বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1211



শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২৯

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

ঘুম ভাঙ্গতেই বুকের মধ্যে গরম নিঃশ্বাস অনুভব হলো, ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি আলিফা আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে আর বাচ্চা মেয়ের মতো আমাকে ঝাপটে ধরে রেখেছে। খুব হাসি পাচ্ছে কোথায় বলেছিলাম ওর বুকে আমি মাথা রেখে ঘুমাবো উল্টো ও আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। আলিফাকে সরিয়ে দিয়ে উঠতে চাইলাম কিন্তু ও আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো আমাকে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি নয়টা বাজে, এতো বেলা হয়ে গেছে আর আলিফা আমাকে উঠতেই দিচ্ছে না। এখন কি করি আলিফাকে জোর করে সরাতে গেলে তো ওর ঘুম ভেঙে যাবে।
প্রিতি: ভাইয়া ভাইয়া
আমি: হুম
প্রিতি: আজ সারাদিন ঘুমাবে নাকি ভাবির ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে তো
আমি: যা তুই আসছি
প্রিতি: তাড়াতাড়ি আসো।

এখন তো ওকে ডাকতেই হবে ওষুধ খেতে হবে। আলিফাকে ডাক দিতেই চোখ মেলে তাকালো আমার দিকে।
আলিফা: শান্তিতে ঘুমাতে দিবে না
আমি: ওষুধ খেতে হবে তো উঠো
আলিফা: না আজ সারাদিন এভাবেই তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো (আবার আমাকে ঝাপটে ধরলো)
আমি: আলিফা এইটা কি হলো রাতে তো বলেছিলাম আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো এখন দেখছি উল্টো তুমি…. (আলিফা আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে হেসে দিলো, কতো দুষ্টু মেয়ে)
আমি: অনেক দুষ্টু হয়ে গেছ
আলিফা: দুষ্টুমি গুলো তো তুমিই শিখিয়েছ (নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার চোখের দিকে, আর কিছুক্ষণ পর ডিভোর্স হয়ে যাবে আমাদের ভাবতেই কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে)
আলিফা: রিফাত চলে যাচ্ছ কেন
আমি: উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও তোমার খাবার নিয়ে আসছি।
তাড়াতাড়ি ওর সামনে থেকে চলে আসলাম, আর একটু সময় থাকলে হয়তো চোখে ছলছল করা পানিগুলো ঝরে পড়বে।

ড্রয়িংরুমে তো কেউ নেই গেলো কোথায় সবাই।
নীলিমা: ভাইয়া কাকে খুঁজছ
আমি: সবাই কোথায় রে
নীলিমা: রুমেই আছে
আমি: ওহ আলিফার খাবারটা দেতো
নীলিমা: হুম (চেয়ার টেনে বসতেই কলিংবেল বেজে উঠলো)
নীলিমা: ভাইয়া দেখতো কে এসেছে
আমি: দেখছি।

দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছি, মাথা খুব ঘুরছে মনে হচ্ছে এখনি পড়ে যাবো। আস্তে আস্তে এসে সোফায় বসে পড়লাম।
নীলিমা: ভাইয়া কে এসেছে
আমি: (নিশ্চুপ)
নীলিমা: কে উনি
আমি: উকিল চাচ্চুর এসিস্টেন
নীলিমা: হুম
আমি: নীলিমা উনার থেকে পেপারটা নিয়ে তোর রুমে রেখে দে যখন বলি দিস
নীলিমা: হুম নাও ভাবির খাবার।
প্লেট’টা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম। খাটে দফ করে বসে পড়লাম।
আলিফা: রিফাত কি হয়েছে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন
আমি: কিছু হয়নি খেয়ে নাও, খেয়ে ওষুধ খেও
আলিফা: তুমি খাইয়ে দাও (আলিফার দিকে তাকালাম কেমন বাচ্চা মেয়েদের মতো আবদার করছে। জানিনা ওর এসব স্মৃতি ভুলতে পারবো কিনা)
আলিফা: কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছ কেন
আমি: কিছুনা খেয়ে নাও
আলিফা: খাইয়ে দাও
আমি: হুম।

আলিফাকে খাইয়ে দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। ভাবছি আলিফাকে কি এখনি ডিভোর্স পেপারটা দিয়ে দিবো নাকি পরে দিবো। বিষয়টা যখন আলিফার খুশি হওয়ার তাহলে পরে কেন এখনি ভালো। নীলিমার কাছে যাবো পিছন ফিরতেই দেখি আলিফা।
আমি: কিছু বলবে
আলিফা: তুমি আমার থেকে কি যেন লুকাচ্ছ
আমি: নাতো কি লুকাবো
আলিফা: সত্যি তো
আমি: আলিফা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে
আলিফা: সারপ্রাইজ
আমি: হ্যাঁ তুমি অনেক খুশি হবে আমি জানি
আলিফা: তাহলে এক্ষণি দাও
আমি: তুমি এখানে দাঁড়াও আমি আসছি
আলিফা: ঠিক আছে।

ডিভোর্স পেপারটা নিতে নীলিমার রুমে আসলাম, ও ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে কাঁদছে।
আমি: নীলিমা (আমার ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলো)
নীলিমা: হুম ভাইয়া
আমি: কি হয়েছে কাঁদছিস কেন
নীলিমা: ভাইয়া ডিভোর্স হয়ে গেলে তোমার কি হবে
আমি: আলিফা সুখে থাকবে এটাই তো অনেক কিছু
নীলিমা: তুমি না খুব ভালো কষ্ট লুকাতে পারো
আমি: তুই বুঝি কম পারিস। তুইও তো সব কষ্ট লুকিয়ে ভালো থাকার অভিনয়টা কতো সুন্দর ভাবে করছিস
নীলিমা: ভাইয়া ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেন (ওর এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই, কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে চলে আসলাম)

আলিফা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, দেখে ওকে খুব খুশি মনে হচ্ছে। ডিভোর্স পেপারটা পেলে হয়তো আরো বেশি খুশি হবে।
আমি: আলিফা
আলিফা: হুম
আমি: এইযে তোমার গিফট
আলিফা: কি এইটা
আমি: বলেছিলাম না সারপ্রাইজ আছে
আলিফা: দেখি কি এইটা (আমার হাত থেকে পেপারটা নিয়ে দেখেই আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো)
আলিফা: এইটা কি রিফাত
আমি: আলিফা আমি জানি রাতুলকে তুমি ভালোবাস রাতুলও তোমায় ভালোবাসে। রাতুল ফিরে এসেছে তাও তুমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলে না। তাই আমি….
আলিফা: তাই তুমি আমাকে এমন সারপ্রাইজ দিলে
আমি: আলিফা আমি তোমাকে ভালোবাসি, এসব মিথ্যে মায়ার জালে তোমাকে আমি আর আটকে রাখতে চাই না। নিলাকে হারিয়ে আমি কষ্ট পেয়েছি তাই তুমি নতুন করে আমাকে কষ্ট দিতে পারছ না। নিজের জন্য তো তোমার রাতুলের দুইটা জীবন আমি নষ্ট করে দিতে পারিনা
আলিফা: তাই তুমি আমাকে জিজ্ঞেস না করেই ডিভোর্স পেপার এনেছ তাও আবার আমাকে সারপ্রাইজ বলে দিয়েছ। এইটা সারপ্রাইজ হ্যাঁ এইটা সারপ্রাইজ
আমি: চেঁচামেচি করছ কেন
আলিফা: (ঠাস)
আমি: আজব তো থাপ্পড় মারলে কেন
আলিফা: তো তোমাকে কি আদর করবো। আরে আমি জানতাম মানুষ বোকা হয় কিন্তু কোনো মানুষ যে এতোটা বোকা হতে পারে সেটা তোমাকে না দেখলে আমি বুঝতামই না
আমি: তুমি রাতুলকে ভালোবাস রাতুলও তোমাকে ভালোবাসে তাই আমি আমার মিথ্যে বাঁধন থেকে তোমাকে মুক্ত করে দিতে চেয়েছি। ডিভোর্স পেপার….
আলিফা: আমি তোর কাছে ডিভোর্স চেয়েছিলাম নাকি বল চেয়েছিলাম (আমার কলার ধরে চেঁচামেচি করছে, তাহলে কি আলিফা ডিভোর্স চায় না)
আলিফা: আমি জানতাম মেয়েদের নাকি মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বলতে হয় না ছেলেরা এমনিতে বুঝে যায় কিন্তু তুই তো এতোই বোকা যে আমি মুখ ফুটে “ভালোবাসি” বলার পরও বুঝলি না
আমি: তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাস
আলিফা: না মিথ্যে ভালোবাসি, আমার চোখের সামন থেকে যা নাহলে আরো কয়েকটা থাপ্পড় দিবো
আমি: হুম।
চুপচাপ বিছানায় এসে বসে রইলাম। সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আলিফা এসব কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছি না। ও যদি আমায় ভালোই বাসে তাহলে…
আলিফা: হ্যালো (হঠাৎ দেখি আলিফা কাকে যেন ফোন করছে, অপর পাশ থেকে কি বলছে কিছুই তো শুনতে পারছি না)
আলিফা: একটু এই বাসায় আসো তো (রাতুল মনে হয় কিন্তু আসতে বলছে কেন)
আলিফা: না ওকে আমি এক্ষণি ডিভোর্স দিবো, পেপার আমার হাতেই আছে সাইন করে দিলেই সব মিটে যাবে। তুমি এসো আমি আজকেই তোমার কাছে চলে যাবো। (ওহ তারমানে রাতুলকেই ফোন করেছিল। আর আজকেই চলে যাবে)
আলিফা ফোন রেখে খাটে এসে বসে পড়লো, ডিভোর্স পেপারটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে।
আমি: আলিফা
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: তোমাকে কাঁদাতে চাই না বলেই তো আমি এই সিদ্ধান্ত নিলাম তাও তুমি কাঁদছ
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: রাতুলকে ফোন করেছিলে তাই না। সত্যিই কি আজকেই চলে যাবে।
আলিফা: একটা মেয়ে প্রতিটা কাজে তোমাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে, হসপিটালের বেডে শুয়ে শুধু তোমাকে বার বার খুঁজেছে, রাত হলে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে আরো কতো কিছু করেছে শুধু ভালোবাসে বুঝানোর জন্য। আর তুমি এতোটাই বোকা যে কিচ্ছু বুঝতে পারোনি উল্টো…. তোমার মতো বোকার সাথে থাকার চেয়ে ডিভোর্সই ভালো, আমি এক্ষণি সাইন করে দিচ্ছি।
ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে নিচে চলে গেলো। আমিও পিছু পিছু আসলাম।

আলিফা: আব্বু আব্বু (আলিফার চেঁচামেচিতে সবাই ড্রয়িংরুমে চলে আসলো)
আব্বু: কি হয়েছে মা
আলিফা: এইটা একবার দেখো
আব্বু: কি
আলিফা: তোমার ছেলে আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য এইটা এনেছে এখন তুমি বলো আমি কি করবো
ছোটমা: মা চেঁচামেচি করো না এখানে বসো
আলিফা: মানে কি তোমাদের রাগ হচ্ছে না ওর এমন বোকা কাজে
রিয়ান: রাগ হবার কি আছে এটাই তো হবার ছিল। আজ হউক কাল হউক ডিভোর্স তো দিতেই হতো।
প্রিতি: ভাবি তুমি শান্ত হয়ে বসো তোমার শরীর কিন্তু অসুস্থ
আলিফা: আমি অসুস্থ এইটা তোমাদের মনে আছে আমি তো ভেবেছিলাম ভুলে গেছ
আমি: মানে কি
আলিফা: তুমি একটা কথাও বলবা না
আমি: হুম।

সবাই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে আলিফা বার বার আব্বুর দিকে তাকাচ্ছে, হয়তো আব্বুর সিদ্ধান্ত জানতে চাইছে। আব্বুর সিদ্ধান্তে কি বা এসে যায়। আজ যা হচ্ছে এইটা অনেক আগে হলেই ভালো হতো অন্তত সবাইকে এতো বেশি কষ্ট পেতে হতো না।
নীলিমা: ভাইয়া তোমার কষ্ট হচ্ছে না
আমি: এতো ফিসফিস করে কথা বলছিস কেন
নীলিমা: ভাবি শুনলে রেগে যেতে পারে
আমি: কষ্ট হবে কেন আলিফা রাতুলের সাথে সুখে থাকবে এইটা ভেবে ভালো লাগছে
নীলিমা: হ্যাঁ ভালোবাসার মানুষ ভালো থাকলে সুখে থাকলে সবারই ভালো লাগে কিন্তু সাথে কষ্টও হয়, যেমনটা তোমার হচ্ছে। (নীলিমার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম, আমি তো দিব্বি হাসছি ও কষ্ট কোথায় দেখলো)
নীলিমা: ভাইয়া তোমার চোখে পানি ছলছল করছে মনে হচ্ছে সবার চোখের আড়াল হলেই কেঁদে দিবে
আমি: দূর এসব কিছু না
নীলিমা: ভাইয়া আমিও কিন্তু একি কষ্টে ভুগছি তাই আমার কাছে লুকানোর চেষ্টা করো না
আমি: আচ্ছা নীলিমা রিয়ানকে সব বলে দিলে কেমন হয়
নীলিমা: মানে
আমি: আমরা সবাই থাকতে তুই কষ্ট পাবি কেন আমি সবাইকে বলে রিয়ানকে রাজি করাচ্ছি
নীলিমা: ভাইয়া ও অন্য কাউকে ভালোবাসে আমি কি করে তার ভালোবাসার মানুষের থেকে তাকে কেড়ে নেই। তুমি নিজেই তো ভাবিকে ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছ শুধুমাত্র সে যেন তার ভালোবাসার মানুষের সাথে ভালো থাকে। তাহলে আমার বেলায় এমনটা ভাবছ কেন
আমি: কি করবো বল নিজে যে কষ্ট পাচ্ছি সে কষ্ট বোনকে পেতে দেই কিভাবে
নীলিমা: হুম বুঝতে পারছি কিন্তু একবার রিয়ান ভাইয়ার কথা ভেবে দেখো সবাই চাপ দিলে হয়তো ভাইয়া রাজি হবে কিন্তু আমি কি আদৌ সুখী হবো তা….
আমি: তবুও
নীলিমা: বাদ দাওনা ভাইয়া সব ভালোবাসা কি পূর্ণতা পায়, আমাদের ভালোবাসা নাহয় অপূর্ণ রয়ে গেলো।
আমি: হুম।
আলিফা: আব্বু কিছু তো বলো (আলিফার কথা শুনে সামনে তাকালাম, আব্বু মাথা নিচু করে বসে আছেন)
আলিফা: আব্বু….
আব্বু: কি বলবো বল, এটাই তো হবার ছিল
আলিফা: মানে
আব্বু: আমার ছেলেটা তোর মাঝে নিলাকে খুঁজে পেয়েছিল তাই তোকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু তুই তো অন্য কারো তাই ডিভোর্স’টাই এখন একমাত্র রাস্তা
আলিফা: ওহ তারমানে ডিভোর্স এর সিদ্ধান্ত রিফাত একা নেয়নি তোমাদের সবার মতামত নিয়েই এইটা করেছে
আব্বু: আমার ছেলেটা কে পারলে ক্ষমা করে দিস, না বুঝে হুট করে বিয়ে করে তোর জীবনটা উ….
আলিফা: হয়েছে আর বলতে হবে না। সবাই যখন ডিভোর্স চাচ্ছ তাহলে এটাই হউক আমি সাইন করে দিচ্ছি।

আলিফা ডিভোর্স পেপারটা সামনে নিয়ে বসে আছে, হাতে কলম। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, রাগ দেখাচ্ছে আবার চোখে পানি ছলছল করছে। কষ্ট হচ্ছে খুব তাই ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। আলিফা চোখ সরাতেই সবার দিকে তাকালাম, সবাই মাথা নিচু করে রেখেছে। আলিফা আর একবার আমার দিকে তাকালো তারপর সাইন করতে গেলো….

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২৮

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফা: রাতুল তুমি এখানে
রাতুল: কি করবো আমাকে কিছু না জানিয়ে হুট করে রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে এসেছ
আলিফা: আমি তোমাকে ফোন করতাম এক্ষণি
রাতুল: আমি হসপিটালে এসে তোমাকে না পেয়ে ওখান থেকে বাসার এড্রেস নিয়ে চলে এসেছি।

নিলার ছবিটা বুকে জরিয়ে নিয়ে বারান্দায় বসে ছিলাম, হঠাৎ করে রুমের ভিতর থেকে আলিফা আর রাতুলের কন্ঠ ভেসে আসলো। নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি আর ওদের কথা শুনছি।
রাতুল: চলে আসলে আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না
আলিফা: বললাম তো এক্ষণি ফোন করতাম তোমাকে
রাতুল: এসেছ তো অনেক আগে
আলিফা: হ্যাঁ এসে বাসায় একটা জামেলা হয়েছিল তাই দিতে পারিনি
রাতুল: কি হয়েছিল
আলিফা: বাদ দাও এখানে এসেছ বাসায় তো আব্বু আছেন কি ভাববেন বলতো
রাতুল: ওহ তারমানে চলে যেতে বলছ
আলিফা: রাতুল ভুল বুঝনা প্লিজ
রাতুল: ভুল বুঝছি না আলিফা বুঝার চেষ্টা করো এখন অন্তত কিছু ভাবো
আলিফা: আমি কিছু ভাবতে পারছি না আর ভাবতে চাইও না এখন
রাতুল: এক বছর হয়ে গেছে আলিফা আর তো এভাবে চলতে পারে না
আলিফা: হ্যাঁ বুঝতে পারছি কিন্তু আমি কি করতে পারি বলবা প্লিজ
রাতুল: তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে তাতেই আমি রাজি
আলিফা: চলে যাচ্ছ কেন
রাতুল: সিদ্ধান্ত নিয়ে ফোন করো আসছি।
সবকিছু নীরব হয়ে গেলো, রাতুল মনে হয় চলে গেছে। রাতুল আর কি করবে রাগ করাটা তো স্বাভাবিক, তিনটা মানুষ একি দুটানায় ভুগছি। আর এসব কিছুর জন্য দায়ী আমি। তাই এখন যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমাকেই নিতে হবে, এভাবে আর চলতে পারে না।

রুমে এসে নিলার ছবিটা দেয়ালে রাখলাম, আলিফা বিছানায় শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ওর পাশে এসে বসলাম, মাথায় হাত দিতেই আলিফা আমার হাত সরিয়ে দিলো।
আলিফা: রিফাত আমার ভালো লাগছে না কিছু
আমি: সব ঠিক হয়ে যাবে কেঁদো না
আলিফা: বললাম তো ভালো লাগছে না, আমাকে একা থাকতে দাও প্লিজ।
আলিফা চেঁচিয়ে উঠলো, তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম।

আব্বুর রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছি, ভিতরে চাচ্চু ছোটমা আর প্রিতি আছে। সবার সামনে ডিভোর্স এর কথা বলতে ভয় করছে, সবাই তো কষ্ট পাবে।
চাচ্চু: রিফাত বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভিতরে আয়
আমি: হুম
প্রিতি: ভাইয়া চা খাবে এনে দেই
আমি: না
ছোটমা: কেন সবাই খাচ্ছি তো
আব্বু: কিরে কি হয়েছে মুখটা এমন লাগছে কেন
আমি: আব্বু উকিল চাচ্চু কে একটু ফোন করে বলে দাও আমি যাচ্ছি
আব্বু: হঠাৎ…
আমি: হঠাৎ কোথায় আব্বু এটাই তো হবার ছিল
প্রিতি: ভাবির সাথে কথা বলেছ
আমি: ওর সিদ্ধান্তের আশায় একটা বছর কেটে গেছে আর এখন তো রাতুল ফিরে এসেছে তাই এইটা ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই
ছোটমা: তুই কিভাবে…
আমি: ছোটমা প্লিজ তোমরা এসব বললে আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে পারবো না
চাচ্চু: তাই বলে নিজের কথাটা একবার ভাববি না
আমি: চাচ্চু আলিফা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো, ও যার সাথেই থাকুক শুধু সুখে থাকুক এইটুকুই চাই
ছোটমা: হুম যা ভালো মনে হয় কর
আমি: আব্বু ফোন করে বলে দিও।

রুমে আসলাম, আলিফা এখনো কেঁদে যাচ্ছে। ওর চোখে পানি দেখতে আর ভালো লাগে না। এবার ওর আর রাতুলের হাসার পালা। “আর বেশি দিন তোমাকে কাঁদতে হবে না রাগিণী” আলিফার দিকে একবার তাকিয়ে কথাটা মনে মনে ভেবে বেরিয়ে আসলাম।

উকিল চাচ্চুর সামনে বসে আছি সারা শরীর কাঁপছে বার বার ঘেমে যাচ্ছি, বুঝতে পারছি না এমন হচ্ছে কেন। বড্ড ভয় হচ্ছে সাথে কষ্ট, মনে হচ্ছে কেউ বুঝি আমার কলিজা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
চাচ্চু: রিফাত পানিটা খেয়ে নাও (চাচ্চুর কথায় সামনে তাকালাম, উনি পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই ঢকঢক করে খেয়ে ফেললাম। তবুও যেন অস্থির অস্থির লাগছে)
চাচ্চু: এতোই যখন ভালোবাস তাহলে ডিভোর্স এর জন্য এসেছ কেন
আমি: এক তরফা ভালোবাসা তো বেশি দিন বয়ে বেড়ানো যায় না চাচ্চু
চাচ্চু: হুম তোমার আব্বু ফোনে আমাকে সব বলেছেন
আমি: চাচ্চু যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় তুমি ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করে দাও, আমি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাই।
চাচ্চু: আরেকবার ভেবে দেখলে হয় না বাবা
আমি: সম্ভব না চাচ্চু
চাচ্চু: হুম
আমি: যদি পারো এখনি…
চাচ্চু: এতো তাড়াতাড়ি সম্ভব না তুমি বাসায় যাও আমি আগামীকাল সকালে পাঠিয়ে দিবো
আমি: ঠিক আছে
চাচ্চু: আরেকটু বসে যাও তোমার শরীর খারাপ লাগছে
আমি: না আমি ঠিক আছি চাচ্চু, আসি।

বেরিয়ে আসলাম, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুইটা বাজে। গ্রামে গিয়ে আবার ফিরে আসতে অনেক রাত হয়ে যাবে, তবুও যাবো। ফোনটা গাড়ির পিছনের সিটে ছুড়ে ফেলে দিলাম আজ একটু একা থাকতে চাই। ড্রাইভ করছি কিন্তু বার বার মাথা ঘুরছে, আজ না আবার এক্সিডেন্ট করে বসি। যাই হয়ে যাক শুধু একবার নিলার কবরের কাছে যেতে চাই। ওখানেই আমার শান্তির জায়গা।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে গাড়িতে বসে নিলার কবরের দিকে তাকিয়ে আছি। কেন যেন মনে হচ্ছে নিলার পাশে চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়তে পারলেই ভালো হতো। এলোমেলো পায়ে হেটে নিলার কবরের পাশে এসে দফ করে বসে পড়লাম। এক হাত দিয়ে নিলার কবর জরিয়ে ধরে আছি, ভিতর থেকে যেন কোনো কথা বের হচ্ছে না। দুটু চোখ থেকে অঝরে পানি ঝরছে। আমার চোখের পানি নিলার কবর ভিজিয়ে দিচ্ছে, আর বার বার নিলাকে বলতে চাইছে “তোর পাশে আমাকে একটু জায়গা দিবি পাগলী, তুই যেভাবে সব যন্ত্রণা ভুলে নীরবে ঘুমিয়ে আছিস আমিও সেভাবে সব যন্ত্রণা ভুলে সারাজীবনের জন্য তোর পাশে ঘুমিয়ে পড়তে চাই”

নিলার কবর আকড়ে ধরে বসে ছিলাম হঠাৎ মনে হলো অনেক রাত হয়েছে বাসায় যেতে হবে। তাড়াতাড়ি গাড়িতে এসে বসলাম। ড্রাইভ করছি কিন্তু কেন যেন এখন কোনো কষ্ট হচ্ছে না শান্তি লাগছে নিলার কবরের কাছে এসে। হয়তো আরো বেশি শান্তি লাগতো যদি একেবারে নিলার পাশে ঘুমিয়ে পড়তে পারতাম।

বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই কে যেন দরজা খুলে দিলো, তাকিয়ে দেখি ছোটমা। ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় বসে পড়লাম, বাসার সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে।
রিয়ান: ভাইয়া কোথায় ছিলে তুমি
আব্বু: রাত একটা বাজে রিফাত তোর এখন বাসায় ফিরার সময় হয়েছে
আমি: (নিশ্চুপ)
ছোটমা: একি তোর শরীরে মাটি লাগানো কেন কোথায় ছিলি তুই
নীলিমা: আমার মনে হয় ভাইয়া গ্রামে গিয়েছিল
আলিফা: গ্রামে কেন যাবে (আলিফা যে এখানে লক্ষই করিনি, এই অসুস্থ শরীর নিয়ে…)
আমি: আলিফা তুমি এখানে কেন ঘুমাওনি
প্রিতি: আজ যা করেছ কারো চোখে ঘুম আসবে নাকি
আমি: কি করলাম
প্রিতি: সেই সকালে বেড়িয়েছিলে আর বাসায় আসোনি, সারাদিন ফোন করেছি রিসিভ করনি
আমি: ওহ ফোনটা গাড়ির পিছনে বোধহয় পড়ে আছে
রিয়ান: ভালো তো বাড়ির সবাইকে চিন্তায় রেখে….
চাচ্চু: রিফাত চলে যাচ্ছিস কেন
আমি: এখানে বসে থেকে কি করবো
প্রিতি: খাবে না
আমি: না
চাচ্চু: কোথায় গিয়েছিলি এইটা অন্তত বলে যা (একের পর এক প্রশ্ন শুনতে শুনতে রাগ উঠে যাচ্ছে)
আমি: গ্রামে গিয়েছিলাম নিলার কাছে
আব্বু: তাই বলে কাউকে না জানিয়ে
আমি: আব্বু আমি মারা গেলে নিলার কবরের পাশে আমার কবর দিও। (চোখের পানি মুছতে মুছতে রুমে চলে আসতে চাইলাম)
আব্বু: রিফাত দাঁড়া
আমি: কিছু বলবে
আব্বু: সবাই ঘুমাতে যাও আর রিফাত তুই আমার রুমে আয়
আমি: হুম।

আব্বুর পিছু পিছু রুমে আসলাম, আব্বু দরজা লাগিয়ে দিলেন।
আব্বু: বস
আমি: হুম (আমি বসতেই আব্বু আমার পাশে এসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন)
আব্বু: রিফাত তুই কি সুইসাইড করার চিন্তা করছিস (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আব্বুর দিকে, আমি সুইসাইড করার চিন্তা করছি আব্বু বুঝলেন কিভাবে)
আব্বু: ছোটবেলা থেকে তো আমিই তোদের বড় করেছি তাই কখন কি ভেবে কোন কথাটা তোরা বলিস সেটা আমি বুঝতে পারি।
আমি: আব্বু
আব্বু: তখন বললি না তোকে যেন নিলার কবরের পাশে কবর দেই তখনি আমি বুঝতে পেরেছি
আমি: (নিশ্চুপ)
আব্বু: এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলি একবারো আমার কথা, রিয়ান প্রিতির কথা ভাবলি না। ভালোবাসা ছাড়া বেঁচে থাকা কষ্টের জানি তাই বলে পরিবারের ভালোবাসা কে তুচ্ছ করবি। আমরা কি তোকে কম ভালোবাসি যে আলিফা চলে যাওয়াতে তোকে সুইসাইড করতে হবে।
আমি: (নিশ্চুপ)
আব্বু: জানি এক কষ্ট দুইবার পেয়েছিস, একি আঘাত দুইবার সহ্য করতে গিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিস কিন্তু একবার আমাদের কথা ভাব। আমরা তোকে কতো ভালোবাসি তোকে ছাড়া তো আমাদের থাকতে কষ্ট হবে। মানছি আলিফা চলে গেলে নতুন করে আর কাউকে ভালোবাসতে পারবি না কিন্তু আমাদের ভালোবাসা তো আছে। একটা কথা মনে রাখিস বাবা সবাই ছেড়ে চলে গেলেও পরিবার কখনো ছেড়ে যাবে না, পরিবারের ভালোবাসা সবসময় থাকবে। আমি রিয়ান প্রিতি তোকে কতো ভালোবাসি আমাদের ভালোবাসায় কি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবি না।
আমি: আব্বু সরি (আব্বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদছি আব্বুও কাঁদছেন)
আব্বু: সুইসাইড করতে নেই বাবা পাপ হয়, আল্লাহর উপর ভরসা রাখ দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে
আমি: সরি আব্বু আর কখনো এসব ভাববো না
আব্বু: হুম যা ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড় গিয়ে
আমি: হুম।

ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করে পিছনে তাকালাম। আলিফা এসে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি: ঘুমাও গিয়ে অনেক রাত হয়েছে
আলিফা: সারাদিন আমাকে টেনশন দিয়ে এখন আমার ঘুমানো নিয়ে টেনশন করছ
আমি: সরি যাও ঘুমিয়ে পড়ো
আলিফা: অনেক রাত হয়েছে তুমিও চলো ঘুমাবে
আমি: হুম।
আলিফা চলে গেলো, যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাই দাঁড়িয়ে রইলাম। পকেট থেকে ঘুমের ওষুধ গুলো বের করে ফেলে দিলাম। থাক না আব্বু আর ভাই বোনের ভালোবাসায় নাহয় বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবো। সত্যিই তো সবাই ছেড়ে চলে গেলেও পরিবার কখনো ছেড়ে যায় না আর আমি কিনা সেই পরিবার কে কষ্ট দিতে যাচ্ছিলাম।
আলিফা রুমের লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছে দেখে রুমে আসলাম।

আলিফার পাশে এসে শুয়ে পড়লাম, আজ রাগ দেখাচ্ছে না শুধু অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে আছে। আমিও অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে রইলাম।
আমি: আলিফা আমার শেষ একটা কথা রাখবে
আলিফা: শেষ কথা মানে
আমি: না মানে
আলিফা: কি হয়েছে তোমার হ্যাঁ কিসব উলটাপালটা কথা বলছ (আমার হাত ধরে টানতে শুরু করলো, ওকে জরিয়ে ধরলাম)
আমি: আলিফা শুধু আজকের রাতটা আমাকে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে দিবে
আলিফা: রিফাত হয়েছে কি তোমার
আমি: প্লিজ
আলিফা: হুম।

আলিফার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছি, ও আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে।
আলিফা: রিফাত কাঁদছ কেন তুমি
আমি: নাতো
আলিফা: তোমার চোখের পানিতে আমার বুক ভিজে যাচ্ছে আর তুমি নাতো বলছ, কি হয়েছে বলতো।
আমি: কিছুনা ঘুমুতে দাও
আলিফা: হুম।
আলিফা আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আমার চোখ থেকে অবাধ্যের মতো পানি ঝরছে। আলিফা তো জানেনা সকালে ওকে আমি ওর জীবনের সবচেয়ে বড় গিফট’টা দিবো। আলিফা অনেক খুশি হবে ওর রাতুলকে ফিরে পেয়ে। কাল আমাদের দুজনের রাস্তা আলাদা হয়ে যাবে সারা জীবনের জন্য। ডিভোর্স হয়ে যাবে কাল আমাদের।

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২৭

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

একটু রেস্ট নিতে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। হঠাৎ চুলে কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেলো। তাকিয়ে দেখি ছোটমা।
আমি: ছোটমা তুমি কিছু বলবে
ছোটমা: তোর ফোন কোথায়
আমি: দেখিনি
ছোটমা: সেই সকাল বেলা ঘুমিয়েছিলি বিকেল হয়ে গেছে….
আমি: কি (তাড়াতাড়ি দেয়াল ঘড়িতে তাকালাম সত্যিই তো পাঁচটা বাজে। এতো সময় ঘুমালাম আমি)
ছোটমা: তুই ক্লান্ত ছিলি জানি তাই আর ডাকিনি কিন্তু
আমি: কি
ছোটমা: আলিফা বার বার ফোন করছে তুই যাওয়ার জন্য
আমি: আজকে রাগিণী আমার বারোটা বাজাবে (তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম, ফোনটা টেবিলের উপর দেখে হাতে নিয়েই এক দৌড় দিলাম)
ছোটমা: রিফাত কিছু খেয়ে যা
আমি: খেয়ে নিবো চিন্তা করো না।

এতো তাড়াহুড়ো করে হসপিটালে এসে এমন দৃশ্য দেখবো ভাবতেও পারিনি। আলিফা রাতুলের কাধে মাথা রেখে বসে আছে, দরজা থেকে দেখেই চলে আসতে চাইলাম। আলিফা ডাক দিলো।
আমি: রিফাত যেও না (আলিফা আমাকে ডাক দিতেই রাতুল সরে বসলো, আমি মৃদু হেসে আলিফার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম)
আলিফা: কয়টা বাজে
আমি: সরি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
আলিফা: রাগ করেছি
আমি: সরি তো এইযে কান ধরছি
আলিফা: যাও মাফ করে দিলাম
আমি: মাফ চাওয়ার আগেই মাফ করে দিয়েছ (হঠাৎ মনে পড়লো সেদিন ও মাফ করে দিয়েছি বলাতে ঠোঁটে মায়া দিছিলাম কিন্তু আজ…)
আলিফা: কি হলো এভাবে হা করে দাঁড়িয়ে আছ কেন
রাতুল: আমি এখানে আছি তো তাই হয়তো ভাইয়ার খারাপ লাগছে
আমি: না না খারাপ লাগবে কেন আসলে ঘুম থেকে উঠেই তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছি তো কে….
আলিফা: এতো তাড়াহুড়ো করে আসতে বলছে কে, ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে আসবা তো (একদিকে রাতুলের কাধে মাথা রাখে আবার আমার প্রতি মায়া দেখায়, ইচ্ছে হচ্ছে এখন…)
আলিফা: কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন
আমি: এমনি
রাতুল: আলিফা আমাকে এখন যেতে হবে প্লিজ
আলিফা: ওকে যাও।

রাতুল চলে যেতেই আলিফার থেকে দূরে এসে বসলাম, মোবাইল বের করে গেইম খেলায় মন দিলাম। আলিফাকে যতো এড়িয়ে চলবো এখন ততোই কষ্ট কম পাবো। তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখাই উত্তম কাজ।
আলিফা: রিফাত তুমি তো বলো আমার থেকে দূরে থাকো না তাহলে এখন কি কাছে আছ
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: রিফাত
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: কথা বলছ না কেন
আমি: রাতুলের কাধে মাথা রেখে দিব্বিই তো ছিলে তাহলে এখন আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়েছ কেন
আলিফা: ওহ এই জন্য রাগ করেছ
আমি: রাগ তার উপর করা যায় যে ভালোবাসে তুমি তো…
আলিফ: কি আমি তোমাকে ভালোবাসি না
আমি: (মৃদু হাসলাম)
আলিফা: বলছ না কেন
আমি: প্রশ্নটা নিজের মন কে করো আমার চেয়ে সে ভালো উত্তর দিতে পারবে
আলিফা: কোথায় যাচ্ছ।
ওর সামনে যতো থাকবো ততোই কষ্ট পাবো। কেবিনের বাইরে এসে বসে রইলাম।
নার্স: আপনি এই কেবিনের মেয়েটির হাজবেন্ড না (হঠাৎ নার্স এর কথায় সামনে তাকালাম)
আমি: হ্যাঁ কেন
নার্স: আপনি এখানে বসে আছেন কেন, জানেন আপনার স্ত্রী আজ সারাদিন কিছু খাননি ওষুধ পর্যন্ত খাননি
আমি: মানে কেন
নার্স: আপনার উপর রাগ করে, কতোবার যে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আপনি এসেছেন কিনা। (বোকার মতো বসে আছি নার্স কি বলছে এসব)
নার্স: আরেকজন ছেলে যে আসে উনি অনেকবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু কিছু খাওয়াতে পারেননি। আপনার স্ত্রীর একটাই কথা আপনি ফোন রিসিভ না করলে এখানে না আসলে কিছু খাবে না। আপনি প্লিজ ভিতরে যান উনি ওষুধ না খেলে প্রবলেম হয়ে যাবে
আমি: ঠিক আছে।

ভিতরে এসে দেখি আলিফা নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে, ওর দুই চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। আস্তে গিয়ে ওর পাশে বসে চোখের পানি আলতো করে মুছে দিলাম।
আমি: কাঁদছ কেন
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি যাইনি তো বাইরে বসে ছিলাম
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: রাগিণী কে কাঁদলে একদম মানায় না (কথাটা বলতেই কাঁদতে কাঁদতে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো)
আমি: পাগলী এভাবে কাঁদছ কেন
আলিফা: সরি আর কখনো রাতুলের কাধে মাথা রাখবো না আসলে ও খুব রিকুয়েস্ট করছিল তাই, আর হবে না তুমি আমার উপর রাগ করে চলে যেও না প্লিজ
আমি: দূর পাগলী আমি তোমার উপর রাগ করে চলে যেতে পারবো নাকি আমি তো বাইরে বসে ছিলাম
আলিফা: ইসস আমি না জেনে অজতাই এতোক্ষণ কেঁদেছি। (চোখের পানি মুছে এসে আমার কাধে মাথা রেখে আমাকে জরিয়ে ধরলো। আমিও জরিয়ে ধরলাম)
আমি: সারাদিন কিছু খাওনি কেন
আলিফা: তোমাকে পাঠাইছিলাম নীলিমার সাথে কথা বলার জন্য আর তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছ, আমি তো জানতাম না সারাদিন ফোন দিয়েছি রিসিভ করনি সন্ধ্যায় বাসায় ফোন করার পর ছোটমা বললো তুমি ঘুমে তাই রাগ করে সারাদিন খাইনি
আমি: রিয়ান কোথায় ও তোমাকে খাওয়াতে পারলো না
আলিফা: ও তো বিকেলে চলে গেছে বললো বন্ধু ফোন করেছে। তখন অবশ্য রাতুল চলে এসেছিল।
আমি: আচ্ছা এখন খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও
আলিফা: আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না, ডক্টর তো বলেছে বাসায় চলে যেতে পারবো
আমি: হ্যাঁ বলেছে তবে বাসায় নিয়ে….
আলিফ: সেবা করতে হবে তাই তো। সেবা করার জন্য তো তুমি আছ প্লিজ
আমি: ঠিক আছে যদি সকালে রিলিজ করে দেয় তাহলে বাসায় নিয়ে যাবো
আলিফা: হিহিহি থ্যাংকু (হাসতে হাসতে এসে আমার গালে চুমু দিয়ে দিলো, আমি তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। এই প্রথম ও আমায় নিজে থেকে চুমু দিয়েছে)
আলিফা: কি হলো (আলিফার ধাক্কায় হুশ ফিরলো, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললাম)
আমি: কিছু হয়নি শুধু তোমার ছুঁয়ায় একটু জমে গিয়েছিলাম (কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো পরক্ষণেই লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো, পাগলী একটা।)

সকাল হতেই ডক্টর এর সাথে আলিফাকে রিলিজ করে দেওয়ার কথা বললাম। ডক্টর নিয়ে যেতে বললো তবে সাবধানে থাকতে হবে সবসময় ওর খেয়াল রাখতে হবে। রিয়ানকে ফোন করে আসতে বললাম। সবকিছু গুচাচ্ছি হঠাৎ আমার ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো। নীলিমার মেসেজ, “ভাইয়া আরোহী কে নিয়ে বাসায় আসছি তুমি চলে এসো”
আলিফা: দেখি কার মেসেজ এতো মন দিয়ে পড়ছ (আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো, এই পাগলী কে নিয়ে আর পারা যায় না)
আলিফা: তুমি আরোহীকে বাসায় আনতেছ কেন
আমি: শাস্তি দিবো
আলিফা: মানে কি করবে তুমি
আমি: ও আমার নিলাকে খুন করেছে আমি ওকে খুন করবো
আলিফা: একদম চুপ তুমি খুন করে জেলে চলে গেলে আমি কার কাছে যাবো
আমি: কেন রা… (বলতে গিয়েও থেমে গেলাম যদি আবার রাগ করে)
আলিফা: কি বলতে চাইছিলে বলো থেমে গেলে কেন
রিয়ান: ভাইয়া চলো (যাক রিয়ান এসে বাঁচিয়ে দিলো)
আলিফা: বেঁচে গেলে
আমি: হিহিহি।

সারা রাস্তা আলিফা আমার কাধে মাথা রেখে বসে ছিল। বাসায় এসে রিয়ান কলিংবেল চেপেই বললো
রিয়ান: ভাইয়া তুমি ভাবিকে নিয়ে যাও আমি আসছি
আমি: কোথায় যাচ্ছিস
রিয়ান: ভাবি কে কোলে তোলে নিয়ে যাও আসছি।
রিয়ান চলে গেলো, কোথায় যাচ্ছে বলেও গেলো না।
আলিফা: রিয়ানের চিন্তা বাদ দাও আমাকে কোলে করে নিয়ে যাও
আমি: মুটকি মানুষ আমি কোলে নেই না
আলিফা: কি বলেছ
আমি: কিছু না তো।

আলিফাকে কোলে করে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি এখনো কেউ দরজা খুলছে না। আবার কলিংবেল চাপতেই দরজা খুললো, সামনে তাকিয়ে দেখি আরোহী দরজা খুলেছে। ইচ্ছে তো হচ্ছে একটা লাত্তি মেরে দেই কিন্তু আলিফা কোলে।
আমি: নীলিমা দরজাটা লাগিয়ে দে।
নীলিমা দরজা লাগিয়ে দিলো, আরোহী এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে অবাক চোখে।

আলিফাকে এনে সোফায় বসিয়ে দিলাম। আরোহী কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
আমি: আব্বু, চাচ্চু, ছোটমা ওরা সবাই কোথায় রে নীলিমা
নীলিমা: রুমেই আছে
আরোহী: মানে কি নীলিমা তুই না বললি বাসায় রিফাত ছাড়া কেউ নেই
আমি: বাসায় আমি একা আছি শুনেই চলে এলে মতলব কি বলো তো
আরোহী: রিফাত আমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন
আমি: খারাপ কিছু বলেছি নাকি
আরোহী: নীলিমা তুই তো বলেছিলি রিফাতকে সব বলেছিস
নীলিমা: বলেছি তো তুমি ভাইয়া কে ভালোবাস আর সেটা আবার তুমি নিজে বলার জন্যই তো বাসায় আনলাম
আমি: হ্যাঁ আরোহী নীলিমা আমাকে বলেছে তুমি আমাকে ভালোবাস। আর এইটা তো নতুন না অনেক আগেই তো তুমি আমাকে প্রপোজ করেছিলে
আরোহী: হ্যাঁ
আমি: তোমার প্রপোজ যদি আমি এখন একসেপ্ট করি
আলিফা: রিফাত কি বলছ এসব
আরোহী: সত্যি বলছ রিফাত (আস্তে আস্তে আরোহীর কাছে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ালাম, ও খুশিতে হাসছে দেখে রাগটা বেড়ে গেলো, ঠাস করে ওর গালে একটা থাপ্পড় দিলাম। আব্বু চাচ্চুরা সবাই ড্রয়িংরুমে চলে এসেছেন এখন শুরু করা যায়। আরো কয়েকটা থাপ্পড় দিলাম)
আরোহী: রিফাত তুমি আমাকে মারছ কেন
নীলিমা: তো তুমি কি ভাইয়ার আদর পাওয়ার জন্য খালি বাসা ভেবে এসেছিলে নাকি
আমি: ওর মতো মেয়ের থেকে তো এটাই আশা করা যায়
আরোহী: কি বলছ তোমরা আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না
আব্বু: রিফাত কি হয়েছে বল তো
আমি: আব্বু চুপচাপ শুধু দেখে যাও
আরোহী: নীলিমা তুই আমাকে অপমান করার জন্য এনেছিস, আমি চলে যাচ্ছি
আমি: যেতে দিলে তো যাবে
আরোহী: কেন করছ এমন
আমি: আরো কয়েকটা থাপ্পড় খেলে পর বুঝতে পারবি কেন করছি এসব
নীলিমা: আমি স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি তুমিও স্পষ্ট করে বলে দাও
আরোহী: কি
নীলিমা: নিলা আপুর পানির গ্লাসে বিষ দিয়েছিলে কেন
আরোহী: মানে
আমি: অবুঝ হবার বান করতে হবে না। নিলার পানির গ্লাসে বিষ দিয়েছিলি, আলিফা আর আমাকে আলাদা করার জন্য ডিভোর্স পেপার রেখেছিলি, আলিফাকে গাড়ি চাপা দিয়ে মারার চেষ্টা করেছিলি। এসব কিছুর প্রমাণ আছে আমার কাছে
ছোটমা: কি বলছিস এসব রিফাত
নীলিমা: আম্মু সব সত্যি
আরোহী: মিথ্যে কথা আমি এসব করিনি
আমি: আবার মিথ্যে….
নীলিমা: ভাইয়া আর কয়েকটা থাপ্পড় দাও দেখবে সত্যি কথা বলে দিবে
আব্বু: রিফাত ওর গায়ে হাত তুলবি না
আমি: হাত না তুললে ও মুখ খুলবে না আব্বু
আরোহী: আমার গায়ে আর একটা আছরও যদি দিয়েছ ভালো হবে না কিন্তু
আমি: কি করবি হ্যাঁ (আরো কয়েকটা থাপ্পড় দিতেই ও চেঁচিয়ে উঠলো)
আরোহী: হ্যাঁ আমি সব করেছি নিলাকে বিষ খাইয়ে মেরেছি, এসবের জন্য আমার এতটুকুও ভয় হয় না বেশ করেছি ওকে মেরে।
ছোটমা: তোমাকে নিজের মেয়ের মতো ভাবতাম আর তুমি কিনা….
আরোহী: কি করবো হ্যাঁ, রিফাতকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি কিন্তু ও আমাকে কোনো পাত্তাই দিতো না। নিলাকে কখনো বুঝতে দেইনি আমি যে রিফাতকে ভালোবাসি কিন্তু রিফাতকে অনেক বার বুঝিয়েছি নিলার চোখের আড়ালে। রিফাত আমার কোনো কথাই শুনেনি ওর মুখে শুধু একটাই নাম শুধু নিলা নিলা নিলা। অসহ্য লাগতো এসব। নিলাকে আরো অনেক আগেই মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ও আমাকে বলেছিল ওর নাকি কি রোগ হয়েছে ডক্টর বলেছে ওর হাতে বেশি সময় নেই, তাই আর মারার চেষ্টা করিনি। নিলা সারাক্ষণ ভয় পেতো কাউকে বলতে পারতো না রিফাত শুনলে কষ্ট পাবে তাই। এর মধ্যেই সবাই রিফাত আর নিলার বিয়ে ঠিক করে। ভেবেছিলাম বিয়ের আগেই ও মারা যাবে কিন্তু ও বলেছিল একদিনের জন্য হলেও রিফাতের বউ হতে চায়, সহ্য করতে পারিনি ওর এসব ভালোবাসা। তাই বিয়ের দিন ওর পানির গ্লাসে বিষ মিশিয়ে রাখি আর নিলা সে পানি খেয়ে মারা যায়। কেউ বুঝতেও পারেনি নিলাকে যে আমি খুন করেছি, সবাই ভেবেছিল নিলা সুইসাইড করেছে। কিন্তু এতো বছর পর….
আমি: আমিও বুঝতে পারিনি, ওই যে সোফায় বসা মেয়েটাকে দেখছিস যাকে তুই গাড়ি চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছিলি সেই সবকিছু বের করেছে আর তুই যে আসল খুনি….
আরোহী: গাড়ি চাপা দিয়েছিলাম ও মরেনি কিন্তু এখন তো ওকে আমি মেরেই ফেলবো (আরোহী আলিফার দিকে এগিয়ে গেলো, ওর হাত ধরে টান দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলাম)
আমি: আমার এক কলিজা মেরেছিস আরেক কলিজায় হাত দেয়ার ফল এখন পাবি
নীলিমা: ভাইয়া কি করছ চাকু আনছ কেন
আলিফা: রিফাত ও খুব খারাপ মেয়ে যেও না ওর কাছে (চাকু নিয়ে আরোহীর কাছে যেতেই প্রিতি এসে সামনে দাঁড়ালো)
প্রিতি: পাগল হয়ে গেছ ওর মতো মেয়েকে খুন করে জেলে যাবা নাকি। আর নীলিমা আপু এই ফল কাটার চাকুটা এখানে রেখেছিলে কেন
নীলিমা: আমি জানতাম নাকি ভাইয়া এমন করবে
রিয়ান: ভাইয়া সরে এসো পুলিশ এসেছে আরোহীর ব্যবস্থা এখন ওরাই করবে (সরে এসে দাঁড়ালাম, পুলিশ আরোহীকে এরেস্ট করলো)
আমি: রিয়ান পুলিশ আনতে গেলি কেন ওকে খুন করা উচিত ছিল
প্রিতি: হ্যাঁ করো খুন করে জেলে চলে যাও আর আমরা কেঁদে মরি
আব্বু: প্রিতি তুই হোস্টেল থেকে আসতে গেলি কেন
প্রিতি: ভাগ্যিস নীলিমা আপু ফোন করে সব বলেছিল তাই এসেছি
আব্বু: আরোহীকে নিয়ে যান আপনারা
পুলিশ: আপনারা চিন্তা করবেন না ওর ব্যবস্থা আমরা ভালো করেই করবো
আরোহী: নীলিমা তোকে তো আমি ছাড়বো না তোকে আমি…(রিয়ান গিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় দিলো)
রিয়ান: আগে জেলে গিয়ে ফাসির দিন গুন তারপর মরে ভূত হয়ে আসিস নীলিমার ক্ষতি করতে।
পুলিশ আরোহীকে নিয়ে চলে গেলো। বাসার সবাই কাঁদছে, ছোটমা বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন।
রিয়ান: ভাইয়া ভাবিকে এখান থেকে নিয়ে যাও
আমি: হুম।

আলিফাকে রুমে এনে শুয়ে দিলাম। কিছু ভালো লাগছে না তাই বারান্দার দিকে পা বাড়ালাম।
আলিফা: রিফাত
আমি: আলিফা আমি একটু সময় একা থাকতে চাই প্লিজ
আলিফা: হুম।

নিলার ছবিটা বুকে জরিয়ে ধরে বারান্দায় বসে আছি। বাসার সবাই তো কাঁদছে কিন্তু আমার কান্না পাচ্ছে না কেন। বরং আজ শান্তি লাগছে নিলার খুনিকে শাস্তি দিতে পেরেছি এইটা ভেবে। নিলার ছবিটার দিকে তাকালাম। আজ ওকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে “তুই একদিনের জন্য হলেও আমার বউ হতে চেয়েছিলি আর আমি কিনা তোকে আগলে রাখতে পারিনি, আমায় মাফ করে দিস পাগলী”

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২৬

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

নীলিমাকে কি এখন কিছু জিজ্ঞেস করবো বুঝতে পারছি না। তখন নীলিমা ফোনে একটা কথা বলেছিল “আপু তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি” এই কথাটার মানে কি তাহলে কি আরোহীর সাথে নীলিমা যুক্ত আছে। নাহ নীলিমাকে এখন কিছু বলবো না আগে আলিফার সাথে কথা বলা প্রয়োজন।
রিয়ান: ভাইয়া কোথায় যাচ্ছ
আমি: হসপিটালে
রিয়ান: আমি যাচ্ছি তুমি একটু রেস্ট নাও
আমি: না আলিফার সাথে আমার প্রয়োজন আছে
রিয়ান: আচ্ছা দাঁড়াও ভাবিকে দেখতে যাবো আমি
আমি: হুম চল।

রিয়ানের সাথে কথা বলতে বলতে হসপিটালে চলে আসলাম। আলিফার রুমে ঢুকতে যাবো হঠাৎ একটা কথা শুনে রিয়ান আমি থমকে দাঁড়ালাম।
আলিফা: রাতুল বুঝার চেষ্টা করো আমি এসব নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না। আর আমি অসুস্থ রিফাতের মনের অবস্থা দেখেছ এখন কিভাবে এসব বলি
রাতুল: হুম বাদ দাও
আলিফা: আমাকে সুস্থ হওয়ার সময় দাও প্লিজ
রাতুল: হুম।
সবকিছু আবার নীরব হয়ে গেলো। রিয়ান আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি: কি কিছু বুঝিসনি
রিয়ান: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি সিউর আলিফা ডিভোর্স এর কথা ভাবছে
রিয়ান: ভাবি কি এই শব্দটা একবারো বলেছে সবসময় এতো বোকা বোকা কথা বলো কেন
আমি: এখন আমার কথা বোকা বোকা কথা মনে হচ্ছে সময় হলে ঠিক বুঝতে পারবি
রিয়ান: কচু বুঝবো তুমি বুঝ ভালো করে
আমি: চল
রিয়ান: হুম চলো ভাবিকে ডিভোর্স নিয়ে কোনো কথা বলবা না বলে দিলাম
আমি: হুম।

আমরা ভিতরে আসতেই রাতুল চলে যেতে চাইলো।
রিয়ান: রাতুল ভাইয়া চলে যাচ্ছেন কেন
রাতুল: তোমরা তো আছ পরে আবার আসবো
রিয়ান: হুম যান বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নিন
রাতুল: হুম। (রিয়ান যে চাচ্ছেই রাতুল চলে যাক সেটা রাতুল বুঝতেও পারলো না)
রিয়ান: ভাবি এখন কেমন আছ
আলিফা: ভালো, আমি বাসায় যাবো কবে
রিয়ান: আমি ডক্টর এর সাথে কথা বলে আসছি
আলিফা: হুম।
রিয়ান যেতেই আলিফা আমাকে ওর পাশে গিয়ে বসতে বললো। আলিফার পাশে বসে আছি কিন্তু কেন যেন ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছি না।
আলিফা: হয়েছে কি তোমার, আমার থেকে দূরে দূরে থাকো কেন
আমি: কোথায় নাতো
আলিফা: আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলো
আমি: বাদ দাওনা
আলিফা: না বলো কেন তুমি এতো দূরে দূরে থাকো
আমি: মায়া কাটানোর চেষ্টা করছি
আলিফা: কি
আমি: কিছুনা, একটা কথা বলার ছিল
আলিফা: বলো
আমি: তুমি তো বলেছিলে কোনো মেয়ে আমাকে ভালোবাসতো কিনা, পেয়েছি আরোহী নিলার বেস্ট ফ্রেন্ড….
আলিফা: তাহলে নিশ্চিত হয়ে নাও এই মেয়েই খুনি
আমি: হতে পারে কিন্তু প্রমাণ তো লাগবে
আলিফা: আচ্ছা তুমি পেয়েছ কিভাবে
আমি: আরোহীর সাথে নীলিমার যোগাযোগ আছে
আলিফা: নীলিমা যুক্ত নয় তো
আমি: সেটাই তো ভাবছি
আলিফা: তুমি নীলিমার সাথে কথা বলো জিজ্ঞেস করো যে….
আমি: ও বলবে নাকি
আলিফা: চেষ্টা তো করে দেখো
আমি: ঠিক আছে
আলিফা: তোমার হাতটা দাও তো (হাত বাড়াতেই ও আমার হাত শক্ত করে ধরে আমার দিকে তাকালো)
আলিফা: এবার বলো কি হয়েছে তোমার আমাকে এড়িয়ে চলছ কেন
আমি: কখন এড়িয়ে চললাম ভালোবাসার মানুষকে এড়িয়ে চলা যায় নাকি
আলিফা: রাতুল ফিরে এসেছে তাই এমন চুপচাপ হয়ে গেছ তাই না
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: আমাকে তোমরা একটু সময় দাও আমি এই অবস্থায় টেনশন নিতে পারছি না। সুস্থ হই দেখো আমি নিজেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিবো।
আমি: সিদ্ধান্ত তো একটাই হয় আমাকে ছাড়তে হবে নাহয় রাতুলকে
আলিফা: সিদ্ধান্ত তো এইটাও হতে পারে দুজনকেই ছেড়ে দিবো (কিছু না বলে আলিফার দিকে তাকিয়ে আছি, জানি তো ওকে আমার হারাতে হবেই। আর এখন তো ওর কথাতেই বুঝা গেছে)

নিলাকে ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছিলাম ওর স্মৃতি নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতাম ভালো হতো। কেন যে এই মিথ্যে মায়ায় জড়াতে গেলাম। এখন না পারছি আলিফাকে ছাড়তে না পারছি ওকে ধরে রাখতে। আমি নাহয় কোনো সিদ্ধান্ত নিলাম না কিন্তু আলিফা যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিবে তখন তো আমি মানতে বাধ্য….
রিয়ান: ভাইয়া আসবো
আমি: হুম আয়
রিয়ান: ভাবি ডক্টর বলেছে দু সপ্তাহ থাকতে হবে
আলিফা: আমি এতোদিন থাকতে পারবো না প্লিজ
রিয়ান: ডক্টর অবশ্য আর একটা কথা বলেছে
আলিফা: কি
রিয়ান: আমরা যদি তোমাকে বাসায় নিয়ে সেবা করতে পারি তাহলে দু-তিন দিন পর তুমি বাসায় চলে যেতে পারো কিন্তু আমরা তো নিবো না
আলিফা: আমাকে দেখার জন্য তো রিফাত আছেই ও আমার কোনো ক্ষতি হতে দিবে না আমি জানি। প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো (রিয়ান আমি দুজনেই আলিফার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা এখনো আমার উপর এতো ভরসা করে)
আলিফা: আরে কি হলো দু ভাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছ কেন
রিয়ান: দেখেছ ভাইয়া এতো কিছুর পরও ভাবি তোমার উপর কতোটা ভরসা করে আর তুমি কিনা….
আলিফা: রিয়ান কি হয়েছে
রিয়ান: কিছু না ভাবি
আলিফা: আমার থেকে সবাই কথা লুকায়
আমি: রিয়ান তুই থাক আমি আসছি
রিয়ান: কোথায় যাবে
আমি: বাসায়
রিয়ান: এখন আসলাম মাত্র এখনি চলে যাবে
আলিফা: রিয়ান ওকে যেতে দাও
রিয়ান: ঠিক আছে।

বাসায় এসে নীলিমাকে খুঁজতে সোজা ওর রুমে গেলাম, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
আমি: নীলিমা (আমার ডাক শুনে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলো)
আমি: তুই কাঁদছিলি
নীলিমা: নাতো
আমি: আমার সাথে চল
নীলিমা: কোথায়।
নীলিমার হাত ধরে টেনে ওকে ছাদে নিয়ে আসলাম।

ছাদে এসে নীলিমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, আমার মাথায় কিছুতেই আসছে না নীলিমার মতো মেয়ে এতো চুপচাপ হলো কিভাবে। সবসময় কাঁদছে কাউকে কিছু বলছে না, কিছু জিজ্ঞেস করলে লুকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আজ ওকে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
আমি: নীলিমা
নীলিমা: হুম
আমি: দেখ এখানে কেউ নেই তুই আর আমি ছাড়া তাই আমি যা জিজ্ঞেস করি নির্ভয়ে বল
নীলিমা: কি জানতে চাও
আমি: তুই কাকে ভালোবাসিস (এতক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল আমার প্রশ্নটা শুনে আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকালো)
আমি: দেখ আমি যে শুধু তোর বড় ভাই তা কিন্তু না, বড় ভাই যেমন শাসন করতে জানে তেমন ভালোবাসতেও জানে প্লিজ তুই নির্ভয়ে বল
নীলিমা: আগে কথা দাও কাউকে বলবা না
আমি: ঠিক আছে
নীলিমা: আমি রিরিরিয়া….
আমি: মাথা নিচু করে কি এতো তোতলাচ্ছিস ভালোবাসার কথা কি মানুষ মাথা নিচু করে বলে
নীলিমা: ভয় করে যে
আমি: কিসের ভয়টা বলবি তো
নীলিমা: যাকে ভালোবাসি সে যদি আমাকে বুঝতে না চায় যদি আমাকে ফিরিয়ে দেয়, আমাদের দুই পরিবার যদি না মেনে নেয়
আমি: দুই পরিবার মানে তুই কি রিয়ানকে ভালোবাসিস
নীলিমা: হুম
আমি: হাসবো না কাঁদবো তোর কথা শুনে বুঝতে পারছি না, রিয়ানকে ভালোবাসিস আর এইটা বলতে পারছিস না। আমাদের যে কোনো একজন কে বললেই তো হতো
নীলিমা: বললাম না ভয় হয়। রিয়ান ভাইয়াকে আমি অনেক ভয় পাই একবার রেগে গেলে পাগলের মতো হয়ে যায়। তাছাড়া আপুর হঠাৎ করে সুইসাইড এখন যদি কেউ এই সম্পর্কটা মেনে না নেয় তাই ভয়ে কাউকে বলতে পারিনি কিন্তু আজ তুমি….
আমি: নীলিমা আমি না ভাবতেই পারছি না তোর মতো মেয়ে কিনা এতো ভয় পায়
নীলিমা: একটা কথা জানো তো ভাইয়া, ভালোবাসা মানুষকে সব করতে শিখায়। তোমাদের বাসায় তো আমি তেমন আসিনি, তোমাদের বিয়ের সময় এসেছিলাম। তখন রিয়ান ভাইয়া কে ভালো লেগেছিল কিন্তু হঠাৎ আপুর মৃত্যু সব উলটপালট করে দেয়। ভেবে নিয়েছিলাম আর কখনো এখানে আসবো না নিজের ভালোবাসা কে নিজের ভিতরেই কবর দিবো। কিন্তু পারিনি লাস্ট দুবছর মন কে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু বার বার ব্যর্থ হয়েছি। কাউকে বলতেও পারতাম না এসব, একদিন আরোহী আপুকে সব বলি….
আমি: আরোহী কি বলেছিল
নীলিমা: আপু বলেছিল শহরের ছেলেরা স্মার্ট মেয়ে চায়, নিজেকে সেই ভাবে তৈরি করি শুধুমাত্র একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কিন্তু
আমি: কি
নীলিমা: তোমাদের বিয়ের পর আম্মু অনেক বার বলেছিল বাসায় আসতে। ভয়ে আসিনি যদি কেউ বুঝতে পেরে সবাইকে বলে দেয় তাহলে তো আম্মু আব্বু চাচ্চু সবাই কষ্ট পাবে। সেদিন কেন যেন খুব ইচ্ছে হয় ওকে একবার দেখার, ও তো আর গ্রামে যাবে না। তাই ভাবিকে দেখার কথা বলে এখানে আসি শুধুমাত্র ওকে এক নজর দেখার জন্য। প্রথম দিন তুমি আমাকে যেভাবে দেখেছিলে আমি আসলে সেই নীলিমা নই আমি নিলার বোন নীলিমা, ওইসব ছিল একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কিন্তু এখানে এসে বুঝতে পারি তোমার ভাই ঠিক তোমার মতো। ভেবেছিলাম যেহেতু আমি রিয়ান ভাইয়ার মনের মতো তাহলে আমাকে ফিরিয়ে দিবে না আর পরে নাহয় সবাইকে বুঝিয়ে বলবো। তাই গতকাল সাহস করে রিয়ান ভাইয়াকে বলতে গিয়েছিলাম কিন্তু ওর রুমের বাইরে থেকে শুনতে পাই ও কাকে যেন ফোনে আই লাভ ইউ বলছে। এতোদিনের সব স্বপ্ন এক নিমিষেই ভেঙে গিয়েছিল তাই কাল সন্ধ্যায় ছাদে সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম
আমি: তারমানে তুই কাল নিলার ছবি নিয়ে সুইসাইড করতে গিয়েছিলি
নীলিমা: আপু থাকলে হয়তো আমাকে এতো কাঁদতে হতো না, তাই শেষ সময়ে আপুর ছবিট….
আমি: তুই আমাকে প্রমিজ কর আর কখনো সুইসাইড এর কথা মাথায় আনবি না
নীলিমা: জানো ভাইয়া আম্মু যখন বলেছিল ভাবি তোমাকে মেনে নেয়নি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। তারপর এখানে এসে বুঝতে পারি আসলে ভাবি তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু সেটা বুঝতে পারছে না। তাই আমি এতো অভিনয় করেছি, আমি তো জানি ভালোবাসা না পাওয়ার কি যন্ত্রণা তাই তোমাকে সে যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলাম কিন্তু
আমি: কিন্তু কি
নীলিমা: তোমাদের এক করেও আমি আবার আলাদা করার চেষ্টা করেছিলাম
আমি: মানে
নীলিমা: ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দিও ডিভোর্স পেপারটা আমি রেখেছিলাম
আমি: আরোহী রাখতে বলেছিল
নীলিমা: হ্যাঁ কিন্তু তুমি বুঝলে কিভাবে
আমি: আরোহী বললো আর তুই তাই করলি
নীলিমা: ভালোবাসার জন্য তো মানুষ মরতেও পারে, আরোহী বলেছিল ওর কথামতো ডিভোর্স পেপারটা না রাখলে রিয়ানকে মেরে ফেলবে
আমি: ওর পক্ষে কাউকে মেরে ফেলাটা খুব সহজ
নীলিমা: ও নাকি তোমাকে ভালোবাসে তাই….
আমি: ভালোবাসে আমি বাসিনি তাই ও নিলাকে খুন করেছে আলিফাকে মারার চেষ্টা করেছে
নীলিমা: কি
আমি: হ্যাঁ তুই যাকে বড় বোনের মতো ভাবতি সেই নিলার খুনি (নীলিমা ছাদের মধ্যে দফ করে বসে পড়লো)
আমি: নীলিমা শান্ত হ প্লিজ
নীলিমা: আপু সুইসাইড করেনি ওকে খুন করা হয়েছে আর আরোহী আপু করেছে। আমি কিনা এতোদিনে এইটা বুঝতে পারিনি উল্টো আরোহী কে বড় বোন ভেবে সব বলে এসেছি
আমি: কান্না করিস না প্লিজ আমার কথা শুন
নীলিমা: আপুকে খুন করা হয়েছে জেনেও তুমি পারছ শান্ত হয়ে থাকতে আমি তো….
আমি: নীলিমা তোকে প্রথম চিনতে পারিনি আজ বুঝলাম তুই একটা সহজ সরল মেয়ে আর আরোহী তোর এই সরলতাকে কাজে লাগিয়েছে
নীলিমা: ওকে তো আমি ছাড়বো না
আমি: পাগলামি করিস না আমি যা বলি তাই কর তাহলে আমরা আরোহীকে শাস্তি দিতে পারবো
নীলিমা: ঠিক আছে বলো
আমি: তার আগে বল সুইসাইড করার কথা মাথায় আনবি না (আমার দিকে শান্তভাবে তাকিয়ে আছে)
নীলিমা: আচ্ছা ভাইয়া ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেন (ওর এই প্রশ্নের উত্তর আমি কি দিবো আমি নিজেই তো এই যন্ত্রণায় ভুগছি)
নীলিমা: পৃথিবীর নিয়ম এতো নিষ্টুর কেন, যাকে আমি ভালোবাসি সে আমাকে নয় অন্য কাউকে ভালোবাসে আর যে আমাকে ভালোবাসে আমি তাকে ভালোবাসি না। খুব অদ্ভুত নিয়ম তাই না ভাইয়া।
আমি: কাঁদিস না আমি রিয়ানের সাথে কথা বলবো
নীলিমা: না তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছ কাউকে বলবা না
আমি: ঠিক আছে বলবো না
নীলিমা: ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দিও তুমি ভাবিকে এতো ভালোবাস জেনেও আমি ডিভোর্স পে….
আমি: এইটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো দুদিন পর তো আমাদের ডিভোর্স হয়েই যাবে
নীলিমা: ভাইয়া
আমি: বাদ দে এখন আরোহীকে আগে শাস্তি দিতে হবে
নীলিমা: ভাইয়া আমি আর একটা অন্যায় করেছি
আমি: কি
নীলিমা: আরোহীর কথায় সেদিন আমি তোমাদের জোসে মদ দিয়ে ছিলাম। আমি জানতাম না আরোহীর প্ল্যান কি ছিল শুধু ওর কথা মতো কাজ করেছিলাম কারণ ও বলেছিল ওর কথা না শুনলে সবাইকে বলে দিবে আর রিয়ান ভাইয়াকে মেরে ফেলবে তাই আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম
আমি: আরোহী দিতে বলেছিল তারমানে ওর কোনো খারাপ প্ল্যান ছিল
নীলিমা: হতে পারে, আমি কতোটা বোকা এতোদিনে আরোহীর আসল চেহারাটা বুঝতে পারিনি
আমি: তুই বোকা না তুই একটা সহজ সরল মেয়ে। এখন আমি যা বলি তাই কর তাতেই আমরা আরোহীকে শাস্তি দিতে পারবো
নীলিমা: কি করতে হবে বলো
আমি: আরোহীকে শুধু একবার আমাদের বাসায় নিয়ে আয় বাকিটা আমি দেখছি
নীলিমা: ঠিক আছে।
এবার দেখি আরোহী কিভাবে বাঁচে, ওকে তো আমি শাস্তি দিবোই। আমার নিলাকে খুন করেছে আলিফাকে মারার চেষ্টা করেছে ওকে এমন শাস্তি দিবো আর কখনো কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করবে না।

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২৫

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

রাতুল: ভাইয়া আপনি বাইরে বসে আছেন কেন। (হঠাৎ রাতুলের ডাকে চমকে উঠলাম, ডিভোর্স এর কথা ভাবতে ভাবতে…)
রাতুল: ভাইয়া কি হয়েছে
আমি: কিছু না কোথায় যাচ্ছেন
রাতুল: ছিঃ ছিঃ ভাইয়া আমি আপনার ছোট, আপনি করে বলছেন কেন। আমি তো আপনার ছোট ভাইয়ের মতো।
আমি: ওকে আর হবে না। কোথায় যাচ্ছ।
রাতুল: অনেক রাত হয়ে গেছে তো বাসায় যেতে হবে আম্মু একা আছেন
আমি: ঠিক আছে যাও
রাতুল: সকাল সকাল চলে আসবো, আলিফার খেয়াল রাখবেন। (রাতুলের দিকে তাকালাম কতো ভালোবাসে আলিফাকে কিন্তু আমিও তো অনেক ভালোবাসি রাগিণী কে)
আমি: হুম রাখবো
রাতুল: ওকে আসছি।

কেবিনের ভিতরে আসতে আসতে ভাবছি রাতুল ছেলেটা তো খারাপ না অনেক ভালো একটা ছেলে, এমন ছেলেকে কিভাবে কষ্ট দেই। ও তো বললো আমার ছোট ভাইয়ের মতো তাহলে ওর থেকে ওর ভালোবাসা কেড়ে নেই কিভাবে।
আলিফা: নিজের বউ হসপিটালে আর উনি যাবো আর আসবো বলে এতো রাতে এসেছেন (আলিফার কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, মেয়েটা অভিমানী সুরে কথাটা বললো)
আলিফা: এখন কি কথাও বলবা না নাকি
আমি: তোমার এসব অভিমানী কথা গুলো খুব মিস করবো রাগিণী
আলিফা: এতো দূরে থেকে আস্তে আস্তে কি বলছ
আমি: কিছু না
আলিফা: হুম এখন আসার সময় হয়েছে তোমার, এতোক্ষণ ওই বজ্জাত মেয়েটার সাথে ছিলে তাই না
আমি: নাহ অনেক আগেই এসেছিলাম
আলিফা: অনেক আগে এসেছিলে মানে তাহলে এতোক্ষণ কোথায় ছিলে
আমি: বাইরে বসে ছিলাম
আলিফা: কেন
আমি: ভিতরে রাতুল ছিল তোমার হাত ধরা অবস্থায় তাই আসার সাহস হয়নি
আলিফা: (এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
আমি: কি দেখছ এভাবে
আলিফা: কিছুনা
আমি: হুম
আলিফা: আমি বাসায় যেতে পারবো কবে
আমি: দু সপ্তাহ তো থাকতেই হবে
আলিফা: এতোদিন হসপিটালে থাকলে তোমার বউ এমনিতেই মারা যাবে (বউ শব্দটা শুনে বুকের ভিতর কেমন যেন ব্যথা অনুভব হচ্ছে। আলিফা সুস্থ হয়ে উঠলে পর তো আর ও আমার বউ থাকবে না ডিভোর্স দিয়ে দিতে হবে)
আলিফা: রিফাত তুমি রাতুল আসার পর থেকে কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছ
আমি: না তো
আলিফা: খেয়েছ কিছু (আলিফা জিজ্ঞেস করাতে মনে পড়লো সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। কষ্ট পেলে মনে হয় খিদে লাগে না)
আলিফা: রিফাত আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি
আমি: তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো আমি ডক্টর এর সাথে কথা বলে আসছি
আলিফা: রিফাত আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছ কেন।
আলিফার কথার উত্তর না দিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসলাম। ওর সামনে গেলে চোখ দুটু যেন বাধ মানতে চায় না। ওর মায়াবী চেহারা অভিমানী কথা সবকিছু এখন আমাকে কষ্ট দেয়। কারণ কয়েকদিন পর তো আর ও আমার থাকবে না।

ডক্টর এর সাথে কথা বলে আলিফার পাশে এসে বসলাম। আলিফা ঘুমিয়ে আছে, আগে ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখলেই চুমু দিতে ইচ্ছে হতো আর এখন ওর কাছে যেতেই ভয় হয়। ফোন বেজে উঠলো, রিয়ান ফোন করেছে।
আমি: রিয়ান বল
রিয়ান: ভাইয়া আমি কি হসপিটালে আসবো
আমি: না এখন আসার প্রয়োজন নেই অজতা রাত জাগতে হবে তোর, সকালে আসিস
রিয়ান: ভাইয়া তোমার কন্ঠ এমন কেন
আমি: কই ঠিকি তো আছে
রিয়ান: আমার কাছে লুকাতে হবে না কাঁদলে তোমার কন্ঠ কেমন হয় আমি তো জানি
আমি: হুম
রিয়ান: কিছু খেয়ে নিও
আমি: হুম রাখি।

রাত বারোটা বাজে চোখে ঘুম আসছে না, আলিফা নিশ্চুপ হয়ে ঘুমিয়ে আছে দেখে কেবিনের বাইরে আসলাম। আনমনে হয়ে হাটছি আর নিলার মৃত্যুর কথা ভাবছি। কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না কে হতে পারে নিলার খুনি। যেই হউক সে যে খুব খারাপ মানুষ তা তো বুঝাই যাচ্ছে, যে কিনা নিলাকে মেরেই শান্ত হয়নি আলিফা আর আমাকে আলাদা করার চেষ্টা করেছে। আর এইটা না পেরে শেষ পর্যন্ত আলিফাকে মারার চেষ্টা করেছে। ডিভোর্স পেপারের কথাটা নাহয় বাদ দিলাম কারণ দুদিন পর তো আলিফাকে ডিভোর্স দিতেই হবে কিন্তু আমার নিলার মৃত্যু। যে আমার নিলাকে এতো কষ্ট দিয়ে মেরেছে তাকে তো আমার খুঁজে বের করে শাস্তি দিতেই হবে।
আলিফা: রিফাত কোথায় তুমি (হঠাৎ আলিফার ডাক শুনে তাড়াতাড়ি ভিতরে আসলাম)
আলিফা: কোথায় ছিলে
আমি: এইতো বাইরে একটু হাটছিলাম
আলিফা: কি হয়েছে তোমাকে এমন চিন্তিত লাগছে কেন
আমি: সুস্থ হয়ে উঠো তারপর বলবো
আলিফা: না এখন বলো
আমি: জিদ করোনা তোমার এখন টেনশন করা ঠিক হবে না
আলিফা: বলবা কিনা
আমি: না বললে তো মানবা না বলছি, তুমিই তো বলেছিলে নিলার মৃত্যুটা সাধারণ মৃত্যু না ওকে খুন করা হয়েছে
আলিফা: হ্যাঁ তোমার কথা অনুযায়ী আমার তাই মনে হয়েছে
আমি: হুম আমি নিলার খুনিকে খুঁজছি কিন্তু বুঝতে পারছি না কে হতে পারে। আর আমার মনে হচ্ছে যে নিলাকে মেরেছে সে তোমাকেও গাড়ি চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছিল
আলিফা: মানে
আমি: হ্যাঁ, ভেবে দেখো যে রাস্তায় তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছে সে রাস্তা দিয়ে গাড়ি তেমন একটা চলাচল করে না। হঠাৎ করে গাড়ি এসে ধাক্কা মারবে এমন রাস্তায় এইটা অ….
আলিফা: মরে গেলে ভালোই হতো (আমার কথার মাঝখানে আস্তে করে কথাটা বললো)
আমি: হ্যাঁ আমি তো তোমাকে দুটানায় ফেলে দিয়েছি তাই তুমি মরে গেলেই সব মিটে যেতো তাই তো
আলিফা: আমি ফাজলামো করেছি রেগে যাচ্ছ কেন
আমি: কোন কথা মানুষ ফাজলামো করে বলে সেটা বুঝার বয়স আমার হয়েছে আলিফা। সত্যি তো এটাই আমি তোমাকে দুটানায় ফেলে দিয়েছি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি তাই তুমি মৃত্যুর কথা বলছ
আলিফা: আচ্ছা বাবা সরি আর কখনো বলবো না এই যে কান ধরছি (আলিফা হাসছে কিন্তু আজকের হাসিটা মলিন, খুব চেষ্টা করে কষ্ট গুলো আড়াল করে ও হাসছে। বুঝতে পারছি তো আলিফা এসব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেই মৃত্যুর কথা বলছে)
আলিফা: রিফাত সত্যি করে আমাকে একটা কথা বলতো
আমি: কি
আলিফা: নিলাকে তুমি ভালোবাসার আগে কি অন্য কোনো ছেলে ওকে ভালোবাসতো বা নিলা কলেজে আসার পর কি কোনো ছেলে….
আমি: না নিলা কখনো আমাকে এমন কিছু বলেনি
আলিফা: ওকে, তোমাকে কোনো মেয়ে ভালোবাসতো
আমি: উহু মনে পড়ছে না
আলিফা: মনে করার চেষ্টা করো প্লিজ। কেউ তোমাকে ভালোবাসতো আর তোমাকে না পাওয়ার কষ্টে সে নিলাকে মেরে ফেলেছে, আর সে আমাকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। ভেবে দেখো এমনটা কিন্তু হতেই পারে, ভালোবাসার জন্য মানুষ যেমন জীবন দিতে পারে তেমন জীবন নিতেও পারে
আমি: তুমি যা বলছ তা হতে পারে কিন্তু আমাকে কেউ এতোটা ভালোবাসতো কিনা সেটাই তো মনে পড়ছে না।
আলিফা: মনে করার চেষ্টা করো প্লিজ
আমি: হুম তুমি ঘুমাও
আলিফা: না তোমার সাথে সারারাত গল্প করবো
আমি: অসুস্থ শরীর নিয়ে সারারাত গল্প, চুপ করে ঘুমাও
আলিফা: তাহলে আমার চুলে হাত বুলিয়ে দাও
আমি: হুম।
আলিফা তো বুঝতে পারছে না ওর এসব কথা পরে আমাকে কতোটা কষ্ট দিবে। জানিনা কিভাবে থাকবো ওকে ছাড়া, কিভাবে বেঁচে থাকবো সেটাই বুঝতে পারছি না। আলিফার দিকে তাকালাম চুলে হাত বুলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়েছে পাগলীটা। কেমন যেন ভয় করছে তাও আস্তে আস্তে ওর কাছে গিয়ে ওর ঠোঁটে আলতো করে একটা মায়া দিলাম।

“আলিফা আলিফা” (হঠাৎ কারো মুখে আলিফাকে ডাকতে শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। দরজায় তাকিয়ে দেখি রাতুল কেমন করে যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝলাম না ও এভাবে কেন তাকিয়ে আছে। উঠতে যাবো তখন বুঝতে পারলাম রাতে আলিফার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে ওর মাথার কাছেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, আমার একটা হাত আলিফার বুকে আর ও দুইটা হাত দিয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে। ওহ বুঝেছি রাতুল এজন্যই এভাবে তাকিয়ে আছে। তাড়াতাড়ি উঠে বসে আলিফার হাত থেকে আমার হাত সরিয়ে আনলাম।
রাতুল: ভাইয়া ঠিক আছে আপনি ঘুমান আমি পরে আসছি
আমি: সকাল তো হয়েই গেছে, তুমি যখন এসে পড়েছ আলিফার কাছে থাকো আমি বাসা থেকে আসছি
আলিফা: আমাকে রেখে আবার চলে যাচ্ছ (আলিফা আমার হাত ধরে ফেললো, বুঝতে পারছি না রাতুল থাকতে ও বার বার আমাকে কেন ওর পাশে রাখতে চাইছে)
আমি: তুমি উঠে পড়েছ কেন
আলিফা: ঘুম ভেঙে গেছে আর ভেঙেছে ভালোই হয়েছে নাহলে তুমি আমাকে রেখে আবার চলে যেতে
আমি: এখন আর বেশি সময় লাগবে না বাসায় গিয়ে একটু ফ্রেশ হবো আর আব্বুকে দেখে আসবো। গতকাল যে আব্বু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন দেখেছ তো
আলিফা: হ্যাঁ আব্বুর অসুস্থতার কথা মনেই ছিল না, গিয়ে আমাকে ফোন করে জানিও আব্বু কেমন আছেন
আমি: ঠিক আছে
আলিফা: আর হ্যাঁ গিয়ে কিন্তু খেয়ে নিও দুদিন ধরে কিচ্ছু খাওনি
আমি: হুম।
আলিফার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসলাম। বেরিয়ে আসার সময় রাতুল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। অবাক হওয়া বা অন্য দৃষ্টিতে তাকানোটা তো স্বাভাবিক।

বাসায় এসে সোজা আব্বুর রুমে গেলাম, আব্বু আমাকে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করলেন।
আমি: আব্বু উঠো না
আব্বু: নিজের কি অবস্থা করেছিস
আমি: এসব কিছু না আব্বু, তোমার শরীর এখন কেমন আছে
আব্বু: আমার ছেলে বার বার কষ্ট পাচ্ছে আমি কিভাবে ভালো থাকি বল
আমি: আব্বু এসব নিয়ে তুমি টেনশন করোনা তো দেখবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে
আব্বু: কিছু ভেবেছিস কি করবি এখন
আমি: রাস্তা তো একটাই আব্বু, ডিভোর্স
আব্বু: হুম যা ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে
আমি: হুম।

রুমে আসতে গিয়ে হঠাৎ কারো কান্নার শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ালাম। কান্নার শব্দ তো নীলিমার রুম থেকে ভেসে আসছে তাহলে কি নীলিমা কাঁদছে কিন্তু ও কাঁদবে কেন। নীলিমার রুমের দরজার পাশে যেতেই শুনলাম ও কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে আর কাঁদছে।
নীলিমা: আপু তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি, এখন কি করবো বলো আমি কি ওকে পাবো না (অপর পাশে কে আছে আর কি বলছে সেটা তো শুনতে পারছি না কিন্তু নীলিমা কাকে পাওয়ার কথা বলছে)
নীলিমা: আমি ওকে খুব ভালোবাসি আপু আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না প্লিজ কিছু করো।
আমি: নীলিমা (রুমের ভিতরে এসে ডাক দিতেই ও থমথম খেয়ে ফোনটা কেটে দিলো)
নীলিমা: ভাইয়া তুমি আর এভাবে কি দেখছ
আমি: তুই পড়েছিস শাড়ি যে কিনা সবসময়…
নীলিমা: ছাড়োনা ভাইয়া এমনি পড়তে ইচ্ছে হয়েছিল
আমি: হুম কার সাথে ফোনে কথা বলছিলি
নীলিমা: কককই কেকেউ না তো
আমি: তোতলাচ্ছিস কেন বল কার সাথে কথা বলছিলি
নীলিমা: কেউ না তো। তুমি তো কাল থেকে কিছু খাওনি আমি তোমার জন্য খাবার দিচ্ছি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো
আমি: হুম।
রুমে চলে আসলাম কিছুই বুঝতে পারছি না, নীলিমা কিছু তো একটা লুকাচ্ছে। ওর কথা মতো মনে হলো ও কাউকে ভালোবাসে কিন্তু কাকে….?

খেতে বসেছি নীলিমা খাবার দিয়েই সরে যাচ্ছে আমার সামনে থাকতেই চাইছে না। নীলিমা কি লুকাচ্ছে বুঝতেই পারছি না। আচ্ছা এমন নয় তো নীলিমা যা লুকাচ্ছে সেটা থেকেই নিলার মৃত্যুর রহস্য পেয়ে যাবো।
রিয়ান: ভাইয়া কখন এসেছ
আমি: একটু আগে
রিয়ান: খাবার সামনে নিয়ে বসে আছ কেন
আমি: খাচ্ছি তো
রিয়ান: আমাকে ফোন করলে না কেন ভাবিকে একা রেখে চলে এসেছ
আমি: না ওর কাছে রাতুল আছে
রিয়ান: মানে তুমি ওদের একসাথে রেখে আসলে
আমি: তাতে কি হয়েছে দুদিন পর তো আলিফা রাতুলেরই হয়ে যাবে
রিয়ান: কি বলছ এসব
আমি: আলিফা সুস্থ হলেই ডিভোর্স….
রিয়ান: একদম চুপ একবার বলেছ আর বলোনা
আমি: রেগে যাচ্ছিস কেন
রিয়ান: এখনো রাগিনি আরো আগেই তোমার উপর আমার রাগ করা উচিত ছিল। ভালো করেই জানো আমি একবার রেগে গেলে ছোটবড় মানিনা
আমি: হুম
রিয়ান: ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভুলে যাও একবার কষ্ট পেয়েছ আর না
আমি: পরে ভাবা যাবে আগে আলিফা সুস্থ হয়ে উঠোক। খেয়েনে আর নীলিমা তুইও খেয়েনে (নীলিমাকে বলতে গিয়ে ওর দিকে তাকালাম কেমন যেন ভয়ে চুপসে আছে, হঠাৎ এতো ভয় পেলো কেন নীলিমা)
রিয়ান: কি হলো নীলিমা ভাইয়া কি বলেছে শুনিসনি
নীলিমা: হুম খাচ্ছি।
নীলিমা খেতে বসেছে এই ফাকে ওর ফোনটা আমাকে দেখতে হবে। কার সাথে ও কথা বলছিল আর কাঁদছিল সেটা তো আমাকে জানতে হবেই।

নীলিমার রুমে এসে ফোনটা বালিশের কাছে পেয়ে গেলাম। কল লিস্টের প্রথমে একটা নাম “আরোহী আপু”
তারমানে নীলিমা এই নাম্বারেই কথা বলে কাঁদছিল। নামটা তো খুব পরিচিত লাগছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না। হঠাৎ মনে পড়লো আরোহী তো নিলার বেস্ট ফ্রেন্ড, তাই শুধু না আরোহী আমাকে ভালোবাসতো। অনেক বার নিলার চোখের আড়ালে আরোহী সেটা আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিল, আমি বার বার আরোহী কে বুঝিয়েছি আমি নিলাকে ভালোবাসি। নিলার মৃত্যুর পর আরোহীর সাথে কখনো দেখা হয়নি আমার। তাহলে কি আলিফার কথাই ঠিক, যে আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু আমি বাসিনি সেই এসব করেছে। আর সে অন্য কেউ না আরোহী….?

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২৪

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

দেয়ালে হেলান দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, চোখ দুটু থেকে বৃষ্টির মতো পানি পড়ছে। বুঝতে পারছি না ভাগ্য আমার সাথে এ কি খেলা খেলছে। এখন আমি কি করবো সত্যি বুঝতে পারছি না।
আব্বু: রিফাত কি হলো দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন (আব্বু তোমাকে আমি কি করে বুঝাই আমার মনের ভিতর কি চলছে, আমার মুখ থেকে যে কোনো কথা বের হচ্ছে না। আমি রাতুলকে দেখে যে বোবা হয়ে গেছি)
আব্বু: রিফাত কি হয়েছে তোর, আরে এখানে আয় উনি তোর আলিফাকে বাঁচিয়েছেন অন্তত একটা ধন্যবাদ তো দে
আমি: আব্বু আমি কাকে ধন্যবাদ দিবো যে নিজের ভালোবাসা কে বাঁচিয়েছে
আব্বু: মানে
রিয়ান: কি বলছ এসব ভাইয়া
আমি: আব্বু ও রাতুল আলিফা যাকে ভালোবাসে
আব্বু: কি (আব্বু দফ করে ফ্লোরে বসে পড়লেন, তাড়াতাড়ি গিয়ে আব্বুকে ধরলাম)
আমি: আব্বু তুমি বাসায় চলে যাও তোমার শরীর খারাপ লাগছে
আব্বু: আমার ছেলেটা….
আমি: রিয়ান আব্বুকে নিয়ে বাসায় যা
রিয়ান: তুমি
আমি: হসপিটালে আছি যদি কোনো প্রয়োজন হয়
রাতুল: আপনারা চাইলে সবাই বাসায় গিয়ে রেস্ট নিয়ে আসতে পারেন, আমি আছি আলিফার কাছে (রাতুলের কথা শুনে মনে হলো আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো, ওরা একটু একা থাকুক এতোদিন পর দেখা হয়েছে)
আমি: হুম ঠিক আছে।
আলিফার মাথার পাশে মোবাইলটা রেখেছিলাম, আনতে গেলাম। আলিফা আমার হাত ধরে ফেললো ইশারা দিয়ে বললো যেন না যাই। রাতুল বলছে চলে যেতে আলিফা হাত ধরে আছে কি করবো এখন। রাতুলের দিকে তাকালাম।
রাতুল: আলিফা যখন যেতে দিচ্ছে না তাহলে থাকুন সমস্যা নেই
আমি: হুম।

রিয়ান আর আব্বুকে পাঠিয়ে দিয়ে এসে আলিফার থেকে অনেক দূরে একটা চেয়ারে বসলাম। কেন যেন আলিফার কাছে যেতে ওকে ছুতে বড্ড ভয় হচ্ছে। কিসের এতো ভয় বুঝতে পারছি না, মনের ভিতর এক অজানা ভয় কাজ করছে।
আলিফা: রিফাত তুমি এতো দূরে বসে আছ কেন (আলিফার কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম, রাতুল ওর একদম কাছে বসে আছে)
আমি: আলিফা তুমি কথা বলো না কষ্ট হবে তোমার
আলিফা: আমি ঠিক আছি এখন কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে না
আমি: হুম
আলিফা: রাতুল তোমার সাথে আমার কথা বলার আছে
রাতুল: সব কথা পড়ে বলবে আগে তুমি সুস্থ হয়ে উঠো (রাতুলের কথাটা শুনে আলিফা ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
রাতুল: কি হলো কি দেখছ এভাবে
আলিফা: আগের মতোই ভালোবাস তাই না (বাহ্ রাতুলের একটা কথায় বুঝে গেলো আগের মতোই যে ভালোবাসে আর আমি পুরো একটা বছর চেষ্টা করে বুঝাতে পারলাম না। কত বড় অপদার্থ আমি)
রাতুল: দূরে গেলেই ভালোবাসা কমে যায় নাকি আগে যেমন ভালোবাসতাম এখনো বাসি আর সবসময় বাসবো (ওদের কথা গুলো আমার কানে বিষের মতো ঢুকছে, এখানে বসে থাকলে আমি নির্গাত মারা যাবো। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালাম)
আলিফা: রিফাত কোথাও যাবে না চুপ করে বসে থাকো
আমি: একটু ডক্টর এর কাছ থেকে আসছি
আলিফা: চুপ করে বসে থাকতে বলেছি বসে থাকো
আমি: হুম।

কিছু করার নেই চুপ করে বসে আছি, আর ওদের কাছে যা রোমান্টিক কথা আর আমার কাছে বিষ সে কথা গুলো শোনার জন্য অপেক্ষা করছি।
আলিফা: রাতুল তুমি দেশে ফিরেছ কবে
রাতুল: এক মাস হবে
আলিফা: আমার সাথে দেখা করোনি কেন
রাতুল: কিভাবে দেখা করবো কোনো রাস্তা ছিল নাকি। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম কিন্তু গিয়ে দেখি দরজায় তালা দেওয়া। এতিমখানায় গিয়ে জানতে পারি তোমার আব্বু মারা গেছেন
আলিফা: হ্যাঁ আর যেদিন আব্বু মারা যান সেদিন গাড়িতে তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই আর ফোনটা বাইরে পড়ে যায়। পড়ে আমি তোমাকে রিফাতের মোবাইল থেকে ফোন করেছিলাম কিন্তু তোমার নাম্বার বন্ধ ছিল। আর কখনো অন পাইনি অনেক চেষ্টা করেছি।
রাতুল: কিভাবে পাবে সেদিন আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল। দু সপ্তাহ হসপিটালে থেকে বাসায় ফিরে যখন নতুন নাম্বার থেকে তোমাকে ফোন দেই তখন তোমার ফোন বন্ধ ছিল
আলিফা: আমাদের সাথে ভাগ্য খুব ভালো খেলা করেছে (আলিফার এই কথাটা শুনে ওর দিকে তাকালাম, আলিফার চোখে পানি। জানি এই পানির কারণ আমি। আমার কারণে আলিফার ভাগ্যটা উলটপালট হয়ে গেলো)
রাতুল: এই এক মাস তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছি। তোমার শশুড় বাড়ির ঠিকানা তো জানতাম না রাস্তায় রাস্তায় খুঁজেছি। আর আজ যখন পেলাম তখন তুমি মাঝ রাস্তায় পিছনে গাড়ি, আমি তোমার কাছে যাওয়ার আগেই গাড়িটা তোমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়
আলিফা: তাহলে তখন আমার কাছে যাওনি কেন
রাতুল: আমি যাওয়ার আগে রিফাত মানে তোমার হাজবেন্ড চলে এসেছিল তাই আর যাইনি। তোমাদের ফলো করে হসপিটালে চলে আসি কারণ আমি জানতাম তোমার গ্রুপের রক্ত সহজে পাওয়া যায় না
আলিফা: হুম আমর…. (রাতুলের ফোন বেজে উঠলো, ও ফোনটা নিয়ে কেবিনের বাইরে চলে গেলো। নাহ এখানে আর আমি থাকতে পারবো না খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। একটু সময়ের জন্য হলেও আমাকে বাইরে যেতে হবে নাহলে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো।)

আলিফার পাশে এসে বসলাম। চোখের পানি কোনোভাবে আড়াল করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম
আমি: আলিফা রাতুল তো আছে তোমার কাছে আমি একটু বাসা থেকে আসছি
আলিফা: আমাকে রেখে বাসায় যাওয়াটা খুব বেশি প্রয়োজন
আমি: নীলিমার সাথে আমার একটু কথা আছে, আমি যাবো আর আসবো
আলিফা: বজ্জাত মেয়েটার সাথে তোমার কিসের কথা একদম ওর কাছে যাবে না
আমি: একটু প্রয়োজন আছে যেতে হবেই তাড়াতাড়ি চলে আসবো
আলিফা: রিফাত তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না (কি বলবো এখন ওকে, চোখের পানি যতোই আড়াল করার চেষ্টা করছি ততোই যেন বেশি কান্না পাচ্ছে)
আমি: নারে পাগলী আমার আবার কষ্ট কিসের আসছি আমি।
তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসলাম, চোখের পানি মুছতে মুছতে কেবিনের বাইরে আসতেই রাতুলের সামনে পড়ে গেলাম। রাতুল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি চলে আসলাম।

বাসায় এসে নীলিমাকে খুজছি কিন্তু পাচ্ছি না। ওকে তো আমার খুঁজে পেতেই হবে কেন করেছে এমন ওকে বলতেই হবে।
ছোটমা: রিফাত কাকে খুঁজছিস পাগলের মতো
আমি: নীলিমা কোথায়
ছোটমা: দেখলাম তো ছাদের দিকে গেলো
আমি: ওকে
ছোটমা: আরে কি হয়েছে আস্তে যা।

দৌড়ে ছাদে আসলাম নীলিমা ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে কি যেন করছে।
আমি: নীলিমা (ও কি যেন নিচে ছুড়ে ফেলতে চাইছিল আমার ডাকে চমকে উঠে পিছনে তাকালো)
নীলিমা: তুমি এই সময় বাসায়
আমি: এই সময় মানে
নীলিমা: না মানে ভাবি হসপিটালে আর তুমি বাসায় চলে এসেছ তাই একটু অবাক হলাম
আমি: তোর হাতে এইটা কি দেখি
নীলিমা: আরে এইটা নিচ্ছ কেন
আমি: এইটা তো নিলার ছবি যেটা সবসময় ড্রয়িংরুমে থাকে
নীলিমা: হ্যাঁ
আমি: তুই ছবিটা নিচে ছুড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছিলি
নীলিমা: মানে কি পাগল হয়ে গেছ কি বলছ এসব, ভুলে যেও না ও আমার বোন। আমি কেন ওর ছবি ছুড়ে ফেলে দিতে যাবো
আমি: তাহলে তুই এইটা নিয়ে এখানে কি করছিস
নীলিমা: আপুর কথা খুব মনে পড়ছিল তাই ছবিটা এনে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি একটু একা থাকার জন্য
আমি: ওহ
নীলিমা: হুম
আমি: এসব বাদ দে সত্যি করে একটা বল তো
নীলিমা: কি
আমি: সকালে নাশতার টেবিলে ডিভোর্স পেপারটা কে রেখেছিল
নীলিমা: ডিভোর্স পেপার…? কার ডিভোর্স পেপার…?
আমি: না জানার বান করিস না, ওই বাসায় আমরা তিনজন ছাড়া অন্য কেউ ছিল না আমি বা আলিফা কেউ ডিভোর্স পেপারটা আনাইনি তারমানে…
নীলিমা: তারমানে কি আমি ডিভোর্স পেপারটা আনিয়েছি আর নাশতার টেবিলে রেখে দিয়েছি। তোমার মাথা ঠিক আছে তো পাগল হয়ে গেছ তুমি। আমি কোথা থেকে ডিভোর্স পেপার আনবো আর এতে আমারই বা লাভ কি
আমি: সেটাই তো জানতে চাইছি আমাদের ডিভোর্স হলে তোর লাভটা কি
নীলিমা: পাগল হয়ে গেছ যাও ভাবির সাথে তুমিও গিয়ে হসপিটালে ভর্তি হও
আমি: নেকামো ছাড় নীলিমা বল কেন করেছিস এমন
নীলিমা: ঠান্ডা মাথায় আমার কথাটা শুনো। তোমাদের ডিভোর্স হলে তো আমার কোনো লাভ নেই তাছাড়া তোমাদের ডিভোর্স চাইলে কি আমি তোমাদের এক করার জন্য এতোকিছু করতাম
আমি: এতোকিছু মানে
নীলিমা: আম্মুর মুখে শুনেছিলাম ভাবি অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই তোমাকে মেনে নিতে পারছে না। ভাবিকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল তাই তোমাদের বাসায় চলে আসি কিন্তু এসে যা বুঝতে পারি ভাবি তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু সেটা নিজ থেকে বুঝতে পারছে না। তাই আমি ইচ্ছে করে তোমার কাছে যাওয়ার অভিনয় করেছি, চোখে কিছু পড়া, তোমার টাই ঠিক করে দেওয়া, তোমার হাত থেকে গোলাপ কেড়ে নিয়ে তোমাকে জরিয়ে ধরা সব আমার অভিনয় ছিল
আমি: অভিনয়
নীলিমা: হ্যাঁ কারণ আমি জানতাম একটা মেয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষকে কখনো অন্য কোনো মেয়ের সাথে সহ্য করতে পারে না আর ভাবির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমার এসব আচরণে ভাবি নিজের ভালোবাসা বুঝতে পেরেছে তোমার কাছে গিয়েছে ভালোবাসার কথা বলেছে।
নীলিমার কথা শুনে তো আমার মাথা ভনভন করছে। কি বলছে ও এসব, কিন্তু নীলিমা তো মিথ্যে কিছু বলছে না আমার প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল নীলিমা এসব ইচ্ছে করেই করছে। তাহলে ডিভোর্স পেপার….?
নীলিমা: ভাইয়া কোথায় যাচ্ছ এই সন্ধ্যা বেলায়।

দৌড়ে নিচে চলে আসলাম। আমাকে জানতে হবে ডিভোর্স পেপার আসলো কোথা থেকে।
ছোটমা: রিফাত কি হয়েছে তোর আস্তে যা (দৌড়ে এসে গাড়িতে বসলাম, ছোটমাও পিছন পিছন আসলো)
ছোটমা: এই সন্ধ্যা বেলায় কোথায় যাচ্ছিস
আমি: ছোটমা আমাকে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে, নিলার মৃত্যুর রহস্য খুঁজে বের করতে হবে আমাকে
ছোটমা: মানে কি নিলার মৃত্যুর রহস্য মানে
আমি: আসছি
ছোটমা: সাবধানে যা।

একের পর এক সিগারেট খাচ্ছি আর খুব স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছি। কোথায় যাবো জানিনা শুধু পাগলের মতো গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি। নীলিমার কথা অনুযায়ী তো একটা কথা পরিষ্কার এসবের পিছনে নীলিমা নেই। যদি নীলিমা না থাকবে তাহলে আর কে হতে পারে। নিলার মৃত্যুটা যদি খুন হয়ে থাকে তাহলে খুনটা করলো কে। আমার তো এখন মনে হচ্ছে কেউ একজন আছে যে লুকিয়ে এসব করছে। আর যে নিলার খুন করেছে সেই আলিফা আর আমার ডিভোর্স চাচ্ছে এইটা তো নিশ্চিত। আচ্ছা এমন নয় তো যে নিলাকে খুন করেছিল সে আজ আলিফাকেও গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। হতেই পারে এমন কিছু কিন্তু মানুষটা কে…? কে করছে এসব তাও আমাদের সবার চোখের আড়ালে। কোথায় খুঁজবো আমি তাকে কোন সুত্র ধরে খুঁজবো, খুঁজে কি আদৌ তাকে পাবো আমি….? হঠাৎ রাতুলের কথা মনে পড়লো, ও তো বলেছিল আলিফার এক্সিডেন্ট এর সময় রাস্তার অন্যপাশে ও ছিল। তারমানে কেউ যদি ইচ্ছে করে আলিফাকে ধাক্কা দিয়ে থাকে তাহলে সে মানুষটা কে হয়তো রাতুল গাড়িতে দেখতে পেয়েছে। তাড়াতাড়ি হসপিটালে চলে আসলাম রাতুলকে জিজ্ঞেস করার জন্য।

কিন্তু আলিফার কেবিনের দরজায় এসে কিছু জিজ্ঞেস করার মতো শক্তি আর রইলো না। রাতুল আলিফার পাশে বসে আছে, আলিফার একটা হাত রাতুলের দু হাতের মুঠোয়। রাতুল আলিফার হাত ধরে কাঁদছে আর আলিফা অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে কাঁদছে। এই দৃশ্য দেখে ভিতরে যাওয়ার সাহস আর হলো না। বাইরে একটা চেয়ারে এসে বসলাম। কান্নাকাটি বাধ দিয়ে মাথা ঠান্ডা করে ভাবলাম, ওদের কান্নার কারণ তো আমি। এতোদিন যা হবার হয়েছে এখন আর ওদের কাঁদানোর কোনো অধিকার নেই আমার। যতো কষ্টই হউক আমার সব কষ্ট আড়াল করে আলিফাকে সুখী করার জন্য ওকে আমার ডিভোর্স দিতেই হবে।

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২৩

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে আলিফার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, ঘুম ঘুম চোখে আলিফার দিকে তাকালাম।
ভেজা চুলে ওকে খুব সুন্দর লাগছে। আলিফা চলে যেতে চাইলো, ওর হাত ধরে টান দিয়ে আমার বুকে শুয়ে দিলাম। এক হাত দিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে রেখেছি, আরেক হাতে ওর ভেজা চুলগুলো থেকে টুপটুপ করে পড়া পানি নিয়ে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম “ভেজা চুলে তোমায় খুব সুন্দর লাগে” আলিফা কিছু না বলে উঠে চলে গেলো। আশ্চর্য রাতে তো কতো ভালো ছিল আর এখন, তারমানে কি রাতে এসব ও আমাকে ভালোবেসে বলেনি নেশার ঘোরে বলেছে। আর এখন নেশার ঘোর কেটে যেতেই….
নাহ আলিফার সাথে কথা বলা প্রয়োজন কোনো কারণে হয়তো রেগে আছে। তাড়াতাড়ি উঠে নিচে আসলাম।

আলিফা তো রান্নাঘরে নেই, টেবিলে নাশতা সাজানো তাহলে আলিফা গেলো কোথায়।
নীলিমা: ভাইয়া কাকে খুঁজছ
আমি: তোর ভাবি কোথায়
নীলিমা: এক্ষণি তো দেখে গেলাম নাশতা খেতে বসলো, আজকে আমি নাশতা বানিয়েছি শুনে অনেক হেসেছেও
আমি: এইটুকু সময়ের মধ্যে গেলো কোথায়
নীলিমা: তুমি নাশতা করো আমি দেখে আসছি
আমি: ছোটমা কোথায় রে
নীলিমা: আম্মু সকাল সকাল চলে গেছেন বলেছেন আমরা যেন তাড়াতাড়ি চলে যাই
আমি: ঠিক আছে।
স্থির হয়ে বসতে পারছি না, হুট করে কোথায় চলে গেলো মেয়েটা। আচ্ছা ও সেদিনের মতো আজ আবার ছাদে যায়নি তো।

তাড়াতাড়ি ছাদে আসলাম, আলিফা ছাদের এক কোণে বসে আছে।
আমি: আলিফা এখানে কি করছ
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: আলিফা (টান দিয়ে ওকে আমার দিকে ফিরালাম)
আমি: আলিফা তুমি কাঁদছ কেন, একটু আগেই তো রুম থেকে আসলে তখনো হাসছিলে
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: প্লিজ কিছু তো বলো এভাবে কাঁদছ কেন
আলিফা: নাও (আমার দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিলো। হাতে নিয়ে তো আমি অবাক, ডিভোর্স পেপার)
আমি: এইটা কি আলিফা
আলিফা: প্রশ্নটা তো আমার তোমাকে করা উচিত। কেন এমন করলে রিফাত, কিসের প্রতিশোধ নিলে
আমি: প্রতিশোধ
আলিফা: হ্যাঁ এতোদিন তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এমন প্রতিশোধ নিলে
আমি: আলিফা কি বলছ এসব
আলিফা: প্রতিশোধ নেওয়ার ছিল অন্যভাবে নিতে পারতে এভাবেই নিতে হলো তাও আজকের দিনে
আমি: কি বলছ আমি কেন প্রতিশোধ নিতে যাবো আর কিসের প্রতিশোধ নিবো
আলিফা: আমিও তো ভাবছি কিসের প্রতিশোধ নিলে তোমাকে এতোদিন ভালোবাসিনি এইটার, বলতে পারো আমার দোষ কোথায় ছিল আ….
আমি: প্লিজ চুপ করো আমি তোমাকে ভালোবাসি আমি তোমার প্রতি প্রতিশোধ নিবো কেন
আলিফা: রিফাত কেন করলে এমন
আমি: আজব তো আমি কি করলাম
আলিফা: গতকাল যখন বলছিলে আমাকে অনেক বড় গিফট দিবে তখন আমি একটুও বুঝতে পারিনি আমার জন্য যে এতোবড় গিফট এর আয়োজন করেছ তুমি
আমি: আলিফা প্লিজ বিশ্বাস করো আমি জানিনা এই ডিভোর্স পেপার কোথা থেকে এসেছে
আলিফা: আমি যখন আনাইনি তারমানে তুমি এনেছ
আমি: কি বলছ এসব আমি এই ডিভোর্স পেপারের বিষয়ে কিছুই জানিনা
আলিফা: আর মিথ্যে বলতে হবে না রিফাত তুমি তো এক সপ্তাহ আগে বলেছিলে এক সপ্তাহ পর তুমি সিদ্ধান্ত নিবে আর আজকেই এক সপ্তাহ পূর্ণ হয়েছে তাই তুমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছ
আমি: হ্যাঁ আমি বলেছিলাম এক সপ্তাহ পর সিদ্ধান্ত নিবো তারসাথে তো এইটাও বলেছিলাম যে এই এক সপ্তাহ আমি বুঝার চেষ্টা করবো তুমি আমাকে ভালোবাস কিনা। আর রাতে তো সব ঠিক হয়েই গেছে তুমিও বলেছ আমাকে ভালোবাস তাহলে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে যাবো কেন
আলিফা: ডিভোর্স পেপারটা আমার হাতে আছে রিফাত আর মিথ্যে বলে লাভ কি
আমি: তোমাকে বুঝাই কিভাবে আমি কেন তোমাকে ডিভোর্স দিতে যাবো
আলিফা: কারণ আমাকে তোমার প্রয়োজন শেষ রাতে তো বিছানায় নিয়ে নিয়েছ এখন তো ডিভোর্স দিবেই
আমি: আলিফা (একসাথে কয়েকটা থাপ্পড় দিলাম, বলে কিনা আমি…. ছিঃ)
আলিফা: তুমি আমাকে যতোই মারো সত্যি তো এটাই তুমি আমাকে ডিভোর্স দেয়ার জন্য এই পেপার আনিয়েছ। আর আমি যেন খুব সহজেই পেয়ে যাই সেজন্য নাশতার টেবিলের উপর রেখে দিয়েছিলে
আমি: একবার ভেবে দেখো আমি ডিভোর্স পেপার যদি আনিয়ে থাকি তাহলে তো তোমার হাতেই দিতাম লুকিয়ে নাশতার টেবিলে রাখার কি দরকার ছিল আর সবচেয়ে বড় কথা আমি তোমাকে ভালোবাসি আ….
আলিফা: হ্যাঁ তুমি ডিভোর্স পেপারটা আনাওনি আমি আনিয়েছি তাই তো
আমি: তোমার সাথে আর কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই শুধু এইটুকু জেনে রাখো আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার শরীর কে না
আলিফা: তুমিও আমার শেষ কথা শুনে যাও ডিভোর্স পেপার যখন আনিয়েছ আমিও সাইন করে দিবো আর এক্ষণি।
দূর এই মেয়ের সাথে কথা বললে শুধু ঝগড়া হবে, তাড়াতাড়ি নিচে চলে আসলাম।

নীলিমা রেডি হচ্ছে আজব মেয়ে তো আমাদের রেখেই চলে যাবে।
নীলিমা: ভাইয়া তুমি এসেছ, আমি চলে যাচ্ছি তোমরা পরে এসো
আমি: একসাথে গেলেই তো হয়
নীলিমা: না আমার একটু কাজ আছে, কাজটা সেরে বাসায় যাবো
আমি: ঠিক আছে।
নীলিমা বেরিয়ে পড়ার সাথে সাথে আমিও বেরিয়ে পড়লাম।

বাসার সামনেই রাস্তার পাশে এসে বসলাম। আমার তো মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না ডিভোর্স পেপারটা আসলো কোথায় থেকে। আমি আলিফাকে ভালোবাসি ডিভোর্স দিতে যাবো কেন, যদি আলিফা আমাকে ভালো না বাসতো বা রাতুল ফিরে আসতো তাহলে নাহয় ডিভোর্স এর কথা ভাবতাম। আচ্ছা আমি যখন ডিভোর্স পেপারটা আনাই’নি তাহলে এইটা আনলো কে আর নাশতার টেবিলেই বা রাখলো কে। হঠাৎ নীলিমার কথা মনে পড়লো, এমন নয় তো নীলিমা পেপারটা আনিয়েছে আর ও নাশতার টেবিলে রেখে দিয়েছে যেন আলিফা বা আমি পেয়ে যাই আর আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়ে ডিভোর্স হয়ে যায়। কিন্তু নীলিমা এমন কাজ কেন করবে। মাথায় কিছুই ঢুকছে না সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
আলিফা: রিফাত (হঠাৎ আলিফার ডাকে পিছন ফিরে তাকালাম। ওর হাতে ডিভোর্স পেপার তারমানে সাইন করে নিয়ে এসেছে)
আমি: বাহ্ আমাকে সত্যি খারাপ ভেবে সাইনটা করে দিলে তো
আলিফা: আরে শু….
আমি: কি শুনবো হ্যাঁ আবার এটাই বলবে যে আমি খারাপ তোমাকে ভোগ করে ফেলেছি তাই আর প্রয়োজন নেই বলে ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছি
আলিফা: আমার কথা তো শুনো
আমি: তুমি শুনো ভালো করে, যতোটা খারাপ আমাকে ভাবছ ততোটা খারাপ আমি নই। আর ভোগ করা সেটা তো শত্রুকে করা যায় তুমি তো আমার ভালোবাসা। ভালোবাসা কে কখনো ভোগ করা যায় না বুঝেছ
আলিফা: তখন থেকে উল্টাপাল্টা বলেই যাচ্ছ আমাকে কিছু বলার সুযোগ’ই দিচ্ছ না। থাকো তুমি তোমার ভালোবাসা আর নীতিকথা নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি।
পেপারটা ছুড়ে ফেলে দিলো, হাতে নিয়ে দেখি আলিফা সাইন করেনি। তারমানে কি আলিফা বুঝতে পেরেছে আমি পেপারটা ওখানে রাখিনি। যদি বুঝে থাকে তাহলে তো আলিফার সাথে এইটা নিয়ে কথা বলে বের করা দরকার কে করেছে এই কাজ। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আলিফা চলে যাচ্ছে, মাঝ রাস্তায় যেতেই একটা গাড়ি এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। দৌড়ে আলিফার কাছে গেলাম। চারপাশে শুধু রক্ত, আলিফা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
আমি: আলিফা
আলিফা: রিফাত আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আলিফা আর কিছু বলতে পারলো না….
আমি: আলিফা….
রিয়ান: ভাইয়া কি হয়েছে ভাবির নাম ধরে চিৎকার করছ কেন (রিয়ানের ধাক্কায় চারপাশে তাকালাম, কেবিনের সামনে একটা চেয়ারে বসে আছি পাশে আব্বু আর রিয়ান)
রিয়ান: ভাইয়া কি হয়েছে শরীর খারাপ লাগছে
আমি: আআআলিফা আলিফা
রিয়ান: চিন্তা করো না ভাবির অপারেশন হয়ে গেছে
আমি: অপারেশন হয়ে গেছে
রিয়ান: হ্যাঁ তুমি এখানে নিশ্চুপ হয়ে বসেছিলে তাই আব্বু তোমাকে ডাকতে নিষেধ করেছিলেন
আমি: রিয়ান আলিফা বাঁচবে তো
রিয়ান: প্লিজ ভাইয়া এভাবে কেঁদো না অপারেশন তো হয়ে গেছে, ডক্টর বলেছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাবির জ্ঞান ফিরে আসবে
আমি: সব দোষ আমার
আব্বু: রিফাত কেন পাগলামি করছিস এক্সিডেন্ট হয়েছে আর এক্সিডেন্ট এর উপরে তো কারো হাত নেই
আমি: না আব্বু সব দোষ আমার। আমি যদি তখন বাইরে না যেতাম তাহলে তো আলিফাও বাইরে যেতো না আর এমন হতো না
আব্বু: দূর পাগল ছেলে যা হবার ছিল তাই হয়েছে নিজেকে দোষে লাভ নেই। এখন বৌমা কে সুস্থ করে তোলা প্রয়োজন
আমি: হুম।

রিয়ানের কাধে মাথা রেখে বসে আছি আর অপেক্ষা করছি কখন আলিফার জ্ঞান ফিরবে কখন আমি ওর কাছে যেতে পারবো। পুরো একটা বছর পর আলিফা আমাকে ভালোবেসেছে আর আজ কিনা এমন হলো তাও আমার জন্মদিনে। আসলে দোষটা আমারই, তখন যদি আলিফার সাথে রেগে গিয়ে বাইরে না বেরুতাম তাহলে আলিফাও বেরুতো না আর এমন হতো না। বাইরে গিয়েছিলাম যদি আলিফার হাতে ডিভোর্স পেপার দেখে এভাবে রেগে গিয়ে ওকে কথা না শুনাতাম তাতেই ভালো হতো। আলিফা রাগ করে চলে যেতো না আর মাঝ রাস্তায় যেতেই এক্সিডেন্ট’টাও হতো না। হঠাৎ ডিভোর্স পেপারের কথা মনে পড়লো, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এর পিছনে নীলিমা আছে।
আমি: আব্বু নীলিমা কোথায়
আব্বু: বাসায় আছে তোর ফোন পেয়ে আসতে চেয়েছিল আমি না করেছি সবাই এসে কি করবে
আমি: ছোটমারা থাকবে তো
আব্বু: হ্যাঁ কয়েকদিন থাকবে ওরা (থাকতে তো হবেই, বাসায় গিয়ে নীলিমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে কেন করেছে এমন)
নার্স: আপনাদের রোগির জ্ঞান ফিরেছে চাইলে কথা বলতে পারেন (নার্স এর কথা শুনে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছি। এক দৌড়ে আলিফার কাছে চলে আসলাম)

আলিফা নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে, ওর কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম। আলিফার হাত আমার দু হাতের মুঠোয় এনে খুব কাঁদছি। আজকে যদি আলিফার কিছু হয়ে যেতো আমি বাঁচতাম কিভাবে। হঠাৎ আমার গালে আলিফার হাতের স্পর্শ পেলাম, আলিফা আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে অথচ ওর চোখ দিয়েও পানি ঝরছে।
আমি: আলিফা বিশ্বাস করো ডিভোর্স পেপারের ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আমি আনিনি ডিভোর্স পেপার, আমি তোমাকে ভালোবাসি আর সারাজীবন বাসতে চাই। আমি ডিভোর্স চাই না আলিফা।
আলিফা: (কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, কষ্ট হচ্ছে ওর)
আমি: তোমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে হবে না চুপ করে শুয়ে থাকো।
আলিফা নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে আর আমি ওর হাত ধরে এখনো কেঁদে যাচ্ছি। মনের ভিতরের ভয়টা এখনো কাটেনি, নিলাকে যেভাবে হারিয়ে ছিলাম আজ যদি এমন কিছু হতো তাহলে তো আমি শে…..
আব্বু: রিফাত দেখ কে এসেছে (আব্বুর ডাক শুনে দরজায় তাকালাম, নিজের অজান্তেই আমার দু হাতের মুঠোয় থেকে আলিফার হাতটা ছেড়ে দিলাম। উঠে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছি)
আব্বু: উনি তোর আলিফাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছেন
নার্স: হ্যাঁ বলতে পারেন আপনারা খুব ভাগ্যবান ঠিক সময় উনি এসে রক্ত না দিলে রোগিকে বাঁচানো যেতো না
আব্বু: হ্যাঁ মা আমরা সত্যি ভাগ্যবান
নার্স: রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না বলে ডক্টর তো রোগিকে বাঁচানোর আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন কিন্তু হঠাৎ করে উনি এসে রক্ত দেওয়াতে রোগিকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। বলতে পারেন উনি আপনাদের রোগিকে নতুন জীবন দিয়েছেন।
আর কারো কোনো কথা আমার মাথায় ঢুকছে না, মাথা খুব ঘুরছে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। আস্তে আস্তে পিছাতে পিছাতে গিয়ে দেয়ালে ঠেকলাম, এখনো সামনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমার মন কিছুতেই মানতে চাইছে না যে রাতুল ফিরে এসেছে আর আমার সামনের ছেলেটাই রাতুল, যে কিনা আলিফাকে রক্ত দিয়ে ওকে আজ নতুন জীবন দিলো। আলিফার দিকে তাকালাম, রাতুলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আলিফার ঠোঁটের কোণে হাসি, চোখে খুশির কান্না। এখন আমি কি করবো রাতুল যে ফিরে এসেছে আমার মন তো তা মানতে চাইছে না। রাতুলের থেকে আলিফাকে কেড়ে নিবো….? তাহলে আমার ভালোবাসার মূল্য কি আমি তো স্বার্থপর হয়ে যাবো। দুচোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছে, আর একবার সামনে তাকালাম রাতুল আলিফার দিকে তাকিয়ে আছে আলিফাও রাতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনের চোখেই আনন্দের কান্না। আচ্ছা আলিফা রাতুলের কাছে ফিরে যাবে না তো…?

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২২

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২২

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে হঠাৎ চোখেমুখে পানির ছিটায় ঘুম ভেঙে গেলো, ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি নীলিমা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে হাসছে। তাড়াতাড়ি উঠে বসে চারদিকে চোখ বুলালাম, যাক বাবা আশেপাশে আলিফা নেই। এই দৃশ্য যদি ও দেখতো তাহলে আজ আমার কপালে দুঃখ ছিল।
নীলিমা: আমি তো ভেবেছিলাম রাতে ভাবিকে আমার কাছে নিয়ে যাওয়াতে তোমার বুঝি ঘুমই আসবে না কিন্তু তুমি তো দিব্বি ঘুমাচ্ছিলে (কথাগুলো বলেই আবার হাসতেছে। ছোটমা কষ্ট পাবে ভেবে কিছু বলছি না নাহলে রাতে যখন আমাদের রোমান্স মাটি করে দিয়ে আলিফাকে ডেকে নিয়ে গেছিল তখনি বুঝাতাম)
নীলিমা: কথা বলছ না কেন, ব্যাপার কি মনে হচ্ছে বউয়ের জন্য টান নেই
আমি: আগে ঘুম তারপর বউ
নীলিমা: দেখো কখনো আবার বলো না আগে বউ তারপর সব
আমি: তোর এতো পাকনামি করতে হবে না, আলিফা কোথায়
নীলিমা: আছে হয়তো নিচেই
আমি: হুম তুই যা আমি আসছি
নীলিমা: ওকে।

আলিফা রান্না করছে দেখেই তো দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে হচ্ছে, আজ তো কোনো বাধা নেই আলিফা তো এখন আমায় ভালোবাসে। রান্নাঘরে গিয়েই আলিফাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম।
আলিফা: কি হচ্ছে রিফাত বাসায় নীলিমা আছে
আমি: তাতে আমার কি আমি তো অন্য কারো বউকে আদর করছি না নিজের বউকেই করছি
আলিফা: ছাড়ো নাহলে কিন্তু ভালো হবে না
নীলিমা: ভাবি (নীলিমার ডাক শুনে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলাম উফফ সবসময় ও আমাদের রোমান্সে বাধা দিচ্ছে)
আলিফা: হ্যাঁ এসো (আমার দিকে তাকিয়ে একটা ভেঙছি দিলো)
নীলিমা: খাবার গুলো আমি টেবিলে নেই
আলিফা: আমি নিয়ে নিবো সমস্যা নেই
আমি: একটু কাজ করতে দাও বাড়িতে তো ছোটমা সব করে আর ও বসে বসে খেয়ে মোটা হচ্ছে
নীলিমা: কি আমি মোটা
আমি: না তো তুই খুব সুন্দর (যাক বাবা কি এমন বললাম নীলিমা আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে, আলিফাও রেগে গেছে)
এখানে থাকা আর ঠিক হবে না আমি বরং চলে যাই।

খেতে খেতে আলিফার দিকে লক্ষ করছি কিন্তু আলিফা লক্ষ করছে নীলিমার আমার দিকে চাহনি। উফফ এই নীলিমা আমার দিকে এভাবে কেন তাকায়, ও যেভাবে তাকায় তাতে যেকোনো বউ রাগ করবে, আলিফার রাগ করা তো স্বাভাবিক।
নীলিমা: ভাইয়া একটা কথা ছিল
আমি: বল
নীলিমা: আসলে আগামীকাল তো তোমার জন্মদিন তাই তোমাকে জিজ্ঞেস না করেই একটা কাজ করে ফেলছি
আলিফা: কি কাল তোমার জন্মদিন আর আমি জানি না
আমি: তোমাকে জানানোর সুযোগ কোথায় হলো প্লিজ রাগ করোনা
নীলিমা: আরে আবার তোমরা ঝগড়া শুরু করে দিয়েছ আমাকে পুরো কথাটা তো বলতে দাও
আমি: হুম বল
নীলিমা: তোমাকে না জিজ্ঞেস করে আমি পার্টির আয়োজন করে ফেলেছি, আমার সব ফ্রেন্ডসদের আজকে রাতে ইনভাইটও করে ফেলেছি
আমি: মানে কি এতো কিছু করার আগে আমাকে একবার জিজ্ঞেস করবি না। তুই জানিস না আমার জন্মদিনে আমি কোনো পার্টি করি না এতিমখানায় বাচ্চাদের জন্য খাবার নিয়ে যাই।
নীলিমা: ভাইয়া প্লিজ আমার মনে ছিল না সবাইকে ইনভাইট করার পর মনে পড়েছে, প্লিজ রাগ করো না আমি তো কাল চলেই যাবো এই কথাটা রাখো প্লিজ
আলিফা: কি তুমি কাল চলে যাবে
নীলিমা: হ্যাঁ, ভাবি প্লিজ ভাইয়াকে বলো আমার এই রিকুয়েস্ট’টা রাখতে প্লিজ
আলিফা: ঠিক আছে পার্টি হবে
আমি: আলিফা….
আলিফা: থাক না রিফাত একটু সময়ের ব্যাপার
আমি: হুম।

রুমে এসে পায়চারী করছি আর ভাবছি আলিফার মাথায় আসলে কি চলছে, ও নীলিমার কথায় রাজি হয়ে গেলো কেন। যে মেয়ে নীলিমাকে সহ্য করতে পারে না সে নীলিমার কথায় রাজি হয়ে গেলো ভাবতেই তো অবাক লাগছে। হঠাৎ আলিফা এসে আমার শার্টের কলার ধরে চিৎকার শুরু করলো।
আলিফা: তোমার জন্মদিন অথচ আমি জানিনা আর ওই মেয়েটা জানে
আমি: ও আমাদের পরিবারের একজন তাই আগে থেকে জানে
আলিফা: আর আমি তোমার পরিবারের একজন না হুম
আমি: হ্যাঁ তুমিও এই পরিবারের একজন তবে নতুন তাই জানো না প্লিজ আর রাগ করোনা
আলিফা: যাও মাফ করে দিলাম
আমি: মাফ চাইলাম না অথচ মাফ করে দিলা
আলিফা: হিহিহি
আমি: ছাড়াচ্ছি হাসি।
আলিফাকে জরিয়ে ধরে আস্তে আস্তে ওর ঠোঁটের দিকে আমার ঠোঁট এগুচ্ছি তখনি নীলিমা এসে হাজির।
নীলিমা: এই সরি সরি আমার নক করে আসা উচিত ছিল
আমি: রোমান্সটা যখন মাটি করেই দিলি তখন বলে ফেল কেন এসেছিস
নীলিমা: না থাক পরে আসবো যাই।
নীলিমা যাওয়ার সময় আবার আমার দিকে তাকালো, উপরে হাসলেও ওর চোখে মুখে বিরক্তির চাপ। মনে হচ্ছে ও আমাদের এই অবস্থায় দেখতে চায়নি, তাহলে কি আলিফার সন্দেহ ঠিক। আলিফার দিকে তাকালাম জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ও কি বিষয়টা লক্ষ করেছে নাকি করেনি।
আমি: আলিফা একটা বিষয় লক্ষ করেছ
আলিফা: কি (তারমানে ও তখন নীলিমার দিকে তাকায়নি, থাকুক আর বলে ওর মন খারাপ করাই না)
আমি: না কিছু না
আলিফা: আচ্ছা কাল তো তোমার জন্মদিন আমাকে কি গিফট দিবে
আমি: জন্মদিন আমার আর গিফট নিবে তুমি
আলিফা: হ্যাঁ বলো কি দিবে
আমি: যখন দেই তখন নাহয় বলবো, তবে এইটুকু জেনে রাখো কাল তোমাকে অনেক বড় একটা গিফট দিবো
আলিফা: দেখা যাবে, ফোন বাজছে যাও রিসিভ করো
আমি: ফোন যে বাজছে লক্ষই করিনি।

তাড়াতাড়ি ফোনটা আনলাম ছোটমা ফোন দিয়েছে, রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যাঁ ছোটমা
ছোটমা: এক কাজ কর আলিফা নীলিমাকে নিয়ে বাসায় চলে আয় আমরা এখানেই আছি
আমি: বাসায়
ছোটমা: হ্যাঁ আমতা আমতা করছিস কেন
আমি: আসলে ছোটমা একটু সমস্যা হয়ে গেছে তুমি বাসায় বলো না
ছোটমা: কি হয়েছে
আমি: নীলিমা একটা পার্টির আয়োজন করেছে আজ আসতে পারবো না। প্লিজ বাসায় কাউকে বলোনা।
ছোটমা: ঠিক আছে সকালে চলে আসিস
আমি: ওকে ছোটমা।

আলিফা সাজছে আর আমি বসে বসে দেখছি। পার্টি যখন ভালো লাগে না নিজের বউ কেই দেখি তাহলে। অবশ্য ওকে দেখলে আর অন্য কিছুর প্রয়োজন হবে না, ওকে দেখেই কাটিয়ে দেয়া যাবে হাজারটা শতাব্দী।
আলিফা: এভাবে কি দেখছ
আমি: দেখছি আবার সাথে ভাবছিও
আলিফা: কি
আমি: ভাবছি আয়নায় তোমাকে এতো সুন্দর লাগে কিন্তু আমার সামনে দাঁড়ালে তোমাকে পেত্নীর মতো লাগে কেন
আলিফা: কি বললে
আমি: এমনি বলেছি আর মেরো না প্লিজ।
আলিফা আমার কোনো কথাই শুনছে না বালিশ দিয়ে একের পর এক বারী দিচ্ছে। পাগলী অনেক ক্ষেপে গেছে থামাতে হবে।
বালিশটা ওর হাত থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলাম। একটু আগের চঞ্চল মেয়েটা নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি আস্তে আস্তে গিয়ে ওর দুইটা ঠোঁটে আমার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম।
আলিফা: উহহ ছাড়ো
আমি: কেন
আলিফা: দিলে তো আমার সাজটা নষ্ট করে
আলিফা: কিচ্ছু নষ্ট হয়নি শুধু লিপস্টিকটা নাই হয়ে গেছে হাহাহা
আলিফা: ফাজি ছেলে
আমি: আবার লিপস্টিক দিলে আবার খাবো
আলিফা: আর সুযোগ দিচ্ছি না
আমি: দেখা যাবে
আলিফা: হুহ।

নীলিমা বলেছিল ছোট একটা পার্টির আয়োজন করেছে আর ওর কয়েকজন ফ্রেন্ডসদের ইনভাইট করেছে কিন্তু এখন তো দেখে অনেক বড় মনে হচ্ছে। নীলিমার এতো ফ্রেন্ডস তাও শহরের কিভাবে সম্ভব ও তো গ্রামে থাকে। নীলিমার কাজ কর্ম সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
নীলিমা: ভাইয়া এখানে একা দাঁড়িয়ে কি করছ ভাবি কোথায়
আমি: আসছে
নীলিমা: তুমি চলো কেক কাটবে আমি ভাবিকে ডেকে আনছি
নীলিমা: হুম।

কেক কেটে প্রথম আলিফাকে খাওয়াতে যাবো নীলিমা আমার হাত ধরে নিজের মুখে কেক নিয়ে নিলো। আশ্চর্য তো, এতো গুলো মানুষের সামনে তাই রাগ দেখালাম না আলিফাও রাগ করলো না।
নীলিমা: ভাইয়া চলো আজ তোমার সাথে ডান্স করবো
আমি: এসব পার্টি ডান্স আমি পছন্দ করিনা
নীলিমা: চলো তো দেখবে ভালো লাগবে (আমার হাত ধরে টানছে দেখে আলিফা এসে নীলিমার হাত সরিয়ে দিলো)
আলিফা: ও তো বলেছে ডান্স পছন্দ করে না আর যদি করতেই হয় আমি তো আছি ওর স্ত্রী
নীলিমা: হুম
আলিফা: তোমাকে আগেই বলেছিলাম এই মেয়ে বজ্জাতের হাড্ডি দেখেছ কেমন রাগ দেখিয়ে চলে গেলো
আমি: তুমিই তো ওর কথায় রাজি হয়ে গেলে নাহলে এসব পার্টি হতো নাকি
আলিফা: ও কাল চলে যাবে এই খুশিতেই তো আমি মেনে নিয়েছিলাম
আমি: যা হবার হয়ে গেছে আর একটু সময়
আলিফা: হুম চলো ডান্স করি
আমি: এই পাগলী এসব আমার ভালো লাগে না
আলিফা: তো এখানে বসে থাকবো নাকি।
“কে বলেছে বেবি তোমাকে বসে থাকতে হবে ও তোমার সাথে ডান্স না করলে কি হয়েছে আমি তো আছি” কথাটা শুনে দুজনেই অবাক হয়ে সামনে তাকালাম। একটি ছেলে নীলিমার ফ্রেন্ড হবে হয়তো, কিন্তু এতো অসভ্য ছেলে নীলিমার ফ্রেন্ড।
ছেলেটা আলিফার হাত ধরে টানছে ইচ্ছে তো হচ্ছে এখানেই খুন করে ফেলি কিন্তু নীলিমার ফ্রেন্ড তাই বেশি কিছু করা যাবে না। ছেলেটার হাত আস্তে সরিয়ে দিয়ে নীলিমাকে ডাকলাম।
নীলিমা: কি হয়েছে ভাইয়া
আমি: তোর এই ফ্রেন্ডকে এখান থেকে নিয়ে যা নাহলে কিন্তু
আলিফা: রিফাত আমি কথা বলছি মাথা গরম করো না।
নীলিমা ছেলেটাকে নিয়ে চলে গেলো, আর একটু হলে তো ওকে আমি খুনই করে ফেলতাম। অসভ্য ছেলে কোথাকার।

আলিফা আর আমি দাঁড়িয়ে গল্প করছি, নীলিমা এসে পাশে দাঁড়ালো হাতে গ্লাস।
নীলিমা: ভাইয়া এইটা খাও মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে
আমি: নীলিমা তুই কি পাগল হয়ে গেছিস আমাকে কখনো ড্রিংক করতে দেখেছিস
নীলিমা: না আসলে তুমি রেগে আছ তাই….
আমি: আমার কথা ছাড় তুই কি ড্রিংক করিস নাকি
নীলিমা: না না এসব তো আমার ফ্রেন্ডসদের জন্য
আমি: ঠিক আছে
নীলিমা: তুমি দাঁড়াও আমি আমাদের তিনজনের জন্য জোস নিয়ে আসছি।

নীলিমা হাতে জোসের গ্লাস নিয়ে আমাদের দিকেই আসছে, আজব মেয়ে তো ও। দেখে বুঝার উপায় নেই ও যে গ্রামের মেয়ে।
নীলিমা: জোস খেতে তো সমস্যা নেই নাও
আলিফা: জোস খেতে সমস্যা হবে কেন আমি তো জোস খুব পছন্দ করি (নীলিমার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে একবারেই খেয়ে নিলো। আমি গ্লাসে চুমুক দিতে যাবো আমার হাত থেকে গ্লাস কেড়ে নিয়ে এটাও একবারে খেয়ে নিলো)
নীলিমা: ভাইয়া তুমি আমারটা নাও আমি আমার জন্য আবার নিয়ে আসছি
আমি: ওকে।
অর্ধেক জোস খেতেই মাথা কেমন যেন জিমজিম করছে, আলিফার দিকে তাকালাম ওর তো আমার থেকে খারাপ অবস্থা। আলিফা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না আমাকে এসে জরিয়ে ধরলো।
আলিফা: রিফাত চলো না ডান্স করি (আরে ও তো পুরো মাতালের মতো কথা বলছে, তাহলে কি জোসে….) নীলিমা: ভাইয়া ভাবিকে সোফায় শুইয়ে দাও তো চলো আমরা ডান্স করি
আমি: আমার মাথা খুব যন্ত্রণা করছে দাঁড়াতে পারছি না আর তুই আছিস ডান্স নিয়ে। (কলিংবেল বাজছে এতো রাতে কে আসলো আবার)

আলিফাকে নিয়ে সোফায় বসে আছি, নীলিমা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ছোটমা এতো রাতে এই বাসায়।
ছোটমা: রিফাত এসব কি হচ্ছে এখানে
আমি: তোমাকে তো সকালে বলেছিলাম
ছোটমা: রিফাত তুই ড্রিংক করেছিস
আমি: নাতো আমি তো জোস খেয়েছি
ছোটমা: হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি তুমি কোন জোস খেয়েছ, বৌমার তো দেখছি একি অবস্থা ও ড্রিংক করেছে নাকি।
আমি: না তো নীলিমা আমাদের জোস খাইয়েছে
ছোটমা: সন্ধ্যার পর থেকেই আমার মনে হচ্ছে এই মেয়ে কিছু একটা প্ল্যান করেছে তাইতো এতো রাতে ছুটে আসতে হয়েছে আমাকে
নীলিমা: কে বলেছিল তোমাকে আসতে, এসে দিলে তো আমার সব প্ল্যান নষ্ট করে। (ওদের আর কোনো কথা আমার কান দিয়ে ঢুকছে না, মাথা খুব যন্ত্রণা করছে)
ছোটমা: রিফাত আলিফাকে নিয়ে রুমে যা
নীলিমা: আম্মু প্লিজ আমার সব প্ল্যান এভাবে নষ্ট করে দিও না
ছোটমা: একদম চুপ, রিফাত যা তুই।
আলিফাকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম কিন্তু দাঁড়াতে পারছি না। আলিফা সমানে বলে যাচ্ছে “ডান্স করবো ডান্স করবো”
ছোটমা আমাদের দুজনকে রুমে দিয়ে গেলেন।

কোনো ভাবে দরজা লাগিয়ে বিছানায় দফ করে শুয়ে পড়লাম। আলিফা এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো। ও তো পুরো মাতাল হয়ে গেছে আমি তো কমই খেয়েছি।
আলিফা: রিফাত একটা সত্যি কথা বলবো
আমি: হ্যাঁ বলো আমি জানি নেশার ঘোরে সবাই সত্যি কথাই বলে
আলিফা: আমি তোমাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি, আআমি… (নেশা ভালোই হয়েছে ওর আর কথাই বলতে পারছে না)
উফফফ মাথাটা কেমন যেন করছে আর কিছু ভাবতে পারছি না। আলিফা আমাকে জরিয়ে ধরে আছে দেখে আমিও ওকে জরিয়ে ধরলাম। আলিফার মুখে গলায় চুমুয় চুমুয় ভরিয়ে দিচ্ছি, আলিফা আমার চুল খামছে ধরে আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২১

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২১

লেখিকা: সুলতানা তমা

অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছি আর রাতের কথা ভাবছি। রাতে আলিফা যা করেছে, কেন যে শুধু শুধু আমাকে সন্দেহ করছে, অবশ্য নীলিমার আচরণে সন্দেহ হওয়াটা স্বাভাবিক। রাতে খেতে বসে নীলিমা আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছিল আলিফা সেটা লক্ষ করে রুমে এসে আমার সাথে কি ঝগড়াটাই না করলো। আবার নীলিমা এসে আলিফাকে ওর রুমে নিয়ে গেলো থাকার জন্য, এতেও আলিফার সমস্যা বলে নীলিমা নাকি চায় না আমরা দুজন এক রুমে থাকি। স্বামী স্ত্রী এক রুমে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক এতে নীলিমা না চাওয়ার কি আছে। অবশ্য একদিকে আমার জন্য ভালোই হয়েছে নীলিমাকে দেখে আলিফা জ….
আলিফা: এই তুমি রেডি হচ্ছ কেন কোথায় যাবে (হঠাৎ আলিফার চিৎকারে কেঁপে উঠে পিছন ফিরে তাকালাম)
আমি: এই তোমার সমস্যা কি এভাবে চিৎকার করে কথা বলছ কেন
আলিফা: আমার সমস্যা তুমি অফিসে যেতে পারবা না
আমি: মানে কি কেন
আলিফা: তুমি অফিসে যাবা আর আমি একা একা ওই বজ্জাত মেয়েটার সাথে বাসায় থাকবো
আমি: বজ্জাত মেয়ে আবার কে
আলিফা: কেন তোমার ওই চাচাতো বো নী… (তাড়াতাড়ি গিয়ে আলিফার মুখ চেপে ধরলাম, কি মেয়েরে বাবা মুখে কিছুই আটকায় না)
আমি: এভাবে নাম বলছ ও যদি শুনে কষ্ট পাবে তো (আমার হাত ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে দিলো)
আলিফা: কষ্ট পেলে পাইছে আমার স্বামীর দিকে নজর দিলে খুন…. (আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি দেখে থেমে গেছে, সবসময় বলে ভালোবাসে না আর এখন স্বামী বলছে)
আমি: থেমে গেলে কেন বলো ওকে খুন করে ফেলবে
আলিফা: (লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো)
আমি: যে মেয়ে আমাকে ভালোবাসে না সে কিভাবে আমার জন্য অন্য মেয়েকে খুন করার কথা ভাবছে সেটা তো আমার মাথায় আসছে না
আলিফা: আর আসতে হবেও না, অফিসে যাওয়া লাগবে না চুপচাপ বাসায় বসে থাকো।
আলিফা দৌড়ে রুম থেকে চলে গেলো। ভালোই লজ্জা পেয়েছে, পাগলী একটা সবসময় ভালোবাসা লুকানোর চেষ্টা করে।

রেডি হয়ে নিচে আসলাম, আলিফাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। নীলিমা ড্রয়িংরুমে বসে আছে তাই ওকে বলে অফিসে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম, ওমনি রাগিণী এসে হাজির।
আলিফা: তোমাকে না বলেছি অফিসে যেতে হবে না
আমি: আরে যেতে হবে রিয়ান একা আছে
আলিফা: আমি রিয়ানের সাথে কথা বলবো, তুমি রুমে চলো।
নীলিমা: ভাবি ভাইয়া যখন অফিসে যাবে না চলো আমরা ঘুরতে যাই (আলিফার দিকে তাকালাম এখন ওর মুখটা দেখার মতো হয়েছে, নীলিমার এই কথায় আলিফা রেগে ফুলে পুরো বেলুন)
আলিফা: অন্য দিন যাবো তুমি এখানে বসো আমরা আসছি।

আলিফা আমার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলো। আজ কপালে কি আছে আল্লাহ্‌ জানেন।
আলিফা: বউ রেখে ওই বজ্জাত মেয়েটাকে বলে অফিসে যাওয়া হচ্ছে (রেগেছে ভালোই আর একটু রাগালে খারাপ হয় না)
আমি: কিসের বউ তুমি তো আমাকে ভালোই বাস না, তাহলে আমি যাকে খুশি বলে যাবো তোমার তাতে কি
আলিফা: আমার তাতে কি বুঝাচ্ছি (একের পর এক কিল দিতে শুরু করলো)
আমি: ওরে বাবারে আমি শেষ
আলিফা: কেন আর ওকে বলে অফিসে যাবা না, ওকে ঘুরতে নিয়ে যাবা না।
আমি: যাবো তাতে তোমার কি
আলিফা: এই মেয়ে আমার সামনেই তোমার দিকে কিভাবে যেন থাকায় বাইরে গেলে তো….
আমি: কি ভয় হচ্ছে নাকি হিংসে হচ্ছে (ওকে জরিয়ে ধরে আছি, কিছুনা বলে চুপচাপ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে)
আলিফা: জানিনা, অফিসে যেও না।
আলিফা চলে গেলো। এবার তো নিশ্চিত ও যে আমায় ভালোবাসে। আর দু-তিনটা দিন ওকে কষ্ট দেই তারপর নাহয়….
আলিফা: রিফাত নিচে এসো। (মহারাণীর ডাক পড়েছে, তাড়াতাড়ি নিচে চলে গেলাম)

নীলিমা ড্রয়িংরুমে বসে বসে টিভি দেখছে। আলিফা এসে নোডলস আর কপি রেখে গেলো। বাব্বাহ হঠাৎ এতো আদর কার জন্য আমি নাকি নীলিমা। নীলিমা তো হবে না নিশ্চিত, যা হিংসে করে ওকে।
আলিফা: সবাই একসাথে মুভি দেখবো আর নোডলস খাবো
আমি: বাব্বাহ হঠাৎ….
নীলিমা: ভাইয়া সবসময় ভাবির সাথে লাগো কেন, ভাবি ইচ্ছে করে এসব বানিয়েছে খাও তো
আমি: ওকে
আলিফা: এমা আমার জন্য তো চামচ আনিনি তোমরা খাও আমি রান্নাঘর থেকে চামচ নিয়ে আসছি। (আলিফা ওর নোডলস হাতে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো)
নীলিমা: ভাইয়া দেখতো আমার চোখে কি যেন পড়েছে (এইরে এখন কি করি, ওর চোখ দেখতে গেলে তো ওর কাছে যেতে হবে। আলিফা দেখলে তো রেগে যাবে)
নীলিমা: কি ভাবছ দেখনা আমার চোখ জ্বলছে খুব
আমি: হুম দেখছি। (ভয়ে ভয়ে নীলিমার একটু কাছে গিয়ে ওর চোখে হাত দিলাম। সাথে সাথে ঠাস করে কিসের যেন একটা শব্দ হলো। তাকিয়ে দেখি আলিফা রাগে নোডলস সব ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে)
আমি: আলিফা কি হয়েছে।
আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।

রুমে এসে দেখি বিছানায় শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ইসস বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম না তো। আস্তে আস্তে গিয়ে ওর পাশে বসলাম। চুলে হাত বুলাতে বুলাতে ডাক দিলাম।
আমি: আলিফা
আলিফা: আমার কাছে এসেছ কেন যাও ওর কাছে যাও
আমি: আরে নীলিমার চোখে কি যেন পড়েছিল তাই
আলিফা: মিথ্যে কথা বজ্জাত মেয়ে একটা ইচ্ছে করেই মিথ্যে বলেছে যেন তুমি ওর কাছে যাও
আমি: তুমি যা ভাবছ তা না আর ও তো আমার বোন
আলিফা: হুম বোন তবে চাচাতো বোন। (আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে কথাটা বলে চলে গেলো)

বসে বসে ভাবছি এভাবে চললে হবে নাকি। নীলিমা আসাতে আলিফা আমাকে অফিসে যেতে দিচ্ছে না, সবকিছুতে সন্দেহ করছে। নীলিমাকে যেভাবেই হউক আব্বুর কাছে পাঠাতে হবে। তাড়াতাড়ি ছোটমাকে ফোন দিলাম।
ছোটমা: কিরে নীলিমা তোদের বাসায় গেছে
আমি: হুম ছোটমা
ছোটমা: ও নাকি তোর জন্মদিন পর্যন্ত থাকবে, আর তোর জন্মদিনে তো আমরাও যাবো তখন নিয়ে আসবো
আমি: ওকে
ছোটমা: তোর কি মন খারাপ
আমি: নাতো, আচ্ছা এখন রাখি পরে ফোন করবো
ছোটমা: ঠিক আছে।
দূর ও নাকি আমার জন্মদিন পর্যন্ত থাকবে। ছোটমাকে কিছু বলতেও পারলাম না, বললে উনি কষ্ট পাবেন।

রাতের খাবার খেয়ে এসে সোফায় বসলাম। আলিফা সবকিছু গুচাচ্ছে আর নীলিমা আমার পাশে বসে টিভিতে কার্টুন দেখছে। আমি নীলিমার এতো কাছে বসা দেখে আলিফা বার বার তাকাচ্ছে, ওকে রাগানোর জন্য আমিও সরছি না। কিন্তু নীলিমা আমাদের দুজনকে অবাক করে দিয়ে কার্টন দেখে হাসতে হাসতে এসে আমার উপরে পড়ে গেলো। আলিফাকে রাগাতে চেয়েছিলাম কিন্তু এতোটা না, পাগলী তো এই দৃশ্য দেখে রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে গেছে। তাড়াতাড়ি ওর পিছন পিছন রুমে আসলাম।

আলিফা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে নীরবে কেঁদে যাচ্ছে। রাগাতে গিয়ে ওকে কাঁদিয়ে ফেললাম, কিন্তু আমার কি দোষ আমি জানতাম নাকি নীলিমা এমন করবে। বুঝতেছি না নীলিমা কি এসব ইচ্ছে করে করছে নাকি। এইটা পড়ে ভাবা যাবে আগে রাগিণীর রাগ ভাঙানো প্রয়োজন। আস্তে আস্তে আলিফার কাছে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখলাম। সাথে সাথে ও পিছনে ঘুরে আমাকে জরিয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। এখন কি করি আমি তো ওকে একটু রাগাতে চেয়েছিলাম এভাবে কাঁদাতে চাইনি।
আমি: আলিফা কেঁদো না প্লিজ।
আমার কথা শুনে আরো জোরে কাঁদতে শুরু করলো। আরো কিছু বলতে গেলে হয়তো আরো বেশি কাঁদবে তাই আর কথা বাড়ালাম না, আলিফাকে জরিয়ে ধরে ওর কপালে একটা চুমু একে দিলাম।

সকালে রোদের আলো মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো, দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি নয়টা বাজে। এতো বেলা হয়ে গেলো আলিফা ডাকলো না। তাড়াতাড়ি উঠে তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছি, আজ অফিসে যেতে হবেই। আলিফার জন্য একটা সপ্তাহ অফিসে যাওয়া হয়নি, নেহাত রিয়ান ছিল তাই বাসায় বসে থাকতে পেরেছি কিন্তু আজ যেতেই হবে।
আলিফা: এই কোথায় যাচ্ছ তুমি
আমি: প্লিজ আজ আটকিয়ো না আজ অফিসে যেতেই হবে।
আলিফা: ওকে যাও তবে একটা কথা কি মনে আছে তোমার
আমি: কি কথা
আলিফা: আমরা এখানে এসেছি কতদিন হয়েছে
আমি: হুম মনে আছে তবে এক সপ্তাহ হতে এখনো একদিন বাকি
আলিফা: আমার তো মনে হয় একদিন আগেই রেজাল্ট পেয়ে গেছ
আমি: আর একদিন অপেক্ষা করলে হয়তো এরচেয়ে বেশি কিছু পাবো (আলিফার একদম কাছে গিয়ে বললাম, ও মুখ গোমড়া করে অন্য দিকে তাকালো)
আমি: কি হয়েছে
আলিফা: নীলিমা কিন্তু একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে ওকে আমি আর সহ্য করতে পারছি না
আমি: ছোটমাকে বলে পাঠিয়ে দিবো
আলিফা: ওকে।

দুজন একসাথেই নিচে আসলাম আলিফা রান্না ঘরে চলে গেলো, আমি বের হবো তখন নীলিমা ডেকে দাঁড় করালো।
আমি: কিরে কিছু বলবি
নীলিমা: দাঁড়াও আসছি (নীলিমা আমার দিকে এগুচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না, রান্নাঘরের দিকে তাকালাম আলিফা রাগি চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: তাড়াতাড়ি বল কি আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে
নীলিমা: অফিসে যাচ্ছ অথচ টাই টাও ঠিক করে বাঁধনি। (আরে কি বলে এসব, টাই তো ঠিকি আছে তারমানে নীলিমা ইচ্ছে করে এসব করছে। ও আমার একটু কাছে আসতেই আলিফার দিকে তাকালাম চোখ দুইটা আগুনের মতো হয়ে আছে হাতে চাকু সেটা আমাকে দেখাচ্ছে)
নীলিমাকে ঠিক করতে হবে না বলে এক দৌড়ে বাসার বাইরে চলে আসলাম।

সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম এখন রাত আটটা বাজে বাসায় ফেরা উচিত নাহলে আবার আলিফা রাগ করবে।

ড্রাইভ করছি আর ভাবছি নীলিমা আসাতে ভালোই হয়েছে তারচেয়ে বেশি ভালো হয়েছে নীলিমার এসব আচরণে। নীলিমা না আসলে আলিফা হয়তো নিজের ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে পারতো না। এই এক সপ্তাহে আলিফা নিজের ভালোবাসা ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে। আমিও বুঝে গেছি আলিফা সত্যি আমাকে ভালোবাসে শুধু এতোদিন ওর ভালোবাসা লুকানোর চেষ্টা করেছে। আর আলিফা তো সকালে বললো একদিন আগেই নাকি রেজাল্ট পেয়ে গেছি, সত্যিই তো এক সপ্তাহ হতে আরো একদিন বাকি অথচ এর মধ্যেই আমি আলিফার মন বুঝে ফেলেছি। আলিফা এখন আর আগের মতো দুরকম ব্যবহার করে না হয়তো সত্যি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। হঠাৎ পাশের একটা দোকানে চোখ পড়লো অনেক গুলো গোলাপ একসাথে দেখে ভালোই লাগছে। নেমে আলিফার জন্য এক গুচ্ছ গোলাপ নিলাম।

বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই নীলিমা দরজা খুলে দিলো। আমার হাতে গোলাপ ফুল দেখে ও খুশিতে নাচতে নাচতে ফুলগুলো ওর হাতে নিয়ে নিলো। শুধু ফুলগুলো নিয়েই শান্ত হয়নি আমাকে জরিয়েও ধরেছে। পাশে আলিফা তাকিয়ে আছে, এসব দেখে কিছুনা বলে রান্নাঘরে চলে গেলো। আমি নীলিমাকে ছাড়িয়ে রুমে চলে আসলাম।

শার্ট খুলতে খুলতে ভাবছি, নীলিমা আজ সব রোমান্স মাটি করে দিলো। ভেবেছিলাম আজ আলিফাকে গোলাপ গুলো দিয়ে নতুন করে প্রপোজ করবো নতুন করে জীবনটা শুরু করবো কিন্তু তা আর হলো না। আলিফা খুব রাগ করেছে দেখেই বুঝা গেছে, রাগ করাটা তো স্বাভাবিক। হঠাৎ আলিফা দৌড়ে এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো, অন্যমনস্ক ছিলাম তাই টাল সামলাতে না পেরে ডাইরেক্ট বিছানায় গিয়ে পড়ে গেলাম। আলিফা খুব কাঁদছে দেখে গড়িয়ে ওকে বুকে নিলাম। চোখের সামনে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
আমি: কি হয়েছে…?
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: এভাবে কাঁদছ কেন বলো (বুকে মাথা রেখে আরো জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করলো। নাহ এই একটা সপ্তাহ ওকে বেশি কাঁদিয়ে ফেলছি আর না)
আমি: রাগিণী তুমি এভাবে কাঁদলে আমার বুঝি ভালো লাগে, প্লিজ লক্ষীটি কান্না থামাও।
আলিফা: রিফাত আমি আর পারছি না
আমি: কি পারছ না তুমি
আলিফা: ওই মেয়েটাকে আর সহ্য করতে পারছি না, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে মেয়েটা আমার কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নিচ্ছে।
আমি: দূর পাগলী আমাকে আবার কেড়ে নিবে কে আমি তো তোমারই। (আলিফা কান্না থামিয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো)
আলিফা: রিফাত আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি (আমি যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। তারমানে শেষমেশ আলিফা আমাকে ভালোবেসেছে)
আলিফা: কি হলো কিছু বলছ না যে।
কি বলবো খুশিতে তো দুচোখ দিয়ে পানি ঝরছে। আলিফাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম। কাঁদতে কাঁদতে আলিফার কপালে আলতো করে আমার ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলাম।

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২০

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২০

লেখিকা: সুলতানা তমা

“রিফাত উঠো প্লিজ অনেক বেলা হয়ে গেছে” হঠাৎ আলিফার চেঁচামেচিতে চোখ মেলে তাকালাম। আলিফা আমার হাত ধরে টানছে, ইচ্ছে হচ্ছে ওকে টান দিয়ে আমার বুকে শুয়ে দিয়ে বলি “ভালোবাসি রাগিণী” কিন্তু সেটা করা যাবে না কারণ আজ থেকে আমি আলিফাকে অবহেলা করবো। আচ্ছা আমি যে বার বার বলছি ওকে অবহেলা করবো পারবো তো আমি। না না এসব কি ভাবছি পারতে তো আমাকে হবেই, না পারলে অন্তত অভিনয় করতে হবে আমাকে।
আলিফা: রিফাত যাবে কিনা সবাই নাশতা করার জন্য বসে আছে (আলিফার দিকে তাকালাম, রাতে ডিভোর্স এর কথা বলাতে মেয়েটা অভিমান করে চলে যেতে চেয়েছিল আর এখন হাসছে)
আলিফা: এই কি ভাবছ এতো চলো (এক ঝটকা দিয়ে আলিফার হাত সরিয়ে দিলাম, চেঁচিয়ে বললাম)
আমি: আর কখনো আমাকে ডাকতে আসবে না। আমার যখন খুশি উঠবো, যখন খুশি খাবো বুঝেছ।
আলিফা: রিফাত তুমি আমার সাথে এমন করছ কেন
আমি: তোমার সাথে এর চেয়ে ভালো ব্যবহার করা যায় না।
আলিফা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আলিফার দিকে আর না তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

নাশতা করছি আর ভাবছি রাতে যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি সেটা আব্বুকে এখনি জানানো প্রয়োজন।
আমি: আব্বু একটা কথা ছিল
আব্বু: বলে ফেলো
আমি: আব্বু আসলে আমি এই বাসায় থাকতে চাইছি না, আলিফাকে নিয়ে অন্য বাসায় উঠতে চাইছি (সবাই খাবার রেখে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: কি হলো সবাই এমন হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছ কেন
রিয়ান: ভাইয়া তুমি বুঝতে পারছ কি বলতেছ
প্রিতি: ভাইয়া তুমি আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যেতে চাইছ
আব্বু: থাম তোরা, ও যখন নিজে থেকে যেতে চাইছে তারমানে কোনো কারণ নিশ্চয় আছে (আব্বু যে কিভাবে আমার মনের কথা বুঝে যান। আসলেই তো আমি একটা কারণেই এই বাসা থেকে যেতে চাইছি। আর সেটা হলো আলিফাকে কষ্ট দেওয়া। এখানে সবার মাঝে থাকলে ওকে আমি কষ্ট দিতে পারবো না তাই অন্য বাসায় যাওয়া প্রয়োজন)
আব্বু: রিফাত তুই যেতে পারিস তবে আমি যেখানে বলি সেখানে
আমি: ঠিক আছে আব্বু
আলিফা: সবাই যার যার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছ একবারো আমার সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে না
আমি: ওমা তুমি সিদ্ধান্ত নিতে জানো আমি তো জানতাম….
আব্বু: রিফাত চুপ কর। আলিফা বলো তুমি কি চাও
আলিফা: আমি এই বাসা ছেড়ে তোমাদের ছেড়ে যাবো না
আমি: এই বিষয়ে আর একটা কথাও শুনতে চাই না। আমি যাবো তাই তুমিও আমার সাথে যাবে (আলিফাকে চেঁচিয়ে বললাম, ও কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেলো)
আব্বু: রিফাত কি হচ্ছে এসব
আমি: আব্বু ওকে কষ্ট দেওয়া প্রয়োজন নাহলে ও বুঝবে না সত্যিকারের ভালোবাসা কোনটা
আব্বু: তাই বলে
আমি: হ্যাঁ আব্বু এজন্যই আমি ওকে নিয়ে অন্য বাসায় যাবো
আব্বু: ঠিক আছে যা ভালো মনে হয় কর
আমি: হুম।

আলিফা বসে বসে কাঁদছে এখন কি করি ওকে কাঁদিয়ে নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে। কিন্তু যেতে তো হবেই ও সবার মাঝে থাকলে অবহেলাটা অনুভব করতে পারবে না।
আমি: বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি না করে সবকিছু গুছিয়ে নাও
আলিফা: আমি যাবো না যেতে হয় তুমি একা যাও
আমি: একদম চুপ, রেডি হয়ে নাও বলছি
আলিফা: যাবো না বললাম তো
আমি: এমন ভাবে কান্না করছ মনে হচ্ছে তোমাকে আমি ওখানে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলবো (কথাটা শুনে কেমন করে যেন আমার দিকে তাকালো)
আমি: এভাবে কি দেখছ যাও রেডি হয়ে নাও
আলিফা: বুঝেছি এজন্যই এতোকিছু করছ
আমি: মানে
আলিফা: তুমি আমাকে ওখানে নিয়ে সত্যি সত্যি মেরে ফেলবে আমি বুঝে গেছি এজন্যই এতো প্ল্যান করেছ (জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করেছে আজব মেয়ে তো কি বলে এসব)
আমি: কান্না থামাও আর রেডি হও নাহলে কিন্তু
আলিফা: আমি তোমাকে ভালোবাসি না বলে সত্যি সত্যি আমাকে মেরে ফেলবে (এখন ওকে কি বলা উচিত ভেবে পাচ্ছি না। কেমন বোকা মেয়ে উফফফ)
আমি: আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে মারা তো দূরের কথা তোমাকে…. (দূর ওকে এসব বলে লাভ কি ও তো ভালোবাসা কি সেটাই বুঝে না)
আলিফা: চুপচাপ রেডি হয়ে নাও।

রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। যতোক্ষণ রুমে থাকবো এই পাগলীর সাথে বকবক করতেই হবে।
রিয়ান: ভাইয়া কখন যাবে তোমরা (রুম থেকে বেরুতেই দেখি রিয়ান)
আমি: একটু পর কেন
রিয়ান: না মানে তোমাকে ছাড়া কখনো….
আমি: বুঝেছি, আমি মাত্র এক সপ্তাহের জন্য অন্য বাসায় যাচ্ছি। এই এক সপ্তাহে যদি মনে হয় আলিফা আমাকে ভালোবাসে তাহলে ফিরে আসবো আর যদি মনে হয় ভালোবাসে না তাহলে ওকে ডিভোর্স দিয়ে মুক্ত করে দিবো
রিয়ান: ভাইয়া এক সপ্তাহ পর তোমার জন্মদিন আর তুমি ভাবিকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবছ
আমি: এটাই মনে হয় আমার এই জন্মদিনের সবচেয়ে বড় গিফট
রিয়ান: ভাইয়া
আমি: নিচে যা আমি রেডি হয়ে আলিফাকে নিয়ে আসছি
রিয়ান: হুম।

রুমে এসে দেখি আলিফা এখনো বসে বসে কাঁদছে। ইচ্ছে হচ্ছে একটা ধমক দিয়ে নিয়ে যাই।
আমি: এখনো রেডি হওনি
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: তোমার রেডি হতে হবে না চলো
আলিফা: দাঁড়াও রেডি হয়ে আসছি
আমি: লাগবে না আর অন্য কারো বাসায় যাচ্ছি না ওইটাও আমাদের বাসা
আলিফা: হুম।

আলিফাকে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম, মন খারাপ করে আছে দেখে মনে হচ্ছে ও বাবার বাড়ি থেকে শশুড় বাড়ি যাচ্ছে।
আব্বু: সাবধানে যাস
আমি: আব্বু এতো চিন্তা করছ কেন আমি কি অন্য কোথাও চলে যাচ্ছি এখান থেকে কিছু দূরেই তো বাসা
আব্বু: তাও সাবধানে থাকিস
আমি: ওকে।

ড্রাইভ করছি আর আলিফাকে আড়চোখে দেখছি, আলিফাও বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে।
আমি: কিছু বলবে
আলিফা: আমি জানি তুমি কেন আমাকে নতুন বাসায় নিয়ে যাচ্ছ
আমি: কেন
আলিফা: বলেছিলে না এখন থেকে অবহেলা করবে তাই
আমি: তুমিতো আমায় ভালোবাস না আমি তোমাকে অবহেলা করলেই কি। (ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ের মনে যে কি চলছে আল্লাহ্‌ জানেন)

বাসায় এসেই রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম, আলিফা আমার পিছন পিছন এসে রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করলো।
আমি: এইটা আমার রুম তাই এইটা এভাবে দেখার কোনো মানে হয় না
আলিফা: তোমার রুম মানে
আমি: আমার রুম মানে আমার রুম। এই রুমে আমি ঘুমাবো তুমি অন্য রুমে, যাও যে রুম পছন্দ হয় সেটা গিয়ে পরিষ্কার করে নাও
আলিফা: আজব তো আমরা কখনো আলাদা থেকেছি নাকি
আমি: আমরা কখনো এক সাথে ঘুমিয়েছি নাকি
আলিফা: না মানে এক রুমে তো থেকেছি। আসলে এতো বড় বাসায় আমরা দুজন মানুষ মাত্র অন্য রুমে ঘুমাতে আমার ভয় করবে
আমি: সেটা তোমার ব্যক্তিগত সমস্যা আমার কি
আলিফা: অবহেলা বুঝি মানুষ এভাবে করে
আমি: যাও তো আমার চোখের সামন থেকে।
আলিফা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রাগ দেখিয়ে তো বললাম চোখের সামন থেকে চলে যেতে, অচেনা জায়গায় আবার হারিয়ে যাবে না তো। আস্তে আস্তে আলিফার পিছু পিছু আসলাম। আমার রুমের পাশের রুমে গিয়ে ঢুকলো মনে হয় এই রুমেই থাকবে।
আমি: রুম তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করে রান্না বসাও গিয়ে (হঠাৎ আমার কন্ঠ শুনে আলিফা চমকে উঠে পিছন ফিরে তাকালো, সত্যিই তো মেয়েটা ভয় পায়)
আলিফা: মানে
আমি: দুপুরে খেতে হবে তো নাকি। রান্না ঘরে সব আছে গিয়ে রান্নাটা করে নাও
আলিফ: হুম।

আলিফা রান্না করছে আর আমি বার বার গিয়ে ওকে পাহারা দিচ্ছি, ভয় পায় যদি তাই। নিলা যখন মাঝে মাঝে রান্না করতো তখন খুব দুষ্টুমি করতাম ওর সাথে, আলিফা রান্নায় ব্যস্ত ইচ্ছে হচ্ছে দুষ্টুমি করি কিন্তু….
রুমে চলে আসলাম নিলার ছবিটা সাথে নিয়ে এসেছিলাম। দেয়ালে রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। পাগলীটা তো দিব্বি হাসছে কষ্টে তো রেখে গেছে আমাকে, আবার ডায়েরিতে লিখে রেখে গেছে বিয়ে করি যেন, বউকে অনেক ভালোবাসি যেন কিন্তু একবারো ভাবেনি বউটা আমাকে ভালোবাসবে কিনা।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসছে মহারাণীর রান্না এখনো শেষ হয়নি, কি যে রান্না করছে ও জানে।
আলিফা: রিফাত যাও খেয়ে নাও (পাশ ফিরে দেখি আলিফা, ওর যা অবস্থা হয়েছে দেখার মতো)
আমি: রান্না শেষ হয়েছে তাহলে
আলিফা: রান্না তেমন করিনি তো তা….
আমি: থাক আর বলতে হবে না।
আলিফাকে রেখেই খেতে চলে আসলাম।

খেয়ে সোফায় বসে আছি, ইচ্ছে করেই বসে আছি কারণ আলিফা এখনো খায়নি কোথায় যে আছে মেয়েটা। সন্ধ্যা নেমে আসছে অথচ….
আলিফা: রিফাত খেয়ে নিয়েছ
আমি: হ্যাঁ
আলিফা: আমার জন্য একটু অপেক্ষাও করনি
আমি: তুমি কোন দেশের মহারাণী যে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
আলিফা কিছু না বলে মন খারাপ করে গিয়ে খেতে বসলো।

“উনি নাকি আমাকে ভালোবাসে আমি একা একা রান্না করলাম একটু হেল্প করলো না, রুম পরিষ্কার করলাম তাও একটু হেল্প করলো না উল্টো রান্না করতেই এসে খেয়ে নিলো। আমার খিদে লেগেছে কিনা জানার প্রয়োজন মনে করেনি। আবার নাকি আমাকে ভালোবাসে হুহ” বসে বসে আলিফার কথা শুনছিলাম এবার উত্তর দেয়া উচিত। উঠে উপড়ে আসতে আসতে আলিফার দিকে তাকিয়ে বললাম “আমি কাউকে ভালোবাসি না” তাড়াতাড়ি উপরে চলে আসলাম। লুকিয়ে একবার ওর দিকে তাকালাম, খাবার রেখে বসে আছে হয়তো ভাবছে আমি হঠাৎ ভালোবাসি না বললাম কেন।

রুমে আসার সাথে সাথে শুনতে পেলাম কলিংবেল বাজছে। এই সন্ধ্যাবেলায় তাও এই বাসায় কে আসবে।
নিচে আসলাম আলিফা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: কি হলো দরজা খুলছ না কেন
আলিফা: এই সন্ধ্যাবেলায় কে আসবে তাও নতুন বাসায় তাই ভয় করছে
আমি: তুমি সরো আমি খুলছি।

দরজা খুলে দেখি নীলিমা। দূর এই মেয়ে আবার এখানে আসতে গেলো কেন, ওকে কেন যেন আমার ভালো লাগে না।
নীলিমা: ভাইয়া
আমি: তুই এখানে
নীলিমা: ভাবিকে দেখার জন্য গ্রাম থেকে আসলাম, বাসায় এসে শুনি তুমি ভাবিকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠেছ ভা….
আমি: তোকে দেখে তো বুঝার উপায় নেই গ্রাম থেকে যে এসেছিস, মনে হচ্ছে লন্ডন থেকে এসেছিস।
নীলিমা: কেন
আমি: যা পোশাক পড়েছিস
নীলিমা: সুন্দর লাগছে বুঝি
আমি: হুম ভিতরে আয়
আমি: ভাবি কোথায়। (পিছনে তাকিয়ে দেখি আলিফা নেই গেলো কোথায়)
আমি: তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি আলিফাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি
নীলিমা: ওকে।

আলিফার রুমে এসে খুঁজলাম ও নেই, আমার রুমে এসে দেখি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: আমার রুমে কেন তুমি
আলিফা: তোমার বোন এসেছে ও তো এখন আমার রুমটায় থাকবে তাই আমি আগেই এই রুমে চলে আসলাম
আমি: তুমি না সত্যি একটা আজব মেয়ে তোমার মন বুঝা খুব কঠিন
আলিফা: বুঝার চেষ্টা করলে বুঝে যেতে এতো কঠিন মনে হতো না
আমি: প্রায় একটা বছর ধরে চেষ্টা করছি এতোটুকু বুঝতে পারিনি। সকালে যদি ভালো ব্যবহার করো তো বিকেলে খারাপ। এভাবে কারো মন বুঝা যায় নাকি।
আলিফা: কই এখন তো এমন করি না সবসময় ভালো ব্যবহার করি
আমি: কচু করো, যাও নীলিমা ডাকছে
আলিফা: যাবো না মেয়েটাকে আমার ভালো লাগেনি
আমি: তুমি দেখলে কখন
আলিফা: তোমার পিছন থেকে একবার দেখেছি কি সব ড্রেস পড়েছে ছিঃ
আমি: বেশি কথা বললে তোমাকেও এসব ড্রেস পড়াবো যাও বলছি
আলিফা: ওহ বুঝেছি এসব ড্রেস পড়ে আসাতে ওকে তোমার ভালোই লেগেছে
আমি: মানে
আলিফা: শুনো আমি বাচ্চা মেয়ে না আর তোমার ওই বোন ও বাচ্চা না দেখে তো মনে হয়….
আমি: যাবা তুমি
আলিফা: যাচ্ছি তবে এই মেয়ে যেন দুদিনের বেশি এখানে না থাকে।
আলিফা চলে গেলো কিন্তু কি বলে গেলো ও কি আমাকে সন্দেহ করছে নাকি….? যদি ভালো না বাসবে তাহলে সন্দেহ করবে কেন…? এই মেয়ের মন যে কবে বুঝতে পারবো, আদৌ বুঝতে পারবো কিনা আল্লাহ্‌ জানেন।

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৯

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের মৃদু বাতাস উপভোগ করছি। আলিফা দুমগ কফি নিয়ে এসে পাশে দাঁড়ালো, হাসি মুখে এক মগ কফি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
আলিফা: কিছু কথা ছিল
আমি: হাজার হাজার কথা বলো আমি তোমার কথাগুলো মুগ্ধ হয়ে শুনবো
আলিফা: কথাগুলো শুনার পর এই মুগ্ধতা হয়তো আর থাকবে না
আমি: মানে, কি কথা বলো তো
আলিফা: রাতে তুমি অনেক বার বলেছ তোমাকে ভালোবাসি কিনা অন্তত একবার যেন বলি
আমি: হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু তুমি তো না বলে উল্টো আমার জায়গাটা আবার সোফাতেই করে দিলে
আলিফা: হুম একদিন বলবো সেদিনটা কবে জানো…?
আমি: কবে
আলিফা: যেদিন রাতুল আমার সামনে দাঁড়ানো থাকবে
আমি: মানে
আলিফা: এখন আমরা যেভাবে বন্ধুর মতো আছি সেভাবেই থাকবো, রাতুল ফিরে আসলে পর তোমাদের দুজনকে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে আমি বলবো কাকে ভালোবাসি কার কাছে থাকতে চাই (ওর কথা শুনে তো আমার মাথা ভনভন করছে, কি বলছে এসব)
আমি: তারমানে তুমি সেদিন আমাকে ভালোবাস বলবে না, সেদিন তুমি সিদ্ধান্ত নিবে কাকে ভালোবাস কার কাছে থাকতে চাও
আলিফা: হুম
আমি: তারমানে আমি যে ভাবতাম তুমি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছ এসব কিছু মিথ্যে
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: কথা বলছ না কেন…? উত্তর দাও আমার সব ভাবনা গুলো কি মিথ্যে ছিল।
কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে চলে যেতে চাইলো। ওর হাত ধরে টেনে আমার সামনে এনে দাঁড় করালাম।
আমি: চলে যাচ্ছ কেন, এতোক্ষণ কি বলেছ বুঝতে পেরেছ
আলিফা: হ্যাঁ আপাতত এই সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া আমার কোনো রাস্তা নেই
আমি: ওহ তারমানে রাতুল ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি….
আলিফা: হ্যাঁ আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই।
আমি: ওকে আমার কথাও শুনে যাও, রাতুলকে আমি খুঁজে আনবোই
আলিফা: অযতা খুঁজতে যেও না ও হয়তো এখনো বাহিরে আছে
আমি: তুমি তো সেদিন একবার দেখেছিলে তাই চেষ্টা করে দেখবো, আমাকে তো জানতেই হবে তুমি আমাকে ভালোবাস কিনা আমার এতো ভালোবাসার তিল পরিমাণ মূল্য তোমার কাছে আছে কিনা
আলিফা: যে ফিরে আসার সে এমনিতেই ফিরে আসবে পাগলামি করো না।
আমি: আর যদি কখনোই ফিরে না আসে
আলিফা: আসবে আজ হউক কাল হউক কিংবা কয়েক বছর পর হলেও ফিরে আসবেই।
আলিফা চলে গেলো কিন্তু ও শেষ কথাটা কি বলে গেলো, কথাটা কি রাতুল ফিরে আসার জন্য বলেছে নাকি ও আমার কাছে ফিরে আসার কথা বলেছে। আচ্ছা রাতুল যদি আদৌ ফিরে না আসে তাহলে কি আলিফাও আমাকে ভালোবাসবে না….?

নাশতাটা কোনো রকমে করে তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম, তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছি সেই শপিংমলে যাবো আমি। আমাকে তো জানতেই হবে আলিফা আমাকে ভালোবাসে কিনা।
আলিফা: রিফাত এতো তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছ অফিসে নাকি
আমি: না
আলিফা: তো কোথায়
আমি: রাতুলকে খুঁজতে
আলিফা: কেন পাগলামি করছ বলতো, রাতুল যদি দেশে না এসে থাকে তাহলে তুমি পাবে কোথায়
আমি: তাও একবার চেষ্টা করে দেখি
আলিফা: না লাগবে না চেষ্টা করা চুপটি করে এখানে বস কোথাও যেতে হবে না
আমি: সরি আমাকে যেতে হবেই
আলিফা: রিফাত শুনো।
আলিফার কোনো কথা না শুনে বেড়িয়ে পড়লাম।

নাহ পেলাম না রাতুলকে। সারা শপিংমল খুঁজলাম, অবশ্য না পাওয়াটাই স্বাভাবিক রাতুল যদি দেশে না এসে থাকে আবার দেশে এসে থাকলেও যে রোজ একি শপিংমলে আসবে এমন তো না। কিন্তু আমাকে যে রাতুলকে খুঁজে পেতেই হবে। উফফফ কোথায় গেলে, কোথায় খুঁজলে পাবো রাতুলকে, আমি যে আর পারছি না।

বাসায় ফিরে আসলাম। আমি মনে হয় রাতুলকে খুঁজে পাবো না আর ওকে খুঁজে না পেলে তো….
আলিফা: এই তোমার বাসায় ফেরার সময় হয়েছে (আলিফা চিন্তিত হয়ে খাটে বসে আছে। কখন যে রুমে চলে এসেছি বুঝতে পারিনি। আসলে এসব যন্ত্রণায় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি)
আলিফা: কথা বলছ না কেন সারাদিন কোথায় ছিলে
আমি: রাতুলকে খুঁজছিলাম
আলিফা: রিফাত কেন পাগলামি করছ
আমি: আমার এগুলো যখন তোমার পাগলামি মনে হচ্ছে তাহলে বলে দিচ্ছ না কেন তুমি আমাকে ভালোবাস
আলিফা: রিফাত আস্তে, চিৎকার করছ কেন
আমি: তো কি করবো। আমি আর পারছি না আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি
আলিফা: রিফাত।

আলিফার সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না, তাই সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম।
আলিফা: এই সন্ধ্যা বেলায় শুয়ে পড়েছ কেন
আমি: যাও তো আমাকে একা থাকতে দাও
আলিফা: পারবো না
আমি: উফফফ যাবা তুমি
আলিফা: বললাম তো যাবো না (আমার পাশে এসে বসে পড়লো)
আমি: ওকে তুমি বসে থাকো আমি ঘুমাই।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। মনে হচ্ছে আলিফা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখ মেলে তাকালাম। যা ভেবেছিলাম তাই, আলিফা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি: কি দেখছ
আলিফা: কিছু না।
আলিফা তাড়াতাড়ি চলে গেলো। হয়তো লজ্জা পেয়েছে নয়তো ভালোবাসে যে এইটা বুঝতে দিতে চাইছে না।

এখন প্রতিদিন একবার হলেও রাতুলকে খুঁজতে যাওয়া আমার রুটিন হয়ে গেছে। জানিনা কিসের জন্য এভাবে ওকে খুঁজি। অনেক সময় ভাবি আর খুঁজবো না কিন্তু আলিফা আমাকে ভালোবাসে কিনা জানার জন্য আবার পাগলের মতো খুঁজতে যাই। ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়, ওর মুখে একবার ভালোবাসে কিনা শোনার জন্য পাগলের মতো রোজ রাতুলকে খুঁজতে যাই। রাতুলকে কি আদৌ খুঁজে পাবো আমি…? যদি রাতুলকে খুঁজে পাই তাহলে কি আলিফা আমাকে ভালোবাসে বলবে নাকি ওর রাতুলের কাছে ফিরে যাবে….?

কয়েক মাস পর….

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনমনে হয়ে ভাবছি, এতোগুলো মাস এতোগুলো দিন এতো সময় পার হয়ে গেলো কিন্তু আলিফা আজো আমাকে এতটুকু ভালোবাসতে পারলো না। আর আমি কিনা ওকে পাগলের মতো ভালোবাসি। আলিফা একদিন বলেছিল রাতুলকে সামনে রেখে ও বলবে কাকে ভালোবাসে, সেই থেকে প্রতিটা দিন আমি রাতুলকে খুঁজেছি। কিন্তু এতোগুলো মাস কেটে গেলো আমি রাতুলকে খুঁজে পাই নি। আর আলিফা ও তো যেমন ছিল তেমনি আছে, একবার ভাবেও না আমি যে কষ্ট পাচ্ছি। অবশ্য আমার কষ্টতে ওর কি আসে যায়, ও তো আর আমাকে ভালোবাসে না। তবে হ্যাঁ অনেক দিন আলিফার ইচ্ছেতে চলেছি আর না, এবার আমার কথায় সব হবে আমার কথায় আলিফা চলবে। অনেক হয়েছে আর না এভাবে তো চলতে পারে না। আলিফা নিজেও দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছে অন্যদিকে আমাকেও দুটানায় পিষে মারছে। আমি জাস্ট এসব আর নিতে পারছি না, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।
আলিফা: রিফাত এই সন্ধ্যা বেলায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছ কেন
আমি: এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে তাই
আলিফা: রিফাত তুমি কাঁদছ কেন
আমি: আমার কান্না তোমার চোখে পড়ে (ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ও নিশ্চুপ হয়ে আছে)
আমি: আলিফা একটা সুস্থ মানুষকে কখনো পাগল হতে দেখেছ
আলিফা: না কেন
আমি: দেখেছ কিন্তু বুঝতে পারছ না, তোমার চোখের সামনে আমি একটু একটু করে পাগল হয়ে যাচ্ছি আর তুমি সেটা দেখতে পারছ না
আলিফা: কি বলছ এসব
আমি: আলিফা এসব আর আমি নিতে পারছি না আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি প্লিজ আমাকে মুক্তি দাও এসব থেকে
আলিফা: মুক্তি
আমি: হ্যাঁ আমি তোমার মতামত না নিয়ে বিয়ে করে ভুল করেছি মানছি তাই বলে একটা ভুলের শাস্তি এভাবে পেতে হবে। প্রায় একটা বছর কেটে গেছে তুমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছ না। কেন আলিফা কেন বলতে পারো আমাকে মেনে নিতে তোমার আপত্তি কোথায়
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: তুমি চুপ হয়েই থাকো, তোমাকে আর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে না। এবার আমি সিদ্ধান্ত নিবো আর তুমি আমার সব সিদ্ধান্ত মেনে নিবে
আলিফা: মানে
আমি: প্রথম আমি তোমাকে সাত মাস সময় দিয়েছিলাম তুমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারোনি। তারপর তোমার আব্বু মারা গেলেন সাথে রাতুলের ফোন বন্ধ। দুজন প্রিয় মানুষকে হারিয়ে তুমি ভেঙে পড়েছিলে তাই আমি তোমাকে জোর করিনি। মাঝে তুমি বলেছিলে রাতুল ফিরে আসলে দুজনকে তোমার সামনে দাঁড় করিয়ে বলবে তুমি কাকে ভালোবাস কার কাছে থাকতে চাও। আমি মেনে নিয়েছিলাম, মেনে নিয়ে আমি এই কয়টা মাস রাতুলকে পাগলের মতো খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। যার ফোন আজ প্রায় চার পাঁচ মাস ধরে বন্ধ সে আদৌ ফিরে আসবে কিনা বলতে পারো।
আলিফা: আমার কথা শু….
আমি: কি বলবে জানি, রাতুল ফিরে আসবে তাই তো। কিন্তু কখন আসবে বলতে পারো
আলিফা: আমাকে বলতে তো দাও
আমি: তোমার আর কিছু বলতে হবে না। এখন থেকে আমি যা বলব তাই হবে
আলিফা: যা বলবে তাই হবে মানে
আমি: আলিফা অবহেলা কি জানো
আলিফা: হঠাৎ এই প্রশ্ন
আমি: আমি কাকে কি প্রশ্ন করি, যে আমাকে প্রায় একটা বছর ধরে অবহেলা করে আসছে তাকে আমি জিজ্ঞেস করি অবহেলা কি চিনে কিনা। সত্যি আমি একটা বোকা।
আলিফা: আমি কখন তোমাকে অবহেলা করলাম
আমি: করেছ আলিফা করেছ, তুমি আমাকে দিনের পর দিন অবহেলা করেছ আর আমি সহ্য করে গেছি, কেন জানো…? শুধু তোমাকে ভালোবাসি বলে তুমি একদিন আমাকে ভালোবাসবে এই আশায়। কিন্তু এবার থেকে তুমি নয় আমি তোমাকে অবহেলা করবো
আলিফা: মানে কি
আমি: হ্যাঁ আমি তোমাকে অবহেলা করবো
আলিফা: পারবে অবহেলা করতে
আমি: একটা কথা মনে রেখো, যে ভালোবাসতে জানে সে প্রয়োজন হলে ঘৃণাও করতে পারে আর আমি তো প্রয়োজন হলে তোমাকে ডিভোর্সও দিবো
আলিফা: রিফাত
আমি: এভাবে তো চলতে পারে না তাই না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে আমি ডিভোর্স দিবো। তাতে তুমি তোমার মতো থাকতে পারবে আর আমি আমার মতো।
আলিফা: পারবে
আমি: পারতে তো আমাকে হবেই। তুমি শুধু ভেবে নাও এক সপ্তাহ পর কোথায় যাবে
আলিফা: এক সপ্তাহ পর মানে
আমি: এক সপ্তাহ পর আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো। আর এই এক সপ্তাহ আমি দেখবো বুঝতে চেষ্টা করবো তুমি আমাকে ভালোবাস কিনা
আলিফা: ঠিক যখন করেই নিয়েছ এক সপ্তাহ পর ডিভোর্স দিবে তাহলে আজই চলে যাওয়া ভালো। আমি চলে যাচ্ছি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবো ভয় নেই।
আলিফা রুমে চলে গেলো।

রাতের আকাশ দেখছি আর ভাবছি ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেন। যাকে আমি ভালোবাসি সে আমাকে ভালোবাসে না আর যে আমাকে ভালোবাসত সে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। হঠাৎ আলিফার কথা মনে পড়লো সত্যিই চলে যাবে নাকি ও। তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম।
এসে দেখি আলিফা কাপড় গুচাচ্ছে। ওর হাত ধরে টান দিয়ে আমার দিকে ফিরালাম।
আলিফা: রিফাত হাত ছাড়ো লাগছে আমার
আমি: কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: সেটা তো জানিনা তবে যে আমাকে এক সপ্তাহ পর ডিভোর্স দিয়ে দিবে ভেবে নিয়েছে তার বাসায় আর থাকবো না
আমি: আমার বাসায় তো তোমাকে থাকতে হবেই
আলিফা: কেন থাকবো, এক সপ্তাহ পর ডিভোর্স পেপার সহ যেন আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারো সেজন্য (ওকে ঠেলে দেয়ালের কাছে নিলাম, দেয়ালে হেলান দিয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর একদম কাছে গিয়ে বললাম)
“আমার বাড়িতে তোমাকে থাকতে হবে কারণ তুমি আমাকে এতোদিন যতো অবহেলা করেছ সব তোমাকে ফেরত দিবো, কষ্ট দিবো তোমাকে আমাকে যতোটা কষ্ট দিয়েছ। আজ থেকে অবহেলা শুরু এইটা ভালো করে তোমার মাথায় ঢুকিয়ে নাও”

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৮

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

দৌড়ে আলিফার কাছে যাচ্ছি মনে হচ্ছে ও এখনি লাফ দিবে, জোরে একটা চিৎকার দিলাম আলিফা….

তাড়াতাড়ি গিয়ে ওকে জাপটে ধরলাম।
আমি: আলিফা কি করছ পাগল হয়ে গেছ নাকি, বলেছি তো রাতুলকে খুঁজে এনে দিবো
আলিফা: ওহ বাবারে আর একটু হলেই তো পড়ে যাচ্ছিলাম এভাবে কেউ জাপটে ধরে
আমি: এভাবে জাপটে না ধরলে তো তুমি নিজেই লাফ দিতে
আলিফা: মানে কি আমি কেন লাফ দিতে যাবো
আমি: তুমি এখানে সুইসাইড করতে আসোনি
আলিফা: পাগল হয়েছ আমি সুইসাইড করতে যাবো কেন
আমি: তাহলে আমাকে কিছু না বলে এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছ কেন তাও আবার এমন কিনারায়
আলিফা: আমার কিছু ভালো লাগছে না তাই একা থাকার জন্য এখানে এসেছিলাম কিন্তু খুঁজতে খুঁজতে তুমিও চলে আসলে একা থাকা আর হলো না
আমি: (ঠাস)
আলিফা: রিফাত তুমি আমাকে মারলে
আমি: তো কি করবো এমন একটা কান্ড করার পর আদর করবো, তোমার কোনো ধারণা আছে আমি কতোটা ভয় পেয়েছিলাম। সারা বাসা তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছি যখন এসে দেখলাম তুমি এভাবে ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছ তখন তো আমি….. দূর কাকে কি বলি তুমি তো সত্যিকারের ভালোবাসা কি সেটাই বুঝনা, যদি এতটুকু বুঝতে আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি তাহলে আজ আমাকে এমন টেনশন দিতে পারতে না। তোমাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম একটা ভেজা বিড়ালকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছিলে তখন ভেবেছিলাম তুমি অন্য মেয়েদের মতো না কিন্তু এখন দেখছি তুমি অন্যদের মতোই।
আলিফা: কি বলতে চাইছ
আমি: বলতে চাইছি এটাই যে তুমি সেইসব মেয়েদের মতো যাদের এক ছেলের ভালোবাসায় হয় না তাই দুদিকেই পরে আছ কাউকেই ছাড়ছ না
আলিফা: ছিঃ রিফাত এসব তুমি কি বলছ
আমি: কেন ভুল কিছু বলেছি নাকি তুমি তো তাদের মতোই যারা….
আলিফা: ব্যস রিফাত অনেক বলেছ এবার একটু থামো। কি বলেছ আমার এক ছেলের ভালোবাসায় হয় না তাই দুদিকেই পড়ে আছি কাউকেই ছাড়ছি না, শুনো ছোটবেলা থেকে এতিমখানায় থেকেছি তো মা বাবা ছিল না সঠিক শিক্ষাটা দেওয়ার জন্য, নিজে থেকে যেটুকু শিখেছি সেটার মধ্যে এটাও পরে যে কাউকে ঠকানো ঠিক না। আর এজন্যই আমি দুদিকে পরে আছি বুঝতে পারছি না কাকে ঠকাবো। তুমি বলতে পারো আমি কাকে ঠকাবো…?
আমি: (সত্যিই তো ও কাকে ঠকাবে)
আলিফা: জানি চুপ হয়েই থাকবে কারণ তুমিও জানোনা আমার কাকে ঠকানো উচিত। রাতুল যাকে আমি তিনবছর ধরে ভালোবাসি, যে কিনা আমার বিয়ে হয়ে গেছে শুনেও আশা নিয়ে বসে আছে ও দেশে ফিরে আসলে আমি ওর কাছে ফিরে যাবো বলতে পারো ওকে আমি কিভাবে ঠকাই। তুমি যে কিনা নিলা নামের মেয়েটাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো, নিলাকে হারিয়ে আমার মাঝে নিলাকে খুঁজে পেয়েছে, প্রতিটা মুহূর্তে স্বপ্ন দেখে আমি একদিন নিলা হয়ে নিলার মতো ওকে ভালোবাসবো, যার পরিবারের প্রতিটা মানুষ আমাকে নিলা ভাবে, যার কাছে আমার আব্বু আমাকে তুলে দিয়েছেন বলতে পারো তাকে আমি কি ভাবে ঠকাবো।
আমি: আলিফা আমার কথা শুনো
আলিফা: তুমি ঠিক বলেছ আমি খারাপ মেয়ে তাহলে বলতে পারো তুমি কি…? তুমি তো একটা অকৃতজ্ঞ, হুট করে বিয়ে করে ফেলছ মেয়েটা অন্য কাউকে ভালোবাসা সত্যেও তোমার কাছে পরে আছে শুধুমাত্র এইটা ভেবে যে তুমি নিলাকে হারিয়ে একবার কষ্ট পেয়েছ এখন যদি আবার ভালোবাসা হারিয়ে পেলো তাহলে অনেক কষ্ট পাবে। আর তুমি কিনা মেয়েটা কে এতো খারাপ ভাবো
আমি: আলিফা আমি এভাবে বলতে চাইনি
আলিফা: তোমার জন্য না আমার মনে একটু একটু করে মায়া জন্মাতে শুরু করেছিল, হয়তো আমার অজান্তে আমার মনের মধ্যে তোমার জন্য ভালোবাসাও সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এখন আর সেটা বাড়বে না….
আমি: আলিফা আমার কথা শুনো প্লিজ
আলিফা: আমার সম্পর্কে যার এমন খারাপ ধারণা তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই
আমি: আলিফা আ….
আলিফা: আমি আর তোমার সাথে কথা বলবো না তুমিও কথা বলার চেষ্টা করো না।
আমি: আলিফা।
আমার কোনো কথা না শুনে চলে গেলো। কি বলে ফেললাম এসব, এই কথাগুলো তো আমি বলতে চাইনি। এসব তো কখনো আমার ভাবনাতেও আসেনি আর আজ কিনা পাগলীটার মনে এভাবে আঘাত দিলাম।

জানিনা আলিফা এখন কি করছে হয়তো কাঁদছে। আস্তে আস্তে রুমের দিকে আসলাম, দরজার কাছে আসতেই দেখি আলিফা কাপড়চোপড় গুচাচ্ছে, আরে এই রাতের বেলা কোথায় যাবে ও।
আমি: আলিফা কোথায় যাবে এসব গুচাচ্ছ কেন
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: প্লিজ পাগলামি করো না আমার কথা শুনো
আলিফা: তোমাকে তো নিষেধ করেছি আমার সাথে কথা বলবে না
আমি: তুমি নিষেধ করলেই আমি শুনবো নাকি, বলোনা কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবো তাও তোমার কাছে থাকবো না (এখন কি করি পাগলি তো খেপে গেছে)

তাড়াতাড়ি গিয়ে আব্বুকে আনলাম, আমার কথা না শুনলেও আব্বুর কথা তো শুনবে।
আব্বু: আলিফা মা কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: (আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে, বুঝতে পেরেছে আমি না পেরে যে আব্বুকে নিয়ে এসেছি)
আব্বু: ওহ বুঝেছি রিফাতের সাথে ঝগড়া করেছ, আচ্ছা তুমি এখন যাবে কোথায়
আলিফা: জানিনা
আব্বু: মেয়েরা স্বামীর সাথে ঝগড়া করলে কোথায় যায় জানো তো
আলিফা: বাবার বাড়ি
আব্বু: হ্যাঁ বাবার বাড়ি যায়। তো তুমি কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আব্বু: পাগলী মেয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়েছে বলে কি নিজের বাবা কে ছেড়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে
আলিফা: (অবাক হয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে)
আব্বু: এখন তো আমিই তোমার বাবা আর আমার বাড়িই তো আমার মেয়ের বাড়ি তাহলে নিজের বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাচ্ছ (আলিফা কাঁদতে কাঁদতে এক দৌড়ে গিয়ে আব্বুকে জরিয়ে ধরলো)
আব্বু: শুনো মা তুমি যাবে কেন যেতে হলে যে তোমার সাথে ঝগড়া করেছে সে যাবে
আমি: আব্বু কি বলছ এসব
আব্বু: তুই আমার আলিফা মার সাথে ঝগড়া করেছিস এক্ষণি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যা
আমি: আব্বু কি বলছ (আমি তো প্রায় কেঁদেই দিচ্ছিলাম তখনি আব্বু আমাকে চোখ মারলেন, বুঝলাম এসব বলছেন আলিফার রাগ কমানোর জন্য)
আমি: রাগিণী থাকো তুমি একা একা তোমার বাবার কাছে আমি চলে যাচ্ছি।

ভালোই হয়েছে বিয়ে করার পর একদিনও শান্তিতে আড্ডা দিতে পারিনি আজ ঝগড়া করে অন্তত শান্তিতে আড্ডা দিতে পারবো। কিন্তু আজ যা বলেছি আলিফা আমাকে ক্ষমা করবে তো। কেন যে এতো রেগে গিয়ে এসব বলতে গেলাম। আমারই বা দোষ কিসের ওকে ছাদের কিনারায় দেখে এতো ভয় পেয়ে গেছিলাম যে মুখে যা এসেছে তাই বলেছি। আলিফার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতাম কি নিয়ে।

রিয়াদ আর সাগরের সাথে আড্ডা দিয়ে অনেক রাত করে বাসায় ফিরলাম। বাব্বাহ্ সবাই আমার জন্য ড্রয়িংরুমে বসে অপেক্ষা করছে, সাথে রাগিণীও আছে।
আব্বু: কোথায় ছিলি
আমি: এইতো রিয়াদের বাসায়
আব্বু: এখন তোর ফিরার সময় হলো আমরা কতো চিন্তা করছিলাম, আর তোর ফোন কোথায় ফোন রিসিভ করছিলি না কেন
আমি: ফোন মনে হয় সাইলেন্ট করা
আব্বু: বৌমা আজকে ওকে খাবার দিও না শাস্তি হউক সবাইকে চিন্তায় রাখার
আলিফা: ওকে আব্বু।
যে যার রুমে চলে যাচ্ছে, এইটা কি হলো খিদে তো লেগেছে অনেক। আলিফার পিছন পিছন রুমে আসলাম।

আলিফা রুমে এসেই শুয়ে পড়লো কি জেদি মেয়েরে বাবা এখনো কথা বলছে না।
আমি: আব্বুর কথা শুনে আমাকে সত্যিই খাবার দিলে না
আলিফা: আব্বু যা বলেন তাই হবে
আমি: তাহলে এতোক্ষণ আমার জন্য চিন্তা করছিলে কেন
আলিফা: আমার বয়েই গেছে আপনার জন্য চিন্তা করতে, আমি তো শুধু আব্বুকে দেখানোর জন্য এতোক্ষণ ড্রয়িংরুমে বসেছিলাম
আমি: তোমার রাগ এখনো কমেনি
আলিফা: কখনো কমবেও না আমি তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম আর তুমি কিনা আমাকে নিয়ে এসব বাজে চিন্তাধারা করো
আমি: ভুল হয়ে গেছে সরি, আসলে তোমাকে ওখানে দেখে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম তাই মুখে যা এসেছে তাই বলেছি প্লিজ ক্ষমা করে দাও
আলিফা: তুমি কথা গুলো ভয় পেয়ে না রেগে গিয়ে বলেছ আর মানুষ রাগের মাথায় সত্যি কথা গুলো বলে
আমি: কি বলো এসব আমার বউ কি খারাপ মেয়ে হতে পারে
আলিফা: হয়তো আমি খারাপ না কিন্তু তুমি সবসময় আমাকে খারাপ ভাবতে তাই রাগের মাথায় মনের কথা গুলো বলে দিয়েছ
আমি: বিশ্বাস করো আমি এসব কখনো আমার ভাবনাতেও আনিনি। আমার বউ কতো লক্ষী তাকে আমি খারাপ বলতে পারি
আলিফা: অনেক পাম দেওয়া হয়েছে এবার যাও আমি ঘুমাবো
আমি: ঠিক আছে আমি কানে ধরে উঠবস করছি তাহলে তো খুশি হবে (অন্যায় করেছি যখন কান তো ধরতেই হবে তাই কানে ধরে উঠবস করছি। আলিফা আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে)
আমি: তোমার মন পাথরের মতো যে জানতাম না, তোমার জামাই এতোক্ষণ ধরে কান ধরছে তাও তোমার মায়া লাগছে না
আলিফা: না লাগছে না, যাও তো আমি ঘুমাবো
আমি: ছাড়াচ্ছি তোমার ঘুম
আলিফা: এখানে আসছ কেন
আমি: ঘুমাবো।
সোফা থেকে বালিশটা এনে খাটে আলিফার পাশে শুয়ে পড়লাম। আজ রাগিণী যাই বলুক আমি ওর পাশেই ঘুমাবো।
আলিফা: রিফাত কি হচ্ছে কি
আমি: ঘুমাবো এতো বকবক করো না তো
আলিফা: ওকে ঘুমাও আমি সোফায় চলে যাচ্ছি
আমি: যেতে হবে না যাওয়ার চেষ্টা করলেই জরিয়ে ধরবো
আলিফা: আমি তো যাবোই
আমি: যেতে চাইলেই আমি ধরে নিবো যে তুমি মন থেকে চাইছ আমি তোমাকে জরিয়ে ধরি
আলিফা: রিফাত ভালো হচ্ছে না কিন্তু
আমি: খারাপ কিছুই হচ্ছে না
আলিফা: ওকে দাঁড়াও।
আলিফা মধ্যে কোলবালিশ এনে দিয়ে দিলো এইটা কিছু হলো।

আলিফা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আমি আস্তে কোলবালিশটা সরিয়ে দিয়ে আলিফার কাছে গিয়ে ওকে মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকলাম। হঠাৎ আলিফা চোখ খুলে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
আলিফা: কি
আমি: ভালোই যখন বাসো এতো লুকাও কেন
আলিফা: আমি কাউকে ভালোবাসি না
আমি: তাহলে আমি খাটে আসার পরও রাগ দেখালে না কেন
আলিফা: রাগ দেখালেও দোষ না দেখালেও দোষ
আমি: হুম সবকিছুতে দোষ শুধু আমাকে ভালোবাসায় দোষ নেই। প্লিজ শুধু একবার বলো আমাকে ভালোবাস। (আলিফাকে জরিয়ে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম, ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
আমি: আলিফা প্লিজ শুধু একটা বার বলো।
আলিফাকে জরিয়ে ধরে ওর চুলে হাত বুলাচ্ছি, ও কিছু না বলে নিশ্চুপ হয়ে চোখ দুটু বন্ধ করে শুয়ে আছে, ওকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম….

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৭

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম। আলিফা আজ কোনো রাগ দেখাচ্ছে না বাধাও দিচ্ছে না, চোখ দুটু বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে….

হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো আলিফা তাড়াতাড়ি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। উফফফ ফোনটা আসার আর সময় পেলো না। ফোন হাতে নিয়ে দেখি ছোটমা, অন্য কেউ হলে এখন….
আমি: হ্যালো ছোটমা
ছোটমা: হ্যাঁ কেমন আছিস
আমি: এইতো ভালো
ছোটমা: আমার আলিফা মা কেমন আছে
আমি: আচ্ছা ছোটমা একটা সত্যি কথা বলতো
ছোটমা: কি
আমি: তোমার কি তিনটা মেয়ে ছিল আর ছোটবেলায় একটা হারিয়ে গিয়েছিল, না মানে সিনেমায় তো এমনটা হয়
ছোটমা: ফাজি ছেলে কি বলছিস এসব আমার তো দুটুই মেয়ে
আমি: তাহলে নিলার সাথে আলিফার সবকিছু মিলে যায় কিভাবে, আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় নিলা আর আলিফা দুবোন
ছোটমা: এইটা হয়তো প্রকৃতিরই খেলা, তোর থেকে এক নিলাকে কেড়ে নিয়ে আরেক নিলাকে দিয়েছে (আলিফার দিকে তাকালাম ও আমার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করছে কি)
ছোটমা: কিরে কি হলো
আমি: ছোটমা এইটা যদি প্রকৃতিরই খেলা হবে তাহলে বলতে পারো আলিফা আমাকে মেনে নিতে পারছে না কেন
ছোটমা: আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস, আসলে বিয়েটা হুট করে হয়েছে তো মেয়েটা মেনে নিতে পারছে না আর অন্য কাউকে ভালোবাসে যেহেতু একটু তো সময় লাগবেই
আমি: আর কতো সময় লাগবে সাতটা মাস পেরিয়ে গেলো আলিফার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই
ছোটমা: পরিবর্তন হয়েছে তো সেটা তুই নিজেও বুঝতে পারছিস কিন্তু মানতে চাইছিস না কারণ তুই চাইছিস আলিফা পুরোপুরি তোর হয়ে যাক। বুঝার চেষ্টা কর ভালোবাসা ভুলা এতো সহজ না মেয়েটার সময় প্রয়োজন। যতোটুক সময় লাগে তুই দে ধৈর্য হারা হবি না
আমি: হুম
ছোটমা: আলিফার কাছে ফোনটা দেতো
আমি: হুম

আলিফা ছোটমার সাথে কথা বলে এসে আমার পাশে বসলো, ফোনটা হাতে নিয়ে চটপট করছে।
আমি: কি হয়েছে
আলিফা: রাতুলকে আবার ফোন করে দেখি
আমি: ওকে।
আলিফা যেন আমার মুখ থেকে ওকে শব্দটাই শুনতে চাইছিল, খুশি হয়ে সাথে সাথে ফোন দিলো। আমি মানা করবো কেন দোষ তো আমারি এভাবে হুট করে বিয়ে করে মেয়েটার জীবন উলটপালট করে দিলাম। আজ মেয়েটা দুটানায় ভোগছে শুধুমাত্র আমার জন্য।
আলিফা: ফোনটা এখনো বন্ধ (আলিফার কথায় ওর দিকে তাকালাম মন খারাপ করে বসে আছে)
আমি: মন খারাপ করো না বার বার ট্রাই করে দেখো একবার নিশ্চয় ওকে পাবে
আলিফা: হুম

আলিফা মন খারাপ করে রুমে বসে আছে আর আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। আলিফার সামনে থেকে ওর মন খারাপ দেখতে পারবো না তাই দূরে চলে এসেছি। আমি তো বুঝতে পারছি আলিফা আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে কিন্তু রাতুলের প্রতি ওর যে ভালোবাসা ছিল মায়া ছিল ও এসব ভুলতে পারছে না। কিন্তু আমি রাতুলকে ভুলাবো কিভাবে আমি তো ওকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা যায় কিনা আমার জানা নেই, তারপরও যদি আলিফা রাতুলকে না ভুলতে পারে আমার কি করার আছে। আচ্ছা রাতুলকে না ভুলাতে পারি অন্তত ওর মন তো ভালো করে দিতে পারি কিন্তু কিভাবে ভালো করবো। একটা রাস্তা আছে আলিফা রাজি হয় কিনা দেখি।

আলিফার সামনে এসে পায়চারী করছি কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছি না।
আলিফা: কিছু বলবে
আমি: আমি যে কিছু বলতে চাই তুমি বুঝলে কি করে
আলিফা: মনে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম
আমি: দেখেছ তুমি আমাকে ভালোবাস তাই তো সবসময় আমি বলার আগেই তুমি আমার মনের কথা বুঝে যাও
আলিফা: কচু ভালোবাসি
আমি: তোমার তো ঘুরতে ভালো লাগে চলো শপিং করতে যাই
আলিফা: হঠাৎ শপিং
আমি: না মানে তোমার জন্য ফোন কিনা হয়ে যাবে সাথে তোমার মনও ভালো হবে
আলিফা: (আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছ কেন, প্লিজ চলো না তোমার জ্বরও তো কমেছে
আলিফা: ওকে যাবো
আমি: সত্যি
আলিফা: না মিথ্যা
আমি: তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও
আলিফা: ওকে।

ড্রয়িংরুমে বসে আলিফার জন্য অপেক্ষা করছি, রাগিণী আসার নামই নেই আজ মনে হয় সাজতে সাজতে ও রাগিণী থেকে পরী হয়ে যাচ্ছে হিহিহি।
আলিফা: এই ভূতের মতো একা একা হাসছ কেন (আলিফার দিকে তাকিয়ে আছি এতোক্ষণ ও কি করলো এটাই ভেবে পাচ্ছি না, একদম সাজেনি শুধু শাড়িটা চেঞ্জ করেছে আর চুলগুলো খোপা করেছে কিন্তু তাতেই রাগিণীকে অনেক সুন্দর লাগছে)
আলিফা: হা করে তাকিয়ে থাকবে নাকি যাবে
আমি: চলো।

গাড়িতে উঠতে যাবো আলিফা চেঁচিয়ে বললো
আলিফা: আমি তো গাড়িতে যাবো না
আমি: আরে বাবা আস্তে বলো
আলিফা: হুম আমি গাড়িতে যাবো না
আমি: কেন
আলিফা: আমি রিকশা করে যাবো
আমি: রিকশা
আলিফা: হ্যাঁ অবাক হচ্ছ কেন
আমি: এমনি দাঁড়াও রিকশা পাই কিনা দেখি
আলিফা: ওকে।

রিকশাতে বসে আছি আলিফা আমার কাধে মাথা রেখে আমার হাত ধরে রেখেছে। এখন বুঝেছি এজন্যই আলিফা রিকশাতে আসতে চেয়েছিল।
আলিফা: এভাবে তাকিয়ে আছ কেন
আমি: আমি না তোমার মন একদম বুঝতে পারিনা, হঠাৎ আমাকে ভালোবাস হঠাৎ আবার….
আলিফা: রিফাত এখন এসব বাদ দাও না
আমি: সবসময় তো বাদ দিয়েই যাচ্ছি আর কতো
আলিফা: আমি কিন্তু রিকশা থেকে নেমে যাবো
আমি: এই না না কান ধরেছি আর বলবো না।
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আলিফাকে জরিয়ে ধরলাম তারপর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম।
আলিফা: এই রাস্তার মধ্যে
আমি: প্লিজ এবার অন্তত হাসো। (আলিফা ফিক করে হেসে দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো)

আলিফার জন্য ফোন দেখছি ও মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: কি হয়েছে
আলিফা: আমার ফোন লাগবে না
আমি: কেন
আলিফা: রাতুলের ফোন তো সবসময় বন্ধ পাই আমি আর ফোন কিনে কি করবো (রাগটা এখন আর কন্ট্রোল করতে পারছি না, রাতুলের ফোন বন্ধ থাকে তাই ফোন কিনবে না। ওর কথায় মনে হচ্ছে রাতুলকে ফোন দেওয়া ছাড়া দুনিয়ায় আর কাউকে ফোন দেওয়ার নেই, আরে আমি যখন অফিসে থাকি তখনো তো ফোন দিতে পারে)
আমি: লাগবে না যেহেতু চলো (ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরলাম)
আলিফা: রিফাত কি করছ লাগছে আমার ছাড়ো
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: রিফাত আমার হাতে লাগছে প্লিজ ছাড়ো
আমি: হুম ফোন যেহেতু লাগবে না শাড়ি কিনো
আলিফা: আমার শাড়িও লাগবে না
আমি: কেন রাতুল নেই বলে নতুন শাড়িও লাগবে না, ওহ বুঝেছি নতুন শাড়ি পরে কাকে দেখাবে রাতুল ছাড়া তো তোমাকে দেখার আর কেউ নেই
আলিফা: রিফাত
আমি: যা যা পছন্দ হয় কিনো আমি আসছি
আলিফা: আমাকে একা রেখে কোথায় যাচ্ছ।
আলিফার কথার উত্তর না দিয়ে চলে আসলাম। ওয়াশরুমে এসে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিলাম, যা রাগ হয়েছিল আলিফা যদি আজ বাসায় এমন করতো তাহলে হয়তো থাপ্পড় কয়েকটা দিয়ে দিতাম।

আলিফার কাছে এসে দেখি অনেক কিছু কিনেছে, আমাকে দেখেই একটা হাসি দিলো।
আমি: কিনা শেষ
আলিফা: হুম টাকা দিয়ে আসো বাসায় যাবো
আমি: হুম।

ইচ্ছে ছিল আজ সারাদিন ঘুরবো কিন্তু আলিফা বাসায় চলে যেতে চাইছে তাই আর কিছু বললাম না। শপিংমল থেকে বেরিয়ে পড়বো এমন সময় আলিফা দাঁড়িয়ে গেলো।
আমি: কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে কেন
আলিফা: রিফাত আমি রাতুলকে দেখেছি
আমি: মানে কোথায়
আলিফা: এইতো ভিতরে ঢুকলো
আমি: তুমি এখানে দাঁড়াও আমি দেখে আসছি
আলিফা: তুমি ওকে ছিনো নাকি আমিও সাথে যাই
আমি: তোমার ফোনে রাতুলের পিক দেখেছিলাম দেখলে ছিনতে পারবো, তুমি এখানেই দাঁড়াও আমি আসছি।

সারা শপিংমল খুঁজলাম কিন্তু রাতুলকে তো পেলাম না তাহলে কি আলিফা ভুল দেখেছে। আলিফাকে গিয়ে কি জবাব দিবো ও তো মানিতেই চাইবে না ও যে ভুল দেখেছে।

আলিফার সামনে এসে দাঁড়ালাম।
আলিফা: পেয়েছ
আমি: না আমি তো অনেক খুঁজলাম কোথাও পাইনি তুমি মনে হয় ভুল দেখেছ
আলিফা: ভুল
আমি: প্লিজ কেঁদো না বাসায় চলো
আলিফা: হুম

বাসায় এসে আলিফা কারো সাথে কোনো কথা বললো না সারাটা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে এসেছে। আলিফা কি সত্যি রাতুলকে দেখেছে, তাহলে কি রাতুল ফিরে এসেছে…?

রুমে এসে দেখি শপিং এর ব্যাগ গুলো এলোমেলো হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে আলিফা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। আমি এখন কি করবো কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে আলিফা এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম।
আমি: আলিফা প্লিজ আর কেঁদো না আমি কাল আবার রাতুলকে খুঁজতে যাবো
আলিফা: শপিং এর ব্যাগ গুলো খুলে যার যেটা তাকে সেটা দিয়ে আসো
আমি: যার যেটা মানে
আলিফা: দেখো গিয়ে তাহলেই বুঝতে পারবে, আর কালো পাঞ্জাবীটা তোমার
আলিফা: তুমি কি সবার জন্য শপিং করেছ
আলিফা: হুম
আমি: তাহলে তুমি নিজের হাতে দিয়ে আসো
আলিফা: ভালো লাগছে না তুমি যাও
আমি: হুম।

ব্যাগ গুলো নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম। প্রিতি সবকিছু খুলে দেখছে। আব্বুর জন্য পাঞ্জাবী, রিয়ানের জন্য টিশার্ট, প্রিতির জন্য লেহেঙ্গা অথচ আলিফার জন্য কিছুই না।
প্রিতি: ভাবি তো নিজের জন্য কিছুই কিনে নি
আমি: আমারই ভুল ওখানে দেখতাম কি কি কিনেছে
প্রিতি: মন খারাপ করো না আবার ভাবিকে নিয়ে যাবে সমস্যা কি
আমি: হুম।

রুমে আসলাম আলিফাকে জিজ্ঞেস করতে নিজের জন্য কিছু কিনে নি কেন, কিন্তু ও তো রুমে বা বারান্দায় কোথাও নেই। গেলো কোথায় নিচে নয়তো, প্রিতি আর আমি তো ড্রয়িংরুমে ছিলাম নিচে গেলে তো আমরা দেখতাম। তাড়াতাড়ি নিচে গেলাম কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।
আমি: প্রিতি প্রিতি
প্রিতি: কি হয়েছে ভাইয়া
আমি: তোর ভাবিকে দেখেছিস
প্রিতি: নাতো আমি তো এতোক্ষণ তোমার কাছেই ছিলাম।
দৌড়ে আব্বুর রুমে গেলাম আব্বুর রুমেও নেই, এই সন্ধ্যা বেলায় যাবে কোথায় ও। আচ্ছা ছাদে যায়নি তো।

তাড়াতাড়ি ছাদে আসলাম। ছাদের চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছি কোথাও তো নেই, হঠাৎ ছাদের এক কোণায় চোখ পড়লো আলিফা ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। আজব মেয়ে তো বাসর রাতে সুইসাইড এর ভয় দেখিয়েছিল আর আজ সত্যি সত্যি সুইসাইড করতে চলে এলো। আরে রাতুলকে একবার দেখেছে মাত্র খুঁজে এনে দিবো বলেছি তারপরও সুইসাইড করতে চলে এলো। দৌড়ে আলিফার কাছে যাচ্ছি মনে হচ্ছে ও এখনি লাফ দিবে, জোরে একটা চিৎকার দিলাম আলিফা….

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৬

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফার দিকে তাকিয়ে দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে, ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললাম “তোমাকে কখনো হারাতে দিবো না রাগিণী, অনেক ভালবাসবো তোমায়”

হঠাৎ আলিফার গোঙানিতে ঘুম ভেঙে গেলো। কখন যে আলিফার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। আলিফার দিকে তাকিয়ে দেখি ও কেমন যেন করছে, তাড়াতাড়ি ওর কাছে গিয়ে কপালে হাত দিলাম, জ্বরে তো ওর শরীর পুরে যাচ্ছে। রাত প্রায় তিনটা বাজে এতো রাতে আব্বুকে ডাকা ঠিক হবে না এখন আমি কি করি। মনে পড়েছে সেদিন আমার জ্বর হওয়াতে আলিফা আমার কপালে জলপট্টি দিয়েছিল।

বসে বসে আলিফার কপালে জলপট্টি দিচ্ছি, এখন কিছুটা কমেছে। ওর পাশে গিয়ে চুলে হাত বুলাতে লাগলাম, আলিফা পাশ ফিরে আমাকে জরিয়ে ধরলো।
আলিফা: রিফাত আমি না আর পারছি না আমি দুটানায় পড়ে গেছি। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। (আরে এসব কি বলছে ও, চোখ বন্ধ রেখেই আমাকে জরিয়ে ধরে একমনে এসব বলে যাচ্ছে)
আলিফা: রাতুল আমাকে ভালোবাসে আমিও বাসতাম কিন্তু এখন আমি কাকে ভালোবাসি নিজেই বুঝতেছি না, রাতুলকে ছেড়ে দিলে ও অনেক কষ্ট পাবে আমাকে খারাপ ভাববে। এদিকে রিফাত আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে ওকে কি করে আমি কষ্ট দেই। রিফাতকে ছেড়ে যেতেও পারবো না আমি ওর প্রতি আমার মায়া জমে গেছে, এই মায়া কাটিয়ে আমি যেতে পারবো না। আমি এখন কি করবো সত্যি বুঝতে পারছি না, কিচ্ছু বুঝতে পারছি না….
বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো তারমানে এতোক্ষণ ও জ্বরের ঘোরে এসব বলেছে। এতো জ্বর ওকে এখানে রেখে সোফায় গিয়ে ঘুমানো ঠিক হবে না তাই ওর পাশে শুয়ে পড়লাম, সাথে সাথে আলিফা এসে আমার বুকে মাথা রাখলো। জ্বরের ঘোরে জরিয়ে ধরেছে বুকে মাথা রেখেছে সকালে যখন এই অবস্থা দেখবে তখন তো রেগে যাবে, আলিফাকে সরিয়ে দিতে চাইলাম কিন্তু ও আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। কি আর করার সকালে যা হবার হবে আমিও আলিফাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম ভাঙতেই তাকিয়ে দেখি আলিফা আমার মাথার পাশে বসে আছে আর একমনে আমাকে দেখছে।
আমি: কি দেখছ এভাবে
আলিফা: একটা মানুষ এতোটা ভালোবাসতে পারে কিভাবে
আমি: হঠাৎ এমন কথা
আলিফা: রাতে আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলাম তাই না
আমি: না মানে তোমার খুব বেশি জ্বর ছিল তাই জ্বরের ঘোরে আমাকে জরিয়ে ধরেছিলে, আমি সরে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি ছাড়ো নি। আর তোমাকে এই অবস্থায় একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না তাই আর কি… সরি
আলিফা: এমন আমতা আমতা করছ কেন আমি কি তোমায় বকা দিয়েছি (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে আজব তো ও রাগ করলো না কেন)
আলিফা: কি দেখছ
আমি: জ্বর কমেছে
আলিফা: হ্যাঁ অনেকটা কমেছে
আমি: ওকে।

আলিফার জন্য নাশতা রুমে নিয়ে আসলাম আবার রাগ করবে কিনা কে জানে, এই রাগিণীকে খুব ভয় লাগে।
আলিফা: এসব কি
আমি: নাশতা
আলিফা: তাতো দেখতেই পারছি কিন্তু রুমে নিয়ে এসেছ কেন
আমি: এই শরীর নিয়ে আবার নিচে যাবে তাই রুমে নিয়ে আসলাম। এতো কথা না বলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও তো ওষুধ খেতে হবে
আলিফা: কষ্ট করে এনেছ যখন আর একটু কষ্ট করে খাইয়ে দাও (খাইয়ে দিতে বললো আমি তো নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না)
আমি: তুমি বললে তো আমি সারাজীবন তোমাকে খাইয়ে দিতে রাজি আছি (আস্তে বললাম)
আলিফা: কিছু বললে
আমি: নাতো
আলিফা: বলেছ তো, আস্তে বলেছ আমি শুনতে পাইনি
আমি: খেয়ে নাও।

আলিফাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলাম। আলিফাকে শুয়ে দিয়ে নিচে যাবার জন্য পা বাড়ালাম তখন আবার আলিফা ডাক দিলো।
আলিফা: রিফাত
আমি: কি আর কিছু লাগবে
আলিফা: আমার ফোনটা দিয়ে যাও তো
আমি: তোমার ফোন আমার কাছে নাতো কোথায় রেখেছিলে
আলিফা: ফোন ফোন….
আমি: কি হয়েছে এমন করছ কেন
আলিফা: ফোনটা বোধহয় হারিয়ে ফেলেছি
আমি: মানে
আলিফা: কাল যখন গাড়ির জানালার কাছে গিয়েছিলাম কথা বলতে তখন হঠাৎ করে মাথা ঘুরায় আর কিছু মনে নেই….
আমি: হ্যাঁ তখন তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে
আলিফা: তখনি হয়তো ফোনটা হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল
আমি: আচ্ছা আমি দেখে আসছি গাড়িতে পড়েছে কিনা
আলিফা: এখন কি হবে
আমি: আমি দেখে আসছি দাঁড়াও।

গাড়িতে অনেক খুঁজলাম কিন্তু গাড়ির কোথাও তো ফোন পেলাম না তাহলে কি….
আলিফা: পেয়েছ
আমি: না গাড়িতে অনেক খুঁজলাম নেই, মনে হয় জানালা দিয়ে বাইরে পরে গিয়েছিল
আলিফা: এখন কি হবে
আমি: আরে এই পাগলী কাঁদছ কেন একটা ফোনই তো আমি আজকেই তোমাকে নতুন ফোন কিনে দিবো
আলিফা: তুমি বুঝতে পারছ না রিফাত এই ফোনে রাতুল ফোন দিবে, ও বন্ধ ফেলে ভাববে আমি ইচ্ছে করে ওর সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছি। আর এইটা ভাবা মানে ও আমাকে খারাপ মেয়ে ভাববে, রিফাত আমি এতোটা খারাপ মেয়ে নই। হ্যাঁ আমি হয়তো রাতুলকে আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছি কিন্তু সেটা ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলে মিটিয়ে নিতাম এভাবে হুট করে যোগাযোগ বন্ধ….
আমি: এক মিনিট তুমি একটু আগে কি বললে, রাতুলকে আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছ
আলিফা: না মানে (তারমানে কি আলিফা আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে)
আলিফা: রিফাত তোমার ফোনটা দিবে
আমি: হুম।

আলিফা বার বার ফোন করে যাচ্ছে কাকে জানিনা হয়তো রাতুল।
আলিফা: দূর ওর ফোনটা কেন বন্ধ
আমি: কে রাতুল
আলিফা: হুম
আমি: হয়তো ফোনে চার্জ নেই বা অন্য কোনো সমস্যা একটু পর আবার দিয়ে দেখো
আলিফা: হুম।

নাশতা করে ড্রয়িংরুমে বসে আছি রুমে যেতে ইচ্ছে করছেনা, আলিফা হয়তো রাতুলের সাথে কথা বলছে মাঝখানে গিয়ে আমার ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না। তাছাড়া আজকাল আলিফার রাতুলের সাথে কথা বলাটা সহ্য করতে পারি না, বুকের কোথাও যেন চাপা কষ্ট অনুভব হয়।
রিয়ান: ভাইয়া একা একা বসে কি ভাবছ
আমি: কিছু নাতো
রিয়ান: তোমার মুখ দেখলেই বুঝা যায়
আমি: হুম
রিয়ান: ভাবি রুমে একা আর তুমি এখানে বসে আছ
আমি: ও মনে হয় রাতুলের সাথে কথা বলছে তাই ডিস্টার্ব করতে ইচ্ছে করছে না
রিয়ান: ভাইয়া এখন কি করবে
আমি: জানিনা মাথায় কিছু আসছে না, আগে তো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু এখন সব এলোমেলো হয়ে গেলো। আলিফা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না আর এখন ওর মনের যা অবস্থা তাই চাপ দিচ্ছি না কিন্তু এভাবে আর কতোদিন। আমি আর পারছি না।
রিয়ান: ভাইয়া আমি বলি কি ভাবিকে তুমি স্বাভাবিক হতে আর কিছুদিন সময় দাও। হঠাৎ করে ভাবির বাবা মারা গেছেন বুঝতেই তো পারছ মনের অবস্থা ঠিক নেই, আর কিছুদিন সময় দিলে হয়তো ভাবি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে
আমি: সাত মাসে যখন পারেনি ও আর পারবেও না
রিয়ান: বলছে তোমাকে, সবকিছুতে তাড়াহুড়া করলে হয় না ভাইয়া। তুমি যে হুটহাট রেগে যাচ্ছ একবার ভেবে দেখতো তুমি আজো নিলা আপুকে ভুলতে পারোনি তাহলে ভাবি এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা ভুলে যাবে কিভাবে। ভাবির কি ভালোবাসা ভুলার কথা ছিল তুমি হুট করে বিয়ে করাতেই তো ভাবি এখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
আমি: কিন্তু আমিও তো একটা মানুষ আমারো কষ্ট হয় এসব আর নিতে পারছি না, আমি ওকে সময় দেইনি এমন তো না অনেক সময় দিয়েছি….
রিয়ান: হ্যাঁ আর কিছুদিন সময় দাও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাইয়া ভালোবাসা ভুলা এতো সহজ না।
আমি: হুম
রিয়ান: ভাবির কাছে যাও উনি অসুস্থ
আমি: ওকে

রুমে এসে দেখি আলিফা বসে বসে কাঁদছে।
আমি: এই কি হয়েছে কাঁদছ কেন
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: রাতুলের ফোন কি এখনো বন্ধ
আলিফা: হুম
আমি: তাই বলে কাঁদবে, কিছুক্ষণ পর আবার ট্রাই করে দেখবে। এখন কেঁদো না প্লিজ এমনি অসুস্থ তুমি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে।
আলিফা: আমি বলেছি তোমাকে এজন্য কাঁদছি আর আমি অসুস্থ হলে কার কি
আমি: মানে আর এতো রেগে যাচ্ছ কেন
আলিফা: কিছুনা (গাল ফুলিয়ে বসে আছে এখন ওকে দেখতে একদম বাচ্চা মেয়েদের মতো লাগছে)
আমি: আপনি অসুস্থ হওয়াতে কারো কিছু না হলে কেউ রাত জেগে আপনার কপালে জলপট্টি দিতো না বুঝেছেন
আলিফা: হুহ জলপট্টি দিলেই রোগীর সেবা করা হয়ে যায় নাকি
আমি: তো আর কি করতে হবে বলে দাও আমি তো জানিনা
আলিফা: জানতে হবেও না, আমি অসুস্থ জেনেও তো এতোক্ষণ বাইরে ছিলে
আমি: হুম এতোক্ষণে বুঝলাম রাগিণী রাগ করেছে কেন
আলিফা: রাগ কি
আমি: হাহাহা রাগিণী নাকি জানেনা রাগ কি
আলিফা: জানিই না তো
আমি: শিখাতে হবে নাকি (ওর একদম কাছে গিয়ে বললাম, ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
ভাইয়া একটু নিচে আসতো (হঠাৎ রিয়ানের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি সরে গেলাম)
আলিফা: রিয়ান ডাকছে যাও
আমি: ওকে।

ড্রয়িংরুমে এসে দেখি রিয়ান অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: রিয়ান কিছু বলবি
রিয়ান: অফিসে যাবা কিনা জিজ্ঞেস করার জন্য ডেকেছি
আমি: কিভাবে যাবো একটু সময় তোর কাছে বসে ছিলাম তাতেই আলিফা রেগে আছে অফিসে গেলে তো আমাকে মেরেই ফেলবে
রিয়ান: তাহলে থাকুক ভাবি সুস্থ হলে পরেই যেও
আমি: ওকে সাবধানে যাস
রিয়ান: ভাইয়া তুমি যাই বলো ভাবি কিন্তু তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে
আমি: তোর কথাটা সত্যি হলে তো ভালোই হতো
রিয়ান: সত্যি তো আস্তে আস্তে হয়েই যাচ্ছে। ভাইয়া একটা কথা বলবো
আমি: বল
রিয়ান: আমার না চাচ্চু ডাক শুনতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে
আমি: দাঁড়া ফাজিল।
রিয়ান হাসতে হাসতে দৌড়ে চলে গেলো, যে মেয়ে আমাকে সোফায় ঘুমুতে দেয় আবার বাচ্চা।

রুমে আসতেই দেখি আলিফা নিলার ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর কি যেন ভাবছে।
আমি: আলিফা
আলিফা: হুম
আমি: ছবির দিকে তাকিয়ে কি ভাবছ
আলিফা: ভাবছি মেয়েটা খুব ভাগ্যবতী
আমি: কিভাবে
আলিফা: এইযে তোমার মতো একজনের ভালোবাসা পেয়েছে
আমি: এদিক থেকে ভাবলে তো তুমিও ভাগ্যবতী কারণ আমি নিলাকে যতোটুকু ভালোবাসতাম তোমাকেও ততোটুকু ভালোবাসি
আলিফা: তাই বুঝি
আমি: সন্দেহ আছে বুঝি
আলিফা: একটু আছে
আমি: দাঁড়াও তোমার সন্দেহ দুর করছি
আলিফা: এই কি করছ এভাবে এগুচ্ছ কেন।
কোনো কথা না বলে আস্তে আস্তে আলিফার দিকে এগুতে থাকলাম আলিফা পিছাতে পিছাতে গিয়ে দেয়ালে ঠেকলো। ওর একদম কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমি: এখন কোথায় যাবে
আলিফা: কি করছ
আমি: তোমার সন্দেহ দুর করছি
আলিফা: রিফা….
আলিফাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম। আলিফা আজ কোনো রাগ দেখাচ্ছে না বাধাও দিচ্ছে না চোখ দুটু বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে….

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৫

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

সাত মাস পর….

সকালে মুখে রোদের আলো পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো, ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি আলিফা জানালা খুলে দিয়েছে, আমার মুখে রোদ পড়েছে দেখে হাসছে। আমি পাশ ফিরে শুয়ে রইলাম। আজ আমাদের বিয়ের সাত মাস পূর্ণ হলো। আজকে আলিফার উপর সবকিছু নির্ভর করছে ও যা চাইবে তাই হবে। আচ্ছা আলিফা যদি আজ ডিভোর্স চায়…?
আড়চোখে আলিফার দিকে তাকালাম, রুমে পায়চারী করছে আর কি যেন ভাবছে।
আলিফা: আবার ঘুমিয়ে পড়ছ যে অফিসে যাবে না
আমি: না
আলিফা: কেন
আমি: আলিফা আজ আমাদের বিয়ের সাত মাস পূর্ণ হয়েছে তোমার মনে আছে তো….
আলিফা: হুম
আমি: কি সিদ্ধান্ত নিয়েছ
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: আলিফা আজ নিশ্চুপ হয়ে থাকলে হবে না, সাত মাস অনেক সময় একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য
আলিফা: আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না
আমি: তা বললে তো হবে না। সাত মাস হয়ে গেছে রাতুল দেশে ফিরে আসবে, তোমাকে তো এখন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। (বলতে বলতে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম)

এসে দেখি আলিফা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম।
আলিফা: রিফাত সত্যি করে একটা কথা বলবে
আমি: কি
আলিফা: এই সাত মাসে তোমার কি মনে হয়েছে আমার মন কাকে ভালোবাসে
আমি: আমি এখনো তোমার মন বুঝতে পারিনি। তুমি আমার সাথে ভালো ব্যবহার করো আবার রাতুলের সাথেও কথা বলে যাচ্ছ কি বুঝবো বলো
আলিফা: আমি না দুটানায় পড়ে গেছি আমি তোমাদের কাউকেই কষ্ট দিতে চাই না
আমি: তুমি যা চাইবে আমি তাই মেনে নিবো
আলিফা: যদি ডিভোর্স চাই (ওর এমন কথায় কেমন যেন বোবা হয়ে গেলাম, এখন কি বলবো)
আলিফা: কি হলো
আমি: কিছুনাহ, ডিভোর্স চাইলে আমি দিবো কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি যেভাবে ভালো থাকবে তাতেই আমি খুশি
আলিফা: আর যদি তোমার কাছে থেকে যেতে চাই
আমি: সবটুকু উজাড় করে দিয়ে ভালবাসবো সবসময় আগলে রাখবো তোমাকে, কোনো কষ্ট পেতে দিবো না
আলিফা: প্রশ্নগুলো রাতুল কে করলে সেও এমন উত্তর দিবে এখন তুমি বলো আমি কাকে বেছে নেই
আমি: তোমার মন যা চায় তাই করো
আলিফা: মন কি চায় আমি নিজেই বুঝতেছি না
আমি: তোমার মন একবার আমাকে চায় একবার রাতুলকে চায় বুঝেছ এজন্যই তুমি দুটানায় পরে গেছ। কিন্তু আলিফা বুঝার চেষ্টা করো এভাবে সম্ভব না।
আলিফা: হুম
আমি: রাতুল কি বলেছে দেশে কবে আসবে
আলিফা: আর দুদিন আছে
আমি: রাতুল এসে যখন তোমার সামনে দাঁড়াবে তখন কি করবে তারচেয়ে ভালো আজই সিদ্ধান্ত নাও
আলিফা: রিফাত আমাকে একটু একা থাকতে দাও তো
আমি: ওকে।

আলিফা কি সিদ্ধান্ত নিবে আমি জানিনা কিন্তু আমি আজ একটা সিদ্ধান্ত নিবোই এভাবে তো চলতে পারে না। আব্বুর সাথে কথা বলার জন্য আব্বুর রুমে আসলাম।
আমি: আব্বু আসবো
আব্বু: আয়
আমি: আব্বু
আব্বু: কিছু বলবি
আমি: হুম
আব্বু: বল
আমি: আব্বু আমি আলিফাকে সাত মাস সময় দিয়েছিলাম ভালোভাবে বুঝে যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিন্তু ও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। রাতুল দেশে চলে আসবে আব্বু আমি আর পারছি না আমি এই দুটানা থেকে মুক্তি চাই
আব্বু: কি করতে চাইছিস
আমি: আলিফা যদি এভাবে থাকতে চায় তাহলে আমার পক্ষে সম্ভব না আমি ওকে ডিভোর্স দিবো
আব্বু: এইটা কি ঠিক হবে
আমি: তো আমি কি করবো আব্বু, আলিফা প্রতিনিয়ত রাতুলের সাথে কথা বলে যাচ্ছে আমি তো একটা মানুষ আব্বু আমারো তো কষ্ট হয় আর কতো সহ্য করবো
আব্বু: ঠিক আছে তুই আলিফার সাথে আবার কথা বলে দেখ আমি ভেবে দেখছি
আমি: হুম।

রুমে চলে আসলাম, আলিফা ফোনে কথা বলছে। এই মেয়েকে তো থাপড়াইতে মন চাইতেছে, দুদিকেই ঠিক রাখছে এইটা তো ঠিক না। রাতুল আমি দুজনেই কষ্ট পাচ্ছি।
আলিফা: রিফাত এসেছ শুনো আমার সিদ্ধান্ত
আমি: হুম বলো (বুকের বাম পাশে ধুকধুক করছে, ভয় হচ্ছে আলিফা যদি ডিভোর্স চায় তখন কি করবো আমি, পারবো আলিফাকে ডিভোর্স দিতে…?)
আলিফা: রিফাত কি হয়েছে তোমার এভাবে ঘামছ কেন
আমি: কই কিছু নাতো
আলিফা: কিছু না বললেই হলো।
এক গ্লাস পানি এনে আমার হাতে দিলো। পানি খেতে খেতে ওর দিকে তাকালাম, এসব তো এখন স্মৃতি হয়ে যাবে আর আমাকে তাড়া করে বেড়াবে।
আলিফা: রিফাত আমি কাউকেই কষ্ট দিতে চাই না। তোমার কাছে থাকলে রাতুল কষ্ট পাবে রাতুলের কাছে চলে গেলে তুমি কষ্ট পাবে। কিন্তু তোমাদের এই কষ্ট দেওয়া ছাড়া আমার সামনে কোনো রাস্তা নেই। আমি অনেক ভেবে দেখেছি কষ্ট দিলে দুজনকেই দেওয়া উচিত।
আমি: দুজনকে মানে বুঝলাম না
আলিফা: আমি তোমাদের দুজনকেই মুক্তি দিতে চাই
আমি: মানে কি
আলিফা: রাতুলকে বলবো তোমাকে আগে বলছি তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও, রাতুলের সাথেও আমি সব সম্পর্ক বাদ দিয়ে দিবো।
আমি: মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার পাগলের মতো এসব কি বলছ, একবার ভেবে দেখেছ তোমার কি হবে কোথায় যাবে তুমি
আলিফা: কেন আব্বুর কাছে
আমি: তোমার আব্বু আমার উপর ভরসা করে বলেছিলেন তোমাকে যেন আগলে রাখি, আমি হয়তো পারবো না কিন্তু রাতুল তো পারবে তুমি যেকোনো একজনের কাছে থাকো প্লিজ
আলিফা: একজন হাসবে অন্যজন কাঁদবে তা তো হতে পারে না
আমি: এসব বলেছ রাতুলকে
আলিফা: না রাতে ও ফোন করবে তখন বলে দিবো
আমি: তাহলে আর বলার প্রয়োজন নেই তুমি রাতুলের কাছে চলে যাও আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছি। তুমি যার সাথেই থাকো তোমাকে সুখী দেখলেই আমি শান্তি পাবো
আলিফা: রিফাত শু….
আলিফার ফোন বেজে উঠলো, রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কি বললো শুনিনি কিন্তু আলিফা একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি ওকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলাম। হঠাৎ করে কি হয়েছে বুঝতে পারছি না। পানি ছিটিয়ে দিলাম ওর চোখে মুখে কিন্তু জ্ঞান ফিরছে না।
আব্বু: রিফাত কি হয়েছে আলিফা এভাবে চিৎকার করলো কেন
প্রিতি: ভাবির চিৎকার শুনে আমরা দৌড়ে এসেছি, কি হয়েছে
আমি: জানিনা কে যেন ফোন করলো ও রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কি বলেছে যেন সাথে সাথে আলিফা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো
আব্বু: রিয়ান আলিফার মোবাইল এনে দেখতো কে ফোন দিয়েছিল
রিয়ান: দেখছি আব্বু।
আলিফার চোখেমুখে পানি ছিটাতে ছিটাতে হঠাৎ ওর জ্ঞান ফিরলো।
আমি: আলিফা কি হয়েছে
আলিফা: রিফাত আব্বু আআআব্বু… (আবার অজ্ঞান হয়ে গেলো)
রিয়ান: আব্বু এতিমখানার ম্যানেজার ফোন করেছিল ভাবির আব্বু মারা গেছেন
আব্বু: এজন্যই মেয়েটা এতো কষ্ট পেয়েছে। ছোটবেলা থেকে কারো আদর ভালোবাসা পায়নি, বড় হয়ে একজনের পেলো তো আজ উনি মেয়েটাকে একা রেখে চলে গেলেন
রিয়ান: আব্বু ভাবির তো জ্ঞান ফিরছে না আমি ডক্টরকে ফোন করে আসতে বলছি
আব্বু: হুম।

আলিফার মাথাটা আমার কোলে নিয়ে বসে আছি, এখনো অজ্ঞান হয়ে আছে। যে মেয়েটা একটু আগে বলছিল আমাকে রাতুলকে মুক্তি দিয়ে বাবার কাছে চলে যাবে সে মেয়েটাই কিনা এখন একা হয়ে গেলো।
আলিফা: রিফাত আমি আব্বুর কাছে যাবো (হঠাৎ আলিফার জ্ঞান ফিরে আসলো)
আমি: আব্বু আলিফার জ্ঞান ফিরেছে
আব্বু: মা এখন কেমন লাগছে
আলিফা: আমি আব্বুর কাছে যাবো
আব্বু: হ্যাঁ আমরা সবাই যাবো, ডক্টর আসছে তোমাকে দেখিয়ে তারপর যাবো
আলিফা: আমি ঠিক আছি ডক্টর লাগবে না, আমাকে আব্বুর কাছে নিয়ে চলো
আমি: আব্বু বাসায় এসে ডক্টর দেখানো যাবে ওকে এখন নিয়ে যাওয়াই ভালো
আব্বু: ঠিক আছে, রিয়ান গাড়ি বের কর আমরা সবাই যাবো।

গাড়িতে আলিফা আমার কাধে মাথা রেখে আমাকে জরিয়ে ধরে বসে আছে। এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না, সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সকালে ভেবেছিলাম আলিফা কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে আমিই সিদ্ধান্ত নিবো, ওকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু ওকে একা করে দেই কিভাবে, আমি ওর পাশে না থাকলে কে থাকবে রাতুল তো দেশের বাইরে।
রিয়ান: ভাইয়া ভাবির ফোন এসেছে মোবাইল আমার কাছে ছিল
আমি: প্রিতি ফোনটা এনে তুই রিসিভ কর তো (প্রিতি ফোন হাতে এনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: কি হলো রিসিভ কর
প্রিতি: ভাইয়া রাতুল ফোন দিয়েছে (আমাদের তো রিসিভ করা ঠিক হবে না, পরে যদি আলিফাকে ভুল বুঝে)
আমি: আলিফা তোমার ফোন এসেছে।
আলিফা ফোন রিসিভ করে গাড়ির জানালার কাছে গেলো কথা বলতে। হঠাৎ গোঙিয়ে উঠলো তাড়াতাড়ি ওর পাশে গেলাম, গিয়ে দেখি আবার অজ্ঞান হয়ে গেছে।
আমি: আব্বু আলিফা তো আবার অজ্ঞান হয়ে গেছে
আব্বু: বেশি কষ্ট পেয়েছে তো চিন্তা করিস না আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে
আমি: হুম। (আলিফাকে কাছে এনে বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম, এই একটু সময়ে মেয়েটা কেমন যেন নীরব হয়ে গেছে)
আব্বু: রিফাত সকালে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলি তা ভুলে যা, এখন তুই আলিফার সবকিছু
আমি: কিন্তু আব্বু রাতুল যদি ফিরে আসে
আব্বু: ফিরে আসলে আলিফা যদি নিজের ইচ্ছায় রাতুলের কাছে যেতে চায় তখন বাধা দিবি না কিন্তু এখন মেয়েটার কেউ নেই তাই আমি চাইবো তুই অতীতের সব কষ্ট ভুলে মেয়েটাকে আপন করে নে
আমি: হুম আব্বু।

আলিফার আব্বুর লাশ জরিয়ে ধরে ও খুব কান্না করছে। কাঁদুক আজ আর বাধা দিবো না।
ম্যানেজার: মেয়েটা খুব একা হয়ে গেলো
আব্বু: কে বললো আমার বৌমা একা হয়ে গেছে, ওর এক আব্বু মারা গেছে আর এক আব্বু তো বেঁচে আছে। আমি সবসময় আলিফাকে আগলে রাখবো।
ম্যানেজার: আপনার কথা শুনে স্বস্তি পেলাম, আসলে মেয়েটা ছোট থেকেই একা তো তা….
আব্বু: এখন আর ও একা না, ওর পুরো একটা পরিবার আছে স্বামী আছে।
ম্যানেজার: মেয়েটা খুব ভালো ছোট থেকে চিনি তো ওকে কখনো কষ্ট দিও না বাবা (আমাকে কথা গুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন)

আলিফার আব্বুর দাফন কাজ শেষ করে ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

আলিফা শুয়ে শুয়ে কাঁদছে, রাত হয়ে গেলো সকাল থেকে মেয়েটা সমানে কেঁদে যাচ্ছে এভাবে কাঁদলে তো মেয়েটা….
রিয়ান: ভাইয়া ডক্টর এসেছেন
আমি: হুম ভিতরে নিয়ে আয়।

ডক্টর আলিফাকে দেখে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে ওকে রেস্ট নিতে বলে চলে গেলেন। আলিফা আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
আমি: কি হয়েছে এতো ভেঙে পড়ছ কেন
আলিফা: আমি যে আবারো খুব একা হয়ে গেলাম, আব্বু আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেলেন
আমি: কেঁদো না প্লিজ কে বলেছে তুমি একা আমরা আছি তো, এখানে তো তোমার আরেকজন আব্বু আছেন তাহলে এতো ভেঙে পড়ছ কেন
আলিফা: রিফাত (আমার হাত ধরে কান্না করে দিলো)
আলিফা এখন আমাকে ছাড়বে নাকি রাতুলকে ছাড়বে ভেবে পাচ্ছে না, দুজনকে ছেড়ে দিলে যাবে কার কাছে এজন্যই এতো ভেঙে পড়ছে আমি তা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তো ওকে আর কাঁদতে দিবো না, ও আমাকে ভালোবাসুক বা না বাসুক আমি ওকে সবসময় ভালবাসবো, ওকে সবসময় আগলে রাখবো।
আলিফার দিকে তাকিয়ে দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে, ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললাম “তোমাকে কখনো হারাতে দিবো না রাগিণী, অনেক ভালবাসবো তোমায়”

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৪

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে কপালে কারো ঠোঁটের উষ্ণ ছুয়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো, তাকিয়ে দেখি আলিফা। আমি সজাগ হয়ে গেছি দেখে আলিফা কেমন যেন হকচকিয়ে উঠলো, তাড়াতাড়ি চলে যেতে চাইলো। আমি ওকে টান দিয়ে জরিয়ে ধরলাম কেমন যেন অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে, চোখে পানি ছলছল করছে।
আমি: কি হয়েছে
আলিফা: কিছু নাতো
আমি: লুকাচ্ছ কেন তোমার চোখের পানিই তো বলে দিচ্ছে কিছু হয়েছে তোমার
আলিফা: কিছু হয়নি উঠো
আমি: ভালোই যখন বাস লুকাচ্ছ কেন, ভালোবাসা কি লুকানো যায়
আলিফা: রিফাত ছাড়ো ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো
আমি: আগে বলো ভালোবাস কিনা
আলিফা: জানিনা (আমার বুকে মাথা রেখে কান্না করছে, কি হয়েছে ওর কিছুই বুঝতে পারছি না)
আমি: আলিফা কান্না না করে বলো আমাকে কি হয়েছে
আলিফা: কিছু নাতো।
আমার দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা হাসি দিলো তারপর চলে যাওয়ার জন্য উঠতে চাইলো। ওর মুখটা আমার মুখের কাছে এনে ওর ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু দিলাম। আলিফা লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেলো।

সবাই একসাথে বসে নাশতা করছি হঠাৎ আলিফার ফোন বেজে উঠলো, আশ্চর্য ফোন সাথে নিয়ে নাশতা করতে এসেছে। আলিফা তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে রুমের দিকে চলে গেলো, মনে হচ্ছে ও কারো ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিল।
রিয়ান: ভাইয়া হানিমোনে যাওয়ার প্ল্যান কি করেছ প্লিজ তাড়াতাড়ি গিয়ে ফিরে এসো আমি ব্যবসা সামলাতে পারছি না
আব্বু: যাওয়ার আগেই বলছিস তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে, তাড়াতাড়ি আসতে হবে না আমি কয়েক দিন নাহয় অফিসে যাবো
আমি: না আব্বু তোমার আর যাওয়ার প্রয়োজন নেই দুভাই সব সামলে নিতে পারবো। আর আমি এক্ষণি আলিফার সাথে কথা বলে দেখছি
রিয়ান: ভাইয়া প্লিজ যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব যাও
আমি: ওকে।

নাশতা করে সবার সাথে অনেক্ষণ গল্প করে রুমে আসলাম। আলিফা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, এতো সময় ধরে আলিফা কার সাথে কথা বলছে রাতুল নয় তো….?
আমি: আলিফা কার সাথে কথা বলছ
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: আলিফা আমি তোমায় কিছু জিজ্ঞেস করেছি
আলিফা: (নিশ্চুপ)
এতোক্ষণ ধরে ডাকছি কথা বলছে না তাই ওর কাছে গিয়ে কাধে হাত রাখলাম ও পিছন ফিরে একবার তাকিয়ে বারান্দায় চলে গেলো, আলিফা ফোনে কথা বলছে আর কাঁদছে। কিন্তু কার সাথে কথা বলছে আর কাঁদছেই বা কেন…?

বারান্দায় এসে আলিফার পাশে দাঁড়ালাম ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, আর ভালো লাগছে না ওর কান্না দেখতে।
আমি: আলিফা কি হয়েছে কাঁদছ কেন
আলিফা: এমনি
আমি: কে ফোন করেছে
আলিফা: বিরক্ত করোনা তো যাও এখান থেকে
আমি: আগে বলো তুমি কাঁদছ কেন
আলিফা: বললাম তো এমনি (চেঁচিয়ে উঠলো)
আমি: আশ্চর্য তো কাঁদছ কেন জিজ্ঞেস করাতে এতো রেগে যাচ্ছ কেন
আলিফা: তো কি করবো কি উত্তর দিবো তোমাকে, আমার কান্নার কারণ তো তুমিই
আমি: মানে
আলিফা: একদিনে সবকিছু উলটপালট করে দিয়েছ এখন আমি কি সিদ্ধান্ত নিবো নিজেই বুঝতে পারছি না, রাতুল সমানে আমাকে ভুল বুঝে যাচ্ছে। এতো যন্ত্রণা আর নিতে পারছি না ইচ্ছে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে দেই (ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারলাম ওকে কতো বড় কথা বলে ফেলছে নিজেকে নাকি শেষ করে দিবে)
আমি: অন্যায় করলে আমি করেছি শাস্তি দিতে হলে আমাকে দাও নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছ কেন
আলিফা: (নিশ্চুপ হয়ে গালে হাত দিয়ে কাঁদছে)
আমি: মানছি আমি তোমার মনের কথা না জেনে বিয়ে করে অন্যায় করেছি তাই বলে….
আলিফা: তোমার একটা অন্যায় যে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে সেটা কি বুঝতে পারছ
আমি: প্রথম বুঝেছিলাম কিন্তু তোমার গতকালের ব্যবহারে ধারনাটা পাল্টে গিয়েছিল কিন্তু আজ দেখছি তুমি রাতুলকেই ভালোবাস
আলিফা: হ্যাঁ আমি রাতুলকেই ভালোবাসি শুনতে পেয়েছ তুমি।
আমার সব ভাবনা তাহলে মিথ্যে ছিল আলিফা এসব কি বলছে। আর ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না, বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম।

সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় কাটিয়েছি ফোনটাও সাথে আনা হয়নি আব্বু হয়তো টেনশন করছেন। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। বাসায় গেলেই তো আলিফার সামনে যেতে হবে, ওকে দেখলেই এখন রাগ উঠবে শুধু রাতুল রাতুল করে আর আমি যে ওকে পাগলের মতো ভালোবাসি তার কোনো দাম নেই।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে রাস্তার পাশে বসে বসে ভাবছি, রাগের মাথায় কতো জোরে থাপ্পড় মেরে দিলাম পাগলীটা অনেক কষ্ট পেয়েছে গালে মনে হয় দাগ পরে গেছে।
সাগর: রিফাত তুই রাস্তার পাশে বসে কি করছিস (হঠাৎ সাগরের ডাকে ওর দিকে ফিরে তাকালাম)
সাগর: কিরে কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন
আমি: এমনি
সাগর: বাসায় চল কিছু তো একটা হয়েছে
আমি: বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না
সাগর: আমার বাসায় চল
আমি: হুম

সাগরের বাসায় বসে আছি ইচ্ছে হচ্ছে না বাসায় ফিরে যেতে।
সাগর: রিফাত সব তো শুনলাম এখন কি করবি
আমি: জানিনা
সাগর: আমার কি মনে হয় জানিস ভাবি দুটানায় পরে গেছে তাই আজ তোর সাথে এমন ব্যবহার করেছে
আমি: হুম আর ও এইটা সারাজীবন করবেও আর আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না
সাগর: আমার মনে হয় তোর ভাবিকে সময় দেওয়া উচিত, ভাবির মন কি চায় সেটা উনাকে বুঝতে দে দেখবি উনি নিজেই সব ঠিক করে নিয়েছেন
আমি: সময়
সাগর: হ্যাঁ তুই ভাবিকে ভাবির মতো থাকতে দে তুই তোর মতো থাক, তবে যেমন ভালোবাসিস তেমন ভাবেই ভালোবেসে যা। ভাবি সময় পেলে আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে কি করলে ভালো হবে বা উনার মন কি চায়
আমি: হুম
সাগর: এখন বাসায় যা অনেক রাত হয়েছে
আমি: ইচ্ছে করছে না
সাগর: আঙ্কেল কে কষ্ট দিবি নাকি
আমি: নাহ যাচ্ছি

আনমনে হয়ে রাস্তায় হাটছি আর ভাবছি সত্যি আলিফাকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। হঠাৎ করে এতোকিছু হয়ে গেলো মেয়েটা কি করবে, সময় না পেলে ও নিজের মনের কথা বুঝবে কিভাবে। বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই প্রিতি দরজা খুলে দিলো।
আমি: ঘুমাস নি
প্রিতি: সারাদিন কোথায় ছিলে
আমি: সুমনের বাসায়
আব্বু: তোর থেকে এইটা আশা করিনি রিফাত, কাউকে কিছু না বলে সারাদিন বাসার বাইরে ছিলি এসব কি রিফাত
আমি: আব্বু….
আব্বু: রিফাত আমি বলছি নিজে সময় নে বউমা কে সময় দে দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে
আমি: হুম
আব্বু: রুমে যা বউমা আজ একবারো নিচে আসেনি
আমি: হুম

রুমে এসে দেখি আলিফা ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে। ফ্লোরে বসে কাঁদতে কাঁদতে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। কোলে তুলে ওকে নিয়ে খাটে শুয়ে দিলাম। ওর শরীরে বিছানাচাদর টেনে দিতেই ঘুমের ঘোরে আমাকে জরিয়ে ধরলো। আলিফার ঠোঁটের একদম কাছে আমার ঠোঁট, ওর গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। আলিফার গালে কিছু চুল এলোমেলো হয়ে পরে আছে হাত দিয়ে চুলগুলো সরাতে গিয়ে দেখি গালে আঙ্গুলের দাগ বসে আছে। নিজের প্রতি খুব ঘৃণা হচ্ছে ভালোবাসার মানুষকে কেউ এভাবে আঘাত করে। কিন্তু আমারই বা কি করার ছিল, আলিফা নিজেকে শেষ করে দিতে চাইছিল ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো কিভাবে। গালের দাগ গুলোর উপর একটা চুমু দিয়ে আলিফার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম তারপর সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আলিফা এখনো ঘুমাচ্ছে, গালের দাগ গুলো এখনো দেখা যাচ্ছে। ওকে আর না ডেকে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

নাশতা করতে এসে দেখি আলিফাও চলে এসেছে।
আমি: আব্বু আজ থেকে আমি অফিসে যেতে চাচ্ছি
আব্বু: কিন্তু হানি….
আমি: আব্বু প্লিজ এসব বাদ দাও আমি ভালই আছি
আব্বু: হুম
আমি: রিয়ান খেয়ে রেডি হয়ে নে এক সাথেই যাবো
রিয়ান: হুম।
একদিকে চাকু দিয়ে আপেল কাটছি আরেক দিকে আলিফাকে দেখছি হঠাৎ চাকু হাতে লেগে গেলো।
আব্বু: কিযে হয়েছে তোর হুশ রেখে কাজ করবি তো, প্রিতি যা তো ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে দে
আলিফা: আব্বু আমি করে দিচ্ছি, রিফাত রুমে চলো।

রুমে এসে চুপচাপ বসে আছি আলিফা ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে, এখন দেখে বুঝার উপায় নেই ও যে আমাকে নয় রাতুলকে ভালোবাসে।

অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছি কিন্তু শার্টের বোতাম লাগাতে পারছি না হাত ব্যথায়। আলিফা এসে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে নিজেই বোতাম লাগিয়ে দিলো। নাহ আর মায়া বাড়াতে চাই না।
আমি: আলিফা এসব সহানুভূতি দেখানো ছাড়ো
আলিফা: মানে
আমি: সকালে আমায় ভালোবাসবে আর বিকেলে বলবে রাতুলকে ভালোবাস আবার বিকেলে আমায় ভালোবাসবে আর সকালে বলবে রাতুলকে ভালোবাস সেটা তো হতে পারে না। আলিফা দু নৌকায় পা দিয়ে সাগর পারি দেওয়া যায় না তাই তোমাকে যে কোনো একজন কে বেছে নিতে হবে। আর এজন্য আমি তোমাকে সময় দিচ্ছি তুমি ভাবো সময় নাও তোমার মন কি চায় বুঝ তারপর সিদ্ধান্ত নাও
আলিফা: সময়
আমি: হ্যাঁ, তুমি তো বলেছিলে রাতুল সাত মাস পর দেশে আসবে তাই তোমাকে আমি সাত মাস সময় দিচ্ছি এই সাত মাসে তুমি বুঝার চেষ্টা করো তুমি কার কাছে থাকতে চাও
আলিফা: রিফাত আমার কথা শুনো আগে
আমি: যা শুনার সাত মাস পর শুনবো, তখন যদি ভালোবাস বল তাও মেনে নিবো যদি ডিভোর্স চাও তাও দিবো
আলিফা: রিফাত আ….
আলিফার কোনো কথা না শুনে বেরিয়ে আসলাম।

সারাদিন অফিসের কাজে মন দিতে পারিনি বার বার শুধু আলিফার কথা মনে পড়েছে। আচ্ছা সাত মাস পর আলিফা আমাকে মেনে নিবে তো নাকি….
এখন ছোটমার কথাই মনে রাখতে হবে নিজের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস হারালে চলবে না। আলিফাকে আমি সবসময় ভালোবেসে যাবো কিন্তু ও কি চায় সেটা সাত মাস পর ওর মুখ থেকে শুনবো।

রাতে বাসায় ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেলো, রুমে এসে দেখি আলিফা শুয়ে শুয়ে ফোনে কথা বলছে। ওকে কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আলিফা রুমে নেই হয়তো বারান্দায় গিয়ে কথা বলতেছে, আমি নিচে চলে আসলাম। নিচে এসে তো আমি অবাক আলিফা রিয়ানকে ভাত দিচ্ছে।
আমি: রিয়ান প্রিতি কোথায়
রিয়ান: ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আর ডাকিনি আমি নিজেই নিয়ে খাচ্ছিলাম তখন দেখি ভাবি…
আমি: আলিফা আমরা দুভাই নিজেই নিয়ে খেতে পারি তুমি রুমে চলে যাও
রিয়ান: ভাইয়া কি বলছ এসব
আমি: একটু আগে ও রাতুলের সাথে কথা বলছিল আর এখন আসছে আমাকে ভাত দিতে, ও তো দুদিকেই ঠিক রাখতেছে এভাবে তো চলা যায় না ওকে যে কোনো একজন কে বেছে নিতে হবে
আলিফা: এর জন্য তো তুমি আমাকে সাত মাস সময় দিয়েছ তো আজই এতো রাগ দেখাচ্ছ কেন। তাছাড়া আমি নিজেও খাইনি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করে আমার খিদে লেগেছে
রিয়ান: ভাইয়া প্লিজ খেয়ে নাও
আমি: খিদে চলে গেছে।

রুমে এসে শুয়ে পড়লাম, রাগ দেখিয়ে চলে আসলাম কিন্তু খিদে তো লেগেছে খুব।
আলিফা: খাবার এনেছি খেয়ে নাও
আমি: এই মেয়ে তুমি চাওটা কি দুদিকেই ঠিক রাখতেছ, যেকোনো এক রাস্তা বেছে নাও না
আলিফা: একদম চুপ, হাত তো কাটা আমি খাইয়ে দিচ্ছি
আমি: লাগবে না
আলিফ: আগে আমার হাতে খাওয়ার জন্য বাহানা করতে আর এখন না করো ভালোবাসা কমে গেছে নাকি।
এই মেয়ের সাথে কথায় পারবো না তাই চুপচাপ খেয়ে নিলাম। আমাকে খাইয়ে দিয়েই আলিফা আবার ফোনে কথা বলতে চলে গেলো, কি আজব মেয়েরে বাবা। ওর এসবে তো আমি বার বার কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি আসলে ও চায়টা কি।

রাত প্রায় দুটু বাজে ঘুম আসছে না আলিফা এখনো ফোনে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর রুমে আসলো।
আলিফা: রিফাত আমি একটা কথা ভেবেছি
আমি: যা ভেবেছ সাত মাস পরে বলো, এখন তোমার যা খুশি করো কিছু বলবো না কিন্তু সাত মাস পরে যদি তুমি কোনো সিদ্ধান্ত না নাও তাহলে আমি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো
আলিফা: হুম
আমি: মনে রেখো সাত মাস।

দিনগুলো খুব দ্রুত কেটে যাচ্ছে কিন্তু আমি এখনো বুঝতে পারিনি আলিফা আসলে কাকে ভালোবাসে কার কাছে থাকতে চায়। সকালে আমার সাথে ভালো ব্যবহার করলে বিকেলে খারাপ ব্যবহার করে আবার রাতুলের সাথেও সমানে কথা বলে যাচ্ছে, ও চাইছেটা কি আমি বুঝতেই পারছি না আমি কি আদৌ আলিফার মনের কথা বুঝতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই, সাত মাসের অপেক্ষা….

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৩

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফার হাত বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদছি, মনে হচ্ছে ওর হাত ছাড়লেই ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আলিফা ওর আচল দিয়ে আমার দুচোখের পানি মুছে দিলো তারপর আমাকে জরিয়ে ধরলো…

রিফাত তাড়াতাড়ি আয় বাবা (হঠাৎ ছোটমার ডাকে আলিফা তাড়াতাড়ি আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ইসস ছোটমা আসার আর সময় পেলো না)
ছোটমা: কিরে তুই শুয়ে আছিস যাবি না
আমি: হ্যাঁ যাবো তো তুমি যাও আমি রেডি হয়ে আসছি
ছোটমা: তাড়াতাড়ি আয়।
ছোটমা চলে গেলো, আমি ফ্রেশ হতে যাবো আলিফার দিকে তাকাতেই ওর চোখে আমার চোখ পড়লো। কিছুক্ষণ এভাবেই তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ আলিফা জোরে হেসে উঠলো।
আমি: হাসছ কেন
আলিফা: যেভাবে তাকিয়েছ আজ আর ছোটমাদের নিয়ে যাওয়া হবে না হিহিহি।
আমি: তোমার হাসিটা খুব সুন্দর (আলিফার কানের কাছে আস্তে বললাম)
আলিফা আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে, আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে এসে তো আমি অবাক। আলিফা আয়নার সামনে বসে বসে সাজছে, এইটুকু সময়ের মধ্যে শাড়িও চেঞ্জ করে নিয়েছে। কিন্তু এই সময়ে আলিফা সাজছে কেন বুঝতে পারছি না। আস্তে আস্তে গিয়ে আলিফার পিছনে দাঁড়ালাম, ও আয়নায় আমাকে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।
আমি: বাব্বাহ্ লজ্জা পেলে তো আমার বউটাকে অনেক সুন্দর লাগে
আলিফা: তাই বুঝি
আমি: জ্বী
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: হঠাৎ করে সাজছ যে কোথায় যাবে
আলিফা: তোমার সাথে ছোটমাদের দিয়ে আসতে, যেমন করে নিলা যেতো আজ আমি যাবো (আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, নিলার কথা বলাতে মনে পড়েছে নিলা এভাবে সাজলেই ওকে জরিয়ে ধরতাম আলিফাকে জরিয়ে ধরার ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু ভয় হচ্ছে যদি রেগে যায়)
আলিফা: কি ভাবছ (যা হবার হবে ওকে টান দিয়ে বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম, চোখের উপরের চুলগুলো সরিয়ে দিলাম)
আমি: এটাই ভাবছিলাম যে তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে (আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম)
আলিফা: একটু ছাড়ো তো
আমি: কেন
আলিফা: ছাড়ো না।
আমি ওকে ছাড়তেই আলিফা আমার বুকে কয়েকটা কিল দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, পাগলী একটা।

রেডি হয়ে নিচে এসে দেখি আলিফা সবার কাছে বসে আছে আর সবাই ওর কতো প্রশংসা করছে।
প্রিতি: ভাবি তোমাকে আজ একদম পরীর মতো লাগছে
আব্বু: হ্যাঁ আমার বউমাকে দেখতে একদম লক্ষী মেয়ের মতো লাগছে অবশ্য আমার বউমা তো লক্ষীই
আমি: তোমরা যার এতো প্রশংসা করছ আমার চোখে তো তাকে দেখতে একদম পেত্নীর মতো লাগছে
আলিফা: কি আমি পেত্নী
আমি: একদম
আলিফা: আব্বু দেখেছ তোমার ছেলে কেমন মিথ্যেবাদী, রুমে বলে এসেছে আমাকে সুন্দর লাগছে তাও আমাকে জরিয়ে ধরে আর এখানে এসে পেত্নী বলছে (কেমন বোকা মেয়েরে বাবা এসব কেউ শশুড়কে বলে)
রিয়ান: ভাবি দিলে তো ভাইয়ার মান ইজ্জত নষ্ট করে
ছোটমা: মান ইজ্জত নষ্ট হবার কি আছে বউমা সত্যি কথা বলেছে আমিও তো…
আমি: ছোটমা যাবে তোমরা
ছোটমা: হাহাহা ছেলে লজ্জা পাইছে।
এখানে থাকলে আরো লজ্জা পেতে হবে তাই তাড়াতাড়ি গাড়িতে এসে বসলাম।

আলিফা এসে আমার পাশে বসলো, বাব্বাহ আজ বলতেও হলো না। ছোটমা আর চাচ্চু পিছনে বসলেন।
ছোটমা: সাবধানে চালাস
আমি: অসাবধানে চালাবো
চাচ্চু: এই ছেলেটা সবসময় উল্টো কথা বলে
আমি: চাচ্চু আবার কবে আসবে
চাচ্চু: খুব তাড়াতাড়ি আসবো
আমি: সত্যি তো
ছোটমা: হ্যাঁ কিন্তু তোর জন্য আসবো না
আমি: মানে কার জন্য আসবে তাহলে
চাচ্চু: আমাদের বউমার জন্য
আমি: দুদিনেই আমি পর হয়ে গেলাম আর ও আপন হয়ে গেলো
ছোটমা: নারে পাগল ছেলে তোরা দুইটাই তো আমাদের সন্তান।
হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো আলিফার আব্বু ফোন দিয়েছেন।
আমি: আলিফা তোমার ফোন কোথায়
আলিফা: বাসায় রেখে এসেছি
আমি: হুম নাও তোমার আব্বু ফোন দিয়েছেন।

আলিফা কথা বলে ফোন নিজেই আমার পকেটে রাখলো, এই মেয়ে যে আজ আমাকে আর কতোবার অবাক করাবে আল্লাহ্‌ জানেন। ড্রাইভ করছি আর আড়চোখে আলিফাকে দেখছি, আলিফাও আমাকে আড়চোখে দেখছে হঠাৎ দুজন দুজনের দিকে একসাথে তাকালাম আলিফা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। ওকে ইশারা দিয়ে আমার কাধে মাথা রাখতে বললাম, ও লক্ষী মেয়ের মতো তাই করলো। আলিফা কাধে মাথা রাখতেই ফিসফিস করে বললাম…
আমি: এই পাগলী রুমে কি করেছি না করেছি এসব কি সবার সামনে বলতে হয়
আলিফা: সরি (লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো)
আলিফাকে কখনো এভাবে কাছে পাবো ভাবতেই পারিনি। আজ তো মনে হচ্ছে আলিফা আমাকে ভালোবাসে কিন্তু রাতুল…? মাথায় কিছুই ঢুকছে না আলিফাকে সব জিজ্ঞেস করতে হবে।

আলিফাকে গাড়ির কাছে রেখে চাচ্চু আর ছোটমাকে ট্রেনে তুলে দিতে আসলাম।
ছোটমা: রিফাত আমার মনে হচ্ছে সবকিছু ঠিক হতে চলেছে তাই আর কান্নাকাটি করিস না
আমি: আলিফার ব্যবহারে তো তাই মনে হচ্ছে কিন্তু ছোটমা রাতুল
চাচ্চু: হয়তো আলিফা তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছে
আমি: বুঝলাম কিন্তু রাতুলের দোষটা কোথায় ও যখন দেশে ফিরে আসবে তখন কি হবে
ছোটমা: মানুষের মন বড়ই অদ্ভুদ কখন কিভাবে কাকে ভালোবেসে পেলে মানুষ তা নিজেও বুঝতে পারে না তাই রাতুলের বিষয়টা আলিফার উপর ছেড়ে দে
আমি: আলিফা তো পরে কষ্ট পাবে
চাচ্চু: ভালোবাসার জন্য কিছু কষ্ট পাওয়া প্রয়োজন নাহলে ভালোবাসার গভীরতা উপলব্ধি করা যায় না
আমি: কিন্তু আমি ওকে কষ্ট দিতে চাই না
ছোটমা: জানি কিন্তু কিছু তো করার নেই এখন তুই কি করবি যা করার আলিফাকে করতে হবে, ওর মন যা চাইবে ওকে সেটাই করতে দে
আমি: আলিফা পারবে তো সবটা সামাল দিতে
ছোটমা: সিদ্ধান্ত এখন আলিফার ও যাকে ভালোবাসে তার কাছেই যাবে এতে তোর কোনো হাত নেই। আর হ্যাঁ আলিফা যদি রাতুলের কাছে যেতে চায় তুই বাধা দিবি না
আমি: কিন্তু
ছোটমা: যেভাবে ভালোবাসছিস সেভাবেই ভালোবেসে যা নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখ
চাচ্চু: ভালোবেসে যা কিন্তু ভালোবাসার মানুষের উপর অন্যায় কোনো জোর কাটাবি না এতে তোর ভালোবাসা ছোট হবে
আমি: হুম
ছোটমা: সবশেষ কথা নিজের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস কখনো হারাবি না
আমি: হুম
চাচ্চু: সাবধানে বাসায় ফিরিস আসছি।

চাচ্চু আর ছোটমাকে বিদায় দিয়ে আলিফার কাছে আসলাম। কি করবো বুঝতে পারছি না, আলিফা আমাকে ভালোবাসলে রাতুল কষ্ট পাবে কিন্তু আমি তো চাইনা আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক। ছোটমা ঠিকি বলেছে এখন সব সিদ্ধান্ত আলিফার, ও যা চাইবে তাই হবে।
আলিফা: কি ভাবছ
আমি: কিছুনা
আলিফা: তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে আছ
আমি: আলিফা তুমি কি আমায় ভালোবাস (কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলো)
আলিফা: রিফাত আজ প্রথম তোমার সাথে ঘুরতে এসেছি তুমি কি এখন এসব নিয়ে কথা বলবে এসব তো বাসাতেই জিজ্ঞেস করতে পারো
আমি: হুম
আলিফা: প্লিজ মন খারাপ করে থেকো না
আমি: আমার রাগিণীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি আমি কি মন খারাপ করে থাকতে পারি
আলিফা: একদম না
আমি: রাগিণী ডাকলাম রাগ করছ না যে
আলিফা: জানিনা।
আলিফার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম বিনিময়ে পাগলীটাও হাসলো।

আলিফাকে নিয়ে পার্কের মধ্যে হাটছি হঠাৎ ও ফুচকা ফুচকা বলে লাফাতে শুরু করলো। সামনে তাকিয়ে দেখি ফুচকাওয়ালা, পার্কের সবাই ওর লাফানো দেখে তাকিয়ে আছে। ওর বাচ্চামি দেখে আর ধমক দিতে ইচ্ছে হলো না, ওর কাছে গিয়ে আস্তে বললাম
আমি: যেভাবে ফুচকা দেখে লাফাচ্ছ সবাই তো ভাববে আমি আমার বউকে ফুচকা খাওয়াতে কিপটামি করি
আলিফা: যার যা খুশি ভাবুক আগে ফুচকা খাবো
আমি: ওকে
আলিফা: বেশি করে জ্বাল দিয়েন (ফুচকাওয়ালাকে বললো, আমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ও কি সত্যি আলিফা নাকি আমার নিলা ফিরে এসেছে সবকিছু মিলে যাচ্ছে কিভাবে)
আলিফা: রিফাত তুমি খাবে না
আমি: আমি তো জ্বাল কম খাই
আলিফা: দূর তুমি পিচ্ছি নাকি বেশি জ্বাল খেয়ে দেখো ভালো লাগবে।
কি আর করার ওর কথা রাখতে গিয়ে খেলাম।
আলিফা: রিফাত তুমি তো কান্না করে দিয়েছ।(অসহায়ের মতো ওর দিকে তাকালাম, ও আমাকে অবাক করে দিয়ে ঠিক নিলার মতো আমার চোখের পানি মুছে দিলো)
আলিফা: চলো বাসায় যাই আর ঘুরতে ইচ্ছে হচ্ছে না
আমি: ওকে।

গাড়িতে এসে বসেই আলিফা আমার একদম কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো, আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো। এই মেয়ে এসব কি করছে মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

বাসায় এসেও আলিফার ব্যবহার দেখে আমি বার বার অবাক হচ্ছি, ওর প্রতিটা কাজে মনে হচ্ছে ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু ভালো বাসলে নিজের মুখে বলছে না কেন।
আলিফা: এইযে বসে বসে কি ভাবছ খাবে না
আমি: আলিফা একটা কথা বলবো
আলিফা: বলো
আমি: যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকো প্লিজ বলে দাও আমি না আর পারছি না আমি কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি তোমার ব্যবহারে
আলিফা: সবাই বসে আছে একসাথে লাঞ্চ করার জন্য চলো তো।
আলিফা আমার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে আসলো। বুঝতে পারছি না কিছুই ও ব্যবহারে বুঝাচ্ছে আমাকে ভালোবাসে কিন্তু এসব নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলেই এড়িয়ে যাচ্ছে।

খাবার খেতে বসেও আলিফা বার বার আমাকে আড়চোখে দেখছে, আমি খাবার খাবো কি ওর এমন আচরণে হা করে বসে আছি।
রিয়ান: ভাইয়া খাবারটা খাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে
প্রিতি: হিহিহি
আমি: পেত্নীর মতো হাসছিস কেন
প্রিতি: যেভাবে ভাবির দিকে তাকিয়ে ছিলে খাওয়া বাদ দিয়ে….
আব্বু: প্রিতি চুপ কর তো, রিফাত তোরা হানিমোনে যাওয়া নিয়ে কিছু ভেবেছিস
আমি: না আব্বু
আব্বু: যাওয়ার কি ইচ্ছে নেই নাকি (আমার তো অনেক ইচ্ছে আলিফার সাথে একা সময় কাটানোর কিন্তু আলিফা চায় তো…? ওর দিকে তাকালাম খাবার না খেয়ে প্লেটে আঙ্গুল ঘোরাচ্ছে আর কি যেন ভাবছে)
আমি: আব্বু আলিফার সাথে কথা বলে তোমাকে জানাবো
আব্বু: ঠিক আছে
রিয়ান: ভাইয়া একটু অফিসে যেতে হবে তোমাকে
আমি: কেন
রিয়ান: একটু কাজ আছে আমি একা পারছি না, আব্বু তো এখন অফিসে যান না আর এখন আব্বুর না যাওয়াই ভালো
আমি: এখন যেতে হবে
রিয়ান: হ্যাঁ বেশি সময় লাগবে না
আমি: ওকে।

রুমে এসে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি, আলিফা এসে পিছনে দাঁড়ালো।
আমি: কিছু বলবে
আলিফা: তাড়াতাড়ি এসো
আমি: ওকে রাগিণী।
আলিফার কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, আশ্চর্যের বিষয় রাগিণী আজ কোনো রাগ দেখালো না।

অফিসের জামেলা শেষ করে একেবারে ডিনার করে অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম। রুমে এসে দেখি আলিফা নেই বারান্দার দরজা খুলা, বারান্দায় এসে আলিফার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। ভালোই রাগ করেছে দেখছি, ওকে গিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম।
আমি: আমার রাগিণীটা রাগ করেছে বুঝি
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: অনেক জামেলা ছিল অফিসে বুঝই তো রিয়ান একা এসব পারবে কিভাবে আর ও ব্যবসা তেমন বুঝে না তাই আ….
আলিফা: হইছে আর বলতে হবে না
আমি: আর কখনো এতো দেরি হবে না এবার হাসো
আলিফা: কান ধরো
আমি: হুম ধরলাম
আলিফা: আর যেন এমন না হয়
আমি: ওকে, ঘুমাবে না
আলিফা: না আজ তোমার সাথে এখানে বসে সারারাত চাঁদ দেখে কাটাবো
আমি: তাই
আলিফা: হুম।
আলিফা চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে, আমি ওর শাড়ির নিচ দিয়ে ওর পেটে হাত রাখলাম, আলিফা কেঁপে উঠে আমার হাতের উপর ওর হাত রাখলো। আমি ওর কানের কাছে আস্তে করে বললাম “ভালোবাসি” তারপর ওর কানে একটা কামর বসিয়ে দিলাম….

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১২

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

নিলাকে ফিরে পেয়ে যেন আমি সব কষ্ট ভুলে গেছি, আমি আমার নিলাকে ফিরে পেয়েছি….

হঠাৎ কপালে কারো হাতের উষ্ণ ছোঁয়া অনুভব করে ঘুম ঘুম চোখে তাকালাম, আলিফা আমার পাশে বসে কপালে হাত দিয়েছে। কিন্তু এখানে তো নিলা ছিল আমি ওকে জরিয়ে ধরেছিলাম, নিলা কোথায় গেলো। চারপাশে তাকালাম নিলা নেই, আমি যেন কেমন এক ঘোরের মধ্যে আছি।
আলিফা: কি খুঁজছ
আমি: এখানে তো নিলা ছিল তুমি কখন এলে
আলিফা: তুমি বোধহয় স্বপ্ন দেখছিলে
আমি: স্বপ্ন
আলিফা: হ্যাঁ, তুমি ঘুমের মধ্যে নিলা নিলা বলে গোঙাচ্ছিলে, আমার ঘুম ভেঙে যায়। এসে দেখি তুমি এই চেয়ারে ঘুমিয়ে আছ আর ঘুমের মধ্যে কিসব বলছ
আমি: আমার গায়ে চাদর আসলো কোথা থেকে
আলিফা: সারারাত এখানেই ঘুমিয়েছ তো তোমার শরীর ঠান্ডা হয়েছিল তাই এই চাদরটা এনে তোমার গায়ে দিয়েছি
আমি: আর কতো মায়া বাড়াবে
আলিফা: বলেছিলাম না আমরা দুজন বন্ধু তাহলে মায়া ভাবছ কেন
আমি: তুমিও তো রাতে বললে আমি মায়া বাড়াচ্ছি
আলিফা: জানিনা চলো তো নাশতা করবে
আমি: হুম
আলিফা: ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো
আমি: হুম

নিলার ছবিটা আবার দেয়ালে রেখে দিলাম, পাগলিটা দূরে গিয়েও আমার স্বপ্নে আসে।

ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম। আলিফা সবাইকে খুশি মনে নাশতা বেরে দিচ্ছে। বাইরে থেকে বুঝার উপায় নেই এই মেয়ে যে দুদিন পর এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে, ওকে দেখলে মনে হয় যেন ও এ বাড়িরই মেয়ে।
আব্বু: কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বস
আমি: আমাকে রেখেই তো সবাই নাশতা করে নিচ্ছ
ছোটমা: একজন কিন্তু করেনি
আমি: কে
ছোটমা: আলিফা (নামটা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম)
রিয়ান: ভাইয়া এতো অবাক হচ্ছ কেন ভাবি তোমাকে ভালোবাসে তাই তোমাকে রেখে খায়নি সিম্পল (আলিফা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, সত্যিই কি ও আমাকে ভালোবাসে)
প্রিতি: ভাইয়া এভাবে কি দেখছ ভাবিকে তো নজর লাগিয়ে দিবে (প্রিতির কথায় লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি আলিফার থেকে চোখ সরালাম)
রিয়ান: ভাইয়া আমি ভাবছিলাম এবার তোমরা হানিমোনে গেলে কেমন হয় (খাবার মুখে দিতেই রিয়ানের এমন কথায় বিষম খেলাম। আলিফা তাড়াতাড়ি এসে আমাকে পানি দিলো)
প্রিতি: ইসরে কি ভালোপাশা
আব্বু: রিফাত রিয়ান কিন্তু কথাটা মন্দ বলেনি এবার তোদের হানিমোনে যাওয়া উচিত, একা সময় কাটানোর জন্য
আমি: আব্বু…
আব্বু: লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই আমি তো তোর মাকে নিয়ে কতোবার হানিমোনে গিয়েছি তার কোনো হিসেব নেই হাহাহা।
হঠাৎ করে সবকিছু কেমন যেন নীরব হয়ে গেলো। আম্মুকে নিয়ে কোনো কথা হলে আমরা তিন ভাই-বোন যেন কিছু সময়ের জন্য বোবা হয়ে যাই। মা না থাকার কষ্ট সত্যি অনেক যন্ত্রণাদায়ক।
ছোটমা: বাদ দাও তো এসব কথা, রিফাত শুন নীলিমা ফোন করেছিল আজ আমাদের যেভাবেই হউক যেতে হবে তুই আমাদের ষ্টেশনে দিতে যাবি তো
রিয়ান: কি যে বলো ছোটমা ভাইয়া ছাড়া কখনো কেউ তোমাদের ষ্টেশনে দিতে গিয়েছে
প্রিতি: হ্যাঁ সবসময় তো ভাইয়া আর নিলা আপুই দিতে যায় (নিলার কথা উঠতেই সবাই কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো)
চাচ্চু: কেন যে তোরা এতো কথা বলিস
আমি: ছোটমা রেডি হয়ে আমাকে ডেকে নিও
ছোটমা: চলে যাচ্ছিস কেন নাশতাটা করে যা।
ছোটমার কথার উত্তর না দিয়ে রুমে চলে আসলাম।

নিলার ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছি আর দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে। আজ সব স্মৃতি চোখের সামনে ভাসছে। ছোটমা চাচ্চু গ্রামে যাওয়ার সময় নিলা আর আমি ওদের ছাড়তে ষ্টেশনে যেতাম আর আসার সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফোচকা খেতাম। পাগলিটা অনেক জ্বাল খেতো সাথে আমাকেও খেতে হতো, আমি তো জ্বালে কান্না করে দিতাম।
আলিফা: রিফাত (হঠাৎ আলিফার ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম)
আমি: কিছু বলবে
আলিফা: একটা কথা জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে
আমি: কি
আলিফা: রাগ করবে নাতো
আমি: না বলো
আলিফা: নিলা কোথায় ওর কি হয়েছিল
আমি: আমার উপর অভিমান করে না ফেরার দেশে চলে গেছে
আলিফা: প্লিজ কান্না করো না
আমি: তিনটা বছর ধরে কাঁদছি তাতে নিলার কি ও তো ভালোই আছে উপারে
আলিফা: বলেছিলে না নিলার কথা আমাকে সব বলবে আজ বলোনা প্লিজ জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে
আমি: নিলা ছোট চাচ্চুর মেয়ে। চাচ্চুরা সবসময় গ্রামে থাকেন গ্রামের সবকিছু দেখাশুনা করার জন্য। নিলা কলেজে পড়ার জন্য আমাদের বাসায় এসেছিল, এখান থেকেই পড়তো। আজ তোমার সামনে যে রিফাত দাঁড়িয়ে আছে আমি তখন এই রিফাত ছিলাম না, সারাদিন সিগারেট আর বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে থাকতাম। পড়ালেখায় অমনোযোগী সারাদিন ঘুরাফেরা, আমার কাছে মনে হতো জীবন মানেই এনজয় করা। কিন্তু নিলা এসে আমার এসব ধারনা পাল্টে দেয়। আমি যদিও ওকে গ্রাম থেকে আসার জন্য অনেক অপমান করতাম গেয়ো ভূত ডাকতাম। তারপর আস্তে আস্তে কিভাবে যে দুজন বন্ধু হয়ে গেছিলাম বুঝতেই পারিনি। একসাথে কলেজে যাওয়া, ঘুরাফেরা আর আড্ডা তারপর বাড়িতে এসে এইটা সেইটা নিয়ে খুনসুটি। আস্তে আস্তে ভালো লাগা তারপর ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা। একটা সময় আসে আমরা দুজন দুজনকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারতাম না তারপর….
আলিফা: তারপর কি
আমি: তারপর আব্বু আর চাচ্চু আমাদের বিয়ের কথা ভাবেন বিয়ের তারিখও ঠিক করেন
আলিফা: বিয়েটা হয়নি
আমি: নাহ
আলিফা: কেন
আমি: কি করে হবে নিলা যে লাল বেনারসি পড়ার বদলে সাদা কাপড় পরে নিয়েছিল
আলিফা: মারা গেলো কিভাবে
আমি: বিয়ের দিন সকাল বেলা নিলা আমাকে ছাদে ডেকে পাঠায়, আমি যাওয়ার পর আমাকে জরিয়ে ধরে খুব কাঁদে। জানতাম না কেন কাঁদছে আমি ভেবেছিলাম দুজন এক হচ্ছি এই খুশিতে কাঁদছে। ওকে লাল বেনারসিতে একবার আলাদাভাবে দেখতে চাই বলে চলে আসি।
আলিফা: তারপর
আমি: তারপর বিয়ের অনুষ্টান শুরু হয় সবাই একদিকে নিলাকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অন্যদিকে আমাকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ নিলা আমার ফোনে মেসেজ করে ওর রুমে যাওয়ার জন্য। আমি সবার চোখের আড়ালে ওর রুমে যাই।
আলিফা: কেঁদো না প্লিজ
আমি: আমি ওকে বলেছিলাম না বউ সাজে আলাদাভাবে দেখতে চাই তাই ও বউ সেজে আমাকে রুমে ডেকে পাঠিয়েছিল। জানো আলিফা ওকে লাল বেনারসিতে একদম পরীর মতো লাগছিল আমি তো হা করে তাকিয়ে ছিলাম, নিলা এসে আমাকে জরিয়ে ধরে তারপর আমার হুশ ফিরে। জানিনা সেদিন ও বার বার কেন বলছিল ওকে অনেক আদর করতে, আমি অনেক বুঝিয়েছিলাম যে বিয়ে তো হয়েই যাচ্ছে ও সেদিন আমার কথা শুনেনি। তাই ওকে জরিয়ে ধরে একের পর এক চুমু দিয়ে আপন করে নিচ্ছিলাম। দরজা খুলা ছিল হঠাৎ নীলিমা এসে বলে বিয়ের আগে এসব ঠিক না। শালী হলেও তো একদিকে ছোট বোন লজ্জা পেয়ে চলে আসি। কিন্তু….
আলিফা: বলোনা
আমি: আমার রুম অবধিও আসতে পারিনি নিলা আমার নাম ধরে একটা চিৎকার দেয়। সবাই ওর রুমে যাই, গিয়ে যা দেখেছিলাম তার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না। নিলা ফ্লোরে পড়ে আছে মুখ থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে পাশে পানির গ্লাস ভাঙ্গা। ওর এই অবস্থা দেখে আমি ফ্লোরে দফ করে বসে পড়ি, ওর মাথাটা আমার কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে। নিলা আমার মুখে হাত দিয়ে শেষ কথাটা বলেছিল “আমার মতো কাউকে বিয়ে করে নিও, তোমাকে সুখী দেখলে আমার আত্মা শান্তি পাবে”
তারপর আস্তে আস্তে ও আমাকে ছেড়ে চিরতরে চলে যায়। আমি ওকে পাগলি বলে অনেক ডাকি কিন্তু ও কোনো সাড়া দেয়নি, ছোটমা তখন চিৎকার করে বলেছিল নিলা মারা গেছে সাথে সাথে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। একমাস হসপিটালে ছিলাম একদম মরার মতো, সবাই তো বলেছিল আমি নাকি আর বাঁচবো না।
আলিফা: বলোনা প্লিজ
আমি: হসপিটাল থেকে বাসায় এসে সারাদিন নিলার রুমে পরে থাকতাম, ওর স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইতাম। কিন্তু মৃত মানুষের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে কি বাঁচা যায়। সবাই বললো নীলিমাকে বিয়ে করে নিতে যদি ওর মাঝে নিলাকে খুঁজে পাই কিন্তু আমি বিয়ে শব্দটা শুনলেই ভয় পেতাম কষ্ট হতো কাঁদতাম। তারপর আস্তে আস্তে সবাই বিয়ের কথা বলা ছেড়ে দেয় আমিও এভাবেই কাটিয়ে দেই তিনটা বছর। নিলার স্মৃতি আর মাঝে মাঝে গ্রামে গিয়ে নিলার কবর আঁকড়ে ধরে কান্না এভাবেই কেটে যায় তিন বছর।
আলিফা: (নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে)
আমি: আর পারছি না আমাকে এক গ্লাস পানি দিবে।
বিছানায় এসে বসে পড়লাম, আলিফা পানি এনে নিজেই খাইয়ে দিলো।
আলিফা: রিফাত তোমার অসস্থি লাগছে তুমি শুয়ে পড়ো
আমি: হুম

বিছানায় শুয়ে আছি আলিফা আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, খুব ইচ্ছে হচ্ছে আলিফাকে বলি আমি ওর মাঝে নিলাকে খুঁজে পেয়েছি আমি ওকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
আলিফা: আচ্ছা রিফাত নিলা বিষ খেয়েছিল কেন
আমি: এই প্রশ্নের উত্তর আমি আজো পাইনি
আলিফা: যেদিন তোমাদের দুজনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছিল সেদিনই নিলা বিষ খেলো ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত না, আচ্ছা তুমি নিলার হাতে বিষের বোতল পেয়েছিলে
আমি: না শুধু একটা পানির গ্লাস ভাঙ্গা দেখেছিলাম
আলিফা: তারমানে বিষ পানিতে ছিল
আমি: হ্যাঁ
আলিফা: নিলার যদি বিষ খাওয়ার ইচ্ছে থাকতো ও তো বোতল থেকেই খেতে পারে পানিতে মিশিয়ে খেতে যাবে কেন
আমি: কিচ্ছু জানিনা আমি
আলিফা: রিফাত বিষয়টা এতো সহজভাবে নিও না ভেবে দেখো নিলা চাইলেই কিন্তু বোতল থেকে বিষ খেতে পারতো ও অযতা পানিতে মিশাতে যাবে কেন তারমানে পানিতে আগেই বিষ মিশানো ছিল আর নিলা সেই পানিটা খায়
আমি: কি বলতে চাইছ
আলিফা: বলতে চাইছি এটাই নিলা বিষ খায়নি ওকে বিষটা খাওয়ানো হয়েছিল
আমি: মানে
আলিফা: প্লিজ তুমি উঠো না তোমার শরীর খারাপ
আমি: নিলাকে বিষ খাওয়াবে কে
আলিফা: সেটা তো আমি বলতে পারবো না কিন্তু একটা বিষয় ভেবে দেখো নিলার যদি বিষ খাওয়ার ইচ্ছে থাকতো তাহলে ও বিয়ের দিনই খেলো কেন এর আগে খেতে পারলো না, ওর যদি সুইসাইড করার ইচ্ছে থাকতো তাহলে ও বিয়েতে রাজি হয়েছিল কেন, আর সবচেয়ে বড় বিষয় তো নিলা তোমাকে ভালোবাসতো তাহলে ও সুইসাইড করতে যাবে কেন
আমি: তাহলে নিলাকে বিষ খাওয়াবে কে নিলার তো কোনো শত্রু ছিল না ও খুব ভালো মেয়ে ছিল
আলিফা: এইটা পরে ভেবো এখন একটা কথা বলতো
আমি: কি
আলিফা: যেখানে তুমি বিয়ের কথা শুনলেই ভয় পেতে আমাকে ভালোবাসলে কিভাবে আর এভাবে হুট করে বিয়েও করে নিলে। (আলিফার হাতটা আমার বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম)
আমি: প্রথম যখন তোমাকে দেখেছিলাম তুমি রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে। ঠিক এভাবেই রাগি চোখে তাকাতো নিলা এই রাগি চোখ দিয়ে আমাকে শাসন করতো। তুমি বিড়ালের যত্ন করছিলে নিলাও এমন ছিল কখনো কোনো কিছুকে কষ্ট দিতো না। কয়টা বলবো বলো, তোমার মাঝে যে নিলার অনেক স্বভাব আমি খুঁজে পেয়েছি শুধু আমি না বিয়ের পর আমার পরিবারের সবাই তোমার মাঝে নিলাকে খুঁজে পেয়েছে। প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল আমি আবার নিলাকে খুঁজে পেয়েছি তাই কোনো কিছু না ভেবে হুট করে বিয়ে করে ফেলি কারণ আমার ভয় হয়েছিল নিলার মতো যদি তোমাকেও হারিয়ে ফেলি। বিশ্বাস করো আলিফা আমি তোমাকে ততোটাই ভালোবাসি নিলাকে যতোটা বাসতাম আমি তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই। আমি তো নিজের জীবনের কথা ভাবা ছেড়েই দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি হঠাৎ আমার জীবনে আসলে, তোমাকে পেয়ে মনে হয়েছিল আমি আবার নতুন করে বাঁচতে পারবো, তোমাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে পারবো। আলিফা তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো, নিলার মতো যদি তুমিও আমাকে একা করে চলে যাও আমি সত্যি মরে যাবো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
আলিফা: কাঁদছ কেন পাগল
আমি: তুমিও তো কাঁদছ। আচ্ছা আমি কাঁদলে তুমি কাঁদো কেন, আমি কষ্ট পেলে তুমি কষ্ট পাও কেন।
আলিফা: জানিনা।
আলিফার হাত বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদছি, মনে হচ্ছে ওর হাত ছাড়লেই ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আলিফা ওর আচল দিয়ে আমার দুচোখের পানি মুছে দিলো তারপর আমাকে জরিয়ে ধরলো…..

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১১

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফা কিছু না বলে আলতো করে আমার চোখের পানি মুছে দিলো….

বাসায় আসতেই সবাই নানা রকম প্রশ্ন করতে শুরু করলো কিন্তু আমার কান দিয়ে এসব কিছু ঢুকছে না। আমার শুধু মনে পড়ছে আলিফার খাইয়ে দেওয়ার কথা, চুলে হাত বুলিয়ে দেওয়ার কথা, চোখের পানি মুছে দেওয়ার কথা।

বিছানায় শুয়ে আছি ছোটমা এসে পাশে বসলেন।
ছোটমা: রিফাত কি হয়েছে
আমি: কিছুনা (ছোটমার কোলে মাথা রাখলাম)
ছোটমা: আমার কাছে লুকাস না বল কি হয়েছে
আমি: ছোটমা আমি আলিফাকে ছাড়া থাকতে পারবো না, আমি না আস্তে আস্তে ওর মায়ায় জরিয়ে যাচ্ছি।
ছোটমা: কাঁদিস না দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
আমি: সেই দিনের অপেক্ষায় তো বসে আছি কিন্তু আদৌ কি কিছু ঠিক হবে
ছোটমা: নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখ, মনে রাখিস বিশ্বাস এমন এক জিনিস যা অনেক অসম্ভব কে সম্ভব করে দেয়।
ছোটমা ভিতরে আসবো (দরজায় তাকিয়ে দেখি রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে)
ছোটমা: আয় অনুমতি লাগে নাকি
রিয়ান: তোমার বড় ছেলের সাথে কি কথা বলছ তা তো আর জানিনা
ছোটমা: হয়েছে পাকনামি করতে হবে না
আমি: কিছু বলবি
রিয়ান: হুম ছোটমাও এখানে আছেন তোমার থেকে একটা কথা জানতে চাই
আমি: কি
রিয়ান: গাড়িতে ভাবিকে এসব কি বলছিলে। ছেড়ে চলে যাবে যখন মায়া বাড়াচ্ছে কেন। এসব কথা কেন বলেছ ভাইয়া কিছু হয়েছে (ছোটমার মুখের দিকে তাকালাম উনি নিরবে কাঁদছেন)
ছোটমা: রিয়ান আমার সাথে চল রিফাতকে একটু একা থাকতে দে, আমি তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।
রিয়ান ছোটমার সাথে চলে গেলো। আমি নিরবে কাঁদছি আর ভাবছি নিলা থাকলে আজ এতো কিছু হতো না, কেন যে পাগলীটা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। আচ্ছা নিলার মৃত্যুর রহস্য কি আমি কখনো জানতে পারবো না…?

হঠাৎ মাথায় কারো হাতের ছোঁয়ায় ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আলিফা আমার মাথার কাছে বসে আছে। নিলার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। কিন্তু আলিফা হঠাৎ….
আলিফা: রিফাত সরি
আমি: কেন
আলিফা: আমার জন্য তোমার এই অবস্থা হলো
আমি: তোমার আবার কিসের দোষ
আলিফা: আমি যদি ফ্লোরে না ঘুমাতাম তাহলে তো এমন হতো না
আমি: ঠিক আছে এখন তোমার ভুলটা শুধরিয়ে নাও
আলিফা: কিভাবে
আমি: এই রুমের সোফা স্টোররুমে রেখে আসবো তাহলে দুজনেই খাটে ঘুমাতে পারবো, কারণ ফ্লোরে তো আর ঘুমাতে দিবে না নিজেও ঘুমাবে না
আলিফা: রিফাত প্লিজ পাগলামি করো না
আমি: আলিফা আ…
রিফাত আসবো (আব্বুর কন্ঠ শুনে আলিফা দূরে গিয়ে দাঁড়ালো)
আমি: হ্যাঁ আব্বু এসো
আব্বু: তুই যেতে পারবি না তাই ডক্টর কে ফোন করে বাসায় এনেছি
আমি: আব্বু আমি সুস্থ হয়ে গেছি ডক্টর লাগবে না
আব্বু: একদম চুপ।
আব্বুর মুখের উপর কথা বলার সাহস নেই তাই চুপচাপ শুয়ে রইলাম। ডক্টর জ্বর মেপে ওষুধ দিয়ে চলে গেলো।
আব্বু: বৌমা রিফাত কে কিছু খাবার খাইয়ে ওষুধ গুলো খাইয়ে দাও তো
আলিফা: ঠিক আছে আব্বু।
আলিফা আর আব্বু চলে গেলেন।

একটু পর আলিফা খাবার নিয়ে রুমে ঢুকলো। ভাবছি খাবো না বলে বায়না ধরলে তো আলিফা নিজের হাতে খাইয়ে দিবে বায়না কি ধরবো…? কিন্তু যদি না খাইয়ে দেয়, আমার তো খিদে লেগেছে।
আলিফা: রিফাত উঠো খেয়ে নাও
আমি: আমার তো হাত ব্যথা করছে
আলিফা: কেন হাতে কি হয়েছে আবার
আমি: হাহাতে হাতে (এখন কি বলি)
আলিফা: তোতলাচ্ছ কেন
আমি: না মানে
আলিফা: সোজা বললেই পারো আমার হাতে খেতে চাও
আমি: তুমি আমার মনের সব কথা বুঝ শুধু ভালোবাসি যে এইটা বুঝ না
আলিফা: তোমার মন খারাপ হউক আমি তা চাই না চুপচাপ খেয়ে নাও
আমি: হুম

আলিফা আমাকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে চলে যেতে লাগলো।
আমি: আলিফা
আলিফা: হুম আর কিছু লাগবে
আমি: লাগবে তো
আলিফা: কি
আমি: তোমার ভালোবাসা
আলিফা: ফাজলামো বাদ দিয়ে একটু ঘুমাও
আমি: ঘুম আসছে না।
আলিফা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবলো তারপর আমার মাথার কাছে এসে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো, যা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
আমি: এসব শুধু দায়িত্ববোধ থেকে করছ তাই না
আলিফা: মানে
আমি: আব্বু বলে গেছেন তাই আমাকে খাইয়ে দিলে, এখন আমার ঘুম আসছে না তাই চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছ। সবকিছু শুধু দায়িত্ববোধ থেকে করছ কারণ তুমি এই বাড়ির বউ তাই না
আলিফা: এইটা না হয়ে তো অন্যকিছু হতে পারে
আমি: হ্যাঁ পারে তবে ভালোবাসা না আমি অসুস্থ
তাই সহানুভূতি দেখাচ্ছ
আলিফা: দূর থাকো তুমি একা।
রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। ভালোবাসে এইটা বললেও সমস্যা আবার ভালোবাসে না এইটা বললেও সমস্যা। কোন পথে যে যাই আমি।

হঠাৎ কারো হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো, দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত এগারোটা বাজে। সেই বিকেলে ঘুমিয়েছিলাম কখন যে এতো রাত হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি কেউ ডাকেওনি। কিন্তু আলিফা কোথায় আমার পাশেও নেই সোফায়ও নেই, আর এতোরাতে হাসছে কে। আবার হাসির শব্দ শুনতে পেলাম, বারান্দা থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসছে। আর কারো হাসি না আলিফার হাসি। কিন্তু এতো রাতে আলিফা বারান্দায় কি করছে। আস্তে আস্তে উঠে বারান্দায় গেলাম, আলিফা ফোনে কথা বলছে আর হাসছে নিশ্চয় রাতুল হবে। ওকে কি ডাকবো আবার যদি রেগে যায় কিন্তু ও যেভাবে হাসছে সবাই তো শুনতে পাবে তখন তো আব্বু রেগে যাবেন। এসব ভাবতে ভাবতে ওর কাধে হাত রাখলাম সাথে সাথে ও চমকে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালো।
আলিফা: রিফাত তুমি
আমি: কার সাথে কথা বলছ (ফোনে আস্তে কি যেন বলে ফোন রেখে দিল)
আলিফা: রিফাত সবকিছুতে এতো বাড়াবাড়ি ভালো না, আমি কার সাথে কথা বলছি সেটা জেনে তুমি কি করবে আর তুমি তো জানই আমি কাকে ভালোবাসি
আমি: হুম জানি বুঝতেও পেরেছি
আলিফা: তাহলে ডিস্টার্ব করছ কেন
আমি: তোমার হাসির শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেছে অন্যদেরও ঘুম ভেঙে যেতে পারে আর আব্বুর ঘুম ভাঙলে রেগে যাবেন। তাই বলতে এসেছি আস্তে কথা বলো আর যত খুশি মন খুলে হাসো
আলিফা: এভাবে কথা বলছ কেন
আমি: এতোক্ষণ তুমি যেভাবে কথা বলেছ তারপরে এরচেয়ে ভালো ভাবে কথা বলা যায় না (মাথা খুব যন্ত্রণা করছে তাই ফ্লোরেই দফ করে বসে পড়লাম)
আলিফা: রিফাত
আমি: আমাকে তোমার ধরতে হবে না আমি ঠিক আছি। অনেক সহানুভূতি দেখিয়েছ আর চাই না
আলিফা: এসব কি বলছ
আমি: প্লিজ এখান থেকে চলে যাও আমাকে একা থাকতে দাও একটু।
আলিফা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।

বারান্দায় বসে একের পর এক সিগারেট খাচ্ছি আর আকাশের তারা দেখছি, যে তারায় আমার নিলা আছে। ভেবেছিলাম আলিফাকে ভালোবেসে এই রাত জেগে তারা দেখার অভ্যাস ছাড়তে পারবো কিন্তু আলিফাই তো অন্য কারো।

মাথা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে এলোমেলো পায়ে হেটে রুমে আসলাম। দেয়াল থেকে নিলার ছবিটা এনে বুকে জরিয়ে বারান্দায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। হঠাৎ চোখ পড়লো আলিফা বালিশ ছাড়া ঘুমিয়ে আছে। কাছে গিয়ে ওর মাথার নিচে বালিশ দিলাম, গায়ে বিছানা চাদরটা টেনে দিয়ে চলে আসতে চাইলাম আলিফা আমার হাত ধরে ফেললো।
আমি: ঘুমাও নি
আলিফা: ঘুমিয়েছিলাম ভেঙে গেছে
আমি: হুম ঘুমিয়ে পড়ো
আলিফা: তুমি ঘুমাবে না অনেক রাত হয়েছে তো
আমি: (মৃদু হাসলাম)
আলিফা: হাসছ যে
আমি: এমনি, আমার হাতটা ছাড়ো
আলিফা: হুম (হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো)
আমি: ঘুমিয়ে পড়ো গুডনাইট
আলিফা: রিফাত
আমি: কি কিছু বলবে
আলিফা: আসার সময় তো তুমি জিজ্ঞেস করছিলে মায়া বাড়াচ্ছি কেন। এখন যদি আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করি মায়া বাড়াচ্ছ কেন
আমি: উত্তরটা খুব সহজ আমি তোমাকে ভালোবাসি
আলিফা: কিন্তু….
আমি: তুমি আমাকে ভালোবাস না তাই তো…? সমস্যা নেই আমি নাহয় এভাবেই তোমাকে ভালোবেসে যাবো সবসময়
আলিফা: রিফাত তোমার হাতে কি
আমি: নিলার ছবি
আলিফা: এতো রাতে নিলার ছবি দিয়ে কি করবে
আমি: নিলা সবসময় তো আমার সঙ্গী ছিল এখনো আছে, ও কখনো আমার ভালোবাসার অমর্যাদা করেনি
আলিফা: আমি কখনো কাউকে কষ্ট দিতে চাই না কিন্তু দেখো কিভাবে যে সবকিছু উলটপালট হয়ে গেলো, নিজের অজান্তেই আমি তোমার মন ভেঙে দিলাম
আমি: মন তো আগেরই ভাঙা নতুন করে আর কি ভাঙবে (চলে আসতে চাইলাম আলিফা আবার পিছু ডাকলো)
আলিফা: রিফাত
আমি: হুম
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আলিফাকে নিশ্চুপ দেখে ওর দিকে তাকালাম, আলিফার চোখে পানি। কাছে গিয়ে আলতো করে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বারান্দায় আসতে আসতে ভাবলাম, আলিফা তো আমাকে ভালোবাসে না তাহলে আমি কষ্ট পেলে ও কষ্ট পায় কেন…? আমি কাঁদলে আলিফাও কাঁদে কেন…? তাহলে কি আলিফা আমাকে ভালোবাসে নাকি এসব শুধুই মায়া….? প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার জানা নেই কখনো জানতে পারবো কিনা তাও জানিনা।

বারান্দার চেয়ারে বসে বসে নিলার ছবিটা বুকে জরিয়ে ধরে আকাশের তারাটার দিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শে পিছনে তাকালাম। পিছন ফিরে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, আমার সামনে নিলা দাঁড়ানো।
আমি: নিলা তুমি
নিলা: হ্যাঁ আমি, কি হয়েছে এতো কষ্ট পাচ্ছ কেন
আমি: নিলা তোমার মতো কেউ আমাকে ভালোবাসে না। আলিফা, যার মধ্যে তোমাকে খুঁজে পেয়েছিলাম সেতো অন্য কারো।
নিলা: (মৃদু হাসল)
আমি: তুমি হাসছ নিলা। জানো তোমাকে হারিয়ে আমি কতো কষ্ট পেয়েছিলাম, হঠাৎ করে যখন আলিফা আমার জীবনে আসলো তখন আমি ওকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু সবকিছু ভুল হয়ে গেলো। আমি কি নিয়ে বাঁচবো বল বার বার একি আঘাত সহ্য করা যায় নাকি…?
নিলা: তোমার পাশে কেউ নেই তো কি হয়েছে আমি তো আছি, আগে যেমন ছিলাম এখনো আছি আর সবসময় থাকবো। দেখো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিলা এসে আমার পাশে বসে আমাকে জরিয়ে ধরলো, আমিও নিলাকে জরিয়ে ধরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। নিলাকে ফিরে পেয়ে যেন সব কষ্ট ভুলে গেছি, আমি আবার আমার নিলাকে ফিরে পেয়েছি…..

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১০

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১০

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফার পেটে দুহাত দিয়ে চাপ দিয়ে ওর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম “ভালোবাসি তোমায় রাগিণী অনেক বেশি”

আলিফা: রিফাত কি হচ্ছে কি ছাড়ো বলছি (আমাকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে আমার গালে থাপ্পড় মারলো। আমি বোকার মতো গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, বউকে ভালোবাসার শাস্তি বুঝি এভাবেই পেতে হয়।)
আলিফা: অনেক বার বারণ করেছি শুননি উল্টো তুমি তোমার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছ
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: শুনো তুমি যদি আবার এমন করো তাহলে কিন্তু….
ওর পুরো কথা না শুনে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম।

রাত দশটা বাজে এখনো বাসার বাইরে আছি, এখানের কিছুই ছিনি না তাই রাস্তার পাশে বসে আছি। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো অচেনা নাম্বার রিসিভ না করে রেখে দিলাম। কিন্তু ফোনটা বারবার বেজেই চলছে তাই বাধ্য হয়ে রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–কোথায় তুমি এতো রাত হয়েছে বাসায় আসছ না কেন (ভাবতেই পারিনি আমার খুঁজে আলিফা ফোন করবে)
–রিফাত আমার কথার উত্তর দিচ্ছ না কেন
–এমনি
–আব্বু চিন্তা করছেন তাড়াতাড়ি বাসায় এসো
–আব্বু চিন্তা করছেন তুমি তো আর করছ না
–তুমি আসবে কিনা
–রাখো আসছি।

ফোন রেখে বাসায় চলে আসলাম, আলিফা ড্রয়িংরুমে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, দেখেই তো আমার অবাক লাগছে।
আলিফা: কোথায় গিয়েছিলে
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: রুমে চলে যাচ্ছ যে খাবে না।
ওর কোনো কথার উত্তর না দিয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। একটু পর আলিফা খাবার নিয়ে রুমে আসলো
আলিফা: রিফাত প্লিজ খেয়ে নাও
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: আমার সাথে কথা বলবে না
আমি: কি কথা বলবো
আলিফা: সরি আসলে আগে এভাবে…
আমি: হুম আর বলতে হবে না
আলিফা: এইযে কান ধরছি আর হবে না (ভাবছিলাম রাগ করে থাকবো কিন্তু ওর কান ধরা দেখে সব রাগ হাওয়া হয়ে গেলো। ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়)
আলিফা: রিফাত প্লিজ খেয়ে নাও
আমি: ওকে (আলিফার হাত থেকে খাবারের প্লেট আনতে গিয়ে সামনে নজর পড়লো, সারা রুমে চোখ বুলালাম। এই রুমে যে সোফা নেই এইটা তো আগে লক্ষ করিনি)
আলিফা: কি দেখছ এভাবে মনে হচ্ছে সারাদিন এই রুম দেখনি
আমি: দেখেছিলাম তবে আমার সতিন যে নেই এইটা লক্ষ করিনি
আলিফা: মানে
আমি: এই রুমে কিন্তু সোফা নেই আজ কোথায় ঘুমাবে
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: আজ তোমার জায়গা আমার বুকে বুঝেছ রাগিণী হাহাহা (আলিফা কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো, তারপর চলে যেতে লাগলো)
আমি: আলিফা কোথায় যাচ্ছ
আলিফা: তুমি খাবারটা খেয়ে নাও এখনি আসছি।
যাহ চলে গেলো।

খাবার খেয়ে এসে শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছি হঠাৎ আলিফা এসে রুমে ঢুকলো হাতে বিছানা আর বালিশ।
আমি: এসব কি
আলিফা: আগে জিজ্ঞেস করছিলে না কোথায় ঘুমাবো
আমি: হ্যাঁ তো
আলিফা: ফ্লোরে ঘুমাবো
আমি: পাগল হয়েছ
আলিফা: এছাড়া তো উপায় নেই অন্য রুমে ঘুমালে আব্বু সন্দেহ করবে
আমি: আলিফা প্লিজ কেন এমন করছ, দেখো আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে আর আমি তোমাকে ভালোবাসি প্লিজ তুমি মেনে নাও।
কিছু না বলে মৃদু হেসে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো। আমিও আর কিছু না বলে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম আসছে না।

কিছুক্ষণ পর আলিফার দিকে তাকালাম, পাগলিটা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি এক দৃষ্টিতে ওকে দেখছি ডিম লাইটের আবছা আলোতে ওকে দেখতে খুব মিষ্টি লাগছে। হঠাৎ মনে হলো আলিফা নিচে শুয়েছে যে ওর তো ঠান্ডা লেগে যাবে যদি জ্বর হয় তখন কি হবে। ওর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো না, আমিই নাহয় ফ্লোরে ঘুমাবো।
নেমে গিয়ে আলিফাকে কোলে করে এনে বিছানায় শুয়ে দিলাম, এই প্রথম ওকে এতো কাছ থেকে এভাবে দেখছি কেমন যেন এক অনুভূতি কাজ করছে। আলিফার চোখে কিছু চুল এলোমেলো হয়ে পরে আছে, হাত দিয়ে আলতো করে চুলগুলো সরিয়ে দিলাম তারপর ঘুমন্ত রাগিণীর কপালে একটা চুমু দিয়ে ফ্লোরে এসে শুয়ে পড়লাম।

হঠাৎ কারো উষ্ণ ছুঁয়ায় ঘুম ভেঙে গেলো, তাকিয়ে দেখি আলিফা আমার বুকের কাছে শুয়ে আছে। মাথা কেমন যেন ভারী লাগছে কপালে হাত দিয়ে দেখি জলপট্টি। আমিও খাটে শুয়ে আছি, আমি তাকিয়েছি দেখে আলিফা উঠে বসলো
আমি: আলিফা কি হয়েছে
আলিফা: কে বলেছিল আমার জন্য দরদ দেখাতে
আমি: মানে
আলিফা: রাতে আমাকে খাটে শুয়ে দিয়ে নিচে ঘুমিয়েছ কেন। এখন যে জ্বর এসেছে কে সেবা করবে আর আমি তোমার পরিবারের সবাইকে কি জবাব দিবো
আমি: ফ্লোরে ঘুমানোর অভ্যাস নেই তো তাই, চিন্তা করো না কমে যাবে
আলিফা: সারা রাত ধরে তোমার জ্বর, কমার কোনো নামই নেই এখন ভোরবেলায় একটু কমলো। উফফফ আব্বু আমাকে যা বকা দিয়েছে
আমি: সরি আমার জন্য তোমার আব্বু সব জেনে গেছেন
আলিফা: হুম হয়েছে
আমি: রাগিণী আজ আমার এতো কাছে ছিলে যে ব্যাপার কি (দুষ্টুমি করে বললাম)
আলিফা: অসুস্থ হয়েও এসব বলা ছাড়োনি, তুমি জ্বরের ঘোরে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিলে আমার তো কিছু করার ছিল না তাই আ….
আলিফা রিফাত কি উঠেছে (হঠাৎ আলিফার আব্বুর কন্ঠ শুনে আলিফা দূরে গিয়ে বসলো)
আলিফা: হ্যাঁ আব্বু, জ্বরটাও অনেক কমেছে (আব্বু এসে আমার পাশে বসলেন, আলিফা তো ভয়ে একদম চুপসে গেছে)
আব্বু: আলিফা যা তো ডক্টর কে ফোন করে আসতে বল আর কিছু খাবার নিয়ে আয়
আলিফা: হুম।
আলিফা চলে যেতেই উনি আমার একটা হাত মুঠো করে ধরে কেঁদে দিলেন।
আমি: আব্বু কি হয়েছে
আব্বু: আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি না জেনে তোমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দিলাম
আমি: মানে
আব্বু: রাতে যখন তুমি জ্বরে গোঙাচ্ছিলে তখন আলিফা ভয় পেয়ে আমাকে ডেকে আনে, আমি এসে তোমাকে ফ্লোরে দেখে ওকে অনেক প্রশ্ন করি। তারপর আলিফা আমাকে সব বলেছে। আমি আগে রাতুলের কথা জানতাম না বাবা জানলে এমন হতো না
আমি: আব্বু আমার ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে এতে কারো দোষ নেই
আব্বু: তবে একটা কথা বলি বাবা বিয়েটা যখন হয়েই গেছে আমি চাই আলিফা তোমারই থাক। আমার বিশ্বাস আলিফা একদিন তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারবে
আমি: গতকাল আপনি কি যেন বলতে চেয়েছিলেন
আব্বু: আমার অবস্থা বেশি ভালো না তাই বলতে চেয়েছিলাম আমার কিছু হয়ে গেলে আলিফাকে তুমি আগলে রেখো কিন্তু এখন তো সব উলটপালট হয়ে গেলো
আমি: কিচ্ছু হয়নি আব্বু সব ঠিক হয়ে যাবে
আব্বু: এতো কষ্ট লুকিয়ে কি করে পারছ এই কথা বলতে
আমি: (নিশ্চুপ)
আব্বু: আলিফা আমার নিজের মেয়ে না কিন্তু আমি ওকে নিজের সন্তানের চেয়ে বেশি ভালোবাসি, আমি যখন থাকবো না আমার মেয়েটা কে আগলে রেখো তুমি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
উনি কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন। সত্যিই কি কখনো সব ঠিক হয়ে যাবে…?
আলিফা: রিফাত ডক্টর আসছেন, তুমি কিছু খেয়ে নাও (আলিফা এসেছে খাবার নিয়ে, ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি আদৌ কি আলিফা আমার হবে)
আলিফা: এইযে কোথায় হারিয়ে গেলে খেয়ে নাও
আমি: ইচ্ছে করছে না
আলিফা: আমি খাইয়ে দিচ্ছি হা করো (আর কিছু বলতে পারলাম না চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছি)
আলিফা: চিন্তা করো না তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে
আমি: একটা কথা বলবো
আলিফা: বলো
আমি: এইযে আমার সেবা করছ ভালোবেসে করছ নাকি আমি অসুস্থ বলে সহানুভূতি….
আলিফা: কাঁদছ কেন
আমি: জানিনা।
আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ খাইয়ে দিচ্ছে আর আমি নিরবে কেঁদে যাচ্ছি। যখন ও থাকবে না তখন তো এসব স্মৃতি আমাকে তাড়া করে বেড়াবে যেমন করে নিলার স্মৃতি আজো আমায় তাড়া করে। হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো, আলিফা ফোন এনে নিজেই রিসিভ করলো।
আলিফা: হ্যালো আব্বু (এইরে আব্বু ফোন দিয়েছেন ও যদি বলে দেয় আমি অসুস্থ তাহলে তো বাসায় সবাই চিন্তা করবে)
আলিফা: না আব্বু রিফাত একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে আমরা দুদিন পর আসবো।
আমি: এই ফোন দাও তো (ওর থেকে ফোন কেড়ে আনলাম)
আমি: হ্যাঁ আব্বু
আব্বু: তুই নাকি অসুস্থ
আমি: তেমন কিছু না সামান্য জ্বর এসেছে
আব্বু: রিয়ানকে পাঠিয়ে দিচ্ছি আলিফাকে নিয়ে বাসায় চলে আয়
আমি: আব্বু আমার কথা শুনো
আব্বু: কিচ্ছু শুনতে চাই না রেডি হয়ে থেকো রিয়ান যাচ্ছে।

আব্বু ফোন রেখে দিলেন। আলিফার দিকে রাগি চোখে তাকালাম।
আলিফা: কি হলো
আমি: যাও রেডি হয়ে নাও রিয়ান আসছে আমাদের নিতে
আলিফা: মানে কি আজই চলে যাবো
আমি: আমি যে অসুস্থ আব্বুকে বলতে গেলে কেন
আলিফা: এখন কি হবে
আমি: ডক্টরকে ফোন করে বলে দাও আসতে হবে না আর তুমি রেডি হয়ে নাও
আলিফা: সত্যি চলে যেতে হবে
আমি: আব্বু বলেছেন যেহেতু যেতেই হবে।
আলিফা মন খারাপ করে চলে গেলো।

বিছানায় শুয়ে আছি হঠাৎ আলিফা আর রিয়ান রুমে এসে ঢুকলো। আলিফার মুখটা গোমড়া হয়ে আছে হয়তো যেতে চায় না।
রিয়ান: ভাইয়া কি হইছে তোমার
আমি: এতো অস্থির হচ্ছিস কেন সামান্য জ্বর
রিয়ান: কিন্তু এসেই জ্বর বাধালে কিভাবে (আলিফার দিকে তাকালাম ভয়ে চুপসে গেছে যদি বলে দেই ফ্লোরে ঘুমিয়েছিলাম এই ভয়ে হয়তো)
আমি: গতকাল সন্ধ্যার পর একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম তাই একটু ঠান্ডা লেগে গেছে। তুই চিন্তা করিস না কমে যাবে
রিয়ান: ঠিক আছে এখন চলো ডক্টর দেখিয়ে একেবারে বাসায় যাবো
আমি: হুম
রিয়ান: ভাবি তুমি রেডি তো
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: ও মনে হয় যেতে চাচ্ছে না
রিয়ান: না গেলে হবে না আব্বু বলে দিয়ছেন যেহেতু যেতেই হবে। কি ভাবি যাবে না
আলিফা: হুম যাবো

আলিফার আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। রিয়ান ড্রাইভ করছে আলিফা আর আমি পিছনে বসেছি। আলিফা মুখ গোমড়া করে বাইরে তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ মাথা ঘুরতে শুরু করলো, ঠান্ডাটা ভালই লেগেছে। আমার অসস্থি দেখে আলিফা ঘাবড়ে গিয়ে আমার পাশে এসে বসলো।
আলিফা: রিফাত কি হয়েছে
আমি: একটু অসস্থি লাগছে
রিয়ান: ভাইয়া গাড়ি থামাবো
আমি: না তাড়াতাড়ি বাসায় চল এখন ডক্টর এর কাছে যাবো না
রিয়ান: ঠিক আছে।
কেমন যেন এক অসস্থি হচ্ছে নিশ্চুপ হয়ে বসতে পারছি না। আমার এই অবস্থা দেখে আলিফা আমাকে ইশারা দিয়ে বললো ওর কোলে মাথা রেখে শুতে। আমি তো অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আলিফা নিজেই আমাকে ওর কোলে শুয়ে দিলো তারপর আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আলিফার হাতটা আমার দুহাতের মুঠোয় এনে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আলিফা: কি
আমি: চলেই যখন যাবে এতো মায়া বাড়াচ্ছ কেন
আলিফা: অসুস্থ হয়েও এতো কথা কিভাবে বলো
আমি: কথা ঘুরিয়ে নিচ্ছ কেন, বলো এতো মায়া বাড়াচ্ছ কেন
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: যখন চলে যাবে তখন তো এসব স্মৃতি হয়ে যাবে আর এই স্মৃতিগুলো আমাকে তাড়া করে বেড়াবে। তখন আমি কিভাবে বাঁচবো, এই স্মৃতির তাড়া যে আমি বড্ড ভয় পাই।
আলিফা কিছু না বলে আলতো করে আমার চোখের পানি মুছে দিলো….

চলবে?