Wednesday, July 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 120



শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১০

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১০

আজকে নিধির মায়ের মৃত্যুর ৫ম দিন চলে, নিধি এখন আগের থেকে কিছুটা স্বাভাবিক আছে। বাস্তবতার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে সে। নিধি রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছে সকালের। ফারিশ ঘুম থেকে উঠে নিজের পাশে নিধি কে না দেখে ঘুম জড়ানো চোখে ঢুলতে ঢুলতে নিধি কে খুঁজতে থাকে। নিধি কে রান্নাঘরে পায় ফারিশ।

“এত্তো সকাল সকাল রান্নাঘরে কি করছো?”

হঠাৎ পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে চমকে তাকায় নিধি। অতঃপর ফারিশ কে নিজের পাশে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিধি।

“এখন এগারোটা বাজে, কম বেলা হয়নি।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ মোবাইলে টাইম দেখে নেয়, তারপর নিধি কে তাড়া দিয়ে বলল,

“আমি কিন্তু আজকে বাসায় চলে যাচ্ছি।”

ফারিশের কথা শুনে নিধির একটু খারাপ লাগে, পরক্ষণে নিজেকে সামলে বলে,

“আচ্ছা, কখন যাবেন?”

“এইতো, এখনই বের হবো। কয়েকদিন অফিসের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। কে জানে কি অবস্থা এখন অফিসের।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি আর কিছু বলেনি। সে নিজের মনে নাস্তা বানাতে ব্যাস্ত। তা দেখে ফারিশ আর দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে চলে যায় রেডি হতে।
**
ফারিশ তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে, নিধি তখন টেবিলে খাবার এনে রাখতে ব্যাস্ত। ফারিশ কে দেখে নিধি তাকে ইশারা দিয়ে টেবিলে বসতে বলে। ফারিশ বাধ্য ছেলের মত খাবার টেবিলে এসে বসে। নিধি এসে ফারিশের প্লেটে খাবার তুলে দেয়। ফারিশকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে নিধির চোখ ছলছল করে উঠে, ফারিশ দেখার আগেই নিধি নিজের রুমে চলে যায়। নিধি কে এভাবে হুট করে রুমে চলে যেতে দেখে কিছুটা বোকা বনে যায় ফারিশ। সে খাবার টেবিলে বসেই জোরে বলল,

“নিধি, এসো খাবার খাবে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি নিজের চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক ভাবে রুম থেকে বের হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে। দুজনেই চুপচাপ খাবার খাওয়া শেষ করে।

“খাবারটা মজা হয়েছে, কালকে থেকে তোমার হাতের রান্না মিস করবো।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি মলিন কন্ঠে বলল,

“যখন মন চাইবে তখন চলে আসবেন, তাহলে আর মিস করবেন না আমার হাতের রান্না।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে হেসে বিদায় দিয়ে চলে যায়। নিধি বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে ফারিশের চলে যাওয়া দেখছে। ফারিশের দিকে তাকিয়ে নিধি তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,

“আমার হাতের রান্না মিস করবে, কিন্তু আমাকে মিস করবে না।”

বলেই দরজা আঁটকে দেয় নিধি।
★★
ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘেরা রুমে কয়েকজন ছেলে বসে আছে। কারো মুখে সিগারেট তো কারো হাতে মদ রয়েছে। তারমধ্যে একটা ছেলে হাতে ড্রিংকস নিয়ে দাড়িয়ে আছে, চোখমুখ তার রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। ছেলেটা হঠাৎ তার হাতে থাকা ড্রিংকস এর গ্লাস নিচে ছুড়ে মেরে রুমে থাকা সকলকে কঠিন কন্ঠে শুধালো,

“ ওই ফারিশ কু*ত্তারবাচ্চা কে বুঝি মারতে তোদের এতদিন লাগে? টাকা কি কম দিই আমি তোদের? একটা দুই টাকার কোম্পানির মালিক কে মারতে তোদের এত সময় লাগে?”

অয়নের কথা শুনে রুমে থাকা সকলে ঘাবড়ে যায়, তারমধ্যে রুমে থাকা একটা ছেলে ভয়ে ভয়ে বলে উঠল,

“দুই টাকার কোম্পানি না স্যার, ওনার বাপ যখন কোম্পানির দেখাশোনা করতো তখন এখানের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোম্পানি ছিল ফারিশদের কোম্পানি।”

ছেলেটার কথা শুনে অয়ন রেগে গিয়ে বলল,

“ফারিশ, ফারিশ, ফারিশ! ফারিশ মাই ফুট। তুই আমার লোক হয়ে কিভাবে ওই ফারিশের সুনাম করছিস?”

বলেই অয়ন পকেট থেকে পি’স্তল বের করে ছেলেটাকে গু’লি করে। মুহূর্তের মধ্যে ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অয়নের কাজে ভয়ে জবুথবু হয়ে যায় রুমে থাকা অন্য ছেলেরা। তা দেখে অয়ন ফের আগের কন্ঠে শুধালো,

“এই আবর্জনা কে কোথায় গায়েব করবি এটা তোদের ব্যাপার৷ তবে একটা কথা মাথায় রাখবি, এই রুমের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা যদি লোক জানাজানি হয় তবে তোদের অবস্থাও এই ছেলের মতোই হবে, মাইন্ড ইট।”

বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায় অয়ন। অয়নের পিছন পিছন একটা ছেলে রুম থেকে বের হয়ে এসে তার সামনে দাড়ায়। তা দেখে অয়ন তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়, ছেলেটা নিচু গলায় বলল,

“একটা খবর আছে স্যার।”

“কি খবর?”

“দীর্ঘ পাঁচদিন পর ফারিশ শিকদার অফিসে গিয়েছেন আজকে।”

ছেলেটার কথা শুনে অয়নের চোখ চকচক করে উঠে আনন্দে। অয়ন বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলল,

“তারমানে নিধু পাখি বাড়িতে একাই আছে। আমার তো গিয়ে তাকে সঙ্গ দেওয়া উচিত!”
*****
অফিসে এসে ফারিশের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বারোটা বেজে গেছে, অথচ এখনো অনেকে অফিসে আসেনি। তা দেখে ফারিশ পিয়াস কে ডেকে নিজের কেবিনে চলে যায়।

“আসবো?”

চেয়ারে বসে ফারিশ একটা ফাইল চেক করছিল, হঠাৎ দরজায় কারো আগমন টের পেয়ে সেদিকে তাকায় সে। পিয়াস কে দেখে ইশারায় আসতে বলে ফারিশ। পিয়াস এসে চেয়ার টেনে বসে ফারিশের সামনে।

“ড্যাড অফিসে থাকা অবস্থায় কিভাবে সবকিছু পরিচালনা করেছে সেটা আমার থেকে তুই ভালো করে জানিস। আমি সবে জয়েন করেছি কয়েকদিন হবে। সবাই আমাকে ভয় ফেলেও সুযোগ ফেলে আমার অগোচরে অফিসের নিয়ম না মানার চেষ্টা করছে। এভাবে চললে তো দুদিনও টিকবে না আমাদের কোম্পানিটা। তাই আমাদের সকলকে আরো সচেতন হতে হবে। অফিসের ম্যানেজার টা বুড়ে হয়ে গেছে, তাই হয়তো এসব দিকে নজর দিতে পারছে না। কালকে থেকে ওই বুড়ো কে বলে দিস অফিসে না আসতে। আর ম্যানেজারের দায়িত্ব টা তুই পালন করবি, ড্যাড কিভাবে সবকিছু সামলাতো সেটা তো তুই জানিস। তাই আমি আশা করি তুই এই দায়িত্ব টা পালন করতে পারবি। আর যারা অফিসে অনিয়ম করছে, তাদের বাদ দিয়ে নতুন কর্মী নিয়োগ দে। অনেক বেখেয়ালি ভাবে অফিস সামলিয়েছি, এবার সিরিয়াস হতে হবে। ড্যাডের যত্নের কোম্পানিটা কে আমি এভাবে ডুবে যেতে দিতে পারবো না আর।”

ফারিশের সব কথা পিয়াসের মাথার উপর দিয়ে যায়। তবে সে এটা বুঝতে পেরেছে যে তার পদোন্নতি হয়েছে। আর ফারিশ অবশেষে তার কোম্পানি টা কে নিয়ে সিরিয়াস হয়েছে। সে নিজেকে সামলিয়ে বলল,

“এ সবকিছু করতে মাসখানেক সময় লেগে যাবে, নতুন কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া, ইন্টারভিউ নেওয়া। এসব অনেক সময়ের কাজ। তুই ভরসা করতে পারিস আমাকে, এসব সামলানোর চেষ্টা করবো আমি।”

“ভরসা করি বলেই তো তোকে দায়িত্ব টা দিলাম। যাই হোক, এখন যা। কাজে মন দে।”

ফারিশের কথায় সায় দিয়ে পিয়াস উঠে দাড়ায় যাওয়ার জন্য। সে কিছু একটা ভেবে আবার পিছন ঘুরে বলল,

“নিধির কি খবর? এখন আগের থেকে ঠিক আছে তো ও?”

“হ্যাঁ, এখন ঠিক আছে।”

“ওহ, তা নিধি কে তোর বাড়িতে নিয়ে গেছিস নাকি? ওর বাড়িতে তো এখন আর একা থাকতে পারবে না তাই বলেছি আরকি!”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ থমকে যায়, নিধি কে যে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া উচিত সেটা সে ভুলেই গিয়েছে। সে তড়িঘড়ি করে নিজের ফোন বের করে নিধিকে কল দেওয়ার জন্য।

“কি রে, ও নিজের বাড়িতে একা নাকি? শুনেছি ওর ওই ভাইটা নাকি এখনো এখানেই আছে, যদি জানতে পারে নিধি বাসায় একা তাহলে কোনো কুবুদ্ধি খাটাবে নিশ্চয়।”

পিয়াসের কথা শুনে চিন্তায় ফারিশের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সে নিধির নাম্বার ডায়াল করে কল দেয় তাকে, কিন্তু কয়েকবার কল দেওয়ার পরেও কল রিসিভ করে না নিধি।
***
তীব্র মাথা যন্ত্রণা করছে নিধির, সে ড্রয়িং রুমে সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শুনে চমকে যায় নিধি। ফারিশ এসেছে ভেবে নিধির চোখ খুশিতে চকচক করে উঠে। সে তড়িঘড়ি করে উঠে নিজের চোখের পানি মুছে ছুটে যায় দরজা খুলে দিতে। দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে যায় নিধি, দরজায় অয়ন কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিধি আহাম্মক বনে যায়। অজানা ভয় এসে গ্রাস করে তাকে। এদিকে অয়ন নিধিকে এভাবে ভয় পেতে দেখে দাঁত কেলিয়ে বলল,

“তোকে সঙ্গ দিতে চলে এলাম আমি নিধু পাখি।”

বলেই অয়ন এগিয়ে আসে নিধির দিকে।

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব-০৯

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৯

“এই নিধি, এই ছেলে কে রে?”

অয়নের কথা শুনে নিধি নির্দ্বিধায় বলল,

“আমার বর!”

নিধির কথা শুনে ফারিশ আর অয়ন দুজনেই তার দিকে অবাক চোখে তাকায়।

“কিভাবে এই ছেলে তোর বর হয়? কি প্রমাণ আছে? বুড়ি মরতেই ছেলে ঘরের মধ্যে নিয়ে এসে ন’ষ্টামি শুরু করে দিয়েছিস নাকি?”

অয়নের কথা শুনে রাগে থরথর করে কাঁপছে ফারিশ, সে আর দাড়িয়ে না থেকে অয়নের বুকের উপর একটা লা’থি দেয়। মূহুর্তের মধ্যে অয়ন মাটিতে গিয়ে পড়ে। ফারিশ তখনো শান্ত হয়নি, সে মাটি থেকে অয়নের কলার চেপে উঠিয়ে তার গালে চ’ড় দিয়ে বলল,

“শা** নিজের চরিত্রের মত সবার চরিত্র মনে করেছিস নাকি? অ’সভ্যের বা’চ্চা বড়দের কিভাবে সম্মান করে কথা বলতে হয় সেটাও জানে না, একটা মেয়ের মা মরে গিয়েছে। মেয়েটা কি পরিস্থিতি তে আছে সেটা বুঝে তাকে স্বান্তনা না নিয়ে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছিস! আবার তার মা কে নিয়ে বাজে কথা বলছিস, কু’ত্তার** আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলবো!”

বলেই ফারিশ অয়ন কে একনাগাড়ে মারতে থাকে। নিধি ফারিশকে আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। শেষে নিধি আর উপায় না পেয়ে ফারিশের সামনে হাতজোর করে বলল,

“প্লিজ ফারিশ, আপনি অয়ন ভাই কে ছেড়ে দিন। অয়ন ভাইয়ের বাবার কানে যদি এসব যায় তাহলে আমাদের শান্তিতে বাঁচতে দিবে না ওরা। আমার বাবা মা কেও ওরা শান্তিতে বাঁচতে দেয়নি, এখন আমাদেরও দিবে না।”

নিধির কথা শুনেও থামল না ফারিশ, সে অয়ন কে ইচ্ছে মত পিটিয়ে তবেই শান্ত হলো। ফারিশ অয়ন কে মাটি থেকে উঠিয়ে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দরজা আঁটকে দেয়। ফারিশ রাগে এখনো থরথর করে কাঁপছে, আজকের এই ফারিশ কে দেখে নিধি ভয়ে জবুথবু হয়ে গেছে একদম। ফারিশ ধীরপায়ে নিধির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বিড়বিড় করে বলল,

“আবর্জনা কোথাকার, আসে আমার বউ কে বিয়ে করতে! বিয়ে করার শখ একদম মিটিয়ে দিয়েছি।”

নিধিকে এভাবে গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশ তাকে ধমক দিয়ে বলে উঠল,

“তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো আমাকে? আমি কি তোমাকে মেরেছি, নাকি তোমার শত্রু কে কিছুই বুঝলাম না।”

নিধি ফারিশের কথার জবাব না দিয়ে রুমে চলে যায়। ফারিশ অসহায় দৃষ্টিতে নিধির যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।

“যার জন্য চু’রি করলাম সেই বলে চো’র, মানবতা আর বেঁচে নেই রে ফারিশ! অফিসের খিটখিটে বসটা আজ তার নিধি রানীর মন ভালো করতে ব্যাস্ত! ভাবা যায় এসব!”

কথাগুলো নিজের মনে বলতে বলতে ফারিশ খাবার নিয়ে নিধির রুমে যায়।

“রাগ দেখাচ্ছো আমাকে?”

কথাটা বলে থমকে যায় ফারিশ, সে নিজের মনে বিড়বিড় করে বলল,

“কন্ট্রোল ফারিশ কন্ট্রোল, মেয়েটা এখন নিজের মধ্যে নেই যে তোকে সহ্য করবে!”

ফারিশ কে বিড়বিড় করতে দেখে নিধি তার দিকে তাকায়, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। ফারিশ ধীরপায়ে গিয়ে নিধির পাশে বসে।

“ছেলে টা তোমাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছে, তোমার বর হয়ে আমি কি এসব সহ্য করে নিবো বলো?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলল,

“আমি এসব কিছু আর সহ্য করতে পারছি না ফারিশ।”

বলেই নিধি কান্নায় ভেঙে পড়ে, নিধি কে এভাবে কাঁদতে দেখে ভড়কে যায় ফারিশ। সে তাড়াতাড়ি নিধির চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল,

“আরে পাগলী, কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি আগের ন্যায় কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“এমন বংশে জন্মগ্রহণ করেছি আমি, যে আমাদের অর্থ সম্পদ থাকতেও মেয়ে হয়ে এখন আমাকে সংসারের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আব্বু আর আম্মু রিলেশন করে বিয়ে করেছে, এজন্য আব্বুর ভাই রা তাকে ভাই হিসেবে মানে না। কিন্তু আমার দাদা ঠিকই আমার বাবার নামে তার অর্ধেক সম্পদ লিখে দিয়ে যান। কিন্তু অয়ন ভাইয়ের আব্বু কিছুতেই আমার বাবার জমির ঝামেলা টা ঠিক করে দেয় না। তার এতো বাহাদুরি সহ্য করে আমার বাবা আর টিকে থাকতে না পেরে আমাদের নিয়ে আলাদা ভাবে থেকেছে। এখন যদি তারা জানতে পারে আপনি অয়ন ভাইকে মেরে এই অবস্থা করেছেন তাহলে আপনার জীবনটা বরবাদ করে দিবে তারা।”

নিধির পুরো কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছে ফারিশ, শেষের কথা টা শুনে ফারিশ হেসে নিধিকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“তুমি আমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছো! আরে এসব চুনোপুঁটি আমার কিছুই করতে পারবে না। আমার কিছু করতে আসলে বরং আমিই তাকে আধমরা করে দিবো।”

ফারিশের কথা শুনে শান্ত হতে পারল না নিধি, সে ফারিশের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে ব্যাস্ত। ফারিশ নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“হয়েছে অনেক চিন্তা করে ফেলেছো আমার জন্য, এবার ব্রেকফাস্ট করে নাও তো লক্ষী মেয়ের মত!”

“খাবো না।”

“মার খাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে নাকি?”

ফারিশের কথা শুনে কান্না থেমে যায় নিধির, সে অবাক হয়ে ফারিশের দিকে তাকায়।

“আপনি মারবেন আমাকে?”

নিধির কথা শুনে ফারিশ কিছুটা ভড়কে যায়, সে নিজেকে সামলে বলল,

“বউ কে মাইর দেওয়ার ক্ষমতা সেই আমার, কিন্তু চু’মু দেওয়ার ক্ষমতা আছে আমার!”

হঠাৎ ফারিশ এমন একটা কথা বলে বসবে সেটা ভাবেনি নিধি। সে লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,

“লাগাম নেই মুখে!”

নিধির কথা শুনে হেসে ফেলে ফারিশ।
★★
রিক্সা থেকে নেমে নিধিদের বাসার সামনে দাড়ায় ইকরা, সে বাসায় ডুকবে এমন সময় দেখে বাসার সামনে একটা ছেলের অবস্থা খুবই খারাপ, ছেলেটা কে এই মূহুর্তে হাসপাতালে নিতে হবে। আশেপাশে কাউকে দেখছেও না যে ছেলেটা কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলবে ইকরা। শেষে ইকরা আর কোনো উপায় না পেয়ে একটা সিএনজি ডেকে নিজেই ছেলেটা কে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইকরা রা হাসপাতালে এসে পৌছায়, ইকরা ছেলে টা কে নিয়ে ডক্টরের কাছে যায়। ইকরা করিডোরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে ডক্টর কি বলে সেটা জানার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডক্টর বের হয়ে আসে কেবিন থেকে। ডক্টর কে দেখে ইকরা তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

“উনি ঠিক আছে তো?”

“এখন মোটামুটি ঠিক আছে, তবে যে উনার এই অবস্থা করেছে সে অনেক মারাত্মক লেভেলের গু’ন্ডা মনে হচ্ছে। মেরে ছেলেটার কি বিভৎস অবস্থা করে দিয়েছে!”

“আমি কি উনার সাথে কথা বলতে পারি? কথা বলার মত অবস্থা তে আছে উনি?”

ইকরার কথা শুনে ডক্টর বলল,

“ওহ হ্যাঁ, উনি আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।”

ডক্টরের কথা শুনে ইকরা আর দাড়িয়ে না থেকে কেবিনে যায় ছেলেটার কাছে। ইকরা বেডের একপাশে বসতেই ছেলেটা নড়েচড়ে উঠে।

“আপনার এই অবস্থা কে করেছে?”

ইকরার কথা শুনে ছেলেটা তার দিকে তাকায়, ছেলেটা ইকরার চোখের দিকে চেয়ে বলল,

“সুন্দরী।”

ছেলেটার মুখে এমন কথা শুনে ভড়কে যায় ইকরা। সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

“আপনার পরিবারের কারো নাম্বার দিন, আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি আপনি যে এখানে!”

ইকরার কথা শুনে ছেলেটা অসহায় গলায় বলল,

“এই শহরে আমার আপন বলতে কেউ নেই, কাকেই বা ফোন করবেন আপনি!”

ছেলেটার কথা শুনে তার জন্য মায়া হয় ইকরার।

“কে আপনার এই অবস্থা করেছে?”

ইকরার কথা শুনে ছেলেটা কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলল,

“সে অনেক কাহিনি। পরে একদিন বলবো।”

ইকরা ভেবে পাচ্ছে না সে এখানে থাকবে নাকি চলে যাবে। তাই সে ছেলেটা কে বলল,

“আমি চলে যাই? আপনি তো এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন।”

ইকরার কথা শুনে ছেলেটা মিষ্টি হেসে বলল,

“আচ্ছা যান।”

ছেলেটার কথা শুনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে ইকরা। সে বেড থেকে উঠে পা বাড়ায় যাওয়ার জন্য, হঠাৎ কিছু মনে পড়াতে সে আবার পিছনে ঘুরে বলল,

“আচ্ছা আপনার নাম কি?”

ছেলেটা নির্দ্বিধায় বলল,

“অয়ন।”

চলবে???

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০৮

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৮

দৌড়াতে দৌড়াতে গাড়ির সামনে এসে থামে পিয়াস আর ইকরা। দুজনেই হাঁপাচ্ছে।

“স্কুলের দৌড় প্রতিযোগিতায় যদি আমি আজকের মত এভাবে দৌড়াতাম তাহলে ওই ডাইনি বিথীর বদলে আমি ফাস্ট হতাম।”

ইকরার কথা শুনে পিয়াস তার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলল,

“বিথী কে?”

পিয়াসের কথা শুনে হুশ ফিরে ইকরার, সে নিজেকে সামলে বলল,

“স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে গেছে, স্কুলের ক্লাসমেট ছিল বিথী।”

ইকরার কথা শুনে প্রাণে বাঁচলো সে, কারণ তার বোনের নামও বিথী।

“চলুন যাই, আবার কখন কোন বিপদ জেঁকে বসে কে জানে!”

বলেই পিয়াস গাড়িতে গিয়ে বসে, ইকরাও আর দ্বিমত পোষণ না করে গাড়িতে গিয়ে বসে। ইকরা গাড়িতে বসতেই পিয়াস গাড়ি স্টার্ট দেয়।
******
রাত প্রায় তিনটা বাজে, জ্বরে নিধির গা পুড়ে যাচ্ছে। নিধির চোখ মেলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে, চোখ জ্বালা করছে জ্বরের তোপে। তার চোখ বেড়ে নিরবে অশ্র গড়িয়ে পড়ে। নিধি বিছানা থেকে উঠে বসার চেষ্টা করে, উঠে বসতে নিতেই নিধি আবারো পড়ে যায় বিছানায়। ফারিশ তার পাশেই শুয়ে ছিল, হঠাৎ আওয়াজ শুনে সে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। সে তাড়াতাড়ি করে রুমের লাইট অন করে নিধির কাছে আসে। নিধির চোখে পানি দেখে বুক ধক করে উঠে ফারিশের। সে তাড়াতাড়ি নিধির চোখের পানি মুছে দেয়। নিধির গাল স্পর্শ করে থমকে যায় ফারিশ, জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে নিধির। সে আতঙ্কিত গলায় নিধি কে বলল,

“ঠিকাছো নিধি?”

ফারিশের কথা কানে গেলেও জবাব দিতে পারলো না নিধি। নিধি কে চুপ করে থাকতে দেখে ফারিশ ফের বলল,

“এই নিধি, শুনছো? কি হয়েছে তোমার?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে চোখ মেলে তাকাল, তারপর ভাঙা কন্ঠে বলল,

“ল..লাইট।”

আর কিছু বলতে পারলো না নিধি, তার আগেই সে জ্ঞান হারায়। নিধির এই অবস্থা দেখে ফারিশ তো পুরো হতভম্ব হয়ে গেল। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। রাত প্রায় তিনটা বাজে, এত রাতে কোনো ডক্টর তো জীবনেও বাসায় আসবে না, তারউপর সে নিধি কে নিয়ে ডক্টরের কাছেও যেতে পারবে না, কারণ তার গাড়ি যে পিয়াস নিয়ে গেছে। চিন্তায় ফারিশের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সে তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে তার পরিচিত একজন ডক্টর কে কল করে। বেশ কয়েকবার কল দেওয়ার পরেও ডক্টর কল রিসিভ করে না। জীবনে প্রথম নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে ফারিশের, সে সামনে বসে থেকেও কিছু করতে পারছে না নিধির জন্য। তবুও সে হাল ছাড়লো না, নিধিকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে ফারিশ রান্নাঘরে গিয়ে পানি আনে। কিছুটা পানি নিধির মুখে ছিটিয়ে দেয় সে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিধি নড়েচড়ে উঠে। নিধি জ্বরের ঘোরে বলল,

“মা পানি।”

নিধির কথা টা ফারিশের বুকে তীরের মত বাঁধে! মেয়েটা তার মা কে কতটা ভালোবাসে! অথচ এখন পরিস্থিতিটাই বা কেমন! ফারিশ চাইলেও নিধির মা কে তো আর ফিরিয়ে এনে দিতে পারবে না! সে উঠে গিয়ে নিধির জন্য পানি আনে। নিধি কে শোয়া থেকে উঠিয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয় ফারিশ। তারপর পানির গ্লাস নিয়ে নিধিকে খাইয়ে দেয় সে। ফারিশ পানি নিয়ে আসে জলপট্টি দিয়ে দেওয়ার জন্য। জলপট্টি দেওয়া শেষ করে ফারিশ নিধির মাথা নিজের কোলের উপর রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“ঘুমাও, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি আছি তো।”

ফারিশের এই একটা কথাতেই যেনো নিধি অনেকখানি ভরসা পেলো।
**
বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে ইকরা, কিছুতেই তার ঘুম আসছে না। সে পিয়াসের শার্টটা জড়িয়ে ধরে আছে। রাতে ছেলেগুলো ইকরার ওড়না নিয়ে যাওয়ার পর পিয়াস তার শার্টটা ইকরার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। এতে ইকরা অবাক হলেও পরক্ষণে পিয়াসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। বাসায় এসে বিছানায় শুয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার মন ঠিকই পিয়াসের কাছে, ছেলেটার চোখে কোনো খারাপ দৃষ্টি ছিলো না তার জন্য! এজন্যই সে পিয়াসের প্রতি একটু বেশিই আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে।
*
বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে পিয়াস, একদিনের ব্যবধানে সে একের পর এক খারাপ খবর পাচ্ছে। প্রথমে নিধি কে সে পছন্দ করে এটা টের না ফেলেও ফারিশ যখন জানালো নিধি তার বউ তখন থেকে সে বুঝছে নিধি কে যে সে পছন্দ করত মনে মনে। সেই ঘটনাতে নিজেকে সামলে নিলেও আবার নিধির মায়ের মৃত্যুতে সে ব্যথিত। চাইলেও সে একটু নিধিকে স্বান্তনা দিতে পারেনি। নিধির জন্য তো সে নিজের বন্ধুত্বটা নষ্ট করতে পারবে না। আর এখন চাইলেও নিধি তার হবে না। তাই নিজেকে সামলে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। চেষ্টা করলে ভুলে থাকতে ঠিকই পারবে সে। এটাই তার বিশ্বাস। পিয়াস বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে, হঠাৎ কিছু মনে পড়াতে সে নিজের প্যান্টের পকেট হাতড়ে একটা কানের ঝুমকো বের করে। ঝুমকোটা ইকরার, দৌড়ানোর সময় কান থেকে খুলে পড়ে যায়। পিয়াস সেটা কুড়িয়ে নিলেও ইকরা কে আর ফেরত দিতে তার মনে ছিল না। আবার দেখা হলে দিয়ে দিবে সেই ভেবেই নিজের কাছে রেখেছে ঝুমকোটা। রাত অনেক হয়েছে, পিয়াস আর বেলকনিতে দাড়িয়ে না থেকে রুমে চলে যায় ঘুমানোর জন্য।
★★
সকাল প্রায় সাড়ে আটটা বাজে, ফারিশ আজকে আর অফিসে যায়নি। নিধিদের বাসায় রয়েছে নিধির সাথে। নিধির জ্বর এখন কিছুটা কমেছে, তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি এখনো সে। ফারিশ বাহিরে যায় নাস্তা আনার জন্য, নিধি তো ব্রেকফাস্ট তৈরি করার মত অবস্থাতে নেই। সে নিজেও বানাতে পারে না। তাই দোকানই তার শেষ ভরসা। পনেরো মিনিটের মধ্যে খাবার নিয়ে বাসায় আসে ফারিশ। বাসায় এসে তো ফারিশ পুরো থমকে যায়। নিধি সোফায় বসে আছে, তার পাশেই একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা নিধি কে মনে হচ্ছে ধমকাচ্ছে কোনো কারণে। ফারিশ আর দেরি না করে নিধির দিকে এগিয়ে যায়। নিধি ভয়ে জবুথবু হয়ে বসে আছে। ফারিশ নিধির পাশে বসে তাকে বলল,

“ভয় পাচ্ছো কেনো নিধি? কে এই ছেলে?”

ফারিশের কথা শেষ হওয়ার আগেই ছেলেটি ফারিশের কলার চেপে ধরে নিধির পাশ থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল,

“এই তুই কে রে? তুই আমাদের মধ্যে কথা বলার কে?”

ছেলেটির কথা ফারিশের কানে গিয়েছে কি না সন্দেহ আছে, কারণ সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার কলারে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকা ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে আছে। সে একপ্রকার হুঙ্কার দিয়ে বলল,

“কলার ছাড় বলছি, নাহলে কিন্তু জীবিত ফিরতে পারবি না বাড়িতে।”

ফারিশের কথা শুনে হো হো করে হাসতে থাকে ছেলে টা। নিধি আতঙ্কিত চোখে দুজনের পানে চেয়ে আছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিধি ছেলেটিকে অনুনয় করে বলল,

“আপনি প্লিজ চলে যান অয়ন ভাই, এতোদিন যেহেতু কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। এখনও কেউ আমাদের খোঁজ নিতে হবে না। আমি আর এসব নিতে পারছি না প্লিজ!”

নিধির কথা শুনে অয়ন ক্ষিপ্ত সুরে বলল,

“চাচার যে গ্রামে জমি রয়েছে সেগুলো তোর নামে, তাছাড়া আব্বু তো বলেছে আমি যেনো তোকে বিয়ে করি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও তোর ওই বুড়ি মা এসব হতে দেয়নি। এখন তো বুড়িটা বিদায় হয়েছে। আর কোনো বাঁধা নেই।”

বলেই বাঁকা হাসে অয়ন। পুরো ব্যাপারটা যেনো ফারিশের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা নিধির মা কে নিয়ে এভাবে কথা বলাতে রেগে যায় ফারিশ।

“তুই ভাবলি কি করে নিধি তোকে বিয়ে করবে?”

ফারিশের কথা শুনে অয়ন ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়। সে নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,

“এই মা* টা কে রে নিধি? শহরে এসে নতুন জুটিয়েছিস নাকি?”

বলেই অয়ন নিধির হাত চেপে ধরে। তা দেখে ফারিশ রাগে থরথর করে কাঁপছে। এতোক্ষণ নিজেকে সামলে রাখতে পারলেও এখন আর পারছে না সে। ছেলেটার কতো বড় সাহস সে নিধির হাত স্পর্শ করেছে! ছেলেটার কি অবস্থা করবে সে নিজেও ভেবে পাচ্ছে না।

চলবে?

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০৭

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৭

নিস্তব্ধ রাত, রাস্তায় কারো কোনো আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না। নিস্তব্ধ পথ বেরিয়ে পিয়াসের গাড়ি ছুটে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে। পিয়াস গাড়ি ড্রাইভ করছে, পাশেই ইকরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তা দেখে পিয়াস দুষ্ট হাসি হেসে বলল,

“আপনি না কারো সাহায্য নেন না, এখন দেখছি সেই ঘুরে ফিরে আবার আমার সাহায্যই নিচ্ছেন!”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরা তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। সে কিছুটা অবাক হয়ে বলল,

“আপনি কি আমাকে খোঁটা দিচ্ছেন নাকি?”

“আরে খোঁটা দিলাম কোথায়? আপনিই তো সেদিন বলেছেন যে কারো সাহায্য নেন না, তাই বলেছি আরকি!”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরা জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,।

“গাড়ি থামান।”

ইকরার চিৎকার শুনে পিয়াস গাড়ি থামায়, ইকরা গাড়িতে আর বসে না থেকে নিচে নেমে পড়ে। তা থেকে পিয়াস হতভম্ব হয়ে যায়। সেও গাড়ি থেকে বের হয়ে ইকরার পাশে গিয়ে দাড়ায়।

“আরে কি হয়েছে? নেমে গেলেন কেনো?”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরা রেগে বলল,

“আপনি যান তো এখান থেকে, এসব খোঁটা দেওয়া লোকের সাহায্য আমি নিই না, আর এটা সাহায্যই বা কই হলো? জিজু বলেছে আপনার সাথে আসতে, তাই তার কথা রাখতে আপনার সাথে এসেছি আমি।”

ইকরার কথা শুনে পিয়াস মহা বিপাকে পড়লো। সে কিভাবে এখন ইকরাকে সামলাবে সেটাই ভাবছে, ফারিশ যদি জানতে পারে সে ইকরা কে মাঝরাস্তায় একা ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছে তাহলে তার কপালে দুঃখ আছে।

“আরে চলুন তো, লেট হয়ে যাচ্ছে।”

ইকরা মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

“ইকরা একবার যা বলে ফেলে তাই করে, আপনার লেট হচ্ছে আপনি যান। আমি একাই যেতে পারি।”

বলেই ইকরা আর কোনো কথা না বলে হাঁটা শুরু করে। পিয়াস হতভম্ব হয়ে শুধু ইকরার যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।
***
তীব্র মাথা যন্ত্রণা আর মায়ের শোকে নিধি কাতর হয়ে গেছে। নিরবে তার চোখ বেড়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। কি সুন্দর কালকে রাতেও সে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে! একদিনের ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেলো তার সাথে! কে আর তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবে? কেই বা তাকে খাবার খাইয়ে দিবে? কার কাছেই বা সে তার সকল আবদার করবে? এসব ভাবতে ভাবতেই নিধির চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
ফারিশ রুমে এসে দেখে নিধি বিছানার একপাশে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। তীব্র গরম পড়ছে, সে রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো রুমে এসি আছে কি না! রুমের পরিস্থিতি দেখে ফারিশ বুঝে ফেলল এসি রাখার মত উপযুক্ত রুম এটা এখনো হয়ে উঠেনি। সে অসহায় দৃষ্টিতে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে, এই ফ্যানই তার শেষ ভরসা। সে সুইচবোর্ডের দিকে গিয়ে ফ্যান অন করে। ফ্যান চালু করতেই ফারিশ ভয় পেয়ে যায়, ফ্যান চলছে ঠিকই। কিন্তু সাথে বিকট আওয়াজ ফ্রী! সে নিধির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সে তো অল্প কিছু ঘন্টা এই বাসায় থেকেই পাগল হয়ে গেছে। আর এরা কিভাবে এতোদিন এই বাসায় ছিলো? সে আর কিছু ভাবতে পারলো না। সোজা গিয়ে বিছানায় বসে সে।

“ঘুমাবে না?”

ফারিশের কথা কানে যায় না নিধির। ফারিশ ফের বলল,

“কি হলো?”

ফারিশের কথা শুনে হুশ ফিরে নিধির। সে কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,

“আপনি বরং এই রুমে থাকেন, আমি আম্মুর রুমে গিয়ে থাকি।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে বাঁধা দিয়ে বলল,

“একা কোনো রুমে থাকতে হবে না তোমাকে। তুমি আমার সাথে এই রুমেই থাকবে!”

ফারিশের কথা শুনে বিরক্ত হয় নিধি। সে বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলল,

“একা রুমে গিয়ে নিজেকে শেষ করে দিবো না, চিন্তা নেই।”

নিধির কথা শুনে ফারিশের মেজাজ বিগড়ে যায়। তবুও সে কিছু বলতে পারলো না নিধি কে, কারণ সে নিজেও নিধির মত একই রকম পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে, তখন তাকে কেউ সামলাতে এগিয়ে আসেনি। বাবা তার অফিস নিয়েই ব্যাস্ত ছিলো। তারপর আবার যখন তার বাবা তাকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমায় তখন তো কেউ ছিলো না তাকে একটু ভরসা দেওয়ার জন্য। এমন পরিস্থিতিতে যে নিজেকে কেমন অসহায় লাগে সেটা ফারিশ অনুভব করেছে। তাই আর নিধির সাথে রাগারাগি করতে পারলো না সে।

“তোমার যদি এক বিছানায় থাকতে কোনো অসুবিধা হয় তাহলে তুমি বিছানায় ঘুমাও, আমি রুমের অন্য কোথাও ঘুমিয়ে যাবো। তবুও অন্য রুমে যেতে হবে না তোমাকে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তাকে বাঁধা দিয়ে বলল,

“আমি একদম স্ট্রং আছি, আমার তেমন কোনো আত্মীয় স্বজন নেই এই শহরে, বাবার সম্পর্কে আত্মীয় যারা ছিল তারা বাবা বেঁচে থাকা পর্যন্তই আত্মীয় ছিলো। এরপর আমাকে আর আমার মা কে তারা নিজেদের আপন ভাবে নি কখনো। মায়ের চলে যাওয়াতে রক্তের কেউ এগিয়ে আসেনি, সে জায়গায় আপনি একা এগিয়ে এসেছেন। সকাল থেকে এতোকিছু করেছেন আমার জন্য, এতে আমি কৃতজ্ঞ স্যার! আমি জানি আমার সাথে আপনার একই রুমে থাকতে অস্বস্তি হবে, তারপরও আমার পরিস্থিতির কথা ভেবে এসব বলেছেন। আমি একদম ঠিক আছি, আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না আর আপনাকে স্যার!”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে এগিয়ে এসে তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

“ঘরের বরকে স্যার বলার কোনো মানে হয় না মিসেস ফারিশ শিকদার। বর তার স্ত্রীর পাশে থাকবে না তো কে থাকবে? আমাকে কি এতোই স্বার্থপর মনে করো তুমি? অফিসের সেই বাউণ্ডুলে বসটারও যে মন বলে একটা জিনিস আছে সেটা তো তোমরা ভুলতে বসেছো। আর বউয়ের সাথে একই রুমে থাকতে আমার কিসের অস্বস্তি লাগবে? চলো ঘুমাবে, অনেক রাত হয়েছে।”

বলেই ফারিশ নিধিকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। নিধি শুধু অবাক হয়ে ফারিশ কে দেখছে, যত দিন যাচ্ছে সে যেনো ফারিশ কে তত নতুন করে চিনছে!
★★
ইকরা রাস্তায় সিএনজির জন্য দাড়িয়ে আছে, রাগে থরথর করে কাঁপছে সে। কিছুতেই নিজের রাগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সে। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলেও কোনো রিক্সা বা সিএনজি পায় না সে। পাবেই বা কি করে? রাত যে অনেক হলো! তবুও হাল ছাড়লো না ইকরা। সে হেঁটে যাবে ভেবে ঠিক করলো। ইকরা হাঁটার জন্য দুইপা বাড়াতেই তার সামনে তিনটা ছেলে এসে দাড়ায়। ছেলে তিনটি ইকরার দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে বলল,

“সঙ্গী লাগবে নাকি ম্যাডাম?”

ছেলগুলোর কথা শুনে ইকরা ভয় পেয়ে যায়। সে ভয়ে পিছিয়ে যেতেই ছেলেগুলো আরো তার দিকে এগিয়ে আসে।

“পালাচ্ছেন কেনো ম্যাডাম?”

একদিকে পিয়াসের উপর রাগে ফুঁসতে থাকে ইকরা। আরেকদিকে এদের আজাইরা কথা শুনে ইকরার মেজাজ আরো বিগড়ে যায়। সে একটা ছেলের গালে সজোরে একটা থা’প্পড় দিয়ে বলল,

“মেয়ে দেখলেই তোদের নাটক শুরু হয়ে যায় কেনো?”

ইকরার কথা কানে যায় না ছেলেগুলোর। তারা রেগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

“খুব ভুল করেছিস তুই।”

বলেই একটা ছেলে ইকরার গলা থেকে টান দিয়ে ওড়না নিয়ে নেয়। ওড়না টেনে নিয়েই ছেলেগুলো হো হো করে হাসতে থাকে। ছেলেগুলোর কাজে ইকরা পুরো থমকে যায়। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎ করে তাকে ভরসা দেওয়ার জন্য একজন উদয় হলো, পিয়াস ইকরার হাত চেপে ধরে বলল,

“এদের হাত থেকে বাঁচার একটাই উপায়, পিছনে ঘুরেন। আর পালান।”

বলেই পিয়াস ইকরাকে নিয়ে দৌড় দেয়। ছেলেগুলো হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে পিয়াস আর ইকরার যাওয়ার পানে।

চলবে?

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০৬

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_০২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৬

সকাল থেকে দুইবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে নিধি, ইকরা তাকে সামলাতেই ব্যাস্ত। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফারিশ আর পিয়াস এসে পৌছায় নিধিদের বাসায়। মলি বেগমের নিথর দেহটা পড়ে আছে ফ্লোরে। ফারিশ এসে নিধি কে খুজতে থাকে, পরক্ষণে নিধিকে তার রুমে পাওয়া যায়। ফারিশ ধীরপায়ে নিধির দিকে এগিয়ে যায়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে নিধি। তার পাশেই বসে ছিল ইকরা, ফারিশ কে রুমে দেখে ইকরা সরে বসে।

“কিভাবে এসব হয়েছে বলবেন আমাকে?”

ফারিশের শীতল কন্ঠস্বর শুনে ইকরা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,

“সকালে নিধি আমাকে ফোন করে বলল আন্টি অনেক অসুস্থ। উনাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাবে ও। নিধি একা পারবে না তাই আমাকেও আসতে বলেছে সে। আমি এসে দেখি সব শেষ ভাইয়া! আমি কিছু করতে পারলাম না আমার বান্ধুবীর জন্য, নিধির পুরো পৃথিবী জুড়ে শুধু তার মাই ছিলো। মেয়েটা এখন কিভাবে নিজেকে সামলাবে! ও এতো মা পাগলী বলার বাহিরে!”

ইকরার কথা শুনে ফারিশের বুকটা ধক করে উঠে নিধির কথা ভেবে। সে কি মলি বেগমের রেখে যাওয়া রত্নকে যত্ন করে রাখতে পারবে? এসব ভেবেই ফারিশ নিধির দিকে তাকায়। মেয়েটা বিছানায় শুয়ে আছে, ফারিশ খেয়াল করল নিধির চোখের কোণে পানি জমে আছে। সে ঠিক কিভাবে সবকিছু সামলাবে ভেবে পাচ্ছে না। কি থেকে কি হয়ে গেলো এসব!

“নিধির চোখেমুখে পানি দিন, দেখুন জ্ঞান ফিরে কি না!”

ফারিশের কথা শুনে ইকরা নাকচ করে বলল,

“আরে না ভাইয়া, ও একদম সামলাতে পারবে না নিজেকে। নিজের সাথে কি করে বসে ও সেটার ঠিক নেই। ও যেরকম পাগলামি করেছে সকালে, তা আমি নিজের চোখে দেখেছি।”

ইকরার কথা শুনে ফারিশ বাঁধা দিয়ে বলল,

“কিন্তু তাই বলে, নিধি কে না জানিয়েই আম্মুর দাফনকাজ করবো?”

ফারিশের কথা শুনে ইকরা তার দিকে অবাক চিত্তে তাকায়, নিধির বর্ণনা অনুযায়ী সেই ফারিশের সাথে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা ফারিশের মধ্যে তো কোনো মিল নেই। নিধি বলেছে ফারিশ অনেক রাগী, তার মা কে আন্টি ডাকে। কিন্তু সে তো দেখছে ফারিশ অনেক শান্ত! ইকরা সেসব চিন্তাকে একপাশে রেখে বলল,

“আমি নিধির ভালোর জন্যই বলেছি এসব, ও নিজেকে একদম সামলাতে পারবে না। ওর মত নরম মনের মানুষ পৃথিবীতে মনে হয় না কেউ আছে, সেখানে সে কিভাবে নিজের চোখে সহ্য করবে তার মায়ের মৃতদেহ!”

ইকরার কথা শুনে ফারিশ কিছু একটা ভেবে রুম থেকে চলে যায়।
★★
মলি বেগম কে কবর দিতে দিতে প্রায় ২ টা বেজে যায়। কবর দেওয়া শেষ করে ফারিশ আর পিয়াস নিধিদের বাসায় ফিরে আসে। বাসায় এসে ফারিশ নিধির কাছে এগিয়ে যায়। মেয়েটার এখনো জ্ঞান ফিরেনি। সে নিধির পাশে বসে তার গালে আলতো থা’প্পড় দিয়ে তাকে ডাকে। কিন্তু নিধির কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। ফারিশ ইকরা কে উদ্দেশ্য করে বলল,

“একটু পানি দিন তো আপু।”

ফারিশের মুখে আপু ডাক শুনে ইকরা কিছুটা লজ্জা পায়, সে তো ফারিশের শালি লাগে, আপু ডাকার কি আছে! এসব ভাবতে ভাবতেই ইকরা রুম থেকে বের হয় পানি আনতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইকরা একগ্লাস পানি নিয়ে ফিরে আসে। ইকরা পানির গ্লাস ফারিশের দিকে বাড়িয়ে দেয়। ফারিশ গ্লাস নিয়ে নিধির মুখে হালকা পানি ছিটিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিধি নড়েচড়ে উঠে। সে চোখ মেলে তাকাল, চোখের সামনে পিয়াস ইকরা আর ফারিশকে একসাথে দেখে ভড়কে যায় নিধি। পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিধি লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে তার মায়ের মৃতদেহ যেখানে রাখা হয়েছিলো সেখানে ছুটে যায়। হঠাৎ নিধির এমন কাজে সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। ফারিশ তাড়াতাড়ি নিধির পিছু পিছু যায়। নিধি দুই হাটু মুড়ে নিচে বসে আছে তার মায়ের রুমে। ফারিশ গিয়ে নিধির পাশে ফ্লোরে বসে তাকে একহাত দিয়ে আগলে নেয়। ফারিশ কে নিজের পাশে দেখে নিধি তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ফারিশ তাকে সামলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফারিশ নিধিকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

“এভাবে ভেঙে পড়ো না নিধি, আম্মু তো সব সময় চায় তুমি হাসিখুশি থাকো। এখন যদি তুমি এভাবে কান্না করো তাহলে তিনি কতটা কষ্ট পাবে ভেবে দেখেছে!”

ফারিশের কথার জবাব দেয় না নিধি, সে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। ফারিশ নিধিকে ধরে তার রুমে নিয়ে আসে। নিধির কান্না থেমেছে, তবে সে একদম শান্ত হয়ে যায়। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলছে না।
**
রাত প্রায় আটটা বাজতে চলেছে, নিধির কোনো সাড়াশব্দ নেই। সে চুপচাপ রুমে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ফারিশও তার পাশেই বসে ছিল। হঠাৎ তাদের রুমের দরজা খোলার আওয়াজ শুনে নড়েচড়ে বসে ফারিশ। ইকরা এসেছে রুমে, সে এসে নিধির পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

“আমি তোর সাথে থাকতে চেয়েছি আজ, কিন্তু আব্বু চলে যাওয়ার জন্য বারবার ফোন দিচ্ছে। আমি একদম ফোন বন্ধ করে রেখে দিয়েছি, বন্ধুর বিপদে বন্ধু থাকবে। তারজন্য এতো বাঁধা দেওয়ার কি আছে! আমার হিটলার বাপ বলে কথা, বাঁধা তো দিবেই।”

ইকরার কোনো কথারই প্রভাব পড়লো না নিধির উপরে। ইকরা কিছুক্ষণ নিধির পানে চেয়ে ছিল, কিছু বলবে নিধি এই আশায়।

“আপনি বরং চলে যান আপু, কোনো বাবা মা চায় না তাদের মেয়ে বাহিরে রাত কাটাক। আর নিধির পাশে আমি তো আছি।”

ফারিশের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় ইকরার। সে বাহানা দেওয়ার জন্য বলল,

“আমি এত রাতে একা বাড়িতে যেতে পারবো না, তারচেয়ে আমি বরং এখানেই থাকি।”

কিন্তু ইকরার ভাবনায় এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে ফারিশ বলল,

“পিয়াস ও তো এখন বাড়ি চলে যাবে, আপনি বরং ওর সাথেই বাড়িতে চলে যান। ও আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিবে।”

বলে ফারিশ আর ইকরার জবাবের আশা না করে পিয়াস কে ডাকে। পিয়াস রুমে আসতেই ফারিশ তাকে বলল,

“তুই তো বাসায় যাবি, সাথে উনাকে একটু উনার বাসায় নামিয়ে দিস।”

পিয়াস আপত্তি করে বলল,

“কিন্তু আমি তো উনার বাসা চিনি না।”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ ইকরার দিকে তাকিয়ে বলল,

“আপনি ওকে আপনার বাসার এড্রেস দিয়ে দেন। তাহলেই তো হয়। আর পিয়াস যা বলছি তাই কর।”

ফারিশের কথা ফেলতে পারে না পিয়াস, সে ইকরাকে আসতে বলে বের হয়ে যায়। ইকরা নিধির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
পুরো বাসায় শুনশান নীরবতা, নিধি আর ফারিশ ছাড়া বাসায় আর কেউ নেই। নিধি বিছানার একপাশে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। ফারিশ একবার নিধি কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নেয়। নিধির মুখটা শুকিয়ে গেছে একদম। সারাদিন সেও কিছু খায়নি, নিধিও কিছু খায়নি। তাই ফারিশ ফোন হাতে নিয়ে খাবার অর্ডার দেয় অনলাইনে। কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার দিয়ে যায়। ফারিশ খাবার রিসিভ করে নিধিদের রান্নাঘরে গিয়ে প্লেট খুঁজে। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর প্লেট পায় সে। ফারিশ প্লেট নিয়ে তাতে খাবার বেড়ে নিধির রুমের দিকে যায়। রুমে এসে ফারিশ খাবারের প্লেটগুলো টি-টেবিলের উপর রেখে নিধির পাশে এসে তাকে ডাক দেয়।

“নিধি।”

ফারিশের কথা শুনে চোখ মেলে তাকাল নিধি। তা দেখে ফারিশ শান্ত গলায় বলল,

“উঠো তো, লক্ষী মেয়ের মত খাবার খেয়ে নাও। নাহলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। এতে ফারিশ বাধ্য হয়ে নিজেই নিধিকে উঠিয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়। সে খাবারের প্লেট নিধির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“চুপচাপ খেয়ে নাও।”

নিধির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফারিশ নিজেই খাবার মেখে নিধির মুখের সামনে ধরে বলে,

“জীবনে প্রথম বার শ্বশুর বাড়িতে এসেছি, আর তুমি আমাকে না খাইয়ে রাখার চিন্তাভাবনা করছো!”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। তা দেখে ফারিশ ফের বলল,

“না মানে, তুমি নিজে না খেয়ে কি বুঝাচ্ছো? যেনো আমিও না খেয়ে থাকি।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি অবাক হয়, সে তো ভুলেই বসেছে তার বাড়িতে যে এখন একটা রাগী নবাব রয়েছে, যার দেখাশোনার দায়িত্ব তার।

“এতক্ষণ ধরে মুখের সামনে খাবার ধরে রেখেছি, হাঁ করো তো। তোমাকে খাইয়ে দিয়ে আমি খাবো। প্রচুর খুধা লেগেছে আমার!”

ফারিশের কথা শুনে নিধি খাবার মুখে নেয়। এতে বিজয়ের হাসি হাসে ফারিশ, সে যেনো বিশ্বজয় করে ফেলেছে!

চলবে?

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০৫

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_৫

সন্ধ্যার বিষন্ন পথ পাড়ি দিয়ে যাচ্ছে ফারিশের গাড়ি। তার পাশেই চটপটে নিধি নিরব হয়ে বসে আছে। ফারিশ গম্ভীর মুখে ড্রাইভ করছে। কারো মধ্যেই কোনো কথা নেই। নিধিদের বাসার সামনে এসে ফারিশ গাড়ি থামায়। ফারিশ গাড়িতে বসে থেকেই নিধিকে আদেশ দিয়ে বলল,

“বাসায় যাও।”

ফারিশের কথা শুনে নিধির হুশ ফিরে, সে তাড়াহুড়ো করে গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে যায়। নিধি বাসার দিকে গিয়ে আবার থেমে যায়, সে পিছনে ফিরে দেখে ফারিশের গাড়িটা এখনো আছে। তাই নিধি আবার আগের জায়গায় এসে ফারিশকে বলল,

“বাসায় চলুন।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে নিধির পাশে দাড়ায়। ফারিশ আগের ন্যায় মুখ গম্ভীর করে বলল,

“বাসায় যাও।”

“আম্মু যদি জানতে পারে আপনি বাড়ির সামনে এসেও বাসায় আসেননি তাহলে আমার উপর রেগে যাবে।”

নিধির কথাকে পাত্তা না দিয়ে ফারিশ বলল,

“আন্টিকে বলতে হবে না তাহলে, বাসায় যাও। এক কথা বার বার বলতে হয় কেনো?”

ফারিশের কথা শুনে নিধির মন খারাপ হয়ে যায়। রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়েছে ফারিশ, তার পাশে একটা গাছ আছে। নিধি ঠিক সেখানেই দাড়িয়ে আছে এখনো। ছোট কাঁটা যুক্ত একটা গাছের ডালের সাথে নিধির গায়ের ওড়না আঁটকে আছে। নিধির সেদিকে খেয়াল নেই। সেটা ফারিশ লক্ষ্য করে নিধির দিকে এগিয়ে যায়। নিধি ভেবেছে ফারিশ তাকে বকা দিতে আসছে। তাই সে তৎক্ষনাৎ সরে যেতে চাইলে ফারিশ নিধির এক হাত চেপে ধরে ক্ষিপ্ত সুরে বলে,

“মন কোথায় থাকে, এখনই তো ওড়নাটা কাঁটার সাথে লেগে ছিঁড়ে যেতো।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার ওড়নার দিকে তাকায়, সে তাড়াতাড়ি করে ওড়না কাঁটা যুক্ত গাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে যেতেই নিধির আঙুলে কাঁটা ডুকে যায়, নিধি ব্যথা পেয়ে মৃদু চিৎকার করে উঠে। ফারিশ নিধির সামনেই ছিল, সে যখন বুঝতে পারলো নিধির আঙুলে কাঁটা ফুটেছে, তখন সে নিধি কে ধমক দিয়ে বলল,

“এতক্ষণ ধরে বলছি বাসায় যাও, আমার কথা কানেই যায় না তার! ব্যথা পেয়েছে?”

“না, সামান্য কাঁটার আঘাতে কারো ব্যথা লাগে না।”

নিধির কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ফারিশ।

“শুনো, তোমার বেখেয়ালি ভাবটা আমার সহ্য হচ্ছে না। এত্তো বড় একটা মেয়ে অথচ নিজের খেয়াল রাখতে পারছো না! নিজের ওড়নাটা পর্যন্ত সামলাতে পারো না তুমি!”

ফারিশের কথার জবাব দেয় না নিধি, সে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। নিধিকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশ নিজের গাড়িতে গিয়ে বসে। নিধি বাহিরে আর দাড়িয়ে না থেকে বাসায় চলে যায়। নিধি আঁধারে হারিয়ে যেতেই ফারিশ গাড়ি স্টার্ট দেয় নিজের গন্তব্যের দিকে যাওয়ার জন্য।
★★
নিধি ঘরে ডুকতেই দেখে তার মা তার জন্য খাবার টেবিলে বসে আছে। নিধি কে দেখতেই মলি বেগম এগিয়ে এসে বললেন,

“এতো দেরি হলো কেনো?”

নিধি তার মায়ের কথার জবাব না দিয়ে রুমে চলে যায়। মলি বেগম ও তার পিছন পিছন আসে।

“কিছু হয়েছে?”

“উফস মা, ভালো লাগছে না। একটু একা থাকতে দাও তো। এসেছি থেকে শুধু একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছো!”

নিধিকে এমন করে কথা বলতে দেখে মলি বেগম থমকে যান।

“যখন থাকবো না, তখন বুঝবি মা কি জিনিস।”

বলেই মলি বেগম চলে যান, নিধির তীব্র মাথা যন্ত্রণা করছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার৷ নিধি কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু ঘুম এলো না। তাই সে উঠে তার মায়ের রুমে যায়। রুমের লাইট অন করে দেখে তার মা নামাজ পড়ছে। তাই সে বিছানায় বসে অপেক্ষা করছে নামাজ শেষ হওয়ার। মলি বেগম নামাজ পড়া শেষ করে জায়নামাজ গুছিয়ে রাখে টেবিলের উপর। নিধিকে নিজের রুমে দেখে তিনি অভিমানে অন্যদিকে তাকিয়ে যান। নিধি এসে মলি বেগম কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“অফিসে অনেক কাজের চাপ ছিলো, মাথা ঠিক ছিল না।”

মলি বেগম নিধির দিকে তাকিয়ে ভাঙা কন্ঠে বলল,

“সেটা বললেই হতো, খেয়ে নিবি চল।”

বলেই মলি বেগম নিধিকে টেনে নিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দেয়। মলি বেগম খাবারের প্লেট নিধির দিকে এগিয়ে দিতেই নিধি বলল,

“খাইয়ে দাও।”

মেয়ের আবদার ফেলতে পারলেন না মলি বেগম। তিনি সযত্নে মেয়ের মুখে খাবার তুলে দেন। খাবার খাওয়া শেষ করে নিধি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলল,

“অনেকদিন পর মনে হলো আবার সেই ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছি।”

মেয়ের কথা শুনে হাসেন মলি বেগম। তিনি নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

“যা ঘুমা, সকালে আবার অফিসে যেতে হবে।”

নিধি তার মায়ের কথা শুনে নিরস গলায় বলল,

“ঘুমানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু ঘুম আসছে না।”

“আমার রুমে আয়, মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো। তাহলে ঘুম চলে আসবে।”

“আচ্ছা।”
**
অন্ধকার রুমে শুনশান নীরবতা। নিধি তার মায়ের মায়ের পাশে শুয়ে আছে। মলি বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“আমাকে ছাড়া একা থাকতে পারবি নিধু?”

হঠাৎ মলি বেগমের একথা শুনে এক মূহুর্তের জন্য হৃদয় থমকে যায় নিধির। সে শোয়া থেকে উঠে বসে বলল,

“আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় মা, এসব কথা বোলো না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। আমার পুরো পৃথিবী জুড়ে একমাত্র তুমিই তো রয়েছো।”

নিধির কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মলি বেগম। তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“এসব বলতে নেই মা, চাইলেই কি সবাই সারাজীবন পাশে থাকতে পারে?”

মলি বেগমের কথা শুনে নিধি কান্না করে দেয়। সে ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল,

“আর একদম এসব বলবে না বলে দিলাম। বললাম তো এসব চিন্তাও করতে পারবো না আমি। তোমাকে একটু সুন্দর করে বাচিয়ে রাখার জন্য আমি এতো স্ট্রাগল করছি, সেই তুমি কিনা আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছো!”

নিধির কথা শুনে হেসে ফেলল মলি বেগম। তিনি ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে বলল,

“আরে পাগলী, আমি তো মজা করেছি। ঘুমা তো তুই।”

মায়ের কথা শুনে শান্ত হতে পারল না নিধি, সে ফোঁপাতে ফোপাঁতে তার মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। মলি বেগম মলিন চোখে মেয়ের কান্নাভেজা মুখের দিকে চেয়ে আছেন। কেনো যেনো তার মনে হচ্ছে আর বেশিক্ষণ তিনি টিকে থাকতে পারবেন না এখানে। তার বুকে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে ।
★★
সকাল প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে, নিধি এখনো অফিসে এসে পৌছায়নি। এটা শুনে ফারিশের মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায়। সে নিজের কেবিনে পায়চারি করছে, মনে মনে নিধির জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছে সে। সে ভেবে রেখেছে কালকে নিধি অফিসে আসলে তাকে বলে দিবে যেনো আর কোনোদিন অফিসে না আসে সে। তার চাকরি এখানেই সমাপ্ত।
এসব ভেবেও শান্তি পাচ্ছে না ফারিশ, মনে মনে অজানা কোনো দুশ্চিন্তার জন্য সে কাজে মন বসাতে পারছে না। মনে হচ্ছে তার খুব কাছের কেউ অনেক কষ্টে আছে। ফারিশ এসব আর ভাবতে পারল না, সে সব চিন্তা কে একপাশে রেখে মলি বেগমের নাম্বারে কল দেন। কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরেও ফোন রিসিভ করল না কেউ। ফারিশ এবার বেশ চিন্তায় পড়ে যায়, মলি বেগম তো কোনোদিন এরকম করে না। সে ফোন করার সাথে সাথে কল রিসিভ করে তিনি। তাহলে এখন কি হয়েছে যে কল রিসিভ করছে না!
ফারিশ নিজের ফোনে তন্নতন্ন করে নিধির নাম্বার খুজে, কিন্তু পায় না। পরে সে নিধির কেবিনে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর নিধির নাম্বার পায়। ফারিশ আর দেরি না করে নিধির নাম্বারে কল দেয়। কয়েকবার কল দেওয়ার পরও রিসিভ হয় না। ফারিশ এবার বেশ ধৈর্যহীন হয়ে পড়েছে। শেষ বারের মত নিধির নাম্বারে কল দিতেই অপর পাশ হতে কল রিসিভ হয়, কিন্তু ফোনের অপর পাশ হতে নিধির বদলে অন্য একটা মেয়ের কান্নাভেজা কন্ঠস্বর ভেসে আসে। মেয়েটার কথা শুনে ফারিশ পুরো হতভম্ব হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। অজানা টেনশনে ফারিশের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে, সে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। তাড়াতাড়ি টেবিলের উপর থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে ফারিশ অফিস থেকে বের হয়ে যায়।

চলবে?

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০৪

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৪

ফারিশ নিধির সামনে ফাইল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এতে নিধি তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে যায়। ফারিশ সেটা বুঝতে পেরেও একদৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে।

“স্যার, আজকের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হবে বলেছিলেন। তাহলে এখানে আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন কেনো?”

নিধির কথা শুনে ফারিশের টনক নড়ে, সে কিছুটা ক্ষিপ্ত সুরে বলল,

“স্বামী তাকিয়ে আছে বলে অস্বস্তি লাগছে নাকি?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি চমকে তার দিকে তাকায়! সে অবিশ্বাস্য চোখে ফারিশের পানে চেয়ে আছে। নিধি কে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারিশ ফের বলল,

“বিয়ের আগে কার সাথে কথা বলেছো, নাকি বলোনি, কারো সাথে মিশেছো নাকি এড়িয়ে চলেছো সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু এখন তোমার বিয়ে হয়েছে, এখন থেকে নিজের সীমার মধ্যে থাকবে।”

ফারিশের কথার মানে বুঝতে পারলো না নিধি, সে মলিন কন্ঠে বলল,

“আমি আবার কি করেছি? বিয়ের আগে কারো সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াইনি, সেখানে কি করে বললেন বিয়ের পরে আমি কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবো?”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়, ফারিশ মুখে গাম্ভীর্য ধরে রেখে বলল,

“কথার মানে না বুঝে কথার জবাব দিবে না, ষ্টুপিড! যাও তো এখান থেকে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল, পরক্ষণে ফারিশের কাছ থেকে ফাইল নিয়ে নিজের কেবিনে চলে যায় সে।
**
বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে বাড়িতে ফিরে ইকরা। সে রুমে এসে ভেজা কাপড় পরিবর্তন করে বেলকনিতে এসে দাড়ায়। বাহিরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে, ইকরা গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দুই হাত বের করে বৃষ্টির পানি ছোঁয়ার চেষ্টা করে। ইকরার হাতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার সাথে সাথে সে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির দৃশ্যটাকে অনুভব করছে। সে চোখ বন্ধ করতেই তার চোখের সামনে সকালের সেই আগন্তুক যুবকটার চেহারা বেসে উঠে। ইকরা চমকে তাড়াতাড়ি চোখ মেলে ফেলে। ইকরার মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল। ইকরা দুই হাতে তার মাথা চেপে মেঝেতে বসে পড়ল। হঠাৎ বেলকনিতে ইকরার ছোটবোন ইরা প্রবেশ করে। ইকরাকে এভাবে মাথা চেপে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে ইরা দুষ্টু হেসে বলল,

“আরে শাঁকচুন্নি, নিচে বসে আছিস কেনো রে?”

এমনিতেই ইকরার মাথা যন্ত্রণা করছে, তার উপর আবার ইরার এসব কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে যায় তার। সে মেঝে থেকে উঠে ইরার গালে চ’ড় বসিয়ে দিয়ে বলল,

“বে’য়াদব, তোর বড় হই না আমি? অ’সভ্য কোথাকার! বড়দের সম্মান করতে জানে না!”

বলেই ইকরা রেগে বেলকনি থেকে চলে যায়, এদিকে ইরা গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। মুহুর্তের মধ্যে কি ঘটে গেলো সেটাই বুঝার চেষ্টা করছে সে। ইরা বুঝতে পারল তার বোনের নিশ্চয় মন খারাপ, তাই সে আর বেলকনিতে না দাড়িয়ে থেকে তার বোনের কাছে চলে যায়।
**
বিকেল প্রায় সাড়ে চারটা বাজে, অফিসের সবাই বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, অথচ নিধির টেবিলের উপর এখনো একগাদা ফাইল জমা হয়ে আছে। সে বিরতিহীন ভাবে একনাগাড়ে ফাইল চেক করে যাচ্ছে। হঠাৎ করে নিধির ফোনটা বেজে উঠে, সে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার বেস্টফ্রেন্ড ফোন করেছে তাকে। নিধি একবার টেবিলের উপর থাকা ফাইল গুলোকে পর্যবেক্ষণ করে নেয়, পরক্ষণে নিধি কল কেটে আবারো কাজে মন দেয়। ঠিক দুমিনিট না যেতেই ইকরা আবারো নিধি কে ভিডিও কল দেয়। নিধি এবার আর কল কেটে না দিয়ে কল রিসিভ করে পিছনের ক্যামেরা অন করে কয়েকটা ফাইলের সাথে হেলান দিয়ে মোবাইল রাখে। কল রিসিভ করতেই অপর পাশ হতে ইকরার অভিমানী কন্ঠস্বর বেসে আসে।

“অফিস তো ছুটি, এখন তো অন্তত কলটা না কাটলে পারতি!”

নিধি ফাইল পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলল,

“আমি এখনো অফিসেই আছি, অফিসে কাজের চাপ অনেক। তাই কল কেটে দিয়েছি।”

“ওহ।”

ইকরার কথার জবাবে আর কিছু বলে না নিধি, দুজনেই চুপ করে আছে। হঠাৎ নিধি কে অবাক করে দিয়ে তার কেবিনে পিয়াসের আগমন ঘটে। ফোনে পিছনের ক্যামেরা অন থাকায় পিয়াস কে সবার আগে ইকরা দেখে। পিয়াস কে দেখে ইকরা ভেবেছে এটা হয়তো তার ভ্রম হতে পারে তাই সে আর এসবকে পাত্তা না দিয়ে বলল,

“তোকে কিছু বলার ছিল নিধু!”

নিধি ইকরার কথার জবাব না দিয়ে বলল,

“একটু লাইনে থাক তো।”

নিধির কথা শুনে চুপ করে যায় ইকরা। এদিকে নিধি পিয়াস কে দেখে বলল,

“কোনো দরকার আছে ভাইয়া?”

নিধির কথার কোনো জবাব দিতে পারলো না পিয়াস, সে কি ভেবে নিধির কেবিনে এসেছে সেটা সে ভুলে বসেছে। কিছু বলতে গিয়েও এলোমেলো কথাকে আর সাজাতে পারে না পিয়াস। পিয়াস কে চুপ করে থাকতে দেখে নিধি ফের বলল,

“কোনো সমস্যা হয়েছে ভাইয়া?”

নিধির কথা শুনে পিয়াস হাসার চেষ্টা করে বলল,

“না মানে, সবাই তো বাড়ি চলে গিয়েছে। তুমি যাবে না?”

পিয়াসের কথা শুনে নিধি নিরস গলায় মিনমিন করে বলল,

“আমার তো আর সেই সুযোগ নেই।”

নিধিকে বিড়বিড় করতে দেখে পিয়াস ফের বলল,

“যাবে না বাড়িতে?”

নিধি তার টেবিলের উপর থাকা ফাইল গুলো পিয়াস কে দেখিয়ে বলল,

“এই সব কাজ আজকের মধ্যে শেষ করতে হবে, কাজগুলো শেষ করেই যাবো।”

নিধির কথা শুনে পিয়াস অবাক হয়ে বলল,

“তুমি আজকের মধ্যে কিভাবে এতোগুলো কাজ করে শেষ করবে? এই কাজ করতে নিম্নে দুদিন লেগে যাবে।”

বলে থামল পিয়াস, নিধি অসহায় দৃষ্টিতে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলল,

“স্যারের আদেশ বলে কথা, অমান্য করার সাধ্য কি আর আমার আছে?”

নিধির কথা শুনে চুপ করে যায় পিয়াস, সে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

“তুমি চাইলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।”

পিয়াসের কথা শুনে চমকে যায় নিধি, দুপুরে ফারিশের রাগারাগি যে পিয়াসকে নিয়েই ছিল সেটা নিধি বুঝতে পেরেছে পরে। তাই সে আর উটকো ঝামেলাতে না জড়ানোর জন্য বলল,

“সমস্যা নেই, আমি করে ফেলবো। আপনি বরং চলে যান।”
**
পুরো অফিস ছুটি হয়ে গিয়েছে, কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। পুরো অফিস জুড়ে শুনশান নীরবতা। ফারিশ নিজের ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। হঠাৎ করে নিধির কথা মনে পড়ে যায় তার, সে তো নিধি কে অনেকগুলো কাজ দিয়ে এসেছে! এসব কাজ করতে করতে তো রাত পার হবে যাবে! একা একটা মেয়ে কিভাবে রাতে বাড়িতে যাবে? এসব ভেবেই ফারিশের মনে নিধির জন্য অল্প একটু মায়া জন্মায়। সে আর বাহিরের দিকে না গিয়ে, নিধির কেবিনের দিকে যায়। ফারিশ দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই হতভম্ব হয়ে যায়। নিধি বসে বসে ফাইল চেক করছে, আর পিয়াস কেবিনের এককোনায় দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ ফারিশ কে নিধির কেবিনে দেখে ভড়কে যায় পিয়াস।

“অফিস ছুটি হয়েছে একঘন্টা হয়ে গেছে, তুই এখনো এখানে দাড়িয়ে কি করিস?”

ফারিশের কথার কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না পিয়াস, সে ইনিয়েবিনিয়ে বলল,

“ নিধিকে দেখলাম এখনো বাড়ি যায়নি। তাই জিজ্ঞেস করতে এলাম বাড়িতে যাবে নাকি? তুই বাড়িতে যাবি না?”

পিয়াসের কথা শেষ হতেই পিয়াস গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“ জিজ্ঞেস করা শেষ হলে বাড়িতে যা।”

ফারিশের কথা শুনে পিয়াস যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়ল। পিয়াস নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,

“নিধি, তোমার যেতে তো মনে হচ্ছে রাত হবে। যেতে পারবে একা?”

পিয়াসের কথা শুনে চুপসে যায় নিধি, সে মনে মনে দোয়া করছে যেনো পিয়াস নামের ছেলেটা একটু চুপ করুক। এদিকে পিয়াসের কথা শুনে ফারিশের মেজাজ বিগড়ে যায়। সে নিজের রাগ কে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে শান্ত গলায় বলল,

“নিধি কে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ওর বর রয়েছে। তোকে এত টেনশন করতে হবে না।”

ফারিশের কথা শুনে হতভম্ব পিয়াস, নিধির হাসবেন্ড আছে? কিন্তু কি করে? মনে মনে ভাবছে পিয়াস। সে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বলল,

“কিন্তু ওর তো বিয়ে হয়নি, বর কোত্থেকে আসবে? ওর বর কে?”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ এবার আর নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। সে হুঙ্কার দিয়ে বলল,

“মেহরাব ফারিশ শিকদারের একমাত্র বউ মানহা ইসলাম নিধি। তাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তার বরই যথেষ্ট, বরের বন্ধুর কোনো প্রয়োজন নেই। আমার বউ অফিস থেকে দিনে যাবে নাকি মাঝরাতে যাবে সেটা আমার ব্যাপার!”

ফারিশের কথা শুনে পুরো হতভম্ব পিয়াস। ফারিশের বউ নিধি? কিন্তু কি করে? এসব নানান ভাবনার বেড়াজালে আঁটকে যাচ্ছে পিয়াস। এদিকে নিধি পুরো মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছে। তার কানে ফারিশের ❝আমার বউ❞ বলা কথাটা বারবার বাজছে শুধু!

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০৩

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৩

মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে নিধি আর ফারিশ, অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে ফারিশের সামনে থেকে সরে দাঁড়াল নিধি। ফারিশ একদৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে, তার প্রশ্নের জবাবের আশায়।

“কি হলো, কিছু জিজ্ঞেস করেছি তো নাকি?”

ফারিশের কথা শুনে মৃদু কেঁপে ওঠে নিধি, সে ইনিয়েবিনিয়ে বলল,

“একজনকে পছন্দ হয়েছে, তাকেই ভালোবেসে কালসাপ ডেকেছি আমি, তাতে আপনার সমস্যা কি?”

নিধির কথা শুনে মনটা বিষিয়ে উঠল নিমিষে। সে নিধির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“ভালো হতো যদি তুমি নাটকে অভিনয় করতে, ষ্টুপিড কোথাকার। শুনো আমার একটা ফাইল তোমার কেবিনে রেখেছে পিয়াস, তাড়াতাড়ি খুজে দাও।”

ফারিশের কথা শেষ হতেই নিধি কাজে লেগে পড়ল ফারিশের ফাইলটা খোঁজার জন্য। ফারিশ এক ধ্যানে তাকিয়ে দেখছে নিজের সামনে থাকা চটপটে মেয়েটাকে।

“এই বোরিং মেয়েটা নাকি ড্যাডের পছন্দের পাত্রী, উফস! এই আনস্মার্ট মেয়েটা কে নাকি সারাজীবন সহ্য করতে হবে আমাকে! তবে মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা আছে, যার জন্য মেয়েটা এখনো আমার সামনে টিকে আছে।”

কথাগুলো বিড়বিড় করে বলে চোখ বন্ধ করে ফারিশ।

“স্যার, এই নিন আপনার ফাইল।”

সবে চোখ বন্ধ করেছে ফারিশ, হঠাৎ নিধির কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় ফারিশ, সে হকচকিয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি নিধির হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ায়।

বাহিরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে, পিয়াস একপ্রকার বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে অফিসে এসে পৌঁছায়। অফিসে এসেই সে আর কোনোদিকে না তাকিয়ে ফারিশের কেবিনের দিকে ছুটে যায়। পিয়াস দরজা নক করে বলল,

“মে আই কাম ইন স্যার?”

দরজার সামনে পিয়াস কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশ অবাক হয়। সে ইশারায় পিয়াস কে ভিতরে আসতে বলে। পিয়াস ভিতরে এসেই উতলা হয়ে বলল,

“স্যরি স্যার, আসলে আমি ইচ্ছে করে লেট করিনি। বৃষ্টির কারণে দেরি হয়ে গেছে আমার।”

পিয়াসের কথা শুনে আশ্চর্য বনে যায় ফারিশ। পিয়াস কোনোদিন লেট করে আসে না, একদিন লেট করেছে বলে কি তাকে সে মেরে ফেলবে? সে তো শুধু নিধির সাথেই এটা নিয়ে রাগারাগি করে, কারণ নিধি সব সময় দেরি করে অফিসে আসে। ফারিশ পিয়াসের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,

“বোস এখানে, পানি খা।”

ফারিশের কথা শুনে পিয়াস পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে চেয়ার টেনে বসে। পিয়াস উতলা হয়ে ফের বলল,

“আমার কি শাস্তি মাফ?”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ এবার কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,

“শা’লা ভীতুর ডিম, আমি কি তোকে খেয়ে ফেলবো নাকি? মেয়েদের মত ফ্যানফ্যান শুরু করে দিয়েছে কানের কাছে।”

ফারিশের কথা শুনে চুপসে যায় পিয়াস, গুরুগম্ভীর স্বভাবের বন্ধুর আচমকা এত নম্র গলায় কথা শুনে অবাক হয় পিয়াস। পিয়াস একবার ফারিশকে ভালো করে পরখ করে নেয়, যে ছেলেটার কাজের প্রতি অনীহা ছাড়া কিছুই দেখতো না পিয়াস, সেই ছেলেটার টেবিলের উপর নাকি এত্তোগুলো ফাইল পড়ে আছে। ফারিশ মনোযোগ দিয়ে ফাইলগুলো পর্যবেক্ষণ করতে ব্যাস্ত। প্রতিদিনকার মত অগোছালো ভাবে আজ অফিসে আসেনি সে, ফারিশকে আজকে অফিসের ড্রেস পরে আসতে দেখে অবাক হয় পিয়াস। অন্যদিনের মত বখাটেদের মত লাগছে না ফারিশকে, বরং আজ তাকে বেশ সুদর্শন লাগছে। হঠাৎ ফারিশ খেয়াল করল পিয়াস তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

“আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েও আমার দিকে এত রোমান্টিক চোখে তাকায়নি, যতটা তুই ছেলে হয়ে তাকিয়ে আছিস! ব্যাপার কি বল তো, আমার মধ্যে আবার তোর কোনো প্রেমিকা টেমিকাকে দেখছিস না তো?”

ফারিশের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় পিয়াস। সে ফারিশের থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকাতেই তার চোখের সামনে নিধির মুখটা বেসে উঠে।

“হায় আল্লাহ্, কি হচ্ছে কি আমার সাথে?”

পিয়াস কে আনমনে বিড়বিড় করতে দেখে ফারিশ তাকে ধমক দিয়ে বলল,

“তোকে ভূতে ধরছে মনে হচ্ছে, যা তো চোখের সামনে থেকে।”

ফারিশের কথা শুনে পিয়াস উঠে নিজের ডেস্কের দিকে চলে যায়। পিয়াস নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে, কাজে মন বসছে না তার। বারবার শুধু নিধির কথা ভাবছে সে, কি অদ্ভুত ঝামেলায় পড়লো সে! এ কোন অনুভূতির বেড়াজালে আঁটকে যাচ্ছে সে? কেনো নিধির কথা ভাবছে সে? পিয়াস আর কিছু ভাবতে পারলো না, তীব্র মাথাব্যথা ঘিরে ধরে তাকে!
**
একটা ফাইল নিয়ে বসে আছে নিধি, ফাইলটার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না সে, এদিকে আবার সবগুলো কাজ আজকের মধ্যেই শেষ করতে হবে। ফাইলটা কি ফারিশ কে দেখাবে সে? ভাবতে ভাবতে আবার পিছিয়ে গেল নিধি, সে নানাবিধ ভাবনায় বিভোর হয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো পিয়াসের ডেস্কের দিকে, নিধিকে নিজের ডেস্কের সামনে দেখে চোখ তুলে তাকালো পিয়াস। নিজেকে সামলিয়ে পিয়াস বলল,

“কিছু হয়েছে নিধি? চিন্তিত লাগছে কেনো?”

পিয়াসের কথা শুনে নিধি নিরস গলায় বলল,

“এই ফাইলের মধ্যে থাকা কিছুই আমার মাথায় ডুকছে না, কিভাবে যে চেক করবো বুঝতে পারছি না৷ স্যারও রেগে আছে, তার জন্য আপনার কাছে এসেছি। যদি একটু বুঝিয়ে দিতেন!”

নিধির কথা শুনে মৃদু হাসে পিয়াস, সে নিধির হাত থেকে ফাইল নিয়ে বলল,

“কি বুঝছো না, বলো তো।”

নিধি পিয়াসের পাশে গিয়ে তাকে দেখাচ্ছে কোথায় তার সমস্যা হচ্ছে ফাইলটা চেক করতে। এদিকে পিয়াস সেদিকে না তাকিয়ে একদৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ পিয়াসের ডেস্কের সামনে ফারিশের আগমন ঘটে, পিয়াসের ডেস্কের সামনে দিয়ে বাহিরে যাচ্ছিল ফারিশ, নিধিকে পিয়াসের সাথে দেখে থেমে যায় সে। এদিকে পিয়াস দেখেনি ফারিশ যে তার ডেস্কের সামনে দাড়িয়ে আছে, সে তো নিধির দিকেই তাকিয়ে আছে। হঠাৎ নিধি অনুভব করল তার পাশে কেউ এসে দাড়িয়েছে। সে মাথা তুলে তাকাতেই হঠাৎ ফারিশকে দেখে ভয়ে শিউরে উঠে। নিধি ফারিশ কে দেখে তার হাতে থাকা ফাইল দেখিয়ে চট করে বলে বসল,

“আসলে আমি উনার কাছে এসেছি এটা একটু বুঝে নিতে।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার দিকে। সে চোখে সানগ্লাস পরতে পরতে বলল,

“কৈফিয়ত চেয়েছি আমি?”

ফারিশের কথা শুনে নিধিকে কিছু না বলতে দিয়ে পিয়াস দাঁত কেলিয়ে বলল,

“আরে নিধি, তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো স্যারকে।”

পিয়াসের কথা শুনে নিধি প্রাণহীন চোখে ফারিশের দিকে তাকায়। ফারিশ নিধির দিকে তাকিয়ে নরম গলায় শুধালো,

“আরে মিস নিধি, ছোটখাটো ব্যাপারে আপনার উনাকে কেনো বিরক্ত করতে হবে? আমি তো আছি, তাই আপনার উনাকে বিরক্ত না করে আমার কেবিনে আসুন। আমি আপনাকে A টু Z সবকিছু বুঝিয়ে দিবো।”

ফারিশের কথা শুনে চুপসে যায় নিধি, ফারিশ যে প্রতিটা কথা ঠেস মেরে মেরে বলেছে সেটা বুঝতে আর বাকি রইলো না নিধির, কিন্তু পিয়াস ছেলেটা বুঝতে পারলে না। সে তো আর জানে না নিধি আর ফারিশের মধ্যে একটা বন্ধন রয়েছে। ফারিশ আর বাহিরের দিকে না গিয়ে নিজের কেবিনের দিকে চলে যায়। এদিকে নিধি পড়লো মহা ঝামেলায়। বসের আদেশ অমান্য করতে না পেরে সেও ফারিশের পিছন পিছন তার কেবিনে যায়। ফারিশ নিধির হাত থেকে ফাইল টা কেড়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“অফিসে এসে দেখছি অনেকের সাথেই ভাব জমেছে!”

ফারিশের কথাটি শুনতেই চোখ তুলে তাকালো নিধি, ফারিশের দৃষ্টি গাঢ়, নির্নিমেষ। ফারিশ যে তাকে অপমান করেই এই কথা বলেছে সেটা আর বুঝতে বাকি রইল না নিধির, মনের অজান্তে তার চোখে অশ্রু রা এসে ভীড় জমায়। তার চোখ বেড়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে, ফারিশের দৃষ্টি সেদিকে যেতেই সে নিধির হাত চেপে ধরে তাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এসে বলল,

“ন্যাকামির শেষ নেই আর। কিছু হলেই চোখে সমুদ্র তৈরি হয়ে যায়।”

বলেই ফারিশ একহাত বাড়িয়ে নিধির গাল স্পর্শ করে চোখের পানি মুছে দেয়। ফারিশের কাজে হৃৎস্পন্দন থমকে গেল নিধির।

চলবে?

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০২

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০২

নিধি গুটিগুটি পায়ে হেঁটে ফারিশের কেবিনের সামনে আসে। কেবিনের দরজা খোলাই ছিলো, তাই নিধি আর সাত-পাঁচ না ভেবেই রুমে ডুকে পড়ে। নিধিকে অনুমতি না নিয়ে তার কেবিনে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ফারিশ। সে কিছুটা রুষ্ট সুরে বলল,

“বিয়ে হতে না হতেই সব নিয়ম-কানুন ভুলে গিয়েছো নাকি? এটা বাড়ি নয় অফিস তোমার জানা নেই?”

ফারিশের কথা বুঝতে না পেরে নিধি তার দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। নিধিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারিশ আবারো আগের ন্যায় বলল,

“এটা কি তোমার বেডরুম পেয়েছো নাকি? যে অনুমতি না নিয়েই ডুকে গিয়েছো?”

নিজের করা ভুল বুঝতে পেরে নিধি নিচের দিকে তাকিয়ে নিভু সুরে বলল,

“স্যরি স্যার, আর এমন ভুল হবে না।”

“স্যরি মাই ফুট! স্যরি বললেই কি সব অপরাধ ক্ষমা করে দিবো নাকি? ষ্টুপিড কোথাকার, কোনো কমনসেন্স নেই! বসের সাথে কেমন করে চলতে হয় সেটা আবার নতুন করে শিখাতে হবে!”

ফারিশের ধমক খেয়ে ভয়ে কেঁপে ওঠে নিধি, সে আগের ন্যায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

“বসো এখানে।”

ফারিশের কথা শুনে চমকে যায় নিধি, দ্বিধাদ্বন্দ্ব তার চেহারায় মিশে আছে। নিধি তো ভেবেছে এখন ফারিশ রেগেমেগে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে দেওয়ার হুমকি দিবে, তা না করে এতো আপ্যায়ন করছে কেনো সেটাই ভাবছে নিধি!

“কি হলো বসতে বলেছি তো, কানে শুনো না নাকি?”

ফারিশের ধমক শুনে নিধি তাড়াতাড়ি চেয়ার টেনে ফারিশের মুখোমুখি বসে। ফারিশ হাতে কলম নিয়ে ভাবুক ভঙ্গিতে বলল,

“এতো লেট হয়েছে কেনো অফিসে আসতে?”

“স্যার আপনি জানেন না কেনো লেট হয়েছে?”

নিধির কথা শুনে ফারিশ ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমার জানার কথা বুঝি? এতো প্রশ্ন না করে যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দাও।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, তারপর মুখে দুষ্টু হাসি বজায় রেখে বলল,

“জানেন স্যার, আজকে আমি বাসা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে কোত্থেকে একটা শয়তান লোকের গাড়ি এসে হাজির হয় আমার সাথে, কিছু বুঝে উঠার আগেই বখাটেটা তার গাড়ি এত্তো জোরে চালিয়ে চলে গেছে যে, রাস্তার সব কাদা পানি আমার গায়ে এসে পড়ে, এতে আমার জামাটা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ অবাক চিত্তে তার দিকে তাকায়, মেয়েটা তাকে বখাটে বলল! এত বড় সাহস তার!

“কন্ট্রোল ফারিশ, কন্ট্রোল। মেয়েটা তো আর তোকে শয়তান, বখাটে বলেনি। আর মেয়েটা তো জানে না তুই গাড়ির ভিতরে চিলি।”

ফারিশ কে নিজের মনে বিড়বিড় করতে দেখে নিধি ঠোঁট টিপে হাসে। নিধিকে হাসতে দেখে ফারিশ তাকে জোর গলায় শুধালো,

“লজ্জা করছে না বসের সামনে দাঁত বের করে হাসছো যে?”

ফারিশের কথা শুনে নিধির মুখ থেকে হাসি গায়েব হয়ে যায়। নিধি আর বসে না থেকে চেয়ার থেকে উঠে বলল,

“স্যার, অনেকক্ষণ হয়েছে ডেকেছেন, কিন্তু কোনো কাজের কথাই তো বলছেন না!”
**
মাঝরাস্তায় ঝড়ো বর্ষণের মুখে পড়ল ইকরা, সে ভিজে পুরো টইটম্বুর হয়ে গেছে। আশেপাশে কোনো বাড়ি বা দোকানও নেই যে একটু দাড়াবে সে। হঠাৎ একটা যুবক এসে ইকরার মাথার উপর ছাতা মেলে ধরে। আচমকা এমন কান্ডে হতভম্ব হয়ে যায় ইকরা। অচেনা একটা ছেলের সাথে একই ছাতার নিচে দাড়িয়ে থাকতে ইকরা অসস্থিবোধ করছে। ইকরা চোখ তুলে ছেলেটার দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়। ইকরা তাড়াতাড়ি নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আরে চিনি না জানি না, হুট করে কোত্থেকে উদয় হলেন আপনি?”

ইকরার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় পিয়াস, সে তো শুধু মেয়েটাকে সাহায্যই করতে চেয়েছে।

“আপনি তো ভিজে যাচ্ছেন, তাই আপনাকে একটু সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। ভিজে গেলে তো অসুস্থ হয়ে যাবেন আপনি, তারজন্য আরকি!”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়,

“অচেনা মেয়ের জন্য এত মায়া কেনো ভাই? আমার এমন সাহায্য লাগবে না।”

ইকরার কথা শুনে পিয়াস হাসার চেষ্টা করে বলল,

“ওহ, সাহায্য লাগবে না আপনার, আগে বলবেন তো। আচ্ছা যাই তাহলে আমি।”

বলেই পিয়াস ছাতা নিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে রওনা হয়। এদিকে ইকরা পুরো বোকা বনে যায় ছেলেটার কাজে, সে তো একটু ভাব নিতে চাচ্ছিল। আর এতেই ছেলেটা চলে গেলো!

“উফস, ইকরা তুই যে কেনো এত ভাব নিতে যাস কে জানে! এখন ভিজ আবার বসে বসে!”

ইকরা নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে দৌড়ে সামনে যেতে লাগল।
★★
“কাজের কথা বলবো নাকি প্রেমালাপ করবো সেটা কি এখন তোমার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করতে হবে নাকি?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি চট করে বলে বসল,

“আমাকে বলবেন কেনো? আপনি তো কোনোদিন কাজের ব্যাপারে কথা ছাড়া অন্যকিছু বলতেন না, তাই বললাম আরকি, স্যরি।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেয়, এই মেয়েটা সামনে থাকলে কেমন এলোমেলো হয়ে যায় সে। আগে থেকে ভেবে রাখে কত কথা শুনাবে, কিন্তু নিধি সামনে এলে মুখ থেকে আর কোনো কঠিন কথা বের হতে চায় না তার।

“আজকের মত ক্ষমা করলাম, আর কোনোদিন যদি লেট হয় তোমার, তাহলে একদম চাকরি থেকে বের করে দিবো বলে দিলাম।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি মুখ ভেঙচিয়ে বলল,

“শয়তান, পারেই তো শুধু হুমকি দিতে।”

“কিছু বলেছো?”

“স্যরি স্যার, আর কিছু বলবো না।”

নিধির কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে ফারিশ বলল,

“পাগল হয়ে গেছো নাকি? সকাল থেকে স্যরি কয়বার বলেছো হিসেব আছে?”

“স্যরি স্য.. না মানে, সকালে ওই বাউণ্ডুলে ছেলেটাকে দেখে দিন শুরু হয়েছে তো, তাই দিনটাই খারাপ যাচ্ছে আমার।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,

“ছেলেটা তোমার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছে যে তুমি তাকে এত বকছো! ষ্টুপিড, যাও তো এখান থেকে।”

ফারিশের কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসে নিধি, সে আর দাড়িয়ে না থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

“এই শুনো।”

ফারিশের কথা শুনে থেমে যায় নিধি, মনে পড়ে যায় সকালে ফারিশের বলা ❝চু’মু খাবো, তাই ডেকেছি❞ কথাটা। তার মানে ফারিশ এখন তাকে…। আর কিছু ভাবতে পারলো না নিধি, লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায় সে।

“কি হলো মিস স্যরি? ডেকেছি আমি, এভাবে মূর্তির মত দাড়িয়ে থাকতে বলিনি।”

ফারিশের কথা শুনে ধ্যান ভাঙ্গে নিধির, সে ফারিশের দিকে তাকিয়ে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে তার সামনে গিয়ে দাড়ায়।

“আমার নাম স্যরি কে বলেছে আপনাকে?”

ফারিশ নিধির কথার জবাব না দিয়ে বলল,

“কালকে অফিসে আসোনি, কালকের সব ফাইল জমা হয়ে আছে তোমার টেবিলে, আজকের সব ফাইলও পড়ে আছে। সব আজকের মধ্যে কমপ্লিট করে ফেলবে, নাহলে চাকরি থেকে বের করে দিবো বলে দিলাম।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি চট করে বলে বসল,

“একদিনের মধ্যে কিভাবে এতোগুলা ফাইল দেখবো আমি? সব ফাইল দেখতে নিম্নে দুইদিন লাগবে!”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে একটা ধমক দিয়ে বলে,

“যা করতে বলেছি তাই করো। ষ্টুপিড।”

ফারিশের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় নিধির, কোথায় ভেবেছে ফারিশ তাকে…। আর কিছু ভাবতে পারলো না নিধি, নিজের ভাবনার কাছে নিজেই লজ্জা পায় সে। সে কিভাবে ফারিশের কাছ থেকে এসব আশা করেছে! সে ফারিশ কে বকতে বকতে তার কেবিন থেকে বের হয়ে নিজের কেবিনে এসে বসে। নিধি একবার টেবিলের উপর থাকা ফাইল গুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেয়।

“শা’লার শয়তান লোক, চু’মু দিবে বলে তার কাছে নিয়ে কত্তো গুলো কাজ ধরিয়ে দিলো। দুনিয়াতে মানবতা বলতে কিছু বেঁচে নেই রে নিধি, কিছু বেঁচে নেই। চারদিকে সব শুধু কালসাপের আনাগোনা, কিছু বললেই ছোবল মারবে এমন ভাবে ফোঁস করে উঠে খ’চ্চরটা।”

“কালসাপটা দেখতে কি আমার মত মিস স্যরি?”

হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনে নিধি হতভম্ব হয়ে যায়। সে পিছনে তাকিয়ে দেখে ফারিশ দাঁড়িয়ে আছে। মুহুর্তের মধ্যেই নিজের বলা প্রথম কথাগুলো মনে করে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায় নিধি। একি বলে ফেলেছে সে, এখন লোকটা তাকে কি ভাববে! ছি ছি! ভাবতে ভাবতে নিধির ইচ্ছে করছে মাটি খুঁড়ে মাটির তলায় পালিয়ে যেতে। কিন্তু আফসোস, অফিসে তো আর মাটি নেই!

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০১

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#সূচনা_পর্ব
#হালিমা_চৌধুরী

১.
বিয়ের পাত্র হিসেবে নিজের অফিসের বস মেহরাব ফারিশ শিকদার কে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় নিধি! দ্বিধাদ্বন্দ্ব তার চেহারায় মিশে আছে ভয়ে। নিধিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার মা মলি বেগম মেয়েকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললেন,

“কি হচ্ছে কি নিধি? কবুল বলছো না কেনো?”

মলি বেগমের কথা শুনে হুশ ফিরে নিধির, সে অসহায় অনুভব করল। তাকে যদি বলা হতো, একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করে নাও, তাহলে সে নির্দ্বিধায় বিয়ে করে নিতো। তবুও এই বদমেজাজি বাউণ্ডুলে ছেলেটাকে বিয়ে করতে চায় না সে।
ছোট একটা রুম, তার মধ্যে ৫ জন মানুষ নিধির পানে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে। নিধি ফুপিয়ে কেঁদে চলেছে একনাগাড়ে। ৫ জন মানুষের মধ্যে একজন মানুষ নিধির দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে। নিধির মা তাকে বুঝিয়ে যাচ্ছে কবুল বলার জন্য। কিন্তু সে কবুল না বলে ফুপিয়ে কান্না করে যাচ্ছে। নিধির কাজে বিরক্ত হয়ে এক সময় ফারিশ খাটের উপর থাকা মিষ্টির প্লেটটা নিচে ছুড়ে মেরে রেগে বলল,

“এই মেয়ে, সমস্যা কি তোমার? আমি কি তোমাকে জোর করে বিয়ে করছি যে তুমি কবুল বলছো না? ন্যাকামি করছো তুমি?”

ফারিশের ধমক খেয়ে নিধির কান্না থেমে যায়, এদিকে ফারিশের আচরণে মলি বেগমের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। তিনি মুখে কিছু প্রকাশ করলেন না। পরিবেশ টা এখন একদম নিস্তব্ধ, রুমের মধ্যে ফারিশ আর তার বন্ধু আর বন্ধুর বউ, বিয়ে পড়ানোর জন্য হুজুর আছে। রাগে থরথর করে কাঁপছে ফারিশ! ফারিশ কে এভাবে রেগে যেতে দেখে তার বন্ধু সাদিফ মলি বেগমের উদ্দেশ্য বলল,

“আন্টি, বিয়ে টা কি পড়ানো শুরু করবে হুজুর?”

মলি বেগম বলল,

“জি শুরু করুন!”

হুজুর বিয়ে পড়ানো শুরু করল, ফারিশ কে কবুল বলতে বলার সাথে সাথে সে কবুল বলে দেয়। এবার নিধির কবুল বলার পালা, কবুল বলার আগে নিধি একবার ফারিশের দিকে তাকায়। ফারিশের এলোমেলো চুলগুলো আজকে পরিপাটি, পরনে ধূসর রঙের পাঞ্জাবি। ফারিশের দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ, নিধি তার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কবুল বলল। তখন রুম জুড়ে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। বিয়ে শেষ হতেই হুজুর চলে যায়, তার কিছুক্ষণ পরেই ফারিশ আর তার বন্ধু রা চলে যায়। থেকে যায় শুধু নিধি আর তার মা। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও নিধি তার শ্বশুর বাড়ি না যাওয়ার কারণ, সে বিয়ে করার আগেই তার মা কে বলেছিল, সে এখনই শ্বশুর বাড়ি যেতে চায় না। পাত্রপক্ষ আপাতত বিয়েটা পড়িয়ে রাখতে পারে চাইলে। তাহলে সে রাজি হবে। মলি বেগমও তেমনই পাত্র খুজলেন মেয়ের জন্য। অল্প সময়ের মধ্যে একটা ভালো ঘরের সমন্ধ পেয়েও গেলেন তিনি। তাই আর দেরি না করে বিয়ের আয়োজন শুরু করে মলি বেগম। ছেলের পরিবারের কেউ নেই, তবুও রাজি হলেন মলি বেগম। বিয়ের আগে অন্য সব পাত্রদের মত নিধিকে দেখতে আসেনি ফারিশ। একদম বিয়ের দিন এসেছে সে।

নিধিদের দুই রুমের ছোট একটা বাসা, তবুও সেটা রঙচটা! সাথে একটা বারান্দা আছে। সেটা থেকে রাস্তা স্পষ্ট দেখা যায়। তার বাবা মারা যাওয়ার পর মা কে নিয়ে এই বাসায় উঠেছে সে, মা অসুস্থ আর বাবা না থাকায় নিধির উপরই সংসারের দায়িত্বটা এসে পড়ে। অনেক কাঠখোট্টার পর একটা চাকরি যোগাড় করতে পেরেছে সে। প্রথম বছর সে চাকরিটা নিয়ে খুশিই ছিল, কারণ তাদের কোম্পানির মালিক অনেক অমায়িক ছিলেন। নিধিকে একদম মেয়ের মত ভালোবাসতেন রাহুল শিকদার। কিন্তু হুট করে রাহুল শিকদারে মৃত্যু হয়, তারপর নিধির জীবনে নেমে আসে অমাবস্যা। অফিসের দায়িত্ব এসে পড়ে রাহুল শিকদারের একমাত্র বদমেজাজি বাউণ্ডুলে ছেলে ফারিশ শিকদারের উপর! ছেলেটা না পারতে অফিসের দায়িত্ব টা নিয়েছে নিধির মনে হতো! নুন থেকে চুন খসলে অযথা রাগারাগি করে ফারিশ। সেই বদমেজাজি ছেলেটার সাথে নাকি তার বিয়ে হয়েছে! আর ফারিশই বা কি ভেবে তাকে বিয়ে করল? ফারিশের লেভেলের সাথে তো তার লেভেল যায় না! এসবই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনমনে ভাবছিল নিধি।

“কি রে, বৃষ্টি হচ্ছে তো। দাড়িয়ে আছিস কেনো এখানে?”

মলি বেগমের কথা কানে যায় না নিধির, সে একমনে বাহিরে দিকে তাকিয়ে আছে। নিধিকে নিরুত্তর দেখে মলি বেগম তার কাঁধ ঝাকিয়ে তাড়া দিল,

“খেতে আয় মা, কারেন্ট চলে যাবে মনে হচ্ছে। যা বাতাস হচ্ছে বাহিরে। কারেন্ট চলে গেলে আর অন্ধকারে খেতে পারবি না। তুই আয়, আমি ভাত দিচ্ছি।”

বলেই মলি বেগম রুমে চলে যায়। নিধি চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেয়। নিজেকে সামলিয়ে রুমে গিয়ে মায়ের পাশে বসে সে। দুনিয়াতে নিধির আপন বলতে এখন শুধু তার মা রয়েছে, আর কেউ নেই। সারাদিন অফিস শেষ করে অসুস্থ মায়ের সেবা করতে হয় নিধির, এখন মলি বেগম কিছুটা সুস্থ আছেন। মলি বেগম আপন মনে মেয়ের জন্য খাবার বাড়তে ব্যাস্ত, নিধি একদৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কি নিষ্পাপ চেহারা তার মায়ের, এই নিষ্পাপ চেহারার মানুষটি নাকি সারাবছর এত অসুস্থ থাকে! কেউ বিশ্বাস করবে এটা?
**
সকাল সাড়ে সাতটা বাজে, নিধি এখনো পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। মলি বেগম মেয়েকে তড়িঘড়ি করে ডেকে তুলেন। বৃষ্টির কারণে পরিবেশ টা নিস্তব্ধ, সেই উপলক্ষ্যেই নিধির এত ঘুম আজ। সে ভুলেই বসেছে তার যে অফিসে যেতে হবে। মলি বেগম ডাকার সাথে সাথে নিধি উঠে ছোটাছুটি করে রেডি হতে থাকে। অফিস শুরু আটটা থেকে, এখন অলরেডি সাড়ে সাতটা বাজে। নিধির বাসা থেকে অফিস যেতে আবার ১৫ মিনিট লাগে! নিধিকে তড়িঘড়ি করে রেডি হতে দেখে মলি বেগম বলল,

“অফিস যাচ্ছিস কেনো? আজকে অন্তত ছুটি নিতে পারতি তো!”

নিধি তড়িঘড়ি করে নিজের ব্যাগ নিতে নিতে বলল,

“তা আমি কি ছুটি চাইনি নাকি? ওই বাউণ্ডুলে টা ছুটি দিলে তো আমি ছুটি নিবো!”

মলি বেগম বলল,

“এমন করে কথা বলছিস কেনো মা? হাজার হোক, ছেলেটা এখন তোর স্বামী হয়।”

নিধি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,

“উনি অফিসে আমার কোনো বর টর নয়, আর বাদ দাও তো উনার কথা। ধুর, আজকের দিনটাই খারাপ যাবে আমার!”

বলেই নিধি রাস্তায় এসে দাড়ায়, রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে করতে পাঁচ মিনিট অতিক্রম হয়ে যায়, কিন্তু নিধি আর রিক্সা পায় না। অফিসে গেলে যে তাকে কি বিপদের সম্মুখীন হতে হবে সেটা ভেবেই নিধির কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। সে আর কোনোকিছু না ভেবে হাঁটা শুরু করে দেয়। হঠাৎ দ্রুতগতিতে একটা গাড়ি নিধির পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই নিধি পুরো কাদা পানিতে মাখামাখি হয়ে যায়। বৃষ্টি হওয়াতে রাস্তায় পানি জমেছে। গাড়ি দ্রুতগতিতে চলাতে রাস্তার পানি সব নিধির গায়ে এসে পড়ে, সে পানিতেই ভিজে টইটম্বুর হয়ে যায় নিধি। সে খেয়াল করে দেখলো গাড়িটা আর কারো নয়, তারই বস ওরফে তার বিয়ে করা বর মেহরাব ফারিশ শিকদার। মূহুর্তের মধ্যেই নিধির প্রচন্ড রাগ হয় ফারিশের উপর, ইচ্ছে করে তাকে ভিজিয়ে দিয়েছে আবার অফিসে গেলেও বকাঝকা করবে! প্রচন্ড রাগ নিয়েই নিধি বাড়িতে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে আবার অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। অফিসে আসতে আসতে ৮:৪৫ বেজে যায়। নিধি এবার আর ভয় না পেয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে বসে। আজকে আর সে ভয় পাচ্ছে না, কারণ ফারিশের জন্যই নিধির দেরি হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতেই নিধি ফাইল নিয়ে বসে। হঠাৎ তার কেবিনের দরজা নক করে একজন কর্মচারী বলল,

“ছোট স্যার ডেকেছে আপনাকে!”

বলেই কর্মচারীটি চলে যায়, নিধি সেসবে পাত্তা না দিয়ে নিজের মনে কাজ করে যাচ্ছে। আবারো কেউ একজন নক করে দরজায়, নিধি এবার বিরক্ত হয়ে বলল,

“আরে ভাই বললাম তো আসছি, তারপরেও কেনো এত ডাকছেন? হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে কোনো নবাব ডাকছে আমা…”

বলতে বলতে দরজায় দিকে ফিরে ফারিশ কে দেখে হকচকিয়ে গেল নিধি। সে তো ভেবেছিলো কোনো কর্মচারী এসেছে হয়তো, সেই জায়গায় বস নিজেই এসেছে! নিধির চুপসে যাওয়া মুখ দেখে বাঁকা হাসে ফারিশ, সে আরাম করে দরজায় হেলাল দিয়ে দাড়িয়ে বলল,

“কি হলো, থেমে গেলে কেনো? পুরো বাক্যটাকে সমাপ্ত করে মুক্তি দাও, আমিও শুনি একটু!”

ফারিশের কথা শুনে নিধির মুখে তিমির নেমে আসে৷ সে ইনিয়েবিনিয়ে বলল,

“না মানে, স্যার কেনো ডেকেছেন?”

ক্ষণিকের জন্য চোখ বুজেছিলো তন্ময়, নিধির কথা শুনে চোখ মেলে তাকাল সে।

“চু’মু খাবো, তাই ডেকেছি।”

ফারিশের কথা শুনে বিষ্ময়ে নিধির মুখ হাঁ হয়ে যায়। লজ্জায় সে এখনই আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে! সে কিভাবে মুখোমুখি হবে ফারিশের? নিধিকে এভাবে হাঁ করে থাকতে দেখে ফারিশের কপাল কুঁচকে এলো!

“স্টুপিড কোথাকার!”

বলেই ফারিশ চলে যায়, আর এদিকে নিধি ঘোরের মধ্যে চলে যায়। না জানি কেনো তাকে ডেকেছে এই লোকটা! যাবে নাকি যাবে না ভেবে ভেবে সে ফারিশের কেবিনের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় সিজন-০১ পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন।

error: ©<b>গল্পপোকা ডট কম</b>