বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1177



তিনি এবং ও! ৩১.

0

তিনি এবং ও!

৩১.
সুফি সাহেব বড় এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিলে ফেললেন। পান করলেন ব্যাপার টা তার কাছে ঠিক মানায় না এভাবে পানি খাওয়ার সাথে। এই নিয়ে সে ১১ তম গ্লাসের পানি গিললেন। তার স্ত্রী ভীতিবিহ্বল হয়ে তার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। সাধারণত খুব টেনশন আর রাগ না হলে ১ ঘণ্টায় এতো পানি তিনি খান না।
দেড় ঘণ্টার মাথায় তিনি পানিবমি করতে শুরু করবেন। আধা ঘণ্টা পানিবমির পর সে সহ্যা নিবেন। মৌরি ঘটনাটা ঘটার সময় ঘড়ি ধরে মাপে। তার এই বাসায় আসার পর সুফি সাহেবের মাসে চার বার এমনকি পাঁচবার এরকম হয়।মৌরি এমন কিছু করে বসে তাতে সুফি সাহেবের টেনশন বাড়বে আর তা না হলে রাগেগরগর করবেন।
প্রতিবারই দেড় ঘণ্টা সময় নেন সুফি সাহেব সহ্যা নেয়ার।
সুফি সাহেবের স্ত্রী অবশ্য বুঝতে পারছেন, মৌরি নতুন অতিথির সাথে কিছু একটা করেছে তার ফলে তার স্বামী টেনশনে এরকম করছেন।
মানুষ টাকে সে খুব ভালবাসে আর সম্মান করে কিন্তু তার বোন কখনওই তাকে সম্মান করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখ ভেংচি কেটে কথা বলে।
বাসায় যে এতো কিছু ঘটছে তার দিকে নিদ্রের কোনো খেয়াল নেই। নিদ্র, নিদ্রায় ব্যস্ত। সকাল ৮ টা পর্যন্ত অদ্রির সাথে একনাগাড়ে কথা বলার পর তার ঘুম যেন পিছু ছাড়ছেই না।
সে বেহুঁশ এর মতো ঘুমাচ্ছে।
সকাল ৯ টায়,
সুফি সাহেব নিদ্রের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নক করবে ঠিক তখন খেয়াল করলেন, দরজা খোলা। এক হাতে ট্রেতে দু কাপ কফি নিয়ে নিদ্রের রুমে ঢুকলেন। নিজ হাতে অতিথির জন্য কফি বানিয়েছেন। বিছানার উপর নিদ্র চার হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে ঘুমুচ্ছে। সুফি সাহেব বুঝতে পারলেন, মৌরি কিছু একটা করেছে। খুব সাবধানে কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারলেন উষ্ণতা।
তার মতে শরীর একটু গরম হওয়া মানেই জ্বর আসা।
মৌরি তাকে পুকুরে চুবায় নাই তো?
ঘুম থেকে টেনে তোলাও ঠিক হবে না। কী করা যায়?
কফি ওভাবেই ঘরের মধ্যে রেখে চলে এলেন তার ঘরে।
মৌরিকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর কিছুই জানতে না পেরে আরো বেশি টেনশনে পরে যান।
জ্বর যদি মেয়াদে চলে যায়? তখন?
এভাবে একজন মেহমান কে বিপদে ফেলা টা ঠিক হলোনা।
তারপর থেকে তার টেনশন বাড়তে বাড়তে পানি খাওয়া বাড়লো।
তারপর আর কী? সেই ঘটনা চক্র আবার ঘটবে ।
লিলি দর্জি বাড়ি থেকে নতুন জামা কাপড় নিয়ে বেশ হাসিহাসি ভাবেই বাসায় আসলো।
এতক্ষণে আপামনির ঘুম থেকে উঠে যাওয়ার কথা। সকালের নাস্তা তাহলে রেডি। এতদূর হেটে এসে তার খুব খিদে পেয়েছে।
কিন্তু বাসার মধ্যে প্রবেশ করেই তার মনে হলো আপামনি ঘুম থেকে উঠে নাই।
সরাসরি দোতলায় উঠে অদ্রির রুমের দিকে এগিয়ে গেলো লিলি। দরজা খোলা ছিলো।
বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো, অদ্রি ঘুমুচ্ছে। গভীর ঘুমে সে পরে আছে বিছানায়। হাতের মুঠোর মোবাইল।
বিছানার একপাশে জামাকাপড় রেখে লিলি রান্নাঘরে চলে এলো।
এভাবে এইপ্রথম সে আপামনিকে এভাবে দেখলো।
ঘুমন্ত মুখখানা দেখে তার মনে হচ্ছিলো সে হাসছে। হাসিটার মধ্যে আনন্দ খেলা করছিলো।
সুফি সাহেব পানিবমি করতে শুরু করলেন। তার স্ত্রী মৌরিকে রাগ করতে শুরু করলেন। মৌরি খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো।
নিদ্রের ঘুম ভাঙলো বাচ্চার কান্নার শব্দে।
তার মনে হচ্ছে ৫ মিনিট হয়েছে ঘুমিয়েছে।
চোখ খোলার সাথে সাথে তার ফোনালাপ এর কথা মনে পড়লো।
খুব ভালোই কেটেছে সময়। অন্ততপক্ষে ওই বিরক্তিকর মেয়ে থেকে দূরে থাকতে পেরেছে।

সুফি সাহেব বিছানার উপর পরে আছেন, নিদ্র তার পাশে লাল রঙের চেয়ারে বসে আছে।
নিদ্রকে সে হাজার বার প্রশ্ন করেছেন, সুস্থ আছেন কিনা?
নিদ্র তাকে কয়েকশ বার বলেছে, সে সুস্থ!
নিদ্রের এদিকে বাসায় যেতে হবে।
গতকাল রাতে পুরোটা গল্প বলে দিলেই হতো।
তাকে এভাবে আটকে থাকতো হতোনা। এই একমাত্র মানুষ যিনি ইখলাস সাহেবের ব্যাপারে ভালো ভাবে জানেন।
আর কেউ জেনে থাকলেও নিদ্রের জানা নেই।
সুফি সাহেব বললেন
– আমি আজকেই আপনাকে বলে দিবো। আমার যতটুকু জানা আছে জানাবো।
নিদ্রের বলতে ইচ্ছে করছিলো না কিন্তু তারপরও বলল
– না আপনি সুস্থ হন তারপর……
– না, আজ রাতেই আমি আপনাকে ছুটি দিয়ে দিবো। মৌরি আপনাকে খুব জ্বালাচ্ছে। ও না এমনি। বাসায় ছেলে মেয়ে কেউই আসতে পারেনা আমাদের এখানে।
বলুন কী করবো?
– বিয়ে দিয়ে দিন।
– দিয়েছিলাম। পাগলামি মানে এসব যা করে সেই কারণে তালাক হয়ে গেছে।
– আবার বিয়ে দিয়ে দিন।
– মাথা খারাপ। ওকে বিয়ে দিয়ে অন্য পুরুষের জীবন নষ্ট করবো নাকি?
প্রথম জনের যে,অবস্থা হয়েছিলো। পাগলের ডাক্তার দেখাতে হয়েছিলো। জানি না এখন তার কী অবস্থা।
সুফি সাহেব আর নিদ্র আগের রাতের মতোই ছাদে বসে আছেন।
নিদ্র অধীর আগ্রহে বসে আছে।
সুফি সাহেব সিগারেট হাতে নিয়ে ঝিমুচ্ছেন।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ৩০.

0
তিনি এবং ও ! ৩০.
তিনি এবং ও ! ৩০.

তিনি এবং ও !

৩০.

২ টা প্রশ্ন নিদ্রের মাথার মধ্যে ব্যথার সৃষ্টি করেছে।
মাথাব্যথা যেন ক্রমশ বাড়ছে। প্রশ্নের উত্তর মৌরি আর সুফি সাহেব জানেন। এই কৃষ্ণ সুন্দরী কখনওই সত্য বলবে না। সুফি সাহেবকে এখন এইসময় বিরক্ত করতেও ইচ্ছে করছে না নিদ্রের।
কিন্তু প্রশ্ন দুটোর উত্তর তার চাই। তা না হলে মাথাব্যথা কমবে না।
খুব বিশ্রী একটা সমস্যা নিদ্রের। কোনো প্রশ্ন মাথার ভেতর প্রবেশ করলেই হয় একবার। সঠিক উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তার স্বস্তি হবেনা। এমনকি এই নিয়ে বেশি চিন্তা করলে মাথাব্যথা শুরু হবে।
এরকম অবশ্য অনেকদিন পর হলো। নিদ্র জানে এখন রেস্ট নেয়াটা খুব দরকার তার।
মৌরি নিদ্রকে চিমটি কেটে বলল
– কী? ভয় করছে নাকি?
এভাবে গায়ে হাত দেয়াটা নিদ্রের বেশ অপছন্দ। তার উপর অসহ্যকর একটা মেয়ে তাকে ছুঁয়েছে।
নিদ্র বেশ শান্ত মেজাজে বলল
– একটা শর্ত দিবো। যদি পূরণ করতে পারেন তাহলে আমি আপনার সাথে ঘুরতে বের হবো।
মৌরি তার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল
– কী আবার শর্ত ? আর আমিই বা মানবো কেনো?
নিদ্র শান্ত কণ্ঠে বলল
– আমিই বা ঘুরতে যাবো কেনো? যান তো এখান থেকে! আমি ঘুমাবো।
– যাবোনা। কী করবেন?
নিদ্র মৌরিকে উপেক্ষা করে বিছানার উপর শুয়ে পড়লো। এমনভাবে বিছানায় শুয়ে রইলো যেন দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি উপস্থিত নেই।
মৌরি ঠিক বুঝতে পারছেনা কী করবে? এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে তার নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। এই প্রথম কোনো পুরুষ তাকে অগ্রাহ্য করলো। তাকে এতোটা অপমান করলো।
মৌরি খুব অস্থির অনুভব করছে। সে নিঃশব্দে রুম থেকে বের হয়ে দরজা আটকে দিলো।
নিদ্রের মাথাব্যথা কিছুটা কমেছে। অনেক কষ্টে সে তার প্রশ্নগুলোকে ঘুম পাড়িয়েছে। এখন সে ঘুমাবে।
হঠাৎ অদ্রির সেই লাল টকটকে চোখ দুটি তার মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠলো।
অদ্রির লাল টকটকে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। নিদ্র ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো পানি না, লাল রঙের তরল পদার্থ। তার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে, চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে।
অদ্রির ওড়না, জামা সেই রক্তে লাল হয়ে উঠছে ধীরেধীরে।
একসময় হুট করেই ক্যানভাস থেকে পুরো দৃশ্যটা উধাও হয়ে গেলো।
যেমন করে এসেছিলো ঠিক তেমনভাবেই।
নিদ্রের ঘুম আর হলোনা।
সহ্যা ছেড়ে উঠে বসলো। রশিদ সাহেবকে ফোন দিলো।
এবার প্রথম রিং এ ফোন রিসিভ হলো। ফোনের ওপাশ থেকে রশিদ সাহেব ঘুমে জড়ানো কণ্ঠে বলল
– কী বাবা? কোনো সমস্যা হয়েছে?
নিদ্র যথাসাধ্য চেষ্টা করলো নিজেকে শান্ত রাখার। তারপর বলল
– চাচা অদ্রির মোবাইল নাম্বার টা দিবেন?
রশিদ সাহেব কোনো প্রশ্ন না করেই বলল
– আচ্ছা আমি ম্যাসেজে পাঠাচ্ছি।
ফোন কেটে দিয়ে রশিদ সাহেব মেসেজে অদ্রির নাম্বার পাঠিয়ে দিলো।
অনেক সাধনার পর ম্যাসেজ দেয়া সে শিখেছে।
তারপর আবারো ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমের ঘোরে ছিলেন বলেই কোনো প্রশ্ন না করেই কাজটা করেছেন। জাগ্রত থাকলে নিদ্রকে বিরক্ত করেই নাম্বার দিতেন।

বিছানার উপর মোবাইল টা প্রায় চিৎকার করে জানান দিচ্ছে যে, অদ্রিকে কেউ ফোন করেছে।
অদ্রি জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে জীবনের পাতাগুলো উল্টে পাল্টে দেখছিলো।
একটু পরেই ভোর হবে। দিগন্ত রেখায় অগণিত আলোকরশ্মি তার আভা ছড়াবে। সেই আভা অদ্রির জীবনে কখনওই আসেনি।
তার দিকে শুধু অন্ধকারই ধেয়ে আসে। অন্ধকার তাকে দিনদিন আরো বেশি অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রথমে সে নিজেই চাইতেন অন্ধকারে ভেসে যেতে কিন্তু আজকাল তার সহ্যশক্তি কমে যাচ্ছে।
মোবাইল ৩ বারের মতোন জানান দিচ্ছে কেউ ফোন করছে। অদ্রি অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফোন রিসিভ করে শুকনো কণ্ঠে বলল
– হ্যালো।
নিদ্র কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। এসময় ফোন করেছে সে অদ্রি যদি রাগ হয়? নিদ্র আস্তে আস্তে বলল
– আমি নিদ্র বলছিলাম।
অদ্রি যেন তার কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। নিদ্র তাকে ফোন করেছে?সেও কি রাত জাগছে? আমার মতোই? না না এসব আমি কীসব ভাবছি, অদ্রি নিজেকে শুধরালো। অদ্রি বলল
– হ্যা বলুন।
নিদ্র আড়ষ্টভাবে বলল
– আমি খুব বাজে স্বপ্ন দেখেছি।আমার এই ঠাণ্ডা পরিবেশেও খুব গরম লাগছে।
অদ্রি বলল
– স্বপ্নটা আমাকে বলুন। দেখবেন ভয় কিছুটা কমে যাবে।
নিদ্র, অদ্রির কথায় কিছুটা সহজ হলো। নিদ্র বলল
– আপনি কেঁদেছেন আবার তাই না?
অদ্রি থতমত খেয়ে গেলো। কীভাবে নিদ্র বুঝলো? নাকি সে আন্দাজে বলেছে?
অদ্রি কোনো উত্তর না দেয়াতে নিদ্র বলল
– আপনার লাল টকটকে চোখ বেয়ে লাল রঙের রক্ত গড়িয়ে পরছে। আপনার সাদা কামিজ, ওড়না রঙিন হয়ে যাচ্ছে।
এই স্বপ্ন আমাকে ঘুমাতে দিলোনা।
অদ্রি বলল
– চোখেরজল কখনওই রঙিন হয়না। কারণ কষ্টগুলো তো জীবনকে ফ্যাকাসে করে দেয়। জীবনের রঙটাকে চুষে খেয়ে ফেলে রাখে ফ্যাকাসে জীবনটাকে। সেই চোখেরজল কী করে রঙিন হয় বলতে পারবেন নিদ্র???

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ২৯.

0
তিনি এবং ও ! ২৯.
তিনি এবং ও ! ২৯.

তিনি এবং ও !

২৯.
– আজকের মতো থাক। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে যান।
সুফি সাহেব কথাগুলো বলে উঠতে গেলেন তখনি নিদ্র বলে উঠলো
– আমি কাল চলে যাবো। যেতে আমাকে হবেই।
সুফি সাহেব আবার বসলেন তারপর মৃদু স্বরে ধীরেধীরে বললেন
– অন্ধকার থাকতেই মৌরি আপনাকে ঘুম থেকে টেনে তুলবে। অনেক রাত হয়েছে এখন। ঘুম না হলে সারাদিন ওর সাথে পেরে উঠতে পারবেন না।
আজকে আপনি ওর দেয়া চা ফেলে দিয়ে বিরাট ভুল করেছেন। ও আপনাকে এতো সহজে যেতে দিবেনা।
গল্প বা ঘটনা যেটাই বলুন শোনার অনেক সময় পাবেন।
নিদ্র তীক্ষ্ণ স্বরে কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো।
সুফি সাহেব বললেন
– আসলে আমি আপনাকে এখানে আটকে রাখতে চাইনি। কিন্তু মৌরির কারণে পারছিনা। আপনাকে ঝামেলায় ফেলার জন্য আমি দুঃখিত।
ফ্লাক্স ভরা চা আছে, খাবেন?
নিদ্র মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।
মেয়েটা পাগল নাকি? নাকি তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার ফন্দি আঁটছে এরা?
মেয়েটার গায়েররঙে তার সমস্যা না। সমস্যা তার গায়েপড়া স্বভাবে। এরকম গায়েপড়া মেয়ে নিদ্রের মোটেই ভালো লাগেনা।
ওয়ান টাইম কাপে চা বানিয়ে দিলো নিদ্রকে। নিদ্র নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।
তীরে এসে তরী ডুবানোর ইচ্ছা তার নেই।
সে একটি সাদাফুলকে বাঁচাতে চায়। না সে তার কেউ হয়। অদ্রি তার কী হয়? মাত্র কদিনেরই বা পরিচয়? কটাই বা কথা হয়েছে? তার জন্য সে এতো বড় ঝামেলায় ফেঁসে গেছে। হয়তোবা এটাই বন্ধুত্ব। নাকি তার থেকেও বেশি কিছু?
সুফি সাহেব বললেন
– চা মৌরির বানানো। খেতে পারেন ভয় পাবার কিছুই নেই। আর দরজা লক করে ঘুমাবেন।
নিদ্র চায়ে চুমুক দিলো। সত্যি অসাধারণ চা। অদ্রির চা কেমন যেন পানসে টাইপের হয়। একদিন কাছে দাঁড়িয়ে চা বানানোটা দেখতে হবে। দিনের পর দিন এরকম পানসে চা খাওয়ার কোনো মানে হয়না।

নিদ্রের মনে হচ্ছে সে গভীর কোনো স্বপ্ন দেখছে। তার মুখের ঠিক উপরে কেউ ঝুকে আছে। তার এলোপাথাড়ি চুল নিদ্রের মুখে বারবার ছুঁয়ে যাচ্ছে। খুব সুন্দর ঘ্রাণ তার নাকে ধাক্কা লাগলো। খিলখিল করে হাসার শব্দ তার কানে ভেসে আসছে। তার মনে হলো প্রায় আধা মাইল দূর থেকে ভেসে আসছে।
থেমে থেমে হাসির শব্দ তার কানে অজানা সুর সৃষ্টি করছে।
তার মুখের উপর গভীর উষ্ণ নিশ্বাসের স্পর্শ অনুভব করলো। কী হচ্ছে? কেনো হচ্ছে সে তার চিন্তায় আনতে পারলো না। এটা স্বপ্ন না বাস্তব সে তার পার্থক্য করতে এখন আর পারছেনা।
প্রায় লাফিয়ে উঠে তার খুব কাছে সেই কৃষ্ণ সুন্দরী কে দেখে ভয়ে প্রায় আৎকে উঠলো।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এখনো অন্ধকার। সময় টা দেখা তার জরুরী। স্বপ্ন না বাস্তব পার্থক্য করা যেতো।
তার স্পষ্ট মনে আছে দরজা খুব ভালোভাবেই লক করে ঘুমিয়েছে। কিন্তু কীভাবে কী?
সুফি সাহেবের কথার কারণে তার হ্যালুসেনেশন হচ্ছে না তো?
ঠাণ্ডার রাতেও নিদ্র ঘামতে শুরু করলো।
মৌরি ঠাট্টার স্বরে বলল
– আপনি মশাই আমাকে ভয় পাচ্ছেন কেনো?
নিদ্র জড়ানো কণ্ঠে বলল
– এতো রাতে আমার ঘরে কেনো? এখান থেকে যান।
মৌরি মুচকি হেসে বলল
– আপনাকে নিয়েই তবে যাবো।
– মানে কী? আমি কেনো আপনার সাথে যাবো?
নিদ্র বিছানা ছেড়ে উঠে ঘরের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
মৌরি ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বলল
– আপনি আমার সাথে যাবেন। ভয় পাবার কিছুই নেই। রাজপুত্র কে আমি ক্ষত করবো না। কারণ, স্বয়ং রাজপুত্র আমাকে ক্ষত করেছে।
– আপনি এখন যান। আমি ঘুমাবো। সুফি সাহেবকে ডাকতে হবে।
– ডাকুন। সালিশ বসান। ভালোই হবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আমাদের গাটবাধা হয়ে যাবে। তখন আর আমাকে তাড়াতে পারবেন না।

নিদ্র কথাগুলোর সারমর্ম বুঝতে পেরে থমকে গেলো। কী করা যায়? এই মেয়েকে বিয়ে? জীবন আমার মরুভূমি হয়ে যাবে।
নিদ্র বলল
– আপনি কী চান বলুন?
– আমার সাথে এখন আপনাকে বের হতে হবে। আমরা একটু ঘুরবো ফিরবো। তারপর ছুটি আপনার।
– সত্যি তো?
– মৌরি যা বলে সত্য বলে।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ২৮.

0
তিনি এবং ও ! ২৮.
তিনি এবং ও ! ২৮.

তিনি এবং ও !

২৮.
নিদ্র বলল
– অদ্রি তো তেমন কিছুই বলেনি।
সুফি সাহেব হেসে বললেন
– উনি কখনওই অদ্রির সামনে বা বাসায় নেশা করতেন না। আর বিয়ে তো করেছিলেন অল্প বয়সী মেয়েকে। সেই মেয়ের সামনে ভদ্র সেজে বসে থাকতেন। অল্প বয়সী মেয়েরা আবেগ দ্বারা চালিত হয়। এদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কম থাকে।
অদ্রিও ঠিক তেমনি ছিলো।
বুঝেন ৪৫ বছরের লোক ১৮/১৯ বছরের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। বাপের বয়সী জামাই বুজঝেন?

নিদ্র সুফি সাহেবের প্রত্যেকটা কথায় শুধু অবাক হচ্ছে। মানুষের তো একটা সাধারণ জ্ঞান তো থাকে? এরকম মেয়ের বয়সী মেয়েকে? থাক এসব কোনো কথা না। আমাদের ধর্ম পাত্র – পাত্রীর বয়স নিয়ে এরকম কিছু বাধা দেয়নি।
মানুষ ভালো হলে যেকোনো বয়সের জীবনসঙ্গীর সাথে জীবন কাটানো যায়।
সুফি সাহেব সিগারেট ফেলে দিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বলতে শুরু করলেন
– প্রায় ২ মাস হয়েছে আমি ব্যবসার সাথে সংযুক্ত হয়েছি। অফিসে জরুরী মিটিং ছিলো যা শেষ হতে হতে রাত ১০ টা বেজে গেলো। আমি আর ইখলাস সাহেব বের হলাম সবার শেষে। বুঝেনই তো পার্টনারশিপ বলে কথা।
ইখলাস সাহেব আমাকে বললেন – চলো সুফি তোমাকে এক জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
আমি বললাম – আমার মা বাসায় একা। দেরি হলে তার কষ্ট হবে।
– আরে সুফি এই বয়সে যদি মা মা করো তাহলে কি আর চলে?
ওনার নিজস্ব গাড়ি ছিলো। গাড়িতে করে আমাকে নিয়ে উনি নিষিদ্ধপল্লীতে গেলেন।
উনি আমার দিকে দাঁত বের করে হেসে বললেন – চলো রসের মেলায় ঘুরে আসি।
আমি বললাম – আমি যাবোনা।
উনি ভ্রু কুঞ্চিত করে বললেন – কেনো হিজড়া নাকি তুমি? নাকি সমকামী? হিজড়া হলে তো খুবই খারাপ। জীবনের স্বাদ তো পেলা না।
আমি রেগে গিয়ে বললাম – আমার এসব পছন্দ না।
আমাকে জোড় করে টেনে নিয়ে গেলেন। কী যে বাজে পরিবেশ…..
সুফি সাহেব কী যেন ভাবলেন তারপর নিদ্রকে বললেন
– আপনার নামটাই তো জানা হলো না।
নিদ্র বলল
– আমার নাম নিদ্র।
– বাহ দারুণ নাম তো।
– তারপর কী হলো?
– তারপর আর কী? মেয়েদের বেহায়াপনা আর ইখলাস সাহেবের লুচ্চামি চোখের সামনে দেখতে হলো। তবে উনি মূলত একজন মেয়ের জন্য বেশি পাগল ছিলো। আর সেই মেয়ে যে কী পরিমাণ সুন্দরী আপনাকে বুঝাতে আমি পারবো না। এরকম সুন্দরী মেয়ে এই পরিবেশে বেমানান।
সেই মেয়ের কাছে উনি ইয়াবা সেবন করেই…… বুঝেনই তো।
নিদ্র বুঝতে পারলো না। সুফি সাহেবকে বললেন – আমি ঠিক বুঝলাম না।
– ড্রাগ সম্পর্কিত কোনো জ্ঞান আপনার আছে? মূলত ইয়াবা বিষয়ক?
– নাহ, আসলে কখনো ইন্টারেস্ট ফিল হয়নি।
– আমারো তেমন একটা জ্ঞান নেই। সিগারেট, গাঞ্জা এসব ব্যাপারেই একটু জানি। ইয়াবা সম্পর্ক এ ওনার কাছ থেকেই জানা।
ইয়াবার মধ্যে এক প্রকারের আছে যেগুলো সেক্স করার আগে সেবন করতে হয়। ওগুলো উত্তেজনাজনক মূলত। যাই হোক তুমি বাচ্চা ছেলে এতো জানতে হবেনা। তবে ওটার সাইড ইফেক্ট হচ্ছে, যে সেবন করবে তার একসময় পৌরষত্ব থাকবে না।
– ইখলাস সাহেবের কি তাই হয়েছিলো?
সুফি সাহেব প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল
– বাহ, ধরতে পেরেছো বটে।
– তাহলে বিয়ে করলেন কেনো?
– উনি বিয়ের ৬ মাস আগে থেকে বিভিন্ন ঝামেলার কারণে নারীসঙ্গ থেকে দূরে ছিলেন। এই কারণে নিজের অক্ষমতাটা ধরতে পারেননি। আর বিয়ের সময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম মাকে নিয়ে।
– যদি থাকতেন, বিয়েটা ভেঙে ফেলতেন তাই না?
– হ্যা, অবশ্যই ভাঙতাম। এরকম ঠাণ্ডা মাথার শয়তানের সাথে কোনো মেয়েরই বিয়ে হওয়া ঠিক না।
– বিয়ের পর তো অদ্রিকে জানাতে পারতেন?
– উনি বিয়ের করেছেন সেটা আমাকে জানিয়েছেন বিয়ের ৬ মাস পর। বউকে তিনি বাসা থেকেই বের করতেন না। জানানোর কারণ টাও অতি বিশ্রী।
– আপনি সবকিছু খুলে কেনো বলেননি অদ্রিকে?
নিদ্রের কেনো যেন, সামনে বসে থাকা লোকটাকে সন্দেহ হচ্ছে। লোকটা মিথ্যে বলছে না তো?
সুফি সাহেব আরেকটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন
– আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না তো? আমি অদ্রিকে কখনওই একা পেতাম না। না হয় ওই কুটনি বুড়ি কান পেতে থাকতো না হয় সুফি সাহেব আমাকে ফোন দিতেন। সেই ফোন আমি রিসিভ করে রাখতাম। উনি আমাদের সকল কথাবার্তা শুনতেন।
নিদ্র বলল
– সেই বিশ্রী কারণটা জানতে পারি?
– অবশ্যই। অদ্রি বাচ্চাকাচ্চা চাইতো, বুঝেনই তো বিয়ে হলে মেয়েদের কোল ভরা চাই। আমাকে ইখলাস সাহেব একদিন বেশ আদরযত্ন করে খাওয়ালেন। তারপর বললেন, আমার বউটারে একটু সঙ্গ দাও সুফি।
কথাটা বলে উনি শয়তানের মতো করে হাসলেন।
আমি রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে বললাম – বুঝলাম না ঠিক কী বললেন?
– বুঝো না তুমি? আমার তো কিছুই নাই। এতো আকর্ষণীয় মেয়ে আমার পাশে বসে থাকে আর আমি কিছুই করতে পারিনা। আফসোস বুঝছো সুফি।
– তো আমি কী করতে পারি?
– এতো প্যাঁচানো বন্ধ করো তো। আমার বউটারে পটিয়ে যা করার করবা।
– আপনি তালাক দিলেই তো পারেন।
– মানুষ কী বলবে? আমার নানান কথা শোনার ইচ্ছে নেই।
– সেটা আপনার ইচ্ছা। কিন্তু আমি আপনার কথা মানতে পারবো না।
– তুমি আসলেই একটা হিজড়া।
নিদ্র সুফি সাহেবকে থামিয়ে দিয়ে বলল
– তো আপনি কেনো অদ্রির সাথে দেখা করলেন? আপনি তো চাইতেনই না তো কীভাবে কী?
নিদ্র অবিশ্বাসের সুরে কথাগুলো বলল।
সুফি সাহেব উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলেন। তারপর হাসি থামিয়ে বললেন
– শুনেন নিদ্র। আমি কখনওই মিথ্যা বলবো না আপনাকে। কারণ জানেন?
কারণ আপনাকে অদ্রি পাঠিয়েছে। আমার অভিমানী বোনটা পাঠিয়েছে। আমি তাকে কীভাবে মিথ্যা বলি?
হালকা চাঁদের আলোয় সুফি সাহেবের চোখের কোণায় জলকণা গুলোকে মুক্তোদানার মতো লাগছে।

চলবে……!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ২৭.

0
তিনি এবং ও ! ২৭.
তিনি এবং ও ! ২৭.

তিনি এবং ও !

২৭.
অদ্রি এখন কী করছে? আমার জন্য অপেক্ষা? আমার জন্য কী কী রান্না করেছে?
হিমশীতল পানি শরীরে লেগে নিদ্র কেপে উঠলো। তার ভাবনা গুলো ভাবনায় রয়ে গেলো। পানিতে কেউ বরফ মিশিয়েছে কিনা কে জানে।
বাধ্য হয়ে তাকে গোসল করেই বের হতে হলো।
জানালার দিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে নিদ্র ভাবছে, অদ্রি এভাবে উদাসীন ভাবে তাকিয়ে কী দেখে?
আমার চোখে দেখতে পারছিনা কিন্তু অদ্রির চোখে হাজার হাজার মৃত স্বপ্নের পাল দেখে। মৃত স্বপ্নগুলো তাকে খুব কষ্ট দেয়। যদি আমি সেই কষ্টগুলোকে অনুভব করতে পারতাম। কষ্টগুলোকে তার খাঁচা থেকে বের করে দিতে পারতাম?
খাঁচার দুয়ার খোলার চেষ্টায় সে এখন এই ফাঁদে পরেছে। কী হবে কে জানে? এই কৃষ্ণ মেয়েটি তাকে বেশ জ্বালাবে। মেয়েটার কিছু একটা ক্ষমতা আছে মানে কাছাকাছি থাকলে নিজেকে অসহায় মনে হয়। মনে হয় সময় থমকে যাচ্ছে।
ক্ষমতা টমতা না, অন্যকিছু।
এই কৃষ্ণ সুন্দরী থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
অদ্রির হাতের বিরিয়ানি তো তৃপ্তি নিয়ে খেতে হবে। তবে নিমপাতা ভর্তাটা কখনওই ভুলতে পারবো না।
আর আর আর বৃষ্টির সেই রাত!
পাগল একটা মেয়ে, যখন হুট করে জড়িয়ে ধরলাম…. হার্টবিট এতো দ্রুত বাড়তে শুরু করলো অদ্রির। মনে হচ্ছিলো কেউ ঢোল পেটাচ্ছে।
অদ্রির উষ্ণ দেহের আবরণে শীতলতা কিছুটা কমেছিলো।
আরেকটু দেরি হলে হয়তোবা তার স্ট্রোকই হয়ে যেত।
অদ্রির প্রত্যেকটা স্পর্শ তার অনুভবে রয়ে গেছে।
মৌরি ধোয়া ওঠা এক কাপ চা এনে নিদ্রের ঘরের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বলল
– আকাশ দেখছেন?
নিদ্র কোনোরকম পিছনে না তাকিয়ে বলল
– তাছাড়া আর কিছুই তো দেখছি না।
– দেখার অনেক কিছুই আছে। আসলে আপনার চোখ খুঁজে পাচ্ছেনা।
– হতে পারে।
মৌরি ধীর পায়ে নিদ্রের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল
– রান্না হতে হতে অনেক দেরি। আপাতত খুদা নিবারণ করা প্রয়োজন। চা খেলে খুদা কম লাগবে।
– এখন আমি চা পান করবো না। ধন্যবাদ আপনাকে।
মৌরি ভেংচি কেটে বলল
– পান করবেনা? খেতেই হবে, এতো কষ্ট করে চা বানিয়েছি কি ফেলে দেবার জন্য নাকি?
– আপনি ফেলবেন কেনো? অন্য কেউ পান করলেই হয়।
– আপনার জন্য বানানো চা অন্য কেউই খাবে না। আপনাকেই খেতে হবে।
– দেখুন, আমি এখানে থাকতে আসিনি। আমি আমন্ত্রণ পেয়েও আসিনি। আমি একটা জরুরি কাজে এসেছি। কাজ শেষ হলেই চলে যাবো।
নিদ্রের রাগে গা কাঁপছে। তার ইচ্ছে করছে চায়ের কাপ ফেলে দিতে। কিন্তু ইচ্ছেটাকে সবসময় পূরণ করা যায়না। অন্ততপক্ষে সম্পূর্ণ অচেনা একজন মানুষের সাথে।
মৌরি মুচকি হেসে চায়ের কাপ বিছানার উপর রেখে চলে গেলো।
সুফি সাহেব ছাড়া আর কোনো অপশন তার ছিলোনা। বাধ্য হয়ে এই ফাঁদে পা দেয়া।
অদ্রির মোবাইল নাম্বার টাও নেই। এতদিন ওই বাসায় আছি কিন্তু মোবাইল নাম্বার টা নেয়া হয়নি। রশিদ চাচাকে বললে উনি কিছু একটা করতে পারেন।
নিদ্র চায়ের কাপের চা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো। তারপর চেয়ারে বসে রশিদ সাহেবের নাম্বারে কল দিলো।
রিং বেজেই যাচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করছেনা।
সেদিনকার পর তিনি খুব বেশি ভয় পেয়ে গেছেন। নাকি অসুস্থ হয়ে আছেন?
৮ বার রিং বাজার পরও যখন ফোন রিসিভ হলো না তখন নিদ্র ফোন বিছানার উপর রেখে দিলো।
খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তার মুক্তির স্বাদ নেবার ইচ্ছা জাগলো। সে কী করবে বুঝতে পারছেনা।
অদ্রি তার ওয়ারড্রব এর সব জামাকাপড় বের করে দেখছিলো রঙিন কোনো থ্রিপিচ আছে কিনা?
আজকাল তার সাদারঙ টা বেশ অসহ্যকর লাগে। অনুশোচনা বোধটা আর আগের মতোন তীব্র নেই।
ভেতরটা তার তীব্র দহনে পুড়ে ছাই হয়ে আছে।
লিলি বলল
– আপা আপনার তো সাদা ছাড়া কোনো রঙের জামাই নেই।
অদ্রি হতাশ সুরে বলল
– তাই তো। আমি না বানালে আসবে কোথা থেকে?
– আপা, ৩০ মিনিটের পথ পার হলেই নিউমার্কেট আছে। চলেন যাই, অনেক দিন নিউমার্কেট যাওয়া হয়না।
অদ্রি এর আগেও নিউমার্কেট ঘুরে এসেছে তবে নিতান্ত প্রয়োজন ছিলো বলে।বাসায় তার এমন কেউ নেই যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র কিনে তাকে সাহায্য করবে।
তাকেই বাধ্য হয়ে বাসার বাইরে বের হতে হয়।
সাদারঙ না হোক হালকা গোলাপি বা বাসন্তী রঙ বা হালকা নীল রঙের পোশাক পরিধান করা যাবে। ইসলামে এতো কঠোরতা নেই বিধবাদের নিয়ে।
বিধবা – এই মাত্র ২২ বছরে সে একজন বিধবা। ২০ বছর বয়সেই তাকে বিধবা নামক শিকলে পা বাধতে হয়েছে। পায়ে সেই শিকলের দাগ গাঢ় ভাবে লেগে আছে। অদ্রি ছাড়া কেউই তা দেখতে পায়না।
রাত ১০ দিকে সুফি সাহেব নিদ্রকে ছাদে ডেকে নিয়ে গেলেন।
ছাদে পাটি বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। দুটো বালিশ, খাবার পানি, পান, সিগারেট, চায়ের ফ্লাক্স, টোস্ট বিস্কুট সবকিছু সুন্দর ভাবে সাজানো। পাটিতে বসে সুফি সাহেব বললেন – আসলে আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছিলাম না। তাছাড়া উপায়ও নেই। সবাই এখন ঘুম, আমি শান্তিতে যা জানতে চাইবেন বলবো।
নিদ্র বালিশ কোলে নিয়ে খুব ক্ষীণস্বরে বলল
– না না আমার আবার কীসের কষ্ট? ভালো আছি তো।
দুপুরের খাবার বিকালে টেবিলে খাবার সময় সেই কৃষ্ণ সুন্দরী তাকে কম হেনস্তা করেনি। বহুত জ্বালিয়েছে। চা ফেলে দিয়েছি বুঝতে পেরে তো আরো বেশি রকম করেছে। এর থেকে অদ্রির নিমপাতা ভর্তাও অনেক ভালো। অন্ততপক্ষে শান্তিতে খেতে পারা যায়।
সুফি সাহেব কিছুক্ষণ কেশে গলা পরিষ্কার করে বললেন
– আমার শালী আপনাকে খুব জ্বালাতন করছে আমি বুঝতে পারছি। আসলে আপনি অনেক সুন্দর আর সাদামাটা মানুষ তো তাই আরকি তার…. যাইহোক কিছু মনে করবেন না।
সিগারেট হাতে নিয়ে নিদ্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
– লাগবে?
নিদ্র বলল
– না, আমার এসবের অভ্যেস নেই।
– আমার আবার দারুণ অভ্যেস। আমি এখন অনেক গুলো খাবো। ২-৩ প্যাকেট ও হতে পারে। আপনাকে কষ্ট করে সহ্য করতে হবে।
– না না সমস্যা নেই।
– চা খাবেন?
– আমি আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো। আপনি তার সঠিক উত্তর দিবেন। কোনো কিছু গোপন করবেন না।
– আচ্ছা করুন। না থাক। আমি আদি অন্ত বলি। তার মধ্যে থেকে আপনার উত্তর খুঁজে নিবেন। ওই প্রশ্ন ট্রশ্ন আমার সহ্য হয়না।
– আচ্ছা বলুন।
– ইখলাস সাহেব আমার বন্ধু ছিলেন না। তিনি আমার থেকে প্রায় ১০ বছরের বড়। আমার বাবার সাথে তার পার্টনারশিপ ছিলো। বাবা মারা যাওয়ার ঠিক আগে আমাকে বলে গেলেন, যেমনেই হোক পার্টনারশিপ টা ভেঙে ফেলতে। মানে আলাদা হতে। আমি তখন ব্যাপার টা গুরুত্ব দেইনি। মৃত্যু শয্যায় কী না কী বলতেছে, মাথা ঠিক আছে নাকি?
নিদ্র বলল
– কেনো বলেছিলো ব্যাপার টা জেনেছিলেন?
– আবার জিগায়। চোখের সামনে দেখেছি।ঠাণ্ডা মাথার শয়তান যদি না দেখে থাকেন তাহলে ওনাকে দেখলেই দেখা হয়ে যেতো। আর গুণাগুণ জানা না থাকলে ওনার গুণাগুণ জানলেই যথেষ্ট।

নিদ্র খুব সাবধানে তার মোবাইলের রেকর্ডিং সিস্টেম অন করলো। হিউজ পরিমাণ জায়গা আছে। সারারাত ধরে বললেও জায়গা ফুল হবেনা।

সুফি সাহেব সিগারেটের ধোয়া অন্য দিকে ছেড়ে দিয়ে বললেন
– শুনুন, একবার আমি অফিসে গিয়েছি জরুরী কাজে। ওনার রুমে যদি ঢুকতে পারি পুরো রুম ধোয়ায় পরিপূর্ণ। আর ধোয়া দিয়ে চকলেটের ঘ্রাণ। বুঝতেই পারছেন ইয়াবা মানে বাবা সেবন করছেন।
আমার সিগারেটের নেশা আছে তাছাড়া আর কোনো ধরনের কোনো নেশা নেই।

চলবে……!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ২৬.

0
তিনি এবং ও ! ২৬.
তিনি এবং ও ! ২৬.

তিনি এবং ও !

২৬.
ড্রয়িংরুম এ ছোট্ট ছোফার উপর নিদ্র বসে আছে। বাড়িটায় কেমন যেন গুমোট ভাব আছে। নিদ্রের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। তার সামনে টিভিতে ইন্ডিয়ান একটা গানের চ্যানেল খোলা আর তাতে বাম ডিগি ডিগি বাম গান চলছে। নিদ্র ভাবছে হুট করে কেউ চলে আসলে এই গান চলা অবস্থায় তাহলে খুব লজ্জায় তাকে পড়তে হবে। এই গানের মিনিং টা খুব খারাপ লাগে নিদ্রের কাছে। পৃষ্ঠদেশ নিয়ে এভাবে কেউ গান লিখে? আর তাতে যে নাচ দিচ্ছে তাতেও স্পষ্ট ভাবে ওই অঙ্গ দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে বারবার। কী অরুচিকর গান!
সুফি সাহেব চলে আসলে যাও কম লজ্জা পাওয়া যাবে ওনার স্ত্রী আসলে খুবই লজ্জাকর পরিস্থিতি!
তার কপাল ঘামে ভিজে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বাড়ির ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসছে। সুফি সাহেব সেই যে তাকে এখানে বসিয়ে রেখে গেছেন আর খোজ নেই।
বাচ্চার কান্নার আওয়াজ বেড়ে যাচ্ছেই।নিদ্রের মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেলো।
২৫-২৬ বছরের একজন নারী এক গ্লাস লেবুর শরবত নিদ্রের সামনের টি-টেবিলে রেখে বললেন
– কিছু মনে করবেন না। উনি একটু কুটিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। উনি এক্ষণি আসবেন। আপনি শরবত খান। আমার শরবত এই বাংলাদেশে শ্রেষ্ঠ!
লাস্টের কথাটা বলে সেই নারী মুখ টিপে হাসলেন।
নিদ্র এরকম কুচকুচে কালো নারীকে এতো সুন্দর করে কখনো হাসতে দেখেনি।
মুখ টিপে হাসার কারণে তার দুই গালে টোল পড়েছে। কী সুন্দর হাসি!
এরকম সুন্দর হাসির মেয়েকে যে কেউ বিয়ে করতে চাইবে। কালো গায়ের রঙ কে ছাপিয়ে গেছে এই হাসি।
রমণী চলে গেলেন। নিদ্র নিজেকে শাসন করলো। এভাবে হুট করে কারো মায়ায় পড়তে নেই।
শরবতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে লাস্টের কথার সত্যতা বুঝতে পারলো।
মৌরি ইচ্ছে করেই মুখ টিপে হেসেছে। অজানা কাউকে এভাবে চমকে দিতে তার ভালো লাগে। সে জানে তার হাসির তুলনা কখনওই হয়না। আর শরবত এর তো কথাই নেই।
ছেলেটা চমকে যাবার পর বেশ বোকাসোকা লাগছিলো। চোখ দুটো বড় বড় করে হা করে তাকিয়ে ছিলো। ছেলেটা অবশ্য খুবই সুন্দর। কী সুন্দর তার চুলের রঙ। অবশ্য বয়সে তার অনেক ছোটো। তবে…. এরকম চিন্তা করতে করতে মৌরি আবারো মুখ টিপে হাসলো।
ছেলেটাকে আবারো চমকে দিতে হবে।
নিদ্রের চোখের সামনে এখনো সেই হাসি ভেসে ভেসে উঠছে।
মাথাব্যথা টা আর এখন নেই।
মেয়েটা সুফি সাহেবের স্ত্রী তো নয়? হলেও বা কী? নিদ্রের তাতে কিছুই যায় আসেনা। নিদ্র নিজেই অবাক হচ্ছে এতকিছু কেনো ভাবছে সে?
সুফি সাহেব বাচ্চা কোলে নিয়ে নিদ্রের পাশের সোফায় বসলেন। তারপর ফিসফিস করে বললেন
– শুনো ভাই, আমার বাসায় ওসব ব্যাপারে কথা বলা যাবেনা। আমার ইলেকট্রন কিছুই জানেনা। আমি তাকে জানাইনি।
নিদ্র ধীরেধীরে বলল
– আমার খুব দরকার ছিলো যে।
– আমরা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার নাম করে বের হবো। তখন না হয়……
সুফি সাহেবের কোলের বাচ্চাটা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো।
সুফি সাহেব বেশ জোড়ে বললেন
– এই কুটির মা, নিয়ে যাও কুটিরে।
ফর্শা মতোন একজন নারী মাথার ঘোমটা ঠিক করতে করতে এসে বাচ্চাকে নিয়ে গেলেন।
নিদ্র বুঝতে পারলো, ইনিই সুফির সাহেবের স্ত্রী। তাহলে সেই কৃষ্ণ নারী কে?
সুফি সাহেব ফিসফিস করে বললেন
– আমার শালীর হাতের শরবত খেয়েছেন? দারুণ না?
নিদ্র মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।
সুফি সাহেব হেসে বললেন
– আমার শালীর হাসিও দেখেছেন তাই না?
– হ্যা।
– সে হাসিতে অনন্যা।
নিদ্র বলল
– আমার বাসায় যাওয়া দরকার। রাত হয়ে গেলে ঝামেলায় পড়তে হবে।
সুফি সাহেব উচ্ছসিত হয়ে বললেন
– আপনি কি ভেবেছেন, ১ দিনেই আপনাকে আমরা ছেড়ে দিবো?বাসায় মেহমান এসেছে আর তাকে আদরযত্ন করবো না? তা কী হয়?
– না মানে আমার যেতেই হবে।
– আরে মিয়াঁ থামেন। আগে খেয়ে দেয়ে স্বাস্থ্য ভালো করুন। তারপর……
আর আপনার যা জানার দরকার আমি ডিটেইল বলবো যদি এখানে আমাদের ইচ্ছামত থাকেন। আর না থাকলে একটা শব্দও শুনতে পারবেন না।
অগ্যতা নিদ্রকে রাজি হতে হলো।
সুফি সাহেব বললেন
– একটু বসেন, আপনার জন্য যে ঘরটা খোলা হয়েছে ওটা পরিষ্কার করা হচ্ছে।
কথাটা বলে সুফি সাহেব চলে গেলেন।
নিদ্র কোথায় ফেঁসে গেছে, কী হবে? কীভাবে বের হবে বুঝতে পারছেনা।
ওদিকে অদ্রি রাতের খাবার রান্না করে অপেক্ষায় থাকবেন। বেচারি দেখা গেলো না খেয়েই….
নিদ্র তার মনকে বলল – সে আমার জন্য না খেয়ে কেনো থাকবে?
এসব কী এলোমেলো চিন্তা তার মাথায় ঘুরছে।
টিভিতে এখন অন্য একটা গান হচ্ছে, সেটা বিংশ শতাব্দীর গান। কিন্তু এটাকে রিমেক করে আবারো বের করা হয়েছে। নায়িকা ভিন্ন, নায়ক ভিন্ন প্রায় সবই ভিন্ন।
নিদ্র গানে মনযোগ আনার চেষ্টা করছিলো তখন মৌরি এসে বলল
– গান শুনতে ভালো লাগছে না বুঝি?
নিদ্র কিছু বলবে আর তখন মৌরি বলল
– আপনার ঘর পরিষ্কার হয়ে গেছে। চলুন আমার সাথে দেখিয়ে দিয়ে আসি।
মৌরির পিছুপিছু নিদ্র এগোলো। বেশ গোছানো একটা ঘর। একটা বেড, ছোট্ট টেবিলে বই ভরা, সাথে চেয়ার। একটা ওয়ারড্রব আর বিশাল জানালার সাথে ইজি চেয়ার রাখা। ইজি চেয়ারে বসেই জানালা দিয়ে বাইরের সবকিছু দেখা যাবে। কিছু মুহূর্ত এর জন্য নিদ্রের এমন একটা ঘর পেয়ে ভালো লাগতে শুরু করলো। কিন্তু পরক্ষণেই মৌরির কথায় তার ভালো লাগাটা কমলো ।
– ওয়ারড্রবে সম্পূর্ণ নতুন জামা কাপড় আছে। আপনি সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। আর একটু গোসল করেন। এতো ফর্শা মানুষটাকে কেমন কালো কালো লাগছে।
নিদ্র বোকা বনে গেলো। এ কীরকম কথা মেয়ের?
মৌরি দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। তার ইচ্ছে করছিলো পিছন ফিরে তাকাতে কিন্তু সে তাকালো না। ছেলেটা আরেকটু বোকা হোক না।
তাকে বোকা অবস্থায় বেশি ভালো লাগে।
অদ্রি নিদ্রের ঘর সুন্দর করে গুছিয়ে একগোছা সাদা গোলাপ ফুলদানিতে রেখে দিলো।
ফুলগুলো সে নিজ হাতে রুমন মালির বাগান থেকে। ফুলের বোটা থেকে এখনো কস পরছে। নিদ্রের মনে হয় সাদারঙ এর গোলাপ খুব পছন্দ।
অদ্রির আজকে খুব ভালো লাগছিলো। গতকাল রাতে নিমপাতা ভর্তা খাইয়েছে ভেবে আনমনে হেসে ফেলল অদ্রি। বেচারা তাও খেয়েছে। আজকে তার পছন্দের বিরিয়ানি রান্না করবো। অদ্রি মনে মনে ঠিক করে নিলো। খুব খুশি হবে মানুষটা।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ২৫.

0
তিনি এবং ও ! ২৫.
তিনি এবং ও ! ২৫.

তিনি এবং ও !

২৫.
– আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই!
নিদ্র বেশ ভারী কণ্ঠে বলল।
অদ্রি অবজ্ঞার স্বরে বলল
– আমাকে?
– জি আপনাকে।

ইখলাস সাহেবের ( অদ্রির মৃত স্বামী) সেই বন্ধুর নাম, ঠিকানা অনেক কষ্টে অদ্রির কাছ থেকে পাওয়া গেছে। নিদ্র রাত ২ টা পর্যন্ত পরিকল্পনা করেছে কীভাবে কী করা যায়। অদ্রি তার স্বামীকে এতোটাই বিশ্বাস করেন যে, প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছাড়া তার তিনির কুকর্ম বিশ্বাস করতে চাইবে না। প্রত্যক্ষ প্রমাণ হলেও খুব জোড়ালো প্রমাণ হতে হবে। তা না হলে বিষয়টা ভিন্ন দিকে মোড় নিবে।
এমনিতেই সন্ধার কথা কাটাকাটিতে অদ্রি বেশ বিরক্ত হয়েছেন তার প্রতি।
ইখলাস সাহেবের বন্ধুর নামটা শুনলে মনে হয়, মানুষ টা খুবই ভালো। অবশ্য ইখলাস নামটাও তো সেরকমই কিন্তু যতটুকু তথ্য যোগাড় হয়েছে তাতে তাকে ভালো মানুষ বলা চলেনা।
মানুষের কতো রূপ হতে পারে সেটা চিন্তার অতীত।
আর হিসাবের এই খাতাটা অদ্রিকেই দিয়ে যেতে হবে, নিদ্র ভেবে রেখেছে।
মেয়েটা কে সাহায্য করতে পারলে শান্তি পাওয়া যাবে।
নিদ্র ভাবতে ভাবতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। স্বপ্নহীন ঘুম ভাঙলো অদ্রির ডাকে।
বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে নিজেকে সামলে নিলো। তারপর বিছানার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকা জিনিষ পত্রগুলো তার লাগেজে রেখে দিলো। চোখ মুছতে মুছতে দরজা খুলে দিলো।
অদ্রির চোখ এখনো লাল তবে গতদিনের তুলনায় কিছুটা কম।
অদ্রি খাবারের ট্রে নিয়ে ছোট্ট টেবিলের উপর রেখে আবার চলে গেলো।
নিদ্র চাচ্ছিলো অদ্রি তার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করুক। কেনো যেন তার সাথে গল্প করতে নিদ্রের খুব ভালোলাগে। কেনো ভালোলাগে সেটা নিদ্রের জানা নেই। আর জানার ইচ্ছেও নেই।
এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে যাদের সাথে কোনো কারণ ছাড়াই কথা বলতে ভালো লাগে। অদ্রি, নিদ্রের সেই কিছু মানুষের একজন।
নিদ্র তাকে ডাকলেও হয়তোবা অদ্রি আসতো। আবার নাও আসতে পারে। না আসার কারণ অনেক আছে। তার তিনিকে নিয়ে যে নিদ্র অপ্রীতিকর কথা বলেছে। অপ্রীতিকর হলেও বাস্তব, অতিবাস্তব।
কিছু মানুষ থাকবেই যারা সহজে বাস্তবতাকে মেনে নিতে চায়না বা অন্ধ, বধিরের মতো বসে থাকে।
এদেরকে বোঝানোর জন্য চোখ টেনে খুলতে হয় আর কানের টিমপেনিক পর্দায় বৃহৎ কম্পনের সৃষ্টি করতে হয়।
অদ্রির জন্য তাকে দুটো পদ্ধতি এপ্লাই করতে হবে।
দাঁত ব্রাশ করার পর নিদ্র কিছুটা শান্তি ফিরে পেলো। দাঁতে মনে হচ্ছিলো মণ খানিক ময়লা জমে ছিলো। প্রতিদিন ব্রাশ না করার অভ্যেস তার নেই। তারপরও সেই নিমপাতা খাবার পর থেকেই মনে হচ্ছিলো তার।
শান্তভাবে নাস্তা খাবার পর তাড়াতাড়ি বাসার পোশাক ছেড়ে খুবই মার্জিত পোশাক পড়লো।
এমন ভদ্র ব্যবহার করতে হবে যাতে সুফি সাহেব মুগ্ধ হয়ে যান। ইখলাস সাহেব আর সুফি সাহেব নামে প্রচুর মিল আছে।
অদ্র যেভাবে বলেছে তাতে নিদ্রের কিছু বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা হয়েছে সুফি সাহেবের ব্যাপারে।
অদ্রির তিনির একমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু আর ব্যাবসার পার্টনার। খুবই খোলামেলা মনের মানুষ। প্রচুর কথা বলেন আর বিয়ে বিদ্বেষী। বাগানপ্রিয় মানুষ।
নিদ্র তার প্রয়োজনীয় জিনিষ ছোট্ট কাধ ব্যাগে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরলো।
চোর যেভাবে চুরি করার পর বাসা থেকে বের হয়ে আসে নিদ্রও ঠিক সেভাবেই বের হলো। সে কোনো চুরি করেনি কিন্তু যাওয়ার পথে অদ্রি বা লিলি কেউ থাকলে ঝামেলা হতে পারে।আবার নাও হতে পারে।
অদ্রির ঠিকানা অনুযায়ী তাকে অন্ততপক্ষে ৩ ঘণ্টার জার্নি করতে হবে।
তারপর পায়ে হেটে ৩০ মিনিটের পথ আর কপাল ভালো থাকলে ভ্যানগাড়ি পেয়েও যেতে পারে।
কারেক্ট ৩.৩০ মিনিট পর নিদ্র তার গন্তব্যস্থান এ পৌঁছালো। বিশাল উঁচু গেটের সাথে নিচু পাঁচিল। খুবই উদ্ভট আর
হাস্যকর হাস্যকর। এতো উঁচু গেট প্রথমে কেউ দেখলে ভাববে বাইরের লোকজন থেকে ভেতরকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে চাচ্ছেন বাড়ির মালিক। কিন্তু পাঁচিল এর দিকে তাকালে উল্টো চিন্তা মাথায় আসবে। বাড়ির মালিক চাচ্ছেন, আপনি বাড়িতে ঢুকে খুব আনন্দের সহীত ঘুরতে পারেন।
গেট এর পাশে কলিংবেল এ কয়েকবার বাজানোর পরও কেউই গেট খুললো না। নিদ্র আবারো কলিংবেল এ চাপ দিলো প্রায় সাথেসাথে ৩০-৩৫ বছরের একজন সুঠাম দেহের পুরুষ একরাশ বিরক্তি নিয়ে গেট খুলে ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল
– কে ভাই আপনি? এতোবার কেউ কলিংবেল বাজায়?
নিদ্র বলল
– আমি ভাবলাম কেউ হয়তোবা শুনছেনা তাই।
– বলেন কী ভাই? এই বিখ্যাত বেল বাজবে না জোড়ে? আমার ইলেকট্রন মানে আমার স্ত্রী পুরো ১ মাস ধরে প্রায় ৫০০ টা দোকানের বারোটা বাজিয়ে এটাকে কিনেছে। এটাতে শব্দ না হয়ে কই যাবে বলেন ভাই?
নিদ্র ৬০% শিওর ইনিই সুফি সাহেব কিন্তু উনি তো বিয়ে বিদ্বেষী। তাহলে স্ত্রীর কথা বলেছেন কেনো?
লোকটি আবারো বলল
– আপনি কে? একজন অপরিচিত দের সাথে এভাবে বেশিক্ষণ কথা বলা ঠিক না। দেখা গেলো আপনি আমাকে ক্লোরোফম দিয়ে বেহুঁশ করে আমার বাগানের গাছ চুরি করলেন। তখন কী হবে?
নিদ্র খুব কষ্টে হাসি চাপিয়ে রাখলো কিন্তু সে শেষ পর্যন্ত হেসেই ফেলল।
লোকটি ভ্রু আরো বেশি কুঞ্চিত করে বললেন
– হাসেন ক্যান মিয়াঁ?
নিদ্র ৯০% শিওর যে ইনিই সুফি সাহেব। ১০% তো বাকিই রয়ে গেলো।
নিদ্র বিনয়ী স্বরে বলল
– আমি সুফি সাহেবের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
লোকটি মৃদু হেসে বললেন
– আমিই আপনার কাঙ্ক্ষিত সুফি সাহেব। বলুন কী বলবেন?
– আমি আসলে অদ্রির বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
সুফি সাহেবের হাস্যোজ্জ্বল মুখ গভীর বিষাদে ছেয়ে গেলো।
আপনি বাড়ির মধ্যে আসুন সুফি সাহেব নিদ্রকে বললেন।

চলবে…..!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ২৪.

0
তিনি এবং ও ! ২৪.
তিনি এবং ও ! ২৪.

তিনি এবং ও !

২৪.
– আপনার চোখ এরকম লাল কেনো?
নিদ্র চায়ের কাপ ট্রের উপর রেখে বলল।
অদ্রি উত্তর দিবে কি দিবে না সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা। উত্তর টা জানার পর সে বিশ্বাস করবেনা। এরকম আজগুবি স্বপ্ন কেউ দেখে নাকি কখনো?
সরাসরি পাগল না বললেও মনে মনে বলতেও পারে।
নিদ্র আবার প্রশ্ন করলো
– আপনি অনেক অসুস্থ মনে হচ্ছে এবং চিন্তিত। যদি বাইরের কাউকে বলার মতো না হলে বলতে হবে না।
আসলে, প্রথম যেদিন আপনাকে দেখলাম সেদিনও আপনার চোখ এরকম ছিলো। আর বেশ বিষণ্ণ ছিলেন। কারণ টা জানার ইচ্ছা সেদিন থেকেই।
অদ্রি মৃদুস্বরে বলল
– আপনি গবেষণা করে বের করুন।
নিদ্র দাঁত বের করে হেসে বলল
– আমার মাথায় তো জট নেই যে, আপনার মনের খবর জানতে পারবো। আর থাকলেও মেয়েদের মন তো পানির মতো। কখনো এসিড হিসেবে আচরণ করে, কখনো ক্ষার হিসেবে আবার কখনো নিরপেক্ষ আচরণ করে। এখন আমি তো এতো মহাজ্ঞানী নই যে, এই তিন অবস্থা বুঝতে পারবো।
– আপনি অনেক বেশি কথা বলেন। প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা বেশি বলেন।
– জানি তো। আসলে সামনের জন তো প্রয়োজনেই কথা বলেনা তাই আমি…..
অদ্রি ট্রে নিয়ে চলে গেলো। অদ্রির চলে যাওয়াটা নিদ্র খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।
প্রতিদিনের মতো আজকের হাটায় অনেক পার্থক্য। আজকে কেমন যেন পা টিপে টিপে হাটছে। প্রত্যেকটা পদক্ষেপ খুব সাবধানে ফেলছে।
কী এমন ঘটেছে? মৃত স্বামীর কথা মনে পড়েছে? মনে পড়লেও এরকম হবে কেনো?
নিদ্রের মাথাধরা শুরু হয়ে গেলো। ক্ষুদ্র এই মস্তিষ্কে এতো প্রশ্ন রাখা যায় নাকি? উত্তর ও পাওয়া যাচ্ছেনা।
কী যে অবস্থা!
নিদ্রের এক মুহূর্ত এর জন্য মনে হলো, এখানে আসাটা ঠিক হয়নি। শুধুশুধু ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া।
পরক্ষণে মনে হলো, না ঝামেলা না। একটি সাদা ফুল কে তপ্ত মরুভূমির বালির মাঝে পরে আছে। তপ্ত বালির স্পর্শে ফুলের পাপড়ি গুলো উমম পাপড়িগুলো…… ধ্যাৎ মনে পড়ছে না।
রাতে খাবার টেবিলে নিদ্র অবাক থেকে অবাক হচ্ছে।
পুরো টেবিল জুড়ে বিভিন্ন ভর্তা। ২-৩ টা বাদে একটারও নাম তার জানা নেই।
নিদ্রের দিকে ছোট্ট বাটি এগিয়ে দিয়ে অদ্রি বলল
– এটা নিমপাতা ভর্তা। আগে খান, ভাত ঠাণ্ডা হয়ে গেলে স্বাদ পাবেন না।
– মানে, আমি তো জানতাম এটা খুব তিতা।
– আপনার জানাটা সঠিক।
– তাহলে খাবো যে……আমার তো তিতা খাওয়ার অভ্যেস নেই।
– আপনি বাঙালি খাবার খেতে চেয়েছিলেন।
– কিন্তু……

জানালার ধারে অদ্রি দাঁড়িয়ে কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে ধীরেধীরে বলতে শুরু করলো
– একটা ভয়ানক স্বপ্ন। আমার পিছু ছাড়েনা।
নিদ্র বলল
– ২ বছর যাবত তাই তো?
– হ্যা।
অদ্রি তার স্বপ্নের সবটুকু নিদ্রকে জানালো।
নিদ্র বলল
– আমি একটা তত্ত্ব পেয়েছি আপনার স্বপ্নবিষয়ক।
– কীরকম শুনি?
– আপনার বর এর পোস্টমর্টেম হয়েছিলো তাই তো?
– হ্যা, অপমৃত্যু হয়েছিলো তাই।
– আপনি এই পোস্টমর্টেম নিয়ে অনেক গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন। আপনার বরের আত্মহত্যার জন্য নিজেকে দায়ী করেন। আপনার চিন্তাটা এতোটাই গভীরে চলে গিয়েছে যে, পোস্টমর্টেম থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা ধাপের জীবন্ত অনুভূতি আপনি অনুভব করতে পারছেন।
নিজেকে দায়ী করা বন্ধ করুন। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন। এরকম অস্বাভাবিক জীবন আর কতো দিন?
অদ্রি বলল
– আমিই দায়ি।
– ভুল আপনি অদ্রি সম্পূর্ণ ভুল ভেবে বসে আছেন।

চলবে…….!

 

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ২৩.

0
তিনি এবং ও ! ২৩.
তিনি এবং ও ! ২৩.

তিনি এবং ও !

২৩.

পড়ন্ত বিকাল বেলায় অদ্রির মনে পড়লো রান্না করতে হবে। অবশ্য লিলি করে রেখেছে কিন্তু নিদ্র তার রান্না খেতে চেয়েছে।
গত দুই বছরের অভ্যেস কে ত্যাগ করে অদ্রি তার ঘর থেকে বের হলো।
সন্ধ্যের দিকে নিদ্র তার দুহাত ভরে সাদা গোলাপ নিয়ে বাসায় ফিরলো।
অদ্রি রান্নাঘরে শুঁটকিমাছ ভর্তা করছিলো।
নিদ্র বাসার মধ্যে প্রবেশ করার পর থেকে কেমন যেন পঁচা একটা গন্ধ তার নাকে আসছে। সে কোনোভাবেই গন্ধের উৎস খুঁজে পাচ্ছেনা।
রশিদ সাহেব সরাসরি তার বাসার দিকে চলে গেছেন।
নিদ্র তাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত যদি পা ভেঙে থাকে তাহলে একা একাই তাকে বের হতে হবে। একা বের হওয়াটা রিস্কি বহুত রিস্কি। আবারো যদি কুকুর তাকে নর্দমায় ফেলে ডুবিয়ে রাখে।
ফুলগুলো অদ্রির হাতে দিলেই ভালো হতো।
তার অনেক হিসেব এখনো বাকি। একটা গল্প তার মাথায় আছে। গল্পে কিছু মিসিং আছে। দুইয়ে দুইয়ে চার হচ্ছে না তিন হচ্ছে। কোনোভাবেই মিলছেনা। আজকের জমা শব্দে কিছুটা ঘাটতি কমলেও পুরোটা কমবে না।
ঘরে এসে নিদ্র ফুলগুলো বিছানার উপর রেখে সংগ্রহীত জিনিষ গুলো তার ব্যাগে রেখে দিলো।
সারাদিনের ক্লান্তিটা গোসল করে কিছুটা কমাতে হবে।
অদ্রি তাকে মিথ্যে বলেনি, কেউ মিথ্যে বললে খুব সহজে নিদ্র বুঝতে পারে। আর গল্পে যে মিসিং ছিলো, সেটা অদ্রি ইচ্ছে করেই করেছে। মিথ্যে সে বলতে চায়না, তাই এড়িয়ে গেছে। কিন্তু বলতে সমস্যা টা কই?
তবে অদ্রির তিনি মানুষ টা তেমন ভালো ছিলেননা। এলাকার মানুষ জন তার উপর বেশ বিরক্ত। তার বাড়ির আশেপাশেই কেউ যেতে চায়না।
কিন্তু তবুও রয়ে যায়। বৃদ্ধ কাজের লোক, তিনির বন্ধু আর অদ্রির পরিবার এদের সাথে কথা না বললে চার আর হবেনা।
মেয়েটার কোনো খারাপ দিক সে এখনো খুঁজে পায়নি। দুজন লোকের একজনও অদ্রি সম্পর্কিত তেমন কিছুই বলেনি। যদি থাকতো তাহলে অবশ্যই বলতো।
থানা থেকে কিছু তথ্য পেয়েছে তবে পুরোটা জানতে হলে ঘুষ প্রদান না করে উপায় নেই।
লিলি অদ্রিকে এসে জানালো
– ভাইজান আইছে আপামনি। সে তার ঘরে গ্যাছে।
অদ্রি হাত ধুয়ে চুলায় চায়ের পানি দিতে দিতে বলল
– তোর ভাইজান কই?
– বললামই তো ঘরে।
– মোবাইল টা নিয়ে আয় তো। বাড়িঘর নোংরা হয়ে আছে দুই বেগমের খোজ নেই। মাস হলে টাকা নেবার বেলায় ঠিকই ছুটে আসবে । আমার দ্বারা আর হচ্ছেনা।
খাবার টেবিলে গুছিয়ে দুকাপ চা ট্রে তে নিয়ে নিদ্রে ঘরের দিকে ধীর পায়ে এগোতে লাগলো। পুরো শরীর তার ব্যথা তারপরও সে ব্যাপার টা ভুলে থাকতে চাচ্ছে কিন্তু ব্যথা তাকে ভুলতে দিতে চায়না।
এভাবে তো আর থাকা যায়না তাই সে চেষ্টা করছে কাটিয়ে ওঠার।
ঘরে ঢুকে বিছানার উপর ট্রে রাখতে গিয়ে ফুলেরতোড়ার দিকে চোখ গেলো তার।
মেয়ে আর বাচ্চা এই দুটো জাত ফুল খুব পছন্দ করে। যারা খুব সাদামাটা তারাই সাদারঙ এর ফুল বেশি পছন্দ করে।
ফুলগুলো কি তার জন্য নাকি অন্য কারোর জন্য অদ্রি জানেনা। মন বলছে তার জন্য কিন্তু সেই মনই আবার বলছে না, তোর জন্য না।
কী আজব ! একটাই মন ক্ষুদ্র সময়ের ব্যবধানে ভিন্ন দুটো কথা বললো। সময়ের ব্যবধান আরেকটু বেশি হলে হয়তোবা এই সংখ্যাটাও বৃদ্ধি পেতো।
মাত্র ২ সপ্তাহ আগেও তার একই অবস্থা হয়েছিলো। সে ঘরে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছিলো।
আজও একই স্বপ্ন, একই অনুভূতি, একই ব্যথা, একই মনের অবস্থা কিন্তু কিন্তু সে স্বাভাবিক ভাবেই আছে।
কারণ টা একটা শব্দ – নিদ্র।
হাসিখুশি সরল মনের মানুষ টার জন্য তার ক্ষুদ্র সময়ে কতোটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে।
নিদ্র গোসল করে বের হয়ে দেখলো, অদ্রি তার বিছানার উপর উবু হয়ে বসে ফুল দেখছে। চোখের পলক পরছে না।
নিদ্র আনমনেই নিঃশব্দে হাসলো।
নিদ্র একটু জোড়েই বলল
– চায়ের কাপটা নিতে পারি ম্যাডাম?
অদ্রির চিন্তায় ছেদ পরলো। সে কিছুটা অপ্রস্তুত ছিলো। ঘোমটা ভালো ভাবে ঠিক করে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল
– আপনার জন্যই আনা।
– দুকাপ চা আমার জন্য? আমার থেকে তো আপনাকেই বেশি ক্লান্ত লাগছে।
অদ্রি নিদ্রের দিকে তাকালো, নিদ্র ঠিক সেই প্রথম দিনের মতো ভয় পেলো।
অদ্রির চোখ লাল টকটক আর ফুলে আছে।
নিদ্র নিজেকে সামলে নিয়ে চায়ের কাপে ছোট্ট করে চুমুক দিলো।
অদ্রির হাতের রান্না যতোটা ভালো চা ঠিক তার চারগুণ খারাপ।
অদ্রি নীরবতা ভেঙে বলল
– আপনি সারাদিন কই ছিলেন?
– ওই একটু গবেষণা করতে বের হয়ে ছিলাম।
– আপনি এতো গবেষণা কেনো করেন?
– আপনার হাতের চা কিন্তু তেমন ভালো হয়না।
– তাহলে খাচ্ছেন কেনো?
– কই খাচ্ছি না তো? পান করছি!
কথাটা বলে নিদ্র চায়ের কাপে লম্বা এক চুমুক দিলো। অদ্রি নিদ্রের কথায় উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো।

চলবে……!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ২২

0
তিনি এবং ও ! ২২
তিনি এবং ও ! ২২

তিনি এবং ও !

২২.
বাড়ির গেটের সামনে ‘ ই লাস ভবন ‘ লিখা। নিদ্র হিসাব মিলিয়ে নিলো খ টা কোনো কারণে গায়েব হয়েছে। বৃদ্ধ গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে বলল
– জোয়ান আছো বুঝলাম কিন্তু দাদাভাই একটু সাবধানে। আর দাদাভাই সন্ধ্যা যেন না হয়।
নিদ্র ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। বৃদ্ধ চলে গেলো।
রশিদ সাহেব খুব ঘামতে শুরু করেছেন। নিদ্র গেট খুলে ঢুকতে যাবে তখন রশিদ সাহেব হাত টেনে ধরে বললেন
– ছোটোবেলায় দাদীর কাছে রূপকথায় এরকম ভূতের বাড়ির কথা শুনেছি।
নিদ্র হাসতে হাসতে বলল
– চাচা এটা বাস্তব।
গেট থেকে সরু একটা রাস্তা বাড়ির মূল ফটকের দিকে চলে গেছে।
সরু পথটা শ্যাওলা পরে পিছলা হয়ে আছে। নিদ্র খুব সাবধানে পা ফেলে ফেলে যাচ্ছিলো। রশিদ সাহেব নিদ্রের পিছন পিছন বাড়ির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটছেন। এই বাড়িতে মাকড়শারজাল এতো পরিমাণ হয়েছে যে, যে কেউই বুঝতে পারবে এখানে অনেকদিন যাবত কেউ এখানে বসবাস করেনা।
ভাবতে ভাবতে আর দেখতে দেখতে রশিদ সাহেব খুব ভালোভাবে আছাড় খেলেন। নিদ্র শুনতে পেলো ধুপ করে একটা শব্দ। পেছনে তাকিয়ে নিদ্র হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছিলো না। হাসি চাপিয়ে রেখে রশিদ সাহেবকে টেনে তুললেন।

অদ্রি ফুলগুলো ফুলদানিতে রেখে পানি দিচ্ছিলো তখন লিলি এসে জানালো
– রঙিন ভাইজান কোথায় নেই।
অদ্রি ফুলগুলোকে ঠিক করতে করতে বলল
– সকালের খাবার খাওয়া হয়েছে?
– নাহ।
– রান্না করেছিস?
– হ্যা। টেবিলে রাখবো?
– রাখ, আমি আসছি।
দুপুরে রান্না শেষ করে অদ্রির খুব ক্লান্ত লাগছিলো। কোনোরকম গোসল করে ঘুমিয়ে পরলো ।
ঘুমের মধ্যে আবারো সেই বিশ্রী স্বপ্নটা সে দেখলো। মাঝে কিছুদিন এই স্বপ্ন তার পিছু ছেড়েছিলো কিন্তু সেটা তার ভুল ধারণা ছিলো। সে বারবার এই স্বপ্ন থেকে নিজেকে মুক্তি করতে কিন্তু পারেনি।
স্বপ্নের মধ্যেই সে কাঁদতে শুরু করে এবং কাঁদতে কাঁদতেই তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম আর আসেনা। নিদ্রাহীন ভাবে তাকে এর আগে ৩ দিনও কাটাতে হয়েছে। সে জানে এবার তাকে কতদিন কাটাতে হবে।
আচ্ছা, কোনো উপায় কি নেই? কেউ কি নেই এই শাস্তি থেকে তাকে মুক্তি দিবে?
কেউ একজন তাকে গলায়দড়ি দিয়ে বেধে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেয়। কী অসহ্য যন্ত্রণা কষ্ট। হাত পা ছুটাছুটি করে বাচার জন্য কিন্তু পারেনা। একসময় তার আর শক্তি থাকেনা হাত পা ছুটাছুটি করার। এমনকি নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। একসময় তার মৃত্যু হয়। কিন্তু তার অনুভূতি থাকে। কয়েকজন অচেনা মানুষ এসে তার দেহ নামিয়ে লাশকাটা ঘরে নিয়ে যায়।
এবং তার পোস্টমর্টেম করতে শুরু করে। ধারালো ব্লেডের প্রত্যেকটা টানে তার শরীর ব্যথ্যায় কুঁকড়ে উঠে।
একসময় কাটাছেড়া শেষ হলে ময়লা পাটি দিয়ে তাকে মুড়িয়ে ঘরের এক কোণায় ফেলে রাখে। বড় বড় সাদা ইঁদুর তার দেহকে ঠুকরে ঠুকরে খেতে থাকে।
কী অসহ্য ব্যথা! কী যন্ত্রণা! সে আজ ২ বছর যাবত সহ্য করেই যাচ্ছে।
এরকম হবার ১ সপ্তাহ পর্যন্ত তার পুরো শরীরে পানি পরলেও ব্যথা অনুভব হয়।
নিদ্র পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রত্যেকটা জিনিষ সে দেখছে।
মাঝেমধ্যে কিছু জিনিষ তার প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখছে।
রশিদ সাহেব ভাঙা চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছেন।
দুপুরের দিকে নিদ্রের কাজ শেষ হলো। রশিদ সাহেবকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো।
রশিদ সাহেব পায়ে বেশ ব্যথা পেয়েছেন। সে আশংকা করছেন,পায়ের মোটা হাড়টা ভেঙেছে জোড়ালো ভাবে।
নিদ্র বোঝানোর চেষ্টা করছে, ভাঙলে আপনি খুঁড়িয়েও হাটতে পারবেন না।
রশিদ সাহেব বললেন – বাবা ভুতুড়ে বাড়ি থেকে পালানোর জন্যই ভাঙা পা নিয়েই খোঁড়াচ্ছি।
অদ্রি কাঁদতে কাঁদতে ঘুম থেকে উঠে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো। হালকা বাতাস তার শরীরে আলতোভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ ধারালো ছুড়ি দিয়ে তাকে আঘাত করছে।
তার চোখ দিয়ে পানি অঝোর ধারায় পরতে শুরু করছে।
মুছে দিবে কে? কেউই নেই, নেই!

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও! ২১.

0
তিনি এবং ও! ২১.
তিনি এবং ও! ২১.

তিনি এবং ও!

২১.
নিদ্রের ঘরের টেবিলের উপর পরে থাকা সাদা গোলাপের তোড়া আর তার পাশে ছোট্ট চিরকুট দেখে বেশ বিরক্ত হলো। মাত্র ২ দিন হয়েছে নিদ্রের জ্বর সেরেছে আর আজকেই সে আবার ঘুরতে বের হয়েছে। অদ্রি অনিচ্ছাসত্ত্বেও চিরকুট হাতে নিয়ে ভাজ খুলে পড়তে শুরু করলো। বড়ো বড়ো করে লিখা
– অদ্রি সাদা ফুল গুলোর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন। মন শান্ত হবে। রাগ জমিয়ে রাখবেন না। আমি এবার একা নই, রশিদ চাচা আছেন।
বিঃ দ্রঃ বাঙালী খাবার রান্না করে রাখবেন। একসাথে রাতে খাবার খাবো।

অদ্রি চিরকুট ওড়নার সাথে বেধে রাখলো। ফুলগুলো হাতে নিয়ে তার ঘরে চলে গেলো।
রশিদ সাহেব কিছুই বুঝতে পারছেন না, নিদ্র তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। রশিদ সাহেব নিদ্রকে জিজ্ঞেস করলেন
– বাবা, আমরা কই যাইতেছি?
নিদ্র বলল
– চাচা এই বার দিয়ে আপনি ১১ বার একই প্রশ্ন করলেন। আর আমিও ১১ বার উত্তর দিলাম, পরে বলবো। আমি আপনাকে মেরে ফেলবো না।
রশিদ সাহেব বললেন
– ইয়ে মানে আশেপাশে তেমন কিছুই চিনি না তাই একটু চিন্তিত।
– চাচা না চিনলেও সমস্যা নেই। এখানকার ওসি বাবার চেনা। তার সাথে আমি কথা বলেই এসেছি। হারিয়ে গেলে একটা ফোনকল ব্যাস।
– ওর আবার ওসি ফ্রেন্ড কীভাবে হলো?
– আপনি রশিদ চাচা চুপ করেননা? প্লিজ?
– বাবা খুব খিদে পেয়েছে!
– চাচা ৩০ মিনিট হলো আপনি ৫ টা পরোটা আর ২ টা ডিম ভাজা খেয়েছেন।
– আসলে বাবা ভয় লাগলে আমার খুদা লাগে বারবার।
বাস থেকে নেমে নিদ্র একজন লোককে ডেকে জিজ্ঞেস করলো
– এখানে ‘ ইখলাস ভবন ‘ টা কই?
প্রশ্নটা শুনে লোকটার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। আমতাআমতা করে বলল
– ওখানে কী কাজ?
নিদ্র হেসে বলল
– ট্যুরিস্ট তো বুঝেনই।
লোকটা চটে গিয়ে বলল
– অতো হাইসেন না আর সাহস কম দেখান। ওই বাড়ি আর বাড়ি নাই।
রশিদ সাহেব নিদ্রের হাতে চিমটি কেটে কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন কিন্তু নিদ্র সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে লোকটিকে বলল
– বাড়ির কী হয়েছে? বললে উপকার হতো।
– শুনেন, বহুত খারাপ একটা মানুষ গলায়দড়ি দিয়ে মরছিলো। ওই বাড়ি এখন আছর হইয়া আছে। কেউ ভুলে ওই বাসায় পা দেয়না।
– ওনার আত্মীয় স্বজন ছিলোনা?
– নাহ, আমি তো শুনিনি কোনোদিন । বউ ছিলো তাও ১ সপ্তাহ এর মাথায় কোথায় যেন চলে গেলো।
– সন্ত্রাসের ভয়ে?
– নাহ, এইখানে আবার বিধবাকে কে জ্বালাবে?
– যুবতী মেয়েদের জ্বালায় না?
– নাহ, বখাইটা পোলাপান আছে কিন্তু মাইয়াগো জ্বালাতন করেনা।
– বাড়িটা একটু দেখিয়ে দিবেন?
– আমি ও বাড়ির আশেপাশেই যাবোনা।
লোকটা দ্রুত পা চালিয়ে চলে গেলো। নিদ্র পিচঢালা পথের কিনার ধরে হাটতে শুরু করলো। বেশ ব্যস্ত এলাকা, নতুন দুজন মানুষ এভাবে বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার দিকে কেউ ভুলেও ফিরে তাকাচ্ছেনা।
এদিকে রশিদ সাহেবের খুদা লেগেছে বিশ্রী ভাবে।
অনেকক্ষণ হাটার পর একটা চায়ের দোকান দেখে নিদ্র সেখানে রশিদ সাহেবকে বসিয়ে দিয়ে বললেন
– আপনার যদি ইচ্ছে হয় তাহলে চায়ের দোকানটাকেই খেয়ে ফেলতে পারেন।
– আমি কি হাঙ্গর মাছ বাবা?
– নাহ, আপনি যেভাবে খাবো খাবো করছিলেন তাতে তো মনে হচ্ছিলো এই চায়ের দোকানটাও কম হয়ে যাবে।
তিন কাপ চা আর ৫ টুকরা পাউরুটি খাওয়ার পর রশিদ সাহেব হেসে বললেন
– আপাতত পেট ভরেছে।
নিদ্র চায়ের দোকান থেকে ১ প্যাকেট পাউরুটি নিয়ে নিলো।
গুগোল ম্যাপ দেখে দেখে এসব এলাকায় বাড়িঘর খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। একজন মানুষ পেলে খারাপ হয়না।
একজন বয়স্ক মানুষ কে অনেক অনুরোধ করার পর সে রাজি হলো তবে সে দূর থেকে দেখিয়ে দেবে।
লোকটার সাথে সাথে যাওয়ার সময় নিদ্র অদ্রির বলা কথা গুলো ভাবছিলো। অদ্রির গল্পের শেষ কথা গুলো ছিলো এমন – তিনি আমাকে ছাদের রুমে ডেকে নিয়ে গেলেন। তাকে এতো বেশি চিন্তিত আমি কখনো দেখিনি।আমার দিকে না তাকিয়ে বললেন, ” তুমি আর তুহিন একসাথে বেশি ভালো থাকবে। আমার সাথে কখনওই তোমাকে অতোটা হাসতে দেখিনি যতোটা ওর সাথে তুমি হাসো। আমি তোমাকে সুখ দিতে পারিনি কিন্তু তুহিন পারবে। ”
তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, তুমি এখন আসতে পারো।
আমি বের হয়ে এলাম। তিনি দরজা আটকে দিলেন। আর খোলেননি। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ওনার লাশ বের করলেন।
নিদ্র বলল – আপনি তার সাথে সম্পর্ক এ জড়িয়ে পড়েছিলেন?
অদ্রি বলল – না, তুহিন ভাই আমার ভালো ফ্রেন্ড ছিলেন।
– তাহলে এমন ভাবার কারণ?
– আমি নিজেও কখনো খুঁজে পাইনি।

চলবে….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ২০.

0
তিনি এবং ও ! ২০.
তিনি এবং ও ! ২০.

তিনি এবং ও !

২০.
জ্বরের মধ্যে নিদ্রের মনে হলো তার মা পাশে এসে বসেছেন। মা তার কপালে হাত দিয়ে জ্বর মাপলেন তারপর বললেন
– অনেক গরম নিড্র।আমি কপালে হাত দিয়ে রাখি ঠিক হয়ে যাবে।
নিদ্র মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। তার মার শরীর দিয়ে সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসছে। এতো সুন্দর ঘ্রাণ শুধু মায়ের শরীরেই থাকতে পারে, নিদ্র এটাই বিশ্বাস করে। নিদ্রের ইচ্ছে করছে মাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতে। বাংলাদেশ যে কতোটা সুন্দর সেটা তার মা কি জানে? তার মা কি জানে সে একজন বিধবাকে পছন্দ করে ফেলেছে। ভালোলাগা টা কাজ করছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু বুঝতে পেরেছে বৃষ্টির সেই সময় গুলোতে। কেনো যে এমন হচ্ছে? মা কি উত্তর দিতে পারবে? নিদ্র তার মাকে বলল
– মা?তুমি জানো আমি এই বিধবাটাকে পছন্দ করি?
– জানি তো। তোর মনের খবর জানি। তাহলে লুসির কী হবে?
– আরে ওটা তো তেমন কিছুই না।
– বাঙালি বিয়ে করবি?
– তাছাড়া কী করবো? তা না হলে বাবার মতো আমাকেও অন্য কোনো ইংরেজ ছেড়ে চলে যাবে? বাবা তো সহ্য করেছেন কিন্তু আমি তা পারবো না।মা, আমার কথা কখনো মনে পড়তো না? তোমার নাড়ী ছেঁড়া ধন রেখে এসেছো, একবারো নাড়ীর টানও অনুভব করোনি? মা কখনো মনে পড়েনি ৯ মাস গর্ভে রাখা সন্তান কেমন আছে? মা, জানো আমার দাদী একজন খাঁটি মা। সে আজও তার সন্তানকে একা রাখেনি। সন্তান তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু সে কিন্তু করেনি। মা, ও মা কথা কেনো বলছো না?
দাদী বলেন,তুমি বাঙালি না তাই এভাবে ছেড়ে গেছো আমাকে।
কিন্তু মা, পিটারের মা তাহলে তার সাথে আছে কেনো?

অদ্রি চেয়ার পেতে নিদ্রের বিছানার পাশে বসে আছে। ডাক্তার একটু আগে এসে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে। ইনজেকশন দেয়ার আগ পর্যন্ত নিদ্র বিড়বিড় করে কথা বলছিলো। এখনো সে বিড়বিড় করে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর পর অদ্রি মা শব্দটা শুনতে পাচ্ছে। আর কোনো কথাই সে বুঝতে পারছেনা। ইনজেকশন এ এতক্ষণ কাজ হয়ে যাবার কথা কিন্তু হচ্ছেনা। অদ্রি খুব চিন্তায় পড়ে গেছে। খারাপ কিছু হয়ে গেলে সে রশিদ সাহেবকে কী বলবেন?
অদ্রি সকালের নাস্তাটাও করতে পারেনি ভালোভাবে। দুপুর এর জন্য রান্না করা দরকার। কিন্তু এরকম রোগীকে রেখে কীভাবে যাবে? আর লিলিটাও এসব বোঝেনা। দেখা গেলো বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়লো।
লিলিকে বরং ভাত আর ডিম ভাজতে বলে দেয়াই ভালো। আর নিদ্র কী খাবে সেটা পরে দেখা যাবে ঘুম ভাঙার পর।
একসময় নিদ্র ঘুমিয়ে পড়লো। অদ্রি বুঝতে পারলো ইনজেকশন কাজ করেছে। সে নিদ্রের গায়ে পরিষ্কার কাথা দিয়ে দিলো। জ্বরে ফর্শা মুখটা লাল হয়ে আছে।
কপালে হাত দিয়ে দেখলো আগেরমতো গরম নেই।
খুব আস্তে আস্তে ঘর থেকে বের হয়ে অদ্রি নিচে নেমে এলো।
রশিদ সাহেব সোফার উপর বসে বসেই ঘুমুচ্ছিলেন। অদ্রি তাকে জাগিয়ে দিয়ে বলল
– অনেক বেডরুম খালি পরে আছে। আপনি ঘুমুতে পারেন সেখানে।
রশিদ সাহেব বললেন
– আমি নিদ্রের ঘরেই ঘুমাবো।
– কিন্তু সেখানে খাট নেই এক্সট্রা। আর তার পাশেও ঘুমুতে পারবেন না।
– আমাকে ফ্লোরে বিছানা করে দিলেই হবে। আর একটা বালিশ। পরের ছাওয়ালের কিছু হলে আমি মুখ দেখাবো কীভাবে? এই ছাওয়ালরে হইলো পায়ে শিকল বাইধা রাখতে হবে।
আর বাইরে যাইতে চাইলে বেত দিয়ে পিটাইতে হবে।
কী কবো কও তো ওরে? মা ছাড়া পোলা মানুষ হইছে। বড় হবার পর মায়ের খোজ পাইয়া তার লগে দেখা সাক্ষাৎ করেছে। পোলাডার শুকিয়ে যাওয়া ঘাউ ওই ইংরেজি বেডি তাজা কইরা দিয়ে গেছে।
জানিস ওরে বাংলাদেশে ক্যান পাঠাইছে?
– না চাচা ।
– আরে ওইখানকার ওর মায়ের বয়সী ইংরাজি মহিলা দেখলে কান্দাকাটি করে, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়ে চুপ করে বসে থাকে। নাজমুল ওই পোলার জন্য বিয়ে করেনি দ্বিতীয় বার। সৎ মা জ্বালাবে তাই। কিন্তু কী হলো? পোলা সেই কষ্টই পাচ্ছে। এইজন্যই তো পোলারে শাসন করার সাহস পাইনা।
আরে কপাল রে নিদ্র তোর….. আরে কপাল…..
রশিদ সাহেব এই কথা বলতে বলতে নিদ্রের ঘরে এসে ফ্লোরে বসে পরলেন। ঘুমন্ত নিদ্রকে কতো যে নিষ্পাপ লাগছে তা একমাত্র সেই বুঝতে পারছে।

চলবে…..!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১৯.

0
তিনি এবং ও ! ১৯.
তিনি এবং ও ! ১৯.

তিনি এবং ও !

১৯.

জীবনটা নতুন সাজে সাজতে শুরু করলো। আশেপাশে মনে হচ্ছিলো কেউ সুখেরকাঁটা বিছিয়ে দিয়েছিলো।কিন্তু সমস্যা হলো খুব খারাপ ভাবে। আমি একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হলাম। জানেন নিদ্র তিনি আমাকে একবারো নিষেধ করেননি।
নিদ্র বলল
– নিষেধ করবেন কেনো?
– নিদ্র আপনি মনে হয় জানেন না, বাংলাদেশের গ্রাম আর মফস্বল শহর এমনকি শহরে বিয়ের পর মেয়েদের পড়াশোনা করতে দেয়া হয়না। অনেক সময় মেয়ে দের পড়তে দেয়া হলেও কড়া গার্ড এ রাখা হয়।
– তারপর কী হলো? সমস্যা টা তো বলবেন?
– ইভটেজিং বুঝেন? এলাকার কিছু চোর ছ্যাঁচড়া আমার পিছু লেগে গেলো। কলেজ যাওয়া আসার পথে কটু কথা, শিষ দেয়া শুরু করলো। আমার হাজবেন্ড থানায় কেস করলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। যেদিন পুলিশে থানায় নিয়ে গেলো সেদিন রাতেই ওরা বাসায় ঢিল মারতে শুরু করলো। বাসার দারোয়ানের মাথা ফাটিয়ে দিলো। বিশ্রী গালাগাল দিতে লাগলো চোর ছ্যাঁচড়া গুলা। তিনি নিচে গিয়ে দারোয়ান কে বাসার মধ্যে আনতে গেলেন, ওনার মাথাও ফাটিয়ে দিলো। নিদ্র আপনি বুঝতে পারবেন না, আমার অবস্থাটা তখন কেমন ছিলো! আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হতে লাগলো। আমার কারণে তার এরকম ক্ষতি হয়ে গেলো।
– আপনার কোনো ক্ষতি করেনি সেই ইভটিজার গুলো?
– তার আগেই পুলিশ এসে গিয়েছিলো।তার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগেছিল। আর পড়াশোনা আমি ছেড়ে দিলাম। যে,আমার জন্য এতোকিছু করলো তাকে কীভাবে দিনের পর দিন কষ্ট পেতে দেখি?
– বাহ কী যে বলেন? ইভটিজিং করতো আপনাকে, গালাগাল করতো আপনাকে, খারাপ লাগার কথা আপনার।
– আরে এলাকাজুড়ে তাকে কথা শুনাতো। আর আমাকে বলাতো তাকে বলা একই।
– তারপর কী হলো? রোমান্স হলো টলো না? তার জন্য আপনি এতো বড় স্যাক্রিফাইজ করলেন তারজন্য তো……………
– বাদ দিন। হাসিখুশি ভাবটা আমাদের সংসারে আবার ফিরে এলো। পুরো বাসায় একা একা থাকতে ভালো লাগতো না।একটা বাচ্চা থাকলে ভালো হতো। আমি প্রায়শই তাকে অন্যভাবে বোঝাতাম। একজন ছোট্ট সংগী দরকার। কিন্তু তিনি বুঝেও না বোঝার ভান করতেন।
– আপনারা কখনো ঘুরতে যেতেন না?
– নাহ, ওই চোর ছ্যাঁচড়ার ভয়ে বাসা থেকে বের হওয়া যেতো না।যেদিনই বের হতাম সেদিন রাতে বাসায় আবারো ওরা ঢিল মারতো, খুব জোড়ে জোড়ে গালাগাল করতো।আমার হাজবেন্ডের ব্যবসার পার্টনার এবং বন্ধু প্রায়শই বাসায় আসতেন। প্রথম প্রথম আমি তার সামনে যেতাম না। কিন্তু তিনি বললেন,আমার বন্ধুর সাথে তুমি কথাবার্তা বলতে পারো। ও বাসায় আসে আর তুমি যদি কথাবার্তা না বলো তাহলে তো খারাপ দেখায় তাই না?
তারপর থেকে উনি আসলেই বেশ আড্ডা হতো। আমাকে দাবা খেলা উনি শিখিয়েছিলেন। এমনকি রান্নাবাড়া ও শিখেছি ওনার কাছ থেকে।
তবে ওনার বাগানের ফুল গুলো ইউনিক। এরকম ফুলের বাহার আমি কোথাও দেখিনি।
নিদ্র বলল – আপনি তো বাসা থেকে বের হতে পারতেন না। তাহলে বাগান কীভাবে দেখলেন? মোবাইলে? কিন্তু আপনার চেহারায় তো প্রকাশ পাচ্ছে অন্যকিছু!

অদ্রি বলল – তার বাসায় আমরা প্রায়ই যেতাম।
– আপনি একা যেতেন নাকি আপনার হাজবেন্ডও যেতেন?
– প্রথমে তিনি যেতেন আমার সাথে পরে অবশ্য একাই যেতাম।
– উনি বিবাহিত ছিলেন তাই না?
– নাহ, বিয়ের প্রতি ওনার কোনো ইচ্ছে ছিলোনা। সবসময় বিয়ের নেগিটিভ সাইড নিয়ে তর্ক করতেন আমার সাথে।
– আপনারা দূরে কোথাও ঘুরতে যাননি কখনো?
অদ্রি অবাক হয়ে বলল
– ওনার সাথে আমি একা দূরে কোথাও কেনো যাবো?
নিদ্র হাসার চেষ্টা করে বলল
– আমি তো আপনাকে একা যেতে বলিনি! আপনারা উল্লেখ করেছি। তাতে তো আপনার হাজবেন্ডকেও উল্লেখ করা হয়।
নিদ্রের হঠাৎ করে খারাপ লাগতে শুরু করেছে। পুরো মাথা ঝিম ধরে আসছে। আর মনে হচ্ছে কে যেন কানের কাছে ঝিঝি ঝিঝি করছে।
নিদ্র বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে পড়লো। অদ্রির গল্পটা তার শুনতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু তার শরীর তাকে শুনতে দিতে চাচ্ছেনা। সে আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু শরীর তো কারোরই কথা শুনেনা, সে যে অবাধ্য…….!

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১৮.

0
তিনি এবং ও ! ১৮.
তিনি এবং ও ! ১৮.

তিনি এবং ও !

১৮.
অদ্রি মুচকি হেসে বলল
– কখনো জানা হয়নি আসলে কি সে কখনো বলেনি।
নিদ্র বলল
– ভালবাসার কথাটা বলতে হয়না সেটা আসলে ফিল করার ব্যাপার। যেমন ধরুন মা আমাদের কখনওই তেমনভাবে বলেননা যে, ভালবাসেন। কিন্তু আমরা জানি মা আমাদের সবথেকে বেশি ভালবাসেন। ছোটোবেলায় আমরা যখন কথা বলতে পারতাম না মাকে কখনওই বলতে পারিনা যে ভালবাসি। কিন্তু মা বুঝতে পারেন। টেলোপ্যাথি একটা বিষয় আছে। আদিম মানুষেরা নাকি টেলোপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগ করতো। তবে এটা জাস্ট ধারণা।
নিদ্র লিলিকে বলল
– আমার জন্য কড়া লিকারের চা নিয়ে আসো।
অদ্রি বলল
– আরে না। জ্বর একটু কমেছে কেবল তার উপর রাতে খাওয়া হয়নি আপনার। এখন কড়া লিকারের চা কোনোভাবেই খাওয়া যাবেনা।
নিদ্র চোখ বন্ধ করে বলল
– অদ্রি পান করবো চা!
– হয়েছে হয়েছে। আমি আপনার জন্য যা এনেছি এগুলোই খেতে হবে।
টেলোপ্যাথি বিষয়টা অদ্রির জানা নেই। জিনিষ টা সে কোনোভাবেই বুঝতে পারছেনা।
অদ্রি জিজ্ঞেস করবে কিনা নিদ্রকে বুঝতে পারছেনা। নিদ্রকে জিজ্ঞেস করেই বসলো অদ্রি
– আচ্ছা টেলোপ্যাথি কী?
নিদ্র খেতে খেতে বলল
– আপনি যার কথা ভেবে ঘুমোতে যান ,তিনিও আপনার কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমোতে যান । সাইকোলজিক্যাল ভাষায় এটাকে বলে, টেলোপ্যাথি। আরেকটা ধারণা আছে, সেটা হচ্ছে ইংরেজিতে এটা noun
the supposed communication of thoughts or ideas by means other than the known senses.

synonyms:mind reading, thought transference. বাংলায় এটা
বিশেষ্য

জ্ঞানের অর্থে ব্যতীত অন্য অর্থ দ্বারা চিন্তাধারা বা ধারণাগুলির অনুমতিক্রমে যোগাযোগ।

প্রতিশব্দ: মন পড়া, চিন্তা স্থানান্তর।

অদ্রি ইতস্ততভাবে বলল
– আমি ঠিক কিছুই বুঝলাম না।
নিদ্র পরে বলল
– ভুলটা আমারি, আমিই আপনাকে বোঝাতে পারছিনা ভালোভাবে। যাইহোক একদিন ভালোভাবে বুঝিয়ে বলবো।আজ থাকুক। এমনিতেই আপনি অন্য চিন্তায় হারিয়ে আছেন। তা না হলে আপনি অনেক আগেই ব্যাপার টা বুঝে যেতেন।
– আমি আর কার চিন্তায় হারাবো?
– আপনার গল্পটা বলুন শুনি।বললে মন হালকা হবে আপনার। দেখুন না আমার মায়ের গল্পটা আপনাকে বলেছি ব্যাস মন হালকা হয়েছে। আপনিও বলে ফেলুন।
– আমার জন্ম হয় পাড়াগাঁয়ে। দরিদ্র পরিবারে জন্ম আমার। ৩ ভাইয়ের পর একমাত্র মেয়ের জন্ম হওয়াতে বাবা মা খুব খুশি হয়েছিলেন। বাবা ছোটোখাটো চাকরী করতেন।আমার বয়স যখন ১৮ তখন পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলো। ভাইয়েরা সবাই শহরে পড়তে গেলো তাদের খরচ জোগাতে বাবাকে হিমসিম খেতে হচ্ছিলো।
আমি যে হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেছিলাম তার হেডমাস্টার আমাকে খুব ভালবাসতেন, খুব স্নেহ করতেন। আমার পড়াশোনা টা বন্ধ হয়ে যায়। ভালো রেজাল্ট করেও যখন কলেজে ভর্তি হতে পারলাম না তখন তিনি একটা উপায় খুঁজে আনলেন।
স্যার ই আমার বিয়ের প্রস্তাব টা আনেন। আসলে স্যার চেয়েছিলেন, এমন একজনের সাথে আমার বিয়ে হোক যে আমার ভরণপোষণ করবে এমনকি আমাকে পড়াবেও তার উপর আমার পরিবারকেও টানবে।

নিদ্র বলল
– এরকম বর পাওয়া যায়? আমার তো বিশ্বাস হয়না।
অদ্রি বিরক্ত হয়ে বলল
– তিনি একজন মহান মানুষ ছিলেন। আপনার বিশ্বাস অবিশ্বাস দিয়ে তো তার মহত্ত্ব কমে যাবেনা।
– আমি তো এমনি বললাম। আপনি রাগ করবেন না প্লিজ।
– আমার যেদিন বিয়ে হলো সেদিন খুব গরম ছিলো। বিয়ের রাতে খুব ভয় পাচ্ছিলাম সম্পূর্ণ অচেনা অজানা একজন মানুষের সাথে কীভাবে থাকবো?
বিয়ের দিনই তিনি আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে এলেন। বাসায় আসার পর বুঝতে পারলাম তার কোনো আত্মীয় স্বজন নেই। বুড়ো এক কাজের মহিলা আছেন। উনিই সবকিছু করেন।
বাসররাতে আমাকে বললেন – যতদিন
তুমি আমাকে পুরোটা না জানো ততদিন আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না।
একজন মানুষ কতোটা ভালো হলে এভাবে বলতে পারেন? জানেন?
– নাহ, বিয়ে মানেই শরীরের বৈধতা ভেবে নেয়।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১৭.

0
তিনি এবং ও ! ১৭.
তিনি এবং ও ! ১৭.

তিনি এবং ও !

১৭.
নিদ্র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলো
– অদ্রি আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। গতরাতের ঘটনার জন্য। দেখুন আমি যে সমাজে বড় হয়েছি সেখানে জড়িয়ে ধরাটা স্বাভাবিক ঘটনা।ভুল হয়েছে স্বীকার করছি কিন্তু এরকম করবেন না। আরেকটু হলে আমার নাকের বারোটা বাজতো।
অদ্রি বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় বলল
– ভাষাটা ভালো ভাবেই আয়ত্ত্ব করেছেন তাহলে কালচার টা আয়ত্ত্ব কেনো করতে পারেননি?
নিদ্র বলল
– বুড়ো দাদী আর কতটুকু বা পারবে? আশেপাশে বাঙালি যারা আছেন তারা তো আর কতটুকুই বা কালচার মানে?
– হয়েছে আর অজুহাত দিতে হবেনা।
– আমি অজুহাত দিচ্ছি না। সত্যটা বললাম।আমি আপনাকে প্রমিজ করলাম, আর কোনোদিনও আপনাকে স্পর্শ করবো না। আপনার অনুমতি ছাড়া কোনোদিনও না।
– আপনি এখান থেকে যান তো। আমার ভালো লাগছেনা।
– বিরিয়ানি টা গরম করে দিন খেয়ে নেই। শত হলেও আমি অতিথি। আমাকে না খাইয়ে রাখবেন?
অদ্রি ওড়না দিয়ে ভালোভাবে নিজেকে ঢেকে দরজা খুলে বলল
– আপনি এতো মিথ্যা বলেন, আমার জানা ছিলোনা।
– না আসলে মাঝেমধ্যে বলতে হয় প্রিয় মানুষের রাগ ভাঙানোর জন্য।
অদ্রি, নিদ্রের এরকম কথায় হাসতে শুরু করলো।অদ্রি ঘর থেকে বের হয়ে নিচে নামতে নামতে বলল
– আপনি এখন আপনার ঘরে যান। বিরিয়ানি আসছে।
অদ্রি বিরিয়ানি গরম করে সাথে সালাদ নিয়ে নিদ্রের রুমে আসলো।
নিদ্রের সকাল থেকেই শরীর গরম লাগছিল। কিন্তু এখন তার নাক ও চোখ জ্বলছে। জ্বর আসবে কিন্তু সেটা আসবে খুব জোড়ালো ভাবে।
বিকালের দিকে জ্বরে নিদ্র বিছানায় পরে রইলো। লিলি, অদ্রি মিলে মাথায় পানি ঢেলে জ্বর কমাতে পারলো না।
রশিদ সাহেবকে দিয়ে বাসায় ডাক্তার আনা হলো।
ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে, একটি প্রেসক্রিপশন রশিদ সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ডাক্তারবাবু বিদেয় হলেন।
সকালের দিকে নিদ্রের ঘুম ভাঙলো অদ্রির ডাকে।
অদ্রি মনে পড়ে গেলো তার স্বামীর সাথের স্মৃতিগুলো। তাকেও ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হতো। কড়া লিকারের এক কাপ চা আর দুটো টোস্ট। ব্যাস তার সকালের নাস্তা এতেই হয়ে যেতো।
আসলে তার খাবার দাবারের প্রতি তেমন আকর্ষণ ছিলোনা। আর রাত হলেই ড্রিংক্স করতো। মাঝেমাঝে এতো বেশি করতো যে, আবোলতাবোল বকতো।
তখন অবশ্য আমি তার সামনে থাকতাম না।
নিদ্র ঘুম ঘুম চোখে খেয়াল করলো অদ্রির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। নিদ্র বলল
– তার কথা মনে পড়ছে?
অদ্রি বলল
– আপনি কীভাবে জানলেন?
– স্বাভাবিক। আগে বলুন তার কথা মনে পড়েছে?
– হ্যা, তিনি মানুষ টাই এমন ছিলেন।
– আপনাকে খুব ভালবাসতো?
অদ্রি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না। কখনওই জানা হয়নি, তিনি অদ্রিকে ভালবাসতো কিনা???

চলবে…..!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও! ১৬.

0
তিনি এবং ও! ১৬.
তিনি এবং ও! ১৬.

তিনি এবং ও!

১৬.
গরম গরম আলু পুরি তে কামড় দিয়ে নিদ্রের মন ভালো হয়ে গেলো। সকাল সকাল এরকম সুস্বাদু খাবার পেলে আর কী লাগে? রাতের ঘটনা টা এখনো ভুলতে পারছেনা সে। এভাবে হুটহাট করে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরা ঠিক হয়নি। তবে
সে যেখানে বড় হয়েছে ওখানে তো পরিচিত দের জড়িয়ে ধরাটা স্বাভাবিক ঘটনা। লিলি আলু পুরি ভরা প্লেট নিয়ে নিদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। লিলি জিজ্ঞেস করলো
– ভাইজান কেমন হইছে?
নিদ্র বলল
– সেই রকম হয়েছে।
লিলি প্লেট নিদ্রের বিছানার উপর রেখে চলে যাবে তখন নিদ্র জিজ্ঞেস করলো
– তোমার ম্যাডাম কী করে?
লিলি বলল
– ম্যাডাম না আপা।
নিদ্র বলল
– আপা কী করে?
– আপা তো এখনো তার ঘর থেকে বেরই হয়নি। সে মাঝেমধ্যে এমন করে।
– কেনো?
– জানি না ভাইজান।
লিলি নিদ্রের ঘর থেকে চলে গেলো। নিদ্র প্লেটের সবগুলো আলু পুরি খেয়ে নিলো।
খাওয়া শেষ হবার পর ভাবতে লাগলো কী করা যায়? অদ্রির কাছে তার ক্ষমা চাওয়া দরকার ছিলো। কিন্তু , অদ্রির সামনে যেতে তার লজ্জা লাগছে।
এদিকে তার মনে কোনোভাবেই শান্তি আসছে না।
নিদ্র অদ্রির রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করলো।
অদ্রি বিছানায় শুয়ে ছিলো। সারারাত সে ঘুমাতে পারেনি। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে চোখের সামনে ভেসে উঠে ” নিদ্রের জড়িয়ে ধরা সময়টুকু ”
কানে বার বার বেজে উঠে, নিদ্রের হৃদস্পন্দন। কী অসহ্য লাগে তখন তার, সে কাউকেই বোঝাতে পারবেনা।
এই প্রথম কোনো পুরুষের এতোটা কাছে সে এসেছে। যে শুনবে সেই অবাক হবে! অবাক হওয়ারই তো কথা! প্রায় ২ বছর সংসার করেছে সে কিন্তু তার স্বামী তার হাতটা পর্যন্ত কখনো স্পর্শ করেনি। সে যে সুন্দরী সেটা বলেছে কিন্তু আবেগহীন ভাবে। বলার কথা বলেছে চোখ মুখে কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়নি।
গতরাতে নিদ্রের চোখে মুখে অদ্ভুত অভিব্যক্তি সে খেয়াল করেছে। যেটা সে তার স্বামীর কাছ থেকে। মানুষ টা কেনো এমন ছিলো সে জানে না। কখনওই জানতে পারেনি। জানার আগেই মানুষ টা টুপ করে চলে গেলো।
নিদ্র কেনো এরকম টা করলো? কী চায় সে? এতোটা কাছে আসার কী খুব দরকার ছিলো? একজন বিধবাই কি ছিলো তার সুন্দর মুহূর্তকে আরো সুন্দর করে তোলার জন্য?
নিদ্র বারবার দরজায় নক করছে। অদ্রি দরজা খুলে বলল
– কিছু বলবেন?
অদ্রির মাথার ঘোমটা খুলে গিয়ে এলোমেলো চুল গুলো কপাল জুড়ে আছে। নিদ্রের ইচ্ছে হচ্ছে, অদ্রির কপালের চুল গুলো সরিয়ে দিতে। কিন্তু এই ইচ্ছে কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। গতরাতে যা করেছি তাতেই ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে।
অদ্রি দরজা আটকে দিয়ে বিছানার উপর পরে রইলো।
অদ্রি তার মুখের উপর এভাবে দরজা আটকে দিলো যে, সে প্রায় লাফিয়ে উঠেছে। আরেকটু হলে তার নাক এর দফারফা হয়ে যেতো।
আসলেই অদ্রি অনেক রাগী।

চলবে…..!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১৫.

0
তিনি এবং ও ! ১৫.
তিনি এবং ও ! ১৫.

তিনি এবং ও !

১৫.

নিদ্র চায়ের মগে চুমুক দিয়ে ভাবছিলো চিৎকার দিবে কি দিবে না?
এতো তিতা আর গরম মসলার গন্ধে ভরপুর।
অদ্রি খেয়াল করলো নিদ্রের চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর নাক কুঁচকে যাচ্ছে যখনি চায়ে চুমুক দিচ্ছে।
অদ্রি বলল
– চিনি লাগবে চায়ে?
নিদ্র বলল
– মানে, আমার মনে হচ্ছে আপনি আমার চায়ে আদা, জিরা, তেজপাতা, মরিচ, দাড়ুচিনি, লবঙ্গ ইত্যাদি দিয়েছেন।
– এটা চা কোনো তরকারী না নিদ্র। আপনি খান তো চা।
– অদ্রি চা কেউ খায় না, পান করে।
– হয়েছে অনেক হয়েছে এখন আপনি এটা পান করুন। সারাদিন নর্দমায় থেকে আপনার মাথা আওলায়ে গেছে। এখন প্লিজ রেস্ট নেন।
– বিরিয়ানি কখন পাবো?
অদ্রি অবাক হয়ে বলল
– বিরিয়ানি???
– হ্যা, আপনি তো রান্না করছেন। তাই জিজ্ঞেস করলাম।
– এই চা না খেলে এক দানাও পাবেন না।
– বললামই তো চা খায় না পান করে।
– পান করুন।
– বিরিয়ানির জন্য এই মশলা যুক্ত চা পান করা তো কোনো ব্যাপারই না।

বিরিয়ানি খাওয়ার সময় রশিদ সাহেব বললেন
– নাজমুল একটা গাধা।
নিদ্র বলল
– তা আজকে জানলেন?
– আরে একমাত্র ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না। আর সে ঠাণ্ডা মেজাজে আছেন।
– আসলে বাবা আমাকে ভালো ভাবে জানেন তো তাই।
– তোমরা বাপ ছেলে কী না কী করো আল্লাহ জানে।
– তবে আজকে আমি ইচ্ছে করে করিনি।
অদ্রি বলল
– খান তো আপনারা চুপ করে। উঁহু এতো কথা বলতে পারেন আপনারা।
রশিদ সাহেব বললেন
– নিদ্র আজকে তোমার জন্য এই মেয়েটাকে খুব কষ্ট করতে হয়েছে। ইশ মেয়েটার শরীর খারাপ করেছে মনে হয়।
অদ্রি বলল
– নাহ, আমি ঠিক আছি।
রাত ১২ টার পর ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পরতে শুরু করলো।
অদ্রি তার জানালা দিয়ে এইসময় বৃষ্টি হতে দেখে একটু বিরক্ত হলো। সাধারণত এই সময় বৃষ্টি হয়না। বর্ষাকাল এমনকি কালবৈশাখী ও অনেক দেরি। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া তার তেমন একটা ভালো লাগেনা। রোদ থাকে না জামা কাপড় শুকাতে চায় না।
অদ্রি ছাদের দরজা খোলার আওয়াজ পেলো। প্রথমে মনে হলো, না হয়তোবা ভ্রম। পরে তার কানে সেই শব্দটা আবারো ভেসে এলো।
এইসময় কে ছাদের দরজা খুলছে? চাবি তো আমার কাছেই থাকে।
অদ্রি মাথায় ঘোমটা ঠিক করে ছাদের দিকে দৌড়ে গেলো। ছাদের দরজা হা করে খোলা। বৃষ্টির পানিরছিটা এসে সিঁড়ি ভিজিয়ে দিয়েছে। গুটি গুটি পায়ে ছাদের দিকে এগিয়ে গেলো অদ্রি।
ছাদে ঢুকে দেখলো নিদ্র দু হাত টান টান করে দাঁড়িয়ে ভিজছে।
ছাদের লাইটের হালকা আলোতে সেই দৃশ্য অপরূপ লাগছে।
অদ্রিও ভিজে যাচ্ছে কিন্তু তার ছাতা আনার খেয়াল ছিলো না। নিদ্র বুঝতে পারলো অদ্রি তার পিছনে বরাবরের মতো এসে দাঁড়িয়েছেন। নিদ্র বলল
– আপনি এখন ছাদে?
– আমি ভাবলাম চোর আসলো নাকি।
– বৃষ্টি হচ্ছিলো, ছাদও খোলা পেয়ে গেলাম
ব্যাস সুযোগের সৎ ব্যবহার করলাম।
– আমাকে একবার বললেই পারতেন। অন্ততপক্ষে আমাকে এভাবে ভিজতে হতো না।
– এই বয়সেই তো ভিজবেন।
নিদ্র অদ্রির কাছে এসে দাঁড়ালো। পুরো শরীর তার ভেজা। বৃষ্টির পানিতে ভিজে তার শরীর ঠাণ্ডায় কাঁপছিল।
অদ্রি বলল
– আপনি কাঁপছেন ঠাণ্ডায়।
– এটাই তো মজা অদ্রি। কিন্তু আপনি তো কাঁপছেন না?
– আমি তো সারাদিন নর্দমায় বসে ছিলাম না।
– উফ অদ্রি আপনি না….
– কী?
নিদ্র অদ্রির আরো কাছে এসে বলল
– অসম্ভব সুন্দরী।
অদ্রি লজ্জায় মাথা নিচু করে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে, নিদ্র তার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
অদ্রির কানে কানে বলল
– সুন্দর মুহূর্ত কে আরো সুন্দর করে তুলতে পারেন আপনি। এজন্যই আপনাকে আটকে রাখলাম।
অদ্রি নিদ্রের হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছিলো। কী হচ্ছে? কেনো হচ্ছে? কী করছে সে? কিছুই বুঝতে পারছে না অদ্রি!

চলবে……!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ১৪.

0
তিনি এবং ও ! ১৪.
তিনি এবং ও ! ১৪.

তিনি এবং ও !

১৪.

রশিদ সাহেব খাওয়া দাওয়া করে সোফায় উপর বসে ঝিমুচ্ছিলেন। তার মনে হলো বাসার মধ্যে কেউ খুব দ্রুত প্রবেশ করলো। সে চোখ খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আপাদমস্তক কাদামাটি তে মাখা মানুষ কে দেখে ভয়ে চিৎকার দিলেন।
রশিদ সাহেবের এইরকম গগন ফাটানো চিৎকারে কাদামাটি মাখা মানুষ টাও চিৎকার দিলো। অদ্রি তার রুম থেকে চিৎকার শুনে দৌড়ে নিচে নেমে এলো। অদ্রি কাদামাটি মাখা মানুষ টাকে দেখে রাগীস্বরে বলল
– নিদ্র, আপনার কিন্তু এরকম করাটা ঠিক হয়নি!
রশিদ সাহেব অদ্রির কথা শুনে কাদামাটি মাখা মানুষ টাকে ভালোভাবে দেখলো।
নিদ্র হাসতে শুরু করলো। রশিদ সাহেবের বুঝতে বাকি রইলো না এই মানুষ টাই নিদ্র। রশিদ সাহেব বললেন
– বাবা, আমি দূর্বল হার্টের মানুষ। আমাকে এভাবে ভয় দেখানোটা ঠিক হয়নি।
নিদ্র বলল
– আমি ভয় দেখাতে চাইনি।
– তাহলে বাবা এভাবে কাদামাটি মেখে কী করবা?
– আমি ইচ্ছে করে মাখি নি।
নিদ্র কী যেন বলতে যাচ্ছিলো তখন অদ্রি বলল
– আপনার ঠাণ্ডা লেগে যাবে। তাড়াতাড়ি গোসল করে আসুন।
নিদ্র বলল
– পুরো বাড়ি কাদায় মেখে যাবে।
অদ্রি এতক্ষণ পর খেয়াল করলো তার ড্রয়িংরুম কাদায় মাখামাখি অবস্থা। ১ সপ্তাহ যাবত বাসায় কাজের লোক ছুটিতে। সে কোনোরকম পরিষ্কার করে রেখেছিলো। লিলি টাও তেমন একটা পারেনা। এখন কীভাবে কী করবে? অদ্রি বেশ চিন্তিত হয়ে পরলো। তার পক্ষে এতোটা কাজ করা সম্ভব না। সারাদিন কিছুই তার পেটে পরেনি।
নিদ্র বলল
– আপনি চিন্তা করবেন না। আমি পরিষ্কার করে দিবো।
অদ্রি বলল
– না না আমিই পারবো। আপনি আপনার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।
নিদ্র তার রুমে চলে গেলো। অদ্রি লিলিকে ডাকলো। লিলি ঘুম ঘুম চোখে অদ্রির সামনে এসে দাঁড়াল।
অদ্রি বলল
– যা বালতি ভরে পানি নিয়ে আয়, সাবান এর গুড়া আর স্যাভলন লিকুইড নিয়ে আয়। ঘর দিয়ে গন্ধ ছুটছে কাদামাটির।
অদ্রি আর লিলি পরিষ্কার করতে শুরু করলো।
ড্রয়িংরুম পরিষ্কার করে সিঁড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখলো নিদ্র চুল টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে নিচে নেমে আসছে।
নিদ্র অদ্রিকে বলল
– আপনি এখন বিশ্রাম নিন। আমি করে দিচ্ছি।
অদ্রি বলল
– আপনি মেহমান।
– তো কী? আমিই তো অকাজ টা করেছি আর আমার অভ্যেস আছে।
– না না আপনি খেয়ে নিন। আমি করছি।
– আপনিও তো খান নি। আপনার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে।
– আপনি খেয়ে নিন।
পুরোটা পরিষ্কার করতে অদ্রি আর লিলির বেশ সময় লেগে গেলো। সন্ধ্যার সময় পুনরায় গোসল করে খেতে বসলো।
অদ্রি বলল
– কিছু মনে করবেন না। আজকে তেমন কিছুই রান্না হয়নি। সকাল থেকে আপনাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। চিন্তায় কারোরই খাওয়া দাওয়ার প্রতি কোনো হুশ ছিলো না।
নিদ্র বলল
– আমি ইচ্ছে করে কাজটা করিনি। রাতে ঘুম হলো না। খুব সকালে হাটতে বের হলাম।
– পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন?
– আরে না। অনেকক্ষণ হাটার পর একটা মাঠের মধ্যে কয়েকটা কুকুর ছানা দেখলাম। কী পরিমাণ কিউট আপনি ধারণাও করতে পারবেন না। আমার বাসায়ও এরকম একটা কুকুর ছানা আছে। আমার খুব মনে পড়ে গেলো। কাছে গিয়ে কুকুরছানার একটাকে কোলে নিয়ে আদর করতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম কয়েকটা বড় আকারের কুকুর আমার দিকে ছুটে আসছে।
দিলাম দৌড়। দৌড়াচ্ছি তো দৌড়াচ্ছি আর পথও শেষ হয়না আর কুকুর গুলোও পিছু ছাড়ছেনা।
একটা সময় পঁচা নর্দমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলাম। না হয় আমাকে কুকুরের কাছে নিজেকে সমার্পন করতে হবে আর না হয় পঁচা নর্দমায়!
অদ্রি বলল
– আর আপনি পঁচা নর্দমায় ডুব দিলেন। তো এতসময় কই ছিলেন?
– আরে কুকুর গুলো তো যায়ই না। চলে যাবার পর আমি উঠে সোজা বাসায় চলে এলাম। রাস্তায় কতো মানুষ আমাকে দেখে ভয় পেলো।
– এতো সময় থাকলেন কীভাবে?
– কী করার বলুন?
– খাওয়া শেষ হলে আপনার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়বেন। আমি গরম দুধ হলুদ দিয়ে নিয়ে আসবো।
– আচ্ছা।
– আর দয়া করে এরকম করবেন না।বলে যাবেন কোথায় যাচ্ছেন।
– কাউকে বিরক্ত করতে চাচ্ছিলাম না।
– আপনি যথেষ্ট বিরক্ত করেন আমাকে। সুতরাং জরুরী কাজে বিরক্ত করলে কিছুই হবেনা।
নিদ্র বলল
– সারাদিন না খেয়ে থাকার পর এই শুকনো খিচুড়ি ই বিরিয়ানি মনে হচ্ছে।
– আপনি বিরিয়ানি পছন্দ করেন?
– পছন্দের মানে? ভালবাসা, ভালোলাগা সব সব আমার ?

খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিদ্র তার রুমে গিয়ে অদ্রির কথামতো বিছানায় শুয়ে পরলো।
অদ্রি রশিদ সাহেবকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো। আর বলল
– একটু বাজার থেকে ঘুরে আসুন। একটা লিস্ট দিচ্ছি সেই অনুযায়ী বাজার করে আনুন।
রশিদ সাহেব বললেন
– আজ আমি এখানেই থাকবো।
– আচ্ছা।

চলবে……!

#Maria_kabir

প্রত্যাখান_পর্ব(১২)

0
  1. #প্রত্যাখান_পর্ব(১২)
    লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

বাব্বাহ! জামাই তো দেখি একদম তৈরি…
দাদার কন্ঠকে অনুসরণ করে পিছু ফিরলাম আমি।
কিন্তু একি! দাদার সাথে সাথে যে আরো কয়েক জোড়া চোখ পলকহীন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে।
প্রশ্ন করলাম। বাবা-মা, কাকা-কাকীমা কিছু বলবে তোমরা?
জবাবে কারো মুখ থেকে কোন শব্দ বের হয়নি। তবে আমার মা এগিয়ে আসে রুমে আমার দিকে।
তারপর তিনি যেটা বলেন সেটা শুনে আমার পুরো শরীর শিহরণ দিয়ে ওঠে। সে স্থানেই থমকে দাঁড়ায় আমি। বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলি কথা বলার শক্তি। মা যেটা বললো সেটা ছিল আমার ভাবনারও অতীত।
অত্যন্ত ধীর এবং স্বাভাবিক গলায় আমার মা সেদিন আমায় জানিয়েছিলো, শুভ্র! এটা বিয়ে বাড়ি। বিয়ে বাড়িতে গ্রামের দূর দূরান্ত থেকে আগত মুরুব্বীয়ান থাকবে। তাই দয়া করে এখানে এমন কিছু করিস না যেটা দেখে লোকে আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলতে পারে। আমাদের সম্মানহানি হয়।
লাবণ্যকে আমাদের অনেক পছন্দ। ওর শান্তশিষ্ট বিনয়ী স্বভাবের জন্য সুমনরাও অকে বেশ পছন্দ করেছে। প্রচন্ড চুপচাপ স্বভাবের সে। বয়স কম হলেও যেকোন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার বিশেষ ক্ষমতা আছে ও’র। সে গুনেই তোর দাদাও মুগ্ধ।
এমন মেয়েকে বিনা দ্বিধায় চোখ বোজে বিয়ে করা যায়। যেটা তুইও পারিস।

মায়ের শেষ কথা’য় আমার হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠল। স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনায় ঘামতে লাগলাম আমি। কাঁপা স্বরে প্রশ্ন করলাম মা’কে, মাম্মমানে?
পুনঃবার স্বাভাবিক গলায় মায়ের জবাব, মানে লাবণ্যর বিয়েটা তোর সাথে হচ্ছে। মায়ের কথা শেষ হতে না হতেই পাশে রাখা চেয়ারে বসে পড়লাম আমি।
বাবা-দাদা, কাকা-কাকীমা, কাজিন এবং একমাত্র ছোটবোন আশা সবাই আমাকে বোঝাতে ব্যস্ত।
ওরা ঠিক কি বলেছে? কি বলে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে? সেটা আমি জানি না। আমি জানি, আমার মাথাটা কেবল ঘুরছিল।
পরে যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরি তখন নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করি। যেখানে আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলো অনেকগুলো মানুষ।
‘কেমন বোধ করছি?’ কোনরকমে এটা জেনেই ওরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে আমাকে বিয়ের আসরে নেয়ার জন্য।
মা’কে বারংবার একটা কথা বলতে চেয়েও পারিনি বলতে। বিয়ের আসরে গিয়ে চেষ্টার কোন ভ্রুটি করিনি।
কিন্তু আমার মা! আমার কোন কথা শুনার আগ্রহ দেখাননি। ওনার একটাই কথা ছিলো, কথা যা বলার বাড়িতে গিয়ে বলিস। শুনবো আমি।

বুঝাতে ব্যর্থ আমি একটা সময় চুপ হয়ে যাই।
বিয়ে পরানো শেষ হয়। সামাজিক নানা রীতিনীতি শেষে বউ নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসি।
পাশাপাশি বসে দু’জন। কারো মুখেই কোন কথা নেই। অথচ ভেতরে আমাদের অজস্র কথাদের ভীড় জমেছিল।
গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। এসিযুক্ত গাড়িতে বসেও ঘামছি আমি ভিষণ।
দু’কান দিয়ে অগ্নির ন্যায় গরম হাওয়া বের হচ্ছিলো আমার। অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটলে এরকমই হয় বুঝি….!

চলবে….

তিনি এবং ও ! ১৩.

0
তিনি এবং ও ! ১৩.
তিনি এবং ও ! ১৩.

তিনি এবং ও !

১৩.

সময়ের সাথে সাথে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন বদলে যায়। কিন্তু বদলে যাওয়া জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি গুলো রয়ে যায় অগোচরে। কখনো সেটা কাদায় কখনো হাসায়। নিদ্রের জীবনে * মা * সম্পর্কিত যে স্মৃতি গুলো জমে আছে, সেগুলো তাকে শুধুই কাদায়।সারারাত নিদ্র তার মায়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিলো।
সকালের প্রথম আলো যখন তার ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলো তখন নিদ্র তার বিছানায় বসে পরলো। কী করবে? এভাবে কোনো কাজ ছাড়া বসে থাকতেও তার ভালো লাগছে না। ঘুমও আসেনা। কী করা যায়? ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলো। এতো ভোরে তেমন কোনো মানুষ জন রাস্তায় নেই। কেবল সূর্য তার আলো ছড়াচ্ছে।
নিদ্র হাঁটতে শুরু করলো। তার বাবা বলেছিলেন – সকালের বাতাস বিশুদ্ধ হয়। বাবা তুমি প্রতিদিন সকালে হাঁটবে।
বাবার এই আদেশ আর পালন করা হয়নি।
আজ না হয় পালন করা হোক। মোবাইল টা রুমে রেখে আসাটা ঠিক হয়নি। এই সুন্দর দৃশ্যপট স্থিরচিত্রে ধরে রাখা গেলে ভালোই হতো। বাবাকে দেখানো যেত তার মাতৃভূমির রূপ। তবে আমি পিতৃ সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। জন্মসূত্রে ইংল্যান্ড এর নাগরিক। বাবা বলেছেন, সবাইকে যেন ব্যাপার টা না জানাই। তা না হলে ফাঁসিয়ে আমাকে বিয়ে করিয়ে দিবে। তারপর আরো ইতিহাস…….
রাস্তার দু ধারে সারি সারি সবুজ গাছ গাছালি। নিদ্র সেই সবুজের মাঝে মিশে যেতে চাচ্ছে। যেন সবুজে মিশে আছে তার প্রাণ তার আত্মার শান্তি।
অদ্রির ঘুম ভাংলো লিলির ডাকে। লিলির এভাবে চেঁচামেচি তে অদ্রি বিরক্ত হয়ে বলল
– হয়েছে টা কী? শুনি যে এভাবে চেঁচামেচি করতে হবে?
লিলি হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলল
– আপা, সেই রঙিন চুলওয়ালা কে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
অদ্রি বলল
– বাগানে আছে হয়তোবা।
– না আপা কোথাও নেই। ওনার ঘরে বিছানার উপর মোবাইল ফেলে রেখে কোথায় যেন চলে গেছে।
– কী সব বলছিস আছে কোথাও।
অদ্রি বিছানা থেকে নেমে মাথায় ঘোমটা ঠিক করে নিদ্রের ঘরে গেলো।খাটের নিচে খুঁজে দেখলো। পুরো বাড়ির চিপা চাপা সব জায়গা খুঁজে যখন নিদ্রকে পেলো না তখন রশিদ সাহেবকে কল করলো। রশিদ সাহেব কল রিসিভ করে বলল
– আরে অদ্রি মা, আমি তোমাকে ফোন করবো আর তুমি করলা।
– নিদ্র আপনার ওখানে গেছেন?
– নাহ তো। ও তো আমার বাসা চিনেই না আসবে কীভাবে?
– ওনাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
– ও কি এলাকা চিনে?
– না।
রশিদ সাহেব আর লিলি পুরো এলাকা পাশের এলাকা খুঁজে যখন নিদ্রকে পেলো না তখন থানায় গিয়ে নিখোঁজ ফাইল লিখিয়ে অদ্রির বাসায় আসলেন।
প্রায় দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে যাচ্ছে নিদ্রের কোনো খোজ নেই। অদ্রি সকাল থেকে এক ফোটা পানি পর্যন্ত পান করেনি। একজন মানুষ এভাবে উধাও হয়ে যেতে পারে তার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
অদ্রির মনে হচ্ছে, নিদ্র তার ঘরেই ঘুমিয়ে আছে। ঘুম ভাংলেই নিচে এসে খেতে চাবে।কিন্তু খাবার তো বানানো হয়নি। খানিকক্ষণ পর তার মনে পড়ে, মানুষ টা সকাল থেকে নিখোঁজ।
রশিদ সাহেব অদ্রির পাশে বসে নিদ্রের বাবাকে কল করলো।
নাজমুল সাহেব ফোন রিসিভ করলেন। রশিদ সাহেব বললেন
– নাজমুল তোর ছেলেটার কি মাথা খারাপ টারাপ আছে?
নাজমুল সাহেব বললেন
– ওটা আমার ছেলে তোর না যে মাথা খারাপ থাকবে।
– দ্যাখ, আমার ছেলেপুলের মাথা খারাপ নাই। তোর ছেলেরই আছে।
– কী হয়েছে বল।
– আরে সকাল থেকে নিখোঁজ। কোথাও নেই।
নাজমুল সাহেব শান্ত ভাবেই বললেন
– সে সবুজের মাঝে হারিয়ে গেছে হয়তোবা বা পাখির গানে মেতে আছে।
– বাদ দে সাহিত্য। সারাদিন খুঁজতে খুঁজতে আমরা হয়রান। তার উপর কেউই কিচ্ছু খাইনি।
– দ্যাখ ভাই, ও চলে আসবে। তোরা খেয়ে দেয়ে রেস্ট নে।
– আশেপাশের অবস্থা ভালো না। এটা বাংলাদেশ এখানে মানুষ জনকে কয়েকটা টাকার জন্য খুন করে।
– এটা চিন্তার বিষয়। থানায় গেছিলি?
– ওখান থেকেই তো আসলাম।
– যা এখন খেয়ে নে। যদি রাতে না আসে আমাকে আবার ফোন করিস।
– হ্যা করবানি।
অদ্রি রশিদ সাহেবকে বলল
– কী বললেন উনি?
– ও আর কী বলবে? একমাত্র ছেলের প্রতি কোনো চিন্তা নাই। মোটা চামড়ার শালা।
অদ্রি চুপ হয়ে গেলো। রশিদ সাহেব লিলিকে ডাকলেন। লিলি বলল
– রান্না করেছি। খাবেন?
রশিদ সাহেব বললেন
– টেবিলে দে।
অদ্রিকে বলল
– চল মা খেয়ে নেই।
– নাহ আপনি খান। আমার ভালো লাগছেনা।
অদ্রি ঘোমটা টেনে ঠিক করে দোতলায় তার রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
ওয়াশরুমে ঢুকে ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলো। চাপা কষ্ট কান্নার শব্দে রূপান্তরিত হচ্ছে। একজন ভালো বন্ধু কে এভাবে হারিয়ে যাবে তার জানা ছিলোনা। জীবনের প্রিয় মানুষ গুলো হয়তো এভাবেই হারিয়ে যায় জীবন থেকে।

চলবে…….!

#Maria_kabir