বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1206



জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২২

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২২

লেখিকা: সুলতানা তমা

দরজা খুলতেই চমকে উঠলাম, হৃদয় আমার পিছনেই ছিল ও তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে গেলো বুঝলাম ও নিপার সামনে যেতে চাচ্ছে না, হ্যা নিপা দরজায় দাড়িয়ে আছে সাথে ওর আম্মু বোন আর শ্রাবনের আম্মু, ভেবেছিলাম এই মেয়ের মুখোমুখি হবো না কিন্তু ভাগ্য আমাকে ছাড়ল না শেষ মুহূর্তে নিপার সামনাসামনি হতেই হলো
নিপা: আপু কোথায় যাচ্ছেন
তমা: তুমি এখানে হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়েছ কেন এখনো তো পুরোপুরি সুস্থ হওনি
নিপা: আমার কথা ছাড়ুন আপনি কোথায় যাচ্ছেন
তমা: চাকরি পেয়েছি একটা সেখানেই যাচ্ছি
নিপা: আপু মিথ্যে কেন বলছেন শ্রাবন আমাকে সব বলেছে
আমি:(নিশ্চুপ)
নিপা: ভিতরে যাই দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে (পিছনে থাকালাম হৃদয় হ্যা সূচক মাথা নেড়ে আব্বুর রুমে চলে গেলো আমি দরজা থেকে সরে ড্রইংরুমে এসে বসে পরলাম, নিপা সহ সবাই এসে ড্রইংরুমে বসলো

সবাই নিশ্চুপ কেউ কোনো কথা বলছে না, রিয়া কথা বলা শুরু করলো
রিয়া: নিপা হঠাৎ এখানে এসেছ
নিপা: একটু পর বলছি আরো দুজন আসার বাকি আছে
বুঝলাম না এই মেয়ে কে আসার কথা বলছে আর কি কথাই বা বলবে, হঠাৎ দরজায় চোখ পরলো আকাশ আর মেঘা আপু এসেছে, দরজা খুলাই ছিল ওরা এসে বসলো, তাহলে কি নিপা ওদের আসার কথাই বলছিল

বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে চুপ করে বসে আছি নীরব দর্শকের মতো কি হয় দেখার জন্য
নিপা: আপু আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই
আমি: কি কথা বলো
নিপা: আপনি তো ভাবছেন শ্রাবন আমাকে ভালোবাসে আমাদের মিলিয়ে দিয়ে আপনি চলে যাবেন তাই না
আমি: হুম
নিপা: কিন্তু আমি যে বলবো শ্রাবন আপনাকে ভালোবাসে
আমি: কিভাবে
নিপা: ওর সাথে আমার পরিচয় হবার সময় থেকেই ওর মুখে শুধু আপনার নাম ছিল যখন আমি ওকে প্রপোজ করি ওর প্রথম কথা ছিল আপনার জায়গা আমি কখনো পাবো না, আপনার পাশে একটুখানি জায়গা নিয়ে যদি থাকতে পারি তাহলে সে আমার প্রপোজে রাজি, আমি প্রথম ভেবেছিলাম আস্তে আস্তে আপনাকে ভুলে যাবে কিন্তু আমি সম্পূর্ণই ভুল ছিলাম ও প্রতিটা মুহূর্তে আপনার নাম বলতো আপনার ভাবনায় মেতে থাকতো এসব নিয়ে আমি ঝগড়া করতাম, শেষ পর্যন্ত আমি বুঝে নিয়েছিলাম শ্রাবন আপনাকে কখনো ভুলতে পারবে না তাও আমি চেষ্টা করি আপনাকে ভুলানোর এতে উল্টো শ্রাবন আমাকে অবহেলা করতে শুরু করে তারপর ব্রেকাপ, এখন আপনিই বলুন ও কাকে ভালোবাসে
আমি:(নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি)
রিয়া: তমা আমার কথা সত্যি হলো তো
আকাশ: তমা শ্রাবন আমাকে আজ সব বললো এইটুকুই বলবো কোনো ছেলে কখনোই কোনো ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করতে চায়না ও তোমাকে ভালোবাসে বলেই আমার সাথে ডিভোর্স এর পরও ফিরে এসেছে বিয়ে করতে চাইছে
নিধি: তমা আপু আপনি তো ভাবছেন ভাইয়া আপুর জন্য হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করেছে তাই আপুকেই ভালোবাসে ভুল ধারনা আপনার আমি সেখানে ছিলাম আমি প্রায় সময় দেখেছি ভাইয়া আপুর পাশে বসে থেকে ফোনে আপনার পিক দেখছে তারপরও কি বলবেন ভাইয়া আপনাকে না আপুকে ভালোবাসে
রিয়া: তমা এখনো সময় আছে বুঝার চেষ্টা কর
আমি:(চুপ হয়ে নিচের দিকে থাকিয়ে আছি কি করা উচিত কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না)
নিপার আম্মু: মা তুমি নিপার কথা ভাবছ তো, নিপা খুশি হয়েই সব মেনে নিয়েছে শ্রাবন যেহেতু তোমাকে ভালোবাসে ওর তো জোর করার অধিকার নেই আর তোমার ভালোবাসা ছিনিয়ে নেয়ার প্রশ্নই তো উঠে না যেখানে তুমি অচেনা অজানা এক মেয়েকে কিডনি দিতে চেয়েছিলে
আমি: অভাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা জানলেন কিভাবে
নিপা: ডক্টর বলেছে সবকিছু
আমি: কিডনি তো আমি দেয়নি কে দিয়েছে সেটা কি ডক্টর বলেছে
নিপা: শুধু বলেছে একটি ছেলে দিয়েছে কিন্তু ছেলেটি কে কেন দিয়েছে কিছুই বলেনি
আমি: হুম
শ্রাবনের আম্মু: মা একটা কথা বলি যদিও কথাটা শুনতে খারাপ লাগবে
আমি: বলুন
মা: নিপার কথা আমি জানতাম না গতরাতে শ্রাবন আমাকে সব বললো আচ্ছা মা একটা প্রশ্ন করি, তোমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর শ্রাবন অসুস্থ হয়ে পরে আস্তে আস্তে সুস্থ হয় তখন তো ও জানতো তোমাকে আর ফিরে পাবে না তারপরও কি ওর একা থাকা উচিত ছিল….? নিপার সাথে সম্পর্ক করে কি ও অন্যায় করেছে…? ওর কি দোষ ছিল এসবে সব তো তোমার মা করেছিলেন তাহলে আমার ছেলেকে আজ এতো কষ্ট কেন দিচ্ছ বলতে বলতে উনি কেঁদে দিলেন
আমি: (নিশ্চুপ হয়ে সব শুনছি শুধু আসলেই তো শ্রাবনের কি দোষ, আমার বিয়ে হয়ে গেছে ফিরে পাবে না জেনেও শ্রাবন একা থাকবে কেন….?
এতোকিছুর পর ও ফিরে এসেছে বিয়ে করতে চাইছে তারমানে তো ও আমাকেই ভালোবাসে)
আব্বু: তমা একটা কথা বলবো
আমি: হ্যা আব্বু বলো
আব্বু: কখনো তোর কোনো সিদ্ধান্তে বাধা দেয়নি কিন্তু আজ দিচ্ছি, আমিও তোর মা কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম তাই আমি এসব একটু হলেও বুঝি, ছেলেটা এতোকিছুর পরও তোকে বিয়ে করতে চাইছে এইটা ভালোবাসা না থাকলে কখনোই সম্ভব না মা, তুই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারিস শ্রাবন তোকেই ভালোবাসে
নিপা: আপু আর কিছু ভাববেন না আপনি শ্রাবনের কাছে যান ও ওর রুমেই আছে
আমি: হুম যাবো তার আগে তোমাকে একটি কথা বলতে চাই
নিপা: কি কথা
আমি: আচ্ছা বলতো একটি ছেলে কতোটা ভালোবাসলে একটি মেয়ে কে তার কিডনি দিতে পারে
নিপা: এই ভালোবাসা পরিমাপ করা যায় না
আমি: মেয়েটা যদি ছেলেটি কে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে পায়
নিপা: তার চেয়ে ভাগ্যবতী আর কেউ হবে না
আমি: হুম ভাগ্যবতীটা যদি তুমি হও
নিপা: মানে
আমি: যে তোমাকে কিডনি দিয়েছে সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে আর শ্রাবন কে যেহেতু আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছ আমি চাইব ছেলেটির সত্যিকারের ভালোবাসা তুমি গ্রহণ করো
নিপা: কিন্তু ছেলেটি কে
আমি: (হৃদয় কে ডেকে আনলাম নিপা তো দেখে অভাক)
নিপা: হৃদয় তুমি…?
হৃদয়: হুম
আমি: কি গ্রহণ করবে না ওর ভালোবাসা
নিপা: অবশ্যই গ্রহণ করবো কেউ আমাকে এতোটা ভালোবাসে জানতাম না জানলে আগেই গ্রহণ করতাম
আমি: তোমরা কথা বলো আমি গেলাম বলেই দৌড়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে সোজা শ্রাবনের বাসায় আসলাম

শ্রাবনের রুমের দিকে যতো এগুচ্ছি আমার হার্টবিট ততো বাড়ছে, দরজা খুলা দেখে সোজা রুমের ভিতরে ঢুকে গেলাম শ্রাবন খাটে গাঁ হেলিয়ে ফ্লোরে বসে আছে, আমি গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠলো…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২১

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২১

লেখিকা: সুলতানা তমা

–তমা (হঠাৎ রিয়ার ডাকে চোখ খুলে থাকালাম)
–হুম
–শ্রাবন এসেছে
–তো
–দেখ তমা তোর থেকে আমি কম বুঝিনা যে….
–কি বলতে চাইছিস সুজা বল
–শ্রাবনের কথায় মনে হয় ও এখনো তোকেই ভালবাসে তাই যা করবি ভেবে চিন্তে করিস
–হুম
–তোর আব্বুর সাথে কথা বলতে এসেছে শ্রাবন, আঙ্কেল বলে দিয়েছেন তোর সিদ্ধান্তই উনার সিদ্ধান্ত
–হুম
–কি হুম হুম করছিস
–যাতো একা থাকতে দে
–থাক একা

রিয়া রাগ করে চলে গেছে আর ভালো লাগছে না এসব আব্বুকে বলে আগামীকালই এই শহর ছেড়ে চলে যাবো
–তমা
–হুম (শ্রাবন এসেছে)
–আর একটা সুযোগ কি দেওয়া যায় না, তোমার আব্বুও জানিয়ে দিয়েছেন তোমার সিদ্ধান্তই উনার সিদ্ধান্ত
–দেখ শ্রাবন যা হবার হয়ে গেছে এখন নিপা সুস্থ হয়েছে আমি চাই তুমি ওকে বিয়ে করো আর আমি আগামীকাল এখান থেকে চলে যাচ্ছি
–চলে যাচ্ছ মানে কোথায় যাইবা
–কোথায় যাবো জানিনা তবে এই শহর ছেড়ে চলে যাবো
(কথাটা বলার সাথে সাথে শ্রাবন আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরলো অঝরে কাঁদছে ও আর দুই হাত জোর করে বলতে লাগলো)
–তমা প্লিজ এতো বড় শাস্তি আমাকে দিও না আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া একটা সুযোগ অন্তত দাও প্লিজ
–কি করছ তুমি উঠে দাড়াও
–না বল তুমি আমাকে ছেড়ে যাইবা না
আর কিছু না বলে ওকে এই অবস্থায় রেখেই রুমে এসে শুয়ে পড়লাম

সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম, আজ আমি সবার জন্য নাস্তা বানালাম তারপর সবাইকে ডেকে ডাইনিং এ আনলাম, নাস্তা খেতে খেতে আব্বুকে বললাম
আমি: আব্বু আমি আজকেই এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছি
আব্বু: (নিশ্চুপ)
আমি: আব্বু কথা বলছ না কেন
আব্বু: আমার কিছু বলার নেই
আমি: কেন
রিয়া: বুঝছিস না কেন আঙ্কেলও চাইছেন তুই শ্রাবনকে ক্ষমা করে দে
আমি: আব্বু তুমি কি এটাই চাইছ (আব্বু কিছু না বলে খাবার না খেয়েই উঠে রুমে চলে গেলেন)
রিয়া: তমা বুঝার চেষ্টা কর শ্রাবন তোকে ভালো না বাসলে এতোকিছুর পরো ফিরে আসতো না
আমি: এতো যে বুঝিস এইটা বুঝিস না কেন ও নিপা কে কি করবে
রিয়া: তমা….
আমি: রিয়া বাদ দে তুই আমার সাথে আপাদত যেখানে যাচ্ছি সেখানে চল আর পিয়াস কে ফোন করে বল তোকে নেওয়ার ব্যবস্থা যেন করে
রিয়া: হুম
আমি: তুলি আব্বু আর তোর জিনিসপত্র গুছিয়ে নে আমরা বিকেলে চলে যাবো
তুলি: আপু
আমি: কি তুইও এখন জ্ঞান দিবি আমাকে
তুলি: না বলেই উঠে চলে গেলো সাথে রিয়াও চলে গেলো
সবাই আমার সাথে এমন করছে কেন, এমন মনে হচ্ছে যে আমি সব দোষ করেছি কিন্তু এখানে তো কারো দোষ নেই

বিছানায় বসে বসে কাপড়চোপড় গুচাচ্ছি তখন হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো, বের হয়ে দেখি ড্রইংরুমে হৃদয় বসা, বুঝলাম না এই ছেলে আমার বাসা চিনল কি করে আর হসপিটাল থেকেই বা এতো তাড়াতাড়ি রিলিজ নিল কেন, এসব ভাবতে ভাবতে ড্রইংরুমে গেলাম
–আপু কেমন আছেন
–ভালো তুমি
–ভালো
–আমার বাসা চিনলে কিভাবে
–কষ্ট করে চিনে নিলাম
–হঠাৎ আমার বাসায় কোনো প্রয়োজন
–বিকেলে চলে যাচ্ছি এখান থেকে তাই ভাবলাম আপনার সাথে দেখা করে যাই
হৃদয়ের সাথে বসে গল্প করছি হঠাৎ কারো বাহ বাহ কথা শুনে দরজার দিকে থাকালাম, শ্রাবন আগুনের মতো চোখ করে আমার দিকে থাকিয়ে আছে
–এজন্যই তো বলি আমার কাছে ফিরে আসছ না কেন
–মানে
–খুব সহজ নতুন কাউকে পেয়ে গেছ তাই আমাকে ক্ষমা করতে পারছ না (কথাটা শুনে খুব রাগ উঠলো চিৎকার করে বললাম)
–এই ছেলেকে দেখে কি তোমার তাই মনে হয় ও তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো আর তুমি এসব ভাবছ
–হ্যা ভাবছি নাহলে তুমি আমার কাছে ফিরে আসছ না কেন, আসলে এই ছেলের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে
–এতোটাই রাগ উঠলো ঠাস করে ওর গালে একটা তাপ্পর মেরে চিৎকার করে বললাম নিজে যেমন আমাকেও তেমন ভাবছ, আমার চিৎকার শুনে ততোক্ষণে আব্বু রিয়া তুলি সবাই ড্রইংরুমে এসে পরলো, সবার সামনে এভাবে তাপ্পর দেওয়া উচিত হয়নি ও কিছু না বলে আমার দিকে একবার থাকিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো, আমি দফ করে সোফায় বসে পরলাম কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারছি না, যাকে ভালো রাখার জন্য এতোকিছু করলাম তাকেই আমি তাপ্পর দিলাম
রিয়া: তমা এখন একটু বেশিই করে ফেলেছিস এভাবে সবার সামনে ওকে অপমান না করলেও পারতি
হৃদয়: আমার জন্য সব হলো
রিয়া: ওর দোষটা শুধু দেখলি ভালোবাসা দেখলি না ও তোকে ভালো না বাসলে অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে রেগে যেতো না
আব্বুর দিকে থাকালাম আমার দিকে কিছুক্ষণ থাকিয়ে রুমে চলে গেলেন, এখনো আমিই দোষী আর ও যে আমার ভালোবাসা কে অপমান করলো এইটা কিছু না, এতো ভালোবাসি ওকে আর ও কিনা ভাবলো এই ছোট ভাইয়ের বয়সী ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে তাপ্পর দিয়েছি বেশ করেছি

আর বেশিক্ষণ দেরি করলাম না এখানে যতো বেশি সময় থাকবো ততোই অশান্তি বাড়বে তাই আধাঘণ্টার ভিতরে সবাইকে রেডি হতে বললাম, আমিও রেডি হয়ে নিলাম হৃদয়ও রয়েছে একসাথে বেরুবো তাই

সবার মুখ মলিন কিছু করার নেই বেড়িয়ে পরলাম সবাইকে নিয়ে…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২০

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২০

লেখিকা: সুলতানা তমা

ছেলেটির সামনে বসে আছি, ছেলেটির জ্ঞান হয়তো একটু আগে ফিরেছে, হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আর আমি চেয়ারে বসা
ছেলেটি: আপু আমি আপনার সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা আবার অনেক কিছুই জানি মানে ডক্টর যতোটুকু বলেছে ততোটুক জানি
আমি: তোমার নাম জানতে পারি
ছেলেটি: আমি হৃদয়
আমি: আমাকে চিনো কিভাবে
হৃদয়: চিনতাম না হসপিটালে এসে ডক্টর এর কাছ থেকে আপনার সম্পর্কে জেনেছি
–কি কি জেনেছ
–অনেক কিছু তারমধ্যে মজার বিষয় যেটা জেনেছি তা হলো আমরা দুজন এক পথের পথিক
–মানে বুঝলাম না
–মানে হলো আপনি ভালোবাসেন শ্রাবন ভাইয়া কে আর উনি অন্য কাউকে, আমি ভালোবাসি নিপা কে আর ও অন্য কাউকে
–যা আন্দাজ করেছিলাম তাই সত্যি তুমি নিপা কে ভালোবাস
–হুম তিন বছর যাবত ওকে ভালোবাসি কিন্তু ও আমাকে কখনো ভালোবাসেনি কারন আমি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম
–ছিলাম বলতে এখন কি নেই…?
–না নেই এক বছর হলো ও আমার সাথে যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে কারন আমি ওকে বার বার ভালোবাসি বলে ডিস্টার্ব করি
–নিপা অসুস্থ জানো কিভাবে
–নিপা আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে আমি না, ওর সব খুঁজ আমি রাখি ওদের রিলেশন যখন হয়েছে তখন আমি জানতে পেরে ওর খুঁজ রাখা বন্ধ করে দেই, দুদিন আগে হঠাৎ ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয় তাই ফোন দেই তখনি ওর ছোট বোন জানায় নিপা হসপিটালে তারপর এখানে আসা
–সবই তো বুঝলাম কিন্তু কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে কেন….?
–সিদ্ধান্তটা এমন ছিল না ডক্টর এর কাছে এসেছিলাম নিপার অবস্থা জানতে তখন উনি আমাকে আপনার সম্পর্কে বলেন আর আপনার সম্পর্কে জেনেই আমি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই
–কেন…?
–আপনি যদি আপনার ভালোবাসার মানুষ কে ভালো রাখার জন্য তার প্রিয়জন কে কিডনি দিতে পারেন তাহলে আমি কেন আমার ভালোবাসার মানুষ কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কিডনি দিতে পারবো না
–এজন্য দিয়েছ
–হ্যা, আমি এতোটা মহান ছিলাম না ডক্টর এর কাছে আপনার ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা দেখে আমি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই আর ডক্টর কে নিষেধ করে দেই আপনার কিডনি না নিতে
–হুম বুঝলাম একটা প্রশ্ন করতে পারি….?
–জ্বী অবশ্যই
–নিপা কে এখনো চাও…?
–কেউ কি ভালোবাসার মানুষ কে হারাতে চায়….?
আমিও হারাতে চাইনা ও যদি নিজে থেকে ফিরে আসে তাহলে অবশ্যই চাই আর যদি….
–হুম বুঝেছি, তো নিপাকে কি জানাবা না কিডনি যে তুমি দিয়েছ
–না থাক আমি দূর থেকেই নাহয় ভালবাসি
–হুম
–হুম
–আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও আমি আবার আসবো এখন যাই
–ঠিক আছে আপু

কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসলাম ভাবছি নিপা কে দেখতে যাবো কিনা হঠাৎ সামনে এসে কে জেনো দাঁড়াল থাকিয়ে দেখি শ্রাবন
–তমা তুমি এখানে
–(এখন কি বলি হৃদয়ের কথা তো বলা যাবে না)
–কি হলো চুপ হয়ে আছ যে
–এইতো নিপাকে দেখতে আসছি
–ঠিক আছে চলো

শ্রাবনের সাথে নিপার কেবিনের দিকে যাচ্ছি, যতো কেবিনের কাছে এগুচ্ছি ততোই যেন বুকে চিনচিনে ব্যাথা বাড়ছে, জানিনা নিপা কি থেকে কি বলে আমাকে দেখে

নিপার কেবিনে ঢুকে দেখি ও ঘুমিয়ে আছে নিপার বোন আর মা পাশে বসা, যাক এবারের মতো বেচে গেলাম নিপা কিছু বলবে এই টেনশন তো আর নেই, তাড়াতাড়ি শ্রাবন কে বললাম
–নিপা তো ঘুমিয়ে আছে আমি নাহয় পরে আবার আসবো এখন যাই
–বাসায় যাইবা
–হুম
–চলো আমিও যাবো
–থাক আমি একা যেতে পারবো
–আমি কি বলেছি একা যেতে পারবা না এতো বেশি কথা বল কেনো, চলো
–হুম

রিক্সায় শ্রাবনের পাশে বসে আছি, কি আজব আগে এই মানুষটা আমার কতো আপন ছিল আর এখন পাশে বসতেও মনে হয় অন্য কারো পাশে বসে আছি
–তমা (হঠাৎ শ্রাবনের ডাকে ওর দিকে থাকালাম)
–হুম
–ভুল শুধরানোর একটা সুযোগ দিবা
–কি ভুল
–ভুল নাকি অন্যায় তা জানিনা কিন্তু আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই
–কিসের ভুল আর কিসের অন্যায়
–নিপার সাথে আমার সম্পর্ক করা ঠিক হয়নি জানি এইটা ভুল করেছি নাকি অন্যায় করেছি জানিনা এখন শুধু একটা সুযোগ দাও প্লিজ আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই
–(নিশ্চুপ)
–তমা প্লিজ বিশ্বাস কর আমি তোমাকে যেমন ভালোবাসতাম এখনো তেমন ভালোবাসি মধ্যে তোমার পাশে নিপা কে একটুখানি জায়গা দিয়েছিলাম, নিপা থাকা অবস্থায়ও আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি সারাক্ষণ তোমার কথা ভাবতাম তাই নিপা আমাকে ভুল বুঝতো এখন তুমিই বলো আমি কাকে বেশি ভালোবাসি
–বাসায় চলে এসেছি
–বলে যাও
–না বলাই থাক (মৃদু হেসে বাসায় চলে আসলাম)

সন্ধ্যা নেমে এসেছে আকাশে দুইএকটা তারা উঠেছে, মৃদু বাতাসের মধ্যে বারান্দায় চোখ দুইটা বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি, মাথায় নানান কথা ঘুরপাক খাচ্ছে
পৃথিবীর নিয়ম বড়ই অদ্ভুত আমি ভালোবাসি শ্রাবনকে আর ও নিপাকে, হৃদয় ভালোবাসে নিপাকে আর ও শ্রাবনকে
যদি এমন উলটপালট নাহয়ে দুইটা জুটি হতো তাহলে কতো ভালো হত
আচ্ছা শ্রাবন যে বলে ও আমায় এখনো ভালোবাসে, সত্যিই কি ভালোবাসে…..?

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৯

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

শ্রাবন: তমা তুমি
আমি: অভাক হচ্ছ কেন আসতে পারি না নাকি
শ্রাবন: না আসলে তুমি তো কাজে গিয়েছিলে
আমি: হুম কাজ শেষ তাই চলে এসেছি
(নিপা আস্তে আস্তে চোখ খুলে আমাদের দিকে থাকালো, শ্রাবন মৃদু হেসে নিপার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল)
নিপা: আপু আপনি খুব ভাগ্যবতী
আমি: মানে
নিপা: সুস্থ হয়ে মানেটা বলবো এখন কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে (লক্ষ করলাম মেয়েটির চোখ বেয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পরলো, নিজের কাছে কেমন যেন লাগছে মেয়েটার চোখের পানির জন্য আমি দায়ী নইতো)
শ্রাবন: তমা কি হল কি ভাবছ
আমি: হুম কিছু না
রিয়া: তমা বাইরে চল
আমি: হুম

রিয়া আমাকে নিয়ে কেবিনের বাইরে আসলো
রিয়া: কিরে কি হইছে তোর হঠাৎ এমন চুপ হয়ে গেলি
আমি: নিপা কাঁদছিল আমি লক্ষ করেছি ওর কান্নার জন্য তো আমিই দায়ী
–আমি বুঝি না সবসময় নিজের উপরেই দোষ টেনে নিস কেন
–দোষ টেনে নিলাম কোথায়
–নিপা তোকে ভাগ্যবতী কেন বলেছে বুঝেছিস
–নাহ
–কারন ও বুঝেছে শ্রাবন যে তোকে ভালোবাসে
–(মৃদু হাসলাম)
–হাসছিস কেন
–এমনি
–শ্রাবন তোকে ভালোবাসে এইটা বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো
–হতেও পারে
–একদিন ঠিক বুঝতে পারবি ও যে শুধু তোকেই ভালোবাসে তখন বুঝেও লাভ হবে না
তমা (ডাক শুনে পিছনে থাকালাম শ্রাবন এসেছে)
–হুম বল
–নিপার সাথে আমার একসময় রিলেশন ছিল তাই আমার কর্তব্য ছিল ওর বিপদে পাশে দাঁড়ানো এখন ও সুস্থ তাই আমি তোমাকে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চাই
–সব কি তোমার ইচ্ছেতেই হবে আমার ইচ্ছের কোনো মুল্য নেই
–আমি কি তা বলেছি
–না আমি এখন বিয়ে করবো না আর তোমাকে তো একদমই না
–কেন অন্য কাউকে বিয়ে করার চিন্তা করছ নাকি
–হয়তো
–(ঠাস)
–মারলা কেন
–তো কি তোমাকে আদর করবো অন্য কাউকে বিয়ে করার চিন্তা করলে খুন করে ফেলবো বলেই হনহন করে চলে গেলো

গালে হাত দিয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে থাকিয়ে আছি হঠাৎ রিয়ার হাসিতে হুশ ফিরলো
–হাসছিস কেন
–তুই না বলিস ও তোকে ভালোবাসে না তাহলে তাপ্পর মারলো কোন অধিকারে, অন্য কাউকে বিয়ে করবি শুনে এতো রেগে গেলো কেন
–জানিনা চল আমার সাথে
–কোথায়
–চল

রিয়া কে নিয়ে ডক্টর এর চেম্বারে আসলাম
–চাচ্চু আসবো
–হ্যা আসো মা
–চাচ্চু….
–আমি জানি তুমি কেন এসেছ কিন্তু এখনো যে সময় হয়নি সবকিছু বলার
–হুম
–সময় হলে আমিই সব বলবো তোমার আসতে হবে না
–ঠিক আছে আসি তাহলে
–ওকে

চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসলাম, হাটছি আর ভাবছি কে এমন কিডনি দিয়েছে যে আমাকে এখন বলা যাবে না
–কিরে তমা কি ভাবছিস
–ভাবছি নিপা কে কিডনি কে দিলো
–যেই দেয় তাতে তোর কি নিপা সুস্থ হইছে এখন বিয়েটা করে নে
–রিয়া তুইও
–হুম আমিও
–চুপ থাক তো কথা বলতে ভালো লাগছে না
–ওকে

বাসায় চলে আসলাম অজতা হসপিটালে থেকে কি করবো আমার তো আর ওখানে প্রয়োজন নেই, নিপা ভালো হয়ে গেছে শ্রাবন খুশি আর কি চাই,

বারান্দায় বসে আছি হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখি শ্রাবন রিসিভ করলাম না কেটে দিলাম, বার বার কল দিচ্ছে আর আমি কেটে দিচ্ছি শেষে বিরক্ত হয়ে রিসিভ করলাম
–কি হইছে এভাবে ফোন দিচ্ছ কেন
–সরি
–কেন
–তাপ্পর দেওয়ার জন্য
–তাপ্পর দিয়েছ ভালো করেছ রাগ করিনি খুন করে ফেললে আরো বেশি খুশি হতাম
–কি বলছ এসব
–যা শুনেছ তাই
–এমন করছ কেন বুঝতেছি না
–তোমার নিপা সুস্থ হয়ে গেছে আমাকে আর ফোন না দিলে খুশি হবো
–ঠিক আছে আর ফোন দিব না বাসা তো পাশাপাশি সামনে গিয়ে কথা বলবো
–বাসায়ও আসবা না
–আমার শশুড়ের বাসায় আমি যাবো তাতে তোমার কি
–দুর
ফোন কেটে দিলাম এসব ফাজলামো ভালো লাগছে না ইচ্ছে হচ্ছে দূরে কোথাও চলে যাই
–তমা (ডাক শুনে থাকালাম আব্বু এসেছেন)
–আসো আব্বু
–কি করছিস
–এইতো বসে আছি
–কথা ছিল
–বল
–শ্রাবন বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিল….
–আব্বু তুমি তো সব জানো
–হ্যা কিন্তু শ্রাবন তো তোকে বিয়ে করতে চাইছে
–অন্য মেয়েকে কষ্ট দিয়ে ও আমাকে বিয়ে করবে এতে কি আমি সুখি হবো
–তুই কি….
–আমি ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছি নাহ খুব শীঘ্রই এখান থেকে আমরা চলে যাবো
–ঠিক আছে

আব্বু চলে গেলেন চোখ দুইটা বন্ধ করে বসে আছি হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো, হাতে নিয়ে দেখি ডক্টর রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–হসপিটালে আসতে পারবে মা
–কেন চাচ্চু
–জানতে চেয়েছিলে না কে কিডনি দিয়েছে
–হ্যা
–যে ছেলেটি কিডনি দিয়েছে সে তোমার সাথে কথা বলতে চায়
–ছেলে, কোন ছেলে…?
–বলেছিলাম না পৃথিবীতে স্বার্থহীন ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছুই নেই, এই ছেলেও স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসে
–কাকে ভালোবাসে আর এই ছেলেই বা কে
–তুমি আস কথা বল সব জানতে পারবে
–ঠিক আছে আসছি

ফোন রেখে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরুলাম, রিক্সায় বসে আছি আর ডক্টর এর বলা কথাগুলো ভাবছি, কে এই ছেলে কাকে ভালোবাসে এতোই স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসে যে কিডনি দিয়ে দিল, মাথায় অনেক গুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো কে এই ছেলে….?

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৮

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

ডক্টর এর চেম্বারে বসে আছি কিন্তু ডক্টর আসার নাম নেই একজন নার্স বললো অপারেশন করছেন নাকি ডক্টর, বসে বসে ডক্টর এর জন্য অপেক্ষা করছি আর একটু পর কি হতে চলেছে আনমনে হয়ে ভাবছি হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখি শ্রাবন, রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–তমা তুমি কোথায়
–বলেছিলাম না অন্য জায়গায় যাবো চলে এসেছি
–আমাকে না বলে
–গত রাতে তো বলেছি
–হুম নিপা কে দেখতে আসবা না
–দুদিন পর তো ফিরে আসবো তখন নাহয় দেখবো
–আর যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়
–কিছু হবে না ভয় পেয়ো না আল্লাহর উপর ভরসা রাখো
–হুম
–আচ্ছা এখন রাখি কাজ আছে
–ওকে

তাড়াতাড়ি ফোনটা রেখে দিলাম গলাটা কেমন যেন ধরে আসছে আর একটু কথা বললে হয়তো চোখ থেকে পানি পরতো কিন্তু আমার কান্না যে ওদের বুঝতে দেওয়া যাবে না

অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি আর ডক্টর এর জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু কোনো খুঁজ নেই বুঝতে পারছি না ডক্টর তো বলেছিল সকাল ১০টায় অপারেশন করবে আর তো বেশি সময় নেই

প্রায় ১০টা বেজে গেছে কিন্তু ডক্টর আসছে না কি করবো বুঝতেছি না হঠাৎ আবার ফোনটা বেজে উঠলো, আবার শ্রাবন ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–তমা একটু পর নিপার অপারেশন হবে দোয়া করো
–অপারেশন হবে মানে
–চমকে উঠছ কেন জানই তো আজ ওর অপারেশন হবে
–কিন্তু কিডনি কোথায় পেলে
–আজব এমন সব কথা বলছ মনে হচ্ছে তুমি কিছুই জাননা, ডক্টরই তো কিডনি পেয়েছে
–কিন্তু
–তমা তুমি ঠিক আছ তো
–হ্যা আচ্ছা এখন রাখি
–ওকে

এইটা কি হলো বুঝতে পারছি না কিডনি দেওয়ার কথা আমার অথচ অপারেশন হয়ে যাচ্ছে তাহলে কিডনি দিল কে, মাথায় কিছু আসছে না কে কিডনি দিতে পারে নাকি কিডনি কিনতে পাওয়া গেছে কিন্তু এক রাতে পাওয়া কিভাবে সম্ভব যেখানে শ্রাবন তিনদিন খুঁজেও পায়নি, ডক্টরও তো আমাকে কিছু জানায়নি

প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেলো বসে বসে এসব ভাবছি কিন্তু কোনো কিছুর আগাগোড়া খুঁজে পাচ্ছি না মাথায় অনেক প্রশ্ন কিডনি কে দিলো যদি কিনতে পাওয়া যায় তাহলে এক রাতে কিভাবে সম্ভব….?
ফোনের রিংটোনে হুশ ফিরলো শ্রাবন ফোন দিয়েছে রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে
–আলহামদুলিল্লাহ্‌
–আচ্ছা তখন তুমি উল্টা পাল্টা বলছিলে কেন
–আসলে কাজে আছি তো মাথাটা ঠিক নেই
–বাসায় কবে আসবা
–জানিনা নিপার জ্ঞান ফিরলে জানিয়ো রাখি এখন
–ওকে

কি যে হচ্ছে মাথায় কিছু ঢুকছে না সবকিছু কেমন যেন রহস্যের মতো লাগছে, এতো তাড়াতাড়ি কিডনি পাওয়া গেলো অপারেশনও হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না

ডক্টর এর চেম্বারে বসে বসে রহস্য খুঁজছি হঠাৎ দেখলাম ডক্টর আসছেন হাসি হাসি মুখ, উনি এসে চেয়ারে বসতেই একসাথে প্রশ্ন করা শুরু করলাম
–চাচ্চু কিডনি কোথায় পেলেন অপারেশন যে হয়ে গেলো, একরাতে সবকিছু কিভাবে সম্ভব আর কিডনি পাওয়া গেছে আমাকে জানাননি কেন
–শান্ত হও একসাথে এতো প্রশ্নের উত্তর দিবো কিভাবে
–ঠিক আছে বলুন
–গতকাল রাতে তোমার সাথে কথা বলে ফোন রাখার পর জানতে পারি কিডনি পাওয়া গেছে তোমাকে জানাইনি ভেবেছি অপারেশন করে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো
–কিন্তু কিডনি দিল কে
–সেটা নাহয় অজানায় থাকুক
–না না চাচ্চু আমি জানতে চাই সবকিছু তে কেমন যেন রহস্য আছে
–হ্যা আছে কিন্তু বলা যাবে না নিষেধ আছে
–কার নিষেধ
–যে কিডনি দিয়েছে
–কিন্তু আমার যে জানাটা প্রয়োজন
–সময় হলে আমিই বলবো
–ঠিক আছে নিপার কি অবস্থা
–৬-৭ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে চিন্তা করো না
–হুম
–একটা কথা জানতো মা পৃথিবীতে স্বার্থহীন ভালোবাসার চেয়ে বড় আর কিছু নেই আমার মতে অন্যরা কে কি ভাবে জানিনা
–হঠাৎ এই কথা
–সময় হলে সবই বুঝতে পারবে
–হুম
–আমি বলি কি তুমি বরং নিপার কেবিনে যাও সবাই আছে ওখানে
–কিন্তু ওরা তো জানে আমি দুদিনের কাজে শহরের বাইরে আছি
–তাহলে আরো কিছুক্ষণ পর যাও আর বলবে কাজ শেষ নিপা কে দেখার জন্য চলে এসেছ
–ঠিক আছে

হসপিটালেই সারাটা সকাল কাটিয়ে দিলাম, রহস্য খুঁজতে খুঁজতেই সকালটা কেটে গেলো, এর মধ্যে শ্রাবন ফোন করে জানিয়েছে নিপার জ্ঞান ফিরেছে, বিকেলের দিকে রিয়া কে ফোন করে নিপার কেবিনে আসতে বললাম আমিও গেলাম ওখানে, কেবিনের সামনে নিপার আম্মু আর বোন বসা ভাবছি শ্রাবন কোথায় তখনি নিপার বোন এসে বললো শ্রাবন কেবিনের ভিতরে, ভাবছি যাবো কি যাবোনা ওদের ডিস্টার্ব করা কি ঠিক হবে এসব ভেবে আর ভিতরে গেলাম না বাইরে বসে রইলাম, কিছুক্ষণ পর রিয়া চলে আসলো
–কিরে তমা বাইরে বসে আছিস যে
–ভিতরে শ্রাবন
–তো কি হইছে
–না মানে ওদের ডিস্টার্ব করা কি ঠিক হবে
–হঠাৎ গেলেই তো বুঝা যাবে শ্রাবন কাকে ভালোবাসে
–মানে
–তোর এতো বুঝতে হবে না চল আমার সাথে

আমার হাত ধরে টানতে টানতে রুমের ভিতরে নিয়ে গেলো নিপা শুয়ে আছে শ্রাবন পাশে চেয়ারে বসা, আমাকে দেখেই শ্রাবন চমকে উঠলো হয়তো আমার এভাবে হুট করে আসাটা ঠিক হয়নি, নিপা তো আমাকে চিনে না এখন কি বলবে আর এই অবস্থায় নিপা কে সত্যিটা কিভাবে বলবে এসব ভেবেই হয়তো চমকে উঠেছে…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৭

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

কলিংবেল এর শব্দ শুনেও গেলাম না ইচ্ছে হচ্ছে না রুমেই শুয়ে রইলাম, একটু পর আমার রুমে কারো আসার শব্দ পেলাম থাকিয়ে দেখি শ্রাবন, একদম শুকিয়ে গেছে হয়তো নিপার চিন্তায়, কিছু না বলে ওর দিকে থাকিয়ে আছি ও এসে আমার পাশেই খাটে বসলো
–তমা
–হুম
–এই অসময়ে শুয়ে আছ যে
–এমনি
–আমি খুব স্বার্থপর তাই না
–হঠাৎ এই কথা কেন
–এইযে নিপার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে তোমার কোনো খুঁজ নেইনি
–(মৃদু হাসলাম)
–নিপা সুস্থ হলে ওকে জিজ্ঞেস করো আমি কাকে বেশি ভালোবাসি
–থাক না এখন এসব কথা
–কিন্তু তুমি যে আমায় ভুল বুঝে বসে আছ
–নাতো
–বিশ্বাস করো আমি তোমাকেই ভালোবাসি তোমার পাশে নিপাকে একটুখানি জায়গা দিয়েছিলাম শুধু
–বাদ দাও তো এখন এসব কথা
–হুম

দুজনেই চুপচাপ হয়ে আছি, আমি দেয়াল ঘড়িটার দিকে থাকিয়ে আছি আর ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে, কিছুক্ষণ পর ও আমার মাথার পাশে এসে বসলো আমার মাথা ওর কোলে নিয়ে আমার দিকে থাকিয়ে রইলো, আজকে ওর কোলে শুতে কেমন যেন লাগছে ও যে এখন আর আমার নেই তাই হয়তো

ওর কোলে চুপ করে শুয়ে আছি হঠাৎ আমার গালে এক ফোটা পানি পড়ল চমকে উঠে ওর দিকে থাকালাম পাগলটা কাঁদছে, লাফ দিয়ে উঠে বসে জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে কিছু না বলে আমার দুগালে ধরে কপালে একটা মায়া দিল তারপর আমাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো, পাগলটার সামান্য কষ্ট সহ্য করতে পারি না চোখের পানি কিভাবে সহ্য করবো, আমিও কাঁদতে কাঁদতে ওর দুগালে ধরে জিজ্ঞেস করলাম
–কি হইছে এভাবে কাঁদছ কেন
–তমা বিশ্বাস কর আমি তোমাকে ভালোবাসি
–তাই বলে এভাবে কাঁদবা
–তুমি তো বলেছ নিপা সুস্থ হলে আমাকে ছেড়ে চলে যাইবা আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না
–আচ্ছা এখন এসব নিয়ে ভাবছ কেন নিপার অপারেশন করাতে হবে তো
–হুম করাবো মানবতার কারনে কিন্তু আমি ভালোবাসি তোমাকে, তুমি ছিলে না ফিরে পাবো না তাই তোমার পাশে নিপাকে একটু জায়গা দিয়েছিলাম বিশ্বাস করো আমার সবকিছু জুরে তুমি আছ
–হুম
–নিপার সাথে তো ব্রেকাপ হয়ে গেছিল আমি ভুলেও গিয়েছিলাম তুমি ফিরে এসেছ এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার আর কি হতে পারে
–শ্রাবন এখন এসব কথা বাদ দাও নিপার অপারেশন করাও
–হুম
–এই নাও টাকা (টাকা এনে ওর হাতে দিলাম)
–টাকা দিলে আগামীকাল সকালেই অপারেশন করবে ডক্টর বলেছে
–ঠিক আছে করাও টাকা আরো লাগলে বলো আর আমি হসপিটালে থাকতে পারবো না এতিমখানার কাজে দুদিনের জন্য বাইরে যাবো
–মানে
–যা শুনেছ তাই ফোন করবো সবসময়
–না গেলে হয়না
–নাহ
–হুম
–এখন যাও অপারেশন এর ব্যবস্থা করো
–হুম

শ্রাবন চলে গেলো নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকলাম, আমি তো এমন কিছু চাইনি চেয়েছিলাম দুজনের ছোট্ট একটা সংসার হবে অন্য কিছুর অভাব থাকলেও ভালোবাসার অভাব থাকবে না আর এখন কিনা দুজনকেই কাঁদতে হচ্ছে, নিপা সুস্থ হলে এসব জানলে পর হয়তো তিনজন কেই কাঁদতে হবে, কিন্তু আমার কান্না যে ওদের দেখানো যাবে না ওদের কে সুখে রাখতে হলে নিজেকে পাথর বানাতে হবে, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ডক্টর ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–তুমি চাইলে আগামীকাল সকাল ১০টায় অপারেশন করবো যতো তাড়াতাড়ি করা হবে ততোই ভালো হবে
–ঠিক আছে আমি সকালে চলে আসবো
–ওকে

ফোনটা রাখার পর ভিতরে কেমন যেন এক অজানা ভয় হচ্ছে যদি আমার কিছু হয়ে যায় কি হবে আব্বু আর তুলির ওদের ভরসা তো এখন আমি কি হবে রিয়া পাগলীটার ও যে আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না
–আম্মু আসবো (দরজায় থাকিয়ে দেখি আব্বু এসেছেন)
–আসো
–কিরে মন খারাপ
–হুম একটু
–কেন
–আমি এখন তোমার কাছে যেতাম
–কেন কোনো প্রয়োজন
–হ্যা
–বল
–আব্বু এতিমখানার কাজে দুদিনের জন্য একটু শহরের বাইরে যেতে হবে (এতো বড় মিথ্যে আব্বুকে বলতে গিয়ে গলা কেঁপে কেঁপে উঠছে)
–তুই না গিয়ে অন্য কেউ গেলেও তো হয়
–আমাকেই যেতে হবে আব্বু
–একা একা যাবি…
–কিছু হবে না ফোন করবো বার বার
–ঠিক আছে কখন যাবি
–সকালে
–আচ্ছা
আরো কিছুক্ষণ আব্বু আর আমি গল্প করলাম তারপর আব্বু চলে গেলেন, এতোক্ষণ আব্বুর সামনে খুব কষ্ট করে চোখের পানি আটকে রেখেছিলাম এখন আর পারছি না, অনেকদিন হলো আম্মুর ছবিটা জরিয়ে ধরে কাঁদি না তাই আম্মুর ছবিটা আলমারি থেকে বের করে আনলাম, এক দৃষ্টিতে ছবিটার দিকে থাকিয়ে আছি এই আম্মুটা বেঁচে থাকলে হয়তো আমার জীবনে এতো কষ্ট আসতো না, আম্মুর ছবিটা জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারিনি

সকালে খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো, উঠে ফ্রেশ হয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করলাম, কিছুটা ভয়ও হচ্ছে তাও যে আমাকে যেতেই হবে

রেডি হয়ে রিয়া কে কোনো ভাবে বুঝিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৬

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

–তমা এই তমা (হঠাৎ রিয়ার ডাকে হুশ ফিরলো)
–কিরে তমা তোকে খুশি খুশি লাগছে
–হুম কারন কিডনির ব্যবস্থা হয়ে গেছে
–আমি বুঝতে পারছি না যে মেয়ের জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো সেই মেয়েকেই বাঁচানোর জন্য এতো চেষ্টা কেন করছিস
–তুই বুঝবি নারে
–হুম আমি তো পিচ্ছি কিছু বুঝি না তা কিডনি কোথায় পেলি
–পেয়েছি এখন বলা যাবে না আগে নিপার অপারেশন হউক
–এই তোর মতলব কি বল তো কিডনি কোথায় পেলি সত্যি করে বল
–সময় হলে বলবো এখন যা একা থাকতে দে
–হুম

রিয়া চলে গেলো, সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম নিপাকে একটি কিডনি দিব তাতে নিপাও বাঁচবে শ্রাবনকে নিয়ে আমিও বাঁচবো আব্বু আর তুলিকে নিয়ে কিন্তু আমি কিডনি দিব শুনলে তো কেউ রাজি হবে না তাহলে দিব কিভাবে
না কাউকে বলা যাবে না এমনকি শ্রাবনকেও না, আগে ডক্টর এর সাথে কথা বলি সব ঠিক করি তারপর দেখা যাবে, সময় খুব অল্প যত তাড়াতাড়ি অপারেশন করা হবে ততোই ভালো

নিপার চিকিৎসা যে ডক্টর করছেন উনার সামনে বসে আছি
ডক্টর: সব তো শুনলাম মা কিন্তু
আমি: চাচ্চু প্লিজ কোনো কিন্তু না আর আমি তো কাউকে খুন করতে চাইছি না একটি প্রাণ বাঁচাতে চাচ্ছি
–তা ঠিক তাও মা এভাবে একজন কে বাঁচাতে গিয়ে অন্যজন কে…..
–আমি তো আর মারা যাবো না দুটি কিডনি নিয়ে দুজন বেঁচে থাকবো
–ঠিক আছে আমি দেখছি
–চাচ্চু প্লিজ বিষয়টা যেন লোকানো থাকে আমার পরিবারের কেউ জানলে কিডনি দেওয়া আর হবে না
–তোমাকে তো নিম্নেও দুদিন হসপিটালে ভর্তি থাকতে হবে তাহলে লুকিয়ে কিভাবে সম্ভব
–এসব আমি ব্যবস্থা করবো আপনি শুধু অপারেশন এর ব্যবস্থা করুন আর শ্রাবনকে বলুন কিডনি আপনি পেয়েছেন
–ওকে
–সব ব্যবস্থা করে আমাকে জানিয়ে দিবেন কখন হসপিটালে এসে ভর্তি হতে হবে
–ঠিক আছে মা
–আসি চাচ্চু

হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসলাম, রিক্সায় বসে আছি আর ভাবছি আমি কোনো ভুল করছি না তো….?
ভুল হবে কেন একজন মানুষের প্রাণ বাঁচানো কি কোনো অপরাধ নাকি, আমি তো কোনো অপরাধ করছি না একজন কে বাঁচাবো তাতে একজন মা তার সন্তান কে ফিরে পাবে, একজন বোন তার বড় বোনকে ফিরে পাবে, আর একজন প্রেমিক ফিরে পাবে তার ভালোবাসা, সবাই ভালো থাকবে এর চেয়ে ভালো কিছু আর আছে নাকি, নাহ এই কাজে কোনো ভুল হবে না কিন্তু বাসায় কি বলবো দুদিন যে হসপিটালে থাকতে হবে আমাকে

বাসায় এসে শুয়ে পরলাম ভালো লাগছে না কিছু, হঠাৎ তুলি আসলো
–আপু এই সময় শুয়ে আছ যে
–এমনি
–আপু একটা কথা
–বল
–আমি আবার স্কুলে ভর্তি হতে চাচ্ছি
–ঠিক আছে ভর্তি করে দিব
–আপু তোমার কি হইছে
–কই কি
–একদম চুপচাপ হয়ে গেছ
বেশি মহান হতে গেলে এমনই হয় (কথাটা শুনে দরজায় থাকালাম রিয়া এসে হাজির)
রিয়া: আর কতো মহান হবি
আমি: রিয়া এভাবে বলছিস কেন
রিয়া: তো কি বলবো শ্রাবন যেহেতু বলছে ও তোকেই ভালোবাসে তাহলে কেন নিপার হাতে তুলে দিতে চাচ্ছিস
আমি: তোরও বিশ্বাস হয় শ্রাবন আমাকে ভালোবাসে
রিয়া: হ্যা
আমি: পাগল হয়ে গেছিস
তুলি: আপু রিয়া আপু পাগল হয়নি তুমি পাগল হইছ
আমি: তুলি তুইও
তুলি: আমি ছোট এসব বুঝি না তাও তোমার অবস্থা দেখে এইটুকু বুঝতে পারছি তুমি পাগল হয়ে গেছ
আমি: তোরা দুইটা আমার রুম থেকে যা তো
রিয়া: সত্যি কথা সবসময় তেতোই লাগে বলেই তুলিকে নিয়ে চলে গেলো

আর পারছি না খুব কষ্ট হচ্ছে চোখ ফেটে যেন পানি না রক্ত আসতে চাইছে, আমি কি করবো এখন শ্রাবনকে আমার করে নিলে নিপার কাছে স্বার্থপর হয়ে যাবো যদি নিপার কাছে দিয়ে দেই আমার আপনজনরা কষ্ট পাবে আমি তো পাবোই, কোন পথ বেচে নিবো আমি এখন….?
উফফফ খুব কষ্ট হচ্ছে আর পারছি নাহ

শুয়ে শুয়ে ভাবছি আব্বুকে কি বলে দুদিনের জন্য হসপিটালে যাবো হঠাৎ রহিম চাচার কথা মনে পরলো, তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম
–হ্যালো
–চাচা একটু সাহায্য করবা
–কি মা বল
–আমি দুদিনের জন্য একটু বাইরে যেতে চাচ্ছি কিন্তু বাসায় বলা যাবে না অন্যকিছু বলে যেতে হবে তুমি একটু মিথ্যে বলবে আমার জন্য
–কি মিথ্যে
–আমি বাসায় বলে যাবো এতিমখানার কাজে বাইরে যাচ্ছি আমার বাসার কেউ যদি তোমাকে জিজ্ঞেস করে তাহলে তুমিও বলো এতিমখানার কাজেই পাঠিয়েছ
–তা না হয় বলবো কিন্তু মা তুমি যাবে কোথায় যদি তোমার কোনো বিপদ হয়
–ভালো কাজেই যাচ্ছি চাচা চিন্তা করো না
–ঠিক আছে মা
–রাখি চাচা

ফোন রেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম অন্তত বাসার জামেলা তো মিটে গেলো এখন নিপার অপারেশনটা ভালো ভাবে হলেই হয়, ফোনটা বেজে উঠলো শ্রাবন ফোন দিয়েছে হয়তো কিডনি পাওয়া গেছে এইটা জানতে পেরেছে, রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–তমা কিডনি পাওয়া গেছে
–কোথায় পেলে
–ডক্টর বললো হসপিটালেই পাওয়া গেছে
–ঠিক আছে ডক্টর কে বলো অপারেশন এর ব্যবস্থা করতে আর ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রেখেছি বাসায় এসে নিয়ে যাও
–ঠিক আছে আসছি

নিপা সুস্থ হলেই শ্রাবন সারাজীবন এর জন্য আমার থেকে পর হয়ে যাবে আমাকেও এই শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে, শহর ছেড়ে যাবো কোনো দুঃখ নেই শ্রাবন ভালো থাকলেই হলো, ওকে ভালো রাখতে এর চেয়ে বড় কিছুও আমি করতে রাজি, এসব আনমনে হয়ে ভাবছি তখনি হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো……

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৫

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

আব্বু: তমা টাকাটা যদি আমি না দেই
–নিপা মারা যাবে নিপা মারা গেলে শ্রাবন কষ্ট পাবে আর শ্রাবন কষ্ট পেলে আমি কষ্ট পাবো এখন বল তুমি কি আমাকে কষ্টে দেখতে চাও
–এখন কি কম কষ্টে আছিস
–হুম কষ্টে আছি কিন্তু যখন দেখবো শ্রাবন নিপাকে নিয়ে সুখে আছে তখন হয়তো আমিও ভালো থাকবো
–শ্রাবনের জন্য আকাশকে মেনে নিলি না এখন তো দুটিই হারালি
–আমি শ্রাবন ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না তাই আকাশকে মেনে নেই নি তাছাড়া আকাশ আর মেঘা আপু দুজন দুজনকে ভালোবাসে
–হুম তোর যা ভালো মনে হয় কর টাকা নিয়ে নিস
–আচ্ছা

আব্বু চলে গেলেন ভাবছি শ্রাবনকে ফোন করে বলবো টাকাটা যেন নিয়ে নেয় তখনি শ্রাবনের ফোন আসলো
–হ্যালো
–তমা টাকা….
–হুম আব্বু বলেছেন নিতে
–কিন্তু কিডনি
–খুঁজতে তো হবে
–অনেক হসপিটাল তো খুঁজলাম পাইনি যদি আর কোথাও না পাই
–(চুপ হয়ে আছি শ্রাবনের গলা কেমন যেন কাঁপছে কথা বলতে পারছে না এইটা থেকেই তো বুঝা যায় ও নিপাকে খুব ভালোবাসে নিপা মারা গেলে….)
–চুপ হয়ে আছ যে
–এমনি খুঁজে দেখো না পেলে তো কোনো একটা ব্যবস্থা করতে হবে
–হুম
–আচ্ছা রাখি
–হুম

ফোন রেখে চুপ করে বসে আছি চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি ঝরছে, শ্রাবন নিপাকে কতোটা ভালোবাসে সেটা ওর কন্ঠ শুনলেই বুঝা যায়, আচ্ছা আমার কি অপরাধ ছিল আমি কি ওকে কম ভালোবাসছিলাম যে ও অন্য কাউকে ভালোবাসল….?
রিয়া: তমা খেতে আয়
–খাবো না এখন
–দেখ তুই এমন করলে আমি পিয়াস এর কাছে চলে যাবো
–হুম
–সিদ্ধান্ত তো নিয়ে ফেলছিস এখন কেঁদে কি হবে
— কষ্ট ভুলতে তো একটু সময় লাগবেই বাদ দে বল তো কিডনি কোথায় পাই
–তোর যা খুশি কর আমি এসবে নেই বলেই হনহন করে হেটে চলে গেলো

আচ্ছা ও আমাকে রাগ দেখাচ্ছে কেন আমার কি করার আছে আমি কি নিপার কাছ থেকে শ্রাবনকে কেড়ে নিয়ে আসবো…?

রাতে শ্রাবন আবার ফোন দিল কিডনি পাওয়া যায়নি, শ্রাবনের কন্ঠটা আগের চেয়ে বেশি কাঁপছে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না, পরিচিত কয়েকজন কে ফোন দিলাম নাহ কেউ কিডনির সন্ধান দিতে পারলো না, এতো বড় শহরে এতো গুলো হসপিটাল অতচ একটা কিডনি পাওয়া যাচ্ছে না, আচ্ছা যদি নিপা মারা যায়….?
নাহ আর ভাবতে পারছি না কিছু একটা ব্যবস্থা তো করতে হবে

সকালে ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে হসপিটালে গেলাম নিপার আম্মু আর নিধি কাঁদছে আমাকে দেখে নিপার আম্মু জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলেন, একজন মায়ের কান্না একজন বোনের কান্না শ্রাবনের কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না কিন্তু কি করবো আমি কি করার আছে আমার

নিধি আর ওদের আম্মুর কাছে বসে আছি একটু পর শ্রাবন আসলো
–তমা তুমি
–কেন আসতে পারি না
–তা তো বলিনি
–হুম
–একটু বাইরে চল কথা আছে
–চলো

শ্রাবন আমাকে নিয়ে হসপিটালের বাইরে আসলো
–তমা তুমি কিন্তু ভুল বুঝে বসে আছ
–কিসের ভুল বুঝলাম
–তুমি আমাকে ফোন দাও না কেন এমন এড়িয়ে চলছ কেন
–কোন অধিকারে ফোন দিব
–জানো না
–নাহ
–দেখ তমা আমি তোমাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি আমি তোমাকেই ভালোবাসি আর তোমাকে ভুলিনি তোমার জায়গায় তুমি ছিলে তোমার পাশে শুধু নিপা কে একটু জায়গা দিয়েছিলাম
–শ্রাবন এখন এসব বলার সময় না নিপাকে কিভাবে বাঁচাবে সে চিন্তা কর
–নিপা সুস্থ হলেই তো তুমি আমাকে ওর হাতে দিয়ে দিবা
–হয়তো
–তমা…
–তুমি এমন করলে আমি বাসায় চলে যাবো
–প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো
–থাকো তুমি আমি চলে যাচ্ছি

শ্রাবন পিছন পিছন ডাকলো না শুনে বাসায় চলে আসলাম, আর কি শুনবো আমাকে ভালোবাসে….?
তাহলে নিপা কে কি করবে আর ভালো লাগছে না এসব ইচ্ছে হচ্ছে আত্মহত্যা করে এই নিষ্টুর দুনিয়া থেকে বিদায় নেই কিন্তু পারছি না আব্বু আর তুলি যে একা হয়ে যাবে, আমার সাথে যে কেন বার বার এমন হয় বুঝি না

বারান্দায় দাড়িয়ে আছি আর নিজেকে শান্তনা দিচ্ছি এইটা ভেবে ভালোবাসলেই যে নিজের করে পেতে হবে এমন তো না, ভালোবাসার মানুষ কে সুখে দেখাতেই তো প্রকৃত সুখ, আমি নাহয় একাই থাকলাম শ্রাবন ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো কিন্তু শ্রাবনকে ভালো রাখতে গেলে যে নিপাকে সুস্থ করে তুলতে হবে, কিডনি কোথায় পাবো নিপা মারা গেলে যে আমার শ্রাবন অনেক কষ্ট পাবে
আচ্ছা নিপা সুস্থ হলে পর তো ওদের বিয়ে হবে আমি তখন কি করবো, আমার কি ওদের বিয়েতে উপস্থিত থাকাটা মানাবে নাকি বিয়ের আগেই অনেক দূরে চলে গেলে ভালো হবে….?
আচ্ছা নিপাকে বিয়ে করার পর কি শ্রাবন আমাকে ভুলে যাবে….? দূর কি ভাবছি এসব বউ রেখে কি কেউ অন্য মেয়েকে মনে রাখে শ্রাবন আমাকে ভুলে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক
আচ্ছা শ্রাবন তো আমাকে ভুলে গেছেই ভুলতে না পারলে কি নিপাকে ওর মনে জায়গা দিতে পারতো

থাক এসব আর না ভাবা-ই ভালো, আমার কথা আর নাইবা ভাবলাম শ্রাবন সুখি হউক এটাই আমি চাই, কিন্তু শ্রাবনকে সুখে রাখতে হলে তো নিপাকে প্রয়োজন, কিভাবে ফিরিয়ে আনবো আমি নিপাকে, কিডনি কোথায় পাবো কিভাবে সুস্থ করে তুলবো ওকে

হঠাৎ মনের ভিতর কেমন যেন করতে লাগলো, একটা কথা শুধু মনে হচ্ছে ভালোবাসার মানুষ কে সুখে রাখতে তো কিছু ত্যাগ করাটা অপরাধ হবে না, নিপাকে একটি কিডনি যদি আমি দিয়ে দেই…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৪

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

ফোন রেখে চুপ হয়ে বসে আছি, আসলে এখন আমার হাসার কথা নাকি কান্নার কথা বুঝতেছি না, সব কষ্ট গুলো আজ চোখের সামনে ভাসছে এতো কষ্ট সহ্য করলাম তাও শ্রাবনকে ভালোবাসি, আকাশের সাথে বিয়ে হলো আকাশকে মেনে নেই নি উল্টো কতকিছু করে আকাশ আর মেঘা আপুকে মিলিয়ে দিলাম, ডিভোর্স নিয়েও শ্রাবনের অপেক্ষা করলাম, কে কি বললো তা কানে নেই নি শ্রাবনকে ভালবেসে গেছি অপেক্ষা করেছি প্রতিটি মুহূর্তে ওর জন্য,
এতো কিছু হয়ে গেলো তাও শ্রাবনকে ভালোবাসি আর ও কিনা….
রিয়া: তমা কি ভাবছিস(রিয়ার ডাকে হুশ ফিরলো)
–হুম কিছুনা
–ভেবে আর কি হবে শ্রাবন তোকে আর ভালোবাসে না ভুলে যা
–দুবছর আগেই পারিনি ভুলতে আর এখন
–দুবছর আগে অন্তত এই ভরসা টুকু ছিল যে শ্রাবন শুধু তোকেই ভালোবাসে এখন তো সেই ভরসা টুকুও নেই
–আমার প্রতি শ্রাবনের ভালোবাসা হয়তো নেই কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবাসি
–এক তরফা ভালোবাসার কোনো মুল্য নেই
–জানি তাও সারাজীবন ভালোবেসে যাবো হউক তা এক তরফা
–এমন একটা ছেলের জন্য নিজের জীবনটা নষ্ট করবি
–নষ্ট করলাম কই দূর থেকে শুধু ভালোবাসবো
–ও তো নিপাকে নিয়ে সুখেই থাকবে
–ওর সুখেই আমার সুখ
–তোকে বুঝানোর মতো ক্ষমতা আমার নেই
–হুম বাদ দে এখন কিডনি পেলেই হলো
–আগে তো টাকার ব্যবস্থা হউক
–টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে
–কে করেছে
–আমি
–তুই এতো টাকা কোথায় পেলি
–আব্বু আমার জন্য ব্যাংকে রেখেছিলেন সেখান থেকেই দিব
–(ঠাস)
–তাপ্পর দিলি কেন
–তো কি তোকে আদর করবো কি পেয়েছিস তুই যা খুশি তাই করবি যে মেয়ের জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো সেই মেয়ের জন্য বাবার এতো কষ্ট করে জমানো টাকা খরচ করবি
–হ্যা করবো কারন নিপাকে শ্রাবন ভালোবাসে নিপার কিছু হলে শ্রাবন কষ্ট পাবে আর আমি ওর কষ্ট সহ্য করতে পারবো না
–কি আমার দরদী রে কষ্ট সহ্য করতে পারবে না ও কিভাবে পারে তোর কষ্ট সহ্য করতে ও কিভাবে পারলো তোকে ভুলে নিপার হাত ধরতে
–দেখ রিয়া যা হবার হয়ে গেছে এসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই মেয়েটা সুস্থ হয়ে গেলেই আমি এখান থেকে চলে যাবো
–হ্যা যাবাই তো তুমি তো মহান একবার নিজের স্বামী কে অন্য মেয়েকে দিয়ে দিয়েছ যার জন্য এতোকিছু করেছ এখন তাকেও অন্য মেয়েকে দিয়ে দাও
–তো কি করবো, আমি কি শ্রাবনকে কেড়ে নিয়ে আসবো নিপার কাছ থেকে
–আমি হলে তাই করতাম
–শ্রাবন আসতেছে কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলবি না
–হুম

শ্রাবনকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিডনি পাওয়া যায়নি, ওর এমন মলিন মুখ দেখতে আর ভালো লাগছে না
শ্রাবন: তমা
–হুম পাওনি
–নাহ
–খুব ভালোবাস নিপাকে তাই না
–আর কতবার বলবো আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি
–হুম তা তো বুঝাই যাচ্ছে
–নিপার জন্য এতোকিছু করছি দেখেই তো এই কথা বলছ আচ্ছা তমা তুমিই বল আমি যখন অসুস্থ ছিলাম নিপা আমাকে ওর ভালোবাসা যত্ন দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে এখন ওর এমন অবস্থায় কি আমি পাশে থাকবো না
–হুম

চুপ হয়ে বসে আছি কি বলবো শ্রাবনকে….?
মন থেকে ভালোবাসে নিপাকে আর মুখে বলে ভালোবাসে আমাকে এখানে আর কি বা বলার আছে….?
থাকুক ও ওর মতো আমি দূরে চলে যাবো দূর থেকেই ভালোবাসবো
শ্রাবন: তমা চুপ হয়ে আছ কেন
–কিছু বলার নাই যে
–ভুল বুঝছ তুমি আমাকে
–হতেও পারে
–ভুল বুঝনা প্লিজ আমি তোমাকেই ভালবাসি
–আচ্ছা আমি বাসায় যাই টাকার ব্যবস্থা করি
–তোমার আব্বু কি দিবেন
–বাসায় গিয়ে দেখি
–হুম

রিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম, রিয়া এখনো ক্ষেপে আছে আমার উপর আচ্ছা আমার কি করার আছে….?

আব্বুর কাছে গেলাম দেখি কি হয়
–আব্বু
–হুম বল
–টাকাটা
–আগে বল কি করবি
–আমার একজন প্রিয় মানুষ অসুস্থ তার চিকিৎসায় টাকাটা লাগবে
–মানুষটা কে
–আমি বলছি আঙ্কেল(কথাটা শুনে ফিছনে থাকালাম রিয়া আসছে এখন কি হবে এসব বললে তো আব্বু টাকা দিবেন না)
–রিয়া প্লিজ তোর কিছু বলা লাগবে না
–কেন বললে টাকাটা পাবি না তাই
ওর দিকে কিছুক্ষণ থাকিয়ে আব্বুর রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম জানি ওকে থামাতে পারবো না ও আব্বুকে বলবেই

বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম ভাবছি আব্বু যদি টাকা না দেন তাহলে কি করবো….?
আচ্ছা টাকা পাওয়ার পর যদি কিডনি না পাওয়া যায় তখন….?
নিপা তো মারা যাবে আর নিপা মারা গেলে…
–তমা (ফিছনে থাকিয়ে দেখি আব্বু)
–হ্যা আব্বু বল
–বাবার কাছ থেকে কবে থেকে কথা লুকাতে শিখলি
–(নিশ্চুপ)
–রিয়া আমাকে সব বলেছে তুই যা সিদ্ধান্ত নিয়েছিস সেটাই কি করবি
–এছাড়া আর কি করার আছে আব্বু
–শ্রাবনকে ছাড়া থাকতে পারবি
–জানিনা তবে ওর থেকে অনেক দূরে চলে যাবো নিপা সুস্থ হলে এই শহর ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো যেখানে আমার ভালোবাসায় কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াবে না আমি শ্রাবনকে নিজের মতো করে ভালোবাসতে পারবো দূর থেকে
আব্বু তুমি আর তুলি যাবে আমার সাথে তোমাদের দুজনকে নিয়ে আর শ্রাবনের স্মৃতি নিয়েই নাহয় কাটিয়ে দিব বাকিটা জীবন

আব্বু নিশ্চুপ হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছেন চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে হয়তো নিজের মেয়ের এমন কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না, পারবেন কিভাবে কষ্ট তো আমার জীবনে একবার আসেনি বার বার আসছে, নিয়তিটাও বড় অদ্ভুত নাহলে আমার জীবনে এমন কষ্ট কেন বার বার আসছে…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৩

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

খুব ভোরে শ্রাবনের ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো, এমনিতেই সারা রাত ঘুম হয়নি ভোরের দিকে চোখ দুইটা লেগে আসছিল শুধু তখনি ফোন দিল, রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–তমা একটু হসপিটালে আসতে পারবা
–এতো সকালে
–হুম নিপার জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু এক্সিডেন্টে ওর কিডনি দুইটা নষ্ট হয়ে গেছে ৩-৪ দিনের ভিতরে কিডনি না পেলে….
–চেষ্টা করো পেয়ে যাইবা
–অনেক টাকা প্রয়োজন কি করবো মাথায় আসছে না তুমি একটু আসো নিপার আম্মুকে দেখে রেখ আমি টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করি
–ঠিক আছে আসছি

ফোন রেখে ফ্রেশ হতে বাতরুমে গেলাম, আয়নার সামনে যেতেই নিজেকে দেখে চমকে গেলাম, মাত্র একদিনে কি অবস্থা হয়েছে শরীরের, আয়নায় নিজের চেহারার দিকে থাকিয়ে ভাবছি আজ নিপা ওর জীবনে না আসলে তো আমার এমন অবস্থা হতো না, কেন আসলো মেয়েটি আমার জীবন নষ্ট করার জন্য, খুব কঠোর ভাবে নিজের চোখের দিকে থাকিয়ে ভাবলাম এই নিপাকে আমি সরাবো শ্রাবনকে আমার করে নিবো

পানির ঝাপটা মুখে দিতেই মনে হলো আমি এতোক্ষণ কি ভাবলাম এসব, নিপাকে কেন দোষ দিচ্ছি আমি এতে মেয়েটার কি দোষ, শ্রাবন না চাইলে তো নিপা ওর জীবনে আসতো না, দোষ করলে শ্রাবন করেছে আমি নিপাকে কেন দোষ দিচ্ছি
আর এতোক্ষণ এসব কি ভেবেছি নিপাকে সরাবো শ্রাবনকে আমার করে নিবো…..?
ছিঃ আমি এতো নিছে নামলাম কিভাবে নিজের সুখের জন্য অন্য মেয়ের জীবন নষ্ট করবো….?
এইটা তো ভালোবাসার নীতি না….?

ভালোবাসি তাই বলে জোর করে নিজের করে নিবো নাকি, ভালোবাসা মানে তো শুধু নিজের করে পাওয়া না, ভালোবাসার মানুষটা কে সুখে রাখাই তো প্রকৃত ভালোবাসা, শ্রাবন যদি নিপার কাছে সুখে থাকে ভালো থাকে তাহলে আমি ওকে ভালো রাখার জন্য নিপার হাতে তুলে দিতে পারবো না কেন….?

সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম শ্রাবন আর নিপাকে মিলিয়ে দিয়ে আব্বু আর তুলিকে নিয়ে এই শহর ছেড়ে চলে যাবো, বাকি জীবনটা নাহয় শ্রাবনের স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবো

ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বেরুতেই রিয়া সামনে এসে দাঁড়াল
–কোথায় যাচ্ছিস এতো সকালে
–হসপিটালে
–কেন
–শ্রাবন ফোন দিয়েছিল নিপার জ্ঞান ফিরেছে
–তাতে তোর কি নিপা শ্রাবনের ভালোবাসা শ্রাবনকে ওর পাশে থাকতে দে তুই কেন যাবি
–শ্রাবনের ভালোবাসা তো আমারও ভালোবাসা
–তমা চুপ কর যে মেয়ের জন্য তোর এই অবস্থা সেই মেয়ের সেবা করতে হসপিটালে যাচ্ছিস
–নিপার তো কোনো দোষ নেই
–হইছে এতো মহৎ হতে হবে না
–বাদ দে তো যেতে দে
–তোকে একা যেতে দিচ্ছি না দাড়া আমি আসছি
–হুম

এই রিয়াটা যে কি আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করে উফফফফফ

রিয়া রেডি হয়ে আসলো দুজন বেড়িয়ে পড়লাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে

কেবিনের সামনে নিপার মা বোন কান্না করতেছে আর শ্রাবন তাদের শান্তনা দিচ্ছে, আমাদের দেখে শ্রাবন এগিয়ে আসলো
শ্রাবন: এখানে একটু থাক তোমরা আমি আসছি
রিয়া: একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না শ্রাবন
আমি: রিয়া চুপ কর
শ্রাবন: দেখ রিয়া আমি তমাকেই ভালোবাসি নিপা অসুস্থ একজন মানুষ হিসেবে তো পাশে থাকা প্রয়োজন
রিয়া: হুম আমি সব বুঝি
আমি: রিয়া থাম তো শ্রাবন তুমি যাও
শ্রাবন: হুম

শ্রাবন চলে গেলো রিয়া আর আমি গিয়ে নিপার মায়ের কাছে বসলাম, খুব কাঁদছেন উনি কি বলবো খুঁজেই পাচ্ছি না, হঠাৎ রিয়া নিপার বোনকে জিজ্ঞেস করলো
রিয়া: তোমার নাম কি
–জ্বী নিধি
–তোমার আপু এখন কেমন আছে
–কিডনি দুটিই নষ্ট হয়ে গেছে ডক্টর ৩-৪ দিনের সময় দিয়েছে এর ভিতরে কিডনি না পেলে আপুকে….
–চিন্তা করো না খুঁজলে পাওয়া যাবে কিডনি
–পাওয়া যাচ্ছে না ডক্টরও চেষ্টা করেছে তাছাড়া টাকারও সমস্যা

ওরা দুজন কথা বলছে আমি একটু দূরে গিয়ে বসলাম, বসে বসে ভাবছি কি করা উচিত এখন কি শ্রাবনকে টাকা জোগাড় করতে সাহায্য করবো কিন্তু এতো টাকা পাবো কোথায়, অন্তত একটা কিডনি তো জোগাড় করতেই হবে অনেক টাকা প্রয়োজন, শ্রাবন কি একা এতো টাকা জোগাড় করতে পারবে….?
হঠাৎ মনে পরলো আব্বুর দেওয়া দশ লক্ষ টাকার কথা, আব্বুকে জিজ্ঞেস করতে হবে টাকাটা ব্যাংকে আছে কিনা থাকলে সেখান থেকেই যত টাকা লাগে দিয়ে দিব, তাড়াতাড়ি আব্বুকে ফোন দিলাম
–হ্যালো আব্বু
–কিরে এতো সকালে দুজন কোথায় গেলি
–এসে বলবো একটা কথা আব্বু
–বল
–আমার জন্মদিনে যে টাকাটা দিয়েছিলে সেটা কি এখনো ব্যাংকে আছে
–হ্যা আছে তো তোর টাকা আমি খরচ করবো কেন কিন্তু হঠাৎ এই কথা জিজ্ঞেস করলি কেন
–আব্বু আমার কিছু টাকা প্রয়োজন
–কত
–৬-৭লক্ষ
–এতো টাকা দিয়ে তুই কি করবি
–বাসায় এসে সব বলবো আগে বল টাকাটা দিবা
–ঠিক আছে
–এখন রাখি আব্বু বাসায় আসতে দেরি হবে
–আচ্ছা

ফোন রেখে ভাবছি টাকার ব্যবস্থা তো হলো কিন্তু কিডনি কোথায় পাবো, আচ্ছা শ্রাবনকে আগে বলি টাকার ব্যবস্থা হয়েছে ও যেন কিডনি খুঁজে, তাড়াতাড়ি শ্রাবনকে ফোন দিলাম
–তমা বল
–টাকার ব্যবস্থা হয়েছে তুমি বিভিন্ন হসপিটালে গিয়ে কিডনির ব্যবস্থা কর দেখ পাও কিনা
–টাকা তো অনেক লাগবে এতো টাকার ব্যবস্থা কিভাবে করেছ
–করেছি যেভাবেই হউক তুমি কিডনি খুঁজ
–তমা তুমি এভাবে সাহায্য করবে ভাবতেও পারিনি
–তোমার ভালোবাসা তো আমারও ভালোবাসা এইটুকু তো করতেই পারি
–আমার ভালোবাসা মানে তমা দেখ আমি আবারো বলছি আমি তোমাকেই ভালোবাসি
–হুম ঠিক আছে এইটা নিয়ে পরে কথা বলি আগে কিডনির ব্যবস্থা কর
–হুম ঠিক আছে

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১২

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

সন্ধ্যার সময় ঘুম ভাঙ্গলো, বারান্দায় গিয়ে বসে রইলাম মাথাটা খুব বারি হয়ে আছে ভালো লাগছে না, হঠাৎ কারো আসার শব্দ পেলাম পিছনে থাকিয়ে দেখি শ্রাবন, এসে আমার পাশের চেয়ারে বসলো
দুজনেই নিরব হয়ে বসে আছি কারো মুখে কথা নেই থাকবে কিভাবে ও প্রতারণা করল আর আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেলো

হঠাৎ শ্রাবন আমার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিল তারপর নিরবতা ভেঙ্গে বললো
–তমা আমার কথা গুলো শুন প্লিজ
–আর কিছু কি বাকি আছে
–হ্যা আছে
–বলে ফেলুন আমি হজম করার জন্য প্রস্তুত
–তমা প্লিজ আপনি করে বলো না আমার কষ্ট হয়
–আমি আপনি করে বললে কষ্ট হয় আর আপনি অন্য মেয়েকে ভালোবাসলে আমার বুঝি কষ্ট হয় না
–জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমার সব কথা শুনবা তো
–হুম বলুন
–প্লিজ আপনি বলো না
–হুম
–সকালে এই কথা বলার জন্য তোমাকে বাহিরে নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই নিপার বোন….
–হুম জানি এখন কি বলতে চাও বলে ফেলো

শ্রাবন বলতে শুরু করলো….
এখান থেকে কক্সবাজার চলে যাবার পর তোমার আম্মু জানায় তোমার বিয়ে হয়ে গেছে তখন আমি অনেক ভেঙ্গে পরি অসুস্থ হয়ে যাই প্রায় পাঁচমাস অসুস্থ থাকার পর একদিন বালুচরে হাটতে যাই তখন নিপার সাথে পরিচয় হয়, নিপা ঢাকা থেকে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিল, ওর সাথে আস্তে আস্তে কথা হয় যখন ও ঢাকা ফিরে আসে আমাকে নাম্বার দিয়ে আসে, তখন থেকে ফোনে রোজ কথা হত আমি ওষুধ খেয়েছি কিনা কি করছি সবকিছুর খুঁজ রাখত নিপা, তোমার বিয়ের ছয়মাসের মাথায় আমি নিপার যত্নে সুস্থ হয়ে উঠি, তখন নিপা আমাকে প্রপোজ করে, তোমার বিয়ে হয়ে গেছে আর তো ফিরে পাবো না তাই আমি নিপার সাথে সম্পর্ক করি, তোমাকে ফিরে পাবার তিনমাস আগে নিপার সাথে আমার ব্রেকাপ হয়ে যায়, কারন ছিল আমি নতুন চাকরিতে জয়েন করেছি ওকে সময় দিতে পারতাম না আর ও আমাকে সন্দেহ করত, যখন রিয়ার সাথে কথা হয় আর জানতে পারি তুমি আমার জন্য আকাশকে মেনে নাওনি তখন অনেক কষ্ট পাই তারপর সিদ্ধান্ত নেই তোমার কাছে ফিরে আসবো, হ্যা ফিরে এসেছি কিন্তু নিপা এখন ওর ভুল বুঝতে পেরেছে তাই ও ফিরে আসতে চায়, সেদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় নিপা ফোন দিয়েছিল তাই তোমার সাথে এমন ব্যবহার করেছিলাম, তার দুদিন পর নিপা ফোন দিয়ে জানায় ওর আব্বু এক্সিডেন্ট করে মারা গেছেন, আর এখন নিপা এক্সিডেন্ট করেছে ওর তো কোনো ভাই নেই আমি এখন সাহায্য না করলে কে ওদের দেখবে বল, কিন্তু বিশ্বাস কর আমি এখন তোমাকে ভালোবাসি

একদমে কথা গুলো বলে ও থামলো
–তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু নিপা যে তোমাকে ভালোবাসে
–জানিনা
–মাত্র পাঁচমাসে অন্য দিকে জড়িয়ে গেলা আর আমি কত যুদ্ধ করে তোমার জন্য অপেক্ষা করলাম
–তমা প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও
–হুম বাদ দাও নিপা কেমন আছে
–ভাল না এখনো জ্ঞান ফিরেনি তাই ডক্টর কিছু বলতে পারছে না
–হুম
–তমা প্লিজ ভুল বুঝ না
–ইচ্ছে হয়েছে অন্য দিকে সম্পর্ক করেছ তাতে ভুল বুঝার কি আছে, ভেবে দেখ এখন কি করবা
–কি করবো বলে দাও প্লিজ
–আমার জানা নেই সিদ্ধান্ত এখন তোমার
–তুমি কিছুই জান না
–কিভাবে জানবো তুমি আমাকে বেশি ভালবাস নাকি নিপা কে ভালবাস সেটা তো তুমিই ভালো জানো
–তোমার কি মনে হয়
–আমার মতে নিপা কে বেশি ভালবাস কারন আমাকে ভালবাসলে নিপার হাত ধরতে পারতে না আর আমাকে ভুলতে পেরেছ বলেই নিপা কে ভালোবাসতে পেরেছ
–তমা আমি তোমাকে ভালবাসি
–ভুল আমাকে ভালবাসলে কখনোই অন্য মেয়ের হাত ধরতে না বাদ দাও নিপা কে সুস্থ করে তুলো
–নিপা সুস্থ হলেই তো….
–হুম কি আর করার বিয়ে করে নিবা
–মানে
–খুব সহজ বিষয় নিপাকে ভালোবাস তাই ওকেই বিয়ে করবা
–আমি তোমাকে ভালবাসি
–এই ভুল একদিন ভাঙ্গবে তোমার তখন বুঝতে পারবে আমাকে ভুলতে পেরেছ বলেই নিপা কে ভালবাসতে পেরেছ
–তুমি কিন্তু বেশি বুঝতেছ
–ওহ তাই ঠিক আছে রিয়া কে ডেকে আনো দেখ ও কি বলে
–তুমি যদি আমাকে না বুঝ রিয়া কিভাবে বুঝবে
–আমি বুঝেছি তুমি নিপাকে ভালোবাস যাও ওকে সুস্থ করে তুল, ভয় পেয়ো না আমি তোমাদের জীবনের কাটা হবো না, আকাশ আর মেঘা কে যেভাবে মিলিয়ে দিয়েছি তোমাদেরও সেভাবে মিলিয়ে দিবো তারপর চলে যাবো অনেক দূরে
–তমা কি বলছ এসব
–যা সত্যি তাই বলেছি আমার জন্য অন্য মেয়ে কষ্ট পাবে সেটা আমি মানতে পারবো না
–তমা….
–প্লিজ আর কিছু শুনতে চাই না, আমার ভাগ্যকে আমি মেনে নিয়েছি, একটা কথা কি জানো আমার মতো মা হারা মেয়েদের রঙিন স্বপ্ন দেখাটা মানায় না, আমরা শুধু স্বপ্ন দেখতেই পারি পূরন করতে পারি না, আমাদের নিয়ে সবাই খেলা করতে পছন্দ করে, আম্মু বেঁচে থাকলে আমার জীবনে সৎমা আসতো না দুবছর আগে তোমাকে আমাকে আলাদা করতো না হয়তো আকাশের সাথে বিয়ে না হয়ে তোমার সাথে বিয়েটা হত, আসলে আমার কপাল পুরা তাই বার বার এমন হচ্ছে, যাই হউক আমি আমার ভগ্যকে মেনে নিয়েছি
–তমা….
–আমি এখন আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না তুমি এখান থেকে যাও আমাকে একটু একা থাকতে দাও প্লিজ
–হুম

শ্রাবন চলে গেলো, বারান্দায় রেলিং ধরে দাড়িয়ে রইলাম চোখ থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে, প্রকৃতিও আজ কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে আছে চারদিকে শুনশান নিরবতা, কোথাও কোনো আলোর রেখা নেই, প্রকৃতি মনে হয় মানুষের মনের অবস্থা বুঝে তাই তো আমার মনের আকাশের মতো প্রকৃতির আকাশেও আজ চাঁদ নেই, অমাবস্যায় ঢেকে আছে চারদিক ঠিক আমার মনের মতো…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১১

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

কেবিনের বাহিরে বসে আছি মেয়েটার চিকিৎসা চলতেছে, শ্রাবন কেমন যেন অস্থির হয়ে আছে ঠিক হয়ে বসতেছে না, ভাবছি মেয়েটা ওর কি হয় জিজ্ঞেস করবো কিনা তখনি একজন সিস্টার এসে শ্রাবনের হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললো ওষুধ গুলো নিয়ে আসতে, শ্রাবন এক মুহূর্ত দেরি না করে দৌড়ে চলে গেলো ওষুধ আনতে

চেয়ারে বসে আনমনে হয়ে ভাবছি মেয়েটি শ্রাবনের কি হয় তখন মেয়েটির ছোট বোন পাশের চেয়ারে এসে বসলো এখনো কাদতেছে, আমি শান্তনা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
–আচ্ছা শ্রাবন তোমাদের কি হয়
–আপনি জানেন না ভাইয়া তো আপুকে ভালোবাসে, আপুর নাম নিপা প্রায় একবছর ধরে সম্পর্ক….

ওর আর কোনো কথা আমার কান দিয়ে ঢুকলো না, কানে শুধু বার বার একটা কথাই বাজতেছে “ভাইয়া তো আপুকে ভালোবাসে”
মাথাটা প্রচুর ঘুরতেছে বুকের বাম পাশে খুব ব্যাথা হচ্ছে চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে আমি যেন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি, আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালাম তারপর এলোমেলো ভাবে হাটতে শুরু করলাম পা দুইটা যেন অবস হয়ে গেছে, চোখ দুইটায় আজ কাজল দিয়েছিলাম শ্রাবন দেখবে বলে এখন এই কাজল চোখের পানিতে লেপ্টে যাচ্ছে, কোনো ভাবে হসপিটাল থেকে বেরুলাম, একটা রিক্সা ডেকে আনলাম যখন রিক্সায় উঠতে যাবো তখন দেখলাম শ্রাবন চলে এসেছে, আমার কাছে আসলো
–কোথায় যাচ্ছ
–আমার ঠিকানায়
–মানে
কিছু না বলে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ থাকিয়ে রইলাম তারপর রিক্সাওয়ালা কে যেতে বললাম

বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে শুরু করলাম, কি হলো এইটা আমি তো এমন কিছু কল্পনাও করিনি আর শ্রাবন কিনা আমার অজান্তে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছে, আর ভাবতে পারছি না মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করতেছে উউউফফফফ খুব কষ্ট হচ্ছে, এতো বছর আম্মুর অত্যাচার সহ্য করলাম কিন্তু এতো কষ্ট তো হয়নি আজ কেন এতো কষ্ট হচ্ছে, চোখ দুইটা যেন সাগর হয়ে গেছে বুকে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে

কতক্ষণ সময় এভাবে কাঁদলাম জানিনা হঠাৎ তুলির ডাকে নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা খুললাম
–আপু কি হয়েছে তোমার
–কিছু না তো
–তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন
–এমনি
–দাড়াও আমি রিয়া আপুকে ডেকে আনি
দৌড়ে চলে গেলো তুলি, আচ্ছা রিয়া কে আমি কি বলবো শ্রাবন অন্য মেয়েকে ভালোবাসে….?
রিয়া তো শ্রাবন কে মেরেই ফেলবে এই কথা শুনলে

এসব ভাবতে ভাবতেই রিয়া এসে হাজির
–কিরে কি হইছে তোর
–কই কি
–এমন দেখাচ্ছে কেন
–কিছুনা
–আমার কাছে লুকিয়ে পারবি না এইটা ভালো করেই জানিস বলে ফেল
–হুম
–কি হলো বল
–কিছুনা
–শ্রাবনের সাথে ঝগড়া করেছিস
–না
–ওকে আমি শ্রাবনকে ফোন দিতেছি
–ও এখন ব্যস্ত আছে
–কিসের এমন ব্যস্ততা যা তোর থেকে বেশি জরুরী
–ও এখন আর আমার নেই
–মানে কি আবুল তাবোল বকছিস
–এটাই সত্যি
–হইছে কি বলবি তো
–শ্রাবন নিপা নামের একটি মেয়েকে ভালোবাসে
–তমা প্লিজ জোকস রাখ
–সত্যি রে নিপা এখন হসপিটালে আছে এক্সিডেন্ট করেছে শ্রাবন ওখানেই আছে
রিয়া দফ করে বিছানায় বসে পড়লো হয়তো আমার মতো রিয়াও বিশ্বাস করতে পারতেছে না কিন্তু এটাই যে সত্যি

শ্রাবন এখন আর আমার নেই, ও এখন নিপা নামের কারো হয়ে গেছে, ও এখন আর আমায় ভালোবাসবে না জরিয়ে ধরবে না চুলের ঘ্রান নিতে পাগল হবে না……

আচ্ছা শ্রাবন আমাকে ঠকালো কেন….?
নিপা কে ভালোবাসে আমাকে বলেনি কেন…?
একবছর ধরে ওদের সম্পর্ক তারমানে আমি যখন ছিলাম না তখন থেকে….?
আচ্ছা শ্রাবন যদি নিপা কে ভালোবাসে তাহলে আমাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখালো কেন….?
নিপা কে ভালোবাসা সত্বেও কেন বারবার বলেছে আমাকে ভালোবাসে….?
শ্রাবন কেন আমার সাথে এমন করেছে…..?

আনমনে হয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ রিয়া আমার কাধে হাত রাখলো চমকে উঠে ওর দিকে থাকালাম, রিয়ার চোখে পানি দেখে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না ওকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম, আমার সাথেই কেন এমন হয় আর কতো কষ্ট পাবো আমি
–তমা প্লিজ শান্ত হ
–কিভাবে শান্ত হব ও এমন করলো কিভাবে
–শ্রাবন আসলে পর জিজ্ঞেস করবো তুই তো ভুলও শুনতে পারিস
–ভুল হবে নাহ আমি দেখেছি নিপার জন্য শ্রাবনের ভালোবাসা কেমন, যখন ফোন আসছিল ও পাগল হয়ে গেছিল কিভাবে যে হসপিটাল যাবে ও ভেবে পাইতেছিল না, ও নিপার জন্য একদম পাগল আমি বুঝে গেছি
–আচ্ছা শ্রাবন আসলে পর কথা বলে দেখি তুই একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর

খুব ক্লান্ত লাগছে রিয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১০

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১০

লেখিকা: সুলতানা তমা

টেবিলে বসে আছি আর ভাবছি কে ফোন দিতে পারে, একটু পর শ্রাবন আসলো মুখটা একদম মলিন
–কি হয়েছে
–কিছুনা
–হুম খেয়ে নাও
–আর খাবো না
–মানে একটা পরোটাও তো খাওনি
–খিদে নেই
–আজব তো এতোক্ষণ খিদে লাগছে বলে পাগল বানিয়ে দিছ আর এখন বলছ খিদে নেই
–হুম
–ফোন কে দিয়েছিল
–অফিস থেকে
–অফিস থেকে ফোন দিলে তো মন খারাপ হবার কথা না সত্যি করে বল কে ফোন দিয়েছিল

নিশ্চুপ হয়ে কিছু সময় আমার দিকে থাকিয়ে রইল তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো, আমি স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি ও এমন করলো কেন ভেবে পাচ্ছি না

সারাদিন শ্রাবন একবারও ফোন দেয়নি আমিও দেইনি, সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে বললো ওদের বাসায় যেতে রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছি

বারান্দায় বসে আছি ভাল লাগছে না কিছু শ্রাবন সকালে এমন করলো কেন মাথায় আসছে না হঠাৎ পিছন দিক থেকে কেউ জরিয়ে ধরলো, ঘুরে থাকালাম না জানি শ্রাবন এসেছে ওর স্পর্শ আমার খুব চেনা
–রেগে আছ কেন
–না তো
–সকালে মাথা ঠিক ছিল না
–হুম
–তমা আমি চাচ্ছি এক সপ্তাহের ভিতরে বিয়েটা হয়ে যাক
–এতো তাড়া কিসের
–তোমাকে আমার করে পাবার
–শুধু এটাই নাকি অন্য কিছু
–মানে
–কিছু না
–আমি আম্মুকে বলবো তোমার আব্বুর সাথে কথা বলার জন্য
–হুম
–এবার তো একটা হাসি দাও
আর কিছু না বলে ওর বুকে মুখ গুঁজে দিলাম, ওকে ছাড়া তো আমি কিছু ভাবতে পারিনা আর ও কিনা আমাকে কষ্ট দেয়

সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি ড্রইংরুমে সবাই বসা, একটু এগিয়ে গিয়ে শুনলাম বিয়ের কথা হচ্ছে, বারান্দায় এসে দাড়িয়ে রইলাম, ভাবছি আমার বিয়ে হয়ে গেলে আব্বু আর তুলির কি হবে, এখন তো আব্বুর চাকরিও নেই বাড়িটা তো আম্মু বিক্রি করে দিয়েছে, এই ভাড়া বাসায় কতোদিন আর….?
হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে পিছনে থাকালাম শ্রাবন এসেছে
–এখানে দাড়িয়ে আছ কেন
–এমনি
–কি ভাবছ
–অনেক কিছু
–কি কি
–আমার বিয়ে হয়ে গেলে আব্বু আর তুলিকে দেখবে কে
–আমি দেখবো
–মানে
–সবাই একসাথে থাকবো চিন্তা করো না
–হুম

শ্রাবন আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে চুলে মুখ গুঁজে দিলো, আমি ভাবছি শ্রাবন কি সত্যি আব্বুর আর তুলির দায়িত্ব নিবে এইটা কি সম্ভব

দুপুরে শুয়ে আছি রিয়া আর তুলি নাচতে নাচতে এসে বললো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে দুই সপ্তাহ পর বিয়ে, আমি কিছু বললাম না মনের ভিতর কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে শেষ পর্যন্ত শ্রাবন আমার হবে ভাবতেই ভালো লাগছে, এতো দিনের সব স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে আর কি চাই আমার

অনেক দিন হলো এতিমখানায় যাওয়া হয় না তাই আজ এতিমখানায় আসলাম, সারাদিন বাচ্চাদের সাথে কাটালাম, রহিম চাচা কে বিয়ের কথা বলতেই উনি অনেক খুশি হয়েছেন, খুশি তো হবেনই এই দুইটা বছর আমার কষ্টগুলো যে উনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন

এক সপ্তাহ কেটে গেলো, আর এক সপ্তাহ পর বিয়ে ভাবতেই ভালো লাগছে, আমি শ্রাবনের জন্য বউ সাজবো হিহিহি

আজকে সকালটা শুরু হলো শ্রাবনের মিষ্টি কন্ঠ শুনে, ওর ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো
–হ্যালো
–একটু বাহিরে যেতে চাচ্ছিলাম
–কেন
–তোমার সাথে কিছু কথা ছিল কথা গুলো বলা হবে আর সাথে কিছু শপিং করবো
–ওকে
–রেডি হয়ে নাও আমি আসছি
–আচ্ছা

ফোন রেখে রেডি হয়ে নিলাম, আজ অনেক দিন পর শ্রাবনের সাথে বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি তাই গোলাপি রঙের একটা শাড়ি পড়েছি, চোখে কাজল দিয়েছি, আর চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছি

ড্রইংরুমে গিয়ে দেখি শ্রাবন বসে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি যেতেই ও হা করে আমার দিকে থাকিয়ে রইল, আমি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আব্বু আর রিয়া কে বলতে চলে গেলাম, আব্বু আর রিয়া কে বলে বেড়িয়ে পড়লাম আমরা

রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছি দুজন
–একদম পরীর মতো লাগতেছে
–তাই বুঝি
–জ্বী
–আচ্ছা কি যেন বলতে চাইছিলে বল
–আসলে তমা কথা গুলো না বললেও হত কিন্তু আমি চাইনা আমাদের দুজনের মধ্যে কোনো কিছু গোপন থাকুক
–ঠিক আছে বল
–আগে বলো রাগ করবা না
–ওকে করবো না এখন তো বলো
–আসলে তমা আমি যখন কক্সবাজার ছিলাম তখন……
হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে উঠলো, ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে রিসিভ করছে না, কয়েকবার আমার দিকে থাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো, ওপাশ থেকে কে কি বলেছে জানিনা কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো সমস্যা হয়েছে, ফোনটা রেখে আমাকে বললো
–তমা আমাকে হসপিটাল যেতে হবে তুমি বাসায় চলে যাও
–হসপিটালে কেন
–বাসায় এসে সব বলবো
–ঠিক আছে আমিও যাই তোমার সাথে
–না তোমার যেতে হবে না
–আমি যাবোই

আমি জিদ করাতে আমাকে সাথে নিয়ে হসপিটালে গেলো, ভেবে পাচ্ছি না কার এমন কি হলো যে ও এমন অস্থির হয়ে হসপিটালে আসলো

একটা কেবিনের সামনে গিয়ে ও দাঁড়াল একজন মহিলা আর একটি মেয়ে কাদতেছে, শ্রাবনকে দেখেই মেয়েটি এসে বললো ভাইয়া আপু এক্সিডেন্ট করেছে অবস্থা খুব খারাপ…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৯

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

বাসায় চলে এসেছি তুলিটা খুব কাঁদতেছে আজ থেকে তুলিও যে মা হারা হয়ে গেলো, বড় বোন নাকি মায়ের সমান তুলিকে বুকে জরিয়ে নিলাম ওকে মায়ের অভাব বুঝতে দিব না, আমি যে কষ্ট পেয়েছি সে কষ্ট ওকে পেতে দিব না

আকাশরা বাসায় চলে গেছে, শ্রাবন মা কে নিয়ে নতুন বাসায় উঠেছে, এখন বাসায় শুধু আমি, রিয়া, আব্বু আর তুলি আছি

রাতে রিয়া আর আমি বারান্দায় বসে আছি তখন আব্বু আসলেন
আব্বু: তমা একটা কথা বলার ছিলো
আমি: বল
আব্বু: আমি চাচ্ছি খুব শীঘ্রই শ্রাবনের সাথে তোর বিয়েটা দিয়ে দিতে
রিয়া: হ্যা আঙ্কেল আমিও তাই ভাবছিলাম
আমি: আব্বু আমাদের সবার উপর দিয়ে অনেক দকল গেছে আর কিছু দিন পর বিয়েটা হলে ভালো হবে
আব্বু: ঠিক আছে এখন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে রাখি
আমি: আচ্ছা

আব্বু চলে গেলেন, রিয়া আর আমি গিয়ে তুলির পাশে শুয়ে পড়লাম
রিয়া: অনেক জামেলা হয়েছে এবার বিয়েটা ভালো ভাবে হলেই হয়
আমি: আমার তো ভাগ্য অনেক খারাপ দেখ কখন আবার কোন জামেলা সৃষ্টি হয়ে যায়
–একদম অলুক্ষণে কথা বলবি না
–যা সত্যি তাই তো বললাম
–কচু সত্যি
–সেই ছোট বেলা থেকে একটার পর একটা কষ্ট আমাকে ঘিরে রেখেছে ভবিষ্যৎ এ যে আমার জীবনে আর কষ্ট আসবে না তার নিশ্চয়তা কি
–প্লিজ তমা এসব বলিস না সব ঠিক হয়ে যাবে, শ্রাবনের সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে তুই অনেক সুখি হবি দেখিস
–বিয়েটা হলেই হলো
–হবে চিন্তা করিস না এখন ঘুমিয়ে পড়
–হুম

রাতে রিয়ার সাথে বক বক করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনেই নেই, সকালে শ্রাবনের ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো
–হ্যালো
–ম্যাডাম একটু এই বাসায় আসতে পারবেন
–কেন
–খিদায় পেট জ্বলতেছে
–নাস্তা করোনি
–আম্মু ঘুমিয়ে আছেন তাই আর ডাকিনি
–ঠিক আছে আমি আসছি

ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে গেলাম, গিয়ে দেখি রিয়া নাস্তা বানাচ্ছে
–রিয়া নাস্তা কি হইছে
–না কেন
–মা নাকি ঘুমে শ্রাবন নাস্তা করেনি
–দেরি হবে তো
–ঠিক আছে তুই এখানে নাস্তা বানা আমি ওকে নাস্তা বানিয়ে দিয়ে আসি
–ওকে

শ্রাবনের বাসায় আসছি সেই কখন থেকে কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছি দরজা খুলার নাম নেই, অনেকক্ষণ পর দরজা খুললো, শ্রাবনের দিকে থাকিয়ে তো আমি হা হয়ে গেছি সারা শরীরে ময়দা লেগে আছে, ওর পুরো শরীরে একবার চোখ বুলিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম
–হাসছ কেন
–তোমার শরীরের যে অবস্থা না জানি রান্নাঘরের কি হাল করেছ
–পারলে তাড়াতাড়ি দুইটা পরোটা করে দাও প্রচন্ড খিদা লাগছে
–সেটা তো আপনার অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে, রান্নাঘর কোন দিকে নিয়ে চল
–হুম চলেন

রান্নাঘরে পা দিয়েই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো হাসব নাকি কাঁদবো বুঝতেছি না, মেঝেতে ময়দা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তেলের বুতল মেঝেতে পালানো, চুলায় কড়াই বসানো তেল পুরে ধুয়া উড়তেছে কি অবস্থা
–এই এসব কি
–আমি কি কখনো রান্না করেছি নাকি
–তাই বলে এই অবস্থা
–বেশ করেছি তাড়াতাড়ি রান্না করো

কি আর করার পরোটা বানাতে শুরু করলাম
–ভাবছি বিয়েটা এবার করেই ফেলবো (পিছনদিক থেকে আমাকে জরিয়ে ধরলো)
–বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলে বিয়ে করো রান্নার সময় দুষ্টুমি কেনো
–বিয়ের পর তো আমি রোজ তোমার সাথে এভাবে দুষ্টুমি করবো
–এই এইটা কি করলে
–কেন দেখনি তোমার গালে ময়দা মেখে দিয়েছি
–কেমন ফাজিল গালে ময়দা লাগিয়ে আবার বলতেছে
–আমি কি অন্য কারো বউয়ের গালে ময়দা লাগাইছি
–না তোমার বউ এর গালেই এবার ছাড়ো
–ছাড়তে পারবো না আমি এভাবেই তোমাকে জরিয়ে ধরে রাখবো আর তুমি রান্না করবা
–উউউফফফফফফ

পিছন থেকে জরিয়ে ধরে রাখলে বুঝি রান্না করা যায়, কি আর করার কোনো ভাবে রান্না করে নিলাম
–শরীরের অবস্থা তো বারোটা বাজিয়ে ফেলছ যাও ফ্রেশ হয়ে আস টেবিলে নাস্তা দিচ্ছি
–ওকে

টেবিলে নাস্তা এনে বসে আছি ফাজিলটা আসার নাম নেই, অনেকক্ষণ পর আসলো
–মা কে কি ডাকবো
–না ঘুমিয়ে আছেন যেহেতু থাক উঠলে পর বলবো আম্মু তোমার বউমা নাস্তা বানিয়ে রেখে গেছে খেয়ে নাও
–হইছে খাও এখন
–হুহ বউ পাশে থাকতে নিজে খাবো কেন
–এখন কি খাইয়েও দিতে হবে
–অবশ্যই

আর কিছু না বলে খাইয়ে দিতে শুরু করলাম জানি এই পাগলের সাথে বক বক করে লাভ হবে না শেষে আমাকেই খাইয়ে দিতে হবে
–বিয়ের পর লক্ষী বউ এর মতো সবসময় এভাবে খাইয়ে দিবা বুঝছ
–হুম তুমি তো পিচ্ছি বাবু প্রতিদিন খাইয়ে দিতে হবে
–হিহিহি বুঝার জন্য থ্যাংকস

রাগি চোখে থাকালাম ওর দিকে তখনি ওর ফোনটা বেজে উঠলো, ফোনটা হাতে নিয়ে আমার দিকে একবার থাকালো তারপর আমাকে অভাক করে দিয়ে দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো, বুঝলাম না কে এমন ফোন দিল যে লুকিয়ে কথা বলতে হবে……

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৮

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে আব্বু, আমি, তুলি, রিয়া, শ্রাবন আর আকাশ পুলিশ স্টেশনে গেলাম

আম্মু আর রাকিবের সামনে আমরা সবাই বসে আছি, আম্মুর মুখটা ভয়ে চুপসে গেছে আর রাকিবের তো আরো খারাপ অবস্থা
আমি: আম্মু কেন করলে এমন
আম্মু: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি নাহয় তোমার মেয়ে ছিলাম না কিন্তু তুলি তো তোমার পেটের সন্তান ওর সাথে কিভাবে এমন করলে আর আব্বু উনি তো তোমার স্বামী উনার সাথে এসব কিভাবে করলে
আম্মু: (নিশ্চুপ)
আমি: তুলির কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছি এখন শুধু দুইটা প্রশ্নের উত্তর চাই, শ্রাবন আর আমাকে কেন আলাদা করছিলা আর আকাশের সাথে বিয়ে হয়েছিল যে তোমার কি লাভ হয়েছিল
আম্মু: (নিশ্চুপ)
আমি: দেখ তুমি চুপ হয়ে থাকলে তোমার শাস্তি বেশি হবার ব্যবস্থা করবো আর যদি সব সত্যি বলে পেলো তাহলে শাস্তি কম হবে
এবার আম্মু আমার দিকে চোখ তুলে থাকালো চোখে লজ্জা আর ভয়ের চিহ্ন

আম্মু বলতে শুরু করলো….

রাকিবের সাথে আমার কলেজে সম্পর্ক ছিল আমি গরীব ছিলাম তাই ওর পরিবার মেনে নেয়নি, ও বিয়ে করে নেয় অন্য মেয়েকে আর আমার বিয়ে হয় তোর আব্বুর সাথে, কিন্তু দুবছর পর রাকিবের স্ত্রী রাকিব কে ডিভোর্স দেয় তখন রাকিব আমার কাছে ফিরে আসে, তোর আব্বুকে ডিভোর্স দিয়ে ওর কাছে চলে যেতে বলে, কিন্তু আমি যাইনি

রাকিবের সাথে দেখা হত কথা হত ও আমাদের বাসায় আসত আমার অন্য ফ্রেন্ডস দের সাথে, এভাবে কেটে যায় অনেক গুলো বছর তুই বড় হয়ে যাস তুলিও বড় হয়

হঠাৎ করে আমাকে টাকার নেশায় পেয়ে বসে, আমার মনে হয় তোর আব্বু আমাকে জীবনে কিছুই দিতে পারেনি তারচেয়ে রাকিবের কাছে চলে গেলে টাকা ভালোবাসা দুটিই পাবো, আমি রাকিব কে আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেই যে ওর কাছে ফিরে যাবো

আমরা যখন প্ল্যান করছিলাম তোর আব্বুকে ডিভোর্স দেয়ার তখনি রাকিব তোকে দেখে আর তোকে ভোগ করতে চায় কিন্তু আমি বাধা দেই তখন ও আমাকে টাকার লোভ দেখায় আর বলে আমাকে বিয়ে করবে, আমি অনেক ভেবে চিন্তে রাজি হই কারন আমি ভেবেছিলাম তোকে ওর হাতে তুলে দিলে ও আমাকে বিয়ে করবে নাহলে করবে না, কিন্তু তোর আব্বুর জন্য তোকে রাকিবের হাতে তুলে দেয়ার কোনো সুযোগ পাইনি তখনি জানতে পারি শ্রাবনের সাথে তোর সম্পর্ক চলছে

রাকিবের প্ল্যান মতো শ্রাবনকে হুমকি দেই তোর জীবন থেকে চলে যেতে কিন্তু ও যেতে চায়নি তাই তোকে মেরে ফেলার ভয় দেখানোর জন্য বিষ খাইয়ে ছিলাম শ্রাবন যেন ভয় পেয়ে দূরে চলে যায়, তাতেও যখন লাভ হয়নি তখন রাকিব ওর লোক দিয়ে শ্রাবনকে মারধোর করে, তারপর শ্রাবনের আম্মুকে হুমকি দিয়ে আসে আবার তোর সাথে যোগাযোগ করলে তোকে আর শ্রাবনকে মেরে ফেলবে

এসব রাকিবের প্ল্যান ছিল কারন ও তোকে আকাশের বউ করে নিতে চেয়েছিল, এতে রাকিবের দুইটা লাভ ছিল তোকে ভোগ করতে পারবে আর শেষে বাহিরে পাচার করে টাকা পাবে, রাকিব জানতো আকাশ মেঘাকে ভালোবাসে তোকে কখনো মেনে নিবে না আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তোকে ভোগ করতে পারবে কিন্তু ওর কোনো প্ল্যান সাকসেস হয়নি

যখন তুই আকাশকে ডিভোর্স দিয়ে মেঘা আর আকাশের বিয়ে দিলি তখন রাকিব তোর আশা ছেড়ে দেয়, তুই বাসা থেকে চলে আসার পর আমি সুযোগ পেয়ে যাই তোর আব্বুকে বলি তুই এক্সিডেন্ট করে মারা গেছিস, তোর আব্বু হার্ট এট্যাক করে আর এই সুযোগে আমি সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নেই কিন্তু একটা জমি তোর নামে থাকার কারনে নিতে পারিনি কারন এই জমির উইল করা ছিল এভাবে যে তুই মারা গেলে এই জমি এতিমখানার নামে হয়ে যাবে, তখন রাকিব খুঁজ নিয়ে জানতে পারে জমিটা অনেক ছোট কোনো জায়গা না অনেক বড় জমি, রাকিব সিদ্ধান্ত নেয় এই জমিতে হোটেল বানাবে কিন্তু জমি পেতে হলে তোকে প্রয়োজন তাই রাকিব তোকে খুঁজে বের করে আর ফোনে হুমকি দেওয়া শুরু করে, তোর আব্বু না বললে তুই জমি কিছুতেই দিবি না এইটা রাকিব আর আমি জানতাম তাই তোর আব্বুকে রাজি করানোর জন্য রাকিব মারধোর করে আর তুলিকে বাহিরে পাচার করে দেয়ার কথা বলে কারন টাকাও পাবে আর আমাদের বিয়ে করতে সমস্যা হবে না কিন্তু তুলি পালিয়ে আসে, তারপরের সবকিছু তো তোর জানা…..

আম্মুর কথা গুলো শুনে চুপ হয়ে আছি আসলে কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, ওনাকে এখন আমার কি বলা উচিত তাও খুঁজে পাচ্ছি না, সবাই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে

আম্মু তুমি হয়তো একটা কথা ভুলে গিয়েছ “লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু”
তুমি টাকা আর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে এতোকিছু করলে, নিজের স্বামী সন্তানের চেয়ে টাকা তোমার কাছে বড় হয়ে গেলো

পেয়েছ তো এখন তোমার রাকিবকে প্রাণ ভরে ভালোবাস জেলে বসে বসে দুজন দুজনকে, এখন তোমার টাকা কোথায় তোমাকে মুক্ত করে নিয়ে যায় না কেন
ছিঃ তোমাকে আম্মু বলে ডাকতে আমার ঘৃণা হচ্ছে, পাপ যখন করেছ এখন শাস্তি ভোগ কর, পাপের শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে…..

আম্মু নিশ্চুপ হয়ে শুনছে আর চোখের পানি ফেলছে, আমরা চলে আসলাম ওখান থেকে……

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৭

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

তুলি বলতে শুরু করলো….

আপু তুমি যখন আব্বুকে চিঠি লিখে বাসা থেকে চলে আস তখন আব্বুর আগে আম্মু চিঠিটা পায়, চিঠিটা পড়ে আম্মু খুশি হয়েছিল সেটা বুঝেছিলাম আম্মুর মুখ দেখেই কিন্তু আম্মুর প্ল্যান বুঝতে পারিনি

যেদিন তোমার ফোন ছিনতাই হয় সেদিন আব্বু হার্ট এট্যাক করেন কারন আম্মু তোমার ফোন ছিনতাই করিয়ে বলেছিল তুমি নাকি এক্সিডেন্ট করে মারা গেছ, কথাটা সত্যি কিনা যাচাই করতে পারিনি তার আগেই আব্বু এই কথা শুনে হার্ট এট্যাক করেন, আব্বুকে নিয়ে হসপিটালে যাই আমরা

সেদিন রাতেই আম্মু আব্বুর ঘুমন্ত অবস্থায় সিগনেচার নিয়ে বাসা বিক্রি করে দেয়

আব্বু সুস্থ হবার পর আমাদের নতুন বাসায় নিয়ে যায় বাসাটা কার জানো আকাশ ভাইয়ার মামা রাকিব এর, আব্বু চুপচাপ সব দেখছিলেন কিছু বলার মতো অবস্থা আব্বুর ছিল না কারন আব্বু তখন জানতো তুমি মারা গেছ

এভাবে মধ্যে দুইটা বছর কেটে যায় আব্বু আমি ওই বাসায় জীবন্ত লাশের মতো বেঁচে থাকি

হঠাৎ আব্বু আমি দুজনেই বুঝতে পারি আম্মু আর রাকিবের মধ্যে সম্পর্ক আছে, আব্বু আম্মুকে শান্ত ভাবে বুঝায় এসব পাপ ভালো হয়ে যেতে কিন্তু আম্মু বুঝে না তাই আব্বু আম্মুকে বলে দেয় আব্বুকে যেন ডিভোর্স দিয়ে রাকিবের কাছে চলে আসে, আম্মু তাতেও রাজি না কারন আব্বুর একটা জমি আছে যে জমিটা রাকিবের প্রয়োজন

যখন আব্বুকে বলে জমিটা আম্মুর নামে লিখে দিতে তখন আব্বু জানায় জমিটা তোমার নামে করা আর তুমি মারা গেলে জমিটা এতিমখানার নামে হয়ে যাবে, তুমি মারা গেছ তাই এখন জমিটা এতিমখানার নামে হয়ে গেছে

তখন আম্মু আর রাকিব জানায় তুমি মারা যাওনি বেঁচে আছ, আব্বু তোমাকে ফিরে পাবার জন্য অস্থির হয়ে যায়, এদিকে জমির জন্য রাকিবও তোমাকে খুঁজতে শুরু করে একসময় পেয়েও যায় কিন্তু আব্বু বা আমাকে তোমার ঠিকানা দেয়নি

এভাবে অনেকদিন কেটে যায় আম্মু আর রাকিব আমাদের আটকে রাখে শুধুমাত্র জমিটার জন্য, রাকিব আব্বুকে বলেছিল তোমার সাথে দেখা করিয়ে দিবে জমিটা যেন দিয়ে দেন আব্বু না করেন তাই রাকিব আব্বুকে প্রচুর মারধর করে আব্বুর সামনে আমাকেও মারে আর আমার গর্ভধারিণী মা দেখে দেখে হাসে

গত তিন দিন আগে আব্বু আর আমি জানতে পারি আম্মু আর রাকিব মিলে নারী পাচার করে, এই ব্যবসা ওদের অনেক দিনের

গতকাল আম্মু আর রাকিবের মধ্যে কথা হয় আমাকে বাহিরে পাচার করে দিবে আর এই কথা শুনে ফেলি আমি, আব্বুকে বলার পর আজ খুব কষ্ট করে আব্বুকে ওই বাসায় একা রেখে আমি পালিয়ে এসেছি তারপর তোমার সাথে দেখা হলো….

তুলির কথা গুলো শুনে বুবা হয়ে গেলাম একজন মা কিভাবে পারে নিজের মেয়েকে পাচার করতে, একজন স্ত্রী কিভাবে পারে স্বামীর উপর এভাবে অত্যাচার করতে
রিয়া: এই তমা কি ভাবছিস
আমি: আব্বুকে ওখান থেকে আনতে হবে
তুলি: ওরা বাসা চেঞ্জ করে ফেলেছে আমি চিনি নতুন বাসা

একটু পর শ্রাবন আর আকাশ হসপিটালে আসলো, ওদের সবকিছু বললাম
শ্রাবন: তাহলে আমাকে ওদের দুজনকে এরেস্ট করারই দায়িত্ব দিয়েছে, আমি এখনো ফাইল খুলে ওদের ছবি দেখিনি
আমি: তাহলে এরেস্ট করছ না কেন
শ্রাবন: এই শহরে আসলামই তো মাত্র আগামীকাল অফিসে গিয়ে দেখি
আমি: তাড়াতাড়ি কিছু কর আব্বু কিন্তু ওদের কাছে
শ্রাবন: ভয় পেয়ো না তোমার আব্বুকে নিয়ে আসবো

তিনদিন হসপিটালে থাকলাম তুলি কে নিয়ে, তুলি সুস্থ নাহলে রাকিব এর বাসায় নিয়ে যেতে পারবে না তাই এতো দিন শ্রাবন কিছু করতে পারেনি, আজ শ্রাবন পুলিশ নিয়ে তুলি কে সাথে নিয়ে রাকিব কে এরেস্ট করতে গেলো

সেই দুপুরে ওরা গিয়েছিল সন্ধ্যা নেমে আসলো কিন্তু ওদের কোনো খবর নেই শ্রাবন ফোন রিসিভ করছে না এদিকে টেনশনে আছি সবাই

সন্ধ্যা সাতটার দিকে শ্রাবন ফোন করে বললো বাসায় আসছে, কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বেজে উঠলো দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম, দরজা খুলেই আব্বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম, কতোদিন পর আব্বুকে দেখছি আর এভাবে জরিয়ে ধরে কাঁদছি, আব্বু তুলি আর আমাকে বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদছেন আমরাও কাঁদছি সাথে কাঁদতেছে শ্রাবন, আকাশ, মেঘা আপু, রিয়া, আন্টি, মা
আমাদের কান্না দেখে সবাই কাঁদতেছে

এই কান্না কোনো কষ্টের কান্না না বাবা মেয়ে এক হবার সুখের কান্না…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৬

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

চোখ খুলে দেখি আমি বিছানায় সবাই আমার পাশে বসা
শ্রাবন: কি হয়েছে হঠাৎ এমনভাবে চিৎকার দিয়েছ কেন আর অজ্ঞান হয়ে গেলা কিভাবে
আকাশ: তোমার চিৎকার আমাদের বাসা থেকে শুনা গেছে দৌড়ে এসে দেখি তুমি অজ্ঞান কি হয়েছে
আমি: ঐ নাম্বার থেকে আবার ফোন আসছিল হারামজাদা বলে আব্বু নাকি মারা গেছে
শ্রাবন: গাদি ও বললো আর তুমি বিশ্বাস করে কান্না শুরু করে দিলে
আমি: বিশ্বাস করিনি আর ও তোমাকেও হুমকি দিয়েছে
শ্রাবন: মানে
আমি: বলেছে তোমাকে যেন বলে দেই পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেন প্রাণটা না হারাও
আকাশ: তারমানে ও সবাইকে চিনে আর শ্রাবনেরও শত্রু
শ্রাবন: আমার তো কোনো শত্রু নেই
রিয়া: পুলিশের শত্রু হতে কতক্ষণ
শ্রাবন: ঠিক আছে আমি দেখছি তুমি ভয় পেয়ো না

আকাশ আর শ্রাবন নিজেদের মধ্যে কি যেন কথা বললো তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো, আমার পাশে রিয়া, মেঘা আপু, মা আর আন্টি বসা
রিয়া: ফোনটা তো ভেঙ্গে ফেললি
আমি: ভালো হয়েছে বদমাইশটা আর আমাকে ফোনে পাবে না
রিয়া: ও হয়তো আমাদের সবাই কে চিনে
আমি: আচ্ছা ও আম্মুর লোক নয়তো আম্মুর পক্ষে তো সবই সম্ভব
রিয়া: হলে হতেও পারে

সারাদিন শ্রাবন আর আকাশ বাসায় আসেনি কোথায় গেছে তাও জানিনা কেউ ফোন রিসিভ করে না, এদিকে আমার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে এসব কি আম্মু করতেছে কিন্তু কিসের জন্য

রাতে শ্রাবন আর আকাশ বাসায় আসলো এসে যা জানালো আমার তো মাথা ঘুরে গেছে, অচেনা নাম্বার থেকে ফোন দেয় আকাশের মামা রাকিব, আম্মু আর রাকিব মিলেই নাকি এসব করতেছে, আম্মু যদি রাকিবের সাথে মিলে এসব করবে তাহলে আব্বু আর তুলি কোথায় উফফফফফ মাথায় কিচ্ছু আসছে না, আম্মু কেন এসব করছে ঐ জমিটার জন্য….?

সকালে আমার জ্বর প্রচন্ড বেড়ে গেলো, আকাশ আর শ্রাবন অফিসে তাই রিয়া আর মেঘা আপু আমাকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে আসলো

ডক্টর এর কাছ থেকে আসার সময় রিয়া বললো একটু ঘুরে আসতে তাহলে আমার ভাল লাগবে, আমরা হাটতে হাটতে একটু দূরে গেলাম উদ্দেশ্য পার্কে যাবো, মাঝ রাস্তায় হঠাৎ লক্ষ করলাম একটি মেয়ে দৌড়াচ্ছে, আমাদের থেকে অনেক দূরে তাই বুঝা যাচ্ছে না কিছু, হঠাৎ দেখলাম মেয়েটির পিছনে কয়েকটা লোক তার মানে মেয়েটি কে ধরার জন্য দাওয়া করছে আর মেয়েটা প্রাণপণে দৌড়ে আমাদের দিকে আসছে, এই রাস্তায় তেমন মানুষ নেই মাঝে মাঝে কয়েকটা দোকানপাট

মেয়েটি আমাদের কাছে আসতেই হুচট খেয়ে পড়ে গেলো, মুখ উড়না দিয়ে পেছানো কিন্তু কেমন যেন চেনাচেনা লাগছে, রিয়া গিয়ে মেয়েটিকে তুললো আমাদের দেখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলো, মেয়েটা হাপাতে হাপাতে মুখ থেকে উড়না সরালো, মেয়েটির মুখের দিকে থাকিয়ে আমি যেন থ হয়ে গেলাম কাঠের মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছি, রিয়া ওকে জাপটে ধরে চিৎকার দিয়ে উঠলো তুলি তুই, রিয়ার চিৎকারে আমার হুশ হলো তুলিকে বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরলাম, হ্যা আমি আমার ছোট্ট বোনটা কে ফিরে পেয়েছি কিন্তু এই অবস্থায় ফিরে পাবো কল্পনাও করিনি, তুলি আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতেছে
আমি: এই তুলি তোর এই অবস্থা কেন আর ওরা কারা
তুলি: ওরা সন্ত্রাসী পরে সব বলবো আপু আগে আমাকে বাচাও আমার পা কেটে গেছে
ওর কথা শুনে পায়ের দিকে থাকালাম খুব রক্ত ঝরছে তাড়াতাড়ি পাশের হসপিটালে নিয়ে গেলাম

তুলির চিকিৎসা করছে ডক্টর আমরা তিনজন বাইরে বসে আছি, মাথায় কিছু আসছে না তুলির এই অবস্থা কেন আব্বু আম্মু কোথায় আর সন্ত্রাসীরা ওকে ধরতে চায় কেন

একটু পর ডক্টর বেড়িয়ে আসলেন
–ডক্টর তুলি…..
–রোগি আপনার কি হয়
–বোন
–মেয়েটার বয়স তো বেশি না এই ছোট মেয়েটা কে অনেক শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছে সারা শরীরে আগাতের চিহ্ন, রোগীকে কয়েক দিন রেস্টে রাখতে হবে
–ওর কিছু হবে না তো
–হসপিটালে রাখুন কয়েকদিন চিকিৎসা চললে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে
–ঠিক আছে

শ্রাবনকে ফোন করে বললাম হসপিটালে আসতে, তারপর তুলির কাছে গেলাম, তুলিটা বেডে শুয়ে আছে মুখে যন্ত্রণার চাপ স্পষ্ট ফুটে আছে, মাথার পাশে বসে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললাম
আমি: তুলি তোর এই অবস্থা কেন আব্বু আম্মু কোথায়
তুলি: আগে বল তুমি কোথায় ছিলে কত খুঁজেছি তোমাকে জানো
আমি: এদিকেই থাকি আমি আমাদের বাসায় অনেকবার গিয়েছি কিন্তু তোদের পাইনি
তুলি: কিভাবে পাবে আমরা তো ওখানে থাকতাম না চলে গিয়েছিলাম অন্য জায়গায়
আমি: কোথায় গিয়েছিলি আর আমাকে জানাসনি কেন
তুলি: তোমার ফোন বন্ধ ছিল অনেক চেষ্টা করেছি যোগাযোগ করার কিন্তু পারিনি
আমি: আমার ফোন ছিনতাই হয়েছিল
তুলি: হুম জানি
আমি: তুই কিভাবে জানিস
তুলি: সে অনেক কথা
রিয়া: তমা এসব পরে শুনতে পারবি এখন তুলির রেস্টের প্রয়োজন
তুলি: আমি ভালো আছি রিয়া আপু তোমরা অনেক কিছু জানোনা তোমাদের জানা প্রয়োজন
আমি: কি জানিনা আর কি জানা প্রয়োজন
তুলি: তোমার ফোন কে ছিনতাই করেছিল, আমরা হুট করে কোথায় চলে গিয়েছিলাম, আব্বু কোথায় আছেন আর আমার এই অবস্থা কেন
আমি: তাহলে সব বল
তুলি: বলছি

তুলি বলতে শুরু করলো……

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৫

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

রাতে বারান্দাতেই ওর কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরছিলাম, সকালে রিয়ার ডাকে দুজনের ঘুম ভাঙ্গলো
রিয়া: রোমান্স করতে করতে বারান্দাতেই ঘুমিয়ে পরছিলা হিহিহি
আমি: এত্তো হিহিহি করছ কেন
রিয়া: তোদের রোমান্স দেখে
আমি: তোরে আমি….
রিয়া: কিচ্ছু করতে হবে না আন্টি উঠে পরেছেন ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে আস দুজন
শ্রাবন: তুমি যাও আমরা আসছি
রিয়া: ওকে

রিয়া যেতেই শ্রাবন আমাকে জরিয়ে ধরলো
–দেখেছ আমার কাধে এতো আরামে ঘুমাইছ যে আম্মু উঠার আগে তুমি উঠতে পারোনি হিহিহি
–তোমার কারনেই তো এমন হলো আবার হাসতেছ মা কি ভাববেন
–কিছুই না আম্মু বুঝে
–কচু বুঝে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আস
–ওকে যাও আসছি

নাস্তা খেতে খেতে মা বললেন
মা: তমা তোমার তো অনেক কিছুই অজানা খেয়ে আমার রুমে এসো সব বলবো তোমাকে
আমি: ঠিক আছে

শ্রাবন, আমি, রিয়া আর মা সবাই মায়ের রুমে বসে আছি, মা বলতে শুরু করলেন
মা: তমা যেদিন তোমার আম্মু তোমার হাত পুরিয়ে দেয় তার আগের দিন উনি আমাদের বাসায় এসেছিলেন
আমি: অভাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আম্মু কিভাবে বাসা চিনে আর আপনাদেরই বা কিভাবে চিনে
শ্রাবন: তোমার জন্মদিনের রাতে উনি ছাদে আমাদের দুজনকে দেখেছিলেন
আমি: তারপর
মা: উনি বাসায় এসে শ্রাবন কে হুমকি দেন তোমাকে যেন ভুলে যায়, আমি উনাকে সাফ জানিয়ে দেই তুমিই আমার বৌমা হবে উনি কিছু না বলে চলে যায়, পরেরদিন ফোনে জানিয়ে দেয় তোমার হাত পুরিয়ে দিছে শ্রাবন যদি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখে তাহলে তোমাকে মেরে ফেলবে
শ্রাবন: তখন থেকেই আমি তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই তোমার কোনো ক্ষতি হলে আমি বাঁচতে পারবো না তাই
আমি: আমাকে তখন এসব বলনি কেন
শ্রাবন: তোমার আম্মু বলছিল তোমাকে এসব জানালে উনি তোমাকে মেরে ফেলবে
মা: আমরা এসব বিশ্বাস করিনি কারন সৎ মা হলেও তো মা, মেয়েকে কিভাবে মেরে ফেলবে তাই শ্রাবন তোমাকে আবার ফোন দেয়, আর তার দুদিন পরই তোমাকে বিষ খাওয়ায় তোমার আম্মু
আমি: (কথাটা শুনে অভাক হলাম না আমি তো আগেই বুঝতে পারছিলাম এইটা আম্মুর কাজ)
শ্রাবন: চুপ হয়ে আছ কেন
আমি: এমনি
মা: তুমি হাসপাতালে ছিলে কিন্তু আমরা মা ছেলে তোমাকে এক নজর দেখতে পারিনি তোমার আম্মু বলেছিল আবার যদি তোমার সাথে শ্রাবন যোগাযোগ করে তাহলে তোমাকে জানে মেরে ফেলবে
শ্রাবন: সেই ভয়ে আমি তোমাকে ফোন দেইনি সিম চেঞ্জ করে ফেলি তুমি বেঁচে আছ এইটুকুতেই শান্তি খুঁজে নেই আর কিছু করার ছিল না আমার
আমি: আম্মু এমন করলো কেন কিছু বলেছে
শ্রাবন: হ্যা আমি নাকি তোমার যোগ্য না আমার কাছে তোমাকে বিয়ে দিলে উনার কোনো লাভ হবে না
মা: তারপর তোমার আম্মু এসে জানায় তোমার নাকি অনেক বড় জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে কাজেই শ্রাবন যেন তোমাকে ভুলে যায়
শ্রাবন: আমি চেয়েছিলাম বিয়ের আগে তোমাকে সবকিছু লুকিয়ে জানাব কিন্তু তার আগেই তোমার আম্মু গুন্ডা ভাড়া করে আমাকে মারে আমার অবস্থা খুব খারাপ ছিল তাই আম্মু আমাকে নিয়ে কক্সবাজার চলে যান
মা: আমার ছেলেটা কে তুমি ভুল বুঝো না ওর কোনো দোষ নেই ও এই জায়গা ছেড়ে যেতে চায়নি আমি জোর করে নিয়ে যাই ওই তো আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল তাই ভয় পেয়ে যাই ওর যদি কিছু হয়ে যায়
আমি: না মা এতে তো আপনাদের কোনো দোষ নেই
মা: তুমি যেমন ভালো ছিলে না শ্রাবনও তেমন ভালো ছিল না সবসময় তোমার কথা ভাবতো কেমন যেন ঘোরের মধ্যে থাকতো এভাবে কিছুদিন যেতেই ও অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রায় ছয়মাস পর ও সুস্থ হয়
শ্রাবন: তোমার বিয়ে হয়ে গেছে জানতাম তাই তোমাকে পাবার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, তোমাকে ভুলে থাকার জন্য পুলিশে চাকরি নেই নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি কিন্তু রিয়ার সাথে যোগাযোগ হবার পর ও যখন বললো তুমি আকাশ কে মেনে নাও নি ডিভোর্স নিয়েছ তখন আবার তোমাকে পাবার ইচ্ছা জাগে তারপর এখানে ছুটে আসি
রিয়া: তমা আমি সব জানতাম শ্রাবনের সাথে যেদিন কথা হয়েছিল ও সেদিন সব বলেছিল আমি তোকে জানাই নি কারন আমি চেয়েছিলাম শ্রাবনের মুখ থেকেই তুই এসব শুন
আমি: হুম কিন্তু আকাশের সাথে বিয়ে দিয়ে আম্মুর কি এমন লাভ হলো যে শ্রাবনের সাথে দিলে হত না
শ্রাবন: সেটাই তো ভাবার বিষয় এখন আগে তোমার আব্বুকে খুঁজে বের করতে হবে তাহলেই সব রহস্য বেরিয়ে আসবে
আমি: কিন্তু আব্বুকে পাবো কোথায়
মা: চিন্তা করো না মা একদিন ঠিক পেয়ে যাবা সবাই কে
আমি: হুম

রুমে এসে শুয়ে পরলাম ভালো লাগছে না আম্মু কেন এমন করলো সৎমা বলে কি এমন করবে, আর আম্মুর কি এমন লাভ হলো আকাশের সাথে বিয়ে দিয়ে, এসব ভাবছি তখনি ফোন ভেজে উঠলো আগের সেই নাম্বার
–হ্যালো
–কিরে তোর সৎ মায়ের ব্যাপারে সব জেনে গেছিস
–আপনি কে বলুন তো আমার সবকিছুর খুঁজ কেন রাখছেন
–সব বুঝবি আর হ্যা তোর শ্রাবনকে বলে দিস পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেন নিজের প্রাণটা না হারায়
–মানে
–হাহাহাহা সব বুঝবি এখন বল তোর আব্বুর ঠিকানা ফেলি
–না প্লিজ ঠিকানাটা দিন
–গিয়ে দেখ হয়তো কোথাও মরে পরে আছে আর শেয়াল কুকুরে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে

ফোনটা রেখে দিল এসব শুনে প্রচন্ড রাগ উঠলো ফোন ফ্লোরে ছুড়ে মারলাম চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম আমার আব্বু মরতে পারে না, চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে আসলো আমি কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেলাম…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৪

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে পিয়াস আমাদের ডেকে তুললো ওর ফ্লাইট নয়টায়, রিয়া তাড়াতাড়ি উঠে নাস্তা বানালো, নাস্তা খেতে খেতে রিয়া বললো
রিয়া: তমা তোর যাওয়ার দরকার নেই আমি ওকে এয়ারপোর্ট এগিয়ে দিয়ে আসব
আমি: আমাকে এতিমখানায় যেতে হবে
রিয়া: এই শরীর নিয়ে
পিয়াস: দুজনেই চলো আমাকে এগিয়ে দিয়ে তমাকে ডক্টর দেখিয়ে আসবা ওর তো জ্বর অনেক বেড়েছে
রিয়া: ঠিক আছে

রেডি হয়ে তিনজন বেড়িয়ে পরলাম এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে, গাড়িতে বসে আছি তখন শ্রাবন ফোন দিল
–হ্যালো
–জ্বর কমেছে
–একটু
–মিথ্যে বল কেন রিয়া যে বললো কমেনি ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাচ্ছে
–(রিয়ার দিকে রাগি চোখে থাকালাম ও হাসছে)
–চুপ হয়ে আছ কেন
–এমনি কমে যাবে আর ডক্টর এর কাছে যাচ্ছি তো
–আমার ট্রান্সফার হয়েছে তোমরা আগে যেখানে থাকতে ওই এলাকায় আগামীকাল আসছি
–তাহলে তো ওইদিকে বাসা ভাড়া নিতে হবে
–যেতে একটু কষ্ট হবে সমস্যা নেই আকাশদের উপরের ফ্লাটই ভাড়া নিবো
–ঠিক আছে
–বাসায় পৌঁছে ফোন দিও এখন রাখি
–আচ্ছা

পিয়াস কে এয়ারপোর্ট দিয়ে রিয়া আর আমি ডক্টর এর কাছে আসলাম, ডক্টর দেখিয়ে এতিমখানা ঘুরে তারপর বাসায় আসলাম

সন্ধ্যায় রিয়া রান্না বসালো আমি শুয়ে আছি তখন সেই নাম্বার থেকে আবার ফোন আসলো
–হ্যালো
–খুব ভালো আছিস তাই না
–আপনি কে বলুন তো
–তোর বাবা কে জিজ্ঞেস কর
–আব্বুকে আমি পাবো কোথায়
–আমি জানি তোর বাবার ঠিকানা
–কোথায় বলুন
–এতো সহজে বলছি না বাপ মেয়ে আলাদা থাক আর কিছু দিন
–প্লিজ ঠিকানাটা দিন আপনি জমি চান তো আমি দিয়ে দিবো
–জমি তো আমি নিবোই বলেই ফোনটা কেটে দিল

বার বার ফোন দিলাম কিন্তু মোবাইল বন্ধ, আব্বুর ঠিকানা আমার খুব প্রয়োজন জায়গার বিনিময়ে যদি ঠিকানা দিত তাও আমি জায়গা দিয়ে দিতাম কিন্তু এই লোক তো ফোন বন্ধ করে ফেলছে এখন কি করবো

রাতে শ্রাবনকে অচেনা নাম্বারের কথা সব জানালাম ও আগামীকাল এসে দেখবে বললো, এসব নিয়ে আর না ভেবে ঘুমিয়ে পরলাম

সকালে উঠে রিয়ার সাথে কিছু কাজ করলাম কারন আজ শ্রাবন আর মা আসবে

সারাদিন টুকটাক কাজ করে দুপুরে খেয়ে রিয়া আর আমি বারান্দায় গিয়ে বসলাম, একটু পর কলিংবেল বেজে উঠলো দুজনেই গেলাম, দরজা খুলে দেখি মা আর শ্রাবন, মা কে সালাম করতেই উনি আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন
–আমাকে মাফ করে দিও মা আমার জন্য তোমার জীবনটা এমন হলো
–আপনার কি দোষ
–আমি ভয় না পেয়ে তোমাকে সব বলে দিলেই হত
–কি বলে দিলে হত
–বলবো মা এখন তোমাকে সব কথা বলবো
–আচ্ছা পরে শুনবো সব কথা এখন ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিন
–আচ্ছা

মা কে একটা রুমে দিয়ে আমার রুমে আসলাম, রুমে এসে দেখি শ্রাবন আমার রুমে বসে আছে ভাবখানা এমন যে আজ থেকে উনি এই রুমেই থাকবেন, ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম
–এই তুমি আমার রুমে কেন
–তোমার রুম মানেই তো আমার রুম
–মানে
–আচ্ছা তুমিই বলো বউ এর রুম রেখে অন্য রুমে আমি থাকবো কেন
–এখনো বউ হই নাই বের হউ আমার রুম থেকে
–খুব শীঘ্রই বউ হয়ে যাবা
–আব্বুকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমি বিয়ে করছি না
–শশুড় কে ছাড়া আমিও বিয়ে করবো না
–তোমার রুমে যাও
–যাবো তো আমার বউ এর কাছে একটু থাকতে দাও
–এই একদম কাছে আসবা না
–হুহ বললেই হলো দুইটা বছর দূরে থাকছি আর পারবো না
–দুই বছর কি আমার জন্য দূরে থাকছ নিজের ইচ্ছাতেই তো দূরে চলে গেছিলা
–নিজের ইচ্ছায় যাইনি আমি পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম
–কি রকম
–পরে বলবো এখন একটু রোমান্স করতে দাও

ওর চোখের দিকে থাকালাম কেমন যেন এক মাথাল করা চাহনি, চোখে মুখে দুষ্টুমির চাপ, ও আমার দিকে আস্তে আস্তে এগুতে শুরু করলো আর আমি পিছাতে শুরু করলাম, পিছাতে পিছাতে দেয়ালে গিয়ে আটকে গেলাম, আমি দেয়ালে আটকে গেছি দেখে ওর মুখে দুষ্টু হাসি, আমার কাছে এসেই কপালে একটা মায়া দিয়ে দিল
–দেখ বিয়ের আগে এসব রোমান্স কিন্তু ঠিক না
–তাহলে চলো এখনি বিয়ে করে ফেলি
–বললাম তো আব্বুকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত বিয়ে করবো না
–এখানে আমার একটি কাজ আছে কাজটা শেষ করেই শশুড় আব্বুকে খুঁজতে শুরু করে দিব
–কি কাজ
–এক লোক নাকি নারী পাচার করে তাও বউকে সাথে নিয়ে ওদের কেই ধরতে হবে
–আরো কতো কি দুনিয়ায় দেখতে হবে
–জ্বী
–রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও
–আমার তো রোমান্স করা হলো না
–যাইবা তুমি
–যাচ্ছি যাচ্ছি
রাগি চোখে থাকাতেই দৌড়ে চলে গেলো ফাজিল একটা

রাতে সবাই একসাথে খেয়ে নিলাম মা আর রিয়া ওদের রুমে গেলো আর ফাজিলটা আমার পিছু পিছু আমার রুমে আসলো, রুমে এসে বলতেছে চলো বারান্দায় গিয়ে বসি
–এই তোমার মতলব কি
–বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে আমার মিষ্টি বউ এর চুলের ঘ্রান নিবো
–আহারে কি রোমান্স
–এই বাসায় ছাদ থাকলে ভালো হত
–কেন
–ছাদের স্মৃতি গুলো কি ভুলে গেছ
–ভুলার মতো স্মৃতি নাকি ওগুলো
–এজন্যই বলছিলাম ছাদ থাকলে ভালো হত আরো কিছু স্মৃতি জমানো যেত, অবশ্য নতুন যে বাসা নিবো ওই বাসায় ছাদ আছে
–আমি ঘুমাবো তুমি এখন যাও
–যাবো না বারান্দায় চলো
–না
–যাবা না
–না
–ওকে
বলেই আমাকে কোলে তুলে নিল বারান্দায় চেয়ারে নিয়ে বসিয়ে নিজেও বসলো
–চুপ করে বসে থাক আমি রোমান্স করবো
–মানে

আর কিছু না বলেই আস্তে আস্তে আমার কাছে আসতে শুরু করলো, ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিলো, আমি চোখ বন্ধ করে ওর গরম নিঃশ্বাস অনুভব করছি তখনি কানের মধ্যে এক কামড় বসিয়ে দিল আমি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরী২ পার্ট: ৩

0

জীবনেরডায়েরী২

পার্ট: ৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

খুব শান্ত ভাবে ও আমার চোখের দিকে থাকিয়ে আছে হয়তো আমার চোখে ওর জন্য ভালোবাসা আছে কিনা তাই খুঁজছে, আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি কি বলবো ওকে এখনো ভালোবাসি কিন্তু আমি তো এখন ডিভোর্সি কিভাবে বলি ওর আম্মু যদি আমাকে মেনে না নেন, কিছুক্ষণ আমার দিকে থাকিয়ে রইলো তারপর আমাকে ঘুরিয়ে দিয়ে পিছন দিক থেকে জরিয়ে ধরলো, চুলের খোপা খুলে দিয়ে চুলে নাক ডুবিয়ে দিয়ে শান্ত ভাবে বলতে শুরু করলো
–তমা আমি জানি তুমি এখন কি ভাবছ আমাকে এখনো ভালোবাস এই কথাটা বলবা কিনা তাই তো
–হুম
–ভয় পাইতেছ কেন আমি তোমাকে আগের মতই ভালোবাসি তুমি বিবাহিতা এইটা আমার কোনো সমস্যা না তোমার যদি বাচ্চা থাকতো তাও আমার সমস্যা ছিল না কারন আমি তোমাকে ভালবেসেছি তোমার শরীর কে না
–কিন্তু
–আম্মুর কথা ভাবছ ভয় নেই আম্মুও চায় তুমি উনার বৌমা হও
–তাহলে সেদিন দুজনেই আমাদের অপমান করেছিলে কেন
–আম্মু আমি দুজনেই পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম তোমাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের এমন করতে হয়েছে
–মানে
–এসব অনেক কথা পরে বলব তোমার শরীরে তো জ্বর রেস্ট নাও এখন
–না আমি ঠিক আছি
–কেমন ঠিক আছ তো দেখছিই
–আচ্ছা মা এখন কোথায়
–কক্সবাজার, আমরা এখন ওখানেই থাকি ভাবছি এখানে চলে আসবো
–একটা প্রশ্ন করি
–হুম কর
–দুবছ আগে আমি তোমাকে কক্সবাজার দেখেছিলাম পরে আর খুঁজে পাইনি সবাই বলেছে ভুল দেখেছি কিন্তু আমি তোমাকে চিনতে ভুল করতেই পারি না
–হ্যা তুমি আমাকেই দেখেছিলে আমি জানতাম না তুমি ওখানে ছিলে, তুমি আমাকে দেখে যখন দৌড়ে আসছিলে তখন খুব দ্রুত ওখান থেকে আমি সরে যাই
–কেন
–আমি জানতাম তোমার বিয়ে হয়ে গেছে আমার জন্য তোমার সংসারে কোনো জামেলা হউক তা আমি চাইনি তাই
–হুম
–তোমার আম্মু কেমন আছে
–জানিনা
–কেন
–আমি তো সবাইকে হারিয়ে ফেলছিলাম আব্বুকে এখনো খুঁজে পাইনি
–মন খারাপ করো না আমি তো এখন পুলিশ তোমার আব্বুকে খুঁজে বের করতে বেশি সময় লাগবে না
–হুম
হঠাৎ কাশির শব্দে শ্রাবন আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়াল, রিয়া এসেই হাসতে শুরু করলো
–হাসছিস কেন
–আমিই সবসময় তোদের রোমান্সে বাধা দেই হিহিহি
–হিহিহি বন্ধ কর নাহলে মাইর খাবি
–আচ্ছা বন্ধ করলাম তা শ্রাবন সাহেব আপনার কি খাবার খাওয়া লাগবে নাকি বউ এর পাশে থাকলেই চলবে
–খিদে আছে খাওয়া লাগবে আর খেয়েই চলে যাবো

শ্রাবন চলে যাবে শুনেই কেমন যেন খারাপ লাগতে শুরু করলো ভয় হচ্ছে খুব আবার যদি ওকে হারিয়ে ফেলি, এখন হারালে হয়তো আমি মরেই যাবো

দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসলাম কিন্তু আমি খেতে পারছি না শ্রাবন চলে যাবে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে
রিয়া: কিরে খাচ্ছিস না কেন
আমি: খাচ্ছি তো
শ্রাবন: টেনশন করতে হবে না দুদিনের ভিতরেই এখানে চলে আসবো আর প্রথমে তোমার বাসাতেই উঠবো (কথাটা শুনে ওর দিকে থাকালাম পাগলটা কিভাবে যেন আমার মনের সব কথা বুঝে যায়)
আকাশ: তমা আমরা বাসা পেয়ে গেছি বিকেলে চলে যাবো
আমি: কিছুদিন পর গেলে হয়না
মেঘা আপু: পাগলী ভয় নাই এমন জায়গায় বাসা নিয়েছি যেখানে চাইলেই এক মিনিটে তুমি যেতে পারবা
আমি: মানে
আকাশ: তোমার বাসার পাশে যে বাসা খালি আছে ওইটাই ভাড়া নিয়েছি
আমি: আমি তো ভেবেছিলাম দূরে কোথাও চলে যাবা
আকাশ: ওই বাসার উপরের ফ্ল্যাট খালি আছে শ্রাবন তুমি চাইলে খালি ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিতে পারো
শ্রাবন: তাহলে তো ভালই হবে সবাই কাছাকাছি থাকতে পারবো
রিয়া: হ্যা তোমাদের রোমান্স করতে সুবিধা হবে বলেই হাসতে শুরু করলো (এইটা যে কি সবসময় ফাজলামো করে)
পিয়াস: একটু কম হাস আমি আগামীকাল চলে যাবো
রিয়া: কেন
পিয়াস: কাজ পরে গেছে আব্বু ফোন দিছিলেন
রিয়া: তমার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে যাচ্ছি না
পিয়াস: পাগল হইছি তো তোমাকে এখন নিয়ে যাবো আর তমার বিয়ে ঠিক হলেই বাংলাদেশে যাবো বাংলাদেশে যাবো বলে আমাকে পাগল করে দিবা (পিয়াসের কথায় সবাই একসাথে হেসে উঠলো)

বিকেলে শ্রাবন চলে গেলো, মেঘা আপুরা নতুন বাসায় চলে গেছে যদিও আমার বাসার পাশেই তবুও বাসাটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে, পুরু বাসায় রিয়া পিয়াস আর আমি

রাতে আমার জ্বর অনেক বেড়ে গেলো তাই রিয়া আমার পাশেই ঘুমাল……

চলবে?