Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 116



বিয়ে থা_২ পর্ব-১৩

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১৩
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

বিয়ের শপিং করতে এসে নিনীকার দেখা পেলো ধ্রুব। সঙ্গে দুই পরিবারের সকলেই রয়েছেন। আজ থেকেই সবকিছু কেনাকাটা করছেন তারা। যদিও আগে একবার করেছেন তবে এখনো অনেক কিছু কেনা বাকি। ধারা নিনীকাকে নিয়ে বিশাল এই শপিং মলের শাড়ি লেহেঙ্গা কিছু দেখাতে বাদ রাখেন নি। মুখে মাস্ক পড়া নিনীকার গরমে হাসফাস লাগছিলো। কখন এখান থেকে বের হতে পারবে সেটাই ভাবছিলো। কিন্তু এখনো তার কোনো কিছু পছন্দ হলো না। ধারা ফাহিম মাহবুব ও রমজান শেখের সাথে দাড়ানো ধ্রুবকে ডাকলেন। আসতেই ক্লান্তি নিয়ে বললেন,

‘ ধ্রুব তোমার বউয়ের কিছু পছন্দ হচ্ছে না, এই নাও তুমিই ওকে নিয়ে পছন্দ করো সব। আমি একটু বসে নেই। ‘

ধ্রুবর হাতে নিনীকাকে তুলে দিলেন যেনো ধারা। নিনীকা ধ্রুবর বউ কথাটা কতো স্পষ্ট করে বলে গেলেন। নিনীকা লজ্জায় নয় প্রথমবার কারো বউয়ের সম্মোধনে কেমন কুণ্ঠাবোধ করলো। ধ্রুব হয়তো বুঝতে পারলো। চট করে মুখ ঘুরিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল,

‘ চলুন ঘুরে দেখি। ‘

ধ্রুব ঘুরে ঘুরে একটি শাড়ির দোকানে থামলো। লাল রঙের চকচকে সুন্দর কারুকাজ করা একটি শাড়িতে চোখ পড়তেই সেটা দেখাতে বললো৷ এবং আশ্চর্যের বিষয় এবার শাড়িটা নিনীকার চোখে পড়তেই সেটা পছন্দ হয়ে গেলো। শাড়িটা দারুণ দেখতে। নিনীকা খুশিটা আটকে রাখলো না। বলল,

‘ নাইস, এটা আমার পছন্দ হয়েছে। এটাই বিয়েতে পড়বো। ‘

ধ্রুব অবাক চোখে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘ শিওর? ‘

নিনীকা দ্রুত মাথা নাড়াতে লাগলো। ধ্রুব চমৎকার ভঙ্গিতে হেসে বলল,

‘ ওকে ইট’স ফাইনাল। ‘

ধারা শাড়িটা দেখে মুগ্ধ হয়ে বললেন,

‘ আমার চোখে এতোক্ষণ এটা পড়েনি কেন? তবে যাই বলো ধ্রুবর চয়েস ভালো। আমি এতোক্ষণ কতো কি দেখালাম পছন্দ হলো না, কিন্তু যেই ধ্রুব দেখালো তোমার পছন্দ হয়ে গেলো। এবার থেকে তোমার জন্য কিছু কিনলে ধ্রুবকে চয়েস করে দিতে বলবো। ‘

নিনীকা সুর সুর করে মিথিলার কাছে গেলো। মিথিলা নিনীকার গায়ে হলুদ ও মেহেদীর শাড়ি চ্যুজ করছিলেন। ধ্রুব সেদিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো৷ ধারা তাকে টেনে নিয়ে গেলেন,

‘ তুমিই সব চয়েস করে দাও ধ্রুব, নাহলে তোমার বউয়ের পছন্দ হবে না বাবা। ‘

নিনীকার সবকিছু ধ্রুবর চয়েসেই কেনা হলো। নিনীকার সাথে আজ ফারিনের ও শপিং করা শেষ। এবার ধ্রুব ও বাকিরা করবে। তবে আজ নয়। বাকিটা তারা যেকোনো দিন করে নিবে। নিনীকার শপিং শেষ মানে স্বস্তি। কোনোরকম তাড়াহুড়ো নেই আর।

বিকেল হয়ে গেছে। সবাই একটি বড় রেস্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছে। ধ্রুবর জীপগাড়িতে নিনীকা বসেছে সামনে। পেছনে ফারিন বসে বসে চিপস খাচ্ছে। ড্রাইভিং করার ফাঁকে ধ্রুব নিনীকার সেদিনের রাগটা ভাঙাতে চাইলো। ডাকলো,

‘ মিস নিনীকা? ‘

নিনীকা তাকাতেই বলল,

‘ এখনো কি ক্ষমা করেন নি? ‘

অনেকক্ষণ পর নিনীকা মিষ্টি কন্ঠে বলল,

‘ আপনার উপর আমার কোনো রাগ নেই। আপনার নাম্বারটা ব্লক লিস্টে আছে। আপনি নিজেই না-হয় ব্লক লিস্ট থেকে নাম্বারটা তুলবেন। ততোদিন অপেক্ষা করুন না একটু। ‘

ধ্রুব ঠোঁট চেপে মাথা নাড়ালো। নিনীকা ঠোঁট প্রসারিত করে বলল,

‘ আপত্তি থাকলে আমি করে ফেলছি। ‘

ধ্রুব সঙ্গে সঙ্গে না করলো।

‘ একদম না, আমি নিজেই সেটা করবো সময় হলে। ‘

মাস্কের আড়ালে নিনীকা ঠোঁট চেপে হাসছে। ধ্রুব আড়চোখে নিনীকার চিকচিক করা চোখ দেখে সেটা বুঝে ফেললো। ফারিন আচমকা চিৎকার করে গাড়ি থামাতে বললো। ধ্রুব রেগে তাকালো,

‘ কি সমস্যা তোর? ‘

ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

‘ ফুচকা খাবো ব্রো। ‘

‘ প্রতিদিন কত মন ফুচকা খাস তুই? পেটে অসুখ বাঁধবে না? ‘

ফারিন নিরীহ চোখে তাকালো,

‘ আমার সাথে ভাবিও খায়। ‘

ধ্রুব চট করে নিনীকাকে দেখে নিয়ে বলল,

‘ যতো ইচ্ছে খেতে থাকো দুজন, অসুস্থ হলে উল্টো করে ঝুলিয়ে পে*টাবো। ‘

ফারিন পিটপিট করে তাকিয়ে বলল,

‘ আমাকে একা? নাকি ভাবিকেও? ‘

ধ্রুব দারুণ ফেসাদে পড়লো যেনো। সে দেখলো নিনীকাও উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। অনেক ভেবে জবাব দিলো,

‘ যারা আমার নিজের তাদের সবাইকে পে*টাবো। সে তোর ভাবি হলেও রেহাই নেই। ‘

ফারিন অভিজ্ঞদের মতো মাথা নাড়ালো,

‘ তোমার দ্বারা সব সম্ভব৷ আর্মির মেজর বলে কথা। ‘

ফারিন কথাটা বলে থেমে থাকলো না। গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দিলো ফুচকা স্টলের দিকে। ধ্রুব বোকা হয়ে সেদিকে হা করে তাকিয়ে আছে দেখে নিনীকা শব্দ করে হেঁসে ফেললো।

‘ ও আপনাকে কথার মধ্যে ফাঁ*সিয়ে নেমে চলে গেলো।’

ধ্রুব তৎক্ষনাৎ জীপ থেকে নামলো। ফুচকা স্টলটায় রাস্তা পাড় হয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ তাদের গাড়ির বিপরীতে সেটা। ফারিন মাঝখানে আটকে আছে গাড়ির জ্যামে পড়ে। এবার নিনীকাও চিন্তিত হয়ে নেমে দাড়ালো। ফারিনের অবস্থান দেখে মুখে হাত তার।

‘ সর্বনাশ, একটু এদিক সেদিক হলেই ওর উপর গাড়ি উঠে যেতে পারে। ‘

ধ্রুব রাগে ঘাড়ে মাসাজ করছে। নিনীকা ঢুক গিললো। আর্মি অফিসারদের অনেক রাগ হয় তনু আপা বলেছেন তাকে। নিনীকা দেখলো ধ্রুব রাস্তা পেরিয়ে মাঝখানে চলে গেছে। ফারিন পেছনে একবারও তাকায় নি। ধ্রুব দু’হাতে বোনকে কোলে তুলে রাস্তা পেরিয়ে ফুচকা স্টলে নিয়ে গেলো। ফারিন প্রথমে ভড়কে গেলেও ধ্রুবকে দেখে গলা জড়িয়ে ধরে হাসছিলো। যেনো সে জানতো তার ভাই তাকে বিপদ থেকে বাঁচাতে আসবেই।

ফারিন একটা ফুচকা খাচ্ছিল আর সাথে ধ্রুবর একটা ধমক। নিনীকা জীপে হেলান দিয়ে ওপর পাশের সেই দৃশ্য দেখছে। ফারিনের খাওয়া হয়ে গেলে ধ্রুব ফিরে এলো। গাড়িতে বসে নিনীকার দিকে প্যাক করা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘ এখানে অনেক জ্যাম, এই শয়তানটা নেমে গেছে দেখলেন তো। আপনাকে নামিয়ে আর রিস্ক নেইনি। গাড়িতে বসেই খেয়ে নিন। ‘

ফারিন পেছনে বসে মুখ বাকালো। তার হাতে প্যাক করে আনা ফুচকা। খেয়ে আরও এনেছে যাতে গাড়িতে বসে খেতে পারে। ধ্রুব একবার পেছনে তাকিয়ে দেখলো তার বোন গপাগপ করে খাচ্ছে। একটা মানুষ এতো খেতে পারে কিভাবে, তাও যদি সে হয় লিলিপুট। ধ্রুব চেপে না রেখে জিজ্ঞেস করে ফেললো,

‘ তোর পেট এতো ছোট, জায়গা হচ্ছে কিভাবে? ‘

ফারিনের মুখ অপমানে থমথমে। কিছু কড়া কথা শুনাতে চাইছিল সে। তার আগেই ধ্রুবর ফোন বাজলো। এতোক্ষণে যেনো ধ্রুবর মাথায় এলো তারা রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিল খেতে। রমজান শেখ ফোন করে ছিলেন, ধ্রুবর থেকে মোবাইল নিয়ে নিনীকা কথা বলল,

‘ বাবা আমরা ফুচকা খাচ্ছি বুঝলে৷ তোমরা বরং রেস্টুরেন্টে খাও। আমরা এখানেই আছি৷ বাসায় পৌঁছে যাবো চিন্তা করো না। তোমরাও সাবধানে ফিরো। ‘

কথা বলে ধ্রুবর মোবাইল এগিয়ে দিলো সে। ধ্রুবর পেট ক্ষিধায় জ্বালাতন করছে। সে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ আপনাদের কি পৌঁছে দিবো এখন? ‘

নিনীকার যেনো মনে পড়লে হঠাৎ। বলল,

‘ আরে আপনি তো কিছু খাননি, সামনে কোনো রেস্টুরেন্টে চলুন তো। খেয়ে তারপর ফিরে যাবো না-হয়। আমার সত্যি মনে ছিল না। ‘

ধ্রুব মাথা দুলিয়ে গাড়ি চালানোতে মন দিলো। ফারিন পেছন থেকে বলল,

‘ ব্রো তোমার যদি বেশি খিদে পায় তবে আমার থেকে ফুচকা নিয়ে খেতে পারো। কি দিবো? ‘

ধ্রুব রেগে গলা উঁচু করে বলল,

‘ আর একটা কথা বলবি তবে রাস্তায় ফেলে দিবো বলে দিলাম। ‘

ফারিন আর কোনো কথা বললো না। রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে নিনীকা ও ফারিনকে শেখ বাড়িতে পৌঁছে দিলো ধ্রুব। যাওয়ার আগে নিনীকা নিচু কন্ঠে বলল,

‘ আমি সত্যি জানতাম না বা মনে ছিল না সেজন্য দুঃখীত। এটার জন্যে আপনাকে আমি একদিন রেঁধে খাওয়াবো না-হয়। তাহলে শোধবোধ হয়ে যাবে তাই না?’

ধ্রুবর থেকে উত্তর এলো,

‘ একদিন নয়, প্রতিদিন যদি কেউ যত্ন করে রেঁধে খাওয়ায় তবে আমি রাজি

বিয়ে থা_২ পর্ব-১২

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১২
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

সকাল থেকে বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। আজ ফারিনের কোচিং-এ যেতে হলো না। সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে সে ও নিনীকা, মিথিলার বানানো ফুচকা ও বেলপুরি খাচ্ছে আরাম করে। ফারিনে বেলপুরি খেতে খেতে চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে ওয়া-ও দেখালো। খেয়ে তারপর বলল,

‘ তোমার হাতের বেলপুরি কি ফ্যান্টাসিক আন্টি! আমি তো এটা খাওয়ার লোভে এখানে সারাজীবন থেকে যেতে পারবো। অথচ মাম্মা প্রতিদিন ফোন দিয়ে বলে কি এমন ফেলি যে বাড়ির কথা তোর মনে পড়ে না! ‘

মিথিলা হেসে ফেললেন শব্দ করে। নিনীকা ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

‘ তুমি কি বলেছো? ‘

‘ আমি বলেছি উত্তর টা আপাতত জানি না, জেনে তারপর জানাবো। ‘

‘ এখন তবে জানিয়ে দাও। ‘

ফারিনের ধারাকে ফোন দিলো। গপাগপ করে বেলপুরি খেতে খেতে বলল,

‘ মিথি আন্টির বানানো বেলপুরি খাওয়ার জন্যে হলেও আমি সারাজীবন এখানে থেকে যাবো মাম্মা। তুমি প্লিজ আমাকে নিয়ে আর টানাটানি করো না। বিয়ে নিয়ে কিছু ভেবো না। ঘরজামাই নিয়ে আমি এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে রাজি আছি। ‘

মিথিলা ও নিনীকা হাসতে হাসতে শেষ। রুম্পা ছোট সোফায় বসে নিজেও বেলপুরি খাচ্ছিল। ওর হাসতে হাসতে নাকেমুখে উঠে গেছে। মিথিলা জলদি পানি খাওয়ালেন। রুম্পা এখন পোয়াতি। বয়সে নিনীকার অনেক ছোট। নতুন বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। প্রথমবারের মতো মা হচ্ছে।

ফারিন ধারাকে কোনকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিয়েছে। শান্তিতে বসে বেলপুরি খেতে খেতে বলল,

‘ আমি আপনার কাছে বানানো শিখবো আন্টি। ‘

মিথিলা মাথা নাড়ালেন,

‘ অবশ্যই। ‘

দুপুরেও বৃষ্টি থামলো না। নিনীকা ও ফারিন শাড়ি পড়ে ছাঁদে ভিজলো। দুজনে পায়ে আলতা দিয়েছে সুন্দর করে। বৃষ্টির পানিতে সেগুলো ধুয়েমুছে যাচ্ছিল। মিথিলা ছাদের দরজায় দাড়িয়ে ছিলেন। নিনীকা তাকে টেনে নিয়ে গেলো। বহুদিন পর বৃষ্টিতে ভিজে মিথিলা অল্প বয়সী তরুণী হয়ে গেছিলেন যেনো। অনেকক্ষণ পর হাঁচি দিতে দিতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে চলে গেছেন। নাহলে এ দুজন তাকে ছাড়তোই না সহজে।

দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজার ফলে নিনীকা ও ফারিনের ঠান্ডা লেগে গেলো। ঔষধ খেয়ে বিকালে দুজন কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমালো। সন্ধ্যায় রমজান শেখ অফিস থেকে ফিরে নাস্তার টেবিলে দুজনকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হলেন। মিথিলা নাক টানতে টানতে বললেন,

‘ দুটো বৃষ্টিতে ভিজেছে, আমাকেও টেনে ভিজিয়ে ছেড়েছে। তুমি চিন্তা করো না৷ ওরা উঠলেই নাস্তা করবে না-হয়। ‘

রমজান শেখ কোণা চোখে স্ত্রীকে দেখলেন।

‘ তোমারও ঠান্ডা লেগেছে? ‘

মিথিলা মাথা নাড়ালেন। রমজান শেখ পাশে বসতে ইশারা করলেন। মিথিলা বসতেই কপালে হাত দিয়ে চেক করে দেখলেন বেশ গরম৷ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

‘ এখনই রুমে গিয়ে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। আমি নাস্তা করে আসছি। ‘

‘ রাতের রান্না বাকি তো। ‘

‘রুম্পা করে নিবে। সার্ভেন্ট আরও রাখবো দরকার হলে। তুমি রেস্ট নাও গো। ‘

মিথিলা মাথা দুলিয়ে চলে গেলেন। জানেন কিছু বলে লাভ হবে না। তার মাঝেমধ্যে মনে হয় নিনীকা শেখ বাবুর মতো হয়েছে। বাপের মতোই কিছু টা জেদি কি না কে জানে।

প্রায় রাত আটটার পর দুজনের ঘুম ভাঙলো। খাবার টেবিলে রমজান শেখ একা বসে ছিলেন। মাকে না দেখতে পেয়ে নিনীকা চিন্তিত হয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছিল। রমজান শেখ দুজনের প্লেটে ভাত তুলে দিয়ে বললেন,

‘ আজ তোমার মা অসুস্থ, সে রেস্ট নিক। আমি তোমাদের ভাত বেড়ে দিচ্ছি খেয়ে নাও। ‘

নিনীকা অদ্ভুত চোখে নিজের বাবাকে দেখলো। ভাত বেড়ে খাওয়ার মতো বয়স তার হয়েছে। কিন্তু মায়ের বেড়ে দেওয়ার পর ভাত খাওয়াটা নিত্যদিনের অভ্যাস ছিল। তাই বলে সে নিজের হাতে ভাত বাড়তে পারবে না সেটা কি রমজান শেখ ভেবে নিয়েছেন! নিনীকা ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো।

‘ আমি নিজেই বেড়ে খেতে পারি বাবা। তুমি যদি চাও তোমাকেও ভাত প্লেটে তুলে দিতে পারি। এটা কোনো বড় বিষয় নয়। ‘

রমজান শেখ খেতে খেতে হাসলেন।

‘ কি বলো তো নিনী মা, এটা একটা অভ্যাস। মিথিলার হাতে ভাত বেড়ে খাওয়াটা এ পরিবারের সবার অভ্যাস। আমরা সবাই কিন্তু ভাত বেড়ে খেতে পারি, কিন্তু ওইযে অভ্যাসটা! এটাতে আমাদের আনন্দ। একদিন তার ব্যতিক্রম হলে আমরা ভড়কে যাবো। যেমন আজ তোমাকে আমি ভাত বেড়ে দিচ্ছি বলে তুমি ভড়কে গেছো। ভেবেছো তুমি নিজেই তো ভাত বেড়ে খেতে পারো। অথচ এতোদিন অভ্যাসবশত তোমার মা-ই ভাত বেড়ে খাওয়াতেন তখন কিন্তু এটা তোমার মনে হয়নি। ‘

নিনীকা বুঝতে পারলো। রমজান শেখ মেয়ের মুখে ভাত তুলে দিলেন।

‘ কয়েকদিন পর তুমি নতুন পরিবারে যাবে। সেখানেও সবাই এইরকম একটি অভ্যাসে অভ্যস্ত থাকতে পারে। নতুন কোনো মানুষ ভাত বেড়ে দিতে পারে। সেটা এখনই বুঝতে পেরে গেছো বলে যখন তুমি ওটার মুখোমুখি হবে তখন তোমার আর অদ্ভুত লাগবে না। তুমি সেটা স্বাভাবিক ভাবেই নিতে পারবে। বা এমনও হতে পারে নতুন মানুষ হিসেবে তোমাকে সবাইকে বেড়ে খাওয়াতে হতে পারে। সেটাতে তোমার কোনো অসুবিধা হবে না বলে আমার ধারণা। ‘

ফারিন মুগ্ধ চোখে রমজান শেখ কে দেখছে। একজন বাবা কি সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে নিজের মেয়েকে বুঝাচ্ছেন বিয়ের পরে কিভাবে সবকিছু সহজ ভাবে নিতে হবে। ফারিন নিজেও ধারার ভাত বেড়ে দেওয়ায় অভ্যস্ত। এখানে মিথিলা বেড়ে দিতেন। সেটা তার কাছে নতুন নতুন লাগতো। আমরা আসলে অভ্যাসগত কিছু থেকে হঠাৎ করে পিছু হেঁটে গেলে থমকে যাই। আজ রমজান শেখ ভাত বেড়ে দিলেন। ফারিনের আজও নতুন নতুন লাগলো। এখানে ধারা থাকলে সেরকমটা লাগতো না। তাদের বাড়িতে যখন নিনীকা বউ হয়ে চলে যাবে তখন কি নিনীকাও ভাত বেড়ে খাওয়াবে? ব্যাপার টা ফারিন কিভাবে নিবে জানে না, তবে সিনটা পুরনো হয়ে গেলে ধারার মতোই লাগবে। অস্বাভাবিক ভাবনাটা পাল্টে যাবে হয়তো।

রমজান শেখ খাওয়ার পর প্লেট গুছাতে লাগলেন। নিনীকা হেল্প করলো তাকে। রুম্পা প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে রাতের রান্নাটা করেই চলে যায়। মিথিলা নিজেই সবটা করতেন। আজ বাবা মেয়ে মিলে সব গুছানো হলো। বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে তবেই দুজন কাজ শেষ করলেন। ফারিন উঁকিঝুঁকি দিয়ে তাদের দেখছিল। আচমকা দেখলো নিনীকার মতো শক্ত মেয়ে তার বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়েছে। রমজান শেখ চশমার ফাঁক দিয়ে চোখের কোণে হাত বুলিয়ে হাসছেন। নিনীকা ফুপিয়ে উঠছে বার-বার। বলছে,

‘ বাবা…আমি তোমাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো। ‘

রমজান শেখ মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রাখলেন।

‘ সবাইকেই তো যেতে হয় মা। এদিক থেকে তুমি লাকি ভালো শ্বশুরবাড়ি পাচ্ছো। যখন তখন গাড়ি চালিয়ে চলে আসবে। তাছাড়া কয়েকদিন পর অফিসের দায়িত্ব তো তোমাকেই বুঝে নিতে হবে মা আমার। আমি আর কয়দিন? ‘

‘ বিয়ে করাটা কি খুবই জরুরি বাবা? এটা না করলে আমি তো তোমার কাছে সারাজীবন থাকতে পারতাম। ‘

রমজান শেখ মেয়ের ছেলেমানুষী কথাতে হাসলেন।

‘ বিয়েটা করা কতোটা জরুরি তুমি ভালো করেই জানো মা৷ বিয়ে মানে দ্বিতীয় জন্ম। তুমি নিজের ইচ্ছেতে নতুন মা বাবা, নতুন পরিবার বেছে নিচ্ছো। ‘

ফারিন বাবা মেয়ের আবেগপ্রবণ ঘটনা দেখে ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে ফেললো। তার ঠোঁট তরতরিয়ে কাঁপছে। বিয়ে করাটা জরুরি, তারমানে তাকেও করতে হবে। মা বাবা ভাই ভাবীকে ছেড়ে তাকেও চলে যেতে হবে। আচ্ছা ফারিন কার কাছে যাবে? তাকে ছোট বোন মনে করা ওই নিরবের কাছে?

(চলবে)

বিয়ে থা_২ পর্ব-১১

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১১
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

রমজান শেখ রোজকার মতো সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরেছেন। গত দুদির ধরে অফিস থেকে ফিরে ডোয়িং রুমে বসে ফারিন ও নিনীকার সাথে আড্ডা দেওয়াটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আজ ও আড্ডা দিতে বসেছে সবাই। রুম্পা নাস্তা এনে ছোট টেবিলে রেখে নিজেও বসলো সোফায়। ফারিনের চটপটে স্বভাব তারও ভালো লাগে। শেখ বাড়ির সবাইকে দুদিনে যেনো নিজের বশে এনে ফেলেছে ফারিন।

সবার সাথে আড্ডা দেওয়ার মধ্যে ফারিনের মোবাইলে ধ্রুবর মেসেজ আসছে সেকেন্ডের গতিতে। ফারিন চোখমুখ শক্ত করে বসে আছে। তার ভাই যে তাকে দুদণ্ড শান্তিতে বসতে দিবে না সেটা যেনো পণ করেছে।

ফারিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আজ ধ্রুবর কোনো মেসেজ সিন করবে না। সকালবেলা বলবে মোবাইলে চার্জ ছিল না। ব্যস!

রাত নয়টা তখন। ফারিনকে পড়াচ্ছে নিনীকা। মাঝে মধ্যে ভাবছে ধ্রুবর কথা। আচমকা ফারিনকে জিজ্ঞেস করলো,

‘ তোমার ভাই কি বিজি থাকে? ‘

ফারিন চোখ না তুলেই জবাব দিলো,

‘ আপাতত ছুটিতে, বিজি থাকার প্রশ্নই আসে না। ‘

ব্যস নিনীকা নিজের উত্তর পেয়ে গেলো। চোখমুখ শক্ত হলো তার। মানুষটা কি তাকে অবহেলা করছে?

রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত মোবাইল হাতে নিয়ে নিনীকা এসবই ভাবলো। দু’দিন ধরে ধ্রুব কোনোরকম ফোনকল করছে না। তবে কেন সেদিন নিজ থেকে ফোন দিয়ে নিনীকাকে নতুন কিছুর আশা দিলো! ব্যাপার টা নিনীকার আত্নসম্মানে আঘাত করছে ভীষণ ভাবে। ঘুমানোর আগে সে ধ্রুবর নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেললো। মোবাইল টা অফ করে রাখলো।

মধ্যরাতে পায়চারি করতে করতে ধ্রুব যখন নিনীকার মোবাইলে ফোন করলো তখন বন্ধ পেলো। একে তো ফারিনের উপর রাগ, তার উপর নিনীকার মোবাইল বন্ধ! ধ্রুবর রাগটা দ্বিগুণ বাড়লো। ভাব হবার আগেই ভাঙন হওয়ার সম্ভাবনা!

পরদিন ফারিনকে কোচিং-এ ড্রপ করে ফিরছিলো নিনীকা। সামনে জীপগাড়ি থামলেও কোনোরকম ভাবাবেগ দেখালো না সে। ধ্রুব নিজেই গাড়ি থেকে নেমে নিনীকার গাড়ির কাঁচে ঠুকা দিল। কাচ নামাতেই বলল,

‘ কথা আছে আমার। ‘

‘ যা বলার বলে ফেলুন। ‘

নিনীকার মধ্যে নিরুৎসাহিত ভাব। ধ্রুব আহত হলো মনে মনে। বলল,

‘ বেশি সময় নিবো না। ‘

অগত্যা বের হতে হলো নিনীকাকে। গাড়ি থেকে বের হয়ে ধ্রুবর জীপগাড়িতে উঠে বসলো। ধ্রুব কয়েক মিনিট চুপ থেকে বলল,

‘ আপনার মোবাইল বন্ধ দেখাচ্ছে কেন? কেউ যে চিন্তা করতে পারে সেটা কি আপনার মনে নেই? ‘

‘ দুদিন যখন কেউ চিন্তা করেনি, তাহলে মোবাইল বন্ধ দেখালে যে কেউ চিন্তা করবে সেটা ভাবা বিলাসিতা। ‘

ধ্রুব থমথমে কন্ঠে বলল,

‘ আমি এক্সপ্লেইন করছি মিস..ফারিনের মাধ্যমে আপনার খুঁজ খবর নিয়ে নিতাম, গতকাল সন্ধ্যা থেকে ফারিন আমার কোনোরকম কল বা মেসেজ সিন ওর রিসিভ করছিল না। সেজন্য আমি অপেক্ষা করতে করতে মধ্যরাতে আপনাকে ফোন করেছিলাম। আই নো দ্যাট আপনি অপেক্ষা করছিলেন। আ’ম স্যরি নিনীকা। ‘

‘ ফারিনের মাধ্যমে খুঁজ নিতেন যেহেতু এখনও তাই নিন না-হয়। ‘

‘ নিনীকা প্লিজ বুঝতে চেষ্টা করুন! ‘

নিনীকা তাকালো,

‘ কি বুঝবো? ‘

ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘ ওকে ওকে আমি বলছি। আসলে আমি দেখতে চেয়েছিলাম আপনি নিজ থেকে আমাকে স্মরণ করেন কি না। প্লিজ অভিমান করে থাকবেন না। আ’ম স্যরি এগেইন মিস হিরোইন৷ ‘

নিনীকা অবাক হলো।

‘ আপনাকে কে বললো আমি অভিমান করেছি? ‘

ধ্রুব হাসলো,

‘ কাউকে বলতে হবে কেনো, যাকে দু’দিন পর নিজের সাথে জড়াবো তার স্বভাব, মুখ দেখে মনের কথা পড়ে নেওয়া সবকিছুর দায়িত্ব তো আমারই হবে। সেটা এখন থেকেই পালন করতে চেষ্টা করছি। ‘

নিনীকা বলল,

‘ ওকে মিস্টার, আপনি তবে বিয়ের আগ পর্যন্ত ফারিনের থেকেই খুঁজ খবর নিন। নাম্বার টা ব্লক লিস্ট থেকে সেদিনই বের করবো, যেদিন আপনার সাথে জড়িয়ে যাবো। ‘

ধ্রুব অসহায় চোখে তাকালো। নিনীকা নির্লিপ্ত ভাবে জীপগাড়ি থেকে নেমে চলে গেলো। ধ্রুব চেয়ে চেয়ে দেখলো নিনীকার কালো রঙের গাড়িটা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।

ধ্রুব বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরলো। ধারা ছেলের মুখ দেখে চিন্তিত হলেন। দুপুরে খেতে বসেও ধ্রুবর চেহারা একই ছিল। ধারা যে পছন্দের সব খাবার রান্না করেছেন সেটাও কেমন অনিচ্ছুক ভাবে খেলো। ধারা জিজ্ঞেস করেই ফেললেন,

‘ কি হয়েছে ধ্রুব? ‘

ধ্রুব মুখ কালো করে বলল,

‘ বিয়ের ডেট টা এগিয়ে আনা যায় না মা? ‘

‘ কেন তোমার কি ছুটি বাতিল হয়ে গেছে? ‘

ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে না করলো।

‘ কিছু না মা, আ’ম আপসেট না-ও। ‘

ধারা মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন।

‘ কি নিয়ে ব্যাটা? ‘

ধ্রুব সব বললো। শুনে ধারা বললেন,

‘ এটা হয়তো তোমার করা উচিত হয়নি। স্যরি বলেছো তো? সব ঠিক হয়ে যাবে সময় দাও। ‘

ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো রুমে। ধারা সোফায় বসে ভাবলেন, অবশেষে ধ্রুব কারো জন্যে ভাবছে। নিনীকার সাথে দেখা করতে যাওয়ার আগে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ধ্রুব কি কঠিন স্বরেই না বলেছিল উত্তর একই থাকবে!

রুমে এসে ধ্রুব অনেকক্ষণ নিনীকার নাম্বারে ট্রাই করলো। না ব্লক খুলেনি। ধ্রুব মনে মনে পাষাণ উপাধি দিলো নিনীকাকে। রাত দশটার পর ফারিনের হয়তো মায়া হলো। ধ্রুবর মেসেজের উত্তর দিলো। ধ্রুব ফারিনকে ধমক না দিয়ে নিনীকার বিষয়ে কথা বলতে লাগলো। ফারিনকে পরে দেখে নিবে সে। আপাতত চুপ থাকাই শ্রেয়, নাহলে ফারিন তাকে কোনোরকম আপডেট দিবে না৷

নিনীকার সাথেই ঘুমায় ফারিন। ধ্রুবর সাথে মেসেজে কথা বলার মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়েছে। নিনীকা ফারিনের মোবাইল নিয়ে ধ্রুবর সব মেসেজ দেখলো। শেষ মেসেজটা ছিলো,

‘ তোর ভাবি অনেক রাগ করেছে বুঝলি, বুঝিয়ে বলিস একটু। আমি তো এতকিছু ভেবে কিছু করিনি। জানতাম নাকি মহারানী এতো রাগ করে ফেলবে। ‘

নিনীকা মেসেজটা পড়ে হাসলো৷ রিপ্লাই দিলো,

‘ ঠিক আছে বলবো। ‘

সেকেন্ডের গতিতে সেটা সিন করেছে ধ্রুব। নিনীকা অবাক হচ্ছে শুধু। ধ্রুব লিখেছে,

‘ সে কি ঘুমিয়ে গেছে? একটা ছবি তুলে পাঠা তো বনু। ‘

নিনীকা চোখ বড়বড় করে মেসেজটা দেখলো। এটার উত্তরে কি বলবে সে বুঝতে পারছে না। কিছু না বলাই শ্রেয় ভেবে মোবাইল টা রেখে দিলো।

সকালে ফারিন মোবাইলে ধ্রুবর মেসেজ দেখে তেমন কিছু বুঝতে পারলো না। কারণ রাতে সে ঘুমের ঘুরেও কয়েকটা মেসেজের উত্তর দিয়েছিল। নিনীকা যে তার হয়ে ধ্রুবর সাথে কথা বলেছে সেটা তার ভাবনাতেও এলো না।

নাস্তা করার মধ্যে ফারিনকে পরখ করছিল নিনীকা। ধরা পড়েনি বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। ফারিন যদি তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতো তবে সে বিব্রতবোধ করতো অনেক। যতোই হোক মেয়েটা তার অনেক ছোট।

রাতের কথা ভেবে নিনীকা নাস্তা করতে করতে মিটিমিটি হাসছিল। সেটা লক্ষ্য করে ফারিন প্রশ্ন ছুড়লো,

‘ তুমি হাসছো কেন ভাবি? ‘

নিনীকা বিষম খেতে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নিয়েছে। এরা ভাই বোন দুটোই ডেঞ্জারাস।

‘ ফানি একটি বিষয় মনে পড়েছে, সেজন্য হাসছি। ‘

ফারিন মাথা নাড়িয়ে খেতে মন দিলো। নিনীকা আড়চোখে রুম্পাকে দেখলো। যে তার দিকে তখন থেকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ স্বাভাবিক, নিনীকা স্বভাববিরুদ্ধ কাজ করছে, রুম্পা এভাবে তাকাবেই। নিনীকা সোজা হয়ে বসে খেতে লাগলো। রুম্পার নজর নিজের উপর ভেবে তার দারুণ অস্বস্তি হচ্ছে। মনে হচ্ছে সে চুর!

(চলবে)

বিয়ে থা_২ পর্ব-১০

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১০
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

আজ শেখ বাড়ি থেকে প্রথমবার কোচিং-এ গেছিল ফারিন। এখন বিকেল গড়িয়ে গেছে। নিনীকা বলেছিল তাকে নিতে আসবে। সেজন্য রাস্তায় দাড়িয়ে আছে সে। ফারিন চারিদিকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল। তন্মোধ্যে তার সামনে এসে থামলো একটি কালো গাড়ি। নাহ্ গাড়িটা নিনীকার নয়। কালো হলেও নিনীকার গাড়ি একটু অন্যরকম। ফারিনকে অবাক করে দিয়ে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে মুখ বের করলো নিরব।

‘ আপনি কি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন মিস? ‘

ফারিন বিস্ময়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। নিরবকে সে আশা করেনি। নিরব ফারিনের মুখের হা করা দেখে ইতস্তত করে বলল,

‘ আপনি মেজরের বোন তো? ‘

ফারিন রোবটের মতো মাথা নাড়াতেই নিরব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।

‘ গ্রেট, সেজন্যই আমি আপনাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামিয়েছি। বাট আপনার রিয়াকশন দেখে মনে হচ্ছিল আমি হয়তো ভুল কাউকে মেজরের বোন ভেবে ফেলেছি। ‘

ফারিন হেসে ফেললো এবার। চঞ্চলতা তার কন্ঠে।

‘ কোথায় যাচ্ছিলেন আপনি? ‘

নিরব সরল হাসি দিলো।

‘ একটু কাজ ছিল ম্যাম সেজন্য বের হয়েছিলাম। আপনি যদি উঠে বসেন তবে আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আমি আর্লি চলে যেতে পারি। ‘

ফারিন মুখ বাকালো। কি সুন্দর ম্যাম ম্যাম করছে! কেনরে বেটা? তোর কোন কালের ম্যাম লাগি! মুখে বলল,

‘ আপনাকে কষ্ট করতে হবে না, ভাবী গাড়ি নিয়ে আসবে। আমি তার সাথেই যাবো। আপনি বরং সে না আসা পর্যন্ত আমার সাথে গল্প করুন। ‘

নিরব অসহায় চোখে তাকালো। মেজরের ছোট বোন বলে সে এক ধরনের দায়িত্ব থেকেই হেল্প করতে এসেছিলো। গল্প করার মুড বা ইচ্ছে কোনটাই এখন তার নেই।

ফারিন জিজ্ঞেস করল,

‘ আপনি বিয়ে করেছেন? ‘

নিরব অদ্ভুত চোখে তাকালো এবার। নিজেকে সামলে বললো,

‘ না আপনার ভাবি এখনো আসেন নি। ‘

ফারিনের উত্তর টা পছন্দ হলো না।

‘ কে ভাবি? ‘

‘ আমি বিয়ে করলে যে আসবে সে। ‘

এমন স্পষ্ট উত্তরে ফারিন পাল্টা কি বলবে ভেবে পেলো না। নিরবের উত্তর তার ভালো লাগে নি। এরমধ্যেই নিরব আবার ও বলল,

‘ মেজরের হবু ওয়াইফ কি সত্যি আসবেন? আপনি বিনা সঙ্কোচে গাড়িতে উঠতে পারেন। আপনি আমার ছোটবোনের মতোই। ‘

ফারিন তেতে উঠলো,

‘ কিসের ছোটবোন মশাই? আপনি কি আমাকে সম্পত্তির ভাগ দিবেন? ‘

নিরব আশ্চর্য হয়ে গেলো। তারা দু’ভাই। কোনো বোন নেই বলে নিজের থেকে ছোট কাউকে দেখলেই তার বোন বোন ফিলিংস আসে। তাছাড়া মেজরের বোন মানেই তো তার বোন! এই সহজ হিসাবটার এমন গড়মিল করছে কেন মেয়েটা?

গলা কাঁকড়ি দিয়ে বলল,

‘ আপনি মেজরের বোন যেহেতু সেহেতু আমারও বোনের মতোই। ‘

ফারিন নাক ফুলিয়ে বলল,

‘বোনের মতোই কিন্তু বোন না! ‘

নিরব এমন আশ্চর্য মেয়ে এর আগে দেখেনি। কি পটপট করে কথা বলে। নিরব কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু তার আগেই সামনে থামা একটি কালো গাড়িতে উঠে গেলো ফারিন। নিরব বেআক্কল হয়ে ভাবলো শুরুতে মেয়েটার গলার স্বরে চঞ্চলতা ছিল বোন বলতেই সেটা উধাও হয়ে গেলো কেন!

নিনীকার পাশে গাল ফুলিয়ে বসে আছে ফারিন। হাতে কোণ আইসক্রিম। নিনীকা ড্রাইভিংয়ের ফাঁকে ফারিনকে খেয়াল করছে।

‘ মন খারাপ কেন বারবিডল? ‘

ফারিন অদ্ভুত একটি প্রশ্ন করলো।

‘ আমি কি অনেক বেশিই ছোট ভাবী? ‘

‘ না তো, এ মাসটা শেষ হলেই তো তোমার আঠারো হয়ে যাবে। তুমি তো অলরেডি বড় হয়ে গেছো। ‘

‘ তাহলে সবাই আমাকে বোন বানায় কেন? ‘

নিনীকা চিন্তিত হয়ে বলল,

‘ কে ডেকেছে? ‘

‘ ধরো তুমি কাউকে পছন্দ করো, সে তোমাকে ছোট বোন হিসেবে দেখে! তখন তোমার কেমন লাগবে? ‘

‘ কাকে পছন্দ করো তুমি? ‘

‘ বলবো না। ‘

ফারিন গাল ফুলিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকলো। নিনীকা গাড়ি সাইড করলো।

‘ যাকে পছন্দ করো তাকেও তো জানতে হবে, যে তুমি তাকে পছন্দ করো। নাহলে তো তোমাকে ছোট বোন কেন অন্য কিছু ও ভাবতে পারে। যেমন তোমার ভাইকে আমি আগে এয়ারপোর্টে দেখেছি। তখন আমার কাছে সে শুধুমাত্র একজন আর্মি অফিসার ছিল। বাট এখন সে আমার হবু, সবকিছু ঠিক থাকলে আমাদের বিয়ে হবে। সে আমার বর হয়ে যাবে। সম্পর্কের বদল হবে। ‘

ফারিনের মুখে হাসি ফুটলো,

‘ আমি কি তাকে পছন্দের ব্যাপারে বলে দিবো? ‘

নিনীকা ফারিনের উচ্ছসিত মুখশ্রীটি দেখলো কয়েক সেকেন্ড।

‘ পছন্দ করো, সেটা বলাতে কোনো দোষ নেই। একটা ছেলে যেমন একটা মেয়েকে পছন্দ করলে প্রপোজ করে তেমনই একটা মেয়ে ও একটা ছেলেকে প্রপোজ করতে পারে। কিন্তু তার আগে তোমাকে নিজের অনুভূতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে হবে। তোমার এই বয়সটা আবেগের। এ সময় অনেককেই ভালো লাগবে। কিন্তু ভালো লেগেছে বলে তাকে প্রপোজ করে সম্পর্কে যেতে হবে তেমন না। তুমি তার সাথেই সম্পর্কে যেতে পারো যার প্রতি তোমার ভালো লাগাটার স্থায়িত্ব হবে সারাজীবনের জন্য। দু’দিনের ভালো লাগার জন্যে কারো সাথে সম্পর্কে গিয়ে নিজের চরিত্রে দাগ লাগানোর কোনো মানে নেই। এবং আমি মনে করি এগুলো তুমিও জানো এবং বুঝো। ‘

ফারিন মাথা নাড়ালো,

‘ আমি জানি এগুলো ভাবি। বাট তুমি এখন বুঝিয়ে বললে বলে আমি ভাবতে বাধ্য হবো। এবং নিজের অনুভূতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করেই কিছু করতে এগোব। ঠিক আছে? ‘

নিনীকা গাল টেনে দিলো।

‘ দ্যাটস গুড গার্ল। ‘

‘ তুমি জানতে চাইবে না সে কে? ‘

নিনীকা ড্রাইভিং শুরু করেছে আবারও।

‘ কে? ‘

‘ থাক এখন বলবো না। আগে নিজের অনুভূতি পাকাপোক্ত ভাবে জেনে নেই। ‘

নিনীকা শব্দ করে হাসলো। ফারিনের ফোনে নোটিফিকেশনের শব্দ হলো। ফারিন দেখলো তার ভাই লিখেছে,

‘ কোথায় আছিস এখন? ‘

ফারিন উত্তর দিলো,

‘ গাড়িতে, কোচিং থেকে বাড়িতে যাচ্ছি। ‘

ধ্রুব লিখেছে,

‘ একটা ছবি তুলে দে তো লুকিয়ে। ‘

ফারিন চট করে নিনীকার কাঁধে মুখ রেখে দুজনের সেলফি তুলে ফেললো। নিনীকা সেটা স্বাভাবিক ভাবেই নিলো। ধ্রুবকে পাঠিয়ে দিয়ে ফারিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। ধ্রুব অনেকক্ষণ পর রিপ্লাই দিলো,

‘ একা ছবি দিতে বলেছি, পুরোটাতে তো তোর বান্দরমুখটাই দেখা যাচ্ছে বেশি। ‘

ফারিন ফুঁসে উঠে লিখলো,

‘ আর পারবো না। আমাকে আবার বকা দিলে ভাবিকে বলে দিবো তোমার মতলব। ‘

ধ্রুব সেটাতে এংরি রিয়েক্ট দিয়ে রিপ্লাই দিয়েছে,

‘ বাসায় আয় একবার। তুলে একটা আছাড় মা*রবো দেখিস। ‘

ধ্রুবর মেসেজে স্পষ্ট ধমক টের পেরো ফারিন। মোবাইল বন্ধ করে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে রইলো। নিনীকা খেয়াল করে বলল,

‘ কি হয়েছে? ‘

‘ ভাবি আমি আচার খাবো, ফুচকা খাবো, ঝালমুড়ি খাবো, চটপটি খাবো। ‘

নিনীকা অবাক হয়ে বলল,

‘ খাবে, তাতে মন খারাপ করার কি আছে? ‘

‘ তুমি কি আমার সাথে খেতে পারবে? ‘

নিনীকা ভেবে বলল,

‘ অবশ্যই। গাড়িতে বসে একসাথে খাবো। ‘

নিনীকা ফুচকা স্টলের সামনে গাড়ি থামালো। ফারিন অর্ডার দিয়ে এসে গাড়িতে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর ফুচকাওয়ালা ফুচকা দিয়ে গেলেন। দুজন খেতে খেতে কথা বলতে লাগলো। এই ফাঁকে চোখ বন্ধ করে ফুচকা খেতে ব্যস্ত নিনীকার একটি ছবি তুলে ফেললো ফারিন। ধ্রুবকে সেটা পাঠিয়ে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।

(চলবে)

বিয়ে থা ২ পর্ব-০৯

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব – ০৯
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

মাসের শেষ দিকে বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে। সুতরাং এখন হাতে অফুরন্ত সময়। গতকাল এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো। পার্টির পর আর তাদের দেখা বা কথা হয়নি।

রাত দশটা। ধ্রুব সবে খেয়ে রুমে এসেছে। মোবাইল হাতে বারান্দায় কিছুক্ষণ পায়চারি করলো সে। গতকাল বাড়িতে এসে বার-বার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নিনীকাকে ফোন করা হয়নি। আজ-ও ফোন করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোথাও একটা জড়তা কাজ করছে ধ্রুবর। ইতিহাসের পাতায় কেউ লেখেনি সবার আগে ছেলেদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নিনীকা নিজে কি পারতো না? নিজ থেকে ফোন করে ধ্রুবর এই জড়তা কাটিয়ে দিতে!

ধ্রুব অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো সে আজ ফোন করেই ছাড়বে। দুরুদুরু বুক নিয়ে ডায়াল করলো নিনীকার নাম্বারে। রিসিভ হতেই ধ্রুব থমকে গেলো। ওপাশ থেকে নিনীকা হ্যালো বলছে। ধ্রুব কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না। নিনীকা হয়তো ধ্রুবর পরিস্থিতি বুঝতে পারলো, নাকি বুঝলো না সেটা ধ্রুব জানে না। তবে চমৎকার বুদ্ধিমান মেয়েটি চট করে তার জড়তা কাটিয়ে দিলো।

‘ কেমন আছেন ধ্রুব? ‘

ধ্রুব কথা খুঁজে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। ভাগ্যিস নিনীকা জিজ্ঞেস করেনি কেন ফোন দিয়েছেন! ধ্রুব উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ আপনি কেমন আছেন নিনীকা? ‘

‘ আমি বরাবরই ভীষণ ভালো থাকি। বাড়ির সবাই কেমন আছে? আন্টি..মানে মায়ের শরীর ভালো? ‘

ধ্রুব হাসতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। গতকাল পার্টিতে তার মা বোন নিনীকাকে অনেক বিরক্ত করেছে। ধারা নিনীকার মুখে মা ডাক শুনে তবেই শান্ত হয়ে বসেছিলেন।

‘সবাই ভালো আছে, আপনি চলে এলে আরও ভালো থাকবে সবাই। ফারিন আপনার অনেক ভক্ত হয়ে গেছে। সারাক্ষণ আপনার কথাই বলে। সে নাকি বিয়ে যতোদিন না হচ্ছে ততোদিন আপনার সাথে গিয়ে থাকবে। মা অনেক ধমকে আটকে রেখেছেন। সামনে এডমিশন ওর, রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে এবার পড়াশোনাতে মনোযোগ দিতে হবে। সেজন্য জোর করে হলেও পড়তে বসাচ্ছেন। ‘

নিনীকার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

‘ বেশিই কি ধমকানো হয়েছে ওকে? ‘

‘ না তেমন না, তবে বাবা না থাকলে মা*র খেতো হয়তো। ‘

নিনীকা কেমন অনুরোধের স্বরে বলল,

‘ আপনি প্লিজ মাকে বলে ফারিনের এডমিশনের সমস্ত বইপত্র সাথে করে এখানে দিয়ে যাবেন? আমি মাকে ফোন করে বলবো যাতে তিনি আমার কাছে ফারিনকে পাঠিয়ে দেন। আমিও তাকে অনেক মিস করি। ‘

ধ্রুব কি বলবে বুঝলো না।

‘ কিন্তু ওর তো কোচিং আছে! ‘

‘ আমাদের বাড়ি থেকে কোচিং-এ যেতে কোনো অসুবিধা হবে না। আমিই ওকে ড্রপ করে দিয়ে আবার নিয়ে আসবো। ‘

ধ্রুব অনেকটাই অবাক হলো। মেয়েটির কথাবার্তা শুনে কে বলবে সেলিব্রিটি। একটু তো অহংকারী ভাব থাকবে সেটাই তার ধারণা ছিল। তার সব ধারণা গুলো মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে। তাতে অবশ্য ধ্রুবর ভালো লাগছে। নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে এরকম একজনকেই চেয়েছিল সে, যে তার পরিবারকে সবটুকু দিয়ে ভালোবাসবে।

নিনীকা ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করছে। ধ্রুব উত্তর দিলো,

‘ ঠিক আছে, মা যদি রাজি হোন তবে আমি দিয়ে আসবো। ‘

‘ আরে মা আমার কথাতে পুরোপুরি রাজি হবেন না। আপনিও তাকে বলবেন প্লিজ। তাতেও যদি রাজি না হোন আমি বাবাকে পাঠাবো। ‘

ধ্রুব এবার হেসে ফেললো। বিয়ের কনে হবু বরের জন্য পাগল থাকবে তা না হবু ননদের জন্য পাগলামি করছে।

ধ্রুবর রুমের দরজায শব্দ হলো। ধারা কফি নিয়ে ঢুকেছেন। ধ্রুব মাকে দেখে বলল,

‘ তোমার হবু বউমা কি বলে শুনে নাও মা। ‘

ধ্রুব মোবাইল এগিয়ে দিলো। ধারা আগ্রহী হয়ে মোবাইল কানে ধরলেন। নিনীকা তাকে ফারিনের বিষয়ে বলতেই তিনি নাকচ করলেন।

‘ ওর এডমিশনের বেশিদিন নেই নিনীকা, তোমার কাছে গেলে ঠিকমতো পড়বে না। সারাক্ষণ লাফালাফি করবে। ‘

‘ আমি পড়াবো মা, আপনি প্লিজ রাজি হয়ে যান। আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি ফারিন প্রতিদিন পড়তে বসবে। কোচিং-এ ও আমিই নিয়ে যাবো। ‘

ধারা না করতে পারলেন না আর।

‘ ঠিক আছে। তবে গায়ে হলুদের আগের দিন চলে আসতে তবে ওকে৷

ফারিনকে গলা উঁচু করে ডাক দিলেন। আসতেই মোবাইল বাড়িয়ে দিলেন। কানে নিতেই নিনীকা বলল,

‘ আগামীকাল তোমার ভাইয়ের সাথে চলে এসো সবকিছু নিয়ে। মাকে আমি রাজি করিয়েছি। ‘

ফারিন উজ্জ্বল চোখে ধারার দিকে তাকালো। ধারা হাত দিয়ে মার দেখালেন। ফারিন ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ ভাবী মা তো মার দেখায়৷ ‘

নিনীকা হেসে বলল,

‘ আগামীকাল আমার কাছে চলে আসলে আর দেখাবে না। ‘

ধারা মেয়ের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছেন। ধ্রুব মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফারিনের কথা শুনছিল। বলল,

‘ বেচারিকে আর ভয় দেখিও না মা। দেখবে শেষে সবাই রাজি অথচ ও যাবে না ভয় পেয়ে। ‘

ফারিনের চঞ্চল মুখে ভয়, সে মোবাইল এগিয়ে দিলো ধ্রুবর দিকে। ধারা মেয়েকে আগলে নিলেন।

‘ আগামীকাল চলে যেও, শান্তশিষ্ট হয়ে থাকবে কেমন?’

ফারিন বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালো। ধারা চলে যেতেই ধ্রুবকে ধরে লাফালাফি করলো।

‘ থ্যাংক ইউ ব্রো, থ্যাংক ইউ সো মাচ। ‘

ধ্রুব নিজেকে সামলিয়ে মোবাইল কানে নিলো। নিনীকা হেসে বলল,

‘ রাখছি তবে ভালো থাকুন। ‘

মোবাইল কান থেকে নামিয়ে ধ্রুব ফারিনের কান টেনে ধরলো।

‘ যা বলেছি তা ঠিকঠাক পালন করবি। প্রতিদিন সব খবর দিবি। মনে থাকবে তো? ‘

ফারিন মাথা নাড়ালো,

‘ অবশ্যই, তুমি আমাকে ভাবির কাছে পাঠানোর জন্য মাকে রাজি করিয়েছো। তোমার কাজ ও হয়ে যাবে চিল। ‘

ধ্রুব গাল টেনে দিলো।

‘ চিল বের করবো যদি যেটা বললাম সেটা ঠিকভাবে না করিস। ‘

ফারিন মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। ধ্রুব বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে মিটিমিটি হাসলো। এভাবে নিনীকাকে ফোন করে খুজ খবর নিতে হবে না আর। ফারিন তাকে সবরকম আপডেট দিবে। সে দেখবে কিভাবে নিনীকা তাকে ফোন না করে থাকে।

নিনীকার মনে যদি ধ্রুবর জন্য একটুও ভালো লাগা থেকে থাকে, তবে ধ্রুব ফোন দিচ্ছে না বলে নিনীকা নিজ থেকে অবশ্যই ফোন দিতে বাধ্য হবে। এবং এটাই দেখতে চায় ধ্রুব। বিয়ের আগে দুজনের মধ্যেকার এই জড়তার দেয়াল ভাঙতে হবে তাকে। যোগাযোগটা দুজনের দিক থেকে হওয়াটা জরুরি। ধ্রুব আজ ফোন দিয়েছে, নিনীকা নিশ্চয়ই ভেবেছে ধ্রুব প্রতিদিন ফোন দিবে। সেজন্য নিজ থেকে কোনো ফোন দিবে না। ধ্রুব চায় খুব করে চায় নিনীকা বাধ্য হয়ে ফোন দিক। গলা শুকিয়ে গেলে একফোঁটা জলের আশায় মানুষ যেমন মরিয়া হয়ে যায় তেমনই করে নিনীকা ধ্রুবর কন্ঠ শোনার জন্যে নিজ থেকে স্মরণ করুক।

এইযে একটু আগে ফারিনের সাথে কথা বলার পর ধ্রুবকে বললো রাখছি তবে ভালো থাকুন! এটা যেনো নিনীকা কখনো বলতে না পারে। বরং প্রেমিকাদের মতো রাত জেগে কথা বলার আবদার করুক। ধ্রুব নির্দ্বিধায় মেনে নিবে। এরকমই তো সে চায়।

পরদিন সকালবেলা নিজের জীপগাড়িতে করে ফারিনকে নিয়ে শেখ বাড়িতে গেলো। গেইটের বাহিরে থেকে ফারিন কে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে ভেবেছিল সে। কিন্তু নিনীকা সবাইকে জানিয়ে রেখেছে কি না ধ্রুব জানে না, রমজান শেখ ও মিথিলা তাকে শেখ বাড়িতে ঢুকতে বাধ্য করলেন। সেখানেই থেমে নেই। ফারিন এসেই নিনীকার সাথে আড়ালে চলে গেছে। নিচে পুরো এক টেবিল খাবারের অত্যাচারে সে কাচুমাচু করেছে শুধু। অনেক কষ্টে ছাড়া পেয়ে বেরিয়ে এসেছে বিদায় নিয়ে।

(চলবে)

বিয়ে থা ২ পর্ব-০৮

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-০৮
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

নিনীকা বিয়েতে রাজি হয়েছে, সেটা ফাহিম মাহবুবকে জানিয়ে দিলেন রমজান শেখ। ফাহিম মাহবুব থেকে সেটা বাড়ির সব সদস্যের কানে গেলো। ধ্রুব টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিল। ফারিন পাশে বসে নিচু স্বরে বলল,

‘ খুব তো বলেছিলে উত্তর একই থাকবে! এখন তো বিয়ের ধুম পড়ে গেছে। ‘

ধ্রুব কিছু না বলে একদৃষ্টিতে টিভি দেখলে লাগলো। ভাব এমন সে কিছু শুনে নি। ফারিন নাছোড়বান্দার মতো ঘেঁষে বসলো। ধ্রুব চোখ রাঙিয়ে বলল,

‘ কি সমস্যা বনু? ‘

ফারিন চোখ ছোটছোট করে বলল,

‘ তুমি আমাকে ট্রিট দাও। নাহলে আমি ভাবীকে বলে দিবো। ‘

ধ্রুব বোকার মতো বলল,

‘ কি বলে দিবি? ‘

‘ এইযে তুমি বলেছিলে যতোই সুন্দরী হোক তোমার সিদ্ধান্ত একই থাকবে। ‘

ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এক হাতে কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ কি চাই তোমার? ‘

ফারিন গলা জড়িয়ে ধরলো,

‘ একমাস পর বলো তো কি? ‘

ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ভাবলো।

‘ আমাদের বাড়ির একমাত্র রাজকন্যার আঠারোতম জন্মদিন। ‘

ফারিন খুশি হলো।

‘ তোমার মনে আছে? ‘

ধ্রুব মাথা নাড়ালো,

‘ অবশ্যই, নাহলে এ বাড়িতে ঠাঁই হবে আমার? ‘

ফারিন খিলখিল করে হাসলো।

‘ একমাসের মধ্যে তো ভাবি চলে আসবে। তখন আমাকে ও ভাবিকে তুমি ঘুরতে নিয়ে যাবে। ‘

ধ্রুব মাথা নাড়ালো,

‘ অবশ্যই নিয়ে যাবো৷ ‘

*

আজ ধ্রুব নিনীকার এনগেজমেন্ট। শেখ বাড়িতেই আয়োজনটা করা হয়েছে। এরমধ্যে নিনীকা বা ধ্রুব কেউ কখনো কাউকে কোনোরকম ফোন বা মেসেজ করেনি। সেদিনের পর আজই তাদের প্রথম দেখা। ধারা ও ফারিনই নিনীকাকে নিয়ে শপিং করেছেন।

ধ্রুব প্রথমবার শেখ বাড়িতে প্রবেশ করলো। পড়োনে কালো স্যুট। প্রিন্সেস লাগছে তাকে। নিনীকা সাদা গাউন পড়েছে। মাথায় সাদা দোপাট্টা। ধ্রুবর সামনে যখন দাঁড় করানো হলো তখন ধ্রুবর মনে হলো এ যেনো রুপকথার রাজকুমারী।

নিনীকার হাতে হীরের আংটি পড়িয়ে দিয়ে ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে রইলো। পেছন থেকে ধ্রুবর এক কলেজ বন্ধু ধাক্কা দিয়ে নিচু কন্ঠে বলল,

‘ আরে ভাই একটু স্মার্ট হো, একটা চুমু দিতে পারতি আংটি পড়িয়ে। ‘

তীব্র অস্বস্তিতে ধ্রুব হাসফাস করতে লাগলো। এতো এতো মানুষের সামনে হাতে চুমু দেওয়াটা তার জন্য মারাত্মক লজ্জার।

মিথিলা মেয়েকে তাড়া দিলেন। নিনীকার আরেক পাশে তনু আপা দাড়িয়ে আছেন। তিনি নিনীকার হাতে আংটি ধরিয়ে দিলেন। ধ্রুব হাত বাড়িয়ে দিলো। একদৃষ্টিতে চেয়ে দেখলো একটি কাঁপা কাঁপা হাত তার আঙুলে সোনালি রঙের আংটিটা একটু একটু করে ঢুকিয়ে দিয়েছে।

নিনীকার কাঁধে তনু আপা ধাক্কা দিলেন। নিচু কন্ঠে বললেন,

‘ তোমরা দুজনই আন রোমান্টিক! ‘

নিনীকা কিছু বললো না। ধ্রুব ও নিনীকাকে পাশাপাশি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবার। একে একে সবাই দুজনের পাশে বসে ছবি তুলছে। দুজনের বেশকিছু কাপল ছবিও তুলা হলো। কিন্তু বিপত্তি বাধলো যখন ক্যামেরাম্যান দুজনকে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসতে বললেন। ধ্রুব শরীর ঘেষে তো বসে পড়লো, কিন্তু কাঁধ জড়িয়ে ধরতে ইতস্তত করছিল। এবং তাকে অবাক করে দিয়ে নিনীকা নিজেই বাহু জড়িয়ে ধরে হেসে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছিল। ধ্রুব যখন অবাক হয়ে নিনীকার দিকে তাকিয়ে তখনই ফটো’টা উঠে যায়।

খাওয়ার টেবিলে একই রকম দেখতে দুটো মানুষকে দেখে চমকালো ফারিন৷ চেহারাটা তার পরিচিত। নায়ক নির্ঝর আব্রাহামকে সবাই চেনে। পাশে বসা একই রকম চেহারার ছেলেটি কে সে বুঝতে পারলো না। নিজের পাশে বসা নিনীকার কানে কানে বলল,

‘ একই রকম দেখতে নায়ক আব্রাহামের মতো যে লোকটা সে কে ভাবি? ‘

ধ্রুব নিনীকার পাশে বসা ছিল। নিনীকাকে প্রথম লোকমাটা সে নিজ হাতেই খাইয়ে দিয়েছে। ফারিনের প্রশ্ন তারও কানে গেলো। বলল,

‘ ওরা জমজ ভাই। ‘

ফারিন অবাক হলো,

‘ তুমি কিভাবে জানো? ‘

‘ নিরব আয়মান আমার চেনা একজন অফিসার। একসাথে অনেক কাজ করেছি। সে বর্তমানে একজন ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে আছে। পাশে তার ভাই নির্ঝর আব্রাহাম যে মিডিয়াতে কাজ করে। ‘

ফারিনের সাথে সাথে নিনীকাও যেনো আকাশ থেকে টুপ করে নিচে পড়লো। কাকতালীয় ভাবে হলেও সে এর আগে জানতো না আব্রাহামের ভাই ধ্রুবর পরিচিত কেউ হতে পারে।

ধ্রুব হয়তো নিনীকার ভাবনা ধরে ফেললো। বলল,

‘ অনেক সময় এরকমটা হয়ে থাকে। কাকতালীয় অনেক কিছুই হয়৷ ‘

নিনীকা কিছু বললো না। ফারিন ফিক করে হাসলো। ধ্রুব ঠোঁট চেপে নিজেও হাসছে। নিনীকা এই দু ভাই-বোনের মাঝখানে পড়ে অসহায়বোধ করলো। ধ্রুবর সাথে তার কথাবার্তা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। লোকটা একটু হাসলেও তার অস্বস্তি বেড়ে যায়।

ধ্রুবর সোজাসুজি চেয়ারে তনু আপা বসেছেন। তিনি আচমকা ধ্রুবকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ নিনীকার হবু বর, আপনার আর কোনো অফিসার এখানে আসেন নি? ওইযে যাদের এয়ারপোর্টে দেখেছিলাম। ‘

ধ্রুব একটু অবাক হলো।

‘ আপনি কবে আমাকে এয়ারপোর্টে দেখেছেন? ‘

তনু আপা হয়তো একটু বিরক্ত হলেন।

‘ আরে আপনি ভুলে গেছেন মশাই! কয়েকমাস আগে নিনীকা আমি আমাদের পুরো টিম থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্যে এয়ারপোর্টে হাজির হয়েছিলাম। আপনাদের তো আমি এয়ারপোর্টে দেখার পর থাইল্যান্ডেও দেখেছি। ‘

ধ্রুব নিনীকার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালো। নিনীকা মনে মনে চরম বিরক্ত তনু আপার উপর। ধ্রুবকে বলল,

‘ হ্যাঁ তনু আপা আপনাকে দেখেছেন এয়ারপোর্টে। ‘

নিনীকার উত্তরে তনু আপা হয়তো সন্তুষ্ট হোন নি। আওয়াজ একটু উঁচু শুনালো,

‘ আরে আমি কি একা দেখেছি নাকি? তুমি ও তো দেখেছো! ‘

নিনীকা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছিলো না। ফারিন খিলখিল করে হাসছে৷ সে দারুণ মজা পেয়েছে৷ ধ্রুব নিনীকার থেকে চোখ ফিরিয়ে মুখ নিচু করে হাসলো। নিনীকা সেটা দেখে গুটিয়ে গেলো। কি একটা অস্বস্তিতে সারাক্ষণ জড়িয়ে যাচ্ছে সে। লোকটা বার-বার হেসে তাকে বিব্রত করে!

তনু আপা আবারও জিজ্ঞেস করলেন,

‘ বললেন না তো মশাই, কোনো অফিসার এই পার্টিতে উপস্থিত কি না? ‘

ধ্রুব জবাব দিলো,

‘ এয়ারপোর্টে আমার সাথে থাকা কেউ এখানে উপস্থিত নেই। তবে আমার পরিচিত একজন আর্মির ক্যাপ্টেন উপস্থিত আছে। কেন বলুন তো? ‘

নিনীকা তনু আপাকে টাইট দিতে বলল,

‘ তনু আপা আর্মিদের প্রতি মারাত্মক ক্রাশিত! ‘

তনু আপার গলায় খাবার আটকে গেলো। ধ্রুব আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো নিনীকাকে তনু আপা চোখ দিয়ে শাসাচ্ছেন কিন্তু নিনীকা পাত্তা না দিয়ে নিঃশব্দে কিছু একটা বলে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে।

এ প্রথম নিনীকাকে হাসতে দেখলো ধ্রুব। সুন্দরী মেয়েটা হয়তো তার সামনে হাসতে চায় না।

তনু আপা ধ্রুবর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন আবারও।

‘ আপনার ওই ক্যাপ্টেন টা কোথায়? ‘

উত্তর দিলো নিনীকা,

‘ মিস্টার নির্ঝর আব্রাহামের জমজ ভাই, তাকিয়ে দেখো। ‘

তনু আপা চট করে পাশে তাকালেন। লম্বা টেবিলে তার আরও চার পাঁচ চেয়ার পরে বসেছে একইরকম দেখতে দুটো ছেলে। একটা আব্রাহাম আরেকটা অবিকল আব্রাহামের মতো দেখতে। তনু আপা খুশিতে আব্রাহামকে ডাক দিলেন। আব্রাহাম তাকাতেই ইশারায় কিছু একটা দেখালেন। আব্রাহাম বুঝলো না। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বিরক্ত হচ্ছে অনেক। এই তনু আপা সবাইকে এতো বিরক্ত করতে ভালোবাসে কেন কে জানে!

খাওয়া শেষে নিনীকা ও ধ্রুব আবারও পাশাপাশি বসে আছে। ফারিন ধ্রুবর পাশে বসে নিনীকার পাশে বসা তনু আপার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এরমধ্যে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে এলো নায়ক আব্রাহামের জমজ ভাই।

‘ আমার একটু কাজ পড়ে গেছে মেজর, আমি আসছি।’

ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে বিদায় দিলো। তনু আপা নিনীকার কাঁধে ঝুলে পড়ে হলেও নিরবকে দেখছেন। ফারিন নাক ফুলিয়ে ক্যাপ্টেন নিরব আয়মানকে দেখলো এক নজর। তার জীবনের প্রথম ক্রাশ এভাবে কেউ চিনিয়ে নিয়ে যাবে সেটা সে কখনোই হতে দিবে না!

(চলবে)

বিয়ে থা ২ পর্ব-০৭

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-০৭
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

(কপি নিষিদ্ধ)

ধ্রুব থমথমে মুখশ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরলো। ডোয়িং রুমে বসা ধারা ও ফারিন চেপে ধরলো তাকে। ধ্রুব মিনমিন করে বলল,

‘আমাকে একটু সময় দাও মা। ‘

ফারিন মুখ বাঁকিয়ে বলল,

‘ তুমি যে হ্যাঁ বলবে সেটা আমি বুঝতে পারছি। ‘

ধ্রুব গটগট পায়ে রুমে চলে গেলো।

এদিকে শেখ বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই মিথিলা মেয়েকে চেপে ধরলেন।

‘ কেমন দেখলি ধ্রুবকে? ‘

নিনীকা কি বলবে বুঝতে পারলো না। ড্রাইভারকে দিয়ে ফুচকা আনিয়ে গাড়িতে বসে খেয়ে তবেই বাসায় এসেছে সে। যাতে তাড়াতাড়ি আসার জন্যে মা সন্দেহ না করেন। মিথিলা গলার স্বর উচু করলেন।

‘ কিরে? ‘

নিনীকা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো।

‘ আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি মা। ফ্রেশ হয়ে আসি আগে, ততোক্ষণে তুমি খাবার রেডি করো। অনেক ক্ষিদে পেয়েছে। ‘

মিথিলা হতাশ হলেন। খাবার গরম করতে বললেন রুম্পাকে। রুম্পা এতোক্ষণ কিচেনের দরজায় সামনে দাড়িয়ে ছিলো। মিথিলাকে নিচু কন্ঠে বলল,

‘ আপার মুখের হাবভাব ভালো লাগছে না খালাম্মা। নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল আছে। ‘

মিথিলা ধমক দিলেন।

‘ চুপ কর, কোনো গন্ডগোল নেই। ধ্রুব সোনার টুকরো ছেলে। তোর আপা হয়তো ওমন রাজপুত্র দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে বুঝলি। ‘

রুম্পা মুখ বাঁকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। নিনীকা ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো আধাঘন্টা পর। খাবার খেতে খেতে মিথিলা আবারও প্রশ্ন ছুড়লেন।

‘ বললি না তো কেমন দেখলি। ‘

নিনীকা খাবার গিলে বলল,

‘ ভালোই ‘

‘ তোর বাবাকে মতামত কখন জানাবি? ‘

‘ সময় দাও মা, আমি আরেকটু ভাবি। ‘

মিথিলা কিছু বললেন না আর। নিনীকা খেয়ে রুমে চলে গেলো। ধ্রুবর সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার সবটুকু সময় কি কি হয়েছে ভাবতে লাগলো। তার বয়স বা ধ্রুবর বয়সটা সিরিয়াস টাইপ বয়স। এ বয়সে সিরিয়াস কথাবার্তা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু না তাদের কোনো কথাই হলো না।

ধ্রুব যখন খেতে নিচে নামলো তখন আচমকা ধারাকে বলল,

‘ মা সে সত্যিই সুন্দর। ‘

ধারা খুশি হলেন।

‘ তুই রাজি তবে? ‘

ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘ আমি ভাবতে চাই মা। সৌন্দর্য কখনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে না। আমি তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তবে আমি তারমধ্যে আরেকটি জিনিস খুঁজবো, সেটা যদি পাই তবে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। ‘

ফারিস চোখ ছোটছোট করে বলল,

‘ আর কি চাও? ‘

‘ এরকম কিছু, যাতে আমার মনে হয় তাকে আমি চোখবন্ধ করে বিয়ে করে নিতে পারবো। ‘

‘ এখনও চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে নিতে পারো, সে সবদিক থেকে ফিট। তুমি যা খুঁজছ তা পেয়ে যাবে। ‘

‘ যদি না পাই বিয়ের পর? ‘

ধারা চিন্তিত হয়ে বললেন,

‘ তুই ঠিক কি খুজচ্ছিস বাবা? ‘

ধ্রুব একটু হাসলো,

‘ জেনে যাবে মা, আমি তোমাদের শীগ্রই মতামত জানাবো। ‘

ধ্রুব খেয়ে রুমে গিয়ে নিনীকার নম্বরে মেসেজ দিলো। নম্বরটি তাকে ধারা দিয়েছেন। লিখলো,

‘ ভীষণ নার্ভাস হয়ে গেছিলাম। সেজন্য কিছু বলতে পারিনি। আপনি কি বিরক্ত হয়েছেন? ‘

নিনীকা সঙ্গে সঙ্গে দেখলো সেটা। উত্তর দিলো,

‘ নাহ, আমি নিজেও নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম যদিও। ‘

‘ আপনি যেটা ভেবেছেন সেটা আসলে ঠিক নয়। পরিবার থেকে আমাকে জোর করে কিছু করাবে না। আমি মতামত দিলে তবেই সব হবে। ‘

নিনীকা লিখলো,

‘ গুড। ‘

এর পরিবর্তে কি বলা যায় ধ্রুব বুঝতে পারলো না। অনেক ভেবে লিখলো,

‘ আপনার কাছে সম্পর্কের গুরুত্ব কতটুকু? ‘

নিনীকা দেখলো সেটা। হেসে লিখলো,

‘ মিস্টার ধ্রুব মাহবুব, মিডিয়া জগতের সবাই খারাপ হয় না। ‘

ধ্রুব রিপ্লাই টা দেখে একটু চমকে গেলো। কি বুদ্ধিমান! সে তো কোনোরকম ইঙ্গিত ও দেয়নি। ধ্রুব কিছু লিখার আগেই নিনীকার আরও একটি মেসেজ এলো।

‘ আপনি যাকে বিয়ে করবেন তার বিষয়ে আগে পুরোপুরি শিওর হোন। যাতে পরবর্তীতে কখনো মনে না-হয় যে আগে একটু খুঁজ খবর নিলে ভালো হতো! ভবিষ্যতে যাতে আফসোস না করেন। ‘

ধ্রুব রিপ্লাই দিলো না। বরং চিৎকার করে ডাকলো ধারাকে। ধারা দৌড়ে এলেন।

‘ কি হয়েছে ধ্রুব? ‘

ধ্রুব জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ আমি তাকে বিয়ে করতে রাজি মা। আঙ্কেল কে জানিয়ে দাও৷ ‘

ধারা বিস্মিত হলেন। হঠাৎ ধ্রুবর কি হলো বুঝতে পারলেন না। তবে খুশিও হলেন। ফারিন ঘুমিয়ে পড়েছিল। ধ্রুবর চিৎকারে ছুটে এসেছে। পিটপিট করে তাকিয়ে বলল,

‘ সে-ই তো হ্যাঁ বলে দিলি। বলেছিলাম না? ‘

ধ্রুব কিছু না বলে হাসলো। ফারিন ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ তুমি কি যেন একটা খুঁজে পেলে তবেই রাজি হবে বলেছিলে! পেয়েছো? ‘

‘ একটু বেশিই পেয়েছি। ‘

ফারিন খুশি হয়ে চলে গেলো। ধারা যাওয়ার আগে বললেন,

‘ তোর বাবা খুব খুশি হবে এটা জেনে। ‘

*
সন্ধ্যায় রমজান শেখ বাসায় ফিরলেন। মেয়ে ও স্ত্রী কে নিয়ে নাস্তা করতে বসলেন। খেতে খেতে বললেন,

‘ ধ্রুব হ্যাঁ বলে দিয়েছে। ‘

নিনীকা চমকালো। মনে করতে চেষ্টা করলো রেস্টুরেন্টে দেখা ধ্রুবর কিছুটা স্তব্ধ, কিছুটা নার্ভাস মুখটা। না চোখে ভাসছে না সেটা। মিথিলা বললেন,

‘ হ্যাঁ না বলে উপায় আছে? আমাদের নিনীকাকে পছন্দ করবে না এমন ছেলে হতেই পারে না। ‘

রমজান শেখ মেয়েকে পরোখ করলেন।

‘ তুমি যদি মতামত টা জানিয়ে দাও তবেই আমরা আগাতে পারবো নিনী৷ ‘

নিনীকা চুপচাপ নাস্তা করে রুমে চলে গেলো। মিথিলা একটু মন খারাপ করে বললেন,

‘ তোমার মেয়ে হ্যাঁ বলবে তো? ‘

রমজান শেখ চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করে বললেন,

‘ আমার মেয়ে বুদ্ধিমতী। সে যা সিদ্ধান্ত নিবে ভেবেচিন্তেই নিবে। ‘

‘ ধরো, নিনীকা না করে দিলো। তখন? ‘

‘ ওইযে বললাম আমার মেয়ে বুদ্ধিমতী। সে যদি না করে দেয় তারমানে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। আমি বাবা হিসেবে তার সব সিদ্ধান্তকেই সাপোর্ট করবো। ‘

মিথিলা অবাক হলেন,

‘ ধ্রুবর মতো ছেলেকে রিজেক্ট করার কি কারণ থাকবে? ‘

‘ আহ্, মিথি! নিনী এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। আমি শুধু বলেছি সে যদি ‘না’ বলে তারজন্যে কোনো কারণ থাকবে। কারণ আমার থেকে তুমি ভালো করেই জানো নিনীকা এই সম্মন্ধে একটু হলেও আগ্রহ দেখিয়েছে৷ আগের মতো মুখের উপর কিছু বলেনি। তুমি আমি যা বলছি সে সব শুনছে। ধ্রুবর সাথে দেখা করতেও গেছে।’

মিথিলা মাথা নাড়ালেন। এবার তার মাথায় কিছু টা হলেও ঢুকছে।

রমজান শেখ তখন সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন। মিথিলা পাশে বসে কম সাউন্ড দিয়ে টিভি দেখছেন। একপাশে রাখা স্মার্টফোনে নোটিফিকেশনের শব্দ হলো। রমজান শেখ কাজে ডুবে। মিথিলা উঁকি দিলেন। উপরে নিনীকার নাম!

তড়িৎ গতিতে মোবাইল টা হাতে নিলেন। মেসেজ বক্সে গিয়ে মেসেজ পড়ে খুশিতে চিৎকার করে উঠলেন।রমজান শেখ চমকে গেলেন।

‘ কি হলো? ‘

মিথিলা মোবাইল বাড়িয়ে দিলেন। রমজান শেখ দেখলেন নিনীকা মেসেজ পাঠিয়েছে৷ লিখেছে,

‘ তোমার বন্ধুর ছেলেকে রিজেক্ট করার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি বাবা। দেখা যখন হলো তখন অস্বস্তিতে কেউই কিছু বলতে পারিনি। তোমার ভালো বন্ধুর কিপ্টা ছেলে আমাকে কোনো খাওয়ার অফার করেনি। আমি চাইলেই এই কারণটা দেখিয়ে প্রস্তাব টা রিজেক্ট করে দিতে পারি। কিন্তু দিলাম না। আমি একটু বেশিই বুদ্ধিমান কি না। তার অস্বস্তিটা বুঝে ফেলেছি। সামনাসামনি হ্যাঁ বলতে পারছিলাম না, সেজন্য মেসেজে বলে দিলাম। তোমার মেয়ের জন্যে যদি তোমার বন্ধুর ছেলেকে উপযুক্ত মনে হয় তবে আমি রাজি! ‘

(চলবে)

বিয়ে থা ২ পর্ব-০৬

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-০৬
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

টেবিলে খাবার খেতে বসেছে শেখ বাড়ির সবাই। তখনই মিথিলা কথাটা বললেন।

‘ নিনীকা, তোমার আন্টি আঙ্কেল চাইছেন তুমি ধ্রুবর সাথে দেখা করো। ‘

নিনীকা খাওয়া থামিয়ে মিথিলার দিকে তাকালো। রমজান শেখ মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন,

‘ দেখা করলে তোমার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে নিনী। কথা বললে তুমি বুঝতে পারবে তার বিষয়ে কিছু টা হলেও। ‘

নিনীকা মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘ ঠিক আছে। ‘

‘ তবে আগামীকাল দেখা করে ফেলো। ধ্রুবর ছুটি রয়েছে কয়েকমাস। দুজন যদি রাজি থাকো তবে আমরা এরমধ্যেই তোমাদের বিয়ের কাজটা সেরে নিতে চাই। ‘

নিনীকা একটু থমকালো। সে যদি হ্যাঁ বলে দেয় তবে তার বিয়ে হয়ে যাবে! নিনীকার নামের সাথে মিসেস শব্দ টা যুক্ত হবে৷ এ যেনো অবিশ্বাস্য!

খাবার খেয়ে নিনীকা যখন রুমে যাচ্ছিল তখন মিথিলা মেয়েকে আটকালেন। রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দিয়ে বললেন,

‘ শাড়ি পড়ে যেও। তোমাকে শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগে। ‘

নিনীকা কিছু না বলে মাথা নাড়ালো শুধু। রুমে এসে ঘুমাতে চেষ্টা করলো। সে জানে ভোর হলেই মিথিলা তাকে ডেকে তুলবেন। তারপর শাড়ি গহনার মাঝে বসিয়ে দিয়ে বলবেন,

‘ দেখ তো মা, তোর কোনটা পছন্দ হয়? ‘

নিনীকার ভাবনা সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে মিথিলা ভোরে নিনীকাকে ডেকে তুললেন। শাড়ি ও গহনার মাঝে বসিয়ে একটা একটা করে শরীরে লাগিয়ে দেখতে লাগলেন কোনটায় বেশি সুন্দর লাগে। মিথিলার এ কাজ চললো আটটা পর্যন্ত। রমজান শেখ স্ত্রীর কান্ড দেখে হেসে চলে গেছেন। আজ তাকে একাই টেবিলে বসে নাস্তা করতে হলো। অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাওয়ার আগে মিথিলাকে ডেকে বিদায় নিয়ে বললেন,

‘ ওকে কোনো প্রকার চাপ দিও না। ওর কোনটা পছন্দ সেটা জিজ্ঞেস করবে আগে। দেখবে ও অনেক সহজ হয়ে যাবে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা বিয়েকে এক প্রকার ভয়ের চোখে দেখে। নিনী ও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের ওর সাথে সহজ আচরণ করতে হবে। যাতে ওর কখনোই মনে না হয় বিয়ে একটা ঝামেলা। ‘

মিথিলা মুগ্ধ হয়ে শুনলেন। চুল ঠিক করে দিয়ে বললেন,

‘ তুমি এতো সুন্দর করে কথা বলো কিভাবে? মোটিভেশনাল স্পীকার হিসেবে ভালোই নাম কামাতে পারবে। ‘

রমজান শেখ না হেসে পারলেন না।

‘ পরিবারের কাউকে না কাউকে মোটিভেশনাল স্পীকার হতে হয় বুঝলে মেয়ের আম্মু? ‘

‘ এটা কি নিয়ম শেখ বাবু? ‘

‘ নাহ্ এটা নিয়ম নয়, তবে তুমি খেয়াল করে দেখবে প্রত্যেক পরিবারেই একজন করে মোটিভেট করা মানুষ থাকে। আমি সেরকমই কেউ হতে চেষ্টা করছি। যাতে আমার মেয়ের জীবনটা গুছিয়ে দিতে পারি সুন্দর করে। এবং আমি এটাও জানি মেয়ের মাকেও আমাকেই সামলাতে হবে। মেয়ের মা-ও মেয়ের মতো একটু অদ্ভুত৷ ‘

রমজান শেখ অফিসে চলে গেলেন। মিথিলা আবারও নিনীকার রুমে গেলেন। সাদা জামদানী শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

‘ এটা পড় মা, তোকে সাদাতেই বেশি সুন্দর লাগে। ‘

নিনীকা সুন্দর করে গুছিয়ে শাড়ি পড়লো। এর ফাঁকে মিথিলা মুখে তুলে নাস্তা খাইয়ে দিয়েছেন। নিনীকার কানে ডায়মন্ডের সাদা টপ পড়িয়ে দিয়ে বললেন,

‘ কোনো সাজ ছাড়াই আমার মেয়েকে কতো সুন্দর লাগছে। আমারই নজর লেগে যাচ্ছে। ‘

নিনীকা একটু হাসলো।

‘ বাবা তো আর এমনি এমনি বলে না, আমি তোমার মতো হয়েছি। ‘

‘ তুই আমাকেও ছাড়িয়ে গেছিস বুঝলি। ‘

‘ মা এরকম সিম্পলই থাক, সাধারণই সুন্দর। ‘

মিথিলা মাথা নাড়ালেন।

‘ অবশ্যই। কৃত্রিম কোনোকিছু দেওয়ার দরকার নেই। একটু লিপবাম দিতে পারিস। আর চুলগুলো গুছিয়ে দেই আয়। ‘

চুল গুছানো শেষে মিথিলা সাদা কারুকাজ করা চুড়ি পড়িয়ে দিলেন দু’হাতে। গলায় ছোট্ট সিম্পল একটি সাদা পাথরের চিকন চেইন।

মিথিলা একটু আফসোস করে বললেন,

‘ নাক ছিদ্র করাবো তোর বুঝলি, এখন যদি একটা ডায়মন্ডের ছোট নাক ফুল পড়তি তো আরও সুন্দর লাগতো। ‘

‘ ঠিক আছে করবো। ‘

মিথিলা খুশি হলেন। নিনীকার আচরণে পরিবর্তন এসেছে। যে মেয়ে পাত্রপক্ষ আসবে শুনলেই তুলকালাম করতো সে পাত্রের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। নিজ থেকে আগ্রহ দেখাচ্ছে সবকিছুতে। যদিও আগ্রহটা সামান্য তবুও মিথিলার কাছে তা বড় কিছু। তার বিশ্বাস নিনীকা আজ দেখা করে এসে হ্যাঁ বলে দিবে।

নিনীকা সাদা হাইহিল ও ব্যাগ বের করে বলল,

‘ মা দেখো তো এগুলো ঠিকঠাক মানাবে কি না। ‘

*

ধ্রুব রেডি হচ্ছে। ফারিন বিছানায় বসে দেখছে। ধ্রুবর ড্রেস সে-ই পছন্দ করে দিয়েছে। ধ্রুব কেমন যেন নির্লিপ্ত। কোনোরকম আগ্রহ সে দেখাচ্ছে না। ফারিন মনে মনে বলল,

‘ একবার দেখা তো করো বাছাধন, এমনভাবে পা পিছলে পড়বে না! কোনোদিন উঠতে পারবে না। ‘

ধ্রুব রেডি হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। ফারিন পেছন থেকে তাড়াতাড়ি গিয়ে সামনে দাড়ালো।

‘ তুমি আমাকে না বলে চলে যাচ্ছো কেন? ‘

ধারা সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন। ধ্রুবকে নামতে দেখে উঠে দাড়ালেন। মুখে হাত বুলিয়ে বললেন,

‘ সাবধানে যেও, তাকে নিয়ে আসতে পারলে নিয়ে এসো। আমাদের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে যাবে। তার ভালো লাগবে। ‘

ধ্রুব মাথা নাড়ালো। ফারিন ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

‘ যাও যাও, মনে থাকে যেনো। তুমি বলেছো উত্তর একই থাকবে। ‘

ধারা চোখ রাঙালেন। ধ্রুব কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো।

‘ উত্তর একই থাকবে বলেছি তারমানে একই থাকবে। দেখে নিস। ‘

‘ হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও দেখবো৷ তুমি যদি উত্তর একই রেখে ভাব দেখাও তবে তার কিছু আসবে যাবে না। তার জন্যে পাত্রের অভাব হবে না বুঝলে! ‘

ধ্রুব রেগে গেলো।

‘ মা! ‘

ধারা ফারিনের মুখ চেপে ধরলেন।

‘ তুই সাবধানে যা বাবা। ওর কথায় কান দিস না। ‘

*

রেস্টুরেন্টের একটি টেবিলে পাঁচ মিনিট ধরে বসে আছে ধ্রুব৷ বার-বার ঘড়ির দিকে চোখ বোলাচ্ছে। এগারোটা বেজে গেছে। মায়ের বলা সুন্দরীর কোনো দেখা নেই এখনো। আরও দশ মিনিট সময় গড়ালো। তখনই রেস্টুরেন্টের সামনে থামলো একটি কালো গাড়ি। ধ্রুব কাঁচের ফাঁক দিয়ে দেখলো সাদা শাড়ি পরিহিত একজন রমনী এগিয়ে আসছে। মুখে মাস্ক ও চোখে রোদচশমা। রমনীটি ধ্রুবর বুক করা টেবিলের কাছে এসে থামলো। চেয়ার টেনে বসে রোদচশমা খুলে এক পলক তাকালো। মাস্ক খুলে যখন আবারও তাকালো তখনই ধ্রুব থমকালো। বুক টিপটিপ করছে তার। রমনীটি ঠোঁট প্রসারিত করে বলল,

‘ হাই, আমি নিনীকা শেখ। ‘

ধ্রুবর মুখটা হা হয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পরখ করছে নিনীকাকে। মুখে কোনো প্রসাধনী নেই। গাল নাকে গোলাপি আভা। ফারিনের কথা মনে হতেই গলা শুকিয়ে গেলো তার। ফারিন বলেছিল মোমের পুতুল। ধ্রুবর মনে হলো তার সামনে সত্যিই মোমের তৈরি কেউ বসে আছে। সাদা শাড়িতে স্নো ওয়াইট লাগছে।

নিনীকা ধ্রুবর কোনো উত্তর না পেয়ে একটু নার্ভাস ফিল করলো। এরকম আগ বাড়িয়ে কথা বলাটা হয়তো ঠিক হয়নি। সামনের মানুষ টা নিজ থেকে ও কিছু বলছেনা। শুধু তাকিয়ে আছে৷ ধ্রুবর তাকানোর স্থায়ীত্ব ত্রিশ মিনিটেরও বেশি ছিলো। তারপর সে মুখ খুললো।

‘ আপনি ভালো আছেন? ‘

নিনীকা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না। এতোক্ষণ পর একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো। কি অদ্ভুত!

‘ আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি? ‘

ধ্রুব উত্তর দিলো না। বলল,

‘ আপনি কি বিয়েতে রাজি? ‘

নিনীকা এবার পুরোপুরি নার্ভাস হয়ে গেলো। এই উত্তর টা সে নিজের মা বাবাকেও দেয়নি। ধ্রুব উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে।

‘ সেটা আমি বাসায় গিয়ে জানিয়ে দিবো। ‘

উত্তরে সন্তুষ্ট হলো কি না বুঝা গেলো না। ধ্রুব উঠে দাড়ালো।

‘ আপনি বাসায় চলে যান। ‘

নিনীকা শুধু অবাক হচ্ছে। জীবনে প্রথমবার পাত্রের সাথে দেখা করতে এসেছিল সে। সবারই কি তার মতো এমন অভিজ্ঞতা হয়! নাকি তার বেলাতেই ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো! নিনীকা উঠে দাড়ালো।

‘ আমার মনে হচ্ছে আপনি প্রস্তাবে রাজি নন, বা আপনাকে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আমার সাথে দেখা করার জন্য। আপনি যদি ফ্যামিলির জন্য না করতে না পারেন, তবে আমাকে মেসেজে বলে দিবেন। আমি বাকিটা দেখে নিবো। আসছি। ‘

নিনীকা মাস্ক লাগিয়ে চলে গেলো। ধ্রুব হতভম্ব চোখে তাকিয়ে থাকলো। এমন অদ্ভুত সাক্ষাৎকার তার জীবনে প্রথম। মেয়েটাকে দেখার পর থেকে সে নিজেই বেশি নার্ভাস হয়ে গেছে।

(চলবে)

বিয়ে থা ২ পর্ব-০৫

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-০৫
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

(কপি নিষিদ্ধ)

খেয়েদেয়ে রাতে নিনীকা যখন রুমে আসলো তখন তার ফোনে মেসেজের নোটিফিকেশনের শব্দ হলো। বাড়িতে থেকেও রমজান শেখ মেসেজ দিয়েছেন।

পাত্রের বিষয়ে সবকিছু পাঠিয়েছেন। সাথে ছোট একটি মেসেজ লিখেছেন,

‘ নিনীকা আমার বুদ্ধিমতী মেয়ে, আমি জানি তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে। বাবা তোমার সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায়। তোমার উপর আমার ভরসা আছে মা আমার। ‘

নিনীকার ঠোঁটে হাসি ফুটলো। পাত্রের নাম ধ্রুব মাহবুব। বয়স বত্রিশের কাছাকাছি। পেশায় আর্মি অফিসার। আপাতত একটি মিশনে থাইল্যান্ডে আছে।

নিনীকার ভ্রু কুঁচকে গেলো। তারমানে যাকে নিনীকা দেখেছে সেই এই লোকটা। নিনীকা তনু আপাকে সবকিছু পাঠালো মেসেজে। ধ্রুবর ছবি দেখে তনু আপা লিখেছেন,

‘ ও মা গো, নিনীকা! এটা তো ওই অফিসারদের মধ্যে একজন! ‘

নিনীকা লিখলো,

‘ হ্যাঁ তনু আপা। ‘

‘ নিনীকা তুমি কি তার উপর ক্রাশ? হঠাৎ তার ছবি পাঠালে যে? আর তুমি ছবিটা পেয়েছো কিভাবে? ‘

নিনীকা ধীরেসুস্থে লিখলো,

‘ বাবার বন্ধুর ছেলে। ‘

‘ ও মাই গড! সেই বন্ধুর ছেলে? যার সাথে তোমাকে বিয়ে দিতে চায় তোমার পরিবার! ‘

‘ হ্যা আপা, এটা তিনিই। ‘

নিনীকা উত্তরের অপেক্ষা করলো। ওপাশ থেকে বড়সড় মেসেজ পাঠাবেন হয়তো তনু আপা। টাইপিং দেখাচ্ছে। তনু আপার মেসেজ এলো।

‘ আ’ম সো এক্সাইটেড নিনীকা। তোমার সাথে তাকে অনেক মানাবে। তুমি নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে তাকে বিয়ে করে ফেলতে পারো। যদি না করো তবে আমাকে একটু চান্স করে দিও। ‘

মেসেজটা পড়ে নিনীকার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। নাক ফুলিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লিখলো,

‘ বাবার আমার উপর অনেক ভরসা। তার বুদ্ধিমান মেয়ে যে প্রস্তাব টা ফিরিয়ে দিবে না সেটা তিনি জেনে রিলাক্সে বসে আছেন তনু আপা। ‘

‘ তার মানে তুমি বিয়ে টা করছো? ‘

নিনীকা উত্তর দিলো না আর। মোবাইল রেখে শুয়ে পড়লো। ঘুম দরকার, লম্বা জার্নি করে শরীরে অনেক ক্লান্তি ভর করেছে।

*
বউ কথা কও বাড়ির সামনে থামলো জীপ গাড়িটি। শার্ট প্যান্ট পড়া বলিষ্ঠ শরীরের পুরুষটি সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে উচ্চস্বরে ডাকলো, ‘মা!’

ধারা দুপুরের জন্য রান্না করছিলেন। কানে মা ডাকটা আসতেই দৌড়ে বের হলেন কিচেন থেকে। ততোক্ষণে ধ্রুব ডোয়িং রুমে চলে এসেছে। ধারা আছড়ে পড়লেন ছেলের উপর।

‘ ধ্রুব, আমার বাবা। ‘

ধ্রুব আগলে নিলো। সোফায় বসে বলল,

‘ কেমন আছো মা? ‘

ধারা চোখের পানি ঝরালেন। ধ্রুবর মুখে তার হাতের বিচরণ চলছে।

‘ তোকে দেখে ভালো লাগছে, এতোদিন এক ধরনের চিন্তার মধ্যে থাকতাম কবে তুই ফিরবি। ‘

ফারিন ও ফাহিম মাহবুব বাহিরে ছিলেন। দুজন বাড়িতে ঢুকেই দেখলেন ধ্রুব সোফায় বসে আছে। ফারিন উচ্চস্বরে ডাকলো, ‘ব্রো! ‘

ধ্রুব হাত বাড়ালো। ফারিন দৌড়ে এলো। ফাহিম মাহবুব ছেলের পাশে বসলেন। মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বললেন,

‘ তোমার এই সাফল্যে আমি অনেক খুশি এবং গর্বিত ধ্রুব। ‘

ধারা টেবিলে খাবার এনে রাখছেন। প্রশ্ন করলেন,

‘ কিসের কথা বলছো? ‘

ধ্রুব বললো,

‘ থাইল্যান্ডের মিশনে সাকসেস হওয়ার জন্যে প্রমোশন হয়েছে মা। ‘

ধারা বিস্ময় নিয়ে বললেন,

‘ তার মানে? ‘

ফাহিম মাহবুব হেসে বললেন,

‘ তোমার ছেলে এখন আর্মির ক্যাপ্টেন থেকে একজন মেজর হয়ে গেছে। ‘

ফারিন কংগ্রেস জানালো। ধারা কপালে আদর দিলেন।

‘ এভাবেই জয়ী হও আমার বাবা। তোমার এই সাফল্যে আমরা অনেক খুশি হয়েছি। যদিও তোমাকে নিয়ে ভয়ও থাকে। ‘

ধ্রুব হাসলো,

‘ কোনো ভয় নেই মা, আমাদের সবকিছু পূর্বনির্ধারিত করা। আমার ভাগ্যে যেভাবে যা লিখা আছে সব হবে। তুমি শুধু দোয়া করবে, ব্যস। ‘

বহুদিন পর টেবিলে একসাথে বসেছে সবাই। ধারা ছেলেকে যত্ন করে খাওয়াচ্ছেন। এটা ওটা তুলে দিতে পাশে বসেছেন। ধ্রুব খেতে খেতে বলল,

‘ তুমিও খাওয়া শুরু করো মা, কিছু লাগলে আমি নিতে পারবো। ‘

‘ কতোদিন তোকে যত্ন করে পাশে বসিয়ে খাওয়াতে পারিনি ধ্রুব৷ ‘

ফারিন খেয়ে ধ্রুবর লাগেজ খুলে বসলো। ধ্রুব থাইল্যান্ড থেকে কি কি এনেছে দেখতে বসলো। সোফায় বসে থাকা ধ্রুবকে ধারা ঘুমিয়ে রেস্ট নিতে বললেন। ধ্রুব ঘুমাতে চলে গেলো। তার ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যার দিকে। ফ্রেশ হয়ে যখন নিচে নামলো তখনই ধারা ছেলেকে কথাটা বললেন।

‘ তোমার বাবার বন্ধুর একটি মেয়ে আছে ধ্রুব। আমরা চাই তার সাথে তোমার বিয়ে দিতে। তুমি কি একটু ভেবে দেখবে বাবা? ‘

ধ্রুবর পাশে ফারিন। দু ভাই বোন কফি খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। ফারিন কানে কানে বলল,

‘ একবার দেখতে পারো ব্রো, তোমার পছন্দ হয়ে যেতে পারে বলে আমার ধারণা। ‘

ধ্রুব তেমন গুরুত্ব দিলো না। ফারিন আবারও বললো,

‘ না সে সুন্দর বলে বলছি না। কিন্তু তার মধ্যে একধরনের আকর্ষণ আছে। তুমি তো সহজে আটকাবে না। সুতরাং দেখতে দোষ কি? ‘

ধ্রুব তবুও চুপ থাকলো। ফারিন ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ একবার দেখোই না ভাইয়া, তোমাকে দেখতে বলা হয়েছে। বিয়ে করতে বলা হয়নি। পছন্দ না হলে তো জোর করে বিয়ে দিবে না! ‘

ধ্রুব অতিষ্ঠ হলো। ধারার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,

‘ দাও ‘

ধারা নিজের মোবাইল দিলেন। স্কিনে নিনীকার ছবি। ধ্রুব এক পলক দেখলো। সম্ভবত জিন্স আর শার্ট পড়া। ধারা আরেকটা বের করলেন। ধ্রুব সেটাও এক পলক দেখলো। সবুজ রঙের ঝলমলে শাড়ি পড়া। ধারা ও ফারিন ধ্রুবর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে। তাদের ধারণা এমন সুন্দরী দেখতে মেয়েকে ধ্রুবর অবশ্যই পছন্দ হবে। কিন্তু ধ্রুব তাদের ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে বললো,

‘ পছন্দ হয়নি। ‘

ধারা অবাক হলেন।

‘ কি বললে বাবা? এমন সুন্দর একটা মেয়েকে তোমার পছন্দ হয়নি! আরেকটু ভালো করে দেখো? ‘

‘ না মা, সত্যিই পছন্দ হয়নি। ‘

ফারিন নাক ফুলিয়ে বলল,

‘ তুমি জানো সে কে? তার জন্য কতো কতো ছেলেরা পাগল। তার সিনেমা দেখতে বাংলার ইয়াং জেনারেশন থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও হুমড়ি খায়। ‘

ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ ওহ হ স্টার! ‘

‘ তবুও বলবে পছন্দ হয়নি? ‘

‘ একবার তো বললামই। এসব স্টারকে জীবনসঙ্গী করার কোনো মানে হয়না৷ ‘

ধারা হতাশ হলেন।

‘ আরেকটু ভেবে দেখলে হতো না ধ্রুব? মেয়ে টা অসম্ভব ভালো। এ পর্যন্ত কোনো বাজে রেকর্ড নেই। মিডিয়া জগতেও তার দারুণ প্রশংসা চলে। সে অন্যান্য স্টারদের মতো নয়। ‘

ফারিন তাল মিলালো,

‘ হ্যাঁ ভাইয়া, আর তুমি জানো? সে সিনেমার অফার পেলে আগে দেখে সেটাতে কোনো ক্লজ সিন থাকবে কি না। যদি থাকে তো সে সেটা রিজেক্ট করে দেয়। এজন্য ও তার অনেক সুনাম আছে মিডিয়া জগতে। আর আমি তার একটা সাক্ষাৎকার দেখেছিলাম। সেখানে তিনি বলেছিলেন সিনেমা জগতে এসেছেন শখের বসে। যেকোনো সময় তিনি সিনেমা করা বাদ দিতে পারেন। কজ তার এক কাজ বেশিদিন করতে ভালো লাগে না। তার অভিনেত্রী ক্যারিয়ারের আট বছর রানিং। ‘

ধ্রুব বিরক্ত হলো।

‘এসব আমাকে শুনাচ্ছিস কেন? ‘

‘ কারণ আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি নায়িকাদের পছন্দ করো না। বাট ব্রো সে আলাদা। তুমি ভেবে দেখতে পারো। বা তার সাথে কথা বলে দেখতে পারো। ‘

ধারাও ছেলের হাত ধরলেন।

‘ প্লিজ ধ্রুব, একটু দেখা করে দেখো না? এরপরে যদি তোমার মনে হয় সে তোমার যোগ্য না তবে আমরা আর জোর করবো না। কথা দিচ্ছি। ‘

ধ্রুব দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।

‘ ঠিক আছে। তবে জেনে রেখো তাকে আমার কোনোদিনই পছন্দ হবে না। এবং আমার উত্তর একই থাকবে। ‘

(চলবে)

বিয়ে থা ২ পর্ব-০৪

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব – ০৪
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

থাইল্যান্ডে থাকা দিনগুলোতে তনু আপা যখনই ওই অফিসারদের দেখেছেন তখনই নিনীকার কাছে বলেছেন,

‘ নিনীকা লুক, ওই অফিসারগুলো। ‘

নিনীকা কিছু না বলে শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তনু আপা তার মাথা খারাপ করে দিতে যথেষ্ট।

শুটিংয়ের কাজ শেষ করে নিনীকা যখন বাড়ি ফিরলো তখন গোধুলি বিকেল। দীর্ঘ কয়েকমাস সে থাইল্যান্ডে ছিলো। সদর দরজা খোলা। নিনীকা উঁকি দিয়ে দেখলো ভেতরে কিছু মানুষজন বসে আছে। তাদের নিনীকা চিনে না।

আকস্মিক নিনীকাকে দেখে রুম্পা চিৎকার দিলো,

‘ খালাম্মা আপা আইয়া পড়ছে। ‘

ডোয়িং রুমের সবাই সদর দরজার দিকে তাকালো তৎক্ষনাৎ। নিনীকা ধীর পায়ে প্রবেশ করলো। মিথিলা মেয়েকে দেখে হাসলেন। এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।

‘ শুকিয়ে গেছো কেন এতো? ‘

নিনীকা ঠোঁট উল্টে তাকালো।

‘ সিনেমাতে স্লিম নায়িকার অভিনয় করেছি সেজন্য। ‘

‘ ব্যাপার না কয়েকদিন খাইয়ে গুলোমোলো বানিয়ে দিবো। ‘

নিনীকা দু’হাতে পিঠ জড়িয়ে ধরলো।

‘ আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি। ‘

মিথিলা মাথায় চুমু দিলেন।

‘ আমরাও তোমাকে মিস করেছি অনেক। এসো দেখবে কে এসেছে আজ। ‘

মিথিলা নিনীকাকে ধরে সোফার কাছে নিয়ে গেলেন। বসিয়ে দিলেন রমজান শেখের পাশে। নিনীকা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। রমজান শেখ মেয়েকে আগলে নিয়ে সামনে বসা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বললেন,

‘ নিনীকা মাত্রই এলো থাইল্যান্ড থেকে, শুটিংয়ের কাজে গেছিল। আর নিনীকা মা উনারা হলেন তোমার আঙ্কেল ও আন্টি, পাশে তাদের মেয়ে ফারিন। পরিচিত হও মা। ‘

নিনীকা পরিচিত হলো। ধারা নিনীকাকে টেনে নিজের পাশে বসালেন।

‘ মাশাআল্লাহ একেবারে মোমের পুতুল তুমি মা। ছবি ও সিনেমার থেকে সামনাসামনি তোমাকে বেশি সুন্দর লাগে। ‘

‘ আপনারাও অনেক সুন্দর এবং ভালো আন্টি। আমি ফ্রেশ হয়ে আপনাদের সাথে এসে জয়েন করি? ‘

ধারা হাসলেন,

‘ অবশ্যই, ফ্রেশ হয়ে এসো। আমরা অপেক্ষা করবো।

নিনীকা ফ্রেশ হতে চলে গেলো। পেছনে রুম্পা ট্রলি নিয়ে যেতে লাগলো। রুমে ঢুকতেই রুম্পা ফিসফিস করে বলল,

‘ আপা উনারা হলেন খালুর বন্ধু ও বন্ধুর বউ, সাথে তাদের মেয়ে। ‘

‘ এরকম শুদ্ধ করেই কথা বলবি সবসময়। ‘

নিনীকা রুম্পার বলা কথা খেয়াল করেনি হয়তো। রুম্পা আবার বললো,

‘ আপা উনারা তারা যার ছেলের সাথে আপনার বিয়ে হবে। ‘

নিনীকা চমকে তাকালো,

‘ কিহ! ‘

রুম্পা মাথা নাড়ালো।

‘ আজ আপনি আসবেন সেজন্য খালু তাদের আসতে বলছে যাতে আপনার সাথে দেখা হয়ে যায়। ‘

নিনীকা রাগে ফুসফুস করতে করতে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। চেহারার রিয়াকশন ঠিকঠাক করে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে নিচে নামলো। জীবনে প্রথমবার পাত্রপক্ষের সামনে বসতে হয়েছে তাকে।

টেবিলে সকলের সাথে বসে খাওয়া দাওয়া করলো। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বললো। মিথিলা মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। নিনীকা অভিনয় করেই হোক হাসছে তো। নাহলে পাত্রপক্ষের সামনে নিনীকা কোনো সিনক্রিয়েট করলে তাদের মানসম্মান থাকতো না।

সন্ধ্যার পর পাত্রপক্ষ বিদায় নিলেন। ফারিন যাওয়ার আগে নিনীকার গাল টেনে দিয়ে বলল,

‘ তুমি একদম মোমের মতো। ‘

নিনীকা সোফায় শান্ত হয়ে বসে আছে। রমজান শেখ ও মিথিলা একে-অপরের দিকে তাকালেন। রমজান শেখ গলা পরিষ্কার করে বললেন,

‘ নিনী তাদের তোমার কেমন মনে হলো? ‘

নিনীকার স্পষ্ট উত্তর,

‘ ভালো। ‘

‘ আমার বন্ধু ও তার পরিবার, যদিও তাদের ছেলে অনুপস্থিত ছিল। তোমার তাদের ভালো লেগেছে সেটা জেনে ভালো লাগছে। তুমি যদি চাও তাদের ছেলেকে দেখতে পারো। খারাপ না, তোমার ভালো লাগবে বলেই আমি আশাবাদী৷ একবার দেখবে? ‘

নিনীকা হাত বাড়ালো,

‘ দাও ‘

রমজান শেখ মোবাইল থেকে ছবি বের করে নিনীকার হাতে দিলেন। নিনীকার সামনে ভেসে উঠলো আর্মি ইউনিফর্ম পরিহিত একজন বলিষ্ঠ শরীরের পুরুষ। তার মনে হলো এই পুরুষকে সে আগে কোথাও দেখেছে।

‘ আমি তাকে কোথাও একটা দেখেছি বাবা। ‘

রমজান শেখ উৎসাহ নিয়ে তাকালেন,

‘ কোথায় দেখেছো মাই চাইল্ড? ‘

মিথিলার চোখেমুখে কৌতূহল। রুম্পা নিজেও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নিনীকা সবার চাহনি দেখে একটু ভড়কে গেলো। সবার ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে বলল,

‘দেখেছি হয়তো আশা যাওয়ার পথে, আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। ‘

মিথিলা মেয়ের পাশে বসলেন।

‘ একটু মনে করতে চেষ্টা কর না মা। ‘

নিনীকা ঠোঁট কামড়ে ভাবলো। বললো,

‘ যাওয়ার সময় এয়ারপোর্টে সাদা পোশাক পড়া একদল ডিফেন্স অফিসার দেখেছিলাম। তনু আপাকে তো চিনোই, সে ওদের উপর ক্রাশ। সারাক্ষণ এদের কথা কানের কাছে বকবক করেছে। আমরা যখন থাইল্যান্ডের এয়ারপোর্টে নামি তখনও তাদের তনু আপা দেখেছেন৷ এবং যে কটা দিন ছিলাম তনু আপা মাঝেমধ্যে তাদের দেখেছেন। সেইরকম বলেছেন। আমি তেমন করে তাকিয়ে দেখিনি৷ হয়তো তাদের মধ্যেই কেউ একজন হবে ছবির এই অফিসারটা। ‘

মিথিলার মুখে হাত।

‘ নিনীকা! তুমি তাকে দেখেছো! বলো কেমন লেগেছে তোমার? ‘

রমজান শেখ মুখ লুকিয়ে হাসলেন। নিনীকা বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ মা আমি তাকে তেমন করে দেখিনি, এমনকি শিওর না তিনি ওই অফিসারদের মধ্যে ছিলেন কি না। আমার কাছে সবকিছু অস্পষ্ট। তবে তোমাকে কথা দিচ্ছি পরের বার দেখা হলে একটা ছবি তুলে নিয়ে আসবো প্রমাণ হিসেবে৷ যাতে তুমি দেখতে পারো। ‘

মিথিলা মুখ বাঁকালেন।

‘ এখন দেখো ভালো করে। সুপুরুষ একজন। তোমার তাকে পছন্দ হচ্ছে না? ‘

‘ মা তাকে অপছন্দ হবার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীর সব মানুষকেই আমার পছন্দ৷ ‘

‘ আরে ওই পছন্দ বলছি না, আমরা চাই তুমি তাকে বিয়ে করো। নিজের জন্য তোমার তাকে পছন্দ কি না? ‘

নিনীকা নিজের বাবার দিকে তাকালো। রমজান শেখ বুঝিয়ে বললেন,

‘ দেখো মা, আমরা আজ আছি কাল না-ও থাকতে পারি। তোমাকে এই ছেলেটাকেই বিয়ে করতে হবে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তুমি চাইলেই তাকে রিজেক্ট করে দিতে পারো। তবে আমরা কিন্তু থেমে থাকবো না। একের পর এক পাত্র তোমার সামনে হাজির করবো। কারণ বাবা মা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব অনেক। এরকম একের পর এক পাত্র দেখাতে দেখাতে তুমি অতিষ্ঠ হয়ে একসময় বিয়ে করে ফেলবে। কিন্তু তখন সেই পাত্র যদি এই পাত্রের মতো না-হয়? আমি কি তোমাকে বুঝাতে পেরেছি নিনী? তোমার হাতের মোবাইলে থাকা ছবির ছেলেটিকে আমি চোখ বন্ধ করে সবার থেকে বেশি বিশ্বাস করতে পারবো। কারণ তাকে আমি দেখেছি চিনেছি। সে নিঃসন্দেহে এ পর্যন্ত দেখা সব পাত্রের থেকে ভালো, এবং আমি মনে করি আজ যদি তুমি তাকে রিজেক্ট করো তবে ভবিষ্যতে পাত্রের অভাব না হলেও একজন বিশ্বস্ত মানুষের অভাব থেকে যাবে। আমি এতো নির্ভয়ে তোমাকে আর কারো হাতে তুলে দিতে পারবো না। আমার চিন্তা থাকবে তোমাকে নিয়ে সবসময়। ভেবেচিন্তে উত্তর দিও মা আমার। আমরা তোমার খারাপ চাই না। এবং আমি জানি তুমি একসময় অবশ্যই বিয়ে করতে রাজি হবে, বিয়ে যেহেতু করবেই এখনই না-হয় যোগ্য কাউকে করো? ‘

নিনীকার মস্তিষ্কে রমজান শেখের একেক টা কথা প্রতিধ্বনিক হতে লাগলো। মিথিলা বিস্ময় নিয়ে নিজের স্বামীকে দেখছেন। এই লোক কতো সহজ করে নিনীকার মস্তিষ্কে সবকিছু ভরে দিলো। মিথিলা জানেন এবার নিনীকা ভাবতে বাধ্য হবে।

নিনীকা আড়চোখে হাতে রাখা মোবাইলের ছবিটার দিকে তাকালো। বলল,

‘ আমাকে ভাবতে দাও বাবা। ‘

রমজান শেখ মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন,

‘ অবশ্যই আমার মা, তুমি ধীরেসুস্থে ভাবো। কোনো তাড়াহুড়ো নেই৷ ‘

(চলবে)