বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1179



ডুমুরের ফুল ৭.

0
ডুমুরের ফুল ৭.
ডুমুরের ফুল ৭.

ডুমুরের ফুল
৭.
হেমলতা বিষন্ন হাসি হেসে বলল
– তোমার তো মা জীবিত আছেন আর আমার তো….
হেমলতার হঠাৎ তার মৃতা মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো। মনে পড়ে যাওয়াতে সে আর কথা বলতে পারলো না। মনে হচ্ছে কে যেন তার গলায় অনেক ভার চাপিয়ে দিয়েছে।
জাদিদ বুঝতে পারছে যে মায়ের কথা হেমলতার খুব মনে পড়েছে। হেমলতাকে কখনো সে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করেনি। জুবায়ের এর কাছ থেকে হেমলতার সম্পর্কিত সকল বিষয় জাদিদ জেনে নিয়েছিলো। জাদিদ এমন একজন ফ্রেন্ড চেয়েছিলো – যে ওর কষ্ট গুলো খুব সহজে বুঝতে পারবে। মুখ ফুটে তাকে কিছুই বলতে হবে না। যেমন আজকে জাদিদ শুধু ওর মা বাবার ডিভোর্স এর কথা বলেছে তাতেই হেমলতা বুঝতে পেরেছে জাদিদের ভিতরের কষ্টটা।
ওর মতোই মা – বাবা ছাড়া একজনকে ফ্রেন্ড হিসাবে চেয়েছে এবং পেয়েছোও। কারণ জাদিদ নিজেও মা – বাবা ছাড়া। মা – বাবা থাকতেও নেই।
হেমলতারও তাই। মা তো মারাই গেছেন আর বাবা তো ছোট মার জন্য পারেন না।
একজন মা ছাড়া সন্তানই বুঝতে পারে মা না থাকার কষ্টটা। আর কেউই পারে না।
জাদিদ পরিস্থিতি হালকা করার জন্য বলল
– আচ্ছা তুমি চুল বেণী ছাড়া কিছুই কি করতে পারো না?
– নাহ। নানী বেণী ছাড়া কোনো স্টাইলের চুল বাঁধতে পারেন না। আর মা তো নেই।
মা মারার যাবার পর থেকে নানী তার জগত। মা মরা মেয়েটাকে মিসেস জয়নব আগলে রেখেছেন। মেয়ে যদি বখে না যায় তাই সহজে কারো সাথে মিশতে দেন না। এমনকি কোনো প্রকার ফ্যাশন করতে দেন না। আর হেমলতাও সব কিছু মেনে নিয়েছে। হয়তোবা নানী কষ্ট পাবে সেই কারণে।
জাদিদ বলল
– আরে ইউটিউব এ তো কতো প্রকার চুল বাধার ভিডিও পাওয়া যায়। তোমার একমাত্র ফ্রেন্ড মিম্মার কাছ থেকে তো শিখতে পারো।
– আসলে জাদিদ আমার না ভালো লাগেনা।
– চুল খোলা তো রাখতে পারো?
– লম্বা চুল তো নিয়ন্ত্রণ করা কষ্ট হয়ে যায়।

জাদিদের মা মাইমুনা ইফতি। ছেলেকে সে অনেক ভালবাসেন।
কিন্তু স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়াতে তার ডিভোর্স টা নিতে হলো। আজকে তার একমাত্র ছেলে তার হাতের রান্না খেতে চেয়েছে তাই সে অনেক কষ্টে রান্না করেছে। গ্রীসে তো সে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে খায়। একা মানুষের জন্য রান্না করাটা তার কাছে সময় নষ্ট বলে গণ্য।
ছেলের পছন্দের খাবার রান্না করে গোসল করে কেবল একটু শুয়েছিলো আর জাদিদ হাজির।
প্রায় ৫ বছর পর ছেলেকে দেখে সে আনন্দিত যেমন হয়েছেন ঠিক তেমনি কষ্টও পেয়েছেন।
ছেলেটাকে নিজের কাছে রাখতে পারলে ভালো হতো।
দুটো রুম, একটা বাথরুম, একটা বেলকুনি আর একটা কিচেন সহ এই ফ্ল্যাট টা সে ৩ দিনের জন্য বুকিং করেছেন। ছেলেটার সাথে অনেক সময় কাটাবে সে।
টেবিলে খাবার গোছাতে গোছাতে জাদিদের মা এগুলো ভাবছিলেন।
গোছানো শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ছেলেকে ডাকলেন
– জাদিদ বাবা আয়। তোর ফ্রেন্ড কেও আসতে বল।
– আসছি মা।
জাদিদ আর হেমলতা টেবিলের পাশে এসে চেয়ার টেনে বসলো।
জাদিদ টেবিলের খাবার দেখে মার দিকে তাকিয়ে বলল
– তোমার মনে আছে? আমার পছন্দের খাবারের কথা?
মাইমুনা ইফতি ছেলের পাশে চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বলল
– মা কখনো ভুলতে পারে?
জাদিদ আবদার করে বসলো
– মা তুমি খাইয়ে দাও।
– আচ্ছা, দিচ্ছি।
মাইমুনা ইফতি হেমলতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
– মা তুই হাত দিয়ে নিয়ে খা। যা যা লাগবে নিজের হাতে বেড়ে খা।
– জি।
হেমলতা একটা কাচের প্লেট নিলো।
টেবিলের খাবার দেখে নিলো এক পলকে। পোলাও চালের ভাত রান্না করেছে। ঘ্রাণ নাকে আসছে তাতেই সে বুঝতে পারছে। ঝোল তরকারীর অভাব। ইলিশ মাছ ভাজা, চিংড়িমাছ ভাজা, রুই মাছ ভাজা, পুটি মাছ ভাজা আর বেগুন ভাজা। জাদিদ মাছ ভাজা পছন্দ করে। আর মুরগির মাংস পাতলা ঝোল করেছে। আরেকটা যে কী রান্না করেছে সেটা হেমলতা বুঝতে পারেনি।
পোলাও চালের ভাত হেমলতা কোনোদিন খায়নি । তার খেতে কেমন যেন লাগছে।
হেমলতার অবস্থা দেখে মাইমুনা ইফতি নিজেই খাবার বেড়ে দিলেন। সব মাছ ভাজা প্লেটে তুলে দিলেন।
হেমলতার থুঁতনি ধরে বলল
– আমি খাইয়ে দেই?
হেমলতা মাথা নিচু করলো। সেই ৫ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছে। মায়ের হাতে খাবার খেতে কেমন লাগে সেটা তার মনে নেই। মাঝেমাঝে মার কথা খুব মনে পড়ে। তখন মায়ের কাপড় জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। মায়ের জামা কাপড় নানী না ধুয়ে রেখে দিয়েছেন তার জন্য। যাতে মায়ের জামা কাপড় থেকে গায়ের গন্ধটা তাকে মায়ের অভাব পূরণ করে।
মায়ের স্পর্শও তার মনে নেই।
চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।
সবার সামনে এভাবে কেঁদে ফেলাতে হেমলতা একটু লজ্জা পেল।
মাইমুনা ইফতি দুজনকে খাইয়ে দিলেন।
তারপর তিনি খেতে বসলেন।
খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর জাদিদ তার ব্যাগ মায়ের হাতে দিয়ে বলল
– আমার পুরাতন কাপড় চোপড় সব এখানে আছেন।
ব্যাগ হাতে নিয়ে মাইমুনা ইফতি বললেন
– আধোয়া তো?
– হুম।
আমি তোর জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় এনেছি।
তারপর একটা কালো রঙের লাগেজ পাশের রুম থেকে নিয়ে আসলেন।
হেমলতা সোফায় চুপচাপ বসে ছিলো।
হেমলতাকে বললেন
– তোর জন্য আমি কিছু এনেছি। তবে বাসায় গিয়ে দেখবি। ওকে?
হেমলতা শুষ্ক হাসি ঠোঁটের এক কোণায় এনে বলল
– জি।
তারপর মা ছেলে গল্প জুড়ে দিলেন। ছবি তুলল সবাই।
কয়েকটা ছবি খুব ভালো হয়েছে।
হেমলতার বেণী খুলে খুব সুন্দর করে বেধে দিলেন।
স্বন্ধ্যা হবে হবে এমন সময় জাদিদ ব্যস্ত হয়ে উঠলো বাসায় যাওয়ার জন্য। হেমলতারো আর থাকা সম্ভব না।
মাইমুনা ইফতি তাদের রিক্সায় উঠিয়ে দিলেন। আগামীকাল আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা আসলো।
এই প্রথম ওরা রিক্সায় এক সাথে উঠলো। হেমলতার অস্বস্তি লাগছিলো।
চুল কীভাবে যেন বেধে দিছে ও বুঝতে পারেনি। এখন মনে হচ্ছে খুলে যাবে যেকোনো সময়।
হেমলতা কাপড় চোপড় ওড়ণা ঠিক করতে গিয়েই চুল খুলে গেলো। এতো লম্বা চুল সে কীভাবে কী করবে বুঝতে পারছিলো। এর উপর আবার জোড়ে বাতাস শুরু হলো।
চুল এলোমেলো ভাবে উড়তে শুরু করলো। কপালে ছোট ছোট চুল গুলো উড়ছিলো। তাতে ওর সুড়সুড়ি লাগছিলো।
মনের অজান্তেই হেমলতা হাসতে শুরু করলো। অট্টহাসিতে সে মগ্ন।
জাদিদ এতক্ষণ ধরে রাস্তার লোকজন, গাড়ি দেখছিলো।
অট্টহাসির আওয়াজে সে হেমলতার দিকে তাকালো।
হেমলতার মুখের উপরে, কপালে চুল গুলো এলোমেলো ভাবে খেলে যাচ্ছে।
বাতাসের গতি বৃদ্ধিতে চুলগুলো উড়ে জাদিদের মুখের উপর এসে খুব মিষ্টি একটা গন্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
তার সাথের এই মেয়েটি যে এতো সুন্দর করে হাসতে পারে তার জানা ছিলো না।
হাসির শব্দে, চুলের মিষ্টি গন্ধে চিরচেনা হেমলতাকে তার অচেনা লাগছে।
গোধূলি লগ্নের রক্তিম আভায় এই হেমলতাকে খুব রহস্যময়ী লাগছে।

চলবে….!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ৬.

0
ডুমুরের ফুল ৬.
ডুমুরের ফুল ৬.

ডুমুরের ফুল
৬.
হেমলতা ফোন রেখে দিয়ে আবার পড়ায় মন দিলো। ১২ টায় গোসল করে জোহরের নামাজ পড়ে নিলো।
মিসেস জয়নব বিবির আজকাল শরীর টা ভালো না। এই পর্যন্ত ছোটখাটো রোগ ছাড়া তেমন কোনো রোগ হয়নি। মৃতা মেয়ের কথা খুব মনে পড়ে তার।
মনোজও আজকাল তেমন একটা আসতে পারেনা মেয়েকে দেখতে। তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী হেমলতার সাথে যোগাযোগ করাটা পছন্দ করেনা। ঝগড়া ঝাটি করে দুই কন্যা এক ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়।
মিসেস জয়নব বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় গল্পের বই পড়ছিলেন। হেমলতা নানীর রুমের সামনে এসে দাঁড়াতে রুমের ভেতর থেকে মিসস জয়নব ডাকলেন
– আয়, ভিতরে আয়!
হেমলতা নানীর বিছানার কাছে চেয়ার টেনে বসলো। তারপর বলল
– নানী
– হুম বল
– দুপুর ৩ টায় একটু বাইরে কাজ আছে।
– স্যারদের কাছে তো পড়া শেষ? তাহলে বাইরে ক্যান যাবি?
– পরীক্ষা বেশিদিন নাই। পরীক্ষার পর সবাই কোচিং করতে ঢাকা চলে যাবে। দেখা না হইতেও পারে। তাই আর কী আজকে দেখা করতে চাচ্ছিলাম।
– ওহ। যাবি তো যা। কিন্তু সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে আসবি।
– আচ্ছা।
– টাকা আছে? নাকি লাগবে?
– যা আছে তাতে হবেনা।
মিসেস জয়নব তার বালিশের নিচ থেকে ছোট্ট ব্যাগ বের করলেন।চকচকা ৫০০ টাকার নোট হাতে দিয়ে বলল
– আরো লাগবে?
– নাহ। এতেই হবে।
– যাওয়ার সময় দেখা করে যাস।
– হুম।
– আর শোন। এখানে খাবি নাকি ফ্রেন্ডদের সাথে?
– ফ্রেন্ডদের সাথে।
কথাটা বলেই হেমলতা নিজের রুমের দিকে এগোলো।
সত্যি তো জাদিদ তো খাওয়ার কথা কিছু বলেনি! টাকা তো আমার কাছে আছেই।
হেমলতার ছোটবেলা থেকেই টাকা জমানোর অভ্যাস। তার নিজের কাছে যা আছে তাতে হয়ে যাবে কোনো রেস্টুরেন্টের খাবার বিল।
অনেক কষ্টে একটা রিক্সা পেয়েছে হেমলতা তাও চড়া ভাড়ায়। হাতের ঘড়িতে সময় দেখে নিলো হেমলতা
-২.৪৫ বাজে।
বায়তুল আমান থেকে র‍্যাফেলস বেশ দূরে।হাজী শরিয়তউল্লাহ বাজার, র‍্যাফেলস, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ফরিদপুর শাখা,ওয়ালটন এর কাস্টমার কেয়ার, টেলিটক এর অফিস আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ অফিস এখানে এক সাথে জড়সড় হয়ে আছে।
র‍্যাফেলস এর সামনে রিক্সা এসে থামলো। ভাড়া দিয়ে একটু এগিয়ে র‍্যাফেলস এর মেইন গেটের সামনে দাঁড়ালো। ২.৫৭ বাজে কিন্তু জাদিদ এখনো আসেনি।
হেমলতা কী করবে বুঝতে পারছিলো না। জাদিদকে ফোন করলো। রিসিভ হলো
– কই তুমি?
– এইতো মাত্র ১ মিনিট।
হেমলতা কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেলো।
জাদিদের বাসায় পানি ছিলো না। ট্যাংকিতে কী যেন সমস্যা হয়েছে। পানি সাপ্লাই হচ্ছেনা। মিস্ত্রী এনেছিলো কিন্তু কোনো কাজতো হয়নাই উল্টো বিগড়ে দিয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে জুবিলী ট্যাংকের পুকুরে গোসল করেছে। কিছু আধোয়া কাপড় চোপড় নেয়ার ছিলো। সবকিছু করতে গিয়ে তার একটু লেট হয়ে গেলো।
জাদিদের মনে হচ্ছিলো যদি ও আলোর বেগে ছুটতে পারতো? তাহলে ন্যানোসেকেন্ড সময় লাগতো পৌঁছাতে।
রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো হেমলতা দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা এমন কেন? একটু সাজগোছ তো করতে পারে? এই বয়সের মেয়েরা কতো সুন্দর ভাবে সেজে থাকে।অন্তত চোখে কাজল তো দিতে পারে। আর কোনোদিন খোলা চুলে এই মেয়েকে দেখলাম না। সবসময় বেণী
।তাও ভালো বাচ্চাদের মতো দুটো বেণী করে না। একটাই করে। আর এতো কালো চুল কীভাবে হয়?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে জাদিদ হেমলতার দিকে এগিয়ে আসলো।
হেমলতা জাদিদের দিকে তাকিয়ে দেখে অবাক। হাতে এতো বড় ব্যাগ কেন? আর স্যুট ব্লেজার এগুলা কেন পড়ছে?
হেমলতা কৌতূহল চেপে না রাখতে পেরে জাদিদকে প্রশ্ন করেই বসলো
– হাতে এতো বড় ব্যাগ কেন?
জাদিদ বুঝতে পেরেছে যে হেমলতা অবাক হয়েছে তার এই ব্যাগ আর পোশাকে। একটু চমকে দেয়া যাক।
দুষ্ট হাসি মুখে এনে বলল
– ব্যাগে আমার সব জামা কাপড় আর তোমার জন্য কিছু জামা কাপড় কিনে এনেছি।
– বুঝলাম তুমি কোথাও যাচ্ছো তাই তোমার কাপড় চোপড় কিন্তু আমার জন্য কেন জামা কাপড় এনেছো।
– হেমলতা একটু শান্ত হও। আমার কথা শুনো। আমি একা যাচ্ছি না। তুমিও সাথে যাচ্ছো। আর তোমাকে তো জামা কাপড় আনার কথা বলা যায় না। তাহলে তো তুমি আসবাই না।
– মানে কি?
হেমলতার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু কপাল ঘামছিলো। এই ছেলে বলে কি?
– মানে হচ্ছে যে হোটেলের ভিতরে কাজী সাহেব আর উকিল সাহেব বসে আছেন। তুমি শুধু ৩ বার কবুল বলবা। তারপর হোটেলে রুম বুকিং দেয়া আছে। তোমার আমার ফুলসজ্জা রাত…..
জাদিদ আর বলতে পারলো না। হেমলতা ওর কথার মাঝে কথা বলে উঠলো
– তুমি তো ভারি খারাপ ছেলে। ফ্রেন্ড ফ্রেন্ড বইলা এখন বিয়ে করার কথা বলছো?
– আরে আমি তো ভালো প্রস্তাব দিয়েছি। শুনো এমন উকিল এনেছি যে বান কি মুনের ক্ষমতাও হবে না আমাদের ডিভোর্স করানোর।
হেমলতা কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। এখান থেকে পালানো দরকার।
হেমলতা পিছন ঘুরে হাঁটতে শুরু করলো। জাদিদ হাত টেনে ধরে বলল
– আরে কই যাও।
– হাত ছাড়ো।
– আরে আমি তো মজা করছিলাম।
হেমলতা ভাবলো জাদিদ এখন মিথ্যা কথা বলছে। তাই ভাবলো তার এখান থেকে যেভাবে হোক পালাতে হবে।
– না মানে আমার তো শরীর ভালো লাগছে না তাই বাসায় যেতে হবে।
এই কথা শুনে জাদিদ হাসতে শুরু করলো। তারপর কোনো মতে হাসি চেপে বলল
– পাগল মেয়ে। আমি সত্যি মজা করেছি। তবে তোমার মতো মেয়েকে বউ হিসেবে পেলে জীবন রংগিলা হয়ে যাবে।
এখানে আসার উদ্দেশ্য ভিন্ন আর অতি সৎ উদ্দেশ্য ।
হেমলতা বিশ্বাস করতে পারছিলো না।
জাদিদ এক হাতে ব্যাগ আরেক হাতে হেমলতাকে টেনে নিয়ে র‍্যাফেলস এর ভিতরে ঢুকলো। হেমলতা বিশ্বাসও করতে পারছিলো না আবার অবিশ্বাসও করতে পারছিলো না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে যেতে হচ্ছে।
রিসিপশনে একজন মধ্যবয়সী নারী বসে ছিলেন। জাদিদ হেমলতাকে একটু দূরে দাড় করিয়ে রেখে রিসিপশনে গেলো।
হেমলতা দূর থেকে খেয়লা করলো জাদিদ হেসে হেসে কী কী যেন বলছে।
জাদিদকে হেমলতার দিকে আসতে দেখে হেমলতা চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নিলো।
তারপর জাদিদ হেমলতার হাত ধরে টেনে লিফটের দিকে নিয়ে গেলো।
হেমলতার অসস্তি লাগছিলো জাদিদের হাত ধরাতে।
– জাদিদ আমার হাত ছাড়ো।
– না। তুমি পিছন থেকে পলাবা।
– সত্যি আমি পলাবো না। বিশ্বাস করো।
– আরে হাত ধরলে কী এমন হয়। আর চুপ করো তো। বেশি কথা বলো।
তারপর মুচকি হেসে বলল
– হেম! আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারো।
জাদিদের চোখের দিকে তাকিয়ে হেমলতা কিছু না বলেই জাদিদের সাথে হাঁটতে শুরু করলো।
৩ তলাতে লিফট থামলো।
হেমলতা খেয়াল করলো এটা তো আবাসিক।
কিছু না বলেই জাদিদের পিছুপিছু চলতে শুরু করলো।
তারপর একটা রুমের সামনে এসে ওরা দাঁড়ালো।
জাদিদ কলিং বেল চাপলো। সাথে সাথেই দরজা খুলে গেলো।

হাসিহাসি মুখে একজন ৪০-৪৫ বছরের নারী দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচুর ফরশা, মাথা ভরা কালো লালচে চুল। এই বয়সেও তার চেহারায় মাধুর্য টা হারিয়ে যায়নি।
হেমলতা অবাক চোখে দেখছিলো যে মহিলার পরনে হালকা বাদামী রঙের গাউন। গায়ের রঙের সাথে পুরোপুরিভাবে মিশে গেছে। এক গাল হেসে জাদিদকে বলল
– my son ভিতরে এসো!
জাদিদ এখনো হেমলতার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।
হেমলতার দিকে তাকিয়ে বলল
– হেই বনলতা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? এসো ভিতরে এসো।
জাদিদ হেমলতার হাত ধরে টেনে রুমে ঢুকার সময় বলল
– মা! বনলতা না হেমলতা ওর নাম।
হেমলতা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মহিলার দিকে। সত্যি তো দুজনের চেহারা হুবহু এক।
জাদিদ হেমলতাকে বলল
– আরে বসো।
রুম টা বেশ বড়। এক কোণায় জানালার ধারে বেড। আর দক্ষিণের দেয়ালের সাথে মাঝারি আকারের সোফাসেট বসানো। হেমলতা ছোট সোফায় বসলো। জাদিদের মা হেমলতার থুঁতনি ধরে বলল
– মাশাআল্লাহ। নামের সাথে চেহারার মিল আছে বটে।
জাদিদ ওর মাকে বলল
– মা খিদে পেয়েছে। খাবো। আজকে তুমি খাইয়ে দিবে। সেই কবে খেয়েছিলাম মনেও নেই।
– একটু বোস বাবা। এই রুমের সাথে কিচেন আছে। আমি তোদের জন্য নিজ হাতে রান্না করেছি।
আমি টেবিলে খাবার সাজিয়ে ডাকছি তোদের।
– আচ্ছা।
হেমলতা কিছুই বুঝতে পারছিলো না। হতভম্ব অবস্থায় বসে ছিলো।
জাদিদ হেমলতার অবস্থা বুঝতে পারছে। তাই সে বলল
– আমার মা। গ্রীসে থাকেন।
– তোমার বাবা?
– আচ্ছা তোমাকে তো আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি?
– নাহ।
– আমি যখন ক্লাস ৫ এ পড়ি তখন মা – বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। রাগের মাথায় মা গ্রীসে চলে যান। আমাকে তার কাছে নেয়ার জন্য অনেক কাঠ কয়লা পুড়িয়েছেন কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। মাকে শেষ বার দেখেছিলাম যখন ক্লাস ৮ এ পড়ি।
তাছাড়া তো ভিডিও কলে কথা হয়।
কথাগুলো বলে জাদিদ একটু হাসতে চাইলো কিন্তু তা আর ঠিক হাসি বলা যায় না।
হেমলতা বুঝতে পারছিলো তার সামনে বসে থাকা ছেলেটার মাঝে চাপা কষ্ট জমে আছে। যা সে কখনো প্রকাশ করেনা।

চলবে…..!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ৫.

0

ডুমুরের ফুল
৫.
হেমলতা ক্যালকুলেটর আবার ব্যাগে রেখে দিলো।
বিকালবেলা কী করবে ভাবছিলো হেমলতা। মিম্মাকে জানানো দরকার। তবে মেসেজ বা সামনাসামনি জানাতে হবে। ফোনে বলতে গেলে নানী জেনে যাবেন।
ফেসবুকে মেসেজ করে দিয়ে চা বানানোর জন্য রান্নাঘরে গেলো।
চা নিজ হাতে বানিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ছাদে গেলো।
খোলা চুলে হালকা বাতাসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বেশ ভালোই লাগছে।
রাতে পড়তে বসলো। ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। অচেনা নাম্বার। রিসিভ করে হ্যালো বলতেই হেমলতা অবাক। আরে এতো জাদিদের কণ্ঠ মনে হচ্ছে।
– আচ্ছা। তোমার নামটা এতো সেকেলে টাইপের ক্যান?
– আপনার কোনো সমস্যা?
– অবশ্যই। এতো বড় নাম। ছোট কোনো নাম নাই?
– না।
– তুমি তো হিন্দু। তাই না?
– না।
– হেমলতা চৌধুরী। হিন্দু নামই তো।
– নাম হলেই কি সে হিন্দু হবে?
– না। সেটা না।
– আমার নাম্বার কোথায় পাইলেন?
– মিম্মার কাছ থেকে। রাগ কইরো না। আমি লাইন মারার জন্য তোমার পিছুপিছু ঘুরছি না। তুমি মেয়েটা অনেক ভালো। এমন একজন মেয়েকে আমি ফ্রেন্ড হিসেবে চাই।
-সত্যি তো?
– হ্যা ১০০% সত্যি।
– কিন্তু আমি কেন? মেয়ের কি অভাব?অনেক ভালো ভালো স্টুডেন্ট আছে। আমার মতো মেয়েকে কেন ফ্রেন্ড হিসাবে লাগবে?
– আসলেই মেয়েরা না সোজাসুজি কোনো কিছু বুঝতে চায় না। খালি সাত পাঁচ ভাবে।
– বিশ্বাস করো আমি ফ্রেন্ড ছাড়া কোনো কিছুই চাই না।
– করলাম। এখন ফোন রাখেন।
– আমরা সেম এজের।তাই তুমি করে বলাই বেটার।
– রাখি।
হেমলতা ফোন কেটে দিয়ে ভাবলো তার নিজেরো কোনো ছেলে ফ্রেন্ড নাই। পড়াশোনার ব্যাপারে তো ও অনেক সাহায্য করতে পারবে।
বাংলা বই নিয়ে বসলো। আগামীকাল বাংলা পরীক্ষা। খালি পরীক্ষা আর পরীক্ষা।
জাদিদ ফোন রেখে দিয়ে ভাবতে লাগলো জুবায়েরকে ধন্যবাদ দেয়া দরকার। জুবায়ের কে ফোন করলো। রিসিভ করলো
– হ্যালো
– হ্যালো। কি কথা হয়েছে?
– হুম। একসেপ্ট করছে!
– লাভ রিকুয়েস্ট?
– নাহ নাহ পাগল নাকি? ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট।
– তুই না আজব পাব্লিক। মানুষ এই বয়সে করে লাভ রিকুয়েস্ট আর তুই করলি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট।
– আমার জিএফ এর দরকার নাই। একজন ভালো মেয়ে ফ্রেন্ড এর দরকার।
– তা বুঝলাম। তুই আর মেয়ে পাইলি না? ভালো স্টুডেন্ট ছিলো তো। তাহলে পড়াশোনায় সাহায্য পাইতি।
তোর সম পর্যায়ের কাউকে….
-তুই বুঝবি না।
– এইসব মেয়ে ঘাড়ে চাইপা বসবে তখন বুঝবি।
– ও ঘাড়ে চাপার মেয়ে না। উল্টা আমি ওর ঘাড়ে চাপবো।
কথাটা বলেই হাসতে শুরু করলো। হাসতে হাসতে বলল
– একটা চরিত্রবান, ভালো স্বভাবের মেয়ে হাজারটা ব্রিলিয়ান্ট মেয়ের থেকে ভালো।
– কিন্তু…!
– আচ্ছা রাখি।
– ওকে।
ফোন রেখে দিয়ে জাদিদ ভাবতে লাগলো পড়তে হবে। পড়তে হবে।
দরজা কে যেন নক করছে।
চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজা খুলে দেখে তার দাদী হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
খাবারের প্লেট হাতে করে দাদী এসেছে। এর মানে বাবার বিয়ে মনে হয় ঠিক করে ফেলেছে। আমাকে পটানোর জন্য দাদী আমার পছন্দের খাবার এনেছে। এগুলো ভাবতে ভাবতে জাদিদ হেসে ফেলল তারপর বলল
– ভিতরে আসো দাদী।
বৃদ্ধা রুমে ঢুকে বিছানায় বসলেন। তারপর প্লেট রাখলেন।
প্লেটের উপরকার ঢাকনা সরিয়ে বলল
– দাদাভাই আয়। তোর পছন্দের সব পিঠা বানিয়েছি।
জাদিদ চুপচাপ বিছানায় বসে পিঠা খেতে শুরু করলো।
বৃদ্ধা বলতে শুরু করলেন
– তোর বাপের জন্য একটা মেয়ে দেখেছি। মানে সব ঠিকঠাক। তোর বাপ আসলেই হুজুর ডেকে নিকা করায় দিবো।
জাদিদ মাথা নেড়ে বলল
– হুম।
জাদিদ ভালোভাবেই জানে তার বাবা আর বিয়ে করবে না। বাবা এমন ভাবে বিয়ে ভাঙবে যে দাদী বুঝতেও পারবেনা।
প্লেট খালি হয়ে গেলো। প্লেট খালি দেখে বৃদ্ধা বললেন
– আরো পিঠা লাগবে?
– হুম
– বয়। আমি নিয়ে আসি।
জাদিদ আজকে বেশ আনন্দিত। পিঠা তার পছন্দের। বিশেষ করে পাটিসাপটা, আন্দোসা আর বড়া পিঠা। আজকে সবই দাদী করেছে।
প্রতিবছর বাবার বিয়ে উপলক্ষে অনেক খাওয়া দাওয়া তার হয়। এর মধ্যে পিঠা তার পছন্দ।
বাবা না আসা পর্যন্ত এভাবেই প্রতিদিন ভালো ভালো খাবার খাওয়া হবে জাদিদের।
এমনি দিনেও খাওয়া হয় কিন্তু সেগুলো বুয়ার হাতের তৈরি। স্বাদ না ছাই। দাদীর হাতের রান্নাকরা খাবার খুব স্বাদের।
হেমলতা পড়তে পড়তে আবারো টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছে। তার নানী অবশ্য দেখেছে যে সে ঘুমুচ্ছে টেবিলে কিন্তু ডাকেনি। কারণ একবার ঘুম ভাঙলে সারারাত আর ঘুমাতে পারবে না।
জাদিদের পড়ার নির্দিষ্ট কোনো টাইম টেবিল নাই। মন চাইলে সারারাত পড়লো আবার মন চাইলে সারারাত নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবে। ঘুমের ঘোরে ওর নাক আটকে যায়। বহুত ডাক্তার, কবিরাজ দেখানো হয়েছে কোনো লাভ হয়নি। বরংচ তিতা, বিচ্ছিরী স্বাদের ঔষধ খেয়ে পেটের বারোটা বাজাইছে।
ওর বাবা মোল্লা সাহেব একদিন ছেলের এতো কষ্ট দেখে কী মনে করে যেন নাকে সরিষার তেল দিয়ে দিলেন। সারারাত মোল্লা সাহেব ছেলের পাশে না ঘুমিয়ে জেগে ছিলেন। যদি সরিষার তেলের নেগেটিভ ইফেক্ট হয়ে জাদিদের কিছু হয়ে যায়!
কিন্তু কিছুই হয়নি। সারারাত শান্তিতে ঘুমিয়েছে। তখন থেকে জাদিদ নাকে খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে ঘুমায়।
রাত দুটোর সময় জাদিদের পড়তে পড়তে বোরিং লাগছিলো। হেমলতাকে ফোন দিলে কেমন হয়?
যেই ভাবা সেই কাজ। ফোন বাজছেই তো বাজছে।
হেমলতা ফোনের রিংটোন এ ঘুম ভাঙলো। ফোন রিসিভ করলো
– এতো রাতে কেউ ফোন দেয়?
– আমি দিলাম তো।
– কেন ফোন দিছো?
– এমনি ভাল লাগছিলো না তাই ।
– এখন পুরো রাত আর ঘুম আসবে না।
– কেন?
– আমার ঘুম ভাংলে আর ঘুম আসে না।
– তাহলে তো ভালো।
– এখন পড়তে বসো।
– নাহ।
– সেদিন দেখলাম একটা মাত্র গণিত পারছো। তাও ভাগ করতে পারছিলা না।
– আরে স্যার যেসব প্রশ্ন, গাণিতিক সমস্যা দেয় সেগুলা খুইজা পাইতেই তো ১ দিন চলে যায়। তার উপর আবার ১ টা তো সাবজেক্ট না। বাংলা আছে, ইংলিশ আছে, রসায়ন আছে, উদ্ভিদবিজ্ঞান….
– ফাঁকিবাজি কথাবার্তা!
– শুনো আমি তোমার মতো ভালো স্টুডেন্ট না। আমি কমার্স নিতে চাইছিলাম।
– নিলা না ক্যান?
– আরে জেএসসি এক্সাম দিয়ে বেড়াতে গেছিলাম। বেড়ানো থেকে আসতে দেরি হয়ে গেলো। এইদিকে বাবা আমার অনুপস্থিতিতে ভর্তি কমপ্লিট করে রেখেছিলেন। তিনিই আমাকে সাইন্স নিতে বাধ্য করলেন।
– ইন্টারে তো চেঞ্জ করতে পারতে?
– বাবা বুঝছো।
জাদিদ হাসতে শুরু করলো।
– হাসো হাসো। ফেল করলে তখন আরো হাসবা।
– ফেল করবা ক্যান?
– কিছুই তো কমপ্লিট করতে পারছিনা। ফিজিক্সের প্রশ্ন সমাধান করতে যেয়ে তো অন্যান্য সাবজেক্ট গোল্লায় যাইতেছে। আসলে এতো চাপ আমি সহ্য করতে পারছিনা।
– একটা উপায় আছে। বলবো?
– ফিজিক্সের এমনকি যেকোনো সাবজেক্ট এর প্রশ্ন আমি সলভ করে ছবি তুলে ফেসবুকের ইনবক্সে দিয়ে দিবো। তারপর তুমি পড়বা। তাহলে তোমার অনেক সময় বেঁচে যাচ্ছে।
– তোমার নিজের পড়া বাদ দিয়ে?
– আরে এতে তো আমারি বেশি উপকার।
— তুমি কী চাও বলোতো?
– আচ্ছা একটা ছেলে আর মেয়ের মধ্যে কি শুধুই প্রেম হয়? বন্ধুত্ব কি হতে পারেনা?
– হতে পারে।
– এখন তো আর ঘুমাবা না?
– না।
– আমি কিছু গণিতের সমাধান দিচ্ছি। প্রাকটিস করো।
– হুম।
– নেট কানেকশন অন করো। আমি ছবি তুলে পাঠাচ্ছি।
– আচ্ছা।
নেট কানেকশন অন করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো।
জাদিদকে ফোন দিলো হেমলতা। রিসিভ করলো
– হ্যালো
– আচ্ছা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট তো একসেপ্ট করো।
– দাড়াও।
ফোন কেটে দিয়ে। ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করলো। তারপর মেসেঞ্জার এ টুংটাং শব্দ করে জাদিদের আইডি থেকে মেসেজ আসলো।
– ছবি গুলো সেভ করো।
– ওকে।
– তাহলে আমি যাই। পড়তে বসবো।
– হুম। টাটা।
হেমলতা নতুন খাতা বের করলো। খাতার উপরে সাবজেক্ট এর নাম লিখে। ছবি গুলো থেকে অংক গুলো প্রাকটিস করতে শুরু করলো।
হঠাৎ করে হেমলতা বেশ মনোযোগী হয়ে উঠলো।
ফজরের সময় মিসেস জয়নব নাত্মীর রুমে এসে অবাক। একি নাত্মী না ঘুমিয়ে পড়ছে। রাতে ঘুম না আসলে ও তো টেলিভিশন দ্যাখে। কিন্তু আজকে কী হলো?
মনে প্রশ্ন চেপে রাখতে না পেরে নাত্মীকে প্রশ্ন করেই বসলো
– কিরে পড়ছিস?
নানী যে অবাক হয়েছে সেটা হেমলতা বুঝতে পেরেছে। তাই সে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
– পরীক্ষা সামনে। ভালো রেজাল্ট করা দরকার।
– খুবই ভালো।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
– চল নামাজ পড়ে নেই। তারপর হেঁটে আসি।
– চলো।
হেমলতা বই খাতা গুছিয়ে রেখে, ফোন চার্জ দিয়ে নামাজ পড়তে গেলো।
পড়াশোনা নিয়ে হেমলতা বেশ ব্যস্ত হয়ে পরলো।মিসেস জয়নব বিবি আর মনোজ হেমলতার পড়াশোনা দেখে খুব অবাকও হলেন। খুশিও হলেন।
হেমলতার উন্নতির কথা জাদিদ জুবায়ের কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে। জুবায়ের কিছু বলেনা। হুম, হ্যা বলে কাটিয়ে দেয়।
ওর ধারনা যে ভুল সেটা প্রমাণিত হওয়াতে একটু লজ্জায় পড়েছে।
পরীক্ষা শুরু হতে ১ সপ্তাহ বাকি।
প্রত্যেক স্যার তাদের কোর্স কমপ্লিট করে দিয়েছেন। তাই বাইরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা। আজকাল নানীর সাথে সকালে হাঁটতে যাওয়া হয়না।
এতো পরিমাণ ফাকি দিয়েছে যে এখন সারা দিন রাত পড়েও শেষ করতে পারছে না হেমলতা।
জাদিদ এই কথা শুনে হাসতে হাসতে বলেছে
– এই ভাবে পড়তে পড়তে ইনশাআল্লাহ রেজাল্ট ভালো হবে।
– হু। পাবনায় একটা সিট বুকিং দিয়ে রেখো।
এই কথা শুনে জাদিদ হাসতে হাসতে অস্থির। তুমি পাগলের মতো কথা বলো না ক্যান?
– পাগল হয়েই তো গেছি।
সকালে পড়ছিলো জাদিদ এর ফোন আসলো। রিসিভ করে হেমলতা বলল
– কী সমাচার?
– একটু বের হতে পারবা?
– কখন?
– দুপুরবেলা।
– কয়টায়?
– ৩ টায়।
– আচ্ছা। কিন্তু কোথায় আসতে হবে?
– র‍্যাফেলস এ
– আচ্ছা।

চলবে…..!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ৪.

0
ডুমুরের ফুল ৪.
ডুমুরের ফুল ৪.

ডুমুরের ফুল
৪.
ক্যালকুলেটর বেঞ্চের উপর রেখে দিয়ে জাদিদ যেখানে ছিলো সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো। জাদিদ মনে মনে ভাবছে যাক খুব ভালো ভাবেই চমকে দিলাম। এবার ক্যালকুলেটর নিতে ওর বাড়ি যাবো। মেয়েটাকে দেখে যা মনে হচ্ছে ছেলে ফ্রেন্ড ওর নাই। আর বাসায়ও মনে হয় ছেলে ফ্রেন্ড এলাউ না।আমার দিকে তাকিয়ে থাকার ঝাল তোমাকে বোঝাবো খুব ভালো ভাবেই।
জাদিদ মনে মনে প্ল্যান করছিলো ঠিক এই সময় স্যার বই নিয়ে হাজির।
বইটা জাদিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন
– নাও এই বইটা। যদি এটাতে কাজ না হয় তাহলে আরো বই আছে।
জাদিদ বই নিয়ে বলল
– থ্যাঙ্কু স্যার। স্যার আসি।
– হুম।
আশেপাশে না তাকিয়ে সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
সবাই হেমলতার দিকে তাকিয়ে ছিলো। হেমলতা ঘটনার আকস্মিকতায় চুপ হয়ে গেছে।
উত্তর টা লিখে সে বসে রইলো। স্যার চলে আসাতে সবাই আবার খাতায় মনোযোগ দিলো।
খাতা জমা দিয়ে যখন সবাই বের হলো। হেমলতা মিম্মার জন্য অপেক্ষা করছিলো। মিম্মা স্যারের সাথে জরুরী কথা বলছিলো।
কয়েকজন মেয়ে দূর থেকে হেমলতাকে ইংগিত করে কিছু বলছিলো।
হেমলতা বুঝতে পারছিলো ওকেই কিছু বলছে কিন্তু কী যে বলছে সেটা শুনতে পারছিলো না। আজকে যা ঘটেছে সেটা তার চিন্তার বাইরে ছিলো। তার মতো এতো সাধারণ মেয়েকে কোনো টপার স্টুডেন্ট তো পছন্দ করতে পারেনা। আর সেতো ওই ছেলের কোনো ক্ষতিও করেনি তাহলে এমন ক্যান করলো?
এই ধরনের ফাজলামি করার কোনো মানে হয়না। প্রত্যেকটা মেয়ে তার দিকে কীভাবে যেন তাকাচ্ছে। কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে! এমনিতেই কেউ ওর সাথে কথা বলে না।
মিম্মাকে বের হয়ে আসতে দেখে হেমলতা একটু স্বস্তি ফিরে এলো।
মিম্মা কে একটু চিন্তিত লাগছে। হেমলতা জিজ্ঞেস করলো
– কিরে কিছু হয়েছে?
– জাদিদ এমন করলো ক্যান? ওর সাথে তোর কোনোদিন কথাও হয়নি।
– আমিও জানি না।
– ফেসবুকে চ্যাট হয়?
– না তো এডই তো নাই।
– শোন ওই ছেলে তোর সাথে মজা করছে। কারণ যখন তোর সাথে ও কথা বলছিলো তখন ওর চোখে দুষ্টুমি খেলা করছিলো।
– আমি কী করলাম?
– সেটা তো আমিও জানি না। ক্যালকুলেটর ঠিক আছে না?
– হ্যা ব্যাগে রেখে দিয়েছি।
– যত্ন করে রাখিস। যেকোনো সময় ও রাস্তায় তোর কাছে ক্যালকুলেটর চেয়ে বসতে পারে।
– যখনি বের হবো তখনি সাথে নিয়ে বের হবো।
বাট আমার সাথে এমন করলো ক্যান?
– ধুরো আমি জানি না।
তারপর মিম্মা হা হা হা করে হেসে উঠলো।
হেমলতা বলল
– হাসার কী হলো?
মিম্মা হাসতে হাসতে বলল
– সবাই তোকে জাদিদের জিএফ ভাবছে।
– কী?
– হুম। আরে ওর তো কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড নাই। কারণ হিসাবে সবাই জানতো ও মনে হয় ওসব পছন্দ করেনা। কিন্তু আজকে অনেকে তার কারণ হিসেবে বের করেছে যে – জিএফ এর ভয়ে ও কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড রাখে না।
হেমলতা হতাশ হয়ে বলল
– কিন্তু এটা সত্যি না।
– সেটা তুই আর আমি জানি যে এটা সত্যি না। কিন্তু কেউ তো সেটা জানে না।
– আমরা বললেই তো বিশ্বাস করবে। তাই না?
– না কেউ বিশ্বাস করবে না। যেভাবে ওই পোলা তোর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আর কথা বলার স্টাইল……..
হেমলতা মিম্মার কথার মাঝে কথা বলল
– শুধু ওভাবে কথা বললেই কী হয়?
– শুনো মানুষ তার চোখের সামনে যা ঘটে তাই বিশ্বাস করে। এর পিছনের কারণ, আসল কারণ কখনোই দেখেই না।
হেমলতা একেবারেই চুপ হয়ে গেলো।
মিম্মা হাসতে হাসতে বলল
– শোন তুই একা ঝামেলায় পড়িস নাই। জাদিদ তো নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছে।
– কিসের কুড়াল? ছেলে মানুষ এর আবার কি? হাজার টা প্রেম করলেও বা কী?
– তোর নানী জানলে কী হতে পারে?
– জানি না।
হেমলতার জীবনে প্রথম এমন ধরনের ঘটনা ঘটলো।
মিম্মা রিক্সায় করে চলে গেলো। হেমলতা ওটোর জন্য দাঁড়ায় আছে।এতো ওটো কিন্তু আজকে কোনো ওটো পাচ্ছেনা। মেজাজ এমনিতেই খারাপ এখন আরো খারাপ হচ্ছে।
পাশে এসে কে যেন দাঁড়ালো।
হেমলতা তাকিয়ে দেখে বিরক্ত হলো। এই ছেলের জন্য আজকে সবাই তাকে নিয়ে আলোচনা করছে।
জাদিদ আশেপাশেই ছিলো। অপেক্ষা করছিলো কখন এই কেশবতী একা হবে। একা দেখেই সে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। হাত টা ধরলে কেমন হয়?
না না বেশি হয়ে যায়। মেয়েটা এমনিতেই মনে হয় ভয়ডর পেয়েছে। একটু হাসিহাসি মুখে মেয়েটাকে বলল
– এই মেয়ে এতো সোজা ভাগ কেন পারো না?
হেমলতা কিছুই বলল না। কী বলবে? মিম্মাও তো চলে গেলো।
– কথা বলবা না?
– আচ্ছা আপনি তো আমাকে চিনেন না। তাহলে কথা বলতে আসছেন কেন?
– আচ্ছা কথা না বললে কীভাবে পরিচিত হবো?
– তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু সবার সামনে এভাবে
আর কিছুই বলতে পারলো না। গলা আটকে আসছে তার।
– আসলে গত পরশুদিন তুমি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলে। মনে হচ্ছিলো
গত পরশুদিন তো? হেমলতার মনে পড়লো। সত্যি তো ওর দিকে তো হা করে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু ও কীভাবে খেয়াল করলো?
হেমলতাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল
– ধরা পড়ে গেছো
একটা ওটো ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। হেমলতা প্রায় দৌড়ে ওটোতে উঠলো।
হেমলতা শান্তির নিশ্বাস ছেড়ে ভাবলো
– যাক বাঁচলাম।
জাদিদও দৌড়ে অটোতে উঠলো।
হেমলতা দেখেও না দেখার ভান করলো।
জাদিদ হাসতে হাসতে বলল
– তোমার বাড়ি যাবো আজকে।
হেমলতা কোনো উত্তর দিলো না।
তারপর আস্তে আস্তে বলল
– আমি আপনার দিকে তাকিয়েছি।তাতে কী এমন হয়েছে? যে আমার পিছুপিছু ঘুরতে হবে? কতো মানুষ তো আপনার দিকে তাকায়। তাই বলে কি সবার পিছুপিছু আপনি ঘুরে বেড়ান?
– না।
– তাহলে?
– মন চাইলো। তাই!
– মন চাইলেই কি সেটাই করতে হবে?
– আসলে আমার মন যা চায় আমিই তাই করি। মন বলল তোমাকে একটু জ্বালাতে। তাই
– আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে। আর কোনোদিন ভুলেও তাকাবো না।
– আবারো তো তাকালে
– না তাকিয়ে কথা বলা যায়?
– তুমিই তো বললা ভুলেও তাকাবা না।
হেমলতা কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছিলো না।
জাদিদ গম্ভীর ভাবে বলল
– কথার প্যাঁচে পরে গেছো।
হেমলতা বাইরের দিকে তাকিয়ে জাদিদকে গুরুত্ব না দেয়ার ভান করলো।
কী আজব! এই কাউয়ার বাসাকে সে মনে মনেই খুজছিলো। আর এখন সেই তার সামনে বসে আছে।
ওদের বাড়ির সামনে আসার সাথে সাথেই হেমলতা নেমে পরলো।
ভাড়া দিয়ে গেটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় তার মনে হলো। ক্যালকুলেটর এর জন্য এই ছেলে ওর বাসায়ও আসতে পারে।
তাই সে ব্যাগ থেকে ক্যালকুলেটর বের করে পিছনে ঘুরে দাঁড়ালো। কিন্তু ততক্ষণে ওটো অনেক দূরে চলে গেছে।

মিম্মাকে সব জানাতে হবে।
জাদিদ ওটোর পিছনের ফাকা দিয়ে দেখছিলো – মেয়েটা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
সে নিজেও জানে না কেন এমন করলো?
মেয়েটা মনে হয় একটু সেকেলে ফ্যাশনের। চুল তো হাটু সমান।
চুলে কোনো কাট দেওয়াও নাই।
ভুরু প্লাগ ও করেনা।
জামা কাপড়ে শালীনতা উপচে পড়ছে। হাতে একটা ঘড়ি তাও কালো ফিতার। আদ্দিকালের।
চোখ দুটো মায়াবী।
নাক একটু বেশিই বোঁচা।
কথা যখন বলছিলো তখন কান লাল টকটকে হয়ে ছিলো।
মজাই লাগছে মেয়েটাকে বিরক্ত করে।
ক্যালকুলেটর টা মেয়ের কাছেই থাকুক। তাহলে ভয়ে ভয়ে থাকবে। এমনিতেই আমার ক্যালকুলেটর লাগে না। ফিজিক্সের গণিত করতে গেলে লাগে তাও ঠ্যাকায় না পড়লে ব্যবহার করে না।
অটো ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো ভাই আপনি কই যাবেন?
অম্বিকায় নিয়ে যান।
জাদিদের একটা আফসোস রয়েই গেলো মেয়েটার নাম জানা হলো না।
নাম জানা কোনো ব্যাপার না।
ওর সাথের মেয়েটাকে চিনি।
প্রত্যেক ছেলের মেয়ে ফ্রেন্ড থাকেই। জুবায়ের এর তো অনেক মেয়ে ফ্রেন্ড। ফেসবুকে কতো চ্যাট করে।
অনেক মেয়ে অবশ্য নক করে। কিন্তু গায়ে পরা মেয়ে আমার ভালো লাগেনা। মেয়ে হবে এই কেশবতীর মতো।
দাদীর কথায় জাদিদ এতদিন মেয়েদের সাথে সেধে কথা বলতো না। তার দাদীর কড়া হুকুম
– কোনো মেয়েছেলের সাথে মিশবা না।
এতদিন হুকুম সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে।
কিন্তু এখন আর সে মানবে না এই হুকুম। সে মনে মনে স্থির করে ফেলেছে এই মেয়েকে তার ফ্রেন্ড বানাবে।
মনে মনে জাদিদ একটা শব্দই বলছে
– কেশবতী, কেশবতী….!

চলবে….!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ৩

0
ডুমুরের ফুল ৩
ডুমুরের ফুল ৩

 

ডুমুরের ফুল
৩.
জাদিদ তার বাবার একমাত্র সন্তান। মা বাবার ডিভোর্স এর পর মা চলে যান গ্রিসে আর জাদিদ বাবার সাথেই বাংলাদেশে থেকে যায়। জাদিদের বাবা ইমরান মোল্লা হাইসাম। মোল্লা সাহেব পেশায় একজন নাবিক। বর্তমানে তিনি প্রধান নাবিক । একমাত্র ছেলেকে তিনি ঢাকা রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার বৃদ্ধা মার জন্য ছেলেকে ফরিদপুরে রাখতে হয়েছে।
বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি সমুদ্রে থাকেন। ২ মাসের ছুটিতে ১ মাস ছেলে ও মায়ের সাথে কাটান বাকি ১ মাস বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ান।
ঝিলটুলিতে থাকে জাদিদ আর তার দাদী। অর্ধ পাগল এই বৃদ্ধার সাথে জাদিদের অবসর সময় থেকে শুরু করে ব্যস্ত সময়ও কেটে যায়।
৩ তলা বাড়ির তিন তলাতেই থাকে জাদিদ আর তার দাদী। একজন কাজের মহিলা আর বাড়ির দারোয়ান থাকেন। বাজার করা থেকে বাড়ির সকল কাজ দারোয়ান করে থাকেন। ৩ দিন ধরে জাদিদের মাথায় হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি বিষয়ক একটা গণিত মাথায় ঢুকেছে। সমাধান আর করতে পারছে না। মাথায় একবার কোনো কিছু ঢুকলেই হলো খাওয়া দাওয়া ভুলে যায়। ঘুম ও থাকে না তার চোখে। হাবিব স্যারকেও সে বলেছে সমস্যার কথা। স্যার বলেছে তুমি পারবা, চেষ্টা করো।
৩ দিনের দিন পারলো। তারপর স্যারকে বলে বাসায় এসে গোসল করে খেয়ে দেয়ে ঘুমালো বিকালে।
এইরকম সমস্যার সমাধানের পর সে লম্বা এক ঘুম দেয়। এক ঘুমে সকাল।
সকাল ৭ টায় জাদিদের ঘুম ভাংলো।
ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই সে ফ্রেশ হয়ে নিজ হাতে চা বানিয়ে খায়। আজকেও সে চা হাতে নিয়ে ছোট বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে ফেসবুকে ঢুকলো। অনেকদিন ফেসবুকে আসা হয়না ভাবতে ভাবতে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলো।জাদিদের চা বানানোর সময় টুংটাং আওয়াজে বৃদ্ধার ঘুম ভেঙে গেছে।
ছোট বারান্দায় এসে ফ্লোরে বসে পড়লো।
এই ঠাণ্ডার মধ্যে দাদীকে ফ্লোরে বসতে দেখে জাদিদ চেয়ার থেকে উঠে বলল
– young lady ফ্লোরে কী করছো? চেয়ারে বসো।
বৃদ্ধা হেসে বলল
– থাক ভাই তুই বয়। আমি এইখানে ঠিক আছি।
কথাগুলো বলতে বলতে চেয়ারে বসলেন। তারপর একটু হেসে বললেন
– তোর বাপ রে আরেকটা নিকা করতে কস না ক্যান?
চায়ের কাপ ফ্লোরে রেখে দিয়ে জাদিদ বলল
– তোমার ছেলেকে তুমি রাজি করাও। আমি ছেলে হয়ে বাবাকে কীভাবে বলবো বিয়ের কথা? আর বাবার যদি ইচ্ছা না থাকে তাহলে কী দরকার?
– কোন কুলক্ষুণে তোর মায়তে পোলাডা বিয়া করছিলো। জীবন টাই গেলো আমার পোলার।
জাদিদ খেয়াল করেছে যে তার বাবার ছুটিতে আসার সময় হলেই তার দাদী বিয়ে করানো নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
আরেকটু সময় এখানে থাকলে দাদী কেঁদে কেটে পরিস্থিতি খারাপ করে ফেলবে। তাই জাদিদ চুপচাপ তার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে পড়তে বসলো।
অনেক পড়া তার বাকি। তাকে অনেক পড়তে হবে। ঢাবি তার চাই!
হেমলতা প্রতিদিনের মতো ফজর নামাজ পড়ে নাস্তা করে পড়তে গেলো। আজ তার বাবা আসেনি।
বাবাকে সে খুব ভালবাসে। মার মুখটা সে মনে করতে পারে না। মায়ের সাথের কোনো স্মৃতী তার মনে নেই।
মার ছবি তার কাছে আছে। কিন্তু তারপরও কেন যেন মনের স্বাদ মেটে না দেখে।
এই শীতের সকালে তার মা যেন তাকে খুব কাছে ডাকছে।
মিম্মার কাছে শোনা জাদিদের কথাও তার মনে পড়ছে। গোমড়া মুখ আর হাসিখুশি মুখ। দুটোতেই ছেলেটাকে ভালো লাগে।
জাদিদ সকালের নাস্তার সময় খেয়াল করলো কয়েকজন মুরুব্বী গোছের লোক ড্রয়িংরুম এ বসে আছে। ব্যাপার টা কী?
দাদী কি আবারো বাবার জন্য মেয়ে দেখছে? এরা কী তাদের লোক? এই প্রশ্নগুলো জাদিদ তার দাদীকে করতে যেয়েও করলো না। প্রশ্নগুলো এর আগেও একবার করেছিলো এবং বাসায় ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিলো। দাদী ইঁদুর মারার বিষ খেয়েছিলেন। তারপর বহুত কষ্টে তাকে বাঁচানো হয়েছে।
জাদিদ তার দাদীকে ডাকলো
– দাদী, দাদী
– কিরে ডাকোস ক্যা?
– বাসায় মেহমান এসেছে নাস্তা দাও নি?
– সেটাই তো করছি রে।
দাদী বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন।
জাদিদ ও নাস্তা করে ব্যাগ গুছিয়ে পড়তে বের হলো।
টেরাকোটার সামনে আসতেই তার মনে হলো গতকাল একজন কেশবতী তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। মেয়েটার তাকিয়ে থাকার কারন সে জানে। কিন্তু এতক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারন কি বুঝতে পারছেনা।
কাকে জিজ্ঞেস করবে?
দূর থেকে যতটুক বোঝা গেছে মেয়েটার চেহারা খারাপ না।
মেয়েটাকে একদিন ভয় দেখাতে হবে বা চমকে দিতে হবে। হাবিব স্যারের কাছেও মেয়েটা পড়ে।
আমাকে না হয় জোকারের মতো লাগে তাই বলে এভাবে তাকাবে ক্যান?
অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করতে হবে। প্ল্যান করতে হবে যখন সামনে পাবো। তার আগে করলে প্ল্যান মাটি হয়ে যাবে।
হেমলতার আজকে ১০ মিনিট দেরি হয়ে গেছে। কেন যেন ইংলিশ পড়তে আসলেই তার দেরি হয়। প্রায় দৌড়ে এসে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। স্যার ওর দিকে তাকিয়ে বললেন
– আজকেও লেট?
ক্লাস শুদ্ধু সবাই হেসে উঠলো।
হেমলতার অবশ্য অভ্যাস হয়ে গেছে কথা শোনার। তাই সে মন খারাপের ভান করে বলল
– sorry স্যার আর হবে না।
স্যার ধমক দিয়ে বললেন
– হইছে প্রতিদিন একই কথা বলো আর একদিনও তো পূরণ করো না।
হেমলতা সহ ক্লাস শুদ্ধু সবাই চুপ হয়ে গেলো।
স্যার কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইলেন। তারপর বললেন
– আসো। দাঁড়িয়ে থেকে কী লাভ? ক্লাসেই বসে থাকো।
হেমলতা চুপ করে পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসলো।
তারপর স্যার এবং পুরো ক্লাসের স্টুডেন্ট স্বাভাবিক হয়ে গেলো। যেন কিছুই ঘটেনি।
আগামীকাল দুপুর ৩ টায় হাবিব স্যারের কাছে পরীক্ষা। কিন্তু হেমলতার কিছুই পড়া হয়নি। ব্যাখ্যা মূলক প্রশ্নের থেকে গাণিতিক সমস্যাই বেশি। কী পরীক্ষা দিবে এই নিয়ে মিম্মার সাথে কথা হচ্ছিলো হেমলতার
– মিম্মা দোস্ত প্লিজ লাগে আমার পাশে বইসো।
– হেহ আইছে। আমি নিজেও বা কী পড়ছি?ঘুম এতো বাড়ছে।
– আমার ফিজিক্স বই দেখলেই ভয় লাগে। আবার সকালে রসায়ন এর জৈবযৌগ চ্যাপ্টারের উপর পরীক্ষা।
– আমি যাবোনা।
– আমার তো যাওয়াই লাগবে। নানী তো রুটিনের ফটোকপি তার রুমে টানায় রাখছে। না যাওয়ার উপায় নাই।
– চিন্তা না কইরা পড়। সাদা খাতা তো জমা দেয়া যায় না।
– আচ্ছা।
পড়তে পড়তে কখন যে টেবিলেই ঘুমায় পড়ছে সেই খেয়াল হেমের নাই।
ফজরের নামাজের সময় নানী এসে তাকে ডেকে তুললেন।
রসায়ন পরীক্ষা খারাপ হয়নি। রাতে তো রসায়ন পড়ছে।
মিম্মা আসেনি। তাই সে আর একা একা টেরাকোটার সামনে না গিয়ে বাসায় চলে আসলো।
কোনোরকম ফিজিক্স পড়েছে।এভাবে কী পরীক্ষা দিবে সে ভাবছিলো। হাবিব স্যার প্রশ্ন দিলেন।
একটা গাণিতিক সমস্যা বাদে কিছুই কমন পড়ে নাই। এমনকি ছোট প্রশ্নও ভুলে গেছে।
গাণিতিক সমস্যা সমাধানের সময় তার মনে পড়লো ক্যালকুলেটর ভুলে টেবিলের উপর রেখে আসা হয়েছে।
– মিম্মা ক্যালকুলেটর টা দে
মিম্মা, হেমলতার থেকে ৩ বেঞ্চ পিছনে বসেছে।
হেমলতা খেয়াল করলো মিম্মা লেখেই যাচ্ছে। হাত থামছে না। খাতার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বলল
– আমার এখন লাগবে। পরে দিবো।
কী আর করার চুপ করে বসে থাকা ছাড়া।
সবার শেষে এসেছে বলে তাকে সবার সামনের সিংগেল চেয়ার টেবিলে বসতে হয়েছে। কী কপাল? আগে আসলে মিম্মার সাথে বসিলেই হতো।
স্যার একটু দূরে চেয়ারে বসে ছিলেন।
কেউ একজন বলল
– স্যার আসতে পারি?
স্যার হেসে বললেন
– আসো।
আরে এতো সেই জাদিদ। হেমলতা ১ বার তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো।
ছোট্ট একটা ভাগে এসেই সে থেমে আছে। ক্যালকুলেটর ছাড়া সে কিছুই করতে পারেনা।
জাদিদ স্যারের কাছে বই চাইলো।
স্যার বলল একটু দাড়াও। আমি নিয়ে আসছি।
জাদিদ ইচ্ছাকৃত ভাবে এখন এসেছে। মেয়েটা একেবারে সামনেই বসে আছে। একটু চমকে দেয়া যাক। কী করা যায়? কী করা যায়?
জাদিদ মেয়েটার দিকে এগিয়ে এসে খাতার দিকে ঝুকে দেখলো কী করছে মেয়েটা।
জাদিদকে এই রুমে থাকা প্রত্যেকটা মেয়ে চিনে। সবাই অবাক। জাদিদ, হেমলতার দিকে ঝুকে আছে কেন?সবার একই প্রশ্ন মুখে আটকে আছে।
হেমলতাও অবাক।প্রায় আতকে উঠে চাপা স্বরে বলল
– একি। আপনি এভাবে আছেন কেন? সরে দাঁড়ান।
জাদিদ মুচকি হেসে বলল
– তুমি এতো সহজ একটা ভাগ পারছো না?
হেমলতা কী উত্তর দিবে? ভাবতেও পারছেনা। মাথা নিচু করে বলল
– আপনি যান তো এখান থেকে।
– আরে বোকা মেয়ে ১০০০ কে ৩ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল হয় ৩৩৩.৩৩। উত্তর টা লেখো।
তারপর ব্যাগ থেকে ক্যালকুলেটর বের করে হেমলতার বেঞ্চের উপর রেখে বলল
– রেখে দাও।পরে একদিন নিয়ে নিবো।

চলবে…….!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ২.

0
ডুমুরের ফুল ২.
ডুমুরের ফুল ২.

ডুমুরের ফুল
২.
সারদা সুন্দরী কলেজের সামনে এসে রিক্সা দাঁড়ালো। হেমলতা রিক্সা থেকে নেমে বাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
– বাবা আসি
– আচ্ছা মা যা।
পকেট থেকে ১০০ টাকার নোট বের করে মেয়ের হাতে গুঁজে দিয়ে বলল
– রাখ মা। আজকের দিনে এতে তোর হবে?
মেয়ে ১০০ টাকার নোট ব্যাগে রেখে বলল
– হবে বাবা!
মনোজ সাহেব রিক্সা নিয়ে চলে গেলেন। হেমলতা পড়তে গেলো।
৯ টায় পড়া শেষ হওয়ার পর হেমলতা আর তার বান্ধবী মিম্মা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ইন্টারের টেস্ট এক্সাম শেষ তাই ক্লাস অফ।
হেমলতা খেয়াল করলো ঠিক তাদের বিপরীতে টেরাকোটার সামনে জটলা। ১০-১২ জন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই খুব হাসাহাসি, গল্পে ব্যস্ত। কিন্তু একজন গোমড়া মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।গোমড়া মুখেই ছেলেটাকে বেশি সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে হাসলেই ছেলেটার সৌন্দর্য টা হাওয়া হয়ে যাবে।
নীল রঙের জিন্সের সাথে লাল রঙের ফুল হাতা গেঞ্জি পড়েছে। এই পোশাকে এই ছেলেকে বেশ ভালোও লাগছে না আবার খারাপও লাগছে না। মাথায় এক ঝাক কোঁকড়া চুল। ঘুম থেকে ওঠে আচড়াতে ভুলে গেছে। তাতে কাউয়ার বাসার মতো লাগছে। প্রচুর ফর্শা, ঠোট পাতলা। লম্বা মাঝারি, স্বাস্থ্য ভালো।
চেহারা দেখে মনে হচ্ছে খুব চিন্তায় আছে।
এই ছেলেটাকে হেমলতা আজকেই প্রথম দেখলো। হেমলতা মিম্মা কে বলল
– মিম্মা
– হু বল
ইশারায় ছেলেটাকে দেখিয়ে বলল
– চিনিস ওই ছেলেকে?
– কোন ছেলে?
– আরে গাধী উইজে টেরাকোটার সামনে লাল ফুল হাতা গেঞ্জি পড়া ছেলেটা!
– আরে ও। ওর চিনে লাভ নাই লাইন মারতে পারবি না।
– ধুত্তুরি আমি কি লাইন মারার জন্য বলছি নাকি? ছেলেটাকে এই প্রথম দেখলাম।
– তুই তো সারাদিন তোর ওই ব্রিটিশ রাজ্যে বাস করিস। তোর আবার অন্যের খবর রাখার সময় আছে?
– শোন আমাদের সাথের প্রায় ছেলেকে আমি নামে হলেও চিনি। কিন্তু এরে তো মনে হচ্ছে ফরিদপুরে নতুন।
– নাহ। ফরিদপুরের স্থানীয়। ওর নাম জাদিদ ইবনে হাইসাম। ফরিদপুরের টপার স্টুডেন্ট। এবার এইচএসসি ক্যান্ডিডেট দের মাঝে জাদিদ ১ নাম্বারে আছে। আর হাবিব স্যারের মতে ওর মতো মেধাবী ১০০ বছরে ১ টাই পাওয়া যায়।
– এতো ভালো স্টুডেন্ট তাহলে একা একা কেন দাঁড়িয়ে আছে? ফ্রেন্ডস কই?
– ওর কোনো নির্দিষ্ট কোনো ফ্রেন্ড নাই। যেই ওর সাথে কথা বলতে আসে ও তার সাথেই কথা বলে। পড়াশোনার ব্যাপারে যতো রকমের হেল্প লাগবে ও এক পায়ে রাজি। কিন্তু…!
– কিন্তু কী?
– এক্সাম হলে বোম মারলেও কাউকে দেখাবে না কিছুই।

হেমলতার কেন যেন ছেলেটাকে ভালো লাগলো। এক দৃষ্টিতে জাদিদের দিকে তাকিয়ে আছে। কপাল কুঁচকিয়ে, চোখ বন্ধ করে, হা করে জাদিদ কী যেন চিন্তা করছিলো।
হেমলতার এই অবস্থা দেখে মিম্মা হাসতে হাসতে বলল
– দোস্ত প্রেমে পড়ার মানুষ পাইলা না।
মিম্মার টিটকারি শুনে হেমলতা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল
– কে বলেছে আমি প্রেমে পড়েছি? একটা ছেলের দিকে তাকালেই কী প্রেমে পড়া হয়ে যায় নাকি?
– যাই হোক। একটা কথা বলে রাখি ওর প্রেমে পড়ে লাভ নাই। ওইরকম টপার স্টুডেন্ট রা বই ছাড়া কিছুই বুঝে না।
– তুই এতো কিছু কীভাবে জানলি?
– সবার কাছ থেকে শুনি। নিফার কাছ থেকে বেশি শুনেছি।
– ক্যান নিফা ওর জিএফ নাকি?
– মাথা খারাপ নাকি? নিফার বিএফ জাদিদের সাথে ঘোরাফেরা করে।
মিম্মার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। মিম্মা ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
হেমলতার চোখে জাদিদের চিন্তাভরা মুখখানা ভেসে আসছে।
নিজের উপর ধিক্কার দিয়ে নিজেকে মনে মনে বলল
– হেম তুই মানুষ আর পাইলি না। এই কাউয়ার বাসার কথা চিন্তা করছিস।
বিকাল ৩ টায় হাবিব স্যারের কাছে পড়া।
স্যার পড়ানো শুরু করবে এই সময় সেই কাউয়ার বাসা আইসা হাজির।
হেমলতা খেয়াল করলো ছেলেটা এখনো সেই একই পোশাক পড়ে আছে। স্যারের সাথে হেসে হেসে খুব আস্তে আস্তে কী কী যেন বলছিলো।
হেমলতার কানে শুধু সূত্র, গাণিতিক যুক্তি, ব্যাখ্যা শব্দ আসছিলো।
সে উতলা হয়ে ভাবছিলো
– কী নিয়ে কথা বলে?
কিছুক্ষণ পর স্যার জাদিদের পিঠে চাপড় মেরে বলল
– সাবাস!
সবাই শুনলো। জাদিদ খুব মিষ্টি করে হেসে বিদায় নিয়ে যাচ্ছিলো তখনি হেমলতা জাদিদের ফেস পুরোপুরিভাবে দেখতে পেলো। এতক্ষণ পিছন ঘুরে ছিলো।
হেমলতা সকালের সেই চিন্তাসহ গোমড়া মুখ আর নাই। এখন চেহারায় বিজয়ের হাসির ঢেউ উপচে পড়ছে।
মিম্মা হেমলতার এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
– আর তাকাস না এভাবে।
হেমলতা ধরা পড়ে যাওয়ায় লজ্জা পেলো। তারপর বলল
– আরে না তেমন কিছুনা।

রাতে পড়া শেষ করে ঘুমানোর আগে হেমলতা ফেসবুকে কিছুক্ষণ থাকে। তারপর ঘুমায়।
হেমলতা জাদিদের ফেস মনে করতে পারছিলো না। আজকেই তো ২ বার সে দেখেছে আর এখনি মনে করতে পারছেনা। তার খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছিলো।
ছেলেটার নাম তার মনে আছে। হেমলতা ফেসবুকে পুরো নাম ইংলিশে লিখে সার্চ দেয়ার সাথে সাথেই অনেক আইডি চলে আসলো।
এখন সমস্যা হচ্ছে কোনটা কাউয়ার বাসার আইডি।
একদম প্রথম আইডি তে ডোরেমন এর ছবি দেওয়া। আর ৫ মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। কাভার পিকে ৩ জন ছেলের ছবি তার মধ্যে একজন তো নাফির বিএফ আর দ্বিতীয় জন জাদিদ।
সেন্ড রিকুয়েস্ট অপশনে গিয়ে হেমলতা থেমে গেলো।
না ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানো যাবেনা।
পিকচার দেখতে শুরু করলো। প্রত্যেকটা পিকচারে চুল আচড়ানো না। আর হাসি কী রে মাইরি?
দাঁতের উপর দাঁত দিয়ে জগত কাঁপানো হাসি।
আর প্রায় প্রত্যেকটা ছবিতে ফুল হাতা গেঞ্জি পড়া। হাফ হাতা গেঞ্জি পড়া পিকচার ২-৩ টা।
নানীর পায়ের শব্দ শুনে হেমলতা ডাটা কানেকশন অফ করে ঘুমের ভান ধরলো।
মিসেস জয়নব নাত্মীর কাছে এসে তার মশারী টানিয়ে দিলেন।
তারপর কিছুক্ষণ ঘুমন্ত চেহারা দেখে চলে গেলেন তার রুমে।
ঘুমানোর আগে মিসেস জয়নব তার বাড়ির সব খবর ভালোভাবে নেন। মেইন গেট, কেঁচি গেট, বাড়ির সদর দরজা লাগানো হয়েছে কিনা। তারপর তিনি প্রেশারের মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এই রুটিন অনুযায়ী সে সবকিছু করে ঘুমিয়ে পড়লেন।
এইদিকে হেমলতা ঘুমের ভান ধরতে গিয়ে সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছে।

হেমলতার ঘুম খুব পাতলা। খুব আস্তে শব্দতেও ওর ঘুম ভেঙে যায়। মিসেস জয়নব এর কড়া হুকুম ওর ঘুমের সময় যেন কেউ তার রুমের আশেপাশেও যেন না থাকে!

চলবে…!

#Maria_kabir

ডুমুরের ফুল ১

0
ডুমুরের ফুল ১
ডুমুরের ফুল ১

ডুমুরের ফুল
১.
ফরিদপুর একটি জেলা। বর্তমানে ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। এই জেলাতে পল্লী কবির জন্ম। বৃহত্তর ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর জন্ম। বিখ্যাত ফরায়েজী আন্দোলনের মূল নেতার জন্ম এখানেই। ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের একজনের জন্ম এই ফরিদপুরে! এমনকি বাংলাদেশের একমাত্র নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট ফরিদপুরে অবস্থিত। সুতরাং ফরিদপুরকে সামান্য জেলা বলা ঠিক না।
ফরিদপুর এর বায়তুল আমান হচ্ছে এমন একটা জায়গা যার নাম পুরা ফরিদপুর জানে। কারণ এখানে সরকারি পলিটেকনিক কলেজ আর সরকারী রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স শাখা অবস্থিত। রাজেন্দ্র কলেজ অনার্স শাখা রোডের সব থেকে বয়স্ক মানে পুরাতন মডেলের বাড়ি টা মিসেস জয়নব বিবি এর।
পুরো এলাকা তার ভয়ে কাঁপে। একমাত্র তার নাত্মী ব্যতিক্রম।
ফজরের ওয়াক্ত থেকে মিসেস জয়নব বিবির বাসায় হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।
ফজরের নামাজের জন্য তার একমাত্র নাত্মীকে ডাকতে ডাকতে তার নামাজের ওয়াক্ত যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায়।
বিশাল এই বাড়ির দোতলার দক্ষিণের রুমটা হেমলতা। হেমলতা মিসেস জয়নব এর নাত্মীর নাম। হেমলতার রুমের ঠিক দুটো রুমের পর মিসেস জয়নব এর রুম।
দক্ষিণের এই রুম পুরোপুরিভাবে বিলেতি স্টাইলে সাজানো – মিসেস জয়নব এর ভাষ্যে।
হেমলতার ভাষ্যে দুনিয়ার যতো খ্যাত ফার্নিচার আছে সব তার এই রুমে এসে জুটেছে।
দিনে ২-৩ বার ঝগড়া হয় নানী নাত্মীর। কিন্তু তাদের মধ্যে ভালবাসা অটুট।
নানীর কিছু হলে নাত্মী পাগলের মতো হয়ে যায়। আর নাত্মীর কিছু হলে পুরো ফরিদপুর জেনে যায় মিসেস জয়নব বিবির নাত্মীর কিছু হয়েছে!
এখন ৫.৩০ ফজরের আজান দিবে। শীতের সময়। গরমেই ডাকতে ডাকতে পুরো বায়তুল আমান জেনে যায়। আর এখন তো শীত।
মিসেস জয়নব ওজু করে হেমলতার বিছানার পাশে বসে আছেন। ঘুমন্ত নাত্মীকে দেখতে তার ভালোলাগে। কিছুক্ষণ নাত্মীকে দেখেন তারপর ডাকতে শুরু করেন।
ঘুমন্ত মুখখানায় সে তার মৃতা কন্যাকে দেখতে পান। তার একমাত্র মেয়ে হেমলতাকে ৫ বছরের রেখে মারা যান। মেয়েকে মনে পড়ে যখন কান্না আসে তখনি ঘুম থেকে ওঠার জন্য হেমলতাকে ডাকেন।
– হেমলতা, হেমলতা
প্রতিদিন হেমেলতার ঘুম ভাঙে তার নানী যখন পা রাখেন তার রুমে।
পায়ের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। তারপর সে তার নানীকে রাগানোর জন্যই ঘুমের ভান ধরে।
– হু
– কী হু?এতো ঘুমায় কেউ?
– হু ঘুমায়!
– তাড়াতাড়ি ওঠ। নামাজের ওয়াক্ত যায়।
– নানী আজকে মাফ করো।
– এই বুবু আমি মাফ করার কে?
বুবু ডাক হেমলতার একদমই পছন্দ না। এই ডাক শুনেই সে ঘুম থেকে বিছানায় লাফিয়ে উঠে বসে। চোখ ডলতে ডলতে বলে
– নানী আমাকে বুবু বলবা না।
– আমি তো বলবোই। দেখি কে ঠেকায়?
খুব হাসতে হাসতে এই কথাটা বলে মিসেস জয়নব।
তারপর দুজনে নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হয়।
বায়তুল আমান এলাকাটা খুব সুন্দর। বিশেষ করে গাছ গুলো। বিশাল বড় বড় গাছ। রাস্তার দুপাশ দিয়ে সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। যেন বলতে চাচ্ছে সবাইকে – দেখো আমি কতো সুন্দর। আমি চিরসবুজ!
শীতের সাদা কোয়াশা গায়ে জড়িয়ে থাকে তখন হেমলতার মনে হয় গাছ গুলো অনেক ঠাণ্ডায় চাদর পড়েছে।
দুজন ৩০ মিনিট হেঁটে বাসায় আসেন।
তারপর খোলা বারন্দার চেয়ারে বসে সকালের নাস্তা সারেন।
প্রতিদিনের মতোও আজকেও তারা হেঁটে নাস্তা করতে বসেছেন। তখনি হেমলতার বাবা হাজির।
হেমলতার বাবার নাম মনোজ চৌধুরী। নাম শুনলে মনে হয় হিন্দু। কিন্তু আসলে তিনি মুসলমান।
মনোজ কে দেখেই জয়নব বিবি বললেন
– আরে বাবা তুমি?
– কেন আম্মা আমি কি আসতে পারি না?
– আরে কী বলো বাবা তুমি আসবা না তো কে আসবে? বললাম যে এতো ঠাণ্ডার মধ্যে আসলে তোমার তো আবার নিউমোনিয়ার সমস্যা আছে।
– আম্মা হেমকে দেখার জন্য মন টা ছুটে গেলো তাই আসলাম।
চারটা চেয়ার সহ এই টেবিলে তিনটা চেয়ার আজকে পূর্ণ। একটা চেয়ার খালি।
মনোজ খালি চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবলেন।
তারপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন
– হেম মা তোমার পরীক্ষা কবে?
– বাবা এখনো ২ মাস বাকি।
– ওওহ আচ্ছা।
– বাবা তুমি আমাকে এই প্রশ্ন কতোবার করলে আজকে দিয়ে?
মনোজ একটু লজ্জা পেয়ে আবার হেসে বলল
– হেম বয়স হয়েছে তো তাই ভুলে যাই।
মেয়ে বাবার কথা শুনে হাসতে শুরু করেছে।
একমাত্র নাত্মীর হাসি দেখে নানীও হেসে ফেললো।
মিসেস জয়নব বললেন
– বাবা নাস্তা করো।
তারপর লায়লী বানু কে ডাকলেন
– লায়লী লায়লী, মনোজের জন্য নাস্তা আনো।
খাওয়া দাওয়ার সময় লায়লী বানু আশেপাশে থাকেন। এই বাড়িতে ৩ জন কাজের লোক। একজন ঠিকা কাজ করে। আরেকজন রান্নাবাড়ার জন্য কুটাকাটি করে সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে যান। আরেকজন মানে লায়লী বানু রান্নাবাড়া সহ বাড়ির সবকিছু দেখেন।
মিসেস জয়নব এর ডাক শুনে সে বললেন
– জে আনতাছি।
নাস্তা খাওয়া শেষ হওয়ার পর মনোজ তার মেয়েকে বললেন
– আজ তোর প্রাইভেট নাই?
– আছে তো বাবা।
– কখন?
– এই তো ৮ টায়।
– তাহলে চল মা আমার সাথে চল
– আচ্ছা বাবা তুমি ৫ মিনিট বসো। আমি আসছি।
মিসেস জয়নব বিবি এই সময় ঘুমান। ৮ টা থেকে ১০ পর্যন্ত ঘুমিয়ে তিনি অনেক শান্তি পান।
বায়তুল আমানে রিক্সা পাওয়া কষ্টের। অটো পাওয়া যায়। কিন্তু মনোজের সেটা ভালো লাগেনা।
প্রায় মনোজ সকাল সকাল শ্বশুর বাড়ি মেয়ের কাছে চলে আসেন।তারপর একসাথে রিক্সায় করে মেয়েকে প্রাইভেটে দিয়ে নিজের বাসায় যান।
এই সময়টুকু সে তার মেয়ের সাথে গল্প করেন।
রিক্সা আগে থেকেই রিসার্ভ করে রাখেন।
রিক্সায় বসে মেয়ের সাথে তিনি রাজ্যের গল্প জুড়ে দিলেন।
মাঝেমাঝে মেয়ে হেসে ওঠে আর তখনি মনোজ সাহেবের প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
মনোজ সাহেব বললেন
– হেম মা তোকে না মনে হয় আমার সাথেই রাখি। কিন্তু….
আর বলতে পারলেন না। হেমলতা তখন বলল
– জানি বাবা ছোট মা। ওনার জন্য আমাকে তুমি তোমার কাছে রাখতে পারো না। আর তোমার তো আরো দুটো মেয়ে আছে তাই না?

মনোজ সাহেব মেয়ের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। হুট করে চলে আসা চোখের পানি মুছে নিলেন। তারপর বললেন
– মা রে আছে তো। কিন্তু তোর প্রতি ভালবাসাটা বেশি। সন্তান তার পিতার চোখে সমান কিন্তু কেন যেন তোকে একটু বেশি ভালবাসি।

হেমলতা তখন খুব গম্ভীর ভাবে বলল
– হা জানি তো। আমি তো মা মরা মেয়ে।
দুজনের মধ্যে আর কথা হয়না। গভীর শোক তাদের মাঝে হানা দেয়। বাবা- মেয়ে চুপ করে তারপরের রাস্তাটা পার করেন।
দুজনেই কান্নাটা চাপা রাখেন একে অপরের জন্য।
এই সুন্দর শীতের সকালে দুজন বুকের মাঝে চাপা কষ্ট নিয়ে দিনের কাজ করতে শুরু করেন।

চলবে…..!

#Maria_kabir

মন ফড়িং ♥ ৮

0
মন ফড়িং ♥
৮.
অদ্রি রীতাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– খালা, রশীদ চাচা দুপুরে খাননি। আপনি তার খাবার ব্যবস্থা করুন। পারলে আবার রান্না করুন।
রীতা বললেন
– কিন্তু তিনি তো বললেন খেয়ে এসেছেন!
– মিথ্যা বলেছেন। আর দেখুন তো উনি চলে গেছেন কিনা? জরুরি কথা ছিলো।
– খাবার টা শেষ হোক।
– উনি চলে যাবেন ততক্ষণে।
রীতা বাধ্য হয়ে খাবারের প্লেট রেখে রশীদ সাহেবের খোঁজে বের হলেন।
দোতলার সিড়ি অবদি এসে দেখলেন রশীদ সাহেব সোফায় পা দুলিয়ে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন।
ফিরে এসে অদ্রিকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে কিছুটা বিরক্ত হলেন। মেয়েটা এমন কেনো? খাবেনা, ঘুমাবেনা ঠিক মতো আর অসুস্থ হবেন।
প্লেটে এখনো খাবার পরে আছে। ম্যাডামের সমস্যাটা কী তার জানা হলো না। হবেও কিনা সেটাও তার জানা নেই।
রান্নাঘরে যাওয়ার সময় রশীদ সাহেবকে রীতা বলে গেলেন
– ম্যাডাম আপনাকে দুপুরে খেয়ে যেতে বলেছেন। তিনি আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা বলবেন।
রশীদ সাহেব খবরের কাগজ টিটেবিলে রেখে বললেন
– দোতলায় গিয়ে কথা বলে আসবো?
রীতা বললেন
– না, তিনি ঘুমাচ্ছেন।
– আপনার সমস্যা না হলে একটা কথা বলি। আপনি কোনো একটা ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকুন। রান্না হলে ডাক দিবো।
রশীদ সাহেব খবরের কাগজ নিয়ে নিচতলার  ডানের শেষের ঘরটায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন।
অদ্রি মেয়েটা সত্যি তাকে খুব ভালো জানে। তা না হলে সে যে না খেয়ে আছেন সেটা বুঝতে পারতেন না।
নিদ্র বেশ মনোযোগ দিয়েই ফুলটায় লাল রঙের আঁচড় দিচ্ছিলো। পেছন থেকে মিস্টার ব্রন্ড বললেন
– নিড্রো, সুন্দর হওয়া চাই। আমার স্ত্রীকে খুশি করতে হবে।
নিদ্র বেশ গম্ভীর স্বরে বলল
– চেষ্টা করছি।
নিদ্রের কেনো যেন এসব কাজ করতেই ভালো লাগে। তার এই কাজের মাধ্যমে একজন দম্পতি তাদের নবজীবন শুরু করবে। বাচ্চাকাচ্চা হবে হয়তোবা না। হয়তোবা দেখা যাবে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলো। এই দুজন একে অপরকে কতোটা ভালোবাসে এখন ! দেখা গেলো ভবিষ্যতে কোনো একটা কারণে তাদের মাঝে সম্পর্কে কিট জন্ম নিতে শুরু করবে। তারপর সেই কিট পুরো সম্পর্ক টাকে ধ্বংস করে দিবে। তারা একে অপরকে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের মতো চলতে শুরু করবে। এক পর্যায়ে তারা নতুন কারো সাথে পুরাতন নিয়মে প্রেম শুরু করবে। প্রেম গভীর থেকে গভীর হলে তারা বিয়ে করবে।
এই নিয়মের পুনরাবৃত্তি হবে কি? নাকি হবে না? নিদ্রের ভেতর একটা ছোট্ট যুদ্ধ চলছে। যদি এরকম সম্পর্ক গুলো এতো সহজে ভেঙে যায় তবে তার সম্পর্ক কেনো ভাঙছে না? তাদের মধ্যে তো কোনো সম্পর্কই তৈরি হয়নি কখনও তাহলে ভাঙবে কীভাবে? কিন্তু অদ্রির প্রতি তার টান কাটছে না কেনো? নাকি এটা শুধু মোহ না, অন্যকিছু।
এই মেয়েটা আমাকে শান্তি দিলো না। নিদ্র নিজের উপরই বিরক্ত লাগছে।
সন্ধ্যার দিকে এক পৃথিবী সমান খুদা নিয়ে বাসায় ঢুকলো নিদ্র। পেটের মধ্যে ইঁদুর দৌড়ে চলছে। দাদী কি তার জন্য খাবার নিয়ে বসে আছেন? নাও হতে পারে। বয়স হয়েছে তার। দেশের বাড়ি যাওয়ার জন্য তার নিজের মন উতলা হয়ে আছে। টাকা না জমিয়ে তো যাওয়াটাও ঠিক হবেনা। ওখানে কে তাকে টাকা ধার দিবে? বাবা তো একদমই পছন্দ করছেন না বাংলাদেশে যাওয়ার বিষয়টা।
রান্নাঘরে ঢুকে পাউরুটি আর ডিম ভেজে কোনোমতে খেয়ে পেট ঠান্ডা করে দাদীর রুমের দিকে গেলো।
দাদী ঘুমে তলিয়ে আছেন। এখন ডাক দেয়া ঠিক হবেনা।
নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হবার জন্য বাথরুমে গিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে রইলো নিদ্র।
দিনটা মনে নেই, খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। ছাদে ভিজতে ইচ্ছে করছিলো। নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে ছাদে গিয়ে বৃষ্টির ভিজতে শুরু করেছিলো। বেশ ঠান্ডা ছিলো ওইদিন রাতে।
অদ্রিও এসে দাঁড়ালেন ওই সময় বৃষ্টির মধ্যে। আবছায়া আলোতে অদ্রির ভেজা শরীর তার আজ অবদি ধরে রাখা নিয়ন্ত্রণ কে ভেঙে দিয়ে তাকে উন্মুক্ত পাগল বানিয়ে দিয়েছিলো! অদ্রিকে জড়িয়ে ধরে যেন কিছুটা শান্তি পেয়েছিলো সে! তার শরীরের মধ্যে বারবার কেঁপে ওঠা শরীর টার হৃদস্পন্দন তার ভেতরটাকে পুড়িয়ে দিচ্ছিলো। ইচ্ছে করছিলো ভেজা শরীরের সুখ টা নিজের করে নিতে! কিন্তু তা আর হয়নি!
এতো সহজে কোনো কিছু পাওয়াতে হয়তোবা সুখ নেই। একটু ধীরে ধীরে পাওয়ার মাঝে পৃথিবী সমান সুখ লুকিয়ে থাকে।
ওই ভেজা শরীরের গন্ধ একদিন সে নিবে তবে সেদিন কোনো ভয়, লজ্জা, সংকোচ থাকবেনা।
অদ্রিও কি এভাবে তার মতো করে ভাবে আমাকে? নিদ্র নিজেকেই প্রশ্নটা করলো! না, মেয়েরা কোনো ছেলেকে এভাবে ভাবেনা। তাদের ভাবনা অন্যদিকে প্রবাহিত হয়।
ওদের ভাবনায় পবিত্রতা থাকে। আমি।যাবো তার কাছে যাবো। যেভাবেই হোক অদ্রিকে আমার পাওয়া চাই! সত্যি তাকে ভালোবাসি তা না হলে এতো দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও তার প্রতি টান কাটছেই না বরং আরো বাড়ছে! হ্যাঁ তাকেই আমি ভালোবাসি!
নিদ্র যেন পণ করছে নিজের কাছেই।গোসল সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো! অনেকটা শান্তির ঘুম।
অদ্রির ঘুম ভাঙলো তখন বিকাল বেলা। রশীদ সাহেব দুপুরে খেয়ে দেয়ে নিচের বসার ঘরে সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। যদিও এটা একবার পড়েছেন। কিন্তু কী আর করার। কিছু তো করার দরকার। অদ্রি তার সাথে জরুরি কী কথা যেন বলবে কিন্তু ও এখনো ঘুমাচ্ছে।
অদ্রি বিছানা ছেড়ে উঠে একটা চিঠি লিখতে বসলো। মাত্র ৫ মিনিটে চিঠিটা লিখা শেষ করে নিজেই নিচে নেমে আসলো। আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলো কী লিখবে!
অদ্রিকে দেখে রীতা বললেন
– আপনি অসুস্থ, আমাকে ডেকে পাঠালেই তো পারতেন।
অদ্রি মুচকি হাসার চেষ্টা করে বললো
– এখন একটু ভালো লাগছে।
রশীদ সাহেবের হাতে চিঠিটা হাতে দিয়ে বললো
– খামে নাম ঠিকানা লিখে দিয়েছি। আপনি শুধু স্ট্যাম্প লাগিয়ে চিঠিটা পাঠিয়ে দিবেন।
রশীদ সাহেব চিঠিটা হাতে নিয়ে ঠিকানা পড়ে বুঝতে পারলেন, চিঠিটা কার উদ্দেশ্যে লেখা।
রীতা, অদ্রির মুচকি হাসি দেখে বেশ অবাক হলেন। এই মেয়ের মুচকি হাসিতে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে। আজ অবদি কেউ পড়েছে কি প্রেমে?
অদ্রি রশীদ সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন
– দুপুরে খেয়েছেন?
– জি মা। তুমি তো খাও নাই। খেয়ে নাও মা।
রীতা বললেন
– অদ্রি আপনি আপনার রুমে যান। আমি খাবার নিয়ে আসছি।
– একটু পরে খাই। এখন ভালো লাগছে না।
– না, আপনাকে এখনই খেতে হবে। এরকম অনিয়ম করতে করতে আপনার অবস্থা কী খারাপ হয়েছে বুঝতে পারছেন আপনি?
অদ্রি মাথা নিচু করে বললো
– আচ্ছা আপনি খাবার নিয়ে আসুন।
অদ্রি চলে যাচ্ছিলো পিছনে ফিরে রীতাকে বললেন
– লিলিকে দেখছিনা। ও কই?
রীতা বিরক্ত হয়ে বললেন
– তার খোঁজ পাওয়া যায় নাকি? সে তো নিজের মতোই স্বাধীন।
– ওকে পেলে বলবেন, আমি তাকে ডেকেছি।
বিছানার উপর বসে বসে ভাবছে অদ্রি, চিঠিটা দেয়া কি ঠিক হলো? তার আগের চিঠিরও উত্তর আজও পায়নি সে। বেহায়া হয়ে গেলো শেষ পর্যন্ত?
এবারই শেষ আর কোনো চেষ্টা সে করবেনা। একা একাই তো কতোটা বছর কাটিয়ে দিয়েছে সে! আর কয়টা দিনই সে বাঁচবে? শরীরের যে অবস্থা তাতে হায়েস্ট ১০ বছর বা তার কমও হতে পারে, তারপর শান্তির ঘুম। চোখ ভিজে উঠেছে অদ্রির। মানুষ কখনো তার সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনা কিন্তু তার কোনো স্বপ্নই তো পূরণ হলোনা। একটা স্বপ্ন অন্ততপক্ষে যদি পূরণ হতো।
নিদ্রের চেহারাটাও সে,পুরোপুরি মনে করতে পারেনা। কেমন আবছা আবছা লাগে।
চলবে……!
© Maria Kabir

মন ফড়িং ♥ ৭.

0
মন ফড়িং ♥ ৭.
মন ফড়িং ♥ ৭.
মন ফড়িং ♥
৭.
নাজমুল সাহেব নিদ্রের দরজার সামনে পানির বোতল ডান হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বাম হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিচ্ছেন।শব্দের ঊর্ধ্বক্রমে টোকা দিচ্ছেন দরজায়। কিন্তু ছেলের গলার স্বর বা দরজার দিকে এগিয়ে আসার শব্দ পাচ্ছেন না। ইখলাস সাহেব ভাবলেন
– বাম হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে যেরকম শব্দ হচ্ছে, ডান হাতেও কি একই রকম শব্দ হবে? নাকি কম বা বেশি?
তার একসময় মনে হলো একই রকম শব্দ হবে মানে শব্দের তীব্রতা একই হবে আবার মনে হলো না শব্দের তীব্রতা ভিন্ন হবে। প্রমাণ করার লক্ষ্যে পানির বোতল বাম হাতে নিয়ে ডান হাতে দরজায় টোকা দিলেন কয়েকবার।
এবার তীব্রতা পূর্বের তুলনায় বেশি, তবে বেশিটা কতোটা বেশি সেটা ধরতে পারছেন না।
কতোটা বেশি জানার জন্যে আবারো বাম হাত দিয়ে টোকা দিলেন বেশ কয়েকবার। না এবারও তিনি ধরতে পারছেন না।
” একবার না পারিলে, দেখো শত বার ” প্রবাদ বাক্য না কী যেন আজকে তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন। না করে তিনি এখান থেকে এক পাও নড়বেন না।
রশীদ সাহেব গভীর চিন্তায় ডুবে থাকেন প্রায়শই। কারণ তার স্ত্রী ভালো করেই জানেন। তারপরও তিনি স্বামীর কাছ থেকে প্রতিদিন শুনতে পছন্দ করেন। এমনকি চিন্তার সমাধানও জানেন এবং প্রতিদিনই বলেন খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কিন্তু তার স্বামী মানতে নারাজ। তার কথা, কখনো সে যাবে না।
সকালের নাস্তা দেয়ার সময় রশীদ সাহেবকে বললেন
– এতো কীসের চিন্তা শুনি?
– একটাই তো চিন্তা হোসনের মা। ভাবলাম অনেক বুঝছো?
– তা না হয় বুঝলাম। কী ভাবলে শুনি তো?
– তোমার সমাধানটাই মানতে হবে। তাছাড়া উপায় পাচ্ছিনা। ব্যাংকে যা আছে ওতে খরচ কুলোবে না।
– নাস্তাটা করে বের হয় সেই উদ্দেশ্যে!
রশীদ সাহেব কথার উত্তর না দিয়ে নাস্তায় দেয়া রুটি আর আলু ভাজি খেতে শুরু করলেন।
আর ভাবতে লাগলেন, আজ যদি নাজমুলের মতো ভাগ্য নিয়ে জন্ম নিতাম তাহলে কতোই না সুখী হতাম।
অদ্রির চোখ খুলতে ইচ্ছে করছেনা কিন্তু চোখ না খুলেও শান্তি পাচ্ছেনা।সে এখন কোথায় আছে? তার রুমেই নাকি অন্য কোথাও? তার মন বলছে সে কোনো লাশ কাটা ঘরে পরে আছে। ডোম এখনও আসেনি বিধায় তাকে নিচেই ফেলে রাখা হয়েছে। আর মস্তিষ্ক বলছে, তুই তোর বিছানায় শুয়ে আছিস।নিজের কর্ম দোষে তার এই অবস্থা।
মনের কথা মানবে নাকি মস্তিষ্কের? কে সঠিক বলছে? তার মনের কথা খুব কমই সঠিক হয়েছে। মস্তিষ্ক কখনো কিছু বলেছে কিনা মনে করতে পারছেনা। কখনো বলেনি তাহলে এখন কেনো বলছে?
আসলেই সে লাশ কাটা ঘরে পরে আছে। না তার মস্তিষ্ক কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেনা। মাথার বাম পাশে চিন চিন করে ব্যথা শুরু হয়েছে। কেমন একটা বিশ্রী গন্ধ তার নাকে আসছে। আর আবারও পেট গুলিয়ে আসছে। তার লাশের পাশে সাদা রঙের বড় বড় ইঁদুর গুলো হাঁটছে। লাশকাটা ঘরে নাকি এরকম ইঁদুর থাকাটা স্বাভাবিক। লাশ কেটে কুটে যেটুকু অংশ আশেপাশে পরে থাকে সেটুকু অংশ খেতেই নাকি তারা আসে।
কী আজব তাই না? এই মৃত দেহটাও কিছু ছোটো প্রাণীর আহার জোগায়। কবরে অণুজীব গুলো এই দেহের পচন ঘটাবে। মাটির দেহ মিশে যাবে মাটিতে।
মাথার ব্যথাটা বাড়ছে। আসলেই সে লাশকাটা ঘরে নাকি তার বিছানায় জানতে হবেই। জোড় করে চোখ খোলার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো অদ্রি।
মাথার ব্যথাটা বাড়ছে আরো। সহ্য হবার মতন না।
চোখ খুলে মাথার উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যান টাকে দেখতে পেলো অদ্রি। কেমন যেন আবছায়ার মতো। আশেপাশে তাকিয়ে নিজের চেনা রুমটাকে দেখে একটু ভালোলাগা কাজ করছে তার মধ্যে। মাথার সেই ব্যথাটা একটু কমেছে।
অদ্রির চোখ খোলা দেখে রীতা বললেন
– ম্যাডাম, খাবার আনবো?
অদ্রি চোখ বন্ধ করে বলল
– রান্না কী করেছেন?
রীতা ধীরে ধীরে বললেন
– আপনি অসুস্থ তাই ফ্যানা ভাত আর কাঁচা কলা ভর্তা করিয়েছি লিলিকে দিয়ে।
এখন আনি?
অদ্রি বলল
– এখন খেতে ইচ্ছে করছেনা।
– আপনি চোখ বুজে থাকবেন আমি চামচে করে খাইয়ে দেই?
অদ্রি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
রশীদ সাহেব বসার রুমে বসে আছেন। রীতা তাকে দেখে সালাম দিলেন৷ রশীদ সাহেব সালামের উত্তর দিলেন।
রীতা মুচকি হেসে বললেন
– আজকে খেতে বলবো না আপনাকে কারণ অসুস্থ মানুষের খাবার রান্না হয়েছে আজকে।
রশীদ সাহেব অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন
-কার কী হয়েছে? অদ্রির কিছু হয়েছে?
– তা না হয়ে উপায় আছে? খাবেন না ঠিক মতো তারপর অসুস্থ হবেন।
– এখন কী অবস্থা? একটু জরুরি কথা ছিলো। কথা বলা যাবে?
– যাবে বৈকি। আপনি বসুন, আমি রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে আসি তারপর একসাথে যাবো।
খাবারের ট্রে বিছানার পাশে ছোটো টেবিলে রেখে অদ্রির গায়ের কাথা ঠিক করে দিয়ে বললেন
– ম্যাডাম রশীদ চাচা আসছেন আপনার সাথে নাকি জরুরি কথা আছে। আসতে বলবো?
অদ্রি চোখ বোজা অবস্থায় বলল
– বলুন।
রশীদ সাহেবকে বিছানার পাশে চেয়ারে বসতে দিয়ে অদ্রিকে খাবার খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন রীতা।
রশীদ সাহেব কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বললেন
– মা, এরকম আর কইরো না। নিজের খেয়াল রাখাটা দরকার মা।
অদ্রি মাথা নাড়ালো।
– মা, আমি একটা বড় সমস্যায় পড়েছি। সাহায্য করতে পারবা?
– বলুন।
– আমার ছোটো মেয়েটা প্রেম করেছে এক বড় ঘরের ছেলের সাথে। ছেলে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা জানে। তার কোনো সমস্যা নাই কিন্তু তার পরিবার চায় তাদের বউকে কোনো বড় বাড়ি থেকে তুলে নিবে। আমাদের বাড়িটা তো দেখেছোই। বড় বাড়ি ভাড়া করার মতোন টাকা নাই। যদিও ভাড়া করি তাহলে মেয়েকে সাজিয়ে দিতে পারবোনা। আবার বর পক্ষকে তো হাবিজাবি খাওয়ানো যায়না। তুমি বিরক্ত হচ্ছো না তো?
অদ্রি বলল
– আমার এই বাড়িটা তো খালিই পরে আছে। কয়েকদিনের জন্য আপনারা এখানে আসুন। ছোটো মেয়েটার বিয়েটাই তো?
– জি মা।
– কবে বিয়ে?
– এই সামনের সপ্তাহের পরের সপ্তাহে।
– সমস্যা নাই চাচা। আপনি আর চিন্তা করবেন না। খেয়েছেন দুপুরে?
– জি৷ তুমি খাও মা, আমি আপাতত যাই।
– আচ্ছা।
রশীদ সাহেবের চিন্তা এখন দূর হলো কিছুটা। মেয়েটাকে জামাই এর হাতে তুলে দেয়ার পর পুরোপুরি চিন্তামুক্ত হওয়া যাবে।
চলবে……!
© Maria Kabir

মন ফড়িং ♥ ৬.

0
মন ফড়িং ♥ ৬.
মন ফড়িং ♥ ৬.
মন ফড়িং ♥
৬.
ইখলাস সাহেব বিকট  শব্দে হাসতে শুরু করলেন।সেই শব্দ অদ্রির কানে অসহ্য লাগছে। হাসির শব্দ তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। মানুষ কীভাবে এতো বিকট শব্দে হাসতে পারে? অদ্রি কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা। বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে এগিয়ে যাবে ঠিক তখনই দেখলো ইখলাস সাহেব তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা দড়ি ঝুলছে। দাঁত কিটমিট করে বলল
– খুব আনন্দে আছো তাই না?
অদ্রির গলা দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে হেচকা  টান দিলেন ইখলাস সাহেব।
দম বন্ধ হয়ে আসছে অদ্রির। দুহাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছেনা। ইখলাস সাহেবের হাত কোনোভাবেই ছাড়াতে পারছেনা। আস্তে আস্তে অদ্রির হাত অবশ হয়ে আসছে।নিশ্বাস নেয়ার ক্ষমতা সে হারিয়ে ফেলছে।
চোখে অন্ধকার শুধুই অন্ধকার, আলোর রেখার কোনো চিহ্ন নেই। গভীর অন্ধকারে ধীরে ধীরে সে তলিয়ে যাচ্ছে।এই গভীরতার কোনো পরিমাপ তার কাছে হয়তোবা নেই।
অদ্রির মনে হলো গলায় চেপে থাকা দড়িটা আস্তে আস্তে আলগা হচ্ছে।
অদ্রির বিছানার পাশে টুল নিয়ে রীতা বসে আছেন। অদ্রি ঘুমের ঘোরে আবোলতাবোল বকছে। একটু আগেই সে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছিলো। হাত পা এমনভাবে নাড়াচাড়া করছিলো ; মুরগী জবাই করার পর যেমনটা করে। তার আগে বেশ হাসছিলো, শব্দ করে না মুচকি হাসি। অদ্রি ম্যাডামের হাসি এই প্রথম সে দেখেছে। মানুষটা যে এরকম কেনো? প্রশ্নের উত্তর তাকে খুব খোটায়। কিছু একটা বলছিলো, ঠোঁট নড়াচড়া করছিলো। হয়তোবা ভালো কোনো স্বপ্ন দেখছিলো।
এখন একটু স্বাভাবিক আছে।এঠো চায়ের কাপ নিতে এসেই রীতা দেখে যে, অদ্রি ম্যাডাম বমি করছে। ম্যাডামের এই অবস্থা দেখে রীতা দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন। তারপর বমি করা শেষ হবার পর তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে খাবার পানি আনতে যায়। খাবার পানি নিয়ে এসে দেখেন অদ্রি গভীর ঘুমে নিমগ্ন। বমির জায়গাটা এখনও অপরিষ্কার। মোছার সময় পাইনি তা না, ম্যাডামের পাশ থেকে সরতেই তার ভালো লাগছেনা। এটা ঠিক যে ম্যাডামের সাথে তার কথাবার্তা খুব কম হয় কিন্তু রীতা তার প্রতি আলাদা স্নেহ অনুভব করে। ম্যাডাম তার মেয়ের বয়সে। একটা মাত্র ছেলেটা তার স্বামীর কাছে।
স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়েছেন কিন্তু ছেলেটার জন্য তার মনটা পোড়ে। এখানে তো সে বেশ আছে কিন্তু ছেলেটা?
ম্যাডাম পুরো রাত না খাওয়া, সকালেও কিছুই খাননি। ওই অবস্থায় লাল চা?
ম্যাডামের  ভাসা ভাসা চোখ দুখানা গর্তে চলে গেছে। মুখখানা শুকিয়ে ছোটো হয়ে গেছে।
নাজমুল সাহেব এলকোহলের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বেশ তৃপ্তি নিয়ে বলল
– তোর দাদীকে পারমিশন দিয়ে দিলাম বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য।
নিদ্র হাত লেগে থাকা লাল রঙের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বলল
– পারমিশন দিয়ে দিলা?
– yes ! my dear son.
– তোর দাদী বলে সম্বোধন করলা ক্যান?
– কারণ সে আমার কথা শোনে নাই।
– তাই বলে মা বলবা না?
গ্লাসে এলকোহল ঢালতে ঢালতে বললেন
– না, বলবো না।
নিদ্র অনুভূতিহীন স্বরে বলল
– আচ্ছা মনে পড়ে, ফরেইনার বিয়ে করার কারণে দাদীকে তেজ্য করা হয়েছিলো?একমাত্র তোমার কারণে? তোমার এ ধরণের কাজে তার বাবা কসম দিয়েছিলেন যেন, মরা মুখও দেখতে না আসে। তোমার জন্য সে তার স্বপ্নের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখানে চলে আসেন।
– my dear son, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা বন্ধ করবি?
– আমি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছিনা।
– আমাকে শিখাতে আসছো তুমি?
– তোমাকে তো দাদীই কিছুই শিখাতে পারেনি। আমি তো কিছুই না।
– বেশ বড় বড় কথা বলছো, সাহস এতো কই থেকে আসে? আমার টা খাও আমার টায় পড়ো তার উপর বড় বড় কথা!
– আমি তোমার টা খাইও না পড়িও না। শুধু এখানে থাকি।
– থাকছো কেনো বাবা? চলে যাও।
– যাবো, একটা কথা ছিলো।
– যেহেতু চলে যাবি সেহেতু ডিসকাউন্ট হিসেবে একটা না অনেক গুলো কথা বলতে পারবি।
– দাদীর পা ধরে মাফ চেয়ে নিও।
নিদ্র কথাটা শেষ করেই বাবার সামনে থেকে উঠে চলে আসলো।
আজ দুদিন যাবত ঘুম ছাড়া কোনো প্রকার রেস্ট না নিয়েই কাজ করেছে নিদ্র। হাতের একপাশে লাল রঙ লেগে আছে। কোনোভাবেই উঠাতে পারছে। বেশ মোটা অংকের ডলার পেয়েছে, অবশ্য খাটাখাটুনি তো আর কম হয়নি। আগামীকালও কাজ আছে। একটানা কাজ করলে বাংলাদেশে যাওয়ার ডলার যোগাড় হয়ে যাবে। ব্যাংকে কিছু আছে। আর দাদীর খরচ নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই।
বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে চোখ বুজে নতুন দম্পতির ফ্ল্যাট ডেকোরেশান কীভাবে করেছে ভাবছে। নতুন দম্পতির ঘনিষ্ট মূহুর্তের ছবি গুলো কোনো দ্বিধা ছাড়াই তাকে দেখতে দিয়ে দিলো। আর তার সামনেই চুম্বন করতেও দ্বিধাবোধ করেনি৷ এইখানকার কালচারই এরকম। নিদ্র এই কালচারের মধ্যেই বড় হয়েছে তারপরও তার কেনো যেন এসব ভালো লাগেনা। যদি তার মা সাথে থাকতো তাহলে হয়তোবা সে এদের মতোই হতো৷ রাস্তাঘাটে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করছে কিন্তু কোনো লাজ শরম নাই। তারও লজ্জাশরম থাকতো না। যার তার সাথে বেডে যেতো।
লাস্টের কথাটা মনে পড়াতে নিদ্রের নিজের কাছেই বিশ্রী লাগলো। হঠাৎ মৌরির কথা মনে পড়লো। মেয়েটার চরিত্র আর এদেশের মানুষের চরিত্র এক।
অদ্রির কাছে গিয়ে কি বলবে সে?
সরাসরি বলে দিবে, চলুন আমার সাথে?
আর বললেই কি আসবে? যদি তা না হয় তাহলে সে কী করবে?
আর ফিরবেই না এখানে।
একাকী এই সময় অদ্রি পাশে থাকলে ভালোই কাটতো। মাঝেমধ্যে তার মাঝেও একপ্রকার তৃষ্ণা জাগে। আসলে সেও রক্ত মাংসের মানুষ। আশেপাশে এরকম দেখে কেইবা এরকম একাকী জীবন কাটাতে চাইবে?
সে মিছে আশায় দিন কাটছে।
দরজায় টোকার শব্দে নিদ্রের চিন্তায় ছেদ পড়লো। নিদ্র চুপচাপ পরে রইলো বিছানায়। দরজায় টোকার শব্দটা তীব্র হচ্ছে। হতে থাক, তার বাবা পুরোপুরি মাতাল অবস্থায় এই কাজ করছেন। দরজা খোলা মানেই বিপদ, মহাবিপদ। সারারাত তাকে জাগিয়ে রেখে বাজে ভাষায় কখনো, কখনো সাধু ভাষায় লেকচার দিবে।
সকালে তার কাজ আছে এখন তাকে ঘুমাতে হবে।
চলবে…….!
© Maria Kabir

মন ফড়িং ♥ ৫.

0
মন ফড়িং ♥ ৫.
মন ফড়িং ♥ মন ফড়িং ♥ ৫.
মন ফড়িং ♥
৫.
খোলা চুলে বিলি কাটতে কাটতে নিদ্র বলল
– না খেয়ে থাকতে খুব ভালো লাগে আপনার?
অদ্রি কোনো উত্তর না দিয়ে চোখ বুজে থাকে। নিদ্র, কপালে ডান হাতের উল্টো পাশ রেখে একটু চাপাস্বরে বলল
– ঘুমানোর অভিনয় করাটা ঠিক হচ্ছেনা। আপনি অভিনয়ে মোটেও পটু নন।
অদ্রি এখনও চুপ।
নিদ্র কানের কাছে ফিসফিস করে বলল
– আপনার চুলে বিলি কাটছি, আপনার বিরক্তিকর লাগছেনা?
অদ্রি একশব্দে বলল
– না।
– কেনো?
– কারণ শুনতে হবে না!
নিদ্র চুলের মাঝ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল
– তাহলে আমিও আর আপনার চুলে বিলি কাটবোনা।
অদ্রি চোখ খুলে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছেলেটা মিটিমিটি হাসছে। চোখের কোণে হাসি লেগেই আছে।নিদ্র দেখতে এতো সুন্দর কেনো? বেশিক্ষণ তাকাতেও ভয় লাগে। যদি নিজেরই নজর লেগে যায়?
– নিদ্র !
নিদ্র অন্যদিকে তাকিয়ে বলল
– বলুন।
– আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে পারি?
নিদ্র বলল
– না।
– কেনো?
– কারণ শুনতে হবে না।
অদ্রি খুব জোড়ে হাসতে হাসতে শুরু করলো।
হাসি থামিয়ে বলল
– আপনি বাচ্চাদের মতো পুরোটাই। আসলে মাথাটা কেমন ভার হয়ে ছিলো। আপনার বিলি কাটাতে বেশ ভালো লাগছিলো।
– মাথাটা ভার কেনো হয়েছিল?
– বমি হয়েছিলো সকালের দিকে। তখন থেকে মাথাটা ভার।
– কারণ টা কি আমি বলবো?
– না, আমিই বলি। রাতে খাইনি, সকালেও বেশ দেরি করে চা খেয়েছি। তারপর হুট করে গা গুলিয়ে বমি….
– আমাকে ছুঁয়ে দেখতে চাইলেন?
নিদ্র, অদ্রির বিছানার বালিশের পাশে বসে আছে। অদ্রি বালিশে আধশোয়া অবস্থায় হেলান দিয়ে আছে। আধশোয়া অবস্থা ছেড়ে উঠে বসলো। কিন্তু নিদ্রের প্রশ্নের উত্তর দিলোনা।
নিদ্র বলল
– এতো অভিমান কি ভালো?
– আপনি অভিমানের কিছু বুঝেন?
– বুঝি কিনা জানিনা, তবে পাশের মেয়েটি যে অভিমানে জমে আছে সেটা বুঝি।
অদ্রি, I am very sorry! আর কখনোই এমন হবেনা। সত্যি বলছি আমি।
অদ্রির কাছে, খুব কাছে যাওয়ার সাহসটা এখনো জমাতে পারেনি। কাছে গিয়ে হুট করে জড়িয়ে ধরলে বা হাতটা চেপে ধরে চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে বা দূরে কোথাও তাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে পারলে অভিমানের কালো মেঘটা দূর হতো আমাদের মাঝের। তার সাথে প্রত্যেকটা মূহূর্ত্ব কে অনুভব করা যেতো। তার বিষন্নতার সেই চেহারা যদি সারাজীবনের জন্য মুছে দেয়া যেত তাহলে তার সাদামাটা মুখের চাহনিতে আর বিষন্নতা লুকিয়ে থাকতো না। তার চোখ দুটোতে আর কষ্টের জল থাকতোনা। তার চোখ দুটোতে আমার দেয়া স্বপ্নের রঙ থাকতো কানায় কানায় ভরে।
হ্যাঁ, ভালোবাসি কিন্তু তার অনুমতি ছাড়া তাকে ছুঁয়ে দেখার দুঃসাহস আমি করতে পারিনা।
অদ্রি আমাকে ছুঁয়ে দেখতে চায়, কতটুকুইবা ছোবে? হাতটাকে আলতো স্পর্শ করবে। বিদ্যুতের মতো একটা কঠিন শকও আমাদের লাগতে পারে। উষ্ণ স্পর্শ পাবার লোভ কে সামলাতে পারে? তাও ভালোবাসার সেই মানুষটির কাছ থেকে!
অদ্রি আস্তে আস্তে নিদ্রের কাছে এসে সত্যিই হাতটি আলতোভাবে  ছুঁয়ে দিলো।
কয়েক সেকেন্ডের মাথায় হাতটা সরিয়ে নিলো।
নিদ্র ঠাট্টার সুরে বলল
– ব্যস এটুকু? হাত কীভাবে ধরতে হয় জানেন না?
খপ করে অদ্রির হাত ধরে ফেলল নিদ্র। অদ্রি বিরোধিতা না করে চুপচাপ বসে বসে দেখতে লাগলো নিদ্রের চঞ্চলতা।
অদ্রির হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিদ্র তার হাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে, হাতটাকে শক্ত করে চেপে ধরলো।
– দেখেছেন ম্যাডাম এভাবে হাত ধরতে হয়, যাতে ছেড়ে না যেতে পারে।
– হাতটাকে এখন ছাড়ুন, আমি ঘুমাবো।
– অনেক ঘুমিয়েছেন এখন গল্প হবে শুধু।
– কই অনেক ঘুমালাম? মাত্র একটু আগেই ঘুমিয়েছি।
নিদ্র অদ্রির খোলা এলোমেলো চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো।
– অদ্রি
– হুম
– আমার হবে?
– তাছাড়া কার আমি?
– খুব কাছের থেকে হবে? তোমার প্রত্যেকটা নিশ্বাসের সাক্ষী আমাকে করবে? তোমার প্রত্যেকটা চোখের পলকের সঙ্গী আমায় করবে? তোমার নিশ্বাসে আমার নিশ্বাস ভারী করতে দিবে?
তুমি বলছি রাগ হচ্ছেনা?
অদ্রি ভাবলো নিদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলবে।
অদ্রি, নিদ্রের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো নিদ্রের চেহারা পরিবর্তন হচ্ছে। ধীরে ধীরে সেই চেহারা চেনা কারো রূপ নিচ্ছে।
অদ্রি চিৎকার করে হাতটা ছাড়িয়ে দূরে সরে গেলো। সামনে যে বসে আছে সে নিদ্র না তার মৃত স্বামী ইখলাস সাহেব।
ইখলাস সাহেব তার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
চলবে……!
©  Maria Kabir

মন ফড়িং ♥ ৪.

0
মন ফড়িং ♥
৪.
কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই……
মোবাইলের স্পিকার মান্না দের বিখ্যাত গানে মুখরিত হচ্ছে। নাজমুল সাহেব বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে গান টা শুনছেন। মানুষ ভারী আজব স্বভাবের। কষ্টের সময়ে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা না করে আরো বেশি কষ্ট পেতে চায়। ছ্যাকা খাওয়ার পর, স্যাড সং বেশি শুনে মানুষ। কলেজ জীবনের মূহুর্ত গুলো ভাবতে নাজমুল সাহেবের ভালো লাগে। ওই সময়টাতেই সে জীবনের শ্রেষ্ঠ মূহুর্ত গুলো কাটিয়েছেন। তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে ছিলো ৭ জন। তিন জন মেয়ে চার জন ছেলে। মেয়ে তিন জনের সাথে একেবারেই কোনো যোগাযোগ নেই। তবে তিন জনের মধ্যে রাশা আর নীপা নাকি বেশ ভালোই আছে কিন্তু মায়া মেয়েটা নাকি আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যার পেছনের কারণ নাকি পরোকীয়া! তবে সে পুরোপুরি সঠিক তথ্য জানেন না। পরোকীয়ার ব্যপারটা মিথ্যেও হতে পারে। মায়া ওইসময়ের কলেজে সবথেকে ভদ্র মেয়ে ছিলো। কোনোদিন কোনো ছেলে ওর ভদ্রতার জন্য একটা বাজে শব্দ ওকে বলার সাহস পায়নি। মাঝেমধ্যে তো আমি নিজেই ভয় পেতাম কথা বলার সময়। কোন সময় কী বলে বসবো বেচারি রাগ করে বসবে। ৬ জন খোলামেলা মনের মানুষের সাথে ১ জন বদ্ধ মনের মানুষের ফ্রেন্ডশিপটা উদ্ভট লাগলেও মোটেও উদ্ভট ছিলোনা। ও আমাদের সাথে আঠার মতো লেগে থাকতো আর আমরাও কখনো ওকে ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবতামও না।
বাকি চারজনের তিনজন বাংলাদেশে আর চার নম্বর জন নাজমুল সাহেব তো প্রবাসে নিজেকে গুম করেছেন।
দেশে গিয়ে একবার সবার সাথে দেখা করার স্বাদ জাগে প্রায়ই কিন্তু স্বাদ পূরণ করা আর হয়না।
নিদ্রকে জোড় করে পাঠানোর পিছনের কারণ টা নিদ্র নিজেও জানে। রশিদের বাসায় বেশ ভালোই ছিলো তার ছেলে। খারাপ কিছু ঘটলে রশিদ নিজেই বলতো।তবে রশিদকে যে নিদ্র খুব জ্বালিয়েছে ব্যাপারটা রশিদ মুখে না বললেও কথাবার্তায় কিছুটা বুঝতে পেরেছেন।
গরম চায়ে চুমুক দেয়ার পর অদ্রির টক ঢেকুর ওঠা বন্ধ হলো। কাথা সেলাই বন্ধ রেখে চা শেষ করে বিছানা ছেড়ে নেমে জানালা খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। জানালা খোলার সাথে সাথে এক ঝাপটা ঠান্ডা বাতাস রুমের ভিতর ঢুকে পরলো। হঠাৎ করে এরকম ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটায় অদ্রির ভালো লাগলেও হালকা শীত অনুভব হলো। বর্ষামৌসুম এখনো শেষ হয়নি শীতকাল আসার কথা নয়। বৃষ্টির কারণেও এরকম ঠান্ডা বাতাসের উদ্ভব হয়। জানালা খোলা রেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের মেঘ জমাট বাধা  দেখলো অদ্রি। জমাট বাধছে আর ঘন কালো হচ্ছে। মেঘ গুলো যখন আলাদা ছিলো তখনও এতো কালো ছিলোনা। একটার সাথে একটা যুক্ত হচ্ছে আর কালো রঙের ঘনত্ব বাড়ছে। মেঘ জমাট  বাধার পরে কালো হতে থাকবে একসময় ভারী ঘন কালো মেঘ গুলো বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে হালকা হবে। খুব ছোটোবেলার বিজ্ঞান বইগুলোতে সে বৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়া পড়েছিলো। পানিচক্র বলতে কী বুঝো? পানিচক্র কী? আলোচনা করো! এই প্রশ্নের উত্তর দিতে তার বেশ মজা লাগতো। খুব সম্ভব ৪র্থ বা  ৫ম শ্রেণীর বইতে পানিচক্র বিষয়ক চ্যাপ্টার আছে।
অদ্রির মনে হলো তার পেট ফুলে উঠছে। পেটের মধ্যে কেমন যেন শব্দও হচ্ছে। গা গুলিয়ে আসছে। কেমন বিশ্রী ঢেকুর তুলার পর অদ্রি বমি করতে শুরু করলো। অদ্রির মনে হচ্ছে তার নাভির কাছ থেকে একটা চিনচিন ব্যথা পাক খেয়ে ঠিক বুকের দিকে উঠে আসছে। বমির সাথে তার পাকস্থলীও মনে হয় বের হয়ে আসবে।
– হ্যালো নাম্মি?
ফোনের ওপাশ থেকে নাম্মি হাসি হাসি স্বরে বলল
– হ্যালো।
– কাজটা কি এখনো আছে?
নাম্মি হেসে বলল
– অবশ্যই মিস্টার নিড্র ফ্রেন্ড।
– আমি কীভাবে যোগাযোগ করবো?
– ঠিকানা ম্যাসেজ করে দিচ্ছি চলে যেও সকাল ১০ টার মধ্যে। আর আমার কথা বললেই হবে। দেনাপাওনা ঠিক করে নিও।
– থ্যাংকস।
নিম্মি হেসে বলল
– নো থ্যাংকস প্লিজ।তুমি আগামীকাল সকালে পৌঁছে যেও। এখন রাখি ব্যস্ত আছি।
নিদ্র ফোন টা বিছানার উপর ফেলে দিয়ে হেসে ফেললো। নিম্মি কখনোই ব্যস্ত থাকেনা তারপরও ফোনে কথা বলার ২-১ মিনিটের মাথায় বলবে
– এখন রাখি ব্যস্ত আছি।
বাবার সকল সম্পত্তি পেয়ে এখন বেশ আরামে দিন কাটায়। কিন্তু এক সময় ১ ডলারের জন্য সে রেস্টুরেন্টে গাধার মতো খেটেছে। নিজের বার্থডে তে পর্যন্ত এক পিচ কেক খাওয়ার ডলার জোগাড় করতে পারেনি। কিন্তু মেয়েটার ক্যারেক্টার অন্যসব মেয়েদের মতোনা। বাঙালি দের মতো ক্যারেক্টার। সতীত্ব নষ্ট হতে দেয়নি। দেখতে বেশ সুন্দর অফারও কম পায়নি। মোটা ডলারের লোভ খুদা পেটে কজন ব্রিটিশ সামলাতে পারে?
কে বলবে একসময় না খেয়ে থাকা মেয়েটা এখন পায়ের উপর পা রেখে পেট পুরে খাবার খায়? অতিত কজনই বা জানতে চায়?
অদ্রি কি ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমাকে তার অতীত জানিয়েছে? যাতে আমি তার পিছু ছেড়ে দেই?
ধুর, সবকিছুতে এই মেয়েটা ভাগ বসায়। নিম্মির চিন্তার মাঝেও সে হাজির হয়। নিজের উপরই নিদ্রের বিরক্ত লাগলো।
তার বাবা কদিন ধরে এলকোহল খাচ্ছে। না করতে গেলে অভিমানের সুরে বলে
– তোর মাও শান্তি দিলোনা তুইও দিলি না। পড়াশোনা করতে বললাম করলি না। এখন কর রংমিস্ত্রীর কাজ, করবি মানুষের প্লেট ধোয়ার কাজ।
– নিজের প্লেট তো এমনিতেই ধোই। সেখানে প্লেট ধুয়ে কয়েকটা ডলার আসলে সমস্যা কী?
– তোর নজর আর চিন্তা নিচেই নামলো।
– নিচে নামাই ভালো, বেশি উপরে উঠলে ভেঙে পরার সম্ভাবনা থাকে।
– আমার ছেলে হয়ে তুই ওসব কাজ করবি? তবে আমি মোটেও আমার সম্পত্তির ভাগ দিবোনা।
– না দাও।
এই পর্যায়ে এসে তার বাবা বেশ উত্তেজিত হয়ে বোতল সুদ্ধ এলকোহল মানে বাঙালির ভাষায় মদ গিলে খায়। তারপর অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। নিদ্র প্রথম যেদিন এরকম অকথ্য গালাগালি তার বাবার মুখ থেকে শুনেছিলো, সেদিন সে বিশ্বাসই করতে পারেনি, তার বাবা এরকম গালিও দিতে পারে!
এখন অবশ্য সহ্য হয়ে গেছে। বুড়ো বয়সে এরকম নাকি সবারই হয়, তার বাবারও হয়েছে।
চলবে…….!
© Maria Kabir

মন ফড়িং ♥ ৩.

0
মন ফড়িং ♥ ৩.
মন ফড়িং ♥ ৩.
মন ফড়িং ♥
৩.
সেই সকাল থেকে খালি পেটে থাকায় অদ্রির টক ঢেকুর তুলছে। পেটও কেমন কেমন ফোলা ফোলা মনে হচ্ছে। ঢেকুর কয়েক প্রকারের আছে। কিছু প্রকার ঢেকুর মানুষের খুব পছন্দ। আবার কিছু ঢেকুর মানুষকে বেশ বিরক্ত করে। মিষ্টি ঢেকুর, টক ঢেকুর, ঝাল ঢেকুর, রসুনের ঢেকুর, মুলার ঢেকুর, বিরিয়ানির ঢেকুর…. আর মনে পড়ছে না অদ্রির। মিষ্টি ঢেকুর মিষ্টি যারা পছন্দ করে তাদের ভালো লাগে। সবথেকে বাজে ঢেকুর মুলার ঢেকুর। বেশ বাজে, এই কারণে মুলা তার অপছন্দের তালিকার শীর্ষে। বিরিয়ানীর পাগলদের আবার বিরিয়ানির ঢেকুর খুব পছন্দ করে। নিদ্রের মনে হয় এই ঢেকুর খুব পছন্দ করে। খাওয়ার পরও বিরিয়ানীর রেশ টা রয়ে যায়। তবে ঢেকুর সম্পর্কিত তার এই মতামত সঠিক কিনা তা জানা নেই তার। নিদ্রকে বা রশীদ সাহেবকে জিজ্ঞেস করতে হবে। কাথা সেলাই করা বন্ধ করে অদ্রি বালিশে হেলান দিয়ে ভাবতে লাগলো। রীতাকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়?
রীতা হচ্ছে গল্পদারী মানুষ। এই ধরণের মানুষ গল্প করতে খুব পছন্দ করে। একটু সুযোগ পেলে রাজ্যের গল্প নিয়ে বসবে। এদের গল্পের ভাণ্ডার কখনও শূন্য হয়না। রীতা বলাটা ঠিক না অদ্রি নিজেকে শুধরানোর সুরে বলল। সে বয়সে অনেক বড়, মায়ের সমতুল্য। তাই তাকে রীতা খালা বা খালাম্মা বলাটাই ঠিক।
চায়ের কাপ নিয়ে খুব সাবধানে দোতলায় উঠে আসলেন রীতা।
দরজায় টোকা দিতেই অদ্রি বলল
– খোলা আছে।
চায়ের কাপ অদ্রির হাতে দিয়ে রীতা লিলির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। কী রান্না করতে হবে না জেনে তার মতো করে রান্না করলে লিলি বেশ ঝামেলা করবে।
টক ঢেকুর এখনও বন্ধ হয়নি। এই অবস্থায় চা খেলে সমস্যা বাড়বে? নাকি চায়ের স্বাদ আর টক ঢেকুর এর স্বাদ মিক্সড হয়ে নতুন কোনো স্বাদের ঢেকুর উঠবে?
বেশ ভাববার বিষয়!
সবকিছু ভুলে এরকম উদ্ভট চিন্তা করতেও শান্তি পাওয়া যায়। অন্ততপক্ষে তাজা ঘায়ের ব্যথা গুলোকে তখন ভুলে থাকা যায়।
নাজমুল সাহেব ছেলের রুমের দরজার সামনে ১৫ মিনিট যাবত দাঁড়িয়ে আছেন। দরজা অল্প একটু খোলা, সেই খোলা জায়গা দিয়ে নিদ্রকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ১৫ মিনিট ধরে ছেলে মোবাইল হাতে নিয়ে স্থির হয়ে বসেই আছে। শুধু নিশ্বাস আর চোখের পলক পরছে তাছাড়া আর কোনো মুভমেন্ট নেই। ১৬ মিনিটের মাথায় নাজমুল সাহেব নিদ্রের রুমে ঢুলে পরলো। নক না করেই। নিদ্র প্রায়ই লাফিয়ে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে মোবাইল বিছানার উপর করে রেখে দিয়ে বলল
– তুমি??
নাজমুল সাহেব ভাবগাম্ভীর্য ধরে রাখার উদ্দেশ্যে গলা ভারী করে বলল
– কেনো আমি তোমার রুমে আসতে পারিনা?
– না, বাবা পারো কিন্তু তুমি তো এই সময় মানে ইয়ে তুমি তো কখনও আসোনা। আর নক না করেই?
– নিজের ছেলের রুমেও কি নক করে আমাকে ঢুকতে হবে? আমি তোর রুমে যখন ইচ্ছা আসতে পারি এটা আমার অধিকার। আজকে থেকে আমি তোর রুমেই থাকবো। ওকে?
নিদ্র বলল
– থাকবা।
নাজমুল সাহেব চেয়ার টেনে হেলান দিয়ে বসে বলল
– মোবাইলে কী দেখছিলি?
নিদ্র ভাবেনি তাকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে!
– আমি কিন্তু তোর রুমের বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখেছি। আমাকে খুলে বল।
– না বাবা তেমন কিছু না। ইউটিউবে ভিডিও দেখছিলাম।
– তোকে বিষন্ন দেখছি? কী হয়েছে বলবি?
বুঝেছি আমার মতো হয়েছো।
নিদ্র মুচকি হাসি ছাড়া এই কথা বিপরীতে কী বলা যায় তার জানা নেই।
নাজমুল সাহেব পায়ের উপর পা রেখে নাচাতে নাচাতে বলল
– ছেলেদের বিষন্নতা ভোলার সবথেকে ভালো উপায় সিগারেটে টান দেয়া। নিকোটিনের ধোয়ায় মনের ধোয়াশা কেটে যায়। বাপ হয়ে ছেলেকে সিগারেট খেতে বলছি বলে আমাকে খারাপ ভাবিস না। আসলে তুই তো খোলামেলা ভাবে বলবিনা। তাহলে নির্দিষ্ট করে সমাধান দিতাম। মন খুলে তুই বলবিও না কারণ আমার ফটোকপি তুই।
তোর মা আমাকে রেখে চলে গেলো তখনও আমি আমার মনের কষ্ট, বেদনা সব লুকিয়ে রেখেছিলাম। কাউকে বলিনি। সব মানুষ স্বার্থপর, মন দিয়ে কষ্টের কথা শুনবে। পরে কোনো কারণে ঝগড়া লাগলে পিছনের কথা বলে খোটা দিবেই।
এই দুনিয়াতে কেউই কারো না। দ্যাখ না আমি শেষ মেশ একা।
নিদ্র কিছু একটা বলতে যাবে তখন নাজমুল সাহেব থামিয়ে দিয়ে বলল
– তুই এখন বলবি তুই আছিস সাথে? না রে বাপ তুইও থাকবি না। বিয়ে করবি বউকে পাবি। তারপর পোলাপান হবে। এই বুড়ো বাপকে একসময় ভুলে যাবি।
শোন বাপ, মন খারাপের কারণ টাকে ধ্বংস করে দে। দেখবি ভালো থাকতে পারবি।
তোর মাকে ছাড়া দ্যাখ আমি কিন্তু ভালোই আছি। তোর দাদী আসমা খাতুন বা বেগম তার স্বামীকে মানে আমার বাপকে ছাড়া থাকতেই পারতো না। দুই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এতো মিল মহব্বত ভাবত্রি অবাক লাগতো। বাবা হঠাৎ করে স্ট্রোক করে মারা গেলেন। মা কিন্তু এখন ভালোই আছেন। মানুষ আসলে ভাবে যে সে ভালো থাকতে পারবেনা। সময় কাটবে কীভাবে? কিন্তু বাস্তবতা হলো শেষ মেশ ভালো থাকতে পারে। শুধু ভালো না বেশ ভালো।
কী বলতে চাচ্ছি তুমি বুঝতে পেরেছো? My dear son?
নিদ্র বলল
– ভাবতে হবে।
নাজমুল সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে বলল
– ওকে ভাবতে থাকো। উত্তর টা দিও। আর আপনার দাদীকে একটু বুঝাবেন যে, এই বয়সে এরকম ছেলেমি যেন বাদ দেয়।
আর ভালো লাগেনা।
নাজমুল সাহেব খুব দ্রুত তার রুমের দিকে পা বাড়ালো। অনেকক্ষণ যাবত তার বিছানায় শুয়ে মান্নাদের গান শোনা হয়নি।
একটু শান্তি না খুঁজে উপায় নেই, বাঁচতে হবে তাকে অনেকদিন, অনেক অনেক দিন।
এই পৃথিবীতে কেইবা মরতে চায়।
চলবে…….!
© Maria Kabir

মন ফড়িং ♥ ২.

0
মন ফড়িং ♥ ২.
মন ফড়িং ♥ ২.
মন ফড়িং ♥
২.
সাদামাটা অদ্রির চোখের নেশা তাকে অনেক আগেই পেয়েছে। নেশাগ্রস্ত মন নেশায় ডুব দেয়ার ইচ্ছে আজও পূর্ণ হয়নি তার। প্রায় ৬-৭ মাস কেটে গেছে সে ফিরেছে দেশ থেকে। একটা মূহুর্তে সে অদ্রিকে স্মরণ না করে থাকতে পারেনি। কোনো না কোনোভাবেই মনে পড়বে। এমনও হয়েছে ঘুমের মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়েছে। ঘুমে’র ঘোরেও সেই সাদামাটা অদ্রির অস্পষ্ট ছবি।
নিদ্রের মাঝেমাঝেই মনে হয়, ফিরে গিয়ে তাকে চুরি করে নিয়ে আসতে। পরক্ষণেই মনে হয়, সে কি আসবে তার সাথে?
চিঠির অর্থ তো আরেকটিও হতে পারে। এমনও হতে পারে তার উপকারের প্রতি কৃতজ্ঞতার স্বরূপ চিঠিটা পাঠিয়েছে।
এমনও হতে পারে চিঠিটা অদ্রির নাও হতে পারে।
এতো অস্থিরতা যে তার মাঝে জন্ম নিবে জানা ছিলোনা। জানা থাকলে সেই মানুষকে না নিয়ে ফিরতেন না।
বাবা তাকে কোনোভাবেই বাংলাদেশে যেতে দিবেন না। তারও চালচলনে পরিবর্তন আসছে। নিদ্রের কেনো যেন মনে হচ্ছে আশেপাশের সবাই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি সেও পরিবর্তন হচ্ছে। আগে কয়েকটা ডলার বেশির জন্য বেশি সময় কাজ করতো৷ দেশ থেকে ফেরার পর সেই সত্ত্বাটা হারিয়ে গেছে। আজকেও সে বেশ মোটা ডলারের কাজ পেয়েছিলো।  কাজটা ছিলো নতুন দম্পতির ফ্ল্যাট ডেকোরেশান করে দেয়া। ডেকোরেশানও না ফুল, নকশা,রোমান্টিক মূহুর্তের ছবি দিয়ে, আসবাপত্র দিয়ে সাজিয়ে দেয়া।
অন্য কোনো কাজ হলে সে করতো কিন্তু নতুন দম্পতির রোমান্টিক মূহুর্তের ছবি….
রোমান্টিক মূহুর্ত তার আর অদ্রির মাঝে আসছিলো একবার  তাও খুব অল্প সময়ের!
অদ্রির কাছে না যাওয়ার পেছনে আরও একটি কারণ আছে। নিদ্রের মনে হয় অদ্রি তাকে পছন্দই করে না। মনের টান তো দূরে থাক। হয়তোবা তার উপস্থিতি বিরক্ত জাগায় তার মনে। অদ্রির মনে তার স্বামীর স্থান এখনও আছে। সেই স্থানে অন্য কাউকে সে ঠাই দিবে না। আবার মনে হয় চিঠির অর্থ হচ্ছে, তীব্র কাছে পাওয়ার তৃষ্ণা। যেমনটা তার আছে। মরুভূমিতে হেঁটে চলা পথিকের পানির প্রতি যে তীব্র তৃষ্ণা জাগে, ঠিক তার থেকেও বেশি।
তার এই অবস্থার কথা শুনে পিটার হাসতে হাসতে বলেছিলো
– নিড্র ফ্রেন্ড, তুমি শেষ।
হ্যাঁ আমি শেষ, তবে আমার শুরুটা করতে হবে তার কাছে গিয়ে যার কাছে আমার শেষ টা হয়েছে।
হারিয়ে ফেলার ভয়টা ঝেড়ে ফেলতে হবে তাছাড়া নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়বে।
নিদ্র চেয়ারে হেলান দিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো
অদ্রি…. অদ্রি….. অদ্রি….
লিলি বসার ঘরে বেশ আয়েস করে বসে বসে মুড়ি খাচ্ছিলো। রান্নাঘরের চিন্তা এখন আর তার করার প্রয়োজন হয়না।আপামনি রান্নার জন্য লোক রেখেছেন। একজন মধ্যবয়সী মহিলা। বয়স কতো হবে? ৪২ – ৪৭? যাইহোক,তার নাম রীতা এবং তিনি সাজগোজে করতে পছন্দ করেন। রান্নাবান্নার কাজ বাদে যেটুকু সময় থাকে সেটুকু সময় তিনি রূপচর্চায় ব্যস্ত থাকেন।আপামনি তাকে কিছুই বলেন না। রীতার রান্না তেমন একটা ভালো না। তবে চা দারুণ বানান। একমাত্র চায়ের কারণেই তাকে রাখা। অদ্রি অবশ্য বলেনি, লিলি নিজেই বুঝতে পেরেছে। রঙিন ভাইজান যে চা পছন্দ করে।
মানুষটা সেই মজার মানুষ ছিলেন। কতো হাসি ঠাট্টা করতেন আর অদ্রি আপা পুরাই নিরামিষ।
রীতা কী রান্না করবে? প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য অদ্রির রুমের দিকে যাচ্ছিলো। যাওয়ার সময় খেয়াল করলেন, লিলি শুধু মুড়ি চাবাচ্ছে। লিলিকে জিজ্ঞেস করলেন
– একটু ডাল এনে দিবো?
লিলি বলল
– না।
রীতা কোনো প্রতিউত্তর না দিয়ে তার কাজে পা বাড়ালেন। লিলি মনে মনে বলল
– যে বাজে ডাল রান্না করে মুখেই নেয়া যায়না।
অদ্রি বিছানায় বসে কাথা শেলাই করছিলো। দরজায় টোকা পরাতে জিজ্ঞেস করল
– কে?
রীতা বললেন
– আমি ম্যাডাম।
– দরজা খোলা আছে।
রীতা ভেতরে এসে বললেন
– আজ কী রান্না করবো দুপুরের জন্য?
অদ্রি কাথায় ফুল তুলতে তুলতে বলল
– লিলিকে জিজ্ঞেস করো। খাবার নিয়ে ও বেশ খুতখুতে স্বভাবের। আমার তো কিছু একটা হলেও চলবে। কিন্তু ওর তো…
– আমার রান্না ওর পছন্দ না।
অদ্রি একটু হেসে বলল
– একজন রাঁধুনি আরেক রাঁধুনির রান্না কখনোই পছন্দ করেনা।
বিছানার পাশের ছোট্ট টেবিলের দিকে তাকিয়ে রীতা দেখলো, সকালের চা ওভাবেই পরে আছে। ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেনি। ম্যাডাম প্রায়ই এমন করেন।
রীতা বললেন
– ম্যাডাম গরম এক কাপ চা দিয়ে যাবো?
– হ্যাঁ, যান।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে রীতা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো।
ম্যাডাম এমন কেনো? এর উত্তর তিনি আজও পান নি। লিলিকে জিজ্ঞেস করলে তো কোনো তথ্য জানাই যায়না উল্টো ঝামেলার সৃষ্টি করে।
নাজমুল সাহেব তার মায়ের বিছানার পাশে টুল নিয়ে বসে আছেন। আর তার মা আসমা উল্টো দিকে মুখ দিয়ে আছেন। সে তার ছেলের মুখই দেখতে চান না।
নাজমুল সাহেব বললেন
– আম্মা, আমার দিকে তাকান একটু।
– আমাকে আম্মা বলবিনা। আমি তোর আম্মা না।
– আম্মা প্লিজ প্লিজ
– এই স্টুপিড ইংরেজি ঝাড়িস কেনো কথায় কথায়?
নাজমুল সাহেব মন খারাপ করে বললেন
– আপনি নিজেও তো কেবল ইংলিশ বললেন।
– দেখ আমার সাথে তর্ক করতে আসবিনা।
– আমি সত্যিটা জানালাম।
– না তুই এখনো তর্ক করছিস।
দুই হাত উপরে তুলে মোনাজাতের মতো করে বলল
– ও নাজমুলের বাপ, দেখছো তোমার ছেলে আমার লগে তর্ক করে। আমারই পেটের ছাও আমারে কয় ম্যাও। ও নাজমুলের বাপ।
নাজমুল সাহেব অধৈর্য্য হয়ে বললেন
– আম্মা আপনি এসব কী শুরু করেছেন?
– দেখছো নাজমুলের বাপ, পোলা আমাকে ঝাড়িও দেয়।
নাজমুল সাহেব বিরক্ত হয়ে ওঠে গেলেন।
নিদ্রের কাছে যাওয়া দরকার। এই ছেলেকে দিয়ে আম্মাকে পটাতে হবে।
আচ্ছা একজন সাইকোর ডাক্তার দেখালে কেমন হয়? আম্মার মাথার ভূত তাড়াবে। নাকি তার আম্মার ছেলেমিটাকে মেনে নিবে?
তার চেনা একজন সাইকোর ডাক্তার আছেন কিন্তু আম্মাকে তার কাছে নিয়ে গেলে আম্মা তাকে ঝাটা পেটা করবে। আর তার আবদার পূরণ করতে পারলে আম্মা আনন্দিত হবেন।
কী করবেন? টস করবেন? না, কিন্তু টস করাটা খুব বাজে। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে আসলেও তাকে মানতে হবে।
নিদ্রকেই জিজ্ঞেস করা যাক। ছেলেকে এই সময়ে বিরক্ত করবে? নাকি একটু একা থাকতে দিবে? ধুর ছোটোবেলা থেকেই তো সে একাই কাটিয়েছে বেশি সময়। এখন না হয় বাপ তারে একটু জ্বালাক….!
অদ্রি বিরবির করে বলছে
– আচ্ছা নিদ্র, বর্ষাও তো চলে যাচ্ছে আপনি আসবেন না? অপেক্ষার প্রহর গুনে শেষ করতে পারছিনা কিন্তু সময় তো শেষ হয়ে যাচ্ছে…. নিদ্র….
চলবে……!
© Maria Kabir

মন ফড়িং ♥ ১

0
মন ফড়িং ♥ ১
মন ফড়িং ♥ ১
মন ফড়িং ♥
১.
সকাল থেকেই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।এই মনে হয় থেমে যাবে কিন্তু থামেনা।এরকম শেষ হবে হবে করেও শেষ হচ্ছেনা খেলাটা অদ্রির কাছে কেমন খাপছাড়া লাগে। প্রকৃতির এই খেলা যেন প্রতিনিয়তই ঘটছে। তার জীবন তার হিসেব মতো চলছে না। আর কবেই বা তার হিসেব মতো চলেছে?
অদ্রির হাসি পেলো নিজের উপরই। আজকাল প্রকৃতির প্রত্যেকটি খেলা তার মনে দাগ কাটে।
এইযে হঠাৎ রোদ ওঠে, আবার হঠাৎ কোথা থেকে কালো মেঘ গুলো উড়ে এসে ভিড় জমায় রোদেলা আকাশে। আবার খুব গরম সকাল থেকে কিন্তু বিকালের দিকে হুট করে ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো।
কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই কুয়াশা উধাও। এটাই প্রকৃতি এবং এরকমই মানুষের জীবন।
ক্ষণে ক্ষণে ক্ষয়ে পরে সময় শুধুমাত্র মানুষ গুলোর রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো ক্ষয়ে যায়না।
অদ্রির এই বৃষ্টিতে বড়সড় ঘুম দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তার ভেতরের কেউ একজন বলছে জানালার ধারটাতে দাঁড়িয়ে থাকতে। হয়তোবা হুট করে সেই মানুষটা এসে দাঁড়াবে বাগান টাতে। জানালার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলবে
– চলুন আজ ভিজি একসাথে…
অদ্রি এই আবদার অপূর্ণ রাখতে পারবেনা। লোক লজ্জা তখন আর তাকে ছুঁয়ে যাবেনা।
শত বছরের অপেক্ষার পর সেই মানুষের ভেজা হাতে শুকনো হাতটি লুকাতে পারবে, সেটা কি কেউ জানে?
কেউ কি জানে, সেই অনুভূতি কেমন?
কেউ কি জানতে পারবে, অদ্রি কতটা সুখে জড়িয়েছে?
না, সেই কেউ শুধুই একজন বিধবার নতুন করে প্রেমে পড়ার রঙিন গল্প আটবে।
বিধবার চরিত্রের ওপর কালোর ছাপ দেয়ার প্রচেষ্টায় থাকবে।
সেই কেউই কখনও তাকে নতুন সুখে সুখী হতে দেখতে চাইবেনা।
থাকুক তাদের কথা, তাতে কী?
নিজের ভেতরে পুড়ে মরার থেকে, একবারেই মরা ভালো।
অদ্রির রুমের দরজা খোলা ছিলো। লিলি তাড়াহুড়ো করে ঢুকে বলল
– আপা, দেখোতো কোন নামটা সুন্দর?
অদ্রি পেছন ফিরে দেখলো লিলি  ডান হাতে একটা কাগজ তার দিকে এগিয়ে দিয়েছে।
অদ্রি কাগজ টা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ দেখে বুঝতে পারলো। মেয়েদের নাম লেখা, বেশ মডার্ন নাম। লিলি আজকাল তার নাম পরিবর্তন করার চেষ্টায় আছে। কয়েক দিন পরপর কোথা থেকে যেন নামের লিস্ট নিয়ে আসে। সারাদিন সেই নাম বাছাই নিয়ে হইহল্লা। তারপর কোনো নাম পছন্দ না হওয়ায় নামের লিস্ট পাশের ডোবায় ফেলে দেয়।
প্রতিবারের মতো অদ্রি নাম গুলো মনযোগ দিয়ে পড়ে একটা নাম বাছাই করে বলল
– তুই লামিয়া রাখতে পারিস।
লিলি কী যেন একটা ভেবে বলল
– না, বেশ বড় নাম। এমন নাম হবে যা ২ সেকেন্ডের মধ্যে উচ্চারণ করা যাবে।
অদ্রি কাগজ টা ফেরত দিয়ে বলল
– তুই নিজেই পছন্দ কর।
নাজমুল সাহেব বেশ চিন্তিত। তার মা কয়েকদিন যাবত কিছুই খাচ্ছেন না। তবে এটা তার সামনে বলছেন। বাস্তবে সে লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার খাচ্ছেন। তারপরও তার মা বিষন্নতায় ভুগছেন। মাকে সে এই জীবনে অনেকভাবেই কষ্ট দিয়েছেন। নিদ্রকে সে প্রায় আধা ঘণ্টা হয়েছে ডেকে পাঠিয়েছেন কিন্তু এখনও তার খোঁজ নেই।
নিদ্র কফির মগ হাতে নিয়েই বাবার সামনে এসে দাঁড়ালো। নিদ্র কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল
– বাবা আমাকে ডেকেছো?
নাজমুল সাহেব বললেন
– হ্যাঁ, আম্মার খবর কী?
– আগের মতোই। সে তার বিষন্নতা কাটাবেন না।
ভ্রুকুঞ্চন করে নাজমুল সাহেব বললেন
– এই বয়সেও কেউ বাচ্চাদের মতো আবদার করে?
নিদ্র বলল
– age is just a number বাবা।
ধমকের সুরে নাজমুল সাহেব বললেন
– রাখো তোমার নীতি বাক্য। দাদীর সাথে সেও যেন রুখে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের কোন এক ভুইতা গ্রামে তার বাপের বাড়ি, সেখানে যাবেন। তিনি জানেন ভালোভাবেই যে, ওই পরিবার থেকে তাকে ত্যাজ্য করা হয়েছে। তারপরও সে এরকম আবদার কেনো করলেন?
কথাটা মনে পড়াতে নাজমুল সাহেবের নিজেরই উপর রাগ হতে লাগলো। একমাত্র তার কারণেই তার মাকে ত্যাজ্য করা হয়েছে। খ্রিস্টান মেয়ে বিয়ে করেছিলেন। সেই এক ভুলে তার জীবন টা আজ….. থাক।
বুড়ো মায়ের আবদার টা তার না মেনে উপায় নেই।
নিদ্র তার দাদীর পাশে বসে বলল
– দাদী, আপনি কেমন আছেন?
নিদ্রের দাদী আসমা জামান বিরক্ত হয়ে বললেন
– খুব আয়েসে আছি। ফরেইনার বউ আমার সুন্দর যুবক রেখে গেছেন। তার জ্বালায় মরছি।
নিদ্র হাসতে হাসতে বলল
– কেনো আমি আবার কী করলাম?
নিদ্রের দাদী নিদ্রের গাল ধরে টেনে বলল
– পীরিতের জ্বালা উঠেছে তার।
– আহা! এক মাত্র নাতীর জন্য এটুকু অভিনয় তো করতেই পারো।
– আমার কইলজার টুকরা ছেলের সাথে কথা না বলে থাকা কতো কষ্ট তুই জানিস?
– জানবো ক্যামনে? আমি তো কোনোদিন কোনোভাবেই মা হতে পারবো না।
নিদ্র হা হা হা করে হেসে উঠলো।
আসমা জামান আরো বেশি বিরক্ত হয়ে বললেন
– বাবা তো হবি?
– যদি তাহাকে পাই।
– কেনো না পেলে দেবদাস হবি?
– না, আমি দেবদাসের মতো সেই বিশাল ভুলটা ভুলেও করবোনা।
কথাটা বলে নিদ্র দাদীর রুম থেকে নিজের রুমে দিকে পা বাড়ালো। হঠাৎ করেই তার মন খারাপ হয়ে গেলো। কারণ হয়তোবা সেই বিধবা।
নাজমুল সাহেব কী যেন ভাবছিলেন, সেই ভাবনার মধ্যে উদ্ভট ভাবনা উঁকি দিলো। নিদ্র আজকাল তাকে তুমি করে বলে। আগে তো আপনি করে বলতো। নাকি আগেও তুমি বলতো এখনও তুমি বলে। নাকি আগেই তুমি বলতো এখন আপনি বলে। তুমি না আপনি সম্বোধন করে বলে? কোনটা? সমস্যার সমাধান তার চাই। কিন্তু  কিছুতেই মনে করতে পারছেন না।
নিদ্রকে কি সে ডেকে জিজ্ঞেস করবে? নাকি সে নিজেই নিদ্রের রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে?
কোনটা? নাকি সে টস করবে? নাকি করবেনা?
তার মন আর মাথায় আজকাল শুধু হ্যাঁ, না এর প্রশ্নের প্যাচ পাকে।
এই প্যাচ আর কোনোভাবেই খুলতে সে পারেনা। একটা সময় বিরক্ত হয়ে ঘুমের মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে থাকেন।
এই একটা সমাধান।
নিদ্রের মোবাইলের স্ক্রিনে সাদামাটা অদ্রির ছবিটা স্থির হয়ে আছে। আসলে স্থির ছবি তো স্থিরই থাকবে।
তার খুব ভয় হয় অদ্রির কাছে আসতে। দূর থেকে কেউ বলে, হারিয়ে ফেলবি খুব কাছে তার নিশ্বাসে নিশ্বাস জমাতে গিয়ে।
হারিয়ে ফেলবি, খুব কাছে থেকে পেয়েও!
চলবে……..!
© Maria Kabir

প্রত্যাখান_পর্ব(০৯)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(০৯)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৯)

প্রত্যাখান_পর্ব(০৯)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

পরদিন মলিন মুখে বাবা আমার রুমে আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। বিছানা থেকে ওঠে বসলাম আমি। উৎকন্ঠার সহিত প্রশ্ন করলাম, বাবা কিছু বলবে? পাশে বসে বাবা। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত স্বরে বলেন, তোর মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে নরসিংদী। তৈরি হো। আমাদের এখনই একবার নরসিংদী যেতে হবে। বাবার কথা শুনে আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে যায়। ওলট-পালট হয়ে যায় সবকিছু। ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। সেটা রেখে দ্রুত ওঠে দাঁড়াই। বাবা তুমি কি বলছো এসব? মা অসুস্থ? আমি তো একটু আগেও মায়ের সাথে কথা বলেছি। তখন তো…. ‘শুভ্র! কথা না বাড়িয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে নে। আমি আসছি।’ আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বাবা রুম থেকে বের হয়ে যায়।

ফ্রেশ হয়ে দ্রুত ছুটলাম আলমারির দিকে। হাতের নাগালে পেলাম একটা পাঞ্জাবি। পরে নিলাম সেটাই। বাবা আমায় দেখে বিষম খায়। টিপ্পনী কাটে। ‘বাব্বাহ! একেবারে দেখছি নতুন জামাই সেজেছে আমার বাবা’টা!’
মেজাজ এমনিতেই চরমে। ঝাঁঝালো কন্ঠে জবাব দিলাম, বাবা! এটাও তোমার টিপ্পনী কাটার সময়? মা না অসুস্থ…. অসুস্থ….. ক্ষাণেক থেমে বাবা বলল, চল, চল। ওদেরকে নিয়ে আসি। বাবার পিছুপিছু বাবাকে অনুসরণ করে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। কিন্তু একি! চাচা-চাচী, ফুপ্পি, দাদা আর কাজিনরা কি করছে এখানে? আমার কিছু বুঝে ওঠার আগেই লিমা, সুমন, রুবেল, আতিক চেপে বসলো আমার পাশে, আমার গাড়িতে। মিলিত স্বরে ওদের উচ্ছ্বাস, আমরাও যাচ্ছি প্রাণের নরসিংদী প্রাণের মানুষদের আনতে। ভেতরে ছ্যাৎ করে ওঠে আমার। তবে কি মা খুব বেশীই অসুস্থ? হে আল্লাহ!

একি হলো? কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম গাড়িতে বসেই।





গাড়ি স্টার্ট দেয় আতিক। এদিকে লিমা, সুমন, রুবেল আমায় বুঝাতে ব্যর্থ। সন্ধ্যার দিকে ও বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলাম আমরা৷ কিন্তু একি!

এ বাড়িতে এত সাজসাজ আয়োজন কেন? অবশেষে মা’কে দেখেই কলিজা জুড়ালো আমার৷ কাজিনরা আমার মা’কে এমন আনন্দের সহিত এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছে যেন ওরা অসুস্থ রোগী দেখতে নন, কোনো উৎসবে বেড়াতে এসেছে। চোখের জল মুছে মায়ের কাছে গেলাম আমি। সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলাম।

কেমন আছো মা? কপালে চুমুর পরশ এঁকে দিয়ে হাসোজ্জল মুখে জানান দেয় মা, একটু আগেও ভালো ছিলাম না বাবা। আলহামদুলিল্লাহ! এখন খুব ভালো আছি। তোর বাবা আসেনি? আর ভাইয়া-ভাবি ওনারা আসেনি? পেছন থেকে বাবার জবাব- এইতো! আমরা এখানে, শুভ্র’র মা৷ পরে মায়ের থেকে জানতে পারলাম, বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর পুরো পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। ওদের সেই মানসিক অবস্থা থেকে উত্তরণে সাহায্য করে আমার মা৷ মা তাঁর উপস্থিত বুদ্ধির জুড়ে ওনার পরিচিত এক যুবকের সহিত লাবন্যর অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করে রাতেই৷ আমাদের সে বিয়ে খাওয়ার জন্যই এভাবে নিয়ে আসা। মায়ের প্রতি প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল আমার। মানলাম স্বাভাবিক ভাবে বললে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে আসতে চাইতাম না৷ তাই বলে এভাবে…..! বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সাথে আমার মা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ওদের সাথে এমনভাবে দৌঁড়ে দৌঁড়ে কাজ করছে যেন তিনি এ বাড়ির’ই পুরনো সদস্য। লক্ষ্য করলাম, বোন আমার লাবণ্যর কাজিনদের সাথে হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেছে। আরো লক্ষ্যনীয় যে, ওদের সমস্ত আনন্দ আর উল্লাস সবই যেন আমাকে ঘিরে। কতেক মেয়েরা তো আড়চোখে আমাকে দেখছে আর হাসছে। আমার কাজিনদের অবস্থা তো আরো খারাপ৷ হাসতে হাসতে লাবণ্যর কাজিনদের ওপর পড়ে যাওয়ার অবস্থা। বাড়ির বয়স্ক মহিলাদের খাতিরের অন্ত নেই আমাকে ঘিরে। লাবণ্যদের সদ্য নির্মিত বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। কোথা থেকে যেন একটা মহিলা এসে আমার গালে হলুদ মাখিয়ে দৌঁড় দেয়। মহিলাকে অনুসরণ করে পেছনের দিকে তাকাতেই আমার চোখ স্থির হয়ে যায় একদিকে। কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলি নিজের বোধ শক্তিকে…… চলবে…

প্রত্যাখান_পর্ব(০৮)

0

প্রত্যাখান_পর্ব(০৮)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

লাবণ্যর সাথে আমার সমস্ত বাঁধন ছিন্ন হয়ে যায়। ভেবেছিলাম ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ! ঘটনার ওপর ঘটনা থাকে৷ থাকে নাটকের ওপর নাটকীয়তা। লাবণ্যর বিয়ে ঠিক হয় জনৈক ভদ্রলোক তথা ঐ দুই সন্তানের জনকের সাথে। বিয়ের দাওয়াত দিতে আসে স্বয়ং লাবণ্যর বাবা। লাবণ্যকে ভিষণ ভালোবাসতো মা। তারউপর মায়ের দূরসম্পর্কের বোন ছিলো লাবণ্যর মা। আর সে টানেই হয়তো বা বিয়ের দাওয়াতটা সানন্দে গ্রহন করে নেন তিনি। লাবণ্যকে পুত্রবধূ করে আনার প্রবল ইচ্ছেটা ভেতরে ধামাচাপা দিয়ে আশা বোনটিকে সাথে নিয়ে নির্ধারিত দিনের দু’দিন আগেই মা নরসিংদী পৌঁছে। ঘনিয়ে আসে কাঙ্খিত দিন। নির্ধারিত দিনের চেয়ে একটু দেরীতে বরপক্ষ আসে। যেখানে মেহমান আসার কথা ছিল একশো, সেখানে হাতা গুনা মাত্র ১৫,২০জন লোক নিয়ে ওরা হাজির হয়। পাত্রের মুখখানা অমাবস্যার অন্ধকারের ন্যায় কালো ছিল। দেখে মনে হচ্ছিলো, কেউ যেন তাকে বন্দুকের মুখে বিয়ে পরানোর জন্য নিয়ে এসেছে। বিয়ে পরানোর তাড়াটা ওদের এতটাই জরুরী ছিলো যে, প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে, মুখে কিছু না দিয়ে বিয়ে পরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে ওরা। এ নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয় এলাকার মানুষজনদের মধ্যে। সেটা দেখে স্বয়ং লাবণ্যর চাচা ঘোষনা দেন, আপনারা আগে কিছু মুখে দিবেন তারপর বিয়ে। ওরা সে বুঝ মানতে নারাজ। ভাবখানা এমন যেন পারলে মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়। কনে পক্ষের মেয়েদের তীব্র প্রতিবাদ, আমাদের মেয়েদের সাজ এখনো কমপ্লিট হয়নি। আর সে সাজ কমপ্লিট হওয়ার আগে কোন বিয়ে নয়। দাঁতে দাঁত চেপে মিনিট ত্রিশেক অপেক্ষা করে বরপক্ষ। রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে বসে থাকা স্বয়ং বর মশাই এবার ওঠে দাঁড়ায় চরম উত্তেজিত অবস্থায়। সু্যোগের আশায় ঘাপটি মেরে বসে থাকা লাবণ্যর ভাবি পর্দার আড়াল থেকে মুখ বের করে জানান দেয়, কোথায় এরকম নয়তো ওনারা ফেসে যাচ্ছেন কোথাও? হেনার কথায় গর্জে ওঠে বর। উত্তেজিত গলায় জানায়, হ্যাঁ, ফেসে গেছি আমরা। প্রথম বিয়ে ছাড়াও আমি আরো একটা বিয়ে করেছিলাম। ডিভোর্স হয়নি আমাদের। ঐ পক্ষেরও ২মেয়ে আছে আমার। বিয়ে করার আগে প্রথমা স্ত্রীর যে অনুমতিটা নিতে হয় সেটা নেয়ার প্রয়োজন মনে করিনি আমি। আমার নামে তাই থানায় মামলা দায়ের করেছে আমার স্ত্রী। বিষয়টা এখানে আসার মিনিট ত্রিশেক আগেই আমরা পাই। তা সত্ত্বেও আপনাদের মেয়ের কথা ভেবে আমি বিয়ে করতে এসেছি। তবে আর নয়৷ এই মুহূর্তে আমার নিজের জীবন বাঁচানোটাই শ্রেয়। কেননা, আমরা খবর পেয়েছি যেকোন মুহূর্তে আইনের লোক এখানে চলে আসতে পারে। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে যায় সবাই। বসা থেকে ওঠে দাঁড়ায় আগত মুরুব্বীয়ান। হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায় এলাকায়। অফিসে বসে বোর হচ্ছিলাম আমি। ভালো লাগছিলো না একদম৷ অস্থির অস্থির লাগছিলো ভেতরে। কল দিলাম বোন আশাকে। জানি না বোন আমার সে কল সজ্ঞানে রিসিভ করেছে কি না। করলেও কথা কেন বলছিলো না। লাউডস্পিকার বাড়াতে গিয়ে টের পাই ওপাশে বিশাল হট্টগোল চলছে। মিনিট খানেকের জন্য সাক্ষী হই একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির। পরে কলটা কেটে যায়। এদিকে অস্থিরতায় আমার পুরো শরীর ঘামছিল। কলের ওপর কল দিতে থাকি। ঘন্টা খানেক পর বোন আমার কল রিসিভ করে জানায়, লাবণ্যর বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে। বিয়ের আসর থেকে পুলিশ পাত্র এবং তার তিন বাবা চাচাকে সাথে ঐ জনৈকা ভদ্রমহিলা তথা ফুপ্পিকে ধরে নিয়ে যায় থানায়। কিছু সময়ের ব্যাপারে প্রাণচঞ্চল বাড়িটা নিরব, নিস্তব্ধ পরিবেশে রূপ নেয়। লাবণ্যর মা ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছিল। অসুস্থ ভাই আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাবা করে স্ট্রোক। চলবে….

প্রত্যাখান_পর্ব(০৭)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(০৭)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৭)

প্রত্যাখান_পর্ব(০৭)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

কৌতূহলী মন বারংবার জানতে চাচ্ছিলো ভদ্রমহিলা কোন সে বিয়ের ইঙ্গিত দিলো? সত্যিই কি তাহলে আগে লাবণ্যর বিয়ে হয়েছিলো? কিংবা বিয়েটা যদি হয়েও থাকে তাহলে সেটা তো আমাদের জানার কথা। বিশেষ করে আমার মায়ের তো এ বিষয়ে জানাটা জরুরী ছিল। তবে কি ওরা বিষয়টাকে ধামাচাপা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলো? উফ, নাহ! আর ভাবতে পারছি না৷ এরকমভাবে ওরা আমাদের ঠকাতে চাইবে এটা যে কল্পনারও অতীত। মনের অদম্য কৌতূহল মেটাতে লাবণ্যদের সদ্য নির্মিত রুমটাতে ঢুকলাম। লাবণ্য তখন চুপটি করে জানালার গ্রিল ধরে বাহিরের পানে তাকিয়ে। আমার আওয়াজে ওর সে দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটে৷ পিছু ফিরে তাকায় লাবণ্য। অতঃপর পুনঃবার দৃষ্টি নিয়ে যায় বাহিরে। নিঃশব্দে লাবন্যর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। প্রশ্নটা করার কথা ভাবতেই ভেতরে কম্পনের সৃষ্টি হয় আমার। তথাপি মিটিয়েই ফেললাম অদম্য সে কৌতূহল। প্রশ্ন করলাম, লাবণ্য তুমি বিবাহিতা? লাবণ্যর ছোট্ট জবাব, হ্যাঁ! ডিভোর্সি। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম৷ উলট-পালট হয়ে যায় ভেতরে। দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে। চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করি। চোখ থেকে অনবরত অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে থাকে নিচে। চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে এলে জীবনের রঙ জলের মতোই হয় বুঝি? জানি না এরপর লাবণ্য আর কোন কথা বলেছিলো কি না! আর বললেও ঠিক কি বলেছিলো?! শুধু এটুকু জানি- ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে আমি তখনই সেখান থেকে বেরিয়ে আসি। লাবণ্যর বাবা-মা, ভাই-ভাবির থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকায় নিজ বাসায় চলে আসি। রাতে ঘুম হচ্ছিলো না। অচেনা এক কষ্ট ভেতরটাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো। আমি সইতেও পারছিলাম না, কারো সাথে শেয়ার করতেও পারছিলাম না। সেদিনের পর থেকে কেন জানি না নিজেকে, নিজের অনুভূতিগুলোকে অসুস্থ মনে হতে লাগলো। ঘৃণা হচ্ছিলো, বড্ড ঘৃণা হচ্ছিলো নিজের প্রতি। প্রতিবারই মানুষ চিনতে ভুল করি আমি। মিতুর থেকে ঠক-প্রবঞ্চনায় কোন অংশে কম ছিল না লাবণ্য। বরং একটু বেশীই এগিয়ে ছিলো সে। এমনভাবে কেউ কাউকে ঠকাতে পারে সেটা লাবণ্যর সাথে পরিচয় না হলে আমি বোধ হয় জানতেই পারতাম না। দিন দিন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। প্রথম প্রেমের দুঃখজনক পরিণতির পরও ভালোবেসেছিলাম লাবণ্যকে। কষ্ট হচ্ছিল যার মায়ায় জড়িয়ে নিজেকে পুনঃবার গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলাম সেই লাবণ্য আমায় চরমভাবে ফাঁকি দিলো! হে বিধাতা! বলে দাও তুমি। আমি কাকে বিশ্বাস করবো? চার দেয়ালের ভেতরের ঐ চিৎকার আমার কাছেই ফিরে আসে প্রতিধ্বনিত হয়ে। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছিলো। এরকমই মুহূর্তে এক বিকেলে কল করে লাবণ্য। নাম্বারটা খেয়াল না করেই রিসিভ করি কল। ওপাশ থেকে ভেসে আসে সুমিষ্ট কন্ঠস্বর, আসসালামু আলাইকুম। শরীরে আগুন ধরে যায় আমার। প্রচন্ড এক অভিমানে সালাম না দিয়েই কলটা কেটে দেই। শুরু হয় লাবণ্যর একের পর এক কল দেয়া৷ এক সন্ধ্যায় বিরক্ত হয়ে লাবণ্যর কলটা রিসিভ করেই বসি। সালাম দেয় লাবণ্য। জবাব না দিয়ে অনর্গল কথা বলা শুরু করি। এক নিশ্বাসে অনেকগুলো তিক্ত কথা শুনিয়ে দেই লাবণ্যকে। কথাগুলো শুনার পরও ফোনের ওপাশে মিনিট পাঁচেক চুপ করে ছিলো লাবণ্য। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কলটা কেটে দেয়। চলবে…

প্রত্যাখান_পর্ব(০৬)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(০৬)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৬)

প্রত্যাখান_পর্ব(০৬)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

লাবণ্যদের পরিবারে লাবণ্যর বাবা ছাড়াও ছিল ওর একমাত্র ভাই লাবিব। বয়সে লাবিব লাবণ্যর থেকে বছর সাতেকের বড়। একটা সময় এই লাবিবই ছিল লাবণ্যদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বছর চারেক আগে হুট করে লাবিব পঙ্গু হয়ে যায়। সেই থেকে সে বিছানায় পড়ে। লাবণ্যর বাবার অনুরোধে আমাকে তাই সেদিন থেকে যেতে হলো। বাজার সওদা থেকে শুরু করে পরদিন পাত্রপক্ষের সামনে খাবার উপস্থাপন। সমস্তই আমাকে করতে হয়েছে। অবশ্য আমাকে হাতে হাতে সাহায্য করার জন্য পাশে ছিল লাবণ্যর সমবয়সী ২কাজিন। পরদিন যথাসময়ে লাবণ্যর ডাক পড়ল। অতিকায় সাধারণ বেশভূষায় লাবণ্য হাজির হয় পাত্রপক্ষের সামনে। ঘোমটার আড়ালের ঐ মায়াবী মুখটা দেখে জানি না কেন সেদিন আমার ভেতরটা কেঁপে ওঠেছিল। নামাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন করে, হেঁটে হাঁটিয়ে বিভিন্ন কায়দায় মুরুব্বীরা লাবণ্যকে দেখে নেয়। লাবণ্যও কিরকম বাধ্য বালিকার ন্যায় নিরবে ওদের সব প্রশ্নের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক উত্তর দিয়ে যায়। সবশেষে লাবণ্যকে পছন্দের কথা জানান দিয়ে ওরা বিদায় নেয়। পাত্রপক্ষ চলে গেলে উঠোনে পুরো বাড়ির মানুষজন জড়ো হয়। সবার মুখেই এক কথা। ‘ছেলে দেখতে শুনতে ভালো। অর্থ সম্পদও ঢেড় আছে। আর কি লাগে? দিয়ে দেন বিয়ে।’ বাধ সাধল লাবণ্যর ভাবি হেনা। ‘নাহ! একটা বিবাহিত পুরুষের কাছে আমরা আমাদের মেয়ে বিয়ে দেবো না। আর যায় হোক এত বড় অন্যায়টা আমরা ওর সাথে করতে পারি না। হেনা তথা লাবণ্যর ভাবির সাথে তাল মেলায় লাবণ্যর মা৷ হ্যাঁ, হেনা ঠিকই বলেছে। এ বিয়েতে আমারও মত নেই। লাবণ্যর ভাবির কথা শুনে চমকিত নয়নে ফিরে তাকালাম আমি লাবণ্যর বাবার দিকে। আমার শুনা যদি ভুল না হয় তবে ছেলে বিবাহিত। একটা বিবাহিত ছেলের সাথে জেনে শুনে ওরা কেন ওদের অবিবাহিতা মেয়ের বিয়ে দিবে! প্রশ্নটা করেছিলাম আমি। উত্তরটা পাইনি তার আগেই ভেসে আসে হেনা ভাবির উত্তেজিত গলা, শুধু বিবাহিত নন, দুই বাচ্চার বাবাও। ‘কিহ? দুই বাচ্চার বাবা?’ এবার আমি অবাকের চূড়ান্ত সীমায়। একটা অল্পবয়স্কা বাচ্চা মেয়ে, যাকে দেখলে সবাই নবম দশম শ্রেণীর ছাত্রী মনে করে ভুল করবে, তাকে কি না একটা বয়স্ক বিবাহিত পুরুষের সাথে বিয়ে দেয়া হচ্ছে! তাও দু’সন্তানের জনকের সাথে!!! ব্যাপারটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছিল আমার। সর্বসম্মুখেই তাই উঁচু গলায় বলে ওঠি, এ আপনারা কি করছেন? ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়ের জীবনটা আপনারা নিজ হাতে ধরে এভাবে শেষ করে…. পুরো কথা বলতে পারিনি আমি৷ তার আগেই অপরিচিত মহিলাটি তিরস্কারের ছলে বলে ওঠে, হাঃ হাঃ! বিয়ে দিবে না!! কি আমার দুধে ধুয়া তুলসি পাতা। পালঙ্কে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে তাকে লোকে!!! লাবণ্যর ভাবির মুখোমুখি প্রতিবাদ, আন্টি! পালঙ্কে নাকি সোফায় বসে খাওয়াবো সেটা একান্তই আমাদের ব্যাপার। আর কি যেন বলছেন? দুধে ধুয়া তুলসি পাতা৷ যেটা একবারও দাবি করিনি আমি যদিও আপনি কয়েক ঘন্টায় আপনার ভাইপোর শতেকটা সুনাম করে ফেলেছেন যেটা আদৌ ওনার পক্ষে যায় কি না সন্দেহ। আমি শুধু এটাই বলেছি, এটা হয় না। হতে পারে না। এ ঘোর অন্যায়। আর তুমি সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে এসেছ, তাই না? হাঃ হাঃ। মেয়ে বিবাহিত সেটা জানা সত্ত্বেও আমি আমার ভাইপোকে নিয়ে আসছিলাম। কোথায় তোমরা নত হয়ে মেয়ে বিয়ে দিবে, তা নয়। তা না করে বিয়ে ভাঙার জন্য কোমড় বেধে লেগেছ। শুনো তবে! আজ যদি তোমরা বিয়ে হবে না বলে জানিয়ে দাও, আগামীকাল ঠিক এসময় আমি আমার ভাইপোর বউ নিয়ে বাড়ি যাবো। ‘কিহ! লাবণ্যর আগে বিয়ে হয়েছে?’ আনমনে নিজে নিজেকে প্রশ্নটা করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফিরে তাকালাম মধ্যবয়স্কা মহিলার দিকে। মহিলা তখনো হেনা ভাবির সাথে তর্কে লিপ্ত। ভিড় ঠেলে সেখানে উপস্থিত হয় স্বয়ং লাবণ্য। আন্টি! আপনি চুপ করুন। আর ভাবি?!!! তুমি এ শরীর নিয়ে এখানে কেন আসছো? যাও, রুমে যাও। মা! চিন্তা করো না। আমি ঠিক মানিয়ে নিতে পারবো। বাবা! আপনি ওদের জানিয়ে দিন আমি রাজি। কথাগুলো বলে দ্রুতপায়ে রুমে চলে যায় লাবণ্য। আলোচনা তখনকার মতো সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়। সবাই যে যার মতো চলে যায়। নির্বাক আমি হা করে তখনো সে স্থানে দাঁড়িয়ে…. চলবে…

প্রত্যাখান_পর্ব(০৫)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(০৫)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৫)

প্রত্যাখান_পর্ব(০৫)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

সেদিনও প্রতিদিনকার নিয়মে অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়েছিলাম। রুমে আসে মা। জানান দেয়, লাবণ্য’র কেনাকাটা করা দরকার। ওরে নিয়ে যেন একটু কেনাকাটা করে আসি। মাতৃআজ্ঞা! অবশ্য পালনীয়… ঘমার্ক্ত শরীরেই তাই বিছানায় ওঠে বসলাম। গেঞ্জি গায়ে দ্রুত ছুটলাম নিচে। খুব বেশী ক্লান্ত থাকার কারণে গাড়ি নিয়ে বের হতে পারিনি। বাসা থেকে বের হয়েই তাই রিকশা ডাকি। রিকশা চলতে শুরু করল। লক্ষ্য করলাম, এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রতিবারই ওর চোখ আমার চোখে এসে আটকে যেত। একবার তো ও আমার একটা হাতও চেপে ধরেছিল। আমি তাকাতেই দ্রুত সে তার হাতটা সরিয়ে নেয়। গভীর ভাবনায় ডুবে যাই আমি। আচ্ছা! ও’কে এরকম দেখাচ্ছে কেন? চোখ মুখ এরকম অস্বাভাবিক লাগছে কেন ওর? তবে কি ও আমায়….. ধূর! এসব কি ভাবছি? ও’তো আমাকে বন্ধু বৈ বেশি কিছু ভাবেনি কখনো। আমিই মনে হয় একটু বেশীই ভাবছি…. এই যে আমার হাতে হাত রাখা, চোখে চোখ আটকে যাওয়া, লজ্জা পেয়ে আবার সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া হতে পারে সবগুলোই আমার মনের ভ্রম। ও আমাকে জাস্ট বন্ধু’ই ভাবে, এরচে’ বেশি কিছু নয়। ভাবতে ভাবতে কখন যে মার্কেটের সামনে এসে গেছি টের পাইনি। ঘোর কাটে লাবণ্যর ডাকে। ভাইয়া…. অনর্থক হাসি দিয়ে দ্রুত রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে ভাড়া মিটিয়ে নিয়েছে লাবণ্য। কেনাকাটা শেষে বাসায় ফেরার সময়ও একই ভঙ্গিতে আমার সাথে ওর চোখাচোখি হয়। হয় দৃষ্টির আলাপন। রাত্রি ২টা — বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। অজানা কারণে ভেতরটা হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে যেন খুব প্রিয় কোন জিনিস হারাতে বসেছি আমি। কিন্তু কিসের এত হাহাকার? কেন এমনটি অনুভূত হচ্ছে আমার? নিজের মন নিজেকে এরকম হাজারো প্রশ্ন করলেও কোনটার সঠিক জবাব পাইনি আমি। পরদিন মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ঘড়িতে সময় ৯টা বেজে ১১টা মিনিট। অফিসে যাবো না। তাই ঘুম থেকে উঠার সেরকম তাড়াও ছিল না কোন। বালিশটা খাটে সোজা করে রেখে আধশোয়া অবস্থায় হেলান দিয়ে বসলাম। সালাম দিয়ে প্রশ্ন করলাম মা’কে, কিছু বলবে মা? ধীর কন্ঠে মায়ের জবাব, জানি ভোরে নামাজটা পড়েই ঘুমিয়েছিলি। তা সত্ত্বেও জাগাতে হলো। আসলে লাবণ্যর গ্রামের বাড়ি থেকে কল এসেছে। ওদের জরুরী তলব, লাবণ্য যেন আজই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যায়। এবার পুরোপুরি সোজা হয়ে বসলাম আমি। কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত মনে প্রশ্ন করলাম, কোন সমস্যা? চিন্তিত গলায় মায়ের জবাব, জানি না। যায় হোক, তুই বরং মেয়েটাকে একটু গ্রামের বাড়িতে দিয়ে আয়। মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। মা! আমি? আজ ছুটির দিন। কোথায় আমি একটু বিশ্রাম নেবো। তা না! তুমি আমাকে সুদূরের ঐ নরসিংদী…. পুরো কথা বলতে পারিনি। তার আগেই মায়ের প্রস্থান ঘটে। কি আর করার?! ঐ যে! মাতৃআজ্ঞা অবশ্য পালনীয়…. অগত্যা তাই লাবণ্যকে সাথে নিয়ে বের হতে হলো আমার। দুপুরের দিকে নরসিংদীতে পৌঁছি আমরা। ঐখানে পৌঁছেই আসল ঘটনা জানতে পারি৷ জানতে পারি হঠাৎ ওদের জরুরী তলবের কারণ। ‘লাবণ্যকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।’ চলবে….