Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 119



শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১৬

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১৬

বেলা নয়টা,
অয়নের বাইক এসে থামে একটা কফিশপের সামনে এসে। এতে ইকরা ভয় পেয়ে যায় কিছুটা। সে নিজেকে সামলে নিয়ে বাইক থেকে নেমে অয়নকে ভয়ে ভয়ে বললো,

“আমরা এখানে এসেছি কেনো?”

ইকরার কথা শুনে মুচকি হাসে অয়ন। সে কিছুটা নরম গলায় বলল,

“তুমি আমার প্রান বাঁচিয়েছ, তাই তোমাকে তো ছোটখাটো একটা ট্রিট দেওয়াই যায় তাই না?”

অয়নের কথা শুনে ইকরা হাসার চেষ্টা করে বললো,

“না মানে আগে বলবেন তো, আসলে আমার একটা কাজ ছিল৷ হুট করে না বলে এখানে নিয়ে এলেন!”

ইকরার কথা শুনে অয়নের মুখটা ছোট হয়ে যায়, তবুও সে মুখে জোর করে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল,

“স্যরি, এখন যখন চলেই এসেছি তখন এক কাপ কফি অন্তত খেতে পারি তাই না?”

অয়নের কথার জবাব দেয় না ইকরা, তার প্রচন্ড রাগ হয় পিয়াসের উপর। কারণ পিয়াস যদি তাকে রেখে না যেতো তাহলে তো আর অয়নের মুখ দেখতে হতো না তাকে। তাই তার সমস্ত রাগ গিয়ে পিয়াসের উপর পড়ে।

“নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ, চলুন তাহলে।”

বলেই অয়ন কফিশপের ভিতরে চলে যায়। ইকরাও বাধ্য হয়ে অয়নের পিছুপিছু কফিশপের ভিতরে যায়।
***
নিজের কেবিনে বসে বসে ফাইল চেক করছিল পিয়াস, হুট করে তার ফোনটা বেজে উঠে। এই অসময় ফোন বেজে উঠাতে প্রচন্ড বিরক্ত হয় সে। চরম বিরক্তি নিয়ে ফোন হাতে নিয়ে পিয়াসের সমস্ত বিরক্তির রেশ কেটে গেলো। অভ্র কল দিয়েছে, যে কিনা তার কাজিন মহলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু /ভাই। তাই সে আর দেরি না করে কলটা রিসিভ করল। কল রিসিভ করতেই অপর পাশ হতে বেসে আসে অভ্রর গলা,

“কিরে ভাই, কল ধরতে এতক্ষণ লাগে তোর? মাইয়া লইয়া বিজি নাকি মামা?”

অভ্রর কথা শুনে হেসে ফেলে পিয়াস, সে নিজের কন্ঠ কিছুটা গম্ভীর করে বলল,

“তোর মত আমার কি সেই সুযোগ আছে নাকি যে মাইয়া লইয়া রঙ্গ করবো৷ তুই উড়তাছোস, তুইই উড়। আমার পিঠে আর জোর করে ডানা লাগানো লাগবে না তোর। আমার উড়ার ইচ্ছে নেই মামা।”

পিয়াসের কথা শুনে অভ্র কিছুটা মজার সুরে বলল,

“তা তুমি ছ্যাঁকা খেয়ে কি বাঁকা হয়ে গেছো নাকি?”

অভ্রর কথা শুনে পিযাসের নিধির কথা মনে পড়ে যায়। আদৌও সে কি সত্যিই ছ্যাঁকা খেয়েছে নাকি? সে তো নিধি কে কখনো বলতেই পারেনি, সে যে নিধিকে ভালোবাসে।

“কিরে চুপ করে আছিস যে?”

অভ্রর কথা শুনে হুশ ফিরে পিয়াসের। সে অসচেতন কন্ঠে বলল,

“হু? হ্যাঁ বল শুনছি তো।”

পিয়াসের কথা শুনে অভ্র কড়া কন্ঠে তাকে আদেশ দিয়ে বলল,

“হু হা বাদ দিয়ে কফিশপে চলে আয়। জমিয়ে আড্ডা দিবো সবাই মিলে। অনেক পালিয়ে থেকেছিস আমাদের থেকে, আজকে আর তোকে ছাড় দিতে পারবো না৷ সো নো এক্সকিউজ। সোজা কফিশপে চলে আয়, আমি তোকে লোকেশন টা টেক্সট করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

একদমে কথাগুলো বলে কল কেটে দেয় অভ্র। আর পিয়াস অসহায়ের মত টেবিলের উপর জমা ফাইলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
**
কফিশপে পৌঁছে পিয়াস অভ্রকে কল করে। সে কল কানে নিয়ে অভ্রর সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে ডুকছিল। কিন্তু বিপত্তি সৃষ্টি হয় তখনই, যখন সে একটা মেয়ের সাথে ধা’ক্কা খায়। মেয়েটার সাথে ধা’ক্কা খেতেই পিয়াসের হাত থেকে ফোন নিচে পড়ে যায়। ইকরা পিয়াস কে না দেখেই তাড়াতাড়ি নিচ থেকে ফোন উঠিয়ে পিয়াসের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“স্যরি স্যরি, আসলে আমি দেখিনি।”

বলেই পিয়াসের দিকে তাকাতেই সে থতমত খেয়ে যায়। পিয়াস ও একটু অবাক হয় ইকরা কে এই মূহুর্তে কফিশপে দেখে। তাকে আরো অবাক করে দিয়ে ইকরার পাশে এসে অয়ন দাড়ায়। সে অদ্ভুত চোখে ইকরা আর তার পাশে দাড়িয়ে থাকা অয়ন কে ভালো করে পরখ করে বললো,

“ভালো মানিয়েছে।”

পিয়াসের কথা ইকরা বুঝতে না পারলেও অয়ন মিটমিট করে হাসে। তা দেখে পিয়াস বিরক্ত হয় প্রচুর, সে ইকরার হাত থেকে নিজের ফোন টা নিয়ে ওদের পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে যায়।
**
রাত ৮ টা বাজে, ফারিশের হাসপাতালের আজকে তৃতীয় দিন। আজকে তাকে রিলিজ দেওয়া হবে,তাই সে প্রচুর খুশি। পিয়াস গাড়ি নিয়ে এসেছে তাদেরকে নেওয়ার জন্য। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে তারা ফারিশের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। এক ঘন্টার মধ্যেই পিয়াসদের গাড়ি এসে থামে একটা বিলাসবহুল বাড়ির সামনে। বাড়ির নাম ❝সুখনিবাস❞। গাড়ির মধ্যে থেকেই বাড়ির নামটা দেখে নজর কাড়ে নিধির। সে নিজের মনে একবার বাড়ির নামটা উচ্চারণ করলো। পিয়াস গাড়ি থামায়, ফারিশ গাড়ি থেকে নেমে অপরপাশে এসে গাড়ির দরজা খুলে দেয় নিধির জন্য। নিধি বাধ্য মেয়ের মত গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। নিধি গাড়ি থেকে নেমে পুরো বাড়িটা একবার পরখ করে নেয় ভালো করে। দোতলা একটা বাড়ি, বাড়ির সামনের একপাশে একটা ফুলের বাগান করা। নানান রঙের ফুল ফুটে আছে সেখানে। নিধির ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে বাগান থেকে একটা ফুল ছিঁড়ে কানে গুঁজতে। কিন্তু নিজের ইচ্ছে কে সেখানেই মাটিচাপা দিয়ে দেয় সে। নিধি পিয়াস আর ফারিশের পিছুপিছু হেঁটে বাড়ির ভিতরের দিকে যায়। ফারিশ বাড়ির ভিতরে ডুকে সদর দরজার সামনে এসে দাড়ায়। নিধি বাহিরে দাড়িয়ে। ফারিশ নিধির দিকে তাকিয়ে মাথা টা একটু নিচু করে বললো,

“সুখনিবাসে স্বাগতম তোমাকে।”

ফারিশের করা কাজে হেসে ফেলে নিধি।

“নতুন বউকে কোলে করে রুমে নিয়ে যা ফারিশ, এটাও কি আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে নাকি আজব!”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ লাজুক হেসে বলল,

“তবে তাই হোক।”

“এই না না, আমাকে কোলে নিতে হবে না। আপনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ না স্যার।”

নিধির কথা শুনে পিয়াস বিষ্ময়কর নজরে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

“স্যার!”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ অসহায় কন্ঠে বলল,

“কি আর করবো ভাই, অন্যদের বউরা তাদের বরকে ভালোবেসে বাবু, জান, কলিজা, ফুসফুস বলে ডাকে। আর আমার বউয়ের মুখে স্যার ডাক শুনতে শুনতেই মনে হয় জীবন শেষ হয়ে যাবে আমার। এই দুঃখ আমি কাকে বলি বল তো!”

ফারিশের সাথে পিয়াসও সায় দিয়ে বলল,

“হ্যাঁ নিধি, এটা মানা যাচ্ছে না। বরকে স্যার ডাকা যাবে না।”

দুজনের কথা শুনে নিধি ছোট করে জবাব দেয়,

“আচ্ছা।”

নিধির কথা শেষ হতে দেরি ফারিশ তাকে কোলে তুলে নিতে দেরি হয় না। সে নিধিকে কোলে তুলে নিয়ে পিয়াস কে বলল,

“যা যা বলেছি সবকিছু কি ডান?”

পিয়াস ফারিশ আর নিধি কে একবার দেখে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“হু, আচ্ছা যাই আমি।”

বলেই পিয়াস চলে যায়। ফারিশ নিধি কে কোলে করে নিজের রুমে আসে, পুরো রুমটা অন্ধকার। নিধি ভয় পেয়ে ফারিশের শার্ট খামচে ধরে রেখেছে। ফারিশ নিধিকে কোলে করে বিছানায় এনে বসিয়ে দিয়ে সে রুমের লাইট অন করে দেয়। রুমের লাইট অন করতেই অবাক হয়ে যায় নিধি। পুরো রুমটা খুব সুন্দর করে ফুলে সজ্জিত। সে অবাক হয়ে ফারিশের দিকে তাকাতেই সে এসে নিধির পাশে বসে। নিধির গলা থেকে তার ওড়নাটা ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় ফারিশ। সে সযত্নে ওড়নাটা দিয়ে নিধির মাথায় ঘোমটা দিয়ে দেয়। সে নিধির কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়। ফারিশের করা কাজে নিধি লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে যেতেই ফারিশ হেসে ফেলে।

“তোমাকে একদম লজ্জাবতী বউ এর মত লাগছে ফুল! ইচ্ছে করছে নিজের বুকপকেটে সাজিয়ে রাখি এই ফুলটা কে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি লাজুক হেসে বলল,

“আপনি চাইলে এই ফুলকে আপনার মনে সাজিয়ে রাখতে পারেন। এই ফুলটা শুধু আপনার জন্যই জন্ম নিয়েছে, অন্য কারো সাধ্য নেই এই ফুলকে ছোঁয়ার।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে নিজের সাথে আগলে নেয়।

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১৫

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১৫

সকাল সকাল ইকরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্য। কালকে রাতে নিধির সাথে কথা না বলেই চলে আসতে হয়েছে তাদের। তাই আজকে আবার হাসপাতালে যাচ্ছে প্রিয় বন্ধুর বিপদে তাকে একটু সঙ্গ দেওয়ার জন্য। হাসপাতালের নিচে এসে দাড়াতেই পিয়াসের সাথে দেখা হয় ইকরার। সে পিয়াস কে দেখেই হাসিমুখে ডাক দেয় তাকে। ইকরার ডাক শুনে থেমে যায় পিয়াস, সে বাসা থেকে সরাসরি হাসপাতালে এসেছে ফারিশকে একবার দেখে যাবে বলে। কিন্তু এখানেও যে ইকরা চলে আসবে ভাবেনি সে।

“কি ব্যাপার, চুপ করে আছেন যে?”

ইকরার কথা শুনে হুশ ফিরে পিয়াসের। সে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে একবার ইকরা কে ভালো করে পরখ করে নেয়।

“চুপ করে থাকবো না তো কি আপনার মত অযথা উল্টাপাল্টা বকবক করে যাবো নাকি?”

বলে আর এক মুহূর্তও দাড়ায় না পিয়াস, সে হনহন করে হাসপাতালের ভিতরে চলে যায়। আর ইকরা বোকার মত পিয়াসের যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে শুধু,সে কিছুই বুঝতে পারলো না পিয়াসের এমন ব্যবহার করার কারণ।
**
ফারিশ ঘুমাচ্ছে, তারপাশেই নিধি বসে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পিয়াস প্রবেশ করে কেবিনে। পিয়াস কে দেখে নড়েচড়ে বসে নিধি।

“কিছু লাগবে নিধি? ফারিশ এখন কেমন আছে? কবে রিলিজ দিবে ওকে?”

পিয়াসের একটানা এতগুলো প্রশ্নের জবাব দিতে হিমশিম খেয়ে যায় নিধি। পিয়াসের কথার মাঝেই ইকরাও এসে পৌছায় সেখানে। ইকরাকে একবার দেখে তার থেকে চোখ সরিয়ে নেয় পিয়াস।

“ফারিশ ঘুমাচ্ছে, বাহিরে গিয়ে কথা বলি চলো।”

পিয়াসের সঙ্গে সায় দিয়ে নিধি আর ইকরা কেবিন থেকে বাহিরে বের হয়ে আসে।

“ফারিশ এখন ঠিক আছে তো নিধি?”

“মোটামুটি ঠিক আছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে বেশ কয়েকটা দিন তো লাগবে।”

পিয়াসের কথা থামতেই ইকরা প্রশ্ন করে বসে,

“কে করেছে এসব? কি হয়েছে কেউ আমাকে একটু বল না প্লিজ!”

ইকরার কথা শুনে নিধি তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“সে অনেক কাহিনী, আমার কাজিন… যাইহোক, তোকে পরে সময় করে সবকিছু বলবো।”

নিধির কথা শুনে চুপ করে যায় ইকরা, সে আর কিছু বলে না। পিয়াস আর নিধি কথা বলতে ব্যাস্ত তাদের মত। তা দেখে ইকরা বলল,

“আচ্ছা যাই আমি, নিজের খেয়াল রাখিস তুই।”

ইকরার কথা শুনে নিধি তার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলল,

“চলে যাবি? আঙ্কেল আসেনি? একাই যাবি?”

“হু, একাই যাবো৷ ড্যাড অফিসে।”

“একা যেতে হবে না, পিয়াস ভাইয়াও তো অফিসে যাবে। তুই বরং উনার সাথে চলে যা।”

নিধির কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় পিয়াস, সে কিছুতেই আর এই মেয়ের সাথে কোথাও যাবে না বলে ঠিক করেছে! অথচ নিধি আবার এই মেয়ে কে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে! এটা ঠিক সে হজম করতে পারল না।

“কি হলো ভাইয়া, দিয়ে আসতে পারবেন ওকে?”

নিধির কথা শুনে হুশ ফিরে পিয়াসের। সে মুখে জোরপূর্বক হাসি বজায় রেখে বলল,

“হ্যাঁ হ্যাঁ, পারবো না কেনো? আমি তো সরকারি ড্রাইভার, যে বলবে তাকেই সাহায্য করবো।”

শেষের কথা টা বিড়বিড় করে বলে পিয়াস, যার কারণে ইকরা বা নিধি কেউ শুনেনি কথাটা। তাই নিধি বলল,

“আচ্ছা যা তাহলে, বাসায় গিয়ে ফোন দিস।”

নিধিকে বিদায় দিয়ে চলে যায় ইকরা আর পিয়াস।

রাস্তায় এসে ইকরা আর পিয়াসের মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগে যায়। ঝগড়ার মূল কারণ হলো ইকরা।

“আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো একটা মেয়ের সাথে?”

“তো কিভাবে কথা বলবো? আপনারা বাবা মেয়ে একটু বেশিই বুঝেন। কালকে অযথা আপনি আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছেন। আপনার সাথে কথা বলতেই তো আমার রুচিতে বাঁধছে।”

প্রথম সবগুলো কথা মেনে নিলেও শেষ কথা টা শুনে ইকরার চোখ ছলছল করে উঠে। তার সাথে কথা বলতে রুচিতে বাঁধছে, এটা ভাবতেই গা শিউরে উঠে তার। সে নিজের চোখের পানি মুছে বলল,

“আপনাকে কি আমি বাধ্য করেছি আমার সাথে কথা বলতে? যাই হোক, ভালো থাকবেন।”

বলেই ইকরা পিয়াস কে রেখেই হাঁটা ধরলো। পিয়াসও সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে পড়ল অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্য।
**
ফারিশের ঘুম ভাঙতেই সে আশেপাশে নিধি কে খুঁজে, কিন্তু কোথাও সে নিধির দেখা পায় না। বেডে শুয়েই কয়েকবার সে নিধি কে ডাকে, কিন্তু নিধির কোনো সাড়াশব্দ পায় না সে। নিধিকে কেবিনের কোথাও না দেখে ফারিশ নিজে নিজে উঠে বসে। সে বেড থেকে নামতে যেতেই পড়ে যেতে নেয়, কিন্তু সে পড়ে যাওয়ার আগেই একজোড়া হাত তাকে সযত্নে আগলে নেয়। ফারিশ কে সুন্দর করে বেডে বসিয়ে নিধি তাকে ধমকের সুরে বলল,

“এই আপনাকে না বলেছি একা না উঠতে। আর আপনি কি সুন্দর একা তো উঠে বসেছেনই আবার নামতেও গিয়েছেন, দিন দিন সাহস দেখছি বেড়েই যাচ্ছে আপনার। এখন যদি আমি না আসতাম তাহলে কি হতো বলুন তো, কেয়ারলেস কোথাকার।”

একদমে কথাগুলো বলে থামে নিধি। আর ফারিশ পুরোটা সময় নিধির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল৷ নিধি কে থেমে যেতে দেখে ফারিশ শান্ত চোখে নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,

“কি হলো, থেমে গেলে যে? আর কিছু বলার নেই?”

ফারিশের কথা শুনে ভড়কে যায় নিধি, রাগের মাথায় কতকিছু বলে ফেলেছে এই রাগী মানব কে তা ভাবতেই ভয় পেয়ে যায় নিধি। তাই সে মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে বলল,

“না মানে, আপনি একা কোথায় যাচ্ছিলেন?”

“বউকে খুঁজতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সে তো চলে এসেছে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি নিজের হাতে থাকা ঔষধ দেখিয়ে বলল,

“ঔষধ আনতে গিয়েছিলাম।”

নিধির কথা কানে নেয় না ফারিশ, সে নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমাকে বাড়ি যেতে দিবে কখন?”

ফারিশের কথা শুনে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় নিধি।

“বাড়ি গিয়ে কি করবেন?”

“বাড়ি গিয়ে কি করবো মানে? আমার হানিমুন, বাসর সবকিছুই তো বাকি আছে এখনো।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি লজ্জায় মিইয়ে যায়।

“আপনার মুখে যে লাগাম নেই তা জানা ছিল না।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ মুচকি হেসে বলল,

“এতদিন তো বাউণ্ডুলে বস মেহরাব ফারিশ শিকদার কে দেখে এসেছো, এখন তুমি বর মেহরাব ফারিশ শিকদার কে দেখবে।”
______________
ইকরা রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে রিক্সার জন্য, কিন্তু অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পরও সে কোনো খালি রিক্সা পায় না। ইকরা আর কোনো উপায় না পেয়ে হাঁটা শুরু করল। হঠাৎ তার সামনে একটা বাইক এসে জোরে ব্রেক কষে। ইকরা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতেই ছেলেটা বাইক থেকে নেমে এসে হাসিমুখে বলল,

“আরে তুমি সেই না, আমাকে যে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলে?”

নিজের চোখের সামনে অয়ন কে দেখে কিছুটা অবাক হয় ইকরা। সে মুচকি হেসে বলল,

“আরেহ্, কেমন আছেন আপনি? পৃথিবীটা গোল আবারো প্রমানিত হলো, এতবড় একটা শহর, অথচ আমাদের আবারো দেখা হয়ে গেলো!”

ইকরার কথা শুনে হাসে অয়ন।

“তা হেঁটে হেঁটে কোথায় যাচ্ছেন?”

অয়নের কথা শুনে ইকরা অসহায় কন্ঠে বলল,

“আরে আর বলবেন না, একটা রিক্সাও খুঁজে পাচ্ছি না যে বাসায় যাবো। তাই হেঁটে একটু সামনে যাচ্ছি যদি একটা রিক্সা পাই আরকি!”

ইকরার কথা শুনে অয়ন বললো,

“আমার সাথে চলো, আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসছি।”

অয়নের কথা শুনে ভড়কে যায় ইকরা, সে ব্যাস্ত গলায় বলল,

“আরে লাগবে না, আমি রিক্সা পেয়ে যাবো।”

“আরে চলো, সেদিন তুমি আমার এত বড় একটা উপকার করেছো। তোমার জন্য তো আমি এটুকু করতেই পারি।”

“না প্লিজ পরে…। ”

ইকরার কথার মাঝপথেই তাকে অয়ন থামিয়ে বলল,

“না করতে পারবে না, তুমি সেদিন না থাকলে আমি হয়তো মরেই যেতাম। প্লিজ, তোমাকে সাহায্য করার একটা সুযোগ তো দাও আমাকে!”

অয়নের এত জোরাজুরি ফেলতো পারলো না ইকরা। সে রাজি হয় অয়নের সাথে যেতে। তাই সে বাইকে উঠে বসে। তা দেখে অয়ন বাঁকা হেসে বাইক স্টার্ট দেয়।

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১৪

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১৪

নার্সের কথা শুনে বেশ ঘাবড়ে যায় পিয়াস। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে নার্স কে আবারো জিজ্ঞেস করল,

“কি হয়েছে বলুন না প্লিজ।”

“আম সো স্যরি স্যার, সি ইজ নো মোর।”

নার্স এর কথা শুনে পিয়াসের বুক কেঁপে ওঠে। সে কি বলবো ভেবে পাচ্ছে না।

“কি বলছেন এসব! ফারিশের কিছু হতে পারে না৷”

পিয়াসের কথা শুনে নার্স কপাল কুঁচকে তাকায় তার দিকে।

“ফারিশ তো একজন ছেলের নাম, ওয়েট ওয়েট। আপনাদের রুগী কোন ওটি তে আছে সেটা আগে ঠিক করে বলুন তো।”

নার্সের কথা শুনে হুস ফিরে পিয়াসের। সে চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে তব্দা খেয়ে যায়। পায়চারি করতে করতে সে অন্য একটা ওটির সামনে এসে দাড়ায়।

“স্যরি স্যরি, মিস্টেক হয়ে গেছে।”

পিয়াসের কথা শুনে নার্সটা অদ্ভুত ভাবে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলল,

“এতবড় ছেলে, অথচ হি আর সি এর মধ্যের তফাত জানে না।”

বলেই নার্সটা চলে যায়। এদিকে নার্সটার কথা শুনে পিয়াস লজ্জা পেয়ে যায় খানিকটা। তার আগেই বুঝা উচিত ছিল যে নার্স কেনো ❝সি ইজ নো মোর❞ বলেছে। নিজের করা বোকামির জন্য নিজেই লজ্জায় নুইয়ে পড়ে।
***
রাত প্রায় দশটা বাজে, ইকরা আর তার বাবা হতদন্ত পায়ে হেঁটে হাসপাতালে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর ইকরা পিয়াসের দেখা পায়। সে পিয়াস কে ইশারায় ডাক দিতেই সে এসে হাজির হয়।

“নিধির কি হয়েছে? ও ঠিক আছে তো?”

ইকরা কে দেখে পিয়াসের বিকালের ঘটনাটা মনে পড়ে যায়।

“চলুন।”

বলেই পিয়াস হাঁটা শুরু করলো, পিয়াসের এমন আচরণে ভড়কে যায় সে। তবুও কিছু না বলে পিয়াসের পিছন পিছন হাঁটা শুরু করল সে। পিয়াস হাসপাতালের একটা কেবিনের সামনে এসে দাড়ায়। ইকরার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে নিধি ভিতরেই আছে, তাই সে আর দেরি না করে তড়িঘড়ি করে কেবিনের ভিতরে ডুকে তব্দা খেয়ে যায়। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে ফারিশ, তারপাশেই নিধি বসে আছে। নিধিকে দেখে ইকরা আঁতকে উঠে, মেয়েটার মুখটা শুকিয়ে কি অবস্থা হয়ে গেছে! ইকরা নিধির কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে।

“কোথায় ছিলি নিধু? কত্তো ভয় পেয়েছি জানিস? এভাবে হুট করে কোথায় উধাও হলি তুই?”

ইকরা কে এভাবে কাঁদতে দেখে নিধির চোখেও পানি চলে আসে। সে কিছু বলতে পারল না। হঠাৎ কেবিনে একজন নার্স প্রবেশ করে সবাই কে ধমকের সুরে বলল,

“এখানে এতো মানুষ কেনো? সর্বোচ্চ একজন থাকতে পারবেন রুগীর সাথে। বাকি সবাই বের হোন, রুগী এখন ঘুমাচ্ছে, কেঁদে কেটে তাকে ডিস্টার্ব করবেন না।”

নার্সের ধমক শুনে ইকরার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। সত্যি তারা অনেকজন আছে এখানে, পিয়াস সে তার বাবা আর নিধি। এতজন থাকলে ফারিশের তো ডিস্টার্ব হবেই। তাই নিধি কেবিনে থাকে, আর বাকিরা বের হয়ে যায়। পিয়াস করিডরে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে। তা দেখে ইকরার আব্বু ইকরা কে ফিসফিস করে বলল,

“দেখ কেমন অভদ্র ছেলে, মুরব্বি দাড়িয়ে আছে। অথচ ওই ছেলে কি সুন্দর নাচতে নাচতে চেয়ার টেনে বসে পড়ল।”

ইকরা তার বাবার কথা শুনে বিরক্ত হয় প্রচুর, সে বিরক্তিভরা কন্ঠে বলল,

“বাবা, আরো কত চেয়ার পড়ে আছে, তুমি বসো না। কে বারণ করেছে তোমাকে? শুধু শুধু দোষ খুঁজছো কেনো? আমরা এখানে রুগী দেখতে এসেছি, পাত্র দেখতে আসিনি।”

ইকরার কথা শুনে তার বাবার মুখটা ছোট হয়ে আসে। তিনি আর কিছু না বলে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। তিনি পিয়াস কে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলল,

“তা ছেলে, কি করো তুমি?”

ইকরার বাবা ফয়সাল মির্জার মুখে হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে যায় পিয়াস।

“জ..জি জব করি।”

“তা তো জানি, কিন্তু কি জব করো?”

“জি শিকদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ম্যানেজার।”

“ভালো ভালো। তা কয় ভাই বোন?”

ফয়সাল মির্জার একের পর এক প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হয়ে যায় পিয়াস। সে বিরক্তিভরা কন্ঠে বললো,

“এক বোন, আর আমি।”

“বাসা কোথায়?”

পিয়াস আর ধৈর্য ধরে রাখতে না পেরে বলেই ফেললো,

“কি করবেন আঙ্কেল? আপনার প্রশ্ন করার ভাব দেখে মনে হচ্ছে পাত্র দেখতে এসেছেন আপনি!”

পিয়াসের কথা শুনে কিছুটা অপমানিত বোধ করে ফয়সাল মির্জা। তিনি থমথমে কন্ঠে বললেন,

“আমার কোনো ইচ্ছে নেই আমার মেয়েকে তোমার সাথে বিয়ে দেওয়ার। অভদ্র ছেলে কোথাকার।”

বলেই ফয়সাল মির্জা উঠে অন্যদিকে চলে যায়। এদিকে তার বলা কথা শুনে তব্দা খেয়ে যায় পিয়াস। সে নিজের মনে বিড়বিড় করে বললো,

“আজব! আমি কখন বললাম তার মেয়ে কে আমি বিয়ে করবো! যেমন বাপ তার তেমনই মেয়ে। দুই লাইন বেশি বুঝা পাবলিক।”
★★
রাত প্রায় একটা বাজে,
ফারিশের ঘুম ভাঙতেই নিজের পাশে নিধিকে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় সে। তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে পড়তেই অয়নের প্রতি ক্রোধে ফেটে পড়ে সে। এদিকে ফারিশের নড়েচড়ে উঠার শব্দ শুনে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। ফারিশ কে জেগে যেতে দেখে সে ব্যাস্ত গলায় বললো,

“ঠিক আছেন আপনি? কিছু লাগবে? বলুন আমাকে?”

নিধির কথা কানে যায় না ফারিশের, সে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে নিধির পানে চেয়ে আছে।

“দুনিয়াতে খুব কম মানুষই আমাকে নির্স্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছে। সেই খুব কম মানুষের মধ্যে মনে হচ্ছে তুমিও আছো। তোমার চোখ বলছে তুমি আমাকে ভালোবাসো। এই ভালোবাসার মধ্যে কোনো স্বার্থ দেখছি না আমি।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, সে কি বলবে খুজে পাচ্ছে না। তাই ফারিশ ফের বলল,

“আ’ম সো স্যরি বউ, তোমাকে এভাবে একা রেখে যাওয়া উচিত হয়নি আমার। এই পাগল টা কে ক্ষমা করে দিয়ো প্লিজ।”

গম্ভীর শক্ত মনের মানুষ কে হুট করে এতটা নরম কন্ঠে কথা বলতে দেখে কিছুটা অবাক হয় নিধি।

“এসব বলবেন না প্লিজ, আপনি আমার জন্য যা করেছেন তা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। আমার কোনো আত্মীয় এগিয়ে আসেনি আমাকে একটু স্বান্তনা দেওয়ার জন্য। সেখানে আপনি দিনরাত আমার সঙ্গ দিয়েছেন, আমাকে আগলে রেখেছেন।”

“আমার দায়িত্ব তোমাকে আগলে রাখা, যত্ন নেওয়া। সে জায়গায় তো আমি কিছুই করতে পারিনি তোমার জন্য। আজ যদি আমি মরে যেতাম তাহলে কতটা আক্ষেপ নিয়ে মরতে হতো আমাকে যে, আমি আমার বউ কে আগলে রাখতে পারিনি শত্রুদের থেকে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলল,

“চুপ, এসব অলুক্ষণে কথা আর বলবেন না। আপনাকে হারাতে পারবো না আমি। আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে ফেলেছি আমি, কিন্তু আপনাকে হারাতে পারবো না আমি।”

নিধির করা কাজে ফারিশ মুগ্ধ নয়নে অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সেটা বুঝতে পেরে নিধি বলল,

“তাকিয়ে আছেন কেনো?”

নিধির কথা শুনে ফারিশ ইশারায় বুঝায় তার মুখ থেকে হাত সরাতে। নিধি তা বুঝতে পেরে কিছুটা লজ্জা পেয়ে হাত সরিয়ে ফেলে।

“স্যরি।”

“লজ্জা পেলে তো তোমার মুখটা একদম লাল টমেটোর মত হয়ে যায়। ইচ্ছে করছে টুপ করে খেয়ে ফেলি।”

ফারিশের মুখে হুট করে এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় নিধি। সে অবাক চিত্তে ফারিশের দিকে তাকিয়ে আছে।

“এভাবে তাকিও না জান, মরেই তো যাবো আমি।”

“কে বলবে যে আপনি অসুস্থ, এই অবস্থায় কেউ এসব বলে? অদ্ভুত!”

নিধির কথা শুনে ফারিশ নিজের বুকের বাঁ পাশে হাত দিয়ে বলল,

“আহ্, বুকে বড্ড ব্যথা গো জান।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি ব্যাস্ত হয়ে তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,

“কই কোথায় ব্যথা? ডক্টর ডাকবো?”

নিধির কথা শেষ হওয়ার আগেই ফারিশ নিধির গালে টুপ করে চু’মু খায়। এত নিধি পুরো থমকে যায়। নিধি কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারিশ ফের বলল,

“আমার দেওয়া প্রথম চু’মু, এখন অসুস্থ দেখে ছাড় দিলাম। সুস্থ হতে দাও, তারপর বুঝবে মেহরাব ফারিশ শিকদার কতটা….. থাক আর বললাম না, তুমি লজ্জা পাবে।”

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১৩

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১৩

নিধিকে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ফারিশের পিছনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অয়নের দলের সবাই হো হো করে হাসতে থাকে। তা দেখে ফারিশের মেজাজ বিগড়ে যায়।

“এইডা রে দুনিয়া থেকে ওপারে পাঠাতে তো মাত্র দুমিনিট লাগবে আমার।”

বলেই একটা লোক নিজের শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে ফারিশের দিকে এগিয়ে আসে। তা দেখে ফারিশ নিধি কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে চাপা কন্ঠে বলল,

“নিধি, তুমি চলে যাও এখান থেকে। আমি দেখছি এদের।”

“আমি যাবো না, চলুন না একসাথে পালাই। এরা অনেক সাংঘাতিক লোক। আমার ভয় লাগছে, চলুন না যাই আমরা।”

“আরে, ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। ওরা আমার কিছু করতে পারবে না। আমার তো তোমাকে নিয়ে ভয়, ওরা তোমার না কোনো ক্ষতি করে পেলে! তাই প্লিজ আমার কথা শুনো, যাও এখান থেকে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ফারিশ কে এদের মধ্যে একা ছেড়ে যাওয়ার কথা সে কল্পনাও করতে পারবে না। নিধি কে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশ তাকে মৃদু ধমক দিয়ে বলল,

“যা বলছি তাই করো, নাহলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। যাও এখান থেকে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি বাধ্য হয়ে হাঁটা ধরলো। নিধি কে চলে যেতে দেখে অয়ন দুষ্ট হেসে বলল,

“আরে পাখি, তুই যাচ্ছিস কোথায়? তোর সাথে যে এখনো আমার অনেক হিসাব বাকি আছে, এভাবে আমাকে একা রেখে চলে গেলে হবে?”

অয়নের কথা শুনে ফারিশ রক্তিম চোখে তার দিকে তাকায়। সে আর রাগ সহ্য করতে না পেরে অয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে সজোরে একটা ঘু’ষি দিয়ে বলল,

“কি চাই তোর? আর একবার যদি আমার বউ এর দিকে তোকে কুনজর দিতে দেখি তো তোর চোখ খুলে আমি মারবেল খেলবো বলে দিলাম।”

ফারিশের কথাকে কানে না নিয়ে অয়ন অট্টহাসিতে মেতে ওঠে।

“মারবেল খেলার বয়স আছে এখনো তোর?”

বলেই অয়ন নিধির দিকে এগিয়ে গিয়ে তার হাত চেপে ধরে তাকে নিয়ে যেতে যেতে নিজের দলের অন্য সব লোকদের বলল,

“ওকে মেরে লা’শটার এমন বিভৎস অবস্থা করবি যে একটা কুকুরও ওর লা’শ দেখে যেনো ভয়ে কেঁপে ওঠে।”

বলেই অয়ন নিধির হাত ধরে তাকে জোর করে নিয়ে যেতে নেয়। ফারিশ নিধির অন্য হাত ধরে অয়ন কে বলল,

“ওর হাত ছাড়, নাহলে কিন্তু খারাপ হবে বলে দিলাম। এতক্ষণ চুপ করে ছিলাম বলে ভাবিস না আমি ভিতু।”

ফারিশের কথা শুনে অয়ন ভয় পেয়েছে এমন ভাব করে বলল,

“হায়, কি বলিস এসব। আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।”

বলেই অয়ন অট্টহাসিতে মেতে ওঠে। সে হাসি থামিয়ে ফের বলল,

“কি করবি তুই আমার? শা’লা আসছে আমার এলাকাতে মাতব্বরি করতে! চল হুট এখান থেকে।”

অয়নের কথা শেষ হতে না হতেই সে ছিটকে নিচে গিয়ে পড়ে, ফারিশ নিধির হাত শক্ত করে ধরে বলল,

“মেহরাব ফারিশ শিকদার যেহেতু এই ফুলের হাত একবার ধরে ফেলেছে তাহলে সেই হাত আর কক্ষনও ছাড়বে না সে। আর এই ফুলের গায়ে যে আঁচড় দিতে আসবে তাকে খু’ন করে ফেলবো আমি। মাইন্ড ইট!”
***
শহর জুড়ে অন্ধকার নেমে এসেছে, চারিদিকে মাগরিবের আজানের কলধ্বনি শোনা যাচ্ছে। পিয়াস আর ইকরা নিরবে রিক্সায় বসে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। নিরবতা ভেঙে ইকরা বলল,

“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

“জানি না।”

পিয়াসের হেয়ালি কন্ঠস্বর শুনে ইকরার মেজাজ বিগড়ে যায়। সে পিয়াস কে শাসিয়ে বলল,

“অ্যাই,কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে এই রাতের বেলা? কি হচ্ছে টা কি?”

ইকরার কথা শুনে বিরক্ত হয় পিয়াস। সে বিড়বিড় করে বলল,

“এই অশান্ত মেয়ের বান্ধবী কি করে যে নিধি হলো কে জানে!”

“কিছু বলেছেন?”

ইকরার কথা শুনে পিয়াস কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,

“হ্যাঁ বলেছি তো, পাশেই একটা পার্ক আছে। সেখানে যাচ্ছি আপনার সাথে প্রাইভেট সময় কাটানোর জন্য।”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরার ভিষণ রকম ভয় পায়। তবুও নিজের দাপট বজায় রেখে কিছুটা রেগে বলল,

“সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তোদের শরীরের জ্বালা ধরে যায়? অসভ্য কোথাকার।”

কথাগুলো বলে থামে ইকরা, সে দম নিয়ে ফের বলল,

“এই মামা, রিক্সা থামান তো।”

ইকরার কথা শুনে রিক্সা থামায় চালক। ইকরা আর রিক্সায় বসে না থেকে হনহন করে নেমে পড়ে রিক্সা থেকে। আর পিয়াস হতভম্ব হয়ে ইকরার কান্ড গুলো দেখলো শুধু। ”আমরা দুজন তো এসেছি ফারিশদের খুঁজতে, তাহলে এই মেয়ে এত্তোগুলো কথা বলেছে কেনো আমাকে? নিশ্চয় মাথার তাঁর ছিঁড়া আছে।”

কথাগুলো নিজের মনে আওড়াল পিয়াস। ইকরার কথাগুলোতে সে কষ্ট পেয়েছে কিছুটা। হুট করে ইকরার প্রতি একরাশ অভিমান এসে জমা হয় তার মনে। তীব্র মনে কষ্ট নিয়েই সে রিক্সাওয়ালাকে বলল,

“এই মামা, চলুন তো আপনি। ওই মেয়ে জাহান্নামে যাক। আমার কি?”
***
অয়ন কে আঘাত করাতে তার দলের সবাই এসে ফারিশ কে ঘিরে ধরে। ফারিশ আর নিধি সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই একসাথে ফারিশ কে আক্রমণ করতে থাকে, নিধি একপাশে জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে। সবার একসাথে করা আক্রমণ সামলাতে না পেরে ফারিশ মারাত্মক ভাবে আহত হয়। রাস্তায় মারামারি দেখে পুলিশের গাড়ি এসে থামে সেখানে। পুলিশ কে দেখে সবাই এদিক ওদিক পালাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। পুলিশের লোকেরা অয়নের লোকদের চাড় না দিয়ে গ্রেফতার করে, তা দেখে অয়ন ঘাবড়ে যায়। পুলিশের নজর এখনো তার দিকে আসেনি। সে সুযোগ বুঝে নিজের পকেট থেকে পি’স্তল বের করে ফারিশের দিকে তাক করে। সবার নজর যখন অন্য মা’স্তান দের দিকে, সেই সুযোগে অয়ন ফারিশের দিকে গু’লি ছুড়ে। গু’লিটা সোজা গিয়ে ফারিশের বুকে লাগে। মূহুর্তের মধ্যেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তা দেখে নিধি দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেলে। আর পুলিশ অয়নের পিছু নেয় তাকে ধরার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই পিয়াস এসে পৌঁছায় ঘটনা স্থানে। সে এসে ফারিশের এই অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। নিধি পিয়াসের সাহায্যে ফারিশকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
**
ফারিশকে OT তে নেওয়া হয়েছে, পিয়াস করিডোরে পায়চারি করছে। নিধি কান্নায় ভেঙে পড়েছে। নিধির কান্না দেখে পিয়াসের বড্ড খারাপ লাগছে। মেয়েটা কয়েকদিন আগে মা কে হারিয়েছে, এখন আবার তার জীবনসঙ্গীর এই অবস্থা। সে কিভাবে নিধিকে সামলাবে ভেবে পাচ্ছে না। সে নিজের মনে বিড়বিড় করে বলল,

“ওই অশান্ত মেয়েটা থাকলেও তো নিধি কে সামলাতে পারতো। ইশ, মেয়েটা এত কাঁদছে কেনো! আমার যে ওর কান্না সহ্য হয় না।”

কথাগুলো বলে পিয়াস নিধির দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। সে আর সাতপাঁচ না ভেবে নিজের ফোন বের করে ইকরা কে কল দেয়। কয়েকবার রিং হওয়ার পর কল রিসিভ করে ইকরা। সে থমথমে গলায় বলল,

“কে বলছেন?”

ইকরার কথা শুনে পিয়াস নিজের ভয়েস কিছুটা থমথমে করে বলল,

“চিনবেন না, আপনার বান্ধবী ****** এই হাসপাতালে আছে। তার অবস্থা অনেক খারাপ। আপনি তাকে দেখতে চাইলে চলে আসুন।”

বলেই কল কেটে দেয় পিয়াস। পিয়াস ফোন পকেটে রেখে আবারো পায়চারি করছে করিডোরে, কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন নার্স বের হয়ে আসে ওটি থেকে, পিয়াস দৌড়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল,

“আ..আমার বন্ধুর কি খবর এখন? সব ঠিকঠাক আছে তো?”

পিয়াসের কথা শুনে নার্সটা তার দিকে নিষ্প্রাণ চোখে তাকিয়ে বললে,

“আ’ম সো স্যরি স্যার।”

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১২

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১২

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো আকাশে। বাহিরে তুমুল বেগে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, ফারিশের গাড়ি এসে থামে ছোট একটা গ্যারেজের সামনে। ফারিশ পার্কিং লটে গাড়ি রেখে রাস্তায় এসে দাড়ায়, তার আর শরীরে শক্তি নেই গাড়ি ড্রাইভ করার মত। সে অসহায় ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারিশ আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,

“কোথায় তুমি নিধি! আমার যে দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার ফুল টা কে ছাড়া! কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি?”

ফারিশের চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে, কিন্তু বৃষ্টির কারণে বুঝা যাচ্ছে না সে যে কাঁদছে। ফারিশ মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় বসে ডুকরে কেঁদে উঠে।
**
ইকরার মুখ থেকে সব ঘটনা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় পিয়াস, নিধির জন্য তার বুকটা ধক করে উঠে। যতোই নিধি ফারিশের বউ হোক না কেনো, নিধি তো তার প্রথম ভালোবাসা ছিল। হয়তো সে নিধি কে কখনো নিজের করে পাবে না, কিন্তু সে ভালোবাসে তো। আর সে মানে ভালোবাসলেই তো নিজের করে পেতে হবে এমন কোনো নিয়ম নয়। বরং ভালোবাসা দূর থেকেই সুন্দর।
পিয়াস কে এভাবে গভীর ভাবনার দেশে পাড়ি জমাতে দেখে ইকরা হতাশ হয়। সে পিয়াস কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,

“কি হলো, কিছু বলছেন না কেনো?”

ইকরার কথা শুনে হুশ ফিরে পিয়াসের, সে তড়িঘড়ি করে পকেট থেকে ফোন বের করে ফারিশ কে ফোন দেয়। বেশ কয়েকবার কল দেওয়ার পরও কল রিসিভ করে না ফারিশ। এবার পিয়াস বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

“ফারিশ তো কলও ধরছে না।”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরা কিছু একটা ভেবে বলল,

“এককাজ করুণ, ভাইয়ার ফোন নাম্বার স্ট্রেস করে লোকেশন ট্রাক করুন।”

প্রথমবারের মত ইকরার কথা শুনে বিরক্ত হয় পিয়াস। সে কপাল কুঁচকে রেখেই বলল,

“আপনার কথা আপনার মতোই যুক্তিহীন। আমি কিভাবে ওর লোকেশন ট্রাক করবো? এসব কি আমার কাজ?”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরার মুখটা চুপসে যায়। সে আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ অন্যদিকে হাঁটা শুরু করে। তা দেখে পিয়াস ঘাবড়ে যায় কিছুটা। পিয়াস দৌড়ে ইকরার পিছু নিয়ে বলল,

“আরে কোথায় যাচ্ছেন?”

পিয়াসের কথা কানে গেলেও জবাব দেয় না ইকরা, সে নিজের মত করে হাঁটতে ব্যাস্ত। ইকরা কে থামানোর আর কোনো উপায় না পেয়ে পিয়াস দৌড়ে ইকরার সামনে গিয়ে তার হাত চেপে ধরে বলল,

“এভাবে ছেড়ে গেলো পাবো কি করে?”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই পিয়াস নিজের মাথা চুলকে মিনমিন করে বলল,

“আই মিন, ফারিশ আর নিধিকে পাবো কিভাবে সেটাই বলেছি।”

“হাত ছাড়ুন।”

ইকরার কথা শুনে হুশ ফিরে পিয়াসের, সে ইকরার হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলল,

“স্যরি।”

“ইটস ওকে।”

দুজনেই চুপচাপ রাস্তার এককোনায় দাড়ায়, কিছুক্ষণের মধ্যে পিয়াস একটা রিক্সা দাঁড় করায়।

“চলুন।”

বলেই পিয়াস রিক্সায় উঠে বসে, ইকরা এখনো বুঝতে পারছে না পিয়াসের মতলবটা ঠিক কি? তাই সে আগের ন্যায় রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।

“আরে আসুন না, ওদের খুঁজতেই তো যাচ্ছি।”

“ আপনার গাড়ি থাকতে এই রিক্সাতে কেনো?”

“কেনো? একসাথে রিক্সায় বসতে সমস্যা আছে নাকি?”

“সমস্যা নেই, তবে লোকে কি বলবে?”

ইকরার কথা শুনে পিয়াস বোকা চোখে ইকরার দিকে তাকিয়ে আছে।

“লোকে কি বলবে? আমরা কি প্রেমিক-প্রেমিকা নাকি যে লোকজনে কিছু বলবে? আর কত হাজার হাজার ছেলেমেয়ে রিক্সায় করে দিব্যি চলছে, সাথে রিক্সায় বসে চুমুও খায়৷ কই তাদের তো লজ্জা লাগে না।”

পিয়াসের কথা শুনে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায় ইকরা। সে আর কোনোকিছু না বলে রিক্সায় উঠে বসে।

“পড়ে যাবেন তো, সুন্দর করে বসুন। আরে মেয়েটা কত ভয় পায়, আমরা তো ভাইবোনের মত, তাই না?”

পিয়াসের কথা শুনে হোঁচট খায় ইকরা। তারা ভাই বোন?
★★
অয়ন নিধিকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিতেই নিধি ভয় পেয়ে যায়। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, নিধি ভয়ার্ত চোখে চারিদিকে তাকায়। বিছানার পাশেই একটা ছোট ভেনেটি আছে, তার উপরে কয়েকটা পারফিউম,আর সাজার জন্য কয়েকটা মেক-আপ আইটেম। নিধি আর কোনোকিছু না ভেবেই ভেনেটির উপর থেকে পারফিউম নিয়ে অয়ন এর চোখে স্প্রে করে। মূহুর্তের মধ্যেই অয়ন যন্ত্রনায় চিৎকার দিয়ে উঠে। এই সুযোগে নিধি দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসে। রাস্তায় বের হতেই নিধি বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে যায়। তবুও সে আর দাড়িয়ে না থেকে অন্ধকারের মধ্যে দিয়েই দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ নিধি বলিষ্ঠ দেহের কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে যায় নিচে। তীব্র ভয়ে হাত পা কাঁপছে নিধির। হঠাৎ তার চোখে আলো পড়তেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে সে।

“নিধি!”

হঠাৎ পরিচিত কন্ঠে উচ্চস্বরে নিজের নাম শুনে চমকে যায় নিধি, সে চোখ খুলে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে যায়। নিজের সামনে চিরচেনা পরিচত ব্যাক্তিটিকে দেখে নিধি উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। ফারিশ নিধি কে নিজের সাথে আগলে নেয় সাবধানে। সে নিধির চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল,

“কান্না করে না বোকা মেয়ে, তোমার বর চলে এসেছে তো। আর কাঁদতে হবে না তোমাকে।”

ফারিশের কথা শুনেও কান্না থামে না নিধির, সে ফারিশের শার্ট খামচে ধরে ফোপাঁতে থাকে। ফারিশ নিধি কে নিজের কাছে পেয়ে যেনো নিজের শরীরের শক্তি ফিরে পেয়েছে। নিধি কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে ফারিশ তার চুলে মুখ গুঁজে বলল,

“মেহরাব ফারিশ শিকদারের বউ কান্না করবে না, প্রতিবাদ করবে। কি হয়েছে খুলো বলো আমাকে?”

নিধি আগের ন্যায় ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল,

“অয়ন ভাই আমার সাথে…. ”

আর কিছু বলতো পারলো না নিধি, তার গলা ভেঙে আসছে। মুখ দিয়ে যেনো কথা বের হচ্ছে না তার। এদিকে অয়নের নাম শুনেই ফারিশের মেজাজ বিগড়ে যায়। সে শক্ত হাতে নিধি কে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিধির হাত চেপে ধরে বলল,

“চলো।”

“ককোথায়?”

নিধির কথার জবাব দেয় না ফারিশ, সে নিধির হাত চেপে ধরে সামনে হাটতে থাকে। অজানা ভয়ে নিধি আড়ষ্ট হয়ে যায়। কে জানে কি হবে এখন, অয়ন আর ফারিশ সামনাসামনি এলে যেকোনো একজনের যে র’ক্ত জড়বে সেটা নিধির খুব ভালো করেই জানা আছে। হঠাৎ তাদের সামনে অয়ন এসে দাড়ায়। অয়নকে নিজের সামনে দেখে ফারিশের নিজের মধ্যে থাকা সমস্ত রাগ ক্ষোভ গুলো যেনো জাগ্রত হয়ে উঠেছে। সে নিধির হাত ছেড়ে দিয়ে অয়নের কলার চেপে ধরে বলল,

“তোর সাহস হয় কি করে আমার ফুলকে কষ্ট দেওয়ার? তোর জন্য আমার ফুল কেঁদেছে আজ, তোকে তো আমি খু’নই করে ফেলবো আজ।”

বলেই ফারিশ অয়নের গালে সজোরে একটা ঘু’ষি মারে। তবুও শান্ত হয়নি ফারিশ, সে অয়ন কে টেনে নিয়ে তার বুকের ওপর লা’থি দেয়, এতে টাল সামলাতে না পেরে অয়ন নিচে ছিটকে পড়ে যায়। এতকিছুর পরেও ফারিশ শান্ত হতে পারলো না, সে অয়নের দিকে এগিয়ে যাবে তার আগেই অয়ন নিচে থেকে উঠে হো হো করে হাসতে থাকে। এতে ফারিশের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়। সে অয়নের কলার চেপে ধরে হুঙ্কার দিয়ে বলল,

“তোর সাহস হয় কি করে আমার ফুল কে ছোঁয়ার? তুই যে হাতে আমার ফুল কে স্পর্শ করেছিস, সেই হাত কে’টে আমি নদীতে ভাসিয়ে দিবো।”

ফারিশের কথা শুনে অয়ন নিজের কলার থেকে ফারিশের হাত ছিটকে সরিয়ে দেয়।

“ব্যাস অনেক হয়েছে, এটা আমার এলাকা। এখানে তোর রাজত্ব চলবে না। এখানে অয়ন মির্জার রাজত্ব চলবে।”

বলেই অয়ন হো হো করে হাসতে থাকে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ১৫-২০ জন লোক এসে অয়নের পাশে এসে দাড়ায়। সেখানের একটা লোক নিজের হলদে দাঁত কেলিয়ে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলল,

“স্যার, এইডারে কি মাইরা মাটিতে পুঁতে রাখবো নাকি লাশ নদীতে ভাসায়ে দিবো?”

লোকটার কথা শুনে নিধির বুক ধক করে উঠে, সে ফারিশের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

“চলুন এখান থেকে, ওরা মে’রে ফেলবে আপনাকে।”

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১১

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১১

সময়টা দুপুর ১টা, ফারিশ অফিস থেকে বের হয়ে নিধিদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। নিধিদের বাসার সামনে এসে ফারিশ গাড়ি থামায়। ফারিশ গুটিগুটি পায়ে হেঁটে দরজার সামনে এসে দাড়ায়। বাড়ির সদর দরজাটা খোলা পড়ে আছে। এতে ফারিশের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। সে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে নিধি কে ডাকতে থাকে। কিন্তু নিধির সাড়াশব্দও নেই। পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও নিধিকে পায় না ফারিশ। ঘরের সব জিনিস উলোটপালোট হয়ে আছে। সবটা যে নিজের করা বোকামির জন্য হয়েছে সেটা ফারিশ বুঝতে পেরে মাটিতে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে।

“আমি আমার কথা রাখতে পারিনি সালেহা মা, আমি আপনার মেয়ে কে দেখে রাখতে পারিনি। আমি একটা দায়িত্বহীন ছেলে, আমার আরেকটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল। আমি কিছু করতে পারলাম না নিধির জন্য।”

হঠাৎ ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে থমকে যায় ফারিশ। সে তাড়াতাড়ি নিজের চোখের পানি মুছে পিছনে ঘুরে তাকায়।

“কি হয়েছে ভাইয়া? আপনি কাঁদছেন কেনো?”

ইকরার কথা শুনে ভড়কে যায় ফারিশ, না চাইতেই ফারিশের চোখে পানি চলে আসছে। মনে হচ্ছে অমূল্য কিছু একটা সে হারিয়ে ফেলছে!

“নননিধি…. ”

এতটুকু বলতেই ফারিশের কথা থেমে যায়, সে আর কিছু বলতে পারল না।

“নিধির কি হয়েছে? কোথায় ও? কি হয়েছে বলুন না ভাইয়া?”

“আমি ওকে বাসায় রেখে অফিসে গিয়েছি, এখন এসে ওকে খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও। ঘরের সবকিছু এলোমেলো হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কেউ এসেছে এখানে!”

ফারিশের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় ইকরা। সে অবিশ্বাস্য চোখে ফারিশের দিকে চেয়ে আছে।

“কিন্তু কে আসবে এখানে? আর নিধিই বা না বলে কোথায় গেছে?”

“আমি জানি না কে এসেছে, তবে আমি শিওর যে নিধি ইচ্ছে করে বাড়ির বাহিরে যাবে না। আমার ওকে খুঁজতে যেতে হবে।”

“কিন্তু এত বড় একটা শহরে কিভাবে আপনি নিধিকে খুঁজে পাবেন?”

ইকরার কথার জবাব দেয় না ফারিশ, সে মলিন চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ তার চোখ পড়ে দরজার পাশে পড়ে থাকা একটা ব্রেসলেটের উপর। ফারিশ তড়িঘড়ি করে ব্রেসলেট টা নিচ থেকে উঠিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। গভীর মনোযোগ দিয়ে ফারিশ কিছু একটা পর্যবেক্ষণ করছে দেখে ইকরাও সেই জিনিসের দিকে তাকায়। ফারিশের হাতে থাকা ব্রেসলেট টা ইকরা ভালো করে দেখে চমকে যায়।

“আরে, ওটা তো ওই হসপিটালের ছেলেটার ব্রেসলেট।”

ইকরার কথার মানে বুঝতে না পেরে ফারিশ তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। তা বুঝতে পেরে ইকরা আমতা আমতা করে বলল,

“না মানে, হসপিটালের ছেলেটার হাতেও এই রকম ব্রেসলেট ছিল তো তাই বললাম আরকি।”

ইকরার কথা কানে না নিয়ে ফারিশ ব্রেসলেট টার দিকে তাকিয়ে বলল,

“এটা নিশ্চয় এই ঘরে আসা তৃতীয় ব্যাক্তির ব্রেসলেট। চো’র তো কাঁচা খেলোয়াড়। ভালো করে চু’রিই করতে পারলো না। উল্টো প্রমাণ ফেলে চলে গেলো।”

ফারিশের কথা সব ইকরার মাথার উপর দিয়ে যায়। সে ফারিশের দিকে তাকিয়ে বললো,

“কি চু’রি করেছে? চোর কে?”

“এই বাসার সবচেয়ে দামী জিনিসটা চু’রি করেছে, আর চোর হলো সেই যে ঘরের সবচেয়ে দামী জিনিসটা নিয়ে গেছে।”

বলেই ফারিশ বাসা থেকে হনহন করে বের হয়ে যায়। আর ইকরা বোকার মত দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। ফারিশের কোনো কথাই সে বুঝতে পারেনি।
***
বিকাল প্রায় ৫ টা বাজে, ইকরা আনমনে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। নিধি যে বড় কোনো বিপদে পড়েছে সেটা ইকরা এখন বুঝতে পেরেছে। দুপুরে ফারিশের কথা না বুঝলেও এখন বুঝতে পেরেছে সে যে নিধির বিপদের কথাই তাকে বলেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই রাস্তা পার হচ্ছিল ইকরা। হঠাৎ একটা গাড়ি জোরে ব্রেক কষে ইকরার সামনে। গাড়ির নিচে চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে যায় ইকরা।

“আরে আন্টি, দেখে হাঁটবেন তো। এতো বেখেয়ালি ভাবে রাস্তা পার হলে হবে?”

হঠাৎ কারো মুখ থেকে আন্টি ডাক শুনে হতভম্ব হয়ে যায় ইকরা। সে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটির দিকে তাকাতেই আরেক দফা অবাক হয়। ইকরার সামনে থাকা ছেলেটা নিজেও অবাক হয়।

“আমাকে কোন দিক দিয়ে আপনার আন্টি মনে হয় ভাই?”

ইকরার কথা শুনে পিয়াশ কিছুটা ঘাবড়ে যায়। সে কোনোকিছু না ভেবে চট করে বলে বসলো,

“না মানে, আপনি বুড়ো মানুষের মত ঝুকে ঝুকে হাঁটছিলেন তো তাই মনে হলো। আমি ভালো করে খেয়াল করিনি ওই আন্টি যে আপনিই ছিলেন।”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরার মেজাজ বিগড়ে যায়, সে রাগী চোখে পিয়াসের দিকে তাকাতেই পিয়াস আমতা আমতা করে বলল,

“রাগ করছেন কেনো বেয়াইন?”

পিয়াস কে অবাক করে দিয়ে ইকরা মাঝরাস্তায় কাঁদতে শুরু করে। এতে পিয়াস কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়।

“আরে করছেন টা কি? আমি আর জীবনেও কাউকে আন্টি ডাকবো না, দয়া করে এবার একটু থামুন। নাহলে লোকজন আমাকে এখানে গণধোলাই দিবে কিন্তু।”

“নিধি কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। বিকাল হয়ে গেলো অথচ এখনো নিধুরও কোনো খোঁজ নেই ভাইয়ার ও কোনো খোঁজ নেই।”

ইকরার কথা শুনে পিয়াশ হেসে ফেলল।

“আরে মানুষ সিরিয়াসলি একভাবে কাঁদে, আর ন্যাকামি করে একভাবে কাঁদে। আপনি দেখি কোনো ভাবেই কাঁদতে পারেন না। আগে কোনো ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে কান্না করার উপরে কোর্স নিন, তারপর রাস্তাঘাটে এসে কান্না করবেন। নাহলে মানুষজন দৌড়ে পালাবে আপনার কান্না দেখে। আর ফারিশ তো নিধির বাসায় এসেছিল, হয়তো দুজন কোথাও ঘুরতে বের হয়েছে।”

পিয়াসের কথা শুনে রেগে যায় না ইকরা, বরং সে ঠান্ডা মাথায় পিয়াস কে পুরো ঘটনা টা খুলে বলে।
★★
চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে নিধি। এতক্ষণ সে অচেতন ছিলো, মাত্র চেতনা ফিরেছে। চারদিকে তাকিয়ে ভয়ে কেঁপে উঠে সে। পুরো রুম জুড়ে একটা মাত্র জানালা, তাও অনেক উপরে। শুধুমাত্র আলো প্রবেশের জন্য যে জানালাটা ব্যবহৃত হয় তা বুঝাই যাচ্ছে। পুরো রুম জুড়ে একটা কাঠের চৌকি, অদূরেই পড়ে আছে একটা টেবিল। কাঠের টেবিলের উপরে একটা জগ আর একটা স্টিলের গ্লাস রাখা। আর একটা মাত্র চেয়ার যেখানে নিধিকে বেঁধে রাখা হয়েছে। সে বুঝে উঠতে পারছে না সে এখানে কি করছে? তীব্র মাথা যন্ত্রণার জন্য কিছু মনে করতে পারছে না সে। হঠাৎ ঠক করে রুমের দরজাটা খুলে যায়। এতে নিধি ভয়ে শিউরে উঠে। কেউ একজন হেঁটে নিধির দিকেই এগিয়ে আসছে, অজানা আতংকে নিধি ভয়ে জবুথবু হয়ে যায়। কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটি নিধির সামনে এসে থামে। দরজা হালকা খোলা থাকায় অন্য রুম থেকে কিছুটা আলো প্রবেশ করেছে এই রুমে। সামান্য এই আলোর মধ্যে নিধি ছেলেটা কে সেটা পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করে, কিন্তু সে ব্যর্থ হয়, মাথা ব্যথার জন্য সে কিছুই ভাবতে পারছে না। পিনপতন নীরবতার অন্তিম ঘটিয়ে রুমে আসা ছেলেটা হো হো করে হাসতে থাকে। এতে নিধি ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে নিভু নিভু সুরে বলল,

“অয়ন ভাই আপনি?”

নিধির কথা শুনে অয়ন হাসি থামিয়ে নিধির দিকে তেড়ে এসে তার সামনে হাটু গেড়ে বসে নিধির চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরে বলে,

“হ্যাঁ, তোর অয়ন ভাই আমি। ভুলে গেছিস একটু আগে ঘটা সব ঘটনা? মনে কর।”

বলতে বলতে অয়ন নিধির হাতের বাঁধন খুলে দেয়। দুপুরে ঘটা সব ঘটনা এতক্ষণে মনে পড়ে নিধির। দুপুরে অয়ন এসে নিধিকে জোরাজুরি করে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে৷ পরে নিধি যখন কোনোমতেই যেতে চাচ্ছিল না, তখন নিধির মুখে স্প্রে করা রুপাল চেপে ধরে তাকে অজ্ঞান করে দেয় অয়ন, তারপর, তারপর আর কিছু মনে করতে পারে না নিধি। সে অয়নের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই অয়ন ভয় পেয়েছে এমন ভাব করে বলে,

“আরে নিধু পাখি, আমি যে ভয় পেয়েছি। ইশ রে, আজকে নিধু পাখি টা আমার হবে। আজকে আর কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে, এখানে তোর ওই সো কোল্ড ভাড়া করা ছেলেটা নেই যে তোকে বাঁচাবে। এখানে শুধু আমি আর তুই।”

বলেই অয়ন নিধিকে টেনে নিয়ে যায় অন্য একটা রুমে। রুমে নিয়ে গিয়ে নিধিকে বিছানায় ধা’ক্কা দিয়ে ফেলে দেয় অয়ন।

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-১০

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_১০

আজকে নিধির মায়ের মৃত্যুর ৫ম দিন চলে, নিধি এখন আগের থেকে কিছুটা স্বাভাবিক আছে। বাস্তবতার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে সে। নিধি রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছে সকালের। ফারিশ ঘুম থেকে উঠে নিজের পাশে নিধি কে না দেখে ঘুম জড়ানো চোখে ঢুলতে ঢুলতে নিধি কে খুঁজতে থাকে। নিধি কে রান্নাঘরে পায় ফারিশ।

“এত্তো সকাল সকাল রান্নাঘরে কি করছো?”

হঠাৎ পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে চমকে তাকায় নিধি। অতঃপর ফারিশ কে নিজের পাশে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিধি।

“এখন এগারোটা বাজে, কম বেলা হয়নি।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ মোবাইলে টাইম দেখে নেয়, তারপর নিধি কে তাড়া দিয়ে বলল,

“আমি কিন্তু আজকে বাসায় চলে যাচ্ছি।”

ফারিশের কথা শুনে নিধির একটু খারাপ লাগে, পরক্ষণে নিজেকে সামলে বলে,

“আচ্ছা, কখন যাবেন?”

“এইতো, এখনই বের হবো। কয়েকদিন অফিসের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। কে জানে কি অবস্থা এখন অফিসের।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি আর কিছু বলেনি। সে নিজের মনে নাস্তা বানাতে ব্যাস্ত। তা দেখে ফারিশ আর দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে চলে যায় রেডি হতে।
**
ফারিশ তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে, নিধি তখন টেবিলে খাবার এনে রাখতে ব্যাস্ত। ফারিশ কে দেখে নিধি তাকে ইশারা দিয়ে টেবিলে বসতে বলে। ফারিশ বাধ্য ছেলের মত খাবার টেবিলে এসে বসে। নিধি এসে ফারিশের প্লেটে খাবার তুলে দেয়। ফারিশকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে নিধির চোখ ছলছল করে উঠে, ফারিশ দেখার আগেই নিধি নিজের রুমে চলে যায়। নিধি কে এভাবে হুট করে রুমে চলে যেতে দেখে কিছুটা বোকা বনে যায় ফারিশ। সে খাবার টেবিলে বসেই জোরে বলল,

“নিধি, এসো খাবার খাবে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি নিজের চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক ভাবে রুম থেকে বের হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে। দুজনেই চুপচাপ খাবার খাওয়া শেষ করে।

“খাবারটা মজা হয়েছে, কালকে থেকে তোমার হাতের রান্না মিস করবো।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি মলিন কন্ঠে বলল,

“যখন মন চাইবে তখন চলে আসবেন, তাহলে আর মিস করবেন না আমার হাতের রান্না।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে হেসে বিদায় দিয়ে চলে যায়। নিধি বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে ফারিশের চলে যাওয়া দেখছে। ফারিশের দিকে তাকিয়ে নিধি তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,

“আমার হাতের রান্না মিস করবে, কিন্তু আমাকে মিস করবে না।”

বলেই দরজা আঁটকে দেয় নিধি।
★★
ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘেরা রুমে কয়েকজন ছেলে বসে আছে। কারো মুখে সিগারেট তো কারো হাতে মদ রয়েছে। তারমধ্যে একটা ছেলে হাতে ড্রিংকস নিয়ে দাড়িয়ে আছে, চোখমুখ তার রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। ছেলেটা হঠাৎ তার হাতে থাকা ড্রিংকস এর গ্লাস নিচে ছুড়ে মেরে রুমে থাকা সকলকে কঠিন কন্ঠে শুধালো,

“ ওই ফারিশ কু*ত্তারবাচ্চা কে বুঝি মারতে তোদের এতদিন লাগে? টাকা কি কম দিই আমি তোদের? একটা দুই টাকার কোম্পানির মালিক কে মারতে তোদের এত সময় লাগে?”

অয়নের কথা শুনে রুমে থাকা সকলে ঘাবড়ে যায়, তারমধ্যে রুমে থাকা একটা ছেলে ভয়ে ভয়ে বলে উঠল,

“দুই টাকার কোম্পানি না স্যার, ওনার বাপ যখন কোম্পানির দেখাশোনা করতো তখন এখানের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোম্পানি ছিল ফারিশদের কোম্পানি।”

ছেলেটার কথা শুনে অয়ন রেগে গিয়ে বলল,

“ফারিশ, ফারিশ, ফারিশ! ফারিশ মাই ফুট। তুই আমার লোক হয়ে কিভাবে ওই ফারিশের সুনাম করছিস?”

বলেই অয়ন পকেট থেকে পি’স্তল বের করে ছেলেটাকে গু’লি করে। মুহূর্তের মধ্যে ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অয়নের কাজে ভয়ে জবুথবু হয়ে যায় রুমে থাকা অন্য ছেলেরা। তা দেখে অয়ন ফের আগের কন্ঠে শুধালো,

“এই আবর্জনা কে কোথায় গায়েব করবি এটা তোদের ব্যাপার৷ তবে একটা কথা মাথায় রাখবি, এই রুমের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা যদি লোক জানাজানি হয় তবে তোদের অবস্থাও এই ছেলের মতোই হবে, মাইন্ড ইট।”

বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায় অয়ন। অয়নের পিছন পিছন একটা ছেলে রুম থেকে বের হয়ে এসে তার সামনে দাড়ায়। তা দেখে অয়ন তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়, ছেলেটা নিচু গলায় বলল,

“একটা খবর আছে স্যার।”

“কি খবর?”

“দীর্ঘ পাঁচদিন পর ফারিশ শিকদার অফিসে গিয়েছেন আজকে।”

ছেলেটার কথা শুনে অয়নের চোখ চকচক করে উঠে আনন্দে। অয়ন বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলল,

“তারমানে নিধু পাখি বাড়িতে একাই আছে। আমার তো গিয়ে তাকে সঙ্গ দেওয়া উচিত!”
*****
অফিসে এসে ফারিশের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বারোটা বেজে গেছে, অথচ এখনো অনেকে অফিসে আসেনি। তা দেখে ফারিশ পিয়াস কে ডেকে নিজের কেবিনে চলে যায়।

“আসবো?”

চেয়ারে বসে ফারিশ একটা ফাইল চেক করছিল, হঠাৎ দরজায় কারো আগমন টের পেয়ে সেদিকে তাকায় সে। পিয়াস কে দেখে ইশারায় আসতে বলে ফারিশ। পিয়াস এসে চেয়ার টেনে বসে ফারিশের সামনে।

“ড্যাড অফিসে থাকা অবস্থায় কিভাবে সবকিছু পরিচালনা করেছে সেটা আমার থেকে তুই ভালো করে জানিস। আমি সবে জয়েন করেছি কয়েকদিন হবে। সবাই আমাকে ভয় ফেলেও সুযোগ ফেলে আমার অগোচরে অফিসের নিয়ম না মানার চেষ্টা করছে। এভাবে চললে তো দুদিনও টিকবে না আমাদের কোম্পানিটা। তাই আমাদের সকলকে আরো সচেতন হতে হবে। অফিসের ম্যানেজার টা বুড়ে হয়ে গেছে, তাই হয়তো এসব দিকে নজর দিতে পারছে না। কালকে থেকে ওই বুড়ো কে বলে দিস অফিসে না আসতে। আর ম্যানেজারের দায়িত্ব টা তুই পালন করবি, ড্যাড কিভাবে সবকিছু সামলাতো সেটা তো তুই জানিস। তাই আমি আশা করি তুই এই দায়িত্ব টা পালন করতে পারবি। আর যারা অফিসে অনিয়ম করছে, তাদের বাদ দিয়ে নতুন কর্মী নিয়োগ দে। অনেক বেখেয়ালি ভাবে অফিস সামলিয়েছি, এবার সিরিয়াস হতে হবে। ড্যাডের যত্নের কোম্পানিটা কে আমি এভাবে ডুবে যেতে দিতে পারবো না আর।”

ফারিশের সব কথা পিয়াসের মাথার উপর দিয়ে যায়। তবে সে এটা বুঝতে পেরেছে যে তার পদোন্নতি হয়েছে। আর ফারিশ অবশেষে তার কোম্পানি টা কে নিয়ে সিরিয়াস হয়েছে। সে নিজেকে সামলিয়ে বলল,

“এ সবকিছু করতে মাসখানেক সময় লেগে যাবে, নতুন কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া, ইন্টারভিউ নেওয়া। এসব অনেক সময়ের কাজ। তুই ভরসা করতে পারিস আমাকে, এসব সামলানোর চেষ্টা করবো আমি।”

“ভরসা করি বলেই তো তোকে দায়িত্ব টা দিলাম। যাই হোক, এখন যা। কাজে মন দে।”

ফারিশের কথায় সায় দিয়ে পিয়াস উঠে দাড়ায় যাওয়ার জন্য। সে কিছু একটা ভেবে আবার পিছন ঘুরে বলল,

“নিধির কি খবর? এখন আগের থেকে ঠিক আছে তো ও?”

“হ্যাঁ, এখন ঠিক আছে।”

“ওহ, তা নিধি কে তোর বাড়িতে নিয়ে গেছিস নাকি? ওর বাড়িতে তো এখন আর একা থাকতে পারবে না তাই বলেছি আরকি!”

পিয়াসের কথা শুনে ফারিশ থমকে যায়, নিধি কে যে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া উচিত সেটা সে ভুলেই গিয়েছে। সে তড়িঘড়ি করে নিজের ফোন বের করে নিধিকে কল দেওয়ার জন্য।

“কি রে, ও নিজের বাড়িতে একা নাকি? শুনেছি ওর ওই ভাইটা নাকি এখনো এখানেই আছে, যদি জানতে পারে নিধি বাসায় একা তাহলে কোনো কুবুদ্ধি খাটাবে নিশ্চয়।”

পিয়াসের কথা শুনে চিন্তায় ফারিশের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সে নিধির নাম্বার ডায়াল করে কল দেয় তাকে, কিন্তু কয়েকবার কল দেওয়ার পরেও কল রিসিভ করে না নিধি।
***
তীব্র মাথা যন্ত্রণা করছে নিধির, সে ড্রয়িং রুমে সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শুনে চমকে যায় নিধি। ফারিশ এসেছে ভেবে নিধির চোখ খুশিতে চকচক করে উঠে। সে তড়িঘড়ি করে উঠে নিজের চোখের পানি মুছে ছুটে যায় দরজা খুলে দিতে। দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে যায় নিধি, দরজায় অয়ন কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিধি আহাম্মক বনে যায়। অজানা ভয় এসে গ্রাস করে তাকে। এদিকে অয়ন নিধিকে এভাবে ভয় পেতে দেখে দাঁত কেলিয়ে বলল,

“তোকে সঙ্গ দিতে চলে এলাম আমি নিধু পাখি।”

বলেই অয়ন এগিয়ে আসে নিধির দিকে।

চলবে?

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব-০৯

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৯

“এই নিধি, এই ছেলে কে রে?”

অয়নের কথা শুনে নিধি নির্দ্বিধায় বলল,

“আমার বর!”

নিধির কথা শুনে ফারিশ আর অয়ন দুজনেই তার দিকে অবাক চোখে তাকায়।

“কিভাবে এই ছেলে তোর বর হয়? কি প্রমাণ আছে? বুড়ি মরতেই ছেলে ঘরের মধ্যে নিয়ে এসে ন’ষ্টামি শুরু করে দিয়েছিস নাকি?”

অয়নের কথা শুনে রাগে থরথর করে কাঁপছে ফারিশ, সে আর দাড়িয়ে না থেকে অয়নের বুকের উপর একটা লা’থি দেয়। মূহুর্তের মধ্যে অয়ন মাটিতে গিয়ে পড়ে। ফারিশ তখনো শান্ত হয়নি, সে মাটি থেকে অয়নের কলার চেপে উঠিয়ে তার গালে চ’ড় দিয়ে বলল,

“শা** নিজের চরিত্রের মত সবার চরিত্র মনে করেছিস নাকি? অ’সভ্যের বা’চ্চা বড়দের কিভাবে সম্মান করে কথা বলতে হয় সেটাও জানে না, একটা মেয়ের মা মরে গিয়েছে। মেয়েটা কি পরিস্থিতি তে আছে সেটা বুঝে তাকে স্বান্তনা না নিয়ে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছিস! আবার তার মা কে নিয়ে বাজে কথা বলছিস, কু’ত্তার** আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলবো!”

বলেই ফারিশ অয়ন কে একনাগাড়ে মারতে থাকে। নিধি ফারিশকে আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। শেষে নিধি আর উপায় না পেয়ে ফারিশের সামনে হাতজোর করে বলল,

“প্লিজ ফারিশ, আপনি অয়ন ভাই কে ছেড়ে দিন। অয়ন ভাইয়ের বাবার কানে যদি এসব যায় তাহলে আমাদের শান্তিতে বাঁচতে দিবে না ওরা। আমার বাবা মা কেও ওরা শান্তিতে বাঁচতে দেয়নি, এখন আমাদেরও দিবে না।”

নিধির কথা শুনেও থামল না ফারিশ, সে অয়ন কে ইচ্ছে মত পিটিয়ে তবেই শান্ত হলো। ফারিশ অয়ন কে মাটি থেকে উঠিয়ে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দরজা আঁটকে দেয়। ফারিশ রাগে এখনো থরথর করে কাঁপছে, আজকের এই ফারিশ কে দেখে নিধি ভয়ে জবুথবু হয়ে গেছে একদম। ফারিশ ধীরপায়ে নিধির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বিড়বিড় করে বলল,

“আবর্জনা কোথাকার, আসে আমার বউ কে বিয়ে করতে! বিয়ে করার শখ একদম মিটিয়ে দিয়েছি।”

নিধিকে এভাবে গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশ তাকে ধমক দিয়ে বলে উঠল,

“তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো আমাকে? আমি কি তোমাকে মেরেছি, নাকি তোমার শত্রু কে কিছুই বুঝলাম না।”

নিধি ফারিশের কথার জবাব না দিয়ে রুমে চলে যায়। ফারিশ অসহায় দৃষ্টিতে নিধির যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।

“যার জন্য চু’রি করলাম সেই বলে চো’র, মানবতা আর বেঁচে নেই রে ফারিশ! অফিসের খিটখিটে বসটা আজ তার নিধি রানীর মন ভালো করতে ব্যাস্ত! ভাবা যায় এসব!”

কথাগুলো নিজের মনে বলতে বলতে ফারিশ খাবার নিয়ে নিধির রুমে যায়।

“রাগ দেখাচ্ছো আমাকে?”

কথাটা বলে থমকে যায় ফারিশ, সে নিজের মনে বিড়বিড় করে বলল,

“কন্ট্রোল ফারিশ কন্ট্রোল, মেয়েটা এখন নিজের মধ্যে নেই যে তোকে সহ্য করবে!”

ফারিশ কে বিড়বিড় করতে দেখে নিধি তার দিকে তাকায়, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। ফারিশ ধীরপায়ে গিয়ে নিধির পাশে বসে।

“ছেলে টা তোমাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছে, তোমার বর হয়ে আমি কি এসব সহ্য করে নিবো বলো?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলল,

“আমি এসব কিছু আর সহ্য করতে পারছি না ফারিশ।”

বলেই নিধি কান্নায় ভেঙে পড়ে, নিধি কে এভাবে কাঁদতে দেখে ভড়কে যায় ফারিশ। সে তাড়াতাড়ি নিধির চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল,

“আরে পাগলী, কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি আগের ন্যায় কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“এমন বংশে জন্মগ্রহণ করেছি আমি, যে আমাদের অর্থ সম্পদ থাকতেও মেয়ে হয়ে এখন আমাকে সংসারের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আব্বু আর আম্মু রিলেশন করে বিয়ে করেছে, এজন্য আব্বুর ভাই রা তাকে ভাই হিসেবে মানে না। কিন্তু আমার দাদা ঠিকই আমার বাবার নামে তার অর্ধেক সম্পদ লিখে দিয়ে যান। কিন্তু অয়ন ভাইয়ের আব্বু কিছুতেই আমার বাবার জমির ঝামেলা টা ঠিক করে দেয় না। তার এতো বাহাদুরি সহ্য করে আমার বাবা আর টিকে থাকতে না পেরে আমাদের নিয়ে আলাদা ভাবে থেকেছে। এখন যদি তারা জানতে পারে আপনি অয়ন ভাইকে মেরে এই অবস্থা করেছেন তাহলে আপনার জীবনটা বরবাদ করে দিবে তারা।”

নিধির পুরো কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছে ফারিশ, শেষের কথা টা শুনে ফারিশ হেসে নিধিকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“তুমি আমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছো! আরে এসব চুনোপুঁটি আমার কিছুই করতে পারবে না। আমার কিছু করতে আসলে বরং আমিই তাকে আধমরা করে দিবো।”

ফারিশের কথা শুনে শান্ত হতে পারল না নিধি, সে ফারিশের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে ব্যাস্ত। ফারিশ নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“হয়েছে অনেক চিন্তা করে ফেলেছো আমার জন্য, এবার ব্রেকফাস্ট করে নাও তো লক্ষী মেয়ের মত!”

“খাবো না।”

“মার খাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে নাকি?”

ফারিশের কথা শুনে কান্না থেমে যায় নিধির, সে অবাক হয়ে ফারিশের দিকে তাকায়।

“আপনি মারবেন আমাকে?”

নিধির কথা শুনে ফারিশ কিছুটা ভড়কে যায়, সে নিজেকে সামলে বলল,

“বউ কে মাইর দেওয়ার ক্ষমতা সেই আমার, কিন্তু চু’মু দেওয়ার ক্ষমতা আছে আমার!”

হঠাৎ ফারিশ এমন একটা কথা বলে বসবে সেটা ভাবেনি নিধি। সে লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,

“লাগাম নেই মুখে!”

নিধির কথা শুনে হেসে ফেলে ফারিশ।
★★
রিক্সা থেকে নেমে নিধিদের বাসার সামনে দাড়ায় ইকরা, সে বাসায় ডুকবে এমন সময় দেখে বাসার সামনে একটা ছেলের অবস্থা খুবই খারাপ, ছেলেটা কে এই মূহুর্তে হাসপাতালে নিতে হবে। আশেপাশে কাউকে দেখছেও না যে ছেলেটা কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলবে ইকরা। শেষে ইকরা আর কোনো উপায় না পেয়ে একটা সিএনজি ডেকে নিজেই ছেলেটা কে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইকরা রা হাসপাতালে এসে পৌছায়, ইকরা ছেলে টা কে নিয়ে ডক্টরের কাছে যায়। ইকরা করিডোরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে ডক্টর কি বলে সেটা জানার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডক্টর বের হয়ে আসে কেবিন থেকে। ডক্টর কে দেখে ইকরা তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

“উনি ঠিক আছে তো?”

“এখন মোটামুটি ঠিক আছে, তবে যে উনার এই অবস্থা করেছে সে অনেক মারাত্মক লেভেলের গু’ন্ডা মনে হচ্ছে। মেরে ছেলেটার কি বিভৎস অবস্থা করে দিয়েছে!”

“আমি কি উনার সাথে কথা বলতে পারি? কথা বলার মত অবস্থা তে আছে উনি?”

ইকরার কথা শুনে ডক্টর বলল,

“ওহ হ্যাঁ, উনি আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।”

ডক্টরের কথা শুনে ইকরা আর দাড়িয়ে না থেকে কেবিনে যায় ছেলেটার কাছে। ইকরা বেডের একপাশে বসতেই ছেলেটা নড়েচড়ে উঠে।

“আপনার এই অবস্থা কে করেছে?”

ইকরার কথা শুনে ছেলেটা তার দিকে তাকায়, ছেলেটা ইকরার চোখের দিকে চেয়ে বলল,

“সুন্দরী।”

ছেলেটার মুখে এমন কথা শুনে ভড়কে যায় ইকরা। সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

“আপনার পরিবারের কারো নাম্বার দিন, আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি আপনি যে এখানে!”

ইকরার কথা শুনে ছেলেটা অসহায় গলায় বলল,

“এই শহরে আমার আপন বলতে কেউ নেই, কাকেই বা ফোন করবেন আপনি!”

ছেলেটার কথা শুনে তার জন্য মায়া হয় ইকরার।

“কে আপনার এই অবস্থা করেছে?”

ইকরার কথা শুনে ছেলেটা কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলল,

“সে অনেক কাহিনি। পরে একদিন বলবো।”

ইকরা ভেবে পাচ্ছে না সে এখানে থাকবে নাকি চলে যাবে। তাই সে ছেলেটা কে বলল,

“আমি চলে যাই? আপনি তো এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন।”

ইকরার কথা শুনে ছেলেটা মিষ্টি হেসে বলল,

“আচ্ছা যান।”

ছেলেটার কথা শুনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে ইকরা। সে বেড থেকে উঠে পা বাড়ায় যাওয়ার জন্য, হঠাৎ কিছু মনে পড়াতে সে আবার পিছনে ঘুরে বলল,

“আচ্ছা আপনার নাম কি?”

ছেলেটা নির্দ্বিধায় বলল,

“অয়ন।”

চলবে???

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০৮

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৮

দৌড়াতে দৌড়াতে গাড়ির সামনে এসে থামে পিয়াস আর ইকরা। দুজনেই হাঁপাচ্ছে।

“স্কুলের দৌড় প্রতিযোগিতায় যদি আমি আজকের মত এভাবে দৌড়াতাম তাহলে ওই ডাইনি বিথীর বদলে আমি ফাস্ট হতাম।”

ইকরার কথা শুনে পিয়াস তার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলল,

“বিথী কে?”

পিয়াসের কথা শুনে হুশ ফিরে ইকরার, সে নিজেকে সামলে বলল,

“স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে গেছে, স্কুলের ক্লাসমেট ছিল বিথী।”

ইকরার কথা শুনে প্রাণে বাঁচলো সে, কারণ তার বোনের নামও বিথী।

“চলুন যাই, আবার কখন কোন বিপদ জেঁকে বসে কে জানে!”

বলেই পিয়াস গাড়িতে গিয়ে বসে, ইকরাও আর দ্বিমত পোষণ না করে গাড়িতে গিয়ে বসে। ইকরা গাড়িতে বসতেই পিয়াস গাড়ি স্টার্ট দেয়।
******
রাত প্রায় তিনটা বাজে, জ্বরে নিধির গা পুড়ে যাচ্ছে। নিধির চোখ মেলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে, চোখ জ্বালা করছে জ্বরের তোপে। তার চোখ বেড়ে নিরবে অশ্র গড়িয়ে পড়ে। নিধি বিছানা থেকে উঠে বসার চেষ্টা করে, উঠে বসতে নিতেই নিধি আবারো পড়ে যায় বিছানায়। ফারিশ তার পাশেই শুয়ে ছিল, হঠাৎ আওয়াজ শুনে সে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। সে তাড়াতাড়ি করে রুমের লাইট অন করে নিধির কাছে আসে। নিধির চোখে পানি দেখে বুক ধক করে উঠে ফারিশের। সে তাড়াতাড়ি নিধির চোখের পানি মুছে দেয়। নিধির গাল স্পর্শ করে থমকে যায় ফারিশ, জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে নিধির। সে আতঙ্কিত গলায় নিধি কে বলল,

“ঠিকাছো নিধি?”

ফারিশের কথা কানে গেলেও জবাব দিতে পারলো না নিধি। নিধি কে চুপ করে থাকতে দেখে ফারিশ ফের বলল,

“এই নিধি, শুনছো? কি হয়েছে তোমার?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে চোখ মেলে তাকাল, তারপর ভাঙা কন্ঠে বলল,

“ল..লাইট।”

আর কিছু বলতে পারলো না নিধি, তার আগেই সে জ্ঞান হারায়। নিধির এই অবস্থা দেখে ফারিশ তো পুরো হতভম্ব হয়ে গেল। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। রাত প্রায় তিনটা বাজে, এত রাতে কোনো ডক্টর তো জীবনেও বাসায় আসবে না, তারউপর সে নিধি কে নিয়ে ডক্টরের কাছেও যেতে পারবে না, কারণ তার গাড়ি যে পিয়াস নিয়ে গেছে। চিন্তায় ফারিশের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সে তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে তার পরিচিত একজন ডক্টর কে কল করে। বেশ কয়েকবার কল দেওয়ার পরেও ডক্টর কল রিসিভ করে না। জীবনে প্রথম নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে ফারিশের, সে সামনে বসে থেকেও কিছু করতে পারছে না নিধির জন্য। তবুও সে হাল ছাড়লো না, নিধিকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে ফারিশ রান্নাঘরে গিয়ে পানি আনে। কিছুটা পানি নিধির মুখে ছিটিয়ে দেয় সে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিধি নড়েচড়ে উঠে। নিধি জ্বরের ঘোরে বলল,

“মা পানি।”

নিধির কথা টা ফারিশের বুকে তীরের মত বাঁধে! মেয়েটা তার মা কে কতটা ভালোবাসে! অথচ এখন পরিস্থিতিটাই বা কেমন! ফারিশ চাইলেও নিধির মা কে তো আর ফিরিয়ে এনে দিতে পারবে না! সে উঠে গিয়ে নিধির জন্য পানি আনে। নিধি কে শোয়া থেকে উঠিয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয় ফারিশ। তারপর পানির গ্লাস নিয়ে নিধিকে খাইয়ে দেয় সে। ফারিশ পানি নিয়ে আসে জলপট্টি দিয়ে দেওয়ার জন্য। জলপট্টি দেওয়া শেষ করে ফারিশ নিধির মাথা নিজের কোলের উপর রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“ঘুমাও, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি আছি তো।”

ফারিশের এই একটা কথাতেই যেনো নিধি অনেকখানি ভরসা পেলো।
**
বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে ইকরা, কিছুতেই তার ঘুম আসছে না। সে পিয়াসের শার্টটা জড়িয়ে ধরে আছে। রাতে ছেলেগুলো ইকরার ওড়না নিয়ে যাওয়ার পর পিয়াস তার শার্টটা ইকরার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। এতে ইকরা অবাক হলেও পরক্ষণে পিয়াসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। বাসায় এসে বিছানায় শুয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার মন ঠিকই পিয়াসের কাছে, ছেলেটার চোখে কোনো খারাপ দৃষ্টি ছিলো না তার জন্য! এজন্যই সে পিয়াসের প্রতি একটু বেশিই আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে।
*
বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে পিয়াস, একদিনের ব্যবধানে সে একের পর এক খারাপ খবর পাচ্ছে। প্রথমে নিধি কে সে পছন্দ করে এটা টের না ফেলেও ফারিশ যখন জানালো নিধি তার বউ তখন থেকে সে বুঝছে নিধি কে যে সে পছন্দ করত মনে মনে। সেই ঘটনাতে নিজেকে সামলে নিলেও আবার নিধির মায়ের মৃত্যুতে সে ব্যথিত। চাইলেও সে একটু নিধিকে স্বান্তনা দিতে পারেনি। নিধির জন্য তো সে নিজের বন্ধুত্বটা নষ্ট করতে পারবে না। আর এখন চাইলেও নিধি তার হবে না। তাই নিজেকে সামলে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। চেষ্টা করলে ভুলে থাকতে ঠিকই পারবে সে। এটাই তার বিশ্বাস। পিয়াস বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে, হঠাৎ কিছু মনে পড়াতে সে নিজের প্যান্টের পকেট হাতড়ে একটা কানের ঝুমকো বের করে। ঝুমকোটা ইকরার, দৌড়ানোর সময় কান থেকে খুলে পড়ে যায়। পিয়াস সেটা কুড়িয়ে নিলেও ইকরা কে আর ফেরত দিতে তার মনে ছিল না। আবার দেখা হলে দিয়ে দিবে সেই ভেবেই নিজের কাছে রেখেছে ঝুমকোটা। রাত অনেক হয়েছে, পিয়াস আর বেলকনিতে দাড়িয়ে না থেকে রুমে চলে যায় ঘুমানোর জন্য।
★★
সকাল প্রায় সাড়ে আটটা বাজে, ফারিশ আজকে আর অফিসে যায়নি। নিধিদের বাসায় রয়েছে নিধির সাথে। নিধির জ্বর এখন কিছুটা কমেছে, তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি এখনো সে। ফারিশ বাহিরে যায় নাস্তা আনার জন্য, নিধি তো ব্রেকফাস্ট তৈরি করার মত অবস্থাতে নেই। সে নিজেও বানাতে পারে না। তাই দোকানই তার শেষ ভরসা। পনেরো মিনিটের মধ্যে খাবার নিয়ে বাসায় আসে ফারিশ। বাসায় এসে তো ফারিশ পুরো থমকে যায়। নিধি সোফায় বসে আছে, তার পাশেই একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা নিধি কে মনে হচ্ছে ধমকাচ্ছে কোনো কারণে। ফারিশ আর দেরি না করে নিধির দিকে এগিয়ে যায়। নিধি ভয়ে জবুথবু হয়ে বসে আছে। ফারিশ নিধির পাশে বসে তাকে বলল,

“ভয় পাচ্ছো কেনো নিধি? কে এই ছেলে?”

ফারিশের কথা শেষ হওয়ার আগেই ছেলেটি ফারিশের কলার চেপে ধরে নিধির পাশ থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল,

“এই তুই কে রে? তুই আমাদের মধ্যে কথা বলার কে?”

ছেলেটির কথা ফারিশের কানে গিয়েছে কি না সন্দেহ আছে, কারণ সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার কলারে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকা ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে আছে। সে একপ্রকার হুঙ্কার দিয়ে বলল,

“কলার ছাড় বলছি, নাহলে কিন্তু জীবিত ফিরতে পারবি না বাড়িতে।”

ফারিশের কথা শুনে হো হো করে হাসতে থাকে ছেলে টা। নিধি আতঙ্কিত চোখে দুজনের পানে চেয়ে আছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিধি ছেলেটিকে অনুনয় করে বলল,

“আপনি প্লিজ চলে যান অয়ন ভাই, এতোদিন যেহেতু কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। এখনও কেউ আমাদের খোঁজ নিতে হবে না। আমি আর এসব নিতে পারছি না প্লিজ!”

নিধির কথা শুনে অয়ন ক্ষিপ্ত সুরে বলল,

“চাচার যে গ্রামে জমি রয়েছে সেগুলো তোর নামে, তাছাড়া আব্বু তো বলেছে আমি যেনো তোকে বিয়ে করি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও তোর ওই বুড়ি মা এসব হতে দেয়নি। এখন তো বুড়িটা বিদায় হয়েছে। আর কোনো বাঁধা নেই।”

বলেই বাঁকা হাসে অয়ন। পুরো ব্যাপারটা যেনো ফারিশের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা নিধির মা কে নিয়ে এভাবে কথা বলাতে রেগে যায় ফারিশ।

“তুই ভাবলি কি করে নিধি তোকে বিয়ে করবে?”

ফারিশের কথা শুনে অয়ন ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়। সে নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,

“এই মা* টা কে রে নিধি? শহরে এসে নতুন জুটিয়েছিস নাকি?”

বলেই অয়ন নিধির হাত চেপে ধরে। তা দেখে ফারিশ রাগে থরথর করে কাঁপছে। এতোক্ষণ নিজেকে সামলে রাখতে পারলেও এখন আর পারছে না সে। ছেলেটার কতো বড় সাহস সে নিধির হাত স্পর্শ করেছে! ছেলেটার কি অবস্থা করবে সে নিজেও ভেবে পাচ্ছে না।

চলবে?

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

শেষ বিকেলের প্রণয় ২ পর্ব-০৭

0

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#সিজন_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৭

নিস্তব্ধ রাত, রাস্তায় কারো কোনো আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না। নিস্তব্ধ পথ বেরিয়ে পিয়াসের গাড়ি ছুটে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে। পিয়াস গাড়ি ড্রাইভ করছে, পাশেই ইকরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তা দেখে পিয়াস দুষ্ট হাসি হেসে বলল,

“আপনি না কারো সাহায্য নেন না, এখন দেখছি সেই ঘুরে ফিরে আবার আমার সাহায্যই নিচ্ছেন!”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরা তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। সে কিছুটা অবাক হয়ে বলল,

“আপনি কি আমাকে খোঁটা দিচ্ছেন নাকি?”

“আরে খোঁটা দিলাম কোথায়? আপনিই তো সেদিন বলেছেন যে কারো সাহায্য নেন না, তাই বলেছি আরকি!”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরা জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,।

“গাড়ি থামান।”

ইকরার চিৎকার শুনে পিয়াস গাড়ি থামায়, ইকরা গাড়িতে আর বসে না থেকে নিচে নেমে পড়ে। তা থেকে পিয়াস হতভম্ব হয়ে যায়। সেও গাড়ি থেকে বের হয়ে ইকরার পাশে গিয়ে দাড়ায়।

“আরে কি হয়েছে? নেমে গেলেন কেনো?”

পিয়াসের কথা শুনে ইকরা রেগে বলল,

“আপনি যান তো এখান থেকে, এসব খোঁটা দেওয়া লোকের সাহায্য আমি নিই না, আর এটা সাহায্যই বা কই হলো? জিজু বলেছে আপনার সাথে আসতে, তাই তার কথা রাখতে আপনার সাথে এসেছি আমি।”

ইকরার কথা শুনে পিয়াস মহা বিপাকে পড়লো। সে কিভাবে এখন ইকরাকে সামলাবে সেটাই ভাবছে, ফারিশ যদি জানতে পারে সে ইকরা কে মাঝরাস্তায় একা ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছে তাহলে তার কপালে দুঃখ আছে।

“আরে চলুন তো, লেট হয়ে যাচ্ছে।”

ইকরা মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

“ইকরা একবার যা বলে ফেলে তাই করে, আপনার লেট হচ্ছে আপনি যান। আমি একাই যেতে পারি।”

বলেই ইকরা আর কোনো কথা না বলে হাঁটা শুরু করে। পিয়াস হতভম্ব হয়ে শুধু ইকরার যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।
***
তীব্র মাথা যন্ত্রণা আর মায়ের শোকে নিধি কাতর হয়ে গেছে। নিরবে তার চোখ বেড়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। কি সুন্দর কালকে রাতেও সে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে! একদিনের ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেলো তার সাথে! কে আর তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবে? কেই বা তাকে খাবার খাইয়ে দিবে? কার কাছেই বা সে তার সকল আবদার করবে? এসব ভাবতে ভাবতেই নিধির চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
ফারিশ রুমে এসে দেখে নিধি বিছানার একপাশে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। তীব্র গরম পড়ছে, সে রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো রুমে এসি আছে কি না! রুমের পরিস্থিতি দেখে ফারিশ বুঝে ফেলল এসি রাখার মত উপযুক্ত রুম এটা এখনো হয়ে উঠেনি। সে অসহায় দৃষ্টিতে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে, এই ফ্যানই তার শেষ ভরসা। সে সুইচবোর্ডের দিকে গিয়ে ফ্যান অন করে। ফ্যান চালু করতেই ফারিশ ভয় পেয়ে যায়, ফ্যান চলছে ঠিকই। কিন্তু সাথে বিকট আওয়াজ ফ্রী! সে নিধির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সে তো অল্প কিছু ঘন্টা এই বাসায় থেকেই পাগল হয়ে গেছে। আর এরা কিভাবে এতোদিন এই বাসায় ছিলো? সে আর কিছু ভাবতে পারলো না। সোজা গিয়ে বিছানায় বসে সে।

“ঘুমাবে না?”

ফারিশের কথা কানে যায় না নিধির। ফারিশ ফের বলল,

“কি হলো?”

ফারিশের কথা শুনে হুশ ফিরে নিধির। সে কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,

“আপনি বরং এই রুমে থাকেন, আমি আম্মুর রুমে গিয়ে থাকি।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে বাঁধা দিয়ে বলল,

“একা কোনো রুমে থাকতে হবে না তোমাকে। তুমি আমার সাথে এই রুমেই থাকবে!”

ফারিশের কথা শুনে বিরক্ত হয় নিধি। সে বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলল,

“একা রুমে গিয়ে নিজেকে শেষ করে দিবো না, চিন্তা নেই।”

নিধির কথা শুনে ফারিশের মেজাজ বিগড়ে যায়। তবুও সে কিছু বলতে পারলো না নিধি কে, কারণ সে নিজেও নিধির মত একই রকম পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে, তখন তাকে কেউ সামলাতে এগিয়ে আসেনি। বাবা তার অফিস নিয়েই ব্যাস্ত ছিলো। তারপর আবার যখন তার বাবা তাকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমায় তখন তো কেউ ছিলো না তাকে একটু ভরসা দেওয়ার জন্য। এমন পরিস্থিতিতে যে নিজেকে কেমন অসহায় লাগে সেটা ফারিশ অনুভব করেছে। তাই আর নিধির সাথে রাগারাগি করতে পারলো না সে।

“তোমার যদি এক বিছানায় থাকতে কোনো অসুবিধা হয় তাহলে তুমি বিছানায় ঘুমাও, আমি রুমের অন্য কোথাও ঘুমিয়ে যাবো। তবুও অন্য রুমে যেতে হবে না তোমাকে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তাকে বাঁধা দিয়ে বলল,

“আমি একদম স্ট্রং আছি, আমার তেমন কোনো আত্মীয় স্বজন নেই এই শহরে, বাবার সম্পর্কে আত্মীয় যারা ছিল তারা বাবা বেঁচে থাকা পর্যন্তই আত্মীয় ছিলো। এরপর আমাকে আর আমার মা কে তারা নিজেদের আপন ভাবে নি কখনো। মায়ের চলে যাওয়াতে রক্তের কেউ এগিয়ে আসেনি, সে জায়গায় আপনি একা এগিয়ে এসেছেন। সকাল থেকে এতোকিছু করেছেন আমার জন্য, এতে আমি কৃতজ্ঞ স্যার! আমি জানি আমার সাথে আপনার একই রুমে থাকতে অস্বস্তি হবে, তারপরও আমার পরিস্থিতির কথা ভেবে এসব বলেছেন। আমি একদম ঠিক আছি, আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না আর আপনাকে স্যার!”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে এগিয়ে এসে তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

“ঘরের বরকে স্যার বলার কোনো মানে হয় না মিসেস ফারিশ শিকদার। বর তার স্ত্রীর পাশে থাকবে না তো কে থাকবে? আমাকে কি এতোই স্বার্থপর মনে করো তুমি? অফিসের সেই বাউণ্ডুলে বসটারও যে মন বলে একটা জিনিস আছে সেটা তো তোমরা ভুলতে বসেছো। আর বউয়ের সাথে একই রুমে থাকতে আমার কিসের অস্বস্তি লাগবে? চলো ঘুমাবে, অনেক রাত হয়েছে।”

বলেই ফারিশ নিধিকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। নিধি শুধু অবাক হয়ে ফারিশ কে দেখছে, যত দিন যাচ্ছে সে যেনো ফারিশ কে তত নতুন করে চিনছে!
★★
ইকরা রাস্তায় সিএনজির জন্য দাড়িয়ে আছে, রাগে থরথর করে কাঁপছে সে। কিছুতেই নিজের রাগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সে। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলেও কোনো রিক্সা বা সিএনজি পায় না সে। পাবেই বা কি করে? রাত যে অনেক হলো! তবুও হাল ছাড়লো না ইকরা। সে হেঁটে যাবে ভেবে ঠিক করলো। ইকরা হাঁটার জন্য দুইপা বাড়াতেই তার সামনে তিনটা ছেলে এসে দাড়ায়। ছেলে তিনটি ইকরার দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে বলল,

“সঙ্গী লাগবে নাকি ম্যাডাম?”

ছেলগুলোর কথা শুনে ইকরা ভয় পেয়ে যায়। সে ভয়ে পিছিয়ে যেতেই ছেলেগুলো আরো তার দিকে এগিয়ে আসে।

“পালাচ্ছেন কেনো ম্যাডাম?”

একদিকে পিয়াসের উপর রাগে ফুঁসতে থাকে ইকরা। আরেকদিকে এদের আজাইরা কথা শুনে ইকরার মেজাজ আরো বিগড়ে যায়। সে একটা ছেলের গালে সজোরে একটা থা’প্পড় দিয়ে বলল,

“মেয়ে দেখলেই তোদের নাটক শুরু হয়ে যায় কেনো?”

ইকরার কথা কানে যায় না ছেলেগুলোর। তারা রেগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

“খুব ভুল করেছিস তুই।”

বলেই একটা ছেলে ইকরার গলা থেকে টান দিয়ে ওড়না নিয়ে নেয়। ওড়না টেনে নিয়েই ছেলেগুলো হো হো করে হাসতে থাকে। ছেলেগুলোর কাজে ইকরা পুরো থমকে যায়। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎ করে তাকে ভরসা দেওয়ার জন্য একজন উদয় হলো, পিয়াস ইকরার হাত চেপে ধরে বলল,

“এদের হাত থেকে বাঁচার একটাই উপায়, পিছনে ঘুরেন। আর পালান।”

বলেই পিয়াস ইকরাকে নিয়ে দৌড় দেয়। ছেলেগুলো হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে পিয়াস আর ইকরার যাওয়ার পানে।

চলবে?

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]