Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 121



আপনার শুভ্রতা পর্ব-২৪ এবং শেষ পর্ব

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২৪(অন্তিম পর্ব)

২০.
তূর্য ও নম্রতার, তুর ও রিজভীর বিয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল একটি অসাধারণ আয়োজনে ভরা, যেখানে সৌন্দর্য এবং বৈভব একসাথে মিশে গিয়েছিল। পুরো অনুষ্ঠানস্থলটি ফুল, আলো, এবং নানান রঙের সাজসজ্জায় সজ্জিত ছিল। চারপাশে থাকা উজ্জ্বল লাইটিং এবং রঙিন ডেকোরেশন পুরো পরিবেশটিকে এক রূপকথার মতো করে তুলেছিল। প্রতিটি কোণে ছিল শিল্পের ছোঁয়া, আর গাছগাছালিতে টাঙানো ছোট ছোট লাইট পুরো পরিবেশকে মায়াময় করে তুলেছিল।

তূর্য বিয়ের জন্য বেছে নিয়েছিল একটি ক্লাসিক কালো শেরওয়ানি, যা তার ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই। সোনালি এমব্রয়ডারির কাজ তার পোশাকটিকে আরও সুন্দর করে তুলেছিল। মাথায় ছিল একটি কালো পাগড়ি, যাতে ছিল রূপালী মুকুটের আভা। তার পাশে নম্রতা ছিল একটি হালকা গোলাপি বেনারসী শাড়িতে সজ্জিত, যা সোনালী জরির কাজ দিয়ে সাজানো ছিল। নম্রতার হাতে ছিল সোনার চুড়ি আর কানে ঝুলছিল ঝুমকা। তার মেকআপ ছিল হালকা কিন্তু অত্যন্ত স্নিগ্ধ, যা তার স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলেছিল।

তুর ছিল একটি উজ্জ্বল লাল লেহেঙ্গায়, যা সোনালী জরির কারুকাজে সজ্জিত। মাথায় পরা ওড়নায় ছিল সোনালি এমব্রয়ডারি, যা তার চেহারাকে আরও সুন্দর করে তুলেছিল। তার কানের দুল আর গলার হার ছিল রূপালী ও মণি মাণিক্যের মিশ্রণে তৈরি। তার স্নিগ্ধ মেকআপ তাকে একটি রাজকীয় রূপে উপস্থাপন করেছিল।

রিজভী বেছে নিয়েছিল একটি হালকা সোনালী শেরওয়ানি, যাতে ছিল লাল কাজের ছোঁয়া। তার পোশাকে ছিল একটি লাল পাগড়ি, যা তার সাজসজ্জাকে সম্পূর্ণ করেছিল। হাতে ছিল সোনালী আংটি আর পায়ে সাদা জুতো, যা তার ব্যক্তিত্বকে আরও প্রাঞ্জল করে তুলেছিল।

রাদিফ ছিলেন একটি চমৎকার ফর্মাল স্যুটে, যা ছিল নেভি ব্লু কালারের। তার সাজে ছিল সাদা শার্ট ও সিলভার টাই, যা তাকে একটি আধুনিক এবং স্মার্ট লুক দিয়েছে। রাদিফের চুল ছিল সুন্দর করে সেট করা, এবং তার ঘড়ি আর চশমা তার ব্যক্তিত্বে একটি পরিণতিপূর্ণ ছোঁয়া দিয়েছে।

শুভ্রতা বেছে নিয়েছিলেন একটি মেরুন রঙের লেহেঙ্গা, যা সোনালী জরির কাজ দিয়ে সাজানো। তার হাতে ছিল সোনার বালা, এবং কানে ঝুলছিল বড় ঝুমকা। শুভ্রতার মাথায় ছিল একটি হালকা সোনালি টিকলি, যা তার পুরো সাজকে পূর্ণতা দিয়েছিল। তার মেকআপ ছিল একটি ক্লাসিক লুকের, যার মধ্যে ছিল লাল লিপস্টিক এবং হালকা স্মোকি আই মেকআপ।

অনুষ্ঠানে সবার চোখ ছিল তুর এবং রিজভীর দিকে। তারা যখন মঞ্চে উঠে এল, সবার মুখে এক আনন্দের হাসি ফুটে উঠল। তুরের খুনসুটি আর রিজভীর হাসি এই মুহূর্তটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল।

অন্যদিকে, তূর্য যখন নম্রতার হাত ধরে মঞ্চে এল, তখন চারপাশে আনন্দের উল্লাস শোনা গেল। তাদের সম্পর্কের গভীরতা এবং ভালোবাসা সবার মনে দাগ কাটল।

রাদিফ এবং শুভ্রতা একসঙ্গে মঞ্চে এলে, তাদের সৌন্দর্য এবং আভিজাত্য পুরো পরিবেশকে মোহিত করে তুলল। শুভ্রতার মিষ্টি হাসি এবং রাদিফের মুগ্ধ দৃষ্টি একে অপরের প্রতি তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইল।

অনুষ্ঠানের মাঝে, তুর এবং রিজভীর মধ্যে মিষ্টি খুনসুটি চলতে থাকল। রিজভী যখন তুরকে মিষ্টি কিছু বলল, তুর তা শুনে একটু বিরক্তির ভাব এনে হেসে ফেলল। তাদের এই মিষ্টি ঝগড়া সবাইকে আনন্দ দিল।

তূর্য এবং নম্রতা যখন একসঙ্গে মঞ্চে নাচতে শুরু করল, তখন সবাই তাদের দেখে মোহিত হয়ে গেল। তাদের নাচের ছন্দ, একে অপরের প্রতি ভালোবাসা এবং সম্মান সবাইকে মুগ্ধ করল।

রাদিফ এবং শুভ্রতার মুহূর্তগুলো ছিল বিশেষ। রাদিফ শুভ্রতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
“শুভ্রতা, আজকের দিনটি আমাদের জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে মধুর অংশ।”

শুভ্রতা হেসে বলল
“রাদিফ, আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার।”

রাদিফ মুচকি হেসে বলল
“শুভ্রতা,তোমাকে আজ অসাধারণ লাগছো।”

শুভ্রতা লাজুক হেসে বলল
“আপনাকেও আজ বেশ সুদর্শন লাগছে।”

রাদিফ শুভ্রতার কথা বাঁকা হাসলো।

——————

অনুষ্ঠানের মাঝে, তূর্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিল যখন তার সৎ মা, শায়লা, এসে উপস্থিত হলো। শায়লা চোখের পানি মুছে বলল,
“তূর্য, আমি জানি আমি তোমাদের জীবন কঠিন করে তুলেছি। আমার সমস্ত কিছু হারিয়ে গেছে এবং আমি এখন সম্পূর্ণভাবে নিঃস্ব। আমি সত্যিই দুঃখিত।”

তূর্য কঠোরভাবে বলল
“আপনি যে ক্ষতি আমাদের করেছো, তা আমরা কখনো ভুলতে পারব না। আপনি আপনার পথ বেছে নিয়েছেন এবং এখন আপনার পরিণতি ভোগ করতে হবে।”

শায়লা হাহাকার করে চলে গেল। তার ভয়াবহ পরিণতি তার জীবনের এক নতুন অধ্যায় হয়ে দাঁড়াল।

এদিকে, তূর্যয়ের বাবা, নুরুল হক, যিনি এতদিন ধরে তার সৎ মায়ের সঙ্গ দিচ্ছিলেন, শেষ পর্যন্ত একটি ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হন। তার ব্যবসায়িক অংশীদারদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে, তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয় এবং তিনি অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে, তার জীবন একেবারেই অন্ধকারে ডুবে যায়। তার মানসিক অবস্থাও চরম দুর্দশার মধ্যে চলে যায়, এবং অবশেষে তিনি স্বাস্থ্যগত কারণে পরলোকগমন করেন। যা তার পরিবারের জন্য একটি কঠিন পরিণতি এনে দেয়।

তূর্যের সৎ মায়ের প্রস্থান এবং তার বাবার কঠিন পরিণতির বিষয়গুলি দেখে, নম্রতা তূর্যকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এল। সে তূর্যের পাশে গিয়ে বলল
“তূর্য, আমি জানি এই মুহূর্তটি আপনার জন্য কঠিন। কিন্তু আমরা একসাথে এই সময় পার করব। আপনি একা নন এখন আর।”

তূর্য নম্রতার সান্ত্বনার প্রতি মৃদু ধন্যবাদ জানাল। নম্রতা তূর্যের কাঁধে হাত রেখে বলল
“আমরা একসাথে সবকিছু মোকাবেলা করব।”

তূর্য বোনের হাসি মুখ দেখে এই ঘটনাটা আর জানালো তাকে। থাক না মেয়েটা তো হাসিখুশি আছে। মেয়েটার বিশেষ দিনে এমন কথা না বললেই বা কি। তূর্য খেয়াল করলো ওর জন্য নম্রতার মনটাও খারাপ হয়ে গিছে। সে নিজেকে স্বাভাবিক করে নম্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“নম্রতা, আজকের দিনটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন। তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমার জন্য অমূল্য।”

“তূর্য, এই মুহূর্তের আনন্দ শুধু আমাদের নয়, আমাদের পরিবারও যেন আনন্দিত। আপনার সাথে আমার জীবন নতুন এক শুরু পাচ্ছে।”

বিয়ের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর, তূর্য এবং নম্রতা একে অপরকে আলিঙ্গন করে, তাদের নতুন জীবনের শুরুতে একসাথে হওয়ার অঙ্গীকার করল। তাদের চোখে সুখের আলো এবং নতুন জীবনের জন্য আশা ছিল।

বিয়ের দিন তুর এবং রিজভীও তাদের বিশেষ মুহূর্ত উপভোগ করছিল। সাজানো অনুষ্ঠানে, তুর তার সাজপোশাক আর হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় রিজভীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। রিজভী তার উজ্জ্বল পোশাক আর হাসিমুখে তুরের পাশে ছিল।

রিজভী মুচকি হেসে বলল
“তুর, আজকের দিনটা আমাদের জীবনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করছে। তুমি জানো, আমাদের মধ্যে এই মিষ্টি ঝগড়া আর খুনসুটি আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করে তুলেছে।”

“হ্যাঁ, রিজভী, তুমি আমার জীবনের অঙ্গ। আমাদের মিষ্টি খুনসুটি আর হাস্যরস আমাদের সম্পর্কের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।”

তুর আর রিজভী একে অপরকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল
“আজকের দিনটি শুধু আমাদের সম্পর্কের জন্য নয়, আমাদের পরিবারের জন্যও একটি নতুন শুরু। আমরা একসাথে সুখী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”

২১.
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে চারপাশে যখন হইচই থেমে গেছে, অতিথিরা বিদায় নিয়েছে, এবং বাড়ি নিস্তব্ধতায় ঢেকে গেছে, তখন রাদিফ ও শুভ্রতা কিছু সময়ের জন্য ছাদে উঠে আসলো। চারদিকে নীরবতা, আকাশে উজ্জ্বল পূর্ণচাঁদ, আর হালকা বাতাস—সবকিছুই যেন তাদের জন্য বিশেষভাবে সাজানো ছিল।

রাদিফ শুভ্রতার হাতটি আলতোভাবে ধরে বলল
“মায়াবতী, তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত যেন জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠেছে। এই চাঁদের আলোয় তোমার মুখের মায়াবী আভা আমাকে আরও মুগ্ধ করে।”

শুভ্রতা চাঁদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল
“রাদিফ, এই চাঁদ যেমন আকাশের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনই আপনি আমার জীবনে আলো এনে দিয়েছেন। আজকের এই মুহূর্তটি আমি কখনো ভুলবো না।”

রাদিফ শুভ্রতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
“তুমি জানো মায়াবতী, এই চাঁদ যেমন পূর্ণিমার রাতে উজ্জ্বল, তেমনি আমার জীবনের প্রতিটি রাত তোমার সান্নিধ্যে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা যেমন গাঢ়, তেমনই অটুট।”

শুভ্রতা মৃদু হাসি দিয়ে বলল
“আপনার এই কথাগুলো আমার হৃদয়ে সুরের মতো বাজে, রাদিফ। আমি জানি, আমাদের পথচলায় অনেক বাধা আসতে পারে, কিন্তু আপনার হাত ধরে থাকলে আমি সবকিছু পারি।”

রাদিফ হেসে শুভ্রতার কপালে একটি মিষ্টি চুম্বন দিলো। তারা চাঁদের আলোয় কিছুক্ষণ নীরবে বসে রইলেন, যেন সেই মুহূর্তটি সময়ের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশের নিস্তব্ধতা এবং চাঁদের আলো তাদের হৃদয়ে এক অন্যরকম প্রশান্তি এনে দিল।

শুভ্রতা মাথা তুলে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“রাদিফ, আমাদের ভালোবাসা যেন এই চাঁদের মতোই চিরকাল উজ্জ্বল থাকে।”

রাদিফ আলতো করে শুভ্রতার গাল ছুঁয়ে বলল
“মায়াবতী, তুমি আমার জীবনের আলো, তুমি আমার সবকিছু। যতক্ষণ তুমি আমার পাশে থাকবে, আমি প্রতিটি মুহূর্তে তোমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখবো।”

শুভ্রতা প্রশান্তির হাসি হেসে রাদিফের কাধে মাথা রেখে বলল
“আমি সারাটা জীবন শুধুমাত্র আপনার শুভ্রতা হয়েই থাকতে চাই।”

রাদিফ আলতো এসে শুভ্রতাকে আগলে নিলো নিজের আরো কাছে।

—————-

পরিশেষে,
রাদিফ ও শুভ্রতার হৃদয় এক হয়ে গেল, যেমন চাঁদ আর তার আলো একসাথে মিলে রাতের অন্ধকারকে দূর করে। তাদের ভালোবাসার গভীরতা, তাদের একে অপরের প্রতি নির্ভরতা, এবং তাদের ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি—সবকিছুই যেন এই রাতের নিস্তব্ধতার মাঝে ফুটে উঠেছিল।

এই গল্পটি শুধুমাত্র তূর্য, নম্রতা, তুর, রিজভী, রাদিফ এবং শুভ্রতার নয়; এটি সেই সকল ভালোবাসার গল্প, যেখানে সম্পর্কের গভীরতা, ভালোবাসার স্নিগ্ধতা, এবং জীবনের প্রতিটি বাঁক একে অপরের হাতে হাত রেখে পার হয়।

এভাবে, চাঁদের আলোয় রাদিফ ও শুভ্রতার এই মধুর মুহূর্ত তাদের জীবনের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা করে, যা কখনও ম্লান হবে না। তাদের ভালোবাসা যেমন এই রাতের চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল, তেমনি তাদের সম্পর্কও চিরকাল অমলিন থাকবে।

#সমাপ্ত

আপনার শুভ্রতা পর্ব-২২+২৩

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২২

শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে শুভ্রতার। রিজভীকে দিয়ে ঔষধ আনিয়েছে রাদিফ। শুভ্রতা জ্বরের ঘোরে বিরবিরাচ্ছিলো।

রাদিফ একটু সুপ তৈরি করে এনেছে ওর জন‍্য। এটা খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিবে ওকে। রাদিফ সুপের বাটিটা বেড সাইড টেবিলে রেখে কান পাতলো শুভ্রতার মুখের কাছে। শুভ্রতা জড়ানো কন্ঠে বলছে
“আপনি আমাকে ধোকা দিলেন রাদিফ। আমি কতটা ভালোবেসেছিলাম আপনাকে। আর আপনি আমাকে ভালোই বাসেন না।”

রাদিফ কপাল কুচকে এলো। শুভ্রতা এগুলো কি বলছে! সে ধোকা দিয়েছে! কখন মনে পড়ছেনা তো তার।”

রাদিফ সেসব একসাইডে রেখে সুপের বাটিটা নিয়ে শুভ্রতাকে কিছুটা খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।

১৮.
সকালের রোদের ঝিলিক চোখে আসতেই ঘুম ভেঙে গেল শুভ্রতার। শরীরটা বেশ দূর্বল লাগছে তার। শুভ্রতা নিজের হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল রাদিফ মেঝেতে বসে আছে শুভ্রতার হাত ধরে। শুভ্রতা আগের দিনের কথা মনে করেই ধীরপায়ে রুম ত‍্যাগ করলো রাদিফকে না ডেকেই।

রাদিফের ঘুম ভাঙতেই শুভ্রতাকে বেডে না পেয়ে শুভ্রতাকে ডাকতে লাগল। শুভ্রতার সারা না পেয়ে ওয়াশরুম চেক করলো না এখানে তো নেই। রাদিফ বড় বড় পা ফেলে রান্নাঘরে গেল। শুভ্রতা ওখানেই ছিলো। চা বানাচ্ছিলো। রাদিফ নরম গলায় বলে উঠলো
“তুমি আসতে গেলে কেন! আমাকে বললেই আমি বানিয়ে দিতাম।”

শুভ্রতা কোনো কথা বলল না। রাদিফের ভ্রুযুগল কুচকে এলো শুভ্রতার এমন ব‍্যবহারে। রাদিফ শুভ্রতার কাছ ঘেঁষে বলল
“কি হয়েছে কথা বলছো না কেন!”

শুভ্রতা সরে যেতে নিলো তখনই রাদিফ ওর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের বুকে এনে ফেলল। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“মায়াবতী পারলে একবারের মেরে ফেল আমায় তবুও এমন করে কথা বন্ধ করে কষ্ট দিও না আমায়।”

শুভ্রতা হুট করেই রাদিফকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। রাদিফ বেশ অবাক হলো শুভ্রতার কাজে। রাদিফ নিজেকে সামলে শুভ্রতার মুখটা নিজের সামনে এনে আলতো হাতে চোখের ‍পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল
“কি হয়েছে বলো আমায়। না বললে বুঝবো কিভাবে?”

শুভ্রতা চুলা বন্ধ করে রুমের দিকে পা বাড়ায়। রাদিফও ওর পিছু পিছু যায়।

শুভ্রতা কার্বাট থেকে খামটা বের করে রাদিফের দিকে দেয়। রাদিফ খামটা দেখে একদমই থমকায়নি। খামটা থেকে ছবিগুলো বের করে রাদিফ টুকরোটুকরো করে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলো। শুভ্রতা শুধু দেখছে কিন্তু কিছু বলছে না।

রাদিফ শুভ্রতার দুবাহু ধরে বেডে বসিয়ে নিজে হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসলো। শুভ্রতা দুহাত নিজের দুহাতে আবদ্ধ করে বলল
“ওর সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। নিধি বরাবরই গায়ে পড়া ছিলো। আমি যখন অর্নাস প্রথম বর্ষে পড়ি তখন নিধি আমার সঙ্গে রিলেশন করতে চায়। তখন আমি এগুলো এত গুরুত্ব দেইনি। তখনকারই কিছু ছবি। মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু নিধির সঙ্গে একাধিক ছেলের। সে যাইহোক এটা তেমন বড় বিষয় আমি মনে করিনি। কারণ তুমি আমার প্রথম অনুভূতি। আমার প্রথম ভালোবাসা। নিধিকে আমি কাজিন সিস্টার ছাড়া কিছুই ভাবিনি।”

শুভ্রতা নাক ফুলিয়ে বলল
“তাহলে ছবিগুলো ছিলো কেন ওখানে!”

রাদিফ শুভ্রতার গালে হাত ছোঁয়ালো। অপরাধী কন্ঠে বলল
“সরি আসলে আমার মনে ছিলোনা যে ছবিগুলো ওখানে ছিলো।”

শুভ্রতা অন‍্যদিকে তাকিয়ে বলল
“ভুল করেছেন যখন শাস্তি পেতে হবে।”

রাদিফ মুখটা ছোট করে বলল
“তুমি যেই শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো।”

শুভ্রতা মুচকি হেসে বলল
“আমাকে আরো বেশি বেশি ভালোবাসতে হবে। আর ভুলেও অন‍্য মেয়ের দিকে তাকাবেন না বলে দিলাম। আর আপনার
ওই নিধি না ফিধি ওর সঙ্গে যদি আপনাকে দেখেছি একবারও তাহলে আপনার খবর আছে।”

রাদিফ মুচকি হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল
“আমার মায়াবতী দেখছি জেলাস।”

শুভ্রতা রাদিফের গালে হাত রেখে বলল
“জেলাস না ভয় হয় আপনাকে হারানোর। ভালোবাসি যে অনেক আপনাকে।”

রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার হাতে হাত রেখে ছোট একটা চুমু বসিয়ে দিলো শুভ্রতার হাতে। ধীর কন্ঠে বলল
“মৃত‍্যুর আগ পযর্ন্ত এ অধম শুধু তোমার।”

শুভ্রতা মুচকি হাসলো।

১৯.
কেটে গেছে দুইমাস আজ নম্রতার জন্মদিন। সবাই তাকে উইস করলেও তূর্যের কোনো খবর নেই। এইজন‍্য নম্রতার মুড বেশ বিগড়ে আছে। সে আশা করেছিলো তূর্যই আগে উইস করবে। কিন্তু তার তো খবরই নেই। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আজ অনেকগুলো গিফটও পেয়েছে সে। ওর বাবা ওকে ওর পছন্দের চকলেট বক্স এনে দিয়েছে। দুপুরে ওর মা ওর পছন্দের সব খাবার রান্না করে খাইয়েছে। তুর তাকে একটা ড্রেস গিফট করেছে। রাদিফ আর শুভ্রতা মিলে একটা ফোন গিফট করেছে। স্নেহাও চকলেট দিয়েছে।

তূর্য শুধু উইস করলেও সে খুশি হতো। কিন্তু না বাবুর কোনো খবরই নেই। এগুলোই ভাবছিলো তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। নম্রতা বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে চলে গেল। দরজা খুলে বেশ অবাক হলো সে একটা পার্সেল। নম্রতা ভ্রুকুচকালো। রেহানা বেগম রান্নাঘর থেকে বলে উঠলেন
“কে এসেছে?”

“পার্সেল এসেছে আম্মু।”

“তোর কোনো ফ্রেন্ড হয়তো দিয়েছে। নিয়ে দেখ।”

নম্রতা পার্সেলটা নিয়ে রুমে চলে গেল। পেকেট খুলে দেখলো একটা সাদা গাউন বেশি কারুকাজ না থাকলেও বেশ সুন্দর। সঙ্গে মিলিয়ে হালকা কিছু গহনা, কাঁচের চুড়ি, বেলিফুলের গাজরা। নম্রতা সবকিছু বের করতেই একটা চিঠি পেল। চিঠিতে লেখা
“নিজে পছন্দ করে নিজের বোকাফুলের জন‍্য কিছু উপহার কিনেছি। এগুলো পড়ে ছাদে চলে আসো দ্রুত। হালকা কাজল দিবে সঙ্গে হালকা লিপস্টিক দিবে। মেকআপ করবেনা একদম। চুল খোলা রাখবে। চুলে গাজরাটা পড়বে কেমন।
ইতি তোমার উনি”

নম্রতার ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। সে জানে এটা তূর্যের কাজ।

নম্রতা দ্রুত তূর্য কথামতো নিজেকে সাজিয়ে দ্রুত পায়ে ছাদের দিকে রওনা হলো।

ছাদে প্রবেশ করে দেখলো ছাদে অন্ধকার গুটগুট করছে। নম্রতা ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে তূর্যকে ডাকতে লাগল।

হুট করেই চারপাশে আলো জ্বলে উঠলো। সাদা আর আকাশি রঙের বেলুন দিয়ে পুরো ছাদটা ডেকোরেশন করা। নম্রতার মুখ হা হয়ে গেল। নিজের সামনে তূর্যকে হাঁটু গেড়ে বসতে দেখে আরো অবাক হলো নম্রতা। তূর্য নম্রতার সামনে একগুচ্ছ লাল গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলল
“শুভ জন্মদিন বোকাফুল। এই বিশেষ দিনে কি তুমি পারোনা এই প্রেমিক পুরুষের ভালোবাসা গ্রহণ করতে। আমি ওতো ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে বলতে পারিনা। আমি তোমাকে মনের গহীন থেকে ভালোবাসা নিবেদন করছি। উইল ইউ মেরি মি বোকাফুল!”

কথাগুলো বলেই উত্তরের অপেক্ষায় তূর্য নম্রতার মুখপানে তাকিয়ে রইলো। নম্রতা মুখে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো তূর্যের দিকে। নম্রতাকে কিছু বলতে না দেখে তূর্য বিরক্তি নিয়ে বলল
“বসে থাকতে থাকতে হাঁটু খুলে গেল। নিজে তো শুভ্রতাকে ধমকাচ্ছিলে এখন নিজে কি করছো!”

নম্রতা হাত বাড়িয়ে গোলাপ ফুলগুলো হাতে নিয়ে বলল
“হুম আমি বিয়ে করবো আপনাকে। আমিও অনেক ভালোবাসি আপনাকে হাইপার ম‍্যান।”

তূর্য ভ্রুকুচকে বলল
“কি বললে আমায়!”

নম্রতা দাঁত ‍‍বের করে হাসলো। তূর্য দাঁড়িয়ে মুখ ঘুড়িয়ে রাখলো। নম্রতা মুচকি হেসে তূর্যের হাত ধরে কাধে আলতো করে মাথা ঠেকিয়ে বলল
“এমন সারপ্রাইজ আমি কল্পণাও করিনি। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি যে আমাকে আজকেই এমন মুহূর্ত উপহার দিবেন ভাবতেও পারিনি।”

তূর্য পকেট থেকে একটা আংটির বক্স বের করে তা থেকে আংটিটা বের করে নম্রতার আঙুলে পড়িয়ে দিয়ে ছোট একটা চুমু বসিয়ে দিলো ওর হাতে। নম্রতা লাজুক হাসলো।

তূর্য নম্রতার হাত ধরে ছাদের মাঝ বরাবর একটা টেবিলের কাছে নিয়ে এলো। যেখানে বিভিন্ন রঙের মোমবাতি আর গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে সাজানো। যার মাঝবরাবর একটা চকলেট কেক রাখা। যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা
”শুভ জন্মদিন বোকাফুল”

তূর্য হাক ডাক দিয়ে বলল
“তোরা সবাই বেড়িয়ে আয়।”

সঙ্গে সঙ্গে পিলারের পিছন থেকে ধাক্কাধাক্কি করে দাঁত কেলাতে কেলাতে বেড়িয়ে এলো তুর রিজভী রাদিফ আর শুভ্রতা। নম্রতা অবাক চোখে একবার তূর্যের দিকে তাকালো আর একবার ওদের দিকে তাকালো। ওরা সবাই একসঙ্গে বলে উঠলো
“শুভ জন্মদিন তূর্য ভাইয়ের বোকাফুল”

নম্রতা লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। সে মনে মনে চাইছে মাটি ফাঁক হয়ে যাক আর সে সেখানে ঢুকে যাক। নাহয় আকাশ ছেদ করে দড়ি আসুক। সেটি দিয়ে সে উপরে উঠে যাক।

তূর্য নম্রতা হালকা করে ধাক্কা দিয়ে বলল
“কেকটা কাটো”

নম্রতা কেক কেটে তূর্যকে খাইয়ে দেয়। তূর্যও নম্রতাকে কেক খাইয়ে দেয়। একে একে সবাই কেক খায়।

কেক খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই সেখানে হাজির হয় শামসুল হক রেহানা বেগম আর রফিকুল সাহেব। নম্রতা বাবা মাকে দেখে কিছুটা গুটিয়ে যায়।

শামসুল হক মেয়ের কাছে এসে মেয়ের মাথায় হাত রাখে। সবার দিকে তাকিয়ে তিনি বলে উঠলেন

#চলবে

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২৩

সবার দিকে তাকিয়ে উনি বলে উঠলেন
“আগামী শুক্রবার তূর্য আর নম্রতার বিয়ে হলে কেমন হয়!”

ওনার কথা সবাই যখন হাসি-আনন্দে মেতে ছিল, তূর্য ও নম্রতা দুজনেই নীরব থেকে নিজেদের মধ্যে ভাবনার বিনিময় করছিল। তূর্যর চোখে এক গভীর নির্ভরতার ছাপ ফুটে উঠল। তূর্য জানত, তাদের দুজনের পথচলা সহজ হবে না, কিন্তু নম্রতার প্রতি তার বিশ্বাস ছিল অবিচল।

নম্রতার দিকে তাকিয়ে তূর্য আস্তে করে বলল
“নম্রতা, জানি, আমার পাশে থাকাটা সহজ হবে না, কিন্তু আমরা একসাথে সবকিছু সামলে নেব, তাই না?”

নম্রতা চোখ তুলে তূর্যের দিকে তাকাল। তার ঠোঁটে ফুটে উঠল এক নির্ভরতার হাসি।নম্রতা মৃদু সরে বলল

“আপনার সঙ্গে থাকতে পারা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি, তূর্য। আপনি আছেন বলেই আমি সবকিছু করতে পারব।”

এই কথাগুলোতে যেন একে অপরের প্রতি তাদের অঙ্গীকার নবায়ন হলো। বিয়ের সিদ্ধান্তে তারা দুজনই একে অপরের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে গেল। আর চারপাশে থাকা মানুষগুলোর মুখে আনন্দের ছাপ সেই মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রইলো।

তখন রফিকুল সাহেব তূর্যের কাছে এলেন। তূর্যের কাধে হাত রেখে মুচকি হেসে বললেন
“তূর্য বাবা আজ তোমার কাছে আমি একটা আর্জি নিয়ে এসেছি।”

সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রফিকুল সাহেবের দিকে। তূর্য মুচকি হেসে রফিকুল সাহেবের হাতে হাত রেখে বলল
“এমন করে বলবেনা আঙ্কেল। নিজের ছেলে মনে করে দিধা ছাড়া বলুন।”

রফিকুল সাহেব তূর্যের এমন ব‍্যবহারে বেশ মুগ্ধ হলেন। মুচকি হেসে বললেন
“বাবা আমার ছোট ছেলেটা বেশ চাপা স্বভাবের ছেলে। তুমি একটু খেয়াল করলে এতদিনে বুঝে যাবে। কারণ তোমাকে দেখে আমার বোঝদার ছেলে মনে হয়েছে। তোমার বোনকে আমার ছেলে পছন্দ করে। আমি তোমার ছোট বোনটাকে আমার ছোট মেয়ে করে আমাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চাই।”

রিজভী গোল গোল চোখে বাবার দিকে তাকালো। তুরেরও একই অবস্থা।

তূর্য তাকালো তুর আর রিজভীর দিকে। সেও খেয়াল করেছে। কিন্তু রফিকুল সাহেবকে বলাতে দিধায় পড়েছিলো সে। এই মুহূর্তটা তূর্যের জন্য আরও এক ধরনের অপ্রত্যাশিত বাস্তবতা নিয়ে এল। তূর্য তাকিয়ে রইল তুর ও রিজভীর দিকে। রিজভীর মুখে এক ধরণের অস্বস্তি আর লজ্জা ফুটে উঠল। তবে তূর্যও লক্ষ্য করেছিল যে রিজভী যখনই তুরের আশেপাশে থাকত, তার চোখে এক অন্যরকম অনুভূতি ফুটে উঠত। তূর্য একটু সময় নিয়ে বিষয়টা ভাবল।

তারপর মৃদু হাসি দিয়ে বলল
“আঙ্কেল, আপনি যে কথা বললেন, তা আমার জন্য অনেক সম্মানের। তুরের ওপর রিজভীর দৃষ্টি আমি আগে থেকেই অনুভব করেছিলাম। রিজভী যদি সত্যিই তুরকে ভালোবাসে এবং তুরও যদি এ সম্পর্কে সম্মতি দেয়, তবে আমি অবশ্যই তাদের পাশে থাকব। তবে আমি আগে তুরের মতামত জানতে চাই।”

তূর্যর কথা শুনে রফিকুল সাহেবের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল। তিনি বললেন
“তুমিই ঠিক বলেছ, বাবা। তোমার বোনের মতামত জানা খুবই জরুরি।”

এই কথার পর তূর্য তুরের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলল
“তুর, তুই কী বলবি? রিজভী তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”

তুর কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল
“ভাইয়া,যদি ও সত্যিই আমাকে ভালোবাসে, তবে আমি ওকে নিয়ে ভাবতে রাজি।”

তূর্য তুরের কথায় সম্মতি জানিয়ে রফিকুল সাহেবের দিকে ফিরে বলল
“আঙ্কেল, আপনি রিজভীকে নিশ্চিন্ত করতে পারেন। তুর ওর জন্য প্রস্তুত।”

রফিকুল সাহেব আলহামদুলিল্লাহ্ বলে উঠলেন।

রফিকুল সাহেবের মুখে আলহামদুলিল্লাহ্ শুনে পুরো ছাদটা যেন এক আনন্দের ঢেউয়ে ভেসে গেল। সবাই খুশিতে মেতে উঠল। তূর্যর মনের ওপর থেকেও যেন এক ভার নেমে গেল। সে ভাবল, এই মুহূর্তটা তাদের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

তূর্য তুরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। সে বুঝল, তুরের মনে রিজভীর জন্য কিছু অনুভূতি গড়ে উঠেছে, যা এতদিন সে হয়তো নিজের কাছেও স্বীকার করতে পারেনি। তূর্যর মনে হল, এই নতুন সম্পর্কগুলো তাদের পরিবারে আরও আনন্দ এবং সম্প্রীতি নিয়ে আসবে।

রিজভীও তূর্যের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে সম্মতি জানাল। তুরের চোখেও একরকম লজ্জা আর আনন্দের মিশ্রণ ফুটে উঠল।

এরপর তূর্য নম্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“দেখলে, নম্রতা, একের পর এক ভালো খবর আসছে। আমাদের বিয়েটা শুধু আমাদের জন্য নয়, পুরো পরিবারের জন্য এক নতুন যাত্রার শুরু।”

নম্রতা হাসি দিয়ে তূর্যের হাত ধরে বলল
“হুম আমি জানি আমাদের সামনে অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। তবে আমি জানি, আমরা একসঙ্গে থাকলে সবকিছুই সম্ভব হবে।”

তূর্য মুচকি হাসলো।

তূর্যর মুচকি হাসি দেখে নম্রতার চোখে ভরসার আলো ফুটে উঠল। তারা দুজনই জানত, সামনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, কিন্তু একে অপরের পাশে থাকার শক্তি তাদের আরও দৃঢ় করে তুলল।

এরপর তূর্য চারপাশে তাকিয়ে দেখল সবার মুখে খুশির ঝিলিক। এই মুহূর্তটা যেন সত্যিই এক নতুন শুরু, যেখানে ভালোবাসা, বন্ধন, এবং পারিবারিক সম্পর্কের মূল্য সবার মনে গেঁথে যাচ্ছে।

তূর্য ভাবল যাত্রাটা যতই কঠিন হোক না কেন, আমাদের একসাথে থাকার শক্তি সবকিছু জয় করবে।

তারপরে সে নম্রতার হাত শক্ত করে ধরে বলল
“নম্রতা, আমরা একসাথে নতুন জীবনের পথে পা বাড়াচ্ছি। তোমার হাত ধরেই আমার জীবনের সব আনন্দ।”

নম্রতা মৃদু হেসে বলল
“আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন, আর আমি সবসময় আপনার পাশে থাকবো।

রিজভী তুরের পাশ ঘেঁষে বলল
“তুর, তোমার এই চোখ রাঙানোটা খুব মজার। তুমি যখনই রাগ করো, তখন তোমার মুখটা দেখতে অনেক মিষ্টি লাগে।”

তুর ভ্রুকুচকে বলল
“আপনি আবার শুরু করলেন? রাগ করলেও মিষ্টি লাগবে! এটা কোনো কথা হলো?”

রিজভী হেসে বলল
“হ্যাঁ, তোমার রাগটা এমন মিষ্টি যে, আমি ইচ্ছা করেই তোমাকে রাগাতে চাই!”

তুর রিজভীর হাতটা ধরে টান দিয়ে বলল
“তাহলে আমি আপনাকে একটু বেশিই রাগিয়ে দেখাই?”

রিজভী বলদ মার্কা হাসি দিয়ে বলল
“আরে না, প্লিজ! আমি তো শুধু মজা করছি। তুমি রাগলে আমার কিন্তু সত্যিই ভয় লাগে।”

তুর একটু গম্ভীর কন্ঠে বলল
“ভয় পেতে হয়, বুঝেছেন? আমি কোনো মজা করছি না।”

রিজভী মুচকি হেসে বলল
“ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমি আর কিছু বলব না। তবে তুমি যখন রাগ করো, তখন তোমার গালটা একটু লাল হয়ে যায়, জানো?”

তুর রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল
“আপনি এমন করলে আমি সত্যিই রাগ করব।”

“আচ্ছা, আমি আর রাগানোর চেষ্টা করব না। তবে একটা কথা বলো, তোমার রাগটা আমার দিকে একটু কমিয়ে দেবে, প্লিজ?”

তুর মৃদু হেসে বলল
“ঠিক আছে, তবে তার জন্য তোমাকে আমার একটা শর্ত মানতে হবে।”

রিজভী ভ্রুকুচকে বলল
“শর্ত? ঠিক আছে, যা বলবে মানব।”

“আমাকে আর কখনও এমনভাবে রাগাবে না।”

“এই শর্ত মেনে নেওয়া আমার জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার।”

“তাহলে ঠিক আছে। আজকের মতো মাফ করে দিলাম।”

“থ্যাঙ্ক ইউ, মিস ঝগড়ুটে!”

“আবার বললেন, এবার কিন্তু সত্যি রাগ করব!”

“আরে মিস ঝগড়ুটি, এত রাগ কেন তোমার? আমি তো কিছু বলিনি!”

তুর দাঁত কটমট করে বলল
“রামছাগল, রাগ তো করবোই! আপনি সবসময় আমার সাথে মজা নেন কেন?”

রিজভী মুখটা ইনোসেন্ট করে বলল
“মজা নেওয়া? আমি তো তোমাকে একটু হাসাতে চাই, আর তুমিই সবসময় ঝগড়া শুরু করো!”

তুর কপাল কুচকে বলল
“হাসাতে চান? আপনার এই হাসানোর স্টাইল একদমই ভালো লাগে না!”

রিজভী চোখ ছোট ছোট করে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“তাহলে তুমি বলো, কিভাবে হাসাবো?”

“হাসাবার দরকার নেই, আপনার ঝামেলা থেকেই দূরে থাকেন!”

“ঠিক আছে, মিস ঝগড়ুটি। কিন্তু মনে রেখো, আমি থাকলে ঝগড়া হলেও মজা থাকে, আর আমি না থাকলে তোমার রাগ দেখানোর কেউ থাকবে না!”

“বেশি কথা বলবেন না! আর এই রামছাগল নামটা পাল্টাতে হবে!”

“ওহ, তাই? কিন্তু মিস ঝগড়ুটি নামটাও কিন্তু তোমার জন্য পারফেক্ট!”

তুর হাসি চাপিয়ে বলল
“তাহলে ঠিক আছে, রামছাগল আর মিস ঝগড়ুটি হিসেবে থাকি!”

রিজভীও হেসে ‍বলল
“হুম, একেবারে পারফেক্ট টিম!”

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-২১

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২১

১৭.
শুভ্রতাদের পরীক্ষা শেষ হয়েছে একদিন আগে। শুভ্রতা আজ ভার্সিটি আসে নি। তুর একাই এসেছে। কিন্তু তার একদম বিরক্ত লাগছে একা ক্লাস করতে। তবুও বেশ বিরক্ত নিয়ে একটা ক্লাস করলো সে।

ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে পরলো সে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্য। কিছু দূরে যেতেই সে দেখতে পেল কিছু বখাটে ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তুর দূর থেকে দেখে নিজের শরীরের ওড়না টেনে ঠিকঠাক করে তাড়াতাড়ি করে সেদিক দিয়ে যেতে নিবে তখনই ছেলেগুলো তুরের রাস্তা আটকে ধরলো। তুর রাস্তা কাটিয়ে চলে যেতে নিবে তখনই ছেলেগুলো আবারও আটকায় তাকে। তুরের গলা শুকিয়ে আসছে তবুও নিজের ভয় দমিয়ে বলে উঠলো
“রাস্তা ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন।”

একটা ছেলে বিচ্ছিরি হেসে বলল
“না সোনা তোমার রাস্তা তো ছাড়া যাবেনা।”

তুর দৌড় দিতে নিবে তখনই একটা ছেলে ওর ওড়না জোড়ে টেনে ধরে। ওড়নাটা পিন করা ছিলো বলে ওড়নাতে জোড়ে টান পড়ায় কাধের জামার অংশে টান পড়ে ছিড়ে গেল। তুর ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো কাধের দিকে। সে যদি ছুটে পালাতে যায় তাহলে আরো ছিড়ে যাবে। মনে মনে সে আল্লাহর নাম নিতে লাগল। সে বারবার চাইছে কেউ এসে তাকে বাঁচাক। তুর চোখ বুজলো।

চারটা ছেলের মধ্যে একটা ছেলে তুরের গায়ে হাত দিতে নিবে তখনই ছেলেটার নাক বরাবর কেউ ঘুসি দেয়। ছেলেটা আর্তনাদ করে উঠতেই তুর চোখ খুলে পিছনে তাকালো। রিজভীকে দেখে যেন তার প্রাণ ফিরে এলো। হুট করেই সে রিজভীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

রিজভী পরপর ছেলেটার নাকে ঘুসি দিতেই থাকে। ছেলেটার নাক দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। বাকি ছেলেগুলো তা দেখে দৌড় দেয়। রিজভীর শ‍্যামবর্ণের চেহারা রাগে অদ্ভুত ভয়াবহ দেখাচ্ছে। তুর কান্নাভেজা কন্ঠে বলল
“রিজভী ওকে ছেড়ে দিন প্লীজ।”

রিজভী চোখ গরম করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আঙুল নাচিয়ে ওয়ারনিং দিলো। ছেলেটা ছাড়া পেতেই ভো দৌড় দিলো নাক ধরে।

রিজভী রাগে কাঁপছিলো। তুর এতক্ষণে রিজভীকে ছেড়ে সামনে দাঁড়িয়েছে। রিজভী জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো। রাগান্বিত কন্ঠে বলল
“জানোই যখন ভাবি আসবেনা। পাকনামি করে ভার্সিটি আসতে হবে কেন!”

তুরকে ফোপাতে দেখে দমে গেল রিজভী। চোখ পড়লো তুরের কাধের দিকে। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টিশার্টের উপরের শার্টটা খুলে তুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“পড়ে নেও এটা।”

তুর রিজভীর কথা বুঝতে না পেরে কপাল কুচকে তাকালো রিজভীর দিকে। রিজভী বুঝতে পেরে শার্টটা তুরের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বলল
“চলো তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি।”

তুর নীচু কন্ঠে বলল
“ধন‍্যবাদ”

রিজভী ভ্রুকুচকে বলল
“কেন!”

“না মানে আমাকে বাঁচানোর জন‍্য ওই ছেলেগুলোর থেকে।”

রিজভী কি যেন ভেবে বলল
“অন‍্য মেয়ে হলেও বাঁচাতাম।”

“অন‍্য মেয়ে আর আমি এক।”

রিজভী ভ্রুকুচকে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“একই তো।”

হুট করেই তুর ক্ষেপে গেল। রিজভীকে রেখেই হনহন করে হাঁটা ধরলো। রিজভী বাঁকা হেসে চেঁচিয়ে বলল
“আই লাভ ইউ মিস ঝগড়ুটি।”

রিজভীর কথাগুলো কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই তুরের পা জোরে থেমে গেল। সে কি শুনলো এটা! তুর কিছু সময় নিয়ে ভেবে দুষ্টু হেসে পিছনে ঘুরে বলল
“আই হেট ইউ মিস্টার রামছাগল।”

তুরের ঠোঁটের মুচকি হাসি দেখে রিজভী হাত দিয়ে মাথার পিছনের চুলগুলো চুলকালো। তুর ঠোঁট কামরে হাসলো।

———————

শুভ্রতা কার্বাট গোছাচ্ছিলো তখনই রাদিফের জামা কাপড়ের ভাঁজে একটা খাম পেল। শুভ্রতার কপাল কুচকে এলো। শুভ্রতা খাম খুলে যা দেখলো তা দেখে আর নিজেকে কন্টোল করতে পারলো না। ধপ করে বসে পড়লো মেঝেতে। তার হাতে কয়েকটা ছবি যেখানে নিধি আর রাদিফের কিছু সুন্দর মুহূর্তের বিদ‍্যমান। অজান্তেই শুভ্রতার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। বুক ফেটে কান্না আসছে তার। এতো কষ্ট লাগছে কেন তার। শুভ্রতা যেন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। মাথাটা ঘনঘন করে ঘুরছে তার। চোখ দুটো বারবার ভরে আসছে। রাদিফ কিভাবে পারলো এই ঘটনাগুলো গোপন করতে। তার সবকিছুই তো রাদিফ জানে। তাহলে রাদিফের গোপন কথা কেন সে জানবেনা। শুভ্রতা আর ভাবতে পারছেনা কিছু।

তখনই তার ফোনটা বেজে উঠলো। শুভ্রতা কান্নাভেজা চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাদিফের নামটা জ্বল জ্বল করছে। শুভ্রতা ফোন‍টাকে সুইচঅফ করে বেডে ছুড়ে মারলো।

বেডের কাণিশে মাথা ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে রইলো চোখ বুজে। এভাবে কতক্ষণ ছিলো জানা নেই তার। বাসায় কেউ না থাকায় কেউ জানতেও পারলোনা শুভ্রতার মনের খবর।

বেশকিছুক্ষণ পর শুভ্রতা ছবিগুলো জায়গা মতো রেখে টলমল ‍পায়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগল। পড়নের মেরুন রাঙা শাড়ির আঁচল মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।

ওয়াশরুমের দরজা না লাগিয়েই শাওয়ার ছেড়ে দিলো শুভ্রতা। গা হিম হয়ে যাওয়া পানি ফোঁটায় ফোঁটায় শুভ্রতার শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে।

অন‍্যদিকে রাদিফের কপালে চিন্তার ছাপ পড়েছে। শুভ্রতা তো কখনো ফোন অফ করে রাখেনা। আর আজকে তো ও বাসায় আছে। রিংও তো হলো প্রথমবার। তাহলে কি কোনো বিপদ হলো ওর। রাদিফের অস্থিরতা ক্রমশ বাড়তে লাগল। কাজে মন বসছে না তার। ল‍্যাপটপ অফ করে রেখে কল দিলো রিজভীকে। দুইবার রিং হতেই কল রিসিভ করলো রিজভী। রিজভীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাদিফ বলল
“তুই কোথায়?”

রিজভী তুরকে নিয়ে গাড়িতে যাচ্ছিলো তুরকে ওর বাসায় দিয়ে আসতে। রিজভী ভ্রুকুচকে বলল
“কেন ভাইয়া কি হয়েছে! আমি একটু বাহিরে আসছি।”

রাদিফ ছোট করে
“ওও”

বলে কল কেটে দিলো। রিজভী ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়। তুর ‍বলল
“কে কল দিয়েছিলো!”

রিজভী ভাবুক কন্ঠে বলল
“ভাইয়া”

“ও”

রিজভী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি চালাতে লাগল।

রাদিফ ওর পার্টনারকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো। রফিকুল সাহেব গ্রামে গেছেন আগের দিন জমিজমার ঝামেলার জন‍্য। রাদিফ আবারও কল করলো শুভ্রতাকে। এখন ফোন বন্ধ বলছে। রাদিফ দ্রুত ড্রাইভ করতে লাগল।

রাদিফ ডুবলিকেট চাবি দিয়ে মেইন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। বেশ কয়েকবার শুভ্রতার নাম ধরে ডেকেছে সে। কিন্তু শুভ্রতার কোনো সাড়াশব্দ পায়নি সে।

দ্রুত পায়ে রুমে প্রবেশ করলো রাদিফ। বেডের মাঝ বরাবর শুভ্রতার ফোনটা পড়ে আছে। কিন্তু আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো শুভ্রতা নেই।

ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। রাদিফ আর দেড়ি না করে ওয়াশরুমের দিকে গেল। ওয়াশরুমের দরজা খোলা দেখে বেশ অবাক হলো রাদিফ। ওয়াশরুমের ভিতরে চোখ রাখতে দেখতে পেল শুভ্রতা শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। পরনের শাড়িটা ভিজে জবজব করছে। রাদিফ এগিয়ে গেল শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতার হাত ধরতেই রাদিফ চমকিত হলো।

রাদিফ শুভ্রতা নিজের দিকে ফেরাতেই শুভ্রতার রক্তশূন্য হয়ে যাওয়া ফেকাসে মুখটা দেখেই আতকে উঠলো। একি অবস্থা হয়েছে তার মায়াবতীর। কি এমন হলো যে তার মায়াবতী এই অবস্থায়!

রাদিফ অস্থির কন্ঠে কয়েকবার ডাকলো শুভ্রতাকে। শুভ্রতা পিটপিট করে একবার তাকালো রাদিফের দিকে। তারপরেই ঢলে পরলো রাদিফের বুকে।

রাদিফ হতভম্ব হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারলো শুভ্রতা জ্ঞান হারিয়েছে। রাদিফ তাড়াতাড়ি করে শাওয়ার অফ করে শুভ্রতাকে কোলে তুলে নিলো। শুভ্রতার শাড়ি পাল্টে একটা কাথা গায়ে দিয়ে দিলো। গালে হাত রেখে ডাকলো কয়েকবার কিন্তু সারাশব্দ না পেয়ে রাদিফ বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-২০

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২০

রিজভীকে পাত্তা না দিয়ে হনহনিয়ে বাসায় চলে গেল তুর। রিজভী কিছু বলল না। সেও শুভ্রতাদের বাসায় ঢুকে পরলো। তার বরাদ্দকৃত রুমে সে চলে গেল। রফিকুল সাহেব চলে যেতে চাইছিলেন কিন্তু শামসুল হক তাকে ছাড়েননি। রফিকুল সাহেব আর শামসুল হক পাশের রুমে একসঙ্গে গল্প করতে বসেছেন। রিজভী রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরলো।

তুরও হাই দিতে দিতে রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো।

নম্রতা নেমে যাচ্ছিলো তখনই তূর্য ওকে টেনে সাইডে নিয়ে এলো। নম্রতা হঠাৎ এমন হওয়ায় ভয়ে চোখ বুজে নিলো। তূর্যের রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে। তূর্য শক্ত করে নম্রতার হাত ধরায় নম্রতা ব‍্যথায় কুকিয়ে উঠলো। তূর্য হিসহিসিয়ে বলল
“তোর এতো সাহস হয় কোথায় থেকে?”

নম্রতা রক্তলাল চোখ নিয়ে তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল
“হাতটা ছাড়ুন লাগছে।”

তূর্য আরো শক্ত করে চেপে ধরলো নম্রতার হাত। ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো
“লাগুক। তোর এই ব‍্যথায় তুই ছটফট করছিস। আমার ভিতরের ব‍্যথাটা দেখছিস না।”

নম্রতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল
“ওও তাই আমার শুধু হাতেই ব‍্যথা। ভালো ভালো। আর আমি বা আপনার সঙ্গে কথা বলে আমার মূল‍্যবান সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না। আমাকে ছাড়ুন। আর কোন অধিকারে আমাকে স্পর্শ করেন।”

তূর্য নম্রতার চোয়াল চেপে ধরে বলল
“অধিকার নিয়ে কথা বলতে আসিস না একদম। অধিকার করে নিতে আমার বেশি বেগ পেতে হবেনা।”

নম্রতা ব‍্যথায় কুকিয়ে উঠতেই তূর্য ঝারি দিয়ে নম্রতাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল।

নম্রতা তূর্যের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরলো তার। নম্রতার ফর্সা মুখটা রক্তলাল হয়ে গেছে। হাতটাও নীল হয়ে গেছে। ব‍্যথায় নাড়াতে পারছেনা হাত। নম্রতা হুট করে চেঁচিয়ে বলল
“কি শুরু করেছেন আপনি! নিজে অবহেলা করেন। আর আমি করলেই রাগারাগি করেন। আপনার তো দরকার নেই আপনার। এই কয়েকদিন আমার দিন কেটে একবারও খোঁজ নিয়েছেন। ব‍্যস্ততা সবারই থাকে। কিন্তু সময় করে প্রিয় মানুষের যত্নটাও নেওয়া যায়। ওহ সরি সরি ভুল হয়ে গেল আমি তো আপনার প্রিয় মানুষই না। আপনি তো টাইমপাস করছেন আমার সাথে।”

তূর্য ঝট করেই নম্রতার কাছে গিয়ে ওর চুলের মুটি ধরে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো। রাগে নম্রতার ঠোঁট কামরে ধরেছে সে। নম্রতা ব‍্যথায় ছটফট করছে। বেশকিছুক্ষণ পর ভালো করেই কিস করতে লাগল সে।

খানিকক্ষণ পর তূর্য নম্রতার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ওর কপালে কপাল ঠেকালো। দুইজনই হাঁপাচ্ছে।

এমন অবস্থায় বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হলো। তূর্য নরম হাতে নম্রতার ডান গালে হাত রেখে অপরাধী কন্ঠে বলল
“সরি,আমি বেশ ডিপ্রেশশনে পড়ে গেছিলাম। আমার মা নেই। বাবা থেকেও নেই। এমন একটা ছেলের সাথে কোনো বাবাই বিয়ে দিতে চাইবেনা। হয় তো আঙ্কেল এমন না কিন্তু অভিভাবক ছাড়া ছেলের সঙ্গে কেউ মেনে নিবে না আমাদের। আমি তোমার বয়সেও বেশ ছোট। তাই ভেবে দূরে সরে ছিলাম অনেক কষ্টে। কিন্তু তোমার ইগনোর আমার সহ‍্য হচ্ছিলো না।”

নম্রতা আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল
“আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। তাই তো এমনটা করতে পারলেন।”

তূর্য ভ্রুকুচকে বলল
“কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসিনা!”

“ভালোবাসেন যে এটা কখনো বলেছেন আমায়!”

“সবসময় কি মুখে সব কিছু বলতে হয়। আর তুমিও কখনো আমার বলেছো!”

নম্রতা তূর্যকে এড়িয়ে চলে যেতে নিবে তখনই তূর্য নম্রতা হাত টেনে ধরলো। ধীর কন্ঠে বলল
“রাস্তায় ছেলেদের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলবেনা।”

নম্রতা ভ্রুকুচকে তাকালো তূর্যের দিকে। তূর্য আর দাঁড়ালোনা সেখানে। ধুপ ধুপ পায়ে চলে গেল সেখান থেকে। নম্রতা শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো তূর্যের যাওয়ার দিকে। কি বলে গেল এই লোক! পর মুহূর্তেই কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া কথা মনে পড়তেই হাজারো লজ্জা এসে ভিড় করলো নম্রতার চোখে মুখে। নম্রতা আলতো হাতে হাত বোলালো ঠোঁটে।

১৭.
সকালের মিষ্টি রোদ চোখে এসে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল শুভ্রতার। শুভ্রতা পিটপিট করে তাকিয়ে রাদিফের উন্মুক্ত বুক দেখলো। নিজের রুমের বিছানায় দেখে বুঝতে পারলো রাতে সে ছাদেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। শুভ্রতা মুচকি হেসে রাদিফের বুকে আঁকিবুকি করতে লাগল। শুভ্রতা মুখটা উঁচু করে রাদিফের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকালো। আলতো হাতে রাদিফের গালে হাত বোলালো। হুট করেই শুভ্রতা রাদিফের গালে একটা চুমু বসিয়ে দিলো। সাথে সাথে রাদিফ চোখ খুলে ফেলল।

রাদিফকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে শুভ্রতা লজ্জায় পড়ে গেল। রাদিফ শুভ্রতার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল
“শুভ সকাল মায়াবতী।”

শুভ্রতা নরম কন্ঠে বলল
“শুভ সকাল”

রাদিফ শুভ্রতাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আবারও চোখ বুজলো। শুভ্রতা অসহায় কন্ঠে বলল
“ছাড়ুন না। অনেকবেলা হয়েছে তো।”

রাদিফ একটু ভেবে বলল
“আগে আমাকে একটা কিস দিবে তারপর ছাড়বো।”

শুভ্রতা কাচুমাচু করতে লাগল। রাদিফ নিজেই শুভ্রতার ঠোঁটে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিলো ওকে। শুভ্রতা ছাড়া পেতেই দৌড় দিলো ওয়াশরুমে। রাদিফ মুচকি হেসে বালিশ জড়িয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো।

শুভ্রতা ফ্রেশ হয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে রুমের দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে পরলো। হাটা দিলো রান্নাঘরের দিকে।

রেহানা বেগম রান্নাঘরে চা বানাচ্ছিলেন। মেয়েকে আসতে দেখে মুচকি হেসে বললেন
“কিছু লাগবে তোর। রাদিফ উঠেছে।”

শুভ্রতা মায়ের গায়ের সঙ্গে লেপ্টে দাঁড়িয়ে বলল
“না কিছু লাগবেনা। উনি এখনো উঠেননি।”

রেহানা বেগম কাপে চা ঘেলে মেয়ের থুতনিতে হাত রেখে বললেন
“মাশাল্লাহ্ আমার মেয়েটাকে ঘোমটা দিয়ে একদম পুতুল বউয়ের মতো লাগছে। তা মা ওই বাড়িতে তুই ভালো আছিস তো।”

শুভ্রতা মুচকি হেসে বলল
“মা ওই বাসায় আমি কি করে ভালো না থাকি। সবাই আমাকে কত যত্ন করে জানো। বাবা তো তার মেয়ের মতো খেয়াল রাখে। আর রিজভী ভাইয়াও সারাদিন ভাবি ভাবি করে মাথায় তুলে রাখে আমায়।”

“আর রাদিফ!”

রাদিফের কথা কানে পরতেই শুভ্রতা লাজুক হাসলো। মেয়ের চেহারা দেখেই রেহানা বেগম যা বোঝার তা বুঝে গেলেন। উনার বুকে যেন প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল মেয়ের সেই হাসিতে। রেহানা বেগম মেয়ের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে বললেন
“তোর বাবা বসার রুমে আছেন। আর বেয়ান সাহেব এখনো উঠেননি। উনি উঠলে ওনার চা ঢালবোনি। তুই গিয়ে এ‍টা তোর বাবাকে দিয়ে আয়।”

শুভ্রতা হাসিমুখে চায়ের কাপ নিয়ে চলে গেল।

শামসুল হক বসার রুমে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন।

শুভ্রতা মুচকি হেসে বাবার দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল
“বাবা তোমার চা।”

শামসুল হক ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে খবরের কাগজ বন্ধ করে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে শুভ্রতাকে ইশারায় ওনার পাশে বসতে বললেন।

শুভ্রতা বাধ‍্য মেয়ের মতো বাবার পাশে বসলো। শামসুল হক মেয়েকে নিজের বুকে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন
“পরীক্ষার আগের রাতে তো তুই একা খেতে পারিস না। আমিই বরাবর তোকে খাইয়ে এসেছি। তাই এ নিয়ে বেশ টেনশন হচ্ছিলো। পরে রাদিফ বাবাকে কল করলাম ও বলল তুই খেয়েছিস।”

শুভ্রতা মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল
“জানো বাবা তুমি যেমন পরীক্ষার আগের রাতে আমার খেয়াল রাখতে। উনিও না ঠিক ওমনভাবেই আমার খেয়াল রাখেন।”

শামসুল হক বেশ খুশি হলেন মেয়ের কথায়। না সে মেয়ের জন‍্য ঠিক মানুষকেই বাছাই করেছেন। মেয়ে তার সুখে আছে আর কি চাই।

তখনই নম্রতার অভিমানী কন্ঠ ভেসে আসলো ওনার কানে। নম্রতা ঠোঁট উল্টে বলছে
“হ‍্যাঁ এখন তো বড় মেয়েকে পেয়ে গেছো। আমাকে কিভাবে চিনবা। আমি তো কেউ না।”

ছোট মেয়ের কথায় হেসে দিলেন শামসুল হক। ইশারায় কাছে ডাকলেন ওকে। নম্রতা হাসিমুখে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো বাবাকে।

শামসুল হক দুই মেয়েকে বুকে নিয়ে প্রশান্তির হাসি হাসলেন। এই দুই মেয়েই তো তার হাসির কারণ।

রেহানা বেগম দূর থেকে এমন দৃশ্য দেখে কেঁদে দিলেন। এটা কোনো দুঃখের অশ্রু না এটা আনন্দের অশ্রু। ওড়নার শেষ অংশ দিয়ে আলতো করে সে অশ্রু মুছে রেহানা বেগম মুচকি হেসে রান্নাঘরে চলে গেলেন।

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৯

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৯

রাদিফ গাড়ির কাছে গিয়ে দরজা খুলতেই নম্রতা নিজেকে ঠিক করে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে বসে রইলো। রাদিফ ইশারায় শুভ্রতাকে গাড়ির ভিতরে দেখতে বলল।

শুভ্রতা গাড়ির ভিতরে তাকাতেই নম্রতা বলে উঠলো
“টুকি আপু।”

শুভ্রতা অবাক হয়ে গেল। নম্রতা জড়িয়ে ধরলো বোনকে। শুভ্রতা আবেগে কান্না করে দিলো।

রাদিফ ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো
“কেমন লাগল সারপ্রাইজ!”

শুভ্রতা চোখের কিণারার পানিটা মুছে নিয়ে বলল
“অনেক ভালো। ধন‍্যবাদ।”

রাদিফ হাতের আইসক্রিম নম্রতাকে দিলো। আর তাড়া দিয়ে বলল
“চল সবাই বাসায় যাই।”

গাড়িতে উঠতে নিবে তখনই রাদিফের ফোনটা বেজে উঠলো। রাদিফ ফোনটা বের করে দেখলো রেহানা বেগম কল করেছে। রাদিফ কল রিসিভ করে সালাম দিলো। রেহানা বেগম ফোন রিসিভ করে বললেন
“বাবা তোমরা সবাই কোথায়?”

রাদিফ গাড়িতে বসতে বসতে বলল
“আম্মু আমরা শুভ্রতার ভার্সিটির সামনে আসি। কেন আম্মু কিছু কি হয়েছে!”

“তেমন কিছু না নম্রতার থেকে সবটাই শুনলাম। তোমরা ওই বাসায় না গিয়ে এই বাসায় চলে আসো। শুভ্রতার ও তো দুইদিন পর আবার পরীক্ষা। সমস্যা হবে না। তোমাদের জন‍্য আমি রান্না করেছি।”

“কিন্তু আম্মু!”

“কোনো কিন্তু শুনতে চাচ্ছিনা। আমি বসে আছি তোমাদের জন‍্য খাবার নিয়ে।”

রাদিফ না করতে পারলো না। মুচকি হেসে বলল
“আচ্ছা আম্মু আসছি।”

“ও হ‍্যাঁ ভালো কথা রিজভী আর বেয়ান সাহেবকেও আমাদের বাসায় দাওয়াত কেমন! একসঙ্গে খাবো দুপুরে আর রাতে। তোমাদের বিয়ের পর তো আর একসঙ্গে হওয়াই হয় নি।”

রাদিফ কিছুটা ভেবে বলল
“আচ্ছা আম্মু আমি বলে দিবোনি।”

রেহানা বেগম কল কেটে দিলেন। মুখে তার হাসি ফুটে উঠলো। মেয়েটাকে কত দিন নিজের কাছে বসিয়ে খাইয়ে দেয় না। যদিও বা কথা হয় ফোনে। মাসে দু একবার আসে তবুও মায়ের মন কি আর এতটুকুতে ভরে। আবার ছেলে দুটোরও মা নেই সে তো একটু আদর যত্ন করে খাওয়াতেও পারে। ছেলে দুটোও বেশ ভালো। রাদিফের ব‍্যবহারে বরাবরই মুগ্ধ তিনি।

রেহানা বেগম শামসুল হককে কল দিয়ে সব জানালেন। আর তূর্য রিজভী আর রফিকুল সাহেবকেও দাওয়াত দিতে বললেন। শামসুল হকও বউয়ের কথায় রাজি হয়ে গেলেন। তিনি দাওয়াত দিবেন বলে জানিয়ে দেন।

কল রাখতেই শুভ্রতা প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“কি বললো আম্মু!”

রাদিফ গাড়ি স্ট্রার্ট দিয়ে বলল
“আম্মু সবাইকে ওই বাসায় যেতে বলেছে। দাওয়াত দিয়েছে।”

শুভ্রতার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।

১৬.
রাতের খাবার শেষে রাদিফ রিজভী শুভ্রতা আর নম্রতা এসে ছাদে বসেছে আড্ডা দিতে। তূর্যের কি যেন কাজ থাকায় সে রুমেই আছে। রিজভী পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে তুরের দিকে। যা রাদিফের চোখ এড়ালো না। তুর শুভ্রতা আর নম্রতার সঙ্গে গল্প করছে। রাদিফ রিজভীকে ধাক্কিয়ে বলল
“কি হয়েছে!”

রিজভীর ধ‍্যান ভাঙলো। ঠোঁটে জোড়পূর্বক হেসে বলল
“না কিছু হয় নি তো।”

রাদিফ মাথা ঝাঁকিয়ে বাঁকা হাসলো।

তূর্য এসে রাদিফের পাশে বসে বলল
“সরি সরি দেড়ি হয়ে গেল।”

রাদিফ মুচকি হেসে বলল
“সমস‍্যা নেই ভাইয়া। আসো সবাই ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলি।”

শুভ্রতা বসা থেকে উঠে বলল
“আমি বোতল আনছি।”

বলেই সে চলে গেল। খানিক বাদেই শুভ্রতা একটা বোতল আনলো। রাদিফ বোতল নিয়ে ঘোরাতে লাগল। বোতল প্রথমে রাদিফের দিকেই থাকলো। তুর শয়তানি হাসি দিয়ে বলল
“ভাইয়া ট্রুথ না ডেয়ার।”

রাদিফ টিশার্টের কলারটা একটু ঝাকুনি দিয়ে বলল
“আমি সাহসী তাই আমি ডেয়ার নিবো।”

তুর মুখ টিপে হেসে বলল
“তাহলে এখনি শুভ্রতাকে একবার হাঁটু গেড়ে সিনেমাটিক ভাবে ভালোবাসি বলে দেখান।”

শুভ্রতা চোখ বড় বড় করে তাকালো তুরে দিকে। তুর দাঁত বের করে হাসলো। রাদিফ বাঁকা হেসে বলল
“ও এই ব‍্যাপার।”

রাদিফ এদিক সেদিক তাকালো ছাদের একটা টবে গোলাপ ফুটে আছে। যদিও বা তেমন একটা তাজা নেই। তাতে কি। রাদিফ শুভ্রতাকে দাঁড় করালো। দৌড়ে গিয়ে গোলাপ ফুলটা ছিড়ে আনলো। হাঁটু গেড়ে বসে বলল
“আমার ফুলের জন‍্য এই ফুলটা এনেছি। সে কি এই ফুলটা নিয়ে আমার ভালোবাসা কবুল করবে। বলবে কি ভালোবাসি প্রিয়!”

তুর বলে উঠলো
“শুভ্র বলে দে এখনি সুযোগ।”

তূর্যও বলে উঠলো
“বলে দেও শুভ্রতা।

রিজভীও বলল
“ভাবি বলে দেও ভাইয়াটা তাছাড়া বিরহে খান খান হয়ে যাবে।”

নম্রতা এবার খানিকটা বিরক্তি নিয়েই বলে উঠলো
“আপু এতো সময় নিচ্ছিস কেন! আমি হলে এতক্ষণে বলে দিতাম। ভিডিও ধরে থাকতে থাকতে হাত ব‍্যথা হয়ে গেল।”

তূর্য রাদিফ আর শুভ্রতার দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে নম্রতার দিকে তাকালো। নম্রতা তূর্যের সে তাকানিকে পাত্তা দিলো।

শুভ্রতা পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে প্রিয়তমের ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া সেই গভীর দৃষ্টির দিকে। হাত বাড়িয়ে রাদিফের হাতে হাত রেখে বলল
“আপনার শুভ্রতা আপনার ভালোবাসা কবুল করলো জনাব। ভালোবাসি আপনাকে আপনার মায়াবতী হয়ে।”

রাদিফ মুহুর্তেই দাড়িয়ে পরলো। শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রতাকে। শুভ্রতাও জড়িয়ে ধরলো। বাকিরা হাত তালি দিতে লাগল। শুভ্রতা বেশ লজ্জা পেল। লজ্জা কান দিয়ে গরম হাওয়া বের হচ্ছে তার। লজ্জায় সে মুখ গুজলো রাদিফের বুকে। রাদিফ মুচকি হেসে তুরকে চোখ দিয়ে ধন্যবাদ জানালো। এটা তাদের সবার করা প্লান ছিলো। তুর হাসলো।

তুর সবাইকে ইশারা করতেই সবাই কেটে পড়লো সেখান থেকে।

রাদিফ পকেট থেকে একটা চেইন বের করলো। যত্ন সহকারে চেইন টা পড়িয়ে দিলো শুভ্রতার গলায়। শুভ্রতা খেয়াল করলো চেইনে ইংরেজি বর্ণের S আর R লেখা। শুভ্রতা মুচকি হাসলো। রাদিফও মুচকি হেসে শুভ্রতার দু গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেল। শুভ্রতা চোখ বুজে অনুভব করলো মুহূর্তটা।

রাদিফ এবার গাল ফুলিয়ে বলল
“আমিই খালি চুমু খাই।”

শুভ্রতা এবার মাইনকার চিপায় পড়ে গেল। কি বলে কি এই লোক! তার কি লজ্জা করবেনা! এই বেডার না হয় লজ্জা নেই ছোট ভাইবোন বড় ভাই এর সামনে ভালোবাসি ভালোবাসি করে। কিন্তু তার তো লজ্জা আছে নাকি।

শুভ্রতা আশেপাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলল
“ওরা সবাই কোথায় গেল!”

রাদিফ শুভ্রতার কোমরে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে এনে বলল
“কাবাবে হাড্ডি কেউ হতে চায়না তাই চলে গেছে। এখন তুমি তোমার কাজ করো তো।”

শুভ্রতার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। সে কাঁপা কাঁপা ঠোঁট নিয়ে রাদিফের কপালে চুমু খাওয়ার জন‍্য চোখ বুজতেই। রাদিফ দুষ্টু হেসে ওর ঠোঁট এগিয়ে দিলো। শুভ্রতা চুমু বসিয়ে বুঝতে পারলো রাদিফ কি করেছে। শুভ্রতার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। রাদিফ দুষ্টু হাসছে। শুভ্রতাকে সে ছেড়ে দিয়েছে। শুভ্রতা কোমরে হাত রেখে বলল
“এটা কি হলো!”

রাদিফ কলার উঁচিয়ে শুভ্রতার মুখ বরাবর নেমে এসে ফিসফিসিয়ে বলল
“কেন জান ভালো লাগে!”

শুভ্রতার কানে কথা যেতে শুভ্রতা রাদিফের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। মুখ ভেংচে বলল
“আপনি চিটিং করেছেন!”

রাদিফ মুখটাতে ইনোসেন্ট ভাব ফুটিয়ে তুলে বলল
“চিটিং যখন করেছি তখন এর শাস্তি হিসেবে না হয় আরেকটা চুমু খাই তোমায়।”

শুভ্রতা আবারও অবাক চোখে তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফ ওর তাকানো দেখে হো হো করে হেসে দিলো। রাদিফকে হাসতে দেখে শুভ্রতাও হেসে দিলো।

ছাদে থাকা মাদুরে রাদিফ গিয়ে শুয়ে পরলো আর বলল
“মায়াবতী আসো আমার একসঙ্গে রাত্রি বিলাশ করি।”

শুভ্রতা মুচকি হাসি দিয়ে রাদিফের পাশ ঘেঁষে শুয়ে পরলো। রাদিফ শুভ্রতাকে একহাত দিয়ে আগলে শুভ্রতাকে নিজের বুকে শোয়ালো। শুভ্রতা মুচকি হাসলো। রাদিফ শুভ্রতা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
“এই নিস্তব্ধ নিঝুম রাত সাক্ষী তোমার আর আমার ভালোবাসার। হে মায়াবতী কন‍্যা এই অধম পুরুষের মনিকোঠায় যে তোমারই রাজ‍্যত্ব চলে প্রতিটাক্ষণ প্রতিটা মুহূর্ত। তুমি কি বোঝনা এই হৃদয়ের আকুল আবেদন। এই ভালোবাসার পাগল প্রেমিক পুরুষকে কি সে বোঝেনা!”

শুভ্রতা এতটা সময় মন দিয়ে শুনছিলো রাদিফের কথা। রাদিফের কথা শেষ হতে শুভ্রতা চিত হয়ে শুয়ে আকাশপানে তাকিয়ে বলল
“ভালোবাসা কি প্রেমিক পুরুষকে সবসময় বলে বোঝাতে হয়। সে কি নিজে বুঝে নিতে পারেনা! তার মায়াবতী কি তাকে ভালোবাসি নাকি!”

রাদিফ শুভ্রতার দিকে কাত হয়ে শুয়ে শুভ্রতাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
“বুঝি তো সব। কিন্তু আমার আকুল মন যে মানে না। শুধু শুনে মন চায়।”

শুভ্রতা রাদিফের চোখপানে তাকালো। রাদিফ তার দিকেই গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। তার সেই গভীর দৃষ্টিতে শুভ্রতা ডুবে যাচ্ছে। চোখে মায়ায় নিজেকে বেঁধে ফেলছে। শুভ্রতা রাদিফের গালে এক হাত রাখলো। রাদিফের ফর্সা গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি বেশ আকর্ষণীয় লাগে শুভ্রতার কাছে। গভীর সেই দৃষ্টি। এই বলিষ্ট দেহের সুদর্শন ছেলেটা শুধু তার। হ‍্যাঁ শুধুই তার। শুভ্রতা নরম কন্ঠে বলল
“ভালোবাসি প্রিয়তম। অনেক অনেক ভালোবাসি আমার একান্ত উনিটাকে।”

রাদিফের ঠোঁটে এক অদ্ভুত সুন্দর মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। সে শুভ্রতাকে নিজের বুকে শক্ত করে আকড়ে ধরলো।

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৮

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৮

১৫.
শুভ্রতার ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামিয়ে রাদিফ বলল
“টেনশন নিও না। তুমি সব পারবে। ধীরেসুস্থে পরীক্ষা দেও। আমি তোমাকে পরীক্ষা শেষে নিতে আসবো।”

শুভ্রতা হ‍্যাঁবোধক মাথা নাড়ায়। রাদিফ শুভ্রতাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে ওর কপালে একটা দীর্ঘ চুমু দিলো।

শুভ্রতা চোখ বুজে মুহূর্তটা অনুভব করলো। রাদিফ শুভ্রতাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
“এবার যাও।”

শুভ্রতা লাজুক হেসে গাড়ি থেকে নেমে গেল।

রাদিফ তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার যাওয়ার দিকে। শুভ্রতা চোখের আড়ালে চলে যেতেই রাদিফ গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।

ক্লাসে এসে শুভ্রতা দেখলো তুর চুপচাপ বসে আছে। শুভ্রতা মুচকি হেসে তুরের কাছে গিয়ে বলল
“কিরে এতো চুপচাপ যে! টেনশন হচ্ছে নাকি রে!”

তুর শুভ্রতাকে দেখে বলল
“তুমি তো পইড়া ফাটাইয়া ফালাইছো। আমি কিছু পারিনা।”

শুভ্রতা সিটে বসতে বসতে বলল
“আমি টেনশন নিস না আমি তোমাকে দেখাবোনি।”

তুর দাঁত বের করে হেসে বলল
“এই না হলে আমার দোস্ত।”

শুভ্রতা হাসলো।

—————–

নম্রতা কলেজে মনমরা হয়ে বসে আছে। ওর যে কয়েকটা ফ্রেন্ড ছিলো সব আলাদা হয়ে গেছে। সে একদম একা হয়ে গেছে। সেইজন‍্য তার কলেজ আসতে একদমই ভালো লাগে না। চারমাস হতে চলল তবু কোনো ফ্রেন্ড হয়নি তার। কিন্তু কি আর করার কলেজ তো আসতেই হতো। নম্রতা মন খারাপ করে বসে ছিলো তখনই একটা মেয়ে তার পাশে এসে বসে বলল
“মন খারাপ”

নম্রতা তাকালো মেয়েটার দিকে। মেয়েটা হাসিমুখে ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। নম্রতা মাথা নাড়ালো। মেয়ে‍টা হাত বাড়িয়ে বলল
“আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি! আসলে এই কলেজে আমার একটাও ফ্রেন্ড নেই। কাউকে পাইও নি ফ্রেন্ড করার। তারপর দেখলাম তুমি ও একা আমি ও একা।”

নম্রতা ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলল
“কেন না!”

মেয়ে‍‍টার সঙ্গে টুকিটাকি কথা বলতে বলতে জানতে পারলো মেয়েটার নাম স্নেহা।

ক্লাস শেষে নম্রতা আর স্নেহা কলেজ গেট দিয়ে বের হচ্ছিলো। তখনই একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে। নম্রতার কপাল কুচকে এলো। স্নেহা বিষয়টি খেয়াল করে হেসে বলল
“নম্রতা এটা আমার ভাইয়া ফয়সাল।”

নম্রতা মুচকি হেসে সালাম জানালো। ফয়সালও মুচকি হেসে সালামের উত্তর দিয়ে বলল
“কেমন আছো?”

“এই তো আলহামদুলিল্লাহ্ ভালোই আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?”

“আমিও ভালো আছি। তা তোমাকে কি কেউ নিতে আসবে নাকি একাই যাবে।”

ফয়সালের কথায় নম্রতার হুট করেই তূর্য ওইদিনের কথা মনে পড়ে গেল। যেইদিন সে তূর্যের বাইকে বাড়ি গিয়েছিল। নম্রতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁটে হাসি বজায় রেখেই বলল
“না ভাইয়া আমি একাই যাবো। আমি তাহলে যাই আম্মু তাছাড়া টেনশন করবে। অন‍্য একদিন কথা হবে।”

“আচ্ছা আমি তাহলে রিক্সা ধরে দেই।”

“দরকার নেই ভাইয়া। আমি পারবো। কষ্ট করতে হবেনা।”

“ধুর কষ্ট কিসের তুমি আমার বোনের ফ্রেন্ড। কলেজ এসেছে বেচারি চার মাস আগে আর কেবল ফ্রেন্ড পেল।”

স্নেহা রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো
“ভাইয়া ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু!”

ফয়সাল মুখ ভেংচালো। নম্রতা ওদের কান্ডে হাসলো। নম্রতা না করার পরেও ফয়সাল তাকে রিক্সা ডেকে দেয়। নম্রতা ওদের বিদায় দিয়ে রিক্সায় উঠে পড়ে।

ফোনটা বাজতেই নম্রতা ব‍্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে রাদিফের ফোন। নম্রতা কল রিসিভ করে কানে ধরে। রাদিফ অপর পাশ থেকে বলল
“শালিকা তুমি কোথায়! কলেজ থেকে বের হয়ে গিয়েছো!”

নম্রতা ভ্রুকুচকে জিঙ্গাসা করে
“কেন ভাইয়া কিছু কি হয়েছে! আপু ঠিক আছে তো।”

“হুম তোমার আপু একদম ঠিক আছে। তা তুমি কোথায়!”

“আমি রিক্সায় বাসায় যাচ্ছি।”

“তুমি একটু তোমার আপুর ভার্সিটির সামনে আসতে পারবে?”

নম্রতা কপাল কুচকে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলল
“কি হয়েছে বলো তো ক্লিয়ার করে!”

“তেমন কিছুই না। আসলে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতাম।”

“কিন্তু ভাইয়া কথা হচ্ছে তোমাদের মাঝে আমি কেন কাবাবের হাড্ডি হবো।”

“শালিকা তুমি কিন্তু বেশ পেকেছো। তোমার আব্বুকে জানাতে হবে দেখছি। এখন কথা না বাড়িয়ে চলে এসো তো। তুর ও যাবো। কিছু খাওয়াদাওয়া করে আড্ডা দিয়ে বাসায় যেও না হয়।”

নম্রতা মুচকি হাসলো। সে আসছে বলে কল কেটে রিক্সা ভার্সিটির দিকে ঘোরাতে বলল।

নম্রতা ভার্সিটির সামনে আসতেই রাদিফ হাসি মুখে এগিয়ে এলো। নম্রতা ভাড়া দিতে নিবে তখনই রাদিফ ভাড়া বের করে দিতে নিবে তখনই নম্রতা বলল
“ভাইয়া কি করছো! আমি দিচ্ছি তো।”

রাদিফ ভাড়া দিয়ে বলল
“কথা না আর। চলো তো।”

নম্রতা আর কথা বাড়ালো না। রাদিফ ওকে গাড়িতে বসতে বলল। এসি অন করে বলল
“এখানে থাকো আমি তোমার জন‍্য ঠান্ডা কিছু নিয়ে আসি।”

রাদিফ নম্রতার উত্তর না শুনেই চলে গেল। নম্রতা সিটে গা এলিয়ে বসলো। বেশ ক্লান্ত লাগছে। ফোনটা হাতে নিয়ে তূর্যের লুকিয়ে তোলা ছবিগুলো দেখতে লাগল। আপনাআপনিই ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। সে বিরবির করে বলল
“কেন করলেন এমনটা আমার সঙ্গে! চাচ্ছি ভুলে যেতে কিন্তু পারছিনা কিছুতেই।”

ফোনটা ব‍্যাগে রেখে সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজলো সে।

শুভ্রতা আর তুর পরীক্ষা হয়ে বের হলো। পরীক্ষা বেশ ভালোই হয়েছে শুভ্রতার। শুভ্রতা মনে মনে রাদিফকে ধন্যবাদ দিলো। রাদিফ যে সাপোর্টটা ওকে করেছে সেইজন‍্যই তো আজ তার পরীক্ষাটা এতো ভালো হয়েছে। এইজন‍্য রাদিফ তো কিছু একটা উপহার পেতেই পারে। কিন্তু সে কি উপহার দিবে। থাক না হয় পরে ভেবে চিন্তে একটা ভালো উপহার দিয়ে দিবে। যা রাদিফের সবসময় মনে থাকবে।

শুভ্রতা এগুলোই ভাবছিলো তখন তখন তুর শুভ্রতাকে কুনি দিয়ে গুতিয়ে কুটিল হেসে বলল
“কি দোস্ত জিজুর কথা ভাবছিস নাকি! আজ কেউ নেই বলে।”

শুভ্রতা সরু চোখে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“চোখটা মেলে দেখ। যাকে ইগনোর করছিস, রাগারাগি করছিস। সেও কিন্তু সুযোগ পেলে কম যত্নে রাখবে না তোক।”

তুর কপাল কুচকে বলল
“তুই কি বলতে চাইছিস!”

শুভ্রতা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“রিজভী ভাইয়া কিন্তু তোর ব‍্যবহারে বেশ কষ্ট পাচ্ছে।”

রিজভীর নাম কানে আসতেই তুরের রাগে নাকের পাটা ফুলে উঠলো। খানিকটা ঝাঝালো কন্ঠেই বলল
“ওমন সন্দেহ করা মানুষের যত্ন আমি চাইনা।”

শুভ্রতা তুরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
“দেখ সেই সন্দেহ করে যে ভালোবাসে।”

শুভ্রতা আরো কিছু বলতে নিবে তখনই সেখানে রাদিফ এলো। সে কপাল কুচকে বলল
“ভালোবাসা নিয়ে কি এতো কথা হচ্ছে! আমি ও শুনি একটু।”

শুভ্রতা তাকালো রাদিফের দিকে। মুচকি হেসে বলল
“তেমন কিছুই না। আপনি কখন এসেছেন!”

রাদিফ আইসক্রিম একটা শুভ্রতার হাতে দিয়ে বলল
“বেশ কিছুক্ষণ আগেই এসেছি। তোমার জন‍্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলল
“কি সারপ্রাইজ!”

রাদিফ মুচকি হেসে একটা আইসক্রিম তুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“নেও তুর এটা তোমার জন‍্য।”

তুর মুচকি হেসে বলল
“ধন‍্যবাদ ভাইয়া।”

রাদিফ এবার শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“সারপ্রাইজটা না হয় সময় হলেই দেখতে পাবে।”

বলেই শুভ্রতা একটা হাত ধরে তুরকে বলল
“তুর চলো আজ আমাদের বাসায় আজ খাবে। আড্ডা দেওয়া হবে।”

তুর প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলল
“কেন ভাইয়া কি আছে আজ!”

রাদিফ তাড়া দিয়ে বলল
“চলো তো এতো কথা না বাড়িয়ে।”

তুর আর কথা না বাড়িয়ে ওদের সঙ্গে যেতে লাগল।

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৭

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৭

রিজভী অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো তুরের দিকে। তুর সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রাগে রিক্সা থেকে নেমে যেতে নিবে তখনই রিজভী নরম কন্ঠে বলল
“তুমি থাকো। আমি নেমে যাচ্ছি।”

তুর কিছু বলল না। রিজভী নেমে যেতেই তুর রিক্সাওয়ালাকে বলল
“মামা চলেন।”

রিক্সা চলতে লাগল। রিজভী পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।

১৪.
দেখতে দেখতে শুভ্রতাদের পরীক্ষার দিন চলে এসেছে। কাল শুভ্রতার পরীক্ষা। শুভ্রতা চারপাশে বইখাতা ছিটিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। ঘড়িতে তখন রাত নয়টা।

রাদিফ কেবলি বাহিরে থেকে এসেছে। সে নিজের নতুন বিজনেস নিয়ে বেশ ব‍্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে সে। রাদিফ রুমে প্রবেশ করে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয়েছে শুভ্রতার এমন কান্ডে। রাদিফ চশমাটা ঠিক করে বলল
“এই শুভ্রতা এ তোমার কি অবস্থা!”

শুভ্রতা ঠোঁট উল্টে তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফ ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতার পাশে বসে ওর হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে বলল
“টেনশন নিও না। তুমি পারবে। আমি তোমার পাশেই আছি।”

শুভ্রতা তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফ ক্লান্তিমাখা মুচকি হাসি দিয়ে শুভ্রতার মুখটা নিজের দুহাত দিয়ে ধরে ঠোঁট ছোঁয়ালো শুভ্রতার কপালে। শুভ্রতা চোখ বুজে নিলো।

দীর্ঘ এক চুমু দেওয়ার পর রাদিফ বলল
“তুমি চিন্তা বাদ দিয়ে ধীরেসুস্থে পড়ো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

শুভ্রতা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। রাদিফ মুচকি হাসি বজায় রেখেই পকেট থেকে চকলেট বের করে শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দিলো। শুভ্রতা খুশি মনে চকলেটটা নিয়ে নিলো।

রাদিফের প্রতিদিনের অভ‍্যাস এটা। সে প্রতিদিনই শুভ্রতার জন‍্য চকলেট নিয়ে আসে বাসায় আসার সময়। শুভ্রতার বেশ ভালো লাগে বিষয়টা।

শুভ্রতা উঠে কার্বাট থেকে রাদিফের টিশার্ট বের করে রাখলো। বইখাতা গুছিয়ে টেবিলে রাখলো। বিছানা গুছিয়ে রাখলো।

রাদিফ শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে দেখলো বেডে তার টিশার্ট রাখা। শুভ্রতা টেবিলে বসেছে পড়তে। রাদিফ মুচকি হেসে তোয়ালেটা বারান্দায় মেলে দিয়ে এসে টিশার্টটা পড়ে নিলো। শুভ্রতা পড়ছে মনোযোগ দিয়ে।

রাদিফ মুচকি হেসে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।

রিজভী আর রফিকুল সাহেব খাবার টেবিলে বসে ছিলেন। রাদিফকে একা আসতে দেখে রফিকুল সাহেব কপাল কুচকে বললেন
”মামুণি কোথায়!”

রাদিফ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল
“কাল থেকে ওর পরীক্ষা শুরু তো পড়াশোনা করছে টেনশন করো না। খাওয়া শুরু করো আমি খেয়ে ওকে গিয়ে খাইয়ে দিবোনি।”

রফিকুল সাহেব মুচকি হাসলেন ছেলের আচরণ বরাবরই তাকে মুগ্ধ করে। কি সুন্দর ছেলেটা সবদিকে খেয়াল রেখে চলে।

রিজভী খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। রাদিফ বিষয়টি খেয়াল করেছে। বেশকিছুদিন যাবত রিজভী বেশ চুপচাপ। রাদিফ ভেবে নিলো সময় করে ওর সঙ্গে কথা বলতে বসবে সে। রফিকুল সাহেব ছোট ছেলেকে খেতে না দেখে বললেন
“রিজভী কি হয়েছে খাচ্ছিস না কেন!”

রিজভীর ভাবনায় ছেদ ঘটলো। সে ঠোঁটে জোড়পূর্বক হাসি টেনে বলল
“খাচ্ছি তো বাবা।”

বলে সে খেতে লাগল। রফিকুল সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে খেতে লাগলেন। ছেলেটা তার বেশ চাপা। পেটে বোম মারলেও কথা বের হয় না। ছোট ছেলেটাকে নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত।

খাওয়াদাওয়া শেষে রাদিফ একটা প্লেটে খাবার আর পানি নিয়ে রুমে চলে গেল।

শুভ্রতা তখনো পড়ছিলো। রাদিফ পাশে থাকা চেয়ারটা টেনে শুভ্রতার পাশাপাশি বসলো। শুভ্রতা তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফ ওর চেয়ার ঘুড়িয়ে সামনাসামনি করলো। শুভ্রতা বলল
“আমাকে ডাকলেই পারতেন। আমি ওখানে গিয়ে খেতাম। আপনার…”

রাদিফ শুভ্রতার ঠোঁটে আঙুল রেখে বলল
“এতো কথা শুনতে চাইছিনা। চুপচাপ বাধ‍্য মেয়ের মতো খাবে।”

বলেই ভাত মাখিয়ে শুভ্রতার মুখে ধরলো। শুভ্রতা খেতে লাগল। চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরলো শুভ্রতার। রাদিফ খাবার প্লেটটা টেবিলে রেখে বাম হাত দিয়ে শুভ্রতার চোখের পানি আলতো হাতে পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল
“বাবার কথা মনে পড়ছে!”

শুভ্রতা ছলছল নয়নে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“আপনি কিভাবে আমার মনের সব কথা বুঝে যান!”

রাদিফ মুচকি হেসে খাবার প্লেটটা আবারও হাতে নিলো। শুভ্রতা আবারও বলল
“জানেন তো বাবা ও আমাকে পরীক্ষার আগের রাতে এভাবেই খাইয়ে দিতো।”

রাদিফ আরেক লোকমা ভাত শুভ্রতার মুখে তুলে দিতে দিতে বলল
“পরীক্ষাটা শেষ হলে ওই বাড়িতে নিয়ে যাবোনি কিছুদিন মা বাবার সঙ্গে থেকে এসো।”

শুভ্রতার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো রাদিফের কথায়। সে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল
“সত‍্যি”

রাদিফ শুভ্রতাকে পানি খাইয়ে দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিয়ে বলল
“হুম সত্যি এখন পড়ো। আমি বাবাকে ঔষধ দিয়ে আসছি।”

শুভ্রতা হ‍্যাঁবোধক মাথা নাড়িয়ে পড়তে শুরু করলো।

রাদিফ সবকিছু রান্নাঘরে রেখে রফিকুল সাহেবের রুমে গেল।

রফিকুল সাহেব ল‍্যাপটপে কাজ করছিলেন। রাদিফ বলল
“বাবা কি করছো!”

রফিকুল সাহেব কাজ করতে করতেই বললেন
“রেদোয়ানকে নিয়ে কলেজে বেশ বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। দেখ তো ছেলেটা কাজটা কি করলো!”

রাদিফ ঔষধ ছিড়তে ছিড়তে বলল
“চাপ নিও না সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। সকালে কাজ করো।”

রফিকুল সাহেব দীর্ঘশ্বাস টেনে ল‍্যাপটপ বন্ধ করে ঔষধ খেয়ে নিলেন। খেয়ে শুয়ে পড়লেন। রাদিফ বাবাকে ঘুম পারিয়ে প্রতিদিন কাজ শেষে রান্নাঘরে গেল।

শুভ্রতা মাথায় হাত চেপে বসে আছে। মাথাটা বেশ ধরেছে তার। রাদিফ রান্নাঘর থেকে কফি বানিয়ে রুমে এসে শুভ্রতার কাছে কফির মগটা এগিয়ে দিতেই শুভ্রতা মুচকি হেসে কফির মগটা হাতে নিয়ে খেতে লাগল। কফিটা শেষ হতেই রাদিফ বলল
“আর কতটুকু বাকি আছে?”

“আর বেশি বাকি নেই আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।”

রাদিফ পাশের চেয়ারেটা টেনে বসতে বসতে বলল
“আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। তুমি পড়ো আমি তোমার পাশেই আছি। কিছু দরকার হলে আমাকে বলো।”

“সমস‍্যা নেই আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।”

“তোমার সমস্যা নাই থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে। চুপচাপ পড়ো। একসঙ্গে ঘুমাবো।”

শুভ্রতা আর কথা বাড়ালো না। কারণ জানে এই লোকের সঙ্গে কথায় সে পারবেনা। এই লোক যা বলবে তাই করবে। শুভ্রতা আবার পড়তে লাগল।

আরো ঘন্টাখানেক মনোযোগ দিয়ে পড়ে শুভ্রতা রাদিফের দিকে তাকাতেই দেখলো সে পলকহীনভাবে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। শুভ্রতা নিচু কন্ঠে বলল
“আমার পড়া শেষ।”

রাদিফ মুচকি হেসে বেডের দিকে এগিয়ে গেল। শুভ্রতা লাইট অফ করে বেডে আসতেই রাদিফ ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল চোখ বুজে।

শুভ্রতা ও মুচকি হেসে চোখ বুজলো।

————–

নম্রতা অস্থিরচিত্তে ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। সে কয়েকদিন যাবত দেখছে তূর্য তাকে এড়িয়ে চলছে। নিজে ফোন করছেনা। আবার সে কল করলে ব‍্যস্ততা দেখিয়ে কেটে যাচ্ছে। যা নম্রতাকে বিরক্ত করে তুলেছে। হঠাৎ করে কি এমন হলো লোকটার। আজও সে কল করেছিল।

“ব‍্যস্ত আছি ফ্রি হলে কথা কল দিবোনি।” বলেই নম্রতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিয়েছে তূর্য।

ঘড়িতে রাত বারোটা তূর্যের এখনো কোনো কল বা মেসেজ নেই। নম্রতা ফোনটা পাশে রেখে মাথা ঠেকালো বারান্দার দেয়ালের সঙ্গে। পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রইলো ঘুটঘুটে আকাশটার দিকে। আজ চাঁদ নেই। তাহলে কি তার মতো আকাশের মন খারাপ। হয়তো বা তাই। তা না হলে কি হাসা বন্ধ করে দেয়।

মৃদু বাতাস বইছে। নম্রতার খোলা চুলগুলো বাধাহীন ভাবে উড়ছে। সেদিকে তার খেয়াল নেই। এক ধ‍‍্যানে আকাশপানেই সে তাকিয়ে আছে।

তূর্য এমন ধারার ব‍্যবহার সে সহ‍্য করতে পারছেনা। দিনে পাঁচটা মিনিটও কি ওর সঙ্গে কথা বলা যায় না। এতোই ব‍্যস্ত সে। হয় তো যায় কিন্তু ইচ্ছে করেই করে না সে। নম্রতা চোখ বুজলো। এতক্ষণ যাবত আটকে রাখা নোনাজল গুলো চোখের কাণিশ ছেড়ে গাল বেয়ে নেমে যেতে থাকলো।

নম্রতা হুট করেই উঠে দাঁড়ালো। চোখের পানিটুকু হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে বিরবির করলো
“সে যখন তাকে চায় না। তাহলে তার জন‍্য নিজে কষ্ট পাবে। পাবেনা সে কষ্ট। সে কি কারো খেলার পুতুল নাকি একবার নিজে নিজে কথা বলবে আবার নিজে নিজে কথা বন্ধ করে দিবে। সেই দেখিয়ে দিবে ইগনোর কাকে বলে?”

নম্রতা তূর্যকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিলো। গটগট পায়ে রুমে এসে ঠাস করে শুয়ে পড়লো। এগুলো ভাবার আর সময় নেই তার কাছে। এখন থেকে আবারও নিজের পড়ালেখায় মন দিবে সে। এগুলো ভাবতে ভাবতেই নম্রতা কখন যে ঘুমের রাজ‍্যে পারি দিলো টেরও পেল না।

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৬

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৬

রিজভী ফোন হাতে নিয়ে ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। মাথাটা বেশ ধরেছে তার। মাথারই বা আর দোষ কি! কম তো আর চাপ দেয়নি এই মাথায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিজভী। তুর এখনো ব্লক খুলেনি। মেজাজ খারাপ হলো রিজভীর। মেয়েটা এতো সাহস কোথায় পায় যে তাকে ব্লক করে। ভেবে পায় না রিজভী।

১৩.
কেটে গেছে চারটা দিন। রিজভী সেই রাতের পর গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে। তাই আশেপাশে হুশ ছিলো না। তুরও এই দুই দিন বাড়িতেই ছিলো। শরীরটা সুস্থ হতেই রিজভী শুভ্রতার কাছে গিয়ে তুরের কথা জিঙ্গাসা করে। শুভ্রতা প্রথমে বলতে না চাইলেও রিজভীর জোড় করায় শুভ্রতা থাকতে না পেরে তুরের অসুস্থতার কথা জানায়। সে জানায় সেইদিন নাকি তুরের মামাতো ভাই আর তার বউ বাচ্চা নিয়ে এসেছিলো। তাদের সঙ্গেই ফুচকা খেয়েছিলো। ভুল করে ঝাল খেয়ে ফেলেছিলো সে।

সব কথা শুনে রিজভীর মাঝে যেন অপরাধবোধ আরো বেড়ে যায়। ছেলেটা তাহলে তুরের কাজিন ছিলো। বিবাহিত সে। এমনকি বাচ্চাও আছে। কি ভুলটাই না করলো সে। রাগের সময় কেন যে মাথা ঠিক থাকে না তার। ভেবেই নিজেকে নিজে হাজারো গালি দিতে লাগল রিজভী।

রিজভী কিযেন ভেবে বলল
“ভাবি তুমি কলেজ কবে যাবে!”

শুভ্রতা একটু ভেবে বলল
“কালকেই যেতে হবে। কিছুদিন পর এক্সাম আছে তো আমাদের। কিছু নোট সংগ্রহ করতে হবে।”

রিজভীর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। সে হাসিমুখেই চলে গেল নিজের রুমে।

—————————

নম্রতা আজ কলেজ এসে আটকা পড়েছে। একটাও রিক্সা পাচ্ছেনা। বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে আছে তার। তখনই তার সামনে একটা বাইক এসে দাঁড়ালো। নম্রতা ভ্রুকুচকে তাকালো সেদিকে। তূর্যকে দেখে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো নম্রতার। তূর্য হেলমেটটা খুলে নম্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“ছুটি কখন হয়েছে। এখনো এখানে কি করছো!”

নম্রতা মুখটা ছোট করে বলল
“রিক্সা পাচ্ছিনা।”

তূর্য ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“বাইকে উঠে বসো।”

“কিন্তু”

“এমনিতেই দেড়ি হয়ে গেছে। এখন ভেবে দেখ যাবে নাকি যাবে না।”

নম্রতা খানিকটা বাধ‍্য হয়েই তূর্যের পিছনে উঠে বসলো। তূর্য হেলমেট এগিয়ে দিলো। নম্রতা হেলমেটটা পড়ে বাইক ধরে বসতেই তূর্য বলে উঠলো
“কাধে হাত রাখো তাছাড়া পড়ে যাবে।”

নম্রতা কাঁপা হাতে তূর্যের কাধে হাত রাখলো। তূর্য মুচকি হাসলো নম্রতার অগোচরে। অন‍্যদিকে নম্রতার হৃদস্পন্দন যেন বেড়েই চলছে ক্রমান্বয়ে।

তূর্য বাইক স্টার্ট দিলো। নম্রতার কপালে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো উড়ছে আপন গতিতে। বেশ বিরক্ত হচ্ছে নম্রতা। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে আছে। তূর্য সবটাই লুকিং গ্লাসে দেখছে।

——————

রাদিফ আর শুভ্রতা কলেজে ঢুকেই বেশ অবাক হলো। কলেজ ক‍্যাম্পাসে বেশ ভীড় জমে আছে। রাদিফ ভ্রুযুগল কুচকে বলল
“হঠাৎ কি হলো কিছু জানো!”

শুভ্রতা রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“নাতো জানিনা কিছু।”

তখনই তুর ভীড় থেকে বেড়িয়ে এলো। শুভ্রতা একটু এগিয়ে গিয়ে বলল
“কি হয়েছে রে কিছু জানিস!”

রাদিফও এগিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তুর বলল
“রেদোয়ানকে ধরতে পুলিশ এসেছে।”

রাদিফ অবাক হয়ে বলল
“কেন কি হয়েছে! কি বলছো এগুলো তুর!”

“হুম সত্যি বলছি ভাইয়া। রেদোয়ান রিয়ার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে রিয়াকে মেরে ফেলেছে। রিয়ার বাবা এইজন‍্য রেদোয়ানের নামে মামলা করেছে। তাই আজ পুলিশ ওকে ধরতে এসেছে।”

“কি বলছো কবে হলো এসব!”

“আসলে ভাইয়া বলতে পারবোনা। এতদিন তো আমি আর শুভ্র কেউই কলেজ আসিনি।”

শুভ্রতা তুরের কথায় তপ্ত শ্বাস ফেলল। রাদিফ শুভ্রতার দিকে তাকালো। শুভ্রতা ভাবলেশহীন। তুরও বিষয়টা খেয়াল করলো। রাদিফ শুভ্রতাকে বলল
“তাহলে ক্লাস করবা নাকি বাসায় যাবা।”

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলল
“বাসায় কেন যাবো!”

রাদিফ আমতা আমতা করে বলল
“না মানে ঝামেলা হচ্ছে তো তাই বললাম আর কি!”

শুভ্রতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“এমন কিছু অনেক আগে থেকেই হওয়ার ছিলো। একটা কথা মনে রাখবেন আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। আপনি চাইলে অপেক্ষা করতে পারেন। নোট নিয়ে না হয় যাবো।”

রাদিফ মাথা নাড়িয়ে বলল
“আচ্ছা আমি অপেক্ষা করছি তুমি নোট নিয়ে এসো।”

রাদিফ গিয়ে গাড়িতে বসলো।

তুর আর শুভ্রতা ক্লাসে দিকে এগোতেই রেদোয়ানের দিকে চোখ পড়লো শুভ্রতার। রেদোয়ানের মাথা নিচু করে আছে। পুলিশ ওকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। শুভ্রতা ছোট প্রসারিত করে হেসে তুরকে বলল
“জানিস তো মানুষের পাপে ঘড়া সে নিজে নিজেই পূর্ণ করে।”

তুর তাকালো শুভ্রতার দিকে। নরম কন্ঠে বলল
“থাক বাদ দে এসব। পরীক্ষায় মন দে।”

শুভ্রতা এগোতে লাগল।

দুটো ক্লাস করলো তারা। নোট নিয়ে পাকিং এ আসতেই রাদিফের গাড়িটা পাকিং দেখতে পেলো। রাদিফ গাড়িতেই বসে ফোন টিপছিলো। শুভ্রতাকে দেখে বের হলো সে। তুর মুচকি হেসে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“তুই ভাইয়ার সঙ্গে চলে যা। আমিও বাসায় যাই।”

রাদিফ তুরকে বলল
“আমি তোমাকে ড্রপ করে দিবোনি। আমাদের সঙ্গে চলো।”

তুর ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়েই বলল
“না ভাইয়া আমি যেতে পারবো সমস্যা হবেনা।”

তুরকে একটা রিক্সায় তুলে দিলো রাদিফ। তুরকে বিদায় জানিয়ে রাদিফ আর শুভ্রতা উঠে বসলো গাড়িতে। রাদিফ গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল
“কাজ হয়েছে?”

শুভ্রতা ছোট করে উত্তর দিলো
“হুম হয়েছে।”

রাদিফ কথা না বাড়িয়ে মন দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগল।

বেশকিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে রাদিফ বলল
“রেদোয়ান যে এতটা নিচে নামতে পারে আমি কল্পণাও করতে পারিনি।”

শুভ্রতা তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফ ওর দিকে আগে থেকেই তাকিয়ে থাকায় চোখাচোখি হয়ে গেল দুইজনের। শুভ্রতা রাদিফের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো
“আচ্ছা আপনার কি ওর জন‍্য খারাপ লাগছে।”

“একটু খারাপ লাগছিলো ও আমার বন্ধু ছিলো তো তবে যেহেতু ও এত বড় অপরাধ করেছে ওর সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। সেটা ভেবে আর মন খারাপ হচ্ছে না এখন আর।”

শুভ্রতা চোখ সরিয়ে জানলা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বলল
“জানেন এখন নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা লাগছে। আমি কিভাবে এমন একটা মানুষের জন‍্য নিজের অনুভূতি গুলোকে…”

রাদিফ গাড়ি ব্রেক করলো। শুভ্রতাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে আনলো। হুট করে এমন হওয়ায় শুভ্রতা ভয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নিলো। রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার কপালে থাকা অবাদ্ধ চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বলল
“তুমি আসলেই বোকা মায়াবতী। এখনো ভালোবাসা আর ভালোলাগার মধ্যে পার্থক্য বুঝ না।”

শুভ্রতা চোখ খুলে রাদিফের মুখপানে তাকালো। রাদিফ আবারও বলল
“ভালো লাগতেই পারে এটা ব‍্যাপার না বুঝলে।”

শুভ্রতা পলকহীনভাবে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“সারাজীবন এভাবে আগলে রাখবেন তো আমায়।”

রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতাকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বলল
“মৃত‍্যুর আগ পযর্ন্ত আগলে রাখবো তোমায়। তুমি ছেড়ে দিতে চাইলেও আমি ছাড়বো না। বুঝলে মায়াবতী।”

শুভ্রতার ঠোঁট প্রসারিত হলো। সেও জড়িয়ে ধরলো রাদিফকে। রাদিফের বুকে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।

—————-

তুর জ‍্যামে বসে ছিলো তখনই রিক্সায় লাফিয়ে উঠলো রিজভী। তুর এমন হওয়ায় চমকে উঠলো। চিল্লিয়ে উঠতে যাবে তখন রিজভীকে দেখে থেমে গেল। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“আপনি আমার রিক্সায় উঠেছেন কেন! ভালোই ভালোই নেমে যান বলছি।”

“যদি বলি নামবোনা।”

তুর রিক্সা থেকে নেমে যেতে নিবে তার আগেই রিজভী তুরের একটা হাত ধরে বলল
“আমাকে ক্ষমা করে দেও প্লীজ। অপরাধবোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তুর। মানসিক চাপ সৃষ্টির কারণে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।”

তুর রিজভীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠেই বলে উঠলো
“কিছু করার আগে সেইজন‍্যই ভেবে করতে হয়। দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন। রাস্তায় সিন ক্রিয়েট করেন না।”

রিজভী অসহায় দৃষ্টিতে তাকা

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৫

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৫

রাদিফ ধীর কন্ঠে বলল
“আচ্ছা”

খানিকক্ষণ পরেই ওরা বাসায় চলে এলো। রাদিফ শুভ্রতাকে ঘরে যেতে বলে বাবার রুমে গেল। রফিকুল সাহেব শুয়ে ছিলেন। ছেলেকে আসতে দেখে মুচকি হেসে বললেন
“সব ঠিকমতো হয়েছে তো।”

রাদিফ বাবার মাথার কাছে বসে বলল
“হুম বাবা। তুমি ঔষধ খেয়েছো।”

রফিকুল সাহেব মুচকি হেসে বললেন
“এমনটা কি হওয়ার কথা!”

রাদিফ ঔষধের বক্স থেকে ঔষধ বের করতে করতে বলল
“বাবা এমন করলে হবে বলো তো। কত রাত হয়ে গেছে। আমার জন‍্য অপেক্ষা করতে গিয়ে শরীরটা যদি খারাপ হয়। আর ঔষধ দেওয়ার জন‍্য তো আর আমি সবসময় নাও থাকতে পারি।”

রফিকুল সাহেবের বুকটা ধুক করে উঠলো ছেলের মুখে এমন কথা শুনে। তিনি ধমকে বললেন
“রাদিফ তুই এসব কি উল্টাপাল্টা কথা বলবিনা বলে দিলাম। তুই আমাকে ঔষধ দেওয়ার জন‍্য সবসময় থাকবি।”

রাদিফ ঔষধ পানি এগিয়ে দিয়ে বলল
“আচ্ছা বাবা সরি আর বলবো না। এখন ঔষধগুলো খেয়ে নেও তো। তাছাড়া শরীর খারাপ করবে তো।”

রফিকুল সাহেব ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়লেন। রাদিফ মুচকি হেসে বাবার গায়ে কাথা টেনে দিয়ে লাইট অফ করে। বাবার মাথায় বেশ কিছুসময় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। রফিকুল সাহেব ঘুমিয়ে যেতেই রাদিফ ওনার কপালে একটা চুমু খেয়ে চলে গেল রুম ছেড়ে।

রফিকুল সাহেব মুচকি হাসলেন। তিনি জানেন প্রতিরাতেই ছেলে তার এমন করে। প্রিয়তমাকে হারিয়ে এই ছেলে দুটোকে নিয়েই তো তিনি বেঁচে আছেন।

রাদিফ রুমে আসতেই দেখলো শুভ্রতা বিছানা গোছ করে বেডে পা ঝুলিয়ে ওর জন‍্যই বসে অপেক্ষা করছে। রাদিফ ড্রেসিংটেবিলের কাছে গিয়ে ঘড়ি খুলছিলো তখনই শুভ্রতা বলল
“খুব ভালোবাসেন বাবাকে!”

রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার দিকে ফিরে বলল
“হুম খুব ভালোবাসি। লোকটা আমাদের জন‍্য অনেক কিছু করেছে। ওনি চাইলেই আম্মু মারা যাওয়ার পর নিজের আরেকটা ভালো সংসার তৈরি করতে পারতেন। বিয়ে করতে পারতেন অন‍্য নারীকে। কিন্তু ওনি তা করেন নি। ওনি আম্মুকে ভালোবেসেছিলেন। যা বলার মতো না। আম্মু মারা যাওয়ার পর বাবা অনেকটাই ভেঙে পড়েন। আমি আর রিজভী তখন ছোট। সবাই বাবাকে আরেকটা বিয়ে করতে বলে। কিন্তু উনি এক কথায় না করে দেয়। উনি সবাইকে বলেছিলেন তিনি নিজ হাতে আমাদের মানুষ করে দেখাবেন। কতটুকু তার কথা রাখতে পেরেছি তা জানিনা। তবে নিজের শেষ নিশ্বাস অব্ধি আমি মানুষটা কোনো প্রকার কষ্টে দিবোনা।”

রাদিফের চোখের কাণিশে পানি চিকচিক করছে। শুভ্রতা বেড থেকে উঠে রাদিফের সামনে দাঁড়িয়ে নত মুখে বলল
“সরি আমি এই কথাটা না বললে এই সময় আপনার মনটা খারাপ হতো না।”

“ধুর পাগলি কি যে বলো না তুমি!”

“আমিও আজ থেকে বাবাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবো সবসময়।”

শুভ্রতার কথায় রাদিফের মনে যেন এক শীতল হাওয়া বয়ে গেল। রাদিফ শুভ্রতাকে কাছে টেনে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল
“এইজন‍্যই তো আমি আমার মায়াবতীকে এতটা ভালোবাসি।”

শুভ্রতা গুটিসুটি মেরে রাদিফের বুকে লেপটে রইলো। রাদিফের প্রতিটা হৃদস্পন্দন অনুভব করতে লাগল।

বেশ কিছু সময় এভাবেই অতিবাহিত হওয়ার পর শুভ্রতা মাথা উঁচিয়ে বলল
“ফ্রেশ হয়ে আসুন। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবেন না।”

রাদিফ কথা বাড়ালো না। চলে গেল ফ্রেশ হতে। রাদিফ যেতেই শুভ্রতা বেডের একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরলো।

রাদিফ ফ্রেশ হয়ে এসে শুভ্রতার পাশে শুয়ে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে চোখ বুজলো। শুভ্রতা মুচকি হাসলো।

————————

তূর্য বাসায় ফিরতেই তুরকে দেখতে পেল না। দরজাটাও নম্রতা খুলে দিয়েছিলো। সে নাকি এতটা সময় তুরের সাথেই ছিলো। নম্রতাকেও বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। তূর্য অফিস থেকে এসে সোজা ফ্রেশ হতে চলে গিয়েছিলো।

তূর্য দেখলো খাবার টেবিলে খাবার রাখা আসে। তূর্য পা বাড়ালো তুরের রুমের দিকে।

তুর কাথা মুড়িয়ে শুয়ে আছে অন‍্যপাশ হয়ে। নম্রতা চিন্তিত মুখে তুরের মাথার কাছে বসে আছে। তূর্যের কপালে ভাঁজ পড়লো। তুর যে মেয়ে ওর তো এমন তাড়াতাড়ি কে শুয়ে পড়ার কথা না। যেখানে পাশে নম্রতা আছে। প্রশ্নই উঠে না। তূর্য কি যেন ভেবে দৌড়ে তুরের সামনে গিয়ে তুরের কাথা টান দিলো। যা ভেবেছিলো তাই। তুরের চোখমুখ লাল হয়ে আছে। গালে হাত সব জায়গায় এর্লাজি বের হয়েছে। তূর্য অস্থির হয়ে বলল
“কি খেয়েছিলি পিচ্চু!ঝাল কি খেয়েছিস! আমাকে আগে বলবি না। খুব কষ্ট হচ্ছে তোর।”

তুর আধো আধো কন্ঠে বলল
“ভাইয়া তুমি এতটা হাইপার হয়ে যেয়েও না। আমি ঠিক আছি।”

তূর্য ধমকে বলল
“চুপ একদম চুপ। তোকে না করেছিলাম না ঝাল খেতে। কথা তো শুনিস না। আগের বার কি হয়েছিলো ভুলে গেছিস। ঔষধ খেয়েছিস!”

তুর চুপ করে রইলো। তূর্যের রাগে চোখ লাল হয়ে উঠলো। গম্ভীর কন্ঠে বলল
“নম্রতা টেবিলের উপর থেকে ঔষধের বক্স‍টা দেও তো।”

নম্রতা তাড়াতাড়ি করে তূর্যের হাতে ঔষধের বক্সটা দিলো। তূর্য দেখলো তুরের ঔষধ ফুরিয়ে গেছে। তুরকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই তুরের ক্লান্ত লাল মুখটার দিকে তাকিয়ে দমে গেল তূর্য। পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তূর্য উঠে গেল। নম্রতা তাকিয়ে রইলো তূর্যের দিকে। তুর অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো নম্রতার দিকে। নম্রতাও মুখটা ছোট করে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“তূর্য ভাইয়া মনে হচ্ছে অনেকটাই খেপে গেছে তুর আপু।”

তুর ঠোঁট উল্টে বলল
“ভাইয়াকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি নম্র। ভাইয়া হাজার বার না করেছিলো ঝাল খেতে।”

“কিজন‍্য খেতে গেলে বলো তো।”

তুর কিছু বলল না। চুপ করে চোখ বুজে রইলো। তূর্য ঔষধ আর পানি এনে তুরের মুখের সামনে বাড়িয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
“খেয়ে নে।”

তুর চোখ খুলে মুচকি হাসলো। ঔষধ নিয়ে খেতে নিবে তখনই তূর্য বলল
“কিছু খেয়েছিস!”

নম্রতা আস্তে করে বলল
“অল্প কিছু খাবার খাইয়ে দিয়েছি জোর করে। আপনি চিন্তা করবেন না।”

তূর্য শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো নম্রতার দিকে। তুর ঔষধ খেতেই তূর্য নরম কন্ঠে বলল
“নম্র তুমি এখন বাসায় যাও। আন্টি চিন্তা করছে। সমস্যা হলে ডাকবোনি। রেস্ট নেও গিয়ে।”

নম্রতা কথা বাড়ালো না। ধীর পায়ে রুম ছেড়ে চলে গেল।

তূর্য বোনের মাথার কাছে বসতেই তুর তূর্যের কোলে মাথা রেখে চোখ বুজলো। তুরের মাথায় স্নেহের হাত ‍বুলিয়ে দিতে লাগল তূর্য। ধীর কন্ঠে বলে উঠলো
“কেন করিস এমন বল তো। জানিস তো তুই ছাড়া আমি কত‍টা অচল। একবারও আমার কথা চিন্তা করলি না। কতটা কষ্ট পাচ্ছিস এখন দেখ তো।”

তুর দমে দমে বলে উঠলো
“আর কখনো এমন হবেনা ভাইয়া। এরপর থেকে নিজের খেয়াল রাখবো।”

তূর্য মুচকি হেসে বোনের কপালে চুমু খেয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

তুর ঘুমিয়ে যেতেই তূর্য তুরকে বালিশে শুয়ে দিয়ে নিজের রুমে যেতে নিবে তখনই তূর্যের ফোনে মেসেজ টুন বেজে উঠলো। তূর্য মেসেজ ওপেন করে দেখলো নম্রতা মেসেজ দিয়েছে। তূর্য মুচকি হাসলো। তূর্য দেখল নম্রতা লিখেছে
“খাবার টেবিলে রাখা আছে। মনে করে খেয়ে নিবেন। তাছাড়া আপনার শরীর আবার খারাপ হয়ে যাবে।”

তূর্য খেয়ে নিজের রুমে গেল। বেশ ক্লান্ত লাগছে। ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে চোখ ‍বুজতেই নম্রতার মায়াময় চেহারা ভেসে উঠলো তূর্যের চোখের সামনে। মেয়েটাকে সে ভালোবাসে। শুধু যে সে ভালোবাসে তা তো নয়। মেয়েটাও তাকে ভালোবাসে। কিন্তু তূর্য নিজের ভালোবাসার কথা বলতে বরাবরের মতোই ব‍্যর্থ। তার মনে এক ভয় বাঁধা দেয় তাকে প্রতিটা মুহূর্ত। সে যদি হারিয়ে ফেলে নম্রতাকে। ভয় পায় সে ভালোবাসার কথা বলতে। যদি নম্রতা দূরে সরে যায় ওর থেকে। গুটিয়ে নেয় নিজেকে তখন কি হবে। তার বোকাফুল যে বড্ড বোকা। কিছু না হতেই চোখের কোনায় পানিরা এসে খেলা করে। সেই কান্নামাখা চেহারা যে একেবারেই পছন্দ না। তার বোকাফুল তো হাসলেই ভালো। লজ্জামাখা সেই হাসি ঘায়েল করে তাকে প্রতিটা মুহূর্ত। থাক না এমন সম্পর্ক ক্ষতি কি। প্রতিনিয়ত কথাটুকু তো বলা হচ্ছে। মেয়ে‍টা দিধা ছাড়া কথা বলতে পারছে। ভালোবাসার কথা বললে হয় তো এতটা কথা বলতে পারবেনা।

এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো তূর্য টের ও পেল না।

অন‍্যদিকে রিজভীর রাতটা কাটছে অস্থিরতায়। কে ছিলো ছেলেটা যার সঙ্গে এতো হেসে হেসে কথা বলছিল তুর। আর মেয়েটাকে এমনি বা লাগছিলো কেন! চোখ বুজলেই তুরের লাল হওয়া চোখমুখ ভেসে উঠছে রিজভীর চোখের সামনে যা রিজভীকে বেশি অস্থির করে তুলেছে। রিজভী আর থাকতে না পেরে শোয়া থেকে উঠে বসল। ফোন‍টা হাতে নিয়ে দেখলো রাত দুটো বাজে। আশ্চর্য রিজভী এতটাই ঘুম কাতুরে যে রাত বারোটার পর সে চোখ খোলায় রাখতে পারেনা। আর সে কিনা একটা মেয়ের চিন্তায় ঘুমাতে পারছেনা। রিজভী ফোন হাতে নিয়ে ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।

#চলবে

আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৪

0

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৪

মৃদু বাতাসে শুভ্রতা খোলা চুলগুলো উড়ে এসে পড়ছে রাদিফের মুখে। মন মাতানো গন্ধে রাদিফ যেন বারবার প্রেমে পড়ছে শুভ্রতার। শুভ্রতার মুখের দিকে অপলক চেয়ে রইলো রাদিফ। শুভ্রতার বেশ লজ্জা লাগল। লোকটা কেমন হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

খানিক বাদেই শুভ্রতা আর রাদিফ পৌঁছে গেল বিয়ে বাড়িতে। জাকজমক সাজে সাজানো হয়েছে বাড়িটা। রাদিফ খানিকটা ঝুকে শুভ্রতার কানে কানে বলল
“বউ আমার না বিয়ে করতে মন চাইছে।”

রাদিফের কথায় চকিতে ওর দিকে তাকালো শুভ্রতা। রাদিফ হেসে দিয়ে বলল
“এমন অনুষ্ঠান করে যদি আমাদের আবার বিয়ে হয় তাহলে কেমন হবে বলো তো বউ।”

শুভ্রতা লাজুক হেসে বলল
“আপনিও না”

রাদিফ হেসে ভিতরে ঢুকলো। নিবিড় রেডি হচ্ছিলো। রাদিফ সেদিকে গেল। শুভ্রতা নিবিড়ের মায়ের কাছে গেলো। নিবিড়ের মা হাসিমুখে বললেন
“শুভ্রতা মা তুমি এসেছো। তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম।”

শুভ্রতা ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলল
“আন্টি ভালো আছেন?”

“হুম মা তোমাকে দেখে একদম ভালো হয়ে গেছি। কি সুন্দর লাগছে তোমাকে!”

শুভ্রতা মুচকি হেসে বলল
“ধন‍্যবাদ আন্টি”

অন‍্যদিকে রাদিফ নিবিড়ের রুমে ঢুকতেই নিবিড় একটা বালিশ ছুড়ে দিলো ওর দিকে। রাদিফ বালিশ ধরে বলল
“কি করছিস এগুলো। লেগে যাবে তো।”

নিবিড় গাল ফুলিয়ে বলল
“হ তুই থাক তোর বউয়ের কাছে। আমি তো কেউ না তোর।”

রাদিফ ভ্রুযুগল কুচকে বলল
“মেয়েদের মতো এতো ঢং কোথায় থেকে শিখলি তুই”

নিবিড় মুখ ঘুরিয়েই বসে রইলো। রাদিফ বেশ কিছু সময় নিয়ে মানালো ওকে।

—————-

তুর হা হয়ে বসে আছে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সামনের সাত প্লেট ফুচকার দিকে। কি হচ্ছে তার সঙ্গে এগুলো। সামনে বসে থাকা রিজভীর দিকে তাকালো সে। রিজভী পায়ের উপর পা রেখে বসে মুখটা শক্ত করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ আগেই রিজভী তুরকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসেছে। এখন তারা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।

তুর অবাক কন্ঠে বলল
“এতো ফুচকা কে খাবে!”

রিজভী দাঁতে দাঁত চেপে বলল
“কেন তুমি!”

তুর যেন এবার অবাকের চরম পর্যায় চলে গেল। কি বলছে এসব এই লোক। মাথা ঠিক আছে তো। তুর অবাক কন্ঠেই বলল
“আপনি ঠিক আছেন তো। কি বলছেন এসব।”

রিজভী এবার রাগী কন্ঠেই বলে উঠলো
“রাস্তায় তো ভালোই হেসে হেসে ফুচকা খেতে পারো। ছেলে নিয়ে ঘুরে বেড়াও।সেই পাশের ছেলে যে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে তা তো চোখে পড়ে না। খুব শখ না রাস্তার পাশে গিয়ে হেসে হেসে ফুচকা খাওয়ার। সব শখ আজ মেটাবো। এখনি সব ফুচকা খাবে।”

তুরের এবার চিক্কুর দিয়ে কান্না করতে মন চাইছে। রিজভী এবার ধমকে বলল
“খাও বলছি”

তুরের এবার রাগ উঠে গেল। তুর রাগান্বিত কন্ঠে বলল
“রাস্তায় ওই ব‍্যাটার লগেই আমি ফুচকা খাবো হেসে। আপনি কি করবেন!”

রিজভীর রাগে কপালের রগ ফুলে গেল। চোখ লাল হয়ে এলো। মুখের রঙ পাল্টে গেল। তুর রিজভীর দিকে তাকাতেই ভয়ে কেঁপে উঠলো রিজভীর ভয়ংকর চেহারা দেখে। পরপর কয়েকটা ঢোক গিললো সে। তুর আর কথা বাড়ালো না ফুচকা খেতে শুরু করলো। কয়েকটা খাওয়ার পরেই তুর বুঝতে পারলো ফুচকাগুলোই বেশ ঝাল দেওয়া। চোখ মুখের রঙ পাল্টে গেল তার। তবুও খেতেই থাকলো সে।

রিজভী পলকহীন গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুরের দিকে।

দুই প্লেট ফুচকা খাওয়ার পর রিজভী ধীর কন্ঠে বলল
“থাক আর খেতে হবে না।”

তুর কথা শুনলো না খেতেই থাকলো। রিজভী এবার রেগে তুরের হাত চেপে ধরলো। তুর হাত ছাড়ানো চেষ্টা করতে করতে বলল
“ছাড়ুন আমাকে খেতে দিন।”

রিজভী একটা ওয়েটারকে ফুচকার প্লেটগুলো নিয়ে যেতে বলল।

তুর কটমট দৃষ্টিতে তাকালো রিজভীর দিকে। ঝালের কারণে ঠোঁট লাল হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে নাক দিয়ে পানি বের হচ্ছে। ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।

রিজভী তুরের হাত ছেড়ে তুরের দিকে টিস্যু এগিয়ে দিলো। তুর ঝালে মুখ দিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। নাজেহাল অবস্থা তার। তুর রক্ত চোখ নিয়ে তাকালো রিজভীর দিকে। তুরকে বেশ অস্বাভাবিক লাগছে। রিজভীর হুট করেই খারাপ লাগা শুরু হলো। বেশি বেশি কি হয়ে গেল।

তুর মাথা ধরে বসে রইলো কিছু সময়। তুরকে চুপ থাকতে দেখে রিজভী কিছু বলতে নিবে তখনই তুর নরম কন্ঠে থেমে থেমে বলে উঠলো
“আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসবেন।”

রিজভী চিন্তিত কন্ঠে বলল
“বেশি খারাপ লাগছে।”

তুর এবার একাই ব‍্যাগটা কাধে নিয়ে উঠে এগিয়ে যেতে নিলেই রিজভী তুরের এক হাত টেনে ধরলো। তুর পিছনে ফিরে তাকালো না।

রিজভী অপরাধী কন্ঠে নিচু কন্ঠে বলল
“সরি রাগ উঠে গিয়েছিল।”

তুর কিছু বলল না। রিজভী উঠে দাঁড়ালো। কিছু বলতে নিবে তার আগেই তুর বলল
“দয়া করে আমাকে যেতে দিন।”

রিজভী কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বলল
“তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন তুর! কি হয়েছে বলো আমায়!”

তুর এবার ক্ষেপে গেল। খানিকটা চেঁচিয়ে বলল
“বাসায় যাবো বললাম না। কথা কানে যায় না আপনার।”

রিজভী আর কথা বাড়ালো না। গাড়িতে করে তুরকে নিয়ে তুরের বাড়ির সামনে আসতেই তুর গাড়ি থেকে নেমে গেল। তুর নেমেই হনহন করে চলে গেল। রিজভী কিছু বলতে গিয়েও বলল না।

রিজভী ভেবেছিল তুর হয় তো কিছু বলবে। কিন্তু সে তো কিছুই বলল না। রিজভী তুরের যাওয়ার পানেই তাকিয়ে রইলো। রিজভী চোখের আড়াল হয়ে যেতেই ফুস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো রিজভী। গাড়ি চালিয়ে চলে এলো বাসায়।

———————

নিবিড়ের বিয়ের সব কাজ শেষে রাদিফ আর শুভ্রতা বেড়িয়ে পরলো সেখান থেকে। নিবিড়ের মা ওদের থেকে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু রাদিফ রাজি হয়নি। ওরা কাল আবার অনুষ্ঠানে আসবে বলে চলে আসে।

শুভ্রতা আর রাদিফ দুইজন পাশাপাশি হেঁটে চলছে ফুটপাত দিয়ে। হুট করেই রাদিফ শুভ্রতার একটা হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে নিলো। শুভ্রতা কিছু বলল না। বেশ ভালো লাগছে তার এভাবে একসঙ্গে হাঁটতে। রাদিফের মনটা বেশ ফুড়ফুড়ে লাগছে। সে চাইছে সময়টা এখানেই থমকে যাক। প্রিয়তমার হাত ধরে পাড়ি দিতে চায় হাজার হাজার মাইল। ভেবেই ঠোঁট প্রসারিত হলো রাদিফের। শুভ্রতা মনোযোগ দিয়ে রাদিফের পায়ের ধাপের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটছে। শুভ্রতা আঙুল তুলে আইসক্রিমের দোকানে দিকে দেখিয়ে বলল
“একটা আইসক্রিম কিনে দিবেন আমাকে!”

শুভ্রতার এমন বাচ্চাদের মতো করে আইসক্রিম চাওয়াতে বেশ হাসি পেল রাদিফের। হুট করেই হেসে দিলো সে। রাদিফকে হাসতে দেখে ঠোঁট উল্টালো শুভ্রতা। রাদিফ শুভ্রতাকে আইসক্রিমের দোকানে গিয়ে দুটো আইসক্রিম কিনলো। শুভ্রতার হাতে আইসক্রিম দিতেই শুভ্রতা বেশ খুশি হলো। শুভ্রতা কৌতূহল নিয়ে বলল
“দুটোই আমার”

রাদিফ মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। শুভ্রতা খেতে লাগল। শুভ্রতা অর্ধেক আইসক্রিম খেতেই রাদিফ শুভ্রতার হাত থেকে আইসক্রিমটা কেড়ে নিয়ে খেতে লাগল।

শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
“এটা কি হলো!”

রাদিফ ভাবলেশহীন ভাবে বলল
“কি আর হবে তুই অন‍্য আইসক্রিমটা খাও।”

শুভ্রতা মুখে ভেংচি দিয়ে অন‍্য আইসক্রিমটা খেতে লাগল।

আইসক্রিম খাওয়া শেষে রাদিফ একটা রিক্সা ডাকলো।

রিক্সাতে দুইজন মিলে উঠে বসলো। রাদিফে শুভ্রতার মাথা নিজের কাধে রাখলো। শুভ্রতা মুচকি হাসলো। ওর খুব ক্লান্ত লাগছিল। এই শান্তির কাধটাই তো এত সময় চাইছিলো। লোকটা কি সুন্দর তার মনের সকল কথা বুঝে যায়।

রাদিফ শুভ্রতাকে আগলে বসে রইলো। শুভ্রতার চুলের সুগন্ধ ভেসে আসছে রাদিফের নাকে। রাদিফের শুভ্রতা। তার ভালোবাসা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সে জানে শুভ্রতাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তার কি চাই। রাদিফ আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো শুভ্রতার কপালে।

শুভ্রতা চুপচাপ গুটিশুটি মেরে রাদিফের কাধে মাথা হেলিয়ে বসে রইলো।

হালকা ঠান্ডা বাতাসে পরিবেশটাও যেন এক স্মৃতিমূখর মুহূর্তে সৃষ্টি করেছে। রাদিফ কি যেন মনে করে পকেট থেকে ফোন বের করে চুপচাপ কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। শুভ্রতা কপাল কুচকে বলল
“চুপ করে ছবি তোলা লাগবে কেন!”

রাদিফ আমতা আমতা করতে লাগল। শুভ্রতা রাদিফের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল
“সুন্দর করে হাসি দিন।”

শুভ্রতার কথায় রাদিফ হাসলো। শুভ্রতা হাসিমুখে ফটাফট কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো। ছবি তোলা শেষে ছবি গুলো দেখতে দেখতে বলল
“পিকগুলো বেশ সুন্দর হয়েছে। আমাকে পাঠিয়ে দিয়েন তো।”

রাদিফ ধীর কন্ঠে বলল
“আচ্ছা”

#চলবে