বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1173



খেলাঘর পর্ব-২৭

0

খেলাঘর পর্ব-২৭
লেখা-সুলতানা ইতি

আশা করি আপনাদের আর কিছু বলতে হবে না, এই বলে মিথিলা বেরিয়ে যায়,,

পরীক্ষা শেষে নতুন করে পরিচিত হওয়া এক বান্ধবীর সাথে দেখা করলো মিথিলা

মিথিলা- তৃধা আমার না কিছু টিউশনি খুব দরকার,একটু খুঁজে দিতে পারবি?

তৃধা- দোস্ত আমার ছোট একটা বোন আছে পড়া শুনায় ফাঁকিবাজ, তুই যদি তারে পড়াশ তা হলে পাঁচ হাজার করে পাবি

মিথিলা- পাঁচ হাজার কেনো, একটা টিউশনি তে এতো দেয় নাকি

তৃধা- শুন আমার বোন কে কোন টিচার ই পড়াতে চায় না, দূর্বল, ক্লাস সেভেনে এই চার বছর আছে,এর আগের এক টিচার কে তো আট হাজার টাকা করে দিতাম,, কিন্তু তা ও কিছু হয়,এই টা লাষ্ট সান্স

সে হিসেবে তোকে অনেক কম ই বলেছি
মিথিলা- ওকে ডান, প্রতি দিন সন্ধায় আজ থেকেই শুরু করবো,কিন্তু তৃধা আমার আর ও কিছু টিউশনি দরকার, মানে যা দিয়ে তিন চার জনের সংসার খুব ভালো ভাবে চলতে পারবে

তৃধা একটু ভেবে বল্লো
– দোস্ত টিউশনি করে তুই সংসার চালাতে পারবি না কারন দেখ অনেক স্টুডেন্ট এর গার্ডিয়ানরা মাস শেষে বেতন দিতে গড়িমসি করে,,যদি এই টিউশানির ফাকে তুই কোন প্রাইভেট কম্পানিতে জব নিস,বা প্রাইভেট স্কুলে তা হলে গিয়ে একটু বরকত পাবি

মিথিলা- তুই আমার জন্য টিউশনি খুঁজে দে, রেজাল্ট বের হলে জবের কথা ভাববো

তৃধা- ঠিক আছে,

মিথিলা তা হলে আমি যাই এখন
মিথিলা বাসায় চলে আসে অনেক রাত আয়ান এখন ও ফেরেনি,মিথিলা জেগে বসে আছে আজ আয়ানের সাথে কথা বলতেই হবে

আনুমানিক রাত একটায় আয়ান আসে
মিথিলা আয়ানের রুমে যায়
আয়ান মিথিলা কে দেখে মনে মনে বল্লো ভাগ্যিস আজ সেন্সে আছি নইলে আপু যে কি বলতো

মিথিলা গিয়ে আয়ানের পাশে বসে
আয়ান ছুপটি মেরে বসে আছে
কথা শুরু করলো মিথিলা ই
– ভাই যেদিন আমি এস,এস, সি তে প্লাস পেয়ে বাসায় আসি সেদিন মা বাবার পাশা পাশি তুই ও অনেক খুশি হয়েছিলি বরাবর তোর আর নির্ঝরের দুষ্টুমির কারনে আমি ভাবতাম পড়াশুনা নিয়ে তোদের বুঝি কোন ভাবনা নেই
কিন্তু সেদিন নির্ঝরী আমার সাথে ফাজলামি করলে ও তুই আমার ধারনা পালটে দিয়েছিলি, মনে আছে তোর সেদিনের কথা?

আয়ান মিথিলার দিকে তাকায় মুখে তার কথা নেই,,কি বলবে সে ভাষা ও খুজে পাচ্ছে না

মিথিলা ই বলতে শুরু করল
– তুই সেদিন আমায় একটা কলম গিফট করেছিলি,আর বলেছিলি কলম একটা শিক্ষা উপকরণ এটা তার হাতে ই মানায় যে এটার মূল্য বোঝে,আর ও বলে ছিলি,টিপিনের টাকা জমিয়ে তুই আমার জন্য কলম টা কিনেছিলি বেশ দামি ছিলো কলম টা

আমি সেদিন খুব খুশি এতো টা খুশি হয়েছিলাম যে তোরা দুজন ই বুঝতে পারিস নি, আমি সেদিন তোকে নিয়ে দূরে ভবিষ্যৎ দেখতে থাকি,,এই কলম ই হবে তোর ভবিষ্যৎ এর পথ চলার ছাবি কাঠি,,
এতোটুকু বলে মিথিলা থেমে যায়,,একটা শূন্যতা ভরা নিঃশ্বাস গোপন করে আবার বলতে শুরু করলো
– কিন্তু আব্বুর মৃত্যুর পর তুই এমন হয়ে যাবি আমি ভাবতে ও পারিনি,দেখ তোর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত

তোর সাথে আমার নির্ঝর সবার ভবিষ্যৎ ঝড়িয়ে শুধু আমাদের দুজনের কেনো জিমি আপু কে আব্বু বিয়ে দিলে ও একদিনের জন্য ও সে তার স্বামির কাছে সুখি হয়নি,তাকে যদি আমরা না দেখি কে দেখবে বল

আচ্ছা আমার কথা বাদ দে আমি না হয় কোন ভাবে আমার জীবন টা পার করে দিবো, যদি তোদের নিয়ে আমার কেনো চিন্তা না থাকতো,কিন্তু এখন আমার প্রতিনিয়ত টেনশন তোদের কি হবে,

জানিস মা শেষেবার আমাকে দেখে ইশারায় অনেক কথা বলে ছিলো,সেটা তোরা না বুঝলে ও আমি বুঝেছি,
মায়ের মৃত্যুর আগের রাতে আমি স্বপ্নে দেখি বাবা মা দুজনেই এক সাথে বসে আছে,আর আমাকে বলছে মিথিলা তুই তোর ভাই বোন দের দেখিস

আমি বল্লাম- তোমরা থাকতে আমি কেনো?
তখন মা বল্লো আমরা তো সব সময় থাকবো না তার পরেই আমার ঘুম ভেঙে যায়

মিথিলা থামতেই আয়ান মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো
মিথিলা কিছু বল্লো না কাঁদতে দিলো আয়ান কে কাঁদলে হয়তো মনটা হালকা হবে

কিছুক্ষন পর আয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– আপু আমি এখন কি করবো বল

মিথিলা- দেখ এখন ও অনেক দেরি হয়ে যায়নি,সময় আছে তুই পড়াশুনা শুরু কর, আমি আছি তোদের পাশে,যখন যা দরকার হবে আমাকে বলবি আমি আমার রক্ত বেছে হলে ও তোদের পাশে থাকবো

আয়ান- আপু দুলা ভাইয়ের সাথে তোমার কি হয়েছে

মিথিলা কিছুক্ষন ছুপ করে থেকে বল্লো
-তুই এখন ও ছোট যখন বড় হবি তখন নিজেই বুঝতে পারবি,এখন শুয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে

আয়ান আর নির্ঝর আবার পড়াশুনা শুরু করে,,ওদের পড়াশুনার খরচ, সংসার খরচ সব চালাতে মিথিলা হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে তবু ও হাল ছাড়েনি, ভাই বোন দের একটা পর্যায়ে না পৌছানো পর্যন্ত শান্তি নেই তার

জে.এস.সি তে আয়ান টেনে টুনে পাশ করলে ও নির্ঝরী অনেক ভালো রেজাল্ট করে যদি এ প্লাস পায়নি তবু ও ভালো হয়েছে

আয়ানের মন খারাপ
মিথিলা গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসলো
আয়ান মন খারাপ করছিস কেনো?
এখন রেজাল্ট খারাপ হয়েছে তাতে কি, এস.এস.সি তে অবশ্যই ভালো হবে,ভালো করে পড়াশুনা কর

আয়ান- আপু তুই বলছিস, আমার দ্বারা ভালো রেজাল্ট হবে
মিথিলা- হ্যারে পাগল,অবশ্যই পারবি,

মিথিলা এখন ছয়টা টিউশনি করায় সব মিলিয়ে মাসে পনেরো ষোল হাজার হয় কিন্তু তবু ও
ওদের পড়া শুনা আর সংসারে ঠিক মতো হয়ে উঠে না,নির্ঝরিণীর পরনে একটা ভালো ড্রেস নেই, আয়ানের ভালো একটা শার্ট নেই,,মিথিলা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,,

এইচ,এস,সি র পরে নিজে আর পড়াশুনার কথা ভাবেনি এতো খরচ চালাবে কি দিয়ে,,
অনেক চেষ্টার পর টিউশানির পাশা পাশি একটা প্রাইভেট স্কুলে মিথিলার জব হয়, মাথা থেকে যেন কিছু টা চিন্তা গেলো,

স্কুল শেষ করে মিথিলা, তাড়াতাড়ি রান্না বসালো কিছুক্ষন পর নির্ঝর আর ভাই আসবে অনেক ক্ষুর্ধাত্ব থাকবে, খাবার রেডি না হলে কি যে হবে

সন্ধায় আবার তৃধার বোন তৃনা কে পড়াতে যেতে হবে মেয়েটা এতো অমনোযোগী পড়া শুনায়, তবু ও টেনে টুনে সেভেনের বছর পার করিয়ে এনেছে তৃনার মা বাবা অনেক খুশি তাদের অনুরোধ এইটের বছর ও মিথিলা কেই পড়াতে হবে দরকার হলে বেতন বাড়িয়ে দিবে

নির্ঝরিণী বাসাতে প্রবেশ করতেই চিৎকার করে করে মিথিলা কে ডাকতে লাগলো আপি এই আপি শুন না কি ঘটেছে আজ

আয়ান- এই নির প্লিজ আপুকে কিছু বলিস না

মিথিলা- কি হয়েছে রে নির্ঝরী, আমাকে বললে কি হবে

আয়ান- আপু তুই ওর কথা শুনিস না, ও এমনিতেই ফাজিল

নির্ঝরিণী – আপু আমি মটেও ফাজিল নয় সত্যি বলছি,
পাশের বাসার আন্টির মেয়ে উতলা, ভাই কে রোজ আসা যাওয়ার পথে চোখ মারে,আর আমাদের রোমিও লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে ও পারে না হা হা হা

মিথিলা ও মুচকি মুচকি হাসতে থাকে
আয়ান লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে

মিথিলা- হয়েছে যা হাত মুখ ধুয়ে আয় খেতে দিচ্ছি

হ্যারে আয়ান উতলা যেন কিসে পড়ে?
আয়ান- আপু নিউ টেনে

মিথিলা- ওপ্স আমার ভাই নয়,ভাইয়ের বউ দশ

নির্ঝরিণী – আপি এক সাথেই থাকার কথা আমাদের আদুভাইয়ের এক বছর মিস হয়েছে না
আয়ান- আপু তোরা কি শুরু করেছিস,ধূর ভাল লাগে না

মিথিলা- ওকে নির্ঝর আর কোন ফান নয় খেতে আয়

নির্ঝরিণী – খেতে খেতে বল্লো জানিস আপু কালকে না আমাদের স্কুলে কন্সার্ট হবে,, অনেক বড় নাম করা শিল্পী কে আনবে
আমি কাল তাড়া তাড়ি স্কুল যাবো

মিথিলা- কি জানি আমি তো গান ফান এতো শুনি না, তাই শিল্পী দের নাম ও জানি না,কোন শিল্পী আসবে রে

আয়ান- আরেহ আপু শিল্পি আয়াপ খান, নতুন করে মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে তাই এখানে সেখানে যায় আর কি

নির্ঝরিণী – আপু তুই ওর কথায় কান দিস না,আয়াপ সত্যি অনেক ভালো গান করে,ওর ছেলে ফ্যানের থেকে মেয়ে ফ্যান অনেক,,সবার ক্রাশ উনি,,

আয়ান- হা আপু আমাদের ফাটা বাশওয়ালির ও ক্রাশ

মিথিলা- কি সব বলছিস বলতো, নির্ঝরের কন্ঠ সত্যি অনেক সুন্দর ফাটা বাশ হতে যাবে কেনো

আয়ান- শুন নির তুই না সাবধানে থাকিস ফাকনামি করে আবার স্টেজে তোর ফাটা গলায় গান ধরিস না নইলে স্কুলে আমার মান থাকবে না সবাই জানে তুই আয়ানের বোন

মিথিলা ভাই বোন দের ধমক দিয়ে বল্লো- ছুপ কর তোরা খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে নেই

মিথিলা- তোরা খা আমার একটু মার্কেটে যেতে হবে সেখান থেকে তৃনা কে পড়িয়ে একেবারে আসবো

নির্ঝরিণী – হুম তাড়া তাড়ি এসো আর শুনো আপি তোমাকে আর বেশি দিন কষ্ট করতে হবে না আমি এস.এস.সি দিয়ে তোমার মতো টিউশনি করাবো

আয়ান- আপু তুই যদি ওর আশায় থাকিস তা হলে তুই বুড়ি হবি আমি বুড়া হবো তবু ও ঝড়ের টিউশনি ঝুটবে না হি হি হি

মিথিলা আয়ান কে ধমক দিয়ে বেরিয়ে গেলো
আজ মিথিলার মার্কেটে যাওয়ার কারন নির্ঝরিণীর জন্য একটা ভালো ড্রেস কিনবে

মিথিলা একটা মার্কেটে ডুকলো,
এই দোকানদার মেয়ে,মিথিলা বেছে বেছে এই দোকানেই আসলো কারন মেয়েদের সাথে ধামা ধামি ভালো করা যায়,

মিথিলা দোকানি কে বল্লো
আমাকে একটা চুড়িদার দেখান তো

দোকানি পাশে ফিরে থাকা একটা মেয়ে কে ডাক দিয়ে বল্লো
– এই রাহি এই ম্যাম কে চুড়িদার দেখা তো

রাহি সামনে ফিরতেই মিথিলা ভুত দেখার মতো চমকে উঠে
-আরেহ রাহি তুই এখানে

রাহি- আমি তো এখানে কাজ করি কিন্তু তুই এখানে?

মিথিলা কিছুক্ষন আর কথা বলতে পারলো না
রাহি এসে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরলো
রাহি- তোর সব কথা শুনেছি কিন্তু সময়ের কারনে তোর সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি
আর তোর নাম্বার টা ও হারিয়ে ফেলেছি

মিথিলা- ওহ

রাহি – চল কোথাও গিয়ে বসি
মিথিলা প্রথমে যেতে চায়নি পরে ভাবলো ইহানের খবর জানে কি না জিজ্ঞাস করা যাবে তাই বল্লো চল যাই

ওরা একটা কফিশপে গিয়ে বসলো
রাহি- তো দিন কাল কাটছে তোর

মিথিলা- ভালো,পড়াশুনা করছিস না এখন ও

রাহি- হুম সেটা তো করতেই হবে সব বন্ধুরা দেশের বাইরে ডিগ্রী নিতে গেছে আমি বিদেশে না যেতে পারি দেশে থেকে তো পারবো

মিথিলা- হুম,সব বন্ধুরা মানে তুই আর কার কার কথা বলছিস

রাহি- ইহান,সাম্মি, অরনি ওদের কথা বলছি

ইহানের কথা শুনে আবেগে মিথিলার কন্ঠ ভারী হয়ে যায় অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
ইহানের খবর কোথায় ফেলি

রাহি- ইহানের খবর তেমন বেশি জানি না,অস্ট্রিয়া তে সাম্মি যায় সেখানে একটা ভার্সিটি তে ইহানের সাথে দেখা হয় তার,সেখান থেকেই জানতে পারি ইহান এখন অস্ট্রিয়া তে আছে,আর অরনি আমেরিকায়

মিথিলা- অরনি আমেরিকায় কেনো

রাহি- কারন অরনি জানে না ইহান যে অস্ট্রিয়া তে আছে, তাই অরনি তার আন্টির কাছে আমেরিকায় যায়
মিথিলা- ওহ,

রাহি- তবে লাস্ট মান্থে শুনেছি অরনি অসুস্থ, হোসপিটালে ভর্তি আছে

মিথিলা- কি হয়েছে অরনির

রাহি- সেটা জানি না,বাই দ্যা য়ে জিজুর খবর রাখিস?

মিথিলা গম্ভীর হয়ে বল্লো
যখম সম্পর্ক টার কোন মূল্য নেই তখন মানষ টার খবর রেখে কি হবে

রাহি- তোদের তো ডিভোর্স হয়নি,,তুই চাইলে তো জিজু কে আইনের জাঁতাকলে আটকাতে পারিস

মিথিলা- ওসব করে কি লাভ বলতো থাকনা সে নিজের মতো

রাহি- শুনেছি জিজুর সাথে তার বাবা মা,র কোন সম্পর্ক নেই,এ দিকে নায়া আপুর সাথে সে আলাদা ফ্ল্যাটে থাকে,বিয়ে ও করে নিয়েছে

মিথিলা অবাক হয়ে বল্লো
– নায়া কে তুই ছিনিস নাকি,আপু বললি যে

রাহি- আরেহ তুই তো জানিস না,নায়া আপু ইহানের বড় বোন

মিথিলা- হোয়াট

রাহি- হুম,নায়া অস্ট্রিয়া থেকেই পড়া শুনা করেছে আর জিজু ও সেখানে ছিলো তাদের পরিচয় সেখানেই হয়,দেশে আসার পর জিজুর মা,বাবা মানে তোর শ্বশুর শ্বাশুড়ি ঝোর করে তোর সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়,তার পর নায়া দেশে ফিরে যা করার তা করলো

মিথিলা পাথরের মতো বসে আছে

রাহি মিথিলার কাদে একটা হাত রেখে বল্লো
– মন খারাপ করিস না,নায়া আপু যে এমন আমি ও ভাবতে পারিনি,তবে শুনেছি ইহান এই নিয়ে নায়ার সাথে রাগা রাগি করে বাংলাদেশে আসা বন্ধ করে দিয়েছে ফ্যামেলীর কারো সাথে যোগাযোগ নেই ইহানের

মিথিলা – ওহ, আমি এখন উঠি রে,
মিথিলা রাহি কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে যায়,রাহি পিছন থেকে ডাকলে ও শুনে না

আজ আর তৃনা কে পড়ানো হয়নি সোজা বাসায় চলে আসে

নির্ঝরিণী – আপু তুমি না বললে দেরি হবে তোমার আসতে

মিথিলা কিছু বল্লো না সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়

নির্ঝরিণী – কি হলো আপুর, যাওয়ার সময় তো সব ঠিক ই ছিলো

মিথিলা রুমের লাইট অফ করে বসে আছে ভাবছে ইভানের কথা বিয়ের পর তার পাগলামির কথা
সব ই তো ঠিক ছিলো,তা হলে এমন হলো কেনো, ভালো বাসা হুম ওদের ভালোবাসার কাছে আমি হেরে গেছি,
ওরা ঠিক ই ওদের ভালোবাসা জয় করে নিয়েছে,,আমার ভালোবাসায় অনেক খাদ ছিলো তাই হয়তো ইভান কে নিজের করতে পারিনি হয়তো ওকে নায়ার মতো করে ভালোবাসতে পারিনি,
ভালো থাকুক ওরা,,,

সকালে মিথিলার খুব ঝামেলা হয় ভাই বোন দের খাইয়ে তার পর স্কুলের জন্য বের হতে হয়
আজ নির্ঝরিণী ও কোন হেল্প করেনি সকাল থেকেই স্কুলে যাওয়ার জন্য তার কতো আয়োজন ভাবা যায় বিখ্যাত শিল্পি আয়াপ খান আসছে

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর.পর্ব-২৬

1

খেলাঘর.পর্ব-২৬
লেখা-সুলতানা ইতি

এলো মেলো পা ফেলে হাটছে মিথিলা উদ্দেশ্য হীন ভাবে
এভাবে অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর মিথিলা বাসায় ফিরে এলো

মিসেস আয়মন মিথিলা কে দেখেই হাসি মুখে জিজ্ঞাস করলো
– কিরে কেমন দেখলি ইভুর অফিস

মিথিলা- ভালো

মিসেস আয়মন- তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো, কি হয়েছে বল

মিথিলা – কিছু হয়নি, আমি একটু আসছি

মিথিলা রুমে চলে এলো
নাহ এই বাড়িতে আমি আর এক মুহুর্ত থাকবো না,আমাকে ছোট করে কথা বলছে তো বলছে আমার মৃত বাবা কে অপমান করছে হায়রে মানুষ গিরগিটির মতো রঙ বদলায়,এদের আসল রুপ ছিনতে সময় লেগে যায়,ইভান যে এমন করবে ভাবতে ও পারিনি,
তার শিক্ষা এতো খারাপ ছিঃ

মিথিলা ভিড় ভিড় করছে আর নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে,চোখ আটকে যায় চশমার বাক্সে ইহানের কথা মনে পড়ে যায়,ইহানের শেষ কথা ছিলো আমি কখনো শুখি হতে পারবো না,ইহানের কথা ফলে গেছে,, আজ বুঝতে পারছি ইহান কতো টা কষ্ট পেয়েছে সেদিন,
‘ ক্ষমা করে দিস আমায় ইহান’

মিথিলা সব গুছিয়ে বেরিয়ে এলো
মিসেস আয়মন অবাক হয়ে বল্লো- কিরে কোথায় যাচ্ছিস ব্যাগ প্যাক নিয়ে

মিথিলা- সেটা আপনার ছেলে আসলে তার কাছে জিজ্ঞাস করবেন,তবে এখন আমি এই টুকু ই বলবো,,আমার এখানে থাকার ছেয়ে আমার অসুস্থ মা,,আর অসহায় ভাই বোনের পাশে থাকা খুব জরুরী, আশা করি আপনি আর কোন প্রশ্ন করবেন না আমায়

মিসেস আয়মন- মা কি হয়েছে বলো,তোমার শ্বশুর এখন দেশে নেই,এই সুযোগে ইভান কি কিছু করেছে

মিথিলা- বললাম না আপনার কোন কথা উওর দিবো না,তবে হা আপনার বিদেশ ফিরত ছেলের সাথে আমার মতো সাধা সিধে মেয়ের বিয়ে না দিলে আজ দুটি জীবন অনেক সুখের হতো
এই বলে মিথিলা মিসেস আয়মন কে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে যায়

মিসেস আয়মন- কি হলো এটা
ছেলেটা আবার কি করেছে, আমি এখন ই কল দিচ্ছি ওকে
কল রিসিভ হলো সাথে সাথেই

মিসেস আয়মন- ইভান তুই কোথায় এখন ই বাসায় আসবি

ইভান- কি হয়েছে আম্মু?

মিসেস আয়মন- তুই আয় তার পর বলছি

মিসেস আয়মন কল অফ করে দিয়ে অফিসের রিসেপসেনিষ্ট কে ফোন দেয়
রিসেপসেনিষ্ট জারা
– হ্যালো

মিসেস আয়মন- মিসেস আয়মন আতাহার চৌধুরী বলছি

জারা- বলুন ম্যাম

মিসেস আয়মন- অফিসের খবর কি, ইভান অফিস দেখাশুনা করছে তো?

জারা- হ্যা ম্যাম স্যারের পি এ, খুব এক্টিভ,স্যার কে সব কাজে হেল্প করে

মিসেস আয়মন অবাক হলো কিন্তু তা ছেপে গিয়ে বল্লো
– ও হা তাই তো,আচ্ছা ইভানের পি এ, এর নামটা যেন কি,আসলে মনে পড়ছে না এই মুহুর্তে

জারা- নায়া চৌধুরী

মিসেস আয়মনের মন টা কেপে উঠে,তার পর নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– ঠিক আছে আমি রাখছি
মিসেস আয়মন কল অফ করে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো,তা হলে মিথিলার এমন ভাবে যাওয়ার কারন এটাই, আচ্ছা কি দেখেছিলো মিথিলা অফিসে গিয়ে, যে জন্য ওকে এ ভাবে চলে যেতে হয়েছে, ছেলে টা কে শুদরাতে পারিনি

বাইরে গাড়ির হর্ন শুনা গেলো, ইভান এসেছে
মিসেস আয়মন উঠে দাড়ালো

ইভান- আম্মু আর্জেন্ট কল করে ডেকেছো কিছু হয়েছে

মিসেস আয়মন শান্ত আর স্বাভাবিক কন্ঠে বল্লো
– মিথিলা চলে গেছে

ইভান কথা টা শুনেই মায়ের দিকে তাকায় আবার চোখ নামিয়ে নেয়

মিসেস আয়মন- তুই কিছু বলবি না, ছুপ করে থাকবি

ইভান – আ- মি কি. কি বলবো

মিসেস আয়মন- সত্যি ই তো তুই কি বলবি তোর তো এখন খুশি হওয়ার কথা,নায়ার সাথে তোর দিন গুলি নির্ভেজাল কাটবে

ইভান- আম্মু

-ঠাসসসসসসসস,মিসেস আয়মন ইভান কে চড় মারে,এই শিক্ষা দিয়ে মানুষ করেছি তোকে আজকের এই দিন দেখার জন্য,
আজ থেকে আমি ভাববো আমার কোন সন্তান নেই বেরিয়ে যা,,আর কখনো তুই এ বাড়িতে পা রাখবি না

মিসেস আয়মন ইভান কে টেনে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলো

ইভান- আম্মু আমার কথা শুনো

মিসেস আয়মন- তোর কোন কথা শুনবো না,
ইভান কিছুক্ষন দরজা ধাক্কায়ে বিরক্ত হয়ে বাড়ির বাইরে চলে এলো
ছোট লোকের মেয়ে তোর সাহস হয় কি করে আমার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আমার আম্মুর কাছে আমাকে দোষী করার,, খুব গেছিস না ভেবেছিস তোকে ফিরিয়ে আনবো কখনো না,,

ইভান নায়ার কাছে ফিরে এলো
নায়া- ডার্লিং তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেনো কি হয়েছে বলো আমায়

ইভান সব কথা নায়া কে বলে,শুনে নায়া মনে মনে পিচাশি হাসি হাসে (খুব কাজে দিয়েছে আমার মেসেজ টা নইলে ওকে ঘাড় থেকে নামানো ই যেতো না)ডার্লিং মন খারাপ করো না সব ঠিক হয়ে যাবে আমি আছি তো তোমার পাশে

ইভান নায়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে
– এখন তুমি আমার বেছে থাকার সম্বল নায়া

নায়া- আমি অলওয়েজ তোমারি আছি জান

মিথিলা বাড়িতে এসে কাউকে দেখতে ফেলো না অসুস্থ মা শুয়ে আছে বিছানায় কোন কথা তার মুখে নেই শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে ছেয়ে আছে

মিথিলার আজ আর কান্না আসছে না,কেনো যেন মনে হচ্ছে চোখের পানি সব শুকিয়ে গেছে
মিথিলা মায়ের পাশে বসে আছে, নির্ঝরিণী কোথায়? মাকে এ ভাবে একা ফেলে কোথায় গেছে সে

বেশ কিছু সময় পর নির্ঝরিণী আসে

মিথিলা- কোথায় গিয়েছিস মাকে একা ফেলে

নির্ঝরিণী – এ ছাড়া কোন উপায় ছিলো না ঘরে চাল ডাল সব ফুরিয়ে গেছে মায়ের ওষুধ ও শেষ

পাশের বাসার আন্টি বলেছে উনার সাথে ব্যাগ বানিয়ে দিলে কিছু টাকা দিবে তাই গিয়েছি সেখানে

মিথিলা ছেয়ে আছে নির্ঝরিণীর দিকে ছোট বোন আমার এতো কষ্ট করছে কতো ই বা আর বয়স হয়েছে এতো তাড়া তাড়ি বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়েছে

নির্ঝরিণী – এ ভাবে ছেয়ে আছো কেনো আপি,তুমি এসেছো আমি খুশি হয়েছি দুলা ভাই আসলে আর ও খুশি হতাম

মিথিলা- আসবে না দুলা ভাই

নির্ঝরিণী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বল্লো
– কেনো?

মিথিলা একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বল্লো,
কিছু না,

নির্ঝরিণী আর কথা বাড়ালো না
– আপু তোমার তো কাল পরীক্ষা যাও তুমি গিয়ে পড়তে বসো আমি মাকে ওষুধ খাইয়ে রান্না বসাচ্ছি

মিথিলা – হুম ঠিক বলে ছিস আমি তা হলে যাই
অনেক রাত জেগে মিথিলা পড়ছে, বিয়ে সংসার সব কিছুর ঝামেলায় পড়া টা পিছিয়ে গেছে,

হঠ্যাৎ মায়ের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো মিথিলা কান খাড়া করে শুনলো হুম নির্ঝরিণীর কান্নার আওয়াজ মিথিলার বুকের ভিতর ছ্যাত করে উঠে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের রুমে আসে,

মা অসাড় হয়ে পড়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার শরিরে আর প্রান নেই

নির্ঝরিণী এসে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কাঁদছে
মিথিলা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আল্লাহ কি করে এতো টা নিষ্টুর হলো,বাবা কে নিয়ে গেছে মা কে কেনো রাখলো না আমাদের জন্য, কি নিয়ে বাছবো আমরা,,

প্রায় রাত দুটোতে আয়ান বাড়ি আসে, বাড়িতে এসে আয়ান আবার মাকে হারানোর সংবাদ পেয়ে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়, পাড়া প্রতিবেশিরা সবাই ততক্ষনে চলে আসে কেউ আয়ানের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে,

পরদিন সকাল আট টা বাজেই দাপনের ব্যাবস্থা করা হয় কেননা দশটায় মিথিলার পরীক্ষা,
ইভান কে খবর দেয়া হয়েছে সে আসেনি,,
জিমি এসে মায়ের লাশের পাশে বসে আছে কাঁদছে সে, তার কি হবে সে কার কাছে এসে কষ্টের কথা বলবে

নির্ঝরিণী – জিমি আপু বলো তো আমাদের কি হবে এবার বাবা মা দুজনেই আমাদের একা করে চলে গেলো কেনো
জিমি নির্ঝরিণী কে ঝড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদছে

দূরে মিথিলা দাঁড়িয়ে আছে তার চোখে আজ খরা নদীর বুকে চর উঠে গেছে তাই তো মিথিলার চোখের পানি ও শুকিয়ে গেছে

সকাল আট টায় দাপনের কাজ সম্পূর্ণ হয়
মিথিলা পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে

প্রতিবেশী মুরুব্বীরা মিথিলা কে আজকের পরীক্ষা না দিতে বলছে,গুরু মরা মাথার উপরে আজ যেন বাড়ির বাইরে না বের হয়

মিথিলা শান্ত আর গম্ভীর কন্ঠে বল্লো
– আমাদের চার ভাই বোনের ভাগ্যে এই কষ্ট টা ই লিখা আছে এটা হবেই তাই বলে পরীক্ষা না দিয়ে ঘরে বসে কাঁদলে এর সমাধান হবে না,আমার ছোট ভাই বোন দের কথা ভাবতে হবে,আশা করি আপনাদের আর কিছু বলতে হবে না মিথিলা বেরিয়ে যায়

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর.পর্ব-২৫

0

খেলাঘর.পর্ব-২৫

লেখা- সুলতানা ইতি
ঠিক আছে এই নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো এখন চলো মোম ড্যাড তোমার জন্য অপেক্ষা করছে
ইভান- চলো মাই জান

মিথিলার ফোন অনেক্ষন থেকে বেজেই যাচ্ছে ফোন রিসিভ করতে তার ইচ্ছে করছে না, সে জানে ফোনের অপাশে তার জন্য কি খবর অপেক্ষা করছে,

এক সময় অধৈর্য্য হয়ে ফোন রিসিভ করে
নির্ঝরিণী -আপু তুই ফোন রিসিভ করছিলি না কেনো?.

মিথিলা- কিছু বলবি?

নির্ঝরিণী – অনেক কিছুই তো বলবো

মিথিলা- বল

নির্ঝরিণী – মার অসুখ বেড়ে গেছে রে, তোর দেয়া টাকা গুলো ও শেষ

মিথিলা নিরুত্তাপ কন্ঠে বল্লো
– শেষ হওয়ার ই কথা

নির্ঝরী – বড় দুলা ভাই জুয়া খেলতে গিয়ে ধরা পড়েছে পুলিশ হাজতে আছে

মিথিলা শান্ত কন্ঠে বল্লো
– এতে আমরা কি করতে পারি এমন টা তো হওয়ার ই ছিলো

নির্ঝরিণী – জানি না কিন্তু আপু খুব কাঁদছে

মিথিলা রোবটিক কন্ঠে বল্লো
– কাদার ই কথা

নির্ঝরিণী – আপু তুমি কি আমার সাথে জোক করছো

মিথিলা- তোর কি তাই মনে হয়

নির্ঝরিণী – জানি না আমি রাখছি

নির্ঝরিণী কল অফ করে দেয়, বাবা যেতে না যেতে সংসার টার কি হয়ে গেলো,ভাই পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে ভণ্ডামি করছে মা অসুস্থ হয়ে গেছে মিথিলা আপু কেমন যেন পালটে গেছে,ওকে আকড়ে ধরে বাছতে ছেয়েছি কিন্তু আজকের কথা গুলো শুনে কেমন যেন মনে হচ্ছে

উফফ আল্লাহ এই সাজানো গোছানো সংসারে কার নজর পড়েছিলো, আজ অনেক দিন মা অসুস্থ ঠিক মতো ওষুধ চলছে না আমি কি করবো,
নাহ আমাকেই কিছু একটা করতে হবে আমার মায়ের জন্য,,পাশের বাসার আন্টি ব্যাগ বানিয়ে মার্কেটে বিক্রি করে,আজ থেকে তার সাথে আমি ও যোগ দিবো

মিথিলার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে আপাদাত সব চিন্তা বাদ দিয়ে মন দিয়ে লেখা পড়া টাকে কাছে টেনে নিয়েছে মিথিলা, দু সাবজেক্ট শেষ মোটামুটি ভালো ই হয়েছে পরিক্ষা গুলো বাকি গুলো এমন হলেই হয়

কাল অর্থনীতি পরীক্ষা মিথিলা পড়ছে, এমন সময় মিথিলার ফোনে কল আসে, ফোন স্ক্রিনে নাম্বার দেখে মিথিলা একটু অবাক হলো
ইভান কল করেছে তা ও আমাকে মিথিলা কল রিসিভ করার আগেই কল কেটে যায় একটা মেসেজ আসে
‘মিথিলা এখন ই তুমি আমার অফিসে চলে আসো,আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি’

কিহহ অফিস যেতে বলেছে আমি কি ভুল পড়েছি মিথিলা আবার করে মেসেজ টা পড়ে নাহ ভুল না তা হলে, উনি কেনো আমায় অফিস যেতে বলেছে

যেতে যখন বলেছে তা হলে যাওয়া যাক দেখি কি হয়
মিথিলা চুল গুলো ঠিক করে নিলো, চশমা টা ভালো করে মুছে নিলো

মিসেস আয়মন- কিরে মিথিলা কোথায় ও বেরুচ্ছিস নাকি

মিথিলা- মা আপনার ছেলে অফিসে যেতে বলেছে

মিসেস আয়মন- কি বলছিস? ইভু তোকে যেতে বলেছে

মিথিলা- হুম
মিসেস আয়মন খুশি হলো
– ঠিক আছে মা যা তা হলে

মিথিলা বেরিয়ে গেলো
কয়েক ঘন্টার মধ্যে মিথিলা পৌছে গেলো
অফিস কাউন্টার থেকে ইভানের কেবিন কোন ফ্লোরে জেনে নিলো

মিথিলা নক না করেই ইভানের কেবিনে ডুকে গেলো,, কেবিনে গিয়ে যে দৃশ্য দেখলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না মিথিলা

সেদিনের সেই মেয়েটা ইভান কে জড়িয়ে ধরে আছে ইভান ও তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে

মিথিলার উপস্থিতি ইভানরা কেউ টের পায়নি
মিথিলার হাত পা কাঁপছে, সেখান থেকে শরে আসার মতো শক্তি যেন তার নেই

মিথিলার হাত লেগে একটা ফুলের টব পড়ে যায়
ইভান চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে মিথিলা দাঁড়িয়ে আছে

ইভান- এ কি তুমি এখানে? শেষ পর্যন্ত এখানে ও চলে এসেছো,, বড় লোক ছেলে কে হাত করার এতো শখ তোমার
ওহ শখ তো হবেই এখন এই রকম চালবাজি করেই তোকে তোর বাবার সংসার চালাতে হবে

শুন যা দেখেছিস দেখেছিস সব ছেপে যাবি আব্বু আম্মু কে কিচ্ছু বলবি না তার বিনিময়ে তুই অনেক টাকা পাবি যা দিয়ে তুই তোর বাবার ভাংগা সংসার টা কে ঝোড়া লাগাতে পারবি

মিথিলা অবাক দৃষ্টিতে ইভানের দিকে ছেয়ে আছে এতো দিন ভেবেছে ইভান রাগি কিন্তু আজ আর তা মনে হচ্ছে না,আজ চরিত্রহীন মনে হচ্ছে

নায়া- ডার্লিং কে ও?

ইভান- জান বুঝতে পারছো না সে ছোট লোকের বাচ্ছা টা

নায়া- ও এই কি সেই,শুনো ইভান কে স্বামি হিসেবে পাবে এটা ভুলে যাও, আর কিছু দিন পরেই আমরা বিয়ে করছি

মিথিলার মাথা ঘুরছে মনে হচ্ছে এই বুঝি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবে

নাহ আমাকে এখন জ্ঞান হারালে চলবে না মিথিলা অনেক কষ্টে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে এলো মেলো পা ফেলে হাটছে সে উদ্দেশ্য হীন ভাবে

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-২৪

0

খেলাঘর পর্ব-২৪
লেখা- সুলতানা ইতি

ইভানের এমন ব্যাবহার মিথিলা নিতে পারছে না কাঁদছে বালিশ এ মুখ গুঁজে

মিসেস আয়মন ভাবছে কি হলো ওদের মাঝে সব ই তো ঠিক হয়েছে দেখলাম নাকি মিথ্যা ছিলো সব

মনে হয় ভুল করে ফেলেছি মিথিলার মতো একটা ভদ্র সহজ সরল মেয়ের সাথে ইভানের বিয়ে দিয়ে
গিয়ে দেখি আসি মেয়েটা এখন কি করছে

মিসেস আয়মন এসে দেখলো মিথিলা কাঁদছে, মিসেস আয়মন ভাবছে, কি বলে আমি মেয়ের কান্না থামাবো মেয়েটা যে আমার বড্ড সহজ সরল
– মা মিথিলা?

মিসেস আয়মনের ডাক শুনে মিথিলা উলটো দিকে ফিরে চোখের পানি মুছে মিসেস আয়মনের দিকে ফিরে

মিসেস আয়মন- কাঁদিস না মা,ইভুর কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু কি হয়েছে সেটা আমরা জানি না, তবে এ ভাবে বসে থাকলে তো হবে না ইভানের প্রব্লেম টা কি আমাদের জানতে হবে,,

মা একজন স্ত্রীর কর্তব্য স্বামি কে সৎ পথে ফিরিয়ে আনা, একজন স্ত্রী চাইলে সব পারে তুমি ও পারবে মা, একটু চেষ্টা কর

মিথিলা ছুপ করে থেকে মিসেস আয়মনের কথা গুলো শুনলো কিন্তু কিচ্ছু বলেনি

মিসেস আয়মন- মা স্বামিরা একটু আধটু রাগ দেখাবেই, বুঝে ও দেখাবে, না বুঝে ও দেখাবে সেটা মেনে নিতে হয় মা,এ ভাবে ভেঙে পড়লে চলে,
আচ্ছা মন খারাপ হয়েছে না খুব, চল আমরা গুরতে যাবো এখন ই

মিথিলা- আমার ভালো লাগছে না আপনি যান

মিসেস আয়মন- ভালো লাগবে, আয় না

মিথিলা- আর পাচ দিন পরেই আমার পরীক্ষা পড়তে হবে,আমি এখন কোথায় ও যাবো না
মিসেস আয়মন আর কথা বাড়ালো না,তিনি চলে গেলেন

মিথিলা উঠে দাঁড়ালো, আগে সাওয়ার নিবে তার পর পড়তে বসবে চোখ মুখের যা হাল হয়েছে
মিথিলা কাবার্ডের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার শাড়ি গুলো এলো মেলো
– উফফ আগে মা সব গুছিয়ে রাখতো এখন সব নিজের করতে হচ্ছে শাড়ি গুলো যে এলো মেলো হয়ে আছে খেয়াল করিনি

মিথিলা শাড়ি গুলো গুছিয়ে রাখতে গিয়ে একটা চশমার বাক্স ফেলো বাক্স টা ছিনতে একটু ও কষ্ট হয়নি তার ইহানের দেয়া চশমা টা ভেঙে যাওয়ার পর এই বাক্স টা তেই রেখেছিলাম,, চশমা টা আজ ও ঝোড়া লাগাতে পারিনি দেখি তো এখন ঝোড়া লাগে কি না,

মিথিলা বাক্স টা খুলে অবাক হলো,চশমা টা ঝোড়া লাগানো বুঝা ই যাচ্ছে অনেক চেষ্টার পর চশমা টা ঝোড়া লেগে ছিলো, কিন্তু কে ঝোড়া লাগিয়েছি? বাক্স টার ভিতর ভালো করে তাকাতে গিয়ে একটা চিরকুট পেলো,তাতে লেখা
” যা তোমার কাছে স্পেশাল তা আমার কাছে ও স্পেশাল চশমা টার জন্য তোমার এতো মন খারাপ হতে দেখেই বুঝেছি এটা তোমার কাছে স্পেশাল,আমার ভাবনা টা আর ও মজবুত হয়, তোমার শাড়ির মাঝে ভাঙা চশমার বাক্স টা আর ভিতরে চশমার ভাঙা টুকরো দেখে তাই খুব যত্ন করে ঝোড়া লাগিয়ে রেখেছি,অনেক কষ্ট হয়েছে তবু ও ফেরেছি কারন জিনিষ টা যে তোমার কাছে মূল্যবান”

মিথিলার ঠোঁটে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো বুঝার আর বাকি রইলো না কাজ টা যে ইভানের,
মুহুর্তেই মিথিলার মন ভালো হয়ে যায়,খুশি মনে সাওয়ার সেরে,পড়তে না বসে রান্না করতে যায়,কতো ভুল বুঝেছি উনাকে,আমাকে ভালো না বাসলে আমার জন্য ফেলে দেয়া একটা জিনিষ কে এভাবে যত্ন করে কেউ?

আমি সত্যি উনাকে বুঝতে পারি না
রান্না বান্না শেষ করে মিথিলা ইভান কে কল দেয় কিন্তু ইভান কল রিসিভ ই করেনি
ধ্যাৎ উনি কল কেনো রিসিভ করছে না,,নিজেই নিজের মন কে বুঝালো হয়তো কাজে ব্যাস্ত আছে

বরাবরের মতো ইভান আজ ও লেইট করে বাসায় ফিরে, মিথিলা জেগেই ছিলো
ইভান কপাল কুঁচকে বল্লো
– এতো রাতে জেগে আছো যে
মিথিলা ইভান কে হঠ্যাৎ ই ঝড়িয়ে ধরে বল্লো
-ধন্যবাদ
ইভান আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠে মিথিলা কে ছাড়িয়ে নিয়ে বল্লো
– সো হোয়াট?

মিথিলা – আমার প্রিয়ো জিনিষ গুলো কে আপনার এতো টা প্রিয়ো মনে করার জন্য

ইভান- মানে

মিথিলা- মনে হচ্ছে কিছুই বুঝেন নি,আমি সেই চশমা টার কথা বলছি,জানেন চশমা টার পিছনে একটা কাহিনী আছে

ইভান- উফফ মিথিলা আমি খুব টায়ার্ড তোমার কাহিনী ফাহিনি এখন শুনতে পারবো না, আর হা তোমার জায়গাতে অন্য কারো জিনিষ হলে ও আমি এ ভাবেই করতাম সো এতে এতো এক্সাইটেড হওয়ার কিছু নেই,ক্লিয়ার?
কথা শেষ করে ইভান শুয়ে পড়লো

মিথিলা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে যাক ভাভা কি এমন বললাম যে এতো রেগে গেলো
সত্যি উনি যে কি বুঝা মুশকিল,যাই ভাভা ঘুমাই অনেক রাত হয়েছে

পরদিন ইভান ব্রেকফাস্ট না করেই বেরিয়ে যাচ্ছিলো আজ নায়ার সাথে ব্রেকফাস্ট করার কথা, নায়া বায়না করেছিলো একদিন ওর সাথে ব্রেকফাস্ট করতে
ইভান কে বেরিয়ে যেতে দেখে মিসেস আয়মন গম্ভীর কন্ঠে বল্লো
– ইভান ব্রেকফাস্ট না করে কোথায় বেরুচ্ছিস

ইভান- আম্মু একদিন বাইরে ব্রেকফাস্ট করলে কিচ্ছু হবে না

মিসেস আয়মন- শুধু কি একদিন? এখন লাঞ্চ ডিনার সবটা ই বাইরে করিস? আয় বউমা ব্রেকফাস্ট তৈরী করেছে খেয়ে যাবি

ইভান- আম্মু রোজ রোজ এক হাতের রান্না খেতে ভালো লাগে না

মিসেস আয়মন- এ কেমন কথা ইভান মেয়েটা তোর পছন্দের খাবার রান্না করে তোর জন্য অপেক্ষা করে তুই আসিস ই না,আর এখন উলটো কথা বলছিস

ইভান রেগে যায় এবার মিথিলা কে বলে এই মেয়ে এই
– কে বলেছে তোমায় আমার জন্য রান্না করে বসে থাকতে? আমি বলেছি? না তো, তা হলে একদম নেকামি দেখাবে না
ইভান রেগে বেরিয়ে যায়

মিথিলা দাঁড়িয়ে আছে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে কি বলবে বা কি করবে বুঝতে পারছে না

নায়া ডাইনিং রুমে বসে অপেক্ষা করছে ইভানের জন্য

রাইমা চৌধুরী- নায়া ইভান মনে হয় আজ আর আসবে না তুই নাস্তা শুরু করে দে

ইতিমধ্যে ইভানকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে নায়া শুধু ইভান যে ম্যারিড এটা গোপন রেখেছে

নায়া-( ইভান আসবে না? ওকে আসতেই হবে? ঐ মেয়ে কিছুতেই ওকে আটকে রাখতে পারবে না সে ক্ষমতা তার নেই)তুমি ও না কি যে বলো মোম ইভান কখনো আমার কথা ফেলেনি ও আসবে হয়তো কোন কারনে লেইট হচ্ছে

রাইমা চৌধুরী- কি জানি তুই ভালো বুঝিস

রায়হান চৌধুরী নিশ্চুপ খাচ্ছিলো স্ত্রীর সাথে এবার তিনি যোগ দিলেন
– বুঝলে রাই আমরা তখন একে ওপরের সাথে দেখা করলে কি বলবো না বলবো সব ঘুলিয়ে ফেলতাম এখনকার ছেলে মেয়েরা অন্য রকম, এরা নিজেরাই নিজেদের বিয়ে করে নেয়,,

নায়া- ওহ ড্যাড এমন বলছো যেন আমরা বিয়ে করে নিয়েছি তোমাদের না জানিয়ে,শুধু ইভানের মা বাবা কে জানানো হবে না কারন তারা আমাকে মেনে নিবে না

রায়হান চৌধুরী- কেনো মানবে না তোরা একে অপরকে পছন্দ করিস এতে অন্যায় কি আছে,তুই আমাকে বিয়ের প্রপোজাল কেনো পাঠাতে দিচ্ছিস না বল

নায়া- ড্যাড ছুপ থাকো তো,যা বুঝো না তা নিয়ে কথা বলতে এসো না

রায়হান চৌধুরী- ছুপ ই তো আছি তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে তোর বিয়ে আমরা সুন্দর ভাবে দিবো তা না

নায়া মিঃ চৌধুরী কে থামিয়ে বল্লো
– উফফ ড্যাড মিডিল ক্লাস ফ্যামেলীর বাবাদের মতো কথা বলো না তো,তারা নিজের পছন্দ ছেলের মেয়ের উপর ছাপিয়ে দেয়

রাইমা চৌধুরী- দেখ মা আমরা তোর বাবা মা আমরা তোর ভালো চাই….
এমন সময় কলিংবেল বেঝে উঠে

নায়া- কেমন ভালো চাও আমি বুঝি এখন আর একটা কথা ও বলবে না ইভান এসে গেছে নায়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়

নায়া ইভান ঝড়িয়ে ধরে বল্লো সুইট হার্ট এতো লেইট হলো যে

ইভান- ডার্লিং জানোই তো কতো কি ফ্যাস করে আমায় আসতে হয়

নায়া- ঠিক আছে এই নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো এখন চলো ড্যাড মোম তোমার জন্য অপেক্ষা করছে

কাল থেকে তিনবার লিখে তিনবার ই ভুলে টাস লেগে ডিলেট হয়ে গেছে খুব বিরক্ত নিয়ে এখন আবার লিখেছি জানিনা কেমন হয়েছে

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর..পর্ব-২৩

0

খেলাঘর..পর্ব-২৩
লেখা-সুলতানা ইতি

উনি ঠিক ই বলেছে এই সল্প পড়াশুনা দিয়ে উনার এতো বড় ইন্ডাস্ট্রি তে জব পাওয়া যাবে না, কিন্তু অন্য কোথায় ট্রাই করবো আমি? এই সব ভাবনার মধ্যে ই মিথিলা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো,

আজ মিথিলার কেনো জানি সময়ের আগেই ঘুম ভেংগে গেছে পাশে ইভান বেঘোরে ঘুমোচ্ছে, কি যেন একটা স্বপ্ন দেখে মিথিলার ঘুম ভেঙে যায়,
কিছুক্ষন এ ভাবে থম মেরে বসে থাকার পর মিথিলার স্বপ্নের কথা মনে হলো
হুম ইহান ফিরে এসেছে মিথিলাকে নিতে মিথিলা ও ইহানের হাত ধরে চল্লো ইহানের সাথে
পিছনে ফিরে ছেয়ে দেখে অসহায় ইভান কাঁদছে ওদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে কিন্তু কিছু বলছে না,
তার পর ই জেগে উঠা উফফ এই স্বপ্ন দেখার মানে কি কেনো আমি এই স্বপ্ন দেখলাম যদি ইহানের কাছে যাওয়ার ই হতো তা হলে আমি ইভান কে বিয়ে করেছি কেনো,ইভানের ঘুমন্ত মুখের দিকে ছেয়ে আছে মিথিলা, কি নি:স্বপাপ চেহারা,
যেই না মিথিলা ইভানের মুখ টা ছুয়ে দিতে গেলো অমনি ইভান জেগে উঠে মিথিলার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বল্লো
– কি করছো তুমি

মিথিলা বিব্রত বোধ করতে লাগলো,অনেক কষ্টে বল্লো
– ম ম মশা ব বসেছিলো আ- আপনার গালে,সত্যি বলছি মশা ছিলো ওটা

ইভান- হোয়াট মশা আসবে কোথায় থেকে আজ মশারস্প্রে মারনি

মিথিলা- দিয়েছিলাম তো, তবু ও

ইভান- হোয়াটএবার ঘুমাও তো যত্ত সব
ইভান আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো

মিথিলা যেমন ছিলো তেমন ই বসে আছে
আজ আর ঘুম হবে না মিথিলা বুঝে গেছে,সময়ের আগে ঘুম ভাঙলে মিথিলাত আফসোস এর সিমানা থাকে না,কেননা ঘুম যে আর আসবে ই না

মিথিলা উঠে এলো স্টাডি রুমে, ভালো ই হয়েছে ঘুম ভেঙে বাকি রাত পড়াশুনা করে কাটানো যাবে অনেক পিছিয়ে গেছে পড়া শুনা

আজ বিকেলের আড্ডায় ইভান নেই তবু ও আসর জম জমাট হয়ে উঠেছে আতাহার চৌধুরী, মিসেস আয়মন ই পারে একটা আসর মাতাতে
মিথিলা তো এমনি কম হাসে কম কথা বলে তবু ও মাঝে মাঝে উনাদের সাথে যোগ দেয়

মিথিলা- বাবা,মা আপনাদের কাছে আমার কিছু চাওয়ার আছে, কিছু বলার আছে

আতাহার চৌধুরী হাসি মুখেই বল্লো
– তোমার যা ইচ্ছে তা চাইতে পারো বলতে পারো,আমি আর মুন তা হাসি মুখে গ্রহন করবো

মিথিলা অনেক ইতস্তত হয়ে বল্লো
– আমি একটা জব করতে চাই বাবা,

মিসেস আয়মন – কেনো আমাদের আল্লাহ এতো দিয়েছেন যে আমাদের বাড়ির বউয়ের আলাদা করে ইনকামের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না

মিথিলা বিব্রত হয়ে বল্লো
– না মানে আমাদের বাড়িতে মা অসুস্থ ছোট দুই ভাই বোনের লেখা পড়ার খরচ চালাতে তো হবে

আতাহার চৌধুরী- এ জন্য তোমার চাকরি করতে হবে কেনো আমাকে বললেই তো আমি সব ব্যাবস্থা করে দিতাম

এবার মিথিলা স্পষ্ট ভাষায় বল্লো
– বাবা এ ভাবে আমার মা ভাই বোন মরে গেলে ও আপনাদের কাছে থেকে সাহায্য নিবে না

মিসেস আয়মন- কেনো? আমরা কি তোমাদের কেউ নই

মিথিলা- কথা সেটা নয় মা,কথা হচ্ছে মেয়ের জামাইর বাড়ি থেকে এই রকম হেল্প আমার মা নিবে না মরে গেলে ও না,যদি আমি জব করি আর সেখান থেকে মায়ের চিকিৎসা করাই এতে আমার ও তৃপ্তি হবে,

আতাহার চৌধুরী- বুঝতে পেরেছি মা,কিন্তু তুমি আমাকে বলছো কেনো,ইভান কে বললেই তো,ও আমাদের অফিসে তোমার জবের ব্যাবস্থা করে দিতো

মিথিলা – আমি উনাকে বলেছি, উনি বলছে আমার এই পড়া দিয়ে নাকি হবে না

মিসেস আয়মন- চিন্তা করো না, আজ বাসায় আসুক ইভান আমরা কথা বলবো তার সাথে

কিন্তু আজ ও ইভান ডিনারের সময় আসেনি, অনেক রাতে এসেই শুয়ে পড়েছে আজ মিথিলা কিছু বলেনি,, ছুপ ছাপ দুজনেই দু দিকে ফিরে শুয়ে আছে

একজন ভাবছে সারাদিন নায়ার সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলোর কথা,নায়া খুব শিগ্রই বিয়ে করতে চায়
ভাগ্যিস বুদ্ধি খাটিয়ে সময় নিয়েছি,,নইলে কি যে হতো মিথিলা থাকতে নায়াকে বিয়ে করা কি সম্ভব নায়া তো বলেছে সে আলাদা বাসায় থাকবে বাবা যেহেতু তাকে মানবে না সেহেতু উনাদের কাছে এসে জ্বামেলা বাড়াতে চায়না, কিন্তু মিথিলা যদি জেনে যায় তখন তো আব্বু আম্মু ও জানবে তখন কি হবে

মিথিলা ভাবছে কি করে একটা জব জোগাড় করা যায়, নির্ঝরিণীর পড়া একদম পিছিয়েছ গেছে, আয়ান কে আবার ভালো পথে আনতে হবে মায়ের চিকিৎসা, উফফ অনেক টাকার দরকার আমার,
ইসস আমার যদি অনেক টাকা থাকতো তা হলে এই জিমি আপুর জামাইকে দেখাতাম মজা, সব শেষে মায়ের হার নিয়ে গেলো,, মা যক্ষের ধনের মতো হার টা আগলে রেখেছিলো নিজের কাছে
মায়ের কাছে শুনেছি বাবা পুরো এক বছর টাকা জমিয়ে তার পর হার টা দিয়েছিলো মাকে,বাবার কথা মনে পড়তেই মিথিলার চোখ বেয়ে নিশ্চুপ নির্ঝর পানি ঝরতে লাগলো
কাঁদতে কাঁদতে মিথিলা ঘুমালো,

সকাল বেলা উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো রাতে কান্না করার কারনে চোখ ফুলে গেছে এখন সবাই কি ভাববে

মিথিলা চোখের চশমা টা ঠিক করে মাথায় কাপড় ভালো করে টেনে দিয়ে নাস্তা বানাতে গেলো,আজ মিথিলার ইচ্ছে করছে নতুন বউয়ের মতো লম্বা ঘোমটা দিয়ে থাকতে যেন তার চোখ সবার নজরের আড়ালে রাখতে পারে

নাস্তার টেবিলে সবাই ছুপ ছাপ খাচ্ছে নিরাবতা ভেঙে
আতাহার চৌধুরী বল্লো- ইভু তোর তো একজন অ্যাসেসটেন্ট দরকার তাই না? তুই চাইলে তো বউ মাকে সেই পদে নিয়োগ দিতে পারিস,তাতে দুজনের পাশা পাশি থাকা ও হলো

ইভান শান্ত কন্ঠে বল্লো
– আব্বু আতাহার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির এমডি আমি,আমার অ্যাসেসটেন্ট হবে এইচ এস সি অধ্যায়নরত একটা মেয়ে,এটা কি করে সম্ভব আব্বু যে কাজ গুলো আমার সেক্রেটারির করতে হবে তার একটা ও মিথিলা পারবে না

মিসেস আয়মন- তা হলে তুই শিখিয়ে নিস

ইভান- আমি একবার বলেছি তো হবে না,ব্যাস হবে না

আতাহার চৌধুরী শান্ত কন্ঠে বল্লো
-তা হলে রিসেপসেনিষ্ট জারা কে প্রমেশন দিয়ে উপরে নিয়ে যা আর বউ মাকে সেখানে দে,এবার এটা বলিস না যে বউমার সেই যোগ্যতা ও নেই

ইভান এবার রেগে গিয়ে খাবারের প্লেট ছুড়ে ফেলে দিয়ে মিথিলা কে বল্লো
এই মেয়ে এক থাপ্পড়ে দাঁত সব ফেলে দিবো, কি বলেছি তোমায়? তোমায় বলিনি অন্য জায়গাতে জব খুঁজতে, তা হলে চালাকি করে বাবা কে কানভেন্স করতে গিয়েছিলে কেনো,, সারা দিন আমাকে চোখে চোখে রাখতে চাও তাই না,আঁচলে বাধতে চাও আদৌ সেই ক্ষমতা তোমার আছে,রাবিশ
ইভান বেরিয়ে যায়,

আকস্মিক এমন পরিস্থিতির জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলো না
মিথিলা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে,, নিঃশব্দে চোখের পানি ঝরে যাচ্ছে
মিথিলা কিছু না বলে রুমে চলে আসলো বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো, ইভানে এমন ব্যাবহার সে নিতে পারছে না, কাঁদছে অঝর নয়নে,

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-২২

0

খেলাঘর পর্ব-২২
লেখা-সুলতানা ইতি

আমি তোমার কোন কথার উওর দিবো না..
ইভানের কথা শুনে নায়া ছুপ হয়ে গেলো
– নাহ এ ভাবে করে আমি ইভান কে ফিরে পাবো না ঐ হাভা মেয়ের কাছে আমার ভালোবাসা হেরে যাবে এটা আমি কখনো হতে দিতে পারি না, এবার নায়া কান্না করে দিলো, কাঁদতে কাঁদতে বলছে
– ইভান ভালোবাসি তোমায় আজ ও , তুমি পারো না আবার ফিরে আসতে?

ইভান নায়ার কান্না দেখে বিমূঢ় হয়ে পড়ে কি বলবে বা কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না ইভান
– নায়া প্লিজ তুমি কেদো না, প্লিজ কান্না থামাও

নায়া ননস্টপ কান্না করেই যাচ্ছে থামানোর কোন নাম নেই

ইভান এবার রেগে গিয়ে হাত দিয়ে টেবিলে ঝোরে থাপ্পড় দিয়ে বল্লো
– এই কান্না থামাও কি শুরু করলে,কান্না থামাও আর এখান থেকে যাও

নায়া এবার কান্না বন্ধ করে ইভানের দিকে ছেয়ে আছে
ইভান- ( ও ভাবে তাকিও না নায়া আমি যে তোমার চোখের দৃষ্টিতে খুন হয়ে যাচ্ছি)ইভান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– কি হলো তাকিয়ে আছো কেনো, যাও বলছি

নায়া এবার উঠে দাঁড়ালো
– ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু এটা আমার শেষ যাওয়া নয় আমি আসবো আবার আমার ভালোবাসা আদায় করতে
নায়া বেরিয়ে গেলো

ইভানের অফিসের কাজে মন বসছে না নায়ার কান্নামাখা মুখ টা চোখের পাতায় ভেসে উঠছে,,
আমি কি নায়ার সাথে অন্যায় করেছি মেয়েটির তো কোন দোষ নেই সে আমায় ভালোবেসেছে,,
যেখানে আজ এতো গুলো দিন পরে ও মিথিলা আমায় ভালোবাসতে পারেনি, ইভান ঠিক করলো আর অফিস করবে না বাসায় ফিরে যাবে

মিথিলা – উনার আজ আবার কি হলো লাঞ্চ করতে এলো না ফোন করবে বলে ফোন করলো না,,দূর ইভান কে আমি সত্যি বুঝতে পারি না,, আজ আসলে বাড়ি যাওয়ার কথা বলবো দেখি উনাকে দিয়ে আয়ান কে বুঝাতে পারি কি না,,

উফফ টেনশনে আমি পাগল হয়ে যাবো এদিকে কয়দিন পর ফাইনাল এক্সাম আসছে, যাই উনি আসার আগে পড়তে বসি আসলে তো আবার পড়তে দিবে না,পড়লে নাকি চোখের প্রব্লেম বেড়ে যাবে,সত্যি পাগলামি কতো প্রকার আছে তা উনাকে না দেখলে বুঝতাম না

মিথিলা সব ভাবনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়ার দিকে মন দিলো,,
মিসেস আয়মনে এসে মিথিলা কে বল্লো কিরে পড়ছিস?

মিথিলা- হুম,সামনে এক্সাম তো তাই,কিছু বলবেন?

মিসেস আয়মন- ইভান অফিস থেকে ফিরেছে দেখলাম,,কিন্তু মুখটা ওর থমথমে হয়ে আছে,কি হয়েছে জানো কিছু

মিথিলা- উনি যে ফিরেছে সেটা তো আমি খেয়াল করিনি,উনি আমায় ডাকে ও নি,আচ্ছা দেখছি আমি

মিসেস আয়মন – হুম যা তা হলে,, শুন স্বামির মন খারাপ থাকলে মন ভালো করার দায়িত্ব কিন্তু স্ত্রীর উপরেই পড়ে

মিথিলা কিছু বল্লো না রুমে এসে দেখলো ইভান ড্রেস চেঞ্জ না করেই শুয়ে আছে কপালে হাত দিয়ে

ইভানের এই অবস্থা দেখে মিথিলা ভ্রু কুচকালো এই প্রথম ইভান কে এমন চিন্তিত দেখলো মিথিলা
– কি এমন হলো যে এতো গভীর চিন্তায় ডুবে আছে উনি

মিথিলা ইভানের পাশে বসে কপাল থেকে হাত টা সরাতেই ইভান উঠে বসলো
– তুমি?

মিথিলা- হুম আমি,মনে হচ্ছে আপনি আমায় এই প্রথম দেখলেন, ওমন করে তাকিয়ে আছেন

ইভান- কিছু বলবে? বললে বলো,নতুবা এখান থেকে যাও, ভালো লাগছে না কিছু

মিথিলা- আপনি এমন করছেন কেনো,অফিসে কি কোন প্রব্লেম হয়েছে? খুব বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে আপনাকে

ইভান – না অফিসে কোন প্রব্লেম হয়নি,আর কোথায় আমি চিন্তা করছি, মনে হচ্ছে তোমার চশমার পাওয়ার চেঞ্জ করতে হবে, যাও তো এখন জালিও না আমাকে

মিথিলা ইভানের ব্যাবহারে অবাক হলো খুব,আবার উনি সেই রুপে ফিরে এলো? কিন্তু কেনো? আমি কি কিছু করেছি

ইভান মিথিলা কে বসে থাকতে দেখে বল্লো
– বসে আছো কেনো যাও,,

মিথিলা উঠে চলে এলো স্টাডি রুমে
ভাবছে বসে বসে কি হলো ইভানের এমন বিহেভ করছে কেনো আমার সাথে
ভেবেছি উনাকে নিয়ে একবার ঐ বাসায় যাবো কিন্তু উনার যে মেজাজ উঠেছে কোন কথাই তো বলতে পারবো না উনাকে

রাতে ঘুমাতে এসে ও ইভান মিথিলার সাথে কোন কথা বলেনি,, অন্য পাশে ফিরে শুয়ে আছে

মিথিলা আবার অবাক হলো, রোজ ঘুমানোর আগে উনার কতো কথা শুনতে হতো সব শেষে আমায় ঝড়িয়ে ধরে ঘুমাতো,আজ একেবারেই কথা বন্ধ,

ধ্যাত আমি এতো ভাবছি কেনো মানুষের কি কোন কারনে মন খারাপ হতে পারে না, পারে তো,,এতো না ভেবে আমি ঘুমাই গিয়ে
মিথিলা ইভানের গায়ে একটি হাত দিয়ে শুয়ে পড়লো কিন্তু এতে ও ইভানের মাঝে কোন পতিক্রিয়া দেখা গেলো না

আজ সকালে নাস্তার পর ইভান নিজেই নিজে রেডি হলো আজ আর মিথিলা কে টাই বেধে দিতে ডাকেনি,

মিথিলা টাই বাধতে এসে দেখে ইভান রেডি মিথিলা আর কোন কথা বলেনি
ইভান বেরিয়ে যাচ্ছিলো

মিথিলা – আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো

ইভান- সময় নেই, আমার
ইভান চলে গেলো

মিথিলা- যাক ভাবা কি এমন হলো যে বক বক করা মানুষ টি ছুপসে গেলো
কিন্তু আমার যে বাড়ি যাওয়া খুব দরকার তা হলে কি করি এখন
আমি মাকে বলে চলে যাই,মাকে দেখে আসি।
যেই ভাবা সেই কাজ মিসেস আয়মন কে বলে মিথিলা বাবার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়

নির্ঝরিণী মিথিলা কে দেখে খুব খুশি হয়
নির্ঝরিণী – আপি দুলা ভাই আসেনি কেনো

মিথিলা- অফিসের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত

নির্ঝরিণী – ওহ আচ্ছা এসো মাকে দেখবে চলো
মিথিলা মায়ের কাছে গিয়ে মাকে দেখে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো কি হাল হয়েছে মায়ের, শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে শরিরের হাড় ছাড়া মাংস নেই
হ্যারে নির্ঝর, মাকে ঠিক ভাবে খাবার খাওয়াস না

নির্ঝরিণী – আপি মা খেতে চায় না,ঝোর করে খাওয়াতে হয়,আজ দুই দিন থেকে তো মায়ের কোন কথা ও নেই দেখনা তুমি এসেছো বলে ও কোন রেসপন্স করেনি বলতে বলতে নির্ঝরিণী কেদে দিলো, আপু আমার খুব ভয় করছে
না জানি মাকে হারাতে হয় আমার

মিথিলা ছোট বোন কে কাছে টেনে নিলো
কাঁদিস না নির্ঝর মায়ের ভালো করে চিকিৎসার দরকার এখন

নির্ঝরিণী – কিন্তু আপু মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার সংসারের উপার্জনের পথ তো বন্ধ কি করবো বল

মিথিলা- আমি ও সেটা ই ভাবছি, আয়ান কখন বাড়ি ফিরে

নির্ঝরিণী – ঠিক নেই আপু অনেক রাতে ফিরে আর অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠে,ওর পাশে দিয়ে হাটার সময় আমি খারাপ একটা গন্ধ পাই

মিথিলা- আয়ানের , জে. এস. সি পরিক্ষা সামনে সেটা বলেছিস ওকে

নির্ঝরিণী – আপু ভাইয়ের সাথে কথা বলতে আমার ভয় লাগে

মিথিলা- আচ্ছা জিমি আপু মাকে দেখতে আসেনি?

নির্ঝরিণী – একদিন এসেছিলো এসে মায়ের গলায় থাকা হার টা নিয়ে গেছে দুলা ভাইয়ের নাকি টাকার দরকার

মিথিলা- ওহ সেই হার টা না যেটা বাবা মাকে বিয়ের প্রথম বিবাহবার্ষিকী তে দিয়ে ছিলো

নির্ঝরিণী – হুম আপু,মা এই হার টা কখনো হাত ছাড়া করেনি,আর মা অসুস্থ হতে না হতে আপু সেটা নিয়ে গেলো,আচ্ছা আপু বড় আপু এমন হলো কেনো

মিথিলা- জানি না,হয়তো বড় আপু যেই পরিস্থিতিতে আছে,সেই পরিস্থিতি তাকে এমন হতে বাধ্য করেছে

আচ্ছা নির্ঝরী আমার এখন যেতে হবে আমি ইভানের কাছে বলে আসিনি, তুই আমার এই আংটি টা রাখ এটা বিক্রি করে যা পাস তা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে যা,তার পর দেখি কি হয়

নির্ঝরিণী – আপু তুমি আজ থাকো না

মিথিলা- ইভান কে সাথে নিয়ে এসে একদিন থাকবো এখন আসিরে

মিথিলা বেরিয়ে গেলো
মিথিলা সোনারপুর বাজারে এসে রিক্সা নিলো, আসার সময় মিসেস আয়মন খুব করে গাড়ি নিয়ে যেতে বলে ছিলো কিন্তু মিথিলা আনেনি,,মিথিলা যেই রিক্সাতে উঠতে যাবে ওমনি পাশে গাড়ি পার্কিং এ একটা গাড়ি দেখতে পেলো যেটা ইভানের গাড়ি
– উনার গাড়ি এখানে তার মানে আশে পাশে কোথায় ও আছে, ঠিক আছে আমি একটু অপেক্ষা করি

কিছুক্ষন অপেক্ষার পর ইভান কে একটা কফিশপ থেকে বেরুতে দেখলো,কিন্তু একা নয় সাথে একটা মেয়ে যার সাথে ইভান খুব হেসে হেসে কথা বলছিলো

মিথিলা- কে এই মেয়ে? আমি কি যাবো ওদের সামনে না থাক যাবো না, আমাকে এখানে দেখে যদি রেগে যায়,বাসায় গেলে জিজ্ঞাস করবো মেয়েটা কে?

মিথিলা বাসায় ফিরে অপেক্ষা করতে লাগলো
অনেক রাতে ইভান বাসায় ফিরে বিয়ের পর এই প্রথম ইভান এতো লেইটে বাসায় এসেছে,

মিথিলা ইভানের জন্য অপেক্ষা করেই ছিলো
ইভান- কি হলো ঘুমাও নি?

মিথিলা ইভানের কথার উত্তর না দিয়ে বল্লো
– চলুন খাবেন

ইভান- খেয়ে এসেছি
মিথিলা একটু অবাক হলো এই প্রথম ইভান ফ্যামেলির সবাইকে রেখে বাইরে খেয়ে এসেছে,
– মেয়েটি কে ছিলো?

মিথিলার কথা শুনে ইভান চমকে উঠে
– কোন মেয়েটি?

মিথিলা- যার সাথে আজ সোনারপুর বাজার কফিশপ থেকে হাত ধরে বেরিয়ে ছিলেন

ইভান কিছুক্ষন মিথিলার দিকে ছেয়ে থেকে বল্লো
– আমাদের বিজনেস পার্টনার

মিথিলা একটু শকড খেলো এতো অল্প বয়সী সুন্দরি মেয়ে বিজনেস পার্টনার? মিথিলা নিজেই নিজের মাথায় টোকা দিয়ে বল্লো দূর কি সব ভাবছি আমি,এমন টা তো হতেই পারে,সব ফ্যামেলি তো আর এমন না যে মেয়ের ক্যারিয়ারের কথা না ভেবে বিয়ে দিয়ে দিবে

ইভান- বাই দ্যা য়ে তুমি সেখানে কি করছিলে,

মিথিলা- মা খুব অসুস্থ মাকে দেখতে গিয়েছি, শুনুন না আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো

ইভান- টায়ার্ড লাগছে খুব ঘুমাতে দাও

মিথিলা- আমার কথা টা শুনুন না

ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো আচ্ছা বলো কি বলবে

মিথিলা- আমার না একটা জবের দরকার,আপনি যদি আপনার অফিসে কোন ব্যাবস্থা করে দিতেন

ইভান রাগি চোখে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– তোমার কোয়ালিটি আছে?

মিথিলা- জানি তো আমি এখন ও কলেজ শেষ করতে পারিনি, কিন্তু জবের তো ভিবিন্ন কোটা থাকে তাই না,আমাকে না হয় আমার কোয়ালিটি অনুযায়ী একটা পদ দিলেই হবে

ইভান- আমার অফিসে তোমার জন্য কোন জব নেই তুমি অন্য কোথায় ও ট্রাই করো, এই বলে ইভান পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো

মিথিলা চিন্তায় পড়ে গেলো
উনি ঠিক ই বলেছে এই শল্প পড়াশুনা দিয়ে উনার এতো বড় ইন্ডাস্ট্রি তে জব পাওয়া যাবে না,কিন্তু অন্য কোথায় ট্রাই করবো আমি?

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-২১

0

খেলাঘর পর্ব-২১
লেখা – সুলতানা ইতি

ইভান এখন মিথিলা কে অনেক বেশি সময় দেয় যেন সে স্বাভাবিক হতে পারে,,আস্তে আস্তে মিথিলা স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে,এখন ইভানের সাথে ও সে কথা বলে

ইভানের টুকি টাকি কাজ কর্ম নিজের ইচ্ছেতে করে দেয়,ইভানকে বলতে হয়না

ইভান- মিথিলা এই মিথিলা কোথায় তুমি

মিথিলা কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছিলো এখন মিথিলা সকাল দুপুর রাত সব রান্নাই করে, ইভানের ডাক শুনে মিথিলা বুয়াকে বল্লো
খালা আপনি টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে দিন,, উনি কেনো ডাকছে আমি শুনে আসছি

– বলুন কি বলবেন
ইভান- কি বলবো মানে,তুমি জানো না আজ আমার অফিসে জরুরী মিটিং আছে,তাই আজ অন্য দিনের ছেয়ে তাড়া তাড়ি বেরুতে হবে

মিথিলা- হুম তো যান দাঁড়িয়ে আছেন কেনো টেবিলে নাস্তা দিয়ে দিয়েছি

ইভান- যান মানে এটা বেধে দিবে কে

মিথিলা মুচকি হেসে বল্লো
টাই টা দিন বেধে দিচ্ছি আপনি না একদম বাচ্ছাদের মতো বিহেভ করেন,,অথচ এই বয়স হচ্ছে আপনার বাচ্ছা পালার বয়স
আর আপনি কি না বাচ্ছা হয়ে যাচ্ছেন দিনে দিনে

ইভান- ওহ হো মিথিলা আদি কালের দাদিদের মতো বিয়ে হতে না হতে বাচ্ছা বাচ্ছা করো না তো,,

মিথিলা- আমি কি আপনার কাছে বাচ্ছা এখন ছেয়েছি নাকি কিন্তু আমরা তো একদিন বাবা মা হবো তাই না

ইভান- নো য়ে,আগামি দশ বছরের আগে বাচ্ছার কথা ঠোঁটে ও আনবে না এমনিতে ও বাচ্ছা হলে ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে তোমার

মিথিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে বলে কি এই লোকে দশ বছর ততদিনে তো আমি বুড়ি হয়ে যাবো আমার বাচ্ছা পালবে কে

ইভান- সুইট হার্ট হা করে থেকো না চলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার

ইভান নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে গেলো মিথিলা সারা সকাল বসে বসে ইভানের কথা গুলো ভাবছে দশবছরে ও বাচ্ছা নেবো না হায় হায় বলে কি,আমি তো মাস্টার্স কম্পলিট করার আগেই বাচ্ছা নিবো ভেবে ছিলাম আর উনি কি না দূর ছঁাই ভাবতে ভাবতে অনেক বেলা হয়ে গেছে আজ দুপুরের রান্না রাঁধবো কখন

এমন সময় মিথিলার ফোন বেজে উঠে
উফফ এই সময় আবার কে ফোন করলো? ওহ নির্ঝরিণী!
হ্যালো নির্ঝর বল
নির্ঝরিণী – কেমন আছিস আপু

মিথিলা- ভালো তুই কেমন আছিস,মা কেমন আছে

নির্ঝরিণী – আমি ভালো আছি আপু,মা ভালো নেই, গত কয়েক দিন থেকে মা বিছানা থেকে উঠতে পারছে না

মিথিলা- আমাকে আগে বলিস নি কেনো, ডাক্তার দেখিয়েছিস,,

নির্ঝরিণী – ডাক্তার দেখিয়েছি এ দিকে…..

মিথিলা- কি বল থেমে গেলি কেনো

নির্ঝরিণী – আপু আয়ান এখন আর পড়াশুনা করে না স্কুলে যায় না অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে, আপু আমার মনে হয় আয়ান বাজে ছেলেদের সাথে আড্ডা দেয়,আপু আমার না খুব ভয় করছে

মিথিলা- আয়ান এমন করছে? আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না, আচ্ছা তুই ভয় পাস না মার দিকে খেয়াল রাখিস আমি দেখি কি করতে পারি,আচ্ছা এখন রাখ রে রান্না বসাতে হবে এখন আমাকে

মিথিলা কল অফ করে দিয়ে চিন্তায় পড়লো কি হলো আয়ানের,, ও দুষ্টু ছিলো ঠিক কিন্তু এতো টা তো অনিয়ম ছিলো না, তা হলে?, হায় আল্লাহ বাবা যেতে যেতে কি হয়ে গেলো মা অসুস্থ ভাই কেমন হয়ে গেলো কি করবো এখন আমি

আজ ইভান অফিসে আসতে আসতে লেইট হয়ে গেছে,এদিকে আর এন কম্পানির লোকেরা এসে গেছে তারা মিটিং রুমে অপেক্ষা করছে ইভান এসেই মিটিং রুমে চলে যায়,
ইভান মিটিং রুমে ডুকেই আর এন কম্পানির নতুন এমডির সাথে পরিচিত হতে গিয়ে একটা বড়সড় শকড খেলো,কোন ভাবে মিটিং টা শেষ কতে ইভান নিজের ক্যাবিনে এসে চেয়ার গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে, উলটাচ্ছে স্মৃতির পাতা

অস্ট্রিয়া থেকে ফেরার দুই দিন আগে নায়ার সাথে মিট করতে গিয়ে নায়া কে বলেছিলো দেশে ফিরেই আব্বু আম্মু কে বলে বিয়ের কথা ফাইনাল করবে,
নায়া সেদিন খুব কেঁদে ছিলো, কান্নাভেজা কন্ঠে আমার হাত ধরে বলেছিলো
– ইভান প্লিজ আমায় ভুলে যেও না,,খুব ভয় করছে আমার, শুনেছি চোখের আড়াল হলে নাকি মনের আড়াল হয়ে যায়, কথা টা যেন সত্যি না হয়

সেদিন নায়াকে আমি অনেক করে বুঝিয়ে রেখে এসেছি,কিন্তু দেশে আসার পর আব্বু আম্মুর একটা ই কথা নায়ার সাথে যেন কোন যোগাযোগ না রাখি, ফেলতে পারিনি আমি আব্বু আম্মুর কথা,,নায়ার সব স্মৃতি ভুলতে চেষ্টা করেছি,আজ ও সেই চেষ্টা করি আর এখন সেই নায়া আমার সামনে আচ্ছা নায়া আর এন কম্পানির নতুন এমডি যাদের সাথে আমাদের বিজনেস আগা মাথা ঝড়িয়ে আছে

এমন সময় ক্যাবিনের দরজায় নক হলো
আয়ান চোখ বন্ধ রেখেই বল্লো
– ইয়েস কাম

কি ব্যাপার চোখ বন্ধ করে আছো যে,নাকি আবার কি করে সিটিংবাজি করবে সেটা ভাবছো

ইভান চোখ খুলে দেখে নায়া ইভানের সামনে
ইভান মুখে হাসি টানার ব্যার্থ চেষ্টা করে বল্লো
– বসো

নায়া- থ্যাংস তুমি না বললে ও আমি বসতাম অনেক পুরোনো হিসেব কষার বাকি আছে যে

কেনো এমন করলে ইভান ভালোবাসার হাত তুমি বাড়িয়ে দিয়েছো আমার দিকে,তা হলে তোমার বাড়ানো হাত টা ফিরিয়ে না দেয়া কি আমার অপরাধ ছিলো

ইভান- এমন করে বলো না নায়া আমি তো এখন ও তোমায়……
ইভান কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই ইভানে কল আসে

ইভান কল রিসিভ করে
– হ্যালো?

অপাড় থেকে মিথিলা বলে
– আজ বাসায় লাঞ্চ করবেন না? লাঞ্চের সময় ফেরিয়ে যাচ্ছে

ইভান- আমি তোমায় পরে কল করছি

ইভান কল অফ করে দেয়
নায়া- কার ফোন ছিলো তোমার বউয়ের?

ইভান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নায়ার দিকে

নায়া- অবাক হওয়ার কিছু নেই তুমি কি ভেবেছো যে আমার সাথে চিটারি করেছে তাকে আমি এ ভাবে ছেড়ে দিবো,না এএতো সহযে নয় তাই তো দেশে এসেই তোমার সম্পর্কে খোজ নিতে শুরু করি আর পেয়ে ও যায় খুব সহজে,
আমাকে শুধু একটা কথা বলো কি এমন পেয়েছো ঐ হাভা মেয়েটির মাঝে,যা আমার মাঝে ছিলো না?

ইভান কথার প্রসংগ পাল্টানোর জন্য বল্লো
– কি খাবে বলো?

নায়া কর্কশ কন্ঠে বল্লো
আমি তোমার সাথে রসালাপ করতে আসিনি

ইভান এবার শক্ত কন্ঠে বল্লো
– আমি তোমার কোন কথার উত্তর দিবো না,,

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর.পর্ব-২০

0

খেলাঘর.পর্ব-২০
লেখা-সুলতানা ইতি

সুইট হার্ট শ্বশুর বাড়িতে যে কি দিন খন সময় ঠিক করতে হয় নাকি, যখন ইচ্ছে তখন যাওয়া যায়

মিথিলা ভাবছে অন্যকিছু বিয়ের রিচুয়ালস মানতে মা, বাবা কতো বুঝিয়ে উনাকে পাঠিয়েছে আর আজ উনি নিজের ইচ্ছে তে যাচ্ছে, ব্যাপার টা আসলেই সহজ নয়, আচ্ছা উনি নির্ঝরিণীরর সাথে কথা বলে তার পর আমাদের বাড়িতে যাবে বল্লো,কিন্তু কেনো?,নির্ঝরিণীর কোথায় উনি যেতে রাজি হবে? এটা মানা যায় না?
তা হলে
বাবার কিছু হয়নি তো বাবা ঠিক আছে তো?
মিথিলার বুকটা কেপে উঠে।

ইভান নিজে তৈরী হচ্ছে
কি হলো হেভলি? বসে আছো যে লেটস গো বাবার বাসায় যাচ্ছি. তা ও কার বাবার বাসা ভাবতে পারছো হেভলির বাবার বাসা,তৈরী হয়ে নাও তাড়া তাড়ি ডার্লিং

মিথিলা- বাবা ঠিক আছে তো
ইভান- বলো কি? বাবা ঠিক থাকবে না কেনো,
তা তুমি কি শাড়ি টা চেঞ্জ করবে, নাকি যেমন। আছো তেমন ই যাবে

মিথিলা- পাঁচ মিনিট বসুন
মিথিলা ঠিক পাঁচ মিনিটের ভিতরেই তৈরী হয়ে নিলো

ইভান গাড়ি স্ট্রাট দিলো
মিথিলা অন্যমনোস্ক হয়ে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসলো

ইভান- হেভলি কি এতো ভাবছো বলো তো

মিথিলা- কিছু না
ইভান নরম স্বরে বল্লো
– চিন্তা করো না,আমি বলছি আংকেল ঠিক আছে, উনাকে ঠিক থাকতেই হবে তার এই হেভলি মেয়েটার জন্য

মিথিলাদের বাসার সামনে আজ প্রচুর মানুষের ভিড়
ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে

মিথিলা- কি হয়েছে বাড়িতে সবার কান্না শুনা যাচ্ছে কেনো,
এই বলে মিথিলা দৌড়ে বাড়ির ভিতরে যায় মিথিলার পিছনে ইভান আসে

বসার ঘরে ফ্লোরে কাউকে শোয়া অবস্থা দেখতে ফেলো, পাশে আয়ান বসে কাঁদছে
আয়ান তুই কাঁদছিস কেনো

আয়ান কিছু বল্লো না শুধু শুয়ে রাখা লোকটার মুখের কাপড় শরিয়ে দিলো

মিথিলা দেখতে ফেলো তার বাবা চির নিদ্রায় শায়িত হয়ে আছে

মিথিলা অঝোর নয়নে কাঁদছে
কাদতে কাঁদতে বল্লো
বাবার কি হয়েছিলো আয়ান তোরা আমায় আগে বলিসনি কেনো

আয়ান কিছু বলছে না কাঁদছে ও না ছুপ করে বসে আছে

নির্ঝরিণী কোথায় থেকে যেন এসে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে
মিথিলা ও কাঁদছে এর মধ্যে জিমি আপু এসে পড়ে সে ও কাঁদছে

ইভান আয়ান কে নিজের কাছে টেনে নেয়
ইভান- আয়ান আংকেলের কি হয়েছিলো? তোরা আমাদের আগে বলিসনি কেনো

আয়ান- বলার মতো সুযোগ পাইনি ভাইয়া, হঠ্যাৎ করেই বলছে বুক ব্যাথা করছে,তো মা বল্লো ডক্টরের কাছে যাবে কি না
বাবা নিষেধ করলো যাবে না,

এর কিছুক্ষণ পরেই আম্মুর চিৎকার শুনে আমি এসে দেখি আব্বু আর নেই ডক্টর এনেছি, ডক্টর তখন আব্বু কে মৃত ঘোষনা করে

ইভান- আংকেল স্টোক করেছে, কিন্তু উনি এতো কিসের চিন্তা করতো
আয়ান আর কিছু বল্লো না

মিথিলা বোনদের ঝড়িয়ে কিছুক্ষন কান্না করার পর
মিথিলা- মা কোথায় মা
নির্ঝরিণী কাঁদতে কাঁদতে বল্লো মার জ্ঞান নেই আপু,অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে হাতে সেলাইন চলছে,

মিথিলা মায়ের পাশে গিয়ে মাকে ডাকা ডাকি করলে ও ফাতেমাবেগমের সেন্স ফিরেনি
সন্ধায় ছয়টা দাপন কাপনের কাজ সম্পূর্ণ হয়,
আত্মীয় স্বজনেরা অনেক ই চলে গেছে,

ইভান থাকতে ছেয়ে ছিলো মিথিলা ঝোর করে ইভান কে পাঠিয়ে দিয়েছে,
এই জন্য যে, আমাদের বাড়িতে এসি নেই আপনার থাকতে কষ্ট হবে,আমি চাই না আপনি মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে বকা ঝকা করুন

ইভান- মিথিলা প্লিজ ঐ দিনের জন্য আ’ম স্যরি

মিথিলা- তবু ও প্লিজ আপনি যান

ইভান- মিথিলা আমি এই সময় তোমার পাশে থাকবো না তা হয় কি করে

মিথিলা- কাল সকালে আবার আসবেন আমি কি আসতে নিষেধ করেছি নাকি,আমি বলেছি আপনি এখন যান

ইভান- ওকে তা হলে তুমি ও চলো

মিথিলা- না আমাকে আমার ভাই বোনের পাশে থাকতে হবে,প্লিজ আপনি যান আর কথা বাড়াবেন না

ইভান সত্যি আর কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ে
ফাতেমা বেগমের অবস্থা ভালো না, এই কয়দিনে তিনি বিছানার সাথে মিশে গেছে
মিথিলা তো মায়ের কাছে আসলেই কান্না করে
তাই নির্ঝরিণী মিথিলাকে আসতে দেয় না

এর মাঝে একদিন ইভান এসে মিথিলা কে নিয়ে যায় মিথিলা যদি ও যেতে চায়নি তবু ও আর কয়দিন থাকবে সে জন্য ইভান ঝোর করে নিয়ে গেছে
ইভান এখন অনেক বেশি সময় দেয় মিথিলা কে যেন সে স্বাভাবিক হতে পারে

to bee continue

খেলাঘর পর্ব-১৯

0

খেলাঘর পর্ব-১৯
লেখা- সুলতানা ইতি

এই রকম খাবার স্বর্ন দিয়ে মেখে দিলে ও আমি খাই না কিন্তু না খেয়ে উপায় ও নেই উনি অনেক আশা নিয়ে এগুলা করেছে একটু তো খেতে হবে

ইভান- খেতে টেষ্টি লাগছে না মিথিলা

মিথিলা শুধু মাথা নাড়ালো

ইভান- উহ হু মাথা নাড়ালে হবে না,, বলো যে খেতে ইয়ামি হয়েছে

মিথিলা- (ইসস ইয়ামি না ছাঁই, না খেয়ে থাকলে ও তো আমি এই সব খাবার খাই না,)হুম ইয়ামি হয়েছে

মিসেস আয়মন, আর আতাহার চৌধুরী দুজনেই খুব খুশি ছেলের পরিবর্তন দেখে

খাওয়া শেষ করে মিথিলা রুমে এলো, ইভান ও এসেছে এসেই অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলো

ইভান শার্ট পরতে পরতে বল্লো
– এ ভাবে বসে না থেকে আমাকে রেডি হতে একটু হেল্প করতে পারো তো

মিথিলা- আপনি তো রেডি হচ্ছেন ই আমি কি হেল্প করবো

ইভান- উফফ কিচ্ছু বুঝে না বউটা আমার,ঘড়ি, ওয়ালেট, এগিয়ে দিতে পারো

মিথিলা- কিন্তু আপনি নিজেই তো ওগুলা রাখেন,আপনি জানেন সেগুলা কোথায়, তা হলে আমাকে এগিয়ে দিতে হবে কেনো

ইভান- উফফ বউ টা আমার একদম আনরোমান্টিক, দাও তো টাই টা পরিয়ে দাও আমায়

মিথিলা- সে কি আপনি টাই লাগাতে জানেন না,তা হলে এতো দিন কে লাগিয়ে দিয়েছিলো

ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো
– এতো কথা না বলে টাই টা লাগিয়ে দিলেই তো পারো

মিথিলা- কিন্তু আমি তো এগুলা পারিনা,

ইভানের এখন মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে তবুও মাথা ঠান্ডা করে বল্লো
– কোন ব্যাপার না, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি তোমাকে কি করে টাই বাধতে হয়, এর পর থেকে কিন্তু টাই তোমাকেই বেধে দিতে হবে

মিথিলা বোকার মতো তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে
ইভান- হেভলির মতো তাকিয়ে না থেকে আমাকে কেমন লাগছে বলো

মিথিলা- ভালো

ইভান মিথিলার কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বল্লো, আমার হেভলি বউ টা এমন হাভা বোবা হয়ে থাকে কেনো

ইভান মিথিলার অনেক কাছে চলে এসেছে, যতো টা কাছে এলে একে অপরের নিশ্বাস অনুভব করতে পারে

মিথিলা নিশ্বাসবন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে, এদিক ওদিক শরে যাওয়ার মতো শক্তি তার নেই

ইভান মিথিলার চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিতে দিতে বল্লো
– শুনো হেভলি বউ আমি যাওয়ার পরে একদম বই নিয়ে বসবে না পরিক্ষার এখন ও অনেক দিন বাকি, অতএব এখন না পড়লে ও চলবে,

মিথিলা কিছু বলতে যাচ্ছিলো
ইভান তার ঠোঁটে আংগুল দিয়ে বল্লো শুসসস ছুপ করে থাকো আমি বলছি শুনো
সময় কাটানোর জন্য আম্মুর সাথে কথা বলতে পারো জানো ই তো তুমি আম্মুর কতো টা পছন্দের

নিচের দিকে তাকিয়ে বই পড়লে চোখে প্রব্লেম হবে এই জন্য ই তোমার এতো বেশি পাওয়ারের চশমা পরতে হয়

এই জন্য বলছি এখন বই পড়তে বসো না, বুঝেছো আমার হেভলি বউ

মিথিলা বরফের মতো জমে আছে, কোন কথা ই শরছে না মুখ দিয়ে

ইভান এবার মিথিলার কাছে থেকে শরে গিয়ে বল্লো
– তোমার আটকে রাখা নিশ্বাস টা এবার ফেলতে পারো,এভাবে দমবন্ধ করে রাখার কিছু নেই আমি তোমাকে খেয়ে পেলবো না, এই বলে ইভান বেরিয়ে গেলো

মিথিলা তখন ও মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে
,ইভানের এমন আচরনে মিথিলা সত্যি সারপ্রাইজড
কতোক্ষন এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো মিথিলার খেয়াল নেই
তার পর হুস ফিরে পেয়ে মিথিলা কি করবে ভাবছিলো মনে হলো ইভান বলেছি মিসেস আয়মনের সাথে কথা বলতে

মিথিলা রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মিসেস আয়মন কিচেনে আছে
এই বাড়িতে সকালের নাস্তা আর রাতের খাবার টা বুয়া তৈরী করে, আর দুপুরের টা মিসেস আয়মন নিজেই রান্না করে

মিথিলা- আজকের রান্না টা কি আমি করতে পারি

মিসেস আয়মন- কোন দরকার নেই আমি পারবো, যতো দিন তুমি আমায় মা বলে না ডাকছো ততদিন তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই

– আমি চেষ্টা করছি উনাকে মা বলে ডাকতে তবুও কেনো পারছি না আজ ডাকবো ই,মিথিলা মনে মনে দশবার মিসেস আয়মন কে মা বলে ডেকে প্র্যাক্টিজ করে তার পর বল্লো

মিথিলা- মা আমি থাকতে আপনি কেনো রান্না করবেন, মেয়ে থাকতে মায়ের রান্না করা কি মানায়

মিসেস আয়মন এতো খুশি হলো যে খুশিতে হাত থেকে পানির ঘামলা টা পড়ে গেছে
তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মিথিলা কে বুকে টেনে নিয়ে বল্লো
আজ সত্যি আমার মেয়ের অভাব পুরোন হলো
মিথিলা বিব্রত বোধ করে বল্লো
– তা হলে রান্না টা আমি করি

মিসেস আয়মন- ঠিক আছে

মিথিলা- আপনি শুধু একবার বলুন কার জন্য কি রান্না করবো

মিথিলা মিসেস আয়মনের থেকে জেনে নিয়ে রান্না শুরু করলো
ইভানের জন্য ফ্রাইড রাইচ রাঁধতে গিয়ে ইহানের কথা মনে পড়ে গেলো, ফ্রাইড রাইচ ইহানের ও খুব পছন্দের খাবার ছিলো

মনে পড়ে যায় সেদিন ইহান মিথিলার হাতের রান্না খেয়ে কি খুশি টা ই না হয়ে ছিলো
সেদিন ইহান কিছু বলতে গিয়ে ও বলেনি তবু ও মিথিলা বুঝে নিয়েছে,ইহান আসলে এটা ই বলতে ছেয়ে ছিলো
আমার ভাগ্য ভালো যে তোকে ভালোবেসেছি বিয়ের পর তোর হাতের নতুন নতুন কতো আইটিমের রান্না খাবো,

কিন্তু আজ ও কোথায় কেউ জানে না,আজ আমি এই রান্না টা ই অন্য কারো জন্য রাঁধছি
মিথিলার মন টা ই খারাপ হয়ে গেলো,

রান্না শেষ করে সব গুলো রান্না নিজের হাতে টেবিলে নিয়ে সাজিয়ে রাখলো

তার পর মিথিলা ফ্রেশ হতে চলে গেলো
ফ্রেশ হয়ে মিথিলা টেবিলে এসে তো অবাক ইভান আর আতাহার চৌধুরী এসে বসে আছে

মিসেস আয়মন- মিথিলা এরা বাপ বেটা আজ বাইরে খাবে ঠিক করেছে, কিন্তু তুই এতো কষ্ট করে রেধেছিস,তাই ওদের বলে দিয়েছি আজ রান্না টা তুই করেছিস না খেলে সব মিস হবে

মিথিলা- তাতে কি হয়েছে,, অন্য একদিন রান্না করতাম উনাদের জন্য

আতাহার চৌধুরী- বৌ মা নতুন বউয়ের নতুন হাতের রান্না প্রথম দিন সবাই মিলে খাওয়ার আনন্দ ই আলাদা

ইভান- কই মিথিল দাও তাড়া তাড়ি আমার তো আর তর সইছে না

মিথিলা ইভানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো
ইভান- কি হলো এ ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো খাবার সার্ভ করো

মিথিলা আর কিছু না বলে সবার প্লেটে খাবার উঠিয়ে দিলো
খাওয়া শুরু করলো সবাই

ইভান- উমমম এটা তো রেষ্টুরেন্টের রান্না কে ও হার মানাবে, আসলেই তুমি অনেক ভালো রাঁধুনি

আতাহার চৌধুরী- শুনেছি বৌমা সারা দিন বই নিয়ে বসে থাকতো পড়া লেখা নিয়ে নিজেকে ব্যাস্ত রাখতো তা হলে এতো ভালো রান্না শিখলে কখন

মিথিলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস আয়মন বল্লো
– বুঝেছো যে রাধে সে চুল ও বাধে

আতাহার চৌধুরী- হুম ঠিক বলেছো মুন

ইভান- আব্বু আমি ভাবছি নতুন বিজনেস স্ট্রাট করবো

ইভানের কথা কেউ ই বুঝেনি তাই আতাহার চৌধুরী বল্লো
– কি রকম বিজনেস

ইভান মুচকি হেসে বল্লো
– হোটেল হোটেল,যেখানে মিথিলা থাকবে রাঁধুনি

মিসেস আয়মন ছেলের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বল্লো
– আর তুই থাকবি সার্ভেন্ট, খাবার সার্ভ করবি
ইভান খেতে খেতে স্টাইল করে বল্লো
– না সার্ভেন্ট আমায় পুষাবে না, আমি তো হবো ম্যানেজার,

আতাহার চৌধুরী- তোর ফাজলামি রাখতো,বৌমা এসো তুমি আমাদের সাথে খেতে বসে যাও

মিথিলা- আজ আপনারা খান,আমি না হয় পরেই খাবো

মিসেস আয়মন- কিরে ইভু বসে বসে গিলছিস শুধু,যে কষ্ট করে রেঁধেছে তাকে খেতে বলছিস না যে

ইভান- আম্মু তুমি জানো না সে চাইলে তো আমি তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো

ইভানের কথা শুনে মিথিলা লজ্জা পেয়ে কিচেন রুমের দিকে হাটা ধরলো

ইভান- পিছন থেকে মিথিলার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে বল্লো
হা করো, আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমায়

মিথিলার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো
উফফ এই লোকটার মুখে কোন কথা আটকায় না,মা বাবার সামনে কেউ এমন কথা বলে

ইভান- কি হলো হা করো, ওহ আচ্ছা তুমি কি তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির সামনে
লজ্জা পাচ্ছো

মিথিলা- প্লিজ আপনি আমাকে ছেড়ে দিন আমি নিজেই খেয়ে নিবো

মিসেস আয়মন- মিথিলা লজ্জা পাচ্ছিস কেনো খেয়ে নে আমরা বাপু তোর দিকে তাকাবো ও না,এই চোখ বন্ধ করলাম

আতাহার চৌধুরী- হুম আমি ও

মিথিলা আজ লজ্জার উপর লজ্জা পাচ্ছে
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না, দারুন অস্বস্তিতে পড়ে গেলো

ইভান এবার জোর করেই মিথিলা কে খাইয়ে দিলো
মিথিলা কোন ভাবে এক লোকমা খেয়ে পানি খেয়ে রুমে চলে আসলো

রুমে এসেই মাথা নিচু করে বসে আছে আজকের মতো লজ্জা আমি আমার জীবনে ও পাইনি
পাশে ইভানের ফোন বেজেই চলছে অনেক্ষন থেকে
মিথিলা- উনার ফোন আসছে, উনাকে ডাকবো কি, না থাক উনি নিজেই আসবে, কিন্তু কল টা তো আমাদের বাড়ি থেকে এসেছে মনে হয় নির্ঝরিণী শয়তান টা কল করেছে

আমি কি কল ধরবো,উনার ফোন তার অনুমিত ছাড়া ধরবো? ব্যাপার টা কেমন যেন লাগছে
এমন সময় ইভান চলে আসলো,ফোন হাতে নিতে নিতে বল্লো
– কল টা রিসিভ করলেই তো
হতো
মিথিলা – না মানে আপনার ফোন আর আমি?

ইভান- থাক আর বলতে হবে না শালিকার সাথে কথা বলে নিই আগে

– ইয়েস মাই ডিয়ার শালিকা, বলো
নির্ঝরিণীর সাথে কথা বলতে বলতে ইভানের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো
ইভান কথা শেষ করে লাইন অফ করে বল্লো
– মিথিলা রেডি হয়ে নাও তোমাদের বাড়িতে যাবো

মিথিলা অবাক হয়ে বল্লো
– মানে এখন? কিন্তু এখন কেনো যাবো

ইভান- সুইট হার্ট শ্বশুর বাড়িতে যেতে কি দিন খন সময় ঠিক করতে হয় নাকি যখন তখন যাওয়া যায়

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর. পর্ব-১৮

0

খেলাঘর. পর্ব-১৮
লেখা-সুলতানা ইতি

মিথিলা ছেয়ে আছে ইভানের চোখের দিকে আজ প্রথম বার চার চোখের মিলন হলো, আজ মিথিলা সব লজ্জা সংকোচ ভুলেই ইভানের পানে ছেয়ে আছে, হয়তো ঐ চোখে কিছু খুঁজছে

ইভান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– বাহ দারুন লাগছে তোমায় এসো আয়নার সামনে এসো সব গুলো একবার ট্রাই করে দেখবে

মিথিলা- না থাক সব গুলো ট্রাই করতে হবে না একটা হলেই চলবে

ইভান- তা হলে বাকি চশমা গুলো যে তোমার ছোঁয়া না পাওয়ার কষ্টে ধুমড়ে মুষড়ে শেষ হয়ে যাবে, প্লিজ মিথিল বিয়ের পর প্রথম তোমাকে কিছু দিলাম এটা ও তুমি ফিরিয়ে দিবে

মিথিলা আজ ইভানের আচরনে শকড এর উপর শকড পাচ্ছে
মিথিলা – আর কিছু বল্লো না

ইভান – স্যরি মিথিল
মিথিলা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ছেয়ে আছে ইভানের দিকে মুখে তার কোন কথা নেই

ইভান- তখনকার আচরনের জন্য স্যরি,আসলে ভুল টা আমার ই ছিলো, আমি আম্মু কে জিজ্ঞাস করলেই এতো প্রব্লেম হতো না

এবার মিথিলা একটা নিশ্বাস ফেলে বল্লো
– ইটস ওকে

ডক্টর বল্লো মিথিলা টেনশন করছে কিন্তু কি এমন টেনশন মিথিলা করছে,ও কি ওর বাবা মায়ের কথা বেশি ভাবছে,আমি কি জিজ্ঞাস করবো একবার,,আচ্ছা আমি এতো ভাবছি কেনো আমি ওর হাজবেন্ড এইটুকু জানার রাইট তো আমার থাকতেই পারে

ইভান- You can share with me your problem
মিথিলা ইভানের কথা শুনে চমকে উঠে ইভানের দিকে তাকায়,ইভান কি কিছু বুঝতে ফেরেছে, না বুঝার ই তো কথা
মিথিলা তাড়া তাড়ি করে নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– আমার কোন প্রব্লেম নেই,যে সেয়ার করবো আপনার সাথে

ইভান- তা হলে এমন ছুপ ছাপ থাকো কেনো সারা দিন

মিথিলা- আপনি মনে হয় জানেন না আমি ছুপ ছাপ থাকতে পছন্দ করি,আর বই পড়তে পছন্দ করি

ইভান- সেটা আমি আয়ানের কাছে শুনেছি,কিন্তু তোমাকে দেখলেই মনে হয় তুমি কিছু নিয়ে গভীর চিন্তা ডুবে আছো

মিথিলা- না তেমন কিছুই না
ইভান মনের গভীরতা দিয়ে ভালোবাসা মেশানো কন্ঠে বল্লো
মিথিল আমি তোমাকে শুধু একজন ওয়াইফ হিসেবে চাই না
আমি তোমাকে চাই এজ আ ফ্রেন্ড এজ আ গার্ল ফ্রেন্ড এন্ড এজ এ গুড ওয়াইফ হিসেবে চাই,
আর তাই আমি তোমার সাথে আগে আমাদের সম্পর্ক টা স্বাভাবিক করতে চাই, এই যে তুমি আমাকে দেখলে আতংকিত হও ভয় পাও এগুলা আমার ভালো লাগে না আর তুমি না কোথায় কোথায় কাঁদবে না
কান্না আমার পছন্দ না বুঝেছো

মিথিলা- হুম
ইভান- হুম নয়,পালটা প্রশ্ন করতে পারো না আমাকে,তোমার দেখছি তোমার বরের প্রতি কোন আগ্রহ নেই

এখন ই তো আমাদের দুজন দুজন কে বুঝার সময় যেহেতু আমাদের এরেঞ্জ ম্যারেজ,এখন তো আর তেমন এরেঞ্জ ম্যারেজ হয়না বললেই চলে,কিন্তু তুমি ও মা বাবার বাধ্য শন্তান আমি ও,তাই আমাদের এভাবে আদিকালি স্টাইলে বিয়ে হলো, আমি তোমাকে বুঝতে চাই মিথিলা
আচ্ছা তুমি কি কি বই পড়তে পছন্দ করো

মিথিলা- আমার তো সব বই পছন্দ তবে এখন সামনে পরিক্ষা তাই অন্য বই ইচ্ছে হলে ও পড়তে পারবো না, আচ্ছা আপনার কোন বই পড়তে ভালো লাগে

ইভান- আমার কথা বলে লাভ নাই আমি তোমার বীপরিত আমার বই পড়তে ভালো লাগে না

মিথিলা- সে কি আপনি তো আয়ান আর নির্ঝরিণীর মতো,তা দেশের বাইরে গিয়ে পড়লেন কি করে

ইভান- সে পড়েছি কোন ভাবে আব্বু আম্মুর ভয়ে

মিথিলা- কিন্তু আপনাদের মাঝে কথা শুনে তো মনে হয়না আপনি আব্বু আম্মু কে ভয় পান

ইভান- এটা তো ফান করি কিন্তু সিরিয়েসলি পড়াশুনার ব্যাপারে আব্বু আম্মু কখনো ছাড় দেয়নি

মিথিলা- ও, উনাদের কথা শুনে বুঝার উপায় নেই উনারা যে এতো স্টিক্ট

ইভান – চলো বারান্দায় গিয়ে বসি

মিথিলা চশমা ঠিক করতে করতে বল্লো
– চলুন

ইভান- তোমার কিন্তু চশমা পরা চলবে না,আমি তোমাকে চোখের ভালো ডক্টর দেখাবো

মিথিলা- চশমা বুঝি আপনার পছন্দ নয়

ইভান- না, কারন এই চশমা চোখের গভীরতা ঢেকে রাখে,যদি চোখের গভীরতা মাপতে না পারি, চোখের প্রেমে পড়তে না পারি,তা হলে সেটা কোন প্রেম ই নয়

মিথিলা- আপনি তো দার্শনিকদের মতো কথা বলেন দেখছি

ইভান- হুম তবে আমি দার্শনিক নয়,, আমি ইতিমধ্যে খোজ শুরু করেছি,শহরের সেরা চক্ষু ডক্টরের,যদি এখানে না হয় তা হলে দেশের বাইরে নিয়ে যাবো,তার আগে তোমাকে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা করাবো

মিথিলা হেসে বল্লো
– এখন আপনি চোখের ডাক্তার হবেন নাকি

ইভান মুগ্ধ নয়নে মিথিলার হাসি দেখছে
– সুইট স্মাইল

মিথিলা – লজ্জা পেয়ে হাসি থামিয়ে পেল্লো

ইভান, উফফ হাসির প্রশংসা না করলেই হতো,হাসি টা আর ও কিছুক্ষণ চলতো
– হুম বউ যখন চোখে দেখেনা তখন বরকে তো ডক্টর হতেই হবে

মিথিলা- শুনি আপনার চিকিৎসার নমুনা

ইভান- শুনাবো না, দেখাবো, যাস্ট ওয়েট করো শুধু

তার পর দুজনেই নিরব
আবার নিরাবতা ভেঙে ইভান বল্লো
– স্যরি

মিথিলা- এবার কিসের জন্য?

ইভান- বিয়ের আগে তোমার সাথে খারাপ বিহেভ করেছি তাই

মিথিলা- তখন তো আপনি আমায় ছিনতেন না

ইভান- তবু ও একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে এমন বিহেভ করা ঠিক হয়নি

মিথিলা- সেদিন আপনি রিক্সা ওয়ালা মামার সাথে খারাপ বিহেভ করেছেন বেশি,স্যরি বলতে হলে উনাকে বলুন

ইভান- কিন্তু আমি উনাকে পাবো কোথায়

মিথিলা -আমাদের কলেজের সামনেই পাবেন

ইভান- আচ্ছা,সে না হয় ক্ষমা ছেয়ে নিবো তার কাছে,কিন্তু তুমি কি আমার স্যরি একসেপ্ট করেছো

মিথিলা- হুম মঞ্জুর করলাম

ইভান- হোয়াট মন. জু,হোয়াটএবার কি বললে

মিথিলা হেসে বল্লো
– একসেপ্ট করলাম

আপনি তো বাংলা ভাষায় কাছা

ইভান- আজ অব্দি কেউ বলেনি,তুমি খাটি বাংলা ভাষায় কথা বলেছো তাই বুঝতে পারিনি
সেদিন ওদের চমৎকার একটা রাত পার হয়,সারা রাত বেলকনিতে বসে গল্প করে শেষ রাতের দিকে ঘুমাতে এলো,আজ প্রথম বার,ইভান মিথিলা কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে
অনেক রাতে ঘুমানোর কারনে সকালে মিথিলার ঘুম দেরিতে ভাংগে

ঘুম ভেংগে মিথিলা অবাক, পুরো রুমের কালার চেঞ্জ হয়ে গেছে,সব কিছু সবুজ, রুমের দেয়াল থেকে পর্দা পর্যন্ত সবুজ, একেবারে পুরো রুম সবুজে সবুজ

মিথিলা বিছানায় থ মেরে বসে আছে,রুমের এমন চেঞ্জ কেনো বুঝতে পারছে না মিথিলা

ইভান- বলে ছিলাম না, করে দেখাবো
মিথিলা- কি?

ইভান- আজ থেকে তোমার চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু,ডক্টর বলে চোখে প্রব্লেম হলে সবুজ শ্বাগ খেতে, সবুজ পাতার দিকে তাকাতে,কিন্তু আমি তোমার জন্য এই শহরে অরিজিনাল সবুজ পাচ্ছি না তাই,সবুজ রঙ নিয়ে এলাম,
তবে ছাদে অর্দেকের বেশি সবুজ বাগান করা হবে আজ থেকে তুমি প্রতি দিনের কিছু অংশ ছাদে কাটাবে,তখন যেন তোমার চোখে চশমা না থাকে

মিথিলা- এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম আমি

ইভান- এখন চলো বসে না থেকে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আসো

মিথিলা খেতে গিয়ে আবার শকড খেলো
আজ নাস্তার আইটিমে সব সব্জি, সবুজ শ্বাক
মিথিলা- আমি তো এগুলা খাই না

মিসেস আয়মন- খেয়ে দেখনা, আমার পাগল ছেলে সকাল থেকে এতো সব আয়োজন করেছে তোর জন্য

মিথিলা আর কিছু বল্লো না, এই রকম খাবার স্বর্ন দিয়ে মেখে দিলে ও আমি খাইনা,কিন্তু না খেয়ে উপায় ও নেই উনি অনেক আশা নিয়ে এগুলা করেছে একটু তো খেতে হবে

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-১৭

0

খেলাঘর পর্ব-১৭
লেখা-সুলতানা ইতি

ইভান- এই জন্য ই তো তুমি কারো সাথে মিশতে জানো না
মিথিলা আর কিছু বল্লো না মনটা তার খারাপ হয়ে গেছে, ক্লাস সেভেনে এক্সামের সময় ইহানের সাথে আমার পরিচয়, সেদিন ম্যাথ এক্সাম ছিলো আমি আমার মতো করে এক্সাম দিচ্ছি, এই ভাবে দেড় ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পর পিছনের বেন্স থেকে কেউ একজন ফিস ফিস করে বল্লো
এই মেয়ে সব নাম্বার কি তুমি একা ই নিবে আমাদের কে একটু হেল্প করতে পারো না

মিথিলা তখন পিছনে ফিরে একটা ছেলে কে দেখতে পায় হুম এই ছেলেটা ই ছিলো ইহান,ইহান আগে ক্লাসে অনিয়মিত ছিলো কিন্তু মিথিলার সাথে পরিচিত হওয়ার পর থেকে নিয়মিত হয়ে যায়,

সেই এক্সাম হল থেকেই তাদের একটু একটু কথা আর একটু একটু বন্ধুত্ব শুরু হয় এক সময় বেষ্ট ফ্রেন্ডশিপ, এর মাঝে হৃদয় টা কখন আদান প্রদান হয়ে গেছে টের ই পায়নি কেউ,মিথিলার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায় নিশ্বাস নিতে তার কষ্ট হচ্ছে মিথিলা চোখ বন্ধ করে ফেল্লো

ইভান মিথিলা কে ছুপ হয়ে যেতে দেখে মিথিলার দিকে তাকিয়ে দেখলো মিথিলার মুখটা বিষাদময়
– কি হয়েছে মিথিলা কোন সমস্যা

মিথিলা কোন জবাব দিলো না, আজ সকালে অরনিরা এসেছিলো তাদের কাছে থেকে মিথিলা জেনেছে ইহান কোথায় ওরা জানে না সেদিন নাকি ইহান বাড়ি যায়নি,ইহানের বাবা মা সুইজারল্যান্ড তাই তাদের সাথে ও যোগাযোগ করতে পারেনি,ইহান সেদিনের পর থেকে আর কলেজে ও আসেনি বলতে বলতে অরনি কেদে দিয়েছিলো

মিথিলা অরনিকে কিছুই বলতে পারেনি সে নিজেই ইহানের লাপাত্তা হওয়া টা মেনে নিতে পারছে না

গাড়ি চলছে মিথিলার বন্ধ চোখের পাতা বেধ করে টপ টপ করে পানি পড়ছে

ইভান অবাক হলো মিথিলার অবস্থা দেখে,এই তো কথা বলছিলো এর মাঝে আবার কি হলো সেটা ই বুঝতে পারছেনা ইভান
– মিথিলা এই মিথিলা

এতো কাছে থেকে ও ইভানের কথা গুলো তার কানে প্রবেশ করছে না

ইভান বিরক্ত হয়ে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো, মেয়েটা কে খুব ইরিটিয়েড লাগে,,এই যুগে এমন বিরক্তিকর মানুষ ও আছে, কি এতো ভাবে সারা দিন কে জানে,

ইভানরা এসে পৌছে গেলো
– আমরা পৌছে গেছি,এবার তো একটু স্বাভাবিক হও,নইলে আব্বু আম্মু ভাববে আমি তোমার সাথে কি না কি করে ফেলেছি
মিথিলা কিছু বল্লো না নিঃশব্দে গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে চলে গেলো

সন্ধায় সবাই এক সাথে গল্পের আসরে বসলো
গল্পের মাঝে মাঝে খাওয়ার জন্য আছে হালকা স্নেক্স

আতাহার চৌধুরী- কেমন কাটলো শ্বশুর বাড়িতে, ভালো লেগেছে তো তোর

ইভান- হুম আব্বু খুব ভালো লেগেছে

– হুম মিঃ ফারুকি খুব ভালো মানুষ

ইভান- শালিকা টা সব ছেয়ে আগুনের গোলা আব্বু

আতাহার চৌধুরী- বাবা দু দিনেই শালিকা দুলা ভাইয়ের মন জিতে নিয়েছে দেখছি,তা ও তো তোর কপাল ভালো, আমার তো কোন শালি ছিলো না, মুন কে বিয়ে করে কপালটা ই পুড়লো

মিসেস আয়মন, অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো আতাহার চৌধুরীর দিকে
– কি বল্লে তুমি

আতাহার চৌধুরী- কিছু বলিনি তো

মিসেস আয়মন- ছেলে আর ছেলের ভয়ের সামনে ইজ্জতের ফালুদা করতে না চাইলে মুখ সামলে কথা বলবে

আতাহার চৌধুরী- মনে থাকবে,এতো রাগছো কেনো মুন
মিসেস আয়মন – যেমন বাপ তেমন ছেলে,শালির প্রশংসা করছে আমার মিথিলা কম কিসের

ইভান- যাক বাবা কি এমন বললাম।দুলা ভাই হিসেবে এই টুকু বলা যাবে না

মিথিলা ওদের মাঝে নিরব দর্শক, কোন কথা ই তার মুখে নেই,বাবা ছেলে এমন কথা ও
বলতে পারে এ তার প্রথম শুনা

ইভান- আরেহ আম্মু আব্বু শুনো ই না, নির মানে আমার শালিকা আমায় উদ্ভট একটা উপহার দিয়েছে

মিসেস আয়মন- কি রকম?

ইভান- পায়রা,সাথে অদ্ভুত একটা যুক্তি

আতাহার চৌধুরী-পায়রা? তুই কিছু বলিসনি

ইভান- আমি গফুর চাচার পায়রার পরকিয়ার গল্প টা শুনিয়ে দিয়েছি

মিসেস আয়মন-হাসতে শুরু করে
শালি দুলা ভাই, দুজনের মাথার তার লুজ আছে

ইভান- আম্মুউউ

আতাহার চৌধুরী- হয়েছে এবার কাজের কথায় আসি
সবাই হাসি বন্ধ করে গম্ভীর হলো

আতাহার চৌধুরী- তোর বিয়ের আনন্দে অফিসে তেমন একটা কাজ হয়নি, অনেক কাজ পড়ে আছে

ইভান- নো প্রব্লেম আব্বু আমি কাল থেকেই
অফিসে জয়েন করবো

মিসেস আয়মন- কাল থেকে? না না আর কয়টা দিন যাক তার পর

আতাহার চৌধুরী- আমি ও তাই চাই,কিন্তু কন্সট্রাকশান সাইটে ইভান ছিলো, এতো দিন কাজ টা বন্ধ ছিলো আর কতো দিন বন্ধ থাকবে,যেহেতু প্রথম থেকে ইভান সেখানে আছে, সেহেতু আমি গেলে এখন প্রথম থেকে কাগজ পাতি সব ঘাটতে হবে,,

ইভান- কিছু করতে হবে না কাল থেকে আমি আছি,বিয়ে করেছি বলে আর কয়দিন বসে থাকবো

মিসেস আয়মন- মিথিলা তুই কিছু বলছিস না যে

মিথিলা- আমি কি বলবো উনি যা ভালো বুঝে

মিসেস আয়নন হতাশ হলেন মিথিলা এখন ইভানের মন অব্দি পৌছতে পারেনি এর মধ্যে ইভান কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লে তো মোটে ও সময় হবে না
-তুমি না বলে ছিলে এদের হ্যানিমুনে পাঠাবে সেটার কি হলো

হ্যানিমুনের কথা শুনে মিথিলার হার্টবিট বেড়ে যায়
ইভান- আম্মু এখন ওসব ছাড় পরে যাওয়া যাবে,অফিসের কাজ গুলো গুছিয়ে নিই তার পর যাবো

মিসেস আয়মন- তোদের যেমন ইচ্ছে

ইভান- ওকে আমি ফাইল গুলো এখনি আবার দেখে নিচ্ছি তা হলে কাল আর জামেলা থাকবে না।

ইভান উঠে রুমে চলে এলো
রুমে এসে ইভান পুরোনো সব ফাইল দেখতে শুরু করলো, কিন্তু সব গুলোর মাঝে ব্ল্যাক কালারের ফাইল টা না পেয়ে খুঁজতে শুরু করলো,ওটা তো কাবার্ডের দ্বিতীয় তাকে রেখেছিলাম এখন কোথায় গেলো
ইভান কাবার্ডের দ্বিতীয় তাকে মিথিলার শাড়ি গুলো ভাজ করা দেখতে পেলো কিন্তু ফাইল নেই

ইভান- মিথিলা এই মিথিলা এই দিকে আসো তো
মিসেস আয়মনের সাথে মিথিলা বসে ছিলো, ইভান ডাকছে শুনে মিসেস আয়মন খুশি হয়ে বল্লো

যা তো মিথিলা দেখ ইভু কেনো ডাকছে তোকে
মিথিলা উঠে এলো
-ডাকছিলেন কেনো

ইভান- ব্ল্যাক কালারের ফাইল টা এখানে রাখা ছিলো এখন পাচ্ছি না।

মিথিলা- আমি কি করে জানবো

ইভান- কি করে জানবে মানে এই তাকে আমি ফাইল গুলো রেখেছিলাম এখন এই তাকে তোমার জিনিষ পত্র কিন্তু আমার ফাইল টা নেই কেনো

মিথিলা- আমি শাড়ি গুলো রাখার সময় আপনার ফাইল দেখিনি

ইভান – দেখনি মানে ইউ ইডিয়েট , এক্ষনি ফাইল টা খুজে দাও খুব ইমপ্রট্যান্ট ফাইল

মিথিলা ফাইল খুঁজতে সামনের দিকে এগুচ্ছিলো আর ইভান চিন্তিত মুখে পিছু হাটছিলো
ইভানের ধাক্কা লেগে মিথিলা পড়ে যায়,সাথে চশমা টা চোখ থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়

ইভান রেগে যায়
– ইডিয়েট দেখে হাটতে পারো না এখন ফ্লরে বসে আছো উঠো, আর ফাইল টা এক্ষুনি খুজে দেবে

কিন্তু মিথিলার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই চশমা টা ভেঙে গেছে মিথিলা সেটা নিয়ে ব্যাস্ত কাঁদছে মিথিলা চশমা টা তার কাছে মূল্যবান ছিলো,এই চশমা টা কখনো চোখ থেকে খুলবেনা কথা দিয়েছিলো ইহান কে,আজ চশমা টা ভেঙে গেলো

ইভান- এই মেয়ে একটাই চশমা ই তো বেঙেছে এতে এমন কান্নার কি আছে, এই রকম দশটা চশমা চলে আসবে আমার একটা ফোন কলে

মিথিলা কর্কশ কন্ঠে বল্লো
চশমা টা আপনার কাছে হেলা পেলা হলে ও আমার কাছে এর মূল্য আছে,সব কিছু টাকা দিয়ে বিচার করতে যাবেন না

ইভান- একদম লেকচার দিবে না উঠো বলছি
ইভানের ধমক শুনে মিথিলা উঠে দাঁড়ালো কিন্তু স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তার আগেই মিথিলা ঢলে পড়ে যাচ্ছিলো

ইভান বরাবর ই রাগি চোখেই মিথিলার দিকে তাকিয়েছিকো হঠ্যাৎ মিথিলা কে পড়ে যেতে দেখে ইভান ধরে ফেল্লো
-মিথিলা,কি হয়েছে তোমার চোখ খোল মিথিলা, মিথিলার কোন রেসপন্স না পেয়ে ইভান মিথিলাকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দিলো

ইভান রুম থেকে একটু উচ্ছ স্বরে ডাকলো
– আব্বু. আম্মু, দেখে যাও মিথিলার কি হলো যেন
মিসেস আয়মন,আর আতাহার চৌধুরী এসে মিথিলাকে সেন্সলেস হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো

কি হয়েছে মিথিলার
ইভান- জানি না আম্মু, হঠ্যাৎ ই এমন হলো

মিসেস আয়মন- বললেই হলো,এমনি এমনি কেউ কেউ সেন্সলেস হয় না মিথ্যা বলিস না

আতাহার চৌধুরী- মুন আগে বৌমার জ্ঞান ফিরাতে হবে এই সব কথা ছাড়ো এখন

মিসেস আয়মন- হুম ঠিক বলেছো ডক্টর কে ফোন করো

ইভান- আম্মু ডক্টর ডাকতে হবে না,চোখে মুখে পানি মারো দেখবে সেন্স ফিরবে

মিসেস আয়মন- ছুপ, একদম ছুপ তোর কোন কথা নেই এখানে,

আতাহার চৌধুরী- ডক্টর কে কল করলো,কিছুক্ষন পর ডক্টর এসে পড়লো
ডক্টর মিথিলা কে দেখে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে বল্লো
– ভয়ের থেকে এমন হয়েছে, আর রোগী মনে হয় টেনশন করে অনেক, সব সময় মনমরা হয়ে থাকে এই জন্য,,স্বাভাবিক ভাবে রাখতে হবে উনাকে নইলে হার্টের প্রব্লেম দেখা দিতে পারে,একটু পরে ই জ্ঞান ফিরে আসবে, কোন চিন্তা করবেন না

ডক্টর চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে মিথিলার সেন্স ফিরে আসে
মিথিলা সেন্স ফিরতেই বল্লো
– আমার চশমা টা কি ফেলে দিয়েছেন

ইভান- হুম বুয়া এসে রুম টা পরিষ্কার করে নিলো,টেনশন করো না আমি বুঝতে পেরেছি চশমা ছাড়া তুমি চলতে পারো না,,চশমা এনে দিবো তোমায়

মিথিলা ছুপ হয়ে গেলো,,চশমা টা ফেলে দিয়েছে শুনে মবে খুব কষ্ট ফেলো ইহানের কথা মনে পড়ছে অনেক,মিথিলা বিড় বিড় করে বলছে ইহান আমি তোর কথা রাখতে পারিনি

মিসেস আয়মন- মিথিলা কিছু বলছো কি
মিথিলা – না

আতাহার চৌধুরী- বৌমা তুমি কি কোন ব্যাপারে খুব চিন্তিত

মিথিলা- না আমি ঠিক আছি

মিসেস আয়মন উঠে দাঁড়ালো, ইভু বুয়ার হাতে গরম দুধ পাঠিয়ে দিচ্ছি,মিথিলা কে খাইয়ে দিস
মিসেস আয়মন চলে গেলো

ইভান কিছুক্ষন মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলো
নিজেই নিজের মনের সাথে কথা বলছে
– আমার এমন ব্যাবহার করা উচিত হয়নি মিথিলার সাথে, কয়দিন হলো মেয়েটা আসছে এখন ও তো কিছুই বুঝে উঠেনি, আমি আম্মু কে জিজ্ঞাস করলেই তো ফাইলটার সন্ধান পেয়ে যেতাম,আচ্ছা মিথিলা চশমা টা ভেংগে যাওয়াতে কষ্ট ফেলো কেনো, ওটা কি তার কাছে খুব স্পেশাল? হতে পারে

ইভান বেরিয়ে গেলো
মিথিলা এবার উঠে দাড়ালো,বুয়া অনেক আগেই দুধ দিয়ে গেছে মিথিলা পরে খাবে বলে রেখে দিয়েছে।

চশমার ভাঙা টুকরো গুলো কোথায় ফেলতে পারে ডাস্টবিন এ, কিন্তু ডাস্টবিন খুঁজে দেখতে গেলে যদি কেউ দেখে ফেলে
না তবু ও আমাকে দেখতে হবে ইহানের শেষ স্মৃতি ছিন্ন আমি ফেলে দিই কি করে

মিথিলা নিঃশব্দে হেটে ডাস্টবিনের কাছে যায় অনেক খুঁজে চশমার টুকরো গুলো পেলো,ভাগ্যিস সব গুলো টুকরো একড়া পলিথিন মুড়ানো ছিলো,এই জন্য মিথিলা নিশ্চিত ছিলো, সব গুলো ভাংগা অংশ এক জায়গা তেই আছে

মিথিলা রুমে ফিরে এলো,ভাংগা টুকরো গুলো মিলানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,চশমা ছাড়া খালি চোখে নিপুন ভাবে কোন কাজ ই করতে পারে না মিথিলা চশমার টুকরো গুলো যত্ন করে রেখে দিলো মিথিলা

ইভান অনেক রাতে এলো,মিথিলার জন্য ডজন খানেক চশমা নিয়ে

মিথিলা- এতো চশমা নিয়ে আমি কি করবো

ইভান- আমি ও এতো গুলো আনতে চাইনি, কিন্তু চশমা চুজ করতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম মনে হলো এটা না ওটা বুঝি তোমার চোখে ভালো মানাবে এভাবে সব গুলো দেখে মনে হলো এখানে সব চশমা ই তোমার চোখের জন্য পারফেক্ট

একটা করে চোখে দাও তো দেখি কোন টা তোমায় বেশি সুইট লাগবে

মিথিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে,সত্যি আমি ইভান কে বুঝতে পারছি না,এই তো কয়েক ঘন্টা আগের ইভানের সাথে এখন কার ইভানের কোন মিল নেই,
এই ইভান কে দেখে মনে হচ্ছে যুগ যুগ এর সাথে কাটিয়ে দেয়া যায়

ইভান- হা করে দেখছো কি, এসো দেখি তো এই চশমা টা পরো চোখে

ইভান নিজে মিথিলার চোখে চশমা পরিয়ে দিলো
ইভান ছেয়ে আছে মিথিলার চোখের দিকে
মিথিলা ছেয়ে আছে ইভানের চোখের দিকে আজ প্রথম বার চার চোখের মিলন হলো,আজ মিথিলা সব লজ্জা সংকোচ ভুলেই ইভানের পানে ছেয়ে আছে,হয়তো ঐ চোখে কিছু খুজছে

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-১৬

0

খেলাঘর পর্ব-১৬
লেখা- সুলতানা ইতি

পরদিন রিসেপশন পার্টি শেষে মিসেস আয়মন আর আতাহার চৌধুরী ছেলে কে বুঝিয়ে মিথিলা কে নিয়ে পাঠিয়ে দিলো মিথিলাদের বাড়ি তে

ইভান গাড়ি ড্রাইভ করছে মিথিলা তার পাশের সিটে বসে আছে
ইভানের গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আয়ানের কথা মনে হলো
– তুমি কি তোমার বাড়িতে কথা বলেছো

মিথিলা- হুম মা আর বাবার সাথে বলেছি

ইভান- কেনো তোমার ভাইয়ের সাথে বলনি,ওরা তো তোমার ব্যাপারে ভিষন পজেটিভ

মিথিলা এবার ও ছুপ থাকলো

ইভান বুঝলো মিথিলা কথা বলতে চায় না তার সাথে, আচ্ছা এখন নায়া যদি আমার সাথে থাকতো তা হলে কি হতো,হয়তো এতোক্ষনে কথা দিয়ে আমাকে পাগল করে দিতো, ইসস যদি নায়া কে পেতাম জীবনে, আম্মু বলে মিথিলা আমার জন্য বেষ্ট কিন্তু আমি তা এক বিন্দু ও ফিল করতে পারছি না,

নায়ার চোখের গভীরতা মাপা যেতো, কিন্তু এই মেয়ে সারাদিন চশমা দিয়ে চোখ ঢেকে রাখে, লাইফে এমন একজন কে ছেয়েছিলাম যার চোখের মাঝে ডুব দেয়া যায়,পেয়েছি ও তাই,কিন্তু আব্বু আম্মুর কারনে পেয়ে ও হারাতে হলো

আরেহ আরেহ গাড়ি থামান, আমরা বাড়ি ক্রস করে চলে যাচ্ছি তো

ইভান হার্ট ব্রেক কসে গাড়ি থামায়
মিথিলা টাল সামলাতে না ফেরে গাড়ির ডেস বোর্ডে মাথা ঠুকে যায়

ইভান- ইডিয়েট, সিট বেল্ট বাধনি কেনো, এখন মাথায় লেগেছে না

মিথিলা- না মানে লাগেনি তেমন, ঠিক আছি আমি

ইভান ঠিক আছে নামো আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি

মিথিলা – এখানে গাড়ি পার্ক করতে পারবেন না, এখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে আমাদের বাজার,সেখানে একটা গ্যারেজ আছে,গ্যারেজের মালিক কে টাকা দিয়ে গাড়ি সেখানেই রাখতে হবে

ইভান – ড্যাম ইট, আগে বলোনি কেনো, তা হলে আসার সময় রেখে আসতাম, এখন আবার যাবো?

মিথিলা ছুপ করে দাঁড়িয়ে আছে
ইভান- ঠিক আছে তুমি বাসায় যাও আমি গাড়ি
পার্ক করে আসছি

মিথিলা- গাড়ি এখন এখানে থাক আপনি ও আমার সাথে আসুন,পরে আয়ান কে সাথে নিয়ে গাড়ি রেখে আসবেন

ইভান- ঠিক আছে চলো

মিথিলা কে পেয়ে নির্ঝরিণী আর আয়ানের আনন্দ ধরে না
মিথিলা- কেমন আছিস তোরা
আয়ান- আপু ভালো ছিলাম না তোকে ছেড়ে,এখন ভালো আছি,

মাসুম ফারুকি বসে ইভানের সাথে কথা বলছে ঠিক কথা ও বলছে না দুজন ই ছুপ করে আছে ইভান বোর হচ্ছে,

ফাতেমা বেগম মিথিলা কে ডেকে বল্লো
– জামাইকে নাস্তা দিয়ে আয়,

মিথিলা- নির্ঝর তুই নিয়ে যা নাস্তা টা

নির্ঝরিণী নাস্তা নিয়ে গেলো
ইভান- আমি এখন কিছু খাবো না আয়ান কে ডেকে দাও, গাড়ি টা রেখে আসি

নির্ঝরিণী – দুলা ভাইয়া,শালি কিছু আনলে ফিরিয়ে দিতে নেই, একটু হলে গ্রহন করতে হয়

ইভান মৃদু হেসে বল্লো
– ফিরিয়ে দিলে কি হবে

নির্ঝরিণী – ফিরিয়ে দিলে ভিটামিন শালিস লভ এর অভাবে চোখ কানা রোগ হয়

ইভান হাসতে হাসতে গড়া গড়ি খাচ্ছে,
ওহ তুমি তো খুব মজা করে কথা বলতে পারো, আমার তো হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেলো

নির্ঝরিণী – তা ও ভালো পেট ব্যাথা হলে ওষুধ দিয়ে সারানো যায়,মন ব্যাথা হলে কি দিয়ে সারাতাম

ইভান হেসে বল্লো কেনো,শালিস লভ দিয়ে

নির্ঝরিণী – এমা ছিঃ ছিঃ এই কথা বললে মুখ বাকা হয়ে যাবে

ইভান আবার ও হাসতে শুরু করলো

নির্ঝরিণী – এবার খান, এখন তো আর মুড অফ নেই,খেয়ে ভাই কে নিয়ে কোথায় যাবেন যাইয়েন

ইভান- তোমার বাবা কোথায় গেলো

নির্ঝরিণী – বাবার এই সময় একটা ওষুধ আছে,ওষুধ খেতে গেছে

ইভান- ওহ তা হলে কি আমি একা ই খাবো?
তুমি ও খাও

নির্ঝরিণী – আমি খাবো না আয়ান কে ডেকে দিচ্ছি
খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইভান আর আয়ান বেরিয়ে পড়লো

মিথিলা আর ফাতেমা বেগম কিচেনে
ফাতেমা বেগম- হ্যারে মিথি,ও বাড়ির লোক গুলো কেমন, তোর ভালো লাগছে তো সেখানে

মিথিলা- সবাই ভালো, বেশি ভালো উনার মা বাবা, তবু ও আমার সেখানে ভালো লাগে না মা

ফাতেমা বেগম- থাকতে থাকতে ভালো লাগবে
আর কি বলছিস তুই উনার মা,শ্বাশুরি কে মা বলে ডাকতে হয় জানিস না

মিথিলা মাকে ঝড়িয়ে ধরে বল্লো মা তুমি ছাড়া কাউকে মা বলে ডাকতে হবে ভাবিনি তাই

ফাতেমা বেগম কথা শেষ করতে দিলো না মেয়ে কে
বল্লো কোন কথা নয়, কোন দিন যেন আমি এই অভিযোগ না পাই, তোর শ্বাশুরির কোন মেয়ে নেই অনেক শখ করে তোকে বউ করেছে,,

মিথিলা – জানি মা

ফাতেমা বেগম- হ্যারে জামাই কেমন,তোর সাথে কোন খারাপ আচরণ করে না তো

মায়ের কথায় মিথিলার মনের পর্দায় ভেসে উঠে ইভানের কথা গুলো,তার পর মনের কথা মনে ছেপে
বল্লো
– উনি ও খুব ভালো মা

নির্ঝরিণী আপু এদিকে এসো কথা আছে
মিথিলা আর নির্ঝরিণী বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো
মিথিলা- কি বলবি

নির্ঝরিণী – অরনি আপুরা আসবে
মিথিলা খুশি হয়ে বল্লো
-ওরা জানতো আমি আসবো

নির্ঝরিণী – আমি বলেছি আপি
মিথিলা মনে মনে অনেক খুশি ইহানের কথা জানা যাবে ওরা আসলে

ইভান আর আয়ান ফিরে এলো
ইভান এসেই মিথিলা কে ডাকতে শুরু করলো
মিথিলা কই তুমি

মিথিলা – বলুন

ইভান – প্রচণ্ড খিধা লেগেছে খেতে দাও

ইভানের কথা শুনে মিথিলা ভ্রু কুঁচকে ইভানের দিকে তাকালো

ইভান- এমন গুন্ডি মার্কা চাহনিতে ছেয়ে না থেকে যাও খাবার রেডি করো

মিথিলা ভাবছে উনার আবার কি হলো হুট হাট রেগে যাওয়া মানুষ এতো মিষ্টি কথা বলছে কেনো
– মা খাবার দিয়েছে হয়তো,যা হাকিয়ে বললেন মা আর নির্জর শুনেছে

ইভান যেতে যেতে বল্লো তোমার বোনের সঠিক নাম টা কি বলো তো

মিথিলা কিছু বলার আগে নির্ঝরিণী বল্লো দুলা ভাই আমাকে আপি নির্ঝর বলে ডাকে, রেগে গেলে পুরো নাম ধরে নির্ঝরিণীইই বলে চিৎকার দেয়, আয়ান ডাকে নির বলে,মা ডাকে নির্ঝরী
বাবা তেমন কিছু বলে না, মা বলে কথা বলে বেশি

ইভান চেয়ার টেনে বসে খেয়ে খেতে বল্লো বাবা তোমার তো নামের গোডাউন দেয়া দরকার একটা ই নাম কতো ভাগ হলো,

বাই দ্যা য়ে,তোমার আপুর রাগ আছে নাকি
নির্ঝরিণী ভয়েজ টা আরেকটু নিচু করে অনেক ফিস ফিস ভাবে বল্লো
-রাগ আছে মানে একদম ধানিলংকা,দুলা ভাই সাবধান থাকবেন, আপনার জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছে,না জানি কবে আপনি জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যান

আয়ান এসে নির্ঝরিণীর শেষের কথা টা একটু শুনতে পায়
– ও নিয়ে তুই ভাবিস না নির,দুলা ভাই জ্বললে আপুর প্রেমে জলবে, এমনি এমনি না

ইভান হাসছে আর খাচ্ছে
মিথিলা- আয়ান খেতে বসলে কথা বলতে নেই জানিস না

আয়ান ফিক করে হেসে বল্লো
– আপ্পি তুই কথা টা দুলা ভাই কে বলেছিস তাই না

মিথিলা- বেশি বুঝিস কেনো আমি তোকে বলেছি

আয়ান- কিন্তু আমি তো খাচ্ছি না আমি কথা বলতে ই পারি খাচ্ছে তো দুলা ভাইয়া

মিথিলা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো
ইভান- নির তুমি জানো না আমি কথা কম বলা পছন্দ করি না

এবার মিথিলার কপাল আর ও কঞ্চিত হয়ে গেলো
বলছে কি লোক টা, আমার বাড়িতে এসে আমার ভাই বোন কে পেয়ে তার পাখা গজিয়ে গেছে, বাড়িতে তো সারা দিন রাগ দেখায়

মিথিলা আর কিছু না বলে চলে যায়
নির্ঝরিণী – দুলা ভাই, আমার আপি টা খুব ভালো,কিন্তু একটু কষ্ট করে তাকে বুঝে নিতে হবে

ইভান- হুম তোমার মতো শালি থাকতে দুলা ভাই কেনো কষ্ট করবে তুমি বুঝিয়ে বলো বোন কে,ইভান খাওয়া শেষ করে হাত মুছে উঠে দাঁড়ালো

নির্ঝরিণী – আপু রুমে আছে যান আপনি
ইভান চলে যায়

নির্ঝরিণী – কিছু বুঝলি ভাই
আয়ান- কি বুঝবো

আপু আর ভাইয়ার মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি

আয়ান- তা ঠিক বলেছিস, এখন কি করবো আমরা

নির্ঝরিণী – কি আর করবো,

ঘুমাচ্ছে মিথিলা আর ইভান গভীর রাতে ইভানের ঘুম ভেংগে যায় প্রচণ্ড গরমে,ফ্যানের বাতাস থেকে ও গরম হাওয়া বের হচ্ছে ইভান ঘামছে বিছানা ছেড়ে উঠে এদিক সেদিক হাটতে শুরু করে, মিথিলাদের বাড়িটা পুরোনো মডেলের রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দা নেই
ইভান প্রচণ্ড বিরক্ত হচ্ছে মিথিলার উপরে
মিথিলা ঘুমাচ্ছে কোন খবর ই নেই তার পাশে একটা মানুষ ঘুমাচ্ছে না, সে কি করে ঘুমাতে পারে?
ইভান- এই মিথিলা, মিথিলা, মিথিলাআয়ায়া,

মিথিলা বেঘোর এ ঘুমাচ্ছে
ইভান একটু থেমে আবার ডাকতে শুরু করে

এই মেয়ে উঠো, মরার মতো ঘুমাচ্ছো কেনো

এবার মিথিলা উঠে বসলো ঘুম ঘুম চোখে বল্লো
– কি হয়েছে এতো রাতে ডাকছিলেন কেনো

ইভান এদিক ওদিক পায়চারি করছে,তার পর একটু থেমে বল্লো
আমি ঘুমাতে পারছি না

মিথিলা- কেনো

ইভান- ঘরে এসি নেই,আমার এসি ছাড়া ঘুমানোর অভ্যাস নেই, আমি শিতের রাতে ও এসি চালিয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাই আর এখানে গরমের মাঝে এসি নেই থাকো কি করে তোমরা

মিথিলা- দেখুন আমরা আপনাদের মতো বড় লোক নই যে ঘরে এসি লাগাবো, আমার বাবা খুব সামান্য বেতনে চাকরী করে,আর আমরা অনেক সুখিও শুধু এসির বাতাসের মধ্যে ঘুমালে কেউ সুখি হয় না

ইভান রেগে গিয়ে বল্লো
– ইডিয়েট তোমায় লেকচার দিতে বলিনি

মিথিলা ইভানের দিকে তাকিয়ে ছুপ হয়ে গেলো

ইভান- রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দা নেই কেনো

মিথিলা- জানি না ইচ্ছে হলে আপনি একটা লাগিয়ে নিন,,মিথিলা রাগি স্বরেই বলেছে

ইভান- হা তাই তো করতে হবে দেখছি, দেখে তোমাকে খুব ইনোসেন্স মনে হলে ও আসলে তুমি মোটেও ইনোসেন্স নও, একটা লোভী নইলে এমনি এমনি কি আর আমার মতো বড়লোক ছেলে কে বিয়ে করো, মিডেল ক্লাস ঘরের মেয়েরা এমন লোভী হয় এটা তো আমার জানা ই ছিলো, এরা এদের ইনোসেন্স চেহারা দেখিয়ে বড় লোকদের মন গলিয়ে নেয়, যেমন আমার বাবা মা তোমাকে দেখে হয়েছিলো, চিন্তা করো না এক সপ্তাহ এর মধ্যে তোমাদের আদিকালের এই বাড়ি টা ভেংগে নতুন করে বাড়ি বানিয়ে দিবো,,তাতে তোমার বাবা মায়ের ও লাভ হবে, আর তুমি তো এই উদ্দেশ্য নিয়ে ই বিয়ে করেছো যেন বাবা মাকে হেল্প করতে পারো

মিথিলা পুতুলের মতো বসে ইভানের কথা গুলো শুনছিলো, আর চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছিলো, মিথিলা ইভান কে কিছু না বলেই ছুপ করে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো, হয়তো কান্না লুকাচ্ছে মিথিলা

ইভান রাগে ক্ষোভে খাটের এক পাশে বসে পড়লো খুব রাগ হচ্ছে বাবা মায়ের উপর,বাকি রাত টা বসে বসেই পার করে দিয়েছে

ইভান সকাল বেলায় চলে যেতে ছেয়ে ছিলো, মাসুম ফারুকি আর ফাতেমা বেগম ঝোর করে খুব,তাই অনিচ্ছায় থেকে গেলেও শর্ত দিয়েছে বিকেলের মধ্যে চলে যাবে

সবাই শর্ত মেনে ও নিয়েছে
দুপুরে খাওয়ার পরে ইভান আর এক সেকেন্ড ও দেরি করেনি, চলে যাওয়ার জন্য রেডি হলো

নির্ঝরিণী – দুলা ভাই এই দুপুরে কেউ যায় শ্বশুর বাড়ি থেকে বলেন

ইভান- অনেক থেকেছি আর থাকতে পারবো না তা ছাড়া দুপুর কোথায় আড়াইটা বাজে বেরুতে বেরুতে তিনটা বেঝে যাবে যেতে যেতে চারটা ছুঁয়ে যাবে

নির্ঝরিণী আর কিছু বল্লো না,
মিথিলা যাওয়ার সময় মা বাবা কে ঝড়িয়ে ধরে খুব কাদলো

আয়ান- আপি আবার কবে আসবি
মিথিলা কিছু বল্লো না, সে নিজেই জানে না
আবার কবে আসতে দিবে তাকে

মিথিলা কে ছুপ করে থাকতে দেখে ইভান বল্লো
– তুমি বোন কে আসতে বললে দুলা ভাইকে বললে না যে

আয়ান- বোন আসলে দুলা ভাই না এসে আর পারবে না তাই

ইভান- বড্ড পেকে গেছো,আমরা খুব শিগ্রই আসবো বুঝলে,এখানে আমার শালা শালি কে রেখে যাচ্ছি না,ইভান হাসতে হাসতে ড্রাইভিং সিটে বসলো,যেই সিট বেল্ট বাধতে যাবে তখন ই নির্ঝরিণী কোথায় থেকে যেন দৌড়ে এসে বল্লো,গাড়ি স্ট্রাট দিবেন না প্লিজ

ইভান নির্ঝরিণী কে আসতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো

নির্ঝরিণী – এটা আপনার জন্য দুলা ভাইয়া,আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট একটা উপহার

ইভান দেখলো নির্ঝরিণীর হাতে একটা খাঁচা, আর ভিতরে দুই টা পায়রা
– পায়রা? পায়রা দিয়ে কি করবো? আর পায়রা ও কি উপহার হতে পারে

নির্ঝরিণী -গুনি জ্ঞানিরা যদি ও বলে ফুল ভালোবাসার প্রতিক, কিন্তু নির্ঝরিণী একজন বিখ্যাত গুনি মানুষ,সে রিসার্চ করে দেখলো,পায়রা হচ্ছে ভালোবাসার অন্যতম প্রতিক,

ইভান- বুঝাও

নির্ঝরিণী – এই ধরুন আপনি কবুতর গুলো পুষবেন, আর রোজ এদের ভালোবাসা ময় মুহুর্ত গুলো দেখবেন এরা পুরুষ কবুতর টা মেয়ে কবুতর টা কে খুব ভালোবাসে,আবার মেয়ে কবুতর টা ও পুরুষ কবুতর কে ভালোবাসে, এরা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারে না, এদের কে দেখে আপনাদের দুজনের মধ্যে ভালোবাসা বাড়বে

ইভান অট্টহাসি তে ফেটে পড়লো, তার পর হাসি থামিয়ে বল্লো
– শুনো গুনি মানুষ তোমায় একটা গল্প শুনাই, এই যে আমাদের বাসায় পরিচারক গফুর চাচা, পায়রা পুষতো, তো একদিন কি হলো শুনো,
এক খাঁচার পুরুষ পায়রা,অন্য খাঁচার মেয়ে পায়রার সাথে পালিয়ে গেলো(পরকিয়া)
অবশেষে দুই খাঁচা তে একা একটা পুরুষ পায়রা আর মেয়ে পায়রা ছিলো,তো তারা দুজন একা না থেকে দুজনে সংসার শুরু করলো মেয়েরা পায়রা যখন ডিম পেড়ে তা দিতে বসলো
তখন পালিয়ে যাওয়া মেয়ে পায়রা টা ফিরে এলো, এবার পুরুষ পায়রা টা তাকে প্রথমে ঠোকরা তো,পরে পরে ও দুটো বউ নিয়ে ই সংসার শুরু করলো, তার ও দু মাস পরে ফিরে আসা মেয়ে পায়রা টা, বেনামি উড়ে আসা একটা পুরুষ পায়রার সাথে ভেগে গেলো

ইভান কথা শেষ করে আবার হাসতে শুরু করলো,
নির্ঝরিণী হাসলো না মুখ টা কালো করে বল্লো
– ঠিক আছে নিতে হবে না আপনাকে

ইভান হাসি থামিয়ে বল্লো
– আরেহ আরেহ যাচ্ছো কেনো দাও আমি নিবো শালিকার দেয়া কোন জিনিষ ফিরিয়ে দিতে নাই,তা হলে ভিটামিন শালিস এর অভাবে দিল কালা রোগ হয়

এবার আয়ান নির্ঝরিণী দুজনে এক সংগে হেসে উঠলো,

ইভান পায়রা গুলো নিয়ে গাড়ির পিছনে রেখে সামনে এসে গাড়ি স্ট্রাট করলো
গাড়ি চলছে ইভানের দৃষ্টি সামনে,

ইভান- তোমার বোন তো অনেক বেশি কথা বলে আর হাসাতে ও পারে,তুমি তো দেখছি কিছুই জানো না

মিথিলা- পড়া ও ফাকি দিতে জানে

ইভান- ও তা হলে তুমি পড়া ফাঁকি দাও না

মিথিলা- মোটেও না আমি সব সময় ক্লাসের ফাষ্ট গার্ল ছিলাম, আর আমার কখনো কারো সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে হতো না,আপনা আপনিই আমার অনেক ফ্রেন্ড হয়ে যেতো

ইভান- এই জন্য ই তো তুমি কারো সাথে মিশতে জানো না

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-১৫

0

খেলাঘর পর্ব-১৫
লেখা-সুলতানা ইতি

নির্ঝরিণী কাঁদছে ভাই কে ঝড়িয়ে ধরে তাদের কান্নার তালে অন্ধকার থেকে আলো তে পরিনত হচ্ছে
আয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো নির কাঁদিস না,চল আপু কে ফোন করি

নির্ঝরিণী – এতো সকাল সকাল ফোন দেয়া টা কি ঠিক হবে তা ছাড়া আপুর তো ফোন নেই, কার ফোনে দিবি

আয়ান- আমি বিয়ের দিন এক পাকে দুলা ভাইয়ের থেকে মোবাইল নাম্বার নিয়েছি

নির্ঝরিণী – তবু ও এখন কল দেয়া ঠিক হবে না ভাই,দুলা ভাইয়া ব্যাপার টা হয় তো ভালো ভাবে নিবে না

আয়ান- তা হলে আরেকটু পরে দিবো কি বলিস
নির্ঝরিণী – সেটাই ভালো

সকাল আট টা বেজে গেছে, এ বাড়িতে সবাই এখন ও নিরব কেনো? মিথিলা বুঝতে পারছে না,,মিথিলা একটু ঘুমাতে চাইলে ও ঘুম হয়নি তার,
উঠে রুমের সব কিছু দেখতে লাগলো, ইভানের সব কিছু পরিপাটি বুঝা ই যাচ্ছে ইভান অগোছালো নয়, পুরো ইহানের উলটো,ইহান কোখন ই গোছানো ছিলো না

উফফ আবার ভাবছি ইহানের কথা, একা থাকলে ইহানের চিন্তা মাথা থেকে ফেলতে পারবো না,মিথিলা রুম থেকে বেরিয়ে কিচেন রুমের দিকে গেলো,বুয়া কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছে
বুয়া মিথিলা কে দেখে বল্লো
-বউমনি কিচেনে আসলেন কেন,আম্মা দেখলে আমাকে বকা দিবে

মিথিলা- উনারা কেউ উঠেনি

বুয়া- হুম এতোক্ষনে উঠে যাওয়ার কথা আমার নাস্তা হয়ে গেছে টেবিলে দিচ্ছি আপনি গিয়ে বসুন

মিথিলা কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলো
ফিরে এলো রুমে সবার আগে গিয়ে টেবিলে খাবারের জন্য বসে থাকবে ব্যাপার টা মিথিলার কাছে ভালো লাগেনি,ইভান তখন ও ঘুমাচ্ছিলো,
আমি কি উনাকে ডাকবো? ডাকলে যদি রেগে যায়,আবার না ডাকলে ও কেমন দেখায় নাস্তার সময় তো অনেক আগেই হয়েছে
– এই যে শুনছেন, এই যে শুনুন, উঠে পড়ুন একটু পরে নাস্তার জন্য ডাকবে হয়তো

ইভান এপাশ থেকে ওপাশে ফিরে শুলো,
মিথিলা- কি ঘুম রে ভাভা, এই যে আটটার বেশি বাজে এখন ও শুয়ে থাকবেন, উঠুন

ইভান এবার আর শুয়ে না থেকে উঠে বসলো
মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– শুনো আমার একটা নাম আছে ইভান, আম্মু আব্বু ইভু বলে ডাকে তুমি ইভান বললেই চলবে, এভাবে এই যে শুনুন এগুলা কি বলে ডাকছো দাদি মার্কা কথা সব,
আর শুনো কি আপনি আপনি করছো তুমি করে বলবা ইহান এক নিশ্বাসে কথা গুলো শেষ করে ওয়াশ রুমে গেলো

বুয়া এসে মিথিলা কে ডেকে গেলো
মিথিলার লজ্জা লাগছিলো সবার সামনে যেতে তবু ও না যেয়ে উপায় নেই, কিন্তু একা যাবো না উনি আসলে সাথে যাবো, কিন্তু উনি তো আমায় এক্ষুনি কতো গুলো কথা শুনালো, রাতে মনে হলো উনি সেদিনের ছেলেটি নয়,সকালে ধারনা চেঞ্জ করে দিলো কেমন মানুষ উনি আমি দাদি মার্কা কথা বলি

মিথিলা ঠায় দাঁড়িয়ে ভাবছে
ইভান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষন মিথিলার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে মন দিলো মিথিলা যে বাস্তব জগতে নেই সেটা ইভান খুব ভালো ভাবেই বুঝেছে ইভান মিথিলা কে না ডেকেই ডাইনিং এ চলে আসলো নাস্তা করার জন্য
মিসেস আয়মন- ইভু বৌ মা কই ঘুম থেকে উঠেনি

ইভান – রুমে আছে
আতাহার চৌধুরী- এ কেমন কথা ইভু নতুন বউ কে রুমে রেখে তুই একা নাস্তা করতে চলে এলি, যা গিয়ে বউ মা কে নিয়ে আয়

ইভান একরাশ বিরক্তি নিয়ে মিথিলা কে ডাকতে গেলো
মিথিলা তখন ও দাঁড়িয়ে ভাবছিলো
ইভান মিথিলার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বল্লো এই মিস ভাবুক কি ভাবছো এতো,

ইভানের কথায় মিথিলা চমকে উঠে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়
ইভান – তুমি তো জানতে ই নাস্তা রেডি হয়েছে তা হলে টেবিলে না গিয়ে রুমে এসে কি ভাবছিলে

মিথিলা কিছু বল্লো না
ইভান – ঠিক আছে বলতে হবে না আসো আব্বু আম্মু বসে আছে তোমার জন্য

মিথিলা আর ইভান গিয়ে পাশা পাশি চেয়ারে বসলো
আতাহার চৌধুরী- গুড মর্নিং মা
মিথিলা বিব্রত হয়ে বল্লো
মর্নিং

মিসেস আয়মন নিজ হাতে মিথিলার প্লেটে নাস্তা তুলে দিতে দিতে বল্লো, একদম লজ্জা করবে না মা এই বাড়িটা তোমার নিজের বাড়ির মতো করে থাকবে, কোন অসুবিধা হলে ইভান কে বলবে সে যদি তোমার কথা না শুনে তা হলে আমাকে বলবে তার ঘাড় তেড়ামি ছাড়িয়ে দিবো

ইভান- আম্মু এটা তুমি ঠিক করলে না,দল চেঞ্জ করলে কেনো

মিসেস আয়মন- দল চেঞ্জ করলাম কোথায়,তুই কথা না শুনলে তোকে কি এমনি এমনি ছেড়ে দিবো নাকি।

ইভান- তোমার পক্ষ পাতিত্ব কথা শুনবো না আমি

মিসেস আয়মন- তুই শুনবি তোর বাপ শুনবে
আতাহার চৌধুরী জুস খাচ্ছিলো স্ত্রী কথা শুনে উনার কাশি শুরু হলো

মিসেস আয়মন- তোমার আবার কি হলো

আতাহার চৌধুরী- আমি তো তোমার কথা শুনি তবু ও বৌমার সামনে আমার ইজ্জতের ফালুদা না করে শান্তি পাচ্ছো না তাই তো

মিসেস আয়মন- বেশ করেছি, শুনো বৌ মা, তোমাকে খুব চালাক হতে হবে, নইলে ইভান কে টাইট দিয়ে রাখতে পারবে না,পুরুষ মানুষ কে যদি কড়া শাষনে না রাখো তা হলে এরা তোমার মাথায় লবন রেখে বরই খাবে
বুঝেছো

মিথিলা আস্তে করে বল্লো
– হুম
মিসেস আয়মন- হুম কি,তুমি কিচ্ছু বুঝোনি,কোন ব্যাপার না আমি আছি তো সব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য,আর শুনো কখনো আমাকে শ্বাশুড়ি ভাববে না,মা ভাববে মায়ের থেকে বেশি বান্ধুবী ভাববে তা হলে অবলিলায় সব কথা বলতে পারবে, বুঝেছো

মিথিলা খাবার বন্ধ করে থ মেরে বসে আছে শ্বাশুড়িরা এমন হয় তার জানা ছিলো না,সবার কাছে শুনলাম শ্বাশুড়ি হয় দজ্জাল মার্কা আর ইনি তো দজ্জাল কি করে হতে হয় সেটা শিখাচ্ছে,

মিথিলার এমন অবস্থা দেখে আতাহার চৌধুরী বল্লো – বউ মা অবাক হচ্ছো তাই না,অবাক হওয়ার কিছু নেই তোমার শ্বাশুড়ি এমন ই, থাকতে থাকতে বুঝতে পারবা

তার পর আতাহার চৌধুরী ইভান কে বল্লো
– হ্যানিমুন প্ল্যান কোথায় করলি

ইভানের খাবার নাকে উঠে যায় কাশি শুরু হয়ে গেলো, তার পর পানি খেয়ে বল্লো
– আব্বু মুখে একটু লাগাম দাও, কি যে বলো তুমি

আতাহার চৌধুরী- কেনো লজ্জা পাচ্ছিস শুন,আমার তো আর ছেলে মেয়ে নেই যে তাদের মাধ্যমে তোর মনের ইচ্ছে জানবো,তাই কোন লজ্জা নয় বল হ্যানিমুনে কোথায় যাবি

ইভান – এখন ও ভাবিনি পরে ভেবে বলবো

বাবা ছেলের কথা শুনে মিথিলার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো

আতাহার চৌধুরী- ঠিক আছে দেরি হলে ও চলবে কাল তোদের রিসেপশন, তার পর তুই তোর শ্বশুর বাড়ি যাবি বউ মাকে সাথে নিয়ে আর…..

আতাহার চৌধুরী কে কথা শেষ করতে না দিয়ে ইভান বল্লো
– অসম্ভব আমি কিছুতেই ওদের বাড়িরে যেতে পারবো না

আতাহার চৌধুরী- কঠোর হয়ে বল্লো
– আমি তোর মতা মত চাইনি, আদেশ করেছি,আশা করি তুমি আমার কথা অমর্যাদা করবে না,সে শিক্ষা তোমাকে আমরা দিই নি

ইভান নাস্তা পুরো কম্পলিট না করেই বেরিয়ে যায়
মিথিলার ও আর খাওয়া হয়নি,রুমে চলে আসে ইভানের আচরণ মিথিলা কে খুব ভাবাচ্ছে, তাহলে কি ইভান বিয়েতে রাজি ছিলো না এই জন্য ই কি বিয়ের আগে রিতি অনুযায়ী আমায় দেখতে যায়নি, নাকি সাথে নেয়া হয়নি,বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে
এদিকে ইহানের ও কোন খবর পাচ্ছি না সেদিন যে রাগি লুক নিয়ে বেরিয়েছে আল্লাহ জানে কেমন আছে ইহান, অরণি সাম্মি রাহি কারো সাথে কথা বলতে পারিনি, তবু ও কোন খবর পেতাম, এখন বসে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই

ইভান বাসা থেকে বেরিয়ে নির্জন একটা জায়গায় এসে বসে পড়ে,আব্বু আম্মু কেনো এমন করেছে আমার সাথে শুধু বিয়েটা দিয়ে ওরা খান্ত হয়নি কি সব রিছুয়ালস সব মানতে হবে , একটা মাত্র সন্তান আমি তাদের আমার ইচ্ছের ও কোন দাম নেই
ইভানের মোবাইল টা বেজে যাচ্ছে আননোন নাম্বার তাই রিসিভ করছে না
বার বার কল আসছে দেখে রিসিভ করলো
রাগি কন্ঠে বল্লো
– হ্যালো কে
– আসসালামু আলাইকুম দুলা ভাই আমি আয়ান, কেমন আছেন

আয়ানের নামটা শুনে ইভান আর ও বিরক্ত হয়ে যায় তবু ও নিজেকে কন্ট্রোল করে বল্লো
– হুম বলো
– কেমন আছেন আপনি দুলা ভাই
– ভালো,তুমি কিছু বলবে?
– আপুর সাথে কথা বলবো
– আমি বাইরে বাসার নাম্বারে কল দাও এই বলে ইভান কল অফ করে দেয়

আপির সাথে কথা বলবে, ইসস মনে হচ্ছে আমি আপির সেক্রেটারি, অর্ডার করছে আমাকে,ঐ মেয়ের জন্য আমার লাইফ টা হেল হয়ে গেলো, কি পেয়েছে আব্বু আম্মু ওর মাঝে ওকেই বিয়ে করতে হবে আর কাউকে না

নির্ঝরিণী – কি বল্লো আয়ান?
মন খারাপ করে আয়ান বল্লো নির দুলা ভাইয়ার কথা গুলো ভালো মনে হলো না আমার কাছে সৌজন্যবোদ দেখালো না,আব্বু আম্মুর কথা থাক আমি কেমন আছি সেটা ও জিজ্ঞাস করেনি

নির্ঝরিণী – কি বলিস? আচ্ছা এগুলা এখন মা বাবা কে শুনানোর দরকার নাই, এম্নিতে বাবার শরির ভালো না

আয়ান -পাগল হয়েছিস এখন না বললে কখন বলবো,এগুলা গোপন করলেই কি আপু সুখি হবে

নির্ঝরিণী – দেখ সত্যি টা আমরা কেউ ই দেখিনি হয়তো দুলা ভাইয়া কোন কাজে বেশি ব্যাস্ত তাই তোর সাথে ঠিক করে কথা বলেনি

আয়ান- কি জানি,আচ্ছা যা তোর কথা ই থাক বলবো না কাউকে কিছু

মিথিলা একা একা রুমে বসে আছে মিসেস আয়ম মিথিলার কাছে এসে বল্লো
কি করছো মা

মিথিলা- কিছু না
মিসেস আয়মন চলো আমরা কথা বলি,, শ্বাশুরি বৌ মা দুজন দুজন কে বুঝতে হেল্প করি

মিথিলা কিছু বল্লো না শুধু একটু হাসলো
মিসেস আয়মন এসো আমরা বাগানে গিয়ে বসিয়

মিথিলা আর মিসেস আয়মন বাগানে এসে বসলো
মিথিলা চারিদিকে তাকাচ্ছে বাড়িটা আসলেই সুন্দর
-আপনাদের বাড়ি টা কিন্তু খুব সুন্দর

মিসেস আয়মন মুচকি হেসে বল্লো
– হুম কিন্তু তুমি মনে হয় এখন আমাদের কে তোমার ভাবতে পারোনি,, তাই বাড়িটা আমাদের না বলে আপনাদের বলেছে

মিথিলা ছুপ হয়ে গেলো মিসেস আয়মনের কথা শুনে
– শুধু তাই নয় তুমি এখন অব্দি আমাকে একবার ডাকোনি মা বলতে হবে এই জন্য

মিথিলা- আসলে ঠিক তা নয় আমি….

মিসেস আয়মন- বুঝেছি লজ্জা পাচ্ছো তাই তো,কোনন প্রব্লেম নেই সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি যখন এই বাড়িতে বউ হয়ে আসি, আমি ও তখন লজ্জা পেতাম,তোমার শ্বশুর কে তো দেখলে আমি পালিয়ে যেতাম,তবে এখন কার ছেলে মেয়েরা অন্যরকম এরা নিজেরা ই পছন্দ করে বিয়ে করতে চায়

মিসেস আয়মনের শেষের কথাটা মিথিলার মনে লাগলো, তা হলে সত্যি কি ইভান অন্য কাউকে পছন্দ করতো, আমি কি একবার জিজ্ঞাস করবো? না থাক এখন না

মিসেস আয়মন- আচ্ছা শুনো তোমাকে বৌমা বলে ডাকতে পারবো না, আমার কোন মেয়ে নেই আমি তোমাকে নাম ধরেই ডাকবো, তুই বললে তো কোন প্রব্লেম নেই তোমার

মিথিলা- আপনার যেমন টা ভালো লাগে,আমার কোন আপত্বি নেই

মিসেস আয়মন খুশি হয়ে বল্লো
– শুন মিথিল স্বামিদের আচলে বেধে রাখতে জানতে হয়,নইলে ওরা অন্যকারো আঁচলেন বাধা পড়ে যায়

মিসেস আয়মনের কথা শুনে মিথিলার বুকের ভিতর ছ্যাৎ করে উঠে, তবু এ নিজেকে সামলে নেয়
– আর তুমি যে ভাবে লজ্জা পাচ্ছো তাতে মনে হয় না তুমি আমার ইভুকে তোমার আঁচলে বাধতে পারবে,শুনো মেয়ে কেয়ারফুলি থাকবা,,হয়তো তোমাদের বিয়েটা ভালোবেসে হয়নি,কিন্তু বরকে ভালোবেসে, দাম্পত্য জীবন কে ভালোবাসা ময় করে তুলতে হয় বুঝেছো

মিথিলা মাথা নাড়ালো
– কি শুধু শুধু মাথা নাড়াচ্ছো,ইভু রুমে এসেছে যাও এখন ইভুর সাথে কথা বলো, আমরা কথা বলার জন্য অনেক সময় পাবো

মিথিলা – না মানে আমি রুমে গিয়ে কি বলবো

মিসেস আয়মন- বোকা মেয়ে কিছু বলবে না,, শুধু ওর কিছু লাগে কি না খেয়াল রাখবে,আমার যখন নতুন বিয়ে হয় তখন আমি লজ্জা পেলে ও তোমার শ্বশুর লজ্জা পেতো না, তিনি মাথায় পাকা চুল বাছতে দিতো আমাকে

মিসেস আয়মনের কথা শুনে মিথিলা হাসতে শুরু করে
মিসেস আয়মন – এই তো সব সময় এমন হাসি খুশি থাকবি বুঝেছিস,যা এখন

মিসেস আয়মন মিথিলা কে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে বসে বসে হাসছে হয়তো পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেছে তার

ইভান গাইয়েত শার্ট খুলে বিছানাই সটান হয়ে শুয়ে পড়লো, আবার কি ভেবে উঠে বসলো
এমন সময় মিথিলা রুমে এলো ইভানের দিকে চোখ পড়তেই মিথিলা পিছনে ফিরে বল্লো
ছিঃ ছি
আপুনি খালি গায়ে কেনো কিছু একটা পরে নিন

ইভান আরেহ তুমি এমন করছো যেন আমি পর পুরুষ, আমি কি দেখতে খারাপ নাকি যে তুমি ছিঃ ছিঃ করছো, ভার্সিটি তে সব মেয়ের ক্রাশ আমি ছিলাম,আবার অস্ট্রিয়া তে কতো মেয়ে আমার পিছন পিছন গুরতো,তোমার বর হিরো বুঝলে ইভান হাত দিয়ে চুলের স্টাইল করতে করতে বল্লো

মিথিলা এবার ইভানের দিকে ফিরে তাকালো ততক্ষনে ইভান গেঞ্জি পরে নিলো, মিথিলা ইভানের দিকে ছেয়ে আছে সত্যি দেখতে ইভান হিরোর মতো লম্বা ছোড়া,
বিলাইর মতো সাদা নয় তবে ফর্সা,চুলের স্টাইল টা ও দারুন ঘন চুল জেল করা, বডির মাসেল দেখে মনে হয় বক্সিন লড়তে পারবে

মিথিলা তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে
ইভান- আচ্ছা তুমি কি চশমা ছাড়া মোটে ও দেখতে পাওনা

মিথিলা এই প্রশ্নেত উত্তর টা দিতে চায় না, আবার কি বলে কথা গুরাবে সেটা ও বুঝতে পারছে না,তাই ছুপ করে দাঁড়িয়ে আছে

ইভান -এই মেয়ে তো কথা ই বলে না এর সাথে মিশবো কি করে,,আমার নায়া মুহুর্তেই সবাই কে আপন করে নেয়,,ক্লাবে ওর সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো,কিন্তু ওর সাথে পরিচিত হওয়ার পর খুব আপন মনে হয়ে ছিলো ওকে কিন্তু এ তো কথা ই বলে না

ইভান- তুমি হঠ্যাৎ রুমে এলে কিন্তু কিছু বললে না, কিছু বলবে

মিথিলা- না মানে আপনার মা,ইয়ে না মানে মা আসতে বলেছিলো

ইভান- না মানে আপনার ইয়ে মা কি শব্দ এগুলা, এতো নার্ভাস কেনো তুমি,শুনো আমি নার্ভানেস একদম পছন্দ করি, বি স্টোং ওকে

মিথিলা – মাথা নাড়ালো

ইভান-মুখে বলতে পারছো না ইডিয়েট ইভান আবার রেগে যায়,, এবার রেগে গিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে সাওয়ার নিতে শুরু করে,মাথাত উপর পানি পড়ছে
ইহান ভাবছে রেগে গেলে আব্বু বলে মাথায় পানি ডালতে এতে নাকি রাগ কমে যায়,আসলেই রাগ কমে গেছে,কিন্তু এই মেয়ে এতো কথা কম বলে যে ওর সাথে কথা বলতে গেলেই আমার মেজাজ খারাপ হবে কি করবো আমি

পরদিন রিসেপশন পার্টি শেষে মিসেস আয়মন আর আতাহার চৌধুরী ছেলেকে বুঝিয়ে মিথিলাকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠালো

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-১৪

0

খেলাঘর পর্ব-১৪
লেখা-সুলতানা ইতি

এর মাঝে আয়ান এসে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কান্না ঝুড়ে দিলো
আয়ান কাঁদছে আর বলছে আপি তুই চলে গেলে আমরা কার সাথে দুষ্টুমি করবো, কাকে রাগাবো বল, আপু তুই যাস না আমাদের ছেড়ে বাবা মা কেউ তোকে ছাড়া ভালো থাকবে না

মিথিলা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে তার চোখে অশ্রু নেই,,শুধু আয়ান কে বুকের সাথে মিশিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,

অরনিরা আয়ান কে ছাড়িয়ে মিথিলা কে নিয়ে গেলো বরের কাছে কন্যা সম্প্রদান হবে এখন,,

মিথিলার বাবা মিথিলার হাত আর ইভানের হাত এক করে বল্লো,
বাবা আজ তোমাদের চার হাত এক করে দিলাম এই হাত ছেড়ো না,,আমার মেয়েটা একটুকরো কাছা মাটি,যেমন ইচ্ছে তেমন করে গড়ে তুলো তাকে,কখনো কষ্ট ফেলে ও অভিযোগ করবে না,বাবা তুমি তো জানো কাছা মাটি কে যেমন করে তেমন ই হয়,,আমার মেয়ে ও তেমন

মাসুম ফারুকির কথা গুলো ইভান কে খুব বিরক্ত করছে
এতো প্যাচানোর কি আছে,এতো কষ্ট হলে মেয়ে বিয়ে না দিলেই পারতো কেউ তো ঝোর করে নিয়ে যাচ্ছে না মেয়ে কে,নিজেরা ই দিচ্ছে আবার নিজেরাই প্যান প্যান করছে,আসলে সব অভিনয় এতো বড় ঘরে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছে এ টুকু অভিনয় না করলে হয়?

মাসুম ফারুকি ইভানের মুখের দিকে তাকিয়ে কি বুঝলো জানি না,উনি মেয়ে কে বুকে ঝড়িয়ে কান্নায় ভেংগে পড়লো এবার আর মিথিলা নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি বাবা কে ঝড়িয়ে কান্না শুরু করে,
ফাতেমা বেগম কাছে আসতেই মিথিলা বাবা কে ছেড়ে মাকে ধরে কান্না শুরু করলো,

ইভানের বিরক্তির শেষ নেই এতো কাঁদছে কেনো সবাই, মনে হচ্ছে এটা একটা মৃত বাড়ি

মিথিলাকে সাম্মি গাড়ি তে নিয়ে বসালো মিথিলা গাড়ি থেকে বেরিয়ে নির্ঝরিণীর কাছে গিয়ে বল্লো
-শুন মন দিয়ে পড়া শুনা করবি,মা বাবার খেয়াল রাখবি আয়ানের সাথে একদম ঝগড়া করবি না,জিমি আপু ফোন করলে বলিস, আমি তার কথা খুব ভেবেছি,কেনো আসে নি সে

নির্ঝরিণী কাঁদতে কাঁদতে বল্লো আপি এসব কথা থাক এখন,
গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে রাহি এসে মিথিলার পাশে দাড়ালো, তাদের চোখের পাতা ভারি হয়ে আসছে প্রিয় বান্ধুবীর বিয়োগ তাদের কে ও কাঁদাচ্ছে,

অরণি – চল মিথিল,সবাই মিলে মিথিলা কে ইভানের পাশে বসিয়ে দিলো গাড়ি চলছে মিথিলার কান্নার গতি আর ও বাড়ছে, এই কান্না কিসের মিথিলা বুঝতে পারছে না,তবে এই টুকু বুঝতে পারছে এই চোখের পানিতে পাওয়ার ছেয়ে হারানোএ যন্ত্রনা বেশি,

মিথিলার কান্না ইভান কে ভাবাচ্ছে না,বরং ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো এতো কান্নার কি আছে,শ্বশুর বাড়ির যাচ্চো,যমের বাড়ি তো নয়, তার পর টিসু এগিয়ে দিয়ে বল্লো না ও চোখ মুছে নাও

মিথিলা ইভানের কথা শুনে অবাক হয় ভয়েজ টা পরিচিত মনে হচ্ছে কোথায় যেন শুনেছি,,কিন্তু লজ্জার কারনে তাকাতে পারছে না মিথিলা,,কাপা হাতে টিসু নিয়ে চোখ মুছে কিন্তু কান্না তখন ও থামেনি নিঃশব্দে চোখের অশ্রু ঝরছে

মিথিলা মাথা নিচু করে ঘোমটা টেনে দেয়াতে ইভান মিথিলা কে দেখতে পাচ্ছে না,কিন্তু ইভানের কাছে মিথিলা কে পরিচিত মনে হচ্ছে

গাড়ি পৌছে গেছে গন্তব্যে মিসেস আয়মন বধু বরন করে ঘরে তুললেন,
রাত এগারটা এক গাধা ফুল দিয়ে সাজানো বিছানার উপর বসে আছে মিথিলা,বিছানার চাদর টা অনেক সুন্দর,সাধার মধ্যে লাল গোলাপ আর চড়ানো ছিটানো ফুলের পাপড়ি,,

এমন সময় দরজায় শব্দ হলো
ইভান ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে খাটের এক কোনায় এসে বসলো
মিথিলা তখন ও মাথা নিচু করে বিছানারচাদর দেখছে,

ইভান কিছুক্ষন ছুপ করে থেকে মিথিলার দিকে তাকায় এখন ও বড় করে ঘোমটা দিয়ে আছে উফফ এ কেমন মেয়ে এ যুগে এমন মেয়ে আছে নাকি

ইভান হালকা করে গলা টা কেশে ইভানের উপস্থিতি জানান দিলো

কিন্তু মিথিলার মাঝে কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না

ইভান- এই যে শুনছেন, আপনি চাইলে চেঞ্জ করে আসতে পারেন, সারাক্ষন তো এই ভারি ভারী জিনিষ গুলো পরে থাকার কোন মানে হয় না

এবার মিথিলা মাথা নিচু করেই উঠে দাঁড়ালো
ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো
– আপনি অলওয়েজ মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে থাকেন নাকি

এবার মিথিলা,ভাবলো
না এটা ঠিক হচ্ছে না উনি আমার স্বামি,এখন পর্যন্ত কেউ কাউকে দেখা হয়নি এবার দেখার সময় এসেছে

মিথিলা ঘোমটা সরিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে শকড খেলো,মনে হয় তার মাথায় ভাজ পড়লো
– আপনিইইইইই

ইভান- তুমিইইইইইই
তার পর দুজনের মুখেই কোন কথা নেই

মিথিলা মনে মনে বলছে
ছিঃ এমন ছেলের সাথেই আমার বিয়েটা হতে হলো যে কিনার সাধারণ ভদ্রতার জ্ঞান টুকু রাখে না

ইভান ভাবছে
-একি সে দিনের সে মেয়েটা ইস মেয়েটা জানি আমায় কি ভাবছে,হয়তো পৃথিবীর সব থেকে খারাপ মানুষ আমি এটা ই ভাবছে

ইভান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বল্লো
– তোমার নামটা যেন কি

মিথিলা কোন উত্তর না দিয়ে ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেলো,এই রুমে এসেই সব চিনে নিয়েছে মিথিলা কোন টা ওয়াশ রুম,কোন টা বেলকনি,মিথিলা ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখে মেয়েদের প্রয়োজনীয় সব রাখা আছে সেখানে,
-যাক বাবা এগুলা খুঁজতে কোন ঝামেলা পোহাতে হলো না

ইভান- মেয়েটার কতো বড় সাহস আমার প্রশ্নের এন্সার না দিয়ে চলে গেলো,,দেখে তো পুচকি একটা মনে হয় কিন্তু জেদ আছে তা হলে,, সেদিনের জন্য কি স্যরি বলবো? দূর বলতে হবে না,
নায়ার কাছে এসব কিছু কোন ম্যাটার করতো না কিন্তু এই মেয়ে যে ফ্যামেলী তে স্ট্রাগল করেছে তাতে সেদিনের ব্যাপারটা ওর কাছে এক ভিরাট ইস্যু

ধ্যাত আমি এখন ও নায়ার কথা ভাবছি কেনো, নায়া অতিত বর্তমান নিয়ে খুশি থাকতে হবে,তাতে মা বাবা খুশি হবে কিন্তু নায়া কে ভুলবো কি করে

ইভানের ভাবনায় ছেদ পড়লো ওয়াশ রুমের দরজার খোলার শব্দে ,
ইভান ই আগ বাড়িয়ে কথা বল্লো
– শুনো তোমাকে তুমি করেই বলছি, বয়সে তুমি অনেক ছোট,আর সবাই তো বিয়ে করা বউকে তুমি ই বলে তাই না,কথা টা ইভানের গলায় আটকে আসছিলো,তবু ও বলে থামলো

মিথিলা সে দিনের সেই ছেলের সাথে আজকের এই ছেলের মিল খুঁজছে দুজন একই মানুষ হলে ও কিছু একটার যেন অমিল রয়ে গেছে

ইভান কি বলবে ভেবে না পেয়ে বল্লো
তুমি কি নাইটি পরতে লাইক করো, তা হলে পরতে পারো,ওখান টায় সব রাখা আছে হাত দিয়ে ইশারা করে ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা ব্যাগ দেখালো

এবার মিথিলা যতো টা সম্ভব চোখ বড় করে অবাক হয়ে ইভানের দিকে তাকায়

ইভান- ধ্যাত আবার কি বললাম এতো মনে হয় এগুলাতে অভ্যাস্ত নয়,ঠিক আছে পরতে হবে না মনে হয় তুমি এগুলা কে ডিজলাইক করো তাই না,
আচ্ছা তুমি কি অলওয়েজ চোখে চশমা পরে থাকো, কথা অন্য দিকে গুরানোর জন্য ইভানের এই প্রশ্ন

মিথিলা এবার ও কোন কথা না বলে খাটের অপর পাশ টায় শুয়ে পড়ে

ইভান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মিথিলার দিকে, এই মেয়ে কথা বলতে জানে না নাকি,আচ্ছা আম্মু যেন এর কি নাম বলেছে দূর মনে ও করতে পারছি না এখন,
রাত টা তাদের এ ভাবেই কেটে যায়, ইভান খাটের এক পাশে মিথিলা অন্য পাশে

মিথিলা ঘুমের ভান করলে ও ঘুমায়নি ভাবছে ইহানের কথা কি করছে সে এখন খুব কষ্ট পেয়েছে ছেলেটা
কিন্তু সে অরনি কে ভুল বুঝলো কেনো
ইহান কি সত্যি আমায় কোন দিন ক্ষমা করবে না
সাম্মি কে তো বলেছি ইভানের মাঝে ইহান কে খুঁজে নিবো কিন্তু আদৌ কি তা আমি পারবো

ফজরের আজান কানে যেতেই মিথিলা সব ভাবনা বাদ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, নাহ ইহানের কথা ভাবা ঠিক হচ্ছে না, একজনের স্ত্রী হয়ে অন্যজনকে নিয়ে ভাবা সত্যি অন্যায়,
মিথিলার নজর পড়লো ঘুমন্ত ইভানের দিকে খুব নিষ্পাপ লাগছে ঘুমন্ত ইভান কে,, কে বলবে এই ছেলে টা ই সেদিন এতো রুঢ় ব্যাবহার করে ছিলো তার সাথে

মিথিলা ভাবনা যগতে তালা দিয়ে ওযু করে নামায পড়ে নিলো
নামায পড়ে আবার একটু শুয়ে নেয়ার চিন্তা করলো
এই বাড়িতে সবাই কখন ঘুম থেকে উঠে কে জানে

নামাযের বিচানায় বসে আছে মাসুম ফারুকি,আজ মোনাজাতে অনেক কেঁদেছে মেয়েদের জন্য কাকে নিয়ে ভাববে তিনি, ছোট বোনের বিয়ে গেছে অথচ বড় বোন আসেনি ব্যাপার টা সত্যি দৃষ্টি কটু,আত্মিয় স্বজন সবাই প্রশ্ন করেছিলো জিমির না আসা নিয়ে,, কিন্তু কি করে সবাই কে বলি জিমির বর তাকে আসতে দেয়নি
ফাতেমা বেগম স্বামির পাশে এসে বসলো
কি ভাবছো এতো,প্রেসারর বাড়িয়ে ফেলবে আবার

মাসুম ফারুকি- না ভেবে উপায় আছে ফাতেমা মিথিলার বিয়েতে জিমি আসেনি দেখছো না সবাই কেমন চোখে দেখেছে আমাদের

ফাতেমা বেগম – তুমি ভেবো না জিমির সাথে আমার কথা হয়েছে,সব ঠিক আছে,,

আজ সকাল না হতেই নির্ঝরিণীর ঘুম ভেংগে যায় নির্ঝরিণী বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো বারান্দায় আগে থেকেই আয়ান দাঁড়িয়ে ছিলো
নির্ঝরিণী – ভাই তুই ঘুমাসনি

আয়ান- নির্ঝর মিথিলা আপু নেই ঘর টা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে বলতো স্টাডি রুমে যেতে ইচ্ছে করেনা,কর্নারের চেয়ার টা তে সব সময় আপু বই নিয়ে বসে থাকতো বল,আয়ান কথা বলতে বলেই কান্না শুরু করে দিলো
নির্ঝরিণী ও কাঁদছে ভাই কে ধরে
তাদের কান্নার তালে অন্ধকার থেকে আলোতে পরিনত হচ্ছে

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

.খেলাঘর…পর্ব-১৩

0
.খেলাঘর...পর্ব-১৩

.খেলাঘর…পর্ব-১৩
লেখা-সুলতানা ইতি

মিথিলা বেরিয়ে এলো কলেজ থেকে আর একটু সময় থাকলে হয়তো চোখের পানি ইহান দেখে ফেলতো
মিথিলা রিক্সা ডেকে উঠে পড়ে কোথায় যাবে জানে নেই তবে এই মুহুর্তে তার বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না, রিক্সা ওয়ালা জানতে চাইলো কোথায় যাবে.

মিথিলা- কোথায় ও না মামা এমনিতেই গুরেন তো,দেখি কোথায় গিয়ে পৌছে,,রিক্সাওয়ালা মিথিলার দিকে একবার ছেয়ে রিক্সা চালাতে শুরু করলো

অরনি- ইহান তুই ঠিক আছিস
ইহান- হুম দোস্ত ঠিক করে নিয়েছি নিজেকে
যদি ও ইহান মুখে বলে ঠিক আছে কিন্তু ভেতর টা তার ধুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে

অরনি – যাবি তুই মিথিলার বিয়ে তে
ইহান- হোয়াই নোট
অরনি- ওহ আচ্ছা

ইহান- আচ্ছা দোস্ত ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না,আমি যাই

অরনি- তুই সত্যি ঠিক আছিস তো
ইহান মিষ্টি হেসে বল্লো টেনশন নিস না দোস্ত আমি একদম ঠিক আছি

ইহান সোজা কলেজ থেকে বাড়ি চলে আসে, কোন কিছুতেই তার ভালো লাগছে না
ইহান ভাবলো
-ঘুমাতে হবে আমাকে, কিন্তু ঘুম তো আসবে না, ইহান রায়হান চৌধুরীর রুমে গিয়ে সেখান থেকে কয়েক টা ঘুমের ওষুধ এনে খেয়ে নিলো,, আজ বাসা টা ও খালি মা গেছে নানু কে দেখতে বাবা তো সারা দিন বিজনেস নিয়ে পড়ে থাকে,

খালি বাসায় নিশ্চিন্তে ঘুম দেয়া যাবে
স্কুলের অনুষ্ঠানে নির্ঝরিণী ওদের যে ছবি টা লুকিয়ে তুলেছিললো সে ছবিটা বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লো ইহান,আর তাকিয়ে থাকতে পারছে না ইহান গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে

মিথিলা রিক্সায় বসে ভাবছে আমি কি পারবো অন্য কারো সাথে সুখি হতে, ইহান যে আমায় সত্যি ভালোবাসে, ওর ভালোবাসা অবজ্ঞা করা কি ঠিক হচ্ছে,কিন্তু এখন তো সব শেষ,বাবার মান সম্মান ঝড়িয়ে পড়েছে,এখন কিচ্ছু করা যাবে না,
মিথিলা গভীর ভাবনায় তলিয়ে গেছে
হঠ্যাৎ তাদের রিক্সার সামনে একটা কার এসে ধাক্কা দিতে যেয়ে ও দেয়নি,অনেক টা হার্ডব্রেক করে গাড়ি টা থেমে যায়

রিক্সার ঝাঁকুনি তে মিথিলা বাস্তবে ফিরে এলো কার থেকে একটা ছেলে নেমে এসে, শুধু শুধু রিক্সাওয়ালা কে মারতে লাগলো

মিথিলা- আরেহ আরেহ করছেন কি উনার তো কোন দোষ নেই আপনি পাগলের মতো গাড়ি নিয়ে এসে সামনে পড়লেন

ছেলেটি রিক্সা ওয়ালা কে ছেড়ে দিয়ে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– দেখে তো বাচ্ছা একটা মেয়ে মনে হয়,আর সে কি না আসছে আমাকে শাসন করতে,

মিথিলা- স্যরি আমি আপনাকে শাসন করতে আসিনি, আপনি ভুল করছিলেন আপনার ভুল টা ধরয়ে দিতে এসেছি,আপনি মামা কে স্যরি বলুন

ছেলেটি তাচ্ছিল্য হেসে বল্লো
এই রিক্সাওয়ালা আপনার মামা,

মিথিলা- উনি আমার নিজের মায়ের ভাই না হোক, কোন না কোন মায়ের ছেলে কোন বোনের ভাই,সো সে দিক থেকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখুন

ছেলেটি রেগে গিয়ে বল্লো,এই মেয়ে ইভান চৌধুরী কে ভদ্রতা শিখাতে এসো না, সোজা নিজের পথে যাও

মিথিলা – আপনার মতো অভদ্র ছেলে তো দুনিয়াতে দেখিনি,বাবার বয়সের একজনের সাথে বেয়াদবি করেছেন আবার বড় কথা বলছেন

ইভান- এই মেয়ে একদম প্যান প্যানাবি না যা এখান থেকে নইলে, এই বলে ইভান মিথিলার হাত ধরে টানতে থাকে

মিথিলা আরেহ করছেন কি ছাড়ুন,আমি কিন্তু চিৎকার করবো

ইভান মিথিলার হাত ছেড়ে দিয়ে বল্লো ছুপ ছাপ চলে যা,আমাকে জ্ঞান দিবি না

মিথিলা আর কিছু না বলে রিক্সা ওয়ালা কে পরিমানের ছেয়ে বেশি টাকা দিয়ে বিধায় করে নিজে হাটতে থাকে

ইভান গিয়ে আবার ড্রাইভিং সিটে বসে সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে, কিছুক্ষন পর চোখ খুলে দেখলো রিক্সা ওয়ালা নেই,

ইভান- ইস কি করেছি আমি ওদের সাথে, বাসায় বাবা মা কে কিছু বলতে না ফেরে অসহায় একটা মানুষ কে অত্যাচার করলাম, আর একটা মেয়ে কে অসম্মান করে কথা বললাম ছিঃ

এখন আমি তাদের কোথায় খুঁজে পাবো,
আচ্ছা বাবা মা কি সত্যি সন্তানের ভালো চায়,তা হলে আমার বাবা মা এমন কেনো

নাকি আমার চয়েজ টা ই ভুল, উফফ কিচ্ছু ভাবতে পারছি না, ইভান কিছুক্ষন ছুপ করে থেকে মাথা ঠান্ডা করে গাড়ি স্ট্রাট দিলো
আর কারো সাথে গোল মাল করতে চায় না,গাড়ির গতি স্লো করে চালাচ্ছে

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো আজ হলুদ ছোয়া,অরনি বিকেল বেলায় এসে পড়েছে,
অরনি ইহান কে নিয়ে মিথিলার সাথে কোন কথা বলেনি যেন সে মনে মনে চাইছে মিথিলার বিয়ে টা হয়ে যাক

অরনি- মিথিলা তোর হবু বর কেমন রে
মিথিলা- জানি না,
অরণি – সে কি বিয়ে করবি আর বর কে দেখিস নি,,আচ্ছা সে কি তোকে দেখেছে
মিথিলা- মনে হয় দেখেনি

অরনি চিন্তিত চাহনিতে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– তা হলে বিয়ে হচ্ছে কেনো

মিথিলা- জানি না,বাদ দে এই সব,,ইহান কি আসবে?
অরণি – বলেছিলো আসবে, এখন ও আসছে না কেনো সেটাই কথা

মিথিলা – সাম্মি রা আজ আসবে না, তবে বিয়ের দিন ঠিক আসবে বল্লো

ইহান শোয়া থেকে উঠে বসলো
সেদিন ঘুমের ওষুধ গুলো কাজ করেছে খুব, জীবনের প্রথম ঘুমের ওষুধ খাওয়াতে ওষুধ গুলো প্রায় চার পাচ দিন শরিরে কাজ করেছিলো,পুরো তিন দিন তো ঘুমিয়ে কাটিয়েছে
ভাগ্যিস বড় লোক বাবার ঘরে জন্ম নিয়েছি,তাই তো তাদের সন্তান দের গতিবিধির উপর নজর নেই,,মিথিলার মতো কোন সুইট ফ্যামেলি তে জন্ম নিলে তো কোন আগে কান্না কাটি পড়ে যেতো
এদিক থেকে ভাগ্যবান ইহান তুই
নিজেই নিজের সাথে কথা বলছে আর তৈরী হচ্ছে মিথিলার হলুদ ছৌয়াতে যাওয়ার জন্য

হলুদ শাড়িতে মিথিলা কে কেমন লাগছে,কতো বার রিকুয়েস্ট করেছি একদিন শাড়ি পরার জন্য,,পরেনি,আজ হয়তো নীতি অনুযায়ী পরবে,,আমি ও দেখবো হয়তো এই দেখাতে কোন অধিকার থাকবে না তবু ও দেখবো
ইহান তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়লো

মিথিলার হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হতে দেরি মিথিলার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা হলুদ আর বিয়ের তত্ব নিয়ে চলে এসেছে সবাই তাদের নিয়ে ব্যাস্ত মিথিলা অরনি নির্ঝরিণী বসে আছে,কর্নারের একটা রুমে এদিকে তেমন লোকজন আসে না

এমন সময় অরনির ফোনে কল আসে
অরনি- ইহান বল কই তুই,ওহ চলে এসেছিস,, আমি নির্ঝর কে পাঠাচ্ছি

অরনি ফোন রেখে বল্লো
ইহান এসেছে নির্ঝরিণী তুমি যাও গিয়ে ইহান কে এখানে নিয়ে এসো

নির্ঝরিণী উঠে গেলো
মিথিলার বুকের ভিতর হাতুড়ি ফেটানো শুরু করলো ইহান কে কি করে ফ্যাস করবে,
ইহান রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় মিথিলার দিকে অপলক ছেয়ে আছে আজকের দিনে ও চোখ থেকে চশমা টা খোলেনি, চশমা না থাকলে চোখের গভীরতা মাপা যেতো
যেন এক হলুদ পরী বসে আছে

নির্ঝরিণী – ভাইয়া দাঁড়িয়ে পড়লেন যে আসুন
ইহান ভিতরে যায়

তার পর নানান কথার মধ্যে কেটে যায় সময়
হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়,আজ সবার মাঝে ইহান মিথিলা কে হলুদ ছোয়ানোর ছুতোয় একটু ছুঁয়ে দিলো,হয়তো এই ছোয়া টা ই জনম জনম স্মৃতি হয়ে বেছে থাকবে ইহানের মনের মাঝে, অনেক রাত অব্দি থেকে ইহান চলে আসে,অরনি থেকে যায় মিথিলার কাছে,
আজ মিথিলার দু চোখ কিছুতেই এক করতে পারেনি, ইহানের নেশা ধরানো চাহনি চোখের মাঝে ভেসে উঠছে

মিথিলা নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– এ আমি কি করছি আর কিছু ঘন্টা পর এক জনের বউ হবো,আর আমি কি না,এখন ও ইহান কে ভুলতে পারছি না,আচ্ছা ইহান কে তো কখনো ভালোবাসি বলিনি তবে কেনো আমার এতো ভয় এতো অনুশোচনা,ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে গেছে, মিথিলা আর শুয়ে না থেকে উঠে এলো

সকাল দশটায়ায় পার্লারের লোক পাঠিয়ে দিলো মিথিলার শ্বাশুড়ি একমাত্র ছেলের বিয়েতে কোন কিছুর ঘাটতি রাখতে চান না মিসেস আয়মন,তাই তো কনে সাজানোর দায়িত্ব ও তারা নিয়েছে

আজ সাম্মি রাহি ও এসেছে মিথিলার সাজানো শেষ,মিথিলার পাশে সাম্মি আর রাহি বসে আছে অরনি কি কাজে যেন বাইরে গেছে ইহান তখনো এসে পৌছয়নি

সাম্মি- মিথি তুই এটা কি করছিস তুই পারবি ইহান কে ভুলে থাকতে

মিথিলা- আমি ইহান কে ভালোবাসিনি

রাহি- কিন্তু আমরা বুঝি,তুই ইহান কে ভালোবাসিস,কিন্তু সেটা গোপন করছিস কেনো সেটা ই বুঝতে পারছি না

সাম্মি- তোর বর কি যেন নাম ওহ ইভান,তুই কি ইভানের সাথে সুখি হতে পারবি

মিথিলা অনেক্ষন ছুপ করে বল্লো
– আমি ইভানের মাঝে ইহান কে খুঁজে নিবো

রাহি- পারবি তুই, দুটি আলাদা মানুষ কে এক করতে, ভালোবেসে ইভানের সাথে সংসার করতে

মিথিলা- উফফ এতো বেশি কথা বলিস কেনো তোরা ছুপ করনা

বাহিরে হইচই শুরু হয়েছে, বর এসেছে হয়তো,,আর কিছুক্ষন পর মিথিলাদের রুমে লোক জনের ভরে গেলো,, কেউ এলো বউ দেখতে,কেউ এলো বিয়ে এজান নিতে,

মিথিলা কে কবুল বলতে বলা হয়েছে
মিথিলা চোখ বন্ধ করে আছে চোখের সামনে ইহান দাঁড়িয়ে আছে আবার চোখ খুল্লো
মিথিলার চারিদিকে তাকালো মনে হচ্ছে সব ঘুরছে

কাজি আবার কবুল বলতে বল্লো
মিথিলা কবুল বলেই অরনির কলে ঢলে পড়লো,সবার মাঝে হইচই শুরু হলো

নির্ঝরিণী – অরনি আপু মিথিলা আপুকে শুয়ে দাও দূর্বলতা থেকে এমন হয়েছে,

সাম্মি- প্লিজ সবাই এই রুম থেকে যান,, আগে জ্ঞান ফেরানো দরকার

অরনি মিথিলাকে রেখে উঠে দাঁড়ালো, নির্ঝর পানি নিয়ে এসো,ততক্ষনে রুম থেকে সবাই চলে গেছে,

নির্ঝরিণী পানি নিয়ে আসার পর মিথিলার চোখে মুখে পানি ছিটানো হয়,মিথিলার সেন্স ফিরে আসে সাম্মি তুই ঠিক আছিস

নির্ঝরিণী – আমি যাই মাকে বলে আসি আপুর জ্ঞান ফিরেছে

মিথিলা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে অরনি কে বল্লো
ইহানন এসেছে

অরনি- হুম অনেক আগেই

মিথিলা- তুই সব সময় ওর পাশে থাকিস,ওকে কখনো একা করে যাস না

অরনি- ও কি আমার কথা শুনবে

মিথিলা- আমি জানি অরু তুই ইহান কে ভালোবাসিস

মিথিলার কথা শুনে সাম্মি রাহি অবাক হয়ে অরনির দিকে তাকায়

অরণি ইতস্তত হয়ে বল্লো
– তুই কি আমার জন্য ই ইহান কে রিজেক্ট করেছিস,,

মিথিলা- জানি না রে

অরণি – আমি কিন্তু চাইতাম তোরা দুজন যেন ভালো থাকিস

মিথিলা- আর আমি ছেয়েছি কারো মনে কষ্ট না দিতে,ইহান আমাকে ভালোবাসলে ও আমি ইহান কে তার অনেক পর থেকে ভালোবাসি,কিন্তু তুই তার ও আগে থেকে ইহান কে ভালোবাসিস, তোরা ভাবতি আমি সারাক্ষন বুঝি বই নিয়ে পড়ে থাকি,কিন্তু আমি বইয়ের মাঝে ডুবে থেকে ও তোকে খেয়াল করেছি অরু,আমি ও একটা মেয়ে আমার ও মন আছে, শুনেছি মেয়েদের সিক্সত সেন্স খুবই প্রখর আমি সেই প্রখরতা দিয়ে ইহানের চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি,

আর আমি ইহানের ডাকে সাড়া দিলে তুই কষ্ট পাবি,কারন ইহান আমাকে চাইতো বলেই তুই ইহান কে বুঝতে দিতিস না,,যেদিন ইহান আমায় প্রপোজ করে সে দিন তোর চোখে আমি পানি দেখতে পাই,ইহান আমার জন্য কষ্ট ফেলে তুই ইহানের কষ্টে হাজার গুন বেশি কষ্ট পেতিস

অরনি-মিথিলা তুই আমাকে হারিয়ে দিলি,সব ধারনা ভুল প্রমান করলি,তুই কি করে পারলি, বল

মিথিলা কিছু বলতে যাবে এমন সময় রুমে ইহান এলো,ইহান ওদের সব কথাই শুনতে পায়
– বাহ খুব সুন্দর হয়েছে তোদের নাটক টা একজন বেষ্ট ফ্রেন্ডের মুখোশ পরে ছিলো আর একজন জেনে শুনে আমায় ব্যাবহার করেছে
খেলা করেছে আমার ভালোবাসা নিয়ে
তোদের দুজনের একজন কে ও আমি ক্ষমা করবো না

মিথিলা- তুই শুন…
ইহান মিথিলা কে থামিয়ে দেয়
কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি,,আমি ভাবতাম তুই ভালোবাসা বুঝিস না তোর জগতে শুধু বই নিয়ে,কিন্তু না তুই তো আসল শয়তান,সব বুঝে ইচ্ছে করে আমায় কষ্ট দিয়েছিস,তুই আমাকে অবহেলা করতি,আর আমি তত মনের এখানে তোকে জায়গা দিতাম,ভাবতাম হয়তো তুই একদিন আমার ভালোবাসায় সাড়া দিবি,কিন্তু দিলিনা,একেবারে বিয়ের কার্ড নিয়ে হাজির হলি আমার সামনে
ভেবেছি না বুঝে তুই বিয়েটা করছিস, ছুটে এলাম বধুর সাজে তোকে দেখবো বলে,ভাগ্যিস এলাম,নইলে বন্ধু নামের শক্রুদের ছিনতাম কি করে

মিথিলা- তুই অরু কে ভুল বুঝছিস ইহান

ইহান- ব্যাস আর কোন কথা নয়,মিথিলা তুই কোন দিন সুখি হবি না,একটা হৃদয়ের হাহাকার তোকে সুখি করবে না,ইহান বেরিয়ে যায়

অরু মিথিলাকে কিছু বলতে যাবে তার মাঝে গেষ্টরা চলে এসেছে,সবাই বলছে অনেক দেরি হয়ে গেছে,এবার কনে বিধায় দিতে হবে
ফাতেমা বেগম আর মাসুম ফারুকি ব্যাস্ত হয়ে উঠলো,,সব রেডি করতে
এর মাঝে আয়ান এসে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কান্না ঝুড়ে দিলো

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

মন ফড়িং ❤১২.

0

মন ফড়িং ❤

১২.

আসমা জামান রান্নাঘরে নিদ্রের জন্য খাবার তৈরি করছেন। প্রায় ১ সপ্তাহের মতো হয়েছে ছেলেটা কোনোরকমে খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তারপরও সে মুখ ফুটে কিছু বলছেনা। নিজের কষ্ট হবে তারপরও তাকে কষ্ট দিবেনা। নাজমুলের তো খোঁজ পাওয়াই দায়। এতো ড্রিংক করতে শুরু করেছে যে কোনো হুশ থাকেনা। সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায় আর রাতে নিজের ঘরে বসে এলকোহল গিলবে!
নিদ্র বেশ ক্লান্ত হয়ে বাসায় পৌঁছে দেখলো দাদী রান্নাঘরে! মনে মনে খুব খুশি হলেও ভাবভঙ্গিতে প্রকাশ না করে বললো
– দাদী এসবের কি দরকার ছিলো?
আসমা জামান ভেংচি কেটে বললেন
– আমি না করলে করবে টা কে?
– তা অবশ্য ঠিক! তা কী কী রান্না হচ্ছে?
– চিকেন স্যুপ, চিকেন ব্রোস্ট আর আপনার পছন্দের সালাদ।
নিদ্র তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো
– তাহলে আমি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসি?
– অবশ্যই। আর তোর বাবাকে ডেকে আন।
নিদ্র বেশ ক্লান্ত স্বরে বললো
– আপনার ছেলে আপনিই ডেকে আনুন।
– আমি তো ডেকেছিলাম, আমার কথা কে শোনে!
– আমি দেখছি।

গোসল সেরে চুল মুছতে মুছতে নাজমুল সাহেবের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। রুমের দরজা বন্ধ ভেতর থেকে। এর অর্থ বাবা ভেতরে!
– বাবা, চলো একসাথে খেতে বসি।
দরজায় টোকা দিয়ে কথাটা বেশ কয়েকবার বললো। কোনো।সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজায় বেশ জোরে টোকা দিতে লাগলো। বাবার কিছু হলো না তো? দিনের এই সময়টাতো সে বাসায় থাকেনা। আজকে এইসময় বাসায় তার উপর কোনো সাড়াশব্দ নেই।
নিদ্রের খুব চিন্তা হচ্ছে।
রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে দাদীকে জিজ্ঞেস করলো
– দাদী, বাবা কখন থেকে দরজা লক করে এভাবে আছে?
– সেই ১২ টা থেকে।
– আমাকে বলবে না?
– আরে ও তো এমন প্রায়ই করে।
– কিন্তু তার রুমে সাড়াশব্দ পাওয়া যায় কিন্তু আজকে একেবারেই নিখোঁজ অবস্থায় আছেন।
– সব রুমেরই তো এক্সট্রা চাবি আছে। সেটা দিয়ে খুলতেই পারিস।
– বাবার রুমের এক্সট্রা চাবি তার কাছেই রাখেন।
– তাহলে লক খোলার মিস্ত্রী নিয়ে আয়। আমি ততক্ষণে ডাকাডাকি করে দেখি।
নিদ্র দ্রুত মিস্ত্রীর খোঁজে বের হলো। আসমা জামান ছেলের চিন্তায় রান্নাবান্না বন্ধ করে তার রুমের দরজায় টোকা দিলেন। নরম স্বরে বললেন
– বাবা নাজমুল শোন তো!বাবা আয় একসাথে খেয়ে নেই। বাবা, এমন করিস না।
আসমা জামান কাঁদতে শুরু করলেন। ছেলে মরে গেছে নাকি কে জানে?
নিদ্র পাগলের মতো লোক খুঁজছে। প্রায় ১ ঘণ্টা হতে চললো কিন্তু একজন মানুষ সে পেলো না।
একজনকে বেশ চড়া ভাড়ায় পেলো। নিদ্রের জমানো ডলারের বেশ খানিকটা খরচ হয়ে গেলো। কিছুই করার নেই তার।
বাসায় এসে দাদীকে বাবার রুমের দরজার সামনে বসে কাঁদতে দেখে নিদ্র হকচকিয়ে গেলো।
আধা ঘণ্টা চেষ্টা করার পর লক খুলতে সক্ষম হলো।
দরজা খুলে নিদ্র তার বাবাকে দেখে অবাক! নাজমুল সাহেব তার রকিং চেয়ারে হাতে বই পড়ার মতো করে নিয়ে বসে আছেন। বেশ মনযোগ দিয়েই বই পড়ছেন। নিদ্র তার বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়ালো। নাজমুল সাহেব ছেলের দিকে না তাকিয়ে বললেন
– আমার বই পড়ায় বিরক্ত কেনো করছো তোমরা?
নিদ্র ঠান্ডা স্বরে বললো
– তুমি উল্টো করে বই কেনো পড়ছো কেনো বাবা?
নাজমুল সাহেব ইতস্ততভাবে বললেন
– সে তুমি বুঝবেনা। now get lost my dear son!
নাজমুল সাহেব পুরোপুরি নেশা অবস্থায় আছেন সেটা নিদ্র বুঝতে পেরে চুপচাপ রুম ছেড়ে বের হয়ে আসলো।
মিস্ত্রীকে তার ডলার বুঝিয়ে দিয়ে দাদীকে বললো
– খাবার দাও তো দাদী!
আসমা জামান রান্নাঘরে ফিরে এসে স্যুপের বাটি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

রিতা ছাদে পাটি বিছিয়ে বসে আছেন। অদ্রি ঘুমুচ্ছে আর লিলি কী করছে তার জানা নেই। মেয়েটাকে তার চোখে চোখে রাখা উচিৎ। এটা ঠিক খুব বেয়াদব মেয়েটা। কিন্তু মেয়েটার ক্ষতি হলে তার খারাপ লাগবে,খুব খারাপ লাগবে!

রশিদ সাহেব তার স্ত্রীকে বললেন
– একটা মতামত দাও তাও।
– বলো।
– নাজমুলকে দাওয়াত করলে কেমন হয়? বড়লোক মানুষ দাওয়াতে না আসলেও গিফট পাঠাবে এটা আমি শিওর।
– দাওয়াতে আসবেনা তাহলে গিফট কেনো নিবা? লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়বা!
– ছোটো মেয়েটার শ্বশুরবাড়ি তো দামী গিফট দেয়া দরকার। খোঁটা শুনতে হবে ওর। আমরা না হয় লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়লাম কিন্তু ও তো ভালো থাকুক।
– মেয়েটাও আছে এতো বড়লোক ছেলের সাথে প্রেম কেনো করতে হবে?
– প্রেম কি বলে কয়ে হয় নাকি? আর আমাদের চাওয়া তো একটাই ছেলে মেয়ে ভালো থাকুক। আর ছোটো হচ্ছি নিজেদের লোকের কাছেই। অন্ততপক্ষে ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে তো হেয় হতে হবেনা।
– তাহলে করো দাওয়াত আর অদ্রির বাসায় কবে উঠবো আমরা?
– ওই বাড়ি রঙ করাতে হবে তারপর আমরা উঠবো।
– মেয়েটাকে বিয়ে দেয়া দরকার।
– তা দরকার কিন্তু আমি তো ওকে এসব বলতে পারছিনা। তুমি একটা কাজ করতে পারবা?
– বলো!
– ওকে একটু বিয়ের কথা বলে দেইখো তো কী বলে?
– আমার সাথে তো তেমন চেনাজানা নাই। ও আমার কথায় বিরক্ত হবে।
– বিরক্ত হলেও প্রকাশ করবেনা।

অদ্রির ঘুম ভেঙে গেলো। ঘড়িতে রাত ২ টা বেজে ৪৫ মিনিট। পানির পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। টেবিলে আজকে পানি রাখা নেই। লাইট জ্বালিয়ে খুঁজে নিজের রুমে পানি না পেয়ে নিচে নামার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হলো।
অদ্রির মনে হচ্ছে নিদ্রের ঘরের দরজার সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। ওইদিকটার লাইটটা বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বালানো হচ্ছেনা। লিলিটার যে কী হয়েছে আল্লাহ জানে!

চলবে……!

© Maria Kabir

খেলাঘর পর্ব-১২

0

খেলাঘর  পর্ব-১২

লেখা-সুলতানা ইতি
মিসেস আয়মন- ছেলে আর যাই করুক আমার কথার অবাধ্য হবে না,একবার বিয়েটা হয়ে যাক দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে

আতাহার চৌধুরী- তাই যেন হয়
ভিবিন্ন কথার মাঝে তারা পৌছে গেলো বাড়িতে
মিসেস আয়মন বাড়িতে এসেই খোজ নিলো ইভান এসেছে কি না

বাড়ির পরিচারিকা জানালো এখনো আসেনি
মিসেস আয়মন ছেলে কে ফোন করলো
– কোথায় তুই ইভু তাড়া তাড়ি আয়, কথা আছে তোর সাথে,….
হুম এক্ষুনি আসবি

মিসেস আয়মন কল অফ করে আতাহার চৌধুরী কে বল্লো
– ইভু আসছে,, তুমি দেখো নিজের বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট নিজেই করবে

আতাহার চৌধুরী- তোমার ছেলে যে এক গুয়ে, আমার মনে হচ্ছে না এতো সহজে হার মানবে

মিসেস আয়মন- তা হলে বাজি ধরো,দেখি কে জিতে

আতাহার চৌধুরী- ভাভাহ আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তোমার সাথে বাজি ধরবো, কলে কৌশলে বাজিতে তুমি জিতবে

মিসেস আয়মন- তা হলে হার মানলে

আতাহার চৌধুরী- না মেনে উপায় আছে

এর মাঝে ইভান এসে গেলো
ইভান- আম্মু বলো কি বলবে

মিসেস আয়মন- বস তার পর বলছি

ইভান- বসতে পারবো না বলো

মিসেস আয়মন উঠে গিয়ে ছেলেকে এনে নিজের পাশে বসালো,,মায়েদের সেই মমতা মাখানো কন্ঠে বল্লো
– ইভু, মা,বাবা সব সময় সন্তানের ভালো চায়,জীবনের সব ছেয়ে ইমপট্যান্ট জিনিশ টা বেছে নিতে সন্তান যখন ভুল করে তখন মা বাবা ই এগিয়ে আসে, সন্তানের ভুল টা শুধরিয়ে দিতে,যেমন টা ছোট বেলায় দিতো

ইভান- কিন্তু আম্মু যাকে নিয়ে সারা জীবন কাটাতে হবে তাকে আমি পছন্দ করবো না

আতাহার চৌধুরী- অবশ্যই করবি,আমি তো বলেছি মিথিলার সাথে দেখা কর

ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো
ঐ একটা মেয়ের মাঝে তোমরা কি পেয়েছো বুঝি না,,নায়া এর ছেয়ে হাজার গুন ব্যাটার,, ঐ মিডেলক্লাস মেয়েটার মতো না

মিসেস আয়মন- দেখ বাবা নায়া পার্টি তে যায় নাইট ক্লাবে যায়,ভিবিন্ন বন্ধুদের সাথে রাত বিরাতে দেখা করে, এগুলা তোর এখন ভালো লাগলে ও বিয়ের পরে লাগবে না,তখন সংসারে অশান্তি হবে,,তুই মিথিলাকে নিজের মতো করে নিস

আতাহার চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বললেন
তুমি মিথিলাকে মিডেল ক্লাস বলছো? তোমার যোগ্য নয় বলছো? ভেবে দেখো কোন না কোন ক্ষেত্রে তুমি মিথিলার অযোগ্য,মায়ের গর্ভ থেকে কেউ যোগ্য হয়ে জন্ম নেয় না, যোগ্য করে নিতে হয়

ইভান- কিন্তু আব্বু….
মিসেস আয়মন- আর কোন কথা নয়,তোর আর মিথিলার বিয়ে আগামি মাসের পনেরো তারিখে, নিজেকে তৈরী করে নে

ইভান- তোমাদের যেমন ইচ্ছে
এই বলে ইভান নিজের রুমে চলে গেলো,মোবাইল বের করে নায়ার একটা একটা করে ফটো গুলো দেখছে,কি অপূর্ব লাগছে নায়াকে
নায়ার ফটোর দিকের তাকিয়ে থেকেই ঘুমিয়ে পড়লো ইভান

মিথিলা আজ অনেক দিন হলো কলেজে যায় না,যেতে ইচ্ছে করছে না কলেজে,রোজ রোজ ইহান কে ফ্যাস করতে পারছে না মিথিলা
মিথিলা ঠিক করেছে বাসায় বসেই পড়বে কলেজে যাবে না

অরনি কয়েকদিন কল করেছিলো মিথিলা কল রিসিভ করেনি, কাউকে রিসিভ করতে ও নিষেধ করেছে,

মিথিলা বই সামনে নিয়ে এগুলা ভাবছিলো
নির্ঝরিণী – আপি তোমার হবু শ্বাশুড়ি মা ফোন করেছে,কথা বলবে

মিথিলা- উনি কি আমার সাথে কথা বলতে চায়

নির্ঝরিণী – উনি তো ফোন করেই তোমার সাথে কথা বলতে ছেয়েছিলো,আমি মাকে ধরিয়ে দিয়ে এসেছি

মিথিলা- ওহ আচ্ছা
নির্ঝরিণী ছুটে গিয়ে আবার মোবাইল নিয়ে হাজির হলো
– আপু কথা বলো

মিথিলা মোবাইল নিয়ে
প্রথমে সালাম দিলো মিসেস আয়মন কে

মিসেস আয়মন- ভালো আছো মা,কি করছো তুমি

মিথিলা- ভালো আছি,আপনি ভালো আছেন

মিসেস আয়মন- আচ্ছা মা শুনো আমি ড্রাইভার কে পাঠিয়েছি তোমাদের বাড়িতে,বিয়ের কার্ড রেডি হয়ে গেছে,স্পেশাল ভাবে তোমার জন্য বিশ টা কার্ড পাঠিয়েছি,তোমার ফ্রেন্ডস দের ইনভাইট করার জন্য,আর বাকি গুলো তোমার বাবার কাছে দিও

শুনো মা, বিয়ের কার্ডের ডিজাইন আমার ইভান পছন্দ করেছে,তাই আর তোমাকে বলিনি,,ডিজাইন হয়তো তোমার পছন্দ হবে না,তবু ও বলছি এখন থেকে মানিয়ে নিতে শিখো

মিথিলা- ঠিক আছে আন্টি, আপনি চিন্তা করবেন না কার্ড দেখে আপনাকে বলবো

মিসেস আয়মন- পাগলি মেয়ে এখন ও আন্টি বলা হচ্ছে না,,মা কখন বলবি
মিথিলা……

মিসেস আয়মন- ওকে একবার শুধু আমার বাড়িতে নিয়ে আসি তার পর দেখবো তুই কেমন করে আমাকে মা না ডাকিস
এখন রাখছি আমি বাই

মিথিলা ফোন রেখে ভাবছে মিসেস আয়মনের কথা,,মানুষ টা খুব ই মিশুক, যে কাউকে আপন করে নিতে পারে,,

মিথিলার ভাবনায় ছেদ পড়লো মাসুম ফারুকির আগমনে
তিনি এসে মেয়ের পাশে বসলো
মিথিলা- বাবা কিছু বলবে

মাসুম ফারুকি- শুনলাম তুই কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস

মিথিলা- কে বল্লো বাবা,এমনিতেই যেতে ইচ্ছে করেনি,কাল থেকে তো যাচ্চি আবার

মাসুম ফারুকি- তোর মা বল্লো তোর নাকি মন খারাপ, কলেজে যাচ্ছিস না

মিথিলা- তেমন কিছু নয় বাবা,সব ঠিক আছে

মাসুম ফারুকি- আচ্ছা তা হলে আমি যাই আমার আবার অনেক কাজ

মিথিলা- বাবা অনেক তো হলো এবার একটু রেস্ট নাও এভাবে সারা দিন চলতে থাকলে তুমি অসুস্থ হয়ে যাবা

মাসুম ফারুকি- এই তো আর কয় বছর তার পর আয়ান বড় হয়ে গেলে ওর হাতে সব ছেড়ে দিয়ে আমি বিশ্রাম নিবো
আচ্ছা মা এখন উঠি

মাসুম ফারুকি চলে গেলেন
মিথিলা বাবার যাওয়ার পথে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার বইয়ের দিকে নজর দিলো আজ কয়দিন
পড়া ও হচ্ছে না ঠিক মতো

পরদিন মিথিলা কলেজে যেতেই ইহান অরনি ঘিরে ধরলো,এতোদিন কলেজে আসেনি কেনো তাই
অরনি- তুই তো কখনো এমন অনিয়ম করিসনি পড়ালেখার ব্যাপারে, তা হলে এখন এমন করছিস কেনো

মিথিলা- ভালো লাগেনি তাই আসিনি,

ইহান- দেখ মিথি তোর না আসার কারন যদি আমি হয়ে থাকি তা হলে বলবো তোর ভালোর জন্য আমি এই কলেজ ছেড়ে চলে যেতে রাজি আছি,

মিথিলা- তোর আর কষ্ট করতে হবে না ইহান আমি ই চলে যাচ্ছি

ইহান- মানে

মিথিলা-সামনের মাসের পনেরো তারিখে আমার বিয়ে……

মিথিলাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ইহান আর অরনি একি স্বরে বল্লো
মানেহ কি বলছিস তুই
দেখ ফাজলামি করিস না

মিথিলা- ফাজলামি নয়,এই দেখ আমার বিয়ের কার্ড,আচ্ছা অরু সাম্মি আর রাহির মোবাইল নাম্বার টা দে তো আমাকে, ওদের কে ও তো বলতে হবে

অরনির কানে মিথিলার কথা গুলো পৌছয়নি,,
অরনি মিথিলা কে ইহানের কাছে থেকে দূরে নিয়ে গেলো
– মিথি তোর মাথা ঠিক আছে, তুই কেনো ইহান কে কষ্ট দিচ্ছিস বল

মিথিলা- তোর কথার উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই,,বাই দ্যা য়ে তোরা আমার বিয়েতে এলে খুশি হবো,এতোক্ষনে ইহান মিথিলাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে

ইহান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো – অবশ্যই যাবো মিথি তোর বিয়ে আর আমি,আমরা যাবো না

মিথিলা অন্য দিকে ফিরে বল্লো
– আমি আসছি
মিথিলা বেরিয়ে এলো কলেজ থেকে আর একটু সময় থাকলে হয়তো চোখের পানি টা ইহান দেখে ফেলতো

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

দই সমাচার 

0

মিষ্টির দোকান থেকে দই কিনে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি এমন সময় এক গাড়ী পুলিশ এসে দাঁড়ালো আমার সামনে। গাড়ী থেকে নেমেই কয়েকটা পুলিশ সোজা বন্দুক আমার দিকে করে বললো, এই প্যাকেটের মধ্যে কি আছে এক্ষুনি বের করুন নাহলে আপনাকে গুলি করতে বাধ্য হবো। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। সকাল সকাল এ কি বিপদে পড়লাম রে বাবা। ভয়ে ভয়ে বললাম, স্যার এর মধ্যে বগুড়ার দই আছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে লক্ষ্য করে বললাম, স্যার আমার বিয়েশাদি হয়নাই। আপনি দয়া করে বন্দুকটা বুকের দিকে অথবা মাথার দিকে তাক করে ধরুন। ওখানে গুলি লাগলে আমি আর এই জীবনে বিয়ে করতে পারবো না। ছোটবেলা থেকে আমার বিয়ে করার খুব ইচ্ছে।

পিছন থেকে এসআই সাহেব এগিয়ে এসে বললো, মানুষের এতো ইচ্ছে থাকতে তোর এই বিয়ে করার ইচ্ছের কারণ টা কি? আমি বললাম, বিয়ের পর অনেকগুলো বাচ্চাকাচ্চা হবে। তারপর শিশুপার্কে গিয়ে এক ব্যাটার উপর প্রতিশোধ নিবো। সেদিন প্রেমিকার সাথে শিশুপার্কে গেছিলাম। এক ব্যাটা আমাদের ঢুকতে দেয়নাই। বলছে ওখানে শিশু ছাড়া ঢোকা নিষেধ।

এসআই আমার কানমলা দিয়ে বললো, পরিবার পরিকল্পনার শ্লোগান শুনিস নাই? দুইটি বাচ্চার বেশি নয়৷ একটি হলেই ভালো হয়। আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম, স্যার বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। সেইখানে আমার ৩-৪ বাচ্চাকাচ্চা আপনাদের কাছে বেশি হয়ে গেলো? এসআই ধমক দিয়ে বললো ,অই তুই চুপ থাক। বেশি কথা বলিস। ঐ কেউ একজন এর প্যাকেট খুলে দেখ ভিতরে কি আছে।

একজন এগিয়ে এসে প্যাকেট খুলে দেখে বললো, স্যার ভিতরে দই ছাড়া কিচ্ছু নাই।

এসআই বললো, দইটাও চেক করে দেখ। গাড়ির ভিতরে দেখ চামুচ আছে সেটা নিয়ে আয়।

কনস্টেবল একটা চামুচ এনে দই থেক এক চামুচ মুখে দিয়েই বললো, স্যার ফার্স্টক্লাস দই। জীবনে এমন দই খাইনাই।

এসআই বললো, কি তাই নাকি? সত্যি ভালো তো?

কনস্টেবল বললো, জ্বী স্যার। একদম খাটি দই।

এবার আমার বিশেষ যায়গায় দিকে বন্দুক তাক করে থাকা কনস্টেবল এসআইকে বললো, স্যার বউয়ের যন্ত্রণায় বাসায় মিষ্টি খাইতে পারি না। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে ওখান থেকে এক চামুচ দই খাই? খুব খাইতে ইচ্ছে করতেছে।

এসআই বললো, ঠিক আছে খা। তবে এক চামুচের বেশি খাবি না।

এরপর সেই কনস্টেবল এক চামুচ মুখে দিয়েই বললো, স্যার দই খেয়ে মুখের চুলকানি বেড়ে গেছে। আরেক চামুচ খাই স্যার?

এসআই বললো, ঠিক আছে খা।

এবার খেয়াল করে দেখলাম, সব পুলিশ সদস্যরাই এসআইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্থাৎ এরাও খেতে চায়।

আমি দৌড়ে গিয়ে সেই কনস্টেবলের হাত থেকে দইয়ের হাঁড়ি দুইটি কেড়ে নিয়ে বললাম, স্যার আর দই দেওয়া যাবে না। আপনার দুই কনস্টেবল আমার এক হাঁড়ির অর্ধেক দই শেষ করছে। আমি আর দই দিবো না।

এবার আরেক কনস্টেবল বলে উঠলো, ও ভাই আমারে এক চামুচ দই দেন না। এমন করেন কেন?

আমি রেগে গিয়ে বললাম, দেখেন ভাই। আমার আব্বা আমাকে এমনেই বিশ্বাস করে না। ভাববে আমি রাস্তায় দই খেয়ে হাঁড়ি খালি করেছি। আপনারা থাকেন আমি চালালাম।

এসআই সাহেব বললেন, “আজ নির্বাচন” জানো না?এসব প্যাকেট নিয়ে ঘুরলে পুলিশ সন্দেহ করবেই।যাইহোক, এটা কোথাকার দই?

আমি বগুড়ার দই বলে বাসার দিকে হাঁটতে লাগলাম। একবার পিছন ফিরে দেখি সবাই আমার হাতের দইয়ের প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছি বাসায় গিয়ে আব্বারে কি জবাব দিমু।

বাসার প্রায় সামনে চলে এসেছি। দেখি গলির মোড়ে কয়েকজন পুলিশ সমস্যা দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম শেষ। এবার আর আমার দই নিয়ে বাসায় যাওয়া হবে না। কোনো চিন্তা না করেই দইয়ের প্যাকেট দুইহাত দিয়ে শক্ত করে ধরে দিলাম ভৌ-দৌড়।

আমি দৌড়াচ্ছি পুলিশ সদস্যরা আমার পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে। আমি আরো জোরে দৌড়াচ্ছি। ওরাও আমার পিছু আরো জোরে দৌড়াচ্ছে। বেশকিছু দূর দৌড়ানোর পর হাল ছেড়ে দিলাম। ইতিমধ্যে উনারা আমাকে ধরে ফেললো। আবার বন্দুক আমার দিকে তাক করে বললো, সত্যি করে বল এই প্যাকেটের মধ্যে কি আছে?

আমি বললাম, আমার জীবন থাকতে বলবো না।। এর আগেরবার যে ভুল করছি সেটা আর করবো না।

একজন পুলিশ সদস্য এসে আমার কাছে থেকে দইয়ের প্যাকেট কেড়ে নিয়ে খুলে দেখে বললো, আরে এর মধ্যে তো দই।

আমি বললাম, হ্যাঁ দই।

উনি বললেন, তাহলে তুই দৌড়াচ্ছিলি কেন?

আমি রাগ নিয়ে বললাম, আপনারা মানুষের হাতে দই দেখলেই খাওয়া শুরু করেন। এই ভয়ে দৌড় দিছি।

হঠাৎ একজন পুলিশ সদস্য বললো, তোর কথা আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। চল থানায় চল।

আমি থানায় দইয়ের প্যাকেট নিয়ে বসে আছি। এরমধ্যে আব্বা এসে হাজির।

আব্বা- তুমি কি করছ? পুলিশ তোমাকে ধরছে কেন?

আমি- আব্বা আমি পুলিশকে দই খাইতে দেই নাই। তাই আমাকে ধরে নিয়ে আসছে।

আব্বা – জেলে বইসা আমার সাথে মজা করো?

আমি- আব্বা বিশ্বাস করেন আমি মজা করতেছি না।

হঠাৎ সেই এসআই এসে বললো, আরে তুই এইখানে কেন? এসআই আর আব্বাকে পরের ঘটনা সব খুলে বলতেই এসআই বললো, তোকে মুক্তি দিতে পারি এক শর্তে।।

আব্বা বললেন, কি শর্ত এসআই সাহেব?

এসআই বললেন, দইয়ের হাঁড়ি দুটো আমাকে দিতে হবে। নাহলে সাতদিন জেল খাটতে হবে।

আব্বারে বললাম, আব্বা আমার সাতদিন জেল খাটতে কোনো সমস্যা নাই। আপনি দইয়ের হাঁড়ি দুইটা নিয়ে যান।

আব্বা আমাকে ধমক দিয়ে বললো, তুই চুপ থাক হারামজাদা। এসআই সাহেব হাঁড়ি দুইটা আপনি রাখেন। তবুও আমার ছেলেরে ছাইড়া দেন।

আমি আর আব্বা থানা থেকে বের হচ্ছি। এমন সময়
এসআই সাহেব বললেন, কিছুদিন ধরে বউ রাগ করে শ্বশুর বাড়ি গেছে। আমার বউয়ের রাগ আবার বগুড়ার মিষ্টি দই ছাড়া ভাঙ্গানো যায় না।

থানার বাইরে আইসা আব্বাকে বললাম, আব্বা জোরে হাঁটেন। আব্বা বললেন, কেন? আমি বললাম, আপনি না বলছিলেন একটা টক দই আর একটা মিষ্টি দই নিতে। এরা তো মিষ্টি দইটা খাইছে টক দইটা নিচে আছে। এসআইয়ের বউ যখন টক দইয়ে মুখে দিবে তখন কি হবে একবার ভেবে দেখেছেন?

হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম আশেপাশে আব্বা নাই। কিন্তু একটু দূরে চোখ রাখতেই টের পেলাম আব্বার মতো একটা লোক দৌড়ে পালাচ্ছে।

দই সমাচার

রিফাত আহমেদ

নবনী

0

রেস্টুরেন্টের মালিক প্রায় অপমান করেই নবনী আর জাকির কে রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে দিলো। ওরা বের হয়ে যাবার সময় মালিক অন্যান্য কাস্টমার দেখে গলা উঁচু করেই বললো, আমার রেস্টুরেন্টে এসব চুমাচুমি, ধস্তাধস্তি চলবে না। হালাল ভাবে আমি রেস্টুরেন্ট চালাই। এসব বেহালাল কাজ আমার রেস্টুরেন্টে হবে না।

রাস্তায় বের হয়ে নবনী প্রায় কেঁদে ফেললো। কি হতে কি হয়ে গেলো নবনী কিছুই বুঝতে পারেনি। জাকির নবনীর পিছুপিছু হাঁটছে। ওকে কি বলবে সে নিজেও ভেবে পাচ্ছে না। আসলে ব্যাপারটা যে এরকম হবে সেটা ও নিজেও বুঝতে পারেনি।

আজবাদে কাল নবনীর সাথে জাকিরের বিয়ে হবে। নবনীর বাবাই এই বিয়ে ঠিক করেছে। এর আগেও ওরা দুইবার বাইরে দেখা করেছে। রেস্টুরেন্টে বসে বিভিন্ন গল্পগুজব করেছে। বিয়ের পর কি কি ভাবে সংসার সাজাবে। কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে সেসবই ছিল গল্পের মূল বিষয়।

আজকেও স্বাভাবিক ভাবেই ওরা রেস্টুরেন্টে এসে খাবার অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছিল। এমন সময় লোডশেডিং হয়। হঠাৎ জাকিরের মনে কি যেন হয়ে গেলো। অন্ধকারে চুপ করে নবনীর গালে চুমু খাবার সময়ই জেনারেটর চালু হয়ে গেলো। আলো জ্বলতেই সরাসরি ওদের দেখে ফেললো রেস্টুরেন্টের মালিক।

উনি এগিয়ে এসে বললেন, উঠুন আপনারা চেয়ার থেকে। এক্ষুনি আমার রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যান। রেস্টুরেন্টের অন্যান্য কাস্টমার সবাই একে অন্যের মুখ দেখাদেখি করছিল তখন। আসলে ওরাও বুঝতে পারেনি। কেন এভাবে ওদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। নবনী আর জাকির অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে।
পরিবার শিক্ষা দেয়নি নাকি? লজ্জা করেনা পাবলিক প্লেসে এসে পরপুরুষের সাথে এভাবে ঢলাঢলি করতে। মুরুব্বি মানেন না?বাড়িতে আমার নিজের ছেলে মেয়ে আছে। ওদের তো আমি কখনো এমন শিক্ষা দেইনি। কেমন বাপ মা আপনাদের? এরকম নানান কথা বলে উনি চিৎকার করে যাচ্ছেন। ততক্ষণে ওরা দুজন রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে।

নবনী বেশ অপমানিত বোধ করছে। কথাগুলো ভেবে প্রায় কেঁদেই দিলো। এতগুলো মানুষের সামনে লোকটা অপমান করে বের করে দিলো তাদের।

জাকির বারবার ডাঁকছে কিন্তু নবনীর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। কাঁদতে কাঁদতে চলে যাচ্ছে। সে এখনো বুঝতে পারছেনা এতগুলো মানুষের মধ্য থেকে কেন তাদের এভাবে অপমান করে বের করে দেয়া হলো। ঢলাঢলির কথাটা কাকে বললেন উনি। সে তো জাকিরের থেকে দূরত্ব রেখেই বসেছিলো। জাকির দ্রুত পায়ে এগিয়ে নবনীর সামনে এসে দাঁড়ায়।

~ নবনী প্লিজ শুনো, আমি সত্যিই চুমু খেতে চাইনি। এমন কোনো ইচ্ছে আমার ছিলোনা কিন্তু তখন হঠাৎ করে কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝে উঠতে পারছিনা।

~ তাহলে চুমু খেতে গেলেন কেন? নবনী দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিলো।

~ বললাম তো ভুলে। এছাড়া আজ বাদে কাল তুমি আমার স্ত্রী হতে যাচ্ছ। এভাবে ওভার রিএক্ট করার কি আছে?

~ ওভার রিএক্ট! অন্তত একবার অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন ছিলো। আমি এটা চাই কিনা। এখনো কিন্তু আপনার স্ত্রী আমি হইনি। আর আপনার স্ত্রীকে কি আপনি রাস্তাঘাটে চুমু খেয়ে বেড়াবেন?

~ ঘরের বউ যখন । অনুমতি নেয়ার কি আছে?

একথা শুনে নবনী চুপচাপ হেঁটে চলে আসে। জাকির ডাকলেও ও আর পিঁছু ফিরে তাকায়নি। জাকির বারবার কল দিচ্ছে। নবনী কলটা কেটে মোবাইল বন্ধ করে রাখে।
বাসায় এসে চুপচাপ রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। কি হতে কি হয়ে গেলো। এরকম একটা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সে প্রস্তুত ছিলো না। তাছাড়া জাকির এরকম করবে সেটাও সে ভাবতে পারেনি। বিয়েটা পারিবারিকভাবে ঠিক হয়েছে, দুদিন পরে বিয়ে তা না হয় মানলাম। তাই বলে অন্ধকারে পেয়ে চুমু খেতে হবে? একবার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করলো না? জাকির এতটাই খারাপ। ছিঃ
.
নবনীর মনে হলো সে অন্যায় করছে নিজের সাথে। নীরবতা আর রাগ কোনো কিছুর সমাধান হতে পারেনা। নবনী জাকিরকে কল করে বিকেলে তার সাথে দেখা করতে বলে। জাকির এসেই প্রথমে নবনীর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে তার ভূলের জন্য। কিন্তু নবনী দমে যাওয়ার পাত্রী না। কোনভাবেই সে জাকিরকে আর মেনে নিবেনা। জাকিরের কথা বলার এক পর্যায়ে নবনী বলে উঠে,

~ শুনুন, আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।

~ আজ বাদে কাল আমাদের বিয়ে। আর এখন তুমি আমার সাথে মশকরা করছো? নিজের এত বড় ক্ষতি করোনা নবনী।

~ নিজের ক্ষতি করতে চাইনা বলেই এ বিয়ে আমি করবো না। যে নারীদেরকে সম্মান দিতে জানেনা তার সাথে আমার যায় না।

~ বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দাও। আমরা যে সংসারটা সাজাতে চেয়েছিলাম সেটা সাজাতে দাও প্লিজ।

~ প্রথমে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে সম্মান দিতে শিখুন। যাকে বিয়ে করবেন তাকে পণ্য না ভেবে মানুষ বলে ভাবুন। তারপর সংসার সাজাবেন।

কথাগুলো বলেই নবনী ফিরে আসছে। এখন অনেক হালকা লাগছে নিজেকে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। চুপচাপ এরকম অন্যায় মেনে নেয়ার মেয়ে সে না। এ অন্যায় মেনে নেয়ার কোনো কারণও নেই। নবনী জানে, তার বাবা তাকে সাপোর্ট করবে। বাবার আদর্শেই তো সে আদর্শিত।
.
বাসায় ফিরে নবনী তার বাবার কাছে গিয়ে বলে, বাবা কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে। একটু শুনো এদিকে। নবনীর বাবা তার পাশে এসে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, কিছু বলবি?

~ আমি জাকিরকে বিয়ে করতে পারবো না বাবা। এ বিয়ে ভেঙে দিয়েছি আমি।

~ পাড়া-পড়শী সবাই জানে আজ বাদে কাল তোর বিয়ে হবে জাকিরের সাথে। আর এখন বলছিস বিয়ে করবি না। কাউকে পছন্দ করিস?

~ না

~ তাহলে বিয়ে করবিনা কেন?

~ যে পুরুষ নারীদের সম্মান করতে জানেনা তার সাথে আমার জীবন বাঁধা অসম্ভব। বাবা আমি “আলোকবর্তিকা” সংঘের সদস্য। সে সংঘ নারীকল্যাণমূলক কাজ করে। সমাজের অসহায়, অবহেলিত, নির্যাতিত নারীদের জন্য আমি কাজ করি। নারী সমাজকে এগিয়ে নেয়ার ব্রত নিয়ে পথ চলছি আমি। সেখানে নিজের সাথেই এতবড় অন্যায় আমি কিভাবে মেনে নিই বলো।

~ নবনী মা শোন, সে কি এমন করছে যার জন্য তুই একাই এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নিলি। আর যা করুক না কেন। সেটার জন্য তোর কাছে না হয় ক্ষমা চেয়ে নিবে। কিন্তু বিয়েটা ভাঙিস না মা। বিয়ে ভাঙা মেয়েদের মর্যাদা এই সমাজ দেয়না।

~ প্রাচীন সমাজের ঘুণে ধরা চাকার নিচে পিষ্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না বাবা। আমি সমাজের উল্টো পথে হাঁটি। আমার কাছে আত্নমর্যাদা সবার আগে। আমি যদি নিজেকে সম্মান না দেই তাহলে অন্যজন থেকে সম্মান প্রত্যাশা করাটা বোকামি। আর যা-ই হোক, আমি নিজেকে অপমান করতে পারবো না।

~ নবনী একটু বুঝার চেষ্টা কর। তোর বিয়ের কথা সবার জানাজানি হয়ে গেছে। পরেরবার তোকে বিয়ে দিতে হলে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে। আর যদি বিয়ে না হয় তখন আজীবন সবাই তোকে ছোট করে দেখবে। অলক্ষুণে ডাকবে। পাড়া-পড়শীর একথা ওকথা শুনে হীনম্মন্যতায় বাঁচতে হবে। পারবি?

~ আজীবন মেয়েরাই কেন এসব সহ্য করে আসবে বাবা? চিরকাল ছেলেপক্ষ বিয়ে ভেঙে যায়, মেয়েটার অবস্থা বুঝার চেষ্টা করেনা। আজ কোনো মেয়ে স্বয়ং তার বিয়ে ভাঙলো। এবার তারা একটু সহ্য করুক, বুঝুক.. বিয়ে ভাঙার যন্ত্রণা। এ বিয়ে হবেনা। ব্যস।

~ নবনী আমাদের টিকে থাকা দায় হবে এ সমাজে। রাগ, জেদ এগুলো পুরুষদের মানায়। নারীদের সর্বদা কোমল হতে হয়।

~ বাবা তুমি তো আমাকে এ শিক্ষা দাওনি। তাহলে আজ কেন নিজের বিরুদ্ধে কথা বলছো? তুমিই আমাকে শিখিয়েছো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে।

~ অনেক সময় মাথা নোয়াতে হয় মা। সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার তাগিদে।

~ আর কত বাবা? নারীরা চিরকাল মাথা নুইয়ে সব সয়েই গেছে, প্রতিবাদ করেনি। মাথা নুয়াতে নুয়াতে এখন আর নুয়াবার জায়গা নেই। কপাল মাটিতে ঠেকে গেছে। এবার একটু ঘুরে দাঁড়াই?

নবনীর কথা শুনে তার বাবা প্রায় কেঁদে ফেললো। মেয়েকে সঠিক শিক্ষা দিতে পেরেছে ভেবে গর্ব হচ্ছে। মেয়ের আত্নবিশ্বাস দেখে কলুষিত সমাজের ভয়টাও কাজ করছেনা আর।
.
আমাদের সমাজে নবনী চরিত্রের মেয়েদের খুব অভাব। এ সমাজের মেয়েরা পরিবারের জন্য চুপচাপ নিজেকে বিসর্জন দেয়। টু শব্দটি করেনা।

ঘুণেধরা সমাজে চিরকাল কন্যাপক্ষ শুধু পাত্রপক্ষের সামনে কেঁদে বুক ভাসায়। তাদের হাতে পায়ে ধরে আঁকুতি মিনতি করে। নারীরা তো দূর্বল নয়। ইসলাম নারীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে। নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্যটা আমরাই সৃষ্টি করি। নীরবে সব সয়ে অন্যের কাছে নিজেকে বলি দেওয়া কোনো যুক্তিসঙ্গত কাজ না। সবসময় সয়ে না গিয়ে কিছুসময় রুখে দাঁড়াতে হয়। বাঁচতে হলে বাঁচার মতো বাঁচুন। নিজেকে সম্মান করতে শিখুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার সাহস রাখুন।

নবনী
~

রিফাত আহমেদ

চতুষ্কোণ

0

আমাদের ক্লাসে নীলিমা নামে যে কালো মেয়েটা ছিল।রনি তাকে খুব জ্বালাতন করতো। ক্লাসে ও নীলিমাকে নাইজেরিয়ান বেগুন ছাড়া কখনো ডাকতো না। মেয়েটাকে প্রায় সময় দেখতাম রনির এমন কথা শুনে প্রচণ্ড মন খারাপ করতো। মাঝেমধ্যেই ক্লাস থেকে কাঁদো কাঁদো চোখে বেরিয়ে যেতো।

অনেকবার রনি কে বুঝিয়ে ছিলাম। দেখ কোনো মানুষকে এভাবে তার চেহারা নিয়ে খোটা দেওয়া উচিৎ না।কিন্তু রনি কখনো আমার কথা শুনেনি।বারবার এই কাজ করে গেছে।

কিন্তু আজ রনির বাবার অপারেশন করতে যে টাকা লাগছে সেটা সম্পূর্ণ দিয়েছে নীলিমার বাবা। বিনিময়ে রনিকে বিয়ে করতে হয়েছে নীলিমা মতন নাইজেরিয়ান কালো বেগুন কে।

ট্রেনে একজন হিজড়া মাসুদ সাহেবের গায়ে হাত দিয়ে কথা বলায় উনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন। নতুন বউয়ের সামনে এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন হিজড়ার গালে। থাপ্পড়ের চোটে ট্রেনের সীটের রড লেগে কপাল কেটে যায় হিজড়ার। কাঁদো কাঁদো চোখে মাসুদ সাহেবের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো হিজরাটা। তারপর, ট্রেন থেকে নামবার আগে বলে গেলে “আল্লাহ এর বিচার করবে”।

একটু আগে হিজড়ার দল এসে মাসুদ সাহেবের প্রথম সন্তান কে নিয়ে গেলো।ওরা কোথা থেকে যেন খবর পেয়েছে এই বাড়িতে একটা হিজড়া সন্তান আছে মাসুদ সাহেবের। মাসুদ সাহেবের স্ত্রী চিৎকার করে কাঁদছে। হঠাৎ মাসুদ সাহেবের সেই দিনের ট্রেনের কথা মনে পড়ে গেলো।

পলাশপুরের চেয়ারম্যান বাড়ির ছেলে জয়। কিন্তু আজ ও আত্মহত্যা করতে চলেছে। মানুষের কাছে এই মুখ ও কিভাবে দেখাবে! সবাই জয়কে এখন অন্যচোখে দেখছে। এলাকার কোনো মানুষের আর কিছু জানা বাকি নেই । সবাই জেনে গেছে জয়ের বউ জয়ের ছোট ভাইয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে গিয়ে ধরা পরেছে।

আম গাছের সাথে একটা দড়ি ঝুলছে। দড়িটাকে মালার মতো করে বানিয়ে নিজের গলায় পড়ে নিলো জয়। পায়ের নিচের চেয়ারটাকে লাথি দিতে যাবে এমন সময় কে যেন জয়ের কানে কানে বলে উঠল।” তুই বন্ধু হয়ে আমার বউয়ের সাথে এসব করতে পারলি? কি দোষ করেছিলাম আমি! যে তুই আমার বউয়ের দিকে নজর দিলি।তোকে কিছু বলার নেই।মাথার উপড়ে আল্লাহ আছে তিনি বিচার করবে “।

জয়ের হঠাৎ মনে পড়ে গেলো পাঁচ বছর আগেকার কথা। তুষারের বউয়ের সাথে জয়ের যে একটা অবৈধ সম্পর্ক ছিল সেটা তুষার জেনে গিয়েছিল। পরে লোকলজ্জার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায়।এই ঘটনা জয় আর তুষার ছাড়া কেউ জানে না। হঠাৎ নিজের অজান্তে জয় পা দিয়ে নিচের চেয়ার টা ফেলে দিলো। বারকয়েক কেঁপে উঠে ঝুলে রইলো জয়ের শরীর।

লোকাল বাসে খুব ভিড়। আবির ও ওর ছোটবোন খুব ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠে দাঁড়ালো। ভাই বোন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। হঠাৎ দুইজন ছেলের মুচকি হাসি দেখে আবির ছেলে দুটোর হাসির কারণ অনুসন্ধান করতে লাগলো। একটু পরেই আবির কারণ খুঁজে পেলো। ছেলে দুটো হাসছে আবিরের বোনকে দেখে। আবিরের বোনের পিঠে জামার গলার ফাঁক দিয়ে একটা সাদা ফিতা দেখা যাচ্ছে। মুহূর্তেই আবিরের কান রাগে লাল হয়ে উঠলো।ছেলে দুটোকে জবাই করতে ইচ্ছে হচ্ছিল আবিরের। কিন্তু লোকাল বাসে কিছু বলাও যাচ্ছে না। ছেলে দুটোর চোখ থেকে বোনকে আড়াল করে রইলো।

হঠাৎ দুটো সীট ফাঁকা হওয়াতে দুই ভাইবোন বসে পড়লো। কিন্তু আবিরের মনে মনে তখনো আগুন জ্বলছে। হঠাৎ আবিরের মনে পড়লো কয়েকদিন আগের কথা।

টিএসসিতে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিল। এমন সময় দুজন মেয়ে ওদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের একজনার পিঠের জামার গলা দিয়ে নিচের অন্তবার্সের ফিতা দেখে আবির ও ওর বন্ধুরা মিলে হাসাহাসি। অথচ মেয়ে দুইটি জানতেও পারেনি ওদের হাসির কারণ।

আজ নিজের বোনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা দেখে নিজেই নিজের গালে মনে মনে চড় মেরে চলেছে আবির।অথচ পাশে বসা বোন কিছুই বুঝতে পারছে না।

( জগৎসংসার কখনো ঋণী থাকতে চান না। যেকোনো ভাবে তার ঋণ শোধ করে দেন। যদি কেউ ভালো কাজ দিয়ে জগৎসংসার কে ঋণী করেন। তাহলে জগৎসংসার ভালো কিছু দিয়েই সেটা শোধ করবে। আর যদি খারাপ কাজ দিয়ে ঋণী করেন তাহলে…………!)

চতুষ্কোণ

রিফাত আহমেদ

লিখা: ২৩ মার্চ ২০১৮