বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1209



আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৯

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিনের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি যতো দিন যাচ্ছে আমার প্রতি যেন ওর ভালোবাসা বেড়েই চলেছে ইদানীং আমারো কেন যেন মনে হয় আমিও তাসিন কে ভালোবাসি কিন্তু অবনী….
তাসিন: কি হলো দূরে সরে গেলে কেন
–অবনী যদি জানতে পারে তোমার উপর রাগ করবে
–(ও কিছু না বলে চুপচাপ বারান্দায় চলে গেলো)

দুজন বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি
আমি: আজকে কলেজে যাওনি কেন
তাসিন: তুমি আসবে তাই
–আমি যে আসবো তুমি জানতে
–তুমি কখন কোথায় যাও বা যাওয়ার প্ল্যান কর সব আমি আগে থেকে জানি তুমি না সত্যি একটা বোকা মেয়ে
–কি রকম
–একবারো ভাবনি আমার অনুমতি ছাড়া হোস্টেল থেকে বেরিয়েছ কিভাবে
–তাই তো
–আমি অনুমতি দিয়ে রেখেছিলাম আর তুমি হোস্টেল থেকে বাসায় আসা পর্যন্ত আমার দুজন লোক তোমার পিছু পিছু এসেছে তুমি লক্ষ করনি
–মানে কি তুমি আমার পিছনে…..
–আমি জানি তোমার নিজের প্রতি কোনো খেয়াল নেই তাই তোমার নিরাপত্তার জন্য আমাকে এসব করতে হচ্ছে (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ও আমাকে এত্তো ভালোবাসে)
–অরনী জানি তুমি প্রমানের জন্য এসেছ আব্বুকে একটু সুস্থ হতে দাও প্লিজ কথা দিচ্ছি আমিই প্রমান এনে দিব
–হুম

দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে হোস্টেলে চলে আসলাম, বসে বসে গেমস খেলছি
–অরনী পায়েলটা খুব সুন্দর যাই বলিস ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে
–তাহলে অবনী
–(নিশ্চুপ)
–মেয়েটা কাল যা ইচ্ছে তাই বললো তাও তাসিন চুপ করে ছিল
–বাদ দে না
–উহু বাদ দিবো না আমি আর ক্লাসেই যাবো না
–দুর ভাইয়া তোকেই ভালোবাসে নাহলে কি নিজ হাতে পায়েল পরিয়ে দিত
–এখনো আমাদের ডিভোর্স হয়নি তাই বউ যেহেতু পায়েলটা দিয়েছে
–তুই যে কি
–আমি অরনী হিহিহি
–হাসি বের হবে ভাইয়া কে যখন হারাবি তখন
–ওকে

চার দিন কেটে গেলো এই চার দিনের মধ্যে একদিনও ক্লাসে যাইনি, আশ্চর্যের বিষয় হলো যে তাসিন আমাকে পড়া চুরি করতে নিষেধ করে সে তাসিন চারদিনের মধ্যে একবারো জানতে চায়নি কেন ক্লাসে যাচ্ছি না জানবে কিভাবে ও তো চার দিনের ভিতরে একবারো ফোন দেয়নি, অবশ্য এটাই এখন স্বাভাবিক অবনী আছে না, সবাই বলে তাসিন আমাকে ভালোবাসে এখন দেখেছ ওর ভালোবাসার নমুনা
–অরনী তোর ফোন বাজছে
–কে
–ভাইয়া
–চারদিনে ইচ্ছে হয়েছে
–কোনো সমস্যা ছিল মনে হয়
ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছি রিসিভ করবো নাকি কেটে দিবো, ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো একটু পর মেসেজটোন বেজে উঠলো “অন্নি প্লিজ ফোনটা রিসিভ করো প্রয়োজন আছে” তারপর সাথে সাথে আবার ফোন বেজে উঠলো, আল্লাহ জানেন কিসের প্রয়োজন রিসিভ করলাম
–অন্নি প্লিজ একটা হেল্প করবে
–কি
–আমাদের তো ডিভোর্স হয়েই যাবে ডিভোর্স এর আগে নাহয় একটু হেল্প করো
–বলবা তো কি
–অবনীর খুব ইচ্ছে কক্সবাজারে ঘুরতে যাবে কিন্তু সাথে আমাকে যেতে হবে
–তো যাও এখানে আমার কি করার আছে
–বাসায় কি বলবো তুমি যদি আমাদের সাথে যেতে
–মানে কি
–বাসায় বলবো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি তাহলে কেউ কোনো প্রশ্ন করবে না তোমাকে ছাড়া গেলে তো বুঝই
–তাই বলে…
–অন্নি প্লিজ তুমি চাইলে শিলা কে সাথে নিয়ে যেতে পারো
–ভেবে দেখি
–প্লিজ অন্নি না করো না
–হুম রাখ এখন
ইসস প্রেম করতে যাবে ওরা আর আমি পাহারাদার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তো আমার
–কিরে অরনী কি বিড়বিড় করছিস
–শিলা কক্সবাজার যাবি
–সত্যি নিয়ে যাবি উফফফ আমার অনেক ইচ্ছে কক্সবাজার যাওয়ার
–আমি তোকে নিয়ে যাবো কিভাবে আমাকেই তো যেতে হবে পাহারাদার হিসেবে
–মানে
–তাসিনের অবনী কক্সবাজার যেতে চায় তাসিন বাসায় কি বলে যাবে তাই সাথে আমাকে যেতে হবে আর আমি চাইলে তোকে নিয়ে যেতে পারি
–ওয়াও অরনী প্লিজ না করিস না আমি যেতে চাই
–কি বলছিস যে মেয়ে আমাকে এতো কথা শুনিয়েছে সে মেয়ের সখ পূরন করতে আমি যাবো কক্সবাজার
–অবনীর ইচ্ছেটা বাদ দে আমার ইচ্ছেটার কথা ভাব (সত্যি তো অবনীর কথা নাহয় বাদ দিলাম কিন্তু শিলা যে যেতে চাচ্ছে)
–প্লিজ অরনী আমার জন্য হলেও চল
–ঠিক আছে যাবো
–থ্যাংক ইউ

তাসিন কে ফোন দিলাম ওয়েটিং হয়তো অবনীর সাথে কথা বলছে, একটু পর তাসিন নিজেই ফোন দিল
–অরনী সরি অবনীর সাথে কথা বলছিলাম জানো মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে আ…
–কক্সবাজার যাবো
–সত্যি
–হুম
–অবনী শুনলে খুব খুশি হবে
–আমি তোমার অবনীর জন্য যাচ্ছি না শিলার জন্য যাচ্ছি
–তুমি গেলেই হলো তাহলে আমরা আগামীকালই যাই
–এতো তাড়াতাড়ি
–হ্যা অবনীর আবদার তাড়াতাড়ি পূরন করতে চাই
–ভালো
–আমি বাসায় বলে তোমাকে জানাবো
–ঠিক আছে

আচ্ছা তাসিন যে বলেছিল ও ছোটবেলার কথা ভুলতে পারবে না আমাকে ভুলবে কিভাবে কিন্তু এখন তো তাসিন অবনী কে ভালোবাসে তাহলে কি তাসিন ছোটবেলার কথা ভুলে গিয়েছে, হ্যা ভুলাটাই তো স্বাভাবিক তাসিন তো এতোদিন মনে রেখেছে আমার তো কিছুই মনে নেই, আচ্ছা তাসিন ছোটবেলার স্মৃতি ভুলে অবনী কে ভালোবাসলে আমার কি আমার তো খুশি হবার কথা তাড়াতাড়ি ডিভোর্স হবে কিন্তু আমার এমন লাগছে কেন, অবনী নামটা মনে হলেই কোথাও যেন একটু কষ্ট হয় তাহলে কি আমি তাসিন কে ভালোবেসে পেলেছি
–অরনী সন্ধ্যা বেলায় শুয়ে আছিস কেন
–ভালো লাগছে না
–আমি জানি কেন
–কেন
–অরনী তোকে ছোটবেলা থেকে ভুলের মধ্য দিয়ে বড় করা হয়েছে তাই তোর ভুল ধারনা গুলো ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে এতোটাই বাড়ছে যে এই ভুল ধারনার কারনে তুই তোর ভালোবাসাটা বুঝতে পারছিস না
–(নিশ্চুপ)
–অরনী তুই ভাইয়া কে ভালোবাসিস এটাই সত্যি কিন্তু তুই ভালোবাসা বুঝতে পারতেছিস না প্লিজ অরনী এখনো সময় আছে
–হুম

রাতে তাসিন ফোন করে জানালো বাসার সবাই রাজি সকাল দশটায় যেন শিলা কে নিয়ে রেলস্টেশনে থাকি, রাতেই দুজনের ব্যাগ গুছিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম

সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে শিলা কে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম

রেলস্টেশনে পৌঁছে দেখি তাসিন আর অবনী দাঁড়ানো, বাহ্ অবনী আজ তাসিনের পছন্দের নীল শাড়ি পরেছে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু আমার কেন জানি এই মেয়েটা কে সহ্য হচ্ছে না, সত্যিই কি আমি তাসিন কে ভালোবেসে পেলেছি….

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৮

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

মাঠের এক কোনে বসে বসে ভাবছি তাসিন কিসের প্ল্যানের কথা বলছিল আবার কোন রহস্য লুকিয়ে আছে ওর এই কথায় হঠাৎ দেখলাম তাসিন এদিকে আসছে
তাসিন: অন্নি এই নাও তোমার ফোন
আমি: লাগবে না
তাসিন: কেন
আমি: ক্লাসে তো আমাকে না চেনার ভান করেছ আর এইটা তোমার দেওয়া ফোন তাই তুমি নিয়ে গেছ এখন আবার দিচ্ছ কেন
তাসিন: তুমি ক্লাস না করে গান শুনছিলে তাই নিয়েছি রাগ করো না প্লিজ
আমি: লাগবে না তোমার ফোন আর এখান থেকে যাও তোমার অবনী দেখলে রাগ করবে
তাসিন: সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না তুমি ফোনটা নাও শুধু
আমি: আমার ফোন লাগবে না
তাসি: তাহলে আমি তোমার সাথে কথা বলবো কিভাবে
আমি: কোনো প্রয়োজন নেই তো কথা বলার অবনী তো আছেই
তাসিন: (নিশ্চুপ)
আমি: যাও
তাসিন: অন্নি ফোনটা নাও প্লিজ আমি অবনী কে ভালোবাসি কিন্তু তোমার সাথে….
আমি: একসাথে দুই মেয়ের সাথে কথা বলতে চাও
তাসিন: (আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে এই সুযোগে ওকে শাস্তি দেওয়া যাক আমাকে না চেনার ভান করে ফোন নিয়ে যাওয়া এবার বুঝবে ঠেলা)
আমি: নিতে পারি এক শর্তে
তাসিন: কি বলো
আমি: কান ধরে উঠবস করো আর বলো আমার গান শুনাতে কখনো ডিস্টার্ব করবা না
শিলা: অরনী পাগল হয়ে গেছিস কি বলছিস এসব এই কলেজের….
তাসিন: শিলা থামো সমস্যা নেই ওর কথায় আমি সব করতে রাজি (বলেই কান ধরে বসতে গেলো)
আমি: তাসিন আমি ফাজলামো করেছি সবাই দেখছে কান ছাড়ো
তাসিন: না
আমি: তাসিন প্লিজ সবাই হাসছে আমি ফাজলামো করেছি ফোন দাও আমি নিচ্ছি
অবনী: তাসিন কি করছ এসব (পাশে তাকিয়ে দেখি অবনী রাগি চোখে তাকিয়ে আছে ওর রাগ দেখে তাসিন কান ছেড়ে সুজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো)
অবনী: এসব কি করছিলে সবাই যে হাসছে দেখেছ ওহ বুঝেছি এই মেয়ের কথায় এসব করেছ
তাসিন: (নিশ্চুপ)
অবনী: এই মেয়ে তোমার নাহয় লজ্জা শরম নাই ও তো এই কলেজের টিচার ওকে কান ধরতে বললা কিভাবে (অবনী আমার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো একদমে বলে ফেললো আমি তো ফাজলামো করেছিলাম তাই বলে এসব বলবে)
তাসিন: অবনী মুখ সামলে কথা বলো অন্নি কে কিছু বলার আগে ভেবে চিন্তে বলো
অবনী: পারবো না তুমি এখন আমার তোমার ভালো মন্দ দেখার দায়িত্বটাও আমার আর ওকে কখনো অন্নি বলে ডাকবা না এতো আদর করে ডাকতে হবে না চলো আমার সাথে

নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি তাসিন চুপচাপ অবনীর সাথে চলে যেতে লাগলো, আবার ফিরে এসে ফোনটা শিলার হাতে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “নিজের দোষে আমাকে হারিয়েছ আর অন্য মেয়ে তোমাকে এত্তোগুলো কথা শুনানোর সুযোগ করে দিয়েছ” বলেই হনহন করে চলে গেলো, আমি মাঠে বসে পড়লাম আমি ফাজলামো করেছিলাম আর মেয়েটা আমাকে এতো কথা শুনালো তাসিনও মেয়েটা কে কিছু বললো না
শিলা: এখন কান্না করে কি হবে নিজের দোষেই সব হারালি
–তাই বলে মেয়েটা আমাকে এতো কথা শুনাবে
–মেয়েটা ভাইয়া কে ভালোবাসে তাই ওর অধিকার আছে
–হুম
–নিজের অধিকার তো নিজেই শেষ করে দিলি
–তুই থাক আমি হোস্টেলে যাই

হঠাৎ শিলার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, হোস্টেলে এসে শুয়ে ছিলাম কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি
–রাত হয়ে গেছে উঠে পড়তে বস আর ভাইয়া অনেক বার ফোন দিয়েছিল তুই ঘুমে তাই জাগাতে বারন করেছিল এখন ফোন দে
–পারবো না
–কেন
–ওর সাথে তো আমার কোনো কথা নেই যা কথা হবার ডিভোর্স এর সময় হবে
–পাগলামি করিস না
–আমি কাল তাসিনের বাবার কাছে যাবো প্রমান চাইবো
–কিন্তু
–আর কতো অপেক্ষা করবো আর বাবা হয়তো এতোদিনে সুস্থ হয়েছেন
–ঠিক আছে

সকালে শিলা কে নিয়ে তাসিনদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম, কলিংবেল বাজাতেই তিথি এসে দরজা খুলে দিলো, আমাকে দেখেই জরিয়ে ধরে সবাইকে ডাকতে শুরু করলো ভাবি এসেছে ভাবি এসেছে বলে, মুহূর্তের মধ্যে বাড়ির সবাই ড্রয়িংরুমে এসে হাজির, মা এসে আমাকে জরিয়ে ধরলেন
মা: আমাদের কথা মনে পড়েছে বুঝি কতোদিন পর তোকে দেখলাম
ভাবি: তাসিন কে তো কলেজেই সারাক্ষণ কাছে পায় বাসায় এসে কি করবে আমাদের জন্য কি আর কষ্ট করে আসবে (বলেই আমাকে ধাক্কা মারলো সবাই আমাকে কতোটা ভালোবাসে আজ বুঝতে পারলাম)
আমি: মা বাবা কোথায়
মা: কেন তুই জানিস না কাল রাত থেকে তো উনি অসুস্থ তাসিন বলেনি
আমি: হ্যা বলেছিল এজন্যই তো দেখতে এসেছি (মিথ্যে বলা ছাড়া উপায় নেই রাতে হয়তো তাসিন বার বার এজন্যই ফোন দিয়েছিল দুর সব প্ল্যান বেস্তে গেলো আবার উনার সুস্থ হবার অপেক্ষা)

বাবার রুমে তাসিন আর আসিফ ভাইয়া বসা আমাকে দেখেই বাবা হাত বাড়িয়ে দিলেন আমিও গিয়ে বাবার মাথার কাছে বসলাম
বাবা: এতোদিন পর আসলি
তাসিন: আব্বু ও আসতে চেয়েছিল আমিই না করেছি ওর সামনে পরিক্ষা তো তাই (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে আজো ও আমাকে ভালো সাজিয়ে দিলো)
বাবা: ঠিক আছে মা ভালো করে পড়াশুনা করবি কেমন আর বাবার জন্য দোয়া করবি
আমি: আচ্ছা

সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে, তাসিন কে কোথাও দেখতে না পেয়ে আমাদের রুমে গেলাম, রুমের যা অবস্থা করে রেখেছে কিন্তু তাসিন তো রুমেও নেই হঠাৎ দেখলাম বারান্দার দরজা খুলা এগিয়ে দেখি তাসিন বাইরে তাকিয়ে আছে হাতে সিগারেট
–তাসিন
–হুম (তাড়াতাড়ি সিগারেট ফেলে দিলো)
–এখন তো অবনী আছে সিগারেট খাচ্ছ কেন
–(মৃদু হাসল)
–অরনী শুনো না….
–বাহ অবনীর কথায় অন্নি থেকে অরনী
–সরি ভুল হয়ে গেছে
–আগে এমন ভুল হতো না বাদ দাও আসি

রুমের যা অবস্থা এমন অবস্থায় ফেলে রেখে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাই রুম গুছাতে লেগে গেলাম, বালিশ ঠিক করতে গিয়ে দেখি বালিশের নিচে একটি পায়েল, পায়েল হাতে নিয়ে তাসিনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি
–তুমি বাসায় নেই বালিশের নিচে পায়েল আসলো কোথায় থেকে এইটা ভেবেই তো অবাক হচ্ছ আসলে সেদিন একটা কাজে এক জায়গায় গিয়েছিলাম এই পায়েলটা দেখে পছন্দ হয়েছে তাই এনেছি কিন্তু তোমাকে দেওয়ার সাহস হয়নি যদি রাগ করো
–(সত্যি কি ও অবনী কে ভালোবাসে যদি অবনী কে ভালোবাসে তাহলে ও আমার জন্য পায়েল আনবে কেন আর…)
–অন্নি প্লিজ একটি কথা রাখবে আমার
–হুম বল
–পায়েলটা তোমার পায়ে পড়িয়ে দেই প্লিজ (কি করবো বুঝতেছি না তাসিন মুখ মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে)
–ঠিক আছে

তাসিন যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো খুশি হয়ে আমার পায়ের কাছে বসে পড়লো তারপর খুব যত্ন করে পায়েলটা পড়িয়ে দিলো….

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৭

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

–অরনী এই অরনী
–হুম
–এতো বেলা হয়ে গেছে এখনো শুয়ে আছিস ক্লাসে যাবি না
–না ভালো লাগছে না
–ক্লাসে চল ভালো লাগবে
–না
–চল বলছি

শিলা আমাকে টেনে ঘুম থেকে তুললো, রাতে যে কখন ঘুমিয়ে ছিলাম মনেই নেই, এখন এই পাগলীর জন্য ক্লাসে যেতে হবে আমার তো মোটেও ক্লাসে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না গেলেই তো তাসিনের চেহারা দেখতে হবে কিন্তু যাওয়া লাগবে শিলার জন্য, উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম
–এই অরনী হলো তোর
–হ্যা চল
–কিছু খেয়ে নে
–ইচ্ছে নেই চল

কলেজের ভিতর ঢুকতেই শুনলাম তাসিন কে নিয়ে সবাই কি যেন বলাবলি করছে কিন্তু বিষয়টা কি বুঝতে পারলাম না, হঠাৎ পিছন থেকে শিলা কে তাসিন ডাক দিলো, আমি দাঁড়িয়ে রইলাম শিলা আর তাসিন দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে অনেক দূরে যেহেতু কি কথা বলছে শুনতে পাচ্ছি না, অনেক্ষণ পর শিলা আসলো
–কিরে কি কথা বললি
–শুনলে সহ্য করতে পারবি তো
–মানে
–সবাই কি বিষয় নিয়ে বলাবলি করছে জানিস
–না তো
–কলেজে একটি নতুন মেয়ে এসেছে নাম অবনী, এই মেয়ে ভাইয়া কে প্রপোজ করেছে ভাইয়াও রাজি আজ ওদের দুজনের প্রেম হলো
–তাতে আমার কি আমি কেন সহ্য করতে পারবো না
–কলেজে যে মেয়েরা ভাইয়া কে দেখে ক্রাশ খাইছিল তারা কষ্ট পাচ্ছে আর তুই উনার বউ হয়ে বলছিস তাতে কি
–আমি ওর ছয়মাসের বউ তাও শুধু কাগজে কলমে ও প্রেম করুক বা বিয়ে করুক আমার কিছু না
–দূর তোর সাথে এই বিষয়ে কথা না বলাই ভালো
–আমিও তো এটাই বলতে চাইছিলাম এসব আজাইরা বিষয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই
–হুম ক্লাসে চল

ক্লাসে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছি আর পা নাচাচ্ছি এইটা আমার খুব পুরনো অভ্যাস মন খারাপ থাকলে এমন করি হঠাৎ শিলা ধাক্কা দিয়ে সামনে থাকাতে ইশারা করলো, সামনে তাকিয়ে তো আমি অবাক একটি মেয়ে সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে কিন্তু এই মেয়ের সাথে আমার চেহারার এতো মিল কেন দুজন এক জায়গায় দাঁড়ালে সবাই ভাববে আমরা দুবোন
–অরনী
–হুম
–এই মেয়ে কে জানিস
–কে
–অবনী তাসিন ভাইয়ার…
–বুঝেছি কিন্তু ওর সাথে আমার চেহারার এতো মিল কেন
–এক চেহারার মানুষ নাকি পৃথিবীতে সাতজন থাকে শুনেছি অবনী তো আর তোর মতো হুবহু না দেখতে কিছুটা তোর মতো
–তাও কেমন যেন আমার সাথে ওর চেহারা মিলে যাচ্ছে
–তোর সতিন হবে তো তাই হিহিহি
–ফাজলামো করবি না
–ওকে ক্লাস শুরু হবে হেডফোন রেখে ক্লাসে মন দে
–আর ক্লাসে মন তাসিনের ক্লাস করতে তো ইচ্ছেই হয়না আমার
–ওই উনি কিন্তু এখানে তোর টিচার নাম ধরে ডাকবি না
–হুহ

কোন কাজের শাস্তি হিসেবে যে তাসিন আমার টিচার হয়েছে আল্লাহ জানেন ওর ক্লাস করতে একদম ইচ্ছে হয়না তাই হেডফোন কান থেকে না খুলে উল্টো সাউন্ড বারিয়ে দিয়ে গান শুনতে লাগলাম সাথে তো পা নাচানি আছেই, তাসিন ক্লাসে ঢুকেই আমার কানে হেডফোন দেখে রাগি চোখে তাকালো পড়া চুরি তো ও দেখতে পারে না তাই হয়তো, ওকে আর একটু রাগানোর জন্য আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি দিলাম সাথে সাথে ও আমাকে দেখিয়ে অবনীর দিকে তাকিয়ে ওকে চোখ মারলো মেয়েটাও কেমন নির্লজ্জের মতো হাসছে উফফফ মন চাইছে সবার সামনেই তাসিনের গলা টিপে ধরি কিন্তু বর্তমানে ও আমার টিচার তাই রাগটা কন্ট্রোল করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে গান শুনতে লাগলাম
–এই মেয়ে তোমার নাম কি (কথাটা শুনে পাশে তাকালাম হাসবো নাকি কাঁদব এখন তাসিন আমার নাম জিজ্ঞেস করছে)
–কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন
–(শিলার দিকে তাকালাম আমার মতো ওর একি অবস্থা অবাক হয়ে তাসিনের দিকে তাকিয়ে আছে)
–এই মেয়ে কথা কান দিয়ে যায় না ওহ যাবে কিভাবে কানে তো হেডফোন লাগানো
–(চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকালাম)
–দাও ফোন আর হেডফোন আমার কাছে দাও ক্লাস শেষে নিয়ে যেও (বলেই ফোনটা আর হেডফোন নিয়ে গেলো তারপর আমার কানের কাছে এসে আস্তে করে বললো “বলেছিলাম না পড়া চুরি করতে পারবা না এখন মন দিয়ে ক্লাস কর”)

তাসিন ফোন নিয়ে চলে গেলো আমি কিছু না বলে চুপচাপ বসে বসে ভাবতেছি ওর এই কাজের শাস্তি কি দেওয়া যায়
–অরনী
–কি কানের কাছে ফিসফিস করছিস কেন
–আরে রাগিস না একটা বিষয় ভেবে দেখেছিস
–কি
–ভাইয়া তোকে যেমন ভালোবাসে তুইও যদি তেমন ভালোবাসতি তাহলে আজকের ক্লাসটা হেব্বি হতো
–মানে
–স্বামী টিচার আর বউ ছাত্রী হিহিহি
–তোর ফাজলামো ছাড়াচ্ছি
–দেখ অবনী মেয়েটা তোর দিকে বার বার তাকাচ্ছে (অবনীর দিকে তাকালাম মেয়েটা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, ওর প্রতি আগে একটু হিংসা হলেও এখন ওর চোখ দুটি দেখে কেমন যেন মায়া লাগছে, আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি বুঝতে পেরে মিষ্টি করে একটি হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো)
–কিরে কি হয়েছে হিংসা হচ্ছে
–নারে কেমন যেন মায়া লাগছে আচ্ছা অবনীর বাসা কোথায় ওর বাবার নাম কি
–লন্ডন থেকে এসেছে জানি আর কিছু জানিনা
–হুম

ক্লাস শেষে লাইব্রেরীর দিকে গেলাম হঠাৎ তাসিনের কন্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে পড়লাম, কার সাথে যেন কথা বলছে
–তুমি এমন করলে হবে নাকি
–কি করলাম
–ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলে তো বুঝে ফেলবে
–আর থাকাবো না
–তুমি দূর্বল হয়ে পরলে আমার সব প্ল্যান বেস্তে যাবে বুঝার চেষ্টা করো
–বুঝি তো কিন্তু
–প্লিজ এখন থামো ও এদিকে আসলে শুনে ফেলবে তোমাকে যা বলার ফোনে বলবো
–হুম
হঠাৎ শিলা আমার হাত ধরে টেনে মাঠে নিয়ে এলো
–এভাবে টেনে আনলি কেন
–ওরা এখন প্রেম করছে তাই ওদের কথা আমাদের শুনা উচিত না
–কিন্তু তাসিন কি যেন বলছিল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে কেন এমন করলে বুঝে যাবে তারমানে কি অবনী আমার দিকে তাকিয়ে ছিল বলে ও এসব বলেছে কিন্তু আমি কি বুঝে যাবো
–দুর অজতা তোর বিষয় ভাবছিস ওরা অন্য কিছু নিয়ে হয়তো কথা বলছিল
–না কেমন যেন রহস্য লাগছে আর তাসিন কি যেন প্ল্যান এর কথা বলছিল
–তুই না বললি এসব আজাইরা বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো ঠিক না তাহলে এখন ভাবছিস কেন চুপ করে বসে থাক ওদের কে ওদের মতো থাকতে দে
–হুম

চুপ করে বসে আছি টিকি কিন্তু মাথা থেকে একটা কথা সরাতে পারছি না তাসিন কিসের প্ল্যানের কথা বলছিল…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৬

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিনের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছি ও দিব্যি হাসছে
–রাগ করেনা সোনা বউ
–আমি তোমাকে খুন করবো
–এখনি করবা নাকি যখন আশেপাশে কেউ থাকবে না তখন
–তাসিন
–হ্যা বল বউ
–দূর

ওর চোখের সামনে থেকে চলে আসলাম, ক্লাসে বসে আছি
–অরনী রাগ করছিস কেন
–কার উপর রাগ করবো যার মা বাবা নেই তার তো কিছুই নেই
–ভাইয়া তোকে সত্যি ভালোবাসে
–হুম জানি
–তাহলে এমন করছিস কেন
–তাসিনের বাবা যে খুনি না সেটার কোনো প্রমান নেই আমার কাছে চাচ্চু তাসিন কে মেনে নিবে না আর চাচ্চু তো আমার সব উনাকে কষ্ট দেই কিভাবে
–তারমানে তুইও ভাইয়া কে ভালোবাসিস
–ভালোবাসি কিনা জানিনা কিন্তু ওর প্রতি কেমন যেন মায়া কাজ করে আমি আর এই মায়া বাড়াতে চাইনা
–প্লিজ কান্না করিস না
–হুম
–ভাইয়া আসছে ক্লাসে যদি কান্না করিস ভাইয়া কিন্তু কষ্ট পাবে
তাসিন রুমে ঢুকার আগেই চোখের পানি মুছে নিলাম, সবাই ওর সাথে হাসছে কথা বলছে এসব আমার ভালো লাগছে না আব্বু আম্মুর কথা খুব মনে পরছে ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদি, ক্লাসে মনোযোগ নেই কিন্তু তাসিন যে ভালো ভাবে ক্লাস নিচ্ছে সেটা সবার মনোযোগ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, তাসিন ক্লাস নিচ্ছে আর বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে

ক্লাস শেষে শিলা আর আমি বাইরে একটু হাটতে বেরুলাম হঠাৎ পিছন থেকে তাসিন ডাক দিল
তাসিন: অন্নি এদিকে এসো
আমি: কেন
তাসিন: আসতে বলছি আস আর শিলা তুমি একটু দাড়াও এখানে
আমি: আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ
তাসিন আমার হাত ধরে টানতে টানতে লাইব্রেরিতে নিয়ে আসলো
–এখানে এনেছ কেন
–এখানে কেউ নেই তাই
–মানে
–ক্লাসে কান্না করছিলে কেন
–এমনি
–তুমি এমনি কাঁদবা কেন
–তাতে তোমার কি
–আমার কি তাই না
–তাসিন আমার দিকে এগুবে না ভালো হবে না কিন্তু
–চুপ (তাসিন আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আমার ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দিলো, অনেক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে চেয়ারে গিয়ে দফ করে বসে পরলো, আমি এখনো পাথরের মূর্তির মতো দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে আছি একটু সময়ের মধ্যে তাসিন কি করে ফেললো ভাবছি)
–অন্নি সরি
–(নিশ্চুপ)
–তুমি কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে তো আর মাইর দিতে পারবো না তাই এই কাজ করলাম এখন থেকে যতবার কাঁদবা ততোবার তোমার ঠোট আমার ঠোট দিয়ে চুষে খাবো
–(নিশ্চুপ)
–অন্নি তোমার চোখে পানি কেন আমি কিন্তু আবা….. (ওর কথা আর না শুনে দৌড়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে আসলাম)
শিলা: কাঁদছিস কেন
আমি: হোস্টেলে চল
শিলা: কিন্তু ক্লাস
আমি: তুই কর আমি যাই
শিলা: হয়েছে কি
আমি: যাই

আর এক মুহূর্ত দেরি না করে হোস্টেলে চলে আসলাম, ফোনটা হাতে নিলাম চাচ্চুকে বলবো আমাকে যেন এসে নিয়ে যায় কিন্তু চাচ্চুকে ফোন দেওয়ার আগেই তাসিন ফোন দিল কেটে দিলাম, বার বার কল দিচ্ছে আর আমি কেটে দিচ্ছি হঠাৎ মেসেজটোন বেজে উঠলো “কাঁদলে কিন্তু তোমার রুমে চলে আসবো আর হ্যা ভুলেও তোমার চাচ্চুর কাছে যাওয়ার চিন্তা করো না আমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে এই হোস্টেল থেকে কেউ বের করতে পারবে না” মেসেজটা পড়ে হাসব নাকি কাঁদবো ভেবে পেলাম না, আমি এখন চাচ্চুর কাছে যেতে পারবো না কাঁদতেও পারবো না কতোটা পরাধীন হয়ে গেলাম, প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এখন নিজেই কষ্টে ভুগছি, হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো চাচ্চুর কল রিসিভ করবো কিনা ভাবতে ভাবতে রিসিভ করে ফেললাম
–হ্যালো
–কিরে মা তোর কোনো খুঁজ নেই ফোন বন্ধ
–আমার মোবাইল নষ্ট ছিল কেমন আছ তোমরা
–তোর কোনো খুঁজ নেই আমরা ভালো থাকবো কিভাবে (আমি ছাড়া যে চাচ্চু ভালো থাকে না আমি নাকি তাকেই ভুলে যাবো, তাসিনের উপর খুব রাগ হচ্ছে)
–কিরে মা চুপ হয়ে আছিস কেন
–এমনি ছোট মা কোথায়
–বাসায় আমি একটু বাইরে এসেছি তুই কথা বলছিস কেউ দেখবে নাতো
–চাচ্চু আমি হোস্টেলে উঠেছি
–কেন
–সামনে পরিক্ষা
–কিন্তু
–সমস্যা নেই আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি ছোট মা কে বলো বাড়িটা আমার নামে লিখিয়ে নিয়েছি
–সত্যি
–হ্যা
–এখন শুধু বাকি আছে বাংলোটা আর দুইটা কোম্পানি
–এগুলা বাধ দাও না চাচ্চু আমার সম্পত্তি চাইনা
–এইগুলার মুল্য কতো তোর কোনো ধারনা আছে
–সম্পত্তি দিয়ে কি হবে আব্বু আম্মুকে তো আর ফিরিয়ে আনতে পারবো না
–কাঁদিস না মা আমরা আছি তো
–হুম আচ্ছা এখন রাখি পরে ফোন করবো
–আচ্ছা

ফোন রেখে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, একটি মাস কিভাবে যেন কেটে গেলো, মাত্র একমাসে তাসিনের প্রতি মায়া জন্মে গেলো কেমন মেয়ে আমি নিজের মা বাবার খুনির ছেলে কে নিয়ে এসব ভাবছি, নাহ তাসিনের আব্বু খুনি হউক বা না হউক আমি তাসিন কে ডিভোর্স দিব আর ডিভোর্স দিয়ে বাহিরে চলে যাবো এই দেশে আর থাকবো না, হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শে পিছনে তাকালাম তাসিন দাঁড়িয়ে আছে
–তুমি হোস্টেলে আসলে কিভাবে
–তোমার কাছে আসতে আমাকে কোনো বাধা আটকে রাখতে পারবে না
–তাসিন কেন করছ এসব
–তুমি আবারো কান্না করেছ
–নাতো
–তোমার চোখ বলে দিচ্ছে
–আচ্ছা তোমার জন্য কি আমি এখন কাঁদতেও পারবো না
–না পারবে না কারন তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়
–আর পাঁচটা মাস অপেক্ষা করো কষ্ট হবে না
–কি করবে তুমি হ্যা কি করবে (আমার হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো, তাসিন যে খুব রেগে গেছে ওর চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, ও রাগলে চোখ দুটু লাল হয়ে যায়)
–চুপ হয়ে আছ কেন বলো কি করবা
–ডিভোর্স দিব
–তাই (বলেই আমার চুলে ধরে জোর করে আমার ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দিল, অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলাম না, অনেক্ষণ পর ও নিজেই ছেড়ে দিল তারপর আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে বললো)
–আর কখনো ডিভোর্স এর কথা বললে খুন করে ফেলবো
–(ঠাস) এই তাপ্পর এর কথা মনে রেখো
–অন্নি
–অনেক হয়েছে তাসিন আর না অনেক সহ্য করেছি তোমার অত্যাচার আমি একা থাকতে চাই তুমি আমাকে আর ডিস্টার্ব করোনা প্লিজ আমি ডিভোর্স চাই
–ওকে অরনী ম্যাডাম তাসিন কি এখন থেকে বুঝবা আমার ভালোবাসা যখন তোমার কাছে অত্যাচার মনে হয় এই ভালোবাসার জন্যই আমি তোমাকে কাঁদাবো
তাসিন হাসতে হাসতে চলে গেলো…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৫

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

ক্লাসে বসে আছি কিসের ক্লাস করবো সারাক্ষণ তাসিনের কথা মনে পরছে মনে হয় এই বুঝি ও পাশে থেকে বকবক করছে, সবসময় ওর বকবক করাটা বিরক্ত লাগতো কিন্তু আজ কেন যেন খুব মিসস করছি ক্লাসেও মন বসছে না কি যে করি
–এই অরনী কি হয়েছে তোর
–কিছুনা
–বল
–কি বলবো তাসিন কে মাথা থেকে সরাতে পারছি না
–হিহিহি
–হাসছিস কেন
–তুই না ভাইয়া কে ভালোবাসিস না তাহলে মিসস করছিস কেন
–জানিনা
–হুম বুঝেছি ভালো বাসতে শুরু করেছিস
–মোটেও না কোনো খুনির ছেলে কে আমি ভালোবাসবো না
–অরনী প্রমান ছাড়া কাউকে খুনি বলা ঠিক না
–প্রমান পেলে তো ওদের সবাই কে জেলে পাঠাইতাম
–নাই যেহেতু অযতা খুনি বলবি না
–ক্লাস করবো না চল
–কোথায়
–ঘুরতে যাবো
–ওকে

শিলার সাথে কথা বলতে বলতে গেইটের কাছে চলে আসলাম বেরুতে যাবো তখনি দারোয়ান গেইট লাগিয়ে দিল
শিলা: কি হলো
দারোয়ান: স্যার এর অনুমতি ছাড়া ম্যাডাম বেরুতে পারবে না
শিলা: কোন স্যার আর ম্যাডাম কে
দারোয়ান: তাসিন স্যার
আমি: কি (দারোয়ানের দিকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চেয়ে রইলাম কি বলে এইসব)
দারোয়ান: উনি কড়া নিষেধ করে গেছেন উনার অনুমতি ছাড়া যেন আপনাকে বাইরে যেতে না দেই
শিলা আর আমি দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আমার এখন হাসা উচিত নাকি কান্না করা উচিত বুঝতেছি না তবে তাসিন কে সামনে পেলে এখন কষিয়ে একটা তাপ্পর দিতাম এইটা নিশ্চিত
–অরনী চল হোস্টেলে চলে যাই
–আমি তো বাইরে যাবোই
–কিভাবে যাবি
–দাড়া
তাসিন কে ফোন দিলাম কিন্তু ফোন ধরছেই না মন চাইছে ওকে, যাক ফোন রিসিভ করেছে
–অন্নি আমি ভিজি আছি পরে ফোন দেই
–তুমি কি ভেবেছ আমার সব স্বাধীনতা কেড়ে নিবা
–মানে
–আমি বাইরে ঘুরতে যেতে চাই কিন্তু দারোয়ান যেতে দিচ্ছে না এসব কি তাসিন
–এখন হোস্টেলে যাও আমি কাজ শেষ করে এসে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো
–আমি তোমার সাথে যাবো কেন আমি একা যেতে চাই
–একা যেতে দিচ্ছি না চুপচাপ হোস্টেলে চলে যাও বলেই ফোনটা কেটে দিল

মোবাইলটা একটা আছাড় দিয়ে গেইটের কাছে ফেলে রেখে হোস্টেলে চলে আসলাম, ছোট থেকে স্বাধীনতা পেয়েছি চাচ্চু কখনো আমার কোনো কিছুতে বাঁধা দেননি আর দুদিনের তাসিন এখন আমাকে সব কিছুতে বাঁধা দিচ্ছে আমার সব স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে
–অরনী এভাবে কাঁদছিস কেন
–ও আমার স্বাধীনতা কেড়ে নেবার কে
–দেখ আমার মনে হয় ভাইয়া তোর কোনো বিপদ হতে পারে বুঝতে পেরেছে তাই এমন করছে প্লিজ কান্না করিস না
–ছয়মাস যেদিন পূরন হবে সেদিনই আমি ওকে ডিভোর্স দিব ওকে আর সহ্য হচ্ছে না
–আচ্ছা দিস এখন কান্না থামা
–হুম তোর ফোন বাজছে
–দাড়া আমি কথা বলে আসি
–হুম

দুর ওর উপর রাগ করে ফোনটা কেন ভাঙ্গলাম এখন তো অন্তত গেমস খেলতে পারতাম
–অরনী আমাকে একটু হসপিটালে যেতে হবে
–কেন
–আমার কাজিন অসুস্থ সন্ধ্যার আগেই চলে আসবো
–হুম
–দুপুর হয়ে গিয়েছে তুই গোসল করে ঘুম দে কান্নাকাটি করিস না
–আচ্ছা যা

গোসল করে বের হতেই শুনি বাইরে হর্ন বাজছে একটার পর একটা বাজছেই বিরক্ত হয়ে কে এভাবে হর্ন বাজাচ্ছে দেখার জন্য জানালা দিয়ে নিচে থাকালাম, আশ্চর্য তাসিন এই জানালার দিকে তাকিয়ে এভাবে হর্ন বাজাচ্ছে, আমাকে দেখা মাত্র ইশারা দিল নিচে যাওয়ার জন্য, যাবো কি যাবো না এসব ভাবছি তখন তাসিন ইশারা দিয়ে বুঝালো আমি না গেলে ও উপরে চলে আসবে, ও উপরে না আসাটাই ভালো তাই আমিই নিচে গেলাম
–এই ফোন ভেঙ্গেছ কেন এতোক্ষণ ধরে হর্ন বাজাতে হয়েছে
–ভেঙ্গেছি বেশ করেছি এখানে কেন এসেছ
–তুমি না বলেছিলে ঘুরতে যেতে চাও
–তোমার সাথে যাবো কেন আমি একা যাবো
–এইটা সম্ভব না
–তাসিন আমাদের মধ্যে কিন্তু এমন কথা ছিল না তুমি বলেছিলে আমি এখন হোস্টেলে থাকবো ছয়মাস হলে আমাদের ডিভোর্স হবে কিন্তু তুমি এখন তার উল্টো করছ
–আমি তোমাকে ভালোবাসি ডিভোর্স দেওয়া সম্ভব না আর তোমার বিপদ হতে পারে তাই এমন করছি
–আমার কোনো বিপদ হবে না আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
–সম্ভব না এই নাও তোমার ফোন
–আমার জন্য ফোন এনেছ কেন
–আমি তোমার সাথে কথা বলবো কিভাবে
–তাহলে আমার সিম দাও
–ফোনের মধ্যেই আছে গাড়িতে উঠো
–না যাবো না বাসায় চলে যাও বলেই হনহন করে হেটে হোস্টেলে চলে আসলাম

কিছুই ভালো লাগছে না আমি চাই একা বাঁচতে কিন্তু তাসিন আমার পিছুই ছাড়ছে না, ফোনের দিকে চোখ পরলো ফোন হাতে নিয়ে অফ করে ফেললাম, এখন শান্তিতে ঘুমাবো নাহলে তাসিন ফোন দিবে

সকালে মুখে পানি ছিটায় ঘুম ভাঙ্গলো
–ওই পানি দিছিস কেন
–কি করবো এতোক্ষণ ধরে ডাকতেছি খবর নেই ক্লাসে যাওয়া লাগবে না নাকি
–আমার তো খিদা লেগেছে
–রাক্ষসী পরে খাবি ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি চল
–হুম

উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে দৌড়ে ক্লাসে গেলাম কিন্তু গিয়ে শুনি ক্লাস হবে না এখন নতুন স্যার আসবে সবাই উনাকে বরণ করতে ব্যাস্ত, এই প্রথম শুনছি নতুন স্যার আসবে বলে ক্লাস হবে না, শিলার দিকে রাগি চোখে তাকালাম
–এই এভাবে তাকাস না প্লিজ ক্যান্টিনে চল খাওয়াই
–হুম

ক্যান্টিনে বসে বসে সমুচা খাচ্ছি পাশ দিয়ে দুটি মেয়ে যাচ্ছে আর বলছে
–নতুন স্যার কে দেখেছিস কি হ্যান্ডসাম
–হ্যা আমার তো ইচ্ছে হচ্ছিল গিয়ে জরিয়ে ধরে কিস করি
ছি কি মেয়ে স্যার কে কিস করার কথা ভাবছে
–অরনী চল নতুন স্যার কে দেখে আসি
–তোরও কিস করার সখ জাগছে নাকি
–আরে চলনা
–তুই যা আমি খেয়ে আসি
–সমুচাটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে চল বলেই আমাকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসলো

–অরনী দেখ কি সুন্দর স্যার (সমুচা মুখে দিতে দিতে সামনে তাকালাম আমার চোখ তো কপালে উঠে গেছে সমুচা গলায় আটকে বিষম খেলাম)
–কিরে কি হয়েছে স্যার কে দেখে বিষম খেলি হিহিহি
–হ্যা আপনার স্যার কে দেখেই বিষম খেয়েছি কারন এটাই তাসিন
–কি
–ও আমার পিছু ছাড়বে না বুঝে গেছি

আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাসিন আমার কাছে আসলো তারপর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো “পড়া চুরনি আর পড়া চুরি করতে পারবা না একেবারে তোমার টিচার হয়ে এই কলেজে ঢুকেছি আর এতো দিন যতো কষ্ট দিয়েছ তারচেয়ে বেশি ভালোবাসা আমাকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও”

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৪

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

চুপ করে বিছানায় শুয়ে আছি কিছুই ভালো লাগছে না তাসিনের কথা শুধু মনে পরছে, আমি যে কি বুঝি না যাকে ভালো লাগে না তার কথাই এতো মনে পরছে
–আরে অরনী তুই হোস্টেলে (কারো ডাকে ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসলাম তাকিয়ে দেখি আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী শিলা)
–তুই এখানে
–আমি তো হোস্টেলে উঠেছি এক সপ্তাহ হলো
–তুই না বলেছিলি বাহিরে চলে যাবি
–যাওয়া হয়নি ভাবছি অনার্সটা শেষ করেই যাবো আচ্ছা তোর ফোন কোথায় আমি দুদিন ধরে ট্রাই করছি সুইচড অফ বলছে
–মানে কি অফ হবে কেন এইতো ফোন
–ফোন তো অন তাহলে অফ দেখায় কেন
–এখন দে তো
–অফই তো
–(তাড়াতাড়ি সিমের নাম্বার চেক করলাম একি এইটা তো আমার সিম না এই সিম আসলো কোথা থেকে আর আমার সিম গেলো কোথায়)
–কিরে কি হয়েছে
–ফোনে তো অন্য সিম লাগানো
–এইটা কিভাবে সম্ভব (সাথে সাথে ফোন বেজে উঠলো স্কিনে হাব্বি নাম ভেসে উঠলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না, ফোন রিসিভ করলাম)
–হাই সোনা বউ
–তাসিন তুমি
–হ্যা কেন অন্য কারো ফোন আসা করেছিলে বুঝি
–তারমানে তুমি আমার সিম চেঞ্জ করেছ
–হ্যা
–কেন
–তোমার চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করবে তাই
–ফোন করতে পারবো না কিন্তু বাসায় তো যেতে পারবো আমি কালই চলে যাবো
–সম্ভব না লক্ষীটি আমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে হোস্টেল থেকে বের হতে দিবে না
–তাসিন আমি তোমাকে খুন করবো
–তোমার ভালোবাসায় খুন হবার জন্য তো আমি অপেক্ষা করছি
–দূর

ফোনটা কেটে দিলাম ভেবেছিলাম হোস্টেলে আসলে তাসিনের যন্ত্রণা থেকে বাঁচবো এখন দেখছি ও আমার পিছু ছাড়বে না
–কিরে কি হয়েছে
–অনেক কিছু
–বল আমাকে (শিলা কে সবকিছু বললাম)
–অরনী আমার মনে হয় ভাইয়া তোকে সত্যি ভালোবাসে তুই বাসায় ফিরে যা
–অসম্ভব ওর বাবা আম্মু আব্বু কে খুন করেছে আর আমি সংসার করবো ওর সাথে
–কিন্তু ভাইয়া তো বললো উনি খুনি না
–ওর কথা যে সত্যি সেটার কি প্রমান আছে নিজের বাবা যেহেতু ও নির্দোষ বলবেই
–উনি যে খুনি এইটারও তো প্রমান নেই
–হ্যা এটাই তো সমস্যা কি যে করি
–আমার মনে হয় এখন কিছুটা দিন তোর ধৈর্য ধরা প্রয়োজন তারপর তাসিনের বাবা পুরোপুরি সুস্থ হলে পর উনার সাথে সরাসরি কথা বলবি আর ওরা যেহেতু বলছে প্রমান আছে তাহলে নিশ্চই প্রমান তোর হাতে দিবে তখন তুই আসল খুনিকে পেয়ে যাবি শাস্তিও দিতে পারবি
–হ্যা ঠিক বলেছিস কিন্তু আমার চুপ করে থাকাটা তো চাচ্চু মানবে না চাচ্চু কে কি বলবো
–দেখ কথাটা তোর কাছে খারাপ লাগলেও আমি বলছি আমার মনে হয় এসবে তোর চাচ্চুর হাত আছে বুঝে শুনে কাজ করিস
–কি করবো আমার মাথায় কিছু আসছে না
–আমি যা বলি শুন তাহলেই হবে
–বল
–তুই আপাতত চুপ থাক তাসিনের বাবা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আর তোর চাচ্চু কে বল তোর সামনে পরিক্ষা তাই হোস্টেলে উঠেছিস
–চাচ্চু কি মানবে
–তাহলে এক কাজ কর উনাকে বল তুই হোস্টেলে থাকলেও প্রতিশোধ ঠিকি নিচ্ছিস আর বাড়িটা তোর নামে করে নিয়েছিস
–ঠিক আছে
–এখন পড়তে বস
–নারে আজ আর পড়বো না
–ঠিক আছে রেস্ট নে
–হুম

বিছানায় শুয়ে আছি আর ভাবছি তাসিন আমাকে চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না কেন এতে ওর কি লাভ, তাহলে কি চাচ্চু আম্মু আব্বুর খুনি আর তাসিন এইটা জানে আমার ক্ষতি হবে ভেবে কি চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না, কিন্তু চাচ্চু খুনি হয়ে থাকলে তো চাচ্চুর সাথে আমার যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন নাহলে চাচ্চু সন্দেহ করবে যে আমি সব জেনে গেছি, তাড়াতাড়ি তাসিন কে ফোন দিলাম
–আমি জানতাম আমার বউটা আমাকে ফোন দিবে
–ফাজলামি করো না আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও
–কি প্রশ্ন
–চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছ না কেন
–এমনি
–তাসিন প্লিজ বলো
–এখন জানতে হবে না
–কিন্তু তাসিন আমি যদি হঠাৎ করে চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই তাহলে তো উনি আমাকে সন্দেহ করবেন
–(নিশ্চুপ)
–কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন
–ভাবছিলাম
–কি
–তুমি ঠিক বলেছ উনি তোমাকে সন্দেহ করবেন
–হ্যা
–আমি তোমাকে সিমটা দিব কিন্তু সবসময় অন রাখতে পারবা না প্রয়োজন হলে অন করে উনার সাথে কথা বলে আবার অফ করে ফেলবা
–ঠিক আছে
–কালকে সিম পেয়ে যাইবা এখন পড়তে বস
–উহু ফোন রাখো ঘুমাবো
–পড়া চুরনি এখন কিসের ঘুম পড়তে বস
–ওই শুনো তুমি আমার হাজবেন্ড কিন্তু সেটা কাগজে কলমে শুধু আর ছয়মাস পূর্ন হলেই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব কাজেই এতো অধিকার দেখাবা না
–হুহ পড়া চুরি করার জন্য এতো কথা শুনিয়েছ আজকে যতো খুশি পড়া চুরি কর আগামীকাল থেকে আর চুরি করতে পারবা না আর ডিভোর্স সেটা তোমার আশা আশাই থেকে যাবে
–এই ফোনটা রাখ তো তোমার সাথে বকবক করতে আমার ভালো লাগছে না
–ফোনটা কি আমি দিয়েছি
–আমিই দিয়েছি কিন্তু সেটা প্রয়োজনে তুমি তো অপ্রয়োজনীয় কথা বলছ
–মোটেও অপ্রয়োজনীয় কথা বলিনি, এই শুনোনা আমার না আব্বু ডাক শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে
–আর কয়টা মাস অপেক্ষা কর আমি তোমাকে ডিভোর্স দেওয়ার পর একটা বিয়ে করে নিও আর আব্বু ডাক শুনো যত্তোসব

সকালে শিলার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–কিরে অরনী রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছিলি কেন
–(রাতের কথা মনে পড়লো রাগ করে তাসিনের ফোন কেটে ওকে বকা দিতে দিতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম ওর জন্য রাতের খাওয়াটা হলো না)
–কি ভাবছিস
–কিছুনা খিদা লেগেছে
–ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে ক্লাসে যেতে হবে
–ওকে

ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রেডি হচ্ছি ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো “একটু সুন্দর করে সেঝে ক্লাসে যেও পেত্নীর মতো যেও না” মেসেজটা পড়ে ইচ্ছে হচ্ছে মোবাইলটা তাসিনের মাথায় আছাড় দিয়ে ভাঙি, কোনোরকমে রাগ সব কমিয়ে শিলা কে নিয়ে কলেজে চলে গেলাম…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৩

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে তাসিনের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো চোখ ডলতে ডলতে ওর দিকে থাকালাম, ভয় পেয়ে গেলাম ওকে দেখে চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে চুল গুলো উসকোখুসকো একদম রোগা রোগা মনে হচ্ছে
–হা করে কি দেখছ ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও বের হতে হবে
–হুম

ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম তাসিন টেবিল রেখে সোফায় বসে নাস্তা করছে, ওর থেকে চোখ ফিরাতে গিয়ে ফ্লোরে চোখ পরলো, ফ্লোরের অবস্থা দেখে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে
–তাসিন এসব কি
–কোন সব
–ফ্লোরে অর্ধেক অর্ধেক সিগারেট পালানো কেন
–ওহ তারমানে পুরোটা খাওয়া উচিত ছিল
–আগে তো সিগারেট খেতে না
–এখন পরিস্থিতি খেতে বাধ্য করছে
–তাই বলে তুমি….
–চুপ করে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও এখনি রওনা দিব
–হুম

চুপচাপ খেয়ে নিলাম তাসিনের দিকে আর থাকালাম না কথাও বললাম না

আয়নার সামনে বসে রেডি হচ্ছি তাসিন ফিছনে এসে দাঁড়াল
–কিছু বলবে
–হুম
–বলো
–রাখবে তো
–চেষ্টা করবো
–শেষ অনুরোধ এইটা প্লিজ রেখো
–কি
–জানো তো আমার নীল রঙ পছন্দ তোমার জন্য একটা শাড়ি এনেছিলাম নীল রঙের আজ পরবে প্লিজ
–শাড়ি কখন আনলে
–এখানে এসে তো ঘুরতে যাওনি ঢাকা থেকই এনেছিলাম ভেবেছিলাম হানিমোনে আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে
–রেখে যাও
–হুম

শাড়ি পরে রেডি হয়ে তাসিনের সামনে গেলাম ও হা করে তাকিয়ে আছে কিছু না বলে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম, তাসিন চুপচাপ গাড়িতে উঠে গাড়ি ছেড়ে দিল, বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখছি মাঝে মাঝে আয়নায় চোখ পরছে আমার শাড়ির আচল বাতাসে উড়ে বার বার তাসিনের মুখে গিয়ে পরছে কিন্তু ও একটু বিরক্তও হচ্ছে না, তাসিন পারেও বটে

বিকেলের দিকে আমরা ঢাকায় পৌছালাম, বাসায় যেতেই সবাই আমাদের দেখে অবাক, আজ পর্যন্ত কোনো দম্পতী মনে হয় একদিনের জন্য হানিমোনে যায়নি
তিথি: ভাবি এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে
ভাবি: কি হয়েছে কোনো সমস্যা একদিন থেকেই তোরা চলে আসলি যে
তাসিন: তেমন কিছু না ভাবি অন্নির কলেজ থেকে ফোন এসেছিল ওকে কলেজে যেতে হবে
মা: নতুন বউ এতো তাড়াতাড়ি কলেজে যাবে
তাসিন: তাতে কি হয়েছে বিয়ের জন্য কি পড়াশুনার ক্ষতি করবে নাকি
মা: ঠিক আছে তাহলে তোর আর অফিসে যেতে হবে না এসব ব্যবসা তোর বাবা আর আসিফ বুঝে নিবে তুই বরং প্রতিদিন বউমা কে কলেজে দিয়ে আসবি আবার নিয়ে আসবি
তাসিন: মা ও হোস্টেলে থাকবে
মা: কেন
তাসিন: পড়াশুনার সুবিধা হবে
মা: হোস্টেলে কিসব খাবার দেয় আমার বউমা তো অসুস্থ হয়ে পরবে (মায়ের কথাটা শুনে চমকে উঠলাম উনার দিকে তাকিয়ে আছি, কি মায়াবী চেহারা হোস্টেলে থাকবো বলে কতো চিন্তা করছেন)
তাসিন: পড়তে হলে একটু কষ্ট তো করতে হবেই
মা: ঠিক আছে
ভাবি: তাসিন আমার সাথে চল তো
তাসিন: কোথায়

ভাবি তাসিনের হাত ধরে টানতে টানতে উপরে নিয়ে গেলো, আমিও উপরে চলে গেলাম রুমে ব্যাগ রেখে বের হতেই দেখি ভাবি আর তাসিন তিথির রুমের সামনে দাঁড়িয়ে কি যেন কথা বলছে তাসিন কাঁদছে, কাঁদছে কেন জানার জন্য একটু এগুলাম
ভাবি: আরে গাধা বউয়ের ভালোবাসা পাবার জন্য কি সিগারেট খেতে হয়
তাসিন: তাহলে কি করবো অন্নি তো আমাকে একটুও ভালোবাসে না
ভাবি: আমি যা বলি তাই কর
তাসিন: কি বল
ভাবি: কানেকানে বলি

দূর কি বলে জোরেই বলতো আমি শুনতাম কিন্তু ভাবি উনার দেবরের কানেকানে বলছে যত্তোসব, আবার রুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি তাসিন সোফায় বসে বসে গেমস খেলছে আর হাসছে, বুঝলাম না ভাবি ওকে কি এমন বললো যে কান্না থেমে গেছে এখন বসে বসে হাসছে
–অন্নি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছ কেন এখানে এসে বস
–ভাবি তোমাকে কি বলেছে
–এইটা বলা যাবে না
–বলবা কিনা
–জ্বী না
–তাসিন
–রাগ দেখিয়ে লাভ নেই আর শুনো সন্ধ্যায় তোমাকে হোস্টেলে রেখে আসবো
–তোমার থেকে দূরে গেলেই আমি বাঁচি
–দেখো আবার না কোনো সময় আমাকে কাছে না পেয়ে মরতে বস হিহিহি
–তোমার হাসিটা একদম ভূতের মতো
–হুহ ইউনিভার্সিটি তে যখন পড়তাম তখন ক্লাসের মেয়েরা তো আমার হাসি দেখে ক্রাশ খেত সাথে বড় আপুরাও খেত
–ওদের রুচি খারাপ তাই তোমার হাসি দেখে ক্রাশ খেত
–তুমিও একদিন এই হাসির প্রেমে পরবা
–তোমার সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না প্লিজ মুখটা বন্ধ রাখো
–অন্নি আমার একটা কথা রাখবে
–আবার কথা বলছ বললাম না চুপ থাকতে
–প্লিজ এই কথাটা রাখবে বল শুধু
–কি বলো
–হোস্টেলে গিয়ে তুমি তোমার চাচ্চুর সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবে না বলো
–মানে কি চাচ্চু আমার মা বাবা সব উনি আমাকে বড় করেছেন আর তুমি উনাকেই ভুলে যেতে বলছ
–হ্যা বলছি প্লিজ বল আমার এই কথাটা রাখবা
–তাসিন তুমি পাগল হয়ে গেছ ডক্টর দেখাও
তাসিনের চোখের সামন থেকে চলে আসলাম বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, খুব খারাপ লাগছে তাসিন কি বললো এসব চাচ্চু কে ভুলে যেতে বলছে তাসিন এমন আগে জানতাম না তো, আমি আর ওর কাছে থাকবো না এখনি হোস্টেলে চলে যাবো, রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছাতে শুরু করলাম
–অন্নি ব্যাগ গুচাচ্ছ কেন
–চলে যাবো
–এখনি
–হ্যা
–একা যাবে
–হ্যা একাই যাবো আমার সাথে কাউকে যেতে হবে না
–বাসার সবাই ভাববে তুমি ঝগড়া করে যাচ্ছ রেডি হয়ে নাও আমিই দিয়ে আসবো
–হুম

রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম, তাসিন ড্রাইভ করছে আর বার বার আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে
–অন্নি
–কথা বলতে ভালো লাগছে না চুপ থাকো
–একটু পর তো কেউ আর এভাবে বকবক করবে না এখন নাহয় একটু সহ্য করো (কথাটায় কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছে সত্যিই তো তাসিন আর আমার সামনে বকবক করবে না আমিও বিরক্ত হবো না, আচ্ছা তাসিন আমাকে বিরক্ত করবে না এইটা তে তো আমার খুশি হবার কথা কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে কেন)
–অন্নি সোনা কাঁদে না চিন্তা করো না তুমি যেন আমাকে রোজ দেখতে পারো সে ব্যবস্থা করবো (চোখে হাত দিয়ে তো আমি অবাক নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি পরছে)
–কি ম্যাম তুমি না আমায় ভালোবাস না তাহলে কাঁদছ কেন
–তোমার জন্য কাঁদতে আমার বয়েই গেছে, চোখে কি যেন পরেছে
–হুম বুঝেছি হোস্টেলে চলে এসেছি এবার নামো

হোস্টেলের সব জামেলা শেষ করে তাসিন আমাকে রুমে দিয়ে চলে গেলো, আশ্চর্য আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তাসিন একটু মন খারাপও করলো না, দৌড়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম তাসিন কে দেখা যাচ্ছে গাড়িতে উঠে চলে গেলো একবার পিছন ফিরে থাকালো না…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১২

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

–অন্নি এই অন্নি
–হুম
–এই ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছ কেন
–কখন ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতে পারিনি
–তুমি ঠিক আছ তো (চোখ মেলে তাসিনের দিকে তাকালাম ফ্লোরে কিভাবে আসলাম আবার ঘুমিয়েও পরেছিলাম কিছুই বুঝতে পারছি না, মাথাটা কেমন যেন করছে অতিরিক্ত টেনশন করার কারনে হয়তো)
–বিছানায় গিয়ে ঘুমাও
–হুম
ফ্লোর থেকে উঠতে চাইলাম তখনি মাথাটা কেমন যেন করে উঠলো সাথে সাথে পরে গেলাম

ভেবেই নিয়েছিলাম এখন পরে গিয়ে বুঝি মাথাটা ফেটে গেছে কিন্তু পরার আগেই তাসিন ধরে ফেলেছে, ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরে আছে আমাকে, আস্তে আস্তে মাথা তুলে ওর চোখের দিকে তাকালাম আজো ওর চোখ দুইটা আমার চোখে ভালোবাসা খুঁজে বেড়াচ্ছে, নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে ওকে এভাবে কষ্ট কেন দিচ্ছি খুন তো ওর বাবা করেছে আর তাসিন তো বলছে খুনি অন্য কেউ তাহলে ওকে কষ্ট দেওয়া কি আমার ঠিক হচ্ছে
–অন্নি
–হুম
–কি হয়েছে তোমার (তাসিন কাঁদছে ওর দুচোখ থেকে পানি টুপটুপ করে আমার উপরে পরছে আর তাকিয়ে থাকতে পারলাম না ওর দিকে মাথা নিচু করে ফেললাম, তাসিন আমাকে কোলে তুলে নিল তারপর বিছানায় শুয়ে দিল)
–চুপ করে শুয়ে থাকো
–আমার কিছু হয়নি
–তা তো দেখতেই পারছি
–তাসিন….
–অন্নি প্লিজ আর কিছু শুনতে চাই না চলো সব ভুলে নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করি (কিছু না বলে চুপ করে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি, তাসিন মৃদু হেসে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুতে শুরু করলো, দুজনের ঠোটের মধ্যে সামান্য ফাক কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হয়তো তাসিন ওর ঠোটের উষ্ণ ছুঁয়া আমার ঠোটে ছুঁয়ে দিবে কিন্তু আমি তো এমন কিছু চাই না আমি তাসিন কে কখনো ভালোবাসতে পারবো না, এক ঝটকায় তাসিন কে দূরে সরিয়ে দিলাম ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
–কি হলো অন্নি
–তাসিন আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই
–বুঝেছি আমাকে ভালোবাস এইটা বলবা তো তাড়াতাড়ি বলে ফেলো প্লিজ বিয়ের পর একবারো তোমার মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনতে পারিনি
–তাসিন আমি ফিরে যেতে চাই
–মানে
–আমি তোমার সাথে থাকতে চাচ্ছি না চাচ্চুর কাছে চলে যাবো
–অন্নি ফাজলামো করনা প্লিজ
–আমি সিরিয়াসলি বলছি
–আমার সাথে থাকতে চাওনা কেন তুমি না আমায় ভালোবাস
–না আমি তোমাকে ভালোবাসি না
–আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতো (ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছি “তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা কিন্তু তোমার প্রতি কেমন যেন এক মায়া জন্মে গেছে” এই মায়া বাড়তে দেয়া যাবেনা আমি মুক্তি চাই)
–কি হল চুপ হয়ে আছ কেন বল
–(ওর চোখের দিকে তাকিয়ে একদমে বলে দিলাম “আমি তোমাকে ভালোবাসি না”)

তাসিন আমাকে ছেড়ে আস্তে আস্তে পিছিয়ে গেলো, জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল বাইরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে, আমি বিছানায় উঠে বসলাম তাসিনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছি “মাফ করে দিও তাসিন তোমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করার জন্য, আমি এতোটা খারাপ মেয়ে নই শুধু তোমার বাবার প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোমাকে কষ্ট দিয়েছি এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না, তোমাকে কষ্ট না দিয়ে উনাকে শাস্তি দিতে পারতাম কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রমান নেই তাই উনাকে পুলিশে দিতে পারিনি আর কাউকে খুন করার মতো এতো সাহস আমার নেই যদি থাকতো তাহলে খুনের বদলে আমিও খুন করতাম”

তাসিন চোখের পানি মুছতে মুছতে আমার কাছে এসে বসলো তারপর একটুখানি হেসে বললো
–অন্নি তুমি যা চাও তাই হবে কিন্তু তোমার চাচ্চুর কাছে যেতে পারবে না
–কেন
–আমি জেনে শুনে তোমাকে বিপদে ফেলতে পারবো না তাছাড়া আমার পরিবারের সবাই জানে তুমি অনাথ মেয়ে ডিভোর্স এর আগে তোমার চাচ্চুর কাছে গেলে সবাই জেনে ফেলবে
–তাহলে আমি কোথায় যাবো
–ছয়মাসের আগে তো ডিভোর্স হবে না এই সময়টুকু তুমি তোমার কলেজের হোস্টেলে থাক আমি সব ব্যবস্থা করে দিব
–হুম
–আর হ্যা ভালো করে পড়াশুনা করো
–হুম
–এখান থেকে আগামীকাল যাই আজ ভালো লাগছে না বাসায় গিয়ে সবাইকে বলেই তোমাকে হোস্টেলে রেখে আসবো
–ঠিক আছে

রাত আটটা বাজে কিন্তু এই বাংলোতে মনে হচ্ছে গভীর রাত, তাসিন সেই সন্ধ্যায় বেরিয়ে ছিল এখনো ফিরার নাম নেই একা একা খুব ভয় করছে, খাটের এক কোনে বসে আছি হঠাৎ ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো তাসিনের মেসেজ “ভয় পেয়ো না আমি বারান্দায় আছি”
আমি ভয় পাচ্ছি তাসিন বুঝলো কিভাবে ভালোবাসলে হয়তো প্রিয়জনের মনের অনুভূতি বুঝা যায়

রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসলাম তাসিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে হাতে সিগারেট একটু অবাকই হলাম কারন তাসিনের সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস ছিল না, আমি আসছি বুঝতে পেরে সিগারেট হাত থেকে পেলে দিল
–বাইরে কেন এসেছ এখানে খুব ঠান্ডা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পর
–তুমি ঘুমাবে না
–এখানে ভালো লাগছে
–তোমার ঠান্ডা লাগবে তো, তোমার তো আবার ঠান্ডা লাগলে সবার মাথা খারাপ হয়ে যায়
–সবাই বাইরের কষ্ট দেখে তাই এমন করে ভিতরের কষ্ট তো আর কেউ দেখে না
–তাসিন
–অন্নি আর একটা বার ভেবে দেখনা প্লিজ তোমাকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হবে
–আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে
–যা এত্তোগুলো বছরে ঠিক হয়নি তা আর কখনো ঠিক হবে না সেই ছোট বেলায় ভালোবেসে ছিলাম হারিয়ে গিয়েছিলে কিন্তু ভুলতে পারিনি প্রতিটা মুহূর্তে কষ্ট পেয়েছি
–দেখ তাসিন আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসিনি আর বাসতে পারবোও না তুমি তোমার জীবনটা নতুন করে শুরু করো
–নতুন করে শুরু করতে হলে তোমাকে ভুলতে হবে যাকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি তাকে ভুলবো কিভাবে
–চেষ্টা করো পারবে
–পাগলী (বলে একটু হাসি দিল)
–সারা জীবন একা থাকবে নাকি
–হয়তো
–পারবে
–(আবারো হাসল)
–হাসছ যে
–এমনি
–তাসিন
–যাও ঘুমিয়ে পর সকালে রওনা দিতে হবে আর যা চাইছ তাই হবে আটকাবো না আর তোমাকে
–হুম

বিছানায় শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না তাসিনের সাথে অন্যায় করেছি জানি কিন্তু তাসিন কে ভালোবাসাও আমার পক্ষে সম্ভব না চাচ্চু মেনে নিবেন না তাছাড়া আমি জানি তাসিনের বাবা আমার আব্বু আম্মুর খুনি, মেয়ে হয়ে নিজের মা বাবার খুনির ছেলে কে ভালোবাসবো কিভাবে….?

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১১

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিন কে এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে দিলাম ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি
–অন্নি তোমার রাগ করাটা স্বাভাবিক কিন্তু তুমি কি জানো তুমি যে ভুল ধারনা নিয়ে এই অপরাধ গুলো করছ
–কিসের ভুল ধারনা নিজের বাবা কে ভালো সাজাচ্ছ তোমার বাবা আমার আব্বু আম্মুকে খুন করেছে এটাই সত্যি
–ভুল অন্নি তোমাকে ভুল বুঝানো হয়েছে আব্বু কেন খুন করতে যাবেন
–কারন এই বাংলো, ঢাকার ফ্ল্যাট, দুইটা কম্পানি সবকিছু দুজনের নামে ছিল আর তোমার বাবা আব্বুকে খুন করে সবকিছুর মালিক একা হতে চেয়েছে আর এখন উনি সব একা ভোগ করছে
–আচ্ছা তুমিই বলো আব্বু আর আঙ্কেল তো খুব ভালো বন্ধু ছিল তাহলে আব্বু বন্ধু হয়ে কি বন্ধুকে খুন করতে পারেন
–হ্যা পেরেছে তো লোভে পরে তোমার বাবা আব্বু আম্মুকে খুন করেছে
–তাহলে তোমাকে খুন করলো না কেন তোমার বাবা মায়ের অবর্তমানে তো সব সম্পত্তি তোমারই হবে তাই না
–আমাকে তোমরা খুঁজে পাওনি তাই খুন করতে পারনি
–ভুল করছ অন্নি আব্বু তোমার বাবা মা কে খুন করেননি খুন করেছে তো….
–কে খুন করেছে বলো
–(নিশ্চুপ)
–খুন তো তোমার আব্বুই করেছে তাই চুপ হয়ে আছ
–আসল খুনি কে সেটা বললে তুমি সহ্য করতে পারবে না তাই এখন বলতে চাইছি না তুমি খুঁজে দেখ পাও কি না
–চাচ্চু বলেছেন তোমার আব্বুই খুনি তাই আমার আর খুঁজার প্রয়োজন নেই
–আব্বু যে খুনি তার প্রমান দিয়েছে তোমার চাচ্চু
–না
–তাহলে বিশ্বাস করেছ কিভাবে প্রমান ছাড়া কাউকে খুনি বলা যায় না
–চাচ্চু তো আমাকে মিথ্যে বলবে না
–হ্যা মিথ্যে বলবে না কিন্তু সত্যি যে বলেছে এইটারও তো প্রমান নেই খুন করার সময় কি তোমার চাচ্চু ওখানে ছিলো যদি থেকেই থাকতো তাহলে তোমার আব্বু কে বাঁচায়নি কেন
–(নিশ্চুপ)
–যখন খুন হয় তখন তুমি তোমার চাচ্চুর বাসায় ঢাকা ছিলে আমরাও বাংলোতে ছিলাম না ঘুরতে গিয়েছিলাম ফিরে এসে দেখি আঙ্কেল আন্টি কে খুন করা হয়েছে তাহলে আব্বু কিভাবে খুন করলেন বলতো
–তাহলে চাচ্চু আমাকে বললো কেন
–যেদিন খুন হয়েছিল সেদিন কি তোমাকে লাশ দেখানো হয়েছিল
–না চাচ্চু বলেছে আমি অজ্ঞান অবস্থায় হসপিটালে ছিলাম
–তুমি কি এইটা জানো তোমার আম্মু জায়গায় মারা গেলেও তোমার আব্বু একদিন পর মারা গিয়েছিলেন
–কি
–হ্যা আর তখনি উনি আব্বুকে সব বলে গেছেন খুনি তোমাকে খুন করতে পারে এই ভেবে উনি তোমার নামে সব সম্পত্তি আব্বুর নামে দিয়ে যান আর উইল করে যান তোমার আঠারো বছর হলে তুমি এই সম্পত্তি ফিরে পাবে
–তাহলে কি চাচ্চু আমাকে মিথ্যে বলেছে কিন্তু মিথ্যে বলবে কেন
–অন্নি তুমি ভুলের জগতে বাস করছ খুঁজে দেখ খুনি তোমার চোখের সামনেই আছে তোমার আপনজনই কেউ একজন
–কে
–আমি বলবো না বললে বিশ্বাসও করবে না তারচেয়ে ভালো তুমি নিজে খুঁজে বের করো তবে হ্যা কখনো যদি খুঁজে ব্যর্থ হও আব্বুর কাছে যেও আব্বুর কাছে প্রমান আছে কে আসল খুনি
–তাহলে এখন নিয়ে চলো তোমার বাবার কাছে
–এখন সম্ভব নয়
–কেন
–আব্বু যদি জানতে পারেন তুমি উনার সেই ছোট্ট অরনী তাহলে অনেক খুশি হবেন কিন্তু যখন জানতে পারবেন তুমি উনাকে খুনি ভেবে এতোকিছু করেছ আর উনার ছেলেকে ভালোবাস না মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করেছ তখন উনি অনেক কষ্ট পাবেন, মাত্র হার্ট এট্যাক করেছেন উনি আবার কোনো বড় আগাত দিতে চাইনা
–শুনো এসব বলে লাভ নেই আমি জানি উনিই আব্বু আম্মুর খুনি আর তুমি খুনির ছেলে, আমার তো ভয় হয় কখন জানি তুমি আমাকে খুন করে ফেল
–আরে পাগলী তোমাকে খুন করার ইচ্ছে তো দূরের কথা একটা ফুলের টোকা দিতেও কষ্ট হয়, বৌভাতের দিন তোমাকে তাপ্পর দিয়ে তোমার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি আমি সারা রাত কেঁদেছি বুঝতে পেরেছ একবারও….?
বুঝনি কারন তুমি আমাকে ভালোবাস না তাই এতো কষ্ট দিতে পার
–কষ্ট দিয়েছি বেশ করেছি আরো বেশি দেওয়া উচিত ছিল
–তুমি কখন কিভাবে আমাকে কষ্ট দিয়েছ তা সব জানি কিন্তু কখনো কিছু বলিনি, ইচ্ছে করে ফ্লোরে ঘুমাতে বলেছ, হসপিটালে এসি বাড়িয়ে দিয়েছ, পরী কে কিডন্যাপ করিয়েছ এখানে এসেও আমাকে কষ্ট দেওয়ার প্লেন ছিল তোমার সবকিছু জানি কিন্তু কিছুই বলিনি কেন জানো তুমি যদি কষ্ট পেয়ে কাঁদো সহ্য করতে পারবো না
–সবকিছু জানো কিভাবে
–তুমি আমাকে লুকিয়ে ফোনে কথা বলতে সন্দেহ হয়েছিল তোমার ফোন থেকে নাম্বার নিয়ে জানতে পারি তোমার চাচ্চুর সাথে কথা বল আর তখন জানতে পারি তুমি সেই অরনী, এসি যখন বাড়িয়ে দিয়েছিলে তখন আমি সজাগ ছিলাম, ছাদে যখন পরী কে কিডন্যাপ করার কথা বলছিলে তখন শুনেছি, খুন করার কথা বলেছ তোমাকে খুন করার ইচ্ছে থাকলে তখনি করতাম যখন তুমি আমাদের সবার কলিজার টুকরা পরী কে কিডন্যাপ করিয়েছিলে কেন করিনি জানো
–কেন
–কারন তোমার জায়গায় থাকলে আমিও এসবই করতাম
–মানে
–তোমাকে আমি দোষ দিব না কারন তোমাকে ভুল বুঝানো হয়েছে আর প্রত্যেক সন্তানই তার মা বাবার খুনের প্রতিশোধ নিতে চাইবে সেটা যেভাবেই হউক
(অবাক হয়ে তাসিনের দিকে তাকিয়ে আছি এতোকিছুর পরও তাসিন আমাকে অপরাধী বলছে না)
–যা হবার হয়েছে অন্নি এবার সব ভুলে যাও প্লিজ চলো আমরা সব নতুন করে শুরু করি
–আব্বু আম্মুর খুনিকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমি কিছুই ভুলতে পারবো না আর ভালো করে শুনে রাখ আমি তোমাকে ভালোবাসি না ছয়মাস পর আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব
–(তাসিন আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো “কিভাবে ভালো বাসাতে হয় তা আমি ভালো করেই জানি ছয়মাস আমার জন্য যথেষ্ট সময়”)
একটি মুচকি হাসি দিয়ে তাসিন চলে যেতে লাগলো, দরজার কাছে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “অন্নি ভুলেও তোমার চাচ্চু কে বলো না যে আব্বু তোমার বাবা মায়ের খুনি না এইটা তুমি জানতে পেরেছ যদি বলো তোমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে”

তাসিন বাইরে চলে গেলো আমি আস্তে আস্তে এই রুম থেকে বেরিয়ে পাশের রুমে গেলাম, মাথা ঘুরছে কি হচ্ছে এসব আমার সাথে চাচ্চু বলছে তাসিনের আব্বু খুনি আর তাসিন বলছে অন্য কেউ, আচ্ছা তাসিন চাচ্চু কে বলতে নিষেধ করলো কেন এর মধ্যে আবার কি প্যাচ আছে তাহলে কি চাচ্চু আসল খুনি…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১০

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১০

লেখিকা: সুলতানা তমা

বিকেলের দিকে আমরা বাংলোতে পৌছালাম, খুব সুন্দর বাংলো কিছুটা পাহাড়ি এলাকা একটু উঁচুতে বাংলোটা খুব সুন্দর দেখতে, ভিতরে আরো বেশি সুন্দর কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এতো বড় বাংলোতে একটা কাজের লোক পর্যন্ত নেই
–তাসিন এখানে তো কোনো কাজের লোক নেই
–ছিল আমি ছুটি দিয়ে দিয়েছি
–তাহলে খাবো কি আমি তো রান্না করতে পারিনা
–পাশে রেস্টুরেন্ট আছে ওখান থেকেই খাবার আনবো
–হুম
–ভয় পেয়ো না তোমার কোনো ক্ষতি করবো না
–তুমি তো আমাকে ভালোবাস তাহলে আমার ক্ষতি করবে কিভাবে
–তারমানে কি তুমি আমাকে ভালোবাস না (ওর চোখের দিকে থাকালাম সত্যিই তো আমি ওকে ভালোবাসি না কিন্তু ওর চোখ দুটি তো আমার চোখে ভালবাসা খুঁজে বেড়াচ্ছে)
–অন্নি খিদে লেগেছে
–হ্যা
–তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি খাবার নিয়ে আসছি
–ঠিক আছে

ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি তাসিন চলে গেছে খাটের উপর একটি ডায়েরি রাখা, ভাবছি ডায়েরিটা পড়বো কিনা, পড়াটা ঠিক হবে কিনা এসব ভাবতে ভাবতেই ডায়েরিটা খুললাম
প্রথমেই লিখা “এইটা পিচ্ছি বউয়ের জন্য”
ডায়েরিটা তো তাসিনের হবে তাহলে ওর পিচ্ছি বউ আবার কে, কৌতূহল নিয়ে পড়তে শুরু করলাম

পৃষ্ঠা নং ১
জানিনা আমার পিচ্ছি বউটা কোথায় আছে যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে বউটা কে খুঁজে বেড়াচ্ছি কিন্তু খুঁজে পাইনি, আমার মন বলে ও বেঁচে আছে আর একদিন ঠিক ও আমার কাছে ফিরে আসবে

পৃষ্ঠা নং ২
ইদানীং পিচ্ছি বউটার কথা খুব মনে পরে খুব কষ্ট হয় জানিনা ওকে কখনো ফিরে পাবো কিনা

পৃষ্ঠা নং ৩
সেদিন হঠাৎ করে রাস্তার উপারে অন্নির মতো একটি মেয়েকে দেখেছি দৌড়ে ওর কাছে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু এক্সিডেন্ট করে ফেলি, এই কয়দিন হসপিটালে ছিলাম তাই বউটা কে নিয়ে কিছু লিখা হয়নি

পৃষ্ঠা নং ৪
ছোট বেলার সেই দিন গুলো খুব মনে পরে অন্নি কে বউ সাঝানো আর আমি বর সেজে দুজন মিলে খেলা করা, এখন এসব মনে পরলে হাসি পায় জানিনা অন্নিকে কখনো খুঁজে পাবো কিনা আমার বউ বানাতে পারবো কিনা

ডায়েরির বেশকিছু পাতা জুরে শুধু পিচ্ছি বউকে নিয়ে লিখা, তাসিনের পিচ্ছি বউয়ের নাম অন্নি আমার নামও অন্নি তাহলে কি আমিই সেই মেয়ে কিন্তু কিভাবে সবকিছু রহস্যের মতো লাগছে, আরো কিছু পাতা উল্টিয়ে পড়তে শুরু করলাম

পৃষ্ঠা নং ১
আবার প্রথম থেকে শুরু করলাম কারন আজ থেকে ডায়েরিতে নতুন অন্নির কথা লিখবো, কয়েকদিন ধরে একটি মেয়ে আমাকে খুব জ্বালাচ্ছে, আমি আমার পিচ্ছি বউ কে ভুলে অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না তাও মেয়েটি কে ভালোবাসতে হলো নাহলে নাকি মেয়েটি সুইসাইড করবে, হয়তো পিচ্ছি বউকে যতটা ভালোবাসি ততোটা ভালোবাসতে পারবো না অন্নিকে কিন্তু দুজনের নাম তো এক পিচ্ছি বউয়ের পাশে নাহয় অন্নিকে একটু জায়গা দিলাম

পৃষ্ঠা নং ২
আমার কেন জানি মনে হয় এই অন্নিটাই আমার পিচ্ছি বউ অনেক মিল খুঁজে পাই দুজনের মাঝে

পৃষ্ঠা নং ৩
আজ অন্নি আর আমার বিয়ে কাল থেকে এই ডায়েরিতে শুধু আমাদের রোমান্স গুলো লিখবো ভাবতেই ভালো লাগছে

পৃষ্ঠা নং ৪
মানুষের সব ইচ্ছা কখনো পূর্ন হয়না তাই হয়তো অন্নি আমার সাথে এমন করেছে
হাহাহা আমি কেমন বোকা অন্নি আমাকে ভালোই বাসে না আর আমি বুঝতেও পারিনি

পৃষ্ঠা নং ৫
এই অন্নিই আমার সেই পিচ্ছি বউ আজ জানতে পেরেছি কিন্তু অন্নির তো ছোটবেলার কথা কিছুই মনে নেই আমি কি পারবো অন্নিকে সবকিছু মনে করিয়ে দিতে

পৃষ্ঠা নং ৬
যতো দিন যাচ্ছে ততোই অন্নির নতুন রূপ দেখতে পারছি জানিনা অন্নি এমন পাল্টে গেলো কেন

পৃষ্ঠা নং ৭
অন্নিকে ভুল বুঝানো হয়েছে অনেক বড় ভুল অন্নি ভাবছে আব্বু ওর মা বাবা কে খুন করেছেন কিন্তু এইটা তো সম্পূর্ণ মিথ্যে আমি কি পারবো অন্নিকে এই ভুল ধারনা থেক বের করতে

আর পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না তাও পড়লাম
তাসিন কে কষ্ট দেওয়া থেকে শুরু করে পরী কে কিডন্যাপ করা সহ সব লিখা আছে ডায়েরিতে, আমার আন্দাজ ঠিকি ছিল তাসিন বুঝে ফেলেছিল সবকিছু কিন্তু বুঝলো কিভাবে আর ওর বাবা খুন করেছে এইটা মিথ্যে বললো কেন
–অন্নি (দরজায় তাসিন দাড়িয়ে আছে আমার হাতে ডায়েরিটা দেখে একটি মুচকি হাসি দিলো)
–হাসছ যে
–আমি চেয়েছিলাম ডায়েরিটা তুমি পড় পড়েছ তাই হাসছি
–কিন্তু
–অন্নি ডায়েরিটা পড়ে এই বাংলোতে এসেও কি তোমার কিছুই মনে পড়ছে না
–কি মনে পরবে
–না কিছু না খাবার এনেছি খেয়ে নাও
–খাবো না আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর চাই
–সব প্রশ্নের উত্তর দিবো আগে খেয়ে নাও আমিও ফ্রেশ হয়ে নেই
–হুম

তাসিন ফ্রেশ হতে চলে গেলো, আমি খাবার মুখে দিচ্ছি কিন্তু গলা দিয়ে যাচ্ছে না, শুধু মনে পরছে কি আছে এই বাংলোতে তাসিন কেন বললো আমার কিছু মনে পরেছে কিনা তাহলে কি আমিই তাসিনের সেই পিচ্ছি বউ কিন্তু আমার তো ছোটবেলার কথা কিছুই মনে পরছে না
–অন্নি তুমি তো কিছুই খাওনি
–খেতে ইচ্ছে করছে না
–টেনশন হচ্ছে
–হুম বলনা তোমার বলা কথা গুলোর মানে কি
–আগে আমার সাথে চলো
–কোথায়
–পাশের রুমে

তাসিনের পিছু পিছু গেলাম একটি রুমে তালা দেওয়া তাসিন তালাটা খুলে ভিতরে ঢুকলো আমিও ওর পিছু পিছু রুমের ভিতরে ঢুকলাম, তাসিন রুমে লাইট জ্বালাতেই চমকে উঠলাম পুরু রুমের দেয়াল জোরে শুধু ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, একটি ছবিতে তাসিনের পুরু পরিবার আর একটি ছবিতে আব্বু আম্মু আর আমি, অনেক গুলো ছবিতে আব্বু আর তাসিনের আব্বু আর সবচেয়ে বেশি গুলোতে তাসিন আর আমার ছোটবেলার ছবি, কোনও ছবিতে তাসিন আমাকে দৌড়াচ্ছে কোনোটিতে তাসিন বর সাঝে আমি বউ সাঝে খেলা করছি এমন অনেক ছবি, তাসিনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে থাকালাম ও আস্তে করে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বললো অন্নি তুমিই আমার সেই পিচ্ছি বউ আশরাফ আঙ্কেলের মেয়ে….

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৯

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে দারোয়ানের চেঁচামেচি তে সবার ঘুম ভাঙ্গলো, রাতে তিথি আর আমি কখন যে মা আর ভাবির পাশে ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝতেই পারিনি, সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ির বাইরে গেলাম দারোয়ান পরী কে কোলে করে নিয়ে আসছে, ভাবি দৌড়ে গিয়ে পরী কে কোলে নিল পরী অজ্ঞান হয়ে আছে, তিথি পানি এনে পরীর উপরে ছিটিয়ে দিতেই পরী চোখ খুলে তাকালো, আমি রুমে এসে তাসিন কে ফোন দিলাম
–অন্নি বল
–পরী কে পাওয়া গেছে
–হ্যা জানি তো পরী ফিরে আসবে এজন্য তোমাকে এতো খুশি হতে হবে না
–মানে
–কিছুনা সবাইকে নিয়ে হসপিটালে চলে আসো
–হুম

কিছুই মাথায় ঢুকছে না পরীর জন্য তাসিনের একটুও চিন্তা ছিল না পরী কে পাওয়া গেছে তাও তাসিন খুশি না তাহলে কি ও জানতো পরী কে যে আমি কিডন্যাপ করিয়েছিলাম….?

সবাইকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, গাড়িতে বসে বসে ভাবছি এখন কি কাজ করবো যে কাজে সবাই আবার কাঁদবে, হঠাৎ মাথায় আসলো তাসিন হানিমোনে যেতে চাইছে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে যেখানেই যাই তাসিন কে কষ্ট দিব আর এই কষ্টটা হবে অনেক বড় যার আগাত সহ্য করতে গিয়ে সবাই কাঁদবে

হসপিটালে চলে এসেছি বাবার রুমে একসাথে অনেক মানুষ যেতে দেয়না তাই পরী কে আসিফ ভাইয়া বাবার রুমে নিয়ে গেলো, আমরা সবাই বাইরে অপেক্ষা করছি, তাসিন বার বার আমার দিকে থাকাচ্ছে আর হাসছে বিষয়টা কেমন যেন লাগছে সত্যিই কি ও সব বুঝে গেছে
–অন্নি
–হুম
–ঠিক করেছ
–কি
–আমরা হানিমোনে কোথায় যাবো
–না
–ঠিক আছে আমিই বলছি আমরা সমুদ্র বা পাহাড়ি অঞ্চলে যাই তোমার জন্য সুবিধা হবে
–আমার সুবিধা হবে মানে
–না কিছুনা
–(কি বলছে তাসিন এসব মাথায় কিছুই ঢুকছে না)
–কি ভাবছ
–কিছুনা
–হানিমোনে অন্য কোথাও না গিয়ে চলো আমাদের বাংলো তে ঘুরে আসি আমার কিছু স্মৃতি জমানো আছে ওখানে তোমাকে দেখাবো
–হুম
–তাহলে আমরা এক সপ্তাহ পর যাচ্ছি
–(তোর হানিমোন করার সখ মিটাবো একবার যাই বাংলোতে)

পরী কে পেয়ে বাবা আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ হয়েছেন তাই বিকেলবেলা বাবা কে রিলিজ করে দেওয়া হলো, বাবা কে নিয়ে সবাই বাসায় ফিরে আসলাম

রাতের খাবার খেয়ে এসে সোফায় বসে বসে গেমস খেলছি হঠাৎ তাসিন ভাবি কে সাথে নিয়ে রুমে ঢুকলো বুঝলাম না ভাবি কে নিয়ে আসলো কেন
তাসিন: ভাবি অন্নি কে জিজ্ঞেস করো ও আমার সাথে এমন করছে কেন (হায় আল্লাহ্‌ ভাবি কে সব বলে দিল নাকি, তাসিন যদি পরীর কথা বুঝেই থাকে ভাবি কে বললে তো আমি অনেক ছোট হয়ে যাবো)
ভাবি: কিরে অরনী কি হয়েছে
আমি: কই কি আমি আবার কি করলাম (ভয়ে তো আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে)
তাসিন: এতো ভয় পাচ্ছ কেন
ভাবি: তাসিন কে ইগনোর করছ কেন দুজন আলাদা ঘুমাও কেন
আমি: ও কি শুধু এগুলো বলেছে তোমাকে
ভাবি: হ্যা আর কি বলবে আরো কিছু করেছ নাকি
তাসিন: না ভাবি এইগুলাই
ভাবি: সব মান অভিমান ভুলে দুজন এক খাটে ঘুমাও আমার তো ইচ্ছে হচ্ছে চাঁচিআম্মু হতে (ভাবি এসব বলে হাসতেছে রাগে তো ইচ্ছে হচ্ছে তাসিন কে খুন করি)
তাসিন: ভাবি আমার মনে হয় আমরা হানিমোনে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে
ভাবি: তাহলে যা আমি বাবা কে বলবো
তাসিন: ভাবি আমি আমাদের বাংলো তে যেতে চাই
ভাবি: পাগল হয়েছিস ওখানে কেন যাবি শুধু শুধু নিজের কষ্ট বাড়াতে
তাসিন: না ভাবি এখন তো অরনী পাশে আছে আর কষ্ট হবে না
ভাবি: ঠিক আছে

ভাবি চলে গেলো আমি ভাবছি বাংলোতে কি এমন আছে যে তাসিন হানিমোনে ওখানে যেতে চাইছে আর ভাবি না করলো কেন, বাংলোতে গেলে তাসিনের কষ্ট বাড়বে মানে কি
–অন্নি কি ভাবছ
–কিছুনা
–বাংলোতে গেলে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে
–(অবাক হয়ে ওর দিকে থাকালাম)
–হ্যা অন্নি এই বাংলোতে অনেক কিছু আছে যা থেকে তোমার অজানা অনেক কিছুই জানবে
–কি আছে
–বললাম তো বাংলোতে গিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর পাবে এখন ঘুমাতে আস
–আমি সোফায় ঘুমাব
–অন্নি প্লিজ আমার বুকে ঘুমাও
–ইচ্ছে নেই
–হ্যা এখন তো ইচ্ছে থাকবেই না একদিন তুমি আমার বুকে ঘুমানোর জন্য ঠিক কাঁদবে সেদিন আমি বলবো তোমাকে বুকে নেওয়ার ইচ্ছে নেই
ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে শুয়ে পরলাম, বাংলোতে কি আছে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম

সকালে মুখে পানির ঝটকায় ঘুম ভাঙ্গলো চোখ খুলে দেখি তাসিন হাসছে রাগে উঠে ওর গলা চেপে ধরলাম
–এই অন্নি মরে যাবো তো
–পানি দিলা কেন
–একটু পর রওনা দিতে হবে তুমি এখনো ঘুমাচ্ছ তাই ঘুম ভাঙ্গালাম
–রওনা দিতে হবে মানে
–ভুলে গিয়েছ বাংলোতে যাবার কথা
–আজকেই
–হ্যা আমি দেরি করতে চাই না তোমার সবকিছু জানা প্রয়োজন রেডি হয়ে নাও
–আচ্ছা তুমি কি বলছ আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না আমার কি জানা প্রয়োজন
–তুমি তোমার ছোটবেলার স্মৃতি ভুলে গিয়েছ আমি ভুলিনি অন্নি আমি চাই তুমি আবার সবকিছু মনে করে আগের অন্নি হয়ে যাও
–আগের অন্নি মানে
–তুমি কি বাসাতেই সময় নষ্ট করে ফেলবে আমাদের তো যেতে হবে যাও রেডি হয়ে নাও
–হুম

রেডি হচ্ছি আর তাসিনের বলা কথা গুলো ভাবছি কি বলছে তাসিন এসব, বাংলোতে কি আছে আর সবকিছু আমার জানা প্রয়োজন মানে কি মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না

রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে তাসিন আর আমি বেরিয়ে পরলাম, তাসিন ড্রাইভ করছে আর আমি বাইরে তাকিয়ে ভাবছি তাসিন আমাকে কি জানাতে চায় যে বাংলোতে নিয়ে যাচ্ছে, আগের অন্নি হয়ে যাও বলে তাসিন কি বুঝাতে চাইছে তাহলে কি তাসিন আমাকে আগে থেকে ছিনে…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৮

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

আয়নার সামনে বসে গুনগুন করে গান গাইছি আর গহনা খুলছি হঠাৎ তিথি দৌড়ে আসলো
–ভাবি পরী কি তোমার কাছে
–না কেন
–পরী কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না (বলেই কেঁদে দিলো খুব খারাপ লাগছে কেন করলাম আমি এমন আমারই বা কি করার আছে মা বাবার খুনের বদলে খুন করা উচিত ছিল এইসব তো কমই করছি)

নিচে এসে দেখি তাসিন আর আসিফ ভাইয়া বাদে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে কাঁদছে, আমি ভাবির কাছে যেতেই আমাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল কি বলবো কি বলে শান্তনা দিব খুঁজে পাচ্ছি না কারন অপরাধী যে আমি

রাত দশটা বাজে তাসিন আর আসিফ ভাইয়া এখনো বাইরে খুঁজছে ভাবি কাঁদতে কাঁদতে বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে ইচ্ছে হচ্ছে পরী কে এখনি এনে দেই কিন্তু এইটা করলে যে ওদের কষ্ট দেওয়া হবে না

পুলিশে রিপোর্ট করা হয়েছে তারা তদন্ত করছে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না জানি পাবেও না কারন পরী চাচ্চুর বাসায় আছে, সারা রাত কেউ ঘুমায়নি সবাই কাঁদতে কাঁদতেই রাত কাটিয়ে দিলো

ভোরের দিকে চারদিকে যখন অন্ধকার কেটে আলো ফুটতে শুরু করেছে তখন হঠাৎ দারোয়ান দৌড়ে এসে হাপাতে শুরু করলো, দারোয়ানের হাতের দিকে থাকিয়ে সবাই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো, পরীর পরনে যে জামা ছিল সেইটা রক্তাক্ত অবস্থায় দারোয়ানের হাতে তাহলে কি চাচ্চু পরী কে মেরে ফেললো, না না তা হবে কেন আমার অনুমতি ছাড়া তো চাচ্চু পরীর গায়ে একটি টোকাও দিবে না আর চাচ্চু তো এমন না,বাবা দৌড়ে গিয়ে দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলেন
–এইটা কোথায় পেয়েছ
–গেইট খুলে বাইরে যাচ্ছিলাম হঠাৎ দেখি পরী মামুনির জামা গেইটের সামনে ফেলে রাখা (কথাটা শুনেই বাবা বুকে হাত দিলেন তারপর মাটিতে লুটিয়ে পরলেন)

বাবা হার্ট এট্যাক করেছেন তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করে তাসিন আর ভাইয়া বাবা কে নিয়ে হসপিটালে চলে গেলো, বাড়িতে কান্নার রুল পরে গেলো সবাই কাঁদছে একদিকে পরী কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না অন্য দিকে বাবা হার্ট এট্যাক করেছেন আচ্ছা আমি কি অন্যায় করলাম নাকি কথাটা ভাবতে ভাবতে মায়ের দিকে থাকালাম উনি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পরে গেছেন, তাড়াতাড়ি ধরে উনার রুমে নিয়ে গেলাম মাথায় পানি দিলাম অনেক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলো

মা এখন একটু সুস্থ, তিথি কে মায়ের পাশে বসিয়ে দৌড়ে রুমে এসে চাচ্চু কে ফোন দিলাম
–চাচ্চু
–কিরে এভাবে হাপাচ্ছিস কেন
–পরী কোথায়
–এইতো এখানেই পুতুল নিয়ে খেলা করছে
–তাহলে সকালে যে পরীর জামা…
–ওইটা তো পাঠিয়েছি আফজাল চৌধুরী কে কষ্ট দেওয়ার জন্য
–চাচ্চু উনি হার্ট এট্যাক করেছেন
–এটাই তো আমি চেয়েছিলাম
–কিন্তু
–দেখ অরনী তোর যে মন এই মন নিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া যায় না শক্ত হ মা তোর বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নে
–হুম

ফোন রেখে চুপ করে ভাবছি
আমি যে এসব করছি সেগুলো কি অন্যায়….?
তাহলে আফজাল চৌধুরী যে আমার বাবা মা কে খুন করলো সেটা কি অন্যায় না….?
আমি তো কাউকে খুন করিনি শুধু ওদের তিলেতিলে কষ্ট দিচ্ছি তাহলে আমার কাজ গুলো অন্যায় হবে কেন….?
হ্যা আমি উনাকে পুলিশে দিতে পারতাম কিন্তু লাভ হতো না কারন উপযুক্ত প্রমান আমার হাতে নেই উনি ঠিক টাকার জোরে বেরিয়ে আসতেন তখন কি আমার বাবা মায়ের খুনের শাস্তি উনি পেতেন….?
আমি যা করছি তা তো খুব কম তাহলে অন্যায় হবে কেন….?
সবকিছু ভেবে মন স্থির করলাম আমি আমার বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিবই তাতে যা করা লাগে করবো প্রয়োজন হলে ওদের সাথে নিজেকেও শেষ করে দিবো

হসপিটাল থেকে তাসিন ফোন করে জানালো বাবা এখন একটু সুস্থ কিন্তু ডক্টর বলেছে বাবা কে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলতে হলে পরী কে উনার কাছে এনে দিতে হবে, এখন আমি কি করবো পরী কে ফিরিয়ে আনবো নাকি আর দুদিন রেখে দিবো কিন্তু বাবা যদি মারা যান, আমি তো এইটা চাই না আমি চাই ওরা কষ্ট পেয়ে তিলেতিলে শেষ হয়ে যাক
–ভাবি
–হ্যা তিথি বল
–মা তো শুধু কান্না করছে এভাবে চলতে থাকলে মা আরো অসুস্থ হয়ে পরবে ভাবির অবস্থাও ভালো না
–এক কাজ করো দুজন কে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পারিয়ে রাখো
–ঠিক বলেছ ভাবি
–হুম যাও

নাহ আর পারছি না চেয়েছিলাম ওদের শাস্তি দিতে এখন দেখি তিন তিনটা মানুষ মারা যাবে, যতোটুকু শাস্তি পেয়েছে ততোটুকুই থাক অন্য উপায়ে নাহয় আবার দিব এখন পরী কে এনে দেই, চাচ্চু কে ফোন দিলাম
–চাচ্চু পরী কে পাঠিয়ে দাও
–কি বলছিস
–হ্যা যা বলছি তা করো
–কিন্তু কেন
–পরীর মা তো এই বাড়ির বউ উনার তো কোনো দোষ নেই উনি কেন শুধু শুধু কষ্ট পাবে
–হুম
–জামাটা যেভাবে রেখেছিলে ভোরবেলা ঠিক সেভাবে পরী কে রেখে যাবা কিন্তু অজ্ঞান অবস্থায়
–ঠিক আছে

এছাড়া আর কিছু করার নেই আমি আমার বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে পরী কে মা হারা করতে পারবো না, ভাবির যা অবস্থা আর দুদিন গেলে মারা যাবে আর বাবা মায়ের তো অবস্থা আরো বেশি খারাপ, ফোনে রিংটোন বাজছে তাসিন ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–কি করছ
–কিছুনা বাবার অবস্থা এখন কেমন
–সেটা জেনে তুমি কি করবে
–মানে (তাসিন কি কিছু বুঝে ফেললো নাকি)
–না কিছু না বাবা ভালো আছে একটা কথা বলার জন্য তোমাকে ফোন দিয়েছি
–কি কথা
–ভাবছি হানিমোনে যাবো
–কি
–অবাক হচ্ছ কেন
–পরিবারের এমন অবস্থায় তুমি হানিমোনের কথা ভাবছ
–সব ঠিক হয়ে যাবে পরী ফিরে আসবে তুমি ভয় পেয়ো না
–কিন্তু আমি হানিমোনে যাচ্ছি না
–অন্নি দেখো আমাদের মধ্যে যা মান অভিমান চলছে হানিমোনে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে
–আর একবার যদি হানিমোনের কথা বলেছ তো আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো
–সেটা তুমি পারবে না
–কেন
–আমি যেতে দিব না তাই
–তাসিন তুমি কিন্তু বেশি করছ
–মোটেও না তুমি বেশি করছ আর হ্যা আমরা হানিমোনে যাচ্ছি এটাই ফাইনাল এখন তুমি শুধু ঠিক করো কোথায় যাবে (বলেই ফোন কেটে দিলো)

তাসিন এভাবে কথা বলছিল কেন তাহলে কি ও কিছু বুঝতে পেরেছে কিন্তু বুঝবে কিভাবে আমি তো চাচ্চুর সাথে খুব সাবধানে কথা বলি……

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৭

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

আজ আমাদের বৌভাত আমাকে পার্লার থেকে সাঝিয়ে আনা হয়েছে চারদিকে অনেক মেহমান কিন্তু আমার মন একটু একা থাকতে চাইছে তাই ছাদে চলে আসলাম, ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে থাকিয়ে আছি আর ভাবছি আজ আম্মু আব্বু বেঁচে থাকলে কি আমার জীবনটা এমন হতো, তাসিন কে বিয়ে করেই হয়তো আমি সুখে থাকতাম, আজ বৌভাতের দিনে এমন মন খারাপ থাকতো না আমিও হতাম পৃথিবীর সুখি মানুষদের মধ্যে একজন, ফোন বেজে উঠলো স্কিনে থাকিয়ে দেখি ছোট মা রিসিভ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না, করলেই তো প্রতিশোধ নিতে বলবে তাসিন কে কষ্ট দিতে বলবে কিন্তু ছোট মা কে কিভাবে বুঝাই তাসিন কে কষ্ট দিতে এখন আমার কষ্ট হয়, জানিনা কেন এমন হয় খুব বেশিই কষ্ট হয়, ফোন বাজতে বাজতে কেটে গেলো, একটু পর আবার বেজে উঠলো রিসিভ করলাম
–হ্যা ছোট মা বলো
–ফোন রিসিভ করছিস না কেন
–অনুষ্ঠানে আছি তো
–তোর কি মন খারাপ
–হ্যা একটু
–কেন
–আব্বু আম্মুর কথা মনে পরছে
–মনে পড়াটাই ভালো মনে পড়লেই তো প্রতিশোধ নিতে পারবি
–হুম
–শোন যে কথা বলতে ফোন দিয়েছি
–বলো
–চৌধুরী পরিবারের একটি নিয়ম আছে বৌভাতে স্ত্রী যা চায় স্বামী তাই দেয় তাসিন যখন তোকে বলবে কি চাস তখন বলবি বাড়িটা তোর নামে লিখে দিতে
–মানে বলো কি তাহলে তো তাসিন আমাকে লোভী ভাববে
–শোন এতো ভালো হয়ে প্রতিশোধ নেওয়া যায় না আর এই বাড়িতে তোরও অধিকার আছে এই বাড়ি তোর বাবা আর তাসিনের বাবা দুজন মিলে তৈরী করেছিল আর এখন তাসিনের বাবা একা দখল করে আছে
–তাই বলে…
–যা বলেছি তাই করবি শুধু বাড়ি না আস্তে আস্তে তোর সবকিছু তোর নামে লিখিয়ে নিবি
–আমার সবকিছু মানে
–তোকে বলা হয়নি তোর বাবা এই বাড়ির অর্ধেক, সিলেটে একটি বাংলো, আর দুইটা কম্পানি তোর নামে লিখে দিয়ে গিয়েছিল, তোর বাবা যখন খুন হয় তুই তখন ছোট তাই তাসিনের বাবা চালাকি করে সবকিছু উনার নামে করে নিয়েছে, এখন তুই বল তোর সবকিছু কি তুই ফিরিয়ে আনবি না
–আমার এসব সম্পত্তি চাই না আমি শুধু আমার আব্বু আম্মুর খুনের প্রতিশোধ নিতে চাই
–তোর তো ভবিষ্যৎ আছে তাই এসব তোকে ফিরিয়ে আনতে হবে
–হুম
–আমি যা যা বলি তাই তাই করবি মনে রাখিস আমি তোর ছোট মা আর মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না
–ঠিক আছে
–এখন ফোন রেখে অনুষ্ঠানে যা সবার সাথে ভালো ব্যবহার কর
–আচ্ছা রাখি

ফোন রেখে ফিছন ফিরতেই দেখি তাসিন দাঁড়ানো খুব ভয় পেয়ে গেলাম ও কি সব শুনে ফেললো
–তাসিননন তততুমমি
–হ্যা তোতলাচ্ছো কেন আমি কি ভূত
–না মানে কখন এলে
–এইতো এই মাত্র তোমাকে নিচে খুঁজে না পেয়ে ছাদে আসলাম
–ওহ
–চলো আমার ফ্রেন্ডসরা এসেছে তোমাকে দেখবে
–হুম
–আর হ্যা প্লিজ অন্নি এমন কিছু করো না যেন আমি ওদের কাছে ছোট হয়ে যাই
–ঠিক আছে

তাসিন ওর সব ফ্রেন্ডদের সাথে একে একে পরিচয় করিয়ে দিল, তিনটা মেয়ে ফ্রেন্ড আর চারটা ছেলে ফ্রেন্ড, সবার সাথে কথা বলছি হঠাৎ কোথা থেকে একটি ছেলে দৌড়ে এসে তাসিন কে জরিয়ে ধরলো সাথে বাকি সবাই ওদের দুজন কে জরিয়ে ধরলো আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দেখছি, তাসিন ছেলেটি কে সাথে নিয়ে আমার কাছে আসলো
–অন্নি ও আমার জানের দোস্ত সিয়াম (বুঝলাম জানের দোস্ত তাই এভাবে জরিয়ে ধরেছিল কিন্তু এই ছেলে আমার দিকে এভাবে হা করে থাকিয়ে আছে কেন আশেপাশে মশা মাছি থাকলে তো ওর মুখ দিয়ে ঢুকে অনায়াসে পেটে চলে যেতে পারতো হিহিহি)

যেদিকে যাচ্ছি সে দিকেই তাসিন এর ফ্রেন্ড সিয়াম যাচ্ছে জীবনে কোনো মেয়ে মানুষ দেখেনি নাকি আল্লাহ্‌ জানেন তাও আবার বন্ধুর বউ কে এভাবে দেখছে তাসিন দেখলে তো মেরেই ফেলবে

তাসিন কোথায় যেন গেছে আমি একা একা বাগানের দিকটায় গেলাম হঠাৎ সিয়াম এসে সামনে দাঁড়াল
–হাই ভাবি
–হাই
–আপনাকে একটি কথা না বলে শান্তি পাচ্ছি না
–কি কথা
–আপনি দেখতে খুব সুন্দর একদম পরীর মতো (হায় আল্লাহ্‌ এই ছেলের মতলব কি এসব কি বলছে)
–ভাবি চুপ হয়ে আছেন যে
–এমনি
–আপনার নাম্বারটা পেতে পারি না মানে মাঝে মাঝে একটু কথা বলবো আর কি
কিছু বলতে যাবো তখনি দেখি তাসিন এদিকে আসছে
–অন্নি আমার একটা জিনিস খুঁজে পাচ্ছি না রুমে চলো তো (এই কথা যে ও এমনি বলেছে বুঝতে পারছি তারমানে কি সিয়ামের সাথে কথা বলাতে তাসিন রাগ করেছে)

রুমে আসতেই তাসিন আমাকে ধাক্কা মেরে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো ওর চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে
–এই সিয়ামের সাথে এতো কথা কিসের
–তোমার ফ্রেন্ডই তো
–তো কি হইছে অন্য ছেলের সাথে তুমি আলাদা কথা বলবা কেন
–বেশি করে বলবো
–(ঠাস) এই তাপ্পর এর কথা মনে রেখে কথা বইলো, তোমাকে ভালোবাসি তোমার দেওয়া সব কষ্ট সহ্য করতে রাজি আছি কিন্তু কোনো ছেলের সাথে কথা বললে খুন করে ফেলবো বলেই হনহন করে চলে গেলো

তাসিন চৌধুরী আমার গালে তাপ্পর দিয়েছ এর প্রতিশোধ তো আমি নিবোই, এই সিয়ামের সাথে কথা বলেই আমি প্রতিশোধ নিবো তখন বুঝবা অরনী কে তাপ্পর দেওয়ার ফল কি ভয়ানক

সন্ধ্যা নেমে এসেছে অনুষ্ঠান প্রায় শেষ মেহমানরা চলে যাচ্ছে আমি সুযোগ বুঝে পরী কে নিয়ে বাগানের দিকে গেলাম, বাগানের পাশেই লোকটি দাঁড়িয়ে আছে ওকে ইশারা দিয়ে পরীকে বললাম একটু দাঁড়াতে আমি আসছি, মেয়েটা কে রেখে আমি সরে গেলাম আর লোকটি এসে পরীর হাতে চকলেট দিয়ে কোলে করে নিয়ে গেলো…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৬

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে তাসিনের ডাকাডাকি তে ঘুম ভাঙ্গলো
–কি হইছে এভাবে চেঁচাচ্ছ কেন
–তিথি নাস্তা করার জন্য ডাকছে আমি দরজা খুলতে পারছি না তুমি সোফায় ঘুমে দেখলে ও কি ভাববে
–যা খুশি ভাবুক তাতে আমার কি সবাই দেখুক তুমি আমাকে নিয়ে সুখে নেই
–শুনো অন্নি যা কষ্ট দেওয়ার আমাকে দাও আমার পরিবারের সবার কাছে আমার ভালোবাসা কে ছোট করো না প্লিজ বলেই নিচে চলে গেলো
উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম রুমে আসতেই দেখি কাজের বুয়া নাস্তা হাতে দাড়িয়ে আছে
–কি ব্যাপার
–স্যার কইছে আপনের শরীর ভালো না নাস্তা যেন রুমে দিয়ে যাই
–রেখে যাও
–আইচ্ছা
বুয়া নাস্তা রেখে চলে গেলো বুঝলাম না তাসিন নাস্তা রুমে পাঠালো কেন, দুর যা খুশি করুক খিদে লেগেছে খেয়ে বসে থাকি

নাস্তা করে বিছানায় বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছি তখন তিথি আসলো
–ভাবি
–হুম
–আব্বু তোমাকে ড্রয়িংরুমে যেতে বলেছেন
–কেন
–কি যেন জরুরী কথা বলবে সবাইকে নিয়ে
–তুমি যাও আসছি
কি কথা বলবে কিছু টের পেয়ে গেলো না তো, যদি টের পেয়ে যায় তাহলে তো খেলা এখানেই শেষ এসব ভাবতে ভাবতে নিচে চলে আসলাম সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি নিচে আসতেই মা ডেকে উনার পাশে আমাকে বসিয়ে দিলেন
বাবা: অরনী তোমাদের সবার সাথে একটি কথা বলার ছিল
আমি: কি কথা বাবা
বাবা: তাসিনের অসুস্থতার জন্য তো বৌভাত করা হয়নি এখন তাসিন অনেকটা সুস্থ হয়েছে তাই ভাবছি বৌভাতটা করে ফেলি (যাক বাঁচলাম আমি তো ভেবেছিলাম আমার প্লেন বুঝে পেলেছে কিন্তু এসব অনুষ্ঠান যে আমার ভালো লাগে না এখন কি বলি)
আমি: বাবা বৌভাত না করলে হয়না আমার এসব ভালো লাগে না
বাবা: কি বলছ মা সবাই কি ভাববে বল তো
তাসিন: আব্বু অন্নির কথা শুনো না তো তুমি আগামীকাল বৌভাতের আয়োজন কর
বাবা: ঠিক আছে
(আমার কথা না শুনে তুমি বৌভাতের আয়োজন করতে বলেছ তাসিন চৌধুরী এইটার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে)

সবার সাথে ড্রয়িংরুমে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রুমে চলে আসলাম, বিছানায় শুয়ে আছি আর ভাবছি বৌভাতের অনুষ্ঠান যখন হবেই তখন এই সুযোগ কাজে লাগাতে হয়, অনুষ্ঠান এর ভীড়ে সবাই ব্যাস্ত থাকবে পরী কে তখন-ই কিডন্যাপ করাতে হবে এইটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ, তাসিন রুমে নেই তাড়াতাড়ি চাচ্চুকে ফোন দিলাম
–হ্যালো চাচ্চু
–হ্যা বল
–সময় নেই যা বলি মন দিয়ে শুনো
–বল
–তুমি তো আসতে পারবা না একজন চালাক লোক ভাড়া করো যেন সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পরী কে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে পারে আর আমি তো এখানে আছিই লোকটার একটি ছবি আমাকে ইমেইল করবে আমি ওকে সাহায্য করবো আর হ্যা পরী দুদিন তোমাদের কাছে থাকবে খবরদার ওকে কষ্ট দিবা না সবসময় হাসিখুশি রাখবা
–ঠিক আছে
–বৌভাত হবে আগামীকাল সেখান থেকেই সন্ধ্যার সময় পরী কে কিডন্যাপ করতে হবে আর হ্যা খুব সাবধানে ওরা কিন্তু পুলিশের কাছে যাবে পুলিশ যেন কোনো ভাবেই পরী কে উদ্ধার করতে না পারে
–ওকে

ফোন রেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম যাক কাজটা এখন ভালো ভাবে হলেই হয় চৌধুরী পরিবারে অশান্তি নেমে আসবে আর আমার মনে আসবে শান্তি পরম শান্তি

সারা বাড়িতে অনুষ্ঠানের কাজ চলছে চারদিক একটু ঘুরেফিরে দেখলাম তারপর পরীর রুমের দিকে গেলাম এই একদিনে একটু ফ্রি হয়ে নেই, রুমে গিয়ে দেখি পরী বিছানায় পুতুল নিয়ে খেলা করছে
–পরী আম্মু কি করছ
–খেলছি আপনাকে আমি কি বলে ডাকবো
–ছোট আম্মু বলে ডাকবা আর তুমি করে বলবা
–তুমি খুব ভালো আম্মু
–শুধু আম্মু না আমি তোমার বন্ধুও
–তাহলে চলো আমরা দুজন খেলা করি
–ঠিক আছে
যাক এই পিচ্ছিটার সাথে তো ফ্রি হয়ে গেলাম এখন কাজটা অনেক সহজ হবে

পরীর সাথে অনেক্ষণ খেলা করে রুমে আসলাম তাসিন বিছানায় বসে আছে খুব চিন্তিত লাগছে, সে যাই হউক আমার কি আমি বিছানার এক পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম
–অন্নি কোথায় ছিলে
–পরীর কাছে
–হুম
–কেন সন্দেহ হচ্ছে
–মানে
–কিছু না শুধু এইটুকু জেনে রাখো এতো তাড়াতাড়ি যাবো না ভয় পেয়ো না
–অন্নি কেন করছ এমন কি লাভ হচ্ছে তোমার
–(লাভ একটাই আমার মনে শান্তি পাই, এখন তো কমই করছি আস্তে আস্তে সবার উপর আমার অত্যাচার বেড়ে যাবে তখন বুঝবা)
–কি হলো কথা বলছ না কেন কি ভাবছ
–কিছুনা কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না
–হুম

রাতে চাচ্চু একজন লোকের ছবি পাঠালো বুঝলাম এই লোক পরী কে কিডন্যাপ করবে, খুব কান্না পাচ্ছে আমি তো এতো খারাপ না যে পরীর মতো পিচ্ছি একটি মেয়ে কে কিডন্যাপ করাবো কিন্তু নিয়তি যে আমাকে খারাপ বানিয়ে দিয়েছে, আমাকে যে প্রতিশোধ নিতেই হবে নাহলে যে আব্বু আম্মুর আত্মা শান্তি পাবে নাহ, খুব অসহ্য লাগছে চোখ থেকে পানি ঝরছে আমি তো এসব চাইনি প্রত্যেক মেয়ের মতো আমিও স্বপ্ন দেখতাম কাউকে ভালোবাসবো সংসার করবো সবাইকে নিয়ে কিন্তু নিয়তি আমাকে এমন জায়গায় এনে দাড় করিয়েছে সব স্বপ্ন মাটি চাপা দিয়ে প্রতিশোধের আগুন জ্বালাতে হয়েছে মনে আর এখন সেই প্রতিশোধ নিতে হচ্ছে, তাও এসবের মাঝে আমি একটু ভালো থাকার চেষ্টা করি কিন্তু মনে একটু শান্তি আনতে চাইলেও মনে পরে যায় আমি আমার আব্বু আম্মুর খুনির বাড়িতে আছি এই খুনিদের সাথে একসাথে থাকছি খাবার খাচ্ছি উফফফ এসব মনে পরলে খুব যন্ত্রণা হয়, কেন আফজাল চৌধুরী সামান্য সম্পত্তির লোভে আব্বু আম্মুকে খুন করলো আমাকে এতিম করলো……

চলবে?

(রহস্য বের হলো এবার সবাই খুশি☺)

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৫

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

ডক্টর: উনার এতো ঠান্ডা লাগলো কিভাবে অনেকটা তো কমে গিয়েছিল উনার ওয়াইফ কোথায় (রাগে গা জ্বলতেছে ওর ঠান্ডা লাগলে আমি কি করবো ওদের কথায় বুঝা যায় আমার সারা রাত ওকে পাহারা দেওয়া উচিত ছিল যত্তোসব)
নার্স: উনার ওয়াইফ কে এসে ঘুমে পেয়েছি সারা রাত জেগে হয়তো ঘুমিয়েছে মাত্র (যাক নার্সটা বাঁচিয়ে দিলো)
ডক্টর: চৌধুরী সাহেব কে জবাব দিব কি এখন
উফফফ আহ্লাদে বাঁচি না চৌধুরী সাহেব কে জবাব দিবো কি এখন ডং যত্তোসব
রুম থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় আসতেই দেখি মা বাবা দৌড়ে আসছেন দূর তাদের এখন কি বলবো বুঝতে তো দেওয়া যাবে না আমি যে এসি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম বুঝলে আমার প্রতিশোধ নেওয়া হবে না খেলা এখানেই শেষ হয়ে যাবে
মা: বউমা আমার তাসিনের কি হয়েছে
আমি: মা শান্ত হন তেমন কিছু হয়নি
বাবা: ডক্টর যে বললো জ্বর অনেক বেড়ে গিয়েছে
আমি: হ্যা সামান্য বেড়েছে ডক্টর দেখছে আপনারা শান্ত হন
মা: আমার ছেলেটার যে কি হলো (কাঁদছেন আর এসব বলছেন মনে হচ্ছে উনার ছেলে মারা গেছে উফফফ কবে যে আমি প্রতিশোধ নিয়ে এই আজব মানুষদের কাছ থেকে দূরে যেতে পারবো)

ডক্টর কেবিন থেকে বেড়িয়ে এসে বললো আমরা যেন ভিতরে যাই, ভিতরে যেতেই দেখি তাসিন আমাদের দিকে থাকিয়ে আছে
মা: তাসিন বাবা তোর কষ্ট হচ্ছে খুব
তাসিন: তেমন কিছু হয়নি তো তুমি শান্ত হও
বাবা: রাতে তো অনেক কম ছিল হঠাৎ বাড়লো কিভাবে
তাসিন: ভোরের দিকে একটু ঠান্ডা পড়েছিল তাই হয়তো
মা: বউমা কোথায় ছিল
তাসিন: সারা রাত আমার পাশে বসেছিল ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে তাই আর ডাকিনি (বার বার কেন তাসিন আমাকে ভালো সাঝিয়ে দিচ্ছে বুঝতেছি না ওর তো আমার উপর রাগ করার কথা ও আমায় এতো ভালোবাসে কেন)

বারান্দায় দাড়িয়ে আছি হঠাৎ তাসিন ডাক দিল
–অন্নি
–হুম
–খাইয়ে দাও তো তোমার হাতে খেতে ইচ্ছে হচ্ছে (এখন ইচ্ছে হচ্ছে খুন করে ফেলি কিন্তু মা বাবা সামনে তাই কিছু বলতেও পারলাম না লক্ষী মেয়ের মতো খাইয়ে দিতে শুরু করলাম)
মা: কিরে তাসিন তোর চোখে পানি কেন (উনার কথা শুনে তাসিনের দিকে থাকালাম আমার দিকে থাকিয়ে আছে আর ওর চোখে পানি)
তাসিন: জ্বর তো তাই একটু কষ্ট হচ্ছে (মিথ্যে বললো আসলে তো কাঁদছে আমার বদলে যাওয়া দেখে)
তাসিন কে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাওয়ালাম তারপর ওর মাথার পাশে গিয়ে বসলাম, মা বাবা সামনে তাই এতো লক্ষী মেয়ে সাঝলাম নাহলে তো এতোক্ষণে আরো কষ্ট দিয়ে ফেলতাম

ডক্টর এসে বললো তাসিন কে বিকেলে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো যাক শান্তি পেলাম এই হসপিটালে থেকে রাত জাগতে হবে না তো

সন্ধ্যায় তাসিন কে নিয়ে সবাই বাসায় চলে আসলাম, তাসিন শুয়ে আছে আর আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছি এর থেকে বেশি কষ্ট ওদের কিভাবে দেওয়া যায় তখনি ফোন বেজে উঠলো চাচ্চুর ফোন, রিসিভ করলাম
–চাচ্চু
–হ্যা মা কেমন আছিস
–শত্রুর বাড়িতে যেমন থাকা যায়
–একটু কষ্ট কর মা নাহলে যে প্রতিশোধ নিতে পারবি না
–চাচ্চু একটু বুদ্ধি দাও তো কিভাবে তাসিন কে বেশি কষ্ট দেওয়া যায় আমি না ভেবে পাচ্ছি না
–আরে এইটা কোনো ব্যাপার হলো চৌধুরী কে কাঁদাতে তাসিন কে বেশি কষ্ট দিতে হবে না একটু একটু করে কষ্ট দিবি আর চৌধুরী একটু একটু করে শেষ হয়ে যাবে
–ঠিক আছে আর হ্যা চাচ্চু আরেকটা বিষয় নিয়ে তোমার সাথে কথা বলা প্রয়োজন আমি সুযোগ পেয়ে ফোন দিব
–ঠিক আছে মা রাখি
–ওকে

ফোন রেখে ভাবছি পরী কে কিডন্যাপ করা নিয়ে চাচ্চুর সাথে কথা বলবো, উহু কোনো টাকা চাইবো না শুধু দুইটা দিন পরী কে চাচ্চুর বাসায় রেখে দিব তাহলেই চৌধুরী পরিবারের সবাই বড়সড় একটা ধাক্কা খাবে

আজকে আর তাসিন কে জ্বালাই না খাটে ঘুমিয়ে গেছে যখন থাকুক আমি সোফায় ঘুমিয়ে থাকি, সোফায় এসে শুয়ে পরলাম
–অন্নি
–হুম
–এই সন্ধ্যার সময় ঘুমাচ্ছ কেন
–ঘুম পাচ্ছে তাই
–খাবে না
–না আমার খিদে নেই
–আমার সাথে এমন কেন করছ অন্নি কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছ
–এতোই যদি কষ্ট পাও তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দাও
–চুপ কর অন্নি তুমি আমাকে যতো খুশি কষ্ট দাও কিন্তু ডিভোর্স এর কথা কখনো বলোনা
আর কিছু না বলে শুয়ে রইলাম, তাসিন ডিভোর্স চায়না তারমানে আমি নিজে থেকে ডিভোর্স দিলে তাসিন কষ্ট পাবে শুধু কষ্ট না অনেক বেশি কষ্ট পাবে কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যে আমি ডিভোর্স দিতে পারবো না, আগে তো আমার প্রতিশোধ নেই মনের জ্বালা মিঠাই তারপর নাহয় ডিভোর্স এর কথা ভাববো

মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি লাইট জ্বালানো তাসিন টেবিলে বসে কি যেন লিখছে আর চোখের পানি মুচ্ছে, চোখ বন্ধ করে ফেললাম তাসিন কে কষ্ট দেই ঠিকি কিন্তু পরে নিজের কাছেই খারাপ লাগে জানিনা কেন এমন হয়, এখন ও কাঁদছে দেখলে হয়তো মায়ায় পরে যাবো, মায়া জিনিসটা খুব খারাপ একবার কারো প্রতি মায়া জন্মালে সে মায়া কাটিয়ে উঠা খুব কষ্টকর, তাসিনের প্রতি মায়া জন্মালে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না আম্মু আব্বু কে অপমান করা হবে চাচ্চু ছোট মা কষ্ট পাবে, নাহ আমার মনের মধ্যে তাসিনের জন্য মায়া জন্মাতে দেওয়া যাবে না এতে যদি তাসিনের থেকে দূরে থেকে প্রতিশোধ নিতে হয় তাহলে আমি সেটাই করবো, তাসিন আমাকে ওর নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে আমি দূরে থাকলে ও তিলেতিলে শেষ হয়ে যাবে আর ওর শেষ হয়ে যাওয়া দেখে চৌধুরী পরিবারের সবাই তিলেতিলে শেষ হবে, আমি তো চাই সবাই কে তিলেতিলে শেষ করে দিতে এই চৌধুরী মঞ্জিল এর নাম মুছে দিতে……

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৪

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিন কে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো মা বাবা আর তাসিনের বড় ভাই আসিফ গেলেন সাথে, বাড়ির সবাই ড্রইংরুমে চিন্তিত মুখে বসে আছে আমার তো দেখতে বেশ মজা লাগছে, কিন্তু আমি যে আনন্দ পাচ্ছি সেটা তো প্রকাশ করা যাবে না বরং আমাকে এমন অভিনয় করতে হবে যে সবার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি আমি কারন আমি তাসিন কে ভালবেসে বিয়ে করেছি আর বিয়েরও মাত্র দুদিন হলো, সবকিছু ভেবে আমিও চিন্তিত মুখে ড্রয়িংরুমের ফ্লোরে বসে আছি আর কান্না করার মিথ্যে নাটক করছি, প্রতিশোধ নিতে হলে তো এইটুকু নাটক করতেই হবে আমাকে

ঘরির কাটাতে রাত নয়টা বাজে হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো, তাসিনের নাম্বার থেকে ফোন এসেছে কি দিলো তাসিন….? তাহলে কি তাসিন সুস্থ হয়ে গেছে কিন্তু ও এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাক সেটা তো আমি চাইনা, ফোনটা রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–অরনী মা তাসিনের জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর থেকে শুধু তোমাকে দেখতে চাইছে আসিফ কে পাঠিয়েছি তুমি ওর সাথে হসপিটালে চলে এসো
–ঠিক আছে
পরলাম আরেক জ্বালায় শাশুড়ি মা ফোন করে বলেছে না গেলেও প্রব্লেম হবে কি যে করি ওদের উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তো দেখি আমি নিজেই শেষ হয়ে যাবো, হসপিটালে যাওয়া মানেই তো সারা রাত জেগে থেকে তাসিনের সেবা করা যারা আমার শত্রু তাদের ছেলে কে সেবা করবো আমি ইম্পসিবল, আজ এমন সেবা করবো আমি তাসিন আর কখনো আমাকে পাশে রাখতে চাইবে না

হসপিটালে তাসিনের পাশে বসে আছি, আমার হাত তাসিনের হাতের মুঠোয় নিয়ে ও শুয়ে আছে পাশে মা বাবা তাই কিছু বলতেও পারছি না জাস্ট অসহ্য লাগছে এসব
তাসিন: আম্মু তুমি আর আব্বু বাসায় চলে যাও অন্নি তো আমার কাছে আছেই
মা: তোকে রেখে কিভাবে….
তাসিন: আম্মু অন্নি আমাকে কতোটা ভালোবাসে তোমরা তো জানো তাহলে ওর পাশে রেখে যেতে ভয় কিসের
বাবা: ভয়ের কিছু না ও মেয়ে মানুষ হঠাৎ কিছু হলে ও একা কি করবে
তাসিন: কিছু হবে না তোমরা যাও
মা: ঠিক আছে
বুঝলাম উনারা যেতে চাচ্ছেন না কিন্তু তাসিনের জিদের কাছে হার মেনে যেতে হচ্ছে

মা বাবা চলে গেলেন, এখনো তাসিন আমার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে শুয়ে আছে আর কি এভাবে রাখা যায় এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলাম ও শুধু অভাক হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছে
–এতো অভাক হবার কিছু নেই এসব আমার ভালো লাগে না
–(মৃদু হাসল)
–হাসছ কেন
–নতুন অন্নির নতুন রূপ দেখে, আগে এই অন্নিটাই সারা দিন আমার হাত ধরে থাকতে চাইতো
–আগের অন্নি নেই পাল্টে গেছে
–হ্যা কবুল বলার সাথে সাথে আমার অন্নিটা পাল্টে গেছে
ভালো লাগছে না এসব শুনতে কেবিন থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, তাসিন আমাকে অনেক ভালোবাসে আমি জানি কিন্তু আমি তো তাসিন কে কখনো ভালোবাসিনি এতোদিন শুধু ভালোবাসার অভিনয় করেছি চৌধুরী বাড়ির ছোট বউ হয়ে আসার জন্য, ছোট বউ হয়ে তো এলাম তাসিন কে কষ্টও দিচ্ছি কিন্তু তাসিন তো দিন দিন আরো বেশি ভালোবেসে ফেলছে আমায়, আমি কি পারবো সবসময় ওর এতো ভালোবাসা কে উপেক্ষা করে সবাইকে শাস্তি দিতে আমার প্রতিশোধ নিতে
–অন্নি অন্নি (উফফফফফ তাসিন ডাকতেছে একদম ভালো লাগছে না এসব)
–কি
–আমার ওষুধটা খাইয়ে দিবে ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো
–কেন তোমার হাত নেই নিজে খেতে পারো না
–হুম খেয়ে নিবো ভেবেছিলাম আমার পাশে থাকলে আমার কষ্ট দেখে তোমার পাথর হয়ে যাওয়া মনটা হয়তো একটু নরম হবে কিন্তু এখন দেখছি আমি সম্পূর্ণ ভুল
–আমার মন পাথরের মতো নাকি নরম সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না
–খাবার রাখা আছে খেয়ে নাও
–খাবো না
–খাবারের উপর রাগ করো না অসুস্থ হয়ে পরবে
–আমার জন্য তোমাকে চিন্তা করতে হবে না
–তুমি তো আমার জন্য চিন্তা কর না আমিই নাহয় তোমার জন্য চিন্তা করলাম
–আচ্ছা তাসিন একটা কথা বলো তো তুমি কি আমাকে হসপিটালে এনেছ সারা রাত ঝগড়া করবে বলে
–না আমার অসুস্থতার সময় তুমি পাশে থাকলে আমার ভালো লাগবে তাই এনেছিলাম কিন্তু….
–কিন্তু কি
–কিছু না ঘুমিয়ে থাকো
–হসপিটালে তো এনেছ আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কোথায় ঘুমাবো আমি ফ্লোরে
–রাগের মাথায় রুমটা মনে হয় ভালো করে দেখনি
–(ওর কথা শুনে রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলালাম সোফা এসি টিভি সব আছে)
–আফজাল চৌধুরীর কলিজা আমি আমাকে কোনো ছোট হসপিটালে ভর্তি করানো হবে ভাবলে কিভাবে যাও সোফায় ঘুমিয়ে পরো আমার হাতে স্যালাইন লাগানো নাহলে আমি সোফায় ঘুমাইতাম আর তোমাকে বেডে ঘুমাতে বলতাম
(তুমি যে আফজাল চৌধুরীর কলিজা সেটা জেনেই তো তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করলাম বিয়ে করে চৌধুরী পরিবারের বউ হয়ে আসলাম তোমাকে দিয়েই যে আমি আমার প্রতিশোধ নিবো এসব ভাবতে ভাবতে সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম)

মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাসিনের দিকে থাকিয়ে দেখি ঘুমিয়ে আছে, রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলালাম তারপর এসিটা বাড়িয়ে দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, ডক্টর বা নার্স কেবিনে আসার আগেই এসি বন্ধ করে ফেলবো, হাহাহা সারা রাতের এসির ঠান্ডায় তাসিন আরো অসুস্থ হয়ে পরবে আর কষ্ট পাবে আফজাল চৌধুরী & মিসেস আফজাল

বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতটা কাটিয়ে দিলাম, নার্সরা আসার সময় হয়েছে তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে এসিটা বন্ধ করে সোফায় শুয়ে পড়লাম, একবার তাসিনের দিকে থাকালাম বেচারা জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে ঠান্ডা ভালোই লেগেছে এবার শুধু ওদের কান্না দেখার পালা, ওরা ওদের কলিজার টুকরা ছেলের কষ্ট দেখে কাঁদবে আর আমি ওদের কান্না দেখে শান্তি পাবো

সোফায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি হঠাৎ নার্সদের চেঁচামেচি শুনে উঠে বসলাম, কয়েক জন ডক্টর দৌড়ে রুমে আসলো……

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৩

1

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

সারা বাসায় শুধু চেঁচামেচি সবার মুখে একটাই কথা তাসিন অসুস্থ তাসিনের খুব জ্বর এসেছে উফফফফফ আর ভালো লাগছে না এসব চেঁচামেচি, আগে জানলে সবার এই আহ্লাদের টুকরা তাসিন কে ফ্লোরে ঘুমাতে বলতাম না এখন নিজেই শাস্তি ভোগ করছি

সবাই আমদের রুমে ভীড় করে আছে আমি আর কি করবো খাটের এক কোনে বসে রইলাম, তাসিন হয়তো বুঝতে পারছে আমার অস্বস্তি লাগছে তাই ও সবাইকে রুম থেকে বের করে দিল, যাক এতোক্ষণে একটু শান্তি পেলাম
–অন্নি সরি আমার জন্য সবাই এ রুমে এসেছে আর তুমি অস্বস্তি ফিল করেছ
–(কিছু না বলে ওর দিকে শুধু থাকিয়ে রইলাম)
–অন্নি প্লিজ আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিবে
–বল
–এমন কেন করছ আমার সাথে আমার সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছে
–(কিছু বলতে যাবো তখনি আমার ফোনটা বেজে উঠলো ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম)

–হ্যালো ছোট মা
–হ্যা মা কেমন আছিস
–আর বলো না একদম অসহ্য লাগছে এখানে
–কেন কি হয়েছে
–তাসিন কে কষ্ট দেওয়ার জন্য রাতে ফ্লোরে ঘুমাতে বলেছিলাম এখন তো ওর ঠান্ডা লেগে গেছে বাড়িতে এইটা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে জাস্ট অসহ্য লাগছে
–ওদের প্রতি প্রতিশোধ নিতে হলে এমন জামেলা তো তোর সহ্য করতেই হবে তাই না
–ভালো লাগছে না এসব ছোট মা
–একটু ধৈর্য ধর মা তুই কি হতাশ হয়ে হেরে যাবি
–না ছোট মা আমাকে হারলে হবে না প্রতিশোধ আমাকে নিতেই হবে
–এইতো আমার মেয়ের মতো কথা, এসব একটু সহ্য কর আর তুই যে এভাবে কথা বলছিস কেউ শুনে ফেলবে তো
–হ্যা এখন রাখি পরে ফোন করবো
–ঠিক আছে মা

ফোন রেখে রুমে আসতেই দেখি তাসিন অভাক হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছে, ও কি কিছু বুঝে ফেললো নাকি
–অভাক হয়ে থাকিয়ে আছ কেন
–আমার নতুন অন্নিটা কে দেখছি
–মানে
–এই যে আমার থেকে দূরে গিয়ে ফোনে কথা বলে আগে তো এমন ছিল না
–আমার ফ্রেন্ড ফোন দিয়েছিল ওর সাথেও কি তোমার সামনে কথা বলতে হবে, ভালো করে শুনে রাখো আমার ব্যাক্তিগত কোনো ব্যাপারে একদম নাক গলাতে আসবে না
–হুম
–আচ্ছা তোমার বাড়ির মানুষদের কি সামান্য বিবেক বলতে কিছু নেই সকাল দশটা হয়ে গেছে অথচ নাস্তা খেতে ডাকেনি ওরা কি ভাবে নতুন বউদের খিদে লাগে না
–আসলে আমি অসুস্থ হওয়াতে কারো মন মেজাজ ঠিক নেই তুমি বস আমি খাবার রুমে নিয়ে আসি
–হ্যা তুমি যাও আর বাড়ির মেহমানরা আমাকে অসভ্য বলুক
–(একটা হাসি দিয়ে কাকে যেন ফোন দিয়ে বললো রুমে খাবার নিয়ে আসতে)

ফোন দেওয়ার একটু পরই কাজের বুয়া খাবার দিয়ে গেলো, সোফায় বসে পা নাচাচ্ছি আর খাবার খাচ্ছি তাসিন খাবে কিনা জিজ্ঞেসও করলাম না
–অন্নি
–কি
–খিদে লেগেছে
–খাবার আছে খাও
–খুব কষ্ট হচ্ছে তুমি খাইয়ে দিবে
–শুনো এসব আহ্লাদী কাজ আমি করতে পারবো না নিজে খেতে পারলে খাও না খেতে পারলে ঘুমাও
–হুম

আর একবারও তাসিনের দিকে থাকালাম না ফোনে গেমস খেলতে খেলতে খেয়ে নিলাম, খাওয়া শেষে থাকালাম দেখি তাসিন ঘুমিয়ে পড়েছে মুখটা খুব মায়াবী লাগছে, নিজের অজান্তেই ওর মাথার পাশে গিয়ে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিলাম, খুব বেশিই মায়াবী লাগছে ওকে আর কষ্ট দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাসিন তো আর কোনো অপরাধ করেনি তাহলে ওকে কেন কষ্ট দিচ্ছি

হঠাৎ এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে নিলাম ওর মাথা থেকে, বারান্দায় এসে চেয়ারে দফ করে বসে পড়লাম, কি করছি আমি এসব আমি তো এ বাড়িতে এসেছি প্রতিশোধ নিতে তাহলে আমি তাসিনের উপর দূর্বল হয়ে পড়ছি কেন, আমাকে যে দূর্বল হলে চলবে না তাসিন কে কষ্ট দিয়েই যে আমার প্রতিশোধ নিতে হবে, তাসিন এই বাড়ির সবার কলিজার টুকরা ওকে কষ্ট দিলেই সবাই কষ্ট পাবে তাই ওকেই আমার কষ্ট দিতে হবে অনেক বেশি কষ্ট

–ভাবি ভাবি (হঠাৎ তিথির ডাকে চোখ খুলে থাকালাম বারান্দায় চেয়ারে বসেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি)
–ভাবি তুমি এখানে ঘুমিয়ে আছ কেন দরজা খুলা ভাইয়াও ঘুমে
–এখানে এসে বসছিলাম কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি
–তোমার চোখে তো ঘুম রইছে যাও রুমে গিয়ে ঘুমাও
–হুম

তিথি চলে গেলো রুমে এসে বিছানায় বসলাম তাসিন গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে, কি করবো বুঝতেছি না এই বাসায় দম বন্ধ হয়ে আসছে, শত্রুর বাসায় তো আর শান্তি লাগবে না বরং অশান্তিই লাগবে, ঘুমও ধরছে খুব চোখ মেলে থাকাতে পারছি না, বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লাম

হঠাৎ পেটে কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাড়াতাড়ি চোখ খুলে থাকিয়ে দেখি তাসিন আমার পেটে হাত দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে, আস্তে করে ওর হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে পড়লাম, সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ভালো লাগছে না কিছু তাই ছাদে গেলাম

ছাদের দোলনায় বসে বসে ভাবছি কি করলে এই চৌধুরী পরিবারের সবাই কাঁদবে আর আমি পরম শান্তি পাবো, কি করবো তাসিন কে কষ্ট দিবো নাকি অন্য কাউকে, আচ্ছা পরী কে কষ্ট দিলে কেমন হয় ও তো এই চৌধুরী পরিবারের প্রথম সন্তান অবশ্যই সবাই কাঁদবে ওর জন্য, কিভাবে কষ্ট দিব পরী কে মেরে ফেলবো….?
না না খুন করা যাবে না কাউকে খুন করতে হলে তো আফজাল চৌধুরী কে খুন করে আমার প্রতিশোধের আগুন নিবাতাম, আমি তো চাই চৌধুরী পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ কষ্ট পেতে পেতে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাক মুছে যাক এই চৌধুরী মঞ্জিল এর অস্তিত্ব

হঠাৎ নিচে চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে গেলাম, ড্রয়িংরুমে সবাই ভীড় জমিয়েছে একটু সামনে যেতেই দেখলাম তাসিন ফ্লোরে পরে আছে মা ওকে জরিয়ে ধরে কাঁদছেন, কে একজন যেন চিৎকার করে বললো তাসিন মাথা ঘুরিয়ে পরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো ওকে হসপিটাল নিতে হবে…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০২

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০২

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিন: এই অন্নি কি করেছ এইটা
–কি
–তুমি বিয়ের সাঝ পাল্টে এই জামা পড়েছ কেন
–আমার অস্বস্তি লাগছিল তাই
–মানে কি এইটুকু কষ্ট আমার জন্য করতে পারলা না
–না
–তুমি জানতে আমি তোমাকে বাসর ঘরে বউ সাঝে দেখতে চাই তাও তুমি চেঞ্জ করে নিলে
–হ্যা নিলাম
–এই অন্নি তুমি ঠিক আছ তো
–একদম
–তুমি কি আমার অন্নি
–উহু তোমার কখনো ছিলামই না
–পাগল হয়ে গেছ নাকি কি বলছ এসব আবুল তাবুল
–ঘুমাবো এতো চেঁচামেচি করো না তো
–ঘুমাবা মানে কি প্লেন ছিল আমাদের ভুলে গেছ
–দূর এসব প্রেম ভালোবাসা আমার ভালো লাগে না আর এই বাসর টাসর তো একদমই না
–এই অন্নি কি বলছ এসব তুমি কি সেই অন্নি যে অন্নি আমার ভালোবাসা পাবার জন্য পাগল ছিলে
–আগে পাগল ছিলাম এখন আর নেই
–অন্নি লক্ষীটি প্লিজ এসব ফাজলামো বাধ দাও আমার ভালো লাগছে না
–তোমার ভালো লাগলেই কি আর না লাগলেই কি আর হ্যা আমি কোনো ফাজলামো করছি না
–তারমানে আগে যে ভালোবাসা ছিল তোমার আমার প্রতি সেটা বিয়ে হবার সাথে সাথে কমে গেছে
–হ্যা
–তাহলে বিয়ে করলে কেন
–হাহাহা
–পাগলের মতো হাসছ কেন
–আমি পাগল তাই
–অন্নি তোমার মাথা ঠিক নেই তুমি ঘুমাও সকালে মাথা ঠিক হয়ে যাবে
–আমার মাথা ঠিকি আছে তাসিন চৌধুরী
–এই রাতটি নিয়ে তুমি আমাকে কতো স্বপ্ন দেখিয়েছ আর আজ এমন করছ
–হ্যা করছি আর শুনো আমি খাটে থাকবো তুমি ফ্লোরে থাকবে এইটা নিয়ে কোনো জামেলা করবে না
–মানে কি তুমি আমাকে ছাড়া ঘুমাবে তুমি না সবসময় বলতে বিয়ের পর আমার বুক ছাড়া ঘুমাবে না
–(রাগি চোখে থাকালাম)
–ঠিক আছে ফ্লোরে না ঘুমিয়ে সোফায় ঘুমাই আমি তো কখনো ফ্লোরে ঘুমাইনি ঠান্ডা লেগে যাবে
–আমি বলেছি ফ্লোরেই ঘুমাবা আমার কথা মতো না চললে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবো
–চুপ কি বলছ এসব তুমি হ্যা পাগল হয়ে গিয়েছ নাকি
–উফফফফ ঘুমাতে দিবা নাকি আমি অন্য রুমে চলে যাবো
–না না অন্য রুমে যেতে হবে না আমি ফ্লোরেই ঘুমুচ্ছি তুমি খাটে ঘুমাও
–ওকে

একটি বালিশ আর একটি বিছানা চাদর ছুড়ে নিচে দিলাম তাসিন অভাক হয়ে শুধু আমার দিকে থাকিয়ে আছে, এখন শুধু ওর অভাক হবার পালা শুধু ওর না এই পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ অভাক হবে প্রতিদিন আমার নতুন নতুন কাজে, ওরা চাইলেও আমাকে ডিভোর্স দিতে পারবে না কারন আমি উকিলের কাছ থেকে জেনেই এসেছি ছয়মাসের আগে ডিভোর্স দেওয়া সম্ভব না আর এই চৌধুরী পরিবারের একটি নিয়ম আছে বাড়ির বউ কে কখনো বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় না, সবকিছু জেনেই এই বাড়িতে আমি এসেছি ওদের সবার সুখ তছনছ করে দেওয়ার জন্য

একবার নিচে থাকালাম তাসিন গুটিসুটি মেরে ফ্লোরে শুয়ে আছে হয়তো ঠান্ডা লাগছে লাগুক আমার কি, আমি বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম, সারা দিনের ক্লান্ত শরীর বিছানায় শুতেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম

সকালে গোঙানির শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো উঠে চারদিকে থাকিয়ে বুঝতে পারলাম ফ্লোরে তাসিন গোঙাচ্ছে, বিছানা থেকে নেমে দেখি তাসিন খালি ফ্লোরে শুয়ে আছে বিছানারচাদর গায়ে দিয়ে কাঁপছে, কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে, পড়লাম মহা মুশকিলে এতোটা ঠান্ডা লাগুক আমি চাইনি লেগেছে যখন কি আর করার ওকে টেনে হিছরে খাটে শুয়ে দিলাম মাথায় একটু সময় জলপট্টি দিলাম

তাসিনের জ্বর একটু কমেছে ঘুমিয়ে আছে ও তাই উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম

গোসল করে রুমে ঢুকতেই শুনি দরজায় কে যেন টোকা দিচ্ছে, দরজা খুলে দেখি ভাবি দুষ্টু হাসি হাসছে
–কি রাতে আমার দেবর বুঝি ঘুমাতে দেয়নি
–(মৃদু হাসলাম)
–সাহেব বুঝি এখনো ঘুমে (বলেই রুমের ভিতরে থাকালো বিছানায় চোখ পরতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো)
–এই তাসিনের কপালে জলপট্টি কেন কি হয়েছে ওর
–তেমন কিছু না ভাবি সামান্য জ্বর এসেছে
–জ্বরে তো শরীর পুরে যাচ্ছে আর তুমি বলছ সামান্য
–(মনে মনে ভাবছি সকালে যে জ্বর ছিল তা দেখলে তো উপায় ছিল না এখন তো কমেছে)
–চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছ কেন যাও মা কে ডাক দাও

দূর ভালো জ্বালায় পড়লাম তো, মা কে ডাকার জন্য দরজার কাছে যেতেই দেখি সিড়িতে লাইন লাগানো নিচ থেকে মা বাবা তিথি চাকর বাকর সহ আত্মীয়স্বজন সবাই আমাদের রুমের দিকে আসছে, আমি রুমে এসে খাটের এক কোনে গিয়ে চুপ করে বসে রইলাম, মনে মনে হাসছি তাসিনের কষ্টে ওর মা বাবা এখন কাঁদবে আমি তো চাই ওরা কাঁদুক

রুমের মধ্যে এতো মানুষ যে একটু নড়াচড়া করার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই, জ্বর উঠেছে সামান্য অথচ শহরের বড় ডক্টর কে আনা হয়েছে আহ্লাদে আর বাঁচি না উফফফ অসহ্য লাগছে এসব

ডক্টর তাসিনের জ্বর মেপে পাশে বসে আছে সবাই তাসিনের চোখ খুলার জন্য অপেক্ষা করছে

অনেক্ষণ পর তাসিন আস্তে আস্তে চোখ খুলে থাকালো, প্রথমেই আমার দিকে থাকিয়ে মিষ্টি একটি হাসি দিলো, খুব অভাক হলাম আমার জন্য অসুস্থ হলো অথচ আমার উপর ওর কোনো রাগ নেই
মা: তাসিন বাবা তোর এতো জ্বর আসলো কিভাবে (কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলেন)
বাবা: সেই ছোট বেলায় তোর এমন জ্বর উঠেছিল আর উঠেনি উঠবে কিভাবে তোকে যেভাবে আগলে রেখেছি জ্বর তোর কাছেই আসতে পারেনি কিন্তু আজ এতো জ্বর আসলো কিভাবে
তিথি: আচ্ছা ভাবি ভাইয়ার এতো জ্বর এসেছে তুমি আমাদের ডাকোনি কেন
তাসিন: মা তোমরা শান’ত হও তো আর অন্নির কোনো দোষ নেই এতো রাতে ওর কি করার ছিল ও যতোটুকু পেরেছে করেছে সারা রাত আমার পাশে বসে মাথায় জলপট্টি দিয়েছে মেয়েটা আর কি করবে (ওর কথা শুনে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে কি বলছে এসব)
মা: তোর জ্বর আসলো কিভাবে
তাসিন: (আমার দিকে একবার থাকালো তারপর আমাকে অভাক করে দিয়ে বললো) গতকাল বন্ধুদের সাথে ধুলোবালিতে একটু ঘুরাঘুরি করেছিলাম তো আর সারা দিনের ক্লান্ত শরীর ছিল তাই হয়তো জ্বর এসেছে

অভাক হয়ে ওর দিকে থাকিয়ে আছি কি বলছে তাসিন এসব ও কি পাগল, আমার জন্য ওর এতো কষ্ট হচ্ছে আর ও কিনা আমাকে সবার সামনে ভালো সাঝিয়ে দিলো, তাহলে কি আমি ওকে কষ্ট দিয়ে অন্যায় করছি……

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০১

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০১

লেখিকা: সুলতানা তমা

আজ আমার বিয়ে বাসায় মেহমানরা গিজগিজ করছে চারদিকে বিয়ের আমেজ সবাই খুশি শুধু খুশিই না অনেক বেশি খুশি, তবে বিয়েটা আমার বাসায় বা কোনো সেন্টারে হচ্ছে না বিয়েটা হচ্ছে আমার হবু শশুড় বাড়িতে, শহরের অনেক বড় ব্যবসায়ী আফজাল চৌধুরী (হবু শশুড়) এর ছোট ছেলের সাথে বিয়েটা হচ্ছে তাই সবাই এতো খুশি কারন এ বাড়ির ছোট ছেলে যে সবার চোখের মণি

আমি অরনী অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছি, মা বাবা বেঁচে নেই আজ থেকে সাত বছর আগে আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন আম্মু আব্বু মারা যান, সেই থেকে চাচ্চুর কাছে বড় হয়েছি চাঁচিআম্মু আমাকে উনার নিজের মেয়ের মতো বড় করেছেন তাই আমি উনাকে ছোট মা বলে ডাকি, ভাবছেন চাচ্চু থাকতে আমার বিয়ে হবু শশুড় বাড়িতে হচ্ছে কেন আসলে তো আমার শশুড় বাড়ির সবাই জানে আমি একটি অনাথ মেয়ে এতিমখানায় বড় হয়েছি, আমার যে চাচ্চু আছে আমিও যে কোনো এক বড় ব্যবসায়ীর মেয়ে সেটা ওরা জানে না অবশ্য তারও একটি কারন আছে
–ভাবি ভাবি (হঠাৎ কারো ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো)
–হ্যা
–তুমি এখানে আর ভাইয়া তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজছে
–তুমি যাও আমি আসছি
–ওকে

যার সাথে এখন কথা বললাম সে আমার একমাত্র ননদ+ছাত্রী তিথি, মাত্র কলেজে উঠেছে, আজ থেকে এক বছর আগে তিথি যখন ক্লাস টেনে পড়তো তখন খুব কষ্ট করে অনেক কাঠকড় পুরিয়ে ওর টিউশনির টিচার হয়ে এই বাসায় ঢুকেছিলাম, যে উদ্দেশ্যে এই বাসায় এসেছিলাম সে উদ্দেশ্যর তৃতীয় ধাপ আজ পূরন হতে যাচ্ছে

প্রথম দুটি ধাপ পূরন করতে মোটামুটি অনেক কষ্ট হয়েছে আমার, প্রথম তাসিন কে প্রপোজ, ওহ আপনাদের বলা হয়নি তাসিন আমার হবু বর, প্রেম করে বিয়ে করছি অবশ্য ওকে প্রেমে রাজি করাতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে, প্রথম যখন প্রপোজ করেছিলাম ও আমাকে ইগনোর করেছিল যদিও আমি মোটামুটি সুন্দরীর খাতারে পরি তাও ইগনোর করেছিল কারন তাসিনও যে খুব সুন্দর+বড় লোকের ছেলে, তাসিনের সাথে প্রেম করার জন্য আমাকে একটি বছর এতিমখানায় থাকতে হয়েছে কারন ওকে বলেছিলাম আমি অনাথ, তাসিনের সামনে আমি গরীবদের সাহায্য করতাম যদিও এইটা আমার ছোট বেলার অভ্যাস তাও তাসিনের সামনে এইসব কাজ করতাম ওকে আমার প্রতি দূর্বল করার জন্য, বুদ্ধিটা কাজেও লেগেছিল তাসিন আস্তে আস্তে আমার প্রতি দূর্বল হয় তারপর আমাদের প্রেম হয় আর এখন তো তাসিন আমার জন্য এতোটাই পাগল যে আমার কথায় মরতেও রাজি, হাহাহাহা আমি তো এটাই চেয়েছিলাম কারন ওকে দিয়েই যে আমি আমার প্রতিশোধ নিবো

দ্বিতীয় ধাপ পূরন করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, তাসিনের পরিবার কে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য অনেক কাঠকড় পুরাতে হয়েছে, প্রথমে কেউ রাজি ছিল না আমি অনাথ বলে না তাসিনের জন্য নাকি মেয়ে ঠিক করা ছিল ছোট বেলায়, মেয়েটি এখন হারিয়ে গিয়েছে তাই উনারা এখনো আশা করেন মেয়েটি ফিরে আসবে তাসিনের বউ হবে, সবার আশা নিরাশা করে আজ আমি তাসিনের বউ হতে যাচ্ছি, এর জন্য সুইসাইড করার মিথ্যে নাটক করতে হয়েছে তাসিনও অনেক কান্নাকাটি করেছে তাই বাধ্য হয়ে সবাইকে রাজি হতে হয়েছে, এখন সবাই খুশি ওই মেয়ের আশা ছেড়ে দিয়ে আমাকে এই বাড়ির ছোট বউ বানাতে সবাই ব্যাস্ত, এই বাড়ির বড় বউ আসিফ চৌধুরীর স্ত্রী শায়লা চৌধুরী, তাদের ছোট্ট একটি মেয়েও আছে নাম পরী, ভাবছেন সবার পরিচয় দিচ্ছি কেন
এই কারনে দিচ্ছি যেন পরে কাউকে চিনতে অসুবিধা না হয়
–অন্নি কোথায় তুমি (আবার ডাক পড়েছে বিয়ের স্টেজ ছেড়ে আমি ছাদে দাড়িয়ে আছি তো তাই, এখন এসেছে তাসিন ও আমাকে আদর করে অন্নি বলে ডাকে)
–এই ছাদে কি করছ
–কিছুনা
–ওমা আমার অন্নি কাঁদছে কেন
–আম্মু আব্বুর কথা ভাবছিলাম তো কখন চোখে পানি চলে এসেছে বুঝতে পারিনি
–ঠিক আছে নিচে চলো এই বউ সাঝে ছাদে দাড়িয়ে থাকলে নজর লেগে যাবে
–তাই বুঝি
–হ্যা আমার অন্নিটা একদম পরীর মতো তো তাই নজর লেগে যাবে, চলো সবাই স্টেজে অপেক্ষা করছে বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে ফেলি আমার আর তর সইছে না
–(মৃদু হাসলাম)
–কি হলো হাসছ যে
–তোমার পাগলামি দেখে চলো নিচে যাই
–চলো

তাসিনের হাত ধরে নিচে নেমে আসলাম সবাই আমাদের দিকে হা করে থাকিয়ে আছে
ভাবি: দুইটা কে খুব সুন্দর মানিয়েছে
মা: আমার তাসিনের জন্য এই মেয়েটাই পারফেক্ট, খুব সুন্দর লাগছে আমার বউমা কে
আমি:(মনে মনে ভাবছি কতটুকু পারফেক্ট তা তো বিয়ের পরই বুঝতে পারবেন সবাই হাহাহা)
তাসিন: এই হাসছ কেন
আমি: এমনি
বাবা: তোমরা সবাই এখানে কাজি সাহেব তো বসে আছেন চলো শুভ কাজটা সেরে ফেলি
মা: হ্যা সবাই চলো চলো

বিয়েটা হয়ে গেলো সবাই খুশি সবচেয়ে বেশি খুশি আমি আমার উদ্দেশ্যের তৃতীয় ধাপ পূরন হলো

সারা দিন বিয়ের ব্যাস্ততা শেষে এখন আমাকে তাসিনের রুমে নিয়ে আসা হলো, সব নিয়ম কানুন শেষে ভাবি আমাকে খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো

আর আট-দশটা মেয়ের মতো আমি দশ হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে খাটে বসে বসে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছি না, উঠে ফ্রেশ হয়ে লেহেঙ্গা পাল্টে জামা পরে নিলাম জানি তাসিন রাগ করবে কারন ও আমাকে বাসর ঘরে বউ সাঝে দেখতে চেয়েছিল, করুক রাগ কারো রাগে আমার কিছু যায় আসে না আমি আমার উদ্দেশ্য সফল করেই ছাড়বো

বারান্দায় আর রুমে পায়চারী করছি আর ভাবছি কিভাবে প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করবো, হঠাৎ দরজায় শব্দ হলো তাসিন এসেছে চট করে মাথায় বুদ্ধি চলে আসলো তাসিন কে দিয়েই প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করবো, ও এই বাড়ির সবার চোখের মণি ওকে কষ্ট দিতে পারলেই সবাই কষ্ট পাবে……

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ২০/অন্তিম পর্ব

15

অবুঝ_বউ

পার্ট: ২০/অন্তিম পর্ব

লেখিকা: সুলতানা তমা

আর মাত্র আধা ঘন্টা তারপর সোহাগীর থেকে অনেক দূরে চলে যাবো আর কখনো ফিরে আসবো না, সোহাগী জিসানকে নিয়ে ভালো থাকবে আমি নাহয় ওর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবো
মাথাটা খুব যন্ত্রণা করছে তাই কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলাম, হঠাৎ মনে হলো আমার পাশের চেয়ারে কেউ এসে বসেছে চোখ খুলে পাশে তাকাতেই চমকে উঠলাম সোহাগী এখানে কিভাবে আসলো তাও আবার সেই কালো শাড়ি এই মেয়ে তো আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে, অনেকক্ষণ ধরে সোহাগীর কথা ভাবছি তো তাই হয়তো ভুলে ওকে এখানে দেখছি এইটা ভেবে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম
–এখন আমাকে চোখে দেখ না বুঝি (সোহাগীর কন্ঠ শুনে আবার চমকে উঠে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম)
–ওই কি হলো
–উফফফ এভাবে কেউ চিমটি দেয়
–তাহলে কি করবো তুমি তো বিশ্বাস করছ না আমি যে এখানে এসেছি তাই চিমটি দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম সত্যি আমি এসেছি
–কেন এসেছ
–হানিমোনে যাবো
–তাহলে জিসান কোথায় আর পিচ্ছি মেয়ে তুমি হানিমোনের কি বুঝ
–ওই আমাকে পিচ্ছি বলবা না আমি বড় হয়ে গেছি আর এতো জিসান জিসান করোনা তো জিসান এখন হসপিটালের বেডে আরামে ঘুমাচ্ছে
–মানে
–অবাক হওয়ার কিছু নেই সাথে তোমার মৌরিও শান্তিতে হসপিটালের বেডে ঘুমাচ্ছে
–কি বলছ এসব এই সত্যি করে বলতো এসবের মানে কি আর তুমি জিসানের কাছে না গিয়ে এখানে এসেছ কেন
–শুনবা
–হুম বল
–তাহলে শুনো, তুমি বাসা থেকে বেড়নোর পর আমিও বের হই, আমি তোমাদের পিছনের গাড়িতেই ছিলাম মৌরি যখন তোমাকে থাপ্পড় দিয়েছিল আমি দূর থেকে দেখেছি জানো আমার খুব কষ্ট হয়েছিল কিন্তু তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম তুমি ওকে কিছু না বলাতে তখন বুঝতে পারি তুমি আমার কাছ থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছ তাই মন খারাপ বলে মৌরিকে কিছু বলনি তারপর
–তারপর কি বল
–তারপর তোমরা ওখান থেকে চলে আসার পর মৌরির কাছে জিসান আসে আমি আড়াল থেকে ওদের সব কথা শুনেছি কিন্তু তোমাকে বলব না
–কেন
–আগে বল আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাবা আর ওখানে গিয়ে বেশি দিন থাকবা না হানিমোন করে চলে আসবা
–উফফফ ঠিক আছে বল
–আসলে সবকিছু জিসান আর মৌরি তোমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য করেছে আমি না বুঝে বোকার মতো জিসানকে বিশ্বাস করেছিলাম
–তুমি যে বললে তোমরা আগামীকাল বিয়ে করবে
–জিসান মৌরিকে বলেছে আমাকে বিয়ে করে কয়েকদিন রেখে ছেড়ে চলে যাবে এই কথা শুনেই তো আমি তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে যাই, অনেক ভেবে দেখেছি আসলে তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাস আর আমি তোমাকে ভালোবাসি
–তুমি আমাকে ভালোবাস
–কেন বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি
–চেঁচাচ্ছ কেন এইটা বাসা না এয়ারপোর্ট
–হুম
–এবার বল ওরা হসপিটালে কেন
–এইটা জানার জন্য এতো পাগল হয়ে আছ কেন মৌরিকে ভালোবাস নাকি শুনো একদম অন্য মেয়ের দিকে নজর দিবা না চোখ উপড়ে তুলে ফেলব
–তুমি পিচ্ছি বউ থেকে গুন্ডি বউ হইলা কবে
–কি আমি গুন্ডি
–না না তুমি লক্ষী বউ এবার বাকি কাহিনী বল
–আমাকে পাগলের মতো দৌড়ে বাসায় যেতে দেখে আব্বু আম্মু সবাই জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে আমি সবকিছু বলে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি তারপর….
–তারপর কি কান্না করছ কেন
–আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ডিভোর্স পেপারের কথা মনে পড়তেই কিন্তু আমার মন বলছিল তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতেই পারো না তাই আমি সারা রুম তন্নতন্ন করে খুঁজি আর ডিভোর্স পেপার টেবিলের ড্রয়ার থেকে পাই সাথে ছোট্র একটা চিরকুট “পিচ্ছি বউ আমি তোমাকে সত্যি অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি তাই সাইনটা করতে পারলাম না”
–তুমি তো সাইন করেই দিয়েছিলে
–সরি
–হুম তারপর বলো
–আমি তোমার সেই ছোট্র চিরকুটটা বুকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্না করেছিলাম তখন মুমু আপু এসে বললো ফ্লাইটের আরো দুঘন্টা বাকি আছে চাইলে তোমার কাছে ফিরে আসতে পারবো
–তারপর তুমি আমার কাছে চলে এসেছ
–হুম আসার আগে একটা কাজ সেরে এসেছি
–কি কাজ
–আব্বুর সাথে প্ল্যান করে টাকা দিয়ে মাস্তান ভাড়া করে জিসান আর মৌরিকে পিটিয়ে হসপিটালে পাঠিয়ে এসেছি
–কি বলছ এসব
–কেন তোমার কষ্ট হচ্ছে নাকি আমার তো বেশ মজা লেগেছে যখন জিসানকে পিটাচ্ছিল
–সত্যি
–হ্যাঁ কষ্ট তো হয়েছিল যখন মৌরি তোমাকে থাপ্পড় দিয়েছিল (এক দৃষ্টিতে ওকে দেখছি সত্যি কি ও আমাকে ভালোবাসে)
এভাবে কি দেখছ আমার লজ্জা লাগে না বুঝি
–কি বললে লজ্জা
–(নিশ্চুপ)
–আচ্ছা তুমি যে ওদের মাস্তান ভাড়া করে পিটিয়েছ এখন যদি পুলিশ এসে তোমাকে নিয়ে যায়
–এসব আমি ভয় পাই না আর আমার শশুর আব্বুটা খুব ভালো উনি বলেছেন সব জামেলা মিটিয়ে নিবেন শুধু আমি যেন আসার সময় উনার জন্য একটা….
–একটা কি
–পরে বলবো
–ওকে এখন চলো প্লেনে উঠতে হবে
–ওকে

সোহাগীকে নিয়ে প্লেনে এসে বসলাম এখন তো আমি আমেরিকা থাকার চিন্তা বাদ দিয়ে হানিমোনের চিন্তা করছি হাহাহা, কিন্তু এই পিচ্ছি মেয়ে এতোসব কান্ড করে এসেছে ভাবতেই আমার মাথা ঘুরছে, বেচারা জিসান বিয়ের সখ মিটে যাবে হসপিটালে থাকতে থাকতে হাহাহা
–এই এভাবে পাগলের মতো হাসছ কেন
–হানিমোনে যাচ্ছি তো তাই আনন্দ হচ্ছে
–এই হানিমোন কি (দিল সব আনন্দ মাটি করে বিয়ের দিন প্রশ্ন করেছিল বাসর রাত কি আর এখন হানিমোন কি এমন প্রশ্নের কি উত্তর হতে পারে সত্যি আমার জানা নেই ইচ্ছে হচ্ছে কান্না করে দেই)
–নাহিল তুমি তো কান্না করে দিচ্ছ হিহিহি
–(আবার সেই হাসি)
–কিছু বললে
–হুম
–কি
–কাছে এসো কানে কানে বলছি
–ওকে বল
–তোমার কালো সিল্কি শাড়ি আর খিলখিল করে হাসি আমাকে আগেই পাগল করে দিয়েছিল আজ আবার নতুন করে পাগল করে দিয়েছে (কথাটা ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলতেই লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকালো)
–নাহিল সরি আমাকে ক্ষমা করে দাও
–কেন
–এইযে তোমাকে এতো কষ্ট দিয়েছি, আমি না বুঝে এমন করেছি ওই জিসান যা বলত আমি তাই করতাম
–ভুল তোমার একার না আমিও ভুল করেছি বাহিরে গিয়ে তোমাকে সময় দেওয়া উচিত ছিল কিন্তু আমি তা করিনি আর তোমার এই একাকীত্বের সুযোগ নিয়েছে জিসান….
–তাও তো আমার বুঝা উচিত ছিল সরি প্লিজ ক্ষমা করে দাও এইযে কান ধরছি
–দোষ করেছ তুমি আর কান ধরছ আমার ফাজি মেয়ে
–তোমার কান মানে আমার কান আর আমার কান মানে তোমার কান হিহিহি
–তাই বুঝি
–জ্বী
–এতো চটপট করোনা কখনো প্লেনে উঠনি তো প্লেন এখন উপড়ে উঠবে তুমি ভয় পেয়ে যাবে
–আমি এখন আর কিছু ভয় পাই ন….
–কি হল ভয় তো পাওনা বলতে চাইছিলে তাহলে ভয়ে আমাকে জরিয়ে ধরেছ কেন
–আজকের জরিয়ে ধরায় ভয়ের চেয়ে ভালোবাসাটা বেশি (আমার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব শান্তভাবে কথাটা বলল)
–বাব্বাহ্ পিচ্ছি দেখি লোমান্তিক কথা বলতে শিখে গেছে
–আবার পিচ্ছি বলছ আব্বু আম্মু সবাই বুঝে গেছে আমি আর পিচ্ছি নেই তুমি কেন বুঝছ না
–আব্বু আম্মু বুঝে গেছে
–হ্যাঁ নাহলে কি আব্বু আম্মু বলে দিতেন আসার সময় যেন উনাদের জন্য ফুচকে একটা নাতনী নিয়ে আসি আর মুমু আপু কি বলে দিত ফুচকে একটা….
–বলো থেমে গেলে কেন
–তুমি এভাবে তাকিয়ে আছ কেন আর বলতে পারবো না (পিচ্ছিটা লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকালো)

সোহাগী আমার কাধে মাথা রেখে হাতে হাত রেখে বকবক করে যাচ্ছে আর আমি এসব শুনছি আজ মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ
–নাহিল
–হুম
–তুমি যখন বাহিরে ছিলে তখন আমি সত্যি একা হয়ে গিয়েছিলাম সবসময় তোমার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো মনে পড়তো রাতে ঘুম আসতো না তোমার বুকে মাথা রাখতে ইচ্ছে হতো….
–সোহাগী আসলে আমারি ভুল হয়েছে কাজের জন্য আমি তোমাকে সময় দিতে ভুলে গিয়েছিলাম, শত ব্যস্ততার মাঝে প্রিয়জনকে একটুখানি সময় দেওয়াই তো সত্যিকারের ভালোবাসা
–বুঝেছ তাহলে
–হুম জানো প্রথম ভেবেছিলাম জিসানকে শাস্তি দিব কিন্তু তুমি যখন বললে ওকে ভালোবাস তখন আমি মনের দিক থেকে অনেক দূর্বল হয়ে পরেছিলাম কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল তুমি তোমার ভুল বুঝতে পারবে আর আমার কাছে ফিরে আসবে, আমার বিশ্বাসই সত্যি হলো আজকে আমি অনেক খুশি তুমি আমার কাছে ফিরে এসেছ এর চেয়ে বেশি কিছু আমি আর চাই না
–তোমার এতো খুশির দিনে আমাকে কিছু দিবে না
–কি চাও
–একটা ফুচকে বাচ্চা
–কি
–অবাক হচ্ছ কেন আমার একটা বাচ্চা চাই বুঝেছ
–তুমি নিজেই তো একটা বাচ্চা তুমি আবার বাচ্চা দেখাশোনা কিভাবে করবে
–কেন তুমি দেখাশোনা করবে আমার আর আমি দেখাশোনা করবো আমাদের বাচ্চার (এই পিচ্ছি বলে কি এসব আমি তো হাসতে হাসতে শেষ)
–নাহিল তুমি আমাকে সত্যি ক্ষমা করে দিয়েছ তো আমার ভুল হয়ে গিয়েছে আমি সত্যি না বুঝে…
–এই পাগলী কাঁদছ কেন আমি তোমাকে সত্যি ক্ষমা করে দিয়েছি এখন আর কোনো কান্না নয় আমরা এখন আমাদের নতুন জীবন শুরু করবো আবার সবকিছু আগের মতো সুন্দর হবে (পাগলীটা নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে আমি আর বাঁধা দিচ্ছি না কাঁদলে কষ্টটা হালকা হয়ে যাবে)
–নাহিল মনে হচ্ছে আমি যেন আজ প্লেনে করে আকাশে উড়ছি না কোনো এক স্বপ্নের রাজ্যে ভাসছি
–তাই বুঝি
–হ্যাঁ আজ তুমি আমার কাছে কিছু চাইবে না
–চাইলে দিবে
–হ্যাঁ কেন দিব না
–সত্যি তো
–হ্যাঁ
–ওকে দেখা যাক, তোমার নাভির একদম কাছে একটা তিল আছে ওইটায় মায়া দিতে দাও (দুষ্টুমি করে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম)
–ফাজি ছেলে তুমি জানো কিভাবে
–মনে আছে তোমাকে একদিন শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলাম সেদিন দেখেছিলাম কিন্তু বলার সাহস হয়নি, আজ তো তুমি নিজ থেকে বলেছ যা চাই দিবে এখন দাও
–একদম না
–প্লিজ দাও
–না
–প্লিজ বউ
–না
–প্লিজ পিচ্ছি বউ
–ওকে
আমাকে আর পায় কে হিহিহি, সোহাগীর চোখের দিকে তাকালাম কেমন যেন এক মাতাল করা চাহনি আমাকে ওর দিকে টানছে, এই নেশা ধরানো দুটু চোখের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে আমার এই অবুঝ বউটার কাছে এগিয়ে যেতে লাগলাম…..

প্লেনের সবাই ঘুমুচ্ছে আপনারা এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে না থেকে চোখ বন্ধ করুন আর নাহিলকে ওর পিচ্ছি বউ এর সাথে শান্তিতে রোমান্স করতে দিন???

#সমাপ্ত?

(গল্পটা পুরোটাই কাল্পনিক আমি আমার মন থেকে সাঝিয়ে লিখেছি কিন্তু এই গল্পের জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে, আমি প্রত্যেক গল্পে কিছু শিক্ষণীয় বিষয় বা একটুখানি বাস্তবতার ছোঁয়া রাখি, এই গল্পেও বাস্তব কাহিনী তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এমন কাহিনী তো অহরহ ঘটছে ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভালোবাসা, ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে প্রিয়জনকে একটু একটু করে দূরে সরিয়ে দেওয়া, আমি এই দুইটা বিষয়ই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি
সবাই সোহাগীর পাল্টে যাওয়া নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছ একবারো নাহিলের ব্যস্ততা দেখনি, নাহিল যদি শত ব্যস্ততার মাঝে সোহাগীকে একটুখানি সময় দিত তাহলে সোহাগী পাল্টে যাওয়ার সুযোগ পেতো না এখানে দুজনেরই দোষ আছে।
অনেকে কমেন্ট করেছেন আমার এই গল্প পড়ে রোজ কাঁদতে হয় কারন আপনাদের সাথে এমন কিছুই ঘটেছে আমি সত্যি দুঃখিত কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি গল্প লিখিনি ক্ষমা করবেন।

আর হ্যাঁ অনেকে বলেছ নাহিল যেন সোহাগীকে কখনো ক্ষমা না করে কিন্তু আমি ক্ষমা করিয়ে দিয়েছি কারন আমার মতে ভালোবাসা সব অন্যায় ক্ষমা করতে জানে আর ভালোবাসার মানুষকে ক্ষমা করে আপন করে নিতে না পারলে সেটা কখনোই সত্যিকারের ভালোবাসা হয়না

প্রিয়জনের ভালোবাসা ছেড়ে একটু বেশি সুখের আশায় অন্য কাউকে ভালোবাসলে কখনো সুখী হওয়া যায় না, শত ব্যস্ততার মাঝে প্রিয়জনকে বেশি না পারেন একটুখানি সময় দিন দেখবেন সম্পর্কটাই মিষ্টি হয়ে যাবে??
টাটা??)