বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1176



ফাগুণের নবধারা পর্ব-৯

0
ফাগুণের নবধারা পর্ব-৯
ফাগুণের নবধারা পর্ব-৯

ফাগুণের নবধারা
পর্ব-৯

শাহাজাদী হুমাশা

রুকুর ফোন টা বেজেই চলেছে। কেউ ধরছেনা। সবাই যার যার কাজে বাহিরে।বাসায় শুধু রুকু আর মেঘ।২ বছরের মেঘকে ঘুম পারিয়ে রেখে রুকু গোসলে গিয়েছে।মেঘ সম্পূর্ণই তার বাবার মত হয়েছে।শান্ত আর ঘুম কাতুরে।গোসল শেষে বারান্দায় কাপড় নেড়ে রুকু আবার রুমে এলো। ফোনটা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে আবার ডায়াল করলো।অপর পাশে হ্যালো বলতেই রুকুর বিরক্ত ভাব দেখিয়ে বললো

– এতো বার কল করতে হয়? তোদের জন্য যদি বাবু ঘুম থেকে উঠে যেতো??

অপর প্রান্ত থেকে সবাই চিৎকার করে সরি জানালো।রুকু আবার রাগ হয়ে বললো –

আস্তে।সবাই চুপ?

কলাপাতা রঙের শাড়িতে রুকুকে দারুণ মানিয়েছে।শাড়িটা আবিদের পছন্দের।আজ ২ সপ্তাহের ফ্লাইট শেষ করে আবিদ আসবে।১ সপ্তাহের ছুটিতে।তাই সবাই মিলে এবার একটা ট্যুর প্ল্যান করলো।সবাই ঠিক করলো তারা কক্সবাজার যাবে।নিঝুমের কাছে।নিঝুম কে চমকে দিবে।বিসিএসের পর নিঝুমের পোস্টিং চট্টগ্রামেই হয়েছে।তাই ওকে সারপ্রাইজ দেয়া যাবে ভালো।নাভিদ ফোনের অপর পাশ থেকেই সুমুকে বকা দিচ্ছে।

– তুমি সাবধানে হাটতে পারো না? সারাক্ষণ দৌড়ানোর দরকার আছে?? আপাতো কোথাও চলে যাচ্ছেনা।
-তুমি কথা থামাও।আমাকে কেনো ডাকলেনা আপাকে কল করার সময়? তোমার এত সাহস।আজ তুমি আমায় ফুচকা খেতে নিয়ে যাবে কোলে করে তোমার শাস্তি।

– নাভিদের মুখটা চুপসে গিয়েছে।এ মেয়েটার সাথে কেন জেনো সে পেরে ওঠেনা।না শাস্তিতে, না শাসনে, আর না ভালোবাসায়।

রুকু দেখলো সুমু ফুলে ঢোল।এত্ত বড় একটা পেট নিয়ে দৌড়ে আসছে।রুকুও বকা দিলো।
– আস্তে হাটঁ পরে যাবিতো।
– আপা কেমন আছো?? দেখো তুমি নিজেই দেখো তোমার ভাই আমার কি অবস্থা করেছে। আমি ওকে মাফ করবো না।ওর জন্য আমি শান্তিতে কিচ্ছু করতে পারিনা।মানুষ একটা নিয়ে হিমশীম খায় সে আমায় ট্রিপল করার ট্রায় করেছে।বদ লোক।

নাভিদ লজ্জায় কাচুমুচু হয়ে গিয়েছে।এই মেয়েটা এত্ত বেফাঁস কথা বলে।
রুকু ওদের কান্ড দেখে হাসছে।সাথে ইলমা, ফাহিম আর নিধিও হাসছে।

ফাহিম আর ইলমা বিয়ের পর হ্যাপি কাপল লাইফ লিড করছে।ফাহিম একটা মাল্টিন্যাশনালে জব করে।ইলমা ব্যাংকে। দুজনের সুখি পরিবার।প্রথমে ফাহিমের মা মেনে না নিলেও ধীরে ধীরে সবাই মেনে নিয়েছে। নিধি একটা সনামধন্য স্কুলের শিক্ষিকা।চোখে চশমা দেয়াতে ওকে আরেকটু আলাদা লাগছে আগের চাঞ্চল্যতা নেই।

রুকু ভাবছে সবাই সবার জীবনে সুখী। কত ঝড়ঝাপটা পার করে আজ সবাই এখানে।
এবার শুধু নিঝুম আর নিধির একটা গতি করে দিলেই রুকুদের দায়িত্ব শেষ।

সবাই মিলে ঠিক করলো আবিদের জন্মদিন উপলক্ষে সবাই কক্সবাজার যাবে আর নিঝুম কেও সারপ্রাইজ দেয়া হবে।
আর আবিদের জন্য আরো একটা সারপ্রাইজ রেখেছে রুকু।

রাতের ১০ আবিদ বাসায় ফিরে দেখে সবাই টিভি দেখছে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।নীহারিকা বাবাকে দেখে দৌড়ে এলো। আবিদ মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো।রুকু রান্নাঘর থেকে এসে আবিদের ব্যাগ বেডরুমে রেখে আসলো।সবার সাথে গল্প শেষ হতেই রুকু বললো ফ্রেশ হয়ে আসতে খাবার দিচ্ছে।আবিদ ও চলে গেলো।
খাবার টেবিলে রুকু ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানটা বললো। আবিদ রাজি হলো।বহুদিন সবার সাথে দেখা হয়না। নাভিদ আর সুমু আসতো আগে বাবুকে দেখতে তবে এখন তো সুমুর ও ৮ মাস চলছে।তবে আবিদ প্রশ্ন করলো সুমুর এই অবস্থায় জার্নি ঠিক হবে কি?? রুকু বললো প্ল্যান্টা ওরই।সবাই বারণ করেছিলো তবুও সে যাবেই। তার নাকি ওখানের কাকড়া ভাজা খেতে ইচ্ছে করেছে।আবিদ সহ সবাই হাসছে।সুমু সত্যিই পাগলী।তাই আবিদ ট্রেন এ সিট বুক করলো ৬ টা কেবিন।আগামীকাল রাতের ট্রেনে যাবে সবাই।

রাত ২ টা বাজে সুমু আর নাভিদ ছাদে বসে আছে।নাভিদ চেয়ে আছে সুমুর দিকে। সুমু মনোযোগ দিয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর উম্ম করে শব্দ করছে।নাভিদ হাসছে।
সে এক উদ্ভট দৃশ্য।সন্ধ্যায় নিয়ে আসা ফুচকা সে রাত দুটায় খাচ্ছে।এমন পাগলামি একমাত্র ওকে দ্বারাই সম্ভব।নাভিদ মনে মনে ভাবছে ২ বছর আগের কিছুই ওর মনে নেই।কিন্তু এই দুবছরে সুমু ওর জন্য যা করেছে তা মনে আছে ওর।এই মেয়েটাকে সুখী করতে সে যেকোনো কিছু করতে পারে।সে তার প্রেয়সী, স্ত্রী, আর সবচেয়ে বড় বিষয় সে তার সন্তানদের মা।সন্তানদের বলার কারণ সুমুর টুইন্স হবে।আর এ নিয়ে সুমু নাভিদ কে বকা দেয়ার শেষ নেই।কারণ সে জেনেছে টুইন্স ডিলভারি করাটা কঠিন কাজ।আর পালাটা আরো কঠিন।তাই।সে যদি মারা যায় তবে বাচ্চাগুলা কে দেখবে? নাভিদ এসব কথায় রাগ করে কিন্তু কিছু বলতে পারে না।এক জীবনে সুমুর থেকে আর কিছু চায়না সে।সুমুকে ভালোবাসাই তার মোক্ষম উদ্দেশ্য।

ভোরের সূর্য জানালা দিয়ে উকি দিচ্ছে। নামাজ পড়ে নিধি বাহিরে চেয়ে আছে।নিধি ভাবছে কালকের সূর্যটা সে নিঝুমের সাথে দেখবে।তার অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে এবার।গত দুবছর যাবত সে নিঝুমের সামনে যায়নি।এবার সব অভিমান ভুলে নিঝুমের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে।নিঝুম কি তাকে মেনে নিবে? নাকি সে এখনো ইলমাকে ভুলতে পারেনি??

চলবে….

ফাগুনের নবধারা পর্ব-৮

0

ফাগুনের নবধারা
পর্ব-৮
শাহজাদি হুমাশা

জোহরের আযান শোনা যাচ্ছে।সবাই জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে ছুটছে।আবিদদের বাড়ি এবং পাশের বাড়িটা মানুষে গমগম করছে। বৌ সাজানো হচ্ছে।
আজ এ বাড়িতে ২ টি বিয়ে।রুকু এ কদিন বেশ চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয়না।আর কাউকে রুমে যেতেও দেয়না।বাচ্চাকেউ কাউকে দেখতে দেয়না।শুধু নীহারিকা এ রুমে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে। ইলমার বেশ কষ্ট হয় তার ভাবির জন্য।ইলমা তার মায়ের সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে প্রায়।ইলমার মায়েরও বেশ খারাপ লাগছে কিন্তু তিনি নিরুপায়।

নামাজ পড়ে সবাই চলে আসছে।আবিদ ঠিক করেছে সে আজ পালাবে।একা নয় রুকু, নীহা এবং মেঘ কে নিয়েই।ব্যবস্থাও করে ফেলেছে।
বধূ বেশে বসে আছে ইলমা আর সুমু।পাশে নিধিও বসে আছে।সে আজ বেশ খুশি অবশেষে আজ তার আপির বিয়ে।তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে।নিঝুম বেশ তদারকি করছে সবকিছুর।
নাভিদ বারান্দায় বসে আছে সুমুকে এক পলক দেখার জন্য কিন্তু সুবিধা করে উঠতে পারছেনা।সবাই কনেকে ঘিরে বসে আছে।

নাভিদ, আবিদ দুজনকেই বেশ লাগছে বর বেশে।ঠিক হয়েছে আগে নাভিদ আর সুমুর বিয়ে হবে এবং পড়ে আবিদ আর ইলমার।তাই সবাই যখন নাভিদ আর সুমুর বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে আবিদ সেই সময় পালাবে রুকুকে নিয়ে।কিন্তু রুকু কি রাজি হবে? রাজি না হলে নেই অপহরণ করবে প্রয়োজনে কিন্তু সে তার ভালোবাসাকে হারতে দিবেনা।কক্ষনো না।

নাভিদরা সুমুদের বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।আবিদ সেই সুযোগে রুকুদের বাসায় গিয়েছে।বাসায় বউ বরণ করতে রুকু আর কিছু আত্মীয়া রয়েছেন।আবিদকে আগেও দেখেছেন সবাই তাই খুব একটা কিছু মনে করেন নি কেউ।রুকুর রুমে ঢুকতেই রুকু চমকে যায়।
– আপনি এসময়ে এখানে কি করছেন??
– শোনো রুকু আমাদের হাতে সময় কম।তাই আমাদের এখনই করতে হবে যা করার।
এতক্ষণে আবিদের চোখ পড়লো রুকুর উপর।এমরোল্ড গ্রীণ কালারের বেনারসি পড়েছে রুকু।তাকে দারুণ লাগছে এই সাজে।
যদিও সে জানে রুকু সাজতে চায়নি।সবাই তাকে একপ্রকার জোর করেই সাজিয়েছে।শাড়িটাও আবিদেরই দেয়া। বড্ড কৌশলে এ শাড়ি রুকুর পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়েছে তাকে।
রুকুকে কিছুক্ষণ মন ভরে দেখে নিলো আবিদ।পরক্ষণেই তারা দিতে শুরু করলো সে।রুকুতো কিছুই বুঝতে পারছেনা।আবিদ তাকে সবটা খুলে বললো।
– আমি পালাবো না।ইলমার কি হবে আপনি ভেবে দেখেছেন?? আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারবোনা।
– আমি ইলমার ব্যবস্থা করেই এসেছি।
– মানে?!!
– কিছুক্ষণ পড়েই বুঝবে।

আবিদের কথা কিছুই বুঝতে পারলোনা রুকু।

এদিকে নাভিদ এবং সুমুর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে সবাই খেতে বসে গিয়েছে।ভিতরে বিয়ের পড়ের নিয়মগুলো হচ্ছে।নাভিদ এক দৃষ্টিতে সুমুকে দেখছে। তার জীবনের পুরোনো সময় গুলো মনে নেই তার তবে গত দুমাস সে সুমুর প্রতি অন্যরকম টান অনুভব করেছে।আর তার ফল স্বরূপ আজ তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।সুমুও ভাবছে একজীবনের কোনো পুণ্যর ফলে আজ তার ভালোবাসার মানুষটা তার হলো।কজনের এমন ভাগ্য হয়?!! শত ঝড়ঝাপটার পরও আজ তারা এক।এবং আজীবন এভাবেই এক হয়ে থাকবে।

সন্ধ্যে হতে চললো।নাভিদ বউ নিয়ে বাসায় এসেছে অনেক আগেই।বাড়িতে বেশ থমথমে পরিবেশ সবাই চিন্তিত। আবিদ, রুকু, ইলমা, নেহা, মেঘ কারোর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না সবাই বেশ চিন্তিত।

ট্যাক্সিতে ইলমা বসে আছেন তার পাশে লাল রঙের পাঞ্জাবি পরা আরো একজন বসে আছে দেখতে বেশ সুদর্শন।ইলমাকে বেশ খুশি কিন্তু তবুও মনের গভীরে কোথায় যেন একটা সূক্ষ্ম চিন্তা রয়ে গিয়েছে।

ফাহিম ইলমাকে দেখে বলে উঠল চলো কিছু খেয়ে নেয়া যাক। কিছুক্ষণ পরেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাব তখন আমারা বেশিক্ষণ সময় পাবো না কিছু খাওয়া দাওয়ার জন্য কারণ আমরা ফ্লাইটে উঠবো আর এখনই যদি খেয়ে না নেই তাহলে তখন বেশ দেরী হয়ে যাবে।ইলমা ফাহিম এর কথায় সায় দিল কি তারা একটা রেস্টুরেন্ট এর কাছে ট্যাক্সি থামানো এবং সেখানে গিয়ে দুজনে বসে কিছু খেয়ে নিলো।

ফাহিম অপলক দৃষ্টিতে ইলমার খাওয়া দেখছে।সে ভাবছে আজ যদি ইলমা তার না হতো তবে জীবনের সুখগুলো অপ্রাপ্তিতে পরিণত হতো।ইলমা মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে।ফাহিম আবিদকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালো।সেদিন যদি ফাহিম আবিদকে সবকিছু খুলে না বলতো তবে আজ তার ইলমাকে পাওয়া হতোনা।

চলবে……

ফাগুনের নবধারা পর্ব-৭

0
ফাগুনের নবধারা পর্ব-৭
ফাগুনের নবধারা পর্ব-৭

ফাগুনের নবধারা
পর্ব-৭

শাহাজাদী হুমাশা

বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছে রুকু চৈত্রের শেষের দিকে।ফাগুণ আগুন লাগিয়ে কবেই চলে গিয়েছে।এখন ঝড় উঠছে, চারদিক লন্ডভন্ড করছে।টুং করে শব্দ হলো।পাশের ঘরে আবিদের লেপটপে হলো আওয়াজটা।রুমে গিয়ে লেপটপের সামনে বসতেই দেখলো মেইল এসেছে।ওপেন করতেই বুঝতে পারলো এটা সুমুর মেইল। মেইলের উত্তর দিয়ে আবার বারান্দায় গিয়ে বসলো রুকু।আজ ২ বছরের মত হয়ে গিয়েছে সে রাতের ঘটনার পর।এরপর ২ টো বসন্ত পার হলো।ফাগুনের নবধারা বয়ে গিয়ে চৈত্রের রুক্ষতা, বৈশাখী ঝড়, জৈষ্ঠ্যের খরতাপ গেলো।কিন্তু আজও রুকু সে রাত ভুলতে পারেনি।

রাত ৯টা থমথমে পরিবেশ পুরো হাসপাতাল জুড়ে।নাভিদ এর অপারেশন শেষ তবে জ্ঞান ফেরেনি।সে আপাদত ইন্টেন্সিভ কেয়ারে আছে।ডাক্তার বলেছেন নাভিদের জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে।তবে হয়তো ব্রেইন হ্যাম্পার্ড হবে।চোট টা গভীর।সুমুর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু সে ভীষণ চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।রুকু ঘুমাচ্ছে তার পাশে আবিদ বসে আছে।রুকুর একপাশে নীহা গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে।

আবিদের মা আবিদের এহেন কর্মকান্ডে রেগে বোম হয়ে আছেন।আবিদের বাবা আবিদের মাকে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করেছেন লাভ হয়নি।এক পর্যায়ে আবিদের মা উঠে সরাসরি ইলমার মায়ের কাছে গিয়েই ইলমা আর আবিদের বিয়ের কথা বললেন।ইলমার মা ইতস্তত করেছিলেন।কারণ আবিদ রুকুকে বিয়ে করতে চেয়েছে।কিন্তু নিজের মেয়ের জন্য এত ভালো সম্বন্ধে আর বেশিক্ষণ গাঁইগুঁই করতে পারলেন না।

হাসপাতালে ৩ দিন থাকার পর রুকু আর মেঘ কে নিয়ে সবাই বাসায় চলে এলেন।নাভিদের জ্ঞান ফিরেছে।তবে তাকে হাসপাতালেই থাকতে হবে তাই সুমুও ওর কাছেই রয়ে গিয়েছে।তবে একটাই সমস্যা।নাভিদ পুরোনো কিছুই মনে করতে পারছেনা।স্মৃতি শক্তি চলে গিয়েছে।এবং এক কানেও শুঞ্চছে না।বেশ ব্যাথা পেয়েছে।
রুকুর নতুন বাবুকে যখন ব্যস্ত সবাই তখন আবিদের মা আবিদ আর ইলমার বিয়ের কথা তোলেন সবার সামনে। আবিদ অবাক হয়ে যায়।ইলমা আর রুকুও।কিন্তু রুকু মুচকি হেসে মেনে নেয়।আবিদ রুকুর হাসি দেখে রেগে যায়।
বাসায় এসে আবিদ তার মাকে জেরার মুখে ফেলে।কিন্তু তার মা এবার জেদ ধরেছেন তিনি ছেলেকে ইলমার সাথেই বিয়ে দিবেন।

নাভিদকে বাসায় আনা হয়েছে। ২ মাস কেটে গিয়েছে।নাভিদ আর সুমুর মাঝে বন্ধুত্বও হয়েছে বেশ।নাভিদের কোনো কাজই সুমু ছাড়া হয়না।তাই সবাই তাদের এবার জোড়া বেঁধে দিতে চাইছেন পাকাপোক্ত ভাবেই।সামনের শুক্রুবার বাদ জুম্মা তাদের বিয়ে ঠিক হয়।কে জানতো সেদিন একসাথে কতগুলো জীবন পালটে যাবে।সবাই সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।কেউ পাবে কেউ হারাবে।

চলবে….

ফাগুণের নবধারা পর্ব- ৬ 

0
ফাগুণের নবধারা পর্ব- ৬ 
ফাগুণের নবধারা পর্ব- ৬ 

ফাগুণের নবধারা

পর্ব- ৬
শাহাজাদী হুমাশা

রুকুর অবস্থা বেগাতিক দেখে আবিদ রুকুর হাত শক্ত করে ধরে আছে।হাসপাতালে আসতেই রুকুকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয় লেবার রুমে।রুকু শেষ বার আবিদকে দেখে তাকে বলে আমার বেবিটাকে বাঁচাবেন প্লিজ।আবিদ রুকুর হাত ধরে বলে আমি তোমাদের দুজনের একজনকেও হারাতে চাইনা রুকু।

ইমারজেন্সি রুমে সুমুকে আইভি ড্রিপ দেয়া হয়।সবাই যখন সুমুর আর রুকুর চিন্তায় অস্থির তখন আরো একটা খারাপ সংবাদে সবার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়।

নাভিদ এর জ্ঞান ফিরছেনা।ওর জ্ঞান কবে ফিরবে বা আদৌ ফিরবে কিনা কেউ জানেনা। সুমুর জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু সে কারো কথার কোনো জবাব দিচ্ছেনা।বডিতেও কোনো মুভমেন্ট নেই।ডাক্তাররা বলেছেন খুব বড় রকমের শক থেকে এরকমটা হচ্ছে।নাভিদের মাকে নিঝুম সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ওখান থেকে।সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে।আমিনা বেগম মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে এসে ছেলের এক্সিডেন্টের সংবাদ শুনে শোকে কাতর।এদিকে আবিদ রুকুর টেনশনে নিহাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।

জীবন খুবই আনপ্রিডিক্টেবল।কখন কি হয়ে যায় তা কারো জানা থাকেনা,জানা নেই।কোথায় নতুন প্রাণের আগমনের খুশির জোয়ার তো কোথায় মৃত প্রায়ের জন্য শোক। আল্লাহ কখন কার ভাগ্যে কি রেখেছেন জানা বড্ড দায়।

অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হলেন।আবিদের সামনে গিয়েই তাকে বাবা হওয়ার অভিনন্দন জানালেন।আবিদ প্রথমে অস্বস্তি বোধ করলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়ে ডাক্তার কে বললো –
আমি বেবির বাবা না।
ডাক্তার অবাক হয়ে বললেন তাহলে বাবা কে?
-হি এক্সপায়ার্ড।
– ওহ দুঃখিত।বেবি আর মা দুজনেই সুস্থ আছেন। আপনি চাইলে দেখা করতে পারেন।তাকে কেবিনে শিফট করা হবে।

আবিদ ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানিয়ে কেবিনের দিকে গেলো।নরমাল প্রসিজারেই রুকুর বাচ্চা হয়েছে। দুজনেই সুস্থ।আবিদ কেবিনে ঢুকতেই দেখে রুকুর পাশে একটা ছোট্ট পুতুল শুয়ে আছে।আবিদ রুকুর সামনে যেতেই রুকু আবিদকে দেখে মুচকি হাসে। আবিদ বেবিটাকে কোলে নেয়।রুকু আবিদের হাসি দেখে।নিহা রুকুর বিছানার উপরে উঠে রুকুর বুকে শুয়ে জিজ্ঞেস করে-
মামণি এটা ভাইয়া নাকি আপু? রুকু হেসে দেয় নিহার কথায়।
– এটা ভাইয়া নিহা।
নিহার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে যায়।
– আমি ওর একটা নাম রেখেছি মামণি।
– কি নাম?
– মেঘ।
– আচ্ছা বেশ।তবে এই নামেই আমরা ওকে ডাকবো কেমন?
– আমি কি ওকে কোলে নিতে পারি?
আবিদ বলে কেনো নয়? অবশ্যই পারো।আবিদ আর রুকু নিহার কোলে ছোট্ট মেঘ কে দেয়।নিহার বিস্ময় জেনো কাটছেইনা।এত ছোট বাবু ও আর কখনোই দেখেনি।

রুকুকে এখনো নাভিদের কান্ডিশন জানানো হয়নি।আবিদ সবাইকে রুকুর ছেলে হবার খবর দিতে বেড়িয়ে যায়।নিহা রুকুর পাশেই বসে থাকে।

আবিদ এর কথা শুনে সবাই খুশি হয়। রুকুর বাচ্চাকে দেখতে যায় সবাই আর সুমুর কাছে নার্সকে রেখে যায়। রুকুর শাশুড়ি তো ভেবেই নিয়েছেন তার ছেলে ফিরে এসেছে তার কাছে।আবিদের মা ইলমার সাথে আবিদের বিয়ের কথা বলতে চাচ্ছিলেন। তবে এ পরিস্থিতিতে তা সম্ভব না।কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আবিদ রুকুর মাকে অার শাশুড়িকে বলেন –
আন্টি আমি রুকুর আর তার সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাই।আবিদের কথা শুনে তার মা হতভম্ব হয়ে যান।কি বলছে তার ছেলে?

চলবে….

ফাগুণের নবধারা পর্ব- ৫

0
ফাগুণের নবধারা পর্ব- ৫
ফাগুণের নবধারা পর্ব- ৫

ফাগুণের নবধারা
পর্ব- ৫

শাহাজাদী হুমাশা।

ইদানীং রুকুর মন খারাপ থাকে খুব।কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়না।সারাদিন সে শুধু উপন্যাসের বইয়ে ডুবে থাকে।ক্ষুধাও কমে গিয়েছে।বাচ্চাটাও দুষ্টু হয়েছে বেশ।শুধু পেটেই নাড়ানাড়ি। রুকু তার অনাগত সন্তানের সাথে কথা বলে।
আরো আশ্চর্য ব্যাপার হলো রুকু চোখ বন্ধ করে আবিদের চেহারাটা দেখতে চায়।আবিদের চেহারা তার কল্পনার ঘরে উঁকি দেয়। আবিদের হাতে এক দেবশিশু দেখা যায়।কিন্তু সেটা তার মৃত স্বামী আবিদ নয়। সে তার কল্পনা থেকে বেড়িয়ে এসে হাসফাস করতে থাকে।সে যখন কল্পনায় আবিদের জায়গায় অন্য আবিদকে দেখে তার পেটের শিশুটাও তার অস্তিত্ব জানান দেয়।

রুকুর ডিলেভারির এখনো এক সপ্তাহ বাকি।আজ আমিনা বেগম বাদে বাসার সবাই শপিং এ গিয়েছে।রুকুর অনাগত সন্তানের জন্যও শপিং করতে হবে।প্রধান উপলক্ষ নাভিদ আর সুমুর বিয়ে।নাভিদ ইদানীং অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সুমুকে সময় দিতে পারছেনা খুব একটা। এ নিয়ে সুমুর মাথা ব্যথা নেই সে একাই একশ। তাই নিজে নিজেই শপিং করছে। নতুন সংসারের জন্য তার বহু প্ল্যান।আজ রুকুর শাশুড়ি আর নিহার দাদীও গিয়েছেন শপিং এ।তাদের দুজনের মধ্যে আলাদা ভাব হয়েছে।বুড়ো বয়সে সই পাতিয়েছেন দুজন।নিহার দাদীর এর পেছনে একটি উদ্দেশ্য রয়েছে।তিনি তার বড় পুত্রের জন্য পাত্রী খুঁজছেন।সে ক্ষেত্রে তার পুত্রের জন্য ইলমাকে যোগ্য বলে মনে হয়েছে।যদিও বয়সের গ্যাপটা বেশি তাতে কি? সুখী হতে বয়স লাগেনা।তিনি সুযোগ খুঁজছেন কখন ইলমা আর আবিদের ব্যাপারে কথাটা বলবেন সবাইকে।

নিহা আবিদের পিঠের উপর বসে আছে।আবিদ পুশ আপ দিচ্ছে।নিহা সেটা কাউন্ট করছে।
-৮৮, ৮৯,৯০, ৯১… আব্বু?
– জ্বি।
– মামণি কে তুমি কতটা ভালোবাসো?
নিহার প্রশ্ন শুনে আবিদ থ হয়ে যায়।রুকুর কথা বলছে তার কন্যা সেটা বুঝতে বেশিক্ষণ লাগেনি তার।
নিহাকে পিঠ থেকে নামতে বলে আবিদ। নিহা নামতেই চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে সে ম্যাট এর উপর।নিহা ঝাপিয়ে পড়ে বাবার বুকে।আবিদ নিহাকে জড়িয়ে ধরেই বলে-
উনি তোমার মামণি না নিহা।তোমার মামণি নেই।
– তাহলে মামণি যে বললো সে তোমাকে ভালোবাসে আর তুমি তাকে, আর আমার একটা ছোট ভাই নিয়ে আসবে তোমরা।
নিহার কথায় আবিদের মেজাজ খিচড়ে যায়।নিহাকে কিছু না বলেই আবিদের বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার অন করে দেয়।ঠান্ডা পানির নিচে দাড়িয়ে থেকে অনেক কিছু চিন্তা করে সে। শেষ পর্যন্ত সে ঠিক করে রুকুকে কিছু কঠিন কথা শুনাবে।আর নিহাকে রুকুর কাছে যেতে বারণ করবে।

গোসল সেরে চেইঞ্জ করে আবিদ নিহাকে নিয়ে রুকুদের দরজার সামনে দাঁড়াতেই চিৎকারের শব্দ পায়।ভড়কে যায় আবিদ। কলিং বেল চাপতেই।রুকুদের বাসার কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দেয়।আবিদ ভিতরে ঢুকে দেখে রুকু সোফায় বসেই চিৎকার করছে। তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে ব্যাথায়।আমিনা বেগম মানে রুকুর মা তাকে ধৈর্য ধরতে বলছেন।এম্বুল্যান্স ডেকেছেন তিনি।নাভিদকে বলেছেন চলে আসতে।রুকুর ওয়াটার ব্যাংক ব্রেক হয়েছে।অবস্থা বেগাতিক।তিনি নিজেও বুঝতেছেন না কি করবেন।সময়ের আগেই এমনটা হলো।আবিদ আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে নিহাকে রুকুর মায়ের কাছে দিয়ে রুকুকে কোলে নিয়ে দরজা দিয়ে বের হলো।লিফটে উঠতেই রুকুর মা কাজের মেয়েটাকে দরজা লক করতে বলে তিনিও পারসটা নিয়ে নিহাকে সাথে নিয়ে বের হলেন।নিহা কিছু বুঝতেছেনা কি হচ্ছে! আবিদের টি-শার্ট খামছে ধরে আর্তনাদ করছে রুকু।এ ব্যাথা সহ্য করার মত না।
আবিদের হাতের কিছু যায়গা কেটে গিয়েছে রুকুর জন্য। সে দিকে সে ভ্রুক্ষেপ না করে রুকুকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে ড্রাইভার কে হাসপাতালে নিতে বললো।আর সে রুকুর পাশে গিয়ে বসলো।আমিনা বেগম ড্রাইভারের পাশের সিটে নিহাকে নিয়ে বসলেন।তিনি ড্রাইভারকে হাসপাতালের ঠিকানা দিলেন যেখানে রুকুকে এডমিট করার কথা।তিনি সবাইকে ফোন করে হাসপাতালে আসতে বললেন।রুকু ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে বিপদ। তাই আবিদ রুকুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।

– রুকু তোমার বেবিটা আসতে চলেছে তোমার কাছে একটু অপেক্ষা করতে হবে।ধৈর্য ধরো।
– আবিদ আমার বাচ্চাটার কিছু হবেনাতো?
– কিচ্ছু হবেনা। আমি আছিতো।তোমার মাও আছে।সব ঠিক হবে।রিল্যাক্স।
– আমার কষ্ট হচ্ছে।আমাদের বেবিটা সুস্থ হবেতো? আমি বাঁচবোতো?
রুকুর কথা শুনে আবিদের হার্টবিট মিস করে কয়েকটা।সে মাথা ঠান্ডা রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করে। কিন্তু রুকুর শেষ কথাটা তার মনেও ভয় ঢুকিয়ে দেয়।রুকু না বাঁচলে তার কি হবে? নিহার কি হবে? রুকুকে বাঁচতে হবেই।

তাড়াহুড়ো করে নাভিদ অফিস থেকে বের হয়। আমিনা বেগমের কথামত সে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।জ্যামে আটকা পড়ায় পৌছাতে দেরি হচ্ছে তার।জ্যাম ছাড়তেই। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনে এগুতেই একটা ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়।বিকট আওয়াজে গগণ কেঁপে ওঠে।ভিড় জমে যায় মুহূর্তেই।

সুমু সহ সবাই হাসপাতালে যচ্ছে।রুকু্র অবস্থা ভালোনা বেশি।সুমুর ফোনে এ সময়ে নাভিদের কল আসে।ভয়ে মুসরে যায় সুমু।কে জানে কেমন সংবাদ আসবে।ভয়ে ভয়ে রিসিভ করতেই স্তব্ধ হয়ে যায় সুমু। চিৎকার করার আগেই জ্ঞান হারায়।সবাই অবাক হয়ে যায় সুমুর অবস্থা দেখে।নিঝুম সুমুর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নাভিদের কল। সে ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই বুঝে যায় কি হয়েছে।কাউকে কিছু বলেনা সে।

চলবে…..

-ফাগুণের নবধারা পর্ব- ৪

0

-ফাগুণের নবধারা

পর্ব- ৪

– শাহাজাদী হুমাশা।

সুমু বারান্দায় বসে নাভিদের দিকে চেয়ে আছে।অপর পাশের বারন্দায় বসে নাভিদও চেয়ে আছে।দুজনে চুপ, কিন্তু কথা বলছে তাদের চোখ আর কিছু অনুভূতি।একে অন্যের দিকে চেয়ে হাজারো না বলা কথা গুলো জেনো পড়ে নিচ্ছে।পুরোটা বিকেল তারা এভাবেই কাটালো।মাগরিবের আজানের পরই সুমু উঠে ভিতরে চলে গেলো।

নিঝুম বাহির থেকে এসে নিধির সাথে করা আজকের দূর্ব্যবহারের কথা চিন্তা করতে থাকলো।অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিলো সে নিধির কাছে মাফ চাইবে।

ইলমা বিকেলের অলস সময়টা ফাহিমের সাথে গল্প করেই কাটিয়ে দিলো।আজ বহুদিন পর তার মনটা আনন্দে ভরে উঠেছে।সে আজ অনেক খুশি।আজানের পর নিঝুমের সাথে দেখা হতেই আজ আর সে তার সাথে দূর্ব্যবহার করলো না।বরং নিঝুমকে অবাক করে দিয়ে সে নিজেই তাকে কফি অফার করলো।কিন্তু বেচারা নিঝুম বিকেল থেকে নিধির কথাই ভেবে যাচ্ছে তাই আজ আর সে ইলমার কথায় খুব একটা পাত্তা দিলো না।এরকম আচরণে ইলমা অভস্ত না।হঠাৎ করে তার কি জেনো হলো।এই অবহেলাটা নিতে না পেরে তার মন খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু সে নিজের আচরণে নিজেই অবাক হচ্ছে।

আজ শুক্রুবার।দেখতে দেখতে প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলো রোকসানাদের এ বাড়িতে আসার।দুশ্চিন্তা মুক্ত কিছু সময় কাটালো রোকসানার। আরও কিছু জিনিস দেখলো সে।এই যেমন আবিদ লোকটা।তার সম্পর্কে করা রোকসানার প্রায় সকল ধারণাই ভুল হলো। তবুও তার ভুল গুলো হওয়াতেও সে অদ্ভুত এক আনন্দ পেলো।

বাসার সবাই আজ খানিকটা ব্যস্ত। সুমু আর নাভিদের বিয়ের শপিং করতে যাবে সবাই।রোকসানার শরীর ভালো না থাকায় সে বাসায় থাকবে আর নিঝুম বাসায় থাকবে সাথে তাদের বাসার কাজের মেয়েটা।ইলমার ইচ্ছে না থাকলেও মায়ের পিড়াপীড়ি তে যেতে হচ্ছে। সকালের নাস্তা করেই সবাই বের হবে।আসতে সন্ধ্যা হবে।আত্মীয় বাড়িতে দাওয়াতেও যেতে হবে তাই।আমিনা বেগম নিঝুম কে রুকুর খেয়াল রাখতে বলে সবাইকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন।

সাড়ে ১১ টা নাগাদ ডোরবেলটা বেজে উঠলো। রুকুদের কাজের মেয়ে লতা দৌড়ে গিয়ে লুকিং গ্লাসে দেখে দরজা খুললো।দরজা খুলতেই একটা ৫ বছরের মেয়ে দৌড়ে রুকুর ঘরে গিয়ে রুকুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।নিঝুম রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো রুকু কার সাথে যেনো হেসে হেসে কথা বলছে। উকি দিতেই দেখলো একটা ছোট্ট মেয়ে।সে মেয়েটাকে চেনে।এটা বাড়িওয়ালার নাতনি নিহারীকা। সবাই নিহা ডাকে। রুকুকে দেখে নিঝুমেরও আনন্দ হচ্ছে।কতদিন পর রুকুকে এভাবে হাসতে দেখছে যে হাসিতে কোনো কৃত্তিমতা নেই। নিঝুম রুকুর ঘরে গিয়েই বললো –
মা মেয়ের কথার মাঝে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য দুঃখিত।রোকসানা হাসলো।
নিঝুম আবার বললো আমি নিচে যাচ্ছি আপু।তুই থাক। কিছু লাগলে কল করে দিস।রুকু মাথা নেড়ে সায় দিয়ে আবার বাচ্চা মেয়েটার সাথে কথা বলতে লাগলো।

নিহা রুকুর বিছানায় বসে তার স্কুলের সব বন্ধুদের কথা বলছে আর হেসে কুটিকুটি হচ্ছে কি নিষ্পাপ সে হাসি।রুকু নিহাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো –
নিহা তুমি আমাকে মামণি ডাকো কেনো? তোমার আম্মু রাগ করবে না? মুহূর্তেই নিহার মন খারাপ হয়ে গেলো।সে বললো – আমার আম্মু নেই।চমকে গেলো রুকু নিজেকে সামলে নিয়ে বললো তোমার আব্বু বাসায়? নিহা মাথা নেড়ে সায় দিলো।লতা নিহা আর রুকুর জন্য দুটো গ্লাসে জুস নিয়ে আসলো।নিহা জুস খেতে খেতে রুকুকে জিজ্ঞেস করলো – মামণি তোমার পেটে কি আমার ভাই?? নাকি বোন? রুকু নিহার কথায় হাসলো নিহা জুস শেষ করে রুকুর পেটে কান লাগিয়ে তার অনাগত ভাই বা বোন কে জলদি আসতে বললো সে তাদের সাথে বাবার সাথে সুইমিং শিখবে তাই।
নিহার কথায় রুকুকে অবাক করে দিয়ে পেটের ভেতরের বাসিন্দা লাথি দিলো মৃদু।

আবিদ ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেড়ে ছাদে গেলো। গাছ গুলোতে পানি দিবে।সাথে তাদের ছাদের সুইমিংপুল টাতে কিছুক্ষণ সাতার কাটবে।সুইমিংপুল টা একান্তই আবিদের শখের বসে করা খুব বড় না হলেও খুব ছোটও না।১৩ তালা এপার্টমেন্ট টার ছাদের পুলটা অনেক শখ করেই বানিয়েছে আবিদ।পুরো ছাদ টা সে নিজের ইচ্ছেমত সাজিয়েছে। বছরের বেশির ভাগ সময় তাকে বাহিরে কাটাতে হয়।তাই নিজের বাসায় খুব একটা থাকা হয়ে ওঠেনা।সুইমিং করার কিছুক্ষণ পরেই নিচে চলে এলো আবিদ। নামাজে যাবার সময় হয়ে যাচ্ছে প্রায়।ঘরে এসে নিহাকে ডেকেও সে পেলোনা।নিহার দাদী জানালো সে রুকুদের ঘরে গিয়েছে।আবিদ মুচকি হাসলো।

নিহা আবিদের মেয়ে।তবে আপন মেয়ে নয়।নিহাকে আবিদ কুড়িয়ে পেয়েছিলো যখন নিহার বয়স দেড় বছরের মত ছিলো। এরপর থেকে নিহাকে সে নিজের মেয়ে হিসেবে পরিচয় দেয়।প্রথমে আবিদের বাবা গাঁইগুঁই করলেও পরে নিহার সাথে তার সখ্যতা হয়ে যাওয়ায় সে আর এ নিয়ে কথা বাড়ায়নি। তাই নিহা এখন তাদের পরিবারের সদস্য আবিদের কন্যা।

নিঝুম দুপুরে বাসায় খাবেনা বলে জানিয়ে দিলো রোকসানাকে।তাই রোকসানা নিহাকে নিয়ে খেতে বসলো।নিহাকে মুখে তুলে খায়িয়ে দিচ্ছে রুকু আর রাজ্যের গল্প করে যাচ্ছে নিহা।রুকুর খুব মায়া হচ্ছে মেয়েটার জন্য।আবিদ বাসায় ফিরে দেখলো নিহা নেই।নিহাকে ছাড়া সে কখনো খেতে বসে না। তাই উঠে নিহাকে ডাকতে গেলো রুকুদের বাসায়।কলিং বেল দিয়েই দাড়িয়ে রইলো সে।লতা দরজাটা খুলে দিলো আবিদকে দেখে।আবিদ নিহার কথা জিজ্ঞেস করতেই লতা রুকুর রুমটা দেখিয়ে দিলো আবিদকে।ভিতরে গিয়ে আবিদ অবাক হয়ে চেয়ে রইলো নিহা আর রুকুর দিকে।নিহা গরগর করে কথা বলছে আর রুকু তার মুখে নলা তুলে দিচ্ছে।আবিদ অবাক কারণ নিহা সবার সাথে মিশেনা।দাদা-দাদী আর আবিদই তার ভুবন।সে কারো কাছে খেতেও চায়না।অথচ আজ পুরো ব্যাতিক্রম।
আবিদ নিহাকে ডেকে বললো –

আমাকে ছাড়াই খেয়ে নিলে? নিহা বাবার দিকে চেয়ে মিষ্টি হাসি দিলো।
– তোমার সাথেতো রোজ খাই বাবা,আজ মামণির সাথে খাচ্ছি।
আবিদের বিস্ময়ের সীমা রইলোনা।নিহা রুকুকে মা ডাকছে।অথচ এই মেয়ের জন্য সে বিয়ে করেনি।বাসা থেকে বহু পাত্রি দেখা হলেও নিহার পছন্দ হয়নি বলে আবিদ এগোয় নি।এছাড়া তার পেশার জন্য ও নিহাকে এমন কারো কাছে রাখবে বাবা মায়ের পরে যে বিশ্বস্ত এমন কাউকেই পায়নি।

রুকু আবিদের চেহারা দেখে বুঝলো আবিদ অবাক হয়েছে।রুকু আবিদ কে তাদের সাথে খেতে বসতে বললো আবিদ বসতে চাইলোনা।নিহা আবিদকে জোর করায় আবিদ বসলো।খাবারের আইটেম দেখে আবিদ আরো অবাক হলো প্রায় সবই তার পছন্দের খাবার।গরম ধোয়া ওঠা পোলায় চালের খিচুড়ি, ডিম ভুনা,মাছের কোফতা, সব্জি, সাদা মুরগির মাংস আরর সাথে সালাদ।
রুকু আবিদকে বেড়ে দিয়ে সে নিজে খেতে বসলো আবিদ মানা করলো তাকে ব্যস্ত হতে। এইসময়ে এত প্রেশার না নেয়াই ভালো।দুপুরের খাবার খেতে খেতে রুকু কথা বলছে আবিদের সাথে।চুপচাপ আবিদ একজন ভালো শ্রোতা।আর রুকু বক্তা।
– আবিদ সাহেব আপনার স্ত্রীর বিষয়ে জেনে দুঃখিত।এত ছোট বয়সে নিহা তার মাকে হারিয়েছে।নিহা লতার সাথে খেলছিলো তখন।আবিদ রুকুকে বললো
– আমি অবিবাহিত। নিহা আমার আপন মেয়ে না।আমি তাকে দত্তক নিয়েছি।
– অবাক হলো রুকু।আর বললো- আমি দুঃখিত।আমি জানতাম না ব্যাপারটা। আবিদ হালকা হেসে বললো ব্যাপারটা বাবা -মা ছাড়া আর কেউ জানেনা আর আপনি আজ জানলেন।আমার পেশার জন্য আমাকে বছরের অর্ধেক সময় বাহিরে থাকতে হয় নিহা তখন মার কাছে থাকে।
রুকু আবিদকে তার পেশা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো।আবিদ স্বাভাবিক ভাবে বললো সে একজন পাইলট। বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ এর।

রুকুদের খাওয়া শেষ হলে রুকুর ঘরে গিয়ে আবিদ দেখলো নিহা ঘুমিয়ে পড়েছে ক্লান্ত হয়ে।আবিদ রুকুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিহাকে ওখানেই রেখে এলো।আজকের দুপুরটা বেশ ভালো কেটেছে তার।অনেকদিন পর এভাবে গল্প করেছে কারও সাথে।রুকুও আবিদ যাওয়ার পর বিশ্রাম নিতে গেলো নিহার পাশে শুয়ে পড়লো সে।

চলবে….

ফাগুণের নবধারা পর্ব-৩

0

ফাগুণের নবধারা
পর্ব-৩

-শাহাজাদী হুমাশা।

এই হিরহিরে ঠান্ডা মেঘ বৃষ্টির লুকুচুরি খেলায় ও রোকসানার গরম লাগা শুরু করলো আর কিছুক্ষণের মধ্যে সে বিরক্ত হয়ে গেলো।দুপুরের পর সবাই হালকা বিশ্রাম নিচ্ছে।বাসাটা নিরব হয়ে আছে।অবাক রোকসানা, বাংলা গান অপছন্দ করা নাভিদ-নিঝুমের রুম থেকে গানের শুর ভেসে আসছে –
“এসো করি স্নান নবধারা জলে,
এসো নীপবনে,
ছায়াবীথি তলে…”

বিস্ময়ের সীমা রইলোনা রোকসানার…
ছাদে উঠে এসেছিলো লিফটে একাই।এই অবস্থায়। কারণ ঘরে তার দম আটকে আসছিলো। কিন্তু ছাদে এসে আরো কেমনজানি লাগলো রুকুর।তারও ইচ্ছে করলো বৃষ্টিতে ভিজি তাকে উপভোগ করার,যেভাবে এখন তার সামনে থাকা অত্যন্ত সুদর্শন, সুপুরুষটি করছে।দুহাত মেলে দিয়ে ভিজছে আর গান গাইছে।রুকু আর স্থীর থাকতে না পেরে ছাদে গিয়েই আবিদ কে জিজ্ঞেস করলো-
আমি কি আপনার সাথে ভিজতে পারি??
– আবিদ কিছুক্ষণের জন্য মনে হয় বেক্কল হয়ে গেলো।সে একজন গর্ভবতী, ২৪ কি ২৫ বছর বয়সী মেয়ের শান্ত কিন্তু প্রাণোচ্ছল চোখের দিকে তাকিয়ে।

সম্মত ফিরে পেয়ে আবিদ একটা হাসি দিলো তার অর্থ হ্যাঁ।আবিদ আর রুকু বৃষ্টিতে মাত্র ৮ মিনিট ভিজলো। গুণে গুণে।তারপরই আবিদ বলে উঠলো গম্ভীর স্বরে-

মিসেস রহমান আমাদের এখন নিচে নামা উচিৎ। হতভম্ভ হয়ে রুকু চাইলো আবিদের দিকে-
মাত্রইতো এলাম।আমার চুলগুলোও ভিজেনি।আর চলে যাবো?
– হ্যাঁ কারণ আপনি এখন কোনোভাবেই ভেজার স্টেট এ নেই।আর আমি আপনার এই ক্রুশিয়াল মুমেন্টে অসুস্থ তা আফোর্ড করতে পারবোনা।রুকু অবাক হয়ে আবিদের কন্সার্ণ দেখলো তার প্রতি,বিব্রতও হলো।অপিরিচিত পরিচিত লোকটি কেনো এটা বললো?

আবিদ একপ্রকার জোর করে রুকু কে নিয়ে নিচে নামলো ফ্ল্যাটে ঢোকার আগে ওকে মাথা মুছতে বলতে ভুললোনা।রুকুকে অবাক করে দিয়ে পাশে বাড়িওয়ালাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেলো।

রাতে রুকু শুয়ে শুয়ে ভাবছে আবিদ এর নামটাই মিলে শুধু বাকি সবকিছু ই আলাদা।যেমন – আবিদ বাঁচাল ছিলো,এত কেয়ারিং ছিলোনা,মুডি ছিলো, তবে গম্ভীর্যও ছিলো ডিফেন্সে ছিলো যে তাই,তার হাসব্যান্ড কে নিয়ে তার একটু নাক উঁচু হলো তার বর আর্মি অফিসার হওয়ায়।আর এই আবিদ বেশি হলে নিশ্চই কোনো কর্পোরেট জব করে।কি অদ্ভুত এক ব্যাপার সে কি ভাবছে আজ এগুলো?? ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো রুকু।

নাভিদ সুমুকে দেখে চমকে উঠলো। দুদিনের জ্বর তাকে কাবু করে ফেলেছে।সে খুব সুন্দর করে চোখে কাজল পড়েছে। তবুও তাকে আজ নিস্তেজ লাগছে।বাগদান হবার পরে তারা আর রাখঢাক করে দেখা করেনা।তবে তারা শালীন আর সচেতন তাদের সম্পর্ককে নিয়ে।
ভালোবাসা হয়তো এমনই হয়।রুকুর ডিলেভারির পরেই তাদের বিয়ের আয়োজন হবে

।নাভিদের বুকে মুখ গুজে থাকা সুমুর কপালে আলতো করে চুমু খেলো। সুমু ঘাড় সোজা করে তাকাতেই নাভিদ শুষ্ক ঠোঁট গুলোতে গভীর ভাবে চুমু খেলো। নাভিদ হঠাৎ বলে উঠলো –

সুমু তুমি কি জানো তোমার নামের সাথে একটা জিনিসের খুব মিল! নাভিদের কথায় সুমু প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো।
নাভিদ উত্তর দিলো-
সু মু, চু মু

নাভিদ কথাটা বলেই হাহা করে হেসে ফেললো সুমু লজ্জায় বেগুনী হয়ে তেড়ে গেলো নাভিদের দিকে।

নিঝুমের এহেন কান্ডে বিস্মিত নিধি। তার চোখ বেয়ে পানি চলে এলো।নিঝুম ঝোকের মাথায় বলতে গেলে রাগের বসে নিধিকে একটা বিরাশি সিক্কার চড় মেরেছে।নিধি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।

নিঝুমের হাতে ইলমাকে দেয়ার জন্য একটা সুন্দর ফ্লাওয়ার ভাজ।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা-
নিঝুম একটা মাটির ফুলদানি কিনেছে,ইলমার জন্মদিনের উপহার হিসেবে।কথা হলো ভাজ গুলো মাটির ছিলো সেখান থেকে সুন্দর একটা বেছে নিয়েছে।নিঝুম সেটা শুধু খবরের কাগজ দিয়ে পেঁচিয়েছে আর কিছুইনা।তারপর রাস্তা পার হতে যাচ্ছিলো।জ্যাম ছোটার আগেই সে পার হবার জন্য হাটতে লাগলো হঠাৎ একটা প্রাইভেট কার তার গা ঘেষে চলে যেতে নিলেই নিধি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় যেনো গাড়িটাতে তার ক্ষতি নাহত কিন্তু ভুল বসত নিঝুমের হাত থেকে সদ্য কেনা ফুলদানি টা পরে ভেঙ্গে গিয়েছে।নিঝুম রাগে হিতাহীত জ্ঞান ভুলে নিধিকে চড় দিয়েছে।নিধি প্রথমে ভেবেছে হয়তো তার নিজের ক্ষতির ভয়ে নিঝুম কাজটা করেছে মনে মনে এতজোরে চড় খেয়েও খুশি হচ্ছিলো কিন্তু তার আশায় জল ঢেলে দিয়ে নিঝুম রাস্তার সবার সামনে তাকে গায়ে পড়া মেয়ে বলে অপমান করেছে।আর ইলমার জন্য আনা ফুলদানিটার জন্য আফসোস করছে।নিধি সহ্য করতে না পেরে চলে গেলো পালালো বলা চলে। ভিড় থেকে কেউ একজন নিঝুমকে বললো আপনার জান বাঁচাতে মেয়েটা নিজেকে বিপদে ফেলতে যাচ্ছিলো।কথাটা শুনে নিঝুমের হুঁশ ফিরলো সে এতক্ষণে পিছনে ফিরে তাকিয়ে নিধিকে খুজলো কিন্তু পেলোনা।সে হয়তো আর কখনো পাবেনা নিধিকে।তার হয়তো ক্ষমা চাওয়া আর পাওয়াটা কোনোদিনই হবেনা।

চলবে….

 

ফাগুণের নবধারা পর্ব-২

0

ফাগুণের নবধারা
পর্ব-২
-শাহাজাদী হুমাশা

ফাহিম কে অনেক্ষণ ধরে ফোন দিয়েও ব্যর্থ ইলমা।ফোন রিসিভ করছেনা।গত একসপ্তাহ ধরে কারো সাথে কোনো যোগাযোগ নেই ওদের। ইলমার কাছে ফাহিমদের ল্যান্ডফোনের নাম্বার আছে কিন্তু সে কল দিতে পারছেনা।ফাহিমের মাকে সে ভয় পায়।তিনি খুব সহজসরল হলেও অত্যন্ত রাগী। তার মতে তার ছেলে খুবই শান্তশিষ্ট তাকে ছাড়া সে কিছু বোঝেই না।কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকায়ও নি।এইসব ভাবতে ভাবতেই ইলমা হঠাৎ একটা ধাক্কা খেলো।চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে নিঝুম।এই ছেলেটাকে সে সহ্যই করতে পারেনা সারাক্ষণ তার পিছু পিছু ঘুরে তাই সে তার ভাবির বাসায় আসতে চায়না।কিন্তু তবুও আসে।ভাবিকে একা ছাড়তেও পারেনা।ভাই থাকলে হয়তো ও আসতো না।ভাইয়ের কথা মনে পড়লেই ইলমার মন খারাপ হয়ে যায়।নিঝুম ইলমার চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো-

কি হয়েছে?? মন খারাপ? আচ্ছা তুমি আমাকে দেখলেই ওমন পালাতে চাও কেনো?
– নিঝুমের প্রশ্নের উত্তরে ইলমা বললো-
আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা।বলেই সেখান থেকে চলে গেলো।

রোকসানা আজ ৭ মাস পর তার বাবার বাড়িতে এসেছে।আমিনা বেগম মেয়েকে কাছে পেয়ে তার খাতিরের কোনো ত্রুটি রাখছেন না।রোকসানার শাশুড়ি ও বেশ ভালো।আমিনা বেগম আর রোকসানার শাশুড়ি মায়মুনা ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছেন।আমিনা বেগম রোকসানার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন আর মায়মুনা বেগম চা পান করছেন।রোকসানার বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত তারা এখানেই থাকবেন।রোকসানার শাশুড়ি তার ছেলের ছোটবেলার কথা বলছিলেন সবাইকে আর তিনজনে হাসছিলেন।

রোকসানার স্বামী নাসির রহমান আবিদ।আর্মি অফিসার ছিলেন।রোকসানা যখন দুমাসের প্রেগন্যান্ট তখন মিশনের জন্য কল আসে তার আর মিশনে চলে যায় সে।কিন্তু জীবিত অবস্থায় আর ফিরতে পারেনি।তার লাশ এসেছিলো বাড়িতে।রোকসানা বেশ শক্ত সে তার স্বামীকে দুঃখ নিয়ে মনে করতে চায়না তাই হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে।গর্ভাবস্থার শেষ দিকে প্রায় সে।

আজ মিষ্টি রোদ উঠেছে মায়মুনার সাহায্য নিয়ে গোসল করার পর রোকসানা রোদ পোহাতে নিঝুমের সাথে ছাদে যায়।নিঝুম রোকসানাকে ছাদে রেখে নিচে নামে। রোকসানা ছাদের দোলনাটায় বসে।এ বাড়ির মালিক বেশ সৌখিন। তার প্রমাণ এ বাড়ির ছাদ দেশি বিদেশী গাছ,দিয়ে সাজিয়েছে মন ভালো করার মত পরিবেশ। হঠাৎ ছাদে কেউ একজন উঠে এলো।হাতে একটা সিগারেটের প্যাকেট। হয়তো বিদেশি সিগারেট। সে রোকসানা কে দেখতে পায়নি।কিছুক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে থেকে সিগারেট ধরালো এক টান দিয়েই পিছন ফিরে তাকালো প্রথম বার খেয়াল করেনি পরমুহূর্তেই তাকানোর সাথে সাথে চমকে উঠলো। রোকসানা মৃদু হেসে ফেললো। লোকটা রোকসানার দিকে এগিয়ে এসে বললো-

আপনি কিছু মনে করেননিতো?
-না ঠিকাছে আপনি আমাকে লক্ষ করেননি তাই হয়তো।
-হ্যা আসলে। আগেতো আপনাকে দেখিনি এখানে।তাই একটু চমকে গিয়েছিলাম।
– আমি বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছি।আর ২ সপ্তাহ বাকি তাই।
-একা ছাদে বসে আছেন যে আজতো শুক্রুবার আপনার হাজব্যান্ডের তো আপনার পাশে থাকা উচিৎ এখন।
– হি এক্সপায়ার্ড এইট মান্থ এগো।
রোকসানার কথা শুনে খুব মায়া নিয়ে তাকালো তার দিকে লোকটি।

– ওহ আই এম স্যরি মিসেস -?
-রোকসানা। রোকসানা রহমান।
-হ্যাঁ। মানে আমার নাম আবিদ।রেদওয়ানুল হোসেন আবিদ।

নামটা শুনেই রোকসানার বুকটা ধক করে উঠলো।সে আবিদ কে বললো -আমি নিচে যাবো। ভালো থাকবেন।আবিদ রোকসানাকে ধরে উঠালো। লিফটে উঠিয়ে দিয়ে তার সাথেই নিচে নামলো রোকসানাকে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে রেখে সে বিদায় নিয়ে নিচে নামলো।আর সে লক্ষ করলো রোকসানা যে ফ্ল্যাট এ যাচ্ছে সেটা নাভিদদের ফ্ল্যাট।

ইলমা অবশেষে অনেক কষ্টের পর ফাহিম কে কলে পেলো।ফাহিম উদাসীন ভাবে কথা বলায় রাগে ইলমা ওকে কতক্ষণ গালিগালাজ করলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে।নিঝুম পিছন থেকে এগুলো শুনছিলো।কল কাটার সাথে সাথেই সে ইলমার উদ্দেশ্যে বলল-
বেশিদিন টিকবেনা।
– কি?
– তুমি যাকে এত মিষ্টি বকা দিচ্ছিলে সে।
বিরক্তভরা চোখে ইলমা নিঝুমের দিকে তাকালো-
তাতে আপনার কি? লুকিয়ে কথা শুনতে লজ্জা করে না?
– এতজোরে বললে তা আর লুকানো কথা হয় নাকি?
যাইহোক এই নাও আচার।আপুর জন্য এনেছিলাম ভাবলাম তোমার জন্যও নিয়ে আসি।
– নো থ্যাংকস আমি আচার খাইনা।
– খাওনা খাবে।আর একটা সময় প্রায় সব মেয়েরাই খায় আচার।
নিঝুমের কথা শুনে রাগে,লজ্জায় ইলমার কান গরম হয়ে যায়।কতবড় অসভ্যের মত কথাটা বলে ফেললো লোকটা।ইলমা তখনি নিঝুমকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

পাশের বারান্দা থেকে নিধি সবই আড়চোখে খেয়াল করে।সে ভেবে পায়না সে কেনো কষ্টপায় নিঝুমকে মেয়েটার সাথে দেখলে আর নিঝুমেরইবা কি দরকার ওই মেয়েটার পিছনে ঘুরার!! রাগে নিধি তার শখের গোলাপের টব টা হালকা উঠিকে নিঝুমের বারান্দায় ছুড়ে মারতে গিয়ে থেমে যায়।দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যাওয়ার সময় ধাক্কা লাগে সুমুর সাথে

চলবে….

 

( ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)

ফাগুণের নবধারা। পর্ব-১

0

ফাগুণের নবধারা।

পর্ব-১

—শাহাজাদী হুমাশা।

ভোর রাত থেকে বৃষ্টি পড়ছে ঝিরি ঝিরি।গতকাল বিকেলেও ঝুম বৃষ্টি হয়েছে সন্ধ্যায় কমে আসার পর আর হয়নি।আমিনা বেগম ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়েই রান্না ঘরের দিকে গেলেন আমিনা বেগম।ভোর ৬ টা বাজে নাজমুল সাহেব ঘুম থেকে উঠলেন।নামাজ পড়ে নিয়েই তিনি ঘুমিয়েছিলেন।উঠেই শুনতে পেলেন রান্না ঘর থেকে ঘি এর ঘ্রাণ আসছে। আস্তে আস্তে রান্না ঘরের দিকে গেলেন তিনি।উকি দিয়ে দেখতে পেলেন আমিনা বেগম পরোটা ভাজছেন।স্ত্রীর সামনে গিয়ে মোরায় বসলেন।আমিনা বেগম জিজ্ঞেস করলেন- তোমাকে চা দিবো? স্ত্রীর কথায় নাজমুল সাহেব মাথা দুলালেন তার মানে হ্যাঁ।

আমিনা বেগম পাশের চুলায় পানি ভর্তি করে কেটলিটা বসিয়ে দিলেন।এই মুহূর্তে নাজমুল ল্যান্ডফোনে কল এলো।নাজমুল সাহেব উঠে কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে কথা এলো।কথা শেষ করে তিনি ফোনটা নামিয়ে রাখলেন।স্ত্রীর সামনে গিয়ে আবার বসলেন এবং বললেন-

-এর জন্যই আজ সকাল সকাল ঘি তে ভাজা পরোটস হচ্ছে।
আমিনা বেগম হালকা হেসে বললেন রুকু ফোন দিয়েছিলো তবে?
নাজমুল সাহেব হ্যাঁ বললেন।

নাভিদ বারান্দায় বসে পাশের বাসার বারান্দায় চেয়ে আছে।বৃষ্টির ছাট গুলো তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে এতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।হঠাৎ পাশের বারান্দায় আকাশী রঙের সালওয়ার কামিজ পড়া মেয়েকে দেখে নাভিদের ধ্যান ভাঙলো।নড়েচড়ে বসলো সে।কিন্তু তার কাঙ্ক্ষিত আশায় জল ঢেলে দিয়ে বারান্দার মেয়েটি হেসে উঠলো।
– কি নাভিদ ভাই! যার জন্য অপেক্ষা করছেন সে আসেনি বলে মনঃক্ষুণ্ণ হচ্ছেন??
– না মানে কারো অপেক্ষা করছিনা।তুমি কেমন আছো নিধি?
– হয়েছে আমার থেকে আর লুকাতে হবে না।আমি ভালো আছি।তবে যার অপেক্ষা করছেন তার জ্বর।বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেনা।
– ঠিকাছে ওর খেয়াল রেখো।
– আচ্ছা।
হঠাৎ বারান্দায় তাওয়াল পেঁচিয়ে নিঝুম এসে দাঁড়ালো ওকে দেখে নিধি উচ্চস্বরে হেসে দিলো।
– নাভিদ ভাই তোমার ভাইয়ের বুঝি কাপড় এর অভাব?
তাই তাওয়াল পড়েই বারান্দায় এসে পড়েছে?
অসম্ভব বিরক্তি নিয়ে নিঝুম নিধির দিকে তাকালো ওর ওই চেহারা দেখে নিধি আরো জোরে হেসে দিলো।নাভিদ কে উদ্দেশ্য করে বললো –
ভাইয়া তোকে মা ডাকছে রুকু আপুরা বাসায় আসবে আজকে।আর তুই আজকে অফিস যাবি না?
নাভিদ- না আজকে যাবোনা।শরীর ভালো লাগছেনা বাসায় বসেই কাজ করে ফেলবো।আমি যাচ্ছি আম্মার কাছে।
নাভিদ ওখান থেকে চলে গেলো।

নিঝুম নিধিকে হাসতে দেখে ভেংচি দিয়ে ওর মতো করেই হাসির অনুকরণ করলো যা দেখে নিধির পিত্তি জ্বলে যাবার উপক্রম। নিঝুমকে শাস্তি দিতে নিধি ভিতরে গিয়ে মগ ভর্তি পানি এনে নিঝুমের বারান্দার দিকে ছুড়ে মারলো।নিঝুম বেকুবের মত চেয়ে থেকে কিচ্ছুক্ষণ পর চলে গেলো।নিধিও ভিতরে চলে গেলো।
নিঝুম এর শোধ নিবেই।এর জন্য ফন্দি আটতে শুরু করলো।

জ্বরের ঘোরে সুমু কল্পনা করছে গতকাল বিকেলের ঘটনা।
ঝুম বৃষ্টির মাঝে নাভিদের হাত ধরে কুল্ফি খাচ্ছে আর বৃষ্টিতে ভিজছে।নাভিদ বারণ করলেও শুনছে না।একসময় নাভিদ জোর করে ওকে গাড়িতে এনে বসালো।শীতে কাঁপছে রীতিমতো।ওর ওড়নার এক কোণ চিপড়ে পানি নিংড়ে মাথা মুছে দিতে দিতে নাভিদ বললো-

-তুমি কি সারাজীবন বাচ্চাই থেকে যাবে সুমু?

কাঁপতে কাঁপতে সুমু বললো- শোনো আবার যেদিন ভিজবো সেদিন চা খেতে খেতে ভিজবো কেমন?
– আর এই উদ্ভট কাজ টা কোন কবি করতে বলেছে তোমায়?
– হুমায়ূন স্যার।হুমায়ূন আহমেদ স্যার বলেছে করতে।বৃষ্টির পানি টপ টপ করে চায়ে পড়বে আর আমরা সেই চায়ে হালকা করে চুমুক দিবো।দুটোর সংমিশ্রণ টা কেমন তা দেখবো।
– তুমি কি জানো সুমু তুমি যে পাগল?
– হ্যা জানি।এজন্যইতো তুমি আমায় ভালোবাসো।
– তাও ঠিক।
– বাড়ি চলো।
-হুম।

নাভিদ সুমুর সিটবেল্টটা পড়িয়ে দিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল্ট বাধলো।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসায় রওনা হলো।
বাসায় আসার পর থেকেই সুমুর জ্বর।রাতে খায়নি।আর নাভিদের টেক্সটের রিপ্লাই ও দিতে পারেনি।গতকালের কথা ভেবেই সুমুর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো।সুমুকে এভাবে হাসতে দেখে নিধি ভাবলো ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছে হয়তো।

নাভিদ ওর মায়ের কাছে যেতেই আমিনা বেগম বলে উঠলেন বাবা তোমার সুমু বিলাস হয়েছে? নাভিদ মাথা চুলকে মুচকি হাসলো।
– তা নাস্তা কিছু করতে হবে না পেট ভরে গেছে?
– আম্মা ক্ষুদা লাগছে।
– নাস্তা করে বাজারে যাও রুকু আসবে আজকে।
বলেই আমিনা বেগম চলে গেলেন। নিঝুম রুকু আসার কথা শুনে যতটা খুশি হয়েছে তার চেয়ে বেশি খুশি হচ্ছে রুকুর সাথে ইলমা আসবে বলে। ইলমা রোকসানার ননদ।নিঝুম ইলমাকে বেশ পছন্দ করে।তার মতে ইলমার মত মেয়েই হয়না।ওর মনে হয় গভীর শান্ত চোখে দুষ্টুমি খেলা করে ইলমার।তার চোখ দুটোই যেনো ওকে আকর্ষণ করে বেশি।
নাভিদের ডাকে ঘোর কাটে ওর দুভাই মিলে বাজারের জন্য রওনা হয়।

চলবে-

—-

খেলাঘর  পর্ব-৭

0

খেলাঘর  পর্ব-৭
লেখা-সুলতানা ইতি

ইহান এসে মিথিলার পাশের সোফায় বসলো
মিনিট খানেক পর অরনি ও আসলো

অরনি বসতে বসতে বল্লো
তো মিথিলা চল রান্না করবি আজ আমরা তোর হাতের রান্না ই খাবো

ইহান- হুম, আসলে আমি কি ভুলটা ই না করছিলাম,এমন একটা সুবর্ন সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক নয় তাই আমি রাজি
সবাই হই চই করে উঠলো

সাম্মি- আমি তোকে হেল্প করবো
মিথিলা- লাগবে না তোরা বসে আড্ডা দে,
তবে অরু তুই আসতে পারিস আমার সাথে,আমার চশমার পাওয়ার টা চেঞ্জ করতে হবে এটা দিয়ে সব ক্লিয়ার দেখি না,তুই আমাকে এই কাজে হেল্প করতে পারিস চাইলে

অরনি- ও. এম. জি.কিচেনে আমি যেতে পারবো না
ইহান- তোর তো কোন গুন ই নাই অরু
অরনি গাল ফুলিয়ে কিছু বলতে যাবে…

মিথিলা তাকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– ওকে সাম্মি তাইলে তুই আয়
সাম্মি- চল,,

মিথিলা আর সাম্মি কিচেনে চলে যায়

অরনি- ভয় লাগছে খুব

ইহান- আমার ও রে,,মিথিলা যদি আমায় রিজেক্ট করে তা হলে বেঁচে থাকতে খুব কষ্ট হবে,

রাহি- এতো অলক্ষনে কথা ভাবিস কেনো তোরা, সব সময় ভালো কিছু ভাববি,দেখবি ভালো হবে

অরনি- ঠিক বলেছিস রাহি

ইহান- ঠিক না রে কিচ্ছু ঠিক না,,তোরা ও জানিস আমি ও জানি মিথিলা আমাদের মতো নয় ওর জগৎ আমাদের থেকে আলাদা
অরনি- ভাবতে পারছি না কিছু,,,

মিথিলা ফ্রিজে কি আছে দেখার জন্য ফ্রিজ খুল্লো,তিন রকম মাংস ফ্রিজ থেকে নামিয়ে রাখলো

মিথিলা- এই সাম্মি দেখ তো এই বাটিতে এগুলা কি মুড়ি?

সাম্মি-তখন মাছ পরিস্কার করছিলো, মিথিলার পাশে এসে বল্লো,মিথি তোর চশমা টা সবার আগে চেঞ্জ করা উচিত,আন্টি ভাত রান্না করে ফ্রিজে রেখে গেছে যেন ইহান খেতে পারে,,

মিথিলা চশমা খুলে মুছতে মুছতে বল্লো ঠিক বলেছিস রে
বাসায় গিয়ে বাবা কে বলতে হবে

সাম্মি- আচ্ছা এতো গুলো জিনিশ বের করলি,,কি করবি বল

মিথিলা- ইহানের জন্য ফ্রাইড রাইস,অরনির জন্য চিকেন ফ্রাইড,রাহির জন্য,খাশির রেজালা,আর তোর জন্য কি রান্না করবো তুই বললি না সাম্মি

সাম্মি- আমি ওদের মতো লাঞ্চে এগুলা খাবো না,লাঞ্চে যা খেলে ভালো লাগে আমি তা ই খাবো,

মিথিলা- সেটা কি

সাম্মি- ভাত আর গরুর মাংস ভুনা

মিথিলা- ওকে তাহলে ঠিক আছে

সাম্মি- কিন্তু অন্যের বাড়িতে এসে এই সব রান্না করবি তুই,খুঁজে পাবি তো সব মশলা,

মিথিলা- একটু খুঁজলে ই পেয়ে যাবো, চল কাজে লেগে পড়ি

মিথিলা অনেক সময় নিয়ে সবার পছন্দ মতো রান্না করলো

সাম্মি- মিথি তুই তো ঘেমে গেছিস, অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে তোকে,সত্যি রান্না করতে ও অনেক কষ্ট হয়,আজ বুঝলাম

মিথিলা- হুম তুই ইহানদের বুয়াকে ডেকে বল এগুলা টেবিলে সাজিয়ে দিতে
এর মাঝে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
সাম্মি – ওকে
মিথিলা – ফ্রেশ হতে চলে গেলো

সাম্মি ইহানদের কাছে এসে বল্লো বাহ সবাই তো বেশ ঝমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে আর ও দিকে আমরা রান্না করতে করতে হয়রান

ইহান- মিথিলা কোথায়?
সাম্মি- ওয়াশ রুমে
ইহান- ওকে তোরা থাক আমি আসছি

সাম্মি আর অরনি হেসে বল্লো যা,ভালোবেসে মিথির মুখ টা মুছিয়ে দিস, হি হি হি হি

ইহান- বেশি কথা বলিস তোরা মিথিলা শুনবে এই নিয়ে আর কোন কথা নয়

ইহান নিজের রুমে গিয়ে একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াশ রুমের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো
মিথিলা ভালো করে মুখে পানি মেরে, ফ্রেশ হয়ে বেরুতে গিয়ে সামনে ইহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু ভয় ফেলো
– তুই

ইহান- হুম আমি,

মিথিলা- কথা না বলে এ ভাবে হুট করে এসে আলিফের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো

ইহান- এই নে তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছে নে
-মিথিলা ইহানের কাছে থেকে তোয়ালে নিয়ে বল্লো
-ধন্যবাদ,বুয়া এতোক্ষনে হয়তো টেবিলে খাবার দিয়ে দিয়েছে চল সবাইকে নিয়ে ডাইনিং এ আয়

পাঁচজন মিলেই খেতে বসলো
ইহান খেতে খেতে বল্লো
– আহ মিথি দারুণ রেঁধেছিস,, কি করে শিখলি এতো ভালো রান্না

অরনি- আমি তো জানতাম তুই বই পড়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারিস না,এখন তো দেখি তুই সব ই পারিস

ইহান-তোর মতো হলে কিছুই পারতো না বুঝলি অরু, তুই তো একটা ই জানিস শুধু সাজুগুজু এই ছাড়া আর কিছু পারবি না

অরু-ইহান্নন্নন্ন
রাহি-তোরা থামতো,সারা দিন তোদের এগুলা ভালো লাগে না
ইহান আর অরু চুপ হয়ে গেলো

মিথিলা- তোরা একটু বেশি বেশি বলছিস
সাম্মি- একদম ঠিক

রাহি- মিথি সত্যি তুই ভালো রান্না পারিস,আমি তো টাস্কিত

সাম্মি- আমি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস ই করতাম না

মিথিলা- আচ্ছা তোদের এই সব কথা শুনতে ভালো লাগছে না আমার

অরনি অবাক হয়ে বল্লো
– বলিস কি মিথি প্রশংসা শুনতে কে না চায়,সবারি ভালো লাগে প্রশংসা শুনতে

মিথিলা – কিন্তু আমার ভালো লাগে না

ইহান- এই জন্য ই তো তুই সবার থেকে আলাদা
এ ভাবেই গল্পগুজবের মাঝে খাবার শেষ করলো,,
সবাই গিয়ে আবার ড্রইং রুমে বসলো
মিথিলা অরনি রাহিরা কথা বলছে কিন্তু ইহানের সে দিকে মন নেই
ইহান বার বার ঘড়ি দেখিছে

মিথিলা- এই শুন অনেক্ষন তো থাকলাম এবার আমাকে যেতে হবে

ইহান- বললেই হলো,আরেকটু সময় তোকে থাকতেই হবে

মিথিলা- কেনো?

ইহান- এই যে আমরা সবাই মিলে কতো মজা করছি তাই

মিথিলা আর কিছু বল্লো না
ইহান উঠে গেলো সবার কাছে থেকে কিছুক্ষন পর অরনি ও চলে গেলো,,রাহি আর সাম্মি ও উঠে গেলো বাসায় ফোন করবে বলে

মিথিলা- ওরা সবাই আগে পরে করে কোথায় গেলো আমি এখন একা একা কি করবো
এমন সময় উপরের একটা ঘর থেকে অরনির কন্ঠ শুনা গেলো

অরনি- মিথিলা উপরে ইহানের রুমে চলে আয়,আমরা সবাই এখানেই আছি

মিথিলা ওদের আবার কি হলো এখান থেকে ইহানের রুমে গেলো কেনো,,যাই তার পর বুঝবো কি হচ্ছে সেখানে

মিথিলা ইহানে রুমে গিয়ে দরজা নক করলো,দেখলো দরজা খোলা কিন্তু রুম অন্ধকার

মিথিলা- অরু,সাম্মি,তোরা কোথায়,এই রুম টা এতো অন্ধকার কেনো

এমন সময় রুমে আলো জ্বলে উঠলো, একি সাথে সবাই বল্লো হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মিথিলা,হ্যাপী বার্থডে টু ইউ

মিথিলা অবাক হয়ে রুমের চারি দিয়ে তাকিয়ে দেখছে,, সারা রুম আলোয় ঝলমল করছে,,রুমের চার দেয়ালের মধ্যেই মিথিলার ছবি, আর ছবির পাশে লেখা বার্থডে কুইন

মিথিলা- তোরা এই সব কখন করলি

অরনি- করেছি,তুই তখন রান্না করতে ব্যাস্ত ছিলি,তা ছাড়া এটা আমাদের অনেক আগে থেকেই প্লান ছিলো,অবশ্য অনুষ্ঠান রাতে করতে ছেয়েছিলাম, কিন্তু তোকে রাতে আর রাখা যাবে না

মিথিলা- আজকে যে আমার বার্থডে এটা তো আমার ও মনে নেই তোদের মনে আছে কি করে

রাহি- তুই যে আমাদের সবার প্রিয়,আর তোর বার্থডে মনে রাখবো না

ইহান- চল মিথিলা কেক কাটবি

অরনি- মিথিলা আমার তরফ থেকে তোর জন্য,কিছু বই,,আমার মনে হয় এগুলা পড়লে তোর ভালো লাগবে,

মিথিলা খুশি হয়ে বল্লো
– বই? ধন্যবাদ দোস্ত

সাম্মি- এটা আমার পক্ষ থেকে সামান্য একটা জিনিষ

মিথিলা- কি আছে এতে কোন বই মনে হচ্ছে

সাম্মি- বই না একটা ডায়েরী

মিথিলা- ওহ ডায়েরী, ধন্যবাদ

রাহি- আমি কিন্তু আগে থেকে জানতাম না তাই কিছু আনতে পারেনি,আমার পক্ষ থেকে তোকে দোলনচাঁপার শুভেচ্ছা

মিথিলা- ওয়াও আমার প্রিয়ো ফুল

ইহান- আমি ভাবলাম আগে কেক কাটা হবে পরে এগুলা দেয়া হবে কিন্তু তোরা তো সব গুলিয়ে দিলি

মিথিলা- কিচ্ছু গুলিয়ে যায়নি ইহান, আমার খুব ভালো লেগেছে তোদের এই পাগলামি

ইহান- ওকে নো প্রব্লেম তা হলে, আমার তরফ থেকে বার্থডে কুইনের জন্য এই সামান্য উপহার

মিথিলা- কি আছে বাক্সে, খুলে দেখবো

ইহান- দেখতে পারিস

মিথিলা বক্স টা খুলে দেখলো একটা চশমা
– তুই কি করে জানলি আমার একটা চশমার প্রয়োজন

ইহান- কেনো তুই খুশি হসনি

মিথিলা- হুম দারুন, ভালো গিফট করেছিস তুই ধন্যবাদ ইহান

ইহান- আমার একটা কথা মিথি, ফ্রেন্ডস রা ছোট করে আমাকে ইহু বলে,তুই কেন ইহান বলিস

মিথিলা- সুন্দর নাম ইহান,এটা ছোট্ট করে অসুন্দর বানাতে চাই না তাই

ইহান- ওয়াও থ্যাংস ডিয়ার

,অরনি- অনেক হয়েছে এবার চল কেক কাটবি
মিথিলা কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিলো

অরনি- আজকের এই খুশিতে একটা গান হয়ে যাক মিথি, কি বলিস?

মিথিলা -আমি গান গাইতে পারবো না দোস্ত

সাম্মি-তোকে গাইতে হবে না, ইহু গাইবে

মিথিলা- কি বলছিস,এহানের ঐ ইংরেজি গান আমি শুনবোই না

ইহান- ওয়েট মিথিলা,কাল রাত জেগে তোর জন্য একটা বাংলা গান শিখেছি,সেটা ও শুনবি না

মিথিলা- তা হলে গাইতে
পারিস

অরনি- আমি গিয়ে গিটার নিয়ে আসছি , অরনি গিটার এনে ইহান কে দিতে গিয়ে ফিস ফিস করে বল্লো,দারুণ প্লান করেছিস,গানের অর্থ যদি মিথিলা বুঝতে পারে তা হলে ই হলো আর কি

ইহান- চুপ করে গিয়ে মিথিলার পাশে বস,

মিথিলা- এই অরনি তোরা কি ফিস ফিস করিছিস

অরনি- কিছু না,অরনি এসে মিথিলার পাশে বসলো
ইহান গিটারে সুর তুলে গান শুরু করলো
“”একটু কাছে আসো,
একটু ভালোবাসো
অনুভবে রাখো আমায়
চোখে চোখ রাখো
স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখো
ভালোবাসা দিবো তোমায়
এলো মেলো মেঘে বৃষ্টি হয়ে
ভিজিয়ে গেছো তুমি আমাকে
হৃদয়ের সব কথা ভাংগে নিরাবতা
মনে পড়ে শুধু তোমাকে

হোওওওওওও
যখনি প্রথম দেখেছি তোমাকে রুপেতে গেছি হারিয়ে
ওও মায়াবি স্বপনে নিরবে
গোপনে দিয়েছি দু হাত বাড়িয়ে
ছড়ালে এ বুকের শহরে
কি যাদু আমি বোঝাতে পারি না,কিছুতেই নিজেকে
এলো মেলো মেঘে বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে গেছো তুমি আমাকে
হৃদয়ের সব কথা ভাংগে নিরাবতা মনে পড়ে শুধু তোমাকে

কতো যে আপন ভেবেছি তোমাকে
বলবো বলো কি করে
ওওও মনেরি গহিনে রেখেছি যতনে সারাটা প্রহর ধরে
ঝড়ালে এ আমায় বলো না
কি সুখে জানোকি তোমারি জ্বলেতে ভিজে কে
এলো মেলো মেঘে বৃষ্টি হয়ে
ভিজিয়ে গেছো তুমি আমাজে
হৃদয়ের সব কথা ভাংগে নিরাবতা মনে পড়ে শুধু তোমাকে,,,,

ইহানের গান শুনে সবাই খুশি হলে ও মিথিলা খুশি হতে পারেনি

ইহান- মিথি গান ভালো হয়নি

মিথিলা -আমি বাড়ি যাবো

অরনি ইহান কে ইশারা করলো, ইহান তার প্যান্টের পকেট থেকে একটা আংটি বের করে মিথিলার সামনে
হাটু মুড়ে বসে বল্লো,
– মিথি উইল ইউ মেরী মি

মিথিলা স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,তার চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে

অরনি ভাংগা গলায় বল্লো
– মিথি কিছু বল

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-৬

0
খেলাঘর পর্ব-৬
খেলাঘর পর্ব-৬

খেলাঘর পর্ব-৬
লেখা-সুলতানা ইতি

সবাই বসার ঘরে ফিরে এলো
মিথিলা নাস্তা নিয়ে এলো সবার জন্য
ইহান খেতে খেতে বল্লো
– কে বানিয়েছে পিঠা গুলো, অনেক মজার আজ কাল তো এমন ঘরোয়া নাস্তা পাওয়া ই যায় না

মিথিলা- মা বানিয়েছে

ইহান- জানতাম আন্টি ছাড়া আর কে বানাবে,তুই কি জীবনে এসব পারবি

রাহি- এমন বলিস না ইহান,আমাদের মিথিলার ও অনেক গুন আছে,সে সব শ্বশুড় বাড়ির লোকেদের জন্য তুলে রেখেছে,ঠিক বলেছি না মিথিলা

– জানি না তুই ভালো বলতে পারবি,বল্লো মিথিলা অনেকটা কঠিন স্বরে

অরনি- মিথিলা তুই যে ঠোটে বইয়ের মতো এতো সুন্দর সাহিত্য পড়িস,সে ঠোঁটে কঠিন কথা গুলো উচ্চারন করিস কি করে?

মিথিলা – চলে আসে,মন না চাইলে ও আসে,আচ্ছা বাদ দে এই সব

ইহান-আমি একটা কথা বলতে চাই

সাম্মি- আবার অনুমতি নিচ্ছিস কেনো, বল

ইহান- ঐ চুপ কর তুই,, আমি বাড়ি ওয়ালির অনুমতি চাইছি

সাম্মি হেসে বল্লো
– অহহহহহ

মিথিলা- এতো ঢং তোরা কই থেকে আমদানি করিস বলতো,যাই হোক কি বলবি বল ইহান

ইহান- কাল আমার বাসায় কেউ থাকবে না, আম্মু, আব্বু, আপু, সবাই চট্রগ্রাম যাচ্ছে, আমি বাসায় আমাদের পাচ ছয় জন বন্ধু নিয়ে একটা পার্টি দিবো ভাবছি। কেউ থাকবে না আমরা আমরা ই,,,তোকে আসতে হবে কিন্তু মিথি কোন এক্সকিউজ শুনবো না

অরনি খুশি হয়ে বল্লো পার্টি,আমাকে আগে বলিসনি কেনো

রাহি- অরু আগে তো বলেই নি এখন ও আমাদের দাওয়াত করেনি,মিথিলাকে একা করেছে আমাদের কারো নাম বলেনি

ইহান- এই তোরা চুপ করবি, বলেছি না পাঁচ ছয়জন,তাদের মধ্যে তো তোরা ও পড়িস. তাই না,তোদের কে না বললে ও তোরা আসবি
আর যে আসবে না তাকে বলতে এসছি বুঝলি

রাহি কিছু বলতে যাবে তার আগে মিথিলা বল্লো
– কিন্তু আমি যেতে পারবো না,, বাসা খালি দেখছিস না

ইহান – জানতাম তুই এই কথা বলবি তাই তো তোর জন্য দারাওয়ান এনেছি

মিথিলা – মানে

ইহান- মানে সি সি ক্যামেরা, যাওয়ার সময় দরজার আড়ালে রেখে যাবি, এর মাঝে যদি চোর আসে এই ক্যামেরা তে তার ছবি উঠবে, ছবি দেখে চোর ধরতে সুবিধা হবে

মিথিলা- পাগল নাকি তুই,

অরনি- আরেহ মিথি বুঝিস না কেনো,, দুষ্টুটা অলওয়েজ দুষ্টু বুদ্ধি নিয়ে ই থাকে,

মিথিলা- দোস্ত প্লিজ ঝোর করিস না আমি সত্যি যেতে পারবো না

সাম্মি- বুঝেছি তুই সাইমুম সিরিজের বইগুলোর জন্য যাচ্ছিস না তাই তো,দেখ একদিন না পড়লে কিচ্ছু হবে না,,, প্লিজ প্লিজ

ইহান- দোস্ত আজকের পরে আরর কোখনো তোর কাছে কিচ্ছু চাইবো না প্লিজ রাজি হয়ে যা

মিথিলা হেসে বল্লো
– ঠিক আছে যাবো তোরা সবাই পাগল
তার পর আর ও কিছুক্ষন সবাই আড্ডা দিয়ে
সবাই চলে গেলো
মিথিলা আবার বই নিয়ে বসলো

পরদিন সকালে অরনির ফোন আসে
মিথিলা অরনি কেনো ফোন করেছে এতো সকালে
তার পর রিসিভ করে বল্লো
– অরু কিছু বলবি

অরনি- বলবো তো অনেক কিছু,সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি গাড়ি নিয়ে তাড়া তাড়ি আয়

মিথিলা- ও তাই,আমি তো এখনে রেডি হইনি, তুই বাসায় আয়,,আমার তো রেডি হতে দেরি হবে

অরনি- আমি জানি মটে ই তোর দেরি হবে না,সো আমি গাড়িতেই আছি

মিথিলা কল অফ করে দেয়
তাড়া তাড়ি চুল গুলো ঠিক করে ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে যাচ্ছিলো দরজার সামনে গিয়ে মনে হলো ওহ নো এই জন্য ই তো সব ক্লিয়ার দেখছি না চশমা টা রেখে এসছি রুমে, মিথিলা চশমা চোখে দিয়ে বেরিয়ে পড়লো গাড়ির কাছে এসে বল্লো, তোকে নিশ্চই অনেক্ষন অপেক্ষা করতে হয়েছে

অরনি- একদম না,তুই তো আর আমাদের মতো ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে সাজিস না, আমাদের তুলনায় অনেক কম সময় লেগেছে

মিথিলা গাড়িতে উঠে বসলো,,,ইহানদের বাসায় এসে মিথিলা অবাক পুরো বাসা ডেকোরেশন করা,, কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না মিথিলা

মিথিলা – এই অরু ইহানদের বাসায় কি কোন অনুষ্ঠান আছে বল, বাড়ির পরিবেশ অন্যরকম মনে হচ্ছে

অরনি- চল, বিতরে যাই,, তার পর বুঝবো কি হচ্ছে

ইহানদের ডুপ্লেক্স বাড়ি সারা বাড়ি সাজানো কিন্তু কোন মেহমান নেই যে কয়জন আছে বাড়ির পরিচারিকা,

মিথিলা বাসার গেটে এসে দাড়াতেই রাহি এসে বল্লো
মহারানী আপনি এক মিনিট দাড়ান, এখানে

সাম্মি এসে বাড়ির ঘেট পর্যন্ত ফুলের পাপড়ি চড়িয়ে দিলো

রাহি- মহারানী এবার আপনি আসুন ফুলের পাপড়ির উপর দিয়ে হেটে আসুন।কথা বলছে আর মুচকি মুচকি হাসছে

মিথিলা অবাক হচ্ছে খুব
– কি হচ্ছে আমাকে একটু বলবি তোরা

সাম্মি – কিছু না আয়

অরনি- কি হলো মিথি চল যাই
মিথিলা আর কিছু না বলে হাটতে শুরু করলো
ইহানদের ড্রইং রুমে এসে মিথিলা আবার শকড খেলে

উপরে উঠার শিড়ির শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে আছে ইহান হাতে ফুলের বকি নিয়ে

মিথিলা বিতরে আসতে ইহান এগিয়ে গিয়ে মিথিলার হাতে ফুলের বকি টা দিলো

মিথিলা ফুলের বকি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ইহানের দিকে

মিথিলা- ইহান কি হচ্ছে আমাকে একটু বলবি,

ইহান- তেমন কিছুই না মাই ডিয়ার চশমিস তুমি তো আজ এই অধমের বাসায় নতুন তাই তোমাকে বরন করে নিলাম

মিথিলার কেনো জানি কথা গুলো বিশ্বাস হলো না
অরনি- চল সবাই বসি

ইহান- তোরা গিয়ে আড্ডা দে আমি একটু কাজ সেরে আসি
মিথিলারা সবাই গিয়ে নিচতলাতে ড্রইং রুমে বসলো

অরনি- মিথিলা তুই এমন উসখুস করছিস কেনো,তুই কি আমাদের মাঝে কম্ফোট ফিল করছিস না

মিথিলা- আসলে তা নয়, কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না

অরনি- ইহু তো বল্লো তোকে সব
মিথিলা- হুম

ইহান এসে বল্লো
– এই পেটুক রাহি, সাম্মি, অরনি, তোরা কি খাবি আজ লাঞ্চে কি রান্না করতে বলবো

অরনি কৃত্তিম রাগ দেখিয়ে বল্লো
– কি আমরা পেটুক,আর মিথিলা কি বল,

মিথিলা- আমি তোদের মাঝে আছি তো অতয়েব আমাকে ও বলেছে

রাহি- না মিথি আমাদের বলেছে,কারন ও আমাদের নাম মেনশন করে বলেছে তোর নামের ধারে কাছে ও আনেনি

মিথিলা আর কিছু বল্লো না আজ কেনো ইহান কে নতুন মনে হচ্ছে,কেন ইহান আমার সাথে এমন উদ্ভট আচরন করছে

মিথিলার ভাবনা ভেঙে গেলো ইহানের কথায়
ইহান- ডার্লিং তুমি কি খাবে বলো

মিথিলা ইহানের মুখে ডার্লিং আর তুমি শব্দ শুনে একটু বিব্রতবোধ করলো
ইতস্তত হয়েই বল্লো
– তোদের যদি কোন আপত্তি না থাকে তা হলে আমি আজকের রান্না টা করবো

অরনিরা সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠলো
ওয়াও আজ তা হলে আমাদের মিথিলার রান্না খাবো আমরা

ইহান সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– মিথি আজ কিছুতেই কিচেনে যাবে না, ও যেতে চাইলে ও আমি যেতে দিবো না

মিথিলা কৌতূহল নিয়ে তাকালো ইহানের দিকে
মিথিলা- আজকের দিনে মানে, আজ কি আছে?

অরনি- এই তোরা কথা বল আমি একটু আসছি
অরনি আড়ালে গিয়ে ইহান কে মেসেজ দিলো

ইহান তখন কথায় ব্যাস্ত মেসেজ সিন করে ইহান বল্লো মিথিলা আমি একটু আসছি,

ইহান পাশের রুমে অরনির কাছে গিয়ে বল্লো
– কিরে আসতে বললি কেনো

অরনি ফিস ফিস করে বল্ল
– তুই কি রে, তুই কি আমাদের সব প্লান ব্যাস্তে দিবি নাকি

ইহান- আমি আবার কি করলাম

অরনি- কি করিসনি বল,কি কথা ছিলো মিথিলা কে কোন কিছু বুঝতে দেয়া যাবে না
আর তুই যা করছিস তাতে মিথিলা খুব শিগ্রই তোর সব কাজ ধরে ফেলবে,এমনিতে মিথিলা ওকে ঘিরে এতো আয়োজন করাতে সন্দেহ করছে

ইহান- তাই বলে….

অরনি ইহান কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
-আসতে কথা বল

ইহান এবার ফিস ফিস করে বল্লো
– তাই বলে আমি মিথিলাকে রান্না করতে দিতে পারবো না

অরনি- মিথি সন্দেহ করেছে আমাদের, এখন তুই যদি ওর কথা মেনে না নিস তা হলে মিথির সন্দেহ মজবুত হবে আর দেখবি একটা সময় মিথিলা হুট করে চলে যাবে
তখন এতো কষ্ট করে ওকে ম্যানেজ করে এনে লাভের ছেয়ে ক্ষতি বেশি হবে

ইহান- তাই তো আমি অতো কিছু ভাবিনি, থ্যাংক ইউ মাই ডিয়ার

অরনি- পাম্প দিতে হবে না,চল ওদের কাছে যাই, তুই আগে যা আমি পরে আসছি

ইহান- এক সাথে গেলে কি হবে

অরনি- বুদ্ধু, প্রেমে পড়ে তোর সব গেছে,আমরা এলাম আলাদা, আর এক সাথে বের হলে সন্দেহ হবে না,মিথিলা অনেক খুত খুতে টাইপের

ইহান – ঠিক আছে আমি যাচ্ছি আগে, তুই পরে আসিস

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-৫

0
খেলাঘর পর্ব-৫
খেলাঘর পর্ব-৫

.খেলাঘর পর্ব-৫
লেখা-সুলতানা ইতি

ছবিটা আমি শুট করবো,আমি কিন্তু আপনাদের দলের নই
ইহান- ওকে তবে তাই হোক

নির্ঝরিণী উঠে ক্যামেরা হাতে নিলো,গ্রুপ পিক নেয়া শেষ হলে
ইহান অনুরোধ করে সবার একটা করে সিংগেল ছবি তুলতে

এতে কারো আপত্তি না থাকলে মিথিলা আপত্তি করে বসে, কিছুতেই সিংগেল ছবিতে রাজি হয়নি মিথিলা

মিথিলার কথা শুনে ইহানের মন খারাপ হয়ে যায় তবু ও না মেনে কোন উপায় নেই

নির্ঝরিণী -আপু চল বাসায় যাই,
মিথিলা- হুম চল

নির্ঝরিণী – তুমি যাও আপু আমি সবার কাছে থেকে বলে আসি,

মিথিলা- না বললে কি হবে

নির্ঝরিণী – আমি তোমাদের মাঝে ক্ষনিকের অতিথি, আর হয়তো তোমার বন্ধুদের সাথে আমার দেখা হবে না তাই আর কি

মিথিলা- সব জায়গা পাকনামি না করলে হয় না তোর,ঠিক আছে যা আমি গেটে অপেক্ষা করছি

নির্ঝরিণী সবার কাছে বলে ইহানের কাছে এসে সবার অলক্ষে তার হাতে একটুকরো কাগজ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো

ইহান অবাক হলো এই বাচ্ছা মেয়ে সবাইকে লুকিয়ে আমাকে এই কাগজ টা দিলো কেনো, আচ্ছা এতে প্রেম পত্র নেই, কথা টা মনে হতেই ইহানের চোখ বড় হয়ে গেলো

অরনি- ইহান চোখ বড় করে কি দেখছিস

ইহান- কিছু না চল যাই
ইহান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো তখনি নির্ঝরিণীর দেয়া কাগজটার কথা মনে হলো,, এই পিচ্ছি মেয়ে প্রেম পত্র দিয়েছে আমাকে, কি লিখা আছে তাতে, দূর এক বোনের জন্য পাগল আমি আরেক বোন এসে প্রেম পত্র দিচ্ছে ব্যাপার টা কেমন হয়ে গেলো না,
একটুক্ষন ভেবে ইহান নিজেই নিজের মাথায় টোকা দিয়ে বল্লো দূর কাগজ টা না পড়ে এতো কিছু মন্তব্য করা ঠিক হচ্ছে না,আসলেই আমি একটু বেশি বেশি ভাবি,, যতো চাই ভাবনাকে বাধতে,ভাবনা বাধা ই পড়ে না,,লাগাম হীন ভাবে ভেবে চলছে

ইহান ভাবনাকে আর এগুতে না দিয়ে চট করে উঠে শার্টের পকেট থেকে চিরকুট টা হাতে নিলো,চোখের সামনে মেলে ধরলো চিরকুট

‘ভাইয়া আপনি আপুর একটা ছবি নিতে ছেয়ে ছিলেন, আপু রাজি হয়নি,কিন্তু আমি আপনাদের দুজনের অনুমতি না নিয়ে, যখন আপনারা কথা বলতে ব্যাস্ত তখন একটা ছবি নিয়ে নিই.রিলে খুঁজলে পাবেন
অনুমিত না নেয়ার জন্য ক্ষমা করবেন,,

চিরকুট টা পড়ে ইহান এক লাফে ক্যামেরা হাতে নিলো,সব গুলো পিক দেখছে, একটা পিকে এসে চোখ আটকে যায়,হা পিক টা মিথিলার আর ইহানের,,

মিথিলা বরাবরই চোখ নামিয়ে কথা বলে আজ ও তাই বলছিলো,আর ইহান মিথিলার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে এমব অবস্থায় ছবি টা তুলেছে নির্ঝরিণী,

ইহান- মনে মনে কয়েকশ ধন্যবাদ জানালো নির্ঝরিণী কে, না চাইতে প্রিয়ো মানুষটার ছবি পেয়ে যাবে নিজের সাথে, তা ভাবতেই পারেনি ইহান

আচ্ছা আমি মনে মনে ধন্যবাদ দিচ্ছি কেনো, আমি তো ফোন করতে পারি নির্ঝরিণীর কাছে আচ্ছা ফোন করলে যদি মিথিলার মা রিসিভ করে ফোন তা হলে কি বলবো, মিথিলার সাথে কথা বলবো, নাকি নির্ঝরিণীর কথা বলবো,

কিন্তু নির্ঝরিণীর কথা বলা ঠিক হবে না,দূর এতো ভাবছি কেনো কল দিয়ে ই দেখি কি হয়

মিথিলা স্কুল থেকে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে পড়তে বসলো,আজ সারাদিন একটু ও পড়তে পারিনি, কি যে হবে পরিক্ষার দিন

নির্ঝরিণী মোবাইল নিয়ে গেম খেলছে
আয়ান তার পাশে বসে আছে
আয়ান- এই নির্ঝর বলনারে আজ সারা দিন কি কি করলি তোরা

নির্ঝরিণী – আমি কিছু করিনি যা করেছে সব আপু করেছে,কি করেছে সেটা শুনলে তুই অবাক হয়ে যাবি

আয়ান ও উৎসাহের সাথে জানতে চাইলো
– কি করেছে আপু।

নির্ঝরিণী – জানিস আপু গান গেয়েছে

আয়ান- বলিস কি,তার পর স্বাভাবিক হয়ে বল্লো
যাহ ঢপ মারছি গান গাইবে ঐ গ্রন্থকীট, এটা আমি বিশ্বাস করবো

নির্ঝরিণী – আরেহ সত্যি বলছি, তুই বিশ্বাস না করলে কি করি বলতো,এমন সময় মোবাইল বেজে উঠলো

আয়ান- কে কল করেছে দেখি

নির্ঝরিণী – তোর দেখে কাজ নেই নাম্বার টা আমার পরিচিত যাহ এখান থেকে

আয়ান- এই নির্ঝর তুই প্রেম করছিস না তো,

নির্ঝরিণী – থাপ্পড় টা কি এখন খাবি না পরে দিবো

আয়ান- আমি তোর বড় সম্মান দিয়ে কথা বল

নির্ঝরিণী – এহ আসছে বলদ দেড় বছরের বড় আপনি তেমন বেশি নয়

আয়ান- এখন কল রিসিব কর পরে ঝগড়া করিস

নির্ঝরী কল রিসিভ করে বল্লো
– ভাইয়া আপু কে দিবো ফোন টা

ইহান- না তোমাকে একটা কথা বলবো

নির্ঝরিণী – আমাকে,বলুন কি বলবেন

ইহান- থ্যাংক ইউ সো মাচ

নির্ঝরিণী – বুঝলাম কিন্তু এই কথা টা যেন আপু কোন দিন না জানতে পারে, তা হলে আমাকে দু টুকরো করে নদিতে ভাসিয়ে দিবে।

ইহান- জানবে না এখন দাও তো মোবাইল টা তোমার আপুকে

নির্ঝরিণী – আপু পড়ছে দাড়ান দিচ্ছি

নির্ঝরিণী মোবাইল নিয়ে স্টাডি রুমে গেলো
– আপু তোমার ফোন

মিথিলা বই থেকে মুখ না তুলেই বল্লো,কে ফোন করেছে

নির্ঝরিণী – ইহান ভাইয়া

মিথিলা কিছু না বলেই মোবাইল হাতে নিলো
– কিছু বলবি ইহান

ইহান-স্যরি তোকে ডিস্টার্ব করার জন্য

মিথিলা- এতো ফর্মালিটি না দেখিয়ে বল কি বলবি

ইহান- বলছি তুই পরিক্ষার কেন্দ্রে যাবি কি করে

মিথিলা- কি করে আবার গাড়ি দিয়ে যাবো,পাব্লিক বাস গুলো আছে কিসের জন্য

ইহান- বলছি মিথিলা পাব্লিক বাসে গেলো অনেক প্রব্লেম সিট পাওয়া যায় না,তার পর সময় মতো বাস পাওয়া যায় না……

ইহানের কথার মাঝখানে মিথিলা থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– তুই কি বলতে চাস

ইহান- তেমন কিছুই না বলছি আমার সাথে রোজ ই গাড়ি যাবে এন্ড সিট খালি থাকবে, আমি কি তোকে লিফট দিতে পারি?

মিথিলা- না পারিস না,এই নিয়ে তোর সাথে একটা কথাও বলতে চাই না. বাই

মিথিলা ইহানের মুখের উপর লাইন কেটে দেয়
নির্ঝরিণীর দিকে তাকিয়ে মিথিলা বল্লো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি শুনছিস মোবাইল নিয়ে চলে যা

নির্ঝরিণী কিছু না বলেই চলে গেলো
মিথিলা আবার বইয়ে মুখ গুজে দিলো পরিক্ষার না শেষ হওয়া পর্যন্ত অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সময় তার নেই

পরিক্ষার দিন সকাল বেলা মিথিলার বাসার সামনে দুটো গাড়ি অপেক্ষা করছে, প্রথম টা ইহানের দ্বিতীয় টা ওর বাবার বাড়া করা সি এন জি

মিথিলা বইয়ের দিকে তাকাতে তাকাতে বাসা থেকে বের হলো, গাড়িতে উঠতে গিয়ে মিথিলা শকড খেলো,এতো দামি কার , তার বাবা ঠিক করেনি তা হলে

এমন সময় গাড়ির গ্লাস নেমে গেলো
অরনি জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বল্লো
– তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম মিথিলা চলে আয়

মিথিলা -অরু তুই? তোর তো এখানে আসার কথা ছিলো না

অরণি – সব কথা কি তোকে আগে থেকেই বলে রাখতে হবে

মিথিলা- ওকে তোরা যা আমি সি এন জি তে করেই আসছি তোদের পিছনেই থাকবো

অরণী – মিথিলা সি এন জি কে আমরা বিদায় দিয়ে দিয়েছি,ও এখন পাশের বাসার বাড়ার জন্য অপেক্ষা করছে, দাঁড়িয়ে থাকলে দেরি হয়ে যাবে

মিথিলা আর কথা না বাড়িয়ে উঠে বসলো,আট সিটের বিশার মাইক্রোবাস,সবাই আছে সাম্মি রাহি নতুন কয়েকজন আছে যারা শুধু ক্লাসমেট

রাহি- মিথিলা তুই আমাদের সাথে মিশতে চাস না কেনো

মিথিলা- চাই না কে বল্লো

সাম্মি- অনেক বলে কয়ে তোকে রাজি করাতে হয় কেনো,আমাদের কে তুই বেষ্ট ফ্রেন্ড ভাবতে পারিস না

মিথিলা- রাহি, সাম্মি রাতে কি পড়েছিস একবার করে দেখে এক্সাম হলে কাজে দিবে

অরনি- ঠিক বলেছিস মিথি, গাড়ি চলতে শুরু করলো

মিথিলা এ কি গাড়ি উলটো দিকে যাচ্ছে কেনো

অরনি- ইহান উঠবে, ইহান কে নিতে হবে না

মিথিলা- তার মানে এই গাড়ি ইহানের,

অরনি- না ইহানের না এটা বাবা কিনেছে আমার জন্য বাবা অবশ্য একটা জিপ কিনতে চেয়েছিলো
আমি নিষেধ করি জিপে তো তোদের সবাইকে নিয়ে বসতে পারবো না তাই, আমি প্লান করি সবাই এক সাথে যাওয়ার

মিথিলা- তা আসার পথে ইহান কে না এনে এখন উলটো পথে ইহান কে নিচ্ছিস কেনো

অরনি- এমনি( ইহান কে যে তুই এভয়েট করিস সেটা আমরা ভালো করেই বুঝতে ফেরেছি তাই আগে ইহান কে নিই নি) মনে মনে বল্লো

মিথিলা আর কিছু বল্লো না,,ইহান দের বাসার সামনে ইহান দাঁড়িয়ে আছে

ইহান গাড়িতে উঠে বসলো মিথিলার পাশের সিটে মিথিলা খেয়ালই করেনি তার পাশের সিটের দিকে ইহান বসতেই খেয়াল করলো,,পরে আফসোস করলো এই ভেবে যে যা এড়িয়ে চলতে চাই তা ই কেনো পিছু ছাড়ছে না আমার

ইহান- অরু পরিক্ষার ‘ হলে’ কি ছেলে মেয়ে এক সাথে বসবে নাকি

অরনি কিছু বলার আগে রাহি বল্লো
– কেনো মেয়ে পটানোর ধান্দা করছিস নাকি

ইহান- করলে ও করতে পারি

অরনি- তুই সেটা করবি না আমি জানি,,মজার ব্যাপার কি জানিস,তুই মিথিলা রাহি অর্চনা তোরা তিন জন ই পাশা পাশি,তার পর মাঝখানে এলো যাদের জীবনে ক্লাসে দেখিনি তারা,তাদের পাঁচজনের পরে আমি

ইহান- ওয়াও( এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি)

অরনি- তুই তো খুশি হবি

ইহান- অরু মেরা দোস্ত মন খারাপ করিস না

অরনি- রাখ তোর ফাজলাম

পুরো সময় মিথিলা কোন কথা বলেনি পরিক্ষার হলে ডুকে ও বলেনি
ইহান- দোস্ত মিথি হ্যাল্প করিস রে তুই তো আবার সব জান্তা হি হি হিহি

এভাবেই পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ততার মাঝে পরিক্ষা শেষ হলো
কিন্তু মিথিলার পড়া কখনো ই শেষ হবে না সে এখন গল্প উপন্যাসের বই নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছে

আজ বাসায় কেউ নেই মা বাবা আয়ান নির্ঝরিণী সবাই গ্রামে নানু বাড়ি গেছে মিথিলাকে ও নিতে ছেয়েছিলো তারা কিন্তু মিথিলা যায়নি,
মিথিলা এখন সাইমুম সিরিজের বই গুলো নিয়ে খুব ব্যাস্ত রাত নেই দিন নেই সারা দিন বসে থাকে বই গুলোর সামনে

আজ ও খালি বাসা ডিস্টার্ব করার মতো কেউ নেই,মিথিলা বই সামনে নিয়ে বসে পড়লো
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো

মিথিলা- এখন তো কেউ আসার কথা নয় তা হলে কে আসবে
অনেকটা বিরক্ত হয়েই মিথিলা দরজা খুলতে গেলো
দরজা খুলে মিথিলা লাফিয়ে উঠলো
কারন
চারজনের এক স্বরে কথা শুনে
– সারপ্রাইজ মিথি চলে এলাম

মিথিলা হঠ্যাৎ ওদের কে দেখে ভয় পেয়ে গেছিলো,

ইহান- কিরে এমন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো

মিথিলা নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– তোরা সবাই আসবি, ফোন করিস নি কেনো

অরনি- করেছিলাম তো আয়ানের সাথে কথা বলে এসেছি,জানতে পারলাম সবাই বেড়াতে গেলে ও তুই যাস নি তাই তোকে সংগ দিতে চলে এলাম

ইহান- তা ছাড়া বলে আসলে.তোর পাঁচের মতো হয়ে যাওয়া মুখটা তো দেখতে পারতাম না
কি বলিস তোরা

সবাই এক স্বরে বল্লো
হুম তাই

রাহি- এখন কি দরজায় দাড় করিয়ে রাখবি নাকি

মিথিলা- ওহ তাই তো আয় বস

ইহান এই প্রথম মিথিলাদের বাসায় এসেছে তাই সে না বসে বল্লো কিছু মনে করিস না মিথি
আমি কি তোদের বাসাটা একটু দেখতে পারি

মিথিলা ভ্রুকুঞ্চিত করে বল্লো
– কেনো

অরনি- মিথি আমার মনে হয় ইহান তোদের বাসা দেখতে চায় না,ও দেখতে চায় তোর স্টাডি রুম
কি ঠিক বলেনি ইহু

ইহান- হুম তাই

মিথিলা- ঠিক আছে তোরা সবাই আয়
সবাই মিলে চল্লো স্টাডি রুমের দিকে

স্টাডি রুম টা মোটামুটি সাইজের বড় চারি দিকে বইয়ের তাক,আর হরেক রকম বই দিয়ে সাজানো,
ইহান একটা জায়গাতে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে, তার পর ফিরে এলো ব্যাপার টা মিথিলার চোখ এড়ালো না,প্রশ্ন এলো মিথিলার মনে ইহান কি রেখেছে সেখানে

ইহান- চল এবার বেরুই

মিথিলা- বেরুবি মানে যাহ গিয়ে ড্রইংরুমে বস আমি আসছি

ইহান- আরেহ বেরুবো মানে স্টাডি রুম থেকে বেরুবো, তোদের বাড়ি থেকে নয়

মিথিলা – ওহ আচ্ছা
সবাই আবার বসার ঘরে ফিরে এলো

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-৪

0
খেলাঘর পর্ব-৪
খেলাঘর পর্ব-৪

খেলাঘর পর্ব-৪
লেখা-সুলতানা ইতি

অরনি আর কিছু বল্লো না
ইহান ছাড়া বাকিরা সব বেরিয়ে গেছে
মিথিলা ইহানের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন, তোর ও তো রাগ করে চলে যাওয়ার কথা

ইহান শান্ত কন্ঠে বল্লো
– সবাই কি এক রকম,কেউ কেউ তো বন্ধুর সাথে অভিমান করে থাকতে পারে ,আর কেউ পারে না,ধরে নে আমি সেই না পারার দলেরই একজন

মিথিলা- ওহ আচ্ছা,
ইহান- একটা কথা বলবো

মিথিলা -জানতাম তুই প্রশ্ন করার জন্য ই রয়ে গেছিস কি বলবি হল

ইহান অনেক টা ইতস্তত ভাবেই জিজ্ঞাস করলো
– তুই কি আমার সামনে শাড়ি পরতে চাস না

মিথিলা ভ্রুকুচকে তাকালো ইহানের দিকে,তার পর স্বাভাবিক হয়ে বল্লো
– তোর এমন মনে হওয়ার কারন কি

ইহান- না এমনি মনে হলো
মিথিলা- তোর ধারনা ভুল আমি এমনি শাড়ি পরতে চাই না

ইহান আর কিছু বল্লো না
নির্বাক দৃষ্টিতে ছেয়ে আছে মিথিলার দিকে
ভাবছে মনে মনে
– এই মেয়ে এমন কেনো, কোন কিছুতেই ওর আগ্রহ নেই,মেয়েরা এমন হতে পারে? সাধারণত মেয়েরা শাড়ি পরা সাজগোজ নিয়ে বেশি এক্সাইটেড থাকে, আর এতো পুরো ভিন্ন

মিথিলা- দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেবে লাভ নেই ইহান,আমি শাড়ি পরবো না

ভাবতে ভাবতে ইহান অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলো, মিথিলার কথায় চমকে উঠে বল্লো,তুই কি করে জানিস যে আমি এই কথা ভাবছি

মিথিলা- আমি বুঝতে পারি
এমন সময়,অরনি,সাম্মি রাহি, ওরা এসে যায় সবার পরনে শাড়ি অপরুপ লাগছে ওদের কে

মিথিলা-তোদের তিনজন কে ই অনেক সুন্দর লাগছে,,খোলা চুল, চোখে মোটা করে কাজল,সত্যি ই ধারুন

অরনি- হুম সুন্দর তো দেখাতেই হবে তাই না,এই সাম্মি তুই যা নির্ঝর কে খুজে নিয়ে আয়,একটু পরেই অনুষ্ঠান শুরু হবে
সাম্মি বেরিয়ে গেলো

রাহি- চল মিথিলা প্যান্ডেলে গিয়ে বসি
মিথিলা- হুম চল

অরনি এক মিনিট দাড়া
এই ইহান মিথিলা তো আমাদের অনেক প্রশংসা করলো, কিন্তু তুই তো কিছুই বললি না,বলতো কেমন লাগছে আমাকে

ইহান – ভালো

অরনি- শুধু ভালো?

ইহান – তুই যেমন তোকে তেমনি লাগছে, আর কি বলবো,চল চল বেরয়ে পড়ি

অরনি মন খারাপ করে হাটতে শুরু করলো,
মিথিলা আর ইহান ওদের পিছনে

ইহান ফিসফিস করে বল্লো
– মিথিলা একটা কথা বলবো

মিথিলা- আবার কি

ইহান-শুসসস,আস্তে বল,ওরা শুনবে তো,,

মিথিলা-তো

ইহান- আমার কথা টা শুন, তোকে না খুব সুন্দর লাগছে জানিনা তোকে শাড়িতে কেমন লাগতো,কিন্তু ন্যাচারাল ভাবে তুই অনেক সুন্দর

মিথিলা- বেশি বেশি বলছিস চুপ থাক
মিথিলা ইহান কে পিছনে পেলে আগে আগে হাটতে শুরু করলো

সবাই গিয়ে প্যান্ডেলে বসলো, এস এস সি পরিক্ষার্তিরা সামনের সারিতে,বাকিরা সবাই পিছনে যে যার আসনে বসলো

প্রথমে বক্তিতা নিয়ে গেলো ইহান, ইহানের বক্তিতা শেষে ,,

সাম্মি এনাউন্স করলো
– এখন আপনাদের সামনে কবিতা নিয়ে আসছে আপনাদের সবার প্রিয়ো বইপোকা মিথিলা,,মিথিলাকে স্টেজে আসতে অনুরোধ করছি

নির্ঝরিণী – আপি তুই কবিতা বলবি আর ভালো কিছু পাসনি নাকি

মিথিলা- চুপ থাক

অরনি- থাক নির্ঝরী কিছু বলো না,অনেক কষ্ট
করে কবিতার জন্য রাজি করিয়েছে ইহান

নির্ঝরিণী – কি বলছো আপু,মিথিলা আপু ইহান ভাইয়ার কথায় রাজি হয়েছে,আই কান্ট ভিলিব ইট

অরনি- হুম,সেটাই,,আমরা ও প্রথমে একটু অবাক হয়েছি

রাহি- এই চুপ করতো তোরা মিথিলার কবিতা আবৃতি অনেক সুন্দর হয় শুনতে দে,সবাই চুপ হয়ে গেলো

মিথিলা বলতে শুরু করলো
প্রথমে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সালাম জানাই,তার পর উপস্থিত ভাই বোনদের জানাই স্নেহ ও ভালোবাসা,,
আমার কবিতার নাম
‘ ভালোবাসা’
ভালোবাসি তোমায়
ওগো তুমি কেনো বুঝো না
মধুচন্দ্রিমাতে তোমায় নিয়ে,
জোনাক পোকার আলো দেখতে চাই
ভালোবাসি তোমায় কেনো বুঝো না
মনের মাধুরিতে তোমারি ছবি
তুমি তো দেখতে পাওনা
ভালোবাসি কেনো বুঝো না
চোখের ভাষা কি তুমি বুঝো না
মনের না বলা কাকুতি
তুমি শুনতে পাওনা
কান পেতে দেখো এই মন
বলছে ভালোবাসি তোমায় হৃদয়ে হৃদয়”

মিথিলার কবিতা আবৃতি শেষ হতেই, করতালিতে চারিদিকে মুখর হয়ে উঠলো

ইহান তনয় হয়ে মিথিলার কবিতা আবৃতি শুনছিলো,করতালি দিতে ভুলে গেছে সে,মনে হচ্ছে কবিতার প্রত্যেক লাইন আমাকে নিয়ে লিখা, সত্যি মিথিলা তুই সাধারনের মধ্যে অসাধারণ,

অরনি কনুই দিয়ে ইহান কে ধাক্কা দিয়ে বল্লো,কিরে কোথায় হারালি

ইহান সম্বিত ফিরে পেয়ে বল্লো
– না ভাবছিলাম,,মিথিলা সাধারনের মধ্যে অসাধারণ

অরনি- তুই শুধু মিথিলার মাঝে মুগ্ধতা খুঁজে পাস,আর কাউকে দেখিস না, নাকি মিথিলার মতো তুই ও কানা

ইহান হেসে বল্লো- তুই ও না অরু,মিথিলা বুঝি কানা,,আর তুই ভালো করেই জানিস সে ছোট্ট থেকে মিথিলার প্রতি আমার দূর্বলতা আছে,, যদি আর কাউকে দেখার হতো অনেক আগেই দেখতাম

ইহানের কথা শেষ না হতেই মিথিলা ফিরে এলো
মিথিলা- কিরে তোরা কি নিয়ে আলাপ করছিলি

অরনি- না এমনি

মিথিলা- কবিতা টা একদম ভালো হয়নিরে, তোদের মনের মতো হয়নি নিশ্চয়ই

ইহান- থাক যে সব সময় ভালো করে তার মুখে এমন কথাই শুনা যায়

অরনি- এই তো সার্টিফিকেট পেয়ে গেছিস আর কি

এহান উঠে গেলো ওদের মাঝে থেকে

ইহান- হ্যালো ভাই ও বোনেরা এখন আপনাদের মাঝে নাচ নিয়ে আসছে অরনি চৌধুরি
অরনি চলে গেলো
নাচ শুরু হলো, সবাই নাচ মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করলো, এ ভাবে একে একে সবাই অংশ নিলো

ইহান এবার বিদায় নিতে এনান্স করতে এলো
ইহান- দেখতে দেখতে আমরা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায় চলে এসেছি, কিন্তু আমার আরেকটি কথা থেকে যায়,, শুধু যে আমার তা নয় আমাদের এখানে প্রায় অর্ধেক ভাই বোনদের কথা এটা, আমি সবার পক্ষ থেকে বলছি
মিথিলা প্লিজ তুমি সবার জন্য একটি গান ধরো

কথাটা শুনেই মিথিলা লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো,রাগের গজ গজ করতে করতে বল্লো
– মানে কি এই সবের আমি গান গাইবো? নো য়ে,আমি গান একেবারেই পারি না,

অরনি- মিথিলা কথা টা শুধু আমাদের নয় স্কুলের অন্য ভাই বোনদের ও, তুই সবাইকে এ ভাবে চুপ করাতে পারবি না

মিথিলা- দেখ অরু আমি গান পারি না কোখনো গাইনি,তা ছাড়া আগে বললে প্রস্তুতি নিয়ে আসতাম,এখন?

রাহি- আগে বললে তুই কিছুতেই রাজি হতি না

ইহান আবার মিথিলার নাম এনাউন্স করলো
– আফরিনা মিথিলাকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করছি,প্লিজ কাম মিথিলা

সাম্মি- দেখ সবাই চায় তুই একটা গান করবি এভাবে সবার আনন্দ মাটি করতে পারিস না

অরনি- দেখ আজকে আমাদের স্কুল জীবনের এই শেষ অনুষ্ঠান, এই অনুষ্ঠানে তুই যদি বেসুরে গান করিস,সেটা ও আমাদের জন্য স্মৃতি হয়ে থাকবে প্লিজ

নির্ঝরিণী – আপি কিছু মনে করো না,এ ভাবে সবার কথা উপেক্ষা করা তোমার ঠিক হবে না, একটা গান ই তো বেশি কিছুতো নয়

মিথিলা- ওকে ফাইন যাচ্ছি

ইহান- এখন আপনাদের মাঝে গান নিয়ে আসছে আফরিনা মিথিলা

মিথিলা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বল্লো
– হ্যালো বন্ধুরা আমি সত্যি কোন দিন গান করিনি তবু ও তোমরা শুনতে চাইছো,আমি অবশ্যই গাইবো,কিন্তু খারাপ হলে কেউ হাসবে না ওকে

মিথিলা একটুক্ষণ চুপ করলো
কি গাইবো বুঝতেই পারছি না, তার পর চোখ বন্ধ করে কিছু একটা মনে করে, চোখ বন্ধ রেখে গেয়ে উঠলো

“কথা হবে ফোনে ফোনে, হ্যাংগ আউট টা ফুডজোনে
সময়ের খেয়াল টা আর রবে না
সব নতুন বন্ধু হবে স্মৃতি সব পড়ে রবে মনে করতে কেউ তো আর চাইবে না
সব কিছু হবে রংগিন সামলানোটা বেশ কঠিন,কেউ তো আর পিছনে ফিরে চাইবে না
হুট করে কলেজ এসে লুট করে নিয়ে গেলো বেস্ট ফ্রেন্ড নাম সেই যন্ত্রনা
পুরোনো সেই স্মৃতি গুলো আর ফিরে পাবো না,পুরোনো লাস্ট ব্যাঞ্চ টা তেও আর বসা হবে না

আধুনিকা মেয়ে হবো সারাদিন ক্রাশ খাবো,পুরোনো গুলোর খোজ নিবো না
বয়ফ্রেন্ডের নাম্বার পেয়ে শুধু শুধু কল দিয়ে বিরক্ত করতে ভুল হবে না
যা ছিলো সবই ফাকি দিন শেষে এসে দেখি পড়া শুনা কিছু আর হলো না
দূর কিছু হলো নাকি জীবন আরও দেখা বাকি আগামি কাল পড়তে ভুল হবে না
এ জীবনে আগামিকাল কখনোই এলো না

যেই গেম খেলতে আসি আম্মু এলে পড়তে বসি,হোমওয়ার্ক টা আজ ও করা হলো না
যখন আমি স্কুলে ছিলাম ছেলেটিকে দেখেছিলাম
ভালোবাসি বলা আর হলো না
সেদিন ও দেখেছি তাকে অন্যকে কাছে ডাকে আমাকে সে যে আর চিনে না,,
তবু তাকে ভালোবাসি ডাকলে সে যে চলে আসি কিন্তু সে ডাকা আর হলো না
স্কুলের সে দিন গুলো ফিরে তো পাবো না
পুরোনো সে স্মৃতি গুলো আর দেখা হবে না”

মিথিলার গান গাওয়া শেষ কিন্তু চারি দিকে নিরাবতা,কারো মুখে কোন কথা নেই মনে হয় কেউ এ জগতে নেই,ইহান স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টি মিথিলার দিকে,

ঠিক সে সময় শিক্ষক সারির মধ্যে থেকে একজন শিক্ষক উঠে এলো মিথিলার কাছে,,
মিথিলা পুরো সময় চোখ বন্ধ করেই ছিলো,গান শেষ হতেই চোখ খুল্লো কিন্তু সবার এমন নিরাবতা দেখে ও ভড়কে গেছে হয়তো গান ভালো হয়নি তাই সবাই এমন বসে আছে,
রহিম স্যার কে উঠে আসতে দেখে মিথিলা আর ও ভয় পেয়ে গেছে পুরো স্কুল জীবনে রহিম স্যারকে ভয় করে আসছে মিথিলা কি যে রাশ ভারি স্যারের কি বলবো,

রহিম স্যার মিথিলার কাছে এসে বল্লো
– মা আজ এই স্কুল থেকে তোদের বিদায় বেলা,তবে আজকের এই মুহুর্তটা সব সময় মনে থাকবে,,

স্যারের এমন মিষ্টি কথা শুনে মিথিলার গলা শুকিয়ে গেলো,স্যার এই সব কি বলছে এই প্রথম স্যারকে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে দেখলাম

রহিম স্যারর- এই ইহান মাইক্রো ফোনটা দিয়ে যাও

স্যাররের ডাকে ইহানে তনয়তা ভাংলো,ইহান মাইক্রোফোন স্যার কে দিলো

রহিম স্যার-দর্শক সারিতে বসে থাকা ছাত্র ছাত্রী দের বলছি,তোমরা এতো নিরব কেনো,,আমাদে প্রিয়ো ছাত্রী, এন্ড তোমাদের প্রিয়ো বোন, সবার প্রিয়ো আফরিনা মিথিলা এতো সুন্দর একটা গান গেয়ে আজকের দিন টা কে স্বরনিয় করেছে,তার জন্য একটা হাত তালি তো চাই,কি হলো সবাই ঝোরে হাত তালি দাও

করতালিতে চারিদিকে মুখর হয়ে উঠলো,মিথিলা গিয়ে তার সিটে বসলো

নির্ঝরিণী -আপু দেখলে তো আমার গান একটু ধৈর্য্য ধরে শুনাতে আজ তোমার কতো লাভ হয়েছে

মিথিলা- হুম সেটাই,কোন গান মনে আসছিলো না,তার পর তোর কাছে থেকে শুনা এই গান টা মনে এসে গেলো

অরণি – হুম এই গান টা আমি ও আগে শুনেছি, কিন্তু তোর মতো করে এতো ভেবে গানের লাইন চেঞ্জ করার কথা মাথায় আসেনি

রাহি- হা মিথিলা খুব ভালো চেঞ্জ এনেছিস তুই গান টা তে,,

সাম্মি- তোর গান টা সবার মনে গেঁথে গেছে

মিথিলা- গান টা আমার নয়,তবে আমি যেহেতু গান টা নির্ঝরিণীর কাছে শুনেছি সেহেতু বলতে পারছি না গানটার লেখক এন্ড কণ্ঠশিল্পী কে,

ওদের কথার মাঝে যোগ দিলো ইহান
– আমি তো বাংলা গান শুনি না কিন্তু বাংলা গান যে এতো টা হৃদয় ছুঁয়ে যায় তা এই কিছুক্ষন আগে বুঝলাম

মিথিলা- ওকে এবার তা হলে বাড়ি যেতে হয়,

ইহান- আর একটু দাড়া একটা গ্রুপ ছবি তুলবো

নির্ঝরিণী – ছবি টা আমি শুট করবো,আমি
কিন্তু আপনাদের মাঝের নই
ইহান- ওকে

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

.খেলাঘর পর্ব-৩

0
.খেলাঘর পর্ব-৩
.খেলাঘর পর্ব-৩

.খেলাঘর পর্ব-৩
লেখা-সুলতানা ইতি

মিথিলা বই নিয়ে শুয়ে পড়লো
শুয়ে শুয়ে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে
নির্ঝরিণী এমন সময় মিথিলার রুমে এলো হাতে মোবাইল

নির্ঝরিণী – আপি তোমার ফোন

মিথিলা- কে কল করেছে?

নির্ঝরিণী – ইহান নামের কেউ একজন

মিথিলা- ওহ, দে হ্যালো ইহান বল,কেনো কল করেছিস,,(মিথিলা এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো)

ইহান- মিথি তুই মোবাইলে কথা বলতে জানিস না?

মিথিলা- কেনো আমার কথা গুলো কি কথা নয়?

ইহান- মোবাইলে কথা বলার শুরুতে কিছু ফর্মালিটি আছে সেগুলা মনে হয় তুই জানিস না

মিথিলা- দেখ ইহান শুধু শুধু কথা প্যাচিয়ে লাভ নেই কেন ফোন করেছিস বল

ইহান- ওকে তোর তো আবার পড়ার ডিস্টার্ব হচ্ছে, বাই দ্যা য়ে, কাল আসছিস তো

মিথিলা শান্ত আর কঠোর কন্ঠে বল্লো
– আমি তো সেদিন বলে এসেছি যাবো তা হলে আজ আবার কল কেনো

ইহান- স্যরি দোস্ত রাগ করিস না এমনি মনে করিয়ে দিলাম তোকে আচ্ছা রাখছি বাই

ইহান কল কেটে দিয়ে অনেক্ষন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলো

নিজে নিজেই মোবাইলের দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন ইহান
– মিস চশমিশ কেনো বুঝো না ভালোবাসি তোমায়, তাই তো শুধু বাহানা খুঁজি তোমার পাশে থাকার
ইসস যদি বই হতে পারতাম তা হলে সারাক্ষন তুমি আমার উপর চোখ রেখে বসে থাকতে
উফফ ভাবতেই মন টা আনন্দে নেচে উঠছে কিন্তু আফসোস তুমি……

ইহান কথা শেষ করতে পারলো না কেউ তার কান টেনে ধরলো

ইহান- উফফ মা লাগছে তো

রাইমা চৌধুরী- লাগুক, মোবাইলের দিকে তাকিয়ে কি ভিড় ভিড় করছিলি বলতো

ইহান- নাহ মানে এই আর কি,তোমার ভবিষ্যৎ বৌমার সাথে কল্পনায় কথা বলছিলাম

রাইমা চৌধুরি- ওহ তাই!বল নারে আমার বৌমা দেখতে কেমন?

ইহান- নো মাই ডিয়ার মোম তোমাকে এখনি কিছু বলতে পারবো না,তার আগে তোমার ভবিষ্যৎ বৌমার মন জিততে দাও

রাইমা চৌধুরি- সে কিরে এখন ও সে জানে না তাই তো বলি হাদারাম ছেলেটা মোবাইলকে কেনো বলছে

ইহান – মা তুমি আমাকে হাদারাম বললে(অভিমান মেশানো কন্ঠ ইহানের)

রাইমা চৌধুরি- ঠিক আছে হাদারাম কে আর হাদারাম বলবো না,এক শর্তে

ইহান খুশি হয়ে বল্লো
-কি শর্ত

রাইমা চৌধুরি- এস,এস,সি,এন্ড এইচ, এস, সি, দুটোতেই ভালো রেজাল্ট এন্ড অস্ট্রিয়া থেকে এম বি এ কমপ্লিট করতে পারলেই আর হাদারাম বলবো না, আর হা তার সাথে আমার বৌ মাকে ও পটাতে হবে

ইহান মুখ টা কালো করে বল্লো,এতো কঠিন শর্ত তুমি দিতে পারলে মা, আমি না তোমার একটা মাত্র ছেলে

রাইমা চৌধুরি- হাহ হাহ তা ঠিক, কিন্তু আমার একটা মাত্র ছেলের বোন আজ অস্ট্রিয়া থেকে ফিরছে তাকে তো এয়ারপোর্টে আনতে যাওয়ার কথা তার ভাইয়ের তাই না

ইহান- ওহ তাই সত্যি ভুলেই গিয়ে ছিলাম,কিন্তু আব্বু তো আপুর সাথেই আসবে মা, আমার যেয়ে কাজ নেই

রাইমা চৌধুরি- তোর আব্বু আসছে না, জরুরী মিটিং এ এটেন্ড করতে হয়েছে তাকে,তাই নায়া চলে এসেছে

রাইমা চৌধুরি, আর রায়হান চৌধুরির দুই সন্তান, ইহান চৌধুরি এন্ড নায়া চৌধুরি, নায়া অস্ট্রিয়া থেকে পড়াশুনা কমপ্লিট করে পাঁচ বছর পর আজ দেশে ফিরছে, আর তাই নায়াকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে যাচ্ছে ইহান

ইহান- ওকে মা দু মিনিট সময় দাও আমি রেডি হয়ে আসছি
ইহান তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়লো

রাইমা চৌধুরী ছেলের যাওয়ার পথে চেয়ে আছে, ছেলেটা হয়েছে ঠিক বাবার মতো,

হারিয়ে গেলো রাইমা চৌধুরি অতিতের মাঝে যেখানে তাদের প্রথম দেখা হয়, তখন রায়হান চৌধুরি ইন্টার এক্সাম দিচ্ছে আর সেই সময় রাইমা চৌধুরি সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে ,, প্রথম দেখা, প্রথম ভালো লাগা,তার পর প্রকাশ করা অনুভূতি গুলো কোন কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না,অনেক প্রতিকুলতা ফেরিয়ে তাদের এক হওয়া,আর তাদের ভালোবাসার সম্পদ,নায়া আর ইহান,

রাইমা চৌধুরি বাস্তবে ফিরে এলো সত্যি সময় গুলো কেমন স্বপ্নের মতো ফেরিয়ে গেলো,
রাইমা চৌধুরি মোবাইল হাতে নিলেন, একটু খানি কথা বলে নিই রায়হানের সাথে,তাকে জিজ্ঞাস করবে আজ ও কি সেই প্রথম দিনের কথা মনে রেখেছে

মিথিলা অনেক রাত অবদি পড়েছে কাল আবার পড়তে পারবে না পুরো দিন অনুষ্ঠানে থাকতে হবে,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ও আবার পড়তে বসলো স্কুলে যাওয়ার আগে এই সময় টা কিছুতেই নষ্ট করতে চায় না মিথিলা,

আয়ান আর নির্ঝরিণী দুজনেই মিথিলার রুমে ডুকেছে

আয়ান- আপি জানিস নির্ঝরিণী অনেক সুন্দর একটা গান শিখেছে,

নির্ঝরিণী – আপু গান শুনবি তুই, আমি গাইবো?

মিথিলা বিরক্তি নিয়ে দুজনের দিকে তাকায়
– তোরা দুজন কি কখনো আমার পিছু ছাড়বি না, দেখছিস তো পড়ছি

নির্ঝরিণী হাসি মুখটা মলিন করেন বল্লো
– আপু তুমি খুব খারাপ কখনো আমাদের সাথে ভালো করে কথা বলো না

সত্যি আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করতে আসিনি একটা গান শুনিয়ে চলে যেতাম

আয়ান- নির্ঝর ঠিক বলেছো আপু কি হয় আমাদের সাথে একটু ভালো করে কথা বললে,বলতে বলতে কেঁদে ফেল্লো আয়ান

মিথিলা -ওকে,ওকে কি গান শুনাবি তাড়া তাড়ি শুনা

নির্ঝরিণী খুশি হয়ে বল্লো ওকে শুন তা হলে

‘এই মন যা বলে বলুক
আমি তোমারি হবো,
চোখ যা দেখে দেখুক
আমি তোমাকেই দেখবো ‘

নির্ঝরিণী গান গেয়ে শেষ করে বল্লো কেমন হয়েছে আপু

মিথিলা- ভালো

নির্ঝরিণী – আরেকটা বলি

মিথিলা- হুম বল

নির্ঝরিণীর গান শেষ হওয়ার আগেই মিথিলা বল্লো এবার থাম স্কুলের সময় হয়ে গেছে, আজ স্কুলে অনুষ্ঠান আছে একটু তাড়া তাড়ি যেতে হবে

নির্ঝরিণী – ওহ আপু তা হলে তো তোর আজ ক্লাস হবে না তাই তো

মিথিলা চুল আছড়াতে আছড়াতে বল্লো
-হুম, কেনো

নির্ঝরিণী – আপু আমাকে নে না সাথে

মিথিলা- মানে তোর ক্লাস আছে না,

নির্ঝরিণী – আপি মাত্র ক্লাস সিক্সে উঠেছি এখনি তোমরা সারা দিন পড়া পড়া বলে আটকে ধরে রাখো কেমন লাগে বলো তো

মিথিলা- ঠিক আছে আয়,তবে খবর দার করে দিলাম,একদম চুপ করে আমার সাথে বসে থাকবি চালাকি করে কারো সাথে বক বক করবি না ওকে

নির্ঝরিণী – ওকে সুইট আপি

আয়ান এতোক্ষন চুপ করে কথা শুনছিলো, এবার সে প্রতিবাদ করলো
– শুধু নিজের বোনকে সাথে নিলে হবে না আমি কি নদিতে ভেসে আসছি নাকি হা, আমি ও যাবো

মিথিলা- আয়ায়ায়ানন

আয়ান- চোখ রাংগিয়ে তাকালে ও লাব নেই আমি যাবো ই

মিথিলা- বললাম না তুই যাবি না, যা স্কুলে যা, পড়া শুনা কিছুই করে না, সারাক্ষন পাকনামি

আয়ান- আপু তুমি আমায় একটু ও আদর করো না (গাল ফুলিয়ে বল্লো কথা টা)

মিথিলা- তোরা দুজন কিরে? সারাক্ষন আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করবি আর আমি তা মেনে নিবো,মা,মা

ফাতেমা বেগম ছুটে এলো
– কিরে মিথি এতো ডাকছিস কেনো

মিথিলা- মা তুমি আয়ান কে স্কুলে যেতে বলো,কোন এক্সকিউজ যেন না দেখায়

ফাতেমা বেগম- আয়ান দেরি হয়ে যাচ্ছে না,যা স্কুলের জন্য রেডি হও

আয়ান মুখ ভার করে চলে গেলো
মিথিলা আর নির্ঝরিণী বেরিয়ে পড়লো,

ইহান অনেক আগেই চলে এসছে স্কুলে,আজকের অনুষ্ঠান হোস্ট করবে ইহান
তাই ওর দায়িত্ব অনেক

অরনি ইহান কে হ্যাল্প করছে

ইহান- অরু এই মিথি টা কখন আসবে রে

অরনি- জানি নারে ইহু,একটা কল দিয়ে দেখ বেরিয়েছে কি না

ইহান- নারে কল দিলে রেগে যাবে, অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই বুঝলি

অরনি- আচ্ছা ইহু তুই মিথি কে বলছিস না কেনো যে তুই ওকে পছন্দ করিস,শুধু কি পছন্দ একে বারে লাভ এট ফাস্ট সাইট,যাকে বলে

ইহান- অরু মিথিলাকে বলে কোন লাভ হবে না উলটো ভুল বুঝবে, ওর জগতে ওর বই আর চশমা ছাড়া আর কিছু নেই

এমন সময় রাহি এসে বল্লো কিরে ইহু, অরু তোরা এখানে ওদিকে কি হয়েছে জানিস
ইহান- কি হয়েছে

রাহি- মিথিলা এসেছে,ওর বোন কে নিয়ে

অরনি অবাক হলো বল্লো কি বলছিস মিথিলা নিয়ে এসেছে তার বোন কে বিশ্বাস হচ্ছে না,চলতো ইহু দেখে আসি

ইহান আর অরনি চল্লো মিথিলার কাছে

অরনি দৌড়ে গিয়ে মিথিলা কে বল্লো আরে মিথি তুই এসেছিস তোর জন্য ই অপেক্ষা করেছিলাম

মিথিলা- আমি তো বলেছি আসবো,আবার অপেক্ষা করার কি আছে অরু

সাম্মি- এই মিথি তুই কি আমাদের নতুন প্লানের কথা জানিস

মিথিলা- আবার কি প্লান

অরনি- আমরা সবাই আজ শাড়ি পরবো

মিথিলা কথা টা শুনে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো,
– প্লিজ অরু আমাকে তোরা শাড়ি পরতে বলিস না আমি পারবো না

রাহি- কি বলছিস আমরা পরবো আর তুই পরবি না

নির্ঝরিণী – আপু তোমাকে কোন দিন শাড়ি পরতে দেখিনি,শাড়ি পরলে কেমন লাগে জানি ও না প্লিজ আপু

মিথিলা- নির্ঝর, আর একবার পাকনামি করলে থাপ্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবো,মিথিলার রাগে চোখ দিয়ে আগুন জ্বরছে

নির্ঝরিণী লজ্জায় অপমানে উঠে চলে গেলো
আপু তার বন্ধুদের সামনে আমাকে এই ভাবে বল্লো,ছোট বলে কি আমার মান সম্মান নেই নাকি,নির্ঝরিণী ছুপি ছুপি স্কুলের পিছনে এসে কাঁদছে, মিথিলার সামনে কিছুতেই কাঁদতে চায়নি সে

মিথিলার রাগ দেখে সবাই স্তম্ভিত কারো মুখে কোন কথা নেই
ইহান ভাবছে সামান্য শাড়ি পরতে বলাতে মিথিলা এই ভাবে রিয়েক্ট করলো কেনো

অরণি আর কিছু বল্লো না

to be continue

ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-২

0
খেলাঘর পর্ব-২
খেলাঘর পর্ব-২

খেলাঘর পর্ব-২
লেখা-সুলতানা ইতি

মিথিলা আর অরনি বেরিয়ে পড়লো
যাওয়ার আগে মিথিলা আয়ান আর নির্ঝরিণী কে স্কুলে যেতে বল্লো, দুই টা পড়া চোর

অরনি- এই বয়সে একটু আধটু পড়া চোর হতে হয়, বুঝিস না এক সময় আমরা ও এমন ছিলাম

মিথিলা- তা ঠিক তবে আমরা ওদের মতো এমন ছিলাম না
কথা বলতে বলতে এরা স্কুলে এসে গেলো

সবাই মিলে বৈঠক বসলো অনুষ্ঠানে কে কি করবে
ইহান বলতে যাচ্ছিলো এমন সময় মিথিলাদের উপর ইহানের চোখ পড়ে

ইহান- ঐ তো মিথিলা এসে গেছে,আয় বস তোদের জন্য ই অপেক্ষা করছিলাম

মিথিলা আর অরনি বসতে বসতে বল্লো কি নিয়ে আজকের বৈঠক

সাম্মি কিছু বলার আগেই ইহান বলে
– অনুষ্ঠানে কে কি করবে, সেটা নিয়ে

অরনি- কে কি করবে মানে?

সাম্মি- নাচ,গান,কবিতা আবৃতি,বক্তিতা,এগুলা আর কি কে কোন টা নিবি বল

অরনি- আমি তো নাচবো

ইহান- আমি বক্তিতা দিবো

সাম্মি- তা হলে তো হয়েই গেলো সবাই সবার টা বেছে নিলো কিন্তু মিথিলা কি নিবে সেটা তো বলেনি

মিথিলা সবার পাশে বসেই বইয়ের মাঝে ডুবে গেলো তার পাশে যে এতো আলোচনা হচ্ছে,তা মিথিলার কান অব্দি পৌছায়নি

অরনি মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– মিথিলা আর এই জগতে নেই বুঝলি রে ইহু

ইহান- এই জগতে নেই মানে কি?বল ও এখন পড়ার মাঝে ডুবে গেছে

অরনি টিপ্পনি কেটে বল্লো
– কেনো এই জগতে নেই বলতে তুই মরে যাওয়া বুঝেছিস নাকি,ভাভাহ ইহু তোর দেখি মিথিলার জন্য খুবইই….

অরনির কথার মাঝে রাহি বল্লো
– কিন্তু তোরা যাকে নিয়ে এতো তর্ক করছিস সে তো শুনছে ই না

এই বলে রাহি মিথিলার বইটা ছো মেরে নিয়ে নিলো

মিথিলা- রাহি ভালো হচ্ছে না বই দে বলছি

অরনি- মিথি আমরা এখানে আলোচনা করছি,আর তুই বই পড়ছিস,এটা কেমন লাগে বলতো

মিথিলা ওকে ফাইন বল কিসের আলোচনা আর আমাকে কি করতে হবে

সাম্মি- অনুষ্ঠানে তুই কিসে অংশ
নিবি,নাচ,গান,কবিতা আবৃতি,বক্তিতা,কোন টা বল

মিথিলা- কোন টা ই নিচ্ছি না

অরনি- তা বললে হয় নাকি সবাই নিয়েছে তোকে ও নিতে হবে

মিথিলা- সবাইকে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে এমন কোন কথা নেই বুঝলি

রাহি- প্লিজ মিথি এমন করিস না

অরনি- মিথি দোস্ত তুই কোন কিছুতে না থাকলে এতিম এতিম লাগে নিজেকে, আচ্ছা ঠিক আছে তুই বক্তিতা দিস কেমন

মিথিলা- নো য়ে আমি তোদের এই সবের মাঝে নেই

ইহান- মিথিলা আমার রিকুয়েস্ট তুই কবিতা আবৃতি করবি

মিথিলা কিছুক্ষন ইহানের দিকে তাকিয়ে থেকে রাজি হয়ে গেলো কেনো জানি ইহানের কথা সে ফেলতে পারেনি

মিথিলা ইহানের কথায় রাজি হওয়াতে সবাই মুখ টিপে হাসছে

মিথিলা সবার দিকে চোখ গুরিয়ে বল্লো
– তোরা হাসছিস কেনো

সাম্মি- এমনি আর কি

অরনি- ইহু তোর কি ভাগ্যরে, তোর এক কোথায় মিথিলা রাজি হয়ে গেলো

রাহি- ইহু আমার তো মনে হয় তোর এক কথায় মিথিলা ধরবে হাজার বাজি,হি হি হি

মিথিলা – তোরা এই সব কি শুরু করেছিস, যাহ আমি কোন কিছুর মধ্যে ই নেই হয়েছে শান্তি

মিথিলার কথা শুনে সবাই এক সাথে স্যরি বল্লো
ইহান- মিথিলা এভাবে রিয়েক্ট করার মতো কিছু হয়নি বুঝলি, ফ্রেন্ড এই রকম একটু মজা করতেই পারে এতে এতো টা সিরিয়েস না হলেই হয়

মিথিলা- আমি বাসায় যাবো

রাহি- সে কি ক্লাস করবি না

মিথিলা- নাহ তোরা কর
বলে মিথিলা হন হন করে হাটতে শুরু করলো

মিথিলা চলে যাওয়ার পরে ইহান বল্লো
– তোরা সব কিছুতেই একটু বেশি বুঝিস বুঝলি
তোরা তো জানিস মিথিলা একটু অন্যরকম,তবু ও তোরা…

অরনি- আমরা কি মিথ্যা বলেছি ইহান,এটা তো সত্যি তুই মিথি কে পছন্দ করিস

ইহান- প্লিজ তোদের কাছে হাত জোড় করছি এই কথা মিথিলার সামনে বলিস না

এই বলে ইহান ও চলে গেলে মিথিলার পিছু পিছু
মিথিলা রিক্সাসার জন্য দাঁড়িয়ে আছে

ইহান গিয়ে মিথিলার পাশে দাড়ালো
ইহান- মিথিলা তুই ওদের কথায় কিছু মনে করিস না

মিথিলা- নাহ কিছু মনে করিনি

ইহান- তা হলে চল আমরা ক্লাসে যাই

মিথিলা- নারে বাসায় যাবো

ইহান- ওকে পরশু আসছিস তো

মিথিলা- পরশু কি অনুষ্ঠান?
ইহান- হুম

মিথিলা- আচ্ছা দেখি

ইহান- প্লিজ দোস্ত আসিস কেমন, দেখ পরিক্ষার পর কে কোথায় যায় কোন ঠিক নেই, তাই শেষ বার সবাই মিলে একটু আনন্দ করি কি বলিস

মিথিলা- আচ্ছা যাহ আসবো ,
এই বলে মিথিলা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো রিক্সা চলছে

ইহান- ইয়েস,যাই অরনিকে খবর টা দিই

মিথিলা বাসায় চলে আসলো এসে দেখে বাসার পরিবেশ টা থম থমে, সবার মুখ ভার বড় আপু ও এসেছে তার মুখ ভার কি হয়েছে মিথিলা কিছু বুঝতে পারেনি

মিথিলা জানে এখন কাউকে জিজ্ঞাস করে ও উত্তর পাবে না তাই সে স্টাডি রুমের দিকে গেলো
ফাতেমা বেগম স্টাডি রুমে গিয়ে বল্লো
– কিরে এসে ই দেখি আবার বইয়ের মাঝে ডুবে গেলি

মিথিলা মায়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– কিছু বলবে মা

ফাতেমা বেগম- হুম, চুলায় রান্না বসিয়েছি,রান্না টা দেখিস,আমি আর তোর বাবা একটু বেরুবো
মিথিলা আর কিছু বল্লো না
বাবা, মা, দুজনেই যখন যাবে তখন নিশ্চই কোন ইমপ্রটেন্ট কাজ আছে

মিথিলা কিচেনের দিকে গেলো
কিচেনে আগে থেকে জিমি ছিলো

মিথিলা- কিরে আপু দুলা ভাই এলো না মেহের কে ও আনলি না কেনো

জিমি কিছু বল্লো না
প্রশ্ন পালটিয়ে করলো
– তোর পড়া শুনা কতো দূর মিথি

মিথিলা- এই তো পড়তে পারলাম আর কই, এক বার একজনে এসে ডিস্টার্ব করছে

জিমি- ওহ, ঠিক আছে, তুই যা পড়তে বস আমি এদিকা টা দেখছি

মিথিলা- না ঠিক আছে আমি তোমাকে হ্যাল্প করি
আপু বলো না কি হয়েছে তোমার মন খারাপ কেনো, মেহের কে ছাড়া তো তুমি কোথাও যাও না তা হলে

জিমি – সে অনেক কথা পরে শুনিস
দুপুর পার হয়ে যাচ্ছে
এমন সময় এলো মাসুম ফারুকি আর ফাতেমা বেগম

জিমি- মা,বাবা তোমরা ফ্রেশ হয়ে এসো টেবিলে খাবার দিচ্ছি

ফাতেমা বেগম- আয়ান আর নির্ঝর এসেছে

জিমি- না ওরা আসেনি
মিথিলা জিমি সহ সবাই খেতে বসলো
খেতে খেতে মাসুম ফারুকি মিথিলা কে বল্লো
-মা তোর বিয়ের জন্য ব্যাংকে কিছু টাকা রেখেছিলাম, এখন জামাই জিমি কে পাঠিয়েছে টাকার জন্য তাই ওগুলা তুলে আনতে হলো,
তুই কিছু মনে করিস নি তো

মিথিলা অনেক্ষন চুপ থেকে বল্লো
– বাবা টাকা গুলো আমার বিয়ের জন্য রেখেছো বলে জানতে চাইছিনা,কৌতূহল থেকে বলছি, দুলাভাই এখন টাকা দিয়ে কি করবে

মাসুম ফারুকি- আগের ব্যাবসা টা তো ওর লস হয়েছে নতুন করে ব্যাবসা শুরু করবে তাই

মিথিলা শান্ত কন্ঠে বল্লো
– তো প্রতিবার কিছু না কিছুর বাহানা দিয়ে ও টাকা নেয় আমাদের থেকে, এ নিয়ে ওকে চার বার টাকা দেয়া হয়েছে এই টাকা গুলো নিয়ে উনি যে আর কখনো টাকার জন্য আপু কে পাঠাবে না সেটার কি গ্রান্টি আছে বল্লো

মাসুম ফারুকি কিছু বলার আগে জিমি বল্লো
– এবারে দেখিস ঠিক ভালো হবে,হয়তো আর আসতে হবে না আমাকে

মিথিলা- আপু তুমি প্রতিবার এই কথা বলেছো, শুনো বাবা টাকা আর আপু কোন টা ই ঐ লোকের কাছে পাঠানোর দরকার নেই বুঝলে

মিথিলার কথা শুনে জিমি খাবার বন্ধ করে উঠে দাড়ালো আতংকিত কন্ঠে বল্লো
-তুই কি বলতে চাইছিস মিথি, আমি ওর কাছে না গেলে ও টাকার জন্য আরেক টা বিয়ে করবে

মিথিলা- করুক না আরেক টা বিয়ে তার পর দেখা যাবে

জিমি- আমি আমার মেহের নিগারকে রেখে এসেছি আমি ওকে ছাড়া থাকবো কি করে বলতে বলতে কেদে দিলো জিমি

মিথিলা- দেখ মেহের ছোট দুলা ভাই ওকে রাখতে পারবে না, দুই একদিন রেখে ঠিক দিয়ে যাবে

জিমি চোখের পানি মুছে বাবা কে বল্লো
– বাবা তুমি এখনি আমাকে টাকা দাও আমি এখন ই যাবো

ফাতেমা বেগম- তুই এমন রেগে যাচ্ছিস কেনো জিমি মিথিলা তোর ছোট বোন, ছোট জ্ঞান নিয়ে ও একটা কথা বলেছে,ও বললে ই কি আমরা শুনবো নাকি,তুই বস খেয়ে নে তার পর যাবি

মিথিলা আর একটি কথা ও বলেনি জানে কথা বললে ও কোন লাভ হবে না
মিথিলা খাওয়া শেষ করে আবার স্টাডি রুমে গেলো
মাথা থেকে সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে পড়ায় মন দিলো

-আপি আবার পড়তে বসেছিস?

মিথিলা খুব বিরক্তি নিয়ে নির্ঝরিণীর দিকে তাকায়
– কিছু বলবি

নির্ঝরিণী – হুম,শুনলাম বড় আপু এসেছে, কিন্তু কোথাও দেখলাম না যে

মিথিলা- হয়তো চলে গেছে

নির্ঝরিণী ভ্রু কুঁচকে বল্লো
– হয়তো

মিথিলা এবার রেগে যায়
– নির্ঝরিণী তুই কি আমার পড়ার ডিস্টার্ব করতে আসছিস,যাহ এখান থেকে

নির্ঝরিণী – নাহ, তোমার চোখ কে একটু বিশ্রাম দিতে এসছি

মিথিলা- নির্ঝরিণীইইইইইই
– ওকে ওকে, মাই ডিয়ার চশমিশ আপি,তুমি পড়ো মন দিয়ে পড়ো আমি গেলাম

মিথিলা- উফফফ এই নির্ঝরিণী টা কোন দিন শুধরাবে না
মিথিলা আবার পড়াতে মন দিলো

মাসুম ফারুকি তার বৈঠক খানায় বসে আছেন চিন্তিত মুখে
ফাতেমা বেগম গিয়ে স্বামির পাশে বসলো
– কি ভাবছো তুমি

মাসুম ফারুকি- ভাবছি অনেক ধার ধেনা করে জিমি কে বিয়ে দিয়েছে, আফসোস একটা ভালো ছেলের হাতে দিতে পারিনি মেয়ে টা কে

ফাতেমা বেগম- কি করবে বলো চেষ্টা তো কম করোনি,আমাদের মেয়ের তকদিরে হয়তো এমন টা ই ছিলো, তুমি চিন্তা করে শরির খারাপ করো না,

মাসুম ফারুকি- হুম সামান্য একটা চাকরি দিয়েতো আর সন্তানদের সমান ভাবে সব দেয়া যায় না বলো,

-বাবা কে বল্লো তুমি আমাদের সমান ভাবে সব দিতে পারো নি,,আমরা কোন ভাই বোন কি কখনো তোমার কাছে নালিশ করেছি এই নিয়ে(বলতে বলতে বৈঠক খানায় প্রবেশ করলো নির্ঝরিণী)

মাসুম ফারুকি- হুম এই দিক থেকে আমি খুব লাকি,আমার তিন রাজকন্যা কোন দিন আমার কাছে কোন কিছুর অভিযোগ করেনি

নির্ঝরিণী – তাই তো বলি বাবা চিন্তা করো না,শরির খারাপ হবে,পরে আমাদের কি হবে বলতো

মাসুম ফারুকি, স্বস্নেহে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন

আয়ান এসে বল্লো
– বাবা আমি দেখেছি তুমি ঐ শাঁকচুন্নি কে আদর করেছো, আমি তোমার একটা মাত্র ছেলে বাবা কোথায় আমাকে বেশি আদর করবে তা না তুমি শাঁকচুন্নি দের বেশি আদর করো

মাসুম ফারুকি- আয় বাবার কাছে আয়
ফাতেমা বেগম ছেলে মেয়েদের পাগলামি দেখে বল্লো,দুইজন বাবা কে নিয়ে আহ্লাদ করতে এসেছে,আর একজন সারাদিন বইয়ের বিতর ডুবে থাকবে

আয়ান- মা বুক ওয়ার্ম এর কথা বলো না তো,বড় আপু বিয়ের আগে আমাদের নিয়ে গল্প করতো গুরতে যেত,আর ঐ বই ফেত্নি কোন দিন আমাদের সাথে কথা পর্যন্ত বলে না ঠিক করে

মাসুম ফারুকি- আমার মিথি মা এমনি একটু শান্ত স্বভাবের

নির্ঝরিণী – বাবাহ আবার তুমি মেঝো আপু কে ভালো বললে,যাও তোমার সাথে কথা নেই,

ফাতেমা বেগম- আমি গিয়ে দেখি মিথিলা কি করছে,

আয়ান- দেখ গিয়ে পড়তে পড়তে বইয়ের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে

ফাতেমা বেগম বেরিয়ে এলেন, স্টাডি রুমে এসে দেখে সত্যি ঘুমিয়ে আছে মিথিলা,একটু অবাক হলেন ফাতেমা বেগম এই সময় তো মিথিলা ঘুমায় না তা হলে

মিথিলার গায়ে হাত দিয়ে ফাতেমা বেগম আতকে উঠেন মিথিলার জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে
জ্বর এতো বেশি যে মিথিলার হুস নেই
ফাতেমা বেগম সবাই কে ডেকে আনলেন
মাসুম ফারুকি ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন মিথিলা কে নিয়ে

মিথিলা কে শুইয়ে দিলো বিছানায় এনে
ডাক্তার এসে দেখে গেলো মিথিলা কে
সারা রাত সবাই মিথিলার পাশে জেগে ছিলো

রাতে মিথিলার জ্বর আর ও বেড়ে যায়, জ্বরের ঘোরে মিথিলা বকছে

নির্ঝরিণী হাসছে মিথিলার অবস্থা দেখে

ফাতেমা বেগম মেয়েকে ধমক দিয়ে বললেন
-এতে হাসির কি আছে

নির্ঝরিণী তবু ও হাসি মুখে আয়ান কে বল্লো
– ভাই কান পেতে শুন আপি জ্বরের ঘোরে পড়ছে

আয়ান- হা হা হা বলিস কি দেখি তো
হা হা হা আপি তো সন্ধিবিচ্ছেদ করছে
ফাতেমা বেগম ধমক দিয়ে আয়ান কে আর নির্ঝরিণী কে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলো

তার পর নিজে মেয়ের পাশে শুয়ে পড়লো
মাসুম ফারুকি- তুমি তা হলে আজ এখানেই ঘুমাও আমি বরং যাই
ফাতেমা বেগম – হুম ঠিক আছে

সকাল আট টায় মিথিলার ঘুম ভাংগে জ্বর এখন আর নেই
আয়ান হেসে হেসে জিজ্ঞাস করলো
– কিরে আপি এখন কেমন লাগছে,

মিথিলা- হাসছিস কেনো

নির্ঝরিণী – বারে হাসবে না,তুই জ্বরের মধ্যে থেকে ও পড়তে পারিস

আয়ান – তা ও কি এই সেই পড়া সন্ধিবিচ্ছেদ করছিলি

মিথিলা কিছু বল্লো না,মুখ ঘোমরা করে বসে আছে
ফাতেমা বেগম মিথিলার জন্য নাস্তা নিয়ে এসে দেখলো আয়ানরা মিথিলার রুমে

ফাতেমা বেগম- তোরা এখানে কি করছিস যা এখান থেকে

আয়ান- কিছু করছিনা মা,কিছু বলছিলাম আর কি হি হি হি

ফাতেমা বেগম- আবার হাসছিস যা তো
নির্ঝরী যা এখন,মেয়েটা কে ডিস্টার্ব করিস না তোরা
মুচকি হেসে নির্ঝরিণী আর আয়ান বেরিয়ে গেলো

ফাতেমা বেগম মিথিলা কে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বল্লো
– এখন আর বসে থাকিস না মা,শুয়ে থাক, পরিক্ষার আগে আগে সুস্থ হতে হবে তো

মিথিলা- মা ইংরেজি বই টা দিয়ে যাও তো

ফাতেমা বেগম- এখন পড়তে হবে না মা,একটু চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাক

মিথিলা- ঠিক আছে মা তা হলে বাংলা বই দাও একটু চোখ বুলিয়ে নিবো

ফাতেমা বেগম হেসে।বল্লো
– সত্যি তুই গ্রন্তকীট

মিথিলা- মা তুমি ও
ফাতেমা বেগম বই দিয়ে বল্লো,এই নে আমি যাই কিচেনে কাজ আছে
মিথিলা বই নিয়ে শুয়ে পড়লো

to be continue

খেলাঘর পর্ব-১

0

খেলাঘর পর্ব-১
লেখা- সুলতানা ইতি
ওহ হো মিথিলা খাবার টেবিলে ও বই নিয়ে এলি, প্লিজ খাওয়ার সময় অন্তত বইটা সাথে রাখিস না

মিথিলা- বাবা আর পঁচিশ দিন বাকি পরিক্ষার, বুঝো না কেনো সব পড়া বাকি রয়ে গেছে

কথা হচ্ছে মাসুম ফারুকি আর তার মেয়ে মিথিলার মাঝে,
এর মাঝে যোগ দিলো মিথিলার মা ফাতেমা বেগম
– তোমার মেয়ে সারা বছর গল্প উপন্যাস নিয়ে ব্যাস্ত থাকে এই পরিক্ষা আসলে হুস থাকে না বুঝেছো

মাসুম ফারুকি- আমার মিথিলা মা ই ভালো সব সময় কোন না কোন বই নিয়ে ব্যাস্ত থাকে এটা ভালো না, ভালো তো

ফাতেমা বেগম- তোমার মেয়েরা তোমার কাছে এমনি স্বর্গ, কই তোমার আদরের দুলালি ছোট নির্ঝরিণী এখনো নাস্তার টেবিলে আসেনি,কিছুক্ষন পর এসে বলবে আমার সময় নেই আমি যাই

মাসুম ফারুকি- তুমি তো শুধু আমার মেয়েদের কে ই দেখবা,তোমার রাজপুত্র আয়ান যে এখনো ঘুম থেকে উঠেনি সেটা কে দেখবে

মিথিলা- ওহ মা,বাবা তোমরা থামবে মনোযোগ দিয়ে পড়াটা দেখতে দাও তো

ফাতেমা বেগম-তোমার বিদুষীনি মেয়ের জন্য এখন কথা ও বলা যাবে না

এমন সময় আয়ানের এন্ট্রি
আয়ান- মা, বাবা প্রতিদিন নাস্তার টেবিলে তোমাদের ঝগড়া না হলে হয় না, না

ফাতেমা বেগম ছেলের প্লেটে নাস্তা তুলে দিতে দিতে বল্লো
তোর এক দার্শনিক বোন,আরেক গাইকা বোন তাদের নিয়ে কথা হচ্ছে দেখ আরেকজন খেতে বসেছে তবু ও তার সাথে বই

এবার মিথিলা বই বন্ধ করে দিলো
আর রাগি চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– প্রব্লেম কি তোদের এখন আমি পড়তে ও পারবো না তোদের জন্য

আয়ান – আমি আবার কি করলাম,যা বল্লো মা ই তো তোকে বল্লো,মাকে কিছু বলতে না ফেরে এখন আমাকে নিয়ে ছুটছে হুহ

আমি কিন্তু সবার কথা শুনেছি বিচার টা তা হলে আমিই করি, বলতে বলতে ডাইনিং এ আসলো নির্ঝরিণী

মিথিলা- তোকে এখানে দাদি সাঝতে হবে না, চুপ চাপ খেয়ে পড়তে বস,না পড়ে স্কুলে যেতে পারবি না

নির্ঝরিণী – তুই আর যা ই বলিস আপু আমি আর ভাই তো তোর মতো গ্রন্থকীট হতেই পারবো না

আয়ান- ঠিক বলেছিস নির্ঝরী দেখনা মাত্র এস এস সি পরিক্ষা দিবে, আর এই বয়সে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা উঠেছে

আয়ানের কথার মাঝখানে নির্ঝরিণী বল্লো
-ঠিক বলেছিস ভাই আমি ভাবছি আপু বুড়ো কালে কি করবো বুড়োকালে তো মনে হয় চশমা দিয়ে ও দেখতে পাবে না তখন বলবে আল্লাহ হস্তে আমাকে বই টা পড়ে শুনান না,

নির্ঝরিণীর কথা শেষ হতে ই নাস্থার টেবিলে হাসির ধুম পড়ে গেছে

মিথিলা রাগ করে উঠে গেছে
রুমে এসে মিথিলা ধুম করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বালিশে মুখগুজে কান্না শুরু করে দিলো, মিথিলার এই এক অভ্যাস কেউ তাকে নিয়ে হাসা হাসি করে সে সহ্য করতে পারে না, সে আপন হোক আর পর,

মিথিলা চলে যাবার পর খাবার টেবিল একেবারে নিরব হয়ে গেছে নিরাবতা ভাংলো আয়ান
– মা অনেক দিন হয়েছে বড় আপুদের বাসায় যাই না,,,

ফাতেমা বেগম- তো এখন পড়া ফাকি দেয়ার জন্য বড় বোনের বাসায় বেড়ানো ধান্ধা, স্কুল বন্ধ হোক তার পর না হয় জিমির বাড়ি তে যাওয়া যাবে, এখন জিমি আসছে কয়দিন পরে

মায়ের কথা শুনে আয়ান মুখ কালো করে ফেল্লো,(সারাদিন পড়া আর পড়া,ভাবলাম একটু কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি তা না)

নির্ঝরিণী – মা জিমি আপু আসছে? কবে কখন

মাসুম ফারুকি স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বল্লো
– কাল ই তো জিমির সাথে কথা বলেছি ও যে আসবে এটা তো বলেনি

ফাতেমা বেগম- আজ সকালেই ঠিক করেছে আসবে,
এভাবে টুকী টাকি আলোচনার মাঝে খাবার শেষ হয়

ফাতেমা বেগম খাবার নিয়ে মিথিলার রুমে যায়
গিয়ে দেখে মিথিলা বালিশে মুখ গুজে আছে
মেয়ে যে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে এটা ফাতেমা বেগম দেখেই বুঝতে ফেরেছে,
বাকি দুই মেয়ের থেকে এই মেয়ে একদম আলাদা তার খুব ছাপা স্বভাবের, তার জগত ঝুড়ে নানারকম বই ছাড়া আর কিছুই নেই
ফাতেমা বেগম আলতো করে মেয়ের পিঠে হাত রাখে

মিথিলা হাতের ছোয়া পেয়েই বুঝেছে হাত টা কার
মিথিলা- মা আমি খাবো না, তুমি যাও তো, বালিশ থেকে মুখ না তুলেই বলেছে মিথিলা

ফাতেমা বেগম- ভাই বোনের সাথে রাগ করতে নেই মা খেয়ে নে,,ছোট ভাই বোন থাকলে এই রকম হয়

মিথিলা এবার বালিশ থেকে মুখ তুল্লো
মিথিলা- মা ওরা আমার চশমা পরা নিয়ে হাসা হাসি করে কেনো, চশমা কি আমি সখ করে পরি নাকি, বিশ্বাস করো মা চশমা ছাড়া আমি বইয়ের অক্ষর চোখে দেখি না

ফাতেমা বেগম- আমি জানি মা,ওরা তো দুষ্টুমি করে,তুই তো বড় মা তোকে এই টুকু মানতে হবে,নে হা কর মা খাইয়ে দিচ্ছি তোকে

এমন সময় আয়ান এলো মিথিলার রুমে
আয়ান- মা তুমি আপুকে খাইয়ে দিচ্ছো কই আমাকে তো এই রকম খাইয়ে দাও না

ফাতেমা বেগম- যা তো মেয়েটার পিছনে সারা দিন তোরা দু ভাই বোন পড়ে থাকিস,

আয়ান- ঠিক আছে যাচ্ছি,তার পর মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো এই যে মেঝো আপ্পি মায়ের কলিজার টুকরা আপনার বান্ধুবী আসছে ড্রইং রুমে বসে আছে, রুমে আসতে বলবো

মিথিলা- কে অরনি? পাঠিয়ে দে তা হলে
আয়ান চলে যায়,কিচ্ছুক্ষন পর অরনি রুমে আসে

অরনি- কিরে তুই এখন ও নাস্তা করিসনি,স্কুলে যাবি না

মিথিলা- না পরিক্ষার আর অল্প বাকি,ভাবছি এখন বাসা থেকেই পড়া শুনা করবো

অরনি- তা বললে শুনছি না
এদিকে ইহানরা সবাই বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে ব্যাস্ত,আর তুই বই নিয়ে,তা হলে বিদায় অনুষ্ঠানে বাকি কাজ কে করবে

মিথিলা- কেনো তুই তো বললি ইহান রা সবাই করছে,তা হলে সেখানে আমার কি কাজ

অরনি- ইহান দের হ্যাল্পিং হ্যান্ড লাগবে না?

মিথিলা- আমি পারবো না

অরনি- ঠিক আছে কাজ না করিস সাথে তো থাকবি চল রেডি হয়ে নে

মিথিলা- দোস্ত দেখ এই কিছুদিন পরেই পরিক্ষা এখন বিদায় অনুষ্ঠানের পাল্লায় পড়ে যদি না পড়ি তা হলে এক্সাম দিবো কি করে,

অরনি- তুই যাবি কি না বল,তুই যদি এখন আমার সাথে না যাস তা হলে তোর সাথে আমার কোন কথা নেই,আর কোন দিন কথা হবে ও না

মিথিলা- এটা কিন্তু ঠিক নয় অরু তুই আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছিস

অরনি হেসে বল্লো
– ব্ল্যাকমেইল থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তা হলে ব্ল্যাকমেইল ই ভালো

মিথিলা- ফাজি ব্ল্যাকমেইলার
মিথিলা আর অরনি বেরিয়ে পড়লো,

to be continue

তিনি এবং ও ! ৩৫ . (শেষ পর্ব)

0

তিনি এবং ও !

৩৫ .
(শেষ পর্ব)

বিছানার উপর ফেলে রাখা মোবাইল থেকে সুফি সাহেবের কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে । রেকর্ড করে রাখা প্রত্যেকটি কথা তার ভিতরে নতুন ভাবে আগুনের সৃষ্টি করছে।
২ বছর যাবত সে যে পাপের জন্য নিজেকে দোষী ভেবেছে ,দিনের পর দিন সে শুধু নিজেকে সব হাসি আনন্দ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে ; সে পাপ সে করেই নি।রেকর্ড গুলো সে বারবার শুনছে কোথাও যদি একটু মিথ্যে সে খুঁজে পায় ,তাহলে নিজের সাথে করা অন্যায়কে সে ক্ষমা করতে পারতো ।
না কোনো মিথ্যে সে খুঁজে পাচ্ছেনা।
অদ্রি চায়ের ট্রে নিয়ে যখন রুমে আসলো তখন নিদ্রকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল। কারণ টা অদ্রি কিছুটা অনুমান করতে পারছিলো কিন্তু কীভাবে কী শুরু করবে অথবা প্রশ্ন করবে ভেবে পাচ্ছিলো না।
নিদ্র তার শব্দ গুলোকে একত্রিত করতে পারছিলো না।
একজন মেয়ে ৩ বছর ধরে জানে তার স্বামী একজন ফেরেস্তা সমতুল্য মানুষ। নিদ্র জানেনা অদ্রি আসলে জানে কি জানেনা। তারপরও এরকম তিতা সত্যি সরাসরি কাউকে বলে দেয়াটা সহজ না। মিথ্যে বলাটাই সহজ। সত্যি বলাটাই কঠিন।
কীভাবে কী বলবে ভাবতে ভাবতেই অদ্রি চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। ২২ বছরের যুবতীর মাঝে সে অন্য এক নতুন সত্ত্বা দেখতে পাচ্ছে। এতদিন যার অস্তিত্ব অদ্রির মধ্যে ছিলোনা! হয়তোবা ছিলো সুপ্ত অবস্থায়। বসন্তের হাওয়ায় সে তার সুপ্ত অবস্থার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে।
বসন্ত টা কি সে? এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই। জানে অদ্রি, জানে তার নতুন সত্ত্বা। চায়ের মগে চুমুক দিয়ে নিদ্র বলল
– আপনি কোথাও বেড়াতে যান না?
– নাহ।
অদ্রি চায়ে চুমুক দিয়ে জানালার ধার ঘেঁষে দাঁড়াল। নিদ্র , অদ্রির বিপরীতে দাঁড়াল।
নিদ্র হাসিহাসি মুখে বলল
– চলুন দূরে কোথাও ঘুরে আসা যাক।
– আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন নাকি?
– কেনো? আপনার কি বাসার বাহিরে যাওয়া নিষেধ?
– বিধবা আমি। অনেক বড় পাপী আমি।পাপ আর এ জন্মে পিছু ছাড়বেনা।
নিদ্রের হঠাৎ করেই মেজাজ বিগড়ে গেলো। পাপী কী কারণে? ওরকম নরপিশাচ এর জন্য ?
নিদ্র বলল
– সুফি সাহেবের বাগান আসলেই সুন্দর।
অদ্রি কেমন যেন মুশরে গেলো। তারপরও সে ক্ষীণ স্বরে বলল
– হ্যা, তার পরম ভালবাসা।
– সুফি সাহেব বিয়ে করেছেন, ছোট্ট একটা ছেলেও আছে।আচ্ছা অদ্রি আপনার বাচ্চাকাচ্চা ভালো লাগেনা? ১ বছরের দম্পতি জীবনে একটা ছোট্ট প্রাণের ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করেনি?
অদ্রি গলা জড়ায় আসছে এই প্রশ্নের উত্তর সে কখনও দিতে পারবেনা। এর আগে নিদ্রকে পরোক্ষভাবে বলেছে কিন্তু ……
নিদ্র অদ্রির মুখের উপর তাকিয়ে বলতে শুরু করলো
– সে আপনাকে কখ‌নো ভালবাসেনি আর আপনাকে বিয়ে করেছিলেন সমাজের প্রশ্নোত্তর দেয়ার জন্য। হয়তোবা শেষ বয়সের ভরসার কারণে।
আপনাকে আমি বলে বুঝাতে পারবোনা। আমি রেকর্ড করে এনেছি।
প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে রেকর্ড অন করে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
এতদিন একটা বিশ্বাস নিয়ে সে ছিলো আর কিছু সময়ের ব্যবধানে সেটাও ভেঙে গেলো।
বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করতেই হয়।
স্বামীর প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ ছিলো এখন সেটা আর নেই। কর্পূর এর মতো উড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত সে ঠকে এসেছে !
লিলিকে দিয়ে মোবাইল নিদ্রের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে সে দরজা ভালো করে লাগিয়ে দিলো।
একা থাকার খুব প্রয়োজন তার।
রাতে নিদ্র আর লিলি খাবার খেলো। অদ্রিকে শত চেষ্টা করেও খাবার টেবিল পর্যন্ত আনতে পারলোনা।
অদ্রি সারারাত ধরে শুধু চিন্তাভাবনা করেই কাটালো। আফসোস করা ছাড়া উপায় নেই। সেদিন সুফি সাহেবকে যদি সে কথা বলতে দিতো তাহ‌লে এরকম বিশ্রী জীবন তাকে যাপন করতে হতোনা।
মা বাবা তাকে কতোটা ভুল বুঝেছে, কতোটা খারাপ ভেবে এসেছে।
তার স্বামী অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট ছিলো। ড্রাগ এডিক্টেড, নিষিদ্ধ পল্লী …….
আর তার জন্য সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে, বাসার বাহিরে কখনো পা রাখেনি।
সে বেঁচে থাকতেও শান্তি দেয়নি এবং মরার পরও চায়নি আমি শান্তিতে থাকি।
লিলি সকাল ৯ টায় ঘুম থেকে উঠে চায়ের পানি চুলায় দিয়ে নিদ্রের ঘরের দিকে গেলো।
সকালে কী নাস্তা করবে না জানলে সে বানাবে কীভাবে? অদ্রিকে তো এখন কোনোভাবেই ডেকে পাওয়া যাবেনা।
নিদ্রের ঘরের সামনে এসে লিলি অবাক হয়ে গেলো। দরজা হা করে খোলা, ব্যাগপত্র কিছুই নেই। সে ঘরের মধ্যে ঢুকে বিছানার উপর পরে থাকা চিরকুট খুঁজে পেলো।
কয়েকটা লাইন লেখা আর নিচে বামপাশে ছোট্ট করে নিদ্র লেখা।

সেই ভোরবেলা সে বের হয়েছে কিন্তু এখনো ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারলো না।
রশিদ সাহেবকে না জানিয়ে আসাটা ঠিক হয়নি।
১১ টায় প্লেন আকাশে উড়াল দিবে আর এখন ১০ টা বাজে। ট্রাফিক জ্যামের কারণে তার এই অবস্থা।
বাংলাদেশের প্রথমদিনেও তাকে জ্যামে পরতে হয়েছিল।
নাজমুল সাহেব বেশ অবাক হচ্ছেন তার ছেলে এতো তাড়াতাড়ি ফিরে আসছে কেনো?
এদিকে রশিদ সাহেবের মোবাইল সুইচ অফ বলছে।
নিদ্রকে বিভিন্ন ভাবে আসার কারণ টা জানতে চেয়েছে। কিন্তু নিদ্র তার প্রত্যেকটি উত্তরে একই কথা বলেছে
– সে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়।

লিলি চায়ের পানি ফেলে দিলো। ফ্রীজে রাখা বাসি খাবার গরম করে খেয়ে নিলো। চিঠিটা সে যত্ন করেই রেখে দিয়েছে। আপামনি যখন বের হবেন তখন তাকে দিয়ে দিবে।

৪ মাস পর …….

নিদ্রের দাদী চিঠি হাতে বসে আছেন বিছানার উপর।তার পাশে নিদ্র গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
চিঠিটা নিদ্রের নামে এসেছে বাংলাদেশ থেকে। তাও একজন মেয়ের চিঠি। নামটাও নিদ্রের সাথে মিলে যায়। কিন্তুটা মেয়েটা সম্পর্কে না জেনে তার অস্থিরতা কমছেনা।
অনেক ডাকাডাকির পর নিদ্র ঘুম থেকে উঠে বসলো। কিছু বলার আগেই চিঠিটা তার হাতে দিয়ে বলল
– মেয়েটা কে রে? এরকম নিমন্ত্রণ করেছে তোকে।
চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো। মাত্র দুটো লাইন লিখা।
” বাসায় নতুন বাবুর্চি রেখেছি, চা টা দারুণ বানায় সে। একদিন আসবেন, চায়ের দাওয়াত রইলো। ”
ইতি
অদ্রি।
বিঃ দ্রঃ বর্ষাকাল চলে এসেছে তার কালো মেঘের ভেলা নিয়ে।

নিদ্র মুচকি হেসে চিঠিটা ভাজ করে বালিশের নিচে রেখে দিলো।
তার লিখা ছোট্ট চিরকুট লিখে রেখে এসেছিল। কয়টা লাইন তার জানা নেই কিন্তু শব্দগুলো তার স্পষ্টভাবে মনে আছে।

অদ্রি,
বৃষ্টির সেই রাতে আপনার স্পর্শ আমার ঠান্ডায় জমে যাওয়া মন টাকে উষ্ণ ভাবে ছুঁয়ে দিয়েছিল। মন বারংবার সেই উষ্ণ ছোঁয়ায় মেতে থাকতে চায়। প্রিয় সেই ……

নিদ্র, ভালো থাকবেন।

সমাপ্তি ???

© Maria Kabir

তিনি এবং ও ! ৩৪.

0
তিনি এবং ও ! ৩৪.
তিনি এবং ও ! ৩৪.

তিনি এবং ও !

৩৪.
হলুদ রঙের লুঙ্গি আর নীল রঙের হাফ হাতা গেঞ্জি পড়ে নিদ্র খাবার টেবিলে অধীর আগ্রহে বসে আছে। খুব খিদে পেয়েছে, সেই সকাল থেকে এই পর্যন্ত সে না খাওয়া। দুপুর ২ টা বেজে ২০ মিনিট।
সুফি সাহেবের বাসা থেকে রীতিমত সে পালিয়ে এসেছে। সুফি সাহেবের স্ত্রী তাকে খুব সাবধানে বাসা থেকে বের করেছেন। নিদ্র রাস্তায় পা দেয়ার পর সুফি সাহেবের স্ত্রী মাথা নিচু করে বললেন
– কিছু মনে করবেননা না খাইয়ে আপনাকে যেতে দিচ্ছি। মৌরি কোনোভাবে যদি জেনে যেত আপনি চলে যাচ্ছেন, তাহলে ও আপনাকে যেতে দিতো না। হয়তোবা আপনার সাথেই রওনা হতো।
নিদ্র কী বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছিলোনা।সুফি সাহেবের স্ত্রী বুঝতে পেরে বললেন
– আপনি এখনি যান। ও চলে আসলে বিপদে পড়বেন।
এতো সকালে এসব গ্রাম্য এলাকায় রিক্সা, ভ্যান কিছুই পাওয়া যায়না। শহরের বাড়ি বিক্রি করে এরকম স্থানে আসার কারণ কি অনুশোচনা?
হতেও পারে,আবার নাও পারে। নিদ্রকে এই মানুষ টাকেই বিশ্বাস করতে হবে। তাছাড়া কোনো উপায় নেই। অদ্রি আর ইখলাস সাহেব সম্পর্ক এ অনেকেই জানতে পারে কিন্তু অদ্রি তাকে সুফি সাহেব ছাড়া কাউকে চিনেন না। সুফি সাহেবও তাকে ঘটনা বলেছেন কিন্তু চরিত্রের নাম বলেননি। হয়তোবা সুফি সাহেব চাননা তাদের সাথে আমার দেখা হোক বা এমন কোনো সত্য যেন আমি জানতে পারি। ইখলাস সাহেব যে মানুষ টা সুবিধার ছিলেননা সেটা তো বাবার বন্ধুর কাছ থেকেই জেনেছি।
নিদ্র চিন্তার খেই খুঁজে পাচ্ছেনা। সে যা শুনেছে তা কি সত্যি?
অদ্রিকে জানাবে নাকি জানাবে না? এভাবে একটি মেয়েকে অন্ধকারে ডুবে যেতে দেয়া যায়না। কতোই বা বয়স এই মেয়ের। নিদ্রের ২-১ বছরের বড়। এই বয়সে তো আজকালকার মেয়েরা বিয়েই করেনা আর তো বিধবার জীবন!
লিলি রান্নাঘরের দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
হলুদ রঙের লুঙ্গী?ভাগ্যিস তার গায়ের রঙ ফর্শা, তা না হলে খাটি খ্যাত লাগতো।
লিলি আজকাল একটা বিষয় খেয়াল করেছে, অদ্রি বেশ হাসিখুশি থাকে। আগের মতো গুমোট হয়ে থাকেনা। সাদা গোলাপ নিজ হাতে ছিঁড়ে এনে ঘর সাজায়। সাদারঙ টা সে পছন্দ করছেনা।
হালকা গোলাপি বা হলুদ বা সবুজ রঙটা তাকে টানছে।
সুফি সাহেব বারান্দায় একমনে কী যেন ভাবছেন।
সত্য বলতে ভাবতে হয়না বেশি বা পরিকল্পনাও করতে হয়না। আর মিথ্যে বলতে হলে আটঘাট বেধে নামতে হয়। মিথ্যে বোকা মানুষ বলতে পারেনা, মিথ্যা বলতে হলে চালাকচতুর হতে হয়। যেন সেটা ধরা না পড়ে।
সুফি সাহেব মিথ্যে বলতে তেমন একটা পছন্দ করেননা। কিন্তু মাঝেমধ্যে বলতে হয়।
ইতি কে সেই অফিসে ডেকে এনেছিলেন। অবশ্য কাজটা সে পরোক্ষভাবে করেছিলেন। নিষিদ্ধ পল্লীর সেই ইতি অনেক বেশি সুন্দরী ছিলো। তিনি টাকা খাইয়ে ওই মেয়েকে ফুসলেফাসলে এনে ছিলেন।
ফুসলেফাসলে কথাটা ঠিক না। অতি মাত্রায় ভালবাসতো মেয়েটি ইখলাস সাহেবকে। ইখলাস সাহেবও তাই কিন্তু তিনি গ্রহণ করবেন না স্ত্রী হিসেবে? কেনো রে প্রয়োজন তো একসময় ঠিকই মিটিয়েছেন আর সামাজিক মর্যাদা দিতে সমস্যা?
এরকম ভালবাসার কী প্রয়োজন? যাকে গ্রহণ করতে পারবো না!
সুফি সাহেব চেয়েছিলেন ইখলাস সাহেব আর ইতিকে এক করে দিতে আর অদ্রিকে মুক্তি দিতে। কিন্তু হয়ে গেলো উল্টো।
ইতি ইখলাস সাহেবের সামনেই আত্মহত্যা করেছিলো।
ইতিকে সে সবকিছু দিতে পারবে কিন্তু সামাজিক স্বীকৃতি দিতে পারবেননা। এক কথায় দুই কথায় ইতি ডেড।
ইখলাস সাহেব আমার চালাকি টা কিছুটা হলেও ধরতে পেরেছিলেন তাই তো আমাকে বিশ্রী ফাঁদে ফেলে দিয়ে গেলেন।
টাকা থাকলে গুপ্তচর পাওয়া অসম্ভব কিছুনা। গুপ্তচর অবশ্য এখনো আমার আছে। নিদ্রের পিছনে লাগিয়েছি। আসলেই কি সে অদ্রির শুভাকাঙ্ক্ষী নাকি ধ্বংস কামনাকারী ; জানতে হবেনা তাকে?
মেয়েটাকে সেই তো মুক্তি দিয়েছে। তবে পুরোটা দিতে পারিনি। এখন যদি এই অল্পবয়সী আবেগী ছেলেটা পারে।
দুটি প্রাণের জন্য তার মাঝে কখনওই অনুশোচনা জাগেনা আর জাগবেও না। কারণ, একটি ঠাণ্ডা মাথার শয়তান কে সে ধ্বংস করেছে। কোনো মানুষ কে সে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়নি। একজন অসুস্থ মানসিকতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ইখলাস সাহেব।
নিজের ফুফুকে সে গলাটিপে হত্যা করেছেন আমার সামনে। আমি কিছুই করতে পারিনি। একজন অসহায় বৃদ্ধা মহিলা যে,এই ইখলাস কে তিলেতিলে বড় করেছে তার নিশ্বাসবন্ধ করে দিতে তিনি পিছুপা হননি।
আমার তখন কিছুই করার ছিলোনা। আমাকে উনি ভীষণ ভাবে আটকে রেখেছিলেন এক বিশ্রী ফাঁদে। অদ্রিকে ফুফু সম্পর্কে জানানো হয়েছিলো – তিনি তার নিজ বাড়িতে চলে গেছেন।
এসব সত্যি আমি ফাঁস করে দিলে আমিই ফেঁসে যাবো।
কী দরকার নিজের পায়ে কুড়াল মারার?
ভালোই তো আছি বউ, বাচ্চা নিয়ে।

অদ্রি হালকা নীল রঙের সালোয়ার
কামিজ পড়েছে। ভেজা চুল গুলো ঘাড়ের এক পাশ দিয়ে এলিয়ে দিয়ে সে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে।
নিদ্র অদ্রিকে বেশিরভাগ সময় এভাবেই দেখেছে। তবে আজকে একটু পার্থক্য আছে। অদ্রির মাথায় ঘোমটা আজ নেই। হালকা নীলে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। নিদ্র দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে আর ভাবছে ঘরে ঢুকবে কি ঢুকবেনা?
অদ্রি বুঝতে পারছে নিদ্র ঠিক তার ঘরের দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
ভিতরে আসছে না কেনো সে তার কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা।

অদ্রির মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ব্যবহার, কথাবার্তা, স্টাইলে। মেয়েটা আসলেই সুন্দর। নিদ্র বলল
– ভিতরে আসতে পারি?
অদ্রি পিছন না ফিরেই বলল
– হ্যা পারেন।
– গল্পগুজব করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আপনাকে দেখে তো সেরকম গল্পের মুডে আছেন বলে মনে হচ্ছেনা।
– যুক্তিটা বলবেন নিদ্র সাহেব?
– উদাসীন হাওয়া যেন আপনার মনের কোণ জুড়ে বয়ে যাচ্ছে।
– তো হাওয়া টা কোথা থেকে আসছে জানেন?
– মনে হচ্ছে আপনার প্রিয় জানালা থেকে।
– আপনার গবেষণা সবসময় ঠিক হয়না সেটা জানেন?
– জানলাম আজকেই প্রথম।
– তো চা না কফি খাবেন?
– খাবো না পান করবো।
অদ্রি উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে। নিদ্র তার চলে যাওয়া দেখছে। চুল গুলো ঢেউ খেলানো, হাঁটার সময় দুলে উঠে অনবরত।

চলবে……..!

#Maria_Kabir

তিনি এবং ও ! ৩৩

0
তিনি এবং ও ! ৩৩
তিনি এবং ও ! ৩৩

তিনি এবং ও !

৩৩.

ভাষাই মানুষের পরিচয় – একটা কথা আছে জানেন তো?
নিদ্রের উত্তরের অপেক্ষা না করে সুফি সাহেব বললেন
– অফিসের মধ্যে এরকম ঝামেলা শুরু হবে আমরা ভাবিনি।মেয়েকে তো ইখলাস সাহেব কোনোরকম বুঝিয়ে অফিস থেকে বের করলেন কিন্তু কর্মচারীরা তাকে আড় চোখে…. মানে বুঝোই তো।
আমাদের সাথে যারা লেনদনে যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যেও ব্যাপার টা ছড়িয়ে গেলো। নিষিদ্ধ পল্লীর যে,ওই মেয়ে এটা জানতে কর্মচারীদের সমস্যা হয়নি। কারণ, সবাই তো আর সাধু না।
ইখলাস সাহেবকে অনেক কথাই শুনতে হয়েছে। কেউ ঠাট্টাতামাসা করে বলেছে আবার কেউ ঘৃণাবশত হয়ে বলেছে।
নিদ্র বলল
– অদ্রির কানে যায়নি?
– অদ্রিকে অফিসের কেউই কোনোদিন দেখেনি, আমি ছাড়া। সুফি সাহেব জানতেন, সত্য কোনোদিন গোপন থাকেনা।এই কারণেই তিনি অদ্রিকে আড়ালে রেখেছিলেন। শেষ বয়সের ভরসা হিসেবে।
– আপনি কেনো অদ্রিকে বলেননি?
– বলার কোনো উপায় আমি পাইনি। সেদিনই তিনি ওই মেয়ের কাছে যান। কী হয়েছিলো আমি জানি না।
ইখলাস সাহেব প্রায় ১ সপ্তাহ অফিসে আসেননি। বাসায় ছিলেননা।
অদ্রির সাথেও আমার যোগাযোগ নেই।নিষিদ্ধ পল্লীতে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম, সেই সুন্দরী মেয়ে আত্মহনন করেছেন।
– সে কবে সুইসাইড করেছিলো?
– ইখলাস সাহেবের সুইসাইড করার ৩ দিন আগে। এই হলো ভালবাসা!
– ভালবাসা হলে সে যতোই নোংরা জায়গার মানুষ হোক না কেনো তাকেই জীবনসঙ্গী করতেন।
– দুই নৌকায় পা দিলে যা হয়।
– না। এটা মানায় না। কর্মফল ভোগ করতেই হবে।
– তবে আজব ব্যাপার হচ্ছে সুইসাইড করার আগের দিন তিনি তার সব সম্পত্তি অদ্রিকে দিয়ে যান। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইছিলেন মনে হয়।
– আমার একটা বিষয়ে বেশ খাপছাড়া লাগছে। অদ্রি সত্যিই কিছুই জানতো না?
– আমার জানা নেই। আমি যতটুকু জানি ততটুকুন তোমাকে বলেছি।
– ব্যবসার কী হলো?
– অদ্রি তার অংশটুকু বিক্রি করে দিয়েছে আমিও তার ১ মাস পর বিক্রি করে দিয়ে এক অজপাড়া গায়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম।
মনের মধ্যে অনুশোচনা বোধটা কোনোভাবেই যাচ্ছিলো না। রাতে আমি ঘুমাতে পারতাম না। হুট করেই অদ্রি বাড়িঘর বিক্রি করে উধাও হয়ে গেলো।অনেক খুঁজেছি ওকে। প্রত্যেক মা – বাবার উচিত তার সন্তানকে বিশ্বাস করার।সন্তান যতোই ভুল করুক না কেনো মা – বাবার উচিত তার সন্তানকে স্নেহে আগলে রাখা। এতে সন্তান প্রথমে ভুল করলেও পরবর্তীতে যেন তা না করে। অদ্রি প্রথমে তার মা – বাবার কাছেই গিয়েছিলো কিন্তু তারা তাকে গ্রহণ করেনি। তাদের কাছে মেয়ের বর ফেরেশতা আর মেয়ে শয়তান। মেয়ের ক্যারেক্টার এর কারণেই নাকি তার ফেরেশতা জামাই আত্মহত্যা করেছেন। গলায়দড়ি দেয়ার আগে অদ্রির মা – বাবার সাথে তার কথা হয়।অদ্রির মা – বাবা কে বলেছে- আমার সাথে নাকি অদ্রির খুব প্রেম চলছে। আমাদের নাকি বিয়ে যেন তারা দিয়ে দেয়।
জানেন নিদ্র, মিথ্যা কে আমি খুব ভয় পাই।
– অদ্রির মা, বাবাকে যে তিনি ফোন করেছিলেন সেটা জানলেন কীভাবে? পুলিশ ইনভেস্টিগেশন?
– পুলিশ? এলাকার পুলিশ তার আশেপাশের এলাকার পুলিশ তাকে ভালো ভাবেই চিনতেন। এলাকার দারোগা তাকে কতোবার যে নিষিদ্ধ পল্লী থেকে ধরেছেন। টাকার জোড়ে বেঁচেছেন। আর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী তার মৃত্যু গলায়দড়ি দিয়েই। গলায় গভীর দাগ ছিলো।
ওনার এই কাণ্ডের পর আমাকে আর অদ্রিকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আমাদের মাঝে সম্পর্ক আছে এই কারণে আমরা ইখলাস সাহেব মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি – এই মর্মে অদ্রির বাবা কেস করেছিলেন।
– আমার প্রমাণের অভাব ছিলো কিন্তু টাকার অভাব ছিলোনা।কেস থেকে রেহাই পাই কিন্তু অনুশোচনা থেকে পাইনি আজও।
উপর দিয়ে দেখাই সুখী একজন মানুষ আমি। কিন্তু আমার ভেতর যে ঝড় চলছে আজও সেটা কেউই দেখেনি। আর দেখতেও দিবোনা।
মাঝেমধ্যে ভাবি, আমি কেনো ইখলাস সাহেবের কথা শুনে অদ্রির সাথে মেলামেশা শুরু করেছিলাম? না করলেই তো আমাকে অনুশোচনার আগুনে জ্বলতে হতোনা। পরে ভাবি, আমি না হয় বেঁচে যেতাম কিন্তুকিন্তু……
– কী?
– অন্য কাউকে দিয়ে অদ্রির বড় কোনো ক্ষতি করতে পারতেন। আমি তো তাকে বন্ধু, ছোটোবোনের চোখে দেখেছি। ওই খাঁচা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছি কিন্তু ব্যর্থ।
– আমি কি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি?
– সেটা আপনার ইচ্ছা। আমার জানা যতটুকু ছিলো বলেছি।
– ওই বুড়িকে কোথায় পাবো?কেসের সাক্ষী হিসেবে তো ওনাকে…….
– ইখলাস সাহেবের মৃত্যুর দেড় মাস আগেই তিনি ওই বাসা ছেড়ে চলে যান।
– তার বাড়ির ঠিকানা?
– তিনি ইখলাস সাহেবের ফুফু ছিলেন। আপন কিনা সেটা অদ্রি ভালো জানে।
আর কিছু জানার আছে?
– আপাতত নেই। আগে সমীকরণ মিলিয়ে নেই।আমি কাল খুব ভোরে চলে যাবো।
– তাই ভালো মৌরি থেকে পালানো উচিৎ।
ওরকম অসুস্থ মেয়েকে আমি কারো ঘাড়ে চাপাতে চাইনা।

অদ্রি তার ঘরে হিসাবের খাতা নিয়ে বসেছে। আজকেই তাকে শেষ ছক কেটে ফেলতে হবে।
আর বেশি সময় নেয়া ঠিক হবেনা।

চলবে……..

#Maria_kabir

তিনি এবং ও! ৩২.

0
তিনি এবং ও! ৩২.
তিনি এবং ও! ৩২.

তিনি এবং ও!

৩২.
– আপনাকে মৌরি পুকুরে চুবিয়েছে?
বেশ গম্ভীর স্বরেই প্রশ্নটা সুফি সাহেব নিদ্রকে করলেন।
নিদ্র তীক্ষ্ণ স্বরে বলল
– না, সেরকম কিছু করলে জানতে পারতেন।
সুফি সাহেব সিগারেট ফেলে দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বলে থাকা শিখার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিছু একটা ভাবছেন।
ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে নিলেন।
নিদ্রের কাছে সুফি সাহেবের এরকম ঢিলেমি একদম সহ্য হচ্ছেনা। তারপরও কিছুই করার নেই তার। তারই প্রয়োজন বেশি। আর মানুষ টা আজ খুব অসুস্থ, সারাদিন কিছুই সে খেতে পারেননি।
নীরবতা মানুষ কে কখনো খুব জ্বালায়। কখনো আরাম দেয়। কিন্তু এই মুহূর্ত তাকে খুব জ্বালাতন করছে।
সুফি সাহেব চায়ে লম্বা চুমুক দিয়ে বললেন
– আমার মা সেইসময় খুব অসুস্থ। মায়ের অসুস্থতা নিয়ে আমি খুব চিন্তিত তার সাথে আবার অদ্রির বিষয়টা যোগ হয়। আমি প্রথমে তো না করলাম কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, খারাপ মানুষের অভাব এই পৃথিবীতে নেই। আমি না হয় ইখলাস সাহেবকে না করলাম কিন্তু সে তো টাকার বিনিময়ে অন্য কাউকে ব্যবহার করতে পারে। কী করবো ভেবে কূল পাচ্ছিলাম না। এরকমভাবে অন্য একটা মেয়ের সাথে আমি? মিলাতে পারছিলাম না।
সুফি সাহেব আবারো চায়ে চুমুক দিয়ে চোখ বুজে বসে রইলেন।
চোখ বুজা অবস্থায় বললেন
– আমি একটা মাস্টারপ্ল্যান করলাম। অদ্রির সাথে মিশবো ইখলাস সাহেবের প্ল্যান সাকসেসফুল করার জন্য না। ইখলাস সাহেবের কুকীর্তি প্রকাশের জন্য।
নিদ্র বলল
– অদ্রি যে আপনার কথাই বিশ্বাস করবে এরকম ভাবার কারণ?
– বৎস আমি আটঘাট বেঁধে নেমেছিলাম। কিন্তু ওই বুড়ি ঝামেলা পাকালো। বুড়ি তো পিছু ছাড়েই না।
– ইখলাস সাহেবের প্ল্যান অনুযায়ী তো আশেপাশে কাউকে জানানো যাবেনা। এরকম ছিলো?
সুফি সাহেব মুচকি হেসে বললেন
– তোমার যথেষ্ট বুদ্ধি আছে। আসল কথা হচ্ছে ওই বাড়ির মধ্যে এক বুড়ি ছাড়া চেনাজানা কেউই থাকতো না। দারোয়ান তো মেইন গেটের সাথের রুমের।অদ্রির সাথে কথাবার্তা বলতে শুরু করলাম। বাড়ির মধ্যে ঘুরাঘুরি, দাবা খেলা বেশ চলতো।
অদ্রির সাথে ১ সপ্তাহ কথা বলার পর বুঝতে পারলাম, সে তার স্বামী মহোদয় কে খুব বিশ্বাস করেন।
এই ১ সপ্তাহে আমি অদ্রিকে পরোক্ষভাবে ইখলাস সাহেবের কথা বলেছি।
চায়ের কাপ পাটির উপর রেখে সুফি সাহেব বললেন
– অদ্রি মনে হয় এসব আকার ইঙ্গিত এসব বুঝেনা।মাথার মধ্যে প্যাচ না থাকলে অন্যের প্যাচ ধরা যায়না।
ওই বুড়ি বুঝতে পেরে ইখলাস সাহেবকে বললেন। ব্যাস তেলে বেগুনে সম্পর্ক। তিনি আমাকে ডেকে কী বলেছিলেন জানেন?
নিদ্র বলল
– আমি কীভাবে জানবো? আমি তো ওইসময় ছিলাম না আপনাদের সাথে বা আপনিও ইতোপূর্বে বলেননি।
– সায়ানাইড বিষ চিনো সুফি? তোমার মাকে খুব ভালোবাসো তাই না? আপনি না বড়োই ফাজিল সুফি সাহেব। আমার নামে আমার বউ এর কাছে কুটনামি করা তাই না?
– আপনার মা তখনো জীবিত ছিলো?
– হ্যা, হাসপাতালে ভর্তি ছিলো।তারপর আমার মাস্টারপ্ল্যান চেঞ্জ করলাম। কিন্তু সেটাও কাজে দিলোনা। ইখলাস সাহেব নিজেই লোক ভাড়া করে অদ্রিকে ইভটিজিং করিয়ে ছিলেন। যাতে ভয়ে বাসা থেকে বের না হতে পারে।
আর তার বাসায়ও কোনো আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী আসতো না। কারণ তো জানেনই। না জানলে বলুন আমি এক্সপ্লেইন করি?
– না না আমি বুঝেছি।
– নিষিদ্ধপল্লীর সেই সুন্দরীর কথা মনে আছে? গতকাল গল্পে বললাম।
– জি জি ইখলাস সাহেব তাকে ভালবাসতেন।
– এইতো মনে আছে। ওই মেয়ের কাছে যাওয়াআসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ওই মেয়েও তাকে খুব ভালবাসতো।ইখলাস সাহেব যে বিয়ে করেছেন, সেটা জানতে পারে। তারপর….. তারপর একদিন অফিসে এসে হাজির। ইখলাস সাহেবকে অনেক কথা বলেছিলো। তার সবকয়টি আমার মনে নেই। কিছুকিছু মনে আছে।
আমি আর ইখলাস সাহেব তার অফিসকক্ষে ব্যবসা সম্পর্কিত জরুরি কিছু কাজ করছিলাম।
পিওন এসে বলল – ইখলাস ভাই একজন মেয়েমানুষ আসছে। আপনার লগে দেখা করতে চায়।
ইখলাস সাহেব ইশারায় আসতে বলে দিলেন। যখন ওই মেয়ে কক্ষে প্রবেশ করলো, আমরা দুজনই মোটামুটি অবাক।
ইখলাস সাহেব ঘামতে শুরু করলেন, এসির ঠাণ্ডা বাতাসেও।
জানো তো এসব মেয়েদের লাজলজ্জা কম থাকে।কী না কী বলে বসে তাই আমি উঠে চলে যাবো তখন ইখলাস সাহেব আমাকে বসতে বললেন।
মেয়ে বলল – বিয়ে করে আমাকে ভুলে গেলেন? এখন আর এই পুরাতন দেহের স্বাদ মিষ্টি লাগেনা?
ইখলাস সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললেন
– এসব নিয়ে পরে কথা হবে। এখন তোমার জায়গায় তুমি যাও।
– আপনি আজ প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে আমার কাছে আসেননি। কারণ টা কি জানতে পারি?
– হ্যা পারো। তবে এখানে না।
– কেনো না? আমার দেহের স্বাদ তো নিতে পারেন সেটা স্বীকার করতে পারেননা?
বউকেও তো ভোগ করেন। সেই একই তো হলো। স্বীকারোক্তি তেই তো পার্থক্য।
– বললাম না, এখানে এসব না।
– আমাকে সমাজে আপনার স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তা না হলে…..
– কী করবে শুনি?
– আমি আপনার বাচ্চার মা হতে চলেছি।
ইখলাস সাহেব বেশ বিরক্তি নিয়ে বললেন
– গাঁজাখুরি কথা বলবা না।
– ক্যান? আমার সাথে ঘুমান নাই আপনি?
– আচ্ছা তোমার কতো মাস চলে?
– ৫ মাস।
ইখলাস সাহেব হেসে বললেন
– তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। আমার আজ থেকে প্রায় ১ বছর আগেই ওই ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। ডাক্তারি পরীক্ষায় তাই ধরা পড়েছে। তোমার ওইধরনের কথা হাস্যকর।
জানেন নিদ্র মেয়েটা বেশ আস্তে আস্তে কথা বলছিলো। লাস্টের কথাগুলো শোনার পর মেয়েটার চেহারা দেখার মতো ছিলো। আর মেয়েটাও প্রথমে বলল ১ বছরের বেশি যায় না তার কাছে। পরে বলে ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট। হাস্যকর।
মেয়েটি রাগে ফুপাচ্ছিলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল
– তো ওই মা* খায়েশ মিটাও ক্যামনে?

সুফি সাহেব তিক্ত স্বরে নিদ্রকে বললেন
– বিশ্বাস করেন নিদ্র, আমি ছেলে হয়েও এধরনের বাক্য কখনো বলিনি বা ব্যবহার করিনি।
নিদ্র চোখ বুজে বলল
– আমি তো এই প্রথম শুনলাম।

চলবে…..!

#Maria_kabir