নষ্ট গলি পর্ব-১০

0
4455

নষ্ট গলি পর্ব-১০

লেখা- মিম
মায়াকে এক হাতে পেঁচিয়ে অন্য হাতে ওর চুলের গোড়ায় অাঙুল চালাচ্ছে সোহান। অদ্ভুদ অনুভূতি হচ্ছে মায়ার। তবে অনুভূতিটা সুন্দর। একটু বেশিই সুন্দর। সোহানকে অারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মায়া। হৃদস্পন্দনটা এখন অারেকটু জোরে শোনা যাচ্ছে । মায়াকে বুকের কাছ থেকে সরিয়ে টেনে খানিকটা উপরে তুলে অানলো সোহান। ঠোঁটে অালতো করে চুমু খেলো মায়ার।
-” তোমাকে যদি পুরোপুরিভাবে কাছে টানতে চাই তোমার কি অাপত্তি অাছে ?”
-” উহুম।”
-” অাজ রাতে?”
-” হুম।”
বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার পর্দাগুলো টেনে দিলো সোহান। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে ঠান্ডা বাতাস। বাতাসের জন্য পর্দাগুলো স্থির থাকছে না। উড়ছে পর্দাগুলো। বাহিরে তুফান চলছে সেই সাথে মায়ার মনেও। বুকের ধুক পাকুর শব্দটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মনে হচ্ছে দশ হাত দূর থেকেই একজন মানুষ এই ধুক পাকুর শব্দ শুনতে পাবে। মনের গহীনে শীতল বাতাসের অস্তিত্ব টের পাচ্ছে মায়া। শীতল বাতাসের কারনটা কি? হতে পারে সেটা ভালোবাসার মানুষের কাছে অাসার পূর্বাভাস। মায়ার পাশে বসে গালে হাত রাখলো সোহান।
-” রাত অনেক হয়েছে তুমি ঘুমাও।”
-” মানে?”
-” মানে তুমি ঘুমাও। অামি অামার রুমে যাচ্ছি।”
-” অাপনি না একটু বললেন অামাকে কাছে টানতে চান। পুরোপুরিভাবে।”
-‘ হুম বলেছিলাম। তোমাকে এতটা কাছে পেয়ে মাইন্ড খানিকটা ডিসট্র্যাক্ট হয়ে গিয়েছিলো। বুঝোই তো, দিনশেষে অামিও একজন পুরুষ। এখন মনে হচ্ছে তোমাকে এভাবে প্রস্তাবটা দেয়া উচিত হয়নি। শুরুতে তোমার ঘরে অাসলাম হেড ম্যাসাজ নেয়ার জন্য। এরপর অাবদার ধরলাম জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো। এরপর পারমিশন ছাড়াই কিস করলাম। এখন অাবার অাবদার ধরছি অারো গভীরে যাওয়ার জন্য। লোভী পুরুষের মতো অাচরন করছি। লোভ ব্যাপারটা ভালো না। সবকিছু ধীরে সুস্থে এগিয়ে নেয়াটা ভালো। সরি মায়া। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।”
সাধু হওয়ার একটা লিমিট থাকে। কিন্তু সোহান লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটা কোন কথা? বেশি লোভ করে ফেলেছি! মায়া হাসবে না কাঁদবে খুঁজে পাচ্ছে না।
-” তাহলে অামাকে কেনো এনেছেন? সাজিয়ে রাখার জন্য?”
-” সংসার করার জন্য। তোমার সাথে সংসার করে দেখতে চাই অাসলে সংসার কতটা তিতা।”
-” টেস্ট করতে চাচ্ছেন অামাকে দিয়ে? যদি টেস্টের রেজাল্ট মিষ্টি হয় তাহলে অন্য কাউকে বিয়ে করবেন। তিতা হলে বিয়ে করবেন না।”
-” ব্যাপারটা তেমন না।”
-” ব্যাপার যেমনই হোক, অাপনি অাজ কিছু করেনঅার না করেন অাপনি অামার সাথেই ঘুমুবেন।”
-” থাকতেই হবে?”
-” হুম। অাপনার গায়ের খুব সুন্দর একটা ঘ্রান অাছে। সকালে যখন জড়িয়ে ধরেছেন তখন ঘ্রানটা একটুখানি পেয়েছিলাম। এখন ঘ্রানটা ভালো মতো পেয়েছি। একদম নেশা ধরানো। অাপনাকে জড়িয়ে না ধরলে অামার ঘুমই অাসবে না। অাসেন এখানে। শুয়ে পড়েন।”
মুচকি হেসে মায়ার পাশে শুয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলো সোহান। সোহানের বুকে অালতো করে হাতাচ্ছে মায়া। ফের দুজনেরই নিঃশ্বাস গাড়ো হয়ে অাসছে। সোহানের গলায় চুমু খেলো মায়া। দুহাতে শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরলো মায়াকে। ঘোরের মাঝে ডুবে যাচ্ছে সোহান। মায়ার পরোক্ষ ইশারা সোহানের অাবদারগুলোকে ভীষনভাবে অাস্কারা দিচ্ছে। নিজেকে অার অাটকে রাখার প্রয়োজন মনে করছেনা সোহান। অাটকে রাখার তিল পরিমান ইচ্ছাও তার নেই।
সকাল অাটটা। বাহিরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সারারাতের বৃষ্টিতে অাবহাওয়া পুরোপুরি ঠান্ডা। তবু ফুল স্পীডে ফ্যান ঘুরছে মাথার উপর। যত ঠান্ডাই পড়ুক ফ্যান ছাড়া ঘুম হয় না সোহানের। অার অন্যদিকে মায়ার শীত বেশি। তাই কাঁথার নিচে একদম গুটিসুটি হয়ে সোহানের সাথে ঘেষে শুয়ে অাছে। মায়ার গায়ের উপর হাত পা তুলে দিয়ে বেঘোর ঘুম ঘুমুচ্ছে সোহান। সোহানের ফোন বাজছে। জাহিদ ফোন করেছে। কোনোমতে চোখ মেলে দেখে জাহিদের নাম স্ক্রিনে ভাসছে। ঘুম জড়ানো কন্ঠে সোহান বললো,
-” হুম বলো।”
-” স্যার অাপনার বাবা ফোন করেছিলো। অাপনাকে নাকি খুঁজে পাচ্ছে না ফোনে।”
-” হুম ঐ ফোনটা বন্ধ করে রেখেছি।”
-” অাপনার এই নম্বর তো বড় স্যার জানে না। তাই অামাকে ফোন করে বললো অাপনাকে কল করতে।”
-” অার্জেন্ট কিছু?”
-” না স্যার অামাকে কিছু বলেনি।”
– অাচ্ছা অামি ফোন দিচ্ছি তুমি রাখো।”
ফোনটা রেখে উঠে বসলো সোহান। অাড়মোড়া দিয়ে ঘুমটা পুরোপুরি ভাবে চোখ থেকে সরাতে চাচ্ছে সে। মায়ার ঘুমও ততক্ষনে ভেঙে গেছে।
-” মায়া, জলদি উঠো। গোসল করো। ফ্রেশ হও। অামার জন্য কফি বানাও। অামার অালমারি থেকে অফিসে যাওয়ার কাপড় বের করে রাখো। কাপড়ের সাথে অামার মানিব্যাগ, ঘড়ি, মোবাইল, গাড়ির চাবি সব যেনো থাকে। অলরেডি সোয়া অাটটা বেজে গেছে। অফিসে মিটিং অাছে দশটায়। পৌনে দশটার মধ্যে অফিসে পৌঁছাতে হবে।”
-” জ্বি উঠছি।”
সোহানের তাড়া দেখে হুড়মুড়িয়ে বিছানা ছেড়ে কাপড় চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো মায়া। সোহানের ফরমায়েশ পূরন করতে হবে। এই প্রথম মানুষটা তাকে কোনো ফরমায়েশ করলো। সংসারের প্রথম ফরমায়েশ। কোনোভাবেই ত্রুটি রাখা যাবে না। বেঁধে দেয়া সময়ের মাঝে কাজ সারতে হবে।
চুলায় কফির দুধ গরমে বসিয়ে সোহানের রুমে এসেছে মায়া। সোহানের গোসল তখনও শেষ হয়নি। সোহানের জন্য অনেক বিচার বিবেচনার পর অালমারি থেকে কাপড় বের করে খাটের উপর রেখেছে মায়া। ওয়ালেট, মোবাইল গাড়ির চাবি সব রাখা অাছে কাপড়ের পাশেই। কিন্তু ঘড়ি খুঁজে পাচ্ছে না মায়া। সোহানের বেডরুম তন্নতন্ন করে খুঁজছে মায়া। ভাবছে সোহানকে কি একটাবার জিজ্ঞেস করবে? ওয়াশরুম থেকে শ্যাম্পুর স্মেল অাসছে। সোহান চুল শ্যাম্পু করছে । এখন যদি ডেকে কোনো কথা জিজ্ঞেস করে তাহলে উত্তর দেয়ার সময় সোহানের মুখে শ্যাম্পুর ফেনাসহ পানি মুখের ভিতর ঢুকে যেতে পারে। তাই এই মূহূর্তে জিজ্ঞেস না করাটাই হয়তো ভালো হবে। রান্নাঘর থেকে কাজের লোক শামীমের কন্ঠ ভেসে অাসছে,
-‘ ভাবি, দুধ তো গরম হইয়া গেছে। কফি বানাইবেন না।”
চুলায় দুধ বসিয়ে এসেছে একদমই খেয়াল ছিলো না মায়ার। দৌড়ে কিচেনে যেয়ে দেখে শামিম চুলা থেকে দুধের পাতিল নামিয়ে রেখেছে।
-‘ অামি তো ভুলেই গিয়েছিলাম শামিম ভাই। ”
-” অামি নামায়া থুইছি ভাবি। চিন্তা নাই।”
-” এখন কি কি মিশাবো এটাতে?”
-” মগে দুধ ঢালেন। দুই চামচ কফি, এক চামচ হরলিক্স অার অাধা চামচ চিনি মিলাইবেন।”
-” শামিম ভাই, উনি ঘড়ি কোথায় রাখে জানেন?”
-“স্যারের তো ঘড়ি অাছে চাইর পাঁচটা। একটাও পাইতাছেন না?”
– ” না।”
-” গতকাল বাইরে থেইকা অাইসা ড্রইং রুমে টি-টেবিলের উপ্রে থুইছিলো দেখছিলাম। অার বাকিগুলা কই অাছে জানি না।”
ভিতর থেকে সোহানের গলার অাওয়াজ পেলো মায়া।
-” অামার ঘড়ি কোথায়? ঘড়ি বের করোনি কেনো?”
তাড়াহুড়ো করে ফের সোহানের রুমে গেলো মায়া।
-” ঘড়ি খুঁজছি। কিন্তু পাচ্ছিনা।”
-” ড্রইংরুমে দেখো। পাবে। অার অামার সব ঘড়ি অালমারির মাঝের দরজার সেকেন্ড ড্রয়ারে থাকে।”
-” অামি এনে দিচ্ছি। ”
দৌড়ে ড্রইংরুম থেকে ঘড়ি এনে খাটের উপর রাখলো মায়া। সোহান মাথার ভেজা চুল মুছছে।
-” কফি হয়েছে?”
-” না এক্ষুনি অানছি।”
ছুটে কিচেনে গেলো মায়া। খুব জলদি বাকি উপকরন মিশিয়ে কফি তৈরি করে সোহানের সামনে হাজির করলো।
-” তুমি তো অামার মোজা বের করে রাখোনি।”
-” এক্ষুনি বের করে দিচ্ছি।”
-” এই দাঁড়াও।”
-” জ্বি?”
-” এভাবে দৌড়াদৌড়ি করছো কেনো? ধীরে সুস্থে কাজ করো।”
-” অাসলে অামি একটু নার্ভাস। কখনো কাউকে সংসার করতে দেখিনি। কাজ কিভাবে গুছিয়ে করতে হয় অামি জানি না। এই প্রথম অাপনি কিছু করতে বলেছেন। অামি চাইনা কোনো ত্রুটি থাকুক।”
-” বসো এখানে।”
-” মোজাগুলো বের করে দেই।”
-” বসতে বলেছি, বসো।”
কফির মগে চুমুক দিচ্ছে সোহান। পাশে বসে অাছে মায়া।
-” কফিটা খুব ভালো হয়েছে।”
-” সত্যি?”
-” নাও, খেয়ে দেখো।”
-” না অাপনিই খান।”
-” শোনো, এতটাও নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। অামি জানি তুমি কাজ পারো না। একদিনে কেউ সংসারের কাজে এক্সপার্ট হয় না। অাস্তে ধীরে সব ঠিক হবে। কাজ করতে করতে পুরোপুরি সংসারী হবে তুমি। ঘরের জিনিস ভাঙবে, তরকারি পুড়বে, হাত কাটবে এরপর পাক্কা হাউজওয়াইফ হতে পারবে। এছাড়া না। তুমি তোমার মতো অাস্তে ধীরে কাজ করো। দেরি হলে হবে। অসুবিধা নেই। বাসায় শামীম রতন অাছে। চাইলে অামি কাজ ওদের দিয়েও করাতে পারবো।”
এতক্ষনের মানসিক চাপটা মনে হয় কিছুটা কমেছে মায়ার। ভয়টা কিছুটা কেটেছে।
-” যাও নাস্তার টেবিলে খাবার সাজাও। অামি কাপড় পাল্টে অাসছি।”
সোহানের প্লেটে খাবার সাজিয়ে চেয়ারে বসে অাছে মায়া। সোহান চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
-” তোমার প্লেট কোথায়?”
-” অাপনার কাছ থেকে খাবো। তাই অামার অালাদা করে খাবারের প্লেট নেইনি।”
কথাটা বলে মায়ার মনে হলো অাবদারটা খুবই বাজে হয়েছে। কি মনে করে কথাটা ও বলেছে সেটা ও নিজেও জানে না। সোহান মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে অাছে। এবার মায়ার লজ্জা লাগছে নিজের এমন বুদ্ধিহীন অাবদারের জন্য। কোনো কথা না বলে নিজের জন্য প্লেট সাজাতে লাগলো মায়া।
-” এই, তুমি না বললে অামার হাতে খাবে?”
-” না, থাকুক। অামি অামার হাতেই খাবো।”
-” কেনো?”
-” অাসলে অামি কেনো যেনো এমন একটা অাবদার ধরে ফেলেছি।”
-” গতরাতে অামি চলে অাসতে চেয়েছিলাম। অামাকে জড়িয়ে ধরার অাবদারটা কিন্তু তুমি করেছিলে। তখন লজ্জা পাওনি, এখন এই সামান্য কথায় লজ্জা পাচ্ছো কেনো? অাজাইরা ঢং ছাড়ো। নাও হা করো।”
মায়ার মুখের সামনে খাবার ধরে রেখেছে সোহান।মায়া মুখের মধ্যে খাবার পুরে চুপচাপ চাবাচ্ছে।
-” মায়া।”
-” হুম?”
-” রাতটা সুন্দর ছিলো।”
মায়ার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সোহানের দিকে তাকিয়ে মায়া উত্তর দিলো
-” অনুভূতিগুলো অারো বেশি সুন্দর ছিলো।”
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে