বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1162



নষ্ট গলি পর্ব-৪১

0

নষ্ট গলি পর্ব-৪১

লেখা-মিম

আনিকার রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দাটা দক্ষিণমুখী। প্রায় সারাটাদিন ধরেই মাতাল হাওয়ার আনাগোনা থাকে এই বারান্দাটাতে৷ বিশেষ করে রাতের বেলায়। রাতের খাবার সেড়ে বারান্দায় বসে আছে আনিকা আর মায়া। খুব মনোযোগ দিয়ে আনিকার কথাগুলো শুনছে মায়া।

– বিশ্বাস করেছিলাম ওকে। এতটা করেছি যে নিজের সম্মানটুকু ওর হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করিনি। কতটা বিশ্বাস করলে একটা মেয়ে মানুষ তার প্রেমিকের সামনে নগ্ন হতে পারে ভেবে দেখতো? আর ও কি করলো? বিশ্বাসটাকে পা দিয়ে পিষে ফেললো।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মায়া। চাইলে এই মূহুর্তে আনিকাকে কড়া গলায় বলতে পারতো, তোকে না করেছিলাম। কেনো গেলি?
এধরনের প্রশ্ন করাটা মায়ার কাছে অদ্ভুদ এবং অহেতুক মনে হয়। যা হয়ে গেছে তা তো আর বদলানো সম্ভব না। তাছাড়া তার কর্মফল তো সে ভুগছেই। নতুন করে তার কর্ম মনে করিয়ে দেয়ার কি আছে?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলো আনিকা।

– ওর সাথে যতবার রুমডেটে গিয়েছি প্রতিবারই ওর কোনো না কোনো বন্ধুর বাসায় গিয়েছি। ওর বন্ধুরা জানতো ওর সাথে আমি……
জানিস সে মূহুর্তে এই কথাটা একটাবারের জন্যও মাথায় আসেনি বদ্ধরুমে আমি আমার প্রেমিকের সাথে কি করছি সেটা তো ওর বন্ধুরা জেনে যাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে হয়তোবা আলোচনাও করছে। আমার আড়ালে হয়তোবা আমাকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করছে। আমার প্রেমিককে হয়তোবা জিজ্ঞেস করছে রুমডেট কেমন ছিলো? কেনো মাথায় আসেনি আমি জানিনা। সত্যি জানিনা৷ লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে বসেছিলাম একদম। আর এখন…. মনে হলেই গা কাঁটা দিয়ে উঠছে। কিভাবে পারলাম ওর বন্ধুদের সামনে দিয়ে ঐ রুমে যেতে? ওর বন্ধুরা জানতো কি কাজ করতে ঐ ঘরটাতে আমি যাচ্ছি। অনেক মানুষই হয়তো আমার নিকৃষ্ট কাজের গল্পটা জানে। রাস্তা দিয়ে যখন হেঁটে যাই তখন হয়তো আমার আড়ালে আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলে। গা ঘিনঘিন করছে খুব। মনে হচ্ছে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেই। কি করলাম আমি এটা? কেনো করলাম?

এতক্ষণ নিঃশব্দে কাঁদছিলো আনিকা। শেষের কথাগুলো বলে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো৷ মনে হচ্ছে যেনো চাপা কষ্ট আর অপরাধবোধটা ওর ফুসফুসটাকে দখলে নিয়ে নিয়েছে। কোনোভাবেই নিঃশ্বাসটা ফুসফুস অব্দি পৌঁছাচ্ছে না। দম আটকে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
রুমে যেয়ে পড়ার টেবিলের উপর থাকা পানির বোতলটা নিয়ে এলো মায়া। আনিকার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো

– একটু পানি খা। গলাটা বোধহয় শুকিয়ে এসেছে।

ধীরে ধীরে পানি খাচ্ছে আনিকা। গলাটা সত্যিই শুকিয়ে এসেছিলো। পানি খাওয়া শেষে জোরে একটা নিঃশ্বাস নিলো সে। এতক্ষণে মনে হচ্ছে নিঃশ্বাসটা ফুসফুস অব্দি একটু হলেও পৌঁছেছে।

– শোভন ভাই ব্রেকআপ কেনো করতে চায়? কিছু বলেছে?
– হুম।
– কেনো?
– আমাকে নাকি আর ভালো লাগছে না। আমার সবকিছুতেই নাকি বিরক্ত লাগে। আগের মত ম্যাজিক নাকি আর খুঁজে পায়না।
– আর?
– আমি আনস্মার্ট। ওর ভার্সিটিতে নাকি অনেক সুন্দর মেয়ে আছে। সেক্সি ফিগার। দেখলেই নাকি চোখ জুড়িয়ে আসে৷ ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকলেও একঘেয়েমি আসবে না। বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ডগুলো নাকি আমার চেয়ে হাজারগুনে ভালো। তাদের সামনে আমাকে পরিচয় করাতে লজ্জা লাগে।
– তুই সুইসাইড করতে চাচ্ছিলি কেনো?
– কারনগুলো কি যথেষ্ট মনে হচ্ছে না? সারা শরীরে ঐ মানুষটার স্পর্শ লেগে আছে। অবৈধ সম্পর্কের নোংরা স্পর্শ। মনে হলেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে। সেইসাথে কিছু মানুষের নজরে আমি “ইউজড মাল” নামে পরিচিত হয়ে গেছি। আমার ভবিষ্যত কি বলতে পারবি? বাবা মা কি আমাকে ঘরে বসিয়ে রাখবে? কোনোদিনও না। পাঁচ ছয় বছর পর ঠিকই বিয়ে দিবে। ততদিনে নিশ্চয়ই ঐ নোংরা স্পর্শ মুছে যাবে না। গায়ে লেগেই থাকবে। সেই সাথে ইউজড মাল তকমাটাও। আমার পরিবারের রক্ষণশীলতা দেখে আমার হাজবেন্ড হয়তোবা ভাববে আমি অতি মাত্রার সতী মেয়ে। আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে৷ রাস্তাঘাটে আমার সেই নোংরা ঘটনার সাক্ষ্যীরা আমাদের দেখবে। নোংরা হাসি হাসবে আর বলবে, আরে এই মালটারে তো আমার বন্ধু কবেই খায়া দিছে। আর সেই মানুষটা যদি কখনো জানে আমি তো সতী না। মিথ্যা ভ্রমে সংসার করে গেছে উনি। তখন কি হবে বল তো? ভবিষ্যত অন্ধকার। নূন্যতম আলা আমি দেখতে পাইনা। যত ভাবি ততই মনে হয় অন্ধকারের গভীরে তলিয়ে যাচ্ছি। এমন মানুষের বেঁচে থাকার কি আদৌ কোনো মানে আছে?
– ভবিষ্যত কি হবে তা তুই জানিস না আমিও না৷ সেটা তো ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। তোর স্বামী মানুষটা কেমন হবে তা আমি জানি না। তবে এটা কি জানিস মানুষরুপি কিছু ফেরেশতা আছে। ফেরেশতাগুলো আমাদের জীবনে আসে একরাশ স্নিগ্ধ আলো নিয়ে৷ এমনও তো হতে পারে এমন একজন ফেরেশতা তোর জন্যও অপেক্ষা করছে।
– মিথ্যা আশায় আমি দিন কাটাতে রাজি না। এগুলো নেহায়েৎ মিথ্যা ছাড়া আর কিছু না।
– গল্প শুনবি আনিকা? আমার গল্প?
-কি গল্প শুনবো তোর? তুই যে কতটা সুখী তা আর নতুন করে কি শুনবো?
– সুখের আড়ালের ভয়ংকর সত্যিটা শুনবি না?
– মানে?

খানিকটা নড়েচড়ে বসলো মায়া। নিজের অতীতটাকে কখনো কারো সামনে মেলে ধরে না। মায়ার চকচকে দুনিয়ার সাথে পরিচিত মানুষগুলো জানেই না ওর অতীত কতটা কালো ছিলো। আজ অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই কালো অতীতকে নাড়া দিতে হবে। কাছের মানুষটাকে যে সেই কালো অতীত থেকে অনেক কিছু শিখানোর আছে। খোলা চুলগুলো খোপা করে নিলো মায়া। বারান্দার বাহিরে তাকিয়ে বললো,

– আনিকা আমি একজন প্রস্টিটিউট ছিলাম। জন্মসূত্রে। আমার মাও ছিলো এই পেশায়।

আনিকার ভ্রু কুঁচকে মায়ার দিকে তাকালো। একরাশ বিস্ময় আর প্রশ্নের ছোটাছুটি করছে ওর চোখে। মায়ার মাত্র বলা কথাগুলো বড্ড দোটানায় ফেলে দিয়েছে ওকে৷ কথাগুলো কি সত্যি নাকি বাজে কৌতুক ছিলো সে হিসেব মিলাতে পারছেনা আনিকা। হুট করেই যেনো মনে হচ্ছে কান্নাটা আটকে গেছে। কষ্টের চাপ কমে গেছে। কি বললো মায়া এটা?

– অবাক হচ্ছিস খুব তাই না রে?
– কেমন কথা বললি এটা?
– সত্যি বলেছি। আমার ঝলমলে দুনিয়াটা দেখলে কেও বিশ্বাস করবে না আমার অতীত কতটা ফ্যাকাশে ছিলো।
– সিরিয়াসলি তুই…….
– নিজেকে নিয়ে, নিজের মা কে নিয়ে নিশ্চয়ই কেও এমন নোংরা মজা করবে না।
– সোহান ভাই কি জানে এসব?
– হুম। ঐ মানুষটা আমাকে ঐ পাড়া থেকে তুলে নিয়ে এসেছে। নিজের স্ত্রীর সম্মান দিয়েছে। আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে। তার বউ একজন প্রস্টিটিউট জানা সত্ত্বেও কোনো স্বার্থ ছাড়া অকারনে ভালোবেসেছে৷ আগলে রেখেছে। কখনো আমাকে নিয়ে এমন চিন্তা করেনি আমার শরীরে এর আগেও বহু পুরুষের হাত পড়েছে। সেই প্রথম দিন থেকে এখন পর্যন্ত মানুষটা যতবার আমার দিকে তাকায় ততবার সেই একই মুগ্ধতা খুঁজে পাই৷ তার চোখে তিল পরিমান মুগ্ধতা বা ভালোবাসা কোনোটারই ঘাটতি হতে দেখিনি।
প্রায় আড়াই বছর আগে গল্পটা শুরু হয়েছিলো। তখন ঐ পাড়াতে আমার চাহিদা আকাশচুম্বী৷ আতিপাতি কাস্টমারদের কাছে আমাকে নেয়া হতো না। মোটা অংকের টাকা যারা দিতে পারবে শুধু মাত্র তাদের কাছেই আমাকে পাঠানো হতো। একদিন এই মানুষটা এলো। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলো৷ উনার দেখা পাওয়ার আগ পর্যন্ত ধারনা ছিলো পুরুষ হলো মাংসখেকো৷ কিন্তু সেদিন মনে হচ্ছিলো আমি কোনো পুরুষের ঘরে আসিনি৷ আমি একজন মানুষের ঘরে এসেছি। সেই রাতে মানুষটা আমাকে বলেছিলো ঐ ঘরটা আমার ঘর। আমার সংসার। নিজের মতো করে যেনো আগলে রাখি। যত্ন করি। কথাগুলো কানের মাঝে ঘন্টার মতো বাজছিলো। একে তো জ্বর ছিলো। তার উপর এসব কথা। দুটো মিলিয়ে মনে হচ্ছিলো আমি আর এই জগতে নেই৷ বোধহয় স্বপ্নের রাজ্যে ভাসছি। ঘুমটা ভাঙলে বা জ্বরটা কমলেই একদম মুখ থুবড়ে এসে সেই নোংরা জগতে পড়বো।

(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৪০

0

নষ্ট গলি পর্ব-৪০

লেখা-মিম

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আনিকা। মাথার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে আনিকার পরিবারের সদস্যরা। ঘন্টা দেড়েক আগে জ্ঞান ফিরেছে ওর। পুরো তিনঘন্টা পর মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে৷ ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলো৷ কেনো খেয়েছিলো সে ব্যাপারে কিছু জানা নেই পরিবারের সদস্যদের। রুমের বাহিরে বসে আছে মায়া৷ মুখোমুখি চেয়ারটাতে বসে আছে সোহান। সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়াকে যখন বাসার কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলো না তখন শামীম এসে জানালো মায়া ঘুম থেকে উঠে নাস্তা না করেই কোথাও তড়িঘড়ি করে বের হয়ে গেলো। কোথায় গেছে সে ব্যাপারে জানা নেই শামীমের। অবশেষে মায়াকে ফোন করে জানতে পারলো আনিকার কথা। খবরটা পেয়েই হসপিটাল চলে এলো সোহান। প্রিয়তমা স্ত্রীর পরম প্রিয় বান্ধবী হলো আনিকা। নিশ্চয়ই এতক্ষণে মায়ার হাল বেহাল হয়ে গেছে৷ তাই ওকে সঙ্গ দিতে সোহানের এখানে আসা। আপাতত দুজনই চুপচাপ বসে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কেবিনের দরজায় এসে দাঁড়ালো আনিকার ভাই। বললো,

– মায়া,,,,
– জ্বি ভাইয়া?
– এক কাজ করো তুমি বাসায় চলে যাও। অনেকক্ষণ হলো এখানে এসেছো। ভাইয়াও কাজ ফেলে এখানে বসে আছেন৷ তাছাড়া আনিকা এখন ভালো আছে। শুধুশুধু কষ্ট করে এখানে বসে থেকো না।
– কিসের কষ্ট! কি যে বলেন না! আমি থাকি এখানে। সমস্যা নেই।
– আমরা আছি তো। তুমি চিন্তা করো না।
– না ভাইয়া। আমি…..
– তোমাকে যেটা বলি সেটা শুনো। আনিকাকে বোধহয় কাল রিলিজ করে দিবে। তুমি কাল বাসায় চলে এসো। দুই তিনদিন আনিকার সাথে সময় কাটিয়ে যেও। ওর ভালো লাগবে। তাছাড়া তোমার সাথে ওর ব্যাপারে কথাও আছে। তুমি বাসায় আসলে ঠান্ডা মাথায় সেসব শুনবো।
– জ্বি।
– ভাইয়া আপনার কোনো আপত্তি নেই তো মায়া যদি দুই তিনদিনের জন্য আমাদের ওখানে থেকে আসে?
– আরে নাহ, সমস্যা হবে কেনো? মায়ারও অনেকদিন হয় কোথাও গিয়ে একটু বেড়ানো হচ্ছে না৷ পড়া বিজনেস সংসার সব মিলিয়ে বেচারী একদম হাঁপিয়ে যাচ্ছি। একটু ব্রেক দরকার। ভালোই হবে দুই তিনদিন আপনাদের ওখান থেকে বেড়িয়ে আসলে। মায়ার মাইন্ড রিফ্রেশ হবে আনিকাও সঙ্গ পাবে।
– তাহলে মায়া আনিকাকে রিলিজ করে বাসায় নেয়ার পর তোমাকে ফোন করে জানাবো।
– জ্বি। আমি ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসি।
– হুম, হুম যাও।

কেবিনের দরজা ঠেলে ভিতরে গেলো মায়া। আনিকা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে৷ আনিকার কপালে হাত রাখলো মায়া।
– আনিকা, আমি আসি। কাল তোর সাথে দেখা হবে।

চোখ বন্ধ রেখেই মায়ার হাতের কব্জি চেপে ধরলো আনিকা। ফোঁপাচ্ছে সে। চোখের কোন বেয়ে পানি ঝরছে।

– কাঁদবি না তো। তোকে কাঁদতে দেখলে কষ্ট হয়।
-…………….
– এই তোকে না করেছি কাঁদতে।
– ও কিভাবে পারলো?
– চুপ। শুনবো। সব শুনবো। এখন না। কাল যাবো তোর বাসায়। তিন চারদিন থাকবো তোর সাথে। তখন সব শুনবো।
– সত্যিই আসবি তো?
– হ্যাঁ আসবো।

রেস্টুরেন্টে চুপচাপ বসে খাবার খাচ্ছে মায়া আর সোহান। এভাবে চুপ করো বসে থাকতে ভালো লাগছে না সোহানের। মায়াকে স্বাভাবিক ভাবপ কথা না বলতে দেখলে ভিতরে উশখুশ চলতে থাকে। নীরবতা ভেঙে কথা বলতে শুরু করলো সোহান।

– খাবারটা বেশ ভালো। তাই না?
– হুম।
– আরো কিছু অর্ডার করবো?
– আরে নাহ। পাগল নাকি? কে খাবে এত খাবার?
– আমার গিফট কোথায়?
– বাসায়। আলমারিতে আছে।
– কি কিনেছো?
– বাসায় যেয়ে দিয়ে দিবো। তখন দেখে নিবেন।
– শুনো না….
– হুম।
– মনটা খারাপ করে রেখো না তো। ভালো লাগে না তোমাকে এভাবে দেখতে। জানি তোমার মনটা খারাপ। তবুও ভালো লাগছে না তোমাকে এমন মনমরা দেখতে।
– হাসি না আসলে কি করবো?
– ঠিকাছে হাসি আসছে না। কিন্তু কথা তো বলতে পারো। কথা বলো আমার সাথে।
– ভালো আছেন?
– খুব প্রিয় কেও যখন ভালো থাকে না তখন আমি কি করে ভালো থাকি?
– আসলে ওর জন্য চিন্তা হচ্ছে।
– আচ্ছা ও এমন করলো কেনো?
– পুরো ঘটনা জানি না। তবে আন্দাজ করতে পারছি।
– কি?
– একজনের সাথে প্রেম চলছে তিনবছর যাবৎ। নাম শোভন। সিরিয়াস পর্যায়ের প্রেম। এতদিন শোভন ভাই বিয়ে করবো বিয়ে করবো বলে পাগল করে ফেলেছিলো। আনিকাও সেসব শুনে একদম আহ্লাদে গদগদ।
– হুম। তারপর?
– মাস তিনেক আগে শুনেছিলাম উনি আনিকাকে প্রস্তাব দিয়েছে ফিজিক্যালি ইনভলভ হওয়ার জন্য। আনিকা দোটানায় ভুগছিলো ব্যাপারটা নিয়ে। আমার সাথে শেয়ার করলো। আমি ওকে কড়া গলায় না করেছি এমন কিছু যেনো না করে৷ আমার না শুনে জিজ্ঞেস করলো বা করছি কেনো? শোভন ভাই তো ওকে বিয়ে করবেই। তাহলে অসুবিধা কোথায়? তখন ওকে বুঝালাম এই লোকের সাথে বিয়ে হবেই তার গ্যারান্টি কি? নাও তো হতে পারে। লোকটা যে দুদিন পর পরিবর্তন হবে না তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? আর ভাগ্য নামে কিছু আছে। ভাগ্যে যদি বিয়েটা না লিখা থাকে তাহলে কি বিয়ে সম্ভব? ভাগ্যে কি আছে তা তো আর ও জানে না।
– এরপর কি ও তোমার কথা মেনে নিয়েছে?
– হুম মেনেছিলো তো। আমি ওকে কয়েকদফা জিজ্ঞেস করেছি এ ব্যাপারে। ও প্রতিবারই বলেছে ওরকম কোনো সম্পর্কে ও জড়ায়নি। তবে মাসখানেক যাবৎ লক্ষ্য করছি শোভন ভাইয়ের সাথে ওর বেশ ঝামেলা যাচ্ছে। মন মেজাজ বেশ খারাপ থাকে। পুরো ঘটনা বলে না উনার সাথে সমস্যা কি হয়েছে।
– পুরো ঘটনা হলো তোমার বান্ধবী মিথ্যা বলেছে। ছেলে মজা নিতে এসেছে৷ মজা পেয়েছে। এখন তোমার বান্ধবীর আর কোনো প্রয়োজন নেই তাই ব্রেকআপ করতে চাচ্ছে অথবা করে ফেলেছে।
– আমারও তাই মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা আরো আগেই সন্দেহ হয়েছিলো। কিন্তু ও স্বীকার না করলে কি করবো বলো?
– সেটাই৷ অস্বীকার করলে তো আর কিছু করার নেই। টেনশন নিও না তো। সব ঠিক হয়ে যাবে।
– আজ আমাদের এ্যানিভারসারি। অথচ আমি অন্য চিন্তায় ডুবে আছি। সরি। আসলে চিন্তাটা মাথা থেকে ঝাঁড়তে পারছি না।
– তুমি তো এই স্বভাবেরই। মাথায় কোনো পোকা ঢুকলে সেই পোকা মাথার মধ্যে নড়াচড়া করতেই থাকে।

(চলবে)

[আনিকা মায়ার বান্ধবী । ওকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নাই। আনিকা কোনো ক্ষতিকারক পদার্থ না। হুদাই ওকে নিয়ে টেনশন করবেন না৷ নিশ্চিন্তে গল্প পড়েন। আর আনিকাকে গল্পে কেনো আনছি সেটা পরেই বুঝবেন।]

কেউ নেক্সট লিখবেন না…গল্প নিয়ে কোন মন্তব্য থাকলে তা বলবেন…

নষ্ট গলি পর্ব-৩৯

0

নষ্ট গলি পর্ব-৩৯

লেখা-মিম

রাত ১২:১০।আজ মায়া,সোহানের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী।পাশাপাশি চেয়ারে এপার্টমেন্টের ছাদে বসে আছে দুজন।রেলিং এর উপরে রাখা কফির মগ থেকে ধোঁয়া উঠছে।

-দুই বছর কেটে গেলো!তাই না?
-হুম!দুই বছর।
-ভালো সময় হয়তো খুব দ্রুত চলে যায়।টেরই পাইনি কোথা থেকে দুবছর চলে গেলো।প্রতিটা সময়,প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে স্বর্গীয় ছিলো।

নতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কার করেছি।কখনো ভাবিনি জীবনটা এভাবে ঘুরে দাঁড়াবে।যখনি আয়নার সামনে দাঁড়াই তখনই মনে হয় নতুন কেউ।এই আমি তো সেই আমি না।আয়নার সামনে এখন যে দাঁড়িয়ে আছে সে সোহানের মায়া।তার নিজের মনমতো সাজানো কেউ।

-চেয়ার নিয়ে আরো খানিকটা মায়ার গা ঘেষে বসল সোহান।১হাতে শক্ত করে মায়ার কাঁধ জড়িয়ে ধরলো,অন্য হাত হাত বাড়িয়ে কফির মগটা হাতে নিলো সোহান।কফির মগে চুমুক দিয়ে মায়ার কানে নাক ঘষে দিয়ে বলল,
ভালোবাসি…..

আজ কলেজ যায়নি মায়া।সারা রাত ছদে কাটিয়ে এসে ভোরের দিকে সোহানের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়েছে।আজ গোটা দিনটা সোহানের জন্য বরাদ্দ রাখবে।
বেলা সাড়ে ৯টা বাজে,বালিশের কাছে রাখা মায়ার ফোনটা বাজছে।ঘুমের ঘোর কাটতে কাটতে রিসিভ করার আগেই কলটা কেটে গেলো।দ্বিতীয়বারের মত ফোনটা আবার বাজছে।হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে “হ্যালো”বলল মায়া।
ওপাশ থেকে কারো ফুঁপিয়ে কাঁদার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
-তুমি কি জানো আনিকার কি হয়েছে?
-চমকে গিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো মায়া,কে ফোন করেছে?স্ক্রিনে আনিকার মায়ের নম্বরটা ভেসে উঠেছে।তড়িঘড়ি করে আবার কানে ফোনটা লাগালো ।
-জ্বী আন্টি,কি বলছিলেন?

-গতকাল রাত থেকে আনিকা রুমের দরজা লক করে বসে আছে।ভোরের দিকে ওর রুম থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ পাচ্ছিলাম।ও চিৎকার করে কাঁদছিলো আর কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলো।ও খুব করে কাওকে রিকুয়েস্ট করছিলো”আমার সাথে এরকম করো না,আমাকে ছেড়ে যেও না।আমাদের সম্পর্ক কতটা গভীর সেটা বোঝার চেষ্টা করো”।
-তুমি কি কিছু জানো ওর কি হয়েছে?

মায়া শোয়া থেকে উঠে বসল ।বললো,

-আন্টি আপনি আগে কান্না বন্ধ করুন।আমি ওকে ফোন দিয়ে দেখি,ওর কি হয়েছে।

-ও কোন ধরনের রেসপন্স করছেনা।সকালবেলা চেঁচামেচির পর থেকে বিগত ১ঘন্টা ধরে ওর কোন সাড়াশব্দ নেই।অনেক ডেকেছি,আমার বড় মেয়েকে দিয়ে ফোন করিয়েছি কোন লাভ হয়নি।ওর আমার বড় মেয়ের ফোন রিসিভ করেনি।এমনকি ভেতর থেকে ১টা আওয়াজ ও পাচ্ছিনা।

-আচ্ছা ঠিক আছে আন্টি।আমি আপনাদের বাসায় আসছি।

-তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো মায়া।সোহানকে কিছু না জানিয়ে আনিকার বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো।

মাঝপথে যাওয়ার পর ফের আনিকার মায়ের ফোন এলো।ফোনটা কানে লাগাতেই ওপাশ থেকে হাউমাউ করে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
আমার মেয়েটা শেষ।

-আঁৎকে উঠল মায়া!কি বলেন আন্টি?

ওপাশ থেকে আর কোন সাড়া পাওয়া গেলো না,শুধুমাত্র কান্নার আওয়াজ ছাড়া।প্রচন্ড চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে ওপাশ থেকে।
১০-১৫ সেকেন্ড পর কলটা কেটে গেলো।
কলটা কেটে যাওয়ার পর আরো ৫বার ট্রাই করল মায়া কিন্তু ওপাশ থেকে ফোনটা কেউ রিসিভ করেনি।

আনিকার বাসায় গিয়ে দেখল দরজায় তালা লাগানো,বাসায় কেউ নেই।পাশের ফ্ল্যাটে নক করলো আনিকাদের খবর নেওয়ার জন্য।দরজা খুলে একজন মাঝবয়সী মহিলা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকালো।

-জ্বী!কাকে চাচ্ছেন?
-পাশের ফ্ল্যাটের আনিকা…..ওরা কোথায়?কিছু জানেন?

-হ্যাঁ!এইতো ৭-৮ মিনিট আগে দেখলাম ধরাধরি করে ওর বাবা-ভাই আর আমাদের বাসার দারোয়ান ওকে হসপিটাল নিয়ে যাচ্ছে।ওর নাক থেকে ব্লিডিং হচ্ছিলো।বোধ হয় সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছে।

-আন্টি?আন্টি কোথায়?
-উনিও ওদের সাথেই গিয়েছে।

-কোন হসপিটাল?জানেন কিছু?

-নাহ,এই ব্যাপারে তো আমি কিছু জানিনা।<br>
ভালো হয় যদি আপনি ওদেরকে ফোন করে জানেন।

-আমি তো ওর নম্বরে অনেকবার ট্রাই করেছি কিন্তু উনি ফোনটা পিক করছেন না।আপনি কি আনিকার ভাই অথবা বাবা কারো নাম্বারটা আমাকে দিতে পারবেন?

-আচ্ছা!তুমি দাঁড়াও আমার ফোনটা নিয়ে আসছি।

খুব দ্রুত গতিতে ঢাকা মেডিকেলের দিকে ছুটছে মায়ার গাড়ি।নি:শব্দে চোখের পানি ফেলছে ও।

১৫মিনিট আগে মায়ার ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পেরেছে আনিকাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হচ্ছে।

(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৩৮

0

নষ্ট গলি পর্ব-৩৮

লেখা-মিম

সমুদ্রের মাতাল হাওয়ায় জানালার পর্দাগুলো উড়ছে। জানালার পাশেই দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মায়া৷ পড়নে কালো রঙের নেটের শাড়ি৷ এখানে আসার আগে মায়ার লাগেজে শাড়িটা রেখে দিয়েছিলো সোহান। শাড়ির উপরে ছিলো ছোট্ট একটা চিরকুট।
” আজ রাতে পরীটাকে কালো শাড়িতে দেখতে চাই।”

সমুদ্র পাড় থেকে ফিরেই কালো শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে হাল্কা সেজে নিলো মায়া। রুমের দরজার বাইরে সোহান দাঁড়িয়ে ছিলো। সে অনেকটা সময় দরজার বাইরে অপেক্ষা করেছে কালো শাড়ীতে একটা পরীকে দেখার জন্য।

মানুষটা ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে ওর দিকে। চোখে মাদকতা চিকচিক করছে মানুষটার। হৃদস্পন্দন বাড়ছে মায়ার।

– দেখো ভাই, ভিডিও ক্লিপ চেয়েছিলে দিয়ে দিয়েছি। সব দিয়েছি। তোমার লোকরা তো আমার বাসা পুরাটা খুঁজে দেখেছেই। আর কোথাও নেই। বিশ্বাস করো। আমাকে যেতে দাও প্লিজ।
– হ দিমু তো। এখন তোরে সোজা উপরে পাঠামু।
– ভাই, আমি আর জীবনেও মায়ার পিছু নিবো না। আমাকে আমার মত যেতে দাও।
– তোরে দিয়া ভরসা নাই৷ ঐ মানিক শালার মুখটা বাঁধ। কোলে নে। ছাদের উপরে যামু।
– এই না,,,,, না,,,,, ভাই টাকা লাগলে বলো আমি দেই। আমার যা আছে সব দিয়ে দিবো আমাকে যেতে দাও।

বিশালদেহী মানিক হাসতে হাসতে ইমনের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে তাকে বড় একটা ড্রামের ভিতর ঢুকিয়ে নিলো। টুনু আগে ভাগে যেয়ে সিঁড়ির লাইট অফ করে দিয়েছে। টুনু আর মানিক ড্রামটা নিয়ে লিফটে উঠে গেলো। বাকিরা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসছে। টুনু আর মানিক ধরাধরি করে ড্রামটা ছাদে নিয়ে এসেছে। ইমনকে ড্রামের ভিতর থেকে টেনে বের করছে ওরা।

– ঐ বিল্লাল তুই এইটারে আয় তুই আমি মিলা ধইরা নিচে ফালাই। ইমনের মুখটা এখনও খোলা হয়নি৷ দুচোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝড়ছে তার। চোখে বেঁচে থাকার আকুল আবেদন দেখা যাচ্ছে । খুব করে কিছু বলতে চাচ্ছে সে৷ কিন্তু সামনে থাকা লোকগুলো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওর দু পায়ে দুজন ধরে উল্টো করে ঝুলিয়ে দিলো ছাদের রেলিংয়ের বাইরে। নিঃশ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। চোখ মেলে রাখতে পারছে না৷ বুকে পিঠে চাপ লেগে গেছে বাজেভাবে। ইমন বুঝে গেছে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গেছে সে। এইতো আর কিছু মূহুর্ত। এরপর সে আর এই দুনিয়ার বাসিন্দা হিসেবে বিবেচিত হবে না। জীবনের সমস্ত পাপগুলো যেনো একের পর এক সারি বেঁধে চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

– ভাই, তারে একটা সুযোগ দেন।

রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে কথাটা বললো টুনু৷ এ মূহূর্ত্বে টুনুকে ফেরেশতা মনে হচ্ছে ইমনের। মনে হচ্ছে একদম কলিজার ভিতর টুনুকে সযত্নে ঢুকিয়ে রাখতে।
– এটা হইলো ভাইরাস। বাঁচায়া রাখলে অসুবিধা আছে।
– তবু ভাই। শুধরানোর একটা সুযোগ অন্তত দ্যান।
– যদি আবার কোনো কাহিনী করে?
– তখন না হয় মাইরা ফালায়েন। তারে আমরা চোখে চোখে রাখমু৷ উল্টাপাল্টা কিছু করলে ঐদিনই শ্যাষ কইরা দিমু।
– দেখ আমি রিস্ক নিতে চাই না।
– ভাই ক্যান জানি মায়া লাগতাসে৷ ছাইড়া দেন ভাই।
– তুই এমন করতাসোস ক্যান একটু কইবি? এত পিড়িত জাগতাছে ক্যান?
– জানি না ভাই।
– কেমনডা লাগে? কি রে বিল্লাল কি করমু?
– সোহান স্যাররে কি কইবেন?
– সেটাই তো কথা।
– ভাই, সোহান স্যাররে বলমু তারে মাইরা ফালাইসি।
– বেকুবের মত কথা কইস না তো৷ এই বেটারে রাস্তাঘাটে দেখলে আমাগোরে শ্যাষ কইরা ফালাইবো।
– সে অন্য কোথাও চইলা গেলেই তো হইবো।

ইমনকে আবার টেনে উপরে তুললো স্বপন আর বিল্লাল। ফ্লোরে দু পা ছড়িয়ে বসে আছে ইমন। মুখ থেকে স্কচটেপ খুলে দেয়া হয়েছে। মাথা ভীষনভাবে ঘুরাচ্ছে তার। নিঃশ্বাস নিচ্ছে জোরে জোরে। খানিক বাদেই বমি করতে লাগলো ইমন।

– শালায় কি শুরু করছে। একটু আগে মুতলো। এখন আবার বমি করতাসে। খবীশ একটা।

ভ্রুঁ কুঁচকে ইমনের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো বাশার।

– ঐ, তোর বমি করা হইছে?

উপরে নিচে মাথা নাড়লো ইমন।
– দ্যাখ সোহান স্যার কইছে তোরে মাইরা ফালাইতে। টুনুর মায়া লাগতাছে দেইখা তোরে ছাড়তাসি। কথা হইলো তুই এই দেশে থাকতে পারবি না৷ তোর দেশ ছাইড়া যাইতে হইবো। সোহান সয়ার যদি দেখে তুই বাইচা আছোস তাইলে তোরে তো মারবোই সাথে আমাগোরেও শেষ করবো।
– আমি চলে যাবো ভাই। আমি থাকবো না এখানে। মায়ার কাছ থেকে বহুদূর চলে যাবো।
– ঠিক কইতাসোস?
– সত্যি ভাই।

হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো ইমন। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না ওকে ছেড়ে দেয়া হবে।

– ঐ মানিক যা গাড়ি নিয়া যা। বাসায় দিয়া আয় এইটারে।
ঐ উঠ। যা, ওর লগে যা। আর যা কইসি তা যেনো মনে থাকে।

ইমন উঠে টুনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবে ভেবে পাচ্ছে না। তাই চুপ করে ওকে জাপটে ধরে রেখেছে।

– হইছে, হইছে ছাড়েন আমারে। ভালা হইয়া যাইয়েন। মাইয়্যা মানুষের পিছনে ঘুরা ভালা না। মন্দ কাম। এইসব কাম আর কইরেন না।

ইমন কিছু বললো না। টুনুর দিকে একবার কৃতজ্ঞতা ভরা নজরে তাকিয়ে মানিকের পিছু পিছু চলে গেলো। মানিকের সাথে বাশারকেও পাঠিয়েছে স্বপন।

ইমন যাওয়া মাত্রই সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। টুনু বললো,

– সোহান স্যার এটারে বাঁচায়া রাখতে কইলো ক্যান। মাইরা ফেললেই ভালো হইতো।
– নাহ্। সোহান ভাই এসব ক্যাচালে জড়াইবো না। খুন করলে ক্যাচাল সামাল দিতে কষ্ট হয়া যাইতো।
– সোহান স্যাররে ফোন কইরা বলেন খেল খতম।
– হ দেই।

ভোর হয়ে আসছে৷ হেলান দিয়ে বসে আছে সোহান। ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে মায়া। কল এসেছে স্বপনের। এতক্ষণ যাবৎ এই কলটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটলো।

– কাজ হয়েছে?
– হ্যাঁ ভাই। খুব ভয় পেয়েছে। ক্লিপগুলো ওর ফোনের মেমরি আর দুইটা পেনড্রাইভে ছিলো। সব পুঁড়ে ফেলেছি।
– পুরো বাসা ভালোভাবে চেক করেছো তো?
– হ্যাঁ চেক করেছে। ওর কাছে আর কোনো কপি নেই।
– দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার শর্ত দিয়েছো?
– হ্যাঁ দিয়েছি। রাজি হয়েছে। দেশ ছেড়ে দিবে এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। আর যদি না যায় তখন অন্য কোনো স্টেপ নিবো।
– আচ্ছা,,, স্বপন থ্যাংকস। থ্যাংকস এ্য লট।
– ভাই যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে ডাকবেন। যতটা সম্ভব হেল্প করার চেষ্টা করবো।
– ঠিকাছে। রাখি। ঘুমাবো এখন।
– আচ্ছা।

সোহানের এ মূহূর্ত্বে মনে হচ্ছে মাথা থেকে এক মন ওজনের পাথর সরেছে৷ প্রচন্ড রিল্যাক্স লাগছে। এবার একটু শান্তিমতো ঘুম দেয়া যাবে। মায়ার মাথাটা খুব সাবধানে বালিশে রেখে ওর পাশেই শুয়ে পড়লো সোহান। মায়াকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরলো সোহান। সব ধরনের অতীত থেকে আগলে রাখতে চায় মেয়েটাকে। এতটুকু বয়সে অনেক সহ্য করেছে মেয়েটা। আর না। এবার ওকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখাতে হবে।

(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৩৭

0

নষ্ট গলি পর্ব-৩৭

লেখা-মিম

দীর্ঘ পয়ত্রিশ মিনিট যাবৎ গলা ফাটিয়ে চেচাচ্ছে ইমন। বারবার একটা কথাই বলছে,

– যা চাও সব দিবো। আমাকে এখান থেকে বের করো।

মাঝে দুইবার এসে ইমনের হাল দেখে গেছে স্বপন। এই ডোজে অবস্থা নাজেহাল হয়েছে নাকি আরও ডোজ বাড়াতে হবে সেটাই দেখে গেলো। হাল দেখে যা বুঝা গেলো যেকোনো মূহুর্তে জ্ঞান হারাবে৷ একটা মানুষ ইঁদুরকে এতটা ভয় পায় ইমনকে না দেখলে বোধহয় স্বপন কখনো টেরই পেতো না৷ ইমনের হাল দেখে মনে হচ্ছে ভিডিও ক্লিপের কথা জিজ্ঞেস করলে এখনই বলে দিবে। তবুও একটাবার সোহানের অনুমতি নেয়াটা জরুরী মনে করছে স্বপন। এখনই ভিডিওর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে কি না জানার জন্য ফোন করলো সোহানকে।

সমুদ্রের পাড়ে মায়ার হাত ধরে খালি পায়ে হাঁটছে সোহান। বাচ্চাদের মতো কিছুক্ষন পরপরই সমুদ্রের দিকে দৌঁড়ে যাচ্ছে মায়া। পানিতে নেমে লাফালাফি করে আবার দৌঁড়ে এসে সোহানের হাত ধরে হাঁটছে। শরীরের অর্ধেক ভিজে গেছে মায়ার। অন্য কোনো সময় হলে এভাবে ভিজা কাপড়ে সোহান কখনোই ঘুরতে দিতো না ওকে। কিন্তু আজ বাঁধ সাধছে না। ওকে ওর মতো করে উপভোগ করতে দিচ্ছে।

পকেটে থাকা ফোনটা বাজছে সোহানের। ফোন বের করে দেখলো স্বপন কল করেছে।

– হ্যাঁ স্বপন, খবর কি?
– ভাই, ইঁদুরকে একটা মানুষ এত ভয় পায়?
– সে পায়।
– বলছে তো যা চাই দিয়ে দিবে। ভিডিওর কথা জিজ্ঞেস করবো?
– এখনই না। আরো ভয় দেখাও৷ ভয়ের জন্য যাতে মাথা থেকে অন্য সব কিছু বেরিয়ে যায়। তাহলেই ভিডিও কোথায় কোথায় আছে স্বীকার করবে। আর নয়তো এক দুই কপি নিজের কাছে রেখে বাকিগুলোর কথা বলবে।
– আচ্ছা ভাই।
– স্টোর রুমের উল্টোদিকে যে রুমটা আছে সেটাতে ঢুকো। বড় একটা স্যুটকেস দেখতে পাবে। ওটার ভিতর অনেক কিছু আছে৷ চাইলে সেখান থেকে কিছু কাজে লাগাতে পারো।
– জ্বি ভাই।

পানিতে নেমে লাফাচ্ছে মায়া। সোহানের কথা কিছুই শুনেনি সে৷ ইমনের ব্যাপারে আরেকটু জানতে পারলে ভালো ছিলো। মায়াকে এই মূহূর্ত্বে জিজ্ঞেস করাটা কি উচিত হবে? ইমনের কথা জিজ্ঞেস করলেই তো মনটা খারাপ করে ফেলবে। না জিজ্ঞেস করলেও হচ্ছে না। দুইদিনের বেশি এখানে ইমনকে আটকে রাখা যাবে না। যা করার দুদিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। মায়া এসে সোহানের হাত জড়িয়ে ধরে হাঁটতে লাগলো। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মায়াকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো সোহান।

– মায়া…..
– হুউউম…
– মন খুব ভালো?
– অন্নেএএএক।
– একটা কথা জানার ছিলো।
– জিজ্ঞেস করে ফেলুন।
– ইমন আর কি ভয় পায়?

সোহানের প্রশ্নে থমকে দাঁড়ালো মায়া। মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো মূহুর্তে। সোহানের দিকে বেশ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে।

– এই মানুষটাকে স্মরণ করা কি খুব জরুরী?
– হ্যাঁ জরুরী। তাই তো জিজ্ঞেস করছি।
– আপনি কি আমার সাথে ভালো সময় কাটাতে এসেছেন নাকি আমার অতীত নিয়ে টানাটানি করতে এসেছেন?
– এটা কেমন প্রশ্ন মায়া? কখনো দেখেছো প্রয়োজন ছাড়া তোমার অতীত নিয়ে ঘাটাতে?
– ঘাটাননি। তবে এই মূহুর্তে কেনো? অন্য কোনো সময়ও তো জানতে চাইতে পারতেন?

সোহানের হাতটা ছেড়ে নিজের মতো হেঁটে চলছে মায়া। পিছন পিছন আসছে সোহান। মায়া রাগ করেছে। মায়াকে ইমনের ব্যাপারে কিছু জানাতে চাচ্ছে না সোহান। পুরো ব্যাপারটা মায়ার কাছ থেকে চেপে যাবে। কয়েক মিনিট এভাবেই হেঁটে চলছিলো ওরা দুজন। কিছুক্ষণ পর মায়া এসে মুখ গোমড়া করে সোহানের হাত জড়িয়ে ধরলো।

– ঐ লোকটা উপর থেকে নিচে তাকাতে ভয় পায়। লোকটার নাকি মাথা ঘুরে। বমি হয়।
– তুমি জানো কিভাবে?
– একবার এক হোটেলে নিয়ে গিয়েছিলো। নয়তলায় একটা রুম বুক করেছিলো। রুমে যেয়ে দেখি একপাশের জানালার পর্দা খোলা। আমাকে বললো জলদি পর্দাগুলো আটকে দিতে। আমি যখন পর্দা আটকাচ্ছিলাম তখন আমাকে বলেছিলো উনি নাকি খুব বেশি উপর থেকে নিচে তাকাতে পারে না। বুক ধরফর করে। দম বন্ধ হয়ে আসে। মাথা ঘুরায়। বমি হয়।
– রাগ হয়েছো খুব?
– হ্যাঁ।
– আসো আদর করে দেই।
– লাগবে না।
– সত্যি লাগবে না?

খিলখিল করে হেসে উঠলো মায়া। সোহানের হাত ছেড়ে ফের দৌঁড়ে চলে গেলো সমুদ্রের পানিতে পা ভেজাতে।

রতনের রুমে ফ্লোরে পড়ে থাকা স্যুটকেসটা খুললো স্বপন। অনেক কিছুই আছে এটাতে। স্ক্রু ড্রাইভার, ড্রিল মেশিন আরো অনেক কিছু। কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে ড্রিল মেশিনটা হাতে নিলো। এটা নিয়ে এখন ইমনের রুমে যাবে সে। এখানে সঙ্গে করে আরো পাঁচজনকে এনেছে স্বপন। বাসার ড্রইংরুমে তারা টিভি দেখছে। সেখান থেকে বাশার কে ডেকে নিয়ে এসে স্টোর রুমে গেলো। দরজা খুলে ইমনের মুখোমুখি দাঁড়ালো স্বপন আর বাশার। ইঁদুরগুলো তখনও ছুটাছুটি করছে। বাশারের হাতে একটা মোটা লাঠি। এটা দিয়ে ইঁদুরগুলোকে রুম থেকে সরাচ্ছে সে।

প্রচন্ড রকমে হাঁপাচ্ছে ইমন। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেনো শরীরের সমস্ত শক্তি শেষ।

– ভাই, একগ্লাস পানি হবে?
– বাশার, এই শালারে ফুটা করমু কই? বুকে নাকি মাথায়?
– ফুটা করবেন মানে? এই,,,,, এই আপনারা ড্রিল মেশিন কেনো এনেছেন?
-তোরে ফুঁটা কইরা ঝাঁঝরা বানামু।
– ভাই মুখটা ভালো কইরা ডিজাইন কইরেন। যাতে লাশ কেও চিনতে না পারে।

বাচ্চাদের মতো কাঁদতে শুরু করেছে ইমন।

– ভাই, আমি কি করেছি ভাই?
– তুই ভিডিও করছোস।
– আমি কিচ্ছু করিনি ভাই। আমাকে যেতে দিন।
– দিমু তো। তোরে আগে ছিদ্র করি। এরপর।
– বিশ্বাস করেন ভাই। আমি কিচ্ছু করিনি। আমাকে এভাবে মারবেন না প্লিজ।
– মায়ার ভিডিও করোস নাই?

কান্না থামিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো ইমন। মায়া,,,,,, হ্যাঁ মায়ার ভিডিও ক্লিপ আছে ওর কাছে। তার মানে এরা মায়ার লোক। না না, মায়া না। বোধহয় মায়ার হাজবেন্ডের লোক। তার বউয়ের পিছু নেয়ার অপরাধে লোক পাঠিয়েছে ওকে খুন করার জন্য।

– ভাই, ভিডিও ক্লিপ আমি দিয়ে দিবো। আমাকে ছেড়ে দিন।
– তোরে দিয়া ভরসা নাই। নিজের কাছে এক দুই কপি রাইখা বাকি কপি আমারে দিবি। এরপর আবার ঐ ভিডিও নিয়া তামশা করবি৷ দুইদিন পরপর বায়োস্কোপ দেখার টাইম নাই। এরচেয়ে ভালো তোরেই শেষ কইরা দেই। ঐ বাশার মেশিন চালু কর। আগে কপালের মাঝখান বরাবর দিবি।

প্রচন্ড শব্দ করতে থাকা ড্রিল মেশিনটা ইমনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইমনের মনে হচ্ছে যেনো এই মেশিন কপালে ঠেকার আগেই ওর দম আটকে মরে যাবে। চিৎকার করে বলছে আমি সব ক্লিপ দিয়ে দিবো৷ আমাকে মেরো না। ড্রিল মেশিনের আওয়াজে সেই চিৎকারের আওয়াজ চাপা পড়ে যাচ্ছে।

– শালার পোলা, করছোস কি?

ড্রিল মেশিন বন্ধ করে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ইমনকে প্রশ্ন করলো বাশার।

– কি রে? সমস্যা কি?
– ভাই, শালায় মুতছে।
ফ্লোরে তাকালো স্বপন। গলা ফাটিয়ে হো হো করে হাসছে সে৷

– কি রে ব্যাটা? কি করলি তুই? মরনরে এতো ভয় পাস। আকাম করার সময় হুঁশ থাকে না?
– ধুর,,,,, এইডা কিছু হইলো? এগুলা পরিষ্কার করবো কে এখন?
– ঐ টুনু,,,,,,, টুনুউউ,,,,

স্বপনের আওয়াজ পেয়ে ড্রইংরুম থেকে ছুটে এলো টুনু।

– কি ভাই?
– রান্নাঘরে গিয়া দেখতো ত্যানা ট্যানা কিছু আছে কিনা?
– খাঁড়ান। দেখি।

চেয়ারে মাথা ফেলে চোখ বন্ধ করে রেখেছে ইমন। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। স্বপন আর বাশারের হাসি কোনোভাবেই থামছে না৷ পাগলের মতো হেসেই যাচ্ছে ওরা। রান্নাঘর থেকে ফ্লোর মুছার কাপড় নিয়ে এলো টুনু। কাপড় হাতে নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

– কি করুম এটা দিয়া?
– ফ্লোরটা মোছ।
– পানি ফালাইলো কে?
– পানি না ব্যাটা। শরবত।
– লেবুর শরবত?
– নাহ, লবনের।।

ফ্লোর মোছার জন্য নিচে বসতেই মৃদু বাজে গন্ধ নাকে এসে ঠেকলো টুনুর। ফ্লোরে পড়ে থাকা পানির দিকে নাক খানিকটা এগিয়ে নিলো ভালোভাবে বুঝার জন্য গন্ধটা কিসের। সাথে সাথেই মাথা ঝাড়া দিয়ে সেখান থেকে সরে এলো টুনু।

– ঐ মিয়া, এটাতো মুত। আমারে শরবত কইলেন ক্যা?

(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৩৬

0

নষ্ট গলি পর্ব-৩৬

লেখা-মিম

নিজের বেডরুমে মুখোমুখি বসে আছে আলিশা রুপম। প্রচন্ড মনোযোগ আর উৎকন্ঠা নিয়ে রুপম তাকিয়ে আছে আলিশার দিকে। কোত্থেকে কথা শুরু করবে খুঁজে পাচ্ছে না আলিশা। অহেতুক নিজের গাল চোখ হাত চুলকাচ্ছে কিছুক্ষণ পরপর।

-কি না বলতে চেয়েছিলে?
-হুমমম।
– তোমার তো শরীর চুলকাচ্ছে না। কেনো শুধুশুধু শরীর চুলকাচ্ছো?
– কিভাবে বুঝলে?
– তোমার সাথে সংসার করছি বহুদিন৷ এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝবো না?
– আমাকে এত ভালোবাসো কেনো?
– জানি না তো।
– আমি খুব পাগলামি করি তাই না?

আলিশার কথায় শব্দ করে হেসে উঠলো রুপম।

– হ্যাঁ পাগলামি তো করো। কিন্তু তোমাকে আজকে সুস্থ মনে হচ্ছে।
– মজা করছো?
– নাহ আমি সিরিয়াস। সত্যিই একটু অন্যরকম লাগছে তোমাকে। ভালো লাগছে খুব।

নিজের হাত বাড়িয়ে রুপমের হাতটা ধরলো আলিশা। চোখে পানি ছলছল করছে ওর।

– তোমার কি মন খারাপ আলিশা?
– রুপম,, আজকে সোহানকে দেখেছি মায়ার সাথে। অনেকটা সময় নিয়ে ওদের দেখেছি। খুব সুখে আছে সোহান। ওর জীবনটা মায়া গুছিয়ে নিয়েছে। মায়াকে ও প্রচন্ড ভালোবাসে। ওর চোখ দেখলেই বুঝা যায়। সোহানের হাসির আওয়াজ কানে লাগছিলো খুব। এভাবে কখনো ওকে হাসতে দেখিনি জানো। মায়া নিজের ভালোবাসা আদায় করে নিতে জানে। সত্যিই ও ভালোবাসার মানুষটাকে আগলে রাখতে জানে৷
– এজন্য মন খারাপ?
– না। মন খারাপ অন্য কারনে।
– কি কারন?
– নিজেকে খুব হীন মনে হচ্ছে।
– কেনো?
– আমি খুব খারাপ। খুউউব বেশি। ভালো সন্তান হতে পারিনি। ভালো ওয়াইফ হতে পারিনি৷ ভালো মা হতে পারিনি। কোনো সম্পর্কের মূল্যায়ন আমি করতে জানি না রুপম। সম্পর্কে বিষ ঢেলে ঢেলে একদম শেষ করে ফেলেছি। বাবা মা ভাইয়া কেও আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না। আফিফ আমাকে দেখলে যতটা সম্ভব লুকানোর চেষ্টা করে। আমার কাছে ঘেষতে চায় না। সোহান আমাকে ফেলে চলে গেছে। তোমার ফ্যামিলির মানুষও আমাকে দেখতে পারে না। বাকি আছো শুধুমাত্র তুমি। সবাই আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছে। আমি তোমাকেও হারাতে চাই না৷

ঠোঁট ভেঙে কাঁদতে লাগলো আলিশা। খানিকটা সামনে এগিয়ে এসে আলিশাকে জড়িয়ে ধরলো রুপম।

– আমি কোথায় যাবো?
– দূরে।
– যাওয়ার হলে তো অনেক আগেই যেতে পারতাম। গিয়েছি আজ পর্যন্ত?
– যদি চলে যাও?
– মরন ছাড়া কোথাও যাবো না। পুরো পঁচিশ লাখ টাকা খরচ করে পনেরো লাখ টাকা দেনমোহর পরিশোধ করে বিয়ে করেছি। আপনাকে আমি ছাড়ছি না৷ বহু পরিশ্রম করে টাকা কামাই করি। চল্লিশ লাখ টাকা উসুল না করেই কি চলে যাবো নাকি?

রুপমের কথায় ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো আলিশার। রুপমের বুক থেকে মাথা তুলে বললো,

– তুমি না বলেছিলে সাইকাআট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাবে আমাকে,?
– তুমি ডক্টরের কাছে যাবে?
– হুম যাবো। যাওয়াটা দরকার।
– কালকেই নিয়ে যাবো।
– রুপম আমি ভালো থাকতে চাই।
– অবশ্যই থাকবে। তুমি জাস্ট নিজেকে একটু চেঞ্জ করো। দেখবে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
– আর আমাদের সম্পর্কটা?
– মানে?
– আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারি না কেনো?
– তুমি কখনো আমার ভালোবাসাটা রিয়েলাইজ করতে চাওনি। তোমার মাথায় সোহানকে পাওয়ার ভূত চেপে ছিলো এতদিন। আমার ভালোবাসা অনুভব করার মতো সময়ই তো ছিলো না।
– সরি,,,,,, সম্পর্কটা কি সুন্দর করা যায় না?
-অবশ্যই যায়। আমি তো হাত বাড়িয়েই রেখেছি। এখন শুধু তোমার হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়া বাকি।

রুপমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আলিশা। মুখ ফুটে কিছু বলেনি ও। আলিশার স্পর্শের গভীরতায় রুপম যতটা বুঝার বুঝে নিয়েছে।

দুইদিন পর………

মায়াকে নিয়ে সকালের ফ্লাইটে কক্সবাজার গিয়েছে সোহান। বাসায় কেও নেই৷ কাজের লোক দুটোকে ছুটি দিয়েছে দুইদিনের। ওরা যে যার মতো গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। সালমান ওর কোন এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছে। সোহান ঢাকা ফিরে আসার আগ পর্যন্ত বন্ধুর ওখানেই থাকবে।

রাত পৌনে একটা। সোহানের ফ্ল্যাটের স্টোর রুমে একটা চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে ইমনকে। জোনাকি দশটার দিকে খবর দিয়েছিলো ঐ পাড়ায় যাওয়ার জন্য। মায়া অপেক্ষা করছে ওর জন্য। কারা যেনো ঐ গলির সামনে থেকে ওকে তুলে এনেছে। অন্ধকারে কারো চেহারা দেখতে পায়নি। সরু গলিটার কাছে যেতেই ৮-৯ জন মিলে একটা জটলা পাকালো। কেও একজন ওর নাকে কাপড় চেপে ধরলো। এরপর আর কিছু মনে নেই। চোখ মেলে নিজেকে আবিষ্কার করলো এই রুমে। ডিম লাইট জ্বলছে বাম পাশের দেয়ালটাতে। দেখে মনে হচ্ছে স্টোর রুম। কিন্তু পুরো রুম ফাঁকা। কয়েকবার চিৎকার করেছে কারো সাহায্য পাবার আশায়৷ কেউই ওর ডাকে সাড়া দেয়নি।

থাইগ্লাসের দরজাটা কেও খুলছে। একজন পুরুষ মানুষ ছোট একটা বস্তা মতন দেখতে ব্যাগ এনে রুমের ভিতর রেখেছে। মুখটা অর্ধেক ঢেকে রেখেছে। তাই চেহারা বুঝা যাচ্ছে না৷ অদ্ভুত শব্দ করে হাসছে লোকটা।

– কি রে শালা, তুই নাকি ইন্দুররে জমের মতো ভয় পাস। নে, আজকে রাতে তোরে ইন্দুর দিয়া নাচামু।

লোকটা কথাটা বলেই ব্যাগের মুখ খুলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রুম থেকে বেরিয়ে থাই গ্লাসটা আবার আটকে দিলো। ইমন লোকটার কথা কিছু বুঝে উঠার আগেই ডিম লাইটের আবছা আলোতে দেখতে পেলো ব্যাগের ভিতর থেকে একের পর এক ইঁদুর বের হতে শুরু করেছে। শরীর সর্বশক্তি দিয়ে সেখান থেকে ছুটে যাবার চেষ্টা করছে সে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে,

– সরাও এগুলো। আমার সহ্য হয় না। আমাকে যেতে দাও।

পুরো রুমে ইঁদুর ছুটোছুটি করছে। তিন চারটা ইঁদুর ইমনের শরীরে বেয়ে উঠা নামা করছে। ভয়ে পুরো শরীর ঘেমে ভিজে গেছে ইমনের। ফর্সা মুখে রক্ত জমে লাল হয়ে গেছে। গলায় তীব্র ব্যাথা হচ্ছে। তবু থেমে নেই সে। চিৎকার করেই যাচ্ছে

– আমাকে এখান থেকে বের করো। যা চাও তাই দিবো।

(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৩৫

0

নষ্ট গলি পর্ব-৩৫

লেখা-মিম

বিকেলের দিকে মায়াকে নিয়ে শপিং করতে এসেছে সোহান। কোনো কিছু না দিয়েই বিয়ে করেছে ওকে। ব্যাপারটা মনের মধ্যে মধ্যে বারবার খচখচ করছিলো সোহানের। তাই ওকে নিয়ে এসেছে কিছু গোল্ডের জুয়েলারি আর শাড়ি কিনে দেয়ার জন্য। শাড়ি কেনার পালা শেষ করে স্বর্নের দোকানে গলার নেকলেস দেখছে ওরা। গলায় নেকলেস ট্রায়াল দিয়ে দেখছে মায়া৷ সোহান খুব মনোযোগ মায়ার গলার দিকে তাকিয়ে দেখছে। অপর পাশের দোকানে দাঁড়িয়ে আছে আলিশা। সোহানের দিকে তাকিয়ে আছে ও। কত মনযোগ দিয়ে মায়াকে দেখছে মানুষটা৷ মায়ার গলায় স্পর্শ করছে কিছুক্ষণ পরপর৷ একটার পর একটা নেকলেস পাল্টে যাচ্ছে মায়া। কোনোটাই সোহানের পছন্দ হচ্ছে না৷ নিজের বউয়ের কোনো জিনিস কেনার ব্যাপার সোহান কতটা যত্নশীল সেটা দেখতেই পাচ্ছে আলিশা। এতটা ভালোবাসে মায়াকে! কান্নাটা বহু কষ্টে চেপে রেখেছে আলিশা। কন্ঠনালীর ঠিক মাঝখানটাতে তীব্র চাপ অনুভব করছে সে।

মায়ার জন্য একসেট গহনা কিনে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো ওরা। কসমেটিকস শপ থেকে কিছু কসমেটিকস আর জুতার দোকান থেকে জুতা কিনে ফুড কোর্টে বসেছে খাওয়ার জন্য। এতক্ষণ আলিশা ওদের পিছন পিছন ঘুরেছে। দূর থেকে দুজনকে দেখেছে। মায়াকে নিয়ে সোহান বেশ সুখে আছে৷ মায়ার দিকে সোহানের তাকিয়ে থাকা। মায়ার কাঁধ জড়িয়ে হাঁটা। সোহানের হাসি। প্রতিটা ব্যাপার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করেছে আলিশা। এই ব্যাপারগুলো আলিশাকে প্রতি সেকেন্ডে জানান দিচ্ছিলো সোহান কতটা সুখী। সোহানের সাথে প্রেম চলাকালীন সময়ে কখনো সোহানকে এভাবে হেসে হেসে কথা বলতে দেখেনি। ওর দিকে এভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়েও থাকতে দেখেনি। তাকিয়ে থাকতো না ঠিক তা না। ওর দিকেও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো। তবে মায়ার ব্যাপারটা আলাদা। সোহানের চোখের ভাষা পাল্টে যায় মায়ার দিকে তাকালে। মনে হয় যেনো সমস্ত ভালোবাসা ঐ দু’ চোখের মাঝেই ভিড় জমাচ্ছে। আর মায়া……… চেহারা থেকে বাচ্চা ভাবটা এখনো কেটে উঠেনি৷ আদুরে একটা ভাব আছে চেহারার মাঝে৷ হাসেও বাচ্চাদের মতই। খিলখিল শব্দ করে। প্রচন্ড বাধ্য স্বভাবের বউ। সোহান যা পছন্দ করে কিনে দিয়েছে তাই চুপচাপ নিয়েছে। নিজের পছন্দ প্রকাশ করতে দেখেনি ওকে। সোহান যা পছন্দ করে দেখাচ্ছে তাতেই মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছে। বোধহয় সোহান এমন একটা বউয়ের শখ করেছিলো।

আজ ওদেরকে দেখার আগ পর্যন্ত সোহানের প্রতি ভীষন ক্ষোভ কাজ করছিলো মনের ভিতর। কিভাবে পারলো সোহান ওকে ভুলে যেতে? ভালোবাসায় কি কমতি ছিলো? কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কমতি সত্যিই ছিলো। সোহান যেভাবে আশা করেছিলো সেভাবে হয়তো ও সোহানকে ভালোবাসতে পারেনি। আজ সকালে রুপমও তো বলে গেলো। মায়া স্বামী সংসার আগলে রাখতে জানে। এই গুনটাতো ওর মাঝে নেই। শুধু ভালোবাসাতে কি হয়? ভালোবেসে আগলে রাখতে পারলে তবেই না ভালোবাসার মানুষ আমার বাহুবন্দী হয়ে থাকবে। আমার অস্তিত্বের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকবে। নিজেকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে আলিশার। নিজের কমতির কথাগুলো মাথার ভিতর নাড়াচাড়া দিয়ে উঠছে৷ সোহানকে ভালোবেসেছে ঠিকই কিন্তু আগলে রাখতে পারেনি। তাইতো ভালোবাসা ছুটে গিয়ে অন্যের বাহুবন্দী হয়েছে৷ সেই ভালোবাসা নিজের বাহুবন্দী করার মিথ্যা প্রয়াস চালাতে যেয়ে রুপমকে এতগুলো বছর ধরে কষ্ট দিয়েই গিয়েছে। আর সে…….. লাগাতার ভালোবাসি ভালোবাসি বলেই গিয়েছে। পরম যত্নে আগলে রেখেছে। কখনো মানুষটার ভালোবাসায় ডুব দিয়ে গভীরতা মাপতে ইচ্ছে হয়নি আলিশার। ডুব দেয়া থাক দূরের কথা কোনোদিন পা ভিজিয়ে উষ্ণতাটুকুও মাপতে ইচ্ছে হয়নি ওর। কেনো ইচ্ছে হয়নি সে কারনটা জানে না আলিশা।

সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে আলিশা। আজ মনে হচ্ছে একটাবার রুপমের ভালোবাসায় ডুব দেয়ার চেষ্টা অন্তত করা উচিত। যে চলে গেছে তাকে আর ফিরিয়ে আনা ঠিক হবে না। সে তার আপন জগত নিয়ে দিব্যি আছে৷ আর যে ওর জীবনে বর্তমান তাকেই আগলে ধরাটা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে আগলে তো রেখেছে রুপমই। এখন শুধু আলিশার এক ধাপ এগিয়ে রুপমের বাহুবন্দী হওয়া বাকি।

গাড়ি নিয়ে সোজা চলে এসেছে রুপমের অফিসে। আজ পর্যন্ত কখনো রুপমের অফিসে আসা হয়নি আলিশার। এইবারই প্রথম। নিচতলায় রিসিপশনে রুপমের খোঁজ করতেই রিসিপশনিস্ট বললো,

– স্যার তো মিটিংরুমে।
– ওহ। কখন মিটিং শেষ হবে জানেন?
– ঠিক বলতে পারছিনা।
– আচ্ছা ওর পারসোনাল কেবিনটা কোন দিকে?
– ম্যাম আপনি এখানে ওয়েট করুন। মিটিং শেষ হলে স্যারের পারমিশন নিয়ে আপনাকে উনার কেবিনে পাঠানো হবে।
– আচ্ছা।

সোফায় বসে আছে আলিশা। মোবাইলে নিউজ ফিড স্ক্রল করছে। মনোযোগ সেদিকে নেই। ঘোরের মাঝে পড়ে আছে সে। রুপমকে কি বলবে? কিভাবে বলবে? নিজের কমতিগুলো কিভাবে ঢাকবে?

বিশ-বাইশ মিনিট পর মিটিং শেষে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো রুপম। উপর থেকে দেখতে পেলো আলিশা নিচতলায় বসে আছে৷ আলিশাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো রুপম। এই মেয়ে এখানে বসে আছে কেনো? সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসেছে রুপম। আলিশার সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো

– তুমি এখানে কি করো?

রুপমের আওয়াজ পেয়ে মুখ তুলে তাকালো আলিশা।

– মিটিং শেষ তোমার?
– হ্যাঁ৷ কিন্তু তুমি এখানে?
– তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম।
– আমার জন্য?
– হুম।
– তো এখানে কেনো বসে আছো? আমার রুমে চলে যেতে।
– তোমার রিসিপশনিস্ট বললো তুমি মিটিংয়ে। তাই এখানে বসে ছিলাম।
– তোমার হাজবেন্ডের অফিস এটা। যখন খুশি তখন আমার রুমে চলে আসবে। নিতু, তুমি ওকে আমার রুমে পাঠাওনি কেনো?
– স্যার উনি তো আমাকে বলেননি যে উনি আপনার ওয়াইফ।
– না, রুপম। ওর দোষ নেই। আমি ওকে আমার পরিচয় দেইনি।
– আচ্ছা তাহলে উপরে আসো।
– তোমার আর কোনো কাজ আছে।
– না তেমন কোনো কাজ নেই।
– তাহলে বাসায় চলো।
– কোনো সমস্যা আলিশা?
– কিছু বলার ছিলো।

আলিশার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সিরিয়াস কিছু ঘটেছে৷ আর নয়তো এই মেয়ে অফিসে আসার কথা না। রুপম আর কিছু জিজ্ঞেস না করে আলিশাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো অফিস থেকে।

(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৩৪

0

নষ্ট গলি পর্ব-৩৪

লেখা-মিম

আজ অফিস যাবে না সোহান৷ মায়া অসুস্থ। অসুস্থ বউকে ঘরে ফেলে অফিসে যাওয়ার মানুষ সে না। সারাদিন বউয়ের আগে পিছে ঘুরেই সময় কাটাবে। ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছে মায়া আর সালমান। ফোনে একটু জরুরী কথা বলার আছে, এটা বলে সেখান থেকে সরে বেডরুমে এসে দরজা আটকালো সোহান। জাহিদের নাম্বারে ডায়াল করেছে সে।

– জ্বি স্যার।
– স্বপনের কথা মনে আছে?
– ঐ যে সোনারগাঁ থাকে সেই ছেলেটা?
– হ্যাঁ।
– জ্বি স্যার আছে তো।
– নাম্বার আছে ওর?
– আছে।
– এস এম এস করো তো একটু।
– এক্ষুনি করছি স্যার।

জাহিদের কলটা কাটতেই সোহানের মায়ের কল চলে এলো। সামান্য ভ্রুঁ কুঁচকালো সোহান। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া তো উনি ফোন করেন না। নিশ্চয়ই কোনো প্রয়োজন পড়েছে তাই ফোন করেছে।

– হ্যালো…..
– ভালো আছো সোহান?
– হ্যাঁ আছি। তুমি ভালো আছো?
– এইতো। তারপর খবর কি তোমার? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
– হঠাৎ আমার দিনকালের খবর নিচ্ছো?
– নিতে পারি না বুঝি?
– কখনও তো নাওনি। এজন্য একটু অবাক হলাম আর কি।
– বউ কেমন আছে?
– ওহ! বুঝেছি। আসল কথা হচ্ছে বৌয়ের কথা বিস্তারিত জানার জন্য কল করেছো। দিনকাল কেমন যাচ্ছে সেটা জানার জন্য না৷ আমিও তো বলি, কি ব্যাপার হঠাৎ আমার মায়ের কি হলো? ফোন দিয়ে সোহানের খোঁজ নিচ্ছে!
– সবসময় রুডলি কথা বলাটা কি জরুরী?
– আমি এমনই। ছোট থেকেই এমন। সমস্যা হচ্ছে ছোট থেকে তুমি তো আমাকে বড় করোনি। আমার সাথে তেমন একটা মিশে দেখোনি। তাই আমার কথার ধরন তোমার কাছে বাজে মনে হয়।
– বিয়েটা করেছো আমাকে জানালে না কেনো?
– জানালে কি হতো?
– কি হতো মানে? আমি কি কেও না?
– কখনো কেও ছিলে নাকি?
– তুমি বুঝতে পারছো সোহান? তুমি এভাবে বিয়ে করে সংসারদারী শুরু করে ফেলেছো এখানকার লোকজন জানাজানি হলে কি পরিমান সমালোচনা হবে?
– হ্যাঁ জানি৷ একটা ঘটনা নিয়ে সোসাইটির মানুষরা কতটুকু সমালোচনা করতে পারে তা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে? তোমার আর বাবার পরকীয়া নিয়ে তো কম সমালোচনা শুনিনি। বলতে পারো সমালোচনা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। আর আমি মায়াকে বিয়ে করেছি। পরকীয়া করছি না। আমাদেরকে নিয়ে যেটা হবে সেটা হলো আলোচনা। সমালোচনা না।
– তোমার আমার কি সম্পর্ক ভুলে গেছো?
– নাহ ভুলিনি তো।
– তাহলে এসব ব্যাপার নিয়ে কথা কেনো বলছো।
– খুব গায়ে লাগছে?
– বেয়াদবির শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছো।
– সেটা তো কবেই পৌঁছেছি।
– হ্যাঁ জানি। খুব ভালো করেই জানি তুমি যে কতটা বেয়াদব।
– জেনে শুনে কেনো এসেছো আমার সাথে কথা বলতে?
– নিজের সন্তানের কাছ থেকে জুতার বাড়ি খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। তাই তোমাকে ফোন করে জুতার বাড়ি খেলাম।
– সন্তান সন্তান করো না তো। তোমার মুখে সন্তান শব্দটা মানায় না। তুমি দুই ছেলের মা সেই কথা একটা সময় বলতে লজ্জা পেতে। এমনও সময় গেছে দূরে কোথাও বেড়াতে গেলে আমাকে আর সালমানকে তুমি বোনের ছেলে বলে পরিচয় করিয়েছো।
– ওগুলো যাস্ট ফান ছিলো।
– ফান ছিলো না কি ছিলো সেগুলো বুঝার মত যথেষ্ট বয়স তখন আমার হয়েছিলো।
– তুমি তোমার ওয়াইফের সামনে এসব বলছো?
– হ্যাঁ বলছি। বউকে আগে ভাগেই সব জানিয়ে রেখেছি। প্রেম করা তো এখনও ছাড়োনি। চট্টগ্রামে কোনো পার্টিতে গেলেই তো তোমার আর বাবার পরকীয়া নিয়ে কানাঘুষো চলে। সেসব আমার বউয়ের কান পর্যন্ত আসতে কতদিন? তাই আগে ভাগেই বউকে শুনিয়ে রাখছি।
– শুনাও। যত পারো বাপ মায়ের বেইজ্জতি করো৷ অমানুষ হয়েছো একটা। নূন্যতম রেসপেক্ট আমরা কেও তোমার কাছ থেকে পাইনা। এখন এসব বউকে শুনিয়ে ওকেও বেয়াদব বানাচ্ছো। আজ তুমি বেয়াদবী করছো। কাল থেকে তোমার বউও যোগ হবে তোমার সাথে। দুইজনে মিলেমিশে আমাদের ইনসাল্ট করো। বেয়াদব কোথাকার।

শেষের কথাগুলো প্রচন্ড চিৎকার করে বললেন রিমা। পুরো শরীরে মনে হচ্ছে কেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে। ছেলের অপমানের কথা নজরুল সাহেবকে জানানোর জন্য কল করেছেন। ফোনের স্ক্রিনে রিমার নাম দেখে মিটমিটিয়ে হাসছেন নজরুল সাহেব। গায়ে জ্বালা উঠেছে রিমার। ভুলেও কল রিসিভ করা যাবে না। আর নয়তো বিষ ঝাড়বে উনার উপর। বিষটা ঝেড়ে ফেললে তো রিমার গায়ের জ্বালা মিটে যাবে৷ কোনোমতেই মিটতে দেয়া যাবে না। নিজের জ্বালা নিজেই নিয়ে ঘুরেছেন পুরো একটাদিন। কাওকে সেই যন্ত্রণার কথা বলতে পারেননি। রিমাকেও সেই সুযোগ দিবেন না। যেমন উনি জ্বলেছেন তেমনি রিমাকেও জ্বলতে হবে।

মায়ের কলটা কাটার পর স্ক্রিনে দেখলো জাহিদের নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে। স্বপনের ফোন নাম্বারটা এস এম এস করেছে জাহিদ। নম্বরটায় কল করলো সোহান। চারবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো স্বপন।

– আসসালামু আলাইকুম ভাই।
– ওয়া আলাইকুম আসসালাম। ভালো আছো স্বপন?
– এইতো ভাই। আপনি ভালো আছেন?
– হ্যাঁ। তারপর দিনকাল কেমন যায়?
– আপনাদের দোয়ায় যাচ্ছে ভাই। হঠাৎ আমাকে স্মরন করলেন যে। কোনো দরকার?
– একটা কাজ করে দিতে হবে।
-কি কাজ?
-জানি ওসব ছেড়ে দিয়েছো। তবু আমার রিকুয়েস্ট কাজটা করে দিতেই হবে। তোমাকে ছাড়া বিশ্বস্ত কাউকে পাচ্ছি না।
– আরে ভাই, আপনার সাথে আমার হিসাব আলাদা। আপনি শুধু বলেন কি করতে হবে।
– একটাকে তুলে আনতে হবে৷ আমার বাসায় আটকে রাখবে দুইদিন। সারারাত টর্চার করবে। খবরদার মেজর ইনজুরড যেনো না হয়। কিন্তু মরনের ভয় এমন ভাবে ভেতরে ঢুকাবে যাতে মায়া নামের কেও এই পৃথিবীতে আছে সেটা ভুলে যায়। আর ওর কাছে কয়েকটা ভিডিও ক্লিপ আছে। কোথায় কোথায় রাখা আছে জানি না। ওর কাছ থেকে ওর বাসার চাবি নিয়ে ল্যাপটপ, পেন ড্রাইভ, মেমোরী কার্ড যা পাও সব নিয়ে আসবে। একটাও যেনো বাদ না যায়।
– মায়া কে ভাই?
– আমার ওয়াইফ।
– ওহ! ভাবীর সাথে উনার কি সম্পর্ক?
– কোনো সম্পর্ক নেই। আগে এ্যাফেয়ার ছিলো। এখন আমার ওয়াইফকে কন্টিনিউ ব্ল্যাকমেইল করছে৷ যা তা অবস্থা। মজা লাগছে না এই ছেলের তামাশা। এটার একটা দফারফা করা জরুরী।
– বুঝেছি ভাই। কাজ হয়ে যাবে।
– কিভাবে কি করবে সামনা সামনি দেখা করে ডিটেইলস বলবো। ঠিকাছে?
– জ্বি ভাই। কবে আসবো?
– আগামীকাল সন্ধ্যার পর আসো।
– আচ্ছা।

মাথা থেকে অর্ধেক চিন্তা দূর হয়েছে। বাকিটা কাজটা হয়ে গেলে এরপর দূর হবে। উফফ! কোথাকার ইমন! মাথাটা হ্যাং করে দিচ্ছে একদম। সামনে পেলে একটা হলেও দাঁত ভাঙবে এই ব্যাটার। কামড়ানোর শখ চিরতরে মিটাবে এবার।

(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব ৩৩

0

নষ্ট গলি পর্ব ৩৩

#লেখা_মিম

ইমন বের হয়ে যাওয়া মাত্রই সোহানের নাম্বারে কল করলো জোনাকি। মাথার বালিশের কাছে মোবাইলটা বাজছে। একহাত বাড়িয়ে মাথার কাছ থেকে ফোনটা নিলো সোহান। স্ক্রিনে জোনাকির নাম দেখাচ্ছে।
– হ্যাঁ জোনাকি বলো।
– স্যার, ইমন আইছিলো।
– এরপর?
– মায়ারে খুঁজে। মায়ারে তার লাগবোই। কইলাম বিয়া হয়া গেছে। সে মানে না। মায়ার ভিডিও ছাইড়া আমার সামনে বইসা দেখতাছিলো। আর খবিশের মত হাসতাছিলো। মায়া চিল্লাইতাসে ভিডিওতে আর খবিশটা কইতাসে মায়ার চিল্লানি শুইনা নাকি আরো জোরে কামড়াইতে মন চাইতাসে তার। দাঁত বলে শিরশির করতাছে।
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে সোহানের। নোংরা মেন্টালিটির মানুষ। মানসিক রোগী একটা। পা থেকে মাথা পর্যন্ত পিটালেই কামড়ানোর শখ মিটে যাবে।
– তুমি কি বলেছো?
– ভুলভাল বুঝাইসি। কইসি মায়ারে আইনা দিমু৷ তবে এখন না। আরো পরে। আপনে মায়ারে নিয়া বিদেশ ঘুরতে গেছেন।
– আচ্ছা। ভালো করেছো।
– তারে এখন কি করবেন স্যার? সে তো পিছ ছাড়বো না।
– ছাড়বে কি ছাড়বে না সেটা তো বুঝবোই।
– আইচ্ছা স্যার। আমার কিছু করতে হইলে জানাইয়েন।
– হুমম জানাবো।
মায়া এখনও ঘুমে। ওকে এক হাতে জড়িয়ে অন্য হাত মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছে সোহান। কি করা যায় ভাবছে সে। সবার আগে ভিডিওগুলো সরাতে হবে। ভিডিওর কপি কোথায় কোথায় আছে সব বের করতে হবে।
নড়েচড়ে উঠলো মায়া। মুখটা তুলে কোনোমতে একচোখ মেলে সোহানের দিকে তাকালো।
– গুড মর্নিং প্রিন্সেস।
-হুমমমমম।
আবার সোহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো মায়া। সোহানের বুকে নাক মুখ ঘষছে ও।
– উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না?
– উঠবো।
– কখন?
– একটু পর।
– নাস্তা কি খাবে?
– বিস্কিট খাবো। চায়ে ডুবিয়ে।
– ডক্টর গতকাল কি বলেছে শুনোনি?
– শুনেছি।
– বিস্কিট খেলে হবে? তুমি অনেক উইক হয়ে গেছো। হেলদি খাবার খেতে হবে৷
– আবার ডিম?
– হুম ডিম। সাথে একগ্লাস দুধ। রুটি বা পরোটা।
– ডিমে গন্ধ লাগে।
– কিচ্ছু করার নেই। খেতে হবে।
– খাইয়ে দিবেন আমাকে?
– হুম দিবো।
সোহানের গায়ের উপর থেকে বিছানায় নেমে এলো মায়া। ঝিম মেরে বসে আছে খাটে৷ মায়ার পিঠে হাত বুলাচ্ছে সোহান।
– খারাপ লাগছে মায়া?
– মাথাটা একটু ঝিমঝিম করছে।
– ঠিকমতো খাও কিছুদিন। ঠিক হয়ে যাবে।
খাট ছেড়ে নেমে গিয়ে ওয়াশরুমে গেলো মায়া। সোহান গিয়েছে কিচেনরুমে। রতন পরোটা বানাচ্ছে। সালমান গতকাল রাতে বলেছে মাংস দিয়ে পরোটা খাবে। সোহান বললো চুলায় ডিম সিদ্ধ বসাতে। সেই সাথে দুধটাও জ্বাল দিতে বলে এসেছে।
– ভাইয়া…
– হুম?
– মায়ার অবস্থা কি এখন?
– এইতো। জ্বরটা নেই। শরীর এখনও দুর্বল।
– রাগটা কমাও৷ যখন তখন এভাবে ক্ষেপে যাওয়ার মানে হয় না।
– মেজাজ অতিরিক্ত খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। ওকে এখানে এনে বলেছি এটা ওর সংসার। সংসার ফেলে চলে গেলো কেনো?
– ছোট একটা মেয়ে৷ বাবার কথাগুলো ও মেনে নিতে পারেনি। তাছাড়া ওর মনেও হয়তো এই কথাগুলো বারবার ঘুরে ও কোন জায়গা থেকে এসেছে। তোমার ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের সাথে যায় না। তাই বাবার কথাগুলো খুব গায়ে লেগেছে ওর।
– হুমম। রিএ্যাক্টটা একটু বেশিই করে ফেলেছি। মাথা ঠিক থাকে না। বুঝলি?
– জানি ঠিক থাকে না। তাই বলে এতটাও রিএ্যাক্ট করা ঠিক না।
– মাথাটা ঠান্ডা করতে চাই। কিন্তু হয় না।
– কখনো ট্রাই করেছো বলে তো মনে হয় না।
– উনাকে কিচ্ছু বলবে না। উনি খুব ভালো মানুষ।
কথাটা বলতে বলতে ডাইনিং রুমের দিকে আসছে মায়া।
– ভালোবাসা কত্ত! এতবড় ধোলাই খেয়েও বলছো উনি খুব ভালো মানুষ।
– হুম ভালোই তো। ভালো কে ভালো বলবো না?
– বুঝলি সালমান? যে আমাকে ভালোবাসবে সে আমার ভালোকেও ভালোবাসবে মন্দকেও ভালোবাসবে। আমি একটা খারাপ কাজ করলেও বুঝার চেষ্টা করবে আমি কেনো খারাপ কাজটা করলাম।
অফিসে যাবেন বলে তৈরী হচ্ছেন নজরুল সাহেব। খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে সোহানের মা রিমা। ফোনে খুব মনোযোগ সহকারে কিছু একটা দেখছেন তিনি। কয়েক সেকেন্ড পর নজরুল সাহেবের দিকে হাতে থাকা ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– নজরুল, দেখো তো একটু।
– কি দেখবো?
– ফোনটা হাতে নাও আগে।
কিছুটা বিরক্ত হলেন নজরুল সাহেব। অফিসে যাওয়ার সময় হলেই এই মহিলার এটা সেটা দেখাতে হয়। না দেখলেও বিপদ। ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেলবে। বাধ্য হয়েই ফোন হাতে নিলেন তিনি।
একটা মেয়ের ছবি। চেহারা তেমন ভালো না। তবে বেশ স্মার্ট। স্মার্টনেসের আড়ালে চেহারার কমতিগুলো আড়াল হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ভালোই।
– কে এটা?
– সোহানের জন্য দেখেছি। আমার বান্ধবীর ভাইয়ের মেয়ে। ভালো না?
মোবাইলটা খাটের উপর রেখে আবার অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হওয়ার কাজে লেগে পড়লেন। কোনো উত্তর দিচ্ছেন না।
– নজরুল কিছু একটা জানতে চেয়েছি আমি। উত্তর দিচ্ছো না কেনো?
– কি বলবো?
– কেমন লেগেছে?
– সোহান বিয়ে করে ফেলেছে।
তড়িৎ গতিতে শোয়া থেকে উঠে বসলেন রিমা। মনে হলো মাথায় বাজ পড়েছে তার। ঠিকঠাক শুনেছে কিনা সেটা জানার জন্য আবার নজরুল সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন
– কে বিয়ে করেছে?
– সোহান।
– কাকে?
– একজনের সাথে এ্যাফেয়ার ছিলো।
– তুমি জানতে সব?
– হ্যাঁ।
– আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করলে না?
– বললে কি হতো?
– কি হতো মানে? আমি কেও না?
– সেটা তুমি তোমার ছেলের সাথে বুঝে নাও। তোমার ছেলে কেনো তোমাকে জানায়নি সেই যুক্তি ও ভালো জানে।
– তুমি কেনো বলোনি?
– বিয়ে তো আমি করিনি৷ করেছে সোহান। ওর বিয়ের খবর ও না বললে আমি বলার কে?
নজরুল সাহেবের এ ধরনের অযৌক্তিক কথাবার্তা বরাবরই অসহ্য লাগে রিমার। এই লোকটাকেও অসহ্য লাগে। ছেলেগুলোও হয়েছে এই লোকের মতই। বিশেষ করে বড়টা। চরম বেয়াদব। আজকাল তো সে মা বলে ডাকাই ছেড়ে দিয়েছে। বিয়ে করেছে সেটা তো এটলিস্ট বলতে পারতো।
বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে নজরুল সাহেব। আর দশমিনিট বাদে সোহানকে কল করবে রিমা। তুমুল ঝগড়া হবে মা ছেলের মধ্যে। বাবাকে যেভাবে উত্তর দিয়েছে ঠিক সেভাবে মা কেও উত্তর দিয়ে দিবে৷ একদম গা জ্বালানো উত্তর। ভাবতেই পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছেন নজরুল সাহেব। ছেলের উত্তর পেয়ে নিজে পুরো একটাদিন জ্বলেছেন। এবার নাহয় রিমাও একটু জ্বলুক।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্বঃ৩২

0

নষ্ট গলি পর্বঃ৩২

লেখা-মিম

সোহানের ঘুম ভেঙেছে সেই অনেক্ষণ আগেই। কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠতেও পারছে না, এপাশ ওপাশও হতে পারছে না। ওর শরীরের উপর উপুর হয়ে ঘুমুচ্ছে মায়া। ওকে দুহাতে শক্ত করে আগলে রেখেছে সোহান। গায়ের জ্বরটা আপাতত নেই। তবু মায়ার রেস্ট নেয়াটা জরুরী। তাই ওকে জাগাচ্ছে না। তবে কারন অবশ্য আরেকটা আছে। মায়াকে এ মূহূর্ত্বে একদম ছোট বাচ্চার মতো লাগছে। এভাবে আগলে রাখতে ভালো লাগছে সোহানের।

জানালার ধারে বসে আছে আলিশা। ঘুম হয় না আজকাল ওর। একদমই হয় না। সোহানের বিয়ে মেনেই নিতে পারছে না ও। সোহানের ভালোবাসা কেমন তা খুব ভালো করেই জানে আলিশা। ব্রেকআপের এত বছর পরও সোহানের ভালোবাসাটা ওর শরীরের লোমে লোমে মিশে আছে। সেই ভালোবাসা এখন অন্য কেও ভোগ করছে। যতটা ভালোবাসা আলিশাকে সোহান দিয়েছিলো তারচেয়ে বেশি ভালোবাসে মায়াকে। মায়ার অনুভূতিটা কেমন হতে পারে সেটা বেশ বুঝতে পারছে আলিশা। এত সুখ! এত ভালোবাসা! আজ যদি সোহানের বউ হতো তাহলে……. ব্যাপারটা কি আদৌ মেনে নেয়ার মতো? এমন কেনো হলো? হওয়াটা কি খুব প্রয়োজন ছিলো?

-আলিশা….

রুপমের গলার আওয়াজ পেলো আলিশা। পিছন থেকে ডাকছে সে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর প্রয়োজন মনে করছে না আলিশা। এই মানুষটার ছায়া থেকে সরে যেতে পারলেই হাফ ছেড়ে বাঁচে ও। সহ্য হয়না। একদম সহ্য হয় না এই লোকটাকে।

– আলিশা… নাস্তা খাবে এসো।
-………….
– কি বলছি? শুনছো না?
– পরে খাবো।
– না, আমার সাথে খাবে।
– ক্ষিদে নেই।
– গতকাল রাতেও কিছু খাওনি।
– ক্ষিদে লাগেনি তাই।
– একটা মানুষ এভাবে না খেয়ে কিভাবে থাকতে পারে আলিশা?
– ক্ষিদে না লাগলে কি করবো?
– ঘুমাও না। খাও না। কোথাও যাও না। সারাটাদিন এইরুমে বসে থাকো। কেনো আলিশা? তোমার কি স্বাভাবিক হতে ইচ্ছে হয় না?
– কি হবে স্বাভাবিক হয়ে?

এগিয়ে এসে আলিশার পাশে বসলো রুপম। ওর হাতের উপর হাত রাখলো। ঘাড় ফিরিয়ে ডানে তাকালো আলিশা। রুপম ওর চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে।

– সোহান আমাকে খুব ভালোবাসতো। ও আমাকে ভুলে গেলো কি করে?
– আমি কি তোমাকে ভালোবাসি না?
– জানি না।
– আমিও তোমাকে ভালোবাসি। সোহান তোমাকে কতটা ভালোবাসতো আমি জানি না। তবে আমি তোমাকে ওর চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসি। একটাবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো তো। তোমার বাবা সোহানের নামে মামলা করার পর ও তোমাকে ফেলে চলে গেলো। তুমি ওকে কতবার রিকুয়েস্ট করলে তোমার কাছে ফিরে আসার জন্য। ও কি এসেছিলো? মামলা তোমার বাবা করেছে, তুমি তো করোনি। ও যদি তোমাকে এতই ভালোবাসবে তাহলে ও তোমাকে এমন শাস্তি দিবে কেনো যেটার উপযুক্ত তুমি না?
– ওর রাগ খুব বেশি। তাই ও ব্রেকআপ করেছে।
– আমার কি রাগ নেই। তুমি যেসব কাজ করো তোমার উপর কি আমার রাগ হয় না? আমি কি তোমাকে ডিভোর্স দিয়েছি?
– তুমি তোমার ছেলের জন্য আমাকে ডিভোর্স দাও না।
– আফিফকে কি তুমি দেখাশোনা করো? ওর দেখাশোনা আমি আর ঝর্নাই তো করি। তোমার তো কোনো প্রয়োজন নেই। তবু তোমাকে আমার ঘরে রেখে দিয়েছি। কেনো বলতে পারো?
– তুমিই তো বলো আমাকে সেই কবেই তুমি ডিভোর্স দিয়ে দিতে। শুধু ছেলের জন্য দাও না।
– আমার মনের কথাগুলো কবে বুঝবে তুমি? আমি তোমাকে ভালোবাসি আলিশা। তাই তোমার সমস্ত পাগলামী সহ্য করেও তোমাকে আমার পাশে রাখতে চাই। ডিভোর্স দেয়ার শখ থাকলে কবেই দিতাম। তুমি ভার্জিন না এটা আমি বিয়ের পরই টের পেয়েছি। এমনকি সোহানের সাথে তুমি রেগুলার ইন্টিমেট হতে সেটাও বুঝেছি। আমি কি চাইলে তখন পারতাম না তোমাকে ডিভোর্স দিতে। বিয়ের দু সপ্তাহ পর থেকেই শুরু করলে সোহানের কাছে যাবে। আমি যেনো তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেই। তখন কি আমি পারতাম না তোমাকে ডিভোর্স দিতে? তোমার প্রেগন্যান্সির টাইমে কি যন্ত্রনায় আমাকে তুমি রেখেছিলে মনে আছে? তবু তোমাকে আমি ছাড়িনি। দিন দিন সোহানের জন্য তোমার পাগলামি বেড়েই যাচ্ছিলো। তবু আমি তোমাকে ছাড়িনি। আমি তোমার হাজবেন্ড আলিশা। তোমার সন্তানের বাবা। আমার ওয়াইফ সর্বক্ষণ তার এক্স বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ডুবে থাকে সেটা জেনেও আমি তোমাকে নিয়ে ঘর করছি। এরপরও তুমি আমাকে বলছো আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না তুমি জানো না? মায়া সোহানের ওয়াইফ। ওকে পাগলের মত ভালোবাসাটা খুব স্বাভাবিক। প্রেমিকা আর বউ তো এক হয় না। তুমি ওর প্রেমিকা ছিলে আর মায়া ওর বউ। ওর সাথে নিজেকে কেনো মিলাচ্ছো? অহেতুক হিংসার আগুনে নিজে তো জ্বলছোই সেই সাথে আমি আর আমাদের সংসারটাকেও জ্বালাচ্ছো। ওরা তো সুখে আছে আলিশা। তাহলে শুধু নিজের সুখে আগুন ধরাচ্ছো? আমি মানুষটাকে কেনো এভাবে কষ্ট দিচ্ছো। সোহানের চেয়ে অারো অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে। একটাবার… জাস্ট একটাবার ভালোবাসাটা অনুভব করার চেষ্টা করো আলিশা। সংসারটাকে আগলে ধরো। আমাকে, আমাদের ছেলেটাকে আগলে ধরো। মায়াকে দেখেছো? অতটুকু একটা মেয়ে। অথচ নিজের হাজবেন্ড আর সংসারের ষোলো আনা বুঝে। কতটা সুন্দর করে আগলে রাখে। তোমার মত মেয়ে ওর সাথে কথা বলে পেরে উঠতে পারো নি। ভেবে দেখো ও ওর হাজবেন্ড আর সংসার নিয়ে কতটা প্রোটেক্টিভ।
– তুমি মনে হয় ঐ মেয়ের প্রশংসা করছো?
– হ্যাঁঁ করছি। প্রশংসা করার মতো কাজ করেছে তাই করছি।
– হাত ছাড়ো।
– কেনো?
– আমি খারাপ। মায়া ভালো। সোহান ওর প্রেমে মজেছে। এখন তুমিও ওর প্রেমে ডুবে মরো।
– আমি তোমার মাঝে ডুবে মরতে চাই। আমি চাই তুমি মায়ার মতো আমাকে সংসারটাকে আগলে ধরো।
– আমার সাথে ওর তুলনা করতে এসো না রুপম। আমি ওর চেয়ে হাজারগুনে ভালো করে আগলে রাখতে জানি। দেখো না সোহানকে আজও ভুলতে পারি না। ভালোবাসা আজও আগলে বসে আছি।
– তুমি সোহানকে ভালোবাসো। আমাকে না। তাহলে বুঝবো কিভাবে তুমি কতটা আগলে রাখতে জানো।
– কি চাচ্ছো তুমি? বুঝিয়ে বলো।
– কিছু না। নাস্তা খাবে চলো।
-পরে খাবো।
– আমি এখন নাস্তা করবো। নাস্তা খাও আর না খাও আমার সামনে বসে থাকবে। চলো।
– ভালো লাগছে না। যাবো না।
– প্লিজ….
– রুপম তোমার বিরক্ত লাগে না আমার পিছন পিছন ঘুরতে?
– বউ কি আমার দশটা? একটাই তো। তোমার পিছন ঘুরবো না তো কার পিছনে ঘুরবো। এত ঘুরি তবু তো সোহানকে ভুলতে পারো না।
– ওকে ভুলে যাওয়া এতটাও সহজ না।
– এত কঠিনও না।

আলিশা জানে রুপম ঘ্যানরঘ্যানর করতেই থাকবে। ভালো লাগছে না রুপমের ঘ্যানঘ্যানানি শুনতে। এরচেয়ে ডাইনিং টেবিলে চুপচাপ ওর সামনে বসে থাকা ভালো। মাথার চুলগুলো পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকাতে আটকাতে খাট ছেড়ে নেমে এসেছে আলিশা।

জোনাকির ঘরে বসে সিগারেট ফুঁকছে ইমন।

– মায়া এখন তার বিয়া করা বউ। আমাগো সামনেই বিয়া করছে। ওর দিকে আর নজর দিয়েন না স্যার। আরো বহু মাইয়্যা আছে। আমি আইনা দেই। যেইটারে ভাল্লাগবো খালি ইশারা করবেন। রুমে সাজায়া গুজায়া পাঠায়া দিমু।
– মায়াকে লাগবে।

মনে মনে ইমনকে বকছে জোনাকি।

শালায় পাইছে কি? মায়াকে লাগবে, মায়াকে লাগবে। তামশা শুরু করছে। কইতাসি বিয়া হয়া গেছে ছেমড়ির। তবু কথা শুনে না।

ঠোঁটে মিথ্যে হাসি এনে জোনাকি বললো

– এইডা কেমনে সম্ভব। আরেক লোকের বউরে কেমনে আইনা দিমু?
– যেভাবে আমার মায়াকে অন্য লোকের হাতে দিয়েছো, সেভাবেই আমার কাছে আবার ফেরত এনে দিবে।
– স্যার আরো মাইয়্যা আছে তো। মায়ার মতই আছে। আমি আনতাছি।

হাতে থাকা মোবাইলটাতে ভিডিও প্লে করলো ইমন। কারো চিৎকারের আওয়াজ আসছে মোবাইলটা থেকে।

– ব্যাথা পাচ্ছি। ছেড়ে দিন।

ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসছে ইমন। বারবার ঐ চিৎকারের অংশটুকু টেনে টেনে দেখছে সে। ইমনকে এই মূহুর্তে বিশাল বড় মসিবত মনে হচ্ছে জোনাকির। যাওয়ার নাম তো নিচ্ছেই না।, উল্টো এক চিৎকার শুনিয়ে শুনিয়ে কানটাকে পঁচিয়ে ফেলছে। বিশ্রি অবস্থা।

– মেয়েটা কে জানো?
– না।
– মায়া। কত সুন্দর করে চিৎকার করে। ব্যাথা পাচ্ছি, ছাড়ুন। উফফ!! শুনলেই ইচ্ছে হয় আরো জোরে কামড় দেই। দাঁত শিরশির করছে খুব। ওকে আনার ব্যবস্থা করে দাও না জোনাকি। আর সহ্য হচ্ছে না।
ইমনের মতিগতি বেগতিক মনে হচ্ছে জোনাকির। এখান থেকে লোকটাকে বের করতে হবে। ও চায়নি সোহানের কাছে এই মানুষটার খোঁজ দিতে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে খোঁজ দেয়াটা অতি জরুরী। আর নয়তো কেলেঙ্কারি ঘটতে পারে৷ সামনের আটখানা দাঁত বের করে হাসলো জোনাকি।
– মায়ারে খুব মনে ধরছে না স্যার? আইচ্ছা স্যার আইনা দিমু। তবে আপাতত সম্ভব না। জামাইর লগে বিদেশ গেছে হানিমুনে। দেশে আইলেই ওরে ধইরা আনার ব্যবস্থা করুম। তবে চার্জ একটু বেশি লাগবো।
– এডভান্স দিয়ে যাবো?
– না স্যার। কাম সাড়ার পর দিয়েন।

(চলবে)
?

নষ্ট গলি পর্ব-৩১

0

নষ্ট গলি পর্ব-৩১

লেখা-মিম

মায়ার মাথায় পানি ঢালছে সোহান। ঘুমানোর সময় তো ঠিকই ছিলো। জ্বরটা এসেছে ঘন্টাখানেক হবে হয়তো। জ্বরটা কখন এসেছে সেটা জানে না সোহান। খাওয়া শেষে মায়াকে রুমে পাঠিয়ে সালমান আর সোহান মিলে ম্যাচ দেখছিলো টিভিতে। ম্যাচ শেষে রুমে এসে মায়ার মাথার বালিশটা ঠিক করতে গিয়ে ওর কপালের স্পর্শ লেগেছিলো সোহানের হাতে। তখনই টের পেয়েছে মায়ার জ্বর এসেছে। মায়া কি যেনো বিড়বিড় করছিলো। কিছুই বুঝতে পারেনি সোহান। দেরী না করে বাথরুম থেকে আধা বালতি পানি ভর্তি করে নিয়ে এসে মায়ার মাথায় ঢালছে৷ চোখ বন্ধ করে রেখেছে মায়া। কাঁপা গলায় সোহানকে ডাকছে ও।

– এই…..
– খুব কষ্ট হচ্ছে মায়া?
– এই…..
– হুম, শুনছি তো।
– কোথায় আপনি?
– এইতো তোমার মাথার কাছে।

মাথার ওপাশে হাতড়িয়ে সোহানকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছে মায়া। সোহানের গেঞ্জির গলায় হাত ঠেকলো। গেঞ্জিতে খামচে ধরে সামনের দিকে টেনে আনলো ও।

– অ্যাই…..
– হুউউম?
– চুমু খাবো।
– হ্যাঁ দিবো। আগে মাথায় পানি ঢালি।
– না। এখনি।

মায়ার কপালে চুমু খেলো সোহান। চোখ মেলে তাকালো মায়া। চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। ঠিকমতো চোখ মেলতে পারছে না। তবুও বহু কষ্টে সোহানের দিকে আধখোলা চোখে তাকালো ও।

– চোখ জ্বালা করছে খুব।
– দাঁড়াও পানি দিয়ে দিচ্ছি।
– উহুম। পানি না। চুমু খাবো।
– চুমু খেলে চোখের জ্বালা কমবে?
– হুউম। কমে যাবে।

মনে মনে হাসলো সোহান।
মায়ার চোখজোড়ায় চুমু খেলো সে। সোহানের গেঞ্জি এখনো খামচে ধরে রেখেছে মায়া। গেঞ্জি ধরে ফের টানাটানি করছে।

– আরো চুমু খেতে চাও?
– না। ঘুমাবো।
– আচ্ছা ঘুমাও। আমি মাথায় পানি ঢালি।
– ঢালতে হবে না। খাটে আসেন।
– তারপর?
– আপনি বসে থাকবেন। আমি আপনার কোলে বসে ঘুমাবো।

মায়ার আবদারে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে সোহানের। সেই সাথে ভালোবাসাটাও বাড়ছে। সত্যিই মেয়েটা ছোট। প্রচন্ড আহ্লাদী। এত আহ্লাদী তো ছিলো না। গত একমাস যাবৎ আহ্লাদটা বাড়ছে ওর। ভালোই লাগে সোহানের। খুব উপভোগ করে ব্যাপারটা।

-গেঞ্জিটা ছাড়ো। তোমার মাথাটা মুছে দিতে হবে।
– না, মুছবো না৷ কোলে ঘুমাবো।
– মাথা না মুছলে ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
– ওহ তাইতো। আপনি মুছে দিবেন?
– আমি ছাড়া আর কে মুছে দিবে?
– হুম। তাও কথা।
– এখন ছাড়ো।

গেঞ্জিটা ছেড়ে দিলো মায়া। বালতিটা বাথরুমে রেখে বারান্দা থেকে মায়ার তয়লাটা নিয়ে আসলো সোহান। মায়াকে ধরে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসালো৷ চুলগুলো খুব যত্ন নিয়ে মুছে দিচ্ছে সে।

– আমাকে কোলে নিবেন না?
– নিবো তো।
– কখন?
– এইতো এখনি।

সোহানের বুকে গা এলিয়ে দিলো মায়া। মায়ার ভেজা চুলের পানিতে সোহানের গেঞ্জি একটু একটু করে ভিজে যাচ্ছে৷ ভেজা চুলে নাক ডুবালো সোহান। এক হাতে চুলের গোঁড়ায় হাতাচ্ছে সে৷ অন্য হাতে মায়াকে জড়িয়ে ধরেছে। মায়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো সোহান। দু’বাহুডোরে মায়াকে বন্দী করে ফেলেছে৷ মায়ার ঠোঁটজোড়া প্রবলভাবে টানছে সোহানকে। মায়ার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করতেই মনে পড়লো মায়া অসুস্থ। মেয়েটার আজ জ্বর এসেছে৷ খুব দ্রুত সরে এলো সোহান। খাটের বা পাশের বালিশটাতে মায়াকে শুইয়ে দিলো সোহান। ডা পাশের বালিশে নিজে শুয়ে মায়াকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো সোহান।
(চলবে)

মন ফড়িং ২১

4
মন ফড়িং ❤
২১.
 দুপুরের দিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো। নিদ্র বসার ঘরে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলো। খুব জোরে বৃষ্টি পড়া শুরু হলে নিদ্রের মনোযোগ খবরের কাগজ থেকে সরে গেলো।
হুট করেই উদাসীনতা ভর করলো। দরজা খোলাই ছিলো। বাহিরের বৃষ্টি পড়া দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। খবরের কাগজ টি-টেবিলের ওপর রেখেই উন্মাদের মতো উঠানে নেমে এলো।
সাদা রঙের টাউজার কাঁদা লেপ্টে ঈষৎ খয়েরী রঙে রূপ নিয়েছে। পড়নের আকাশী রঙের গেঞ্জিতে বৃষ্টির পানির ফোটায় ভিজতে শুরু করেছে।
নিদ্রের কাছে সময়টাকে বোতল বন্ধী করতে ইচ্ছে করছে। বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে ক্লান্তি, উদাসীনতা উবে যাচ্ছে।
নিদ্র স্থির করলো, যতক্ষণ পর্যন্ত বৃষ্টি হবে ততক্ষণ সে ভিজবে। ঠান্ডা লাগলে লাগুক। তাতে তার আনন্দে কেউ ভাগ বসাতে পারবেনা।
অদ্রি দুপুরে সবার আগেই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। খুব ক্লান্ত লাগছিলো, তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে হাতের ব্যথাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলো। নিদ্র বুঝতে পারলে, কষ্ট পেতো। শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ করতো। সকালে নাস্তা দিতে গিয়ে যা শুরু করেছিলো। অদ্রি হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছিলো না।
নিদ্র প্রথম পরোটা শেষ করে দ্বিতীয় টায় হাত দিবে আর তখনই অদ্রির মনে হলো হাতে কেউ সজোড়ে টান মেরেছে। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো আর নিদ্রও সাথে সাথে বললো
– আমার জন্যই আপনাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে।
অদ্রি তাড়াতাড়ি ব্যথাটাকে হজম করে, মুখে হাসি এনে বললো
– তেমন কিছুই না। মাঝেমধ্যে একটু টান লাগে আরকি।
– অদ্রি, আমাকে মিথ্যে বলে লাভ নাই। আপনার মুখের এক্সপ্রেশনে বোঝা যাচ্ছে একটু টান না কী!
– আপনি সবসময় একটু বেশি বুঝেন।
– আপনার গতকাল রাতে যে পরিমাণ রক্ত ক্ষরণ হয়েছে তাতে তো আমারই অবস্থা খারাপ। কোলে করে কোনোমতে বিছানায় শুয়ে দিয়েই আমি রশীদ সাহেবকে ফোন করলাম। পুরো রাত আমি চোখ বন্ধ কর‍তে পারিনি। সামান্য একটা ফোসকা থেকে এতো কিছু হতে পারে জানা ছিলোনা আমার। তার উপর আপনি বেহুশ হয়ে পড়ে আছেন।
– আপনি আগে নাস্তা শেষ করুন। আমাদের কাছে অনেক অনেক সময় আছে গল্প করার। তাই না?
– ফিউচার জানার ক্ষমতা আমার নেই। বলা কি যায় এক মিনিট পরে কী হবে?
ধরুন না গতকালের ঘটনাটার কথা। দরজা খুলতে গিয়ে আপনার হাত কেটে গিয়ে আপনি অজ্ঞান!
– রক্তের গন্ধটা নাকে যাওয়ার পর থেকেই খারাপ লাগছিলো তারপর পেটের ভিতর থেকে বমি আসতে চাইলো কিন্তু তার আগেই ঠাস।
কথাটা বলে অদ্রি হাসতে শুরু করলো।
নিদ্র পরোটার টুকরা মুখে পুড়ে দিয়ে বললো
– আমার কিছু হলে, কষ্টটা আপনি বুঝবেন।
অদ্রির আর কিছু বলার সাহস ছিলোনা। মনে মনে বলছিলো
– আমি কষ্টটা বুঝতে চাইনা। চাইনা।
নিদ্র বললো
– এরপর থেকে আমি রুড বিহেভ করতে গেলে আমাকে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিবেন।
– তারপর?
– আমি চুপ হয়ে যাবো।
– আমি তো চাইনা আপনি চুপ থাকুন। আপনি কথা না বললে কীভাবে বুঝবো, অভিমান ভর করেছে আপনাকে?
– ভালোবাসলে প্রিয় মানুষের নীরবতার ভাষাও বোঝা যায়।
– আপনি বুঝতে পারেন?
– হ্যাঁ, পারি। আপনার হাতে প্রচুর ব্যথা হচ্ছে কিন্তু আপনি আমাকে বুঝতে দিতে চাচ্ছেন না।
অদ্রি, আপনি রুমে গিয়ে রেস্ট নিন। নোংরা প্লেট, বাটি আমিই কিচেনে রেখে আসবো। প্লিজ, অদ্রি আমার কথাটা শুনবেন?
অদ্রি মুচকি হাসলো।
– বুঝেছি আপনি কথা বলবেন না। দেখুন একটু সুস্থ হোন তারপর অনেক অনেক গল্প করা যাবে।
– আচ্ছা, আপনি থাকুন।
অদ্রি চলে যাওয়ার পর নিদ্র নোংরা বাসন কিচেনে রেখে এসে ঘুমানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হলো।
বৃষ্টির শব্দে অদ্রির ঘুম ভেঙে গেলো। জানাল দিয়ে বৃষ্টির পানি এসে ফ্লোর ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। অদ্রি জানালা আটকে দিতে গিয়ে দেখলো – নিদ্র জানালা বরাবর নিচে দাঁড়িয়ে ভিজছে। ছেলেটাকে আধাপাগল মনে হচ্ছে অদ্রির।
পুরো টাউজারে কাঁদা লেপ্টে আছে। বৃষ্টির পানিতে কাঁদা ধুয়ে যাচ্ছে আর সে আবার কাঁদা লেপ্টে নিচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে গায়ের রঙটা আরো বেশি ফর্শা মনে হচ্ছে।
অদ্রি এই আধা পাগলের পাগলামি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। বৃষ্টির পানি এসে তাকেও ভিজিয়ে দিচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই।
নিদ্র দোতলার জানালার দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় নিচে আসতে বললো।
অদ্রি ডান হাতের ব্যান্ডিজ দেখালো। নিদ্র নিজের মাথায় টোকা দিয়ে হাসলো।
অসম্ভব সুন্দর হাসি।
নিদ্র অদ্রির জন্যই এখানে এসে দাঁড়িয়ে ভিজছিলো। মনে ক্ষীণ আশা ছিলো হয়তোবা ম্যাডামের রূপ একটু দেখা গেলেও যেতে পারে।
মেয়েটার চোখের নিচে কালো দাগ গাঢ় থেকে গাঢ় হচ্ছে দিন দিন, নিদ্রের তাই মনে হলো।
অদ্রিকে নিজের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিদ্র ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিতেই অদ্রি লজ্জা পেয়ে জানালার পাশ থেকে সরে দাঁড়ালো।
রিতা অদ্রির রুমের দিকে আসছিলেন। লিলিকে নিদ্রের রুম থেকে বের হতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন।
মেয়েটার তো সাহস কম না। এভাবে অন্য কারো রুমে যায় নাকি? আর কী বা করতে গেলো ওখানে?
চুরি টুরি করলো না তো? বিদেশ থেকে এসেছে, রুমে রাখা ব্যাগে টাকাপয়সা থাকাটা স্বাভাবিক।
লিলি রিতাকে এইসময় এখানে দেখবে ভাবতে পারেনি। অনেক কষ্টে একটু সুযোগ পেয়েছে রঙিন ভাইজানের রুমে আসার কিন্তু ভাইজান রুমেই নাই। কিন্তু তার ব্যবহার করা টি-শার্ট ছিলো।
বুকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ থেকে যেই না বের হলো আর তখনই সামনে রিতা পড়লো।
সেদিনও অদ্রির কাছে ধরা খেয়েছে আর আজকে রিতার কাছে। তার ভাগ্যটাই খারাপ।
কী বলবে ভাবতে ভাবতেই রিতা তাকে ডাকলেন।
– এই মেয়ে ওই রুমে কেনো গিয়েছিলে?
– এঁটো থালাবাসন আছে কিনা দেখার জন্য।
– যার রুম তার অনুমতি নিয়েছিলে?
– হ্যাঁ।
লিলি এবার খুব সুন্দর করে মিথ্যা বলে দিলো। রিতার প্রতিউত্তরের অপেক্ষা না করে নিচে নেমে রান্নাঘরে পা বাড়ালো।
রিতা অদ্রিকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখে বললো
– ব্যথা কমেছে?
– কিছুটা।
– লিলিকে নিদ্র না কে যেন ওনার রুম থেকে বের হতে দেখলাম।
নিদ্র তো তার রুমে নেই। তাহলে লিলি কী করতে গিয়েছিল?
– জিজ্ঞেস করেননি কেনো গিয়েছিল?
– বললো এঁটো থালাবাসন আনতে গিয়েছিল।
– নিদ্র তো নিজেই নোংরা বাসন কিচেনে রেখে এসেছিলো। নাহ, এই মেয়েটা কী শুরু করেছে আবার! আল্লাহ জানে।
– লিলিকে ডেকে পাঠাবো?
– না, ওই মেয়ে কিছুই স্বীকার করবেনা। উল্টো বেয়াদবি করবে। আমি নিদ্রকে বলে দেখবো কিছু হারিয়েছে নাকি।
– আর একটা কথা।
– বলুন।
– আসমা আন্টি আপনার সাথে কথা বলতে চান।
– আচ্ছা, তাকে বলুন আমি আসছি।
– তুমি তো অসুস্থ। তাকেই ডেকে আনি।
– আমার একটু হাঁটতে ইচ্ছে করছে। এই সুযোগে হেঁটে আসাও হবে।
নিদ্র রাস্তায় বসে ভিজছিলো। তেমন কোনো যানবাহন এই রাস্তায় যাওয়া আসা করেনা। তার উপর আবার ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।
৫-৬ জনের একটি দল বেশ হৈহল্লা করতে করতে নিদ্রের পাশ দিয়েই যাচ্ছে। বয়স কতো হবে ৯-১১ এর মধ্যে। মফস্বলের কাঁচা-পাকা অশান্ত পুচকের দল, যাদের আনন্দ, হৈহল্লা করতে তেমন বিশেষ কিছু লাগেনা। একটু জোরে বৃষ্টি, খুব ঠান্ডা, অভেদ্য কুয়াশা আর কাকা ফাঁটা রোদ্দুর হলেই হলো। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দল বেঁধে চলছে আমেজ।
দলের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা আর স্বাস্থ্যবান যে ছেলেটা, সে বেশ জোরালো ভাবে বলছে
– শোন, আজকে কেউ আমার হুকুমের বাইরে যাবিনা।
সবচেয়ে পুচকে টা বললো
– ভাই আমি কিন্তু আফনের কথা মাইনা চলি।
আরেকটা বাচ্চা পুচকের মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললো
– তুইই বেশি ত্যারামি করোস।
ঝগড়া লেগে যাবে এই অবস্থায় হুকুমজারি করা হলো
– কেউ ঝগড়া না থামালে আজকের কদম অভিজান বন্ধ করে দেয়া হবে।
নিদ্রের মাথায় বুদ্ধি উঁকি দিলো। বৃষ্টির দিনে কদম ফুলের মতো সুন্দর উপহার আর দ্বিতীয়টা হয়না।
রিতার চিল্লাচিল্লিতে অদ্রি প্রায় দৌঁড়ে আসমা জামানের রুম থেকে বসার ঘরে এসে উপস্থিত হলো। পুরো বসার ঘরে কে যেন কাঁদা মাটি দিয়ে মাখিয়ে রেখেছে। বেশ বড় বড় পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে।
নিদ্র ছাড়া এই কাজ আর কেউই করেনি।
রিতা বললেন
– দেখো তো পুরো বসার ঘর থেকে শুরু করে সিড়ি পর্যন্ত কাঁদা মাটি দিয়ে নোংরা করে রেখেছে। আর কতো কাজ করা যায়?
– লিলি কই? ওকে ডাকুন।
লিলিকে ডাকা হলো। অজ্ঞতা তাকেই সব পরিষ্কার করতে হলো।
রিতা বললেন
– সব নিদ্র না কী যেন তার কাজ।
– আমি তাকে নিষেধ করে দিবো। আপনি এখন রেস্ট নিন।
অদ্রির বিছানার উপর কয়েক গুচ্ছ ভেজা কদম ফুল রাখা।হলুদ  আর সাদার অদ্ভুত মিশ্রণ! প্রথমে অদ্রি বিরক্ত হলো, তার বিছানাটা ভিজে উঠেছে। তাও একেবারে মাঝ বরাবর। পরোক্ষণেই মুচকি হেসে কয়েকটা কদম হাতে নিয়ে ঘ্রাণ নিলো। ছোটো বেলায় সে নিজেই গাছে উঠে কদম ফুল পাড়তো। ওদের বাসার পাশেই কদম গাছ ছিলো কয়েকটা। ভরা বর্ষায় যখন পুরো গাছ জুড়ে কদমে হলুদ হয়ে যেতো তখন তার ছোটো ঘরটাতেও রাতের বেলা কদমের ঘ্রাণ তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতো।
নিজেই গাছে উঠে হাত ভরে কদম নিয়ে হাসি মুখে বাসায় ফিরতো। বাবা কিছু বলতেন না কিন্তু মা খুব রাগ করতেন।
মা – বাবার কথা মনে পড়ায় চোখের কোণায় ভিজে উঠেছে অদ্রির।
ফুলগুলো তাকে অতীতের মধুর স্মৃতির প্রতিচ্ছবি ছাড়া আর কিছুই না।
নিদ্র পেছন থেকে অদ্রির কোমর জড়িয়ে ধরে বললো
– খুব সুন্দর তাই না?
অদ্রি কণ্ঠ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো
– অসম্ভব সুন্দর মানে আমি ঠিক আপনাকে বোঝাতে পারবোনা। ঘ্রাণটাতো আরো বেশি সুন্দর।
অদ্রির ঘাড়ে ঠোঁট ঘষে দিয়ে বললো
– ভালো লেগেছে? একদম ফ্রেশ কদম ফুল। বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে ভিজে একদম সেজেগুজে আপনার কাছে এসেছে। আপনার অনূভুতি টা কেমন?
– প্রথম প্রশ্নের উত্তর – ভালো লাগার উপরে কিছু থাকলে সেটাই লেগেছে। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর – আমার অনুভূতি গুলো আপনার জন্যই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
কাঁধে চুমু দিয়ে বললো
– আমি কী করলাম শুনি?
– এতোটা ভালোবাসতে নেই। আমি এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই।
চলবে…..!
© Maria Kabir

নষ্ট গলি পর্ব-৩০

0

নষ্ট গলি পর্ব-৩০

লেখা-মিম

কিছুক্ষণ আগেই মায়ার হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে স্বপন। বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে মায়া। ওর মুখোমুখি বসে প্লেটে ভাত মাখাচ্ছে সোহান।

– হা করো।
ডানে বামে মাথা নাড়লো মায়া। সোহানের মুখে বিরক্তির স্পষ্ট ছাপ ভেসে উঠছে।

– খাবে না কেনো?
– মাফ করেছেন আমাকে?
– মাফ না করলে মুখে তুলে খাইয়ে দিতাম না।
– আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছেন।
– হ্যাঁ রেগে আছি। চুপচাপ খাও। তাহলে আর রাগ করবো না।
– গলা দিয়ে খাবার ঢুকবে না।
– কেনো?
– কেমন মুখ করে বসে আছেন। আপনাকে এভাবে দেখতে আমার একদম ভালো লাগে না। অশান্তি লাগে।

মাথা নিচু করে চেহারা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে সোহান। কিন্তু পারছে না। আসলে ও রেগে নেই। চেহারায় এখন যা ভেসে উঠছে সেটা পুরোটাই হচ্ছে দুশ্চিন্তা। কিন্তু মায়া সেটাকে ধরে নিয়েছে রাগ৷

– এক্ষুনি চেহারা স্বাভাবিক করাটা কি খুব জরুরী?
– হুম।
– পারছি না।
– আমি কি আপনাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি?

ভাতের প্লেটটা বিছানার উপর রেখে মায়াকে এক হাতে টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো। সোহানের বুকে কান পেতে হৃদস্পন্দন শুনছে। আওয়াজটা ওর বড্ড আপন। এই আওয়াজটাতে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পায় মায়া।

– সত্যি কথা বলবো?
– হুম।
– কষ্টের চেয়ে ভয় পেয়েছি বেশি। তোমাকে কোনোভাবেই হারাতে চাই না। বলতে পারো তুমি আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে গিয়েছো। তুমি চলে গেলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো বলো?

বুকের উপর থেকে মাথাটা সরিয়ে সোহানের চোখের দিকে তাকালো মায়া। সোহানের কন্ঠে অভিযোগ, ভয় দুটোই টের পাচ্ছে ও। সোহানের মুখে হাতাচ্ছে মায়া।

– আমি খুব বোকা। বোকা একটা মেয়েকে মন দিয়ে বসেছেন।
– হুম ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
– যাক অবশেষে আপনার মুখে সামান্য হলেও হাসি দেখতে পেলাম। আমাকে ভাত খাওয়াবেন না?

সোহানের বুকে হেলান দিয়ে বসে আছে মায়া। ভাতের প্লেট একহাতে নিয়ে, অন্যহাতে মায়াকে খাইয়ে দিচ্ছে।

– মায়া….
– হুম?
– আর কখনো এমন করবে?
– মাথা খারাপ? আপনার হাতে মার খাওয়ার শখ নেই আমার। আপনি খুব জোরে চড় মারেন।
– সরি।
– সরি বলতে হবে না। আমি জানি আপনি আমাকে এমনি এমনি মারেননি। দোষটা আসলে আমার। পাগল ছাগলের মতো এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হয়নি। আপনাকে একটাবার বলা উচিত ছিলো৷ জানেন আমি তো মরে যাবো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম? ভেবেছিলাম রাতে বিষ খাবো।
– জ্বি। জানি আমি। আপনার হাতে বিষের বোতল দেখেছি। এজন্যই আপনাকে জুতাপেটা করেছি।

শব্দ করে হাসছে মায়া৷ মায়ার হাসিতে বেশ অবাক হচ্ছে সোহান।

– হাসছো কেনো?
– জুতার বাড়ি খেয়ে বুদ্ধি সুদ্ধি জায়গামতো এসে গেছে৷ আর জীবনেও এমন বোকামী করবো না।
– আমি বুঝিনা আমার রাগ এত সহজে কিভাবে হজম করো? তোমাকে এত মারলাম তবু একটু রাগ হওনি আমার উপর?
– আপনাকে ভালোবাসি৷ তাই হজম করতে অসুবিধা হয়না৷ আর সবচেয়ে বড় কথা আপনাকে আমি আমার মনের কোন জায়গায় বসিয়েছি তা আপনি জানেন না। কোনোদিন বুঝিয়ে বলতেও পারবো না। আপনার দশটা গুনের মাঝে একটা দোষ মেনে নেয়া কোনো ব্যাপার না।
– সবাই তো দোষটাই দেখে।
– সবাই তো ভাবে আমি পঁচে গেছি। কিন্তু আপনি তো আমাকে সুবাস ছড়ানো ফুল ভাবেন। যেই পুরুষ আমার মতো মেয়ের মাঝে ভালোবাসা খুঁজে পায়। বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পায় তার দোষ কিভাবে দেখি বলেন তো?

মুখ বাঁকিয়ে হাসলো সোহান। প্লেট থেকে শেষ লোকমাটা নিয়ে মায়ার মুখে তুলে দিলো সে।
– আরো ভাত নিবো?
– উহুম। পেট ভরে গেছে।
– বসো। পানি নিয়ে আসছি।

পানির গ্লাস হাতে রুমে আসলো সোহান। মায়ার দিকে এগিয়ে দিলো গ্লাসটা। গ্লাস হাতে নিয়ে মায়া বললো

– আপনি খাবেন না?
– হ্যাঁ। এখন খাবো।
– ওহ৷ চলুন খাবেন।
– তুমি কোথায় যাচ্ছো?
– ওমা! আপনি খাবেন না! আপনার প্লেটে খাবার বেড়ে দিবো।
– চুপ করে শুয়ে থাকো৷
– পরে শুবো। আপনার খাওয়া শেষ হোক। এরপর।
– আমি তর্ক একদম পছন্দ করি না।
– জানি তো।
– তাহলে করছো কেনো?
– বউরা অহেতুক তর্ক করবে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

হেসে ফেললো সোহান। মায়ার গাল টেনে বললো,

– ইশশ! বউ বউ ভাব চলে এসেছে।
– ওমা! বিয়ে হয়েছে না আমার! ভাব তো আসবেই। আরও কত কি আসবে।
– কত কি আসবে মানে?
– দারোগা ভাব আসবে আমার মাঝে৷ আপনাকে আমি প্রচুর শাসন করবো। আমার কথার বাহিরে গেলে ঘরে তুফান শুরু করে দিবো। রান্নাঘরের পাতিলগুলো ফ্লোরে আঁছাড় দিবো। আপনাকে ঘরের বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখবো। আপনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিবো।
– সবই ঠিকাছে৷ শেষের লাইনটা ছাড়া। এবার তো চুলের মুঠি ধরেছি। ফের ছেড়ে যাওয়ার কথা বললে চুল একদম গোঁড়া থেকে উপড়ে ফেলবো৷ একটা চুলও মাথায় থাকবে না।

সোহানের গলা পেঁচিয়ে ধরলো মায়া।
– চলে যাওয়ার হুমকি যদি না দেই তাহলে বউ হলাম কিসের?
– অন্যের দুর্বলতা নিয়ে মজা করতে খুব ভালো লাগে তাই না?
– উহুম মজা না৷ আপনার রাগের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাটা দেখতে ভালো লাগে।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-২৯

0

নষ্ট গলি পর্ব-২৯

লেখা-মিম

সালমানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রতন আর শামীম গেছে বাহির থেকে খাবার আনতে। সালমান নিজের রুমে বসে কথা বলছে শিমুর সাথে। গুনে গুনে পুরো দুঘন্টা পার হয়ে গেলো। মায়ার হাজার ডাকের পরও দরজা খুললো না সোহান। এমনকি ভিতর থেকে একটু আওয়াজ করলো না৷ এই দুঘন্টায় তিনটা সিগারেট শেষ করেছে সোহান৷ বাহিরে দরজায় মাথা ঠেকিয়ে বসে ফ্লোরে বসে আছে মায়া। মাথাটা প্রচন্ড রকমে ঘুরাচ্ছে ওর। সকাল থেকে না খেয়ে আছে। তারউপর সকাল থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। আপাতত ওর আর কান্না পাচ্ছে না। চোখের সামনে ধীরে ধীরে সব ঘোলাটে হয়ে আসছে। বসে থাকার ক্ষমতাটা শেষ হয়ে আসছে ওর। গলা শুকিয়ে আসছে প্রচন্ড রকমে। পানি খাওয়া দরকার। ফ্লোর ছেড়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলো মায়া। নূন্যতম জোর পাচ্ছে না শরীরে। হাত পা কাঁপছে ওর। পানির গ্লাসটা হাতে নিতেই চোখের সামনে সমস্ত কিছু অন্ধকার হয়ে গেলো। হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে ভেঙে গেলো। ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো মায়া। ভাঙা কাঁচের উপর বাম হাতটা পড়লো। কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত চারটা কাঁচের টুকরা ঢুকেছে। গ্লাস ভাঙার আওয়াজ পেয়ে ফোন কানে নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে এলো সালমান। মায়াকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে ফোন ফেলে মায়ার কাছে ছুটে এলো সালমান। বাহির থেকে সজোরে চিৎকার করলো সে।

– ভাইয়া, জলদি বের হও। মায়া সেন্সলেস হয়ে গেছে।

সালমানের চিৎকার শুনে বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো সোহান। রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে মায়াকে কোলে তুলে নিয়েছে সালমান। মায়ার রুমের দিকে যাচ্ছে সে। সালমানের পিছু পিছু সোহানও যাচ্ছে। চেহারা থেকে মূহূর্ত্বে রাগটা সরে গিয়ে দুশ্চিন্তার ছাপ ভেসে উঠেছে। মায়াকে খাটে শুইয়ে দিলো সালমান। মায়ার পাশে হেলান দিয়ে বসেছে। সোহান। একহাতে মায়ার কপালে হাত দিয়ে অন্য হাতে মায়ার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে সোহান। মায়ার বাম হাতটা বিছানার সাথে লেগে আছে। হালকা গোলাপী রঙের চাদরটায় লাল রক্ত লেপ্টে যাচ্ছে। রক্ত দেখে আৎকে উঠলো সোহান। মেয়েটা আবার রগ কাটলো না তো। বাম হাতটা ওর হাতে নিয়ে ভালোভাবে দেখছে সোহান।
নাহ, রগ কাটেনি। কাঁচ বিঁধেছে।

– সালমান, এক গ্লাস পানি আন। আর স্বপন ভাইয়ের নাম্বারটা আছে না?
– হ্যাঁ।
– উনাকে কল করে বল সোহান ভাইয়ের ওয়াইফ সেন্সলেস হয়ে গেছে৷ হাতে কাঁচের টুকরাও ঢুকেছে। এখনি বাসায় আসতে বল।
– যাচ্ছি।
– পানিটা আগে দিয়ে যা।
– হুম হুম৷ দিচ্ছি।

রুমের এসি ছেড়ে দিলো সোহান। ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে এক জগ পানি আর গ্লাস দিয়ে গেলো সালমান। জগ থেকে একটু একটু পানি নিয়ে মায়ার মুখে ছিটাচ্ছে সোহান। তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। মুখের উপর ছিটিয়ে থাকা পানিগুলো টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছে সোহান। মায়া চোখ খুলছে না৷ মনে হচ্ছে যেনো কলিজায় কামড় লেগে আছে৷ দুশ্চিন্তায় কপালের মাঝে ভাঁজ পড়ে গেছে সোহানের।

– ভাইয়া, স্বপন ভাইকে ফোন করেছিলাম।
– কি বললো?
– দুই তিন মিনিট লাগবে আসতে।
– উনি চেম্বারে না?
– ছিলো। আমাদের বাসার সামনে দিয়েই উনার বাসায় ফিরছিলো। আমাদের গলিতেই আছে। চলে আসবে।
– মায়া তো চোখ খুলছে না।
– টেনশন নিও না। আসলে ও তোমার রাগ দেখে অভ্যস্ত না তো। তাই বেশি ভয় পেয়েছে। ঠিক হয়ে যাবে।
– হাত থেকে তো ব্লিডিং হচ্ছে। কাঁচগুলো কি বের করবো?
– না। ওয়েট করো। স্বপন ভাই আসুক।

বাসার কলিংবেল বাজছে। খুব দ্রুতগতিতে সালমান যেয়ে দরজা খুললো। স্বপন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

– সোহান বিয়ে করেছে? সিরিয়াসলি?
– হ্যাঁ।
– শুনলাম না তো কিছু।
– আমরা সামনে অনুষ্ঠান করবো। তাই এখন কাওকে জানাইনি।
– কোন রুমে?
– ঐ যে। ঐটাতে।

স্বপন দেখা মাত্রই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সোহান। মায়ার পাশে বসার জায়গা করে দিলো স্বপনকে। মায়ার মুখের দিকে একনজর তাকালো স্বপন। এরপর নজর গেলো হাতের দিকে। ফোনে সালমান বলেছিলে হাতে কাঁচ ঢুকেছে। কাঁচগুলো আগে বের করতে হবে। মায়ার হাতটা ঘেটেঘুটে দেখছে স্বপন। তিনটা ছোট কাঁচের টুকরা আর একটা মাঝারি সাইজের টুকরা আছে। মোটামুটি বড় একটা অংশ কেঁটেছে কিন্তু সেখানে কাঁচ নেই।

– সালমান?
– জ্বি?
– নিচে যাও। আমার গাড়িতে সার্জারি কিট আছে। আর মেডিসিনের নাম লিখে দিচ্ছি। ফার্মেসি থেকে নিয়ে আসো৷
– আচ্ছা।

কাগজে ঔষধের নাম লিখে দিলো স্বপন। সালমান নিচে গিয়েছে মেডিসিন আর সার্জারী কিট আনতে। সোহানকে পাশে বসতে বললো স্বপন। ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে বসার টুল টেনে এনে স্বপনের মুখোমুখি বসলো সোহান।

– বিয়ে করেছো কবে?
– এইতো ৪ মাস হয়ে যাচ্ছে।
– তোমার সাথে গত সপ্তাহেও দেখা হয়েছে। কই কিছু বললে না তো?
– মনে ছিলো না।
– মেয়েকে দেখে তো মনে হচ্ছে বয়স একদম কম।
– হ্যাঁ। ১৮ বছর।
– এতটুকুন একটা মেয়েকে এভাবে কেও মারে সোহান?

স্বপনের মুখের দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে আছে সোহান।

– মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো তো। দুগালে হাতের আঙুলের ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। ছয়মাসও হয়নি বিয়ে করেছো। এখনই এভাবে মারামারি শুরু করে দিয়েছো। হাতে কাঁচ ঢুকলো কিভাবে? গ্লাস টাইপ কিছু দিয়ে মেরেছো?
– না৷ ভাঙা কাঁচের উপর পড়ে গিয়েছিলো।
– পড়ে গিয়েছে নাকি ধাক্কা দিয়েছো?
– না না। ধাক্কা দেইনি। পড়ে গিয়েছে।
– বয়স বাড়ছে তোমার। এখনও নাকের ডগায় রাগ চড়ে থাকে তোমার। এগুলো কোনো কথা? মেয়েকে যদি এভাবে মারো তাহলে কি ও তোমার সংসার করবে?
– বাসা থেকে চলে গিয়েছিল। এজন্যই মেরেছি।
– তাই বলে এভাবে মারবে? দেখো তো মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গেছে।
– আমি আসলে বুঝিনি এমন কিছু ঘটে যাবে।
– রাগটা কমাও সোহান। আর কত? বিয়ে শাদী করেছো। এখন নিজের উপর কন্ট্রোল আনো। এত ছোট বউ পেলে তো কোলে বসিয়ে রাখতাম সারাক্ষণ। আর তুমি কিনা এভাবে মারলে।

চোখ পিটপিট করছে মায়ার। স্বপন দেখতে পেয়ে উঠে দাঁড়ালো। সোহানকে ইশারা দিলো মায়ার পাশে বসার জন্য। রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। তার মতে এই মূহুর্তে চোখ মেলে সোহানকে চোখের কাছে দেখাটা মায়ার জন্য খুব জরুরী।

(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-২৮

0

নষ্ট গলি পর্ব-২৮

লেখা-মিম
বিয়ে সেড়ে মাত্রই বাসায় ফিরেছে ওরা। মায়াকে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য ইশারা দিলো সোহান। চুপচাপ মাথা নিচু করে রুমে চলে গেলো মায়া। সালমানও চলে গেলো নিজের রুমে। খানিকক্ষণ বিশ্রাম করবে তাই। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সোফায় গা ছেড়ে হেলান দিয়ে বসলো সোহান। প্রচন্ড পানির পিপাসা লেগেছে ওর। মনে হচ্ছে পুরো এক জগ বরফ ঠান্ডা পানি এখনই শেষ করে ফেলবে। রতনকে ডেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিতে বললো সোহান৷ চোখ বন্ধ করে সোফার উপর ঘাড় ফেলে বসে আছে সে৷ কিছুক্ষণ পর পানি নিয়ে এলো রতন। এক গ্লাস পানি খাওয়ার পর আবার আরেক গ্লাস পানি চাইলো সোহান৷ রতন পের গ্লাস পানি এনে দিলো সোহানকে। একটু পরপর থেমে থেমে পানি খাচ্ছে সোহান।
– রাতের রান্না হয়েছে?
– না ভাই৷ তরকারী কাইটা রেডি করতাছি।
– রান্না করতে হবে না। টাকা দিচ্ছি বাহির থেকে খাবার কিনে আনো।
– আইচ্ছা।
– মায়ার চিঠিটা কোথায়?
– আমার ঘরে।
– নিয়ে আসো।
– আইচ্ছা।
পা থেকে মোজা গুলো খুলে সোফার পাশে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো সোহান। হালকা গরম পানিতে গোসল করাটা এই মূহূর্ত্বে অতি জরুরী বলে মনে হচ্ছে। তবে তার চেয়ে আরো বড় জরুরী কাজটা হলো মায়াকে শায়েস্তা করা।
– ভাই,,,, চিঠি।
চিঠিটা হাতে নিলো সোহান। খুব বেশি বড় না। মাত্র চার লাইনের চিঠি।
” আমি তোমায় না দেখি
তুমি আমার না হও
আমি যত দূরে যাই চলে
তুমি কাছে রও।”
পানি খাওয়ার পর রাগ কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছিলো। চিঠি পড়ার পর মনে হলো সেই রাগের আগুনে কেরোসিন পড়েছে। হাতের মুষ্টিতে চিঠিটা নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলেছে সোহান। পায়ের কাছে বাসায় পড়ার রাবারের স্যান্ডেলগুলো পড়ে ছিলো। একটা স্যান্ডেল হাতে নিয়ে মায়ার রুমে গেলো সোহান। মায়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। রুমের গেট আটকে দিয়ে বারান্দা থেকে মায়ার চুলের মুঠি ধরে ঘরে নিয়ে আসলো সোহান। পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে এলোপাথাড়িভাবে পেটাচ্ছে মায়াকে।
– কবি হবি তুই? কবি হওয়ার শখ জাগছে? তুই আমারে চার লাইনের কবিতা লিখে ঐ পাড়ায় আবার গেছোস? ছোটলোকের বাচ্চা। বেঈমান। আমারে রাইখা যাওয়ার এত্ত শখ তোর? দূরে যাবি আমারে রাইখা?
জুতা ফেলে এবার দুগালে লাগাতার চড় দিতে থাকলো সোহান।
– এত্ত শখ কেন আমারে রাইখা যাওয়ার? হ্যাঁ? কোনো কিছুর অভাব রাখছি? ভালোবাসা সম্মানে কোনো অভাব রাখছি? মাথায় তুলে রাখছি তোরে আমি। ঐ লোক আমার বাপ হইছে তো কি হইছে? তুই জানোস না তার সাথে আমার সম্পর্ক কেমন? ঐ লোক এটা সেটা এসে বলবে আর তুই ঘর ছেড়ে চলে যাবি? আমি তোর কিচ্ছু না?একটাবার মনে করলি না আমি চলে গেলে সোহানের কেমন কষ্ট লাগবে? সোহান তো আবার একা হয়ে যাবে? আমাকে দুই পয়সার দাম দিতে মন চায় না? আমার কষ্ট হয় না? আমি মানুষ না? আমার কি কোনো ফিলিংস নাই? ঐ লোক তোরে কি বললো না বললো ঐটা তোর কাছে মূখ্য আর আমার ফিলিংস? ঐটা মূখ্য না? কেমনে বের হয়ে গেলি তুই? ঐ এই সংসার কি তোর না? আমি কি তোর হাতে সংসার বুঝায়া দেই নাই? তুই তোর সংসার ফালায়া কেন বের হইলি?
ফুঁপিয়ে কাঁদছে মায়া। সোহানের অভিযোগ মাখা কথাগুলো ছুরির মতো কলিজায় গিয়ে বিঁধছে। মানুষটার ভালো চাইতে গিয়ে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। সোহানকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মায়া।
– সরি।
এক ধাক্কায় মায়াকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে খাটের উপর ফেলে দিলো সোহান। প্রচন্ড রাগে ফুঁসছে ও। চোখে পানি নেই। অথচ কষ্টের গভীরতা সোহানের চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মায়া।
– একদম ভালোবাসা দেখাতে আসবি না। তুই আমাকে কখনো আপন ভাবিসনি। আমি একাই তোকে ভালোবেসে গেছি।
– আমি আপনাকে ভালোবাসি। সত্যিই ভালোবাসি।
– তার নমুনা আজকে আমি দেখেছি। আমি তোকে এত ভালোবাসি। তবু তুই কিভাবে ভাবতে পারলি তুই চলে গেলে আমি ভালো থাকবো? আমার শরীরের একটা অঙ্গ হয়ে গিয়েছিস তুই। তোকে ছাড়া আমি শান্তি পাই না। বুঝিস না? আমাকে বুঝতে ইচ্ছা হয় না তোর তাই না? ভালোই তো বাসিস না। বুঝবি কিভাবে? দূরে যাওয়ার খুব শখ তাই না? যা। দূরেই থাক তুই। আমার কাছে তোকে আসতে হবে না৷ কথাও বলতে হবে না। তোকে ভালোবেসে বিপদে পড়ে গেছি। তোকে চোখের সামনে না দেখলে তো আমিই দম আটকে মরে যাবো। তাই তোকে আবার ফেরত এনেছি। যাতে তোকে চোখের সামনে দেখে এটলিস্ট নিঃশ্বাসটুকু নিতে পারি। তোর কাছেও আমি আসবো না। তোর সাথে আজকের পরে আর কোনো কথাও বলবো না। তুই থাক তোর মতো।
মায়ার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে বেরিয়ে গেলো সোহান। পিছু পিছু যাচ্ছে মায়া।
– প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। বড়সড় একটা ভুল করে ফেলেছি।
মায়ার মুখের উপর ঠাস করে দরজাটা আটকে দিলো সোহান। আলমারী থেকে গেঞ্জি ট্রাউজার বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো গোসল সাড়তে। বাহির থেকে ডাকছে মায়া,
– শুনছেন, দরজাটা একটু খুলুন প্লিজ। আমাকে মাফ চাওয়ার একটা সুযোগ তো দিন।
বিগত আধাঘন্টা যাবৎ দরজা ধাক্কাচ্ছে
মায়া। বারবার এক কথা বলেই যাচ্ছে দরজাটা একটু খুলুন। আমার কথাগুলো একটু শুনুন। সালমান এসে কয়েকবার ডেকে গেছে। ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসছে না। সোহান গোসল সেড়ে চুপচাপ ফ্যানের নিচে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। যত খুশি দরজা ধাক্কাতে থাকুক। মায়ার সাথে কোনো কথা বলবে না সে৷ মেয়েটা জঘন্য খারাপ। তাই তো ওকে ফেলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-২৭

0

নষ্ট গলি পর্ব-২৭

লেখা-মিম

ঢাকা এসে পৌঁছেছে জাহিদ আর সোহান। গাড়িতে উঠে বসেছে মায়ার গলির উদ্দেশ্যে। সাথে সালমানও আছে। ইতিমধ্যে চার পাঁচবার সোহানকে জিজ্ঞেস করে ফেলেছে আমরা কোথায় যাচ্ছি? উত্তরে কিছুই বলেনি সোহান। বিরক্ত লাগছে সালমানের। এবার বেশ চেঁচিয়েই জিজ্ঞেস করলো।
– যাচ্ছি কোথায় আমরা? বলতে পারছো না?
– তোকে কিছু কথা বলবো। মন দিয়ে শুনবি।
– কি?
– মায়াকে আমি বিয়ে করিনি।
চোখ বড় হয়ে গেছে সালমানের। সেই সাথে কপালের মাঝেও কয়েকটা ভাঁজ পড়ে গেছে।
– তাহলে মায়া কি হয় তোমার?
– আগে আমাকে কথা শেষ করতে দে। এরপর কথা বলিস। মায়া আসলে নরমাল কোনো মেয়ে না৷ ও একজন প্রফেশনাল প্রস্টিটিউট ছিলো। জন্মসূত্রে। আমি ওকে ঐ পাড়া থেকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলাম। ওর কাছে আমি প্রচন্ড শান্তি পাই। ভালোওবাসি খুব। আমি চাই ও আর দশটা নরমাল মেয়েদের মতো লাইফ লিড করুক। ওকে পুরো সম্মানটুকু দিতে চাই।
-…………..
– সালমান, আমার উপর খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে তাই না?
– আমার এই মূহূর্ত্বে কিভাবে রিএ্যাক্ট করা উচিত ভেবে পাচ্ছি না।
– আজ সাড়ে এগারোটার দিকে বাবা এসেছিলো। বাবা মায়ার সম্পর্কে সব জেনে গেছে। এখানে এসে ওকে অনেক ধরনের কথা শুনিয়েছে। তাই ও চলে গেছে। এখন আমি যাচ্ছি ওর পাড়াতে। আজই ওকে বিয়ে করবো। তুই আমার ভাই। তাই তোকে নিয়ে যাচ্ছি। আর কেও থাকুক বা না থাকুক আমি চাই তুই আমার সামনে থাক বিয়ের সময়।
-ওহ্। আমি তো নয়টার দিকেই চলে গেলাম শিমুর সাথে দেখা করতে। তাই বাবা আসার খবর জানি না।
– সত্যিটা জানার পর মায়াকে মেনে নিতে তোর অসুবিধা হবে তাই না?
– তুমি ওকে নিয়ে খুশি তো?
– আমাকে দেখে বুঝিস না?
– ব্যস। তুমি আমাকে কিছু বলোনি। আমিও কিছু শুনিনি। মায়া কোত্থেকে এসেছে সেসব আমার জানার দরকার নেই। ও কেমন সেটা জানার দরকার। আর সেটা আমি জানি। আজকের পরে এই ব্যাপারে কোনো কথা আমি শুনতে চাই না। তুমিও বলবে না। এতদিন ওর সাথে আমার সম্পর্ক যেমন যাচ্ছিলো তেমনই থাকবে।

সোহানের চোখে মুখে স্বস্তি ফুটে উঠেছে। পরম যত্নে ছোট ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো সে।

-বাবার সাথে কথা হয়েছে?
– হুম।
– কি বলেছো?
– যা শোনানো অতি জরুরী ছিলো তাই শুনিয়েছি।
– বাবা কি বললো?
– মায়াকে নিয়ে চলে যাবো বলার পর বললো এভাবে না থেকে বিয়ে করো। আমি পার্টির এ্যারেঞ্জ করি।
– হা হা হা। ঘাবড়ে গেছে। তোমার জিদ কেমন তা তো জানা আছে।
– হুম।
– তো খালি হাতে বিয়ে করবে? বিয়ের শাড়ী, জুয়েলারি কিছু কিনে নিয়ে যাও।
– ঐ বেঈমানের জন্য একটা সুতাও নিবো না। যেটা পড়ে আছে সেটা পড়েই বিয়ে করবে।
– এত ক্ষেপে আছো কেনো? ঠান্ডা হও। আজ তোমার বিয়ে।
– ক্ষ্যাপার মতো কাজ করলে তো ক্ষেপবোই। ও কোন সাহসে বাসা থেকে বের হলো? বাবা কি বললো না বললো সেসব শুনে বের হয়ে গেলো। আমি যে ভালোবাসলাম সেটার কোনো মূল্য নেই?
– আচ্ছা, হতে পারে বাবার কথা শুনে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারেনি। তাই হয়তো…..
-আমি এত কিছু জানিনা। ও বের হবে কেনো এটা হচ্ছে মূল কথা। আমি ওকে যাওয়ার আগে না করে গেছি বাসা থেকে যেনো না বের হয়। তবু কেনো বের হলো? আমি কি কুকুর বিড়াল? আমার কোনো দাম নেই?

সালমান জানে মায়ার উপর ঝাল মিটানোর আগ পর্যন্ত সোহান ঠান্ডা হবে না। তাই সে চুপ করে গেলো।

মায়ার পাড়াতে এসে গাড়ি থামলো। জাহিদ নেমে চলে গেলো পাশের গলিতে। ওখানে মসজিদ থেকে হুজুর নিয়ে আসতে৷ সোহান আর সালমান সেই গলি দিয়ে হেঁটে ভিতরের দিকে যাচ্ছে। এমন সরু গলিতে গাড়ি নিয়ে ঢুকা সম্ভব না। তাই গাড়িটা গলির মাথাতেই ড্রাইভারকে বসিয়ে রেখে এলো সোহান।

জানালার পাশে বসে আছে মায়া। সেই প্রথমদিনের মতো। যেখানে সোহান ওকে প্রথমবারের মতো দেখছিলো। নিচে থেকে মায়ার দিকে নজর পড়লো সোহানের। আজ আর সেদিনের মতো মুগ্ধতা তৈরী হচ্ছে না। মেজাজ চরম থেকে চরম স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে এই মূহূর্ত্বে চুলের মুঠিতে ধরে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিচে নিয়ে আসতে। সালমানকে নিচে দাঁড় করিয়ে সোজা দোতলায় মায়ার রুমে চলে গেলো সোহান। সজোরে ধাক্কা দিয়ে মায়ার রুমের দরজাটা খুললো। আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠলো মায়া। বিছানায় শুয়ে ছিলো মায়ার মা বিউটি। এভাবে সোহানকে ঘরে ঢুকতে দেখে শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসলেন।
মায়ার দিকে এমন ভাবে সোহান তাকিয়ে আছে যেনো মনে হচ্ছে ওকে এই মূহূর্ত্বে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলবে। চোখজোড়া প্রচন্ড রাগে লাল হয়ে আছে সোহানের। আর মায়ার চোখ লাল হয়ে গেছে অনবরত কাঁদতে কাঁদতে। সোহানকে দেখে কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেছে ওর। সোহান এগিয়ে এসে মায়ার ডান হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে বললো
– নিচে চল।
– বাবা, আপনে আমার মাইয়্যাডারে কই নিয়া যাইবেন?
– কোনো কথা বলবেন না আপনি। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আপনার মেয়েকে আমার দায়িত্বে নিয়েছি। অতএব আমাদের মাঝে কোনো ধরনের কোনো কথা আপনি বলবেন না।
– ঐ তুই নাম।
– হাত ছাড়েন।
– কিহ্? আবার বল?
– হাত ছাড়েন।
এবার মায়ার দু হাতের বাহু ধরে টেনে খাট থেকে নামালো সোহান৷ কোলে তুলে নিলো মায়াকে। মায়ার বাম হাতে ছোট একটা কাঁচের বোতল দেখা যাচ্ছে। সোহান জানে এটা কিসের বোতল। চাইলে এখনই এই বোতল হাতে নেয়ার অপরাধে ওর হাত ভেঙে দিতে পারতো। তবে সে এখন তেমন কিছুই করবে না। বিয়েটা হোক। এরপর বাসায় নিয়ে ওকে জন্মের শিক্ষা দিবে৷ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে মায়াকে নিয়ে। মায়া লাগাতার চেঁচামেচি করে যাচ্ছে, “আমাকে ছাড়ুন”।
অন্যান্য ঘরগুলো থেকে মেয়েরা বেরিয়ে এসেছে তামশা দেখার জন্য। তাদের কাছে মনে হচ্ছে যেনো সিনেমা দেখছে। সোহানের পিছু পিছু বাকিরাও নেমে আসছে শেষ অব্দি কি হয় দেখার জন্য। জোনাকি যেখানে বসে কাস্টমারদের সাথে দরদাম ঠিক করে সেখানে মায়াকে নিয়ে ঢুকলো সোহান। জোনাকি সোফায় দু পা উঠিয়ে পান চিবুচ্ছে আর পুরোনো দিনের গান শুনছিলো,
– হাওয়া ম্যা উড়তা যায়ে, মোরা লাল দুপাট্টা মাল মাল কা…..

সোহানকে দেখে দু পা নিচে নামিয়ে বসলো। পানের পিক দানীতে ফেলে বললো,
– কোনো সমস্যা? মাইয়্যাডারে এমনে কোলে নিয়া আইলেন যে।
– ও পালিয়ে এসেছে বাসা থেকে। তাই আজ ওকে বিয়ে করবো। যাতে আর কোথাও ছুটতে না পারে। মায়ার রেগুলার কাস্টমার কারা ছিলো ওদের নাম ঠিকানা সব রেডি করো। কাগজে লিখে আমাকে দাও। আর আরেকটা ছেলে আছে। ওর কাছে নাকি মায়ার ভিডিও আছে। ঐ ছেলের এড্রেস অতি জরুরী। ওরটা সবার আগে আমাকে ব্যবস্থা করে দিবে।
– কিয়ের ভিডু স্যার? ঐ যে নীল ভিডু?
– কিহ্? নীল ভিডিও কি?
– ঐ যে কুকামের ভিডু করে না ওগুলা?
– ওহ্। হ্যাঁ ওগুলা।
– চিন্তা কইরেন না৷ পাইয়া যাইবেন।
– টাকা লাগবে?
– না। যেই টাকা দিছেন তাতেই চলবো। ছেমড়ি দুপুরে আইছে পরেই কইছিলাম তোরে এই জায়গায় রাখুম না। স্যার অনেকটি টাকা দিছে আমারে। তুই যে পালায়া আইছোস তোরে আবার ধইরা নিয়া যাইবো দেখিস। সে তোরে ভালোবাসে। পুরুষ মাইনষের চোখ দেখলেই বুঝতে পারি। সে তোরে খালি ব্যবহারের লাইগা নেয় নাই। বিউটিও অনেক্ষণ বুঝাইসে। ছেমড়ি খালি এক কথাই কয় একট রাতই তো। এরপর সব ঝামেলা শেষ হয়া যাইবো।
– ওর ঝামেলা শেষ করাচ্ছি আমি।

পিছন থেকে জাহিদ এসে ডাক দিলো সোহানকে।
– স্যার…
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে সালমান আর জাহিদ দাঁড়িয়ে আছে। সাথে একজন হুজুর। দেখে মনে হচ্ছে সুযোগ পেলে এখনই এখান থেকে দৌঁড়ে পালাবে।
– বিয়ে কি উনি করাবে?
– জ্বি স্যার।
– শুরু করেন।

বিবাহ প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন কাজী। আপাতত তিনি মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন কবুল শোনার জন্য। মায়া মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে। সোহান খুব পীড়াপীড়ি করছে কবুল বলার জন্য। হাতের বিষের বোতলটা খুলে সোহানকে বললো
– আমাকে একদম জোর করতে আসবানা। আর নয়তো আমি বিষ খেয়ে মারা যাবো।

মায়ার গালে কষে থাপ্পর লাগালো সোহান। থাপ্পড় এতটাই জোড়ে ছিলো যে টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেলো ও। হাত থেকে বিষের বোতলটা ছিটকে পড়ে গেলো। হাত ধরে আবার টেনে তুললো সোহান।
– কবুল বলবি নাকি আবার থাপ্পড় খাবি?
– কবুল।
(চলবে),,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

নষ্ট গলি পর্ব-২৬

0

নষ্ট গলি পর্ব-২৬

লেখা-মিম

বাসাতেই ফোনটা রেখে গেছে মায়া। মিটিং সেড়েই মায়ার ফোনে কল দিচ্ছে সোহান। দুইবার কল করার পর তিনবারের মাথায় কলটা রিসিভ করলো রতন৷
– ভাই…..
– মায়া কোথায়?
– ভাবী তো গেছে গিয়া।
– মানে?
– যেইখানতে আপনে তারে নিয়া আইছিলেন সেইখানে গেছে গিয়া। আপনের আব্বায় আইছিলো। ভাবীরে বহুতক্ষন বহুকিছু বুঝাইলো৷ ভাবী বড় সাহেবের বুঝ মাইন্না গেছে গিয়া।
– বাবা কি বলেছে ওকে?
– কইছে আপনের লগে ভাবী থাকলে নাকি আপনের বদনাম হইবো। আপনেরে অপমান দেখতে হইবো। আরো বহু কিছু কইসে। এরপর ভাবী আমার হাতে একখান চিঠি দিয়া ব্যাগ গুছায়া গেছে গিয়া। জিগাইসিলাম, ভাবী কই যান। আমারে কইলো আমারে যেখানে মানায় সেইখানে যাই।
সোহান দাঁত কিটমিট করছে। এই মিটিং টা চাইলে সালমানকে দিয়েই সামলানো যেতো। ওকে এমন পীড়াপীড়ি করে সিলেট পাঠানোর পিছনে এই কারন ছিলো তাহলে। সারাবছর ছেলের খবর থাকে না, আজ এসেছে ছেলের অপমান-সম্মান নিয়ে ভাবতে। বন্ধু মহলে যখন বাপ মায়ের পরকীয়ার কুকীর্তি নিয়ে আলোচনা হয় তখন বুঝি ছেলের অপমান হয়না? যেমন মেজাজ খারাপ হচ্ছে বাবার উপর তারচেয়ে দ্বিগুন খারাপ হচ্ছে মায়ার উপর। ইচ্ছে হচ্ছে থাপড়িয়ে চোয়ালের দাঁত সব ফেলে দিতে। আদরে আদরে ঠ্যাং বেশি লম্বা হয়ে গেছে৷ তাই ধেইধেই করে ঘরের বাইরে যাওয়ার শখ জেগেছে ওর। তুলে আছাড় মারলেই সব ঠিক হবে। বাবার নম্বরে ডায়াল করলো সোহান। ফোনের সুইচ অফ দেখাচ্ছে। এরপর কল করলো নজরুল সাহেবের পারসোনাল সেক্রেটারি মিজানের কাছে। কল রিসিভ করলেন উনি।
– হ্যালো স্যার….
– আপনার বড় সাহেব কোথায়?
– এইতো এখানেই।
– ফোনটা দিন।
মিজান ফোনটা নজরুল সাহেবের দিকে এগিয়ে বললো,
– সোহান স্যার ফোন করেছেন।
ফোনটা কানে নিলেন নজরুল সাহেব।
– হ্যাঁ সোহান বলো।
– আমাকে নিয়ে এত সমস্যা কেনো তোমার?
– কিসের সমস্যা?
– আমি যদি বাইরের বেশ্যা ঘরে তুলে এনে ভালো থাকি তাহলে সমস্যা কোথায়?
– দেখো ও আমাদের যোগ্য না। তোমার জন্য মেয়ে দেখছি। কয়েকটাদিন অপেক্ষা করো। আমি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবো। যদি এখনই বিয়ে না করতে চাও তাহলে সমস্যা নেই। এংগেজমেন্ট করে রাখলাম৷ মেয়ের সাথে ঘুরবে ফিরবে। চাইলে লিভ টুগেদারেও যেতে পারো। সেটা তোমরা বুঝে নিও।
– মায়ার সাথে লিভ টুগেদারে ছিলাম সেটাতে সমস্যা কি?
– তুমি কি নিজের স্ট্যাটাস ভুলে গেছো? ঐ মেয়েটা প্রফেশনাল প্রস্টিটিউট। তুমি কেনো ওর পিছনে ছুটছো? তুমি আন্দাজ করতে পারবে না সোসাইটিতে এই মেয়েকে নিয়ে তোমার কতটা হেনস্তা হতে হবে। যতটুক সম্মান তোমার আছে পুরোটা তোমাকে হারাতে হবে।
– আমি ছোটবেলা থেকেই হেনস্তা হয়ে আসছি। তোমার আর মায়ের পরকীয়ার ব্যাপারটা এমন কোনো মানুষ বাদ নেই যে জানে না। তুমি যে আমার বয়সী মেয়ের সাথে বিগত সাত বছর যাবৎ ঘুরছো সেটা কি? এর আগে আরো দুই মহিলার সাথে প্রেম করেছো। ইচ্ছামতো টাকা পয়সা লুটিয়েছো। তুমি ভালো? যাদের সাথে ঘুরো তারা ভালো? তারাও প্রস্টিটিউট। পার্থক্য এতটুকুই তোমরা সেক্স করো ফাইভস্টার হোটেলে বা কোনো ডুপ্লেক্স ভিলায়। আর মায়ারা সেক্স করে পুরান ভাঙাচোরা বিল্ডিং বা টিনের ঘরে। তোমরা ঐ মেয়েদের পিছনে লাখ টাকা ঢালো প্রতিমাসে। মায়ারা পায় ২-৩ হাজার করে। আর মা? মায়ের পরকীয়ার কথাও কম বেশি সবাই জানে৷ এগুলো নিয়ে সোসাইটির লোকজন, ফ্রেন্ড সার্কেলে কম কথা শুনিনি। আর আমি কি দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা? মায়ার আগেও তিন চারটার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন ছিলো আমার। সে হিসাব করতে গেলে মায়া আর আমার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷ ও আমার জীবনে আসার পর থেকে মনে হয়েছে হ্যাঁ আমি বেঁচে আছি। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি। শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারছি। প্লিজ এই শান্তিটুকু আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না। যদি তোমার বা মায়ের কোনো সমস্যা থাকে মায়াকে মেনে নিতে বা তোমাদের যদি মনে হয় মায়ার কারনে তোমাদের অপমান হতে হবে। তাহলে ঠিকাছে, আমি আমার মায়াকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো। তোমাদের ফ্যামিলিতে আমি কখনো পা দিবো না। ধরে নিও সোহান নামের কেও তোমাদের জীবনে কখনো ছিলোই না।
– দেখো সোহান, তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি তোমাকে ছাড়া অচল। বিজনেসটা তোমাকে ছাড়া আমি মেইনটেইন করতে পারবো না। সালমানের হাতে দায়িত্ব দেয়া মানে ব্যবসাটাকে মাঝ সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া। তুমি যত যাই করো না কেনো তোমার সাথে যেভাবে পারি আমি রিলেশন টিকিয়ে রাখবো। তাই হয়তো আজ এভাবে বলার সাহস পাচ্ছো। যাইহোক বড় হয়েছো। যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছেলে তুমি। যদি ঐ মেয়েকে নিয়ে তুমি সিরিয়াস হয়ে থাকো তাহলে বিয়ে করে নাও। আমি চট্টগ্রামে রিসিপশন পার্টির এ্যারেঞ্জ করি। ঢাকায় তো সবাইকে বলে বেড়াচ্ছো তুমি বিয়ে করেছো। রিলেটিভরা তোমার বিয়ের খবর শুনলে বলবে পার্টি দেইনি কেনো?
– মায়ার কথা তোমাকে কে বলেছে?
– এক ক্লাইন্ট বললো। কোন পার্টিতে নাকি মায়াকে দেখেছে। বললো তুমি নাকি বউ নিয়ে গেছো। তখনই খটকা লেগেছিলো বিয়ে করলে তো আমাদের অবশ্যই জানাতে। খবর নিলাম ম্যানেজারের কাছ থেকে। ম্যানেজার সব বললো মায়া কে, কি করে। অফিসের কোন এক এমপ্লয়ি নাকি বাকি এমপ্লয়িদের বলে বেড়াচ্ছে মায়া কি করতো। সেখান থেকে ম্যানেজার জানতে পেরেছে। দেখো তুমি যদি ওকে নিয়ে বাকি লাইফ কাটাতে চাও তাহলে মায়ার অতীত ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করো। কোনোভাবেই এসব কথা তোমার মা, রিলেটিভ কাওকে জানতে দেয়া যাবে না।
– হ্যাঁ সেটা আমি দেখছি।
– তোমার বোধ হয় আমাদের উপর অনেক ক্ষোভ তাই না?
– ক্ষোভ রেখে লাভ কি? তোমরা কি আমার জন্য যার যার পরকীয়া ছেড়ে দিবে? সালমান আর আমি ছোট থেকে অবহেলা পেয়েই বড় হয়েছি। মানুষ হয়েছি বাড়ির কাজের লোকদের হাতে৷ থাক বাবা। সেসব আমি আর বলতে চাই না। আমি জাস্ট শান্তি চাই। আর তুমি আজকের কাজটা খুব বেশিই জঘন্য করেছো। মেয়েটা চলে গেছে। প্লিজ ফের কখনো এ ধরনের কথা মায়াকে বলবে না। ওকে নিয়ে সমস্যা থাকলে আমাকে বলো। ওকে নিয়ে আমি দূরে চলে যাবো। রাখি।
কলটা কেটে দিলো সোহান। সামনেই বসা ছিলো জাহিদ। সে জানে এখনই সোহান ওকে প্লেনের টিকেট বুক করতে বলবে। জাহিদ ফোনে কথা চলাকালীন অবস্থাতেই টিকেট বুক করে ফেলেছে।
– জাহিদ…
– জ্বি স্যার?
– খোঁজ নিয়ে দেখোতো টিকিট আছে কিনা ঘন্টা দুয়েক পরের?
– আছে স্যার। বুক করে ফেলেছি।
– তামাম দুনিয়াতে তুমিই একজন মানুষ যে কিনা আমি কিছু বলার আগেই আমার মনের কথা বুঝে ফেলো। মায়ার সাহসটা চিন্তা করো একবার। ও ঐ জায়গায় আবার চলে গেছে। ছোটলোকের বাচ্চা। বেশি আদর করেছি তো তাই আদরের মর্ম দিলো না। আচ্ছা টিকিট পেলে কেমন করে?
– ভাগ্য ভালো ছিলো স্যার। তিনটা সিট খালি ছিলো। দুটো সিট বুক করে নিয়েছি।
– চলো তাহলে। এয়ারপোর্টে যাই।
– জ্বি স্যার।
এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে সালমানকে কল করলো সোহান। ফোন করে শুধু এতটুকু বললো,
– দুই ঘন্টার মধ্যে ঢাকা এয়ারপোর্টে থাক। আমি আসছি।
– শোনো জাহিদ, আমি মায়াকে আজই বিয়ে করবো। তুমি ওদের এলাকার মসজিদের মুয়াজ্জিন বা ইমাম যাকে পাও নিয়ে আসবে। আর আমি গাড়ি নিয়ে সরাসরি মায়ার গলিতে যাবো।
– জ্বি স্যার।

(চলবে

 

 

 

নষ্ট গলি পর্ব-২৫

0

নষ্ট গলি পর্ব-২৫

লেখা-মিম

-দাঁড়িয়ে আছো কেনো? বসো এখানে।
গুটিগুটি পায়ে নজরুল সাহেবের মুখোমুখি সোফাটায় বসলো মায়া। মাথার উপর ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে৷ তবু কানের পাশ দিয়ে ঘাম বেয়ে পড়ছে মায়ার।
– পানি খাবে মায়া?
খানিকটা অবাক হলো মায়া। সোহানের বাবা ওর নাম জানেন। কিন্তু কিভাবে?
– শামীম ওকে এক গ্লাস পানি দাও তো।
পায়ের উপর পা তুলে সোফায় হেলান দিয়ে বসলেন নজরুল সাহেব। মায়ার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো শামীম। গ্লাসটা হাতে নিয়ে বসে আছে মায়া। হাতে থাকা গ্লাসটা সামান্য কাঁপছে। নজরুল সাহেব ঠান্ডা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
– তুমি হয়তোবা ভাবতে পারো হুট করে আমি এখানে কেনো? তোমার নাম জানি কিভাবে? তাই না।
উত্তর দিচ্ছে না মায়া। প্রশ্নগুলো সত্যিই ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু মুখ ফুটে বলার শক্তি বা সাহস কোনোটাই নেই।
– দেখো, আমি কম সময় নিয়ে এসেছি। অফিসে অনেক কাজ ফেলে এসেছি। ঘন্টা তিনেক পরই আবার ব্যাক করবো। এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছো তুমি। তোমার সাথে কিছু ব্যাপারে কথা বলবো এরপর চলে যাবো।
-………….
– তুমি তো বোবা না। তাহলে কথা বলছো না কেনো?
– জ্বি।
– সোহান আমার বড় ছেলে। সালমানের চেয়ে ওর প্রতি আমার এক্সপেকটেশন্স অনেক বেশি। আমার বিজনেস সামাল দেয়ার মতো যোগ্যতা সোহানের চেয়ে সালমানের অনেক কম৷ আমার প্রপার্টি কি পরিমান আছে সে কথা নিশ্চয়ই সোহান তোমাকো জানিয়েছে?
– জ্বি না।
– ও যদি না বলে থাকে তাহলে সেসব নিয়ে আমি তোমার সাথে কথা বলবো না। আশা করি এই কয়মাসে তুমি সেটা আন্দাজ করে নিয়েছো। দেখো মায়া, তোমার সাথে সোহানের বিয়ে হয়নি সেটা আমি জানি।
চোখ বড় করে নজরুল সাহেবের দিকে তাকালো মায়া। টি টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসে চুমুক দিলেন নজরুল সাহেব। আবারও হেলান দিয়ে বসলেন সোফায়।
– এতটা অবাক হওয়ার কি আছে? সোহান আমার সন্তান। হতে পারে ও আমার কাছ থেকে দূরে থাকে। ও এখন বড় হয়ে গেছে। তারমানে তো এই না আমি ওর খোঁজ নিবো না। কখন কি করছে না করছে সেসব জানবো না। শুনেছি ও নাকি তোমাকে প্রচন্ড যত্নে রাখে। যত্নটা কিজন্য রাখে সে ব্যাপারে আমার জানা নেই। হতে পারে ও তোমাকে সত্যি ভালোবাসে আবার হতে পারে এটা ওর সাময়িক মোহ। এটা তোমাদের নিজস্ব ব্যাপার। তোমরা ভালো বলতে পারবে। আমি সেটা জানি না। তবে আমার ধারনা এটা মোহ। সোহানের এখন ত্রিশ চলছে। স্বাভাবিকভাবে ওর এই মূহুর্তে কাউকে প্রয়োজন যে ওর যত্ন নিবে। ওর চাহিদাগুলো মিটাবে৷ ওর একাকীত্ব দূর করবে৷ বলতে পারো তোমাকে ও এনেছে ওর রিফ্রেশমেন্টের জন্য। হতে পারে ও এখনই বিয়ে করার জন্য মেন্টালি প্রিপেয়ারড না৷ এজন্য তোমাকে নিয়ে এসেছে। তোমাকে কিছুদিন এখানে রাখবে। যখন মেন্টালি প্রিপেয়ারড হবে তখন তোমাকে আবার তোমার আগের জায়গায় ফেরত রেখে আসবে।
চোখে ছলছল পানি নিয়ে মায়া বললো,
– উনি আমাকে বলেছে ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে।
– আচ্ছা ঠিকাছে ধরে নিলাম ও তোমাকে ভালোবাসে। তুমি ও তো ওকে ভালোবাসো তাই না?
-……………
– থাক বলতে হবে না। আমি উত্তর জানি। আচ্ছা মায়া যাকে ভালোবাসো তার মন্দ নিশ্চয়ই কখনো চাইবে না?
– না।
– তুমিই বলো, তুমি কি সোহানের যোগ্য? সোহানের পাশে কি তোমাকে মানায়? সোহানের স্ট্যাটাস আর তোমার স্ট্যাটাস কি ম্যাচ হয়? তোমার বাবার পরিচয়টা পর্যন্ত তুমি জানো না। তোমার মা আর তুমি একটা নষ্ট পাড়ায় বড় হয়েছো। সোহানকে আমরা কতটা যত্নে কতগুলো স্বপ্ন নিয়ে বড় করেছি জানো? সোহান সবাইকে বলে বেড়ায় তুমি ওর ওয়াইফ। তুমি কি এটা জানো ওর অফিসের কর্মচারীদের মাঝে তোমার ব্যাপারে কথা চলছে৷ তুমি কোত্থেকে এসেছো সেটা অফিসের কমবেশি সবাই জানে। কিন্তু সোহানের মুখোমুখি এসব কথা কেও বলতে পারে না ভয়ে। আজকে অফিস জানাজানি হয়েছে। কালকে সোসাইটির লোকজন জানাজানি হবে। কর্মচারীরা নাহয় ওর সামনে মুখ খুলে না চাকরি চলে যাবে সে ভয়ে৷ কিন্তু সোসাইটির লোক? ওরা নিশ্চয়ই চুপ করে থাকবে না। সোহানকে ইঙ্গিত দিয়ে অথবা সরাসরি তোমার ব্যাপারে কথা বলে বসবে। আবার তুমি কোথাও ওর সাথে বেড়াতো গেলে। তোমার পুরানো কোনো কাস্টমারের সাথে দেখা হয়ে গেলো। সোহানের সামনেই তোমাকে খারাপ প্রস্তাব দিয়ে বসলো। তখন কি হবে? ওর কতটা ইনসাল্ট হতে হবে আন্দাজ করতে পারছো? ও কি এধরনের বাজে ব্যাপারগুলোর মুখোমুখি হওয়ার যোগ্য? আজ যদি তোমার সাথে না জড়িয়ে আমাদের স্ট্যাটাসের কারো সাথে সম্পর্কে জড়াতো তাহলে নিশ্চয়ই ওকে এসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না। এই ব্যাপারগুলো কি আমার ছেলেকে শান্তিতে থাকতে দিবে? যাকে ভালোবাসো তুমি কি চাও না সে ভালো থাকুক? তার জীবনটা সুন্দর হোক?
নিঃশব্দে কাঁদছে মায়া। মনে হচ্ছে কেও গলা টিপে ধরে রেখেছে৷ নিজেকে তুচ্ছ থেকে আরো বেশি তুচ্ছ মনে হচ্ছে। উনার প্রতিটা কথা খুবই যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে মায়ার। কথাগুলো সত্যি ছিলো। বাস্তবতাটা আজ বোধহয় একটু বেশিই নির্মম মনে হচ্ছে। নিজের পরিচয়টা এতদিন মেনে নিলেও আজ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না মায়া। ইচ্ছে হচ্ছে গায়ের চামড়া কেঁটে আবার নতুন চামড়া লাগিয়ে নিতে। যে চামড়ায় কোনো ময়লা লেগে থাকবে না।
– এখন বাকিটা তোমার ইচ্ছা। তুমি কি সোহানকে ভালোবেসে ওর ক্ষতি করবে নাকি দূরে সরে গিয়ে ওর উপকার করবে। আমার যা বলার ছিলো আমি বললাম। তুমি কি সিদ্ধান্ত নিবে তা তুমি নিতে পারো। আসি।
সোহানের বাবা উঠে চলে গেলেন। মায়ার মাথায় কথাগুলো তীরের মতো বিঁধছে। মনে হচ্ছে যেনো মস্তিষ্কের ভিতরটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।
পুরো আধাঘন্টা ড্রইংরুমের সোফায় বসে ছিলো মায়া। এই আধাঘন্টায় মন খুলে কেঁদেছে এবং নিজের সাথে বোঝাপড়া করেছে । থাকবে না ও সোহানের জীবনে। চলে যাবে আগের জায়গায়। যাকে ভালোবাসে তার অপমান বা কষ্টের কারন সে হতে চায়না। পাশে থেকেই ভালোবাসতে হবে এমন কোনো কথা নেই। দূর থেকেও ভালোবাসা যায়। দূরে সরে গিয়ে যদি ভালেবাসার মানুষটা ভালো থাকে তবে তাই হোক। সবার গল্পের সমাপ্তি সুন্দর হয়না। ওর ভাগ্যে অসুন্দর সমাপ্তি ছিলো। ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে। নিজের অবস্থানটাকে মেনে নিতে হবে। দাঁত মুখ শক্ত করে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে মায়া। রতনের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে বেরিয়ে এসেছে সংসার থেকে। ওর সংসার, যেটা সোহান ওকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো। যা আজ এই এ মূহূর্ত্ব থেকে মায়ার জন্য প্রাক্তন হয়ে গেছে।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-২৪

0

নষ্ট গলি পর্ব-২৪

লিখা-মিম
একটু একটু করে চোখ মেলছে মায়া। ঘুম ভয়ানকভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ওর চোখ দুটোকে। সারারাত ভালোবাসায় বিভোর থেকে ভোররাতের দিকে সোহানের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়েছে মায়া। অনেক বেলা হয়েছে। ঘরের দেয়ালে রোদের তীব্রতা দেখে তাই বুঝা যাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে বালিশের পাশে থাকা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো ১১.১৪ মিনিট। চোখ কচলাতে কচলাতে শোয়া থেকে উঠলো মায়া। পাশে সোহান নেই। বোধহয় অফিস চলে গেছে।
ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা সাদা কাগজের উপর তাজা লাল গোলাপ দেখা যাচ্ছে। বোধহয় সোহান রেখে গেছে। প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে খাট ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে এগিয়ে গেলো মায়া। হাত বাড়িয়ে গোলাপ আর সাদা কাগজটা নিলো। কাগজটা খুললো সে।
” বাবা সকালে ফোন করেছিলো। সিলেট যেতে হবে। খুব জরুরী কাজ পড়ে গিয়েছে। আমি আগামীকাল রাতেই চলে আসবো। কোনো এক অজানা কারনে তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় অস্বাভাবিক রকমের সুন্দর দেখাচ্ছিলো। তোমাকে জাগাতে ইচ্ছে হয়নি। সিলেট যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছি আর তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। এত মায়া কেনো তোমার মাঝে আমি বুঝে পাইনা।
এই শুনো,
আমি এসে পড়বো। খুব জলদি। নিজের খেয়াল রেখো। আর আমি আসার আগ পর্যন্ত বাসার বাহিরে যেও না।
কি ভাবছো? কথাগুলো ফোনে না বলে চিঠিতে কেনো বললাম? প্রেমিক হতে ইচ্ছে হলো তাই চিঠি লিখলাম।
ভালো থেকো।”
চিঠির উপর হাত বুলাচ্ছে মায়া। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠেছে ওর। নাকের কাছে গোলাপটা নিয়ে সুবাস নিচ্ছে। ভালোবাসার সুবাস।
মোবাইলে কল এসেছে মায়ার। দৌঁড়ে যেয়ে ফোনটা হাতে নিলো মায়া। সোহানের ফোন এসেছে। এক মূহূর্ত্ব দেরী না করে কলটা রিসিভ করে নিলো ও।
-…………
– হ্যালো।
-…………
– কি হলো? রিসিভ করে কথা বলছো না কেনো?
– কোনো কথা নেই আপনার সাথে।
– কেনো?
– একে তো আমাকে ফেলে চলে গেলেন অথচ আমাকে একটা বার জাগানোর প্রয়োজন মনে করলেন না?
– তোমাকে জাগাতে ইচ্ছে হয়নি একদম। বিশ্বাস করো।
– আপনার উচিত ছিলো আমাকে ডেকে তোলা। আপনাকে একটা বার জড়িয়ে ধরতাম। দুদিন তো আপনাকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না।
– জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব?
– হুম।
– তাহলে চলে আসি এক্ষুনি?
– নাহ। কাজ শেষ করে ঢাকা আসেন। এরপর পুরো একদিন সময় শুধু আমার। অন্য কাওকে দিতে পারবেন না।
– উহুম। একদিন না। দুদিন তোমার জন্য পুরোপুরি বরাদ্দ থাকবে।
– ওহ একটা কথা তো জিজ্ঞেস করলাম না। আপনি পৌঁছে গেছেন?
– হ্যাঁ। চলে এসেছি। আধাঘন্টা হয়ে গেলো।
– নাস্তা…..
– এই মায়া! আমার ক্লাইন্ট কল করছে৷ পরে কথা বলছি।
কল টা কেটে দিলো সোহান। চিঠিটা এখনো মায়ার হাতে। কি যেনো একটা আছে এই চিঠিটাতে। নেশা জাতীয় কিছু একটা। মায়া যত বার চিঠিটা হাতে নিচ্ছে ততবার মনে হচ্ছে ও শরীরের তাল হারাচ্ছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
কলিংবেল বাজছে বাসার। রতন যেয়ে দরজা খুলে দিয়েছে। মায়া বেরিয়ে এসেছে নিজের রুম ছেড়ে৷ মেইন ডোর দিয়ে ড্রইংরুমে ঢুকছেন একজন বয়স্ক লোক। লোকটা মায়ার পরিচিত। এর আগে মানুষটার ছবি দেখেছে ও৷ উনি সোহানের বাবা। মায়াকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছেন উনি।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-২৩

0

নষ্ট গলি পর্ব-২৩

লেখা-মিম

বিকেলের লাল কমলা রংয়ের আলোটা মায়ার বেডরুমের একপাশের দেয়ালে এসে লেপ্টে আছে। তৈরী হচ্ছে মায়া। শাড়ির আঁচলটা টেনে ঠিক করে নিচ্ছে। আর সোহান ফ্লোরে হাঁটু ভেঙে বসে মায়ার শাড়ির কুঁচিগুলো ঠিক করে দিচ্ছে। আজ সকালেই সোহান মার্কেট থেকে কিনে এনেছে শাড়ীটা। লালের উপর কমলা পাড়ের তাঁতের শাড়ি। শাড়িটা দেখা মাত্রই খুব মনে ধরেছিলো ওর। চোখের সামনে মায়া ভেসে উঠছিলো। কল্পনায় মায়াকে অপরূপ দেখাচ্ছিলো। কিন্তু বাস্তবে সোহানের মনে হচ্ছে সে একটা পরী দেখছে। শাড়ির কুঁচি ঠিক করে খাটে বেশ আয়েশ করে বসলো সোহান। গালে হাত দিয়ে মায়ার কানে ঝুমকা পড়া দেখছে। সোহানের এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে মায়াকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই৷ মেয়েটাকে সামনে বসিয়ে রেখে সারা বিকেল, সন্ধ্যা, রাত পর্যন্ত ওকে দেখতে।
– ভাইয়া তোমরা রেডি?
– হুম? হ্যাঁ রেডি।
– বের হই চলো।
– হ্যাঁ আসছি। তুই নিচে গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়।
মায়া হয়েছে?
– হ্যাঁ। আচ্ছা আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
– তেমন সুন্দর না। লাগছে আরকি মোটামোটি।
মূহূর্ত্বেই কালো হয়ে গেলো মায়ার মুখটা। আয়নায় নিজেকে ভালোভাবে দেখতে লাগলো। কোনো কিছুর কমতি রয়ে গেলো সাজে? সাজটা কি সুন্দর হয়নি?
– এখন আর দেখে লাভ নেই। চলো। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
– সাজ ভালো হয়নি তাই না?
– হয়েছে মোটামুটি।
– কিসের কমতি? বলেন না?
– কিসের কমতি পরে বলছি। এখন চলো।
– নাহ। আগে বলুন।
– উফফ!
মায়ার হাত ধরে টানতে টানতে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে সোহান। মায়ার মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আজ ওর দোকানের উদ্বোধন হবে। অথচ ওকে ভালো দেখাচ্ছে না। ব্যাপারটা বড্ড বেমানান। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে সোহান বললো
– মাঝে মাঝে প্রেমিকার ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয়াটা জরুরী। তবেই প্রেমিকা আমার প্রশংসার ক্বদর করবে। ঘটনা হচ্ছে তোমার কোনো ত্রুটি আমি দেখতে পাইনা। তাই মিথ্যা মিথ্যি তোমার ত্রুটি ধরলাম। তোমাকে পরীর মতো দেখাচ্ছে। লাল পরী। ইচ্ছে হচ্ছে রুমের দরজা আটকে তোমাকে সামনে বসিয়ে রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকি। কিন্তু সে সুযোগ কোথায়? আগে যদি জানতাম শাড়িটা তোমাকে এত মানাবে তাহলে এখন ভুলেও শাড়িটা এখন পড়তে বলতাম না। রাতে পড়তে বলতাম। ঘরের ভিতরে আসা জোছনার আলোতে তোমাকে সামনে বসিয়ে রাখতাম। আর ভাবতাম রুপালী জোছনায় একটা লাল পরী দেখছি।
সোহানের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে মায়া। লজ্জা ভর করেছে ওর চোখে মুখে। সেই সাথে ভালোবাসাও।
– দেখো এমনিতেই তোমাকে দেখে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তারউপর এভাবে হাসি দিয়ে আমাকে আর পাগল করো না প্লিজ। একটা বিশেষ কাজে আমরা বেরুচ্ছি। কাজটা ঠিকমতো করতে দাও প্লিজ। বাসায় এসে আমার দিকে তাকিয়ে যত পারো মুখ টিপে হেসো৷ আমি দেখবো। বাসায় বসে পাগল হলে সমস্যা নেই। রাস্তাঘাটে বের হয়ে পাগল হলে সমস্যা আছে৷ কখন আবার রাস্তা ঘাটে তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু টুমু খেয়ে বসি তার কোনো ঠিক নেই। সো প্লিজ হাসি বন্ধ করো।
নিচতলায় লিফট এসে থামলো। বেরিয়ে এলো সোহান আর মায়া। সোহান আগে হেঁটে যাচ্ছিলো। পিছন থেকে মায়া এসে সোহানের হাত টেনে আটকালো।
– কি? কিছু ফেলে এসেছো?
– আমাকে কি খুব সুন্দর দেখাচ্ছে?
– এতক্ষণ কি বললাম আমি?
– আরেকবার বলেন।
শব্দ করে হেসে ফেললো সোহান।
– আরো প্রশংসা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে?
– হুমমম। অন্নেএএএক ইচ্ছে হচ্ছে।
– উহুম। এখন না। রাতে বাসায় আসি। তুমি আজকে এই শাড়ি খুলবে না। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আবার এই শাড়ি পড়বে। সাজগোজ করবে।
সোহানের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মায়া। ঠোঁটে বিস্তৃত হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।
গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মায়া সোহান। গাড়ির ভিতরে বসে ওদের দুজনকে দেখছে সালমান। আজকাল সোহানকে দেখলে মনে একধরনের শান্তি পায় সালমান। সোহান প্রচন্ড একা একজন মানুষ। ভাইটার জীবনে সব ছিলো। কিন্তু আগলে রাখার মতো কেও ছিলো না। প্রচন্ড দুশ্চিন্তার রাত গুলোতে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ার কেও ছিলো না। আজ তার এমন কেও আছে৷ মায়া নামের একটা পরী আছে। ভাইয়ের সুখ চোখে মুখে দেখতে পায় সালমান। অন্যরকম একটা সুন্দর ভাব ফুটে উঠেছে সোহানের মুখে। সুখের সুন্দর।
সালমান বসে আছে ড্রাইভারের সাথে। পিছনের সিটে বসে আছে মায়া আর সোহান। মায়ার ডান হাতের উপর সোহান নিজের হাতটা রেখে বসে আছে। কিছুক্ষন পরপর মায়ার দিকে তাকাচ্ছে সে। গাড়ির লুকিং গ্লাসে সে দৃশ্য দেখছে সালমান। খুব উপভোগ করছে ব্যাপারটা ও।
দোকানের উদ্বোধন সেড়ে রাতে একটা পাঁচতারা হোটেল থেকে ডিনার কমপ্লিট করলো ওরা তিনজন। খুব বেশি মানুষ না। খুব কাছের দশ বারোজন লোক নিয়ে দোকানের উদ্বোধন সেড়েছে সোহান। শিমুও এসেছিলো। আজ ওর বান্ধবীর গায়ে হলুদ। তাই ওদের সাথে ডিনারে আসতে পারেনি। দোকান থেকেই সরাসরি কমিউনিটি সেন্টারে চলে গিয়েছিলো।
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেজে গেছে। ঘরে ফিরেই মায়াকে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে আবার সাজগোজ করতে বললো সোহান। নিজের রুমে যেয়ে সোহানও ফ্রেশ হয়ে নিলো। মায়ার রুমে এসে দেখে তখনও সে বের হয়নি। মায়ার শাড়িটা বিছানার উপর রাখা। কয়েক সেকেন্ড পর মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো মায়া। বিছানার উপর থেকে শাড়িটা হাতে নিলো মায়া। শাড়ির একপাশ কোমড়ে গুঁজতেই মায়ার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে নিলো সোহান। মায়ার কোমড়ে শাড়িটা গুঁজে দিচ্ছে সে৷
– আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন?
– তেমন ভালো না।
– তাহলে আমাকে দিন। আমি পড়ে নিচ্ছি।
– উহুম। আমি পড়াবো। আমি তোমাকে সাজিয়েও দিবো।
মায়ার চোখে পানি ছলছল করছে৷ বড্ড আবেগী সে। অথবা বলা যেতে পারে ভালোবাসার কাঙাল। যত্ন ভালোবাসা না পেতে পেতে শুকিয়ে যাওয়া মরুভূমির অন্তরে পানি ঢালছে সোহান। ভালোবাসার ফুলগাছটা সেই পানি পেয়ে ধীরে ধীরে মনের চতুর্দিকে শক্ত শেকড় গজিয়ে উঠছে।
(চলবে)