বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1183



Angry_Husband Season_2___Part_9

0
Angry_husband season_2, Angry_Husband Season_2_Part_4, Avantika Anha
Angry_husband season_2, Angry_Husband Season_2_Part_4, Avantika Anha

Angry_Husband
Season_2___Part_9
Written by Avantika Anha
.
আরাভ দেখলো আমি ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে গাছের ডালে আটকে থাকা ঘুড়িটিকে নামানোর চেষ্টা করছি আর পাশের বাড়িতে থাকা বাচ্চাগুলো আমাকে তাড়াতাড়ি ঘুড়িটিকে নামিয়ে আনতে বলছে। কিছু সময় চেষ্টার পর আমি ঘুড়িটিকে নামিয়ে আনি ঠিকই কিন্তু হঠাৎ নিচের দিকে তাকিয়ে আমার মাথা ঘুরে যায়। আর ভয় পেয়ে চিল্লাতে শুরু করি।।
.
এই অবস্থা দেখে আরাভ এসে আমাকে কোলে তুলে নেয়।
আমি চোখ বন্ধ করে আছি ভিষন লজ্জা লাগতাছে।ওমা আরাভ তো কোলে তুলে নিয়েছে এবার কি তাহলে ছাদ থেকে ফেলে দিবে নাকি।
ভয় লাগতাছে…. ধুররর না আর এই বিপদের মধ্যে থাকা যাবেনা।তবে খুব একটা খারাপ ও লাগতাছেনা। ওর জন্য তো মরতেও পারি…! ইয়ে মানে আমি মরে গেলে আবার ওর বাচ্চার আম্মু কে হবে? তখন আবার অন্যএকজনকে বিয়ে করে নিবে। 

 নাহ এইটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না।
আনহা লাফ দিয়ে কোল থেকে নেমে পড়ে।
আরাভের দিকে তাকায়,
.
– ওই বজ্জাত মেয়ে ভয় পাও তাহলে ওখানে কেনো গেছো?(আরাভ)

– কেনো গেছি…..! হুম কেনো যানি গেছি? ওহ মনে পড়ছে ওইযে বাচ্চা ওদের জন্যই তো গেলাম।(আমি)

– রাখো তোমার বাচ্চা, নিজেই তো একটা বাচ্চা আবার আরেক বাচ্চাকে হেল্প করতে গেছে।(আরাভ)
.
আমার সেই লেভেলের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আমিতো সাহায্য করছি তার জন্যও ঝাড়বে আমাকে। হুহ এইযে আবার রাগ করলাম দেখি এবার কিভাবে রাগ ভাঙায় হুহ।
.
রাগ করে ছাদ থেকে নেমে রুমে চলে আসলাম।
আরাভ ও বেশ রেগে আছে তবে আজকে আমি বেশি রাগগ করছি। কি ভাবে ও নিজেকে হিরো? ধুরো হিরো কেনো হইতে যাইবো ও তো ভিলেন। ডেভিল……
,
মন খারাপ আর রাগের একটা কম্বো মুড নিয়ে বসি আছি।
তখন আরাভ রুমে আসলো। বিছানায় বসে বললো,
– রান্না বান্না কিছু হইছে?(আরাভ)
– আমিতো কারো মতো এতো পচা না যে না খাইয়ে রাখবো।(আমি)
– হইছে এতো ভালো হইতে হবেনা খাবার দাও আমার ক্ষুদা লাগছে।(আরাভ)
– পারবোনা।পারলে নিজে খেয়ে নেন। আমি অনেক রাগ করছি।(আমি)
– তুমি যাবা কি না??(আরাভ)
– যাবোনা যাবোনা যাবোনা।আর খাবোওনা কিছু দেখি আপনি কি করেন।(আমি)
– কি করবো দেখবা।(আরাভ)
– হ দেখবো আপনি কি করতে পারেন।(আমি)
– ওকে দেখো কি করি।(আরাভ)
.
কথাটা বলেই আরাভ আমাকে কোলে তুলে নিলো তারপর বিছানা থেকে আমার ওড়নাটা হাতে নিলো।
তারপর আমাকে সহ খাবার টেবিল এ চলে আসলো।
.
তারপর জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
আমি ছুটার চেষ্টা করতাছি কিন্তু বদমাইশটারর শক্তি অনেক বেশি তাই ওর সাথে পারতাছি না।
আরাভ ওড়নাটা নিয়ে আমার দিকে তাকালো।
তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার হাত বেধে ফেললো চেয়ারের সাথে।
.
তারপর একপ্লেট ভাত নিলো। আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানের মতো একটা হাসি দিলো। ভয়ে অন্তরটা কেপে উঠলো। কিন্তু সেটা বড় কথা না বড় কথা হচ্ছে যে ও এখন কি করে সেটাই দেখার।
আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম,
– ওই ছাড়েন আমাকে।(আমি)
– কি যানি বলছিলা আমি যাবোনা খাবোনা…ব্লা ব্লা ব্লা… তুমি আসছো এবার খাবাও।(আরাভ)
– আমি খাবোনা।(আমি)
– দেখাই যাক।(আরাভ)
.
আরাভ প্লেটে ভাত আর তরকারি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।তারপর জোর করে খাইয়ে দিলো। মাথায় বুদ্ধি আসছে আমার হাত বেধে রাখছে কিন্তু মুভ বাধে নাইই ওরে খাইছি আজকে বজ্জাত পোলা আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করো। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।
পরেরবার আরাভ আমার মুভে ভাত তুলে দিতেই দিলাম এক কামড়। আরাভ চিৎকার করে উঠলো।
.
– ওই তুমি কি করলা?(আরাভ)
– আপনি কি অন্ধ চোখে দেখেন না কি করছি।(আমি)
– আমি ভালো মতো খাইয়ে দিতাছিলাম আর তুমি হাতে কামড় দিলা?(আরাভ)
– হুহ তো কি করবো আপনি আমার হাত কেনো বাধছেন?বললেই পারেন খাইয়ে দিবেন এমনিতেই খেতাম।(আমি)
.
আরাভ কিছু না বলে হাতের বাধন খুলে দিয়ে না খেয়েই চলে গেলো। রাগ করলো নাকি? করলে করুক তাতে আমার কি আমিও তো রেগেই আছি।
……………………………………………………………………………….
বিকেল হয়ে গেলো এখনো আরাভ আসছেনা কেনো??
ফোনটাও তো বন্ধ। কেমন যানি লাগতাছে খুব ঝগড়া করতে ইচ্ছা করতাছে কোথায় উনি। রাগ করে আবার কোথাও চলে যায়নি তো?
উফফ ভালোলাগতাছে না। ফোনটা তো খোলা রাখলেই পারতো। কেনো যানি খুব টেনশন হচ্ছে উনার জন্য।
রাগের মাত্রাটা আরো বেড়ে গেলো।
সন্ধা হয়ে গেলো এখনো আসতাছে না কেনো??
আমার তো ভয় লাগতাছে —- ভুউউত আসবে কি করবো।
ভয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শুনলামম। দৌড়ে গিয়ে দড়জা খুলে দিতেই আরাভকে দেখে প্রান ফিরে পেলাম। সব ভয় গায়েব হয়ে গেছে। হঠাৎ মনে পড়লো আমিতো রাগ করছি।
.
তাই নিজের অভিনয়ে ফিরলাম। ইয়ে মানে অভিনয় না রাগি মুডে আরকি। আমি রুমে চলে আসলাম। এসে বিছানায় বসলাম।
আরাভ আমার পাশে এসে বসলো,
– খাইছো??(আরাভ)
– না।(আমি)
– কেনো??(আরাভ)
– খাইনি এমনি আমার ইচ্ছা আপনার কি?(আমি)
– খুব বেশি রাগ করছো নাকি?(আরাভ)
– হু।
– রাগ কি ভাঙবে না? কোনো ঘুষ অথবা অন্যকিছু দিলে?(আরাভ)
– কোনো কিছুতেই ভাঙবে না আমি প্রচন্ড রেগে আছি।(আমি)
– তাহলে আর কি করার আইসক্রিম আর কিটক্যাট গুলা আমি একা একাই খাই। রাগ যখন ভাঙবেই না।(আরাভ)
.
কিটক্যাট আর আইসক্রিমের কথা শুনতেই লোভে পড়ে গেলাম।
আরাভ কিটক্যাট বের করে আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাওয়া শুরু করলো। আর সহ্য হচ্ছেনা।
– ওই মিয়া আমারটা দেন।(আমি)
– কেনো? আপনি তো খাবেনন না?(আরাভ)
– খাবোনা বলেই খাবোনা?(আমি)
.
বলেই আইসক্রিম আর কিটক্যাট কেড়ে নিলাম।
কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করলাম ওর হাতে ব্যানে্ডজ করা।
– ওই হাতে কি হইছে?(আমি)
– ইদুর এ কামড় দিয়া কেটে ফেলছে।(আরাভ)
– কিহ ইদুর কে??(আমি)
– কেও না।(আরাভ)
.
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আরাভ গিয়ে সুয়ে পড়লো।
আমিও ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। শীতের রাত কম্বল সহজে গরম হয়না। তবুও আরাভের পাশে শুয়ে খুব ভালো লাগতাছিলো। এভাবেই ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুমের মধ্যে কি রোমান্টিক একটা স্বপ্ন দেখলাম। আমি আরাভকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। অবশ্য সত্তিই ঘুমের ঘোরে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাইগেছি। কিন্তু সালার লোকটা এতোই বাজে যে স্বপ্নের মধ্যেও ঝগড়া শুরু করে দিছে।
ধুরররর আর ভালোলাগেনা।
……………………………………………………………………………
এভাবে তিনদিন কেটে গেলো তিনদিন। ঝগড়া আর ঝগড়া তবে ঝগড়া করতে ভালোই লাগে।
আজ ভার্সিটি যাবো।
আরাভ নিচে অপেক্ষা করতাছে কিন্তু আমার দেরি হচ্ছে।
দুই দুই মিনিট করে ২০ মিনিট সময় খেয়ে ফেলছি।
এভাবে আরো কিছুক্ষন চলে গেলো। আমি রেডি হয়ে নিচে গিয়ে দেখি আরাভ নাই।
তার মানে চলে গেছে।
ওদিকে আরাভ অপেক্ষা করতে করতে লেট হয়ে যাচ্ছে তাই আনহাকে রেখেই চলে আসছে। ভার্সিটির মেয়েগুলা আড়চোভে দেখছে আরাভকে। অনেক হ্যান্ডসাম তবে ঝগড়াটে আর বদরাগি। কিন্তু তারপরও মেয়েগুলা কেনো যে ওর ওপর ক্রাশ খায় আমি বুঝিনা।
.
কি আর করার একাই ভার্সিটিতে আসতে হলো।
এমনিতেই রেগে আছি উনি রেখে কেনো আসলো।
তারওপর রাগটা আরো বেড়ে গেলো যখন দেখলাম আরাভ মেয়েগুলার সাথে হেসে হেসে কথা বলতাছে।
এমন ভাবে হাসতাছে মনে হয় প্রেমিকা।
অথচ আমার সাথে সবসময় খারাপ ব্যাবহার করে।
দাড়াও দেখাচ্ছি মজা। আমি দৌড়ে গেলামম আরাভের কাছে। আজকে ঘটনা একটা ঘটাবোই।
রাইসা- কিরে আনহা জিজু তো সেই।
আমি- হুম তো।
রাইসা- তোর আগে আমি পেলে তো সিওর বিয়া করতাম।
আমি- হুম স্বভাব বুঝি এমন তোর?
.
রাইসা জবাব দিলো না মুখ কালো করে চলে গেলো।
.
আমি- শুনুন চলেন বাড়ি আমার কাজ আছে তাড়াতাড়ি চলুন।
আরাভ- আচ্ছা চলো।
.
আমি আর আরাভ একসাথে বাড়ির পথে যেতে লাগলাম। আরাভ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? কিন্তু আমি জবাব দিলাম না।
.
বাড়িতে…..
মা ও আভা চলে এসেছে।
আমি- মা কি হয়েছিলো মামার ?
মা- কিছু না মা। এমনি ডেকেছিলো।
আমি- আপনি যে বলেছিলেন অসুস্থ।
মা- না রে। আরাভ ভুল শুনেছিলো।
আমি- ভুল না কি আমি জানি। (বিড়বিড় করে)
মা- কিছু বললি?
আমি- না। বসুন আমি খাবার আনি।
মা- আচ্ছা।
.
সেদিন রাতে….
মা- তোরা তো ফ্রি আছিস। কোথাও থেকে ঘুরে আয়।
আমি- না থাক।
মা- তোদের বয়সে বিয়ের এতোদিনে আমি ৩ জায়গা ঘুরে এসেছি আরাভের আব্বুর সাথে।
আমি- হিহি তাহলে কাহিনী একটু আমাদেরও শুনান।
আরাভ- আনহা চুপ।
মা- যাই বল কই ঘুরতে যাবি বিদেশে নাকি?
আরাভ- যাওয়া যায়।
আমি- আমার পাসপোর্ট নাই।
আরাভ- সাব্বাস। এতোদিনেও এটা জানাও নাই।
আমি- আমার কি দোষ?
আরাভ- হুম বুঝি। বাদ দেও মা প্লান।
মা- বাদ দিবো কেনো দেশে কি ঘুরতে পারবি না? কক্সবাজার বা বান্দরবান যা।
আরাভ- হুম যাওয়া যায়। কই যাবো তুমি ই বলো।
মা- পাহাড়েই যা।
আরাভ- হুমমম শীতে পাহাড়ে কুলফি।
আমি- আমি পাহাড়েই যাবো।
আরাভ- ওকে ফাইন যাবো নে।
.
প্লান অনুযায়ী আমরা কিছুদিন পর বান্দরবানের ওদিক ঘুরতে গেলাম। আমার প্রথম বান্দরবান ঘুরতে আসা। খুব মজা লাগছিলো। আমি ভাবছিলাম এই পরিবেশে হয়তো ওই রাগী মানব আর রাগ করবে না।
.
রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম আমি। আরাভ ফ্রেশ হওয়ার জন্য নিজের কাপড় খুঁজতে গিয়ে দেখে ৩টা শার্ট, একটা প্যান্ট আর একটা জ্যাকেট ছাড়া ওর কিছু নাই। চিৎকার দিয়ে আমাকে ডাকলো…
আরাভ- আনহা
আমি- কি?
আরাভ- আমার বাকী কাপড় কই?
আমি- আমি কেমনে কমু ছিলো তো।
আরাভ- নীল ব্যাগ কই?
আমি- আভার ঘরে।
আরাভ- মানে?
আমি- আপনিই তো বললেন নীলটা আভার ঘরে দিতে।
আরাভ- আমি নীলটা না লাল ব্যাগটা আভার ঘরে দিতে বলেছিলাম।
আমি- ইয়ে মানে। তাহলে ভুল হয়ে গেছে।
আরাভ- আমি পড়বো কি? (দাঁতে দাঁত চেপে)
আমি- শাড়ি।
আরাভ- কিহ?
আমি- না মানে আমার শাড়ি আনি নি মে বি। আপনি শপিং করে নেন।
আরাভ- ওটাই করতে হবে। তোমার মতো বউ যার থাকবে তার কপাল পোঁড়া।
আমি- ইনসাল্ট করেন?
আরাভ- না তারিফ করি।
আমি- হুহ বুঝি।
আরাভ- যাই হোক। ঠান্ডার কাপড় পড়ে নেও।
আমি- আরে লাগবে না।
আরাভ- যা বললাম করো।
.
আরাভ ফ্রেড হয়ে এলো। তারপর আমাকে নিয়ে কয়েকটা জিনিস কিনে নিলো। বিকেলের পত আমরা হাটতে বের হলাম।
আমি- ওই ঠান্ডা খুব হোটেল চলেন।
আরাভ- বললাম ঠান্ডার কাপড় বেশি পড়ো।
আমি- আমি কি জানতাম এই টাইমে এতো ঠান্ডা এখানে।
আরাভ- ভালো ভালো। এদিক শপও নাই যে চাদর কিনে দিবো। হোটেলই যেতে হবে।
আমি- না আরেকটু হাঁটি তারপর যাই।
আরাভ- না।
আমি- যাবো যাবো যাবো।
আরাভ- ইচ্ছা। পরে মজা বুইঝো।
.
কিছু সময় হেঁটে আমি আর ঠান্ডা সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই আমরা হোটেল ফিরে গেলাম। হোটেলে আমি কাঁপতে কাঁপতে শেষ।
আরাভ- হাহা আরো কাঁপো। কথা তো শুনো না।
আমি- চ..চুপ। লেপ কোনে। আমি ঢুকুম।
আরাভ- নাও এটা গায়ে দেও।
.
আমি তাড়াতাড়ি বিছানায় চলে গেলাম। তারপর বসে গেম খেলতে লাগলাম। কিছু সময় পর আরাভও বিছানায় এলো।
আমি- ওই ওই সরুন। আপনার হাত পা ঠান্ডা। আমি কতো কষ্টে গরম করছি।
আরাভ- কি বললা?
আমি- এটা ছাড়বো না। আপনি অন্য লেপ নেন।
আরাভ- আমি এটাই নিবো।
আমি- না না।
.
আমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। ও আমার গা ঘেসে বসলো। ওর প্রতি রাগী লুক নিয়া তাকালাম। কিন্তু ওয় শয়তানি হাসি দিচ্ছিলো। আজকাল মনে হচ্ছে এংরি বর ফাজিল হচ্ছে । কিন্তু কেমনে আর কিনু? রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
……
চলবে?

Angry_Husband Season_2___Part_8

0
Angry_husband season_2, Angry_Husband Season_2_Part_4, Avantika Anha
Angry_husband season_2, Angry_Husband Season_2_Part_4, Avantika Anha

Angry_Husband
Season_2___Part_8
Written by Avantika Anha
রাতে খাবার টেবিলে আরাভ আসলো না। হয়তো রাগ নিয়ে বসে আছে। আমি ভালো করেই জানি রেগে আছে।তাতে আমার কি? ও আমাকে মারলো কেনো? হুহ। এসবই মাথায় চলছিলো।
তবুও আমি আভার হাত দিয়ে আরাভের জন্য রুমে খাবার পাঠালাম। কিছু সময় পর আভা এসে বললো, আরাভ নাকি খাবার ফেলে দিয়েছে। খাবে না বলে। আজব ব্যাপার রাগ করছি আমি। রাগ এর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে আরাভ। মাঝে মাঝে ভাবি মানুষ এতো পরিমাণ রাগী কিভাবে হতে পারে।
মা- বউমা তুমি যাবে নাকি?
আমি- বকে যদি কি হবে?
মা- তোরা পারিসও বটে। আচ্ছা বাদ দে আমি নিয়ে যাচ্ছি।
.
আরাভের মা ওর জন্য খাবার নিয়ে গেলো। আরাভ আর যাই হোক ওর মাকে না বলতে পারে না। আমি এদিকে সেই খুশি। কারণ ওয়‌ আমাকে এখন বকতেও পারবে না। বাজে পোলা, লুইচ্চা কোনেকার। হুহ। বেয়াদপ।
.
এই সব ভেবে আমি রাতে ঘুমাতে চলে গেলাম। মাঝে মাঝে এভাবে রুম চেঞ্জ ভালোই লাগে। আর আমি তো রাগে আছি। যাক না ওই শাকচুন্নির কাছে।
.
এদিকে আরাভের অবস্থা খারাপ। ওর পুরো রুম অনেক ফাঁকা লাগছে। আরাভের যে আনহার অভ্যাস হয়ে গেছে তা ও ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। ওর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছিলো তার যে, আনহাকে তুলে নিয়ে আসুক। কিন্তু এটা করবে না সে। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে আরাভ ভালো করেই। ওর কিছুতেই ঘুম আসছে না। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। ওর মতে বর্তমানে আনহা ভুল। এরকম বিহেভ করা ভুল। কিছু সময় পর মনে হতে লাগলো ওর যে, “যেকোনো মেয়ে তার স্বামীর সাথে অন্য মেয়েকে ওভাবে দেখলে রাগ করবেই। আনহাই বা ভিন্ন হবে কেনো?” “এটা তো জ্বেলেসির অংশ। তাহলে কি ও আমাকে ভালোবেসে ফেলছে? প্রশ্নের উত্তর তো শুধু ওই দিতে পারবে।” আরাভ ওর রাগ কমায় আমার নম্বরে কল দিলো।
.
এদিকে আমি মায়ের পরম স্নেহের আবেশে ঘুমের চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ ফোন আসলো। উঠে দেখি আরাভ আমি কাটতে লাগলাম। আরাভ বারবার কল দিতে লাগলো আমি বারবার কেটে দিলাম। হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসলো…..
আরাভ- room a aso now.
আমি- jabo na Ami.
আরাভ- asba n now. kono ktha sunte chacci na. 5 minute er majhe Ami tmk room a chai.
আমি- Ami ghumacci tata .
আরাভ- asba .
.
আমি ঘুমে মনোযোগ দিলাম। গেলাম না ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। মায়ের সামনে এভাবে আনহাকে তুলে আনতে পারবে না। এই ভেবে আরাভ যাচ্ছে না। আরাভের রাগের পরিমাণ চরমে উঠে গেলো। সারারাত আর আরাভ ঘুমালো না শুধুই রাগের আবেশে।
.
সকাল ১০ টার ওদিক মায়ের ফোনে কল আসে.. তাকে আর আভাকে নাকি তাদের মামার বাড়ি যেতে হবে কোনো এক দরকারে। কে জানি অসুস্থ। তাই সেদিন তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছিয়ে তারা চলে গেলো। আমি এদিকে ভয়ে শেষ। কারণ এমনি আরাভের উপর রেগে আছি আমি। এই চক্করে আরাভের রাগও বাড়ায় দিছি। মা যখন যাচ্ছিলো আমি ভেজা বিড়ালের মতো হয়ে আছি। একবার আরাভের দিকে তাকালাম ওর মুখ লাল রাগে। প্লাস মুখে শয়তানি লুক দেখলাম। এটা খেয়া আমার ভয়ে অবস্থা শেষ।
.
মা যাওয়ার সময়…
মা- আনহা তুই নিজের আর আরাভের খেয়াল রাখিস।
আমি- মা আমারেও নিয়া যাও। ওয় আমাকে ছাড়বে না।
মা- ওই আরাভ তুই আমার বউমাকে একটুও বকবি না। আর ওর রাগ ভাঙ্গাবি।
আরাভ- হুম মা। তুমি একদম চিন্তা করো না। (আমার দিকে তাকায় একবার চোখ মারলো।)
আমি- মা মা আমি যাবো। ৫ মিনিট দাড়ান আমি তৈরি হয়ে আসছি।
মা- তোর নাকি কি কাজ আছে পরশু ভার্সিটিতে। এই জন্যই তো নিলাম না।
আমি- না না আমি যাবো। ফেল করি তাও আমি থাকবো না এখন একা।
মা- আরে
আমি- ৫ মিনিট দাড়ান।
.
এই বলে আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসলাম ৫ মিনিট পরে। এসে দেখি মা নাই। আমি দেখি আরাভ হাসছে। শয়তানি হাসি।
আমি- মা কই?
আরাভ- চলে গেছে।
আমি- আমিও যাবো।
আরাভ- ম্যাডাম তা তো আর হচ্ছে না।
আমি- ভাই মাফ করেন আর আমি কাউকে ঢাক্কা দিবো না। ওই শাকচুন্নিকে আপনি যা ইচ্ছা করেন। তাও কিছু বলবো না।
আরাভ- (জবাব দিলো না)
.
ওর দিকে তাকায় দেখি ওয় আরো বেশি রেগে গেছে। চোখ লাল হয়ে গেছে। আমি ভয়ে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।
আমি- সরি আর কিছু বলবো না। এই দেখেন কানও ধরছি আমি। (কান ধরে)
আরাভ কিছু না বলে বাড়ির দরজা লাগিয়ে দিলো। এখন বাড়িতে আমি আর আরাভ ছাড়া কেউ নাই।
আমি- ওই কিছু তো বলেন।
আরাভ- আর কিছু বলার আছে তোমার ?
আমি- না। আমি আম্মুর কাছে যাবো। যাই আচ্ছা রেডিই আছি তো।
আরাভ- ওহ ওকে।
আমি- আচ্ছা আমি গেলাম।
.
এই বলে আমি তাড়াতাড়ি কিছু জামা নিয়ে বাড়ি যেতে বের হচ্ছিলাম। কিন্তু বাইরের দরজায় দেখি তালা। বুঝছি আজ আমার নিস্থার নাই। আরাভের রুমে গেলাম পা টিপে টিপে।
আরাভ- কি যাবা না?
আমি- কি চান আপনি। এরাম কেন? আমি বাড়ি যাম।
আরাভ- তো যাও।
আমি- চাবি দেন।
আরাভ- ওকে কান ধরে ৫০ বার উঠবস করো।
আমি- তাহলে যেতে দিবেন?
আরাভ- হুম।
আমি- একটু কমানো যায় না?
আরাভ- যাবা কি না?
আমি- যাবো যাবো।
আরাভ- স্টার্ট।
.
পুরো ৫০ বার উঠবস করলাম।
আমি- এবার যেতে দেন।
আরাভ- চলো।
আমি- আপনিও যাবেন?
আরাভ- হুম।
আমি- ওকে রেখে আসিয়েন।
আরাভ- হুম।
.
বের হয়ে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি চলছে। হঠাৎ মাথায় এলো আমি না থাকলে আরাভ খাবে কি?
আমি- গাড়ি ঘুরান ।
আরাভ- কেনো?
আমি- বাড়ি যাবো না।
আরাভ- কিন্তু কেনো?
আমি- না থাকলে খাবেন কি। যতই আপনি মুখপোড়া হনুমান আর রাগী বিড়াল হন। আমার একটা দায়িত্ব আছে না। আমি তো ভালো মেয়ে।
.
কথাটা বলে আরাভের দিকে তাকালাম। দেখলাম ওয় আবার রেগে গেছে।
আমি- না থাক রাগতেছেন কেন? আমি তো এমনি বলছি। আপনি অনেক ভালো। এসব তো আমি নিজে।
.
আরাভ গাড়ি চালায় যাচ্ছিলো কোনো কথা বলে না। কিছু সময় পর দেখি ওয় আমাকে অন্য রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা ওয় কি আমাকে মেরে ফেলবে? এইসব ভাবতেছি। আর ভয়ে শেষ হচ্ছি। আচ্ছা রাগ তো আমি করছি। থাপ্পর তো ওয় মারছে। তাহলে আমি ওর কথা শুনতেছি কেন?
আমি- ওই মি. আরাভ। রাগ তো মে বি আমি করছি। তাহলে আপনি লাল লাল টমেটো হচ্ছেন কেনো? (মজা করার জন্য)
আরাভ- চুপ।
আমি- আচ্ছা একটা জোক শুনাই হুম,
“একটা হুতুম পেচা ছিলো। দেখতে লাল। কারণ সে রাগলেই লাল লাল হতো। তাই ওর নাম দিলো লাল টমেটো।
.
একদিন সে পা পিচলে পড়ে গেলো। সবাই বলতে লাগলো। লাল টমেটো পড়ে ভর্তা হলো। তারপর থেকে আপরা ভর্তা খাই। মজার না। হিহি।”
.
আমি জোক টি বলে আরাভের দিকে তাকালাম। মনে হয় না সে বিশেষ খুশি হইছে। বরং রেগে গেছে। কিন্তু রাগলো কেনো? আমি তো আর কিছু বললাম না।
.
“পাঠকরা কি জানেন? আরাভ কেনো রাগলো?”
.
হঠাৎ আরাভ গাড়ি থামায় দিলো। খুন করবে নাকি?
আরাভ- বের হও গাড়ি থেকে।
আমি- প্লিজ আমাকে মারিয়েন না। কেবল তো বিয়ে হলো। এখনো তো বাচ্চাও হয় নাই। দেখেন আমি আপনাকে কতোদিন রান্না করে খাওয়ালাম। আরও খাওয়াবো নে। তাও মারে ফেলিয়েন না। দেখেন আমি মরলে আপনার বাচ্চাও মা হারা হবে। আপনার ছোট বাচ্চাদের মা কে মাইরেন না।
আরাভ- কি বলছো এসব?
আমি- মারিয়েন না প্লিজ।
আরাভ- ১-৩ বলবো না বের হলে ফল খারাপ হবে।
.
আমি চুপচাপ বের হলাম। জায়গাটা অন্ধকার। দেখা যাচ্ছে না কিছু। হঠাৎ আরাভ একটা মোমবাতি জ্বালালো। মোমের আলোয় দেখলাম আরাভের হাতে চাকু। তার মানে ও এটা দিয়ে আমাকে মারবে।
.
আমি আর নাই।
আরাভ আরও কিছু মোম জ্বালিয়ে দেখে আমি পাশে নাই।
.
এদিকে আমি দৌড়াচ্ছি। বাঁচলেই ভালো। হঠাৎ কে জানি হাত ধরে ফেললো। ঘুরে দেখি আরাভ।
আমি- মারিয়েন না। দেখেন মারলে বিষ খাওয়ান। চাকু দিয়ে কেনো মারবেন। আপনি না ভালো ছেলে। খুনি হইয়েন না।
আরাভ- তুমি কি পাগল? চলো ওখানে।
আমি- না না না আমি যাবো না।
.
আরাভ কিছু বলার সুযোগ দিলো না আমাকে। কোলে তুলে ওখানে নিয়ে গেলো। গিয়ে দেখি কেক। কিন্তু কেনো আজ কি তবে আমার জন্মদিন?
আমি- কেক?
আরাভ- জ্বী।
আমি- ওয়াও আমার আজকে জন্মদিন। মনেই ছিলো না। থেংকু গিফ্ট কই?
আরাভ- এটা অ্যানেভার্সেরি কেক আমাদের।
আমি- ওওওওও আমাদের ১ বছর হয়ে গেলো। এটাও জানতাম না। মনেই ছিলো না।
আরাভ- ৭মাস হলো আজ আমাদের বিয়ের।
আমি- কি ৭ মাস। এতোদিন ধরে আমি আপনাকে সহ্য করছি।
আরাভ- বাড়ি চলো।
আমি- সরি মজা করলাম। চলেন কেক কাটি।
.
কেক কাটা শেষে ওখানকার পরিবেশ উপোভোগ করে আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। কিন্তু উনি এতো রাগী হওয়া সত্ত্বেও এরকম রোমান্টিক জানতামও না। ওমা আমি যে রাগ করছি।
.
রাতে….
আমি মায়ের রুমে যাচ্ছিলাম। দেখি আরাভ টিভি দেখছে।
আমি- আমি ঘুমোতে গেলাম।
আরাভ- সব জিনিস রুমে আনো।
আমি- না আমি রেগে আছি।
আরাভ- ঢং করবা না।
আমি- না না না।
আরাভ- আনহা আজ রাতটা অন্ধকার খুব তাই না।
আমি- কি
আরাভ- হুম। ভুত আসতে পারে তাই না? দেখো শব্দ পাচ্ছো?
আমি- আম্মুউউউউ। (বলে তাড়াতাড়ি আরাভের পাশে বসে পড়লাম)
আরাভ- কই ঘুমাবা?
আমি- আপনার পাশে।
আরাভ- না না থাক।
আমি- প্লিজ আমার ভয় লাগছে।
আরাভ- কেনো?
আমি- প্লিজ।
আরাভ- যাও। তোমার সব জিনিস ঘরে আনো।
আমি- আপনিও চলেন। আমার ভয় করছে।
.
অতঃপর আরাভ আনহার সব জিনিস রুমে নিয়ে আসলো। আজ প্রথম হয়তো আরাভ নিজের রাগকে কন্ট্রোল করছে। শুধু আনহার জন্য এই ভেবে ওর মুখে হাসি ফুটলো। রাতে আরাভের আরাম লাগছে। কারণ ১ রাত পর আনহা ওর পাশে। আরাভ যে পুরোপুরি আনহার মায়ায় পড়েছে। ও ভালো করেই বুঝতে পারছে।
.
পরেরদিন….
আরাভ উঠে দেখে আনহা পাশে নাই। হঠাৎ ছাদে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ এলো। আরাভ তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেলো। তারপর যা দেখলো চোখ উপরে….
.
চলবে……

Angry_Husband Season_2___Part_7

0
Angry_Husband Season_2___Part_7
Angry_Husband Season_2___Part_7

Angry_Husband
Season_2___Part_7
Written by Avantika Anha
পরেরদিন….
সকালে..
ঘুম থেকে উঠে দেখি আরাভ আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।আরাভের ঘুমন্ত মুখটা দেখে কেউ বলতেই পারবে না এই ছেলে এতো রাগী। ইচ্ছা করছিলো আমার যে, ওরে একটু…
.
কি পাঠক কি ভাবেন? হিহি ইচ্ছা করছিলো ওর গাল দুইটা টানি। যেই ভাবা সেই কাজ। আস্তে আস্তে আরাভের গাল টানতে লাগলাম। কিন্তু সেটা আর বেশি সময় হলো না। ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি পুরাই ভয় পেয়ে গেলাম কি হবে ? এই ভেবে যে, আরাভ আমারে কি যে করবে। ওর ঘুম এত্ত পাতলা কেনো? এসব প্রশ্নই মাথায় ঘুরছিলো।
আরাভ- কি করছো?
আমি- গাল টানি।
আরাভ- কেনো?
আমি- না মানে সরি।
আরাভ- সরি বললে তো হবে না।
আমি- মারবেন না প্লিজ।
আরাভ- মারবো কেনো?
আমি- না এর আগে একটা বাচ্চার গাল টানছিলাম। সে আমাকে কামড় দিছে। সেইইই ব্যাথা পাইছিলাম।
আরাভ- হাহাহা। (হাসতে লাগলো)
আমি- হাসেন কেনো? ব্যাথা পাইছিলাম আর আপনার মজা লাগে।
আরাভ- একটা বাচ্চার কাছে কামড় খাও হাহা। আর সামান্য কামড়ে ব্যাথা। হাহাহা
আমি- ব্যাথা কেমন দেখবেন? খাড়ান।(এই বলে আমি আরাভের গলার কাছে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম)
.
আরাভ থতমত হয়ে গেলো।
আরাভ- কামড় দিলা কেনো?
আমি- হিহি। আপনি হাসলেন কেনো?
আরাভ- দাড়াও এবার আমি মজা দেখাচ্ছি। (আরাভ এক হাত দিয়ে আমার মুখ আটকে ধরলো। আরেক হাত দিয়ে আমাকে ওর আরও কাছে নিয়ে গিয়ে আমারো গলায় কি কামড় বসালো।)
আমি- এ্যা এ্যা এ্যা (কাঁদতে লাগলাম। কারণ আমার লেগেছে)
আরাভ- কাঁদো কেনো?
আমি- আপনি পঁচা।
আরাভ- হাহা তুমি যে কাঁমড় দিলা।
আমি- হুহ। আরও দিবো। (এই বলে ওর ঘাড়ে আরেকটা কামড় দিয়ে ওখান থেকে পালালাম)
.
তারপর ও যেখানে একা ছিলো সেখানে আমি যাচ্ছিলাম না।
খাবার টেবিলে দেখলাম ওয় কলার দিয়ে শার্ট পড়েছে। এতে ওর ঘাড় আর গলা কিছুটা ঢেকে গেছে। কিন্তু তবুও গলার টা দেখা যাচ্ছে। এই দেখে আমি হাসা শুরু করলাম। কাপলদের কেনো যে পাশাপাশি বসতে হয়। আমি ওড়না দিয়ে গলাটা পেচিয়ে রাখছি।
আম্মু- কি রে এভাবে ওড়না নিলি যে। গলা ব্যাথা নাকি ?
আমি- না আম্মু। স্টাইল আর কি। (মিথ্যা বললাম)
আরাভ- (বুঝে গেছি কেনো এমন করে ওড়না নিয়েছে)
আম্মু- তুই আর তোর স্টাইল হায় রে।
আমি- হুহ।
প্রেয়সি- (কানের কাছে এসে বললো…) আপু কি ঢাকো লাভ বাইট নাকি?
আমি- চুপ।
প্রেয়সি- ভাইয়ারও গলায় দেখতেছি যে।
আমি- বেশি দেখা শুরু করছিস।
আম্মু- তোরা কি ফুসফুস করতেছিস?
আমি- না মা কিছু না।
প্রেয়সি- না আম্মু আপুর..
ও কিছু বলার আগেই আমি ওর মুখ চেপে কানে কানে বললাম, “তোরে গিফ্ট দিমু চুপ কর।” ও আর কিছু বললো না। কথা ঘুরিয়ে নিলো।
.
আরাভ- কি হইছে? (জিগাইলো আস্তে)
আমি- ও বুঝে ফেলছে কামড়ের দাগ।
আরাভ- সব দোষ তোমার। লজ্জার অবস্থা।
আমি- দুরর বাদ দেন। আমরা কি পর নারী পুরুষ। কি হবে? (আস্তে আস্তে বললাম)
আরাভ- জবাব দিলো না। আরকি কোনো জবাবই খুঁজে পেলো না লজ্জায়।
.
.
দুপুর ১২ টায়….
আমি মিমির সাথে কথা বলছিলাম ফোনে, এমন সময় আরাভ আসলো কিন্তু আমি ওকে দেখলাম না। আমি আর মিমি সবদময় একে অপরকে বাবু,জানু,সোনা করেই কথা বলি তাই সেভাবেই কথা বলছিলাম। আরাভ জানতো না আমি মিমির সাথে কথা বলছি…
আমি- বাবু আই মিস ইউ।
মিমি- মিস ইউ টু গো। বিয়ের পর তো ভুলেই গেলি।
আমি- না গো তোমাকে কি ভুলি নাকি? শুনো আজ বাড়ি এসো । ঘুরতে যাবো।
মিমি- তোর বর যাবে?
আমি- না যাস্ট ইউ এন মি। ওকে বাই। ওয়েট করছি।
.
আরাভ ভাবছে কার সাথে এতো কথা। আর এরকম কথা কেনো। আমি এইদিকে ফোনে কথা বলে গোসলে গেলাম। আরাভ কিছুটা রেগে যাচ্ছে। যে কার সাথে এমন কথা। ওর মাঝে কিউরিসিটিও হচ্ছে যে, কে সে? ও একবার এগিয়ে যাচ্ছিলো ফোনের কাছে আরেকবার পিছিয়ে যাচ্ছিলো। গিয়ে ফোন হাতে নিলো। কিন্তু দেখে ফোন লক করা। রাগ উঠে গেলো। কিন্তু কি করবে ও? সোজা তো আর বলতে পারবে না ও যে কে ফোন করছে জানবে ও। ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। অপেক্ষা করতে লাগলো আমার বাইরে আসার। আমি গোসল শেষে বাইরে আসতেই ও আমার কাছে আসলো…
আমি- কি হইছে আর আপনার হাতে আমার ফোন কেনো?
আরাভ- না মানে পাস টা দেও তো। আমার ব্যালেন্স শেষ কল করবো একটা জরুরী।
আমি- ও দেন। (পাস টাইপ করে ওরে দিলাম)
.
আমি চলে গেলাম ছাদে চুল শুকাতে। এদিকে আরাভ ফোনের কললিস্টে গিয়ে দেখে মিমির নাম। এটা দেখে নিজের প্রতি একটা লজ্জাবোধ আসলো। কিন্তু কিছু বললো না। পরে আমাকে অনেকগুলো কিটক্যাট দিয়েছিলো। কিন্তু কেনো দিলো জানলাম না।
.
সেদিন মিমি আসলো। অন্যান্য ফ্রেন্ডরা আসলো। মজায় মজায় নিজের বাড়িতে কিছুদিন কাটালাম। তারপর আরাভ আর আমি ওর বাড়িতে ফিরে গেলাম। আমরা হানিমুনে কোথাও গেলাম না। কারণ আমার ভার্সিটির ছুটি শেষ হয়ে গেছিলো। সময় যেতে লাগলো। ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমি ভার্সিটি যেতে লাগলাম। আমি ভার্সিটিতে থাকতাম আর আরাভ অফিসে। যাওয়ার আগে ও আমাকে দিয়ে যেতো আর নিয়েও আসতো ও।
.
একদিন আমি বাহিরে অপেক্ষা করছিলাম আরাভের। আমার ব্যাচের এক বন্ধু বাইক নিয়ে সামনে এলো।
রাফি- কি রে জিজু কই?
আমি- জানি না আইতেছি মে বি।
রাফি- আহা বিয়া কতো মজার। আমার যে কবে হবে?
আমি- হালা আগে বড় হ। শুন তো আমার লাইগা একটা আইসক্রিম আন।
রাফি- টাকা নাই।
আমি- হালা ফকির। যা আন।
রাফি- খাড়া।
আমি- দুইটা আনিস। আমি কিপটা না। একটা তোরেও খাওয়ামু।
রাফি- হ বরের টাকায় লাফাচ্ছিস। আগে তুই আরও বেশি কিপটা ছিলি।
আমি- টাকা ফিরায় দে হালা।
রাফি- মজা করলাম দোস্ত আনতাছি।
.
রাফি আইসক্রিম আনলো। আমি আর রাফি দাড়ায় খাচ্ছিলাম। আর গল্প করছিলাম। মাঝে মাঝে হাসাহাসিও করছিলাম। এমন সময় আরাভ এলো। আমি অন্যের সাথে এতো হাসাহাসি করছি এটা দেখে ও জ্বলতে লাগলো সেই সাথে রেগেও গেলো। আমি আরাভকে দেখে রাফিকে বাই বলে গাড়িতে উঠলাম। আরাভ লাল হয়ে গেছে রাগে। আর ড্রাইভ করতে লাগলো। এদিকে আমি বুঝতেছিলাম না ওয় রাগলো কেনো?
আমি- রাগেন কেনো?
আরাভ- (জবাব দিলো না)
আমি- কি হলো রেগে আছেন যে?
আরাভ- ওই ছেলেটা কে?
আমি- ফ্রেন্ড।
আরাভ- এতো চিপকু কেনো?
আমি- ওমা জ্বলছে নাকি ? প্রেমে পড়ে গেলেন আমার?
আরাভ- (কিছু বললো না। কারণ জবাব জানা নাই)
আমি- ওকে ওকে আমি আর‌ মিশবো না। ব্যাপার না জ্বলিয়েন না মি. হাজবেন্ড।
আরাভ- কবে এক্সাম তোমার? (কথা ঘুরাতে)
আমি- এইতো সামনের মাসে।
আরাভ- পড়া কেমন হচ্ছে?
আমি- মোটামোটি।
আরাভ- আজ থেকে রাতে পড়তে বসাবো আমি তোমাকে।
আমি- এ্যা
আরাভ- হ্যা।
আমি- না
আরাভ- কেনো (কিছুটা শক্ত ভয়েসে)
আমি- আচ্ছা পড়াইয়েন।
.
রাতে…..
আরাভ পড়াতে বসলো। ওয় পড়াচ্ছে আমি কিছু বুঝছি। আবার কিছু বুঝি না। কিন্তু চুপচাপ।
আরাভ- বলো এটা মুখস্ত।
আমি- বলতে বলতে ভুলে গেলাম।
আরাভ- কান ধরে উঠা বসা করো।
আমি- কিইইইই?
আরাভ- জ্বী।
আমি- না না না।
আরাভ- কান ধরবা নাকি স্কেল দিয়ে মার খাবা।
আমি- যাচ্ছি যাচ্ছি।
.
আমি কান ধরে উঠা বসা করতে লাগলাম। এদিকে আমাকে দেখে আরাভ হাসতে লাগলো।
আমি- শয়তান পোলা। আমাকে কান ধরায়। আমারো দিন আসবে। দেখে নিবো। বাজে মানুষ। রাক্ষস কোথাকার। ভ্যাম্পায়ার আমার রক্ত খাইস পঁচা। (এইসব বলতে বলতে কান ধরে উঠাবসা করতে লাগলাম)
আরাভ- আর কিছু
আমি- (ওর দিকে তাকিয়ে দেখি রেগে গেছে) না না।
আরাভ- আরও ৫০ বার উঠা বসা করো।
আমি- কিহ?
আরাভ- জ্বী।
.
বাধ্য হয়ে করতেই হলো। এবার মনে মনে ওরে গালি দিতে লাগলাম। নইলে শুনলে আমাকে আবার শাস্তি দিবে ওয়। তারপর পড়তে পড়তে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। আরাভ তাকিয়ে দেখে আমি ঘুমিয়ে গেছি। ও মুচকি হাসতে লাগলো। বলতে লাগলো “পাগলি শাস্তি পেয়ে ঘুমায় গেলো। গুড নাইট” আমাকে ঠিক করে শুঁইয়ে দিলো।
.
এক্সাম শেষে…..
একদিন আমি আরাভের অফিসে গেলাম ওর জন্য টিফিন নিয়ে। গিয়ে দেখি একটা মেয়ে পড়ে যেতে ধরেছিলো আরাভ ওর কোমড় ধরে আটকালো। রেগে গেলাম।
আমি রুমে ঢুকেই…
আমি- ওই মাইয়া ফিল্মি স্টাইলে ঝুলে আছো কেনো উনার সাথে?
.
মেয়েটা উঠে দাড়ালো…
মেয়েটি- তোমার কি? এটা স্যার আর আমার ব্যাপার তুমি কে?
আরাভ- আনহা চুপ।
আমি- কেনো চুপ করবো। এই শাকচুন্নিটা কে? আর এতো চিপকে কেনো? আর আপনি ধরলেন কেনো?
মেয়েটি- স্যার ইনি কে?
আমি- আমি কে মানে? ওই তুই এখনো উনার পাশে দাড়িয়ে কেনো? সরে যা । (এই বলে মেয়েটাকে ঢাক্কা দিলাম)
আরাভ- (রেগে আমাকে থাপ্পর দিলো) কেমন বিহেভ এটা? ও অফিসে নিউ আমি কাজ শিখাচ্ছিলাম। পড়ে যেতে ধরেছিলো তাই এমন করে আটকিয়েছি। ওর মাথায় লাগলে কি হতো?
আমি- ও ভালো। থাকুন ওকে নিয়ে। এই নিন আপনার খাবার। শখ করে বানিয়ে আনছিলাম। এখন এই পেত্নির হাতেই খান। আমি থাকবো না। গেলাম।
.
এই বলে আমি ওই মেয়েটাকে আরেকবার ঢাক্কা দিয়ে চলে এলাম ওখান থেকে। ওর জন্য আমি থাপ্পর খাইছি ওরে ছাড়বো কেমনে?
.
আরাভ আমাকে আটকাতে চাইলো কিন্তু আমি চলে আসলাম তাড়াতাড়ি। ও অফিসে ফিরে এলো। ওই ক্যাবিনে তখনও মেঘ নামের মেয়েটা দাড়িয়ে ছিলো। ও বুঝলোও না কি হলো? ও আসলে জানে না আরাভের বউ আমি।
আরাভ ক্যাবিনে যেতেই…
মেঘ- স্যার ওই পাগল করে মেয়েটা কে?
আরাভ- কাকে পাগল বললে? (রাগী লুকে)
মেঘ- না মানে ওই মেয়েটাকে।
আরাভ- হাউ ডেয়ার ইউ। সি ইজ মাই ওয়াইফ। তোমার সাহস তো কম না ওকে পাগল বলো।
মেঘ- না মানে সরি স্যার আমি জানতাম না। আই মিন উনি এতো ক্ষ্যাত বিহেভ করলো। তাই আরকি।
আরাভ- হোয়াট? তোমার চাকরি শেষ। গেট আউট। আনহার ব্যাপারে কিছু বলবা না। সে মিসেস আরাভ আহমেদ। ওকে?
মেঘ- স্যার সরি। চাকরি থেকে বের করবেন না প্লিজ।
আরাভ- গেট আউট।
.
মেঘের চাকরি চলে গেলো। আরাভ কাজ গুছিয়ে বাড়িতে গেলো। গিয়ে দেখে আনহা ঘরে নাই। সেই সাথে ওর সব জিনিসও নাই। আরাভ ভয় পেয়ে গেলো। এই ভেবে আনহা কই গেছে?
.
ও ওর মায়ের ঘরে গেলো। গিয়ে দেখে আমার (আনহার) সব জিনিস ওর মায়ের ঘরেই।আর আনহা ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে আছে। আরাভ রুমে যেতেই…
আমি- মা এই ছেলেকে বের করে দেন।
মা- আরাভ তুই ওকে কষ্ট দিয়েছিস?
আরাভ- মা এমন কিছু না।
আমি- মা ও আমাকে মারছে। ওকে গেট আউট করেন।
আরাভ- ওকে ফাইন আমি যাচ্ছি। (কিছুটা রেগে)
.
আরাভ চলে গেলো ওর ঘরে।
.
চলবে……

Angry_Husband Season_2___Part_6

0
Angry_husband season_2, Angry_Husband Season_2_Part_4, Avantika Anha
Angry_husband season_2, Angry_Husband Season_2_Part_4, Avantika Anha

Angry_Husband
Season_2___Part_6
Written by Avantika Anha
কিন্তু প্রশ্ন, “আরাভ যে বললো আমাদের ৩ বার দেখা হইছে। কিন্তু কেমনে? আমার তো মনেই নাই। দুইবারের কথা নাহয় মনে আছে ৩য় বার কখন? আরাভকে জিজ্ঞেস করতে হবে।” এই কথা গুলো মাথায় ঘুরতেছিলো। আমি চুপচাপ ছাদে চলে গেলাম। বোর লাগছিলো। তাই চুপচাপ পা টিপে টিপে রুমে গেলাম। দেখি ঘরে আরাভ নাই। আমি চুপচাপ আমার গিটারটা বের করে নিলাম। নিয়ে আবার দৌড় দিতে গেলাম এমন সময় আরাভের গলা পেলাম।
আরাভ- কই যাও?
আমি- জ…জ্বী ক…কোথাও ন..ন….না তো। (ভয়ে)
আরাভ- তোতলাচ্ছো কেন?
আমি- ক… কইইইই?
আরাভ- এই যে।
আমি- আপনার ভয়ে।
.
এই বলে আমি ভয়ে দৌড় দিলাম। কারণ আমি জানি ওয় আবার Angry হতে পারে। আমি ছাদে চলে গেলাম। ছোট বেলায় গান ভালো লাগতো। এমনি এমনিই কিছু গান গাওয়া শিখছি। সেই সাথে গিটার বাজানোও শিখে নিছি। তাই শখ করে গিটার বাজালাম…..
.
“ভালো আছি, ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
দিও তোমার মালাখানি,
বাউলের এই মনটা রে।

আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।

পুষে রাখে যেমন ঝিনুক,
খোলসের আবরনে মুক্তর সুখ
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে।

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম,
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম
তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরমের মূল পথ ধরে।”
.
গান শেষ হতেই পিছন থেকে কার যেনো গলা পেলাম। পিছনে ঘুরে দেখি আরাভ।
আরাভ- ভালোই তো গান করো।
আমি- হিহিহি এত্ত পামমমম।
আরাভ- সিরিয়াস।
আমি- আপনি গান শুনান তো একটা।
আরাভ- আমি পারি না।
আমি- না না না আপনি বসুন এখানে আর গান শুনান।
আরাভ- না না আমি এসব পারি না।
.
এই বলে আরাভ চলে যাচ্ছিলো। তখন আমি ওকে আটকানোর জন্য ওর শার্টের হাতের কাছের কিছুটা অংশ ধরে টানলাম।
আরাভ- কি হলো?
আমি- না শুনালে যেতে দিবো না।
আরাভ- আরে আমি পারি না তো।
আমি- আমি জানি না কিছু। গান শুনান।
আরাভ- ওকে ওকে। কি গান শুনবা?
আমি- পৃথিবীর যতো সুখ আনলাম
আরাভ- ওকে.. পৃথিবী
আমি- দাড়াননননন। গিটার বাজাতে পারেন ?
আরাভ- হুমমম।
আমি- তো বাজান । ধরুন। (এই বলে গিটার টা আরাভের হাতে ধরিয়ে দিলাম।)
আরাভ- “পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালবাসা
সবই যে তোমায় দেব, একটাই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে।
ভাবিনি কখনো, এ হৃদয় রাঙানো
ভালবাসা দেবে তুমি
দুয়ারে দাঁড়িয়ে, দু’বাহু বাড়িয়ে
সুখেতে জড়াব আমি
সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলব এসে
এক পলকে পৌঁছে যাব, রুপকথারই দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে ।
রয়েছে এখনো এ বুকে লুকানো
রাত জাগা স্বপ্ন ঘুমিয়ে
মেঘেতে দাঁড়িয়ে,
আকাশে হারিয়ে
যতনে রেখ গো তুমি
সেই মেঘেরই আঁচল এনে
আমায় তুমি নাও গো টেনে
রং-তুলিতে আঁকব ক্ষণ
রুপ কুমারের দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে ”
.
আমি- ওয়াওওওওওওওও। আপনি তো সেই গান করেন।
আরাভ- না তো।
আমি- সেইরাম। খাড়ান আমি আমার ফ্রেন্ডদের ফোন করে ডাকি কালকে। আপনার গান শুনাবো।
আরাভ- এই না।
আমি- আরে আমি তো ডাকবোই কারণ আমার বর পারে এতো ভালো। ওদের শুনাইয়া একটু জ্বলাইতে হবে তো।
আরাভ- হাহাহা কিইই।
আমি- আরে সত্যি। আচ্ছা দাড়ান আমি আইসক্রিম আনি। খেতে ইচ্ছে করছে। আপনি খাবেন ?
আরাভ- না।
আমি- ওকে।
.
এই বলে আমি তাড়াতাড়ি করে আইসক্রিম আনতে চলে গেলাম। তাড়াতাড়ি দুইটা আইসক্রিম আনলাম।
আরাভ- বললাম যে খাবো না।
আমি- হুমমম জানি তো।
আরাভ- তা দুটো আনলে যে।
আমি- হুম দুটোই আমি খাবো।
আরাভ- কিহহহ?
আমি- হুমমম। আমি তো দুটোই খাবো। কতোদিন পর খাচ্ছি।
আরাভ- না। ঠান্ডা লাগবে।
আমি- না আমি খাবোই।
.
এই বলে আমি দুটোই ছিড়তে গেলাম। কিন্তু আরাভ একটা কেড়ে নিলো। আমি জিজ্ঞেস করায় বললো, “এতো নাকি খাওয়া যাবে না। আরাভ ফেলে দিতে ধরেছিলো। একটা।
আমি- ফেলিয়েন না প্লিজ।
আরাভ- আচ্ছা। প্রেয়সিকে দিচ্ছি।
আমি- না আপনি খান। প্লিজ প্লিজ।
আরাভ- আচ্ছা ওকে।
.
আমি আর আরাভ পাশাপাশি বসে আইসক্রিম খেতে লাগলাম। আর সেই সাথে গল্প করতে লাগলাম। গল্প করতে করতে বুঝছিলাম আমি যে, মি. আরাভ এতোটা খারাপ না। ভালোও উনি। আইসক্রিম খাওয়া শেষে মি. আরাভ হাসতে লাগলো।
আমি- কি হলো হাসতেছেন কেনো?
আরাভ- আইসক্রিম দিয়ে নিজের মুখের কি অবস্থা বানিয়েছো ?
আমি- কই দেখি? (এই বলে ফোনের স্ক্রিনে দেখলাম, আইসক্রিম দিয়ে উপরের ঠোঁটের সামান্য উপরে নাকের নিচ অংশে আইসক্রিম জমেছে)
.
এটা দেখে আমিও হাসতে লাগলাম। আরাভ তাকিয়ে ছিলো। কারণ ওর জানা ছিলো না যে, নিজের উপরও কেউ এতো হাসে।
আরাভ- থামো মিস. হাসুরি । পরে হাইসো। যাও পরিষ্কার করো।
আমি- আপনি মুছে দিন।
আরাভ- কিহ।
আমি- আরে মুছুন না। আমি একটা পিক তুলবো।
আরাভ- কিইইইইই? (চোখ বড় করে)
আমি- হুমমম। ইন ফিউচার আমাদের যে নাতি নাতনি হবে। ওদের দেখাতে হবে তো। আপনি তো এমনিই পুরাই আনরোমান্টিক। তবুও একটা ইজ্জত আছে না। ওরা তো জানবে ওদের দাদা-দাদি/নানা-নানি একটু হলেও রোমান্টিক ছিলো।
.
আরাভ আমার মুখে এমন ধরনের কথা শুনে পুরাই থ। কেউ এভাবে এসব বলতে পারে এটাও তার জানা ছিলো না।
আমি- হা করে আছেন কেনো?
আরাভ- না কিছু না।
আমি- পুরাই আনরোমান্টিক এমনি কই আমি। হিহিহি। থাক লাগবে না।
.
এই বলে আমি চলে গেলাম। আরাভ থ হয়ে ছিলো তখনো।
.
রাতের দিকে……
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম তাড়াতাড়ি। আরাভ কখন এলো তাই তা বুঝলাম না। ও কি জানি কাজে কিছুটা বাইরে গিয়েছিলো। ফিরে এসে দেখে আমি ঘুমাচ্ছি তাও হেলানি দিয়ে। আরাভ বুঝে গেলো আমি ওরই অপেক্ষা করছিলাম। আরাভ আমাকে ঠিক করে শুইয়ে দিলো। আরাভের কিছুটা নেশা নেশা লাগছিলো। এটা অন্য কোনো নেশা নয়। শুধুই কিছুটা মায়ার নেশা। যা ধীরে ধীরে আরাভের উপর চড়ছিলো। আমার নেশা। নিজের অজান্তেই আরাভ আমার কপালে একটা চুমু একে দিলো। আর একটা স্মৃতি মনে করতে লাগলো। আরাভ আর আমার প্রথম দেখা। যে দেখার স্মৃতি আমি জানি না। কারণ সেদিন আরাভের চেহারাটা আমি দেখি নি কারণ আরাভের মুখটা কাপড়ের কি জানি দিয়ে ঢাকা ছিলো। আরাভ দেখেছিলো আমাকে….
সেদিনই ভালো লেগে যায় আরাভের আমাকে..
তারপর খোঁজার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু পায় নি। পরে যেদিন পআনার আরাভের সাথে দেখা হলো, ঢাক্কা খেলাম। সেদিন আমি না চিনলেও আরাভ চিনতে পেরেছিলো। কিন্তু আমি একটু বেশি গোলমাল করি তাই আরাভ রাগ সামলাতে না পেরে আমাকে চড় মেরেছিলো।
.
আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন কিভাবে হলো পরিচয়, চলুন জানা যাক…
.
আরাভ স্মৃতির পাতায় চোখ দিলো।
সবসময় ফাজলামি পছন্দ করে আনহা(আমি)। আরাভও কিছুটা ফাজিল। কিন্তু অনেক বেশিই রাগী। আমি ও আমার ফ্রেন্ডরা গিয়েছিলাম কাছাকাছি একটা পাহাড় এরিয়া দেখতে। সে সময় আমি ফাজলামি করে একটা বাস আসতে দেখি। সেখানের আরাভ ও তার পরিবারের অন্যরা ছিলো। আরাভের একটা কাজিন ছিলো। যে আরাভকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু আরাভ পাত্তা দেয় না। এই কাহিনী আমি জানতাম না। সে কাজিনটার নাম ছিলো জান্নাত। জান্নাত তার এক ফ্রেন্ড এর সাথে একটা ফুলের গাছের আড়ালে প্লান করছিলো। সেটাও আমি জানতাম না। এমনি ফাজিল। আর ওই গাছের ফুলগুলো ভালো লেগেছিলো। তাই আমার বান্ধবীদের সাহায্যে গাছে উঠছিলাম ঠিকই। কিন্তু সব গুলো আমার সাথে ফাজলামি করে চলে যায়। পরে যাই প্যারায় কারণ আমি নামতে পারছিলাম না। সেই সময় জান্নাত আসে আর প্লান করে। সব বুঝে যাই। আরাভ রান্নার চুলার ওদিক কি জানি করছিলো। শুধু জামা দেখে আর ওদের কথা শুনে বুঝলাম সবটা। ইচ্ছ হলো সাহায্য করি। সেই জন্য জান্নাত রা সরে যাওয়ার পরপরই কি জানি করতে আরাভ অন্য দিকে যাচ্ছিলো। ওদিক গাছ থেকেই ডাকলাম….
আমি- এই যে ভাইয়া শুনুন।
আরাভ প্রথমে থামলো কিন্তু ভাবলো ওকে ডাকছে না কেউ। তাই চলে যেতে ধরলো। কিন্তু আমি আরো কয়েকবার ডাকলাম। ডাক শুনে এদিকে আসলো… আরাভ দেখলো একটা মেয়ে বয়স ১৬/১৭ ওকে ডাকছে। মেয়েটি কালো গাউন পড়ে ছিলো সাথে ওড়না। আমি মাঝে মাঝেই কথা বলতে বলতে হাসি। তাই তখনও হেসে ফেলছি। আরাভ ক্রাশ খেয়ে যায়।
আমি- ভাইয়া ভুত হয়ে দাড়াইয়েন না। একটা হেল্প করুন। পরিবর্তে আপনার একটা বিপদ আছে সামনে কমিয়ে দিবো।
আরাভ- কিহ? এমনিই হেল্প করছি। এতো বাহানা করার কি দরকার?
আমি- মই টা আনুন।
.
আরাভ মই আনলো। আমি নামতে ধরলাম।
আরাভ- সাবধানে।
আমি- আরে আমি পারবো পারবো। (এখনো আরাভের চেহারা দেখি নি)
.
বেশি নিজের উপর ভরসা করার ফল হিসেবে পা পিছলে পরে গেলাম। আর পড়লাম আরাভের উপরে। আর হাতের ফুল গুলো আমাদের উপর পুরাই রোমান্টিক ব্যাপার। এদিক বেশি মানুষ আসে না। তাই কেউ দেখলো না। আরাভ তাকিয়ে থাকলো,কাজল কালো চোখজোড়ার দিকে। সবচেয়ে বেশি ওর চোখ গেলো আমার ঠোঁটের নিচে থাকা তিলের উপর। কিন্তু আমার মাথায় সেই টাইমে রোমান্টিক কিছু আসে নি তাই উঠে পড়লাম। আরাভও উঠে গেলো।
আরাভ- হুমম। বলছিলাম আপনাকে সাবধান হতে।
আমি- তা বিষয় না। ধন্যবাদ। আর শুনুন ওই মেয়েটা আপনার কে হয়? (জান্নাতকে দেখিয়ে)
আরাভ- কাজিন কেনো?
আমি- আপনাকে মে বি ভালোবাসে আর আপনি রিজেক্ট মারেন।
আরাভ- আপনি কেমনে জানলেন?
আমি- (বললাম কিভাবে জানলাম) জান্নাত ওর কোল্ড ড্রিংকে আজ কিছু একটা মেশাবে। তারপর কর্ণারে নিয়ে গিয়ে খারাপ অবস্থায় ছবি তুলবে। ইত্যাদি সব বললাম।
আরাভ- (এসব শুনে পুরাই রেগে গেলো আরাভ)
আমি- ওহো এতো রাগিয়েন না। ওর প্লানে ওরেই মারুন।
আরাভ- মানে?
আমি- ওরেই ওটা খাওয়ান। আর সেই সময় ও সবার সামনে উল্টা পাল্টা কাম করবে। আর ওর বাবা মা ওরেই বকবে সিম্পল। খালি ও খাওয়ার কিছু সময় পর ওরে বলবেন, ও একটা ঝাড়ুদারনি। আর শুনুন ওর ফ্রেন্ড টারে অন্য জায়গায় বিজি কইরেন। তার মাঝেও ঘাপলা।
আরাভ- নাইস আইডিয়া।
আমি- আমি তো জানি। আনহার আইডিয়া সেইরাম হয়। আচ্ছা আমি যাই আগে আমার বান্ধবী গুলার বারোটা বাজামু। আমাকে ছেড়ে গেছে।
.
এই বলে সেদিন ওখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে যাই। আরাভ কিছুই বলতে পারে না। কিন্তু মনে মনে হাসে আমার কথা গুলো ভেবে। ও জেনে যায় আমার নাম আনহা কিন্তু আমি ওর চেহারাও দেখি নাই সেদিন। যাওয়ার সময় আরাভ দেখেছিলো আমাকে, কিন্তু আমি দেখি নি। ও ডাকার আগেই সেখান থেকে চলে যাই। তারপর আজকের দেখা।
.
এসব স্মৃতি মনে করতেই আরাভ হেসে ফেলে। ওর ঘোর কেটে যায়। ঘুমিয়ে পড়লো আরাভ। এই ভেবে, জানে না সে কাল এই মেয়ে আরও কি কি পাগলামি করে।
.
চলবে…..

Angry_Husband Season_2___Part_5

0
Angry_Husband Season_2___Part_5
Angry_Husband Season_2___Part_5

Angry_Husband
Season_2___Part_5
Written by Avantika Anha
তারপর আর আরাভের সামনে আসি নি সারাদিন। মুখপোড়া বান্দর টা আমাকে দেখলে যে শাস্তি দিবে আমি ভালো করেই জানি। মানুষ এতো রাগী কেমনে হতে পারে ইয়ার।
.
রাতের বেলায়….
আমি প্রেয়সির রুমে গেলাম।
প্রেয়সি- কি রে আপি তুই আমার রুমে যে….
আমি- না মানে এতোদিন তোকে অনেক মিস করছি তো তাই ভাবছি আজ তোর সাথেই থাকবো।
প্রেয়সি- ওমা তুই আমাকে মিসও করিস। কি হইছে? সত্যি বল।
আমি- তোর বড় বোন আমি নাকি তুই আমার বড় বোন। সরে যা আমি এখানে ঘুমাবো। কোনো মুভি লাগা তো। ভুতের মুভি দে।
প্রেয়সি- এ্যা । আমার ভয় লাগে।
আমি- হাহা। এতো বড় হইয়া ভয় পাইস।
প্রেয়সি- নিজে বেশি লাফাইয়ো না। তুমি নিজেও ভয় পাও।
আমি- তোরে কইছে আমি ভয় পাই না। লাগা তুই। (সত্যি ভয় পাই। কিন্তু ওর সামনে সাহস দেখাতে বললাম)
প্রেয়সি- ওকে ওয়েট।
.
প্রেয়সি ভুতের মুভি চালু করে দিলো। আর এদিকে দুজনেই কাচুমাচু হয়ে আছি। আমি একবার প্রেয়সির দিকে তাকায় ঢোক গিললাম আরেকবার প্রেয়সি আমার দিকে তাকায় ঢোক গিলতে লাগলো। দুজনেই নিজেকে সাহসী দেখানোর ট্রাই করছি।
.
এদিকে আরাভ ভালোমতোই বুঝছে যে, আমি ভয় পেয়েই ওর সামনে আসছি না। কিন্তু এখন তো রাত। রাতেও কেনো আসছে না এটাই ভেবে পাচ্ছে না আরাভ। তাই ও একটু দেখতে বের হলো কই আমি। এদিক ওদিক ঘুরে সে প্রেয়সির রুমের বাইরে এসে দাড়ালো।
কিছু কথা শুনতে পেলো..
প্রেয়সি- আপু ভয় লাগছে।
আমি- কিসের ভয় হা। মজাই তো হচ্ছে। (এদিকে ভয়ে আমার অবস্থাও শেষ কিন্তু প্রকাশ করছি না)
.
আরাভ রুমে আসলো। পুরো রুম অন্ধকার ছিলো। তাই হঠাৎ ও আসায় আমি আর প্রেয়সি দুজনই চিল্লায় উঠলাম। আমাদের চিৎকার শুনে আম্মু আর আব্বু রুমে আসলো।
আম্মু- কি হইছে রে চিল্লাচ্ছিস কেনো?
আমি- না না কিছু হয় নি। এমনি এমনি।
আম্মু- ও বুঝছি। দুজনেই তো ভুত ভয় পাইস । তবুও সাহস করে দেখতেছিস কেনো?
আমি- ওই আর কি না মানে।
আম্মু- চুপচাপ আনহা তুমি রুমে যাও। জামাই তুমিও যাও। তুমি এখানে কি করছো?
আরাভ- আনহা কে ডাকতে এসেছিলাম।
আম্মু- ও আনহা যাও।
.
কিছু করার নাই আমি রুমে গেলাম। আমি রুমে গিয়েইইইই বকবক করতে শুরু করলাম…
আমি- সব দোষ আপনার। এতো রাগী কেনো? বান্দর কোনেকার। আপনার থেইকা তো রকিও ভালো।
আরাভ- রকি কে?
আমি- পাশের বাড়ির আংকেলের খরগোস।
আরাভ- হোয়াট? (রাগ উঠে গেলো)
আমি- হোয়াট না আপনি বাজে মানুষ হুহ।
.
এই বলে বিছানার দিকে পা বাড়াচ্ছিলাম। সেই সময় আরাভ আমার হাত ধরে টান দিলো। আবার আমি দেয়ালের সাথে।
আরাভ- আমি কি এবার বলো। (দাঁতে দাঁত চেপে)
আমি- না ক. ক. কিছু না।
আরাভ- বলো কি বলছিলা ?
আমি- আপনি ভ. ভালো। (কি করি কি করি ভেবে আইডিয়া পেলাম)
আরাভ- বলো বলছি। (একটু জোড়ে)
.
আমি ফিল্মে দেখছিলাম। তার চেষ্টাই করার নামে মাথা ঘুরে পড়ার ভান করলাম। আমি পড়তে যাচ্ছিলাম এমন সময় আরাভ আমাকে ধরলো। আরাভ আমাকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু আমি চোখ খুলছিলাম না। কারণ জানি চোখ খুললে বাঁশ আছে।
আরাভ- আনহা চোখ খুলো। প্লিজ। ওই ।
.
আমি এদিকে চুপচাপ। আরাভ আমাকে কোলে করে বিছানার দিকে আগাচ্ছিলো। আমার গালে দুই ফোঁটা পানি পড়লো। হায় খোদা। বুঝে গেলাম। আরাভ কাঁদে ফেলছে। আমি তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেললাম। আরাভ আমাকে চোখ খুলতে দেখে কান্না থামালো। আমাকে শুইয়ে দিতেই আমি বসে পড়লাম।
আমি- মি. আরাভ কাঁদিয়েন না প্লিজ। আমি যাস্ট একটু নাটক করছি। যেনো আপনি আমাকে না বকেন তাই আর কি।
আরাভ- কি?? তুমি নাটক করছিলা।
আমি- হিহি হুমম। সরি সরি।
.
আরাভ তার রাগকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। আমাকে একটা থাপ্পর দিয়ে দিলো। থাপ্পর খেয়ে এবার আমার মাথা সত্যি বন বন করতে লাগলো কিন্তু কিছু কইলাম না। জানি ওয় রাগ করছে। নিজের বাড়ি না বলে ওয় ছাদে গেলো। এতো রাতে ভুতের মুভি দেখার পর ছাদে যাইতে ভয় লাগছিলো। তবুও চোখ বন্ধ করে আস্তে আস্তে ছাদের উপরে উঠলাম। একবার তাকিয়ে দেখি পুরাই অন্ধকার একটু একটু আলো আসছে পাশের বাড়ির থেকে হালকা আলো আমাদের ছাদে পড়ছিলো। দেখি আরাভ চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। কি করবো ভেবে পারছিলাম না। তবুও আরাভের পাশে দাড়িয়ে কান ধরে “সরি” বললাম। আরাভ আমার দিকে একবার তাকালো কিন্তু জবাব দিলো না।
আমি- সরি তো প্লিজ এতো রাগেন কেনো?
আরাভ- নিশ্চুপ।
আমি- মি. আরাভ আপনি যদি মাফ না করেন আমি কিন্তু এখন চিল্লাবো।
আরাভ- যা ইচ্ছা করতে পারো।
আমি- (ভাবছি চিল্লাইলে সমস্যা হবে।) না না চিল্লাবো না। লাফ দিবো।
আরাভ- হাহা নাটক। দেও লাফ।
আমি- আমি কিন্তু সিরিয়াস।(কেউ রাগ করলে সেই খারাপ লাগে)
আরাভ- ওহ। (এখনো রেগে)
.
আমি দেখি ও সিরিয়াস হচ্ছে না। এমনি আমার উঁচু জায়গা একটু ভয় লাগে। তাও সাহস নিয়ে আগালাম। ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও তাকাচ্ছে না। তাই পিলার এর উপর বসে পড়লাম। নিচের দিকে একবার তাকালাম। নাহ পড়লে খালি হাত পা ভাঙবে। মরবো না। আমি আরাভের দিকে একবার তাকালাম, বললাম, “সরি শেষ বার বেঁচে থাকলে কথা হবে।” এই বলে পিলারের উপর দাড়াইলাম। আম্মু ভয় লাগে খুব। মনে মনে ভাবছি থাক। অন্য উপায়ে রাগ ভাঙ্গাবো নামে যাই। কিন্তু নামার আগে হলো এক বিপদ ব্যালেন্স হারাবো হারাবো এমন ভাব হয়ে গেলো। তখনি আরাভ আমার হাত ধরে দিলো টান ওর দিকে। ও আর আমি দুজনেই পড়ে গেলাম। ও নিচে আমি ওর উপরে। ও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি দেখলাম আমার হাত কিছুটা ছিলে গেছে । সেই সাথে আরাভের হাতেও লেগেছে। নিরবতা ভেঙ্গে…
আমি- কোমড় ভাঙলো ?
আরাভ- কী?
আমি- না মানে আপনার উপর পড়লাম তাই আর কি।
.
এই বলতে বলতে উঠে বসলাম। আরাভ আমাকে টেনে নিয়ে ঘরে নিয়ে গেলো….। আমি ভাবছি রাগ মনে হয় কমে গেছে। কিন্তু নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়েই আমাকে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। আর সেই সাথে আমার দুই শক্ত করে চেপে ধরলো। এতোটাই শক্ত করে ধরেছিলো যে আমার প্রচন্ড ব্যাথা করতে শুরু করলো।
আরাভ- তুমি কি বাচ্চা মেয়ে হা…
কি ভাবো নিজেকে ড্রামা কুইন?
আমি- না আমি আনহা ভাবি নিজেকে।
আরাভ- চুপপপপপ একদম চুপপ।
.
এই বলে এর হাত দিয়ে আমর মুখ চেপে ধরলো।
আরাভ- ছাদে লাফ দিতে কে বলছে হা ? পড়ে গেলে কি হতো ?
.
আমি আরাভের হাতে কামড় দিলবলে আরাভ হাতটা সরিয়ে নিলো..
আরাভ- কামড় দিলে কেনো?
আমি- কথা তো বলতে দেন। সরি তো।
আরাভ- ভালো।
আমি- এখনো রাগ আমি আবার ছাদে যাবো বাই।
.
এই বলে আমি আরাভের হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। ও কিছুটা আস্তে ধরেছিলো তাই ছাড়িয়ে নিতে পারলাম। আমি যেতে ধরলাম যখন তখন আরাভ আমাকে আবার টান দিলো ওর দিকে তারপর…
আরাভ- চুপচাপ শুয়ে পড়ো ঘুমাও।
আমি- না আমি ছাদে যাবো।
আরাভ- বললাম না শুঁয়ে পড়ো।
আমি- না না না।
.
আরাভ আমাকে এক টানে বিছানায় নিতে জোড় করে শুঁয়ে দিলো। আমি আবার উঠতে ধরলাম। এইবার আরাভ আমার পাশে শুয়ে দুহাত আর দু পা দ্বারা আমাকে আটকে ধরলো। এইবার আমি বারবার চেয়েও উঠতে পারছিলাম না। রেগে গেলাম…
আমি- বান্দর পোলা, বাজে পোলা, শয়তান কোনেকার দুররররর হন। ছাড়েন আমাকে।
আরাভ- কি বললা? (কিছুটা রাগী স্বরে)
আমি- না না আপনি এভাবেই থাকেন। ছাড়তে হবে না তো। আমি ঘুমাচ্ছি। যাচ্ছি না। এই দেখেন চোখ বন্ধ তো। গুড নাইট। (ওর রাগী স্বর শুনে ভয় পেয়ে গেছি)
আরাভ- (কিছু বললো না। কিন্তু ওর হাসি পাচ্ছিলো খুব। আরাভ প্রায়ই ভাবে প্রচন্ড বকবে আনহাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে ওর বাচ্চা বিহেভের জন্য পারে না। কিন্তু আজ ওর প্রচন্ড রাগ হয়েছিলো।কেউ কি এভাবে করে? রাগ করছি তো করছি। পড়ে গেলে কি হতো?)
.
আমি চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছি না। কিন্তু চোখ খুললে আরাভ রাগ করবে। এমন করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোর বেলা ঘুম ভেঙ্গে গেলো আরাভের দ্রুত ও উঠে দেখে আমি কাচুমাচু হয়ে ঘুমিয়ে আছি। এক হাত ওর কাধ বরাবর। আর পা দুটো আমার আরাভের পায়ের আড়ালে পড়ে গেছে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে কিছুটা আরাভের মুখে। এই অবস্থায় আরাভের মনে হচ্ছিলো, “আনহার মাঝে মনে হয় একটা আকর্ষণ ওকে আনহার দিকে টানছে।” সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করছে ওর ঠোঁটজোড়া। কিন্তু ওর কপালে কিস করতে ইচ্ছে করছে আরাভের। এটায় তো সমস্যা নেই । তাই ও নিজের অজান্তেই আমার কপালে কিস করে বসলো। এতে আমি কিছুটা নড়ে উঠলাম। আরাভ তাড়াতাড়ি আমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে পড়লো। তার কিছু সময় পর আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। নামাযটাও সেরে নিলাম। বের হয়ে দেখি আরাভ আব্বুর সাথে গল্প করছে দেশ নিয়ে। মাঝে মাঝে ভাবি ছেলেরা এমন কেনো? তাও কিছু বললাম না। সেদিন সারাদিন আমার ফ্রেন্ডরা এলো। গল্প গুজবেই কাটলো। সেদিন বিকেলে আমার খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছিলো।তাই কাউকে না বলে দোকান গেলাম কিন্তু কাছাকাছি আইসকক্রিমের দোকানে গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ। মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো। কেউ যেনো আমার কাধে হাত দিলো। পুরো ভয় পেয়ে গেলাম। পিছনে ঘুরে দেখি আরাভ।
.
আমি- আপনি এখানে আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
আরাভ- কাউকে না বলে বাইরে এসেছো কেনো?
আমি- আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছিলো। তাই আসলাম। কিন্তু এসে দেখি দোকান বন্ধ।
আরাভ- ও আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি- মি. আরাভ চলেন।
আরাভ- কোথায়?
আমি- একটু সামনে আরেকটা দোকান আছে।
আরাভ- ওহ চলো।
.
এই বলে আমি আর আরাভ হাটতে ধরলাম। আমার একটা বদ অভ্যাস আছে। বাইরে হাটলে পাশে যদি কেউ থাকে তাহলে হাত না ধরলে শান্ত পাই না। তাই কিছু না ভেবেই আমি আরাভের হাতটা ধরে ফেললাম। ও কিছুটা অপ্রস্তুত ছিলো। কিন্তু কিছু বললো না। কিন্তু মনে মনে ভাবছিলো, “পিচ্চিটার মনে এতো সাহস কিভাবে হলো?” দোকানে যেতে দোকান পার হতে হবে। তাই আমি আর ও রাস্তা পার হবো। এমন সময় আরাভের ফোনে একটা কল আসলো। দরকারি কল। তাই ও কলটা ধরলো। ও আমাকে একটু দাড়াতে বললো। আমি ভাবলাম দাড়িয়ে কি করবো? এই ভেবে আমি পার হয়ে দোকানটায় গেলাম।
.
আমি- আংকেল ৮টা কোণ আইসক্রিম দেন।
আংকেল- আচ্ছা।
.
পাশে কয়েকটা ছেলে দাড়িয়ে ছিলো।
একজন- আপু এতো ঠান্ডা কেনো আমাদেরও খাওয়াও।
.
বুঝে গেলাম, ছেলেগুলো বাজে তাই কোনো কথা বললাম না। আংকেলকে ৫০০ টাকার নোট দিলাম। উনি খুচরা দিতে লাগলো।
আবার একজন কথা বলে উঠলো- কি আপু? খাওয়াবেন না নাকি? আমাদেরও তো খেতে ইচ্ছে করে।
হঠাৎ আরাভ এলো আর কথাটা ওর কানে গেলো….
আরাভ- কেনো মা খাওয়ায় না?
ছেলেগুলোর একজন- আপনার লাগছে কই?
আরাভ- ও আমার বউ। আর মেয়ে দেখলে বাদরামি আসে তাই না? এক থাপ্পর দিবো বাপ বাপ করবা। মাকেও এমন লুলামি কথা বলো নাকি? হা মেয়েদের রিস্পেক্ট করো। বদৌলতে রিস্পেক্ট পাবে।
ওরা- সরি ভাইয়া। সরি আপু।
.
আমি খুচরা টাকাটা নিয়ে আরাভকে টানতে টানতে নিয়ে গেলাম। কারণ ওর যা রাগ থাপ্পর দিতেও পারে।
রাস্তায় পুরো আরাভ রেগে ছিলো। আমি বুঝে গেছি ও আমার উপর রাগ করছে। তাই কিছু বললাম না । বাড়িতে যায়ে আইসক্রিমটা ফ্রিজে রেখে রুমে আসলাম। ও রুমে ঢুকতেই…
আরাভ- কি মনে করো নিজেকে? বললাম না একটু থামো আমি আসছি। এতো জেদ কেনো হা? নাকি ছেলেগুলোকে তোমারো ভালো লাগছে। এরকম কথা শুনতে ভালো লাগে নাকি?
আমি- আপনি কিন্তু বেশি বলছেন।
আরাভ- কি বেশি হা?
আমি- চুপ করুন আপনি। নিজে খুব ভালো। শোধ তুলতে বিয়ে করছে আরো বড় কথা।
.
আরাভ আরো রেগে গেলো এ কথা শুনে আমাকে টান দিয়ে আবার দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। ওর রাগ আবার উঠছে। চোখ দুটো কিছুটা লাল হয়ে গেছে। বুঝতেই পারছি রেগে।
আরাভ- কি বললা ? আমি শোধ তুলতে বিয়ে করছি?
আমি- তা নয় তো কি ২ বার দেখাতে তো খালি ঝগড়াই হইছে এইজন্যই তো।
আরাভ- চুপ একদম চুপ কে বলছে দুইবার দেখা হইছে? আমাদের আরো একবার দেখা হইছে। তুমি না জানলেও আমি জানি।
আমি- এ্যা।
আরাভ- কেনো গেছিলা? আমি না বললাম থামতে।
আমি- ভাবলাম। নিজেই কিনে নেই তাই আরকি।
আরাভ- বেশি পাকামি এইটুকু মেয়ের।
আমি- আমি তো এইটুকু না। এই যে ৫” ৫ ।
আরাভ- আমি ৫”১০ সো? আমার কাছে এইটুকুই।
আমি- নিজে লম্বা বলে কথা শুনান।
আরাভ- কথা সেটা না। কথা হলো।
আমি- চুপপপপ। এটাই কথা। এমনি তো কিউট। রাগলে এতো ওয়াইলড ক্যাট হন কেনো?
আরাভ- হুহ।
আমি- মি. আরাভ একটা সত্যি কথা বলবো?
আরাভ- হুম।
আমি- আপনাকে রাগলে সেই লাগে একটা পিক তুলি দেখি ছাড়েন তো।
আরাভ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এই অবস্থায় কেউ এমন কথা বলবে বলে ওর জানা ছিলো না। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তবুও ছেড়ে দিলো আমাকে। আমি গিয়েই ফোন নিয়ে ওর একটা পিক তুলে নিলাম।
আমি- এই দেখেন সুন্দর লাগছে না? আমি প্রেয়সিকে দেখায় আসি আচ্ছা টাটা।
.
এই বলে আমি তাড়াতাড়ি রুম ছেড়ে চলে গেলাম। আসলে ভয় পেয়েই পালাইছি। এটা আরাভ জানেই না। এই ভেবে হাসতে হাসতে পালালাম।
.
চলবে…..

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র(০৮)

0
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা'র(০৮)
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা'র(০৮)

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র(০৮)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

ক্যাম্পাস থেকে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়েছিল নীলিমা। পাখির ঢানা’র মত’ই দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে ছিল। পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠে তখন’ই। কাছে আনতে আনতে’ই সেটা কেটে যায় কল। কে কল দিয়েছে সেটা না দেখে’ই ফোনটা রাখতে যাচ্ছিল নীলিমা।বেজে উঠে আবারো কল। এবার ছো মারা’র ন্যায় কলটা রিসিভ করে কানে ধরে নীলিমা। ওপাশ থেকে নীলিমা’র খালা’র স্বর শুনা যাচ্ছে। ধীর গলায় সালাম দেয় নীলিমা। — আসসালামু আলাইকুম। — ওয়ালাইকুম আসসালাম। — কে নীলিমা? — হ্যাঁ,(গম্ভীর স্বরে) — বাড়িতে কথা বলছিলে আজকে? — নাহ!(গম্ভীর স্বরে) — তোর বাবা এসব কি শুরু করেছে? আর কত! আর কত কথা শুনতে হবে আমাকে? তোর বাপে’র জন্য এখন তো মনে হচ্ছে শ্বশুর বাড়িতে মুখ’ই দেখাতে পারবো না… — কি হয়েছে? — গতকাল বিকেলে আমার শ্বশুর বাজারে বসেছিল। তোর বাপ তখন নেশায় বিভোর হয়ে হেলেদুলে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে তোর বাপ ঐ মহিলা’র উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। তখন বাজার ভর্তি মানুষের সামনে ঐ মহিলা তোর বাপকে তার পায়েক্যাম্পাস থেকে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়েছিল নীলিমা। পাখির ঢানা’র মত’ই দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে ছিল। পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠে তখন’ই।র জুতা দিয়ে পিটাইছে। আমার শ্বশুর রেগে গিয়েছিল এই ভেবে একটা মহিলা, যে কি কিনা বাজারের বেশ্যা নামে পরিচিত সে কিভাবে তোর বাপের গায়ে হাত তুলে। তাই প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন ওনি। সেখান থেকে নিজেই লজ্জা পেয়ে আসে। বাজারের মানুষজন তোর বাবা’র কুকৃর্তি’র খবর জানিয়ে দেয়। শুন! একটা কথা বলি। বাপরে তো এ জন্মে আর ভালো করতে পারলি’ই না। তাই বলি কি লেখাপড়া যেটুকু করছিস করছিস’ই। এইবার শহরে কোন পোলা ধইরা বিয়ে বসে পর। না হয় গ্রামে এসে বাপ বেটি তিনজনে মিলে বিষ খেয়ে মরে যা। মা’রে তো আগেই খাইছস! — আচ্ছা, খালা! রাখছি… ফোন কান থেকে নামিয়ে ছুঁড়ে ফেলে বিছানায়। তারপর বালিশে মুখ ঢুকিয়ে গুমড়ে কেঁদে উঠে নীলিমা। ‘বাবা! এ তুমি কি করলা? আমার কথা নাইবা ভাবলা। কিন্তু লিমা! ওর কি হবে? ওর ভবিষ্যতের কথা কি করে একটা বারের জন্য ভাবলে না। কেন বাবা? কেন এতটা স্বার্থপর হয়ে গেলে তুমি!’ ফুপিয়ে কাঁদছিল আর বিলাপ করে কথাগুলো বলছিল নীলিমা। দরজা’য় ঠকঠক আওয়াজ হয়। দ্রুত চোখের জল মুছে নিয়ে দরজা’র দিকে এগিয়ে যায় নীলিমা। ‘আসসালামু আলাইকুম, মেম! বাহিরে দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে আসুন।’ সালামের জবাব দিয়ে স্মিতহাস্যে রুমে আসে প্রিন্সিপাল মেম। — তারপর! কেমন চলছে পড়াশুনা? পরীক্ষা কেমন হচ্ছে। — আলহামদুলিল্লাহ মেম! ভালো’ই… — পরীক্ষা’য় কিন্তু 1st class চাই…! — ইনশাআল্লাহ মেম! — আচ্ছা, টেবিলে খাবার দিয়েছে। নিচে আসো। — জ্বী, মিম! আসছি… — আর হ্যাঁ! কোন কিছু’র দরকার পরলে অবশ্যই আমাকে জানাবে। — জ্বী, মেম! — ওকে, আসো তবে… — আচ্ছা… প্রিন্সিপাল মেম চলে গেলে ওয়াশরুমে যায় নীলিমা। জামাকাপড় চেঞ্জ করে চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে নিচে নামে নীলিমা। খাবার টেবিলে পূর্ব থেকে’ই শুভ্র বসে। শুভ্র’কে দেখে চেয়ার টেনে বসতে বসতে নীলিমা’র প্রশ্ন, মেম কোথায়! মেম’কে যে দেখছি না? খাবার খেতে খেতে শুভ্র’র জবাব, — মেম ভার্সিটি থেকে লাঞ্চ করে আসছে। তাই আর খেতে চাচ্ছে না… — ওহ! — তারপর? কেমন চলছে পরীক্ষা? — আলহামদুলিল্লাহ! ভালো… — হতে’ই হবে… — (নিশ্চুপ) — আচ্ছা, তোমার সেন্টার কোথায় যেন পরেছে? — মহিলা কলেজ। — ওহ, আচ্ছা! — (নিশ্চুপ) — আচ্ছা, কাল কি আমরা কোথাও ঘুরতে যেতে পারি? — পরীক্ষা আছে তো! — কয়টায় শেষ হবে পরীক্ষা? — বিকেল ৫টায়। — সমস্যা কোথায়? তখন’ই না হয় আমরা ঘুরে আসবো! — কিন্তু মেম বাসা’য়…(….)…??? — আচ্ছা, এককাজ করো! — জ্বী… — তুমি কালকে পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি বাসা’য় চলে আসো। — এই না বললেন ঘুরতে যাবেন? — যাবো তো! — আমরা যাবো রাতের শহর দেখতে! — মেম যদি কিছু বলে? — সে চিন্তা তোমার করতে হবে না। আমি মেম’কে ম্যানেজ করবো। আর এমনিতেও কিচ্ছু বলবে না। দেখে নিও… — তাই যেন হয়…

 

গল্পটা_নিশ্চুপ_বালিকা’র(০৭)

0
golpota nish chop balikar
golpota nish chop balikar

গল্পটা_নিশ্চুপ_বালিকা’র(০৭)

golpota nish chop balikar
 

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

ঘড়িতে সময় রাত্রি ১১টা বেজে ৩৭মিনিট। খাওয়া দাওয়া শেষ হয়েছে সেই সাড়ে ১০টার দিকে। জায়গাটা নতুন। হয়তো এ কারণেই ভালো লাগছিল না নীলিমা’র। কিছুক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ ছটফট করে বেরিয়ে পড়ে তাই ছাদের উদ্দেশ্য।
ছাদে উঠে থমকে দাঁড়ায় নীলিমা। ছাদের একপাশে দুরের ল্যাম্পপোস্টের আলোর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ শুভ্র দাঁড়িয়ে।
চলে যাচ্ছিল নীলিমা। পিছু ডাকে শুভ্র। পূর্বের ন্যায় একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পিছু না ফিরেই প্রশ্ন করে, চলে যাচ্ছেন?!
আমতাআমতা স্বরে নীলিমা’র জবাব, জ্বী। না। মানে। আপনি। আসলে..(…)..?
ফিরে তাকায় শুভ্র। ধীর পায়ে দুর থেকে কাছে চলে আসে নীলিমা’র।

— কেন? কোথাও কি এমন লেখা আছে
নাকি যেখানে আমি থাকবো সেখানে
আপনি থাকতে পারবেন না?
— না মানে আসলে…
— হ্যা, বলুন…!
— আমি কি ছাদে কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারি?
— আবারো! আচ্ছা এটা কি ধরনের প্রশ্ন
বলুন তো?!
— না মানে আপনার যদি কোন আপত্তি
থাকে। তাই আর কি….
— (নিশ্চুপ)
— মনে হচ্ছে আপনার আপত্তি আছে…
— হ্যাঁ, আপত্তি আছে আমার। ঘোর
আপত্তি। আপনি যান! দয়া করে আপনি
রুমে যান! ছাদে আপনার জায়গা নেই
কোন। কেননা এই ছাদের পুরো’টাই
এখন আমার দখলে।

পূর্বের দাঁড়ানো স্থানে ফিরে যায় শুভ্র। তাকে অনুসরন করে ভীরু পায়ে তার ঠিক পাশেই এসে দাঁড়ায় নীলিমা। নিরবতা। কিছুক্ষণ ঘোর নিরবতা বিরাজ করে দু’জনের মাঝে।
কিছু একটা বলতে গিয়েও বার বার থেমে যাচ্ছে নীলিমা। আসলে এই মুহূর্তে সে কি বলবে আর ঠিক কি বা বলা উচিৎ সেটাই বুঝতে পারছে না সে।
নীলিমা’র অগোচরে আড়চোখে নীলিমা’কে একবার দেখে নিয়ে আবারো মূর্তির ন্যায় দুরের রাস্তায় জ্বলে থাকা ল্যাম্পপোস্টের দিকে তাকিয়ে শুভ্র।
শুভ্র’র সে দৃষ্টি অনুসরন করে নীলিমা’ও তাকায় ল্যাম্পপোস্টের দিকে।
অকস্মাৎ শুভ্র’র কিছু বুঝে উঠা’র আগেই আবৃতি করতে শুরু করে-

তোমার শহরে লাখো মানুষের
আনাগোনা।
প্রতিদিন শত শত মানুষ
তোমার শহরে যাচ্ছে;
কেউ বেড়াতে, কেউবা কাজের তাগিদে।
খবরের কাগজেও প্রায়’ই দেখি সেই শহরের নাম,
যে জনবহুল শহরে তোমার হাত ধরে একদিন আমি হেঁটেছিলাম।
সহস্র ভীড় উপেক্ষা করে-
অজস্র মিনারে, সৌধে, রাজপথ, অলিগলি, বিলাসবহুল রেস্তোরায়, রমনার বটমূলে ঘুরে আমায় নিয়ে সেদিন’টি তুমি কাটিয়েছিলে;
অনর্গল কথা বলে,
হেসে হাসিয়ে পথ হেটেছিলে।
দীর্ঘ আঙ্গুল উঁচিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয়ের সাথে আমায় পরিচয় করাচ্ছিলে।
আর আমি?!!!
সেসব দেখার ছলে তোমাকেই দেখছিলাম।
পায়ের আঙ্গুল ঘেষে ইয়া বড় বড় সব গাড়িঘোড়া,
দুর্দান্ত গোধূলী ছিল আমাদের উষ্ণ কাঁধ ঘেষে।
গাড়িচাপা পড়ব ভেবে হ্যাচকা টানে
সামলাচ্ছিলে ভ্যাবাচ্যাকা এই আমাকে।
অলস আমি, কিছুদূর হেঁটেই ক্লান্ত।
সন্ধ্যে হয়ে গেছে, ঘরে ফিরতে চাই।
সেদিন আসবার কালে পরম আদরে
কাছে টেনে এই আমার চোখে চোখ রেখে অপলক তাকিয়ে ছিলে,
নাকে, মুখে, গালে, কপালে ভালোবাসার এক উষ্ণ পরশ এঁকে দিয়েছিলে।

জানতাম সইবেনা;
কোনকালে এত সুখ সয় নি আমার।
যে শহর তোমার পথের ভাগ দিয়েছিল এই আগন্তুককে,
সে-ই পথ ভাগ করে দিল তোমার আমার।
কত অবলীলায় আজ তুমি
সেই পথে হাঁটো অন্য ছায়ার সঙ্গে,
অন্য আঙুল ধরে!
কত অনায়াসে হেসে উড়িয়ে দিয়েছ স্মৃতির ফানুস!
পথক্লান্ত আমি কখন ঘোরের মধ্যে ফিরেছি এখানে,
নিজেই জানি না।
তবু আজও……
তোমার শহরের নাম
অথবা কোন জনসমুদ্রে ঢাকা রাস্তার ছবি আমাকে থামায়;
সেদিনের সেই পড়ন্ত বিকেলে ফেলে আসা
আমাদের একমাত্র জীবন্ত অধ্যায় আমাকে আজো কাঁদায়।

সেই কখন থেকে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় নীলিমা’র দিকে তাকিয়ে শুভ্র। সেদিকে দৃষ্টি নেই নীলিমা’র। নীলিমা’র দৃষ্টি দুর বহুদুরে।আবৃতি শেষেও মিনিট দুয়েক চুপচাপ পূর্বের ন্যায় একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল নীলিমা। তারপর শুভ্র’র দিকে না তাকিয়েই একটা সময় রুমে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। পিছু ডেকে বলে উঠে শুভ্র-

‘কত যে ছবি জমা থাকে মনে কেই বা তার খবর রাখে…’

ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে পূর্ব স্থানে গিয়ে দাঁড়ায় নীলিমা। পাশাপাশি একই ভঙ্গিতে গম্ভীর দৃষ্টিতে দুরের ল্যাম্পপোস্টের দিকে তাকিয়ে শুভ্র’ও। আর সেদিকে তাকিয়েই শুরু হয় দুজনের কাব্য কথন। শুরু’টা শুভ্র’ই করে…

— বালিকা তোমার মনের মাঝে
কেন আজি শ্রাবণ ব্যথা
সরিয়ে তারে শুনাও আজি
বসন্তের’ই ফাগুন কথা।
— যে গেছে সে কি আসবে ফিরে,
চোখের জলে স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না…
— জল ভরা মেঘে
যদিও শ্রাবন অবিরত,
তবুও বসন্ত বয়ে চলে চুপিসারে
ফল্গুধারার মত……
— তুমি চলে গেলে,
বসন্তের ছোঁয়া মুছে গেছে
জীবন থেকে।
বাইরে আকাশে
আজও শিমুল পলাশ রঙ সাজায়,
মন মরুতে চর জেগেছে
শ্রাবন রাতে ভিঁজিয়ে যায়।
তোমাকে ছুঁয়ে থাকা স্বপ্নগুলো
আজও আমায় গুমরে কাঁদায়,
এখন জেনেছি আমি
সে আর আসে না ফিরে
যে চলে যায়।
— বসন্ত চিরকাল আসে
আজও এসেছে।
মনের জানালা খুলে দ‍্যাখো
তার ছোঁয়া পাবে।
আমাদের সৌভাগ্য
বসন্ত আমাদের দরজায় আসে,
আমাদের তার দরজায় যেতে হয় না।
— আমার দরজায় আর আসে না …
— আশাহত হতে নেই।
একটু পরে কি হবে,
তুমি আমি কেউ জানিনা!
আশায় তো জীবন, তাই না?

‘হ্যাঁ, সে আশাতে’ই তো বেঁচে থাকা।’
একটা বড়সড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নীলিমা।
পাশ থেকে শুভ্র’র জবাব, তারপর! রাত্রি তো অনেক হলো। রুমে যাবেন না?
শান্ত গলায় নীলিমা’র জবাব, হ্যাঁ! চলুন…

দ্রুতপায়ে ছাদ ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়ায় নীলিমা। তাকে অনুসরন করে শুভ্রও যাচ্ছে নিজ রুমে….

#

ভালোবাসার বন্ধন

0

ভালোবাসার বন্ধন

  সাহরিয়ার শেখ সাব্বির

এ কোন মায়ায় তুমি জড়ালে আমায়,

দূরে যেতে চাইলেও পারি না ভুলে থাকতে তোমায়।

ভালোবাসার মায়াজালে আবদ্ধ আমি,

আর এই জগতের সেরা সৌন্দর্য্য তুমি।

কাছে টেনে ভালোবাসায় ভরিয়ে দাও আমায়,

ভালোবাসি একটু বেশি আমি যে তোমায়।

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র(০৬)

0
golpota nishchop balikar
golpota nishchop balikar

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র(০৬)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

পরদিন জিনিসপত্র গুছিয়ে প্রস্তুত নীলিমা আন্টির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আন্টি’র কোলের ঐ ছোট্ট বাচ্চা’র কপালে চুমু খেয়ে পাঁচ বছরের ছোট্ট সিয়ামের গালটা টেনে দেয়। — তারপর! ভাইয়া মনে থাকবে তো কি বলেছি আমি? — কি বলেছো?(বোকার মতো) — মন দিয়ে পড়াশুনা করবা। খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করবা আর দুষ্টুমি করবা না, মনে থাকবে? — হ্যাঁ, মনে থাকবে। — এইতো গুড বয়! ঘড়িতে একনজর তাকিয়ে নীলিমা ফিরে তাকায় আন্টির দিকে। — আংকেল-আন্টি! মাগরিবের আজান দিয়ে দিবে। আমি আসি তাহলে। — আচ্ছা, মা যাও! ঐখানে পৌঁছে একটা কল দিও।(আন্টি) — আচ্ছা, সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখন আর ওকে(কোলের শিশু) নিয়ে বাহিরে এসো না তুমি। আমি এগুলো(জিনিসপত্র) গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসি।(আংকেল) — আচ্ছা, ঠিক আছে! নীলিমা মা! ভার্সিটি ছুটি দিলেই এসো কিন্তু… — ঠিক আছে, আসি! আসসালামু আলাইকুম।(নীলিমা) — ওয়ালাইকুম আসসালাম।(আন্টি) বইয়ের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে নীলিমা। আরো একটা বিশালাকার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নামে মন্তু আংকেল। রেখে আসে গাড়িতে। ছুটে এসে নীলিমা’র হাতের ব্যাগটাও নিয়ে যায়। গাড়িতে রাখে। ততক্ষণে নীলিমা সেখানে হাজির হয়। দোতলা’র জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকা আন্টি’র দিকে একবার তাকিয়ে আংকেলের দিকে ফিরে তাকায়। — আসি আংকেল। — ঠিক আছে। আর এটা রাখো। (১০০০টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে) — আরে না! কি করছেন আংকেল! আমার টাকা লাগবে না। টাকা আছে! — তুমি না চিপস আর ঝালমুড়ি খুউব পছন্দ করো?! এটা তার’ই জন্য দিলাম। বিকেলে যখন ঝালমুড়ি ওয়ালা আসবে। তখন কিনে খেও। না চাইতেও টাকা’র নোট’টা হাতে ধরিয়ে দেয় মন্তু আংকেল। নীলিমা সালাম দিয়ে বিদায় নেয়। গাড়িয়ে গিয়ে বসে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। চেনা মানুষজন আর চেনা জায়গা রেখে নীলিমা যাচ্ছে অচেনা গন্তব্যে। আর তারই কল্পনা’য় কিছুক্ষণের জন্য বিভোড় হয়ে যায় নীলিমা। “মা জননী নামেন! আইয়্যা পরছি।” মধ্য বয়স্ক ড্রাইভারের ডাকে ঘোর কাটে নীলিমা’র! একপলক বাহিরে তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় ড্রাইভারের দিকে। জবাব দেয়, ‘জ্বী, আংকেল! নামছি…’ ব্যাগ হাতে নামতে যাচ্ছিল নীলিমা। পাশ থেকে ড্রাইভারের জবাব, ব্যাগ রাখেন মা! আপনি ভিতরে যান। এসব আমি নিয়া আইতাছি… হাসোজ্জ্বল মুখে নীলিমা’র জবাব, সমস্যা নেই আংকেল! আমি নিতে পারবো এটা। আপনি না হয় ঐ ব্যাগটা নেন। জবাব আসে, ঠিক আছে মা! নীলিমা বইয়ের ব্যাগ হাতে নেমে পরে। গেইট পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। যতটা সহজ ভাবছিল আসলে ঠিক ততটা সহজ ছিল না কাজটা। বড্ড ভারী ছিল ব্যাগটা। দরজা অবধি পৌঁছতে নীলিমা রীতিমত হাফিয়ে গেছে। ততক্ষণে ড্রাইভার ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেছে। ‘যাই! এসেই তো পরেছি। আরেকটু…’ মনে মনে কথাটা বলে যেই না নীলিমা রুমের ভেতরের দিকে মোড় নিচ্ছিল ওমনি কারো সাথে ধাক্কা লাগে। নীলিমা হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল। ধরে ফেলে কেউ একজন। ‘ড্রাইভার আর দাড়োয়ান ছিল তো! আপনাকে এসব কে আনতে বলেছে?’ বন্ধ চোখ খুলে তাকায় নীলিমা! শুভ্র’কে দেখে চোখ দুটো গোল মার্বেলের মতো হয়ে যায় ও’র। বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে শুভ্র’র দিকে। শুভ্র ছেড়ে দেয় নীলিমা’কে। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া লোকটাকে ডাক দেয়। ‘চাচা! ব্যাগটা উপরে ওনার রুমে রেখে আসুন…’ জ্বী, বাবা! ব্যাগ হাতে বাড়ির কাজের লোকটা চলে যায় বিপরীত দিকে। ঘোর কাটে নীলিমা’র। আআআপনি প্রিন্সিপাল মেমের….(…)…??? পুরো কথা বলতে পারেনি নীলিমা। নিচে আসে স্বয়ং প্রিন্সিপাল মেম! “নীলিমা এসে গেছো?” — আসসালামু আলাইকুম মেম! — ওয়ালাইকুম আসসালাম। আসতে কোন অসুবিধে হয়নি তো?! — না, মেম! কোন অসুবিধে হয়নি। — আচ্ছা! ঠিক আছে। রুমে গিয়ে ফ্রেস হও। আর তুমি? তুমি দাঁড়িয়ে আছো যে? এই যে! কি বলছি কথা কি কানে যায় নি? — জ্বী, মেম! যাচ্ছি… নীলিমা’র দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে সে স্থান পরিত্যাগ করে শুভ্র…. রাত্রে খাবার টেবিলে খাবার পরিবেশন করছিল কাজের মহিলাটি। চেয়ার টেনে পাশে এসে বসে প্রিন্সিপাল মেম। নীলিমা তখন উপরে দাঁড়িয়ে। মেম সেদিকে লক্ষ্য করে ডাক দেয় নীলিমা’কে। সে কি! দাঁড়িয়ে কেন তুমি? আসো… ভীরু পায়ে নিচে নেমে আসে নীলিমা। সামনের ঐ চেয়ার টেনে বসে। হাসোজ্জল মুখে মেম এর জবাব, ভয় পাচ্ছো? বোবা চাহনীতে মেম-এর দিকে তাকিয়ে নীলিমা। আবারো হাসোজ্জল মুখে মেম-এর জবাব, লজ্জা বলো আর ভয় বলো সবকিছুকে দুরে সরিয়ে রাখো। আমারো মেয়ে আছে। তোমার মতই। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করছে। আর যেটা বলছিলাম! এটা তোমার নিজের বাড়ির মতই। যখন যা লাগবে নিঃসঙ্কোচে বলবে আমাকে। মনে থাকবে? নীলিমার ছোট্ট জবাব, ‘জ্বী, মেম!’ হাসিমুখে মেম-এর জবাব, ঠিক আছে! এবার খাওয়া শুরু করো… নীলিমা খাওয়া শুরু করতেই দ্রুতগতি’তে কোথা থেকে যেন ছুটে আসে শুভ্র। তারপর মেম এর পাশের চেয়ারটাই বসে। ইনি আবারো এখানে? তখন না মেম ডাকলো? তবে কি ওনিও এ বাসা’য়…(…)…??? কৌতূহলে নীলিমা কিছুক্ষণ শুভ্র’র দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর একসময় কৌতূহল মেটাতে খাবার খাওয়ার মাঝেই বলে ফেলে, মেম ওনি কি আমার মতই এ বাসায়…(….)…..??? পুরো কথা বলতে পারেনি নীলিমা। বিষম খায় শুভ্র। প্রিন্সিপাল মেম শুভ্র’র দিকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে নীলিমা’র দিকে ফিরে তাকায়। ‘ না নীলিমা! ও আমার ছেলে….!’ ‘ওহ, আচ্ছা ‘ বলে লজ্জানত মুখে নীলিমা ফিরে তাকায় শুভ্র’র দিকে। হুম! খাবারের সময় কথা বলতে হয় না। খাবার খাও এখন… দ্বিগুন লজ্জায় শুভ্র’র থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে নিজের মাথা নিচু করে তাকায় নীলিমা…

 

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (০৫)

1
golpota nishchop balikar
golpota nishchop balikar

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (০৫)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

লাইব্রেরীতে বসে পত্রিকা পড়ছিল নীলিমা। হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে শাকিলা। ‘নীলি! প্রিন্সিপাল মেডাম তোকে ডাকছে।’ ‘আমাকে? প্রিন্সিপাল মেম? কেন?’ প্রশ্নগুলো করতে করতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় নীলিমা। নীলিমা’র সাথে শাকিলা’ও উঠে দাঁড়ায়। জবাব দেয়, সেটা তো আমি জানি না। তোকে যেতে বলেছে তাই বললাম। — এখন’ই? — হ্যাঁ, এখন’ই যেতে বলেছে। — ঠিক আছে। আমি আসছি। — হু! ধীর পায়ে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নীলিমা। বুকটা ধুরুধুরু কাঁপছে ওর। ভেবে পাচ্ছে না সে প্রিন্সিপাল মেম হঠাৎ’ই কেন ওকে ডাকবে ওকে! কি হতে পারে এভাবে জরুরী তলবের কারণ? খাতাপত্র ঘাটছিল মেডাম। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ধীর গলায় অনুমতি নেয় নীলিমা। ‘আসতে পারি মেম?’ মাথা তুলে তাকায় প্রিন্সিপাল মেম। হাসোজ্জ্বল মুখে জানায়, ওহ, তুমি! আসো, আসো! কাঁপা শরীরে ভেতরে প্রবেশ করে নীলিমা। মেডামের ঠিক সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ‘আসসালামু আলাইকুম, মেম!’ — ওয়ালাইকুম আসসালাম। দাঁড়িয়ে কেন? চেয়ার আছে। বসো… — না মেম! সমস্যা নেই। — হু! তুমি তো অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী, তাই না? — জ্বী, মেম! — কোন ডিপার্টমেন্টের জানি? — অর্থনীতি! — অর্থনীতি! খুব ভালো একটা সাবজেক্ট। — (নিশ্চুপ) — বাসা কোথায় তোমার? — নরসিংদী! — অনেকদূর! — জ্বী, মেম! — কোথায় উঠেছ? — আপাতত আন্টির বাসায় উঠেছি! — গত ২দিন যাবৎ শুভ্র’র মুখোমুখি হতে তোমায় বেশ কয়েকবার দেখেছি। কোন সমস্যা? — ইয়ে মানে মেম সমস্যা… — মানে আমি বুঝাতে চাচ্ছি তোমার কোন সমস্যা হয়েছে কি? — মেম আমি আসলে ঢাকা শহরে এর আগে একা কখনো আসিনি। এবার’ই প্রথম একা আসলাম। আমার একটা বাসা দরকার ছিল। যেখান থেকে আমি পড়াশুনা আর পাশাপাশি তার খরচটা যোগাতে পারি। শুনেছি শুভ্র ভাইয়া এ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তাই ওনার শরণাপন্ন হয়েছিলাম যদি কোন হেল্প করতে পারে। — এই নাও! এই কাগজে তোমার বর্তমান ঠিকানা আর নাম্বারটা লিখো… — জ্বী, মেম… — (……..) — মেম! (কাগজটা এগিয়ে দিয়ে) — ওকে, তুমি এখন আসতে পারো। — জ্বী, আসসালামু আলাইকুম মেম। নীলিমা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নীলিমা বেরিয়ে যেতেই দরজা’র সামনে এসে দাঁড়ায় শুভ্র। ‘আসতে পারি মেম?’ — হ্যাঁ, আসো! — ……….. — বসো।(চেয়ার দেখিয়ে) — (নিশ্চুপ) — দুপুরে খেয়েছ? — নাহ! — খাওনি কেন? — খাবার আনিনি।(নিচু হয়ে) — এই যে। নাও। কোন কথা ছাড়া’ই দ্রুত খেয়ে নাও। বিরতি শেষ হওয়া’র ১৫মিনিট আছে। (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) —- (চুপচাপ খাওয়া শুরু করে শুভ্র) খাওয়া শেষে উঠে যাওয়া’র সময় পিছন থেকে ডেকে উঠে, এই শুনো! — জ্বী, মেম! — তনিমা নাকি কি যেন নাম মেয়েটা’র? যার জরুরী ভিত্তিতে বাসা’র প্রয়োজন?! — জ্বী, মেম! ওর নাম নীলিমা… — হ্যাঁ, যাই হোক! ওকে বলো কাল থেকে ও আমাদের বাসায় থাকবে। ও যাতে ওর সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে রেডি থাকে। কাল আমার ড্রাইভার যাবে ওকে আনতে। আর তাছাড়া আমি ওকে রাতে কল দেবো। — জ্বী, মেম! — ওকে, এখন তাহলে ক্লাসে যাও। রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ক্লাসে আতিকের পাশে গিয়ে বসে শুভ্র। অজানা কারণে চোখে মুখে ওর মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। প্রশ্ন করে বন্ধু আতিক- ” কিরে! সেই কখন থেকে দেখছি একা একা হাসছিস! ঘটনা কি?” — আমি??? — জ্বী, আপনি! — কখন?(স্মিতহাস্যে) — এখন! — চুপ কর! মন দিয়ে ক্লাস কর। — আচ্ছা, না বললে আর কি… ‘আতিক’ স্যারের লেকচার শুনায় মন দেয়। এদিকে শুভ্র! বেঞ্চের মধ্যে কুনুই ঠেকিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে গভীর ভাবনা’য় মগ্ন হয়ে যায়।

 

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (৪র্থ অংশ)

0
golpota nishchop balikar
golpota nishchop balikar

গল্পটা_নিশ্চুপ_বালিকা’র

(৪র্থ অংশ)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

পরদিন ক্লাসের বিরতি চলছিল। সবাই যখন যে যার মতো বাহিরে চলে যায় নীলিমা তখন বই নিয়ে চুপটি করে বসে। বইয়ের পাতায় চোখ বুলাচ্ছিল নীলিমা। পাশে এসে বসে বান্ধবি শাকিলা। শাকিলা’কে দেখে বইটা বন্ধ করে ফেলে নীলিমা। কিছু বলবি? ইয়ে ফোনের ঐ ছেলেটা কে? সত্যি’ই কি তোর বয়ফ্রেন্ড? জবাবে ক্ষাণিক হাসে নীলিমা। ভ্রু-জোড়া কিঞ্চিৎ বাকা হয়ে যায় শাকিলা’র। আশ্চর্য! হাসির কি বললাম এখানে? – কিছু না। – তো হাসির কারণ কি? – ছাড়তো। তারপর আন্টি কেমন আছে? – নীলি! কথা ঘুরাবি না একদম। – ও আমার প্রাক্তন! – মানে এক্স বয়ফ্রেন্ড? – হু, – ব্রেকআপ হলো কিভাবে? – কারণ জানতে চাস না শাকিলা। ঘৃণায় গা ঘিনঘিন করে এখনো। – এতটা ঘৃণা?! – হ্যাঁ, ঘৃণা করি আমি ওকে। খুব খুউব ঘৃণা করি… – তাহলে এভাবে ওয়ালপেপারে সেট করে রাখার মানে কি? ডিলিট করে দিলেই পারিস। – নাহ, ডিলিট করবো না আমি। – কেন? – ওকে আমি ভুলতে চাই না। সারাজীবন ঘৃণা করে বাঁচতে চাই। ওয়ালপেপারেই থাকবে ও। যতবার দেখবো মনে মনে ঠিক ততবার গালি দেবো। আর এটাই হবে ওর প্রাপ্য। – আমি কি জানতে পারি আসলে ঠিক কি হয়েছিল? – ও একটা প্রতারক শাকিলা। – ………. – ও আমাকেও ভালোবাসতো আবার একইসাথে আমার বান্ধবিকেও আই লাভ ইউ বলতো। – মানে এক সাথে দুইজনের সাথে প্রেম? – হ্যাঁ… – তারপর? – তারপর যখন আমরা দু’বান্ধবি বিষয়টা জানতে পারি তখন পরিকল্পনা করি। হিয়া ওকে দেখা করার জন্য ডাকে। ও আসে। কথা ছিল ও হিয়া’র সাথে দেখা করবে। কিন্তু সেখানে সেদিন আমাদের দুজনকেই দেখতে পায়। – ইন্টারেস্টিং তো! তারপর… – তারপর আর কি… ও আমাদের দু’জনকেই অস্বীকার করে। – মানে??? – মানে ওর স্পষ্ট কথা, ও আমাদের কাউকে চিনে না। – তারপর? – কেটে পড়ে… – পরে কথা হয়নি আর? – নাহ! হিয়া’রও অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। আর আমিও সিম চেঞ্জ করে ফেলি। – সম্পর্কের ইতিটা তবে সেখানেই ঘটে? – হ্যাঁ… – স্যরি, অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেললাম। – শাকিলা! জীবন বহতা নদীর মতো। কারো জন্য থেমে থাকে না। সৃষ্টির অনাদিকাল থেকে চলছে বিরামহীনভাবে। ভালোই আছি। মাঝেমধ্যে মনে হয় কি যেন নেই। তখন ডেল কার্নেগীর কথা মনে হয়। তিনি লিখেছেন, একজন বিশেষ লোকের ভালোবাসা হয়তো তুমি হারিয়ে ফেলতে পারো কিন্তু মন থেকে ভালোবাসা নামক বস্তুটি কখনো হারায় না। সেটা আরেকজনকে খুঁজে নেয়। একজনের প্রতি ভালোবাসা আরেকজনে সঞ্চার হয়ে যায়। জেনে রেখো আরেকজন আছে। তাই নষ্ট হলাম না। ধ্বংস করলাম না নিজেকে। পরদিন প্রতিদিনের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু দেরী করে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয় নীলিমা। প্রথম ক্লাসের বিরতি শেষে সবাই তখন মাঠে আড্ডায় মেতে উঠেছিল। দুর থেকে নীলিমা’কে আসতে দেখে’ই আড্ডার মাঝ থেকে উঠে পড়ে শাকিলা। নীলিমা কাছে আসতেই প্রশ্ন করে, কিরে? এত লেইট করলি যে? মাঠের মাঝেই বসে পরে নীলিমা। নীলিমা’র অনুকরণে নিঃশব্দে শাকিলা’ও বসে পরে পাশে। শাকিলা’র হাতে ছিল কাগজের পাখা। নীলিমা সে পাখা হাতে নিয়ে বাতাস করতে শুরু করে। পাশ থেকে শাকিলা’র প্রশ্ন- ‘কিরে? বাসা পেয়েছিস?’ পাখাটা হাত থেকে পাখা’টা নামিয়ে ফেলে নীলিমা। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জানায়, পাইনিরে। — নীলি! তোকে আমি বলছিলাম শুভ্র ভাইয়া’র সাথে কথা বলতে…! — হাঃ হাঃ বড় ভাই! তোদের ঐ বড় ভাই আজ দু’দিন ধরে নিখোঁজ। — মানে কি? — মানে আর কি? ওনাকে আমি কালকে সারাদিনে একবারো ক্যাম্পাসে দেখিনি। তারপর আজ এই যে এত লেইট হলো ওনার জন্য শুধু। ওনাকে খুঁজতে খুঁজতে এখন আমি ক্লান্ত…. — এত সকালে ওনাকে কেন খুঁজছিস? — কি জন্য আবার? ভাবছিলাম আজকে সকাল সকাল’ই বের হবো। — এখন তো ক্লাসটাও মিস করে ফেললি! — বাদ দে! কয়টা বাজে? — এখন তো ১১টা বেজে ৭মিনিট। ২য় পিরিয়ড শুরু হওয়ার এখনো ৮মিনিট বাকি আছে। (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) — ভাল্লাগছে না! আচ্ছা, রুমে চল… — চল…. একসাথে দুটো ক্লাস শেষ করে তবে’ই বাহিরে আসে নীলিমা। এদিকওদিক তাকিয়ে নীলিমা’র দু’চোখ কেবল শুভ্র’কেই খুঁজছে। কিন্তু কোথাও পায়নি। বিষণ্ন মনে বকুলতলায় বসেছিল নীলিমা। কোথা থেকে যেন ছুটে আসে শাকিলা। হাপাতে হাপাতে জানায়, শুভ্র ভাইকে প্রিন্সিপাল মেডামের রুমে দেখে এসেছি। তুই তাড়াতাড়ি অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়া….! বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় নীলিমা। প্রিন্সিপালের রুমে? — হ্যাঁ! ঐখানে বসে কিছু একটা খাচ্ছে দেখলাম! — খাচ্ছে? তাও প্রিন্সিপালের রুমে? — সেটাই তো দেখলাম। — আচ্ছা, ধন্যবাদ! তুই তাহলে এখন যা…. — ওকে! বাই… — আল্লাহ হাফেজ। বান্ধবীকে বিদায় দিয়ে নীলিমা অফিসের সামনে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। মিনিট দশেক পর বেরিয়ে আসে শুভ্র। ডানে তাকিয়ে নীলিমা’কে দেখে বিপরীত দিকে মোড় নেয় শুভ্র। ঐপাশের গেইট দিয়ে বেরিয়ে পরে বাহিরে। দ্রুত পায়ে পিছন দিয়ে ছুটতে থাকতে নীলিমা। সেটা দেখে শুভ্র আরো দ্রুত হাটা শুরু করে। ব্যর্থ নীলিমা এবার পেছন থেকে ডাক দেয়, ভাইয়া…! ডাক শুনে গম্ভীর মুখে পেছনে ফিরে তাকায় শুভ্র। ছুটতে ছুটতে কাছে যায় নীলিমা। সালাম দেয়। — আসসালামু আলাইকুম! — ওয়ালাইকুম আসসালাম। — আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে আমি হয়রান হয়ে গেছি ভাইয়া। — কেন? — ঐ যে মনে নেই আপনার? আপনি বলছিলেন আমাকে বাসা খুঁজে দিবেন! — হ্যাঁ, মনে পড়ে’ছে! — তো যাবেন এখন? — স্যরি, নীলিমা! যেতে পারবো না আমি। — যেতে পারবেন না মানে? — মানে আমার কাজ আছে। আপনি যান! আর বাসা খুঁজা এটা তো কোন কঠিন কাজ নয়। — ওহ, আচ্ছা! — হু, আসি আমি। শুভ্র চলে যায়। বিষণ্ন মনে নীলিমা কতক্ষণ সে স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে তারপর সামনের দিকে পা বাড়ায়।

 

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (৩য় অংশ)

0
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা'র (৩য় অংশ)
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা'র (৩য় অংশ)

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র

(৩য় অংশ)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

পুরো এলাকা ঘুরে ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে ফিরে আসে ওরা। কাঙ্খিত বাসা খুঁজে পায়নি নীলিমা। শুভ্র ফিরে তাকায় নীলিমা’র পানে। দেখতে দেখতে অনেকটা সময় বয়ে গেল। লাঞ্চের টাইমও পেরিয়ে যাচ্ছে। নতুন জায়গা। রাস্তাঘাটও তেমন চিনেন না। বাসায় আপনার জন্য চিন্তা করবে সবাই। আপনি তাহলে আজ যান। ইনশাআল্লাহ! আগামীকাল আবারো আমরা বের হবো। মলিন মুখে শুকনো হাসির রেখা ফুটে উঠে নীলিমা’র। পুরোটা দিন আমার সাথে থেকে আমার কাজে সাহায্য করেছেন। ধন্যবাদ। আসি। আসসালামু আলাইকুম। সালাম দিয়ে পায়ে পায়ে মন্থর গতিতে সামনের দিকে এগুচ্ছিল নীলিমা। অকস্মাৎ পিছু হটে। ফিরে আসে পূর্বের জায়গায়। শুভ্র তখনো সে স্থানে দাঁড়িয়ে। নীলিমা’কে দেখে প্রশ্ন করে, কিছু বলবেন? নীলিমা শুভ্র’র হাত ঘড়িটির দিকে ইঙ্গিত করে। প্রশ্ন করে, কয়টা বাজে? হালকা হাসিতে শুভ্র’র জবাব, এইতো! ২টা বেজে ১৭মিনিট। ক্ষাণেক ভেবে নীলিমা’র প্রশ্ন, ঢাকা শহরে একেলা আমার এটাই প্রথম পদার্পণ। যদিও এর আগে বহুবার এসেছি। কিন্তু সেটা একা নয়। আরো ছোট ছিলাম তো। সবসময় আমার হাতটা ধরে কাউকে না কাউকে ধরে রাখতেই হয়েছে। জবাবে কিচ্ছু বলেনি শুভ্র। নীলিমা আবারো বলতে শুরু করে, আসলে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে শহরটা একটু ঘুরে দেখতে। ঘড়ি’র সময় বলছে, সন্ধ্যা হতে এখনো অনেক দেরী। তো যাবেন আমার সাথে? অবশ্য যদি আপনার সমস্যা না হয়। মনের খুশিতে আত্মহারা শুভ্র। তথাপি সে আনন্দ ভেতরে চেপে রাখে। সাড়া দেয় নীলিমা’র ডাকে। একটা রিক্সা ডাকে। রিক্সায় চেপে দুজন রওনা দেয়। দুজনেই নিরব। রিক্সা চলছে তার আপন গতিতে। হঠাৎ ঝাকুনিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যাচ্ছিল নীলিমা। ধরে ফেলে শুভ্র। সোজা হয়ে বসে নীলিমা। শুভ্র তখনো নীলিমা’র হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। স্তব্ধ নীলিমা। মুঠোবন্দি হাতটা মৃদু কাঁপছে ওর। ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা চলছে কিন্তু পারছে না। একটা সময় ঘোর কাটে শুভ্র’র। ছেড়ে দেয় হাতটা। ক্ষাণেক মাথা চুলকিয়ে ‘স্যরি’ বলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। জবাবে কিচ্ছু বলেনি নীলিমা। মিনিট ক্ষাণেক পর সোজা হয়ে বসে শুভ্র। সামনের দিকে তাকিয়ে নীলিমা। শুভ্র লক্ষ্য করল নীলিমা’র নাকের ডগায় মুক্তোদানা’র ন্যায় জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। শুভ্র’র বড্ড ইচ্ছে হচ্ছিল মাঝের দূরন্তটুকু কমিয়ে নীলিমা’র কাছে যেতে। আলতো করে ওর হাত দু’খানি ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়। তাই অত্যন্ত সংগোপনে মনের ইচ্ছেকে ভিতরেই ধামাচাপা দিয়ে দেয়। ইচ্ছেগুলোকে বুকের ভেতরে ধামাচাপা দিলেও নীলিমা’র সাথে শুভ্র’র চোখাচোখি হয়েছে বেশ কয়েকবার। নীলিমা যখন এদিকওদিক তাকাতো, শুভ্র তখন নীলিমা’র দু’চোখে বিচরণ করতো। আবার কখনো বা ধরা পড়ে যেত। কিছুক্ষণের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছালো ওরা। নদীর পাড়ে কোলাহল মুক্ত একটি জায়গায় গিয়ে বসল। কাটালো স্বপ্নময় একটা দিন। তারপর সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় ফিরলো। পরদিন প্রতিদিনকার ন্যায় নির্ধারিত সেই স্থানে’ই গোল বৈঠকে বসে শুভ্র’র বন্ধু’রা। শুভ্র’র সবচেয়ে কাছের বন্ধু আতিক। আর সেই আতিকের থেকে সবাই ইতোমধ্যে জেনে গেছে চঞ্চল শুভ্র’র হঠাৎ এভাবে বদলে যাবা’র কারণ। তাই তখনকার আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু ছিল ‘শুভ্র…’ আলোচনা’র এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হয় স্বয়ং শুভ্র। ওকে দেখে সবাই চুপসে যায়। আতিক ওর জায়গা থেকে ক্ষাণিকটা সরে জায়গা করে দেয় বসার জন্য। ওখানে বসে’ই সামনে বসে থাকে তাসনিয়ার দিকে দৃষ্টি যায় শুভ্র’র। কি ব্যাপার? তুই হাসছিস যে?! আরে দোস্ত! কই হাসলো ও? ও তো গতকাল থেকেই মুখে তালা লাগিয়েছে। পাশ থেকে রুবেলের জবাব। মুখে রাগের আভা ফুটে উঠে শুভ্র’র। ফিরে তাকায় রুবেলের দিকে। আর কত? আর কত দালালী করবি ওর হয়ে? আর একটা কথা বলতো! তোর এত জ্বলে কেন’রে? বিকৃত স্বরে রুবেলের জবাব, ওরে! আমার কেন জ্বলবে? আমি তো শুধু…. যখন’ই ওরে কিছু বলি তুই ঝাপিয়ে পড়িস আমার উপর। যা নয় তা বলিস। আবার তোর কিছু হলে সবার আগে ও এগিয়ে আসে। ঘটনা কি? মুখ খুলে তাসনিয়া__ — মানে কি শুভ্র? তুই তখন থেকে কিসব উল্টাপাল্টা বকে যাচ্ছিস…?! — উল্টাপাল্টা নয় যা দেখছি তাই বলছি। — তোর দেখার মধ্যে ভুল আছে শুভ্র। আমি শুধু রুবেলের বিপদে নয়, সবার বিপদে ঝাপিয়ে পড়ি। — ওরে বাহ্! তাই নাকি…?! — কেন? কোন কনফিউশন আছে?! — কেন? বললেই কি তুই কনফিউশন দুর করে দিবে নাকি? — তুই শুধু বল কি করতে হবে তোর জন্য? আমি সেটাই করে দিতে রাজি। — বেশী কিছু করতে হবে না। আপাতত ঐ যে লাল ড্রেস পরোয়া মেয়েটা আছে না আমার হয়ে তাকে গিয়ে প্রপোজ করবি। বলবি যে, শুভ্র তোমাকে ভালোবাসে। — মানে কি? (বিস্ময়ে হতবাক তাসনিয়া) — কি? চুপসে গেলি যে? খুব না বললি… — ওয়েট! কোন মেয়েটাকে বলতে হবে?! — ঐ যে লাল ড্রেস, মাথা’য় ওড়না দেয়া… — ও মাই গড! ঐ টুনটুনি পাখিকে! আগে বলবি না! তোরা বস। আমি এখন’ই আসছি… — এই তাসু, যাসনে। মজা করছি আমি…. — হাঃ হাঃ হাঃ (সবাই উচ্চস্বরে) — আল্লাহ! এ তো সত্যি সত্যি চলে গেছে… — যাবে না তো কি করবে? এভাবে কেউ কাউকে পঁচায়? না হয় একটু আমার বিপদে এগিয়েই আসে। তাই বলে…(রুবেল) — চুপ কর রুবেইল্যা! — …… —- উফ! এ আবার না জানি কি করে বসে! মাঠের মধ্যিখানে পত্রিকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে তার উপর গোল করে বসেছে নীলিমা এবং তার ক্লাসমেট’রা। সেখানেই গোল বৈঠকের ফাক দিয়ে তাসনিয়াও বসে পড়ে নীলিমা’র পাশে। মিশুক তাসনিয়া মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পরিচিতি পর্ব সেরে ভাব জমিয়ে ফেলে নীলিমার ক্লাসমেটদের সাথে। বাকি রইল নীলিমা। নীলিমা’র ক্লাসমেট’দের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে তাসনিয়া তাকায় নীলিমার দিকে। ‘বাহ্! খুব সুন্দর তো তোমার ডায়েরী’টা! কোথা থেকে কিনেছ এটা?’ নীলিমা’র সাথে তাসনিয়া’র গল্পের শুরুটা এখান থেকেই। তারপর অনেক অনেক কথা হয়। সেই অনেক কথার ফাঁকে তাসনিয়া মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে নীলিমা’কে ঠিক কিভাবে বলবে শুভ্র’র কথা! মনে মনে আল্লাহ নাম জপে কাঙ্খিত কথাটা বলার জন্য মুখ খুলে তাসনিয়া। আচ্ছা, নীলিমা শুনো… বিনীত ভঙ্গিতে নীলিমা’র জবাব, জ্বী আপু! বলুন… — আসলে তোম….(….)….??? — জ্বী, বলুন… — একমিনিট। (তাসনিয়া’র দৃষ্টি যায় নীলিমা’র ফোনের ওয়ালপেপারের দিকে। এক সুদর্শন যুবকের পিকচার নীলিমা’র ফোনের ওয়ালপেপারে সেট করা। সেটা দেখে থেমে যায় তাসনিয়া।) — …….. — একটা প্রশ্ন করবো নীলিমা? — কেন নয়? অবশ্যই…. — স্ক্রিনের ঐ ব্যক্তি’টি কে? আমি কি জানতে পারি? — (নীলিমা নিশ্চুপ) — বয়ফ্রেন্ড?! — হু…(নিচের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়) — কি করে ভাইয়া? — ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশুনা করে। — কত বছরের রিলেশন? — সাড়ে তিন বছর। — ওহ, আচ্ছা! আমার ক্লাস আছে। আজ তাহলে আসি… — আল-বিদা! মন খারাপ করে শুভ্র’র পাশে গিয়ে বসে তাসনিয়া। ওপাশ থেকে আতিকের প্রশ্ন, কিরে? বলেছিস? কি বলল? নিশ্চয় প্রিন্সিপালের কাছে বিচারের হুমকি দিয়েছে? পাশ থেকে নিপা’র জবাব, আরে ব্যাটা চুপ কর! তুই দেখছি রিলেশন শুরু’র আগেই ভেঙে দিবি…! সুমাইয়ার প্রশ্ন, তাসু! রিপ্লাই কি আসলো? পজিটিভ নাকি নেগেটিভ? কিছুটা কৌতূহলের সাথে রুবেলের জবাব, তারপর তাসু বেবি! কি বললো আমাদের ভাবি সাহেবা? রাগটাগ দেখায়নি তো?! মন খারাপ করে তাসনিয়া’র জবাব, ওই মেয়ে’র বয়ফ্রেন্ড আছে….! কিহ? একসাথে সবাই লাফিয়ে উঠে। চুপচাপ সবার কথা শুনছিল শুভ্র। অকস্মাৎ তাসনিয়া’র এ হেন কথা শুনার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কিছুটা কৌতূহলের সাথে প্রশ্ন করে তাসনিয়া’কে, মানে কি? তুই সত্যি সত্যি ওকে আমার কথা বলে এসেছিস নাকি? অকপটে তাসনিয়া’র জবাব, জ্বী! বলে এসেছি। নিপা’র প্রশ্ন, আসল ঘটনা কী? একটু ঝেড়ে কাশলে হতো না? শুকনো কাশি দিয়ে নড়ে বসে তাসনিয়া। তারপর সবটা খুলে বলে। সব শুনে মাথা নিচু হয়ে যায় শুভ্র’র। বন্ধু-বান্ধব’রা যে যার মতো এ বিষয়কে কেন্দ্র করে হাসাহাসিতে মেতে উঠেছে। তখনো শুভ্র বিষণ্ন মনে নিচের দিকে তাকিয়ে। অজানা কষ্টে ভেতরটা দুমড়ে, মুচড়ে যাচ্ছে ওর। কাঁধে হাত রাখে আতিক। মলিন মুখে সেদিকে ফিরে তাকায় শুভ্র। ‘চল! ওদিকটাই হেটে আসি…’ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় শুভ্র। আতিকের সাথে ক্যান্টিনের দিকে চলে যায়।

 

গল্পটা_নিশ্চুপ বালিকা’র

(৩য় অংশ)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (দ্বিতীয় অংশ)

0
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (দ্বিতীয় অংশ)
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (দ্বিতীয় অংশ)

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র

(দ্বিতীয় অংশ)

রচনা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

বাসা’য় ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে সোফা’য় এলিয়ে দিয়েছিল নীলিমা। রুমে ঢুকে বাসা’র আন্টি। আন্টিকে দেখে সোফায় শুয়া থেকে উঠে বসে নীলিমা। সালাম দেয়। ‘আসসালামু আলাইলুম, আন্টি!’ স্মিতহাস্যে সালামের জবাব দেয় মহিলা’টি। ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। তা কেমন কাটলো মা ভার্সিটির প্রথম দিন….!’ নীলিমা’র জবাব, আলহামদুলিল্লাহ আন্টি! বেশ ভালো… আচ্ছা, তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি চা দিচ্ছি। কথাটি বলেই কিচেনের দিকে পা বাড়ায় আন্টি। বিকেলে বাসার ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলাধূলা করছিল নীলিমা। রুমে এসে উপস্থিত হয় আন্টি। কিছুক্ষণ চুপচাপ বিছানা’র এককোণে বসে থাকার পর মুখ খুলেন তিনি। প্রশ্ন করেন, তারপর?! কি করলে? কিছুই তো জানালে না… ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ায় নীলিমা। অসহায় মুখে আন্টির মুখের দিকে তাকায় সে। আন্টি আবারো বলা শুরু করেন, কথাটা বলতে আমার নিজের কাছেই লজ্জা লাগতেছে কিন্তু কি করবো? আসলে মা আমাদের বাসা’টা তো দেখছো! ছোট্ট একটা বাসা। এই ছোট্ট বাসার মধ্যে তোমার আংকেল আমি, সিয়াম(০৫), আর পিচ্চিকে নিয়ে থাকা’টাই খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে তুমি…(….)….??? নীলিমা নিশ্চুপ। আন্টি আবারো বলতে শুরু করেন, ‘হ্যাঁ, মানলাম তুমি ফ্লোরেই থাকো। কিন্তু এভাবে আর কত দিন?’ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নীলিমা। জ্বী, আন্টি! বুঝতে পারছি। আর এটাও বুঝতে পারছি আপনাদের আমি খুব ঝামেলা’য় ফেলে দিয়েছি। আচ্ছা, দেখি কালকে কলেজে গিয়ে আশেপাশে কোথাও বাসা পাই কি না…! পরদিন ক্যাম্পাসে নিজ ডিপার্টমেন্টের কিছু মেয়েদের সাথে মাঠের মধ্যিখানে বসে নীলিমা। ক্লাসমেট’রা সবাই যেখানে গল্প-গুজব আর হাসি আনন্দে মেতে উঠেছে নীলিমা সেখানে সেই আড্ডা’র মাঝে থেকেও ডায়েরী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। এদিকে শুভ্র? বসে আছে ক্লাসে কিন্তু একটুও মনোযোগ নেই স্যারে’র লেকচারের দিকে। মন পড়ে আছে অন্য কোথাও। ক্লাসে বসেও গভীর ভাবনা’য় মগ্ন শুভ্র।নজর এড়ায় না তাসনিয়া’র। শুভ্র’র থেকে ক্ষাণিকটা দুরে বসে স্যারের লেকচার শুনছিল সে। সেখান থেকে’ই ডাক দেয় শুভ্র’কে। ‘ শুভ্র, এই শুভ্র, শুভ্র…..’ সাড়া নেই শুভ্র’র। দুর থেকে এগিয়ে এসে, পাশে বসে তাসনিয়া। ধাক্কা দেয় শুভ্র’কে। চমকে উঠে পাশে তাকায় শুভ্র। ‘ তুই?’ — জ্বী, আমি! তা সম্রাট শাহজাহান কার কল্পনা’য় বিভোর আপনি? — কিসের কল্পনা?! — ন্যাকা সাজবেন না একদম। আমাকে এটা বলুন যে আপনি বাহিরে কেন তাকাচ্ছিস বার বার? কেউ আছে নাকি? — আশ্চর্য! কে থাকবে? — না মানে রুবেল বলল আপনি নাকি ১ম বর্ষের এক মেয়েকে দেখে ফিদা হয়ে গেছিলেন? — আমরা এখন ক্লাসে আছি তাসনিয়া। তাই দয়া কর। মুখে একটু তালা লাগা। — বলুন না সম্রাট শাহজাহান! মেয়েটি দেখতে কি রকম? — তাসনিয়া তুই চুপ করবি? নাকি… — কি করবেন? মারবেন? বেশ তো! তাই করেন। তারপরও তো আপনি আমার মুখ বন্ধ করতে পারবেন না সম্রাট শাহজাহান! তাসনিয়া’র উঁচু গলা’র কথা স্যারের কান অবধি পৌঁছতে খুব বেশী সময় নেয়নি। রাগান্বিত স্বরে শুভ্র’র দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন স্যার, আমার অর্থনীতি ক্লাসে ইতিহাসের আলোচনা করছে কে? কার এতবড় সাহস? ভদ্র বালকের ন্যায় শুভ্র তাসনিয়া’র দিকে ইঙ্গিত করে। বলে দেয়, ‘স্যার! আমি নয়, তাসনিয়া…’ রাগান্বিত দৃষ্টিতে স্যার তাসনিয়া’র দিকে তাকায়। তাসনিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই স্যারের জবাব, ‘বের হও ক্লাস থেকে। এই মুহূর্তে বের হয়ে যাও আমার ক্লাস থেকে।’ তাসনিয়া চলে যায়। যাওয়া’র আগে শাসিয়ে যায় শুভ্র’কে। ‘বাহিরে আয়! তোর খবর আছে।’ ক্লাস শেষে কাঙ্খিত স্থানে গিয়ে হাজির হয় শুভ্র এবং তার বন্ধু’রা। প্রতিদিনের সেই নির্ধারিত স্থানে গিয়ে বসে। বাঁচাল তাসনিয়া গাল ফুলিয়ে সে স্থানে আগে থেকেই বসে। শুভ্র’কে দেখে ক্ষাণিকটা সরে গিয়ে বসার জন্য জায়গা করে দেয়। সবাই গল্পে মশগুল। শুধু তাসনিয়া’য় চুপচাপ বসে নিচের দিকে তাকিয়ে। ধাক্কা দেয় রুবেল। ‘কি ব্যাপার তাসু বেবি! কি হলো তোমার?’ ক্ষাণিকটা নড়ে বসে তাসনিয়া। এর ছাড়া কিচ্ছু বলেনি। গল্প থামিয়ে ফিরে তাকায় নিপা। ডাক দেয় সে’ও। ‘তাসু?! এই তাসু! কথা বলছিস না কেন? জবাব দেয় না তাসনিয়া। এবার ধাক্কা দেয় শুভ্র। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরে যায় তাসনিয়া। প্রচন্ড রাগে ফুসে উঠে সে। এই তুই আমায় ধাক্কা দিয়েছিস কেন? তোর সাহস কিভাবে হলো আমায় ধাক্কা দেয়ার? মারামারি, কথা কাটাকাটিতে মেতে উঠে শুভ্র এবং তাসনিয়া। চেঁচিয়ে উঠে সুমাইয়া। ঐ মোবাইলের পোকা আতিক্যা! ফোন রাখ, এদের ঝগড়া থামা। ফোনটা আতিকের হাত থেকে কেড়ে নেয় সুমাইয়া। বাধ্য আতিক ঝগড়া থামাতে কাছে যায়। একটা সময় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে নিজ স্থানে। বিরক্তিকর ভঙ্গিতে যে যার মতো কানে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। ঘটনা স্থলে হাজির হয় নীলিমা। ডাক দেয় শুভ্র’কে- আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া। থেমে যায় ঝগড়া। কান থেকে হাত সরিয়ে নেয় বাকিরা। শুভ্র এবং তাসনিয়া’র সাথে বাকিরাও ঘাড় ঘুরিয়ে ডানে তাকায়। নীলিমা’কে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় শুভ্র। সালামের জবাব দেয়। তারপর___ — নীলিমা? কিছু বলবেন?!!! — জ্বী, ভাইয়া! একটু দরকার ছিল। — বলুন… — এখানে না। একটু ঐদিকে প্লিজ… — ঠিক আছে। চলুন। — …………….. — …………… — ভাইয়া… — বলনু! কি হেল্প করতে পারি আমি আপনার জন্য? — আপনি তো এ এলাকার’ই, নাহ? — হু, ঐতো! পাশেই আমার বাসা। কেন? কোন সমস্যা? — সমস্যা বলতে জরুরী ভিত্তি’তে আমার একটা বাসা দরকার। — হোস্টেলে মনে হয় এখনো একটা কি দুটো সিট খালি আছে। আমি কি হোস্টেল সুপারের সাথে কথা বলে দেখবো? — না, না! হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা’টা চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার দরকার একটা ভালো বাসা। যেখান থেকে আমি টিউশন+পড়াশুনা দুটোই চালিয়ে যেতে পারবো। — ঠিক আছে। আমি আপনাকে কালকে জানাচ্ছি। — কালকে নয় ভাইয়া। আজকে… — আজকেই? — হ্যাঁ, আজকেই। আপনি কি আজকে আমাকে এই এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখাতে পারবেন? যদি কোন সমস্যা না হয়! — এখন? — হ্যাঁ… — ঠিক আছে। চলুন। — ………..

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র

(দ্বিতীয় অংশ)

রচনা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র ১ম অংশ

0
নিশ্চুপ বালিকা
গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা'র

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র

১ম অংশ)

নিশ্চুপ বালিকা
 

রচনাঃ- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তির সমস্ত কার্যক্রম শেষে আগত নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের বরণ তথা নবীন বরণের আয়োজন করা হয়। আয়োজন করে উক্ত ভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র’রা। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে একজন করে নেতা থাকবে। আর সেই নেতার নির্দেশনা অনুযায়ী নবীন বরণের সমস্ত কার্য সম্পূর্ণ হবে। আর সে নিয়মানুসারেই প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের নেতা’রা তাদের নিজ নিজ দল নিয়ে ভাগ হয়ে যায়। শুভ্র…! অনার্স চতুর্থ বর্ষের অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টের একজন মেধাবী ছাত্র। স্বীয় মেধা, অমায়িক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের গুনে ভার্সিটির সকল শিক্ষকদের কাছে শুভ্র স্নেহের পাত্র। অন্যদিকে পড়াশুনা’র পাশাপাশি সাংস্কৃতিক নানা কার্যক্রমে নিয়মিত অংশগ্রহন তথা বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদে ভার্সিটির ছোট বড় সকলের কাছে শুভ্র একটি প্রিয় নাম। সর্বোপরি, ভার্সিটির বড় ভাই হিসেবেও শুভ্র বেশ পরিচিত নাম। ভার্সিটির যে কোন সমস্যা সমাধানে ছাত্র-ছাত্রী’রা সবার আগে বড় ভাই তথা শুভ্রর’র কাছে’ই এগিয়ে আসে। আর সেই শুভ্র’ই হলো অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টের প্রধান নেতা। শুভ্র যেহেতু অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টের নেতা তাই ওর কাজ হলো এ বছর অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হওয়া সকল ছাত্র ছাত্রীদের বরণ। আর সে অনুযায়ী’ই একটা সুন্দর সাজানো গোছানো রুমে বরণ চলছিল। বরণের একদম শেষ পর্যায়ে রুমে এসে হাজির হয় নীলিমা। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু দেরীতে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হওয়ায় শ্রেণীকক্ষের পেছনের দরজা দিয়ে একদম পিছনের বেঞ্চে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে সে। নীলিমা! যেন এক ডানাকাটা পরী ভুল করে স্বর্গ ছেড়ে মর্তলোকে নেমে এসেছে। যার রূপ-লাবণ্য প্রতিটি মেয়ের ঈর্ষার কারণ। কিন্তু নীলিমা?!! ওর মধ্যে নেই কোন রূপের গরিমা। ভিষণ সাধাসিধে আর চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে ‘ও’। ওড়নার একাংশ সবসময় ওর মাথা’য় ঘোমটা’কারে দেয়া থাকবে’ই। সবাই যেখানে বরণের আনন্দে মেতে উঠেছে। সহপাঠীদের সাথে হাসি আনন্দ আর সেল্ফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পরেছে। নীলিমা সেখানে একা একটা বেঞ্চে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। যেন সে কোন জায়গায় আছে সেটাই অজানা। হাতে ফুল, ফাইল কিংবা মিষ্টান্ন কিছুই নেই। অনুষ্ঠানেও মন নেই মেয়েটির। নজর এড়ায় না শুভ্র’র। চোখে মুখে রাগের আভা ফুটে উঠে ওর। ভ্রু-জোড়া কিঞ্চিৎ বাকা করে কাছে যায়। কিছুটা রাগী স্বরে ডাক দেয়- ‘ এই মেয়ে! এই…’ পুরো কথা বলতে পারেনি তার আগে’ই মাথা তুলে তাকায় নীলিমা। নীলিমা’র শান্ত-স্নিগ্ধ মায়ামাখা মুখ দেখে চুপসে যায় শুভ্র। সমস্ত রাগ উবে যায় ওর। স্তব্ধ হয়ে গেছে সে। মুখ থেকে কোন কথা’য় সরছে। যেন সে কথা বলা’র শক্তি হারিয়েছে। শুভ্র যখন অনেক’টা ঘোরের মধ্যে ডুবে যায় বন্ধু’রা তখন পাশে এসে দাঁড়ায়। শরীরে কিছুটা ধাক্কার সাথে প্রশ্ন করে, ‘কিরে? চল। বরণ কাজ তো সম্পূর্ণ’ই হলো।’ ঘোর কাটে শুভ্র’র! মৃদু হাসি দিয়ে বন্ধুদের দিকে ফিরে তাকায়। ‘আমাদের আরো একটা নবাগত অতিথি বরণের বাকি রয়ে গেছে। টেবিল থেকে ফুল, ফাইল আর স্কেল, কলম আর মিষ্টান্ন এদিকে এগিয়ে দে তো। বন্ধু আতিক দ্রুত টেবিলের কাছে যায়। আর টেবিল থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসে এগিয়ে দেয় শুভ্র’র দিকে। শুভ্র সেটা এগিয়ে দেয় নীলিমা’র দিকে। আগামী দিনগুলো অনেক অনেক সুন্দর হোক। শুভকামনা নিরন্তর। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় নীলিমা। সম্মানের সহিত সেগুলো গ্রহন করে। তারপর স্মিতহাস্যে জানায়, ধন্যবাদ। ‘কই? এবার তো চল..’ বন্ধু আতিকের দিকে তাকিয়ে শুভ্র’র জবাব, হু! চল…. ক্লাস শেষে সবাই যখন বন্ধু বান্ধবদের সাথে হৈ-হুল্লুর আর আনন্দ উচ্ছ্বাসে মগ্ন, নীলিমা তখন ক্যাম্পাসের অদুরে বকুলতলায় চুপটি করে বসে। ক্লাস রুমের বাহিরে মাঠে দাঁড়িয়ে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে একজোড়া চোখ নীলিমা’কে’ই খুঁজছিল গভীর সংগোপনে। খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত দু’চোখ সেখানেই থেমে যায় যেখানে চুপটি করে নীলিমা বসে। দ্রুত পায়ে বন্ধুদের সাথে নিয়ে সেখানে হাজির হয় শুভ্র। চোখে চশমা, হাঁটুতে খুলে রাখা ডায়েরী। চেহারা’য় শান্ত-স্নিগ্ধ ভাব, গভীর মনোযোগের সহিত ডায়েরী’তে লিখালিখি করছে নীলিমা। আবারো মুগ্ধ শুভ্র ভাবনা’র অতলে ডুবে যায়। ঘোর কাটে বন্ধু আতিকের ডাকে। ক্ষাণিক ধাক্কার সাথে টানা গলায় প্রশ্ন করে, কিরে? এভাবে ‘থ’ হয়ে গেলি যে? বন্ধুদের দিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় নীলিমা’র দিকে। জোর গলায় ডাক দেয় – ‘এই যে মিস ? এদিকে…’ ডায়েরী থেকে ইতস্তত দৃষ্টি ফিরিয়ে ডানে ফিরে তাকায় নীলিমা। ক্যাম্পাসের সেই বড় ভাইগুলোকে চিনে নিতে খুব বেশী বেগ পেতে হয়নি ও’র। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। মাথা’য় ওড়না’টা আরো ভালো ভাবে টেনে দিয়ে কাছে আসে শুভ্র’র। সালাম দিয়ে শান্ত গলায় প্রশ্ন করে- জ্বী, ভাইয়া! আমাকে বলছেন? টানা টানা কন্ঠে শুভ্র’র জবাব, জ্বী! আপনাকে’ই বলছি। ক্লাস শেষের বিরতি চলছে। সবাই মাঠে আড্ডা দিচ্ছে। আপনি এখানে একা একা কি করছেন? আমতাআমতা স্বরে নীলিমা’র জবাব, ইয়ে না মানে এমনি, ভালো লাগছিল না… কথা কেড়ে নেয় শুভ্র। যান, ঐ যে মাঠে আপনাদের ডিপার্টমেন্টের মেয়েরা বসে আছে। সেখানে আড্ডা দেন গিয়ে। ভালো লাগবে… প্রতি উত্তরে এবার আর কোন কথা বলেনি নীলিমা। চুপচাপ বই আর ডায়েরী হাতে বাধ্য বালিকা’র ন্যায় মাঠের দিকে চলে যায়…. ক্যাম্পাস থেকে বাসা’য় ফিরছিল নীলিমা। কলেজ গেইটের সামনে যেতে’ই পিছন থেকে কারো ডাক শুনতে পায়। ডাকটা বড্ড চেনা চেনা লাগছিল ওর। থমকে দাঁড়ায় নীলিমা। সামনে এসে দাঁড়ায় শুভ্র। জিজ্ঞাসো দৃষ্টিতে নীলিমা ফিরে তাকায় শুভ্র’র মুখপানে। জবাবে মাথা চুলকানো ছাড়া কিচ্ছু বলেনি শুভ্র। মুখ খুলে নীলিমা। সালাম দিয়ে বিনয়ের সহিত প্রশ্ন করে, কিছু বলবেন ভাইয়া? সালামের জবাব দিয়ে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে শুভ্র। ঢোক গিলে জানায়- ‘ আমি শুভ্র। অনার্স ৪র্থ বর্ষ। অর্থনীতি ডিপার্টমেন্ট। এই এলাকা’রই স্থানীয় বাসিন্দা। আপনি?’ ধীর কিন্তু স্পষ্ট ভাষা’য় নীলিমা’র জবাব, আমি নীলিমা। গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। আর পড়াশুনা’র তাগিদে সুদুরের সেই নরসিংদী থেকেই এ শহরে এসেছি। ঢাকা শহরে আপন বলতে আমার তেমন কেউ নেই। আপাতত মায়ের দুর সম্পর্কের একটা বোনের বাসা’য় উঠেছি। বাকি পরিচয়টুকু মনে হয় আপনি জানেন! নীচু স্বরে শুভ্র’র জবাব, ওহ, আচ্ছা! ঠিক আছে… এই রিক্সা, এদিকে! আসি। আসসালামু আলাইকুম…. চোখের সামনে দিয়ে রিক্সা’য় উঠে নীলিমা চলে যায়। পিছনে সালামের জবাব দিয়ে হা করে শুভ্র তাকিয়ে নীলিমা’র চলে যাওয়া পথে’র পানে…

নিশ্চুপ_বালিকা(১ম অংশ) রচনাঃ- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

Angry_Husband Season_2_Part_4

0

Angry_Husband
Season_2_Part_4
Written by Avantika Anha
আরাভ বের হয়ে দেখে আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে সেল্ফি তুলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিছু সময় পর আমি আরাভের কাছে আসলাম…
আমি- ওই Angry Husband চলেন সেল্ফি তুলি।
আরাভ- আবার সেল্ফি? (কিছুটা ভ্রু কুচকে)
আমি- ও না না আর ভাঙ্গিয়েন না। এই ফোনটার ক্যামেরা সেই ভাল্লাগছে। এটা আমার নিউ জানটুস । উম্মাহ। (ফোনে কিস করলাম)
আরাভ- (হেসে দিলো)
আমি- (ওর হাসি দেখে আমিও হেসেই দিলাম) আপনার হাসি কিউট একটা সেল্ফি তুলি। স্মাইল প্লিজ। (কইয়াই সেল্ফি তুললাম)
আরো কয়েকটা সেল্ফি তুলছিলাম । এমন সময় প্রেয়সি আসলো।
.
প্রেয়সি- কি জিজু আমার লগে সেল্ফি তুলবেন না?
আরাভ- অবশ্যই।
.
এরপর প্রেয়সি ও ওর বান্ধবীরা পিক তুলতে লাগলো। কেউ কেউ বললো, ভাইয়া আপনি অনেক কিউট। আমার তো আপনার মতোই বর চাই। এসব শুনে আমার রাগ উঠে গেলো। তার জন্য পুরো অনুষ্ঠান রাগে আর আরাভের সাথে কথা বলি নাই। আরাভ অবশ্য পাশে দাড়িয়েছিলো। এছাড়া আড় চোখে দেখেছিলো আমাকে। কিন্তু আমি মুখ বাঁকা করে দাড়িয়ে ছিলাম। লোকজন সবাই চলে গেলো। যাওয়ার আগে আম্মু বলে গেলো, কাল নাহয় দুইদিন পরে আমাকে আমার বাড়িতে(বাপের বাড়ি) যেতে হবে। তাও নাকি জামাইরে নিয়া। আপনারাই বলেন। বাড়ি আমার, জামাই রে নিয়া কেন যাবো? আর এই ইতর তো রাগের ডিব্বা। তাও কিছু বললাম না।
.
অনুষ্ঠান শেষে আমাকে মা(শাশুড়ি) বললো, ফ্রেশ হয়ে নিতে।
আমি রুমে আসতেই আরাভ এলো আমার পিছুপিছু,
আরাভ- কি ব্যাপার বকবক করা মেয়ে আজ শান্ত, চুপচাপ, রেগে কেনো?
আমি- আপনার কি?
আরাভ- বলো।
আমি- আপনি তো চিপকু। যান যান ওদের সাথে পিক তুলেন। আমি কতো করে বলার পর আপনি আমার সাথে পিক তুলছেন। আর ওদের সাথে সহজেই তুললেন। হুহ।
আরাভ- আরে ওরা তো ছোট।
আমি- ছোট তো এতো চিপকু কেনো?
আরাভ- তুমি জ্বলতেছো কেনো? এতো তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়ে গেলা নাকি। আসলে আমি এমনি মানুষ প্রেমে পড়ে যায়। (মজা করে বললাম)
আমি- যা ভাগ লুচ্চা পোলা।
আরাভ- আমি লুচ্চা ? (এটা কেউ বলে নি। এই মেয়েই প্রথম বলছে। তাই আরাভ কিছুটা ভ্রু কুচকালো)
আমি- হুমমম । মহা লুচ্চা । লুচ্চা আরাভ। লুচ্চা লুচ্চা লুচ্চা। (ওর দিকে না তাকাতেই)
.
ও কোনো জবাব দিলো না। তাই ওর দিকে তাকায় দেখি ও রেগে আছে। ওর রাগী চেহারা দেখে আমি পুরাই ভয় পেয়ে গেলাম। এদিকে নিজেকে গালি দিতে লাগলাম,”শয়তান মাইয়া এতো বেশি বকিস কেনো? আজ তুই শেষ)
আমি- চুপচাপ কাপড় নিতে ফ্রেশ হতে যাবো। বাথরুমের দিকে পা বাড়াতে লাগলাম। এমন সময় আরাভ আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিলো। আবার সেই জায়গা। দেয়াল। আমি ভাবি মাঝে মাঝে দেয়াল কি ওর প্রিয় জায়গা। রাগলেই আমি দেয়ালে। হায়রে দেয়াল। ওমা এখন এসব ভাবছি কেনো? আরাভ রেগে বম হচ্ছে আর এদিকে আমার হার্ট ধুক ধুক করছে ভয়ে।
.
আরাভ- আমি লুচ্চা?
আমি- না না আপনি অনেক ভালো। খুব ভালো পোলা। এমন ভালো পোলা হয়ই না। খুব ভালো আপনি। এত্ত সুইট যে মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে কিস করে দেই। (এই বলে জিহ্বাতে কামড় দিলাম। এতো বেশি বকবক করি কেনো?)
আরাভ- ও তাই নাকি? (ভালো করেই বুঝেছি ও পাম মারতেছে)
আমি- জ্বী জ্বী। (ভয়ে ভয়ে)
আরাভ- তাহলে কিস করো।
আমি- এ্যা
আরাভ- এ্যা না হ্যা । কিস মি।
আমি- ওই লুইচ্চা পোলা লজ্জা নাই একটা মেয়ের কাছে কিস চাস। (আবার মুখ দিয়ে ভুলে বলে ফেলছি।)
আরাভ- কিহ?
আমি- আপনি না আমি লুচ্চা আমি মহা লুচ্চা। আপনি তো ভালো মি. আরাভ। (আবার পাম মারতে লাগলাম)
আরাভ- লুচ্চা কাকে বলে দেখাচ্ছি।
.
এই বলে আরাভের মুখ আমার মুখের কাছে এগোতে লাগলো। আর আমার হার্টের ধুকধুকানি আরো বেড়ে গেলো ভয়ে। আমি ভয়ে আর লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। এতো ভয় পাইছি যে চোখ বন্ধ করে ফেলছি।
আরাভ তাকিয়ে আছে আনহার দিকে। ওর(আমার) লজ্জা মাখা মুখ দেখে আরাভ আমার কাছে গেলো আরাভ। কিন্তু কাছাকাছি হলো ঠিকই কিন্তু হঠাৎ ও আমাকে ছেড়ে দিলো।
আমি তখনও ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি।
আরাভ- চোখ খুলো যাও ফ্রেশ হও।
আমি দেখি আরাভ ছেড়ে দিছে আমাকে। তাড়াতাড়ি কাপড় নিয়ে আমি বাথরুমে দৌড়। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। একটা সুতি থ্রি-পিছ পড়ে ফেললাম। পুরো দিন এতো উঠা নামা করে আমি পুরাই টায়ার্ড। তাই রাতের খাবার না খেয়েই বিছানায় একটু হেলানি দিতেই ঘুমিয়ে গেলাম। রাতের খাবারের জন্য আরাভ আমাকে ডাকতে এলো । এসে দেখে আমি ঘুমিয়ে গেছি। তাই আরাভ আমাকে ডাকতে লাগলো। এদিকে আমি ঘুমের ঘোরে দেখি প্রেয়সি আমাকে ডাকতেছে। কিন্তু আসলে যে আরাভ ডাকছে বুঝতেই পারি নি। তাই ঘুমের ঘোরে আমি আরাভকে লাথি দিয়ে বসলাম। আর বললাম, “কুত্তি প্রেয়সি। আমি ঘুমাচ্ছি না । ডাকিস কেন? ঘুমাতে দে।”
.
আরাভ এদিকে থ। সে ভাবছে, “মেয়েটার শক্তি আছে কিন্তু আমাকে মারলো হুহ।
আরাভ- চোখ খুলে দেখো কে?
আমি- হুম আয় তুইও ঘুমা।
.
বলে আরাভকে টান দিলাম। আরাভ ভাবে নি আমি টান দিবো তাই সে পড়ে গেলো আমার পাশে। কিন্তু হাতটা শক্ত লাগলো।
আমি- বইন তুই মোটা হইছিস। এতো শক্ত কেন। দূর হ।একদম ওই বাদরের মতো। বান্দর পোলাটার মতো বডি বানাচ্ছিস। (কইয়া আবার লাথি। এখনো আমি চোখ খুলি নি।)
কিন্তু এবার চোখ খুললাম। চোখ খুলে দেখি আরাভ। এতোক্ষন এসব শুনে আরাভ রেগে গেছে। আমি ওকে দেখে থ। একটু চিল্লায় উঠলাম, আম্মুউউ ।
আরাভ- আমি মোটা?
আমি- না না পার্ফেক্ট। ছেলেদের এমনি হতে হয়।
আরাভ- আর কি জানি বললা। ও লাথি মারলা তাই না।
.
এতোক্ষনে আমি উঠে বসে পড়েছি।
আমি- না না সরি আর হবে না এই যে কান ধরলাম। (কান ধরে)

.
আরাভ এক টান দিয়ে আমাকে দাড়া করিয়ে দিলো। এতোক্ষনে ভয়ে আমার ঘুমের ঘোর কেটে গেছে। ও আমার কোমড় ধরে আমাকে ওর কাছাকাছি আনলো।
আরাভ- এবার বলো আমি কি?
আমি- আন্নে ভালা পোলা। আমি বাজে মাইয়া। ছেড়ে দেন।
আরাভ- ওহ তাই। কান ধরো ।
আমি- এই যে এই যে। (আবার কান ধরলাম)
আরাভ- গুড । খাবার রাখা আছে খেয়ে নেও। (এই বলে ওকে ছেড়ে দিলাম)
আমি- এই খাবারের জন্য আমার সাধের ঘুম ভাঙলেন?
আরাভ- খেয়ে নেও ৫ মিনিটের মধ্যে । নাহলে আমার জুতা পরিষ্কার করতে হবে।
আমি- কিহ?
আরাভ- ইওর টাইম স্টার্টস নাও।
আমি- কিন্তু
আরাভ- টাইম যাচ্ছে।
.
দুররররর। তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে খেতে লাগলাম। খাওয়া বললে ভুল হবে গিলতে লাগলাম। পানি খেয়ে খেয়ে। তাড়াতাড়ি খেতে গিয়েও একটু খাওয়ার পর আর খেতে পারছিলাম না।
আমি- আর খাইতে পারছি না ।
আরাভ- শেষ করেন ম্যাডাম।
আমি- আপনি খাইছেন?
আরাভ- হুমম।
আমি- এটাও খান।
আরাভ- নাহ।
আমি- এই একবার আমার হাত দিয়া খান।
আরাভ- আমি বাচ্চা?
আমি- না না আপনি তো বুইড়া।
আরাভ- কিহ?
আমি- খান।
.
এই বলে জোড় করে খাইয়ে দিলাম।
আরাভ- কি করছো?
আমি- এই নেন আরেকবার।
আরাভ- নাহ।
আমি- খান বলছি।
.
এভাবে করে তিনবার খাওয়ায় দিলাম জোড় করে।
আরাভ- হলো তোমার। (এবার রেগে গেছি)
আমি- না আরেকবার খান।
আরাভ- নিজে শেষ করো নইলে।
আমি- রাগেন কেনো? একবার খান খালি তারপর আমিই খাবো।
আরাভ- প্রমিস ?
আমি- জ্বী।
.
এরপর আরাভকে একবার খাইয়ে আমি নিজে খেয়ে । ব্রাশ কইরা ঘুমায় গেলাম। পরের দিন ভোরবেলা ঘুম ভেঙ্গে গেলো। কারণ আমি বাড়ি যাবো।
.
আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর এসে দেখি আরাভ ঘুমাচ্ছে। আমার মাথায় আবার শয়তানি আসলো। তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে নিলাম। এসে বরফ গুলো আরাভের গেঞ্জির ভিতরে ঢুকিয়ে দিলাম। কয়েক মিনিটে বরফ তার কাজ করে দিলো। আরাভ উঠে গেলো বরফের ঠান্ডায়। তাড়াতাড়ি বসে পড়লো। নিজের গেঞ্জিতে বরফ আর সামনে আমাকে আরাভ বুঝে গেলো কাজটা আমার।
আরাভ- আনহাআআআআ
আমি- কিইইইইই?
আরাভ তোমার আজ বারোটা বাজাবো।
আমি- আগে ধরেন তো। (এই বইলা দৌড় দিলাম)
.
এদিকে আরাভ রেগে আছে। কিন্তু ও ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো। বাইরে এসে দেখে নাস্তা রেডি। নাস্তার টেবিলে…
মা- তা তোমরা কয়দিন থাকবা ?
আমি- আপনিই বলুন মা কয়দিন থাকবো?
মা- তোমাকে তো আমরা মিস করবো। তবুও ৫ দিন থেকো।
আমি- ওক্কে।
মা- আরাভ তুই অফিস থেকে তো অফ এ আছিস। বাকী সব তোর বাবা সামলে নিবে।
আরাভ- আচ্ছা।
.
কিছু সময় পর আমি আর আরাভ বাইরে যেতে বের হলাম। এখনো আরাভ কিছু বলে নাই। তাই আমি ভাবছি ওয় ভুলে গেছে।
.
গাড়িতে…
আমি- মি. আরাভ কত্ত মজা হবে তাই না?
আরাভ- আনহা শাস্তি নিবা না?
আমি- মানে?
আরাভ- তুমি শয়তানি করবা আর শাস্তি পাবা না তা তো হবে না।
আমি- আপনার মনে আছে?
আরাভ- মিসেস আনহা আহমেদ। আরাভ কখনো কিছু ভুলে না।
আমি- একটু বেশিই মনে রাখে। (আস্তে)
আরাভ- কিহ?
আমি- না না সরি সরি।
আরাভ- শাস্তি পেতেই হবে। ম্যাডাম আপনার ব্যাগ চেক করুন।
.
আমি সাথে সাথে ব্যাগ খুলে দেখি একটাও কিটক্যাট নাই। আমি কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে আরাভের দিকে তাকালাম।
আমি- ও ভাই আমার কিটক্যাট দিয়া দে ।
আরাভ- আমি ভাই ?
আমি- না আপনি জানু মনু স্বামী। এবার তো দেন।
আরাভ- এমন করে বলতে থাকো। ভালো লাগলে দিয়ে দিবো।
আমি- রুড পোলা। দুররর।
আরাভ- নিতে চাও কি না?
আমি- জানটুস। মনটুস । কলিজা। কিডনি, ফ্যাপসা, গলা, চোখ, মুখ, নাক।
আরাভ- ওয়েট ওয়েট। কলিজা আর ফ্যাপসা বলে জানতাম। গলা, চোখ,মুখ, নাক কই থেকে আইলো?
আমি- এগুলোও তো বডি পার্ট।
আরাভ- দুররর।
আমি- এবার কিটক্যাট দেন।
আরাভ- পিছনের সিটে রাখা দেখো।
আমি- এ্যা আমি তো লক্ষ্যই করি নি।
আরাভ- হাহা।
আমি- হুহ।
.
আমরা বাড়ি পৌঁছে গেলাম। এদিকে আরাভ জামাই আদর পেতে লাগলো। একটা জিনিস বুঝি না। বিয়া আমার হলো। কই একটু আমাকে দেখবে সবাই ওরে দেখতেছে। হুররর।
.
রুমে চলে আসলাম।
প্রেয়সি- আপ্পি আমার জন্য কি আনছো?
আমি- কেনো তোর বোন আসছে এটা কি যথেষ্ঠ নয় ?
প্রেয়সি- দুররর। কিছুই আনলা না বাজে আপু।
আমি- বইন তোর বোনটা কতো কষ্ট সহ্য করে আইলো ওই রাগী পোলাকে সহ্য করলো। আর তুই গিফ্ট চাস । কই একটু আপুর সেবা করবি।
প্রেয়সি- কিছু আনলে করতাম।
আমি- ওহ।
.
পিছন থেকে কখন আরাভ আসছে আমরা দেখি নি, “ও আনে নি তো কি? আমি গিফ্ট আনছি তোমার জন্য প্রেয়সি।”
আমি- এ্যা কি গিফ্টা?
আরাভ- এই নাও (এই বলে আরাভ প্রেয়সিকে একটা হ্যাডফোন দিলো।)
প্রেয়সি- ওয়াও। সেই তো। থেংকু জিজু। দেখছিস আপি আমার জিজু কতো ভালো।
আমি- হ গিফ্ট পাইয়া বোন নাই।
প্রেয়সি- জিজু তুমি বেস্ট। আপু আরো তোমাকে কতো কি বলে।
আমি- চুপ চুপ।
আরাভ- কি বলে?
আমি- কিছু না। ওই প্রেয়সি তুই না । নইলে আমি তোর চুল ছিঁড়ে দিবো এখনি।
.
কথাটা শুনে প্রেয়সি দৌড়। আরাভ আমার কাছে আসতে লাগলো। আমি জানি ওয় জিগাবে আমি কি করছি আর কেমনে জিগাবে তাও জানি। ও কিছু বলার আগেই আমাকে পালাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ।
আমি- মি. আরাভ টিকটিকিইইইইই।
আরাভ- কই? (ও ওইদিকে তাকাতেই আমি দিলাম দৌড়)
.
চলবে???

Angry_Husband Season_2 _Part_3

0
Angry_Husband Season_2 _Part_3
Angry_Husband Season_2 _Part_3

Angry_Husband
Season_2 _Part_3

Written by Avantika Anha
আরাভ উঠে চলে গেলো। আমি এদিকে আবারো মনে মনে ওরে গালি দেওয়া শুরু করলাম,”বান্দর,রাক্ষস,গাধা,হাতি,বাজে পোলা কোনেকার আম্মু হাত ব্যাথা কেহো বাঁচাও আমারে এই Angry husband এর কাছে থেকে।” এইসব বলতে বলতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
কিছু সময় পর আরাভ ঘরে আসলো। কিছু সময় ও আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে লাগলো। শেষে ও ভাবতে লাগলো,”ওর চেহারাটা এতো মায়াবী কেনো? মায়াবী হলেও কিন্তু একটু বেশিই ফাজিল। দেখে মনেই হয় না এতোটা ফাজিল ও।” আরাভ আমার গায়ে চাদর দিয়ে দিলো। তারপর পাশে শুয়ে পড়লো। সকাল সকাল আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দেখি আরাভের এক হাত আমার পেটের উপর। হয়তো ঘুমের ঘোরে এসেছে। কিন্তু আমার তবুও প্রচুর লজ্জা লাগছিলো। তাড়াতাড়ি ওর হাত সরিয়ে দিতে যাবো কিন্তু তখনি ও একটু শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার লজ্জা আরো বেড়ে গেলো। কি করবো ভেবে পারছিলাম না। তাই আমি আরাভকে ডাকলাম।
.
আমি- মি. আরাভ ও মি. আরভ।
.
আরাভ নড়ে চড়ে গেলো। আমি আবার ডাক দিলাম। কয়েকবার ডাক দেওয়ার পর মি. আরাভের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমাকে এতো কাছাকাছি দেখে সেও কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো।
আরাভ- তুমি আমার এতো কাছে আসছো কেনো ?
আমি- ভালো করে তাকায় দেখেন আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন। আপনার জন্যই আমি উঠতে পারছি না। ছাড়ুন আমাকে।
.
এই কথা শুনে আরাভ আরও বেশি লজ্জা পেয়ে গেলো। আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি ফ্রেশ হতে বাথরুমে ঢুকবো তার আগে আমার মাথায় একটা বিষয় আসলো।
আমি- Angry husband আপনাকে না লজ্জা পাইলে সেই কিউট লাগে। ইচ্ছা করে গাল দুইটা ধরে টানি। (এইটা বলে আমি তাড়াতাড়ি বাথরুমে চলে গেলাম)
.
আরাভ ভাবতে লাগলো, এই মেয়ের মুখে কিছু আটকায় না। দুররর।
.
আমি ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি বাইরে গেলাম। আজ যেহেতু বউভাত তো আভার কাছে গেলাম কারণ তৈরি তো হতে তো হবেই আমাকে আভা তৈরি হতে বললো তাড়াতাড়ি। তাই আমি ঘরে গিয়ে লেহেঙ্গাটা নিয়ে বাথরুমে গেলাম। এদিকে আরাভ রুমে এসে পাঞ্জাবি পড়ছিলো। ও যে ঘরে আসছে আমি জানি না। আমি লেহেঙ্গা পড়ে বের হয়ে দেখি আরাভ। আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো। এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। এদিকে আমি দেখলাম নীল পাঞ্জাবিতে ওকে সেই লাগছে। দেখে পুরাই ক্রাশ খেয়ে গেলাম। ওর দিকে তাকায় হাটতে গিয়ে খাইলাম উস্টা। উস্টা খেলাম তো খেলাম পড়লাম আরাভের উপর কিন্তু আরাভ নিজেকে সামলায় নেওয়ায় নিচে পড়ে গেলাম না আমরা। কিন্তু আরাভের কাছাকাছি চলে আসলাম। নিজের অজান্তেই আরাভ আমার কোমরে হাত দিলো। ওর মুখটা আমার কাছাকাছি চলে আসলো। একটু বেশিই কাছাকাছি আসছিলো। আমার ওই সময় সেই পরিমাণ লজ্জা লাগছিলো। হঠাৎ মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো..
আমি- মি. আরাভ আমার লজ্জা লাগছে।
.
আরাভ কিছুটা ঘোরের মধ্যে ছিলো তাই প্রথমে শুনতে পেলো না। ওর মুখটা আমার মুখের আরো কাছে আসতে লাগলো। ভয় লেগে গেলো। তাই একটু জোড়েই চিৎকারের মতো করে “আম্মুউউউ” বলে উঠলাম।
আরাভের ঘোর ভেঙ্গে গেলো।
আরাভ- কি হলো চিল্লাচ্ছো কেনো?
আমি- ভয় লাগছে আপনি এতো কাছে এসেছেন তাই।
.
এই কথা শুনে আরাভের প্রচন্ড রাগ হয়ে গেলো। এমন একটা রোমান্টিক সময়ে কেউ যদি এমন বলে আর যাকে বলে সেই মানুষটা যদি আরাভের মতো হয় তাহলে আমার মতো আনহার বারোটা বাজবেই। আরাভের একটা গুণ আছে। রাগলে মুখটা কিছুটা লাল লাল হয়ে যায়। কিন্তু আরাভ রাগ টাকে কিছুটা কন্ট্রোল করে বিছানায় বসে পড়লো।
এদিকে আমি ভয় পেয়ে গেলাম কারণ আমি ভালো করেই বুঝেছি আরাভ রেগে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি লেহেঙ্গার পিছনের ফিতাটা বাঁধতে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই বাঁধতে পারছিলাম না। আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো আমি কিছুতেই ফিতাটা বাঁধতে পারছি না। আরাভ উঠে আমার কাছে আসলো।
.
আরাভ- দেও আমি বেঁধে দিচ্ছি।
আমি- না থাক।
আরাভ- চুপপপপ বললাম না আমি বেঁধে দিচ্ছি।
আমি- ওকে ওকে দেন। এতো Angry হওয়ার কি আছে? আমি বাচ্চা মানুষ ভয় লাগে তো।
আরাভ- তুমি বাচ্চা?
আমি- হুমমম।
আরাভ- হাহা এমনি তো পাকা বুড়ি। আর এমনি ক্ষেত্রে বাচ্চা।
আমি- বাঁধে দেন তো। এমনি বউভাত। একটু ভালো করে তৈরি হতে হবে তো।
আরাভ- কেনো? (বেঁধে দিতে দিতে)
আমি- প্রথম বিয়ে বলে কথা। একটু ভালো ভাবে সাজতে হবে তো। পরে বিয়ে হলে নাহয় কম সাজবো।
আরাভ- কিহ তুমি আবার বিয়ে করবে?
আমি- না মানে
.
আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না। আবারো আরাভ আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আরাভ। দুইদিনে ৪ বার এমন করছে। প্রতিবারই রেগে। আরাভের রাগী লুক দেখে আমি ভিগি বিল্লি। নিজেকে মনে মনে গালি দিতে লাগলাম, “বান্দরনি মাইয়া কি বলিস এসব। জানিসই তো কিরাম রাগী তাও বকবক। আম্মু বাঁচাও আমাকে।”
আরাভ- এবার বলো কি বললা?
আমি- আমি তো কিচ্ছু বলি নি। বিয়া কি আমি আর বিয়াই করবো না।
আরাভ- হুমম। অন্য ছেলেদের থাকে তোমার দূরে থাকতে হবে।
আমি- হুমম হুমম। আমি পোলা কি আমি আর কারো কাছেই যাবো না। আমি আপনার কাছেও আসবো না।
আরাভ- কিহহহহ (আরও রাগ লেগে গেলো)
আমি- না মানে আমি আপনার কাছেই থাকবো। এই যে এতো কাছেই থাকবো। কোনো দূরে যাবো না। এবার ছাড়েন। আভা অপেক্ষা করতেছে।(কি যে বলি)
আরাভ- (আনহার কথা শুনলে হাসিও পায়। রাগও লাগে দুররর।)
আমি- কি হলো ছাড়বেন না? আচ্ছা সমস্যা নাই ধরেই থাকেন। আমি কিচ্ছু বলবো না।
.
আরাভ আমাকে ছেড়ে দিলো। আর মুচকি একটা হাসি দিলো। কিন্তু ওটা আমার শয়তানি হাসি মনে হচ্ছিলো। যাই হোক আমাকে ছাড়ছে তো। এইটা মাথায় আসতেই আমি আমার জিনিস গুলো নিয়ে দৌড় আভার ঘরে।
.
আভা- কি ভাবি রোমান্স করছিলে নাকি?
আমি- আরে না।
আভা- তাই নাকি? হিহি।
আমি- শয়তানি হাসি দিচ্ছো কেনো গো।
আভা- হাহা তোমাদের শয়তানি দেখে। দেও তৈরি করে দেই।
.
সেদিন তৈরি হয়ে ঘরে চলে গেলাম। ভালোই লাগছিলো। তাই কয়েকটা পিক তুলে নিলাম। তারপর প্রেয়সিকে পিক গুলো পাঠাতে লাগলাম। নিচের দিকে তাকায়ই রুমের দিকে যেতে লাগলাম। কিন্তু দরজার কাছে যে আরাভ ছিলো দেখি নি। কপাল পুড়লো আবার খাইলাম ঢাক্কা। চোখ তুলে উপরে তাকায় দেখি আরাভের সাথে ঢাক্কা খাইছি। আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো কাজল কালো চোখে, গোলাপি লিপস্টিক, টিকলি, হালকা গহনা, হাত ভর্তি মেহেদী আর আলতা পায়ে আমাকে সেই লাগছে। এভাবে আমাকে দেখে আরাভ আবারো হারায় গেলো আমার মাঝে। কিন্তু আমার এসবের অভ্যাস না থাকায় আবার তারে ডাক দিলাম। সে চুপচাপ ছিলো। তাই কয়েকটা ঝাঁকি দিলাম। তার ঘোর আবারো ভেঙ্গে গেলো।
আরাভ- হুমম। বলো কি বলছিলা।
আমি- সেল্ফি তুলবেন? আসেন একটা সেল্ফি তুলি।
আরাভ- (সামান্য সেল্ফির জন্য আমার ঘোর ভাঙলো। আরাভ সেই রেগে গেলো।)
আমি- (তাকিয়ে দেখলাম। সে লাল হচ্ছে। বুঝলাম না কিছুই রাগ করলো কেনো?) আচ্ছা থাক তুলতে হবে না।
আরাভ- না না দেও আমি তুলে দিচ্ছি।
আমি- সত্যি?
আরাভ- হুম হুম সত্যি।
.
আমি ফোন টা ওর হাতে দিলাম। দিতেই ও রেগে ফোনটা নিজের কাছে রেখে নিলো।
আমি- কি হলো। পকেটে ঢুকালেন কেনো?
আরাভ- আজ আর এই ফোন পাবে না তুমি।
আমি- প্লিজ দেন। আজ সেল্ফি তুলতে হবে তো।
আরাভ- না দিবো না।
আমি- আম্মু তোমার মেয়ের ফোন কেড়ে নিছে। আম্মু গো তুমি কই? (কাঁদো কাঁদো স্বরে)
আরাভ- নাটক কইরা লাভ নাই। দিচ্ছি না।
আমি- দূরররর ।
.
রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলাম ওখান থেকে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো। আমি আমার ফোনকে মিস করতেছি। আর ওই হালারপো ফোন দেয়ও না। অনেকবার ফোন চাইলাম কিন্তু দিলো না। মাথায় একটা আইডিয়া আসলো। আমি আরাভকে রুমে ডাকলাম। অনেক দরকার আছে এটা বলে। হাতে একটা ব্যাট নিলাম। আরাভেরই পুরোনো। বাট ম্যানেজ করছি। আরাভ ঘরে আসতেই আমি দরজা লাগায় দিলাম।
আরাভ- ওএমজি আনহা তুমি আমাকে ধর্ষণ করবা?
আমি- কিহ না তো। আমি ছি ছি ছি । আমি এমন কেনো করবো?
আরাভ- তো দরজা লাগালা কেনো? দরজা খুলো বাহিরে মেহমান আছে।
আমি- না খুলবো না।
আরাভ- খুলো আমার বন্ধুরা আছে।
আমি- ফোন দেন।
আরাভ- তুমি ফোনের জন্য এতো কিছু করছো?
আমি- হুমমম ফোন দেন। বান্দর পোলা আমার ফোন দেন বলছি।
আরাভ- না দিলে কি করবা?
আমি- ওই হারামি, রাক্ষস, বান্দর আমার ফোন দে। দে বলছি।
আরাভ- (আরাভ ভেবেছিলো রোমান্টিক কিছু হবে। কিন্তু এমন হলো না আর আমার মুখে তুই তুই ভাষা শুনে ওর রাগ উঠে গেলো। আমার ফোনটা ভেঙ্গে দিলো)
আমি- আপনি ভেঙ্গে দিলেন?
আরাভ- নিচে পড়ে আছে দেখো না?
আমি- বান্দর পোলা। আমার ফোন ভাঙ্গে দিলেন কেনো?
আরাভ- আমাকে তুই বললা কেনো?
আমি- আমার ফোনননননন। (ফোনটা অনেক সাধের। বাপের কাছে মেলাদিন কান্দে কান্দে নিছি সেই ফোন ভাঙ্গে দিছে)
আরাভ- তুই বলার শাস্তি।
আমি- (কেঁদে দিলাম সাধের ফোনটার জন্য)
আরাভ- (কাঁদে কেনো? ফোনের জন্য কেউ কাঁদে নাকি?) কি হলো কাঁদছো কেনো?
আমি- আমার ফোন ভাঙ্গে দিলেন। আপনি অনেক বাজে।

.
এই বলে আমি কাঁদতে লাগলাম। আরাভের আমার কান্না দেখে খারাপ লাগলো। কি জানি ওর মাথায় এলো আর ও বাইরে চলে গেলো। আমি কিছু সময় পর কান্না মুছে বের হয়ে গেলাম।
.
প্রায় আধা ঘন্টা পর আরাভ এলো। সবাই খাচ্ছিলো। খাওয়ার টেবিলে। আরাভ আসার সাথে সাথে আমাকে দুই মিনিটের জন্য বলে ঘরে নিয়ে গেলো।
আমি- (রাগে কথা বলছিলাম না। অন্য দিকে ঘুরে ছিলাম)
আরাভ- কি হলো। কথা বলো মিস. বাঁচাল।
আমি- কি বলবেন বলেন। আপনার সাথে আমি কথা বলবো না। আমার ফোন ভাঙ্গে দিছেন আরো বড় কথা।
আরাভ- এই নাও। (এইটা প্যাকেট দিলো)।
.
আমি খুলে দেখি নতুন ফোন আর সেই ফোনই যেটা নেওয়ার ইচ্ছা আমার অনেকদিনের।
আমি- আপনি কেমনে জানলেন আমার এই ফোন কিনার ইচ্ছা?
আরাভ- প্রেয়সি বললো। তাই কিনে আনলাম।
আমি- ওয়াও এটার ক্যামেরা সেই থেংকু। উম্মাহ(এই বলে আরাভের গালে একটা কিস করে। খুশি মনে বাইরে চলে গেলাম)
.
আরাভ হাসতে লাগলো, “এই মেয়েটা আজব।”
.
চলবে?????

 Angry_husband season_2_ Part_2

0
 Angry_husband season_2_ Part_2
 Angry_husband season_2_ Part_2

 Angry_husband
season_2___Part_2

Written by Avantika Anha
আরাভ রেগে চিৎকার দিয়ে আমাকে ডাকতে লাগলো।
.
আভা- ভাবি তোমার কপালে আজ দুঃখ আছে। ভাইয়া এমনিতেই কতো রাগী। তার উপর তুমি তার মুখের বারোটা বাজাইছো। আজ তো তুমি শেষ।
আমি- আরে না কিচ্ছু হবে না। আমি যাচ্ছি। (মুখে এমন বললেও আমার ভয় লাগছিলো খুব)
.
ভয়ে ভয়ে আমি রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি আরাভ এখনো মুখ পরিষ্কার করে নি। মুখ টা লাল হয়ে আছে ওর। হায় রে আজ আমার খুন হবে। আমারে কি করবে? চড় মারবে নাকি এই ভাবতে ভাবতে দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই এক হ্যাচকা টান দিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো।
আমি- ক.ক কি হইছে?
আরাভ- তুমি জানো না কি হইছে? হা মজা করো আমার সাথে।
আমি- আপনি মজা করার মানুষ নাকি যে ম.মজা করবো।(কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ভয়ে তোতলায় যাচ্ছে)
আরাভ- ও তাই । আমার মুখের এমন অবস্থা করছো কেনো?
আমি- আমি করি নি। (চোখ নিচে রাখছি ভয়ে। ওর মুখ আমার মুখের কাছাকাছি)
আরাভ- আমার দিকে তাকিয়ে বলো কিছু করো নি।
আমি- (ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম ওর নাক রাগে কিছুটা লাল হয়ে গেছে। এটা দেখে আমার প্রচন্ড পরিমাণ হাসি পেলো। হাসি আটকাতে পারলাম না) হিহিহি
আরাভ- (হাসি দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম) হাসছো কেনো ?
আমি- হিহিহি কমু না।
আরাভ- বলো।
আমি- আপনার নাকটা লাল হয়ে গেছে রাগে আর আপনাকে এমনে পুরাই বানর লাগতেছে হিহিহি।
আরাভ- কিহহ।
আমি- চেক করেন আপনি ওইখানেই আয়না আছে।
.
.
আরাভ আয়নায় তাকায় দেখে একটু আজব লাগছে ঠিকি। কিনগতু পুরো বান্দর তো না। তাই ও আবার আমাকে বকা দেওয়ার জন্য আমার দিকে তাকিয়ে দেখে আমি ওখানে নাই। কারণ ও আয়না দেখতে যাওয়ার সাথে সাথে আমি দৌড় দিছি। হেতের রাগের কাছে আমি শেষ। আমি ওখানে নাই দেখে আরাভ আরো বেশি রেগে গেলো। তারপর ও মুখ ধুয়ে বাইরে এলো।
.
এদিকে আমি আভার রুমে চলে গেলাম। যাতে ও খুঁজে না পায়।
আভা- কি ভাবি। ভাইয়া কি করলো? খুব বকলো নাকি?
আমি- পালায় আসছি বইন।
আভা- হাহা। ভাইয়া ছাড়বে না দেইখো। আর কাল তো বউভাত তোমার শপিং করবা না? আজকে যাবো কিন্তু।
আমি- হুমমম আচ্ছা। আমি কি পড়বো শাড়ি নাকি লেহেঙ্গা?
আভা- উমমমম লেহেঙ্গা। ব্লু পইড়ো ভাইয়ার প্রিয় রং।
আমি- আমারো প্রিয়।
আভা- বাহ কাপল দেখি প্রিয় প্রিয় সেম।
.
এমন সময় আরাভ আসলো। ওকে দেখে আমি ভয়ে শেষ আভাও। আভা জানে আমি ভয় পাচ্ছি কেনো তাই ও কথা বদলানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
আভা- ভাইয়া হঠাৎ আমার রুমে আমাকে তো ভুলেই গেছোস।
আরাভ- আভা তোর নাটক শেষ হইছে ? আনহা রুমে চলো।
আমি- আপনি কে ভাই?
আরাভ আরো রেগে গেলো- রুমে যাবা নাকি তুলে নিয়ে যাবো।
আমি- যাচ্ছি।
.
ভেজা বিড়ালের মতো অবস্থা হয়ে গেলো আমার। রুমে যেতেই আরাভ দরজা লাগায় দিলো। আল্লাহ আমারে বাঁচাও। কেহো আমারে তুইলা নেও। এই রাগী পোলার হাত থেইকা বাঁচাও আমারে।
আরাভ- খুব মজা করার শখ তাই না তোমার?
আমি- ভাই প্লিজ মাফ কর আমাকে।
আরাভ- (আরও রেগে গেলো। কারণ যাই হোক আনহা ওর বউ। আর বউ এর মুখে ভাই ডাক শুনতে কারই বা ভালো লাগে।) মাফ করবো এক শর্তে।
আমি- হ্যা হ্যা আমি রাজি।
আরাভ- ওয়েট।
.
এই বলে আরাভ ওর আলমারি এর অর্ধেক কাপড় বের করলো। আর আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে ধুয়ে দিতে বললো। এতো কাপড় দেখে আমি থ।
.
আমি- এতো কাপড় আমি ধুয়ে দিবো?
আরাভ- এটা যদি না ধুয়ে দাও। তোমাকে মরিচ খাইতে হবে।
আমি- (ঝাল খাই মোটামোটি। কিন্তু মরিচ অসম্ভব) কিহ ।
.
আরাভ আগে থেকেই মরিচ এনে রাখছিলো। ও হাতে তিনটা মরিচ নিলো। লম্বা লম্বা সবুজ মরিচ দেখে আমি ভয়ে শেষ। হেতের ভরসা নাই। তাই আমি তাড়াতাড়ি করে কাপড় গুলো নিয়ে ধুয়ে দিতে লাগলাম। আর আরাভ বাইরে চলে গেলো।
.
এদিকে কাপড় কাঁচতেছি আর আরাভকে গালি দিচ্ছি।
আমি- এতো কষ্ট মেনে নেওয়া যায় না। বিয়ে টা আর করা ঠিক না। আমি কি এমন ভুল করেছি । এতো Angry husband কেনো পেয়েছি। এই পোলারে কেউ মাইরালাও। আমি তারে দিমু গিফ্ট।
.
হায়রে কপাল। কোনেকার এক বান্দর পোলা। ওইটা একটা ইদুর। না না ইদুর না চামচিকা। ওরে ধইরা পিডাইয়া পিডাইয়া লাল,নীল,হলুদ,বেগুনী করে দেওয়া উচিত। টিকটিকি পোলা। হুহ। ওয় তো একটা রাক্ষস। ওরে কিল করবো আমি বান্দর কোনেকার। (এসব বলতে বলতে কাপড় কাঁচতে লাগলাম)
.
আরাভ কি জানি নিতে ঘরে এসেছিলো।এদিকে আমার মুখে এসব কথা শুনে ও আরও বেশি রেগে গেলো। কিন্তু কিছু বললো না। কাপড় ধুয়ে আমি গোসলটাও করে ফেললাম। হাত ব্যাথা করছিলো। তাই কিছু সময়ের জন্য রুমে আসলাম। আরাভ আসলো…..
আরাভ- এতোটুকুতেই টায়ার্ড। যাও আমার জন্য কিছু নিয়ে আসো ক্ষুধা লাগছে।
আমি- এখনি তো নাস্তা খেলেন।
আরাভ- তাহলে এক কাজ করো শরবত নিয়ে আসো।
আমি- হারামি পোলা। আমারে এতো কাম করাইয়াও তোর শান্তি নাই। খাড়া আইতাছি নিয়া।
.
গিয়ে আমি শরবত বানালাম। ওরে এতো সহজে ছাড়বো না। তাই শরবতে বেশি করে মরিচের গুড়া দিয়ে দিলাম। আরাভ হঠাৎ রান্নাঘরে আসলো আর দেখে ফেললো আমাকে মরিচের গুড়া মেশাতে।
আরাভ- কি করছো তুমি?
আমি- কই কিছু না তো।
আরাভ- কি মিশিয়েছো ?
আমি- কই কিছু না তো।
আরাভ- তাই ।
আমি- জ্বী।
আরাভ- খেয়ে দেখতে হবে তো।
আমি- হুমমম নিন খান খান।
আরাভ- তুমি খাবে।
আমি- না মানে।
আরাভ- খাওওওওওও।
.
কি করবো ভাবতে ভাবতে আইডিয়া এলো। কারণ ওটায় আমি খুব বেশি পরিমাণ মরিচের গুড়া মিশিয়েছি। খাওয়ার জন্য মুখের কাছে নেওয়ার আগে ফেলে দিলাম।
আরাভ ভালোই বুঝলো যে আমি ইচ্ছে করে ফেলছি। তাও কিছু বললো না।
আরাভ- পরিষ্কার করে নেও।
আমি- হুম।
.
কাচের গ্লাস ছিলো তাই হাতটা কেটে গেলো।
আমি- আম্মুউউউ।
আরাভ- কি হলো? কেটে ফেললা। বাচ্চা নাকি? সাবধানে করতে পারো না।
.
আমার চিৎকার শুনে আরাভের মা রান্নাঘরে এলো।
মা- কি হলো কাটলো কিভাবে? গ্লাস ভাঙ্গে গেলো কিভাবে?
আমি- ভুলে।
মা- নিশ্চয়ই আরাভ কিছু করেছে। আরাভ তোর রাগকে কন্ট্রোল করা শিখ।
আরাভ- কিন্তু মা।
মা- চুপপপপপ।
.
আরাভ চুপ করে বকা শুনলো। ওকে বকা শুনতে দেখে আমি সেই পরিমাণ খুশি হলাম।
মা- ওষুধ লাগিয়ে দে আনহা কে।
আরাভ- আচ্ছা।
.
আরাভ রুমে এসে আমাকে ওষুধ দিয়ে দিলো। আমার ডান হাত কাটছে এই জন্য আরাভ আমাকে আর কাজ করাতে পারবে না এই ভেবে আমি সেই খুশি।
আরাভ কিছুই বললো না । গোসলে গেলো। আমি বাহির দিক দিয়ে দরজা লাগায় দিলাম।
কিছু সময় পর আরাভ দরজা খট খট করতে লাগলো। আমি এদিকে আর খুলি না দরজা।
আরাভ ভিতর থেকে বলতে লাগলো…
আরাভ- আনহা আমি জানি এটা তোমার কাজ। দরজা খুলো তোমার আজ খবর আছে।
আমি- তাহলে খুলবো না।
আরাভ- আনহা খুলো।
আমি- না।
আরাভ- আচ্ছা কিছু করবো না খুলো।
আমি- এক শর্তে।
আরাভ- কিই?
আমি- আমার ৫ টা কাজ করবেন। আর কথা গুলো শুনবেন তাহলে।
আরাভ- চালাকি করো । যাস্ট বের হতে দেও।
আমি- তাহলে খুলবো না ওয়াদা করেন।
আরাভ- না।
আমি- ওকে থাকেন আপনি।
আরাভ- আচ্ছা ওকে ওকে ওয়াদা রইলো শুনবো।
আমি- হিহি ওকে।
.
এরপর আমি দরজা খুলে দিলাম। আরাভ প্রচন্ড রেগে কিন্তু ওয়াদা করছে বলে কিছু বলতে পারলো না। সেদিন আমি আর আভা শপিং এ গেলাম। আরাভ নাকি যাবে না।
আমি- চলেন শপিং এ।
আরাভ- না আমি যাবো না।
আমি- আপনি যাবেন এবং আমি যা যা চাবো তাই করতে হবে এটাই আপনার প্রথম কাজ।
আরাভ- দুরর।
.
ওইদিন সারাদিন আমরা শপিং করলাম। আরাভের পকেট ফাঁকা করতে লাগলাম। কিন্তু ও ওয়াদার কারণে কিছুই বলতে পারলো না।
.
সেদিন রাতে…..
আমি- মি. আরাভ পা টিপুন।
আরাভ- কিইইইইই।
আমি- ওয়াদা ভুলে যাচ্ছেন। এটা কিন্তু ২য় কাজ। করুন।
.
আরাভ কিছু না বলে রাগী লুকে পা টিপতে লাগলো। আমি সেই খুশি হয়ে ওর একটা সেল্ফি তুললাম। এবার আর আরাভ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে ফেললো।
আরাভ- কি ভাবো নিজেকে হা। চালাকি করো?
আমি- মি. আরাভ আমার লাগছে।
আরাভ- চুউউউপ।
আমি- সিরিয়াসলি লাগছে।
আরাভ- বললাম না চুপ।
.
এতে আমার চোখে পানি চলে আসলো। কষ্টে আর কিছু বললাম না।আমার চোখে পানি দেখে আরাভ আমাকে ছেড়ে দিলো। আর ঘরের বাইরে চলে গেলো।
.
চলবে…..

Angry_Husband Season_2_ Part_1

0
Angry_Husband Season_2_ Part_1
Angry_Husband Season_2_ Part_1

Angry_Husband
Season_2_ Part_1

Written by Avantika Anha
.
আমি- আপনি আমাকে চিটিং করে বিয়ে করলেন কেনো বান্দর পোলা।
আরাভ- ওই মেয়ে ভালো করে কথা বলবা আমার সাথে। ভুলে যাবা না যেভাবেই হোক আমি তোমার স্বামী। বেশি কথা বললে কিন্তু থাপ্পর খাবা।
আমি- (সাথে সাথে মনে পড়ে গেলো প্রথম থাপ্পড়ের কথা।যেটা আরাভের কাছে আমি প্রথম খাইছিলাম।মনে পড়তেই হাত গালে চলে গেলো।) আর কি পারেন রাক্ষস কোথাকার। আপনার নাম না আরাভ ছিলো।রাহিদ কেমনে হলো। এ্যা আমার কত্ত শখ ছিলো। কিউট একটা বর হবে। কই থেকে এই Angry পোলা আমার কপালে জুটে গেলো।
আরাভ- হাহা আগে ভাবা উচিত ছিলো তোমার মিস. আনহা। সরি মিস. না মিসেস আনহা। তুমি কি ভেবেছিলে বর আমার পাশের ছেলেটা ছিলো ওটা আমার বন্ধু ছিলো। হাহা প্লানটা আমারি। এবার বুঝবা আমি কতোটা রাগী।
আমি- আমি বাড়ি যাবো থাকবো না এইখানে। আম্মুউউউউ আম্মু গো তুমি কই। এই টিকটিকি মার্কা ছেলে আমাকে চিটিং করে বিয়ে করছে।
আরাভ- আনহা একদম চুউউপ। চুপচাপ শুয়ে পড়ো।
আমি- না আমি ঘুমাবো না আমি এইখানে থাকবোই না আমি বাড়ি যাবো।
.
আরাভ আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে দিলো।
আরাভ- শুনো আমার সাথে লাগতে মানা করছিলাম তোমাকে। কিন্তু শুনো নি। একের পর এক ঝগড়া লাগিয়েই গেছো আমার সাথে। এখন বুঝবা আসল রাগ কাকে বলে। বুঝতে থাকো মিসের আহমেদ।
আমি- কিন্তু।
আরাভ- চুপ । কোনো কথা না শুয়ে পড়ো। নাহলে বাসর রাত করে ফেলবো আজই জোড় করে। যদিও আমার অধিকার আছে আমি তোমার স্বামী। সব নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু আমি এভাবে তোমাকে অাস্তি দিবো না। আলাদা ভাবে দিবো। শুয়ে পড়ো এখন জানু। গুড নাইট।
আরাভ ছেড়ে দিয়ে ও বিছানায় বসলো। আমি নিজের একটা সুতি জামা নিয়ে বাথরুমে ঢুকার আগে বললাম, “বান্দর পোলা। আমি আপনারেও বাঁশ দিবো। যদি না দেই তাহলে আমার নামও আনহা না।”এই বলে আমি বাথরুমে দৌড় দিলাম। আরাভ কিছু বলতে গিয়েও বললো না।
.
এতক্ষণ কথা হচ্ছিলো আরাভ আর আমার মধ্যে। আমাদের সম্পর্কটা ঝগড়াটে তা এতক্ষণে আপনারা হয়তো বুঝে গেছেন। আমি আনহা বর্তমানে ভার্সিটি প্রথম বর্ষে পড়ি। আর উনি মি. রাগী আরাভ। বান্দর মার্কা পোলা।নিজের কোম্পানি আছে। আরাভ ওর পরিবার আর একটা বন্ধুকে নিয়ে আমাদের বাড়ি গেছিলো। আমি আমার পরিবারের ওপরে বেশি কথা বলি না। তাই আমি ভেবেছিলাম আরাভের বন্ধুই হয়তো ওর হবু বর। যার নাম রাহিদ। কিন্তু আরাভের পুরো নাম যে রাহিদ আহমেদ আরাভ তা আমি জানতামই না। আমাদের পরিচয়ও একটা ঝগড়ার মধ্য দিয়ে। তাই তারে আমি Mr. Angry নাম দিয়েছি। বিয়ে কিভাবে হলো তা তো জেনেই গেছেন। এবার পরিচয়ের ঘটনাটা বলা যাক।
..
..
..
ফ্লাশব্যাক…..
প্রায় ২ মাস আগে…
আমি আর মিমি আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়ি ফিরছিলাম। এদিকে আরাভ মিটিং এর জন্য অফিস যাচ্ছিলো। রাস্তায় ওর কার নষ্ট হয়। মিটিং এর জন্য দেরি হচ্ছিলো। তাই সে ফোন দিয়ে গাড়ি আনতে বললো কাউকে। সে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলো। আমি মিমির সাথে গল্প করছিলাম তাই সামনে কে লক্ষ্য করি নি। সামনে ইট ছিলো তাও দেখি নি। খাইছি উস্টা আর আমার হাতের আইসক্রিম সোজা গিয়ে লেগে গেলো আরাভের মুখে আর হোয়াইট শার্টে। আমি ভয় তো একটু পাইছিই। তবুও সাহস নিয়ে সরি বলে আরাভের দিকে তাকালাম। যদিও তখন তার নাম একদম জানতাম না। আইসক্রিম লেগে আরাভের মুখ সত্যিই বান্দরের মতো লাগছিলো। তাই ভুলে হেসে ফেলছি। এই হাসাই আমার কাল হয়ে দাড়াইছে। এমনি এই পোলা রাগী। আমার হাসি দেখে ওর রাগ আরো বেড়ে গেলো।
আরাভ- এই যে মিস. আপনার সাহস তো কম না। এক আমার উপর আইসক্রিম লাগালেন। সরি বললেন মানলাম। কিন্তু হাসলেন কেন? আমাকে কি আপনার ফানি মনে হচ্ছে।
আমি- আসলে হয়েছে কি ভাইয়া ইট ছিলো আরকি.. (বিষয়টা বুঝাতে লাগলাম)
আরাভ- একদমমমমম চুউউপ।
আমি- আরে আরে বলতে তো দেন।
আরাভ- বললাম না চুউউউপ। কোনো কথা না পরিষ্কার করে দেন। রুমাল বা টিস্যু দিয়ে।
আমি- আরে একটু শুনেন।
.
আরাভ আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না। সোজা চড় বসিয়ে দিলো।
.
আরাভ- বললাম না। আরাভের মুখের উপর বেশি কথা বলা আরাভ একদম পছন্দ করে না।
.
আমি চুপচাপ গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে গেলাম।
মিমি- দোস্ত এটা কেমন পোলা। এখন কি হবে?
আমি- চুপচাপ
আরাভ- যা বললাম করেন। সোজা কথা।
.
আমি মিমির কানে বললাম…
দোস্ত পিছন দিকে দৌড় মারবো ওকে। ওই পাশের গলিটায়। ১ ২ ৩ বলার সাথে সাথে।
মিমি- ওকে
আরাভ- কি হলো কি ফিসফিস করছেন। পরিষ্কার করেন।
আমি- বান্দর পোলা। মারেন আমারে। দেখতে তো ভুতের মতো। ভুতকে ওমনেই মানায়। দুররর হন ।মিমি ১ ২ ৩ দে দৌড়।
.
বলেই আমি আর মিমি দিলাম দৌড়।
আরাভ আরও বেশি রেগে গেলো। সে ঠিক করে নিলো এই মেয়েকে ও একদিন শাস্তি দিবেই।
.
এটুকুতেই শেষ নয়। একদিন আমি ফোনে পিচ্চি বাচ্চাদের খেলার পিক তুলছিলাম।আর ওদের সথে খেলা করছিলাম পার্কে বসে। ওইদিন ওখান থেকে হঠাৎ একটা বাচ্চা রাস্তা হারায় কোনদিকে জানি চলে যায়। আর রাস্তা হারিয়ে ফেলে আরাভ বাচ্চাটাকে দেখে এবং সাহায্য করতে এগিয়ে আছে। বাচ্চাটা সম্পর্কে আমার কাজিন হওয়ায় আমি পুরো পার্ক মাথায় তুলে ফেলি । হঠাৎ আরাভ আসে সায়ানকে(কাজিনটা) নিয়ে। আমি ভেবে ফেলি আরাভ সায়ানকে কিডন্যাপ করেতেছিলো। পুরো মাঠ জড়ায় ফেলি। আর কিছু মানুষ মিলে আরাভকে মারা শুরু করে দেয়।
.
সায়ান- আপ্পি আংকেলটা আমাকে বাঁচিয়েছে। মারতে মানা করো।
আমি- ওমা সত্যি?
সায়ান- হুমম আপ্পি।
আমি- ওই হনুমান আগে বললি না কেনো? এবার যে কি হবে আমার?
.
.
ভয়ে তাড়াতাড়ি ওদের থামিয়ে আরাভকে সরি বলি। কিন্তু আরাভ কিছু না বলেই চলে যায়। আরাভ সেদিনই ঠিক করে নেয় আমাকে শাস্তি দিবে। আরাভ প্রচন্ড রাগী ছেলে। ওর পরিবারের সবাই ওকে ভয় পায়।
.
একদিন আরাভের বাড়িতে বিয়ের জন্য পাত্রীদের ছবি দেখা হচ্ছিলো।
.
আরাভ- কি মা এসব? আমি এখন বিয়ে করবো না। তোমাকে তো বলেছিলাম।
মা- একবার দেখ শুধু।
আরাভ- না ।
মা- দেখলে কি হয়?
আরাভ- দুরর
.
.
আরাভ ছিবি দেখা শুরু করলো। ওসব ছবির ভিড়ে আনহার ছবি দেখে আরাভ ঠিক করে ফেলে ওকে কি করতে হবে। তারপর আরাভের প্লান অনুযায়ী আজকের বিয়ে। আমি এদিকে রাগে শেষ হচ্ছি কারণ রাগী মানুষ আমার অপছন্দ। আর কে এভাবে বদলা নিতে বিয়ে করে আপনারাই বলুন।
.
ফ্রেশ হয়ে দেখি আরাভ ঘুমায় গেছে আমি সেই খুশি হয়ে ওকে বকা শুরু করলাম।
আমি- বান্দর পোলা, রাক্ষস একটা, শয়তান কোনেকার, ইদুর,বিড়াল টিকটিকি, তুই একটা বাজে ছেলে আমাকে শাস্তি দিস। কতো শখ ছিলো একটা কিউট বর হবে। যে আমাকে কত্ত ভালোবাসবে আর কোথা থেকে তুই একটা রাগী বান্দর মার্কা পোলা আমার ঘাড়ে চাপলি হুহ। তোকে আমি পুড়া রুটিব খাওয়াবো। ইদুরের বিষ মিশায় খাওয়াবো।
.
আরাভ চোখ খুললো। ও আসলে ঘুমানোর নাটক করছিলো। আমার এতো গুলো বকবক শুনে ও রাগে শেষ। আমার হাত ধরে এক হ্যাচকা টান দিলো। সোজা পড়লাম ওর বুকে। আর এদিকে আমার অবস্থা যায় যায় ভাব। কারণ আরাভ সব শুনে ফেলছে। আমি নিজেকে বলতে লাগলাম, আনহা এটাই তোর শেষ দিন। কে বলছে এতো বকভক করতে বুঝ এবার।
.
আমি- আমি না কিছু বলি নি । এসব তো নিজেকে বলছিলাম আমি।
আরাভ- ও তাই নাকি তা তুমি মেয়ে থেকে ছেলে হলা কেমনে । বকবক যখন করছিলা তখন তো এক পোলার কথা বলছিলা।
আমি- ভাই মাফ কর আমাকে। আমি আর কিচ্ছ বলবো না এই দেখেন কান ধরছি। (এক হাত দিয়ে এক কান ধরলাম)
আরাভ- আমি তোমার ভাই নাকি বর?
আমি- আপনি তো একটা বান্দর (আস্তে বললাম)
আরাভ- কি ? কি বিড়বিড় করছো জবাব দেও।
আমি- আপনি তো বর।
আরাভ- শাস্তি পেতেই হবে। পা টিপো আমার।
আমি- কিহহ ।
আরাভ- কিহ না হুম। টিপো নাহলে আজ এই ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশে তোমাকে বাথরুমেই রাত কাটাতে হবে। চুপচাপ যা বলছি করো ।
আমি- হুহ আমারো সময় আসবে।৤
আরাভ- আমি থাকতে এখন আমার সময় যা বললাম করো।
.
কি আর করার চুপচাপ পা টিপতে লাগলাম আর মনে মনে আরাভকে গালি দিতে লাগলাম। আরাভ এদিকে হাসতে লাগলো মুচকি মুচকি। আনহাকে আরাভ ঘৃণা করে না। কিন্তু ওর আনহাকে শাস্তি দেওয়ারও আছে। তাই ও বিয়ে করলো।
.
আমি এদিকে পা টিপছি আর ঘুমে টুপতেছি। পা টিপি আর ঘুমে টুপি। হঠাৎ ঘুমিয়েই পড়লাম। আরাভ তাকিয়ে দেখে আমি ঘুমিয়ে গেছি। ও আমাকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে গেলো।
.
পরেরদিন…
আমি উঠে দেখি আমি ঠিকঠাক শুয়ে আছি। আর পাশে Mr Angry ঘুমাচ্ছে। রাগ উঠে গেলো।আমাকে এতো শাস্তি দিয়ে ঘুমানো। ওকে আমি মজা দেখাবো । যেই ভাবা সেই কাজ। লিপস্টিক আনলাম। ওর মুখে ওটা দিয়া দাগ দিয়ে ওরে ভুতের মতো বানালাম। তারপর জ্বলদি জ্বলদি ফ্রেশ হয়ে নামায পড়ে বাইরে চলে এলাম। দেখি আরাভের মা বাইরে।
.
আমি- সরি দেরি হয়ে গেলো। আমার ঘুম ভাঙ্গে নি আন্টি।
মা- আন্টি কেন মা হবো তোর। পর দেরির কি? তুই আমার মেয়ের মতো।
আমি- আপনাকে কাজ করতে হবে না আমাকে বলুন আমি করে দিচ্ছি।
মা- এখন না । আজ তুই দেখ ও। শিখ পরে অন্য কোনোদিন।
আমি- আরে হেল্প তো করি। আমি না আপনার মেয়ের মতো। মেয়ের কথা কি শুনবেন না ?
মা- হাহা হুমমম। আয় সাহায্য কর। আরাভ কই ঘুমাচ্ছে?
আমি- জ্বী।
মা- এখনো । আচ্ছা নাস্তা হলে ওকে ডাকবি।
আমি- আচ্ছা (ডাকবো। আগে উঠুক নিজেকে দেখে তো পাগল হয়ে যাবে)
.
এদিকে আরাভ উঠলো। ওর আবার জ্বলদি পেপার পড়ার অভ্যাস তাই ঘরের বাইরে গেলো। ওকে দেখে মা (আরাভের আম্মু) আর আমি হাসতে লাগলাম। কিছু সময় পর আভা (আরাভের বোন) এলো। ও নিজেও হেসে ফেললো।
আরাভ ভাবতে লাগলো সবাই হাসছে কেনো? কিন্তু গুরুত্ব দিলো না। ঘরে গিয়ে পেপার পড়তে লাগলো। পেপার পড়া শেষে হঠাৎ ওর চোখ আয়নায় গেলো। আরাভ বুঝে গেলো সবাই কেনো হাসছে আর এই কাজ যে আমি করেছি তাও বুঝে গেলো। কারণ সবাই ওকে ভয় পায় ওর রাগের জন্য ।
.
এদিকে মা ও আভাও বুঝলো এই কাজ আমার । কিন্তু কেউ কিছু বললো না। শুধু এটা বললো… তুই অনেক ফাজিল আনহা।
.
এদিকে আরাভ…. আনহা বলে জোড়ে ডাক দিলো।

.

.
চলবে?????

সুখের আশা 

0

সুখের আশা 

লেখা –সুলতানা ইতি

মধ্যভিত্ত ঘরের মেয়ে জিমি, স্বপ্ন তার আকাশ ছোঁয়া সবে মাত্র ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠলো,,
এইটে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে সে, স্বপ্ন অনেক বড় লয়ার হবে সে,
এই বয়সে মেয়েরা পড়াশুনার পাশা পাশি আর অনেক কিছু স্বপ্ন দেখে
যেমন,একদিন কোন এক রাজকুমার এসে ঘোড়ায় করে নিয়ে যাবে স্বপ্নের দেশে,,,

জিমি ও তার বিপরীত নয়,কিন্তু সে তার মনে এই সব কিছুর থেকে পড়া লেখার স্থান বেশি দিয়েছে,

একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে জিমি বসার ঘরে অনেক মেহমান দেখতে ফেলো
যখন সে তার মাকে জিজ্ঞাস করলো
– মা বসার ঘরে এরা কে?
জিমির মা তার মামির সাথে কি যেন কাজে ব্যাস্ত, তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– এরা তোকে দেখতে এসেছে,তোর মামা গত কাল ই আমাকে পাত্র পক্ষের কথা জানিয়েছিলো,
কিন্তু আমার তোকে বলতে মনে ছিলো না,

জিমি মায়ের কথা শুনে অবাক হলো,কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না,যেন সব কথা তার হারিয়ে গেছে,

জিমির বাবা নেই, মামার বাসায় থাকে তারা,মামি ব্যাপার টা ভালো চোখে দেখে না, হয়তো এই জন্য,তাড়া তাড়ি তাকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে চাইছে,

জিমি নিঃশব্দে চোখের পানি ছেড়ে দিলো কান্না করা ছাড়া সে আর কি করতে পারে,

জিমির মা মেয়ের পাশে এসে বসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বল্লো কাঁদছিস কেনো মা
জিমি অশ্রুভেজা চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– মা আমি বিয়ে করতে চাই না এখন,আমি আর ও পড়া শুনা করব,জিমির মা কিছু বলার আগে

তার মামি বল্লো
-তা বললে কি হয় বিয়ের পরে জামাইকে পড়াতে বলিস, গরিব ঘরের মেয়ে, আবার বাবা নেই,এদের এতো আহ্লাদ থাকতে নেই,,কোন ভাবে স্বামির হাতে মৃত্যু পর্যন্ত কাটাতে পারলে ই ভালো

জিমি মামির কথা শুনে কিছু বলতে যাবে,জিমির মা জিমি কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– ভাবি আপনি কিছু চিন্তা করবেন না, আমি জিমি কে বুঝিয়ে বলবো

জিমির মা মেয়েকে নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, মেয়েকে বুকে ঝড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন
– মা রে তুই আমার একমাত্র মেয়ে তোকে নিয়ে কম স্বপ্ন আমি দেখিনি,কিন্তু সবার সব স্বপ্ন পূরন হয় না, তোর পড়া শুনার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়,সে গুলা কি আর তোর মামার পক্ষে দেয়া সম্ভব বল,

জিমি – মা, আমি আর মামার কাছে বই কিনার টাকা চাইবো না,আমি ও কাজ করবো পড়া ফাকে ফাকে

জিমির মা বল্লো
– পাগলি মেয়ে, এতো কথা বলতে নেই মা,তা ছাড়া দেখতে এলেই যে বিয়ে হয়ে যাবে এমন কোন কথা নেই

অবশেষ এ মায়ের কথাতে জিমি পাত্র পক্ষের সামনে যেতে রাজি হয়,
পাত্র পক্ষ জিমি কে দেখে যাওয়ার সময় জানিয়ে দেয় মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে

এ কথা জিমি শুনতেই কান্নায় ভেংগে পড়লো, ছেলে কে তার পছন্দ হয়নি,কালো,মোটা,বেটে, কথা গুলো ও বলতে পারে না ঠিক করে,

জিমি তার মাকে জানিয়ে দেয় ছেলে তার পছন্দ হয়নি, কিন্তু জিমির মামার একটা ই কথা ছেলে বিদেশ থেকে এসেছে টাকা পয়সার অভাব নেই, ১০ ভরি গয়না দিয়ে তারা জিমি কে সাজিয়ে নিবে

জিমি মামার সামনে থেকে চলে আসে কান্না ছাড়া তার কোন পথ নেই মা, মামার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কথা বলবে না, এটা সে জানে,

তা হলে কি টাকার কাছে তাকে বিক্রি করে দিচ্ছে,জীবন সংগী নির্বাচন করার কোন অধিকার তার নেই কারন সে গরিব, বাবা নেই,এদের কোন ভাবে দিন কাটলে ই হলো,

বিয়ে হয়ে যায় জিমির, সে তার মন থেকে পড়া শুনা করার স্বপ্ন টা ঝেড়ে ফেলে দেয়,এখন তার একটা ই স্বপ্ন স্বামির ভালোবাসা পাওয়া,কিন্তু ভয় হয় এর থেকে ও যদি সে বঞ্চিত হয়,

বিয়ের দিন রাতে জিমি বসে আছে ফুল দিয়ে সাজানো একটা খাটে, মনের মধ্যে হাজার কথা আকি জুকি দিচ্ছে, জিমির বর ঘরে প্রবেশ করতে ই জিমি উঠে গিয়ে তাকে সালাম করে

জিমির বর যেন একটা রোবট কোন কথা না বলে ই সে খাটের এক কোনায় বসলো

জিমি সাহস করে কথা বল্লো আগে,,
-আপনাকে একটা কথা বলতে চাই
– বল

জিমি তার বরের কথা শুনে একটু বিস্মিত হলো, তবু ও নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– আমি পড়া শুনা করতে চাই

– বিয়ের পরে মেয়েদের পড়া শুনা করা আমি পছন্দ করি না,বউ, বউয়ের থাকিস, এই বলে সে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো

জিমি সারা রাত কান্না করে পার করলো,
বিয়ের কয়দিন পরে ই জিমি জন্ম দিন আসে,

জিমির স্বপ্ন দেখে তার বর যদি তাকে জন্ম সারপ্রাইজ কোন গিপ্ট দিয়ে চমকে দিতো
কিন্তু কি করে সে তো জানে ই না জিমির জন্ম দিনের কথা, রাতে জিমি সেধে সেধে তাকে বলো
– এই যে শুনছেন আগামি কাল আমার জন্ম দিন

জিমি চায় তার বিয়ের পর জন্ম দিন টা নতুন মানুষের সাথে নতুন ভাবে কাটাতে

জিমির বর জিমি কে, ধমক দিয়ে বল্লো,এই সব রং ডং বাদ দে, তুই কি বাচ্ছা নাকি যে জন্ম দিন পালন করতে হবে

জিমি সেদিন রাতে ও খুব কান্না করে,একটু ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার কি তার নেই,

একটু সুন্দর করে কথা বললে কি হতো

জন্ম দিনে উইশ না ই বা করলো,কথা টা সুন্দর ভাবে বললে কি এমন ক্ষতি হতো

আজ জিমির বিয়ের এক বছর পূর্ন হলো,কিন্তু জিমি আজ আর বলেনি তাকে ম্যারেজ ডের কথা,
হয়তো বললে আবার সেই রকম ধমক মাখানো কয়টা কথা শুনতে হবে,

তবু ও জিমি হাল চাড়েনি অপেক্ষায় আছে এক দিন সব কিছু তার মনের মতো হবে,
ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমার এসে তাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের দেশে,
যেখানে কান্না বলে কিছু থাকবে না,,এই আশা টা ই হয়তো জিমি কে বাছিয়ে রেখেছে,

সমাপ্ত

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৪

0
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৪
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৪

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৪

 

লেখা –সুলতানা ইতি

 

গাইথি নির্বাক দৃষ্টিতে চুহেসের যাওয়ার তাকিয়ে আছে চুহেসের এই অদ্ভুত আচরনে সত্যি একটু অভাক হয়েছে
গাইথি ব্যাপার টা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বাড়ির বিতর যায়

আহমদ মেহেরাহ গাইথির বাবা মেয়েকে দেখে বল্লো কি রে মা কোথায় ছিলি
গাইথি- বাবা নিদিপাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম

আহমদ মেহেরাহ- মা তুই এখন বড় হয়েছিস যখন তখন যেখানে সেখানে যাওয়া ঠিক নয়

গাইথি- ওহ বাবা বান্ধুবীর বাড়িতেই গিয়েছি অন্য কোথা ও যাইনি
এই বলে গাইথি বাড়ির বিতরে চলে গেলো
গাইথি গিয়ে তার ভাবিকে বল্লো
– ভাবি কি করচো
গাইথির ভাবি ঐশী বল্লো
– কি আর করবো দেখতেই পাচ্ছো কাজ করছি আমার তো আর তোমার মতো রাজ কপাল নয় যে সারা দিন টই টই করে এসে সব রেডী পাবো

গাইথি- ওহ ভাবি তুমি এমন করছো কেনো, তুমি তো আমার লক্ষি ভাবি তোমার মুখে এই সব কথা মানায় বলো

ঐশী- থাক আর পাম্প দিতে হবে না, সাইমুম কল দিয়েছিলো, তোর সাথে কথা বলতে চাইছিলো

গাইথি- ওহ ভাবি মেজাজ খারাপ করো না তো,উনি কল দিয়েছে কেনো

ঐশী- আমি কি করে জানবো, দেখ গাইথি ছেলেটা ভালো ভদ্র তোর ভাইয়া তোর ভালো চায় বলেই তো সাইমুমের মতো একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে

গাইথি- আমি জানি ভাইয়া ভালো চায় ভাবি,কিন্তু এ কেমন ভালো চাওয়া,একবার ও জানতে চাইলো না বিয়েতে আমার সম্মতি আছে কি না

ঐশী- রেগে যাচ্ছিস কেনো বিয়েটা তো আর এখন হচ্ছে না, লম্বা সময় আছে,এর মধ্যে ওর সাথে কথা বল দেখবি ভালো লাগবে

গাইথি কিছু না বলে চলে গেলো
গিয়ে নিজের রুমের দরজা আটকে দিলো, ফেজবুক লগইন করলো নাহ আজ ও কোন মেসেজ এলো ঐ আইডি থেকে,ছেলেটা কি হারিয়ে গেলো নাকি আজ চার দিন হলো কোন মেসেজ নেই

গাইথি ভাবছে পিছনের কথা, কবিতা গাইথির বরাবরি অপছন্দ ছিলো কিন্তু কেনো জানি ঐ দিন একটা কবিতা তে চোখ আটকে যায় কবিতা টা ছিলো এমন
“আমার একলা দিনের ক্লান্ত বেলায় আমার মাঝে আমার বাস
সেই মেঘলা দিনের নিভু আলোয় লেপ্টে ছিলো দূরের ওই নীলাকাশ”

কয়েকবার পড়ার পর কবিতা টা গাইথি মুখাস্ত হয়ে যায়, আইডির নাম দেখে ছেলে না মেয়ে বুঝা যাচ্ছে,নেইজিনের নীড়ে,এটা কি হতে পারে,তার পর কিছু না ভেবেই ইনবক্সে নক করে,
হাই আপনি কি কবি?
কবিতা কি আপনার খুব পছন্দ
– কি করেন আপনি

কিন্তু মেসেজ সিন করার কোন নাম গন্ধ নেই
দুই দিন পরে মেসেজের এন্সার আসে,
-না আমি কবি নই, কবিতা আমার ভালো লাগে তাই দিলাম

প্রায় সংগে গাইথি রিপ্লায় দেয়
-ওহ আমি ভেবেছি আপনি কবিতা লিখেন
আবার রিপ্লায় আসে
– নাহ আমি ওতো সময় পাই না যে বসে বসে কবিতা লিখবো

গাইথি বল্লো
-আপনি কি করেন
– কোথায় থাকেন
-আমরা কি বন্ধু হতে পারি

গাইথির প্রশ্নের কোন উত্তর আসলো না অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর গাইথি ফেজবুক থেকে বেরিয়ে যায়,এ কেমন মানুষ কথা কয়টা বলেই অফলাইনে চলে গেলো দূর,এই প্রথম কাউকে নিজে থেকে মেসেজ দিলাম আর সে এতো দাম দেখালো,এটা তো পূরো পুরি আমাকে ইনসাল্ট করেছে

আজ চারদিন ফেরিয়ে গেলো এখন ও মেসেজ গুলো সিন ও হলো না এন্সার এলো না,

গাইথি কে ডাকলো তার ভাবি ঐশী
ঐশী- গাইথি মিশমি কাঁদছে ওকে নিয়ে একটু কান্নাটা থামিয়ে দে না আমি পারছি না

গাইথির ভাইজি মিশমি বয়স দু বছর, এখন দু একটা করে আধো আধো কথা বলে
গাইথি মিশমি কে নিয়ে বাগানের দিকে গেলো

চুহেস রেস্ট হাউজে এসেই তার রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিলো
সব কিছু তার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে গাইথি ই যে তার বাবুই,

ছোট বেলায় গাইথির মিষ্টি কথা, সব থেকে বেশি চুহেসের কাছে কাছে থাকা সব মিলিয়ে চুহেস গাইথি কে আদর করে বাবুই বলে ডাকতো, আজ সেই বাবুই কে দেখে তার বিস্ময়ের শেষ নেই তার বাবুই তাকে ছিনতে পারেনি, এটা যে খুব যন্ত্রনার কি করবে মানবে চুহেস তা

চুহেস গিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো আয়না নিজেকে দেখছে, এটা সত্যি
কিন্তু তার চাওয়ার মাঝে ছোট বেলার চুহেস কে খুজে ফিরছে, সে কি এতোটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে যে বাবুই তাকে ছিনতে পারেনি , কি করলে বাবুই তাকে ছিনবে,
একটা পথ আছে তা হলো আহমদ মেহেরার সামনে যাওয়া তা হলে উনি আমাকে ছিনবে,

আর গাইথি ও তার ছোট বেলার কথা মনে করবে, কিন্তু আমি এতো তাড়া তাড়ি আহমদ মেহেরার সামনে যেতে চাই না,
আগে বাবুইকে ভালো করে বুঝতে হবে, ওকি ছোটবেলারর চুহেস কে মনে রেখেছে,
নাহ আমাকে আরেক বার গাইথির মুখোমুখি হতে হবে, একবার কেনো প্যাচে ফেলে গাইথি কে আমার পাশে পাশে রাখতে হবে

সেদিন বিকেলে আবার চুহেস গাইথিদের ওখানে যায়, এবার আর নিহার কে সাথে নিলো না
একা ই গেলো, অনেক্ষন গাইথিদের বাড়ির দিকে নজর রাখলো

নাহ কেউ বের হচ্ছে না বাড়ি থেকে, কি করা যায় একবার কি বেতরে যাবো,
কে আছে এখন ওদের বাড়িতে?
বাবুইর মা নেই, কিন্তু আমার ছিনার মতো আহমদ মেহেরাহ আছে,
তার সাথে অনেক পুরনো হিসেব বাকি,কিন্তু বাবুইর ব্যাপার টা অন্য
ভালোবাসি বাবুই কে বাবুই কি আমার এই অবেলায় ভালোবাসা টা মেনে নিবে
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে কি করা যায়,
এমন সময় চুহেসের নজর পড়ে গাইথির দিকে গাইথি যেন কোথায় গিয়েছে এখন বাড়িতে ফিরছে

চুহেস এগিয়ে গেলো গাইথির সামনে
গাইথি একটু অভাক হলো চুহেস কে দেখে
-আরেহ আপনি এই সময় এখানে

চুহেস- হুম তোমার সাথে দেখা করতে এলাম( কিছু মনে করোনা বয়সে তুমি আমার অনেক ছোট তাই তুমি করে বললাম)

গাইথি ইষ্যত হেসে বল্লো,
-ইটস ওকে, কি মনে করবো আমি,,আপনি তো বললেন না আমার সাথে কেনো দেখা করতে এলেন
চুহেস- এখন এখানে বলা সম্ভব নয়
গাইথি- তা হলে?
চুহেস- তুমি কাল আমার সাথে দেখা করবে দিঘীর উত্তর পাশে যে খালি জায়গা টা, ওটা অনেক সুন্দর আমি সেখানে সকালবেলা অপেক্ষা করবো,মনে রেখে সকাল বলতে খুব সকালে

কথা শেষ করে চুহেস হন হন করে হাটা ধরলো
গাইথি কে কিছু বলার সুযোগ দিলো না

গাইথি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে লোক টা এমন কেনো,দেখে মনে হচ্ছে অতি ভদ্র কিন্তু রোবটের মতো

গাইথি বাসায় ফিরে এলো,দুটো টিউশনি করায় তার জন্য তাকে প্রতিদিন বিকেলে বের হতে হয়

গাইথি মনে মনে চুহেসের কথা ভাবছিলো এমন সময় গাইথির কল আসে,মোবাইল স্কিনে নামটা দেখে গাইথি খুশি হয় শ্রুতি আপু ফোন করেছে আমেরিকা থেকে

to be continue