Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 117



বিয়ে থা ২ পর্ব-২+৩

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব- ০২ + ০৩
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

বাড়ির নাম বউ কথা কও। বিশাল আভিজাত্যপূর্ণ ডোয়িং রুমে আত্নীয় স্বজনদের ভীড়। ফাহিম মাহবুব ও তার স্ত্রী ধারা আহমেদের বিবাহ বার্ষিকী আজ। নিজের বয়সী কিশোরীদের সাথে গানের তালে নাচছে একটি মেয়ে। পড়োনে বারবি ফ্রক। মেয়েটির নাম ফারিন মাহবুব৷ এ বাড়ির একমাত্র রাজকন্যা। সবার মুখে হাসি থাকলেও ধারার মুখে হাসি নেই। আর মাত্র কিছু সময়, তারপরই তিনি কেক কা*টবেন। তার একমাত্র ছেলে বাড়িতে নেই। বলেছিল আসতে চেষ্টা করবে। ধারা ছেলের আসার অপেক্ষায় আছেন এখনো।

সময় গড়ালো। সবাই কেক কা*টার জন্য অপেক্ষা করছে। ফাহিম মাহবুব স্ত্রীর গোমড়া মুখ দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ছেলেটা আসছে কি না আদোও কে জানে। হয়তো আসবেই না। ধারার হাত টেনে নাইফ ধরিয়ে দিলেন। ধারা ছলছল চোখে তাকিয়ে না করলেন।

‘ ও আসবে দেখো। আরেকটু! ‘

ফাহিম মাহবুব অসহায় চোখে আশেপাশে তাকালেন। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে তার পুরনো কর্নেল বন্ধু ও তার স্ত্রী রয়েছেন। রাত বেড়ে যাচ্ছে, সবাই অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়িতে ফিরে যাবে। আর কতক্ষণ এভাবে অপেক্ষা করাবেন!

আরও পাঁচ মিনিট সময় দেখে ধারার হাত টেনে নাইফ ধরলেন। কেক-এ নাইফ লাগাতেই সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো আর্মি ইউনিফর্ম পরিহিত বলিষ্ঠ শরীরের একজন পুরুষ। ধারা তৎক্ষনাৎ হাত ছাড়িয়ে নিলেন। দৌড়ে গেলেন সেদিকে। আছড়ে পড়লেন ছেলের বুকে।

‘ ধ্রুব..’

ধ্রুব দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো,

‘ মা..আমি এসেছি৷ ‘

ধারার কন্ঠে অভিমান ঝরে পড়লো।

‘ এতো দেরি করলে কেন! আরেকটুর জন্য কেক কে*টে ফেলতে হতো। ‘

‘ কেক কে*টে ফেললে কিছু হতো না মা৷ এরকম কতো কেক তুমি নিজে তৈরি করে খাইয়েছো। চাইলেই বানিয়ে আমার সামনে কা*টতে পারবে যখন তখন। ‘

‘ আজ তোমার বাবার ও আমার বিবাহবার্ষিকী ব্যাটা, তোমরা দু ভাই বোন যদি পাশে না থাকো তো কেমন করে হবে? আমাদের জীবনে তোমরা দুজনই তো আছো শুধু। ‘

‘ আ’ম স্যরি মাই মাদার। চলুন কেক কা*টবেন। ‘।

ধ্রুব মাকে নিয়ে কেকের সামনে দাঁড়ালো। ফাহিম মাহবুব ফারিনকে নিজের সামনে দাড় করালেন। মা বাবার বিবাহবার্ষিকীর কেক হলেও ছেলেমেয়েসহ কা*টা হলো। এবং এমনটাই চাইছিলেন ধারা। এবার তাকে সবচেয়ে বেশি খুশি দেখাচ্ছে।

অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সবাই চলে গেলেন। বাড়িতে শুধু তারা চারজন ও একজন সার্ভেন্ট। ধ্রুবর পড়োনে এখনো ইউনিফর্ম। ধারা ছেলেকে তাড়া দিলেন।

‘ ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে বসো ধ্রুব। তোমার পছন্দের সবকিছু রান্না করেছি। ‘

ধ্রুব হাত-মুখ ধুয়ে টেবিলে বসলো। ফারিন বাবার হাতে খাচ্ছে। খাওয়ার ফাঁকে ভাইকে দেখে নিলো। বলল,

‘ ইউনিফর্ম ছাড়োনি কেন? ‘

ধ্রুব আড়চোখে নিজের মাকে দেখে নিলো। যিনি প্লেটে সবরকমের খাবার তুলে দিতে ব্যস্ত৷ ধারা ছেলের সামনে চেয়ার টেনে বসলেন। খাইয়ে দিতে লাগলেন। ধ্রুবর ইচ্ছে হলো না কিছু বলে মাকে এখন কষ্ট দিতে।

‘ কেমন হয়েছে ধ্রুব? ‘

‘ সবসময়ের মতোই সুস্বাদু৷ বিশেষ করে মিট। ‘

‘ সকালে কলিজা ভুনা করে দিবো, তোমার ফেভারিট পরোটা দিয়ে খাবে। ‘

ধ্রুব চুপচাপ খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে যখন সবাই সোফায় বসলো তখনই সে বলল,

‘ আমার আসলে ছুটি নেই মা। আর্জেন্ট বলে এসেছি। এখনই ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা হতে হবে। তবে কথা দিচ্ছি কয়েকমাস পর ছুটি পেলে পুরোটা সময় বাড়িতে থাকবো। তোমার হাতের সুস্বাদু খাবার খাবো। ফ্যামিলি ট্যুরে ও যাবো। ‘

ধারা ইতিমধ্যে কেঁদে ফেলেছেন। ধ্রুব হাঁটু গেঁড়ে বসলো। দুহাতে মুখ তুলে ধরলো।

‘ প্লিজ মা। তুমি যদি না বুঝো কে বুঝবে বলো তো? আমি যদি না যাই তবে কথা রাখা হবে না। তুমি তো সেরকম শিক্ষা আমাকে দাওনি বলো। ‘

ধারা নাক টেনে বললেন,

‘ সাবধানে যেও। তাড়াতাড়ি ফিরবে কিন্তু। ‘

ধ্রুব জড়িয়ে ধরলো,

‘ কয়েকমাস পরই ফিরবো, এবং তাড়াতাড়ি ফিরবো কথা দিচ্ছি। ‘

ফারিন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ মিস ইউ ভাইয়া। ‘

ফারিনের গালে টান পড়লো।

‘ মিস ইউ টু মাই লিটল সিস্টার্স। বনুর জন্য কি আনবো? ‘

‘ কিছু লাগবে না, তুমি তাড়াতাড়ি এসো। আমরা সবাই তোমাকে অনেক মিস করি। ‘

ফাহিম মাহবুব ছেলের কাঁধে চাপড় দিলেন। তিনি একটু আগেই জেনেছেন ধ্রুব গুরুত্বপূর্ণ মিশনে দেশের বাহিরে যাবে। বললেন,

‘ সফল ও সুস্থ হয়ে ফিরে এসো বাবা।

ধ্রুব পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে গটগট পায়ে সদর দরজা পেরোলো। উঠে বসলো জিপগাড়িতে। পেছনে একবারও না তাকিয়ে দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করে যেতে লাগলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আগে তাকে টিমের কাছে পৌঁছাতে হবে। তারপর সবাইকে নিয়ে সকালে এয়ারপোর্টে!

ধারা গোমড়ামুখে ফাহিম মাহবুবকে বললেন,

‘ তোমার বন্ধুকে না করে দাও, বলো কয়েকমাস পর সব হবে ধ্রুব ফিরলেই! ‘

ফাহিম মাহবুব চিন্তিত হলেন,

‘ সে নাহয় বলবো, ধ্রুব রাজি হবে তো? ‘

‘ সেটা কিভাবে বলবো, ছেলেটার সাথে তো ঠিক করে দুটো কথা ও বলতে পারলাম না। ভাবলাম সকালে ধীরেসুস্থে সব বলবো। সব হলো তোমার দোষ। নিজের মতো আমার ছেলেকেও বানিয়েছো। ‘

ফাহিম মাহবুব কোনো কথা বললেন না। চুপ করে শুনতে লাগলেন।

শেখ বাড়ি অন্ধকার। ধীরে ধীরে পা ফেলে ট্রলি হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামলো নিনীকা। সদর দরজার সামনে রুম্পা দাড়িয়ে আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। নিনীকা ফিসফিস করে বলল,

‘ রুমে চিরকুট রেখে গেছি, মাকে যেকোনো বাহানায় সেটা দেখিয়ে দিবি। ব্যস। ‘

রুম্পা হ্যাঁ বললো। নিনীকা ট্রলি টেনে নিয়ে বের হয়ে গেলো সদর দরজা দিয়ে৷ গাড়িতে উঠে স্প্রিড তুলে ছুটলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আগামীকাল ভোরে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও সে আজই রওনা হচ্ছে। রুম্পার মাধ্যমে খবর পেয়েছে তার বাবা বন্ধুর ছেলের সাথে একমাত্র মেয়ের কাবিনের বিষয়ে সব ঠিকঠাক করে ফেলেছেন গোপনে। এবং সেটা আগামীকাল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেজন্য সে সকালে নয় এই মধ্যরাতেই বের হয়েছে। আপাতত একটা হোটেলে থাকবে। সকালে শুটিংয়ের কাজে বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এয়ারপোর্টে উপস্থিত হবে।

নিনীকা বের হয়ে যেতেই সিঁড়ি দিয়ে নামলেন মিথিলা। রুম্পা চমকে গেলো। মিথিলা হাসলেন।

‘ তোর আপা আর তুই একইরকম ছাগল বুঝলি। নিনীকার সাথে যার কাবিন হওয়ার কথা সে ব্যস্ত সেজন্য কাবিনের ডেট পেছানো হয়েছে৷ ততোদিনে তোর আপা বাড়িতে ফিরে আসবে বিদেশের শুটিং শেষ করে। ‘

রুম্পা মাথা নিচু করে রইলো। মিথিলা রেগে বললেন,

‘ আর কখনো যদি দেখেছি ওর কাছে কিছু বলেছিস তবে তোকে কাজ থেকে বের করে দিতে দু’বার ভাববো না। আর কখনো যেনো হাঁড়ি পাততে না দেখি। বেয়াদব কোথাকার। ‘

মিথিলা গটগট পায়ে উপরে উঠলেন। ফাইলে চোখ রাখা রমজান শেখ বললেন,

‘ তোমার মেয়ে পালিয়েছে? ‘

‘ সে আর বলতে। ‘

‘ এই নিয়ে কতোবার? ‘

মিথিলা একটু ভাবলেন,

‘ গুনে দেখিনি। যতোবারই কিছু করার চেষ্টা করেছি ততোবারই পালিয়েছে। ‘

রমজান শেখ হাসলেন,

‘ পালাতে দাও। ঘরে তো ফিরতেই হবে। ‘

‘ তুমি মেয়েটাকে জোর দিয়ে কিছু বলো না, নাহলে ও কখনো এসব করার সাহস পেতো না শেখ বাবু। ‘

‘ ওহ মিথি, মেয়েকে জোর করতে তো পারবো না। আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো, কিন্তু এখানে তার মতামতের ও বিষয় আছে। তার উপর যদি চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করি তবে সে সুখী হবে না। ‘

‘ এটা কি তোমার মেয়ে বুঝে? ‘

‘ না, বুঝলে তো বার-বার পালাতো না। সে ভেবে নিয়েছে আমরা তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবো। ‘

‘ তারপরও তুমি ওকে কিছু বলো না। ‘

‘ সে বুঝতে পারবে, যখন আমরা তার মতামত চাইবো তখন। আপাতত যা ভাবছে ভাবতে দাও। ‘

‘ হসপিটালে কি বাচ্চা পাল্টিয়ে ছিলে? ‘

রমজান শেখ অদ্ভুত চোখে তাকালেন।

‘ হোয়াট! ‘

(চলবে)

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-০৩
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভীড় জমেছে। নিনীকা বিরক্তিতে চোখমুখ শক্ত করে রেখেছে। বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তার ঘুম হয়নি। মাথা ব্যথায় মনে হচ্ছে চিৎ হয়ে পড়ে যাবে যেকোনো সময়। তার উপর চারিদিকের এমন হৈচৈ তার মাথা ব্যথা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। গেইটের বাহিরে মিডিয়াকে সামলাচ্ছেন ডিরেক্টর। নিনীকার পাশে দাড়িয়ে আছে তার সিনেমার নায়ক নির্ঝর আব্রাহাম। সে ও যে মারাত্মক বিরক্ত তা নিনীকা বুঝতে পারছে। ইতিমধ্যেই আব্রাহাম কয়েকবার বলে ফেলেছে,

‘ মিস নিনীকা মাথা ধরে যাচ্ছে, আপনি ঠিক আছেন কিভাবে এখনো? ‘

নিনীকা বিনিময়ে হাসি দিয়েছে। তারও যে মাথা ফে*টে যাচ্ছে সেটা সে একদমই বুঝতে দিচ্ছে না। পেইন কিলার খেয়েছে, বিমানে উঠে একটু ঘুম দিবে। ব্যস রিলিফ কাজ করবে অনেক।

বিমানবন্দরে সাদা পোশাক পড়া একদল লম্বা ও বলিষ্ঠ শরীরের পুরুষের প্রবেশ ঘটেছে। সবাই হা করে সেদিকে তাকিয়ে আছে। মাথার আর্মি কাট বলে দিচ্ছে তাদের পরিচয়৷ নিনীকার ডান দিকে দাঁড়ানো কাজের বোয়ার চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী তনু মুখে হাত দিয়ে ফিসফিস করে বলল,

‘ এদেরকেই বলে সত্যিকারের পুরুষ। দেখেছো নিনীকা? ‘

নিনীকা নিজেও তাকিয়ে ছিল। একসাথে এতজন লম্বাচওড়া শরীরের পুরুষ দলবদ্ধ হয়ে আসাতে দেখতে সুন্দর লাগছিল। কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে বলল,

‘ আল্লাহর সৃষ্টি সব সুন্দর তনু আপা। ‘

‘ এদের মধ্যে কেউ যদি আমাকে প্রপোজ করতো! নিনীকা আমি কি একটু ট্রাই করে দেখবো? ‘

নিনীকার মাথা ব্যথা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। বলল,

‘ দেখতে পারেন। ‘

তনু হাইহিলের শব্দ তুলে এগিয়ে গেলো। সোজা গিয়ে দাড়ালো দলবদ্ধ সেই পুরুষদের সামনে। সাদা পোশাকে থাকা আর্মি অফিসার গুলো একসাথে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তনুর দিকে। স্বাভাবিক দৃষ্টি অথচ কতো ধারালো৷ তনু কিছু বলতে পারলো না, বরং স্যরি বলে সামনে থেকে সরে পড়লো।

একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা নিনীকা ও আব্রাহাম ঠোঁট চেপে হাসলো। আব্রাহাম বলল,

‘ এই তনু আপা ও পারেন বটে। ‘

অফিসার ওগুলোকে আড়চোখে দেখলো নিনীকা। চেহারা ফ্যাক্ট নয়, এদের জন্য প্রায় অনেক মেয়েই পাগল থাকে শুধুমাত্র ফ্যাশনের জন্য। ওদের স্টাইল টিনেজারদের অনেক পছন্দের। তার উপর দেশের সৈনিক, নরম মনের মেয়েদের মনে প্রভাব পড়বে স্বাভাবিক। তনু আপা টিনেজার নন, কিন্তু নরম মনের মানুষ। তিনিও যে ইতিমধ্যে দলবদ্ধ থাকা সব সৈনিকের উপর মারাত্মক ক্রাশ খেয়েছেন সেটা ভেবেই নিনীকার হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে।

তনু আপা গোমড়ামুখে এসে দাঁড়ালেন।

‘ বুঝলে নিনীকা অফিসার গুলো কেমন যেনো। ‘

‘ কেমন আপা? ‘

‘ জানিনা বাবা, কেমন করে যেনো তাকালো আমি ভয় পেয়ে কিছু বলতেই পারিনি। ‘

আব্রাহাম হেসে বলল,

‘ তারা সবাইকে প্রথমে অপরাধীর দৃষ্টিতে দেখে। যদি তাকানোর পর মনে হয় সামনে দাড়ানো ব্যক্তি চোর বা অপরাধী হতে পারে না তখনই তাদের দৃষ্টি নরম হয়। ‘

তুন আপা ভেঙচি দিলেন,

‘ তুমি এতো কিছু জানো কেমনে বাপু। ‘

‘ আমার একটা জমজ ভাই আছে আপা, সে আর্মির একজন ক্যাপ্টেন। ‘

মিডিয়া সামলে ডিরেক্টর অবশেষে এলেন। নিনীকাদের সাথে অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বাকি অভিনেত্রী অভিনেতারাও এসেছেন। সবাই এয়ারপোর্টের ফর্মালিটি সেরে বিমানে চেপে বসলেন। এবং সবাইকে বকবকানি করতে দেখতে দেখতে নিনীকা ঘুমিয়ে ও পড়লো। নায়ক আব্রাহাম নিজের পাশে বসা নিনীকার আকস্মিক ঘুমিয়ে পড়াতে অবাক হলো। ডিরেক্টর ইশারায় নিনীকার মাথা ব্যথার কথা জানিয়ে দিলেন। আব্রাহাম ঠোঁট উল্টে ভাবলো মেয়েটাকে সে যখন নিজের মাথা যন্ত্রণার কথা বললো তখন হাসলো কেন!

নিনীকা শেখ একটু অদ্ভুত টাইপের মানুষ। আব্রাহামের সাথে এটা নিয়ে দ্বিতীয় সিনেমায় অভিনয় করবে সে। দারুণ একজন অভিনেত্রী সে। সেটা প্রথম সিনেমার কাজেই বুঝেছে আব্রাহাম৷ কিন্তু নিনীকাকে তার একটু অহংকারী মনে হয়। যেখানে সব নায়িকারা তার সাথে কাজ করতে এসে রীতিমতো উপরে পড়তে চায় সেখানে নিনীকা কখনো নিজ থেকে কথাও বলেনা প্রয়োজন ছাড়া। আপনি ছাড়া কখনো তুমি বলেছে বলে আব্রাহাম মনে করতে পারছে না। তারা সমবয়সী। নিজের এই ক্যারিয়ারে আব্রাহাম অসংখ্য নায়িকার বেড অফার রিজেক্ট করেছে। কারণ আছে অবশ্য, তার প্রেমিকা আছে। এবং সেই প্রেমিকাকে নিয়েই সে হ্যাপি। অন্য কোনো নারীর সান্নিধ্য তার প্রয়োজন হয়না।

নিনীকাকে এদিক থেকে আব্রাহামের ভালো লেগেছে। অযথা ঘেঁষাঘেঁষি সে নিজেও পছন্দ করে না। এমনি সিনেমায় অভিনয় করা ঘনিষ্ঠ কোনো দৃশ্য দেখলে তার প্রেমিকা খাওয়াদাওয়া বাদ দিয়ে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। স্কুল লাইফের প্রেমিকাকে নিয়ে আব্রাহাম বরাবরই ভীষণ চিন্তিত থাকে।

থাইল্যান্ডের এয়ারপোর্টে যখন সবাই নামলো তখন তনু আপা মৃদু চিৎকার করে উঠলেন।

‘নিনীকা লুক, সেই অফিসার গুলো! ‘

নিনীকা তাকালো। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

‘ হ্যাঁ তো? ‘

‘ ওহ নিনীকা, তুমি অনেক নিরামিষ। ‘

নিনীকা কিছু বললো না। ট্রলি টেনে নিয়ে সবার সাথে এয়ারপোর্ট ত্যাগ করলো।

*
রাত হয়ে গেছে। ধারা সেই সকাল থেকে ছেলেকে একের পর এক কল দিচ্ছেন। কিন্তু বন্ধ দেখাচ্ছে। ধ্রুব তো প্রতিদিন একবার করে হলেও ফোন দিয়ে কথা বলে। আজ বলেনি, সেজন্য ধারার চিন্তার শেষ নেই। ফারিন নিজেও মন খারাপ করে বসে আছে। তার ভাই ঠিক ভাবে পৌঁছেছে কি না সেটা ও তো জানাতে ফোন করতে পারতো।

ফাহিম মাহবুব বাড়িতে ঢুকে স্ত্রী ও কন্যার গোমড়ামুখ দেখে চিন্তিত হলেন। জিজ্ঞেস করলেন,

‘ দুজনের কি হয়েছে? ‘

ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

‘ বাবা ব্রো’র ফোন বন্ধ সকাল থেকে, সে নিজে থেকে একটাও কল করেনি আজ। ‘

‘ তোমার ছেলেকে কি আমি বেশি চাপ দেই ফাহিম? একটা দুটো কলই তো প্রতিদিন দিতে বলি। মা আমি, আমার কি সন্তানের জন্য মন পুড়ে না? ‘

‘ ধারা তুমি ভুল ভাবছো। ধ্রুব দেশে নেই। ‘

ধারা আঁতকে উঠলেন,

‘ কিহ! কোথায় ধ্রুব? কোথায় আমায় ছেলে? ‘

‘ সে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিশনে দেশের বাহিরে গেছে। ‘

ধারা কেঁদে ফেললেন,

‘ তুমি আমাকে এখন এসব বলছো! ফাহিম ধ্রুব মিশনে গেছে! বুঝতে পারছো তুমি? আমার ছেলেকে ফিরিয়ে এনে দাও। আমার একটামাত্র ছেলে ফাহিম। ‘

‘ আমি কিছু করতে পারবো না ধারা। আর তাছাড়া ধ্রুব এরকম কতো মিশনে যায়, মেজর সে এসব তো তার কাজ।’

‘ লাস্ট মিশন থেকে ফিরে ওর কি অবস্থা হয়েছিল দেখোনি? আমার ছেলের গুলি লেগেছিল। তুমি, তুমি চাইলেই পারতে গতকাল আমাকে বলে দিতে। কিন্তু তুমি বলোনি৷ আমার ছেলের কিছু হলে আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না। ‘

ফাহিম মাহবুব বুঝাতে চেষ্টা করলেন,

‘ লিসেন ধারা, ধ্রুব নিজে আমাকে বারণ করেছিলো। আর এটা ওর কাজ। তুমি যদি ওকে না করতে ও কি শুনতো? আর তাছাড়া তুমি কিভাবে ওকে মানা করতে? বি স্ট্রং ধারা, তুমি তো এমন নও। তুমি ধ্রুবর সেই মা যে ধ্রুকে শিখিয়েছে কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমি ধ্রুবর বাবা, ও আমাকে বিশ্বাস করে বলেছে। তোমাকে যদি আগে জানিয়ে দিতাম তো ধ্রুব আর কখনো আমাকে কিছু বলতো না। ছেলের সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্ক রয়েছে। ‘

‘ ফাহিম আমার একটামাত্র ছেলে! ওর কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে থাকবো! ‘

‘ কিছু হবে না, ওর জন্য দোয়া করবে শুধু। ও আমারও ছেলে। আমি যখন আর্মির জব করে এতো বছর পরিবারের পাশে আছি, ধ্রুব ও থাকবে। ও নিজের বাবার থেকেও সাহসী! এবং আমি আমার ছেলেকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি। সে বলেছে সফল হয়ে ফিরে আসবে। ‘

(চলবে)

বিয়ে থা ২ পর্ব-০১

0

#বিয়ে_থা_২
#সূচনা_পর্ব
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

‘ বিয়ে করলে নিজের ভার্জিনটি হারাতে হবে! সেজন্যই আমি বিয়ে করবো না। এন্ড মোস্ট ইমপোর্টেন্ট ব্যাপার বিয়ে করলে সম্পূর্ণ অপরিচিত কারো পাশে ঘুমাতে হবে, কারো ঘামের গন্ধ বা নাক ডাকার শব্দ শুনতে হবে। বিয়ের থেকে কঠিন ব্যাপার জগৎসংসারে দুটো হতে পারে না। বিয়ে মোটামুটি কঠিন একটি বিষয় আমার মতে! ’

সাংবাদিকের ‘ আপনি বিয়ে করছেন না কেন? ‘ প্রশ্নের পরিপেক্ষিতে উপরোক্ত কথাটি ছুঁড়ে দিলো বাংলা চলচ্চিত্রের একজন স্টার নিনীকা শেখ। সাংবাদিক সহ আশেপাশে ভীড় জমানো দর্শকদের মধ্যে হৈচৈ পড়ে গেলো। কেউ কেউ নির্লজ্জ বলে আখ্যায়িত করতে ভুললো না। তাতে নিনীকার তেমন যায় আসলো না। সে চোখের গগলস ঠিক করে গাড়ির ছাদের উপরের খোলা গ্লাসটা টেনে দিলো। লাগিয়ে বসে পড়লো সিটে। ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরাতে বলে রিলাক্স মুডে কানে হ্যাডফোন গুঁজে গান শুনতে লাগলো। গানটা তার সদ্য মুক্তি পাওয়া সিনেমার।

নিনীকার বর্তমান বয়স ত্রিশ। কিন্তু তাকে দেখে বিশ-বাইশের মনে হয়। নিজে থেকে না বললে বয়স বুঝা দুষ্কর।

শেখ বাড়িতে প্রবেশ করতেই রান্না ঘর থেকে মিথিলা বেরিয়ে এলেন। নিনীকা সবে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চাইছিল। মিথিলার ডাকে থেমে গেলো।

‘ আজ পাত্রপক্ষ আসবে, আশা করি তুমি কোনো আপত্তি করবে না। বয়স তো কম হলো না। বেঁচে থাকতে তোমাকে কারো দায়িত্বে দিয়ে যেতে পারলে তোমার বাবা ও আমি শান্তি পাবো। ‘

নিনীকা নাক ফুলালো। একটু আগেই সে বিয়ে নিয়ে কতো নেগেটিভ কথা মিডিয়ার সামনে বলে এসেছে। এখন কি না তাকে পাত্রপক্ষের সামনে বসতে হবে! বলল,

‘ আ’ম স্যরি মা। আমি বিয়ে করবো না। তুমি প্লিজ জোর করো না। ‘

মিথিলা হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়লেন। এটা নতুন নয়। নিনীকাকে আজ পর্যন্ত পাত্রপক্ষের সামনে বসানো যায় নি। তবে আজ তিনি বসিয়েই ছাড়বেন বলে ঠিক করেছেন। সার্ভেন্ট একটি মেয়ের থেকে বুদ্ধি ও নিয়েছেন। শুরু করে দিলেন ফিল্মের নায়িকার সামনে নিজের অভিনয়।

মিথিলা আহ্ করে বুকে হাত রেখে সোফায় বসে পড়লেন। নিনীকা গগলস হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে নিজের মায়ের অভিনয় দেখছে। মিথিলা আড়চোখে মেয়েকে দেখছেন।

‘ ওরে পাষাণী তোর মায়ের বুকে ব্যথা করছে তুই আমাকে না ধরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কি দেখিস? ‘

নিনীকা এগিয়ে এসে ধরলো। মিথিলা নিজেকে ছাড়িয়ে নিলেন।

‘ আমি বলেছি বলে ধরেছিস। নাহলে তো ধরতি না। তুই তোর ফিল্ম নিয়েই থাক যা। আমাকে মা ডাকবি না। ‘

‘ মা তুমি বাচ্চামো করছো না? ‘

মিথিলা ফুঁসে উঠলেন,

‘ আমি বাচ্চামি করছি? তোর যদি মনে হয় আমি বাচ্চামি করছি তবে তাই। যা ভাগ। ‘

নিনীকা দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো।

‘ মা তুমি বুঝতে পারছো না কেন? আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। বিয়ে জীবনের ছোট্ট একটি অংশ মাত্র। আর কিছু না। এটা না করলে কিছু হবে না। প্লিজ বুঝতে চেষ্টা করো। ‘

‘ ছোট হোক বা বড় তোকে বিয়ে করতেই হবে। নাহলে আমাকে মা ডাকবি না। ‘

‘ শিওর? ‘

‘ হ্যাঁ ‘

‘ ঠিক আছে। ‘

নিনীকা গটগট পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে গেলো। মিথিলা সত্যি সত্যি কেঁদে ফেললেন। তার মতো নরম সহজ সরল মায়ের এমন শক্ত পাষাণ মেয়ে হলো কেন! মেয়ের বাপ ও তো সহজ সরল মানুষ। হসপিটালে নিশ্চয়ই বাচ্চা বদল করা হয়েছে!

রুমে ঢুকে নিনীকা ফ্রেশ হয়ে ঘুমের রাজ্যে চলে গেলো। সে ভীষণ টায়ার্ড ছিলো।

এদিকে বিকাল হতেই শেখ বাড়িতে পাত্রপক্ষ হাজির। পাত্র বাবু খুশিতে গদগদ। স্টার নিনীকার সে যে বিশাল বড় ফ্যান সেটা মিথিলা ইতিমধ্যে বুঝে গেছেন। পাত্র বাবু চোখের চারব্যাটারি ঠিক করে বললেন,

‘ আন্টি নিনীকা ম্যাডাম কোথায়? ‘

মিথিলা এই নিয়ে পাঁচ বারের মতো বললেন,

‘ ঘুমে, আমি একটু পরই ডেকে আনবো। ‘

পাত্র বাবু লজ্জা পাওয়ার মতো করে মুখে হাত দিলো।

‘ আন্টি আপনি কি নিনীকা ম্যাডামের রিসেন্টলি মুক্তি পাওয়া মুভিটা দেখেছেন? ‘

‘ না ‘

‘ ও আন্টি আপনি তো দারুণ কিছু মিস করে গেছেন। ‘

মিথিলা বিরক্ত হলেন। পাত্রের মা বাবা ও একইরকম। তারা নিনীকার সিনেমা নিয়ে কথা বলে চলেছেন। মিথিলা মেয়েকে ডাকবেন কি নিজেই বিরক্ত হয়ে এদের বিদায় করলেন। আর যাই হোক সিনেমাপাগলদের সাথে তিনি মেয়ের বিয়ে দিবেন না। তিনি তো অন্যরকম পাত্র চান মেয়ের জন্য। মেয়েকে কতো বুঝালেন এসব সিনেমা জগতে না যেতে। কিন্তু মেয়ে শুনলো না। নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী সব করে।

মিথিলা ঘটককে ফোন করে বললেন,

‘ এমন পাত্র দেখো যে কখনো সিনেমা দেখা তো দূরে থাক। সিনেমার নামই মুখে নেয়নি। ‘

ঘটক ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন।

‘ আজ্ঞে এ যুগের তো সবাই সিনেমা দেখে। যদিও হঠাৎ কেউ পাওয়া যাবে সিনেমা দেখে না কিন্তু সিনেমার নাম যে জানবে না সেরকম কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখন তো সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন ম্যাডাম। ‘

মিথিলা ধমক দিলেন,

‘ তবে আপনি পাত্র খোঁজা বাদ দিন। আমার মেয়ের জন্য আমি নিজেই পাত্র খুঁজে বের করবো। ‘

মিথিলা মোবাইল কান থেকে নামিয়ে রাখলেন। নিনীকা হাই তুলতে তুলতে সিঁড়ি দিয়ে নামলো। পড়োনে ঢিলেঢালা প্লাজু ও টি-শার্ট। টেবিলে বসে বলল,

‘ বাবার বউ ভাত দাও। ‘

মিথিলা অবাক হলেন না। মেয়েকে মা ডাকতে নিষেধ করেছেন বলে এখন ঘুরিয়ে পেচিয়ে ডাকছে। সার্ভেন্টকে বললেন নিনীকাকে খাবার দিতে। নিজে রুমে চলে গেলেন। যাতে নিনীকা বুঝে তিনি রেগে আছেন।

সার্ভেন্ট মেয়েটি নিনীকার অনেক ছোট। সে জিজ্ঞেস করলো,

‘ বাড়িতে কে এসেছিল রে? ‘

‘ পাত্রপক্ষ আসছিল আপা, কিন্তু খালাম্মা তো নিজেই তাড়াইয়া দিছে। ‘

নিনীকা অবাক হলো,

‘ তোর খালাম্মা নিজেই পাত্রপক্ষ এনে নিজেই তাড়িয়ে দিলো! হোয়াই? ‘

‘ খালাম্মা স্পষ্ট কইরা কইছে, হেই তার মাইয়ারে সিনেমা পাগল অথবা সিনেমার নাম শুনছে এরকম কারো লগে বিয়া দিবো না। পাত্রকে আপনে যেমন বিয়ে বিদ্বেষী তেমন কইরা সিনেমা বিদ্বেষী হইতে হইবো। ‘

নিনীকা হেসে ফেললো। এরকম পাত্র ইহজনমেও পাওয়া সম্ভব না। এখন তো সবাই স্মার্ট। যাক সে নিশ্চিত হলো। বিয়ে নিয়ে এখন আর কোনো প্যারা খেতে হবে না।

‘ তয় আপা.. ‘

নিনীকা ভ্রু কুঁচকে তাকালো,

‘ কি? ‘

‘ খালাম্মা কিন্তু রাইগা ওসব কইছে। ‘

‘ আরে তোর খালাম্মা রাগ করে বললেও সিনেমাজগতের কিছু পছন্দ করে না আগে থেকেই। সুতরাং সে যে আমাকে সিনেমাপাগল কারো সাথে বিয়ে দিবে না নিশ্চিত থাক। ‘

‘ আপা আরেকটা কথা কই? ‘

‘ বল ‘

সার্ভেন্ট মেয়েটি মুখ এগিয়ে আনলো একটু।

‘ খালুরে দেখছি কার সাথে জানি ফোনে কথা কইছে আপনের ব্যাপারে। হের বন্ধুর কোন পোলার লগে আপনের বিয়া দিবার চায়। ‘

নিনীকার খাবার গলায় আটকে গেলো। পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে বলল,

‘ আর কিছু শুনলে আমাকে সাথে সাথে জানাবি। আমি আগামীকাল বের হয়ে যাবো নতুন মুভির শুটিং এর কাজে। বুঝেছিস? ‘

মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। নিনীকা খেতে খেতে বাবার বন্ধুর নাম না জানা ছেলেটিকে কিছু বিশ্রী গালি দিলো। গালি গুলো এরকম-

‘ শালা দুনিয়ায় আর কোনো মেয়ে পায়নি। বাবার বন্ধুর মেয়ে কে বিয়ে করবে। জীবনে কি মেয়ে দেখেনি। যেই দেখেছে বাবার বন্ধুর মেয়ে সুন্দর অমনি বিয়ে করার জন্য হাজির। ‘

সার্ভেন্ট মেয়েটিকে বলল,

‘ বুঝলি রুম্পা, বাংলাদেশের ৯৯% পরিবারে মেয়েরা বাবার বন্ধুর ছেলে, আর মায়ের বান্ধবীর ছেলের জন্য ঠিকমতো লাইফ লিড করতে পারে না। এরা যে কোথা থেকে উৎপন্ন হয়ে হুট করে বিয়ে করতে এসে পড়ে আল্লাহই জানেন। ‘

রুম্পা আফসোস করে বলল,

‘ বুঝলেন আপা আমার হেতিও আমার আব্বার লেংটা কালের বন্ধুর পোলা। ‘

(চলবে)

বিয়ে থা সিজন-০১ পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন

Dont forget me পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ১২/শেষ পর্ব)

মোতাহার উদ্দিন তার পুরো পরিবার নিয়ে কোর্টে উপস্থিত হয়েছেন। আজ তার মামলার রায় ঘোষণা হবার কথা। যদিও তথ্য প্রমাণ সব কিছুই জুলির বিপক্ষে তবুও মোতাহার উদ্দিনের বুক ধুকপুক করছে… যদি কিছু হয়ে যায়? জুলির তো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড বেশ শক্ত!

জুলিকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবার পর খুব দ্রুতই মামলা কোর্টে উঠানো হয়। ফাতিমের মায়ের মত জাদরেল উকিলের সামনে জুলি দাঁড়াতেই পাড়ল না। একেবারে বাসি ফুলের মত মিইয়ে গেল। জুলির ফোন রেকর্ডের ভিত্তিতে জয়নালকে ধরে আনে পুলিশ। আদালত তাকে ৩দিনের রিমান্ড দিলে পুলিশ তার মুখ থেকে সব সত্য উগরে বের করে নিয়ে আসে। জাল কাবিন করে বিয়ের প্রতারণা সহ স্বামীকে হত্যার সকল অপরাধ প্রমাণিত হয়। জুলি এবং তার ভাই জামালের নামে বিয়ের এমন প্রতারণার মামলা আগেও ছিল। স্বামী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে জুলি ও হত্যা করে জুলির পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিয়ে সহযোগিতা করায় আদালত জয়নালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। উক্ত খুনের ঘটনায় জুলির ভাই জামাল এবং জামালের দুই পুত্রের সংপৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে পুলিশ তাদের নামেও গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে। জামাল এবং তার বড় ছেলেকে গ্রেফতার করা গেলেও ছোট ছেলে পলাতক আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করতে জামাল ও তার বড় ছেলেকে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে তথ্য আদায়ে যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আসামীদের আদালত জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়ার পর জুলিকে যখন পুলিশি হেফাজত থেকে জেলে হস্তান্তর করা হলো তখন সে তূর্যকে কড়া গলায় বলেছিল-

-don’t forget, one day I will be back…

তূর্য হেসে বলেছিল- I wouldn’t forget you either. Hope you will come back civilized by then. bye… জুলি এরপর আর দাঁড়ায়নি।

কোর্টে মামলার শুনানি পর্যন্ত জাওয়াদকে আলো নিজের কাছেই রাখল। আলোর কাছে আদরে থাকলেও জাওয়াদ তার মাকে মিস করত… ছোট মানুষ… মাকে ছাড়া কখনও থাকেনি তো! আলো ওকে যথেষ্ট আদর দিল ওই কয়েকটা দিন। মামলার রায়ের সাথে কোর্ট জাওয়াদের custody তার দাদা দাদীকে দিয়েছে। ওর দাদা আব্দুর রশিদ যখন ওকে নিতে এলো তখন আলোকে জড়িয়ে ধরে মন খারাপ করে কেঁদে ফেলেছিল। আলো বলেছে স্কুল ছুটি দিলে যেন এখানে বেড়াতে আসে। জাওয়াদের দাদা জুলির কারাদন্ডে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। তার একমাত্র পুত্র রাজীবকে হারিয়ে একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তার উপর ছেলে হত্যার সঠিক বিচার তিনি পাননি। জামাল আর জামালের ছেলেরা মিলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের সহ জুলিকে নির্দোষ প্রমাণ করে মামলা খারিজ করে দিয়েছিল। হত্যাকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে প্রমাণ করে দিব্যি স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিল ওরা সবাই। এসব দেখে আব্দুর রশিদ সাহেব শোকে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন, ভেঙে পড়েছিল তার পুরো পরিবার। জুলি শুধু তার ছেলেকে হত্যা করেনি, হত্যা করেছে তার পুরো পরিবারের শান্তি আর আনন্দ! দুই বছর পরে হলেও ছেলে হত্যার শাস্তি হওয়ায় তিনি প্রাণভরে তূর্য আর আলোকে দোয়া করে গেছেন। তিনি বাবা হয়ে যে কাজটা করতে পারেননি দূরের মানুষ হয়েও তূর্যরা সেটা করে দেখিয়েছে!

মামলার রায় কার্যকর হবার পর থেকে মোতাহার উদ্দিন খুব ফুরফুরে মেজাজে আছেন। কারণ এই বয়সেও সুন্দরী মেয়েরা তাকে বিয়ের জন্য পাগল! তারান্নুম হোসেনের সামনে ইদানীং খুব ভাব নিয়ে চলছেন। রীতিমতো পাত্তাই দিচ্ছেন না তাকে। বুড়ো বয়সে এসব ঢং তারান্নুম হোসেনের একদমই সহ্য হচ্ছে না।

ওদিকে অনেকদিন পর বাড়িতে স্বস্তি নেমে এসেছে বলে সেই খুশিতে আজ পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। আলো বলেছে পার্টির সব খাবার সে নিজে রান্না করবে। তাকে কারো সাহায্য করার পর্যন্ত কোনো দরকার নেই। এমনকি আজ রান্নাঘরের আশেপাশেও কারো যাওয়া নিষেধ! তূর্য আর তারান্নুম হোসেন এটা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছেন, কারণ আলো চা বানানো ছাড়া কিছুই রান্না জানে না। ২/৪বার কিছু রান্না করার ট্রাই করেছে যার কোনটাই মুখে তোলা যায়নি! আজ আনন্দের দিনে কী হবে কে জানে! ইউটিউব দেখে নাকি খুব টেস্টি সব খাবার রান্না শিখেছে। এবার তার রান্না খেয়ে নাকি আঙুল সুদ্ধ খেয়ে ফেলবে সবাই। একেবারে নো ফেইল সব রেসিপি শিখেছে। এখন ইউটিউবের রেসিপি দেখে কতটা কী হবে কে জানে! সেখানে তো এক কাপ গুড়া দুধে ৬টা ডিম দিয়ে নো ফেইল মিষ্টির রেসিপিও আছে!!!

তারান্নুম হোসেন মোটেও ভরসা করতে পারছেন না তাই তূর্যকে বলল- আলো কী করছে কে জানে… আমাদের কাউকে কিছু বলছেও না দেখতেও দিচ্ছে না। যদি…

-তুমি যা ভাবছ আমিও তাই ভাবছি মা… যদি ওর রান্না খাওয়া না যায় তখন?

-আজ রাতে কী তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে?

-একরাত না খেয়ে থাকাটা ব্যাপার না কিন্তু দাওয়াত খাবার কথা থাকলে খিদেটা তখন রাক্ষস হয়ে যায় এই অবস্থায় খেতে না পারাটা কষ্টদায়ক!

-কী করবি তাহলে?

-ও তো রান্নাঘরেই আছে সেই সুযোগে তাহলে আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খাবার অর্ডার করে ফেলি?

-ও মন খারাপ করবে।

-আরে কিছুই হবে না। আমি ম্যানেজ করে নেব তুমি টেনশন নিও না।

-ম্যানেজ করা যাবে হয়ত কিন্তু মেয়েটা কষ্ট পাবে।

-সারাক্ষণ আলোর প্রতি সফট কর্ণার না দেখিয়ে তোমার যে একটা পুত্র আছে সেটা মাথায় রেখো। আর ওকে একটু রান্নাবান্না শেখাও।

-তোকে মাথায় রাখি না তো কোথায় রাখি?

-কে জানে কোথায় রাখো! আমি খাবার অর্ডার করছি। বলে তূর্য উঠে যায়।

রাত ৯ টায় আলো খাবার রেডি করে সবাইকে ডাইনিং টেবিলে ডেকে পাঠাল। খাবারের দিকে তাকিয়ে সবার রীতিমতো চোখ কপালে ওঠার জোগাড়… এত লোভনীয় সব খাবার… তূর্য তো উত্তাজনায় বলেই ফেলল- wow! looks like restaurant!!!

তূর্যর কথা শুনে আলো চমকে উঠল। তারপর শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা গলায় বলল- রেস্টুরেন্ট মানে কী? আমি সব নিজে রান্না করেছি… শিখেছি না?

তারান্নুম হোসেন বললেন- আসলেই দেখতে চমৎকার হয়েছে। খেতেও নিশ্চই ভালো হয়েছে। কথা না বাড়িয়ে সবাই খাওয়া শুরু করো।

সবাই খুব তৃপ্তি নিয়ে খেল। কেউ কল্পনাই করেনি আলো হুট করে এত ভালো রান্না করে ফেলবে! ওদিকে আলো খুশিতে গদগদ হচ্ছে। তারান্নুম হোসেন ঘোষণা করলেন এখন থেকে আলোকেই রান্নাঘর সামলাতে হবে। এত ভালো রান্না রেখে আর যাই হোক হালিমার হাতের রান্না খাওয়া ঠিক হবে না।

এসব শুনে আলোর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করলেও হেসে বলল- হ্যাঁ হ্যাঁ করব তো… ওদিকে খাবার শেষ হতেই কলিংবেল বাজল। তূর্য বুঝল এটা নিশ্চই ডেলিভারি বয়! খাবার নিয়ে এসেছে। মায়ের কথা না শুনে খাবার অর্ডার করাটা খুব ভুল হয়ে গেছে। পেট ভরে খাওয়ার পর এই খাবার গুলোর গতি কী হবে এখন? সে হতাশ মুখে দরজা খুলে দেখল ডেলিভারি বয় খাবারের প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তূর্য বলল- আচ্ছা আমি যদি এই খাবারের অর্ডারটা ক্যান্সেল করতে চাই সেটা কী সম্ভব?

-সম্ভব না স্যার।

-মুশকিল হয়ে গেলো…

-কেন স্যার? আমাদের তো কোনো ভুল হয়নি! আপনারা তো প্রথমে ৫ জনের খাবারই অর্ডার করেছিলেন। পরে আবার ৫ জনের খাবার চাইলেন। আমরা সেভাবেই তো ডেলিভারি দিলাম!

-আবার ৫ জনের অর্ডার মানে?

-মানে স্যার, আমি দুই ঘন্টা আগে এ বাসায় খাবার দিয়ে গেছি। আবার একই ঠিকানায় অর্ডার আসায় আমিই এলাম খাবার নিয়ে।

তূর্যর মাথা ঘুরতে লাগল… বলল- তুমি শিওর এবাসাতেই খাবার দিয়েছ?

-জ্বি স্যার। একজন মেডাম খাবার গুলো রিসিভ করেছেন।

তূর্য বুঝে গেল আলোর রান্না আসলে কোন কিচেনে হয়েছে! সে খাবারগুলো নিয়ে ছেলেটাকে বিদায় করে দিল। তারপর সেগুলো সোজা নিজের ঘরে নিয়ে গেল।

আলো ঘরে এসে খাবারের প্যাকেট দেখে অবাক হল। তূর্যকে জিজ্ঞেস করলে তূর্য পুরো ঘটনা খুলে বলল। আলো তখন তূর্যকে বকতে শুরু করল এটা বলে যে, বাড়িতে খাবার রান্না হবার পরও সে কেন বাহির থেকে খাবার আনালো?

তূর্য অবাক হয়ে বলল- ওরে বাবা… এ তো দেখি চোরের মায়ের বড় গলা! তুমি কী এখনও ভাবছ আমি কিছু বুঝিনি?

আলো চুপ করে ধরা পরা মুখ নিয়ে মন খারাপ করে বসে রইল। সে তো ভালো ভেবেই এটা করেছে। আনন্দের দিনে খারাপ খাবার খাইয়ে কারো মন খারাপ করাতে চায়নি। আজকের পার্টি পার হলে রান্নাটা শিখে নেবে তারপর সবাইকে শুধু নিজের হাতের রান্না খাওয়াবার জন্যই একটা পার্টি দেবে। অথচ… এভাবে ধরা পরবে ভাবতেও পারেনি। তূর্য ওর মুখ দেখে বলল- রান্নাটা শিখে নিলেই তো পারো?

-এতদিন তো সময়ই পেলাম না…

-ঠিক আছে এখন তো বাসায় আর কোনো ঝামেলা নেই। এখন থেকে রোজ রান্না শিখবে।

-হুম…

-আচ্ছা চলো ছাদে যাই। বেশ কিছুদিন হলো যাওয়া হয় না। কাল বিকেলে গিয়ে একটা জিনিস দেখে অবাক হয়েছি, চলো তোমাকেও দেখাব।

-ইচ্ছে করছে না এখন।

আরে চলো তো… বলে তূর্য আলোর হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে যায়। গিয়ে টর্চ জ্বালাতেই আলো বিস্ময়ে চিৎকার করে বলল… Don’t forget me!!! কবে ফুটল ফুল?

-আজই ফুটেছে। আমি গতকাল এসে দেখে গেছি কিন্তু তোমাকে বলতে ভুলে গেছি…

-এর ফুলের জন্য কবে থেকে অপেক্ষা করছি আর তুমি বলতে ভুলে গেলে?

-কী করব বলো… আমাকে তুমি এত ব্যস্ত রাখো…

আলো মুচকি হেসে ফুলের ছবি তুলে তার উপর “don’t forget me” লিখে সেটা তূর্যর ফোনে সেন্ড করল।

তূর্য সেটা দেখে আলোকে জড়িয়ে ধরল। কানের কাছে ফিসফিস করে শুধু বলল- “never…”

সমাপ্ত।।

Dont forget me পর্ব-১১

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ১১)

মোতাহার উদ্দিন আর তারান্নুম হোসেন এশার ওয়াক্তের নামাজ শেষ করে উঠেছেন। তারান্নুম হোসেন দেখলেন মোতাহার উদ্দিন কেমন চুপ হয়ে আছেন… বুঝতে পারলেন কিছু একটা নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তায় আছেন। পাশে বসে জিজ্ঞেস করলেন- কী হয়েছে? এভাবে ঝিম মেরে বসে পড়লে যে?

-ভাবছি, গত ৩দিন শুক্রবার শনিবার আর মাঘী পূর্ণিমার কারণে রবিবার পর্যন্ত অফিস বন্ধ ছিল। কাল থেকে তো অফিস… বাসার এই অবস্থায় অফিস করব কী করে?

-তূর্য তো বলল অফিস ও ম্যানেজ করবে। তুমি ততদিন বাসায় থাকো। তারান্নুম হোসেন কথা শেষ করতেই জুলি এসে মোতাহার উদ্দিনকে বলল- জাসিয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না আর আপনারা দুজন এমন শান্তিতে বসে আছেন?

মোতাহার উদ্দিন ঠান্ডা গলায় বলল- কী করব তাহলে?

-পুলিশে খবর দিচ্ছেন না কেন?

-২৪ ঘন্টা পার না হলে পুলিশ কোনো কেস নেবে না।

-কেস নেবে না নাকি আমার মেয়েকে আপনারা সবাই মিলে প্ল্যান করে গুম করে রেখেছেন?

-আবোল তাবল বলতে ইচ্ছে হলে তোমার নিজের লোককে গিয়ে বলো। অযথা আমাদের সময় নষ্ট করবে না। পাশ থেকে তারান্নুম হোসেন বললেন-

-মেয়ের বয়ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে খোঁজ নিলেই তো জানতে পারবে তারা কোথায় আছে?

-আমার মেয়ের যে বয়ফ্রেন্ড আছে সেটা আপনাকে বলে গেছে?

-বলতে হবে কেন? দেখলেই তো বোঝা যায় কেমন ইচরেপাকা মেয়ে ওটা!

-এভাবে অপমান করার মাশুল কী হতে পারে জানেন?

-অপমান করার কী আছে যেমন মা তেমন তার ছা হবে এটাই তো বলেছি, ভুল কী বললাম?

জুলি আরও কিছুক্ষণ শাসায় কিন্তু মোতাহার উদ্দিনকে এবার আর কাবু করতে পারল না। তিনিও পাল্টা জবাব দিয়ে গেলেন। এমন সময় তূর্য এসে বলল-

-আন্টি, অযথা চেঁচিয়ে গলা খারাপ করবেন না। আপনার মেয়ে ভালো আছে, ইনফ্যাক্ট সে খুবই ভালো আছে।

-মানে! তুমি কী করে জানলে?

তূর্য ওর মোবাইলটা জুলির মুখের সামনে ধরতেই জুলি দেখল জাসিয়া তার ফেসবুক এ্যাকাউন্টের প্রফাইল পিক চেঞ্জ করেছে। সেখানে জাসিয়াকে বাসরঘরে বসে নববধূর বেশে দেখা যাচ্ছে আর সাথে সেই নে*শাখোর ছেলেটা বর সাজে! ক্যাপশন দিয়েছে, “আলহামদুলিল্লাহ, ৩মাসের প্রেমের মধুর পরিণতি। আমার জান আমার হাবি- রকি ❤️❤️ সবাই আমাদের নতুন জীবনের জন্য দোয়া করবেন।” জুলির টাশকিত অবস্থা দেখে আলো আর তূর্য দুজনই যেন শান্তি পেল। তূর্য বলল-

-বলেছিলাম না জাসিয়া বিয়ের কেনাকাটা করেছে বলে মনে হয়েছে? দেখলেন তো? আপনার মেয়ে আমার দুশ্চিন্তা দূর করতে তার হাজবেন্ডের সাথে তোলা বেশ কিছু রোমান্টিক ছবি আমার ইনবক্সে পাঠিয়েছে। দেখবেন?

জুলি কোনো কথা না বলে তার নিজের ঘরে চলে গেল। এবাড়ির সবাই আজ ৩দিন পর একটু স্বস্তি পেল। তূর্য তখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল-

-ফাতিম ভাইয়ের মায়ের সাথে আমি দেখা করে এসেছি। একটু আগেও উনাকে বেশ কিছু নতুন ইনফরমেশন দিয়েছি। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন এখন কী করতে হবে। তোমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করার দায়ে আগামীকাল পুলিশ নিয়ে আসব ওনাকে এরেস্ট করতে। বাবা, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো সত্যের জয় হবেই। এপর্যন্ত বলে তূর্য থামল। জুলির ফোনের ব্যাপারটা ইচ্ছে করেই চেপে গেল… কারণ দেওয়ালেরও কান আছে!

জাসিয়ার কারণে এই প্রথম জুলিকে একটু বিধ্বস্ত দেখাল। সে নিজের ঘর থেকে আর বের হলো না। পরের দিন সকালে সে মোতাহার উদ্দিনের কাছে গিয়ে বলল- তাকে কাবিনের পুরো ২০লাখ টাকা এখনই দিতে হবে।

মোতাহার উদ্দিন অবাক হয়ে বললেন- কাবিনের টাকা! টাকা দিয়ে কী করবে এখন?

-আমার টাকা দিয়ে আমি যা খুশি করব আপনাকে কৈফিয়ত দিব কেন?

-টাকাটা যেহেতু আমাকেই দিতে হবে সেহেতু কৈফিয়ত তো চাইতেই পারি?

-কাবিনের টাকার ব্যাপারে কোনো কৈফিয়ত চাইবার নিয়ম নেই। টাকাটা আমার লাগবে। এক্ষুণি দেবেন।

তূর্য এসে বলল- এতদিন তো স্ত্রীর অধিকার চেয়ে চেয়ে মাথা খারাপ করেছেন আজ হঠাৎ টাকার জন্য এত মরিয়া?

জুলি মোতাহার উদ্দিনের দিকে তাকিয়ে বলল- আপনি টাকাটা দেবেন নাকি আমি পুলিশের কাছে যাব?

মোতাহার উদ্দিন গম্ভীর গলায় বললেন- চাইলেই তো হুট করে এতগুলো টাকা দেওয়া যায় না। ব্যবস্থা করতে সময় লাগবে না?

-কত সময় লাগবে?

তূর্য বলল- সেটা এখনই কী করে বলবে? দুই সপ্তাহ তো লাগবেই…

-এত সময় আমার হাতে নেই। আমি এক সপ্তাহ সময় দিলাম। এর মধ্যেই ব্যবস্থা করুন। টাকা না পেলে ঠিক এক সপ্তাহ পর বাড়িতে পুলিশ আসবে। বলে জুলি চলে গেল।

-এখন কী করবি তূর্য? এ তো আমাদের শেষ করেই ছাড়বে মনে হচ্ছে!

-কে কাকে শেষ করবে সেটা এখন সময় মাত্র… আমি থানায় যাচ্ছি পুলিশ আনতে… দোয়া করো সব কিছু যেন ঠিকঠাক করতে পারি।

-যাও, আল্লাহ ভরসা। সব কিছু ভালোই হবে ইনশাআল্লাহ।

জয়নাল জুলিকে আবার ফোন করেছে। জুলি ফোন ধরেই ঝাঁজালো গলায় বলল- তোকে না বলেছি এভাবে ফোন দিবি না? টাকার ব্যবস্থা হবে শীঘ্রই। আমাকে ১০ দিন সময় দে। এরপর আমি নিজেই তোকে ফোন দিব।

-ঠিক আছে। তবে এইবার শেষবারের মত সময় দিলাম। ১০দিন শেষ হইলে আমি জয়নাল তরে মাটির তল থিকা হইলেও খুঁইজা বাইর কইরা টাকা আদায় কইরা ছাড়ুম। মনে থাকে যেন। বলেই জয়নাল ফোন কেটে দিল। জুলি ভাবতে লাগল জয়নালকে আর ঘাটানো যাবে না। ১০ দিনের জন্য তো ওকে ঠান্ডা করা গেল। এই ফাঁকে মোতাহার উদ্দিনের কাছ থেকে তাগাদা দিয়ে টাকাটা আদায় করতে হবে। তিনি গাধা হলেও তূর্য ছেলেটা খুব চালাক। কখন জেনে ফেলবে ওর বাবাকে মিথ্যে কাবিনে ফাঁসিয়েছি তখন আর টাকা তোলা সম্ভব হবে না। আম ছালা সব যাবে। ওদিকে জিল্লুর ছোকরাটা বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে। বিয়ে করেই ব্যাংকক চলে যাবে বলেছে। সব কিছু গোছানোই আছে… টাকাটা হাতে পেলেই উড়াল দিবে দুজনে। জাসিয়া ভেগেছে ভালোই হয়েছে। আমার রাস্তা বিনা ঝামেলায় পরিষ্কার হয়েছে। জাওয়াদটা একটা ঝামেলা রয়ে গেছে। ছেলেটা সারাদিন এত খায়… খেতে খেতে কবে জানি ফেটে যাবে! তাও মায়া লাগে… খাক, একটু খেলে কী হয়? ওকে নাহয় ভাইয়ার কাছে দিয়ে যাব। ভাইয়া অবশ্য নিতে চাইবে না। হাতে কিছু টাকা দিলে ঠিকই নেবে, লোভী একটা। ব্যাংককে কিছুদিন আয়েস করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বছর খানেক পর নাহয় জাওয়াদের একটা ব্যবস্থা করা যাবে। তারপর যা সব জাহান্নামে… বলে আয়েসি ভঙ্গিতে ফোন হাতে নিল। জিল্লুরের সাথে কিছুক্ষণ রসের আলাপ করতে হবে। ছেলেটার সাথে গতরাতে একটু ঝগড়া হয়ে গেছে বলে রাগ হয়ে আছে। বেশি রাগ হয়ে গেলে আবার ব্যাংককের টিকিট হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে!

জুলি দরজা বন্ধ করে যখন ফোনে জিল্লুরের সাথে গল্প করছিল তূর্য তখন পুলিশ নিয়ে বাসায় এলো। জুলির ঘর দেখিয়ে দিতেই পুলিশ দরজায় থাবা মারতে লাগল… জুলি ভেতর থেকে চিৎকার করে বলল-জাওয়াদ হারামাজাদা দরজা ভেঙে ফেলবি নাকি? খেয়ে খেয়ে তোর শরীরে মহিষের মত শক্তি গজিয়ে গেছে। মার খেতে না চাইলে ভাগ এখন। কিন্তু দরজা থেকে কেউ সরল না বরং আগের চেয়েও দ্বিগুণ জোরে থাবা পড়ল! জুলি তখন রেগে ইচ্ছেমত গালি দিতে দিতে দরজা খুলল। দরজা খুলেই তার চোখ কপালে উঠে গেল পুলিশ দেখে। বলল- আমি তো আপনাদের ডাকিনি!?

-আমাদের ডাকতে হয় না আমরা গন্ধ শুকে জায়গামত হাজির হয়ে যাই।

জুলি মনে মনে ভয় পেল, এরা জাল কাবিন বিষয়টা বুঝে ফেলল? নাকি অন্য কিছু জেনেছে? সে নিজেকে শক্ত রেখে একবার তূর্যর দিকে তাকাল তারপর বলল- আপনাদের আমি ডাকব তবে সময় হলে।

-আপনার দেখানো সময়ে আমরা চলব? আপনাকে এক্ষুনি থানায় যেতে হবে আমাদের সাথে। তারপর পাশে থাকা মহিলা পুলিশকে নির্দেশ দিলেন ওকে হ্যান্ডকাফ পরাতে। মহিলা পুলিশ হাত ধরতেই জুলি এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল-

-কী হচ্ছে এসব? আপনারা আমাকে কেন ধরছেন? আমাকে এবাড়ির লোক স্ত্রীর অধিকার দিচ্ছে না আর আপনারা তাদের না ধরে আমাকে ধরছেন? এই আপনাদের আইনশৃঙ্খলা?

-কে কী অধিকার পাবে সেটা থানায় গেলেই জানতে পারবেন। আমাদের সময় নষ্ট না করে চলুন এবার।

-তার আগে বলুন কী অপরাধে আমাকে থানায় যেতে হবে?

-অপরাধ তো অনেকগুলো কোনটা থেকে শুরু করব? তবে এই মুহূর্তে বিয়ে সংক্রান্ত জালিয়াতির মামলায় এরেস্ট করছি। থানায় চলুন আরামে বসে সব জানতে পারবেন। তখন আপনার হাতে অফুরন্ত সময় থাকবে।

জুলি এতটা মোটেও আশা করেনি। “অভিযোগ অনেক” এই শব্দটাতে ওর বুকে কাঁপন ধরে গেছে। সে ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছে কিন্তু সে অবস্থা কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না। কঠিন গলায় বলল- আমি একটা ফোন করতে পারব?

-পারবেন, তবে আমাদের সামনে বসে কথা বলতে হবে। নিরাপত্তার জন্য…

-জুলি তার ভাইকে ফোন দিল। জামালকে কেঁদে কেঁদে সব বলল। ওপাশ থেকে জামাল কী বলল জানা গেল না। তবে কথা শেষ হতেই পুলিশ অফিসার ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। ফোন নিতেই জুলি চোখে মুখে আগুন ঢেলে বলল-

-আমার ফোন নিচ্ছেন কেন?

-ফোনে ক্রাইমের অনেক এভিডেন্স পাওয়া যায়। তাই এটা এই মুহূর্ত থেকে পুলিশি হেফাজতে থাকবে।

-আপনারা এভাবে আমার ফোন নিতে পারেন না।

-অবশ্যই পারি। আপনার নামে মামলার সাথে এটাও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে ফোনটা যেন বাজেয়াপ্ত করা হয় নয়ত মামলার অনেক প্রমাণ সরিয়ে ফেলা হবে।

জুলি আর কোনো কথা বলতে পারল না তবে তূর্য আর মোতাহার উদ্দিনের দিকে তাকিয়ে কাউকে ছাড়বে না বলে শাসিয়ে গেল।

জুলিকে নিয়ে যেতেই বাড়ির সবাই স্বস্তি পেল। তূর্য বলল- বাবা তুমি কিচ্ছু টেনশন করো না, এই মহিলা যেন অন্তত ১৪ বছরের আগে ছাড়া না পায় সে ব্যবস্থা আমি করে ফেলব। আর তোমাকেও নির্দোষ প্রমাণ করে ফেলব। টেনশনের দিন শেষ এবার টেনশন দেবার পালা।

সেই মুহুর্তে জাওয়াদ এসে বলল- আমার আম্মুকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল কেন?

চলবে…

Dont forget me পর্ব-১০

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ১০)

তূর্য ৩টার দিকে বাসায় ফিরে দেখল আলো খুব আয়েস করে দুপুরের ভাত-ঘুম দিয়েছে। সে আলোকে আর জাগাল না। ভাবল- এই সুযোগ, ওর জন্য যে সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে সেটা রেডি করে ফেলা যাক… সে সাথে করে আনা ফুল দিয়ে ঘরটা সাজাতে বসল। গোলাপের পাপড়ি ছিঁড়ে মেঝেতে হার্ট শেপ করল। তারপর ছোট ছোট ডেকোরেশন বাতি জ্বালিয়ে দিল। হার্ট শেপের পাশে আলোর জন্য আনা গিফটটা রেখে দিল। এমন সময় দরজায় নক পড়ল। আসলে নক বললে ভুল হবে যেটা পড়ল সেটাকে প্রায় থাবা বলা যায়। আলোর ঘুম ভেঙে যাবে বলে সে দ্রুত দরজা খুলে দেখে জাওয়াদ দাঁড়িয়ে। তূর্য চাপা রাগী গলায় বলল-

-কিরে জাম্বু দুপুরবেলা না ঘুমিয়ে ভূতের মত মানুষের দরজায় দরজায় থাবা মারছিস কেন?

-মা ডাকছে তোমাকে।

-আমাকে কেন ডাকছে?

-আমাকে তো বলেনি কেন ডাকছে।

-আমি এখন ব্যস্ত, পরে যাব যাহ…

-এক্ষুণি যেতে বলেছে। এক্ষুণি না গেলে মা মারবে তোমাকে। মা’র অনেক রাগ।

-আমাকে মারতে পারলে তো? যা গিয়ে তুই মার খা আমি আসতে পারব না।

-তোমাকে যেতেই হবে নয়ত আমি এখনই চিৎকার করব।

-তোরা সব ক’টা এমন বিষের হাড়ি, না? আচ্ছা যাচ্ছি। শোন, এই বেলুন গুলো ওই বিছানার পাশে বেঁধে দিতে পারবি? কোনো শব্দ করতে পারবি না। তোর ভাবির ঘুম ভেঙে গেলে আমি কিন্তু তোর নাক ভেঙে ফেলব।

-ওই গ্যাস বেলুনগুলো? আমাকে একটা দিবে ভাইয়া?

-যদি ঠিকঠাক বাঁধতে পারিস তাহলে দিব।

-ঠিক আছে। তুমি যাও আমি সুন্দর করে বেঁধে রাখব।

তূর্য ওকে বেলুনগুলো দিয়ে সোজা গেস্টরুমে জুলির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল- আমাকে ডেকেছেন কেন?

-তুমি বাসায় এসেছ জাসিয়া কোথায়?

-জাসিয়া কোথায় মানে? আমাকে তো দুই ঘন্টা আগেই ও ছেড়ে দিয়েছে। বলল, একাই বাড়ি যাবে আমি যেন আমার কাজে চলে যাই। ফেরেনি এখনও?

-কী বলছ এসব? ওকে একা ছেড়ে দেবার জন্য তোমাকে সাথে পাঠিয়েছি নাকি?

-কী আশ্চর্য আমাকে কথা শোনাচ্ছেন কেন? আপনার মেয়েই তো আমাকে চলে যেতে বলেছে।

-ও বলল আর তুমি শুনে নিলে! বাচ্চা একটা মেয়ে… কত সময় চলে গেছে… এখনও ফিরল না…

-ফোন করুন?

জুলি ফোন দিল কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাল। জুলি তখন আতংকিত হয়ে পড়ল। বলল- তোমার সাথে যাবার পর ও কী কী করেছে?

-কেনাকাটা করতে যেয়ে কী করবে আবার? কেনাকাটা দেখে তো মনে হয়েছে বিয়ের বাজার করছে! মেয়েকে কিছু কিনে টিনে দেন না নাকি?

-বিয়ের কেনাকাটা!

-তাই তো মনে হলো। এত ব্যাগ নিয়ে এখন রাস্তায় পড়ে আছে কিনা খোঁজ নিয়ে দেখুন?

-জাসিয়া কী কারো সাথে ফোনে কথা বলেছে? তুমি কী ওর সাথে বা আশেপাশে কাউকে দেখেছ?

তূর্য খেয়াল করল জুলির চেহারায় আতংক ভর করেছে! যেটা তাকেও চিন্তিত করে ফেলল বলল- না, কাউকে দেখিনি। তবে একটা ফোন এসেছিল। আমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেনি। আর ফোন আসার পরই সে আমাকে চলে যেতে বলল।

জুলির চেহারা সাথে সাথে রক্তিম হয়ে গেল! সে দাঁতে দাঁত চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল- যদি আমার মেয়ের কিছু হয়ে যায় তাহলে তোমাকে আমি ছাড়ব না। তোমাদের কাউকে ছাড়ব না। আমার মেয়েকে গুম করে দেবার দায়ে সব ক’টাকে জেলের ঘানি টানিয়ে ছাড়ব। যাও এখন আমার চোখের সামনে থেকে। বলেই সে তূর্যকে ঠেলে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

তূর্য বাইরে দাঁড়িয়ে বুঝল জাসিয়া কেন তখন ওকে টেনশনের কথা বলেছিল! তার মানে ওর বাড়ি না ফেরার বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে। সে দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে জাসিয়ার নাম্বারে ডায়াল করল কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাল। মেয়েটার জন্য ওর চিন্তা হতে লাগল। পরক্ষণেই মনে পড়ল জাসিয়া এটাও বলেছিল রাতের মধ্যে টেনশন দূর করে দেবে। সে জুলির দরজায় নক দিয়ে বলল- দরজাটা একটু খুলুন, জাসিয়ার ম্যাসেজ আছে…

জুলি দরজা খুলে বলল- কী বললে?

-জাসিয়া যাবার সময় আমাকে বলেছে আমি নাকি টেনশনে পড়ে যাব তবে রাতের মধ্যে সে টেনশন দূর করার ব্যবস্থা করবে। তাই আমার মনেহয় চিন্তার কিছু নেই। ও যেখানেই আছে নিজের ইচ্ছেতেই আছে এবং ভালো আছে। আমাদের এখন ওর ম্যাসেজ পাওয়া অব্দি অপেক্ষা করে যেতে হবে।

তূর্যর কথায় জুলির মেজাজ আরও বেশি খারাপ হলো। বলল- এ কথা এতক্ষণ কেন বলোনি? এখন এসব ফালতু কথা বলে নিজের দোষ আমার মেয়ের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাও, না?

-কারো ঘাড়ে কী করে দোষ চাপাতে হয় তা আমরা কেউ শিখিনি। ওসব আপনাদের বিজনেস। জাসিয়া যেটা বলেছে আমি সেটাই বললাম। বলে তূর্য আর দাঁড়াল না চলে এলো। এসে নিজের ঘরে ঢুকে তার প্রায় চিৎকার বের হয়ে যাচ্ছিল অনেক কষ্টে সেটাকে চাপা দিল। জাওয়াদকে বলে গেছে বিছানার পাশে বেলুনগুলো বাঁধতে আর বেঁধেছে কিনা আলোর চুলে! ৮টা বেলুনের ৪টাই বাঁধা শেষ। চুলসহ বেলুন উড়ছে… মনে হচ্ছে ডাইনি মেডুলাসের চুল, কী ভয়ংকর দৃশ্য! আলো চুল ঝুটি করে বেঁধে ঘুমিয়েছিল বলে এখনও কিছু টের পায়নি। নয়ত ওর ঘুম ভেঙে যেত আর সারপ্রাইজের ১২টা বেজে যেত। এরা কেউ-ই কী কাউকে শান্তি দিতে জানে না? সে প্রচন্ড রেগে জাওয়াদের কান টেনে ধরে বলল- আমি তোকে কী বলে গেছি আর তুই কী করেছিস এগুলো?

-আরে আমি তো বাঁধার জন্য বিছানার পাশে কিছুই পেলাম না তাই চুলের সাথে বেঁধেছি। আমি তো ভাবলাম তোমার পছন্দ হবে!

তূর্য ওর কান আরও জোরে চেপে ধরে টান মারল আর সাথে সাথে ও এমন জোরে চিৎকার করল যে আলোর ঘুম ভেঙে গেল। সে লাফ দিয়ে উঠে বলল-

-কী হয়েছে? ওকে মারছ কেন?

-দেখ না ভাবি আমি কত সুন্দর করে বেলুন বেঁধে দিলাম আর ভাইয়া আমাকে মারছে!

-হ্যাঁ অনেক সুন্দর করে বেঁধেছিস বলে ওর কপালের উপরের চুলগুলো মুঠো পাকিয়ে ধরে ঝাঁকিয়ে দিল। তারপর বলল- তোর ভাবি দেখার আগে দৌড়ে পালা। বলে কান ছেড়ে দিয়ে ঠেলে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। ওদিকে আলো মাথা ভাড় লাগছিল বলে আয়নার সামনে গিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল… তূর্য ওর দিকে তাকিয়ে আর পারল না শব্দ করে হেসে ফেলল। আলো রেগে বলল-

-ওই মোটকাটার কান যদি আমি না ছিঁড়েছি…

-আহা রাগ হচ্ছ কেন? ভালোই তো লাগছে… ইউনিক আইডিয়া… বলে আবার হাসতে লাগল।

-ইউনিক আইডিয়া না? আসো তোমার মাথায় বেঁধে দেই?

-তোমার ভালো লাগলে সে নাহয় দিও একদিন। এখন এদিকে এসো, বলে টেবিলের উপর থেকে কেকটা নিয়ে বিছানার উপর রেখে বলল- Happy birthday sweet heart…

-আলো তখন খেয়াল করল তূর্য ঘরটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। সে অবাক হয়ে বলল- তুমি জানতে আজ আমার জন্মদিন?

-একটা মাত্র বউ জানব না?

আলো খুব খুশি হলো। তূর্যকে জড়িয়ে ধরে গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল- thank you dear husband.

-কেকটা তাড়াতাড়ি কেটে ফেল জাম্বু এসে পড়লে আর ভাগে পাব না।

-আলো চুলে বেলুন নিয়েই কেক কাটল সাথে সেল্ফিও নিল। সেই সেল্ফি দেখে দুজনে হেসে গড়িয়ে পড়ল। তূর্য বলল- আজ মায়ের বাসায় গিয়েছিলে?

-হুম গিয়েছিলাম। না গেলে ওরা চলে আসত তখন জুলি গুন্ডিদের দেখে ফেললে ঝামেলা হয়ে যেত। তাছাড়া ওরা গোছগাছ নিয়ে ব্যস্ত, কালই তো চলে যাচ্ছে।

-তোমাদের বাড়ির কাজটা শেষ হয়েছে বলে রক্ষা। কাল উনারা চলে গেলে হয়ত এসব দেখা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

-তুমি চিন্তা করো না এবাড়ির এসব ওরা কেউ কখনও জানবে না।

-এত বড় ঘটনা কী আর চাপা থাকে। একদিন হয়ত ঠিকই জানবে। তাছাড়া জুলি আন্টি যেরকম ডেঞ্জারাস… কখন কী করে বসে ঠিক আছে? ও ভালো কথা, তোমাকে তো বলাই হয়নি জাসিয়াকে নাকি পাওয়া যাচ্ছে না।

-মানে! ও তো তোমার সাথেই গেল, পাওয়া যাবে না কেন?

তূর্য পুরো ঘটনা খুলে বলল আলোকে। সব শুনে আলো বলল- আমার ধারণা জাসিয়া ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়েছে।

-তুমি কী করে বুঝলে?

-আরে আমি বলেছিলাম না ওকে দেখলে মনেহয় ও প্রেম করছে? আর দেখলে না মেয়েকে তোমার সাথে পাঠাল যাতে তুমি পাহারা দিয়ে রাখতে পারো। সরাসরি তো আর মেয়ের কান্ড বলতে পারে না। দাঁড়াও জাওয়াদকে ডাকি ওর কাছ থেকে অনেক ইনফরমেশন পাওয়া যাবে।

আলো ড্রইংরুমে গিয়ে দেখল জাওয়াদ ফোনে ইউটিউবে কার্টুন দেখছে। কেক খাবার কথা বলতেই জাওয়াদ দৌড়ে এলো। আলো ওকে ঘরে নিয়ে বড় এক স্লাইস কেক দিয়ে বলল- জাওয়াদ তোমার ফোনটা একটু দেবে আমিও কার্টুন দেখব?

-উহু, মা তোমাদেরকে ফোন দিতে না বলেছে।

-ঠিক আছে দিও না। তাহলে কেকও খেতে পারবে না। বলে আলো ওর সামনে থেকে কেকটা সরিয়ে নিতেই জাওয়াদ মুখটা করুন করে বলল- কেকটা অনেক মজা প্লিজ ভাবি দাও না…

-তাহলে ফোন দে?

জাওয়াদ কী করবে বুঝতে পারছিল না। আলো তখন দুটো চকলেটবার বের করে বলল- ফোন দিলে কেকের সাথে এগুলোও পাবি। দিবি কিনা বল?

-ঠিক আছে নাও কিন্তু মাকে বলো না, হ্যাঁ?

-বলব না, প্রমিস।

জাওয়াদ ফোনটা আলোর হাতে দিতেই আলো আর তূর্য মিলে পুরো ফোন ঘাটতে লাগল। দেখল ফোনে ওর মায়ের ফেসবুক আইডি লগইন করাই আছে। সেখানে ঢুকে প্রফাইল ঘেটে জাসিয়ার আইডি পেল। তূর্য সেটা নিজের প্রফাইল থেকে খুঁজে দেখে রাখল। হয়ত কোনো সময় কাজে লাগবে। তারপর ম্যাসেঞ্জার ঘেটে সেখানে অসংখ্য পুরুষের ইনবক্স পেল যেখানে প্রেমালাপ হয়! আলো বলল-

– মাই গড! আমরা যতটা ভেবেছিলাম এই মহিলা তো তারচেয়েও জঘন্য!!! তূর্য কিছু না বলে ফটাফট ম্যাঞ্জারের বেশ কিছু ছবি তুলে নিল নিজের ফোনে। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে যা দেখল তাতে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হবার জোগাড় হলো…। এখানে একটা নাম্বারে তার প্রায়ই কথা হয়। ফোন তো আসেই, খুব অল্প কয়েকটা ম্যাসেজও আছে। সেখানে ৪দিন আগের একটা ভয়েস ম্যাসেজ পেল যেটা প্লে করতেই শুনতে পেল- “অনেকদিন ধইরা টাকা না দিয়া ঘুরাইতেছেন। বিয়া কইরা ফালাইলেন আর টাকা শোধ করতেছেন না। ভাবছেন কী বিয়া কইরা আমাগো চোখ ফাকি দিয়া পগার পার হইয়া যাইবেন? সাবধান… মামলা কিন্তু এখনো ঝুলতাছে। টাকার জন্য আপনার জামাইরে যেমন খুন করছি টাকা না পাইলে আপনেরে খুন করতেও আটকাইব না। আপনের তো নিজের জামাইরে খুন করাইতে কলিজা কাঁপে নাই টাকা না পাইলে আপনেরে খুন করতেও আমাগো কাঁপব না। তাছাড়া আপনের ঘরে একটা কচি মাইয়া আছে সেইটা ভুইলা যাইয়েন না। কথা কী কিলিয়ার?” এই ভয়েস ম্যাসেজের পর জুলি ফোন দিয়েছিল তাই জুলি কী জবাব দিয়েছিল সেটা বোঝা গেল না। তবে গতকাল আরেকটা ভয়েস ম্যাসেজ এসেছে সেটা প্লে করতেই শুনতে পেল- “টাকা না দিয়া পলাইছস, তুই কী ভাবছস তরে খুঁইজা পামু না? আমি জয়নাল তোর মত কুত্তার দুধ খায়া বড় হই নাই যে ল্যাজ গুটায় পলায় যামু। তর এমন ব্যবস্থা নিমু… তুই খালি চায়া দেখ।” এই ভয়েস ম্যাসেজের কোনো রিপ্লাই নেই। তুর্য বুঝে গেল এখন কী করতে হবে? বাবাকে বাঁচাতে এগুলোই হাতিয়ার হবে। সে দ্রুত নাম্বারটা নিজের ফোনে তুলে নিল। এমন সময় জুলির গলা পাওয়া গেল… সে জাওয়াদকে খুঁজছে তার ফোনের জন্য!!!

চলবে…

Dont forget me পর্ব-০৯

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ৯)

সকালে ছাদে এসে আলো দেখল বারি-৪ আম গাছটা খালি! গাছে তো বেশ কিছু আম ছিল গেল কোথায়? সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল আমের খোসা আর আঁটি এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। তার ভীষণ রাগ হলো। এই গাছের আমগুলো কাঁচা খেতে খুব মিষ্টি ওর খুব পছন্দের। মাঝে মাঝে ছাদে এসে পেড়ে খায়। গাছ খালি দেখে ওর শুধু রাগই হলো না খুব মন খারাপও হলো। নিচে নেমে হালিমাকে জিজ্ঞেস করল, আম কে খেয়েছে? হালিমা বলল-

-আম তো সব জাওয়াদ খাইছে। কালকে সন্ধ্যায় ছাদে গিয়া সব ছিঁড়া খায়া ফেলছে। আমি নিষেধ করছি সেইটা শুইনা তার মা আমারে অনেক বকা দিল। আমি আর কী বলব?

-তুই আমাকে এসে বললি না কেন?

-আপনি তখন নিচে আপনার মা’র বাসায় গেছিলেন। ভাবছিলাম আসলে বলব কিন্তু রান্না করতে করতে ভুইলা গেছি।

-এত বড় একটা বিষয় আর তুই ভুলে গেলি! ইচ্ছে করছে ওই মোটকাটার সাথে তোরও খাওয়া বন্ধ করে দেই। এরপর যা কিছুই হোক এসে সোজা বলবি আমাকে, যা এখন।

হালিমা “আচ্ছা” বলে চলে গেল। আলো ভাবতে লাগল মোটকাটাকে কী করে শাস্তি দেয়া যায়??? এমন সময় জাসিয়া এসে বলল-

-ভাবি, তূর্য ভাইয়া কোথায়?

আলো চোখ সরু করে বলল- তূর্য ভাইয়াকে কী দরকার?

-আমার একটু কেনাকাটা আছে ভাইয়াকে সাথে নিয়ে যাব।

-তোমার কেনাকাটায় তূর্য কেন যাবে?

-আমি ঢাকায় আগে কখনও আসিনি। যদিও একা যেতে পারব তবু মা চাইছে তাই ভাইয়া যাবে।

আলো কড়া গলায় বলল- তূর্য অবশ্যই তোমার সাথে যাবে না।

জাসিয়া তখন চিৎকার করে তার মাকে ডেকে বলল- মা, ভাবি ভাইয়াকে যেতে দিচ্ছে না। কী করব?

জুলি তখনই ঘর থেকে বের হয়ে এসে বলল- এসব কী আলো? জাসিয়া কী বলছে শুনতে পাচ্ছ না? তুমি কী ভেবেছ তুমি যা চাইবে তাই হবে?

-যদি বলি হ্যাঁ?

-ok look… তুর্যওওওও…

তুর্য ঘরেই ছিল, এসে বলল- কী হলো এত চিৎকার করছেন কেন? আমাদের এলাকায় তো কোনো কাক নেই।

-কাক তোমার বউ খুঁজছে, আমি তোমাকে জরুরি কাজে ডেকেছি।

-আপনার সাথে আমার কোনো কাজ থাকতে পারে না। সরি… বলে তূর্য চলে যেতে পা বাড়াতেই জুলি বলল-

-তোমার কাজ আছে কিনা সেটা জানতে চাইনি। আমি বলেছি আমার কাজ আছে। জাসিয়ার একটু শপিং আছে তুমি ওকে নিয়ে যাও।

-আমি কেন নিয়ে যাব? আপনি যান?

-আমি এত কিছু শুনতে চাইনি। আর আলোর সাথে পাঠানোর কথা আমি ভাবছি না কারণ জাসিয়ার সাথে আলোর বিহেভ ফ্রেন্ডলি না। আমার মেয়েটা খুব সরল একা অভ্যস্ত না বাইরে তাই ওর সাথে তোমাকেই যেতে হবে।

“জাসিয়া সরল” এটা শুনে আলো খুব চেষ্টা করল হাসি চাপতে কিন্তু পারল না খুক খুক করে কেশে ফেলল তারপর হা হা করে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে তার চোখে পানি এসে গেল। জুলি চোখে আগুন জ্বালিয়ে বলল- আমার কিন্তু ধৈর্যের সীমা আছে একটা, ওটা অতিক্রম করার চেষ্টা করো না। খুব বড় ভুল করবে।

-কী করবেন আপনি? কিচ্ছু করতে পারবেন না।

-তাই মনে করো? তুমি বা তোমরা কী ভেবেছ, আমি ঘরে বসে আছি বলে ঘরেই বসে থাকব? এবাড়ির অন্য কোনো ফ্ল্যাটে যাব না? তোমার মায়ের ফ্ল্যাটে যাব না? গিয়ে কী কী বলতে পারি তাও কী বুঝতে পারো না?

আলো তখন পুরোপুরি নিভে গেল। আলোর দমে যাওয়া মুখটা দেখে জুলি হেসে বলল- তোমার এই ফেসটা খুবই কিউট, লাভেবল। তারপর তূর্যর দিকে ফিরে বলল- আমাকে কী আরও কিছু বলতে হবে?

তূর্য কপাল কুঁচকে বলল- জাসিয়া তোমার হাতে ১০ মিনিট সময়, তৈরি হয়ে এসো। আমার জরুরি কাজ আছে শপিং এ এক ঘন্টার বেশি সময় দিব না।

জাসিয়া হেসে বলল- ok, my cute handsome bro… বলে আলোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে জাসিয়া রুমে চলে গেল। আর ওর সেই হাসি দেখে আলোর গা জ্বলে গেল। চিবিয়ে চিবিয়ে তূর্যকে বলল- এই মেয়ে কিন্তু ডেঞ্জারাস।

তূর্য তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল- এই পুচকি মেয়ে আমার কী করবে? এক চড় মারলে ২য় চড় দেবার যার জায়গা নেই!

-একে মোটেও আন্ডার এস্টিমেট করো না। ইন্টারে পড়া মেয়ে এমনিতেই ফালতু হয় তার উপর এ ভয়ংকর একটা পরিবারে বেড়ে উঠেছে।

-এই পুচকি ইন্টারে পড়ে!

-হুম, সেকেন্ড ইয়ার। সামনের বছর পরীক্ষা দেবে। সারাক্ষণ ফোন হাতে ম্যাসেজিং করে আর মুচকি মুচকি হাসে। নির্ঘাত প্রেম করে বেড়ায়। কয়টা করে কে জানে!

-যা খুশি করুক তাতে আমাদের কী? শোনো, জাসিয়ার শপিং শেষ হলে আমি ফাতিম ভাইয়ের বাসায় যাব। ওর মায়ের সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে। আজ যেতে বলেছে দুপুরের আগে। বাবার বিষয়টা নিয়ে আলাপ করব।

-ঠিক আছে যাও। তবে জাসিয়ার থেকে সাবধানে থেকো।

-ওই ইন্টারের পুচকিকে আমি মোটেও ভয় পাই না। আসি…

-ইয়ে… আজ একটু জলদি এসো।

-জলদি কেন?

-আছে।

তূর্য কথা বাড়াল না। ও জানে আজ আলোর জন্মদিন। বিয়ের পর আলোর প্রথম জন্মদিন। কোথায় তূর্য স্পেশাল কিছু করবে তা নয় পরিবার নিয়ে সে হিমশিম খাচ্ছে! এর মধ্যেও আলোর জন্য কিছু করতে হবে। দেখা যাক কী হয়…?

শপিং সেন্টারে গিয়ে জাসিয়ার ভোল পাল্টে গেল পুরোপুরি। সে খুব দ্রুতই বেশ কিছু কেনাকাটা সেরে ফেলল। এত দ্রুত যেন ট্রেন মিস হয়ে যাবে। কয়েকটা ড্রেসের সাথে শাড়িও কিনল। বেশ কিছু প্রসাধন নিল। শাড়ির সাথে ম্যাচ করে গহনা কিনল। তখন তূর্যও সুযোগ বুঝে আলোর জন্য একসেট গহনা নিল। জাসিয়া তূর্যর মাপে একটা পাঞ্জাবিও কিনল। তূর্য বুঝতে পারল না ওর মাপে কেন পাঞ্জাবি নিল? আর একটা মানুষ এত শপিং কী করতে করে! তবু কিছু বলল না। করুক যা খুশি, তাতে তূর্যর কী? কেনাকাটার শেষ পর্যায়ে জাসিয়ার ফোনে একটা কল এলো, কল রিসিভ করে জাসিয়া একটু দূরে গিয়ে কথা বলল। তারপর কাছে এসে বলল- ভাইয়া আপনার না কী জরুরি কাজ আছে? আপনার দেরি হচ্ছে না? আপনি চলে যেতে পারেন। আমার তো কেনাকাটা প্রায় শেষ, আমি চলে যেতে পারব।

-তুমি একা যেতে পারবে?

-হ্যাঁ পারব। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। বাসায় গিয়ে আপনাকে ফোন করে দিব।

-তোমার জন্য আমি এতটাও চিন্তায় থাকব না। তাছাড়া ফোন করতে হলে নাম্বার লাগে তোমার কাছে সেটা নেই।

জাসিয়া সাথে সাথে মিষ্টি হাসি দিয়ে তূর্যর নাম্বারে কল দিয়ে বলল- ওই যে ওটা আমার নাম্বার।

তূর্য আশ্চর্য হয়ে বলল- আমার নাম্বার তোমাকে কে দিল?

-কে দিল সেটা ম্যাটার নয়। শুধু আপনার নাম্বারই নয় আপনার ফেসবুক একাউন্টও আমি জানি।

তূর্য কিছু না বলে উল্টো হাঁটতে লাগল। এই মেয়ের সামনে আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে হয়ত ওর সম্পর্কে আরও অনেক কিছু বলে ফেলবে। তখনই জাসিয়া পেছন থেকে চিৎকার করে বলল- তূর্য ভাইয়া, খুব শীঘ্রই আপনি টেনশনে পড়তে যাচ্ছেন… তবে চিন্তা করবেন না রাতের মধ্যে আপনার সকল চিন্তা আমি দূর করে দিব।

জাসিয়ার কথা শুনে তূর্য থমকে দাঁড়িয়ে গেল। পেছন ফিরে তাকাতেই জাসিয়া তার স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি দিয়ে হাত নেড়ে ভীড়ের ভেতর হাওয়া হয়ে গেল! তূর্য বিমূঢ়ের মত দাঁড়িয়ে থেকে ভাবতে লাগল জাসিয়া এগুলো কেন বলে গেল? তার গলা শুকিয়ে এলো… সামনে কী তবে নতুন কোনো বিপদ হানা দিতে চাইছে?

চলবে…

Dont forget me পর্ব-০৮

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ৮)

আজকের বিকেলটা বেশ ঝলমলে। ছাদে বসে চায়ের সাথে দারুণ একটা আড্ডা জমে যেত। কিন্তু বাসার পরিস্থিতির কারণে ঝলমলে বিকেলটাকেও ভালো লাগছে না কারো। পুরো বাসা জুড়ে মনে হচ্ছে কারফিউ চলছে। কেমন থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। তারান্নুম হোসেন বিছানায় এলিয়ে আছেন স্বামীর সাথে কথা বলা বন্ধ। মোতাহার উদ্দিন আছেন পুরোপুরি বিবর্ণ অবস্থায়। চুপচাপ ঘরে বসে তিনি ভাবনার জালে জড়িয়ে আছেন। জুলি আর জামাল যেদিন জোর করে তাদের কাবিন করল সেদিন কাবিন করার পর মোতাহার উদ্দিনের কী হলো হঠাৎ সাহস সঞ্চার করে বললেন- অফিসে তার খুব জরুরি মিটিং আছে না গেলেই নয়, এক্ষুনি যেতে হবে। কাজটা সেরেই ফিরে আসবে। কাবিন হয়ে গেছে বলে জামাল ব্যাপারটাকে একটু শিথিল ভেবেছিল। তাছাড়া মোতাহার উদ্দিন খুবই সরল মানুষ তার উপর শকে আছেন। তাই উল্টা পাল্টা কিছু করতে পারেন বলে ভাবেনি জামাল। তবে সাথে করে দুজন লোক সে ঠিকই পাঠিয়েছিল। মোতাহার উদ্দিন অফিসে গিয়ে ওই মূর্খ গাধা দুটোকে মিটিং এর কথা বলে খুব সহজেই বোকা বানিয়ে ঢাকা ফিরে এসেছিলেন। তবে তার আগে চট্টগ্রাম থানায় একটা জিডি করেছেন। জিডি করে গাড়িতে ওঠার দুই ঘন্টা পরে জামাল ফোন দেয়। তিনি শীতল গলায় জামালকে বলেছে- “আমি থানায় জিডি করে এসেছি তোমাদের সবার নামে। পারলে থানায় গিয়ে দেখে এসো। আমার বা আমার পরিবারের কারো যদি সামান্যতমও কিছু আঁচ লাগে তো পুলিশ সর্ব প্রথম গুষ্টিসুদ্ধ তোমাকেই ধরবে।” তারপর ঢাকায় এসে এখানেও জিডি করেছেন। এরপর জামাল কিছুটা থামলেও জুলিকে থামানো যাচ্ছিল না। সে ফোন দিয়ে স্ত্রীর অধিকার চেয়ে চেয়ে মাথা খারাপ করে ফেলেছে। মামা বাড়ির আবদার আর কি… বিষয়টা নিয়ে কোর্টে যাব শুনেই ছেলে-মেয়ে সহ বাসায় এসে উঠেছে চর দখল করার মত আমাকে দখল করতে! ইয়াং বয়সে বেশ হ্যান্ডসাম স্মার্ট ছেলে ছিলাম মেয়েরা প্রতিনিয়তই প্রেমে পড়ে যেত। কী কী সব রোমান্টিক বিনোদনে ভরপুর দিন দেখতে হয়েছে তখন কিন্তু এই বয়সে এসে যেটা দেখতে হচ্ছে তা রীতিমতো অভাবনীয় এবং ভয়ংকর! আজকাল বয়ষ্ক লোকের প্রেমে পড়াটা ফাতরা মেয়েদের ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে! ফেসবুক ভর্তি এসব নোংরামি দিয়ে। আর সেই নোংরামি আমার লাইফে এসেই জুটতে হলো? সিঙ্গেল থাকলে তাও নাহয় মানা যেত। উফ জীবন আমাকে এমন সংকটে কেন যে ফেলে দিল…

তূর্য এসে মোতাহার উদ্দিনের পাশে বসে বলল- বাবা কী করবে এখন ভেবেছ কিছু?

-কী আর ভাবব… কোর্টে যেতে হবে।

-ওর যা ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড বললে তারা কী এত সহজে মেনে নেবে?

-ওরা এক্ষুনি কিছু করতে পারবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। দুর্জন যতই বড় বড় কথা বলুক সাহস দেখাক আসলে সাহস তাদের লেজের ডগায় থাকে। সামনে নির্বাচন তাই এই মুহূর্তে ওরা আমাকে তেমন ঘাটাবে না। কিন্তু সমস্যা জুলিটাকে নিয়েই। ও উল্টা পাল্টা বলে জট পাকিয়ে ফেলতে পারে। আর আমাদের সমাজ এবং আইন ব্যবস্থায় এসব ক্ষেত্রে মেয়েদের কথাকেই সত্য বলে মেনে নেয়। পুরুষও যে নির্যাতনের স্বীকার হতে পারে সেটা কেউ মনেই করে না। তবে আশার ব্যাপার একটা আছে কিন্তু সেটা আসলেই আশার কিনা সেটাই প্রশ্ন…

-কী?

-চট্টগ্রাম থানায় যখন ওদের নামে জিডি করলাম তখন পুলিশ অফিসার বলেছিল, কোনো রকম কিছু হলেই যেন তাদের জানাই। কারণ জুলির নামে অলরেডি একটা ভয়ংকর রিউমার আছে শুধু প্রমাণের অভাবে তারা কিছু করতে পারেনি। কী রিউমার জানতে চাইলে বলল, জুলির হাজবেন্ড নাকি মারা যায়নি তাকে হত্যা করা হয়েছে আর সেটা জুলি নিজেই করেছে! রাজনৈতিক পরিবার আর জুলির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা সাধারণ দুর্বল পরিবার বলে ব্যাপারটা তারা সহজেই ধামাচাপা দিতে পেরেছিল। এখন সেটা যদি সত্য হয় আর কোনো ভাবে যদি প্রমাণ করা যায় তাহলে আমার জন্য সব কিছু সহজ হয়ে যায়।

তূর্য চমকে উঠল… বাবা তো ভয়ানক ক্রিমিনাল পরিবারের সাথে জড়িয়ে গেছে! বের হবে কী করে…? হঠাৎ তার এক কলিগের কথা মনে পড়ল। বলল- বাবা টেনশন নিও না, আমি দেখছি পুরো ব্যাপারটা। আমার কলিগ ফাতিম ভাইয়ের মা বেশ নামকরা একজন ল’ইয়ার। তার সাথে আমি কথা বলব। ইনশাআল্লাহ তিনি সব সামলে নিতে পারবে।

-ঠিক আছে। কিন্তু তোর মাকে সামলাবে কে? সে তো কারো কথাই শুনছে না। বাপের বাড়ি চলে যাবার হুমকি দিচ্ছে। আরে সে চলে গেলে যে জুলির জন্য মাঠ ফাঁকা হয়ে যায় সেটাও বুঝতে পারছে না।

সেই মুহূর্তে চা নিয়ে আলো ঘরে ঢুকে বাবার কথা শুনে বলল- জুলি আন্টিকে যা দেখলাম তাতে গোল দেবার জন্য ফাঁকা মাঠের প্রয়োজনই পড়বে না তার। মুখ তো নয় যেন আস্ত তলোয়ার! যা বলে সামনে দাঁড়ানো মানুষকে একেবারে কেটে এফোঁড়ওফোঁড় করে ফেলে। আর উনার মেয়েটাও… যেমন গাছ তেমন তার ছায়া!

তারান্নুম হোসেন বললেন- এর একটা ব্যবস্থা না হওয়া অব্দি আমার কাছে এসে তোমরা এভাবে ভ্যাজরভ্যাজর করবে না। অন্য কোথাও যাও। মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।

-মা চা’টা খেয়ে নিন ভালো লাগবে। আর জুলি আন্টিকে আমি দেখে নেব। তবে উনি খুব ডেঞ্জারাস মহিলা তো… একা দেখতে ভয় লাগে, আপনি যদি একটু সাহায্য করতেন…

-কী লাগবে এসে বলবে। মানা করেছি নাকি?

মোতাহার উদ্দিন হাসলেন। মনে মনে বললেন- আল্লাহ সহায় হোক।

সবার চা খাওয়া হয়ে গেলে আলো ড্রইংরুমে বসে ফেসবুক ক্রল করতে লাগল। আসলে ফেসবুক দেখাটা উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য হলো- উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাওয়া উদবাস্তু গুলো কী করছে সেই গতিবিধি ফলো করা। এমন সময় জুলি এসে আলোকে বলল- তোমরা কী বিকেলে চা খাও না? নাকি ভদ্রলোকেরা যে খায় সেটাও জানো না?

-“চা খাওয়া”র মত ভদ্রলোক সত্যিই আমরা নই। তবে হ্যাঁ, দিনে ৩/৪ বার তো আমাদের চা পান করতেই হয়। চা পান করা ভদ্রলোক তো আমরা বটেই।

জুলি দাঁতে দাঁত চেপে অপমানটা হজম করল। বলল- অন্যের কথা না শুধরে নিজের আচরণ শোধরাও। নয়ত ভবিষ্যৎ অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই হবে না।

-আপনার মত মানুষের সাথে যার পরিচয় বা ওঠাবসা হয়েছে তার জীবন আলোকিত হবার কথাও না।

জুলি খুব রূঢ় গলায় বলল- চ্যাটাং চ্যাটাং কথা না বলে যাও আমার আর জাসিয়ার জন্য দুকাপ চায়ের ব্যবস্থা করো। জাওয়াদ বার্গার খেতে চাইছে তূর্যকে বলে দাও দুইটা বার্গার আনতে।

আলো আড় চোখে জুলির দিকে তাকিয়ে বলল- এই হালিমা… জুলি গুন্ডি… সরি জুলি আন্টিকে চা দে। চা বানানোর সময় চিনি খেয়াল করে দিস। চিনির বোয়াম কিন্তু বদলেছি। আগেরটায় ইঁদুর মারার বিষ রাখা আছে। মনে করে আবার সেটা দিয়ে দিস না।

আলো তো রান্না ঘরেই যায়নি আর বাসায় কোনো ইঁদুরও নেই, তাহলে বিষ আসবে কোত্থেকে? আলোর কথার কোনো মানেই বুঝল না হালিমা। সে না বুঝে বোকার মত আলোর দিকে তাকিয়ে রইল। আলো তাকে চোখের একটা ইশারা দিল। হালিমা তখন ব্যাপারটা বুঝে মুচকি হাসি দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল।

জুলি মুচকি হেসে বলল- এত খুশি হবার কিছু নেই কারণ ইঁদুর মারার বিষে কোনদিন মানুষ মরে না।

-মানুষ কে মারতে চাইছে ৩/৪টা পিশাচ মরবে কিনা সেটা প্রশ্ন!

জুলি তখন রাগে ফোসফাস করতে করতে বলল- তেমন বিষ পেলে আমাকে জানিও। আমার নজরেও কিছু পিশাচ আছে।

চলবে…

Dont forget me পর্ব-০৭

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ৭)

বাসার পরিবেশ এই মুহুর্তে ভয়ংকর। সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে। ১৫ মিনিট আগে এক মহিলা এসেছে যার সাথে দুটো বাচ্চা। মেয়েটা মনেহয় এখনও স্কুল শেষ করেনি বা মাত্রই শেষ করেছে টাইপ। আর ছেলেটার ৭/৮ বছর বয়স হবে। খুব স্বাস্থ্যবান, দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব দুষ্টু আর পেটুক। বাচ্চা দুটো যে ভদ্রমহিলার সেটা বলার অপেক্ষা রাখছে না। এদের কাউকে আমরা কেউ চিনি না। ভদ্রমহিলা তার সন্তান এবং লাগেজ আর ব্যাগপত্র নিয়ে কিছু না বলে সোজা ভেতরে ঢুকে পড়েছেন। ঢুকে যা বলেছে তা শুনে সবার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে। মোতাহার উদ্দিনের মুখে কোন কথা নেই আর তারান্নুম হোসেন কিছুই বুঝতে না পেরে নির্বাক অবস্থায় আছেন। তূর্য বুঝতে পারল কী হচ্ছে তবে এই পরিস্থিতিতে কী করণীয় সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। তারান্নুম হোসেন স্বামী সন্তানকে চুপ থাকতে দেখে আতংকিত গলায় বললেন-

-এরা কারা? কী বলছে এসব?

তূর্য তার পাশে গিয়ে বলল- মা ঘরে চলো আমি তোমাকে সব বলছি…

-“সব বলছি” মানে? তার মানে এরা যা বলছে সব সত্যি?

-আমি বলছি তো তুমি ঘরে এসো বলছি আমি তোমাকে…

-না, ঘরে যাব না। যা বলার এখানেই বল।

কিন্তু তূর্য কিছু বলার আগেই আগন্তুক ভদ্রমহিলা মোতাহার উদ্দিনের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন- আপনি এখনও কাউকে কিছু জানাননি? ওদের বলুন আমি কে? আমি যা বলেছি সবটাই সত্য বলেছি। বলুন?

মোতাহার উদ্দিন কিছুই বলতে পারলেন না তিনি প্রচন্ড অসহায়বোধ করছেন। বুকের বাপাশে চাপ অনুভব হচ্ছে।

মহিলার ছেলেটা তখন লাগাতার বলেই যাচ্ছে- “মা আমার খিদে পেয়েছে, আমি কিছু খাব। প্লিজ মা আন্টিকে বলো না আমাকে কিছু খেতে দিতে?” পাশ থেকে তার বোন খুব সহজ আর রিনরিনে গলায় বলল- জাওয়াদ, এমন করছিস কেন? দেখছিস না এবাসার সবাই কেমন ট্রমায় আছে? তারা এখন নাশতা দিতে পারবে না।

-কিন্তু আমার তো খিদে পেয়েছে…

মেয়েটা ব্যাগ থেকে একটা বিস্কিটের প্যাকেট আর জুস বের করে দিয়ে বলল- এখন এটা খেয়ে নে, নাশতা পড়ে দেখা যাবে। জাওয়াদ বিনা বাক্যে খাওয়া শুরু করল। সে খাচ্ছে আর বিস্কিটের গুড়ো সারা ঘরে ফেলছে!

তূর্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল- মা এই ভদ্রমহিলা যা বলছে সত্য বলছে তবে সবটা না। বাবা চিটাগং যাবার পর এক সপ্তাহ আগে বাবাকে উনি ট্র‍্যাপে ফেলে বিয়ে পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে। একটু আগেই বাবা আমাকে সব বলেছে। এখানে বাবার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। বাবাকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ট্র‍্যাপে ফেলে এরা এদের স্বার্থসিদ্ধি করেছে।

ছেলের কথায় তারান্নুম হোসেনের মাথা চক্কর দিতে লাগল। আগন্তুক ভদ্রমহিলা তখন গলার আওয়াজ একটু তুলেই বললেন-

-বিয়ে যেভাবেই হোক হয়েছে এটাই বড় এবং শেষ কথা। এক সপ্তাহ অনেক দীর্ঘ সময়, আমি আর সময় দিতে পারছি না। আমার কথা কেউ কানে তুলতে চাইছিল না তাই বাধ্য হয়েই এখানে চলে আসতে হয়েছে। তারপর তারান্নুম হোসেনের দিকে তাকিয়ে বলল- সংসার আপনি একাই করবেন তা তো হয় না, স্বামীটা তো আমারও।

মোতাহার উদ্দিন এবার ধৈর্য হারা হলেন একটু। বললেন- বেশি বাড়াবাড়ি করো না জুলি। বাচ্চাদের সামনে কী বলছ হুশ আছে কোনো?

-হুশ থাকবে না কেন? ওদেরও তো সব জানা উচিত? তাছাড়া থাকবার জন্য এখনও আমাদের কোনো ঘর দেখিয়ে দেয়া তো দূরে থাক অভ্যর্থনাই তো জানাচ্ছে না কেউ! কথা বলবটা কোথায় তাহলে?

তারান্নুম হোসেন নিজের ঘরে চলে গেলেন। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে এসব সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না তার। দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলেন। কী হয়ে গেল এসব? তূর্যর বাবা অত্যন্ত ভদ্র শান্ত মেজাজের মানুষ। তার চরিত্রে কখনোই নারীলোভ ব্যাপারটা ছিল না। সাত চড়ে রা কাটেনা টাইপ মানুষ আর সেই মানুষটা এমন একটা কাজ করল!!! এও কী সম্ভব? কাউকেই কী তবে আর বিশ্বাস করা যাবে না? সমাজে মুখ দেখাবে কী করে? ছেলের বিয়ের দু’দিন না যেতেই বাবার নতুন বউ এসে হাজির! আলোর পরিবার কী বলবে? লোকের হাসির খোরাক হয়ে গেল! তার মাথা কাজ করছে না… মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে এক্ষুনি!

এদিকে আলো আছে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে। সে কোন দিকে যাবে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এমন ভয়ংকর উদ্ভট ঘটনার সম্মুখীন সে কোনদিন হয়নি। তাই কী করা উচিত এখন তা বুঝে আসছে না। বোকার মত দাঁড়িয়ে থেকে দেখে যাচ্ছে সব। জুলি নামের ভদ্রমহিলা ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে। যেন কিছুই সমস্যা নেই বরং ভেতরে ভেতরে মজাই পাচ্ছে। মহিলার মেয়েটার ভাবগতিক কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আসার পর থেকে ফোন টিপেই যাচ্ছে। মাঝে একবার আলোর কাছে ওদের ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড চেয়েছিল। আলো মুখ কঠিন করে বলেছে, “আমাদের ওয়াইফাই নেই” মেয়েটা ড্যাম কেয়ার ভাবে হেসে বলল- “সমস্যা নেই, একটু পরে ঠিকই দিবে।” আলো বুঝল এই মেয়ে ছোট হলে কী হবে পাক্কা ঝাল মরিচ। আর জাওয়াদ মোটকাটা আসার পর থেকে নড়াচড়া করেই যাচ্ছে আর একটু পরপর ব্যাগ থেকে এটা সেটা বের করে খাচ্ছে। ওরা কী আস্ত মুদির দোকান ব্যাগে ভরে ঘাড়ে নিয়েই ঘুরে বেড়ায়? খাবার বের হয়েই যাচ্ছে হয়েই যাচ্ছে! আর fm রেডিওর এ্যাডের মত একটু পরপর বলেই যাচ্ছে- “মা ওরা আমাদের কিছু খেতে দিচ্ছে না কেন?” আরে রাক্ষস তোকে কী খেতে দিবে? তোর এই খিদে ইহকালে মিটবে বলে তো মনে হচ্ছে না! ও যখন জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছিল তখন জুলি বলে উঠল-

-তুমি নিশ্চই তূর্যর বউ?

আলো চমকে উঠে জুলির দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না। জুলি বলল- আমার ছেলের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? অনেক্ষণ ধরে এসেছি কিছু খেতে না দেওয়াটা অভদ্রতা। তার উপর আমার ছেলেটার খিদে লেগেছে বার বার খেতে চাইছে দেখেও চুপ আছ, আশ্চর্য!

-আপনি আমাকে চিনলেন কী করে?

-এত অবাক হবার কিছু নেই, আমি তোমাদের সবাইকেই চিনি। নিজের অধিকার আদায়ে আমাকে আটঘাট বেঁধেই তো নামতে হবে বলো? সেই চিটাগং থেকে সারারাত লম্বা জার্নি করে এসেছি। আমাদের সবারই খিদে পেয়েছে। ছেলের বউ হিসেবে তোমার উচিত আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করা।

আলো বুঝতে পারল এই মহিলা নিতান্তই অভদ্র একজন। নইলে এমন পরিস্থিতিতে নির্লজ্জের মত খাবার চাইতে পারে? সে বলল- আমাদের সকালের নাশতা করা শেষ। বাসায় আর কোনো খাবার নেই।

জুলি মুচকি হেসে বলল- আমাকে তূর্যর মা পাওনি, আমি জুলি। দরকার হলে পেটের ভেতর থেকে খাবার বের করে আনতে জানি। যাও নাশতার ব্যবস্থা করো।

আলো আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না। ভয়ে এক দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। জুলি তখন কাজের মেয়েটাকে বলল- বাসায় ডিম আছে? আমার ছেলেকে দুইটা ডাবল ডিমের পোচ, এক গ্লাস গরম দুধ আর ৫টা পরটা ভেজে দাও। আর আমাদের দুজনের জন্য ৩টা করে পরটার সাথে একটা করে ডিম পোচ হলেই হবে। সাথে কিছু আমন্ড আর কাজু বাদাম দেবে জাসিয়ার জন্য। আর হ্যাঁ, আমি খিদে সহ্য করতে পারি না জলদি করবে। মেয়েটা মাথা হেলিয়ে সায় জানিয়ে চলে যেতেই জুলি উঠে ঘুরে ঘুরে সব দেখতে লাগল। এমন সময় তূর্য এসে বলল-

-আপনার কথা আজ সকালে বাবা আমাকে সব বলেছে। আপনি যে নিজেকে বাবার স্ত্রী বলে দাবি করছেন আপনাদের তো বিয়ে হয়নি, কেবল কাবিন হয়েছে। তাও বাবাকে ভয় দেখিয়ে বাধ্য করে এসব করেছেন।

-কাবিন হলে বিয়ের আর বাকিই থাকে কী?

-থাকে, বাকি থাকে। কবুল না বলা পর্যন্ত শরীয়ত মোতাবেক আপনি কারো স্ত্রী বলে সরাসরি দাবি করতে পারবেন না।

-সেটা আদালতের কাছে কোনো বিষয় নয় তারা দেখবে প্রমাণ। আর প্রমাণ তো আমার আছেই।

তূর্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই জুলি বলল- আমার এখন এসব বাজে আলোচনা করার মুড নেই, যথেষ্ট টায়ার্ড আছি। বিশ্রামের দরকার, আমাদের ঘরটা দেখিয়ে দাও।

-আমাদের বাড়িতে এক্সট্রা কোনো ঘর নেই।

-তাহলে কী সরাসরি তোমার বাবার ঘরেই উঠব?

তূর্য বুঝতে পারল এই মহিলাকে কাবু করা এতটা সহজ হবে না। বাবার কাছ থেকে যা শুনেছে তাতে তো জেনেছেই এর পুরো পরিবারই সন্ত্রাসী! তাই হুট করেই ঝামেলায় জড়ানোটা ঠিক হবে না, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। সে কাজের মেয়ে হালিমাকে ডেকে বলল- গেস্ট রুমটা কোন দিকে এদের বলে দে।

-“বলে দে”!!! এসেই কোনো ঝামেলা বাধাতে বাধ্য করো না আমাকে। ভদ্রতা দেখাচ্ছি বলে ভেব না সেটা দেখিয়েই যাব। আমার সাথে অভদ্রতা করলে অভদ্রতা কাকে বলে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে ছাড়ব। বলে জুলি গলা উঁচিয়ে হালিমাকে বলল- হালিমা ব্যাগপত্র গুলো রুমে দিয়ে আয়।

তূর্যর সামনে দিয়ে গটগট করে জুলি তার ছেলেকে নিয়ে গেস্ট রুমের দিকে এগিয়ে গেল। তার মেয়েটা পেছন পেছন যেতে যেতে তূর্যর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল-

-সরি তূর্য ভাইয়া, স্মার্ট লোকের সাথে খেলতে গেলে আগে নিজেকে স্মার্ট হতে হয়। এমন গুডবয় টাইপ ইমেজ গার্লফ্রেন্ডদের জন্য, প্রতিপক্ষের জন্য না। বলে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেল। উত্তর শুনবারও প্রয়োজন মনে করল না!

তূর্যর ভয়ানক মেজাজ খারাপ হলো। এই এতটুকুন পিচ্চি একটা মেয়ে পর্যন্ত তাকে কথা শোনাচ্ছে আর সে কোনো জবাবও দিতে পারল না!!!

চলবে…

Dont forget me পর্ব-০৬

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ৬)

তূর্যর বিয়ের কিছুদিন পর এক সকালে সবাই নাশতার টেবিলে বসেছে। মোতাহার উদ্দিন অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ যেন একটু বেশিই চিন্তিত অবস্থায় আছেন। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারা রাত ঘুমাননি। তূর্য বলল-

-বাবা তোমার কী শরীর খারাপ লাগছে? মনে হচ্ছে রাতে ঘুমাওনি?

-ওই ক’দিন ধরে ঘুম হচ্ছে না।

-আমার মনে হচ্ছে তুমি কোনো কিছু নিয়ে অত্যন্ত টেনশনে আছ?

তারান্নুম হোসেন বললেন- কয়দিন ধরে কী নিয়ে এত টেনশন করছে আল্লাহ জানেন। আমাকে তো কিছুই বলছে না। এভাবে চেপে রেখে রেখে কখন যেন শরীরটা দুম করে খারাপ করে বিছানায় পড়ে যাবে। কিছুদিন আগে যে চট্টগ্রাম গেল সেখান থেকে ফেরার পর কী যে হলো আল্লাহ জানেন। কিছু বলেও না শুধু টেনশন করে। টেনশন করে করে শরীর কত খারাপ করে ফেলছে। বিয়ের পুরো সময়টা ধরে থম মেরে ছিল আর ইদানীং তো আরও বাজে অবস্থা! না বললে বুঝবটা কী?

মোতাহার উদ্দিন চুপ রইলেন। তূর্য বাবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বুঝল বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ অথচ বাবা কাউকে বলবারও সাহস পাচ্ছে না। সে মাকে থামাল তারপর খাওয়া শেষ করে বাবার সাথে তার ঘরে গিয়ে বসল। বলল-

-বাবা তুমি কিছু একটা নিয়ে ভয়ানক দুঃশ্চিন্তায় আছ কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছ না। কোনো কিছু না ভেবে আমাকে এখনই বলে ফেলবে, কী সেটা?

মোতাহার উদ্দিন ঘামতে লাগলেন। বুঝলেন এখন আর চুপ থাকা যাবে না। তাছাড়া এখন আর চেপে রাখার মত পরিস্থিতিও নেই। যেকোনো মুহুর্তে ঝামেলা এসে উদয় হয়ে যেতে পারে। স্ত্রী পুত্রকে বলে রাখলে বরং কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যাবে। তিনি বলতে শুরু করলেন-

-চেপে রাখার মত শক্তি বা পরিস্থিতি কোনটাই এখন নেই আমার। তাছাড়া এই মুহূর্তে বলতে না পারলে ঝামেলা বরং বাড়বে। কিন্তু তোদের…

-বাবা আমি তো তোমারই ছেলে, এত কিছু ভাবার দরকার নেই, বলে ফেলো।

-তোমার মা তো বললই চট্টগ্রাম থেকেই আমি টেনশন সাথে নিয়ে এসেছি। ওখানে আমি অফিসের কাজে গিয়েছিলাম এক সপ্তাহের জন্য। হোটেলে উঠবার কথা ছিল কিন্তু ওখানকার অফিসের ম্যানেজার জামাল উদ্দিন কোনো ভাবেই উঠতে দিলেন না। তার বাসায় নিয়ে গেলেন। বাসাটা বেশ বড়, বিশাল বাংলো বাড়ির মত। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। তার বাসায় তার স্ত্রী দুই ছেলে সহ তার বোন থাকত তার দুই সন্তান নিয়ে। এত মানুষের ভীড়ে আমি উটকো ঝামেলা হতে চাইলাম না। কিন্তু জামাল আমাকে কিছুতেই ছাড়ল না। বর্ষাকাল যখন তখন বৃষ্টি হয়। আমি ওর বাসায় ওঠার পরদিন বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলাম আফিসে যাবার পথে। সেই ভেজা নিয়েই অফিস করলাম। দুপুরের পর থেকেই দেখলাম গা গরম হতে শুরু করেছে। বাসায় ফিরলাম প্রচন্ড জ্বর নিয়ে। অসুখ বিসুখ আমার শরীরে সয় না খুব অল্পতেই একেবারে কাহিল হয়ে যাই সেটা তো তোমরা জানোই। জ্বরে একেবারে অচেতন হয়ে গেলাম। ওরা আমার বেশ যত্ন করল। আসলে অচেতন অবস্থায় কে যত্ন করেছে আমি তাও জানি না। যখন একটু হুসে থাকতাম তখন তোমার মায়ের সাথে কথা বলতাম। তোমার মা তো আমাকে জানে তাই আমি যে এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছি সেটা বলিনি শুনলে ভীষণ অস্থির হয়ে পড়বে। ৩দিন পর জ্বর কমতে শুরু করল। আমার শরীর ততদিনে একেবারে দুর্বল। জামালই আমাকে সব এগিয়ে দিত। ওর স্ত্রী ২/১ বার সামনে পড়লেও ছেলেরা কখনো কাছে ভীড়েনি তবে বোনের ছেলেটা আসত সব সময়। মাঝে মাঝে বোনটাও আসত। জামালের উপর খুব কৃতজ্ঞ হয়ে পড়েছিলাম ওই মুহুর্তে। মনে হয়েছিল সে জোর করে বাসায় এনে আমার কত বড় উপকার করল। হোটেলে থাকলে এই শরীর নিয়ে কী অবস্থা হত কে জানে! কিন্তু আমি যেদিন চলে আসব তার আগের দিন জামালের প্রতি এই মনোভাব জামাল সম্পূর্ণ রূপে বদলে দিল। আমি বিস্মিত হয়ে দেখলাম জামালের এই ভদ্র চেহারার পুরোটাই একটা মুখোশ! যার পেছনে কী ভয়ানক এক পিশাচ বাস করে!

তূর্য পিনপতন নিরবতায় অপেক্ষা করতে লাগল বাবা কী বলে সেটা শুনবার জন্য। মোতাহার উদ্দিন কিছুক্ষণ থেমে থেকে দম নিয়ে আবার শুরু করলেন… জামাল আমাকে সরাসরি বলল-

-স্যার কী আগামীকাল ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন?

-হ্যাঁ, কাজ তো তেমন কিছু দেখতে পারলাম না। তবে শরীরের সাথে আর পারছি না। তাই ঢাকায় গিয়ে আবার কিছুদিন পর ব্যাক করব।

-তাহলে যাবার আগেই কাজটা করে যান?

-কী কাজ?

-আমার বোনকে বিয়ে।

-মানে!!!

-মানে, আমার বিধবা বোনটা তো এতদিন এমনি এমনি আপনার সেবা করেনি। সেটা বুঝতে হবে না? আমার তখন রাগে ঘাম ছুটে গেল। বললাম কী সব বলছ জামাল?

জামাল কুটিল হাসি হেসে বলল- না বোঝার কিছু নেই স্যার। আমাদের এই বাড়িটার আশেপাশে খুব একটা মানুষ থাকে না। খুব অল্প যারা থাকে তারা গত কয়েকদিনে দেখেছে আমার বিধবা বোনটা আপনার কী সেবাটাই না করেছে। একটা মেয়ে নিশ্চই বিনা কারণে একটা পর পুরুষকে ফ্রি ফ্রি সেবা করবে না। সবাই বুঝে গেছে আপনার সাথে আমার বোনের কিছু একটা আছে। এই নির্জন বাগান বাড়িতে শহরের সামর্থ্যবান মানুষ তো এমনি এমনি থাকতে আসেনা। আপনিও যে কিছু একটার লোভেই এসেছেন সেটা বুঝতে কারো বাকি নেই। এই পর্যায়ে এসে জামালের কথায় আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসতে লাগল। জামাল তখনও বলতে থাকল- স্যার আমার বোনটা অনেক সুন্দরী। অল্প বয়সে জামাইটা মারা গেল। ছোট ছোট দুইটা ছেলেমেয়ে আছে। তাদের একটা ভবিষ্যৎ আছে না? আমার মা বাবা কেউ বেঁচে নাই বোনের ভালো তো আমাকেই দেখতে হবে তাই না? স্যার কিছু বলতেছেন না যে?

আমি সারা জীবন নির্ভেজাল শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিলাম। আমার সাথে এমন একটা শয়তানি আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি বুঝতে পারছিলাম আমি এখন ঘোর বিপদে পড়তে যাচ্ছি যতটা সম্ভব শক্ত থাকতে হবে। ভেঙে পড়লেই পেয়ে বসবে জামাল। অনেক সাহস সঞ্চার করে বললাম-

-জামাল তুমি কী সব আবোলতাবোল বলছ বুঝতে পারছ?

-আমি সব বুঝেই বলছি স্যার।

-আমি পুলিশ ডাকব।

-পুলিশ ডেকে কোনো লাভ নাই স্যার। আমার দুই ছেলেকে তো দেখছেন? তারা পড়ালেখা কিছু করে না, করে ছাত্র রাজনীতি। সরকার তার পালতু ছেলেপেলেদের কতটা শেলটার দেয় সেটা তো আপনি জানেনই। সরকারের অতি তুচ্ছ কাজেও তারা হেলমেট পড়ে দেশিও অস্ত্র হাতে রাজপথে নেমে পড়ে। এই পুরা চট্টগ্রাম তাদের নামের প্রভাব প্রতিপত্তিতে কাঁপে। আমার শালাও সরকার দলের বড় নেতা। পুলিশ আমাদের হাতের মুঠোয় নাচে। আপনি তো এইখানে থাকেন না তাই কিছু জানেন না। আপনার “না” বলার যে কোনো অপশন নাই আশা করি সেটা বুঝতে পারছেন।

জামালের কথায় আমার পায়ের তলা থেকে পুরোদমে মাটি সরে গেল। বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করতে লাগলাম… পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। জামাল আমার অবস্থা টের পেয়ে বলল- স্যার কি ভয় পেলেন? ভয় পাবেন না। আমার বোন খুবই ভালো। তার ছেলে মেয়ে দুইটাও ভালো। আপনার সম্পর্কে সব জেনেও সে আপনাকে খুব পছন্দ করে ফেলেছে। বুঝতেই পারতেছেন সে কত ভালো? সে নিজেই আমাকে বলছে সে আপনাকে বিয়ে করতে চায়। আমার বোনটা আবার আমার কলিজার টুকরা। সে একটা কিছু চাবে আর আমি দিব না তা হইতে পারে না। স্যার কাজি কি এখনই ডাকব?

আমি কপালের ঘাম মুছে বললাম- তুমি যতই ভয় দেখাও কাজে আসবে না। আমি এসব কিছুই করব না। বলে পকেট থেকে ফোন বের করতেই সে ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নেয়। তারপর সেটা বন্ধ করে দিয়ে বলল- স্যার আমি আপনাকে এখনও কোনো ভয় দেখাই নাই। দেখালে বলতাম, আমার শালাবাবু তার দলবল নিয়া আশেপাশেই অবস্থান করতেছে। আর আমার ছোট ছেলেটা গতকাল ঢাকায় চলে গেছে। সে আপনার ছেলের ডিটেইলস নিয়েই গেছে। ছেলেটা আবার আমার মত মায়ার শরীর নিয়ে জন্মায় নাই। ঢাকায় তার মতই দয়ামায়াহীন কয়েকজন বন্ধু আছে যারা চোখ বন্ধ করে মানুষের বুকে… বুঝতেই পারছেন মনেহয় আর বললাম না। আমি কিন্তু এগুলা কিছুই বলে আপনাকে ভয় দেখাইনি। আপনি ভয় পাবেন না। কাজি ডাকি স্যার?

আমি তখন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম। জ্ঞান ফিরতেই দেখলাম আমি বিছানায় শুয়ে আর আমার পাশেই জামালের বোন বসে আছে। আমার চোখ মেলতেই সে বলল-

-আপনি এখন কেমন আছেন? এত ভয় দেখিয়ে দিয়েছেন না!

আমি লাফিয়ে উঠে বললাম- আপনি এখানে কী করছেন? বের হন এখান থেকে?

-ওমা! এইটা তো আমার ঘর আর আমার ঘর থেকে আমাকেই বের করে দিচ্ছেন?

-আমি তখন খেয়াল করলাম ঘরটা আমার পরিচিত নয়। আমি দ্রুত উঠে বের হতে গেলে সে বলল-

-দরজা খুলে বাঁচতে পারবেন ভেবেছেন? আপনি জানেন না দরজার ওপাশে কী আছে…

আমি থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম। সে বলল- বাইরে এলাকার লোকজন বসে আছে দরজা খোলা মাত্রই কী হবে আশা করি বুঝতে পারছেন?

-আপনারা কেন আমার সাথে এমন করছেন? আমি নির্ভেজাল মানুষ। আমার একটা পরিবার আছে, স্ত্রী সন্তান আছে। আপনি সব জেনেও কেন আমাকে এভাবে ফাঁদে ফেলছেন?

-কী করব বলুন… আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়ে গেছে। আর যা একবার আমার পছন্দ হয়ে যায় তা আমি চাই-ই চাই।

আমি বুঝে গেলাম আমার বাঁচার কোনো উপায় নেই!

তূর্য আতংকিত হয়ে শুকনো গলায় বলল- তারপর? আর এমন সময় কলিংবেল বাজল। মোতাহার উদ্দিন চমকে উঠলেন। তিনি আতংকিত গলায় বলল- ওই যে… ওরা…

-ওরা কারা???

চলবে।

Dont forget me পর্ব-০৫

0

#Dont_forget_me (পর্ব – ৫)

আলোকে এত বড় বক্স নিয়ে ঘরে ঢুকতে দেখেই আদিবা জিজ্ঞেস করল-

-কিরে কোথায় গিয়েছিলি? খুঁজে খুঁজে সব হয়রান। আর হাতে এটা কিসের বক্স? কোথায় পেলি?

-আস্তে আপু, আস্তে। এত প্রশ্ন করলে উত্তর দিব কীভাবে?

-আমাদের এত ধৈর্য নেই। তাড়াতাড়ি বল।

-তূর্য ডেকেছিল…

সবাই একসাথে বলল উঠল- “ওওওওওও…”

আলো লজ্জায় লাল, নীল হয়ে গেল। সেটা দেখে সবাই হেসে কুটিকুটি। সবাই মিলে প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে লাগল আলোকে। একটা করে প্রশ্ন আসে আর সবাই হেসে গড়াগড়ি যায়। ফারিয়া বলল- আপু বক্সটা খোলো না, দেখি আমাদের রোমান্টিক হিরো কী পাঠালো তোমাকে?

আলো বুঝল বক্স এদের সামনে না খুলে উপায় নেই। তাই বক্সটা খুলল। খুলতেই আলো ভীষণ অবাক হলো কারণ বক্সে দুইটা শাড়ি আছে যা আলো বিয়ে আর বৌ-ভাতের জন্য পছন্দ করেছিল কিন্তু তূর্য সেটা নিতে দেয়নি। শাড়ি দেখে সবাই একসাথে বলল “ওয়াও তূর্য ভাইয়া এত্ত রোমান্টিক! এত সুন্দর সুন্দর শাড়ি?” ফারিয়া একটা খাম পেল। সেটা হাতে নিয়ে সে লাফাতে লাগল, এটা সে দিবে না। নিতে হলে আলোকে মোটা অংকের এ্যামাউন্ট খসাতে হবে এবং এর মধ্যে যা আছে তা ওদের সামনেই পড়তে হবে। আদিবা খুশি হয়ে ফারিয়াকে ৫০০টাকা দিয়ে বলল- দারুণ। অতঃপর আলো এক হাজার টাকা দিয়ে ওর কাছ থেকে খামটা নিল। নিয়ে করুণ মুখে বলল- তোরা সবাই যা না এটা আমি একা খুলি? সবাই একসাথে চেঁচিয়ে বলল- “নায়ায়া”। আলো খামটা খুলল- সেখানে ছোট্ট একটা চিঠি। আদিবা বলল- জোরে জোরে পড় আমরা সবাই শুনব। আলো পড়তে লাগল-

“আমি জানি এই চিঠি তুমি একা পড়তে পারবে না। তোমার উদ্ভট আর ফাজিল মার্কা কাজিনরা তোমাকে চেপে ধরবে তাদের পড়ে শোনাতে। তারা যে রোমান্টিক চিঠি আশা করছিল সেটার গুড়ে বালি দিতেই এই চিঠি। তাদের বলে দাও আজ তোমাকে চিঠি পড়ে শোনাতে ফোর্স করবার শাস্তি আগামীকাল পাবে। আর তোমার চিঠি জমা রাখা আছে, নো টেনশন।

তাসবিহুন আলা খায়ের।
তূর্য”

চিঠি দেখে সবার মুখ চুন হয়ে গেল। আর আলো হা হা করে হাসতে লাগল। বলল- একদম উচিত কাজ হয়েছে। এই না হলে আমার হিরো… সে গুনগুনিয়ে উঠল- “হিরো তু মেরা হিরো হ্যায়…” বাকিরা বলল- “ভিলেন য্যায়সা কাম না কার…” তারপর সবাই হাসতে লাগল।

ফারিয়া বলল- আপু, তূর্য ভাইয়া যেমন ছেলে… আগামীকাল ঠিক আমাদের শাস্তি দিয়ে বসবে! প্লিজ আপু কিছু করো?

-আমি কী করব? তোদের ঝামেলা তোরা সামলা।

-আপু… এমন করো না প্লিজ?

এই সময় বড় মামী এসে সরকার দলের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আড্ডায় মসগুল থাকা সকলকে ছত্রভঙ্গ করে দিল ধমক দিয়ে। সকাল সকাল উঠতে হবে, না ঘুমালে চলবে?

আলো তখন শুয়ে পড়ে ভাবতে লাগল তূর্য এটা কেন করল? শাড়ি দুটো তো তখনই নিতে পারত শুধু শুধু বাড়তি শাড়ি কেন কিনল? আর শাড়ি দুটো আজই কেন এভাবে দিতে হলো? নিশ্চই এর মধ্যে কিছু প্রশ্ন লুকিয়ে আছে! তূর্য সব কিছুতে একটা পাজল রাখতে পছন্দ করে এটাও তেমনই কিছু নিশ্চই। আলো অনেক ভেবে দেখল, তূর্য নিজের খুশির সাথে আলোর খুশিটাও দেখতে চাইছে।সেই সাথে এটাও চাইছে আলো কার পছন্দটা বেশি প্রাধান্য দেয়? কী করে সে দুজনের ভালোলাগার কম্বিনেশন করে? আলো সংকটে পড়ল… শাড়ি দেখে খুব খুশি হয়েছিল যে, বিয়েতে নিজের পছন্দেরটা পরবে কিন্তু এখানে তো এখন গিট্টু দেখা যাচ্ছে!

পরদিন বিয়েতে আলোর কাজিন আর বন্ধুদের তূর্য ভীষণ ভাবে নাজেহাল করল। তাদের প্রতিজ্ঞা করিয়ে ছেড়েছে আর কখনো আলোকে এভাবে পঁচাবে না। তবে যত যাই হোক সবাই খুব আনন্দ করেছে।

রাতে তূর্য তার ঘরে ঢুকে আলোকে বলল-

-বাতি নিভিয়ে দেই?

আলো মনে মনে বলল- ঘরে ঢুকেই বাতি নেভাতে চাইছে! ব্যাটার মতলব কী? তারপর একটু ভীত গলায় বলল- আপনার ঘরে আপনি অন্ধকারেও অভ্যস্ত কিন্তু আমি তো অভ্যস্ত নই!

আলোর গলার স্বর শুনে তূর্য মুচকি হেসে বলল- ডার্টি মাইন্ড, মনে মনে কী ভেবেছ সেটা আমি ঠিকই বুঝেছি।

আলো চোখ সরু করে বলল- বেশি বোঝা ভালো না। বেশি বুঝলে বেশি ভুল।

-ও তাই!

-হ্যাঁ তাই।

-ভুল দিয়েই শুরু করি তাহলে?

আলো আতংকিত গলায় বলল- মানে? কী শুরু করবেন?

-আবার?

-আপনিই আবার।

তূর্য হেসে বলল- আমার ঘরে তুমি অভ্যস্ত কিনা সেটা বিষয় না। বিষয় হলো, আমি বলতে চেয়েছি… তূর্য একটু এগিয়ে এলো তারপর মৃদু গলায় বলল- আমার ঘরে অলরেডি চাঁদের আলো হয়ে আলো বাসা বেঁধেছে। বাতি কেন জ্বালাব?

তূর্যর কথায় আলোর মুখে ভালো লাগার যে অনুভূতিটা দেখা গেল সেটা মুহূর্তেই সে চেপে গিয়ে বলল- সবই পয়সা বাঁচানোর জন্য ফ্লার্ট করা!

তূর্য চোখ বড় করে বলল- মাই গড তুমি এত আনরোমান্টিক!

“মোটেও না” বলে আলো তূর্যর আরও একটু কাছে এসে বলল- ভালোবাসেন?

তূর্য ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বলল- বোঝনা?

-উহু, বুঝি না।

তূর্য ওর হাত টেনে ধরে বলল- চলো… তূর্যর ঘরে বেশ বড় একটা বারান্দা আছে। যেটা ওর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। বারান্দাটা সে নিজের পছন্দে ইন্টেরিয়র করিয়ে নিয়েছে। তূর্য দুহাতে আলোর চোখ ধরে ওকে সেখানে নিয়ে গেল। একটা ছোট গোল সেন্টার টেবিলের পাশে দুটো চেয়ার পাতা রয়েছে। টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তূর্য হাত সরিয়ে নিতেই আলো দেখল টেবিলের উপর ৩টা গাছ। সে প্রায় চিৎকার করে বলল- এগুলো তো “don’t forget me” ফুলের গাছ!!!

-হুম, তুমি এটা খুঁজছিলে।

-হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কী করে জানেন?

-যাকে বউ বানাব তার পছন্দ অপছন্দের খোঁজ রাখব না? তোমার ইচ্ছে ছিল বিশেষ দিনে কেউ একজন তোমাকে এটা দিয়ে চিরদিনের জন্য মনে জায়গা করে নিক।

-হাউ কিউট!

-হুম জন্ম থেকেই।

-কবে থেকে আমাকে ফলো করে যাচ্ছেন?

-যবে থেকে তুমি দুকাপ চা নিয়ে ছাদে আসতে শুরু করেছ। আচ্ছা আমি তো পাবলিককে “Don’t forget me” গাছ দিয়ে চিরস্থায়ী হলাম কিন্তু পাবলিক আমার জন্য কী করল?

-পাবলিক কী করবে সেটা রাজপথে গিয়ে তাদেরকেই জিজ্ঞেস করুন। আমি তো এসব চিরস্থায়ী ব্যাপার স্যাপারে বিশ্বাসী নই।

-O wow! So… I have many other options?

আলো চোখ পাকিয়ে বলল- “many other options”! সোজা ট্রাকের নিচে ফেলে দিয়ে আসব।

তূর্য হাসতে হাসতে বলল- really?

-এখন কী ট্রাকের নিচে ফেলে দিয়ে প্রমাণ করব?

-না থাক, এত সিরিয়াস হবার দরকার নেই, I believe you. ও, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করা হয়নি।

-কী?

-আজ আমার পছন্দের শাড়িটা পরলে যে?

-আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন?

-বাহ্ ইন্টেলিজেন্ট গার্ল! তারপর আলোর দিকে ঝুকে বলল- আমার তো অনেক কিছুই চাইতে ইচ্ছে হয়। এই যেমন এই মুহূর্তে ইচ্ছে হচ্ছে…

-কী?

-তুমি আমাকে শক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরো।

আলো “ধ্যাৎ…” বলে মুখ নামিয়ে ফেলল। এরপরই খেয়াল করল টেবিলের উপর বেশ কিছু বই রাখা, সব কটা হুমায়ূন আহমেদের বই। গুনে দেখল ১২টা বই আছে। সে চাপা উত্তেজনা নিয়ে বলল- এত্তগুলা বই! এগুলোও কী আমার?

-হুম, আজকের দিনে আমার পছন্দ বুঝতে পরার জন্য।

তূর্যর প্রতি প্রচন্ড ভালো লাগা কাজ করতে লাগল আলোর। বলল- আপনি আর কী কী জানেন আমার পছন্দের?

-আছ যখন আস্তে আস্তে সবই বুঝতে পারবে। যেগুলো জানি না সেগুলোও জেনে ফেলব ইনশাআল্লাহ।

আলো যত তূর্যকে দেখছে তত অবাক হচ্ছে। ওকে দেখে বোঝার উপায়ই নেই যে ও কাউকে এত গভীরভাবে ভাবতে পারে। লাইফ পার্টনার হিসেবে তূর্য অবশ্যই তার জন্য উত্তম মনে হচ্ছে। প্রথম থেকেই দুজন দুজনকে বুঝতে পারছে এরচেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?

পরদিন সকালে ঘাড় ব্যথা নিয়ে আলোর যখন ঘুম ভাঙল। হঠাৎ ঘাড় ব্যথা কেন হলো সেটা ভাবতেই খেয়াল করল সে তূর্যর বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিল। বুঝতে পারল এইজন্যই বেকায়দায় ঘাড় ব্যথা হয়েছে! সে দ্রুত উঠে গেল। তূর্য তখন চোখ বন্ধ রেখেই বলল-

-এত তাড়াহুড়া করে উঠছ কেন? আমি কিছু টের পাইনি সেটা ভাবার কারণ নেই। তুমি চাইলে আরও কিছুক্ষণ ঘুমাতে পারো।

-আমার এত ঘুম নেই। সাড়ে ন’টা বাজে! অনেক বেলা হয়ে গেছে… কেউ যদি ডাকতে শুরু করে এখন?

-আমার বাড়ির লোক এত বেরসিক নয় যে ডেকে তুলবে। তূর্য এটা বলে শেষ করতেই দরজায় নক পড়ল। বাইরে থেকে ওর কোনো কাজিনের গলা পাওয়া গেল- “ভাইয়া তোমরা উঠেছ? মামী ডাকছে, নাশতা করবা না? ওঠো?”

আলো চাপা হাসিতে বলল- এবার বোঝা গেল?

-এটা আমার বাড়ির লোক না। গলা শুনলে না?

-সে যে-ই হোক উঠুন। আমি দরজা খুলছি… তূর্য সাথে সাথে আলোর হাত টেনে ধরে চেঁচিয়ে বলল- এই কে দরজা ধাক্কায়? কী চাই?

-ভাইয়া খোলো… নাশতা করবে না?

-বিয়ের পরে গরম গরম খাবার খাওয়ার নিয়ম নেই। খাবার ঠান্ডা হতে হতে যখন ফ্রিজ হয়ে যাবে তখন আসবি। এর আগে ডাকলে মেরে নাক ফাটিয়ে ফেলব। তারপর আলোকে কাছে টেনে নিয়ে বলল- আমার ঘুম শেষ না হওয়া অব্দি কোত্থাও যাওয়া চলবে না।

বেলা ১১টার দিকে ওরা নাশতার টেবিলে আসল। ওদের দেখেই সবাই মুখ চেপে হাসতে লাগল! এক ভাবি তো বলেই বসলেন- তোমাদের তো বিয়ে হওয়া উচিত ছিল ২২ডিসেম্বর, একটু আরাম করে ঘুমাতে পারতে। আর হলো কিনা এই জুন মাসে যখন রাত শুরু হতে হতেই শেষ হয়ে যায়! আহারে… বলে সে খুব দুঃখ সূচক শব্দ করতে লাগল। আলোর মনে হলো লজ্জায় সে মারা যাবে অথচ তূর্যর কোনো হেলদোল নেই! উল্টো সে বলল- ভাবি নেক্সট টাইম আর এই ভুল করো না, কেমন?

ভাবি মুচকি হেসে অবাক হবার ভান করে বলল- নেক্সট টাইম!!

আলো তখন আড়চোখে তূর্যকে চোখের আগুনে ভস্ম করে দিতে চাইল। তূর্য সেটা একবার দেখে বলল- হ্যাঁ ভাবি। একবার বিয়ে করে বিয়ের কিছু বোঝা যায় নাকি? কত কিছু শেখার আছে… তাছাড়া পুরুষ লোকের বিয়ে হবে ৪বার। একটাতে কী হয়?

ততক্ষণে আলোর মেজাজ প্লেট আর চামচের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে টকাস টকাস শব্দ করতে লাগল আর বাকিরা হেসে গড়িয়ে পড়তে লাগল। এমন সময় তূর্যর বাবা মোতাহার উদ্দিন ডাইনিং এর পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখলেন সবাই খুব হাসাহাসি করছে তিনি থেমে বললেন-

-কিরে খাওয়ার মাঝে এত হাসাহাসি কিসের? চুপ করে খাও সবাই। খাওয়াটা একটা ইবাদত সেটা ভুলে যাস না।

তূর্যর ভাবি তখন বলল- চাচাজান তূর্য বলছিল ৪টা বিয়ে করবে একটাতে নাকি কিছু বুঝতে পারছে না। পাত্রী দেখা শুরু করব নাকি আবার?

বাবার সামনে তূর্য কিছু বলবার সাহস পেল না। কিন্তু মোতাহার উদ্দিন হাসি চেপে বললেন-

-বিয়ে করেছ কয়েক ঘন্টা হয়েছে মাত্র এখনই এধরনের তামাশা কেন? আলো বেচারা তো মন খারাপ করবে। বলে তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন। ভাবি তখন বললেন-

-এই তূর্য তোর বাবার কী হয়েছেরে? আসার পর থেকে উনাকে কেমন যেন মনে হচ্ছে… ঠিক বোঝা যাচ্ছে না! কিছু একটা নিয়ে খুব টেনশন করছেন এটা বোঝা যাচ্ছে।

-মনেহয় অফিসের ঝামেলাটা নিয়ে টেনশন করছে। চিটাগং এর অফিসে একটু ঝামেলা হচ্ছে সেটা নিয়েই টেনশন যাচ্ছে একটু।

-ও…

রিসিপশনে আলো তার নিজের পছন্দের শাড়িতে সেজেছে। তূর্য অবাক হয়ে বলেছিল-

-মাই গড! আমার মাইন্ড পড়ছ নাকি?

আলো মুচকি হেসে বলল- পৃথিবীর সকল স্ত্রী তার হাজবেন্ডের মাইন্ড পড়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়।

-শীট… সবই আমাদের পাজরের বাঁকা হাড় দিয়ে তোমাদের তৈরি করার ফল! আর এইজন্যই সহ্য হোক বা না হোক ৪টা অনুমতি থাকার পরও একটা নিয়েই জীবন পার করতে হয়! আহারে পুরুষ…

-আসলে আল্লাহপাক জানেন, ষাঁড়ের মত ঘাড় ত্যাড়া পুরুষদের কন্ট্রোল করবার জন্য মেয়েদেরকে বাঁকা হাড় দিয়েই গড়তে হবে।

আলো আর তূর্য দুজনেই বুঝে গেছে তাদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা চমৎকার। তাই তাদের জীবনটা চমৎকার ভাবেই শুরু হলো। কিন্তু এই চমৎকার ভাবটা যে অতি ক্ষণকালীন সময়ের জন্য সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। তাদের বিয়ের কিছুদিন পরই ঘটে গেল ওদের জীবনের সবচেয়ে বড় অঘটন!!!