বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1175



খেলাঘর পর্ব-৯

0
পর্ব-৯
পর্ব-৯

খেলাঘর…….
লেখা- সুলতানা ইতি
পর্ব-৯

নায়ার ডাক শুনে রায়হান চৌধরী আর রাইমা চৌধরী ড্রইং রুমে এলো
কিরে ডাকছিস কেনো,রায়হান চৌধরী বল্লো মেয়ে কে উদ্দেশ্য করে

নায়া- জানো ড্যাড তোমার ছেলে প্রেম করছে

রায়হান চৌধরী- বলিস কি
ততক্ষনে সেখানে ইহান চলে আসে
ইহান- আব্বু তুমি আপুর কথা বিশ্বাস করো না

রায়হান চৌধরী স্ত্রী কে বল্লেন- দেখেছো রাই তোমার ছেলে লজ্জা পাচ্ছে আরেহ আমাকে লজ্জা পেলে মেয়ের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে কে

রাইমা চৌধরী- হা ঠিক ই তো,কিরে ইহান বল সে কে,আমরা আজ ই চলে যাবো মেয়ের বাসায়,(মুখে তার হাসি)

ইহান- আম্মু তোমরা বেশি বুঝো,বললাম না এমন কেউ নেই

নায়া- তা হলে তুই আমাকে দেখে মোবাইল লুকালি কেনো

ইহান- যাক ভাবা কোথায় লুকালাম,ভাবলাম তুমি কিছু বলবে,আর তখন আমার মোবাইল হাতে রাখা ঠিক নয় তাই আর কি

নায়া- হয় হয়,ভাই আমার খুব ই বিনয়ী

ইহান- ভিলিব মি,অরনি কে ফোন করতে যাচ্ছিলাম, এই তো

রাইমা চৌধরী ছেলেকে হাত ধরে টেনে এক পাশে নিয়ে যায়
ফিস ফিস করে বলে, সেদিন যে বললি একটা মেয়েকে পছন্দ করিস,মেয়েটার কি খবর এখন

ইহানের মুখে এক খন্ড কালো মেঘ নেমে এলো
– আম্মু ওটা যাষ্ট ফান ছিলো আর কিছু না

রাইমা চৌধরী- ছেলের দিকে তাকিয়ে বল্লো মায়ের চোখ কে ফাঁকি দিচ্ছিস? বলনা বাবা

রায়হান চৌধরী- রাই কি ফিস ফিস করছো,আমাদের কে ও বলো

নায়া- মোম আমি কিন্তু মানছি না,কি কথা বলছো শুনাও আমাদের

ইহান- আম্মু পাগলামি করো না তো,আসো,আব্বু,আপু কি ভাববে

ইহান ফিরে এলো
– আপু চল তোকে এয়ারপোর্ট এ পৌছে দিয়ে আসি,ফ্রেন্ড দের নিয়ে একটা পার্টি থ্রো করেছি সন্ধ্যা বেলায়

নায়া- ইসস তোর ফ্রেন্ডদের সাথে আমার পরিচয় করালি না

ইহান- অন্য একদিন করাবো এখন চলো
ইহান নায়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়

রাইমা চৌধরী- ছেলেটা বড ছাপা স্বভাবের বুঝতেই পারছি না

রায়হান চৌধরী- হুম পরিক্ষার রেজাল্ট নিয়ে মনে হয় খুশি নয় ছেলেটা

রাইমা- কি জানি হবে হয় তো
মায়ের মনতো তা হয়তো অন্য কিছু বলছে আমার মন

রায়হান চৌধরী- কি ভাবছে তোমার মন?

রাইমা- শিওর না হয়ে, বলতে পারছি না, দেখা যাক কি হয়

রায়হান চৌধরী- ওকে রাই. তা হলে আমার এখন উঠতে হচ্ছে,একটা মিটিং আছে

রাইমা- তোমার তো এখন মিটিং থাকবেই, আচ্ছা বলো তো,কতো দিন আমরা এক সাথে সময় কাটাই না সেই কলেজ লাইফের মতো,

রায়হান চৌধরী- সত্যি সেই দিনন গুলো ছিলো অন্যরকম, তোমার সাথে প্রথম দেখা,তার পর প্রপোজ করা,মনে হয় এই তো সেই দিনের কথা,তুমি কতো লজ্জা পেতে তখন, অবশ্যইই এখন লজ্জা তোমার কম নয়

রাইমা চৌধরী বিব্রত হয়ে বল্লো
– তোমার না মিটিং আছে,তাড়া তাড়ি যাও
রায়হান চৌধরী, স্ত্রীর গালে টোকা দিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো,লজ্জা টা তোমার এক বিন্দু ও কমেনি রাই,

ইহান নায়াকে এয়ারপোর্ট এ নামিয়ে দিয়ে, অরনিদের বাড়ির দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো
আজকের পার্টি অরনিদের বাসায় হচ্ছে, অরনির বাবা মা দেশের বাইরে,,তাই অরনি নিজের বাড়িতেই সব এরেঞ্জ করেছে

ইহান পোঁছে গেলো অরনিদের বাড়িতে, সব ফ্রেন্ডসরা উপস্থিত আছে শুধু মিথিলা ছাড়া

ইহানের চোখ শুধু চারিদিকে ঘুরছে, শুধু এক নজর দেখার জন্য
সাম্মি- তোর চোখ যাকে খুঁজছে সে আসেনি, অরনি অনেক করে রিকুয়েস্ট করেছে আমি করেছি,,রাহি করেছে,তার একটা ই কথা সে আসবে না

ইহান- তা হলে আর কি করা বল

এমন সময় অরনি এসে বল্লো
কিরে ইহান এসে গেছিস, তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম চল গিয়ে বসি,আগে বল কি খাবি

ইহান- বিয়ার হলে ভালো হয়
অরনি- ওকে আয়,, সবাই গিয়ে বসলো

ইহান অন্যমনস্ক হয়ে ই বসলো
অরনি খেয়াল করলো ইহান যেন সবার মাঝে থেকে ও নেই

অরনি- কি ভাবছিস
ইহান- ভাবছি আমি মিথিলাকে একটা কল দিই

সাম্মি- তা হলে দে,হয়তো কথা বললে তোর মন টা হালকা হবে

অরনি- আমার মনে হয় কল না দেয়া ই ভালো, মিথিলা কথা বলতে চাইবে না ইহানের সাথে,এতে তার কষ্ট আর ও বাড়বে

ইহান- দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে বল্লো,তাই হবে হয়তো

রাহি- তোরা সবাই মুড অফ করে বসে আছিস কেনো,এখন এই সব চিন্তা বাদ দে, ইনজয় কর,, লেটস ইনজয় ফ্রেন্ডস

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর

0
খেলাঘর
খেলাঘর

খেলাঘর…..
লেখা-সুলতানা ইতি
পর্ব-৮

মিথিলা স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে
অরনি ভাংগা গলায় বল্লো
– মিথি কিছু বল

অরনির কথায় মিথিলা সম্বিত ফিরে আসে
মিথিলা কঠোর কন্ঠে বল্লো
– ইহান কি করছিস কি তুই,তুই জানিস তুই কতো টা ভুল পথে হাটছিস

ইহান- আমি জানতে চাই না,আমি শুধু তোকে চাই মিথিলা
মিথিলা- এ সম্ভব নয়

ইহান- কেনো সম্ভব নয় বল?
ইহান পাগলের মতো করে বল্লো,ওহ তুই ভয় করছিস এই ভেবে যে আমার বাবা মা আমাদের মেনে নিবে না তাই তো,তুই বিশ্বাস কর আমার কথার বিরুদ্ধে আব্বু আম্মু একটা কথা ও বলবে না

মিথিলা – তা নয় ইহান,তুই এখন আবেগে ভাসছিস, ভালোবাসা কি বুঝিস না,তোর মনে প্রেম জেগেছে, আর কোন প্রেম কখনো স্থায়ী হয় না

ইহান- আচ্ছা যা মেনে নিলাম তোর কথা,, কিন্তু প্রেম থেকেই ভালোবাসা সৃষ্টি হয়

মিথিলা- হয় না ইহান

ইহান- প্লিজ এমন করিস না তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না,

মিথিলা- এখন প্রথম কয়দিন কষ্ট হবে তার পর যখন তোর মন থেকে প্রেম অনুভূতিটা উবে যাবে তখন দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে

ইহান কঠোর কন্ঠে বল্লো
– তুই কি বুঝাতে চাইছিস মিথি, আমার ভালোবাসা ক্ষনিকের, কিছুদিন পর আর থাকবে না তাই তো

মিথিলা- হুম ঠিক তাই
—ঠাসসসসস ইহান শরিরে সব শক্তি দিয়ে মিথিলা কে থাপ্পড় মারে
মিথিলা টাল সামলাতে না ফেরে পড়ে যায়

অরনিরা কেউ ই এই রকম পরিস্থির জন্য প্রস্তুত ছিলো না আকস্মিক এমন হওয়াতে সবাই বিমূঢ় হয়ে গেলো

মিথিলা উঠে দাড়ালো, বাম গাল্টা প্রচণ্ড ঝলছে
মিথিলা- তুই আমাকে হাজার টা থাপ্পড় দিলে ও আমার কথার কোন পরিবর্তন হবে না, এই বলে মিথিলা পিছনে ফিরে দাড়ালো চলে যাওয়ার জন্য

ইহান মিথিলার হাত ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো
প্লিজ মিথি মাফ করে দে আমাকে আমি তোকে থাপ্পড় মারতে চাইনি, তুই কেনো আমার ভালোবাসা কে সন্দেহ করছিস বল, ভালোবাসি তোকে

মিথিলা- হাত ছাড় ইহান

ইহান তবুও হাত ধরে রাখলো
– হাত ছাড় বলছি মিথিলা ঝাটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলো আমি আবার বলছি, আবেগি হয়ে লাভ নেই

ইহান উঠে দাড়ালো
-তুই আমাকে বলছিস আমি আবেগ দিয়ে চলি? আমার বয়স টা আবেগের?
খুব বেশি বুঝিস তুই না,কয়েকটা বই ঘাটা ঘাটি করে খুব জ্ঞানী হয়ে গেছিস তাই না….

মিথিলা- প্লিজ আমি তোর লেকচার শুনতে চাই না,
মিথিলা আর এক মুহুর্ত ও দাড়ালো না হন হন করে হেটে বেরিয়ে গেলো

ইহান মাথা নিচু করে বসে পড়লো
অরনি ইহানের কাধে হাত রাখলো,শান্তনার স্বরে বল্লো
– ভেঙে পড়িস না ইহু নিজেকে শক্ত কর,সামনে আর ও অনেক সময় আছে মিথিলা একদিন না একদিন তোকে ঠিক ই বুঝবে

ইহান কান্না কন্ঠে বল্লো
– অনেক স্বপ্ন নিয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়েছি ও এভাবে আমার হাত টা ফিরিয়ে দিতে পারলো?
আমার ভালোবাসা নাকি ক্ষনিকের ও এতো দিনে আমাকে এই জানলো?

অরনি- ভাবিস না সব ঠিক হয়ে যাবে
ইহান চোখ মুছে বল্লো, অরু মিথির গালটা লাল হয়ে গেছিলো আমি তখন দেখলাম,একটু ঠান্ডাবরফ দিলে ভালো হতো

অরনি- তুই ভাবিস না সাম্মি আর রাহি ওর পিছু পিছু গেছে,ওরা ঠিক কিছু ব্যাবস্থা করবে

ইহান-ওরা আছে মিথির সাথে আচ্ছা আমি একটা ফোন করি,তখন মাথা ঠিক ছিলো না তাই ও ভাবে

অরনি- এতো টেনশন নিস না,ফোন করে দেখ ওরা কোথায়

মিথিলা বের হতেই রাহিরা
মিথিলার পিছু নিলো
– সাম্মি মিথিলা দাড়া কথা শুন
মিথিলা না দাঁড়িয়ে একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো
রিক্সা চলছে

রাহি- এই মিথি টা যে কি বুঝি না,ইহান অনেক মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ, আর সেই ইহানকে মিথিলা রিজেক্ট করলো?

সাম্মি- আর বলিস না মিথিলা একটু বেশি বাড়া বাড়ি করছে এবার

রাহি -চলতো মিথিলার বাসায় যাবো
সাম্মি- হুম চল

সাম্মি আর রাহি মিথিলাদের
বাসায় এসে কলিংবেল দিয়ে যাচ্ছে অনেক্ষন থেকে কিন্তু মিথিলা দরজা খুলছে না
প্রায় বিশ মিনিট সময় কেটে গেলো,,

মিথিলা ভালো করে চোখে মুখে পানি দিয়ে মুখ মুছে তার পর দরজা খুলতে গেলো,,মিথিলা যে কেঁদেছে এটা রাহিদের বুঝতে দিতে চায় না

মিথিলা দরজা খুলতেই
সাম্মিরা বিতরে ডুকে গেলো
রাহি- এতোক্ষন দরজা খুলছিলিনা কেনো,জানিস কতো ভয় পেয়েছি গেছিলাম

মিথিলা- ওয়াশ রুমে ছিলাম,,তোরা কিছু বলবি,মিথিলা এমন ভাবে কথা বলছে যেন কিছুই হয়নি

সাম্মি- তোর ভাব দেখে মনেই হচ্ছে না, একটু আগে তুই বিরাট কান্ড ঘটিয়ে এসেছিস

মিথিলা একটু চুপ করে শান্ত কন্ঠে বল্লো
একটু আগে যা ঘটেছে তা অতিত হয়ে গেছে সুতরাং তা নিয়ে মাথা না ঘামানো ই উচিত

রাহি- তুই ইহান কে কষ্ট দিয়ে এতো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছিস

মিথিলা- আমি কাউকে কষ্ট দিইনি কেউ যদি সেচ্ছায় কষ্ট কে ডেকে আনে তা হলে আমার কিছু করারর নেই

রাহি- ও তোর সাথে টাইমপাস করতে চায়নি,তোকে বিয়ে করতে ছেয়েছে, এ যুগে কয়টা ছেলে এ ভাবে বিয়ের প্রপোজাল দেয়,তুই বল

মিথিলা- তা হলে তোরা এটা ও যেনে রাখ,এই যুগের মানুষ খুবই ফাষ্ট, এরা প্রেম করে সময় নষ্ট করে না, বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে পুতুল খেলতে পছন্দ করে

সাম্মি- কিন্তু ইহান সবার থেকে আলাদা

মিথিলা- তোরা আমাকে ও তো সবার থেকে আলাদা বলিস,প্লিজ দোস্ত তোরা আমার বন্ধু,কারো চামচামি করিস না আমার কাছে এসে

রাহি অনেক টা রেগে বল্লো
– সাম্মি চল এখানে থেকে কোন লাভ নেই
রাহি আর সাম্মি চলে গেলে
মিথিলা স্টাডি রুমে বসে খুব কান্না করে,
আমি. আমি কি করবো. আমার কিচ্ছু করার নেই ইহান প্লিজ তুই আমাকে ভুল বুঝিস না,,কাঁদতে কাঁদতে পাগলের মতো কথা গুলো বলছে মিথিলা
সেদিন সন্ধ্যা বেলা মিথিলার বাবা মা গ্রাম থেকে ফিরে আসে
মিথিলা- বাবা এতো তাড়া তাড়ি চলে এলে যে,তোমাদের তো আর ও কয়েকদিন থাকার কথা ছিলো
মাসুম ফারুকি কিছু বলার আগে ফাতেমা বেগম বল্লো
– তোর বাবা আমাদের থাকতে দিলো কই,তুই বাসায় একা,এই চিন্তায় উনার ঘুম হচ্ছিলো না

মাসুম ফারুকি- মিথিলাকে কাছে টেনে বল্লো,বস মা,কতো দিন তোকে দেখিনি

মিথিলা-মাত্র তো তিন দিন বাবা

মাসুম ফারুকি- হা তাই তো তিন দিন তোকে দেখিনা,ভাভা যায়
নির্ঝরিণী – হা হা সব আদর মেঝো মেয়েকে দাও, আমার জন্য কিচ্ছু রেখো না
ফাতেমা বেগম বল্লো বাপ বেটি ঢং গুলো পকেটে রেখে খেতে এসো,

নির্ঝরিণী- একদম জব্দ হয়েছে,
সবাই ডাইনিং এ গিয়ে বসলো

কিছুদিন পরে মিথিলাদের পরিক্ষার রেজাল্ট বের হয়

বরাবরের মতো এবার ও মিথিলা সবার প্রথম হয়েছে

নির্ঝরিণী – আপ্পি তুই এতো ভালো রেজাল্ট করেছিস তাই আমি তোর জন্য, একটা ডিম ভাজি করে এনেছি নিজ হাতে,হি হি হিহি

মিথিলা- তো,হাসছিস কেনো

নির্ঝরিণী – তুই যে কখনো এক্সাম এ ডিম পাসনি তাই আমি তোর জন্য দয়া করে ডিম এনেছি,নে খেয়ে বল কেমন হয়েছে

মিথিলা- ডিম ভাজি খেতে ডিম ভাজির মতোই হবে,রেখে যা পরে খাবো

এর মাঝে আয়ান এসে গেলো
মিথিলা- ঐ তো আরেকজন এসেছে, কিছু বলবেন

আয়ান হেসে বল্লো
– কিছু বলবো না কিছু দিবো
মিথিলা- কি?

আয়ান- আমি যে তোর একটি মাত্র ভাই,তোর এই সাকসেস এ ভিষন খুশি তাই তোর জন্য আমার ছোট্ট উপহার,আয়ান পকেট একটি কলম বের করে দিলো মিথিলা কে

মিথিলা- কলম টা তো বেশ,আমার ভাইকে আমি ধন্যবাদ দিবো না,সত্যিকার ভাইয়ের মতো কাজ করেছে ভাইটি

আয়ান-তোর পছন্দ হয়েছে আপি
মিথিলা- খুব

আয়ান- বাবা যে টিপিনের জন্য টাকা দিতো সেখান থেকে কিছু টাকা বাছিয়ে কিনেছি ভালো হয়নি বল

আয়ানের কথা শুনে মিথিলার চোখে পানি চলে আসে গভীর মমতায় ভাইকে বুকে ঝড়িয়ে নেয় মিথিলা,
– খুব ভালো হয়েছে, আমি খুব খুশি হয়েছি

নির্ঝরিণী – ওহ শুধু ভাইকে আদর করবে আমাকে করবে না,কারন আমি তো কিছু আনতে পারিনি

মিথিলা আরেক হাত দিয়ে নির্ঝরিণী কে কাছে টেনে নিলো

আয়ান- এখানে ও তোর হিংসে তোর হিংসার জ্বালায় বাছিনা আর

*
ইহান মিথিলা এবার ও সবার প্রথম হয়েছে,,একবার ফোন করে কংগ্রাচুলেশনস জানানো দরকার

ইহান মোবাইল বের করলো কল দেয়ার জন্য
এই সময় নায়া এসে বল্লো
– ইহান কি করছিস তুই তাড়া তাড়ি রেডি হয়ে নে, আমি একটু পর বের হবো

ইহান নায়া কে দেখে মোবাইল আবার পকেটে রেখে দিলো
নায়া – কাকে ফোন করছিলি
ইহান- কাউকে না

নায়া- ওহ আমার ভাবি কে ফোন করছিস

ইহান- আপিইই,তুই ও না

নায়া- দাড়া মোম কে বলছি

মোম মোম, ড্যাড কই তোমরা বলতে বলতে নায়া ইহানের রুম থেকে বেরিয়ে যায়

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

ভালোবাসার মূল্য

0

ভালোবাসার মূল্য

সাহরিয়ার শেখ সাব্বির

মনের আকাশ দিবো লিখে আমি তোমার নামে,

সেই আকাশ টি বিক্রি হবে ভালোবাসার দামে।

পারলে তুমি ভালোবেসে নিও তোমার করে,

আমি কিন্তু ভালোবাসবো সারাজীবন ধরে।

তোমার জন্য

0

ক্লোজ ফ্রেন্ড আয়ান এবং নিধী।দুজন খুব ভাল স্টুডেন্ট।পুরো ভার্সিটির এবং ফ্যামেলির সবাই জানে অদের ফ্রেন্ডশিপের কথা।৫ম শ্রেণী থেকে দুজন একসাথে।এখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।কিন্তু নিধী মনের অজান্তেই আয়ানকে ভালবেসে ফেলে।আজ নিধী ভালবাসার কথা বলবে আয়ানকে।

নিধীঃহ্যালো,

আয়ানঃহ্যা,বল

নিধীঃদেখা করতে পারবি?

আয়ানঃতুই বললি দেখাতো করতেই হবে।

নিধীঃপুকুর পারে,বিকেল ৫টায়

বিকেল ৫টা ১০মিনিট।

নিধীঃ আজও ১০মিনিট লেট।

আয়ানঃআর বলিস না,রাস্তায় তমালের সাথে দেখা হইছিল(তমাল অদের কলেজ ফ্রেন্ড)

নিধীঃ ও,তা কেমন আছে অরা?কি সুন্দর তাই না,ফ্রেন্ড থেকে ভালবাসা তারপর বিয়ে।

আয়ানঃসুন্দর না ছাই,খুব শিগ্রই ডির্ভোস নিচ্ছে দুজন।ফ্রেন্ড ছিল তাইতো ভাল ছিল।এখনতো সব শেষ।

নিধীঃনা,এখন আয়ানকে ভালবাসার কথা বলা যাবে না।অ যদি রাগ করে,আমাদের ফ্রেন্ডশিপ যদি নষ্ট হয়ে যায়।আমার আরেকটু সময় নেয়া দরকার।(মনে মনে বলছে)

আয়ানঃতোর কি হলো, বাদ দে তো অদের কথা।তুই না কি বলবি?

নিধীঃকই,আমিতো কিছু বলবো না।

আয়ানঃজরুরী তলব দিয়ে আনলি

নিধীঃও,তকে ডাকতে বুঝি এখন কারন লাগবে?ফুসকা খাবো

আয়ানঃফুসকা!তুই পারিস ও।দারা, আনছি।

আয়ানের ভাই রায়ানের বিয়ে ঠিক হইছে।আয়ানের মা নিধীকে কল করে………

আয়ানের মাঃহ্যালো,

নিধীঃহ্যা,আন্টি কেমন আছ?

আয়ানের মাঃ ভাল আছিরে মা।তুইতো জানিস,তোর ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হইছে।তোকে কিন্তু দুদিন আগেই আসতে হবে।আমারতো মেয়ে নাই,তোকেই সব করতে হবে।

নিধীঃঠিক আছে

আয়ানের মাঃআব্বু আম্মুকে নিয়ে সময় মত চলে আসবি কিন্তু।

নিধীঃঠিক আাছে বাবা,আসবো।তুমি ভাল থেকো।

আজ রায়ানের বিয়ে।বরযাত্রি কনেপক্ষের বাড়িতে যাবে এমন সময় খবর আসে, নিধীর দাদুর এক্সিডেন্ট হইছে।নিধীর বাবা-মা এখনি নিধীকে নিয়ে গ্রামে যাবে।আয়ান যেতে চেয়েছিল তাদের সাথে ।কিন্তু নিধী বলে,এখানে তোর বেশি প্রয়োজন।আমি ফোনে তকে জানাবো।

বর যাএি কনেপক্ষের বাড়ি গেল।সেখানে একটি মেয়েকে আয়ানের অনেক ভাল লাগে।মেয়েটি হলো আয়ানের ভাবি “তানভি” র ছোট বোন তুহি।বিয়ে শেষ হলো।

আজ তুহি যাবে আয়ানের বাড়িতে তানভিকে দেখার জন্য।কিছুদিন থাকবে সখানে।আয়ানের সাথে বেশ ভালো সময় কাটলো তুহির।খুব হাসি ঠাট্টা করে দুজনে।এত দিনে আয়ান বুঝতে পারে , তুহি শুধু তার ভাল লাগা নয় ।হ্যা,আয়ান তুহিকে ভালোবেসে ফেলেছে।

রাতে আয়ান নিধীকে কল করে..……

নিধীঃহুম, বল

আয়ানঃ  কিরে,কবে আসবি?

নিধীঃ দাদু এখন মুটামুটি সুস্থ। আমরা কাল ই আসবো।

আয়ানঃ তাড়াতাড়ি আস।তোর সাথে অনেক কথা আছে ।

নিধীঃকি বল?

আয়ানঃসারপ্রাইস।

দুদিন পর

আয়ানঃভাবি (তানভি), এটা হলো নিধী,

ভাবিঃতুমিই তাহলে নিধী,আয়ানের কাছে তোমার   অনেক কথা শুনেছি,তা কেমন আছ?

নিধীঃভাল আছি,আপনি কেমন আছেন ভাবি?

ভাবিঃআমিও ভালো আছি।

আয়ানঃভাবি, অ কিন্তু কাউকে আপনি করে বলতে পারে না

ভাবিঃ তাহলে তো আমি নিধীর সাথে রাগ করবো

নিধীঃসরি ভাবি, আর বলবো না ।

আয়ানঃভাবি,তুহি কোথা?

ভাবিঃবাগানে

আয়ান নিধীকে নিয়ে বাগানে চলে গেল    ।

আয়ানঃতুহি,অ হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিধী।আর নিধী,অ হচ্ছে তুহি ভাবির ছোট বোন।

তুহিঃআপু কেমন আছেন?

নিধীঃভাল,তুমি   ?

তুহিঃআমিও ভাল আছি।

ভাবিঃতুহি,এদিকে আয়তো(দূর থেকে)

তুহিঃআপনারা কথা বলুন ,আমি আসছি।

তুহি চলে গেল

নিধীঃকই তোর সারপ্রাই?

আয়ানঃতুহি

নিধীঃমানে?

আয়ানঃঅকে আমার অনেক ভাল লাগে। বলতে পারিস ভালোবাসি।

একথা শুনে নিধীর মাথায় আকাস ভেঙে পড়লো।এক মুহুর্তে সব শেষ হয়ে গেল নিধীর।নিধী নিজেকে সামলে নিয়ে বললো খুব মিষ্টি মেয়েটি ।আমি অনেক খুশি হইছি।বলছিস অকে? না বললে তাড়াতাড়ি বলে দিস।তানা হলে কেউ অকে নিয়ে উরাল দেবে।বলে সেখান থেকে প্রস্থান।   বাড়িতে গিয়ে অনেক কান্না  করে।

তুহি বাড়িতে  চলে যায়।কিন্তু প্রতিদিন আয়ানের সাথে ফোনে অনেক কথা হয়।তুহির আয়ানের সাথে কথা বলতে ভালই লাগে।একদিন আয়ান তুহিকে ভালবাসার কথাটা বলে ।তুহি বলে,আমি আপনাকে ফ্রেন্ড ছারা কিছুই ভাবি না।ফ্রেন্ড হিসেবে থাকলে ভাল,তানা হলে আর যোগাযোগ করবেন না। আয়ানের অনেক কষ্ট হলেও তুহির প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। আগের মতই কথা চলতে থাকে।এভাবে তিন বছর।তুহিও বুঝতে পারে যে,আয়ান শুধু তার বন্ধু নয় ভালবাসা।এবং সে আয়ানকে কথাটা বলতে চায়। ঠিক তখনি আয়ানের মা তুহির বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় আয়ানের জন্য   ।  তুহি শুনে খুশিই হয়।কিন্তু এ খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ি হল না।তুহির ফ্যামেলি রাজি নয়।আর তুহি নিজের কষ্ট হলেও ফ্যামেলির অবাধ্য হবে না।তার ভালবাসার কথা আর আয়ানকে বললো না।কিছুদিন পর তুহির বিয়ে ঠিক হলো।আয়ানও বিয়েতে এসেছে।আয়ান এখনো তুহিকে অনেক ভালবাসে।তুহি এবং আয়ান দুজনেই কেউ কারো কষ্ট কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না।বিয়ে শেষ হলো।আয়ান সোয্য করতে না পেরে  রেল লাইনে গেল নিজেকে শেষ করার জন্য। নিধী সেখান থেকে অকে বাচিয়ে আনে।

এদিকে বাসর ঘরে তুহি……..

তুহিঃশুনেছি বাসররাতে নাকি হাসবেন্ড তার স্ত্রীকে গিফ্ট দেয় ।আজ আমি আপনার কছে কিছু চাইবো ।দিবেন?

নিহাল(তুহির হাসবেন্ড) ঃঃকি চাও?

তুহিঃসময়

নিহালঃমানে কি?

তুহিঃএই পরিবেশে মানিয়ে নিতে

নিহালঃকতদিন

তুহি মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে

নিহাল শব্দ করে হেসে বললো ভয় পাবেন না, আপনার যত সময় লাগে নেন।কিন্তু আমার দুটি সর্ত আছে। একটি হলো আজ সারা রাত আমার সাথে গল্প করতে হবে আর সিনেমার মতো একজন বিছানায় আর একজন নিচে থাকবে তা হবে না।আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।

তিনদিন পর হঠাৎ বিজনেসের জন্য নিহালকে বাহিরে যেতে হবে।রাস্তায় তার এক্সিডেন্ট হয় এবং নিহাল মারা যায়।তুহি দুই মাস নিহালের বাড়িতে থাকার পর বাড়ি ফিরে আসে।আজ দুবছর।তুহি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পায়।স্কুলে আজ তার প্রথম দিন।স্কুলে গিয়ে তুহি অবাক। সেখানে আয়ানও চাকরি করে।বিয়ের পর আজ তাদের প্রথম দেখা।কেউ ভাবেনি অদের এভাবে দেখা হবে।আয়ান অনেক চেষ্টা করেছিল তুহির সাথে দেখা করতে কিন্তু তুহি যোগাযোগ করে নি। এরপর আয়ান একদিন তুহিকে বলে যে,সে এখনো তুহিকে ভালবাসে   ।তুহি কোন জবাব  দেয় না।রাতে তুহি আয়ানকে কল করে বলে……. সেও আয়ানকে ভালবাসে।আয়ানতো খুশিতে আত্তহারা।বাড়ির সবাই রাজি।আয়ান খুশির সংবাদটি নিধীকে জানায়। কিন্তু নিধীর জন্য এটা সুখের সংবাদ না। সে এখনো আয়ানকে ভালবাসে।বাড়ি থেকে বিয়ে দিতে চেয়েছে কিন্তু অ রাজি হয় নি।তুহির বিয়ের পর নিধী আয়ানকে প্রোপোস করেছিল কিন্তু আয়ান তহির মত বলেছিল,ফ্রেন্ড হিসেবে থাকলে থাক।

স্কুলে তুহি গ্যান হারিয়ে ফেলে।মাথায় পানি ঠেলে সবাই তাকে ঠিক করে।আয়ান তুহিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।ঠিক সেই সময়,আয়ানের ফোন আসে,নিধীর এ্যাকসিডেন্ট হইছে।

তুহি বলে আমি ডাক্তার দেখাই, তুমি নিধীর কাছে যাও।আয়ান নিধীকে দেখতে হাসপাতালে চলে গেল

ডাক্তার নিধীকে বাচাতে পারলেও তার চোখকে বাচাতে পারে না।নিধী আয়ানকে বলে, তোর বিয়ে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিল কিন্তু তা আর হলোনা।

পরের দিন

আয়ানঃতুহি,ডাক্তার কি বলেছে?

তুহিঃটেনশনের জন্য।

আয়ানঃটেনশন কর কি নিয়ে?

তুহিঃতোমার বাড়িতে কিভাবে মানিয়ে নিবো এই আরকি

আয়ানঃআমিত থাকবো তোমার পাশে,টেনশন করো নাতো

তুহিঃ আজতো তোমার বাবা-মা আমাদের বাড়িতে যাবে।বিয়ের তারিখ করতে,তুমি তাদের ৬মাস পরের যে কোন তারিখ  দিতে বল না।

আয়ানঃএত দেরি,আচ্ছা এতই যখন অপেক্ষা করলাম ।আর৬ মাস নাহয় করবো।

ইদানিং তুহি আয়ানের ফোন  ধরে না ঠিক মত কথাও বলে না।চাকরি টাও ছেরে দিয়েছে।

আয়ান তুহির বাড়িতে যায়

আয়ানঃকি হয়েছে তোমার,আমাকে এরিয়ে চলছো কেন?চাকরিটা ছেরে দিলে কেন?

তুহিঃচাকরি করতে ভাল লাগে না, তাই।আর আমি তোমায় এরিয়ে চলছি না একটু ব্যস্ত থাকি তাই।

আয়ানঃবুঝলাম,সেদিন দেখলাম পার্কে একটা ছেলের সাথে কথা বলছো,ছেলেটা কে?

তুহিঃতুমি আমায় সন্দেহ করছো।বিয়ে করতে হবে না আমাকে।

আয়ানঃএকটা ছোট কথাকে এত বড় বানাচ্ছ কেন?

তুহিঃতুমি আমাকে সন্দেহ করছো,এটা ছোট কথা।তুমি এখন যাও এখান থেকে।

আয়ান রাগ করে চলে গেল

বাড়িতে এসে আয়ান ভাবে,আমার ই ভুল।এভাবে বলা উচিৎ হয় নি আমার। ফ্রেন্ড হতে পারে।রাগ করারই কথা।থাক আমি সরি বলি।ফোন করছে তুহিকে।কিন্তু ফোনটা বন্ধ। পরের দিন তুহির বাড়িতে গেল।তানভি বাবার বাড়িতেই আছে।আয়ান বাড়িতে গিয়ে দেখে বাড়িটা  স্তব্দ হয়ে গেছে।তুহির মা এবং তানভি কাদছে।আয়ানকে দেখে তারা চোখের পানি মুছে ফেললো।তুহির বাবা এসে আয়ানের হাত ধরে বলে….আয়ান আমাকে ক্ষমা করে দাও তুহির ভুলের জন্য আমার তানভিকে কষ্ট দিয় না কাদতে কাদতে বলছে।তুহির হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।

আয়ান কিছু বুঝতে পারছে না।আয়ান তুহির বাবাকে চেয়ারে বসিয়ে বলছে আপনি শান্ত হন।তারপর তানভিকে বললো কি হয়েছে ভাবি,আর তুহি কোথায়?

তারপর তানভির কাছে যা শুনতে পারলো, তাতে আয়ানের পায়ের নিচের মাটি সরে গেল।তুহি নাকি বিয়ে করেছে।সকালে একটা ছেলেকে সাথে নিয়ে এসে বলে ওরা নাকি দুজন দুজনকে ভালবাসে এবং বিয়ে করেছে। তুহির বাবা অকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তানভির কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে তুহির বাসায় যায়(তুহি যাওয়ার সময় তানভিকে ঠিকানে দিয়ে গেছে)

সেখানে দেখে তুহির সাথে সেই ছেলেটা। যে ছেলেটাকে আয়ান তুহির সাথে দেখেছিল।

আয়ানঃআমাকে বললেই পারতে আমি নিজেই চলে যেতাম।আমার সাথে কেন এরকম করলে?

তুহিঃআমি তোমাকে কিছু বলতে বাধ্য নই।

আয়ানঃতুমি এত নিচু মনের,

তুহিঃহ্যা  আমি নিচু মনের, এবার তুমি চলে যাও।

আরো নানা কথা বলে আয়ানকে অপমান করে তারিয়ে দেয়।

কিছুদিন পর তুহি দেখে নিধী রাস্তায় দারিয়ে…..

তুহিঃআপু কেমন আছেন?

নিধীঃকে?

তুহিঃআমি তুহি,আমি রাস্তা পার করে দেই আপু(হাত ধরে)

নিধীঃহাত ছারো বলছি,তোমার মত খারাপ মেয়ের হেল্প এর কোন দরকার নেই।আয়ান তোমাকে কত ভালবাসতো আর তুমি অকে ঠকালে।তোমার জন্য অ আমার ভালবাসা গ্রহন করে নি। আর তুমি………তুমি কোনদিনও সুখি হতে পারবেনা।

নিধীর ফ্রেন্ড এসে নিধীকে নিয়ে চলে গেল।তুহি দারিয়ে আছে(চোখ দিয়ে পানি ঝরছে)

এক মাস পরে,আয়ানের সাথে সেই ছেলেটা দেখা করতে আসে ।যাকে তুহি বিয়ে করেছিল।যার নাম আবির।

আয়ানঃতুই এখানে কেন আসছিস?তুহি পাঠিয়েছে তোকে দেখার জন্য ,অর ধোকার পর বেচে আছি নাকি মরে গেছি।আরে অর মতো ক্যারেকটারলেজ মেয়ে…

আবিরঃতুহির সম্পর্কে একদম বাজে কথা নয়।(আয়ানকে থামিয়ে)

আয়ানঃআরে অর থেকে তো পারার মেয়েও ভাল

আবিরঃতুহির ব্লাড ক্যান্সার

আয়ান আবিরের কথা শুনে থমকে গেলো

আবিরঃতুহির কাছে একেবারেই সময় নেই।তোমার মনে আছে,তুহি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল।সেদিনই তুহি একথা জানতে পারে। কি করবে বুঝতেছিল না।তাই বিয়ের তারিখ ৬ মাস পরে ঠিক করতে বলেছিল।আমিতো শুধু অর ফ্রেন্ড।তুহি আগেও তোমাকে ভালবাসতো আর এখনো।তুহি আমাকে সবার সাথে অভিনয় করতে বলে।কাউকে কিছু বলতে না করে।কিন্তু এই দুমাসে আমি অকে ভালবেসে ফেলেছি।তোমাদের কষ্ট দিয়েছে এই ভেবে, যাতে অর চলে যাওয়ার পর তোমরা কষ্ট না পাও।কিন্তু অর শেষ সময়ে সবাই অকে ঘৃণা করবে।এটা আমি মানতে পারলাম না।তাই অর মানা সত্যেও সবটা বলে দিলাম।সকাল অর বাবা-মাকে বলেছি ।তারা এখন তুহির কাছে।

আয়ানঃকোথায় তুহি?(চোখ দিয়ে অঝরে অশ্রু ঝরছে)

আবিরঃসিটি হাসপাতালে।

আয়ান  হাসপাতালে গেল।আয়নকে দেখে সবাই রুম থেকে চলে গেল(তুহির বাবা-মা,তানভি)আয়ান তুহি কাছে গিয়ে বসলো।দুজনের চোখেই অশ্রু।

আয়ানঃসরি,আমি তোমাকে বুঝতে পারিনি।তোমাকে নিয়ে কত খারাপ মন্তব্য করেছি।

তুহিঃআমার যাওয়ার সময় তুমি এভাবে বলনা প্লিস।

আয়ানঃচুপ,যাওয়ার সময় মানে কি?কোথাও যেতে দিবো না তোমাকে।(কাদতে কাদতে)

তুহিঃচোখে পানি নিয়ে হাসতে হাসতে বলছে,আরে ছেলেরা কখনো কাদে নাকি।

আয়ানঃদেখ, আমার কি অবস্থা। আমি তোমাকে ছারা ভাল থাকতে পারবো না।ভাল থাকার চেষ্টা করছি কিন্তু পারিনি।আমার জন্য তোমাকে বাচতে হবে।

তুহিঃআমার হাতটা একটু ধরবে(আয়ান তুহির হাত ধরলো)তুমি নিধী আপুকে বিয়ে করবে।

আয়ানঃএটা কি বলছো তুমি,আমি তোমার জায়গা কাউকে দিতে পারবো না

তুহিঃএটা আমার শেষ ইচ্ছা,প্লিস।আর সব সময় ভাল থাকার চেষ্টা করবা।আর আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।

আয়ানের হাত থেকে তুহির হাত নিচে ঠলে পরলো

আয়ানঃতুহি চুপ করলে কেন।চিৎকার করে,তুহি কথা বলনা আমার সাথে।

ডাক্তার এসে বললো,তুহি আর নেই।

৫ বছর পর আয়ান রাস্তায়,সাথে নিধী এবং তাদের তিন বছরের মেয়ে তুহি।আয়ান আবিরকে রাস্তার পাসে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে যায়।

আয়ানঃআবির

আবিরঃকে?

আয়ান অবাক!আবির চোখে দেখতে পায়না।

আয়ানঃকিভাবে হলো এসব?

আবিরঃতুহিকে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে শুনি।অ অর চোখ নিধীকে দিতে চেয়েছিল।কিন্তু ডাক্তার না করে।তুহিকে ছারা আমার জিবনটাই তো অন্ধকার।তাই তুহির ইচ্ছে টাই পুরন করলাম।ডাক্তারকে আমি বলতে না করে ছিলাম তোমাদের।

সবার চোখেই পানি।নিধী ভাবছে,এই মেয়েকে সেদিন আমি অপমান করেছিলাম।শুধু তোমার জন্য আমি আয়ানকে পেয়েছি ,তোমার জন্য,তুহি।

 

 

 

 

 

ঝগরাটে ভালবাসা পার্টঃ৪

0

ঝগরাটে ভালবাসা পার্টঃ৪

তামান্না খান

হ্যালো আয়ান,

আম্মু বল শুনতেছি

আজ একটু তাড়াতাড়ি আসবি

কেন আম্মু?

তোকে বলেছিলাম না!তুহির জন্য তোর মামা বিয়ের প্রস্তাব এনেছিল।তারা আজকে তুহিকে দেখতে আসবে, পছন্দ হলে আজকেই দিন তারিখ ঠিক করবে।

অকে আগে অনার্সটা কমপ্লিড করতে দাও।

আরে তারা বিয়ের পরেও তুহিকে পড়াবে।

আচ্ছা আম্মু,আমার অফিসে তো অনেক কাজ, আমি তাড়াতাড়ি ফিরতে পারবো না।

চেষ্টা করে দেখিস

ঠিক আছে,রাখছি।

কেমন জানি খুব রাগ হচ্ছে।আমারতো খুশি হওয়ার কথা।  আমার চিরশত্রু এবার বিদাই হবে,তবে আমি খুশি হতে পারছি না কেন?আম্মু কেউ মিথ্যা বললাম।অফিসে তেমন কোনো কাজ নেই।আচ্ছা আম্মুকে মিথ্যা বললাম কেন?

বিকেলে তমালকে ফোন করে বললাম মাঠে আসতে

কিরে আয়ান,তুই অফিস থেকে বাসায় না গিয়ে সরাসরি এখানে আসলি?

হুম,ভাল লাগছেনা।ভাবলাম অনেক দিন ধরে তোদের সাথে আড্ডা মারা হয়না,তাই চলে এলাম।

ও….সব বুঝেছি

কি বুঝেছিস?

এইতো তোর ভাল না লাগার কারন!

মানে?

অনিকের কাছে শুনলাম আজ তুহিকে দেখতে আসছে।

হ্যা তো?

তো এই জন্যই তোর মন খারাপ।

তুই আবার শুরু করলি

তাহলে তুই ই বল তোর মন খারাপ কেন? তোর তো মন ভাল থাকার কথা।তহিতো তোর শত্রু তাই না?

জানি না,হইছে,অনেক আড্ডা হলো এখন বাসায় যেতে হবে। আম্মু চিন্তা করবে।

কথা কাটিয়ে নিলি আয়ান।

কথা কাটাতে যাব কেন?এগুলো হচ্ছে তোর আজে বাজে ভুল ধারনা।যাই এখন ,দেখা হবে।

তোকে না বললাম তড়াতাড়ি আসতে।মেহমানরা দশ মিনিট হলো গিয়েছে।

আম্মু চেষ্টা করেছি আসতে

ঠিক আছে,তারা তুহিকে খুব পছন্দ করেছে।তুহিকে আংটি পরিয়ে গেছে।আর বিয়াটা কিন্তু পনের দিন পরেই।

কি বলছো আম্মু !এত তাড়াতাড়ি।

হ্যা এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।

ঠিক আছে

কেন জানি এখন আরো বেশি রাগ হচ্ছে।

তুই আমার রুমে কি করছিস(চেচিয়ে বললাম)

তা শেয়ালের মত হাক ছাড়ছিস ক্যান,বড় মা তোর ঘরে পানি রাখতে বলছে তাই জগটা রাখতে এলাম।

খেয়াল করে দেখলাম,অ নীল রং এর শাড়ী ও হালকা সেজেছে ।মেহমানরা কিছুক্ষন আগে চলে গেছে এখনো চেন্চ করেনি।ভালই লাগছে।পরক্ষনেই রেগে বললাম  রাখা শেষ হইছে এখন যা এখান থেকে।

যাচ্ছি যাচ্ছি আর ঘেউ ঘেউ করতে হবে না বলে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবছি তমালের কথাগুলো। সত্যি কি তাহলে আমি তহিকে..…….না না এটা কিভাবে সম্ভব।এটা সম্ভব না।

খাওয়ার টেবিলে

তুহি আয়ানকে ডাক দেতো

আমি পারবোনা বড় মা,তখন পানি রাখতে গেছিলাম আমাকে কেমন করলো।আচ্ছা বড়মা আমিতো আর কয়েকটা দিনই আছি।এখনো অর আমার সাথে এমন না করলে হয় না। মন খারাপ করিস নে আমি কথা বলবো আয়ানের সাথে।এইতো আয়ান এসেছে,বস। কখন থেকে ডাকছি।তুহির ফোন বেজে ওঠলো।ফোনটা অর হাতেই।কে রে (বড়মা)নাম্বারটাতো চিনি না ,দেখছি

হ্যালো কে বলছেন?

আমি জিসান

কোন জিসান?

আরে তোমার হবু বড়।

আমি তোর নাম্বাটা দিয়েছি,রুমে গিয়ে কথা বল(বড়মা)

ও সরি ,আমি বুঝতে পারি নি।

এক ঘন্টা ধরে গেছে তাই ফোন করতে হবে।যতসব নেকামি(আয়ান মনে মনে বললো)

আম্মু আমার খাওয়া হয়েছে।আমি ওঠলাম।

হয়েছে মানে তুই তো কিছুই খেলি না।

খেলামতো আর খাব না।রুমে গেলাম(আয়ান)

#তুহি

রুমে এসে কথা বলছি

হ্যা কথা বলছেন না যে(জিসান)

বলছিতো,খাবার খেয়েছেন?(তুহি)

হ্যা খেয়েছি,শুনেছি আপনি নাকি একটু চনচল?কিন্তু আপনার সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে না।(জিসান)

আসলে এরকম না,এভাবে আগে কারো সাথে কথা বলি নাই তো তাই একটুু না……(তুহি)

আরে এত নারভাস হতে হবে না(জিসান)

আচ্ছা বড়মা আমাকে ডাকছে পরে কথা বলি?(তুহি)

ঠিক আছে,গুড নাইট(জিসান)

দরজার সামনে থেকে আয়ান বললো,তুই মিথ্যে বললি কেন?

আমি মিথ্যে বলি নাই। বড়মা ডেকেছে তুই মনে হয় শুনিসনি।আর এখন আবার কি নিয়ে ঝগরা করতে এলি?

আমি তোকে খুব বিরক্ত করি তাই না?

আয়ান কোনোদিনও এভাবে বলে না।আমি কিছু বলার আগই কিছু না বলে চলে গেল।

আয়ান….শোন

বল আম্মু

দেখ তুহিতো আর কয়েকটা দিনই আছে।এখন অর সাথে ঝগরা করিস না।অযেন খুশি মনে  নতুন জিবন শুরু করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখবি।আর কাল থেকে কাজ শুরু করবি,সব দায়িত্ব কিন্তু তোর।কিছু বললাম না সুধু মাথা নারালাম।

 

ঝগরাটে ভালবাসা পার্টঃ৩

0
ঝগরাটে ভালবাসা পার্টঃ৩
ঝগরাটে ভালবাসা পার্টঃ৩

ঝগরাটে ভালবাসা পার্টঃ৩

লেখাঃতামান্না খান

এস এস সি পরিক্ষা শুরু হল।দুইটা পরিক্ষা দিলাম,অনেক ভাল হয়েছে।দুপুরে পড়তে বসেছি এমন সময় কারেন্ট চলে গেল।সন্ধ্যা হয়ে গেল কারেন্ট এখনো আসেনি।পরে দেখা গেল সবার বাড়িতেই কারেন্ট আছে।শুধু আমাদের বাড়িতেই নেই।কারেন্ট এর লাইনে কিছু সমস্যা হয়েছে সকাল না হলে ঠিক করা যাবে না।এদিকে চার্জার লাইটে চার্জ নেই,আমি মোমের আলোতে পড়তে পারি না।কালতো ইংরেজী পরিক্ষা।কিভাবে যে পড়ি।আমার পড়ার যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য আয়ান রাস্তার পাশ থেকে চোরাই লাইনের ব্যবস্থা করলো।ভোরে সবার ওঠার আগেই লাইন খুলে ফেললো।আমি তো অবাক হচ্ছি,যে আয়ান আমাকে ইচ্ছে করে ঝামেলায় ফেলে সে কিনা আমার জন্য এই কাজ করলো।যাই হোক, একটা ধন্যবাদ না দিলেই নয়।

আয়ান…..

কি বলবি বল?

ধন্যবাদ

এটা কি শুনছি আমি!এতো দেখি ভুতের মুখে রাম রাম।তুই কি ভাবছিস তোর জন্য আমি এগুলো করেছি?তোর পরিক্ষা খারাপ হলে আমার কিছু যায় আসবে না কিন্তু আমার আব্বু আম্মু অনেক কষ্ট পাবে।যা আমি কখনোই চাইনা।এজন্যই একাজ করা।হয়েছে হয়েছে, আর বলতে হবে না।আমার বুঝতে ভুল হয়ে গেছে।তবুও ধন্যবাদ।তোর মতো বাদর ছেলে যে আব্বু আম্মুর কথা ভেবেছে তাইতো অনেক।

দেখ একদম বারর বলবি না।একশ বার বলবো।বাদর বাদর বাদর।তোর পরিক্ষাই ভাল হবে না।শকুনের কথায় গরু মরে না বুঝলি।কি তুই আমাকে শকুন বললি,দারা।এক দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।।

পরিক্ষা শেষ হয়েছে আজ রেজাল্ট দিবে। রুমে বসে আছি,খুব টেনশন হচ্ছে।কেমন যে হলো।ওই তুহি….কি হইছে ডাকছিস ক্যান?তোর কাছে এটা আশা করি নাই,এরকম রেজাল্ট আমার বংশেও কেউ করেনি।আব্বু আম্মুর মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলি।আবার বলিস ডাকি ক্যান।

আয়ানের কথা শুনে কেদে দিলাম।আমিতো ভালই পরিক্ষা দিলাম তবে?কিরে তুহি কাদছিস কেন(বড় মার এন্ট্রি)

বড় মা আমাকে ক্ষমা করে দাও।বুঝতে পারছিনা কিভাবে এমন হল।

বুঝেছি,আয়ান তুহিকে কি বলেছিস?কই আমি কিছু বলিনাইতো।

জানিস তুই পুরো জেলাতে টপ করেছিস।তবে যে আয়ান বললো…..তুই তো অকে চিনিসই।আয়ান হাসছে।আমাকে কাদাতে তোর খুব ভাল লাগে তাই না ।শয়তান কোথাকার।বলে বালিস দিয়ে ঠিল মারলাম।অই বান্দুন্নী আমি একবারও বলিনি তুই ফেল করছস।কুত্তা থামবি।আম্মু তোমার সামনে আমাকে গালি দিচ্ছে।তুই কেনো অর সাথে এরকম করস।আম্মু তুমিতো অর পক্ষই ধরবে।বাদ দে এখন তোর আব্বুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিষ্ট কিনে আন।

বড় মার একটা আবদার আয়ান আমাকে কলেজে নিয়ে যাবে।আয়ানের কলেজেই ভর্তি হলাম।বড়মার কথা ভেবে দুজনেই রাজি হলাম।

কই তুই কি আসবি?

এইতো আসছি,

ওই তুই কি কলেজে পড়তে যাবি নাকি বিয়ে বাড়ির দাওয়াত খেতে যাবি?এত সময় লাগে রেডি হতে।

প্রতিদিন বক বক করতে তর কেমন লাগেরে

তাও তো প্রতিদিন দেরি করিস।আম্মু বলেছে,তাই প্রতিদিন এই জ্বালা পোহাতে হয়।

তোর কি মনে হয়,তোর সাথে কলেজ যাওয়ার জন্য আমি নাচতেছি।আমিও বড় মার জন্যই এই অত্যাচার সোয্য করছি।

আয়ান ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।প্রতিদিন আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে তারপর অ ভার্সিটিতে যায়।আয়ানের সাথে বাইকে করে যাই।এমন কোন দিন নেই যে আমাদের ঝগরা না হতো।মাঝে মাঝে অ আমাকে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দিত।আবার মাঝে মাঝে আমি নিজেই নেমে যেতাম।ছোট বেলার ঝগরা নাকি বড় হলে কমে যায় কিন্তু আমাদের ওল্টো।যতই বড় হচ্ছি ঝগরার পরিমান ততোই বাড়ছে।

এইস এস সি পাস করার পর…..

বড়মা আমি ভর্তি হবো না।কেনরে মা রেজাল্টতো ভাল হয়েছে তবে?বুঝলে না আম্মু তুহির বিয়ের ব্যবস্থা কর।বড়মা আয়ানকে চুপ করতে বল।ভর্তি হবো কিন্তু এবার থেকে আমি একাই ভার্সিটিতে যাব।হ্যা মা, আমিও ওকে নিয়ে যেতে পারবো না।এই প্রথম তুই কোন ভাল কথা বলছিস।কিন্তু তোরা তো এখন এখন এক ভার্সিটিতেই পড়বি (বড়মা)

তবুও আমরা আলাদাই যাব(দুজনে একসাথে)

আয়ান শুধু ঝগরা করে ।না মা তুহি আমার সাথে ঝগরা করে।তুই করিস

না তুই করিস

থামবি তোরা,যেতে হবে না তোদের একসাথে।

আমি এখন থার্ড ইয়ারে পড়ি।আয়ান অনার্স পাস করে ভাল একটা চাকরি করছে।

 

 

ঝগরাটে ভালবাসা পার্টঃ২

0
 ঝগরাটে ভালবাসা পার্ট২
 ঝগরাটে ভালবাসা পার্ট২

 ঝগরাটে ভালবাসা পার্ট২

লেখাঃতামান্না খান

 

রাতে টিভি দেখছি…..অই হাত থেকে রির্মোট নিলি ক্যান?দেখ আয়ান ভাল হবে না কিন্তু।দে বলছি।দেব না, কি করবি।কিছু না। বলে চলে আসলাম।আমার সাথে তেরামি।দেখাচ্ছি টিভি।বাইরে গিয়ে ডিসের লাইনের তার কেটে দিলাম।ভাল করে দেখ এখন।পিছন ফিরে,তুই?হ্যা আমি ।তার কাটলি ক্যান?বেশ করেছি।কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে চলে এলাম।বেশ করেছি কেটে দিয়ে।আমাকে দেখতে দিলি না আমি কিভাবে দেই।এখন ঘুমিয়ে পরি সকালে স্কুলে যেতে হবে।স্কুলে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম সেই ছেলেটি প্রতিদিনের মত দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ পেছন থেকে ডাক দিয়ে আমাকে প্রোপোস করে বসলো।আমি তখনি না করে দেওয়াতে আমাকে আজেবাজে কথা বলে অপমান করলো।বাড়িতে এসে বড়মাকে সব বলে কান্না করতেছি।দরজার সামনে দাড়িয়ে সবটা শুনলো আয়ান।আয়ানকে আমরা খেয়ালই করিনি।রেগে বলে ওঠলো,কি… রাস্তায় বিরক্ত করবে আবার বড় বড় কথা বলবে।ছেলেটা কে রে।তোকে কিছু বলছি(চিল্লিয়ে) তুজো।আয়ান যাস নে বাবা ,আয়ান(বড় মা)

পরের দিন তুজোর বাবা-মা বিচার দিতে আসলো আায়ান নাকি কাল অর বন্ধুদের নিয়ে তুজোকে খুব পিটিয়েছে।বড় মা তাদেরকে তুজোর কার্যকলাপের কথা বললো ।তারা লজ্জিত হয়ে চলে গেল।

দুপুরে…..অই, কোন ছেলে কিছু বললে আমাকে বলবি।কেন?যাতে তুই গুন্ডামি করতে পারস।তুই আসলেই বান্দুন্নী।এযুগে কারো ভাল করতে নেই।শয়তান্নি কোথাকার।তোকে আমার ভাল করতে বলছে কে। এক নাম্বারের গুন্ডা।

বিকেল…..

জানিস নয়ন,কারো ভাল করতে নেই।বন্দুন্নীটার জন্য তুজোকে মারলাম আর অ আমাকেই গুন্ডা বলছে।

আয়ান তুই কি তুহিকে ভালবাসিস?তোর কি মাথা ঠিক আছে?আমি তুহিকে ভালবাসতে যাব।অর সাথে পাচ মিনিট কথা হলে তিন মিনিটই ঝগরা হয়।তোকে একটা ঘুসি মারতে ইচ্ছে করছে।

আরে রাগ করিস ক্যান?তুই সব সময় অর কথা বলিস।আর কালতো অর জন্য তুজোকে মারলি।আরে তুহিতো আমার বোন।হ্যা বোন কিন্তু খালাতো বোন।আচ্ছা তুহি তোকে কোনদিন ভাইয়া বলেছে?বলে নাই ।তবে???আর এরকম ঝগরা থেকে ভালবাসা অনেক দেখেছি।বাদ দিবি নয়ন।নাকি সত্যি আমার ঘুসি খাবি?

আজ আমাদের স্কুলে বিদাই অনুষ্ঠান।ড্রেস হচ্ছে শাড়ি।ইপ্সিতা ও রিন্তি শাড়ি পরে আমাদের বাড়িতে এসেছে।এখান থেকে তিন জনে একসাথে স্কুলে যাব।

আরে ইপ্সিতা তোমাদের দুজনকে তো দারুন লাগছে।(আয়ান)

ধন্যবাদ ভাইয়া।তুহি কই?

বান্দুন্নীটা ঘরেই।সকাল থেকে রডি হচ্ছে এখনও হয়নি।তোমরা ওর রুমে যাও।

তুহি,

তোরা এসেছিস,এইতো আমার হয়েছে,চল।

আমরা আরো আগেই এসেছি,আয়ান ভাইয়ার সাথে কথা বললাম।নিশ্চয় আমার নামে কথা বলছে।

হ্যারে তুহি,তোকে কিন্তু সেই দেখাচ্ছে।আচ্ছা এখন চলতো।রুম থেকে বের হতেই আয়ান সামনে পরলো।কি অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে আছে। অর ঘোর কাটিয়ে বললাম। সরবি কি সামনে থেকে।জোরে হেসে বললো,বান্দুন্নিটাকে আজ পুরো পেত্নির মত লাগছে।অকে শয়তান বল চলে এলাম ।

 

ঝগরাটে ভালবাসা পার্ট-১

0
ঝগরাটে ভালবাসা পার্ট-১
ঝগরাটে ভালবাসা পার্ট-১

ঝগরাটে ভালবাসা পার্ট-১

লেখাঃতামান্না খান

ওই তুই আমার চুলে ধরলি ক্যান।

আরে আমি ভাবছি ওটা নারিকেল গাছের পাতা।কি???আমার চুলকে তোর নারিকেল গাছের পাতা মনে হল?হ্যা,হলো।তোমরা সবাই বলতো আমি কি ভুল বললাম।নারিকেল গাছের মতো লম্বা আর চুল পাতার মত লম্বা।কি ভুল বললাম।সবাই জোরে হেসে ওঠলো।ওই তোরা থামবি ।আর তুই?আমি নারকেল গাছের…দারা দেখাচ্ছি,এই বলে মাটি দিয়ে ঠিল শুরু করলাম।

এরে পাগল খেপেছে পালাই???

সব বান্ধবিদের সামনে অপমান, দেখে নিব।খুব রাগ হচ্ছে।

তুহি.……

হ্যা,বড় মা বল?

খেতে এলিনা যে,তোমাকে না বললাম আমি খাবো না ,তুমি অযথা কষ্ট করতে গেলে কেন?তুইতো না খেয়ে ঘুমাতে পারিস না।পরে রাতে পেট ব্যাথা করবে।আয়ানের ওপর রাগ হয়েছে বুঝি?অনিক সব বলেছে আমাকে।ওকে আমি আচছা করে বকে দিব।অ সবসময় আমার সাথে এরকম করে।আমার সব বান্ধবীদের সামনে অপমান……..আরে বাদ দেতো। এখন হ্যা কর আমি খায়িয়ে দেই।

বড় মা তুমি না অনেক ভাল।তুমি না থাকলে  আমি কখনো বুঝতেই পারতাম না বাবা-মায়ের আদর কেমন হয়।আমারতো মায়ের চেহারাও মনে নেই আর বাবাতো…..তুমি না থাকলে কবেই মরে যেতাম।

চুপ একদম চুপ,এরকম কথা যেন আর না শুনি।তোর কিছু হলে আমি কি বাচতে পারবো।সন্তানের কিছু হলে মা কি সোয্য করতে পারে।আমার কাছে তুই আর আয়ান এ্যাকি রকম।খাওয়া শেষ এখন ঘুমাতো।

আসলে বড় মা আমার খালামনি হয়।আমার বয়স যখন দুই বছর তখন আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে।আমার মাকে আমাকে সহ নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।মা কষ্ট সোয্য করতে না পেরে মারা যায়।তখন বড় আব্বু বড়মা আমাকে এখানে নিয়ে আসে।কোনো দিনও বাবা মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি।তাদের একমাএ ছেলে আয়ান।এই শয়তানটা সব সময় আমার সাথে ঝগরা করে। আর অনিক হচ্ছে আয়ানের চাচাত ভাই,আমরা দুজন একসাথেই পরি এস এস সি পরিক্ষার্থী আর আয়ান এইস এস সি পরিক্ষার্থী।

আয়ান…

হ্যা আম্মু ভিতরে আস।কিছু বলবা?মা বাবা ছারা মেয়েটাকে  কেন খেপাস বলতো।আরে মা তুমি জান? অ কাল আমার বন্ধুদের সামনে আমাকে বাদর বলেছে।

আরে ওতো মজা করেছে। আর তুইতো বড়, তোকে তো বুঝতে হবে।

অ মজা করলে মজা আর আর আমি করলে…. আর বড়র কথা বল।ওকে তুই বলতে না করলে বলে দুই বছরের বড় নাকি বড় না।আম্মু তুমি খালি অর হয়ে কথা বল।বুঝি না তুমি অর আম্মু না আমার আম্মু।

আমি দুজনের আম্মু।আমার মেয়েকে আর জালাবি না।আর এখন ঘুমা।

আমার নামে বিচার ।দেখাচ্ছি তুহির বাচ্চা????(এক একা)

সকলে ওঠে ব্রাশ করতে ভাতরুমে… ..

মুখ এরকম লাগে কেন।এটাতো পেষ্ট না। পেষ্টের খাপে ফেস ওয়াস ! এটা ওই শয়তানটারি কাজ।বমি আসলে ভাল হতো ।মুখের ভিতরা কেমব লাগছে।বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি শয়তানটা হাসছে।ওই শয়তান তুই আমার পেষ্টএ …..কুত্তা,বানর।

ওই বান্দুন্নী,আমার নামে বিচার-বুঝ এবার।

হ্যারে, তোরা আবার শুরু করলি।সব সময় ঝগরা করে দুজনে (বড় মা)

আরে করতে দাও।ওদের জন্য বাড়িটা ভরা থাকে(বড় আব্বু)

 

 

 

 

 

চলো হারিয়ে যাই

0

চলো হারিয়ে যাই

সাহরিয়ার শেখ সাব্বির

তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে চাই দূর তাঁরার দেশে,

তুমি কী যাবে আমার সাহে হাত বাড়িয়ে ভালোবেসে?

ভাসতে চাই দুজনায় সুখের ভেলায়,

তুমি কী থাকবে আমার সাথে নাকি রাখবে অবহেলায়?

কাছে টেনে ভালোবাসায় ভরিয়ে দাও না আমায়,

ভালোবাসি বড্ডো বেশি আমি যে তোমায়।

 

ফাগুণের নবধারা পর্ব-১৩

0
ফাগুণের নবধারা পর্ব-১৩
ফাগুণের নবধারা পর্ব-১৩

ফাগুণের নবধারা

পর্ব-১৩

শাহাজাদী হুমাশা।

ভ্যাপ্সা গরম পরেছে খুব।ফাগুণের মাস শেষের দিকে প্রায়। কতগুলো ফাগুণ যে এভাবেই পার হয়েছে জানা নেই সুমুর।গরমে কুপুকাত অবস্থা।শুধু ভাবে যদি এসি না থাকতো তাহলে নাহিয়ান তো গরমে সেদ্ধ হয়ে যেতো।নবাবের ব্যাটা গরম সহ্য করতে পারেনা।বকাটা বিড়বিড় করে দিয়েই জীভ কাটলো সুমু।

আজ ছুটির দিন তাই সুমুও আজ রান্না ঘরে দিন কাটাবে।আর দিনতো সব শাশুড়ি করেন শুধু ছুটির দিন গুলোতেই সুমু রান্না করে।আজ নাহিয়ানের পছন্দের সব রান্না করবে সুমু।
রান্না ঘরে রান্না করতে করতেই গরমে সিদ্ধ হবার যোগার সুমুর।ভাবছে সবার জীবন এখন আনন্দময় কাটছে।বেশ ভালো লাগে সুমুর সবাইকে সুখী দেখে।তার ছোট্ট বোন নিধি কি সুন্দর আবিরের সাথে সংসার করছে।ইলমাটা তো এত কিছুর পর ইশরাকের সাথে ভালো আছে।বেচারীর উপর কি ঝড়টাই না গিয়েছে।আর রুকু আপা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষটা। আবিদ ভাই সব সুখ তাকে দিয়ে পরিপূর্ণ করেছে তাকে।শুধু খারাপ লাগে নিঝুমটার জন্য। ভাইবোন সব হারিয়েছে সে।বাবা মাও পারতপক্ষে তেমন যোগাযোগ রাখেন না।আর নিঝুমের স্ত্রী! ওর সাথে নাকি ত্বালাকের কথা হচ্ছে।কে জানে কি চায় ছেলেটা।রিদিমাও করেকবার ক্ষমা চেয়েছিলো রুকু আপার কাছে কিন্তু আপাতো মানলেনই না।মাঝে মাঝে খারাপ লাগে নিঝুমের জন্য।

কলিংবেলটা বেজেই চলেছে।কেউ দরজা খুলছেনা কেনো??
দরজাটা খুলতে একজন লোক হাতে এতগুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো নাহিয়ান।
– আআসসালামু আলাইকুম।আমি কি ভিতরে আসতে পারি??
লোকটার তাকে সালাম দেয়ায় নাহিয়ানের বেশ ভালো লাগলো লোকটাকে।সে সালামের উত্তর দিয়ে তাকে ভিতরে আসার সুযোগ করে দিলো।এর আগেও সে এই লোকটাকে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে।
– আপনি কাকে চাচ্ছেন?? প্রশ্ন করলো নাহিয়ান। লোকটা নাহিয়ান কে দেখে মুচকি হেসে বললো তোমার দাদা দাদু বাসায় আছেন??

পাশের ঘর থেকে আমিনা বেগম এবং তার স্বামী বেড়িয়ে এলেন।
তাদের দেখে লোকটা সালাম দিলো।
নিজের পরিচয় দিলেন।
– আমি রিয়াদ। আমি একজন বিজনেস ম্যান। আপনাদের বিজনেস এ শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে একজন।সুমু ম্যা’ম চেনেন আমাকে।
নাহিয়ান তার মা কে ডাকতে চলে গেলো।
– তা এখানে কি মনে করে?? প্রশ্ন নাভিদের মায়ের।তিনি ছেলেটাকে দেখেই চিনে নিয়েছেন এটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাই।

সুমু কিচেন থেকে লিভিং স্পেসে আসতেই তার হাত পা জমে গেলো।এই বজ্জাত লোকটা বাসা অব্দি চলে এসেছে।রাগে কাপঁছে সুমু।

কিছুদিন আগেই পরিচয় হয়েছিলো রিয়াদের সাথে।এবং রিয়াদ সুমুর সবকিছু জেনেই ভালোবেসেছিলো তাকে।কিন্তু সুমুর আপত্তির জন্য ব্যাপারটা এগুচ্ছেনা।তাই রিয়াদ পণ করেছে সে সুমুকে পাবেই।বহুদিনের প্রতীক্ষার পরও যখন কিছু করতে পারলো না তখন সুমুর শশুড় শাশুড়িই তার শেষ ভরসা।

সুমু আসার চা নিয়ে আসতে বললো তাদের বাসার কাজের লোককে।সুমু আসার আগেই রিয়াদ সুমুর শুশুড় শাশুড়ি কে বিয়ের ব্যাপারে বলে দিয়েছে।

– রিয়াদ সাহেব যে।ভালো আছেন?? তা এখানে কি মনে করে??
– আসলে আমি, না মানে এইতো নাহিয়ানেত জন্য খেলনা কিনেছিলাম সেগুলোই দিতে এসেছি।
– ঠিকাছে খেলনা দিয়েছেন নিশ্চই। চা আনতে বলেছি চা খেয়ে যাবেন।আমার অনেক কাজ আছে আমি উঠছি।

শাড়ি পরিহিতা সুমুকে এই প্রথম দেখলো রিয়াদ।কোমড়ে আচঁল গুজতে গুজতে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে সুমু।এই রূপ আগে কখনোই দেখেনি রিয়াদ। অফিসেতো সবসময় সালওয়ার স্যুট পরেই যায় কিনা।আজ আরো একবার প্রেমে পড়লো রিয়াদ সুমুর।বহু কষ্টে নিজের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে রিয়াদ বিদায় নিয়ে চলে গেলো।সুমুর এই কাটা কাটা স্বভাবে বেশ কষ্ট পেয়েছে রিয়াদ।

– তুই কেনো এমন ব্যবহার করলি ছেলেটার সাথে??ও তো ভালো বুঝেই এসেছিলো।তুই দিনদিন এমন পাথর কেনো হয়ে যাচ্ছিস সুমু??

– আহ মা ছাড়োতো।আমি ভাবেই ঠিক আছি।
তোমরা কেনো আমাকে পর করে দিতে চাও? আমি আর আমার ছেলে কি বোঝা তোমাদের জন্য??

– এ আবার কেমন কথা সুমু?? তুমি বাড়াবাড়ির মাত্রা অতিক্রম করছো।

– মা এ বিষয়ে আর একটা কথাও না।রান্না হয়ে এসেছে প্রায়। আমি গোসলে যাচ্ছি।বাকিটা তুমি দেখো।

আমিনা বেগম সুমুর চলে যাওয়ার পথে একদৃষ্টি তে চেয়ে আছেন।

সকাল গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।বেলাশেষের সময়টা সুমুর সবচেয়ে প্রিয় সময় স্মৃতি রোমন্থনের জন্য এর চেয়ে ভালো সময় হতেই পারেনা।গোধুলী লগ্নের প্রায় কাছাকাছি। আকাশ সাঁঝ করেছে।মেঘ গুড়্গুড় করে আহ্বান জানাচ্ছে বৃষ্টিকে ধরাকে স্বস্তি দিতে। সব জরা কে ধুয়ে মুছে নিয়ে যেতে।
বারান্দাটা থেকে নিচে দেখা যাচ্ছে। একজন যুবক গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুমু এই যুবক টাকে চিনে।কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তে বদ্ধ পরিকর।কিন্তু সে ভুলে বসেছে প্রকৃত এবং পবিত্র ভালোবাসা সকল সিদ্ধান্তের ভীটকে নড়িয়ে দিতে জানে।সুমু বারান্দায় দাঁড়িয়ে রিয়াদের দিকে চেয়ে আছে।এমন না যে সে পছন্দ করেনা।কিন্তু শুধু মাত্র নাহিয়ানের কথা ভেবেই সে আর এগুচ্ছেনা।কি প্রভাব পড়বে তার বাচ্চাটার উপর।এ কয় দিনে রিয়াদ একটু একটু করে সুমুর মনে যায়গা করে নিয়েছে।তবে নাভিদের সম পরিমাণ তা কখনোই না।দিনশেষে সেও তো মানুষ,নারী। তারও ভালো লাগে কারও এক্সট্রা কেয়ার পেতে।কিন্তু তার মাতৃস্বত্তার কাছে বারবার হেরে যায় তার নারী স্বত্তা।

রাত ন’টা বাজে বাহিরে ভেঙে চূড়ে ঝড় নেমেছে।বারান্দার দরজা সহ ঘরের সব জানালা বন্ধ।সুমুর ভয় হয় ফাগুণের নবধারা যদি আবার বারান্দা হয়ে চলে আসে তার ঘরে।সে ভয় পায় সবকিছু আবার হারানোর ভয়। নাহিয়ান তার দাদা দাদুর সাথে গল্পে মসগুল।সুমু রাতের খাবারের আয়োজনে ব্যাস্ত।

রাত ১১ টা বেজে ৫৫ মিনিট।
ঝড় জেনো থামছেই না। নাহিয়ান ঘুমিয়ে পড়েছে।সুমুর চোখে ঘুম নেই।জানালা দিয়ে সে বাহিরের পথে চেয়ে আছে।যুবকটি এখনো দাঁড়ানো। শীতে কাঁপছে সে।কিন্তু একবারের জন্যও গাড়িতে গিয়ে বসছেনা।উফফ মেজাজ টা খিচড়ে যাচ্ছে সুমুর।কি দরকার আছে অমন প্রেমিক পুরুষ সাজার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে রাগে।জানালার কাঁচ টা একটু সরিয়ে বাহিরে তাকাতেই লোকটা উপরের দিকে তাকালো।শীতের প্রকপে কাঁপা কাঁপা হাসি দিচ্ছে বোকা লোকটা।সুমুর ইচ্ছে করছে এক চড় দিতে।কিন্তু পারছে কই??
আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে লোকটার মারাত্মক কিছু হয়ে যাবে।কান্না পাচ্ছে সুমুর।কিন্তু তার কান্নার কোনো মানেই হয়না।
চোখের পানি গুলো জেনো বাঁধ ভেঙ্গেছে আজ।নাহিয়ান উঠে এসে কখন সুমুর পাশে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি সুমু।আঁচলে টান পড়তেই খেয়াল হলো সুমুর। ইংরেজ সাহেব দের মতো কথা বলা ছেলেটা তার বাংলা ভাষা কমই বুঝে সবদোষ তার দাদার। নাতিকে ইংলিশ স্কুলে পড়ানোর ফল।খুব আফসোস হয় সুমুর ছেলেটার বাংলা শুনে।তার বাচ্চাটা।

– ডু নট ক্রায় মম।ইউ আর নট আ ক্রায় বেবি। বিগ গার্ল গ্রো আপ।
– সুমু হাঁসছে নাহিয়ানের কথা শুনে।
– কেঁদো না আম্মু।তুমি রিয়াদকে বাসায় নিয়ে এসো।আজ সারাদিন সে কিচ্ছু খায়নি।পানিও না।আমি যখনই বারান্দা থেকে বাহিরে দেখেছি সে এদিকেই তাকিয়ে ছিলো।তুমি তাকে বাসায় নিয়ে এসো।
– থাকুক।ভিজুক বৃষ্টিতে। মাথা ঠিক হয়ে যাবে।
– আমি সব জানি আম্মু।আমার খুব ভালো লেগেছে রিয়াদকে।আমার তাকে পাপা ডাকতে আপত্তি নেই।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। তুমি তাকে নিয়ে আসবে আমি এখন ঘুমোতে যাচ্ছি।তুমি যাও।
– ছেলের মুখের কথা শুনে সুমুর জেনো খুশি ধরছেনা।তার ছেলেটা এত বড় হয়ে গিয়েছে। এইটুকু বাচ্চা তার বাবার মত করে কথা বলছে।
– আম্মু তুমি যাবে নাকি আমি যাবো??
সুমু নাহিয়ানের কথা শুনে হকচকিয়ে গেলো দ্রুত বলে উঠলো আ’ম গোয়িং হানি।আমি যাচ্ছি।
দ্রুত দরজা খুলে লিভিং রুম থেকে বাহিরের দরজার দিকে ছুটলো সুমু।নাহিয়ান পেছন থেকে ডেকে বললো –
হেই আম্মু ইউ ফরগোট দিস থিংস।
সুমু আবার দৌড়ে নাহিয়ানের কাছে গেলো।
একটা ছাতা আর একটা তাওয়াল ধরিয়ে দিলো নাহিয়ান তার মায়ের হাতে।সুমু নাহিয়ানের গালে চুমু খেতেই নাহিয়ান কপট রাগ দেখিয়ে ইয়াক বলে উঠলো।
সুমু কান্না মিশ্রিত হাসি দিয়ে ছুটলো নিচে যাবার জন্য।
নাহিয়ান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো যতক্ষণ না সে দরজার বাহিরে গিয়ে লিফটে উঠলো।সুমু যেতেই নাহিয়ান নভিদের ছবির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আর বললো আই প্রমিজ আমি আম্মুকে কখনো কষ্ট পেতে দিবোনা।

লিফট থেকে নেমেই সুমু ছাতা খুলে দৌড়ে গেলো রিয়াদের কাছে।ঠকঠক করে কাঁপছে রিয়াদ।সুমুর চোখ ভর্তি পানি টলটল করছে।রিয়াদ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো-

আপনি নিচে কেনো এসেছেন?? ঠান্ডা লেগে যাবে আপনার।

সুমু ভেঙচি দিয়ে রিয়াদের মিমিক করলো- ঠান্ডা লেগে যাবে আপনার।
অসভ্য,বেহায়া লোক এই অবস্থায় কে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে আপনাকে? বাসায় আসলে কি আপনাকে কেউ ঢুকতে দিতো না?? কেনো দাঁড়িয়ে ছিলেন এভাবে?? কাঁদছে সুমু।

রিয়াদ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে সুমুর দিকে।নাফ্রোদিতির মত সুন্দর দেখতে দেবীটা তার জন্য কাঁদছে,অথচ কি সুন্দর লাগছে তাকে ক্রন্দনরত অবস্থা।ঠোঁট গুলো কান্নার তরে কেঁপে উঠছে।চোখ বেয়ে অশ্রু গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে চিবুক ছুঁয়ে দিচ্ছে। রিয়াদের খুব করে সুমুর চিবুকে ঠোঁট ছোঁয়াতে ইচ্ছে হচ্ছে।সুমু তাকে তাওয়ালে জড়িয়ে তার হাতে ছাতাটা ধরিয়ে দিয়েছে রিয়াদ একদৃষ্টি তে সুমুকে দেখছে। আচমকা সুমু রিয়াদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। তাকে শক্ত করে দুহাতে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে সুমু।রিয়াদ একহাতে সুমুকে জড়িয়ে ধরে ভাবছে এক বাচ্চার মা হলেও সুমুর ভিতরের কিশোরী স্বত্তাটা প্রবল। সে ততক্ষণাৎ একটা পণ করলো – সারাজীবন সে নাফ্রোদিতির মত দেখতে এই সুন্দরীকে খুনশুটি করে কাঁদাবে এবং তাকে আদরে আদরে কাণাকাণায় পরিপূর্ণ করবে, এ কান্না দেখেও সুখ।

এক পশলা ফাগুণের নবধারা আবার সুমুকে ভিজিয়ে দিলো কিন্তু এবার তার পাশে রিয়াদ রয়েছে তার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখার জন্য।জীবন বড্ড বৈচিত্র্যময়।??

সমাপ্ত।

প্রত্যাখান_পর্ব(১৫)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(১৫)
প্রত্যাখান_পর্ব(১৫)

প্রত্যাখান_পর্ব(১৫)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

রাত্রি দশটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট।

পিয়াদের বাসার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি মিনিট পাঁচেক হয়ে গেছে।

কল দিয়েছিলাম পিয়ার বাবা জনাব সিদ্দিক সাহেবের ফোনে।

রিসিভ করে বলছে আসতেছে কিন্তু পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও ওনার খবর নেই কোন।

পুনঃবার কল দিলাম।

রিংটোনের আওয়াজ বলে দিচ্ছে, মানুষটা সিড়ি পেরিয়ে গেইটের অনেকটা কাছে চলে এসেছে।

কল কেটে গেইটের ভেতরে দৃষ্টি নিয়ে গেলাম।

বলতে বলতেই সিদ্দিক কাকা গেইটের একদম সন্নিকটে চলে আসে। আমাকে দেখে দুর থেকেই বলতে শুরু করেন তিনি,

‘বাপরে! বয়সের সাথে সাথে মাথাও কিছুটা নষ্টের পথে।

গেইট খুলার চাবি না এনে চলে আসছি ঔষধের বক্স নিয়ে।

তিনতলা পেরিয়ে দুতলায় আসতেই খেয়াল করি সেটা।’ কাকাকে সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম।

কুশলাদি বিনিময় করতে করতে কাকার সাথে তিনতলায় বাসায় ঢুকলাম। তিনকক্ষ বিশিষ্ট ছোট্ট একটা বাসা।

অনেকটা ছিমছাম এবং গুছানো।

একরুমে কাকা কাকি থাকেন, আরেক রুমে তাদের একমাত্র মেয়ে পিয়া এবং অন্য রুমে আগত অতিথিরা থাকেন।

যথারীতি কুশলাদি বিনিময়ের পর পিয়ার মা এবং পিয়া আমায় বসতে অনুরোধ করেন।

আমি বসার আগেই এদিক ওদিক তাকিয়ে পিয়ার দিকে দৃষ্টি নিলাম। প্রশ্ন করলাম,

‘পিয়া, কোথায় লাবণ্য?

ও’কে দেখছি না যে?’ চায়ের কাপটা পিয়ার মা আমার হাতে এগিয়ে দিতে দিতে জানান দেয়,

‘ঘুমুচ্ছে। আহারে বেচারী! পুরো দুপুর পথভুলে ঘুরে বেরিয়েছে রাস্তায়।

তারপর যাও মানুষের মাধ্যমে একটু রাস্তাটা ধরতে পারলো, ওমনি বৃষ্টি শুরু হলো।

সেকি বৃষ্টি! একদম মুশলধার।

ব্যাটা! ব্যবসা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে? ঘরের দিকেও তো একটু নজর দিতে হবে, তাই না?

এক কাজ করো। একদিন ব্যবসা কার্য থেকে দুইদিনের জন্য বিরতি নিয়ে ঢাকা শহরটা ঘুরে দেখাও মেয়েটাকে।

যাতে ভবিষ্যতে পথভুলে হারিয়ে না যায়।’ পিয়ার মায়ের কথার প্রতিউত্তরে কিছুই বলতে পারিনি।

তার আগেই ওনি আবারও বলতে শুরু করেন,

‘আহারে বেচারী! সারাটা দিন অসহায়ের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে শেষমেশ বৃষ্টির জন্য টং দোকানে আশ্রয় নেয়।

পরে বৃষ্টি থামলে পাশের ফ্ল্যাক্সির দোকান থেকে শাশুড়ীকে কল দিয়েছে।

তারপর তোমার মা কল দিয়ে ওর বর্তমান অবস্থানটা আমাদের জানালে তোমার আঙ্কেল গিয়ে ওকে নিয়ে আসে।

ঐতো! লাবণ্য আসছে। ঘুম হলো মা?’ আন্টির দৃষ্টিকে অনুসরণ করে পেছনে ফিরে তাকালাম আমি।

ঘুমজড়ানো চোখে ছোট বাচ্চাদের ন্যায় আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে লাবণ্য।

চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে কাপটা একপাশে রেখে ওঠে দাঁড়ালাম সোফা থেকে।

‘আন্টি! আজ তাহলে আমরা আসি।

লাবণ্য চলো।’ লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে আচমকাই বলে ওঠলাম কথাটা।

‘কি বলছো তুমি বাবা? আসছো মানে?

আজ কোথাও যাওয়া হবে না। আজ তোমরা আমাদের এখানে থাকবে।’

সোফা থেকে ওঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে পিয়ার মা কথাটা বলে।

‘ না আন্টি, আজ নয়৷ অন্য আরেকদিন। আর তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?

যাও, কলেজ ব্যাগ নিয়ে আসো।’

অনেকটা অধিকার খাটানোর ন্যায় লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে কথাটা বললাম।

জবাবে আন্টির দিকে ফিরে তাকায় লাবণ্য।

ভাবমূর্তিখানা এমন যে, আমার কথায় যেন ভিষণ রকম বিরক্ত ‘ও’।

এতরাতে বাসা থেকে বের হওয়ার কোন ইচ্ছেই যেন ওর নেই।

ওর সেই মুখভঙ্গিকে কাজে লাগিয়ে আরো জোর গলায় জানান দেয় আন্টি, ‘না, বাবা!

এই প্রথম মেয়েটা এসেছে। আজ যাওয়া যাবে না।

এতরাত্রিতে তো কোনভাবে নয়। তুমি বরং সকালে এসো।

‘ কেন জানি আন্টির সাধারণ কথায়ও সেদিন আমার মেজাজ চরমে ওঠে গিয়েছিলো।

লাবণ্যর দিকে না তাকিয়েই বললাম, আচ্ছা!

ও থাকুক তবে। আসি আন্টি। আঙ্কেল আসসালামু আলাইকুম।

বাসা থেকে বের হয়ে নিজের ওপর চরম রাগ ওঠে যায়।

এ আমি কি করলাম?

রাগের জন্য ওকে রেখেই চলে আসলাম? না এটা ঠিক হয়নি আমার। ভালো লাগছিলো না কিছুই।

বাসায় না গিয়ে ঘুরঘুর করতে লাগলাম রাস্তায়।

আর মনে মনে লাবণ্যর সাথে কথা বলতে লাগলাম,

‘না হয় আমি বলেছিই থাকতে, তাই বলে তুমি এমন করতে পারলে?

আমাকে একবার থামিয়ে বলতে পারলে না, আমিও যাবো আপনার সাথে?

কি এমন ক্ষতি হতো এটা করলে?’ মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে তিনতলার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আমি।

নাহ! কেউ দাঁড়ায়নি আমার পথপানে তাকিয়ে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পেছনের দিকে তাকাতেই ভূত দেখার ন্যায় চমকে ওঠলাম আমি।

ছাতা হাতে স্বয়ং লাবণ্য দাঁড়িয়ে।

তারপাশেই আরো একটি ছাতা হাতে সিদ্দিক কাকা দাঁড়িয়ে।

আসলে হচ্ছেটা কি? বুঝতে পারছিলাম না কিছুই।

স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাই তাকিয়ে আছি ওদের পানে।

সিদ্দিক কাকা দুষ্টুমির হাসি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে।

তুই তো পুরো বাপের মতো হয়েছিস।

তোর বাপও এমন করত।

অকারণে ভাবির(তোর মা) সাথে ঝগড়া করতো।

তারপর তোর মা বাপের বাড়ি চলে গেলে রাত্রি আধারে তোর বাপ শ্বশুরের ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো।

কাকার কথায় লজ্জা পেলাম ভিষণ।

কাকা আবারো বলতে শুরু করেন, রাগ করে চলে আসছে লাবণ্য,

এটা আমায় আগে বলিসনি কেন?

আগে বললে তো তোকে এত কষ্ট করতে হতো না৷

ভাগ্যিস, বারান্দার গ্লাসগুলো মিলিয়ে দেয়ার সময় নিচে দৃষ্টি আসে আমার।

কাকা, আমি আসলে….

পুরো কথা বলতে পারিনি। তার আগেই কাকা লাবণ্যর দিকে ফিরে তাকায়।

‘শুনো মা, বর ঝগড়া করলে,

তাদের ঘাড়ের রগ বাকা থাকলে সেগুলো টেনে সোজা বানানোর দায়িত্ব তোমাদের।

রাগ করে এভাবে হুটহাট বাপের বাড়ি/অন্য কোথাও যাওয়ার আগে নেক্সট টাইম একলা ঘরে বসে এটাই ভাববা,

কিভাবে টাইট দিলে বর সোজা থাকে।

কি মনে থাকবে?’

মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ-বোধক জবাব দেয় লাবণ্য।

হাসি এসেও আসলো না আমার। কাকার থেকে বিদায় নিয়ে পায়ে হেঁটে দুজন চললাম সামনের দিকে।

খানেকদুর যেতেই মাথায় দুষ্ট বুদ্ধির উদয় হয়।

ওর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর হাতের ছাতাটা ছেড়ে দিলাম ওপরে শূন্যের দিকে।

মুহূর্তেই দমকা হাওয়া এসে সেটা উড়িয়ে নিয়ে যায় দুরে। চলবে….

মন ফড়িং ❤ পর্ব – ১০ 

0
মন ফড়িং ❤
পর্ব – ১০
মানব হৃদয় কখন কী ভাবে বোঝা মুশকিল। আসমা জামান তার ছেলের মনের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করছেন এই মূহুর্তে। কিন্তু পারছেন না। হতে পারে নিদ্রের মায়ের কথা মনে পড়েছে! আবার নাও হতে পারে।
– নাজমুল শোন তো।
নাজমুল সাহেব দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বললেন
– কিছু বলবা?
– চল একসাথে বাংলাদেশে ঘুরে আসি।
নাজমুল সাহেব মুচকি হেসে বললেন
– না, তোমরা যাও।
৭ টা ৫৫ মিনিটে নিদ্র, মিস্টার ব্রন্ডের বাসায় হাজির। মিস্টার ব্রন্ড দরজার সামনে নিদ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন
– বাইরে কেনো দাঁড়িয়ে ভেতরে আসুন। মনে হচ্ছে রাতে ঘুম কম হয়েছে?
– একটু বেশিই ঘুম হয়েছে আরকি!
মিস্টার ব্রন্ড হাসতে হাসতে বললেন
– টেবিলের উপর গরম কফি রাখা আছে। খেয়ে কাজে লেগে পড়ুন।
– আপনি কোথাও যাচ্ছেন?
– হ্যাঁ, আমার স্ত্রীকে আনতে যাচ্ছি। ১০ টার দিকে চলে আসবো।
মিস্টার ব্রন্ড চলে যাবার পর নিদ্র কফি হাতে নিয়ে বাকি কাজে মন দিলো।কফিটা খারাপ না খেতে।
১০ টার দিকে মিস্টার ব্রন্ড ফিরে এলেন। হুইলচেয়ারে করে ২৫ – ২৮ বছরের একজন নারীকে নিয়ে। মহিলা প্যারালাইজড, পুরোপুরিভাবে! হাত পা কিছুই নাড়াতে পারেনা।মহিলা তেমন সুন্দরী না আবার অসুন্দরী নন। অদ্রির মতো!  মিস্টার ব্রন্ড আর এই মহিলা একা নন। একজন নার্স আছেন, মধ্যবয়সী!
ঘরে ঢুকেই মিস্টার ব্রন্ড, নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন
– নিড্র, আমার প্রিয়তমা স্ত্রী ম্যান্ডি!
মিস্টার ব্রন্ড তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলেন
– ম্যান্ডি, কেমন লেগেছে বলোতো? অল্পবয়সী ছেলেটাকে দেখছো না, ওইযে দাঁড়িয়ে আছে? ও ডেকোরেশন করেছে। দারুণ না? ওকে গিফট দেয়া উচিৎ না আমাদের?
নিদ্র বেশ অবাক হয়ে শুনছিলো ব্রন্ডের কথাগুলো।
মিস্টার ব্রন্ড তার ওয়ালেট থেকে ৫০০ ডলার এর তিনটি নোট নিদ্রের হাতে গুজে দিয়ে বললেন
– ম্যান্ডির, খুব ভালো লেগেছে তোমার ডেকোরেশন টা। ও  আমাকে বলেছে তোমাকে গিফট দিতে। গিফট তো আর এখন কিনে আনা সম্ভব না। তাই তোমাকে এক্সট্রা কিছু ডলার দিলাম। পছন্দমতো কিছু কিনে নিও।
নিদ্র বেশ স্বাভাবিকভাবেই বলল
– আপনি বলেছেন এতেই হবে। এক্সট্রা ডলার লাগবেনা।
– নিতেই হবে। তা না হলে ম্যান্ডি খুব কষ্ট পাবে। ওই দেখো ও তাকিয়ে দেখছে আর শুনছে কী বলি! যদি বুঝতে পারে তুমি নাও নি তাহলে তো কষ্ট পাবে।
নিদ্র তার ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছিলো বাসায় ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মিস্টার ব্রন্ড তার স্ত্রীকে নিয়ে ব্যস্ত আছেন। এই মুহূর্তে তাকে বিরক্ত করাটা ঠিক হবেনা কিন্তু তার স্ত্রীর এই অবস্থার পিছনে কারণটা জানতে ইচ্ছে করছে।
মিস্টার ব্রন্ড তার স্ত্রীর বিছানার পাশে বসে আছেন। স্ত্রী ঘুমুচ্ছেন, সে যদি একটা রাত এভাবে ঘুমাতে পারতেন।
স্ত্রীর পাশ থেকে উঠে চলে এলেন বসার ঘরে। নিদ্রকে ব্যাগ গুছাতে দেখে বললেন
– আপনার জরুরি কাজ আছে নাকি?
নিদ্র বলল
– না, তেমন নেই। তবে খুব খিদে পেয়েছে, বাসায় না গিয়ে উপায় নাই।
– একটা মিনি বার্গারে হবে আপাতত?
– না সমস্যা নেই। আমি বাসায় গিয়ে খেয়ে নিবো।
– আমি চাচ্ছিলাম তোমার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করবো।
বসার ঘরে ছোটো টেবিল এনে মিস্টার ব্রন্ড নিদ্রকে চেয়ার টেনে বসতে বললেন।
হাফ প্লেটে বার্গার আর টমেটো সস এনে টেবিলে রেখে, নিদ্রকে জিজ্ঞেস করলেন
– বেয়ার নাকি রেড ওয়াইন?
নিদ্র বলল
– ওসব আমার ঠিক সহ্য হয়না। ঠান্ডা পানি হলে হবে।
পানির বোতল টেবিলে রেখে মিস্টার ব্রন্ড নিদ্রের সামনে চেয়ার টেনে বসে বললেন
– আমার মনে হচ্ছে তোমার জানতে ইচ্ছা করছে আমার স্ত্রীর এই অবস্থা কেনো?
নিদ্র খেতে খেতে বললো
– তা ঠিক কিন্তু আপনি জানলেন কীভাবে?
– আমার স্ত্রীর অবস্থা কীভাবে এমন হলো।সবাই জানতে চায়। আর তোমার হাবভাব দেখে বুঝেছি কিছুটা।
– আপনি বলেন আমি শুনছি। আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছিলো।
– আমার স্ত্রী একটা স্কুলের টিচার ছিলো আর আমি একটা ফ্যাক্টরি তে ম্যানেজার পদে আছি। বিয়ের প্রথম দিকে বেশ সময় দিতাম ওকে কিন্তু ফ্যাক্টরির অবস্থা খুব একটা ভালো না চলাতে আমার ব্যস্ততা আরও বাড়লো। ফ্যাক্টরির মালিকের সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক হওয়াতে দায়িত্বটাও বেড়েছিলো। এমনও রাত যেতো যে আমি বাসায় আসার সময় পেতাম না। মাথায় শুধু একটাই চিন্তা থাকতো কীভাবে, কোন উপায়ে পরিবর্তন আনা যায়। ওর প্রতি অবহেলাটা আমার অনিচ্ছাকৃত ভাবেই বাড়তে থাকে। প্রায় ১ বছরের মতো এভাবেই চলছিলো। ও যে প্রচুর ড্রিংক করতো আমি বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না। ক্যারিয়ার আর ক্যারিয়ার!
ঠিক ৬ মাস আগে আমার স্ত্রী সুইসাইড নোট লিখে বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড করার চেষ্টা করে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়!
আমাদের লাভ ম্যারেজ ছিলো! এই ক্যারিয়ার আর ফ্যাক্টরি করে করে ওর সাথে আমি অন্যায় করেছি। আমাদের কালচার নিড্র তোমার দেশের মতো না। আমাদের এখানে বিয়ে, ডিভোর্স, সেক্স পার্টনার এসব কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু ভালোবাসাটা বোধহয় কালচার ভেদে পরিবর্তন হয়না।
আমার মনে হয় ও ভাবতো – আমি আর তাকে ভালোবাসিনা। অন্য কোনো মেয়ে পেয়ে গেছি। অন্য কারো সাথে সেক্সুয়াল সম্পর্ক রেখেছি এসব। কিন্তু ওর ভাবনাটা ভুল ছিলো। তবে এই ভুল ভাবার পিছনে আমি দায়ী ছিলাম। আমার এখনো মনে পড়ে অচেনা নাম্বার থেকে কেউ একজন বলছে – আপনার স্ত্রী সুইসাইড করেছে!
আমার বিশ্বাসই হচ্ছিলো না যে, ও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
ডাক্তার বলেছেন – সুস্থ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদি কোনো মিরাকেল না হয়!
আমি প্রায়শই ভাবি, একটা মিরাকেল ঘটে গেছে। ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আমার জন্য স্পেশাল বার্গার তৈরি করছে!
আমার ওর স্পেশাল বার্গারটা খুব পছন্দ! ও সুস্থ হলে, আপনাকে একদিন খাওয়াবো।
চলবে…..!
© Maria Kabir

মন ফড়িং ❤ পর্ব – ৯ 

0
মন ফড়িং ❤
পর্ব – ৯
প্রিয় মানুষের চেহারাটা হয়তোবা কখনো মনে রাখা যায়না। নিদ্রকে সে কোনো ভাবেই কল্পনায় আনতে পারেনা। কিন্তু তার স্বামীর চেহারা ভুলতে পারেনা। যতবার চেষ্টা করে ততবারই সেই চেহারা আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে যায়। জীবন তাকে কিছুই দিবেনা। রশীদ চাচার মেয়েটার বিয়ে তার এই বাড়িতে হবে। চোখের সামনে তার মতোই একজন মেয়েকে নতুন জীবনে পা বাড়াতে দেখবে। স্বামীর ভালোবাসায় স্বপ্ন গুলো তার রঙিন হবে। তার সব স্বপ্ন একটি একটি করে পূর্ণতা পাবে। রীতাকে আসতে দেখে অদ্রি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো। রীতা নামে এই মায়ের বয়সী মহিলা তাকে খুব বেশি যত্ন করে। টাকা দিয়ে এরকম যত্ন কেনা যায়না। সে তো নিজে কখনো বেশি কথা বলেনি রীতার সাথে। তাহলে কীভাবে বা কী কারণে এতোটা যত্ন সে পায়? রান্নাবান্নার কাজের জন্য তাকে আনা কিন্তু সে ধীরে ধীরে সবকিছুতেই প্রভাব খাটাচ্ছে। অদ্রির রুটিন করা অনিয়মকে খুব সহজেই নিয়মে রূপ দিচ্ছে।
রীতা অদ্রিকে চুপচাপ দেখে বললেন
– আজকে একটু ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে।
অদ্রি বললো
– আচ্ছা যাবেন। চাবি আমার কাছ থেকে নিয়ে নিবেন।
– আমার সাথে আপনিও যাবেন। ভালো লাগবে।
– আমার শরীর তেমন ভালো না। ভালো হলেই যাবো। আর আমাকে তুমি করে বলবেন।
– শরীর ভালো করার জন্যই তো বলছি ছাদে যাওয়ার কথা।
– অন্যদিন আমি যাবো।
রীতা বুঝতে পারলেন একে এভাবে বলে নিয়ে যাওয়া যাবেনা।
– আচ্ছা বাদ দাও। আগে খেয়ে নাও
– খাবার রেখে যান। আমি খেয়ে নিবো।
– ওই ভুল অনেক করেছি আর না। আমি এখন থেকে তোমাকে খাইয়ে দিবো।
– আপনাকে কষ্ট করতে হবেনা।
– কষ্ট না। রান্নাবান্না ছাড়া তো আর কোনো কাজই নেই। তোমার যত্নে না হয় কিছু সময় কাটুক। সুস্থ হলে না হয় আর করবোনা।
অদ্রি অনিচ্ছাসত্ত্বেও খেতে হলো। কোনো খাবারই তার ভালো লাগছেনা। কেমন যেন তিক্ত স্বাদের। কিন্তু খুদাও বেশ পেয়েছে। খুদার কারণে তিক্ত স্বাদের খাবার তাকে খেতে হচ্ছে।
রীতা বললেন – তিতা লাগতেছে তাই না?
– হ্যাঁ।
– বোধহয় হালকা জ্বর তোমার শরীরে। পেট ভরে খেয়ে আবার ঘুম দাও ঠিক হয়ে যাবে।
লিলি নদীর পাড়ে বসে আছে। আশেপাশের মানুষ এখন আর তাকে কোনো প্রশ্ন করে না। প্রথম দিকে এখানকার স্থানীয় মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সে রীতিমতো বিরক্ত ছিলো। এখন কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দেয়না। লিলির বাসায় থাকতে ভালো লাগেনা। তার যুবক ছেলেদের দেখতে ভালো লাগে। ইচ্ছা করে তাদের মধ্যেকার কেউ একজন তাকে সঙ্গ দিক। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করুক
– এভাবে একা বসে থাকো কেনো? মন খারাপ?
না, তাকে কেউই জিজ্ঞেস করবেনা। কারণ সে তো কাজের মেয়ে। আজ পড়াশোনা করলে কোনো স্কুলে থাকলে এর বিপরীত ঘটনা ঘটতো।
তার বয়সী কতো মেয়েকে সে এখানকার ঝোড়ঝাপে লুকিয়ে প্রেম করতে দেখেছে।
শুধু কি এরা প্রেম করে? মনে পড়তেই লিলির পুরো শরীরে কেমন তড়িৎ বয়ে যায়!
নদীতে ঠিক এই সময় ৭-৮ জনের মতো যুবক ছেলেদের দল আসে গোসল করতে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর যে যুবক তাকে লিলির খুব ভালো লাগে। ক’দিন যাবত সেই ছেলেও কীভাবে যেন তাকায় ওর দিকে। ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। লিলির খুব ভালো লাগে! ছেলেটাও কি একইরকম ভাবে?
ইশ !
৭-৮ জনের দলটি ইতিমধ্যে এসে গোসলে নেমেছে।
সেই যুবকের দিকে তাকিয়ে আছে লিলি।
সন্ধ্যা হবার কিছুক্ষণ আগেই লিলি বাসায় ফিরেছে। রীতা বললেন
– অদ্রি তোমাকে ডেকেছে। তবে এখন যেয়ো না। ও ঘুমাচ্ছে।
লিলি বেশ বিরক্ত হয়ে বললো
– আমি সেটা বুঝবানি।
– কী বুঝবা না বুঝবা তোমার ব্যাপার কিন্তু অদ্রির ঘুমে যেন ব্যাঘাত না হয়। ও খুব অসুস্থ। বুঝতে পারছো কী বলেছি?
রীতার  কঠোর গলায় কথাটা শুনে লিলি কিছুটা ভয় পেলো। কোনো উত্তর না দিয়েই সে তার ঘরে চলে গেলো।
দরজা আটকে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে। সে কি সত্যি খুব সুন্দর? তাহলে ওই যুবক কেনো তার দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকে?
এই বয়সের মেয়েরা পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি কে ভালোবাসা ভেবে নেয় বুঝি। তা না হলে লিলি ওই যুবকের তাকানোর অর্থ বুঝতে পারতো।
নিদ্রের ঘুম ভাঙলো তখন রাত ৩ টা বেজে ৪৫ মিনিট। অন্ধকারে ঘড়ির কাটা জ্বলজ্বল করছে।
সকাল ৮ তাকে যেতে বলেছে। রঙের কাজ এখনো কিছু বাকি আছে। তার স্ত্রী নাকি সকাল ১০ টার দিকে আসবেন। এতো সহজে কি সে পেয়েছে? তাকে জিজ্ঞেস করলে বলবে কিছু?
মিস্টার ব্রন্ড আবার তাকে খারাপ ভাব্বে না তো? ভাবলে ভাবুক।
ঘুম আসছে না নিদ্রের। কী করবে? নতুন কোনো নকশা তৈরি করার চেষ্টা করবে? নাকি তার কাজে কী কী পরিবর্তন করা যায় সেটা নিয়ে বসবে? দাদীর সাথেও তো আজ তেমন কথাই হয়নি। একটু দেখে আসা যাক কী করছেন আসমা জামান?
নিশ্চয়ই দাদার ছবি হাতে নিয়ে নীরবে চোখ ভেজাচ্ছেন। দেখে ফেললে, স্বীকার করতেই চাইবেনা।
নিদ্র দাদীর রুমের দরজার কাছে যেতেই বুঝতে পারলো, দাদী জেগে আছেন এবং দাদার ছবি হাতে নিয়ে নীরবে কাঁদছেন! নিদ্র দাদীর কাছে বিছানার উপর বসলো। আসমা জামান ছবিটা উপর করে রেখে চোখ মুছে বললেন
– ঘুম আসছে না?
– তা তো দেখতেই পাচ্ছো।
– মেয়েটাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। ছবি আছে তোর কাছে?
– আছে। তবে আমি চাই তুমি সামনাসামনি ওকে দেখবে। ছবিতে তোমার ওকে একদমই ভালো লাগবেনা।
– কবে যাবি?
– টাকাই তো জোগাড় হচ্ছে না। আর দুই একটা কাজ করলে যাওয়ার মতো অবস্থা হবে।
– ওই মেয়ের যদি বিয়ে হয়ে যায় তখন?
– তখন আর কী? ভাবতে হবে আল্লাহ তায়ালা আমার ভাগ্যে ওর নামটা লিখে দেয়নি।
– জীবনটা এভাবেই কাটিয়ে দিবি?
– আসলে দাদী, আমি অনেক চেষ্টা করেছি ভুলে থাকার। বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এসেছি ওকে না জানিয়ে। এখানে এসেও কোনো যোগাযোগ করিনি। ও চিঠি পাঠিয়েছে কিন্তু আমি তার প্রতিউত্তর দেইনি। তারপরও আমি পারছিনা। ক্লাবে, বারে গিয়ে কতো সুন্দরী মেয়েদের সাথে মেশার ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। তাই আমি চাচ্ছি একটা শেষ চেষ্টা করবো। মনে করো যদি একটু বুঝতে পারি, আমার জন্য অল্প একটু ফিলিংস আছে। তাহলেও আমি ওকে…..
নিদ্রের গলার কাছে কথাটা আটকে গেলো। বিছানা ছেড়ে উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো নিদ্র।
আসমা জামান, নিদ্রের চলে যাওয়ার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
নাজমুল সাহেব ডান হাতে দুটো টিকিট নিয়ে বসে আছেন। আরেক হাতে এলকোহলের বোতল। আজকে আর গ্লাসে নিয়ে খাচ্ছেন না। নাজমুল সাহেব বোতল রেখে তার মায়ের রুমের দিকে গেলেন। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইলেন। আসমা জামান বললেন
– আয়। ঘুমাস নাই?
– না, ঘুমাতে ইচ্ছা করছেনা।
– নাকি ঘুম আসছে না?
– ওই একই কথা?
ছেলের হাতের টিকিট দেখে জিজ্ঞেস করলেন
– কীসের টিকিট রে বাপ?
– তোমাদের বাংলাদেশ যাওয়ার টিকিট। আর যাওয়ার সময় মনে করো কিছু টাকা রেখেছি। তা না হলে ভুলে যাবো।
– বাপ তুই আরেকটা বিয়ে কর।
নাজমুল সাহেব হো হো হো করে হাসতে শুরু করলেন। হাসি থামিয়ে বললেন
– এখন ছেলের বিয়ের বয়স আর যদি আমি করি তাহলে ব্যাপারটা একটু কেমন হয়ে যায়না?
– বিয়ের কোনো বয়স নাই বাপ।
– তারপরও আমার আর ওতে মন নেই। মা, আমি যাই নেশাটা বেশি হয়ে গেছে মনে হয়। মাথাটা কেমন যেন লাগছে।
নাজমুল সাহেব টিকিট মায়ের হাতে দিয়ে বললেন
– মা, আমাকে পারলে মাফ কইরো। অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে আর নিদ্রকে। বেচারাকে আমি মনে হয় কখনো ভালোবাসতে পারিনি।
বাবা হতে পারিনি আমি, মা। আমি পারিনি!
চলবে…..!
© Maria Kabir

প্রত্যাখান_পর্ব(১৪)

0

#প্রত্যাখান_পর্ব(১৪)
লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

‘এত যে কষ্ট মনের ভেতরে, তবুও মেয়েটির বিন্দু মাত্র ক্ষোভ নেই বাবা-মায়ের প্রতি। সবসময় মুখে হাসির রেখা ঝুলেই থাকবে। প্রকাশ করে না ঠিক’ই। কিন্তু বুঝি তো, সব বুঝি,’ জানালেন ভাবি। অনেকটা হাহাকার মিশ্রিত ছিল সে কথা।

খানেক থেমে তিনি আবারও বলতে শুরু করে, ‘জানেন, সেবার যখন আপনার মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো, তখন ওর কি আহাজারি! কিছুতেই আপনাকে বিয়ে করবে না। করতেই যদি হয় তবে আপনাকে বিষয়টা জানিয়েই করবে।’
এ কথা শুনে আপনার মা খানেক হাসলেন৷ তারপর লাবণ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন তিনি, ‘বোকা মেয়ে! বিয়েই তো হয়েছে। অন্যায় তো কিছু করো নি। নিজেকে এত ছোট কেন ভাবছো? ছোট তো হওয়া উচিৎ ঐ মুখোশদারী মানুষটির, যে তোমাকে প্রতি পদে পদে ঠকিয়েছে।’
তারপর আর আন্টির মুখের উপর কথা বলেতে পারেনি সে। সব ঠিকঠাক ছিলো। বিপত্তিটা ঘটল সেদিন, ‘যেদিন লাবণ্য ফেসবুকে আপনার স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানতে পারলো মিথ্যে কথা একদম বরদাস্ত করেন না আপনি। হোক তা মজা করেও।’
আর সেদিনই সে আংকেলকে ডেকে প্রত্যাখান করে দেয় বিয়ের প্রস্তাব।
সত্যি বলতে প্রথম দেখাতেই(ছবি দেখে) ও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। জায়গা দিয়ে ফেলেছিলো মনের ছোট্ট কুঠুরিতে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনি।
‘একটা বিয়ে হয়েছে, স্বামী সংসারে থাকতে পারেনি তিনমাসও, চলে আসতে হয়েছে। এসব নানাবিধ কারণে ও হীনমন্যতায় ভুগতো। নিজেকে ভিষণ ছোট ভাবতো। মানুষের ভালোবাসার অযোগ্য মনে করতো নিজেকে।’

লাবণ্যর ভাবির কথাগুলো শুনছিলাম আর দু’চোখ দিয়ে অকাল শ্রাবণ ঝরছিল আমার। মনে মনে শুধু এটাই ভাবছিলাম, ‘এ আমি কি করলাম! কেন করলাম? কোন কিছু না জেনে বুঝে কেন এমনটি করলাম?’
‘শুভ্র ভাই! বেলা বয়ে গেল বলে। আপনি কি আজ রাতটা আমাদের ছোট্ট কুটিরে থেকে যাবেন?’ অনেকটা অনুনয়ের স্বরে ছিল সে প্রশ্ন।
সম্বিত ফিরে আমার। ঠোঁটের কোণে মেকি হাসির দেখা ফুটিয়ে তুলি। ‘না, না, ভাবি! আমার এখন যেতে হবে। আসি।’

হেনা ভাবির থেকে বিদায় নিয়ে আমি যখন নরসিংদী থেকে রওয়ানা দেই, তখন বিকেল ৫টা বেজে ১৩ কি ১৪মিনিট। বাসায় যখন ফিরি তখন রাত্রি সাড়ে ৯টা বাজে।
দরজায় নক করতেই ‘আশা’ এসে দরজাটা খুলে দেয়। যদিও প্রতিটা দিন ড্রয়িং রুমে বসে আমার জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনতো লাবণ্য।
ভেতরে প্রবেশ করেই আমার আকুল নয়ন খুঁজতে থাকে লাবণ্যকে। এদিকে বোন যে আমার প্রশ্ন করেছে, ‘কিরে ভাইয়া! এরকম দেখাচ্ছে কেন তোকে?’ সেদিকে একটুও মন নেই আমার।
বোনের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই দ্রুতপায়ে এগিয়ে যাই নিজ রুমের দিকে, খুঁজতে থাকি লাবণ্যকে।
কিন্তু নাহ! পাইনি ও’কে। ভেতরটা আমার হাহাকার দিয়ে ওঠে। দ্রুত পায়ে মায়ের রুমে গেলাম। মায়ের রুম থেকে গোসলখানা, কিচেন, এরুম-ওরুম সবখানেই খুঁজলাম ও’কে মনে মনে, ভিষণ সংগোপন।

আমার এরকম হন্তদন্ত হয়ে ছুটাছুটিতে কিছুটা অবাক হয় মা। প্রশ্ন করে, ‘কিরে! কি হয়েছে তোর? কি খুঁজছিস এভাবে?’
হতাশ চোখে মায়ের দিকে তাকালাম আমি। তারপর অনেকটা ভেঁজা গলায় প্রশ্ন করলাম, ‘কোথায় লাবণ্য? ও’কে কোথাও পাচ্ছি না?’
বিয়ের পর এই প্রথম নিজ থেকে লাবণ্যর খোঁজ নিয়েছি৷ ব্যাপার’টাতে অবাক হয় মা। কিন্তু অস্বাভাবিক হয়নি। মনে হচ্ছে যেন এরকম কিছু ঘটবে সেটা ওনি আগে থেকেই জানতেন।
কিছুটা উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন করলাম আবারও, ‘কি হলো? কিছু বলছো না যে? কোথায় লাবণ্য?’
মায়ের জবাব, ‘বৃষ্টির জন্য আটকে গিয়েছিলো রাস্তায়। পরে পথভুলে আশ্রয় নেয় বান্ধবীর বাসায়। এখন পিয়াদের বাসায় আছে। কাল সকালে চলে আসবে।’
কেন জানি না, সেদিন আমার ভিষণ রাগ হয় লাবণ্যর প্রতি। ‘না হয় পথভুলে কিছু টা সময় নষ্টই হলো, তাই হলে এভাবে অন্যের বাসায় রাত কাটাবে?’
ঘড়িতে ১০টা বাজার শব্দ হলো তখনই। ঝুলে যাওয়া টা-ই’টা ভালো ভাবে বেধে মায়ের দিকে ফিরে তাকালাম, ‘আমি আসছি পিয়াদের বাসা থেকে। গেইটটা লাগিয়ে দাও।’
পিছু ডাকছে আশা। ‘ভাইয়া! শুন। বাইরে বৃষ্টি পরছে। যাসনে। এই ভাইয়া! ছাতাটা তো নিয়ে যা। এইরে! চলে গেলো। মা, তুমি এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো, কিছু বললে না কেন ভাইয়াকে?
জবাবে একটা রহস্যজনক হাসি দিয়ে আমার মা সেদিন নিজ রুমে চলে গিয়েছিল….

চলবে….

‘সর্বনাশের দিনে'(পর্ব-০৩)

0
'সর্বনাশের দিনে'(পর্ব-০৩)
'সর্বনাশের দিনে'(পর্ব-০৩)

না, অন্য আট/দশটা ছেলের মতো মাস্তানি কিংবা রাজনীতিতে দক্ষ ছিলো না সে।

সে ছিলো ভিষণ শান্ত।

খুব একটা সাহস তার ছিলো না।

বরং চুপচাপ নিরবে সবকিছুর সাক্ষী হয়ে রয়ে যেতো।

রাজপথে মিছিল চলছে।

সেখান দিয়ে হেঁটে গেলেই, আমার হাতে কারো হ্যাঁচকা টান অনুভব করতাম।

পরক্ষণেই নিজেকে আবিষ্কার করতাম ফুটপাতে, মিছিলের বিপরীত পথে।

না, না! ওকে কখনো ভিতু মনে হয় নি আমার।

শুধু বুঝতে পারতাম- ওর সাহসটা একটু কম ছিলো।

প্রতিবাদ করার ধরনটা ছিলো একটু অন্য রকমের।

গায়ের জোরে নয়, ও চাইতো ওর কলমটাকে শক্তি দিতে।

আমার সাহসী প্রেমের সাথে মিশে ওর ভীরু প্রেম একটু একটু করে কখন যেন জমাট বেঁধে গিয়েছিলো বুঝতেই পারি নি!

আর যখন বুঝলাম, ফেরা হয়নি আর।

সেদিন শিবপুরের একটা কম দামি রেস্টুরেন্টে বসে ওর দুটো হাত নিজের হাতে নিয়ে বলেছিলাম

– ‘এবার তো দুজনকে দুজনের বাড়িতে বলা উচিত।

‘ কথা ছিলো পরের শনিবার দেখা হলে বলবো যে বাড়ির সবাই শুনে কি বললো,

মেনে নিলো কি না।

কিন্তু তার আগেই তো সেই অচেনা বুলেট টা!

নাম বদলে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে গেলো স্বপ্নটাই।

যে ছেলেটা সব রকম গন্ডগোল থেকে দুরে সরে থাকতো!

যে নিজেকে কোনো ঝামেলাতে জড়াতোই না কখনো!

যে কেনো সে দিন কলেজের বাইরে দুর থেকে হলেও দেখার চেষ্টা করছিলো ভেতরে এতো পুলিশ কেনো!

সেই ছেলেটা কোথায় যেন হারিয়ে গেলো।

অনেক খুঁজেছি তাকে কিন্তু পাইনি। কোন কথাবার্তা ছাড়াই সে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো।

আচ্ছা, এটাই কি নিয়তি! এভাবেই কি শেষ হয়ে যায় ভালোবাসারা?

না চাইলেও কি এভাবেই প্রিয়জনকে ছেড়ে থাকতে হয়?

ধীরে ধীরে অতল অন্ধকারে তলিয়ে যাই আমি।

হয়ে যাই ডিপ্রেশনের রোগী।

আমার বাবা খুব কঠিন মনের মানুষ।

যেটা বলেন সেটাই হয়।

ছোটো বেলা থেকে যা বলেছেন সেটাই শুনে আসতে হয়েছে।

তবু আমি জানতাম বাবাকে ঠিক মানিয়ে নেবো।

চেষ্টা করবো বুঝাতে- ‘আমি আর ও’ সুন্দর একটা স্বপ্ন,

যা সব মেয়েরাই দেখে।

এই যে যার সাথে বাবা হঠাৎই আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললেন,

এই যে আমার হাজার বারণ কোনো দাম পেলো না আর, সত্যিই যদি কাল আমায় তিন শব্দের কবুল বলতে হয়!

তখন কি করবো আমি?

যে তিন শব্দের কবুল একদিন মনে মনে বলে আমি আর সেই ছেলেটা হৃদয় বদলে নিয়েছিলাম আল্লাহ’কে কে সাক্ষী রেখে, তার কথা কি আমার তখন মনে পড়বে না এক বারও?

আমি কি চোখ বুজলেই দেখবো না সেই হাসি মুখটা?

যে হাসি মুখটার প্রেমিকা ছিলাম আমি।

চলবে….

‘সর্বনাশের দিনে’

(পর্ব-০৩)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

‘সর্বনাশের দিনে'(পর্ব-০২)

0
'সর্বনাশের দিনে'(পর্ব-০২)

তোমার মতো ছেলেকে নিয়ে চিঠি লিখবো এ যে আমার কল্পনারও অতীত।

তবুও লিখতেই হচ্ছে!

সারারাত চোখের জলের নুন মেখে,

দগদগে ঘা’য়ে,

নিজেকে পোড়াতে পোড়াতে তবুও লিখতেই হচ্ছে তোমাকে নিয়ে,

নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে।

জানো কবি! তোমাকে মনে পড়লেই কষ্টের বাষ্প ফোটে আমার দুটি চোখে।

চাই না !

তবুও কেন জানি না তোমার ছবি হৃদয়ের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে।

জানি তো সামনা সামনি দাঁড়িয়ে কোনোদিনও আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস তোমার নেই।

তাই ইন্দ্রজিত এর মতো মেঘের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে একটার পর একটা শুকুনির দান চেলে গেছো তুমি!

ভাবছো কিছুই বুঝি না!

বুঝি,

সবই বুঝি আমি।

কিন্তু অবুঝের মতোই দেখে গিয়েছি শুধু।

আজ তোমার কাছে আমার একটাই প্রশ্ন।

ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে কেনো এসেছিলে জীবনে?

কেন কাঁদালে আমায়?

কেড়ে নিলে আমার স্বপ্ন দেখার অধিকার!

তোমার জন্যই আজ আমার রাত জাগার রুটিন।

তবুও একবুক হাহাকার বুকে নিয়ে অভিশাপ দিতে পারিনি তোমায়।

তোমা বিহনে একা,

একা দগ্ধ আমি আজও তোমায় আগের মতোই ভালোবাসি।

জানো সখা!

আমার বুকের বাঁ’দিকে ভিষণ ব্যথা।

তারপরও হারিয়ে যাওয়া ক্ষণটুকু গচ্ছিত আছে হৃদয়ে।

আফসোস শুধু তোমার ফেলে রাখা ধোঁয়াটে সময়ের রঙ্গমঞ্চের অভিনয়টা প্রথম কেন ধরতে পারি নি?

আজ তুমি আমার থেকে অনেক অনেক দুরে।

কিন্তু রাতের আঁধার যে বেশিক্ষণ থাকে না প্রিয়!

তোমার বোঝানো ভুলে তাই একদিন না একদিন মরচে পড়বেই,

আর সেদিনই খুলে যাবে সীমান্ত পথ ।

তুমি হেরে গেছো কবি,

হেরে গেছো পবিত্রতার কাছে।

হেরে গেছো তুমি আমার ভালোবাসা’র কাছে।

ভাবতে তবু অবাক লাগে তুমি নাকি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসো আমাকে!

এ তোমার কেমন ভালোবাসা ছিলো কবি!

যাকে তুমি নিজের প্রেমিকা বলে ভাবো তার জন্যই সারাটা পথ জুড়ে তুমি এঁকে দিলে কাঁটার পাহাড়!

তবে আজ না হয় কাল তোমার সূর্যও জেনে যাবে আসল নকল।

তখন কি তোমার বাতাসে জমবে না একটুও লজ্জার শ্বাস?

না কি আয়নারা হেসে হেসে দেখাবে না স্বরূপ তোমার!

তোমাকে আজ আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে কবি!

‘কলেজ গেইট’ সেই অগোছালোময় রেস্টুরেন্টের কথা তোমার মনে আছে?

যে টেবিলে বসে কফির ধোঁয়া সরিয়ে তুমি একদিন আমার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলেছিলে

‘ভালোবাসি’ সেই টেবিলেই অপেক্ষায় থাকবো ঠিক অপরাহ্নে শেষবারের মতো তোমার জন্য।

চলবে…

‘সর্বনাশের দিনে’

(পর্ব-০২)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

‘ সর্বনাশের দিনে’

0
' সর্বনাশের দিনে'
' সর্বনাশের দিনে'

ক্লান্ত দুপুর!

ভেতরে হাতুড়ি দিয়ে দুরমুশ পেটানোর শব্দ আর আমার ভীরু পায়ের এক একটা কদম।

গন্তব্য শিবপুর কলেজ গেইট।

যেখানে দাঁড়িয়ে তুমি আমারই অপেক্ষায়।

বাসস্টপে অগণিত মানুষ যেন থেকেও নেই।

শুধু তুমি আর আমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আমাদের প্রথম দৃষ্টি ।

সেই প্রথম তোমাকে সামনাসামনি দেখা।

কনে দেখা আলোর ন্যায় বুক জুড়ে শুধুই লজ্জা।

প্রচন্ড খিদে পেটে তুমি জানতে চেয়েছিলে- খিদে পেয়েছে তো লক্ষ্মী!

এদিকে কোন রেস্টুরেন্ট আছে কি?

পরিচিত শহর।

পাছে কেউ দেখে ফেলে এই ভয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন তোমায় শিবপুর থেকে মনোহরদীতে।

পাশাপাশি চেয়ারে বসেছিলাম দুজন।

তোমার অপলক দৃষ্টি আমার দিকে।

যে দৃষ্টির কাছে লজ্জায় রাঙা হয়ে গিয়েছিলাম আমি।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। তা সত্ত্বেও ঘাম জমেছিল আমার নাকে মুক্তোদানার ন্যায়।

তোমার শব্দ করে হাসা আমায় ঘায়েল করলো পুনঃবার।

মন বলছিলো- এ যে আমার স্বপ্নের পুরুষ!

তোমাকে এবং তোমার কথোপকথন গুলোকে সেদিন খুব করে মিলিয়ে দেখছিলাম আমি।

মনে হচ্ছিল সবটাই একটা রামধনুর মতো।

হাজার রঙের ক্যানভাসে আঁকা আমার কল্পনা।

নিরব থেকে তোমার মুখপানে তাকিয়ে ছিলেম পলকহীন দৃষ্টিতে। ভাবছিলাম,

এই তুমিটার সাথেই তো কতো রাত কেটেছে আমার না ঘুমিয়ে, জেগে জেগে,

স্বপ্ন বুনে।

কি ছিলো সেদিন বলো তো!

কলেজ গেইটের ডান দিকের সুরু রাস্তা ধরে হেঁটে আসা আলোয় কেনো লুকিয়ে ছিলো আমার এমন সর্বনাশ!

সেদিন তোমার দেওয়া প্রথম উপহার ‘স্মৃতির ডায়েরী’র প্রচ্ছদ পেরিয়ে তোমার হাতে আমার হাত রাখা।

চশমার কাঁচের পিছনে তোমার দুটো গভীর চোখ আর টেবিলে রাখা কফির কাপ দুটোর অস্পষ্ট ছাপ,

সব, সব আজও বুকে রয়ে গেছে ঠিক সেদিনের মতো। আমার স্বপ্নের পুরুষ!

কিছু ভুল মাঝে মাঝে দুরত্ব টেনে দেয় বটে কিন্তু কল্পনার ক্যানভাসে তার ছবিখানা রয়ে যায় চিরটা কাল।

অনুভবে হলেও শক্ত করে ধরি হাত।

দিগন্ত পেরিয়ে আসে বিকেলের রোদ্দুর। মনে পড়ে যায় আমার তোমার কথা ভিষণ,

ভিষণ ভাবে।

বাতাসের কানে কানে তখন খবর পাঠাই-

‘ হে আমার স্বপ্নের পুরুষ! হে প্রিয় কবি!

শুনতে কি পাচ্ছো তুমি!

আজও আমি তোমাকেই ভালোবাসি।’

চলবে….

‘ সর্বনাশের দিনে’

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

 প্রত্যাখান_পর্ব(১৩)

0
 প্রত্যাখান_পর্ব(১৩)
 প্রত্যাখান_পর্ব(১৩)

প্রত্যাখান_পর্ব(১৩)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

লাবণ্যকে নিয়ে যখন বাড়ি পৌঁছালাম তখন রাত্রি সাড়ে দশটার মতো বাজে।

রুমে প্রবেশ করেই আমার চক্ষু চড়কগাছ।

ফুলে ফুলে সজ্জিত রুমটির চতুর্দিকে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো।

বিছানায়ও একই রকম ভাবে লাল টকটকে গোলাপের পাপড়িগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

কে বা কারা এই কাজ করেছে জানি না আমি।

রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষে মামাতো বোন কনা এবং চাচাতো লিমা এসেছিলো লাবণ্যকে নিয়ে।

সাথে ছিলো কাজীনের বউ লিপি ভাবি।

লাবণ্যকে খাটের একপাশে বসিয়ে ভাবি ওর কানে কানে কিছু একটা বলে।

মুহূর্তেই লজ্জায় রাঙা হয়ে যায় লাবণ্যর পুরো মুখ।

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যজনক হাসি দিয়ে ননদদের সাথে নিয়ে চলে যান ওনি বাহিরে।

ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম আমি।

যখন ফিরলাম তখনো লাবণ্য পূর্বের ন্যায় পা দুলিয়ে বিছানার একপাশে বসে।

প্রশ্ন করলাম, ‘কি ব্যাপার? সারারাত কি এভাবে বসে থাকার পন করে এসেছো নাকি?’

অনেকটা ঝাঁঝালো গলার প্রশ্নটা ছিলো। চটজলদি ছুটে আসলো সে আমার দিকে।

পা ছুঁয়ে সালাম করে নিলো। তারপর দুজনে মিলে একসাথে নামাজটা আদায় করে নিলাম।

বিয়ের মতো পবিত্র রাত্রিতেও অনেকগুলো তিক্ত কথা শুনিয়েছিলাম আমি লাবণ্যকে।

নিশ্চুপ লাবণ্য মাথা নিচু করে বসেছিলো শুধু।

নেহাৎ’ই পুরুষত্বের ডাকে সাড়া দিতে সে রাতে ওর সাথে মিলিত হই আমি।

স্থাপন করি শারীরিক সম্পর্ক।

‘দিনে পড়াশোনা+বাবা মায়ের দেখাশোনা,

একটুখানি গল্প গুজব,

কাজের বুয়ার সাথে হাতে হাতে রান্নার কাজে সাহায্য করা আর রাতে আলো নেভালে আমার শারীরিক চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়া,

এগুলোই ছিলো ওর দৈনন্দিন রুটিনের তালিকায়।

‘ এর বাইরেও যে আলাদা একটা জীবন আছে, সেটা আমি ভাবতাম না। ভাবতে চাইতামও না।

আমি প্রায়ই লক্ষ্য করতাম, ‘মা আমায় কিছু একটা বলার জন্য আমার কাছে ছুটে আসতো, সময় চাইতো।

আমি মা’কে কোন পাত্তায় দিতাম না৷ এড়িয়ে যেতাম।

এমন ভাব করতাম যেন আমার কোন সময়ই নেই অফিসের কাজ ছাড়া অন্য কোথাও মন দেয়া।

ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে মা আমার ফিরে যেতো নিজ রুমে।’

এভাবেই চলে যায় অনেকগুলো দিন, মাস, বছর।

ফোর্থ ইয়ারে উত্তীর্ণ হয় লাবণ্য। স্যারদের কঠোর নির্দেশ,

‘প্রথমদিকে নিয়মিতই ক্লাস করা চাই।’ লাবণ্যকেও তাই প্রত্যেহ ভার্সিটিতে যেতে হতো।

যথারীতি সেদিনও লাবণ্য ভার্সিটিতে যায়। ব্যবসায়ের কাজে আমাকে যেতে হয়েছিলো নরসিংদী।

ফেরার পথে একটা অদৃশ্য টানে লাবণ্যদের বাসায় গেলাম সবার সাথে দেখা করে আসার জন্য।

বিদায় নিয়ে চলে আসছিলাম। পথবেধে দাঁড়ায় লাবণ্যর ভাবি ‘হেনা’।

অনেকটা ভেঁজা গলায় বিশেষ দরকারের কথা বলে আমার কাছে তিনি একটু সময় চাইলেন।

সময় দিলাম। আমার ভাবনার আকাশে কালো মেঘ জমে সেদিনই হেনা ভাবির কথা শুনে।

ভেতরটা আমার ডুকরে কেঁদে ওঠে।

চোখে নামে অকাল শ্রাবণ।

আমার বিরুদ্ধে, লাবণ্যর সাথে এতকাল করে আসা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে আমার মন।

আমি জানতাম না ঘটনার পরও ঘটনা থাকে, থাকে নাটকের ওপর নাটকীয়তা।

যেই লাবণ্যকে লোভী,

স্বস্তা অপবাদে এতকাল নিজের মনের থেকে দুরে সরে রেখেছিলাম,

সেই লাবণ্য যে এভাবে আমাকে আমার বিবেকের কাছে অপরাধী বানিয়ে দিবে,

কখনো ভাবিনি আমি।

চিৎকার করতে চেয়েও আমি পারছিলাম না। গলার ভেতর দলার ন্যায় কিছু একটা কুন্ডলী পাকিয়ে ছিলো।

তা সত্ত্বেও কান্না জড়ানো গলায় অনেকটা উঁচু স্বরে প্রশ্ন করি ভাবিকে, ‘

এতবড় সত্যিটা কেন আপনারা আমার থেকে গোপন রেখেছিলেন?

কেন আগে জানাননি? কেন? কেন? কেন?’ চলবে….

ফাগুণের নবধারা পর্ব-১১

0

ফাগুণের নবধারা
পর্ব-১১

– শাহাজাদী হুমাশা

কক্সবাজার থেকে ফিরে আসার পর হতেই রুকু আর কখনো নিঝুমের সাথে যোগাযোগ করেনি।
সময় সময়ের মতই পার হচ্ছিলো।কিন্তু সব ভালোর মাঝেও খারাপ থাকে।সব খারাপকে মেনে নিয়েই জীবন যুদ্ধে এগোতে হয়। বিপদের আঁচ পেলেও মানুষ বিশ্বাস রাখে সৃষ্টিকর্তা সব ঠিক করে দিবেন।কিন্তু কিছু বিপদ আর কিছু দুঃসময় যে কখনই ফুরাবার নয়।

ইদানীং রুকু অনেক দুঃস্বপ্ন দেখছে ঘুমে।এটা প্রেগনেন্সির একটা ফেইজ। মাত্র তো ৪ মাস। কিন্তু কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারছেনা সে।গতবারও মেঘের বেলায় এমন হয়েছিলো রুকুর।কিন্তু তখন আবিদের সাথে দুর্ঘটনাটা ঘটে।আবিদ আর ফিরে আসেনি।তাহলে এবারো কি?? না না। কক্ষনো না এবার এমন কিছু রুকু সহ্য করতে পারবেনা।পাগল হয়ে যাবে ও।আবিদ ওর পাশে নেই।রেস্টলেস ফিল করছে।আবিদের সাথে কথা বলতে মন চাইছে।কিন্তু আবিদ হয়তো এখন ফ্লাইটে।কি করবে ও?? কিছুক্ষণ উঠে পায়চারি করে। অযু করে তাহাজ্জুদের নামাজে বসে রুকু। মন তার অস্থির হয়ে আছে আবিদের জন্য।এই মানুষটাকে রুকু পাগলের মত ভালোবাসে।জীবনের প্রতিটি সুসময় কিংবা দুঃসময়ে সে আবিদ কে তার পাশে চায়।এই মানুষটার পাগলামিতে পাগল হতে চায়,তার ভালোবাসায় সিক্ত হতে চায়, তার আহ্লাদে,আদরে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে ভেসে থাকতে চায়।সে শুধু আবিদ এবং নিজের সন্তানদের নিয়ে একটা সুখী জীবন চায়।আল্লাহ জেনো তার বেঁচে থাকার অবলম্বন গুলো কেড়ে না নেন সেই দোয়াই করছে রুকু।

ভোর সারে পাঁচটা নাগাদ আবিদের কল আসে।কল রিসিভ করতেই মিষ্টি কন্ঠে আবিদ বলে ওঠে আমার বিড়ালীটা কেমন আছে?? আর আমার বিড়াল ছানারা কেমন আছে?? রুকু চেষ্টা করেও নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা।কান্নার দমকে হেচকি উঠে যায় রুকুর পাশে শোয়া মেঘ আর রুকুর নিধি জেগে যায়।নিধি আবিদ না ফেরা পর্যন্ত রুকুর বাসাতেই থাকবে আবিদের আদেশ সেটা।সুমুর রিকোয়েস্টে নিধি থেকে যায় ওদের বাসায়।পাশের ঘর থেকে আবির ছুটে আসে রুকুর কান্না শুনে।
– ভাবি তুমি ঠিক আছো??
– রুকু আপা তুমি শান্ত হও দীর্ঘশ্বাস নাও।এভাবে কেঁদো না।আমরা সবাই আছি।
রকুর এহেন অবস্থা দেখে আবিদ ভয় পেয়ে যায়।সে দ্রুত ফিরে আসবে বলে রুকুকে আসস্ত করে।রুকুও আবিদ কে একনজর দেখার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছে।

ইলমা আর ফাহিম সিলেটেই আছে। ফাহিমের বদলী না হওয়ায় ঢাকায় ফিরতে পারছেনা।ইলমা ঢাকায় একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ জব পেয়েছে।ফাহিম বদলীর চেষ্টা করছিলো এ কয় মাস যাবত অবশেষে তার চেষ্টা সফল হলো।কিন্তু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে আগামী ১বছর পর তাকে নিউইয়র্ক শিফট করতে হবে। ইলমা রাজি।সে শুধু রুকু আর সুমুকে চোখে চোখে রাখার জন্যই ঢাকায় আসতে চেয়েছে।মানুষ দুটোকে যে সে বড্ড ভালোবাসে।আজ তার ভালোবাসার মানুষকে পাশে পাওয়ার পিছনে এদের সবচেয়ে বড় হাত রয়েছে।তাদের এতটুকু ক্ষতিও সে মেনে নিতে পারবেনা। প্রয়োজনে নিজের জীবন উৎসর্গ করবে সে।
কে জানতো আল্লাহ তার মনের কথাটা শুনে নিবেন আর তার জীবনটাই তার থেকে চেয়ে নিবেন??

রাত ২টা বেজে ১৩ মিনিট।বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে মুসুল ধারে।
কিছুতেই ঘুম আসছেনা সুমুর।সময় জেনো কাটছেই না।ব্যথাটা সময়ের সাথে বেড়েই চলেছে।
এক পর্যায়ে তা তীব্র আকার ধারণ করে। সুমুর চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় নাভিদের।ধড়মড় করে উঠে বসে সে।
– কষ্ট হচ্ছে সুমু??
– আম্মাকে ডাকো নাভিদ আমার লেবার পেইন হচ্ছে ওয়াটার ব্যাংক ব্রোক করেছে।
– স্টে দেয়ার,কিপ পেসেন্স। আমি মাকে ডাকছি
নাভিদ মাকে ডাকতে গেলো। সুমু জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
নাভিদ আর তার মা ঘরে ঢুকেই দেখেন সুমুর অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে।তিনি নাভিদকে বললেন গাড়ী বের করতে সুমুকে ইমিডিয়েট হসপিটালাইজ করতে হবে। নাভিদ পকেটে মানিব্যাগ আর গাড়ীর চাবি নিয়ে নিচে নামলো।সুমুকে তার শাশুড়ি আর শশুড় মিলে নিচে নিয়ে এলো। নাভিদ নিধিকে কল দিয়ে সব জানালো।এবং দ্রুত সুমুকে নিয়ে হাসপাতালের জন্য রওনা হলো।যদিও সুমুর নরমাল ডিলেভারি হবার কথা ছিলো।কিন্তু বাচ্চা পেটে বমি করে দেয়ায় ডাক্তাররা অপারেট করতে চাচ্ছেন।নাভিদ ঘাবড়ে গিয়েছে।মাথা ঠান্ডা রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করছে সে।ইতো মধ্যে নিধি ওর মা বাবাকে নিয়ে চলে এসেছে।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় সুমুকে ব্লাড দিতে হবে তাই ডোনার হিসেবে নিধিকে রেখেছে।কিন্তু নিধি বেশি হলে একব্যাগ রক্ত দিতে পারবে আর হাসপাতালে আর রক্ত নেই ও।তাই নাভিদের বাবা বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করছেন।ফাহিম এর ব্লাড সুমুর সাথে ম্যাচ করে তাই নাভিদ ফাহিমকে কল দিয়ে রেডি হতে বললো।নাভিদ গাড়ি নিয়ে বের হলো ফাহিমকে আনতে।ইলমা ঠিক করলো সে রুকুদের বাসায় যাবে রুকু একা আছে।

প্রচন্ড ঝড়ো বৃষ্টির মাঝেই ফাহিম আর ইলমাকে নিয়ে বের হলো নাভিদ।ইলমাকে ড্রাইভারের সাথে ইলমাদের গাড়িতে পাঠিয়ে দিলো নাভিদ।আর ফাহিমকে নিয়ে দুটো ব্লাড ব্যাংকে খোঁজ নিতে গেলো।এর মধ্যে নাভিদের বাবা ফোন দিলো।ফোনটা তুলতেই –
– নাভিদ ব্লাড যোগাড় হয়ে গিয়েছে তুই শীঘ্রই চলে আয়। ডাক্তাররা সুমুকে ওটিতে নিয়ে গিয়েছে।
– বাবা আমরা আসছি।
– বন্ডে সই করে দিয়েছি আমি। তুই তাড়াতাড়ি আয় বাপ।
– আমরা আসছি বাবা বের হয়েছি ড্রাইভ……….
– হ্যালো নাভিদ? হ্যালো?? নাভিদ??

কলটা ডিসকানেক্ট হয়ে গেলো। তিন ঘন্টা পার হতে চললো নাভিদ এবং ফাহিমের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ওদিকে সুমু ওটি তে। চিন্তায় সবার মাথা খারাপ হবার যোগার।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে নতুন ভোরের আলোয় নতুন রঙ ছড়াবে এ নবধারায়।ঝড়ের পরের শান্ত সেই মুহূর্ত শুরু হয়ে গিয়েছে।
ডাক্তার বের হতেই সবাই ডাক্তারকে ঘিরে ধরেছে।
– কংগ্রাচুলেশনস 

 মিসেস নাভিদের পুত্র সন্তান হয়েছে।মিসেস নাভিদ এবং বেবি দুজনেই সুস্থ।
– সবাই এক সাথে স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।
-বেবিকে আজ ইনকিউবেটরে রাখা হবে।কাল বিকেলে সবার সাথে দেখা করতে পারবেন।পেসেন্টকে কাল ক্যাবিনে শিফট করা হবে।

চলবে……

ফাগুণের নবধারা পর্ব-১০

0
ফাগুণের নবধারা পর্ব-১০
ফাগুণের নবধারা পর্ব-১০

ফাগুণের নবধারা
পর্ব-১০

-শাহাজাদী হুমাশা

সবার সব চাওয়া যে পূর্ণতা পায়না তা প্রকৃতি সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়।সময় বহমান কারো জন্যই তা অপেক্ষা করেনা।মানব জীবনে ঝড় এলে সব লণ্ড ভন্ড হয়ে যায় ঠিক প্রকৃতির মতই।যেমন লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে ওদের আটজনের জীবনটা। প্রকৃতির খেলা বড্ড বিচিত্র।এখানে টিকে থাকে সেই যার খুটি শক্ত।জীবন খাপছাড়া সবার ভাগে সমান সুখ জোটে না।সময় মাঝে মাঝে আমাদের বাধ্য করে সব কিছু মেনে নিতে। মানিয়ে নিতে।নিজের মনের বিপরীতে গিয়েও সুখি হতে কিংবা অভিনয় করতে, বেঁচে থাকতে।আবার মাঝে মাঝে বিপরীত এই পরিস্থিতি থেকেই মানুষ সুখের সন্ধান খুঁজে নেয়।

ঘুম থেকে উঠে রুকু ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।ল্যাপটপে অফিসিয়াল কিছু মেইল ছাড়াও দুটো মেইল এক্সট্রা জমা পড়েছে।একটা ইলমার এবং একটা নিধির।রুকু ঠিক করলো আগে ইলমার টাই পড়বে।

ল্যাপটপে ইলমার পাঠানো মেইল পড়ে রুকু চিন্তা মুক্ত হলো।তার কাছে এই বিরক্তিকর সকালটা এখন ভালো লাগছে।ইলমা খুব সংক্ষেপে কিছু কথা লিখেছে।এই যেমন সে ভালো আছে।তার বর এবং ছেলে দুজনেই ভালো আছে।ইলমার মা ও ভালো আছে।ফিলাডেল্ফিয়াতে সে একটা চাকুরী করছে তার চাকরী জীবনও ভালোই চলছে।ইসরাকের সাথে খুনশুটি আর বহু প্রচেষ্টার পর তার জীবন ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছে ইত্যাদি।

রুকু ভাবলো এক কাপ কফি খেতে পারলে মন্দ হতো না।
আবিদ রুকুর সামনে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম কফি ধরলো।রুকু অবাক হয়ে দেখলো।বিবাহিত জীবনের ৭ বছর চলছে ওদের।তবুও আজ পর্যন্ত সে আবিদের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।সে এখনো বুঝেনা তার অবচেতন মনে বলা কথা গুলো সে কি করে বুঝে যায়??

রুকু কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে নিধির মেইলটা খুললো।আবিদ বারান্দায় মেঘ আর মানাফকে নিয়ে দুষ্টামিতে মসগুল।নীহারিকা তার গানের ক্লাসের জন্য গিয়েছে।বাসায় শুধু তারা ৫ জন সদস্যই থাকে। আর আবিদ চলে গেলে তারা ৪জন।আবিদের সাথে বিয়ের ৩ বছরের মাথায় মানাফ আসে রুকু আর আবিদের ছোট্ট সংসারে।এখন নীহারিকা, মেঘ আর মানাফকে ঘিরেই আবিদ এবং রুকুর জীবন।শশুড় গত হয়েছেন ২ বছর হলো।শাশুড়ি মা এখন তার ছোট ছেলের সাথে জার্মানিতে থাকেন।বেশ মর্ডান হয়েছেন তিনি।রুকুর ভালো লাগে।তিনি ছেলের বউ এর সাথে থাকেন।আগে রুকুর সাথে সাংসারিক ঝামেলা করতেন এখন ছোট ছেলের বউ এর সাথে করেন না এবং রুকুর সাথেও না।শশুড় মারা যাবার পর থেকে তিনিও শান্ত হয়ে এসেছেন।তবে ছোট ছেলের বউকে তিনি বেশ ভালোবাসেন।এতে রুকু বরং খুশিই হয়।

নিধির মেইল খুলে রুকু বুঝতে পারলো এতো ঝড়ঝাপটার পর অবশেষে সবাই ভালো আছে। শাশুড়ি মাও ভালো আছে।নিধির দু বছরের মেয়ে কণিকা এবং আবিরও ভালো আছে।নিধি সবার একটা ফ্যামিলি ফটো পাঠিয়েছে।

রুকু হাসলো মনে মনে সবাই এখন সবার বর্তমান জীবনে সুখি। আর যে সুখি ছিলো না সেও সুখ খুঁজে পেয়েছে।এ পৃথিবীতে প্রকৃতি সবাইকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয়।শুধু রুকুর চিন্তা একজনের জন্যই। আর সে সুমু।অত্যন্ত চঞ্চল আর ভালোবাসায় ঘেরা মেয়েটা কেমন চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। নাভিদ ছাড়া যার চলতো না সে এখন নাভিদের স্মৃতি এবং শেষ চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছে।

রুকু ল্যাপটপ রেখে আবিদের কাছে গেল। বাচ্চা দুটো খেলছে।আবিদ ফোনের স্ক্রিনে সবার ছবি দেখছে।গ্যালারি ঘেটে সে সেই দিনের ছবিগুলো দেখছে যেগুলো কক্সবাজার যাবার আগের দিন রাতে ট্রেণে তোলা হয়েছিলো।সবার হাসিমুখের ছবি।রুকুর দেবর আবিরও আছে এই ছবিতে জার্মানি থেকে বেড়াতে এসেছিলো ছুটিতে।ফাহিম, ইলমা, নিধি,আবির,রুকু,সুমু,নাভিদ,আবিদ,মেঘ আর নীহারিকার ছোটবেলার উজ্জ্বল মুখের কিছু ছবি।রুকুর মন টা ধক করে উঠলো।মনে পরে গেলো সে রাতের পর সকালের সময়টা। কে জানতো কক্সবাজার তাদের জীবনে এত বৈচিত্র্য নিয়ে আসবে যে জীবন নামক নদীর গতিপথ পালটে যাবে।

রুকুরা সকালে ট্রেণ থেকে নেমে প্রথমে নিঝুমের বাসায় যাওয়ার প্ল্যান করলো। তারা নিঝুমকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো।যেই ভাবা সেই কাজ।নিঝুমের অফিস থেকে তার বাসার ঠিকানা নিয়ে ওরা সবাই রওনা হলো।
নিঝুমের বাসায় পৌঁঁছেই বেল বাজালো ওরা।দরজা খুললো একজন মহিলা।ঠিক মহিলা বলা চলে না মেয়ে। বয়স বেশি না।২২-২৪হবে।হলুদ রঙা সুতি শাড়িতে গাড় সবুজ রঙা পার।দেখতে বেশ সুন্দর।মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো কাকে চাই?? রুকুরা ভেবেছিলো হয়তো ভুল বাসায় চলে এসেছে ওরা।কিন্তু ভেতর থেকে যখন নিঝুমকে কথা বলতে আসতে দেখলো সবাই ভাবলো ঠিকানাতো ঠিকি আছে কিন্তু মেয়েটা কে?? নিধির বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।রুকু সামনে দাঁড়ানো মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভিতরে চলে গেলো।নিঝুম ভয়ে শেষ।এখন কি বলবে সবাইকে? রুকু আপাকে কি করে বোঝাবে সব??রিদিমাকেই বা কি বলবে?

রিদিমা ধাক্কা খেয়ে রেগে রুকুর হাত টেনে ধরলো। রুকু সব বুঝে গিয়েছে।রিদিমা চিৎকার করে বলছে – এরকম অভদ্রের মত কারো বাসায় পরিচয় না দিয়ে প্রবেশ করছেন কোন সাহসে?? আমি সিকিউরিটি কে ডাকবো বের হন বাসা থেকে।
– নিঝুম রিদিমাকে চুপ করতে বলতে না বলতেই ঠাস ঠাস করে কতগুলো চড়ের আওয়াজ হলো।সবাই এহেন অবস্থায় হতভম্ব।
রুকু প্রথমে নিঝুমের দুগালে দুটো চড় দিলো।এবং সাথেসাথেই পিছে ঘুরে রিদিমার গালেও একটা কসে চড় বসালো।রিদিমা সোফার উপরে গিয়ে পড়লো চড়ের ঝাক্কি সামলাতে না পেরে।নিঝুম কিছু বলতে পারছেনা। নিধি দরজার কাছে বসে পড়েছে অবাক হয়ে ছলছল চোখে সব দেখছে।তার অস্বস্তি হচ্ছে এখানে থাকতে তার দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে।আবির বুঝতে পেরে ইলমার কানে কানে কি যেন বলে নিধিকে টেনে নিয়ে গেলো বাসার বাহিরে।আবিদ রুকুকে জাপটে ধরে আছে রাগে থরথর করে কাঁপছে রুকু আর কেঁদে যাচ্ছে।নাভিদ আর সুমু অবাক।সুমুকে নাভিদ ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো।ঘটনার আকষ্মিকতায় সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।রিদিমা ভিতরের রুমে যেতে নিয়েছিলো।সেও বুঝতে পেরে গিয়েছে এরা কারা? এরা নিঝুমের পরিবার।যাদের ছবি না দেখলেও নিঝুমের কাছ থেকে তাদের কথা শুনেছে সে বহুবার।সে কখনই চায়নি নিঝুম এদের কাছে ফিরে যাক।সে বহু কাঠখর পুরিয়ে নিঝুমকে বাগিয়েছে।নিঝুমকে হারাতে চায়না সে।তাই নিঝুমকে আর ঢাকামুখী হতে দেয়নি সে।কিন্তু কে জানতো তারা এখানে চলে আসবে? রাগে আর গালের ব্যাথায় সে কাপঁছে।রুকুকেও চড় দিতে চেয়েছিলো কিন্তু নিঝুম তার গালে আরেকটা চড় বসিয়ে দিয়েছে।গালে হাত চেপে সে ভেতরের রুমে চলে গিয়েছে।

আবিদ রুকুকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।রুকু কেঁদেই যাচ্ছে।তার কাছে নিজেকে নিধির অপরাধী মনে হচ্ছে।সে চারপাশ তাকিয়ে নিধির কথা জিজ্ঞেস করতেই সুমু বলছে আপা ও ঠিক আছে।নিঝুম রুকুর পায়ের কাছে বসে আছে।নিধির কথা শুনতেই সে হকচকিয়ে গিয়েছে।এতক্ষণে সে ইলমা আর ফাহিমকেও দেখলো।নাভিদ কাউকে কিছু না বলেই ট্যাক্সি ডেকে নিলো।তারা এখনি হোটেলে রওনা দিবে।নিঝুম রুকুর পা ধরে বসে আছে।ক্ষমা চাইছে।রুকু শুধু বললো – তুই আমাদের একবার বললেও পারতিস আমরা কেউ তোর সুখের আড়ে আসতাম না।শুধু শুধুই একটা মেয়েকে কষ্ট দিলি।ভালো থাকিস আর আজকের পর আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করিস না।
রুকু বের হয়ে এলো নিঝুমের বাড়ি থেকে সবাই তার পিছু পিছু চলে এলো।এরপর নিঝুম রুকুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি।রুকুর বাবা মা এখন সুমুর সাথেই থাকে।নাভিদের শেষ স্মৃতি নিয়েই তাদের বসবাস।

সেদিনের পর রাতের ট্রেনে সবাই ফিরে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু রুকু সবাইকে বুঝিয়ে ওখানেই কিছু দিন থাকলো।সবাই মিলে অনেক আনন্দ করলো।আবিরের সান্নিধ্যে নিধিও সব কিছু ভুলে ব্যাপারটা মানিয়ে নিলো।নিঝুম আর তার স্ত্রী রিদিমা এসেছিলো হোটেলে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে কিন্তু রুকু দেখা করেনি।রুকুর বাবা মায়ের সাথে অবশ্য নিঝুমের এখনো কথা হয়।নিঝুম আর রিদিমার এখনো কোনো সন্তান নেই।সমস্যাটা নাকি রিদিমার।

রুকুরা কিছুদিন আনন্দ করেই ফিরে এলো ঢাকায়। সবাই সব কিছু মেনে নিয়েছে।এখন আর সমস্যা নেই।

চলবে…..