বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1210



অবুঝ_বউ পার্ট: ১৯

1

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

রাতের আধার কেটে যখন একটু একটু আলো ফুটতে শুরু করেছিল তখন বাসা থেকে বেরিয়ে ছিলাম এখন অনেক বেলা হয়েছে, মুমু এর মধ্যে অনেক বার ফোন দিয়েছে রিসিভ করিনি বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু যেতে তো হবেই আম্মু চিন্তা করছেন

বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই মুমু দরজা খুলে দিল হয়তো আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল
–ভাইয়া কোথায় গিয়েছিলি
–কোথাও না
–সকালে উঠে দেখি তুই বাসায় নেই কতোবার ফোন দিয়েছি রিসিভ করিসনি কেন আম্মু চিন্তা করছে
–আম্মুকে গিয়ে বল বাসায় এসেছি চিন্তা করতে হবে না
–রুমে যাচ্ছিস কেন নাশতা করবি না
–না
–কেন
মুমুর আর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রুমে চলে আসলাম, রুমে ঢুকতেই সোহাগীর হাসি শুনতে পেলাম ফোনে কথা বলছে আর হাসছে, আচ্ছা ভালোবাসার নিয়ম গুলো এমন অদ্ভুত কেন একজন হাসে অন্যজন কাঁদে….?
–নাহিল এসেছ তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম
–কেন
–ডিভোর্স পেপারে সাইন করেছ তো আমি আজ এখান থেকে চলে যাবো
–জিসানের কাছে যাবে তাই তো
–হ্যাঁ আমরা আগামীকাল বিয়ে করবো (খুব রাগ হচ্ছে এই মেয়ে কথা গুলো এতো সহজে বলে কিভাবে, ওর আগে আমাকে এ বাসা থেকে যেতে হবে ওর চলে যাওয়া আমি সহ্য করতে পারবো না, আজকের ফ্লাইটেই আমি চলে যাবো, মুমুকে ডাক দিলাম সবকিছু গুছিয়ে দেওয়ার জন্য)
সোহাগী: আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি তুমি মুমু মুমু বলে চেঁচাচ্ছ কেন
আমি: তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই
সোহাগী: এভাবে কথা বলছ কেন
আমি: এখন তো অনেক বুঝদার হয়ে গিয়েছ প্রশ্নটা আমাকে না করে নিজেকেই কর
মুমু: ভাইয়া ডাকছিলি
আমি: হ্যাঁ আমার সবকিছু গুছিয়ে দে
মুমু: ফ্লাইট তো রাত আটটায় বাজে মাত্র সকাল দশটা এখনি….
আমি: যা করতে বলেছি কর
মুমু: এতো রেগে আছিস কেন কি হয়েছে
আমি: (নিশ্চুপ)
মুমু: ঠিক আছে আমি গুছিয়ে দিচ্ছি, ভাবি তোমার কি কি গুছাতে হবে দাও
সোহাগী: মানে কি গুছাব আর কেন গুছাব
মুমু: ভাইয়া ভাবিকে বলিসনি
আমি: না ও যাবেনা
সোহাগী: কি হচ্ছে বলতো
মুমু: ভাইয়া তো বলেছিল আজ রাত আটটার ফ্লাইটে তোমাকে নিয়ে আমেরিকা চলে যাবে
সোহাগী: এসবের মানে কি নাহিল তারমানে তুমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করনি
মুমু: ডিভোর্স কিসের ডিভোর্স ভাবি তুমি কি পাগল হয়ে গেছ
সোহাগী: পাগল হইনি যা করছি বুঝে শুনেই করছি
মুমু: দাঁড়াও আমি আম্মুকে ডেকে আনছি

মুমু চলে গেলো ডিভোর্স এর কথা শুনে আম্মু যে কি করবে ভেবে পাচ্ছি না শেষ পর্যন্ত আম্মুর কথা গুলোই সত্যি হল
আম্মু: নাহিল এসব কি শুনছি
আমি: (নিশ্চুপ)
মুমু: ভাইয়ার কি দোষ সব তো করছে ভাবি
আম্মু: আমি আগেই বলেছিলাম তখন আমার কথা শুনিসনি
আমি: আম্মু কান্নাকাটি করো না বাদ দাও
আম্মু: বাদ দিতে বললেই কি দেওয়া যায় এই মেয়েটা তো তোর জীবনটা নষ্ট করে দিল
সোহাগী: আমি আপনার ছেলের জীবন নষ্ট করবো কেন
আম্মু: এই মেয়ে একদম চুপ আর একটা কথাও বলবা না আগেই বলেছিলাম এই অবুঝ মেয়েকে বিয়ে করিস না পরে পস্তাতে হবে
আমি: আম্মু ওকে বকছ কেন ও যদি জিসানের সাথে ভালো থাকে তাহলে থাকতে দাও
মুমু: জিসান আমার দেবর আমি ওকে ভালো করে ছিনি এই বদমাশ ছেলের সাথে আবার ভালো থাকবে
আমি: আম্মু প্লিজ কান্নাকাটি করো না একটু পর চলে যাবো শান্তিতে যেতে দাও
আম্মু: একটু পর যাবি মানে ফ্লাইট তো আটটায়
আমি: এই বাসায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে
আম্মু: কি বলছিস এসব
আমি: উফফফ কান্নাকাটি করো না তো
আম্মু: আমার সাথে চল আর মুমু তুই ওর সবকিছু গুছিয়ে দে

আম্মু আমার হাত ধরে টেনে আম্মুর রুমে নিয়ে আসলো, আম্মু খুব কাঁদছে আমারো তো কান্না পাচ্ছে কি করব
আম্মু: তুই রাতে ঘুমাসনি চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে এখন আমার কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমু তো (আর কিছু বলতে পারলাম না খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে আম্মুর কোলে শুয়ে পড়লাম)

সাজিদের ডাকে ঘুম ভাঙলো মনে তো হচ্ছে বিকেল হয়ে গিয়েছে
–কিরে তুই কখন আসলি
–কিছুক্ষণ আগে
–কয়টা বাজে
–চারটা
–ওহ
–নাহিল তুই না গেলে হয় না
–এখানে থাকলে এসব কষ্ট সহ্য করতে পারবো না
–দূরে গেলেই কি ভুলতে পারবি
–দূরে গেলেই কি ভালোবাসার মানুষকে ভুলা যায়
–তাহলে যাচ্ছিস কেন
–হয়তো দূরে গেলে কষ্টটা একটু কম হবে
–হুম
–তুই ড্রয়িংরুমে যা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
–ওকে

রুমে ঢুকতে ভয় করছে বিকেল হয়ে গিয়েছে সোহাগী হয়তো চলে গেছে, ও এই রুমে না থাকলে রুমটাই যে ফাঁকাফাঁকা লাগবে, নাহ যায়নি কাপড়চোপড় গুছাচ্ছে এখন আর ওকে জ্বালাই না থাকুকু নিজের মতো করে, ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম যতো তাড়াতাড়ি বের হবো ততোই যন্ত্রণা কম হবে
–নাহিল তুমি আমেরিকা চলে যাচ্ছ (সোহাগীর এমন প্রশ্নে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম)

মুমু: ভাইয়া এখনি চলে যাবি নাকি আরো তো তিন ঘন্টা বাকি
আম্মু: খেয়ে যাবি না
আমি: না খিদে নেই
সাজিদ: আমি তোর সাথে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আসি
আমি: কি দরকার অযতা….
সাজিদ: প্লিজ
আমি: ওকে চল
আম্মু: তোর আব্বুর সাথে দেখা করে যাবি না
আমি: হুম যাওয়ার পথে অফিসে গিয়ে দেখা করে যাবো

আম্মু আর মুমু কাঁদছে পিছন ফিরে আর তাকালাম না তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে চলে আসলাম
–নাহিল আমি ড্রাইভ করছি
–হুম
–এভাবে মন খারাপ করে থাকিস না
–আগে যদি যানতাম সোহাগী অন্য কারো হয়ে যাবে তাহলে সেদিন আর দেশে ফিরতাম না
–আমার মনে হয় তোর হাতে এখনো সময় আছে ভাবিকে বুঝা বুঝবে
–নারে ও বুঝবে না ও তো জিসানের জন্য অন্ধ হয়ে গেছে বাদ দে
–নাহিল সামনে মৌরি হাত নেড়ে গাড়ি থামাতে বলছে
–ওর হয়তো আমাকে আরো কিছু কষ্ট দেওয়ার বাকি রয়ে গেছে
–থামাবো
–হুম

গাড়ি থেকে নেমে মৌরির সামনে এসে দাঁড়ালাম ওকে দেখে মনে হচ্ছে খুব আনন্দে আছে
সাজিদ: মৌরি কিছু বলার থাকলে বল আমাদের যেতে হবে
মৌরি: যাবি তো ফ্লাইটের তো আরো প্রায় তিন ঘন্টা বাকি
আমি: তুমি জানলে কিভাবে
মৌরি: তুমি যাচ্ছ আর আমি জানবো না
সাজিদ: অযতা কথা বাদ দিয়ে বল কিসের জন্য গাড়ি দাড় করিয়েছিস
মৌরি: প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য
সাজিদ: কিসের প্রতিশোধ
মৌরি: সেদিনের থাপ্পড়ের (বলেই আমার গালে থাপ্পড় মেরে দিল)
সাজিদ: মৌরি
মৌরি: প্রতিশোধ নিলাম
আমি: সাজিদ ছেড়ে দে ভিতরে যা ঝর বইছে এই আঘাত তো কিছুই না
সাজিদ: মৌরি আমি চাইলে তোকে এখন অনেক গুলো থাপ্পড় দিতে পারতাম
আমি: সাজিদ চল তো
সাজিদের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম এসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না, এইটা তো সামান্য একটা থাপ্পড় ভিতরে যে কেমন ঝর বইছে সেটা তো আর কেউ জানেনা

অফিসে গিয়ে আব্বুর সাথে দেখা করে সোজা এয়ারপোর্ট চলে আসলাম
–নাহিল আরো দুঘণ্টা সময় আছে ভাবিকে বুঝা
–উহু ও বুঝবে না ও জিসানকে ভালোবাসে
–এমনো তো হতে পারে জিসান পুরোটাই অভিনয় করছে আর ভাবি বুঝতে না পেরে….
–অভিনয় হলে তো বিয়ের প্ল্যান করতো না বাদ দে না এসব ভাবতে ভালো লাগছে না
–হুম
–তুই বাসায় চলে যা
–এখানে দুঘণ্টা একা বসে থাকবি আমি থাকি প্লেনে উঠার আগে পর্যন্ত
–না আমি একটু একা থাকতে চাই প্লিজ
–ওকে সাবধানে যাস আসি
–হুম
সাজিদকে বিদায় করলাম আমার চোখ যে আর বাধ মানছে না ওর সামনে কাঁদলে তো সাজিদও কাঁদবে আমি আর কাউকে কাঁদাতে চাই না আমার কষ্ট আমি একাই সহ্য করি, খুব কষ্ট হচ্ছে চোখের সামনে সব স্মৃতি গুলো ভাসছে, সোহাগীকে সেই প্রথম কালো শাড়িতে দেখা, ওর খিলখিল করে হাসি, ভয় পেয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে ওর ঘুমানো সবকিছু আজ চোখের সামনে ভাসছে, চোখ থেকে পানি ঝরছে বুকে প্রচুর যন্ত্রণা হচ্ছে তাই চোখ দুটু বন্ধ করে ফেললাম….

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ১৮

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে সোহাগীর চেঁচামেচিতেই ঘুম ভাঙলো, রাতে তো ভেবেই ঘুমিয়ে ছিলাম সকালে যে ওর রাগি মুখটা দেখতে হবে তাই আর অভাক হলাম না উল্টো ওর রাগি মুখের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম, ওর মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে এখনি আমাকে খুন করে ফেলবে
–তুমি আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছ কোন সাহসে
–তুমি আমার বউ তাই
–কিসের বউ আমি জিসানকে ভালোবাসি (নামটা শুনেই মাথা নষ্ট হয়ে গেলো ইচ্ছে হচ্ছে ওকে কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় দেই)
ওই শুনো আমি তোমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাইনি তুমি ইচ্ছে করে আমার বুকে মাথা রেখেছিলে
–মিথ্যে কথা
–এখন তো বলবেই মিথ্যে কথা রাতে যখন জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছিল কই তোমার জিসান তো আসেনি সেবা করতে আমাকেই তো সারা রাত জেগে সেবা করতে হয়েছে
–কেন করেছ আমি মরলে তোমার কি
–যদি সত্যিকারের ভালোবাসা কি সেটা বুঝতে তাহলে বোকার মতো এই প্রশ্নটা করতে না (রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম, এই মেয়ের সাথে কথা বলে লাভ নেই ও জিসানের জন্য অন্ধ হয়ে গেছে আমাদের মাঝখান থেকে জিসানকে সরাতে হবে)

নিচে এসে দেখি সবাই নাশতা করে নিচ্ছে আমাকে কেউ ডাকও দিল না
আমি: মুমু আমাকে ডাক দিলি না
মুমু: তুই ঘুমুচ্ছিলি তাই আর ডাকিনি
আমি: আব্বু আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি
আব্বু: কি সিদ্ধান্ত
আমি: আমি সোহাগীকে এখানে রাখবো না ওকে নিয়ে বাহিরে কোথাও চলে যাব
আম্মু: কেন
আমি: জিসানের থেকে দূরে থাকলেই ওর এসব পাগলামি বন্ধ হয়ে যাবে
আব্বু: আইডিয়াটা খারাপ না তুই বরং বউমা কে নিয়ে আমেরিকা চলে যা ওখানের ব্যবসাও দেখতে পারবি
মুমু: আরে ভাবি তুমি নাশতা না করে কোথায় যাচ্ছ (মুমুর কথা শুনে পিছনে তাকালাম সোহাগী কোথায় যেন যাচ্ছে)
আমি: অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছ সোহাগী
সোহাগী: তোমাকে বলে যেতে হবে নাকি
আম্মু: বউমা একটু বুঝেশুনে কথা বল (সোহাগী কোনো জবাব না দিয়ে বেরিয়ে গেলো, আর নাশতা করতে ইচ্ছে হচ্ছে না যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে আমেরিকা যাওয়ার ব্যবস্থা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে)
মুমু: ভাইয়া নাশতা না করে কোথায় যাচ্ছিস
আমি: আমেরিকা যাওয়ার ব্যবস্থা করতে

তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম, সাজিদের বাসার সামনে গিয়ে ওকে ফোন দিয়ে নিচে আসতে বললাম
–কিরে এভাবে হুট করে বাসার সামনে এসে ফোন দিলি
–গাড়িতে উঠ
–কোথায় যাবি
–আগে উঠবি তো গাড়ি স্টার্ট দেই তারপর কথা বলি
–হুম
–আমি সোহাগীকে নিয়ে আমেরিকা চলে যাব
–কেন
–কেন মানে কি এখানে থেকে ওকে হারাবো নাকি
–সোহাগী যাবে তো
–জোর করে নিয়ে যাব
–কাজটা কি ঠিক হবে
–ঠিক ভুল জানিনা শুধু জানি পিচ্ছি বউ কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না
–যা ভালো মনে হয় কর
–হুম

আমেরিকা যাওয়ার সবকিছু ঠিকঠাক করে অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম, কলিংবেল টিপতেই মুমু এসে দরজা খুলে দিল
–কিরে রাত তো অনেক হলো ঘুমাসনি
–না
–কেন
–একসাথে খাবো তাই সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম
–ওকে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
–হুম
রুমে এসে সোহাগীকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি সোহাগী ফোনে গেমস খেলছে আমি যে রুমে আছি ও যেন চোখে দেখছে না
–সোহাগী খেয়েছ
–হুম
–ওহ ওকে
আজকাল সবার আগেই ও খেয়ে নেয় ভালো তো সব ভূত চলে যাবে ওর মাথা থেকে একবার আমেরিকা নিয়ে যাই জিসানের ছায়াও আর সোহাগী দেখতে পারবে না
মুমু: ভাইয়া কি বিড়বিড় করছিস তাড়াতাড়ি আয়
আমি: হুম
আব্বু: যে কাজে গিয়েছিলি তা হয়েছে
আমি: হ্যাঁ আব্বু আগামীকাল রাত আটটায় ফ্লাইট
আম্মু: মানে কি কালকেই চলে যাবি
আমি: হুম
মুমু: এতো তাড়াতাড়ি যাবি ভাবি জানে
আমি: না সকালে জানিয়ে দিব
আব্বু: আসলে কি বলব বুঝতে পারছি না
আমি: আব্বু আর যাই বল যেতে নিষেধ করোনা
আব্বু: হুম

রুমে এসে চারদিকে চোখ বোলালাম সোহাগী কোথাও নেই বুঝতে বাকি রইলো না মহারাণী যে বারান্দায় আছেন, দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ পড়ল রাত প্রায় একটা বাজে ভাবছি ওকে এখন বলব নাকি সকালে, আচ্ছা আমি যে সবকিছু ঠিক করে নিলাম আগামীকাল ফ্লাইট সোহাগী কি আদৌ যাবে আমার সাথে, যদি যেতে রাজি নাহয় জোর করে নেওয়া কি ঠিক হবে
–নাহিল (হঠাৎ সোহাগীর ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পরলো, বারান্দা থেকে ডাকছে কেন)
–হুম কিছু বলবে
–হ্যাঁ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে বারান্দায় এসো

বারান্দায় এসে সোহাগীর পাশে দাঁড়ালাম জানিনা কি বলবে মনের ভিতর কেমন যেন এক অজানা ভয় কাজ করছে
–দেখ নাহিল যা হবার তো হয়েই গেছে এখন তোমার মেনে নিতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি যে আমি জিসানকে ভালোবাসি (কতো সহজ ভাবে কথাটা বলে দিল ও কিন্তু আমার মনের ভিতর কেমন ঝর বইছে সেটা তো আর পিচ্ছিটা জানেনা, চোখ দুইটা ঝাপসা হয়ে আসছে চারদিকে চোখ বোলালাম আজ মনে হয় অমাবস্যা তাই চারদিক এতো অন্ধকার, এই অমাবস্যার রাতে আমার জীবনেও বুঝি….)
–কি হল নাহিল কথা বলছ না কেন
–কিছু বলার নেই
–আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমার দিকটা ভাবো আমি জিসানকে ছাড়া থাকতে পারবো না
–কথা গুলো বলতে কি তোমার একটু কষ্টও হচ্ছে না
–কেন কষ্ট হবে আমি তো জিসানকে ভালো….
–অনেক হয়েছে এই কথাটা আর শুনতে চাই না তারচেয়ে বরং তুমি কি চাইছ সেটা বলে দাও
–এক মিনিট অপেক্ষা কর আসছি

জানিনা কেন ও রুমে গেলো আসলে ও কি চাইছে বুঝতে পারছি না ও তো বলছে জিসানকে ভালোবাসে তাহলে কি আমাকে ছেড়ে….
–নাহিল
–এইটা কি কিসের কাগজ আমাকে কেন দিচ্ছ
–এইটা ডিভোর্স পেপার
–কি
–হ্যাঁ আমি সাইন করে দিয়েছি তুমিও….
–সোহাগী তুমি না আগে ডিভোর্স এর মানে বুঝতে না আর এখন কিনা…
–এখন আমি সব বুঝি
–ওহ আগে তো অবুঝ ছিলে আর এখন অনেক বুঝদার হয়ে গিয়েছ
–এতো কথা শুনতে চাই না আমি সাইন করে দিয়েছি তুমি করে দিও
–ডিভোর্স পেপারে সাইন করার আগে তোমার আমার কথা মনে পড়েনি হাত কাঁপেনি সাইন করতে
–না সাইন করার সময় আমার জিসানের কথা মনে পড়েছে কবে আমাদের বিয়ে হবে সেটাই ভেবেছি
–শুধু জিসান জিসান ও কি তোমা…
–চিৎকার করছ কেন আমি তোমার চিৎকার শুনতে চাই না পেপারটা নাও সাইন করে দিও
–(নিশ্চুপ)
–কি হল ধরো (কি করবো আমি আর কি করার আছে কাঁপাকাঁপা হাতে ডিভোর্স পেপারটা নিলাম, পেপারটা হাতে নিতেই চারদিক কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসলো দফ করে বসে পড়লাম ফ্লোরে, সোহাগী আমার দিকে একবার তাকিয়ে রুমে চলে গেলো)

দূর থেকে আযানের শব্দ ভেসে আসছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট খেয়েই রাতটা কাটিয়ে দিলাম, বার বার ডিভোর্স পেপারটার দিকে চোখ পড়ছে ইচ্ছে হচ্ছে কাগজটা পুড়িয়ে দেই কিন্তু সোহাগীর জন্য পারবো না, আচ্ছা আমার এখন কি করা উচিত সাইন করে দিব…? এইটা তো আমার পক্ষে সম্ভব না তাহলে কি করবো….
অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম সাইন করবো না কিন্তু আমি সোহাগীর থেকে দূরে চলে যাবো এটাই একমাত্র রাস্তা তাতে সোহাগী জিসানের সাথে ভালো থাকবে আর সোহাগী ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকবো, আমি তো ওকে ভালোবাসি তাহলে ও যেভাবে সুখে থাকতে চায় সেভাবে থাকতে দিচ্ছি না কেন, ভালোবাসা মানে তো এই না যে ও শুধু আমার সাথেই ভালো থাকবে, সোহাগী যদি ওর ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখে থাকতে পারে তাহলে আমি ওর সুখ দেখে ভালো থাকতে পারবো না কেন…?

ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে রুমে ঢুকলাম সোহাগী ঘুমাচ্ছে ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে একদম পরীর মতো লাগছে, ডিভোর্স পেপারটা টেবিলের উপর রেখে ছোট্র একটা চিরকুট লিখলাম তারপর চিরকুট আর ডিভোর্স পেপার ড্রয়ারে রেখে দিলাম, সোহাগীর দিকে বার বার চোখ পড়ছে ইচ্ছে হচ্ছে ওর মুখে এলোমেলো হয়ে থাকা চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দেই কিন্তু সাহস হলো না ওর ঘুমন্ত মুখটা কিছুক্ষণ দেখে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ১৭

1

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

আমি: সোহাগী (আমার ডাকে দুজনেই চমকে উঠে আলাদা হয়ে গেলো)
সোহাগী: নাহিল তুমি
আমি: কেন ডিস্টার্ব করলাম
জিসান: ভাইয়া আমার ক….
আমি: আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলছি এর মধ্যে তুমি কথা না বললেই খুশি হব
সোহাগী: নাহিল আমি….
আমি: জানি জিসানকে ভালোবাস তাই তো
সোহাগী: (নিশ্চুপ)
আমি: এটাই তো নিয়ম তাই না ভালোবাসা শিখাবে একজন আর ভালোবাসবে অন্য কাউকে
সোহাগী: নাহিল শু…
আমি: আরো কিছু শুনানোর বাকি রয়েছে নাকি পিচ্ছি বউ, ওহ সরি তোমাকে তো এখন আর পিচ্ছি বলা যাবে না তুমি তো এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছ
সোহাগী: নাহিল অনেক বলেছ এবার চুপ কর ভালো করে শুনে রাখ আমি তোমাকে কখনোই ভালোবাসিনি আমি জিসানকে ভালোবাসি
সোহাগীর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কি বললো ও নাকি আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি তাহলে প্রতি রাতে আমাকে জরিয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে ঘুমানোটা কি ছিল, অভিনয় নাকি ভয়, পিচ্ছি ছিলো তো তাই হয়তো ভয়ে বুকে ঘুমাতো আর আমি ভাবতাম ভালোবাসে আমিও না….
–নাহিল একা একা দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস (সাজিদের কথায় সামনে তাকালাম সোহাগী জিসান কেউ নেই, ওরা কখন চলে গেছে বুঝতেই পারিনি)
–এই নাহিল
–হুম
–চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি
–না ভালো লাগছে না
–চল ঘুরে আসলে ভালো লাগবে
–ভালো লাগার মানুষটা অন্য কারো হয়ে গেছে এখন আর কোনো কিছুই ভালো লাগবে না
–অন্য কারো হবে কেন দেখিস সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে চল
সাজিদ আমার হাত ধরে টেনে বাসার বাইরে নিয়ে আসলো

পার্কের মধ্যে একমনে হাটছি পাশে সাজিদ বকবক করছে, ওর কথা কোনো কিছুই শুনছি না শুধু মনে পড়ছে সোহাগী এমন করলো কিভাবে
–হ্যালো পিচ্ছির জামাই (হঠাৎ কারো মুখে এই কথা শুনে চমকে গিয়ে সামনে তাকালাম)
আমি: মৌরি তুমি
মৌরি: হ্যাঁ আমি, কেন আমি কি পার্কে আসতে পারিনা
সাজিদ: ও কি সেটা বলেছে সবসময় এতো কথা প্যাঁচাস কেন
মৌরি: সাজিদ তোর এতো গায়ে লাগছে কেন
আমি: মৌরি এমনি মন ভালো নেই তুমি আবার জামেলা করো না তো
মৌরি: মন খারাপ কেন পিচ্ছির জামাই তোমার পিচ্ছি বউ কি তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে নাকি….
সাজিদ: নাহিল এখান থেকে চল তো ওর সাথে কথা বললে মেজাজ আরো খারাপ হবে
মৌরি: যাও যাও আমি আগেই বুঝেছিলাম এই মেয়ে থাকবে না একদিন না একদিন ঠিকি নাহিলকে ছেড়ে চলে যাবে
মৌরির কথা আর না শুনে পার্ক থেকে বেরিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখি সোহাগীর দুলাভাই সব যন্ত্রণা কি আল্লাহ্‌ একসাথে দিচ্ছেন নাকি
–হ্যালো
–কি জামাইবাবু টাকার কথা ভুলে গিয়েছ নাকি
–না
–তাহলে তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও
–টাকা পেলে সোহাগীর পিছু ছেড়ে দিবেন তো
–এখন আমি সোহাগীর পিছু ছাড়লেই কি আর না ছাড়লেই কি সোহাগী তো আর তোমার নেই হাহাহাহা
–এইটা ভেবে থাকলে টাকাও পাবেন না
–আরে না না টাকা থাকলে এমন সোহাগী কতোজন আসবে, কথা দিচ্ছি টাকা পেয়ে গেলে সোহাগীকে আর জ্বালাবো না
–ঠিক আছে আপনার একাউন্টে টাকা চলে যাবে
–ওকে

ফোন রাখতেই সাজিদ আমার হাত ধরে দাঁড় করালো
–সত্যি করে বলতো কিসের টাকা
–কিছুনা
–বলবি কিনা
–সোহাগীর…
–যে তোকে ছেড়ে চলে গেছে তার জন্য এত্তোগুলো টাকা নষ্ট করবি
–টাকা নষ্ট করবো কোথায় এই টাকায় তো সোহাগী ভালো থাকবে
–তুই কি পাগল হয়ে গেছিস
–না তুই বুঝার চেষ্টা কর….
–কি বুঝব হ্যাঁ
–আমি সোহাগীকে ভালোবাসি আর ও সুখে থাকলে আমি ওর সুখ দেখেই ভালো থাকতে পারবো
–তোকে আমি বুঝাতে পারবো না
–হুম চল
–কোথায়
–টাকা দিতে হবে তো
–সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বাসায় চল টাকা সকালে দিবি
–না জামেলা যতো তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় ততোই ভালো
–হুম

টাকা দিয়ে অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম, আব্বু আম্মু মুমু সবাই চিন্তিত হয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে
আমি: কি হয়েছে তোমাদের এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন
আম্মু: সোহাগী এখনো বাসায় ফিরেনি
আমি: মানে
সাজিদ: বাইরে কখন গেল
মুমু: তোমরা যাওয়ার একটু পর জিসানের সাথে….
আমি: আম্মু তুমি ওকে যেতে দিলে
আব্বু: এই মেয়ে কারো কথা শুনে নাকি
আমি: এতো রাতে আমি ওকে কোথায় খুঁজব
সাজিদ: নাহিল শান্ত হ আর একটু অপেক্ষা করে দেখি না আসলে নাহয় খুঁজতে যাবো

সবাই সোহাগীর অপেক্ষায় বসে আছি হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো ভেবেছিলাম সোহাগী এসেছে তাই আমি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিলাম কিন্তু দরজা খুলে দেখি সোহাগীর বোন, এতো রাতে আপু কোথায় থেকে আসলো
–আপু আপ….
–তুমি ওই বদমাইশটাকে টাকা দিয়েছ
–আগে ভিতরে আসুন সব বলছি
–আমাকে একবার জিজ্ঞেস করে টাকা দিবে না
–আসলে আপু
–থাক আমি তোমার টাকা ফেরত দিতে এসেছি আর বদমাইশটার ব্যবস্থাও করেছি
–মানে
–ওকে আমি পুলিশে দিয়েছি
–আপু…
–এইটা নিয়ে আর কথা বলতে চাই না সোহাগী কোথায়
–ভিতরে এসে বসুন
–হুম
–আপু সোহাগী এখনো বাসায় ফিরেনি
–সেটা সবার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে

সবাই সোহাগীর অপেক্ষায় বসে আছি আমার তো কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে, হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো আপু নিজে গিয়ে দরজা খুলে দিল, সোহাগী কারো দিকে না তাকিয়ে রুমে চলে গেলো পিছন পিছন আপু গেলেন আমি আর কি করবো আমিও গেলাম, দরজার পাশে যেতেই শুনতে পেলাম
আপু: এতোক্ষণ জিসানের সাথে ছিলি তাই না
সোহাগী: হুম
আপু: লজ্জা করে না নাহিলকে এভাবে ঠকিয়ে জিসানকে ভালোবাসতে এজন্যই কি তোকে আগলে রেখে বড় করে নাহিলের হাতে তুলে দিয়েছিলাম
সোহাগী: এসব নিয়ে আমি কারো সাথে কথা বলতে চাই না আর কোনো কিছুর কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই
(ঠাস ঠাস করে দুইটা শব্দ শুনলাম আপু যে সোহাগীকে থাপ্পড় মেরেছেন বুঝতে বাকি রইলো না)
আপু: তোর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই যা খুশি কর (আপু রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আমি রুমে ঢুকলাম সোহাগী রুমে নেই বারান্দা থেকে কান্নার শব্দ আসছে, আস্তে আস্তে বারান্দায় গিয়ে সোহাগীর পাশে দাড়ালাম কি বলব বুঝতে পারছি না)
–সোহাগী
–একদম চুপ তুমি আমার সাথে কথা বলবে না তোমার জন্য আজ আপু আমাকে থাপ্পড় মেরেছে
–আমার জন্য মানে আমি কি তোমাকে বলে দিয়েছিলাম এতো রাত পর্যন্ত জিসানের কাছে থাকতে
আর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেলো আমি কি করবো বুঝতে পারছি না সোহাগী যেমন জিসানকে ভালোবাসে আমিও তো সোহাগীকে ভালোবাসি না পারছি ওকে ভুলে যেতে না পারছি আমার কাছে রাখতে

অনেক রাত হয়ে গিয়েছে এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি সোহাগীর কান্নার শব্দ আর শুনা যাচ্ছে না হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে, আমিও রুমে এসে সোফায় শুয়ে পড়লাম, হঠাৎ সোহাগীর দিকে চোখ পড়লো লাল টুকটুকে গালে আঙ্গুলের দাগ বসে আছে ইচ্ছে হচ্ছে গালে হাত বুলিয়ে দেই কিন্তু ভয়ও হচ্ছে, ভয়ে ভয়ে ওর পাশে এসে বসলাম ওর গালে আলতো করে হাত রাখতেই চমকে উঠলাম জ্বরে তো ওর শরীর পুড়ে যাচ্ছে এতো রাতে কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না, আম্মুকে এখন ডাকা ঠিক হবে না তাই নিজেই ওর কপালে জলপট্রি দিতে শুরু করলাম

একটু পর সকাল হয়ে যাবে জলপট্টি দেওয়াতে সোহাগীর জ্বর অনেক কমেছে, খুব ক্লান্ত লাগছে একটু ঘুমাতে হবে কিন্তু ওকে এখানে একা রেখে সোফায় গিয়ে ঘুমানো ঠিক হবে না তাই সোহাগীর একপাশে আস্তে করে শুয়ে পড়লাম, আমি শুয়ে পরতেই পাগলীটা আমাকে জরিয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো, খুব হাসি পাচ্ছে এমনিতে তো আমাকে এখন শুধু বকাবকি করে আর এখন ঘুমের মধ্যে আমাকে জরিয়ে ধরেছে পাগলী একটা, আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত রাখলাম চোখ দুইটা বাধ মানছে না এই পাগলীকে নাকি আমার ভুলে যেতে হবে ও নাকি আমাকে ছেড়ে জিসানের হয়ে যাবে, এই পিচ্ছিকে আমি ভুলতে পারবো না কিছু একটা করতে হবে,
জানি সকালে উঠে অনেক রাগ দেখাবে তাও ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ১৬

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

চোখ দুটু বন্ধ করে ফেললাম পিচ্ছিটার সেই হাসি কথা বলা সবকিছু অনুভব করছি….

এতোক্ষণ ধরে কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছি কেউ দরজা খুলছেই না, মা নাহয় ঘুমে হয়তো কিন্তু সোহাগীটা কোথায় যে থাকে, হঠাৎ আম্মু এসে দরজা খুলে দিলেন আর আমাকে দেখা মাত্র জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন
–আম্মু কি হয়েছে
–কিছুনা বাবা যা ফ্রেশ হয়ে নে আমি তোর জন্য খাবার দিচ্ছি
–ঠিক আছে
ড্রয়িংরুমে এসে চারদিকে চোখ বুলিয়ে সোহাগীকে কোথাও দেখতে পেলাম না
–কিরে নাহিল কি খুঁজছিস
–আম্মু সোহাগী….
–রুমেই আছে
আম্মুর সামনে আস্তে আস্তে হেটে আসলাম আম্মুর চোখের আড়াল হতেই এক দৌড়ে রুমে চলে আসলাম কিন্তু রুমে তো সোহাগী নেই, চোখ পড়লো বারান্দার দিকে, বারান্দার দরজা খোলা দেখেই বুঝতে পারলাম মহারাণী ওখানেই আছেন তাই আস্তে আস্তে গিয়ে সোহাগীকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম ও চমকে উঠে আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিল
–এভাবে কেউ হুট করে জরিয়ে ধরে
–রাগ করছ কেন এতোদিন পর….
–এতোদিন হয়েছে তো তাতে কি হয়েছে এসেই এভাবে জরিয়ে ধরতে হবে নাকি
–রেগে আছ কেন প্লিজ বলো
সোহাগীর দুগালে হাত দিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু ও কোনো উত্তর না দিয়ে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে রুমে চলে গেলো, আমি বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছি সোহাগী তো কখনো এমন করতো না তাহলে আজ কেন এমন করছে
–নাহিল খেতে আয় (আম্মুর ডাক শুনে সোহাগীর কাছে গেলাম)
–সোহাগী চলো আমাকে খাবার দিবে
–আম্মু দিয়েছে তো
–তুমি দিলে দোষ কোথায়
–এতো পারবো না
আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম

খেতে বসেছি হঠাৎ আম্মুর দিকে চোখ পড়লো সোফায় বসে আছেন আর আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদছেন, আর খেতে পারলাম না উঠে সাজিদ এর সাথে দেখা করতে চলে গেলাম

সাজিদের সামনে বসে আছি ও আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে
–এভাবে তাকাচ্ছিস কেন
–কিভাবে
–আচ্ছা বলবি কি হয়েছে সবাই আমার থেকে লুকাচ্ছিস কেন
–কিছু লুকাইনি রাত হয়েছে বাসায় যা সকালে আমি আসবো
–ঠিক আছে

বাসায় এসে দেখি সোহাগী বারান্দায় দাঁড়ানো বাহ্ বারান্দা যেন ওর ঠিকানা হয়ে গিয়েছে, ওকে আর ডাকলাম না এসে শুয়ে পড়লাম খাবো না দেখি ও খেতে ডাকে কিনা, হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো রিসিভ করলাম
–হুম মুমু বল
–কখন আসলি ফোন দিলি না
–এসেই যা দেখছি মন ভালো নেই
–সকালে আমাকে দেখতে আসবি
–না কোথাও যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তুই বরং সজিবকে নিয়ে চলে আসিস একসাথে লাঞ্চ করবো
–ঠিক আছে

ফোন রেখে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনেই নেই ক্লান্ত শরীর তো বিছানায় শুতেই ঘুম ধরে গিয়েছিল, মাঝরাতে হঠাৎ কারো হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি এখনো বাতি জ্বালানো সোহাগী বিছানায় নেই, দেয়াল ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত প্রায় দুটু বাজে এতো রাতে এই পিচ্ছি মেয়ে যাবে কোথায়, হঠাৎ বারান্দার দরজার দিকে চোখ পড়লো দরজা খোলা কিন্তু এমন ভাবে রাখা আছে খোলা যে বুঝাই যায় না, আমি আস্তে আস্তে উঠে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম সোহাগী কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে আর হাসছে, এতো রাতে ও কার সাথে কথা বলবে ভেবে পাচ্ছি না, দরজা খোলে ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম ও আমার উপস্থিতি টের পেয়ে ফোন রেখে রুমে চলে আসলো, আমি রুমে এসে বিছানায় বসে ওর দিকে শান্তভাবে তাকিয়ে বললাম
–কার সাথে কথা বলছিলে
–আমার একটা ফ্রেন্ড
–হুম রাত দুইটার সময় যে ফ্রেন্ড এর সাথে কেউ কথা বলে না সেটা আমি জানি
–(নিশ্চুপ)
–ভয় করে না এতো রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে
–না
–আজ তো ফোনে দিব্বি জোরে জোরে হাসলে সেদিন আমি বলাতে বলেছিলে হঠাৎ করে হাসা যায় নাকি
–তোমার কথামতো আমাকে হাসতে হবে নাকি
–একদম না, ঘুমিয়ে পর
চোখ বাধা মানছে না খুব কাঁদতে চাইছে কোনো ভাবে নিজেকে শান্ত করে শুয়ে পড়লাম, সোহাগী সোফায় শুয়েছে ডাকিনি থাকুক নিজের মতো করে

সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো সোহাগী সোফায় ঘুমিয়েছে দেখলে আম্মু কি ভাববে তাই ওকে কোলে তুলে বিছানায় এনে শুয়ে দিলাম, দরজা খুলে দেখি আম্মু কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন
–আম্মু এখন কফি খাবো না
–কেন
–আরো ঘুমাবো আর শুন দুপুরে মুমু আসবে সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো
–ঠিক আছে
ভাবছি বিছানায় ঘুমাবো কিনা যদি সোহাগী রেগে যায় তাই সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম

–ভাইয়া এই ভাইয়া উঠ
–মুমু তুই কখন আসলি
–অনেক্ষণ হলো আম্মু তোকে ডাকতে নিষেধ করেছিল কিন্তু এখন তো লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছে উঠে পর
–ঠিক আছে
–ভাইয়া তুই সোফায়….
–এমনি সকালে আম্মুর সাথে কথা বলে এসে শুয়ে ছিলাম তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা
–আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়
–হুম
এতোক্ষণ ধরে ঘুমালাম আর সোহাগী একবার ডাকলোও না কি যে হয়েছে ওর, এসব ভাবতে ভাবতে গোসলে চলে গেলাম

গোসল করে নিচে এসে দেখি ড্রয়িংরুমে জিসান বসা ওকে দেখেই তো রাগ উঠে গেলো, আমি গিয়ে মুমুর পাশে বসে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম
–সজিব আসেনি
–না ওর কাজ পরে গেছে পরে আসবে
–তাহলে জিসানকে কেন….
–আমাকে তো একা আসতে দিবে না তাই ও এসেছে
–হুম
–সাজিদ ভাইয়া এসেছে অনেক্ষণ হলো
–কোথায়
–রান্নাঘরে আম্মুকে হেল্প করছে
–ও না পারেও বটে কিন্তু সোহাগী কোথায়
–দেখিনি ছাদে হবে
–ভালো তো পিচ্ছি বলে সবাই মাথায় তুলে রেখেছ
–ভাইয়া চুপ কর খেতে চল
–যা মহারানী কে ডেকে নিয়ে আয়
–ওকে

সবাই একসাথে খেতে বসেছি শুধু আব্বু ছাড়া কারন আব্বু অফিসে, জিসানকে এমনি রাগ উঠে আর সোহাগী গিয়ে ওর সামনের চেয়ারে বসেছে, কিছু বললাম না শুধু রাগি চোখে ওর দিকে একবার থাকালাম
মুমু: ভাইয়া তুই অনেক শুকিয়ে গেছিস
সাজিদ: ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেনি হয়তো
আমি: আর খাওয়া দাওয়া যা কাজের চাপে পড়েছিলাম রাতদিন এক করে কাজ করতে হয়েছে
সাজিদ: ভাবি নাহিলকে এখন ভালো করে খাওয়াও যেন আগের চেয়ে মোটা হয়ে যায় হাহাহাহা (সাজিদের কথার উত্তর না দেওয়াতে সবাই সোহাগীর দিকে তাকালাম ও একমনে খেয়ে যাচ্ছে আর পা নাচাচ্ছে, জিসানের দিকে তাকালাম জিসানও পা নাচাচ্ছে দেখে টেবিলের নিচে তাকালাম বাহ্ আমার পিচ্ছি বউ তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে এখন তো আর ও অবুঝ নেই অনেক বুঝদার হয়ে গেছে তাই তো সবার চোখের আড়ালে জিসানের পায়ের সাথে ওর পা দিয়ে খেলা করছে, আম্মু এসব দেখে না খেয়ে উঠে চলে গেলেন, মুমু আমার দিকে কাঁদোকাঁদো হয়ে তাকিয়ে আছে, আরেকবার দুজনের দিকে তাকালাম জিসান হাত দিয়ে সোহাগীকে ইশারা দিলো ছাদে যাওয়ার জন্য, আর ভালো লাগছে না এসব দেখতে না খেয়েই উঠে রুমে চলে আসলাম, কি হলো এইটা আমার সোহাগী শেষ পর্যন্ত….
–নাহিল (সাজিদের ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম)
–এখন কান্না করে লাভ নেই
–তারমানে তুই জানতি
–হুম আমরা সবাই ওদের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলাম
–আমি বার বার জিজ্ঞেস করার পরও আমাকে বলিস নি কেন
–আঙ্কেল নিষেধ করেছিলেন তুই বাহিরে থাকা অবস্থায় যেন কিছু না বলি কারন সেখানে তুই একা নিজেকে সামলে নিতে পারবি না
–খুব ভালো, তো এখন আমি কিভাবে সহ্য করবো এসব
–তুই শান্ত হ প্লিজ রেগে গিয়ে চেঁচামেচি করলে সমস্যার সমাধান হবে না ভেবে চিন্তে কিছু করতে হবে
–সাজিদ তুই এইটাকে সমস্যা বলছিস তুই দেখিসনি ওদের দুজনের সম্পর্ক কতোটা গভীর
–প্লিজ তুই শান্ত হ…
–সোহাগী কোথায়
–(নিশ্চুপ)
–ছাদে তাই তো
–হুম দেখলাম ছাদের দিকে যাচ্ছে
–ওকে তুই ড্রয়িংরুমে যা আমি আসছি
–হুম

ছাদের দরজা আস্তে আস্তে খোলে চারপাশে একবার চোখ বুলালাম, হঠাৎ একপাশে চোখ আটকে গেলো যা কখনো ভাবিনি যা দেখার জন্য মুটেও প্রস্তুত ছিলাম না সোহাগী আমাকে সেটাই দেখালো, ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে সোহাগী দাঁড়িয়ে আছে আর হাসছে জিসান ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মাঝে মাঝে হাতে মায়া দিচ্ছে, এসব দৃশ্য সহ্য হচ্ছে না মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে খুব কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে সোহাগীর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ১৫

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

পিচ্ছিটা সত্যি সত্যি আমার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো, ফোনের দুপ্রান্তে দুজন আছি ও ঘুমাচ্ছে আর আমি নিশ্চুপ হয়ে ওর নিঃশ্বাস শুনছি….

একটা সপ্তাহ কেটে গেলো কাজের চাপে কোনদিকে সময় চলে গেছে বুঝতে পারিনি কিন্তু আমার কাজের এক ভাগও শেষ করতে পারিনি, এই এক সপ্তাহ সোহাগীর সাথে মাত্র দুবার কথা হয়েছে পাগলীটা বোধহয় অনেক রাগ করেছে, তাড়াতাড়ি মোবাইলটা হাতে নিয়ে ওকে ফোন দিলাম, সেই কখন থেকে রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না কি জানি কোনো সমস্যা হলো কিনা
–হ্যালো
–কি হলো এতোক্ষণ ধরে ফোন রিসিভ করছ না কেন
–শুনি নি আমি বারান্দায় ছিলাম
–মানে কি রাত প্রায় বারোটা বাজে আর তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছ ভয় করে না
–না এখন আর ভয় করে না
–আমার পিচ্ছি বউ বড় হয়ে গিয়েছে নাকি
–হয়তো
–রাগ করেছ
–কি কারনে রাগ করবো
–এক সপ্তাহ হয়ে গেলো তোমার সাথে তেমন কথা বলতে পারিনি প্লিজ রাগ করোনা আমি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করছি তোমার কাছে যেন খুব শীঘ্রই ফিরে আসতে পারি
–রাগ করবো কেন তুমি কাজে ব্যস্ত আমি তো জানি রাগ করিনি
–তাহলে মিষ্টি করে একটা হাসি দাও
–হঠাৎ করে হাসা যায় নাকি
–ঠিক আছে এতো রাতে হাসতে হবে না হাসলে পেত্নীর মতো লাগবে হাহাহাহা
–হুম
–যাও ঘুমিয়ে পড়
–ওকে
ফোন রেখে মন শান্ত করতে পারছি না কেন যেন মনে হচ্ছে সোহাগী কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে আছে, কিন্তু কি নিয়ে টেনশনে থাকবে ওর পাশে তো সবসময় আমি থাকছি আর আমার অবর্তমানে আমার পরিবার সাজিদ সবাই ওর খেয়াল রাখছে, আমি নেই তারমাঝে আবার ফোনে তেমন কথা হয়নি তাই হয়তো মন খারাপ এইটা ভেবেই নিজেকে শান্তনা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম

সকালে মুমুর ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো
–হ্যালো
–ভাইয়া কেমন আছিস
–আর ভালো কাজের চাপে আমি তো একদম পিষে যাচ্ছি
–আর কতো দিন লাগবে
–জানিনা এখনো এক ভাগও শেষ হয়নি ওই বেটা ম্যানেজার কে দুলাই দিতে মন চাইতেছে
–ভাইয়া যতো তাড়াতাড়ি পারিস কাজ শেষ করে চলে আয়
–কেন রে কিছু কি হয়েছে
–না না কি হবে এমনি তোকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব
–তাহলে ভিডিও কল দে
–না সামনাসামনি দেখার অনুভূতিটাই অন্যরকম
–ঠিক আছে আর মাত্র একটা মাস দিন রাত কাজ করে সব গুছিয়ে বাংলাদেশে চলে আসবো
–ঠিক আছে
–সজিব কেমন আছে রে
–ভালো
–ঠিক আছে এখন রাখি
–ওকে
ফোন রেখে চুপ করে বসে আছি মাথায় কিছু ঢুকছে না সোহাগীর কথায় মনে হলো ও টেনশনে আছে আবার মুমুর কথায় কেমন যেন রহস্য আছে মনে হলো, তাহলে কি বাসায় কিছু হয়েছে….?

সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকি তাই সোহাগীকে ফোন দিতে পারিনা কিন্তু ও তো একবার দিতে পারে, সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে গভীর রাতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরি তারপরও বাসায় এসেই ওকে ফোন দেই আর ও একদিন রিসিভ করলে তিনদিন রিসিভই করে না

আর মাত্র এক সপ্তাহ এর ভিতরে কাজ শেষ হয়ে যাবে আর কাজ শেষ হলেই সোহাগীর কাছে ফিরে যাবো, আচ্ছা আমি যে সোহাগীকে দেখার জন্য এমন চটপট করছি ও কি এমন করছে….?
মনে তো হয় আমাকে ভুলেই গেছে কারন সেদিন ও ফোনে বলেছিল “যতোদিন লাগে কাজ পুরোপুরি শেষ করে এসো সমস্যা নেই”
যদি সোহাগী আমাকে মিসস করতো তাহলে তো এই কথা না বলে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ওর কাছে ফিরে যেতে বলতো, ফোনটা বেজে উঠলো আম্মু ফোন দিয়েছেন, রিসিভ করলাম
–আম্মু কেমন আছ
–ভালো তুই
–আছি ভালো এক সপ্তাহ পর আরো বেশি ভালো থাকবো
–নাহিল তুই তাড়াতাড়ি চলে আয় থাকুক কাজ টাকা লস হলে হউক
–আম্মু কি হয়েছে
–না না কিছু না তোকে না দেখে কখনো এতোদিন থাকিনি তো তাই
–আম্মু তুমি আর মুমু না বাচ্চাদের মতো কথা বলো, এখন প্রিয় মানুষ দূরে থাকলে তাকে দেখার জন্য কতো পদ্ধতি আছে ভিডিও কল দিলেই তো হয়
–তোকে বলেছি চলে আসতে চলে আসবি আর খুব শীঘ্রই
–ঠিক আছে আম্মু
ফোন রেখে দফ করে সোফায় বসে পড়লাম, কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছি না মনে তো হচ্ছে সবাই আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছে, আবার ফোন বেজে উঠলো মুমু ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–ভাইয়া
–কিরে তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন কাঁদতেছিস কেন
–কিছুনা তুই দেশে আসবি কবে
–এইতো আর এক সপ্তাহ লাগবে
–এক সপ্তাহ বুঝি না এই এক সপ্তাহে যা ক্ষতি হবার হউক তুই সকালের ফ্লাইটেই দেশে আসবি
–কি বলছিস এসব
–যা বলেছি তাই করবি
–ঠিক আছে কিন্তু হয়েছেটা কি বলবি তো
–কিছু হয়নি বলছি আসতে চলে আসবি আর সকালের ফ্লাইটেই
–ওকে
মুমুর ফোন রেখে ভাবছি সাজিদ কে ফোন দিব কিনা, কি হয়েছে ও নিশ্চয় আমাকে বলবে তাই ফোন দিলাম
–হ্যালো
–সাজিদ সত্যি করে বলতো কি হয়েছে
–আরে আজব তো ফোন দিয়ে হুট করে বলছিস কি হয়েছে কোন ব্যাপারে বলবি তো আগে
–আমি জানি তুই সব জানিস
–আচ্ছা কোন বিষয় সেটা তো বলবি
–আম্মু আর মুমু বার বার ফোন করে দেশে যেতে বলছে তাও আবার কাজ রেখেই আগামীকাল সকালের ফ্লাইটেই যেতে বলছে তারমানে বাসায় কিছু হয়েছে
–আমি সবসময় তোদের বাসায় যাওয়া আসা করছি কিছু হলে তো আমি ঠিকি জানতাম
–সত্যি জানিস না
–আরে আন্টি হয়তো তোকে না দেখে থাকতে কষ্ট পাচ্ছেন এসব না ভেবে আন্টির কথা মতো চলে আয়
–সাজিদ আমার সোহাগী ঠিক আছে তো
–এইটা কেমন কথা নাহিল তুই তো প্রতিদিন ভাবির সাথে কথা বলছিস
–নারে এখানে আসার পর ওর সাথে তেমন কথা হয়নি
–হবে হবে সকালের ফ্লাইটে চলে আয়
–ওকে

একটু পর ফ্লাইট তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এয়ারপোর্ট চলে আসলাম হঠাৎ মনে পরলো সোহাগীকে তো জানাই নি আজ যে যাবো তাই ওকে ফোন দিলাম কিন্তু রিসিভ করছে না, অনেক্ষণ রিং বাজার পর রিসিভ করলো
–হ্যালো
–কি করো এতোক্ষণ লাগে ফোন রিসিভ করতে
–আমি একটু বাইরে এসেছি ফোনের আওয়াজ শুনিনি
–তুমি বাইরে গিয়েছ একা নাকি
–হ্যাঁ তাতে সমস্যা কি
–তোমার বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন কি কিছু লাগলে আম্মু বা সাজিদ কে বলতে
–আমার নিজের কোনো স্বাধীনতা নেই নাকি
–নাহ আছে যা খুশি করো কিন্তু আজ কি জানো
–আজ আবার কি রাখ তো ভালো লাগছে না
–হুম
ফোনটা কেটে দিলাম দিলো আমার মাথাটা নষ্ট করে, উনার স্বাধীনতা প্রয়োজন হেহ

এয়ারপোর্ট বসে আছি মাথা থেকে সব রাগ জেরে ফেললাম সোহাগীকে আজ দেখবো এই খুশিতে হঠাৎ মনে হলো আমি যে আজ দেশে যাচ্ছি সোহাগী তো জানেনা ওকে সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে, আম্মুকে তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম
–কিরে কখন আসবি
–এইতো একটু পর ফ্লাইট, আম্মু
–কি কিছু বলবি
–আমি যে আজ যাবো সোহাগী কি জানে
–না
–ঠিক আছে ওকে বলোনা সারপ্রাইজ দিবো ওকে
–হুম ঠিক আছে
–আচ্ছা আম্মু রাখি

আর মাত্র এক ঘন্টা বাসায় পৌঁছে যাবো সোহাগীকে সামনাসামনি দেখবো ভাবতেই মনটা নেচে উঠলো, আবার সোহাগীর সেই খিলখিল করে হাসি শুনবো, আবার রোজ রাতে পাগলীটা ভয় পেয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে আমার বুকে ঘুমাবে, চোখ দুটু বন্ধ করে ফেললাম পিচ্ছিটার সেই হাসি কথা বলা সবকিছু অনুভব করছি…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ১৪

1

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছি কিছু ভালো লাগছে না খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল তাই সবার চোখের আড়ালে এসে কাঁদছি, একটু পর বর এসে মুমু কে নিয়ে যাবে আমি এখন থেকে কার সাথে ঝগড়া করবো, কে আমাকে সব কিছুতে শাসাবে আমি কাকে ভালোবাসবো, একটু পর পর কে আমাকে ভাইয়া বলে ডেকে উঠবে ওহ আর সহ্য হচ্ছে না বুকের বাম দিকটায় কেমন যেন ব্যাথা করছে, পৃথিবীর নিয়ম এমন অদ্ভুত কেন ছোট থেকে ভালোবাসায় মমতায় বড় করা বোনটা কে ভাইয়ের কাছ থেকে কেড়ে নেয়, আমার যেমন কষ্ট হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত ভাইদের কি এমন কষ্ট হয়….?
–নাহিল তুই এখানে আর আমি তোকে সব জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছি (সাজিদের ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে ওর দিকে তাকালাম, ও হয়তো বুঝতে পেরেছে তাই আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো)
–বর চলে এসেছে চল
–হুম

বিয়ের কাজ খুব সুন্দর ভাবে হলো এখন বিদায়ের পালা সবাই মুমুকে গাড়িতে তুলে দিতে ব্যস্ত আমি একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে শুধু দেখছি যেন কেউ আমার কান্না না দেখতে পায় হঠাৎ মুমু আমার দিকে তাকালো তারপর এক দৌড়ে আমার কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো পাগলীটার চোখ ফাঁকি দিতে পারলাম না, আমাদের ভাই বোনের কান্না কেউ দেখছে না সবাই অনেক দূর কিন্তু সাজিদ ঠিকি আমাদের খুঁজে বের করে ফেলছে, ও এসে আমাদের সাথে কান্নায় যোগ দিল
মুমুকে বুঝাচ্ছি জিসান উল্টাপাল্টা কিছু বললে যেন কথা না বাড়িয়ে আমাদের বা সজিবকে বলে এমন সময় একটু সামনে চোখ পড়লো সোহাগী কি যেন কাজ করছে হাত উপরে তুলে যার কারনে ওর পেটের শাড়ি সরে গিয়ে পেট দেখা যাচ্ছে আর জিসান সোহাগীর দিকে তাকিয়ে আছে, আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাজিদ আর মুমু ওইদিকে তাকালো, আমরা যা কল্পনাও করতে পারিনি জিসান সেটাই করে বসলো, সোহাগীর পেটে হাত রাখলো আর হাত রাখতেই সোহাগী ঘুরে ওর গালে থাপ্পড় দিয়ে বসলো, অনেক সহ্য করেছি এই জিসানের নষ্টামি আর না
সাজিদ: নাহিল মাথা ঠান্ডা কর
আমি: ওকে আমি আজ মেরেই ফেলবো
মুমু: ভাইয়া তুই থাম আমি দেখছি
সবাই জিসানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আর ও মাথা নিচু করে আছে ন্যাকা এখন কিছু চিনেই না মনে হচ্ছে
মুমু: জিসান তুমি জানো ও কে
জিসান: (নিশ্চুপ)
মুমু: ও আমার ভাবি (জিসান অবাক হয়ে মুমুর দিকে তাকালো তারমানে কি জিসান জানতো না সোহাগী যে আমার স্ত্রী)
জিসান: ভাবি আমি জানতাম না উনি কে আমি ভেবেছিলাম তোমাদের কোন গেস্ট প্লিজ ভাবি ভাইয়া বা আব্বুকে বলো না
মুমু: ঠিক আছে আর কখনো যেন এমন ভুল না হয়
জিসান মাথা নিচু করে চলে গেলো, আমরা মুমুকে গাড়িতে তুলে দিলাম

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি সোহাগী এসে পাশে দাঁড়ালো
–কি করছ
–রাতের আকাশ দেখছি
–মিথ্যা তুমি তো আপুকে মিসস করছ
–(নিশ্চুপ)
–আপুকে খুব ভালোবাস তাই না
–হুম
–দুদিন তো অনেক দখল গেছে চলো ঘুমাবে
–তুমি ঘুমাও পরে ঘুমাবো
–আমার বুঝি একা ভয় লাগে না
হেসে দিলাম ওর কথা শুনে পিচ্ছিটা এখনো একা ঘুমাতে ভয় পায়

সকালে আব্বুর চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গলো তাড়াতাড়ি উঠে ড্রয়িংরুমে গেলাম, আব্বু সোফায় বসে কি নিয়ে যেন কথা বলছেন সবাই পাশে দাঁড়ানো
আমি: আব্বু কি হয়েছে
আম্মু: আমাদের কম্পানিতে কি যেন সমস্যা হয়েছে
আমি: কিসের সমস্যা
আব্বু: কিছু ফাইল আছে তুই দেখলেই বুঝতে পারবি আর ম্যানেজার টাকার হিসাবে প্যাচ লাগিয়ে রেখেছে সবকিছু মিলে এখন প্রায় তিন কোটি টাকা লস হবে
আমি: কি বলছ এসব
আব্বু: সবকিছু ঠিক করা যেত বাহিরে যেতে পারলে কিন্তু আমার শরীর তো একটু অসুস্থ কিভাবে যাবো
আমি: কোথায় যেতে হবে
আব্বু: আমেরিকা, সেখানে আমাদের কম্পানির নতুন একটা শাখা হয়েছে ওখানে গেলেই সব সমাধান হবে
সাজিদ: নাহিল তুই চলে যা
আম্মু: নাহিল কি পারবে
সাজিদ: পারবে আর এতো টাকা লস হলে তো…
আমি: ঠিক আছে যাবো, আব্বু কখন যেতে হবে
আব্বু: এই মুহূর্তে গেলে ভালো হয় যতো তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করবি ততোই ভালো
আমি: ঠিক আছে আমি এখনি চলে যাবো

রুমে এসে কাপড়চোপড় গুছাতে শুরু করলাম সাজিদ আমাকে হেল্প করছে
সোহাগী: নাহিল (হঠাৎ সোহাগী এসে পিছন থেকে ডাক দিলো তাকিয়ে দিকে ওর চোখে পানি)
আমি: কাঁদছ কেন খুব তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ফিরে আসবো
সোহাগী: কিন্তু
আমি: কোনো কিন্তু নেই মন খারাপ করোনা আর শুন তোমার বৌভাতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই
সাজিদ: সবাই যাবে আর ভাবি যা….
আমি: জিসান দুইবার এমন করেছে আবার যে করবে না বিশ্বাস কিসের
সাজিদ: তাও ঠিক
আমি: হ্যাঁ ওর যাওয়ার প্রয়োজন নেই আম্মুর কাছে থাকুক
সাজিদ: ওকে

রুম থেকে বেড়িয়ে যাবো এমন সময় সোহাগী দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো সাজিদ তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো
–এই পিচ্ছি কাঁদছ কেন
–আমি তো তোমাকে ছাড়া কখনো থাকিনি
–তাতে কি কয়েকটা দিনই তো
–আব্বু নিচে কথা বলছেন এক মাস নাকি লাগবে
–লাগুক রোজ ফোনে কথা বলবো
–আমার তো ফোন নেই
–সাজিদ কে বলে যাবো তোমাকে ফোন কিনে দিতে
–ঠিক আছে
সোহাগীর কপালে একটা মায়া দিয়ে বেড়িয়ে আসলাম, আমারো তো কষ্ট হচ্ছে ওকে ছাড়া থাকবো কিভাবে আর ও তো রাতে একা ঘুমাতে পারেনা কিন্তু কোনো উপায় যে নেই যেতেই হবে

এয়ারপোর্ট বসে আছি সাজিদ সাথে এসেছে যেতে মন চাইছে না
–নাহিল মন খারাপ করিস না
–হুম
–কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ফোনে বলিস
–যাওয়ার সময় সোহাগীর জন্য একটা ফোন কিনে নিয়ে যাস
–ঠিক আছে

এখানে এসে তো দেখছি অনেক কাজ জমে আছে দুমাসেও শেষ করতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে, এতো দেরি হলে তো সোহাগী…. সোহাগীর কথা মনে পড়তেই আম্মুর নাম্বারে ফোন দিলাম এখানে পৌঁছে বাসায় ফোন দেওয়ার সুযোগও পাইনি
–আম্মু
–হেরে কখন পৌঁছেছিস
–এইতো একটু আগে
–ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে
–আম্মু সোহাগীর কাছে দাও তো
–দাড়া দিচ্ছি
মধ্যে মাত্র কয়েকটা ঘন্টা ওকে দেখিনি তাতেই এতো কষ্ট হচ্ছে প্রায় দুইমাস কিভাবে যে থাকবো বু…..
–হ্যালো (সোহাগীর কন্ঠ শুনে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছি)
–তোমার কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন কান্না করেছ
–উহু
–সাজিদ মোবাইল দিয়েছে
–হ্যাঁ
–ঠিক আছে ফোন অন করে আমাকে ফোন দিও
–হুম
–এখন রাখি ফ্রেশ হবো
–আচ্ছা
ফ্রেশ হয়ে অল্প কিছু খেয়েই কাজে লেগে গেলাম যতো তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করবো ততো তাড়াতাড়ি সোহাগীর কাছে ফিরে যেতে পারবো

ফাইল দেখতে দেখতে কখন যে রাত দুটু বেজে গেছে বুঝতেই পারিনি, হঠাৎ সোহাগীর কথা মনে পড়তেই তাড়াতাড়ি মোবাইল হাতে নিলাম, একটা অচেনা নাম্বার থেকে অনেকগুলো ফোন এসেছিল নিশ্চয় সোহাগী হবে তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম
–ফোন দিয়েছ কেন
–রাগ করোনা আমার কথা শুনো আগে
–কি শুনবো তুমি ওখানে গিয়ে আমাকে ভুলে গিয়েছ তাও মাত্র কয়েক ঘন্টায় আর এক মাস থাকলে তো….
–আমি কাজ করছিলাম বুঝনা কেন যতো তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হবে ততো তাড়াতাড়ি তোমার কাছে ফিরে আসতে পারবো
–(নিশ্চুপ)
–এতো রাত হয়েছে ঘুমাও নি কেন
–জানোনা আমি একা ঘুমাতে ভয় পাই
–ঠিক আছে মোবাইল কানে লাগিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়, তুমি না ঘুমানো পর্যন্ত আমি ফোন রাখবো না তাহলে মনে হবে আমি তোমার পাশে আছি
–তাই
–জ্বী তাই
পিচ্ছিটা সত্যি সত্যি আমার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো, ফোনের দুপ্রান্তে দুজন আছি ও ঘুমাচ্ছে আর আমি নিশ্চুপ হয়ে ওর নিঃশ্বাস শুনছি….

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ১৩

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

আব্বু: নাহিল কাজ কতদূর হলো
আমি: আব্বু সব কাজ শেষ তুমি টেনশন না করে যাও তো মেহমানরা আসছে কিনা দেখ
সাজিদ: নাহিল মুমু কে স্টেজে আনতে বল
আমি: হ্যাঁ বলছি
আজ আমার ছোট বোনটার গায়ে হলুদ ভাবতেই ভালো লাগছে কাল ও চলে যাবে এইটা ভেবে কান্নাও পাচ্ছে, খুব অদ্ভুত নিয়ম ছোট থেকে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করে অন্যের হাতে তুলে দিতে হয়, ভাবতে ভাবতে মুমুর রুমের সামনে চলে আসলাম, ছেলের পক্ষ থেকে হলুদ লাগাতে এক্ষণি চলে আসবে
আমি: মুমু তোর হলো ছেলের পক্ষ তো চলে আসবে এক্ষণি
মুমু: আমার শেষ তোমার বউ এখনো সাজছে
সোহাগী: আমারো শেষ তুমি যাও আমি আপুকে নিয়ে আসছি
সাজিদ: নাহিল তাড়াতাড়ি চল ছেলের বাড়ি থেকে সবাই চলে এসেছে
তাড়াতাড়ি চলে আসলাম মেহমানদের আপ্যায়ন করছি হঠাৎ সাজিদের দিকে লক্ষ হলো সামনে তাকিয়ে আছে দেখে আমিও তাকালাম
সাজিদ: মাশাল্লাহ্ আমাদের বোনটা কে একদম হলুদ পরীর মতো লাগছে
আমি: (কিছু বলতে পারলাম না মুমুকে দেখে যতোটা না ভালো লাগছে তারচেয়ে বেশি বুকের ভিতর ব্যাথা হচ্ছে কাল ও এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে এইটা ভাবতেই)
সাজিদ: দুর পাগল কাঁদিস না তো মুমু সুখেই থাকবে সজিব ওকে অনেক ভালোবাসে
আমি: হুম
সাজিদ: মুমুর পিছনে একবার থাকা তো আমি নিশ্চিত তুই আজ আবার প্রেমে পড়বি হাহাহা (ওর কথা শুনে মুমুর পিছনে তাকালাম কে যেন মুমুকে ধরে ধরে নিয়ে আসছে একবার শুধু হাত দেখা যাচ্ছে আবার শুধু চুল দেখা যাচ্ছে হঠাৎ সোহাগী মুমুর পাশে এসে দাঁড়ালো, আমি হা করে তাকিয়ে আছি এইটা আমার পিচ্ছি বউ নাকি অন্য কেউ)
সাজিদ: কিরে বলছিলাম না আবার প্রেমে পড়বি
আমি: সত্যিই আমি আবার আমার অবুঝ বউয়ের প্রেমে পড়ে গেছি
সাজিদ: তুই হা করে দেখ আমি যাচ্ছি
আমি এখনো হা করে তাকিয়ে আছি পিচ্ছির দিকে, লাল পারের হলুদ শাড়িতে ওকে দেখতে খুব বেশি সুন্দর লাগছে সাথে লম্বা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে
সোহাগী: এই যে এভাবে হা করে কি দেখছ
আমি: পেত্নী
সোহাগী: কি, পেত্নী মানে
আমি: তোমাকে আজ পুরাই পেত্নীর মতো লাগতেছে
সোহাগী: কান্না করে দিব কিন্তু
আমি: পিচ্ছিরা এটাই ভালো পারে (সোহাগী মুখ গোমরা করে ফেললো আর কিছু বললে এখনি ওর চোখ থেকে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে যাবে)
আমি: আরে পাগলী আমি তো মজা করেছি সত্যি তো এটাই আজ তোমাকে খুব বেশি সুন্দর লাগছে
সোহাগী: তাই (খুশিতে আমাকে জরিয়ে ধরলো ইসসসসস রে মান সম্মান আজ সব গেলো সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে, তাড়াতাড়ি ওকে ছাড়িয়ে ওর থেকে দূরে চলে আসলাম, পাগলী একটা)

সাজিদ: সবকিছু তো সুন্দরভাবে হয়ে গেলো বিয়েটা সুন্দরভাবে হলেই হয়
আমি: হ্যাঁ
সাজিদ: হলুদ দেওয়া তো শেষ মেহমানরা চলে যাবে চল
আমি: হ্যাঁ চল
সামনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পিছনে সোহাগীর কন্ঠ শুনে থেমে গেলাম, পিছনে তাকিয়ে দেখি জিসান সোহাগীর গালে হলুদ লাগানোর চেষ্টা করছে আর সোহাগী ছাড়ানোর জন্য জোরাজুরি করছে, আমি এগিয়ে যেতে চাইলাম সাজিদ আমাকে বাদা দিল
সাজিদ: মাথা গরম করিস না কাল মুমুর বিয়ে
আমি: তাই বলে এইটাও সহ্য করবো
সাজিদ: মুমুর কথা ভাব জামেলা করলে যদি বিয়েটা ভেঙে যায়
তাকিয়ে দেখি জিসান জোর করে সোহাগীর গালে হলুদ লাগিয়ে হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে আর সোহাগী আমার দিকে তাকিয়ে আছে

সব জামেলা শেষ করে ভোরের দিকে রুমে আসলাম সোহাগীকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না, হঠাৎ দেখলাম বারান্দার দরজা খুলা আস্তে আস্তে গিয়ে সোহাগীর পাশে দাঁড়ালাম
–মন খারাপ
–না
–সত্যি
–তুমি ওই ছেলেটা কে কিছু বলনি কেন
–ও কে যানো
–কে
–মুমুর দেবর
–ওহ
–ও এমনিতেই খারাপ ছেলে তখন যদি আমি জামেলা করতাম তাহলে মুমুর বিয়েটা ভেঙে যেতো আর তাতে আমাদের মান সম্মান যেতো সাথে মুমু খুব কষ্ট পেতো কারন সজিব আর মুমু ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে
–আপুর বিয়েটা ভেঙে যাক বা আপু কোনো কারনে কষ্ট পাক তা আমি চাই না বাদ দাও
–তুমি না আস্তে আস্তে অবুঝ থেকে বুঝদার হচ্ছ এখন যা বলি অল্পতেই বুঝে যাও
–তাই
–জ্বী তাই (সোহাগীকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম ঘাড়ে মুখ ঘষতে ঘষতে ওর পেটে হাত রেখে হালকা চাপ দিলাম পাগলীটা দৌড়ে পালিয়ে গেলো)

আজ মুমুর বিয়ে বাড়ি ভরতি মেহমান, আমার একমাত্র বোনের বিয়েতে কোনো কিছুর কমতি রাখিনি, সবকিছু সুন্দর ভাবে হচ্ছে
সাজিদ: নাহিল একবার আন্টির রুমে যা তো
আমি: কেন কি হয়েছে
সাজিদ: আন্টি কাঁদছেন তুই যা উনার পাশে এদিক আমি দেখছি
আমি: ঠিক আছে
তাড়াতাড়ি আম্মুর রুমে আসলাম, এসে দেখি আম্মু বসে বসে কাঁদছেন পাশে সোহাগী আর কাজের বুয়া বসা
আমি: আম্মু তুমি কাঁদছ কেন
আম্মু: আমার একমাত্র মেয়েটা একটু পর চলে যাবে আমার ঘর অন্ধকার হয়ে যাবে
আমি: কি আবোলতাবোল বলছ….
সোহাগী: আম্মু তুমি এই কথা বললা কেন আমি বুঝি তোমার মেয়ে না আর আমি বুঝি তোমার ঘর আলো করে রাখিনা
আম্মু: হ্যাঁ তুই তো আমার আরেক মেয়ে আমি আর কাঁদবো না (বাহ্ ওর কথায় বেশ কাজ হয়েছে আম্মু ওকে জরিয়ে ধরে কান্না থামালেন, আমার অবুঝ বউ আস্তে আস্তে বুঝতে শিখছে)
আমি: সোহাগী মুমু কি পার্লার থেকে এসেছে
সোহাগী: না এসে পড়বে চিন্তা করোনা
আম্মু: কতো করে বললাম তুমি যাও গেলে না আজকে একটু পার্লার থেকে সাজলে কি হতো
সোহাগী: আম্মু আমার পার্লারের সাজ ভালো লাগে না
আম্মু: ঠিক আছে যাও নিজে নিজেই গিয়ে রেডি হয়ে নাও বরযাত্রী চলে আসবে তো
সোহাগী: ঠিক আছে

সোহাগী রুমে চলে গেলো রেডি হবার জন্য আমি সাজিদের কাছে এসে দেখছি কোনো কিছু প্রয়োজন নাকি, হঠাৎ শাড়ির কথা মনে পড়লো তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম কিন্তু সোহাগী রুমে নেই, বাতরুমের দরজা বন্ধ দেখে বুঝতে পারলাম সোহাগী গোসলে আছে তাই শাড়িটা বের করে বিছানায় রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম, একটু পর দরজা খুলার শব্দ শুনে রুমের ভিতরে গেলাম, সোহাগী শাড়ি হাতে নিয়ে অবাক হয়ে শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে আমার উপস্থিতি টের পেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো
–এইটা কি
–শাড়ি
–তা তো দেখতেই পারছি কিন্তু কিনলে কখন
–সেদিন রাতে, তুমি তো ঝিমুচ্ছিলে তাই টের পাওনি, পছন্দ হয়েছে
–হ্যাঁ শাড়িটা খুব সুন্দর কিন্তু
–আবার কিন্তু কি পড়ে নাও
–বাসায় তো কোনো মেয়ে নেই সবাই পার্লারে কে পড়িয়ে দিবে আমি তো শাড়ি পড়তে পারিনা
–তুমি পারোনা কিন্তু আমি তো পারি
–তুমি পারো
–হ্যাঁ অবাক হচ্ছ কেন
–আচ্ছা পড়িয়ে দাও
–ওকে
শাড়িটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে সোহাগীকে পড়িয়ে দিতে শুরু করলাম, পিচ্ছিটা এতো সুন্দর করে শাড়ি পড়ানো দেখে আমার দিকে বার বার অবাক হয়ে তাকাচ্ছে, শাড়ির কুচি ঠিক করে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে ওর পেটে হাত দিয়ে কুচিগুলো গেতে দিলাম হাহাহাহা পাগলীটা সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে, চোখ বন্ধ আর ভেজা এলোমেলো চুলে ওকে খুব মায়াবী লাগছে, ওর এই মায়াবী চেহারা আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখছি…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ১২

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

–নাহিল উঠো আব্বু রেডি হয়ে গেছেন (সোহাগীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো আজ যে সজিবদের বাসায় যাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম)
–আগে জাগাবা না
–সেই কখন থেকে তোমাকে ডেকে যাচ্ছি শুনছই না
–ওহ (পাশ ফিরে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো ভাবলাম ঘুমের ঘোরে বুঝি ভুল দেখছি তাই চোখ দুইটা কচলে আবার ভালো ভাবে তাকালাম বাহ্ আমার পিচ্ছি বউ আজ শাড়ি পড়েছে)
–হা করে কি দেখছ
–আমার পিচ্ছি বউটাকে
–কেন নতুন দেখছ নাকি
–শাড়িতে তোমাকে খুব বেশি সুন্দর লাগে
–বুঝেছি অন্য সময় খারাপ লাগে (বলেই অভিমান করে আমার পাশে বিছানায় বসে পড়লো, হাতের কাছে পেয়েছি আমাকে আর পায় কে টান দিয়ে ওকে আমার বুকে শুয়ে দিলাম, গারো করে কাজল দেওয়া চোখ দুইটার দিকে তাকিয়ে আছি ইচ্ছে হচ্ছে এই চোখ জুরার গভীরতায় ডুব দিয়ে কাটিয়ে দেই সহস্র বছর)
–নাহিল ছাড় রেডি হয়ে নাও
–উহু পরে তুমি আরো কিছুক্ষণ আমার বুকে থাকো
–আব্বু রেডি হয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন
–ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম
তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম, রুম থেকে বেরুনোর আগে পিচ্ছির কপালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিতে ভুললাম না

ড্রয়িংরুমে এসে দেখি আব্বু রেডি তাই আর দেরি না করে বেড়িয়ে পড়লাম, গাড়িতে বসে বসে ভাবছি আব্বুকে জিসানের কথা বলবো কিনা, না বললেও সমস্যা জিসান যদি হুট করে সেদিনের মতো কিছু বলে ফেলে তাহলে তো আব্বু বিয়েই ঠিক করবেন না, বিয়েটা সেদিন আমিই বাদ দিয়ে দিতাম শুধু মুমু সজিবকে ভালবাসে বলে চুপ করে সহ্য করেছি
–আব্বু
–কিছু বলবি
–সজিবের ছোট ভাই জিসান মাথাটা একটু গরম হুট করে কি বলে ফেলে নিজেই বুঝে না তাই ও কিছু বললে কান দিও না
–অন্যায় কিছু বললে অবশ্যই কান দিবো
–না আব্বু প্লিজ শুভ কাজে খারাপ কিছু হউক আমি তা চাইনা
–ঠিক আছে

সজিবদের বাসায় এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় হলো, সবাই ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছি, আমার চোখ দুটি জিসানকে খুঁজে বেড়াচ্ছে ভাবছি ও আজ বাসায় না থাকলেই ভালো সেদিন যা বলেছিল আজ এমন কিছু বললে বিয়েটা ভেঙে যাবে আর বিয়ে ভেঙে গেলে মুমু কষ্ট পাবে, আমি মুমুর চোখে পানি দেখতে চাই না
আঙ্কেল: তাহলে বেয়াই সাহেব বিয়ের দিনটা খুব শীঘ্রই ঠিক করে ফেলি
আব্বু: হ্যাঁ কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি
আন্টি: আমি আর দেরি করতে চাই না, আমার মেয়ে নেই তাই খুব তাড়াতাড়ি মেয়ে ঘরে আনতে চাই
আব্বু: ঠিক আছে
আঙ্কেল: তাহলে আগামী শুক্রবার বিয়ে
আমি: আব্বু মাত্র দুদিন মধ্যে
আঙ্কেল: সমস্যা কি শুভ কাজে দেরি করতে নেই
আব্বু: হ্যাঁ এই তারিখই থাকুক
আমি: ঠিক আছে

আরো কিছুক্ষণ বসে সজিবদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম, আব্বুকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে আমি কাজে লেগে গেলাম, পরশু দিন গায়ে হলুদ সবকিছু আজ আর কালকের মধ্যে করতে হবে তাই সাজিদকে ফোন করে আমাদের বাসায় চলে আসতে বললাম

সারাদিন কাজ করে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে সন্ধ্যার দিকে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলাম, ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি সোহাগী গাল ফুলিয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে, রাগ করার কারন বুঝতে পারছি না তাই আস্তে করে ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম ও আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে
–আমার পিচ্ছিটা রাগ করেছে কেন
–এমনি
–এমনি তো কারন হতে পারেনা বলো কেন
–সেই সকাল বেলা বেড়িয়েছিলে সারাদিনের ভিতরে একবারো বাসায় আসো নি জানো আমি তোমাকে কতোটা মিসস করেছি
–ওহ এই কথা আজ খুব বেশি ব্যস্ত ছিলাম আর এই কয়টা দিন অনেক ব্যস্ত থাকবো তাই তোমাকে বেশি সময় দিতে পারবো না
–দিতে হবে না
–রাগ করোনা মুমুর বিয়ের পর আমরা হানিমোনে যাবো
–সত্যি তো
–জ্বী সত্যি (সোহাগী ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, সোহাগী আমাকে আস্তে আস্তে ভালোবাসতে শুরু করেছে সেটা ওর কথাতেই বুঝা যায়, কবে যে ও সবটুকু দিয়ে আমাকে ভালোবাসবে)

খেতে বসেছি তখন আব্বু বললেন
আব্বু: নাহিল আমি ভাবছি এখন শপিং করে ফেললে কেমন হয়
আমি: এখন এই রাতের বেলা
আব্বু: মাত্র আটটা বেজেছে সুন্দর ভাবেই শপিং করা যাবে
সাজিদ: হ্যাঁ এখন করাই ভালো মধ্যে তো কালকের দিনটাই শুধু পরশু তো গায়ে হলুদ (সাজিদ দরজায় দাঁড়িয়ে বললো)
আমি: দরজায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন এসে খাবার নিয়ে বসে যা
সাজিদ: না এখন খাবো না তুই সারাদিন অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছিস শান্তি মতে খাঁ
আম্মু: তাহলে কি আমরা রেডি হবো
আব্বু: হ্যাঁ রেডি হয়ে যাও মুমু আর বউমাকে বলো রেডি হতে একটু পর আমরা বের হবো

সবাইকে নিয়ে বের হলাম সাজিদ ড্রাইভ করছে আর আমি সোহাগীর পাশে পিছনে বসেছি ওকে নিয়ে রাতে কখনো বেরোই নি তাই
আব্বু: নাহিল দুদিনে সব করতে পারবি তো
আমি: আব্বু পার….
সাজিদ: আঙ্কেল আপনি একদম টেনশন করবেন না নাহিল আর আমি সবকিছু দেখবো (সাজিদকে এজন্যই ভালো লাগে যেকোনো কাজে আমার ভাইয়ের মতো হেল্প করে)
আমি: সাজিদ থ্যাংকস এভা….
সাজিদ: থ্যাংকস দিচ্ছিস কেন মুমু কি তোর একা বোন, কিরে মুমু তুই কি শুধু নাহিল এর বোন
মুমু: না ভাইয়া আমি তোমাদের দুজনের বোন
সবাই কথা বলছে আর সোহাগী আমার কাধে মাথা রেখে ঝিমুচ্ছে হাহাহাহা আসলেই ও পিচ্ছি এই সন্ধ্যার সময় ঘুম পাচ্ছে ওর

সব কেনাকাটা প্রায় শেষ হঠাৎ গোলাপি রঙের একটা শাড়িতে চোখ পড়লো আমার, একবার শাড়ির দিকে তাকাচ্ছি আবার সোহাগীর দিকে তাকাচ্ছি ওকে এই শাড়িতে খুব সুন্দর মানাবে, ভাবছি সোহাগীকে জিজ্ঞেস করে কিনবো কিনা ও যেভাবে বসে বসে ঝিমুচ্ছে বিরক্ত না করাই ভালো তাই সবার চোখের আড়ালে শাড়িটা কিনে নিলাম মুমুর বিয়ের দিন পিচ্ছিটাকে পড়াবো
আম্মু: নাহিল কোথায় গেলি
আমি: এইতো আম্মু বলো
আম্মু: বউমা তো ঝিমুচ্ছে এই অবস্থায় কি কিনবে তুই বউমার জন্য শাড়ি পছন্দ করতো
কি আর করার এই শাড়ির কথা না বলে আরেকটা শাড়ি পছন্দ করে কিনে নিলাম, সবার জন্য শপিং করা শেষ রাত এগারোটা বেজে গেছে তাই সবাইকে নিয়ে ডিনার করতে রেস্টুরেন্টে গেলাম, সোহাগীকে বকাঝকা দিয়ে খাওয়ালাম ঘুমের গাদি একটা

আসার সময় তো সোহাগী ঝিমুচ্ছিল এখন আমার কাধে মাথা রেখে আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে, আম্মু আর মুমুর সামনে কিছুটা লজ্জাও লাগছে এই পাগলীকে নিয়ে আর পারলাম না

বাসার সামনে এসে সবাই নেমে পড়লো কিন্তু সোহাগী ঘুমাচ্ছে ডেকেও তুলতে পারতেছি না
মুমু: ভাইয়া আমি বুঝতেছি না এভাবে ডাকছিস কেন ভাবিকে
আমি: ও কি গাড়িতে ঘুমাবে নাকি সারা রাত
সাজিদ: কেন আপনি কোলে করে রুমে নিয়ে যেতে পারেন না
মুমু: হ্যাঁ কোলে করে নিয়ে যা
পাশে তাকিয়ে দেখি আম্মু আব্বু নেই তাই দেরি না করে সোহাগীকে কোলে তুলে নিলাম

সোহাগীকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, আজ ওর খুব কাছ থেকে ওকে দেখছি, একটা মানুষকে ঘুমন্ত অবস্থায় এতোটা মায়াবী লাগতে পারে এই পিচ্ছিকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না, ওর কপালে একটা মায়া দিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য উঠতে চাইলাম সোহাগী ঘুমের ঘোরে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, কি আর করা ফ্রেশ হওয়া বাদ দিয়ে আমিও ওকে জরিয়ে ধরে আমার ঘুমন্ত পরীটা কে মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম….

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ১১

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম উঠেই ফ্রেশ হয়ে নিজের হাতে দুই মগ কফি বানালাম, কফি হাতে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় বসলাম সোহাগী এখনো ঘুমাচ্ছে পাগলীটা হয়তো ভুলেই গেছে আজকে ওর পরিক্ষা, এই কয়েকটা দিন কিভাবে যেন কেটে গেলো সোহাগীর সাথে দুষ্টুমি খুনসুটিতে মেতে ছিলাম
–সোহাগী উঠ
–পরে
–আজকে যে তোমার পরিক্ষা ভুলে গিয়েছ নাকি (তাড়াতাড়ি উঠে বসলো তারপর ঘুম ঘুম চোখে বললো)
–আমার খুব ঘুম পাচ্ছে পড়বো কিভাবে
–এই নাও কফি খাও ঘুম চলে যাবে
–তুমি বানিয়েছ
–হ্যাঁ আমার পিচ্ছি বউটার জন্য
–হিহিহি তুমি খুব ভালো
–কফি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর রাতে যা পড়েছ সেগুলো আবার রিভিশন দাও
–ওকে

সোহাগী টেবিলে বসে পড়ছে আর আমি বিছানায় বসে বসে ওকে দেখছি হ্যাঁ সবাই ওকে পিচ্ছি বলে কিন্তু এই পিচ্ছিটা কেই আমি ভালোবাসি এই পিচ্ছি মেয়েটাই আমার সবকিছু, হঠাৎ সোহাগী আমার দিকে তাকালো আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঠিক আমি যেভাবে ওকে চোখ টিপ দেই ও সেভাবেই চোখ টিপ দিয়ে হেসে দিলো, হাহাহাহা আমার পিচ্ছি বউ আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাচ্ছে, বিছানা থেকে উঠে সোহাগীর পাশে একটা চেয়ারে গিয়ে বসলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
–কি (কিছু না বলে ওর একটা হাত আমার হাতের মুঠোয় আনলাম সোহাগী আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আস্তে আস্তে ঠোট দুইটা ওর ঠোটের দিকে এগিয়ে নিলাম)
মুমু: ভাইয়া নাশতা করবি না (আহারে আমার বোন আর ডাক দেওয়ার সময় পেলনা)
আমি: আসছি যা
মুমু: তাড়াতাড়ি আয় ভাবির পরিক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে
আমি: দিলো আমার রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে
সোহাগী: আপু তোমার রোমান্সের বারোটা বাজাইছে আর তুমি আমার পড়ার বারোটা বাজাইছ
আমি: আর পড়তে হবে না ম্যাডাম যা পড়েছ তাতেই হবে এখন নাশতা করতে চলো
সোহাগী: ওকে

সোহাগীকে নিয়ে স্কুলে আসলাম গাড়ি থেকে নেমে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো
–বাসায় চলে যাও
–না আজকে তোমাকে নিয়েই একেবারে যাবো
–এতো সময় এখানে থাকবা
–সমস্যা নেই তুমি ভালো করে পরিক্ষা দিও
–ওকে
সোহাগী চলে গেলো আমি এখনো তাকিয়ে আছি ও গেইটের সামনে যেতেই পিয়ালের মুখামুখি হলো, দূর থেকে বুঝা গেলো না ওরা কি কথা বলছে তবে সোহাগী আজ হেসে হেসে একটু কথা বলেই পিয়াল কে রেখে চলে গেলো, যাক পিয়ালের ভূতটা তাহলে মাথা থেকে নেমেছে

স্কুলের পাশের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি হঠাৎ সামনে চোখ পড়লো দুলাভাই এদিকে তাও আবার আমার দিকেই আসছে, এসে আমার পাশে বসে পড়লো চায়ের অর্ডার দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বত্রিশটা দাঁত বের করে একটা হাসি দিল যেমন জঘন্য মানুষ তেমন তার হাসি
–আমার শালিকা কে স্কুলে নিয়ে এসেছ
–হ্যাঁ
–সেদিন কিন্তু কাজটা মুটেও ঠিক করনি
–কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটা বুঝার মতো বয়স আমার হয়েছে
–তবে যাই বলো সোহাগীর চেয়ে ওর সম্পত্তির প্রতি আমার লোভটা বেশি
–অন্যের জিনিসের প্রতি লোভ করা ভালো না আর সোহাগী এখন আমার স্ত্রী তাই….
–বুঝেছি সোহাগীর কথা বাদ দাও কিন্তু সম্পত্তি
–এইটার মালিক সোহাগী ওর সম্পত্তির উপর আমার কোনো লোভ নেই তাই ওর সম্পত্তি ওর যা খুশি করবে….
–হাহাহা তাহলে আমার শালিকা কে বলো সব সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিতে
–কেন আপনি কি যে আপনাকে ভয় পেয়ে সম্পত্তি দিয়ে দিতে হবে
–জানি সোহাগীকে কিছু করা সম্ভব না কিন্তু ভুলে যেও না ওর বোন কিন্তু আমার স্ত্রী
–ভয় দেখাচ্ছেন
–না তবে….
–সোহাগীর পিছু ছেড়ে দিন
–সম্পত্তি পেলে ছেড়ে দিব সাথে ওর বোনকেও সুখে রাখবো
–যদি টাকা দেই
–হুম হবে
–ঠিক আছে পেয়ে যাবেন
আবারো বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে চলে গেলো, মানুষ এতো খারাপ হয় ওকে না দেখলে বুঝতাম না, সুখের সংসারে দুঃখ আসুক তা আমি চাই না তাছাড়া আপু যদি একটু সুখে থাকেন সেই আশায় ওকে টাকা দিতে রাজি হয়েছি

গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ সোহাগী দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো তারপর আমার গালে মায়া দিয়ে দিল আমি তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি, যে মেয়ে আমাকে কখনো মায়া দেয়নি সে কিনা আজ
–ওই কি হলো (সোহাগীর ধাক্কায় হুশ ফিরলো তাকিয়ে দেখি আশেপাশের মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে)
–কথা বলছ না কেন
–আসলে তুমি আমাকে মায়া দিয়েছ জরিয়ে ধরেছ তোমার স্পর্শে কেমন যেন জমে গেছি
–তাই
–হঠাৎ এভাবে….
–আমার পরিক্ষা অনেক ভালো হইছে এই খুশিতে
–তাহলে তো প্রতিদিন তোমার উষ্ণ ছুঁয়া পাওয়ার জন্য হলেও তোমাকে রোজ ভালো ভাবে পড়াতে হবে (মনে মনে বললাম)
–কি হলো বাসায় যাবে না
–হুম যাবো তার আগে চলো ফুচকা খাই
–সত্যি
–হ্যাঁ

সোহাগীকে নিয়ে ফুচকা খেয়ে কিছু সময় ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরলাম

রাতের খাবার শেষে সোহাগী পড়তে বসলো আর আমি ওর পাশেই বসে আমাদের ব্যবসার কিছু ফাইল দেখছি আর মাঝে মাঝে ওকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছি, সোহাগী বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে
–কিছু বলবে
–আমার না আজ পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না
–মন দিয়ে পড় আগামীকাল পরিক্ষা ভালো হলে তো আমিও কিছু পাবো
–কি
–(মৃদু হাসলাম)
পাগলীটাও হাসলো, তাহলে কি আমার অবুঝ বউ আস্তে আস্তে সব কিছু বুঝতে শিখেছে

দেখতে দেখতে সোহাগীর পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো এখন শান্তি মতে একটু রোমান্স করা যাবে হিহিহি
–একা একা হাসছ কেন
–ভাবছি বউটার সাথে এখন রোমান্স করবো
–তাই
–জ্বী
–আগে আপুর বিয়ের সবকিছু ঠিক কর
–হ্যাঁ খুব শীঘ্রই করবো (বলেই সোহাগীকে জরিয়ে ধরলাম ও ছুটে যাওয়ার জন্য জোরাজোরি করছে আমি আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম)
আম্মু: নাহিল একটু ড্রয়িংরুমে আয় তো
আমি: আসছি (ডাক দেওয়ার আর সময় পেলে না)
সোহাগী: হিহিহি যাও
সোহাগীর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে নিচে চলে আসলাম, আব্বু আর আম্মু ড্রয়িংরুমে বসে আছেন
আমি: আব্বু কিছু বলবে
আব্বু: হ্যাঁ বউমার তো পরিক্ষা শেষ এইবার মুমুর বিয়েটা ঠিক করে ফেল
আমি: ঠিক আছে
আম্মু: আগামীকাল ওদের বাসায় যা একেবারে সব ঠিক করে আসবি
আমি: কিন্তু তোমরা তো সজিবকে দেখনি
আম্মু: ওরা তো মুমু কে দেখেনি আর তুই দেখেছিস আর দেখার কি আছে মুমু ভালোবাসে এটাই বড় কথা
আমি: ঠিক আছে আমি আগামীকাল গিয়ে সব ঠিক করে আসবো

রুমে এসে দেখি সোহাগী ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ওকে একটু জ্বালাই
–সোহাগী চলো ছাদে যাই
–এতো রাতে ছাদে যাবো পাগল হয়েছ
–গেলে কি হয়
–আমার ভয় করে
–ছাড়াচ্ছি তোমার ভয়
সোহাগীকে কোলে তুলে নিলাম তারপর ছাদে চলে আসলাম, সোহাগীকে বসিয়ে আমি ওর পাশে বসলাম, মৃদু বাতাস বইছে খুব ভালো লাগছে
–নাহিল তুমি সবসময় এমন পাগলামি করো কেন
–তোমার সাথে পাগলামি করতে ভালো লাগে
–তাই
–জ্বী তাই
সোহাগী আমার দিকে তাকিয়ে আছে পূর্ণিমার চাঁদের আলো ওর মুখে এসে উপছে পড়ছে ওকে খুব বেশি মায়াবতী লাগছে এখন, সোহাগীকে আমার কোলে শুয়ে দিলাম ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এই চাওয়ায় কেমন যেন নেশা মিশানো, কোনো কিছু না ভেবে ঠোট ডুবিয়ে দিলাম ওর নেশা ধরানো মিষ্টি দুইটা ঠোটে…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ১০

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১০

লেখিকা: সুলতানা তমা

সোহাগীকে বিছানায় শুয়ে দিয়েই ওর মিষ্টি দুইটা ঠোটে আমার ঠোট ডুবিয়ে দিলাম….

সকালে দরজায় টোকার শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো
–ভাইয়া উঠ ভাবির স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে
–উঠতেছি
ঘুম ঘুম চোখে সোহাগীর দিকে তাকালাম চুপ করে আমার বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে এমনি ও বাচ্চা এখন আরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছে হাহাহাহা পিচ্ছি বউ আমার
–সোহাগী উঠ
–উহু পরে
–স্কুলে যেতে হবে তো
–যাবো না
–ঠিক আছে না গেলে রাতে যা করেছিলাম এখনো তাই করবো (সোহাগী লাফ দিয়ে উঠে বিছানায় বসলো তারপর আমার দিকে কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ওর চোখে স্পষ্ট ভয়ের চিহৃ, শুধু একটু বেশি সময় নিয়ে ঠোট চুষাতেই ওর এমন অবস্থা এর চেয়ে বেশি কিছু করতে গেলে তো পিচ্ছি ভয়েই আমার কাছে আসবে না)
–আমি স্কুলে যাবো
–তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেন
–(নিশ্চুপ)
–আরে শুধু ঠোট চু….
–আমার দম বন্ধ হয়ে আসে
–তুমি আসলেই পিচ্ছি
–(চুপ করে আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে)
–আচ্ছা আর এমন করবো না কিন্তু আমার কথা না শুনলে করবো এর চেয়ে বেশি কিছু
–সব কথা শুনবো
–ঠিক আছে এখন ফ্রেশ হয়ে নাও
–হুম
সোহাগী বিছানা থেকে নামতেই ওর হাত ধরে টান দিয়ে আমার বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম তারপর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
–রোমান্স কি এবার শিখেছ তো আরো অনেক আছে আস্তে আস্তে সব শিখাবো
–এইটা রোমান্স
–তো কি
–কচু
সোহাগী আমার বুকে কয়েকটা কিল দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো

নাশতা করতে যাবো এমন সময় মুমু এসে আমার হাত ধরে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে গেলো
–কিরে কি হয়েছে
–ভাইয়া তুই আব্বু আম্মুকে মিথ্যে বললি কেন
–কি মিথ্যে
–সজিবকে তুই পছন্দ করেছিস এইটা
–ওহ আব্বু যদি রেগে যান
–রেগে গেলে যাবেন কিন্তু আমি কোনো মিথ্যা দিয়ে সম্পর্ক তৈরী করতে চাই না, মিথ্যা দিয়ে তৈরী ভালোবাসার সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয় না
–ঠিক আছে আমি এখনি আব্বুকে সত্যিটা বলে দিব
–ভাইয়া আমি সজিব কে সত্যি ভালোবাসি
–তো কান্না করার কি আছে আমি তো ওদের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে ফেলেছি সোহাগীর পরিক্ষার পর বিয়ে
–থ্যাংকস ভাইয়া
–আরে পাগলী কান্না করছিস কেন চল নাশতা করে সোহাগীকে স্কুলে নিয়ে যেতে হবে
–হুম চল

নাশতা করতে করতে আব্বুকে বললাম
আমি: আব্বু রাগ করোনা একটা কথা বলি
আব্বু: বল
আমি: আসলে সজিবকে আমি পছন্দ করিনি মুমু সজিবকে ভালোবাসে
আব্বু: (মুমুর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছেন)
আমি: আমি সজিবকে দেখেছি আমার পছন্দ হয়েছে আর ওদের পরিবারের সবাই খুব ভালো
আব্বু: আমি ওকে আগেই বলেছিলাম পড়াশুনা শেষ না করা অব্দি যেন এসব….
আম্মু: আহ বাদ দাও তো নাহিল যদি পছন্দ করতো তাহলে কি বিয়ে দিতে না তাছাড়া আমাদের মেয়ে যেখানে সুখি হবে আমরা তো সেখানেই দিব তাই না
আব্বু: ঠিক আছে বিয়ের তারিখ ঠিক করে পেলো
সোহাগী: আমার তো সামনে পরিক্ষা আমি আপুর বিয়েতে মজা করতে পারবো না
আব্বু: দেখ পিচ্ছি মেয়ের কান্না
আম্মু: তোমার পরিক্ষার পরই বিয়ে হবে
সোহাগী: তাহলে ঠিক আছে (একটু আগেই কান্না করে দিছিল এখন আবার হাসছে কি মেয়েরে বাবা)

ড্রাইভ করছি আর সোহাগীর বকবক শুনছি প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় ওর বকবক না শুনলে যেন এখন ভালো লাগে না, পাগলীটা পারেও বকবক করতে এইটা ওইটা নিয়ে কতো কি বলে আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি
–নাহিল স্টপ স্টপ
হঠাৎ কারো মুখে স্টপ স্টপ শুনে তাড়াতাড়ি গাড়ি থামানোতে গাড়ি জুরে ঝাঁকুনি খেলো, আমার মাথা গিয়ে গাড়ির গ্লাসে লেগেছে সোহাগীর দিকে তাকিয়ে দেখি কপাল ফেটে রক্ত ঝরছে মেয়েটা ভয় পেয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল, সামনে তাকিয়ে দেখি মৌরি হাসছে তারমানে ও গাড়ি থামাতে বলেছিল, সোহাগীকে বসিয়ে রেখে গাড়ি থেকে নেমে মৌরির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম
–তুমি গাড়ি থামাতে বলেছিলে
–হ্যাঁ
–এভাবে হঠাৎ করে কেউ বলে
–ভালোই তো হয়েছে তোমার পিচ্ছি বউয়ের কপাল থেকে রক্ত ঝরেছে হাহাহাহা
–(ঠাস ঠাস করে একদমে কয়েকটা থাপ্পড় দিলাম)
–নাহিল
–একদম চুপ তোকে আজ খুন করতাম তোর ভাগ্য ভালো সোহাগীকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে নাহলে….
–এর জবাব তুমি পাবে
–যা খুশি করিস

তাড়াতাড়ি সোহাগীকে হসপিটালে নিয়ে আসলাম, বাইরে বসে আছি ডক্টর সোহাগীর মাথায় ব্যান্ডেজ করছে খুব ভয় করছে পাগলীটার খারাপ কিছু যদি হয়ে যায়
–কপালটা একটু কেটে গেছে সিরিয়াস কিছু না এখনি বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন
–থ্যাংকস ডক্টর
–আপনার কপাল থেকেও তো রক্ত ঝরছে চলুন আমার সাথে
ডক্টর আমার মাথায়ও ব্যান্ডেজ করে দিল, সোহাগীকে নিয়ে কোনো ভাবে বাসায় আসলাম
আম্মু: কিরে তোদের এই অবস্থা কেন
আমি: তেমন কিছু না আম্মু
আম্মু: দুজনের কপালেই ব্যান্ডেজ আর তুই বলছিস কিছুনা
আমি: আমার কিছু হয়নি সোহাগীকে কিছু খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দাও
আম্মু: আমার বৌমার কি হয়েছে
আমি: আম্মু কান্না করোনা তো আগে ওকে ওষুধ খাওয়াও

বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম আমার কপাল একটু কেটেছে তাতেই খুব যন্ত্রণা হচ্ছে সোহাগীর তো বেশি কেটেছে ওর তো অনেক বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে, এই মৌরিকে বুঝাবো সোহাগীর কপাল থেকে রক্ত ঝরানোর মজা

আম্মু সোহাগীকে ওষুধ খাইয়ে রুমে দিয়ে গেলেন, ও এসেই আমার পাশে শুয়ে পড়লো, আমি ওর গালে আলতো করে ধরে বললাম
–কষ্ট হচ্ছে
–হুম
–(কিছু না বলে ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম খুব কান্না পাচ্ছে আমার জন্য সোহাগী কষ্ট পাচ্ছে)
–তোমার ওই বন্ধুটা পঁচা ওর সাথে আর কথা বলোনা
–আচ্ছা তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো
সোহাগীকে বুকে জরিয়ে ধরে চুলে হাত বুলিয়ে দিতেই ও ঘুমিয়ে পড়লো সাথে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম

আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো দরজা খুলে দেখি আপু আর দুলাভাই বুঝলাম না ওদের কে খবর দিল
আপু: সোহাগীর এখন কি অবস্থা
আমি: ভালো ঘুমাচ্ছে কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে
দুলাভাই: তখন থেকে শুধু বলছে সোহাগীর জন্য নাকি ওর কেমন লাগছে তোমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছি রিসিভ করনি তাই তোমার আম্মুকে ফোন দেই উনি বলেছেন
আমি: ওহ আমি ঘুমে ছিলাম আপু ভিতরে আসেন
আপু সোহাগীর মাথার পাশে গিয়ে বসলেন চোখে পানি চিকচিক করছে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে
দুলাভাই: ইসসসস আমার শালীকার কপালটা ফেটে গেছে (সোহাগীর ব্যান্ডেজে হাত বুলিয়ে দিয়ে কথাটা বলেই হাত নিচের দিকে নামাতে শুরু করলো বুকের কাছে নিতেই হাতটা ধরে ফেললাম)
আমি: আপনার শালীকা এখন আর একা নেই ওর হাজবেন্ড আছে তাই ওর কপাল কেটে গেলে বা বুকে ব্যাথা হলে সেটা ওর হাজবেন্ডই হাত বুলিয়ে দেখবে আপনার কষ্ট করতে হবে না
আমার দিকে কিছুক্ষণ রাগি চোখে তাকিয়ে হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো, আপু বেড়িয়ে যাওয়ার সময় একটা হাসি দিয়ে বললো
–তুমিই পারবে আমার বোনটাকে আগলে রাখতে

রাতে বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানছি আর ভাবছি মৌরিকে কিভাবে শাস্তি দেওয়া যায় তখনি সোহাগী ডাক দিল, রুমে এসে দেখি পাগলী এই অবস্থায় বই নিয়ে বসেছে
–এই অবস্থায় পড়তে বসেছ
–ভালো ভাবে না পড়লে স্বপ্ন সত্যি করবো কিভাবে আর আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ
আর কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে ওর পাশে বসলাম তারপর ওকে আমার কোলে শুয়ে দিলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল, হাহাহাহা এমন টিচার আর স্টুডেন্ট কি আদৌ আছে

সোহাগী আমার কোলে শুয়ে পড়ছে মাঝে মাঝে আমার চোখে ওর চোখ পড়তেই চোখ টিপ দিচ্ছি হিহিহি, আমি বুঝিয়ে দেই একটা সোহাগী বলে আরেকটা ধমক দিলেই আমার গাল ধরে টেনে মিষ্টি হাসি দেয় আর আমি এই সুযোগে ওর কপালে আমার ঠোটের উষ্ণতা ছুঁয়ে দেই…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ৯

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

আমিও সোহাগীকে জরিয়ে ধরলাম চোখ দুইটা থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে….

পিয়াল আমার হাত ছাড় ব্যাথা লাগছে তো পিয়াল উফফফ ব্যাথা পাচ্ছি (হঠাৎ সোহাগীর বিড়বিড় শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি ওর সব চুল আমার মুখের উপর হাত পা ছড়িয়ে আমার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে আর পিয়াল পিয়াল বলে বিড়বিড় করছে, তারমানে স্কুলে যা ঘটে তাই সোহাগী ঘুমের ঘুরে বিড়বিড় করে)
–সোহাগী
–হুম
–কি বিড়বিড় করতেছ
–কই কিছু নাতো
–ঠিক আছে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও স্কুলে যেতে হবে তো
–উহু আর একটু ঘুমাই প্লিজ (ঘুম ঘুম চোখে এসব বলেই আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো তারপর আবার ঘুমিয়ে পরলো, আমি ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি আর পিয়ালের কথা ভাবছি হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, স্কিনে মৌরি নামটা দেখেই রাগ উঠে গেলো তাই কেটে দিলাম কিন্তু ও বার বার কল দিয়েই যাচ্ছে তাই বিরক্ত হয়ে রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–ফোন কেটে দিচ্ছ কেন বার বার
–কেন ফোন দিয়েছ
–আজ অফিসে আসবা না
–তা জেনে তোমার লাভ কি
–বলোনা
–আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি
–মানে কেন
–সোহাগীর পরিক্ষা সামনে ওকে পড়াতে হবে
–এই পিচ্ছির জন্য চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছ তা তোমার পিচ্ছি বউ কোথায়
–আমার বুকে ঘুমাচ্ছে
–হাহাহা এই পিচ্ছিকে বুকে নিয়ে কি সুখ যে পাও
–সুখ পাওয়ার জন্য কি তোমাকে বুকে নিতে হবে নাকি
–চাইলে অবশ্যই পাইবা
–তোমার মতো মেয়েকে নিবো আমার বুকে আর কখনো ফোন করবা না
ফোনটা কেটে দিলাম কেমন অসভ্যের মতো কথা বলে, হঠাৎ দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো সোহাগীর স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে ওকে ডেকে তুলে ফ্রেশ হতে পাঠালাম, এই ফাকে মুমুর থেকে সজিবের ঠিকানাটা নিয়ে আসলাম সোহাগীকে স্কুলে দিয়ে সজিবের বাসায় যাবো

নাশতা করতে করতে আব্বু কে বললাম….
আমি: আব্বু আমি মুমুর জন্য একটা ছেলে পছন্দ করেছি তোমরা যদি অনুমতি দাও কথা আগাই
আব্বু: কিন্তু মুমুর পড়াশুনা
আমি: বিয়ের পর পড়বে সমস্যা কি আর ছেলের পরিবারের সবাই খুব ভালো মানুষ
আম্মু: তুই মুমুর জন্য যে যোগ্য পাত্র ঠিক করবি সে বিশ্বাস আমার আছে তুই কথা বল
আমি: তোমরা ছেলে দেখবা না
আব্বু: দেখার সময় তো আর চলে যাবে না তুই কথা বল আর তোর পছন্দ হলে আমাদেরও পছন্দ হবে
আমি: ঠিক আছে

সোহাগীকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে মুমুর দেওয়া ঠিকানায় গেলাম, অনেক সময় কলিংবেল বাজানোর পর একজন ভদ্রমহিলা দরজা খুলে দিলেন
–আসসালামু আলাইকুম আন্টি
–ওয়ালাইকুম আসসালাম, তুমি কে বাবা
–আন্টি সজিব আছে বাসায়
–হ্যাঁ তুমি ভিতরে এসে বস

কিছুক্ষণ বসার পর একটি ছেলে আসলো এইটা যদি সজিব হয় তাহলে আমার বোনের পছন্দ আছে বলতেই হবে
–আমি সজিব কিন্তু আপনি
–আমি মুমুর ভাইয়া (হাহাহা ছেলে ভালো মতেই টাসকি খাইছে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে)
আন্টি: কিরে সজিব এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আর মুমু কে
আমি: মুমুর কথা বাসায় জানাও নি
সজিব: না ভাইয়া আসলে মুমু নিষেধ করেছিল
আমি: কেন
সজিব: ওর পড়াশুনা শেষ হলে পর আপনারা বিয়ে দিবেন তাই ও নিজে থেকে কিছু করতে চায়নি আপনারা যদি কষ্ট পান
আমি: ঠিক আছে আঙ্কেলকে ডাকো
আন্টি আঙ্কেল কে ডাকতে গেলেন এই ফাকে সজিবের ছোট ভাই জিসান আসলো ওর সাথে পরিচিত হয়ে নিলাম
আমি: আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল
আঙ্কেল: ওয়ালাইকুম আসসালাম, তুমি…
আমি: সজিবের সাথে আমার বোনের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি
আঙ্কেল: তোমার বোন
আমি: হ্যাঁ ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে
আঙ্কেল: সজিব
সজিব: আব্বু মুমু নিষেধ করেছিল তাই তোমাদের জানাই নি
আন্টি: একবার জানিয়ে দেখতি আমরাই সব ব্যবস্থা করতাম তোর কোনো স্বপ্ন তো অপূর্ণ রাখিনি
সজিব: সরি আম্মু
আমি: আপনারা আমার বোনকে আগে দেখুন তারপর নাহয় বাকি কথা হবে
আন্টি: সজিব ভালোবাসে এটাই তো বড় কথা আবার দেখার কি আছে তোমরা বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলো
জিসান: কি বলো আম্মু ভাইয়া যে মেয়েকে ভালোবাসে তাকেই বিয়ে করাবা
–হ্যাঁ সমস্যা কি
–শুন আম্মু যে মেয়ে প্রেম করে সে কখনো ভালো হয় না নষ্টা হয় (জিসানের দিকে তাকালাম ফোন টিপছে আর কথা গুলো বলছে ইচ্ছে হচ্ছে ওকে এখানেই কবর দিয়ে দেই কিন্তু মুমুর জন্য পারলাম না)
সজিব: জিসান মুখ সামলে কথা বল
আঙ্কেল: কাকে কি বলছিস সজিব যে যেমন সে অন্য মানুষকে তো তাই ভাববে
জিসান: আব্বু তুমি আমাকে অপমান করছ
আঙ্কেল: মেহমান বাসায় নাহলে আজ তোমার খবর ছিল আপাদত তুমি আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাও
(জিসান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেড়িয়ে গেলো)
সজিব: ভাইয়া সরি আসলে…
আঙ্কেল: সজিব কে মানুষ করতে পেরেছি কিন্তু জিসানকে মানুষ করতে পারিনি পড়ালেখা ছেড়ে বখাটে হয়ে গেছে
আমি: বাদ দিন আঙ্কেল শুভ কাজে এসব না বলাই ভালো
আন্টি: হ্যাঁ তাই ভালো
আমি: বিয়ের তারিখ কয়েক মাস পর ঠিক করতে হবে আমার স্ত্রীর পরিক্ষা সামনে
আঙ্কেল: কোনো সমস্যা নেই তুমি সুযোগ বুঝে আমাদের জানিয়
আমি: ঠিক আছে

আরো কিছুক্ষণ সবার সাথে গল্প করে বেড়িয়ে আসলাম ওদের বাসা থেকে সোহাগীকে আনতে যেতে হবে, ড্রাইভ করছি আর ভাবছি পরিবারের সবাই কতো ভালো আর জিসান…. হঠাৎ সোহাগীর স্কুলের সামনে চোখ পড়লো এই দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না, সোহাগী পিয়ালের পাশে বসে হাসছে আর পিয়াল ওকে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছে বাহ্ কতো সুন্দর দৃশ্য, এই মেয়েকে আমি যতোই ভালোবাসি ও ততোই প্রশ্রয় পায় কিন্তু আর না

গাড়ি থেকে নেমে সোহাগীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ও কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ইচ্ছে করছে কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় দেই কিন্তু সম্ভব না পরে তো নিজেই কাঁদবো, সোহাগীর হাত ধরে টেনে এনে গাড়িতে বসালাম
–নাহিল রাগ করেছ কেন পিয়াল তো….
–একদম চুপ একটা কথাও বলবা না
–পিয়াল তো…
–চুপ থাকতে বলেছি

বাসায় এসে সোহাগীর সাথে একটা কথাও বলিনি সোহাগীও সারাদিন মুখ গোমরা করে ছিল, রাতের আধারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি সোহাগীকে এভাবে স্বাধীনতা দিলে ও যে…..
–নাহিল (সোহাগীর ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পরলো)
–কিছু বলবে
–তুমি আমার সাথে সারাদিন কথা বলনি কেন জানো আমার খুব খারাপ লাগছে
–সত্যি খারাপ লাগছে
–হ্যাঁ
–কথা বলবো যদি তুমি আমার সব কথা শুনো
–বল
–পিয়ালের সাথে আর কথা বলবা না বললেও অনেক কম কথা বলবা
–পিয়াল তো আমার বন্ধু কথা বললে তুমি রাগ কর কেন
–তুমি বুঝবে না
–ঠিক আছে আর কথা বলবো না
–বলবা কিন্তু খুব কম
–আচ্ছা
–বিয়ের আগে কিন্তু তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে আমার সব কথা শুনবে
–শুনবো তো বল
–এখন থেকে আমি যা যা বলি তাই করবা
–কি করতে হবে
–আমি তোমাকে ভালোবাসা+রোমান্স শিখাবো আর তুমি আমাকে সেভাবে ভালোবাসবে
–রোমান্স কি
–বুঝনা
–উহু
–রুমে চলো রোমান্স কি আজ শিখাবো তোমাকে
সোহাগীকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম, আচমকা এভাবে কোলে তুলে নেওয়াতে পিচ্ছিটা লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো, সোহাগীকে বিছানায় শুয়ে দিয়েই ওর মিষ্টি দুইটা ঠোটে আমার ঠোট ডুবিয়ে দিলাম…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ৮

1

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি সোহাগীর মাথায় ডিভোর্স শব্দটা ডুকিয়ে দিয়েছে মৌরি, পরে যদি সত্যি ও আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়….

বারান্দায় দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট টানছি রাগটা এখনো কমেনি মৌরিকে আরো কয়েকটা থাপ্পড় দেওয়া উচিত ছিল কতো বড় সাহস সোহাগীকে ডিভোর্স দেওয়া শিখায়, এই পিচ্ছি তো ডিভোর্স এর মানেই বুঝে না
সোহাগী: নাহিল ঘুমাবে না অনেক রাত হয়েছে তো
–তুমি ঘুমাও
–আমার একা ভয় করে তুমি চলো (সোহাগী এসে আমার হাত ধরে টানতে শুরু করলো আমি ওকে টেনে বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম তারপর কাঁদতে কাঁদতে বললাম…)
–সোহাগী তুমি ডিভোর্স এর মানে বুঝ
–নাতো আর তুমি কাঁদছ কেন
–তাহলে মৌরিকে বলেছ কেন বড় হয়ে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে
–আপু মাঝে মাঝে বলে দুলাভাই কে ডিভোর্স দিয়ে দিবে তাই বলেছি
–ডিভোর্স মানে সব সম্পর্ক শেষ করে দুজন আলাদা হয়ে যাওয়া, তোমার দুলাভাই পঁচা তাই আপু আলাদা হতে চায় আমি কি পঁচা
–না তুমি অনেক ভালো
–তাহলে আমার থেকে দূরে যেতে চাও কেন
–আচ্ছা বাবা সরি আর এসব পঁচা কথা বলবো না এবার তুমি কান্না থামাও
–হুম (সোহাগী ওর হাত দিয়ে আলতো করে আমার দুচোখের পানি মুছে দিল, এই পিচ্ছিকে আমি অনেক ভালোবেসে ফেলছি ওকে কখনো দূরে যেতে দিব না)

ঘুমের মধ্যে হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মনে হলো লাফ দিয়ে উঠে বিছানায় বসলাম পাশে সোহাগী রাগি চোখে তাকিয়ে আছে
–তুমি আমার নাক চেপে ধরছিলা
–হ্যাঁ কি করবো এতোক্ষণ ধরে ডাকছি উঠই না
–এমন করলে তো আমি মারা যাবো
–মরবা না উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি স্কুলে যাবো তুমি নিয়ে যাইবা
–আজ না গেলে হয় না
–কেন
–না মানে দুজন একটু রোমান্স করতাম
–রোমান্স আবার কি উঠ বলছি আমার পরিক্ষা সামনে অনেক পড়তে হবে
–ওকে

আমি ড্রাইভ করছি আর সোহাগী পাশে বসে বকবক করছে বাতাসে ওর চুলগুলো বার বার এলোমেলো করে দিচ্ছে আর ও বিরক্ত হয়ে বার বার ঠিক করছে হাহাহাহা মায়াবতী পিচ্ছি, সোহাগী গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে একটা ছেলের সামনে দাঁড়ালো তারপর ওর হাত ধরে টানতে টানতে আমার কাছে নিয়ে আসলো
সোহাগী: নাহিল ও পিয়াল আমার বন্ধু (যে নামটা শুনলেই কেন যেন ভয় হয় সেই মানুষটাকে সোহাগী আমার সামনে এনে দাঁড় করালো)
সোহাগী: নাহিল কি ভাবছ
আমি: হুম কিছুনা

পিয়ালের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সোহাগী পিয়ালের হাত ধরে হাসতে হাসতে স্কুলের ভিতর চলে গেলো, একটা সিগারেট ধরিয়ে অফিসের দিকে রওনা দিলাম, সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস ছিল না কিন্তু এখন….

অফিসের কোনো কাজেই মন বসছে না সোহাগী পিয়ালের হাত ধরে হাসতে হাসতে চলে যাওয়ার দৃশ্যটা শুধু চোখের সামনে ভাসছে, পিয়াল ছেলেটা দেখতে মোটামুটি বড় সোহাগীর ক্লাসমেট যে বুঝার উপায় নেই এই ছেলেটা কে কেন যেন খুব ভয় হচ্ছে

ছাদে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছি আর ভাবছি সোহাগীর পরিক্ষা শেষ হলেই ওকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাবো, এখানে পিয়ালের আশেপাশে সোহাগী কে রাখা ঠিক হবে না
মুমু: ভাইয়া তুই এখানে আর আমি তোকে সারা বাসা খুঁজেছি
আমি: কিছু বলবি
–হ্যাঁ কিন্তু তোর তো মন খারাপ মনে হচ্ছে
–এসব কিছুনা বল কি বলবি
–মানে ভাইয়া রাগ করবি না তো
–তোর কোনো আবদার অপূর্ণ রাখিনি তাই নির্ভয়ে বল
–আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি
–তাই
–হুম
–আমার পুচকে বোন বড় হয়ে গেছে
–আমি মুটেও পুচকে না অনার্সে পড়ছি
–তাতো বুঝলাম কিন্তু কাঁদছিস কেন
–কোথায়
–আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই বল কি হয়েছে
–তোমরা তো বলেছ আমার পড়াশুনা শেষ হলে বিয়ে দিবে কিন্তু সজিবকে ওর পরিবার বিয়ের চাপ দিচ্ছে
–সজিব…?
–সজিবকেই আমি ভালোবাসি
–বাসার ঠিকানা দে বিয়ে ঠিক করে রাখবো সোহাগীর সামনে পরিক্ষা তাই পরিক্ষার পর বিয়ে হবে
–ওকে থ্যাংকস ভাইয়া
–হুম
–খাবি চল
–চল

খাবার টেবিলে সোহাগী বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে সকালের পর আর ওর সাথে কথা বলিনি, একটু রাগ চেপে আছে মনে পিয়ালের সাথে ওর এতো হাসাহাসি করতে হবে কেন কিছু তো বলতেও পারিনা বললেই কান্না করবে
সোহাগী: আম্মু একটা কথা বলার ছিল
আম্মু: বলো
সোহাগী: আমার তো সামনে পরিক্ষা কোচিং করতে হবে
আব্বু: বাড়ির বউ বাইরে গিয়ে পড়ার দরকার নেই নাহিল তোমাকে পড়াবে
আমি: আমি পড়াবো কেন আমি পারবো না
আম্মু: তোর বাবা ঠিকি তো বলেছে আর তুই পড়ালে দোষ কি
আমি: আমার চাকরি
আব্বু: শুনো তোমার চাকরির টাকায় আমার সংসার চলেনা আমার বৌমার জন্য এমন চাকরি ছেড়ে দিলে সমস্যা কি (বাহ্ ওদের বৌমা এখন সব)
সোহাগী: নাহিল পড়াতে হবে না আমার সব বন্ধুরা কোচিং করে তাই পিয়াল প্রতিদিন এসে আমাকে নিয়ে যাবে
আমি: আমি তোমাকে প্রতিদিন পড়াবো আমার চাকরি বাদ আর তুমিও কোচিং এর চিন্তা বাদ দিয়ে দাও
একটু রেগেই কথা গুলো বললাম সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, খাবার রেখে উঠে চলে আসলাম আবার পিয়াল মাথাটা পুরাই নষ্ট করে দিছে

মাঝরাত চারদিকে শুনশান নিরবতা আমি ছাদে দোলনায় মাথা নিচু করে বসে বসে সিগারেট টানছি খুব কষ্ট হচ্ছে
–নাহিল (হঠাৎ সোহাগীর ডাকে মাথা তুলে তাকালাম)
–এতো রাতে ছাদে এসেছ কেন
–ঘুম ভেঙে গেছে তুমি রুমে নেই ভয় করছিল, ছাদের দরজা খুলা দেখে বুঝেছি তুমি এখানে আছ
–যাও ঘুমিয়ে পড়
–তোমার কি হয়েছে
–কষ্ট হচ্ছে
–কিসের কষ্ট (সোহাগীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম ও এসে আমার পাশে দোলনায় বসলো)
–বললা না কিসের কষ্ট
–সোহাগী তুমি চোখ বন্ধ করে কাকে দেখতে পাও আমাকে নাকি পিয়ালকে
–চোখ বন্ধ করলে আবার কিছু দেখা যায় নাকি
–হুম দেখা যায় যাকে ভালোবাসবা তাকে চোখ বন্ধ করেও দেখতে পারবা
–তাই তুমি কাকে দেখ চোখ বন্ধ করে (সোহাগীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম পাগলীটা আমার ভালোবাসাই বুঝেনা)
–একদিন তুমি নিজেই বুঝতে পারবা আমি চোখ বন্ধ করে কাকে দেখি
–ঠিক আছে
–তুমি কি পিয়ালকে ভালোবাস
–পিয়াল তো আমার বন্ধু
–ভালোবাসা এমন এক জিনিস কখন কাকে ভালোবেসে ফেলবা নিজেই বুঝতে পারবা না, যাকে ভালোবাসবা তাকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগবে না সবসময় তাকে দেখার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে থাকবে, তার সবকিছুই তোমার কাছে ভালো লাগবে, তাকে ছাড়া তুমি বাঁচার কথা ভাবতে পারবে না
–কারো জন্য তো আমার এমন হয় না
–হবে একদিন হয়তো আমার জন্য নয়তো পিয়ালের জন্য বা অন্য কারো জন্যও হতে পারে

সোহাগী কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো তারপর আমার কাধে মাথা রেখে আমাকে জরিয়ে ধরলো, আমিও জরিয়ে ধরলাম চোখ দুইটা থেকে বৃষ্টির মতো পানি পড়ছে…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ৭

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

আজ আমাদের বৌভাত তাই বাসায় অনেক মেহমান সোহাগীর বোন দুলাভাইও এসেছে, আমি ড্রয়িংরুমের এককোনে দাঁড়িয়ে সোহাগীর ছুটাছুটি দেখছি, সোহাগী এমন ভাবে সারা বাসায় ছুটাছুটি করছে ও যে এই বাসার বউ সেটা বুঝার উপায় নেই তবে সবাই ওকে খুব পছন্দ করেছে আর করবেই না কেন আমার পিচ্ছি বউ বলে কথা, সোহাগী আজ সাদা রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে আজ ওকে একদম সাদা পরী লাগছে
–নাহিল (কারো ডাক শুনে পিছনে তাকালাম মৌরি এসেছে, বাহ্ যে মেয়ে কখনো শার্ট-প্যান্ট ছাড়া কিছু পড়ে না সে মেয়ে আজ শাড়ি পড়েছে)
–নাহিল কি দেখছ এভাবে
–তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে একদম বাঙালি নারী
–অন্য দিন সুন্দর লাগে না বুঝি
–কিভাবে লাগবে কিসব ড্রেস পড় ছেলেদের মতো
–তোমার চোখে সুন্দর লাগলে আমি প্রতিদিন শাড়ি পড়তে রাজি আছি
–মানে
–কিছুনা তোমার বউ কোথায়
–ওই যে পিচ্ছিদের সাথে কানামাছি খেলছে
–হাহাহাহা এইটা তোমার বউ
–কেন দেখতে খারাপ
–না তবে এতো পিচ্ছি পুরাই বাচ্চা মেয়ে
–হ্যাঁ এই বাচ্চা মেয়েটাকেই আমি ভালোবাসি
–নাহিল তোমার রুচি দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে নাহলে কেউ বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করে কি পাবে এই মেয়ের থেকে
–(মৃদু হাসলাম)
নাহিল তুই এখানে আমি তোকে খুঁজতে খুঁজতে….. (আমার মতো সাজিদও মৌরিকে দেখে অবাক হয়েছে বেচারা অর্ধেক কথাতেই আটকে আছে)
সাজিদ: এইটা কি আমাদের মৌরি
মৌরি: তো অন্য কেউ নাকি
সাজিদ: মডার্ন মাইয়া শাড়ি পড়লো কিভাবে
মৌরি: প্রেমে পরলে সব পারা যায়
সাজিদ: হাসাইলি, নাহিল ভাবি কোথায় দেখাবি না নাকি
আমি: তোর সামনেই তো দেখছিস না কানামাছি খেলছে
সাজিদ: হাহাহাহা পিচ্ছি ভাবি, তো তুই এখানে কেন তুইও গিয়ে খেলায় যোগ দে
আমি: ওর মতো আমিও পিচ্ছি নাকি
সাজিদ: দূর চল তো
সাজিদ আমাকে টানতে টানতে সোহাগীর সামনে নিয়ে দাঁড় করালো, সোহাগীর চোখ বাঁধা থাকার কারনে আমাকে না দেখে এসে জরিয়ে ধরলো, চোখের বাঁধন খুলে আমাকে দেখে ও একটু লজ্জাও পেলো না উল্টো লাফিয়ে লাফিয়ে বলছে ধরেছি উফফফ কি মেয়েরে বাবা, রুমে বসা সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে এক আন্টি তো আম্মুকে বলেই ফেললো “ভাবি বউ এনেছ একটা তোমার বাসা আলো করে রাখবে” আমি আর কিছু না শুনে সাজিদকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাইরে চলে আসলাম

হঠাৎ চোখ পড়লো বাগানের দিকে আপু আর দুলাভাই কি নিয়ে যেন কথা কাটাকাটি করছেন ওদের মধ্যে কি প্যাচ চলছে তা আমাকে জানতেই হবে কিন্তু জানতে হলে তো আপুর সাথে আলাদা কথা বলতে হবে এখানে তো দুলাভাই আছে
–সাজিদ
–হুম
–দুলাভাই কে নিয়ে একটু ঘুরতে যা
–কেন
–প্রয়োজন আছে
–ওকে

সাজিদ দুলাভাই কে বুঝিয়ে ঘুরতে নিয়ে গেলো আমি গিয়ে আপুর সামনে দাঁড়ালাম উনি কাঁদছেন
–আপু সবকিছু জানতে চাই প্লিজ বলুন
–হুম

আপু বলতে শুরু করলো…
পাঁচবছর আগে আব্বু আম্মু একটা রোড এক্সিডেন্টে মারা যান, তখন আমার নতুন বিয়ে হয়েছিল সোহাগীও তখন অনেক ছোট ছিল ওকে দেখার মতো কেউ ছিল না তাই আমার কাছে ওকে নিয়ে আসি, প্রথম অবস্থায় আমার শশুড় বাড়ির সবাই সোহাগীকে ভালোবাসত কিন্তু ও যতো বড় হয় সবাই ওকে ততোই অবহেলা করতে শুরু করে, তারমাঝে জানতে পারি আমি কখনো মা হতে পারবো না দোষটা অবশ্য আকরামের কিন্তু আমাদের সমাজ তো নারীদের দোষ দিতে দ্বিধা করে না তাই আমিই দোষী, চাইলে আমি আকরাম কে ডিভোর্স দিয়ে চলে যেতে পারতাম কিন্তু যাই নি বিয়ে তো জীবনে একটাই হয় বাকিটা জীবন নাহয় ওর সাথে থেকেই কাটিয়ে দেই, আমি এসব ভাবলেও ওদের ভাবনা ছিল অন্যরকম একসময় আমার শাশুড়ি বলেন সোহাগীর বোঝা উনারা আর বইতে পারবেন না, এমনো হয়েছে আমার শাশুড়ি প্রায় সময় সোহাগীর উপর হাত তুলেছেন, অনেক চিন্তা ভাবনা করে আমার সব সম্পত্তি আকরামের নামে লিখে দেই এতে সবাই খুশি হয়ে যায় ওরা আবার সোহাগীকে ভালোবাসতে শুরু করে, কিন্তু ওদের লোভটা বেড়ে যায় ওরা এখন সোহাগীর নামের সব সম্পত্তি ভোগ করতে চায় ওর নামে মোটামুটি অনেক বেশিই সম্পত্তি আছে তাই আকরাম লোভ সামলাতে পারছে না কিন্তু সোহাগীর তো ভবিষ্যৎ আছে তাই আমি সম্পত্তি দিতে অস্বীকার করি আর সোহাগী একটু বড় হতেই আকরামের খারাপ নজর পড়ে ওর উপর তাই এই অল্প বয়সে ওকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করি, তোমার আগে অনেক বিয়ের প্রস্তাব এসেছে কেউ অল্প বয়স দেখে না করে দিয়েছে আর যারা রাজি হয়েছে সবাই সোহাগীর সম্পত্তির লোভে রাজি হয়েছে, তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি তখনি আমার ভালো লাগে মনে হয় তুমিই সোহাগীকে আগলে রাখতে পারবে আর তোমার পরিবারের সবাই খুব ভালো মানুষ তাই আমি সোহাগীর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তোমাকে অনুরোধ করি, বোনের সুখের জন্য তোমার কাছে একটু ছোট হলে দোষের কি
আমি: আকরাম
আপু: আমার স্বামী
আমি: উনি কি এখনো সোহাগীকে…
আপু: হ্যাঁ ও এখনো সোহাগীকে খারাপ নজরে দেখে, আগে যদিও ভাবতাম আকরামের সাথে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবো এখন আর এসব ভাবি না সোহাগী তোমার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলেই আমি আকরামকে ডিভোর্স দিয়ে দিব
আমি: কিন্তু
আপু: এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, তোমার কাছে একটাই অনুরোধ সোহাগী বাচ্চা মেয়ে ওকে একটু আগলে রেখ আর আকরাম কখনো সোহাগীর পিছু ছাড়বে না তাই ওকে একটু সাবধানে রেখ
আমি: আপু সোহাগীকে নিয়ে আপনার আর চিন্তা করতে হবে না
আপু: হুম জানি তোমার উপর ভরসা আছে
নাহিল চলো আমার সাথে (সোহাগী এসে আমার হাত ধরে টানতে শুরু করলো)
–কোথায় যাবো
–চল তো
সোহাগীর পিছু পিছু আসলাম ও এসে মৌরির সামনে দাঁড়াল
সোহাগী: এই মেয়েটা কে
আমি: আমার ফ্রেন্ড
সোহাগী: ও আমাকে পঁচা কথা বলছে
মৌরি: এই বেয়াদব মেয়ে আমি কখন তোমাকে পঁচা কথা বললাম
সোহাগী: একটু আগেই তো বললেন আমি পিচ্ছি আমাকে নাহিলের সাথে মানায় না আপনাকে মানায় আরো কতো কিছু
আমি: মৌরি তুমি ওকে এসব বলেছ
সোহাগী: বলেছে তো তাই আমিও উনাকে বলেছি আমি বড় হলে তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব (ডিভোর্স শব্দটা শুনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো)
মৌরি: হ্যাঁ এইটা বলেছি কারন তোমাদের ডিভোর্স…
আমি: (ঠাস)
মৌরি: নাহিল তুমি এই পিচ্ছি মেয়ের জন্য আমাকে থাপ্পড় মারলে
আমি: ভুলে যেও না এই পিচ্ছি মেয়েটাই এখন আমার স্ত্রী
মৌরি আর কিছু না বলে চলে গেলো, আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি সোহাগীর মাথায় ডিভোর্স শব্দটা ঢুকিয়ে দিয়েছে মৌরি, পরে যদি সত্যি ও আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ৬

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে হাতের আঙ্গুলে গরম অনুভব করে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম, রাতে অবুঝ বউয়ের অবুঝ প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কখন ঘুমাইছিলাম মনে নেই, হাত পুরার যন্ত্রণায় চিল্লানী দিয়ে যখন সামনে তাকালাম দেখি আমার পিচ্ছি বউ কফির মগ হাতে নিয়ে হাসছে, তারমানে সোহাগী আমার আঙ্গুল কফির মগে….
–সেই কখন থেকে ডাকছি ঘুম আর শেষ হয় না তাই এই কাজ করেছি
–তাই বলে হাত পুরিয়ে দিবা
ব্যস করেছে তোর জন্য এটাই প্রাপ্য (কথাটা শুনে দরজায় তাকালাম আম্মু এসে সোহাগীর পক্ষ নিয়েছে মা আর বউ যেহেতু এক পক্ষে আমি আর কি করবো একবার সোহাগীর দিকে তাকাচ্ছি একবার আম্মুর দিকে তাকাচ্ছি)
আম্মু: ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আয় নাশতা করবো (আম্মু হাসতে হাসতে চলে গেলো এখন উনার আদরের বউমা কে শাস্তি দেওয়া যায় তবে কঠিক কোনো শাস্তি না রোমান্টিক শাস্তি দিব)
আমি: ও মাগো
সোহাগী: এই কি হইছে
–হাতটা মনে হয় বেশি পুরে গেছে খুব যন্ত্রণা করছে
–আমি তো ফাজলামো করে দিয়েছিলাম এতো লেগে যাবে বুঝিনি আচ্ছা দাঁড়াও আমি ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি

বিছানায় চুপ করে বসে আছি দেখি পিচ্ছি মেয়ে কি করে, একটু পর সোহাগী মলম হাতে নিয়ে এসে আমার পাশে বসলো তারপর আমার হাতে মলম লাগিয়ে দিতে শুরু করলো, সোহাগী মলম দিয়ে দিচ্ছে আর ওর চুল বার বার চোখের সামনে এসে পরছে ও বিরক্ত হয়ে বার বার চুল সরাচ্ছে দৃশ্যটা দেখতে খুব সুন্দর লাগছে হাহাহাহা আমার হাত পুরানো এবার বুঝ মজা
–হয়ে গেছে এখন কমে যাবে
–আচ্ছা সোহাগী এই মলম কি খাওয়া যায়
–মলম খেতে যাবে কেন
–আমার খুব খিদে লেগেছে হাতে মলম নিয়ে নাশতা খেলে তো মলম পেটে চলে যাবে
–ওহ আচ্ছা দাড়াও আমি নাশতা নিয়ে আসছি
–ওকে

সোহাগী আমাকে নাশতা খাইয়ে দিচ্ছে, প্রথম দিনেই বউকে বোকা বানিয়ে বউয়ের হাতে নাশতা খাওয়ার মজাই আলাদা পিচ্ছি বুঝতেও পারেনি আমি যে অভিনয় করছি, ফোন বেজে উঠলো সোহাগীর আপু তাই ওর কাছে ফোনটা দিয়ে দিলাম, সোহাগী ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো আর আমি বাকি নাশতা গুলো ফটাফট খেয়ে নিলাম
–সরি আপুর জন্য তোমার নাশতা….. ওমা নাশতা কোথায়
–খেয়ে নিছি
–কিন্তু
–আমার হাত সামান্য পুরেছে তো তোমাকে বোকা বানিয়ে তোমার হাতে খেলাম
বউ কিছু না বলে আমার গলা চেপে ধরলো আমি আস্তে করে ওর হাত ধরে টান দিয়ে ওকে আমার বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম, সোহাগী কিছুক্ষণ আমার চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইলো কি সুন্দর চোখ দুইটা ইচ্ছে করছে এই চোখের গভীরে ডুব দেই হঠাৎ সোহাগী আমাকে ধাক্কা দিয়ে হাসতে হাসতে দৌড়ে চলে গেলো হাহাহাহা পাগলী বউ আমার

বিছানায় বসে গুনগুন করে গান গাইছি তখন মুমু এসে ডাক দিলো ড্রয়িংরুমে যাওয়ার জন্য, ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি আব্বু আম্মু সবাই বসা
আমি: আব্বু কিছু বলবে
আব্বু: হ্যাঁ ভাবছি অনুষ্ঠানটা করে ফেলবো
আমি: ঠিক আছে
আব্বু: তাহলে আগামীকালই ভালো তোমার সব বন্ধুদের ইনভাইট করো
আমি: আচ্ছা

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছি বের হবো একটু ঘোরাঘুরি হবে সাথে বন্ধুদের ইনভাইট করা হবে
–নাহিল একটা কথা বলি (পিছনে তাকিয়ে দেখি সোহাগী)
–হ্যাঁ বলো
–আমার বন্ধুদের ইনভাইট করি
–করো সমস্যা কি
–আচ্ছা
পাগলীটা খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেলো, ফোনটা হাতে নিয়ে সাজিদকে ফোন দিলাম গ্রামে গিয়েছিল এসেছে কিনা দেখি
–হ্যালো
–কিরে ঢাকায় ফিরেছিস
–হ্যাঁ গতকাল সন্ধ্যায় আসলাম
–তাহলে দেখা কর এখনি অনেক কথা আছে তোর সাথে
–কি হইছে বলতো
–ফোনে বললে রাগ করতে পারিস সামনে বলাই ভালো
–ঠিক আছে বাসায় আয়
–ওকে
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হলাম সাজিদের বাসার উদ্দেশ্যে, আমার বন্ধু বলতে মৌরি আর সাজিদই আছে তিনজন একসাথে পড়েছি বাকি সব অফিসের কলিগদের ইনভাইট করতে হবে

সাজিদের বাসায় বসে আছি বিয়ের কথা কিভাবে যে বলি ও তো অনেক রাগ করবে
–কিরে কি হয়েছে বল
–আসলে তুই গ্রামে ছিলি তাই জানাতে পারিনি আর কাজটা খুব তাড়াতাড়ি করতে হয়েছে
–কি কাজ
–বিয়ে করে ফেলছি
–আমাকে না জানিয়ে
–আমার সব কথা শুন তারপর রাগ করিস
–ওকে বল (সবকিছু সাজিদকে বুঝিয়ে বললাম)
–ঠিক আছে এখন কোথায় যাবি
–মৌরির বাসায়
–ওকে চল

মৌরির সামনে বসে আছি ও মুখ গোমরা করে বসে আছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারতেছি না ও আমার ফ্রেন্ড হয়ে আমার বিয়েতে খুশি না
সাজিদ: মৌরি কাল নাহিলের বাসায় যাচ্ছিস তো
মৌরি: অবশ্যই নাহিলের পিচ্ছি বউ কতটা সুন্দর সেটা তো আমাকে দেখতে হবে
আমি: এভাবে কথা বলছ কেন
মৌরি: খারাপ কি বললাম
সাজিদ: নাহিল চল আজ উঠি আমার কাজ আছে
আমি: হুম চল

বাসা থেকে বেরুতেই সাজিদ আমার হাত ধরে টান দিয়ে দাড় করালো
–কি হলো
–কিছু বুঝেছিস
–কি বুঝবো
–মৌরি তোকে ভালোবাসে
–কি বলছিস
–হ্যাঁ আর তুই সোহাগীকে বিয়ে করাতে ও এভাবে প্যাচিয়ে কথা বলেছে
–ও আমাকে ভালোবাসলেই কি আমি সোহাগীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি
–কিন্তু নাহিল তুই মৌরিকে এখনো চিন্তে পারিসনি ও খুব ডেঞ্জারাস মেয়ে যেকোনো কিছু করতে পারে
–দূর ও কি করবে অজতা ভাবিস না
–তাও ওর থেকে সাবধান
–ঠিক আছে

রাতে বাসায় এসে শুয়ে পড়লাম খুব ক্লান্ত লাগছে সারাদিন মৌরির কথা মাথা থেকে যায়নি আমি ওকে ভালো ফ্রেন্ড ভাবি আর ও কিনা আমাকে….
–নাহিল খাবে না (সোহাগী মুখ মলিন করে এসে বললো আজ ওকে একদম সময় দিতে পারিনি এজন্য মনে হয়)
–তোমার মন খারাপ
–হুম
–কেন
–আর বলোনা পিয়ালকে বলছিলাম কাল যেন আসে ও না করে দিয়েছে (এমনি মৌরির চিন্তা মাথা থেকে যাচ্ছে না আবার পিয়াল, সোহাগী কি পিয়ালকে ভালোবাসে নাকি)
–মন খারাপ করোনা আবার বলে দেখ আসবে
–হুম

বিছানার একপাশে শুয়ে আছি সোহাগী এসে অন্যপাশে শুয়ে পড়লো আমি ওর দিকে থাকাতেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো, আমি কি বোকা অজতা ভয় পাচ্ছি সোহাগী পিয়ালকে ভালোবাসে ভেবে, সব চিন্তা বাদ দিয়ে আমিও সোহাগীকে জরিয়ে ধরলাম…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ৫

3

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

আজ আমার বিয়ে ভাবতেই ভালো লাগছে সাথে একটু একটু লজ্জাও লাগছে
মুমু: ভাইয়া তাড়াতাড়ি কর
আমি: শেষ আসছি

তাড়াতাড়ি ড্রয়িংরুমে গেলাম আম্মু আব্বু মুমু সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে
–আমি ভিনগ্রহের প্রাণী নাকি সবাই এভাবে তাকিয়ে আছ কেন
মুমু: ভিনগ্রহের প্রাণীরা তো ভালোই আছে তোকে দেখতে যা খারাপ লাগছে না হিহিহি
আম্মু: এই চুপ কর কিসব বলছিস আমার ছেলেকে তো রাজপুত্রের মতো লাগছে
আমি: সত্যি তো আম্মু
আম্মু: হ্যাঁ এবার চল

সোহাগীদের বাসায় বসে আছি বিয়ে করতে আসছি নাকি মরা বাড়িতে আসছি বুঝতে পারছি না বিয়ে বাড়ির কোনো আমেজই নেই, আমাদের সাথেও কোনো মেহমান নেই ওদের বাড়িতেও কোনো মেহমান নেই এইটা কোনো বিয়ে হলো এখন তো নিজের কাছেই খারাপ লাগছে
মুমু: ভাইয়া দেখ ভাবি আসছে (মুমুর কথা শুনে সামনে তাকালাম সেদিনও সোহাগী কালো শাড়ি পড়ছিল কিন্তু আজ কালো শাড়িতে ফর্সা পিচ্ছি মেয়েটাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে পিচ্ছি হলেও পছন্দ আছে নাহলে কি কেউ বিয়ের বেনারসি কালো শাড়ি পড়তে চায়)
আম্মু: মাশাল্লাহ্ আমার বউমা কে দেখতে একদম পরীর মতো লাগছে
আব্বু: হ্যাঁ খুব সুন্দর লাগছে

বিয়ে পড়ানো শেষ মজার বিষয় হলো সব বিয়েতে মেয়েরা কবুল বলতে একটু সময় নেয় কিন্তু সোহাগী একদমে বলে ফেলছে, পিচ্ছি মেয়ে বুঝতেই পারেনি এই তিন শব্দের কবুল বলেই ও সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে গেছে

বিয়ের সব জামেলা শেষ করে সোহাগীকে গাড়িতে তুলে দেওয়া হলো আমি যখন উঠতে যাবো সোহাগীর বোন পিছন থেকে ডাক দিল তাকিয়ে দেখি উনার চোখ দুইটা ফুলে আছে বোনের জন্য হয়তো একটু বেশিই কাঁদছে, উনি একটু দূর যাওয়ার ইশারা দিলেন আমিও উনার পিছন পিছন গেলাম, একটু দূর যেতেই উনি থেমে গেলেন তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন
–আপু প্লিজ কাঁদবেন না
–না না আমি কাঁদি না আজ তো আমার খুশির দিন আমার বোন এই বাড়ির অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছে ভাই তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাহায্য করার জন্য
–আপু আমি সোহাগী কে ভালোবাসি তাই বিয়ে করেছি
–তোমার এই ভালোবাসার কারনেই ও এই বাড়ি থেকে মুক্তি পেয়েছে
–আচ্ছা এই বাড়ি থেকে মুক্তি পেয়েছে মানে কি
–সময় করে অন্যদিন বলবো সন্ধ্যা হয়ে আসছে আজ তোমাদের যেতে হবে, সোহাগী তো ছোট এখনো অবুঝ রয়ে গেছে এতো কিছু বুঝেনা ওর উপর কখনো রাগ করোনা ও একটু বেশিই বাচ্চামি করে একটু সহ্য করে নিও
–এসব নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না
–তোমার উপর আমার ভরসা আছে সোহাগীকে কষ্ট দিও না এমনি মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে
অন্ধকার হয়ে আসছে কি বকবক শুরু করেছ ওদের যেতে হবে তো (সোহাগীর দুলাভাই এসে রাগি চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে বললো আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আপু অনেক ভয় পেয়েছে তারমানে সব নষ্টের মূল এই দুলাভাই)

গাড়িতে বসে আছি সোহাগী আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আম্মু আব্বু যে পাশে মেয়েটা একটু লজ্জাও পাচ্ছে না কি পিচ্ছি মেয়ে হিহিহি

বাসায় আসতে অনেক রাত হয়ে গেলো সব নিয়ম কানুন শেষ করে মুমু সোহাগীকে আমার রুমে নিয়ে আসলো, আমি চেয়ারে বসে বসে আমার বাসর ঘরের সাজটা দেখছি বিয়েতে জাঁকজমক নাহলেও মুমু বাসর ঘরটা সাজিয়েছে বেশ সুন্দর করে, হঠাৎ আম্মু ডাকছে শুনে তাড়াতাড়ি গেলাম
–আম্মু
–হ্যাঁ বস
–কিছু বলবে
–হ্যাঁ
–বলো
–সোহাগীকে আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে কিন্তু আমরা বিয়েটা করাতে চাইনি এতো পিচ্ছি মেয়ে, শুধু তুই ভালোবাসিস বলে বিয়েটা করালাম তোর বাবা তো এখনো রেগে আছে
–হ্যা জানি
–শুন বউমা পিচ্ছি এখনো এতোকিছু বুঝে না তাই ওর উপর কখনো রাগ করিস না কখনো যদি কোনো ভুল করে বুঝিয়ে বলিস বুঝবে
–ঠিক আছে
–ভবিষ্যৎ এ কি হবে তা তো জানিনা কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে তাই কখনো বউমার মনে কষ্ট দিসনা ছেড়ে যাওয়ার সুযোগটা কখনো দিবি না (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আম্মুর দিকে এমন মা কি কারো হয় কতো সুন্দর করে বন্ধুর মতো বুঝিয়ে বলছেন সত্যি আমি অনেক ভাগ্যবান, আম্মু কে জরিয়ে ধরলাম)
–হইছে এখন রুমে যা বউমা একা আছে
–ঠিক আছে

একটু তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম পিচ্ছি মেয়ে একা রুমে আছে যদি ভয় পায়, দরজা খুলে তো আমি অবাক এই মেয়ে নিজের কি অবস্থা করেছে চুল খুলতে পারে না তাই বলে চুল সব জট লাগিয়ে এলোমেলো করে ফেলছে দেখতে একদম পাগলীর মতো লাগছে, আস্তে আস্তে সোহাগীর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম আয়নায় আমাকে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখ ঘুরিয়ে অসহায়ের মতো আমার দিকে তাকালো, আমি মৃদু হেসে আমার পিচ্ছি বউয়ের চুলের জট ছাড়াতে লেগে গেলাম

অনেক সময় নিয়ে আস্তে আস্তে চুলের জট ছাড়িয়ে দিলাম মাত্র কয়েকটা চুল ছিঁড়েছে দেখে তো সোহাগী অবাক, আমি ওর মুখের অবস্থা দেখে মনে মনে ভাবছি জট ছাড়াতে কতো কষ্ট হয়েছে সেটা তো আমি জানি মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধ জয় করেছি
–হিহিহি আমার চুল ছিঁড়েনি থ্যাংকস (হঠাৎ ওর খিলখিল হাসিতে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকালাম সত্যি পিচ্ছিটা দেখতে অনেক মায়াবী)
–কি ভাবছ
–কিছুনা চলো নামাজ পড়ি
–এতো রাতে কিসের নামাজ
–আমাদের নতুন জীবন শুরু করবো তো তাই আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবো
–আচ্ছা

সোহাগীকে নিয়ে দুই রাকাত নফল নামায পড়লাম তারপর চেঞ্জ করতে চলে গেলাম

চেঞ্জ করে এসে দেখি সোহাগী ফুল গুলোকে ছুঁয়ে দেখছে ওর হাতের ছোঁয়ায় যেন ফুল গুলোকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে
–ওই (হঠাৎ সোহাগীর ডাকে হুশ ফিরলো)
–কি আর কিছু লাগবে
–আমি শাড়ি পড়ে ঘুমাতে পারবো না জামা এনে দাও
–(ঘুমাতে পারবে না বলছে যখন পিচ্ছি বউটার সাথে একটু দুষ্টুমি করা যাক)
–কি হলো
–আজকে ঘুমাতে হবে না তো বাসর রাতে কেউ ঘুমায় নাকি

বউ আমার দিকে কিছুক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে বললো
–বাসর রাত কি
আমার অবুঝ বউয়ের অবুঝ প্রশ্নে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম এই পিচ্ছি মেয়ে তো বাসর রাত কি সেটাই জানেনা এখন কি উত্তর দেই…..

চলবে?

(এই গল্পে তেমন সাড়া পাচ্ছি না মনে হয় ভালো লাগছে না আপনাদের, ভালো না লাগলে বলুন আমি নতুন গল্প লিখবো কিন্তু অনেক দিন পর, আসলে আমি খুব অসুস্থ আছি তো গল্পে তেমন মন দিতে পারছি না কষ্ট করে লিখি কিন্তু কি লিখি নিজেই জানিনা??)

অবুঝ_বউ পার্ট: ৪

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

আব্বুর সামনে বসে আছি আর মনে মনে দোয়া পড়তেছি আব্বু যে রাগি কি থেকে কি করে ফেলবে তার নিশ্চয়তা নেই
আম্মু: কিরে কি জন্য এসেছিস বল এভাবে বসে আছিস কেন
আমি: আম্মু তুমি বলনা
আব্বু: কি হয়েছে
আম্মু: বিয়ের ব্যাপারে
আব্বু: এখানে বিয়ে হবে না
আমি: কিন্তু কেন
আব্বু: আমার ছেলে কি এতোই সস্তা নাকি কোনো অনুষ্ঠান করবে না ওরা আর আমার বন্ধুরা কি ভাববে তাছাড়া তোমার বন্ধুদের কি বলবে হ্যাঁ (আব্বু রেগে গেছে এখন কি করবো আম্মু ছাড়া উপায় নেই তাই আম্মুর দিকে অসহায়ের মতো তাকালাম)
আম্মু: তোমার মান সম্মানের জন্য আমার ছেলে কষ্ট পাবে নাকি আমি এই মেয়েকেই আনবো আর সাধারণ ভাবেই
আব্বু: যাও নিজের বৌমাকে নিজেই গিয়ে নিয়ে আস
আমি: আচ্ছা আম্মু বিয়ের পরে আমাদের বাসায় অনুষ্ঠান করলেই তো হয় তাই না
আম্মু: হ্যাঁ হয় তো শুধু শুধু এতো জামেলা করার কি প্রয়োজন
আব্বু: কিন্তু
আম্মু: আর কোনো কিন্তু নয় এখানেই বিয়ে হবে আর পরে তুমি অনুষ্ঠান করবা
আব্বু: ঠিক আছে
আর কোনো কথা না শুনে দৌড়ে রুমে চলে আসলাম পিচ্চিটাকে বিয়ে করতে পারবো এই খুশিতে তো একটু ডান্স করতেই হয়, মনের সুখে গান গাইছি আর ডান্স করছি হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আমার পিচ্ছি বউয়ের ফোন তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–(নিশ্চুপ)
–কথা বলছ না কেন
–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
–কেন
–আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবেন তাই
–পাগলী চিন্তা করোনা খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো
–পরশুদিন-ই তো আমাদের বিয়ে তাই না
–মানে
–হ্যাঁ আপনি জানেন না
–না তো, ভালো হয়েছে আর মাত্র একদিন তারপর তুমি এখানে চলে আসবে
–হুম
–আচ্ছা আজকেও কি তুমি তোমার আপুর শিখানো কথা বলছ
–(নিশ্চুপ)
–বুঝেছি, শুনো সোহাগী তুমি এখন আমার পিচ্ছি বউ হয়ে যাবে তাই তোমার মন যা চায় তাই আমার সাথে বলতে পারো তোমার আপুর শিখানো কথা বলতে হবে না
–সত্যি তাহলে আমার বিয়ের শাড়ি কেমন আনবেন বলে দেই
–হাহাহাহা আচ্ছা
–আমি যখন ছোট বেলায় পুতুল বিয়ে দিতাম কনে কে কালো শাড়ি পড়াতাম দেখতে খুব সুন্দর লাগতো অবশ্য এখনো আমি মাঝে মাঝে পুতুল বিয়ে দেই (এই মেয়ে বলে কি এখনো পুতুল বিয়ে দেয় আমি এতো পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছি)
–তারমানে তুমি কালো শাড়ি চাও
–হ্যাঁ
–কিন্তু কেউ মানবে না তো বিয়ের বেনারসি কালো দিতে নেই
–আমি জানিনা (বলেই কাঁদতে শুরু করে দিল কোন জ্বালায় পড়লামরে বাবা)
–আরে কান্না করোনা কালো শাড়িই দিব
–আচ্ছা কথা দাও আমার সাথে মাঝে মাঝে পুতুল বিয়ে দিবে
–আরে কি বল এসব আমি ছোট নাকি
–হ্যাঁ ছোটই দিবা বল নাহলে আবার কান্না করবো
–আচ্ছা দিব
–হিহিহি
–(উফফফ কি সুন্দর হাসি, এই হাসির প্রেমে বার বার পড়া যায়, এই পিচ্ছি মেয়ের মুখে হাসি রাখতে হলে এসব তো আমাকে করতেই হবে)
–কি হলো চুপ হয়ে আছ যে
–তোমার হাসি শুনছি
–আমার হাসি খুব সুন্দর তাই না এই কথাটা পিয়ালও বলে
–পিয়াল কে
–আমার বন্ধু আমরা একসাথে পড়ি (বুকের বাম পাশে ব্যাথা অনুভব করছি তাহলে কি সোহাগী পিয়াল কে ভালোবাসে)
–পিয়ালকে কি তুমি ভালোবাস
–ভালোবাসা আবার কি ও আমার বন্ধু আমরা একসাথে স্কুলে যাই
–সত্যি তুমি ভালোবাসা কি জাননা
–নাতো এইটা কি
–পরে শিখাবো কেমন এখন রাখি
–আচ্ছা

ফোন রেখে একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম যাক সোহাগী তো ভালোবাসা কি এটাই বুঝেনা তাহলে পিয়ালকে আবার ভালোবাসবে কিভাবে, সোহাগীকে ভালোবাসা শিখাবো আমি তারপর আমার পিচ্ছি বউ শুধু আমাকে ভালোবাসবে, সোহাগীর সাথে কথা বলতে এতোটাই বিভোর ছিলাম যে ও আমাকে সেই কখন থেকে তুমি করে বলছে খেয়ালি করিনি হাহাহা পিচ্ছি বউ আমার
–কিরে ভাইয়া একা একা হাসছিস কেন (মুমুর ডাকে ভাবনা জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসলাম)
–এমনি হাসছি
–বেশি করে হাস দুদিন পর তো তোর বিয়ে হাসির সাথে ডান্সও কর হিহিহি
–তোর হাসি শুনলে পেত্নীরাও ভয় পাবে হুহুহুহুহু
–তোর বউয়ের হাসি সুন্দর হলেই হবে
–না না তোর হাসি কতো মিষ্টি শুনলে শুধু শুনতেই মন চায়
–তাই
–হ্যাঁ শুননা একটা কথা ছিল
–বল
–সোহাগীর বিয়ের বেনারসি কালো রঙের কিনবো প্লিজ তুই আম্মুকে রাজি করা
–তাই তো বলি আমার হাসির এতো প্রশংসা করছিলি কেন
–প্লিজ
–কিন্তু ভাইয়া বিয়েতে তো কালো রঙ কে অশুভ ধরা হয় বেনারসি কি ক…..
–প্লিজ লক্ষী বোন আমার যে করেই হউক আম্মুকে রাজি করা
–ঠিক আছে আমার হাসির যেহেতু প্রশংসা করছিস চেষ্টা করে দেখি
–ওকে

রাতে সোহাগীর কথা ভাবতে ভাবতে যে কখন ঘুমিয়ে পড়ছিলাম মনে নেই সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–আম্মু আর একটু ঘুমাই প্লিজ
–শপিং করতে যেতে হবে উঠে পর
–এখন আবার কিসের শপিং
–তোর বিয়ের
লাফ দিয়ে উঠে বিছানায় বসলাম আমার যে আগামীকাল বিয়ে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, শপিং করতে যেতে হবে সোহাগীর জন্য কালো বেনারসি কিনতে হবে তাই তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম

গাড়িতে বসে আছি মুমু আম্মুকে বলেছে কিনা বুঝতে পারছি না সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছি কিন্তু কিছু বুঝা যাচ্ছে না
আম্মু: কি বলবি আমি জানি
আমি: কি
আম্মু: কালো বেনারসি লাগবে
আমি: হুম
আম্মু: তুই আমার একমাত্র ছেলে বলে শুধু রাজি হয়েছি নাহলে তোর এই অবুঝ পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করার সখ ছাড়াতাম (মুখ গোমরা করে বসে আছি ভাবখানা এমন যেন আম্মুর কথায় আমি কষ্ট পাইছি কিন্তু মনে মনে তো আমি ডান্স করছি হিহিহি)

সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে কফি হাতে নিয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে রাতের ব্যস্ত শহর দেখছি মাঝে মাঝে কফির মগে চুমুক দিচ্ছি আর সোহাগীর খিলখিল করে হাসিটা অনুভব করছি, আগামীকাল সোহাগীর সাথে আমার বিয়ে আমি ওর স্বপ্ন পূরন করবো ওর সব আবদার পূরন করবো মোট কথা সোহাগীকে অনেক ভালোবাসবো, সোহাগী আগামীকাল আমার হয়ে যাবে সারাজীবনের জন্য কিন্তু কোথাও যেন একটু ভয় হচ্ছে আম্মুর কথাটা যদি কখনো সত্যি হয়ে যায়…..

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ৩

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে মুমুর চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গলো বাসা তো মাথায় তুলে ফেলছে কি নিয়ে যেন চেঁচামেচি করছে, ড্রয়িংরুমে গেলাম শুনার জন্য
মুমু: আমি মানি না এই বিয়ে
আম্মু: কিন্তু উপায় নেই
আমি: মুমু কি হইছে রে
মুমু: ভাইয়া তুই বল আমার একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে নাকি এতো সাধারণ ভাবে হবে আমার ফ্রেন্ডসরা কি বলবে
আমি: কে বলছে সাধারণ ভাবে হবে
আম্মু: সোহাগীর বাড়ির লোকজন বলেছে ওরা অনুষ্ঠান করতে পারবে না বিয়ে আনতে হলে দুদিনের ভিতরে আনতে হবে নাহলে ওরা অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবে
আমি: কি বলো এসব
আম্মু: তোর আব্বু তো এই কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে আছে
মুমু: এখানে বিয়ে হবে না অন্য কোথাও মেয়ে দেখো আম্মু
আমি: মুমু আমি সোহাগী কে ভালোবেসে ফেলছি
মুমু: ওই একদম চুপ এক দেখায় আবার ভালোবাসা হয় কিভাবে
আমি: জানিনা কিন্তু সত্যি বলছি আমি ওকে ভালোবেসে ফেলছি
আম্মু: আচ্ছা তোরা ঝগড়া করিস না ভেবে দেখি কি করা যায়
আমি: আম্মু
আম্মু: আরে বোকা ছেলে মন খারাপ করিস না দেখা যাক কি হয়
আমি: হুম

মনটাই খারাপ হয়ে গেলো নাসতা না করেই রেডি হয়ে অফিসে চলে আসলাম, যাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলছি তাকে নাকি আমার করে নিতে পারবো না এইটা কোনো কথা হলো আর ওরাই বা কেমন কিপটা ছোট করে একটা অনুষ্ঠান করলে কি হয়
–নাহিল কি হয়েছে তোমার (তাকিয়ে দেখি আমার ফ্রেন্ডস মৌরি, আমরা একসাথেই ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম আর এখন একসাথেই একি অফিসে চাকরি করছি)
–কি হলো কি ভাবছ
–কিছু না
–কি হয়েছে আসার পর থেকে দেখছি কাজে মন নেই তোমার
–ভাবছি চাকরিটা ছেড়ে দিব
–তোমার বাবার এতো বড় ব্যবসা রেখে কেন যে অন্যের অফিসে কাজ করছ বুঝিনা আমি
–আমার নিজে থেকে কিছু করতে ভালো লাগে
–তাহলে এখন চাকরি ছেড়ে দিতে বলছ কেন
–মন খারাপ তাই
–কি হয়েছে
–আর বলোনা জীবনের প্রথম একটা মেয়েকে ভালোবাসলাম কিন্তু ওকে বিয়ে করে আমার করে নিতে পারছি না
–(নিশ্চুপ)
–কি হলো তুমি চুপ হয়ে গেলে কেন
–এমনি ভেবো না তোমার ভালোবাসা সত্যি হলে বিয়ে হবে
মৌরি হনহন করে হেটে চলে গেলো বুঝলাম না ও মন খারাপ করলো কেন

অফিসে বসে বসে ঝিমুচ্ছি হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো অচেনা নাম্বার এমনি মন খারাপ আবার অচেনা নাম্বার থেকে ডিস্টার্ব করে ফোনটা কেটে দিলাম, একটু পর আবার বেজে উঠলো বিরক্ত হয়ে রিসিভ করেই রাগ দেখিয়ে বললাম
–হ্যালো কে
–আমি সোহাগী (রাগ তো সব উড়ে গেলো সাথে বুকের ধুকধুকানি বেড়ে গেলো)
–তুমি
–আমার সাথে দেখা করতে পারবেন এক্ষণি
–হ্যাঁ হ্যাঁ পারবো বলো কোথায়
–আমি মেসেজে ঠিকানা বলে দিচ্ছি
–ওকে

সোহাগীর পাঠানো ঠিকানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম, ড্রাইভ করছি ইচ্ছে হচ্ছে গাড়িটা উড়িয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি ওর কাছে পৌঁছে যাই, সোহাগী কে দেখবো ওর খিলখিল করে হাসির শব্দ শুনবো উফফফ আর তর সইছে না

সোহাগীর সামনে বসে আছি বুকের ধুকধুক শব্দটা বেড়েই চলছে কি বলবো ভাবছি তখনি সোহাগী বলে উঠলো
–আপনার সাথে কি বিয়েটা হচ্ছে না (ওর এমন প্রশ্নে থমথম খেয়ে গেলাম কি বলবো আমি নিজেই তো এই প্রশ্নের উত্তর জানিনা)
–চুপ হয়ে আছেন যে
–আসলে বিয়….
–দেখুন বিয়ে ভালোবাসা এসব আমি বুঝিনা আমার ভালোবাসা বলতে আপুকে বুঝি যে আমাকে পাঁচবছর ধরে লালনপালন করছে, বিয়ে করে এই বাড়ি থেকে বেরুনো ছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই আমি ওখান থেকে বেরুতে চাই তাই আপনার সাহায্য প্রয়োজন
–কি সাহায্য
–আপাদত আপনি আমাকে বিয়ে করে ওখান থেকে নিয়ে আসুন তারপর আমাকে ভালো না লাগলে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন
–(এই পিচ্ছি মেয়ে বলে কি যাকে দেখে মনের মধ্যে এতো স্বপ্ন বুনে ফেলছি তাকে নাকি ডিভোর্স দিব)
–প্লিজ কিছু বলুন আমাকে যেতে হবে
–আসলে আম্মুর অনুমতি ছাড়া কি বলবো
–বললাম তো ভালো না লাগলে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন তাও এখন আমাকে সাহায্য করুন প্লিজ কথা দিচ্ছি আমি সবসময় আপনার বন্ধু হয়ে থাকবো
–ঠিক আছে তুমি বাসায় যাও আমি দেখছি
–ওকে
সোহাগী চলে যাচ্ছে মন খারাপ করে ওর মলিন মুখ দেখতে একদম ভালো লাগছে না যে করেই হউক ওর মুখে সেই হাসি ফিরিয়ে আনতে হবে যে হাসি দেখে আমি ওকে ভালোবেসেছি

বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার আকাশ দেখছি আর সোহাগীর কথা ভাবছি
মুমু: এই ভাইয়া
আমি: হুম
–কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি শুনছিস না তোর ফোনটা তো সেই কখন থেকে বেজেই চলেছে
–ওহ শুনিনি
–আচ্ছা এই নে ফোন আর এই নে তোর কফি আমি গেলাম

কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম সকালের সেই নাম্বার থেকে ফোন তারমানে সোহাগী ফোন দিয়েছে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–আমি সোহাগীর বোন
–কেমন আছেন আপু
–ভালো আপনি
–আমি আপনার ছোট ভাই তুমি করেই বলুন
–ঠিক আছে, আসলে একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম
–জ্বী বলুন
–কিভাবে যে বলি না বলেও পারছি না নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে
–আপু কোনো সংকোচ না করে বলুন
–আসলে আজ সোহাগী তোমাকে যা যা বলেছে সব আমার শিখানো কথা
–মানে
–আমিই ওকে এসব বলতে বলেছিলাম যেন বিয়েটা হয় কিন্তু এখন নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে, তুমি কি বুঝনা ওর মতো পিচ্ছি মেয়ে এসব কথা কখনোই বলতে পারবে না
–আপু আমি বুঝতে পেরেছি চিন্তা করবেন না আমি আব্বু আম্মুকে রাজি করাচ্ছি খুব শীঘ্রই আমি সোহাগীকে বিয়ে করবো
–(ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ ছাড়া আর কিছু শুনা যাচ্ছে না)
–আপু প্লিজ কাঁদবেন না
–আচ্ছা ভাই রাখি
সোহাগীর বোন তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে দিল, ওরা দুবোন এতো কাঁদে কেন কোনো জামেলা তো আছেই

সোহাগী কে যে আমি ভালোবেসে ফেলছি এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু আব্বুকে বুঝাবো কিভাবে

জানি আব্বু রেগে আছেন তাও যাচ্ছি আব্বুর কাছে সোহাগীর কথা বলতে জানিনা কি হবে, আচ্ছা আব্বু যদি রাজি না হন তাহলে কি সোহাগী আমার হবে না…?

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ২

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ২

লেখিকা: সুলতানা তমা

আম্মু আব্বুর সাথে সোহাগীর বাড়ির লোকজন তর্ক করছে ওরা বলছে এই বয়সেই বিয়ে দেওয়া উচিত আর আম্মু আব্বু বলছে এইটা বাল্য বিবাহ হবে, হঠাৎ একজন বৃদ্ধ মহিলা ড্রয়িংরুমে এসে বেশ জোরে জোরেই বললো
–আপনাদের যদি মেয়ে পছন্দ না হয় তাহলে বিয়ে নিবেন না এখানে এতো জ্ঞান দিচ্ছেন কেন
এই কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো আব্বু আম্মু তো লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললেন, পরদার আড়ালে আবারো চোখ পড়লো বৃদ্ধ মহিলাটির কথা শুনে যেন সোহাগীর বোনের কান্না আরো বেড়ে গেলো, বুঝতে পারছি না দুবোন কাঁদছে কেন এইটা জানতে হলে তো সোহাগীর সাথে আলাদা কথা বলতে হবে কিন্তু ওরা কি আলাদা কথা বলতে দিবে, চেষ্টা করে দেখি
আমি: মুমু আমি সোহাগীর সাথে আলাদা কথা বলতে চাই (মুমুর কানে কানে বললাম)
মুমু: বলিস কি ভাইয়া
আমি: প্লিজ লক্ষী বোন আমার
মুমু: ওকে
মুমু কিছুক্ষণ আব্বু আম্মুর দিকে তাকালো তারপর ভয়ে ভয়ে বলেই ফেললো
মুমু: ভাবিকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে আমি আর ভাইয়া ভাবির সাথে আলাদা কথা বলতে চাই
আম্মু: কি বলছিস
মুমু: আম্মু প্লিজ
–হ্যাঁ হ্যাঁ তোমরা কথা বলতে পারো পারলে আজকেই বিয়ের কাজ সেরে ফেলো (আগের বৃদ্ধ মহিলাটি বললো, বুঝলাম না ওরা এই পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য এতো পাগল হয়েছে কেন)
আম্মু: কিন্তু
মুমু: আম্মু প্লিজ না করো না
আম্মু: ঠিক আছে যা

সোহাগীর সাথে ওর রুমে আসলাম বেশ সুন্দর করে গুছানো রুম, মুমু রুমে বসে আছে আমি সোহাগীর সাথে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, কি বলবো প্রথমে কি বলা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না তখনি সোহাগী নিরবতা ভেঙ্গে জোরেই বলে উঠলো
–আপনি আমাকে বিয়ে করবেন (আমি ওর এই প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি, আমার মুখের অবস্থা দেখে ও খিলখিল করে হাসছে একদম বাচ্চাদের মতো হাসি খুব সুন্দর হাসি ওর এই হাসির প্রেমে পড়ে গেছি আমি)
–কি হলো কথা বলছেন না যে
–না মানে কি বলবো
–আমাকে বিয়ে করবেন কিনা সেটা বলেন
–আচ্ছা তুমি এতো অল্প বয়সে বিয়ে করতে চাচ্ছ কেন তোমার তো এখন পড়ালেখা করার বয়স
–হুম
–তোমার আব্বু আম্মুকে বুঝাও এখন বিয়ে করলে তো….
–আমার আব্বু আম্মু নেই (সোহাগীর চোখে পানি টলমল করছে এখন কি বলা উচিত বুঝতে পারছি না)
–তাহলে
–এইটা আমার বড় আপুর শশুড় বাড়ি এখানেই থাকি আমি (এখন বুঝেছি দুবোনের কান্নার কারন ওকে হয়তো সবাই বুঝা মনে করে তাই বিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে)
–আচ্ছা তোমার স্বপ্ন কি
–আমি পড়ালেখা করে একজন ডক্টর হতে চাই
–তাই
–হুম কিন্তু আপুর শাশুড়িটা না খুব পঁচা আমাকে পড়ালেখা করাতেই চায়না আর দুলাভাই তো আরো বেশি পঁচা সবসময় আমার দিকে খারাপ নজরে তাকায় (এই মেয়েকে এখানে রাখা ঠিক হবে না ওকে বিয়ে করে আমার পিচ্ছি বউ বানাবো আমি নাহয় ওর সব স্বপ্ন পূরন করবো)
–তুমি পড়ালেখা করতে চাও
–হ্যাঁ কিন্তু কে করাবে আমার তো আব্বু আম্মু নেই
–যদি আমি তোমার ডক্টর হবার স্বপ্ন পূরন করি
–আপনি তো আমাকে বিয়েই করবেন না আর আপনি বিয়ে না করলেও অন্য কেউ এসে আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে আর সে যদি দুলাভাই এর মতো পঁচা হয় তাহলে তো আমার স্বপ্ন পূরন হবে না
–যদি আমি তোমাকে বিয়ে করি
–সত্যি করবেন (মেয়েটা খুশিতে লাফাচ্ছে আর হাত তালি দিচ্ছে এতো পিচ্ছি মেয়ে নাকি আবার ক্লাস টেনে পড়ে আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না)
–হ্যাঁ বিয়ে করবো কিন্তু আমার সব কথা তোমাকে শুনতে হবে
–ঠিক আছে শুনবো
–তাহলে নিচে চলো
–আচ্ছা

সোহাগী হাসছে শুধু হাসছেই না এক প্রকার নেচে নেচেই ও ড্রয়িংরুমে যাচ্ছে, মুমু তো ওর এসব বাচ্চামি দেখে হাসতে হাসতে শেষ

সবার সামনে বসে আছি সোহাগীর বাসার সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করছে কিন্তু আমি এখন কি বলবো আব্বু আম্মুর সাথে কথা না বলে তো আমি আমার সিদ্ধান্ত জানাতে পারবো না
দুলাভাই: আমার শালিকে কেমন দেখলেন পছন্দ হয়েছে
আমি: হ্যাঁ
দুলাভাই: তো বিয়ের দিন তারিখ কি আজকেই ঠিক করবেন নাকি
আব্বু: কিসের দিন তারিখ আমরা আগে বাসায় যাই বুঝাপড়া করে তারপর জানাবো
দুলাভাই: ঠিক আছে

সোহাগীদের বাসা থেকে বেরুনোর সময় ওর দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দিলাম বিনিময়ে পেলাম এই পিচ্ছি মেয়ের খিলখিল করে হাসি যে হাসির প্রেমে পড়ে গেছি আমি, গাড়িতে উঠে বসলাম আর নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করলাম আব্বু আম্মুর বকা শুনার জন্য
আব্বু: নাহিল মেয়েটাকে তোমার পছন্দ হয়েছে
আমি: হ্যাঁ
আম্মু: তুই এই বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করতে চাস
আমি: আম্মু ও ছোট আমিও মানছি কিন্তু আমি বিয়ে না করলেও তো অন্য কেউ একজন ওকে বিয়ে করবেই এতে ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে পারে আম্মু আমি ওর স্বপ্ন পূরন করতে চাই
আম্মু: মানে
আমি: পরে বলবো আম্মু প্লিজ না করোনা তোমরা তো আমাকে সব দিয়েছ এখন নাহয় সোহাগী কে দাও
আব্বু: ভেবে দেখবো

বারান্দায় বসে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছি আর চোখ বন্ধ করে সোহাগীর খিলখিল করে হাসিটা অনুভব করছি সত্যি ও যেমন সুন্দর তেমন ওর হাসিটাও মিষ্টি
–মাগো (হঠাৎ মাথায় থাপ্পড় খেয়ে পিছনে তাকালাম আম্মু রাগি চোখে তাকিয়ে আছে)
–কতোক্ষণ ধরে ডেকে যাচ্ছি তোর কোনো খবর নেই
–আর বলোনা আম্মু চোখ বন্ধ করে তোমার বৌমার কথা ভাবছিলাম
–নাহিল তোর কি লজ্জা শরম নেই
–কেন এখানে লজ্জার কি আছে তুমি আমার আম্মু+ফ্রেন্ড তোমার সাথে এসব কথা বলবো না তো কার সাথে বলবো
–হ্যাঁ তাও ঠিক আচ্ছা শুন যে কারনে এসেছি
–বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলেছ নাকি
–সবসময় ফাজলামো করিস না তো
–আচ্ছা বলো
–তুই যে সোহাগী কে বিয়ে করতে চাচ্ছিস ও টেনে পড়লেও কিন্তু এখনো পিচ্ছি মেয়েই রয়ে গেছে এখনো ও এতোকিছু বুঝেনা কিন্তু ও যখন আরো বড় হবে সবকিছু বুঝবে তখন যদি তোকে ভালো না বাসে
–কি যে বলনা আম্মু আমি কি ওর সাথে প্রেম করবো নাকি যে পরে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে আমি তো ওকে বিয়ে করবো
–কিন্তু
–আম্মু দেখো আমি তোমার বৌমাকে এতো ভালোবাসা দিব যে ও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারবে না
–তাও ভয় হয়
–আম্মু প্লিজ
–ঠিক আছে
–বিয়ের তারিখটা তাড়াতাড়ি ঠিক করে ফেল
–পাগল ছেলে
আম্মু হাসতে হাসতে চলে গেলো আমি আবারো কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে চোখ দুইটা বন্ধ করলাম সোহাগীর মিষ্টি হাসি অনুভব করার জন্য…..

অবুঝ_বউ পার্ট: ১

0

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১

লেখিকা: সুলতানা তমা

–ভাইয়া তোর হলো আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে তো
–আর একটু
–আমি বুঝতেছি না এতো সাজুগুজু করার কি প্রয়োজন তুই তো আজকে শুধু মেয়ে দেখতে যাচ্ছিস বিয়ে করতে তো যাচ্ছিস না
–আরে গাদি মেয়ে যদি আজকে আমাকে পছন্দ না করে তাহলে বিয়েটা হবে কি করে
–আমার ভাই দেখতে অনেক সুন্দর মেয়ে পছন্দ না করে পারবেই না
–সাজুগুজু করে আর একটু সুন্দর হলে দোষের কি
–উফফফ জীবনেও দেখি নাই ছেলেরা এতো সাঝে
–হেহ তোরা মেয়েরা যদি কয়েক কেজি আটা ময়দা লাগাতে পারিস তাহলে আমরা ছেলেরা একটুখানি আটা ময়দা লাগাতে পারবো না কেন
–তুই কি ঝগড়া করবি নাকি যাবি
–হ্যাঁ চল শেষ তো আমার
–উফফফ তুই না পারিসও বটে

বিয়ে করবো আমি আর সব জ্বালা আব্বু আম্মুর, আমি রুম থেকে বেরুনোর আগেই উনারা গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে আছেন কেমন লাগে, তাড়াতাড়ি গিয়ে গাড়িতে উঠলাম, উহ আপনাদের পরিচয় দেওয়া হয়নি তাই না দাঁড়ান হবু শশুড় বাড়িতে যেতে যেতে পরিচয়টা দিয়ে দেই, আমি নাহিল আর এতোক্ষণ যার সাথে আটা ময়দা নিয়ে বকবক করলাম সে আমার ছোট বোন মুমু, আব্বু আম্মু মুমু আর আমি যাচ্ছি মেয়ে দেখতে বিয়ে করবো তো তাই, বিয়ের কথা ভাবতেই লজ্জা লাগে হিহিহি
মা: কিরে ভূতের মতো হাসছিস কেন
মুমু: মা বুঝনা ভাইয়া বিয়ে করবে তো তাই খুশিতে হাসছে
আমি: চুপ কর সবকিছুতে বেশি পাকামো
মা: তোর তো বিয়ের বয়স হয়নি ভাবছি মেয়ে দেখে রেখে আসবো আরো কয়েকটা বছর পর বিয়ে করাবো তোকে
আমি: মানে কি আমার বিয়ের বয়স হয়নি কোন যুক্তিতে বললা পড়াশুনা শেষ করেছি ছোটখাটো একটা চাকরি করছি আর তুমি বলছ আমার বিয়ের বয়স হয়নি আম্মু আমি এখনি বিয়ে করবো
আব্বু: দেখেছ তোমার বোকা ছেলের কান্ড বেকুব এর মতো কিভাবে বলছে আম্মু আমি এখনি বিয়ে করবো লজ্জা শরম সব খেয়ে পেলছে
আমি: আচ্ছা আব্বু তুমি যখন আম্মুকে বিয়ে করতে গিয়েছিলে তখন কি লজ্জা পেয়েছিলে (ভুল বলে ফেললাম মনে হয় আব্বু রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে মুমু তো মুখ টিপে হাসছে আর আম্মুর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না রেগে আছে নাকি হাসছে)

উফফফ এতো দূর শশুড় বাড়ি হলে আমি তো বছরেও একবার আসতে পারবো না আর শশুড় বাড়িতে ঘনঘন না আসলে তো মজার মজার খাবার সব মিসস করবো, বন্ধুদের কাছে শুনেছি শশুড় বাড়িতে জামাই আসলে নাকি খুব আদর করে
আমি: আম্মু আর কতো দূর
আম্মু: কেন
মুমু: আম্মু বুঝনা ভাইয়া ভাবিকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে হিহিহি
আমি: বাসায় গিয়ে তোর হিহিহি ছাড়াবো
আব্বু: নাহিল আমরা চলে এসেছি বাসায় ঢুকে ওদের সামনে এতো কথা বলোনা বুঝেছ
আমি: আব্বু কথা না বললে তো ওরা আমাকে বুবা ভাববে তখন তো আমার বিয়ে করা আর হবে না
আব্বু: বিয়ে পাগল ছেলে একটা (মিনমিনিয়ে বললো)
আমি: আব্বু কিছু বললে
আব্বু: মুখটা আপাদত বন্ধ রাখ

গেইটের সামনে নামতেই কয়েকজন এসে আব্বুর সাথে হাত মিলাতে শুরু করলো আমি যে ওদের হবু জামাই এখানে দাড়িয়ে আছি ওরা যেন চোখেই দেখছে না, একজন আমার দিকে আসছে বয়স দেখে তো শশুড় মনে হচ্ছে না তাহলে এইটা আবার কে
–হ্যালো জামাইবাবু কেমন আছেন
–ভালো আপনি
–আমি মেয়ের দুলাভাই
–ওহ
–ভিতরে চলো

বসে বসে ভাবছি মেয়ে যেন বেশি সুন্দরী না হয় আমি এতো সুন্দরী মেয়ে চাই না আমি চাই শ্যামলা রঙের একটি সাধারণ মেয়ে যার চোখ দেখে আমি পাগল হবো যে আমাকে আমার মতো করে ভালোবাসবে আর তার মনের মতো করে আমাকে গুছিয়ে রাখবে, আমি না সবসময় এলোমেলো ভাবে চলাফেরা করি তাই আম্মু বিয়ে করাতে রাজি হয়েছে নাহলে তো আগামী কয়েক বছরের ভিতরে আমার বিয়ে হতো কিনা সন্দেহ আছে
মুমু: ভাইয়া এতোক্ষণ ধরে কি ভাবছিস তোকে ডাকছে উনারা শুনছিস না
আমি: শুনিনি (আহারে উনাদের কথার উত্তর দেইনি এবার মনে হয় আমার বিয়েটা আর হবে না)
মেয়ের দুলাভাই: নাহিল আপনার কথা তো আমরা সব জানিই তাই আর কথা বাড়াতে চাচ্ছি না মেয়ে দেখুন পছন্দ হলে পর বাকি কথা হবে (আমার সম্পর্কে কি জানে তাহলে কি আম্মু উনাদের বলে দিলো আমি যে বিয়ে পাগল)
মুমু: ভাইয়া বার বার কোথায় হারিয়ে যাচ্ছিস সিড়িতে তাকিয়ে দেখ পরী নেমে আসছে
সিড়ির দিকে তাকিয়ে তো আমি পুরাই টাসকি খাইছি এতো সুন্দর মেয়ে আমার বউ হবে, কালো রঙের একটা শাড়ি পড়েছে চুলগুলো অনেক লম্বা নিচের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসছে মনে হচ্ছে আকাশ থেকে কোনো পরী নেমে আসছে, এই মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে কিনা সন্দেহ আছে আমি তো দেখতে মাশাল্লাহ কয়লার ড্রাম
মুমু: ভাইয়া তোর মনে হয় বিয়েটা আর করা হলোনা
আমি: কেন
মুমু: মেয়ের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখেছিস বয়স অল্প মনে হয় ক্লাস এইট/নাইনে পড়ে
মুমুর কথা শুনে আবেগে কান্না চলে আসছে এখন আমার কি হবে, মেয়ে আমার সামনের সোফায় এসে বসলো ভালো ভাবে তাকালাম সত্যিই বয়স কম
আম্মু: তোমার নাম কি মা
–সোহাগী (বাহ্ খুব সুন্দর নাম সাথে কন্ঠটাও খুব মিষ্টি)
আম্মু: তুমি কিসে পড়
সোহাগী: ক্লাস টেনে (হায় আল্লাহ্‌ বলে কি এই পিচ্ছি মেয়ে টেনে পড়ে আমি তো ভেবেছিলাম এইটে হবে)
আব্বু: তোমাকে দেখে তো বয়স খুব কম মনে হয় মা
— এখন তো এই বয়সের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় আর আমাদের মেয়ে দেখতে সুন্দরী তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাচ্ছি (একজন বৃদ্ধ লোক বললো)
আব্বু: তা বুঝলাম কিন্তু
মেয়ের দুলাভাই: কিন্তু কিসের বিয়ের বয়স তো হয়েছেই
আম্মু: না না বয়স হয়নি এইটা বাল্য বিবাহ হবে
আব্বু: এতো পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাচ্ছেন কেন
মুমু: ভাইয়া দেখ মেয়েটা কাঁদছে (মুমু আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলাতে সোহাগীর দিকে তাকালাম সত্যিই তো ও কাঁদছে কিন্তু কাঁদছে কেন বিয়ে করতে চায় না নাকি বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে বলে)

আম্মু আব্বু রীতিমতো সবার সাথে তর্ক করা শুরু করেছেন আসলে আম্মু আব্বু সোহাগীর সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাচ্ছেন না, হঠাৎ পরদার আড়ালে চোখ পড়লো একটি মেয়ে কাঁদছে দেখে মনে হচ্ছে সোহাগীর বড় বোন কারন দুজনের চেহারায় মিল আছে এখানে সোহাগি কাঁদছে ওখানে ওর বোন কাঁদছে নিশ্চই এর মধ্যে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে, কি রহস্য তা আমাকে জানতে হবেই……

চলবে?

শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ৩০/অন্তিম পর্ব

0

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ৩০/অন্তিম পর্ব

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফা সাইন করছে দেখে বুকের ভিতর কেমন যেন ব্যথা অনুভব হচ্ছে। সবকিছু কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসছে, মনে হচ্ছে এখনি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবো। তাড়াতাড়ি নীলিমার হাতটা চেপে ধরলাম।
নীলিমা: ভাইয়া কি হয়েছে বসো এখানে
প্রিতি: ভাবি (বসতে যাবো তখন প্রিতির চিৎকার শুনে সামনে তাকালাম, আলিফা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে)
নীলিমা: ভাইয়া যেও না পরে যাবে
আমি: ছাড় আমাকে (তাড়াতাড়ি আলিফার কাছে আসলাম)
আমি: আলিফা কি হয়েছে
আব্বু: মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে পানির ছিটা দে। (আলিফার চোখে মুখে প্রিতি নীলিমা অনেক্ষণ পানি ছিটিয়ে দিলো কিন্তু জ্ঞান তো ফিরছে না)
ছোটমা: রিয়ান ডক্টর কে ফোন কর তাড়াতাড়ি
রিয়ান: ঠিক আছে
আব্বু: বৌমা কে বরং রুমে নিয়ে গিয়ে শুয়েদে
আমি: ঠিক আছে
নীলিমা: ভাইয়া তুমি কোলে করে নিবে কিভাবে তোমার শরীরই তো ঠিক নেই
আমি: কিছু হবে না।

আলিফাকে এনে বিছানায় শুয়ে দিলাম। নিথর হয়ে শুয়ে আছে, কি হয়েছে ওর কিছুই বুঝতে পারছি না।
রিয়ান: ভাইয়া ডক্টর এসেছে
আমি: হুম (দূরে এসে দাঁড়িয়ে আছি, ডক্টর আলিফাকে দেখছে। কেন যেন খুব ভয় হচ্ছে)
আব্বু: ডক্টর কি হয়েছে আমার বৌমার
ডক্টর: কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে উনাকে একটু একা থাকতে দিন। সবাই নিচে আসুন।
আব্বু: ঠিক আছে চলুন।

ড্রয়িংরুমে আসতেই আব্বু ডক্টর কে জিজ্ঞেস করলেন
আব্বু: ডক্টর আমার বৌমার খারাপ কিছু হয়নি তো
ডক্টর: না না খারাপ কিছুনা বরং খুশির খবর আছে
আব্বু: মানে
ডক্টর: আপনি তো দাদা হবেন (কথাটা আমার কানে বার বার বাজছে, সত্যি কি)
আব্বু: সত্যি
ডক্টর: হ্যাঁ তবে এই অবস্থায় মেয়েটাকে কোনোরকম টেনশন দেওয়া ঠিক হবে না। অতিরিক্ত টেনশন করার কারণেই আজ উনার এই অবস্থা হয়েছে, দেখবেন আর যেন কোনো…
আব্বু: না না আর কোনো টেনশন করতে হবে না আমার বৌমাকে
ডক্টর: ঠিক আছে আমি ওষুধ লিখে দিয়ে যাচ্ছি, উনাকে সাবধানে রাখবেন
আব্বু: সাবধানে তো রাখবোই আমি দাদা হবো সাবধানে না রাখলে হবে। (ডক্টর ওষুধ লিখে দিয়ে চলে গেলো। ডক্টর যেতেই প্রিতি লাফিয় উঠলো)
প্রিতি: হুররেরে আমি ফুঁপি হবো
রিয়ান: মনে হচ্ছে এতোক্ষণ ডক্টর এর জন্য লাফটা দিতে পারছিলি না
প্রিতি: একদম ঠিক ধরেছ
আব্বু: নীলিমা ওইযে পেপারটা দেতো আমার হাতে (আব্বু ডিভোর্স পেপারটা দেখিয়ে দিলেন, নীলিমা পেপারটা এনে আব্বুর হাতে দিতেই আব্বু ছিড়ে ফেললেন)
আব্বু: এইটার আর কোনো প্রয়োজন নেই
চাচ্চু: একদম ঠিক।

সবাই খুশি শুধু আমি খুশি হবো নাকি কষ্ট পাবো ভেবে পাচ্ছি না। এই শেষ মুহূর্তে এসে এমন একটা খবর শুনতে হবে ভাবতেও পারিনি। এতোক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে বসে সবার আনন্দ দেখছিলাম। আর এখানে থাকতে পারবো না উঠে দাঁড়ালাম।
রিয়ান: ভাইয়া কোথায় যাচ্ছ মিষ্টি খেয়ে যাও প্রিতি মিষ্টি আনতেছে।
রিয়ানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চলে আসলাম।

আলিফার পাশে বসে আছি এখনো ওর জ্ঞান ফিরেনি। আলিফার একটা হাত আমার দুহাতের মুঠোয় আনলাম। আমার খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু সেটা কি খুশির কান্না নাকি কষ্টের বুঝতে পারছি না। প্রত্যেকটা মেয়ে যেমন মা হতে চায় প্রত্যেকটা ছেলেও তো বাবা হতে চায়, আমিও চেয়েছিলাম কিন্তু এমন একটা মুহূর্তে বাবা হবার খবরটা শুনবো কখনো ভাবিনি। আমি এখন আনন্দে কাঁদবো নাকি কষ্টে কাঁদবো কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
আমি: রাগিণী তুমি বলে দিবা এখন আমি কি করবো। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে। (আলিফার হাতের উপর মাথা রেখে কাঁদছি, হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। তাকিয়ে দেখি আলিফার জ্ঞান ফিরেছে)
আমি: আলিফা তুমি ঠিক আছ তো
আলিফা: হ্যাঁ এভাবে কাঁদছ কেন মনে হচ্ছে আমি মারা গে…
আমি: চুপ কি বলছ এসব (আলিফার মুখ চেপে ধরলাম, ও জোর করে সরিয়ে দিলো)
আলিফা: তো কি বলবো এমন ভাবে মাথা ঠুকিয়ে কাঁদছ মনে তো হচ্ছে…
আমি: আবার বলতেছ
আলিফা: সত্যি করে বলো কি হয়েছে (আলিফা প্রেগন্যান্ট এইটা কি ওকে বলবো। বলার পর আলিফা কি করবে। হয়তো রাতুলকে ভালোবাসা সত্বেও আমার কাছে থেকে যাবে। কিন্তু আমি তো ওকে এভাবে চাইনা। যদি ভালোই না বাসবে তাহলে ও আমার হ…)
আলিফা: কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন
আমি: কিছু হয়নি তো, তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলে তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম
আলিফা: অজ্ঞান হবো না আবার ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে গিয়ে তো আমার নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছিল
আমি: কেন তুমি ডিভোর্স চাও না (আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আলিফা: এখনো কি বুঝতে পারছ না
আমি: না আর এভাবে বুঝতে চাইও না আমি, তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই
আলিফা: না আমি ডিভোর্স চাই না শুনেছ তুমি
আমি: প্লিজ আস্তে চিৎকার করো তুমি অসুস্থ
আলিফা: অসুস্থ এইটা মনে আছে তোমার, তুমি পারলে কিভাবে আমার এই অবস্থায় ডিভোর্স পেপার এনে আমার হাতে দিতে
আমি: ডিভোর্স চাওনা কেন
আলিফা: আরে বোকা আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই ডিভোর্স চাই না। আর কিভাবে কতোবার বুঝাবো তোমাকে এইটা
আমি: হুম
আলিফা: রিফাত আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি তোমার কাছে থাকতে চাই। আমি এতোদিন এভাবে বলিনি ঠিকি কিন্তু অনেক ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছি তোমাকে। কারণ আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে বুঝবে কিন্তু তুমি বুঝনি উল্টো ভেবে নিয়েছ আমি রাতুলকে ভালোবাসি
আমি: তারমানে কি তুমি রাতুলকে ভালোবাস না।
“আলিফা আলিফা” হঠাৎ ডাক শুনে দরজায় তাকালাম রাতুল এসেছে। আলিফার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। খুব তো এতোক্ষণ বলেছে আমাকে ভালোবাসে এখন রাতুল এসেছে দেখি রাতুলকে কি বলে।

সবাই মিষ্টি খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত, কতোক্ষণ এই আনন্দ থাকবে সেটা তো আলিফার উপর…
রিয়ান: ভাইয়া এখানে একা বসে আছ কেন নাও মিষ্টি খাও
আমি: কিসের মিষ্টি খাবো হ্যাঁ সবাই পাগল হয়ে গেছ নাকি। যে মেয়েটা আমাকে ভালোই বাসে না তাকে নিয়ে এতো আনন্দ কিসের
আব্বু: আলিফা তোকে ভালোবাসে কিনা এইটা আমি জানিনা, আনন্দটা আমার পরিবারে নতুন মেহমান আসবে এইটার জন্য
রিয়ান: আব্বু কে বলেছে ভাবি ভাইয়া কে ভালোবাসে না। ভাইয়া অনেক বোকা তাই ভাবির ভালোবাসা বুঝতে পারেনি।
আমি: কি বলতে চাইছিস
রিয়ান: এটাই যে তুমি অজতা চিৎকার করলেই ভাবির ভালোবাসা মিথ্যে হয়ে যাবে না। আমি জীবনে অনেক বোকা দেখেছি কিন্তু তোমার মতো একটাও দেখিনি। আমি দূর থেকে বুঝতে পেরেছি ভাবি তোমাকে ভালোবাসে আর তুমি…
আমি: হ্যাঁ আমি শুধু বোকা তাই ওর ভালোবাসা বুঝিনি কিন্তু তুই কি তুই তো আমার থেকে বড় বোকা
রিয়ান: মানে
নীলিমা: রিফাত ভাইয়া থামো বলছি
প্রিতি: আজব তো তোমরা কি এখন ঝগড়া করবে নাকি
ছোটমা: তোরা ভুল বুঝছিস রিফাত এসব নিজ থেকে করছে না, ও কষ্টে এমন করছে।
আলিফা: আর কষ্টে এমন করতে হবে না ছোটমা (হঠাৎ আলিফার কন্ঠ শুনে পিছনে তাকালাম, ও রাতুলের হাত ধরে নিচে নেমে আসছে)
আমি: আলিফা তুমি অসুস্থ নিচে…
আলিফা: মনের অসুখের চেয়ে বড় অসুখ আর নেই রিফাত। অনেক হয়েছে আজ সবকিছু ঠিক করতে দাও।
আমি: মানে
আলিফা: রাতুল আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই
রাতুল: বলো
আলিফা: যদি কখনো পারো আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি তোমাকে ভালোবাসতাম কিন্তু হুট করে রিফাত আমার জীবনে এসে সবকিছু উলটপালট করে দিয়েছে। একসাথে চলতে গিয়ে কখন যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানিনা। রাতুল এইটা কি রিফাত এর ভালোবাসার জাদু নাকি বিয়ে নামক বন্ধন এর জাদু আমি জানিনা। শুধু এইটুকু জানি আমি রিফাতকে ভালোবেসে ফেলেছি, ওকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারিনা। আমি রিফাতের কাছে থাকতে চাই। রাতুল যদি কখনো পারো…
রাতুল: আলিফা ভালোবাসা তো কাউকে বলে আসে না। মানুষের মন খুব অদ্ভুত কখন কাকে ভালোবেসে ফেলে তা সে নিজেও বুঝতে পারেনা। আমি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম তুমি রিফাত ভাইয়াকে ভালোবাস কিন্তু আমি তোমাকে নিজ থেকে কিছু বলিনি যদি ভুল বুঝ এই ভেবে। হ্যাঁ এইটাও সত্যি আমি তোমাকে যেমন ভালোবাসতাম এখনো তেমনই ভালোবাসি। তুমি চাইলে আমি তোমাকে এখন গ্রহণ করতাম এমনকি তুমি প্রেগন্যান্ট জেনেও গ্রহণ করতাম। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার শরীরকে নয়। আ…
আলিফা: রাতুল একটু আগে তুমি কি বললে, আমি প্রেগন্যান্ট মানে কি।
রাতুল: কেন তুমি জানোনা আমি তো বাসায় এসেই দেখলাম সবাই মিষ্টি খাচ্ছে, রিয়ান তো এই খবরটা দিয়ে আমাকে মিষ্টিও খাইয়ে দিয়েছে
আলিফা: রিফাত তুমি আমার থেকে এতো বড় একটা কথা লুকিয়ে রাখলে
ছোটমা: ওর কোনো দোষ নেইরে মা ডক্টর তো বললেনই কিছুক্ষণ আগে তখন তুমি অজ্ঞান অবস্থায় ছিলে (আলিফা কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাতুলের কাছে গিয়ে ওর হাত দুটু ধরলো)
আলিফা: রাতুল প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিও
রাতুল: কাঁদছ কেন তুমি যদি রিফাত ভাইয়ার কাছে ভালো থাকো তাহলে তো আমি খুশি হবো। আলিফা আমি তোমাকে ভালোবাসি এর মানে এই নয় যে তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে আমিই শুধু তোমাকে ভালো রাখতে পারবো, তুমি যেখানেই থাকো যার সাথেই থাকো তুমি শুধু ভালো থাকলেই আমি খুশি। আর আমি এই কয়দিনে বুঝেছি এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ তোমাকে ভালোবাসে, আর রিফাত ভাইয়া তো তোমাকে তার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসে, আমার বিশ্বাস তুমি উনার কাছে অনেক ভালো থাকবে।
আলিফা: রাতুল তুমি এতো সহজে মেনে নিবে আমি ভাবতেও পারিনি
রাতুল: আর কেঁদো না প্লিজ (রাতুল আলিফার চোখের পানি মুছে দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো)
রাতুল: আলিফা নাহয় বাচ্চা মেয়ের মতো তাই কাঁদছে কিন্তু আপনি কাঁদছেন কেন
আমি: স্বার্থপরের মতো তোমার থেকে আলিফাকে কেড়ে নিলাম আমায় ক্ষমা করে দিও ভাই
রাতুল: আপনি কোথায় কেড়ে নিলেন, আলিফা নিজেই তো আপনার কাছে থাকতে চেয়েছে আর আমি তো খুশি মনে আপনাকে দিচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা আপনি আপনার ভালোবাসার জোরে আলিফাকে নিজের করে পেয়েছেন।(আর কিছু বলতে পারলাম না রাতুলকে জরিয়ে ধরলাম। কোনো মানুষ নিজের ভালোবাসা কে এভাবে দিয়ে দিতে পারে আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না)
রাতুল: ভাইয়া আর কান্না নয়, আর হ্যাঁ আলিফা খুব ভালো মেয়ে ওকে কখনো কষ্ট দিবেন না। (রাতুল চলে যেতে চাইলো আব্বু এসে ওকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলেন)
রাতুল: সবাই এতো কাঁদছ কেন, কেঁদো না প্লিজ।
রাতুল আব্বুকে ছেড়ে দিয়ে আলিফার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো “ভালো থেকো, আর আপনাদের সবার কাছে আমি একটা জিনিসই চাই, এই পাগলীটাকে সবাই আগলে রাখবেন প্লিজ”
রাতুল কথাটা বলেই বেরিয়ে গেলো।

সবাই নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ ভাবতে পারিনি রাতুল এভাবে নিজের ভালোবাসাকে সেক্রিফাইজ করবে। এতোটা ভালো মানুষ কিভাবে বাসতে পারে। রা…
আলিফা: রিফাত
আমি: হুম
আলিফা: আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ
আমি: ক্ষমা তুমি কেন চাচ্ছ ভুল তো আমার তুমি এতোবার বুঝানোর পরও আমি তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি
আলিফা: আই লাভ ইউ রিফাত (আলিফা এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো, ওর তো দেখি লজ্জা নেই সবার সামনে)
আব্বু: এই সবাই চোখ বন্ধ করো আমার ছেলে আর বৌমা রোমান্স করছে (আব্বুর কথা শুনে আলিফা লজ্জা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলো)
আমি: আব্বু তুমি না
আব্বু: আমি কি, আমি তোদের বন্ধু বুঝেছিস।
আমি: হুম বুঝেছি তোমার মতো বাবা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
আব্বু: হয়েছে হয়েছে সবকিছু তো ঠিক হয়ে গেলো এবার নতুন করে সবকিছু শুরু করো। দুজন মিলে সুন্দর করে জীবনটা সাজাও অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো আমার ছেলে আর বৌমার জন্য।(আব্বুকে এসে জরিয়ে ধরলাম। সত্যি এমন বাবা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার যা সবার ভাগ্যে থাকেনা। আমি সত্যি অনেক লাকি)
আব্বু: হয়েছে এবার রুমে যা আমার আলিফা মা’টা তো অসুস্থ। আর বাকি সবাই যার যার রুমে যাও।
রিয়ান: তুমি কোথায় যাচ্ছ (চলে আসতে চেয়েছিলাম হঠাৎ রিয়ানের কথা শুনে তাকালাম, ও নীলিমার হাত ধরে আছে। সবাই তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
রিয়ান: কি ভেবেছিলে আমি ভাইয়ার মতো বোকা যে তোমার ভালোবাসা বুঝবো না (নীলিমা ভয় পেয়ে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকালো)
আমি: আমার দিকে তাকাচ্ছিস কেন আমি কিছু বলিনি
রিয়ান: ভাইয়া কিছু বলেনি আমাকে। সবসময় আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকো, আমার দিকে তাকালে দুচোখে পানি ছলছল করে, আমি শাড়ি পড়া পছন্দ করি তাই শাড়ি পড়ো আমি কিছু বুঝিনা নাকি।
আব্বু: কি হচ্ছে একটু বলবি রিয়ান
আমি: আব্বু আমি তোমাদের বলছি, আমাদের নীলিমা রিয়ানকে তিনবছর ধরে ভালোবাসে কিন্তু নিলা মারা যাওয়াতে ভয় পেয়ে কাউকে বলেনি।
আব্বু: এতে ভয় পাওয়ার কি আছে, কিরে ছোট তোর কোনো আপত্তি আছে নীলিমা আমার ছেলের বউ হলে
চাচ্চু: একদম না
রিয়ান: এই পাগলী কাঁদছ কেন
নীলিমা: আসলে রিয়ান ভাইয়া আ….
রিয়ান: এক থাপ্পড় দিয়ে গালে দাগ বসিয়ে দিবো, হাব্বিকে কি কেউ ভাইয়া ডাকে। ছোটমা তোমার মেয়েকে এইটুকুও শিখাওনি
ছোটমা: তুই সব শিখিয়ে নে
আব্বু: হাহাহা চলোরে সবাই চলো আমার ছেলে আর বৌমাদের রোমান্স করার সুযোগ দাও (সবাই চলে গেলো আমি রিয়ানের পাশে এসে দাঁড়ালাম। নীলিমা এখনো ভয় পেয়ে আছে)
রিয়ান: ভাইয়া ও তোমাকে বলতে নিষেধ করলো আর তুমিও বললে না
আমি: আসলে নীলিমা বলছিল তুই নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসিস
রিয়ান: সেদিন ছাদে তোমার আর নীলিমার মধ্যে কি কথা হয়েছে আমি সব শুনেছি
আমি: কিন্তু তুই তো হসপিটালে ছিলি
আলিফা: আমি ওকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম নীলিমা ওকে ভালোবাসে। তাই আমি চাইছিলাম রিয়ান সব নিজে শুনোক
রিয়ান: নীলিমা তুমি অজতা একটা ভুল ধারনা নিয়ে এতোটা কেঁদেছ। সেদিন আমি ফোনে আই লাভ ইউ বলেছি এইটা শুনেছ তারপর কি কি বলেছি এইটা না শুনেই চলে এসেছিলে। আসলে সেদিন আমি আমার একটা বন্ধুকে প্রপোজ শিখিয়ে দিচ্ছিলাম আর তুমি….
নীলিমা: এই কথাটা এতোদিন বললেই হতো আমি এতো কাঁদতাম না
রিয়ান: আসলে আমি এই দিনটার অপেক্ষা করছিলাম, ভাইয়া ভাবির মিল হলেই আমি তোমাকে প্রপোজ করবো ভেবে রেখেছিলাম
আলিফা: তাহলে আর দেরি করছ কেন তাড়াতাড়ি প্রপোজ করে ফেলো।

রিয়ান পকেট থেকে রিং বের করে নীলিমার সামনে হাটু গেড়ে বসলো।
রিয়ান: নীলিমা উ…
নীলিমা: হয়েছে হয়েছে আর প্রপোজ করতে হবে না আমি এমনিতেই তোমার বউ হবার জন্য পাগল হয়ে আছি
রিয়ান: তুমি আসলেই একটা পাগলী (রিয়ান উঠে নীলিমাকে জরিয়ে ধরলো। আমি আলিফার কানের কাছে ফিসিফিস করে বললাম)
আমি: আলিফা চলো
আলিফা: দাঁড়াও না ওদের রোমান্স দেখতে দাও
আমি: ছোট ভাইয়ের রোমান্স দেখাচ্ছি তোমাকে।
আলিফা: এই কোলে নিচ্ছ কেন।

আলিফাকে কোলে করে এনে রুমে দাঁড় করালাম।
আলিফা: এই দরজা বন্ধ করছ কেন
আমি: রোমান্স করবো তাই
আলিফা: একদম কাছে আসবে না
আমি: সরি মানতে পারলাম না (আলিফাকে এসে জরিয়ে ধরলাম)
আমি: লাভ ইউ পাগলী
আলিফা: শেষ পর্যন্ত রাগিণী তোমারই হলো
আমি: হুম (আলিফাকে জরিয়ে ধরে খুব কাঁদছি। সত্যি তো এতোকিছুর পর শেষ পর্যন্ত রাগিণী আমারই হলো)
আলিফা: রিফাত কাঁদছ কেন আর কান্না নয় প্লিজ
আমি: হুম আর কান্না নয় এখন থেকে শুধু রোমান্স আর রোমান্স (আলিফাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর মিষ্টি দুইটা ঠোঁটে আমার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আচমকা ওকে ছেড়ে দিলাম)
আলিফা: কি হলো
আমি: ভাবছি
আলিফা: কি
আমি: শুধু কি বাচ্চার মাম্মি কে আদর করবো নাকি বাচ্চাকেও তো করতে হবে
আলিফা: মানে।

আলিফার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মৃদু হেসে হাটু গেড়ে বসে পড়লাম। একহাত দিয়ে আলিফার কোমর জরিয়ে ধরে আরেক হাতে আলিফার পেটের শাড়ি সরিয়ে দিয়ে ওর পেটে আলতো করে একটা চুমু দিলাম। আলিফা লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ডেকে ফেলেছে দেখে উঠে দাঁড়ালাম। ওর দুহাত মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে আমার কোমরে রাখলাম। আলিফার কোমর জরিয়ে ধরে ওকে টান দিয়ে আমার আরো কাছে নিয়ে আসলাম।
আমি: বলতো আমার আব্বু হবে না আম্মু হবে
আলিফা: আমার তো ছেলে চাই
আমি: কিন্তু আমার তো মেয়ে চাই
আলিফা: উহু ছেলে হবে
আমি: না মেয়ে হবে
আলিফা: ছেলে
আমি: মেয়ে
আলিফা: আচ্ছা যাও মেয়েই হবে
আমি: আচ্ছা যাও ছেলেই হবে।
দুজনেই একসাথে হেসে উঠলাম। এই ঝগড়া, খুনসুটি, ভালোবাসা, রাগ, অভিমান চলবে সারাজীবন….

#সমাপ্ত??

(পুরো গল্পটি কাল্পনিক ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর হ্যাঁ ভালো না লাগলে প্লিজ এড়িয়ে চলুন বাজে মন্তব্য করবেন না। আর যারা ধৈর্য নিয়ে আমার এমন পঁচা মার্কা গল্প পড়েছ তাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নতুন গল্প নিয়ে খুব শীঘ্রই আসছি সাথেই থাকুন টাটা?)