Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 119



Dont forget me পর্ব-০৬

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ৬)

তূর্যর বিয়ের কিছুদিন পর এক সকালে সবাই নাশতার টেবিলে বসেছে। মোতাহার উদ্দিন অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ যেন একটু বেশিই চিন্তিত অবস্থায় আছেন। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারা রাত ঘুমাননি। তূর্য বলল-

-বাবা তোমার কী শরীর খারাপ লাগছে? মনে হচ্ছে রাতে ঘুমাওনি?

-ওই ক’দিন ধরে ঘুম হচ্ছে না।

-আমার মনে হচ্ছে তুমি কোনো কিছু নিয়ে অত্যন্ত টেনশনে আছ?

তারান্নুম হোসেন বললেন- কয়দিন ধরে কী নিয়ে এত টেনশন করছে আল্লাহ জানেন। আমাকে তো কিছুই বলছে না। এভাবে চেপে রেখে রেখে কখন যেন শরীরটা দুম করে খারাপ করে বিছানায় পড়ে যাবে। কিছুদিন আগে যে চট্টগ্রাম গেল সেখান থেকে ফেরার পর কী যে হলো আল্লাহ জানেন। কিছু বলেও না শুধু টেনশন করে। টেনশন করে করে শরীর কত খারাপ করে ফেলছে। বিয়ের পুরো সময়টা ধরে থম মেরে ছিল আর ইদানীং তো আরও বাজে অবস্থা! না বললে বুঝবটা কী?

মোতাহার উদ্দিন চুপ রইলেন। তূর্য বাবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বুঝল বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ অথচ বাবা কাউকে বলবারও সাহস পাচ্ছে না। সে মাকে থামাল তারপর খাওয়া শেষ করে বাবার সাথে তার ঘরে গিয়ে বসল। বলল-

-বাবা তুমি কিছু একটা নিয়ে ভয়ানক দুঃশ্চিন্তায় আছ কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছ না। কোনো কিছু না ভেবে আমাকে এখনই বলে ফেলবে, কী সেটা?

মোতাহার উদ্দিন ঘামতে লাগলেন। বুঝলেন এখন আর চুপ থাকা যাবে না। তাছাড়া এখন আর চেপে রাখার মত পরিস্থিতিও নেই। যেকোনো মুহুর্তে ঝামেলা এসে উদয় হয়ে যেতে পারে। স্ত্রী পুত্রকে বলে রাখলে বরং কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যাবে। তিনি বলতে শুরু করলেন-

-চেপে রাখার মত শক্তি বা পরিস্থিতি কোনটাই এখন নেই আমার। তাছাড়া এই মুহূর্তে বলতে না পারলে ঝামেলা বরং বাড়বে। কিন্তু তোদের…

-বাবা আমি তো তোমারই ছেলে, এত কিছু ভাবার দরকার নেই, বলে ফেলো।

-তোমার মা তো বললই চট্টগ্রাম থেকেই আমি টেনশন সাথে নিয়ে এসেছি। ওখানে আমি অফিসের কাজে গিয়েছিলাম এক সপ্তাহের জন্য। হোটেলে উঠবার কথা ছিল কিন্তু ওখানকার অফিসের ম্যানেজার জামাল উদ্দিন কোনো ভাবেই উঠতে দিলেন না। তার বাসায় নিয়ে গেলেন। বাসাটা বেশ বড়, বিশাল বাংলো বাড়ির মত। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। তার বাসায় তার স্ত্রী দুই ছেলে সহ তার বোন থাকত তার দুই সন্তান নিয়ে। এত মানুষের ভীড়ে আমি উটকো ঝামেলা হতে চাইলাম না। কিন্তু জামাল আমাকে কিছুতেই ছাড়ল না। বর্ষাকাল যখন তখন বৃষ্টি হয়। আমি ওর বাসায় ওঠার পরদিন বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলাম আফিসে যাবার পথে। সেই ভেজা নিয়েই অফিস করলাম। দুপুরের পর থেকেই দেখলাম গা গরম হতে শুরু করেছে। বাসায় ফিরলাম প্রচন্ড জ্বর নিয়ে। অসুখ বিসুখ আমার শরীরে সয় না খুব অল্পতেই একেবারে কাহিল হয়ে যাই সেটা তো তোমরা জানোই। জ্বরে একেবারে অচেতন হয়ে গেলাম। ওরা আমার বেশ যত্ন করল। আসলে অচেতন অবস্থায় কে যত্ন করেছে আমি তাও জানি না। যখন একটু হুসে থাকতাম তখন তোমার মায়ের সাথে কথা বলতাম। তোমার মা তো আমাকে জানে তাই আমি যে এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছি সেটা বলিনি শুনলে ভীষণ অস্থির হয়ে পড়বে। ৩দিন পর জ্বর কমতে শুরু করল। আমার শরীর ততদিনে একেবারে দুর্বল। জামালই আমাকে সব এগিয়ে দিত। ওর স্ত্রী ২/১ বার সামনে পড়লেও ছেলেরা কখনো কাছে ভীড়েনি তবে বোনের ছেলেটা আসত সব সময়। মাঝে মাঝে বোনটাও আসত। জামালের উপর খুব কৃতজ্ঞ হয়ে পড়েছিলাম ওই মুহুর্তে। মনে হয়েছিল সে জোর করে বাসায় এনে আমার কত বড় উপকার করল। হোটেলে থাকলে এই শরীর নিয়ে কী অবস্থা হত কে জানে! কিন্তু আমি যেদিন চলে আসব তার আগের দিন জামালের প্রতি এই মনোভাব জামাল সম্পূর্ণ রূপে বদলে দিল। আমি বিস্মিত হয়ে দেখলাম জামালের এই ভদ্র চেহারার পুরোটাই একটা মুখোশ! যার পেছনে কী ভয়ানক এক পিশাচ বাস করে!

তূর্য পিনপতন নিরবতায় অপেক্ষা করতে লাগল বাবা কী বলে সেটা শুনবার জন্য। মোতাহার উদ্দিন কিছুক্ষণ থেমে থেকে দম নিয়ে আবার শুরু করলেন… জামাল আমাকে সরাসরি বলল-

-স্যার কী আগামীকাল ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন?

-হ্যাঁ, কাজ তো তেমন কিছু দেখতে পারলাম না। তবে শরীরের সাথে আর পারছি না। তাই ঢাকায় গিয়ে আবার কিছুদিন পর ব্যাক করব।

-তাহলে যাবার আগেই কাজটা করে যান?

-কী কাজ?

-আমার বোনকে বিয়ে।

-মানে!!!

-মানে, আমার বিধবা বোনটা তো এতদিন এমনি এমনি আপনার সেবা করেনি। সেটা বুঝতে হবে না? আমার তখন রাগে ঘাম ছুটে গেল। বললাম কী সব বলছ জামাল?

জামাল কুটিল হাসি হেসে বলল- না বোঝার কিছু নেই স্যার। আমাদের এই বাড়িটার আশেপাশে খুব একটা মানুষ থাকে না। খুব অল্প যারা থাকে তারা গত কয়েকদিনে দেখেছে আমার বিধবা বোনটা আপনার কী সেবাটাই না করেছে। একটা মেয়ে নিশ্চই বিনা কারণে একটা পর পুরুষকে ফ্রি ফ্রি সেবা করবে না। সবাই বুঝে গেছে আপনার সাথে আমার বোনের কিছু একটা আছে। এই নির্জন বাগান বাড়িতে শহরের সামর্থ্যবান মানুষ তো এমনি এমনি থাকতে আসেনা। আপনিও যে কিছু একটার লোভেই এসেছেন সেটা বুঝতে কারো বাকি নেই। এই পর্যায়ে এসে জামালের কথায় আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসতে লাগল। জামাল তখনও বলতে থাকল- স্যার আমার বোনটা অনেক সুন্দরী। অল্প বয়সে জামাইটা মারা গেল। ছোট ছোট দুইটা ছেলেমেয়ে আছে। তাদের একটা ভবিষ্যৎ আছে না? আমার মা বাবা কেউ বেঁচে নাই বোনের ভালো তো আমাকেই দেখতে হবে তাই না? স্যার কিছু বলতেছেন না যে?

আমি সারা জীবন নির্ভেজাল শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিলাম। আমার সাথে এমন একটা শয়তানি আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি বুঝতে পারছিলাম আমি এখন ঘোর বিপদে পড়তে যাচ্ছি যতটা সম্ভব শক্ত থাকতে হবে। ভেঙে পড়লেই পেয়ে বসবে জামাল। অনেক সাহস সঞ্চার করে বললাম-

-জামাল তুমি কী সব আবোলতাবোল বলছ বুঝতে পারছ?

-আমি সব বুঝেই বলছি স্যার।

-আমি পুলিশ ডাকব।

-পুলিশ ডেকে কোনো লাভ নাই স্যার। আমার দুই ছেলেকে তো দেখছেন? তারা পড়ালেখা কিছু করে না, করে ছাত্র রাজনীতি। সরকার তার পালতু ছেলেপেলেদের কতটা শেলটার দেয় সেটা তো আপনি জানেনই। সরকারের অতি তুচ্ছ কাজেও তারা হেলমেট পড়ে দেশিও অস্ত্র হাতে রাজপথে নেমে পড়ে। এই পুরা চট্টগ্রাম তাদের নামের প্রভাব প্রতিপত্তিতে কাঁপে। আমার শালাও সরকার দলের বড় নেতা। পুলিশ আমাদের হাতের মুঠোয় নাচে। আপনি তো এইখানে থাকেন না তাই কিছু জানেন না। আপনার “না” বলার যে কোনো অপশন নাই আশা করি সেটা বুঝতে পারছেন।

জামালের কথায় আমার পায়ের তলা থেকে পুরোদমে মাটি সরে গেল। বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করতে লাগলাম… পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। জামাল আমার অবস্থা টের পেয়ে বলল- স্যার কি ভয় পেলেন? ভয় পাবেন না। আমার বোন খুবই ভালো। তার ছেলে মেয়ে দুইটাও ভালো। আপনার সম্পর্কে সব জেনেও সে আপনাকে খুব পছন্দ করে ফেলেছে। বুঝতেই পারতেছেন সে কত ভালো? সে নিজেই আমাকে বলছে সে আপনাকে বিয়ে করতে চায়। আমার বোনটা আবার আমার কলিজার টুকরা। সে একটা কিছু চাবে আর আমি দিব না তা হইতে পারে না। স্যার কাজি কি এখনই ডাকব?

আমি কপালের ঘাম মুছে বললাম- তুমি যতই ভয় দেখাও কাজে আসবে না। আমি এসব কিছুই করব না। বলে পকেট থেকে ফোন বের করতেই সে ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নেয়। তারপর সেটা বন্ধ করে দিয়ে বলল- স্যার আমি আপনাকে এখনও কোনো ভয় দেখাই নাই। দেখালে বলতাম, আমার শালাবাবু তার দলবল নিয়া আশেপাশেই অবস্থান করতেছে। আর আমার ছোট ছেলেটা গতকাল ঢাকায় চলে গেছে। সে আপনার ছেলের ডিটেইলস নিয়েই গেছে। ছেলেটা আবার আমার মত মায়ার শরীর নিয়ে জন্মায় নাই। ঢাকায় তার মতই দয়ামায়াহীন কয়েকজন বন্ধু আছে যারা চোখ বন্ধ করে মানুষের বুকে… বুঝতেই পারছেন মনেহয় আর বললাম না। আমি কিন্তু এগুলা কিছুই বলে আপনাকে ভয় দেখাইনি। আপনি ভয় পাবেন না। কাজি ডাকি স্যার?

আমি তখন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম। জ্ঞান ফিরতেই দেখলাম আমি বিছানায় শুয়ে আর আমার পাশেই জামালের বোন বসে আছে। আমার চোখ মেলতেই সে বলল-

-আপনি এখন কেমন আছেন? এত ভয় দেখিয়ে দিয়েছেন না!

আমি লাফিয়ে উঠে বললাম- আপনি এখানে কী করছেন? বের হন এখান থেকে?

-ওমা! এইটা তো আমার ঘর আর আমার ঘর থেকে আমাকেই বের করে দিচ্ছেন?

-আমি তখন খেয়াল করলাম ঘরটা আমার পরিচিত নয়। আমি দ্রুত উঠে বের হতে গেলে সে বলল-

-দরজা খুলে বাঁচতে পারবেন ভেবেছেন? আপনি জানেন না দরজার ওপাশে কী আছে…

আমি থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম। সে বলল- বাইরে এলাকার লোকজন বসে আছে দরজা খোলা মাত্রই কী হবে আশা করি বুঝতে পারছেন?

-আপনারা কেন আমার সাথে এমন করছেন? আমি নির্ভেজাল মানুষ। আমার একটা পরিবার আছে, স্ত্রী সন্তান আছে। আপনি সব জেনেও কেন আমাকে এভাবে ফাঁদে ফেলছেন?

-কী করব বলুন… আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়ে গেছে। আর যা একবার আমার পছন্দ হয়ে যায় তা আমি চাই-ই চাই।

আমি বুঝে গেলাম আমার বাঁচার কোনো উপায় নেই!

তূর্য আতংকিত হয়ে শুকনো গলায় বলল- তারপর? আর এমন সময় কলিংবেল বাজল। মোতাহার উদ্দিন চমকে উঠলেন। তিনি আতংকিত গলায় বলল- ওই যে… ওরা…

-ওরা কারা???

চলবে।

Dont forget me পর্ব-০৫

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ৫)

আলোকে এত বড় বক্স নিয়ে ঘরে ঢুকতে দেখেই আদিবা জিজ্ঞেস করল-

-কিরে কোথায় গিয়েছিলি? খুঁজে খুঁজে সব হয়রান। আর হাতে এটা কিসের বক্স? কোথায় পেলি?

-আস্তে আপু, আস্তে। এত প্রশ্ন করলে উত্তর দিব কীভাবে?

-আমাদের এত ধৈর্য নেই। তাড়াতাড়ি বল।

-তূর্য ডেকেছিল…

সবাই একসাথে বলল উঠল- “ওওওওওও…”

আলো লজ্জায় লাল, নীল হয়ে গেল। সেটা দেখে সবাই হেসে কুটিকুটি। সবাই মিলে প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে লাগল আলোকে। একটা করে প্রশ্ন আসে আর সবাই হেসে গড়াগড়ি যায়। ফারিয়া বলল- আপু বক্সটা খোলো না, দেখি আমাদের রোমান্টিক হিরো কী পাঠালো তোমাকে?

আলো বুঝল বক্স এদের সামনে না খুলে উপায় নেই। তাই বক্সটা খুলল। খুলতেই আলো ভীষণ অবাক হলো কারণ বক্সে দুইটা শাড়ি আছে যা আলো বিয়ে আর বৌ-ভাতের জন্য পছন্দ করেছিল কিন্তু তূর্য সেটা নিতে দেয়নি। শাড়ি দেখে সবাই একসাথে বলল “ওয়াও তূর্য ভাইয়া এত্ত রোমান্টিক! এত সুন্দর সুন্দর শাড়ি?” ফারিয়া একটা খাম পেল। সেটা হাতে নিয়ে সে লাফাতে লাগল, এটা সে দিবে না। নিতে হলে আলোকে মোটা অংকের এ্যামাউন্ট খসাতে হবে এবং এর মধ্যে যা আছে তা ওদের সামনেই পড়তে হবে। আদিবা খুশি হয়ে ফারিয়াকে ৫০০টাকা দিয়ে বলল- দারুণ। অতঃপর আলো এক হাজার টাকা দিয়ে ওর কাছ থেকে খামটা নিল। নিয়ে করুণ মুখে বলল- তোরা সবাই যা না এটা আমি একা খুলি? সবাই একসাথে চেঁচিয়ে বলল- “নায়ায়া”। আলো খামটা খুলল- সেখানে ছোট্ট একটা চিঠি। আদিবা বলল- জোরে জোরে পড় আমরা সবাই শুনব। আলো পড়তে লাগল-

“আমি জানি এই চিঠি তুমি একা পড়তে পারবে না। তোমার উদ্ভট আর ফাজিল মার্কা কাজিনরা তোমাকে চেপে ধরবে তাদের পড়ে শোনাতে। তারা যে রোমান্টিক চিঠি আশা করছিল সেটার গুড়ে বালি দিতেই এই চিঠি। তাদের বলে দাও আজ তোমাকে চিঠি পড়ে শোনাতে ফোর্স করবার শাস্তি আগামীকাল পাবে। আর তোমার চিঠি জমা রাখা আছে, নো টেনশন।

তাসবিহুন আলা খায়ের।
তূর্য”

চিঠি দেখে সবার মুখ চুন হয়ে গেল। আর আলো হা হা করে হাসতে লাগল। বলল- একদম উচিত কাজ হয়েছে। এই না হলে আমার হিরো… সে গুনগুনিয়ে উঠল- “হিরো তু মেরা হিরো হ্যায়…” বাকিরা বলল- “ভিলেন য্যায়সা কাম না কার…” তারপর সবাই হাসতে লাগল।

ফারিয়া বলল- আপু, তূর্য ভাইয়া যেমন ছেলে… আগামীকাল ঠিক আমাদের শাস্তি দিয়ে বসবে! প্লিজ আপু কিছু করো?

-আমি কী করব? তোদের ঝামেলা তোরা সামলা।

-আপু… এমন করো না প্লিজ?

এই সময় বড় মামী এসে সরকার দলের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আড্ডায় মসগুল থাকা সকলকে ছত্রভঙ্গ করে দিল ধমক দিয়ে। সকাল সকাল উঠতে হবে, না ঘুমালে চলবে?

আলো তখন শুয়ে পড়ে ভাবতে লাগল তূর্য এটা কেন করল? শাড়ি দুটো তো তখনই নিতে পারত শুধু শুধু বাড়তি শাড়ি কেন কিনল? আর শাড়ি দুটো আজই কেন এভাবে দিতে হলো? নিশ্চই এর মধ্যে কিছু প্রশ্ন লুকিয়ে আছে! তূর্য সব কিছুতে একটা পাজল রাখতে পছন্দ করে এটাও তেমনই কিছু নিশ্চই। আলো অনেক ভেবে দেখল, তূর্য নিজের খুশির সাথে আলোর খুশিটাও দেখতে চাইছে।সেই সাথে এটাও চাইছে আলো কার পছন্দটা বেশি প্রাধান্য দেয়? কী করে সে দুজনের ভালোলাগার কম্বিনেশন করে? আলো সংকটে পড়ল… শাড়ি দেখে খুব খুশি হয়েছিল যে, বিয়েতে নিজের পছন্দেরটা পরবে কিন্তু এখানে তো এখন গিট্টু দেখা যাচ্ছে!

পরদিন বিয়েতে আলোর কাজিন আর বন্ধুদের তূর্য ভীষণ ভাবে নাজেহাল করল। তাদের প্রতিজ্ঞা করিয়ে ছেড়েছে আর কখনো আলোকে এভাবে পঁচাবে না। তবে যত যাই হোক সবাই খুব আনন্দ করেছে।

রাতে তূর্য তার ঘরে ঢুকে আলোকে বলল-

-বাতি নিভিয়ে দেই?

আলো মনে মনে বলল- ঘরে ঢুকেই বাতি নেভাতে চাইছে! ব্যাটার মতলব কী? তারপর একটু ভীত গলায় বলল- আপনার ঘরে আপনি অন্ধকারেও অভ্যস্ত কিন্তু আমি তো অভ্যস্ত নই!

আলোর গলার স্বর শুনে তূর্য মুচকি হেসে বলল- ডার্টি মাইন্ড, মনে মনে কী ভেবেছ সেটা আমি ঠিকই বুঝেছি।

আলো চোখ সরু করে বলল- বেশি বোঝা ভালো না। বেশি বুঝলে বেশি ভুল।

-ও তাই!

-হ্যাঁ তাই।

-ভুল দিয়েই শুরু করি তাহলে?

আলো আতংকিত গলায় বলল- মানে? কী শুরু করবেন?

-আবার?

-আপনিই আবার।

তূর্য হেসে বলল- আমার ঘরে তুমি অভ্যস্ত কিনা সেটা বিষয় না। বিষয় হলো, আমি বলতে চেয়েছি… তূর্য একটু এগিয়ে এলো তারপর মৃদু গলায় বলল- আমার ঘরে অলরেডি চাঁদের আলো হয়ে আলো বাসা বেঁধেছে। বাতি কেন জ্বালাব?

তূর্যর কথায় আলোর মুখে ভালো লাগার যে অনুভূতিটা দেখা গেল সেটা মুহূর্তেই সে চেপে গিয়ে বলল- সবই পয়সা বাঁচানোর জন্য ফ্লার্ট করা!

তূর্য চোখ বড় করে বলল- মাই গড তুমি এত আনরোমান্টিক!

“মোটেও না” বলে আলো তূর্যর আরও একটু কাছে এসে বলল- ভালোবাসেন?

তূর্য ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বলল- বোঝনা?

-উহু, বুঝি না।

তূর্য ওর হাত টেনে ধরে বলল- চলো… তূর্যর ঘরে বেশ বড় একটা বারান্দা আছে। যেটা ওর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। বারান্দাটা সে নিজের পছন্দে ইন্টেরিয়র করিয়ে নিয়েছে। তূর্য দুহাতে আলোর চোখ ধরে ওকে সেখানে নিয়ে গেল। একটা ছোট গোল সেন্টার টেবিলের পাশে দুটো চেয়ার পাতা রয়েছে। টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তূর্য হাত সরিয়ে নিতেই আলো দেখল টেবিলের উপর ৩টা গাছ। সে প্রায় চিৎকার করে বলল- এগুলো তো “don’t forget me” ফুলের গাছ!!!

-হুম, তুমি এটা খুঁজছিলে।

-হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কী করে জানেন?

-যাকে বউ বানাব তার পছন্দ অপছন্দের খোঁজ রাখব না? তোমার ইচ্ছে ছিল বিশেষ দিনে কেউ একজন তোমাকে এটা দিয়ে চিরদিনের জন্য মনে জায়গা করে নিক।

-হাউ কিউট!

-হুম জন্ম থেকেই।

-কবে থেকে আমাকে ফলো করে যাচ্ছেন?

-যবে থেকে তুমি দুকাপ চা নিয়ে ছাদে আসতে শুরু করেছ। আচ্ছা আমি তো পাবলিককে “Don’t forget me” গাছ দিয়ে চিরস্থায়ী হলাম কিন্তু পাবলিক আমার জন্য কী করল?

-পাবলিক কী করবে সেটা রাজপথে গিয়ে তাদেরকেই জিজ্ঞেস করুন। আমি তো এসব চিরস্থায়ী ব্যাপার স্যাপারে বিশ্বাসী নই।

-O wow! So… I have many other options?

আলো চোখ পাকিয়ে বলল- “many other options”! সোজা ট্রাকের নিচে ফেলে দিয়ে আসব।

তূর্য হাসতে হাসতে বলল- really?

-এখন কী ট্রাকের নিচে ফেলে দিয়ে প্রমাণ করব?

-না থাক, এত সিরিয়াস হবার দরকার নেই, I believe you. ও, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করা হয়নি।

-কী?

-আজ আমার পছন্দের শাড়িটা পরলে যে?

-আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন?

-বাহ্ ইন্টেলিজেন্ট গার্ল! তারপর আলোর দিকে ঝুকে বলল- আমার তো অনেক কিছুই চাইতে ইচ্ছে হয়। এই যেমন এই মুহূর্তে ইচ্ছে হচ্ছে…

-কী?

-তুমি আমাকে শক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরো।

আলো “ধ্যাৎ…” বলে মুখ নামিয়ে ফেলল। এরপরই খেয়াল করল টেবিলের উপর বেশ কিছু বই রাখা, সব কটা হুমায়ূন আহমেদের বই। গুনে দেখল ১২টা বই আছে। সে চাপা উত্তেজনা নিয়ে বলল- এত্তগুলা বই! এগুলোও কী আমার?

-হুম, আজকের দিনে আমার পছন্দ বুঝতে পরার জন্য।

তূর্যর প্রতি প্রচন্ড ভালো লাগা কাজ করতে লাগল আলোর। বলল- আপনি আর কী কী জানেন আমার পছন্দের?

-আছ যখন আস্তে আস্তে সবই বুঝতে পারবে। যেগুলো জানি না সেগুলোও জেনে ফেলব ইনশাআল্লাহ।

আলো যত তূর্যকে দেখছে তত অবাক হচ্ছে। ওকে দেখে বোঝার উপায়ই নেই যে ও কাউকে এত গভীরভাবে ভাবতে পারে। লাইফ পার্টনার হিসেবে তূর্য অবশ্যই তার জন্য উত্তম মনে হচ্ছে। প্রথম থেকেই দুজন দুজনকে বুঝতে পারছে এরচেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?

পরদিন সকালে ঘাড় ব্যথা নিয়ে আলোর যখন ঘুম ভাঙল। হঠাৎ ঘাড় ব্যথা কেন হলো সেটা ভাবতেই খেয়াল করল সে তূর্যর বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিল। বুঝতে পারল এইজন্যই বেকায়দায় ঘাড় ব্যথা হয়েছে! সে দ্রুত উঠে গেল। তূর্য তখন চোখ বন্ধ রেখেই বলল-

-এত তাড়াহুড়া করে উঠছ কেন? আমি কিছু টের পাইনি সেটা ভাবার কারণ নেই। তুমি চাইলে আরও কিছুক্ষণ ঘুমাতে পারো।

-আমার এত ঘুম নেই। সাড়ে ন’টা বাজে! অনেক বেলা হয়ে গেছে… কেউ যদি ডাকতে শুরু করে এখন?

-আমার বাড়ির লোক এত বেরসিক নয় যে ডেকে তুলবে। তূর্য এটা বলে শেষ করতেই দরজায় নক পড়ল। বাইরে থেকে ওর কোনো কাজিনের গলা পাওয়া গেল- “ভাইয়া তোমরা উঠেছ? মামী ডাকছে, নাশতা করবা না? ওঠো?”

আলো চাপা হাসিতে বলল- এবার বোঝা গেল?

-এটা আমার বাড়ির লোক না। গলা শুনলে না?

-সে যে-ই হোক উঠুন। আমি দরজা খুলছি… তূর্য সাথে সাথে আলোর হাত টেনে ধরে চেঁচিয়ে বলল- এই কে দরজা ধাক্কায়? কী চাই?

-ভাইয়া খোলো… নাশতা করবে না?

-বিয়ের পরে গরম গরম খাবার খাওয়ার নিয়ম নেই। খাবার ঠান্ডা হতে হতে যখন ফ্রিজ হয়ে যাবে তখন আসবি। এর আগে ডাকলে মেরে নাক ফাটিয়ে ফেলব। তারপর আলোকে কাছে টেনে নিয়ে বলল- আমার ঘুম শেষ না হওয়া অব্দি কোত্থাও যাওয়া চলবে না।

বেলা ১১টার দিকে ওরা নাশতার টেবিলে আসল। ওদের দেখেই সবাই মুখ চেপে হাসতে লাগল! এক ভাবি তো বলেই বসলেন- তোমাদের তো বিয়ে হওয়া উচিত ছিল ২২ডিসেম্বর, একটু আরাম করে ঘুমাতে পারতে। আর হলো কিনা এই জুন মাসে যখন রাত শুরু হতে হতেই শেষ হয়ে যায়! আহারে… বলে সে খুব দুঃখ সূচক শব্দ করতে লাগল। আলোর মনে হলো লজ্জায় সে মারা যাবে অথচ তূর্যর কোনো হেলদোল নেই! উল্টো সে বলল- ভাবি নেক্সট টাইম আর এই ভুল করো না, কেমন?

ভাবি মুচকি হেসে অবাক হবার ভান করে বলল- নেক্সট টাইম!!

আলো তখন আড়চোখে তূর্যকে চোখের আগুনে ভস্ম করে দিতে চাইল। তূর্য সেটা একবার দেখে বলল- হ্যাঁ ভাবি। একবার বিয়ে করে বিয়ের কিছু বোঝা যায় নাকি? কত কিছু শেখার আছে… তাছাড়া পুরুষ লোকের বিয়ে হবে ৪বার। একটাতে কী হয়?

ততক্ষণে আলোর মেজাজ প্লেট আর চামচের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে টকাস টকাস শব্দ করতে লাগল আর বাকিরা হেসে গড়িয়ে পড়তে লাগল। এমন সময় তূর্যর বাবা মোতাহার উদ্দিন ডাইনিং এর পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখলেন সবাই খুব হাসাহাসি করছে তিনি থেমে বললেন-

-কিরে খাওয়ার মাঝে এত হাসাহাসি কিসের? চুপ করে খাও সবাই। খাওয়াটা একটা ইবাদত সেটা ভুলে যাস না।

তূর্যর ভাবি তখন বলল- চাচাজান তূর্য বলছিল ৪টা বিয়ে করবে একটাতে নাকি কিছু বুঝতে পারছে না। পাত্রী দেখা শুরু করব নাকি আবার?

বাবার সামনে তূর্য কিছু বলবার সাহস পেল না। কিন্তু মোতাহার উদ্দিন হাসি চেপে বললেন-

-বিয়ে করেছ কয়েক ঘন্টা হয়েছে মাত্র এখনই এধরনের তামাশা কেন? আলো বেচারা তো মন খারাপ করবে। বলে তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন। ভাবি তখন বললেন-

-এই তূর্য তোর বাবার কী হয়েছেরে? আসার পর থেকে উনাকে কেমন যেন মনে হচ্ছে… ঠিক বোঝা যাচ্ছে না! কিছু একটা নিয়ে খুব টেনশন করছেন এটা বোঝা যাচ্ছে।

-মনেহয় অফিসের ঝামেলাটা নিয়ে টেনশন করছে। চিটাগং এর অফিসে একটু ঝামেলা হচ্ছে সেটা নিয়েই টেনশন যাচ্ছে একটু।

-ও…

রিসিপশনে আলো তার নিজের পছন্দের শাড়িতে সেজেছে। তূর্য অবাক হয়ে বলেছিল-

-মাই গড! আমার মাইন্ড পড়ছ নাকি?

আলো মুচকি হেসে বলল- পৃথিবীর সকল স্ত্রী তার হাজবেন্ডের মাইন্ড পড়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়।

-শীট… সবই আমাদের পাজরের বাঁকা হাড় দিয়ে তোমাদের তৈরি করার ফল! আর এইজন্যই সহ্য হোক বা না হোক ৪টা অনুমতি থাকার পরও একটা নিয়েই জীবন পার করতে হয়! আহারে পুরুষ…

-আসলে আল্লাহপাক জানেন, ষাঁড়ের মত ঘাড় ত্যাড়া পুরুষদের কন্ট্রোল করবার জন্য মেয়েদেরকে বাঁকা হাড় দিয়েই গড়তে হবে।

আলো আর তূর্য দুজনেই বুঝে গেছে তাদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা চমৎকার। তাই তাদের জীবনটা চমৎকার ভাবেই শুরু হলো। কিন্তু এই চমৎকার ভাবটা যে অতি ক্ষণকালীন সময়ের জন্য সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। তাদের বিয়ের কিছুদিন পরই ঘটে গেল ওদের জীবনের সবচেয়ে বড় অঘটন!!!

Dont forget me পর্ব-০৪

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ৪)

শপিং করতে গিয়ে তূর্য যতটা সম্ভব আলোকে নাজেহাল করে ছাড়ল। আলো আন্টির সামনে ঠুসঠাস জবাবও দিতে পারছিল না আর তূর্য সেই সুযোগটা ইচ্ছেমতো নিচ্ছিল। আলো যে শাড়িটাই ভালো লেগেছে বলেছে তূর্য তার বিপরীতটা নিয়েছে। মানে, যেটা তার নিজের পছন্দ হয়েছে সেটা নিয়েছে। নিজের পছন্দে নেবে বলে আন্টি তাকে নিয়ে এসেছে অথচ সব নেওয়া হচ্ছে তূর্যর পছন্দে। হবু বউ বলে শ্বাশুড়ির সামনে সে জোর দিয়ে মানাও করতে পারছে না। তার রীতিমতো কান্না পাচ্ছিল, ইচ্ছে হচ্ছিল চলে যায়। একবার সে বলেছিলও যে, তার খুব মাথা ব্যথা করছে অন্যদিন আসুক আবার? কিন্তু তূর্য সাথে সাথে মাথা ব্যথার ওষুধ এনে দিয়ে বলল- খেয়ে নাও ব্যথা চলে যাবে। তারান্নুম হোসেন অবশ্য বলেছিলেন চলে যাবার জন্য কিন্তু তূর্য ফিরতে দিল না। আজ ফুল ডে শপিং করবে সে। আলো মুখে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে রেখে প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে শপিং করল। শপিং এর মাঝখানে খেতে বসে অবশ্য সব আলোর পছন্দেই অর্ডার করল তূর্য। কিন্তু তবু তার মন ভালো হল না। বিয়ের শপিং কী আর বার বার হবে? যদিও তূর্যর টেস্ট ভালো তবু নিজের পছন্দে তো একটা শাড়িও হলো না!

শপিং শেষে বাড়ি ফিরে আলো রাতে আদিবাকে ফোন দিল। তূর্যর ব্যাপারটা সব ওকে বলল। আদিবা ওকে বলল-

-আরে গাধী তুই এখনো কিচ্ছু বুঝিসনি তূর্যকে। ও তোকে ভীষণ পছন্দ করে। সবার ভালোবাসা প্রকাশের ধরন এক নয়। তূর্য ভাইয়া একটু বেশি দুষ্টু প্রকৃতির তাই এমন করছে। ইচ্ছে করে দেখাচ্ছে যে, ও আসলে তোকে পাত্তা দিচ্ছে না কিন্তু মনে মনে ঠিকই তোকে চোখে হারাচ্ছে, ভালোবেসে মরমে মরছে। তবে তার ভালোবাসাটা যখন প্রকাশ করবে তখন তুই নিয়ে কুলাতে পারবি না দেখিস।

-তোমাকে বলেছে এসব। ভালোবাসলে কেউ এমন করে? অন্তত বিয়ের কেনাকাটা কেউ এভাবে করে?

-আরে তূর্য হয়ত তোকে তার পছন্দের সাজে দেখতে চেয়েছে তাই এমন করেছে। সে তোকে কতটা পছন্দ করে, খেয়াল করে সেটা তো তোকে দেওয়া গিফট থেকেই অনুমান করা যায়। আর তুই নিজে কিছুই বুঝতে পারছিস না!

-তুমি ঠিক বলছ তো?

-হান্ড্রেড পার্সেন্ট ঠিক বলছি তুই মিলিয়ে নিস।

এরপর আলো আর কিছু বলল না। এভাবে যে সে নিজে ভাবেনি তা নয় কিন্তু এই ছেলে এত পাজি যে ভাবনাটাও ঠিকঠাক ভাবা যায় না!

বাকি কেনাকাটার দিনে তূর্য আর যায়নি তাই আলো ইচ্ছেমতো কেনাকাটা করতে পেরেছে। কেনাকাটা, পার্লার, দাওয়াত সব কিছু গোছাতে গোছাতে বিয়ের দিন ঘনিয়েই এলো।

রাত পেরুলেই আলোর বিয়ে… আলো নিজের ঘরে বসে আছে আর ভাবনারা তাকে ভীড়ের ভেতরও ঘিরে রাখছে। একদিকে যেমন আনন্দ হচ্ছিল অন্যদিকে পারিবার ছাড়বার বিষণ্ণতা। সে উঠে মায়ের সাথে গল্প করবার জন্য গেল। ডাইনিং রুমের কাছে আসতেই দেখল বাবা খাচ্ছে আর মা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আলোর খারাপ লাগল, টেবিলে আরও অনেক রিলেটিভ বসে খাচ্ছিল। বাবা তো এখন এই কাজটা না করলেও পারত? সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে বাবা এই কাজটা করে। তিনি যতক্ষণ খাবেন মাকে তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে কী লাগবে না লাগবে সব তুলে দিতে হবে। বাবা হাত বাড়িয়ে কখনো পানির গ্লাসটাও তুলে নেয় না। সব সময় মায়ের উপর ডিপেন্ড করে। এই ডিপেন্ড করাটা কখনো ভালোবাসা থেকে আসে না। কী যে বাবার মনে জমা আছে মায়ের প্রতি… যার বঃহিপ্রকাশ কেবল মাকে অপমান করেই হয়। অথচ তারা নিজেরা ভালোবেসে একে অপরকে বিয়ে করেছিল! আলোর একটু কষ্ট হলো… তার বাবা কিন্তু চমৎকার একজন মানুষ। সবার খুব কেয়ার করে শুধু মায়ের বেলায় উল্টো! ছোটবেলা থেকেই দেখেছে মা প্রচন্ড অহংকারী। তিনি যথেষ্ট সুন্দর বলেই অহংকারটা সেখান থেকে আসে কিনা কে জানে! তার মা খুব শক্ত প্রকৃতির, কখনো কখনো প্রচন্ড স্বার্থপর। নিজের স্বার্থে সে যা খুশি করতে পারে। খুব সম্ভব এটাও একটা কারণ যার জন্য বাবা তাকে পছন্দ করে না। এসব কারণে মায়ের উপর তার নিজেরও রাগ হয়। বিবেকের চোখ তো বন্ধ নয় সে সবই দেখতে পায়। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে চলে গেল। ওর ঘরে সব কাজিনরা বসে আছে তারা ওকে ঘিরে ধরল। আজ রাত কেউ ঘুমাবে না সবাই গল্প করে, গান গেয়ে, মাস্তি করে কাটিয়ে দিবে। আলোর ছোট চাচার মেয়ে ফারিয়া খুব ভালো চা বানাতে পারে তার কাজ হলো এক ঘন্টা পরপর সবাইকে চা খাওয়ানো। অলরেডি সে তিনবার চা বানিয়ে ফেলেছে তারপর বলেছে- “চতুর্থবার চায়ের চুলকানিতে চা চাইলে সে চেঁচিয়ে চাচা চাচিকে বলে চারজন করে চারতলা থেকে চৌরাস্তার চৌমাথায় চারচাকার নিচে চাপা দিয়ে চলে আসবে।” ওর কথায় সবাই হেসে চেঁচিয়ে বলেছে- “চ” এর এত বড় রচনা শোনাবার সুখে আমাদের আরেক কাপ চা চাইইইই… ফারিয়া “পারবনা” বলে চুপ করে বসে রইল। এমন সময় আলোর ফোনে তূর্যর ম্যাসেজ এলো-

-“ছাদে এসো”।

ম্যাসেজ পড়ে আলোর কপাল কুঁচকে গেল, বাড়ি ভর্তি মানুষের মধ্যে আলো এখন কী করে ছাদে যাবে? এখন রাত ১২টার বেশি বাজে এত রাতে কী চাই ওর? আলো লিখল- “এখন! কীভাবে আসব? পারব না।”

তূর্য রিপ্লাই দিল- “তোমার কাছে কোনো অপশন চাওয়া হয়নি। আসতে বলেছি আসবে। অযথা বাড়ি ভর্তি লোকের বাহানা দিও না।”

আলো একটু ভীত হলো এটা পড়ে। কারণ এই ছেলে ভয়ানক রকম আলোর মাইন্ড রিড করতে পারে। আর গতরাতে আলো তূর্যকে নিয়ে এমন একটা স্বপ্ন দেখেছে এখন ওর সামনে যেতেও ভয় হচ্ছে যদি বুঝে ফেলে? কিন্তু জাহাপনার হুকুম অমান্য করাও যাবে না, দেখা যাবে নিজেই চলে এসেছে তারপর দুম করে সবার সামনে এমন কিছু বলে বসবে যে আলোর মুখ লুকোবার জায়গা থাকবে না। সে মনে মনে তূর্যর উপর রাগ ঝাড়তে ঝাড়তে উপরে গেল। যেতে যেতে ম্যাসেজ লিখল-

“আসছি, ছাদে অন্য কেউ নেই তো?”

তূর্য রিপ্লাই দিল- “কেন, আমাকে একা পাওয়ার ইচ্ছে? অন্ধকারের সুযোগ নেবে বলে ভাবছ নাতো?”

-“কোনো কথা সহজ ভাবে বললে কী গলা ব্যথা হয় আপনার?”

-“ম্যাসেজ লিখার সাথে গলা ব্যথার সম্পর্ক কী করে আবিষ্কার করলে? তোমাকে তো নোবেল প্রাইজ দেওয়া উচিত!” সেই মুহূর্তে আলো ছাদে উপস্থিত হলো। এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে তূর্যকে কোথাও দেখতে পেল না। আলোর ভয় হলো, তূর্য ওকে মিথ্যে বলে ডেকে আনেনি তো? ও তো ম্যাসেজ পেয়েই ফট করে চলে এসেছে কিন্তু তূর্য তো বলেনি এক্ষুনি আসতে হবে। ছাদ ভর্তি গাছগাছালি এখানে কেউ লুকিয়ে থাকলে অন্ধকারে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এত রাতে তূর্য নিশ্চই এমন মজা করবে না? সে গলা বাড়িয়ে ডাকল-

-কোথায় আপনি? আমি এসেছি?

এমন সময় তূর্য ওর পেছনে এসে বলল- এত চেঁচাচ্ছ কেন?

হুট করে এভাবে পেছন থেকে বলায় আলো তীব্রভাবে ভয় পেয়ে গেল।

-এত জোরে ভয় পায় কেউ?

-এমন করলে ভয় পাবো না?

-কাছে আসো ভয় দূর করে দেই?

-কাছে আসব না।

-তুমি না এলেও আমি কিন্তু যেতে পারি। তূর্য তখন আলোর কাছে এসে ওর কপালে টুকুস করে ছোট্ট একটা চুমু খেল। আলোর হার্টবিট এত বেড়ে গেল যে এক হাত দূর থেকেও তূর্য শুনতে পাচ্ছিল! সে একটু সরে গিয়ে বলল-

-একি, তোমার ভয় তো মনে হচ্ছে বেড়ে গেল! এই কলিজা নিয়ে আবার রোমান্টিক প্রেমিক চাও?

-আপনি ডেকেছেন কেন সেটা বলুন?

-এত তাড়া কেন? ডেকেছি যখন বলব তো।

-আমার অতো সময় নেই। সবাই হয়ত খুঁজতে শুরু করবে একটু পর। আমি কাউকে বলে আসিনি।

-আমি তোমাকে ধরে রেখেছি নাকি? যেতে চাইলে যাও?

-কী জন্য ডেকেছেন সেটা শুনব না?

-তাহলে আমি যখন চাইব তুমি তখন যাবে তার আগে কোনো কথা বলবে না।

-এভাবে অধিকার খাটালে সেখানে কিছু বলার জায়গা থাকে না, আলো চুপ রইল। তবে অন্ধকারেও ওর ভেতর প্রচন্ড অস্থিরতা টের পেল তূর্য।

-তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছ নাতো? ভয় পেলে এক মুহূর্তও দাঁড়াতে হবে না, চলে যাও।

-কী আশ্চর্য আপনাকে ভয় পাওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন?

-তাহলে তোমাকে এমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে কেন?

-আলো ইতস্তত করতে লাগল… কই? ঠিক আছি আমি।

চাঁদের আবছা আলোয় তূর্য ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তূর্যর এমন দৃষ্টির সামনে আলোর অস্বস্তি বাড়তে লাগল। তূর্য বলল- কী হয়েছে বলো তো তোমার?

-কিছু না তো…

তূর্য আরও কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল- আর কয়েক ঘন্টা পর আমার সাথে তোমার বিয়ে হচ্ছে আর তুমি এই মুহূর্তে এমন ভাব করছ… আচ্ছা, আমাকে নিয়ে রোমান্টিক স্বপ্ন টপ্ন দেখছ নাতো?

আলোর এবার ঘাম ছুটে গেল। সে গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল- আমি কখনো ভূত-প্রেত স্বপ্নে দেখি না।

তূর্য হা হা করে হেসে বলল- তার মানে আমি ঠিক ধরেছি। আমায় নিয়ে উল্টো পাল্টা কী কী ভাবো সারাদিন তুমি?

আলো কিছু বলার আগেই ওর ফোন বেজে উঠল। আদিবা ফোন করেছে। আলো তূর্যর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল… তূর্য তখন উল্টো দিকে ঘুরে এগিয়ে গিয়ে বলল- কী সুন্দর চাঁদের আলো… আমার ইচ্ছে হচ্ছে তুমি আমার সাথে দীর্ঘ সময় ধরে থাকো আজ। তারপর ঘুরে আলোর দিকে তাকাল। আলো তখন ফোন বন্ধ করে তূর্যর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তূর্য মনে মনে খুব খুশি হলো, বলল-

-ধন্যবাদ। তোমাকে একটা জিনিস দেবার জন্য ডেকেছি। তুমি তো থাকতে পারছ না তাই টেবিলের উপর রাখা বক্সটা নিয়ে চলে যেতে পারো।

আলো সামনে তাকিয়ে দেখল টেবিলের উপর বড়সড় একটা বক্স। জিজ্ঞেস করল কী আছে ওটায়?

-ঘরে গিয়ে খুলে দেখতে মানা করিনি।

-উফ, ঠিক আছে। ইয়ে… একটা কথা…

-কী?

-আমার এখন যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

-কেন, এখন আর ভয় করছে না আমাকে?

আলো রাগ দেখিয়ে বলল- ধুর, চললাম আমি। তূর্য সাথে সাথেই ওর হাত ধরে ফেলে বলল- আর দুদিন পরই পূর্ণিমা, সেদিন জ্যোৎস্নার আলোয় আজকের সময়টা পুষিয়ে দেবে তো?

আলো মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিয়ে বলল- হুম দিব। তূর্য তখন হাত ছেড়ে দিল। আলো বক্সটা নিয়ে দ্রুত নিচে চলে যায়। সে বাসায় ঢুকতেই মায়ের সামনে পড়ল। সাবীরা খাতুন চোখ কুঁচকে বলল-

-কোথায় গিয়েছিলি? আর হাতে কী এটা?

-কোথাও না, এখানেই… তূর্য দিয়ে গেল এটা।

-“রাত-বিরেতে ঢং” বলে সাবীরা তার ঘরে চলে যায়। আলো তখন সোজা নিজের ঘরে ঢুকে পড়ল কিন্তু তার ঘর ভর্তি কাজিন দিয়ে। তূর্য কী দিয়েছে সে জানে না, এখন উপায়?

Dont forget me পর্ব-০৩

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ৩)

অনেক রাত হয়ে গেছে অথচ আলোর ঘুম আসছিল না। তূর্যর ভাবনা তাকে দিশেহারা করে দিচ্ছে। ছেলেটাকে তার কী পছন্দটাই না ছিল… হ্যাঙলা পাতলা গড়নের লম্বা চওড়া, চশমা পড়া, শান্ত স্বভাবের ছেলে। সিল্কি সিল্কি বড় বড় চুলগুলো কপালের উপর ঝুলে থাকে, দেখলেই এলোমেলো করে দিতে ইচ্ছে করে। এত কিউট একটা ছেলে অথচ কথাবার্তায় কেমন মারমুখী। দাঁত ভেঙে দিতে ইচ্ছে করে। আর তখনই মনে পড়ল তূর্যর ম্যাসেজটা সে এখনো সীন করেনি! ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজ ওপেন করতেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ঐ মারমুখী ছেলেটা লিখেছে এসব! মাই গড… হাউ রোমান্টিক! এ তো দেখছি পুরাই উপন্যাসের নায়কের মত রোমান্টিক আর কাজকারবার সব তামিল মুভির ভিলেনের মত। তার মাথায় গুনগুন করে গান বেজে উঠল- “হিরো তু মেরা হিরো হ্যায় ভিলেন য্যায়সা কাম না কার, সাপ্নো কি ইস রানীকো এ্যাসে তো বাদনাম না কার…” আচ্ছা সে কী তূর্যর ম্যাসেজের রিপ্লাই দিবে? কী লিখবে? ধুর তার চেয়ে ম্যাসেজ আনড়িড করে রাখুক। ব্যাটা বহুত জ্বালিয়েছে একটু তো তারও জ্বলা উচিত।

আলো আর তূর্যর বিয়ের ডেট ফাইনাল হয়ে গেছে। প্রায় মাসখানেক পর তাদের বিয়ে। আলোর পরিবার চেয়েছিল আরও একমাস পর বিয়েটা দিতে যাতে তারা ততদিনে তাদের বাড়ির কাজটা দ্রুত শেষ করে ফেলতে পারে। নতুন বাড়িতে উঠেই বিয়ে হবে কিন্তু তূর্যর পরিবার চাইল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হয়ে যাক তাই সেই অনুযায়ী ডেট ফিক্সড হয়েছে। খুব জোরেশোরে আয়োজন চলছে দুই পরিবারে। বিয়ের শপিং এর জন্য তূর্যর মা তারান্নুম হোসেন আলোকে বলে রেখেছেন সাথে যেতে। তিনি যাবার আগে তূর্যকে একবার জিজ্ঞেস করলেন যাবে কিনা? আলোর সাথে কিছুক্ষণ থাকাও হবে আবার পছন্দ অপছন্দ গুলোও জেনে কেনাকাটা করা যাবে।

তূর্য অবাক হয়ে বলল- আমি গিয়ে কী করব? মেয়েদের শপিং এর কী বুঝব আমি?

-এখানে বোঝাবুঝির কী আছে? গেলে কিছুক্ষণ একসাথে থাকা হবে আবার পছন্দ অপছন্দ গুলোও জানা যাবে এইজন্য যাবি।

-মা অযথা আমাকে টেনো না তো। তোমাদের কেনাকাটা তোমরাই করো।

-সে তো আমরা করবই কিন্তু তোর অভ্যাস করতে হবে না?

-ওসব অভ্যেস সময়েরটা সময়ে দেখা যাবে। এখন পারব না,তোমরা যাও। বলে তূর্য নিজের ঘরে চলে যায়। গিয়েই আলোকে ফোন দিয়ে বলে- শ্বাশুড়িকে লুটপাট করতে নাকি তার সাথে শপিং এ যাচ্ছ?

-হ্যাঁ যাচ্ছি, দেখি তিনি কতটা লুটপাট হন? আপনার কিছু লাগবে? লাগলেও আনতে পারব না।

-পারবে না সেটা জানি। বলে বোঝানোর দরকার নেই। তবে আমি সেজন্য ফোন দেইনি।

-কী জন্য ফোন দিয়েছেন? ঝগড়া করতে?

-ভালো প্রেমিকা হলে জিজ্ঞেস করতে “গল্প করতে?”

-ভালো প্রেমিকা পেতে হলে ভালো প্রেমিক হতে হয়।

-ভালো প্রেমিক কিনা প্রমাণ দিব?

-হ্যাঁ, দিন।

-ঠিক আছে। তবে তার আগে তোমাকে একটা শর্ত পূরণ করতে হবে।

আলো সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করল- কী শর্ত?

-শপিং এ যাবার আগে মাকে ফোন দিয়ে বলবে, আমাকে ছাড়া শপিং এ যাবে না তুমি।

আলো আধশোয়া থেকে উঠে সোজা হয়ে প্রায় চিৎকার করে বলল- কী! আমি কেন এটা বলতে যাব?

-আমার শর্ত, তাই বলবে।

-অসম্ভব। আন্টিকে এসব কী করে বলব আমি? তিনি আমাকে বেহায়া ভাববে না?

-আন্টি তোমাকে কী ভাববে বা তুমি কী করে আন্টিকে বলবে that’s none of my business. মনে রেখো তোমার হাতে সময় খুব অল্প আর আমাকে ছাড়া তোমার বিয়ের শপিং করা চলবে না।

আলো কিছু বলতে যাবে তার আগেই তূর্য “best of luck” বলে ফোন কেটে দেয়।

আলো মহা বিপদে পড়ে গেল। তূর্য এমন একটা শর্ত দিয়ে বসবে কে জানত? ব্যাটা হাড়ে হাড়ে বজ্জাত একটা। তার শপিং এ যাবার ইচ্ছে তো আন্টিকে বললেই পারে? আমাকে এভাবে চেপে ধরার মানে কী? সে তূর্যকে আবার ফোন দিল। তূর্য ফোন ধরেই বলল-

-এত তাড়াতাড়ি পারমিশন নিয়ে ফেলেছ? ভেরি স্মার্ট!

-আমি কাউকে কিছু বলিনি। আপনাকে বলতে ফোন দিয়েছি।

-কী বলবে? আমার সাথে কথা বলার সারাক্ষণ এত বাহানা খোঁজ কেন?

-বাহানা করেছি বেশ করেছি। আরও করব কোনো সমস্যা?

-মিষ্টি করে কথা বললে সমস্যা হবার কথা না। কিন্তু এভাবে বললে তো অবশ্যই সমস্যা।

-শুনুন, আমি আপনার শর্ত মানতে বাধ্য নই।

-অবশ্যই বাধ্য। শর্ত জানতে চেয়েছ মানেই ওটা তুমি agree করে নিয়েছ। তাই যে মুহুর্তে জানতে চেয়েছ সে মুহুর্ত থেকে মানতে বাধ্য হয়ে গেছ। তাছাড়া ভেবে দেখো একবার, পার্মানেন্ট ক্ষ্যাপাটে স্বামী চাই নাকি পার্মানেন্ট রোমান্টিক প্রেমিক চাই? ডিসিশন তোমার হাতে। বাই। বলেই তূর্য ফোন কেটে দিল।

আলো পুরোপুরি হতাশ হয়ে গেল… তার একবার মনেহল আদিবা আপুকে দিয়ে আন্টিকে বলাবে কিনা? পরমুহূর্তেই সেটা বাতিল করে দিল। কারণ শর্ত তো তাকেই পূরণ করতে হবে! কীভাবে বলবে… এমন সময় তূর্যর মায়ের ফোন এলো। ফোনের স্ক্রিনে আন্টি নাম দেখেই ওর মাথায় একটা আইডিয়া এলো। সে ফোন পিক করলে তারান্নুম হোসেন বললেন-

-তুমি রেডি হয়েছ? তাহলে এখনি বের হতাম।

-জ্বি আন্টি আমি রেডি একটা কথা…

-হ্যাঁ বলো?

-তূর্য ভাইয়া কী যাবে আমাদের সাথে?

তারান্নুম হোসেন হেসে বললেন- ধুর মেয়ে, তূর্য এখনো তোমার ভাইয়া আছে নাকি? শুধু তূর্য বলবে। ওকে বলেছিলাম কিন্তু কিছুতেই রাজি হল না। যাবে না বলল।

আলো ভীষণ অবাক হলো তারপর মনে মনে একশ একটা বকা দিল তূর্যকে এক মুহুর্তে। ব্যাটা আন্টিকে বলেছে যাবে না আর তাকে শর্তটা দিল কী? তাকে হয়রানি করে খুব আনন্দ পায় বোঝাই যাচ্ছে। এর প্রতিশোধ যদি না নিয়েছে… আলো খুব ধীরে বলল- আন্টি, আপনার ছেলেকে সাথে নিলে ভালো হত। মা বলছিল সুযোগ পেলে ওনার কেনাকাটাও আজ করে ফেলতে।

-তূর্য তো যেতেই চাইছে না আর একদিনে তো এত কেনাকাটা করা যাবে না।

-আমরা যেহেতু যাচ্ছিই যতটা পারা যায় আর কি… মা বলছিল…

-আচ্ছা আমি বলে দেখি ওকে কিন্তু রাজি হবে বলে মনেহয় না। তারান্নুম হোসেন তূর্যর ঘরে গিয়ে দেখলেন তূর্য ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। সে ওর বিছানায় বসে বলল- যা তৈরি হয়ে নে।

তূর্য মুচকি হেসে টুপ করে হাসিটা গিলে ফেলে অবাক গলায় বলল- তৈরি হব কেন?

-আলো বলল তোকেও সাথে নিতে।

-কেন? ও কী চাইছে আমি ওর ব্যাগ টানব?

-এ আবার কী ধরনের কথা? আমরা যাচ্ছিই যখন তুইও চল সুযোগ হলে তোর কেনাকাটাও করা হবে।

-কী? সুযোগ হলে!!! তারমানে আমার সাথে সুযোগের সদ্ব্যবহার করা হবে?

-উফ ও তাই বলেছে নাকি? সরাসরি তো বলতে পারছে না তুই গেলে ওর ভালো লাগবে তাই একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলেছে। এটুকু না বোঝার কী আছে?

-আলোর কী ভালো লাগবে সেটা ভাবছ আর আমার ভালো লাগার কথা ভাবছ না, বাহ্!

-আশ্চর্য, তুই এমন করছিস কেন? কী কথা টেনে টেনে কোথায় নিচ্ছিস!

-আচ্ছা sorry চলো যাই… তোমাদের কামলা খাটতে।

তারান্নুম হোসেন ওর বাহুতে ছোট্ট করে একটা চড় দিয়ে বলল- পাজি ছেলে।

আলো চেয়েছিল শপিং এ ওর মা সাবীরা খাতুনও যাক কিন্তু ওর বাবা যেতে দেননি। বাবা মায়ের প্রতি বরাবরই এরকম ভয়ানক রকম কড়া। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাবা অতিরিক্ত করেন। অথচ বাবা অন্য কারো সাথে কখনোই এমন নয়। শুধু মায়ের সাথে কী যে আছে তার যার কারণে বাবা মায়ের সাথে এমন জালিমের মত আচরণ করে কে জানে! আলো বহুবার জানতে চেয়েছে কিন্তু বাবা বলেননি। শুধু বলেছে- বড় হলে নিজেই সব বুঝবে। আলোর ধারণা মা অতিরিক্ত অহংকারী আর অপ্রয়োজনে মিথ্যা বলে দেখেই বাবা এমন করে। এখন এছাড়া আর কিছু আছে কিনা কে জানে! আলোর নিজেরও মায়ের এইদিক গুলো জঘন্য লাগে কিন্তু এত বছরেও বাবা তাকে শোধরাতে পারেনি। আলোর বিয়ে হয়ে দুদিন পর শ্বশুরবাড়ি চলে যাচ্ছে… মা যেমনই হোক তার সাথে বাবার এই কঠিন আচরণ যদি ওর শ্বশুরবাড়ির কেউ দেখে ফেলে কেমন হবে? আলো আর দেরি না করে বের হয়ে গেল।

ওরা নিচে গিয়ে গাড়িতে বসতে বসতে আলো চলে এলো। তূর্যর দিকে একবার তাকিয়ে ভেংচি কেটে গাড়িতে বসে আন্টির সাথে গল্প করতে লাগল। তূর্য সামনে বসেছে আর ওরা দুজন পেছনে। ব্যাক মিররে তূর্য আলোর দিকে তাকিয়ে ছিল, ওর সাথে চোখাচোখি হতেই তূর্য eye blink করল। আলো সাথে সাথে অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আর সেটা দেখে তূর্য হাসতে লাগল। এক ফাঁকে আলো তূর্যকে ম্যাসেজ পাঠালো- “Now it’s your turn.”

সেটা দেখে তূর্য মুচকি হেসে পেছনে তাকিয়ে মাকে বলল- মা আমি পেছনে আসব?

-পেছনে আসবে কেন?

-আলো ওখানে বসে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে ভাবলাম গল্প করতে চাইছে…

আলো এতটা মোটেও আশা করেনি। ছেলেটা এত ক্রিঞ্জ কেন? সে মুখে মাস্ক টেনে দিয়ে উইন্ডোর দিকে তাকিয়ে কাশতে লাগল। তূর্য তখন মুচকি হেসে পানির বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বলল- পানি লাগবে?

আলো কঠিন একটা লুক দিয়ে নিজের হ্যান্ড ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে পানি খেয়ে উইন্ডোতে চোখ রাখল। এরচেয়েও ভয়ংকর কথা ওদের কান্ড দেখে তারান্নুম হোসেন মুখ টিপে হাসতে লাগল। তারপর আলোকে বলল-

-আলো, আমি কী সামনে চলে যাব?

আলো সাথে সাথে কিচ্ছু না বলে ওড়না দিয়ে নববধূর মতো পুরো মুখ ঢেকে ফেলল। তারান্নুম হোসেন তখন শব্দ করে হেসে ফেললেন।

Dont forget me পর্ব-০২

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ২)

আলো হতাশ গলায় আদিবাকে বলল- তুমি যে কী সব বলো না আপু। আমাদের বাড়িওয়ালা আন্টির ছেলেকে দেখলে বুঝতে হ্যান্ডসাম কাকে বলে?

-বাড়িওয়ালা আন্টির হ্যান্ডসাম ছেলে মানে?

-মানে আন্টির ছেলে দেখতে অনেক ভালো।

-এই তুই কী আন্টির ছেলের প্রেমে পড়েছিস? আর এইজন্যই মুখ এমন ভোতা করে বসে আছিস পাত্র দেখতে চাচ্ছিস না? একটু ঝেড়ে কাশ তো…

-ধুর কী বলো এসব? দেখতে ভালো হলেই প্রেমে পড়তে হবে নাকি?

-সত্যি করে বল আলো? এখনো সময় আছে, তেমন কিছু হলে আমি বাসার সবাইকে বলে ম্যানেজ করব।

-বললাম তো তেমন কিছু নেই।

আদিবা এরপর আর কিছু বলল না তবে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে রইল আলোর দিকে।

গেস্টরা এসেছে প্রায় ঘন্টাখানেক হয়ে গেছে কিন্তু তাদের কেউই এখনো আলোকে দেখতে ভেতরে আসেনি। খাওয়ার পর আলোকে ড্রইংরুমে ডাকা হয়। আদিবা ওকে নিয়ে আসে। এমন সময় কেউ একজন বলল- বাহ্, আজ কী মিষ্টি লাগছে আলোকে। আগে তো কখনো শাড়ি পরা দেখিনি।

কথা শুনে আলোর কেমন সন্দেহ হলো, গলাটা পরিচিত… সে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে সামনে বাড়িওয়ালা আন্টি বসা! সে টাশকি খেয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলল। আর আন্টির পাশেই তূর্য ভাইয়া বসা। এমন সময় আদিবা আলোর কানে কানে বলল-

-কিরে এ নাকি তোর সেই বাড়িওয়ালা আন্টির ছেলে? এখন বল, পাত্র পছন্দ হয়েছে নাকি আমার জন্য বলব চাচীকে? ছেলে কিন্তু অলরেডি আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছে। বলে আদিবা চাপা গলায় হেসে কুটপাট হচ্ছে। আলো ওকে চাপা ধমক দিয়ে বলল-

-ও মোটেও তোমার দিকে তাকায়নি। ওসব অল্ড জোকস অন্য কোথাও চালাও।

-ওওও… এখন সে “ও” হয়ে গেল! একটু আগে এত মিথ্যে বললি কেন তাহলে?

-উফ ওসব পরে বলো তো আপু। এখন ওকে একটু দেখতে দাও। পিচ কালারের পাঞ্জাবীটাতে কী কিউট লাগছে, মাগো! “দিলি বড়ো জ্বালারে পাঞ্জাবীওয়ালা…” একটু পরেই আলোকে বাড়িওয়ালা আন্টি আংটি পরিয়ে দিলেন। আর তূর্যকে আংটি পরিয়ে দিলেন আলোর বড় চাচ্চু। আলোর মনে কী যে আনন্দ হচ্ছে… স্বপ্ন এভাবেও সত্যি হয়!

আংটি পরানো হয়ে গেলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে বসল সবাই। আদিবা তখন আলো আর তূর্যকে ভেতরের রুমে নিয়ে যায়। আদিবা তূর্যকে উদ্দেশ্য করে বলল-

-কতদিন ধরে চলছে আপনাদের এইসব?

-এইসব কোন সব?

-এই যে, যার কারণে আজকের এত আয়োজন?

-আমার কী চলবে? আমি তো এসব জানিও না। বিয়ের বয়েস হয়েছে বাবা-মা ধরে নিয়ে এসেছে। তাদের নাকি আলোকে খুব পছন্দ।

তূর্যর কথা শুনে আলোর চেহারার সবটুকু আলো নিভে গেল। আদিবা অবাক হয়ে বলল- আর আপনার?

-আমি তো কখনো আলোকে ওভাবে ভালো করে দেখিইনি।

আদিবা আর আলো দুজনের মুখই অন্ধকার হয়ে গেল। আদিবা ওদের কথা বলার জন্য এক্সকিউজ দিয়ে চলে গেল। আলো চুপ করে বসে রইল। কথা বলার মুড চলে গেছে তার। তূর্য তখন বলল-

-কই তুমি তো দেখছি ভালোই আছ?

-মানে? খারাপ থাকতে বলছেন নাকি?

-কাল তো খুব কান্নাকাটি করলে ভাইয়া মারবে বলে কিন্তু তেমন কিছু তো দেখছি না তাই বললাম।

-ভাইয়া কিছু বলেনি।

-ও… আচ্ছা। কিছু বলবে তুমি?

-কী বিষয়ে বলব?

-বাহ্, ডেকে এনে বলছ কী বিষয়ে বলব?

-আমি তো ডেকে আনিনি। আদিবা আপু এনেছে।

-তাহলে আদিবা আপু কিছু না বলেই চলে গেল যে?

-তাকেই গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। ডাকব আপুকে?

-না থাক। পরে শুনলেও চলবে। আমি কী তাহলে চলে যাব?

আলো অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল- যান, মানা করছে কে?

-আহা কী কপাল আমার! হবু জামাইয়ের সাথে প্রথমবার একান্তে কথা বলার সুযোগ হলো আর তার কথা বলার ঢংটা দেখো! একটাবার থাকতেও বলছে না…

-আপনার তো আমাকে পছন্দ নয় থেকে কী করবেন?

-“পছন্দ নয়” এমন কিছু কী বলেছি?

আলো তূর্যর দিকে তাকিয়ে রইল কিছু বলল না। হয়ত বোঝার চেষ্টা করছে…

-ঠিক আছে যাই তাহলে। বলে উঠতে উঠতে তূর্য বলল- রাতে ফোন করবে নয়ত ভাইয়াকে বলে আবার মার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

আলো করুণ মুখে তূর্যর দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবল- এই ছেলেটা এমন কেন? নিজের হবু বউয়ের সাথে কথা বলতে চায় সেটাও এমন হুমকি ধামকি দিয়ে বলতে হবে? সে তো কথা বলতেই চায়।

তূর্যরা সবাই চলে যাবার পর আদিবা একটা বক্স নিয়ে হনহন করে আলোর ঘরে এসে বলল- তূর্য এটা তোকে দিয়ে গেছে। খুলে দেখ তো কী আছে?

আলো আদিবার হাতের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে বেশ বড় একটা বক্স। সে বক্সটা হাতে নিয়ে বলল- এটা কখন দিল?

-এই তো যাবার সময়। তাড়াতাড়ি খোল না দেখব তো?

আলো বক্সটা হাতে নিয়ে খুলল। ভেতরে পাশাপাশি আবার দুটো বক্স! আলো একটা খুলে দেখল ভেতরে- চা পাতা, গুঁড়ো দুধ, কফি আর সাথে দুটো কাপল চায়ের কাপ যেটা পাশাপাশি রাখলে হার্ট শেপ হয়। এগুলো দেখে দুজনের মুখ থেকেই মনের অজান্তে বের হয়ে এলো, “ওয়াও…” একটা চিরকুট পেল সেখানে লিখা- “দুকাপ চা এনে একা পান করো কেন? তূর্য তো আর অনেক দূরে থাকে না, ডাকলে কী হয়?”

আদিবা চোখ বড় বড় করে বলল- আলো এই ছেলে তো মারাত্মক লেভেলের কিউটরে! তারপর আড় চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখে মুখে মিষ্টি লালচে আভা মাখামাখি করছে। নতুন নতুন প্রেম করলে যেমন হয়। লজ্জা লজ্জা ভাব… তীব্র ভালো লাগায় আকাশে বাতাসে পাহাড়ে জঙ্গলে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়িয়ে স্বপ্ন দেখা টাইপ। ইস কী মিষ্টি লাগছে ওকে দেখতে, একেবারে হিংসে লাগার মত। এই সুখ যেন আজীবন ওর চোখে মুখে লেপ্টে থাকে। তারপর মুচকি হেসে বলল- আর কী আছে দেখ?

অন্য বক্সটা থেকে এরপর হলুদ আর মেরুন রঙের দুইটা ছাতা, একগুচ্ছ দোলনচাঁপা, ৪টা আম আর একটা খাম পেল। ছাতা দুটোর উপর ট্যাগ লাগানো। হলুদ ছাতার ট্যাগে লিখা, “বৃষ্টির ছাতা” আর মেরুনটায় লিখা “রোদের ছাতা”। আলো মৃদুস্বরে বলল- how sweet! আদিবা বলল-

-ছাতা! এ আবার কেমন ধরনের গিফট?

আলো মুচকি হেসে বলল- তুমি বুঝবে না আপু।

-ও বাবা… এখানে আবার বোঝাবুঝির ব্যাপার স্যাপারও আছে! তোদের তো সুবিধের লাগছে না!

-অসুবিধারও কিছু নেই আপু। আমি নিজেও আসলে কিছু বুঝতে পারছি না তুমি কী বুঝবে?

-বোঝা বুঝি বাদ দে, আগে খামটা খোল দেখি কী আছে ওতে?

-খাম তোমার সামনে খুলব কেন? তুমি যাও না?

-যাব কেন? খাম তো আমার সামনেই খুলতে হবে। আমি না দেখে তো ছাড়ব না। খোল?

-আপু…

-এমন মায়া মায়া মুখ করে কোনো লাভ নেই। খোল? নয়ত দেখবি কী করব?

-আপু সব সময় তুমি এমন করো… শুধু বড় হয়েছ বলে যা খুশি করে গেলে… নাও তুমিই খোলো?

-উহু, তোরটা তুই খোল। আমি খুললে পরে আফসোস করবি আর আমাকে গালাগাল করবি তা হবে না। খোল…

আলো খামটা খুলল, ভেতর থেকে ভাজ করা একটা নীল কাগজ আর বেশ কিছু ছবি বের হয়ে এলো। আরে, এ তো সব তারই ছবি! দুজন মিলে হুমরি খেয়ে ছবিগুলো দেখতে লাগল। সবগুলো ছবি ছাদ থেকে লুকিয়ে তোলা। গতকাল সকালে ও যখন বৃষ্টির মধ্যে চায়ের ছবি তুলছিল সেই ছবিও আছে। তারমানে রসগোল্লাটা ওখানে অনেক আগেই এসে ছবি তুলছিল লুকিয়ে থেকে! আর এমন ভাব করল যেন মাত্র এসেছে, কী বদলোক! একটা ছবি পেল যেটাতে আলো গাছ থেকে আম পেড়ে খাচ্ছে! ইসস… এইজন্যই তো বলছিল, আমি চুরি করতে এসেছি কিনা? ছিঃ ছিঃ সে ধরা পড়ে বসে আছে সেটা তো জানেই না! আদিবা তখন বলল-

-এই ছেলে তো আস্ত একটা চোর রে! লুকিয়ে লুকিয়ে সারাক্ষণ তোর ছবি তোলে। এ পুরাই তোর প্রেমে লাট্টু হয়ে আছে। তোদের ব্যাপারটা আমি শালা কিছুই বুঝতে পারছি না। তুই ওর প্রেমে পড়েছিস নাকি ও তোর প্রেমে ডুবে আছে? নাকি দুজন দুজনের সাথে প্রেম করছিস আর আমাদের চোখে ঠুলি পরিয়ে বোকা বানাচ্ছিস? আবার বলছিস কেউ কিছু জানিস না। ওদিকে বিয়ে ঠিক হচ্ছে! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। পুরা ব্যাঙ হয়ে গেলাম!

-তুমি ব্যাঙ আর আমি ব্যাঙাচি হয়ে আছি আপু। শুধু এই অংশটুকু বাদে সেটা হলো একে দেখলেই আমার মনের মধ্যে লা লা লা শুরু হয়ে যায়!

-আমার মাথাটা আর খারাপ করিস না। তোরা তোদের ব্যাপার নিয়ে যা খুশি কর, এখন জলদি ওইটা খোল।

-ওইটা কোনটা?

-নীল কাগজটা। ওটা তো চিঠি মনে হচ্ছে আই থিংক লাভ লেটার! তাড়াতাড়ি খোল, লুকিয়ে লাভ নেই।

-আপু প্লিজ এটা অন্তত ছেড়ে দাও?

-নো, বের কর।

-হে আল্লাহ আমাকে কেন এবাড়ির ছোট মেয়ে করলা? সারাক্ষণ সবাই শুধু ফায়দা নেয়।

-এত বড় অপবাদ? আচ্ছা যাহ দেখলাম না। বলে আদিবা উঠে চলে গেল আর যেতে যেতে বলল- দরজা বন্ধ করে পড় নয়ত আমি আবার এসে পড়ব তখন কোনো মানা শুনব না বলে দিলাম।

আদিবা বের হতেই আলো দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিয়ে কাগজটা খুলল। গোটা গোটা অক্ষরে তূর্য লিখেছে-

“এই যে আম চোর, ছবি দেখে কী বুঝলে? নিশ্চই ভাবছ আমি তোমার প্রেমে পড়েছি? ওসব পুতুপুতু টিনএজ টাইপ দিবা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো। তুমি যে আমার মায়ের থেকে হাতে পায়ে ধরে চাবি নিয়ে ছাদে গিয়ে কী কী সব কান্ড করে বেড়াও তার প্রমাণ দেখাতেই এগুলো করা। এটা দেখে মা বলেছে, এরপর আম খেতে চাইলে যেন বলে খাও এভাবে চুরি করার দরকার নেই। তাই আম পাঠালাম।

নেহাৎই ভদ্র ছেলে বলে ছাতা পাঠালাম। আর হ্যাঁ তুমি যে রোজ ছাদে উঠে আমাকে দেখার অপেক্ষা করো, এক কাপ চা বেশি করে কেন আনো সেটা আমি প্রথম দিন থেকেই বুঝতে পেরেছি। আমার সাথে প্রেম করতে হলে তোমাকে অনেক স্মার্ট হতে হবে বেবি।

বিদায়।”

আলো রাগে চিড়বিড়িয়ে উঠল। ইচ্ছে হলো ওর মাথার ঝুটি ধরে ঝাকিয়ে দিয়ে আসে। উপরেই তো থাকে যাবে নাকি একবার? হাতের আংটিটার দিকে তাকিয়ে ভাবল, এখন তো যেতেই পারে আফটার অল লিগ্যাল পারমিশন আছে। না থাক, এবারের মতো মাফ করে দিলাম। তারপর উঠে চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে নিল। আজ আর তার ছাদে যাওয়া হবে না। ওয়েট, এখন থেকে ছাদটা তো তারও! আহ্ এতক্ষণে একটা ভালো কিছু পাওয়া গেল। নাহ, বিয়ে আসলে অতটা খারাপ কিছু না।

রাতে খাওয়ার পর আলো ওর ঘরে দরজা বন্ধ করে পায়চারি করতে লাগল। তূর্য ওকে ফোন করতে বলেছিল, করবে? না করলে তো ভাইয়াকে বলে দিবে বলেছে… কেন, তূর্য নিজে ফোন দিতে পারে না? দিব না আমি ফোন। ভাইয়াকে বলে দিবে, আসছে। ঘরের কথা পরকে বলে নাকি কেউ? আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে ওটা আসলে জাস্ট ভয় দেখাতে বলেছে? ok… ফোন তো তোমাকেই দিতে হবে রসগোল্লা, বলে আলো শক্ত হয়ে বসে রইল। এমন সময় আলিফ ম্যাসেঞ্জারে নক দিয়ে বলল-

-কিরে কী করিস?

-কিছু না।

-তূর্যর সাথে কথা হয়েছে?

আলো বসা থেকে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। তূর্য ভাইয়া কী ভাইয়াকে কিছু বলেছে? এই ছেলেটা আসলেই এত পাজি!

-কিরে কথা বলিস না কেন? দেখ, হুট করেই সব হয়ে গেল। এখন কথা না বললে সম্পর্ক আগাবে কীভাবে? ফোন দিস ওকে।

আলো তখন কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ভেবে তূর্যর ম্যাসেঞ্জারে নক দিল।

তূর্য সাথে সাথে রিপ্লাই দিল- এই মেয়ে, সালাম দাও না কেন? আর ম্যাসেঞ্জারে কী? আমি তো তোমাকে ফোন করতে বলেছিলাম?

-ফোন দেয়ার জন্য নাম্বার থাকতে হয়।

-সাথে ইচ্ছেটাও থাকতে হয়। মা’র কাছ থেকে বলে বলে ছাদের চাবি তো ঠিকই নিয়েছ।

-ছাদের চাবি নেয়া আর কারো ফোন নাম্বার নেয়া এক বিষয়?

-ওটা শ্রেফ বাহানা নইলে এখন তো চাইতে পারতে?

আলো ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে বলল- আমাকে আপনার নাম্বারটি প্রদান করুন প্রিয়। এই মুহুর্তে আমি আপনার গুনাহগার, মহাপাপী। আজ যদি পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর সাথে আমার পরিচয় থাকত তাহলে তিনি নিশ্চই আমার কাছে আপনার নাম্বার না থাকার শোচনীয় দূরবস্থা দেখে “উড বি বউ কেন আসামী?” নামক একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলতেন! শাহেনশাহ জাহাপনায় আলামপনা, বাদশা ওলি শাহ সুফি তূর্য বিন শের শাহ আমার গোস্তাখী মাফ করবেন। আমাকে আপনার গুরুত্বপূর্ণ নাম্বারটি দিয়ে কৃতার্থ করুন, ধন্য করুন, জিন্দেগী বরবাদ করে দিন সরি জিন্দেগী সফল করুন। এর অন্যথায় আমি মরে যাব। আমার শ্বাস আটকে আছে আপনার নাম্বারের প্রতিটি সংখ্যার ভাঁজে ভাঁজে। প্লিজ আমাকে বাঁচিয়ে তুলুন…

-খুবই বাজে ধরনের ন্যাকামো হয়েছে। নেক্সট টাইম ভালো করে ট্রাই করবে। বলে তূর্য ওর নাম্বারটা দিল।

আলোর ইচ্ছে হলো মোবাইলটা তূর্যর কানের নিচে ছুঁড়ে মারে। সে বড় বড় শ্বাস নিল ৫মিনিট তারপর কল দিল। তূর্য সাথে সাথেই ওর কল কেটে দিয়ে ফোন ব্যাক করল।

আলো সালাম দিয়ে চুপ রইল।

-কী হলো কথা বলো?

-আমি পারি না, আপনিই বলুন?

-আমিই যদি বলব তাহলে তুমি ফোন করেছ কেন?

-আরে! ফোন তো আপনিই করতে বললেন।

-আমি তো তোমাকে কথাও বলতে বলছি?

-আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ছবি তুলেছেন কেন?

-সেটা তো লিখেই দিয়েছি। নাকি পড়তে পারো না?

-যা লিখেছেন তা মোটেও সত্যি নয়।

-আর তুমি যে নিজে ছাতা উড়িয়ে দিয়ে আমার উপর দোষ চাপালে তখন খুব সত্য হলো, না?

-আপনাকে দেখে খুব ভদ্র ভেবেছিলাম।

-এখন কী মহাপুরুষ মনে হচ্ছে?

-এখন মহা জালিম মনে হচ্ছে। বলে আলো ফোন রেখে দিল আর তূর্য হাসতে লাগল। নাহ, খুব বেশি করে ফেলেছে, বেচারা ওকে জালিম ভাবছে রীতিমতো! দুঃশ্চিন্তায় রাতের ঘুমটাও হয়ত চলে যেতে পারে। সেটা উচিত হবে না। তখন একটা ম্যাসেজ পাঠালো- “আমি আমার ব্যক্তিগত সম্পদের ছবি তুলেছি, তাতে কারো পারমিশন নেয়া বা আপত্তি থাকার কথা নয়। থাকলেও তূর্য সেটা মানতে নারাজ। …congratulations for your engagement.”

কিন্তু আলো মেজাজ খারাপের কারণে ম্যাসেজ সীন না করে শুয়ে পড়ল।

চলবে…

Dont forget me পর্ব-০১

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ১)

আলোর খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেছে। বাইরে ঝোড়ো বাতাস সেই সাথে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘুমকাতুরে চোখে সে জানালায় চোখ রাখল। তারপর উঠে তার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বৃষ্টি দেখল। আর তখনই তার মনে হলো- এখনই ছাদে যেতে হবে। সবাই ঘুমুচ্ছে এই সুযোগ… সে তৎক্ষনাৎ দুকাপ চা বানিয়ে ছাতা আর ফোন নিয়ে ছাদে চলে গেল। বাইরে তখনো প্রায় অন্ধকার… সেটা ভোরবেলা বলে নাকি ঝড়-বৃষ্টির কারণে বোঝা গেল না। অন্ধকারই ভালো, সে তো এমনটাই চাইছিল। সে চায়ের কাপসহ ট্রেটা বাগান বিলাস গাছ আর আমগাছের নিচে রেখে কিছু ছবি তুলল। তারপর চলে গেল রেলিঙের কাছে। সেখানে পেয়ারা গাছের নিচে চা রেখে দুটো ছবি তোলার পর পরই পেছন থেকে কেউ ভরাট গলায় বলল-

-এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ছাদে কী করছ?

আলো চমকে ওঠে। তার হাত থেকে ফোনটা প্রায় পরেই যাচ্ছিল, কোনমতে সেটাকে সামলে নিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখল বাড়িওয়ালার ছেলে তূর্য ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে! সে মনে মনে বলল- উফ জানেমান, এভাবে ভয় পাইয়ে দিতে হয়? জানেন হৃদয়ে কী হাঙ্গামা হয়ে যাচ্ছে? কিন্তু মি. রসগোল্লা এত সকালে এখানে কী করতে এসেছে? এমনিতেই আবহাওয়া রোমান্টিক তার উপর এর উপস্থিতি। আমার হার্ট এ্যাটাক করিয়ে ছাড়বে নাকি? এর কথা ভেবে ভেবে অলরেডি দিন-রাতের হদিস থাকছে না তার উপর এই রোমান্টিকতা সহ্য করব কীভাবে??? এমন সময় তূর্য অসহনীয় হয়ে ধমকের গলায় বলল-

-কী হলো এমন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন?

-না মানে…

-কী করছিলে ওখানে? ঝড় বাদলের মধ্যে লুকিয়ে সুইসাইড করতে এসেছ?

আলোর রাগ হলো, বলবার জন্য আর কোনো প্রশ্ন পেল না? সে কপাল কুঁচকে বলল- সুইসাইড করতে আসব কোন সুখে?

-সুইসাইড কেউ সুখে করতে আসে নাকি?

-জানি না। আমি তো আর কোনদিন সুইসাইড করতে যাইনি।

-তাহলে কী করতে এসেছ এখানে?

-ঝড়-বৃষ্টির ছবি তুলতে এসেছিলাম।

-ছবি তোলার সাবজেক্টের এত অভাব পৃথিবীতে? মাই গড!

-এটা অভাব নয়, different কিছু করার চেষ্টা।

-different কিছু করা আর different কিছু করার নামে ছাগলামো করার মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। যা হোক চা দুই কাপ কেন? আর কে আছে সাথে?

আলো চোখ সরু করে বললে- সাথে কেউ নেই। আমি একাই দুকাপ চা খাই।

-চা কখনো খাওয়া যায় না, ওটা পান করতে হয়। আর কেউ কখনো একসাথে দুই কাপ চা পান করে না, সেক্ষেত্রে মগ ইউস করে। তোমাদের বাসায় মগ নেই নাকি তুমি আসলে কিছু লুকাচ্ছ?

আলো কিছু বলতে যাবে এমন সময় ঝড়ের বেগ হুট করে বেড়ে গেল। তীব্র বাতাসে আলো তার ছাতা সামলাতে হিমশিম খেতে লাগল, কিছুক্ষণ পর সেটা উড়ে গেল হাওয়ায়! আলো আতঙ্কিত চোখে সেদিকে তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে বলল- আমার ছাতা… ততক্ষণে সেটা দুটো বিল্ডিং পার হয়ে চোখের আড়াল হয়ে গেল। কোথায় গিয়ে থামবে কে জানে! সে তখন তূর্যর দিকে ফিরে বলল- আপনার জন্য আমার ছাতাটা উড়ে চলে গেল।

তূর্য অবাক হয়ে বলল- আমার জন্য মানে? আমি কী করেছি?

-আপনি এসে…

-এত কথা না বলে আমার ছাতার নিচে এসো, নয়ত বাতাস তোমাকেও উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

আলো মনে মনে বলল- আপনার ছাতার নিচে! আপনার এত কাছে! ভিজে আমার ঠান্ডা লেগে যাবে বলে ভাবছে? ইসস কী মায়া, কী ভালোবাসা আমার জন্য! আহা হা… আমি পারি না আর পারি না… বলল- আপনার ছাতার নিচে কেন যাব?

-ভিজে ঠান্ডা লাগবে সেই জন্য বলছি এতটা ভাবার দরকার নেই। ভেজা জামা কাপড় গায়ের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে যাওয়া আমার জন্য মোটেও শোভনীয় নয়।

আলোর ততক্ষণে হুশ হলো। সে দ্রুত নিজেকে গুটিয়ে ফেলে সেখান থেকে চলে যেতে নিলে তূর্য পেছন থেকে বলল- ও হ্যালো, ছবি তুলতেই এসেছিলে নাকি গাছের আম চুরি করতে এসেছিলে? কাপ ফেলেই চলে যাচ্ছ যে? নাকি ওগুলোকেও উড়িয়ে দেবার ইচ্ছে?

-উড়ে যাক, সাথে আপনিও উড়ে যান। বলে আলো ওগুলো না নিয়েই চলে যাচ্ছিল কিন্তু তূর্য ওকে থামিয়ে চায়ের ট্রেটা এনে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল- আমার ওত ওড়ার সখ নেই, বুঝেছ? যাও এখন।

আলো ট্রে হাতে ছাদের মাঝ বরাবর আসতেই বাতাসের বেগ এত বাড়ল যে সে থেমে গেল, আগাতে সাহস হচ্ছিল না। তূর্য এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল- চলো। আলো চুপচাপ তার পাশে হেঁটে চলল। তূর্য বিড়বিড় করে বলল- কাছে আসার বাহানা, বুঝি না ভেবেছে। মা এইসব পিচ্চি-পাচ্চাকে কেন যে ছাদের চাবি দিয়ে বসে? কবে কোন বিপদে পড়বে কে জানে! তারপর সিঁড়ির কাছে এসে হনহন করে চলে গেল আলোকে পেছনে ফেলে। আলো তখন দাঁত কিড়মিড় করে পেছন থেকে হাত উঁচু করে তূর্যকে চড় দেখানোর ভঙ্গি করে মনে মনে রাগের ঝাল মেটাল।

বাসায় ঢুকে আলো দ্রুত চেঞ্জ করে নিল। তার হাঁচি শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। যদিও বের হবার আগে মায়ের ফোনে ম্যাসেজ পাঠিয়ে গেছে যে সে ছাদে যাচ্ছে তবু মা উঠে যাওয়ার আগেই নিজেকে গুছিয়ে ফেলতে হবে। সে চেঞ্জ করে বিছানায় চলে গেল। এখন কিছুক্ষণ শুয়ে না থাকলে সর্দি লেগে যাবে। সে বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ আগে তোলা ছবিগুলো দেখতে লাগল। ছবিগুলো খুব সুন্দর এসেছে, সেখান থেকে কিছু ছবি বাছাই করল। এগুলো এখনই ফেসবুকে আপলোড করবে। ক্যাপশনে লিখবে, “শান্তিতে দুটো ছবিও তোলা যায় না, যেখানে সেখানে গন্ডার ঢুকে পড়ে!” তারপর মনে মনে হাসল। মি. রসগোল্লা, আজ আমার পোস্টে দিস হা হা রিয়েক্ট। তারপর ফেসবুক ক্রল করতে লাগল… এমন সময় দেখে মি. রসগোল্লা তারই দুটো ছবি আপলোড করেছে ১৫ মিনিট আগে! একটু আগে ছাদে যখন তার ছাতা উড়ে যাচ্ছল আর সে সেটাকে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করছিল সেই সময় তোলা। ওর চেহারা অবশ্য দেখা যাচ্ছে না ভালো করে। ছবির ক্যাপশনে লিখেছে, “হালকা বাতাসে কন্যা উড়ে যায় আকাশে!” পোস্ট হা হা রিয়েক্টের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে! মান সম্মানের তেঁতুলের চাটনি করে দিল একেবারে। এভাবে লুকিয়ে মেয়েদের ছবি তোলা অন্যায় সেটা কী জানে না? আর ছবিগুলো তাকে না দিয়ে এভাবে পোস্ট করার মানেই বা কী? তারপর হুট করেই মনে পড়ল ভাইয়া এই পোস্ট দেখলে কী করবে!!! অলরেডি একবার এসব নিয়ে মার খেয়েছে আর আজ যদি এই ছবি দেখে… শেষ, আলো আজ শেষ। বিকালের মধ্যেই তার দাফন কার্য শেষ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে!

তূর্য আলোর ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে আছে। সে আলোর সকল পোস্টেই অতি নিষ্ঠার সাথে হা হা রিয়েক্ট দেয়, সে যে ধরনের পোস্টই হোক। আলো একদিন রাগ করে তূর্যর আইডিতে ঢুকে তার প্রায় শ’খানেক পোস্টে এ্যাংরি রিয়েক্ট দিয়ে এসেছিল। সেটা দেখে ব্যাটা বদ সবগুলো রিয়েক্টের নোটিফিকেশন স্ক্রিনশট নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে আর ক্যাপশনে লিখেছে, “Angry Bird 🤣🤣” সেটা দেখে রাগে আলোর গা জ্বলে গেছে। তাদের মিউচুয়াল কিছু ফ্রেন্ড আছে তারা এই নিয়ে হাসাহাসি করে অস্থির… কী সব কমেন্ট… উফ কী অপমান, কী অপমান। তারচেয়েও ভয়ংকর কথা ভাইয়া এর ফ্রেন্ড লিস্টে আছে আর ও এটা দেখলে মেরে পিঠ ভেঙে ফেলবে! বড় হয়েছে তো কী হয়েছে কিছু হলেই মারে। তার চিৎকার করে কান্না করতে মনে চেয়েছিল। এর আধঘন্টা পর ভাইয়া এসে চোখের সামনে সেই স্ট্যাটাস ধরে বলেছিল-

-কী এগুলো?

আলো ঢোক গিলে বলেছিল- তূর্য ভাইয়া আমার সব পোস্টে হা হা রিয়েক্ট দেয় সেইজন্য রাগ করে এটা করেছি।

-তুই তো হা হা রিয়েক্ট দেয়ার মতই স্ট্যাটাস দিস, ও হা হা দিবে না তো কী দিবে?

আলোর ইচ্ছে হয়েছিল বলে- “আমি স্ট্যাটাস যেমনই দেই ওকে লাভ রিয়েক্ট দিতে হবে। কেন হা হা দিবে?” কিন্তু বলতে পারেনি, ভীষণ আফসোস হয়েছিল… ওর ভাইয়া তখন ওর চুলের বেনি টেনে ধরে বলেছিল- তোদের মধ্যে অন্য কিছু চলছে কিনা সোজাসাপ্টা বল? নয়ত তোর চুল ছিঁড়ে ছাগলের লেজ বানিয়ে দিব এখনি। আলো চিৎকার করতে করতে বলেছিল- মারিস না ভাইয়া, মারিস না… আমাদের মধ্যে কিছু নেই, সত্যি বলছি কিছু নেই। “ফেসবুকে আবার উল্টাপাল্টা কিছু দেখলে মেরে হাত পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি করে দেবে” বলে শাসিয়ে আলিফ চলে গিয়েছিল। এরপর থেকে আলো সাবধানে চলে। কিন্তু মনকে কী করে সাবধানে রাখবেরে… তার উপর আজকের এই ঘটনা! এখন সে ভাইয়ার হাতে মার খেতে খেতে কষ্ট করে মরবে নাকি নিজেই আরাম করে সুইসাইড করবে বুঝতে পারছে না। মার খেতে অনেক ব্যথা লাগে এর চেয়ে সুইসাইডই ভালো… এসব ভাবতে ভাবতে সে যখন প্রায় পাগল সেই মুহুর্তে মনে পড়ল ভাইয়া তো বাসায় নেই, দুই দিনের জন্য বড় মামার বাসায় গেছে। ওহ, বাঁচা গেল মাইর থেকে। এর মধ্যে ওই অসভ্য তূর্যটাকে ধরতে হবে। সে তূর্যর ম্যাসেঞ্জারে নক দিল “হাই” লিখে।

তূর্য সেটার রিপ্লাই দিল- “স্ট্যাটাস বা ক্যাপশন কোনটাই চেঞ্জ হবে না” লিখে।

আলোর মেজাজ খারাপ হলো। এই ছেলে এত চালাক কেন? তার ইচ্ছে হলো “I love you” লিখে অভদ্রটার মাথা নষ্ট করে দিতে কিন্তু পরে দেখা যাবে এটাও স্ক্রিনশট দিয়ে শেয়ার করে দিয়েছে। তাই নম্র হয়ে লিখল- “চেঞ্জ করবার কোনো দরকার নেই, ডিলিট করে দিলেই হবে। ভাইয়া দেখলে আমাকে খুব মারবে… প্লিজ…”

-তুমি মার খেলে আমার কী? আমি আমার টাইম লাইনে কী শেয়ার করব আর কী ডিলিট করব সেটা তোমার কাছ থেকে শুনতে হবে?

-আমি মার খেলে আপনার কিছু না কিন্তু এমন কিউট একটা মেয়ে আপনার জন্য মার খাবে সেটা নিশ্চই ভালো দেখাবে না?

-কে কিউট, তুমি? হুহ, সামান্য বাতাস এলেই তো উড়ে যাও!

-আমি কিন্তু আন্টিকে বলে দিব, অনুমতি ছাড়া আপনি আমার ছবি তুলেছেন আবার সেটা ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন।

-বলে দাও। আমিও বলব- সকাল সকাল তুমি ছাদে গিয়েছিলে আম চুরি করতে, আমি সেটা দেখে ফেলেছি বলে তুমি এসব বলছ।

-আংকেল আন্টি অনেক ভালো তারা আপনার কথা বিশ্বাস করবে না।

-তারা তাদের ছেলের কথা বিশ্বাস না করে তোমার কথা শুনবে? এই রকম প্লাস্টিকের মগজ নিয়ে ঘুমাও কীভাবে? এই কোন ক্লাসে যেন পড়ো তুমি? নাইনে?

আলো দুটো এ্যাংরি ইমুজি দিয়ে চলে যায়। এরপর সারাদিন তার আতংকে কাটল, এই বুঝি ভাইয়া ফোন করে বকা শুরু করল। কিন্তু কী এক কারণে সেটা হলো না।

রাতে মাকে দেখল রান্নাঘরে ভীষণ ব্যস্ত। অনেক খাবারের আয়োজন চলছে। জিজ্ঞেস করলে বলল- কাল বাসায় গেস্ট আসবে, অনেক কাজ। এখন একটু গুছিয়ে না রাখলে কাল পারব না।

-কে আসবে?-

-আলিফ তোর বড় মামা মামীকে নিয়ে আসবে।

-ও… আসুক অনেকদিন হলো ওদের দেখি না।

পরদিন সকাল থেকে বাসা ভর্তি হয়ে গেল মেহমান দিয়ে। শুধু বড় মামা মামী না ছোট মামা, বড় চাচ্চু আর বড় চাচ্চুর মেয়ে আদিবা আপুও এসেছে। মা রান্না নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত, বড় মামী তাকে সাহায্য করছে। আদিবা আপু আজ আলোর বিশেষ যত্ন নিচ্ছে সেই সাথে রান্নাঘরেও যাচ্ছে। দুপুরের আগেই সবাই দ্রুত গোসল করে ভালো কাপড় পরে তৈরি হয়ে গেছে। ব্যাপারটা কী আলো ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। সে আদিবাকে বলল- আপু কী হচ্ছে বলো তো? সবাই এমন সেজে আছে কেন?

-কারা যেন দাওয়াত খেতে আসবে, তুই জানিস না কিছু?

-নাতো! আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি।

-কোন আংকেল আন্টি যেন আসবে। চাচ্চুর নাকি পরিচিত।

-ও… এমন সময় আলোর মা এসে বলল- এই আদিবা এই শাড়িটা আলোকে পরিয়ে দে তো মা। আলো অবাক হয়ে বলল-

-কী আশ্চর্য আমি শাড়ি কেন পরব?

-শাড়ি পরতে আবার আশ্চর্য হবার কী আছে?

-অবশ্যই আছে। ঝেড়ে কাশো তো মা, কী হচ্ছে আসলে? কারা আসছে? কেন আসছে?

-এত অস্থির হচ্ছিস কেন? যারা আসছে তারা তোকে দেখতে আসবে। কোন কথা না বলে যাও তৈরি হয়ে নাও। ওরা যেকোনো মুহূর্তে চলে আসবে।

-তৈরি হয়ে নাও মানে কী? এত কিছু হচ্ছে আর আমাকে কিছুই জানালে না!

-আমরা সবাই জেনেছি এটাই যথেষ্ট। কথা না বাড়িয়ে যা রেডি হ। আর হ্যাঁ, আমাদের উপর ভরসা রাখ। তোর পছন্দের বাইরে আমরাও কিছু করব না। সবাই এই প্রস্তাবটা পছন্দ করেছে। বড়রা সবাই যেটাকে সমর্থন করে সেটা বরকতময় হয় তাই চিন্তা করিস না, যা। আলো এরপর আর কিছু বলার সাহস পেল না কিন্তু তার খুব রাগ হতে লাগল, বুক ফেটে কান্না আসতে লাগল… মি. রসগোল্লাকে নিয়ে সে মনে মনে কত স্বপ্ন আঁকতে শুরু করেছিল সেগুলো সব স্বপ্নেই ঝড়ে যাবে? তূর্যর কথা কাউকে বলবে সে উপায়ও তো নেই। কারণ তূর্য তো তাকে পছন্দই করে না। সব সময় কেমন উল্টো কথা বলে পঁচায়। অথচ তূর্য তার প্রথম ভালো লাগা…

আদিবা আলোকে শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিল। আয়নার সামনে বসিয়ে বলল-

-আলো তাকিয়ে দেখ একবার তোকে কী মিষ্টি লাগছে! আলো প্রচন্ড অনিচ্ছায় একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। তাকে আসলেই খুব সুন্দর লাগছে।

-আরে অত স্যাড হচ্ছিস কেন? চাচী কী বলল শুনলি না? তোর পছন্দ না হলে কিছুই হবে না। তবে শুনেছি ছেলে নাকি খুব ভালো। ভালো ছেলেদের অত রূপ থাকা লাগে না। রূপের সাথে এডজাস্ট করে নেওয়া যায়। তবু তোর পছন্দ না হলে আমি এই প্রপোজাল ঘেটে দিব চিন্তা করিস না।

আদিবা আর আলোর কথার মাঝেই গেস্টরা সব চলে এলো। খাওয়া দাওয়ার পর পাত্র পাত্রী দেখা হবে। আদিবা এক ফাঁকে আড়াল থেকে পাত্র দেখে এসে বলল- আলো তোর কী ভাগ্যরে… এই ছেলে তো পুরাই কিলার, শুধু ভালোই না সেই হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং! আমার তো বুকে আনচান আনচান করছে। তুই মানা করে দিস আলো, এই ছেলেকে আমি বিয়ে করে ফেলি?

-তাহলে এজাজ ভাইয়ার কী হবে?

-কী আর হবে? ব্রেকাপ হবে। এক বয়ফ্রেন্ড আর কত পালব? টেস্ট নষ্ট হয়ে যায়। পরমুহূর্তেই কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল- না, সম্ভব না… ওই পাগলটা আমাকে অনেক ভালোবাসেরে… কিন্তু এই ছেলেটাও তো চোখে ফেবিকলের মত চিপকায় গেছে, কী করি এখন??? হায়রে আমার ভোলা ভালা অবলা মন…

আলো আদিবার দিকে তাকিয়ে হতাশ গলায় বলল…

চলবে…

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-২২ এবং শেষ পর্ব

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#হালিমা_চৌধুরী
#সিজন_২
#অন্তিম_পর্ব

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য ইকরাদের বাসার ছাদটা পুরো সাজানো হয়৷ ইকরা বেশ হাসিমুখে সেসব পর্যবেক্ষণ করছে। ইকরা কে এত স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে ফয়সাল মির্জা একটু অবাক হয়েছিলেন প্রথমে। পরক্ষণে তিনি সেসব ভাবনা বাদ দিয়ে কাজে মন দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিধি আর ফারিশ এসে উপস্থিত হয় সেখানে। তাদের কে মূলত ফয়সাল মির্জায় ইনভাইট করেছেন৷ শত হলেও নিধি তার মেয়ের একমাত্র বন্ধু বলে কথা! গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হতে হতে প্রায় ১২ টা বেজে যায়। সবাই হাসিমুখে ইকরার গালে হলুদ ছুঁয়ে দিচ্ছে।
**
রাত প্রায় ২ টা বাজে, ইকরার হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ হবে। সব রিলেটিভ যে যার মত ঘুমানোর জন্য রুমে চলে যায়। ফয়সাল মির্জা মেয়ের রুমের সামনে এসে দরজার কড়া নাড়ে। ইকরা তার বাবা কে দেখে হাসিমুখে ভেতরে আসতে বলে। রুমের মধ্যে নিধি,ফারিশ আর ইকরা আছে। ফয়সাল মির্জা তাদেরকে একবার ভালো করে পরখ করে বলল,

“ঘুমাচ্ছিস না যে?”

“এইতো ঘুমাবো, অনেকদিন পর নিধিকে কাছে পেয়েছি। বিয়ের পর আবার কোনদিন কাছে পাবো জানি না, তাই ইচ্ছেমতো আড্ডা দিয়ে নিচ্ছি আজকে।”

ইকরা কে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে। তা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল ফয়সাল মির্জা। তিনি মেয়ের রুম ছেড়ে যেতে নিতেই নিধি শুধালো,

“আঙ্কেল, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম।”

নিধির কথা শুনে ফয়সাল মির্জা হাসিমুখে বলল,

”হ্যাঁ মা বলো।”

“আজকে ইকুর হলুদ ছিল, অথচ ছেলের বাড়ি থেকে কেউ আসেনি। ছেলের কোনো বন্ধুও তো আসেনি।”

নিধির কথা শুনে ফয়সাল মির্জা কিছুটা হকচকিয়ে যান।

”ছেলে এসে আর কি হবে? ছেলের বাড়ির লোকজন তো কালকে আসবে।”

নিধি ফের শুধালো,

”ছেলের বাবা মায়ের সাথে কথা হয়েছে?”

“ছেলের বাবা মা কেউ বেঁচে নেই, এই শহরে ছেলেটার কেউই নেই। ছেলেটা এতিম।”

ফয়সাল মির্জার কথা শুনে নিধি ক্ষিপ্ত গলায় শুধালো,

“ভুল আঙ্কেল, কয়দিন আগে যে ফারিশকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। ফারিশের এই অবস্থা কে করেছে জানেন?”

”এসবের সাথে অয়নের কি কানেকশন?”

ফয়সাল মির্জার কথা শেষ হতেই ইকরা বলল,

“ওই অয়নই তো ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল এসব কিছুর সাথে। বাবা আমি অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসি। আমি ওই খু’নী অয়নকে বিয়ে করতে পারবো না।”

মেয়ের কথা শুনে ফয়সাল মির্জা থমকে যায়৷ বিষ্ময়ে তিনি কিছু বলতে পারলেন না আর। এর মধ্যেই নিধির ফোনটা বেজে ওঠে। নিধি ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। প্রথম বার নিধি কলটা রিসিভ করে না। দ্বিতীয় বার ফোন বেজে উঠতেই নিধি কল রিসিভ করে। নিধি কল রিসিভ করতেই অপাশ হতে ভেসে আসে অয়নের অসহায় কন্ঠস্বর,

“শুন নিধি, পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি আসলে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যই না। না জেনে আব্বার কথা শুনে তোর কতটা ক্ষতি করেছি আমি।”

কথাগুলো একদমে বলে থামে অয়ন। নিধির ফোনটা লাউডস্পিকারে দেওয়া ছিল। তাই উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হয়ে যায় অয়নের বলা কথা গুলো শুনে। নিধি কিছু বলতে যাবে তার আগেই অয়ন ফের বলল,

“নিজের ভুলটা যখন বুঝতে পেরেছি তখন তা শুধরে নেওয়ার জন্য ভেবেছি আর তোর কোনো ক্ষতি করবো না। তোর আশেপাশেও যাবো না কোনোদিন। ইকরা কে আমার প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেছে। তাই ভেবেছি ওকে বিয়ে করে একটু সুখে থাকার চেষ্টা করবো। কিন্তু কথায় আছে না, পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। তাই হয়েছে আমার সাথে। ইকরা আমাকে ফোন দিয়ে সব বলেছে, ও আমাকে বিয়ে করতে চায় না। অবশ্য বিয়ে করতে চাইবে কেনোই বা? ও তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। তাছাড়া আমার মত একটা মাস্তান কে ও কেনোই বা বিয়ে করবে! যাইহোক, আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমার পরিবারও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, ইচ্ছে করছে মরে যাই। ক্ষমা করে দিস আমায়৷ আর ইকরা কে দেখে রাখিস, ওকে সত্যিই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম৷”

বলেই কল কেটে দেয় অয়ন। উপস্থিত সবাই অয়নের কথা শুনে থমকে যায়। অয়নের কথা শুনে ফয়সাল মির্জার মাথায় হাত। তিনি অসহায় কন্ঠে বলে উঠল,

“এ কি হয়ে গেলো! কালকে বিয়ে টা না হলে আমার যে মান সম্মান কিছুই থাকবে না। আমি কি করে মেয়ের জামাই নির্বাচন করতে এতবড় ভুল করে বসলাম!”

নিধির চোখের কোনে অশ্রুরা এসে ভীড় জমায়। শত হলেও তো অয়ন তাদেরই রক্তের। তাই অয়নের জন্য একটু খারাপ লাগছে তার। ফারিশ তা বুঝতে পেরে নিধির কাঁধে হাত রেখে তাকে ইশারায় বুঝায় মন খারাপ না করতে।

“মান সম্মান যাবে কেনো বাবা? তুমি যদি বলো আমি এই মূহুর্তে তোমার জামাই কে তুলে নিয়ে আসবো?”

ইকরার কথা শুনে ফয়সাল মির্জা তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। নিধি ইকরার কথার সাথে সায় মিলিয়ে বলল,

”আঙ্কেল, ইকরা যাকে ভালোবাসে আপনি চাইলে তার সাথেই ওর বিয়ে দিতে পারেন।”

”ছেলেটা কে? কি করে?”

ফারিশ বলল,

“ছেলেটা অনেক ভালো। আমার অফিসের ম্যানেজার ও। আপনি হাসপাতালে দেখেছেন ওকে, ওর নাম পিয়াস।”

ফয়সাল মির্জা কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,

“মেয়ে সুখে থাকলে আমার কোনো আপত্তি নেই।”

ইকরার বাবার কথা শুনে সবাই জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে খুশিতে।
★★
শুক্রবার, বিকাল ৪ টা বাজে,
ইকরা-পিয়াসের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। পিয়াস বউ নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটেই উঠেছে। আর নিধিরা অনুষ্ঠান শেষ করে নিজেদের বাসায় চলে আসে। নিধি ভেনিটির সামনে দাড়িয়ে চুল বাঁধছিল। হুট করে ফারিশ এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“মাথা ব্যথা করছে বউ।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি চিন্তিত গলায় শুধায়,

“একি, মাথা ব্যথা করছে কেনো? মেডিসিন খেয়েছেন?”

নিধিকে এত চিন্তিত হতে দেখে ফারিশ তাকে আরো নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল,

“বাড়ির পাশে একটা ছোট লেক আছে, চলো না ওখানে যাই। সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে ওখানে গেলে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি হেসে ফেলল।

“ওহ তাহলে মাথা ব্যথার কারণ এটাই? চলুন তাহলে।”
.

ঘাসের উপর বসে লেকের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে নিধি। বিকেলের শেষ সময়, সূর্য প্রায় ডুবুডুবু অবস্থায়। নিধির কোলে মাথা রেখে ফারিশ ঘাসের উপর পা মেলে শুয়ে আছে। নিধি ফারিশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“ফারিশ।”

ফারিশ অকপটে জবাব দিলে,

“হু।”

“আপনি না শেষ বিকেলের মতোই সুন্দর। বিকেলের শেষ সময়টা এত্তো সুন্দর কেনো? আপনি পাশে আছেন বলে?”

ফারিশ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

“তোমার আমার প্রেম টা শেষ বিকেলের মতোই সুন্দর। এটার নাম দেওয়া যায় #শেষ_বিকেলের_প্রণয়। আমার জীবনের বাকিটা পথ আমি তোমার সঙ্গেই পাড়ি দিতে চাই।নিধি, কখনো চেয়ে যেও না আমাকে। তোমাকে কাছে পেয়ে আমি নিজেকে আবার নতুন করে গড়ে তুলতে পেরেছি। তুমি যদি কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাও তো আমি মরেই যাবো।”

“এমন কথা কক্ষনও বলবেন না। আর একবার একথা বললে কিন্তু নিজের হাতেই খু’ন করে ফেলবো আপনাকে। বিয়ে করেছি কি আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য নাকি? আপনি ছেড়ে চলে যেতে চাইলেও আমি জোর করে রেখে দিবো আপনাকে। সারাজীবন আপনার সাথে কাটাতে চাই আমি।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ হেসে ফেলে। সে নিধির কোল থেকে মাথা তুলে উঠে বসে নিধির কপালে চুমু খায়। নিধিও পরম আবেশে ফারিশকে জড়িয়ে ধরে।

❝সমাপ্ত❞

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-২১

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_২১

বৃহস্পতিবার। পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনে ঘুম ভেঙে যায় নিধির। নিধি চোখ মেলে তাকাতেই তার সামনে ফারিশের ঘুমন্ত চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে উঠে। সে একদৃষ্টিতে ফারিশের ঘুমন্ত চেহারাটার দিকে চেয়ে আছে। ফারিশের এলোমেলো চুলগুলো কপালে এসে লুটোপুটি খাচ্ছে। নিধি নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে ফারিশের চুলগুলো ঠিক করে দেয়। সে ফারিশের কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে বিছানা থেকে নামে। নিধি যেতে নিতেই ফারিশ তার হাত ধরে টান দিয়ে তাকে আবার বিছানায় ফেলে দেয়। ফারিশের কাজে নিধি হতভম্ব হয়ে যায়। নিধি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারিশ তার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল,

”হুসস, এখন বোলো না যে তুমি আমাকে ইচ্ছে করে চুমু খাওনি,আমি সব জানি। তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারলে বউ? আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে তুমি আমাকে চুমু খেতে পারলে?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে ফারিশ কে ইশারায় নিজের ঠোঁট থেকে আঙুল সরাতে বলে। ফারিশ তা বুঝতে পেরে সরে আসে। এতে যেনো নিধি হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। সে বিছানা থেকে উঠে বসে বিস্তর শ্বাস ঝেড়ে বলল,

“আপনি আসলে একটা অভদ্র! আমার বর কে আমি চুমু দিয়েছি, তাতে আপনার কি? আজব!”

বলেই নিধি রুম ছেড়ে চলে যায়। আর ফারিশ নিধির কথা শুনে মিটমিট করে হাসতে থাকে।
**
ইকরা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে পিয়াস কে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কল রিসিভ করার কোনো নামগন্ধ নেই পিয়াসের। ইকরা শেষে অধৈর্য হয়ে নিধি কে কল দেয়। কয়েকবার রিং হওয়ার পর কল রিসিভ করে নিধি। কল রিসিভ করতেই অপাশ হতে ভেসে আসে নিধির হুঙ্কার,

“এই তুই পিয়াস ভাইকে পছন্দ করিস, আমাকে তা বললে আমি কি তোরে মে’রে ফেলতাম? ছিহহহ, তুই আমারে বন্ধুই ভাবিস না। কি পাপ করলাম জীবনে যে তোর মতো একটা শয়তান বন্ধু পেলাম জীবনে। আমার তো মরে যাওয়া উচিত রে!”

একদমে কথাগুলো বলে থামে নিধি। সে থামতেই ইকরা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,

“কিছু শুরু হওয়ার আগেই সবকিছু শেষ রে নিধু। আমি আর এসব নিতে পারছি না। ইচ্ছে করছে ম’রে যাই। বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আর ওইদিকে যেই জনাব কে আমি পছন্দ করি তার কোনো হদিসও নেই।”

ইকরার কথা শুনে নিধি একটু চুপ থেকে বলল,

“কে বলেছে পিয়াস ভাই এর খবর নেই? উনি তোর জন্য আরো বেশি চিন্তা করছে। ছেলেদের কখনো কাঁদতে দেখেছিস? দেখিসনি জানি, কিন্তু কালকে পিয়াস ভাই উনাকে ফোন দিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেছিল তোর যে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বিশ্বাস কর পিয়াস ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে খুব হাসি পাচ্ছিল আমাদের।”

নিধির কথা শুনে কান্না থেমে যায় ইকরার। সে একটু অবাক হয়ে বলল,

“কি বলিস? ও কাঁদছিল আমার জন্য? কিন্তু কেনো? ও তো আমাকে আর পছন্দ করে না? আর তোরা এসব নিয়ে মজা নিচ্ছিস?”

নিধি হৃষ্ট চিত্তে শুধালো,

”হয়তো ভালোবেসে ফেলেছে। এত ভাবছিস কেনো?”

নিধির কথা শুনে ইকরা অসহায় কন্ঠে বলল,

”অবশ্য এখন ভালোবেসেই বা কি লাভ! আমার বাপ তো ওই অয়নের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। অথচ ছেলেটা কে আমি ভালো করে চিনিও না। ওকে যদি আমার সত্যিই বিয়ে করতে হয় না তাহলে আমি সু”ইসাইড করবো বলে দিলাম।”

ইকরার কথা শুনে নিধি আঁতকে উঠে। সে বলল,

“এসব উল্টাপাল্টা কথা বললে থা’প্পড় দিয়ে গালের সবকটা দাঁত ফেলে দিবো৷ তোর বন্ধু এখনো মরে যায়নি যে তোকে এখন নিজের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে৷ আর শুন ছেলেটার নাম কি বলেছিস যেনো? ওহ হ্যাঁ, অয়ন! ওর একটা পিক পাঠিয়ে দে৷ আর তোদের বাড়িতে কি কি ইভেন্ট হচ্ছে তা বলে দিস। আর শুন, একদম মুখ গোমড়া করে বসে থাকবি না। ইন্জয় কর অনুষ্ঠান টা,আর আমার উপর বিশ্বাস রাখ।”

একদমে কথাগুলো বলে থামে নিধি। নিধির কথা শুনে ইকরা একটু ভরসা খুঁজে পেলো। সে কল কেটে অয়নের একটা পিক নিধির হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করে দেয়।
★★
নিধি, ফারিশ আর পিয়াস ড্রয়িং রুমে বসে আছে। ফারিশ রাগে গজগজ করছে সোফার এককোনে বসে। ফারিশের রাগের কারণ জানে না পিয়াস। তাই সে ভয়ে ভয়ে নিধি কে জিজ্ঞেস করল,

“ও এমন অজগরের মতো গজগজ করছে কেনো নিধি?”

পিয়াসের কথা শুনে নিধি তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“ইকরা তার বরের পিক পাঠিয়েছে। দেখবেন?”

“হ্যাঁ নিশ্চয় দেখবো, যে কোন হতভাগা ছেলে এরকম বকবকে একটা মেয়েকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে আছে। কিন্তু ফারিশের রাগের কারণ কি?”

পিয়াসের কথার উত্তর না দিয়ে নিধি নিজের ফোন পিয়াসের দিকে দিয়ে বলল,

”দেখুন।”

পিয়াস নিধির ফোনের স্কিনের দিকে তাকায়। সে মুখে কিছুটা হাসি এনে বলল,

“আরে এ তো ওইদিনের ইকরার সাথের ছেলেটা। তাহলে এর সাথেই তোমার বন্ধুর বিয়ে হচ্ছে!”

পিয়াসের কথা শুনে নিধি তার কপাল চাপড়ে শুধালো,

“আরে আমার কাজিন অয়ন। ওই তো ইকুর হবু বর।”

নিধির কথা শুনে পিয়াস চেঁচিয়ে বলল,

“কিহহহহ্!”

পিয়াস থেমে ফের শুধায়,

“কিন্তু নিধি, তোমার বন্ধুর হবু বর তো আমি। তুমি কিভাবে ওই অয়ন শ্লা কে তোমার বন্ধুর হবু বর বলতে পারলে?”

পিয়াসের কথা শুনে এই সিচুয়েশনেও নিধি হো হো করে হেসে দেয়। ফারিশ এতক্ষণে মুখ খুলল,

“তুই যদি সত্যিকারে আমার বন্ধু পিয়াস হয়ে থাকিস তাহলে ওই কুলাঙ্গারের সামনে থেকে নিজের হবু বউ কে তুলে নিয়ে আয়। যা, এবার অন্তত আমার মানসম্মান টা রাখ ভাই, ওরে আমি সামনে পেলে খু’ন করবো। আমার বউয়ের পিছনে ঘুরা বাদ দিয়ে এখন আমার শালির পিছনে পড়েছে এই ব্যাটা!”

ফারিশের কথা শুনে পিয়াস ভয়ে চুপসে গিয়ে বলল,

”আমি একা কিভাবে পারবো? তোদেরও তো হেল্প চাই।”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ নিজের দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

“শ্লা, ভীতুর ডিম কোথাকার! তুই সত্যি মেহরাব ফারিশ শিকদারের বেস্টফ্রেন্ড? আমার তো এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আমার বন্ধু তো এতটাও ভীতু ছিল না কখনো!”

পিয়াস ফারিশের করা অপমান গুলো অসহায় চোখে হজম করে বলল,

“এসব মেয়েলি ব্যাপার স্যাপার আমি বুঝি না বাপু। যদি বলতিস, যা অমুক মা’স্তান কে তুলে আন, তমুক কে গিয়ে খু’ন করে আয় তাহলে আমি সাথে সাথে তা করে ফেলতাম। এসব মেয়েলি ব্যাপারে আমার প্রচন্ড ভয় জানিস না?”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ চোখ রাঙিয়ে বলল,

“কিহ্! তুই মেয়েদের ভয় পাস?”

“তা নয়তো কি? মেয়ে প্রেমিকা রুপে ডাইনি, আর বউ রুপে দজ্জাল, শাঁকচুন্নি, দানবী সবকিছু।”

পিয়াসের ভীতু কথা বার্তা শুনে ফারিশ তাকে ধমক দিয়ে বলল,

“চুপ থাক, মেয়েদের কে ভয় পায়? ওরা কি বাঘ নাকি ভাল্লুক? আমি কি তোর ভাবি কে ভয় পাই? এই নিধি আমি কি তোমাকে ভয় পাই বলো তো?”

শেষের কথা টা ফারিশ নিধির দিকে চেয়ে বলল। কিন্তু নিধি তার সব আশার মধ্যে জল ঢেলে দিয়ে তাকে ধমক দিয়ে বলল,

“আপনি চুপ করবেন ফারিশ? সেই কখন থেকে পিয়াস ভাই এর পিছনে পড়েছেন। বেচারা এমনিতেই কষ্টে আছে। আমাদের এখন সবকিছু একসাথে করতে হবে।”

নিধির ধমক খেয়ে ফারিশ নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বুঝায়, সে আর কিছু বলবে না। তা দেখে নিধি হেসে বললো,

“শুনুন সবাই, ওই অয়ন কে তো একটা শিক্ষা দিতেই হবে। তার আগে আমাদের ইকরা কে রক্ষা করতে হবে। আমি একটা প্ল্যান করেছি, যার নাম ❝বউ চুরি❞।”

নিধির কথা শুনে পিয়াস আর ফারিশ দুজনেই তার দিকে অবাক চিত্তে তাকায়। পিয়াস আর ফারিশের রিয়াকশন দেখে নিধি হেসে বলল,

“ আজ্ঞে হ্যাঁ, আপনারা যা ভাবছেন তাই। এখন হাত মিলান সবাই।”

বলেই নিধি নিজের একহাত সামনে বাড়িয়ে দেয়। ফারিশ আর পিয়াসও হাসিমুখে নিজেদের হাত বাড়িয়ে দেয়।

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-২০

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_২০

মসজিদের ইমাম, অয়ন সহ তারা ইকরাদের বাসায় বসে আছে। ফয়সাল মির্জা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন সোফায়। মসজিদের ইমাম মূলত ইকরার নামে নালিশ দিতে এসেছে তাদের বাসায়।

“ফয়সাল সাহেব, আপনার মেয়ে রাস্তাঘাটে ন’ষ্টামি করে বেড়ায়। আপনি কি নিজের মেয়ের একটু খোঁজও রাখতে পারেন না নাকি?”

ইমামের কথা শুনে ফয়সাল সাহেব লজ্জায় মাথা নোয়াল। তিনি মাথা নিচু করেই বললেন,

“দেখুন ছোট মানুষ, ওর ভুল হয়ে গেছে। আমি ওকে সাবধান করে দিবো এসব যাতে আর কখনো না করে। আপনি প্লিজ ওকে মাফ করে দিন।”

ফয়সাল মির্জার কথা শুনে ইমাম সাহেব কিছুক্ষণ ভাবলেন। তিনি ছোট শ্বাস ফেলে বলল,

“এরকম মেয়েকে এলাকাতে রাখলে আমাদেরই ক্ষতি। আজ ও করেছে ওসব। কাল আরেকজন করবে। এরকম করে আমাদের বাচ্চা রা কি শিখবে? আপনি যতদ্রুত সম্ভব আপনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিন।”

ইমাম সাহেবের কথা শুনে নিধি হতবুদ্ধি হয়ে কপাল কুঁচকালো। সে কিছু বলবে তার আগেই অয়ন চট করে বলে বসল,

“আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আসলে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। আমরা খুব শিগগিরই বিয়ে করবো।”

অয়নের কথা শুনে ইকরা হতভম্ব হয়ে যায়। সে কিছু বলতে নিবে তার আগেই তার বাবা তাকে ইশারায় চুপ করতে বলেন।

“তাহলে তো হলোই, ফয়সাল সাহেব, আপনি দ্রুত আপনার মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করুন। আমরা দাড়িয়ে থেকে আপনার মেয়ের বিয়ে দিবো।”

ইমাম সাহেবের কথা শুনে অয়ন মুচকি হেসে বলল,

“আপনি যা বলবেন তাই হবে।”

অয়নের কথা শুনে মুচকি হেসে তাদের কে বিদায় দিয়ে চলে যায় ইমাম সাহেব। ইমাম চলে যেতেই ইকরা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। তা দেখে অয়ন তাকে সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।

“উনার কথায় তুমি কিছু মনে কোরো না ইকরা। যেভাবেই হোক না কেনো, আমাদের বিয়ে টা তো ঠিক হয়ে গেছে। তুমি আপাতত আমাদের বিয়ে নিয়ে ভাবো।”

অয়নের সাথে ফয়সাল মির্জাও সায় দিয়ে বলল,

“হ্যাঁ মা, অনেক হয়েছে। তুই এবার বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নে।”

ফয়সাল মির্জার কথা শুনে ইকরা অবাক চিত্তে তার দিকে তাকায়।

“তুমি একটা ছেলে কে চিনো না, কোথাকার কে কি বললো না বললো তুমি সেসব বিশ্বাস করে এখন তার সাথে আমার বিয়ে দিবে?”

ইকরার কথা শুনে হাসেন ফয়সাল মির্জা।

“তোকে কে বলেছে আমি অয়ন কে চিনি না? তোর থেকেও আমি ভালো করে অয়নকে চিনি। ওর সঙ্গে আমার আগেই কথা হয়ে গেছে। যাকগে সেসব তোকে ভাবতে হবে না।”

ইকরা তার বাবার কথা শুনে চেঁচিয়ে বলল,

“কিন্তু বাবা, আমি বিয়ে করতে চাই না।”

“আমি কি তোর মতামত জানতে চেয়েছি?”

বলে ফয়সাল মির্জা অয়নের দিকে তাকিয়ে ফের শুধালো,

“তুমি নিশ্চিন্তে বিয়ের আয়োজন করতে পারো। বিয়ে শুক্রবারেই হচ্ছে।”

ফয়সাল মির্জার কথা শুনে অয়ন হাসিমুখে তাদের বিদায় দিয়ে চলে যায়। ইকরা রেগে কান্না করতে করতে রুমে চলে যায়।
**
রাত প্রায় ১০ টা বাজে,
নিধি গুটিগুটি পায়ে হেঁটে ছাদে প্রবেশ করে। ছাদে এসে নিধি ভয়ে আঁতকে উঠে। পুরো ছাদ অন্ধকার হয়ে আছে। সন্ধ্যায় ফারিশ নিধির হাতে একটা নীল রঙের শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল রাত দশটায় ছাদে চলে আসতে৷ নিধি আর কি করবে, ফারিশের কথামত শাড়ি পরে ছাদে চলে এসেছে। কিন্তু কোথাও ফারিশ কে দেখতে পাচ্ছে না সে। হঠাৎ একটা অবয়বের শীতল একজোড়া হাত এসে নিধির কোমর জড়িয়ে ধরে তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। অকস্মাৎ আক্রমণে নিধি ভয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে। ফারিশ আগের ন্যায় নিধিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে তার ঘাড়ে নিজের মুখ গুঁজে বলল,

“ভয় পাচ্ছো কেনো জান?”

নিধি এখনো ভয়ে কাঁপছে। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

“ভেবেছিলাম ভূত এসেছে।”

নিধির ভয়ার্ত চেহারা আর তার বোকা বোকা কথা শুনে ফারিশ হো হো করে হাসতে থাকে৷ সে নিজের হাসি থামিয়ে বলল,

“মেহরাব ফারিশ শিকদার তার বউ এর আশেপাশে ভূত কেনো একটা মশাকেও ঘেঁষতে দিবে না। মেহরাব নিধি শিকদারের সবটা জুড়ে শুধু এই বখাটে বাউণ্ডুলেটারই অস্তিত্ব থাকুক। আর কারো নয়।”

“অথচ একটু আগেও একটা মশা এসে আমাকে কামড়ে গেছে৷”

নিধির কথা শুনে ফারিশ অসহায় কন্ঠে বলল,

“তুমি তো আমাকে সুযোগ দেও না তোমাকে কিস করার জন্য। তাই দূর থেকে মশাকে দিয়ে উড়ন্ত চুমু পাঠিয়েছি তোমার জন্য। তাই আমার কথামতো মশাটা এসে তোমাকে কিস করে গেছে।”

ফারিশের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় নিধি। সে ফারিশের কথা শুনে হাসবে নাকি কাঁদবে তা ভুলে গেছে।

“আপনাকে সুযোগ দেওয়া লাগে? হুটহাট এসেই তো চুমু খান, অসভ্যের মত।”

“তুমি আমাকে অসভ্য বলতে পারলে বউ?”

“বলতে পারবো না কেনো? আপনি সব করতে পারবেন, আর আমি বললেই দো..”

নিধি পুরো কথাটা সমাপ্ত করতে পারে না, তার আগেই ফারিশ নিধির ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। হঠাৎ ফারিশের করা কাজে নিধি থমকে যায়। পরক্ষণে ফারিশের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে সে। ফারিশ নিধি কে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে আসে। ফারিশের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে নিধি হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। সে কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,

“আপনি, আপনি একটা অভদ্র।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ ঠোঁটে বাঁকা হাসি বজায় রেখে বলল,

“অসভ্য বলবে, আর অসভ্যর মত কাজ করলেই দোষ? এ কোন দুনিয়ায় বসবাস করছি আমি!”

“চুপ থাকুন আপনি, ড্রামা কুইন কোথাকার।”

”কুইন হবে না বউ, ড্রামা কিং হবে।”

“ওই একই তো।”

“এক নয় বউ, এখানে আমার ইজ্জতের উপর প্রশ্ন তুলেছো তুমি। এটা আমি কিভাবে মেনে নিবো?”

“আচ্ছা ভাই৷ ড্রামা কিং, হয়েছে?”

বলেই নিধি অভিমানে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। ফারিশের আর বুঝতে বাকি নেই তার বউজান যে তার উপর রেগে গিয়েছে। ফারিশ ছাদের লাইট অন করে নিধির সামনে এসে দাড়ায়। সে হাতে একটা রিং নিয়ে নিধির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,

“বউ, হুটহাট তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার মত স্বাধীনতা চাই আমি। তীব্র মন খারাপের সময় তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই৷ জ্বরের ঘোরে তোমার উষ্ণতায় নিজেকে মুড়িয়ে নিতে চাই আমি। এসব মেনে কি তুমি এই অভদ্র কে নিজের করে নিবে? ভালোবাসবে আমায়?”

ফারিশের প্রপোজ করার স্টাইল দেখে ফিক করে হেসে ফেলল নিধি। সে ফারিশের দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“বিয়ে যখন হয়েই গেলো, তখন অভদ্রটা কে তো মেনে নিতেই হবে।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ মুচকি হাসে। সে নিধির আঙুলে রিং পরিয়ে চুমু খায় তাতে।

“শাড়িতে প্রথম দেখলাম তোমাকে। একদম বউ বউ লাগছে তোমাকে। ইচ্ছে করছে…..। ”

বাকিটা বলে না ফারিশ, সে থেমে যায়। তা দেখে নিধি বলল,

“থেমে গেলেন যে?”

“বলবো না, তুমি লজ্জা পাবে।”

ফারিশের কথার প্রতিত্তোরে নিধি আর কিছু বলে না। সে ফারিশের একবাহু জড়িয়ে ধরে আকাশের পানে চেয়ে বলল,

“আজকে আকাশের চাঁদটা একটু বেশিই সুন্দর তাই না?”

“আকাশের চাঁদের চেয়ে আমার ব্যাক্তিগত চাঁদ টা বেশি সুন্দরী। তোমার সৌন্দর্যের কাছে ওই দূর আকাশের চাঁদ টা তো কিছুই না।”

বলেই ফারিশ নিধিকে নিজের কাছে টেনে নেয়। ফারিশ নিধির কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়াতে নিতেই তার পকেটে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে।

“রোমান্টিক মূহুর্তে কোন শালা রে কল দিলো! ওর নামে তো মামলা করতে হবে।”

বলতে বলতে ফারিশ নিজের পকেট হাতড়ে ফোন বের করে। পিয়াস কল করেছে দেখে ফারিশ একটু অবাক হয়। তাই সে আর দেরি না করে কল রিসিভ করে বলল,

“আপনাকে মেডেল দেওয়া উচিত মিস্টার পিয়াস।”

ফোনের অপর পাশ হতে পিয়াস শান্ত কন্ঠে বলল,

“কেনো? কি দোষ করলাম আমি?”

“বিয়ের পর বুঝবি, যাই হোক কল করেছিস কেনো?”

“ শুক্রবারে ইকরার বিয়ে।”

অয়নের অসহায় কন্ঠে বলা কথাটি শুনে ফারিশ হতভম্ব কন্ঠে বলল,

“হোয়াট!”

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১৯

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১৯

বিকেল বেলা,
নিধি ফারিশদের বাসার সামনের বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখছে।

“তোমার সাথে কিছু কথা ছিল নিধি।”

হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনে নিধি চমকে পিছনে ঘুরে তাকায়। নিধি নিজের সামনে পিয়াস কে দেখে একটু অবাক হয়।

“কি কথা? বলুন।”

“এখানেই বলবো? ফারিশও থাকলে হতো আরকি।”

পিয়াসের কথা বুঝতে পেরে নিধি তাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে যায়। পিয়াসকে ড্রয়িং রুমে বসতে বলে নিধি রুমে যায় ফারিশ কে ডাকতে।
নিধি রুমে এসে দেখে ফারিশ ঘুমাচ্ছে। নিধি কয়েকবার ডাকার পরেও তার ঘুম ভাঙে না। শেষে নিধি আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে পাশে থাকা টি-টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে কিছুটা পানি ফারিশের মুখে ছুঁড়ে মারে সে। নিধির করা কাজে ফারিশের ঘুম মূহুর্তের মধ্যেই পালিয়ে যায়। সে নিজের মাথা থেকে পানি মুছতে মুছতে নিধিকে ধমক দিয়ে বলল,

“কি হচ্ছে টা কি?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি সিরিয়াস হওয়ার ভাণ করে বলল,

“অনেক কিছু হয়ে গেছে বর।”

ফারিশ বুঝে গেছে নিধি যে তার সাথে মজা করেছে। তাই সে বিছানার পাশে থাকা টি-টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে নিধির মাথায় ঢেলে দেয় পুরো গ্লাসেে পানি। ফারিশের কাজে নিধি পুরো হতভম্ব হয়ে যায়। সে চেঁচিয়ে বলল,

“আরে বিছানা পুরো ভিজে গেছে। আপনি কি পাগল নাকি ফারিশ? এখন রাতে আমি ঘুমাবো কি করে?”

ফারিশ নিধির দিকে কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে বলল,

“নারী-পুরুষের সমান অধিকার এটা কি তুমি ভুলে গেছো বউজান?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি গাল ফুলিয়ে বলল,

“এই ক্ষেত্রে সমান অধিকারের কথা আসছে কেনো?”

“আমি মনে করি সবদিক দিয়েই নারী পুরুষের সমান অধিকার হওয়া উচিত। প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রেও।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

“ আপনি যদি কোনো স্কুলের টিচার হতেন তাহলে আপনার স্টুডেন্টদের ভবিষ্যৎ ব্ল্যাক কালার হতো। ভাঙ্গ্যিস টিচার না হয়ে আমার বর হয়েছেন। নাহলে দেশের স্টুডেন্ট গুলোর যে কি হতো কে জানে!”

নিধির কথা শুনে ফারিশ হো হো করে হাসতে থাকে। তা দেখে নিধি ফের বলল,

“পিয়াস ভাইয়া এসেছে, কিছু কথা বলার আছে নাকি। তাই ডাকতে এসেছি আপনাকে। নাহলে আমার অতো ইচ্ছে ছিল না আপনাকে ডাকতে আসার।”

নিধির কথা শুনে ফারিশের হাসি থেমে যায়। ফারিশ নিধির কাছে কিছুটা এগিয়ে আসতে নিতেই নিধি আচমকা ছুট লাগালো। নিধির কাজে ফারিশ হতভম্ব হয়ে যায়। সে চেঁচিয়ে বলল,

“কোথায় আর যাবে তুমি বউজান, রাতে তো সেই আমার বুকেই তোমাকে ফিরতে হবে। যেমনটা পাখিরা তার নীড়ে ফিরে সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বেই।”

কিন্তু কে শুনে কার কথা, নিধি তো মুহূর্তের মধ্যেই ছুটে পালিয়ে গেছে। তাকে আর ভাগে পায় কে!
***
পিয়াস ড্রয়িং রুমে বসে বসে ফোন টিপছে। ফারিশ কে সেখানে আসতে দেখে সে কিছুটা নড়েচড়ে বসে। ফারিশ পিয়াসের কাছে এগিয়ে এসে তার পিঠে আলতো থাপ্পড় দিয়ে বলল,

”কিরে, ভুলেই তো গিয়েছিস। হুট করে এলি বললি না তো।”

ফারিশের কথা শুনে পিয়াস হেসে বলল,

“তোকে ভুলি কি করে, জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত টা নেওয়ার আগে তোর বাড়ি এলাম চলে এলাম।”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশের পূর্ণ দুষ্টি ঘুরে এলো তার উপর। সে বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল,

”কি হয়েছে বল, আমি তো শুনার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”

ফারিশের কথা শুনে পিয়াস অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলতে শুরু করল,

“একটা মেয়ে, যে কি না আমাকে ভালোবাসে। সে সোজা বিয়ে করতে চায়। সে আমাকে প্রপোজ করেছে। এখন কি করা উচিত আমার?”

”কি আর করবি? রাজি হয়ে যা, বিয়ের দাওয়াত পাই না অনেকদিন হলো।”

ফারিশদের কথার মাঝে নিধি এসে উপস্থিত হয় সেখানে। সেও যোগ দেয় তাদের কথার মধ্যে।

“ফারিশ আমি মজা করছি না, সিরিয়াসলি বলছি। কি করবো আমি?”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ সিরিয়াস হয় এবার। সে পিয়াস কে ভালো করে একবার পরখ করে নিয়ে বলল,

”নিজের মনের কথা শুন এক্ষেত্রে। জীবনসঙ্গী বানাতে অন্যের মতামত কে গুরত্ব না দিয়ে নিজের মন কি বলে সেটাকে গুরত্ব দেওয়া উচিত। ওই মেয়েটার ক্ষেত্রে তোর মন কি বলছে?”

ফারিশের কথা শুনে পিয়াস চট করে বলে বসল,

”মেয়েটা ভালো, কিন্তু আমি কি তার যোগ্য?”

”মেয়েটার বাড়ি কোথায়?”

ফারিশের প্রশ্নে পিয়াস নিধির দিকে কিছুটা ভয়ে তাকিয়ে বলল,

“তুই চিনিস ওকে, নিধির ফ্রেন্ড ইকরা।”

পিয়াসের কথা শুনে নিধি চেঁচিয়ে বলল,

“কিইইই? ইকরা আপনাকে প্রপোজ করেছে! কই ওই হারামি তো আমাকে কিছু বলেনি।”

নিধিকে এত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে দেখে পিয়াস কিছুটা অবাক হয়।

“আমি ঠিক করেছি হ্যাঁ বলে দিবো উনাকে। আর কতকাল একা থাকবো আমি। কিন্তু সমস্যা হলো, আমার বাবা মা কেউ নেই, বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে। এমন একটা পরিবারে কে মেয়ে বিয়ে দিবে?”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ তার মাথায় গাট্টা দিয়ে বলল,

“দিবে না কেনো রে? আমার বন্ধুর কি কম যোগ্যতা নাকি? দেখতে হ্যান্ডসাম, কোনোদিক দিয়ে কেউ তোকে হারাতে পারবে না।”

ফারিশের কথা শুনে পিয়াস মাথা চুলকে বলল,

”বেশি হয়ে যাচ্ছে না?”

নিধি পিয়াস কে থামিয়ে বলল,

“কিচ্ছু বেশি হচ্ছে না, আমরা যাবো ইকরার বাড়িতে আপনার বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে।”

এসব নানারকম কথা নিয়ে ❝সুখনিবাসে❞ আড্ডা চলতে থাকে তাদের।
★★
সূর্য প্রায় ডুবুডুবু অবস্থা। চারিদিকে মাগরিবের আজানের কলধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ইকরা বিষন্ন হৃদয় নিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। সে ছটফট করছে পিয়াসের কথা ভেবে। সে কি আদৌও রাজি হবে নাকি তাকে রিজেক্ট করবে এসব ভেবে। হঠাৎ তার নজর পড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা বাইকের উপর। বাইকে বসে ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইকরা সেদিকে তাকাতেই ছেলেটা তাকে ইশারায় হাই দেয়। ইকরা ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে ভালো করে তাকাতেই আঁতকে উঠে সে। বাইকের ছেলেটা আর কেউ নয় স্বয়ং অয়ন দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। সে অয়নের দিকে আবারো তাকায়, অয়ন তাকে ইশারায় বাসার নিচে আসতে বলে। ইকরা কি করবে ভেবে না পেয়ে বাসার নিচে যায়। ইকরা কে আসতে দেখে অয়ন তার দিকে এগিয়ে এসে হাসি মুখে বলল,

“কেমন আছো ইকরা?”

ইকরা তেজী কন্ঠে শুধালো,

”কি চাই এখানে? কেনো এসেছেন এখানে?”

ইকরার কথা শুনে অয়ন মুচকি হেসে বলল,

“যদি বলি তোমাকে চাই, তবে তুমি হবে কি আমার?”

অয়নের কথা শুনে ইকরা ভ্রু কুঁচকে বলল,

“কিসব আবোলতাবোল বকছেন? ঠিক করে বলবেন কি হয়েছে?”

ইকরার কথা শুনে অয়ন তার দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে বলল,

“ পৃথিবীর সবকিছু বুঝে নারী, কিন্তু পুরুষের মনের কথা বুঝতে পারে না এরা।”

“কোন কবি বলেছে এটা ভাই? আমি তো সারাজীবন শুনে এসেছি ছেলেদের মনে কি আছে না আছে এসব মেয়েরা তাদের চোখের দিকে তাকালেই বুঝে যায়।”

ইকরার কথা শুনে অয়ন নিজের মাথা চুলকে বলল,

“অতো কিছু জানি না, আমার ক্ষেত্রে এটা ভিন্ন এটা জানি।”

”আপনার সাথে কথা বলে কাজ নেই। এই ভরসন্ধ্যা বেলা এখানে কি করছেন আপনি?”

অয়নের সোজাসাপটা স্বীকারোক্তি,

“চাঁদ দেখতে এসেছি।”

অয়নের কথা শুনে ইকরা তার দিকে বোকা চোখে তাকিয়ে বলল,

“আপনাদের আকাশে কি চাঁদ উঠে না নাকি? কি সব অদ্ভুত কথা বলছেন এসব!”

ইকরা ফের বলল,

“যাইহোক, এই ভরসন্ধ্যা বেলায় আমাকে কেউ এখানে দেখলে সমস্যা হয়ে যাবে। আপনি চাঁদ দেখেন, আমি গেলাম।”

বলে ইকরা চলে যেতে নিতেই অয়ন পিছন থেকে তার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে ইকরাকে। এতে ইকরা অপ্রস্তুত হয়ে যায় কিছুটা। পরক্ষণে কি হয়েছে তা বুঝতে পেরে অয়নের থেকে ছুটার চেষ্টা করে সে। ইকরা কিছু বলবে তার আগেই কেউ একজন বলে উঠল,

“ভরসন্ধ্যা বেলায় যুবক-যুবতী মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছো। বাসায় গিয়ে করতে পারো না এসব। নাকি বাসার কেউ জানে না এসব নষ্টামির কথা?”

আকস্মিক কারো মুখে এসব কড়া কথা গুলো শুনে হতভম্ব চোখে সামনে তাকায় ইকরা। মসজিদের ইমাম দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে। অজানা এক ভয় এসে ঘিরে ধরে ইকরাকে।

চলবে?