Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 122



আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৩

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৩

রাদিফ অনড় অবস্থাতে থেকেই বলল
“যেতে হবে না”

তখনই রাদিফের ফোনটা বেজে উঠলো। রাদিফ শুভ্রতাকে এক হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে রেখেই অন‍্য হাত দিয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরে বলল
“হালা এত সকালে ফোন দিছোস কেন!”

নিবিড় কপাল কুচকে বলল
“সকাল কই ব‍্যাটা। কাল হলুদের পর এখানে থাকতে বললাম থাকলি না। আজ আমার বিয়ে আসবি না।”

“যাইতাম না কি করবি!”

নিবিড় রাগান্বিত কন্ঠ বলল
“হুম এখন তো আসবিই না। বউ তো পাইছিস এখন তো আমারে চিনবিই না। নিজের বিয়েতে তো আমাকে বললিও না।”

রাদিফ ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“আইতাছি আর ড্রামা করা লাগতো না।”

নিবিড় হেসে বলল
“আয় বন্ধু আয়। তোরে নিয়ে আমি বিয়া করতে যামু।”

রাদিফ কল কেটে শুভ্রতার দিকে তাকালো। শুভ্রতা ভ্রুকুচকে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল
“আজ ওই নীল রঙের শাড়িটা পড়বে কেমন। আর ওতো সাজতে হবে হালকা সাজেই তোমাকে মায়াবতী লাগে। কাজল দিতে ভুলবেনা কিন্তু।”

রাদিফের কথা শুভ্রতা মুচকি হেসে বলল
“আচ্ছা বাবা সবই কর‍বো। আগে ছাড়ুনই তো।”

রাদিফ ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“কি আর করার যাও তাহলে।”

“আমি একা কেন যাবো! আপনিও ফ্রেশ হয়ে আসুন। নাস্তা করে তো আবার যেতে হবে।”

রাদিফ উঠে চলে গেল ওয়াশরুম। শুভ্রতা ঘর গোছ করে রুমের বাহিরে ‍বেড়িয়ে পড়লো।

সকালের নাস্তা শেষে শুভ্রতা শাড়ি বের করলো নীল রঙের। সময় নিয়ে শাড়িটা পড়ে নিলো সে। নীল কাঁচের চুড়ি পড়ে নিলো। সাথে গলায় কানে হালকা গহনা পড়ে নিলো। চোখে গাঢ় করে কাজল দিলো। নীল শাড়িতে বেশ মানিয়েছে তাকে। কাজল দেওয়াতে চোখ দুটো বেশ আর্কষণীয় হয়ে উঠেছে। ছোট গোল মুখটাতে মায়ার যেন কোনো কমতি নেই। পাতলা গোলাপি ঠোঁট বরাবরই শুভ্রতার সৌন্দর্য যেন আরও বাড়িয়ে তুলেছে রাদিফের কাছে। শুভ্রতা চুলটা বাঁধতে নিবে তখনই রাদিফ দরজায় হেলান দেওয়া থেকে ধীরে ধীরে শুভ্রতার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল
“চুলটা খোলায় থাকুক।”

শুভ্রতা চুল ছেড়ে দিলো। আয়নাতেই পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“রেডি হবেনা!”

রাদিফ ছোট করে উত্তর দিলো
“হুম”

রাদিফ টাউজারের পকেট থেকে একটা বেলি ফুলের গাজরা বের করে শুভ্রতার চুলের খাঁজে আটকে দিলো। শুভ্রতার দুইবাহু ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বেশ কিছুসময় শুভ্রতার মুখপানে চেয়ে বলল
“মাশাল্লাহ্ আমার মায়াবতীর যেন কারো নজর না লাগে।”

শুভ্রতা লাজুক হেসে মুখ নিচু করতেই রাদিফ শুভ্রতার থুতনিতে হাত রেখে শুভ্রতা লাজুক মায়াবতী মুখ‍টা উঁচু করে ধরে কপালে দীর্ঘ এক চুমু দিয়ে ধীর কন্ঠে বলল
“ভালোবাসি মায়াবতী”

তখনই রিজভী রুমে প্রবেশ করতেই চোখ হাত দিয়ে বলল
“আমি কিছু দেখিনি ভাই”

শুভ্রতা ছিটকে সরে গেল রাদিফের থেকে। রাদিফ চোখ ছোট ছোট করে রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল
“ঢং বাদ দিয়ে কি বলতে এসেছিস বল।”

রিজভী চোখ থেকে হাত সরিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলল
“না মানে তোমরা রেডি হয়েছো নাকি তাই শুনতে এসেছিলাম।”

রাদিফ ভাবলেশহীন ভাবে বেডের উপর রাখা নীল রঙের পাঞ্জাবি আর জিন্স নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল। রিজভী একবার সেদিকে তাকিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“ভাবি তুরের কি অন‍্য কোনো নাম্বার আছে?”

শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল
“কেন বলো তো!”

রিজভী আমতা আমতা করে বলল
“না মানে ঝগড়ার পরিমাণ একটু বেশি হয়ে গেছিলো। তাই আর কি ব্লক করেছে আমাকে।”

শুভ্রতা ভ্রু নাচিয়ে বলল
“দেবর জি তোমার ভাব ভঙ্গি তো ভালো ঠেকছেনা। প্রেমে টেমে পড়লে নাকি।”

রিজভী মাথা চুলকে হাসলো। শুভ্রতা হেসে বলল
“আর তো নাম্বার নেই। সমস্যা হবে না রাগ কমলে একাই ব্লক খুলে ঝগড়া করবে চিন্তা নিও না।”

রিজভী মাথা চুলকাতে চুলকাতেই বোকা হাসলো।

রাদিফ ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে বলল
“তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস। আমাকে তো খুব তাড়া দিলি। নিজে রেডি হবিনা।”

রিজভী ভাব নিয়ে শার্টের কলার ঝাকুনি দিয়ে বলল
“এই রিজভী কখনো রেডি হতে দেড়ি করে না। আমি আগে থেকেই রেডি।”

রাদিফ পাঞ্জাবি হাতা গোটাতে গোটাতে আয়নার সামনে গিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল
“রেডি হয়ে গেলেই ভালো। এখন গিয়ে গাড়ি বের করে। আমরা আসছি। আর বাবা কোথায় যাবে না?”

রিজভী ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“যাবেনা বলল। ছুটির দিনে সে ঘুম বাদ দিয়ে ওখানে যাবে না। আবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বের হবে। সব মিলিয়ে না করে দিছে।”

রাদিফ পারফিউম দিতে দিতে বলল
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুই তাহলে যা।”

রিজভী চলে গেল। শুভ্রতা এতক্ষণ আড়চোখে রাদিফকেই দেখছিলো। নীল পাঞ্জাবিতে লোকটাকে বেশ সুদর্শন লাগছে শুভ্রতার কাছে। ফর্সা গায়ে নীল রঙটা বেশ মানিয়েছে। চাপ দাড়ি,লম্বা নাক,মায়া ভরা চোখ,চোখে চিকন ফ্রেমে চশমা, এক কথায় শুভ্রতা যেন এক দফা ক্রাশ খেল রাদিফের দিকে।

রাদিফ শুভ্রতার আড়চোখে তাকিয়ে থাকার বিষয়টি খেয়াল করতেই দুষ্টু হেসে বলে উঠলো
“তোমারি তো জামাই বউ। পরে না তাকিয়ে থেকো। এখন যেতে হবে তো।”

রাদিফের কথায় লজ্জা পেল শুভ্রতা। তড়িঘড়ি করে চোখ সরিয়ে নিলো সে রাদিফের থেকে। রাদিফ ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে শুভ্রতার কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর নাক টেনে দিয়ে বলল
“লজ্জাবতী”

বলেই শুভ্রতার ডান হাতটা ধরে রাদিফ বাহিরে চলে এলো।

রিজভী গাড়ি বের করে ওদের জন‍্যই অপেক্ষা করছিলো। তখনই ওরা এসে গাড়িতে বসতেই রিজভী ড্রাইভ করতে লাগল।

রাদিফ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিলো। রাদিফ তখনই শুভ্রতার কোমরে হাত রেখে ওকে নিজের কাছে নিয়ে এলো। শুভ্রতা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রাদিফের দিকে। রাদিফ অন‍্যদিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসলো। শুভ্রতা কিছু বলতেও পারছেনা। বললেই রিজভীর সামনে ওকে লজ্জায় পড়তে হবে। শুভ্রতা অসহায় দৃষ্টিতে রাদিফের দিকে তাকাতেই। রাদিফ দাঁত বের করে হাসলো। শুভ্রতা বিরবিরিয়ে বলল
“অসভ‍্য লোক”

রাদিফ শুভ্রতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
“শুধু তোমার”

শুভ্রতা মুখ ভেংচি কাটলো।

হুট করেই গাড়ি ব্রেক করাতে দুইজনই খানিকটা ঝুকে পড়লো। রাদিফ বলল
“কিরে রিজভী কি হলো!”

রিজভীর রাগে গায়ের শিরা উপশিরা জ্বলে জ্বলে যাচ্ছে। শ‍্যামবর্ণের মুখটা রাগের কারণে এক অদ্ভুত ভয়ংকর লাগছে। কপাল বেয়ে ঘাম জমে গেল বিন্দু বিন্দু। রাদিফ আবারো বলল
“কিরে কি হলো তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন!”

রিজভী পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“ভাইয়া আমার শরীরটা না ভালো লাগছে না। তুমি আর ভাবি না হয় বিয়ে বাড়ি চলে যাও গাড়ি করে। আমি রিক্সা করে বাসায় চলে যাই।”

রাদিফ বেশ অবাক হলো। হটাৎ করে রিজভীর কি এমন হলো যে ছেলেটা যাবে না বলছে। রাদিফ চিন্তিত কন্ঠে বলল
“শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে!”

“না ভাইয়া মাথাটা একটু ধরেছে। তোমরা চলে যাও। আমি বাসায় যাচ্ছি।”

“তুই একটা কাজ কর গাড়িতে তুই চলে যা। আমরা রিক্সায় চলে যাবো নি।”

“কিন্তু ভাইয়া!”

“কোনো কিন্তু না। সাবধানে যাস কেমন।”

বলেই রিজভীকে কিছু বলতে না দিয়ে রাদিফ আর শুভ্রতা নেমে গেল।

রিজভী সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে নিজেকে কন্টোল করা চেষ্টা করতে লাগল।

রাদিফ একটা রিক্সা ডাকলো। নিজে রিক্সায় উঠে শুভ্রতার উদ্দেশ্য হাত বাড়িয়ে দিলো। শুভ্রতা মুচকি হেসে রাদিফের হাতে হাত রাখলো। রাদিফও মুচকি হেসে শুভ্রতার হাত শক্ত করে ধরে রিক্সায় উঠালো শুভ্রতাকে। শুভ্রতা উঠতেই রিক্সা চলতে লাগল। রাদিফ শুভ্রতাকে একহাতে আগলে বসে রইলো।

শুভ্রতার ঠোঁটে অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো। লোকটাকে যত দেখে সে যেন মুগ্ধ হয়। মনের গহীনে সুপ্ত অনুভূতিরা আনাগোনা করে। শুভ্রতাকে মুচকি হাসতে দেখে রাদিফের ঠোঁট ও প্রসারিত হলো। সেও তো চায় তার মায়াবতী সবসময় এমন হাসিখুশি থাকুক।

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-১২

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১২

সবাই হাসলো রাদিফের কথায়। তুর মুখ ভেংচালো রিজভীকে। রিজভী হাসলো।

রাদিফ নিজের হাসি থামিয়ে বলল
“আচ্ছা বাবা এখন মেইন কথায় আসি তাহলে। যেহেতু আমাদের বিয়েটা হুট করেই হয়েছে। কারো কোনো প্রস্তুতি ছিলো না। সেহেতু আমি সবাইকে ট্রিট দেওয়ার জন‍্য এখানে একত্রে ডেকেছি আমার শালিকারা ও মন খারাপ করে ছিলো। তাই এই ব‍্যবস্থা করা।”

তুর দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল
“জিজু তোমার মতো যদি আমি একটা জামাই পেতাম।”

তূর্য ভ্রুকুচকে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“তুর তোর বড় ভাই সামনে যে বসে আছে ভুলে গেছিস।”

“ভাইয়া আমি কি খারাপ কিছু বলেছি! বিয়ে তো করাই লাগবে একদিন। তুমি বুঝবে না। তোমার বোঝার বয়স হয় নি।”

তূর্য অবাক কন্ঠে বলল
“বুঝতে বুঝতে বুড়া হয়ে গেলাম আর তুই বলতেছিস বোঝার বয়স হয় নি।”

ওদের কথার মাঝেই খাবার চলে এলে। প্রসঙ্গ পাল্টে সবাই বিভিন্ন কথা বলতে লাগল।

খাওয়ার মাঝেই রিজভী তুরের কানে কানে বলল
“তোমার জিজুর চেয়েও ভালো জামাই হবে তোমার। আরে আমি রিজভী কোনো দিন খারাপ হতে পারি। আমি সবসময়ই ইনোসেন্ট ভোলাভালা ছেলে।”

তুর ঝট করেই রিজভীর পায়ে পারা দিলো। রিজভী কুকিয়ে উঠলো। অন‍্যদিকে তুরের এমন ভাব যে সে কিছুই জানেনা। তুর রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল
“কি বেয়ান সাহেব! হঠাৎ কি হলো আপনার!”

রিজভী কটমট দৃষ্টিতে তাকালো তুরের দিকে। তুরের পেট ফেটে হাসি পেলেও সে সেই হাসি চেপে রইলো। তূর্য রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল
“তাই তো রিজভী হুট করে এমন কুকিয়ে উঠলে কেন!”

রিজভী জোরপূর্বক হেসে বলল
“আসলে ভাইয়া পায়ে হয় তো লাল পিঁপড়া কামড়িয়েছে মনে হচ্ছে।”

রাদিফ ভ্রুকুচকে বলল
“কি বলিস লাল পিঁপড়া!”

“হুম ভাইয়া বড় লাল পিঁপড়া।”

তুর কটমটিয়ে তাকালো রিজভীর দিকে। রিজভী ভাবলেশহীন।

শুভ্রতাকে চুপ থাকতে দেখে রাদিফ হুট করেই শুভ্রতার বাম হাতটা চেপে ধরলো। শুভ্রতা কেঁপে উঠলো। হতভম্ব হয়ে শুভ্রতা তাকালো রাদিফের দিকে।

রাদিফের ভাব এমন যে সে এখন খাওয়া ছাড়া আর কোনোদিকে মনোযোগ দিতে ইচ্ছুক না। শুভ্রতা বিরবিরিয়ে বলল
“ভাব এমন যেন ভাঁজা মাছটা উল্টো করে খেতে পারেনা। অন‍্যদিকে ব‍্যাটায় যে হারে বজ্জাত কে বুঝবে!”

রাদিফের কানে শুভ্রতার কথা আসতেই সে মিটমিটিয়ে হেসে ধীর কন্ঠে বলল
“শুধু তুমি জানলেই চলবে।”

শুভ্রতা মুখ ভেংচালো। রাদিফ নিজের প্লেট থেকে খাবার তুলে শুভ্রতার মুখের সামনে তুলে ধরলো। শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে রাদিফের দিকে তাকালো। রাদিফ ইশারায় খেতে বলল।

কি করছে এই লোকটা এখানে সবাই আছে। শুভ্রতা চোরা চোখে তাকালো সবার দিকে। সবাই খাওয়াতে ব‍্যস্ত। শুভ্রতা খাবার মুখে নিতেই তুর ঠাস করে একটা ছবি তুলে নিলো। শুভ্রতা অবাক চোখে তাকালো তুরের দিকে। তুর দাঁত কেলিয়ে বলল
“জোশ হয়েছে একদম। ফাটাফাটি হো গেয়া মেরি ইয়ার।”

রাদিফ ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। রিজভী হুট করেই তুরের কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে ছবিটা দেখে বলল
“ভাইয়া আর ভাবি পারফেক্ট জুটি।”

তুর ছো মেরে ফোন কেড়ে নিলো। রিজভী তুরের দিকে তাকালো। তুর মুখ ঘুড়িয়ে রইলো।

তূর্যের একটা ফোন আসায় সে একটা দূরে চলে গেল।

তুর সেদিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে শুভ্রতাকে বলল
“ভাইয়ার মতিগতি তো আমার ভালো ঠেকছে নারে শুভ্র।”

“কেন কি হয়েছে!”

“আরে বেডি বুঝিস না কেন! প্রেম প্রেম ভাব।”

“কি বলিস কে সে! ওই মেয়ে?”

তুর ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“নারে গাধাটা তো পরে খোঁজ নিয়ে দেখছে ওই মাইয়ার বিয়া হয়ে গেছে। এখন কাহিনী অন‍্য মাইয়ারে নিয়ে মনে হচ্ছে।”

“কি বলিস”

ওদের কথার মাঝেই রাদিফ কপাল কুচকে বলল
“কি এতো ফিসফিস করছো তোমরা! আমাদেরও এক‍টু ‍বলো আমরাও একটু শুনি।”

তূর্য ফোন পকে‍টে রেখে বসতে বসতে বলল
“কি এতো কথা শুনি তো।”

তুর জোরপূর্বক হেসে বলল
“তেমন কিছুনা।”

তূর্য আড়চোখে তাকালো নম্রতার দিকে। নম্রতা বেশ চুপচাপ। ভ্রুকুচকে এলো তূর্যের। তূর্য নম্রতাকে জিঙ্গাসা করলো
“নম্রতা কিছু সমস্যা!”

নম্রতা ধীর কন্ঠে বলল
“কিছু না”

সবাই যাওয়ার জন‍্য প্রস্তুত হতেই নম্রতা শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরে রইলো। শুভ্রতার মনটাও বেশ খারাপ হয়ে গেল। নম্রতার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলো শুভ্রতা। কপালে দীর্ঘ এক চুমু দিয়ে বলল
“পাগলী এমন করিস না। আমি যাবো তুই দেখা করতে আসবি। এমন মন খারাপ কেউ করে নাকি। এখান থেকে এখানেই তো।”

নম্রতা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রতা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফ মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে নম্রতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
“মন খারাপ করো না নম্রতা। যাও তোমাকে প্রমিস করছি প্রতি সপ্তাহে দুইদিন করে শুভ্রতাকে ওই বাসায় নিয়ে যাবো।”

নম্রতার চোখমুখ চিকচিক করে উঠলো। উচ্ছসিত কন্ঠে বলল
“সত‍্যি”

রাদিফ হাসিমাখা মুখেই বলল
“হুম একদম সত্যি। এখন অনেক রাত হয়েছে বাসায় না গেলে বাসায় টেনশন করবে তো।”

তূর্য তুর আর নম্রতা একটা রিক্সায় উঠে বসলো। চোখে আড়াল না হওয়া না পযর্ন্ত নম্রতা তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার দিকে। তুর বুঝতে পেরে নম্রতাকে একপাশ করে জড়িয়ে নিলো। নম্রতা মাথা এলিয়ে দিলো তুরের কাধে। তূর্য পিছু ঘুরে তাকালো একবার।

১৩.
কেটে গেছে পাঁচটা মাস..,

রাদিফের পড়াশোনা শেষ। সে এখন সম্পূর্ণ মন দিয়েছে তার বিজনেসে। দিন যাচ্ছে রাদিফের ভালোবাসা বেড়েই চলছে শুভ্রতার প্রতি। শুভ্রতা রাদিফের ব‍্যবহার বরাবরের মতোই মুগ্ধ। শুভ্রতা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে রাদিফের প্রতি।

রিজভী আর তুরের ঝগড়ার পরিমাণ বেড়েছে আগের চেয়ে। সাপে নেউলের মতো লেগেই থাকে সারাক্ষণ।

তূর্য হাজার ব‍্যস্ততার মাঝেও প্রিয়তমাকে ভালো রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। নম্রতার সঙ্গে রাতে ঘুমানোর আগে কথা বলে সময় নিয়ে। নম্রতা সারাদিনে কি করলো না করলো সব বলে তূর্যকে। তূর্য ভেবে পায় না যে মেয়ে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। সেই মেয়েটা তার সঙ্গে বকবক করতেই থাকে। হয়তো এটাই ভালোবাসা।

———————-

সদ‍্য গোসল করে শুভ্রতা চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো রাদিফ এখনো ঘুমাচ্ছে। ছুটির দিন বলেই কি এতো ঘুম পাড়তে হবে। শুভ্রতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে নয়টা বাজে। শুভ্রতা রাদিফের কাছে গিয়ে রাদিফের পিঠে আলতো হাতে ধাক্কা দিয়ে বলল
“শুনছেন উঠুন। বেলা অনেক হলো উঠুন এবার।”

রাদিফ হুট করেই শুভ্রতাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। শুভ্রতা রাদিফের এমন করে হুট করে টানায় চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রইলো।

রাদিফ মুচকি হাসলো। শুভ্রতার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো যত্ন সহকারে কানের পিছে গুজে দিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল
“আমার মায়াবতী”

শুভ্রতা রাদিফের ঘুম জড়ানো কথায় কেঁপে উঠলো। তার শিরা উপশিরা দিয়ে শীতল রক্ত প্রবাহিত হয়ে গেল।

শুভ্রতাকে কেঁপে উঠতে দেখে রাদিফ ঠোঁট আরো প্রসারিত করে হেসে মুখ গুজলো শুভ্রতার গলার। শুভ্রতা এবার কাঁপা কন্ঠে বলল
“ছাড়ুন আমাকে প্লীজ। এমনিতেই অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। তার উপর দুপুরে তো আবার আপনার ফ্রেন্ডের বিয়ের দাওয়াত আছে। ওখানে তো যেতে হবে।”

রাদিফ অনড় অবস্থাতে থেকেই বলল
“যেতে হবে না”

তখনই রাদিফের

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-১১

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১১

রাদিফ নিরবতা ভেঙে বলল
“রেদোয়ানকে আমি কিভাবে চিনি জানতে চেয়েছিলে না সেদিন।”

শুভ্রতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“থাক না এসব কথা।”

রাদিফ শুভ্রতার একটা হাত নিজের হাতের মাঝে আবদ্ধ করে বলল
“তোমার জানা উচিত। রেদোয়ান আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো ছোটবেলার। কিন্তু প্রতিনিয়ত ওর হিংসা বাড়তো আমার উপর। এর কারণ হচ্ছে আমার রেজাল্ট ভালো আর ওর তেমন একটা ভালো না। এরপর থেকে আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। একদিন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে টিচারের কাছে বকা খাইয়ে নেয়। আমি তবুও কিছু বলিনি। পরে সবার কাছে আমি পরীক্ষায় চিট করেছি বলে। সবাই বিশ্বাস ও করে। পরে আমাকে সেই স্কুল থেকে টিসি দেয়। এরপর থেকে আমার সঙ্গে ওর সম্পর্কের ছেদ ঘটে। ওকে যখন দেখলাম ভার্সিটি তাও একি ডিপার্টমেন্টে আমি হতাশ হয়েছিলাম। তারপর তোমাকে সবার সামনে যখন অপমান করছিলো তখন আমি কিছু বলতে যাবো তখনই তুমি যেভাবে প্রতিবাদ করেছিলে আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম।”

রাদিফের কাধে শুভ্রতার মাথা হেলে পড়তেই রাদিফ ফিরে তাকালো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা ঘুমিয়ে পড়েছে। রাদিফ মুচকি হাসলো। শুভ্রতাকে আলতো করে কোলে তুলে নিলো সে। আলতো হাতে ওকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো। শুভ্রতাকে নিজের বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো সে।

———————

সকালের মিষ্টি রোদ চোখে এসে পড়তেই শুভ্রতা ঘুম ভেঙে গেল। নিজেকে শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ দেখে ভ্রুকুচকে এলো শুভ্রতার। মাথা নামিয়ে পেটের দিকে তাকাতেই চোখগুলো গোল গোল হয়ে গেল শুভ্রতার। রাদিফের শক্ত হাত আকড়ে ধরে আছে শুভ্রতার পেট। শুভ্রতা বেশ লজ্জায় পড়ে গেল তখন কানে উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব হতেই কেঁপে উঠলো সে। রাদিফ শুভ্রতার কানে কানে বলল
“এখনি এমন লাল নীল হলে হবে মায়াবতী। শুধু তো একটু জড়িয়েই ঘুমিয়েছি। এটা কি অপরাধ হয়েছে জান।”

শুভ্রতার কর্ণকূহরে কথাগুলো পৌঁছাতেই শুভ্রতার অসস্থি যেন আরো বেড়ে গেলো। ছটফট করতে লাগল সে। রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার কানের লতিতে চুমু খেয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
“ঘুমাও তো জান।”

শুভ্রতা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল
“বেলা হয়েছে অনেক। ছাড়ুন আমাকে প্লীজ।”

রাদিফ শুভ্রতার পিঠে মুখ গুজে দিলো কোনো উত্তর না দিয়ে। তখনই দরজায় টোকা পড়লো। একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে এলো অপর পাশ থেকে
“রঙ্গন দরজা খুলছোনা কেন! কি হলো দরজা আটকিয়ে রেখেছো কেন!”

রাদিফ বিরক্ত হলো বেশ। রাদিফ বিরক্ত নিয়েই বিরবিরালো। অন‍্যদিকে মেয়েটা দরজা ধাক্কাতেই আছে। রাদিফ বাধ‍্য হয়ে শুভ্রতাকে ছেড়ে দিলো। বিরক্ত নিয়েই বলল
“দরজাটা খুলে দেও তো।”

শুভ্রতা রাদিফের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। ওড়নাটা গায়ে ভালো মতো জড়িয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। একটা মেয়ে পরনে তার ওয়েস্টার্ন ড্রেস। চুল ছেড়ে রেখেছে। মেকআপ করে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। মেয়েটা ভ্রুকুচকে তাকালো শুভ্রতার দিকে। মেয়েটা শুভ্রতাকে এড়িয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলো রাদিফ উল্ট হয়ে শুয়ে আছে। গায়ে টিশার্ট না দেখে মেয়েটা রেগেই বলে উঠলো
“রঙ্গন তোমার একি অবস্থা। তুমি এই মেয়েটার সঙ্গে এক রুমে কি করছিলে।”

শুভ্রতা কপাল কুচকে ফেললো। এই মাইয়া বলে কি! মেয়েটা শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“কি সমস্যা তোমার। তুমি রঙ্গনের রুমে কি করছো!”

শুভ্রতা দুহাত বুকে গুজে দাঁড়িয়ে বলল
“একজন বিবাহিত পুরুষের রুমে নিশ্চয়ই তার বউ ছাড়া আর কেউ থাকবেনা সকালে।”

মেয়েটা চেঁচিয়ে বলে উঠলো
“মানে”

রাদিফ টিশার্টটা পড়ে নিয়ে বেড থেকে উঠে এসে মেয়ে‍টার সামনে দাঁড়িয়ে বলল
“নিধি তুই এত সকালে আমার রুমে কেন এসেছিস। তোর হয় তো জানার কথা আমি এখন বিবাহিত। তোর আক্কেল নেই।”

নিধি রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“তুই এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছো! আমার মধ্যে কি ছিলো না যে আমাকে ছেড়ে ওই মেয়েটাকে বিয়ে করলে। মেয়েটার গায়ের রঙও তো..”

নিধির কথার মাঝেই রাদিফ একটা চড় বসিয়ে দিলো নিধির গালে। নিধি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রাদিফের দিকে। শুভ্রতাও থতমত খেয়ে গেল। রাদিফের রাগে চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল। রাগান্বিত কন্ঠেই বলে উঠলো
“পরবর্তীতে রাদিফ আহমেদ রঙ্গনের স্ত্রীকে কিছু বলার আগে ভেবে কথা বলবি। তাছাড়া ভুলে যাবো তুই আমার চাচাতো বোন। আমাকে তো তুই চিনিস আমি যা বলি তাই করি। খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।”

নিধি রক্ত লাল চোখে একবার শুভ্রতা আর রাদিফের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেড়তেই রিজভীর মুখোমুখি হয় নিধি। রিজভীকে হাসতে দেখে নিধির মেজাজ যেন আরও খারাপ হয়ে গেল। সে কিছু বলতে নিবে তার আগেই রিজভী বলল
“ভাইয়া আর ভাবির মাঝে আসার মতো ভুল করিস না। ভাইয়া ভালোবেসে ভাবিকে বিয়ে করেছে। এটা মনে রাখিস।”

নিধি কিছু না বলে ছুটে চলে গেল।

———————

খাবার টেবিলে বসে সবাই একসঙ্গে খাবার খাচ্ছিলো। তখনই রাদিফ রফিকুল সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল
“বাবা নিধি এসেছিলো সকালে। এসেই আমার রুমে চলে আসে কোন সাহসে। আমি একটা কথা বলে দিচ্ছি ও যদি আমাদের মাঝে আসে তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

রফিকুল সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বললেন
“আমি তোমার চাচার সঙ্গে কথা বলবো এই নিয়ে।”

————–

খাওয়া শেষে রুমে আসতেই শুভ্রতা রাদিফকে বলল
“ওই মাইয়া আপনার সঙ্গে এতো চিপকে চিপকে থাকতে চায় কেন!”

শুভ্রতার কথায় কপাল কুচকালো রাদিফ। পরক্ষণেই ঠোঁটে শয়তানি হাসি নিয়ে বলল
“কেন তুমি জেলাস নাকি জান!”

শুভ্রতা কিছু না বলে মুখ ঘুড়িয়ে রাখলো। রাদিফ বেশ হাসি পেলো শুভ্রতার কান্ডে। তবুও নিজের হাসি চেপেই সে শুভ্রতার পাশ ঘেঁষে বসে বলল
“দুনিয়ার যতো সুন্দর মেয়েকেই আমার সামনে নিয়ে আসা হোক না কেন তুমি আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর নারী। যাকে ছাড়া হয় তো আমি মরে যাবোনা। তবে আমার আত্মা বাঁচবে না। ভালোবাসি যে। খুব বেশি ভালোবাসি।”

শুভ্রতার কানের কাছে বলা রাদিফের কথাগুলো বুঝতে পেরেই শুভ্রতার কান গরম হয়ে গেল। রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতাকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
“আমি আজ থেকে প্রমিস করছি মায়াবতী, আমি সবসময় সব অবস্থায় তোমার পাশে থাকবো।”

শুভ্রতা মুচকি হাসলো রাদিফের কথায়। তখনই শুভ্রতার ফোনটা বেজে উঠলো। শুভ্রতা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মায়ের নাম। ঠোঁট প্রসারিত হলো তার। রাদিফ হাসিমুখেই বলল
“তুমি কথা বলো আমি রিজভীর সঙ্গে কিছু কথা বলে আসছি।”

শুভ্রতা মাথা নাড়ালো। রাদিফ টুক করে শুভ্রতার গালে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। অন‍্যদিকে শুভ্রতা গাল হাত রেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো রাদিফের যাওয়ার দিকে। ফোনটা আবার বেজে উঠতেই শুভ্রতার ধ‍্যান ভাঙলো। শুভ্রতা ঝট করে কল রিসিভ করলো।

অপরপাশ থেকে চাপা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতেই শুভ্রতার বুকটা হু হু করে উঠলো। নম্রতা নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করে দমে দমে বলল
“আপুনি আমি তোমাকে অনেক মিস করছি। ভালো লাগছেনা তোমাকে ছাড়া আপুনি।”

শুভ্রতার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে নিবে তার আগেই রাদিফ আলতো হাতে শুভ্রতার চোখ মুছিয়ে দিয়ে ওর ফোনটা নিজের কানে নিয়ে রাদিফ বলল
“শালিকা রেডি থেকো আজ বিকেলে। তুর আর তূর্য ভাইয়াকেও বলো। আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাবো।”

“কিন্তু তূর্য ভাইয়া তো অফিস আছে!”

“অফিসের যাবে সমস্যা হবেনা।”

নম্রতা মুচকি হাসলো।

১২.
পড়ন্ত বিকেলে শুভ্রতা, রাদিফ,নম্রতা, রিজভী,তুর সবাই মিলে বসে আছে একটা রেস্টুরেন্টে। অ‍পেক্ষা করছে তূর্যের। তূর্য ক্লান্ত চিত্তে এসে ঠাস করে নম্রতার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। মুচকি হেসে বলল
“সরি সবাইকে। একটু দেড়ি হয়ে গেল।”

রাদিফ মুচকি হেসে বলল
“সমস‍্যা নেই ভাইয়া।”

তূর্য ঠোঁটে ক্লান্তি মাখা হাসি নিয়ে তাকালো নম্রতার দিকে। নম্রতা আগে থেকেই তূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকাতে তূর্য ঠোঁট কামরে হেসে সবার অগোচরে চোখ টিপলো। নম্রতার বিষম উঠে গেল।

শুভ্রতা তাড়াতাড়ি পানি এগিয়ে দিলো। নম্রতা ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।

রিজভী তুরের কানের কাছে এসে বলল
“কি বেয়ান কি অবস্থা আপনার! ঝগড়া করছেন না যে!”

শুভ্রতা রিজভীর কথা শুনতে পেয়ে মিটিমিটি হাসলো। রাদিফ রিজভীর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
“ভাই এখন আর ঝগড়া করিস না দয়া করে। তাছাড়া তোদের ঝগড়া থামাতে থামাতে রাত পেড়িয়ে যাবে। আমাদের আর ভালো করে আড্ডায় দেওয়া হবে না।”

সবাই হাসলো রাদিফের কথায়। তুর মুখ ভেংচালো রিজভীকে। রিজভী হাসলো।

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-১০

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১০

তূর্য গম্ভীর কন্ঠে বলল
“তাড়াতাড়ি নিজের কাজ সেরে চলে যাও। তাছাড়া কিন্তু!”

নম্রতা আর দাড়ালো না তুরের রুমে চলে গেল। তুরে শাড়ি নিয়ে আবারও দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল। তূর্যও রেডি হয়ে শুভ্রতাদের বাসায় গেল।

———————-

শুভ্রতা সাদা রঙের মধ্যে সোনালি রঙের পাথর বসানো একটা শাড়ি পড়েছে। চুলের খোঁপায় বেলি ফুলের মাথা। চোখে টানা করে কাজল। হালকা গহনা গায়ে জড়িয়ে হালকা মেকআপে সেজেছে। শুভ্রতা আসতেই রাদিফের চোখ আটকে গেল শুভ্রতার উপর। এত সুন্দর লাগছে কেন মেয়েটাকে! শুভ্রতা একপলক তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফের পড়নে সবসময়ের মতোই শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি। চোখ ফিরিয়ে নিলো সে। কিন্তু রাদিফ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে শুভ্রতার দিকে। রাদিফকে এমন হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুর মিটমিটিয়ে হেসে শুভ্রতার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল
“দেখ দোস্ত জিজু কেমন হা হয়ে তাকিয়ে আছে।”

তুরের কথায় কান গরম হয়ে আসলো। মেয়েটাও না। আর ওই লোকটার ও কি আক্কেল নেই। সবার সামনে কিভাবে হা করে তাকিয়ে আছে।

শুভ্রতাকে রাদিফের পাশে বসাতেই রাদিফ ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে শুভ্রতাকে ফিসফিসিয়ে বলল
“মায়াবতী তোমার রূপে আমি প্রতিটা মুহূর্তে পাগল হয়ে যাচ্ছি। প্রেমে পড়ছি বারবার বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন ভাবে। আজ থেকে এই মায়াবতী শুধুমাত্র আমার হয়ে যাবে। ভাবতেই কিযে আনন্দ লাগছে। বলে বোঝাতে পারবোনা।”

শুভ্রতা চুপ করে মাথা নিচু করেই বসে রইলো।

তিন কবুল বলার মাধ্যমে শুভ্রতা আর রাদিফের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। দুইজন বাধা পড়লো পবিত্র বন্ধনে।

রিজভী তুরের কাছে দাঁড়িয়ে বলল
“তোমাকে নীলকমল লাগছে ঝগড়ুটি।”

তুর বুঝতে পারলো না সুনাম করলো নাকি অপমান করলো। সরু চোখে তুর রিজভীর দিকে তাকাতেই রিজভী দাঁত বের করে হাসলো। তুর চোখ রাঙালো রিজভীকে। রিজভী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রাদিফের কাছে এসে দাঁড়ালো।

অন‍্যদিকে নম্রতা হালকা গোলাপি রঙের একটা গাউন পড়েছে। মাথা নিচু করেই আছে সে। কারণ সামনের দিকে তাকালেই তূর্যের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। কারণ তূর্য তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।

বিয়ে শেষ হতেই আলোচনায় বসলো সবাই। শামসুল হক আর রেহানা বেগম অনুষ্ঠান করে মেয়েকে ওই বাড়িতে পাঠাতে চান বলে মত দিলেন। রফিকুল সাহেব কিছু বলতে নিবেন তখনই তার ফোনের মেসেজ টুন বেজে উঠলো। উনি পায়জামার পকেট থেকে ফোনটা বের করেই দেখলেন তার ছেলে তাকে এখানে বসেই মেসেজ দিয়েছে। রফিকুল সাহেব মেসেজ ওপেন করে দেখলেন রাদিফ লিখেছে
“আব্বু আমি শুভ্রতাকে আজই আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো। এটা আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তুমি যদি এখন না করো তাহলে কিন্তু তোমার মিষ্টি খাওয়া একদম অফ করে দিবো বলে দিলাম।”

কি হুমকি রে বাবা! ছেলে হয়ে বাবাকে হুমকি দিচ্ছে। রফিকুল সাহেব ছেলের দিকে তাকাতেই রাদিফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন‍্য দিকে তাকালো। রফিকুল সাহেব জানেন যে তার ছেলে যা বলে তাই করে। তাই তিনি ব‍াধ‍্য হয়েই শামসুল হককে বললেন
“না বেয়ান সাহেব আমি আমার মেয়েকে এমন করে রেখে যেতে পারবোনা। ভাই এখন মেয়েকে নিয়ে যাই। ওদের পড়াশোনা শেষ হোক তারপর না হয় অনুষ্ঠান করা যাবে। এক মাস পরেই তো রঙ্গনের পরীক্ষা তারপরেই তো ওর পড়াশোনা শেষ। আর বিজনেসটাও একটু সামলে নিক।”

“ভাই সাহেব এখন মেয়ে আপনাদের। আমি আর কি বলবো বলুন।”

রাদিফের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। শুভ্রতার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরলো। এমন হুট করেই যে অন‍্যের বাড়ি চলে যেতে হবে তা কল্পনাও করেনি সে।

রাদিফ শুভ্রতার কানের কাছে গিয়ে বলল
“এরপর যেন আর কখনো চোখে পানি না দেখি মায়াবতী। শুধুমাত্র আমার মৃত্যুদিন ব‍্যতিত।”

রাদিফের কথায় হুট করেই শুভ্রতা থমকে গেল। বুকে এক চিনচিনে ব‍্যথা অনুভূত হলো তার। কত স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুর কথা বলে দিলো। যতই হোক এখন তো সে তার স্বামী। লোকটা খুব খারাপ।

রাদিফ পুনরায় বলল
“মন খারাপ করোনো মায়াবতী। তোমার যখন ইচ্ছে হবে এখানে আসার একবার শুধু আমাকে বলবে। আমি তোমাকে নিয়ে আসবো।”

শুভ্রতা মায়ের দিকে তাকালো। রেহানা বেগম একপাশে দাঁড়িয়ে ওড়নার শেষ অংশ দিয়ে লুকিয়ে চোখের পানি মুছতেছে। শুভ্রতা হুট করেই মায়ের কাছে গিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। নিরবে কান্না করছে সে।

অন‍্যদিকে নম্রতা কান্নাকাটি করে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। কান্না করার ফলে ফর্সা নাক লাল হয়ে গিয়েছে। তূর্য নম্রতার মাথায় টোকা দিয়ে বলল
“নাক যে লাল বানিয়ে ফেলেছো মনে হচ্ছে তোমার বিদায় হচ্ছে। তবে চিন্তা করোনা আর কিছুদিন অপেক্ষা করো।”

নম্রতা কান্না রেখে অবাক চোখে তাকালো তূর্যের দিকে। তূর্য বাঁকা হেসে চলে গেল সেখান থেকে।

তুরও ইতিমধ্যে কান্নাকাটি করে বন‍্যা বানিয়ে ফেলেছে। রিজভী তুরকে বলল
“বিশ্বাস করো একদম পেত্নির মতো লাগছে তোমাকে।”

তুর রেগে কিছু বলতে আঙুল উঠিয়ে কিছু বলতে নিবে তখন রিজভী তুরের আঙুল ধরে বলল
“মেডাম এতো রাগ তো ভালো না। কেবল তো শুরু অপেক্ষা করো। আমার গফের সঙ্গে ব্রেকআপ করিয়েছো। তোমাকে আমার বউ বানিয়ে ছাড়বো। আমি ও রিজভী।”

তুর হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রিজভীর দিকে। মনে মনে বলল
“রামছাগলে কয় কি! ব‍্যাটা তো তুরকে চিনে না। এতোই সহজ নাকি তাইবা ইসলাম তুরকে পটানো।”

মুখ ভেংচালো তুর।

১১.
শুভ্রতা বসে আছে ফুলে সাজানো রুমে। শুভ্রতা ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতে লাগল। ঘড়টা বেশ গোছানো। রাদিফের পড়ার টেবিলের উপরে দুইটা ছবি উল্টো করে রাখা দেখে শুভ্রতা ভ্রু কুচকালো। ধীর পায়ে সেখানে গিয়ে ছবিটা হাতে নিতেই বেশ অবাক হলো। একটা তার সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে থাকা ছবি। হুট করেই তোলা একটা পিক। পাশের আরেকটা মহিলার ছবি। চেহারা রাদিফের মতো হলেও শ‍্যামবর্ণের এক মায়াবতী। শুভ্রতা ছবি দেখছিলো তখন রাদিফ দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
“আমার জীবনের দুই বিশেষ নারী। একজন আমার মা। আর একজন আমার ভালোবাসা।”

শুভ্রতা ছবিটা রেখে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“আপনার মা অনেক সুন্দর।”

রাদিফ মুচকি হেসে বলল
“আব্বু তো সেইজন‍্যই আম্মুর প্রেমে পড়েছিলো।”

শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
“সত‍্যি”

রাদিফ হেসে মাথা নাড়িয়ে শুভ্রতার হাতে একটা সালোয়ার কামিজ দিয়ে বলল
“ফ্রেশ হয়ে আসো। অনেক রাত হয়ে এসেছে। ওই বাসা থেকে তো খেয়ে আসাই হলো। তাই সবাই শুয়ে পড়েছে। তোমার উপর দিয়েও বেশ ধকল গিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসো নামাজ পড়ে ঘুমাবে। মাগরিবের নামাজ পড়েছো?”

“হুম পড়েছি।”

“আচ্ছা যাও তাহলে।”

শুভ্রতা রাদিফের হাত থেকে সালোয়ার কামিজ নিতেই রাদিফ কার্বাট থেকে একটা টাওয়েল এগিয়ে দিলো। শুভ্রতা ওয়াশরুমে চলে গেল।

রাদিফ রুমেই চেন্স করে নিলো। পাঞ্জাবি ছেড়ে টিশার্ট আর টাউজার পড়ে নিলো।

শুভ্রতা একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হলো চুল মুছতে মুছতে। রাদিফ বিছানার উপর থেকে ফুলগুলো ঝেড়ে ফেলছিলো। শুভ্রতার দিকে তাকাতেই রাদিফের চোখ আটকে গেল। সদ‍্য গোসল করায় বেশ স্নিগ্ধ লাগছে শুভ্রতাকে।

রাদিফের ভাবনায় ছেদ ঘটলো শুভ্রতার গলায়। শুভ্রতা বলল
“ওযু করে আসুন।”

রাদিফ ঝট করে ওযু করে আসে। দুইজন মিলে নামাজ পড়ে খাটে বসতেই হুট করে রাদিফ শুভ্রতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রতা বেশ অবাক হলো। পিঠে উষ্ণ পানি অনুভব হতেই হতভম্ব হয়ে গেল শুভ্রতা। লোকটা কি কান্না করছে! কিন্তু কেন! শুভ্রতা চুপ করেই রইলো।

কিছুক্ষণ পর রাদিফ শুভ্রতাকে ছেড়ে শুভ্রতা গোল ছোট মুখটা নিজের দুইহাতে আজলাভাবে ধরে বলল
“জানো তো ওইদিন আমার ফ্রেন্ড তার ভালোবাসাকে চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেলে। শুধুমাত্র দেড়ি করায় মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়। তখনই আমার ভিতরে তোমাকে হারানোর ভয় চেপে বসে। তোমাকে আমি হারাতে চাইনি বলে ওইদিন বাবা তোমার কথা বলি। জানো তো ওনি সেইদিন তোমার ছবি দেখে আম্মু আর তার প্রেমের বিয়ের কথা বলেন। আমাকে বিজনেসের আইডিয়া দেয়। পরে তোমার বাবাকে রাজি করানো সহ আজ তুমি এখানে সবটাতে বাবা আমাকে সাহায্য করেছে। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মায়াবতী। ছেড়ে যাবে না তো আমায়।”

শুভ্রতা হাত রাখলো রাদিফের হাতে। ধীর কন্ঠে বলে উঠলো
“এখন আপনি আমার স্বামী। আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”

রাদিফের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। শুভ্রতার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে আসে। দুইজন মিলে মেঝেতে বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে। রাদিফ নিরবতা ভেঙে বলল
“রেদোয়ানকে আমি কিভাবে চিনি জানতে চেয়েছিলে না সেদিন।”

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-০৯

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৯

রাদিফ ছাদের দেয়ালে দুটো ঘুষি বসিয়ে দিলো। শুভ্রতা অস্থির কন্ঠে রাদিফের হাত ধরতে নিবে তার আগেই রাদিফ অন‍্য হাত দিয়ে শুভ্রতার বাহু শক্ত করে ধরে বলল
“তুই কি রে! তোকে আর কত বলবো আমি। আমি তোকে ভালোবাসি। আজই তোকে আমি বিয়ে করবো দেখতে থাক তুই।”

বলেই শুভ্রতাকে ছেড়ে হনহনিয়ে চলে রাদিফ। শুভ্রতা শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রাদিফের যাওয়ার দিকে। কি হলো এটা! শুভ্রতা হকচকিয়ে বেশকিছুসময় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই।

শুভ্রতা ধীরপায়ে বসার রুমে আসতেই নম্রতা ছুটে এসে একটা মিষ্টি শুভ্রতার মুখে ঢুকিয়ে দিলো। শুভ্রতা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো। তুর এসে ‍বলল
“কিরে বিয়েতে নাকি তুই রাজি। ভাইয়া তো দেখি আজকেই তোকে বিয়ে করার জন‍্য লাফাচ্ছে। ব‍্যাপার কি!”

শুভ্রতা আরো অবাক হলো তুরের কথা শুনে। শামসুল হক মেয়ের কাছে এসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল
“মা তুই কি রাজি এই বিয়েতে!”

শুভ্রতা সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো রাদিফ চোখ রাঙাচ্ছে তাকে। চোখমুখ লাল হয়ে আছে তার। শুভ্রতা কপাল কুচকালো কি এমন বলেছে সে যে রাদিফ এমন করছে!

রফিকুল সাহেব শুভ্রতার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন
“মা আমার কোনো মেয়ে নেই। আমি তোমাকে আমার ছেলের বউ না মেয়ে করে নিয়ে যেতে চাই। তুমি কি তোমার এই বাবাকে ফিরিয়ে দেবে মা। ছেলেটা আমার অনেক ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে। এই প্রথম সে আমার কাছে কিছু চেয়েছে। জানো তো ও আমাকে পাগল করে দিচ্ছিলো তোমাকে এনে দেওয়া জন‍্য।”

শুভ্রতা তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফ মাথা নিচু করে সোফায় বসেই আছে। শুভ্রতা আর না করতে পারলো না। জীবনটা ছেড়ে দিক না হয় আল্লাহর কাছে। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন‍্যই করেন। শুভ্রতা রাজি হয়ে গেল। সবাই আলহামদুলিল্লাহ্ বলে উঠলো। রাদিফের ঠোঁটেও এক মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।

রফিকুল সাহেব ফোন করে তার ছোট ছেলে রিজভীকে কাজী নিয়ে আসতে বললেন। রাদিফও তার রুম থেকে শুভ্রতার জন‍্য কিনে রাখা শাড়ি আর কিছু গহনাও রিজভীকে আনতে বলল।

তুর আর নম্রতা শুভ্রতাকে নিয়ে ঘরে আসতেই শুভ্রতা রাগী চোখে তুরের দিকে চোখ তাকিয়ে কোমরে হাত রেখে বলল
“তুই আগে থেকে ওনার কথা আমাকে বলিসনি কেন!”

তুর ভাবলেশহীন ভাবে বলল
“তুই পাত্রের কথা জানতে চেয়েছিলি!”

শুভ্রতা ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে ধপ করে বেডে বসে বলল
“হালায় তো দেখি বিয়ে পাগলা বেটা। এখন আমার কি হবে রে! ওই হালায় তো হুট করেই আমার কথায় রেগে গিয়ে বিয়া নিয়ে লাগছে। বহুত মছিবত।”

তুর মিটিমিটিয়ে হাসলো।

শুভ্রতা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল
“আমি তো ভাবছিলাম দেখতে আসবে। না করে চলে যাবে। এখন আমার কি হবে তুর রে!”

রাদিফ দরজার সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
“কি আর হবে, মিস থেকে মিসেস হয়ে যাবে। মিসেস রাদিফ আহমেদ রঙ্গন হয়ে যাবে। এই আর কি।”

শুভ্রতা থতমত খেয়ে গেল রাদিফের কথায়। এই ব‍্যাটা আবার কখন আসলো। রাদিফ ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল
“যখন থেকে আমার নামে কথা বলা শুরু করেছো তখন থেকেই আমি এখানে আছি।”

রাদিফ হাতের পেকেটগুলো নিয়ে রুমে ভিতরে ঢুকে পেকেটগুলো নম্রতার হাতে দিয়ে বলল
“শালিকা তোমার আপুকে এগুলো পড়িয়ে রেডি করি দেও তো তাড়াতাড়ি।”

রিজভী কপাল কুচকে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“এই আপনি এখানে কি করছেন!”

তুর ভ্রুযুগল কুচকে রিজভীর দিকে তাকালো। রিজভীর কথায় সবাই তুর আর রিজভীর দিকে তাকালো। রাদিফ বলল
“তুই তুরকে চিনিস। তুর তুমি রিজভীকে চিনো।”

তুর রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“না ভাইয়া আমি এই রামছাগলকে আজই প্রথম দেখলাম।”

রিজভীর মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেল। নাকের পাটা ফুলিয়ে তুরকে চোখ রাঙিয়ে বলল
“এই যে মিস কাকে রামছাগল বলছেন। আপনি আমাকে চিনেন।”

তুর মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল
“এমনি রামছাগল বলেছি। আমি তো আপনাকে চিনিই না। আপনি এমন ভাব করছেন। মনে হচ্ছে আমি আপনার সঙ্গে এক যুগ আগে থেকে পরিচিত।”

রিজভী চোখমুখ শক্ত করে বলল
“এই মেয়ে তুমি এতো ঝগড়ুটে কেন! না বুঝে চেঁচাচ্ছো।”

রাদিফ এবার বলেই উঠলো
“আরে থাম তোরা। রিজভী বল তো তুই কিভাবে তুরকে চিনিস।”

রিজভী তুরকে চোখ রাঙালো। তুর পাত্তাই দিলো না। রিজভী রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“ভাইয়া আমার গফ ছিলো না আনিসা। একদিন রাস্তায় আমি আমার বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করছিলাম। তখন এই ঝগড়ুটে মেয়ের জন‍্য আমার ব্রেকআপ হয়ে গেছে।”

তুর অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
“এই মিয়া আপনি এগুলো কি বলছেন! আমি তো আপনারে চিনিই না। খবরদার বেহুদা কথা বলবেন না বলে দিলাম।”

রিজভী মুখ ভেংচি কাটলো। তুর রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“দেখছেন ভাইয়া আপনার এই বাদর ভাই আমাকে মুখ ভেংচাচ্ছে।”

শুভ্রতা চেঁচিয়ে বলল
“চুপ, দুইজনই একদম চুপ। রিজভী আপনি বলুন তো আসল কাহিনী।”

রিজভী মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বলল
“ভাবি গো তোমারে আর কি ‍বলতাম বলো। এই মাইয়া ওইদিন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো খাম্বার মতো। আমার গফ ওই পিক তুলে আমাকে দেয়। আর বলে আমি নাকি ওর লগে ইটিশ পিটিশ করি। আমার কথা না শুনেই ব্রেকআপ করে দেয়। আমার কোনো কথা শুনেই নি। আমার কত টাকা গেল। কত কষ্ট করে পটাইছিলাম।”

রাদিফ কপাল চাপড়ে বলল
“তুই আসলেই রামছাগল। এখানে তুরের দোষ কোথায়। সব দোষ তোর সো কল্ড গফ। এখন এগুলো বাদ দিয়ে চল তো তুই। আর তুর কিছু মনে করোনা। ও পাগল।”

“ভাইয়া”

“আল্লাহ রাস্তায় তুই চুপ যা। আর চল এখান থেকে। কাজী সাহেব চলে এসেছে এতক্ষণে।”

“কিন্তু ভাইয়া!”

“কোনো কিন্তু না চল তো।”

বলেই রাদিফ রিজভীকে নিয়ে যেতে লাগল। রিজভী চোখ রাঙালো তুরকে। তুর মুখ ভেংচালো।

নম্রতা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“তুর আপি এখন এসব বাদ দিয়ে আপুকে রেডি করাই তো। জিজু তাছাড়া আবার নিজেই সাজাতে চলে আসবে।”

তুর ফিক করে হেসে দিলো। কি যেন ভেবে তুর বলল
“নম্র ভাইয়া এসেছে। তুই গিয়ে দেখ তো ভাইয়া রেডি হলো নাকি। আর আমার আলমারি থেকে নীল রঙের শাড়িটা নিয়ে আয় তো।”

“কিন্তু তুর আপি!”

“আর কিন্তু কিন্তু করিস না তো। এখন বাহিরে গেলেই ওই রামছাগলের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। আর আমার মেজাজ খারাপ করবে। যা নারে বনু।”

নম্রতা বাধ‍্য হয়েই গেল। দরজায় টোকা দিতেই তূর্য এসে দরজা খুললো। নম্রতা ফুস উঠে বলল
“ওই মিয়া আপনি সারাদিন খালি গায়ে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ান কেন! লজ্জাসরম কি বানের জলে ভাসিয়েছেন।”

নম্রতার মুখে হুট করে এমন কথা শুনে ভড়কালো তূর্য। নম্রতা আবারো বলল
“জামা কাপড় নেই আপনার মিয়া।”

তূর্য গলা খাকিয়ে বলল
“তুমি এগুলো কি বলছো!”

নম্রতা এবার আরো দ্বিগুণ ক্ষেপে হিসহিসয়ে বলল
“আমি যখনই আপনার সামনে আসি। আপনি খালি গায়ে অবতারের মতো দাঁড়িয়ে থাকেন।”

তূর্য এবার নিজের দিকে তাকালো। সে জিন্স পড়ে আছে। সে পাঞ্জাবীই খুঁজতেছিলো। তূর্য কিযেন ভেবে দুষ্টু হেসে বলল
“খালি গায়ে দেখলে কি হয় পিচ্চি।”

নম্রতার তূর্যের এমন ধারার আচরণ দেখে অবাক হলো। নম্রতাকে এমন অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনে মনে হাসলো তূর্য। তূর্য পুনরায় গলা পরিষ্কার করে বলল
“কি হলো বলছো না যে!”

নম্রতা আমতা আমতা করে বলল
“কি হবে কিছুই হবেনা। দেখি সরুন তো।”

বলেই নম্রতা তূর্যের পাশ কাটিয়ে যেতে নিবে। তখনই তূর্য পিছন থেকে নম্রতার হাত টেনে বলল
“তোমার লক্ষণ তো ভালো ঠেকছেনা মেয়ে! প্রেমে পড়েছো নাকি!”

নম্রতার বুক ধুকপুক করছে। লোকটা কি বুঝে গেল! তূর্য একটানে নম্রতাকে ওর বুকে এনে ফেলল। নম্রতা চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। তূর্য মুচকি হাসলো।

নম্রতা কপালে পড়ে থাকা অবাদ্ধ চুলগুলো আলতো হাতে কানে গুজে দিয়ে তূর্য ফিসফিসিয়ে বলল
“তুমি আসলেই বোকাফুল। চোখের মধ্যে অনুভূতি নিয়ে ঘুড়ে বেড়াও আর মনে করেছো আমার থেকে লুকিয়ে থাকলেই সব লোকাতে পারবে। কিন্তু পিচ্চি ভুলে যেও না আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়।”

নম্রতার গলা শুকিয়ে এলো। তূর্য ঝট করেই নম্রতাকে ছেড়ে খানিকটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। নম্রতার যেন শ্বাস আটকে আসছিলো। লোকটা এতটা সময় ওর এতো কাছে ছিলো। তূর্য গম্ভীর কন্ঠে বলল
“তাড়াতাড়ি নিজের কাজ সেরে চলে যাও। তাছাড়া কিন্তু!”

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-০৮

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৮

৯.
কেটে গেছে দুটোমাস। নম্রতার কলেজ চয়েজ হয়ে গিয়েছে। তূর্যের চাকরি নিয়ে সে বেশ ব‍্যস্ত। তুর তার পড়াশোনায় মনোযোগ বসিয়েছে। শুভ্রতাও এখন আগের থেকে ভালোই আছে। পড়াশোনা করছে। মজা করছে এভাবেই কেটে যাচ্ছে তার দিনগুলো। রাদিফকে আর দেখা যায় নি ওইদিনের পর থেকে। আল্লাহ ভালো জানে কোথায় আছে সে! হুট করে এসেছিল আবার হুট করেই উধাও হয়ে গেছে। শুভ্রতার মনে হাজারো প্রশ্ন রেখে চলে গেছে সে।

————————–

শুভ্রতা সন্ধ্যায় পড়তে বসেছিল। তখনই তার রুমে শামসুল হক এলেন। শুভ্রতা বাবাকে দেখে মুচকি হেসে পড়ার টেবিল থেকে উঠে বিছানায় বাবার পাশে বসে বলল
“বাবা কিছু বলবে?”

শামসুল হক মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন
“মা আমার একটা কথা রাখবি!”

শুভ্রতা মুচকি হেসে বাবার হাত দুটো নিজের হাতে আবদ্ধ করে নরম কন্ঠে বলল
“বাবা তুমি আমাকে কথা বলতে এতো সংকোচ করছো কেন! আমি জানি তুমি কখনোই আমার খারাপ চাইবে না। এখন ফটাফট বলে ফেলো তো।”

শামসুল হক মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলতে শুরু করলেন
“দেখ মা আমায় তুই ভুল বুঝিস না। আমি কখনোই চাইনি তোর পড়াশোনা মাঝে তোর বিয়ে হোক। সবসময় চেয়েছি তুই নিজে আগে কিছু বলবি তারপর তোর বিয়ে দিবো। কিন্তু আজ বাধ‍্য হয়েই তোর কাছে এসেছি। রঙ্গন খুব ভালো ছেলে। পড়াশোনার পাশাপাশি তার নিজের বিজনেসও আছে। তোকে ভালো রাখবে ও। কাল ওরা তোকে দেখতে আসবে। তুই যদি না করে দিস তাহলে আমি তাদের না করে দিবো।”

শুভ্রতা মুচকি হেসেই জবাব দিলো
“আসতে বলে দেও তাদের। আমি জানি তুমি কখনোই ভুল ডিসিশন নিবে না। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি বাবা।”

শামসুল হক ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে মেয়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে রুম ত‍্যাগ করলো।

শুভ্রতা নিজের ওড়নাটা গায়ে ভালোমতো জড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশের দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চুপ করে রইলো। পাশে কারো উপস্থিতি পেয়ে শুভ্রতা ধীর কন্ঠে বলল
“কি হয়েছে নম্র! কিছু বলবি!”

“আপুনি জিজু কিছু বেশ সুন্দর। একদম হিরোদের মতো দেখতে।”

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলল
“জিজু মানে!”

নম্রতা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“আরে আপুনি কাল যারা আসবে।”

শুভ্রতা ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো
“তাদের আমাকে পছন্দ হবে না।”

নম্রতা ভ্রুকুচকালো। অবাক হয়ে বলল
“এ কথা কেন বলছো আপুনি!”

শুভ্রতা এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“এখনকার দুনিয়ায় সাদা চামড়ার অনেক চাহিদা। সেখানে তোর কিভাবে মনে হয় তারা আমাকে পছন্দ করবে। নিজের বিজনেস আছে আবার। তাহলে কথাই আলাদা। আমার মতো শ‍্যামবর্ণে একটা সাধারণ মেয়েকে তো তার পছন্দ করার প্রশ্নই উঠে না।”

তখনই পিছন থেকে তুর বলে উঠলো
“তেমনটা যদি না হয়। তখন কি হবে বল তো!”

শুভ্রতা আকাশপানে তাকিয়ে বলল
“তেমনটা হবেনা।”

তুর একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে শুভ্রতার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। সে জানে শুভ্রতা নিজে যা ভাবে তাই।

নম্রতা বলে উঠলো
“ওদের বাসা থেকে বলে দিয়েছে কালকেই নাকি আংটি পড়িয়ে যাবে।”

শুভ্রতা আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। তুর এবার কপাল কুচকে বলল
“এমন ভাব করছিস যে আমার বাপের মতো তোর বাপও তোর জন‍্য বইড়া বেডা ঠিক করছে। পোলায় যে কি সুদর্শন। তুই দেখলেই ক্রাশ খাবি। রঙ্গন ভাইয়া তো তোকে আগে থেকেই…!”

তুর হঠাৎ এমন কথা বলতে গিয়ে থেমে যেতে দেখে শুভ্রতা তীক্ষ্ণ চোখে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“কি বলতে গিয়ে থেমে গেলি তুর!”

তুর আমতা আমতা করে বলল
“ভাইয়া এখনই আসবে। তোরা থাক আমি যাই।”

বলেই শুভ্রতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ভো দৌড় দিলো তুর।

শুভ্রতা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে ফোন নিয়ে বসলো। ফোন দেখতে দেখতে আড়চোখে নম্রতার দিকে তাকাতেই দেখলো সে উদাসীন হয়ে মেইনগেটের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রতা ভ্রুকুচকে সেদিকে তাকিয়ে দেখলো তূর্য বাইক নিয়ে ঢুকছে। শুভ্রতা মনে মনে হাসলেও কিছু বলল না। বেশ কিছুদিন যাবত সে দেখতে নম্রতার পরিবর্তন। নম্রতা তূর্যকে দেখলে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। শুভ্রতা ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে রুমে চলে এলো।

কিছুক্ষণ বাদে তারা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

নম্রতা খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে বারান্দায় এসে দাড়ালো। একটা মিষ্টি সূরের গান ভেসে আসছে। নম্রতা মুচকি হাসলো। সে তো এটাই শুনতে আসে প্রতিরাতে।

তূর্য খাওয়াদাওয়া শেষ করে রুম অন্ধকার করে বারান্দার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে গান ধরেছে। এটা তার একটা অভ‍্যাসের মধ্যে পড়ে। মনের কথাগুলো গানের মাধ‍্যমে
রাতের অন্ধকারে এভাবেই প্রকাশ করে।

আর অন‍্যদিকে নম্রতাও চোখ বুজে দেয়ালের অপরপাশে বসে তূর্য গানগুলো অনুভব করে।

আদোও কি দুইজনের একজনও জানে তাদের মাঝের দূরত্ব শুধুমাত্র এক‍টা দেওয়াল। হয় তো হ‍্যাঁ। নয়তো না।

১০.
বিকেলের কথা.,
শুভ্রতাকে সাজিয়ে বসার রুমে আনার পর পাত্রের বাবা রফিকুল সাহেব মুচকি হেসে বললেন
“বিয়ান সাহেব আমি আজকেই আমার বউমাকে আংটি পড়িয়ে যেতে চাই। আপনার সঙ্গে তো আগেই কথা হয়েছে আমার এই ব‍্যাপারে।”

শামসুল হক মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন
“বিয়ান সাহেব আমি আমার মেয়ের সিদ্ধান্তকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে এসেছি। এবারও এর নড়চড় হবে না। আমার শুভ্রতা মা যা বলবে তাই হবে।”

শুভ্রতা মাথা নিচু করেই রয়েছে। সে কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। হুট করে আজই বিয়ে হয়ে যাবে। এটা তো তার কল্পনা অতীত ছিলো। সে তো মনে করেছিলো পাত্রপক্ষ তাকে দেখা মাত্রই না করে দিবে। কিন্তু এ তো উল্টো হয়ে গেল।

“আঙ্কেল আমি আর শুভ্রতা কি একটু কথা বলতে পারি আলাদা।”

শুভ্রতা পরিচিত কন্ঠ পেয়ে চকিতে সামনের দিকে তাকালো। সামনে তাকিয়ে সে থমকে গেল।কারণ সামনে রাদিফ আর তাদের ভার্সিটির সভাপতি স‍্যার বসে আসে। দুইজনের মুখেই মুচকি হাসি বিদ‍্যমান। রাদিফ একটা চোখ চিপে দিলো শুভ্রতাকে সবার অগোচরে। যা নম্রতা আর তুরের দৃষ্টি এড়ালো না। দুইজনই মুখ টিপে হাসলো। শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
“বাবা পাত্রের নাম রঙ্গন ছিলো না।”

রফিকুল সাহেব হেসে বললেন
“হ‍্যাঁ রঙ্গনই তো। আর ছেলের নাম রাদিফ আহমেদ রঙ্গন।”

শুভ্রতার এবার মাথা ঘুরতে শুরু করেছে। কি হচ্ছে তার সঙ্গে। শামসুল হক শুভ্রতাকে বললেন
“মা রঙ্গনকে নিয়ে ছাদে চলে যাও। ওখানে গিয়ে কথা বলে আসো।”

শুভ্রতা থমকানো চোখে বাবার দিকে তাকাতেই উনি চোখ দিয়ে ইশারা করলেন।

রাদিফ বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল
“চলুন তাহলে যাওয়া যাক।”

শুভ্রতা মাথা নিচু করে ছাদের দিকে যেতে লাগল। ছাদে এসে ছাদের কাণিশ ঘেঁষে দাঁড়ালো সে। পড়নে তার আকাশি রঙের শাড়ি। মাথায় ঘোমটা দেওয়ার পরেও অবাদ্ধ চুলগুলো উঁড়ছে আপন গতিতে। চোখের কাজল যেন এক মায়াবী রূপ দিয়েছে তাকে। কপালের অবাদ্ধ চুলগুলো বেশ বিরক্ত করায় শুভ্রতা চুলগুলো বাঁধতে নিবে তখনই রাদিফ ধীর কন্ঠে বলে উঠলো
“থাক না উড়তে দেও। ভালো লাগছে।”

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে রাদিফের দিকে একবার তাকিয়ে ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে চুল বাঁধতে বাঁধতেই বলল
“এগুলোর মানে কি!”

রাদিফ ঝট করে শুভ্রতার বাহু ধরে নিজের সামনাসামনি করে চুলের খোপা খুলে দিয়ে বলল
“না করলাম না বাঁধতে। কথা শোনো না কেন!”

শুভ্রতা রাদিফের মুখ পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“কে হন আপনি আমার! যে আমি আপনার কথা শুনবো।”

রাদিফ শুভ্রতার কথায় বাঁকা হেসে ফিসফিসিয়ে বলল
“হবু বর হই আমি তোমার।”

শুভ্রতা কেঁপে উঠলো। বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে তার। রাদিফের কথায় কি এমন ছিলো যে তার হৃদস্পন্দ বেড়ে গেল!

রাদিফ পুনরায় ফিসফিসিয়ে বলল
“ভালোবাসা ছিলো”

শুভ্রতা থমকে গেল। অবাক দৃষ্টিতে রাদিফের দিকে তাকাতেই রাদিফ মুচকি হেসে বলল
“আমার মনের গহীনে বসবাস তোমার মায়াবতী। আর তোমার মনের কথা আমি বুঝবোনা এটা কোনোদিন হয়।”

শুভ্রতা রাদিফের থেকে খানিকটা সরে গিয়ে বলল
“এসব সবই আপনার মোহ মি.রাদিফ আহমেদ রঙ্গন। কিছুদিন পর সব কেটে যাবে। তাই বলছি ভেবে সিদ্ধান্ত নিবেন।”

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-০৭

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৭

বলেই তুরকে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রতা। তুর মুচকি হাসলো। তখনই সেখানে নম্রতা এলো। হাতে তার গল্পের বই। নম্রতা ছাঁদের মাঝে রাখা বেঁতের চেয়ারে বসে পড়লো। ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“এতো হাসাহাসি করিস না আপুনি। ফুপি এক বিরাট কাহিনী করেছে।”

নম্রতার কথায় কপাল কুচকে এলো শুভ্রতার। সে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলে উঠলো
“কি কাহিনী করলো আবার সে!”

“আর বলিস না আপুনি তার গুণধর পূত্রের সঙ্গে তোর বিয়ে দিতে এসেছে। বাবাকে বলবে সেই কথা। তোকে বউ করে নিয়ে সম্পদ নিবে।”

শুভ্রতা হো হো করে হেসে বলল
“উনি পারেন ও বটে। বাবা খালি একবার শুনুক দুর দুর করে তাড়াবে।”

নম্রতাও হাসলো। সে জানে তার বাবা কখনো তার বোনকে এভাবে বিয়ে দিবেনা। আর শাফিনা বেগমের ছেলে শফিকের চরিত্র তেমন একটা ভালো না। নরজও বেশ খারাপ। তাই তো সে আসলেই তারা বেশিরভাগ সময় রুমেই থাকে।

হুট করেই তুরের মনটা খারাপ হয়ে গেল। নম্রতার দৃষ্টিতে পরতেই বলল
“তুর আপি তোমার মুখে হঠাৎ আধার নামলো কেন!”

শুভ্রতাও প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো তুরের দিকে। তুর মলিন হেসে নম্রতার পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলল
“আঙ্কেলের মতো যদি আমার বাবা হতো।”

শুভ্রতা বুঝতে পারলো তুরের অবস্থা। শুভ্রতা তুরের কাছে এগিয়ে এসে ওর কাধে হাত রেখে বলল
“আবারও মন খারাপ করছিস তুর। এবার কিন্তু মারবো তোকে।”

“তুর আপি একটা মজার কথা শুনবে। হাসতে হাসতে তোমার দাঁত পড়ে যাবে।”

তুর ভ্রুকুচকে জিঙ্গাসু কন্ঠে বলল
“কি এমন কথা নম্র! যে হাসতে হাসতে আমার দাঁত পড়ে যাবে।”

নম্রতা নানা কথা বলে তুরকে হাসালো। তুরের মনটাও বেশ ফুড়ফুড়ে হয়ে গেল।

হুট করেই ফোনের দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে এলো শুভ্রতার। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে টেরও পায়নি। শুভ্রতা তুর আর নম্রতাকে তাড়া দিয়ে নিচে নামলো।

———————

ঘুমের মাঝে শরীরে কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো শুভ্রতা। তড়িৎ গতিতে উঠে যেতে নিলেই একটা শক্ত হাত তার হাত বিছানার সঙ্গে চেপে ধরলো সেই ব‍্যক্তি। শক্ত হাতে তার মুখ চেপে ধরলো। শুভ্রতার ভয়ে গলা শুকিয়ে যেতে লাগল। এসব কি হচ্ছে তার সঙ্গে। মুখটা চেপে ধরায় কিছু বলতেও পারছেনা সে। ছাড়া পাওয়ার জন‍্য ছটফট করতে লাগল সে।

তখনই শাফি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো
“কি হয়েছে সোনা। এতো নড়াচড়া করছো কেন! তোমাকে তো ভালোবাসা দিতে এলাম। আর তুমি এমন করছো। এটা কিন্তু ঠিক না বেইবি। আজকের পরে তো তোমার বাপের বিয়েতে রাজি হওয়াই লাগবে সোনা। আমাকে অপদার্থ বলা না। আমি যে কি করতে পারি তা আজকে দেখিয়ে দিবো।”

কথাগুলো কর্ণপাত হতেই ঘৃণায় শুভ্রতার নাক মুখ কুচকে এলো। এতো নিচে যে শাফি নামতে পারে তা কল্পণাও করেনি শুভ্রতা। রাগে চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো তার।

শাফি জোরজবরদস্তির করে শুভ্রতার গলায় মুখ রাখতে যাবে তখনই শুভ্রতা পাশের টেবিল থেকে হাতরে এসির রিমোট পেলো। কিছু না ভেবেই জোরে করে শাফির মাথায় সেটা দিয়ে আঘাত করলো। শাফি এক‍টা আর্তনাদ করে শুভ্রতাকে ছেড়ে পাশে শুয়ে পড়লো। শুভ্রতা মুখ ছাড়া পেতেই তার বাবাকে ডাকতে লাগল।

শুভ্রতা বিছানা থেকে উঠে দৌড় দিতে নিবে তখনই শাফি শুভ্রতার হাত চেপে ধরে। শুভ্রতা কি করবে তা ভাবতে ভাবতে বাড়ির সকলেই শুভ্রতার রুমের সামনে এসে দরজা ধাক্কাতে থাকে।

তবুও শাফি শুভ্রতার হাত ছাড়ছেনা। শুভ্রতা উপায়ান্তর না পেয়ে একটা লাথি মেরে দেয় শাফির পেটে। শাফি শুভ্রতাকে ছেড়ে দিয়ে বসা থেকে পুনরায় শুয়ে পড়ে পেটে হাত দিয়ে।

শুভ্রতা ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। শামসুল হক থমকে গেলেন। মুহূর্তেই রাগে ওনার চোখ রক্ত বর্ণ ধারণ করে। মেয়েকে রেহানা বেগমের কাছে দিয়ে শামসুল হক ছুটে শাফির কাছে গিয়ে শাফিকে মারতে থাকে। শাফিনা বেগম শামসুল হককে আটকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু শামসুল হক থামছেন না। শাফির নাক ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। শামসুল হক হাঁপিয়ে বেডে বসে পড়লো। শাফিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বলে উঠলেন
“তুই তোর অমানুষ ছেলেকে নিয়ে বের হয়ে যা। ভোরের সূর্য উঠার পরে যদি তোদের দেখি একদম মেরে ফেলবো। কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে। আমার সঙ্গে তোর আর কোনো কথা নাই। আজ থেকে আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ।”

শাফিনা বেগম নেকামি করতে করতে শামসুল হকের পা ধরে কান্নাকাটি করতে লাগলো। তবুও শামসুল হকের কথার এপারঅপার হলো না। উনি ওনার সিদ্ধান্তে স্থির। রেহেনা বেগম মেয়েকে ধরে নিজেদের রুমে নিয়ে এলেন। গ্লাসে পানি নিয়ে শুভ্রতার সামনে ধরতেই সে তা ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। শুভ্রতার গলাটা এতক্ষণ শুকিয়ে কাঠ হয়ে ছিলো। পায়ের কোলে মাথা রেখেই সে শুয়ে পড়লো। রেহেনা বেগম পরম স্নেহে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে শুক্রিয়া আদায় করলেন যে মেয়ের কোনো ক্ষতি ওই আমানুষটা করতে পারেনি বলে। শুভ্রতা গুটিশুটি মেরে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লো।

————————–

ভোরেই শাফিনা বেগম আর শাফি শুভ্রতাদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে। শামসুল হক আর একটা কথাও বলেন নি তাদের। শুভ্রতা জ্বর এসেছে খুব। রেহানা বেগম মেয়ের মাথা জল পট্টি দিচ্ছিলেন। তখনই রুমে শামসুল হক এলেন মলিন হয়ে যাওয়া ফেকাসে মেয়েটার মুখটার দিকে তাকিয়ে তার বুকটা কেঁদে উঠলো। ধীর পায়ে মেয়ের মাথার কাছে এসে কপালে হাত রেখে ধীর কন্ঠে রেহানা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন
“তুমি গিয়ে নাস্তা বানাও। আমি আছি এখানে।”

রেহেনা বেগম মেয়ের হাতে একটা চুমু খেয়ে চলে গেলেন রান্না ঘরে। রান্নাঘরে নম্রতাকে দেখে ভ্রুকুচকে বললেন
“এখানে তুই কি করছিস!”

নম্রতা মায়ের দিকে না তাকিয়েই বলল
“তুমি আপুনির কাছে যাও আম্মু। আমি কিছু একটা করছি।”

রেহেনা বেগম মেয়ের এমন কথা শুনে মনে মনে হাসলেন। তবুও উপরে গাম্ভীর্য ফুটিয়ে তুলে বললেন
“তা আপনি কি করবেন!”

নম্রতা মাথা চুলকে বলল
“নুডলস!”

রেহেনা বেগম মেয়ের কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
“যা তুর আর তূর্যকে ডেকে আন। আজ যেহেতু শুক্রবার। ওরা এখানেই খাওয়াদাওয়া করবে। এটা আমার আদেশ বলে আসিস। আর আমিই রান্না করছি। তোর আপুনির কাছে তোর বাবা আছেন। সমস্যা নেই।”

নম্রতা মায়ের বাধ‍্য মেয়ের মতো ওড়না ঠিকঠাক করে তুরদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। দুবার কলিংবেল বাজাতেই তূর্য ঘুমু ঘুমু চোখে দরজা খুলে নম্রতাকে দেখে বলল
“কি হয়েছে এত সকালে!”

নম্রতা অবাক চোখে শুধু তাকিয়ে আছে তূর্যের দিকে। অপর পাশ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে চোখ কোচলে সামনে তাকাতেই কপাল কুচকে এলো তূর্যের নম্রতার এমন হা হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে।

তূর্য এবার নিজের দিকে তাকাতেই বুঝতে পেলো নম্রতার এমন হা হয়ে তাকিয়ে থাকার কারণ। সে শুধু টাউজার পড়ে আছে। ঘুমানোর সময় সে সাধারণত টিশার্ট খুলেই ঘুমায়। ঘুম থেকে উঠে সোজা দরজা খুলতে এসেছে বলে টিশার্টের কথা মনে নেই তার। কিন্তু নম্রতার রিয়েক্ট দেখে মনে হচ্ছে সে কিছুই পড়েনি। তূর্য একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
“তুর রুমেই আছে। এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।”

তূর্য কথা বলতে দেড়ি কিন্তু নম্রতার দৌড় দিতে দেড়ি হলো না। তূর্য শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো নম্রতার যাওয়ার দিকে।

অন‍্যদিকে নম্রতা তুরের রুমে এসে হাঁপাতে লাগল আর বকতে লাগল তূর্যকে। লোকটার কি লজ্জা সরম নাই নাকি। এমন টিশার্ট না পড়ে একটা মেয়ের সামনে আসে। অসভ‍্য লোক। নম্রতা বকবক করতে করতেই তুরের কাছে গিয়ে ওকে ডাকতে ডাকতে বলল
“তুর আপু উঠো তাড়াতাড়ি। এতোকিছু হয়ে গেল তুমি এখনো পড়ে থেকে ঘুমাচ্ছো।”

তুর ধড়ফড়িয়ে উঠে ঘুমের ঘোরেই বলল
“ডাকাত!ডাকাত!”

নম্রতা একরাশ বিরক্তি নিয়ে তুরকে ধাক্কিয়ে বলল
“আমি নম্র,ডাকাত না। এবার তো উঠো। আম্মু তোমাকে আর তোমার ভাইকে আমাদের বাসায় যেতে বলেছে।”

তুর ভ্রুকুচকে বললো
“কেন!”

নম্রতা ওরা মায়ের কথা বলতেই তুর আর কথা বাড়ালো না। ছোট থেকেই রেহেনা বেগম তুরকে শুভ্রতাদের মতোই আদর করেন। তুরও রেহেনা বেগমকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসে। তুর কপালে কুচকে নম্রতাকে বলল
“শুভ্র এলো না যে!”

নম্রতা মুহূর্তেই মুখটা মলিন করে আগের রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বললো। তুর চমকে উঠলো শুভ্রতা এমন অবস্থার কথা শুনে। সে নম্রতাকে বলল
“তুই গিয়ে ভাইয়াকে বল ফ্রেশ হয়ে নিতে। আর মামুণি (তুর শুভ্রতার মাকে মামুণি বলেই ডাকে।) যে ডেকেছে এটা বলে আয়। আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

নম্রতা কিছু বলতে নিবে তার আগেই তুর ওয়াশরুমে চলে গেল। নম্রতা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওয়াশরুমের দরজার দিকে। উপায়ান্তর না পেয়ে নম্রতা ধীর পায়ে রওনা হলো তূর্যের রুমের দিকে।

তূর্য কেবলি শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। সকাল সকাল যে ভ‍্যাবসা গরম উঠেছে। তাতে বেশ বিরক্ত সে। টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে গম্ভীর কন্ঠে বলল
“দরজার বাহিরে দাড়িয়ে না থেকে ভিতরে এসে যা বলার তা বলো।”

নম্রতা হুট করে তূর্যের বলা কথায় থতমত খেলো। ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে দৃষ্টি মেঝে রেখে বলল
“আম্মু আপনাকে আর তুর আপুকে আজকে আমাদের বাসায় খেতে বলেছেন।”

তূর্য ছোট করে ওও বললো। নম্রতা ছুটে চলে গেল আবারও। তূর্য হাসলো নম্রতার কাজে। পিচ্চি মেয়েটা অকারণেই তাকে ভয় পায়। তাকে ভয় পাওয়ার কি আছে তা খুজেই পায় না তূর্য। একটা টিশার্ট পড়ে রান্না ঘরে গেল সে কফি বানাতে। সকালে এক কাপ কফি না হলে হয় না তার। তাও আজ শুক্রবার ছুটির দিন বলে কথা। সকালে কফি তো খাওয়াই যায়। নম্রতা আর তুর চলে গেছে শুভ্রতাদের বাসায়। সে একটু পরে যাবে।

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-০৬

0

#আপনার_শুভ্রতা
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

৭.
অসহ‍্যকর ভ‍্যাবসা গরমের ভাব চারিদিকে বিরাজ করছে। এমনিতে ব‍্যস্তনগরী ঢাকাতে অনবরত জ‍্যামের অত‍্যাচার তো আছেই। শুভ্রতা তার ওড়নার শেষ অংশ দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নিলো। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে আছে সে। এমনিতেই দেড়ি হয়ে গেছে তার মধ‍্যে এমন ভেবসা গরমে বেশ বিরক্ত লাগছে শুভ্রতার।

তুরটাও আজ নাকি ভার্সিটি যাবেনা। অবশ‍্য আগে দিন যা ঝড় গেছে তার উপর দিয়ে। আজ সকলেই তূর্য প্রয়োজনীয় তোশক বালিশ এগুলো কিনে দিয়ে অফিস গিয়েছে। তুর ঘর গোছাতে ব‍্যস্ত।

শুভ্রতা এগুলোই ভাবছিল হুট করেই রিক্সায় কেউ লাফিয়ে উঠায় চমকে গেল শুভ্রতা। চেঁচিয়ে উঠতে নিবে তার আগেই রাদিফ শুভ্রতার ডান হাতটা চেপে ধরে বলল
“ভয় পেও না মায়াবতী আমি রাদিফ।”

মুহুর্তে ভ্রুকুচকে এলো শুভ্রতার। বুকে ফু দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“এটা আপনি কি করলেন! আর আপনি আমাকে তুমি সম্বোধন করছেন কেন!”

রাদিফ বাঁকা হেসে পাঞ্জাবির বুক পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“ঘাম মুছতে মুছতে তো ওড়নাটা ভিজিয়ে ফেলেছো। নেও এটা দিয়ে মুছে নেও।”

“আগে আমার কথার উত্তর দিন।”

রাদিফ ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“রিক্সা পাচ্ছিলাম না আর তখনই তোমার দেখা পেয়ে গেলাম। যে গরম পড়েছে ভাবলাম ভাড়াটা ফিফটি ফিফটি করে একসঙ্গে চলে যাই। এক জায়গাই তো। আর তুমি বয়সে আমার অনেক ছোট। আর কত আপনি আপনি করবো। যাইহোক এখন তো রুমালটা নিবে।”

শুভ্রতা মুখ ফুলিয়ে অন‍্যদিকে তাকিয়ে রইলো। রাদিফ মুচকি হাসলো রুমালটা দিয়ে নিজের কপালের ঘামটাই মুছে আবারও বুক পকেটে রেখে দিলো।

ওদের নিরবতার মাঝেই জ‍্যাম ছেড়ে গেল। ভার্সিটির গেটের কাছে রিক্সা থামতেই শুভ্রতা পুরো ভাড়াটা দিয়ে নেমে গটগট পায়ে চলে গেল সে। রাদিফ ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে ধীর পায়েই ভার্সিটিতে ঢুকলো।

শুভ্রতা বিরক্ত নিয়েই দুটো ক্লাস করে খালের পাড়ে এলো। শুভ্রতা বেশ অবাক হলো রাদিফকে আগে থেকেই সেখানে দেখে। শুভ্রতা কিছু না বলে ঘুরে চলে যেতে নিবে তার আগেই রাদিফ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি তোমাকে ভালোবাসি মায়াবতী।”

শুভ্রতা থমকে গেল। কি বলছে রাদিফ এগুলো! মাথা ঠিক আছে তো তার! শুভ্রতার কানে বাজছে রাদিফ বলা কথা। ঘামতে শুরু করেছে সে। মাথাটা ভনভন করছে। বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে। কি এমন ছিলো রাদিফের কন্ঠে যে তার এমন লাগছে!

রাদিফ এতক্ষণে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে শুভ্রতার। শুভ্রতার ডান হাতটা টেনে ধরে ব্রেঞ্চে এনে বসিয়ে রাদিফ ওর কোলে মাথা দিয়ে হুট করেই শুয়ে পরলো। শুভ্রতা শুধু থমথমে হয়ে বসে রয়েছে। ছেলেটির হুট করে কি এমন হলো যে এমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে। চুলগুলো এলোমেলো চোখগুলো লাল হয়ে আছে। এই গোছানো মানুষটাকে এই কয়েকদিনে এতটা এলোমেলো লাগেনি শুভ্রতার কাছে। শুভ্রতা নরম কন্ঠে বলল
“কি হয়েছে আপনার!”

রাদিফ হুট করেই উঠে বসলো। শুভ্রতার হাত দুটো নিজের হাতের মাঝে আবদ্ধ করে দমে দমে বলল
“আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি মায়াবতী। প্রেম নামক দহনে আমি জ্বলে পুড়ে ছাঁই হয়ে যাচ্ছি। আমি যে আর পারছিনা। আমাকে বাঁচাও তুমি। তুমি ছাড়া যে আর কেউ আমাকে বাঁচাতে পারবেনা মায়াবতী।”

শুভ্রতা নিরব রইলো। রাদিফ কিছু বলতে নিবে তার আগেই শুভ্রতা বলল
“আমাকে বাড়ি যেতে হবে।”

রাদিফ কিছু বললো না। আস্তে করে হাতটা ছেড়ে দিলো শুভ্রতার। ঢুলুঢুলু পায়ে চলে গেল সেখান থেকে। শুভ্রতা পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রইলো রাদিফের যাওয়ার দিকে।

রাদিফ চোখের আড়ালে চলে যেতেই শুভ্রতার মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুর ঘুর করতে লাগল। কি হয়েছে রাদিফের! এমনটা লাগছিল কেন! সকালেই ঠিক ছিলো।

শুভ্রতার ফোনটা বেজে উঠতেই ওর ভাবনায় ছেদ ঘটলো। শুভ্রতা ব‍্যাগ হাতরে ফোনটা বের করে দেখলো ওর মা কল করেছে। শুভ্রতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলটা রিসিভ করে কানে ধরলো। রেহেনা বেগম অপরপাশ থেকে বলে উঠলেন
“কোথায় তুই!”

“কেন মা ভার্সিটিতেই আছি! কি হয়েছে! তোমরা ঠিক আছো তো!”

“হুম ঠিক আছি সবাই। তোর ক্লাস শেষ।”

“ভালো লাগছেনা ক্লাস করতে তাই একটু বসে ছিলাম। কি হয়েছে বলো।”

“বাসায় চলে আয় তাহলে। তোর ফুফু ফুপা এসেছে।”

শুভ্রতা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“আচ্ছা দেখি।”

“হুম তাড়াতাড়ি চলে আয়।”

আচ্ছা বলেই কল কাটলো শুভ্রতা। ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো তার। এই তো এখনি তার রূপ নিয়ে কথা উঠবে। তুলনা করা হবে তার ছোট্ট বোনটার সঙ্গে। কেন মানুষ বুঝতে চায়না যে কারো সঙ্গে কারো মিল থাকেনা। যে যার মতো। আল্লাহ সৃষ্টি তো। তবুও কেন এতো কথা! ভেবে পায় না সে।

ফোনটা ব‍্যাগে রেখে ব‍্যাগটা কাধে তুলে উঠে দাড়ালো ব্রেঞ্চ থেকে। ভার্সিটি থেকে বের হতে নিবে তার আগে দেখলো বড় আম গাছটার নিচে রেদোয়ান একটা মেয়ের সঙ্গে লেপটে বসে আছে। মেয়েটাও বেশ গা ঘেঁষে বসে হাসাহাসি করছে। শুভ্রতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে অগ্রসর হলো।

শুভ্রতা মনে মনে আল্লাহর কাছে শুক্রিয়া জানালো তাকে রেদোয়ানের থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন‍্য।

———————

বাসায় ফিরতেই রেহানা বেগম দরজা খুলে শুভ্রতাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললেন। মাথাটা বেশ ধরেছে শুভ্রতা। একে তো ভ‍‍্যাবসা গরম তার উপর জ‍্যামে বিরক্ত সে। ক্লান্ত চিত্তে বসার রুমে আসতেই শুভ্রতার ফুফু শাফিনা বেগম কপাল কুচকে বললেন
“কোথায় থেকে এলে শুনি তো!”

শুভ্রতা ঠোঁটে জোড়পূর্বক হাসি টেনে বলল
“আপনি তো জানেনই ফুপি। তাহলে জিঙ্গাসা করছেন কেন! এসব বাদ দেন কেমন আছেন!”

“এই তো ভালো। তা বয়স তো কম হলো না বিয়ে কবে করছো!”

“গায়ে হলুদের পরের দিন।”

“হেয়ালি করছো আমার সঙ্গে মেয়ে! এমনিই তো চাপা গায়ের রঙ তার উপর বয়স হলে তো বিয়েই হবেনা বাপু। ভালো কথা তো ভালো লাগবেই না।”

শুভ্রতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে তো আগে থেকেই জানতো এই কথা উঠবে। শুভ্রতা নিজেকে ধাতস্ত করে ঠোঁটে হাসি টেনেই বলল
“এতো ভালো আপনাকে কে ভাবতে ‍বলেছে! আর নিজের চরকায় তেল দিন আমারটায় দিতে আসবেন না একদম। আমার মুখ খোলাবেন না দয়া করে। ফুফু আছেন ফুফুর মতো থাকবেন। বেহুদা কথা বলে নিজের সম্মান নষ্ট করবেন না।”

শাফিনা বেগম কথা বলতেই ছিলেন কিন্তু শুভ্রতা তা পাত্তা না দিয়ে গটগট পায়ে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে সস্থির নিশ্বাস ছাড়লো।

ক্লাস এইট নাইনে থাকতে এমন সব কথা শুনে শুভ্রতার সোসাল ফোবিয়া হয়ে যায়। ঘরের কোণেই সময় অতিবাহিত করতে শুরু করে সে। পরে তার বাবা মা তাকে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে সাহায্য করে। তার বাবা প্রতি সময় তাকে সাহস জুগিয়েছে। তাই তো এখন সে কথা শুনিয়ে দিতে পারে। তবুও মনটা যে তার নরমই রয়ে গেছে। খুব কষ্ট লাগে তার এসব কথা শুনলে।

লম্বা একটা শাওয়ার নিতে হবে শুভ্রতার। শুভ্রতা ব‍্যাগটা টেবিলে রেখে টাওয়েল আর জামা কাপড় নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে। প্রায় ঘন্টা খানেক ভিজে নিজের মাথাটা ঠাণ্ডা করে ওয়াশরুম থেকে বের হলো শুভ্রতা।

আজ সে শুভ্র রঙের একটা সেলোয়ার সুট পড়েছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো দুপুর দুটো বাজে। শুভ্রতা টাওয়েল নিয়ে বারান্দায় মিলে দিলো। মাথায় ওড়নাটা টেনে ঠিক করে নিলো। বাড়িতে ফুপা ফুপাতো ভাই থাকা আয়নায় আবারও নিজের ওড়নাটা ঠিক করে নিয়েছে কিনা তা আয়নায় দেখে দরজা খুলে খাবার টেবিলে চলে গেল।

শামসুল হক ছাড়া সবাই খাবার টেবিলে বসে আছেন। অফিসে কাজ থাকায় আজ দুপুরে বাসায় আসেননি শামসুল হক। শুভ্রতা ধীর পায়ে মাথা নিচু করে খেতে বসলো। খুব ক্ষুধা পাওয়ায় কোনো কথা না বলে খাবারটুকু খেয়ে মাথা নিচু করেই আবারও রুমে চলে এলো।

রেহানা বেগম মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাফিনা বেগমের দিকে একপলক তাকিয়ে খাবার নিজের প্লেটে বাড়তে বাড়তে বলল
“আমার মেয়ে মায়াবতী। অসম্ভব মায়া আমার মেয়েটার চোখ মুখ জুড়ে মনোমুগ্ধকর মায়া। যার স্বচ্ছ মন সেই শুধু আমার মেয়ের দিকে তাকিয়ে তার আসল সৌন্দর্য উপলব্দি করতে ‍পারবে। আর জন্ম মৃত্যু বিয়ে তিনটাই আল্লাহর হাতে। শুধু শুধু এতো ভেবে কি লাভ আছে!”

শাফিনা বেগম ভ্রুকুচকালেন। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন
“ভাবি তুমি কি আমারে কথা শুনাইতেছো!”

রেহানা বেগম হাসলেন। মৃদু কন্ঠে বললেন
“না গো শাফিনা আমাকে ভুল বুঝোনা। এমনিতেই কথাগুলো বললাম।”

শাফিনা বেগম রাগে হিসহিসালেন। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না। মায়ের কথায় মুচকি হাসি ফুটে উঠলো নম্রতার ঠোঁটে।

নম্রতা খুঁজে পায়না তার আপুনি কত সুন্দর। সে সময় পেলেই তার আপুনির মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কত ভালো যে লাগে তার। তবে কেন মানুষ এমন করে! খুঁজে পায় না সে।

শুভ্রতা ধপ করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। মাথাটা ধরেছে তার। ঘুমও পেয়েছে। শুভ্রতা আর না ভে‍বে ডুব দিলো ঘুমের রাজ‍্যে।

৮.
পড়ন্ত বিকালে শুভ্রতা আর তুর দাড়িয়ে আছে ছাঁদের কাণিশ বেয়ে। তুরকে আজ বেশ চুপচাপ দেখে শুভ্রতার ভ্রুযুগল কুচকে এলো। শুভ্রতা এক হাত তুরের কাধে হাত রেখে বলল
“মন খারাপ কি!”

তুর তাকালো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা মুচকি হেসে আকাশ পানে তাকিয়ে বলল
“জানিস তো আল্লাহ যা করেন ভালোর জন‍্য করেন। যেমন দেখ না রেদোয়ান একটা প্লে বয়। খারাপ ছেলে। কি সুন্দর আল্লাহ আমাকে ওর থেকে সরিয়ে নিলেন। তুই চিন্তা করিস না রে তুর। দেখবি এখনি তুই ভালো থাকবি। ওখানে তুই ছিলি বন্ধ খাঁচায় বন্দি। আর এখানে তুই মুক্ত পাখির মতো। যা ইচ্ছে তাই করতে পারবি। আর সবচেয়ে ভালো কথা তুই আর আমি একসঙ্গে থাকতে পারবো।”

বলেই তুরকে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রতা। তুর মুচকি হাসলো।

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-০৫

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৫

তূর্য তুরের হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। ছোট তাহিয়া এসে তূর্যের কোমর জড়িয়ে ধরে বলল
“ভাইয়া তুমি আপুনিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো। আমিও যাবো।”

তূর্য হাটু গেড়ে বসে পড়লো। আলতো হাতে তাহিয়ার গালে হাত রেখে বলল
“তোর আম্মু তোকে বকবে তো। আমি আর তোর আপুনি তোর সঙ্গে দেখা করবো প্রমিস।”

“ভাইয়া আম্মু কি তোমাদের বকেছে আবারও।”

তূর্য হাসলো। তাহিয়া কপালে ছোট করে একটা চুমু দিয়ে বলল
“বনু এখন আমরা যাই। তুই যেন দুষ্টু করিস না একদম।”

তানিয়া ঠোঁট উল্টালো ভাইয়ের কথায়। তুরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো তাহিয়া। তুর হাটু গেড়ে বসে তাহিয়ার সামনে বসে বলল
“ভালো করে পড়াশোনা করবি ঠিক আছে। এখন কিন্তু তোকে পড়া নিয়ে বকাবকির জন‍্য এই তুর থাকবেনা।”

তাহিয়া এবার কেঁদেই দিলো। তুর অসহায় দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাকালো। তূর্য জিন্সের পকেট থেকে চকলেট বের করে তাহিয়ার হাতে দিতেই তাহিয়া মুচকি হাসলো।

তূর্য তুরকে উদ্দেশ্য করে বলল
“তোর বইখাতা আর সার্টিফিকেটগুলো গুছিয়ে নে। আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমি রুম থেকে নিয়ে আসছি।”

তুর হ‍্যাঁবোধক মাথা নাড়ালো।

তূর্য উঠে দাড়ালো। কি যেন ভেবে আবারও বলে উঠলো
“ভালো কথা ওই লোকের টাকায় কেনা কিছু নিবিনা।”

তুর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল
“ভাইয়া ওই লোকটা তোমার চাকরি পাওয়ার পর আমাকে কি কিছু কিনে দিয়েছে।”

তূর্য এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে রওনা হলো।

দরকারি সব কাগজপত্র নিয়ে বেড়িয়ে পরলো তূর্য আর তুর। সোহানা বেগম নেকামি করতে এসেছিলেন। তবে তূর্যের রক্ত লাল চোখের তাকানি দেখে দমে যায়। আতিকুর রহমান চুপচাপ সব দেখেছেন খালি। তিনি তো বলতে পারতেন। তবে তা ভাবাই ভুল। তাহিয়া তো কান্না করতে করতে অস্থির। তুর আর তূর্যের খুব খারাপ লাগছিলো তাহিয়ার জন‍্য।আট বছরের বাচ্চা আর কি বুঝবে।

অন‍্যদিকে শুভ্রতা এই নিয়ে অনেকবার কল করেছে তুরকে। কিন্তু ওর কোনো রেসপন্স না পেয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে সে। তুর তো এমনটা করেনা। শুভ্রতা বাধ‍্য হয়েই তূর্যের ফোনে কল করলো। তূর্য কেবলি বাইক নিয়ে একটা হোটেলের সামনে থামলো। শুভ্রতার কল পেতেই রিসিভ করে কানে ধরে বলল
“শুভ্রতা বল। হঠাৎ করে আমার ফোনে কল করলি যে। কিছু হয়েছে তোর!”

শুভ্রতা অস্থির কন্ঠে বলল
“ভাইয়া তুর কল রিসিভ করছেনা। ও ঠিক আছে তো ভাইয়া।”

তূর্য মুচকি হাসলো শুভ্রতার কর্মকান্ডে। মেয়েটা অনেক ভালোবাসে তার ছোট বোনটাকে। সেও ছোটবোনের মতোই দেখে শুভ্রতাকে। তুরের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
“কিরে তোর ফোন কোথায়?”

তুর দেখলো ওর ফোনটা বন্ধ হয়ে আছে। চার্জ শেষ হয়ে। তুর বলল
“ভাইয়া ফোনে চার্জ নাই তাই বন্ধ হয়ে গেছে। কেন কি হয়েছে!”

তূর্য নিজের ফোনটা তুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“শুভ্রতা অস্থির হয়ে গেছে তোকে কলে না পেয়ে। নে কথা বল আর আমার পিছু পিছু আয়। আমি সব ঠিকঠাক করছি।”

তুর ফোন নিয়ে কানে ধরতেই শুভ্রতা রাগান্বিত কন্ঠে বলল
“কিরে ফোন কেন রেখেছিস। চার্জ দিতে পারিস না যখন ফোন ফালায় দে। মানুষ যে টেনশন করে তা তো তোর মনেই থাকেনা।”

তুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছি আমি আর ভাইয়া।”

শুভ্রতা দমে গেল। চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলো
“কি বলছিস!”

“হুম”

একে একে সব খুলে বলল তুর শুভ্রতাকে। শুভ্রতা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“তূর্য ভাইয়া একদম ঠিক কাজ করেছে। তুই আর কত কষ্ট সহ‍্য করবি। তোদের কোনো সাহায্য লাগলে আমাকে বলবি। আমি যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করবো।”

হুট করেই তূর্য তুরের কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলল
“অনেক বড় হয়ে গেছিস তুই!”

শুভ্রতা থতমত খেয়ে গেল। তূর্য বলল
“চিন্তা করিস না আমরা ঠিক আছি। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।”

“ভাইয়া তোমরা কোথায় উঠেছো! আমাদের বাসায় আসো না হয়।”

তূর্য মুচকি হেসে বলল
“জানিস তো কখনো কখনো আপন মানুষই আঘাত করে শেষ করে দেয়। আবার পর হয়েও আপন মানুষের মতো সবসময় কাছে থেকে যায়।”

শুভ্রতা ঠোঁট উল্টে অভিমানী কন্ঠে বলল
“ভাইয়া তুমি আমাকে পর বলছো।”

“নারে তুই তো আমার ছোট বোন। আমার আদরের ছোট বোন।”

শুভ্রতা মুচকি হেসে প্রশ্নবোধক কন্ঠে বলল
“কি হলো ভাইয়া বললে নাতো!”

“পাশের একটা হোটেলে উঠেছি। রাতটা এখানে থেকে সকালে বাসা খুঁজে সেখানে সিফট করবো ইনশাআল্লাহ।”

“আচ্ছা ভাইয়া সাবধানে থেকো কিন্তু। আর কি হয় জানিও কিন্তু আমাকে।”

“আচ্ছা তুইও ঘুমিয়ে পড়।”

“আল্লাহ হাফেজ ভাইয়া।”

“আল্লাহ হাফেজ”

তূর্য কল কেটে রুমে গেল। তুরকে বিছানা শুতে বলে তূর্য ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে যাওয়ার জন‍্য টিশার্ট আর টাউজার ব‍্যাগ থেকে বের করতে লাগল।তুর কথা বাড়ালো না। বেশ ক্লান্ত লাগছে তার। ধপ করে শুয়ে চোখ বুজলো তুর। তূর্য মুচকি হেসে তুরের ফোনটা চার্জে বসিয়ে পাতলা কম্বল তুরের গায়ে টেনে দিয়ে এসির পাওয়ারটা সহনীয় পর্যায় দিয়ে দিলো।

তূর্য বেশ সময় নিয়ে একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলো। সোফায় এসে শুয়ে পরলো। বাসা খুঁজতে বেশি বেগ পেতে হয়নি তার। শুভ্রতাদের বাসায় নাকি ফ্লাট ফাঁকা আছে। সেখানেই উঠবে তারা। তুরকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকদিন মিস গেছে অফিস। আর মিস দেওয়া যাবেনা। বাড়িআলার সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। কাল সকালে তুরকে ওখানে রেখে অফিস যাবে সে। ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো তূর্য।

———————

শুভ্রতা তুরদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বাড়ির পাশের ফ্লাটটা যে ফাঁকা তা মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছে তূর্যকে। সঙ্গে বাড়িআলার নাম্বারটাও মেসেজ করে দিয়েছে।

শুভ্রতা বারান্দায় গিয়ে বসলো। রাত এখন সাড়ে বারোটা। পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদের পাশে টুকরো টুকরো মেঘ ভাসছে আকাশে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। শুভ্রতা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশ পানে। চাঁদের আলোই শুভ্রতা মায়াময় চেহারাটা আরো বেশ মায়াবী লাগছে। লম্বা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। শুভ্রতা পলকহীন ভাবে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বলতে লাগল
“চাঁদ তোমার মতোই একাকিত্বে ভুগছি আমি। কিন্তু তোমার সৌন্দর্য আরো ফুটিয়ে তোলার জন‍্য সঙ্গী হিসেবে তোমার পাশে টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে চারদিকে। তুমি হাসোজ্বল মুখে আজীবন মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে সময় অতিবাহিত করছো। কিন্তু আমার সঙ্গী হিসেবে তো কেউ নেই। যার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবো।”

শুভ্রতা থামলো। দমটা আটকে আসছে তার। শুভ্রতা আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে তুলে বলল
“আমি তো আর তোমার মতো সুন্দর না তাই হয় তো আমার সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ নেই। আমি তো শ‍্যামলা। ওহ সরি আমি কালো মানুষের কাছে। আমার জন‍্য কেউ অপেক্ষাও করবেনা। সঙ্গও দিবে না। ভালোবাসা তো দূরের কথা। আচ্ছা আমি কি এতোটাই খারাপ দেখতে! আচ্ছা আল্লাহর সৃষ্টি জীব আমি এতোটা তো খারাপ আমার মনে হয় না। আমার কাছে আমার রূপ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তবুও মানুষের কেন এতো মাথা ব‍্যথা। কথা শোনাতে তারা কেন পিছু পা হয় না!”

পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ্রতা তাকিয়েই রইলো আকাশের দিকে। হুট করেই মেসেজ টুন বেজে উঠলো শুভ্রতার ফোনে। শুভ্রতার ভ্রুযুগল কুচকে এলো। ফোনটা হাতে নিয়ে স্কিনে তাকাতেই চোখগুলো ছোট ছোট হয়ে গেল শুভ্রতার।

আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে
“মাঝরাতে এমন করে জেগে না থেকে ঘুমিয়ে পড়ো।”

শুভ্রতা পাত্তা দিলোনা। হয় তো কেউ ভুল নাম্বারে মেসেজ করেছে। আবারও মেসেজ এলো
”তোমাকে বলছি শুভ্রতা। ঘুমিয়ে পড়ো।”

কপাল কুচকে এলো শুভ্রতার। শুভ্রতা এবার মেসেজ দিলো
“কে আপনি?”

“আমি কে তা না জানলেও চলবে চুলগুলো বেঁধে শুয়ে পড়। এতো রাতে বারান্দায় থাকা ভালো না।”

শুভ্রতা বারান্দায় থেকে চোখ রাখলো বাহিরের দিকে। কিন্তু না কিছুই তো দেখা যাচ্ছেনা। আবারও মেসেজ এলো
“খুঁজে লাভ নেই পাবেনা আমায় ঘুমিয়ে পড়ো।”

শুভ্রতা বিরক্ত হলো। বারান্দার দরজা ঠাস করে বন্ধ করে রুমে চলে গেল। রাত দুটো বেজে গেছে। শুভ্রতা আর কিছু না ভেবে শুয়ে পড়লো। কাল আবার তুররা আসবে। শুভ্রতা ফোনটা চার্জে লাগিয়ে শুয়ে পরলো। চোখ বুজতেই চোখে ঘুম নেমে এলো। শুভ্রতা ঘুমের রাজ‍্যে হারিয়ে গেল।

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-০৪

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৪

রাদিফ আমতা আমতা করতে করতে বলল
“না মানে”
রাদিফ আড়চোখে তুরের দিকে তাকালো। শুভ্রতার তীক্ষ্ণচোখে তুরের দিকে তাকালো।

তুর রাগী চোখে একবার রাদিফের দিকে তাকিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে আবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলল
“পালা তুর পালা।”

বলেই দৌড় দিলো তুর। শুভ্রতা ওর পিছনে দৌড় দিতে নিলেই রাদিফ পিছন থেকে ডেকে বলল
“মায়াবতী!”

শুভ্রতার পা থমকে গেল রাদিফের কন্ঠে। কি ছিলো তার কন্ঠে।

রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার সামনে দাড়িয়ে ভ্রুউঁচিয়ে বলল
“থেমে গেলে যে। যাইহোক এই অধমকে কি কিছু সময় ধার দেওয়া যাবে মেডাম!”

শুভ্রতা কপাল কুচকে রাদিফের দিকে তাকাতেই। রাদিফ ঠোঁট উল্টে অসহায় দৃষ্টিতে শুভ্রতার উত্তরের আশায় তাকিয়ে রইলো।

শুভ্রতা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“আপনি মেয়ে মানুষের মতো ঢং করতে পারেন বাবা।”

“মানে!”

“মানে কিছুই না। আপনি বুঝতে পারবেন না। আপনার বোঝার বয়স হয় নি।”

রাদিফ ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“বুঝতে বুঝতে বুড়ো হয়ে যাচ্ছি তাও নাকি বোঝার বয়স হয়নি।”

শুভ্রতা মুখ ভেংচালো। রাদিফ মুচকি হেসে খালের পাড়ে মাটিতেই বসে পড়লো। শুভ্রতা শুধু আড়চোখে দেখতে লাগল রাদিফ কি করছে। রাদিফ জিন্সটা ফোল্ড করে খালের স্বচ্ছ ঠান্ডা পানিতে পা ভেজালো। ঘাড় ঘুড়িয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“আসো ভালো লাগবে।”

শুভ্রতা কেন যেন না করতে পারলো না। সেও চুপচাপ রাদিফের থেকে বেশ দূরত্ব নিয়ে বসে পা ডুবালো খালের পানিতে।

“বাদাম ভাঁজা খাবে!”

শুভ্রতা রাদিফের কথায় ভ্রুকুচকে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলল
“আপনি এখন বাদাম ভাঁজা কোথায় পাবেন!”

রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্র পাঞ্জাবির পকেট থেকে বাদাম ভাঁজা বের করে শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“পকেটেই ছিলো তাই বললাম।”

“ওও, কিন্তু কথা হচ্ছে কি আমার কিছু প্রশ্ন আছে আপনার কাছে?”

রাদিফ হেসে বাদামটা শুভ্রতার হাতে দিয়ে বলল
“এতো কথা আমি শুনতে চাইনা মায়াবতী। আমি জানি আপনি কি শুনতে চান। কিন্তু তা বলার এখনো সময় হয়নি। সময় হলে আমি নিজেই বলবো।”

“আপনার মাঝে এতো রহস্য কেন বলুন তো!”

রাদিফ বাঁকা হেসে শুভ্রতার মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে গিয়ে বলল
“রহস‍্যের বেড়াজালে বাধতে চাই তোমাকে। বাধতে চাই নিজের জন‍্য। নিজের মনিকঠায় বেধে রাখতে চাই শুভ্র বোকাফুলকে।”

শুভ্রতা ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে তুলে বলছে
“টাইম পাস করার জন‍্য আপনারা কি শুধু আমাকেই পান। আসলেই আমি বোকাফুল। তা না হলে আমাকে আপনারা এতো সহজে বোকা বানাতে পারেন।”

রাদিফের বুকে যেন তীরের মতো আঘাত করলো শুভ্রতার কথাগুলো। মেয়েটা এগুলো কি বলছে! টাইমপাস মনে হচ্ছে তার কাছে! রাদিফ কিছু না বলে হনহন পায়ে জায়গা ত‍্যাগ করলো।

শুভ্রতা মলিন হাসলো। ছেলেটা তাহলে সত্যিই টাইমপাস করছিলো। আর সে কি না! পুনরায় তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো শুভ্রতার ঠোঁটের কোণে।

৬.
তুর বসে আছে নিজের রুমে। তখনই তার রুমে ওর বাবা আসলো। তুর মিষ্টি হেসে ওর বাবাকে বলল
“বাবা কি বলবে!”

আতিকুর রহমান মুখে গাম্ভীর্য নিয়ে বললেন
“পাত্রপক্ষ তোমায় কাল দেখতে আসবে। কাল ভার্সিটি যেতে হবে না। তুমি রেডি হয়ে থেকো।”

“কিন্তু বাবা আমি তো এখন বিয়ে করতে চাই না। আমি পড়াশোনা…!”

“বিয়ের পরেও পড়াশোনা করতে পারবে তুমি। আর কোনো কিন্তু আমি শুনতে চাই না।”

বলেই গটগট পায়ে চলে গেলেন আতিকুর রহমান। তুর থম মেরে বসে রইলো। এতো তাড়াতাড়ি তো সে বিয়ে করতে চায় না। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। এই ইচ্ছাটাও কি তার পূরণ হবেনা।

তুরের চোখের কাণিশ বেয়ে অবাধ‍্য নোনাজল গড়িয়ে পড়তে লাগল।

কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে দ্রুত চোখে জলটুকু ডান হাতের পিঠ দিয়ে মুছে পিছে তাকাতেই দেখলো তূর্য দাঁড়িয়ে আছে ভ্রুকুচকে। তূর্যকে দেখে তুর যেন নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। তূর্যের কোমর প‍্যাঁচিয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

তূর্য পরম স্নেহে আদরে ছোট বোনটার মাথা হাত বোলাতে লাগল। অস্থির কন্ঠে বলল
“কি হয়েছে তোর! এমন করছিস কেন! কে কি বলেছে একবার বল আমায়। তাকে তো আমি।”

তুর মুখ তুলে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল
“আমি এখন বিয়ে করবো না ভাইয়া। আমি পড়াশোনা করতে চাই ভাইয়া।”

তূর্য অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে চেচিয়ে বলল
“বিয়ে মানে! কি বলছিস তুই!”

তুর দমে দমে বলে উঠলো
“বাবা এসে বলে গেল কাল নাকি পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে আমাকে।”

তূর্য যেন ক্ষেপে গেল। ফর্সা মুখটা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। গায়ের রগগুলো রাগে ফুলে উঠেছে। রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো
“সোহানা বেগম প্রচণ্ড বাড় বেড়েছে। হয় তার একদিন না হয় আমার। আজ একটা হেস্তোনেস্তো করেই ছাড়বো।”

তুর আতকে উঠলো। ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“শান্ত হ ভাইয়া। প্লীজ মাথা গরম করিস না।”

তূর্য রাগে কাঁপতে কাঁপতেই বলল
“আমার ধর্য‍্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে ওই মহিলা আজ। আমার মায়ের জায়গা নিয়েছে। আমি চুপ ছিলাম। আমার বাবাকে আমাদের থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছে তাও আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু আমার বোনের সঙ্গে এমন করবে। না না আমি কখনোই তা মেনে নিবোনা।”

“ভাইয়া দয়া করে শান্ত হ। এমন করিস না প্লীজ। বাবা কষ্ট পাবে।”

তূর্য তাচ্ছিল্যের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলল
“তুর তুই খুব সহজ সরল রে। তুই কি মনে করিস আমি চাকরি করি বলে তোর কোনো খবর রাখিনা। ওই মহিলা প্রতিনিয়ত তোকে খাটায় তা আমি জানিনা ভাবছিস। তখন তো তোর কষ্টের কথা কেউ ভাবেনা।”

তুর এবার দমে গেল। মাথা নিচু করে রইলো সে।

তূর্য আর কিছু না বলে গটগট পায়ে রুমে ত‍্যাগ করে আতিকুর রহমান আর সোহানা বেগমের রুমের দিকে যেতে লাগল। একটা কথা তার কানে এলো। সোহানা বেগম বলছেন
“তুরের সাথে তোমার ওই বন্ধুর একবার বিয়ে হয়ে গেলে আমাদের বিজনেস এ আর কোনো সমস্যা থাকবে না।”

তূর্য রুমে ঢুকে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো
“কখনোই এই বিয়ে হতে দিবোনা আমি। আপনারা কিভাবে ভাবলেন যে আমি বেঁচে থাকতে আমার ছোট বোনটাকে নিয়ে আপনারা খেলবেন। আর কত নিচে নামবেন আপনারা ছিহ…!”

আতিকুর রহমান গম্ভীর কন্ঠে বলল
“ঠিক করে কথা বলো তূর্য আমরা তোমার বাবা মা হই।”

তূর্য তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল
“বাবা মা আপনি না বললে বুঝতেই পারতাম না।”

আতিকুর রহমান চেচিয়ে বলে উঠলেন
“তূর্য”

তূর্য তেজ নিয়ে বলে উঠলো
“অনেক হয়েছে আর না। আমি আমার বোনকে নিয়ে আজই আপনাদের সংসার ছাড়বো।”

সোহানা বেগম নেকা কান্না জুড়ে দিলো। তুর এতক্ষণে এসে দাড়িয়েছে রুমে। গুটিশুটি মেরে ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতেই সোহানা বেগম নেকা কান্না করতে করতে তুরকে বললেন
“দেখ না তুর তোর ভাই কি সব বলছে!”

তুর অসহায় দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাকালো। তূর্য মাথা নাড়িয়ে তুরকে সর্তক করলো। তুর মাথা নামিয়ে নিলো। তূর্য পুনরায় বলল
“সম্পদ সম্পদ করছেন না আপনারা। একদিন দেখবেন এই সম্পদের জন‍্যই আপনারা মরবেন।”

“তূর্য তুমি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছো।”

“বাড়াবাড়ির আর কি দেখেছেন আতিকুর রহমান। এবার দেখবেন।”

“তূর্য”

“চেচিয়ে লাভ নেই আপনার কি তাশের সংসারে আমি আমার বোনকে থাকতে দিবোনা। আজকেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। তবে যাওয়ার আগে একটা কথা বলে দিচ্ছি আল্লাহ ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।”

“দেখ তূর্য তোমার মা মারা যাওয়ার থেকে আমি আর সোহানাই তোমাদের আদর যত্নে মানুষ করে তুলেছি। এখন তুমি আমাদের সঙ্গে এমনটা করতে পারোনা।”

“লাইক সিরিয়াসলি আতিকুর রহমান। আপনি আদুরে সঙ্গে আমাদের মানুষ করেছেন। হাসালেন আমায়। জ্বরে বা অসুস্থ হয়ে যখন বিছানায় পড়ে থাকতাম তখন আমার ওই ছোট্ট বোনটা এসে আমার সেবা করতো। পারতো না ঠিক মতো তবুও চেষ্টার কোনো কমতি ছিলো না তার মধ্যে। আর আপনি একবারও খোঁজ অবদি নেন নি আমার। আপনার সো কল্ড দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী আমার ছোট বোনটাকে কাজের লোকের মতো খাটাতো। তবুও মেয়েটা কোনোদিন টু শব্দ টুকু করেনি। হাসিমুখে সবার সঙ্গে মিশে যে কত সুখী। কিন্তু! তারপরও আমাদের উপর আপনার কিসের অধিকার।”

তুরের চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। তীক্ত দৃশ‍্যগুলো মনের মণিকোঠায় ভেসে উঠছে তার। এতো সবকিছু এতোদিন মুখ বুজেই সহ‍্য করেছে সে। কিন্তু একটু সুখ তো সে আশা করেই। এই বাসায় তো আর সুখ আসবেনা তার। ভেবেই তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো তুরের ঠোঁটে।

#চলবে

( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )