পরীক্ষার হলে ঢুকে দেখলাম সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে সীট পরেছে। দেখতে এক্কেবারে ক্যাটরিনা কাইফের মতন। জামাকাপড় ও সুগন্ধির ঘ্রাণ বলে দিচ্ছে বড়লোকের মেয়ে। মনে মনে ভাবলাম একটু খাতির জমানো যাক। পরীক্ষায় টুকটাক সমস্যা হতেই পারে।
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম আপনি কোন কলেজ থেকে এসেছেন। মেয়েটা কোনো উত্তর দিলো না। ভাবলাম শুনতে পায়নি তাই আবার একই প্রশ্ন করলাম। কিন্তু এবার বুঝলাম, মেয়েটা শুনেই না শুনবার ভান করছে। সুন্দরী মেয়েরা যেমন অহংকারী হয় আরকি। সুন্দর চেহারা ও দামি কাপড়চোপড় কিনার যোগ্যতা কোনোটাই আমার নাই। মনে মনে নিজের উপর কিছুটা রাগ হলো। কেন যে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেলাম।
উচ্চ মাধ্যমিকে সাইন্সের ছাত্র ছিলাম। খারাপ ছাত্র ছিলাম না। বিশেষ করে সাইন্সের বিষয় গুলোতে।জেনারেল সাবজেক্ট গুলোর পরীক্ষা চলাকালীন মেয়াটা কখনো আমার সাথে কথা বলেনি। আমিও আর নিজেকে ওর কাছে ছোট করতে যাইনি।
পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা দিন লক্ষ্য করলাম প্রশ্ন বেশ কঠিন। পরীক্ষার হলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একপ্রকার হাহাকার চলছে। নিজের প্রশ্ন দেখে বুঝলাম প্রায় প্রশ্ন কমন এসেছে। খাতার দিকে মনোযোগ দিয়ে লিখা শুরু করলাম। এমন সময় পাশে বসা সুন্দরী ক্যাটরিনা কাইফ বলে উঠলেন এইযে ভাই “এক নাম্বার প্রশ্নটা কি আপনার কমন এসেছে? “।
এইবার এসেছে আমার সুযোগ। শুনেও না শুনবার ভান করে রইলাম। সুন্দরী আবার আমাকে একই প্রশ্ন করলেন। আমিও আবার না শুনবার ভান ধরে নিজের উত্তর পত্রতে লিখে যাচ্ছিলাম।
আশেপাশে ছেলেমেয়েদের সাথে সুন্দরীর ফিসফিসানি ও কলম কামড়ানোর ধরণ দেখে বুঝে গেলাম ক্যাটরিনা আপুর কমন আসেনি। মনে মনে আমি হানি সিং ও দিপিকা পাড়ুকোনের সাথে “লুঙ্গী ড্যান্স” দিচ্ছি। ভাবছি উচিৎ শিক্ষা হয়েছে ওর। আজ কোথায় যাবে তোমার অহংকার।
অর্ধেক প্রশ্ন লিখা শেষ। এমন সময় সুন্দরী দেখি কলম দিয়ে আমাকে গুঁতা মারে। এমনেই আমার ছোটবেলা থেকে প্রচণ্ড কাতুকুতু। ক্যাটরিনার কলমের গুঁতায় এক্কেবারে লাফিয়ে উঠলাম। আশেপাশে ছেলেমেয়ে আমার বাঁদরের মতন লাফ দেখে হেসে একাকার। মুখে প্রচণ্ড বিরক্তি এনে ক্যাটরিনা আপুকে জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছে।
ক্যাটরিনা আপু কাঁদোকাঁদো হয়ে উত্তর দিলো “উনার নাকি কোনো প্রশ্ন কমন নাই”। আমি যদি তাকে সাহায্য না করি তাহলে নিশ্চিত ফেল। এইবার আমার মনের মধ্যে বেজে উঠলো গুরু মাইকেল জ্যাকসনের “বিট ইট” গানটা। কিন্তু গুরুজন বলেছেন মেয়েদের প্রতি দয়া দেখানো আর নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই।
আমি ক্যাটরিনা আপুকে সাহায্য করার জন্য রাজি হলাম।ক্যাটরিনা আপু শুনে তো মহাখুশি। কিন্তু উনাকে একটা শর্ত দিলাম। প্রত্যেকটা নাম্বার দেখানোর জন্য উনাকে দশ টাকা করে দিতে হবে। অর্থাৎ দশ নাম্বার মার্কের জন্য উনাকে দিতে হবে একশো টাকা।
মেয়ে আমার কথা শুনে পুরাই টাস্কি। এই ছেলে বলে কি! আমি বলে দিলাম, আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে জানাবেন।
ক্যাটরিনা আপু অন্য কোনো উপায় না পেয়ে আমার হাতে একশো টাকা তুলে দিলেন। আমিও নির্লজ্জ ভাবে সেই টাকা হাত পেতে নিলাম। মাসে মাসে যদি হাজার টাকা প্রাইভেট টিউটর কে দিতে পারে।তাহলে এক পরীক্ষায় কিছু টাকা খরচ করলে কোনো কিচ্ছু হবেনা এইসব ক্যাটরিনা আপুদের।
এইভাবে সম্পূর্ণ পরীক্ষায় ক্যাটরিনা আপুকে উত্তরপত্র দেখিয়ে যাচ্ছি আর আস্তে আস্তে নিজের পকেট ভারি করছি। মনে মনে যে কি পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছিলাম।
পরীক্ষা শেষ হলে উত্তরপত্র জমা দিয়ে বাইরে এসে বন্ধুদের সাথে কথা বলছি। এমন সময় দেখি ক্যাটরিনা আপুও বের হয়েছে। এগিয়ে গেলাম ক্যাটরিনা আপুর দিকে। পকেট থেকে টাকা গুলো বের করে উনার হাতে দিয়ে বললাম। পরীক্ষার হলে পাশের সীটে বসা কোনো ছেলে কথা বলতে চাওয়া মানে খারাপ কিছু না। সে দেখতে খারাপ হতে পারে তার কাপড়চোপড় দেখতে সুন্দর না হতে পারে। কিন্তু “প্লিজ, ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কাভার!”
যদি বউয়ের সাথে প্রচন্ড ঝগড়া করার পরেও সে বাপের বাড়িতে না গিয়ে আপনার জন্য রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করে। তাহলে বুঝবেন আপনার বউ আপনাকে প্রচন্ডরকম ভালবাসে।
হতে পারে সেই রান্নায় আজ ঝাল বেশি হয়েছে।আপনি মুখে দিতে পারছেন না। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে বউয়ের উপর। আরে বোকা ওই ঝালটাই আপনার বউয়ের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
হতে পারে সেই রান্নার একদম লবন হয়নি। খেতেই পারছেন না। সেটাও ধরে নিতে হবে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।
হতে পারে সেই রান্না খেয়ে আপনার পেট খ্রাপ হয়েছে। দুই মিনিট পরপর আপনাকে বাথরুম যেতে হচ্ছে আর এটা দেখে আপনার বউ মুচকি মুচকি হাসছে। সেটাও তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।
ঝগড়ার পর আপনার বউ আলাদা ঘরে শুয়েছে। আপনি রাতের বেলা চুপিচুপি তার ঘরে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তারপর তার ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই মাথার হাতুড়ি দিয়ে টিং করে একটা বারী খেয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পরে রইলেন। চোখ খুলে দেখলেন আপনি হাসপাতালে আর আপনার স্ত্রী আপনার পাশে বসে। আর আপনার মাথায় ব্যান্ডেজ করা। সে আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। সেটাও তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।
তারপর ধরুন সুন্দরী একটা নার্স আপনার রুমে ঢুকলো। আপনার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তাকে। কিন্তু আপনার বউ আপনার চোখ আড়াল করে রেখেছে। নার্সকে একটুও দেখতে দিচ্ছে না। সেটাও তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।
তারপর মনে করেন বউ নাই। এই সুযোগে আপনি নার্সকে একটু দেখার চেষ্টা করলেন আর ঠিক তখনি আপনার বউ এসে হাজির। আপনি সাথেসাথে চোখ বন্ধ করে ফেললেন। আর আপনার বউ চেয়ার তুলে আবার আপনার মাথায় বারী দিলো। আবার আপনি জ্ঞান হারালেন। তারপর চোখ খুলে দেখলেন আপনি শুয়ে আছেন আপনার বাড়িতে। চোখ ছাড়া সমস্ত মুখে ব্যান্ডেজ করা। আপনার বউ আবার আপনার সামনে বসে আছে একটা খুন্তি নিয়ে। আপনার চোখ খুলা দেখতেই সে বলে উঠলো,
“আবার যদি কোনো মেয়ের দিকে চোখ দিয়েছ তাহলে এই খুন্তি দিয়ে তোমার চোখ দুটো তুলে নিবো। তখন আর কোনো মেয়ের দিকে চোখ দিতে পারবে না। ”
নতুন একটা সিম কিনে পরিচিত দশজন কে মেসেজ পাঠালাম। ” আমি তিয়াসের রুমমেট আকাশ বলছি। আজ সকালে তিয়াস গলায়দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আপনারা দয়া করে ‘হল’ থেকে ওর লাশ নিয়ে যাবেন।”
মেসেজ দেওয়ার মিনিট দুয়েকের মধ্যে কল আসা শুরু। মা, বাবা, ভাই,বোন, বন্ধুবান্ধবী সবাই একের পর এক ফোন দিচ্ছে। কি বলবো না বলবো ভেবে ফোন রেখে দিলাম। যতো ইচ্ছে কল করুক।
একটুপর একটার পর একটা মেসেজ আসতে লাগলো। মেসেজ গুলো ছিল ঠিক এই রকম।
আম্মুঃ আমার ছেলে জীবনে এই কাজ করতে পারে না।ওর প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। ওকে বলে দিও ওর জন্য বড় একটা মুরগী কিনে রেখেছি। বাড়িতে আসলে রান্না করে খাওয়াবো। আর এখন আপাতত কতো টাকা লাগবে সেটা মেসেজে বলে দিতে বলো।
আব্বুঃ বাবা, এই মাসে হাত খালি। মোটরসাইকেল কিনে চেয়েছিস দিবো। ঈদ আসুক, বাপ বেটা মিলে একসাথে গিয়ে গাড়ি কিনে আনবো। আর এইসব অলক্ষুণে কথা বলবি না। এমনিতেই দূরে থাকিস সারাদিন চিন্তায় থাকি কখন কি হয়। বাড়ি আসিস, তোর মা একটা বড় মুরগী রেখেছে। তোর জন্য আমিও খেতে পারছি না।
বড়বোনঃ লাথি খাবি হারামজাদা। মাথার মধ্যে ভূত ঢুকছে? ফাইজলামি করার যায়গা পাস না। রুনার সাথে ঝগড়া লাগছে? আচ্ছা আমি ফ্রি হয়ে রুনাকে ফোন দিবো।
ছোটভাইঃ আম্মুর কাছে কয়টাকা চামু সেইডা কও। তোমার জন্য আমার ক্যামেরা কিনা হচ্ছে না। বাবা বলছে ঈদে নাকি তোমাকে গাড়ি কিনে দিবে। তাই আমারটা দিতে দেরি হবে। তোমার জন্য আমি কিচ্ছু পাইনা।
রুনাঃ ঢং দেখাস? অন্য কাউকে পাইছিস? তুই কি মনে করছিস আমাকে ভয় দেখাবি? যা মরে যা। তোর লাশের সাথে বিয়ে বসবো। তারপর একসাথে কবরে যাবো। আজ বিকালবেলা নীল শাড়ি পরে ছবি পাঠাবো। দেখবি আর মরতে ইচ্ছে হবে না।
বন্ধু রতনঃ কি খবর মামা? রুনা ছ্যাকা দিছে? আমি ১০০% নিশ্চিত ছিলাম এই মাইয়া তোরে ছ্যাকা দিবো। দেখলি আমার কথা মিলে গেছে। মামা ট্রিট দেও ট্রিট। নতুন কাউকে পাইলে জানাস।
বান্ধবী লায়লাঃ ফাইজলামি রাখ। শুভর সাথে আমার আবার ঝগড়া লাগছে। দেখত কিছু করতে পারিস কিনা। বেচারা কাল রাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়া ঘুমাইছে।এখনো ফোন অফ। একটু দেখবি? টেনশন হচ্ছে।
বিল্লু, চা ওয়ালাঃ মামা টেনশন নিয়েন না।বিকালবেলা চলে আসেন এককাপ স্পেশাল চা খাওয়াবো সব ঠিক হয়ে যাবে। রুনা মামীকেও নিয়ে আসবেন।
মেসেজ গুলো পড়ে মন ভালো হয়ে গেলে। মনে মনে আফসোস করতে লাগলাম সেইসব মানুষদের জন্য।যারা সামান্য কারণে সুইসাইড করে। তারা কি জানে প্রিয়জনদের কাছে তার মৃত্যু অবিশ্বাস্য ছাড়া কিচ্ছু না। তারা কি একবার ভাবে এইসব মানুষের কথা গুলো। যদি তারা একবার এইসব মেসেজ গুলো দেখতে পায়। তাহলে সারাজীবন বাঁচতে ইচ্ছে হবে তাদের। নিজের জন্য নাহলেও আপন মানুষদের জন্য।
ঠাস!কে যেন চড় মারল। আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না, ঘুমের ঘোরে শ্বশুরের গায়ের উপর পা তুলে দিয়েছি। শ্বশুর বলে উঠলো “ঐ হারামজাদা গায়ের উপর থেকে পা নামা কইতাছি। তোর মতন বেআক্কেল জামাই আমি জীবনে দেখিনি।” চোরের মতন আস্তে আস্তে শ্বশুরের শরীরের উপর থেকে পা নামিয়ে নিলাম।
গ্রামে শ্বশুর বাড়ি এসেছি শালার বিয়ে খেতে। ঘর ভর্তি মানুষজন। গভীর রাতে যখন প্রচণ্ড ঘুম পেলো। তখন বউ বলল শ্বশুরের কাছে ঘুমাতে।মানুষজন বেশি, ঘুমানোর যায়গা নেই। ওকে এতো করে মানুষের সামনে ইশারায় বুঝলাম ঘুমের সময় আমার হাত পায়ের হিসাব থেকে না। কিন্তু না বউ বুঝল না। কয়েকবার মানুষের আড়ালে পায়েও চিমটি দিয়েছে। তাও বুঝল না। উপায় না দেখে শ্বশুরের পাশে এসে শুয়ে গেলাম। কিন্তু কখন যে ঘুমের ঘোরে পা চলে গেছে!
বিছানায় উঠে বসে চোখ ডলতেছি। মনে মনে বউয়ের উপর রেগে গেলাম।কেন যে মেয়েটা এইভাবে রেখে গেলো। এমন সময় পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। বাইরে গিয়ে দেখি আশেপাশে মানুষজন কেউ নেই। অন্ধকার রাত। একা একা কিভাবে বাথরুমে যাই! এদিকে ছোটবেলা থেকেই আমি ভূতের ভয় পাই। ছোটবেলায় মা ছাড়া কখনো রাতে বাথরুমে যাইনি। এখনো বাড়ি এলে মা কে ডেকে বাথরুমে যাই। কিন্তু এখানে মা, বউ কেউ নেই। উপায় না পেয়ে শ্বশুরের কাছে ফিরে গেলাম।
শ্বশুর আব্বা? একটা কথা বলি?
শ্বশুর আব্বা বললেন “কইয়া ফেলা” আমি বললাম
আব্বা “ছোটবেলা থেকে আমার অনেক ভূতে ভয় হয়।যদি কিছু মনে না করতেন তাহলে আমার সাথে একটু বাথরুমে যাবেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেই হবে।” শ্বশুর আব্বা আমার কথা শুনে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। আমি বললাম “আব্বা একটু তাড়াতাড়ি করেন। নাহলে কিন্তু অঘটন ঘটে যাবে এইখানেই। ” শ্বশুর আব্বা আমার কথা শুনে বললেন ” চল! চল! চল! তাড়াতাড়ি দৌড় দে”।
আমি কাজ সারছি আর শ্বশুর আব্বা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আহা! কি চমৎকার জীবন। এমন শ্বশুর কয়জনার কপালে জুটে। মনে মনে নিজেকে খুব সুখী মনে হলো। এমন সময় পাশে কি যেন নড়াচড়া করতে লাগলো। ভয়ে এক দৌড়ে আমি শ্বশুরের কোলে গিয়ে উঠে উনাকে জরিয়ে ধরে বললাম “শ্বশুর আব্বাগো ভূত ভূত।” শ্বশুর আব্বা চিৎকার করে বলে উঠলো “ওরে বাবা রে! নিচে নাম, মরে গেলাম, মরে গেলাম।” আমি ভয়ে আরো শক্ত করে শ্বশুর আব্বাকে জরিয়ে ধরলাম। পরে উনি যখন ধমক দিয়ে উঠলেন তখন নিচে নেমে এলাম। শ্বশুর তখন বলে উঠলো “তুই ছোটাতে ভাদাইম্মা ছিল সারাজীবন সেই ভাদাইম্মাই থাকবি।” আমার মেয়ে কোন চোখ দিয়ে তোরে পছন্দ করছিল আল্লাহ জানে।
আমার শ্বশুর আমাকে দুইচোখে দেখতে পারে না।
আমার দোষ একটাই,আমি তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম।
মাধ্যমিকে থাকতে আমার শ্বশুর আমার উপর যে নির্যাতন করছে। সেসব দিনের কথা স্বপ্নে দেখে এখনো ঘুমের মধ্যে আমি চিৎকার করে উঠি। উনি ছিল আমাদের অংকের মাস্টার। কিসব আজগুবি অংক ছিল মাধ্যমিক বইয়ে। যে আমি ব্ল্যাকবোর্ডে দেখে দেখে অংক তুলতে ভুল করতাম। সেই আমি পরীক্ষায় অংকে পাশ করি কিভাবে! স্কুলে যেসব পরীক্ষায় পাশ করেছিলাম। সেসব ছিল আমার পাশে বসা ছাত্রছাত্রীদের কৃতিত্ব। ওদের দেখেই তো পাশ করেছি।
আমার শ্বশুরের ক্লাসে সবথেকে কাঁচা ছাত্র ছিলাম আমি। উনি আমাকে উঠতেও পেটাতেন। বসতেও পেটাতেন। আমাকে পেটানো যেন তার রীতিমত ব্যায়াম হয়ে গিয়েছিল। একেতো অংক পারিনি তার উপর উনার অপমানজনক কথা শুনে প্রতিশোধ নিবো বলেই উনার মেয়ের সাথে প্রেম করি।তারপর পালিয়ে বিয়ে।
কিন্তু মানুষ মরলেও নাকি অভ্যাস বদলায় না।ঠিক তেমনি আমার শ্বশুরের অভ্যাস যায়নি। প্রথম যেদিন আমরা স্বামী স্ত্রী উনার সামনে হাজির হয়ে মাফ চাইলাম। উনি হঠাৎ করে ক্লাস সেভেনের একটা পাটি গণিত দিয়ে বললেন এটা করে দেখা তাহলে মাফ করে দিবো। পাশের বাড়ির ছোট ছেলেটা সেদিন সাহায্য করেছিল বলে অংকটা পেরেছিলাম।
তারপর থেকে শ্বশুর আব্বা আমার কোনো দোষ পেলেই একটা না একটা অংক নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির হয়। আমিও কম যাইনা। সব ক্লাসের অংকের গাইড কিনে রেখেছি। শ্বশুর বাড়ি এলেই সাথে করে সেসব নিয়ে আসি।
কালকে রাতের ভুলের জন্য আজকেও অংক করতে দিয়েছে। কিন্তু দুঃখের কথা শালার বিয়ের নানান রকম খাবারের কথা মনে করে অংকের গাইড আনতে ভুলে গেছি। কিভাবে যে করি অংকটা। কেউ কি সাহায্য করবেন?
একটা মেয়ে নাকি আম্মুর কাছে আমার নামে বিচার দিয়েছে। আমি নাকি নিয়মিত মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করি। আম্মুর কাছে কথাটা শুনেই পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। ক্লাসে যেসব মেয়ে আছে তারা সবাই আমার পরিচিত। দুএকজন বাদে সবার সাথে সম্পর্ক খুব ভালো। সবার সাথেই দুষ্টামি ফাজলামি হয়। কিন্তু আম্মুর কাছে বিচার দেওয়ার মতন কাউকে খুঁজে পেলাম না। অনেকবার আম্মুকে বললাম কোন মেয়ে ছিল?কিন্তু আম্মু নাম বলে না।
মনে মনে বন্ধুদের উপর ক্ষেপে গেলাম। ঐ হারামজাদা গুলাই আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে গার্লস স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে প্রেমিকাকে এক নজর দেখার জন্য। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম। এইসব কাজ গুলো এড়িয়ে চলবো। বলা যায় না, মেয়েটা আবার কবে বিচার দেয়।
কিছুদিন পর…….!
আবার মেয়েটা আম্মুর কাছে বিচার দিয়েছে। আমি নাকি দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছি। দেখতে জলহস্তীর মতন লাগে।এবারের বিচার শুনে আর রাগলাম না।কারণ সত্যি আমি অনেক মোটা হয়ে গেছি। মেয়েটা এবার সত্যি বলেছে। কিন্তু এবার রেগে গেলো আম্মু।
কি! মেয়ের এতো বড় সাহস। আমার একমাত্র ছেলেকে মোটা বলে। এক মাসের মধ্যে আমার ছেলের যদি ভুঁড়ি না কমিয়েছি। দেখিয়ে দিবো মেয়েটাকে।
তারপর থেকে আম্মুর কথামত নিয়মিত ব্যায়াম করছি। আম্মু আমাকে সকাল বিকাল দৌড়ে নিচ্ছে। বাইরের খাবার খেতে দিচ্ছে না। একমাস পর যখন শরীর সেই আগের অবস্থায় ফিরে এলো। তখন আম্মু বলল ” বাঁচলাম “।
কিছুদিন পরে……!
এবার আর মেয়েটা বিচার দেয়নি, চিঠি পাঠিয়েছে। আম্মুর হাত থেকে চিঠি নেওয়ার সময় বুঝলাম চিঠিটা পড়ে আম্মুর চোখের উপর দিয়ে ঝড় চলে গেছে। কেন জানি চিঠিটা পড়াবার আগেই মেয়েটার উপর প্রচণ্ড রাগ উঠলো। মনে মনে মেয়েটার চোদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছিলাম। চিঠিটা পড়া শুরু করলাম ।
প্রিয় আন্টি,
রাতুল আর নিয়মিত ক্লাসে পড়া দিচ্ছে না। কাল ওর রেজাল্ট শুনে প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল ক্লাসে সবার সামনে উঠে গিয়ে থাপ্পড় মেরে আসি। কিন্তু ওকে ওভাবে অপমান করতে ইচ্ছে হচ্ছিল না।
আমি জানি আপনি ওকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করছেন। তাই ভাবলাম আপনাকেই ব্যাপারটা জানাই।
আপনি যদি রাতুল কে শাসন না করেন। তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ও নষ্ট হয়ে যাবে। আশাকরি আমি আপনাকে বুঝাতে পেরেছি।
ভালো থাকবেন।
ইতি
রাতুলের সবথেকে প্রিয় বন্ধু
চিঠি পড়ে বুঝলাম মেয়েটা মিথ্যা বলেনি। ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষায় খুব খারাপ রেজাল্ট হয়েছে। চিঠিটা পড়বার পর মা ছেলে দুজনার মন খারাপ। আম্মুকে কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
মেয়েটার উপর রাগ নিয়ে সেই রাতেই প্রতিজ্ঞা করলাম। যেভাবেই হোক আমি ভালো রেজাল্ট করবোই। আম্মুর স্বপ্নকে সত্যি করে ছাড়বো। মেয়েটাকে দেখিয়ে দিবো। আমি কি করতে পারি।
দিনরাত পড়াশুনা শুরু করলাম।
বর্তমান……!
এখন আমি মেডিকেলে পড়ছি। মেয়েটার চিঠির উপযুক্ত জবাব আমি দিয়েছি। কিন্তু সেই চিঠির পর মেয়েটার আর কোনো বিচার বা চিঠি আসেনি। আমি প্রায় সময় আম্মুকে চিঠিতে লিখে পাঠিয়েছি মেয়েটা আর কোনো বিচার বা চিঠি দিয়েছে কিনা। কিন্তু মেয়েটার কোনো বিচার বা চিঠি আম্মু পায়নি। কিন্তু আজ যে চিঠি আম্মু লিখে পাঠিয়েছে সেটা পড়ে চোখ ভিজে এলো।
“বাবা রাতুল”,
আজ তোকে তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। তুই এখনো ভাবিস মেয়েটার কথা? যে মাঝেমধ্যে আমাকে তোর বিচার দিতো। আজ তোকে সব খুলে বলছি।
সত্যি বলতে সেই মেয়েটা আর কেউ নয়। তোর আম্মু। তোর সবথেকে প্রিয় বন্ধু। জানি তুই আমাকে ভুল বুঝবি । তোর মায়ের আর কোনো উপায় ছিল না….। তোর বাবা মারা যাবার পর তোকে শাসন করার মতন মানুষ কেউ ছিল না। আমিও কখনো তোকে শাসন করতে পারিনি। তাই চুপিচাপি নিজেকে আড়ালে রেখে তোকে শাসন করা শুরু করলাম। এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না বাবা। আমাকে ভুল বুঝিস না । একজন মা তার সন্তানের ভালোর জন্য চোখ বন্ধ করে যেকোনো কিছু করতে পারে। আমিও যা করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি। পারলে আমাকে ক্ষমা করিস।
ফেসবুকে আব্বুর কমেন্ট দেখে চমকে উঠলাম । একটা গ্রুপে লেখা দিয়েছি। সেখানে আব্বু কমেন্ট করেছে “ভালো লিখেছেন ভাই”। শেষমেশ নিজের ছেলেকে ভাই বানিয়ে দিয়েছে!
আমিও সেখানে কমেন্ট রিপ্লাই দিলাম “থ্যাংকস “। সাথে সাথে আব্বু কমেন্ট রিপ্লাই দিলো “ভাই আপনার লিখা পড়ে ভক্ত হয়ে গেছি। আপনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছি, আশাকরি আপনার লিস্টে যায়গা হবে।”
চেক করে দেখলাম আব্দুর রাজ্জাক নামে আব্বুর আইডি থেকে রিকুয়েস্ট এসেছে। প্রোফাইলে আমার ছোট ভাইয়ের ছবি দেওয়া। কি করবো ভাবছিলাম।
ভেবে দেখলাম যেহেতু আমি ফেসবুকে ছদ্মনাম ব্যবহার করি আর প্রোফাইলে আমার কোনো ছবি দেওয়া নাই। তাহলে রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করতে সমস্যা নেই। আফটার অল, যে আব্বু সারাদিন আমাকে ঝাড়ির উপর রাখে। সে ফেসবুকে আমার ফ্যান। ভেবেই মনের মধ্যে একটা আনন্দ চলে এলো। একসেপ্ট করে দিলাম।
সাথে সাথে দেখি আব্বু আমার প্রোফাইলের কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিলো। লাইক আর কমেন্টের ঝড়ে, ফোনের নোটিফিকেশন তুফানের মতন আসতে লাগলো। ফোন হ্যাং হয়ে গেলো। মনে হচ্ছিল পাশের রুমে গিয়ে বলি আব্বু তোমার পা ধরি এবার থামো।
যে একটা নষ্ট ফোন চালাই তার উপর তোমার এই নোটিফিকেশনের অত্যাচার থামাও। অনেকক্ষণ পর আব্বু থামলেন।
রাত ১১ টার দিকে আব্বু মেসেজ দিলেন। “ভাই তুমি মনে হয় আমার ছোট হবে। আমার বয়স আটচল্লিশ চলে। আমার দুইটা ছেলে একটা মেয়ে আছে। আমি তোমাকে তুমি করেই বলি?” আমি রিপ্লাই দিলাম “ঠিক আছে সমস্যা নেই।” আব্বু আবার মেসেজ দিলো “কাল কখন গল্প পোস্ট দিবা?” আমি রিপ্লাই দিলাম ” সকাল ১০ টার দিকে।”
পরেরদিন একটা গল্প লিখলাম যেখানে একজন বয়স্ক লোক। স্ত্রী, বাচ্চাকাচ্চা থাকার পরেও একজন মহিলার সাথে প্রেমে করে । কিন্তু তার স্ত্রী ও বাচ্চাকাচ্চা প্রেম ব্যাপারে জানতে পারলে বয়স্ক লোকটি বলে। তার একাকিত্ব কাটানোর জন্য প্রেম করে, এছাড়া কিছু না।
আব্বু গল্পটি পড়ে আমাকে মেসেজ দেয়। “ভাই, তুমি ঠিক আমার জীবনের গল্প লিখেছ ভাই।আমিও প্রচণ্ড একাকিত্বে ভুগি। আমিও প্রেম করতে চাই ভাই। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটা গল্প লিখবার জন্য।” আব্বুর মেসেজ দেখে আমি টাস্কি! কয় কি এইসব। দাঁড়াও আম্মুকে যদি না বলি।কিন্তু আম্মুকে বললে সব মজা এখানেই মাটি হয়ে যাবে। তাই আব্বুকে রিপ্লাই দিলাম “ধন্যবাদ, শুনে খুব ভালো লাগলো যে আমার গল্পগুলো আপনার ভালো লাগে।” আব্বু আবার মেসেজ দিলো “কাল কখন গল্প পোস্ট দিবা?” আমি রিপ্লাই দিলাম ” বিকাল ৪ টার দিকে।”
পরেরদিন এমন একটা গল্প লিখলাম যেখানে বাবা ছেলে মেয়েদের সাথে ঠিকমতন কথা বলে না।তাদের চাহিদার কথা মাথায় রাখে না। ফলে পিতার সাথে তার ছেলেমেয়ের দূরত্ব বেড়ে যায়। পিতার দোষেই এমন হয়। সেটাই ছিল গল্পের বিষয়।
আব্বুর মেসেজের অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু আব্বুর কোনো মেসেজ আর আসে না। চেক করে দেখলাম আব্বু অনলাইনে এক্টিভ আছে কিনা। দেখি হ্যাঁ আব্বু এক্টিভ। তাই আমি মেসেজ দিলাম “আজকের গল্পটা কেমন লাগলো”।আব্বু একটা লাইক ইমু দিয়ে অফলাইন হয়ে গেলো।
পরেরদিন বিকালবেলা ঘুমিয়ে আছি।এমন সময় আব্বু এসে ডাকছে। উঠে বসলাম বিছানায়। আব্বু আমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল এটা তোর জন্য। অনেকদিন থেকেই চাচ্ছিলি। দিবো দিবো করে দেওয়াই হয়নি। প্যাকেট খুলে দেখি নতুন ফোন। আমার আনন্দ দেখে কে! আব্বুকে বললাম এসো ছবি তুলি। আব্বুর সাথে একটা সেলফি তুললাম। আব্বু চলে গেলে সাথে সাথে সেটা প্রোফাইল পিক করে দিলাম।
একটুপর আব্বু এসে বলে হারামজাদা তুই সেই ” দুরন্ত মুসাফির ” আইডি চালাস। আমার কাছে এইভাবে ব্লাকমেইল করে ফোন নিলি। তোর আম্মুরে যদি বিচার না দিছি। আমিও আব্বুকে বললাম তুমিও যে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করতে চাও এই বয়সে সেইটার স্ক্রিনশট ও আমার নেওয়া আছে।আমিও আম্মুকে দেখাবো। আব্বু আমার কথা শুনে হেসে বলে “তোর ফোন থেকে ছবিটা আমাকে পার করে দে।আমার প্রোফাইল পিক দিবো।”
প্লেনে উঠেই গার্লফ্রেন্ড বলল, “তুমি নাকি আমার জন্য সব করতে পারবা। আমি বললাম “অবশ্যই”। গার্লফ্রেন্ড বলল, ” তাহলে এই প্লেনের মধ্যে হকারি করো দেখি।”
গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে বেলুনের মতন গর্বে যেমন বুক ফুলে উঠেছিলাম,প্লেনে হকারির কথা শুনে ঠিক সেইভাবেই চুপসে গেলাম। জীবনে কেউ শুনেছে প্লেনে হকারি করা যায়?
গার্লফ্রেন্ডকে বললাম ” ইয়ে মানে এর থেকে কঠিন কিছু থাকলে বলো( ভাব নিয়ে)। এটা তো খুব সহজ কাজ”। গার্লফ্রেন্ড বলল ” আগে এটাই করে দেখাও। যতো সুন্দর করে করবা ততোই বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় এগিয়ে আসবে। নাহলে কিন্তু অন্য কাউকে নিয়ে গিয়ে বাবার সাথে পরিচিত করিয়ে দিবো”।
সম্রাট শাহজাহান যদি প্রেমের জন্য তাজমহল বানাইতে পারে।
আমি প্রেমের জন্য হকারি করলে কি দোষ? এছাড়া গার্লফ্রেন্ড সরাসরি কলিজাতে হাত দিয়েছে।
নিজের সম্মান বাঁচাতে সীট থেকে উঠে হকারি করতে যাবো এমন সময় মনে হইলো ঢাকার বাসে যারা হকারি করে তারা নানা রকম জিনিস বিক্রি করে।
কিন্তু এই প্লেনে আমি কি বিক্রি করবো।
গার্লফ্রেন্ড কে বললাম ” ইয়ে মানে হকারি করতে তো জিনিসপাতি লাগে।
আমার কাছে তো কিছুই নেই”।
গার্লফ্রেন্ড আমার কথা শুনে ওর হাতের ব্যাগটা থেকে একটা ব্রাশের পাতা বের করে দিলো।
গুণে দেখলাম সেখানে ১২ টা ব্রাশ।
ব্রাশ গুলো হাতে নিয়ে উঠে যেই দাঁড়াতে যাবো ঠিক তখনি গার্লফ্রেন্ড বলল ” যদি ঠিকমতন হকারি না করতে পারো কি হবে বলেছি তো,মনে আছে”?
আমি হকারদের মতন হাতে ব্রাশের পাতা পেঁচিয়ে বললাম “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে”।
কিছুটা সময় নিয়ে ভাবতে লাগলাম কিভাবে লোকাল বাসে হকাররা হকারি শুরু করে। তারপর ব্রাশ গুলো হাতে নিয়ে হকারি শুরু করে দিলাম।
” ডিয়ার ভাই ও বোনেরা,
আপনাদের কি দাঁতের সমস্যা? ঠিকমতন দাঁত ব্রাশ করেন না বলে দাঁতে ময়লা জমে গেছে?
দাঁতের গোড়ায় পোকা হয়ে দিন দিন দাঁত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? মুখের দুর্গন্ধে চারপাশের মানুষের সাঠে ঠিকমতন কথা বলতে পারছেন না? তাহলে এক্ষুনী সংগ্রহ করুন বাংলাদেশের নাভানা কোম্পানির এই মূল্যবান ব্রাশ। সকালবিকাল দুবার এই ব্রাশ করে দাঁগ মাজলে আপনার দাঁত হবে চকচকে ফকফকে”। তারপর ব্রাশের পাতা থেকে একটা ব্রাশ বের করে হাত উঁচু করে সবাইকে দেখিয়ে বললাম “দাম মাত্র দশ টাকা দশ টাকা”। প্লেনের মানুষজন আমার দিকে এলিয়েন দেখার মতন করে তাকিয়ে আছে।
গার্লফ্রেন্ডের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। গার্লফ্রেন্ডের ভয়ে আবার বলা শুরু করলাম। “আমার দাদা ছিলেন বিখ্যাত হকার কালু শেখ, তিনি সারাজীবন ট্রেনে হকারি করেছেন। তারপর তার ছেলে লাল শেখ ছিল আমার বাবা।উনি সারাজীবন বাসে হকারি করছে। আমি লাল শেখের ছেলে ধলা শেখ তাই প্লেনে হকারি করি।”
দেখি পিছন থেকে একটা বয়স্ক মহিলা আমাকে ডাকছে। কাছে যাবার সাথে সাথে উনি আমাকে দশ টাকা দিয়ে হাতের ব্রাশ টা নিয়ে নিলো।
তারপর এক বয়স্ক সাদা লোক আমাকে ডাকলো। উনার কাছে এগিয়ে যেতেই উনি বলল ” হ্যালো মিঃ ধলা শেইখ ( ইংরেজরা বাংলা উচ্চারণ করলে যেমন হয়)। আমি বললাম ” ইয়েস স্যার”। উনি বললেন ” টোমার আইডিয়া আমার খুব পছন্দ হইয়াছে। টুমি একমাত্র হকার যে প্লেন হকারি সূচনা করিয়াছ। যদি নোবেল কমিটি এইরকম মানব সেবায় নোবেল দিতো। টাহলে আমি টোমার নামে ওদের কাচে সুপারিশ করতাম “। আমি খুশিতে বললাম ” থ্যাংকইউ স্যার”। তারপর উনি বললেন ” আমাখে দুইটা নাভানা কোম্পানির ব্রাশ দেও”। সাথে সাথে ব্রাশের পাতা থেকে দুইটা ব্রাশ খুলে উনার হাতে দিয়ে দিলাম।
এরমধ্যে দেখি দুইজন এয়ার হোস্টেজ আমার দিকে দৌড়ে আসছে। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো। আল্লাহ! আজ নিশ্চিত ওরা আমাকে প্লেন থেকে নিচে ফেলে দিবে। ঠিক তখনি হঠাৎ করে আমার গার্লফ্রেন্ড এগিয়ে এসে ছোট বাচ্চার মতন করে আমাকে বলল ” লক্ষী সোনা এমন করে না, চলো চলো সীটে বসো। মানুষ খারাপ বলবে বাবু”। গার্লফ্রেন্ডের এতো সুন্দর ব্যবহার দেখে অবাক হয়ে গেলাম। কিন্তু সেই অবাক আর বেশিক্ষণ থাকলো না যখন সে প্লেনের সবাইকে উদ্দেশ্য করে ইংরেজিতে বলল ” আপনারা সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার স্বামী একজন মানসিক রোগী। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওকে আমেরিকা নিয়ে যাচ্ছি”।
এবার দেখি প্লেনের সবাই আমার দিকে মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এয়ার হোস্টেজ গুলার মুখ ও দেখার মতন ছিল। একজন এয়ার হোস্টেজ এগিয়ে এসে আমার হাতে একটা ললিপপ দিয়ে বলল, “এটা খাও, অনেক মিষ্টি।”
তারপর প্লেনে আমার আর কোনো সমস্যা হয়নি। গার্লফ্রেন্ড ও খুশি আমিও খুশি।
কিন্তু বাংলাদেশে ফিরবার পর এয়ারপোর্টে বিশাল ভিড় দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। পাশের একজন কে বললাম ভাই এতো ভিড় কিসের? লোকটি বলল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নাকি কোন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে তাই এতো ভিড়। আমি নিজের মতন একা একা হেঁটে যেইনা এয়ারপোর্ট থেকে বের হচ্ছি। দেখি সবার হাতে আমার ছবি। কেউ কেউ আমার ছবিতে মালা দিয়েছে। কেউ কেউ আমার ছবির নিচে লেখেছে দেশের গর্ব, জাতীর গর্ব মিঃ ধলা হকার। চোরের মতন এয়ারপোর্ট থেকে পালিয়ে বাসায় এসে শুনি কোন হারামজাদা যেন আমার প্লেনে হকারির ভিডিও নেটে ছেড়ে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশের হকাররা আমাকে স্বাগতম জানাতে এয়ারপোর্ট গিয়েছিল।
বাসে উঠে বসতে না বসতেই পাশের সীটের একটা সুন্দরী মেয়ে বলে উঠলো “ও মাই গড! আপনি এতো সুন্দর কেন? আমার গায়ে হাত দিয়ে বলল আপনার বডি এতো সুন্দর কেন! নিশ্চই জিম করেন?
জীবনে আব্বা-আম্মা আমাকে কালাচাঁদ ছাড়া ডাকে নাই। গার্লফ্রেন্ড আদর করে কালু ডাকে। কিন্তু আজ এই বাসে এই মেয়ে আমার মধ্যে এমন কি দেখে সুন্দর বলল বুঝতে পারলাম না। মনে মনে লজ্জা পাচ্ছিলাম।
একটুপর মেয়েটা আমার পাশে বসা ছেলেটাকে বলল “এই যে ভাই আপনি উঠুন, আমি এই ভাইয়ের পাশে বসতে চাই।আপনি আমার সীটে বসুন”। দেখলাম ছেলেটা সুড়সুড় করে পাশের সারির মেয়েটার সীটে গিয়ে বসল। মেয়েটা বসল আমার পাশে। খেয়াল করে দেখলাম মেয়েটা বেশ সুন্দর।
কয়েকদিন আগে টিভির বিজ্ঞাপন দেখে একটা ফেসওয়াশ কিনেছিলাম। বিজ্ঞাপনে বলা ছিল এই ফেসওয়াশ চার সপ্তাহ মাখলে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও চকচকে। কিন্তু দুই সপ্তাহেই যে কাজে দিবে এটা ভাবিনি।
মেয়েটা এবার বলল ” আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে”?
লোকাল বাসে সুন্দরী মেয়ে পাশে বসলে সব ছেলেরাই সিঙ্গেল হয়ে যায়। তাহলে আমি কি দোষ করছি? তাই মেয়েটাকে বললাম ” জ্বী না আমি সিঙ্গেল”। মেয়েটা এবার সরাসরি বলল ” প্রেম করবেন আমার সাথে”? মেয়েটার কথা শুনেই মনের মধ্যে জেমস ভাইয়ের ” ঝাকানাকা দেহ দোলানা” গানটা বেজে উঠলো। সারাজীবন গার্লস স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়ে পটাতে পারিনি। যে মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছি সেই মেয়ে বলেছে আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে। এক মেয়ে তো বলেই দিয়েছে কয়লা আর আমার চেহারার মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই, দুইটাই কালা। ইসস যদি পাশে বসা সুন্দরী মেয়েটার কথাটা ভিডিও করে ওদের দেখাতে পারতাম। মেয়েটাকে উত্তর দিতে যাবো এর মধ্যে আরেকটা মেয়ে পাশে এসে দাঁড়ালো।
দাঁড়িয়ে আমার পাশে বসা মেয়েটিকে বলল ” বাসে বসা সুন্দর ছেলেদের দেখলেই প্রেম করতে ইচ্ছে করে, না? এই ছেলেকে আমার পছন্দ হয়েছে। তুই অন্য কাউকে দেখ”। দেখলাম আমার পাশে বসা মেয়েটা উঠে চলে গেলো। এবার যে মেয়েটা এলো সে আরো সুন্দরী দেখতে। আমি তাড়াতাড়ি ফোন বের করে সামনের ক্যামেরায় নিজের চেহারা দেখে নিলাম। সত্যি এটা আমি নাকি অন্য কেউ। নিজেকে রেস থ্রির সালমান খান মনে হচ্ছিল,শুধু চশমাটাই নাই। বাসায় ভুলে সানগ্লাস ফেলে এসেছি বলে নিজের উপর রাগ হচ্ছিল। নতুন মেয়াটা এবার বলল ” ওয়াও, আপনি আমার দেখা সেরা পুরুষ । প্রেম করবেন আমার সাথে”? মেয়েটার কথা শুনে বুকের মধ্যে ধপাস ধপাস শুরু হয়ে গেলো। গর্বে বুক ফুলে উঠলো। মনে মনে সেই ফেসওয়াশ কোম্পানি কে অনেক ধন্যবাদ দিলাম। মেয়েটাকে উত্তর দিতে যাবো এমন সময় দেখি আরো তিনটা মেয়ে এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
ওরা তিনজন একসাথে বলে উঠলো ” এই ছেলে প্রেম করবে আমার সাথে?”। এবার আমার পাশের বসা মেয়েটা উঠে ওদের সাথে মারামারি শুরু করলো। চারজন মেয়ে আমার চার হাত পা ধরে বাসের মধ্যে টানাটানি শুরু করলো। একজন বলে এই ছেলে আমার, আরেকজন বলে না না এই ছেলে আমার। ওদের টানাটানি তে আমার গুলিস্তান থেকে কেনা নতুন শার্ট ছিঁড়ে গেছে। প্যান্ট ছিঁড়া ছিঁড়া অবস্থা। নিজেকে সালমান খান ভাবা ছেড়ে টম ক্রুজ ভাবতে শুরু করলাম। আহা! সুন্দরী মেয়েরা আমাকে পাবার জন্য আজ মারামারি করে। এই দিন যে আসবে কল্পনাও করিনি।এর মধ্যে বাসের হেলপার এক লাঠি নিয়ে দৌড়ে এসে বলল ” ঐ তোরা সবাই বস, নাহলে কারেন্ট শখ দিবো ” সাথে সাথে চারটা মেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলে আমি গাড়ির মধ্যে ধপাস করে পড়ে গেলাম।
হেলপার কাছে এসে বলল ” ঐ মিয়া আপনি কখন উঠলেন বাসে? ও বুঝছি, সিগারেট কিনতে নামছিলাম তখনি উঠছেন তাইনা? তাড়াতাড়ি নামেন ভাই, এই বাস পাবনা যাবে। বাসের মধ্যে যারা আছে তারা সবাই পাগল। ওদের সবাইকে পাবনার মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। হেলপারের কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি পাবনার মানসিক হাসপাতালে।
মিলিকে বিয়ে করার পর বাসর রাত থেকে অবাক হওয়া শুরু হয়েছে,সেটা এখনো চলছে।
আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাসর রাতে ঘরে ঢোকার আগে আমাকে খুব করে বলল,,,
–বউকে যতটা সম্ভব হাতের মুঠোয় রাখবি ?
•
–কিভাবে ?
•
–খুব ভয় দেখাবি,,,,আর কঠিন গলায় কথা বলবি,,,,
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,,,,,
–ভার্সিটি পড়ুয়া একটা মেয়ে,আমি তাকে এভাবে ভয় দেখাবো আর সে পাবে,,,,
•
–হুম,,,,পাবে,,,,
আমার বন্ধু হয়তো ভুলেই গেছে যে, বিয়ের পর থেকে ওর বউ ওকে এখানো হাতের মুঠো করে রেখেছে সেটা আমি যানি না।
যে মানুষ নিজের বউকে হাতে রাখতে পারেনি। এখনো নিজের বউয়ের কথায় উঠ বস করে।
এরকম একজন মানুষের থেকে টিপস নিয়ে নিজের বউকে হাতে রাখার চিন্তা করা নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
তাই এসব চিন্তা বাদ দিয়ে বাসর ঘরে ডুকলাম,,,
মিলিকে আগে থেকেই হালকা চিনতাম।মিলি আমার মায়ের বান্ধবীর মেয়ে দু একবার আমাদের বাসায় এসেছিল।
আমি বিছানায় গিয়ে বসতেই মিলি বলল,,,,
–কোন বুদ্ধি করে আসছ ?
•
–কিসের বুদ্ধি ?
•
–আমাকে হাতে রাখার ?
•
–নাহ,,,
•
–সত্যি,,
•
–আসলে, খুঁজেছি কিন্তু কোন বুদ্ধি পাইনাই।
•
–আর কখনো খুঁজবাও না কোন বুদ্ধি।
•
–কিন্তু তুমি কিভাবে বুঝলা ?
•
–সব ছেলেরাই এমনই হয়,,,বাসর রাতে বিড়াল মারার চিন্তা ভাবনা করে আসে।যাতে মেয়েরা তাদের সব সময় ভয় পায়।
•
–ওহ্,,,,তোমার তো দেখি ভালো অভিজ্ঞতা আছে এই ব্যাপারে।আগে কি কখনো বিয়ে হয়েছিল নাকি ?
•
–আজব,,,এসব জানতে হলে কি বিয়ে করা লাগে নাকি।
•
–তাহলে,,,
•
–যে বান্ধবী গুলির বিয়ে হয়েছে তাদের থেকে জেনেছি।
•
ওহ্
•
–কেন তোমার বন্ধুরা তোমাকে এই ব্যাপারে কিছু বলেনাই,,,
•
–ওরা আর কি বলবে,,,নিজেদের বউকে হাতের মুঠোয় আনতে গিয়ে নিজেরাই বউদের হাতের মুঠোয় চলে গেছে,,,
•
–তাই,,,নাকি,,,
•
–হম,,
সেদিন থেকে মিলিকে একটু কঠিনই মনে হত।তবে এখন অতটা মনে হয়না।
কিছুদিন আগের ঘটনা,,,
রাতে বাসায় ফিরে দেখি মিলি বই পড়তেছে,,,
ওর কাছে গিয়ে বললাম কাল তো আমার অফিস বন্ধ।চলো কাল কোথাও ঘুরতে যাই,,,
আমার কথা শুনে মিলি কোন উওর দিল না।
মিলির কাছ থেকে আশা অনুরূপ কোন উওর না পেয়ে খুব হতাশ হলাম।
পরের দিন বিকেল বেলা মিলি আমাকে দুটি শাড়ি দেখিয়ে বলল কোন শাড়িটি পরলে আমাকে মানাবে,,,,
–দুটি শাড়িই খুব ভালো।তুমি যাই পরবে তাতেই তোমাকে ভাল লাগবে,,,
আধা ঘন্টা পর মিলি রুম থেকে বেরিয়ে এল নীল শাড়িটা পরে।ও নীল শাড়িটা পরাতে আমি একটু আবাকই হলাম।
কারো প্রতি ভালবাসা থাকলে হয়তো তার মনের কথা জানা যায়।আর মিলিও হয়তো এভাবেই আমার মনের কথাটা জেনেছে।
মিলি আমার কাছে এসে বলল,,,
–কেমন লাগছে আমাকে ?
•
–ভাল,,
•
–শুধু ভাল,,,আর কিছু না।
আমি মিলির কপালের টিপ টা ঠিক জায়গাতে বসিয়ে তারপর বললাম এখন পারফেক্ট লাগছে।
–আমি কপালের টিপ টা ইচ্ছা করেই ঠিক জায়গাতে পরিনি।
•
–কেন ?
•
–তোমাকে পরীক্ষা করে দেখলাম আমার সবকিছু তোমার নজরে পরে কি না।
•
–হম বুঝলাম,,,কিন্তু এত সেজে গুজে কোথায় যাচ্ছ তুমি ?
•
–ঘুরতে,,,
•
–কার সাথে ঘুরতে যাবে ?
•
–তোমার সাথে,,
•
–কাল রাতে যখন ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছিলাম তখন তো কিছুই বললে না।
•
–তখন বলিনি তো কি হয়েছে এখন তো বলছি,,,
যাও তারাতারি রেডি হয়ে আসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করতেছি,,,,
আমি রেডি হয়ে এসে দেখি মিলি আমার জন্য বসে আছে।তারপর দুজন একসাথে বের হলাম।
–এই রিক্সা যাবে ?
•
–কোথায় যাবেন ‘স্যার’
•
–যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন গন্তব্যে নেই।তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী এই শহরের অলিতে গলিতে সন্ধ্যা নামার আগ পযন্ত আমাদের কে তোমার রিক্সায় নিয়ে ঘুরবা।
•
–আচ্ছা ‘স্যার’,,,, রিক্সায় উঠে বসেন।
রিক্সা চলতেছে তার আপন গতিতে।মিলি তাকিয়ে আছে প্রকৃতির দিকে আর আমি তাকিয়ে আছি মিলির দিকে।
কলেজের ফেয়ারওয়েলের দিন যাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিলে তাকে এত তাড়াতাড়ি ভুলেও গেলে???
তুমি কি রাহুল???
?
বাহ্ তাহলে এখনও মনে আছে দেখছি!!???
সেদিনের জন্য আমাকে মাফ করো রাহুল।।
????
আমি গরিব বলে আমাদের এত ভালো বন্ধুত্ব ভেঙে,,, আমাকে সেদিন কত অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে।।
মনে আছে????
সব মনে আছে রাহুল,,,
I am very sorry রাহুল।।।
????
যাই হোক তুমি এখন নিশ্চয়ই খুব ভালো আছো।???
তোমার বর আর তুমি নিশ্চয়ই দারুন মজা করছো???????
???
কি হলো বলো।।।
আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে রাহুল!!!??????
কি???কিন্তু কেন???
প্রথমে আমরা দুজনেই আমেরিকায় খুব ভালো ছিলাম।।।
হঠাৎ আমার বর খুব রাত করে বাড়ি আসতে শুরু করলো,,,আর এই নিয়ে আমাকে মিথ্যে বলতেও শুরু করলো।।।
তারপর??????
আমার সন্দেহ বাড়তে লাগলো!!!
এরপরে একদিন একটা মেয়ের সাথে দেখলাম,,,যাকে নিয়ে ও সবসময় আমাকে মিথ্যা বলতো।।
এরপর আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে ইন্ডিয়া তে চলে আসি।।
????
আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই কালইইই।।।
এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে রাহুল।।।
????
দেরি হয়ে গেছে মানে???
কি হয়েছে???
???
কিছু না।।।
ভালো থেকো।।
????
বলো কি হয়েছে তোমার।।????
আমার ব্রেন টিউমার হয়েছে রাহুল।।।
???
কি???
তুমি পাগল হয়ে গেছো!!
আমি বিশ্বাস করি না।।??
এটাই সত্যি রাহুল।।
তোমাকে কে বলেছে এটাই সত্যি?????
আমি গত বছর ডাক্তার দেখানোর পর আমার সি.টি.স্ক্যান রিপোর্ট এ ব্রেন টিউমার ধরা পরেছে!!!?????
?
তাই এত মায়া বাড়িয়ে কি হবে!!!
আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না রাহুল!!!?????
এসব কিছুই হবেনা,,,
আমি কিছু হতেই দেবো না।।।।
আমি তোমাকে অনেক বড়ো বড়ো ডাক্তার দেখাবো।।
???
এসব বাদ দাও,,,আমার শেষ ইচ্ছে তুমি আমাকে মাফ করো রাহুল,সেদিন খুব ভুল করেছি।।।
জানো আজও তোমার নাম্বার আমার কাছে “সুইটু” নামে সেভ্ করা আছে।।
আজও ভালোবাসি তোমাকে।।।
??
আমি আজও তোমার সুইটু???
????
কিন্তু আমার তো সময় খুব কম,,,তোমার জীবনে আমি আর থাকতে পারবো না।।
???চুপ।।
???
তুমি আমার কাছেই থাকবে,,কালই আসছি আমি।।
যদি আমি না বাঁচি???
আমার মনে সবসময় বাঁচবে তুমি।।
বুঝেছো???
কিন্তু…
???
কোনো কিন্তু না,,,কালই আসবো আমি।।
তোমাকে সুস্থ করবোই।।
তারপর???
তুমি রাজি থাকলে আমরা বিয়ে করে একসাথে থাকবো।।।☹☹☹☹☹☹
আমি থাকবো তোমার কাছে,,,,রাজি আমি তোমার কাছে থাকতে।।।
????
আজ রাত পেরোলেই আমি তোমার কাছে আসছি,,, আমার সুইটু।।।
????
নিলীমা আর তন্নয় একে অপরকে খুব ভালোবাসে। তন্নয় নিলীমাকে প্রথম প্রপোজ করে কিন্তু নিলীমা রাজি হয়নি। তখন তন্নয়কে নিলীমা খুব অবহেলা করত।নিলীমা আর তন্নয়ের ২বছর আগের কথা। ২ বছর আগে ও নিলীমা তন্নয়কে এতটা ভালোবাসেনি । তন্নয় নিলীমার কাছে গেলেই বিরক্তি বোধ করতো। একদিন তন্নয় নিলীমা কে বলল….
তন্নয় : হাই……
নিলীমা : (কিছু বলে না)
তন্নয় : কি হলো তোমাকে বলছি শুনতে পাচ্ছো….????
নিলীমা : কি এমন চেচাছেন কেনো..?? আপনার ইচ্ছা হইছে আপনি বলছেন আমি কি আপনাকে আমার সাথে কথা বলতে বলছি।
তন্নয় : হুমমম তা বল নাই,, তাই বলে কি কথা বলা যায় না।
নিলীমা : (চুপ করে চলে গেলো কিছু না বলে)
এমন অবহেলা, বিরক্তি, আর তন্নয়ের ভালোবাসায় দিন চলতর থাকে।যত বার তন্নয় নিলীমার কাছে যায় ততবারই নিলীমা তন্নয়কে অপমান করে। এমন করে চলে গেলো অনেকটা দিন। কিন্তু নিলীমা সেই তন্নয় কে অপমানই করে। এমন করতে করতে কখন যে নিলীমা তন্নয়ের প্রেমে পরে গেছে নিলীমা বুঝতেই পারেনি। নালীমা এখন তন্নয়কে অপমান করলে তার নিজেরই খারাপ লাগে, বাসা বার বার তন্নয়ের কথা ভাবে। হঠ্যাৎ তন্নয়কে সে দেখে না। তন্নয় আর আসে না নিলীমার কাছে। নিলীমা খুব চিন্তায় পরে যায় যে তন্নয় কেনো আসে না। তবে কি আর আসবে না। যদি না ই আসবে তাহলে কেনো বুকের ভিতর ভালোবাসাে সৃ্ষ্টি করলো। নিলীমা এখন খুব কাদে তন্নয়ের জন্য, অপেক্ষা করে কিন্তু তন্নয় আসে না। নিলীমা তন্নয়ের বন্ধুদের কাছে খবর পেলো যে তন্নয়ের খুব জ্বর কয়দিন ধরে। তন্নয়ের বন্ধুরা তখন নিলীমাকে খুব বকা বকি করে কেনো তন্নয়ের খবর চাও, এখন তন্নয়কে অপমান করতে পারো না বলে..??? তখন নিলীমা কান্না করেদেয় আর বলে আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি,, আর এটা ও বুঝেছি যে আমি তন্নয়কে খুব ভালোবেসে ফেলেছি, তন্নয় যে আমার অমূল্য রতন। তখন তন্নয়ের বন্ধুরা খুসিতে চিতকার দিয়ে উঠে আর বলে ভাবি এখন কান্না থামান। তন্নয়ের জ্বর কমলে আমরা তাকে বলে দিব সব ঠিক হয়ে যাবে। তন্নয়ের জ্বরের কথা শুনে তন্নয়কে দেখতে খালা আর খালাতো বোন আসে। তন্নয় এখন আগের থেকে একটু সুস্থ্য বলে খালাতো বোনকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। আর তা নিলীমা দেখে। তন্নয়ের পাশে মেয়ে দেখে নিলীমার রাগ হয় আর তন্নয়ের কাছে গিয়ে বলে……
নিলীমা : এটা কি হচ্ছে..???
তন্নয় : কি হচ্ছে আর কি হচ্ছে…!!!
নিলীমা : কি হট্ছে হুমমম মেয়েটা কে..??
তন্নয় : কেনো তা বলতে হবে নাকি….?
নিলীমা : হে বলতে হবে। মেয়ে নিয়ে ঘুরা হয় বুঝি…??? তোমার না জ্বর..???
তন্নয় : যদি বলি এটা আমার বউ তা হলে কি করবে। আর আমার জ্বর তুমি কি করে জানলে…???
নিলীমা : (কান্না করে) এটা তোমার বউ তুমি বিয়ে করলে কবে…???
তন্নয়: তা কি তোমায় বলতে হবে..???
নিলীমা : বলো না তন্নয় মেয়েটা কে..??? আমার খুব খারাপ লাগছে…।
তন্নয় : ও আমার খালাতো বোন তন্নিমা।
নিলীমা : তন্নিমা
তন্নয় : হুমম কেনো।
নিলীমা : তোমার নাম তন্নয় আর অর নাম তন্নিমা মিলিয়ে।
তন্নয় : হুমমম ভাই বোনের নাম কি এক হয় না।
নিলীমা 🙁 হাসি দিয়ে) হে হয়। আমি তো তোমার বন্ধুদের কাছ থেকে তোমার খোজ নিয়ে ছিলাম, জানতে পারলাম তোমার জ্বর।
তন্নয় : কেনো খুজ নিয়েছ তুমি আমার..?? কে হই আমি তোমার…? নাকি অপমান করতে পারছো না বলে…??
নিলীমা : (তন্নয়কে জরিয়ে ধরে) Sorry তন্নয় আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর আমি যে তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি তন্নয়, আর তুমি বললে তুমি কে আমার,,… তন্নয় তুমি আমার অমূল্য রতন।তুমি যে আমার জীবনের আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।
তন্নয় : সত্যি বলছ নিলীমা..???
নিলীমা : হে তন্নয়….. I Love You ?
তন্নয় : নিলীমা I Love You Too ?
নিলীমা : আমাকে ছেড়ে যাবে না তো..
তন্নয় : না কখনো যাবো না… তোমাকে আমার এই বুকে রাখবো আমি ও যাবো না তোমাকে ও কখনো যেতে দিবো না.
নিলীমা : হুমমম যাবো না।
এমন করে চলে গেলো কিছু সময়। তন্নয়ের খালাতো বোন বলে আরে ভাইয়া আমি লজ্জা পাচ্ছি কিন্তু। তন্নয় বলে তো কি হয়েছে। আমি একটু প্রেম করছি আমার পাগলিটার সাথে। নিলীমা বলে হুমমম ঠিকইতো।
তন্নয় আর নিলীমা এখন দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে। একে অপরকে ছাড়া থাকতেই পারে না। ওদের বিয়ে হয়েছে। অরা খুব খুশি। নিলীমা প্রেগনেন্ট অরা মা বাবা হবে খুব খুশি অনেক স্বপ্ন। তার পর পার হয়ে গেল কয়টি মাস….নিলীমার জমজ দুটি বাঁচ্চা হয় একটি ছেলে একটি মেয়ে। মেয়ের নাম রাখে তন্নয়ের সাথে মিল করে তন্নি আর ছেলের নাম রাখে নিলীমার সাথে মিল করে নিলয়। অদের হাসি খুশিতে দিন কাটে খুব খুশি অরা। আজ তন্নয়ের জন্ম দিন। নিলীমা অনেক আয়োজন করেছে,,, আর সবাইর সামনে তন্নয়কে একটি কিস করে বলে তন্নয় তুমি আমার অমূল্য রতন,,, তন্নয় ও বলে তুমি আমার অমূল্য রতন। তার পর জরিয়ে ধরে একে অপরকে।
সমাপ্ত
(প্রিয় পাঠক, গল্পটি কেমন লাগলো লাইক, কমেন্টস করে জানাবেন সবাই।
গল্পটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ।)
আজমিরা ও মিরাজ একে অপরকে খুব ভালোবাসে। আজমিরা আর মিরাজের বাসা এক পাশা পাশি। আজমিরাকে প্রথম দেখেই মিরাজের ভালোলেগে যায় এবং আজমিরার ও। কিন্তু কেও কাউকে বলেনি। প্রতিদিনই তাদের দুজনের দেখা হয়। এমন করে দেখতে দেখতে কিছু দিন চলে গেলো। একদিন মিরাজ কিছু না ভেবেই আজমিরাকে বলল…..
মিরাজ : আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই, যদি কিছু মনে না করেন..!!
আজমিরা : ( নিচে তাকিয়ে হাসছে) হ্যাঁ বলেন।?
মিরাজ : কেমন আছেন..???
আজমিরা : জ্বী ভালো… আপনি কেমন আছেন..??
মিরাজ : হুমমম আমিও ভালো আছি…। আচ্ছা তোমার নাম কী..??
আজমিরা : আমার( বলতে না বলতেই)
মিরাজ : ইয়ে মানে Sorry… ?
আজমিরা : কেনো..??? ?
মিরাজ : ভুলে তুমি করে বলে ফেলেছি তার জন্য..?
আজমিরা : Ok কোনো সমস্যা নেই,, আমাকে আপনি তুমি করেই বলতে পারেন… ?
মিরাজ : আচ্ছা তাহলে আপনি ও ইয়ে মানে তুমি ও আমাকে তুমি করে বলবে…। এখন বলো তোমার নাম কী..? ?
আজমিরা : আমার নাম আজমিরা…☺ আপনার নাম টা… ( বলা শেষ না হতেই)
মিরাজ : মিরাজ আমার নাম মিরাজ ? আমি তোমার বাসার পাশেই থাকি….।
আজমিরা : ওওও তাই বুঝি তা তোমার( কথা শেষ না হতেই)
মিরাজ : আজমিরা I LOVE YOU ☺
আজমিরা : ( লজ্জা পেয়ে আর খুশি হয়ে) কি বললা তুমি…???
মিরাজ : না মানে… আমি তোমাকে ভালোবাসি….
আজমিরা কিছু না বলেই নিচের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে আর মিরাজ ও লজ্জায় ভয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারছে না। আজমিরা একটু দূরে গিয়ে বলে… আমি ও? মিরাজ অর কথা শুনে খুব খুশি….। অরা প্রতিদিন কথা বলে, দেখা করে আর অনেক ভালোবাসে। মিরাজ আজমিরাকে রাগানোর জন্য কত কিছু বলে ইচ্ছে করে অন্য মেয়েদের কথা বলে। আর আজমিরা ও রেগে যায়। এমন করেই তাদের দুষ্টু মিষ্টি প্রেম চলতে থাকে। কিন্তু কথায় আছে না বেশি সুখ কপালে সয় না। আজমিরার মামাতো ভাই আছে। আর ভাই যেহেতু তো কথা তো হতেই পারে… আজমিরা যে তার ভাইয়ের সাথে কথা বলে তা আবার মিরাজ অর ফোনে চেক করে দেখে,,, কিন্তু আজমিরা কিছু বলে না সে চায় মিরাজ সব দেখুক। কিন্তু মিরাজ আজমিরাকে সন্দেহ করতে শুরু করে। মিরাজ আজমিরাকে বলে….
মিরাজ : আজমিরা তুমি তোমার মামাতো ভাইয়ের সাথে কেনো কথা বলো তুমি কি তাকে ভালোবাসো…??
আজমিরা : এই সব তুমি কি বলছ মিরাজ। তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি…!!তুমি আমাকে এই কথাটা বলতে পারলে মিরাজ…। ?
মিরাজ : হে পারলাম… তোমার ভাই তোমাকে ভালোবাসে…!!
আজমিরা : না মিরাজ এটা তোমার ভুল ধারনা,, তুমি আমাকে বিস্বাস করো( কাদঁতে কাদঁতে) মিরাজ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি….
মিরাজ : মিথ্যে কথা,, আর শুনো আমার সাথে তুমি আর কথা বলবা না….!! ?
আজমিরা : মিরাজ এমন করে বলো না আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না,,, তুমি আমাকে সন্দেহ করে না প্লিজ।আচ্ছা আমি তোমার সামনে আমার ভাইকে কল দেই তুমি শুনো প্লিজ।?
তার পর আজমিরা তার মামাতো ভাইকে কল দিল এবং সাউন্ড বারিয়ে দিলো ফোনের,, কল রিসিভ করলো আজমিরার মামাতো ভাই আর বলল…..
আজমিরার মামাতো ভাই :: হেল্লো
আজমিরা : শুন ( একটু কান্না কন্ঠে)
ভাই : হে বল,, আর তর গলা এমন লাগছে কেন..?? কি হইছে ?
আজমিরা : তুই কি আমাকে ভালোবাসাস…??
ভাই : এই এইসব কি বলছিস তুই মাথা ঠিক আছে তোর…? তুই আমার বোন,, আর বোন হিসাবে যতটুকু একটা ভাই ভালোবাসে ততটুকুই তোকে ভালোবাসি.. আর তেমন করে কিছু না।
আজমিরা : তুই বল ভালো বাসিস না.
ভাই : না বাসি না…। তুই আমাকে এমন কথা বলতে পারলি ?
কল কেটে দিয়ে আজমিরা মিরাজ কে বলল।
আজমিরা : শুনেছ তুমি ( কেদে কেদে) এখন তো বিস্বাস করো আমাকে।
মিরাজ : হয়েছে তোমার কান্না শুনে তোমার ভাই মিথ্যে কথা বলেছে..!!?
আজমিরা : মিরাজ..তুমি আমাকে ভুল বুঝ না প্লিজ…
মিরাজ : শুনো তোমার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না। আর তুমি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করবে না।
আজমিরা : তুমি কোনো আমাকে ভুল বুঝতাছ… এমন করে বলো না প্লিজ…. আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি..আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না… ??
মিরাজ : আমি কিছু শুনতে চাই না।
মিরাজ আজমিরার কোনো কথাই শুনে চায়নি,,, সন্দেহ করে ভুলই বুঝল কিন্তু আজমিরা এত কিছুর পর ও মিরাজ কে কাছে পেতে চাইলো। কিন্তু মিরাজ আজমিরার ভালোবাসাটা বুঝলো না। আজমিরা খুব কান্না করে। কিন্তু মিরাজ তার মূল্য দিল না।
সমাপ্ত
কিছু কথা:- ভালোবাসায় কখনো কেউ কাউকে সন্দেহ করবেন না। কারণ সন্দেহ খুব খারাপ যা সম্পর্ককে, জীবনকে শেষ করে দেয়। ভালোবাসায় ভুল বুঝা বুঝি না করে বিস্বাস করতে হয়। এমন অনেক আজমিরার মত লোক আছে যে সব কিছু নিরবে সয়ে যায় তবুও ভালোবাসার মানুষটাকে তার জীবনে চায়। তাই সবার কাছে অনুরোদ প্লিজ সম্পর্কের মাঝে কেউ অবিস্বাস,, সন্দেহ,ভুল বুঝা বুঝি করবেন না। তাহলে সম্পর্ক টিকে থাকবে সুখের হয়ে।
গল্পটি কেমন লাগলো আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ,
আর গল্পটি যদি ভালোলেগে থাকে তাহলে প্লিজ লাইক দিবেন,, আর শিয়ার করে আপনার বন্ধুদের পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য।
আপনাদের একটা বিয়ের ছবি আমাকে দেয়া যাবে? – নিদ্র নিজের অজান্তেই বলে ফেললো। অচেনা কারো কাছ থেকে বিয়ের ছবি চাওয়াটা মনে হয় ঠিক হয়নি।
মিস্টার ব্রন্ড কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন
– অবশ্যই, কেনো নয়?
চেয়ার ছেড়ে উঠে ভেতরের দিকে চলে গেলেন। নিদ্র একটু স্বস্তি বোধ করলো।
কিছুক্ষণ পর মিস্টার ব্রন্ড ছোট্ট একটা ছবি এনে নিদ্রের হাতে দিয়ে বললেন
– এটাতে হবে?
নিদ্র ছবিটা দেখে বললো
– অবশ্যই!
মিস্টার ব্রন্ড মুচকি হেসে বললেন
– নিশ্চয়ই স্পেশাল কাউকে ছবিটি দেখাতে চাচ্ছো?
– হ্যাঁ, যদি সুযোগ হয়।
– অবশ্যই সুযোগ হবে।
নিদ্র বিড়বিড় করে বললো
– প্রিয় মানুষের দেখা সবাই পেলেও, স্পর্শ করার ক্ষমতা সবার মাঝে থাকেনা!
অদ্রির সামনে লিলি বেশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। অদ্রি তাকে কী বলার জন্য ডেকেছে সেটা বুঝতে পারছেনা লিলি। অদ্রি আপা কি জেনে গেছে, তার নদীর পাড়ে বসে থাকার কথা? অদ্রি আপা তো এই বাড়ির উঠানে পর্যন্ত নামেন না। তার কাছে অন্য এলাকার মানুষ তো দূরে থাক এই এলাকার মানুষই আসেনা। কে বলবে? রীতা বলেছে নাকি? না, সে নিজেও তো বাসার বাইরে বের হননা।
অদ্রি চায়ের শূন্য কাপ বিছানার পাশের ছোট্ট টেবিলে রেখে ভারি কণ্ঠে বললো
– কোথাও যাওয়া হয় আজকাল?
লিলি স্বাভাবিক ভাবেই বললো
– আপনার মতো বাসায় বসে থাকতে আমার ভালো লাগেনা!
অদ্রি এরকম উত্তর পাবে আশা করেনি। একটু অবাকই হলো।
– তাহলে কী ভালো লাগে? বেহায়াপনা করতে ভালো লাগে?
– ঘুরে বেড়নো কি বেহায়াপনা?
– গায়ের জামাকাপড় কিছু ঠিক থাকে নাকি তোমার? মুখে মুখে কথা তো বলতে খুব ভালো জানো
অদ্রি রেগে বললো
– তোমাকে কীভাবে সোজা করতে হয় আমার জানা আছে। ফের যদি দেখি বাসার বাইরে বের হয়েছো তাহলে আমার অন্যদিকের ব্যবহার দেখতে পারবে! খুব ভালো ব্যবহার করেছি। যাও এখান থেকে।
লিলি রাগে ফুসছিলো। অদ্রির কঠোর ব্যবহার তার আত্মসম্মানে আঘাত করেছে। লিলি তার রুমের দিকে পা বাড়ালো। অদ্রির কোনো কথাই সে শুনবেনা।
রশীদ সাহেব চিঠিটা পোস্টঅফিসে পোস্ট করে বাসায় ফিরছিলেন। নাজমুল কে দাওয়াত দেয়া কি ঠিক হবে? ও আসবেনা এটা সে শিওর। না আসলেও নিদ্রকে পাঠিয়ে দিবে। তাতেও লাভ আছে রশীদ সাহেবের। মেয়ের বিয়ের কথা শুনে কিছু টাকা বা গিফট পাঠাবে। টাকাপয়সার অভাবে আতিথ্য করতে তার যে কী পরিমাণ কষ্ট হবে, তা বোঝার ক্ষমতা একমাত্র তার মতো বাবারাই জানে। অদ্রি তাকে একটা টেনশন থেকে মুক্তি দিয়েছে। সে কি এর বিনিময়ে কিছু করতে পারবে?
অদ্রির টাকাপয়সার অভাব নেই। যা যা দরকার সবই তার আছে। না, কিছুই দেয়ার ক্ষমতা তার নেই। নামাজে বসে মোনাজাতে প্রাণভরে দোয়া করতে পারবে – আর কিছুই করার ক্ষমতা তার নেই।
অদ্রি রিতাকে বললো
– আচ্ছা ২০ জনের মতো মানুষকে ৭/১০ দিন তিন বেলা খাওয়াতে কী পরিমাণ খরচ হতে পারে?
রিতা পান মুখে দিয়ে বললো
– চাল, ডালের হিসাব বলতে পারবো কিন্তু টাকার পরিমাণ টা আমি ঠিক বলতে পারবো না।
– রশীদ চাচার ছোটো মেয়ের বিয়ে এই বাড়িতে হবে। আমি চাচ্ছিলাম খাওয়া খরচ, বর যাত্রীর আপ্যায়ন সব আমি দিবো।
– তাহলে তো বেশ খরচের বিষয় অদ্রি। আমি একা এতো জনের রান্না করতে পারবো না। যদি একজন মানুষ সহকারী হয় তবে সহজ হবে।
– রশীদ চাচাকে আমি দুইজন লোক আনতে বলবো। আর বাড়িটাও রঙ করতে হবে।
– অদ্রি তুমিও বিয়েটা করে ফেলো। আমি ঘটকালি করবো।
অদ্রি মুচকি হেসে বললো
– আমি বিধবা।
রিতা আজকেই প্রথম জানলেন, অদ্রি বিধবা! তার কেনো যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা। এতো অল্পবয়সী মেয়ে বিধবা? মেয়েটার এতো ছন্নছড়া থাকার কি এটাই কারণ?
অদ্রি বললো
– রশীদ চাচা কখন বের হয়েছেন?
– ১ ঘণ্টার মতো!
– লিলি কি করছে?
– সে দরজা আটকে তার ঘরে আছে।
– মেয়েটার যে কি হয়েছে বুঝতে পারছিনা। আগে সারাদিন আমার পিছু পিছু আর এখন তাকে খুঁজে পাওয়া যায়না।
– নয়া যৌবন এসেছে বুঝতে হবে!
– ঠিক বুঝলাম না।
– নতুন যৌবনে পা দিলে প্রত্যেক ছেলে – মেয়ের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসে। এইসময় তাদের চোখে চোখে রাখতে হয়।
– আমি আগামীকাল থেকে চোখে চোখে রাখবো। আজকে নিচে নামতে ভালো লাগছেনা। আগে বাগানে বেশ সময় কাটাতাম এখন কিছুই ভালো লাগেনা।
– ছাদে যেতে না?
– না!
– চলো আজকে ছাদে যাই। ভালো লাগবে। এতো সুন্দর বাড়িটাকে সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হলে আরো ভালো লাগবে। বিশেষ করে তোমার রুমটা। দেখে কে বলবে বলোতো এটা অল্পবয়সী মেয়ের রুম?
– অল্পবয়সী বিধবা! কি অদ্ভুত উপাধি তাই না?
– চিঠিটা কাকে পাঠানোর জন্য দিলে?
– নিদ্র, আমাকে বেশ সাহায্য করেছিলো ব্যক্তিগত বিষয়ে। আমার হাতের হাবিজাবি রান্না খেয়ে ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। বেচারা চা খেতে পছন্দ করতেন কিন্তু আমার হাতের চা খেয়ে তার এখানে থাকার সখ হাওয়া হয়ে গেছে। আপনি আসার পরে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু কোনো প্রতিউত্তর পাইনি তাই এবার লাস্ট চেষ্টা করলাম।
– রশীদ সাহেবের জন্য এতো কিছু কেনো করতে চাচ্ছেন?
– সে আমার জন্য যা করেছে তার কোনো বিকল্প আমি কখনো দিতে পারবো না। বিধবা হবার পরে যখন এখানে চলে আসলাম কেবলমাত্র রশীদ চাচাই আমাকে সাহায্য করেছে। এতো বড় বাড়িতে আমি আর লিলি ছিলাম কেউ জ্বালাতন করার সাহস পায়নি। একমাত্র ওনার কারণে। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে আমি বাধ্য।
– রাতে কী খাবেন? দুপুরের খাবার গরম করে এনে দিবো নাকি থাই স্যুপ করে খাওয়াবো?
– আপনি পারেন?
– আমি অনেক ধরনের রান্না জানি।শুধু তুমি বলবে।
– আপনার ইচ্ছা হলে করবেন। আজকে থাক, দুপুরের খাবারেই হবে। কাল স্যুপ করে খাওয়াবেন।
রিতা খাবার গরম করার জন্য রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে নিচে নেমে আসলেন।
বিয়েটা রশীদ চাচার ছোটো মেয়েটার বদলে তারও হতে পারতো। এই বাড়ির গণ্ডি পেরিয়ে গেলে হতে পারে কেউ জুটে যাবে কিন্তু নিদ্রকে তো পাওয়া যাবেনা।
তার মতো একজন বিধবাকে কেনইবা নিদ্র ভালোবাসবে?
তার এই শরীরে আজ অবদি নিদ্র ছাড়া কারও স্পর্শ পড়েনি। বিয়ে তার ঠিকই হয়েছিল তবে সেটা নামেমাত্র বিয়ে!
একজন মানুষ তাকে ভুলের মধ্যে রেখেছিলো। তার মা – বাবাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে সেই মানুষ টা।
ভাবতেও ঘৃণা লাগে এরপর নিচু মানসিকতার কারো সাথে তার বিয়ে হয়েছিলো!
তোমাদের যেমন ইচ্ছে,,
ফাতেমা বেগম চলে গেলো
মিথিলা আবার বইয়ের দিকে মনোযোগ দিলো,কিন্তু কিছুতেই বইতে মন বসাতে পারেনি, বার বার বইয়ের পাতায় যেন ইহানের নিঃস্বপাপ মুখটা ভেসে উঠছে, এমন সময় নির্ঝরিণী এসে বল্লো
– আপু আমার দুলা ভাই কি কাল সত্যি আসছে?
মিথিলা বিরক্তি নিয়ে নির্ঝরিণীর দিকে তাকিয়ে বল্লো,
– নির্ঝর , কে তোর দুলা ভাই
নির্ঝরিণী – কেনো কাল যে আসবে সে দুলা ভাই নয় কি?
মিথিলা ভ্রু কুঁচকে বল্লো
– দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয়ে যায়
নির্ঝরিণী – তা ঠিক, কিন্তু আপু আমার মন কি বলছে জানো,
মিথিলা নির্ঝরিণীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
নির্ঝরিণী একটু থেমে আবার বল্লো
– আমার মন বলছে তোমার এখানেই বিয়ে হবে
মিথিলা- তোর এমন মনে হওয়ার কারন?
নির্ঝরিণী – কারন জানি না, তবে মনে হলো আর কি
মিথিলা- শুন তোকে একটা কথা বলি তুই না পড়া শুনা বাদ দিয়ে দে,বটতলায় জ্যোতিস বিদ্যা নিয়ে বস,,খুব অল্প সময়ে ফেমাস হয়ে যাবি
নির্ঝরিণী মুখ ভার করে বল্লো
– আপু তুমি সব সময় কেনো এমন করো আমার সাথে,আয়ান কে তো ঠিক ই আদর করো
এমন সময় আয়ানের এন্ট্রি
আয়ান- জানিস কেনো তোকে সবাই আদর করে না,,কারন তোকে তো রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে তাই
নির্ঝরিণীর চোখে টলমল পানি
যেন একটু টোকা দিলিয়ে টপ করে ঝরে পড়বে
– ঠিক আছে আব্বু আজ আসুক আমি আব্বুকে বলবো এই বলে নির্ঝরিণী দূত পা ফেলে বেরিয়ে গেলো,
মিথিলা- আয়ান কি দরকার ছিলো তোর এই রকম করার
আয়ান- আপ্পি ভালো হয়েছে কাঁদুক একটু হি হি হি
মিথিলা-পাগলী টা তো সত্যি ভেবে নিয়েছে
আয়ান- বুদ্ধি শুদ্ধি মোটে ও নেই।
মিথিলা- যাই হোক তুই কিছু বলবি?
আয়ান- ম্যাথ এর একটা সাপ্টার বুঝতেছি না,একটু বুঝিয়ে দিবি
মিথিলা- ঠিক আছে চল
রাতে মাসুম ফারুকি বাসায় আসতেই নির্ঝরিণী কেঁদে কেঁদে নালিশ করলো
মাসুম ফারুকি তখন খুব টায়ার্ড ছিলো,,মেয়ের এই ছেলে মানুষী দেখে হাসবে না কিছু বলবে ভেবে পাচ্ছে না
আয়ান এসে হাসতে হাসতে বল্লো
– বাবা সত্যি টা বলো,ওকে তো আমরা
হাসপাতাল থেকে এনেছি তাই না
মাসুম ফারুকি ছেলে কে ধমক দিতে যাবে, তার আগেই নির্ঝরিণী বল্লো।
– বাবা দেখো ও মিথ্যা বলছে একবার বলছে রাস্তায় আবার বলছে হাসপাতালে,তুমি বল্লো সত্যি টা কি।
মাসুম ফারুকি- পাগলী মেয়ে, তুই আমার মেয়ে ঐ দুষ্টুর কথা শুনিস না তো
নির্ঝরিণী, বাবাকে ঝড়িয়ে ধরে হেসে ফেল্লো
– বাবা কতোদিন তোমায় কাছে পাই না বলো,এতো ব্যাস্ত কিসের তুমি
ফারুকি সাহেব একটা নিশ্বাস ফেলে বল্লো মারে সব বুঝবি আগে বড় হয়ে নে
আয়ান- আব্বু মেয়ে কে আদর দিলে হবে না মা ডাকছে তাড়া তাড়ি এসো
পরদিন সকালেই মিথিলারা সবাই ব্যাস্ত
ফাতেমা বেগম নির্ঝরিণী কে বল্লো,
-শুন নির্ঝর ঘর টা ভালো করে গুছিয়ে রাখবি,, কতো বড় ঘর থেকে আমার মিথি কে দেখতে আসছে জানিস
নির্ঝরিণী – মা উনারা দুপুরের পরে আসবে এতো ব্যাস্ত হচ্ছো কেনো এখন
ফাতেমা বেগম- সর তো সব কাজে তোর ফাঁকি বাজি,,যা গিয়ে দেখ মিথিলা কি করছে,
নির্ঝরিণী উঠে গেলো, মিথিলার কাছে
-আপু একটা ফ্যাস প্যাক বানিয়েছি একটু খানি মুখে লাগিয়ে নে,দেখবি ফ্রেশ ফ্রেশ লাগবে
মিথিলা – উহ নির্ঝরিণী যাহ তো এই সব চাঁই পাস আমি লাগাইনা
নির্ঝরিণী – ওকে আমি লাগাই, কিন্তু এর পর যদি বর পক্ষ তোর বদলে আমাকে পছন্দ করে তখন চোখে তেল দিয়ে কাঁদতে পারবি না বলে দিলাম
মিথিকা মুচকি হেসে বল্লো
– ঠিক আছে আব্বুকে বলবো তোকে আগে বিয়ে দিতে, আর আজকের ছেলেটা কে যদি তোর পছন্দ হয় তা হলে এর সাথে ই তোর বিয়ে হবে
নির্ঝরিণী হাসছে মিথিলার কথা শুনে
বিকেলে মেহমানরা চলে আসে
মাসুম ফারুকি তাদের বসতে দিলো
মাসুম ফারুকি- ইয়ে মানে আপনাদের ছেলে আসেনি
ছেলের বাবা আতাহার চৌধুরী দুঃখিত হয়ে বল্লো
– আসলে আমরা খুবই লজ্জিত,আপনাদের কাছে আর ক্ষমাপ্রার্থি, আমার ছেলে আসার কথা ছিলো কিন্তু জরুরী মিটিং এ আটকে পড়েছে তাই আসতে পারেনি, কিন্তু সে তার মাকে পাঠিয়েছে বলে দিয়েছে মায়ের পছন্দ হলে ই হলো,
মাসুম ফারুকি- আলহামদুলিল্লাহ
এর পরে আমাদের কোন কথা থাকতে পারে না,
আয়মন চৌধুরী ছেলের মা কিছু বলতে যাবে তখন ই
ফাতেমা বেগম আড়াল থেকে মাসুম ফারুকি কে ডেকে নিয়ে গেলেন
মাসুম ফারুকি আসতেই
ফাতেমা বেগম বললেন
– তুমি পাগল হয়ে গেছো নাকি,আমাদের মেয়ে ছেলে কে দেখেনি,এখানে ছেলে মায়ের পছন্দ বিয়ে করবে এটা কেমন কথা,এ যুগের ছেলে রা কি এমন হয়,আমার কেমন জানি খটকা লাগছে
মাসুম ফারুকি- তুমি এতো চিন্তা করো না হয়তো ছেলে সত্যি খুব ভালো হবে, আমার মন বলছে
ফাতেমা বেগম তোমার যা ইচ্ছে করো,
মাসুম ফারুকি আর কোন কথা বল্লো না, বসার ঘরে আবার ফিরে গেলো
মিসেস আয়মন চৌধুরী মাসুম ফারুকি কে বল্লো মেয়ে কে তো আমরা আগেই দেখেছি,এখন আর নতুন করে দেখতে হবে না, আপনি মেয়ে কে ডাকুন আমি আজ ই আমার বউ মাকে চেইন পরিয়ে রাখতে চাই
মাসুম ফারুকি- কিন্তু, ছেলে মেয়ে কেউ কাউকে দেখেনি,বিয়ের পাকা কথা বলা কি ঠিক হবে
আতাহার চৌধুরী- আমরা ছেলের ছবি সংগে এনেছি, ছেলে আসতেই ছেয়েছিলো কিন্তু জরুরী মিটিং এর কারনে আসতে পারেনি, বেয়াই আপনি আর অমত করবেন না আমার উপর বিশ্বাস রাখুন,আপনার মেয়ে খুব মিষ্টি আমি তাকে দেখেছি আমার কোন মেয়ে নেই,বউ মা হয়ে নয় মেয়ে হয়ে থাকবে আপনার মেয়ে আমার বাড়িতে
মাসুম ফারুকি- আলহামদুলিল্লাহ,, ঠিক আছে আমি আমার মিথিলা মাকে নিয়ে আসছি আপনারা বসুন
মিসেস আয়মন চৌধুরী- বেয়াই সাহেব আমি যাচ্ছি বউ মাকে নিয়ে আসতে,আপনারা বরং কথা বলুন
মিথিলার রুমে নির্ঝরিণী মিথিলার কানের কাছে গুন গুন করছে শাড়ি পরার জন্য
মিথিলার একটাই কথা শাড়ি সে পরবে না,, আজ শাড়ি পরলে নিজেকে বড্ড অপরাধি মনে হবে, সেদিন ইহান কতো রিকুয়েস্ট করেছিলো,,এই সব ভেবেই মিথিলা শাড়ি পরেনি
নির্ঝরিণী – যাহ আপু কি ভেবেছিলাম আর কি হলো?
মিথিলা – কি হয়েছে
নির্ঝরিণী – সকাল থেকে রুপচর্চা করেছি কতো কি করেছি,যদি দুলাভাই আমার দিকে একটু নজর দেয় এখন শুনছি উনি আসে ই নি
মিথিলা- আহ হারে,কি করবি এখন….
এমন সময় মিসেস আয়মন মিথিলাদের রুমে প্রবেশ করলো
– কি কথা হচ্ছে দু বোনের মাঝে
মিথিলা তাড়া তাড়ি করে মাথায় ওড়না টেনে দিয়ে পাশে সরে গেলো
নির্ঝরিণী – আন্টি বসুন
মিসেস আয়মন মিথিলার মাথা থেকে ওড়না সরিয়ে বল্লো,মাকে কেউ লজ্জা পায়, আমি ও তো তোমার আরেক মা হতে চাই,
শুনো মা প্রথম দেখেই তোমার মাঝে আমি মেয়ে মেয়ে গন্ধ পেয়েছি তাই আর দেরি করিনি,আমার তো কোন মেয়ে নেই তাই তোমাকেই আমার লাগবে
মিথিলা কিছুই বল্লো না,
মিসেস আয়মন, একটি ডায়মন্ড হার পরিয়ে দিলো মিথিলার গলায়, আমি আমার মেয়েকে এই হার দিয়ে দোয়া করে গেলাম,,
নির্ঝরিণী – আরেহ আন্টি, আপনি একা কথা বলেই যাচ্ছেন আমাকে ও কিছু বলার সুযোগ দিন
মিথিলা ইশারা করে চুপ করতে বল্লো নির্ঝরিণী কে
মিসেস আয়মন- বলো মা তুমি কি বলবে
নির্ঝরিণী – আমি আর কি বলবো আপনি তো সব বলেই দিয়েছেন, হি হি হি,তবু ও বলছি দুলা ভাই আসেনি কেনো
মিসেস আয়মন কিছু বলার আগেই ফাতেমা বেগম সেখানে এলো,,
– কিছু মনে করবেন না আপা মেয়েটা আমার এই রকম ই
মিসেস আয়মন- না না কি যে বলেন আমি বুঝতে ফেরেছি,আসো মা বসার ঘরে এসো, এই বলে মিসেস আয়মন মিথিলাকে নিয়ে গেলো,
আতাহার চৌধুরী আর মাসুম ফারুকির কাছে,
মিথিলার উপস্থিতিতে বিয়ে সামনের মাসের পনেরো তারিখে ঠিক হয়
আতাহার চৌধুরী – বল্লো আমার একটাই ছেলে,তার বিয়েতে কোন কিছুর কমতি যেন না থাকে তাই এতো লম্বা সময় নিলাম মিঃ ফারুকি,আপনাদের কোন আপত্তি নেই তো।
মাসুম ফারুকি – না,না, আমাদের কোন আপত্তি নেই কি বলো জিমির আম্মু,মাসুম ফারুকি স্ত্রী ফাতেমা কে লক্ষ করে কথা টা বললেন
ফাতেমা বেগম- তা ঠিক আছে,কিন্তু বিয়ের আগে একবার ছেলে মেয়ের দেখা দেখির ব্যাপার টা সেরে ফেললে ভালো হয়
মিসেস আয়মন- ঠিক আছে সময় করে এর মাঝে আমি একবার ছেলে কে পাঠিয়ে দিবো
আতাহার চৌধুরী- তা হলে আমরা আজ উঠি,,আতাহার চৌধুরী আর মিসেস আয়মন বেরিয়ে গেলো,গাড়িতে বসে আতাহার চৌধুরী বললো
-তোমার ছেলে কে বুঝাও মুন, ঐ ডিসকো মেয়েকে আর যাই হোক বাড়ির বউ করা যায় না
আতাহার চোধুরী আয়মন চৌধুরী কে ভালোবেসে মুন বলে ডাকে সেই বিয়ের পর থেকে তাদের মাঝে এই চুক্তি হয়,আজ অব্দি এক বিন্দু ভালোবাসার অভাব দেখা দেয়নি তাদের মাঝে
মিসেস আয়মন- তুমি চিন্তা করো না,ছেলে আর যাই করুক আমার কথার অবাধ্য হবে না,একবার বিয়েটা হয়ে যাক দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে
ইহান গেলো না তাই অরনি ও যায়নি
অরনি- ইহান তুই এভাবে ভেঙে পড়ছিস কেনো বল,দেখ জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না,যাস্ট মুভ অন, ডিয়ার
ইহান মৃদু হেসে বল্লো
– ঠিক ই বলছিস জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না,আবার জীবনে একা পথ চলতে ও কেউ পারে না, তুই দেখনা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মানুষ একা থাকে,তার পর জীবনের বিশেষ সময় গুলো দুজনে মিলে কাটায়
অরনি- আমি বলবো তোর সেই সময় এখন ও আসেনি ইহান
ইহান- তুই আমাকে ইহান বলছিস কবে থেকে?
অরনি বিব্রত বোদ করে ইহানের কথা শুনে
ইহান- তোরা আমাকে ইহু বলিস,ইহান বলে ডাকার দরকার নেই,
অরনি কিছু বল্লো না
ইহান- দোস্ত আমি এখন উঠি রে ভালো লাগছে না কিছু
অরনি- এখন ই যাবি?
ইহান- হুম
অরনি- ঠিক আছে সাবধানে যেও
ইহান নিঃশব্দে হেসে বেরিয়ে পড়ে গাড়ি নিয়ে
ইহানের হাসি অরনি দেখতে পায়নি,দেখলতে হয়তো বুঝতো হাসিটার কারন
মিথিলা খাবার টেবিলে বসে আছে, খাওয়ার প্রতি তার মন নেই
মাসুম ফারুকি- তো মিথিলা মা,কোন কলেজে ভর্তি হতে চাস তুই
মিথিলা- বাবা কাছে কোন কলেজে ভর্তি হয়ে যাবো,,
নির্ঝরিণী – তা হলে আপি তুই ভুঁইয়া একাডেমী কলেজে ভর্তি হয়ে যা,, বাড়ি থেকে হেটে ও যেতে পারবি
মিথিলা- হুম ঠিক বলেছিস
মাসুম ফারুকি- তা হলে ফাইনালি ভুঁইয়া একাডেমী কলেজে ভর্তি হবি তাই তো
মিথিলা- হুম বাবা,কালকেই যাবো ভাবছি
আয়ান- আপু তুমি একা ভর্তি হবে তোমরা ফ্রেন্ডসদের ফেলে? একা হয়ে যাবে না
মিথিলা – জানি না,, হয়তো ওরা অন্য কোন নামী কলেজে ভর্তি হবে,,আমার ওতো নামী কলেজে যাওয়ার দরকার নেই
ফাতেমা বেগম- ঠিক বলেছে মিথি,,সামর্থ্য নিয়ে কথা,
খাবার শেষ করে মিথিলা স্টাডি রুমে গেলো,, ক্লাস শুরু হয়ে গেলে এই বই গুলো আর পড়া যাবে না, তাই আবার বই নিয়ে বসলো
পরদিন মিথিলা কলেজে ভর্তি হয়ে ফিরে এলো,, ক্লাস শুরু হতে কয়েকদিন লাগবে
নির্ঝরিণী আজ স্কুলে যায়নি,পড়া চুরি করা তো ওর নৃত্য দিনের কাজ আজ ও তাই হলো
মিথিলা জানালার পাশে বসে আছে বই নিয়ে
নির্ঝরিণী – আপি সারা দিন বই পড়তে ভালো লাগে বল
মিথিলা- প্যাঁচাল না ফেড়ে কি বলতে আসছিস বলে চলে যা
নির্ঝরিণী – ওকে.শুনো আপি পরিক্ষা শেষ করে তুমি কোথায় ও বেড়াতে যাওনি,,এখন তোমার কলেজে ক্লাস শুরু হতে ও সময় লাগবে, চল না বড় আন্টিদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসি
মিথিলা- আমার ইচ্ছে নেই তুই যা
নির্ঝরিণী – আমাকে যেতে দিলেই তো যেতাম,কিন্তু আপু আব্বু আম্মু তোমার কোন কথা ফেলেনা তুমি বললে ই রাজি হয়ে যাবে
মিথিলা- তারা তো আমাকে যেতে দিবে এতে তোর লাভ কি?
নির্ঝরিণী – দূর তুমি কিচ্ছু বুঝো না, তুমি বলবে নির্ঝর কে সাথে নিতে চাই, তা হলে মা আর নিষেধ করতে পারবে না
মিথিলা কিছুক্ষন চুপ থেকে ভাবলো,
– সত্যি ভালো লাগছে না, বই তো শুধু সবাইকে দেখানোর জন্য সামনে নিয়ে বসে থাকি,মূলত বইয়ের মধ্যে আমার মন বসাতে পারছি না,,কোথায় থেকে বেড়িয়ে আসলে যদি ভালো লাগে
নির্ঝরিণী ভাবছে
– আপু চুপ করে আছে কেনো নিশ্চই এটা ঝড়ের পর্বাশ, আমি নিরবে কেটে পড়ি,নির্ঝরিণী পিছু হাটতে থাকে
মিথিলা- ঠিক বলেছিস নির্ঝরিণী, চল আন্টিদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি অনেক দিন কোথায় ও যাওয়া হয়নি
নির্ঝরিণী থমকে দাড়ালো চোখ বড় বড় করে ফেল্লো,মিথিলা এতো সহযে রাজি হবে এটা নির্ঝরিণী ভাবতেই পারেনি
মিথিলা- কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা আমার আর তোর জামা কাপড় গুছিয়ে নে,আমি মা কে বলে আসি
নির্ঝরিণী – ওকে আপু
মিথিলারা তার বড় আন্টির বাসায় রওনা হলো
পুরো সাতদিন থেকে আজ তারা নিজের বাড়ি ফিরে যাবে
মিথিলার আন্টি রাহেলা বেগম কিছুতে ই বোনঝি দের যেতে দিতে চায় না,তার একটা ই কথা মিথিলা বাড়িতে গিয়ে ডুকলেই আর আসবে না, তাই আর ও কয়দিন দিন থাকতেই হবে
নির্ঝরিণী ও খুশি আন্টির কথা শুনে,মনে মনে বলছে আল্লাহ আপু যেন রাজি হয় আর ও কয়দিন থাকার জন্য
কিন্তু মিথিলা থাকবে না
– আন্টি কলেজ বন্ধ হলে অবশ্যই আসবো,আর তা ছাড়া নির্ঝরিণীর পড়া বন্ধ আজ কতো দিন,এমনিতে ও পড়তে চায় না তার উপর এতো ছাড় দিলে তো মটেও পড়বে না ও
অবশেষে রাহেলা বেগম রাজি হলো,,মিথিলারা চলে এলো বাড়িতে,
মিথিলা কলেজে যেয়ে বড় একটা শকড খেলে যাদের এড়িয়ে চলার জন্য আলাদা কলেজে ভর্তি হয়েছে তারা ও সেই কলেজে
ক্লাসে ডুকে অরনি আর ইহান কে দেখে চমকে উঠলো
অরনি- কিরে মিথি কেমন আছিস,তোকে ফোন করলে ফোন তুলিস না,তার পর কলেজে ও আসিসনি কোথায় ছিলি
মিথিলা- বড় আন্টির বাড়িতে বেড়াতে গেছি,
ইহান- কিরে মিথি তুই কি আমাকে দেখিস নি নাকি, অন্ধের মতো আমাকে ফেরিয়ে অন্য ব্যাঞ্চের দিকে গেলি
মিথিলা- দেখেছি কিন্তু কি বলবো বল,,তোরা এই কলেজে ভর্তি হবি আমি ভাবতে পারিনি
ইহান- তোর মতো টেলেন্টেড মেয়ে যদি এই কলেজে পড়তে পারে তা হলে আমরা কেনো নয়
মিথিলা- বাই দ্যা য়ে, সাম্মি রাহি ওরা কোথায়
অরনি- ওরা দুজন, রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়েছে
মিথিলা- এতো দূরে কেনো
অরনি- বলতে পারছি না
মিথিলা – ও,
মিথিলা আর কথা বলেনি,তাই সবাই চুপ
ক্লাস শেষে মিথিলা সবার আগে বেরিয়ে গেলো
অরনি- ইহান তোর এই কলেজে ভর্তি হওয়া ঠিক হয়নি
ইহান অবাক চোখে অরনির দিকে তাকায়
– তুই এই কথা বলছিস অরু, তুই তো সবার আগে আমাকে সাপোর্ট দেয়ার কথা
অরনি- স্যরি, মিথিলা তোকে এভয়েট করছে,ব্যাপার টা আমি সহ্য করতে পারছি না তাই বললাম
ইহান- এভয়েট করছে আমাকে কষ্ট হচ্ছে তোর?
অরনি- স্যরি, এমনি বলেছি
ইহান- আমি জানি অরু মিথিলা আমাকে এভয়েট করবে তবুও আমি এক ই কলেজে কেন ভর্তি হয়েছি জানিস,,একটিবার ওকে চোখের দেখা দেখবো বলে, কথা না বল্লে কি হবে দেখতে তো পাবো তাকে,আর আমার বিশ্বাস একদিন সে আমার ভালোবাসা বুঝবে
অরনি আর কিছু বলেনি,, যে যার বাসায় চলে এলো
এভাবেই মান অভিমানের মাঝে, কলেজের ফাষ্ট ইয়ার শেষ হলো
মিথিলা কখনোই নিজে থেকে ইহানের সাথে কথা বলেনি, যত টা সম্ভব এড়িয়ে গেছে সব কিছু,
এই রকম ই এক বিকেলে কলেজ থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে অভ্যাস বসত বই নিয়ে বসে,এমন সময় মিথিলার পাশে এসে দাড়ালো তার মা ফাতেমা বেগম
মিথিলা বই থেকে চোখ না সরিয়ে বল্লো,কিছু বলবে মা
ফাতেমা বেগম- হুম,, কিন্তু তুই তো পড়ছিস
মিথিলা বই বন্ধ করে বল্লো,এবার বলো কি বলবে
ফাতেমা বেগম- তুই যে তোর বড় আন্টির বাসায় কয়দিন আগে বেড়াতে গেলি না
মিথিলা ফাতেমা বেগমের কথার মাঝখানে বল্লো
– কয়দিন আগে বলছো কেনো মা প্রায় নয় দশ মাস হবে
ফাতেমা বেগম- ঐ এক ই হলো, একটু থেমে ফাতেমা বেগম আবার শুরু করলেন
– তোর আন্টিদের পাশের বাসার যে ভদ্র মহিলা আছে না,তার বোন তখন বোনের বাসায় বেড়াতে এসে তোকে দেখে পছন্দ করেছে তার ছেলের জন্য,
তুই তো চলে এলি,মহিলার স্বামি ও তখন দেশে ছিলো না গত মাসে এসেছিলো,তার পর তোর আন্টির থেকে কলেজের ঠিকানা যেনে কলেজে যাওয়ার পথে তোকে দেখেছে ভদ্র মহিলার স্বামি
ভদ্র মহিলার মতো তার স্বামির ও তোকে পছন্দ হয়েছে, তারা কাল তাদের ছেলে কে নিয়ে তোকে দেখতে আসতে চায়,তোর বাবা আসতে বলে দিয়েছে তাদের,,তাই বলছি কাল তুই কলেজে যাস না,
লম্বা কথা শেষ করে থামলো,মিসেস ফাতেমা
মিথিলা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বল্লো
মা আমি তো এখন পড়াশুনা করছি বলো,
ফাতেমা বেগম-দেখতে এলেই কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি, আসুক না দেখতে,আমরা ও তাদের ছেলে কে দেখি তার পর না বুঝতে পারবো,তুই এখন ই এতো টেনশন করিস না মা