বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1178



তিনি এবং ও! ১২.

0
তিনি এবং ও! ১২.
তিনি এবং ও! ১২.

তিনি এবং ও!

১২.
রাতে খাবার সময় বাবা বললেন
– তুমি তোমার মায়ের সাথে কয়েকদিন থেকে আসো। ভালো লাগবে তোমার।
দাদী কিছু বললেন না। চুপচাপ খাচ্ছিলেন। পরেরদিন সকালে দাদী আমার ব্যাগপত্র গুছিয়ে দিলেন। বাবার কথার অমান্য করার সাহস আমার কখনওই হয়নি।মায়ের বাসায় বাবাই আমাকে নিয়ে গেলেন। আমি অবাক হচ্ছিলাম বাবা কীভাবে জানে মা এখানে থাকে?
আমাকে ব্যাগপত্র সহ দেখে মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আমি কী বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
বাবা এতো সহজে আমাকে এখানে রেখে গেলো কেনো? এই প্রশ্নের উত্তর টাই আমি দিনরার খুজছিলাম।
মার সাথে আমার তেমন কোনো কথা হতো না প্রথম দিকে। মা আমাকে বাচ্চাদের মতো ট্রিট করতো। নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন। গোসল করার পর মাথা মুছে দিতেন।
একদিন মাকে প্রশ্ন করেই বসলাম – আচ্ছা মা, আমাকে বাবা এতো সহজে এখানে রেখে গেলো কেনো?
মা বলল – তোমার বাবা তোমাকে বলে নি?
আমি বললাম – কী বলবে?
মা বলল – আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। বেশিদিন হাতে সময় নেই। তুমি আমার স্বাস্থ্য দেখেও বুঝতে পারোনি?
আমার খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো। এই অল্প সময়ের জন্য মায়ের কাছে এসেছি? আর আমি বুঝতেও পারলাম না মা অসুস্থ?
মা আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল
– নিড্র, তুমি মন খারাপ করোনা। আর তুমি বুঝবেও বা কীভাবে? আমাকে তো আগে কখনওই দেখোনি।
– মা তুমি মজা করছো তাই না?
– নিড্র তোমার বাবা এতো উদার নয় যে, আমার কাছে তোমাকে রেখে যাবে। আমার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। সে জানে, আমার মৃত্যুর পর তোমাকে ফিরে পাবে!

আমি বাচ্চাদের মতো মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম আর বললাম
– তুমি আমাকে কেনো রেখে চলে এসেছিলে?আমার শৈশব তোমাকে ছাড়া কেটেছে মা। মা তুমি জানো তোমার আদর ভালবাসাকে আমি কতোটা মিস করেছি?

কথাগুলো অদ্রিকে বলতে বলতে নিদ্রের চোখে পানি চলে এলো।
অদ্রি বলল
– আপনার মা এখন কেমন আছেন?
নিদ্র বলল
– মা আমাকে আবারো রেখে চলে গেছে। মা তো মাই হয়। জানেন অদ্রি, ক্যান্সার যখন মাকে একদম জাপটে ধরলো তখন মা কথা তেমন বলতে পারতেন না। অল্প কিছু বাংলা শিখেছিলো আমার কাছ থেকে।
হাত পা নড়াচড়াও করতে পারতো না। শুধু বলতো – নিড্র, ফিল কোল্ড।
আমি তখন তার গায়ের কম্বল ঠিক করে দিতাম।
দেখুন না অদ্রি আমার ভাগ্য, মাকে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি। সেই ছোটো থেকে মাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছি। সবসময় ভাবতাম আমার মা থাকলে মায়ের জন্য এটা করবো ওটা করবো। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারতাম না। সে তার শেষ জীবন টা ঠিকি একমাত্র সন্তান কে নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছে।
অদ্রি বলল
– আপনার মায়ের ছবি আছে?
– আছে। মা মারা যাবার ১ সপ্তাহ পরই বাবা আমাকে এখানে পাঠিয়ে দিলেন। এখানে পাঠানোর আরেকটা কারণ লুসি।
– আপনার প্রেমিকা?
– নাহ তা ঠিক না। আমার মায়ের নার্স ছিলেন। খুব ভালো ফ্রেন্ড ছিলাম আর আমার ভালোও লাগে। তাই আরকি তাকে নিয়ে ভাবি। আসলে কিছু একটা করে তো সময় কাটাতে হয়।
অদ্রি বলল
– অনেক রাত হয়েছে আমি আসি।
– হুম।
অদ্রি চলে যাবার পর নিদ্র দরজা আটকে দিয়ে তার ব্যাগ থেকে মায়ের সাথে তার ছবিটা দেয়ালে টানালো।
একদৃষ্টিতে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।

অদ্রি লিলির রুমে গিয়ে দরজায় নক করলো। লিলি ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে বলল
– কিছু লাগবে?
অদ্রি বলল
– তুই এখানকার সবকিছু চিনিস না?
– হ আপা। পুরো এলাকা, পাশের এলাকা সব আমার চেনা।
– কাল আমাদের নিয়ে সব দেখাতে পারবি?
– একদিনে তো আপা হইবো না।অনেকদিন লাগবো।
– অনেকদিন লাগুক। তুই পারবি তো?
– হ আপা পারুম।
– আচ্ছা ঘুমা তুই।
অদ্রি তার রুমে এসে জানালার পাশে দাঁড়ালো। মাথার ঘোমটা খুলে দিয়ে চুলের খোঁপা খুলে দিলো।
কোনো বাতাস নেই, গুমোট গুমোট লাগছে। তারপরও আজ খুব একটা খারাপ লাগছে না তার। অদ্রির মনে হচ্ছে, ভালো একজন বন্ধু পাওয়া গেলো বটে।
নিদ্র তার চোখ মুছে মায়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মা হাসছে, কতোই না সুন্দর সেই হাসি। মায়েরা কখনওই অসুন্দর হয়না। মাতৃত্ব মা জাতির সৌন্দর্য টাকে বাড়িয়ে দেয়।
নিদ্র আর তার মা একই ফ্রেমে আবদ্ধ কিন্তু তার মা যে নেই। তার মায়ের হাসিটা এভাবেই থেকে যাবে কিন্তু তার……
নিদ্র আর ভাবতে পারছে না। তার মাথা ভার হয়ে আসছে। বুকের মধ্যে কোথাও যেন কাটা বিঁধছে।
নিদ্রের মনে হলো কেউ তাকে ডাকছে। তার বিছানার উপর কেউ শুয়ে আছে।
নিদ্র বিস্ময় চোখে দেখতে লাগলো, তার মা বিছানায় শুয়ে আছে। আবারো নিদ্র শুনতে পেলো
– নিড্র ফিল কোল্ড।
নিদ্র বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে পায়ের কাছে রাখা চাদর তার মায়ের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলল
– মা, ঠিক আছে?
নিদ্র বুঝতে পারছে তার হ্যালুসেনেশন হচ্ছে।তারপরও সে চাচ্ছে, আজীবন এভাবেই কাটিয়ে দিতে মায়ের সাথে।

চলবে……!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১১.

0

তিনি এবং ও !

১১.
অন্যথা আমাকে যেতে হলো। বেশ বড়সড় বাড়িতে মহিলা আমাকে নিয়ে গেলেন। ভয়ভয় লাগছিলো আবার চিন্তিতও ছিলাম। কোনোভাবেই মাথায় আসছিলো না আমার মা কোথা থেকে আসলো।
অদ্রি বলল
– সত্যি কি আপনার মা ছিলেন?
নিদ্র বলল
– আহ, গল্পের মাঝে কথা বলবেন না। আমাকে বসতে দিয়ে মহিলা বাড়ির দোতলায় গেলেন। প্রায় ৩০ মিনিট পার হয়ে যায় কেউ আসলো না। এদিকে বাসায় যেতে আমার দেরি হচ্ছিলো। আমি উঠে চলে আসবো তখন পেছন থেকে আমাকে বলল
– হেই, কোথায় যাও?
পেছন ফিরে দেখি মধ্যবয়সী একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বললাম
– আমার দেরি হয়ে যাচ্ছিলো। বাবা রাগ করবে।
মহিলা সোফায় বসে বলল
– নাজমুল তো সবসময়ই বেশি সময় মেনে চলে। তুমি বসো আমার পাশে।
আমি তার উল্টো পাশের সোফায় বসাতে মহিলা বললেন
– মায়ের পাশে বসতেও লজ্জা লাগে?
– আপনি আমার মা নন। আমার মা অনেক আগেই মারা গেছেন।
– নাজমুল তোমাকে এই কথা বলেছেন?
– বাবা, সত্যিটা আমাকে বলেছেন। বাবা মিথ্যা বলেন না।
– তোমার মায়ের ছবি আছে তোমার কাছে?
– না, তার কোনো স্মৃতি আমার কাছে নেই।
– কিন্তু তোমার স্মৃতি আমার কাছে আছে।
তারপর একটা ছবি আমার হাতে দিয়ে বললেন
– নাজমুল, আমি আর আমার কোলে যে ছোট্ট শিশু সেটা তুমি।
ছবিটা হাতে নিয়ে আমি উঠে চলে আসবো তখন উনি বললেন
– ছবিটা দিয়ে যাও। এই একটাই স্মৃতি আমার।
আমাকে জড়িয়ে ধরে মহিলা ডুকরে কেঁদে ফেলল। এই প্রথম কোনো নারীর কান্না আমি গভীরভাবে অনুধাবন করলাম। আমার বুকের মধ্যে ব্যথা করছিলো। অদ্রি এই মধ্যবয়সী মহিলা আমার মা কিনা তখনো জানতাম না। কিন্তু তার স্পর্শ আমাকে মায়ের অনুভূতি দিচ্ছিলো।
অদ্রি বলল
– তারপর কী করলেন?
নিদ্র মুচকি হেসে বলল
– বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম। বাবা আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন, ও ও ওই মহিলার সাথে তোমার সাক্ষাৎ ঘটেছে?
আমি বললাম, হ্যা। বাবা বললেন, সে তোমার জন্মদাত্রী। এখন কথা হচ্ছে, সে মা কিনা আমার সন্দেহ আছে। তা না হলে সে তোমাকে ১ মাসের রেখে চলে যেতেন না পুরোনো প্রেমিকের হাত ধরে।
এমনিতেই আমার অবস্থা ভালো ছিলোনা। এতদিন জেনে আসা সত্যটা হুট করে মিথ্যে হয়ে গেলো। বাবা যা বললেন তাতে তো আরো অবস্থা খারাপ হলো। বাবা আমার অবস্থাটা হয়তোবা কিছুটা বুঝেছিলেন। তাই বললেন – তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর ঠাণ্ডা মাথায় সব শুনবে।
আমি বললাম
– নাহ, এখনি শুনবো।
– তাহলে শুনো। আমি এখানে পড়তে এসে তোমার জন্মদাত্রীর প্রেমে পড়ি।আমি খুব কালো তাই সাদা চামড়ার প্রেমে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। আমি এখানে খুব ভালো একটা পজিশনে যাই। তারপর তোমার মাকে বিয়ের কথা বলি। সে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা বাধলো যে, বিয়ের ১ মাসের মাথায় তোমার জন্মদাত্রী তোমাকে গর্ভে ধারণ করে।
সমস্যাটা তখনি হলো তোমার মা তোমাকে রাখতে চাইলেন না। শেষে অনেক ঝামেলার পর রাজি হলো। তোমার জন্মের ১ মাসেই সে ডিভোর্স নিয়ে চলে গেলেন।
আমি বললাম – কারণ তো আছেই। মা তো অকারণে ছেড়ে যাননি।
– ছেলে মাকে পেয়ে বাবার সাথে তর্ক জুড়ে দিচ্ছো? সমস্যা নেই সত্য জানার অধিকার তোমার আছে।আসলে তোমার মায়ের পুরোনো প্রেমিক তখন এসে হাজির হয়েছিলো। ব্যাস চলে গেলো।
আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাবা আমাকে বললেন – তুমি এখন যাও। আমার ভালো লাগছেনা।
আমি বের হবার সময় বুঝতে পারলাম বাবা তার চোখ মুছছেন।
এই প্রথম আমি বাবাকে কাঁদতে দেখলাম। আমার আসলে মায়ের কথাটা জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হয়নি।

চলবে……!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১০.

0
তিনি এবং ও ! ১০.
তিনি এবং ও ! ১০.

তিনি এবং ও !

১০.
বিকালের দিকে বাগানে চেয়ার পেতে চুপচাপ বসে আছে নিদ্র। দূর আকাশের দিকে তার দৃষ্টি।
নিদ্র খেয়াল করলো কেউ একজন তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।কে আর হবে? এই বাড়িতে মানুষ মাত্রই বর্তমানে দুজন। অদ্রি আসবে না কারণ দুপুরে আবারো তাদের মাঝে বেশ কথা কাটাকাটি হয়েছে। আর লিলি তো কখনওই তার আশেপাশেও আসেনা। দূর থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে দেখে। এখানে চেয়ারও নেই যে বসতে বলবে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে। বসতে বললেই তাকে চেয়ার ছাড়তে হবে। বিশেষ প্রয়োজন হলে সেই কথা বলবে। নিদ্র আকাশের দিকে মন রাখার চেষ্টা করছে। অনেকক্ষণ যাবত পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। পেছন থেকে বলল
– আমি বসতে পারি এখানে?
নিদ্র পিছনে তাকিয়ে দেখলো অদ্রি হাতে চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিদ্র বলল
– আপনার বাড়ি আর আপনিই অনুমতি চাচ্ছেন?
অদ্রি চেয়ার পেতে বসে মাথার ঘোমটা ঠিক করে বলল
– মানে আপনাকে বিরক্ত করতাম না ইয়ে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।
নিদ্র বলল
– বিরক্ত তো করেই ফেলেছেন এখন জিজ্ঞেস করুন!
অদ্রি মাথা নিচু করে লাজুক স্বরে বলল
– আপনি চুলে কোন কালার ব্যবহার করেছেন সেটা জানতে চাচ্ছিলাম।
নিদ্র ঠাট্টার সুরে বললে
– কেনো? আপনিও করবেন নাকি?
অদ্রি মাথা উঁচু করে বলল
– নাহ নাহ আমাকে ওসব সাজে না।লিলির খুব পছন্দ হয়েছে কালার টা। ও নাকি পার্লার থেকে করাবে।
– আমি ভাবলাম আপনি রঙিন হতে চাচ্ছেন। যাই হোক, আসলে আমি কোনো কালার ব্যবহার করিনি।
অদ্রি অবাক হয়ে বলল
– কিন্তু বাঙালী দের এরকম চুলের রঙ তো হয়না। আমি তো এরকম শুনিও নাই।
– ডাবল সংকর বাঙালী দের হয়।
– বুঝলাম না।
– বাঙালী তো সংকর জাতি। আমি হলাম সেই সংকর জাতির সংকর।
– কীসব বলছেন আপনি।
– আমার বাবা বাঙালী আর মা জাতিতে ইংরেজ। বাবা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বাইরের ইউনিভারসিটি তে পড়তে যান। মাও ওখানে পড়তো। ব্যাস প্রেম হয়ে গেলো, বিয়ে করলেন তারপর ডাবল সংকরের নিদ্র জন্ম নিলো।
– কিন্তু আপনার কথায় তো মনেই হয়না। আপনার বাংলা বলার ধরণে মনে হয় মানে আপনার বাংলা টা তো তাহলে এতো ভালো থাকার কথা না।
– মায়ের ভাষা তখনই তো শিখবো যখন মাকে পাবো! মাকেই তো পাইনি। আমার জন্মের সময়ই মারা গেছেন। দাদীর কাছে মানুষ হয়েছি। বাংলার অধ্যাপিকা ছিলেন। বুঝতেই পারছেন।
– আপনার মা আপনার মতোই সুন্দর ছিলেন?
– সে তেমন সুন্দর ছিলেন না। শুধু গায়ের রংটাই সাদা। আমার চেহারা বাবা – মা কারোরই মতো হয়নি। মায়ের গায়ের রঙ, চোখের আইরিশের রঙ আর চুলের রঙ এককথায় সকল রঙ তার থেকে প্রাপ্ত। বাবার কী পেয়েছি আমি আজও খুঁজে পাইনি।
আর যখন যা ইচ্ছা হয় বলে ফেলি এটাও আমার মায়ের স্বভাব।
তবে লুসি খুব সুন্দরী।
– ইংরেজজাতি সুন্দর হয়।
– আমি তো আমার কথা বললাম। আপনার কথা জানতে পারি?
অদ্রি প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল
– রাতে কী খাবেন?
নিদ্র বলল
– আপনি যা খাওয়াবেন।
অদ্রি দ্রুত পায়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। অদ্রি তার মায়ের মুখখানা মনে করার চেষ্টা করছে। মধ্যবয়সী একজন মহিলার নিড্র ডাকটা তার কানে বাজছে।
রাতে নিদ্রের রুমে অদ্রি চেয়ার এনে রাখলেন। চেয়ার রাখার সময় অদ্রি দেয়ালের রঙ দেখলো। কী চকচকে রঙ! আর কেমন বেমানান।
নিদ্র বিছানার উপর আসন পেতে বসে পুরাতন একটা বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলো। নিদ্র বলল
– আপনাকে মিথ্যে বলেছি।কিন্তু আপনি বুঝতে পারেননি।
অদ্রি দেয়ালে হেলান দিতে গেলো তখনি নিদ্র বলল
– আপনি রঙিন হয়ে যাবেন। রঙ পুরোপুরি শুকায় নাই।
অদ্রি বলল
– এ ঘর টাতে তেমন আলো বাতাস আসেনা।
– কিছুই করার নেই। এখন এটাতে মন বসিয়ে ফেলেছি।
– কী মিথ্যে বলেছেন? আপনার বিষয়ে বলতে গেলে কিছুই জানি না। সেক্ষেত্রে মিথ্যেটা বুঝতে না পারাটা ব্যর্থতা না।
– কিছুই জানতে হয়না। কথা বলার ধরনে ধরা যায়।
– শিখিয়ে দিবেন?
– আমার মায়ের বিষয়ে আজ খুব বলতে ইচ্ছে করছে। আপনি শুনবেন?
অদ্রি বলল
– বলুন।
নিদ্র বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে বসলো। অদ্রি তার মুখোমুখি বসলো।
নিদ্র এখনো সেই বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে।
নিদ্র বলল
– মা শব্দটার অর্থ আমার জানা ছিলোনা। লালনপালন সবকিছু আমার দাদী করেছেন। বাবা কখনওই বেশি আদর করেননি আবার কমও করেননি। মায়ের কোনো স্মৃতি নিয়ে বাবা আমাকে বড় হতে দেননি। একবার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মা কোথায়? বাবা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গম্ভীর স্বরে বলেছিলেন — সে মারা গেছেন তোমার জন্মের সময়। মা কেমন ছিলেন? কীরকম দেখতে সেটা আমি কোনোভাবেই জানতে পারিনি। কিন্তু মায়ের চেহারা কেমন হতে পারে সেটা আমি মনে মনে এঁকে রেখেছিলাম। বাবা খুব কালো, দাদীও তাই। আর আমি সাদা। বাবা আমার অমিল গুলোই আমি মায়ের বৈশিষ্ট্য স্বরূপ মেনে নিলাম।
আমার বয়স ২১ হবে ১ সপ্তাহ বাকি। ফ্রেন্ডদের সাথে বাস্কেটবল খেলছিলাম। খেলার বিরতির সময় পাশেই বসে ছিলাম। একজন বয়স্ক মহিলা আমাকে বললেন – আপনি নিড্রো নাজমুল?
আমার নামের বিকৃতি টা আমার সহ্য হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু এই বয়স্ক মহিলার বলার ধরণে আমার মেজাজ কিছুটা খারাপ হলো। বিরক্তি নিয়েই বললাম – হ্যা।
বয়স্ক মহিলা বললেন – তোমার মা খুব দেখত্ব চাচ্ছে তোমাকে। আমার সাথে চলো।
আমার অবাক হলাম। তাকে বললাম – আপনার ভুল হচ্ছে। আমার মা তো অনেক আগেই মারা গেছেন।
বয়স্ক মহিলা বললেন – আমার ভুল হচ্ছে না। তোমার মা জীবিত। চলো আমার সাথে।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ৯.

0
তিনি এবং ও ! ৯.
তিনি এবং ও ! ৯.

তিনি এবং ও !

৯.
রশিদ সাহেবের চলে যাবার পর নিদ্র বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে রইলো। অদ্রির সাথে এভাবে কথা বলাটা ঠিক হয়নি। আর সেও বা কেমন?
নিদ্র ভাবছে, অদ্রিও তো তার সাথে ভালো ভাবে কথা বলতে পারতেন। হাজব্যান্ডকে এতোই ভালবাসতো যে, ২য় বিয়ে তো দূরে থাক কোনো ছেলের সাথেও বন্ধুত্ব সম্পর্ক টুকু নেই।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিদ্র গভীর নিদ্রায় ঢলে পরলো। স্বপ্নবিহীন ঘুম ভাঙল খটখট আওয়াজে। কেউ একজন তার রুমে আছেন, এমনকি কিছু একটা করছেন। হাঁটা চলার শব্দ তার কানে আসছে। কে হতে পারে? শব্দটা চেনা চেনা লাগছে। ভাসা ভাসা কথা তার কানে আসলো। কিন্তু কথাটা সে বুঝতে পারলো না। তার ইচ্ছে করছে বিছানা ছেড়ে উঠে বসতে কিন্তু সে তাও পারছে না। হাত, পা নাড়াতে পারছেনা।কণ্ঠস্বর আবারো ভেসে আসলো। সে এবার স্পষ্টত বুঝতে পারলো, তার মা বলছে
– নিড্রো, ওয়েক আপ বেবি।
তার মাই তাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য ঘরে আওয়াজ করছিলো। নিদ্র আস্তে আস্তে বলল
– মা, ঘুমাতে দাও।
এই সময় তার মায়ের মুখখানা দেখতে ইচ্ছে করছেনা। মাঝেমধ্যেই এমন হয়। মাকে খুব ঘৃণা করে আবার মাঝেমধ্যে খুবই ভালবাসে।
দুপুরের খাবার টেবিলে গুছিয়ে রেখে অদ্রি গোসল করতে তার ঘরে গেলো।রশিদ সাহেব নিদ্রকে ডাক দিতে যাবেন আর তখনি নিদ্র নিচে নেমে এলো। নিদ্রকে দেখে রশিদ সাহেব বললেন
– এই বয়সে ঘরে ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবে?
নিদ্র বলল
– একা একা ঘুরতে ভালো লাগেনা।
– আমার যে বাবা সময়ের অভাব। তুমি অদ্রিকে নিয়ে ঘুরতে বের হলেই তো পারো?
– চাচা আপনি পাগল হয়ে গেছেন। ওনাকে নিয়ে ঘুরতে গেলে কেউ একজন জীবিত ফিরে আসবে। না হয় আমি আর না হয় উনি।
রশিদ সাহেব আৎকে উঠলেন এবং বললেন
– এমন কেনো হবে?
নিদ্র টেবিলে চেয়ার টেনে বসে বলল
– উনার সাথে আমার মিনিটে মিনিটে ঝগড়া লাগে।আমি কী না কী বলবো, উনি লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দিবেন। আর না হলে কোনো পুকুর বা খালে ফেলে দিলেন।
রশিদ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন
– ব্যাটাছেলে মানুষ গায়ের জোরে সাঁতরে উঠে আসবা।
নিদ্র মন খারাপ করে বলল
– সেটাই তো পারিনা। আমার নাকি পানিতে দোষ আছে দাদী বলে। পানিতে নামলেই পানির দানব আমাকে তার কন্যার সাথে বিয়ে দিবেন। তারপর আজীবন পানির রাজ্যে আমাকে বসবাস করতে হবে।
রশিদ সাহেব হা হা হা হা করে হাসতে শুরু করলেন।বললেন
– তোমার দাদী যা বলেছেন, তুমি যে কতো সুন্দর সেটা দেখেই বলেছেন। এতো সুন্দর ছেলে নাজমুলের হতে পারে, আমার বিশ্বাসই হয়নি প্রথমে। পরে যখন……
রশিদ সাহেব আর কোনো কথা বলতে পারলেন না। তার কথার মাঝেই অদ্রি বলল
– লিলিকে দেখেছেন আপনারা?
নিদ্র টেবিলের উপর রাখা খাবারের বাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। যদিও বাটিগুলো ঢাকা। মূলত সে অদ্রিকে ইগনোর করতে চাচ্ছে। এই মেয়ে কথায় কথায় রেগে যায়। লুসি অবশ্য তেমন না। খুবই সুইট আর হাসিখুশি।কতদিন তাদের দেখা হয়না। এখন কী করছে লুসি? নিদ্র ভাবছে। এখন তো ওখানে রাত। হয়তোবা কেঁদে কেঁদে বালিশ ভেজাচ্ছে। আচ্ছা কাঁদলে ওর নাক লাল হয়ে যাবে। কতো কিউট লাগবে ওকে। জীবনের প্রথম প্রেমটা হয়তোবা এমনি হয়। নিদ্রের ভাবতেই অবাক লাগছে। সে প্রেমে পড়েছে লুসির।
রশিদ সাহেব আর অদ্রি কথা বলছে। সেদিকে নিদ্রের একদমই খেয়াল নেই। রশিদ সাহেব নিদ্রের হাতে ঝাকি দিয়ে বলল
– এই ছেলে?
সাথে সাথেই নিদ্রের হুশ হলো। নিদ্র বলল
– কিছু বলবেন?
রশিদ সাহেব খাবার প্লেটের দিকে ইশারা করে বলল
– খেয়ে নাও।
খাবারের দিক তাকাতেই অদ্রির দিকে চোখ পরলো। ঠিক তার উল্টো পাশে বসেছে। ধবধবে সাদারঙ এর থ্রিপিচ পড়েছেন। মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে ভাত মাখাচ্ছেন অদ্রি।
সাদারঙ অল্প বয়সী মেয়েকে ঠিক মানায় না। তার কাছে মনে হয়, অল্পবয়সী রা রঙিন পোশাক পড়বে। লিলি অদ্রির পাশে পানের বাটা রেখে চলে গেলো। রশিদ সাহেব বললেন
– অদ্রি, লিলি খাবে না?
অদ্রি মুখে খাবার রাখা অবস্থায় বলল
– ও খেয়েছে।
অদ্রি বুঝতে পারছে নিদ্র তার দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে তাকিয়ে থাকাটা তার কাছে অসহ্য লাগছে। অদ্রি বলল
– আপনার কিছু লাগবে? ডাল বা মাছ ভাজা?
নিদ্র বলল
– আপনি সাদারঙ পড়বেন না প্লিজ। অদ্রি আপনাকে সাদারঙ এ ঠিক মানায় না।
নিদ্র এই প্রথম অদ্রির নাম ধরে ডাকলো।
অদ্রি অবাক হলো, এই প্রথম নিদ্র তাকে নাম ধরে ডেকেছে। আর কী সাবলীল ভাবেই নামটা উচ্চারণ করলো। যেন, কতকালের চেনা………

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ৮.

0

তিনি এবং ও !

৮.
রশিদ সাহেব নিদ্রকে বললেন
– বাবা তুমি চুপ থাকো।
নিদ্র রশিদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো।
নিদ্র চুপচাপ লুঙী নিয়ে দোতলায় উঠে তার রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
চোখ বন্ধ করে অদ্রিকে নিয়ে ভাবছে। রশিদ সাহেব অদ্রিকে বলল
– মা, ছেলেটা একটু মন খোলা ধরণের।
অদ্রি বলল
– চাচা, আমি বুঝি কিন্তু কী করবো? পারিনা আমি।আমি চেষ্টা করি একজন মানুষ কে নিয়ে ভালো ভাবে থাকার।কিন্তু….
অদ্রি দুহাত দিয়ে মুখ আটকে কাঁদতে শুরু করলো।
রশিদ সাহেব বললেন
– দেখো দিখি মেয়ের কাণ্ড।আহ! অনেক হয়েছে।
রশিদ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন
– আজ ভাবলাম তোর এখানে দুপুরে দুটো খাবো। তা না তুই কাঁদতে বসে গেলি।
অদ্রির কান্নার শব্দে লিলি তার রুম থেকে বের হলো। লিলি অদ্রির পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। অদ্রির কান্নাকাটি দেখতে সে অভ্যস্ত। দুইটা বছর যাবত সে এই বাড়িতে আছে। অদ্রির সাথে তার তেমন কথাবার্তাও হয়নি কিন্তু একসাথে থাকতে থাকতে ভালবাসার সৃষ্টি হয়েছে।অদৃশ্য এই ভালবাসাটাই তাকে এই নিঃসঙ্গ মেয়েটির কাছে আটকে রেখেছে। রশিদ সাহেব লিলিকে বললেন
– তুই আমাদের জন্যে রান্না কর। আজ এখানে খাবো।
লিলি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। রশিদ সাহেব লিলিকে জিজ্ঞেস করলেন
– নিদ্রের ঘর কোনটা রে?
লিলি বলল
– দোতলার উত্তরের ঘরটা।
রশিদ সাহেব নিদ্রের দয়জায় নক করলেন। নিদ্র দরজা খুলে দিলো।রশিদ সাহেব ঘরের মধ্যে ঢুকে কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে রইলেন। তারপর নিদ্রকে বললেন
– তোমার মাথা খারাপ নাকি?
নিদ্র বলল
– না তো। কেনো?
দেয়ালের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন
– এগুলা কীরকম রঙ? আর কোনো রঙ নাই বাজারে?
– আমার ভালো লেগেছে তাই করেছি।
– অদ্রি জানে?
– হ্যা, সে বলেছেন, আমার যা ইচ্ছা তাই করতে পারি শুধু ভেঙে ফেলা বাদে।
– লাল, হলুদ আর বেগুনি রংধনুর মতো করে পুরো দেয়াল জুড়ে রঙ করেছো। আচ্ছা তুমি নিজে করেছো?
– জি চাচা।
রশিদ সাহেব অবাক হয়ে বললেন
– তুমি রংমিস্ত্রীর কাজ কোথা থেকে শিখলা?
– হাত খরচ জোগাতে গিয়ে শিখতে হয়েছে।
– নাজমুলের তো টাকার অভাব নেই। কীভাবে কী হা?
– আরে চাচা বাবা যা কিপটা। প্রতিদিন ১০ ডলার করে দেয়। ওতে আমার হয় নাকি?তাই একেক সময় একেক কাজ করে পকেট খরচ চালাই।
– ইংলিশও খাওয়া হয়??
– ইংলিশ খাওয়া হয়না চাচা। আমি ওই কোল্ড ড্রিঙ্ক টা খাই। আর একটু ঘোরাফেরার শখ আছে এই আরকি।
– তোমার দাদীও দিতে পারেন?
– হ্যা, কিন্তু দেননা।
– যাক ভালো অল্প বয়সে ইনকাম করতে শিখে গেছো।
– চাচা কী একটা বিশ্রী ব্যাপার। বিশাল বিলাসবহুল বাড়িতে বাস করেও আমাকে এসব কাজ করতে হয়।
– শুনো বাবা কিছু কথা বলার ছিলো।
– বলেন। এই ঘরে চেয়ার নেই চাচা। আপনি বিছানার উপরে বসেন।
রশিদ সাহেব বিছানার উপরে আসন পেতে বসলেন। পাশে নিদ্র বসলো। রশিদ সাহেব বলতে শুরু করলেন
– অদ্রির সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। খুবই অল্প জানি। যতটুকুই জানি ও মেয়েটার চরিত্রদোষ নেই। ওর বয়স তোমার মতো বা একটু বেশি হবে। আমি সঠিক জানি না। আজ ২ বছর যাবত ও এখানে লিলিকে নিয়ে থাকে। বাসায় দারোয়ান আছে , কাজের দুইজন মহিলা আছে। আপাতত ছুটিতে আছে। অদ্রি এতিমখানায় মানুষ হয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৩ বছর আগে একজন ভদ্রলোক ওকে ওখান থেকেই বিয়ে করেন। ভদ্রলোক অনেক ধনী ছিলেন। এইযে বাড়িটা দেখছো এটা ওনারই টাকা দিয়ে কেনা। বিয়ের ১ বছরের মাথায় অদ্রির স্বামী মারা যান বা সুইসাইড করেন। তারপর অদ্রি এখানে চলে আসে। আমার সাথে ওর পরিচয় লিলির মাধ্যমে। লিলি ভবঘুরে টাইপের মেয়ে।আগে সারাদিন পুরো এলাকা চষে বেড়াতো। ওর সাথে প্রথমে আমার দেখা হয়। পরে ওর মাধ্যমে এখানে আসা যাওয়া।
অদ্রির বয়সী আমার একটা মেয়ে আছে। মেয়েটার বিয়ে হয়েছে, একটা মেয়েও হয়েছে।
আমার খুব কষ্ট হয় বাবা, এই মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে। বাবা অনেক চেষ্টা করেছি বিয়ে দেয়ার কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বরংচ সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় অবস্থা। পরে বউ বলল, যেভাবেই হোক সম্পর্ক টা যেন নষ্ট না হয়।
নিদ্র কথা গুলো শুনছে আর গভীর চিন্তায় পরে যাচ্ছে। যতোই গল্পটা সামনের দিকে এগোচ্ছে ততোই তার চিন্তার গভীরতা বাড়ছে। নিদ্র খুব আস্তে আস্তে বলল
– আমি এসব জানতাম না। ভেবেছি…
রশিদ সাহেব বললেন
– তোমাকে আরো কিছু জানতে হবে। ও আমাকে টাকাপয়সা দিয়েও সাহায্য করে। দানশীল মেয়ে। কোনো বাজে অভ্যেস নেই।
রশিদ সাহেব গভীর নিশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে নেমে চলে গেলেন নিচ তলায়।
দেখতে হবে না , অদ্রি কী কী রান্না করছে??

চলবে……..!

©Maria Kabir

তিনি এবং ও ! ৭

0
তিনি এবং ও ! ৭
তিনি এবং ও ! ৭

তিনি এবং ও !

৭.
নিদ্র নাস্তা করে রশিদ সাহেবকে ফোন করলো। রশিদ সাহেবের আজকে সকালের দিকে আসার কথা। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায় কিন্তু তার দেখা নেই। কল ধরলেন রশিদ সাহেব। নিদ্র কিছু বলার আগে রশিদ সাহেব বললেন
– আরে বাবা আমি ফোন করবো তোমাকে আর তুমিই করে বসলা।
– চাচা আসবেন কখন?
– এইতো পথে আমি।
– তাড়াতাড়ি আসুন।
নিদ্র ফোন কেটে দিয়ে তার ঘরে বসেই রঙ করা কেমন হয়েছে সেটা পর্যবেক্ষণ করছে। খুবই উদ্ভট রঙ হয়েছে। যে কেউ ঘরে আসলে প্রথমে হতভম্ব হয়ে যাবে। ব্যাপার টা হজম করতে সময় লাগবে। রশিদ চাচা দেখলে কেমন রিএক্ট করবে সেটা ভেবে নিদ্র একা একাই হাসছিলো।
মানুষ কে অবাক করে দেয়ার মধ্যে আলাদা মজা পাওয়া যায়।
অদ্রিও তো এই ঘরে এসেছিলো কিন্তু সে কেনো অবাক হলো না? নাকি সে প্রকাশ করেনি? নাকি সে লক্ষ্যই করেনি?
নিদ্র, অদ্রির ঘরের দরজায় নক করলো। অদ্রি দরজা খুলে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। নিদ্র বলল
– আপনি তো বললেন না?
অদ্রি বলল
– কী বললাম না?
– আমার ঘরের কালার?
অদ্রি মাথা উঁচু করে কিছু একটা বলতে যাবে আর তখন নিদ্রের চোখে চোখ পড়লো। নিদ্র সেই লাল টকটকে চোখের দিকে তাকিয়ে আবারো ভয় পেলো। নিদ্র কিছুটা পিছনে সরে আসলো। অদ্রি বুঝতে পেরে বলল
– খেয়াল করিনি। চলুন দেখে আসা যাক।
লিলি প্রায় দৌড়ে এসে বলল
– আপামনি রশিদ চাচা এসেছেন।
অদ্রি বলল
– বসতে বল।
নিদ্র বলল
– আমার একটু কাজ আছে রশিদ চাচার সাথে।
অদ্রি বলল
– আচ্ছা, পরে দেখা যাবে।
রশিদ সাহেব শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। নিদ্রকে বললেন
– বাবা তুমি এগুলা কী বানাইতে দিছিলা?
নিদ্র শপিং ব্যাগ থেকে লাল, হলুদ, নীল রঙের লুঙ্গী বের করলো। রশিদ সাহেব বিরক্ত স্বরে বললেন
– এই বাপের জন্মে দেখলাম না কেউ লুঙ্গীতে রাবার ব্যবহার করে।
– আরে চাচা লুঙী পড়লে দেখা গেলো কোন সময় কার সামনে খুলে যায়। সিকিউরিটি সিস্টেমে ঝামেলা। মান সম্মান নিয়ে টানাটানি।
– শক্ত করে পড়লেই তো হয়। তাই বলে মেয়ে মানুষের স্কা্র্টের মতো?
– আরে চাচা আগে সিকিউরিটি তারপর ওসব।
– তোমার লুঙী পড়তে হবেনা।
– আমি পড়বোই। বাংলাদেশে আসছি আর এটা ট্রাই করবো না সেটা কীভাবে হয়?
– বাবা তুমি আর কোনো কালার খুঁজে পেলে না?
অদ্রি রশিদ সাহেবের পাশের সোফায় এসে বসলো।
নিদ্র বলল
– এখনি তো সময় চাকচিক্যময় থাকার।
নিদ্রের হাত থেকে লুঙী নিয়ে অদ্রিকে দেখিয়ে রশিদ সাহেব বললেন
– এইগুলা কেউ পড়ে?
নিদ্র বলল
– উনি কীভাবে বলবেন? নিজেই তো বিধবা সেজে বসে থাকে।
সে আর চাকচিক্যের কী বুঝবে?
রশিদ সাহেব বললেন
– ও যা তাই সেজে থাকে।
নিদ্র অবাক হয়ে বলল
– মানে?
রশিদ সাহেব শান্ত ভাবে বললেন
– অদ্রি বিধবা।
নিদ্র বলল
– এতো অল্প বয়সে বিধবা? তো বিয়ে দেন নি কেনো?
অদ্রি বজ্রকণ্ঠে বলল
– আপনাকে সেটা ভাবতে হবেনা। আপনি আপনার চর্কায় তেল দিন।
নিদ্র বলল
– আমি ভাবতে আসিনি। সাধারণ প্রশ্ন করেছি , তাতে এতো রাগ করার কী আছে?
– আপনি ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে পরবেন না।
– দেখুন আমি আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে পরিনি। আপনি এখনো অনেক ইয়াং তাই জিজ্ঞেস করেছি। আর এই প্রশ্নটা খুবই সাধারণ প্রশ্ন।

চলবে…..!

#Maria_kabir

_ নিষাদ… ❤ সত্য ঘটনা অবলম্বনে ❤

0
আমার সে আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে! আমি প্রথম দিকে খুব অবাক হতাম। বিশ্বাসই হতোনা সে আমাকে ভালোবাসতে পারে? এতো অসুন্দর মেয়েকে এতোটা তীব্রভাবে কেউ ভালোবাসতে পারেনা। কিন্তু আমার সেই বিশ্বাস সে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিয়েছে! তার সাথে প্রতিদিন নিয়ম করে কথা না বললে মুখ ফুলিয়ে থাকে। ম্যাসেজের রিপ্লাই না দিলে তো কথাই নাই। পাগলের মতো বিহেভ করে।
– এই তুমি ম্যাসেজের রিপ্লাই দিচ্ছো না কেনো? কিছু হয়েছে? আমি কিছু করেছি?
সুন্দরী মেয়েদের ভাগ্যে এরকম পুরুষ থাকে। আমার মতো মেয়েদের ভাগ্যে থাকে রাগী, রুক্ষমূর্তি, রুক্ষভাষী পুরুষ। যে পুরুষ আমার মতো মেয়েদের বিয়ে করে আইবুড়ো নামক শব্দটার হাত থেকে রেহাই দিয়েছে। সেই পুরুষ তো রাগ দেখাবেই।
আমি তার সাথে দেখা করতে চাইতামই না। নিজের অসৌন্দর্যো টাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতাম। সে বুঝতো। বুঝেই বলতো
– এই স্কার্ফের নেকাব টা একটু খুলো না।
– নাহ।
– মাত্র ৫ মিনিটের জন্য। শুধু দেখবো, মাত্র ৫ মিনিট।
আমি বাধ্য হতাম নিষাদের কথা মানতে।
আমরা সবাই চাই কেউ একজন থাকুক যার আদেশ অমান্য করার ক্ষমতা থাকবেনা। আমি পেয়েছিলাম এমন কাউকে। পেয়েছিলাম বলে ভুল হবে, পেয়েছি।
আমার জন্য তার রাজ্যের চিন্তা।
একবার হলো কী আমি আর ও ক্যাম্পাসে বসে গল্প করছিলাম। ওর ওইদিন মন বেশ ভালো ছিলো।
ওইসময় খুব সুন্দরী একটা মেয়ে এসে নিষাদকে উদ্দেশ্য করে বললো
– এই মেয়েটার জন্য আমাকে ইগ্নোর করছো?
বেশ তাচ্ছিল্যের সাথেই কথাটা বলেছিলো। আমার অবশ্য খারাপ লাগেনি কারণ এরকমই কথা শুনতে অভ্যস্ত আমি। কিন্তু নিষাদের মন খারাপ হয়ে গেলো। একটু আগেও হাসছিলো কিন্তু ওই কথাটা শোনার পরে ওর হাসি থেমে গেলো।
নিষাদ কোনো কথা না বলে উঠে চলে গেলো। আমিও ওর পিছু পিছু উঠে চলে এলাম। মেয়েটা ওখানেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
সন্ধ্যায় ওকে আমিই ফোন দিলাম। ওই ঘটনার পর সারাদিন আমাকে ফোন দেয়নি, ম্যাসেজও দেয়নি।
– কী করছো?
আমি বেশ ভালো আছি বোঝানোর চেষ্টা করেই একটু হাসি হাসি মুখে কথাটা বলেছিলাম।
ও শুকনো কণ্ঠে বললো
– কিছুনা।
– দুপুরে খেয়েছিলে?
– হ্যাঁ।
– আমার মনে হয় তুমি মিথ্যা বলছো।
– আমার কিছুই ভালো লাগছেনা। এখন একটু দেখা করতে পারবে?
আমি কিছু বলতে যাবো তখন ফোনের ওপাশ থেকে অনেক গুলো কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। বুঝতে পারলাম হাসি ঠাট্টা করছে।
আমি ফোন কেটে না দিয়ে কথাগুলো শোনার চেষ্টা করলাম।
কেউ একজন বললো
– নিষাদ তুই শেষ মেষ ৪ ফুটের প্রেমে পড়লি? ক্যাম্পাসের সবচেয়ে কিউট ছেলে তুই। আর তুই কিনা?
আরেকজন বললো
– আমি তো জানতাম ওই মেয়ের সাথে নোট আর সাজেশন এর জন্য মিশিস। তলে তলে এতো কিছু?
এরকম আরো বাজে কথা, টিটকিরি করছে। ও সম্ভবতঃ চুপচাপ আছে। কোনো কথা বলছেনা। আমি কষ্ট পাচ্ছিলাম, আমার জন্য না। ওর জন্য। আমার জন্য কতো কথা ওকে শুনতে হচ্ছে।
নিজের উপরই রাগ জমছে।
আমি মেধাবী না হয়ে সুন্দরী হতাম তাহলে মনে হয় খুব বেশি ভালো হতো।
নিষাদ আসলেই খুব সুন্দর। এতো সুন্দরের পাশে আমাকে ঠিক মানায় না।
ওই রাতে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ওকে ছেড়ে দিবো। ও না চাইলেও।
কিছু ভালোবাসার গল্প এভাবেই অসমাপ্ত থেকে যাওয়াই ভালো।
তারপর প্রায় ১ সপ্তাহ আমি ওকে ইগ্নোর করার চেষ্টা করবো তাতেই ও সরে যাবে।
রাতে ঘুম হয়নি। সারারাত শুধু ভেবেছি ও ঠিক আছে তো? দুপুরে খায়নি রাতেও কি একই কাজ করেছে?
খুব সকালে হোস্টেলের বাইরে একটু হাঁটতে বের হলাম। রাতে ঘুম না হলে খুব খারাপ কাটে দিনের সিংহভাগ সময়। কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। মন বলে ছেড়ে দিতে আবার সেই মনই বলে না, পারবো না।
মহাবিপদ !
হোস্টেলের বাইরে একটু দূরে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে ওকে বসে থাকতে দেখে অবাক হলাম। ও কখনোই আমার হোস্টেলের সামনে আসেনা।
আমি দূর থেকেই বুঝতে পারলাম ও রাতে ঘুমাতে পারেনি। চোখের দৃষ্টি এলোমেলো। চুল গুলো কেমন এলোমেলো।
আমি ওর পাশে বসে জিজ্ঞেস করলাম
– রাতে ঘুম হয়নি?
– হুম।
– রাতে খাওনি তাই না?
– হুম।
– নিষাদ, ছেলেমানুষী কেনো করো? আমি তো আছিই! যে যাই বলুক।
– রূপন্তী ওদের কথা গুলো তুমি শুনেছো তাই না?
– হ্যাঁ, তাতে কী?
– তোমার খারাপ লাগেনি?
– আমার ওসব এখন গায়ে লাগেনা। এই  চার ফুট আট ইঞ্চি শরীর, বোচা নাক, শ্যামবর্ণা মেয়েকে প্রতিনিয়ত এসব কথা শুনতে হয়েছে এবং সে অভ্যস্ত।
– আমি মনে হয় তোমাকে কথাগুলো আবার মনে করিয়ে দিলাম।
– বাদ দাও। চলো কিছু খাবে। তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছেনা আর কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকতে পারবে।
– হোস্টেলে গিয়েই খাবো।
– না, তা হবেনা। চলো বলছি।
– জানো রূপন্তী ওদের আমি কিছু বলতে পারিনি।
– থাক বলতে হবেনা। আমাদের একসাথে দেখলেই ওরা উত্তর পেয়ে যাবে।
সেদিনের সেই ঘটনা আমাদের সম্পর্ক টাকে আরো শক্ত করে দিয়েছিলো।
ওর রুমমেটরাও হাবিজাবি বলতে বলতে একসময় চুপ হয়ে গিয়েছিলো। সেই সন্ধ্যার কথাগুলো আজও আমার কানে ভাসে। মানুষ আসলে বলবেই কিন্তু সেগুলো কানে দিয়ে নিজের উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যাওয়াটা ভুল।
ওইদিন যদি আমি নিষাদকে ছেড়ে দিতাম তাহলে ওকে পেতাম না।
আমাদের ছোট্ট সংসারে দুই মেয়ে। যেদিন আমাদের বিয়ে হলো সেই সুন্দরী মেয়ে আমাকে অভিনন্দন জানাতে এসে কানেকানে বলেছিলো
– নিষাদ ওর প্রাক্তন প্রেমিক।
আমি কথাটা শুনে হেসেছিলাম। ইচ্ছে করছিলো, উচ্চস্বরে হেসে বলি
– প্রেমিক শব্দের অর্থ জানো মেয়ে? প্রেমিক কখন হয়?
প্রেমিক তখন হয় যখন তুমি প্রেমিকার ন্যায় আচরণ করো। মেয়ে তুমি যদি তাকে ভাঙিয়ে খেয়ে তাকে প্রেমিক বলতে চাও আর নিজেকে প্রেমিকা! তাহলে আমি শুধু হাসবো।
ওই সুন্দরী, নিষাদের প্রথম প্রেমিকা ছিলো। নিষাদ মানতে নারাজ। প্রেমিকা কি প্রেম করলেই হয় নাকি? প্রেম না করেও প্রেমিকা হওয়া যায়। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম আর স্মার্ট ছেলের প্রেমিকা – এমনটার জন্যই সে,আমাকে চেয়েছিলো। ভালোবাসতে পারেনি। আমিও একই নেশায় ছুটেছিলাম। পরে দেখি সব ফাঁকা।
আমি চেয়েছিলাম কাউকে প্রেম শিখাবো, ভালোবাসা শিখাবো তারপর তাকে প্রেমিকা বানাবো। যেটা রূপন্তী তোমার দ্বারাই হয়েছে। তুমিই প্রেমিকা, তুমিই প্রেয়সী।
সম্পর্কে থাকা অবস্থায় ওর প্রথম সম্পর্কে জড়ানো, প্রথম প্রেমিকা ( যদিও তার মতে প্রেমিকা না) সম্পর্কে এটুকুই বলেছিলো। আমার অবশ্য খারাপ লাগেনি। কারণ ওই মেয়ের কথা বলার সময় ওর চোখে ঘৃণা স্পষ্ট দেখতে পাই আমি।
নিষাদ এর মতো পুরুষের অপেক্ষায় থাকে হাজারো অসুন্দর মেয়ে। সেই হাজারো অসুন্দর মেয়ের মধ্যে আমার মতো ২/১ জন নিষাদকে পায়।
নিষাদের ছোঁয়ায় নিজের উপরই ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর সকল নিষাদকে অজস্র ধন্যবাদ আর ভালোবাসা দিলেও তাদের জন্য সামান্যই হবে।
_ নিষাদ… ❤
সত্য ঘটনা অবলম্বনে ❤
© Maria Kabir

প্রত্যাখান_পর্ব(১১)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(১১)
প্রত্যাখান_পর্ব(১১)

প্রত্যাখান_পর্ব(১১)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

সে রাতে অজানা কারণে ঘুম চোখে আসেনি আমার। অবশ্য খাতির যত্নের কোন অন্ত ছিল না ওদের।

অনেকটা জামাই আদর বলা চলে। সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।

হাতে একটা লুঙ্গি ধরিয়ে দিয়ে জানান দেন,

দ্রুত গোসল সেরে নাস্তার টেবিলে আয়।

মায়ের কথামতো সুবোধ বালকের ন্যায় চুপটি করে গোসলখানায় চলে গেলাম।

গোসলখানা থেকে ফিরে সোজা নাস্তার টেবিলে।

সকালেও আমাকে ঘিরে ওদের আপ্যায়নের শেষ ছিলো না।

এমনভাবে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে আমাকে খাওয়াচ্ছিলো যেন আমি তাদের নতুন জামাই আর এটা আমার শ্বশুরবাড়ি।

কোথাও একটু কম পড়লেই বদনাম রটে যাবে।

ব্রেকফাস্ট শেষে যাচ্ছিলাম রুমের দিকে।

সম্মুখে এসে দাঁড়ায় বাবা।

হাতে ৩০হাজার টাকার মতো ধরিয়ে দিয়ে ধীর গলায় জানান,

সুমনরা মার্কেটে যাচ্ছে। তুমিও যাও। আর হ্যাঁ! আঁখিকেও সাথে করে নিও।

কিন্তু বাবা আমি….

পুরো কথা বলতে পারিনি। চটজলদি বাবার জবাব,

একে তো বিয়ে বাড়ি।

তারউপর তোমার এই বেশভূষা।

কিরকম দেখা যায় না ব্যাপারটা? বাবার কথায় লজ্জা পেলাম ভিষণ।

সত্যিই তো! আমি তো এখনো লুঙ্গি পরেই হাঁটাচলা করছি।

কথা বাড়ালাম না আর।

লুঙ্গি পাল্টে বাসা থেকে নিয়ে আসা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে নিলাম।

কাজিনদের সাথে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম কেনাকাটার উদ্দেশ্যে…

. — সুমন! এসব কি কিনেছিস তুই? —

কি কিনলাম? — মায়ের জন্য শাড়ি ঠিক আছে।

কিন্তু এ লাল লেহেঙ্গা, চুড়ি কার জন্য কিনলি? —

সে তুই বুঝবি না। চুপ থাক। — ওহ, আচ্ছা! –(নিশ্চুপ সুমন) —

আতিক দেখি! তোর হাতে এসব কি? কিসব বক্সটক্স কিনে আনছিস!

— এগুলোতে কিছু স্বর্ণালংকার আছে। — মানে???

— মানে সুবর্ণ নাকি প্রফুল্ল! কি যেন নাম মেয়েটির?

ঐ যে কাকিমার বান্ধবীর মেয়ে হয়… — লাবণ্য!!!

— হ্যাঁ, লাবণ্য! কাকিমা এগুলো লাবণ্যর জন্য কিনেছে।

— উপহার? — কিছুটা সেরকমই।

— ওহ, আচ্ছা! গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই ঘটে যায় অনাকাঙ্খিত ঘটনা।

লাবণ্যকে গোসল করানো হচ্ছিলো উঠোনে। আমরা বাড়িতে ঢুকতেই শুরু হয়ে যায় পানি ছুড়াছুঁড়ি।

আমার কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার হাত থেকে শপিং ব্যাপটা টান দিয়ে নিয়ে কাজিনরা দেয় ভোঁ দৌঁড়।

সে যাত্রায় ওরা রক্ষা পেলেও আমি পাইনি। কোথা থেকে যেন দু’তিনজন মহিলা বদনা ভর্তি পানি নিয়ে এসে ভিঁজিয়ে দেয় আমাকে।

একজন তো পুরো বালতি ভর্তি পানি এনে আমার মাথায় ঢেলে দেয়।

ভাগ্যিস! হাতে শপিং ব্যাগ ছিলো না।

থাকলে নির্ঘাত আমার সাথে সাথে সেগুলোরও নাজেহাল দশা হতো।

কাকভেঁজা আমি যখন রুমে প্রবেশ করি তখন আমাকে দেখে কাজিনরা হাসাহাসিতে মেতে ওঠে।

এ হাসি সে হাসি নয়। হাসতে হাসতে মাটিতে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় ওদের।

কিচ্ছু বলিনি আমি। সদ্য কিনে আনা তোয়ালে এবং পাজামা-পাঞ্জাবি হাতে চলে যাই গোসলখানার দিকে।

ফিরে আসি মিনিট দশেক পর’ই।

সবাই কিরকম ‘থ’ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

ওদের তাকানোর ধরন দেখে মনে হচ্ছিল আমি কোন ভিন গ্রহের প্রাণী ভুল করে ওদের গ্রহে চলে আসছি।

কিছু একটা বলতে যাবো তখনই পেছন থেকে বুড়ো দাদুর গলা ভেসে আসে।

বাব্বাহ! জামাই তো দেখি একদম তৈরি…

চলবে…

একটি পানকৌড়ির গল্প….  ১০. 

0
একটি পানকৌড়ির গল্প….
১০.
পিএ ইউনুস একা গ্রামের দিকে যেতে রাজি হচ্ছে না। আফতাব হোসেন তাকে অনেক বার বুঝিয়েছেন কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। এর আগে নাকি একা গ্রামে গিয়ে ভয়াবহ বিপদে পড়েছিলেন।
আফতাব হোসেন কোনো উপায় না পেয়ে ইউনুসকে বললেন
– তোমার ক্লোজ ফ্রেন্ডকে নিয়ে যাও সব খরচ আমার। রাজি?
ইউনুস বিজ্ঞের মতো করে বললেন
– রাজি। কী কী প্রশ্ন করতে হবে আমাকে লিখে দিয়েন। ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
– শর্ত হচ্ছে কোনো তথ্যই তুমি ছাড়া দ্বিতীয় জন যেন না জানে। প্রত্যেক মানুষের অপ্রীতিকর অতিত থাকে। আমাদের দুজনের কাজ হচ্ছে সেটা জেনে ছোট্ট মেয়েটার সাহায্য করা। বুঝতে পারছেন?
– তাহলে আজকেই যাবো?
– অবশ্যই।
২ দিন পর পিএ ইউনুস আর তার ক্লোজ ফ্রেন্ড ফিরে এলেন। পিএ ইউনুসকে চুপচাপ দেখে আফতাব হোসেন জিজ্ঞেস করলেন
– কোনো সমস্যা হয়েছিল ওখানে?
– না জার্নি করার কারণে হালকা মাথাব্যথা হয়েছে এই আরকি।
ইউনুসের দেয়া  আর তার জোগাড় করা ইনফরমেশন নিয়ে সমাধানের দিকে পা বাড়ালেন। রাত প্রায় ২ টা বেজে ১০ মিনিট তার স্ত্রী রেহানা সেই টিয়াপাখি নিয়ে খেলছে! বারান্দায় দাঁড়িয়ে টিয়াপাখির সাথে খেলতে নাকি তার খুব ভালো লাগে। এই বারান্দা থেকে রাস্তাটা পুরোপুরি দেখা যায়। রাস্তায় যা যা ঘটছে যাবতীয় কর্মকাণ্ড আরামে বসে বসে দেখা যায়। আফতাব হোসেন প্রথম প্রথম বেশ মনযোগ দিয়েই দেখতেন। আজকাল আর তেমন ভালো লাগেনা।
মানুষের বড্ড অদ্ভুত স্বভাব। একসময়ের প্রাণের চেয়ে প্রিয় জিনিসটাও অপ্রিয় হয়ে যায় সময়ের প্রবাহে!
মোটামুটি একটা সমাধানে আসতে পারছেন না। নিজের উপরই বিরক্ত হলেন আফতাব হোসেন। বিরক্তি কাটানোর জন্য স্ত্রীর কাছে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন!
রাস্তার দিকে চোখ দুটো আটকে গেলো আফতাব হোসেনের!
কোনো এক ছায়া মূর্তি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
আফতাব হোসেন মুচকি হেসে স্ত্রীকে বললেন
– রেহানা চলো তো ঘুমাই।
রেহানা বললেন
– আর একটু থাকিনা।
– মনে হচ্ছে আমার চেয়ে টিয়াপাখিটাকে বেশি ভালোবাসা হয়?
রেহানা বললেন
– কী যে বলো? তোমার সাথে একটা টিয়াপাখির তুলনা হয়?
– তাহলে চলো ঘুমাবে। অনেক রাত হয়েছে।
আমার সকালে জরুরি কাজ আছে। পেট ভরে খেয়ে বের হবো।
ভোর ছ’টায় রিনির ফোনে আফতাব হোসেনের ঘুম ভাঙলো। অনেক রাতে ঘুমানোর কারণে মাথাটা তার ঝিম ধরে আছে। কোনোমতে ফোন রিসিভ করলেন। ফোনের ওপাশ থেকে রিনি বললেন
– আপনি ৭ টার মধ্যে আসতে পারবেন?
– ৮ টায় আসি? আমার স্ত্রীর রান্না এখনো হয়নি।
– এখানে এসে নাস্তা করবেন।
বাধ্য হয়ে আফতাব হোসেনকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে  বের হলেন। ফারিয়ার নামের খাতাটা নিয়ে বিরক্তিকর মেজাজ নিয়ে বের হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
আফতাব হোসেনকে দেখে দারোয়ান কোনো কথা না বলেই গেট খুলে দিলেন। সাথে বড়সড় সালামও দিলেন।
ড্রয়িংরুমে ঢুকেই দেখতে পেলেন রিনি ম্যাডাম বসে আছেন। গায়ের জামা কাপড় এলোমেলো, মাথার চুল এলোমেলো আর দৃষ্টিতে তার ভয় খেলা করছে। চোখ দুটো লাল টকটকে আর ফুলে আছে।
সোফায় বসে টি-টেবিলের ওপর খাতাটা রেখে আফতাব হোসেন বললেন
– কোনো সমস্যা হয়েছে?
রিনি কিছু বলতে গিয়েও পারলেন না। গলায় কথা আটকে যাচ্ছে। চোখ দুটো বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আ
আফতাব হোসেন বললেন
– কাঁদবেন না প্লিজ। কী হয়েছে আস্তে ধীরে বলুন।
রিনি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। বয়স্ক একজন মহিলা নাস্তা এনে টি-টেবিলের ওপর রেখে গেলেন।কাজের লোক হবে সম্ভবত।
রিনি বললেন
– গতকাল রাতে ঘুমাবো মানে বিছানায় শুয়েছি কেবলমাত্র। আমি।সাধারণত রাত ১২ টার দিকেই বিছানায় যাই। লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাতে পারিনা। অন্ধকারে ঘুমাই। স্বাভাবিকভাবেই ঘর পুরো অন্ধকার। চোখ লেগে আসছে ঠিক তখন মনে হলো আমার পাশে কেউ শুয়ে আছে। নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছিলাম। গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকলে মানুষের যেভাবে নিশ্বাস পড়ে ঠিক তেমন। আমি ভয়ে চোখ খুলতে পারছিলাম না। পুরো শরীর আমার ঠান্ডা হয়ে আসছে।
তারপর চিৎকার শুনতে পারলাম, ভয়ংকর চিৎকার! আমার পাশ থেকেই আসছে। আমি লাফিয়ে উঠে বিছানা থেকে নেমে গেলাম। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি ১০-১১ বছরের একটা মেয়ের শরীর ছটফট করছে। মেয়েটার মাথা পুরো থেতলে গেছে আর পুরো শরীরে রক্ত!
তারপর আর মনে নেই। ভোর ৫ টায় রুনুর মা এসে,আমাকে রুমের ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখেছে।
রিনি শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।
– রক্ত কি আপনার বিছানার চাদরে লেগে ছিলো?
কান্না থামিয়ে বললেন
– না।
– আপনার হ্যালুসিনেশন হয়েছিলো। আপনার মেয়ের সমস্যা আপনি জানেন তাই তো?
– হ্যাঁ।
– সারাক্ষণ  মেয়ের এমন স্বপ্ন দেখার কারণ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত আপনি। এজন্যই আপনার গতকাল রাতে হ্যালুসিনেশন হয়েছিলো।
– সমস্যার কোনো সমাধান করতে পেরেছেন?
– আপনি বাসায় একা থাকেন?
– না, রুনুর মা আর দারোয়ান।
– আপনার বাবা?
– দুই বছর আগেই মারা গেছেন।
– স্বাভাবিক মৃত্যু?
– স্ট্রোক করেছিলেন।
– আপনার মা, ভাই বা বোন কেউই নাই?
– মা আর ভাই আছেন তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। বাবা মারা যাবার পর মা যুক্তরাষ্ট্রে থেকে গেছেন।
– আপনার চেনাজানা পুলিশের লোক আছে?
– না।
– তাহলে ভালো। আমি আপনাকে একজন পুলিশের ঠিকানা আর নাম লিখে দিচ্ছি। তার সাথে গিয়ে দেখা করবেন।
– আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা!
– ওই ঠিকানায় পৌঁছে গেলে বুঝতে পারবেন। আপাতত আমি আসি।
– নাস্তা করে যান।
– না, আমার স্ত্রী আমার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করে আছে।
আফতাব হোসেন রিনির বাড়ি থেকে বের হয়ে রশীদ আলমকে ফোন করলেন। দু’বার রিং বাজতেই ফোন রিসিভ করলেন রশীদ আলম।
– ভালো আছেন রশীদ সাহেব?
– এইতো আছি। কিছু বলবেন?
– আপনার স্ত্রীকে একটু আমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাবেন। সমস্যা নাই আমার স্ত্রী বাসায় আছেন।
– এখনই যেতে হবে?
– নাহ ১০ টায় আসলেই হবে।ফারিয়ার অবস্থা এখন কেমন?
– ওই আগের মতোই।
ফোন কেটে গেলো। আফতাব হোসেন বুঝতে পারলেন ফারিয়ার বিষয়ে রশীদ আলম বেশ বিরক্ত হয়েছেন।
রশীদ আলমের সম্পর্কে রিনি যা বলেছেন সব সত্য। জুয়াখেলা রশীদ আলমের নেশা ছিলো।
রেহানা বসার ঘরে ছোট্ট সোফায় বসে আছেন। তার মুখোমুখি লিমা বসে আছেন। লিমা ঠিক ১০ টায় এসে হাজির হয়েছেন কিন্তু আফতাব হোসেন বাসায় নেই। রেহানা ফোন করেছিলো। আফতাব হোসেন বলেছেন
– ১০ মিনিট পর আসছি।
কিন্তু ২৫ মিনিট পার হয়ে যাচ্ছে তার খোঁজ নেই। রেহানা, লিমাকে বারবার দেখছেন পা থেকে মাথা অবদি। সৎ মা এতো ভালো কীভাবে হতে পারে ভেবে!
৩৫ মিনিট পর আফতাব হোসেন হাসোজ্জল মুখে ঘরে ঢুকলেন। লিমাকে বসে থাকতে দেখে আফতাব হোসেন মুচকি হেসে বললেন
– আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এভাবে অপেক্ষায় রাখার জন্য।
লিমা চোখ মুখ শক্ত করে বললেন
– এভাবে কাউকে বসিয়ে রাখা ঠিক? বাসায় মেয়েটা একা একা আছে।
– কেনো আপনার ছেলেটাও তো একা!
লিমা কী বলবে বুঝতে পারছিলেন না। মাথা নিচু করে বসে রইলেন।
আফতাব হোসেন স্ত্রীকে বললেন
– রেহানা তুমি তোমার কাজে যাও।
রেহানা বেগম কোনো কথা না বলেই উঠে গেলেন।
বসার ঘরের পাটিতে আরাম করে বসে আফতাব হোসেন বললেন
– আপনি মানুষ টা কিন্তু খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন!
– আপনি আপনার এসিস্ট্যান্টকে আমার গ্রামে পাঠিয়েছিলেন?
– আপনি তো সব জানেনই তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেনো?
– আপনাকে সমস্যা সমাধানের জন্য বলা হয়েছিলো, সমস্যা তৈরি করার জন্য না।
– সত্যিটা কি আপনি বলবেন না আমি বলবো?
– কীসের সত্যি শুনি?
– আপনার পরিবার গ্রামের উচ্চবিত্ত। আপনি দেখতেও যে খুব অসুন্দর তা না। আবার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাশ। গ্রামের মেয়ে হিসেবে উচ্চবিত্ত পরিবারে বিয়ে হবার কথা অবিবাহিত যুবকের সাথে। কিন্তু আপনার হলো বিবাহিত মধ্যবিত্ত একটা মেয়ে সহ পুরুষের সাথে। আমি ভেবেছিলাম আপনার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। এইজন্যই এরকম পরিবারে বিয়ে দেয়া হয়েছে। আপনি যে শিক্ষিত সেটা আপনার কথাবার্তায় আর আপনার বাবার কথায় বোঝা যায়। আমি ভাবলাম ফারিয়ার মা রিনির মধ্যে সমস্যা আছে। রিনির বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। পুরো ধারণাটাই ভুল। ম্যাডাম লিমা আপনার অতীত আমি বলবো নাকি আপনি নিজেই বলবেন?
লিমা চোখ মুখ শক্ত করে বললেন
– আমি তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। কলেজের এক বড় ভাইয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম। সে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য জোর করতো। প্রথম দিকে আমি রাজি হয়নি। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে। এভাবে বেশ কয়েকবার চলার পরে টেস্ট এক্সামের কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাই। বাসায় কী বলবো? কী করবো বুঝতে পারছিলাম না।
সবুজ নাম ছিলো ওর। ওকে জানালাম। ও বললো, ” এই বাচ্চা আমারও তো নাও হতে পারে! কার না কার পাপ আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছো তার কোনো ঠিক আছে? “
আমি কিছুই বলার সাহস পাইনি। শুনেছিলাম তার বলা কথা গুলো। কতো সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যেগুলো বলছে। জানেন আফতাব হোসেন, খুব চেনা মানুষ যখন অচেনা হয়ে যায় তখন না কিছু বলার বা করার থাকেনা।
আমি ওই অবস্থায় ফাইনাল এক্সাম দিলাম। সমস্যা হয়নি কারণ আমার তখন ৪ মাস চলছিলো বা ৫ মাস।
কিন্তু আমি তাকে ঠিক ভুলতে পারলাম না। আমার জমানো কিছু টাকা ছিলো সেটা দিয়েই এক্সামের পর থেকে গিয়েছিলাম মহিলা হোস্টেলেই। বাবা খুব বিশ্বাস করে শহরে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। সেই বিশ্বাস ভাঙতে দেখলে বাবা হয়তোবা সহ্য করতে পারতেন না। বাচ্চাটাকে লুকিয়ে জন্ম দিয়ে এতিমখানায় দিয়ে দিবো। পাপ আমার ওর তো না। কিন্তু কী যে হলো, সবুজ এক্সিডেন্টে মারা গেলো। তখন আমার ৯ মাস। ডেলিভারির কাছাকাছি সময়। ওকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য লাশকাটা ঘরের দিকে গেলাম।
সবুজের মাথা পুরো থেতলে গিয়েছিল। চেহারা দেখে বোঝার উপায় ছিলোনা এ আমার সেই সবুজ।
শুনেছিলাম অন্ধকারে একা একা রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো তারপর ট্রাকের নিচে পড়ে সব শেষ। মাথার থেতলে যাওয়া অংশ বেলচা দিয়ে উঠাতে হয়েছিলো।
ওইদিনই আমার ডেলিভারি হলো। মরা মেয়ে জন্ম দিয়েছিলাম আমি। সবুজের শেষ চিহ্নটাও আমার কাছ থেকে সরে গেলো। প্রায় পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। হোস্টেলের সবাই জানতে পারলো আমি অবিবাহিত। কেউই আমাকে রাখতে চাইলোনা। বাধ্য হয়ে আমার বান্ধুবী বাসায় নিয়ে গেলো। প্রায় ৬ মাস ওভাবে থাকার পর আব্বা আমাকে রশীদের সাথে বিয়ে দিলেন। বিয়ে দিতে পারতেন না যদি রশীদের ছোট্ট মেয়েটার কথা না জানতাম।
আমার মন বললো – আমার মেয়ে ফিরে এসেছে।
আমি ওকে মেয়ের স্নেহে বড় করেছি কিন্তু সবুজের এক্সিডেন্টের ঘটনা কয়েকবার ওকে বলেছিলাম।
আমার বুকের মধ্যে চেপে থাকা কষ্টের কথা গুলো অবুঝ ফারিয়াকে বলতাম। অন্যভাবে বলতাম। কষ্টটা হালকা হতো। কিন্তু এটা যে ওর উপর এরকম প্রভাব ফেলবে আমি বুঝিনি। আমিই ওকে নিষেধ করেছিলাম আপনাকে যেন আমার এক্সিডেন্টের গল্পটা না বলে।
– তা তো আমিই বুঝতে পেরেছি। আপনি রিনির কাছে কেনো যেতেন?
– আমার কেনো যেন মনে হতো রিনি ওর মা না। আমার ওই মরা মেয়েটাই ফারিয়া।
তাই বারবার বিভিন্ন ভাবে জানার চেষ্টা করতাম রিনি ওর সত্যিই মা কিনা।
– কিন্তু আপনি প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছেন।
আমি কিছু কথা বলবো শান্ত ভাবে শুনবেন।
– হ্যাঁ।
– আপনার প্রভাব থেকে ফারিয়া মুক্ত হতে পারলে সুস্থ হতে পারবে। আপনার ঔ এক্সিডেন্টের গল্পটা ওর উপর খুব গাঢ় প্রভাব ফেলেছিলো। আর তার ফলাফল তো আপনি নিজেই জানেন। আমি তাই ফারিয়াকে তার জন্মদাত্রী মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তার সুস্থ হবার এই একটাই উপায়। আপনি যতোই চেষ্টা করুন না কেনো ওকে ওই এক্সিডেন্টের গল্পটা বলবেনই। আপনি নিজেকেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। গতকাল রাত ২ টায় আপনি এই বাসার সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাই না?
– হ্যাঁ।
– কারণ জিজ্ঞেস করবোনা। ফারিয়ার মৃত্যু যদি না তাহলে ওর থেকে দূরে থাকুন। আর আপনার ছেলেটার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। তা না হলে একেও হারাবেন আপনি।
– আমি কি ওকে লাস্ট বারের মতো দেখতে পারবো?
– না, আপনাকে দেখলে ও যেতে চাইবেনা রিনির কাছে। ফারিয়াকে যদি সত্যি নিজের মেয়ে ভাবেন তাহলে ওর থেকে দূরে থাকুন।
লিমা অল্পতেই কাঁদতে শুরু করার মতো মেয়ে। কিন্তু আজকে তার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানিও পড়ছেনা।
রিনি ঘুমন্ত মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। মেয়েকে যে এভাবে পেয়ে যাবে বিশ্বাসই হচ্ছেনা তার। আফতাব হোসেন তাকে একজন সাইক্রিয়াট্রিস্ট এর নাম,ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার দিয়েছেন পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে। সবই আল্লাহর রহমতে হয়েছে। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত মেয়েকে নিয়ে সে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়রওয়ানা হয়েছেন। একটা দিনও সে এখন নষ্ট কর‍তে চাননা তিনি।
সকালের দিকে আকাশে মেঘ সাজতে শুরু হয়েছিলো। সেই মেঘ এখন বৃষ্টি হয়ে ঝড়ছে। রিনির আজ প্রায় ১১ বছর পরে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মেয়েটা তার কোলে কতো আরামে ঘুমিয়ে আছে। এই ঘুম ভাঙানো যাবেনা। গাড়ির কাচ নামিয়ে দিয়ে বৃষ্টির  ফোঁটা  স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন।
বৃষ্টির ফোঁটার মতো তার জীবনেও এখন নতুন সুখের বর্ষণ শুরু হয়েছে নতুন করে!
সমাপ্ত।
© Maria Kabir

প্রত্যাখান_পর্ব(১০)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(১০)
প্রত্যাখান_পর্ব(১০)

প্রত্যাখান_পর্ব(১০)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

ঘোরের মধ্যে ডুবে গিয়েছিলাম আমি। ঘোর কাটে মহিলাদের হাসির আওয়াজে। আমাকে দেখে লাবণ্যর ভেঁজা শরীরটা হলুদের শাড়ি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। প্রচন্ড এক লজ্জায় সে স্থান ছেড়ে চলে আসার সময় ধাক্কা খাই পিচ্চি এক মেয়ের সাথে। আমার দিকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দেয় সে। নিঃশব্দেে এক নিশ্বাসে গ্লাস পানিশূন্য করে ফেলি। আমাকে ঘিরে আবারো হাসিতে মেতে ওঠে কাজিন’রা। ওদের কর্মকাণ্ড যতই দেখছিলাম বেশ অবাক হচ্ছিলাম আমি। বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল এত হাসির কারণ কি? সে স্থান ছেড়ে দ্রুত চলে যাওয়ার সময় দূর্ঘটনাবশত পা পিছলে পড়ে যাই মাটিতে। কিছুক্ষণ আগেই ঠিক এ স্থান থেকে লাবণ্যকে গোসল করে রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। শরীর কাদামাটিতে ভরে যায় আমার। এ এক বিশ্রী অবস্থা। খবর শুনে ছুটে আসে মা। জানান দেন, ‘দ্যাখ! বাড়ির উঠোনেই তেতুল গাছ। তার উপর আজ শনিবার। বিয়ে বাড়ি এটা। কি হতে কি হয়ে যায় তার কোন ইয়ত্তা নেই। তাই বলি কি গোসলটা করে নে বাবা! মায়ের অন্ধবিশ্বাস এবং সারা গায়ে লেপ্টে থাকা কাদা মাটির দরুন অগত্যা সে রাতে আমায় গোসলটা করতে হয়েছিল। গোসল করে পড়লাম আরেক মহা ঝামেলায়। আমার সাথে কোন জামা কাপড় ছিলো না গোসল শেষে যেটা পরে নিবো। এদিকে কেউ একজন আমায় কোথা থেকে জানি একটা লুঙ্গি, গামছা দিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। আল্লাহ! শেষে কি না আমায় লুঙ্গি পরে ঘুরতে হবে বিয়ে বাড়িতে! কি করবো! এ ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তাও দেখতে পাচ্ছিলাম না কোন। একপ্রকার বাধ্য হয়ে লুঙ্গিটা তাই পরে নিতে হলো আমায়। পরনে লুঙ্গি আর শরীরে গামছা জড়িয়ে আমি যখন রুমে যাই তখন হাসাহাসির একটা রোল পড়ে যায় কাজিনদের মধ্যে। তাদের কথোকপথনগুলো এমন ছিল- রুবেলঃ- হাউ ফানি! আমাগো শুভ্র লুঙ্গি পড়েছে। আতিকঃ- কি কিউট লাগছেরে ভাই তোকে। একদম ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতই… লিমাঃ- আতিক্যা দ্যাখ! শুভ্র’রে ট্যাগ কইরা ওর লুঙ্গি পরনে অবস্থায় ছবি দিয়েছিলাম। ৪মিনিটে ৩৯৮ রিয়েক্ট…. সুমনঃ- ভাই তুই লুঙ্গি পরছোস ভালা কথা৷ নিচে হাফপ্যান্ট পরছোস তো…! মানে বুঝস তো! একটা দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। চেঁচিয়ে ওঠি আমি। চুপ হয়ে যায় সবাই। এরকম সময়ই দরজায় কড়া নাড়ে কেউ। লজ্জায় দ্রুত বারান্দার দিকে চলে যাই আমি। সোফা ওঠে দাঁড়ায় লিমা। এগিয়ে যায় দরজা’র দিকে। — আপু তুমি? (অবাক লিমা) — জ্বী, (লাজুক লাবণ্য) — আসো। রুমে আসো। — না মানে এ শার্ট আর প্যান্ট’টা দেয়ার ছিল ওনাকে। — শুভ্র বারান্দায়। তুমি যাও দিয়ে আসো… — আআআমি? — হ্যাঁ, যাও…. ভীরু পায়ে লাবণ্য এগিয়ে আসে বারান্দায় দাঁড়ানো আমার দিকে। পেছন থেকে ধীর গলায় ডেকে ওঠে আমায়, শুনছেন? একে তো লুঙ্গি পরনে তার উপর খালি গা। লজ্জায় প্রায় মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তথাপি তাকাতে হলো পেছনে। নিঃশব্দে হাতে রাখা প্যান্ট-শার্ট’টা আমার দিকে এগিয়ে দেয় লাবণ্য। মাথা নিচু রাখা অবস্থায় সেটা গ্রহন করে ‘জ্বী, আচ্ছা’ বললাম আমি। গা থেকে গামছা খুলে রাখলাম বারান্দায় রাখা চেয়ারে। শার্ট গায়ে দিতে যাবো ওমনি পিছু ফিরে তাকায় লাবণ্য। এগিয়ে আসে আমার দিকে। এবারো লজ্জায় মাটিতে মিশে যাওয়ার উপক্রম আমার। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন করলাম, Any problem? লাবণ্য আমার দিকে গোসলখানায় ফেলে আসা মোবাইলটা এগিয়ে দেয়…. চলবে….

তিনি এবং ও ! ৬

0
তিনি এবং ও ! ৬
তিনি এবং ও ! ৬

তিনি এবং ও !

৬.
কম্পানির কী নাম দেয়া যায়?স্বপ্নের মধ্যেই সে ভাবতে লাগলো। এতো নাম তার মনে থাকে কিন্তু আজ কোনো নাম তার মনে পড়ছেনা। একটা নাম তার মনে পড়লো – অদ্রি সাত রঙের নতুন বাজার। বেশ বড় নাম হয়ে যায়। কাস্টমার নাম পড়তে গিয়েই বিরক্ত হবে। তবে নামটা ইন্টারেস্টিং। স্বপ্নের মধ্যেই তার ঘুম আসলো। নৌকার মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়লো।নিদ্রের মনে হলো, কেউ তার মাথার কাছে ঠকঠক আওয়াজ করছে। আস্তে আস্তে আওয়াজ বাড়ছেই। তারপর মনে হলো, কেউ তার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। এতো ইন্টারেস্টিং চিন্তা রেখে দরজা খুলতে তার ইচ্ছে করছে না।কড়া নাড়তে থাকুক কোনো সাড়াশব্দ না পেলে চলে যাবে।
নিদ্র গভীর নিদ্রারত অবস্থায় বিছানায় পরে রইলো। অদ্রি এক হাতে খাবারের ট্রে আরেক হাতে চায়ের ফ্লাক্স নিয়ে অনেকক্ষণ কড়া নাড়ছে। এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে তার দুহাত ব্যথা হয়ে গেছে।
নাস্তা টেবিলেই রাখা ছিলো নিদ্রের জন্য। কিন্তু ১১ টা বেজে যায় নাস্তা করতে না আসাতে অদ্রি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। গত রাতে ওরকম খারাপ ব্যবহার করাটা ঠিক হয়নি। ওই কারণেই নিদ্র নাস্তা করতে আসছে না। বাসার মেহমান না খেয়ে থাকবে, খুবই খারাপ। তাই নিজেই নাস্তা নিয়ে এসেছে।
এতো জোড়ে জোড়ে দরজায় শব্দ করার পরও যখন দরজা খুলছেনা তখন অদ্রি ভাবলো – কিছু হয়ে গেলো নাকি?
অদ্রির গতরাতের কথা মনে পড়েও খুব খারাপ লাগতে লাগলো। মানুষ টা তো কোনো খারাপ কিছুই করেনি তাহলে সে কেনো এমন ব্যবহার করেছে? কী করবে বুঝে উঠতে পারছেনা।
আগের তুলনায় আরো জোড়ে দরজায় কড়া নাড়তে লাগলো। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর দরজা খুলে নিদ্র শুধু মাথা বের করে ঘুমে জড়ানো কণ্ঠে বলল
– কিছু বলবেন?
অদ্রি বলল
– মানে বেলা ১১ টা বাজে আপনি নাস্তা করতে আসলেন না। তাই ভাবলাম আপনি অসুস্থ কিনা?
নিদ্র মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
– রাত ভরে দেয়াল রঙ করেছি। ঘুমিয়েছি ভোররাতের দিকে।
– বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।
– দুঃখিত বলে কী লাভ? ঘুম তো ভেঙেই দিলেন।
অদ্রি খেয়াল করলো নিদ্রের এক চোখ খোলা আরেক চোখ বন্ধ। বন্ধ চোখে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা জানা দরকার। অদ্রি বলল
– আপনার চোখে কোনো সমস্যা?
নিদ্র বলল
– ঘুম যেন না ভাঙে তাই এই কাজ করেছি। কিন্তু লাভ হলো না।
– আমি সত্যি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
– হয়েছে দুঃখিত দুঃখিত বাদ দিন। নাস্তা কী এনেছেন?
কথাটা বলে নিদ্র দরজা পুরোটা খুলে দিয়ে বলল
– ভিতরে রেখে যান।
অদ্রির নাকে রঙের গন্ধ আসলো। রঙের গন্ধ তার একদমই সহ্য হয়না। এই কারণে এই বাড়িতেও রঙ করা হয়না। রুমের ভিতরে ঢুকে অদ্রির অস্বস্তিকর লাগছে। ট্রে আর ফ্লাক্স টেবিলের উপর রেখে দিয়ে অদ্রি দ্রুত পায়ে চলে যেতে লাগলো। নিদ্র পেছন থেকে বলল
– চায়ের কাপ তো দেন নি। আর আমারটাও আপনার রুমে গতরাতে ফেলে এসেছি।
অদ্রি যেতে যেতে বলল
– আমি নিয়ে আসছি।
অদ্রি চলে যাবার পর নিদ্র ফ্রেশ হবার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলো।
নাস্তা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে কে বলবে যে,সে রাগী? হুটহাট করে রেগে যায়। মেয়েটা রাগী হলেও খারাপ না।
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো অদ্রি তার দিকে পেছন ফিরে কিছু একটা করছে। অদ্রি বুঝতে পারেনি নিদ্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।
নিদ্র খুব ধীরেধীরে অদ্রির পেছনে এসে দাঁড়ালো।তাদের মধ্যেকার দূরত্ব অনেক কম। নিদ্র ফিসফিস করে বলল
– কী করছেন?
অদ্রি প্রায় লাফিয়ে উঠলো। নিদ্র হেসে ফেলল।অদ্রি পেছন ফিরে বলল
– আপনি দূরে দাঁড়ান।
নিদ্র বলল
– প্রতিশোধ নিলাম। গতরাতের প্রতিশোধ নিলাম।
অদ্রি বলল
– তাই বলে এভাবে? আর আপনি আমার থেকে দূরে থাকবেন।
– আমার লুসি আছে।
অদ্রি বলল
– চা করেছি আপনি নাস্তা করে নিন।
– তা কী নাস্তা এনেছেন?
– পরোটা আর ডিম ভাজি।
– লুসি অবশ্য ভালো রান্না করতে পারেনা। আমাদের বিয়ে হলে ঝামেলায় পড়তে হবে। দুজনের কেউই রান্না পারিনা। চা কফি খেয়ে দিন পার করতে হবে।
অদ্রি বলল
– আমাকে কেনো বলছেন?
নিদ্র চায়ের কাপ নিয়ে বলল
– যাতে আপনার বরের খাবার বিষয়ক কোনো সমস্যা না হয়।আমাকেই দেখুন, খাবার নিয়ে আমার এখনি টেনশন হচ্ছে।

অদ্রি মাথা নিচু করে কী যেন ভাবলো। তারপর আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। যেতে যেতে অদ্রির দুচোখ ভিজে উঠেছে। হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুছে ফেলল।
অদ্রির পুরোনো স্মৃতি আবার মনে পড়ে গেলো। খুব কষ্টে সে নিজেকে একটু ঠিক করেছিলো। কিন্তু এই মুহূর্ত তাকে, তাকে আবারো সেই পুরোনো স্মৃতিতেই ডুবিয়ে দিলো।

চলবে……!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ৫.

0

তিনি এবং ও !

৫.
অদ্রি ভ্রু কুঁচকে মগ মেঝেতে রেখে বলল
– আমি জানবো কীভাবে?
নিদ্র বলল
– আমি এর একটা উত্তর জানি। তবে ঠিক হবে কিনা জানি না।
– তাহলে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন?
– কিছু প্রশ্নের উত্তর একাধিক হয়ে থাকে। ধরুন আমি যেই প্রশ্নটা আপনাকে করলাম সেটার একাধিক উত্তর হয়।সবগুলোই আমার গবেষণা করে বের করা।
– আপনি গবেষণাও করেন?
নিদ্র লাজুক লাজুক স্বরে বলল
– ওই টুকটাক। তো বলি?
– আপনি আমাকে যেভাবেই হোক বলবেন। আমি সম্মতি দানে হয়তোবা আপনি বিষয়টা ঘুরিয়ে বলবেন না আর সম্মতি না দিলেও…..
নিদ্র, অদ্রির কথার মধ্যেই বলল
– বুঝতে পেরেছি আপনি অনেক বুদ্ধিমান।
অদ্রি বাধা দিয়ে বলল
– বুদ্ধিমতী।
নিদ্র হা হা হা হা করে হাসতে শুরু করলো। অদ্রি তার হাসির দিকে তাকিয়ে ভাবছে, কতদিন পর এই বাড়িতে কেউ একজন মন খুলে হাসলো।
নিদ্র হাসি থামিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো তখন অদ্রি বলল
– আপনি হাসি থামাবেন না প্লিজ। হাসুন প্রাণ খুলে, অনেকদিন এই বাড়িতে কাউকে এভাবে হাসতে দেখিনি।
নিদ্র হাসতে হাসতেই বলল
– কেনো? আপনার বাড়িতে হাসির উপর ১৪৪ ধারা জাড়ি করা নাকি?যে হাসলেই ফায়ার….. ঢুস ঢুস ঢুস ঠা ঠা ঠা…. ফায়ার হবে?
অদ্রি কফির মগ হাতে নিয়ে বলল
– আপনার কফি ঠাণ্ডা হচ্ছে।
– আপনি বললেন না তো?
– কী বলি নাই?
– আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা?
– বললামই তো নেই।
– তাহলে কী কারণে মন খারাপ?
– আমার মন খারাপ আপনাকে কে বলল?
– আমি খুঁজে কিছুটা বের করেছি। বলি?
– হ্যা বলুন।
– আপনি হাসছেন না। যাও একটু আকটু হাসছেন কিন্তু তার পরপরই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
– আমি খুব কম হাসি তাই…..
– আর আপনি খুব হালকা রঙের জামা কাপড় পড়েছেন।তবে অনেকে হালকা রঙ পছন্দ করে কিন্তু এতোটা সিম্পল তো হয়না। আর আপনার এলো চুলেই ধরা দিয়েছে কোনো একটা বিষয় নিয়ে আপনি খুব চিন্তিত বা মন খারাপ। আর আপনার বয়সী মেয়েরা বেশ সাজগোজ করে। এমনকি খুব সাধারণ মেয়েরাও অন্ততপক্ষে চোখে কাজল দেয়।
অদ্রি মাথার ঘোমটা ঠিক করে নিলো যদিও সেটা ঠিক করার প্রয়োজন ছিলোনা।
নিদ্র বলল
– আপনার চোখের দৃষ্টি খুব উদাসীন। একটা শূন্যতা খেলা করছে।
অদ্রি কঠিন স্বরে বলল
– আপনি এখন যেতে পারেন।
নিদ্র মেঝে থেকে উঠে চলে যেতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর অদ্রি তার হাতের কফির মগ আর নিদ্রের রেখে যাওয়া মগ স্বযত্নে তার পছন্দের টেবিলের উপর রেখে দিলো।
কী যেন মনে করে নিদ্রের কফি মগের ঠাণ্ডা কফিতে চুমুক দিলো।
চিনি ছাড়া কফি, কী ভয়ংকর তিতা। তার কফি তো এমন ছিলোনা।
অদ্রির রাতের ঘুমটা ভালোই হলো। এদিকে নিদ্র সারারাত জেগে রুমের চার দেয়ালে নকশা করেছে। ভোররাতে সে ঘুমাতে গিয়ে বুঝতে পেরেছে এখন ঘুমালে তার পুরো দিন পার হয়ে যাবে।
আবার না ঘুমালে সারাদিন মাথা ঝিম ধরে থাকবে। শেষ পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে পরলো। ঘুমের মধ্যে নিদ্র স্বপ্নে দেখলো – সে বিশাল রঙের নদীতে নৌকায় বসে আছে।
নদীটা বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ।
ঢেউ আসছে একেক সময় একেক রকম। নিদ্র হাত বাড়িয়ে ঢেউ স্পর্শ করার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। অনেক চেষ্টা করেও সে স্পর্শ করতে পারলো না। স্বপ্নের মধ্যেই নিদ্র বুঝতে পারলো সে স্বন দেখছে।
এতো রঙিন স্বপ্ন মনে হয় সে আজই প্রথম দেখলো। সে ভেবে নিলো, ফিরে গিয়ে রঙের ব্যবসা করবে।

চলবে……..!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ৪.

0
তিনি এবং ও ! ৪.
তিনি এবং ও ! ৪.

তিনি এবং ও !

৪.
নিদ্র যে তাকে বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করার চেষ্টা করবে এটা অদ্রি ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে। অদ্রি দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক দিন পর তার আজকে একটু ভালো লাগছে। শুধু অনেক দিন না অনেক অনেক অনেক দিন। এই নতুন আসা মানুষ টা তাকে বিরক্ত করেই তার মাঝে ভালো লাগা সৃষ্টি করেছে। অদ্রির খুব ইচ্ছে করছে, খুব ইচ্ছে করছে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে। মাঝেমধ্যে যুক্তিহীন কাজ করতে তার ইচ্ছে করে কিন্তু করা আর হয়না। আজ সে করবে।
কিছুক্ষণ পর নিদ্র আবার তার দিকেই আসলো। এবার নিদ্র একটু হেসে বলল
– ইয়ে মানে আমার কাছে রশিদ চাচার মোবাইল নাম্বার নেই।
অদ্রি বলল
– বুঝলাম, তারপর??
– আপনার কাছে তো থাকবে। আমাকে দিবেন?
– যদি না দেই?
– কেনো দিবেন না?
– এইযে আমাকে বিরক্ত করছিলেন এখন আমি আপনাকে বিরক্ত করি?
নিদ্র মাথা চুলকিয়ে বলল
– মনে হয় পারবেন না।
– কেনো?
– কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত করতে হলে তার বিরক্ত হবার কারণ গুলো জানতে হয়। অর্থাৎ কোন বিষয়গুলো তাকে বিরক্ত করে সেগুলো জানতে হয়।
– আমি অবশ্য জানি না। কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন?
নিদ্র প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল
– মোবাইল নাম্বার টা?
অদ্রি বলল
– আচ্ছা আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি লিখে আনছি।
মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে নিদ্র রশিদ সাহেবকে ফোন দিলেন। প্রথমে একজন বয়স্ক মহিলা ফোন রিসিভ করলেন। প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর রশিদ সাহেবকে পেলো। রশিদ সাহেব বললেন
– কে বলছেন?
– চাচা আমি নিদ্র!
– আরে বাবা তুমি? আমি ফোন করবো তার আগেই তুমি করে বসলা।
– চাচা আমাকে একটু বাজারে নিয়ে যেতে পারবেন?
– কী লাগবে বলো আমি এনে দেই।
– চাচা আমার আর ভালো লাগছে না এভাবে বাসার মধ্যে বসে থাকতে।
– তাহলে আমি আসতাছি। তুমি কী কী কিনবা, কোথায় কোথায় যাবা সব ঠিক করে ফেলো।
বিকাল ৪ টায় বের হলো রশিদ সাহেব আর নিদ্র। পুরো বাজার কয়েকবার রিভিশন দিয়ে নিদ্র যখন বাসায় ফিরল তখন রাত ৯ টা।
রশিদ সাহেব বাসার গেটে দিয়ে তার বাসায় চলে গেলেন।
নিদ্র কলিংবেল বাজানোর সাথে সাথে অদ্রি দরজা খুললো।
নিদ্রের হাতের ব্যাগপত্র আর রঙের কৌটা দেখিয়ে বলল
– আপনি একটু সাহায্য করুন না?
অদ্রি নিদ্রের হাত থেকে রঙের কৌটা নিয়ে বলল
– রাতে কী খাবেন বলে গেলেন না যে?
– বলেন কী? রান্না করেন নি? আমার তো খুবই খিদে পেয়েছে। আগে জানলে আমি খাবার কিনে আনতাম।
অদ্রি বলল
– আহা। পুরো কথা না শুনে এতো মন্তব্য করেন কেনো?
– আরে আপনি এতো পথ হাঁটলে বুঝতেন।
– হয়েছে হয়েছে। আমি আমার মতো রান্না করেছি।
– যাক আপনি আসলেই সাক্ষাৎ মা দূর্গা। একেবারেই চৈত্রের ফাটা মাঠে এক পশলা বৃষ্টির মতো।
রাতের খাবার টেবিলে অদ্রি আর নিদ্র বেশ গল্প করলো। দূর থেকে লিলি দেখছিল। সে তার আপামনিকে এই প্রথম এভাবে কথা বলতে দেখছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা তাতেই……
অর্ধেক চাঁদ টার দিকে অদ্রি তীব্রচোখে তাকিয়ে আছে। গতকালই এই চাঁদ টা সে এখানেই দেখেছে। কোনো পরিবর্তন নেই, থাকলেও খুব অল্প। এই চাঁদ টাই আস্তে আস্তে ছোটো হবে। একসময় চাঁদ টাকে আর দেখা যাবেনা। তখন পুরো পৃথিবী টা কালো অন্ধকারে ডুবে থাকবে রাতের বেলায়। তারপর একদিন আবার চাঁদ টাকে দেখা যাবে। আবার সে আস্তে আস্তে বড় হবে….. কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে কেনো হয়না এমন? মানুষ কেনো তার শৈশব কে বারবার ফিরে পায়না?কেনো যৌবন চলে যায়না?
হলে ভালো হতো অদ্রি ভাবে। অদ্রির চোখ আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। দুচোখের কোণ বেয়ে অশ্রুর ধারা বইতে শুরু করলো। এই একই ঘটনার দিনের পর দিন ঘটছে। অদ্রি প্রতিনিয়ত এক অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে নিশ্বাস ফেলছে। যেন,অপেক্ষা এক চিরসত্য মৃত্যু।
কতক্ষণ যে এভাবে কাটে অদ্রির কখনওই খেয়াল থাকেনা। একসময় সে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে।
অদ্রির মনে হলো কেউ তার রুমের দরজায় নক করছে। চোখ মুছে গায়ের জামা কাপড় ঠিক করে দরজা খুলে দেখে নিদ্র হাতে দুটো মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অদ্রি তার আপাদমস্তক দেখলো। পুরো শরীর রঙ লেগে আছে। এমনকি তার মুখেও বেশ রঙ লেগেছে। অদ্রি গভীর কণ্ঠে বলল
– এতো রাতে?
– হ্যা।ভেতরে ঢুকতে দিবেন না?
অদ্রি দরজার সামনের থেকে সরে দাঁড়ালো। তারপর বলল
– হ্যা আসুন কিন্তু বিছানায় বসবেন না।
– না বসবো না। আমি মেঝেতেই বেশ থাকতে পারি।
অদ্রি মাথার ঘোমটা আবার টেনে বলল
– আপনার গায়ে কাঁচা রঙ….
– কফি?
– কে বানিয়ে দিলো?
– আমার ১ বছর বয়সী কফি মেকার টা। বেশ কফি বানায়।
– নাহ আমি এখন খাবো না।
– আরে অদ্রি কফি কেউ খায় না, পান করে।
মেঝেতে বসে হাতের একটা মগ অদ্রি দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
– তো আপনি কাঁদছিলেন কেনো?
অদ্রি কফির মগ নিয়ে নিদ্রের থেকে একটু দূরে মেঝেতে বসে বলল
– কাঁদছিলাম না তো।
নিদ্র বলল
– আপনি মিথ্যে বলতে একদম এক্সপার্ট না। কারণ টা?
– আপনি আমার বাড়িঘরের কী করছেন? জানা যাবে?
– দেখুন প্রসঙ্গ পাল্টানোর বৃথা চেষ্টা করবেন না।
বলার ইচ্ছা না হলে বলবেন না। আর আপাতত ওই রুমটা আমার। আমি যা ইছা করতে পারি।
– আমার বলার ইচ্ছা নাই।
– আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে। তাই না?
– আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। হাজব্যান্ড আছে।
– আবারো মিথ্যে। হাজব্যান্ড থাকলে এতো রাতে আপনার বেডরুমে আমি বসে থাকতে পারতাম না।
– আপনি আপনার রুমে যান।
– আচ্ছা আপনি আমার একটাও প্রশ্নের উত্তর দিলেন না কিন্তু!
– উত্তর দিতে হবে এমন কোনো দায়বদ্ধতা আমার নেই।
– আপনি আইনজীবী হলে আমি ১০০% শিওর ১ টা কেসও হারতেন না।
– আর আপনার মতো মক্কেল পেলে আমার আইন পেশা ছেড়ে বনবাসে যেতে হবে।
– মনে পড়েছে! আপনার কাছে আমার বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে একটা প্রশ্ন ছিলো।
নিদ্র বেশ উত্তেজিত হয়ে বলল।
অদ্রি বলল
– করুন, সীমিত জ্ঞানের আলোকে উত্তর দেবার চেষ্টা করবো।
নিদ্র বলল
– শুনুন।
– হ্যা বলুন।
– শুনুন।
– হ্যা বলুন।
– শুনুন….
– দেখুন আপনি আরেকবার এরকম করলে আমি এখান থেকে উঠে চলে যাবো।
– বলছি। বাংলা চলচ্চিত্র এ দেখা যায় নায়িকা বা কেউ বনবাসে যায় বা পাঠানো হয়।
– হ্যা।তারপর?
– তারা তো এক কাপড়ে যায়। সাথে কোনো জামা কাপড় থাকেনা। বনেও কাপড় চোপড় দেয়ার মতো নেই।
– হ্যা। আপনার প্রশ্নটা তো বলুন।
– কিছুদিন পর দেখা যায় জামা কাপড়ে অন্য রঙের জোড়া তালি দেখা যায়। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে ” এই জোড়া তালি দেয়ার কাপড় পায় কোথায়? তারা সুই সুতাও বা কোথায় পায়?

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ৩.

0

তিনি এবং ও !

৩.
তাহলে এই মেয়েকে খুব সহজে রাগানো যাবে। মেয়েটার অভদ্র আচরণ কীরকম হতে পারে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে নিদ্রের। বড় বাটির এক বাটি নুডুলস নিয়ে নিদ্রের সামনে টেবিলে রাখলো। নিদ্র বলল
– চামচ ছাড়া খাবো কী করে?
মেয়েটা বলল
– আমি আনছি।
মেয়েটা চামচ এনে নিদ্রের সামনে রেখে বলল
– সকালে কী খাবেন?
নিদ্র চামচ বাটির মধ্যে দিয়ে বলল
– নুডুলস এতো ঝোল কেনো করলেন? এটা তো স্যুপ মনে হচ্ছে।
মেয়েটা বলল
– আপনি চুলায় যে পরিমাণ পানি দিয়েছিলেন তাতে ভাবলাম…….
– সকালে তো খাচ্ছি নুডুলস। দুপুরের জন্য রান্না করতে পারেন।
– কী কী খাবেন?
– বাংলাদেশী খাবার রান্না করবেন। এখন কী রান্না করবেন সেটা আপনার ইচ্ছা।
– একটা প্রশ্ন করবো?
নিদ্র নুডুলস মুখে দিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।
– আপনার নাম?
– নিদ্র। আপনার নাম টা বলবেন?আপনাকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে আমি ঝামেলায় পরে যাচ্ছি। বারবার মেয়েটি মেয়েটি বলতে হচ্ছে।
– আমাকে নিয়ে ভাবছেন? কিন্তু কেনো?
– সে পরে একদিন বলবো।
– আমার নাম অদ্রি।
– অদ্রি অদ্রি…….
অদ্রি কিছু একটা চিন্তা করে নিজেকে গুটয়ে নিলো।সে স্বভাবত এই বয়সের ছেলেদের সাথে কথা বলেনা।
এই লিলি, লিলি….? বলে অদ্রি সেই ১২-১৩ বছরের মেয়েটাকে ডাকতে লাগলো। নিদ্র বেশ মন দিয়েই নুডুলস খাচ্ছে। রান্না ভালো হয়েছে অন্ততপক্ষে তার চেয়ে। সে কোনোমতে পেট বাচানোর জন্য নুডুলস রান্না করতে পারে আর চা, কফি।
লিলি প্রায় দৌড়ে অদ্রির সামনে এসে দাঁড়ালো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল
– বলেন আপা।
– আমার পানের বাটা কই?
নিদ্র বলল
– পানের বাটা কী?
লিলি বলল
– পানের বাটা হচ্ছে এমন একটা বাটি যেখানে পান খাবার সবরকম মশলা থাকে।
নিদ্র বলল
– পান খাবে কে? আমি ওসব খাইনা।
অদ্রি বলল
– আমি খাবো।
লিলি পানের বাটা এনে অদ্রিকে দিলো। অদ্রি পান বানিয়ে মুখে দিলো। অদ্রির মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট বুঝতে পারলো নিদ্র। নিদ্র বলল
– আপনার তো কষ্ট হচ্ছে। তাহলে খাচ্ছেন কেনো?
নিদ্রের কথার উত্তর দিতে গিয়ে অদ্রির পান গলায় ঠেকে যায়। এবং কাশতে শুরু করে।
অদ্রির এই অবস্থায় লিলি ইতস্ততভাবে দৌড়া দৌড়ী শুরু করলো। কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা।
নিদ্র লিলিকে বলল
– পানি দাও।
লিলি এক গ্লাস পানি দিলো অদ্রির হাতে। এতকিছু হয়ে গেলো কিন্তু নিদ্র খুব স্বাভাবিক থাকলো। সে চেয়ার থেকে উঠলোই না। কিছু একটা সে ভাবছে।
দুপুরের খাবার নিদ্র একাই খেলো। কেউ তার সাথে খেতে বসলো না।লিলিকে ডেকে অদ্রির রুম কোনটা জেনে নিলো। খাওয়া শেষ করে দোতলার দক্ষিণ পাশের একদম কোণার ঘরের সামনে গিয়ে দরজায় নক করলো। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে অদ্রি বলল
– কিছু লাগবে?
নিদ্র বলল
– আমাকে যে ঘরটা দেয়া হয়েছে ওটাকে আমি নিজের মতো সাজাতে পারি?
– হ্যা পারেন।
কথাটা বলেই নিদ্রের মুখের উপর দরজা আটকে দিলো। নিদ্র কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার নক করলো দরজায়। পূর্বের ন্যায় আবারো দরজা খুলে অদ্রি বলল
– কিছু বলবেন?
নিদ্র বলল
– আমি কি আমার মতো করে ঘরটাকে কালার করতে পারি?
অদ্রি বিরক্ত হয়ে বলল
– হ্যা পারেন।
দরজা আটকে দিয়ে অদ্রি ভাবলো এ আবার নক না করে?
আবারো দরজায় নক করলো নিদ্র। এবার দরজা খুলে বেশ রাগীস্বরে অদ্রি বলল
– কী সমস্যা আপনার? কী বলবেন সেটা একবারে বলা যায়না?
– আমি কি আমার ইচ্ছেমত আলমারি বা বুক সেলফ কিনে আনতে পারি?
– আপনার যা ইচ্ছা হয় করুন কিন্তু বাড়িঘর ভেঙে ফেলবেননা। আর প্লিজ কিছু বলার থাকলে বলুন।
– নাহ কিছু বলার নেই।
নিদ্র হাসতে হাসতে তার রুমে চলে গেলো। অদ্রি অবাক হয়ে তার চলে যাওয়া দেখছে। আর সে বুঝতে পেরেছে, আসলে ছেলেটা তাকে বিরক্ত বা রাগাতে চাচ্ছিলো। এবং ছেলেটি সফল ও হয়েছে।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ২

0
তিনি এবং ও ! ২
তিনি এবং ও ! ২

তিনি এবং ও !
২.
নিদ্র চায়ের মগে চুমুক দিয়ে ভাবতে লাগলো,আজ দাদী থাকলে সে খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করতে পারতো। দাদী মুখের দিকে তাকিয়ে খুব সহজে মনের অবস্থা বলতে পারে। কীভাবে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে দাদী বলেছেন – চেষ্টা কর পারবি।
নিদ্র চেষ্টা অবশ্য তেমন করেনি।
কী দরকার একজন মানুষের অবস্থা জানার? জানলে আরো বিপদ। সেই মানুষটার কষ্ট তার সহ্য হবেনা। শুধুশুধু কষ্ট পাওয়া।
নিদ্রের ভালো কাটছে না সময়। তার বাবা তাকে লুসির থেকে দূরে রাখার জন্য এখানে পাঠিয়েছে। লুসির সাথে যোগাযোগ করতে পারে এমন পথও রাখেননি। পুরাতন মোবাইল কেড়ে নিয়ে নতুন মোবাইল কিনে দিয়েছেন। এমনকি সিম কার্ড ও চেঞ্জ।
লুসি এতো ভালো একটা মেয়ে কিন্তু কেনো বাবা তাকে পছন্দ করেননা ভেবেই বের করতে পারেনা।
এই সুন্দর সকালে তার লুসির কথা খুব মনে পড়ছে।
অর্ধেক চা ফেলে দিয়ে দোতলায় নিজের রুমে ফিরে এসে মেঝেতে বসে পরলো।
হাতের ছোটো আংটির দিকে তাকিয়ে লুসির কথা ভাবছে। লুসি এখন কী করছে? হয়তোবা এখন ঘুমের মধ্যে খুব খিদে পাওয়া যাওয়াতে সে কিচেনে একাই নুডুলস রান্না করে খাবে।
সাথে সাথে নিদ্র লাফিয়ে উঠে তার ব্যাগের কাছে এগিয়ে গেলো। ২ টা মিনি নুডুলস প্যাকেট নিয়ে রান্নাঘরের খোঁজে বের হলো রুম থেকে। সাধারণত নিচতলায় রান্নাঘর থাকে। রান্নাঘরের দরজায় পর্দা দেয়া থাকেনা – এই যুক্তিটাকে কাজে লাগিয়ে সে রান্নাঘর খুঁজে পেলো। সে এ বাড়িতে আসার পর কয়েকটা ব্যাপার খেয়াল করেছে। তারমধ্যে কয়েকটি হচ্ছে
– এই বাড়িতে লোক সংখ্যা খুব কম।
– যারা থাকে তারা তাদের নিজেদের রুমে থাকতে পছন্দ করে।
– এদের খাদ্যের প্রতি তেমন আকর্ষণ নেই।
– এদের কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই। একজন অতিথি এসেছে বাসায় সেদিকে খেয়াল নেই।
তবে এতে নিদ্রের ভালোই হয়েছে অন্ততপক্ষে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে। তা না হলে সারাক্ষণ বাবার মতো ঘাড়ে কেউ চেপে থাকবে এটা খুবই বিরক্তিকর।
রান্নাঘরও তেমন গোছানো না। অনেকক্ষণ খোঁজার পর একটা ছোটো পাতিল পেয়েছে। তার দাদীর ঠিক এমন একটা পাতিল আছে। তবে সেটা অনেক পুরাতন।
পাতিলে পানি দিয়ে চুলায় দিবে তখন নিঃশব্দে নিদ্রের পেছনে এসে কেউ একজন দাঁড়ালো। নিদ্র বেশ বুঝতে পেরেছে তার পেছনে কেউ আছে। না বোঝার ভান করে পাতিল চুলায় দিয়ে চুলা জ্বালিয়ে দিলো।
– আপনি আমাকে বললেই পারতেন।
নিদ্র স্বাভাবিক স্বরেই বলল
– আপনাকে পাবো কোথায়?
– আসলে আমি অনেক দুঃখিত, অনেক বেশি।
নিদ্র নুডুলসের প্যাকেট গুলো হাতে নিয়ে তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির হাতে দিয়ে বলল
– যেহেতু আপনি এতো দুঃখ প্রকাশ করছেন সেহেতু রান্না করেই দিন।
মেয়েটি নিদ্রের দিকে তাকালো চোখ বড়বড় করে। মেয়েটির লাল টকটকে চোখ দুটোতে তার চোখ পরাতে সে ভয় পেয়ে গেলো। তার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। দুটো চোখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাই তো এই মেয়ে। মেয়েটা চোখ সরিয়ে নিলো। নিদ্র বলল
– আপনি অসুস্থ?
মেয়েটি বলল
– না তো।
– তাহলে চোখের এই অবস্থা যে?
মেয়েটি কঠিন স্বরে বলল
– আপনি ডাইনিং রুমে বসুন। নুডুলস আমি নিয়ে আসছি।
নিদ্র যেন শুনেও না শোনার ভান করে বলল
– আপনার চোখ এতো লাল কেনো?
মেয়েটি এবার আগের তুলনায় বেশি কঠিন স্বরে বলল
– আপনি যান এখান থেকে। দয়া করে অভদ্র আচরণ করতে বাধ্য করবেন না।
নিদ্র চুপচাপ ডাইনিং রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।
অভদ্র আচরণের কী করেছে সে? যে এভাবে কঠিন স্বরে কথা বলতে হবে?
খুব সাধারণ প্রশ্ন করেছে তাতেই এতো রাগ।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১

0
তিনি এবং ও ! ১
তিনি এবং ও ! ১

তিনি এবং ও !

১.
-আরে তুমি নাজমুলের ছেলে নাকি?রশিদ সাহেব নিদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কথাটি বললেন।
নিদ্র একটু হেসে তার বাবার বয়সী লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার বাবার বাল্যকালের বন্ধু রশিদ সাহেব বেশ হাসিখুশি মেজাজের।
নিদ্র কোনোভাবেই বুঝতে পারছেনা এই মানুষ টা কীভাবে তার বাবার বন্ধু হলো। তার বাবার সাথে রশিদ সাহেবের কোনো মিলই নেই, বরং অমিলে পরিপূর্ণ।
রশিদ সাহেব নিদ্রের হাত ধরে বললেন
– বাবা তোমার নাম টা বলো? খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
রশিদ সাহেব নিদ্রের নাম থেকে শুরু করে সবকিছুই জানেন। তারপরও সে আলাপ জমানোর জন্য প্রশ্নটা করলেন। ২১-২১ বছরের যুবকের সাথে গল্প করার মজাই আলাদা। এদের রক্ত টগবগ করে ফুটছে। বুকের ছাতিতে হাজারো স্বপ্ন জমে থাকে। সেই স্বপ্নগুলো জানার প্রবল ইচ্ছা।
নিদ্র বলল
– নিদ্র।
রশিদ সাহেব বললেন
– তা বাবা তোমার প্লেনে কাটলো কেমন?
নিদ্র একটু চিন্তিত হয়ে পরলো। সে প্রশ্নটা ধরতে পারছেনা। প্রশ্নের উত্তর দিবে কীভাবে?
নিদ্রের চুপ থাকা দেখে রশিদ সাহেব বললেন
– তো এখন যাওয়া যাক। ঢাকাশহর বুজেছো বাবা।
রশিদ সাহেব নিদ্রের হাত ধরে এয়ারপোর্ট এর বাইরে পার্কিং করা তার গাড়ির দিকে নিয়ে এলেন।
নিদ্রের মনে হচ্ছে সে এখনো ছোট্ট বালক। একটু অসাবধানতায় সে পথ হারিয়ে ফেলবে। অবশ্য বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম আসা। কিন্তু তাতে ভয় নেই, গুগোল ম্যাপ আছে।
রশিদ সাহেব গাড়ির ড্রাইভার কে বললেন,নিদ্রের ব্যাগপত্র গাড়িতে তুলতে। নিদ্রকে গাড়ির পেছনের সিটে বসিয়ে সে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসলো।
নিদ্র তার ঘাড়ে ঝোলানো ব্যাগ টাকে তার পাশে রেখে চোখ বুজে বসে রইলো। বাবা তাকে কেনো এখানে পাঠালেন, সেটা ভেবে বের করা দরকার।
প্রায় দেড় ঘণ্টা যাবত জ্যামে বসে আছে। খুবই বিরক্ত লাগছে তার।বাংলাদেশে এখন শীতকাল চলছে। তাই সে সোয়েটার পড়ে এসেছে কিন্তু এখানে এসে তার উল্টো ব্যাপার টা ঘটলো। ঠাণ্ডা তো দূরে থাক গরম পরেছে, সে খুব ঘামছেও।
রশিদ সাহেব বললেন
– বুঝছো বাবা এই হইলো ঢাকা। যেখানেই যাও জ্যাম পিছ লেগেই থাকে।
নিদ্র বলল
– আমি যতদূর জানি আমাদের গন্তব্যে পৌছাতে ৫ ঘণ্টা লাগবে।
রশিদ সাহেব হেসে বললেন
– সাথে জ্যামের হিসাবটা করছিলা?
– না, বাবা তো বলে নাই এরকম কিছু।
– আমি জানতাম ওই ব্যাটা কিছুই বলবে না। বাবা তুমি কিছু খাবে?
– চাচা খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু ফ্রেশ না হয়ে কীভাবে খাই?
– দেখো বাবা এখন দুপুর ৩ টা বাজে। বাসায় পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
– আচ্ছা, হালকা খাবার থাকলে দিন।
রাত ৮ টায় নিদ্র আর রশিদ সাহেব গন্তব্যে পৌঁছালেন।
গাড়ি থেকে নেমে বিশাল উঠানের একপাশের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে নিদ্রের বেশ ভালো লাগলো। বাড়িটা তার পছন্দ হয়েছে, এখানে থাকতে তার কোনো সমস্যা নেই। সোডিয়াম আলোতে পুরো পরিবেশ টা তার ভালো লাগছে।
রশিদ সাহেব নিদ্রকে হাত ধরে নিয়ে গেলেন বাড়ির মধ্যে।
বাড়ির মধ্যে ঢুকতে বিশাল ড্রয়িংরুম এ সোফায় রশিদ সাহেব বললেন
– বাবা, তুমি এখানে যত দিন ইচ্ছা থাকবে।
১২-১৩ বছরের একটা মেয়ে এসে রশিদ সাহেবকে বলল
– চাচা, আপামনি তো….
রশিদ সাহেব বললেন
– তুই ওকে ওর রুমটা দেখিয়ে দে। যা যা লাগবে ওকে ঠিকমতো দিবি। আর যত্নে কোনো কমতি যেনো না হয়।
তারপর নিদ্রের হাত ধরে বললেন
– বাবা আমি যাই।
নিদ্র অবাক হয়ে বলল
– আপনি কোথায় যাবেন?
– বাসায়, বাবা আমার বাসায় অনেক মানুষ। তোমার থাকার মতো জায়গা নেই। তাই এখানে রেখে গেলাম।
– আমি একটা হোটেলেই থাকতে পারতাম।
– এখানে তোমার থাকার মতো ভালো হোটেল নেই। এটা মফস্বল শহর।
– হ্যা, ঢাকা থেকে তো দূরে।
– বাবা, আমার একটা ব্যাপার খুব ভালো লাগছে। তুমি বিদেশে বড় হয়েও এতো স্পষ্ট বাংলা বলতে পারো। খুবই ভালো।
নিদ্র আর কিছুই বলল না। রশিদ সাহেবের চলে যাওয়াটা দেখছে।
রাতে তার ঘুম তেমন ভালো হলো না।খুব ভোরেই বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো। ঘুম না আসলে বিছানায় শুয়ে থাকাটা বিরক্তিকর।
হাত মুখ ধুয়ে সে নিজের আনা হিটার দিয়ে পানি গরম করে টি প্যাক দিয়ে চা বানিয়ে ফেলল। প্রিয় চায়ের মগ হাতে নিয়ে নিঃশব্দে সে নিচে নেমে এলো। বাড়িটা ডুপ্লেক্স তাকে দেয়া হয়েছে দোতলার উত্তরের রুমখানা। এখনো তার ভালোভাবে রুমটা দেখা হয়নি।
হাতে চায়ের মগ নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হলো।
দক্ষিণ দিকটাতে ফুলের বাগান দেখে নিদ্রের খুব ইচ্ছা করলো ফুলগুলোকে ছুঁয়ে দেখতে। তার নিজস্ব একটা বাগান আছে। সেখানে অবশ্য এখানকার থেকেও বেশি ফুল। ফুলগুলো দেখতে গিয়ে নিদ্রের দোতলার একটা খোলা জানালায় চোখ পরলো।
জানালার ধারে একজন যুবতী এলোমেলো খোলা চুলে দাঁড়িয়ে আছে। যার চোখের দৃষ্টি আকাশের দিকে। হালকা বাতাসে যুবতীর চুল গুলো দুলছে কিন্তু মেয়েটার সেদিকে খেয়াল নেই। মেয়েটার মুখের উপর এক চিলতে রোদ এসে পরলো। নিদ্র চায়ের মগে চুমুক দিয়ে একটা শব্দ বারবার আওড়াতে লাগলো
– এলো চুলে বিষণ্ণ যুবতী। কী কারণ হতে পারে তার বিষণ্ণতার?? কী কারণ???

চলবে…….!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ১১.শেষ পর্ব!

0

ডুমুরের ফুল
১১.

শেষ পর্ব!

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর জাদিদকে ফোন দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সন্ধ্যা পার হয়ে যায় হেমলতার ফোন আসেনা। জাদিদ বিরক্ত হয়ে হেমলতাকে ফোন করলো। দুইবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ হলো।
– হেমলতা!
– হেমলতা তো অসুস্থ। তুমি কে বাবা?
জাদিদ কণ্ঠ শুনে প্রথমে একটু ভড়কে গিয়েছিলো। হেমলতা এমনকি অসুস্থ যে ফোন রিসিভ করতে পারলো না। ফোন কেটেও দেয়া যাবেনা। তাহলে সন্দহের চোখে দেখবে। সাহস করে বলেই ফেলল
– জাদিদ, হেমলতার ফ্রেন্ড।
– ওহ আচ্ছা।
কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলো। ইনি হেমলতার কাছের কেউ। আর হেমলতার অসুস্থতায় তিনি বেশ চিন্তিত।
– হেমলতার কী হয়েছে?
– আরে বাবা কী বলবো বলো। প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় লবণ দিছে। ভালো কথা তুই বুঝতে পারছিলি না যে কোন লবণ। কাউকে জিজ্ঞেস করলেই হতো। তা না মেয়ে আমার নিজেই লবণ চেখে দেখেছে। ডাক্তার বলল অল্প পরিমাণ পেটে গেছে আর একটু বেশি হলেই ওকে আর…….
হেমলতার বাবা আর কিছুই বলতে পারলেন না।
জাদিদ বুঝতে পেরেছে যে ইনি হেমলতার বাবা।
– আংকেল এখন ও কোথায়?
– ডায়াবেটিক হাসপাতালে।
– আংকেল এখন তো কেবল সন্ধ্যা। আমি আসলে সমস্যা হবে না তো?
– আরে না। আসো। ওর তো তেমন কোনো ফ্রেন্ড নাই। মিম্মা না মিমি ও এসে দেখা করে গেছে। হেমের মন খুব খারাপ। ফ্রেন্ড তো ফ্রেন্ডই তার আবার ছেলে বা মেয়ে কি।
– কতো নাম্বার রুম?
– পুরাতন বিল্ডিং এর ৩ তলার হাতের ডান পাশের রুম।
জাদিদ ফোন রেখে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাসার জামা পাল্টে নিলো। রুম থেকে বের হওয়ার সময় বাবার মুখোমুখি হয়ে গেলো। ছেলেকে এই সময় বের হতে দেখে একটু অবাক হলেন। এই বয়সের ছেলেরা রাতেও আড্ডা দেয়। কিন্তু জাদিদ তা করেনা।
ছেলের দিকে হেসে বললেন
– কই যাওয়া হচ্ছে?
– এইতো বাবা। আমার এক ফ্রেন্ড অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি তাই তাকে দেখতে যাচ্ছি।
– তোমার সাথে গেলে কি তুমি বিরক্ত বোধ করবে?
– না। দুজনে গল্প করতে করতে গেলে ভালোই হবে।
– চলো ।
জাদিদ বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
– তুমি এই পোশাকে যাবা?
– খারাপ কী?
– নিজের দিকে তাকাও তো?
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলেন আসলেই এই পোশাকে বের হওয়া যায়না। তাইলে একটু দাড়া।
তাদের বাড়ি থেকে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা। তারপরো বাবা ছেলে রিক্সায় উঠলেন।
কেবিন খুঁজে পেতে বেশি সময় লাগলো না। দরজা আটকানো না কিন্তু ভেজানো। তাই নক করতে হলো।
দরজা খুললেন হেমলতার বাবা। মেয়ের সাথে গল্প করছেন।
জাদিদকে দেখে চেনার কথা না কিন্তু ও ছাড়া তো আর কেউ আসার কথা না তাই তিনি বুঝতে পারলেন জাদিদ এসেছে। হাসার চেষ্টা করলেন কিন্তু সেটা আর হাসি হলো না।
– আসো।
দরজা পুরোটা খুলে দিলো। মাঝারী আকারের রুম। রুমের দুকোণায় দুটো খাট পাতা। একটি রোগীর জন্য সেটাতে হেমলতা কাথা গায়ে দিয়ে আধ শোয়া অবস্থায় আছে। আরেকটাতে এখন কেউ নেই। রোগীর সাথে রাতে থাকার জন্য এই বিছানা রাখা হয়েছে।
দুটো টুল এগিয়ে দিয়ে মনোজ সাহেব বলল
– বসো বাবা। আর ইনি তোমার বাবা?
জাদিদ টুলে বসতে বসতে বলল
– জি।
জাদিদ হেমলতার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখছে এই একটা দিনের অসুস্থতায় মেয়েটার চোখের নিচে কালি পরে গেছে। চুল গুলো উশখু খুশকু। খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। তারপরও হেমলতাকে অসম্ভব ভালো লাগছে জাদিদের কাছে। হেমলতা কোনো কথা বলছে না।
মনোজ আর জাদিদের বাবা কথা বলতে বলতে রুম থেকে বাহিরে চলে গেলেন।
হেমলতা এখনো কোনো কথা বলছে না। জাদিদ টুল নিয়ে হেমলতার বিছানার পাশে বসলো। তারপর হেমলতার হাত তার দুহাতের মুঠোয়ে নিয়ে আলতো চাপ দিলো।
হেমলতা জাদিদের এভাবে হাত ধরাতে চমকে উঠে বলল
– একি? তুমি এভাবে হাত ধরেছো কেন? হাত ছাড়ো। বাবা দেখলে কী মনে করবে?
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলতে গিয়ে হেমলতা হাঁপিয়ে উঠলো। সারাটা দিন তার খুব কষ্ট হয়েছে। পরীক্ষা হল থেকে বের হওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে বমি শুরু হলো।নানী অসুস্থ, বাবা কাজে তাই কেউ আসেনি। মিম্মা মনোজ সাহেবকে ফোন করে
তারপর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বমি তো থামছিলো না তার উপর আবার চোখ উল্টে যাচ্ছিলো। হেমলতার এই অবস্থা দেখে মিম্মা ভয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়।
বিকালের দিকে হেমলতা একটু স্বাভাবিক হয়।রাতে থাকবেন লাইলী বানু। মিসেস জয়নবের শরীর বেশ খারাপ। সে নিজেই তো কিছু করতে পারেনা সে আবার কেমনে অন্য কারো সেবা করবে।
জাদিদ হেমলতার দিকে না তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল
– লবণ এর কি অভাব ছিলো?
হেমলতার মুখ এমনিতেই ফ্যাঁকাসে এই প্রশ্ন শুনে আরো ফ্যাঁকাসে হয়ে গেলো। মাথা নিচু করে রইলো। এতক্ষণ হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলো। প্রশ্ন শুনে সেটা বন্ধ হয়ে গেলো।
জাদিদ আগেকার মতো করেই বলল
– তুমি একজন সাইন্সের স্টুডেন্ট। একজন মানবিক বা ব্যবসায়ী শাখার স্টুডেন্ট এই ভুল করলে একটা লজিক ছিলো। যে তারা এই ব্যাপারে জানে না। কিন্তু একজন সাইন্সের স্টুডেন্ট এর জন্য এইসব ব্যাপার জানা তো ক, খ জানার মতো। যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো?
হেমলতা জাদিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে জাদিদের ভাব ভঙ্গি কিছুই বুঝতে পারছিলো না।
জাদিদ হেমলতার হাত দুটো তার ঠোঁটের কাছে নিয়ে আলতো করে চুমু এঁকে দিলো।
জাদিদের আলতো স্পর্শে হেমলতার শরীরে কারেন্টের শকের মতো লাগলো।
হেমলতা তাড়াতাড়ি তার হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না।
জাদিদ হেমলতার চোখে চোখ রেখে বলল
– হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করবা না। এমনিতেই আমার শক্তি বেশি তার উপর আবার তুমি অসুস্থ।
হেমলতা চোখ সরিয়ে বলল
– সবাই খারাপ কিছু ভাববে।
– কেউ দেখছে না তো। আর আমরা তো খারাপ কিছু করছি না তো।
হেমলতা ইতস্ততভাবে বলল
– ফ্রেন্ড রা তো এগুলা করেনা।
জাদিদ টুল ছেড়ে দিয়ে হেমলতার বিছানায় বসে পড়লো। হেমলতা দূরে সরে গেলো।
– দেখো বাবা তোমার বাবাকে আপাতত এখানে আসতে দিবেন না।
– বুঝলাম না?
– তোমার আমার মাঝে প্রথমে ফ্রেন্ডশিপ ছিলো কিন্তু সেদিনকার পর থেকে অন্য একটা অনুভূতি আমাকে তাড়া করে ফিরছে।
আমি জানি না কেন এমন হলো।
জাদিদ হেমলতার উশখু খুশকু চুলে বিলি কাটতে শুরু করলো।
জাদিদের এমন আচরণ হেমলতার কাছে খুব অচেনা লাগছিলো। অস্বস্তি লাগছিলো আবার জাদিদের স্পর্শও ভালো লাগছিলো। মিশ্র অনুভূতি খেলা করছে তার মনে।
জাদিদ হেমলতার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল
– তুমি না খুব সুন্দর। অসম্ভব সুন্দর। আমার তোমাকে খুব ভালোলাগে।
হেমলতা ভাবতেও পারছেনাজাদিদ তাকে পছন্দ করতে পারে। অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে। হেমলতা এতক্ষণ অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো। জাদিদের এই কথা শোনার পরেই সে জাদিদের দিকে তাকালো।
জাদিদ তার ডান হাতের দুই আংগুল দিয়ে হেমলতার গালে আলতো করে ছুঁয়ে দিলো।
হেমলতা কেঁপে উঠলো।
হেমলতার কেঁপে ওঠাতে জাদিদ হেসে ফেললো।
হেমলতা বলল
– তুমি কী বলছো? বুঝতে পারছো?
– হ্যা আমি বুঝতে পারছি। তোমাকে খুব ভালোলাগে। মনে হয় তোমার প্রেমে পড়েছি।
হেমলতা এই কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
জাদিদ আবার বললো
– মনে যা হচ্ছে আমি তোমাকে ভালবাসি।
দেখো হেম আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। তারপর ও মাঝেমাঝে বলে ফেলি। আর আমি আগামীকাল চলে যাবো ঢাকায়। যাওয়ার আগে তোমার প্রতি আমার ফিলিংস গুলো জানিয়ে দিলাম। এখন তোমার ইচ্ছা তুমি কী করবা। আমি তোমাকে কোনোরকম ফোর্স করবোনা।
হুট করে জাদিদের মুখে যে উজ্জ্বলতা ছিলো সেটা উবে গেলো। হেমলতা খেয়াল করলো ব্যাপার টা।
জাদিদ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হেমলতা বুঝতে পেরেছিলো এখন কিছু না বললে আর কোনোদিন ও ওর বলা হবেনা।
জাদিদের হাতের মুঠো থেকে ওর হাত মুক্ত হয়ে গেলো।
হেমলতা জাদিদের হাত ধরলো। তারপর আস্তে আস্তে বলল
– আমাকে ভালোবাসার কারণ আমার জানা নেই। জানার ইচ্ছাও নাই। কিন্তু একটা কথা কি তোমাকে ভালবাসার অনেক কারণ আছে।
ভালবাসার কোনো কারণ থাকে না। কিন্তু আমার ভালবাসায় আছে। তোমাকে তো প্রথম দেখাতেই ভালবেসেছি। কিন্তু মিশতে চাই নেই। আমার মতো এতো সাধারণ মেয়ে তো তোমার যোগ্য না।
তারপর ও তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছেটা মনের একটা স্থানে আটকে ছিলো।
তুমি ফ্রেন্ড হওয়ার কথা বললে তখন ভয় হয়েছিলো খুব। আমার ভিতরকার ফিলিংস টা যদি বেড়ে যায়?
জাদিদ মুচকি হেসে বলল
– আর বলতে হবেনা। বুঝেছি আমি। অসুস্থ মানুষের এতো কথা বলা ঠিক হবেনা। হেমলতা কখনো ডুমুরের ফুল দেখেছো?
– নাহ!
– ডুমুরের ফুল ডুমুরের ফলের মধ্যেই থাকে। উদ্ভিদবিজ্ঞান এ তো ছিলো আমাদের। তুমি না ভারী ফাঁকিবাজ।
যাই হোক। ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। ভিতর থেকে ফুল তার সৌন্দর্য টা ফলের গায়ে ছড়িয়ে দেয়। ফলের সেই সৌন্দর্যে পাখি রা আকৃষ্ট হয়।
হেমলতা তোমার সৌন্দর্য টা মনের ভিতর। যে তোমার মনের সৌন্দর্য টা উপলব্ধি করতে পারবে সেই তোমাকে ভালবেসে ফেলবে। তুমি হচ্ছো ডুমুরের ফুল। তোমার মনের সৌন্দর্য টা যেমন আমাকে আকৃষ্ট করেছে ঠিক তেমন ভাবে তোমার সাধারণ রূপ আমাকে ভালবাসতে বাধ্য করেছে। তোমার হাসিতে সরলতা খেলা করে।

জাদিদের বাবা বুঝতে পেরেছিলেন তার ছেলে এই মেয়েকে পছন্দ টছন্দ করে। ছেলের ওই মেয়ের দিকে তাকানো দেখেই ব্যাপার টা আড়ো বেশি পরিষ্কার হয়েছে তার কাছে। দুজনকে একটু আলাদা কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য তিনি মনোজ সাহেবকে নিয়ে বাহিরে বের হয়েছেন। ছেলে এই মেয়েকে যদি ভালবেসেই থাকে বাসুক না। জাদিদের পছন্দ সে ভালো ভাবেই জানেন। ছেলে অবশ্যই ভদ্র মেয়েকেই বেছে নিয়েছে।
অনেকদিন পর আজকে তার খুব ফ্রেশ লাগছে তার। মনে আনন্দের সমুদ্র বয়ে যাছে। তার ছেলে প্রেমে পড়েছে। তার অর্থ এইযে তার ছেলে সুস্থ স্বাভাবিক।

জাদিদ হেমলতার হাতে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল
– আর কোনোদিন এরকম করবে না।
হেমলতা ঘাড় নাড়িয়ে বলল
– হুম।
– লবণ খাওয়ার সখ মিটেছে?
– হুম।
হেমলতা মাথা নিচু করে বলল
– তোমায় ভালবাসি, বড্ড বেশি ভালবাসি।
জাদিদ বলল
– জানি তো। কেশবতী আমার! শুধুই আমার!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ১০.

0
ডুমুরের ফুল ১০.
ডুমুরের ফুল ১০.

ডুমুরের ফুল
১০.
ফোন রেখে দেয়ার পর হেমলতাকে দেখার ইচ্ছে জাগলো। জাদিদের মনে হচ্ছিলো অনেকদিন দ্যাখেনি। কিন্তু মাত্র ৫-৬ দিন আগেও দেখা হয়েছে। হেমলতাকে কল করলো। হেমলতা কেবল চোখ বুজেছে আর তখনি ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। সে এক চোখ বন্ধ রেখে আরেক চোখ খুলে কল রিসিভ করলো।
তারপর বলল
– কি?
জাদিদ একটু হেসে বলল
– ঘুমুচ্ছো?
– তুমি কী ঘুমুতে দিচ্ছো? কেবলি চোখ বুজেছি আর তুমি ফোন দিলা।
– আরে বাহ! আমি তো একবারমাত্র ফোন করলাম। আর আমার দোষ হয়ে গেলো?
– আর প্যাঁচানো বন্ধ করে বলো কী কারণে ফোন করলা?
– আমাকে খুব বিরক্তিকর লাগছে তোমার? কথা বলার তেমন কেউ নাই তাই ফোন করলাম আর তুমি?
হুট করে জাদিদ রেগে যায়। আজকেও তাই। রেগে গিয়ে ফোন কেটে দিয়ে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলো।
জাদিদের কথায় পুরোপুরিভাবে বোঝা যাচ্ছিলো যে সে রেগে গেছে। রাগের কারণটা হেমলতা বুঝতে পেরে জাদিদকে কল দিলো। জাদিদ ফোন রিসিভ করে বলল
– তুমি নাকি ঘুমাবা? তাহলে আমাকে ফোন দিলা ক্যান?
– আমি অনেক দুঃখিত।
– কেন?
– তোমাকে রাগিয়ে দিলাম তাই ।
– এক শর্তে আমি দুঃখিত শব্দটা গ্রহণ করবো।
– বলে ফেলো।
– সত্যি তো?
– হ্যা!
কখনো হেমলতার ছবি জাদিদ চায়নি। কেমন যেন লাগছিলো ওর। তারপরও কাঁপা স্বরে বলল
– না মানে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তাই আর কি একটা ছবি যদি ইনবক্সে দিতা। ভালো হতো।
হেমলতা জাদিদের কাঁপা স্বর শুনে হাসতে শুরু করলো।
হেমলতার হাসি তার বরাবরি ভালো লাগে কিন্তু আজকের হাসিতে তার কেমন যেন লজ্জা লাগছিলো। জীবনের সতেরো টা বছর সে পার করেছে কোনোদিন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোনো মেয়ের সাথে সে সেধে কথা বলেনি ছবি চাওয়া তো দূরে থাক। ফেসবুকে সে অনেক সুন্দরী, স্মার্ট মেয়েদের ছবি দেখেছে তেমন একটা ভালো লাগেনি। ফেসবুকে রিএক্ট অপশন থাকা সত্ত্বেও সে শুধু লাইক দিয়েই চলে এসেছে। কোন একটা মেয়ের ছবিতে কমেন্ট করেছিলো কারণ মেয়েটা তাকে ইনবক্সে কমেন্ট করতে বলেছিলো। তারপর নোটিফিকেশন আসতে আসতে সে শেষ পর্যন্ত কানে ধরেছে বাইচ্চা থাকতে সে কোনোদিন কোনো মেয়ের ছবিতে কমেন্ট করবেনা।
আর আজকে সেই ছেলে খুব সাধারণ এক মেয়ের কাছে ছবি চাচ্ছে।
হেমলতা হাসতে হাসতেই বলল
– আহারে।
ছবি তো তেমন তোলা হয়না। যা আছে তার মধ্যে থেকেই দিচ্ছি।
ফেসবুকে আসো।
– হুম।
ইনবক্সে কয়েকটি ছবি সেন্ড করে মেসেজ দিলো
– এখন আমি ঘুমাই।
– যাও ঘুমাও।
হেমলতা নেট কানেকশন অফ করে ঘুমাতে চেষ্টা করলো। একবার ঘুম ভাঙলে তার আর ঘুম আসেনা। ছবি চাওয়ার কারণ টা তো জাদিদ বলল। কিন্তু তাকে দেখতে কেন মন চাবে তার?
সেদিন যখন ও আমার চুল বেধে দিচ্ছিলো তখন ওর চোখে অন্য কিছু খেলা করতে দেখেছি।
যেভাবে আমাকে দেখছিলো তাতে তো অন্যকিছু বোঝাচ্ছে। কিন্তু কী বোঝাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না। এই প্রথম কোনো পুরুষের চোখে তার জন্য কিছু একটা দেখেছে। সে কি আমায়?
প্রশ্নটা করেই হেমলতা তাচ্ছিল্য স্বরে নিজেকেই বলল
– নাহ হতে পারেনা। ওর সম পর্যায়ের আমি না। ফ্রেন্ড হিসেবে নিয়েছে বলেই কি…….
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও বুঝতে পারেনি।
ছবিগুলো দেখতে তার ভালোই লাগছে। এই প্রথম সে হেমলতাকে সাজা অবস্থায় দেখলো। সাজার ধরনে মনে হচ্ছে কোনো বিয়েবাড়ি তে দাওয়াতের সময় তোলা ছবি।
গাঢ় জাম রঙের শাড়ি পড়া, চোখে কাজল, জাম রঙের লিপস্টিক, চুল ছাড়া। দুইহাতে অনেক চুড়ি। সব মিলিয়ে হেমলতাকে তার অসম্ভব সুন্দরী লাগছে। আসলে যারা সবসময় খুব সাধারণ ভাবে থাকে তারা সাজলে অসম্ভব সুন্দরী লাগে।
জাদিদ শাড়ী পড়া ছবিটা দেখছে। হেমলতাকে কেউ সাজিয়ে দিয়েছে। ও তো চুল বেণী ছাড়া কিছুই পারেনা আর এভাবে সাজা তো অসম্ভব।
কেশবতী কেশ এলিয়ে দিয়ে এখন বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। কথাগুলো নিজে নিজেই উচ্চারণ করছে।
সে যে প্রেমে পড়তে পারে এটা ওকে যারা চিনে তারা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না।
প্রত্যেকটা মানুষ জীবনে একবার হলেও প্রেমে পড়ে।
জাদিদ বই গুছিয়ে রেখে ঘুমাতে গেলো। স্বপ্ন তাকে তাড়া করে ফিরছে। স্বপ্ন টা তাকে সুখী করছে। কিন্তু একবারের জন্যেও তার মাথায় আসছে না যে হেমলতা তার নাও হতে পারে। ছোটবেলা থেকে সে যা চেয়েছে তাই পেয়ে এসেছে। সে বুঝতে পেরেছিলো তার মা বাবা কখনো আর একসাথে থাকবে না। তাই সে কখনো সেটা চায়নি।
পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে হেমলতাকে মেসেজ দিলো
– all the best
হেমলতা মেসেজের রিপ্লে দিলো
– all the best

তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ আর বাকি খালি ব্যবহারিক পরীক্ষা। ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হলেই জাদিদ ঢাকা চলে যাবে। তার বাবা ঢাকার কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে রেখেছেন।
হেমলতার ফরিদপুর ছেড়ে কোথাও যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নাই। কারণ তার নানী অনেক অসুস্থ। তার খুব ইচ্ছে ছিলো নাত্মীকে বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন কিন্তু শরীর এতো খারাপ যে তার এখন বৃদ্ধ বয়সের শেষ সম্বলকে দূরে পাঠাতে মন মানছে না।
নানীর এই অবস্থা দেখে সেও ফরিদপুর এর বাইরে না যাওয়ার চিন্তা করেছে।
জাদিদ এই কথা শোনার পর বলেছে
– তুমি তোমার নানীর কাছেই থাকো। ফরিদপুরেও তো সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ার কলেজ আছে তারপর রাজেন্দ্র কলেজ আছে।
– আমার মেডিকেল কলেজে পড়ার ইচ্ছা নাই। কাটা ছেঁড়া ভয় লাগে।
– ইঞ্জিনিয়ার কলেজে পড়বা
– নাহ আমার অনার্স করার ইচ্ছা।
– হ্যা খারাপ কী? রাজেন্দ্রতে তো পিওর সাইন্সের সাবজেক্ট আছে।
– আমার বাংলা নিয়ে পড়ার ইচ্ছা। খুব সহজ সাবজেক্ট। বেশি পড়া লাগবে না।
– শুনো বাংলা সহজ না। ছন্দ, মুক্ত অক্ষর উপন্যাসের ব্যাখ্যা পড়তে পড়তে বুঝবা।
– হইছে ভয় দেখানো লাগবে না।
– আমি ভয় দেখাচ্ছি না। সত্যি টা বললাম। তুমি যদি পারো আমার কী?
– হ্যা তাই তো।
ব্যবহারিক পরীক্ষা রসায়ন বাদে সবগুলো ভালোই হয়েছে হেমলতার। রসায়ন প্রথম পত্র ব্যবহারিক পরীক্ষায় লবণ দেয়া হয়। সনাক্ত করার জন্য। রঙিন লবণ সনাক্ত করা সহজ। আর ইন্টারমিডিয়েট এ একটাই লবণ দেয়া হয়। কিন্তু হেমলতার কপালে পরলো সাদা লবণ। সাদা লবণ সনাক্ত করা কঠিন। কারণ এতে সবগুলো গ্রুপ টেস্ট করতে হয়। সে বিশাল ঝামেলা। যারা পারে তাদের কাছে কম ঝামেলার। কিন্তু হেমলতা এতদিন ফাঁকিবাজি করে এসেছে। আর এখন তো তার ঠ্যালা বুঝছে। খাবার লবণও তো সাদা হয়। তাই হেমলতা ভাবলো খেয়ে দেখতে পারে। অল্প একটু লবণ জিহ্বায় দিয়ে বুঝতে পারলো এটা খাবার লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড।
ল্যাবরেটরি এর লবণ। শত শত স্টুডেন্ট পরীক্ষা দিয়েছে। লবণে যে ময়লা ছিলো আর সেটা যে ক্ষতি করতে পারে এটা হেমলতার মাথায় আসেনি। সোডিয়াম ক্লোরাইড এর সাথে যে লেড লবণ মিশ্রিত ছিলো সেটা কারো জানা ছিলো না। আর এটা ভুলবশত হেমলতাকে দেয়া হয়েছে। লেড লবণ গুলো সাধারণত বিষাক্ত হয়।

চলবে…..!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ৯.

0
ডুমুরের ফুল ৯.
ডুমুরের ফুল ৯.

ডুমুরের ফুল
৯.
ঘুম ভেঙে গেলো জাদিদের। ঘুমের সাথে সাথে স্বপ্নও ভেঙে গেলো। এতো সুন্দর স্বপ্ন ভেঙে গেলো আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার নাই।
জাদিদ ফোন ওপেন করলো সময় দেখার জন্য।স্বপ্নে এই প্রথম সে কোনো মেয়েকে দেখলো। তার মাকেও সে কখনো দেখেনি। একটা চাপা অভিমান আছে তার মা বাবার প্রতি।
হেমলতাকে তার ভালো লাগে। তবে ফ্রেন্ড হিসাবে। কিন্তু আজকে সন্ধ্যায় কী যে হলো। মেয়েটাকে কখনো সে এভাবে হাসতে দেখেনি। চোখ সরাতেই পারছিলো না সে।
রাত ৩ টা বাজে।
জাদিদ হেমলতার নাম্বারে কল করলো। বাজার সাথে সাথেই রিসিভ করলো হেমলতা।
এতো রাতে জাদিদের কল আসাটা তার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তাই সে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে শুরু করলো।
জাদিদের কথা বলতে কেমন যেন লাগছিলো। হুট করে তার মাঝে যে পরিবর্তন এসেছে সেটাই মূলত দায়ী। তারপরও ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
– কী করো?
হেমলতা ঘুমাতে যাবে আর তখনি জাদিদের কল আসছে। তার ঘুম আসেনি কিন্তু পড়তে মন বসছিলো না। তাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমানোর জন্য অপেক্ষা করতে যাবে আর জাদিদের কল।
হেমলতা বলল
– কিছুই না। তুমি কী করো?
– আমি শুয়ে আছি।
– ঘুমাও তাহলে।
– কেবল ঘুম থেকে উঠলাম। আর কতো ঘুমাবো?
– তাহলে পড়ো।
– পড়া নাম নিও না তো।
– ভালো স্টুডেন্ট পড়া লাগে না। বুঝি তো।
– ভালো স্টুডেন্ট?
জাদিদ হাসলো।
হাসির কারণ বুঝতে না পেরে বলল
– হাসার কিছু বলছি আমি?
– আমি ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না।
– হইছে মিথ্যা বলা লাগবেনা।
– মিথ্যা না রে হেম সত্যি।
– বুঝলাম ভালো স্টুডেন্ট ছিলা না তাহলে এখন ভালো হলে কীভাবে?
– মা – বাবার ডিভোর্স এর পর আমি পুরোপুরিভাবে একা হয়ে যাই।ছোটবেলা থেকে আমার খেলার একমাত্র সংগী ছিলো মা। মা চলে গেলেন। বাবা তো মাত্র ১ মাস থাকেন আমার সাথে। কষ্ট টা ভুলে থাকার জন্য সারাদিন রাত বইতে ডুবে বসে থাকতাম। এক বইকে ৪-৫ বার করে পড়তাম। খবরেরকাগজ, ম্যাগাজিন সবকিছু পড়তাম। পড়তে পড়তে হয়ে গেলাম।
– টিভি দেখলেই তো পারতা।
– টিভি তে গান বা মুভিতে বা নাটকে পরিবার দেখাতো। বাচ্চাদের দেখাতো তাদের মা বাবা তো একসাথে থাকে কিন্তু…
জাদিদ আর বলতে পারলো না।
হেমলতা বুঝতে পেরে বলল
– আচ্ছা থাক আমি বুঝেছি। আর বলতে হবে না।
– না না আমি বলবো। তোমাকে শুনতে হবে।
– আমি শুনতে রাজি আছি। কিন্তু তুমি তো কষ্ট পাচ্ছো!
– মনের কষ্টগুলো কখনো কাউকে বলিনি। ফ্রেন্ডশিপ করিনি। কারন তাদের গল্পে মা বাবার কথা থাকে। আমার তো গল্প করার মতো তেমন কোনো কিছু নাই। মা বাবার কথা মনে পড়ে। নিজেকে ভালো রাখার জন্য আমি ফ্রেন্ড ছাড়া। জুবায়ের এর সাথে বলা আছে আমার মা বাবা পরিবার নিয়ে কোনো কথা যেন না বলে আমার সামনে।
– দেখো আমারো তো মা নেই। আমি কী…..
জাদিদ হেমলতার কথার মধ্যে কথা বলে উঠলো
– শুনো তোমার মা মারা গেছেন। আমার মা মারা যাননি। দুজন নিজের ইচ্ছা, ভালো থাকা টাকেই প্রাধান্য দিলো। আমার কথা কেউ ভাবলো না।
জাদিদ যে রেগে গেছে সেটা হেমলতা বুঝতে পেরেছে। রাগ ভাঙানোর উপায় তার জানা নেই। কী করবে বুঝতে পারছিলো না।
– এইজন্যই আমাকে তুমি ফ্রেন্ড হিসাবে বেছে নিয়েছো?
– অনেক কারণ আছে। একটা না হাজারটা কারণ আছে। যার বর্ণনা করা সম্ভব না।
– আচ্ছা হইছে এখন এগুলা বাদ দাও তো। এই ধরনের কথা আবার বললে আমি কিন্তু….
– কিন্তু কী? কথা বলবা না আর?
– আরে না মার কথা মনে পড়ে যাবে আর
– কি? কান্নাকাটি করবা?
কথাটা বলেই জাদিদ হাসতে শুরু করলো। হাসি থামিয়ে বলল
– তোমরা মেয়েরা খালি পারো কান্নাকাটি করতে।
হেমলতা হাসতে হাসতে বলল
– তোমরা তো সেটাও পারো না।
– আমরা এতো সহজে চোখের পানি ফেলি না।
– ভালো তো। পড়াশোনা কিছু করছো নাকি?
– ইনশাআল্লাহ সকাল থেকে শুরু করবো। জানো আমি স্বপ্ন দেখেছি।
– এমনভাবে বলছো যেন স্বপ্ন মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার মতো ব্যাপার।
– স্বপ্ন টা শুনলেই বুঝবা সেটা কোন গ্রহে যাওয়ার মতো ব্যাপার।
– তাহলে শোনায়। শুনি।
জাদিদ পুরো স্বপ্নটা নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করলো।
কিন্তু কাকে সে দেখেছে সেটা হেমলতাকে বলল না।
হেমলতা একটু মজা করে বলল
– মেয়েটা কে?
– পরে বলবো।
– তুমি যা বললা তার সারমর্ম এটাই যে তুমি মেয়েটার প্রেমে পড়েছো।
– এটাই প্রেম?
– তাছাড়া খামোখা কেন একটা মেয়ের পিছনে এভাবে দৌড়াবা?
– ছিনতাই কারীর পিছনেও তো দৌড়ানো লাগে তাই বলে কী?
– খালি প্যাঁচাও কেন?
– তোমার লজিক টা আসলে অতো শক্ত না তাই প্রশ্ন টা করলাম।
– অতো লজিক আমি বলতে পারবো না।
– তাহলে সত্যি আমি প্রেমে পড়েছি?
– হ্যা।
– আহা! স্বপ্ন কী জিনিষ? সে কেন আমার স্বপ্নে আসলো? আমার সামনে আসুক।
– আহারে! একটু সবুর করো।
জাদিদের মন চাচ্ছিলো এখনি বলে দিতে। কিন্তু ও যদি মাইন্ড করে বসে? কথা না বলে তাহলে পরীক্ষা খুব খারাপ হবে। পরীক্ষা শেষ হলে বলবো।
হেমলতা যখন প্রথম এই ছেলেকে দেখেছিলো তখনি তার খুব মনে ধরেছিলো। ভালোলাগা টা তো প্রথম দেখাতেই শুরু হয়েছে। কিন্তু এতো ভালো স্টুডেন্ট, এতো সুন্দর ছেলে ওকে কীভাবে ভালবাসবে? ফ্রেন্ড হিসাবে চেয়েছে বলেই যে সে ওকে ভালবাসবে এমন কোনো আশা সে খুঁজে পায়নি।
কথা বলতে বলতে কখন যে হেমলতা ঘুমিয়ে গেছে জাদিদ বুঝতে পারেনি। ও এক নাগাড়ে কথা বলে যখন থামলো তখন বুঝতে পারলো হেমলতা ঘুমুচ্ছে। তা না হলে সে এতক্ষণ ধরে কথা বলছিলো আর হেমলতা চুপ করে আছে সেটা তো সম্ভব না। এমনিতে জাদিদ বেশি কথা বলেনা। কিন্তু হেমলতার সাথে সে প্রচুর কথা বলে। দাদীর সাথে তো সে ঠ্যাকায় না পড়লে কথা বলেনা। যতক্ষণ সে বাসায় থাকে ততক্ষণ দরজা বন্ধ করে সে বসে থাকে বা ঘুমায় বা পড়ে। তিনবেলা খাওয়া আর বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয়না। কিন্তু দাদীর সাথে যদি কোনো কারণে কথা বলতেই হয় তাহলে খুব হাসিহাসি মুখ করে রসিকতা করে কথা বলে। মা – বাবার ডিভোর্স এর সব থেকে বড় কারণ এই বৃদ্ধা। এটা সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। হেমলতাকে তার এই রুম এই বাসার ছাদ দেখানোর ইচ্ছা ছিলো কিন্তু দাদীর জন্য সে বাদ দিয়েছে। হেমলতাকে দেখলে সে তার ছেলের বউ বানানোর চেষ্টায় লেগে যাবে। এই কারণে এই বাসায় কোনো মেয়ে আসে না।
সে তার ছেলেকে এখনো যুবক ভাবে।
জাদিদ ফোন রেখে দিয়ে পড়তে বসলো।
হেমলতার একটা ছবিও তার কাছে নাই। ফেসবুকে হেমলতার কোনো ছবি নাই।
পরীক্ষা শুরুর আগেরদিন জাদিদের বাবা আসলেন। ছেলের এতো বড় পরীক্ষা আর সে আসবে না কেমন হয়?
এবার সে ছুটি একটু বেশি নিয়েছে। ছেলের সব পরীক্ষায় সে যাবে।
পরীক্ষার আগের রাতে হেমলতা জাদিদকে ফোন করলো। জাদিদ ফোন রিসিভ করে বলল
– পরীক্ষার আগের রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে হয়।
– হেহ! তোমার পরীক্ষা নাই?
– আছে।
– তাহলে তুমি ঘুমাও নাই ক্যান?
– আমি লাস্ট রিভিশন দিচ্ছি। ১০ মিনিটেই ঘুমাতে যাবো।
– তাহলে তো ডিস্টার্ব করলাম।
– আরেনা। আমার বোরিং লাগছিলো। ফেসবুকেও যেতে মন চাচ্ছেনা। আর তোমাকে যে ফোন দিবো দেখা গেলো তুমি ঘুমুচ্ছো।
– হইছে হইছে বুঝছি কালকে পরীক্ষার হলে ফাটিয়ে দিবে তুমি!
– পরীক্ষার হল কোনো টাকবেল না যে ফাটাবো।
হেমলতা হাসতে শুরু করলো।কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলল
– তোমার পাশে সিট পরলে ভালো হতো।
– আমি পরীক্ষার হলে কাউকে একটা কমা পর্যন্ত দেখাই না। তুমি আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড তারপরও আমি দেখাবো না।
হেমলতা বলল
– আর এই কারণে আমাকে পড়ায় এতো সাহায্য করেছো?
– শুনো তুমি সারদায় পড়ো আর আমি রাজেন্দ্রে। এই দুই কলেজের সিট একসাথে জীবনেও পরবে না। ওই আশায় পানি ঢাইলা দাও।
– থাক থাক বুজছি। এখন আমি ঘুমাবে। তবে আমার সিট কিন্তু রাজেন্দ্রেই পরছে।
– ভালো হইছে বুঝবা গার্ড কাহাকে বলে।
– শুনো সারদা গার্ডে সেরা ফরিদপুর এ। একজন শিক্ষকই যথেষ্ট ৫০-৬০ জন স্টুডেন্ট কে টাইট দেয়ার জন্যে।
– উফ আল্লাহ এর রহমত সিট পরেছে ইয়াসিন কলেজে। তবে এটাও কম না।
হেমলতা হাম ছাড়তে ছাড়তে বলল
– আচ্ছা রাখি। ঘুমাবো আমি।
– আচ্ছা ঘুমাও। শুভ রাত্রি
– good night.

চলবে….!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ৮.

0

ডুমুরের ফুল

৮.
জাদিদের এক পলকে তাকিয়ে থাকাটা হেমলতা খেয়াল করেনি। সে ব্যস্ত ছিলো অন্য জগতে। জাদিদ হেমলতার চুল গুলো হাতের মুঠো দিয়ে ধরে বলল
– কাকরা বা অন্যকিছু আছে?
– ছিলো কিন্তু আন্টি চুল বাধার সময় কোথায় যেন রাখছে। আসার সময় তো মনেও ছিলো না।
– হুম।
তারপর জাদিদ চুলে গিট মেরে দিয়ে বলল
– এতো বড় মেয়ে কিছুই পারো না?
– না, তা তো দেখছোই।
একজন ছেলে যে তার চুল বেধে দিয়েছে তাতে তার কিছুই মনে হচ্ছে না। বরং তার মনে হচ্ছে এটা স্বাভাবিক।
দুজনের মাঝে হঠাৎ অনেক বড় পরিবর্তন হয়ে গেলো কিন্তু দুজনের কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না।
রিক্সা রেল লাইন পার হওয়ার সাথে সাথেই হেমলতা বলল
– এখানে নামিয়ে দিলে ভালো হয়। নানী যদি দেখেন আমি কোনো ছেলের সাথে রিক্সায় একসাথে এসেছি। তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে।
– কিন্তু আমরা তো ফ্রেন্ড তাই না?
– হ্যা কিন্তু সে তো বুঝবে না।
জাদিদ কিছুক্ষণ চুপ রইলো তারপর বলল
– আচ্ছা নামো।
তারপর রিক্সাওয়ালা কে বলল
– মামা এখানে একটু রাখেন।
রিক্সা থামানোর সাথে সাথেই হেমলতা নেমে গেলো।
কিছু না বলেই হেমলতা তার বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করলো।
জাদিদ একদৃষ্টিতে হেমলতার চলে যাওয়া দেখছিলো।
রিক্সাওয়ালা মামা বলল
– ভাইগ্না গাড়ি স্টার্ট দিমু?
প্রশ্ন শুনে জাদিদের সৎবিত ফিরে এলো।
– হ্যা মামা দেন।

হেমলতা বাসায় ঢোকার সময় একজন ব্যাগ হাতে ভদ্রলোক বের হলেন।
হেমলতাকে ঢুকতে দেখে লাইলী বানু দৌড়ে এসে বলল
– তোর নানীর শরীর ভালো না। এতক্ষণ কই ছিলি?
– ডাক্তার ডাকা হয়েছে?
– হ, কেবল গেলো।
– কী বলেছে?
– আমি তো জানি না। আমাকে বলে নাই। তোর নানী জানে।
হেমলতা নানীর রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।
মিসেস জয়নব চোখ বুজে আধশোয়া অবস্থায় ছিলেন। নাত্মীর আসাতে সে চোখ খুললো।
হেমলতা বলল
– কী হয়েছে?
– আরে তেমন কিছু না।
– মেডিসিন দিয়েছে?
– তা তো দিছেই।
– আমি এখন চা খাবো। তুমি খাবা?
– দে তবে কড়া লিকার হালকা মিষ্টি।
– আচ্ছা।
হেমলতা নিজ হাতে চা বানিয়ে নানীর রুমে নিয়ে এলো।
দুজনে চুপচাপ চা খেলো। হেমলতা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রুম থেকে যাবার সময় বলল
– রেস্ট নাও তুমি। যা লাগবে আমাকে বা লাইলী আপা কে বলবে।
মিসেস জয়নব চোখ বুজে মুচকি হেসে বলল
– আচ্ছা।
হেমলতা পড়তে বসলো।
জাদিদ বাসায় গিয়ে রুম এ গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
ঘুমের ঘোরে একটা অচেতন ভাব রয়ে গেলো।
জাদিদ অনেকদিন পর স্বপ্ন দেখছে। সে নিজেও বুঝতে পারছে স্বপ্ন দেখছে সে। স্বপ্নের মাঝে মনে হচ্ছে তার – সে মাটির রাস্তায় হাঁটছে। চারপাশে প্রচুর গাছপালা। রাস্তার সাথে ঝোপের মতো ছোট ছোট গাছ। তাতে বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটে আছে। স্বপ্ন তো সাদাকালো হয়। কিন্তু সে স্পষ্ট দেখছে যে ফুল গুলো রঙিন। সে আশেপাশে দেখছে। এতো সুন্দর পরিবেশ তার জীবনে প্রথম দেখলো। পাখির কলকাকলি কানে আসছে তার। কোনো একটা ছন্দ আছে তাতে। কিছুক্ষণ এভাবে হাঁটার পর তার কানে ঝুমুরের আওয়াজ আসলো। আওয়াজ টা তার পাশের ঘন গাছপালার ভেতর থেকে আসছে।
ঝুমুরের আওয়াজ এর আগেও সে শুনেছে। তাই আওয়াজটা যে ঝুমুরের সে সহজে বুঝতে পেরেছে।
ক্রমেই আওয়াজ টা তীব্র হচ্ছে। কিন্তু শব্দের তীব্রতা তাকে পীড়া দিচ্ছে না। কেন যেন তার শুনতে ইচ্ছে করছে। হুট করেই শব্দের তীব্রতা কমতে শুরু করলো। ওর মনে হলো ঝুমুরের আওয়াজটা দূরে চলে যাচ্ছে।
যেদিক দিয়ে আওয়াজটা ভেসে আসছে জাদিদ সেদিকে দৌড়াতে শুরু করলো। তার এই শব্দের উৎস টা দেখতে হবে। জানতে হবে। কে ঝুমুর পায়ে হাঁটছে? নাকি কেউ না? নাকি ওর ভ্রম? প্রশ্নগুলো জাদিদকে ভাবাচ্ছে এবং সে আবিষ্কার করলো বিন্দু বিন্দু ঘাম তার কপালে জমা হচ্ছে।
ক্রমশ শব্দ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। সে কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর তার থেকে বেশ দূরে সাদা ছায়া দেখা যাচ্ছে। ঝুমুরের আওয়াজ আর কানে আসছে না। ছায়াটা স্থির হয়ে আছে।জাদিদ আরো দ্রুত দৌড়াতে শুরু করলো।
ছায়াটার কাছাকাছি এসে সে বুঝতে পাড়লো দীর্ঘ কেশ নিয়ে সাদা শাড়িতে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। তার পায়ে ঝুমুর। পিছন থেকে তাকে এতো আকর্ষণীয় লাগছে যে ফেস দেখার জন্য জাদিদ উন্মাদের মতো কেউ একজনের হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিলো।
চেনা হাতের স্পর্শ, চেনা ফেস সেই চেনা মানুষ টা তাকে এতদূর টেনে এনেছে। জাদিদ অবাক হয়ে গেলো একি এতো হেমলতা।
জাদিদের অবাক হওয়াতে হেমলতা অট্টহাসিতে মগ্ন হয়ে গেলো।
আজকে সন্ধ্যায় তো জাদিদ এই হাসির শব্দেই মুগ্ধ হয়েছিলো।
জাদিদ সাদা শাড়ীতে জড়ানো খোলা এলোকেশী এই মানবীকে দেখছে।
যেন সময় থমকে গেছে। এই সবুজে ঘেরা পরিবেশে প্রিয় মানুষ টার প্রিয় হাসিতে যেন ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে জাদিদের।
চলবে….!

#Maria_kabir