এক দৃষ্টিতে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটি কে দেখছি তার চোখেও পানি, চোখে তো পানি থাকবেই কারন সামনে যে দাড়িয়ে আছে সে তো আর কেউ না আমার পাগলী বান্ধবী রিয়া, দৌড়ে গিয়ে ওকে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম, দুজনেই কাঁদছি এতো দিনের জমানো সব কষ্ট উড়িয়ে দিচ্ছি হঠাৎ মেঘা আপু এসে দুজনকে ছাড়িয়ে বললো চারদিকে থাকিয়ে দেখতো, আমি চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলাম এয়ারপোর্ট এ থাকা অনেক মানুষ আমাদের দিকে অভাক হয়ে থাকিয়ে আছে, থাকুক তাতে আমাদের কি এতো দিন পর আমার হারিয়ে যাওয়া বান্ধবী কে না না বান্ধবী বললে ভুল হবে রিয়া তো আমার বোন, আমার বোন কে ফিরে পেয়েছি মানুষ হাসুক বা অভাক হউক তাতে আমার কি
রিয়া এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বললো
–কোথায় হারিয়ে গেছিলি
–আমি হারায়নি ভাগ্য আমাকে তোদের কাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছিল
–আচ্ছা এসব পরে শুনবো খিদা লেগেছে চল পাশের কোনো রেস্টুরেন্টে যাই
–হুম
‘বান্ধবী কে পেয়ে আমার কথা ভুলেই গেছ’ কথাটা শুনে সামনে থাকালাম রিয়ার স্বামী পিয়াস কে দেখে রিয়া আমি দুজনেই লজ্জা পেলাম, পিয়াসের সাথে একটু কথা বলে সবাই পাশের একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম
সবাই রেস্টুরেন্টে বসে আছি হঠাৎ মনে পরলো আকাশ কিভাবে রিয়া কে পেলো
আমি: আকাশ তুমি রিয়া কে কোথায় পেলে
আকাশ: এয়ারপোর্ট একটা কাজে এসেছিলাম হঠাৎ রিয়া কে দেখতে পাই ভালো করে চিনি না বিয়ের দিন দেখেছিলাম মাত্র পরে কথা বলে সিউড় হলাম এটাই তোমার বান্ধবী রিয়া
পিয়াস: তমা তোমার বান্ধবী এই দুইটা বছর আমাকে বাংলাদেশে আসবে বলে পাগল বানিয়ে দিয়েছে কাজের জন্য আসতে পারিনি কিন্তু এই শেষ দুই মাসে ওর জিদের কাছে হার মানতে হলো, অনেক বার বলেছি দেশে গিয়ে কোথায় খুঁজবে কিন্তু ওর একটাই কথা সারা বাংলাদেশ খুঁজে তোমাকে বের করবে
রিয়া: দুই মাস আগে আমি যার খুঁজ পেয়েছি তার কথা যদি তমা কে না বলি আমার শান্তি লাগবে না এজন্যই দেশে এসেছি
আমি: কিসের খুঁজ পেয়েছিস
রিয়া: শ্রাবনের
নামটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম বুকের মধ্যে কেমন যেন চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে, এই মানুষটা কে আমি কতো খুঁজেছি কতো কেঁদেছি মানুষটার জন্য
রিয়া: এই তমা কি হল তোর
আমি: হুম কিছু না
রিয়া: চুপ হয়ে আছিস যে
আমি: কোথায় পেলি ওকে
রিয়া: দুমাস আগে পিয়াস ফোনে কথা বলছিল আমি একটু শুনে ছিলাম কন্ঠটা পরিচিত মনে হয়েছিল তারপর পিয়াস কে জিজ্ঞেস করতেই ও বললো পিয়াসের ফ্রেন্ড শ্রাবন, তারপর শ্রাবনের পিক দেখে সিউর হলাম
আমি: ওহ
রিয়া: শ্রাবনের সাথে আমার কথা হয়েছে সবকিছু বলেছি ওকে ও তোর সাথে দেখা করতে চায়
আমি: দেখা করে আর কি হবে ও তো এখন আর আমায় ভালোবাসে না
রিয়া: কে বলেছে বাসে না দেখা কর আগে সব রহস্য বেড়িয়ে আসবে
আমি: কিসের রহস্য
রিয়া: অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে যা আমরা দুজন জানতাম না
আমি: শ্রাবন এখন কোথায় আছে
রিয়া: কক্সবাজার পুলিশে চাকরি করে আগামীকাল তোর সাথে দেখা করতে আসবে
আমি: (তারমানে কক্সবাজার আমি ওকেই দেখেছিলাম ভুল দেখিনি)
রিয়া: কিরে কি ভাবছিস
আমি: কিছুনা
রিয়া: এখন বাসায় চল
আমি: হুম
সবাইকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আসলাম, এসে রাতের রান্না করে সবাই খেয়ে নিলাম, সবাই খুব ক্লান্ত তাই ঘুমিয়ে পরলো কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই, অপেক্ষা করছি আগামীকালের কখন সেই মানুষটাকে দেখতে পারবো, মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শ্রাবন কি আমায় এখনো ভালোবাসে…? শ্রাবনের মা কি আমাকে মেনে নিবে….? রিয়া কিসের রহস্যের কথা বললো….?
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানিনা
সকালে রিয়ার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–কিরে তমা তোর শরীরে এতো জ্বর আসলো কিভাবে
–জানিনা
–জ্বরে তো শরীর পুরে যাচ্ছে এই অবস্থায় শ্রাবনের সাথে দেখা করতে যাবি কিভাবে
–কিছু হবে না পারবো
–যেতে হবে না আমি বাসার ঠিকানা বলে দিচ্ছি শ্রাবনকে ও এখানেই আসবে
–হুম
নিজেও বুঝলাম না এতো জ্বর আসলো কিভাবে রাতে তো ভালই ছিলাম, বিছানায় শুয়ে রইলাম রিয়া আর মেঘা আপু রান্নাবান্না করলো, সবাই খেতে বসেছি কিন্তু আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না, অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছেই না বার বার মনে পরছে শ্রাবনকে কবে দেখতে পাবো, না খেয়েই উঠে চলে আসলাম
রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখি এতিমখানা থেকে রহিম চাচার ফোন এসেছিল, কল ব্যাক করলাম
–হ্যা চাচা
–কিরে মা দুদিন ধরে এতিমখানায় আসো না যে
–একটু ব্যস্ত আছি বাসায় মেহমান আর জ্বরও উঠেছে তুমি ওই দিকটা একটু সামলে নাও
–ঠিক আছে সুস্থ হয়েই এসো
–আচ্ছা
ফোন রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম, দূর আকাশের দিকে থাকিয়ে ভাবছি কি হবে আমার ভবিষ্যৎ শ্রাবনকে কি ফিরে পাবো ও কি এখনো আমায় ভালোবাসে হঠাৎ কাধের উপর কারো হাতের ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলাম এই স্পর্শটা আমার খুব চেনা, বুকের মধ্যে যেন কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে আস্তে আস্তে পিছন ফিরে থাকালাম, এক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছি শ্রাবনের দিকে, হ্যা শ্রাবন ফিরে এসেছে, দুজন দুজনের চোখের দিকে থাকিয়ে আছি, আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে গালে নেমে আসতেই ও দুহাত দিয়ে আলতো করে মুছে দিল, আমার নাকের সাথে ওর নাকটা লাগিয়ে বললো আর তোমার চোখের পানি ঝরাতে চাই না আগের মতো ভালোবাস তো পাগলী…….
দুইটা বছর অনেক কষ্টে পার করলাম এতো খুঁজার পর শেষ পর্যন্ত আকাশ আর মেঘা আপু কে খুঁজে পেলাম অবশ্য আমি খুঁজে পাইনি ওরাই আমাকে খুঁজে বের করেছে, ওদের যেহেতু পেয়েছি সবাইকে খুঁজে পাবো ইনশাল্লাহ
সকাল বেলা বারান্দায় বসে কপি খেতে খেতে এসব ভাবছি হঠাৎ মেসেজ টোন বেজে উঠলো, ওপেন করে দেখি অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে “খুব ভালো আছিস তাই না কিন্তু বেশি দিন আর ভালো থাকবি না তুই আমার সব প্লেন মাটি করে দিয়েছিস আমি তোর জীবন নষ্ট করে দিব”
মেসেজটা পড়ে খুব অভাক হলাম আমি আবার কবে কার প্লেন মাটি করলাম নাম্বারও তো চিনি না কে হতে পারে যে এভাবে আমাকে হুমকি দিলো
মেসেজটার কথা ভাবতে ভাবতে এতিমখানায় চলে আসলাম, সারাদিন মেসেজটার কথা মাথা থেকে সরাতে পারিনি, আমার জীবন তো এমনিতেই কষ্টে ভরা এখন আবার কে আসছে জীবন নিয়ে খেলতে কে জানে
রাতে খেতে বসছি তখন আবার মেসেজ টোন বেজে উঠলো ওপেন করে দেখি সকালের নাম্বার “আমার কি ক্ষতি করেছিস বুঝতে পারছিস না তাই তো আমিই বলে দিচ্ছি তোর বাবার একটা জমি আছে যেটার কথা তোরা কেউ জানিস না জমিটা তোর নামে আমার ওই জমিটা চাই”
মেসেজটা পড়ে আশ্চর্য হলাম আমার নামে জমি আছে অথচ আমিই জানিনা আব্বু তো কখনো এই জমির কথা বলেননি আর এই জমিতে কি এমন আছে যে এই লোকটার জমিটা চাই-ই-চাই, আচ্ছা লোকটা কে হতে পারে আম্মু নাকি অন্য কেউ…? মাথায় আসছে না আব্বুকে খুঁজে পেলে হয়তো জানতে পারতাম কিন্তু আব্বুকে পাবো কোথায়
সকালে কারো ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো নাম্বার না দেখেই রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–আমার ঘুম হারাম করে খুব আরামে ঘুমাচ্ছিস তোর সব আরাম আমি নষ্ট করে দিব
–কে আপনি
ফোনটা কেটে দিল কন্ঠটা কেমন যেন চিনাচিনা লাগছে কিন্তু মনে করতে পারছি না, অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না
ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করেই এতিমখানায় চলে আসলাম, হঠাৎ মেঘা আপু ফোন দিলেন
–হ্যালো
–তমা আকাশের ট্রান্সফার হয়েছে তোমার বাসা থেকে বেশি দূরে না আমরা ভাবছি তোমার বাসার কাছেই একটা বাসা নিব
–ভালো হবে একা একা আর ভালো লাগে না
–আগামীকালই আমরা আসছি
–আচ্ছা
যাক শেষ পর্যন্ত একাকীত্বটা কিছু কাটবে, মেঘা আপুদের তো পাশে পাব কিন্তু আব্বুকে কোথায় খুঁজব, আব্বুর কথা মনে পরতেই খুব কান্না পেলো আমার সাথেই কেন এতোসব হলো সবাইকে হারালাম
রাতে বারান্দায় বসে বসে ভাবছি দুবছর আগে কক্সবাজার শ্রাবনকে দেখেছিলাম কিন্তু পরে আর খুঁজে পাইনি হয়তো ও এখন কক্সবাজারেই আছে, ওকে খুঁজতে কি কক্সবাজার যাবো কিন্তু গিয়ে কি লাভ আমি এখনো ওকে ভালোবাসি কিন্তু ও তো আর আমায় ভালোবাসে না, খুঁজে পাওয়ার পর যদি ও বলে আমায় ভালোবাসে না তখন কি করবো আর আমি তো এখন ডিভোর্সি না শ্রাবন আমায় মেনে নিবে না শ্রাবনের মা মেনে নিবে তারচেয়ে খুঁজে না পাওয়াটাই ভাল, এসব ভাবতে ভাবতে অনেক রাত করে ঘুমালাম
সকালে কলিংবেল এর শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো, দরজা খুলে তো আমি অভাক এতো সকালে মেঘা আপুরা
আকাশ: অভাক হচ্ছ কেন
আমি: এতো সকালে তোমরা
মেঘা আপু: ঘড়ি দেখেছ (কথাটা শুনে দেয়ালে ঘড়ির দিকে থাকালাম এগারোটা বাজে দেখে নিজেই লজ্জা পেলাম)
আকাশ: অবশ্যই রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছ
আমি: হুম
মেঘা আপু: মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে না যে
আমি: ওহ উনি কোথায়
আকাশ: গাড়িতে
আমি গিয়ে আন্টিকে (আকাশের মা) সালাম করে বাসায় নিয়ে আসলাম, নতুন বাসা না পাওয়া পর্যন্ত ওরা আমার কাছেই থাকবে তাই অনেক ভালো লাগছে
আজ আর এতিমখানায় গেলাম না মেঘা আপু আর আমি মিলে দুপুরের রান্না করলাম
দুপুরে সবাই মিলে খেতে বসছি তখন মেসেজ টোন বেজে উঠলো সেই নাম্বার থেকেই মেসেজ এসেছে “কিরে আকাশ কে ডিভোর্স দিয়ে এখন আবার তোর বাসায় ওদের জায়গা দিলি আকাশ কে আবার প্রয়োজন নাকি” মেসেজটা পরে খুব রাগ উঠলো কিন্তু ভেবে পেলাম না কে হতে পারে যে আমার সব কিছুতে নজর রাখছে
আকাশ: তমা কি হয়েছে
আমি: না তেমন কিছু না
আকাশ: তোমাকে চিন্তিত লাগছে কেন
মোবাইলটা আকাশের কাছে দিয়ে সব মেসেজ পড়তে বললাম
আকাশ: কে হতে পারে
আমি: জানিনা
আকাশ: আচ্ছা তুমি টেনশন করো না আমি একটু এয়ারপোর্ট যাবো এসে ফোন করে দেখবো কে এইটা
আমি: হুম
বিকেলে মেঘা আপু আর আমি বারান্দায় বসে গল্প করছি হঠাৎ আকাশ ফোন দিল
আমি: হ্যালো
–তমা তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট আস
–কেন
–তোমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে
–বলবা তো কি
–এসে নিজের চোখেই দেখ
আর কিছু না ভেবে মেঘা আপু কে নিয়ে এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পরলাম, গাড়িতে বসে আছি রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না, জানিনা আমার জন্য কি সারপ্রাইজ আছে
এয়ারপোর্ট এসে পৌছেঁই আকাশ কে ফোন দিলাম, ও এসে আমাদের ওর সাথে যেতে বললো, আকাশের পিছন পিছন যাচ্ছি আর চারদিকে চোখ বুলাচ্ছি কি সারপ্রাইজ তা খুঁজছি হঠাৎ একটা জায়গায় গিয়ে আমার চোখ স্থির হয়ে গেলো, আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তব বুঝতে পারছি না, অভাক হয়ে সামনে থাকিয়ে আছি চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি ঝরতেছে……
রাস্তায় হাটছি কোথায় যাবো জানিনা, সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেক আগেই এই ব্যাস্ত নগরী অন্ধকার হতে শুরু করেছে হঠাৎ চোখ পরলো রাস্তার অপর পাশে একটা ৩-৪ বছরের বাচ্চা একা দারিয়ে কাঁদতেছে, এগিয়ে গিয়ে বাচ্চাটি কে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলাম কোনো কথা না বলে শুধু কাঁদছে
–বাচ্চাটি এতিমখানা থেকে চলে এসেছে (কথাটা শুনে ফিছনে থাকালাম একজন বৃদ্ধ লোক দাড়িয়ে আছেন)
–আপনি
–আমি পাশের এতিমখানার ম্যানেজার এই বাচ্চাটি এতিমখানা থেকে হারিয়ে গেছিল সকালে সারাদিন খুঁজে এখানে পেলাম
–ওহ
–আপনি কোথায় যাবেন
–জানিনা
–মানে
–বাসা থেকে চলে এসেছি কোথায় যাবো জানিনা
–আপনি চাইলে আপাদত আমাদের এতিমখানায় যেতে পারেন ওখানে আপনার বয়সী আরো দুইটা মেয়ে আছে ওরা বাচ্চাদের দেখাশুনা করে
–(কি করবো ভেবে পাচ্ছি না যাবো নাকি যাবো না, রাতের বেলা রাস্তায় থাকার চেয়ে এতিমখানায় থাকা অনেক ভালো)
–কি ভাবছেন
–যাবো চলেন
–হুম চলেন
–আমি আপনার মেয়ের বয়সী আমাকে তুমি করেই বলবেন চাইলে তুই করেও বলতে পারেন
–আমার নাম রহিম সবাই রহিম চাচা বলেই ডাকে তুমিও আজ থেকে এই নামেই ডেকো
–ঠিক আছে
তারপর চলে এলাম এতিমখানায় রিয়া আর আকাশ কে ফোনে সব জানালাম, আর আব্বু কে ফোন করে জানালাম টেনশন না করতে আমি ভালই আছি
সেই থেকে হয়ে গেলাম এই এতিমখানার একজন, এখন আমিও বাচ্চাদের দেখাশুনা করি আর এতিমখানায় থাকি, একটা সপ্তাহ ভালই কাটলো আব্বু রাগ করলেও আমি ভালো আছি শুনে আর ফিরে যাবার কথা বললেন না, হয়তো আব্বুও বুঝেছেন ওই বাসায় থাকার চেয়ে এখানে থাকা অনেক ভালো
এতিমখানার বাচ্চাদের কিছু ড্রেস কিনার জন্য রহিম চাচার সাথে মার্কেটে আসলাম হঠাৎ একটা ছিন্তাইকারী এসে হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দিলো, ব্যাগে কিছু টাকা আর ফোনটা ছিল, কি করবো ফোন নাহয় কিনলাম কিন্তু সিমের কাগজপত্র তো আব্বুর নামে আব্বুকে ছাড়া সিম তুলবো কিভাবে, নতুন সিম কিনলে সবার নাম্বার পাবো কোথায়
এসব চিন্তা করতে করতে এতিমখানায় ফিরে আসলাম, রহিম চাচার ফোন থেকে আব্বুকে ফোন দিলাম কিন্তু বন্ধ, এখন কি করবো আবার বাসায় যাবো গেলেও তো আগামীকাল যেতে হবে এখান থেকে বাসা অনেক দূর ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে, সব ভেবে ঠিক করলাম সকালে বাসায় যাবো
সকালে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, রিয়াটা হয়তো ফোন অফ পেয়ে অনেক টেনশন করছে, বাসার সামনে যেতেই থমকে দাঁড়ালাম বাসায় তালা ঝুলানো, তাহলে কি আব্বুরা অন্য কোথাও চলে গেছে নাকি কোথাও বেড়াতে গেছে কিন্তু বেড়াতে কোথায় যাবে
একরাশ চিন্তা নিয়ে এতিমখানায় ফিরে আসলাম, আকাশের নাম্বারটাও নেই যে ওকে জিজ্ঞেস করবো আব্বু অফিসে কিনা আকাশের নতুন বাসাও চিনি না
এভাবে কেটে গেলো পাঁচটা দিন প্রতিদিন বাসায় গিয়েছি কিন্তু তালা ঝুলানো পেয়েছি
আজ আবার যাচ্ছি বাসায়, মনে হাজার প্রশ্ন আজ কি আব্বুকে পাবো…? আব্বুরা কোথায় যেতে পারেন…? নাকি আব্বুর কোনো বিপদ হলো…? আব্বুকে কি হারিয়ে ফেলেছি আমি…?
এসব চিন্তা করতে করতে বাসার সামনে আসলাম, না আজ তালা ঝুলানো নেই অনেক খুশি মনে কলিংবেল বাজালাম কিন্তু দরজা খুললেন একজন মহিলা
–কে মা তুমি
–আপনি এই বাসায়
–এইটা আমাদেরই বাসা
–এই বাসায় তো…
–ওহ তুমি এই বাসার মালিকের কথা বলতে চাইছ
–হ্যা আগে তো উনারা থাকতেন
–হ্যা পাঁচদিন হলো বাসাটা আমরা কিনে নিয়েছি
–কিনে নিয়েছেন মানে তাহলে উনারা কোথায়
–তাতো জানিনা মা কিন্তু তুমি কে
মহিলার আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলাম না দিব কিভাবে আমার মুখ দিয়ে যে কোনো কথাই বের হচ্ছে না, আমি তো আব্বুকে হারিয়ে ফেলছি কোথায় খুঁজবো এখন
এতিমখানায় ফিরে এসে আম্মুর ছবিটা বুকে জরিয়ে অনেক কাঁদলাম, আম্মু তো সেই ছোট বেলায় আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেছেন এখন আব্বুকেও হারিয়ে ফেলেছি আমি বাঁচবো কি নিয়ে এখন….?
এভাবেই কেটে গেলো দুইটা বছর, এই দুইটা বছর আমি আব্বুকে পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় খুঁজেছি সেই বাসায় অনেক বার গিয়েছি কিন্তু আব্বুকে ফিরে পাইনি, আকাশ রিয়া ওদের ও খুঁজে পাইনি,
সেই থেকে এতিমখানায় বাচ্চাদের দেখাশুনা করতে শুরু করি, আমার পড়ালেখা আবার শুরু করি, এতিমখানার পাশেই একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়েছি ওখানেই একা একা থাকি আর দুইটা টিউশনি করি এতেই আমার জীবন চলে যাচ্ছে, থেমে নেই আমার জীবন থেমে নেই আমার আপন দুইটা মানুষ আব্বু আর রিয়াকে খুঁজা, সুযোগ পেলেই ছুটে যাই সেই বাসায় রাস্তায় রাস্তায় পাগলের মতো খুঁজি আমার আব্বু আর রিয়া কে
জানিনা কখনো ওদের ফিরে পাবো কিনা আবার দেখা হবে কিনা আমার সেই চিরচেনা মানুষ গুলোর সাথে আর কখনো পাবো কিনা সুখের ছোঁয়া……
–মা সেই সকাল থেকে এখানে বসে কি করছ (কথাটা শুনে বাস্তবে ফিরে আসলাম, ডায়েরিটা বন্ধ করে ফিছনে থাকালাম রহিম চাচা এসেছেন)
–চাচা কয়টা বাজে
–দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে মা
–এতো সময় ধরে এখানে বসে আছি আমাকে ডাকোনি কেন
–কয়েকবার এসেছি ডাকার জন্য এসে দেখি তুমি খুব মনোযোগ দিয়ে ডায়েরি তে কি যেন লিখছ তাই আর ডাকিনি
–ওহ
–তোমার সাথে দেখা করার জন্য দুজন লোক এসেছেন
–আমার সাথে দেখা করার জন্য (খুব অভাক হলাম কারন আমার তো আপন বলতে কেউ নেই আমি তো এখন খুব একা, কে আসবে দেখা করতে)
–হ্যা মা উনারা এসেছেন প্রায় দুঘণ্টা হলো
–এতক্ষণ ডাকোনি কেন
–ওনারা নিষেধ করেছিলেন
–নিষেধ করেছিল, ঠিক আছে চলো
ডায়েরিটা ব্যাগে রেখে চাচার সাথে হাটতে শুরু করলাম ভেবে পাচ্ছি না কে এসেছে, হঠাৎ চেয়ে দেখি একটা অন্ধকার রোমে এসে পড়েছি, চাচা কে বললাম এই রোম এতো অন্ধকার কেন…? সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠলো, আমি ভূত দেখার মতো চমকে গেছি সামনের দুইটা মানুষের দিকে থাকিয়ে আছি চোখ থেকে পানি ঝরছে হ্যা সামনে দাঁড়ানো দুইটা মানুষ আমার আপন মানুষ আকাশ আর মেঘা আপু, ওদের যখন পেয়েছি আব্বুকেও পাবো
মেঘা আপু আর আকাশ একসাথে বলে উঠলো “HAPPY BIRTHDAY” আবারো চমকে উঠলাম কারন আজ আমার বার্থডে অথচ আমিই জানিনা জানবো কিভাবে যে মানুষটা তিন দিন আগে উইশ করতো সেই মানুষটাই তো জীবনে নেই জানিনা কোথায় আছে আমাকে মনে রেখেছে নাকি ভুলে গেছে
মেঘা আপু: এই পাগলী কাঁদছ কেন (এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো)
আমি: তোমাদের এতোদিন পর দেখেছি তো তাই
আকাশ: তোমাকে কতো খুঁজেছি পাইনি, এই এতিমখানার নাম ঠিকানা কিছুই জানতাম না অনেক গুলো এতিমখানা খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত এখানে এসে পেলাম
আমি: ভাগ্য আমার সাথে খুব সুন্দর খেলা করতেছে তো তাই খুঁজে পাওনি
মেঘা আপু: কি হয়েছিল তোমার আর হঠাৎ করে ফোন অফ করে ফেলেছ কেন
আমি: যেদিন থেকে ফোন অফ পেয়েছ সেদিন আমার ফোন ছিন্তাই হয় সেই থেকে তোমাদের সবাইকে আমি হারিয়ে ফেলেছি অনেক খুঁজেছি কাউকে পাইনি
আকাশ: কেন তোমার আব্বুর সাথে কথা হয় না
আমি: না তো আমি আরো ভাবলাম তুমি আব্বুর খুজ দিতে পারবা
আকাশ: তোমার সাথে ডিভোর্স হবার পর উনি আর অফিসে যাননি খুঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি উনি নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন
আমি: চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বাসা বিক্রি করে দিয়েছেন তাহলে এখন কোথায় আছেন
আকাশ: প্লিজ মন খারাপ করো না একদিন সবাইকে খুঁজে পাইবা
আমি: হুম
সত্যিই কি আব্বুকে খুঁজে পাবো রিয়া কে খুঁজে পাবো…?
রিয়া তো বাহিরে চলে গেছিল দেশে কি আসছে…?
শ্রাবন কে কি ফিরে পাবো পেলেই বা লাভ কি ও তো আর আমাকে ভালোবাসে না তাছাড়া আমি এখন বিবাহিতা ডিভোর্সি মেয়ে ও কি আমাকে আবার মেনে নিবে….?
পাবো কি কখনো সুখের ছোঁয়া…?
পারবো কি সবাই কে নিয়ে আমার এলোমেলো জীবনটা গুছাতে…?
জানিনা তাদের ফিরে পাবো কিনা, আর কখনো দেখা হবে কিনা, খুঁজে যাবো তাদের সবসময় অপেক্ষা করে যাবো অনন্তকাল……
সমাপ্ত?
(গল্পটি কাল্পনিক ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন?
“জীবনের ডায়েরি ২” লিখবো খুব শীঘ্রই?
ধৈর্য নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ, “জীবনের ডায়েরি ২” পড়ার জন্য সাথেই থাকুন?)
–উনি ঘুমাচ্ছেন তাই তো এই সুযোগে আসছি (বলেই আমার কাছে আসতে শুরু করলেন)
মা বলে জোরে চিৎকার দিলাম সাথে সাথে মা সহ সব কাজের লোক আসলো
মা: কি হয়েছে
আমি: (এখন কি বলি এই কথা বললে মা কষ্ট পাবেন আর কাজের লোকের সামনে আমারই সম্মান যাবে)
মা: চুপ হয়ে আছ কেন কি হয়েছে এমন ভাবে চিৎকার দিলা কেন
আমি: মা ওখানে তেলাপোকা ছিল তাই ভয়ে চিৎকার দিয়েছি
মা: পাগলী মেয়ে তেলাপোকা দেখে ভয় পাবার কি আছে ঘুমিয়ে পড়
আমি: মা আমার ভয় করছে নাফিজা আমার কাছে ঘুমাক
মা: ঠিক আছে
সবাই চলে গেলো নাফিজা আর আমি এসে শুয়ে পরলাম
নাফিজা: আপু তুমি কি সত্যি তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়েছ
–হুম
–আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই আমি বুঝতে পেরেছি কারন তোমার রোমে এসে রাকিব কে দেখেছি
–হুম
–এই খচ্চর খালাম্মা কে ভয় পায় না আকাশ ভাই কে একটু ভয় পায় তুমি বরং তোমাদের বাসায় চলে যাও নাহলে অনেক বড় বিপদ হতে পারে
–হুম কালকেই চলে যাবো
–হুম
–আচ্ছা তুমি তো কথা খুব সুন্দর ভাবে বলো মনে হয় শিক্ষিত বাসায় কাজ কর কেন
–একদিন আমাদের সব ছিল আমি যখন ক্লাস টেনে পরি তখন বাবা মারা যান, চাচা সব সম্পত্তি দখল করে নেন এতে মা অসুস্থ হয়ে পরেন তাই মায়ের চিকিৎসা করানোর জন্য বাসায় কাজ করি
–অন্য কাজও তো করতে পারতে
–এই সমাজ খুব নিষ্টুর যেখানে গিয়েছি সবাই শুধু লোভাতুর চোখে থাকিয়েছে শেষ পর্যন্ত এই বাসায় ঠিকানা হলো খালাম্মার জন্য
–হুম
সকালে আকাশ কে ফোন করে সব বললাম ও মা কে ফোনে কি যেন বললো মা এসে বললেন আমাদের বাসায় চলে যেতে, দুপুরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একাই বাসায় চলে আসলাম, আম্মু অনেক বার জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে উনার সাথে কোনো কথা বললাম না, তুলি এসে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে কিছু দিন থাকবো বলেছি
রাতে রিয়া ফোন দিলো ওকে সব কথা বললাম, ও আকাশদের বাসায় যেতে নিষেধ করলো
দেখতে দেখতে দুই মাস কেটে গেলো, আমি আকাশদের বাসায় যাইনি আমাদের বাসাতেই আছি, রিয়া আকাশ মেঘা আপু আব্বু সবার সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখলাম, আকাশ একটা বাসা ভাড়া নিয়েছে এখন শুধু ডিভোর্স পেপার এর অপেক্ষা
আজ বিয়ের ছয়মাস পূর্ন হয়েছে, ডিভোর্স পেপার চলে এসেছে, আকাশ ফোন করে উকিলের কাছে যেতে বললো
আমি আব্বুকে ফোন করে বললাম আম্মুকে সাথে নিয়ে বিকেলে যেন আকাশদের বাসায় আসেন, আমি রেডি হয়ে আকাশের দেওয়া ঠিকানায় উকিলের বাসায় গেলাম, গিয়ে দেখি সেখানে আকাশ মেঘা আপু আর মেঘা আপুর আব্বু আম্মু আগেই চলে এসেছেন
আঙ্কেল: কেমন আছ মা
আমি: জ্বী ভালো, আপনারা ভালো আছেন
আন্টি: তুমি যে কাজ করতে যাচ্ছ নিজের মেয়ের কথা ভেবে ভালো লাগছে কিন্তু তোমার কথা ভেবে….
আমি: আন্টি আমি তো খুশি হয়ে ডিভোর্স দিচ্ছি আপনারা ভয় পাচ্ছেন কেন
আঙ্কেল: সত্যি তো মা তুমি খুশি হয়ে দিচ্ছ
আমি: হ্যা আপনারা ভয় পাবেন না
আন্টি: কিন্তু তোমার জীবনটা যে অনিশ্চিত হয়ে যাবে
আমি: আল্লাহ আছেন তো
আঙ্কেল: আমি বুঝতে পারছি না নিজের সুখ কেন বিসর্জন দিচ্ছ মা
আমি: এই সংসারে আমি সুখী হবো না বরং ওদের বিয়ে হলে ওরা সুখী হবে আর তা দেখে আমার ভালো লাগবে প্লিজ আপনারা বাধা দিবেন না
আন্টি: ঠিক আছে মা তোমার যা ভালো মনে হয় করো
তারপর আকাশ আমি দুজন ডিভোর্স পেপারে সাইন করলাম, এখানের জামেলা শেষ করে কাজি অফিসে গেলাম, তারপর মেঘা আপুর আব্বু আম্মু আর আমার সাক্ষীতে ওদের বিয়েটা হয়ে গেলো, সব জামেলা শেষ করতে বিকেল হয়ে গেলো, একটা ট্যাক্সি নিয়ে আকাশদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম
গাড়িতে বসে আছি আঙ্কেল আন্টি চিন্তা করছেন আমার কি হবে আর আমি ভাবছি শ্রাবনের সাথে বিয়েটা হলে আজ এতো কিছু হতো না, দুজন কতো সুখে থাকতাম আমি হতাম পৃথিবীর সেরা ভাগ্যবতী মেয়ে, হঠাৎ আকাশ আর মেঘা আপুর দিকে চোখ পরলো দুজন মন খুলে হাসছে সত্যি দুজন কে খুব সুন্দর মানিয়েছে, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে কোনো পাপ করেছি কিন্তু ওদের হাসি দেখে মনে হচ্ছে নাহ কোনো ভুল করিনি দুইটা আত্মা কে এক করে দিয়েছি পাপ হবে কেন
গাড়ি বাসার সামনে এসে থামলো, বাসার ভিতরে ঢুকতে ভয় হচ্ছে বুক ধুকধুক করছে আব্বু মানবেন কিনা ভাবছি তখন রিয়ার ফোন আসলো
–হ্যালো
–কিরে কি করলি
–সব কাজ শেষ বাসায় এসেছি এখন সবাইকে মানাতে পারলেই হলো
–তোর কথা ভেবে এতো দিন না করেছি কিন্তু কাজটা যেহেতু করে ফেলেছিস ভয় পাস না সবাইকে বুঝিয়ে বল আর ভালোবাসার মানুষদের মিলিয়ে দেওয়া ভুল কিছু না
–হুম দেখি কি হয়
–হুম
ফোন রেখে ওদের সাথে নিয়ে বাসায় ঢুকলাম, আব্বু আম্মু রাকিব আকাশের মা সবাই ড্রয়িংরুমে বসা, আকাশকে বর সাজে আর মেঘা আপু কে বউ সাজে দেখেই সবাই বসা থেকে অভাক হয়ে দাড়িয়ে গেলেন
আব্বু: তমা এসব কি
আমি: আব্বু তুমি শান্ত হও বসো আমাদের বসতে দাও সব বলছি
আব্বু: হুম
আম্মু: ওদের বর বউ সাজিয়েছিস কেন
আমি: কারন ওরা বর বউ
মা: মানে
আকাশ আর মেঘা আপু কে সোফায় পাশাপাশি বসালাম, মেঘা আপুর আব্বু আম্মু একটু দূরে গিয়ে বসলেন আমি গিয়ে আব্বুর পাশে বসলাম
আব্বু: তমা কি হচ্ছে এসব
আমি: আব্বু মনে আছে একদিন তোমাকে বলেছিলাম আমি কোনো ভুল করলে ক্ষমা করবা কিনা
আব্বু: হ্যা
আমি: আমি আজ ভুল করেছি, তোমাদের কাছে ভুল মনে হতে পারে কিন্তু আমার কাছে ভুল মনে হচ্ছে না
আব্বু: কি করেছিস
আমি: আকাশকে ডিভোর্স দিয়েছি আর ওদের বিয়ে দিয়েছি
আম্মু: মানে কি
আমি: আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলতে দাও তোমার সাথে পরে কথা বলবো
আম্মু: হুম
আমি: আব্বু আকাশ মেঘা আপুকে আর মেঘা আপু আকাশকে ভালবাসে তাই আমি ওদের বিয়ে দিয়েছি
আব্বু: কিন্তু তোর কি হবে
আমি: আমাকে নিয়ে ভেবো না সমাজের মানুষ খারাপ বলবে এটাই তো বলুক তাতে আমার কিছু আসে যায় না শুধু তুমি পাশে থেকো, আব্বু তুমি তো আম্মুকে ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলে তুমি তো ভালোবাসার মর্ম বুঝ তুমিই বলো আকাশ যখন মেঘা আপুকে ভালবাসে তাহলে কি আমরা সংসার করে সুখী হতাম…? কখনোই হতাম না বরং চারটা জীবন নষ্ট হয়ে যেতো, এখন তো কারো জীবন নষ্ট হলো না আর ওরা দুজন দুজনকে ভালবাসে আজ ওদের বিয়ে হয়েছে দেখো ওরা কতো খুশি ওদের খুশিটা কি কিছুই না, আব্বু প্লিজ তুমি রাগ করো না অন্তত
আব্বু: একটা সত্যি কথা বলবি
আমি: কি
আব্বু: তুই কি কাউকে ভালবাসিস
আমি: (মৃদু হাসলাম)
আব্বু: কাউকে ভালো না বাসলে ভালোবাসার মর্ম বুঝা যায় না আর এতো বড় মহৎ কাজ করা যায় না
আমি: আমি ভেবেছিলাম অনেক বড় ভুল করেছি তুমি রাগ করবা কিন্তু তুমি রাগ করনি তাই আর কাউকে আমি পরোয়া করি না
আম্মু: তুমি ওর এতো বড় ভুল কে মহৎ কাজ বলছ
আব্বু: নিজের স্বামী কে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে নিজের জীবন নষ্ট করা অনেক বড় ভুল জানি কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা হলো ও এমন দুজন কে মিলিয়ে দিয়েছে যারা একে অপরকে ভালোবাসে তাই এইটা মহৎ কাজও বলা যায়
আকাশের আম্মু: আমি যে কাজ পারিনি সে কাজ আপনার মেয়ে করেছে আমি তো এতক্ষণ ভয় পাচ্ছিলাম আপনি যদি রেগে যান কিন্তু আমার ধারনা ভুল আপনি যেমন বড় মনের মানুষ আপনার মেয়েও বড় মনের মানুষ
মেঘার আব্বু: আমি নিজেকে অপরাধী ভেবেছিলাম যে কিনা নিজের মেয়ের সুখের জন্য অন্যের মেয়ের সুখ কেড়ে নিয়েছি কিন্তু এখন অপরাধবোধ টা আর নেই আপনার মতো বাবা পাশে থাকলে যে কোনো মেয়ে এমন মহৎ কাজ করতে সাহস পাবে
আব্বু: আমার মেয়ে তো খুশি হয়েই কাজটা করেছে আপনারা অজতা নিজেকে অপরাধী ভাববেন না
আমি: এতো সহজে তোমরা মেনে নিবা ভাবিনি এখন বুঝেছি কাজটা করে ভুল করিনি
আকাশ আর মেঘা আপু এসে সবাইকে সালাম করলো, যাক বাঁচলাম অন্তত আব্বু আর আকাশের আম্মু তো রাগ করেনি, আম্মু আর রাকিব লুইচ্ছা লুচির মতো ফুলতেছে ফুলুক তাতে আমার কি, আমি দুইটা ভালোবাসার মানুষকে মিলিয়ে দিতে পেরেছি এটাই অনেক আমার জন্য তো কেউ ভালোবাসা হারায়নি
আকাশ: আম্মু আমি একটা বাসা নিয়েছি মেঘা আর তোমাকে নিয়ে ওখানেই উঠবো আর আজকেই আমরা চলে যাবো
আকাশের আম্মু: কিন্তু তোর মামা একা…
আকাশ: উনি একা কোথায় উনার কালো টাকার ব্যবসা তো সাথে আছেই
রাকিব লুইচ্ছার দিকে থাকিয়ে দেখলাম রাগে শুধু ফুলতেছে কিছু বলতেও পারতেছে না
সবাই বাসায় যাওয়ার জন্য বেরুলাম, আমরা আমাদের বাসায় আসলাম আর আকাশ ওদের নিয়ে আকাশের নতুন বাসায় গেলো
বাসায় এসে আর কেউ কথা বলিনি আম্মু যে খুব রেগে আছে বুঝা যাচ্ছে কিন্তু আম্মুর তো খুশি হবার কথা উনার সতিনের মেয়ের সংসার ভেঙ্গে গেছে উনি খুশি না হয়ে বরং রাগ হচ্ছেন কেন…?
রাতে রিয়া ফোন করলো, ওকে সব বললাম সবাই মেনে নিয়েছে শুনে রিয়াও খুশি হলো
হয়তো কিছুটা ভুল করেছি নিজের স্বামী কে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে কিন্তু আমরা তো শুধু কাগজে কলমে স্বামী স্ত্রী, কখনো কেউ কাউকে মেনে নিতে পারতাম না কারন দুজনের মনটাই যে অন্য দুজন কে দেওয়া, দুইটা ভালোবাসার মানুষ কে মিলিয়ে দিতে পেরেছি এটা ভেবে অনেক ভালো লাগছে
সকালে আব্বু আম্মুর চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভাঙ্গলো
আম্মু: ওই মেয়ে আমার বাসায় থাকতে পারবে না
আব্বু: এইটা আমার বাসা আমার মেয়ে এখানে থাকবে না তো কোথায় থাকবে
আম্মু: কোনো ডিভোর্সি মেয়ের জায়গা আমার বাসায় নেই নিজের পায়ে তো নিজে কুড়াল মেরেছে এখন আমার মেয়েটা কেও নষ্ট করবে
আব্বু: আমার মেয়ে কোনো অন্যায় করেনি আর ওকে এই বাসা থেকে বের করার কথা আর একবার ভাবলে বাসাটাই আমি ওর নামে লিখে দিব
আম্মু: কি তার মানে ওই অপায়া মেয়েই তোমার সব আমি আর আমার মেয়ে কিছুই না
আব্বু: আমি কি তা বলছি
আম্মু: বুঝেছি সব বুঝেছি ওই অপায়া টাই তোমার সব
আব্বু: বুঝলে ভালো
তারপর সব নীরব, জানি আম্মু আমাকে এই বাসায় থাকতে দিবে না কিন্তু কোথায় যাবো আমি, আমার তো যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই
এক সপ্তাহ কেটে গেলো আব্বু আম্মুর ঝগড়া সারাদিন লেগেই থাকে, আমাকে তাড়িয়ে দিবে এই ভয়ে আব্বু অফিসে যান না, এসব শুনতে আর ভালো লাগে না, আমার জন্য আব্বুকে রোজ রোজ কথা শুনতে হয় তারচেয়ে ভালো এই বাসা ছেড়ে চলে যাই, আল্লাহর দুনিয়ায় কোথাও তো একটু জায়গা হবে
সারাদিন ভেবে ঠিক করলাম এই বাসা থেকে চলেই যাবো অন্তত আব্বু একটু শান্তি পাবে
সন্ধ্যার সময় সবাই যার যার রোমে তখন কয়েকটা কাপড়চোপড়, আব্বুর দেয়া কিছু টাকা, হাতের ফোনটা আর আম্মুর ছবিটা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম বাসা থেকে, আব্বুর জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে আসলাম…
আব্বু,
আমাকে খুঁজো নাহ, জানিনা কোথায় যাচ্ছি তবে যেখানেই থাকি তোমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করবো, রোজ রোজ আমি অপায়া অলক্ষী এসব শুনতে ভালো লাগে না আর তুমিও তো আমার জন্য এতো কিছু সহ্য করছ তাই বাসা থেকে চলে গেলাম, নিজেকে দোষী ভেবো না কপাল তো আমার খারাপ আম্মু আমাকে রেখে চলে গেছেন আজ আম্মু থাকলে এমন হতো না, প্লিজ আব্বু আমাকে খুঁজো না আমি সবসময় ফোনে যোগাযোগ রাখবো, ভালো থেক….
সকালে রিয়ার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–কিরে তুই এতো সকালে
–সকাল না ১০টা বাজে
–আব্বু আমাকে ডাকেননি তো
–উনি ড্রয়িংরুমে বসা তোর মন খারাপ ঘুমাচ্ছিস তাই নাকি ডাকেননি
–ওহ
–ফ্রেশ হয়ে ছাদে আয় কথা আছে
–তুই যা আসছি
ফ্রেশ হয়ে দুই মগ কপি বানিয়ে ছাদে গেলাম, রিয়া দুলনায় বসে আছে
–কপি নে
–হুম বস
–কি কথা বল
–আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে
–ভালো তো বিয়ে করে নে
–কিন্তু
–কিন্তু আবার কি তোর তো কোনো পিছুটান নেই আমার মতো তো প্রেমের ফাদে পা দিসনি
–তা ঠিক কিন্তু ছেলে দুইমাস পর আমাকে নিয়ে বাহিরে চলে যাবো
–তো কি হয়েছে
–কি হয়েছে মানে তোর বিয়ে হয়েছে মাত্র এক মাস হলো দুমাস পর যদি আমি বাহিরে চলে যাই তুই তো একা হয়ে যাবি, তোর ডিভোর্স এর আর পাঁচ মাস বাকি আছে এই অবস্থায় তোকে একা রেখে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না
–আমার জন্য বিয়ে ভেঙ্গে দিবি নাকি
–প্রয়োজন হলে তাই করবো
–পাগলামি করিস না তোর আম্মু আব্বু কষ্ট পাবেন আমি সব সামলিয়ে নিব তুই টেনশন করিস না
–তুই তো একটু তেই কেঁদে অস্থির হয়ে যাস সব সামলাবি কিভাবে
–আমি তো আর আকশের জন্য কাঁদবো না কাদি তো শ্রাবনের জন্য, ডিভোর্স হলেই ওদের বিয়ে দিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে মাফ চেয়ে নিব
–হুম
–বিয়ে কবে
–আর নয়দিন আছে
–ছেলের নাম কি
–পিয়াস
–তোর বিয়েতে অনেক মজা করবো
–আমি করি তোর টেনশন আর তুই আছিস মজা করা নিয়ে
–একমাত্র তুই আর আব্বুই আমার আপন বাকি সবাই শুধু আমাকে নিয়ে খেলা করে
–সব ঠিক হয়ে যাবে, আচ্ছা বিয়েতে আকাশ আসবে তো
–বলে দেখবো
–হুম
নয়টা দিন খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলো, আজ রিয়ার বিয়ে, আব্বু আম্মু তুলি আকাশ আমি সবাই বিয়েতে এসেছি
বিয়ে ভালো ভাবেই হলো, রিয়াকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আমরাও বাসায় চলে আসলাম, আকাশও এসেছে বাসায়, রাতে বারান্দায় দাড়িয়ে আছি আকাশ আসলো
–তমা একটা কথা
–বলো
–আম্মু জিজ্ঞেস করছিল বাসায় কবে যাইবা
–আমি ওই বাসায় যাবো না
–আম্মু এসব জানলে খুব কষ্ট পাবেন তাছাড়া তোমার আব্বুকে কি বলবা
–জানিনা
–তুমি বাসায় চলো কথা দিচ্ছি তোমাকে বাসায় একা রেখে কোথাও যাবো না
–হুম
পরদিন সকালে আকাশদের বাসায় চলে আসলাম, ইচ্ছে না থাকলেও আসতে হলো কারন আমি যে মেয়ে আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে আমাকে যে এখানে আসতেই হবে
দেখতে দেখতে দুইমাস কেটে গেলো, রাকিব আর কোনো জামেলা করেনি অবশ্য সুযোগ পায়নি কারন আকাশ আমাকে বাসায় একা রেখে কোথাও যায়নি
আজ রিয়া লন্ডন চলে যাবে, আকাশ আর আমি ওদের সাথে এয়ারপোর্ট গেলাম, পাগলীটা যাবার সময় আমাকে জরিয়ে ধরে খুব কেঁদেছে আমি অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রেখেছি আমার চোখে পানি দেখলে যে ও যাবে না, পিয়াস খুব ভালো ছেলে রিয়াকে বুঝিয়ে নিয়ে গেলো
রাতে অনেক কাঁদলাম রিয়ার জন্য, ওর সামনে কাঁদতে পারিনি তাই এখন কেঁদে হালকা হলাম, আমি একদিক দিয়ে খুব ভাগ্যবতী আব্বুর মতো একজন আদর্শবান বাবা পেয়েছি আর রিয়ার মতো একটা বান্ধবী পেয়েছি যে শুধু বান্ধবী না আপন বোনের মতো
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আব্বু ফোন করে একটা গুড নিউজ দিলেন, আব্বুর অফিসে আকাশের চাকরি হয়ে গেছে, আকাশকে বলতেই ও আনন্দে কেঁদে দিয়েছে আনন্দটা শুধু চাকরি পাবার নয় সাথে মেঘা কে পাবারও
বিকেলে বারান্দায় দাড়িয়ে আছি আকাশ আসলো
–তমা একটা আবদার রাখবা
–কি বলো
–চাকরির খবরটা এখনো মেঘা কে দেইনি আমি চাচ্ছি দেখা করে ওকে সারপ্রাইজ দিব
–তো দেখা করো
–তোমার জন্যই তো সব সম্ভব হলো তুমি চলো সাথে মেঘা অনেক খুশি হবে
–ঠিক আছে যাবো
সন্ধ্যার পর একটা রেস্টুরেন্টে আসলাম, আকাশ আর আমি বসে আছি মেঘা এখনো আসেনি, একটু পর মেঘা আসলো
মেঘা: কি ব্যাপার এখানে ডাকলা
আকাশ: সারপ্রাইজ আছে
মেঘা: কি
আকাশ: আগে বস বলছি
মেঘা: হুম বলো
আকাশ: আমার চাকরি হয়ে গেছে
মেঘা: সত্যি
(মেয়েটার দিকে থাকালাম মনে হচ্ছে কোনো রাজ্য জয় করেছে এতো খুশি হয়েছে, অবশ্য ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাওয়া টা রাজ্য জয় করাটা কেও হার মানায়, ভালবাসার মানুষকে খুব কম মানুষই পায়, যারা খুব বেশি ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী তারাই শুধু ভালোবাসার মানুষ কে চিরআপন করে পায়, মেয়েটার চোখ থেকে পানি ঝরছে এই পানি কোনো কষ্টের না এই পানি সুখের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাওয়ার, একদিকে নিশ্চিত হলাম যে ওরা দুজন দুজনকে অনেক বেশি ভালোবাসে ওদের মিলিয়ে দিলে আমার কোনো ভুল হবে না)
আকাশ: মেঘা তুমি খুশি হয়েছ
মেঘা: ভালবাসার মানুষকে আপন করে পাবো এর চেয়ে বড় খুশি আর আছে নাকি
আকাশ: সবকিছু সম্ভব হয়েছে এই তমার জন্য
মেঘা: আজ থেকে তুমি আমার ছোট বোন তোমার কাছে সারা জীবন ঋনি থাকবো বলেই আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো
আমি: ছোট বোনের কাছে বড় বোন কখনো ঋনি থাকে না কান্না থামাও কথা আছে
মেঘা: হুম বলো
আমি: আর তো প্রায় আড়াই মাস আছে ডিভোর্স এর, এর ভিতরে আকাশকে একটা বাসা নিতে হবে আমি চাই না আপু ওই নোংরা জায়গায় বউ হয়ে যাক
আকাশ: সমস্যা নেই আমার কিছু জমানো টাকা আছে আর এখন তো চাকরিও করবো
আমি: হুম
সকালে আব্বু ফোন করে জানালেন আকাশকে আজ বিকেলেই আব্বুর কাছে যেতে হবে, আগামীকাল থেকে অফিসে জয়েন করতে হবে, আপাদত ওখানেই থাকতে হবে দুই থেকে তিন মাস পর ট্রান্সফার হয়ে অন্য জায়গায় যেতে পারবে
বিকেলে আকাশ চলে গেলো, বাসায় মা আছেন কাজের লোক আছে তাও খুব ভয় হচ্ছে রাকিব আবার না কোনো কিছু করে বসে
একটা সপ্তাহ ভালই কাটলো, বিকেলে ছাদে বসে আছি হঠাৎ রাকিব আসলো
–আপনি
–হ্যা ভয় পাচ্ছ কেন
–এখানে কেন এসেছেন
–যে কারনে তোমাকে এই বাড়ির বউ করে এনেছি সেই কাজটা এখন করবো
–মানে
ঠিক তখন নাফিজা এসে ডাক দিলো নিচে যেতে, ওর সাথেই চলে গেলাম, নাফিজা আসাতে বাঁচলাম কিন্তু রাকিব তো আমার পিছু ছাড়ছে না এভাবে কতো দিন বাঁচবো
রাতে বিছানায় শুয়ে আছি তখন আবার রাকিব আসলো
–আপনি আবার এসেছেন
–হ্যা বার বার আসবো
–বেরিয়ে যান নাহলে আমি মা কে ডাকবো
–উনি ঘুমাচ্ছেন তাই তো এই সুযোগে আসছি (বলেই আমার কাছে আসতে শুরু করলো)
রাকিব নিচে নেমে আকাশকে দেখেই থেমে গেলো
আকাশ: কি হয়েছে
রাকিব: দেখনা বাবা তোর বউ আমাকে ফোন করে বললো বাসায় আসতে আমি ভাবলাম কোনো প্রয়োজন তাই আসলাম কিন্তু আসা মাত্রই ওই মেয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো
হায় আল্লাহ এই লুইচ্ছা এসব কি বলছে, আকাশ আমার হাত ধরে টেনে সামনে আনলো
আকাশ: নাও মামা আমার সামনেই ওকে ভোগ করো (ওর দিকে অভাক হয়ে থাকালাম কি বলছে এসব)
রাকিব: কি বলছিস এসব ও আমার মেয়ের মতো
আকাশ: তাহলে ওর রোমে কেন গিয়েছিলে
রাকিব: ও আমাকে ফোন করে ডেকেছিল তাই
আকাশ: ওহ তাই (খুব ভয় হচ্ছে আকাশ কি রাকিবের এসব মিথ্যে কথা বিশ্বাস করে ফেললো)
রাকিব: হ্যা নাহলে কি আমি অফিস থেকে ফেরত আসতাম
আকাশ: তোমার চরিত্র সম্পর্কে আমাকে ধারনা দিতে হবে না আমি জানি তুমি কেমন, এই মেয়েটা তোমাকে বাবার মতো দেখে আর তুমি কিনা ছিঃ তোমাকে মামা ডাকতেও লজ্জা লাগছে, আমি না আসলে তো আজ ওর জীবনটাই নষ্ট হয়ে যেত, দেখেছ তুমি কোনো পশু না মানুষ তাও তোমাকে দেখে মেয়েটা কতো ভয় পেয়েছে
রাকিব: আকাশ তুই ভুল বুঝছিস ও আমাকে….
আকাশ: সেটআপ আর একটা কথা বললে তোমার জিব টেনে ছিড়ে ফেলবো
রাকিব আর কোনো কথা না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো, আমি গিয়ে সোফায় দফ করে বসে পড়লাম চোখ দিয়ে পানি ঝরছে কি হলো এইটা…? আকাশ আসতে আর একটু দেরি হলে তো…
আকাশ: তমা ভয় পেয়ো না তুমি যতোদিন এই বাসায় আছ আমি অফিসে যাবো না তোমার কাছেই থাকবো
কোনো কথা না বলে রোমে এসে শুয়ে পরলাম, কি হলো এইটা ভেবে পাচ্ছি না, রাকিব ওকে তো এখন মামা ডাকতে ঘৃণা হচ্ছে, আমার দিকে খারাপ চোখে থাকাত কিন্তু এমন কিছু হবে কখনো ভাবিনি, আচ্ছা ও কি বললো এতো কাঠকড় পুড়িয়ে আমাকে এই বাড়ির বউ করে এনেছে মানে কি…? আমাকে নাকি টাকা দিয়ে কিনে এনেছে এই কথার মানেই বা কি…? আচ্ছা নাফিজা যে বলেছিল আম্মু রাকিবের কাছ থেকে টাকা নিতো তার মানে কি আম্মু আমাকে বিক্রি করেই ওর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে…? কিন্তু আম্মু কেন এমন করবে আমাকে কেন বিক্রি করবে…? আম্মু এতো টাকা দিয়ে কি করে…? আব্বু তো আম্মুকে কম টাকা দেন না, উফফফফ আর ভাবতে পারছি না আমার সাথে কি হচ্ছে এসব
সারা দিন রোমেই শুয়ে রইলাম, সন্ধ্যায় মায়ের ডাকে নিচে গেলাম, ড্রয়িংরুমে মা আর আকাশ বসা
–মা আপনি কখন আসছেন
–এইতো এখনি তুমি নাকি অসুস্থ আকাশ ফোন করে আসতে বললো
–তেমন কিছু না
–তুমি নাকি বাসায় যেতে চাচ্ছ আমি যখন চলে এসেছি সকালে চলে যেও
–ঠিক আছে
রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলাম, সকালে ঘুম থেকে উঠেই আব্বুকে ফোন করে বললাম বাসায় যাবো আজ
মা এসে ডাক দিলেন নাস্তা করার জন্য, ডাইনিং টেবিলে যেতেই রাকিবের দিকে চোখ পরলো ওর চোখে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই, রাগে টেবিল থেকে চলে আসতে চাইলাম কিন্তু আকাশ ইশারা দিয়ে বললো মা কে যেন বুঝতে না দেই তাই বাধ্য হয়ে বসে নাস্তা করলাম
রোমে এসেই ব্যাগ গুছাইলাম এই বাসায় দম বন্ধ হয়ে আসছে
–এখনি চলে যাইবা নাকি (কথাটা শুনে ফিছনে থাকালাম আকাশ এসেছে)
–হুম
–রেগে আছ
–কার উপর রাগ করবো আমার ভাগ্যের উপর নাকি বিধাতার উপর
–একাই যাইবা
–তুমি নিয়ে গেলে তোমার সাথে যাবো নাহলে একাই যাবো
–ঠিক আছে নিয়ে যাবো
–হুম
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলাম, সারা রাস্তা আকাশের সাথে একটা কথাও বলিনি
বাসায় এসে দেখি আব্বু এখনো আসেননি, আম্মুর সাথে কোনো কথা না বলে রোমে চলে গেলাম আকাশও পিছন পিছন আসলো
–তোমার আম্মুর সাথে কোনো কথা বলনি যে
–এমনি
–তুমি কার উপর রেগে আছ বল তো
–কারো উপরই না
–দেখো যা হয়েছে অনেক খারাপ হয়েছে জানি তাই বলে রেগে থাকবা
–রাগ করিনি তোমার উকিলের সাথে কথা বলে দেখো ছয় মাসের আগে ডিভোর্স পেপার আনা যায় কিনা
–কেন
–আমি ওই বাসায় থাকতে চাই না
–আমার চাকরি নাহলে তো বাসা থেকে বেরুতে পারবো না
–ডিভোর্স হলে তো আমি বেরুতে পারবো
–ডিভোর্স হলে তো মেঘা কে বিয়ে করবো আর চাকরি নাহলে ওকে নিয়ে ওই বাসাতেই উঠতে হবে তখন যদি মেঘার সাথে এমন খারাপ কিছু হয়
–তুমি চাইলে আমি আব্বুর সাথে তোমার চাকরির ব্যাপারে কথা বলে দেখতে পারি
–ঠিক আছে
সন্ধ্যায় আকাশ চলে গেলো, ছাদে গিয়ে বসলাম, এখনো আম্মুর সাথে কোনো কথা বলিনি আমার মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আম্মু কি সত্যি টাকার জন্য আমাকে রাকিবের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে…? সৎ মা বলে কি এমন জঘন্য কাজ করবে…? সৎ মা কি মা না…?
–আপু (ডাক শুনে পিছনে থাকালাম তুলি এসেছে)
–হুম আয়
–সন্ধ্যার সময় এখানে বসে আছ কেন
–এমনি
–তোমার কি হয়েছে বাসায় এসে আম্মুর সাথে কথা বলনি আমার সাথেও না
–কিছু হয়নি এমনি ভাল লাগছে না
–সত্যি তো
–আচ্ছা তুলি তুই যদি কখনো শুনিস আম্মু অনেক বড় একটা জঘন্য কাজ করেছে তাহলে কি তুই আম্মুকে ক্ষমা করবি
–ক্ষমা করাটা কাজের উপর যদি খারাপ কাজ হয় করবো না কিন্তু হঠাৎ করে এমন কথা বলছ কেন
–এমনি
–আম্মু কি কিছু করেছে
–না
–ঠিক আছে চলো নিচে যাই
–হুম
রাতে আব্বু আসলেন, সবাই একসাথে রাতের খাবার খেলাম তখনো আম্মুর সাথে কথা বলিনি আম্মুও কথা বলার চেষ্টা করেননি, রোমে এসে শুয়ে পড়লাম
–আম্মু আসবো (পিছনে থাকিয়ে দেখি আব্বু দরজায় দাড়িয়ে আছেন)
–আসো
–চল ছাদে যাই বাপ মেয়ের তো অনেক দিন ধরে মন খুলে কথা হয় না
–চলো
ছাদে এসে বসলাম
–কিরে মা মন খারাপ মনে হচ্ছে
–না তো
–সত্যি
–আব্বু একটা কথা বলতে চাই
–বল
–আকাশ ওর মামার ব্যবসা পছন্দ করে না ও চাচ্ছে কোনো চাকরি করতে কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও চাকরি হচ্ছে না তুমি কি কোনো হেল্প করতে পারবা
–চেষ্টা করলে পারবো
–একটু চেষ্টা করে দেখো ওর চাকরিটা খুব প্রয়োজন
–ঠিক আছে
–আর একটা কথা বলি
–বল
–আব্বু তুমি তো আমায় অনেক ভালোবাস আমি যদি কখনো কোনো বড় ভুল করি ক্ষমা করতে পারবা
–আমি জানি আমার মেয়ে এমন কোনো ভুল করবে না যা ক্ষমার অযোগ্য
–হুম
–কিছু হয়েছে কি হঠাৎ এমন কথা বললি যে
–এমনি বললাম
রোমে এসে শুয়ে পরলাম কিন্তু ঘুম আসছে না আম্মুর কথা খুব মনে পরছে, আম্মুর ছবিটা বের করে আনলাম বুকে জরিয়ে অনেক সময় কাঁদলাম, কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি…..
–আপু আমি কষ্ট নিয়ে দিচ্ছি না জানেন তো আমি শ্রাবনকে ভালবাসি এই বিয়ে সংসার আমার পক্ষে সম্ভব না তাই আমি চাচ্ছি আপনারা সুখী হন অন্তত আমার মতো তো আপনাদের ভালোবাসা হারাতে হবে না
–আব্বু তো রাজি আশা করি আকাশের মা তেমন রাগ করবেন না কিন্তু তোমার পরিবার
–আব্বুকে বুঝিয়ে ফেলবো সমস্যা নেই
–হুম
–এখন তো সব ঠিক শুধু আকাশের চাকরি আর ছয়মাস এর অপেক্ষা
–হ্যা
কক্সবাজারে পাঁচদিন কেটে গেলো, সকালে নাফিজা আর আমি সাগর পাড়ে দারিয়ে আছি আর সমদ্রের ঢেউ দেখছি
নাফিজা: সেদিন তুমি বলছিলা কাকে যেন ভালবাস
–হুম নাম শ্রাবণ
–সে কোথায়
–জানিনা
–কি হয়েছিল
–হঠাৎ করে চেঞ্জ হয়ে গেল বললো আমাকে নাকি আর ভালবাসে না তারপর ফোন অফ আর কোনো যোগাযোগ হয়নি
–হঠাৎ চেঞ্জ হবার মধ্যে তো কোনো রহস্য আছেই
–হয়তো
–খুব ভালবাস তাই না
–হুম
চোখ দুইটা ঝাপসা হয়ে আসলো, হঠাৎ একটু দূরে চোখ পরতেই চমকে উঠলাম শ্রাবন এখানে আর কিছু না ভেবেই দিলাম দৌড়, আমার দৌড় দেখে নাফিজাও আমার পিছনে দৌড়ে আসলো, সে জায়গায় গিয়ে দেখি কেউ নেই আমি তো স্পষ্ট শ্রাবনকে দেখলাম হঠাৎ উদাও হয়ে গেলো কিভাবে
নাফিজা: কি হলো আপু এভাবে দৌড়ে এখানে আসছ কেন
–এখানে শ্রাবনকে দেখেছি
–কি
–হ্যা আমি স্পষ্ট ওকে দেখেছি কিন্তু এখন কোথায় গেলো
–একটু সময়ে তো আর উদাও হয়ে যাবে না আসলে তুমি ভুল দেখেছ
–না আমি ভুল দেখিনি সত্যি ওকে দেখেছি
–উনার কথা বলতে গিয়ে তোমার চোখে পানি চলে এসেছিল তো তাই ঝাপসা চোখে ভুল দেখেছ
–সত্যি আমি ওকে দেখেছি বিশ্বাস করো
হঠাৎ আমার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করতে শুরু করলো আমি বালুর উপরেই বসে পরলাম তারপর আর কিছু মনে নেই
জ্ঞান ফিরতেই দেখি আমি হোটেল রোমে আকাশ মেঘা নাফিজা সবাই আমার পাশে বসা
আকাশ: হঠাৎ কি হয়েছে তোমার
আমি: আমি এখানে আসলাম কিভাবে
নাফিজা: তুমি অজ্ঞান হয়ে যাবার পর আমি তোমার ফোন থেকে আকাশ ভাইকে ফোন দেই উনি গিয়ে নিয়ে আসেন
মেঘা: কি হয়েছিল হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়লা কেন
আমি: ওখানে আমি শ্রাবনকে দেখেছি আমি দৌড়ে যেতেই ও চলে গেছে
নাফিজা: ওখানে কেউ ছিল না তুমি ভুল দেখেছ
আকাশ: হ্যা ভুল দেখেছ
মেঘা: শ্রাবনকে অনেক ভালোবাস তো তাই ওর কথা ভাবতে ভাবতে অন্য কাউকে দেখে শ্রাবন ভেবে নিয়েছ
আমি: তোমরা বিশ্বাস করছ না কেন আমি ওকেই দেখেছি ওকে চিনতে আমার ভুল হতেই পারে না
আকাশ: ঠিক আছে তুমি শ্রাবনকেই দেখেছ বিকেলে আমরা ওকে সাগর পাড়ে খুঁজতে যাবো এখন একটু ঘুমাও
আমি: হুম
ঘুম থেকে উঠে দেখি বিকেল হয়ে গেছে নাফিজা আর মেঘা আমার পাশে বসা
আমি: আপু আপনারা এখনো এখানে বসে আছেন কেন
মেঘা: তুমি যদি আবার জ্ঞান হারাও এই ভয়ে আর আমাকে আপনি করে বল কেন তুমি তো আমার ছোট বোন এখন থেকে তুমি করে বলবা
–ঠিক আছে, আকাশ কোথায়
–খাবার আনতে গেছে
–শ্রাবনকে খুঁজতে যাবা না
–হুম খেয়েই যাবো
খেয়ে সবাই সাগর পাড়ে আসলাম, আমার দুচোখ শুধু শ্রাবনকে খুঁজছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না, প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসলো কিন্তু ওকে খুঁজে পেলাম না, ওকে ফিরে পাবার আশা ছেড়ে দিলাম চোখ দুইটা যেন বাধ মানছে না চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে, এখানে আর এক মুহূর্তও থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না দম বন্ধ হয়ে আসছে
আমি: আকাশ আমি এখানে থাকবো না বাসায় যাবো আব্বুর কাছে
আকাশ: ঠিক আছে আগামীকাল সকালেই আমরা চলে যাবো, গিয়ে তোমাকে তোমাদের বাসায় দিয়ে আসবো
–হুম
সকালে নাস্তা করেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, বিকেলে বাসায় পৌঁছালাম, মায়ের সাথে দেখা করে রোমে এসে ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পরলাম
রাতে ঘুম ভাঙ্গলো, আব্বুকে ফোন দিলাম
–হ্যালো আব্বু
–কিরে কেমন আছিস
–ভালো তুমি
–ভালো কক্সবাজার গিয়ে তো আমাকে ভুলেই গেলি
–বাসায় চলে এসেছি
–কখন আসলি
–বিকেলে, আব্বু তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে বাসায় আসবা
–তুই কি বাসায় আসবি
–হ্যা মা কে বলে দেখি কি বলেন
–ঠিক আছে তুই যেদিন আসবি সেদিন আমিও আসবো
–আচ্ছা
রাতে খাবার টেবিলে বসে মা কে বললাম
–মা আমি কিছু দিনের জন্য বাসায় যেতে চাই
–ঠিক আছে কিন্তু দুইটা দিন পরে যাও নাফিজার মা অসুস্থ খবর এসেছে আমি আগামীকাল নাফিজা কে সাথে নিয়ে ওদের গ্রামে যাবো আমি আসলে পর যেও
–ঠিক আছে
সকালে মা নাফিজা কে নিয়ে ওদের গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন, আকাশ আর মামা অফিসে চলে গেলো, আমি রোমে এসে শুয়ে পড়লাম শরীর একদম ভালো লাগছে না, শ্রাবনের কথা মাথা থেকে সরছেই না, শুয়ে শুয়ে ভাবছি কক্সবাজারে কি আমি সত্যি ভুল দেখেছি কিন্তু শ্রাবনকে চিনতে তো আমার ভুল হবার কথা নয়, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো আকাশ ফোন দিয়েছে রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–তমা আমি বাসায় একটা ইম্পরট্যান্ট ফাইল আর কিছু কাগজ ফেলে এসেছি, কোথায় রেখেছি সঠিক মনে নেই, আমি যে যে জায়গা বলবো তুমি খুঁজে বের করে রাখো আমি নিতে আসছি
–ঠিক আছে বল
–প্রথমে আলমারি খুঁজো
–ঠিক আছে
নেই তো আলমারি তে
–আমার টেবিলের ড্রয়ারে দেখ তো
–আচ্ছা
পিছন ফিরতেই দেখি মামা দরজায় দাঁড়ানো, খুব অভাক হলাম উনি তো অফিসে গিয়েছিলেন বাসায় আসলেন কেন আর কখনোই বা আসলেন
–মামা আপনি
–হ্যা
–কখন এসেছেন আর কোনো প্রয়োজন নাকি
–হ্যা প্রয়োজন-ই তো অনেক বড় একটা প্রয়োজন বলেই হাসতে শুরু করলেন
–(কেমন যেন লোভাতুর দৃষ্টিতে আমার দিকে থাকিয়ে আছেন খুব ভয় পেয়ে গেলাম, আকাশ উপাশ থেকে ফোনে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে)
–কি হল ভয় পাচ্ছ কেন
–না মানে আপনি এই সময় বাসায় (আকাশ উপাশ থেকে বার বার জিজ্ঞেস করতেছে, তমা কার সাথে কথা বলতেছ..?)
–এতো কাঠকড় পুড়িয়ে তোমাকে এই বাড়ির বউ করে আনলাম কি এমনিতেই
–মানে
–তোমাকে আমি টাকা দিয়ে কিনে এনেছি শুধু মাত্র ভোগ করার জন্য চেঁচামেচি না করে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাও নাহলে আমি জোর করবো বলেই আমার কাছে এগিয়ে আসলেন
–(আমি ভয় পেয়ে জোরে আকাশ বলে চিৎকার দিলাম)
–তোমার আকাশ অফিসে ডেকে লাভ নেই বাসা একদম খালি এমন সুযোগ আর আসবে না বলেই আমাকে জাপটে ধরতে আসলেন
আমি ফোনটা উনার মাথায় ছুড়ে দিয়ে দৌড়ে রোম থেকে বেরিয়ে গেলাম, নিচে যেতেই দেখি আকাশ, দৌড়ে গিয়ে ওর পিছনে লোকালাম, রাকিব নিচে নেমে আকাশ কে দেখেই থেমে গেলো…..
দুইটা দিন খুব দ্রুত কেটে গেলো, ফিরে এলাম আকাশদের বাসায়, এখানে একা কিছুই ভালো লাগে না, কোনো কাজও করতে হয় না, আকাশ অফিসে একটু সময় থাকলেও বাসায় আসে না তেমন এই বাসা থেকে দূরে দূরে থাকে আর মা কেমন যেন চুপচাপ থাকেন সবসময়, কাজের মেয়ে দুইজন একজন মহিলা আর মেয়েটা নাফিজা আর দুইটা কাজের ছেলে, ওরা সবাই যে যার মতো কাজ করে কোনো কথা নেই শুধু নাফিজাই একটু বেশি কথা বলে
নাফিজার সাথে ছাদে গেলাম বেশ বড় ছাদ, একপাশে একটা দুলনা দুজন গিয়ে বসলাম
–আচ্ছা নাফিজা এই বাড়ির মানুষ গুলো সবসময় চুপচাপ থাকে কেন
–আকাশ ভাইয়া তো এই বাসায় থাকতে চায় না খালাম্মাও চায় না শুধু আকাশ ভাইয়ার ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে এই বাসায় আছেন আর রাকিব যে উনি খুব খারাপ মানুষ মেয়েদের দিকে খারাপ চোখে থাকায় দেখেন না আমি আর কাজের খালা উনার সামনে যাই না, উনি রেগে গেলে জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন উনি চুপচাপ থাকাটাই পছন্দ করেন তাই সবাই চুপচাপ থাকে
–বুঝলাম আচ্ছা তুমি তো দুই বছর ধরে এই বাসায় আছ মেঘা মেয়েটা সম্পর্কে কিছু জানো
–হ্যা জানি কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে
–আকাশ মা দুজনেই বলেছে
–মেঘা মেয়েটা অনেক ভাল আকাশ ভাইকে খুব ভালবাসে কিন্তু মেঘার বাবা পুলিশ, মেঘার বাবা আর রাকিব সাহেবের মধ্যে শত্রুতা আছে তাই রাকিব সাহেব উনাকে বউ করে আনেনি
–আমাকে কেন আনলো ওদের দুজনকে কতো সুন্দর মানাইত
–আপনাকে কেন আনছে জানিনা তয় আপনের আম্মা মাঝে মাঝে এই বাসায় আসে আর রাকিব সাহেবের কাছ থেকে টাকা নেয়
–টাকা নেয় (বেশ অভাক হলাম আম্মু টাকা দিয়ে কি করে আর আব্বু তো টাকা দেয়)
–হ টাকা নেয় দেখছি তাও কম টাকা না টাকার বান্ডিল নিতে দেখছি অনেক বার
–এই বিষয় আমি দেখবো তুমি আমাকে একটা সাজেশন দাও তো
–কি
–আকাশ আর মেঘার বিয়ে দিলে কেমন হয়
–কি বলেন আপনি মাথা খারাপ আপনি না উনার স্ত্রী
–হ্যা কিন্তু কাগজে কলমে শুধু আমি ওদের বিয়ে দিতে চাই ওদের সুখী দেখতে চাই
–কিন্তু আপনে কই যাবেন
–আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না আগে বল কাজটা ঠিক হবে কিনা
–আকাশ ভাই মেঘা আপু কে অনেক ভালবাসে ওদের বিয়ে হলে দুজন সুখী হবে খালাম্মাও খুশি হবে কিন্তু মেঘা আপুর বাবা কি মেনে নিবে
–তাই তো এটা তো ভাবিনি আচ্ছা আমি মেঘা আপুর সাথে কথা বলবো
–কিন্তু আপনের কি হইব
–আমি ভালই থাকবো আমার জন্য অন্তত দুইটা মানুষ ভালবাসা হারাবে না
–হুম চল নিচে যাই সন্ধ্যা হয়ে গেছে
–হুম
রাতে খেতে বসে মামা বললেন
মামা: আকাশ নতুন বিয়ে করেছ কয়েক দিন ঘুরে আস আমি তোমাদের হানিমোনের সব ব্যবস্থা করে দিব
আকাশ: হানিমোনে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই
মামা: কেন
আকাশ: ভালো করেই জানো তোমাদের কথা রাখতে গিয়ে আমি তমা কে বিয়ে করেছি
মামা: কি বলতে চাইছ
আকাশ: আমি মেঘা কে ভালোবাসি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব না
মামা: তুমি ভালো করেই জানো মেঘার বাবা আমার শত্রু
আকাশ: হ্যা শত্রু তো হবেই উনি যে তোমার কালো ব্যবসায় বাধা দেন
আমি: মামা আপনারা থামুন আমরা হানিমোনে যাবো আপনি ব্যবস্থা করুন
আকাশ: তমা তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি
আমি: না আমার মাথা ঠিকি আছে তুমি চুপ থাক
মামা: কোথায় যেতে চাও বলো আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি
আমি: কক্সবাজার যাবো তবে আমাদের সাথে নাফিজা যাবে
মা: নাফিজা কেন যাবে
আমি: আমি তো নিজের জিনিস গুছিয়ে রাখতে পারিনা শাড়িও পরতে পারি না ও থাকলে আমার সুবিধা হবে, দুইটা রোম বোকিং করুন নাফিজা অন্য রোমে থাকবে (মিথ্যে বললাম আমাদের তো দুইটা রোম লাগবে নাফিজা কে না নিলে দুইটা রোম নেওয়া যাবে না)
মামা: ঠিক আছে
রোমে আসতেই আকাশ আমার উপর রেগে গেলো
আকাশ: এই মেয়ে তুমি চাও কি হানিমোনে যেতে চাচ্ছ কেন
–মেঘা আপু তোমার উপর রেগে আছে এটাই সুযোগ উনার রাগ ভাঙ্গানোর আর সব প্ল্যান করতে হলে অন্য কোথাও যাওয়াটা প্রয়োজন
–তুমি কি বলতে চাচ্ছ মেঘাও কক্সবাজার যাবে
–হ্যা
–ও রাজি হলে তো হানিমোনে যাচ্ছি শুনলে তো ও উল্টো রেগে যাবে
–আগে বলেই দেখুন
–হুম কিন্তু নাফিজা কেন যাবে
–ওকে না নিলে দুই রোম নিতে পারবো না মামা সন্দেহ করবে
–কিন্তু নাফিজা যদি আমাদের প্ল্যানের কথা জেনে যায়
–ও সব জানে
–মানে
–নাফিজাও চায় তোমার আর মেঘা আপুর বিয়েটা হউক
–হুম
সকালে মামা জানিয়ে দিলেন আগামীকাল সকাল ১০টায় আমরা যাবো, রাতে ব্যাগ গুছিয়ে রাখলাম মেঘা আপুও যাবে, আব্বুকে আর রিয়া কে ফোন করে জানিয়ে দিলাম আমি কক্সবাজার যাচ্ছি
সকালে নাস্তা করে রেডি হয়ে মায়ের আর মামার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নাফিজা আকাশ আমি বের হলাম, ট্রেনে যাবো মেঘা আপু রেলস্টেশনেই থাকবে
স্টেশনে গিয়ে মেঘা আপুকে ফেলাম চারজন ট্রেনে উঠলাম, আমি আর নাফিজা পাশাপাশি বসলাম আর আকাশ মেঘা আপুকে নিয়ে আমাদের সামনের সিটে বসলো, ট্রেন চলছে ট্রেনের গতিতে আমি জানালা দিয়ে বাইরে থাকিয়ে আছি
বিকেলের দিকে হোটেলে পৌঁছালাম, দুইটা রোম বোকিং করা হয়েছে নাফিজা আর মেঘা আপু এক রোমে গেলো আমি আর আকাশ এক রোমে গেলাম
–তুমি তো এই রোমেই আসলে তো ওদের কেন এনেছ আর দুইটা রোম কেন
–রাতে আমরা এক রোমে থাকলে মেঘা আপু রাগ করবে
–হুম
ফ্রেশ হয়ে চারজন গিয়ে খাবার খেলাম তারপর ঘুরতে বের হলাম, নাফিজা কে সাথে নিয়ে বালুচরে হাটছি আকাশ আর মেঘা অন্যদিকে হাটছে
রাতে খাবার খেয়ে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছি তখন মেঘা আপুকে জিজ্ঞেস করলাম
–আপু আকাশ তো এখন বিবাহিত আপনার আব্বু বিয়েটা মেনে নিবে তো শুনেছি মামা আর আপনার আব্বুর মধ্যে শত্রুতা আছে
–আব্বু পুলিশ আর উনি অপরাধী তাই শত্রুতা শুধু উনাদের কাজে আর আব্বু সবসময় আমাকে সুখী দেখতে চান আব্বুর সাথে আমার এই বিষয়ে কথা হয়েছে আব্বু বলেছেন তুমি যদি খুশি হয়ে আকাশ কে আমাকে দিয়ে দাও তাহলে আব্বু রাজি আর তুমি কষ্ট নিয়ে দিলে আব্বু রাজি না সাথে আমিও না
–আপনার বিয়ে হলে পর বুঝবেন বাবার বাড়ি ছেড়ে শশুড় বাড়িতে থাকা কতো কষ্টের, মন কতটা ব্যাকুল হয় একবার বাড়িতে যাবার জন্য মা বাবা কে একনজর দেখার জন্য
–হুম
–আর আমি বুঝি না আপনি এতো সন্দেহ করেন কেন আমাদের কি একটু বিশ্বাসও করতে পারেন না (কথা গুলা রাগি কন্ঠে বললাম)
–আসলে তমা ওকে অনেক ভালবাসি পাঁচ বছর ধরে রিলেশন অনেক বেশি ভালবেসে পেলছি এখন যদি হারাতে হয় আমি মরেই যাবো
–হারাতে হবে না আমার উপর বিশ্বাস রাখুন প্লিজ
–হুম রাখি
আকাশ: মেঘার সন্দেহ দেখে রেগে গেলে তো আমিও মাঝে মাঝে রেগে যাই মেয়েটা খুব বেশি সন্দেহ করে, যখন এমন করে রেগে যাই ঝগড়া করি কিন্তু পরে বুঝতে পারি মেয়েটা আমাকে হারানোর ভয়ে যে এমন করে
–সন্দেহ করার মতো কাজ কর হয়তো তাই এমন করে
–হুম মাঝে মাঝে ওকে রাগানোর জন্য এমন করি পাগলীটা কে রাগাতে খুব ভালো লাগে
–ছয়টা মাস দেখতে দেখতে চলে যাবে চাকরির ব্যবস্থা করো
–আসলে আমি যেখানে চাকরি পাই মামা সেখানেই ভেজাল করে মামা চায় না আমি এই বাসা ছেড়ে যাই
–এতে উনার লাভ কি
–জানিনা
–চেষ্টা করে যাও সফল একদিন হবেই
–হুম
বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো রিয়া আর তুলি দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো,
আকাশের সাথে রিয়ার পরিচয় করিয়ে দিলাম, বাসায় ঢুকে আব্বুকে সালাম করতেই আব্বু জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলেন, আমিও আর চোখের পানি গুলো আটকিয়ে রাখতে পারলাম না আব্বুকে জরিয়ে ধরে অনেক কাঁদলাম
–বাবা কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি (কথাটা শুনে ফিছনে থাকালাম দেখি আম্মু)
–ভুলবো কেন (সালাম করলাম, আকাশও এসে আব্বু আম্মুকে সালাম করলো)
আব্বু: যা মা ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়
আমি: আচ্ছা
ফ্রেশ হয়ে সবাই একসাথে খেতে বসলাম, মনে হচ্ছে যেন কতো বছর পর আব্বুর সাথে বসে খাচ্ছি
আম্মু: কিরে তমা তোর শশুড় বাড়ির লোক কেমন তোকে ভালোবাসে তো
আমি: হুম সবাই অনেক ভালো
আব্বু: কোনো অসুবিধা হলে বলিস মা
আমি: আচ্ছা, আব্বু রিয়ার বাসায় ফোন করে বলে দাও ও আজ আমাদের বাসায় থাকবে
রিয়া: নারে থাকতে পারবো না
আমি: প্লিজ না করিস না
রিয়া: ঠিক আছে (আমার চোখের দিকে থাকিয়ে কি যেন ভেবে বললো, হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার কষ্ট গুলা)
আব্বু: ঠিক আছে আমি বলে দিব
সারা দিন সবাই মিলে অনেক আড্ডা দিলাম, রাতে খেয়ে রোমে আসলাম
আকাশ: তোমার রোমে তো সোফা নেই ঘুমাব কিভাবে
–আমি আজ ঘুমাব না তুমি খাটে ঘুমাও কাল কোনো ব্যবস্থা করে নিব
–আজ ঘুমাবে না মানে
–কিছু না
–কি করবে সারা রাত
–(মৃদু হাসলাম)
আকাশ আর কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়লো, আমি আলমারি থেকে শ্রাবনের দেয়া নীল রঙের শাড়িটা খুলে পড়লাম যদিও পারি না কোনো ভাবে পেছিয়ে পরে নিলাম হাতে নীল চুড়ি পরলাম, চোখে গারো করে কাজল দিলাম, ঠোটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিলাম, চোল গুলো ছেড়ে দিলাম, একদম সেদিনের মতো সাজলাম যেমনটা সেজেছিলাম আমার জন্মদিনের রাতে, সে রাতে শ্রাবন পাশে ছিল আর আজ কোথায় আছে কেমন আছে কিছুই জানিনা
ফোনটা হাতে নিয়ে ছাদে আসলাম, রিয়া তুলির কাছে ঘুমিয়েছে ওকে ফোন করে বললাম ছাদে আসতে, বেলি ফুলের গাছ গুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আজো ফুল ফুটেছে অনেক গুলো কিন্তু আমার উপর ছিটিয়ে দেয়ার মানুষটা আজ পাশে নেই, এই ছাদ জুরে শুধু ওর সৃতি, যেদিকে থাকাচ্ছি শুধু ওকেই দেখতে পাচ্ছি, চোখ দুটু কে আজ আর বাধা দিলাম না কাঁদুক না হয়তো জমানো কষ্ট গুলো উড়ে যাবে
–কিরে রাত ১১টা বাজে এখন ছাদে ডাকলি কেন আর তুই এতো রাতে ছাদে কেন
–(চোখ মুছে পিছনে রিয়ার দিকে থাকালাম)
–এই রাতের বেলা রুপা সাজতে ইচ্ছে হলো কেন
–আমি তো রুপা সাজিনি শ্রাবনের পাগলী সেজেছি
–যে তোকে ভুলে গেছে তাকে কেন মনে রেখেছিস
–চাইলেই কি ভুলা যায়
–ও কলেজেও আসে না ফোন বন্ধ কেন ওর কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস
–আমার জীবনে কষ্ট ছাড়া আর কিছু আছে নাকি
–তুই তো দাড়াতে পারতেছিস না বসে কথা বল
–হুম (বসে রিয়ার কাদে মাথা রাখলাম)
–যখন বলছিলি আমাকে আজ থাকতে তখন তোর চোখ দেখেই বুঝেছিলাম আজ পাগলামি করবি
–পাগলামি কই করলাম
–আকাশের সাথে তো ভালই আছিস মনে হলো তাহলে শ্রাবনের ভূত আবার মাথায় আসলো কেন
–শ্রাবনের ভূত মাথা থেকে কখনোই যাবে না আর আকাশের সাথে সব অভিনয় আমরা দুজন শুধুই ফ্রেন্ড
–অভিনয় মানে
–(রিয়া কে আকাশ আর মেঘার কথা সব বললাম)
–তার মানে আকাশ আর মেঘা কে মিলিয়ে দিবি বলে ঠিক করে নিয়েছিস
–হুম
–ডিভোর্স এর পর তুই কি করবি কোথায় যাবি
–কিছু একটা করে জীবন পার করে দিব
–এমনটা না করলেও হবে
–আমার জীবন নষ্ট হয়েছে মেঘার জীবনটা নষ্ট করতে চাই না, কি দরকার এতো গুলো জীবন নষ্ট করার
–হুম
–(অনেক সময় দুজন চুপচাপ বসে রইলাম)
–আচ্ছা শ্রাবন যদি কখনো ফিরে আসে (নীরবতা ভেঙ্গে রিয়া বললো)
–আসবে নারে
–যদি আসে
–আসলে শুধু জিজ্ঞেস করবো আমার কি অপরাধ ছিল
–ওর যদি কোনো দোষ না থেকে থাকে
–জানিনা বলেই রিয়াকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম
রিয়াকে জরিয়ে ধরে কতক্ষণ কেঁদেছি জানিনা হঠাৎ শুনলাম মসজিদে ফজরের আজান পড়তেছে
রিয়া: তমা এখন চল প্লিজ অনেক তো কাঁদলি এখন রোমে গিয়ে একটু ঘুমা
–তুলির রোমে ঘুমাবো চল
–হুম
সকালে অনেক দেরিতে ঘুম ভাঙ্গলো ঘড়িতে চেয়ে দেখি ১১টা বাজে, ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম সবাই আড্ডা দিতেছে
রিয়া: উঠেছিস আমাকে এখন বাসায় যেতে হবে
–আমাকে ডাকলি না কেন এতো বেলা হয়েছে
–এমনি ডাকিনি এখন যাই
–আচ্ছা
রিয়া চলে গেলো, আকাশও রোমে চলে গেলো, আমি দুই মগ কপি বানিয়ে রোমে গেলাম, আকাশ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে
–কপি নাও
–এতো বেলা করে উঠলা যে
–এমনি
–শ্রাবনকে খুব বেশি ভালোবাস তাই না
–হঠাৎ এমন প্রশ্ন
–রাতে একবার ঘুম ভেঙ্গেছিল তোমাকে রোমে না দেখে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে গিয়েছিলাম, গিয়ে দেখি তুমি রিয়ার কাদে মাথা রেখে কাঁদতেছ তাই আর কথা বলিনি
–হুম
–বিধাতার কি খেলা দেখেছ তুমি শ্রাবনকে ভালবাস আমি মেঘা কে ভালবাসি অথচ আল্লাহ আমাদের দুজনকে মিলিয়ে দিলেন
–হুম
–তমা আমি মেঘা কে সত্যি ফিরে পাবো তো
–আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো বাকিটা বিধাতার ইচ্ছা
–হুম
–তার মানে আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না
–ঠিক তা না আসলে ছয়মাস অনেক সময় তোমার মন তো পাল্টেও যেতে পারে
–শুন নিজের মন ঠিক রাখ আমার মন নিয়ে চিন্তা করতে হবে না আমি শ্রাবনকে ভালবাসি তুমি চাইলেও আমি তোমার সাথে সংসার করবো না
–রেগে যাচ্ছ কেন
–(নিশ্চুপ)
–কি কথা বলবা না আর
আর একটা কথাও বলিনি আমি চাচ্ছি ওদের মিলিয়ে দিতে আর ওরা আমাকে বিশ্বাসই করে না, গাড়ি একটু পর একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে থামল, গাড়ি থেকে নেমে আকাশকে অনুসরণ করে রেস্টুরেন্ট এর ভিতরে ঢুকলাম, আকাশ একটা টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল একটা মেয়ে বসে আছে আর আকাশের দিকে রাগি চোখে থাকিয়ে আছে বুঝলাম এটাই মেঘা কিন্তু এতো রেগে আছে কেন
আকাশ: মেঘা ও হচ্ছে তমা আর তমা ও হচ্ছে আমার জান মেঘা
আমি: কেমন আছেন আপু
মেঘা: ভালো তুমি
আমি: ভালো
মেঘা: দাড়িয়ে আছ কেন বস
আকাশ গিয়ে মেঘার পাশে বসলো আর আমি তাদের সামনের একটা চেয়ারে বসলাম, মেঘা মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর বুঝলাম না কোন লাভে রাকিব লুইচ্ছা টা আমাকে আকাশের বউ করে আনলো মেঘা আর আকাশকে কতো সুন্দর মানাইত
আকাশ: মেঘা এখনো রেগে আছ (আকাশের কথায় ওদের দিকে থাকালাম)
মেঘা: (নিশ্চুপ)
আকাশ: প্লিজ বুঝছ না কেন আমি মজা করে কথাটা বলছিলাম
মেঘা: মজা করে না ছাই আসলে তুমি ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছ (রাগি কন্ঠে বললো)
আকাশ: বিশ্বাস কর আমি মজা করেছিলাম শুধু তোমাকে রাগাতে কিন্তু তুমি যে এতো রেগে যাবা বুঝতে পারিনি
মেঘা: এমন কথা কেউ মজা করে বলে না আকাশ আমাকে এতো বোকা ভেবো না (বুঝলাম না ওরা কি নিয়ে ঝগড়া করতেছে জিজ্ঞেস করবো, জিজ্ঞেস করা কি ঠিক হবে)
আকাশ: আচ্ছা তুমি তমা কে জিজ্ঞেস কর আমি এমনটা চাই কি না
আমি: আমি কি জানতে পারি কি হয়েছে
আকাশ: আমি মেঘা কে মজা করে বলছিলাম ওকে বিয়ে করবো না আর তোমাকেও ডিভোর্স দিব না তাই মহারাণী রেগে আছে
আমি: এইটা তো রাগ করার কথাই এমন মজা কেন করবা
আকাশ: তুমিও আমাকে ভুল বুঝছ আরে আমি মজা করে বলছিলাম
মেঘা: আসলে তুমি ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছ নাহলে তুমি করে কথা বলতেছ কেন
আকাশ: মেঘা প্লিজ
আমি: আপু প্লিজ এমন কথা বলবেন না আমরা দুজন ফ্রেন্ড তাই তুমি করে কথা বলি আর টেনশন নিবেন না আমি আপনাদের মিলিয়ে দিব আমার উপর বিশ্বাস রাখুন
মেঘা: তোমার উপর বিশ্বাস আছে কিন্তু আকাশের উপর নেই
আকাশ: কি (রাগি কন্ঠে)
আমি: আপু যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে সম্পর্ক কোনো ভাবেই ঠিকানো সম্ভব না, একটা সম্পর্ক ঠিকিয়ে রাখতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আপনি যদি ওকে বিশ্বাসই না করেন তাহলে বিয়ে তো দূরের কথা রিলেশন টাই ভেঙ্গে যাবে
মেঘা: আমি ওকে হারাতে চাই না খুব বেশি ভালবাসি ওকে
আমি: তাহলে এতো অবিশ্বাস করেন কেন
মেঘা: ওর কথা শুনে
আকাশ: বললাম তো মজা করেছি আচ্ছা সরি আর কখনো এমন মজা করবো না এইযে কান ধরলাম এবার খুশি তো
মেঘা: হুম
আকাশ: এবার বলো তোমরা দুজন কি খাবা
মেঘা: তোমার ইচ্ছেতেই অর্ডার দাও
আকাশ: তমা তুমি কি খাবা
আমি: তোমরা যা খাও তাই
আকাশ: ঠিক আছে (ওয়েটার কে ডেকে খাবার অর্ডার দিল)
মেঘা: আচ্ছা তমা বলোনি তো কেন তুমি আমাদের মিলিয়ে দিতে চাচ্ছ কোন মেয়ে কি নিজের স্বামী কে অন্য মেয়ের হাতে তুলে দেয়
আমি: আপু আমি জানি ভালবাসার মানুষকে ছাড়া বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কতটুকু আমি চাই না আমার মতো আর কেউ এই কষ্ট ভোগোক, আমরা শুধু কাগজে কলমে স্বামী স্ত্রী আমি ভালবাসি শ্রাবনকে আর আকাশ ভালবাসে আপনাকে আমরা কখনো সুখী হতে পারবো না আর আপনি ভালবাসেন আকাশকে এখন যদি আপনার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয় আপনিও সুখী হবেন না যার সাথে বিয়ে হবে সেও সুখী হবে না কাজেই চারটা জীবন নষ্ট হবে, কি দরকার চারটা জীবন নষ্ট করার তার চেয়ে ভালো হবে আপনাদের বিয়ে হলে
মেঘা: হুম তা ঠিক চারটা জীবন নষ্ট হবে কিন্তু ডিভোর্স এর পর তুমি কি করবা
আমি: ভালবাসা যেহেতু হারিয়েছি কোনো ভাবে জীবনটা পার করে দিব
মেঘা: আচ্ছা যাকে ভালোবাস সে এখন কোথায়
আমি: জানিনা কোনো যোগাযোগ নেই
মেঘা: কেন কি হয়েছিল তোমাদের মাঝে
আকাশ: মেঘা আমি সব জানি তোমাকে সব বলবো এখন ওর মন খারাপ করিও না
মেঘা: হুম
আমি: আর একটা কথা ছয়মাস খুব বেশি সময় না দেখতে দেখতে চলে যাবে এই সময় নিয়ে টেনশন করবেন না আর প্লিজ আমাদের উপর বিশ্বাস রাখুন
মেঘা: ঠিক আছে
আরো কিছু সময় রেস্টুরেন্টে বসে প্রায় সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরলাম
রাতে মা বলে দিলেন আগামীকাল আমাদের বাসায় যাবো আকাশ যেন অফিসে না যায়, আমি বাবার বাড়িতে যাবো শুনে ঠিক যতোটা খুশি হয়েছি আকাশ ততোটাই খুশি হয়েছে অফিসে যেতে হবে না শুনে কারন ও রাকিব লুইচ্ছার ব্যবসা একদম দেখাশুনা করতে চায় না ঠেকায় পরে একটু সময়ের জন্য অফিসে গিয়ে বসে, রাতে ব্যাগ গুছিয়ে রেখে ঘুমাতে গেলাম মন অনেক ভালো কারন সকালেই বাড়িতে যাবো মনে হচ্ছে কতো বছর ধরে বাড়িতে যাই না আব্বুকে দেখি না তুলিটা কে দেখি না আর আম্মু উনার কারনে যেতে মন চায় না কে জানে আবার অত্যাচার শুরু করে দিতে পারে
সকালে আব্বুর ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো রিসিভ করলাম
–হ্যালো আব্বু
–কেমন আছিস মা
–ভালো তুমি
–ভালো কখন আসবি তোরা
–এইতো ১১টার দিকে
–ঠিক আছে সাবধানে আসিস
–আচ্ছা
সকালে নাস্তা করে রেডি হয়ে নিলাম, মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিলাম রাকিব লুইচ্ছাও বাসায় তার কাছ থেকেও বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম, গাড়িতে উঠেই রিয়া কে ফোন দিয়ে বললাম আমাদের বাসায় আসতে, একটু পর আকাশের ফোন বেজে উঠলো কিন্তু রিসিভ করছে না
আমি: কি হলো ফোন রিসিভ করছ না কেন
আকাশ: মেঘা ফোন দিছে রিসিভ করলেই অনেক গুলো প্রশ্ন করবে কেন তোমাদের বাসায় যাচ্ছি তা নিয়ে
আমি: রিসিভ কর কোনো প্রশ্ন করলে আমার কাছে দিও আমি কথা বলবো
আকাশ: ঠিক আছে (ফোন রিসিভ করতেই মেঘা কি যেন বললো তাই আমার কাছে দিয়ে দিল)
আমি: হ্যালো আপু
মেঘা: ও ফোন তোমার কাছে দিল কেন
–ড্রাইভ করছে তো তাই
–তোমরা কোথায় যাচ্ছ
–আমাদের বাসায়
–কেন
–নিয়ম অনুযায়ী যেতে হয়
–ও যাবে কেন
–নিয়ম কি আমি একা পালন করবো নাকি
–তুমি না গেলেই তো হত ওকে ও যেতে হত না
–আপনার বিয়ে হলে পর বুঝবেন বাবার বাড়ি ছেড়ে শশুড় বাড়িতে থাকা কতো কষ্টের, মন কতটা ব্যাকুল হয় একবার বড়িতে যাবার জন্য
–তার নাম কি
–শ্রাবন
–তোমরা বিয়ে করনি কেন
–একার ইচ্ছেতে তো আর বিয়ে করা যায় না
–বুঝলাম না
–সে হঠাৎ চেঞ্জ হয়ে গেলো জানিনা কেন
–বুঝাও নি তাকে
–হুম অনেক বুঝিয়েছি লাভ হয়নি
–কি বলেছিল
–আমাকে নাকি আর ভালবাসে না ওকে যেন বিরক্ত না করি
–হঠাৎ এমন চেঞ্জ হয়ে গেলো কেন
–জানিনা ওর বাসায় গিয়েছিলাম রিয়া আর আমি অনেক বুঝিয়েছি ওর আম্মুও বলে দিয়েছেন ওকে যেন আর বিরক্ত না করি
–রিয়া কে
–আমার একমাত্র বান্ধবী তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব
–ঠিক আছে, আচ্ছা শ্রাবন কি বিয়ের কথা শুনেনি
–বিয়ের কার্ড নিয়ে বাসায় গিয়েছিলাম দরজায় তালা ঝুলানো ওরা নাকি এখান থেকে চলে গেছে
–এখন কি কোনো যোগাযোগ নেই
–নাহ ফোন অফ হয়তো সিম চেঞ্জ করে নিছে
–হুম
ফোনের কথা বলতেই মনে পড়লো আমার ফোন তো বাসায় আব্বুকেও ফোন দেওয়া হয়নি তাই আকাশকে বললাম
–তোমার ফোনটা দাও তো বাসায় ফোন দিব আমার ফোন তো বাসায়
–ওহ বলতে ভুলে গেছি তোমার আব্বু ফোন দিয়েছিলেন
–কখন
–সকালে রাগ করে যখন বাইরে গিয়েছিলাম
–আর এখন বলছ
–সরি মনে ছিল না এই নাও ফোন কথা বল
–হুম
ফোন নিয়ে আব্বুকে ফোন দিলাম
–আব্বু
–কেমন আছিস মা
–ভালো তুমি কেমন আছ
–ভালো তোর ফোন বন্ধ কেন
–আমার ফোন তো বাসায় রইছে
–না তো তুলি তোর ব্যাগে ফোন দিয়ে দিছে
–ওহ দেখিনি
–তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন সত্যিই তুই ভালো আছিস তো
–হ্যা ভালো আছি তুমি টেনশন করো না
–ঠিক আছে
–আব্বু বাসায় যাবো কবে
–নিয়ম অনুযায়ী পরশু দিন
–আচ্ছা এখন রাখি
–ঠিক আছে
ফোন রেখে আকাশের দিকে থাকালাম কেমন যেন মনমরা হয়ে বসে আছে
–কি হয়েছে
–কিছু না তো
–তোমার মেঘার খবর কি
–তোমার সাথে দেখা করতে চায়
–ওকে আর চাকরীর খবর কি
–খুঁজছি এখনো
–হুম
–তো কবে দেখা করবা মেঘার সাথে
–যেদিন নিয়ে যাও
–ঠিক আছে আগামীকাল যাই
–মা কে কি বলবা
–বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি
–ওকে
রোমে গিয়ে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলাম চার্জ নেই তাই অফ হয়ে আছে, চার্জার এনে ফোনটা চার্জে দিলাম
রাতে খাবার টেবিলে আকাশ মা কে বললো আমাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে চায় মা খুশি হয়ে অনুমতি দিলেন
খেয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম আজ আমি সোফায় আর আকাশ খাটে
সকালে রিয়ার ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো, রিসিভ করলাম
–কিরে এতো সকালে
–ম্যাডাম ৮টা বাজে আর আমাকে তো ভুলেই গেছেন
–ভুলব কেন ফোন যে দিয়ে দিছিলি আমাকে বলছিলি
–বলছিলাম তুই তো পাথরের মূর্তি হয়ে গিয়েছিলি তাই শুনিস নি
–হুম
–তোর খবর কি সব ঠিক আছে তো
–আগামীকাল তো বাসায় যাবো তখন সব বলবো
–ঠিক আছে এখন ফ্রেশ হয়ে নে রাখি
–হুম
ফ্রেশ হয়ে নিছে গেলাম সব কেমন যেন নীরব, একটা কাজের মেয়েকে ডাক দিলাম
–সবাই কোথায় বাসা এতো নীরব কেন
–এই বাসা তো সবসময় নীরব থাকে বলেই হাসতে শুরু করলো
–মানে
–দুই বছর ধরে এই বাসায় কাজ করছি একদিনও এই বাসায় কাউকে আনন্দ করতে দেখিনি সবাই সবসময় চুপচাপ থাকে
–ওহ এখন সবাই কোথায়
–আকাশ ভাইয়া আর খচ্চরটা অফিসে গেছে আর খালাম্মা পাশের বাসায় গেছে
–খচ্চর আবার কে
–ওই যে এই বাড়ির মালিক রাকিব সাহেব
–উনাকে গালি দিচ্ছ কেন
–দিব না উনি তো একটা খারাপ মানুষ
–আচ্ছা এগুলা বাদ দাও ওরা সবাই নাস্তা করে গেছে তো
–হ্যা খালাম্মা বলছে আপনি উঠে নাস্তা করে নিতে
–ঠিক আছে
–আপনার কিছু লাগবে
–আমাকে তুমি করেই বলো আর এক মগ কপি দাও
–ঠিক আছে
–আচ্ছা বাকিরা কোথায় কাজের লোক তো মোট চারজন দেখেছি
–সবাই কাজে
–তোমরা সবাই নাস্তা করেছ তো
–হ্যা
–তোমার নাম কি
–নাফিজা
–আচ্ছা যাও
নাস্তা করে রোমে এসে ফোনটা হাতে নিলাম খুব ইচ্ছে করছে শ্রাবনের সাথে কথা বলতে কিন্তু ওর তো ফোন অফ, আচ্ছা তিন চার দিন তো ফোন দেইনি এখন দিয়ে দেখি হয়তো অন করেছে, অধীর আগ্রহ নিয়ে ওর নাম্বারটা ডায়াল করলাম, ঠিক যতটা আগ্রহ নিয়ে ফোন দিয়েছিলাম ঠিক ততটাই হতাশ হলাম ফোন অফ শুনে, হয়তো সিমটাই চেঞ্জ করে নিয়েছে, আচ্ছা আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর ওকে ফোন দিয়ে লাভ কি…? কেন বার বার ওকে মনে করে কাঁদছি…? কেন বার বার ওকে ফোন দিচ্ছি…? আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ওর তো কোনো কষ্ট হচ্ছে না হলে তো ফোনটা অন রাখতো আমাকে একটা কল দিতো
এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে গেলো বালিশে মুখ গুঁজে অনেক কাঁদলাম, কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি, হঠাৎ কারো ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, চোখ খুলে দেখি আকাশ দারিয়ে আছে
–তুমি কখন এসেছ আর কয়টা বাজে
–১২টা বাজে আর একটু আগেই এসেছি
–মা কোথায়
–রোমেই তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই নাকি ডাকেনি
–ওহ
–উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও বাইরে যাবো
–এখন কেন বিকেলে গেলে হয়না
–দুপুরের খাবারটা বাইরে খাবো আর মেঘার সাথে
–ঠিক আছে
ইচ্ছে না থাকলেও উঠে গোসলে গেলাম আকাশ মেঘার সাথে দুপুরে খেতে চাচ্ছে এখন আমি না গেলে তো ওদের ইচ্ছেটা মাটি হয়ে যাবে, অনেক্ষন কাঁদার কারনে চোখ দুটি ফুলে গেছে খুব অসহ্য লাগছে
গোসল করে এসে ভাবতে লাগলাম কি পরবো শাড়ি নাকি থ্রি-পিছ, যদি শাড়ি পরতে হয় কি করবো আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না
আকাশ: কি ভাবছ
–কি পরবো ভাবছি
–শাড়ি পরো নাহলে আম্মু সন্দেহ করবে
–কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারিনা
–ঠিক আছে নাফিজা কে ডেকে নাও হেল্প করবে
–হুম
নাফিজা কে ডেকে এনে বেগুনী রঙের একটা শাড়ি পড়লাম, শাড়ি পরতে আমার একদম ভালো লাগে না তাও পরতে হলো, রেডি হয়ে নিচে গিয়ে দেখি আকাশ ড্রইংরুমে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরুলাম
আকাশ: রিক্সায় যাবা নাকি গাড়িতে
আমি: রিক্সায় গেলে মেঘা আপু রাগ করতে পারেন
–গাড়িতে গেলে যে আমার রাগ উঠবে
–কেন
–গাড়িটা পাপের টাকা দিয়ে কেনা তো তাই যেদিন নিজে গাড়ি কিনতে পারবো সেদিন গাড়ি চালাবো
–আজ অন্তত রাগটা কমিয়ে রাখো
–হুম চলো
আকাশ ড্রাইভ করছে আর আমি পাশে বসা
–আচ্ছা তুমি মামার উপর সবসময় এতো রেগে থাক কেন
–উনার জন্যই মেঘা কে হারিয়েছি আর উনি খারাপ লোক
–মেঘা আপু কে হারালেন কোথায় আবার তো পেয়ে যাবেন
–যদি না পাই ভয় হয়
–কিসের ভয় আমি তো নিজেই মিলিয়ে দিব
–তুমি যদি তোমার কথা না রাখো
–তার মানে আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না
চলবে?
(ভাবতেছি তমা কে মেরে আকাশ আর মেঘা কে মিলিয়ে দিব ভালো হবে তাই না আপুরা??)
আকাশ মেঘার সাথে কথা বলে ফোন রেখে আসলো
–তমা তুমি খাটে ঘুমিয়ে পড় আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি
–আমি সোফায় ঘুমাতে পারবো তুমি খাটে ঘুমাও
–তুমি এখন আমার মেহমান তুমি খাটে ঘুমাও
–ঠিক আছে আজকে আমি খাটে ঘুমাই আপনি সোফায় ঘুমান কাল আমি সোফায় ঘুমাব আপনি খাটে ঘুমাবেন এভাবেই ভাগাভাগি করে ঘুমাব
–ওকে এখন ঘুমিয়ে পরো
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ৯টা বেজে গেছে অথচ কেউ ডাকে নি হঠাৎ চোখ পড়লো বারান্দায় আকাশ দারিয়ে ফোনে কথা বলছে, উঠে ওর কাছে গেলাম
–এতক্ষণ ঘুমাইছি ডাকোনি কেন
–এমনি
–মন খারাপ
–হুম
–কেন
–আমার পরিচিত এক উকিল আছে তার কাছে ফোন দিয়েছিলাম বললো ছয় মাসের আগে ডিভোর্স পেপার আসবে না
–ছয় মাস দেখতে দেখতে চলে যাবে
–কিন্তু মেঘা কি মানবে
–আমি আপুকে বুঝিয়ে বলবো
–ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে নিচে আস নাস্তা করবে
–ওকে
গোসল করে একটা শাড়ি পড়লাম একটু সেজে নিচে গেলাম দেখি সবাই নাস্তার টেবিলে বসা সবাই বলতে শাশুড়ি মা, মামা আর আকাশ আর দুইটা কাজের মেয়ে কাজ করছে, এইটা যে বিয়ে বাড়ি দেখে বুঝার উপায় নেই
মা: বউমা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছ কেন আস এখানে
আমি: আসছি (গিয়ে একটা চেয়ারে বসলাম)
মা: আমরা তিনজন আর দুইটা কাজের মেয়ে ছাড়া আর কাউকে দেখছ না তাই অভাক হয়েছ আসলে তোমাদের বিয়েতে কাউকে দাওয়াত দেয়া হয়নি আকাশ মানা করেছে তাই
মামা: আপা (আমার শাশুড়ি) আমি ভাবছি দুই একদিনের মধ্যেই সবাইকে দাওয়াত দিয়ে ধুমধাম করে ওদের বৌভাত করবো
আকাশ: এসবের কোনো প্রয়োজন নেই মামা আমাদের জন্য যা করেছ যথেষ্ট করেছ
মামা: এটা কেমন কথা আকাশ আত্মীয়স্বজন কে জানাতে হবে না আর আমার বন্ধুবান্ধব দের কি বলবো যখন তারা জানবে আমার একমাত্র ভাগ্নে কে কোনো অনুষ্ঠান ছড়া বিয়ে করিয়েছি
আকাশ: তোমার বন্ধু গুলো তো তোমার মতই হবে ওদের কে এখানে আনতে হবে না আর আত্মীয়স্বজন কে ফোন করে জানিয়ে দাও ওরা এসে তমা কে দেখে যাক
মা: আকাশ তোর মামা যখন চাচ্ছে….
আকাশ: আমার ইচ্ছের বিরুদ্বে অনেক কিছু করেছ তোমরা আর না প্লিজ বলেই নাস্তা না করেই উঠে চলে গেল
মামা: বউমা ওর ব্যবহারে কিছু মনে করো না ও একটু এমনি
আমি: মামা উনি যখন চাচ্ছেন না তাহলে বৌভাতের কোনো প্রয়োজন নেই
মামা: ঠিক আছে
মা: বউমা নাস্তা করে আমার রোমে এসো বলেই চলে গেলেন
আমি বসে আছি আর মামা বসে নাস্তা করছেন হঠাৎ মামার দিকে চোখ পড়লো উনি আমার দিকে আবার খারাপ নজরে থাকিয়ে আছেন আমি তাড়াতাড়ি উঠে মায়ের রোমে চলে গেলাম মনে মনে ভাবছি এইটা নাকি মামা শশুড় এইটা তো একটা আস্ত লুইচ্ছা বিয়ের আগে নামটা ভালই দিয়েছিলাম বেহায়া রাকিব হিহিহি
আমি: মা আসব
মা: আসো বউমা অনুমতি লাগে নাকি
–আপনি তো নাস্তা না করেই চলে আসলেন নাস্তা করবেন না
–না মা খিদে চলে গেছে এমনটা প্রায় দিন হয় যখন খাবার টেবিলে বসে রাকিবের সাথে আকাশ রাগারাগি করে
–মা বাদ দিন উনি যখন চাচ্ছেন না অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই আর আমিও এসব জামেলা চাচ্ছি না
–ঠিক আছে মা, শুনো তোমাকে যে কারনে রোমে ডেকেছি
–কি মা
–আসলে আকাশ মেঘা নামের একটি মেয়েকে ভালবাসে আমিও ওর ভালোবাসা মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু রাকিব বললো তোমাকেই এই বাড়ির বউ করে আনবে তাই বাধ্য হয়ে মেঘা কে অস্বীকার করতে হয়েছে, তোমাকে দেখার পর আমারও পছন্দ হয়েছে তাই আর বাঁধা দেইনি জানি আকাশ অনেক কষ্ট পেয়েছে কি করবো বল রাকিব এত বছর ধরে আমাদের লালনপালন করছে ওর কথা ফেলি কি করে
–সবই ঠিক আছে মা কিন্তু কারো মন ভাঙ্গা ঠিক না এই বিয়েতে আকাশ মেঘা দুজনেরই মন ভেঙ্গেছে আপনি চাইলেই ওদের বিয়ে দিতে পারতেন
–হয়তো পারতাম কিন্তু এই বাসা ছেড়ে চলে যেতে হতো আকাশ তো কোনো চাকরি করে না কোথায় যাবো আর আকাশের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে রাকিব এর কথা মেনে নিয়েছি
–আকাশ যদি আমাকে মেনে না নেয় তখন কি হবে একবার ভেবে দেখেছেন
–আকাশ খুব জেদি জানিনা কখনো তোমাকে মেনে নিবে কিনা আমাকে ক্ষমা করে দিয় মা তোমার জীবনটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিলাম
–এতে আপনার কি দোষ মামার ইচ্ছেতেই তো বিয়েটা হয়েছে
–শুধু রাকিবের ইচ্ছায় না তোমার মায়ের ইচ্ছাতেও হয়েছে
–আম্মুর
–হ্যা তোমার আম্মু প্রায় দিন এই বাসায় আসে, রাকিব আর তোমার মা নাকি দুই বন্ধু আমি প্রথম ওদের কথা বলতে শুনেছিলাম তোমাদের বিয়ে নিয়ে
–ওহ
–শুনেছি ও তোমার আপন মা না
–হুম
–আমি আজকে থেকে তোর মা
–সত্যি বলছেন
–হ্যা
–আচ্ছা মা আপনার মেয়ে যদি কখনো কোনো বড় ভুল করে ক্ষমা করবেন তো
–সন্তানের সব ভুল মা ক্ষমা করে কিন্তু এই কথা বলছিস কেন
–এমনি খিদে লেগেছে চলেন নাস্তা করবো
–চল
মা কে নিয়ে নাস্তা করে রোমে আসলাম, বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম ভাবছি মা মেঘা কে পছন্দ করেন মামার কারনে আমাকে এনেছেন এখন আমি যদি ওদের মিলিয়ে দেই অবশ্যই মা মেনে নিবেন মামা না মানলে কোনো সমস্যা নেই কারন এই ছয় মাসে আকাশ যেকোনো একটা চাকরী খুঁজে নিবে তখন আর ওদের এই বাসায় থাকতে হবে না
আচ্ছা ওদের মিলিয়ে দেয়া কি ঠিক হবে সবাই আমাকে খারাপ ভাববে না তো…?
দূর যার যা খুশি ভাবুক আমার কি আমি ওদের মিলিয়ে দেবো এইটা ছাড়া রাস্তা নেই
যদি মেঘা আর আকাশ কে মিলিয়ে দেই তাহলে তারা সুখী হবে আর যদি এমন ভাবে চলতে থাকে তাহলে আমি মেঘা আকাশ তিনজনই কষ্ট পাবো আর যদি ওদের মিলিয়ে না দিয়ে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাই তাহলেও সবাই কষ্ট পাবে
আকাশ যেমন আমাকে কখনো মেনে নিতে পারবে না তেমনি আমার পক্ষেও আকাশ কে মেনে নেওয়া সম্ভব না কিভাবে মেনে নিবো আমি তো এখনো শ্রাবনকে ভালবাসি ওকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, শ্রাবনের কথা মনে পরতেই চোখ দুইটা ঝাপসা হয়ে গেলো জানিনা ও এখন কোথায় আছে কেমন আছে মোবাইলটাও অফ হয়তো সিম চেঞ্জ করে ফেলছে, আচ্ছা ও আমার সাথে এমন করলো কেন…? আমার কি দোষ ছিল আমি তো শুধু ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম ও কেন সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে চলে গেল…? ও তো এমনটা না করলেও পারতো
চোখের পানি মুছে রোমে যাওয়ার জন্য পিছন ফিরলাম দেখি আকাশ দারিয়ে আছে
–তুমি কাঁদছিলে
–কই না তো
–আমি দেখেছি লুকাতে হবে না
–হুম
–কাঁদছিলে কেন
–এমনি
–তোমার বফ এর কথা মনে পরেছে বুঝি
–বুঝলে কিভাবে
–এভাবে মানুষ ভালোবাসার মানুষের জন্যই কাদে
–হয়তো
যাকে ভালোবাসছি তাকে হারালাম অন্য একজনের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো, আব্বুকে একা করে চলে যাচ্ছি নতুন ঠিকানায় কিন্তু আমার চোখে একফোঁটা পানি নেই, অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর কথাটাই সত্যি আমি কষ্ট পেতে পেতে পাথর হয়ে গেছি তাই দুচোখে আজ পানি নেই, চোখ দুইটার ই বা দোষ কি আর কতো কাঁদবে ছোট বেলা থেকেই তো কেঁদে আসছে, আম্মুর কথা খুব মনে পরছে আম্মু থাকলে হয়তো আমার জীবটাই অন্য রকম হতো, হঠাৎ গাড়ির ঝাঁকানি তে বাস্তবে ফিরে আসলাম, একটা বিশাল বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো খুব জাঁকজমক ভাবে না সাজানো হলেও অনেকটাই সাজানো বাড়িটা, সব নিয়ম কানুন শেষ করে আমাকে একটা রোমে নিয়ে বসানো হলো, আমি চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রোমটা দেখছি অনেক বড় রোম নানা ধরনের আসবাবপত্র, রোমটা অনেক সুন্দর করে সাজানো নানা ধরনের কাচা ফুল দিয়ে তার মধ্যে গোলাপ ফুল অনেক বেশি, বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছিটানো ওরা হয়তো জানেনা আমার গোলাপ নয় বেলি ফুল পছন্দ, হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনলাম বুঝলাম আকাশ এসেছে, আমার বুক ধুক ধুক করছে শ্রাবনের কথা কিভাবে শুরু করবো আকাশ আদৌ কি মেনে নিবে, রিয়ার কথা মনে পড়লো ও বলেছিল আকাশকে মেনে না নিলেও পায়ে ধরে যেন সালাম করি তাই খাট থেকে নেমে সালাম করতে গেলাম কিন্তু আকাশ সরে গেলো
আকাশ: সালাম করতে হবে না
আমি: কেন
–আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই কথা গুলো শুনার পর যদি ইচ্ছে হয় সালাম করতে পারেন আমি বাধা দিবো না
–কি কথা বলুন
–হুম বলবো আগে আপনি ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আসুন বেনারসি পরে যে আপনার অসহ্য লাগছে তা বুঝা যাচ্ছে
–হুম
ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পাল্টে একটা থ্রি-পিছ পরে নিলাম এসে দেখি আকাশও চেঞ্জ করে নিয়েছে
আকাশ: চলেন বারান্দায় গিয়ে বসি
–হুম (বুঝতেছি না কি হচ্ছে ও কি এমন বলবে বলতে তো চেয়েছিলাম আমি, আচ্ছা আগে শুনি ও কি বলে তারপর নাহয় আমার কথা গুলো বলব)
–আচ্ছা আপনার নাম কি (খুব অভাক হলাম বিয়ে করে ফেলছে অথচ নাম জানে না)
–তমা
–অনেক সুন্দর নাম, খুব অভাক হচ্ছেন তাই না বিয়ে করে ফেলেছি অথচ যাকে বিয়ে করলাম তার নাম টাই জানিনা
–হুম
–আসলে আমি এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না মামার কথায় বিয়েটা করতে হয়েছে
–(আবারো অভাক হলাম কি অদ্ভুত বিয়ের কনে রাজি না বর রাজি না অথচ বিয়ে হয়ে গেলো)
–চুপ হয়ে আছেন যে
–এমনি আচ্ছা রাজি যেহেতু ছিলেন না বিয়েটা করলেন কেন
–ভাগ্যের চাকা ঘুরতে ঘুরতে আমাকে আজ এখানে এনে দাড় করিয়েছে
–বুঝলাম না
–আমি যখন খুব ছোট তখন আব্বু মারা গেলেন, আমাকে নিয়ে আম্মু কোথায় যাবে কিভাবে লালনপালন করবে তাই মামার কাছেই চলে আসেন, এইযে এতো বড় বাড়ি দেখছেন এতো সম্পদ সব আমার মামার কালো টাকায় গড়া, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি এসব পাপের টাকায় গড়া তখন থেকেই এই পাপের হাতছানি থেকে অনেক দুরে ছুটে যেতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি, পড়ালেখা শেষ না করে কিছু একটা না করে আম্মুকে নিয়ে কোথায় যাব তাই এখানেই পরে আছি আম্মুও চায় না এখানে থাকতে, পড়ালেখা মাত্র শেষ করলাম আর মামা বিয়ের জন্য জোর করতে শুরু করলেন, আমি রাজি ছিলাম না কারন আমি মেঘা কে ভালোবাসি কিন্তু মামা রাজি হলেন না আম্মু রাজি থাকলেও মামার কারনে কিছু করতে পারেননি, ছোট বেলা থেকে মামা আমাদের লালনপালন করেছেন উনার কথা তো রাখতেই হবে, জানিনা মামা কেন আপনাকে এতো পছন্দ করেছেন অনেক জোর করে বিয়েটা করিয়েছেন আর আম্মু তো আগে মেঘা কে পছন্দ করতেন কিন্তু আপনাকে দেখার পর পছন্দ হয়ে গেছে, জানিনা মেঘা কে পাবো কিনা কিন্তু আমি আপনাকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না
–মেঘা কে আপনার মামা মেনে নেন নি কেন
–জানিনা হয়তো আপনাকে বেশি পছন্দ হয়েছে তাই
–আচ্ছা আপনার মামা বিয়ে করেননি
–করেছিলেন মামি দুই বছর পরই ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছেন
–কেন
–মামার খারাপ কাজ গুলা মামির পছন্দ ছিল না বাসায় মেয়ে পর্যন্ত আনতেন তাই চলে গেছেন
–হুম আচ্ছা মেঘা কি জানে আপনি আজ বিয়ে করেছেন
–হুম জানে পাগলীটা কি করতেছে জানিনা হয়তো কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটি ফুলিয়ে ফেলছে
–খুব ভালোবাসে বুঝি আপনাকে
–হুম অনেক ভালোবাসে আমিও বাসি
–হুম
–আমি মেঘা ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না আপনি যদি অধিকার চান পাবেন কিন্তু আমার ভালোবাসা কখনো পাবেন না এখন আপনার ইচ্ছা
–কারো মন ভেঙ্গে সুখী হবার ইচ্ছে আমার নেই তাছাড়া আমিও এই বিয়ে করতে চাইনি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে করতে হয়েছে আপনি এসব না বললেও আমি আপনাকে বলতাম এই সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না
–একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি
–হুম অবশ্যই
–আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন
–হুম
–সে কোথায়
–হারিয়ে গেছে
–মানে
–এসব অনেক কথা অন্যদিন বলবো আপনি মেঘা কে ফোন দিয়ে বলুন কান্নাকাটি না করতে
–আমি তো ভেবেছিলাম আপনি মেনে নিবেন বা উল্টো আমার ঘাড় মটকে দিবেন হাহাহা
–আমি পেত্নী না আর ফাজলামো রেখে মেঘা কে ফোন দিন
–আচ্ছা আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি
–হুম
–তাহলে আপনি বলা বাদ তুমি করে বলবা
–ঠিক আছে
আকাশ মেঘা কে ফোন দিয়ে কথা বলতে শুরু করলো আর আমি ভাবছি শ্রাবনের কথা
আজ শ্রাবনের সাথে বিয়েটা হলে রাতটাই অন্যরকম হতো
আকাশ: মেঘা তোমার সাথে কথা বলতে চায়
আমি: আমার সাথে কি কথা বলবে
আকাশ: আসলে ও বিশ্বাস করতে পারছে না তুমি যে সব মেনে নিয়েছ
আমি: ঠিক আছে কথা বলবো কিন্তু উনাকে কি বলে ডাকবো
আকাশ: ও তোমার বড় তাই আপু বলেই ডাকতে পার
আমি: ঠিক আছে
আমি: আসসালামু আলাইকুম আপু
মেঘা: ওয়ালাইকুম আসসালাম কেমন আছ বোন
–ভালো আপনি
–জানই তো
–প্লিজ আপু কান্নাকাটি করবেন না আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের এক করে দিব
–কিভাবে সম্ভব
–আকাশ একটা চাকরী পেলেই আমরা ডিভোর্স করে নিব তারপর আপনাদের বিয়ে দিব
–কোনো মেয়ে কি বাসর রাতে স্বামীর প্রেমিকা কে মেনে নিয়ে তাদের বিয়ে দিবে প্রতিশ্রুতি দেয়
–জানিনা কিন্তু আমি দিলাম কারন আমি জানি ভালোবাসার মানুষ কে হারানোর যন্ত্রণা কতটুকু
–তুমি কি কাউকে ভালোবাস
–হুম
–সে কোথায়
–অন্য একদিন বলবো আপু আপনারা কথা বলুন আর হ্যা আকাশ আর আমার উপর বিশ্বাস রাখবেন প্লিজ, বিশ্বাস না থাকলে কোনো সম্পর্কই ঠিকে থাকে না
–তোমার সাথে কথা বলেই বুঝতে পেরেছি বোন তোমার উপর বিশ্বাস রাখা যায়
–থ্যাংকস আপু
রিয়া আর আমি বিয়ের কার্ড নিয়ে শ্রাবনদের বাসায় গেলাম কিন্তু দরজায় তালা দেয়া
–তমা দরজায় তালা দেয়া তো
–কোথাও গেছে হয়তো
–শ্রাবনকে ফোন দিয়ে দেখ
–হুম (ফোন দিলাম কিন্তু বন্ধ)
–বন্ধ রে
–চল পাশের বাসার কাউকে জিজ্ঞাসা করি
–হুম
পাশের বাসার এক আন্টিকে জিজ্ঞাসা করলাম
–আন্টি শ্রাবনরা কোথায়
–ওরা তো এখান থেকে চলে গেছে
–মানে
–ছেলেটা কে নিয়েই ভাবি বেঁচে আছেন উনারা খুব ভালো মানুষ ছেলেটাও অনেক ভালো কিন্তু দুদিন আগে ছেলেটা কে কারা যেন অনেক মেরেছে, ছেলেকে হারানোর ভয়ে উনি ছেলেকে নিয়ে এখান থেকে একেবারে চলে গেছেন
–কোথায় গেছেন আপনি জানেন
–না মা এসব কিছু বলে নি
–ঠিক আছে আন্টি আসি
রিয়া: বুঝলাম না ওকে কে মারবে
আমি: আমিও বুঝতে পারছি না
–বিয়ে তো ঠিক হয়েই গেছে আর খুঁজে কি করবি
–হুম
–ভুলে যা বিয়েটা করে নে
–চাইলেই কি ভুলা যায়
–হয়তো ভুলা যায় না কিন্তু যাকে ভালোবাসিস সেই তো প্রতারণা করেছে তাকে মনে রেখে কি লাভ
–হুম জানিস আকাশ ছেলেটা কে দেখতে অনেক ভালো মনে হয় এমন একটা ছেলেকে ঠকাবো ভেবে নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে
–তোর কি দোষ তুই তো পরিস্থিতির স্বীকার
–আকাশ কে একবার বললে হতো না
–বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর বলে কি হবে
–হুম
–যা হবার হয়েছে বিয়েটা করে নে
–হুম
রাতে বিছানায় শুয়ে আছি, কাল আমার বিয়ে বাড়িতে অনেক মেহমান সবাই আনন্দ করছে আর আমার বুক ফেটে কান্না আসছে, আমি তো অন্য কারো জন্য বউ সাজতে চাইনি সব স্বপ্ন ওকে ঘিরেই দেখেছিলাম কেন সব উলট-পালট হয়ে গেলো
রিয়া: তমা
আমি: হুম
–আর কত কান্না করবি
–আমার জীবনে কান্নাটাই একমাত্র সঙ্গী রে
–কাঁদলে কি শ্রাবন ফিরে আসবে
–জানিনা
–কান্না থামা প্লিজ তোর কথায় তো গায়ে হলুদ ও করা হয়নি মেহেদী তো পরবি
–যার জন্য দুহাত ভরে মেহেদী পরার স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই তো নেই মেহেদী পরে কি হবে
–বিয়ের সময় মেহেদী পরতে হয়
–জীবন্ত লাশের আবার বিয়ে
–চুপ করে বস তো আমি মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছি
–ওকে
–একদম কান্নাকাটি করবি না
–আচ্ছা রিয়া আমি আকাশ কে সব কিছু বলার পর যদি ও মেনে না নেয় যদি রেগে গিয়ে আব্বুকে বলে দেয়
–তুই তো বলেছিস আকাশ কে দেখে ভালো ছেলে মনে হয় আশা করি ও মেনে নিবে
–মেনে না নিলে
–উফফফফ এতো নেগেটিভ চিন্তা করছিস কেন সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিস না
–হুম
আজ আমার বিয়ে আমার কান্নাও পাচ্ছে আবার হাসিও পাচ্ছে হিহিহি, বিয়েটা শ্রাবনের সাথে হচ্ছে না তাই কান্না পাচ্ছে আর আমি তো এখন জীবন্ত লাশ আমাকে সাদা কাপর পরিয়ে কবরে না রেখে এসে লাল বেনারসি পরিয়ে বউ সাজানো হচ্ছে অন্যের ঘরে পাঠানোর জন্য কি অদ্ভুত নিয়ম
লাল বেনারসি পরে বউ সেজে বসে আছি পিচ্ছিরা চেঁচামেচি শুরু করেছে বর এসেছে বর এসেছে
রিয়া: তমা তোর হাব্বিটা অনেক সুন্দর
আমি: তোর পছন্দ হয়েছে নে আমার শাড়িটা পরে বউ সেজে বসে থাক বিয়েটা তুই করে নে
–রেগে যাচ্ছিস কেন
–আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে আর তুই আসছিস বর সুন্দর বলতে
–কান্না করে আর কি লাভ হবে শ্রাবন তো আর ফিরে আসবে না
–হুম
আম্মু আসলেন উনাকে সবচেয়ে বেশি খুশি মনে হচ্ছে, শুনেছি ছেলে পক্ষ অনেক বড়লোক, মা বাবা তো সব মেয়েকেই বড়লোক ছেলের কাছে বিয়ে দিতে চায় যেন সুখি হয় সে হিসেবে তো আমি সুখি হবো তাহলে আম্মু এতো খুশি কেন আম্মু তো আমার সুখ চায় না উল্টো আমাকে মেরে ফেলতে চায়
আম্মু: তমা তুই এই বিয়েতে রাজি হয়েছিস আমি অনেক খুশি হয়েছি
আমি: এতে তোমার লাভ কি
–আমার লাভ কি মানে
–যে খুশি হয়েছ বুঝা তো যাচ্ছে এতে তোমার কোনো লাভ আছে
–তোকে আমি মেয়ের মতো দেখি এতো বড় জায়গায় বিয়ে হচ্ছে খুশি হবো না (মেয়ে যে ভাবো তাতো বুঝাই যায়)
–আচ্ছা আম্মু বিয়ের প্রস্তাবটা এনেছে কে
–আমার ফ্রেন্ড রাকিব, আকাশ তো ওর ভাগ্নে
–ওহ তাই তুমি এতো খুশি
–কেন তুই খুশি না
–হুম অনেক খুশি
–একটু পর কাজি আসবে বস আমি আসছি
–হুম
কাজি, আব্বু, আম্মু, রিয়া সহ অনেক মানুষ আমার সামনে বসা সবার একটাই কথা কবুল বল কিন্তু আমার গলা দিয়ে তো কবুল শব্দটা আসছে না, কবুল শব্দটা তো আমি শ্রাবনের জন্য বলতে চেয়েছিলাম আকাশের জন্য বলবো কিভাবে
কাজি: কবুল বলো মা
আব্বু: মা কবুল বল
আম্মু: চুপ হয়ে থাকিস না কবুল বল
রিয়া: তমা প্লিজ তাড়াতাড়ি কবুল বল
সবার একটাই কথা কবুল বল কবুল বল কবুল বল কিন্তু আমার ভিতর থেকে তো এই শব্দটা আসছে না আমি বলতেই চাচ্ছি না, কেন বলবো আমি তো শ্রাবনকে ভালোবাসি, হায়রে জীবনের স্রুত কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম আর কার সাথে বিয়ে হচ্ছে, আমাদের জীবনটা খুব অদ্ভুত
তিন শব্দের “কবুল কবুল কবুল” আর তিন শব্দের “আমি তোমাকে ভালোবাসি” অথচ কতো পার্থক্য যাকে বলি “আমি তোমাকে ভালোবাসি” তাকে আমরা চাইলেও নিয়তি আমাদের “কবুল” বলতে দেয় না আর যাকে “কবুল” বলি তাকে শত চেষ্টা করেও “আমি তোমাকে ভালোবাসি” বলতে পারি না, বলতে পারবো কিভাবে মন তো একটাই একবার যাকে দেয়া হয় তার কাছ থেকে কি ফেরত এনে নতুন করে অন্য কাউকে দেয়া যায়, জীবনের স্রুত যে কোন দিকে বয়ে যায় আমরা কেউ বলতে পারি না তাইতো স্রুতের দ্বারায় হঠাৎ কেউ জীবনে আসে আবার সেই স্রুতের দ্বারায়ই সে হারিয়ে যায়, খুব কম মানুষই ভালোবাসার মানুষ কে জীবন সঙ্গী হিসেবে পায় তারা খুব ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী হয় তাইতো ভালোবাসার মানুষ কে চির আপন করে পায়, ভালোবাসার মানুষটা কে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়া সবার কপালে জোটে না
আব্বু: কিরে মা এতক্ষণ ধরে কি ভাবছিস কবুল বল (আব্বুর কথায় ভাবনা জগত থেকে বাস্তবে আসলাম)
–হুম (কবুল বললাম কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আমার চোখ থেকে একফোঁটা পানিও ঝরেনি)
বিদায়ের সময় হলো কিন্তু আমার চোখে পানি নেই ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি বিদায়ের সময় মেয়েরা অনেক কাঁদে কিন্তু আমার দুচোখে একফোঁটা পানিও নেই, গাড়িতে উঠে বসলাম গাড়ির জানালা দিয়ে আব্বুর দিকে থাকিয়ে আছি উনার দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে পাশে তুলি আর রিয়া দারিয়ে কাঁদতেছে আর আম্মুর মুখে খুশির ঝিলিক, গাড়ি চলছে তার নিজ গন্তব্যে আর আমি দুচোখ বন্ধ করে ভাবছি শ্রাবন কেন আমার সাথে প্রতারণা করেছে কিন্তু ভেবে কিছুই পাচ্ছি না আর হয়তো পাবোও না……
–ভালোবাসার জন্য নিজেকে একটু ছোট করলে দোষ কি
–তোর যা ভালো মনে হয় কর
–কাল কলেজে আসিস
–ঠিক আছে
রিয়া আর আমি সারা কলেজে শ্রাবনকে খুঁজলাম কোথাও ফেলাম না
–তমা ও তো কলেজে আসেনি এখন কি করবি
–আমি আব্বুর কাছ থেকে দুদিনের সময় নিয়েছি ওকে খুঁজে বের করতেই হবে
–ফোনও তো বন্ধ কি করবি
–ওর বাসায় যাবো
–ঠিক আছে চল
শ্রাবণের বাসায় ও আর ওর আম্মুর সামনে বসে আছি
মা: কেন এসেছ
রিয়া: আন্টি আপনি তো জানেন ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে কিন্তু হঠাৎ করে শ্রাবন পাল্টে গেছে
মা: জানি আর এটাও জানি শ্রাবন তমা কে আর ভালোবাসে না
আমি: আমার দোষ কি মা
মা: দোষ গুন জানিনা আমার ছেলে তোমাকে আর ভালোবাসে না তাই আমি চাই না তুমি আর আমার ছেলেকে বিরক্ত কর
আমি: কি বলছেন মা এসব
মা: আশা করি বুঝতে পেরেছ
রিয়া: আন্টি তমার বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে তাই আমরা এখানে এসেছি
মা: বিয়ে করে নাও এখানে কেন এসেছ
আমি: মা আমি শ্রাবনকে ভালোবাসি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না
শ্রাবন: কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না আর বিয়েও করতে চাই না
রিয়া: শ্রাবন তুমি এতো পাল্টে গেলে কিভাবে তুমি তো ওকে না দেখে থাকতে পারতে না
শ্রাবন: দেখ রিয়া আমি ওকে এখন আর ভালোবাসি না তোমরা আসতে পারো
আমি: ভালোবাসাটা কি পুতুল খেলা চাইলেই ভালোবাসলা আর প্রয়োজন শেষে ছুড়ে ফেলে দিলা
রিয়া: এমনটাই যখন করার ইচ্ছে ছিল ওর জীবনে কেন আসছিলা আর কোনো মেয়ে ছিল না পৃথিবীতে
মা: অনেক বলেছ তোমরা এখন আসতে পারো আমার ছেলেকে আর বিরক্ত করো না
রিয়া: তমা চল এখান থেকে ওরা মা ছেলে দুজনই এক মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে
চলে আসলাম ওদের বাসা থেকে রিক্সায় বসে আছি
–তমা আগেই বলেছিলাম নিজেকে ছোট করিস না এখন কাঁদছিস কেন
–ও আমার সাথে প্রতারণা করলো কেন
–ওর মতো ছেলেদের এটাই স্বভাব আঙ্কেল যাকে পছন্দ করেছেন তাকে বিয়ে করে নে
–আমি অন্য কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধতে পারবো না
–আঙ্কেল এর জন্য হলেও তোকে বিয়েটা করতে হবে, দেখ শ্রাবন তোর সাথে প্রতারণা করেছে কার জন্য বসে থাকবি তুই
–রিয়া আমি নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে পারবো না বিয়ে করে ছেলেটির জীবন কেন নষ্ট করবো
–আঙ্কেল তোকে অনেক ভালোবাসে উনার মনে কষ্ট দিস না ছেলেটাকে মেনে নিতে না পারিস এখন অনন্ত বিয়েটা কর পরে না হয় ছেলেটাকে বুঝিয়ে কিছু করবি
–কি করবো তখন ডিভোর্স দিয়ে চলে আসবো
–পরেরটা পরে ভাবা যাবে আপাদত বিয়েটা কর
–হুম
–নাহলে আঙ্কেল কে একবার শ্রাবণের কথা বলে দেখ
–নারে আমি জানি আব্বুকে মুখ ফুটে একবার যদি বলি শ্রাবনকে ভালোবাসি আব্বু শ্রাবনকে রাজি করাতে চাইবে, শ্রাবনদের কাছে ছোট হবে প্রয়োজনে পায়ে ধরবে তাও আমাকে সুখি দেখতে চাইবে, আজ ওরা আমাদের যেভাবে অপমান করেছে আব্বুকেও তো অপমান করবে আমি চাই না আব্বু আমার জন্য অপমানিত হোক
–তোর আব্বু যদি তোর সুখের জন্য এতো কিছু করতে পারেন তাহলে তুই কেন উনাকে ভালো রাখার জন্য ওই প্রতারক কে ভুলে আঙ্কেল এর পছন্দে বিয়ে করতে পারবি না
–বিয়েটা আমি করবো শুধু আব্বুকে ভালো রাখার জন্য কিন্তু ছেলেটা কে কখনো ভালোবাসতে পারবো না
–হুম
রাতে ছাদে বসে আছি আর দুচোখের পানি ঝরাচ্ছি আব্বু আসলেন
–তমা
–হুম আব্বু বলো
–ছেলে পক্ষ দেখতে আসতে চাইছে তুই কিছু ভাবলি
–তোমার যা ভালো মনে হয় কর
–এইতো আমার লক্ষী মা তাহলে ওদের কাল আসতে বলি
–ঠিক আছে
আজ আমাকে দেখতে আসবে আব্বু অনেক খুশি তারচেয়ে বেশি খুশি আম্মু, বুঝলাম না আম্মু এতো খুশি হলো কেন, আম্মু আসলো
–দুপুর হয়ে গেছে একটু পর ওরা চলে আসবে রেডি হয়ে নে
–হুম
–এইনে এই শাড়িটা পরিস (আম্মুর একটা শাড়ি দিয়ে বললো)
–আমি তো শাড়ি পরতে পারি না
–ঠিক আছে আমি পরিয়ে দিচ্ছি
–হুম
আম্মু শাড়ি পরিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিল
ছেলে পক্ষের সামনে বসে আছি চোখ দুটি যেন বাধ মানছে না কষ্ট করে চোখের পানি আটকিয়ে রাখছি
ছেলের মা: কেমন আছ মা
আমি: ভালো
ছেলের মা: আমি তোমার সম্পর্কে সব জানি আর কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই না তুমি আমার ছেলেকে দেখে বল পছন্দ হয়েছে কিনা পছন্দ হলে আমি এখনি আংটি পরিয়ে ফেলতে চাই
–(উনার কথা শুনে সামনের দিকে থাকালাম ছেলেটা বেশ সুন্দর দেখে ভালই মনে হচ্ছে এমন ভালো একটা ছেলেকে ঠকাবো ভেবে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে)
–মা আমার ভাগ্নে কে পছন্দ হয়েছে তো (কথাটা শুনে সামনে থাকালাম আরে এটা তো আম্মুর বেহায়া ফ্রেন্ড রাকিব, এই লুইচ্ছার ভাগ্নে বলছে কেন)
আব্বু: আমার পছন্দই আমার মেয়ের পছন্দ আপনাদের ছেলেকে আমার পছন্দ হয়েছে
ছেলের মা: তাহলে আমি দেরি করতে চাই না আগামী শুক্রবারেই শুভ কাজ সেরে ফেলতে চাই
আব্বু: মাত্র এক সপ্তাহের ভিতরে
রাকিব: আমার ভাগ্নে জাঁকজমক বেশি পছন্দ করে না তাই সাধারণ ভাবেই বিয়েটা হবে
আব্বু: ঠিক আছে
ছেলের মা আমার হাতে আংটি পরিয়ে চলে গেলেন
রাতে বিছানায় শুয়ে আছি আর চোখ দুটি অবাধ্যের মতো বালিশ বিজিয়ে যাচ্ছে
— মা আসবো (আব্বুর কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি চোখ মুছলাম)
–আসো
–কয়েকটা দিন অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি তোর বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে তো
–হুম
–এতো মনমরা হয়ে আছিস কেন
–কই
–ছেলের নাম কি ছেলে কি করে কিছুই তো জানতে চাইলি না
–জেনে কি হবে
–তুই কি এই বিয়েতে রাজি না
–কে বললো রাজি না
–তাহলে কিছুই জানতে চাইলি না যে
–ওহ তাই তো ছেলের নাম কি
–আকাশ, এখনো কিছু করে না পড়ালেখা শেষ করেছে মাত্র
–হুম
–এতো মনমরা হয়ে থাকিস কেনরে মা
–তোমাদের ছেড়ে চলে যাবো তো তাই খারাপ লাগছে
–সব মেয়েদেরই একদিন এভাবে মা বাবা আপনজন দের ছেড়ে যেতে হয়রে মা এটাই নিয়ম (আব্বুর চোখে পানি দেখে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না আব্বুকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে দিলাম)
আর চারদিন পর বিয়ে সত্যিই কি এইটা বিয়ে হবে নাকি একটা জীবন্ত লাশ কে লাল বেনারসি পরিয়ে সাজিয়ে অন্যের ঘরে পাঠানো হবে, আব্বু আসলেন
–মা এইনে বিয়ের কার্ড তোর বন্ধুদের দাওয়াত দিয়ে আয়, আর তো চারদিন বাসা থেকে বেরুতে পারবি না আজ দাওয়াত দিয়ে আয় যাদের দেবার
–হুম
রিয়াকে ফোন দিলাম
–হ্যালো
–আমাদের বাসায় আয়
–কেন
–আমার বিয়ের কার্ড প্রথম শ্রাবণের হাতে দিতে চাই
–হুম আসছি
–এই কাজ না করে আমাকে বলতি কি হয়েছে
–(বুঝতেছি না আমি কেন বিষ খাবো আমি তো দুই লুকমা ভাত খেয়েই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম তাহলে কি আম্মু ভাতে…..
না না কিসব ভাবছি আম্মু আমাকে মারতে চাইবে কেন)
–কিরে চুপ হয়ে আছিস কেন বল কোন কষ্টে এই জঘন্য কাজ করেছিস
–(আব্বুকে কি বলবো দুই লুকমা ভাত খেয়েই অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম, বললে তো আব্বু আম্মুকে সন্দেহ করবে সংসারে অশান্তি শুরু হবে এমনকি আব্বু আম্মুকে পুলিশেও দিতে পারেন, নাহ না বলাটাই ভালো আমি সংসারে অশান্তি চাই না, আম্মুর দিকে চেয়ে দেখি ভয়ে চুপসে গেছে)
–কিছু বলবি নাকি এভাবে চুপ হয়ে থাকবি
–বাদ দাও না আব্বু আমার এখানে ভালো লাগছে না ডক্টর কে জিজ্ঞেস করে আসো কবে আমাকে রিলিজ করে দিবে
–ঠিক আছে
আব্বু আম্মু আর রাকিব বেহায়াটা ডক্টর এর কাছে গেলো, রিয়া আমার পাশে এসে বসলো
–তুই এই কাজ করবি আমি ভাবতেও পারিনি
—————–
–এখন চুপ হয়ে আছিস কেন আমি বুঝলাম না তোর মতো বুদ্ধিমতী মেয়ে একটা ছেলের জন্য সুইসাইড করতে চাইছিল তাও যে ছেলে তোর সাথে প্রতারণা করেছে
–রিয়া আমি বিষ খাইনি
–ফান করছিস বিষ না খেলে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছিস কেন ডক্টর তোর পেট থেকে বিষ বের না করে কি পানি বের করছে
–বিশ্বাস কর আমি বিষ খাইনি আম্মু আমাকে ভাত খেতে দিয়ে ফোনে কথা বলতে গেয়েছিল আমি দুই লুকমা ভাত খেতেই পেটে জ্বালা শুরু হয় মাথা ঘুরে তারপর আর কিছু মনে নেই
–তাহলে কি তোর আম্মু…..
–হতে পারে
–কিন্তু উনি তোকে মারতে চাইবে কেন
–জানিনা এতে উনার কোন স্বার্থ আছে
–আচ্ছা উনি যদি তোকে মারতেই চাইবেন তাহলে তুই অজ্ঞান হবার সাথে সাথেই আমাকে ফোন দিলেন কেন যে তুই বিষ খেয়েছিস তারপর তোকে এখানে এনেছে তোর আব্বুকে ফোন করে কান্নাকাটি করে বলেছে আসতে, তোকে যদি মারতেই চাইবে হাসপাতালে আনলো কেন তুই মারা যাবার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করল না কেন
–জানিনা, সত্যিটা কি তাতো একদিন বেরিয়ে আসবেই, অন্ধকার দিয়ে সত্যি কে কখনো লোকানো যায় না দিনের আলোতে সত্যি একদিন বেরিয়ে আসবেই সে দিনের অপেক্ষায় থাকবো আমি
–তোর আব্বুকে এই কথা বললি না কেন
–আমি সংসারে অশান্তি চাই না তুলিকে মা হারা করতে চাই না, প্লিজ এই সত্যিটা কাউকে বলবি না
–ঠিক আছে (রিয়ার ফোন বেজে উঠলো)
–শ্রাবন ফোন দিয়েছে
–লাউড দিয়ে কথা বল
–হুম (ফোন রিসিভ করলো)
রিয়া: হ্যালো
শ্রাবন: তমার জ্ঞান ফিরেছে
রিয়া: তুমি জানলে কিভাবে
শ্রাবন: জেনেছি কোন এক ভাবে
রিয়া: এর ফিছনে তোমার কোনো হাত নেই তো
শ্রাবন: রিয়া আমি ওকে ভালোবাসি আর যাই করি ওকে মেরে ফেলবো না পরিস্থিতির কারণে হয়তো ওর থেকে দুরে চলে যেতে হবে কিন্তু ও বেঁচে আছে এই পৃথিবীতে এইটা ভেবেই আমি ভালো থাকবো
রিয়া: তোমার কথার কিছুই বুঝতেছি না
শ্রাবন: একদিন ঠিকি বুঝতে পারবা ওকে দেখে রেখো আর ওকে বইলো আমাকে খুঁজার চেষ্টা যেন না করে বলেই ফোন কেটে দিলো
রিয়া: তমা ওর কথার অর্থ কিছু বুঝলি
আমি: ও বলেছে পরিস্থিতির কারণে দুরে যেতে হবে তাহলে কি ওর কোনো পারিবারিক সমস্যা
— ওর আম্মু তো তোকে পছন্দ করে পারিবারিক সমস্যা হবে কেন
–জানিনা কিন্তু একটা রহস্য তো আছেই
–হুম
আব্বু আম্মুরা চলে আসলো
আব্বু: আগামীকাল সকালে রিলিজ করে দিবে
আমি: আচ্ছা
আম্মু: কেন এমন পাগলামি করতে গেলি মা (আমার গালে হাত দিয়ে)
–(মৃদু হাসলাম শুধু, উনি মারতে চেয়ে এখন আবার ভালোবাসা দেখাচ্ছে)
রাকিব: এমন পাগলামো করতে নেই মা আর কখনো এমন কাজ করো না
আমি: হুম
সকালে আমাকে রিলিজ করে দেয়া হলো বাসায় চলে আসলাম, আব্বু চলে গেলেন, দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলো, আম্মু আমার খুব যত্ন নিচ্ছেন আর উনার বেহায়া রাকিব ফ্রেন্ড প্রতিদিন বাসায় আসে এখন আর সুযোগ ফেলেই আমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে থাকায়, শ্রাবন একদিন ও ফোন করে জানতে চায়নি কেমন আছি আমি, আচ্ছা ও কি আদৌ আমাকে ভালোবাসত নাকি সব অভিনয় ছিলো, যদি অভিনয় করার ইচ্ছেই থাকতো ওর তাহলে আমিই কেন পৃথিবীতে কি আর কোনো মেয়ে ছিল না, ছোট বেলা থেকে কষ্টই শুধু ফেলাম আর শ্রাবন এসে সেই কষ্ট দ্বিগুণ করে দিয়ে চলে গেলো, ঝড়ের গতিতে আসলো আমার জীবনের কষ্ট গুলা দ্বিগুণ করে দিয়ে চলে গেলো কি প্রয়োজন ছিল এমন করার কি লাভ হয়েছে ওর, বসে বসে আনমনে হয়ে এসব ভাবছি আর দুচোখ দিয়ে বন্যা বয়ে যাচ্ছে হঠাৎ আব্বু আসলেন
–আম্মু আসবো
–আসো অনুমতি লাগে নাকি (তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছলাম)
–কি করছিস
–কিছু না বাসায় কখন আসছ ফোন করে বলনি যে
–এমনি বলিনি একটু আগেই আসলাম
–হুম
–হঠাৎ এতো চুপচাপ হয়ে গেলি কেন মা কি হয়েছে তোর বলবি আমাকে
–কই কিছু না তো
–তোকে একটা কথা বলতে চাই যদি অনুমতি দিস
–অনুমতি চাইছো কেন বল কি বলবা
–আমি বোকা নারে মা অনেক কিছুই বুঝি দেখ আমি বাসায় থাকি না কাজের জন্য অন্য জায়গায় থাকতে হয় তুই বাসায় একা থাকিস কতটুক অত্যাচার সহ্য করতে হয় আমি হয়তো জানিনা কিন্তু কিছুটা হলেও বুঝতে পারি, আমি এই অত্যাচারের মধ্যে তোকে রেখে ভালো থাকতে পারছি না তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি
–কি সিদ্ধান্ত আব্বু
–তোর বিয়ের কথা ভাবছি
–বিয়ে
–হ্যা মা অনেক ভালো একটা সমন্ব এসেছে ওরা তোকে বিয়ের পরেও পড়ালেখা করাবে
–(এখন কি করবো আব্বুকে কি শ্রাবণের কথা বলবো)
–কিরে কি ভাবছিস দেখ আমি তোকে জোর করছি না তুই রাজি না থাকলে আমি ওদের না করে দিব
–আব্বু আমাকে দুইটা দিন সময় দাও ভেবে বলছি
–ঠিক আছে তুই এই বিয়েটা করলে আমি অনেক খুশি হব
–হুম
আব্বু চলে গেলেন কি করবো এখন আমি, শ্রাবনকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো কিভাবে আমার সব স্বপ্ন তো ওকে ঘিরে, নতুন করে অন্য কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা আমার পক্ষে সম্ভব না দেখতে চাইও না আমি, রিয়াকে বলে দেখি কি বলে ফোন দিলাম ওকে
–হ্যালো
–রিয়া আব্বু বিয়ের কথা বলেছে
–বিয়ে করে নে
–কি বলছিস আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না
–দেখ ও তোর সাথে প্রতারণা করেছে ওকে ভুলে যা
–সম্ভব না
–তাহলে কি করবি এখন
–কাল শ্রাবণের সাথে দেখা করে ওকে বুঝাবো
–ওকে এখন বুঝানো মানে তোর ভালোবাসাকে ওর কাছে ছোট করা কেন নিজেকে ছোট করতে চাইছিস
–ভালোবাসার জন্য নিজেকে একটু ছোট করলে দোষ কি
রাতে বারান্দায় বসে আছি হঠাৎ আব্বুদের রোমে চেঁচামেচি শুনা গেলো
আব্বু: তুমি এতো নিচে নামলা কিভাবে তমা তো তোমারও মেয়ে কিভাবে পারলা ওর হাত পুরতে
আম্মু: আমি তো আমার ভুল বুঝতে পারছি আমাকে ক্ষমা করে দাও
আব্বু: যে কাজ করেছ তুমি ক্ষমার অযোগ্য
আম্মু: আর এমন হবে না তমা কে আমি নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসব তুমি বললে তমার কাছেও ক্ষমা চাইবো
আব্বু: এইটা তোমার ইচ্ছা কিন্তু মনে রেখো আর কোনো দিন আমার মেয়ের উপর অত্যাচার করলে এই বাসা থেকে তোমাকে চলে যেতে হবে
আবার সব নীরব হয়ে গেলো বুঝলাম না আম্মু হঠাৎ এতো ভালো হয়ে গেলো কেন, না জানি এই মহিলার ভিতরে কোন খারাপ মতলব চলতেছে, এসব ভাবছি তখন আব্বু আসলেন
–কি করছিস
–এইতো বসে আছি
–আমাকে তো কাল চলে যেতে হবে
–হুম
–তোর আম্মুর কথায় তো বুঝা যায় ভুল বুঝতে পারছে
–হয়তো
–আর কখনো মিথ্যে বলিস না তোর আম্মু খারাপ ব্যবহার করলে আমাকে বলিস
–ঠিক আছে
দেখতে দেখতে একটা সপ্তাহ কেটে গেলো শ্রাবণের ফোন এখনো বন্ধ অসুস্থতার জন্য কলেজেও যেতে পারিনি জানিনা ওর কি হয়েছে, হাতটা অনেকটা কমেছে এই এক সপ্তাহ আম্মু কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি আমাকে প্রতি বেলা নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে
রাতে বারান্দায় বসে আছি আর শ্রাবণের কথা আনমনে হয়ে ভাবছি ওর ফোন বন্ধ কেন ও কি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে, হারাবে কেন ও তো আমাকে ভালোবাসে কি করে এতো দিন কথা না বলে থাকতে পারতেছে, এসব ভাবছি আর দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, শ্রাবন ফোন দিয়েছে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–হুম
–এতো দিন কোথায় ছিলে ফোন বন্ধ ছিল কেন
–এমনি
–মানে এমনি ফোন বন্ধ করে রাখছিলা কেন
–বললাম তো এমনি
–কি হয়েছে তোমার
–কিছু না তোমার হাত কমেছে
–তোমার ফোন তো বন্ধ ছিল আমার হাত পুরার কথা জানছ কিভাবে
–জেনেছি কোনো ভাবে দেখা করতে পারবা
–কখন
–এখনি
–এতো রাতে
–হুম তোমার সাথে কিছু কথা আছে একটু পর ছাদে এসো
–হুম
ছাদে গেলাম ও দারিয়ে আছে
–শ্রাবন
–তোমার হাতটা দেখাও
–নাহ দেখতে হবে না
–কেন
–এতো দিন কথা না বলে যখন থাকতে পারছ এখন হাত দেখে কি করবা
–হুম (আমি স্পষ্ট দেখছি ও চোখের পানি লোকানোর চেষ্টা করছে)
–কি হয়েছে বলবা
–তমা তুমি আমাকে ভুলে যাও
–মানে কি বলছ তুমি এসব
–ঠিকি বলেছি ভুলে যাও আমার পক্ষে রিলেশন রাখা সম্ভব না
–কিন্তু কেন
–এমনি
–তুমি কি বলছ বুঝতে পারছ
–হ্যা ভুলে যাও বিয়ে করে নাও সুখি হবা
–এই তুমি কি সেই শ্রাবন যে আমার জন্য সুইসাইড করতে চাইছিলা
–নাহ আমি পাল্টে গেছি ভুলে যেও আমাকে ভালো থেক বলেই চলে গেলো
ওর কথা গুলা আমার কানে এখনো বাজতেছে ওকে নাকি ভুলে যেতে হবে কিভাবে ভুলবো আমার সব স্বপ্ন তো ওকে ঘিরে কিভাবে বাঁচবো ওকে ছাড়া, সারা রাত চোখে ঘুম আসেনি দুইটা চোখ যেন আজ বন্যা হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতেই সকাল হলো নির্ঘুম রাত যে কতটা কষ্টের আজ বুঝেছি, রিয়াকে ফোন দিলাম
–হ্যালো
–কিরে তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন
–আমাদের বাসায় আসতে পারবি
–কি হয়েছে
–বাসায় আয় বলবো
–আচ্ছা রাখ আসছি
একটু পর রিয়া আসলো
–কিরে এতো সকালে আসতে বললি
–রিয়া আমার সব শেষ হয়ে গেছে (ওকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম)
–কি হয়েছে বলবি তো
–শ্রাবন বলেছে ওকে ভুলে যেতে
–মানে কেন
–ওর পক্ষে নাকি রিলেশন রাখা সম্ভব না ভুলে যেতে বলেছে আমি ভুলবো কিভাবে ওকে তো অনেক ভালবেসে ফেলছি
–ও হঠাৎ পাল্টে গেলো কেন
–জানিনা
–আচ্ছা কান্না থামা ওর সাথে আমি কথা বলে দেখি
–হুম
–চল আজকে কলেজে যাই তোর অসুস্থতার জন্য তো এতোদিন আমিও যাইনি আর শ্রাবণের সাথে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করবো কেন এমন করছে
–আচ্ছা
কলেজে শ্রাবণের সামনে দারিয়ে আছি আমি আর রিয়া
রিয়া: শ্রাবন এসব কি শুনছি
শ্রাবন: যা শুনেছ তাই সত্যি
রিয়া: হঠাৎ এমন করছ কেন
শ্রাবন: আমি চাই না এই রিলেশন আর রাখতে
রিয়া: তুমি না ওকে ভালোবাস ওর জন্য মরতে চাইছিলা
শ্রাবন: হুম কিন্তু এখন আর ভালোবাসি না
আমি: বাহ প্রথম ভালোবাসা পাবার জন্য হাতের শিরা কাটবা আর পরে ভালো না লাগলে ছুড়ে ফেলে দিবা
রিয়া: ও তো ওর কষ্ট গুলা নিয়ে ভালই ছিল কেন আসছিলা ওর জীবনে কষ্টটা কে দ্বিগুণ করতে
শ্রাবন: দেখ আমি একসময় তোমাকে ভালোবাসতাম এখন আর বাসি না আমাকে ক্ষমা করে দিও ভালো থেক বলেই হনহন করে চলে গেলো
আচ্ছা ও যে শেষ কথাটা বলে গেলো “ভালো থেক” চাইলেই কি আমি ভালো থাকতে পারবো, ও কি একটা বার বুঝতে চাইছে আমার ভালো থাকা যে ওকে ঘিরে, ভালো থেক বলা সহজ কিন্তু সব ভুলে ভালো থাকা অনেক বেশি কঠিন
দেখতে দেখতে দুইটা সপ্তাহ কেটে গেলো শ্রাবন আর আমাকে ফোন করেনি আমি অবশ্য বেহায়া হয়ে অনেক বার ফোন করেছি কিন্তু ফোনটা বন্ধ, দুপুরে ছাদে বসে আছি আর শ্রাবণের সাথে করা খুনসুটি গুলা মনে করে নিজের অজান্তেই হাসছি, আম্মু আসলো
–তোর কি হয়েছে কদিন ধরে দেখছি মনমরা হয়ে থাকিস
–কই কিছু না তো
–হুম নিচে চল খাবি
–চলো
নিচে গিয়ে খেতে বসলাম, তুলি এখনো স্কুলে, আম্মুই আমার প্লেটে ভাত তরকারী দিলো নিজের প্লেটেও নিল তখন আম্মুর ফোন বেজে উঠলো
–তুই খাওয়া শুরু কর আমি ফোনে কথা বলে আসি
–হুম
দুই লোকমা ভাত খেতেই মাথা কেমন যেন ঘুরে উঠলো পেটে খুব জ্বালা করছে আস্তে আস্তে হাত পা অবস হয়ে আসছে চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে খুব কষ্ট করে আম্মু বলে ডাক দিলাম আর কিছু মনে নেই অন্ধকারে তলিয়ে গেলাম
চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে পাশে কেউ নেই একজন নার্স দুরে কি যেন করছে, আমার নড়াচড়া দেখে রোগীর জ্ঞান ফিরেছে বলেই রোম থেকে বেরিয়ে গেলো, একটু পর আম্মু আব্বু, তুলি, রিয়া, আর আম্মুর ফ্রেন্ড রাকিব ভিতরে আসলো, আব্বু এসেই আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল, লক্ষ করে দেখলাম সবাই কাঁদছে
–আব্বু তোমরা কাঁদছ কেন
–আজ দুদিন পর তোর জ্ঞান ফিরেছে কাঁদবো না যদি কিছু হয়ে যেতো
–দুদিন পর
–হ্যা মা কেন এমন জঘন্য কাজ করতে গেলি
–কি করেছি
–বিষ খেয়ে সুইসাইড করতে চেয়েছিলি কেন
–সুইসাইড (আমি কেন সুইসাইড করবো আমি তো বিষ খাইনি, হ্যা আমি শ্রাবনকে ভালবাসি তাই বলে সুইসাইড করবো কেন, সুইসাইড করতাম যদি আব্বু না থাকতো আব্বুকে একা করে আমি চলে যাবো কিভাবে)
–এখন বললে আমার কিছুই করার থাকবে না
–কেন
–জানই তো আম্মু আমাকে কতো কষ্ট করে লেখাপড়া করাচ্ছে, আমি একটা কিছু না করলে সংসার চলবে কিভাবে, বেকার থাকতে তো বিয়ে সম্ভব না
–হুম
দেখতে দেখতে একটা বছর চলে গেলো এতো দিনে শ্রাবণের প্রতি অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছি অনেক ভালবাসি ওকে প্রতিদিন কলেজে দেখা হয় ফোনে কথা হয় ভালোবাসা দুষ্টুমি অভিমান ছোট ছোট খুনসুটি সব মিলিয়ে অনেক ভালো কাটলো একটা বছর, আম্মু এখন আর বাসায় তার ফ্রেন্ডদের কে আনে না তবে আমার প্রতি অত্যাচার কমেনি বরং আরো বেড়ে গেছে আর আব্বু তো পৃথিবীর সেরা আব্বুদের মধ্যে একজন
রাতে বারান্দায় দারিয়ে আছি ফোনটা বেজে উঠলো শ্রাবন ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–Happy Birthday লক্ষী বউটা (ও এখন আমাকে সবসময় বউ বলেই ডাকে)
–আরো তো দুদিন বাকি আমার বার্থডের আর এখনি উইশ করছ
–আমার আগে যদি কেউ তোমাকে উইশ করে ফেলে তাই
–পাগল একটা
–জ্বী আপনার জন্য পাগল
আগামীকাল আমার বার্থডে অথচ আব্বু বাসায় নেই আসবে কিনা তাও জানিনা, আচ্ছা আব্বু কি ভুলে গেছেন কাল যে আমার বার্থডে ভুলার তো কথা না আচ্ছা অপেক্ষা করে দেখি আব্বুর মনে আছে কিনা
রাত ১১টা বারান্দায় বসে আছি শ্রাবন ফোন দিলো
–হ্যালো
–ছাদে গিয়ে দেখ ফুল গাছের কাছে তোমার জন্য একটা গিফট আছে
–কি গিফট
–নিয়ে আসো দেখে বইলো কেমন হয়েছে
–ঠিক আছে
এই পাগলটা কে নিয়ে আর পারলাম না, ছাদে গেলাম একটা প্যাকেট খুব সুন্দর উপরে লেখা “আমার পাগলীর জন্য” রোমে এসে প্যাকেট খুললাম একটা নীল রঙের শাড়ি খুব সুন্দর, শ্রাবন ফোন দিল
–হ্যালো
–শাড়ি পছন্দ হয়েছে
–হুম অনেক সুন্দর
–এখন শাড়িটা পরে ছাদে চলে আসো
–কেন
–আমি দেখব শাড়ি পরলে তোমাকে কেমন লাগে
–কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারি না
–কোনো ভাবে পেঁচিয়ে চলে আসো আমি ঠিক করে দিব
–তুমি পারো
–হ্যা তোমাকে পরানোর জন্যই শিখেছি
–ঠিক আছে আসছি
–তুমি তো একদমই সাজ না একটু সেজে এসো
–আচ্ছা
ফোন রেখে শাড়ি পরতে শুরু করলাম কোনো ভাবে পেঁচিয়ে পরলাম, চুল গুলা খোপা করলাম চোখে গারো করে কাজল দিলাম ঠোটে হালকা করে গোলাপি লিপস্টিক দিলাম আমার সাজা শেষ আটা ময়দা মাখতে আমার ভালো লাগে না
ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো শ্রাবন মেসেজ দিল “আসো না”
রাত ১১:৫০ ফোনটা হাতে নিয়ে ছাদে গেলাম, ছাদের দরজায় যেতেই পায়ের নিচে শাড়ি পরে আমি পরে গেলাম, পরে গিয়েও পরলাম না শ্রাবন ধরে ফেলেছে
–বিয়ের পর শাড়ি পরবা কিভাবে কোমর ভেঙ্গে ফেলবা তো বলেই হাসতে শুরু করলো
–তুমি আছ না এভাবেই ধরে ফেলবা
–আমি কি সবসময় পাশে থাকবো নাকি মহারাণী
–হ্যা থাকবাই তো
–আচ্ছা থাকবো এখন সোজা হয়ে দারাও তোমাকে ভালো করে দেখবো
–নতুন করে দেখার কি আছে
–অনেক কিছু চুপ করে দারাও
–হুম
–অনেক সুন্দর লাগছে চুল খোপা করেছ কেন
–এমনি
–তোমাকে খোলা চুলেই বেশি সুন্দর লাগে বলেই চুল খোলে দিল
ঠিক ১২টা বাজে ও আমার কাছে আসলো আমার দুগালে হাত দিয়ে বললো Many Many Happy Returns Of The Day আমার পাগলীটা
তখন ফোন বেজে উঠলো আব্বু ফোন দিয়েছেন
–হ্যালো আব্বু
–Happy Birthday আম্মু
–তোমার মনে আছে তাহলে
–মায়ের জন্মদিন আর ছেলের মনে থাকবে না তা কি হয়
–মা কে কি জন্মদিনেও দেখতে আসবা না
–অবশ্যই আসবো কিন্তু তোর আম্মুকে বলবি না
–কেন
–পরে বলবো
–ঠিক আছে
আব্বু ফোন রেখে দিলেন, সারা রাত ছাদে বসে ওর কাধে মাথা রেখেই কাটিয়ে দিলাম, ভোরে রোমে এসে ঘুমালাম, সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেলো ১১টার দিকে উঠলাম, ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি আম্মু বসে আছে আমার দিকে রাগি চোখে থাকিয়ে আছে
–নবাবজাদীর ঘুম ভাঙ্গলো তাহলে
–হুম
–রান্না বসা গিয়ে
–হুম
রান্না শুরু করলাম একটু পর আবার আম্মু আসলো
–কপি বানিয়ে দে
–ভাত প্রায় হয়ে গেছে একটু পর দেই
–কি আমার কপি পরে বানিয়ে দিবি তোর এতো বড় সাহস দাড়া তোর সাহস বের করছি বলেই ভাতের পাতিলে আমার হাত ডুবিয়ে ধরলো, চিৎকার দিয়ে সরে গেলাম
বাহ বাহ (এই কথা শুনে পিছনে থাকালাম)
–আব্বু তুমি
–হুম
–কখন আসছ
–এইতো হাত পুরলি কিভাবে
–ভাতের মাড় পরে হাত পুরে গেছে
–আর কতো মিথ্যে বলবি নিজের চোখেই তো দেখলাম
–হুম
হাত পুরে দিয়েছি বেশ করেছি বলেই আম্মু আমার পুরা হাত চেপে ধরলো এতক্ষণে হাতে পুচকা পরে গেছে আম্মু শক্ত করে চেপে ধরাতে খুব ব্যাথা পেলাম মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আর কিছুই মনে নেই
চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে আব্বু মাথার কাছে বসে কাঁদতেছেন আর রিয়া একটু দুরে চেয়ারে বসে কাঁদতেছে
–আব্বু কাঁদছ কেন তোমরা আমার কিছুই হয়নি
–কি হয়েছে তাতো দেখতেই পারছি
তমা রাত হয়ে গেছে প্রায় সাত ঘন্টা পর তোর জ্ঞান ফিরেছে আঙ্কেল সারাদিন কিছুই খাননি কিছু খেয়ে আসতে বল (রিয়া পাশে এসে বসতে বসতে বললো)
–আব্বু যাও কিছু খেয়ে আস
–খিদে নেইরে মা
–আমার খিদে লাগছে তুমি খেয়ে এসো আর রিয়া আর আমার জন্য খাবার নিয়ে এসো
–ঠিক আছে
আব্বু চলে গেলেন, রিয়া আমার পাশে বসে আছে
–রিয়া শ্রাবনকে বলেছিস আমি হাসপাতালে
–ওর ফোন বন্ধ অনেক বার ট্রাই করেছি
–এখন দিয়ে দেখ
–আচ্ছা
–নারে এখনো বন্ধ
–হুম
হঠাৎ আম্মু আসলো সাথে উনার ফ্রেন্ড যে বাসায় আমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে থাকিয়েছিল
–এখন কেমন আছিস মা (আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)
–ভালো (খুব হাসি পাচ্ছে উনার জন্য আমি হাসপাতালে আর এখন সবার সামনে ভালোবাসা দেখাচ্ছে)
–ও আমার ফ্রেন্ড রাকিব আমরা একসাথে কলেজে পড়তাম তুই অসুস্থ শুনে দেখতে আসছে
–কেমন আছ মামনি (হারামির বাচ্চা একদিকে মামনি ডাকছে অন্য দিকে আমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে)
–ভালো
–তুমি আমাকে রাকিব আঙ্কেল বলেই ডেকো
–ঠিক আছে (মনে মনে ভাবছি তোকে তো রাকিব বেহায়া বলে ডাকবো)
আব্বু চলে আসলেন আমাকে খাইয়ে দিলেন রিয়াও খেল, একটু পর আম্মু চলে গেলেন, আব্বু আর রিয়া আমার কাছে থাকলো সাথে রাকিব বেহায়াটাও থাকলো, আব্বুর সাথে এমন ব্যবহার করছে মনে হচ্ছে ওর মতো ভালো মানুষ দ্বিতীয়টা নেই আর সুযোগ ফেলেই আমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে থাকাচ্ছে
সকালে আমাকে রিলিজ করে দেয়া হলো বাসায় চলে আসলাম, শ্রাবণের ফোনটা এখনো বন্ধ জানিনা কোনো বিপদ হলো কিনা……
–এতো বেলা হয়েছে ডাকোনি কেন
–আমার বউটা এতো আরামে ঘুমাচ্ছিল আমি কি করে ঘুমটা ভাঙ্গাই
–তুমি কখন উঠেছ
–৭টার দিকে এতো সময় তোমার ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখছিলাম
–ফাজিল একটা
একটু পর মা আর রিয়া আসলো, শ্রাবনকে রিলিজ করে দেয়া হলো, হাসপাতালের সব জামেলা শেষ করে মা আর শ্রাবনকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম রিয়া আর আমি রিয়াদের বাসায় গেলাম, কলিংবেল চাপতেই আন্টি এসে দরজা খুলে দিলেন
–আসসালামু আলাইকুম আন্টি
–ওয়ালাইকুম আসলাম কেমন আছ মা
–ভালো আন্টি আপনি ভালো আছেন
–ভালো তুমি তো আমাদের বাসায় এখন আর আসই না
–আজ তো আসলাম
–আমি অনেক খুশি হয়েছি মা অনেক দিন থাকবা কিন্তু
–ঠিক আছে
রিয়ার রোমে ঢুকতেই আব্বু ফোন দিলেন
–আব্বু কেমন আছ
–ভালো তুই কেমন আছিস
–ভালো
–ওখানে কেমন লাগছে
–ভালই
–ঠিক আছে সাবধানে থাকিস কাজের চাপ বেশি ফোন বেশি দিতে পারবো না
–আচ্ছা আমার জন্য চিন্তা করো না তোমার নিজের খেয়াল রেখো
–আচ্ছা রাখি মা
–আচ্ছা
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলো, আমার পা ভালো হয়ে গেছে, শ্রাবণের হাতও অনেকটা ভালো হয়ে গেছে, রিয়াদের বাসায় ভালোই সময় কাটছে, রিয়ার সাথে আড্ডা আন্টির ভালোবাসা শ্রাবণের সাথে ফোনে কথা বলা সব মিলিয়ে অনেক ভালো আছি, দুপুরে রিয়া আর আমি ছাদে বসে আছি আমার ফোন বেজে উঠলো, আম্মু আমাকে কেন ফোন দিল রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–আপু আমি তুলি
–তুলি কেমন আছিস
–ভালো না
–কেন কি হয়েছে
–তুমি নেই বাসায় একা একা ভালো লাগে না
–কেম আম্মু তো বাসায় আছে
–আপু আম্মু এই এক সপ্তাহ আমাকে স্কুলে নিয়ে যায়নি বলে আমি বড় হয়েছি একাই যেতে পারবো
–আম্মু সারা দিন বাসায় কি করে
–প্রতিদিন স্কুল থেকে এসে দেখি আম্মুর কিছু ছেলে ফ্রেন্ড আর দুইটা মেয়ে ফ্রেন্ড নিয়ে বাসায় আড্ডা দিচ্ছে, যানো আপু আম্মুর একটা ছেলে ফ্রেন্ড অনেক খারাপ আমার দিকে কেমন খারাপ দৃষ্টিতে যেন থাকায়
–আমি বাসায় থাকতে তো আম্মু ফ্রেন্ডদের তেমন বাসায় আনে না
–এখন বাসা ফাকা আব্বুও আসে না তাই আনে
–ঠিক আছে আমি বিকেলে বাসায় আসছি তুই আম্মুকে আমার আসার কথা বলিস না
–আচ্ছা
বিকেলে রিয়াদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় গেলাম, অনেক সময় ধরে কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছি কেউ দরজা খুলছে না রাগ উঠলো তাই দরজা ধাক্কাতে শুরু করলাম একজন মহিলা দরজা খুলে দিলো, দেখেই বুঝা যাচ্ছে আম্মুর বেহায়া কোনো ফ্রেন্ড যা সাজ সজ্জা
–কাকে চাই
–আপনি কে
–এই মেয়ে সাহস তো কম না এখানে এসে জিজ্ঞাসা করছ আমি কে
–আপনারও তো সাহস কম না আমার বাসায় এসে আমাকেই জিজ্ঞাসা করছেন কাকে চাই
–তোমার বাসা মানে
–আমি এই বাসার বড় মেয়ে দরজা থেকে সরেন
–মহিলা সরে গেলেন ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম আমার চোখ কপালে উঠে গেলো, সবাই মিলে ড্রয়িংরুম কে নোংরা ক্লাব বানিয়ে ফেলছে কেউ ড্রিংক্স করছে কেউ সিগারেট খাচ্ছে আর আমার শ্রদ্ধেয় আম্মুজান সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছেন, একজনের নজর আমার দিকে পড়লো
–এই মেয়ে তুমি কে (এই কথা শুনে সবাই আমার দিকে থাকালো)
–তার আগে বলুন আপনাদের এই বাসায় ঢুকার অনুমতি দিয়েছে কে
–তোমাকে কে ঢুকার অনুমতি দিয়েছে
–আমার বাসায় আমাকে ঢুকতে কারো অনুমতি নিতে হবে নাকি (একজন আরেকজনের মুখের দিকে থাকাচ্ছে) ড্রয়িংরুমে চেঁচামেচি শুনে আম্মু রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলো
–তমা তুই (আমাকে দেখে যে ভয় পেয়েছে মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে)
–কেন আমাকে আশা করনি ডিস্টার্ব করলাম তোমাদের
–না মানে
–আম্মু শুনো আমার ভালো রুপ সবসময় দেখো বলে ভেবো না তুমি এসব নোংরা কাজ করলেও আমি শান্তই থাকবো
–তমা ওরা আমার ফ্রেন্ড নোংরা কাজ বলছিস কেন
–কেমন ফ্রেন্ড তাতো বুঝতেই পারছি ভুলে যেয়ো না তোমার ঘরে দুইটা মেয়ে আছে, আর কোনো দিন যদি এসব নোংরা মানুষ এই বাসায় দেখি তাদের আমি জুতাপিটা করবো আর সাথে তোমার ব্যবস্থাও করবো, ভুলে যেয়ো না একদিন আমার জন্য এই বাসায় বউ হয়ে আসছিলা যদি এসব নোংরা কাজে আর থাকো তাহলে আমিই তোমাকে এই বাসা থেকে বের করবো, ভালো হয়ে যাও
–হুম (আমার কথা গুলো শুনে সবাই ভয় পেয়েছে কিন্তু একটা লোক আমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে আর কিছু না বলে রোমে চলে আসলাম)
ফ্রেশ হয়ে তুলির রোমে গেলাম ও রোমে নেই খুঁজতে খুঁজতে ছাদে গেলাম, তুলি ছাদের ফুল গাছ গুলায় পানি দিচ্ছে
–তুলি
–আপু তুমি কখন আসছ
–একটু আগে
–ড্রয়িংরুমের অবস্থা দেখেছ
–হুম চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে
–হলেই ভালো
–নিচে চল সন্ধ্যা হয়ে গেছে
–হুম চলো
রোম থেকে আর বের হলাম না আম্মুর উপর থেকে রাগ এখনো কমেনি দেখলেই ঝগড়া করবো, রাতে বারান্দায় দারিয়ে আছি শ্রাবন ফোন দিলো
–হ্যালো
–বাসায় তো আসছ এখন দেখা করবা তো এতোদিন তো রিয়াদের বাসা থেকে বেরই হও নি
–হুম কালকে দেখা করবো
–না আজকেই
–আজকে কিভাবে সম্ভব রাত হয়ে গেছে তো
–ঠিক ১১টায় তোমাদের ছাদে এসো
–মানে
–মানে জানতে হবে না আমি অপেক্ষা করবো এসো বলেই ফোনটা কেটে দিল এই পাগলটা কে নিয়ে যে কি করি
১১টার দিকে আম্মু তুলি ঘুমিয়ে পড়লো আমি আস্তে আস্তে ছাদে গেলাম ভয় করছে ও না আসলে ভূতে আজ আমাকে নির্ঘাত মেরে ফেলবে, না পাগলটা এসেছে ফুল গাছের কাছে বসে আছে
–বেলি ফুল বুঝি তোমার পছন্দের ফুল
–হুম আমি যে আসছি বুঝলা কিভাবে আমি তো কথা বলিনি
–তুমি আমার আশে পাশে থাকলেই আমি অনুভব করতে পারি বলেই কয়েকটা বেলি ফুল আমার উপরে ছিটিয়ে দিল
–এই তুমি আমার গাছের ফুল ছিঁড়লে কেন
–এমনি
–আর কখনো ছিঁড়বা না ফুল ছিড়া আমি পছন্দ করি না
–ওকে বাবা আমি আর কোনোদিন ফুল ছিঁড়বো না
বলেই আমার ফিছনে এসে দাঁড়ালো
–পিছনে দাঁড়িয়েছ কেন
–তোমার চুলের ঘ্রাণ নিব তাই
–মানে
–(আর কিছু না বলেই আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো আমার খোলা চুলে মুখ গুজে দিল)
দুজনেই চুপ হয়ে আছি ও চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে আর আমি ভাবছি এই অল্প দিনেই ওকে এতো ভালোবেসে ফেলছি যদি আলাদা হয়ে যেতে হয় থাকবো কিভাবে ওকে ছাড়া, এক মুহূর্তের জন্য ওকে ভুলতে পারি না ওকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারি না কি করে পারবো ওকে ছাড়া থাকতে
–শ্রাবন এখন যদি আমার বাসা থেকে বিয়ের কথা বলে
–এখন বললে আমার কিছুই করার থাকবে না
–কেন
–তোমাদের জন্যই আমি আজ বেঁচে আছি
–আমরা তো উচিলা মাত্র বেঁচে আছেন তো আল্লাহর ইচ্ছায়
–আমি তোমাদের বড় বোনের মতো আমাকে তুমি করেই বলো
–ঠিক আছে
–হাসপাতালে কাকে নিয়ে এসেছ
–আমাদের একজন ফ্রেন্ড
–আমরা কাল বাসায় চলে যাবো তোমার নাম্বারটা দিয়ে যাও তো
–ঠিক আছে (নাম্বার দিলাম)
আপু এখন যাই আবার দেখা হবে
–ঠিক আছে বেবি তো ঘুমিয়ে আছে নাহলে তোমার কোলে দিতাম
–ঘুমিয়ে থাক অন্য একদিন দেখা হলে কোলে নিবো
–আমি ওর নামটা তোমার পছন্দে রাখতে চাই, নাম রাখার দিন কিন্তু বাসায় আসতে হবে আর নামটা ঠিক করে রেখো
–ঠিক আছে আপু আসি
–আচ্ছা
রিয়া আর আমি শ্রাবণের কেবিনে চলে আসলাম
মা: তমা আমাকে একটু বাসায় যেতে হবে তুই যদি এখানে একটু থাকতি
আমি: ঠিক আছে মা আপনি যান আমি আছি এখানে
রিয়া: তমা তোর তো আজকে আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা এক কাজ কর তুই আজকে এখানে থেকে যা কাল শ্রাবনকে রিলিজ করে দিলে একেবারে আমাদের বাসায় চলে যাবি
আমি: কিন্তু
শ্রাবন: তমা প্লিজ থাকো না একদিনই তো
আমি: ঠিক আছে
রিয়া: আন্টি আপনি দুপুরের খাবারটা দিয়ে যাইয়েন আমি রাতের খাবার দিয়ে যাবো আর রাতে আপনাকে এখানে থাকতে হবে না সকালে চলে আসবেন
মা: ঠিক আছে মা
রিয়া আর মা চলে গেলো, শ্রাবণের দিকে থাকালাম ও মিটিমিটি হাসতেছে
–কি হলো হাসতেছ কেন
–এমনি
–বল বলছি
–আজ সারা রাত তোমার সাথে গল্প করবো
–অসুস্থ শরীর নিয়ে
–আমি তো সুস্থ হয়ে গেছি
–হুম বুঝাই যাচ্ছে
–আমার পাশে এসে বসো
–কেন
–এতো প্রশ্ন কর কেন বসতে বলছি বস
–হুম (ওর পাশে গিয়ে বসলাম)
–তমা আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাবা না তো (আমার হাত ধরে)
–হ্যা যাবো খুব তাড়াতাড়ি যাবো
–(চুপ হয়ে আছে)
–এই কাঁদছ কেন আমি তো মজা করেছি
–এই মজা করাটা যদি কখনো সত্যি হয়ে যায়
–আচ্ছা আর কখনো এমন মজা করবো না
–তুমি চলে গেলে আমি মরেই যাবো
–আমি কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো নাকি (ওর চোখের পানি মুছে দিলাম)
–ঘুম পাচ্ছে
–ঠিক আছে ঘুমাও
–তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাই
–আচ্ছা
ও আমার কোলে ঘুমিয়ে আছে আমি চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি ওর মুখটা অনেক মায়াবী লাগছে ইচ্ছে হচ্ছে ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দেই কিন্তু ও যদি জেগে যায় অনেক লজ্জা পাবো, একজন নার্স আসলো
–বাব্বাহ কতো প্রেম একদম পারফেক্ট জুটি
–(মৃদু হাসলাম)
–উনি কিন্তু আপনাকে সত্যি ভালোবাসেন নাহলে কি কেউ কারো জন্য জীবন দিতে চায়
–জানিনা এই ভালোবাসার পরিণতি কি হবে দোয়া করবেন সব বাধা ফেরিয়ে আমরা যেন এক হতে পারি
–অবশ্যই দোয়া করবো
দুপুর ফেরিয়ে ৩টা বেজে গেছে পাগলটা এখনো ঘুমিয়ে আছে, হঠাৎ মা আসলেন হাতে খাবারের বক্স, আমার দিকে চেয়েই হেসে দিলেন, ও আমার কোলে ঘুমিয়ে আছে মায়ের সামনে কি লজ্জাটাই না পেলাম
–কিরে লজ্জা পাচ্ছিস কেন
–(চুপ হয়ে রইলাম)
–আমি শুধু শ্রাবণের মা না বন্ধুও এখন থেকে তো তোরও বন্ধু, তোদের একসাথে এভাবে সুখি দেখে মরতে পারলেই আমি কবরে গিয়ে শান্তি পাবো
–মা এসব কি বলছেন মৃত্যুর কথা আসছে কেন
–শ্রাবণের যখন সাত বছর বয়স তখন ওর বাবা মারা যান, সেই থেকে খুব কষ্ট করে ওকে বড় করেছি একটাই আশা ওকে সুখী দেখবো, আমি তোর মাঝে ওর সুখ দেখেছি তুই পারবি ওকে সুখে রাখতে
–আমি চেষ্টা করবো মা ওকে সুখে রাখার আপনি শুধু দোয়া করবেন
–মায়ের দোয়া সন্তানদের জন্য সবসময় থাকে, অনেক বেলা হয়েছে ওকে ডেকে তুলে নে, দুজন খেয়ে নিস আমি যাই সকালে আসবো
–ঠিক আছে মা
মা চলে গেলেন, ওকে ডেকে তুললাম, খাবার খাইয়ে ওষুধ খাওয়ালাম, দুজন গল্প করতে করতেই সন্ধ্যা হয়ে গেলো, পায়ের যন্ত্রণা আস্তে আস্তে বাড়তেছে এতক্ষণ তো মনেই ছিলো না আমার যে পা পুরা, যতো রাত হচ্ছে পায়ের যন্ত্রণা ততো বাড়তেছে
–তমা তোমার কি খারাপ লাগতেছে
–কই না তো
–তোমাকে কেমন যেনো দেখাচ্ছে
–এমনি
আসতে পারি স্যার এন্ড ম্যাডাম (রিয়া দরজায় দারিয়ে আছে)
শ্রাবন: আসো অনুমতি লাগে নাকি
রিয়া: যদি তোমাদের রোমান্সে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে যাই বলেই হাসতে শুরু করলো
আমি: এই তোর কি মনে হয় সারা দিন-ই আমরা রোমান্স করি
রিয়া: হলে তো হতেও পারে বলে আবার হাসতেছে (এই রিয়াটা পারেও মজা করতে)
তিনজন মিলে অনেক সময় আড্ডা দিলাম ৯টার দিকে রিয়া বাসায় যাওয়ার জন্য উঠলো
রিয়া: এখন যাই সকালে আসবো কোন সমস্যা হলে ফোন করিছ
আমি: আচ্ছা
রিয়া: খাবার আছে দুজন মিলে খেয়ে নিস আর এইযে তোর ওষুধ মনে করে খেয়ে নিস (ব্যাগ থেকে ওষুধ বের করে আমার হাতে দিলো)
আমি: ওষুধের কথা তোর মনে আছে
রিয়া: তোর পা পুরে গেছে আর আমার ওষুধের কথা মনে থাকবে না
শ্রাবন: তমা তোমাকে সন্ধ্যায় এজন্যই এমন দেখাচ্ছিল পায়ে ব্যাথা করছিল তাই না
আমি: হুম একটু
রিয়া: ওষুধ মনে করে খেয়ে নিস আমি যাই
আমি: আচ্ছা
রিয়া চলে গেলো শ্রাবনকে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলাম আমিও খেলাম, দুজন গল্প করছি হঠাৎ মনে পড়লো শিলা আপুর বেবির নাম রাখার কথা
আমি: এই একটা কথা বলি
শ্রাবন: হাজারটা বলো
–একটা মেয়ে বেবির নাম বলো তো
–(ও অভাক হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছে)
–কি হলো এভাবে থাকিয়ে আছ কেন
–প্রেম হতে না হতেই বেবির নাম ঠিক করা হচ্ছে
–আমি বলছি নাকি আমাদের বেবির জন্য (লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম)
–তো কার
–(ওকে শিলা আপুর কথা সব বললাম)
–আচ্ছা পরে ঠিক করে দিব, আমাদের বেবির নাম কিন্তু আমি ঠিক করে রাখছি
–কি
–নওমি
–এর মধ্যে নামও ঠিক করে ফেলছ
–জ্বী
গল্প করতে করতে কখন যে ভোর ৪টা হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি
–এখন একটু ঘুমাও
–না
–মাইর খাইবা কিন্তু প্রেমিকার হাতে মাইর খাইতে না চাইলে চুপচাপ ঘুমাও
–প্রেমিকা না তো তুমি আমার বউ
–হ্যা বউ এখন ঘুমাও প্লিজ নাহলে আবার অসুস্থ হয়ে পরবা
–ঠিক আছে
পাগলটা ঘুমিয়ে পড়েছে আমি পাশের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি সকালে আমার কপালে আলতো স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গলো চোখ খুলে দেখি শ্রাবন আমার দিকে চেয়ে হাসতেছে আর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে বুঝলাম ফাজিলটা আমার কপালে চুমু দিয়েছে, লজ্জায় আবার চোখ বোঝে ফেললাম
–আর লজ্জা পেতে হবে না অনেক বেলা হয়েছে আম্মু চলে আসবে উঠো
–কয়টা বাজে
–১০টা
–এতো বেলা হয়েছে ডাকোনি কেন