বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1163



নষ্ট গলি পর্ব: ২২

0

নষ্ট গলি পর্ব: ২২

লেখাঃ মিম
.
নিজের রুমে দরজা আটকে খাটের এককোনায় দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেসে বসে আছে মায়া। ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। ভয়ে কুঁকড়ে আছে পুরোপুরিভাবে। কাঁপুনি এখন পর্যন্ত থামেনি। ৪০-৪৫ মিনিট আগে সোহানকে ফোন করেছিলো মায়া। সোহান ফোন রিসিভ করেই মায়ার ফোঁপানোর আওয়াজ শুনতে পেলো। মায়াকে সে শুধু এতটুকু বলতে শুনেছে
– তুমি বাসায় আসো এক্ষুণি। লোকটা বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভয় পাচ্ছি।
ব্যস এতটুকু কথা শুনেই সোহান তার মিটিং ফেলেই দৌড়ে বেরিয়ে আসলো। বাসার বাইরে কে দাঁড়িয়ে আছে? কেনো দাঁড়িয়ে আছে? কাহিনী কি এসব কিছুই জানতে চাইলো না সোহান। আপাতত জানার কোনো ইচ্ছাও নেই। কানে শুধু একটা কথাই বাজছে তুমি বাসায় আসো এক্ষুণি। সোহান এতটুকুই বুঝতে পারছে মায়ার তাকে এখন খুব প্রয়োজন।।
সালমান বাহির থেকে কয়েকবার মায়াকে ডেকেছে। কোনো উত্তর দেয়নি মায়া। রাস্তার প্রচন্ড জ্যাম ঠেলে ঠিক ৪৮ মিনিট ১৩ সেকেন্ড পর সোহান বাসায় পা রাখলো। মায়ার রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে সে।
– মায়া আমি এসেছি। গেটটা খুলো।
সোহানের গলার আওয়াজ পেয়ে জানে পানি ফিরে এলো মায়ার। পড়িমরি করে দৌড়ে যেয়ে গেট খুলে দিলো মায়া। সোহানকে দেখে ঠোঁট ভেঙে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো সে। মায়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সোহান।
– এই মেয়ে, কাঁদছো কেনো এভাবে?
-…………..
– আসো, খাটে এসে বসো। সালমান পানি নিয়ে আয় তো একগ্লাস।
মায়ার অবস্থা দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে সোহান। পরিস্থিতি কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই মাথায় আসছে না সালমানের। মাথাটা চুল্কাচ্ছে প্রচন্ড রকমে। বিশ্রি পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। গ্লাস হাতে নিয়ে মায়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সালমান। সোহান বহুভাবে মায়াকে সামলাতে চাচ্ছে। কিন্তু কোনাভাবেই কূল কিনারা করতে পারছেনা। মায়া কেঁদেই চলছে। একেবারে হেঁচকি তুলে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে। এবার মেজাজ খারাপ হচ্ছে সোহানের। কিন্তু রাগ দেখানোটা হবে বোকামী। এমনিতেই ভয়ে জান চলে যাচ্ছে মেয়েটার। এবার সোহান রাগ দেখালে তো একেবারে বেহুঁশ হয়ে যাবে।
– মায়া আমার কিন্তু আর ভালো লাগছে না। তুমি বলবে কি হয়েছে?
-………….
– কোথায় গিয়েছিলি ওকে নিয়ে?
– শিমুর সাথে দেখা করাতে।
– কি হয়েছে ওখানে?
– একটা লোক মায়ার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলো মনে হচ্ছিলো লোকটা মায়াকে চিনে। ওকে দেখে হাসছিলো মিটমিট করে। মায়া লোকটাকে দেখার পর থেকে ওর অবস্থা নাজেহাল হয়ে গেছে।
সোহানের বুঝতে বাকি নেই লোকটা কে ছিলো? মায়ার কাস্টমারদের মধ্যে কেউ একজন হবে হয়তো। সালমানকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে। মায়ার সাথে এক্ষুনি এ ব্যাপারে কথা বলাটা অতি জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
– ইয়ে, সালমান তুই গ্লাসটা এখানে রেখে একটু তোর রুমে যা। আমি ওর সাথে কিছু কথা বলবো।
– সিউর।
গ্লাসটা বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সালমান৷ যাওয়ার সময় গেটটা আটকে দিয়ে গেলো। মায়ার গাল চোখ মুছে দিতে দিতে বললো,
– মায়া প্লিজ কান্নাটা থামাও। কে এসেছিলো আমাকে বলো।
– ইমন।
– তোমার কাস্টমার?
– হ্যাঁ।
– এমন জমের মতো ভয় পাচ্ছো কেনো লোকটাকে?
– সে খুব জঘন্য একজন মানুষ। এই লোকটা একদম শুরু থেকে আমার কাছে আসতো। মাঝে আট নয় মাস বিদেশ ছিলো কি একটা কাজে। প্রতি সপ্তাহে তিনদিন করে আমার এখানে আসতো। কি যে অত্যাচার করতো সারাটা রাত ধরে কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না৷ আর কারো কাছে যেতো না। শুধু আমার কাছেই আসতো। জোনাকি বুবু অনেক টাকা হাতিয়েছে এই লোকের কাছ থেকে। বিদেশ যাওয়ার আগে লোকটা জোর করে আমার….
– তোমার কি?
– আম…. আমার ভিডিও বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো।
কথাটা বলেঔ আবার কাঁদতে লাগলো মায়া। ওর কাঁধে হালকা থাপ্পড় দিয়ে সোহান বললো,
– গাধার মতো কাঁদছো কেনো? চুপ করো তো।
– ভিডিওটা করার পর আমাকে বলেছিলো সাত আটমাস তো তোমাকে পাবো না তাই ভিডিওটা নিয়ে যাচ্ছি।
– মেন্টালি সিক নাকি?
– বলতে পারেন অনেকটা তেমনই। উনার আচরনগুলো কেমন যেনো। অস্বাভাবিক ধাঁচের।
– মাইর খেলেই মাথা থেকে ভূত নিচে নেমে যাবে৷ এসব ফালতু লোকের ভয়ে তুমি এভাবে কাঁদছো? আশ্চর্য! সে কি তোমাকে খেয়ে ফেলবে? ওর সাহস আছে তোমাকে কিছু করার? দূর থেকে তোমাকে দেখতেই পারবে। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারবে না৷
– আপনি বুঝতে পারছেন না৷ লোকটা খুব খারাপ।
– বি স্ট্রং মায়া। তুমি ঐ নষ্ট জায়গা থেকে এখানে এসেছো। এই সমাজে তোমার সারভাইভ করাটা অতটাও সহজ হবে না৷ তোমার অতীত কোনো না কোনো ভাবে তোমার সামনে আসবেই৷ তুমি না চাইলেও আসবে৷ সিচুয়েশান হ্যান্ডেল করতে শিখো। আমি সবসময় তোমাকে সেইভ করার জন্য থাকবো না। আমি তোমাকে সাপোর্ট দিতে পারবো। কিন্তু তোমার যুদ্ধ তোমাকেই সামাল দিতে হবে। আগামীকাল তোমার দোকানের উদ্বোধন করবো। তোমার উপর ব্যবসায়ের ভার দিবো। সেই তুমি যদি এভাবে ঘাবড়ে যাও তাহলে কিভাবে হবে? এভাবে ভয় পেলে তুমি কখনোই একটা নরমাল লাইফ লিড করতে পারবে না। নিজের লাইফ, ক্যারিয়ার কিছুই সাজাতে পারবে না। নাউ ইটস ইউর ডিসিশন। তুমি কি আমাকে নিয়ে ভালোভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাও নাকি ভয়ে কুঁকড়ে বাকি জীবনটা কাটাতে চাও?
-…………..
– উত্তর দাও মায়া।
– মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই।
– তাহলে এসব ইমন টিমন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো৷ শুধু নিজের ক্যারিয়ার আর আমার দিকে কনসেনট্রেট করো। কে তোমার পিছু নিলো, কে তোমাকে দেখে হাসলো এসব ভেবে মাথা খারাপ করো না।
-………….
– চেহারার কি হাল করেছো! চোখ মুখ ফুলে একদম ভূতের মতো দেখাচ্ছে তোমাকে৷ যাও মুখ ধুয়ে আসো৷
-…………..
– কি হলো? যাও।
চোখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুমে গেলো মায়া। ওকে সান্ত্বনা দিলেও সোহান নিজেই শান্ত হতে পারছেনা৷ মনের মধ্যে উশখুশ চলছে ভিডিওটা নিয়ে৷ ভিডিওটা যেভাবে হোক ডিলিট করাতে হবে। আর এই ইমনের একটা ব্যবস্থা করতে হবে যাতে মায়া নামক ভূত মাথা থেকে নেমে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো সোহান। কেউ জানাজানি হওয়ার আগেই পুরো ব্যাপারটা ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
চলবে,,,,,

নষ্ট গলি পর্ব: ২১

0

নষ্ট গলি পর্ব: ২১

লেখাঃ মিম
.
পরদিন বিকালে ইজি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা হিসেব মিলাচ্ছেন সোহানের বাবা নজরুল সাহেব। গতরাতে সালমানও যখন ফোন রিসিভ করলো না তখন তিনি ফোন করলেন অফিসের ম্যানেজার ইকবালকে। ইকবাল তার যথেষ্ট বিশ্বস্ত কর্মচারী। ইকবালকে দিয়ে সব খবর বের করা যাবে সেই আশায় তিনি ফোন দিলেন। গতরাতে ফোনে যা শুনলেন তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। কান বন্ধ হয়ে আসছিলো তার। এমনকি এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে উনি বধীর হয়ে আছেন। যথেষ্ঠ ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারটা সামাল দিতে হবে। ম্যানেজারপর ভাষ্যমতে সোহান পুরোপুরি এই মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। সোহানের সাথে এই ব্যাপারে কোনো কথা বলা মানেই অহেতুক সময় নষ্ট করা। ছেলের সাথে কথা বলে কোনো প্রকারের কূল কিনারা করতে পারবেন না সেকথা নজরুল সাহেব ভালোই জানেন। ছেলে তো তার কথা শুনবেই না, উল্টো ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে মেয়েকে সাথে নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমাবে। পরে এতবড় ব্যবসা সামাল কে দিবে? সালমানকে দিয়ে তেমন একটা ভরসা পান না নজরুল সাহেব৷ সোহানের বিজনেস পলিসি একদম হিংসে করার মতো। মাঝেমাঝে নিজের ছেলেকেই হিংসে হয় নজরুল সাহেবের। আবার গর্বও হয় খুব। সোহান বিজনেস জয়েন করার পর থেকে লাভের হার বেড়েছে তিনগুন। এই ছেলেকে হাতছাড়া করাটা হবে পুরোপুরি বোকামি৷ এতবড় বোকা নজরুল সাহেব নন। যা করার আড়াল থেকে করতে হবে৷ তিনি কিছুই জানেন না এমন ভাব নিয়ে বসে থাকতে হবে৷ বিশেষ করে সোহানের মায়ের কানে তো ভুলেও এ কথা দেয়া যাবে না। সে জানলে আজই ছেলের বাসায় যেয়ে ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেলবে। মাথাটা ভনভন করছে নজরুল সাহেবের। ছেলের রুচির এতটা অধঃপতন হজম করতে পারছেন না তিনি।
একটা শপিং সেন্টারের সামনে এসে গাড়ি থামলো সালমানের। সাথে মায়াও আছে৷ শিমুর সাথে পরিচয় করানো হবে মায়াকে। তাই আজ এখানে আসা। ফুডকোর্টে বসে আছে শিমু৷ দূর থেকে সালমানকে দেখতে পাচ্ছে সে। সাথে করে একটা মেয়েকেও দেখা যাচ্ছে। মায়া হবে হয়তো৷ সালমান বলেছিলো গতকাল মায়ার কথা। যতটুক শুনেছে মায়া তারচেয়ে আরও বেশি সুন্দর। মাথার চুলগুলো খুব দ্রুত ঠিক করে নিচ্ছে শিমু। সেই সাথে সালমানের উপর বিরক্ত হচ্ছে। তার তো উচিত ছিলো মায়াকে সাথে করে নিয়ে আসছে এই কথাটা বলা। তাহলে আরেকটু ভালো করে সেজে আসা যেতো। হবু শ্বশুরবাড়ির লোকের সামনে যতটা সম্ভব নিজেকে সুন্দর করে প্রেজেন্ট করার তুমুল প্রচেষ্টা প্রতিটা মেয়ের মধ্যেই দেখা যায়। শিমুও তার ব্যাতিক্রম না। রাগটাকে আপাতত আড়াল করে ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসির রেখা টেনে নিলো শিমু। আজ শিমুর পাশে মায়াকে বসার জায়গা করে দিলো সালমান। সালমানের মতে বিয়ের আগে এই দুজনের ভাব হওয়াটা অতি জরুরী। একদম কলিজার বান্ধবী টাইপ ভাব। তাহলে বিয়ের পর দ্বন্দ্ব হওয়ার আশংকা ৮০ শতাংশ কমে যাবে৷ বেশ ভালোই খোশ গল্প চলছে মায়া শিমুর মাঝে। শিমুর একটা বিশেষ গুন আছে৷ সে খুব দ্রুত মানুষকে আপন করতে জানে। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ওদের দুজনের হাসির আওয়াজে আশপাশের টেবিলের লোকজন ওদেরকে দেখছে৷ সালমান উপভোগ করছে ব্যাপারটা। দুজন অপরিচিত মেয়ে কিভাবে আধাঘন্টার মধ্যে কলিজার বান্ধবী হয়ে যায় আবার ১৫ মিনিটের মধ্যে জানের দুশমন হয়ে যায়। মেয়ে জাতটাকে সালমানের কাছে প্রায়ই বড্ড বিচিত্র মনে হয়। এদের কারো সাথে মিশতেও দেরী নেই আবার ঝগড়া করতেও দেরী নেই। এসব ভাবতে ভাবতে আপন মনেই হেসে উঠলো সালমান। ঘাড় ডানদিকে ঘুরাতেই একটা টেবিলে চোখ আটকে গেলো সালমানের। সোহানের বয়সী একজন লোক মায়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে আর কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। বেশ তৃপ্তি নিয়ে মায়াকে দেখছে লোকটা। মায়া যখনই অট্টহাসি দিচ্ছে তখন লোকটাও ওকে দেখে মুচকি হাসছে। লোকটার ভাবগতি বিশেষ ভালো ঠেকছে না সালমানের কাছে। বেশ বিরক্তি নিয়ে লোকটার দিকে অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে সে। ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো মায়া। সালমান কোথায় তাকিয়ে আছে সেটা দেখার জন্য সোজা তাকালো মায়া। ভয়ে দম আটকে যাচ্ছে মায়ার। মূহূর্ত্বে ঠোঁটের কোন থেকে হাসি সরে গিয়ে চোখে মুখে ভয় জায়গা করে নিয়েছে। শিমু খানিকটা অবাক হয়ে মায়াকে জিগ্গেস করলো
– কোনো সমস্যা মায়া?
শিমুর কথা শুনে মায়ার দিকে তাকালো সালমান। মায়া এখনও লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা মায়ার দিকে তাকিয়ে বিদঘুটে একটা হাসি দিচ্ছে৷ সালমান মায়ার কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো
– লোকটাকে চিনো তুমি?
– হুম?…না।
– তাহলে তাকে দেখে এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? আর লোকটা সেই কখন থেকে তোমাকে দেখছে। কাহিনী কি?
সালমানের প্রশ্নে আরও ঘাবড়ে গেছে মায়া। এসির মধ্যেও ঘামতে শুরু করেছে সে৷
– মায়া কোনো সমস্যা হলে বলো। ব্যাটাকে এখনই সাইজ করে আসি।
– আমি বাসায় যাবো।
– কেনো?
– প্লিজ….
– সালমান আর কথা বাড়িও না। বেচারী ভয় পাচ্ছে। ওকে জলদি বাসায় নিয়ে যাও। পরে ধীরে সুস্থে ঘটনা শুনতে পারবে।
মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে সালমান। গাড়িতে শিমুও বসে আছে। যাওয়ার পথে ওকে বাসার সামনে ড্রপ করে দিয়ে যাবে। মায়া বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাচ্ছে৷ লোকটা পিছু নিয়েছে ওর। সোহানকে খুব প্রয়োজন এখন। খুব বেশি প্রয়োজন। অতীত ওর পিছু নিয়েছে৷ ওকে এক্ষুনি লুকাতে হবে। লুকানোর জায়গা পাচ্ছে না মায়া। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। চোখে বারবার পানি এসে জমছে। মাথা ঘুরাতে শুরু করেছে মায়ার। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে এখনি মরে যাবে। সোহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। এতটাই শক্ত করে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে যেনো অতীতটা ওদের মাঝে না আসতে পারে।
চলবে,,,,,

নষ্ট গলি পর্ব: ২০

0

নষ্ট গলি পর্ব: ২০

লেখা: মিম
.
সোহানের বাসার ড্রইংরুমে মাথা নিচু করে বসে আছে রুপম। মুখোমুখি বসে আছে মায়া আর সোহান৷ আলিশাকে বাসায় লক করে এসেছে রুপম। সাথে করে ছেলেটাকে নিয়ে এসেছে যাতে আলিশা বাচ্চাটাকে মারধর না করতে পারে। রুপম জানে আলিশা এখন বাসায় তুমুল ভাংচুর চালাবে। বাচ্চাটা দেখলে ভয়ে বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম হবে। তাই সাথে করে নিয়ে এসেছে। সালমানের বেডরুমে বসে এখন ইউটিউবে কার্টুন দেখছে। সোহানকে কিছু বলতে চাচ্ছে রুপম। কিন্তু গলার ঠিক মাঝখানটাতে এসে ঠেকে যাচ্ছে কথাগুলো। প্রায় বিশ মিনিট যাবৎ এভাবেই বসে আছে সে। এর মাঝখানে সোহান দুইবার জিগ্গেস করেছে পানি খাবে কিনা। সেই উত্তরটাও গলা দিয়ে আসছেনা রুপমের। সোহানও খুব বেশি জোরাজোরি করছে না কিছু বলার জন্য। সে বুঝতে পারছে রুপমের মনের অবস্থাটা এখন কেমন হতে পারে? সোহান ফের রুপমকে জিগ্গেস করলো
– তোমাকে অনেক স্ট্রেসড দেখাচ্ছে। স্ট্রং কফি খাবে? দিতে বলবো?
কোনোমতে গলায় শক্তি জুগিয়ে উত্তর দিলো রুপম।
– নাহ। একগ্লাস বরফ মিশানো পানি দেয়া যাবে? গলা পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে।
মায়া সোফা ছেড়ে ছুটে গেলো ডাইনিং রুমে। ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে বড় একটা গ্লাস পানিতে তিনটুকরা বরফ ছেড়ে দিলো।
রুপমের দিকে গ্লাস এগিয়ে দিলো মায়া। হাতে গ্লাস নিয়ে খুব দ্রুত পানি গিলছে সে। দেখে মনে হচ্ছে বিগত এক সপ্তাহ ধরে বোধহয় সে পানি খায় না। রুপমের মুখ দেখে বড্ড কষ্ট হচ্ছে মায়ার। করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে মানুষটার দিকে। পানি খেয়ে খুব বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলো রুপম। তার চোখে পানি ছলছল করছে। মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো
– ভাবী আসলে….
গলায় কথা ধরে আসছে তার। থেমে গেলো সে। মায়া স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মানুষটার চোখে পানি৷ এবার তারও কান্না পাচ্ছে। বহু কষ্টে চোখে পানি আটকে রেখেছে মায়া। কোনোমতে গলার স্বরটা ঠিক করে ফের বলতে শুরু করলো রুপম।
– ভাবী আমার বাচ্চাটা রাতে কিছু খায়নি। ওকে রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম। খায় নি। ও আসলে ভয় পেয়েছে খুব আমাদের ঝগড়া দেখে। আপনি ওকে একটু খাইয়ে দিবেন প্লিজ?
মায়ারও গলা ধরে আসছে। মুখ ফুটে কিছু বললো না ও। উপরে নিচে মাথা ঝাঁকিয়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো সে।
– রুপম?
– হুম?
– তুমিও তো বোধহয় খাওনি। হাত মুখ ধুয়ে আসো। আমি টেবিলে খাবার দিতে বলছি।
– প্লিজ সোহান আমি খাবো না। গলা দিয়ে খাবার নামবে আমার।
– যা হয়েছে ওগুলো আপাতত একটু সাইড করো। অল্প কিছু খেয়ে নাও।
– বিষ আছে ঘরে?
– কি ধরনের কথা বলছো?
– লজ্জায় কষ্টে আমার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি আমি৷ মরে যেতে হচ্ছে। বাচ্চাটার কথা ভেবে এ ধরনের স্টেপ নিতে পারছি না। আমি মরে গেলে ছেলেটার কি হবে? আলিশার তো বাচ্চাটার দিকে কোনো খেয়ালই নেই।
– আসলে রুপম তোমাকে কি বলা উচিত এই মূহূর্ত্বে আমার জানা নেই। আমি যাস্ট চুপচাপ তোমার অভিযোগগুলো শুনতে পারবো। কিন্তু সলিউশন কি দিবো তা আমার জানা নেই।
– ওকে আমি প্রচন্ড রকমে ভালোবাসি সোহান। একতরফা ভালোবেসেই গেছি। ওর কাছ থেকে কখনো ভালোবাসা পাইনি৷ একজন ওয়াইফ তার হাজবেন্ডকে কিভাবে আগলে রাখে, কতটা যত্ন করে সেসব আমার জানা নেই। আলিশার কাছে কখনো সেসব পাইনি আমি। বিয়ের আগে খুব এক্সপেকটেশনস ছিলো আমার ম্যারিড লাইফটা একদম আদরে মাখামাখি টাইপ হবে। আমার ওয়াইফ আমার ছোটখাটো প্রতিটা বিষয় খেয়াল রাখবে। কিছুই হলো না জানো? কিচ্ছু পাইনি এই বিয়ে থেকে আমি। ওর প্রেগনেন্সির খবর যখন ও জানতে পারলো পুরোপুরি পাগল হয়ে গেলো এ্যাবরশন করানোর জন্য। নয়টা মাস ওকে যে কিভাবে কন্ট্রোল করেছি! উফফ! মনে হলে এখনো আমার দম আটকে আসে। প্রথম প্রথম ভাবতাম ও হয়তোবা আমার সাথে এডযাস্ট হতে আনকমফর্টেবল ফিল করছে। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ওকে নিজের করে নেয়ার জন্য। স্টিল নাউ চেষ্টা করেই যাচ্ছি ওকে আপন করে পাওয়ার জন্য। কিন্তু এই রুপমের দিকে তার একবারের জন্য ঘুরেও তাকাতে ইচ্ছে হয় না। মাঝেমাঝে নিজেকে রাস্তার কুকুর বিড়াল মনে হয়। নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করি, রুপম তুই কি মানুষ? নাকি রাস্তার ক্ষুদার্থ কুকুর যে কি না একটু ভালোবাসার আশায় এতগুলো বছর যাবৎ আলিশার পিছনে ঘুরেই যাচ্ছিস।
কথাটা বলেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো রুপম। সালমানের রুমে বসে রুপমের ছেলেকে খাওয়াচ্ছে মায়া। বাচ্চাটা খুব তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে। খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। মায়া ইতিমধ্যেই ভাব জমিয়ে ফেলেছে ওর সাথে। বাহির থেকে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ভাত মুখে নিয়ে বসে আছে সে।
– কি হলো বাবা? খাচ্ছো না কেনো?
– আন্টি… বাবা কি কাঁদে?
মায়া আর সালমান একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। বিছানা ছেড়ে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো সালমান। বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বারান্দার দিকে এগোতে এগোতে মায়াকে বললো,
– মায়া তুমি ওকে চাঁদ দেখিয়েছো?
– না তো।
– ধুর বোকা। তুমি আফিফকে চাঁদ দেখাওনি? কত্তবড় চাঁদ উঠেছে। একদম বড় গোল রুটির মতন দেখতে। চলো বাবা, আমরা চাঁদ দেখবো। তারা গুনবো। আর ভাত খাবো।
তারা গুনার কথা শুনে ব্যাপক খুশি আফিফ। ব্যাপারটা তার কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। আজ পর্যন্ত তারা কখনো সে গুনে দেখেনি। সালমানের কোলে থেকেই লাফালাফি শুরু করেছে তারা গুনবে সেই খুশিতে।
রুপমের দিকে আরও এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো সোহান। এবার খানিকটা থেমে থেমে পানি খেলো সে। গ্লাসটা টি টেবিলের উপর রেখে আবার বলতে শুরু করলো রুপম।
– এই যে আমার এত প্রপার্টি অর্থ-বিত্ত। লাভ কি এসবের? আমার তো ঘরে শান্তি নেই। আমার চেয়ে ভালো আছে আমার অফিসের পিওন। তুমি ওকে চিনো না?
– আনিস নাম যে ওর কথা বলছো?
– হ্যা। তুমি জানো ওর বউটা প্রায়ই সেজেগুজে বক্সে ভরে খাবার নিয়ে আসে। অফিসের একটা কোনায় বসে ওর বউ ওকে মুখে তুলে খাইয়ে দিয়ে যায়। আমি আমার রুম থেকে বসে দেখি ওদের। তুমি জানো আনিসের মুখটা ঐ মূহুর্তে আমি বসে বসে দেখি৷ ও যে সুখে আছে সেটা তখন ওর মুখটা দেখলেই আমি বুঝি। অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। আবার আফসোসও হয়৷ আনিসের জায়গায় থাকলে খুব সুখে থাকতাম জানো। ওর হতে পারে অঢেল টাকা নেই। কিন্তু ও আমার চেয়ে বড়লোক। ওর ঘরে সুখ আছে যা আমার ঘরে নেই।
বেডরুমে বসে সিগারেট ফুঁকছেন সোহানের বাবা। কিছুক্ষণ আগেই তার একজন ক্লাইন্ট ফোন করেছিলো। কথায় কথায় সেই ক্লাইন্টের কাছ থেকে তিনি জানতে পারলেন তার বড় ছেলে বিয়ে করেছে। কিছুদিন আগেই নাকি এক পার্টিতে পরিচয় করিয়েছে সোহান তার ওয়াইফকে। ভদ্রলোক বেশ প্রশংসা করলেন মায়ার। ছেলের বিয়ের কথা অন্য লোকের মুখে শুনে এতক্ষণে তুফান চালানোর কথা ছিলো। কিন্তু তিনি যথেষ্ঠ ঠান্ডা মাথায় বসে সিগারেট ফুঁকছেন। তিনি যতটুকু সোহানকে চিনেন তার ছেলে এতটাও বেপরোয়া না যে বাপ মাকে ন জানিয়ে বিয়ে করবে। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে সোহান বিয়ে করে নি। ঘটনা এখানে অন্যকিছু। আর যদি বিয়ে করেও থাকে নিশ্চিত মেয়ের মাঝে কোনো সমস্যা আছে। ফ্যামিলিকে জানিয়ে বিয়ে করতে গেলে বাবা অবশ্যই মেয়ের খেঁাজ নিবে সেটা সোহান জানে। নিশ্চিত এমন কোনো সমস্যা আছে যেটা বাবাকে জানানো যাবে না। তাই সে চুপচাপ বিয়েটা সেড়ে নিয়েছে। কিন্তু এখন সত্যিটা জানা খুব দরকার। সোহান কি বিয়ে করেছে নাকি করে নি? সোহানকে জিগ্গেস করে লাভ নেই। সত্যিটা বলার হলে অনেক আগেই বলে দিতো। খবরটা অন্যভাবে নিতে হবে। কাকে জিগ্গেস করবে? জাহিদকে? নাহ, সেও মুখ খুলবে না। সালমান? ওকে জিগ্গেস করা যেতে পারে। ছোট ছেলের নম্বরে ডায়াল করলেন তিনি। ফোন রিসিভ করছেনা সে।
চলবে,,,,,

নষ্ট গলি পর্ব- ১৯

0

নষ্ট গলি পর্ব- ১৯

লেখা: মিম
.
ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছে মায়া আর সালমান। ফোনে কথা বলছে সোহান। কলিংবেল বেজে উঠলো বাসার। সোফা ছেড়ে উঠে এসে গেইট খুলে দিলো মায়া। একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচন্ড রকমে বিধ্বস্ত দেখা যাচ্ছে মেয়েটাকে। চুল আউল-ঝাউল হয়ে আছে। চোখ নাক ফুলে আছে। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে। মেয়েটাকে চিনে না মায়া। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাও ওকে দেখছে। একদম পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুটেখুটে দেখছে মায়াকে মেয়েটা। কয়েক সেকেন্ড বাদে মুখ খুললো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা।
– তুমিই কি মায়া?
– হ্যাঁ।
– সরো এখান থেকে। আমি ভিতরে যাবো।
– কেনো সরবো? কে আপনি?
মায়ার প্রশ্ন শুনে সোফা ছেড়ে উঠে আসলো সালমান। আলিশা দাঁড়িয়ে আছে গেইটের বাহিরে। এতরাতে আলিশাকে দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্ত সালমান। এই মেয়ে যখনই আসে কোনে না কোনো ঝামেলা বাঁধায়৷ আজও নির্ঘাৎ ঝামেলা করবে। তারউপর চোখ মুখ ফুলে আছে। তারমানে বাসা থেকে ঝগড়া করে এখানে এসেছে।
– তুমি এখানে কেনো?
– তোমার ভাই কোথায়?
-,ভাই কোথায় সেটা বলা জরুরি না। জরুরি হচ্ছে তুমি এতরাতে এখানে কেনো সেটা জানা। কেনো এসেছো?
– সোহানকে ভীষন প্রয়োজন।
– ভাইয়া বাসায় নেই। যাও এখান থেকে।
– আমি জানি ও ঘরেই আছে৷ প্লিজ আমাকে ভিতরে যেতে দাও
– সালমান, ইনি কি আলিশা?
– হ্যাঁ। তুমি জানো ওর কথা?
– হুম জানি। তোমার ভাই বলেছিলো। উনার সাথে এতরাতে কি কাজ আপনার?
– সেটা তো তোমার জানার প্রয়োজন নেই। যার কথা আমি তার সাথেই বলবো।
– উনি আর আমি আলাদা না৷ উনাকে বলা যে কথা আমাকে বলা একই কথা। আপনি আমাকে বলতে পারেন।
– তোমাকে কেনো বলবো?
– না বলতে পারলে চলে যান।
– এটা সোহানের বাসা। ওর বাসায় কে আসবে কে যাবে সেটার ডিসিশন ও নিবে। তুমি না।
পিছন থেকে এসে মায়ার কাঁধ জড়িয়ে ধরলো সোহান। আলিশাকে ভালোভাবে দেখছে সে।
– এটা মায়ার বাসা। আমার না। যেদিন বিয়ে করেছি সেদিন থেকে এই ঘর সংসার ওর নামে করে দিয়েছি। এই ঘরে কে আসবে কে যাবে সেসব ডিসিশন আামার বউ নিবে। আমার বউ। বুঝতে পারছো কথাটা? আমার গার্লফ্রেন্ড না, ও আমার বউ।
– তাহলে আমি কে?
– তুমি রুপমের বউ।
– রুপম যে আমাকে তোমার জন্য ঘর থেকে বের করে দিলো?
– আমার জন্য? কেনো? আমি কি করেছি?
– আমি তোমাকে ভালোবাসি সেসব তুমি রুপমকে বলেছো। ও আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আব্বুও বাসায় যেতে নিষেধ করেছে। তোমাকে ভালেবেসেই তো ঘর ছাড়তে হয়েছে আমাকে। এখন তোমার ঘর ছাড়া আমি কোথায় যেয়ে উঠবো?
– আমার তো কোনো ঘর নেই। চিটাগাং যেটা আছে সেটা বাবার। এখানে যেটা আছে সেটা আমার বউয়ের। ও যদি তোমাকে ঘরে থাকতে দেয় তাহলে থাকতে পারো আমার কোনো আপত্তি নেই। কি গো? থাকতে দিবে ওকে এখানে?
– একদম না। আলিশা আপুকে বর্তমানে আমার কাছে কুমীর মনে হচ্ছে। খাল কেটে কুমীর ঢুকানোর মতো বোকা আমি না। যদি উনি হাজবেন্ড বাচ্চাসহ আমার বাসায় আসে তাহলে অবশ্যই মেহমানদারী করবো। দেখেন আপু ভালো ঘরের মেয়েরা এতরাতে হাজবেন্ডের ঘর ফেলে সাবেক প্রেমিকের বাসায় এসে উঠে না। সোহান যদি সিঙ্গেল থাকতো তাহলে নাহয় অন্য কথা ভাবতাম। কিন্তু সোহান তো আার একা নেই। উনার সাথে আমি আছি। আপনার এখানে এতরাতে আসাটা খুবই দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে। আর রুপম ভাই আমার হাজবেন্ডের জন্য আপনাকে ঘর থেকে বের করেনি। আপনার দোষেই আপনাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে৷ বিয়ের পর কোনো বউ তার হাজবেন্ডকে ফেলে পুরোনো প্রেমিকের পিছনে ছুটবে এটা কোনে পুরুষই মেনে নিবে না। বাসায় যান। রুপম ভাইকে সরি বলেন। নিজের সংসারকে আগলে রাখার চেষ্টা করেন।
– সংসার সোহানের সাথে করার কথা ছিলো। রুপমের সাথে না।
– তাহলে করলেন না কেনো সোহানের সাথে সংসার? রুপম ভাইয়ের সাথে সংসার করছেন কেনো?
– শোনে মেয়ে, তোমাকে আমার অসহ্য লাগছে৷ সরো তো এখান থেকে। সোহানের সাথে কথা বলতে দাও।
– আপনাকে আমার আরো বেশি অসহ্য লাগছে। আসলে আমি এত ছ্যাচড়া মেয়ে মানুষ দেখে অভ্যস্ত নই তো তাই। তবু হজম করছি। মাথা যথেষ্ঠ ঠান্ডা রেখে কথা বলছি। মনে হয় বেশিক্ষণ ঠান্ডা রাখতে পারবো না। আপনি এখান থেকে চলে গেলেই বোধহয় আপনার জন্য ভালে হবে। আর নয়তো কখন আবার কি করে বসি!
– সোহান তোমার ওয়াইফ আমার সাথে মিসবিহেভ করছে।
– হ্যা করছে। এটা ওর বাসা। ওর বাসায় ও যা খুশি করতে পারে। আমি বলার কে?
– তুমি কি গাধা হয়ে যাচ্ছো? তোমার তেজ কোথায় গেছে? আগে তোমার উপর কোনো কথা বলতে পারতাম না। এখন তোমার বউ বলে কিভাবে?
– তোমার প্রশ্নের মাঝেই উত্তর আছে। বউ… তুমি ছিলে প্রেমিকা। আর মায়া হচ্ছে বউ। যে অধিকারটা প্রেমিকাকে দেয়া যায় না সেটা বউকে দিতে হয় না। বিয়ে হওয়ার সাথে সাথে অধিকারটা তার হয়ে যায়। পার্থক্যটা বুঝতে পারছো? অযথা নিজের সাথে মায়াকে কম্পেয়ার করো না। আমার জীবনে মায়া আর তোমার অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা।
আলিশা এগিয়ে এসে সোহানের হাত ধরে কিছু একটা বলতে এগিয়ে আসছিলো। বাঁধ সাধলো মায়া। সোহানের দিকে আলিশার এগিয়ে যাওয়া হাতটা ধরে ফেললো মায়া।
– আপনি বেডরুমে যান। আমি আলিশা আপুর সাথে কথা বলে আসছি।
সোহান নিজের রুমে চলে গেলো। রুপমকে ফোন করেছে সে। আলিশার দিকে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে মায়া। রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে মায়ার।
– আমি প্রচন্ড রকমের হিংসুটে স্বভাবের। অন্য মেয়ে আমার হাজবেন্ডের দিকে তাকালে আমার সহ্য হয় না। আর সেখানে আপনি রাত বিরাতে মেসেজ, ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন। বাসায় এসে হাজির হয়েছেন। আমি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও উনার হাত ধরতে চাচ্ছেন। আপনি কি আসলেই মেয়ে মানুষ? একটা মেয়ে এতটা নির্লজ্জ কিভাবে হয়? ছিঃ! আপনি একটা জঘন্য মেয়ে মানুষ। চুপচাপ নিজের ঘরে ফেরত যান। আমাদেরকে বিরক্ত করতে আসবেন না। সারাদিন শেষে কোথায় হাজবেন্ডের সাথে একটু সময় কাটাবো তা না। কোথ্থেকে ফালতু ঝামেলা এসে হাজির হয়েছে।
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে গেট লাগিয়ে দিলো মায়া। বাহিরে দাঁড়িয়ে লাগাতার গেট ধাক্কা দিচ্ছে আলিশা। প্রচন্ড চেঁচামেচি করছে ও৷ মায়া বেডরুমে যেয়ে সোহানকে বললো
– উনি তো খুব সিনক্রিয়েট করছে। লোকজন শুনছে এসব৷
– রুপমকে ফোন দিয়েছি। ও নিতে আসছে ওকে।
– আচ্ছা উনি কি পাগল?
– ভবের পাগল। স্বার্থে টান পড়লে পাগলামি শুরু করে।
মিনিট পনেরো পর রুপম এসেছে আলিশাকে নিতে। এতক্ষন দরজায় ধাক্কা দিয়েই গেছে আলিশা। হাত জ্বালা করছে খুব। তবু থামেনি ও। হাতে রক্ত জমাট বেঁধে লাল হয়ে গেছে। রুপম এসে কিছুক্ষণ টানা হেঁচড়া করেছে আলিশাকে। শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে সোহানের দরজায় এসে ধাক্কা দিচ্ছে। পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন দাঁড়িয়ে ওদের তামাশা দেখছে। অন্যান্য ফ্ল্যাটের লোকজন এসেও জড়ো হয়েছে এখানে। প্রচন্ড লজ্জা লাগছে রুপমের। দিশেহারা হয়ে আলিশাকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসালো রুপম। ঝড়ের গতিতে কার ড্রাইভ করছে সে। আলিশা রুপমের হাতে মুখে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পর দিয়েই যাচ্ছে আর মুখে যা আসছে তাই বলছে। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে রুপমের। আর সহ্য হচ্ছে না তার এসব যন্ত্রনা। অনেকটা দূরে এসে গাড়ি সাইড করে থামালো সে। স্টিয়ারিং এর উপর মাথা রেখে চিৎকার করে কাঁদছে রুপম। মনের বোঝাটা হাল্কা করার খুব বেশিই প্রয়োজন ছিলো ওর। দম আটকে মারা যাবার উপক্রম হচ্ছিলো। চোখের পানির সাথে বুকের ভিতরের চাপটা একটু একটু করে বেরিয়ে যাচ্ছে।
চলবে,,,,

নষ্ট গলি পর্ব- ১৮

0

নষ্ট গলি পর্ব- ১৮

লেখা: মিম
.
বাসায় ফিরে এসে ভেজা শাড়ী গায়ে দিয়েই ফ্লোরে বসে আছে মায়া। ঘোরটা তার এখনও কাটেনি। কানের মধ্যে লাগাতার বেজেই যাচ্ছে, ” কেউ একজন তোমাকে ভালোবাসে।” কথাটার মধ্যে কিছু একটা তো আছে। নেশা জাতীয় কিছু। ভয়ানক নেশা। পুরো শরীরটাকে অবশ করে দেয়ার ক্ষমতা আছে নেশাটার মধ্যে। মায়ারও এই মূহূর্তে শরীরটাকে অবশ মনে হচ্ছে। এজন্যই বোধহয় উঠে গিয়ে কাপড় পাল্টানোর জোরটা পাচ্ছে না।
কাপড় পাল্টে মাথা মুছতে মুছতে মায়ার রুমে এসেছে সোহান। মায়া এক দৃষ্টিতে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। এতটাই ঘোরের মাঝে ডুবে আছে যে সোহানের উপস্থিতি টের পেলো না সে। মায়ার মুখোমুখি হাঁটু ভেঙে বসলো সোহান। ওর গালে হাত দিয়ে জিগ্গেস করলো
– কি গো?
– হুম?
– কি ভাবছো এত মন দিয়ে? আর কাপড় পাল্টাচ্ছো না কেনো?
– হুম
– হুম হুম করছে কেনো? কেনো সমস্যা?
– নাহ।
– তাহলে?
– কিছু না।
– উঠো যাও। কাপড় পাল্টে আসো।
উঠে দাঁড়ালো মায়া। ড্রয়ার থেকে সালোয়ার কামিজের সেট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগুলো মায়া।
কিছুক্ষন আগেই একদম কাক ভেজা হয়ে বাসায় এসেছে সালমান। কাপড় পাল্টে সোহানকে খুঁজতে খুঁজতে মায়ার রুমে চলে এলো সালমান। খাটে বসে ফোন টিপছে সোহান।
– ভাইয়া?
– কি?
– ফ্লোরে পানি কিসের?
– ঐ তো মায়া ভিজা শাড়ি পড়ে এতক্ষন ফ্লোরে বসে ছিলো। শাড়ির পানি ওগুলো।
– ফ্লোরে বসে ছিলো কেনো? রাগ করে?
– আরে নাহ। এমনি।
– ও বোধহয় বেশ চুপচাপ স্বভাবের তাই না?
– কথা বলে। তবে বেশিও না কমও না। আমার সাথে তো বেশ ভালোই কথা বলে। তুই নতুন তাই হয়তোবা কথাটা একটু কম বলছে।
– হয়তোবা।
– তুই তো অনেক কথা বলিস। ওর সাথে কথা বলতে থাক। দেখবি ও তোর সাথে কথা বলবে।
– হুম সেটা তো করবোই। শিমুকে বলেছি মায়ার কথা।
– ওহ আসল কথাই তো জিগ্গেস করলাম না। শিমুর সাথে সব ঠিক হয়েছে?
– হুম হয়েছে। কানে ধরে উঠ বস করিয়েছে এই মেয়ে আমাকে?
– পাব্লিক প্লেসে?
– হ্যাঁ।
– ওসব কোনো ব্যাপার না। ভালোবাসায় এমন শাস্তি পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
– মায়াও কি দেয় নাকি?
সোহান উত্তর দেয়ার আগেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হতে হতে বললো
– মোটেই না। আমি কখনোই তোমার ভাইকে পানিশড করি না।
– মায়া, ঘটনা কি বলো তো?
– কি ঘটনা?
– আমি বাসা থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত একটু মরা মরা লাগছিলো। এখন খুব ফুরফুরে মনে হচ্ছে।
– হুম৷ একটা উত্তর খুঁজছিলাম। পেয়ে গেছি।
– কি উত্তর?
– উহুম। তোমাকে একদম বলা যাবে না।
– একান্ত গোপন কিছু?
– হুম। খুউউব গোপন।
চুল মুছছিলো মায়া। ওর হাত টেনে সামনে
এনে বসালো সোহান। মায়ার হাত থেকে তয়লাটা নিয়ে মাথা মুছে দিচ্ছে সে। বেশ রিল্যাক্স মুডে সালমানের সাথে গল্প করছে মায়া। সোহান চুপচাপ ওদের গল্প শুনছে আর মায়ার চুল মুছছে। রাত সাড়ে দশটা বাজে। বাসার কাজের লোক এসে বললো
– ভাই, রাত হইছে অনেক। খাবেন না?
– কয়টা বাজে?
– সাড়ে দশটা।
– কখন বাজলো? টেরই তো পেলাম না। যাও খাবার সাজাও টেবিলে। আমরা আসছি।
আলিশার বাসার ড্রইং রুমে বসে আছে তার বাবা আকরাম এবং বড় ভাই আদনান। পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে আলিশার ছেলে। মাথা নিচু করে বসে আছে বাপ- ভাই দুজন। প্রচন্ড তর্ক চলছে আলিশা রুপমের মাঝে। নির্বাক শ্রোতা হয়ে ওদের তর্ক শুনছে আাকরাম সাহেব এবং আদনান। এখানে জোর গলায় রুপমকে বলার কিছুই নেই তাদের। তারা দিব্যি বুঝতে পারছে দোষ তাদের মেয়ের। এই মূহূর্তে আকরাম সাহেবের মনে হচ্ছে মেয়ে জন্ম দিয়ে জন্ম-জন্মান্তরের ভুল করেছেন তিনি। কি বেইজ্জতটাই না হতে হচ্ছে তাকে।
– আপনি শুনতে পাচ্ছেন আপনার মেয়ের গলার জোর কত! অন্যায় করেও একটা মানুষ এভাবে কিভাবে ঝগড়া করতে পারে খুঁজে পাই না আমি।
– বাবা কি শুনবে? হ্যাঁ? কথা হচ্ছে আমার তোমার মাঝে। ওদের কেনো ডেকে এনেছো?
– তোমার অসভ্যতামি দেখানোর জন্য। মেয়েকে কি শিক্ষা দিয়ে বড় করেছে সেসব দেখানোর জন্য। এখন মুখ খুলেন না কেনো বাবা? বিয়ের সময় তো মুখ বড় করে বলেছিলেন এত লক্ষী মেয়ে নাকি পুরো বাংলাদেশ খুঁজে পাবো না। এই আপনার লক্ষীর নমুনা?
– বাবা আমি আসলে কি বলবো বুঝে পাচ্ছি না। আমার মেয়ে এসব করবে আমার ধারনার বাইরে ছিলো।
-এই মেয়ের মাথায় কয়দিন পরপরই সোহানের ভূত চাপে। কেনো? আমি কি ওকে কম ভালেবাসি? ও যেসব কাহিনী করে ওকে কবেই ঘর থেকে বের করে দিতো অন্য কেউ হলে। ওকে এখন পর্যন্ত ঘরে রেখেছি আমি। আদনান, তোমার তো ঘরে বউ আছে। তোমার বউ এসব করলে কি তাকে ঘরে রাখতে।
চুপ করে বসে আছে আদনান। উত্তর দেয়ার মতো ভাষা এবং ইচ্ছা কোনোটাই আপাতত খুঁজে পাচ্ছে না। ঘরের সবাই এখন চুপ৷ ফ্যানের আওয়াজ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। কয়েক সেকেন্ড নীরবতা পালন করে মুখ খুললো রুপম।
– আপনাদের মেয়ে আপনারা নিয়ে যান। আমার দ্বারা এসব সহ্য করা আর সম্ভব না।
– রুপম, বাবা এভাবে বলো না।
– প্লিজ আর কোনো রিকুয়েস্ট করবেন না।
– বাচ্চাটার কথা ভাবো।
– এমন ভাবে বলছেন মনে হচ্ছে আমার ছেলেকে আপনার মেয়ে দেখাশোনা করে?আমার ছেলেকে আমিই পালবো। আপনার মেয়েকে কোনো দরকার নেই।
– কিহ্! আমি ছেলেকে দেখাশোনা করি না? তো করে টা কে শুনি? তোমার মা কবর থেকে উঠে এসে আমার ছেলের দেখাশোনা করে?
– দেখো আদনান তোমার বোনকে নিয়ে বের হও। ও কিন্তু আমার হাতে এখন থাপ্পড় খাবে।
সোফা ছেড়ে উঠে বসতো বসতে আদনান বললো,
– শুধু থাপ্পড় না। ও এরচেয়ে আরও বেশি কিছু ডিজার্ভ করে। থাপ্পড়, কিল- ঘুষি যা পারো সব দাও। পারলে মেরে ফেলো। মরার পর আমাদের খবর দিও। আমরা এসে দাফন দিবো। সেই সাথে মিলাদের ব্যবস্থাও করবো। শুনো বাবা, আমি গেলাম। তোমার বাড়িতে তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে আসবে কিনা সেটা একান্ত তোমার ব্যাপার। ওকে নিয়ে বাসায় ঢুকার আগে আমাকে ফোন দিয়ে জানিও। আমি আমার ওয়াইফ নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো। এসব আজেবাজে মানুষের সাথে এক ছাদের নিচে থাকা সম্ভব না। ইজ্জত থাকবে না আমার।
হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছে আদনান। পিছন থেকে ইচ্ছেমতো মুখপ যা আসছে তাই বলছে আলিশা। সেসব কথার ধার ধারছে না আদনান। ওর মতে বাজে লোকের কথা কানে তুলতে নেই। কয়েক মিনিট পর আকরাম সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে খুব ঠান্ডা এবং দৃড় কন্ঠে বললেন
– রুপম তোমাকে ঘরে রাখবে না। আমিও তোমাকে ঘরে নিবো না। অতএব তুমি যেদিক খুশি সেদিক যেতে পারো।
বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন আকরাম সাহেব। পর্দার চিপা থেকে ছেলেকে বের করে কোলে তুলে নিলো রুপম। সেও বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। বাপ বেটা আজ বাহিরে ডিনার করবে। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে আলিশার। ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে সে।
চলবে,,,,,

নষ্ট গলি পর্ব: ১৭ 

0

নষ্ট গলি পর্ব: ১৭

লেখা: মিম
.
.
মায়া এখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জা পাচ্ছে মায়া। সত্যিটা ধরা পড়ে যাওয়ার লজ্জা। ইশ! কি ধরাটাই না খেলো! আচ্ছা সোহান কি ওর ভালেবাসাটাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করবে? নাকি নষ্ট গলির মেয়ে বলে ভালোবাসাটা গ্রহন করবে না? সোহানকে কি সরাসরি এ ব্যাপারে জিগ্গেস করবে? সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মায়া। এভাবে আর সোহানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। লজ্জা এবং দ্বিধা মিলিয়ে বড্ড অস্থির হয়ে যাচ্ছে সে। কিছুক্ষন সোহানের কাছ থেকে দূরে থাকাটা অতি আবশ্যক মনে হচ্ছে মায়ার।
– চুলোয় ভাত বসিয়ে আসছি।
– কাজের লোক আছে ঘরে।
– আমার কিছু হোমওয়ার্ক বাকি রয়ে গেছে। ওগুলো কমপ্লিট করে আসি।
– তুমি কি এখান থেকে পালাতে চাচ্ছো?
মায়া খুব অবাক হয় সোহানের ধারনা করার ক্ষমতা দেখে। মায়ার মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই সব বুঝে নেয় সোহান। এমনটা তো নাকি শুধুমাত্র খিব প্রিয় কারো ক্ষেত্রেই অনুভব করা যায়। পূর্নিমার ছবিতে দেখেছে ও। নায়কের মনের খবর না জেনেই সব বলে দিতো পূর্নিমা। তাহলে কি মায়াও সোহানের প্রিয় কেউ? নাহ, এতটাও আশা করা ঠিক না। এতটাও আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখা মায়ার মতো মেয়েদের মানায় না। স্বপ্ন ভেঙে গেলে একদম আকাশ থেকে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। মিথ্যে আশা রেখে কষ্ট পাওয়ার শখ নেই মায়ার। মন থেকে বাদ দিতে চায় কথাগুলো। তবু একটা কথা মনের মধ্যে জোরপূর্বক উঁকি দিয়েই চলছে। সোহান তাকে ভালোবাসতেও তো পারে। ঐ তো আজ সকালেই না বললো দরকার পড়লে বিয়ে করে নিবে। ভালো না বাসলে কি কথাগুলো বলতো?
– কি চিন্তা করো?
– আচ্ছা আপনি কি….
– আমি কি?
– নাহ কিছু না।
– কি জিগ্গেস করতে চাচ্ছো বলে ফেলো।
– তেমন কিছু না।
– বুঝলাম তেমন কিছু না। যেমনই হোক আমাকে বলো। আমি শুনতে চাচ্ছি।
– না, আসলে…… রাতে কি খাবেন?
– কথা কেনো ঘুরাচ্ছো?
– আপনি আমাকে এতটা কিভাবে বুঝেন?
– তোমাকে বুঝার চেষ্টা করি তাই বুঝি।
– আমাকে কেউ কখনো বুঝতে চায়নি।
– সবাই আর আমি তো এক না।
– হুম সবার চেয়ে আলাদা আপনি।
– চলো ঘুরে আসি।
– কোথায়?
– জানি না। তুমি রেডি হয়ে এসো।
– আচ্ছা।
– মায়া, শুনো…
– জ্বি?
– শাড়ি পড়ে নাও। ঐযে কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম না? ওটা পড়ে এসো।
মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকালো মায়া। এর আগে মায়া নিজের ইচ্ছায় দুদিন শাড়ি পড়েছিলো। আজ সোহানের আবদারে শাড়ি পড়বে সে। সোহানের ফরমায়েশ মতো সাজতে ভীষন পছন্দ করে মায়া। আরো বেশি ভালো লাগে যখন মায়া সোহানের কথামতো সেজে তার সামনে যায়। আর সে একনজরে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সোহানের নজরে একধরনের তৃপ্তি দেখতে মায়া।
আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের হাতা ভাজ করে কনুইয়ের উপরে তুলছে সোহান। শাড়ি পড়ে পিছনে এসে দাঁড়ালো মায়া। আয়নাতে দেখা যাচ্ছে মায়াকে। আায়নাতেই তাকিয়ে মায়াকে দেখছে সোহান। ফের তার নজরে তৃপ্তি দেখতে পাচ্ছে মায়া। তবুও সোহানের মুখ থেকে একটুখানি প্রশংসা শোনার আশায় আছে মায়া।
– আমাকে কেমন লাগছে?
– কথা বলো না তো। দেখতে দাও।
আর কিছু বললো না মায়া। সোহান ওকে মনভরে দেখতে চাচ্ছে। মায়াকে মনভরে দেখাটা সোহানের একধরনের প্রিয় কাজ। সে কথা মায়ার অজানা নেই। কয়েক সেকেন্ড পর ঘুরে দাঁড়ালো সোহান। হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো,
– নতুন করে তোমার প্রশংসা করতে হবে?
– নাহ৷ থাকুক। আপনার চোখ দেখে বুঝে নিবো।
পাশাপাশি রিকশায় বসে আছে সোহান আর মায়া। আজ সোহানের খুব শখ হয়েছে মায়াকে নিয়ে রিকশায় করে ঘুরে বেড়াবে আর বাদাম খাবে। মায়া বাদামের খোসা ছেড়ে সোহানের হাতে দিচ্ছে আর সোহান বাদাম চিবুচ্ছে।
– বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে
– কিভাবে বুঝলেন?
– ঠান্ডা বাতাস লাগছে গায়ে।
– একটা কথা বলি?
– একশটা বলো।
– হাসবেন না তো?
– কথা না শুনে কিভাবে বলবো আমার হাসি পাবে কি পাবে না?
– আপনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজার খুব ইচ্ছে।
মায়ার দিকে তাকিয়ে রহস্যের হাসি হাসছে সোহান। মায়ার মুখে বাদাম ঢুকিয়ে দিয়ে বললো
– আমার সাথে ভিজবে?
– হুম
– পূর্নিমা কি সিনেমাতে নায়কের সাথে বৃষ্টিতে ভিজে?
– হুম। আবার নেচে নেচে গানও গায়।
ভীষন শব্দ করে হেসে উঠলো সোহান। মূহূর্তেই মুখটা কালো করে ফেললো মায়া। সোহান ফের পূর্নিমাকে নিয়ে হাসছে। বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। মায়া বুঝে পায়না পূর্নিমাকে নিয়ে হাসার কি আছে? মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললো মায়া।
– মায়া,,,
– কি?
– এদিকে তাকাও।
– না।
– আরে তাকাও তো।
– আপনি পূর্নিমাকে নিয়ে হাসেন কেনো?
– আমি জানি না। ওর কথা শুনলেই কেনো যেনো আমার হাসি পায়। বিশেষ করে নেচে নেচে গান গাওয়ার ব্যাপারটা। আমাকেও কি এখন নাচতে হবে?
কথাটা বলেই ফের হাসতে শুরু করেছে সোহান। এবার মায়ারও হাসি পাচ্ছে। কোনোমতে হাসি চেপে রেখে মায়া বললো
– আমি কি আপনাকে বলেছি আমার সাথে নাচতে হবে?
– তুমি চাইলে একটু না হয় নেচে দেখালাম।
– এতটা করতে হবে না। আমার সাথে একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই হবে।
মায়ার কথা শেষ হতে না হতেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।
– অলরেডি বৃষ্টি পড়া শুরুও হয়ে গেছে।
– ভিজবেন তো আমার সাথে? নাকি হুড তুলে দিবেন?
– অবশ্যই ভিজবো।
ধীরে ধীরে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে ঠান্ডা বাতাস। ফুটপাতে থাকা লোকজন ছুটছে কোনো ছাউনি বা দোকানের ভিতর একটু আশ্রয় নিতে। কেউবা রিক্সার হুড তুলে দিয়েছে নিজেকে বৃষ্টি থেকে আড়াল করতে। কেউ বৃষ্টিতে ভিজতে রাজি না। একমাত্র মায়া ছাড়া।
এতক্ষন অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো মায়া। আশপাশের লোকজনগুলোকে দেখছিলো। সোহান সেই কখন থেকে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই মায়ার। তার বাঁ হাতটা আলতো করে চেপে ধরলো সোহান। সোহানের স্পর্শ পেয়ে সোহানের দিকে তাকালো মায়া।
– কিছু বলবেন?
– কেউ একজন সেই কখন থেকে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে কিছু একটা বলার আশায়। কথাটা কি জানো? সেই কেউ একজন তোমাকে ভীষন রকমে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তুমি হচ্ছো তার সুখে থাকার টনিক। তোমার নেশায় মানুষটা ভিতর থেকে তিলতিল করে শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ মানুষটার শরীরের রগ গুলোতে বোধহয় আজকাল রক্তের বদলে তোমার ভালোবাসার নেশা ছুটোছুটি করে। মানুষটাকে চিনেছো? নাকি নামটা বলতে হবে?
ডানে বামে মাথা নাড়লো মায়া। মুখ থেকে কথা বেরোচ্ছে না ওর। প্রচন্ড রকমে সুখ ভর করেছে ওর উপর। এতদিন মাথায় ঘুরতে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর আজ মিললো। কেউ একজন তাকে ভালেবাসে। সত্যিই ভালোবাসে। মানুষের চোখ মিথ্যা বলে না। সোহানের চোখও মিথ্যা বলছে না। এই মূহূর্তে নিজেকে নষ্ট গলির মেয়ে মনে হচ্ছে না মায়ার। মনে হচ্ছে গায়ে লেগে থাকা এতদিনের পুরোনো দাগটা বুঝি উঠে গেছে। সোহানের চোখের ভাষায় ডুবে আছে মায়া। চোখ উপছে পানি ঝড়ছে ওর। বৃষ্টির পানিতে চোখের পানি আড়াল হচ্ছে।
চলবে,,,,,,,

নষ্ট গলি পর্ব- ১৬

0

নষ্ট গলি পর্ব- ১৬

লেখা: মিম
.
গাড়িতে উঠে বসেছে সোহান৷ ফোনটা এখন আবার বাজছে। আলিশা আবার ফোন করছে। এবার প্রচন্ড রকমে ক্ষেপে গেলো সোহান। কোনো মানে আছে এসব ছ্যাচড়ামির? ফোনটা কেটেই সাথে সাথে রুপমকে কল করলো সোহান। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। রিং হতে হতে কেটেই গেলো কলটা। কলটা কাটতে না কাটতেই আলিশার কল এসে পড়েছে। এবারের কলটা রিসিভ করলো সোহান।
– সমস্যা কি তোমার?
– মায়া।
– মায়া কি তোমাকে কামড়েছে?
– এরচেয়ে বড় কিছু করেছে। তুমি আমাকে এত ভালোবাসতে। আজ ওকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলে?
– তোমাকে ভুলেছি আরও অনেক আগেই।
– জানি। তবু কেনো জানিনা তুমি মায়ার সাথে আছো মনে হলেই প্রচন্ড রকমে কষ্ট পেতে থাকি। অসহনীয় কষ্ট।
– তোমার কষ্ট হয়? ভুল বললে আলিশা। তোমার হিংসে হয়। এত হিংসে কোথায় পাও তুমি? নিজে তো বিয়ে শাদী করে দিব্যি সংসার জুড়িয়ে বসেছো। আমি করলে দোষ কোথায়?
– বাবার জোড়াজুড়িতে সংসার জুড়িয়েছি।
– বাচ্চাটা কি তাহলে বাবার জোড়াজোড়িতেই হয়েছে? বাবার জোড়াজোড়িতেই কি রুপমের সাথে ফিজিক্যালি এটাচড হয়েছো? রুপমের সাথে এক বিছানায় শুয়ে কি করবে না করবে সেগুলো নিশ্চয়ই তোমার বাপ তোমাকে শিখিয়ে দেয়নি। যা করেছো সম্পূর্ন নিজের ইচ্ছায় করেছো।
– আমি কিন্তু তোমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম।
– ভালোই বলেছো। তোমার বাপ আমার নামে মামলা দিবে আর আমি তোমাকে বিয়ে করে ঘরে তুলবো তাই না? আমার রাগ হ্যান্ডেল করার এ্যাবিলিটি তোমার নেই। তোমাকে বিয়ে করলে আমাদের সংসার কখনোই টিকতো না।
– কাকে কি বলছো? তোমার কম গালি আমি হজম করি নি সোহান।
– গালি দেয়ার টাইমে চুপ থাকলেও পরে গিয়ে আমার উপর ঠিকই বিষ ঝেড়েছো।
– কেনো তোমার মায়া বুঝি বিষ ঝাড়ে না?
– কখনোই না। আমি যত যাই বলি না কেনো আমার বউ সব চুপচাপ হজম করে। আর আমি সব দেখেশুনেই বিয়ে করেছি। ও তোমার মতো ছ্যাচড়া না। যথেষ্ট ভদ্র। এজন্যই ওকে বিয়ে করেছি আমি।
– হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ছ্যাচড়া?
– ছ্যাচড়া মিনস ছ্যাচড়া। তুমি চূড়ান্ত পর্যায়ের ছ্যাচড়ায় পরিনত হচ্ছো দিন দিন। আমি এখন বিবাহিত। তোমার লজ্জা করে না এভাবে আমাকে ডিস্টার্ব করতে?
– মোটেই না। কেনো লজ্জা করবে? তোমার উপর প্রথম অধিকার আমার। এরপর এসব মায়া টায়ার অধিকার।
আলিশাকে কষে দুগালে চড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর৷ সেইসাথে রুপমের জন্য প্রচন্ড মায়াও হচ্ছে। ছেলেটা কত ভালো। আর আলিশা? উফফফ! আর ভাবতে পারছে না সোহান। রাগে দাঁত কিড়মিড়াচ্ছে আর আলিশাকে ইচ্ছেমতো গালি দিচ্ছে। গালি শুনেও আলিশার মাথাব্যাথা নেই। প্রতিটা গালির প্রত্যুত্তরে সোহানকে আই লাভ ইউ বলেই চলছে। ফোনটা কেটে দিয়েছে সোহান। রুপমকে ফের ফোন করেছে ও। এবার ফোনটা রিসিভ করেছে রুপম। রিসিভ হতে না হতেই সোহান একগাদা গালি শুনিয়ে দিলো রুপমকে। হুট করেই এতগুলো গালি স্তম্ভিত ফিরে পেতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো রুপমের।
– কি আশ্চর্য! এভাবে গালাগাল করছো কেনো সোহান?
– তোরে আরো গালি দেয়া উচিত ছিলো।
– আবার তুই তুকারিও করছো? হয়েছেটা কি?
– তোর বউ আমার কলিজা জ্বালায়া ফালাইতাসে।
– কি করেছে?
– গতকাল রাত থেকে লাগাতার ফোন মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। বউয়ের সাথে থাকোস তুই। তবু তোর বউ আরেক বেটারে জ্বালায় কেমনে? তুই ব্যাটা নাকে তেল দিয়া ঘুমাস আর তোর বউ আমারে জ্বালায়। আমার বউ এসব দেখলে আমার সংসারে আগুন জ্বলবে। তোর বউরে আমি বকা দেই সে আমাকে লাভ ইউ বলে। কি করোছ তুই সারাদিন? বউরে সময় দিতে পারোস না? তুই সময় দিলেই তো তোর বউ আমার পিছে লাগে না।
– আলিশা আবার শুরু করেছে এসব?
– হ্যা করছে। স্ক্রিনশট দিবো তোরে?
– আই এ্যাম এক্সট্রিমলি সরি সোহান।
– রাখ তোর সরি। আমার সংসারে যদি এসব নিয়া কোনো দ্বন্দ হয় তাহলে কিন্তু তোর সংসারেও আগুন জ্ালাবো।
– সোহান তোমার ওয়াইফ কি এটা নিয়ে রাগ করেছে? আমি কি ভাবিকে বুঝিয়ে বলবো ব্যাপারটা?
– মায়া এখনও এসব দেখেনি। তোর বউ যা শুরু করছে এসব বন্ধ না হলে আজকেই সব দেখে ফেলবে। ও এসব দেখলে নিশ্চয়ই আমাকে লাভ ইউ জানু লাভ ইউ বেবি বলে ঘুরে বেড়াবে না।
– সোহান তুমি ঠান্ডা হও। আমি আলিশাকে দেখছি।
– মানসিক রোগের ডাক্তার দেখা তোর বউকে। শালী পাগল হয়ে গেছে হিংসায়।
– হ্যা দেখাবো। তবু তুমি প্লিজ ঠান্ডা হও।
ফোনটা কেটে দিলো সোহান। এতক্ষনে নিজেকে কিছুটা হালকা লাগছে ওর।

কিচেনে আনমনে কাজ করছে মায়া। সোহানের কথামতো রান্না করেছে দুপুরে। খাবার সেড়েই সালমান বেরিয়ে গেছে শিমুর সাথে দেখা করতে। সবজি পাকোড়া ভিষন পছন্দ সোহানের। অফিস থেকে ফিরে আসলে নাস্তা খেতে দিবে সোহানকে। আলিশার কথা ভাবতে ভাবতে তেলের মধ্যে পাকোড়া দিতে গিয়ে হাতের আঙুলগুলো ডুবিয়ে দিলো তেলে। হালকা চিৎকার করলো মায়া। ডাইনিং টেবিল মুছছিলো রতন। মায়ার গলার আওয়াজ পেয়ে কিচেনে এসেছে সে। এসে দেখে মায়া হাত ঝাড়ছে। সিংকের ট্যাপ ছেড়ে বললো
– ভাবী ফোস্কা পড়ছে। শিগগির হাত কলের নিচে দেন।
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে রতন দৌড়ে গেট খুললো। অন্যান্য সময় মায়া গেট খুলে দেয়। আজ রতনকে দেখে একটু অবাক হলো সোহান। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে জিগ্গেস করলো
– মায়া কোথায়?
– ভাবী হাত পুইড়া ফালাইসে। রান্নাঘরে কলের নিচে হাত দিয়া দাড়ায়া আছে।
রতনের কথা শুনে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো সোহান। রান্নাঘরের দরজায় দাড়িয়ে মায়াকে বললো
– কি ম্যাম? হাত পুড়ে ফেললেন?
– হ্যা। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি নাস্তা দিচ্ছি।
– নাস্তা পরে হবে। তুমি এসো আমার সাথে। মেডিসিন লাগাতে হবে।
– লাগাবো। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আসছি।
সোহান আর কথা না বাড়িয়ে মায়ার হাত টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসলো। সোহান মায়ার আঙ্গুলে অয়েনমেন্ট লাগাচ্ছে সেই সাথে আঁড় চোখে ওকে দেখছে। মুখটা বেশ মলিন হয়ে আছে ওর। বুঝাই যাচ্ছে মনটা বিশাল রকমে খারাপ। মেডিসিন লাগিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো
– এখানেই চুপ করে বসে থাকো। এক পাও নড়বে না। কথা আছে তোমার সাথে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। এই রতন, আমার রুমে নাস্তা দিয়ে যাও তো।
কথাগুলো বলেই ট্রাউজার আর টাওয়েল হাতে ওয়াশরুমে গেলো সোহান। জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো মায়া। গলির সামনে রিকশা আর গাড়িতে মিলিয়ে বেশ ভালোই জটলা পেকেছে। বেশ হাউকাউ হচ্ছে। রিকশা ড্রাইভার বকছে কার ড্রাইভারকে আর কার ড্রাইভার বকছে রিকশাওয়ালাকে। কেউ কারো দোষ স্বীকার করতে রাজি না। অনেকটা সময় ঝগড়া চলার পর এলাকার লোকজন এসে তাদের থামিয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। রিকশাগুলো টুংটাং শব্দ করতে করতে যার যার গন্তব্যস্থলে যাচ্ছে। হুট করেই ঘরের লাইট অফ হয়ে গেলো। সোহান লাইট অফ করেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই মায়া দেখলো সোহান ওর একদম কাছাকাছি চলে এসেছে।
– লাইট অফ করলেন যে? আাসেন নাস্তাটা সেড়ে নিন।
সেখান সড়ে আসতে চাইলো মায়া। বাঁধ সাধলো সোহান। দুহাতে জানালার গ্রিল ধরে রেখেছে সে। এর মাঝখানে মায়া বন্দী হয়ে আছে। জানালার গ্রিলে পিঠ সেটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মায়া। মায়ার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ওর ঠোঁটে চুমু খেলো সোহান। এক হাতে মায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে মায়ার চুলের খোপা খুলে দিতে দিতে বললো
– কি হয়েছে?
– কিছু না তো?
– সত্যিই কিছু হয়নি?
ফোন বেজে উঠলো সোহানের। মায়া বললো
– আপনার ফোন এসেছে।
– আসুক।
– আলিশা ফোন করেছে বোধহয়। যান গিয়ে রিসিভ করুন।
মায়ার কোমড় আরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
– ঘটনা তাহলে এখানে?
– কিসের ঘটনা?
– কলিজা পোঁড়ার ঘটনা।
– কিসের কথা বলছেন?
– কলিজা পোঁড়ার স্মেল এত্ত সুন্দর হয় আগে জানা ছিলো না। এর আগেও কলিজা পোড়াঁর স্মেল পেয়েছি। কিন্তু তেমন ভালো লাগেনি। আজ ভীষন রকমে ভালো লাগছে। কেনো জানো? সেই পোঁড়া গন্ধের মাঝে ভালোবাসার ঘ্রান খুঁজে পাচ্ছি। কেউ একজন খুব করে ভালেবাসতে শুরু করেছে আমাকে। তার ভালোবাসার ঘ্রানটা নাক দিয়ে ঢুকে ঠিক বুকের বা পাশটাতে যেয়ে প্রচন্ড রকমে আঘাত করছে। ব্যাথা করছে খুব। ব্যাথাটা খুব তৃপ্তির। মনে হচ্ছে বহুদিনের চাওয়াটা বুঝি পূরন হয়েছে। আচ্ছা সেই কেও একজনটা কি তুমি?
চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মায়া। মায়ার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে সোহান বললো
– মুখ ফুটে বলতে চাচ্ছো না? নো প্রবলেম। বলতে হবে না। আমি অনুভব করে নিবো।
চলবে,,,,

নষ্ট গলি পর্ব- ১৫

0

নষ্ট গলি পর্ব- ১৫

লেখা: মিম
.
টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে মায়া। সোহান অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো। সে দেখতে পাচ্ছে মায়া মুখটা কালো করে রেখেছে। কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে এমন সময় দেখলো সালমান এসেছে রুমে। চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
– তোমার ওয়াইফের সাথে ইন্ট্রোডিউস করাও।
সালমানকে দেখে মায়া তার চেহারা স্বাভাবিক রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। ঠোঁটের কোনে হাসি ধরে রাখার প্রানপন চেষ্টা চালাচ্ছে।
– ওর নাম মায়া। মায়া এটা সালমান। আগে তো ওর ছবি তোমাকে দেখিয়েছি।
– কেমন আছেন ভাইয়া?
– হুম ভালো। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও আমার যথেষ্ট ছোট হবে বয়সে ।
– হুম ও তোর বেশ ছোট। শি ইজ অনলি এইটিন।
– এত ছোট মেয়েকে বিয়ে করলে?
– করলাম। ছোটগুলোই ভালো। কোনো কিছু বললে চুপচাপ মেনে নেয়।
– এত ডিফারেন্সে কোনো মেয়ে আজকাল বিয়ে রাজি হয় নাকি?
– ও হয়েছে। কারন ও আলাদা।
– কেনো? ওর কি পিছনে ডানা আছে নাকি?
সালমানের কথায় হাসি পাচ্ছে মায়ার। তবে মনখুলে হাসতে পারছে না। মনে হচ্ছে বুকের মধ্যে কেউ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। তবুও খানিকটা জোর করে হাসলো মায়া।
– শুনো আমি কিন্তু এত ফর্মালিটিজ মেইনটেইন করতে পারবো না। আমি তোমাকে নাম ধরেই ডাকবো। বয়সে ছোট মেয়েকে আমি ওসব ভাবী টাবী ডাকতে পারবো না। তোমার কোনো প্রবলেম নেই তো?
– না ভাইয়া নাম ধরেই ডাকবেন। আমি আপনার ছোট।
– প্লিজ আমাকেও নাম ধরেই ডাকো। আর এসব আপনি টাপনি বলো না তো। নিজেকে বেশি মুরুব্বি মনে হয় এসব শুনলে।
– ভাইয়া আপনাকে নাম ধরে ডাকবো ব্যাপারটা কেমন দেখা যায় না?
– কেমন দেখা যাবে কেনো? যেখানে আমি পারমিশন দিচ্ছি সেখানে তো কেমন দেখার কোনো প্রশ্নই আসে না।
– তবুও….
– মায়া ও যথেষ্ট ফ্রি মাইন্ডেড ছেলে। তাছাড়া সম্পর্কে ও তোমার ছোট। নাম ধরে ডাকতে তো কোনো আপত্তি আমি দেখছি না ।মায়া খানিকটা ইতস্তত করে বললো,
– জ্বি ডাকবো।
– তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো? আমাদের সাথে বসে পড়ো।
– আমি একটু পর খাবো। আপনি খান।
– আপনি? ভাইয়া মায়া তোমাকে আপনি করে ডাকে?
– হুম।
– এটা কেমন কথা? ও তোমাকে আপনি ডাকে কেনো?
– শুরু থেকে আপনি করে ডাকে। আমি কখনো বাঁধা দেইনি। তাই ও এখন পর্যন্ত আপনিতেই সীমাবদ্ধ আছে। তুমি পর্যন্ত আসতে পারেনি।
– তোমাদের সত্যিই বিয়ে হয়ছে তো?
সালমানের প্রশ্নে বেশ চমকে গেলো মায়া। ব্যাপারটা সালমানের নজর এড়ালো না। সে আরো সন্দেহ নিয়ে মায়াকে দেখছে। মায়া, সালমান দুজনকেই দেখছে সোহান। সে বুঝতে পারছে সালমানের মনে মায়ার চমকে যাওয়াটা খটকা লাগছে।
– কি ব্যাপার? তুমি এমন চমকে উঠলে কেনো? ভাইয়া তোমরা কি বিয়ে করোনি?
– আসলে কেউ বিশ্বাস করে না আমরা বিবাহিত। এ নিয়ে ছয় সাতজন এই প্রশ্ন করেছে। তাই মায়া এমন চমকে গেছে।
– লোকজন সন্দেহ করাটাই স্বাভাবিক। একে তো মায়া এত ছোট। তার উপর ও তোমাকে আপনি করে বলে। আজকাল কেউ আপনি করে বলে নাকি?
– আচ্ছা তুই এই আপনি কথাটার পিছনে হাত ধুয়ে লেগেছিস কেনো বল তো?
– শুনতে কেমন যেনো লাগছে। এনিওয়ে, বাদ দেই সেসব আমি এবার ১৫-২০ দিন থাকবো। মায়া আমি কিন্তু ভোজনরসিক মানুষ। হুটহাট এটা সেটা খেতে ইচ্ছে হয়। আমাকে কিন্তু বানিয়ে দিতে হবে।
– হুম দিবো।
সোহানের ফোনটা বেজে উঠলো। আলিশা ফোন দিচ্ছে। স্ক্রিনে আলিশার নামটা দেখতে পেয়েছে মায়া। মনের ভিতরটাতে খচখচ শুরু হয়েছে আবার। যদিও সোহান ফোনটা রিসিভ করেনি। তবুও খচখচ চলছেই। মুখে আপেলের টুকরা ঢুকিয়ে চিবুতে চিবুতে সোহান জিজ্ঞেস করলো
– তুই তো ৫-৬ দিনের বেশি থাকিস না। তোকে ধরে বেঁধেও রাখতে পারিনা। এবার হঠাৎ ১৫-২০ দিন থাকবি যে?
– শিমুর সাথে অনেকদিন ধরে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
– কি নিয়ে?
– ওকে সময় দেই না। ওর সাথে দেখা করতে আসি না।
— ভুল তো কিছু বলে নি। তুই লাস্ট ঢাকা এসেছিলি পাঁচ মাস আগে। বিগত পাঁচ মাসে শিমুর সাথে একদিনও দেখা করিসনি। ও যে এখনও তোকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে না এটাই অনেক।
– পরীক্ষার প্রেশার ছিলো। বাবার সাথে ব্যবসার কাজও করতে হয়েছে। তাই ওকে সময় দিতে পারিনি।
– এটা কোনো কথা হলো না সালমান। কাজ কাজের জায়গায়। এটার সাথে তুই সম্পর্কগুলো গুলিয়ে ফেলছিস কেনো। কাজের ফাঁকে ওর জন্য সময় বের করাটা তোর উচিত ছিলো। সম্পর্কের যত্ন নিতে শিখ। আর নয়তো সব সম্পর্ক এক এক করে ভাঙতে শুরু করবে। বাবা- মা কে দেখিসনা? দুজনের সাথে দুজনের শুধুমাত্র একটা কাগজের সম্পর্ক রয়ে গেছে। ভিতর থেকে কারো প্রতি কারো কোনো টান নেই। সবটাই হয়েছে অযত্ন অবহেলার কারনে।
– এজন্যই তো ১৫-২০ দিনের সময় নিয়ে এসেছি। প্রতিদিন ওর সাথে মিট করবো। দূরে, শহরের বাইরে ঘুরবো। শুনো মায়া তোমাকে কিন্তু অবশ্যই শিমুর সাথে দেখা করাবো। তবে সেটা কাল। আজকে না। আজকে ওর রাগ ভাঙাবো।
– শিমু কি তোমার প্রেমিকা?
– হ্যা। তোমার চেয়ে একটু বড়। বেশি না। মাত্র একবছরের। সমবয়সী বলা চলে।
ফোনটা আবার বাজছে সোহানের। এবার লাগাতার বেজে চলছে। ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিয়েছে সোহান। সালমানের সাথে মায়া কথা বলছে ঠিকই। তবে নজর পড়ে আছে সোহানের ফোনের দিকে। যন্ত্রনাটা ক্রমশ বাড়ছে মায়ার। যন্ত্রনা আড়াল করার চেষ্টা করছে তবু চোখে মুখে ভেসে উঠছে । প্রিয় কোনো কিছু হারানোর ভয়গুলোর যন্ত্রনা বুঝি এমনই হয়। হাজার চেষ্টায়ও লুকিয়ে রাখা যায় না। খাওয়া শেষে সোহান বেরিয়ে গেলো অফিসের জন্য। প্রতিদিনের মতো আজ মায়া গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসে নি। কাজের মিথ্যে অযুহাতে কিচেনের ওদিকটাতেই পড়ে ছিলো। সোহানের চোখ এড়ায়নি ব্যাপারটা। তার মনেও খচখচানি চলছে। সমস্যাটা কোথায় মায়ার? সুযোগ বুঝে ধরতে হবে এই মেয়েকে।
চলবে,,,,

নষ্ট গলি পর্ব- ১৪

0

নষ্ট গলি পর্ব- ১৪

লিখা: মিম
.
.

আজ সকালে ঘুম থেকে মায়ার আগে সোহান উঠে পড়েছে। অপেক্ষা করছে মায়ার ঘুম থেকে উঠার। ওকে সালমানের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতে হবে। আর নয়তো তালগোল পাকিয়ে ফেলবে। অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পর মায়াকে ডেকে তুললো সোহান। মায়ার চোখ যেনো আজ খুলতেই চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেউ আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছে। সোহান বারবার মায়াকে আলতো ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করছে। চোখ কচলাতে কচলাতে মায়া বললো,
– চোখ মেলতে পারছি না। ঘুমটা কাটছেই না।
– উঠো। চোখে মুখে পানির ঝাপটা দাও। জরুরি কথা আছে।
মায়াকে বিছানা থেকে টেনে তুললো সোহান। কোনোমতে ওয়াশরুমে যেয়ে ইচ্ছেমতো চোখে মুখে পানির ছিটা দিতে লাগলো মায়া। বেলকনি থেকে তয়লা নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে সোহানের মুখোমুখি এসে বসলো সে।
– কি জরুরি কথা?
– সালমান এসেছে।
– কখন আসলো?
-গতরাতে।
– আমাকে দেখেছে?
– হুম।
– এখন কি হবে?
– সেটাই বলছি। ও জানে তুমি আমার ওয়াইফ। একটু রাগ করেছে ওদের ফেলে বিয়ে করেছি ভেবে। যদি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে বলবে তোমার মা গ্রামে থাকে। তোমার গ্রামে আমি গিয়েছিলাম। ওখানে আমি তোমাকে প্রথম দেখেছি। দেখা মাত্রই তোমাকে ভালো লেগেছে। তাই বিয়ে করে নিয়ে এসেছি। এখানে নতুন করে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। তিনমাস হয়েছে আমাদের বিয়ের।
– যদি সত্যি কথা মুখ ফসকে বের হয়ে যায়?
– সেজন্যই তো বলছি বেশ কেয়ারফুললি সালমানকে হ্যান্ডেল করতে হবে।
– আচ্ছা উনি কি খুব বেশি ক্ষেপে আছেন?
– হুম একটু ক্ষেপে গিয়েছে। ক্ষ্যাপাটা স্বাভাবিক। ওকে ফেলে বিয়ে করেছি বিষয়টা ওর গায়ে লেগেছে। ব্যাপার নাহ। ওর রাগ বেশিক্ষন থাকে না।
– আপনার বাবা মা কে বলে দিলে?
– বলুক। সমস্যা কোথায়?
– আসলে তো আপনার আমার বিয়ে হয়নি। সবাইকে এভাবে মিথ্যা বলাটা কি ঠিক হচ্ছে? তাছাড়া উনারা বেশ কষ্ট পাবেন শুনলে যে উনাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছেন।
– বিয়ে হয় নি তো কি হয়েছে। বিয়ে করে ফেলবো তোমাকে। এত মাথা ঘামিও না তো মায়া।
“বিয়ে করে ফেলবো তোমাকে” কথাটা ঘন্টার মতো মায়ার কানে খুব জোরে শব্দ করে বেজে চলছে। বুকটা হঠাৎ করে ধুক করে উঠলো মায়ার। বিয়ে? সত্যিই? নষ্ট গলির মেয়ে নামক সিলমোহরটা কি এবার ওর উপর থেকে উঠে যাবে? সোহান কিছু একটা বলছে। সোহানের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে মায়া। কিন্তু একটা কথাও কানে ঢুকছে না ওর। ঘোরের মাঝে ডুবে আছে ও। কি বললো সোহান? বিয়ে? আচ্ছা সত্যিই কি বিয়ে হবে ওর? চোখে পানি ছলছল করছে। কিন্তু পানিটা চোখ থেকে বেরিয়ে আসতে দেয়া যাবে না। সোহানের কাছে সুখের অনুভুতিটা ধরা পড়ে যাবে। লজ্জাজনক ব্যাপার। সোহানের আলতো ধাক্কায় ঘোর কাটলো মায়ার।
– এই মায়া, কি জিজ্ঞেস করছি? শুনো না?
– হুম?
– কি ভাবছিলে?
– কিছু না।
– দুপুরে কি রান্না করবে?
– আপনি যেটা বলবেন।
– সালমান চিংড়ি ভুনা খুব পছন্দ করে। ওটা মাস্ট রাঁধতেই হবে। আর গরু বা মুরগি যেটা ভালো লাগে সেটা করো। ভিনেগার দিয়ে মাখানো সালাদটা বানিয়ে রেখো। ও আবার সালাদ ছাড়া ভাত খেতে পারে না।
– আচ্ছা।
– এখন তোমাকে কিছু রান্না করতে হবে না। তুমি ভালো মতো ফ্রেশ হয়ে কাপড়টা পাল্টে নাও। চুল-টুল ভালোভাবে আঁচড়ে নাও। আমি চাই না সালমানের সামনে তুমি পাগল ছাগলের মতো যাও।
– আমাকে কখনো দেখেছেন পাগল ছাগলের মতো থাকতে?
– হুম। কত দেখেছি। এখনও তো দেখছি। এই যে চুলগুলো জট বেঁধে কেমন হয়ে আছে।
– চুলের জটগুলো তো আপনার খুলে দেয়ার কথা ছিলো।
– হুম ছিলো। তুমি তো ঘুমিয়ে পড়ছিলে।
বিছানা ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চিরুনি নিয়ে এলো মায়া। সোহানের হাতে চিরুনি ধরিয়ে উল্টোমুখ হয়ে বসলো সে।
– নিন, জট খুলে দিন। আমি এখন সজাগ আছি।
সোহান মুচকি হাসছে। পরম যত্নে মায়ার জটগুলো ছাড়াচ্ছে। এমন আহ্লাদ সোহানের খুব পছন্দ। জীবনটাকে সুন্দর করার জন্য এই আহ্লাদগুলো টনিক হিসেবে কাজ করে। এই টনিকটার খুব প্রয়োজন ছিলো সোহানের।বহু খোঁজ করেছে টনিকের। খোঁজ করতে করতে মায়ার দাঁড়ে এসে উপস্থিত হয়েছে সোহান। অবশেষে সে তার টনিক খুঁজে পেয়েছে। ঘড়িতে কয়টা বাজে দেখার জন্য সোহানের ফোন হাতে নিয়েছে মায়া । অনেকগুলো মিসডকল আর মেসেজ জমা পড়েছে। সবগুলো আলিশার। মেসেজগুলো এক এক করে পড়ছে মায়া।
রাত ৩.৫০ মিনিট
জানো ও তোমার মতো করে একদম ভালবাসতে জানে না। তোমার ভালোবাসায় মাদকতা ভরপুর ছিলো। কিন্তু রুপম, ওর ভালোবাসায় আমি তেমন কিছু খুঁজে পাই না।
রাত ৩.৫৫ মিনিট
তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?
রাত ৪.০৫ মিনিট
– ফোনটা রিসিভ করো একটু। তোমার কন্ঠটা খুব শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে।
রাত ৪.১২ মিনিট
– আমি জানি তুমি জেগে আছো। কেনো এমন করছো আমার সাথে?
ভোর ৪.৩০ মিনিট
– তোমাকে খুব বেশিই মিস করছি। একটু কথা বলো প্লিজ।
ভোর ৪.৩৩ মিনিট
– অকে কথা বলতে হবে না। মেসেজের রিপ্লাইটা এট লিস্ট দাও।
ভোর ৪. ৩৭ মিনিট
– আমি তোমাকে এখনও ভালোবাসি সোহান। তুমি বললে এখনই ছুটে আসবো তোমার কাছে।
ভোর ৪. ৪০ মিনিট
-আচ্ছা তোমার কি কখনো জানতে ইচ্ছে হয়না আমি কেমন আছি?
ভোর ৪.৫৫ মিনিট
– তোমার ইগনোরেন্স একদম সহ্য হচ্ছে না সোহান।
ভোর ৪.৫৮ মিনিট
– তুমি কি খুব ব্যস্ত মায়াকে নিয়ে?
ভোর ৫.০৫ মিনিট
– মায়া খুব সুন্দরী তাই না সোহান? এজন্যই ওর মাঝে এতটা ডুবে থাকো। আচ্ছা ও কি আমার চেয়ে আরো বেশি সুন্দর?
ভোর ৫.১৫ মিনিট
– এই নিয়ে ১১ টা মেসেজ দিলাম। একটার রিপ্লাই দিলে না। ১৪ টা কল করলাম রিসিভও করলে না। আমি এতটা অবহেলা পাওয়ার যোগ্য?
সোহানের আগের পাঠানো মেসেজের রিপ্লাইগুলোও দেখলো মায়া। অসহ্য লাগছে ওর। আলিশার মেসেজ, সোহানের রিপ্লাই দেয়া এসব ওকে প্রচন্ড যন্ত্রনা দিচ্ছে। রাগে চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। ওর আর এক সেকেন্ড এখানে বসতে ইচ্ছে হচ্ছে না। উঠে দাঁড়ালো মায়া। মুখ আড়াল করে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে।
– কি ব্যাপার? উঠে পড়লে যে? জট তো এখনও খোলা হয়নি
ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে মায়া উত্তর দিলো
– লাগবে না। বাকিটা আমি করে নিবো।
মায়ার আচরনটা বেশ অদ্ভুদ লাগলো সোহানের। একটু আগেই না আহ্লাদ করে বললো জট খুলে দিতে কিছুক্ষনের মধ্যে কি হয়ে গেলো?
চলবে,,,,,
.

নষ্ট গলি পর্ব ১৩

0

নষ্ট গলি পর্ব ১৩

লেখা: মিম

ব্রিজের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে সোহান আর মায়া। দমকা বাতাসে মায়ার চুল প্রচন্ড রকমে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। চুলগুলো খোপা করছে মায়া। বাঁধ সাধলো সোহান।
– বাঁধার দরকার কি?
– চুলে জট লেগে যাচ্ছে।
– লাগুক।
– জট ছাড়াতে পরে হিমশিম খেয়ে যাবো। একগাদা চুল ছিঁড়বে।
– তোমার কাছে ছোট একটা আবদার ধরেছি আর সেটা তুমি রাখতো চাচ্ছো না?
– ব্যাপারটা তেমন না।
– ব্যাপার যেমনই হোক, চুল খোলা রাখবে ব্যস। এবার জট লাগুক না সব চুল ছিড়ে যাক সেটা আমার দেখার বিষয় না।
মুচকি হেসে সোহানের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো মায়া। তার এক হাত জড়িয়ে ধরে বললো
– ঠিকাছে আবার রাখবো। তবে শর্ত একটাই বাসায় যেয়ে জটগুলো আপনি ছাড়িয়ে দিবেন।
– আর কিছু?
– নাহ, আপাতত জট ছাড়ালেই চলবে।
– ঠিকাছে দিবো।
ব্রিজের উপর দিয়ে বাস ট্রাক কিছুক্ষন পরপরই আসা যাওয়া করছে। তবু মন্দ লাগছে না মায়ার। ভালো লাগা কাজ করছে ভিতরে। নদীর পানি কালো দেখাচ্ছে। একদম বুড়িগঙ্গার পানির মতো। মায়ার জানামতে মেঘনার পানি এমন কালো না। হতে পারে অন্ধকারের জন্য এমন দেখাচ্ছে। দিনের আলোতে দেখতে পারলে আরো ভালো লাগতো।
-মায়া।
– হুম।
– চল বাসায় যাই।
– এখনি?
– আরো কিছুক্ষন থাকতে চাচ্ছো?
– নাহ। অনেকক্ষন তো হলো।
– তুমি চাইলে আরো কিছুক্ষন থাকতে পারো।
– না। চলুন যাই।

খুব দ্রুত গতিতে ছুটছে সোহানের গাড়ি। মায়া গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে ঘুমুচ্ছে। কিছুক্ষন পরপরই ঘাড় বেকায়দায় হেলে যাচ্ছে মায়ার। আর সোহান কিছুক্ষন পরপর মায়ার ঘাড় এক হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছে। মেয়েটা এত বেশি ঘুমকাতুরে যে একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর কোনো হুঁশ থাকে না। এই যে এতবার সোহান ওর ঘাড় ঠিক করে দিচ্ছে একবারের জন্যও মায়ার ঘুম ভাঙেনি। সোহান ভেবে কূল-কিনারা করতে পারে না একটা মানুষ এমন গভীর ঘুম কিভাবে ঘুমায়?
বাসা অব্দি পৌঁছে গেছে সোহানের গাড়ি। মায়া এখনও ঘুমে। ওর এমন শান্তির ঘুম দেখে সোহানের ইচ্ছে হচ্ছে না ওকে ডেকে তুলতে। বাসায় রতনের মোবাইলে ফোন করে সোহান বললো গেইট খোলা রাখতে। মায়াকে কোলে নিয়ে কলিংবেল বাজানো সম্ভব না।

বেডরুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিংরুমে যাচ্ছে সালমান। রতনকে এতরাতে গেইট খুলতে দেখে জিজ্ঞেস করলো
– গেইট খুলছো যে?
– সোহান স্যার আসতেছে তো তাই গেইট খুলে রাখছি।
– তুমি জানো কিভাবে ভাইয়া আসছে?
– ফোন দিয়া কইলো গেইট খুইলা রাখতে।
– ওহ।
সালমান রতনের পিছনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সোহানের সাথে দেখা করবে বলে। একটা মেয়েকে কোলে করে তার ভাই দরজার দিকে এগিয়ে আসছে। ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না সালমানের। কে এই মেয়ে? সালমানকে এভাবে হুট করে দেখে বেশ অবাক সোহানও। দুজন দুজনের দিকে ব্যাপক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। দুজনের চোখে বহু প্রশ্নরা ছুটোছুটি করছে। সালমান কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে এমন সময় সোহান ইশারায় তাকে থামিয়ে দিলো। মায়াকে বেডরুমে শুইয়ে দিয়ে দরজা লক করে বাহিরে বেরিয়ে এলো সোহান।
– তুই কখন এসেছিস?
– মেয়েটা কে?
– আসার আগে ফোন দিলি না কেনো?
– তুমি মেয়েটাকে এতরাতে কোলে করে এনেছো। কি হয় ও তোমার?
– কি আশ্চর্য! উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন কেনো করছিস?
– তুমিও তো উত্তরদিচ্ছো না।
– ওর নাম মায়া।
– কি হয় ও তোমার?
– ওয়াইফ।
– তুমি আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললে?
– হুম করেছি। তো?
– তো মানে? তুমি কি আমাদের একেবারে বাদ দিয়ে দিতে চাচ্ছো?
– নাহ। সেটা চাইবো কেনো? বাদ দেয়ার ইচ্ছে হলে তো সেই কবেই দিতাম। আসলে কথা হচ্ছে কি জানিস? আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি সেই খবরই তো বাবা মা নেয়ার সময় পায় না। তো এত ব্যস্ত লোকদের আমার বিয়ের খবর জানিয়ে করবোটা কি? অহেতুক এসব খবর বলে উনাদের টাইম ওয়েস্ট করতে চাই না।
– আমি? আমি কি করেছি?
– কিছুই করিসনি।
– তাহলে আমাকে বললে না কেনো?
– কথা এতো পেঁচাচ্ছিস কেনো সালমান? বিয়ে করে ফেলেছি তো করে ফেলেছি।কাকে জানালাম,কাকে জানালাম না সেসব এখন ঘেটে তো লাভ নেই।
– ভাইয়া তুমি কেমন যেনো হয়ে গেছো। খুব বেশিই গা ছাড়া ভাব দেখাচ্ছো তুমি। মনে হচ্ছে আমি তোমার ভাই না।রাস্তার অপরিচিত কেউ।
– একটা কথা কোথা থেকে কোথায় টানছিস সালমান? আমি বিয়ে করেছি। খুবই সামান্য একটা ব্যাপার। এমন তো না যে আমি এখানে বিয়ের পার্টি দিয়েছি অথচ তোদের জানাইনি। এতটা রিয়েক্ট কেনো করছিস?
– বিয়েটা সামান্য ব্যাপার না কি সেটা অামি জানি না।কথা হচ্ছে তুমি আমার ভাই। তোমার প্রতি আমার কিছু অধিকার আছে, এক্সপেক্টেশন্স আছে। সেগুলো আমি তোমার কাছে ডিমান্ড করতেই পারি। অনুষ্ঠান করো আর না করো তুমি কবুল বলার টাইমে এটলিস্ট তোমার সামনে দাঁড়ানোর অধিকারটুকু তো আমার আছে।
– বিয়েটা তো হয়ে গেছে। এখন তো আর আমি ঘটনা বদলাতে পারবো না।
– ধুর…।
একরাশ বিরক্তি আর রাগ নিয়ে সালমান রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। সোহান খুব স্বাভাবিক গতিতে ফ্রেশ হয়ে মায়ার পাশে এসে শুয়ে পড়লো। ঘরে ছোটখাটো তুফান হয়ে গেলো আর মায়ার কোনো খবর নেই। ওর ঘুমে তিল পরিমান ব্যাঘাত ঘটেনি। মায়ার ঘুম দেখে নিজের অজান্তেই হেসে ফেললো সোহান। ফোন হাতে নিতেই চোখে পড়লো দুটো মেসেজ এসেছে আলিশার নম্বর থেকে। প্রথম মেসেজে আলিশা তাদের প্রেমের স্মৃতিচারন করেছে। আর দ্বিতীয় মেসেজে লিখেছে
– কোথায় তুমি? কি করছো? একটা রিপ্লাই দেয়ার সময়ও কি পাচ্ছো না?
সোহান একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে মেসেজগুলো পেয়ে। রিপ্লাই দিতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রিপ্লাই দিয়েই দিলো সোহান
– ব্যস্ত ছিলাম।
মেসেজটা সেন্ড হওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে রিপ্লাই চলে আসলো। মনে হচ্ছিলো আলিশা এতক্ষন ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলো রিপ্লাই পাবার আশায়।
– এত রাতে কিসের ব্যস্ততা তোমার?
– বউ আছে। ব্যস্ত থাকাটাই স্বাভাবিক।
– খুব ভালোবাসাবাসি হয় তাই না?
– তুমি যখন রুপমকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলে তখন তো আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি তোমাদের ভালোবাসাটা কোন পর্যায়ে হয়।
– ভালোবাসা কেমন হবে আন্দাজ করে নাও। ভালোবাসা যদি এত বেশিই হতো তাহলে তো আর তোমাকে এতরাতে মেসেজ করতাম না।
– এভাবে নিজের হাজবেন্ডকে বদনাম করে কি মজা পাও আলিশা? রুপম যথেষ্ট ভালো একজন মানুষ। তোমার সাথে ওর বিয়ে হওয়ার আগে থেকে ওর সাথে আমি বিজনেস করি। ওকে খুব ভালোই চিনি আমি। বরং আমি বলবো রুপমের ভালোবাসা বুঝার মতো জ্ঞান বুদ্ধি তোমার হয়নি।
– তোমার মতো করে ভালো তো ও বাসে না।
আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে হচ্ছে না সোহানের। আলিশাকে প্রচন্ড রকমের ছ্যাচড়া মনে হয় তার। সে খুঁজে পায় না এমন একটা ছ্যাচড়া মেয়ের সাথে প্রেম করলো কিভাবে? ফোনটা সাইলেন্ট করে মায়াকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো সোহান। প্রচন্ড ঘুম ভর করছে চোখে। অন্যদিকে সোহানের ফোনে একের পর এক মেসেজ এসেই চলছে। মাঝেমাঝে আলিশা ফোনও দিচ্ছে। সোহানের ইগনোরেন্স প্রচন্ড কষ্ট দিচ্ছে আলিশাকে। দুচোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে ওর।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-১২

0

নষ্ট গলি পর্ব-১২

লেখা-মিম

-” অাপনি কি সত্যিই পুরুষ মানুষ? ”
-” কেনো? কোনো সন্দেহ অাছে?”
-” পুরুষ মানুষ এত ভালো হয় জানতাম না।”
-” তোমার কি ধারনা এসব অামি তোমার জন্য করছি?”
-” তাহলে?”
-” যা করছি নিজের জন্য করছি। নিজের মানসিক শান্তির জন্য করছি। এখানে তোমার যতটুকু না স্বার্থ অাছে তার চেয়ে বেশি অামার স্বার্থ অাছে। মনের শান্তি খুব বড় জিনিস মায়া। অামার সব থেকেও কিছুই ছিলো না। কেনো ছিলো না জানো? মনের শান্তি ছিলো না। এখন অামি শান্তি পাই। প্রচন্ড রকমের শান্তি। ”
-” শুধুমাত্র শান্তির অাশায় অামার জন্য এতকিছু করছেন”
-” মনের খোড়াকের যে কত মূল্য তা হয়তো তোমার জানা নেই মায়া।”
সোহানের ফোন বাজছে। স্ক্রিনে অালিশার নাম ভেসে উঠছে। আলিশা হচ্ছে সোহানের প্রথম প্রেমিকা। ফোনটা রিসিভ করছেনা সোহান। অালিশার নামটা দেখেই ফোনটা সাইলেন্ট করে ফেলে রেখেছে সোহান। প্রথমবার কেটে যাওয়ার পর অাবার ফোন করছে অালিশা।
-” ফোনটা রিসিভ করছেন না যে?”
-” ওর সাথে কথা বলার মুডে অামি একদমই নেই।”
-” কে উনি?”
-” অালিশা। অামার প্রথম গার্লফ্রেন্ড। ঐ যে বিষ খেয়েছিলো না? ঐ মেয়েটা।”
-” তো রিসিভ করেন।”
-” ধুর। এসব প্যারাদায়ক মানুষ অামার পছন্দ না।”
-” অারে বারবার ফোন করছে। রিসিভ করেন।”
ফোনটা রিসিভ করে মায়ার কানে দিয়ে সোহান বললো
-” তুমিই কথা বলো।”
চোখ বন্ধ করে উল্টাদিকে ফিরে শুয়ে অাছে সোহান। মায়া কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না। ওপাশ থেকে অালিশা হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড পর মুখ খুললো মায়া।
-” জ্বি, হ্যালো?”
-” সোহান কোথায়?”
-” জ্বি…. উনি…. উনি ওয়াশরুমে।”
-” তুমিই ওর ওয়াইফ তাই না?”
-” জ্বি?”
-” কি অাশ্চর্য? এমন অাতেলের মতো জ্বি জ্বি করছো কেনো?”
-” না মানে, হ্যা অামি উনার ওয়াইফ।”
-” বিয়েটা কি লাভ নাকি এ্যারেন্জড?”
-” উনি অামাকে দেখেছে এর কিছুক্ষন পরই বউ বানিয়ে ফেলেছে। এখন অামি জানি না এটা লাভ না এ্যারেন্জড।”
-” কিহ্? এটা কেমন উত্তর? হোয়াটএভার……. তুমি কি জানো অামি কে?”
– ” জ্বি। অাপনি অালিশা। উনার প্রথম প্রেমিকা।”
-” ওহ অামার গল্প করেছে তাহলে। বিয়ের কতদিন হলো?”
-” তিনমাস।”
-” এতদিনে নিশ্চয়ই টের পেয়ে গেছো সোহান একটা পাগল।”
-” কই না তো। উনি তো দিব্যি সুস্থ অাছেন।”
-” যেই ছেলে প্রতিদিন গালি দেয় তাকে কি করে তুমি সুস্থ বলো? কোনো সুস্থ মানুষের ভাষা এত জঘন্য হতে পারে না।”
-” অামাকে তো কখনো গালি দেয়নি।”
-” অার ইউ সিরিয়াস? গালি দেয়নি?”
-” না তো।”
-” ওহ্ ঠিকই তো গালি দিবে কেনো? তুমি তার ওয়াইফ। পরম প্রিয় মানুষ। অামি তো প্রেমিকা ছিলাম। প্রেমিকারা শত কিছু হলেও ছেড়ে যায় না। কিন্তু বউরা এত কথা শুনে সংসার করবে না। বউ কখনো প্রেমিকা হতে পারেনা। প্রেমিকার জায়গা নিতে পারে না। এজন্যই তোমার হাজবেন্ড তোমাকে গালি দেয় না। এখন সে নিশ্চয়ই হারে হারে টের পায় অালিশাকে ছেড়ে কতবড় ভুল করেছে। তোমার হাজবেন্ডকে জিজ্ঞেস করে দেখো অালিশা কি ছিলো?”
-” জ্বি।”
-” সবে তো তিনমাস গেলো অারো কতদিন যাক। এরপর সে বুঝবে অামি ওর কি ছিলাম।”
-” জ্বি।”
-” কত গালি সহ্য করেছি ওর। কখনো পাল্টা গালি দেইনি। রাত বিরাতে ফোন করে করে অামাকে গালি দিতো। অামি চুপচাপ সব সহ্য করেছি।”
-” জ্বি।”
-” এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি ? অাতেলের মতো জ্বি জ্বি করছো কেনো?”
-” একটা কথা বলি। মনে কিছু নিবেন না প্লিজ। অাসলে অামার হাজবেন্ড পাগল না, পাগল হচ্ছেন অাপনি। অাপনার কথায় তাই মনে হচ্ছে”
-” স্টুপিড মেয়ে তুমি….”
-” অামাকে অাগে শেষ করতে দিন প্লিজ। একটা সময় ভালোবাসা ছিলো ভালো কথা। এখন তো অাপনার বিয়ে হয়েছে সোহানেরও হয়েছে। অহেতুক কেনো নিজের সংসার ফেলে অামার হাজবেন্ডের পিছনে লেগেছেন। এতই যেহেতু ভালোবাসেন তাহলে অন্য লোককে বিয়ে করলেন কেনো? সোহানের রাগ ভাঙানো পর্যন্ত ওয়েট করতেন। শুনেছি একটা বাচ্চাও নাকি অাছে। বাচ্চা তো অাকাশ ভেঙে পড়েনি। অাপনার অার অাপনার হাজবেন্ডের মধ্যে কিছু হয়েছে বিধায় বাচ্চাটা জন্ম হয়েছে। যাকে ভালোবাসেন তাকে ফেলে অন্য কাউকে বিয়ে করলেন, অাবার বাচ্চাও হলো তখন সোহানকে মনে পড়েনি?”
-” স্টুপিড, তোমার হাজবেন্ড অামাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। অামি ছাড়িনি।”
-” ঠিকাছে ছেড়ে গিয়েছে। অাপনিও তো নিজের রাস্তা সুন্দর গুছিয়ে নিয়েছেন। বিয়ে করেছেন, বাচ্চা হয়েছে, সংসার করছেন। অাপনি করছেন তাতে দোষ নেই, অার সোহান বিয়ে করেছে বলে এতো জ্বলছে কেনো অাপনার?”
-” এই স্টুপিড……”
-” ওয়েট অাপু, অামার নাম স্টুপিড না। অামার নাম মায়া।”
-” গালি, চড় থাপ্পর এসব তো খাওনি। খেলে বুঝবা সোহান কি জিনিস। অামি যাস্ট তোমাকে এলার্ট করার জন্য ফোন দিয়েছিলাম। ”
-” এলার্ট করতে চাইলে অামার নাম্বারে কল করতেন। অামার হাজবেন্ডের ফোনে কেনো? তাও এতো রাতে? অার অামাকে নিয়ে এত না ভাবলেও চলবে। সোহান অামাকে গালি দিলেও সে অামার হাজবেন্ড, মাথায় তুলে নাচলেও অামার হাজবেন্ড। ”
-” কতদিন যে এই ভালোবাসা থাকে অামি দেখবো।”
-” সারাদিন হাজবেন্ডকে কাছে পাইনা। রাতের বেলা যাই একটু াছে অাসার সুযোগ পাই। সে মূহূর্তে অাপনি বিরক্ত করছেন। তাহলে ভালোবাসাটা থাকবে কিভাবে?”
আলিশা কথায় পেরে উঠতে পারছে না। চেয়েছিলো ফোনে সোহানকে কতক্ষন ঝাড়বে। সে সুযোগ তো পেলোই না, উল্টো শুদ্ধ ভাষায় কতখানি অপমান হতে হলো । ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানার উপর অাছাড় দিলো অালিশা। মায়ের মেজাজ দেখে ভয়ে দৌড়ে পালালো অালিশার ছেলে অাফিফ। একেবারে বাবার কোলে ঘাপটি মেরে বসে গিয়েছে সে।
” বাবা কাজ করছি। এখন অাম্মুর কাছে যাও।”
-” অাম্মু ফোন অাছাড় দিয়েছে। কাছে গেলে অামাকেও আছাড় দিবে।”
আলিশার হাজবেন্ড রুপমের বুঝতে বাকি রইলো না তার বউ কারো সাথে ঝগড়া লেগেছে। ছেলেকে কোলে নিয়ে আালিশার মুখোমুখি দাঁড়ালো সে।
-” তোমাকে কতদিন না করেছি ছেলের সামনে উল্টাপাল্টা মেজাজ দেখাবে না? বাচ্চাটা ভয় পায় দেখো না?”
-” তো মেজাজ খারাপ হলে কি করবো?”
– তুমি তোমার রাগ কিভাবে হ্যান্ডেল করবে সেটা তোমার ব্যাপার। অামি চাইনা তোমার কারনে অামার ছেলের উপর কোনো ব্যাড এ্যাফেক্ট পড়ুক। ”
-” তুমি কি মিন করতে চাচ্ছো? আফিফকে ভয় দেখিয়ে টর্চার করি?”
-” অবশ্যই করো।”
তুফান এবং অাগুন দুটো একসাথে লেগেছে অালিশার সংসারে। তুমুল তর্ক হচ্ছে ওদের দুজনের মাঝে। অন্যদিকে মায়ার উত্তর শুনে উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে হাসছিলো সোহান। সে খুব ভালোই জানে মায়াকে আলিশা কি কি বলেছে। সোহানের সাথে কোনো মেয়ে দেখলে সহ্য হয় না আলিশার। এর অাগের দুজনকেও ফোনে যাচ্ছে তাই বলেছিলো অালিশা। সেই দুজন আলিশাকে কিছু না বলে পুরো বিষ ঝেড়েছিলো সোহানের উপর। এজন্যই মায়াকে তার পছন্দ। অন্য সবার মতো সোহানকে কোনো ধরনের প্রেশার দেয় না সে। মায়াকে তার কাছে অনেকটা নদীর পাড়ের বাতাসের মতো মনে হয়। মায়া এবং নদীর বাতাস এ দুটোর মধ্যেই একধরনের শীতলতা আছে। প্রান জুড়ানো শীতলতা। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে সোহানের বুকে হাতাচ্ছে মায়া। নাক মুখ সোহানের পিঠে সেটিয়ে রেখেছে।
– ” তুমি তো দেখি বেশ ভালোই উত্তর দিতে জানো”
-” মেয়েটা অাপনাকে ভালোবাসে না।”
-” কিভাবে বুঝলে?”
-” ভালোবাসলে অাপনার বদনাম করতে পারতো না। অাপনার ভালো দিকগুলো মাথায় রেখে খারাপটা ঝেড়ে ফেলতো। অামার একদম সহ্য হচ্ছিলো না অাপনার বদনামগুলো শুনতে তাই উত্তর দিয়েছি। অার নয়তো কিছু বলতাম না।”
-” কেনো সহ্য হচ্ছিলো না? ভালোবাসো অামাকে?”
সোহানের প্রশ্নে কলিজায় ধুক করে উঠলো মায়ার। কি উত্তর দিবে? সত্যটা বলার অধিকার আদৌ অাছে কি? চুপ করে রইলো মায়া।
-” থাক উত্তরটা দিতে হবে না। চল ঘুরে অাসি।”
-” এত রাতে?”
-” হুম। তাতে কি হয়েছে?”
-” কোথায় যাবো?”
-” মেঘনা ব্রিজ।”
-” ওখানে যেয়ে কি করবো?”
-” ব্রিজের রেলিংয়ের উপর থেকে তোমাকে নিয়ে নদীতে ঝাপ দিবো। এরপর দুজন মিলে সাঁতরাবো।”
-” কি বলেন এগুলো?”
-” অারে মেয়ে, ওখানে যাবো। কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করবো, বাতাস খাবো। এরপর অাবার চলে অাসবো। মোটকথা গাড়ি নিয়ে ঘুরবো। অনেকদিন হয় দূরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। বোর হচ্ছি খুব। ”
-” অাচ্ছা অামি কাপড়টা পাল্টে অাসি।”
-” পাল্টাতে হবে না। যেভাবে অাছো সেভাবেই চলো।”
মধ্যরাত। গোল চাঁদটা ক্ষনে ক্ষনে সাদা মেঘের অাড়াল ঢাকা পড়ছে। বলা যায় মেঘ জোছনার লুকোচুরি। ফাঁকা রাস্তায় গাড়িটা ছুটে চলছে। রাস্তার দুধারের হলুদ ল্যাম্পপোস্টগুলো মৃদু অালো ছড়াচ্ছে। গাড়ির সবকয়টা জানালা খুলে রেখেছে সোহান। জানালায় দু হাতের উপর থুতনি ভর দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে অাছে মায়া। প্রচন্ড বাতাসে খোপা করা চুল থেকে ধীরে ধীরে কিছু চুল বেরিয়ে অাসছে। বারবার চুলগুলোকে খোপার ভাছে গুজে দেয়ার চেষ্টা করছে মায়া।
-” খোপাটা খুলে ফেলো। চুলগুলো উড়ুক।”
-” আপনি খুলে দিন।”
কাছে এগিয়ে এলো মায়া। এক হাত বাড়িয়ে খোপাটা খুলে দিলো সোহান। ফের জানালার উপর মুখ রেখে বাহিরে তাকিয়ে অাছে মায়া। চুলগুলো উড়ছে তার। সোহান কিছুক্ষন পরপরই মায়ার দিকে তাকাচ্ছে। মায়াকে হ্যাচকা টানে কাছে অানলো সোহান। মায়ার ঠোঁটে অালতো করে চুমু খেলো সে।

(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-১১

0

নষ্ট গলি পর্ব-১১

লেখা-মিম
অাজকাল বড্ড ব্যস্ত সময় কাটে মায়ার। দুই টিচারের
কাছে পড়া। সপ্তাহে একদিন ক্লাস। প্রতিদিন রান্না শিখা।
সংসারী হওয়ার তোড়জোড় চেষ্টা। সোহানের
বাসায় কাটানো সময়গুলোতে ওর পিছনে লেগে
থাকা। সময়গুলো সুন্দর যাচ্ছে। সোহান মায়ার জন্য
অনেকটা টনিকের মতো। মন ভালো হওয়ার টনিক।
অতীত ভুলে থাকার টনিক। সুখে থাকার টনিক। কিভাবে
স্টাইল করতে হয়, রেস্টুরেন্টে বসে কিভাবে
খেতে হয়, পার্টিতে লোকের সাথে কিভাবে
মিশতে হয় সব এই তিনমাসে মায়াকে শিখিয়ে পড়িয়ে
নিয়েছে সোহান। সংসারের খুটিনাটি কাজগুলো
সোহানের কাছ থেকেই শিখছে মায়া। বিশেষ
করে রান্নাটা। অফিস থেকে ফিরে হাতে ধরে
মায়াকে রান্না শিখায় সোহান। সংসার…. মায়ার সংসার।
নিজের সবটুকু দিয়ে সংসারটাকে ঢেলে সাজায় মায়া।
অবসরে ঘরের দেয়ালগুলো হাতড়ে বেড়ায়
সে। ভালো লাগে এভাবে হাতড়াতে। মাঝে মাঝে
তার ইচ্ছে হয় দেয়ালগুলোকে অাষ্ঠেপৃষ্ঠে
জড়িয়ে ধরতে। এটা ওর নিজের সংসার। সংসারটা ছিলো
ওর জীবনের সবচেয়ে বড় অনাকাঙ্খিত পাওয়া। অার
সোহান হচ্ছে মায়ার নজরে ফেরেশতা। তিনমাসে
অবশ্য সাতদিন গালি খেয়েছে সোহানের কাছ
থেকে। তাও যে সে গালি না, চূড়ান্ত পর্যায়ের বিশ্রি
গালি। একেবারে কান পঁচে যাওয়ার মতো। কিন্তু মায়ার
কান পঁচেনি। অাসলে গালিগুলো সে কানেই
তুলেনি। যে মানুষের এতগুলো ভালো দিক অাছে
তার এই একটা খারাপ দিক তো অাড়াল করা যেতেই
পারে। গালি দেয়ার ঘন্টা দুয়েক পরই মায়ার জন্য কিছু না
কিছু রান্না করে সামনে এনে দাঁড়িয়ে থাকে
সোহান। কিন্তু তার মুখে সরি কথাটা একবারও উচ্চারন হয়
না। সোহানের ভাষ্যমতে এত ফর্মালিটি তার অসহ্য
লাগে। সংসারে এসব সরি টরির ফর্মালিটি না দেখানোটাই
ভালো বলে মনে করে সোহান। মাঝে মাঝে
সোহানের চাহনিতে মায়া টের পায় সে তাকে
ভালোবাসে। অাবার কখনো তার মনে হয় সোহান
ওকে ভালোবাসে না। বড্ড দ্বিধায় ভুগে মায়া।
ইচ্ছে হয় সোহানকে জিজ্ঞেস করতে অাপনি কি
অামাকে ভালোবাসেন? সাহস হয়না জিজ্ঞেস করার।
প্রত্যেকটা ব্যাপারেরই সীমাবদ্ধতা থাকে। মায়ারও
সীমাবদ্ধতা অাছে। যত যাই হোক সে একজন পতিতা
এ কথা ভুললে তো অার চলবে না। সোহান যা
করছে সেটাই তো অনেক। এরচেয়ে বেশি
অাশা করাটা হবে দিবাস্বপ্ন দেখা। এসবভেবে
কখনো মায়ার মনখারাপ হয়। অাবার কখনো নিজের
মনকে নিজেই বুঝায় ।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অাঁধার নেমে অাসছে বাইরে।
অাশেপাশের বাসাগুলোতে এক এক করে লাইট
জ্বলছে। নিজের রুমেও লাইট জ্বালালো মায়া। হাত
মুখ ধুয়ে অায়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল অাঁচড়াচ্ছে ও।
সোহান অাসার সময় হয়েছে। পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে
চুলটা অাটকে নিলো মায়া। সোহান ঘরে ফিরেই মায়ার
পাঞ্চক্লিপটা খুলে চুলগুলো এলোমেলো
করবে। এটা তার প্রতিদিনকার অভ্যাস। কলিংবেল
বাজছে। দরজা খুলে দেখে সোহান দাঁড়িয়ে।
ভীষন ক্লান্ত দেখাচ্ছে সোহানকে। ঘরে
ঢুকেই সোফায় গা এলিয়ে দিলো সোহান। ওর পা
থেকে জুতো জোড়া খুলে নিচ্ছে মায়া।
-” জঘন্য একটা দিন ছিলো। কুত্তার মতো খাটতে
খাটতে জীবন শেষ। মাথা ঝিমঝিম করছে।”
মায়া কোনো কথা বলছে না। সোহানের গায়ের
শার্টটা খুলে দিলো। সোহান চোখ বন্ধ করে
হেলান দিয়ে সোফায় বসে অাছে। দশ মিনিট পর
হাতে গরম তেলের বাটি নিয়ে অাসলো মায়া। তার
পিছন পিছন রতন এলো এক বোল কুসুম গরম পানি সহ।
সোহানের পায়ের কাছে বোলটা রাখলো রতন।
সোহান বোলে পা ডুবিয়ে বসে অাছে। অার মায়া
সোহানের মাথায় গরম তেল মালিশ করে দিচ্ছে।
দশ মিনিট পর সোহান বললো,
-” তয়লা অার ট্রাউজার বের করো গিয়ে অামি গোসল
করবো।”
সোহানের ওয়াশরুমে তয়লা অার ট্রাউজার রেখে
অাসলো মায়া। চুলায় দুধ বসিয়েছে সে।মায়া জানে
সোহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই এক মগ স্ট্রং
কফি চাইবে।
মায়ার রুমে বসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে সোহান।
এক হাতে মগ ধরে রেখেছে। অন্য হাতে মায়ার
চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে।
-” তোমাকে একটা ব্যাপারে জানানো হয়নি। তুমি
নেক্সট মান্থ থেকে বিজনেস শুরু করছো। পরশু
থেকে অামার এক পরিচিত ভাই অাছে উনি তোমাকে
ঐ ব্যবসায়ের অাটঘাট বুঝাবেন।”
-” অামি? বিজনেস? ”
-” হ্যা তুমি। তোমাকে যদিও জানানো উচিত ছিলো।
কিন্তু তোমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার রাইট অামি মনে
করি অামার অাছে। তাই তোমাকে জানানোটা
প্রয়োজন মনে করিনি। অামি তোমার ভালো চাই
সে ব্যাপারে নিশ্চয়ই তোমার কোনো সন্দেহ
নেই?”
-” সন্দেহ নেই। কিন্তু কিসের বিজনেস?”
-” লেডিস শপ। মেয়ে মানুষের সমস্ত কিছু ওখানে
তুমি সেল করবে। অাসলে সেল তুমি করবে না।
অাটজন মেয়েকে কাজে রেখেছি। ওরা সেল
করবে। অার তুমি হচ্ছো ওদের বস। দোকান নিয়ে
নিয়েছি। ডেকোরেশনের কাজ চলছে। বাহির
থেকে সব প্রোডাক্ট অানাচ্ছি। অর্ধেক
প্রোডাক্ট এসেছে। বাকিগুলো অন দ্য ওয়ে।
এখানে তোমার জন্য সবচেয়ে খুশির সংবাদ কোনটা
তুমি জানো? ঐ অাটটা মেয়ে তোমার মতই পতিতা
ছিলো। ঐ নষ্ট গলি থেকে ওদের তুলে এনেছি।
এর মধ্যে দুটা মেয়ে প্রেগনেন্ট। ওরা অন্য
এলাকার। অার তোমার পাড়া থেকে এনেছি
তিনজনকে। অার বাকি তিনটাকে এনেছি ঢাকার বাহিরের
পতিতালয় থেকে।”
মায়ারবিস্ময় অাকাশের চূড়ায় উঠে যাচ্ছে। অাবারো
একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। যা সে
কখনোই কল্পনা করতে পারেনি। শুধুও কেনো?
সেই অাটটা মেয়েও কখনো কল্পনা করতে
পারেনি এমন কিছু ঘটতে পারে। অাটটা জীবন, না না
পেটের বাচ্চাগুলো সহ দশটা জীবন এখন ভালো
দিন দেখতে পাবে। এতবড় বিস্ময়ের ধাক্কা সামাল
দিতে পারছে না মায়া। দুচোখ উপচে পানি ঝড়ছে।
সোহানের গলা জড়িয়ে কাঁদছে মায়া। সোহানের
গেন্জির ডানদিকের কাঁধের জায়গাটা ভিজে যাচ্ছে
মায়ার চোখের পানিতে। সোহান মায়াকে কান্না
থামাতে বলছে না। সে জানে এটা খুশির কান্না। তাই
মায়াকে কাঁদতে দিচ্ছে সে। মায়ার পিঠে -চুলে
অালতো করে হাত বুলাচ্ছে সোহান। সেই সাথে
ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি লেগে অাছে তার।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-১০

0

নষ্ট গলি পর্ব-১০

লেখা- মিম
মায়াকে এক হাতে পেঁচিয়ে অন্য হাতে ওর চুলের গোড়ায় অাঙুল চালাচ্ছে সোহান। অদ্ভুদ অনুভূতি হচ্ছে মায়ার। তবে অনুভূতিটা সুন্দর। একটু বেশিই সুন্দর। সোহানকে অারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মায়া। হৃদস্পন্দনটা এখন অারেকটু জোরে শোনা যাচ্ছে । মায়াকে বুকের কাছ থেকে সরিয়ে টেনে খানিকটা উপরে তুলে অানলো সোহান। ঠোঁটে অালতো করে চুমু খেলো মায়ার।
-” তোমাকে যদি পুরোপুরিভাবে কাছে টানতে চাই তোমার কি অাপত্তি অাছে ?”
-” উহুম।”
-” অাজ রাতে?”
-” হুম।”
বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার পর্দাগুলো টেনে দিলো সোহান। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে ঠান্ডা বাতাস। বাতাসের জন্য পর্দাগুলো স্থির থাকছে না। উড়ছে পর্দাগুলো। বাহিরে তুফান চলছে সেই সাথে মায়ার মনেও। বুকের ধুক পাকুর শব্দটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মনে হচ্ছে দশ হাত দূর থেকেই একজন মানুষ এই ধুক পাকুর শব্দ শুনতে পাবে। মনের গহীনে শীতল বাতাসের অস্তিত্ব টের পাচ্ছে মায়া। শীতল বাতাসের কারনটা কি? হতে পারে সেটা ভালোবাসার মানুষের কাছে অাসার পূর্বাভাস। মায়ার পাশে বসে গালে হাত রাখলো সোহান।
-” রাত অনেক হয়েছে তুমি ঘুমাও।”
-” মানে?”
-” মানে তুমি ঘুমাও। অামি অামার রুমে যাচ্ছি।”
-” অাপনি না একটু বললেন অামাকে কাছে টানতে চান। পুরোপুরিভাবে।”
-‘ হুম বলেছিলাম। তোমাকে এতটা কাছে পেয়ে মাইন্ড খানিকটা ডিসট্র্যাক্ট হয়ে গিয়েছিলো। বুঝোই তো, দিনশেষে অামিও একজন পুরুষ। এখন মনে হচ্ছে তোমাকে এভাবে প্রস্তাবটা দেয়া উচিত হয়নি। শুরুতে তোমার ঘরে অাসলাম হেড ম্যাসাজ নেয়ার জন্য। এরপর অাবদার ধরলাম জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো। এরপর পারমিশন ছাড়াই কিস করলাম। এখন অাবার অাবদার ধরছি অারো গভীরে যাওয়ার জন্য। লোভী পুরুষের মতো অাচরন করছি। লোভ ব্যাপারটা ভালো না। সবকিছু ধীরে সুস্থে এগিয়ে নেয়াটা ভালো। সরি মায়া। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।”
সাধু হওয়ার একটা লিমিট থাকে। কিন্তু সোহান লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটা কোন কথা? বেশি লোভ করে ফেলেছি! মায়া হাসবে না কাঁদবে খুঁজে পাচ্ছে না।
-” তাহলে অামাকে কেনো এনেছেন? সাজিয়ে রাখার জন্য?”
-” সংসার করার জন্য। তোমার সাথে সংসার করে দেখতে চাই অাসলে সংসার কতটা তিতা।”
-” টেস্ট করতে চাচ্ছেন অামাকে দিয়ে? যদি টেস্টের রেজাল্ট মিষ্টি হয় তাহলে অন্য কাউকে বিয়ে করবেন। তিতা হলে বিয়ে করবেন না।”
-” ব্যাপারটা তেমন না।”
-” ব্যাপার যেমনই হোক, অাপনি অাজ কিছু করেনঅার না করেন অাপনি অামার সাথেই ঘুমুবেন।”
-” থাকতেই হবে?”
-” হুম। অাপনার গায়ের খুব সুন্দর একটা ঘ্রান অাছে। সকালে যখন জড়িয়ে ধরেছেন তখন ঘ্রানটা একটুখানি পেয়েছিলাম। এখন ঘ্রানটা ভালো মতো পেয়েছি। একদম নেশা ধরানো। অাপনাকে জড়িয়ে না ধরলে অামার ঘুমই অাসবে না। অাসেন এখানে। শুয়ে পড়েন।”
মুচকি হেসে মায়ার পাশে শুয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলো সোহান। সোহানের বুকে অালতো করে হাতাচ্ছে মায়া। ফের দুজনেরই নিঃশ্বাস গাড়ো হয়ে অাসছে। সোহানের গলায় চুমু খেলো মায়া। দুহাতে শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরলো মায়াকে। ঘোরের মাঝে ডুবে যাচ্ছে সোহান। মায়ার পরোক্ষ ইশারা সোহানের অাবদারগুলোকে ভীষনভাবে অাস্কারা দিচ্ছে। নিজেকে অার অাটকে রাখার প্রয়োজন মনে করছেনা সোহান। অাটকে রাখার তিল পরিমান ইচ্ছাও তার নেই।
সকাল অাটটা। বাহিরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সারারাতের বৃষ্টিতে অাবহাওয়া পুরোপুরি ঠান্ডা। তবু ফুল স্পীডে ফ্যান ঘুরছে মাথার উপর। যত ঠান্ডাই পড়ুক ফ্যান ছাড়া ঘুম হয় না সোহানের। অার অন্যদিকে মায়ার শীত বেশি। তাই কাঁথার নিচে একদম গুটিসুটি হয়ে সোহানের সাথে ঘেষে শুয়ে অাছে। মায়ার গায়ের উপর হাত পা তুলে দিয়ে বেঘোর ঘুম ঘুমুচ্ছে সোহান। সোহানের ফোন বাজছে। জাহিদ ফোন করেছে। কোনোমতে চোখ মেলে দেখে জাহিদের নাম স্ক্রিনে ভাসছে। ঘুম জড়ানো কন্ঠে সোহান বললো,
-” হুম বলো।”
-” স্যার অাপনার বাবা ফোন করেছিলো। অাপনাকে নাকি খুঁজে পাচ্ছে না ফোনে।”
-” হুম ঐ ফোনটা বন্ধ করে রেখেছি।”
-” অাপনার এই নম্বর তো বড় স্যার জানে না। তাই অামাকে ফোন করে বললো অাপনাকে কল করতে।”
-” অার্জেন্ট কিছু?”
-” না স্যার অামাকে কিছু বলেনি।”
– অাচ্ছা অামি ফোন দিচ্ছি তুমি রাখো।”
ফোনটা রেখে উঠে বসলো সোহান। অাড়মোড়া দিয়ে ঘুমটা পুরোপুরি ভাবে চোখ থেকে সরাতে চাচ্ছে সে। মায়ার ঘুমও ততক্ষনে ভেঙে গেছে।
-” মায়া, জলদি উঠো। গোসল করো। ফ্রেশ হও। অামার জন্য কফি বানাও। অামার অালমারি থেকে অফিসে যাওয়ার কাপড় বের করে রাখো। কাপড়ের সাথে অামার মানিব্যাগ, ঘড়ি, মোবাইল, গাড়ির চাবি সব যেনো থাকে। অলরেডি সোয়া অাটটা বেজে গেছে। অফিসে মিটিং অাছে দশটায়। পৌনে দশটার মধ্যে অফিসে পৌঁছাতে হবে।”
-” জ্বি উঠছি।”
সোহানের তাড়া দেখে হুড়মুড়িয়ে বিছানা ছেড়ে কাপড় চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো মায়া। সোহানের ফরমায়েশ পূরন করতে হবে। এই প্রথম মানুষটা তাকে কোনো ফরমায়েশ করলো। সংসারের প্রথম ফরমায়েশ। কোনোভাবেই ত্রুটি রাখা যাবে না। বেঁধে দেয়া সময়ের মাঝে কাজ সারতে হবে।
চুলায় কফির দুধ গরমে বসিয়ে সোহানের রুমে এসেছে মায়া। সোহানের গোসল তখনও শেষ হয়নি। সোহানের জন্য অনেক বিচার বিবেচনার পর অালমারি থেকে কাপড় বের করে খাটের উপর রেখেছে মায়া। ওয়ালেট, মোবাইল গাড়ির চাবি সব রাখা অাছে কাপড়ের পাশেই। কিন্তু ঘড়ি খুঁজে পাচ্ছে না মায়া। সোহানের বেডরুম তন্নতন্ন করে খুঁজছে মায়া। ভাবছে সোহানকে কি একটাবার জিজ্ঞেস করবে? ওয়াশরুম থেকে শ্যাম্পুর স্মেল অাসছে। সোহান চুল শ্যাম্পু করছে । এখন যদি ডেকে কোনো কথা জিজ্ঞেস করে তাহলে উত্তর দেয়ার সময় সোহানের মুখে শ্যাম্পুর ফেনাসহ পানি মুখের ভিতর ঢুকে যেতে পারে। তাই এই মূহূর্তে জিজ্ঞেস না করাটাই হয়তো ভালো হবে। রান্নাঘর থেকে কাজের লোক শামীমের কন্ঠ ভেসে অাসছে,
-‘ ভাবি, দুধ তো গরম হইয়া গেছে। কফি বানাইবেন না।”
চুলায় দুধ বসিয়ে এসেছে একদমই খেয়াল ছিলো না মায়ার। দৌড়ে কিচেনে যেয়ে দেখে শামিম চুলা থেকে দুধের পাতিল নামিয়ে রেখেছে।
-‘ অামি তো ভুলেই গিয়েছিলাম শামিম ভাই। ”
-” অামি নামায়া থুইছি ভাবি। চিন্তা নাই।”
-” এখন কি কি মিশাবো এটাতে?”
-” মগে দুধ ঢালেন। দুই চামচ কফি, এক চামচ হরলিক্স অার অাধা চামচ চিনি মিলাইবেন।”
-” শামিম ভাই, উনি ঘড়ি কোথায় রাখে জানেন?”
-“স্যারের তো ঘড়ি অাছে চাইর পাঁচটা। একটাও পাইতাছেন না?”
– ” না।”
-” গতকাল বাইরে থেইকা অাইসা ড্রইং রুমে টি-টেবিলের উপ্রে থুইছিলো দেখছিলাম। অার বাকিগুলা কই অাছে জানি না।”
ভিতর থেকে সোহানের গলার অাওয়াজ পেলো মায়া।
-” অামার ঘড়ি কোথায়? ঘড়ি বের করোনি কেনো?”
তাড়াহুড়ো করে ফের সোহানের রুমে গেলো মায়া।
-” ঘড়ি খুঁজছি। কিন্তু পাচ্ছিনা।”
-” ড্রইংরুমে দেখো। পাবে। অার অামার সব ঘড়ি অালমারির মাঝের দরজার সেকেন্ড ড্রয়ারে থাকে।”
-” অামি এনে দিচ্ছি। ”
দৌড়ে ড্রইংরুম থেকে ঘড়ি এনে খাটের উপর রাখলো মায়া। সোহান মাথার ভেজা চুল মুছছে।
-” কফি হয়েছে?”
-” না এক্ষুনি অানছি।”
ছুটে কিচেনে গেলো মায়া। খুব জলদি বাকি উপকরন মিশিয়ে কফি তৈরি করে সোহানের সামনে হাজির করলো।
-” তুমি তো অামার মোজা বের করে রাখোনি।”
-” এক্ষুনি বের করে দিচ্ছি।”
-” এই দাঁড়াও।”
-” জ্বি?”
-” এভাবে দৌড়াদৌড়ি করছো কেনো? ধীরে সুস্থে কাজ করো।”
-” অাসলে অামি একটু নার্ভাস। কখনো কাউকে সংসার করতে দেখিনি। কাজ কিভাবে গুছিয়ে করতে হয় অামি জানি না। এই প্রথম অাপনি কিছু করতে বলেছেন। অামি চাইনা কোনো ত্রুটি থাকুক।”
-” বসো এখানে।”
-” মোজাগুলো বের করে দেই।”
-” বসতে বলেছি, বসো।”
কফির মগে চুমুক দিচ্ছে সোহান। পাশে বসে অাছে মায়া।
-” কফিটা খুব ভালো হয়েছে।”
-” সত্যি?”
-” নাও, খেয়ে দেখো।”
-” না অাপনিই খান।”
-” শোনো, এতটাও নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। অামি জানি তুমি কাজ পারো না। একদিনে কেউ সংসারের কাজে এক্সপার্ট হয় না। অাস্তে ধীরে সব ঠিক হবে। কাজ করতে করতে পুরোপুরি সংসারী হবে তুমি। ঘরের জিনিস ভাঙবে, তরকারি পুড়বে, হাত কাটবে এরপর পাক্কা হাউজওয়াইফ হতে পারবে। এছাড়া না। তুমি তোমার মতো অাস্তে ধীরে কাজ করো। দেরি হলে হবে। অসুবিধা নেই। বাসায় শামীম রতন অাছে। চাইলে অামি কাজ ওদের দিয়েও করাতে পারবো।”
এতক্ষনের মানসিক চাপটা মনে হয় কিছুটা কমেছে মায়ার। ভয়টা কিছুটা কেটেছে।
-” যাও নাস্তার টেবিলে খাবার সাজাও। অামি কাপড় পাল্টে অাসছি।”
সোহানের প্লেটে খাবার সাজিয়ে চেয়ারে বসে অাছে মায়া। সোহান চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
-” তোমার প্লেট কোথায়?”
-” অাপনার কাছ থেকে খাবো। তাই অামার অালাদা করে খাবারের প্লেট নেইনি।”
কথাটা বলে মায়ার মনে হলো অাবদারটা খুবই বাজে হয়েছে। কি মনে করে কথাটা ও বলেছে সেটা ও নিজেও জানে না। সোহান মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে অাছে। এবার মায়ার লজ্জা লাগছে নিজের এমন বুদ্ধিহীন অাবদারের জন্য। কোনো কথা না বলে নিজের জন্য প্লেট সাজাতে লাগলো মায়া।
-” এই, তুমি না বললে অামার হাতে খাবে?”
-” না, থাকুক। অামি অামার হাতেই খাবো।”
-” কেনো?”
-” অাসলে অামি কেনো যেনো এমন একটা অাবদার ধরে ফেলেছি।”
-” গতরাতে অামি চলে অাসতে চেয়েছিলাম। অামাকে জড়িয়ে ধরার অাবদারটা কিন্তু তুমি করেছিলে। তখন লজ্জা পাওনি, এখন এই সামান্য কথায় লজ্জা পাচ্ছো কেনো? অাজাইরা ঢং ছাড়ো। নাও হা করো।”
মায়ার মুখের সামনে খাবার ধরে রেখেছে সোহান।মায়া মুখের মধ্যে খাবার পুরে চুপচাপ চাবাচ্ছে।
-” মায়া।”
-” হুম?”
-” রাতটা সুন্দর ছিলো।”
মায়ার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সোহানের দিকে তাকিয়ে মায়া উত্তর দিলো
-” অনুভূতিগুলো অারো বেশি সুন্দর ছিলো।”
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৯

0

নষ্ট গলি পর্ব-৯

লেখা-মিম

রেস্টুরেন্টে বসে অাছে মায়া অার সোহান। গরম ধোঁয়া উঠা স্যুপে একটু একটু করে চুমুক দিচ্ছে সোহান। অার মায়া চামচ দিয়ে স্যুপ নাড়াচাড়া করছে।
-” না খেয়ে কি ভাবছো? খাওয়া শেষ করে এরপর চিন্তা ভাবনা করো।”
-” অাপনি সবাইকে একথা কেনো বলছেন অামি অাপনার বউ?”
-” তোমাকে তো অামি প্রথমদিনই বলেছি তুমি অামার বউয়ের মতো অামার কাছে থাকবে।”
-” অামি বউয়ের মতো করে থাকবো কিন্তু বৌ না। বৌয়ের মতো অার বৌ তো এক ব্যাপার হলো না।”
-” তাহলে তুমি কি চাচ্ছো? তোমাকে বৌ হিসেবে পরিচয় না করাই?”
-” সেটা বলিনি। অামি বলছি যে অাজীবন তো অার অামাকে অাপনার কাছে রাখবেন না। কিছুদিন পর বিয়ে শাদী করবেন। সংসার হবে অাপনার। তখন তো অার অামার প্রয়োজন পড়বে না। তখন লোককে কি বলবেন? তাছাড়া লোকমুখে অাপনার সত্যিকারের বউ তো জেনেই যাবে অাপনি অাগে বিয়ে করেছিলেন।”
-” তোমাকে কে বললোষঅামি অন্য কাউকে বিয়ে করবো? সংসার করবো? সংসার করার জন্যই তো তোমাকে ধরে এনেছি। নতুন করে অাবার অন্য কাউকে ধরে অানার কি হলো?”
-” তবুও…….”
-” তোমাকে অামি অামার ওয়াইফ হিসেবে ইনট্রোডিউস করাচ্ছি এটা কি তোমার ভালো লাগছে না? না লাগলে বলো অার কখনো বলবো না”
-” সেটা বলিনি। বলছি যে লোকে কি বলবে?”
-” শোনো লোকের ধার অামি ধারি না। কে কি বললো না বললো সেসব নিয়ে অামি ভাবি না। তুমি কি চাও সেটা বলো? বউ হিসেবে পরিচিতি পেতে চাও নাকি মিসট্রেস হিসেবে?”
-” অাপনি যেভাবে ডাকতে চান সেভাবেই চলবে।”
-” ব্যস এটা নিয়ে অার কোনো তর্ক হবে না। চুপচাপ খাও।”
রাতে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে চুপচাপ শুয়ে অাছে মায়া । সোহানের মতিগতি মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ওর। কি থেকে কি ঘটছে বুঝে উঠতে পারছেনা ও। এখন পর্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেনা সোহান। তাহলে ওকে এখানে এনেছে কেনো? সাজিয়ে রাখার জন্য? ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো মায়া। খাটে এপাশ ওপাশ করছে সোহান। ঘুম অাসছে না ওর। কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে ভালো লাগতো। মায়া তো অাছে। ওকে ডাকলেই তো হয়। মায়ার রুমে এলো সোহান। ঘুমুচ্ছে মেয়েটা। কত্ত অারামের ঘুম। সোহান ছটফট করছে অার মায়া ঘুমাচ্ছে সেটা কি করে হয়? মায়াকেও জাগতে হবে। মায়ার কাঁধে অালতো করে ধাক্কা দিচ্ছে সোহান।
-” এই উঠো।”
-“………….”
-” মায়া…. এই মায়া উঠো।”
ঘুর থেকে লাফিয়ে উঠে বসলো মায়া।
-” হুম? জ্বি? কোনো সমস্যা?”
-” অারে ভয় পাচ্ছো কেনো? অামি এসেছি।”
-” হুম বুঝেছি তো।”
-” ঘুম অাসছে না। মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো।”
মায়ার পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো সোহান। সোহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মায়া।
-” মায়া…..”
-” হুম।”
-” অামাকে তোমার কেমন লাগে?”
-” খুব ভালো।”
-” জানো শুরুতে সবাই এই কথাই বলে। যখন অামার রাগটা দেখে তখন অামার সাথে অার কেউ মিশতে চায়না। যারা মিশে তারা প্রয়োজনে মিশে অামার সাথে। একদিন হয়তো রাগের মাথায় তোমাকেও গালি দিবো। এরপর তুমিও অামাকে খারাপ ভাববে।”
-” অামি গালি শুনে অভ্যস্ত।”
-” যারা তোমাকে গালি দিয়েছে তাদের তুমি অাগে থেকেই খারাপ জানতে। কিন্তু তুমি তো অামাকে ভালো মনে করো। পরে যখন অামার মুখে গালি শুনবে তখন তোমার ঠিকই খারাপ লাগবে।”
-” যখন গালি দিবেন তখন না হয় বুঝবো।”
–” একটা কথা বলি?”
-” হুম।”
-” তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই?”
-” অাপনার ইচ্ছা।”
-” তোমার কোনো ইচ্ছে নেই?”
-” অামাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা নামের কিছু নেই।”
-” তোমাকে অামি অামার ওয়াইফ হিসেবে ট্রিট করছি মায়া। প্রস্টিটিউট হিসেবে না। সো তোমার ইচ্ছাটা অামার জন্য অনেক বড় কিছু ম্যাটার করে।”
-” যদি না করি?”
-” অামার রুমে চলে যাবো।”
-” অাপনি এখানেই ঘুমাবেন। অামার সাথে।”
-” তাহলে তুমি অামাকে পারমিশন দিচ্ছো?”
-” হুম দিচ্ছি।”
মায়ার পায়ের উপর থেকে সরে বালিশে এসে শুয়ে পড়লো সোহান। মায়াকে টেনে নিলে নিজের বুকে। সোহানের সবকিছু ভালো লাগে মায়ার। বিশেষ করে মায়ার প্রতি যে সম্মানটা দেখায় সেটা মায়ার খুব পছন্দ। প্রতিটা মানুষেরই কোনো না কোনো খারাপ দিক থাকে। সোহানেরও অাছে। রাগটা না হয় তার একটু বেশি রেগে গেলে মুখে লাগাম থাকে না। সে তো মানুষ। ফেরেশতা তো অার না। এমন লোকের সাথে চোখ বন্ধ করে সারাজীবন পাড়ি দেয়া যায়। তাহলে ঐ তিনটা মেয়ে কেনো ওকে ফেলে চলে গেলো। একটা বাজে দিকের জন্য কি মানুষটার বাকিসব ভালো গুনগুলো তাদের কাছে ধামাচাপা পড়ে গেলো? সম্মান….। মায়ার কাছে শব্দটা প্রচন্ড রকমে ভারী মনেহয়। সম্মান কখনো সে কারো কাছে পায়নি। তাই কথাটা তার কাছে খুব মূল্যবান। অাঠারো বছরের জীবনে প্রথম কোনো পুরুষ ওকে সম্মান দিচ্ছে। এতকাল যারা অসম্মান করতো তারাও পুরুষ ছিলো। অার এখন যে সম্মান দিচ্ছে সেও একজন পুরুষ। তার প্রগি ঘৃনা বা ক্ষোভ জন্মায় না। জন্মায় ভালোবাসা,শ্রদ্ধা। সোহানের প্রতিটা ব্যাপারের প্রতি প্রেমে পড়ে যাচ্ছে মায়া। নিজেকে কোনোভাবেই অাটকাতে পারছে না। সে ভালো করেই জানে প্রেম ভালোবাসার অধিকার তাদের নেই। তবু ভালোবাসাটা তৈরী হচ্ছে। হতে পারে ভালোবাসা প্রকাশ করার ক্ষমতা বা অধিকার কোনোটাই তার নেই। কিন্তু ভালোবাসাটা মনের ভিতর তো চেপে রাখা যেতেই পারে। মুখে না অানলেই হলো। এমন মানুষকে কি ভালো না বেসে অাদৌ থাকা সম্ভব? মানুষটার বুকের ধুক-ধুক শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সোহানের হৃদস্পন্দেরও প্রেমে পড়ে যাচ্ছে সে। অাচ্ছা এই ভালোবাসার পরিনতি কি হতে পারে? ভালো পরিনতি হবে না সে ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত মায়া । সামনে খুব বড়সড় একটা ধাক্কা সে খাবে এই ভালোবাসার বিনিময়ে এটা তার খুব ভালো করেই জানা অাছে। তবু ভালোবাসাটা বেড়ে চলছে। হোক না খারাপ পরিনতি, তাতে কি? জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে এখানে অাসার অাগ পর্যন্ত তো খারাপের মাঝেই অাটকে ছিলো। নতুন করে নাহয় অাবার খারাপ কিছু হবে। এতে তার কিছু অাসে যায় না। একটা সময় হয়তোবা সোহান ওকে চলে যেতে বলবে। তখন হয়তোবা ওর প্রয়োজনটা অার সোহানের কাছে থাকবে না। তবু ওকে ভালোবাসবে মায়া। এখন কাছ থেকে ভালোবাসে তখন নাহয় দূর থেকে ভালোবাসবে। মায়া ভালোবাসতে জানে। যে ভালোবাসতে জানে , সে কাছে থেকেও ভালোবাসতে জানে দূর থেকেও ভালোবাসতে জানে।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৮

0

নষ্ট গলি পর্ব-৮

লেখা-মিম

খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছে মায়ার। চোখ মেলে দেখে সোহানের পায়ের উপর ওমাথা রেখে শুয়ে অাছে। অার সোহান হেলান দিয়ে বসে ঘুমুচ্ছে। ঘুম ভাঙার পরও সেখান থেকে সরছিলো না মায়া। ভালো লাগছে এভাবে ওর পায়ের উপর মাথা রেখেশুয়ে থাকতে। গতরাতে গল্প করতে করতে কখন ও ঘুমিয়ে পড়েছে সেটা ওর নিজের জানা নেই। হয়তোবা সোহানও কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সোহানের মুখের দিকে তাকিয়ে অাছে মায়া। মানুষটা দেখতে সুন্দর। বিশেষ করে মাথার চুলগুলো। একদম সোজা চুল। একটুও কোঁকড়া না। মাথার চুলগুলো ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে মায়ার। ধরাটা কি উচিত হবে? সোহান গতকাল বলেছিলো হুট করে কারো গায়ে হাত দেয়াটা তার অপছন্দ। তাহলে নিশ্চয়ই এভাবে চুলে হাত দেয়াটাও সে পছন্দ করবে না। অার ও যে এভাবে শুয়ে অাছে এটা কি ঠিক হচ্ছে? বোধহয় না। সোহান ঘুম থেকে উঠে যদি দেখে মায়া এভাবে ওর পায়ের উপর শুয়ে অাছে তাহলে নিশ্চয়ই খারাপ ভাববে। নাহ এভাবে শুয়ে থাকাটা ঠিক হবে না। উঠে যাওয়াটাই ভালো হবে।
ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে সোহান রুমে নেই। বোধহয় ঘুম থেকে উঠে চলে গেছে নিজের রুমে। ফুলগাছগুলোর কাছে গেলো মায়া। সাদা গোলাপের গাছটায় একটা নতুন কলি এসেছে। দু তিন দিন বাদেই বোধহয় ফুটবে কলিটা। গত পরশু থেকে একটা কথা মাথায় বারবার ঘুরছে। সেটা হচ্ছে সংসার। সংসার শুরু করতে হবে মায়াকে। অাচ্ছা সংসার কি?সংসার কেমন হয়? এ ব্যাপারে কিছুই জানে না মায়া। তবে নতুন এক অনুভুতির সাথে পরিচিত হচ্ছে সে। সংসার নামক অনুভূতি। গত পরশু থেকে অনুভূতিটা পাচ্ছে ও। অনুভূতিটা বড্ড অদ্ভুদ। ভয় এবং ভালোবাসার সংমিশ্রনে তৈরি অনুভূতি। তবে ভয়ের চেয়ে ভালোলাগার অনুভূতিটাই বেশি। অায়নার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে মায়া। সংসারি মেয়ে মানে গৃহিনীদের দেখতে কেমন দেখা যায়? গৃহিনীদের দেখলে চট করে লোকে বলে দিতে পারে মেয়েটা একজন গৃহিনী। নাকটা ফুটো করা নেই ।মায়ার হাতে চিকন একজোড়া চুড়িও নেই। গৃহিনী হতে গেলে তো নাকে ফুল অার হাত একজোড়া চুড়ি থাকতে হবে। লোকটা বলেছিলো অাজ থেকে যা কিছু প্রয়োজন সব ওর কাছে চাইতে। সোহানকে কি বলবে কিনে দিতে? বলাটা কি উচিত হবে? নাহ। সেসব বলা যাবে না। সোহান ওকে লোভি ভাবতে পারে।
-” অায়নায় নিজেকে খুঁটে খুঁটে কি দেখছো?”
পিছনে ফিরে তাকালো মায়া। দুহাতে দুটো মগ হাতে ঘরে ঢুকছে সোহান।
-” নাও তোমার লাল চা।”
হাত বাড়িয়ে মগটা নিতে নিতে খাটে বসলো মায়া। পাশেই পা ঝুলিয়ে বসেছে সোহান।
-” বললে না তো অায়নায় ওভাবে কি দেখছিলে?”
-” নাহ তেমন কিছু না।”
-” তোমাকে তো দেখলাম গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু ভাবছিলে অায়নায় তাকিয়ে? কিছু হয়েছে?”
-” না কিছু না।”
-” কিছু বলতে চাও অামাকে?
-” না না। কিছু না।”
-” বলতে চাচ্ছো না। ঠিকাছে। জোর করবো না। চা ভালো হয়েছে?”
-” হুম।”
-” কাল থেকে তুমি অামার জন্য কফি বানাবে। অার অাস্তে অাস্তে অামার সমস্ত ব্যাপারগুলো খেয়াল দেয়া শুরু করো। অামি অফিস যাওয়ার অাগে অামার কাপড় তুমি সিলেক্ট করবে। সারাদিনে কয়েকবার অামাকে ফোন দিয়ে অামার খোঁজ নিবে। ঘরের বাজার থেকে শুরু করে কারেন্ট বিল পর্যন্ত সমস্ত হিসাব তুমি দেখবে। ঘরে কখন কি রান্না হবে সেগুলো তোমার ফরমায়েশ অনুযায়ী হবে। ঘরে যদি নতুন কোনো ফার্নিচার প্রয়োজন মনে করো তাহলে অামাকে বলো অামি কিনে দিবো।”
-” অাচ্ছা।”
-” অাজকে অফিস যাবো না। তোমাকে নিয়ে স্কুলে যাবো তোমার এডমিশনের ব্যাপারে কথা বলতে। কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছিলে তুমি?”
-” এইট পর্যন্ত। নাইনে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু ক্লাস অার করতে পারিনি।
-” ঠিকাছে। ইংলিশে কেমন ছিলে তুমি?”
-” হুম ভা…….”
কথাটা শেষ করার অাগেই ফোন বেজে উঠলো মায়ার। ফোনটা রিসিভ করলো মায়া। ওপাশ থেকে ফুপিয়ে কাঁদার শব্দ পাচ্ছে ও।
-” কাঁদো কেনো অাম্মা?”
-” কাজলের একটা মাইয়্যা হইছিলো গতকাল রাইতে। বড় হয়া ওরেও বেশ্যাগিরি করতে হইবো এর লাইগা
কাজল ওরে মাইরা ফালাইছে।জানোস মায়া ঐটুক মাইয়্যাডার গলায় জল্লাদটা ব্লেড দিয়া কাটছে। বাচ্চাটা একটা চিৎকার দিয়া কতক্ষন ছটফট করছে এরপর মইরা গেলো। ”
দম বন্ধ হয়ে অাসছে মায়ার।দুচোখ বেয়ে অঝরে পানি ঝড়ছে। সোহান কফি খাওয়া বাদ দিয়ে মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে অাছে।
-” এখন অামার কি মনে হইতাছে জানোছ? তোরেও ছোট থাকতে মাইরা ফেলার দরকার ছিলো। তাইলে তোরে অাজকা বেশ্যা হইতে হইতো না। অামাগো জিন্দেগিটা অনেক খারাপ রে মায়া। এই জিন্দেগি করার চেয়ে মইরা যাওন ভালো। অামারও মইরা যাওয়াউচিত অাছিলো। কিন্তু সাহস করতে পারি নাই। মরতে গেলে অনেক সাহস লাগে।”
-” বাচ্চাটা কি মাটি দিয়ে দিছে?”
-” হ ভোরে মাটি দিছে।”
অার কথা বাড়ালো না মায়া ফোনটা কেটে দিলো। মায়ার মাথায় হাত রেখে সোহান বললো,
-” কি হয়েছে মায়া? কেউ কি মারা গেছে?”
মায়া কাঁদছে। কোনো উত্তর দিচ্ছে না। সে বুঝতে পারছে এখন ওকে কাঁদতে দেয়া উচিত। খানিকক্ষন বাদে না হয় ওকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা যাবে। সোহান লক্ষ্য করলো মায়া ওর হাত চেপে ধরে কাঁদছে। মায়াকে জড়িয়ে ধরলো সোহান। ওর মাথায় খুব অাস্তে করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষন বাদে মায়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো সোহানের বাহুডোর থেকে। কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে মায়া।
-” অামাকে কি বলা যায় কি হয়েছে?”
-” অামার পাড়াতে একটা অাপা ছিলো। কাজল অাপা। উনি প্রেগনেন্ট ছিলেন। গতরাতে উনার মেয়ে হয়েছিলো। উনি মেরে ফেলেছে মেয়েটাকে।”
-” কেনো মেরেছে জানো? কারন ও চায়নি ওর মেয়েটারও ওর মতো হাল হোক।”
-” অাপনি কিভাবে জানেন?”
-” এমন গল্প অামি অাগেও শুনেছি। এমন ঘটনা অারও দুজন ঘটিয়েছিলো।”
-” একদিকে ভালোই হয়েছে। অামাদের মতো বাচ্চাটাকে একটুএকটু করে শেষ হতে হবে না। মরার অাগেই নরকের শাস্তি ভোগ করতে হয় অামাদের। মাঝে মাঝে এমন কিছু কাস্টমার অাসে এদের অাচরন দেখলে মনেহয় অামরা মুরগি অথবা খাসীর রানের পিস। মনের খায়েশ মিটিয়ে শরীরের যেখানে সেখানে কামড়াতে থাকে। একবার তো এক কাস্টমারের কামড়ে অামার হাতে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিলো। দাগ এখনও যায়নি। এমন জীবন কাটানোর চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। উচিত কাজ করেছে কাজল। ওর জায়গায় অামি হলে ঠিক এই কাজটাই করতাম।”
-” পানি খাবে?”
-” না।”
-” যা হয়ে গেছে তা তো বদলাতে পারবে না মায়া। সামনে দেখি তোমাদের মতো মানুষের জন্য কিছু করতে পারি কিনা।”
কথাটা বলেই সেখান থেকে সরে গেলো সোহান। সেখানে অার বসতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার। কারো কষ্ট সহ্য করতে পারে না সে। তবে মনের কষ্ট মনে রাখতেই ভালোবাসে। লোকের সামনে প্রকাশ করাটা তার কাছে খুবই লজ্জাজনক মনে হয়। সবারসামনে ভাবখানা এমনদেখায় মনে হয় কিছুই হয়নি ।
অাজ দুপুরে মায়াকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে এসেছে সোহান। ওর জন্য দুটো টিচার রাখা হয়েছে। বিকালে একজন পড়িয়ে গেছে। এখন অারেকজন পড়াচ্ছে। কিছুক্ষন অাগে অফিসের একজন স্টাফ এসেছে সোহানের বাসায়। অার্জেন্ট কিছু ফাইল সিগনেচার করাতে এসেছেন তিনি। ড্রইং রুমে বসে সোহান ফাইল দেখছে অার স্টাফ সাঈদ মায়ার রুমে একনজরে তাকিয়ে অাছে। ব্যাপারটা চোখে পড়লো সোহানের।
-” ওদিকে কি দেখছেন সাঈদ সাহেব?”
-” স্যার এই মেয়েটা কি হয় অাপনার?”
-” অামার ওয়াইফ। কেনো?”
-” এটা ওয়াইফ?”
-” কোনো সমস্যা?”
-” স্যার অাপনি ভালো করে খোঁজ নিয়ে বিয়ে করেছেন তো?”
-” হ্যা করেছি।”
-” এটা কি করে হয়? স্যার অাপনাকে বোধহয় মিথ্যা ফলে বিয়ে করেছে এই মেয়ে।”
-” সমস্যাটা কি সেটা তো বলবেন।”
-” এ তো…. ইয়ে মানে…. এই মেয়েটা প্রস্টিটিউট স্যার।”
-‘ অাপনি জানেন কিভাবে?”
-” অামি ওদের ওখানে প্রায়ই যাই। ও ভালো না স্যার।”
-” অাপনি ভালো?”
-” জ্বি?”
-” জিজ্ঞেস করলাম অাপনি ভালো কি না? ভাব তো এমন দেখাচ্ছেন মনে হচ্ছে অাপনি পবিত্র পুরুষ। একটা মেয়ে প্রস্টিটিউট হয় কিভাবে জানেন? একটা পুরুষের সাথে টাকার বিনিময়ে এক বিছানায় শুয়ে। এক মেয়ে অারেক মেয়ের সাথে ঘেষাঘেষি করে তো অার প্রস্টিটিউট হয়নি। অাপনার মতো অতিমাত্রার পবিত্র পুরুষের সংস্পর্শে এসেই এরা প্রস্টিটিউট হয়। অার অামি নিজে ওকে ঐ পাড়া থেকে তুলে এনেছি। ঐ পাড়ায় তো ভালো লোক যায় না। যায় খারাপ লোকেরা। তারমানে অামিও খারাপ। ওর অার অামার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই সাঈদ সাহেব। তবে অাপনার ক্ষেত্রে উল্টোটা হয়েছে। অাপনার বউটা কিন্তু খুব ভালো। কিন্তু অাপনি?”
-” স্যার অাজ অামি অাসি। বাসায় যেয়ে বাকি কাজটা কমপ্লিট করতে হবে।”
কথাটা বলে সাঈদসাহেব ফাইল হাতে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। পিছন থেকে সোহান ডেকে বললো,
-” সাঈদ সাহেব, অাজকের কথাগুলো অাপনার অামার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেই খুশি হবো।”
-” জ্বি স্যার। কথা বাহিরে যাবে না।”
মায়ার রুমে যেয়ে ওর নতুন টিচারকে সোহান জিজ্ঞেস করলো,
-” স্টুডেন্ট কেমন মাহিন?”
-” বেশ শার্প। এত অাগের পড়া গ্রামারগুলো এখনও মুখস্ত রেখেছে। একবছর প্র্যাক্টিস না করলেই সাধারনত মনে থাকে না। কিন্তু ও দেখছি সবমনে রেখেছে।”
-” কি মনে হয়? মাস দুই তিনেকের মধ্যে দৌড়ে ইংলিশ বলতে পারবে তো?”
-” অাশা করছি হবে।”
-” পড়ানো শেষ?”
-” না অারো পনেরো বিশ মিনিট লাগবে।”
-” অাজকে ওকে ছুটি দিয়ে দাও। একটু বাহিরে যাবো।”
-” জ্বি ভাইয়া।”
-” মায়া, যাও গিয়ে রেডি হও। অামি ওর সাথে কথা বলি।”
-” ভাইয়া বিয়ে করলেন, অথচ কিছুই জানালেন না?”
-” রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হুট করে দেখলাম একটা সুন্দর পরী পৃথিবীর রাস্তায় হাটাহাটি করছে। অামি ভাবলাম ডানা ভেঙে পড়ে টরে গেলো কিনা। দৌড়ে গেলাম হেল্প করতে। যেয়ে বললাম, অাপনার ভাঙা ডানাটা কোথায় পড়েছে বলেন। অামি এনে জোড়া লাগিয়ে দিচ্ছি। মেয়ে তো অামার মুখের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে অাছে। চিন্তা করলাম পৃথিবীতে নতুন তাই হয়তো অামাকে উদ্ভট লাগছে। ফের বলতে লাগলাম, অাপনি তো পরী। ডানা ছাড়া বেশিক্ষন থাকলে ঝামেলা হতে পারে। জলদি বলুন ডানা কোথায়? কিছুক্ষন পর পরী মুখ খুলে বললো, সে নাকি পরী না। সে মানুষ। অামাকে অার পায় কে? পরদিনই ধরে বেঁধে ওকে বিয়ে করে ফেলেছি।”
-” হা হা হা। জানিনা কতটুক সত্যি বলেছেন। তবে গল্পটা মজার ছিলো।”
-” শোনো বিয়ের বয়স হয়েছে অামার। অার কত একা ঘুমাবো? অফিস থেকে ঘরে ফিরলে ঘরটা খালি লাগে। তাই মেয়ে পছন্দ হওয়ার সাথে সাথে বিয়েটা করে ফেললাম।”
দরজার অাড়াল থেকে কথাগুলো শুনেছে মায়া। কাপড় হাতে নিয়ে সোহানের রুমে যাচ্ছে অার ভাবছে, সোহান সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে ও সোহানের বউ। কাজটা কি ঠিক করছে সোহান?
(চলবে)

নষ্ট গলি  পর্ব-৭

0

নষ্ট গলি  পর্ব-৭

লেখা-মিম

সোহান মায়ার প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। খুব সুন্দর ঘ্রান বেরোচ্ছে খাবার থেকে।
-” মায়া, নাও শুরু করো।”
-” অাপনি খাবেন না?”
-” হ্যা খাবো তো। এই যে অামার প্লেটে খাবার বাড়ছি।”
প্রথম লোকমা মুখে তুলেই তিন চার সেকেন্ড থমকে ছিলো মায়া।
-” কি ব্যাপার? খাবার মুখে নিয়ে বসে অাছো কেনো?”
-” অসম্ভব ভালো হয়েছে।”
-” তোমাকে বলেছিলাম না অামি একটা মেয়ে মানুষের চেয়েও বেশি ভালো রাঁধতে পারি।”
-” হুম তাই তাো দেখছি।”
-” নেক্সট উইক তুমি রান্না করে খাওয়াবে। অামি যাস্ট তোমাকে এটা সেটা এগিয়ে দিয়ে হেল্প করবো। কিন্তু রেসিপিটি বলবো না।”
-” ঠিকাছে।”
-” কাল থেকে প্রতিদিন তোমাকে একটা দুটা করে রান্না শিখাবো। ”
-” অাপনি ব্যস্ত মানুষ। অাপনার কি সময় হবে রান্না শিখানোর?”
-” এসব অামি তোমার জন্য না যতটুকু করছি তারচেয়ে বেশি করছি অামার নিজের জন্য। অামি মানুষটা খুব একা। তোমার সাথে সময় কাটাতে পারলে অামার ভালো লাগবে।”
এতদিন মায়ার ধারনা ছিলো টাকা থাকলেই বুঝি সব সুখ পায়ের কাছে পড়ে থাকে। ধারনাটা পুরোপুরি ভুল। টাকা থাকলেও মানুষের মনে কষ্টথাকে। একাকিত্বের কষ্ট টাকায় ঘুঁচে না।
-” অাপনার তো এত টাকা। তবু অাপনি একা কেনো? পয়সাওয়ালা লোকের পিছনে তো মেয়েদের লাইন লেগে থাকে।”
-” সমস্যাটা তো সেখানেই মায়া। সব টাকার পিছনে ছুটে। অামার পিছনে ছুটে না। টাকা অাছে তো অামার অস্তিত্ব অাছে, টাকা নেই তো অামার অস্তিত্বও নেই। মন থেকে কেউ কাছে টানে না। একটাবার কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে না, সোহান তুই ভালো অাছিস তো?”
কষ্ট হচ্ছে সোহানের জন্য। এত টাকা থেকে লাভ কি যদি না কেউ সুখের দেখা না পায়?

কিছুক্ষন অাগে কাজলের সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখেছে। মেয়ে হয়েছে তার। রুমে বসে থাকা দাই বাদে বাকি সবার মুখ কালো। মেয়ের অাশা তারা কেউ করেনি। বিউটি কুসুমকে নিয়ে বুদ্ধি বের করছে কিভাবে এই বাচ্চাকে এখান থেকে সরানো যায়। দাইকে না হয় টাকা পয়সা খাইয়ে মুখ বন্ধ করানো যাবে। কিন্তু ফখরুল? ওকে কি করবে? ও গো ঘরের বাইরে পায়চারি করছে। মেয়ের ছোট অাঙুলগুলো ধরে কাঁদছে কাজল। মেয়ে হওয়ার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো? এখান থেকে বাচ্চাটাকে বের করার কোনো উপায় নেই। কাজল চায়না ফের এই গলিতে কোনো মায়া অথবা কুসুম অথবা চুমকি তৈরী হোক। এই মেয়েগুলো জন্মসূত্রে পতিতা। অারও এমন অনেক অাছে এখানে যারা জন্মসূত্রে এই ব্যবসায়ী। কাজল দেখেছে তাদের মায়েদের চাপা কান্না যখন তাদের মেয়েদের ঐ লোকগুলোর হাতে একা রুমে তুলে দেয়া হতো। সবচেয়ে কম বয়সে কাজে লাগানো হয়েছিলো কুসুমকে। মাত্র বারো বছর ছিলো মেয়েটার। অাটাশ বছর বয়সী কোনো এক যুবকের তৃষ্ঞা মেটাতে তাকে পাঠানো হয়েছিলো এই বাড়ির পূর্ব দিকের ঘরটাতে। ঘরের ভিতর চিৎকার করছিলো কুসুম অার বাহিরে ওর মা। ওদের চিৎকারে চারপাশ ভারী হয়ে যাচ্ছিলো। অতটুকুন মেয়ে, যার বয়স ছিলো দুই বেনি করে বাড়ির উঠানে খেলার, সেই মেয়েকে পাঠানো হয়েছিলো কোনো এক দানবের ভোগের বস্তু হওয়ার জন্য। হ্যা দানব, সেই অাটাশ বছরের যুবকটাকে সেদিন কুসুমের কাছে দানব ছাড়া অার কিছুই মনে হয়নি। মানুষ খেঁকো দানব। না, মানুষ খেঁকো না শরীর খেঁকো দানব। টানা চার ঘন্টা কুসুমের উপর দিয়ে কোন তুফান গিয়েছিলো সেটা মনে হলে কুসুম এখনও ঘোরের মাঝে লাফিয়ে উঠে। মায়ারও একই হাল হয়েছিলো। তবে ওর বয়সটা একটু বাড়তি ছিলো যখন ওকে ধান্দায় নামানো হয়। সম্ভবত চৌদ্দ কি সাড়ে চৌদ্দ ।ওকে এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো কাস্টমারের কাছে। কাজলের মেয়েরও একদিন এমন পরিস্থিতি অাসবে, কুসুমের মায়ের মতো তাকেও একদিন মেয়ের রুমের বাইরে বসে তার বাচ্চার অার্তচিৎকার শুনতে হবে। এসব সহ্য করার মতো ক্ষমতা তার নেই। খাটের পাশে থাকা ড্রেসিং টেবিলটার উপর ধারালো ব্লেড চিকচিক করছে। কিছুক্ষন অাগেই এই ব্লেডটা দিয়ে নাড়ি কেটে অালাদা করা হয়েছে ওর সন্তানকে। খুব ধীরে ধীরে উঠে বসলো কাজল। দাই, বিউটি অার কুসুম মিলে খুব ধীর অাওয়াজে কি যেনো বলা বলি করছে। টেবিলের উপর থেকে ব্লেডটা হাতেনিলো কাজল। খুব অাস্তে করে মেয়ের গলায় ব্লেডটা দিয়ে শুধু একটা অাঁচড় কাটলো। যে ব্লেড দিয়ে নাড়ি কাটা হয়েছিলো সেটা দিয়েই নিজ সন্তানের গলার রগ কাটলো কাজল। বাচ্চাটা জোরে একটা চিৎকার দিয়ে থেমে গেলো। অার কোনো অাওয়াজ তার গলা থেকে অাসছে না। কিছুটা ছটফট করছে সে। কচি হাত পা গুলো এদিক সেদিক ছড়াচ্ছে। একটা পর্যায়ে চার হাত পা লম্বা করে টেনে নিঃশ্বাসটা পুরোপুরি ছেড়ে দিলো বাচ্চাটা। এতক্ষন বাকি তিনজন চোখ বড় করে বাচ্চাটার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। বাচ্চার চিৎকার শুনে তিনজনই তাকিয়ে ছিলো বাচ্চার দিকে। তাকিয়ে দেখে কাজলের হাতে রক্তমাখা ব্লেড অার বাচ্চার গলায় রক্ত। ঘটনা চোখের সামনে একদম স্পষ্ট ছিলো তবু তাদের কাছে অস্পষ্ট লাগছিলো। সামনে এগিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী এক শিশুকে অাগলে নিতে সাহস হচ্ছিলো না তাদের। নিঃশ্বাস ত্যাগের পর ঘোর কাটলো কুসুমের। কাজলের মুখে মাথায় এলোপাথারি চড় থাপ্পর দিচ্ছে সে।
-” ** কি করলি তুই এইডা? ঐ *** মারলি কেন মাইয়্যাডারে তুই?”
-” মইরা গিয়া বাঁইচা গেছে অামার মাইয়্যা। অামাগো মতো পইচা মরতে হইবো না ওর।”
কাজলের চোখেমুখে বিন্দুমাত্র কষ্টের ছোঁয়া নেই। ওর চেহার স্বস্তির শান্তি দেখা যাচ্ছে।
রাতে ঘুমানোর অাগে কফি খাওয়ার অভ্যাস অাছে সোহানের। গরম কফির মগে চুমুক দিচ্ছে অার টিভি দেখছে। মায়া নিজেকে প্রস্তুত করছে সোহানের জন্য। মানুষটা এখন পর্যন্ত ওর গায়ে হাত দেয়নি। হতে পারে অসুস্থ ছিলো তাই। অাজ নিশ্চয়ই ওকে বসিয়ে রাখবে না তার অধিকারটা চাইতে অাসবে নিশ্চয়ই। ইতিমধ্যে জোনাকিকে পঞ্চাশ হাজার দেয়া হয়ে গেছে। অার ওরপিছনে অনেক টাকাই খরচ করেছে সোহান টাকাগুলোতো এমনি এমনি অার খরচ করেনি। এগুলো তো সে অবশ্যই উসুল করবে। খানিকটা সেজেগুজে সোহানের পাশে যেয়ে বসলো মায়া। ওর দিকে একনজর দেখেই পরক্ষনে মুখ ফিরিয়ে টিভির স্ক্রিনে নিয়ে গেলো সোহান। টিভিরদিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,
-” ফুল প্রিপারেশন নিয়ে এসেছো মনে হচ্ছে।”
-” ……………”
-” দেখো, হুট করেই কারো গায়ে হাত দেয়াটা অামার পছন্দ না। এখানে এসেছো। কিছুদিন থাকো। দুজন দুজনকে বুঝি এরপর নাহয় দেখা যাবে।”
-” অাপনি তো অনেকগুলো টাকা দিয়ে এসেছেন।”
-” তো?”
-” টাকা উসুল করবেন না?”
-” দেখো অামি কিন্তু তোমাকে এখানে শুধু ফিজিক্যাল রিলেশনের জন্য অানিনি। তোমাকে এখানে অানার মূলউদ্দেশ্য হচ্ছে একাকিত্বটা দূর করা। অামার টাকা উসুল করা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। অামার টাকা কিভাবে উসুল করবো সেটা অামারটা অামি বুঝবো।”
সোহানকে যত দেখছে তত মায়ার বিস্ময়ের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। এমন মানুষও অাছে নাকি দুনিয়ায়? একটা যুবতি মেয়ে হাতের কাছে এসে ধরা দিচ্ছে অার সে কি না বলছে হুট করে কারো গায়ে হাত দেয়া তার পছন্দ না? সোহানকে বিরল প্রজাতির প্রানী মনে হচ্ছে মায়ার।
-” অামার সাথে একটু কথা বলবে মায়া?”
সোফায় পা উঠিয়ে বসতে বসতে হাসিমাখা মুখে মায়া বললো,
-” অবশ্যই বলবো। একটু কেনো? অনেক অনেক কথা বলবো।”
-” অাঠারো বছর অাগের ঘটনা। অামার রেজাল্ট দিয়েছিলো সেদিন। ফাইনাল এক্সামের রেজাল্ট। ফার্স্ট হয়েছিলাম। অাম্মুকে বলেছিলাম, অামি ফার্স্ট হয়েছি। অামি চিকেন ফ্রাই খাবো। অামাকে চিকেন ফ্রাই করে দাও। অাম্মু বললো চলো তোমাকে বাহির থেকে খাইয়ে নিয়ে অাসি। অামি বললাম, তোমার হাতেরটা খাবো। দোকানেরটা খাবো না। অাম্মু উত্তরে কি বলেছিলো জানো?”
-” কি?”
-” মুরগীতে মসলা মাখাতে গেলে হাতে মসলার দাগ বসে যাবে। মসলার বাজে স্মেল অাসবে হাত থেকে। অহেতুক হাতের চামড়া নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। অামি পাল্টা অারকিছু বলিনি। অাসলে বলার কিছুই ছিলো না। জোর করে তো অার কারো কাছ থেকে ভালোবাসা অাদায় করা যায় না। তাই অামিও অার জোর করিনি। যে ভালোবাসার সে এমনিতেই বাসবে। সোজা ফ্রিজ থেকে মুরগি নামিয়ে মসলা মেখে নিজেই ফ্রাই করেছি। তখন তো রান্না সম্পর্কে বিশেষ অাইডিয়া ছিলো না। ঘরে যত ধরনের মসলা ছিলো সবগুলো থেকে একটু একটু করে দিয়েছি। বানিয়ে এনে সবার অাগে অাম্মুকে দিয়েছি। অাম্মুকিছুক্ষন মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।অামি বললাম, খেয়ে দেখো। মুখে নিয়ে বললো খুব ভালো হয়েছে। তখনঅামি বললাম, নাও এই সবগুলো চিকেন ফ্রাই তোমার। মসলার স্মেল অামার হাতেও লেগে অাছে । এই দেখো হাতে হলুদের দাগ ভরে গেছে। কিন্তু অামি তোমার মতো নাক ছিটকাচ্ছি না। অার কখনো তোমাকে বলবো না অামাকে কিছু বানিয়ে খাওয়াও । এখন থেকে নিজেরটা নিজেই বানিয়ে খাবো। তোমার কিছু খেতে ইচ্ছে হলে অামাকে বলো। অামি তোমাকে বানিয়ে দিবো। এরপরদিনই যেয়ে রান্নার বই কিনে এনেছিলাম। প্রতিদিন কিছু না কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতাম। কতবার যে হাত পুড়েছি তার কোনো হিসাব নেই।”
-” একদিন রেঁধে খাওয়ালে কি হতো? একদিনে কি অার চামড়া নষ্ট হয়?”
-” উহুম। অামার মা এক সেকেন্ডও চুলার পাশে যেতে রাজি না। সে খুব চামড়া সচেতন মানুষ। প্রতিমাসে কত হাজার টাকা যে পার্লারে খরচ করে অাল্লাহ ভালো জানে। সেই হিসাব বোধহয় অাম্মুর নিজেরও জানা নেই। অাচ্ছা তোমার কি মাথা ব্যাথা করছে?”
-” কিছুটা। অাপনি জানলেন কিভাবে?”
-” তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে। তুমি যাও গিয়ে ঘুমাও।
-” না একটু গল্প করি না প্লিজ। ”
-” মাথাব্যাথা নিয়ে গল্প করার দরকার নেই। মাথাব্যাথা অারও বাড়বে।”
-” অামার ভালো লাগছে অাপনার সাথে গল্প করতে।”
-” অাচ্ছা তাহলে রুমে চলো। শুয়ে গল্প করবে”
মায়ার রুমে বিছানায়বসে অাছে সোহান। পাশে শুয়ে অাছে মায়া। সোহানের হাত ধরে রেখেছে সে। সোহান গল্প বলছে। অার খুব মন দিয়ে সেই গল্প মায়া শুনছে।

চলবে

নষ্ট গলি পর্ব-৬

0

নষ্ট গলি পর্ব-৬

লেখা-মিম

বিকেল হয়েছে। পশ্চিম অাকাশে সূর্যের তেজ কমে গিয়েছে অনেকটাই। সাদা মেঘে কমলা রঙের অালো ছড়িয়ে পড়ছে। মায়া ফুল গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে। সন্ধ্যামালতিগুলো ফুটতে শুরু করেছে। অাজ সকালে সোহান ওর হাতে একটা ফোন দিয়েছে। ফোনটা সোহানের অালমারিতে পড়ে ছিলো। দুপুরের দিকে ড্রাইভারকে দিয়ে সিম কার্ড পাঠিয়েছে। মায়ের সাথে অনেকক্ষন কথা বলেছে ও। মা খুব খুশি। এবার বুঝি তার মেয়ে এই নরক থেকে মুক্তি পেলো। সোহানকে প্রানভরে দোয়া দিয়েছেন তিনি। সোহান বলেছে ঘরটাকে নিজের সংসার হিসেবে অাগলে রাখতে। অাচ্ছা সংসার কিভাবে অাগলে রাখে? মা কে তো কখনো দেখেনি সংসার করতে। মেয়ে মানুষ তো মায়ের কাছ থেকেই সংসার করা শিখে। এখন কি হবে? ওর তো খালা মামিও নেই বা কোনো বড় বোন নেই সংসার করা শিখাবে। তবে কি সংসার সামলানোর ক্ষেত্রে জিরো মার্কস পাবে? না না, জিরো পেলে কি চলবে নাকি? একজন লোক শখ করে ওকে সংসারের দায়িত্ব দিয়েছে। তার শখটা তো পূরন করতেই হবে। কিভাবে সংসার শুরু করা যায়? রান্না করে নাকি ঘর পরিষ্কার করে? অাজ শুরুটা নাহয় রান্না দিয়েই হোক। সোহানকে ফোন করে জিজেস করা দরকার সে কি খেতে চায়? সোহানের নাম্বারে ডায়াল করলো মায়া।
-” হুম মায়া।”
-” ইয়ে বলছিলাম মানে রাতে রান্না করবো। কি রান্না করবো?”
-” তুমি না অসুস্থ?”
-” এখন একটু ভালো অাছি।”
-” এখন রান্না করার দরকার নেই। সুস্থ হও এরপর রান্না করো।”
-” করি না একটু।”
-” কি খেতে ইচ্ছে করছে বলো অামি অাসার সময় নিয়ে অাসবো।”
-” না অামার জন্য না। অাপনার জন্য রান্না করতে চাই। অাপনার প্রিয় কিছু।”
-” অামার জন্য?”
-” হুম।”
-” কিছু করতে হবে না। তুমি এই অসুস্থ শরীরে অামার জন্য কিছু করতে চেয়েছো এতেই অামি খুশি। খুব বেশিই খুশি হয়েছি।”
-” বেশি কিছু করবো না। শুধু একটা পদের কথা বলেন। অামি তাই করবো”
-” এসব জোরাজোরি অামি একদম পছন্দ করি না মায়া। কাজ করছি। অাজাইরা প্যাচাল বন্ধ করো। যত্তসব …..”
রাগ করে ফোনটা কেটে দিলো সোহান। কি হলো কিছুই বুঝলো না মায়া। পুরো ব্যাপারটা মাথার উপর দিয়ে গেলো তার। মাত্রই না বললো খুব খুশি হয়েছে। তাহলে এমন রাগ দেখালো কেনো? একটু কষ্ট পেলো মায়া। তার কি দোষ? লোকটাই তো বললো এটাকেনিজের সংসার ভাবতে। হতে পারে ব্যস্ত। তাই হয়তো এমনটা করলো।
জোনাকির মুখোমুখি বসে অাছে মায়ার মা বিউটি। জোনাকি পান চাবাচ্ছে অার বিউটির সাথে কথা বলছে।
-” তোর মাইয়্যার তো কপাল খুইল্লা গেছে রে বিউটি।”
-” হ বুবু।”
-” বেডার হাব ভাবে তো লাগতাছে তোর মাইয়্যারে এক্কেবারে তার কাছে রাইখা দিবো। বিয়া-শাদি করবো নাকি? জানোস কিছু?”
-” না তেমন কিছু তো কইলো না।”
-” কেন জানি মনে হইতাছে তুই জানোস। জাইনাও না জানার ভান করতাছোস।”
-” ছিঃ বুবু। কি কন? সত্যিই জানি না অামি।”
-” বুবু…….।”
-” কিরে কুসুম? এমনে হাঁপাইতাছোস ক্যান?”
-” কাজলের ব্যাথা উঠছে। ডাক্তার লাগবো।”
-” এহ্ ডাক্তার লাগবো। ডাক্তার খরচা দিবো কেডা? তোর বাপে? অাজকা সাতমাস ধইরা কাজলের ইনকাম বন্ধ। ওরে উল্টা খাওয়াইতে হইতাছে। ঐ বিউটি যা তো কাজলের কাছে। অার কুসুম তুই ফখরুলরে গিয়া কইবি দাইরে খবর দিতে। অার বিউটি শোন, যদি মাইয়্যা হয় সোজা অামার কাছে নিয়া অাইবি অারযদি পোলা হয় এতিমখানায় দিয়া অাইসা পড়বি। ”
-” বুবু মাস দুয়েক মার কাছে থাকতে দেন। দুধের বাচ্চাটা মা ছাড়া কেমনে থাকবো?”
-” ইশশ, পীড়িত কত্ত! এত পীড়িত কই পাস বিউটি? বাচ্চা একটা লগে ঝুলায়া রাখলে কি বেডারা ওর কাছে যাইবো নাকি? মাইয়্যা হইলে না হয় ছাড় দেওন যায়। পোলা হইলে এক চুলও ছাড় দিমু না অামি। ওর পোলার লাইগা কি অামি অামার ধান্দা লাটে উঠামু? বেহুদা কথা বাড়াইস না তো। যা, কাজলের কাছে যা।”
বিউটি দৌড়েগেলো কাজলের রুমে। ব্যাথায় কোঁকাচ্ছে সে। বিউটি পাশে বসতেই হাত চেপে ধরলো কাজল।
-” বুবু শোনো।”
-” কি রে বইন?”
-” অামার যদি মাইয়্যা হয় তুমি যেমনে পারো অামার মাইয়্যাডারে এইখান থেইকা সরায়া ফালাইবা। ওরা কেউ জানার অাগেই কামডা সারতে হইবো।
-” কেমনে সরামু? ফখরুলরে দেখোস না কারো বাচ্চা হইতে নিলে দরজার বাইরে কেমনে খাড়ায়া থাকে। ”
-” তাইলে বুবু বাচ্চারে লবন খাওয়াইয়া মাইরা ফালাইও। অামি চাই না অামার মাইয়্যাডা এইখানে পইচা মরুক। এখানে পইচা মরার চেয়ে একবারে মইরা যাওয়া ভালো।”
-” কি কস পাগল ছাগলের মতো?”
-” ঠিক কইতাছি বইন। নিজে এতকাল পইচা মরছো। তুমি বুঝো না পইচা মরার কষ্ট কি?”
-” অাইচ্ছা দেখি কি করা যায়। তুই অাল্লাহ রে ডাকতে থাক কাজল। কালেমা পড় বেশি কইরা।”
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কাজশেষ করে অফিস থেকে বেরিয়েছে সোহান। গাড়িতে উঠে হুঁশ হলো মায়ার কথা। ব্যবহারটা কি বেশিই খারাপ হয়ে গেলো? ভালো কথাই জানতে চেয়েছিলো মেয়েটা। রাগ না দেখালেও চলতো। এত রাগ সোহানের অাসে কোথ্থেকে সেটা সে নিজেও বুঝে না।
বাসায় এসে পৌঁছেছে সোহান। ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছে মায়া। ঘরে ঢুকেই মায়ার কপালে হাত দিয়ে দেখলো কপালে জ্বর অাছে কিনা। নাহ, টেম্পারেচার তেমন নেই। হালকা অাছে। সম্ভবত ১০০ ডিগ্রি হবে।
-” মায়া…”
-” জ্বি।”
-” যাও চুল বেঁধে অাসো। অামি ফ্রেশ অাসছি একসাথে রান্না করবো।”
-” অাপনি রান্না করবেন?”
-” অামি একটামেয়ে মানুষের চেয়ে ভালো রাঁধতে পারি। এখন যাও। ভালোমতো চুলটা খোপা করবে। রান্নায় যাতে চুল না পড়ে। খাবার চুল দেখলে অামার মেজাজ বিগড়ে যায়।”
-” জ্বি যাচ্ছি।”
মায়ার খুশি খুশি লাগছে। খুব দ্রুত চুলটা অাটসাট করে বেঁধে কিচেনে চলে এসেছে সে। লোকটা রাগি হতে পারে। কিন্তু ভালো। অনেক ভালো। খুব পছন্দ হয়েছে লোকটাকে মায়ার। এমন মানুষকে মনের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসা যায়। কিন্তু মায়ার ভালোবাসতে বারন। সে যে নষ্ট গলির মেয়ে। ঐ পাড়ার মেয়েদের শুধু ব্যবসা করাই মানায়, ভালোবাসা ব্যাপারটা তাদের সাথে যায় না।
-” চলে এসেছো?”
-” জ্বি।”
-” কি রান্না করতে চাও? ”
-” অাপনার কি পছন্দ?”
-” অামার তো কত কিছুই পছন্দ। তুমি কোনটা ভালো রাঁধতে পারো সেটা বলো।”
-” অামি ডাল ভুনা করতে পারি, অালুভর্তা, ডিমভাজি, অার মাছভুনা করতে পারি।”
-” ব্যস এতটুকুই?”
-” হুম। অার কিছু পারি না।”
-” যাস্ট এই কয়টা মেনু পারো। অার তুমি অামাকে জিজ্ঞেস করছো কি খেতে চাই অামি? যদি বলতাম অামি মোরগ পোলাও খাবো তখন তুমি কি করতে?”
-” শামীম ভাইয়ের কাছ থেকে শিখে নিতাম।”
-” ওর মোরগ পোলাও জঘন্য হয়। অাল্লাহ বাঁচিয়েছে অামি তোমাকে তখন রাঁধতে না করেছি। অার নয়তো ঐ মোরগ পোলাও অামাকে গিলতে হতো।”
-” তাহলে এখন কি করবো?”
-” কি অাবার করবে? অামি তোমাকে শিখাবো। যাও ডিপ থেকে মুরগি নিয়ে অাসো। মুরগি নরম হতে হতে পেঁয়াজ কেটে, চাল ধুয়ে রেডি করি।”
মাথার বা পাশটা চিনচিন ব্যাথা করছে মায়ার। মাথাব্যাথাটা বোধহয় শুরু হচ্ছে। কিন্তু সেদিকে পাত্তা দেয়ার তিল পরিমান শখ নেই মায়ার। সে রান্না শিখতে চায় সোহানের কাছ থেকে ।ভালো একটা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন সময় কাটাতে চায়। ভালোবাসতে বারন, কিন্তু পাশে দাঁড়াতে তো বারন নেই। পেঁয়াজ কাটছে সোহান। পাশে দাঁড়িয়ে মায়া শসা ছিলছে।
-” অাচ্ছা কখনো কাউকে ভালো লাগেনি তোমার?”
-” নাহ। সবাই এক ধাচের ছিলো। কিন্তু হুট করে একজনকে ভালো লাগতে শুরু করেছে।”
-” অামাকে?”
-” মনে হয়।”
-” ভালো লাগার মানুষটা নিঃসন্দেহে অামি। সেটা তোমার মুখ দেখেই বুঝা যায়। এবং সেটা অামি গতরাতেই টের পেয়েছি যখন তুমি অামাকে বলেছো অামার হাত ধরে তুমি ঘুমাতে চাও ।কারও হাত ধরে ঘুমানোর অর্থ জানো? অর্থটা হচ্ছে পাশের মানুষের মধ্যে তুমি নির্ভরতা খুঁজে পাচ্ছো।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৫

0

“”নষ্ট গলি'” পর্ব-৫

লেখা-মিম

সোহানের দিকে এগিয়ে এসে বসলো মায়া। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বলেই ফেললো,
-” অামি অাপনার হাতটা একটু ধরি?”
সোহান মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে মায়ার হাতটা ধরলো। হাত প্রচন্ড রকমে গরম ছিলো মায়ার। সোহান টের পাচ্ছে মায়ার জ্বরটা অাবার বেড়েছে। কপালে হাত রেখে দেখলো সত্যিই জ্বর বেড়ে গেছে।
-” মায়া তোমার তো জ্বর অাবার বাড়ছে। তুমি শুয়ে পড়ো। অার রাত জেগো না।”
-” অাপনি অামার হাতটা একটু ধরে রাখবেন প্লিজ? অামি ঘুমিয়ে গেলে অাপনি হাতটা ছেড়ে দিয়েন। অাপনাকে সারারাত এখানে বসতে হবে না।”
-” ঠিকাছে। অামি অাছি। তোমার হাত ছাড়বো না তুমি ঘুমাও।”
-” না না সারারাত ধরে রাখতে হবে না। অামি ঘুমান…….”
-” হয়েছে থামো। অামি বুঝেছি। এখন চোখ বন্ধ করো তো।”
সোহান একহাতে মায়ার হাত ধরে রেখেছে। অারেকহাতে ফেইসবুকিং করছে। মায়ার দুচোখে প্রচন্ড রকমে ঘুম ভর করছে। বহুবছর এমন চোখ জুড়ানো ঘুম পাচ্ছে তার। এই ব্যবসায় নামার পর থেকে এভাবে কখনো ঘুম ভর করেনি ওর চোখে। মিনিট দশেকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো মায়া। মায়া ঘুমিয়ে গেছে টের পেয়ে খুব সাবধানে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। নিজের রুমে এসে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অাছে। ড্রেসিং টেবিলের উপর থাকা সিগারেটটা মুখে নিয়ে জ্বালালো। অন্ধকারে ধোয়াগুলো দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু পুরো রুমে বিশ্রি গন্ধ ছড়াচ্ছে ঠিকই। সিগারেট বেশি একটা খাওয়া হয়না সোহানের। খুব বেশি মন খারাপের মূহূর্তগুলোতে সে একটা দুটা সিগারেট ধরায়। মনটা অাজও তার খারাপ। অাজ তার ত্রিশতম জন্মদিন ছিলো। কেউ তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়নি। শুধুমাত্র সালমান ছাড়া। যারা জন্ম দিয়েছে তাদেরও বড় ছেলের জন্মদিন মনে নেই। ফেইসবুকে তার অাসল জন্মতারিখটা দেয়া নেই। যেটা অাছে সেটা হচ্ছে ভুয়া। অাত্মীয় বন্ধুরা নোটিফিকেশন পেয়ে সেইমিথ্যা দিনেই তাকে শুভেচ্ছা জানায় খুব অান্তরিকতার সাথে। সব মিথ্যা। অাত্মীয়-বন্ধুরা মিথ্যা। জন্মদিনটা মিথ্যা। তাদের অান্তরিকতাগুলোও মিথ্যা। সবাই সোহানের সত্যিকারের জন্মদিন ভুলে গেছে। কেউ মনে রাখেনি। মনে রাখার প্রয়োজনটা বোধ করে না। গভীর ভালো সম্পর্ক কার সাথে অাছে তার? মনে পড়ছে না কারো নাম। প্রানপন চেষ্টা চালাচ্ছে সোহান। কে অাছে তার এমন প্রানের বান্ধব যে তাকে মন থেকে পছন্দ করে। সালমান ছাড়া অাপাতত খুঁজে পাচ্ছে না। অন্য দশটা মানুষের মতো তারও খুব ইচ্ছে হয় কেউ রাত বারোটা এক মিনিটে অনেকগুলো ফুল চকলেট হাতে নিয়ে ওর দরজার কলিংবেল চাপুক। এরপর সে এসে দরজা খুলে দেখবে কেউ একজন হাসিমুখে ফুল চকলেটগুলো ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলবে,
-” হ্যাপি বার্থডে সোহান। মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে।”
এরপর সে চোখে মুখে একরাশ খুশি এবং বিস্ময় নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে থ্যাংকস জানাবে। এই স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেছে তার। অাজ অব্দি বাস্তবায়ন হয়নি। তিনজন প্রেমিকার একজনও কখনোই বারোটা একমিনিটে তাকে উইশ করে নি। বরাবরই তারা দশ পনেরো মিনিট লেইট ছিলো। এটা নিয়ে সোহানের ক্ষোভের শেষ ছিলো না। এই ক্ষোভে সে কোনো প্রেমিকার সাথেই তার জন্মদিনে দেখা করতো না। অাজ সেঁধে সেঁধে একজনের কাছ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিতে ইচ্ছে হচ্ছে। মানুষটা হচ্ছে মায়া। জন্মদিনটা এখনও শেষ হয়নি। এখনও অাধাঘন্টা সময় অাছে। সোহানের মনে হচ্ছে ইচ্ছেটা পুরন করা উচিত। হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে মায়ার রুমে গেলো সোহান। বেঘোর ঘুম ঘুমাচ্ছে মায়া। সবুজ রঙের ডিমলাইটে ওর মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দেখে মনেহচ্ছে বহুবছর ধরে জমানো ঘুমটা অাজ ঘুমাচ্ছে মায়া। এত অারামের ঘুমটা ভেঙে দেয়া কি ঠিক হবে? ডাকতে যেয়েও অার ডেকে তুলেনি সোহান। রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। নাহ্ অার ভেবে কাজ নেই। জন্মদিন তো চলেই গেছে। কে উইশ করলো অার কে উইশ করলো না সেসব ঘেটে লাভ নেই। শুধুশুধু মন খারাপ হবে। যেখানে নিজের বাবা মায়েরই মন থাকেনা সেখানে অন্যের কাছে অাশা করাটা বোকামি। সবার ভাগ্যে সব থাকে না। ওর ভাগ্যে অান্তরিকতা,টান এসব নেই। এসব ভাবতে ভাবতে পাশে থাকা কোলবালিশটা জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে গেলো সোহান। প্রতিবছর সে এভাবেই নিজের মনকে স্বান্ত্বনা দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে উঠে অাগের দিনের শুভেচ্ছা না পাওয়ার কষ্টটা সে ভুলে যায়। কাল সকালেও হয়তো তাইই হবে।

ভোরের অালো ফুটতে শুরু করেছে । মায়ার জানালা ভেদ করে অালো ওর মুখে এসে লাগছে। ঘুমটা ভেঙে যাচ্ছে একটু একটু করে। অাধাখোলা চোখে অাশপাশের দেয়ালগুলো দেখছে মায়া। দেয়ালগুলো অপরিচিত। এটা কোথায়? চোখজোড়া কঁচলে নিয়ে ভালো করে চোখ মেলে তাকালো মায়া। এতক্ষনে দেয়ালটা পরিচিত লাগছে। এটা সোহানের বাসা। এত বছর একটা রুমকে ঘুম থেকে উঠে দেখেছে সে। অাজ রুমটা ভিন্ন। তাই ঘুম থেকে উঠেই অভ্যাসবশত সেই রুমটা দেখতে চেয়েছিলো মায়া। হুট করে নতুন বাসাটা চিনতে পারেনি সে। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো মায়া। গতরাতে বেলকনিতে থাকা ছোটছোট গাছগুলো চোখে পড়ে নি মায়ার। গাছে তাজা ফুল ফুটেছে। সকাল সকাল চোখের সামনে তাজা ফুল দেখলে মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। বেলকনিতে যেয়ে ফুলগুলো ঘেটে ঘেটে দেখছে মায়া। এর অাগে ওর পাড়াতে দুবার ফুলগাছ কিনে এনেছিলো মায়া। দুবারই গাছ মরে গেছে। ওর মা বলেছিলো এটা নষ্ট গলি। এখানে ভালো জিনিস টিকে না। এরপর অার গাছ কিনেনি ও। পিছন থেকে সোহানের গলার অাওয়াজ পেয়ে চমকে গেলো মায়া।
-” কি ব্যাপার? এভাবে লাফিয়ে উঠলে কেনো?”
-” নাহ্। হঠাৎ ডাকলেন তো তাই।”
-” চা পছন্দ নাকি কফি?”
-” কফি তো কখনো খেয়ে দেখিনি। খেলে বলতে পারবো কোনটা বেশি ভালো।”
” ফ্রেশ হয়েছো?”
-” না।”
-” যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। অামি কফি দিতে বলছি।”
মায়া ওয়াশরুমে চলে গেলো অার সোহান গেলো কিচেনে কফির ফরমায়েশ দিতে। কফি হতে হতে সোহান নিজেও ফ্রেশ হয়ে এলো। দুই মগ কফি নিয়ে মায়ার রুমে এসে দেখে মায়া মুখ মুছছে। সোহানকে দেখে মায়া বললো,
-” বারান্দায় বসি?”
-” বসো। এই রতন দুইটা চেয়ার দিয়ে যাও তো এখানে।”
বেলকনিতে বসে ধোঁয়া উঠা গরম কফির মগে চুমুক দিচ্ছে ওরা দুজন।
-” কি? কফির টেস্ট কেমন?”
-” হুম খুব ভালো।”
-” তো এখন বলো? কোনটা প্রিয়?”
-” লাল চা বেশি প্রিয়”
-” ঠিকাছে কাল থেকে তোমার জন্য লাল চা বানানো হবে।”
-” মাঝে মাঝে কফিও খাবো।”
-” ঠিকাছে। এখন শোনো, অামি চাচ্ছিলাম তোমাকে উন্মুক্ত স্কুলে ভর্তি করাবো। অামি চাচ্ছি পড়াশোনাটা অাবার কন্টিনিউ করো তুমি। বাসায় তোমার জন্য টিচার রেখে দিবো। তোমাকে এসে পড়াবে। অার ইংলিশ শিখানোর জন্য অালাদা টিচার রাখবো। সে তোমাকে ইংলিশে কথা বলা শিখাবে।”
মায়ার মনে হচ্ছে সে অাকাশ ভেঙে নিচে পড়ে যাবে। পড়ালেখা? আবার? ঠিক শুনছে তো?

-” অাপনি অামাকে পড়াবেন?”
-” হুম। কেনো পড়তে চাও না?”
-” সত্যিই পড়াবেন?”
-” মিথ্যামিথ্যি পড়ানো যায় নাকি?”
-” কেনো যেনো মনে হচ্ছে অাপনি অালাদিনের জ্বীন”
-” অামি মানুষ। কোনো জ্বীন টীন না।”
-” এখানে তো তাহলে অামাকে পার্মানেন্টলি থাকতে হবে।”
-” থাকবে। সমস্যা কোথায়?”
-” জোনাকি বুবু মানবে?”
-” সর্বক্ষন জোনাকি জোনাকি করো কেনো? কি করবে এই মহিলা তোমাকে? খেয়ে ফেলবে? ও মানবে না ওর বাপসহ মানবে। ”
-” রেগে যাচ্ছেন কেনো?”
-” কানের কাছে বারবার জোনাকির কথা বলো না তো। ভালো লাগেনা এই মহিলাকে অামার। কেমন যেনো চাড়াল টাইপ। অাস্ত একটা জাদরেল। ওকে দেখলেই অামার সেকেন্ড গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ে যায়।”
মায়া শব্দ করে হাসছে সোহানের কথায়।
-” তুমি হাসছো কেনো?”
-” দ্বিতীয় প্রেমিকা অাপনাকে খুব জ্বালিয়েছে তাই না?”
-” অনেক বেশিই।”
-” অাপনার মুখ দেখলেই বুঝা যায়। ওর কথা বলার সময় অাপনার মুখটা দেখার মতো হয়।”
-” মজা লাগছে খুব তাই না?”
-” খুব বেশিই।”
-” তোমাকে নিয়ে স্টুডিওতে যাবো অাজকে। তোমার পাসপোর্ট অার স্ট্যাম্প সাইজ ছবি তুলতে হবে।”
-” কেনো?”
-” তোমার স্কুল ভর্তি অার পাসপোর্ট বানানোর জন্য লাগবে।”
-” অামার পাসপোর্ট?”
-” হুম।”
-” কেনো?
-” অামি বছরে দুই তিনবার দেশের বাহিরে যাই। তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো এজন্য।”
এই মূহূর্তে সত্যি সত্যিই সোহানকে অালাদিনের জ্বীন মনে হচ্ছে মায়ার। মনে হচ্ছে এটা একটা স্বপ্ন। কিছুক্ষন পরই বোধহয় স্বপ্নটা ভেঙে যাবে।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৪

0

নষ্ট গলি পর্ব-৪

লেখা-মিম

সোহানের বাসার ড্রইংরুমে বসে অাছে মায়া। পাশেই দশ বারোটা শপিং ব্যাগ। এসবগুলো শপিং মায়ার জন্য করেছে সোহান। রেস্টুরেন্ট থেকে ফেরার পথে মার্কেট হয়ে এসেছে দুজন। নিজেকে বেশ সুস্থ মনে হচ্ছে মায়ার। মন ভালো থাকলে শরীরটাও ভালো লাগে সেটা আবারও প্রমানিত হলো। বাসার কাজের লোক দুটো মায়াকে আড়চোখে দেখছে। এর অাগেও তারা এই বাসায় একজন মেয়েকে প্রায়ই আসতে দেখতো। মেয়ে অাসতো, রাতে থাকতো, পরদিন সকালে চলে যেতো। অাবার কখনো দু তিনদিন এখানে থেকে যেতো। সোহান এতক্ষন ফোনে কথা বলছিলো। কলটা কেটেই চলে এলো মায়ার মুখোমুখি।
-” কি ব্যাপার? বসে অাছো যে? এখনো ফ্রেশ হচ্ছো না?’
-” বাথরুমটা কোন দিকে?”
-” ওহ অামার সাথে এসো।”
বাসায় পড়ার জন্য কিছু প্লাজো, গেন্জি অার স্কার্ট কিনে দিয়েছে সোহান ওকে। ব্যাগ থেকে একটা গেন্জি অার স্কার্ট হাতে নিয়ে সোহানের পিছু পিছু যাচ্ছে মায়া। একটা রুমে এসে লাইট জ্বালালো সোহান। সুন্দর সাজানো গোছানো একটা রুম। রুমে এসে অাঙুল দিয়ে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে সোহান বললো,
-” ওটা ওয়াশরুম। ফেসওয়াশ সাবান সব রাখা অাছে। গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো যাও। অামি এই রুমেই অাছি। কিছু লাগলে অামাকে বলো।”
মায়া কিছু না বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলো। জাহিদের নাম্বারে ডায়াল করলো সোহান।
-” জোনাকিকে বলেছো মায়া যে অামার এখানে থাকবে তিন চারদিন?”
-” জ্বি স্যার।”
-” ঝামেলা করেনি তো?”
-” না স্যার।”
-” রাতে খেয়েছো?”
-” জ্বি না স্যার।”
-” তোমার ফ্যামিলিতে কে কে যেনো অাছে?”
-” মা বাবা, ছোট দুই বোন।”
-” যাও ওদের নিয়ে বাহির থেকে খেয়ে এসো। অাজকে তোমার টাকা দিয়ে বিল পে করো। কাল অামি তোমাকে টাকা দিয়ে দিবো।”
-” লাগবে না স্যার। বাসায় রান্না হচ্ছে।”
-” যাও তো। কথা বাড়িওনা ।”
-” স্যার কাল যাই। অার নয়তো অাজকের রান্নাটা ওয়েস্ট হবে।”
-” কি রান্নাকরেছে অাজ ঘরে।”
-” চিংড়ি দিয়ে কচুশাক, বেগুন-ডিমের তরকারি অার ডাল।”
-” ওহ তোমার প্রিয় খাবার রান্না হয়েছে অাজ ।”
” অাপনি জানেন এগুলো অামার প্রিয় খাবার?”
-” অামি সবই খেয়াল করি জাহিদ। তুমি অামার সাথে প্রতিদিন আট নয় ঘন্টা কাটাও। তোমার পছন্দ অপছন্দ লক্ষ্য করাটাই স্বাভাবিক।”
-” জ্বি স্যার।”
-‘ অাচ্ছা কালই যেও। এখন রাখি।”
-” জ্বি স্যার।”
ফোনটা রেখে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে অাছে সোহান। মিনিট দশেক পর বেরিয়ে এলো মায়া। ওকে খুব ফ্রেশ দেখাচ্ছে। এর অাগে স্কার্ট সে কখনো পড়েনি। অাজই প্রথম নিজের কাছে উদ্ভট লাগছে নিজেকে। মনে হচ্ছে লুঙ্গি পড়েছে।
-” জ্বর টা কি এখন অাছে মায়া?”
-” নাহ তেমন নেই। সহ্য করার মতো।”
-” এই শামীম, ড্রইং রুম থেকে মেডিসিনের প্যাকেটটা দিয়ে যাও তো। মায়া, তুমি বসো এখানে।”
খাটের একপাশে জানালার দিকে পিঠ ঠেকিয়ে বসলো মায়া। বাহির থেকে বাতাস এসে ওর ঘাড়ে পিঠে লাগছে। পিছনের চুলগুলো বাতাসে উড়ে বার সামনের দিকে এলোমেলো হয়ে অাসছে। কাজের লোক শামীম এসে মেডিসিনের প্যাকেটটা দিয়ে গেলো। সেইসাথে এক বোতল পানি। প্রেসক্রিপশন দেখে ট্যাবলেট বের করে দিচ্ছে সোহান। মায়ার দিকে মেডিসিন অার পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো
-” খাও।”
মেডিসিন খেয়ে পানির বোতলটা সোহানের দিকে এগিয়ে দিলো মায়া। চুলগুলো খোপা করতে যাচ্ছিলো ঠিক সে সময় সোহান বললো,
-” উড়তে দাও মায়া। দেখতে ভালো লাগছে।”
-” অাপনাকে যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি। খুব রহস্যময় লাগছে অাপনাকে। এতটা যত্ন পাওয়ার অধিকার অামার নেই। তবু দিচ্ছেন। কেনো বলুন তো?”
-” অাসো পুরো ব্যাপারটা ক্লিয়ার করি। চাইলে অামি অন্য দশটা কাস্টমারের মতো ব্যবহার তোমার সাথে করতে পারতাম। সেটা হতো শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য। মানসিক চাহিদা মিটতো না।সারাদিন নানান কাজে ব্যস্ত থাকি। আমার ইচ্ছে হয় ব্যস্ততার মাঝেও কারো সাথে মন খুলে দুমিনিট কথা বলি। কেউ অামাকে ফোন করে খোঁজ খবর নিক। অামি ভালো অাছি কি না, অামার মনটা ভালো অাছে কিনা সেসব খোঁজ করুক। অামার খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয়গুলো খেয়াল করুক। দিনশেষে কারও সাথে কথা বলে অামার সারাদিনের মানসিক ক্লান্তিটা মিটাই। শরীরের চাহিদা টাকা দিলেই মিটে,মনের খোড়াক টাকায় মিলে না। এবার অাসি তোমাকে কেনো সিলেক্ট করলাম সে প্রসঙ্গে। প্রথমটা ফিন্যান্সিয়ালি আমার স্ট্যাটাসের ছিলো। একদম খাপে খাপ মিলে। কিন্তু প্রেম করে বিশেষ শান্তি পাইনি। মনের খোড়াক মিটে নি। দ্বিতীয়টা ছিলো মিডেল ক্লাস। অাস্ত একটা জাদরেল ছিলো ঐটা। সেখানে শান্তি পাওয়ার কোনো প্রশ্নই অাসে না। অার তিন নম্বরটা অামাকে বুঝতো না। বলতাম একটা বুঝতো অারেকটা।সেটা ছিলো নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের। সেখানেও শান্তি পাইনি। সব ক্লাসের মেয়েদের সাথে প্রেম করে দেখেছি। সুবিধা করতে পারিনি। শেষমেষ তোমাদের পাড়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেনো জানো? তোমাদের মেন্টালিটি একটু অন্যরকম। তোমরা সহজে কঠিন ব্যাপার হজম করতে পারো। তোমাদের কাছে প্রতিদিন কমপক্ষে সাত অাটটা কাস্টমার অাসে। একেক কাস্টমার একেক রকম। কাউকে তোমাদের পছন্দ হয় অার কাউকে হয়না। তবু তাদের শুয়ে পড়ো তোমরা। ব্যাপারটা যথেষ্ট ধৈর্য্যের। চাইলেই যার তার সাথে শুয়ে পড়া যায় না। যাকে ভালো লাগে না তার সাথে ইন্টিমেট হওয়াটা খুবই পীড়াদায়ক কাজ। তোমরা কাজটা বেশ হাসিমুখে সামাল দাও। তাছাড়া প্রতিদিন সাত অাটজনের সাথে ইন্টিমেট হওয়াটা কোনো মুখের কথা না। যথেষ্ট কষ্টের কাজ।তবু তোমরা করো। যে মেয়ে হাসিমুখে এই কঠিন ব্যাপারগুলো সামাল দিতে জানে সে অারও অনেক কিছুই সামাল দিতে পারবে। একজন পুরুষের মনের খোড়াক হাসিমুখে মিটানো তাদের পক্ষে কোনো ব্যাপার না। তুমি যেমন ভালোবাসার কাঙাল তেমনি অামিও। তুমি এখানে একদম অামার বউয়ের মতো করে থাকবে। ধরে নাও এটা তোমার সংসার। তুমি যাস্ট অামার ছোট বড় সমস্ত ব্যাপারগুলো, ভালো লাগা-মন্দ লাগাগুলোকে দেখবে। অার প্লিজ কখনো কোনো বিষয় নিয়ে প্যানপ্যান করতে পারবে না। অামি হাজার বকা দিলেও কখনো অামার সাথে রাগ করতে পারবে না। তুমি কি রাজি?”
মায়ার কাছে কথাগুলো এলোমেলো লাগছে। শুরুর দিকে সব ঠিকই লাগছিলো। যখন শুনলো তুমি অামার বউয়ের মতো থাকবে, এটা তোমার সংসার এরপর থেকে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। এতটাও কি পাওয়ার যোগ্যতা সে রাখে। হতে পারে সে মিথ্যে বউ, মিথ্যে সংসার তবুও অনুভুতিটা সত্যিকারের মনে হচ্ছে। শুধুমাত্র মনের খোড়াক মিটানোর বিনিময়ে এতকিছু করছে লোকটা? মনের খোড়াকের এত মূল্য? কান্না পাচ্ছে মায়ার। কেনো পাচ্ছে সেটা সে জানে না। জ্বরটা অাবার বাড়ছে। বোধহয় খুশিতে জ্বর বেড়ে যাচ্ছে। মানুষটাকে একবার ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।
বড্ড দ্বিধা দ্বন্দে ভুগছে মায়া। সে কি একটাবার মানুষটার হাত ধরার অাবদার ধরবে? একটাবার চোখে মুখে অালতো করে ছুঁয়ে দেখতে চাইবে?
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৩

0

নষ্ট গলি পর্ব-৩

লেখা-মিম

রেস্টুরেন্টের ভিতরে মুখোমুখি বসে অাছে দুজন। কিছুক্ষন অাগেই ওয়েটার খাবার দিয়ে গেছে। সোহান লক্ষ্য করছে মায়া কাঁটা চামচ ছুরি দিয়ে ঠিকভাবে খেতে পারছে না। ওপাশ থেকে চেয়ার ছেড়ে এপাশের চেয়ারে এসে বসলো সোহান। মায়ার হাত থেকে চামচ নিজের হাতে নিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে মায়াকে। কখনো এভাবে যত্নআত্তি পায়নি সে। এই প্রথমবার এতটা যত্নঅাত্তি পাচ্ছে। অাবেগটা একটু অাধটু উঁকি দিচ্ছে। যদিওবা মাত্র কয়েকঘন্টার পরিচয় এমন আবেগ উঁকি দেয়ার কথা না। তবু দিচ্ছে। মানুষটাকে জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। নিজের মনের সমস্ত অপ্রকাশিত কথাগুলো, ইচ্ছেগুলো জানাতে ইচ্ছে হচ্ছে।
-” এভাবে তাকিয়ে অাছো কেনো? কিছু বলতে চাও?”
-” হুম।”
-” বলো কি বলবে?”
-” আমি কে সেটা তো আপনি ভালো করেই জানেন। তাহলে এত যত্ন নিচ্ছেন কেনো?”
-” তোমার পছন্দ হচ্ছে না?”
-” সেটা বলিনি। পছন্দ অবশ্যই হচ্ছে।”
-” যেহেতু পছন্দ হচ্ছে সেহেতু চুপচাপ যত্ন উপভোগ করো। এত কেনো কেনো করছো কেনো?”
-” আপনার রাগ বেশি তাই না?”
-” না আমি যথেষ্ট ঠান্ডা মানুষ।”
-” তাহলে আমার সামান্য প্রশ্নে রেগে গেলেন কেনো?”
-” আমি এমনই।”
-” তারমানে আপনি রাগী।”
-” তুমি অনেক কথা বলো।”
-” না। কিন্তু আজকে আপনার সাথে কথাা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।”
-” তাই? পছন্দ হয়েছে আমাকে?”
-” হুম পছন্দ হয়েছে। অাপনার রাগটাকেও ভীষন ভালো লেগেছে। ”
-” বাহ্ তাহলে তো সোনায় সোহাগা। হাজার ধমকালেও পালাবে না। জানো জাহিদকেও অনেক বকা দেই। বেচারা একটা টু শব্দও করে না।”
-” জাহিদ কে?”
-” ঐ যে একটা ছেলেকে দেখলে না আমার সাথে?”
-” হুম।”
-” ঐটাই জাহিদ।”
-” আপনার বয়স কত?”
-” ৩০।”
-” অাপনার তো বিয়ের বয়স হয়েছে। বিয়ে না করে আমার মত মেয়ের পিছনে কেনো ছুটছেন?”
-” বিয়ে করলে বুঝি পুরুষ মানুষরা তোমাদের পিছে ছুটে না?”
-” ছুটে তবে বিয়ের পাঁচ ছয় বছর পর। সংসার করতে করতে তিতা হয়ে যায়। তখন অামাদের কাছে অাসে।আর কতগুলা থাকে জাত লুচ্চা। ওগুলা বিয়ের পরদিনই চলে অাসে অামাদের কাছে।”
-” আমি জাত লুচ্চা না। একজনকে নিয়ে থাকতেই পছন্দ করি। আর সংসার করে মনটাকে বিষিয়ে তুলতে চাই না। তাই তোমার কাছে আসা।”
-” সবাই তো খারাপ হয় না।”
-” ম্যাক্সিমাম মেয়ে মানুষই এমন ত্যানা প্যাচানো টাইপ হয়। তিনজনের সাথে প্রেম করেছি। তিনোটাই একই স্বভাবের ছিলো। অহেতুক ঘ্যানর ঘ্যানর করতো। কিছু থেকে কিছু হলেই ব্রেকঅাপ করবো, সুইসাইড করবো, হাত কাটবো। উফফ! কি যে পেইন দিতো মেয়েগুলা।”
-” আপনি না একটু আগে বললেন একজনকে নিয়েই থাকতে পছন্দ করেন। তাহলে তিনজন আসলো কেমন করে?”
-” একসাথে তো তিনজনের সাথে প্রেম করিনি। যখন যার সাথে প্রেম করেছি তখন তাকে নিয়েই পড়ে থেকেছি। অন্য কোথাও নজরদেইনি। আমি যথেষ্ট লয়্যাল পারসন। প্রতিটা প্রেমের ইতি টানার পর নতুন প্রেমে জড়ানোর আগে ছয়মাস করে সময় নিয়েছি।”
-” সময় কেনো নিয়েছেন?”
-” ওদেরকে পুরোপুরি ভুলার জন্য।”
ঠিক এই মূহূর্তে সোহানের কথায় মায়ার মনে হচ্ছে একটা মানুষ জীবনে কয়টা প্রেমকরতে পারে? যেহেতু একেকজনকে ভুলার জন্য ছয়মাস সময় লেগেছে তারমানে প্রেম গভীর ছিলো। যেহেতু গভীর ছিলো তাহলে ছেড়ে দিলো কেনো? নাকি মেয়েগুলোই ছেড়ে চলে গেছে?
-” সম্পর্ক কে ভেঙেছিলো?”
-” প্রথম দুটো আমি ভেঙেছি। সারাদিন লাগাতার প্যানপ্যানানি,অভিযোগ চলতেই থাকতো এই দুইটার আর শেষেরটা আমার রাগ হজম করতে পারেনি। যখনই বকতাম তখনই কাঁদতো আর কি কি জানি বলতো। ওর কান্নার জন্য কথাগুলো স্পষ্ট বুঝতাম না। তখন আরও বকা দিতাম। শেষমেষ ইচ্ছেমতো অভিশাপ দিয়ে ব্রেকআপ করে ফেলেছে।”
-” আপনি কি গালিও দেন?”
-” হ্যা দেই। সবচেয়ে বেশি গালি খায় জাহিদ আর আমার ম্যানেজার। আর ওদের চেয়েও বেশি গালি খেয়েছে আমার প্রথম প্রেমিকা। গালি দেয়ার টাইমে কিন্তু কখনো প্রতিবাদ করেনি। অামি ঠান্ডা হওয়ার পর আমাকে ধোলাই দিতো । তখন আমি ফোন কান থেকে রিয়ে রাখতাম। এরপর উল্টো অামাকেই সরি বলতো। মাঝে মাঝে অতিষ্ঠ হয়ে বলতো আমি মরে যাবো। একবার এক ক্লাইন্টের উপর মেজাজ খারাপ হয়েছিলো খুব। ক্লাইন্টের ঝাল ওর উপর ঝেড়েছি। সেদিন রাতে এই মেয়ে বিষ খেলো। ওর বাবা আমার উপর মামলা দিলো। এরপর আর কি ব্রেকআপ করে দিলাম।”
-” আপনি জেলও খেটেছেন?”
-” নাহ্। টাকা দিয়ে মামলা তুলেছি।”
-” এরপর ঐ মেয়ে যোগাযোগ করতে চায়নি?”
-” হুম করেছে। আমি পাত্তা দেইনি। কয়দিন পর বাপ মা বিয়ে দিয়ে দিলো ওকে। এখন দুই বাচ্চার মা। বেশ ভালোই আছে। এইবার আসি সেকেন্ড গার্লফ্রেন্ড প্রসঙ্গে। এইটা তো একদম গালির উপর পি এইচ ডি করা ছিলো। আমি একটা দিলে ও দিতো পাঁচটা। সবচেয়ে বেশি জ্বালিয়েছে এই মেয়েটা। মারাত্মক প্যানপ্যানানি স্বভাবের ছিলো। সারাক্ষন এটা করোনি কেনো? ওটা করনি কেনো? ফোন দিতে লেট করলে কেনো এগুলো চলতেই থাকতো। প্রতিটাদিন এই মেয়ের সাথে ঝগড়া হতো। শেষমেষ এটাকে বাদ দিলাম। ঠান্ডা, ঝামেলা ছাড়া মেয়ে মানুষ আমার খুব পছন্দ।”
-‘ আপনি কি অামাকেও গালি দিবেন?”
-” সেটা পরিস্থিতি নির্ভর।”
-” জোনাকি বুবুর সাথে কতদিনের চুক্তি করেছেন?”
-” সময় ফিক্স করিনি।”
-” আপনার ঘরে কে কে আছে?’
-” ঢাকার বাসায় আমি একা থাকি। দুইজন সার্ভেন্ট আছে। ফ্যামিলি চিটাগাং থাকে। ওখানে মা বাবা আর ছোট ভাই আছে। বাবা ওখানকার অফিস দেখে আর আমি এখানকার।”
-” আপনার পরিবার যদি জানে আপনি আমার মতো মেয়ের কাছে আসবেন উনারা বকবেনা?”
-” ফ্যামিলিটা আমার পছন্দ না। আসলে এটা ফ্যামিলি না। সবাই সবার প্রয়োজনের তাগিদে সবাইকে ব্যবহার করছি। ছোট থেকেই দেখে আসছি মা বাবা কুকুর বিড়ালের মতো ঝগড়া লেগে থাকে। দুজনেরই পরকিয়া চলছে বহুবছর আগে থেকে। কয়েকবার এদের দুজনকে বলেছি তোমরা ডিভোর্স নিয়ে নাও। এভাবে আমাকে আর সালমানকে টর্চার করো না। উনারা ডিভোর্স নিবে না। এভাবেই চলবে। অামরা দুইভাই আয়ার হাতে বড় হয়েছি। বাবা মা কে খুব কমই কাছে পেয়েছি। বাবার সাথে ব্যবসায়িক কথা ছাড়া কোনো কথা হয় না। মায়ের সাথে লাস্ট কথা হয়েছে পনেরোদিন আগে। বেশিরভাগ কথা হয় ছোটটার সাথে। ও বেশিরভাগ ফোন করে। মাঝে মাঝে অামার এখানে এসে থাকে। আমি তেমন একটা যাই না ওখানে। শান্তি লাগে না। ঐ বাড়িতে ঢুকা মাত্রই অশান্তি শুরু হয়ে যায় আমার।”
মায়া খুব মন দিয়ে সোহানের কথাগুলো শুনছে। লোকটার বাপ মা থেকেও নেই আর ওর বাবা কে সেটা ওর জানা নেই। কি অদ্ভুদ দুনিয়া! কেউ পায় না আর কারো কারো থেকেও নেই।
-” অাচ্ছা মায়া ঐটা কি তোমার মা ছিলো? ঐ যে চুল আঁচড়ে দিচ্ছিলো যে?”
-” হুম।”
-” উনিও কি তোমার মতই?”
-” হ্যা। অামি জন্মসূত্রে পতিতা। অামার মা পনেরো বছর বয়সে অামাকে জন্ম দেয়। চেয়েছিলো ওখান থেকে অামাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে পারেনি। অাম্মার ডিমান্ড ছিলো বেশি। অাম্মাকে উনারা ছাড়েনি। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছি। এরপর অামাকেও এই কাজে নামিয়ে দিলো আম্মা বলতো অামাকে পালিয়ে যেতে। দুবার ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছিলামও। ঘন্টাখানেক বাদে ফিরে এসেছি মায়ের কথা ভেবে। মা তো একা হয়ে যাবে।অামিই বা যাবো কোথায়? রাস্তার লোকেরাও তো কেমন করে যেনো তাকায়। ভেবে দেখলাম বাহিরে যেয়েও লাভ নেই এরচেয়ে ভালো মায়ের কাছে যাই। ”
-” জীবন কেমন যেনো! খুব এলোমেলো। খুব ছন্নছাড়া। যাই হোক সেসব বাদ দাও। পেট ভরেছে তোমার? অারো কিছু খাবে?”
-” না।”
-” চলো অামার বাসায় যাবে?
-” অামার তো শরীরটা ভালো না অাজই?”
-” অামি সেসব কিছু করবো না। তুমি তোমার মত থাকবে। শোনো সুস্থ হওয়ার জন্য ভালো একটা পরিবেশ দরকার। ওটা তোমার ওখানে নেই। সুস্থ হলে তুমি চলে যেও। আবার অামার এখানেও থাকতে পারো। যাবে আমার সাথে?”
-” ………………”
-” অামাকে বিশ্বাস করতে পারো।”
-” হুম যাবো।”
(চলবে)