Tuesday, June 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 115



বিয়ে থা_২ পর্ব-২৩ এবং শেষ পর্ব

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-২৩ (শেষ পর্ব)
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

তখন শীতের প্রকোপে কাঁথার নিচ থেকে বের হওয়ার অবস্থা নেই। ডিসেম্বর মাস। আচমকা কি থেকে কি হলো ফারিন জানে না। নিজের কাঙ্ক্ষিত মানুষের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো তার। মনে তখন জমেছিল তীব্র অভিমান। প্রত্যাখ্যান করা পুরুষ তাকে বিয়ে করলো কেন সেটা সে জিজ্ঞেস করেছিল বাসর রাতে। নিরব নিতান্তই সহজ কন্ঠে বলেছিলো,

‘ আমি কখনো প্রেম করিনি, বা ইন্টারেস্ট পাইনি বলতে পারো। বিয়ে যদি করি তো করবো। এর আগে অনেক প্রপোজাল রিজেক্ট করেছি। আর সবার মতো তোমাকেও আমি রিজেক্ট করেছি। কজ আমার এসব করার টাইম নেই। আমি ব্যস্ত মানুষ, চাকরির বাহিরে পুরোটা সময় ফ্যামিলির জন্য বরাদ্দ রাখি৷ প্রেম করিনি মানে এই না যে আমি প্রেম করবো না৷ আমি সবসময়ই চেয়েছি যে আমার বউ হবে তার সাথেই প্রেম করবো। ধরো, আমি তোমার সাথে প্রেম করলাম। কিন্তু তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে না বলে আমাদের বিয়ে হলো না। তখন শুধু শুধু দুজনের চরিত্রে একটা দাগ লেগে যাবে না? তাছাড়া মানসিক কষ্ট তো আছেই। সেজন্য আমি সবমসময়ই সহজ পথ অবলম্বন করি। বিয়ের আগে তোমাকে আমি কোনো চোখেই দেখিনি। তবে বিয়ের পর তোমাকে আমি অবশ্যই প্রেম ও এক বুক ভালোবাসা নিয়ে দেখছি। আমার বুকে সবটুকু ভালোবাসা আমার স্ত্রীর জন্যই। ‘

ব্যস, ফারিনের অভিমান কোথায় যে পালিয়ে গেলো সে জানে না। শুধু জানে সে সেদিন নিরবের বুকে মাথা রেখে অনেক কেঁদেছিলো। শুদ্ধ পুরুষকে পেয়ে যাওয়ার আনন্দে তার শরীর কাঁপছিল।

তারপর চলে গেছে দুটো বছর। আজ বিয়ে বাড়ি জমজমাট। নায়ক আব্রাহাম খান নিজের সেই প্রেমিকাকে বিয়ে করবে৷

কমিউনিটি সেন্টারে বিশাল আয়োজন। মিডিয়া থেকে শুরু করে বহু মানুষের পা পড়েছে সেখানে। ফারিন আত্নীয় স্বজনদের সাথে কথা বলার ফাঁকে বার-বার গেইটের দিকে তাকাচ্ছে। নিরব এগিয়ে এসে বলল,

‘ কিছু খুঁজছো? ‘

‘ ভাইয়া এখনো আসছে না কেন? ‘

নিরব লম্বা শ্বাস ছাড়লো। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো ফারিনের উঁচু পেট। চেয়ারে বসিয়ে বলল,

‘ এসে পড়বে, তুমি বসে থাকো। আমি তোমার জন্য ঠান্ডা পানীয় নিয়ে আসছি কেমন? ‘

ফারিন মাথা নাড়ালো। নিরব চলে যেতেই কমিউনিটি সেন্টারের গেইট দিয়ে ঢুকলো একটি জীপগাড়ি। নেমে এলো নিনীকা ও ধ্রুব। ধ্রুবর কোলে মোমের মতো একটি রাজপুত্র। ফারিন মূলত সেই রাজপুত্রের জন্যই অপেক্ষা করছিলো।

অবিকল বাবার মতো চেহারা ও মায়ের মতো গায়ের রঙ পেয়েছে রাজপুত্রটা। নিনীকা ফারিনকে জড়িয়ে ধরলো। ধ্রুবর কোলে বসা রাজপুত্র তখন পিটপিট করে তাকিয়ে নিজের ফুপিকে দেখছে। ধ্রুব ছেলেকে বলল,

‘ দিব্য ফুপুকে হাই বলো বাবা। ‘

দিব্য তার আধো আধো স্বরে বলল,

‘ হাই ফু ফু..’

ফারিনের চোখ ছলছল করে উঠলো। হাত বাড়িয়ে নিতে চাইলো কোলে। নিনীকা আঁতকে উঠল,

‘ একদম না, তোমার পেটে আঘাত লাগবে। ও অনেক দুষ্ট। ‘

দিব্য নিজের নামে বদনাম শুনে রাগ করলো কি না বুঝা গেলো না। ধ্রুব ছেলে ও বউকে নিয়ে বাকিদের সাথে কথা বলতে গেলো। সিনেমাজগতের অনেকেই আজ উপস্থিত। সবাই নিনীকাকে পেয়ে আপ্লুত। ধ্রুব ফিসফিস করে বলল,

‘ দিব্য আমার কাছে থাকুক, তুমি আড্ডা দাও। ‘

নিনীকা হেসে মাথা নাড়ালো। ধ্রুব ছেলেকে নিয়ে এদিক সেদিক হাঁটছে। স্টেজে দেখা বউকে দেখে দিব্য জিজ্ঞেস করলো,

‘ বুউ পাপা? বুউ? ‘

ধ্রুব হেসে বলল,

‘ বউ বাবা তোমার আব্রাহাম আঙ্কেলের বউ। ‘

দিব্য হাত তালি দিলো। বর সাজা আব্রাহাম দিব্যকে টেনে নিলো কোলে। নিজেদের মাঝখানে বসিয়ে দিতেই দিব্য বাবার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আব্রাহাম মুখ গোমড়া করে বলল,

‘ একটু বসো দিব্য বাবু, কয়েকটা ফটো তুলে নেই কেমন? ‘

দিব্য বসতে নারাজ। সে হাত বাড়িয়ে আছে তখনো। ধ্রুব হেসে এক পাশে সরে দাড়িয়েছে। দিব্য রেগে গেলো। ছোট্ট গলার স্বরে চিৎকার করলো মা.. বলে। নিনীকা তৎক্ষনাৎ ছুটে এলো। দিব্যর চেহারা কাঁদোকাঁদো প্রায়। মাকে দেখে হামলে পড়লে বুকে। ঠোঁট ফুলিয়ে বাবাকে দেখিয়ে বলল সে বাবার উপর রাগ করেছে। নিনীকা মিথ্যা চোখ রাঙালো। ধ্রুবকে বলল,

‘ তোমাকে মা*রবো।

ধ্রুব হাত বাড়ালো। দিব্য মুখ ঘুরিয়ে নিলো। অর্থাৎ সে যাবে না। নিনীকা হেঁসে ফেললো।

‘ কেন একা বসিয়ে ছিলে? তুমি কোল থেকে নামালেই ও রাগ করবে জানো না? ‘

ধ্রুব টেনেটুনে ছেলেকে কোলে নিলো। দিব্য গাল ফুলিয়ে তখনো মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। ধ্রুব মুখে আদর দিলো। আহ্লাদ নিয়ে কথা বললো। দিব্য একসময় হেঁসে ফেলেছে। ধ্রুব নিনীকাকে নিচু স্বরে বলল,

‘ তোমার ছেলে তোমার মতোই অভিমান করে মিসেস। ‘

নিনীকা নাক ফুলিয়ে বলল,

‘ আর তোমার মতো যে রাগ করে সেটা? ‘

ধ্রুব ঠোঁট চেপে হেসে ফেললো।

‘ তোমার মতো জেদি ও। ‘

‘ তোমার মতো গোমড়ামুখো। ‘

ধ্রুব শব্দ করে হাসলো। দিব্য মা বাবাকে দেখছে। নিনীকা ছেলেকে দেখিয়ে বলল,

‘ দেখো কিভাবে মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে। ‘

দিব্য তখনই হাত বাড়ালো। নিনীকা কোলে নিলো না। চেয়ারে বসে বলল,

‘ বাবার কোলে থাকো। মা শাড়ি পড়েছি তোমার শরীরে ঘষা লাগলে সমস্যা হবে সোনা। ‘

দিব্য মানতে নারাজ। সে মায়ের কোলে যাবেই। নিনীকা নিজের শাড়ি দেখালো। ধ্রুবকে বলল,

‘ ওকে নিয়ে আশেপাশে হাটাহাটি করো তো, দেখো শাড়িতে ওর সমস্যা হবে না? ‘

ধ্রুব পড়লো মহা বিপদে। দিব্য নাছোড়বান্দার মতো তাকিয়ে আছে। ধ্রুব এক পা বাড়ালেই সে চিৎকার করে কেঁদে উঠবে। সে মায়ের কোলে যাবেই যাবে। ধ্রুব অগত্যা নিনীকার পাশে বসলো। নিজের কোলে রেখেই বলল,

‘ নাও তোমার মায়ের পাশে বসেছি। ‘

দিব্য নরম আদুরে দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে আছে। নিনীকা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,

‘ আমি কিন্তু কেঁদে ফেললো ধ্রুব। ও এভাবে তাকালে আমি ফিরাবো কিভাবে? ‘

ধ্রুব দিব্যকে তুলে নিনীকার কোলে দাঁড় করিয়ে দিলো। ধরে রেখেই বলল,

‘ হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরো। তবে চেপে নয় তাহলে ঘষা লাগবে না। আমি ধরে রেখেছি ওকে? ‘

দিব্য নিজের মুখের লালা লাগিয়ে দিলো গালে। নিনীকার মেক-আপ ওয়াটারপ্রুফ হওয়ায় সমস্যা হলো না। ছেলেকে আদর দিয়ে ফিরিয়ে দিলো। দিব্য আবারও মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে।

খাবার টেবিল থেকে বর কনে বসা স্টেজ সোজাসুজি। দিব্যকে টেবিলের উপরে বসিয়ে দিলো ধ্রুব। নিনীকার ছেলের কোমড়ে হাত জড়িয়ে রেখেছে। বর কনে কে দেখিয়ে বলল,

‘ দেখো বাবা সুন্দর না? ‘

দিব্য মাথা নাড়ালো,

‘ বুউ? ‘

ধ্রুব হেসে বলল,

‘ বউ, তোমার আব্রাহাম আঙ্কেলের বউ। ‘

দিব্য জোরে বলল,

‘ বুউ…’

নিনীকা ধ্রুবকে চোখ রাঙিয়ে বলল,

‘ হ্যাঁ সোনা বুউ। পাশেরটা বর। ‘

‘ বুর? ‘

ধ্রুব শুধরে দিলো,

‘বর ‘

দিব্য এবার চিৎকার করে কেঁদে ফেললো। ধ্রুবকে দেখিয়ে মারতে বললো। নিনীকা ঠা*স করে কাঁধে থাপ্পড় দিলো।

‘ দেখো তোমার বাবাকে শাস্তি দিয়েছি। ‘

দিব্যর ঠোঁটে হাসি। ধ্রুব নাক ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা দিব্যর ভালো লাগলো না। ডাকলো,

‘ বাবা…’

ধ্রুব তাকাতেই সে ছোট ছোট দাঁত দেখিয়ে হাসলো। ধ্রুব জাপ্টে ধরলো। নাক ঘষে বলল,

‘ দিব্য কি বর বউ দেখবে? ‘

দিব্য মাথা কাত করে সায় জানালো। ধ্রুব আলগোছে এক হাত দিয়ে চেপে ধরলো নিনীকার কোমড়। ছেলের উদ্দেশ্যে বলল,

‘ তোমার মা বউ, আমি বর৷ ‘

দিব্য হাত তালি দিলো,

‘ মা বুউ, বাবা বুর ‘

নিনীকা কিশোরীদের মতো খিলখিল করে হাসলো। ধ্রুব কানের কাছে মুখ নিয়ে নিচু কন্ঠে বলল,

‘ তুমি বউ, আমি তোমার বর মাই লাভলি মিসেস।’

(সমাপ্ত )

বিয়ে থা সিজন-০১ পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন

বিয়ে থা_২ পর্ব-২২

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-২২
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

তখন গোধূলি বিকেল। বউ কথা কও বাড়িটির ড্রয়িংরুমে সবাই গোল হয়ে বসে আছে। মধ্যমণি হলো ফারিন। একটু আগেই এডমিশনের রেজাল্ট পাবলিশ হয়েছে। আলোচনার বিষয় সেটাই।

বিয়ের কয়েকমাস হয়ে গেছে। ধ্রুব ঢাকাতেই টান্সফার হয়েছে। তবে বর্তমানে সে একটি মিশনের কাজে দেশের বাহিরে অবস্থান করছে। কয়েকমাস আগে ফারিনের বার্থডের দিন ধারা পইপই করে বলেছেন ভালো ভার্সিটিতে যাতে চান্স হয়, নাহলে ফারিনের কপালে দুঃখ আছে। হুমকিটি দেবার কারণ আছে অবশ্য, ফারিনের পরিবর্তন হয়েছে। চোখের নিচের কালো দাগই তার প্রমাণ। গুলোমোলো মেয়েটি শুকিয়ে গেছে অনেক৷ ধারা মেয়ের পরিবর্তন লক্ষ করে বুঝেছেন শুধু এডমিশনের চিন্তা নয় আরও কিছু একটার চিন্তা ফারিনের মনে রয়েছে। নাহলে তার নাদুসনুদুস বাচ্চাটার এমন হাল হওয়ার কোনো মানেই হয়না। ধ্রুবর মতো ফারিন ও পড়াশোনাতে অনেক ভালো। কিন্তু সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে সেই ফারিন পাবলিকে চান্স পেলো না। দুঃখে নয় মেয়ের চিন্তায় ধারা আজকের এই মিটিং বসিয়েছেন।

ফারিন চুপচাপ সবার মাঝে বসে আছে। ফাহিম মাহবুব গলা পরিষ্কার করে বললেন,

‘ সবসময়ই তোমার বন্ধু হতে চেষ্টা করেছি, তুমি যদি নিজের সমস্যাটা খুলে না বলো তবে সমাধান হবে কিভাবে মা? ‘

ধারা বুকে আগলে নিলেন।

‘ তুই নির্ভয়ে সব বলতে পারিস। আমরা তো তেমন মা বাবা নই যে সন্তানকে বুঝবো না। বলো না মা, কি হয়েছে তোর? ‘

এ পর্যায়ে কথা বললো নিনীকা।

‘ তোমার ভাইয়া ফোন করেই তোমার কথা জিজ্ঞেস করেন। তুমি যে ভালো নেই সেটা বাতাসের সাথে ছড়িয়ে যাচ্ছে। তবুও কি চুপ করে থাকবে? ‘

ফারিন আহ্লাদে, অভিমানে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। ফাহিম মাহবুবকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ বাবা ক্যাপ্টেন নিরব আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে৷ ‘

ফাহিম মাহবুব অবাক হয়ে গেলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

‘ তুমি তাকে অনুভূতি জানিয়েছিলে? মাই গড! ‘

ধারা কটমট চোখে বাপ মেয়েকে দেখছেন।

‘ এটা তবে তোমার মেয়ের প্রেমের কাহিনি! আমি আরও কতো কি ভেবে দিশেহারা হয়েছি। যেমন বাপ তেমন মেয়ে। দুজনেই সারাজীবন জ্বা*লিয়ে মা*রলে। ‘

ফাহিম মাহবুব ধমক দিতে গিয়ে ও দিলেন না। ফারিনকে কান্না থামিয়ে শান্ত হয়ে বসতে বললেন। ফারিন শান্ত হয়ে বলতে শুরু করলো কয়েকমাস আগের ঘটনা।

‘ ভাইয়ার থেকে ক্যাপ্টেন নিরবের নাম্বার নিয়েছিলাম আমি। তাকে ফোনও করেছি। দুই এক দিন বন্ধ পাওয়ার পর একদিন ফোন ঢুকে। তিনি রিসিভ করেন। আমি নিজের পরিচয় দেওয়ার পর কেন ফোন করেছি কারণ জানতে চান। আমি তাকে নিজের অনুভূতি জানালে তিনি আমাকে মুখের উপর প্রত্যাখান করেন বাবা! ‘

ফারিনের কষ্টে ঠোঁট ফুলে যাচ্ছে। ফাহিম মাহবুবের বুক হাহাকার করলো।

‘ তোমাকে বলেছিলাম বাবাকে তোমার অনুভূতি জানাতে মাই চাইল্ড। বাকিটা না-হয় আমরা বড়োরা পারিবারিক ভাবে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করতাম! হুট করে কেউ তো কাউকে পছন্দ করতে পারবে না! তুমি নিরবকে পছন্দ করো, কারণ তুমি তার মধ্যে পছন্দ করার মতো কিছু পেয়েছো। নিরব তোমাকে চিনেই না ভালো করে। সেখানে সে তোমাকে প্রত্যাখ্যান করবে সেটা স্বাভাবিক বিষয়। এর জন্য কেঁদেকেটে নিজের এমন হাল করতে হবে কেন? এডমিশন দিলে কষ্ট করে অথচ কষ্টের ফল পেলে না! ‘

ফারিন কানে কানে ধারাকে লুকিয়ে বলল,

‘ আমি পরীক্ষার হলে গিয়ে সব ভুলে গেছিলাম বাবা। কিন্তু বিশ্বাস করো সব কমন পড়েছিলো, সেটা আমার টাইম শেষ হওয়ার পর মনে পড়েছে। ‘

ফাহিম মাহবুব অবাক হচ্ছেন শুধু। ভাবলেন এ বিষয়ে শীগ্রই কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। তার আহ্লাদী মেয়ে টা কষ্ট সহ্য করতে পারে না। এই কয়েকমাস যে মনে মনে এতোসব পুষে রেখেছে সেটা ভেবেই তিনি বিস্মিত হচ্ছেন।

‘ তোমার মেয়েকে পাইভেটে ভর্তি করে এসো যাও। পড়াশোনা তো আকাশে তুলে বসে আছে। ‘

ধারা রাগ দেখিয়ে উঠে গেলেন। ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

‘ আমি সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিবো বাবা? ‘

ফাহিম মাহবুব দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেন।

‘ দরকার নেই মা, পাইভেটে পড়তে তো আপত্তি নেই তোমার? তবে এক বছর নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। তাছাড়া ক্যাপ্টেন সাহেবকে বিয়ে করতে তাড়াতাড়ি বড়ো হতে হবে না? ‘

ফারিনের চোখমুখ উজ্জ্বল হলো। নিনীকা হেসে ফেললো। তার শ্বশুর বাড়ির সবাই এতো চমৎকার!

রুমে এসে নিনীকা ধ্রুবর নাম্বারে ডায়াল করলো। না বন্ধ দেখাচ্ছে। ধ্রুব নিজ থেকে ফোন না দিলে নাম্বার টা সারাক্ষণ বন্ধই থাকে। নিনীকা রুমের ডিভানে পা ছড়িয়ে বসলো৷ কতোমাস হলো মানুষটাকে সে দেখে না৷ নিনীকা এখন সাংসারিক হয়ে গেছে। বিয়ের আগের রাতের মিটিং টা ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ধ্রুবসহ সবাইকে সেটা জানানো ও হয়েছে। বিয়ের পর নিনীকা স্যাোশালে স্ট্যাটাস ও দিয়েছে এ বিষয়ে। সে সিনেমাজগত থেকে সরে এসেছে। এসবের প্রতি তার আর কোনো টান নেই। ধ্রুব যখন জেনেছিল তখন বুঝিয়ে বলেছিল নিনীকা চাইলে নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করতে পারবে। ধ্রুব কোনো বাঁধা দিবে না। কিন্তু নিনীকার মন মানতে নারাজ৷ সিনেমাকে সে কখনো লাইফ বানায়নি। শখ শেষ হয়ে গেছে। তার এখন শখ সংসার করা৷ সে মনপ্রাণ দিয়ে সেটাই করছে। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হয়েছে। এখনো হয়। অনেক সিনেমার অফার আসে।

নিনীকা সংসার করার ফাঁকে শেখ বাড়ির বিজনেসটা ও দেখছে। পুরোদমে সে অফিস করছে না৷ তবে মাঝে মধ্যে রমজান শেখ তাকে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে উপস্থিত করান।

বিয়ের আগের নিনীকা ও পরের নিনীকার মধ্যে এই হলো তফাত।

নিনীকা আলমিরা থেকে ধ্রুবর শার্ট বের করলো। শরীরে জড়িয়ে নাক টেনে গন্ধ নিলো। সে সবকিছুতে ধ্রুবর অভাববোধ করছে। মানুষটাকে মারাত্মক ভাবে মিস করছে। কবে দেশে ফিরবে সেটা অজানা। মিশন শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় বলেনি ধ্রুব। তবে মানুষ টা যে বেশ পরিশ্রমী ও সাহসী সেটা মানতে হবে। মিশনে যাওয়ার পর একবারই ভিডিও কলে দেখেছে নিনীকা। তারপর আর দেখেনি। মানুষ টা কি প্রতিদিন একবার করে ভিডিও কল করতে পারে না? এইযে নিনীকার চাতক পাখির মতো পথ চেয়ে থাকে, সেটা কি মানুষটার অজানা?

উঁহু মানুষ টা সব বুঝে। নিনীকাকে আগাগোড়া বুঝার ক্ষমতা স্বামী নামক মানুষ টা কিভাবে যেনো আয়ত্ত করে ফেলেছে। কিছু লোকাতে চাইলেও নিনীকা ধরা পড়ে যায়।

দুদিন আগের ঘটনা। নিনীকা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছে। কপালের সাইডে একটু লেগেছিলো তার। ধ্রুবর থেকে লুকাতে চেষ্টা করতে গিয়ে পড়েছিল বিপদে। নির্লজ্জ লোক বলেছিলো,

‘ হিসেব অনুযায়ী আমি তো কয়েকমাস হলো তোমার কাছে নেই। মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার রিজন তবে কি হতে পারে? ‘

নিনীকা লুকিয়ে না রেখে শেষমেশ বলেছিলো প্রেশার লো হয়ে যাওয়ার কথা। ফারিনকে নিয়ে বাহিরের ছোট ফুচকা খাওয়ার পর থেকেই তার কেমন একটা লাগছিলো। হয়তো ওগুলো ভালো ছিলো না। ধ্রুব সব শুনে শাসনের স্বরে বলেছে,

‘ ফুচকা খেতে হলে রেস্টুরেন্টে যাবে, নয়তো বাড়িতে বানিয়ে খাবে। খবরদার রাস্তাঘাটের খোলা খাবার খাবে না! আমি যদি এসে আমার সুস্থ স্বাভাবিক বউকে ফিরে না পাই তবে তোমাকে শাস্তি দিবো। ‘

নিনীকার ঠোঁটে হাসি। ধ্রুবকে মনে করে মিটিমিটি হাসছে সে। তখনই রুমে ঢুকলো ফারিন। নিনীকাকে হাসতে দেখে বলল,

‘ ভাইয়াকে মনে করে হাসছো নাকি ভাবী? ‘

নিনীকা আগের থেকে গুলোমোলো হয়েছে। গাল দুটোয় গোলাপি আভা থাকে সারাক্ষণ। লজ্জা পেলে তা যেনো আরও স্পষ্ট হয়। ফারিন ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

‘ আমি তবে সত্যি বলেছি, তুমি ভাইয়াকেই ভাবছিলে! ‘

ধরা পড়ে নিনীকা লজ্জা ভুলে হেঁসে ফেললো৷ চোখের সামনে ভেসে উঠলো ধ্রুবর চমৎকার হাসিখুশি মুখশ্রী।

(চলবে)

বিয়ে থা_২ পর্ব-২১

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-২১
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

নিনীকা খেয়াল করে দেখলো তাদের বিয়ের দিন সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টির শুরু হয়েছে। একটু বন্ধ থাকে তো একটু ঝরে। সকালে না হলেও বিকালে হবেই। সারাক্ষণই আকাশে কালো মেঘ থাকে৷ ধ্রুবর সাথে তার সাময়িক বিচ্ছেদ টাও বৃষ্টির কারণেই হলো মনে হয়। নিনীকা ধ্রুবর অপেক্ষায় না বারান্দায় বৃষ্টিতে ভিজতো আর না মনে অভিমান জন্ম নিতো। ক্লান্তিতে সে যদি ঘুমিয়ে পড়তো তবে হয়তো এরকমটা হতো না।

নিনীকা চুল বেঁধে শাড়ির আঁচল ঠিক করে উঠে দাড়ালো। চোখ ফেললো বিছানায়। তার স্বামী মহাশয় কপালে হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে কি না বুঝা যাচ্ছে না। হতে পারে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।

তখন সবাই খাবার টেবিলে নাস্তা করে ধ্রুবকে নিয়ে কথা বলছিলো। নিনীকা আফসোসে ভেসে যাচ্ছিল। ঠিক সে সময়ই ধ্রুব ব্যাগ হাতে বাড়িতে ঢুকে। হুট করে ধ্রুবকে দেখে নিনীকার কি হয়েছিল জানে না, সে সামনে গিয়ে দাড়িয়ে অবাক নাকি খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো,

‘ আপনি সত্যিই এসেছেন? ‘

ধারা পেছন থেকে জিজ্ঞেস করেছেন,

‘ তুই না চলে গেছিলি? ‘

‘ ক্যান্সেল হয়ে গেছে। ‘

বলেই রুমে চলে গেছিলো। নিনীকা সেই থেকে রুমে বসে আছে। মানুষটা ইউনিফর্ম ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। একটা বার নিনীকাকে কিছু জিজ্ঞেস ও করলো না।

নিনীকা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ধ্রুবর কোমড়ের কাছে বসলো। মাথা রাখলো পেটে৷ হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রইলো। ধ্রুবর কোনো হেলদোল নেই। যেনো এটা স্বাভাবিক বিষয় বা নিত্যদিনের ঘটনা।

নিনীকা মুখ তুলে অসহায় চোখে তাকালো। মানুষ টা না তাকিয়েছে আর না হাত টা কপাল থেকে সরিয়েছে। তবে কি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছে?

নিনীকা যে মুখে এতোকিছু বলতে পারে না। এই যে তার ইচ্ছে করছে পাগলের মতো মানুষটার বুকে আছড়ে পড়তে। নিজের অনুভূতি জানিয়ে আবেগে কেঁদে ফেললে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে? ধ্রুব কি নিনীকার অনুভূতিকে দাম দিবো?

নিনীকা নিজেকে শাসালো৷ অবশ্যই দাম দিবে। মানুষটা তো সেটাই চায়। নিনীকা কিছু বলুক। স্বীকার করুক। কিন্তু নিনীকা পারে না কেন? অনুভূতি প্রকাশ মরে যাওয়ার মতো কঠিন লাগে কেন? কল্পনা করলেই তার শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যায়। নিজেকে হাঁপানির রোগী মনে হয়।

নিনীকা নিজেকে লাল রঙের একটি শাড়িতে জড়িয়েছে। উদ্দেশ্য যেহেতু স্বামীর মান ভাঙানো তবে চেষ্টা তো করতেই হবে। আর সংকোচ নয়। নিনীকা সাহস সঞ্চয় করে বিছানার আরেক পাশে উঠে পড়লো। গলা পরিষ্কার করে ও ধ্রুবর সাড়া পেলো না। কপালের হাত সরিয়ে দিলো সে। ধ্রুব ফট চোখ মেলে তাকিয়েছে। নিনীকা ঝড়ের গতিতে জড়িয়ে ধরলো। মুখ লুকিয়ে ফেললো কাঁধে। নিজের অস্তিত্বের ভার ধ্রুবর শরীরে দিয়ে আষ্ঠেপৃষ্ঠে ধরে রাখলো। যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে৷ অপেক্ষা করলো ধ্রুবর সাড়া পাওয়ার। অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও ধ্রুবর গলা শুনতে পাওয়া গেলো না। নিনীকা মুখ তুলে দেখলো ধ্রুব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নির্বিকার মুখভঙ্গি তার। নিনীকা মনে মনে আহত হলো। কিন্তু তা পাত্তা দিলো না। মানুষটার অভিমান ভাঙিয়েই ছাড়বে সে।

‘ আমার সাথে কথা বলবেন না মেজর? ‘

কোনো উত্তর নেই। নিনীকার হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। জীবনে কখনো সে কারো কাছে এতো আকুলতা প্রকাশ করেনি। তার মন কখনো এতো ব্যাকুল হয়নি কারো জন্য।

‘ কিছু তো একটা বলুন। আমি আপনার কথা শুনতে চাইছি ধ্রুব৷ ‘

নিনীকা বরাবরই নিজেকে ভীষণ ধৈর্যশীল মেয়ে হিসেবে জেনে এসেছে। আজ এই মুহুর্তে নিজের ধৈর্য নিয়ে তার সন্দেহ হলো। দু’হাতে আগলে ধরলো ধ্রুবর মুখ। চোখে চোখ রেখেছে অথচ কোনো কথা না বলে পাথরের মতো চেয়ে আছে। এ কেমন শাস্তি?

‘ আজ বউ নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার কথা আপনার৷ যাবেন না? ‘

ব্যস নিনীকার আর ধৈর্য নেই। কপাল, গালে ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো। সে দেখবে মানুষটা কতক্ষণ নিজেকে ঠিক রাখতে পারে।

ধ্রুবর জেদ আছে বলতে হবে। নিনীকাকে কাঁদিয়ে ছাড়লো। বেচারি পাশ ফিরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। এ কেমন স্বামী তার? বউয়ের চুমুতেও বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করলো না। যেনো এটা স্বাভাবিক বিষয়। নিনীকা একশোটা চুমু খেয়ে ফেললেও তাকিয়ে থাকা নিয়ম।

ধ্রুব চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আচমকা নিনীকা আক্রমণ করলো ধ্রুবর উপর। ধ্রুবর পড়োনের শার্ট ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে দিলো মেঝেতে। বুকের উপর পা ছড়িয়ে বসে রইলো নির্বিকার ভাবে। ধ্রুবর বুকে তোলপাড় চলছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ঠিক থাকতে। নরম হওয়া যাবে না।

শাড়ির আঁচল টা গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে। নিনীকা মুখ এগিয়ে আনলো। চোখে চোখ রেখে স্বগতোক্তি করলো,

‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি ধ্রুব। ‘

কিছু টা লজ্জা, কিছু টা অস্বস্তি নিয়ে নিনীকা মুখ লোকালো বুকে। অনুভব করলো এক জোড়া হাত তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। কানে ভেসে এলো ধ্রুবর বলা সম্মোধন-

‘ আমার আদুরে মিসেস। ‘

দুপুর বেলা গোসল করে তৈরি হতে লাগলো নিনীকা। কানে ইয়ার রিং পড়তে পড়তে দেখলো মানুষটা মেঝেতে পুশআপ দিচ্ছে। উন্মুক্ত শরীর ঘামে ভিজে একাকার। শরীরে নিনীকার দেওয়া বিশেষ মুহূর্তের চিহ্ন৷ নিনীকার শরীর গরম হয়ে গেলো লজ্জায়৷ ঠোঁট চেপে আস্তে করে বলল,

‘ জলদি গোসল করে আসুন তো। ‘

কথাটা কানে যেতেই ধ্রুব উঠে দাড়ালো৷ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি ঠেকালো। নিনীকা তখন হাতে চুড়ি পড়ছে। ধ্রুব কেঁড়ে নিলো সেগুলো। নিজ হাতে পড়িয়ে দিয়ে আয়নায় চোখে চোখ রাখলো। নিনীকা ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ যান তো তাড়াতাড়ি, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। ‘

ধ্রুব গেলো না। ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,

‘ আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। চলো আবার শুরু করি? ‘

নিনীকার সাদা মুখটায় লাল আভার ছড়াছড়ি। ঠুকা দিলেই রক্ত বের হয়ে যাবে যেনো। ধ্রুব আলতো করে ঠুকা দিলো রক্তজবার মতো ঠোঁটে। নিনীকা আর্তনাদ করে উঠলো।

‘ এমনি জ্বলছে, আপনি আরও ব্যথা বাড়াচ্ছেন। ‘

ধ্রুব যেনো আজ প্রতিজ্ঞা করেছে কোথাও যাবে না। নাছোড়বান্দার মতো নিনীকাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে টেনে নিয়ে গেলো বিছানায়৷ ফিসফিস করে বলল,

‘ আজ আমাদের কোথাও যাওয়া হচ্ছে না মিসেস। ‘

সেদিন বিকেলে খুব জোরে বৃষ্টি নামলো। হালকা ঠান্ডা অনুভব হতেই নিনীকা আরও ঢুকে যেতে চাইলো বুকে। ধ্রুব কাঁথায় মুড়িয়ে ফেললো দুজনকে। ঘুমিয়ে পড়লো এক সমুদ্র প্রেম ও প্রেয়সীকে বুকে নিয়ে।

*

সন্ধ্যাবেলায় ফারিন অদ্ভুত একটি কাজ করলো। ধ্রুবর কাছ থেকে নেওয়া নিরবের নাম্বারে ডায়াল করে ফেললো। কিন্তু তাকে আশাহত করে নাম্বার বন্ধ দেখালো। ফারিন নিজেকে সান্তনা দিলো, হয়তো কাজে থাকার কারণে মোবাইল অফ করে রেখেছে।

রাতে খাওয়ার টেবিলে বসে ফারিনের গলা দিয়ে খাবার ঢুকছিল না। প্যাকেট হয়ে যাওয়া নিনীকা সেটা খেয়াল করে বলল,

‘ তোমার কি মন খারাপ? ‘

ফারিনের মন জোড়ে বিষন্নতা। তার সত্যিই যে সর্বনাশ হয়ে গেছে সে বুঝতে পেরেছে। বাবাকে বলতে হবে কিছু একটা করতে। ভাবনা চিন্তা সাইডে রেখে সে জিজ্ঞেস করলো,

‘ তোমার কি বেশি-ই ঠান্ডা লাগছে ভাবী? একেবারে তো প্যাকেট হয়ে গেছো! কয়টা হুডি জড়িয়েছো বলো তো? ‘

নিনীকা অপ্রস্তুত হলো। তখনই ধ্রুব টেবিল কাঁপিয়ে হাঁচি দিলো। ব্যস লজ্জায় নিনীকার মুখ নিচু হয়ে গেলো। ধ্রুব দাঁত বের করে ফারিনের ওড়নায় নাক মুছে বলল,

‘ তোর ভাবী সন্ধ্যায় বৃষ্টিতে ভিজেছে, ওকে থামাতে গিয়ে আমাকেও ভিজতে হয়েছে৷ ‘

ডাহা মিথ্যা কথা। নিজেই জোর করে বারান্দায় নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজিয়েছে। বলেছে,

‘ রোমান্টিক ওয়েদারে রোমান্টিক বৃষ্টিতে না ভিজলে নিজেদের রোমান্টিক কাপল বলতে পারবো না। ‘

(চলবে)

বিয়ে থা_২ পর্ব-২০

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-২০
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

সারাদিন পর শরীরে ক্লান্তি ভর করেছে। ঝিমুনি ভাব চলে এসেছে। নিনীকা ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো। ধ্রুবর দেখা নেই। ফ্রেশ হয়ে কোথাও একটা চলে গেছে। বাহিরের অন্ধকার জানান দিচ্ছে রাত গভীর হচ্ছে। মানুষটা এখনো আসছে না কেন?

নিনীকার অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হলো। ঘড়ির টাইম রাত এগারোটায় গিয়েছে৷ ধরনী সাদা হয়ে আবার কালো হয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড ঝড় উঠেছে। নিনীকার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় দাড়ালো। টিপটপ করে পানি পড়ছে। ভিজিয়ে দিচ্ছে নিনীকার পড়োনের শুভ্র রঙের ওয়েস্টার্ন গাউনটা। উন্মুক্ত পায়ে বৃষ্টির পানি পড়তেই শরীর শিরশির করে উঠলো৷ নিনীকা হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁতে চাইলো। মুখশ্রী উঁচু করে দিলো। থুতনি বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে গলায়। শুভ্র রঙের পাতলা গাউনটা ভিজে দেহের সাথে মিশে গেছে৷ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দেহের প্রতিটি ভাজ। নিনীকার ভেজা চোখ গেলো গেইটের দিকে। জীপগাড়িটি প্রবেশ করছে। নিনীকা চোখ সরিয়ে নিলো। কোথাও একটা অভিমান চাপা পড়ে গেলো।

দ্রুত পায়ে বাড়িতে ঢুকলো ধ্রুব। শরীর ভিজে গেছে। ভেজা চুল কপালে লেপ্টে রয়েছে। নিজের রুমে প্রবেশ করতেই শূন্যতা অনুভব করলো। রুমের রানীর অনুপস্থিতি মনে ধাক্কা দিলো।

ধ্রুব ওয়াশরুম চেক করে দ্রুত পায়ে বারান্দায় এলো। অন্ধকার বারান্দার এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো কাউকে। অস্থির মন নিয়ে এগিয়ে গেলো। জড়িয়ে ফেললো নিজের সাথে।

নিনীকার নরম মোমের মতো শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে। শরীরে তীব্র কাঁপুনি। ধ্রুবর বুক কেঁপে উঠলো। গালে হাত ডুবিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ ভিজেছো কেন? ‘

নিনীকা উত্তর দিলো না। ধ্রুব অপেক্ষা না করে কাঁধে তুলে নিলো। ছেড়ে দিলো ওয়াশরুমে। আলমিরা থেকে কাপড় বের করে এগিয়ে দিলো।

‘ জলদি চেঞ্জ করে আসো। ‘

নিনীকা নড়লো না, আর না হাতে কাপড় নিলো। ধ্রুব নিরব অভিমানীকে দেখলো।

‘ হঠাৎ কাজ পড়ে গেছিলো, এতো দেরি হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। আমি দুঃখীত মিসেস। ‘

নিনীকা কোনো উত্তর দিলো না। ধ্রুব অসহায় চোখে তাকাতেই থমকে গেলো। এতোক্ষণ খেয়াল করা হয়নি। নিনীকার পড়োনের ওয়েস্টার্ন গাউনটা তার নজর কেঁড়ে নিলো। বুঝে ফেললো সব কিছু। হাতের কাপড় ছুঁড়ে ফেললো এক কোণে। নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

‘ মিসেসের অভিমান কিভাবে কমবে? ‘

নিনীকা নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। ধ্রুব সর্বশক্তিতে নিজের সাথে চেপে ধরলো।

‘ তাকাবে না? ও মিসেস…? ‘

নিনীকা তাকালো। তীব্র গতিতে টানলো ধ্রুবর শার্ট। ধ্রুব তড়িঘড়ি করে নিজের শার্ট খুললো। বুকে দাঁত বসিয়ে থেমে থাকলো না নিনীকা৷ রক্ত বের করে তবেই ছাড়লো। ঠাস করে বন্ধ করলো ওয়াশরুমের দরজা। ধ্রুব বুকে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে এখনো হা করে তাকিয়ে আছে৷

নিনীকা চেঞ্জ করে শুভ্র রঙের টাওয়াল পড়ে বের হলো। হতভম্ব ধ্রুবকে পাশ কাটিয়ে ঢুকলো রুমে।

ধ্রুব চেঞ্জ করে ঢিলেঢালা টাইজার পড়ে বেরিয়ে এলো। বুকের যে পাশে নিনীকা দাঁত বসিয়েছে সেখানে একটা হাত চেপে ধরে রাখা। ধ্রুব বিছানায় এসে দেখলো নিনীকা অলরেডি কাঁথা মুড়ি দিয়ে ফেলেছে। হাত বাড়িয়ে কাঁধ স্পর্শ করলো।

‘ আমি জানি তুমি ঘুমিয়ে পড়োনি। ‘

জবাব এলো না। ধ্রুব আর্তনাদ করে বলল,

‘ অনেক বেশিই যন্ত্রণা দিয়েছো। দেখো কিরকম লাল হয়ে গেছে। তাকাও না একটু। ‘

ধ্রুব চেষ্টার কমতি রাখলো না। কিন্তু নিনীকা তো নিনীকাই। টু শব্দ ও করলো না। ধ্রুব এবার রেগে গেলো। জোর করে সরালো কাঁথা। মুখের উপর থেকে দু-হাত ছাড়িয়ে টেনে বসালো। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ বেশি বেশি করছো না? ‘

নিনীকা পুতুলের মতো মাথা রাখলো বালিশে।

‘ যা করার তাড়াতাড়ি করবেন, আমার ঘুম পেয়েছে। ‘

ধ্রুব ভাষাহীন চোখে তাকালো। মেয়েটা তাকে শুধু ভুল বুঝে কেন? সে তো অভিমান ভাঙাতে এতোক্ষণ চেষ্টা করেছে। অপমানে থমথমে মুখশ্রী নিয়ে ধ্রুব উঠে দাঁড়ালো। নিজের ব্যাগ বের করে জামাকাপড় ভরতে লাগলো। নিনীকা দেখেও যেনো দেখলো না।

‘ আমি কি ঘুমিয়ে পড়বো তবে? ‘

ধ্রুব শার্ট ঢুকাতে গিয়ে থেমে গেলো। মুখ তুলে তাকালো না। দৃষ্টি শুভ্র রঙের শার্টে রেখে বলল,

‘ ইচ্ছে। ‘

নিনীকা কাঁথায় নিজেকে প্যাকেট করে ফেললো। ধ্রুব ব্যাগ গুছিয়ে ঘরের ছোট্ট সোফাতে বসে রইলো দীর্ঘক্ষণ। রজনী শেষ হতে চললো। নতুন তারিখ চলে আসার সময় হলো। মধ্যরাত পেরিয়ে ফজরের আজান কানে ভেসে এলো। এতোক্ষণ মেজর ধ্রুবর শক্ত মুখশ্রী বিছানার দিকে ছিলো। আজান কানে আসতেই তা সরে গেলো। গোপনে ত্যাগ করলো দীর্ঘশ্বাস। চটজলদি নামাজ পড়ে গায়ে জড়ালো আর্মি ইউনিফর্ম। কোমড়ে শক্ত বেল্ট লাগিয়ে, পায়ে বুট পড়ে হাতে তুলে নিলো ক্যাপ। ধীরপায়ে হেঁটে এলো নিনীকা যে পাশে ঘুমিয়েছে সেখানে। হাত বাড়িয়ে কাঁথা সরালো মুখ থেকে। ঝুঁকে ঠোঁটের স্পর্শ দিলো কপালে। ধ্রুবর বিচক্ষণ চোখ দেখলো লাল হয়ে যাওয়া চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুকণা। মনে মনে উচ্চারণ করলো,

‘ পাষাণী! আমিও দেখবো তোমার নির্লিপ্ততা, কঠোরতা কতোদিন থাকে। তুমি অনুভূতি লুকিয়ে রাখো নিনীকা! বেশ আমি অনুভূতি প্রকাশ করা ছেড়ে দিলাম। ‘

মুখে বলল,

‘ আসছি, নিজের যত্ন নিও। ভালো থেকো। ‘

ধ্রুব ব্যাগ তুলে নিলো হাতে। দরজার সামনে গিয়েও ফিরে তাকালো। মনে মনে চাইলো একবার সে পিছু ডাকুক। বলুক যেও না। ধ্রুব যাবে না। অভিমানী মিসেসের কথা সে ফেলতে পারবে না।

ধ্রুবর চাওয়া পূরণ হলো না। জীপগাড়িতে বসে আবারও তাকালো বাগানের কাছের বারান্দার দিকে৷ নেই কেউ নেই। ক্ষোভে স্প্রিড তুলে ছুটে চলে গেলো গাড়ি নিয়ে। পেছনে ফেলে গেলো সবকিছু। সত্যিই কি ধ্রুব সবকিছু ফেলে যেতে পেরেছে? দু’দিনের বউয়ের জন্য কি তার মন কেমন করেনি?

নাস্তার টেবিলে খেতে বসেছে সবাই। ধারা ছেলের রাগ ছেলের বাপের উপর ঢেলে দিচ্ছেন। ফাহিম মাহবুব চুপচাপ খাচ্ছেন। ধারা নিনীকার প্লেটে মাংস তুলে দিয়ে আফসোস করে বললেন,

‘ যেমন বাপ তেমন ছেলে। দু’দিন হলো বিয়ে করেছে, বউ ছেড়ে চলে গেছে। বউয়ের থেকে চাকরি বড়ো তার।’

ফাহিম মাহবুব এ পর্যায়ে কথা বললেন,

‘ ওর ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পথে ছিলো। কিন্তু ও আমাকে বলেছিল ততোদিনে নিজের টান্সফারের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করবে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাতে টান্সফারের বিষয়েই তো কথা বলতে গতকাল বের হলো। আমাকে বললো হয়ে যাবে চিন্তা নেই। রাত পোহাতেই কি হলো বুঝতে পারছি না ধারা। হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে গেছে। নাহলে ও যেতো না। ‘

নিনীকা সবে মুখে খাবার তুলতে চেয়েছিলো। তার হাত থেমে গেলো। ধ্রুব তবে গতকাল এ জন্যই দেরিতে বাড়িতে ফিরেছে! নিনীকার বুকের ভেতর হাহাকার শুরু হলো। পাঁজরে কিছু একটা যেনো খামচে ধরেছে।

‘ কেন সে মানুষটাকে একবার কথা বলার সুযোগ দিলো না! জিজ্ঞেস করতে পারতো কেন দেরি হলো! ‘

নিনীকার চোখ জলে টইটম্বুর। চোখে ভাসছে দরজার সামনে দাড়ানো ধ্রুবর ফিরে তাকানো। নিনীকা আড়চোখ সবটাই যে দেখেছে! মন তখন চেয়েছিল ধ্রুবকে কষ্ট দিতে। তাকে অপেক্ষা করিয়ে বাহিরে সময় কাটিয়ে আসার শাস্তি দিতে।

ধ্রুবর চোখে কিছু একটার আকুতি ছিলো, আশা ছিলো। নিনীকার পাষাণ মন গলে নরম হয়ে ব্যথায় জর্জরিত হয়ে আন্দোলন করে বলছে,

‘ তুমি তাকে ফেরাতে পারোনি! তুমি পাষানী! অভিমান করার অধিকার তোমার নেই। ‘

বুকে দাঁত বসিয়ে দেওয়ার পরেও ধ্রুব তাকে কিছু বলেনি। নিনীকা কিভাবে পারলো মানুষটাকে কষ্ট দিতে!

(চলবে)

বিয়ে থা_২ পর্ব-১৯

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব- ১৯
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

রাতের বৃষ্টির কারণে সকালের পরিবেশ সতেজ। বউ কথা কও বাড়িটির বাগানে সবুজ ঘাসের উপর নিজের নরম পা ফেললো নিনীকা। ঘাস কিঞ্চিৎ ভেজা-ভেজা। মাটির গন্ধে নিনীকার ভালো লাগছে। মাটির ঘ্রাণ নিতে নিতে সে গোলাপ গাছটার কাছে এসে দাঁড়ালো। টকটকে লাল গোলাপ ছিঁড়ে কানে গুঁজে দিলো।

বাগানে ব্যস্ত পায়ে প্রবেশ করলো ফারিন। নিনীকাকে তাড়া দিয়ে বলল,

‘ ভাবী জলদি আসো, তোমাকে রেডি হতে হবে তো। মাম্মা যেতে বলেছে। ‘

নিনীকা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।

‘ কেন? ‘

ফারিন হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। বলল,

‘ আজ তোমার বৌভাত। ভুলে গেছো? ‘

নিনীকা নিজের বৌভাতের কথা সত্যিই ভুলে গেছিল। সদর দরজা দিয়ে ঢুকে বলল,

‘ আমি তোমার ভাইয়াকে ডেকে তুলে দিয়ে তারপর তোমার রুমে যাচ্ছি তবে? ‘

ফারিন মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। নিনীকা হাঁটার গতি বাড়িয়ে রুমে ঢুকলো। শুকিয়ে যাওয়া পাপড়ি ছড়িয়ে আছে বিছানা ও মেঝেতে। ধ্রুব বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। পড়োনের প্যান্ট কোমড়ের অনেক নিচে নেমে গেছে। ভেতরে অন্তর্বাস ছিল বলে রক্ষা। নিনীকা চোখ সরিয়ে নিয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে এগিয়ে এলো। নিচু কন্ঠে ধ্রুবকে ডাকলো। পিটপিট করে চোখ মেলে ধ্রুব ঘুম জড়ানো গলায় প্রশ্ন করলো,

‘ ডাকছো কেন মিসেস? ‘

‘ আপনাকে এবার বিছানা ছাড়তে হবে, কিছুসময় পর বৌভাতের অনুষ্ঠান। ‘

ধ্রুব তড়িৎ গতিতে উঠে বসলো।

‘ বেশিই কি দেরি হয়ে গেছে? ‘

নিনীকা ঠোঁট চেপে হাসলো।

‘ তেমন দেরি হয়নি, তবে আপনি যদি এখন ওয়াশরুমে না ঢুকেন তবে দেরি হয়ে যাবে নিশ্চিত। আপনি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হোন। আমিও তৈরি হতে ফারিনের রুমে যাচ্ছি। কেমন? ‘

ধ্রুব নিনীকার হাসি লক্ষ করে নিজের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো। প্যান্ট টা কোনোরকমে জড়িয়ে আছে যেনো। ধ্রুব দাড়ালেই খুলে পড়ে যাবে নিশ্চিত। ধ্রুবর কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগলো। বিয়ের পরদিনই বউয়ের সামনে এভাবে নিজের মান সম্মান শেষ হয়ে গেলো। যতোই হোক তাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা পুরোপুরি গভীর হয়নি। ততোদিন তো নিজের মান সম্মান বাচিয়ে রাখা উচিত! একবার নিনীকাকে সম্পূর্ণ নিজের করে ফেললে এমন সম্মান বাচিয়ে চলতে হতো না আর। ধ্রুব গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মনে পড়লো তার বউ বাসররাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।

নিনীকা উত্তরের অপেক্ষা করছিলো। ধ্রুবকে অন্যমনস্ক হতে দেখে কাঁধে ধাক্কা দিলো।

‘ আমি তবে যাই? ‘

ধ্রুব ভাবনা থেকে বের হয়ে মাথা কাত করে সায় দিলো৷ নিনীকা দ্রুত গতিতে রুম ত্যাগ করলো।

ফ্রেশ হয়ে বৌভাতের জন্য কেনা স্যুট পড়ে ধ্রুব পরিপাটি হয়ে নিচে নামলো। বৌভাতে বাহিরের কেউ নেই। তাদের আত্মীয় স্বজনরাই শুধু। শেখ বাড়ি থেকে এখনো কেউ আসেনি হয়তো। তবে এসে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। ধারা ধ্রুবকে টেনে টেবিলে বসিয়ে দিলেন।

‘ তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ করো। ‘

ধারা ব্যস্ত ভঙ্গিতে হেঁটে চলে গেলেন। ধ্রুব আশেপাশে তাকিয়ে ফারিনকে খুঁজলো। না পেয়ে মোবাইল বের করে কল দিলো। রিসিভ করতেই বলল,

‘ তোর ভাবী খেয়েছে বনু? ‘

ফারিন ফটাফট উত্তর দিলো,

‘ খেয়েছে, আমি রাখছি তৈরি হতে হবে ব্রো। ‘

বাড়িতেই বিউটিশিয়ান এসেছে। মেয়েরা সবাই আগেই তৈরি হয়ে বসে আছে৷ নিনীকা ও ফারিনই বাকি ছিল শুধু।

ধ্রুব খেয়ে সাজানো সোফাতে বসলো। সমুদ্র পাশে বসে কৌতুক স্বরে বলল,

‘ অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে গুরু, রাতে কি বেশিই পরিশ্রম করতে হয়েছে? ‘

‘ না চোখে ঘুম রয়ে গেছে সেজন্য এমন দেখাচ্ছে, হাটাহাটি করলে ঠিক হয়ে যাবে৷ ‘

উত্তর দিয়েই ধ্রুব চোখ গরম করে তাকালো। সমুদ্র দাঁত বের করে হাসছে। ধ্রুব চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

‘ আমার আগে বিয়ে করেছিস বলে নিজেকে খুব সবজান্তা ভাবছিস নাকি? ‘

সমুদ্র মাথা নাড়ালো,

‘ অফকোর্স, আমি এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেছি গুরু। তোমার থেকে জানাশোনা বেশি থাকবেই। ‘

‘ কি কি জানিস বল শিখে নেই। ‘

সমুদ্র ভড়কে গেলো।

‘ সত্যিই শিখবে? কিন্তু ওগুলো তো লাইভ না দেখলে শেখানো মুশকিল। ‘

ধ্রুব ঠা*স করে একটা মা*রলো। সমুদ্র কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,

‘ তুমিই তো বললে শিখবে। ‘

‘ বয়সে ছোট ছোটর মতো থাক। ‘

সমুদ্র গালে হাত ঘষে বলল,

‘ মাত্র এক বছরের ছোট আমি। বাট অভিজ্ঞতার..’

ধ্রুবর চোখে চোখ পড়তেই সমুদ্র থেমে গেলো। ব্যস্ততা দেখিয়ে পালালো। ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরাম করে বসলো। ফারিন নিনীকাকে নিয়ে নিচে নামলো৷ দাঁড় করালো ধ্রুবর পাশে। ধ্রুব নিনীকাকে দেখে অনেক আগেই দাড়িয়ে গেছিল৷ পাশাপাশি হতেই সন্তপর্ণে হাত চেপে ধরলো।

নিনীকার বৌভাতের শাড়ি সোনালি ও সাদা রঙের। মাথায় সাদা দোপাট্টা জড়ানো। ধ্রুব নাকে জ্বলজ্বল করা ডায়মন্ডের ছোট নাকফুলটা দেখলো। সিঁথির ছোট্ট টিকলিটা ও তার কাছে সুন্দর মনে হলো। নাকি সুন্দরী বউয়ের অঙ্গে জড়িয়ে অলংকার শোভা ছড়াচ্ছে?

শেখ বাড়ির সবাই উপস্থিত হলেন। মিথিলা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলেন দীর্ঘক্ষণ। রমজান শেখ মেয়েকে আগলে বললেন,

‘ বাবার পছন্দের প্রতি আর কোনো সন্দেহ আছে মা? ‘

নিনীকা আড়চোখে ধ্রুবকে দেখলো। যে মিথিলার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে৷ উত্তর দিলো,

‘ মনে হচ্ছে পারফেক্ট কেউ। ‘

রমজান শেখ সন্তুষ্ট হলেন। মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের সাথে ফটোশুট করে তারা সরে গেলেন। দীর্ঘক্ষণ ফটোশুট করার পর নিনীকা সোফায় শরীর এলিয়ে দিয়ে বসলো। ধ্রুব হাত বাড়িয়ে মাথাটা নিজের বাহুতে রেখে বলল,

‘ বেশি খারাপ লাগছে? ‘

‘ একটু ‘

তনু আপার দেখা পাওয়া গেলো তখন। হাইহিলের শব্দ তুলে এগিয়ে এসে বললেন,

‘ নিনীকা আব্রাহামের জমজ ভাই কি অনুষ্ঠানে আসেনি? ‘

‘ আমি তো জানি না আপা। ‘

তিনি ধ্রুবর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।

‘ আপনার ক্যাপ্টেন আসেনি কেন? ‘

‘ তার ছুটি শেষ, সেজন্য আসতে পারেনি। ‘

তনু আপা মন খারাপ করে চলে গেলেন। ধ্রুব প্রশ্ন করলো,

‘ মিডিয়া জগতের এই আপুটা ছাড়া আর কাউকে কি দাওয়াত করোনি? ‘

‘ করেছি, সবাই মু়ভির কাজে ব্যস্ত। ‘

ধ্রুব হঠাৎ কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে নিনীকার সামনে ধরলো।

‘ তোমার মোবাইল মিসেস, নাম্বার টা এবার ব্লক লিস্ট থেকে বের করবে না? ‘

নিনীকা ঠোঁট টিপে হাসলো।

‘ আপনিই করুন না ধ্রুব। ‘

ধ্রুব নিজেই নিজের নাম্বার টা ব্লক লিস্ট থেকে বের করলো। অধিকারের সহিত নিনীকার ফেসবুক একাউন্টে নিজের আইডি এড করে বিয়ের স্ট্যাটাস দিলো। মোবাইল পকেটে ভরে আশেপাশে তাকিয়ে হুট করে চেপে ধরলো নিনীকার হাত। গালে পুরুষালি ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিলো।

বর কনের খাওয়ার সময় এলো। ধ্রুব প্রথম ভাত তুলে নিনীকার মুখেই দিলো।

দিনটা হাসিখুশিতে কেটে গেলেও সন্ধ্যার পর নিনীকার চেহারায় আঁধার নামলো। রমজান শেখ ও মিথিলা চলে যাচ্ছেন। নিনীকা স্থায়ী ভাবে এ বাড়ির একজন হয়ে গেলো। চাইলে শেখ বাড়িতে থাকতে পারবে সে, কিন্তু বিবেক? স্বামীর বাড়িই যে বিয়ের পর স্থায়ী ঠিকানা, সেটা তো নিনীকাকে মেনে নিতে হবে।

মেহমান চলে যাওয়ার পর ফাহিম মাহবুব নিজের শ্বশুর বাড়ির সবাইকে নিয়ে এয়ারপোর্টে রওনা হলেন। বাড়ির হৈচৈ ভাব কমে গেলো। সমুদ্র অবশ্য যাওয়ার আগে ধ্রুবর কানে ফিসফিস করে বলে গেছে,

‘ পরামর্শ তো নিলে না গুরু, বছরের শেষে চাচা বানিয়ে দিও। ‘

(চলবে)

বিয়ে থা_২ পর্ব-১৮

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১৮
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

বাহিরে তুমুলভাবে বৃষ্টি ঝরছে। ফ্রেশ হয়ে শাড়ির পরিবর্তে নিনীকা শার্ট ও স্কার্ট পড়েছে। বাগানের সাথে লাগোয়া ধ্রুবর রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে সে বৃষ্টি দেখছে। রুমে খাবার দিয়ে গেছে ফারিন দুজনের জন্য। ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে রুমে আসেনি এখনো। নিনীকার ঝিমুনির ভাব এসে গেছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীর বিছানায় পড়ে যেতে চাইছে। কপালে ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়ছে। মাথা ব্যথা সারানের একমাত্র উপায় হলো এই মুহুর্তে ঘুম। খেতে একদমই ইচ্ছে করছে না নিনীকার। সে কি ঘুমিয়ে পড়বে? না সেটা করা যাবে না। আজ তাদের বাসররাত। এই রাত চলে গেলে ফিরে আসবে না। ধ্রুব নিশ্চয়ই অনেক কিছু ভেবে রেখেছে নিজের বিশেষ রাতে নিজের বিশেষ মানুষকে নিয়ে৷ নিনীকা কিছুতেই ঘুমিয়ে ধ্রুবকে দুঃখ দিতে চায় না। এই মুহুর্তে তার একমাত্র পরিচয় সে মেজর ধ্রুব মাহবুবের বউ৷ সুতরাং স্বামীর ভালো কিসে মন্দ কিসে সেটা এখন থেকেই ভাবতে হবে। জানতে হবে, বুঝতে হবে কিসে তার স্বামী খুশি হবে! নিনীকা তার জীবনে এর আগে কোনো মানুষকে এতো ইমপোর্টেন্ট দেয়নি। সদ্য জড়িয়ে পড়া মানুষটা তার স্বামী! এই একটা সম্মোধনটাই যেনো মানুষটাকে তার মনে গেঁথে দিতে যথেষ্ট ছিল। মিশ্র এক অনুভূতি তে নিনীকার দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বুক কেমন কেমন করছে। বিছানায় এখন থেকে স্বামী নামক মানুষটার সাথে ঘুমাতে হবে তাকে! মিডিয়ার সামনে বলা সেই কথাগুলো! নিনীকা হেসে ফেললো। ঘামের গন্ধ ভালোবাসায় রুপ নিয়ে নিবে মনে হয়। মানুষটাকে তার বিরক্ত লাগবে না হয়তো। সময় সবকিছু ঠিক করে দিবে। নিনীকার ভাবনা চুত্য হলো। দরজা লাগিয়ে ভেতরে ঢুকেছে ধ্রুব৷ নিনীকা বারান্দা থেকে রুমে এলো। ধ্রুব বউকে দেখতে পেয়ে নিজের চমৎকার হাসি দিলো। কেমন একটা গলায় ডাকলো,

‘ কাছে আসো মিসেস। ‘

নিনীকা সম্মোহন হয়ে গেলো যেনো। ধীরপায়ে হেটে ধ্রুবর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ধ্রুব পকেট থেকে সদ্য কিনে আনা কিছু একটা বের করলো। বলল,

‘ পড়াবো কিভাবে? ‘

নিনীকা ঠোঁট কামড়ে ভাবলো। চোখ নামিয়ে নিজের পড়োনের শার্টকে দেখলো। বলল,

‘ এখনই পড়াতে হবে? ‘

ধ্রুব নিনীকার মোমের মতো মুখে চোখ বুলিয়ে নিলো। রক্তাভ ঠোঁট দাঁতের চাপে আরও লাল হয়ে উঠছে। যেকোনো সময় রক্ত বেরিয়ে পড়বে যেনো। ধ্রুব ঢুক গিললো। এগিয়ে এসে হাত রাখলো নিনীকার কোমড়ে। দুহাতের সাহায্যে পড়িয়ে দিলো বেলি চেইন শার্টের উপরেই। ধ্রুব সরে যেতেই নিনীকা ওয়াশরুমে চলে গেলো। শার্ট থেকে চেইন নিচে কোমড়ে নামিয়ে বের হয়ে এলো৷ ধ্রুব পরোখ করে বলল,

‘ শাড়ি পড়লে ভালো হতো। ‘

নিনীকা মাথা নাড়িয়ে ব্যাগের দিকে গেলো। ধ্রুব বালিশের নিচ থেকে শাড়ি বের করে দিয়ে বলল,

‘ এটা পড়তে অসুবিধা হবে? ‘

নিনীকা শাড়িটা হাতে তুলে নিলো। সাদা রঙের ঝলমলে শাড়ি। ধ্রুব অকপটে বলল,

‘ প্রথম তোমাকে সাদা শাড়িতেই দেখে আটকে গেছিলাম। ‘

ধ্রুব বারান্দায় চলে গেলো। নিনীকা শাড়ি পড়ে নিজেকে নববধূর মতো করে রাঙিয়ে ফেললো। সর্বোচ্চ চেষ্টা করলো স্বামীর মনের মতো করে নিজেকে তৈরি করার। নিনীকা নিজের কাজকর্মে বার-বার থেমে যাচ্ছে। এর আগে কখনো সে নিজের পরে অন্য কাউকে ভেবে ভালোবেসে কিছু করেনি হয়তো। নিনীকা ধ্রুবকে না ডেকে নিজেই বারান্দায় গেলো। ধ্রুবর চওড়া পিঠ চোখের সামনে তার। নিনীকার ইচ্ছে করলো প্রচন্ড আবেগ নিয়ে মানুষটাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে। নিনীকা নিজেকে শাসালো। হঠাৎ করে স্বামী নামক কাউকে পেয়ে সে আবেগে ভেসে যাচ্ছে! পাছে যদি লোকটা তাকে হেয় করে? আগ বাড়িয়ে অনুভূতি দেখানোর দরকার নেই।

ধ্রুব কারো উপস্থিতি পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো নিনীকাতে। চোখের ইশারায় পাশে এসে দাড়াতে বললো। নিনীকা দাড়াতেই ধ্রুব পকেট থেকে নুপুর বের করলো। হাঁটু গেঁড়ে বসতেই নিনীকার মুখ হা হয়ে গেলো। সিনেমা করা মেয়েটার সিনেমার রোমান্টিক দৃশ্যতে ব্যাপক বিরক্তি ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ধ্রুবর করা কান্ডটিতে তার বিরক্ত লাগছে না। বরং মনে রঙ বেরঙের কিছু একটা উড়তে শুরু করেছে। নিঃশ্বাস অস্বাভাবিক হচ্ছে। কোথাও একটা পুড়ছে। দূরত্ব মিটিয়ে দিতে চাইছে মন।

‘ পা দাও। ‘

নিনীকার পায়ে নুপুর জোড়া পড়িয়ে দিয়ে ধ্রুব উঠে না দাড়িয়ে নিজের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ রাখা নিনীকার চোখে চোখ রেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। নিনীকার মন পুলকিত হলো। এবং চোখের পলকেই ধ্রুব নিনীকার পায়ে ঠোঁট বসিয়ে দিলো।

নিনীকা শক্ত হয়ে গেলো। ধ্রুব উঠে একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। নিনীকার মুখে শ্বাস ফেলে বলল,

‘ বেলি চেইন কোথায়? ‘

নিনীকা ঢুক গিলে শাড়ির কোণা সরিয়ে দেখালো। ধ্রুব নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে হাত বাড়িয়ে সেটা ছুঁয়ে দিলো।

‘ এখানে একটা চুমু খাই? ‘

নিনীকার মনে হচ্ছে তার পায়ের তলায় কিছু নেই। নিজেকে স্বাভাবিক করে উত্তর দিলো,

‘ খেতে পারেন। ‘

ধ্রুব চুমু দিলো না। বরং ছেড়ে দূরত্বে দাড়িয়ে বলল,

‘ আমি তোমার বিয়ে করা বর বলেই কি কোনোকিছুতে আপত্তি করছো না? ‘

নিনীকা নির্দ্বিধায় মাথা নাড়ালো। ধ্রুব লম্বা শ্বাস ছাড়লো,

‘ আমি এটা চাই না। যেদিন আমার জন্যে মনে অনুভুতি জন্মাবে সেদিন জানিয়ে দিও। ‘

‘ অনুভূতি নেই সেটা কি একবারও বলেছি? ‘

‘ আছে তবে? ‘

নিনীকার সহজ স্বীকারোক্তি,

‘ তখন বারান্দায় এসে আপনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিলো। সেটা যদি অনুভুতিহীন হওয়ার কারণে হয়ে থাকে তবে আপনার প্রতি আমার কোনো অনুভূতি নেই।’

ধ্রুব মুহুর্তের মধ্যে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরেছে।

‘ প্রকাশ করো না কেন তবে? ‘

নিনীকা পিঠে হাতের বাঁধন শক্ত করলো।

‘ আমার অনুভূতিকে কেউ একটুও হেয় করলে আমি অপমানে শেষ হয়ে যাবো। ‘

‘ আজ থেকে তোমার আত্নসম্মান, সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। তোমার সবকিছু আজ থেকে আমার। তুমি সবকিছু আমার উপর ছেড়ে দিয়ে অনুভূতি ইচ্ছে মত প্রকাশ করতে পারো। আমি কথা দিচ্ছি রক্ষা করার জন্য আমি থেকে যাবো। ‘

নিনীকার মনে ভরসা টুকু দিয়ে ধ্রুব সবকিছুর সমাধান করে ফেললো যেনো। নিনীকা ধ্রুবকে অবাক করে দিয়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো। ধ্রুব মাথায় হাত রাখতেই ক্লান্ত স্বরে বলল,

‘ অনেক ক্লান্ত লাগছে, ঘুম পাচ্ছে। ‘

ধ্রুব ধীরে ধীরে হেঁটে নিনীকাকে নিয়ে এলো ঘরে। ততোক্ষণে তার গলায় গরম নিঃশ্বাস পড়ছে থেমে থেমে। ধ্রুব বুঝলো তার বউ ঘুমিয়ে পড়েছে। ধ্রুব শব্দ করে হাসতে গিয়ে নিজেকে আটকে ফেললো। নিনীকাকে শুইয়ে দিলো ফুলে সজ্জিত বিছানায়। টেবিলের উপরে ঢাকা খাবার ওভাবেই পড়ে রইলো। ধ্রুব ছুঁয়ে ও দেখলো না।

সকালে যখন ঘুম ভাঙলো তখন নিনীকা কারো শক্ত বাহুতে আটকা পড়ে আছে। নিজের উপর বলিষ্ঠ শরীরের পুরুষকে আবিষ্কার করে তার চোখ কপালে। ধ্রুবর গরম নিঃশ্বাস বুক থেকে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। নিনীকা লজ্জায় মুখ লুকাবে কিভাবে ভেবে পেলো না। অনেক সময় পর ধ্রুবকে ডাকতে লাগলো। ধ্রুব এক বার চোখ মেলে তাকিয়ে সরে গিয়ে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছে আবারও। নিনীকা উঠে বসে বিস্মিত হলো। তার স্পষ্ট মনে আছে শাড়ি পড়েই সে বারান্দায় ধ্রুবর কাঁধে ঘুমিয়ে পড়েছে। তবে তার শাড়ি কোথায় গেলো!

নিনীকা আশেপাশে চোখ ফেলে দেখলো তার শাড়ি অযত্নে নিচে পড়ে আছে। নিনীকার পড়োনে জিন্স। পেটিকোটের বদলে গতকাল জিন্স ব্যবহার করেছে সে। সম্পূর্ণ পেট উন্মুক্ত। সাদা চামড়ায় সোনার সেই বেলি চেইনটা জ্বলজ্বল করছে। নিনীকা হাত বাড়িয়ে সেখানে ছুয়ে দিয়ে বুঝলো জায়গাটায় লাল দাগ পড়ে গেছে। মানুষ টা কি তার ঘুমের সুযোগ নিয়েছে? স্বামীর অধিকার সে নিজ ইচ্ছেতেই তো দিয়ে দিতো। তবে ঘুমের সুযোগ নিলো কেন? তবে যে গতকাল বললো নিনীকার আত্নসম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব তার! নিনীকার কন্ঠো চেপে ধরেছে যেন কেউ। ধ্রুবকে ধাক্কা দিতে লাগলো। ধ্রুব চোখ মেলে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে নিনীকাকে টেনে বুকের উপর নিতে চাইলো। নিনীকা ধ্রুবর উন্মুক্ত বুকে হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে বলল,

‘ কি করেছেন আমার সাথে! ‘

ধ্রুব ঠোঁট উল্টে ঘুম জড়ানো গলায় বলল,

‘ বেশি না চেইনের পাশে কয়েকটা চুমু খেয়েছি শুধু। ‘

নিনীকা রাগ করার বদলে হেসে ফেললো। ধ্রুবর কপালের অগোছালো চুলে হাত চালালো।

‘ পাগল একটা। ‘

ধ্রুব নিনীকার আহ্লাদের সুযোগ নিলো।

‘ তোমারই তো। ‘

(চলবে)

বিয়ে থা_২ পর্ব-১৭

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১৭
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

শেখ বাড়ির গেইট দিয়ে সাই-সাই করে একসাথে পর-পর কয়েকটা গাড়ি ঢুকলো। ফুলে সাজানো বরের গাড়িটি সবার আগে। চারিদিকে হৈহৈ পড়ে গেলো, বর এসেছে বর এসেছে। শেখ বাড়ির বিশাল ড্রয়িংরুমে আয়োজন করা হয়েছে। ধ্রুব বর সাজে শেখ বাড়িতে ঢুকলো। আশ্চর্য হলেও সত্যি এখানে বর আটকানোর জন্য কেউ ছিল না। ধ্রুবর কাজিন মহল হা হুতাশ করলো। বর কনের জন্য বানানো জায়গায় ধ্রুব বসলো। মাঝখানে একটি পাতলা পর্দা। ওপাশে নিনীকাকেই বসানো হবে।

চারিদিকে ব্যস্ততা সবার। খাওয়া দাওয়া চলছে পুরোদমে। আচমকা সবকিছু যেনো থেমে গেলো। সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে শেখ কন্যা। পড়োনে ধ্রুবর পছন্দ করে কেনা সেই লাল শাড়ি। মাথায় দোপাট্টা। কপালের টিকলি ও নাকের নোলকে এ এক অন্য নিনীকাকে দেখছে সবাই। ধ্রুব দাড়িয়ে গেছিল অনেক আগে। নিনীকা শেষ সিঁড়িতে পা রাখতেই সে এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। চারিদিকে সবার উচ্ছাস আনন্দের ছড়াছড়ি। ধ্রুবর হাত ধরে নিনীকা পাতলা পর্দার আড়ালে বসলো। সমুদ্র ধ্রুবকে টেনে আরেক পাশে বসিয়ে দিলো। ব্যস ধ্রুব শত চেষ্টা করেও পাতলা পর্দার আড়ালে অস্পষ্ট অবয়ব ছাড়া কিছু দেখতে পাচ্ছে না আর।

কবুল বলে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো নিনীকা। পুরোটা সময় তার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা ছিলো। একসময় সবার সামনে এমনকি মিডিয়ার সামনে যে মেয়েটা বড় গলায় বিয়ে নিয়ে নেগেটিভ মন্তব্য করতো সে-ই মেয়েটা বিয়ে করে নিলো! ধ্রুব ও নিনীকাকে এবার একসাথে বসানো হলো। নিনীকার ঘোমটা টানা। ধ্রুব দুহাতে ঘোমটা তুলে নিজের বউকে দেখলো। এইতো কিছু মিনিট আগেও যার সাথে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে এখন বউ হয়ে গেছে! ধ্রুবর বউ!

সবার অগোচরে ধ্রুব ফিসফিস করে বলল,

‘ মাই মিসেস! ‘

নিনীকা কেঁপে উঠলো। অদ্ভুত মাদকতা মেশানো সম্মোধন শরীরে মনে গেথে গেলো। ক্যামেরাম্যান এর কথায় নানান ভঙ্গিতে দুজন দাড়িয়ে ফটোশুট করতে ব্যস্ত হলো। অস্বস্তিতে নিনীকা একটু দূরত্বেই দাড়িয়ে ছিল। ক্যামেরাম্যান ক্লজ হয়ে দাড়াতে বলতেই ধ্রুব কোনোরকম সঙ্কোচ ছাড়াই নিনীকাকে সামনে দাড় করিয়ে নিজের দু কাঁধে হাত রাখতে বললো। নিনীকার কাঁপা কাঁপা হাত যখন কাঁধে পৌছালো তখনই ধ্রুব শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কপালে এঁকে দিলো ভালোবাসা।

বর কনের সাথে একে একে সকলে ছবি তুলছে। বিয়েতে সিনেমা জগতের অনেকেই এসেছেন। আব্রাহাম ও নিরবকে যে-ই দেখছে সেই টাস্কি খাচ্ছে। একই রকম দেখতে দু’জন মানুষকে দেখে অবাক হবারই কথা। ফারিন মায়ের সাথে দাড়িয়ে অপলক তাকিয়ে দেখছে নিরবকে। হেঁসে হেঁসে সবার সাথে কথা বলছে লোকটা। ধারা মহিলাদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হতেই ফারিন নিরবের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নিরব হেঁসে জিজ্ঞেস করলো,

‘ কেমন আছেন? ‘

ফারিন মুখ বাঁকিয়ে বলল,

‘ মন্দ থাকলে কি আপনি ভালো থাকার দায়িত্ব নিবেন?’

নিরব অস্বস্তিতে পড়লো।

‘ আপনি কি ভালো করে কথা বলতে পারেন না? ‘

‘ আপনি অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলা কমিয়ে দিন, আমি ভালো করে কথা বলবো। ‘

‘ মানে? ‘

ফারিন তেতে উঠলো,

‘ ওই তনু পনু আপার থেকে দূরে থাকবেন। মহিলার ধান্দা ভালো না। ‘

নিরব সহসা প্রশ্ন ছুড়লো,

‘ আপনার কিরকম ধান্দা? ‘

ফারিন নাক-মুখ কুঁচকে বলল,

‘ আপনাকে পটানোর ধান্দা, পটবেন? ‘

‘ মেজরকে বলবো? ‘

‘ বলুন, আমি কি ভয় পাই? ‘

নিরব সিরিয়াস হলো,

‘ আপনি প্লিজ এমন মজা করবেন না। আমি আপনাকে ছোটবোনের নজরে দেখি। ‘

ফারিনের মাথায় দপ করে আগুন জ্ব*লে উঠলো যেনো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ আর একবার বোন বলেছেন তো আপনাকে! ‘

‘ আমাকে কি? ‘

নিরব নিতান্তই মজা করে বলেছিলো কথাটা। ফারিন ঝড়ের গতিতে নিজের কাজ করে কে*টে পড়লো। নিরব স্তব্ধ হয়ে ঠোঁটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। তখনই এলেন তনু আপা।

‘ হ্যালো মিস্টার, আপনি কি খেতে বসবেন না? ‘

নিরবের চেহারায় মোটামুটি আতংকের চাপ। তনু আপা সেটা খেয়াল করে বললেন,

‘ আপনি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত? ‘

নিরব গটগট পায়ে হেঁটে প্রস্থান করলো। আড়ালে থাকা ফারিন ঠোঁট চেপে মিটিমিটি হাসলো।

*
মালাবদল হওয়ার পর মোটামুটি সবকিছু শেষ। খাওয়া দাওয়ার পর্ব ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। নিনীকা খেতে বসে তেমন খেতেই পারলো না। অথচ সে সকাল থেকে কিছুই খায়নি ঠিক করে। বাঙালি মেয়েদের মতো তার মন ও কি মা বাবা ছেড়ে যাওয়ার জন্যে ভার হয়ে যাচ্ছে? কিন্তু সে তো চাইলেই চলে আসতে পারবে।

বিকেলের কনে দেখা আলোয় দুজনের সামনে একটি কারুকাজ করা গোল আয়না রাখা হলো। আয়নাতে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র প্রশ্ন ছুড়লো,

‘ আয়নাতে কি দেখতে পাচ্ছেন ভাবি? ‘

নিনীকা আয়নাতে ধ্রুবর চোখে চোখ রেখে হাসলো।

‘ হাস্যোজ্জ্বল একজন পুরুষ, আমার ধ্রুব। ‘

নিনীকার কথাটা কানে বাজলো। ধ্রুব শিহরিত হলো। ফারিন তীব্র উচ্ছাস নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ তুমি কি দেখতে পাচ্ছো ব্রো? ‘

ধ্রুব চমৎকার করে হাসলো,

‘ মেজর ধ্রুবর মিসেস। ‘

চারিদিকে হাত তালির ধুম পড়লো। এগিয়ে এলো বিদায় বেলা। অন্যদের মতো নিনীকাকে কাঁদতে দেখা গেলো না। রমজান শেখ যখন ধ্রুবর হাতে মেয়ের হাত তুলে দিচ্ছিলেন তখন কান্নারত মিথিলাকে নিনীকা উল্টো সান্তনা দিলো।

‘ কাছেই তো যাচ্ছি মা, চলে আসবো যখন তখন। ‘

ধারা মিথিলাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘ আমার আরেক মেয়ে ও, আপনি কান্নাকাটি করবেন না আপা। আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নিনীকা দুই পরিবারের মেয়ে। যখন যেখানে ইচ্ছে এসে থাকবে। দুটোই ওর বাড়ি। ‘

গাড়িতে উঠে বসলো নিনীকা। পাশে ধ্রুব। ড্রাইভিং সিটে সমুদ্র, তার পাশে ফারিন। সমুদ্র মজা করে বলল,

‘ লাইট বন্ধ করে দিবো নাকি গুরু? ‘

ধ্রুব রাগ দেখাতে চাইলো। সমুদ্র দমলো না। নিনীকাকে বলল,

‘ আপনি আমার ভাইকে অনেক কষ্ট করালেন ভাবী, বেচারা দিনরাত ঘুমাতে পারেনি আপনার জন্য। ‘

ধ্রুব ধমকে উঠলো,

‘ চুপ কর, মন দিয়ে গাড়ি চালা। ‘

সামনে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে ফারিন নিনীকার সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। ধ্রুব দেখা ছাড়া আর কিছু করতে পারছে না। তাকে সাহায্য করতে ধরনীতে নেমে এলো অন্ধকার। সন্ধ্যার আকাশ ঘন-কালো মেঘে ছেয়ে গেলো হঠাৎ। শুরু হলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। ধ্রুব আলগোছে নিনীকার হাত ধরলো। আঙুলের ভাজে আঙুল ঢুকিয়ে শক্ত বন্ধন তৈরি করলো। নিনীকাকে বুঝিয়ে দিলো সারাজীবন একসাথে থাকার অঙ্গীকার।

বউ কথা কও- তে ধারা আগেই পৌঁছে গেছেন। বধু বরণের জন্য সবকিছু আগেই তৈরি করা ছিল। তখন বৃষ্টি থেমে গেছে। গাড়ি থেকে নেমে ধ্রুব নিনীকাকে কোলে করেই ফুলে সাজানো পথ দিয়ে বাড়িতে ঢুকলো। সোফায় বসিয়ে দিতে চাইলে ধারা নাকচ করলেন।

‘ রুমে নিয়ে যা, ফ্রেশ হোক। আত্নীয় স্বজনদের ভীড়ে চাপা পড়ে যাবে বেচারি। ‘

ধ্রুবর কোলে থাকা নিনীকা এতোক্ষণ লজ্জায় মাথা নিচু করে ছিলো। ধারার কথা শুনে তার ঠোঁটে হাসি ফুটলো। শ্বশুর বাড়িতে প্রবেশ করেই বুঝে ফেললো সে শ্বাশুড়ি নয় মা পেয়ে গেছে।

ধ্রুবর রুমটা ফুলের গন্ধে ভরে গেছে। নিনীকাকে ফুলে সাজানো বিছানায় বসিয়ে দিলো ধ্রুব। শেরওয়ানি খুলে হাতে টিশার্ট টাওজার নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলল,

‘ আমি ফারিনের রুমে ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি। তুমি ও ফ্রেশ হয়ে নাও। ফারিনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি ব্যাগপত্রসহ। ‘

ধ্রুব চলে গেলো। নিনীকার নাসারন্ধ্র দিয়ে প্রবেশ করছে বেলীফুলের সুবাস। সাথে কানে বাজছে ধ্রুবর ‘তুমি’ সম্মোধনটা।

(চলবে)

বিয়ে থা_২ পর্ব-১৬

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১৬
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে ধ্রুব। বাড়ির পরিবেশ থমথমে। অনেক আত্মীয় স্বজনরা কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। ধারা ও ফাহিম মাহবুব ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন।

এখন সকাল আটটা। ধ্রুব সোজা হয়ে বসলো। ধারা বলতে লাগলেন,

‘ এসব ফেইক ধ্রুব..’

ধ্রুব তাকে থামিয়ে দিলো। উঠে দাড়িয়ে বলল,

‘ আমি ও বাড়ি থেকে ঘুরে আসছি মা। ‘

ধ্রুব জীপগাড়ি নিয়ে বের হলো। বাহিরে মৃদুমন্দ বাতাস। কপালে উষ্কখুষ্ক চুল পড়ে আছে। পড়োনে টাওজার ও টি-শার্ট।

সাড়ে আটটার দিকে ধ্রুব শেখ বাড়িতে ঢুকলো। সোফায় বসে থাকা মিথিলা ও রমজান শেখের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,

‘ নিনীকা কোথায়? ‘

আজ যদি বিয়ে হয় তবে ধ্রুব এ বাড়ির জামাই হয়ে যাবে। বাড়ির হবু জামাই কে বিয়ের দিন সকালে আসতে দেখে চমকালেন না তারা। মিথিলা নিঃশব্দে হাত দিয়ে নিনীকার রুম দেখিয়ে দিলেন।

ধ্রুব গটগট পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠলো। রুমের দরজা বন্ধ। ধ্রুব দরজায় হাত দিয়ে শব্দ করে ডাকলো,

‘ নিনীকা দরজা খুলুন। ‘

পাঁচ সেকেন্ডের মাথায় দরজা খুলে গেলো। ধ্রুব রুমে ঢুকে দরজা লক করে নিনীকার মুখোমুখি হলো। হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে নিনীকা৷ ধ্রুব খুঁটিয়ে দেখলো। চোখ ফুলে আছে। গাল, নাক লাল। হয়তো কেঁদেছে।

‘ আপনি? ‘

ধ্রুব খাটে বসলো। নিনীকাকে পাশে বসতে ইশারা করলো। নিনীকা একটু দূরত্ব রেখে বসে জিজ্ঞেস করলো,

‘ কি ব্যাপার? ‘

‘ আপনি জানেন না? ‘

নিনীকা এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে ধ্রুবর দিকে তাকালো। ধ্রুব তাকিয়েই ছিল। বলল,

‘ আপনার কি কিছু বলার নেই? ‘

‘ আপনি ভিডিও টা দেখেছেন? ‘

‘ না, দেখতে ইচ্ছে করেনি। ‘

নিনীকা নিজের মোবাইল গেঁটে বের করে ধ্রুবর সামনে ধরলো।

‘ দেখুন তবে। ‘

ধ্রুব হাতে নিলো না। চোখ রাখলো স্কিনে। একটি ছেলে ও মেয়ে ফিজিক্যাল করছে। শরীর সাদা চাদরে ঢাকা। ছেলেটির মুখের একপাশ দেখা যাচ্ছে। মেয়েটির মুখ ও অস্পষ্ট। দেখতে কিছু টা নিনীকার মতো লাগছে হয়তো। ধ্রুব চোখ বন্ধ করে ফেললো। নিনীকা মোবাইল টা সরিয়ে নিয়ে বলল,

‘ এবার বলুন। ‘

ধ্রুব চোখ মেলে স্বাভাবিক হয়ে বলল,

‘ ভিডিও টা যে এডিটিং করা হয়েছে তা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে। ‘

‘ তবে আপনি এলেন কেন? কি ভেবেছেন সত্যি হবে? ‘

ধ্রুব এবার এক পা তুলে বসলো। আলগোছে নিনীকার একটি হাত টেনে ধরলো।

‘ আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম নিনীকা। ‘

‘ কিসের ভয়? ‘

ধ্রুব কথা পাল্টালো,

‘ আপনার ক্যারিয়ারে কখনো বাজে কোনোকিছু হয়নি। এবার কে বা কারা আপনার ক্যারিয়ারে দাগ লাগাতে চেষ্টা করেছে আমি জানি না। তবে আমি আপনাকে বিশ্বাস করি নিনীকা। ‘

নিনীকা শব্দ করে হাসলো।

‘ এটা ঠিক আমার ক্যারিয়ারে কোনো বাজে দাগ পড়েনি। তবে এবার পড়ে যেতো। কিন্তু যে এডিট করেছে সে হয়তো ততোটা কাজে পারদর্শী নয়! সেজন্য যে-ই ভিডিও টা দেখবে সেই বুঝতে পারবে যে এটা এডিট করে বানানো হয়েছে৷ এবং ইতিমধ্যে সোশ্যাল ওয়ালে এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা ও হচ্ছে। বেশিরভাগটাই আমাকে নিয়ে পজিটিভ আলোচনা। ‘

ধ্রুব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।

‘ কে এমন করতে পারে বলে আপনার সন্দেহ হয়? ‘

‘ দেখুন আজ আমার বিয়ে। যে এসব করেছে তার উদ্দেশ্য ছিল আমার ক্যারিয়ারে মারাত্মক একটি দাগ লাগানোর। সে চাইছিল আমার বিয়ে ভেঙে যাক। ‘

বলেই নিনীকা হাসলো। ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘ আমি এটা ক্লিয়ার করতে চাই। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আমি খুঁজে বের করবো, কে এরকম করেছে! ‘

নিনীকা মাথা নাড়ালো। ধ্রুবর বুক এখনো কাঁপছে। ঢুক গিলে বলল,

‘ আমি সত্যিই অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম। ‘

‘ কি ভেবেছিলেন? ‘

ধ্রুব করুণ স্বরে বলল,

‘ মনে হচ্ছিল আপনাকে হারিয়ে ফেলবো। ‘

নিনীকা হু হা করে হাসলো।

‘ দুপুরে বরযাত্রী নিয়ে আসার কথা, আপনি তো সকাল হতে না হতেই চলে এসেছেন! ‘

‘ নিনীকা! ‘

‘ বলুন? ‘

‘ গতকাল আপনি একটি মিটিং করেছেন। সেটা কি উদ্দেশ্যে আমাকে কি জানানো যাবে? ‘

‘ বিয়ের পর জেনে যাবেন। ‘

‘ ঠিক আছে, আমি তবে আসছি। ‘

ধ্রুব নিনীকার হাত ধরেই উঠে দাড়ালো। দরজা খুলে বের হয়ে যাবার আগে আচমকা আলতো করে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো। সেকেন্ডের গতিতে ছেড়ে বের হয়ে গেলো। ব্যাপার টা এতো দ্রুত হলো যে নিনীকা কিছু সেকেন্ড হা করে তাকিয়ে থেকে শরীর দুলিয়ে হেসে নিচে পড়ে গেলো৷

নিচে রমজান শেখ ও মিথিলার মুখোমুখি হলো ধ্রুব। বলল,

‘ আমাকে প্লিজ আটকাবেন না আন্টি, কিছু ঘন্টা পর এমনই আসছি। তখন যতো খুশি খাওয়াবেন আমি না করবো না। ‘

মিথিলা হেসে ফেললেন। ধ্রুব বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলো। রমজান শেখ স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন,

‘ বার-বার প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে আমি নিনীকার জন্যে সঠিক কাউকেই চ্যুজ করেছি মিথি। ‘

*

শেখ বাড়িতে ঢুকতেই সবাই ধ্রুবকে ঘিরে ধরলো। ধারা কাঁদোকাঁদো গলায় বললেন,

‘ ওগুলো ফেইক বাবা, তুই প্লিজ বিয়ে ভাঙিস না। ‘

ফারিন শব্দ করে কাঁদছে।

‘ ভাবী এরকম হতেই পারে না ব্রো। তুমি ভুল বুঝছো। কেউ নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে এমন করেছে যাতে বিয়ে ভেঙে যায়! ‘

ফাহিম মাহবুব ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন।

‘ কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা তা বুঝতে শিখার মতো বয়স তোমার অনেক আগেই হয়েছে। সেজন্য আমি তোমাকে নতুন করে কিছু বলবো না। যা-ই করবে ভেবেচিন্তে করবে। যাতে পরে আফসোস না করতে হয়।’

সমুদ্র কাচুমাচু ভঙ্গিতে এসে দাঁড়ালো। ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ কি ভয়াবহ ব্যাপার গুরু! আমি তো প্রথমে বুঝতেই পারিনি ওটা যে ফেইক। আসলে তখন এতোকিছু মাথায় আসেনি। সেজন্য কি থেকে কি বলে ফেলেছি। তুই প্লিজ ওগুলো মাথায় নিস না। ইতিহাস বলে স্টার নিনীকা শেখ ইজ এ গুড উইমেন্স ইন দ্যা ফিল্ম ওয়াল্ড!’

ধ্রুবর পুরো গোষ্ঠী ধ্রুবর সামনে নিনীকাকে নিয়ে পজিটিভ কথা বলছে। ধ্রুব হাত ভাজ করে দাড়িয়ে সেগুলো শুনছে। সবার বলা শেষ হওয়ার পর বললো,

‘ আমি কি একবারও বলেছি যে বিয়ে করবো না? ‘

ধারা প্রশ্ন করলেন,

‘ তবে ওভাবে বের হয়ে গেলি কেন? জানিস কতো ভয় পেয়েছি? ভেবেছি তুই বিয়ে করবি না বলে চলে যাচ্ছিস রাগ করে। ‘

ধ্রুব ঠোঁট চেপে হাসলো।

‘ তার উপর আমার বিশ্বাস আছে মা। আমি শুধু তার এমন পরিস্থিতিতে তার পাশে থাকতে গিয়েছি। তুমি জানো চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। ‘

ধারা মুখে হাত দিয়ে বললেন,

‘ তুই ও বাড়িতে গেছিলি? ‘

ফারিন উৎফুল্ল হয়ে বলল,

‘ তুমি সত্যিই রেগে নেই! তার মানে বিয়ে টা হচ্ছে! ‘

ধ্রুব উপরে চলে যেতে লাগলো।

‘ বিয়ে না করার কোনো কারণ নেই, তবে বিয়ে করার অনেক কারণ আছে। ‘

সমুদ্র পিছু পিছু চলে এসেছে।

‘ কারণগুলো শেয়ার করবে না গুরু? ‘

ধ্রুব ঠা*স করে সমুদ্রের গালে থাপ্পড় দিলো। সমুদ্র গালে হাত রেখে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ মা*রলে কেন গুরু? ‘

ধ্রুব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ তোর ওই কথাগুলো আমার বুক কাপিয়ে দিয়েছিল সে খবর কি তুই রাখিস? একটুর জন্য আমি যদি হার্ট অ্যাটাক করে মা*রা যেতাম, তবে নিনীকাকে অন্য কেউ বিয়ে করে ফেলতো হয়তো! শালা দূর হো আমার রুম থেকে! ‘

সমুদ্র সুর সুর করে বের হয়ে গেলো। ধ্রুব চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই সেই কয়েক সেকেন্ড তার চোখে ভেসে উঠলো। জড়িয়ে ধরার জন্যে নিনীকা কি তাকে পানিশমেন্ট দিবে?

ধ্রুব কি করলো কে জানে, দুপুরের আগেই সোশ্যাল ওয়াল থেকে এডিট করা ভিডিও নাই হয়ে গেলো!

(চলবে)

বিয়ে থা_২ পর্ব-১৫

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১৫
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

আজ নিনীকার গায়ে হলুদ। শেখ বাড়িতে গ্রাম থেকে আত্মীয় স্বজনরা ভীড় করেছেন এসে। মিথিলার ভাইয়েরা এসেছেন। তাদের বউ, ছেলেমেয়ে সবাই বিবাহিত। এবং তাদের ও বাচ্চা আছে। পুরো গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহ উপযুক্তদের মাঝে নিনীকারই বিয়ের বাকি ছিল।

নিনীকাকে সাজানো হয়েছে। হলুদ লেহেঙ্গা ও সত্যিকারের তাজা ফুলের গহনা পড়েছে সে। চারিদিকে মিডিয়ার অভাব নেই৷ সিনেমা জগতের অনেকেই এসেছেন। নিনীকার গায়ে হলুদ শুরু হয়ে গেলো। ও বাড়ি থেকে এক ঘন্টা আগেই ফোন করে জানানো হয়েছে ধ্রুবর গায়ে হলুদ হয়ে গেছে। ফারিন ও ধ্রুবর কিছু কাজিন এসেছে শেখ বাড়িতে।

রমজান শেখ ও মিথিলার পরে ফারিনই নিনীকার গালে হলুদ ছুঁয়ে দিলো। ক্যামেরাম্যান তো ছবি তুলছেই, সে নিজেও নিনীকার সাথে ছবি তুলে নিলো। আড়ালে দাড়িয়ে পাঠিয়ে দিলো ধ্রুবকে।

ধ্রুবদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার পাট চুকানো হচ্ছে। তারপরই সবাই ঘুমিয়ে পড়বে। আগামীকাল বরযাত্রীতে যাবে দুপুরের দিকে। অতো তাড়া নেই কারো। ধ্রুব হলুদের পর গোসল করে বিছানায় বাবু হয়ে বসে আছে সব কাজিনদের মধ্যমনি হয়ে। তখনই ফারিন ছবি পাঠালো। ধ্রুব দেখার আগেই তার মোবাইল নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেলো। বিশেষ করে সমুদ্র, সে ধ্রুবকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সবাইকে কাহিনি শুনিয়ে দিয়েছে। সেই থেকে সবাই ধ্রুবকে নিয়ে রসিকতা করছে।

ধ্রুব কিছু বলতেও পারছে না। শুধু নিরবে সহ্য করে যাচ্ছে। এরা সবাই তার বড়ো নয়তো সমবয়সী। কিছু বলাও যাবে না। ফারিন ছবি পাঠিয়েছে ধ্রুব দেখবে বলে, অথচ সবাই দেখার পর ধ্রুবকে দেখতে দেওয়া হলো।

ধ্রুবর এক মেয়ে কাজিন মেহেদী আর্টিস্টদের বিদায় করেছে। সে নিজেই সবাইকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে৷ সবার শেষে ধ্রুবর হাতে নিনীকার নাম ছাড়া আর কিছু লিখতে পারেনি। মূলত ধ্রুব দেয়নি।

ফারিন ওখানেই নিনীকার সাথে মেহেদী পড়ে নিলো। ধ্রুবকে ছবিও পাঠালো। এইবার ধ্রুবই সবার আগে ছবিগুলো দেখলো। নিনীকার হাতে তার নামের অক্ষর স্পষ্ট করেই লেখা হয়েছে। ধ্রুব মনে মনে বলল,

‘ মিস নিনীকার মনে কবে লেখা হবে? ‘

ফারিন ফিরলো এগারোটার পর। ধ্রুব আগে থেকেই বোনের রুমে চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল। আসতেই মোবাইল কেঁড়ে নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকেছে। ফারিন ফ্রেশ হতে যাওয়ার আগে ঠোঁট বাকিয়ে বলে গেলো,

‘ বুড়ো বয়সে ভীমরতি। ‘

ধ্রুব কথাটা শুনেও শুনল না। ফারিনের মোবাইল গ্যালারিতে আরও কিছু নতুন ছবি যুক্ত হয়েছে। নিনীকার অনেকগুলো ছবি যেগুলো তাকে পাঠানো হয়নি। ফারিন বের হতেই সে কান টেনে ধরলো।

‘ ছবি পাঠাসনি কেন? ‘

ফারিন ফুসফুস করে উঠলো,

‘ এগুলো আসার সময় তুলেছিলাম, দেওয়ার সময় পাইনি। তাই বলে তুমি এমন করবে? আমি পাপাকে বিচার দিবো। ‘

ধ্রুব গালে মৃদু জোরে হাত ছুঁইয়ে থাপ্পড় দেওয়ার ভঙ্গি করলো। ফারিন তাতে আরও রেগে গেলো। উচু গলায় ডাকলো,

‘ মাম্মা পাপা দেখো ব্রো আমাকে মারছে! ‘

ধ্রুব নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে আবারও বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। ফারিন হাত ধরে টেনে নামাতে চেষ্টা করলো।

‘ তুমি বের হও, আমার বিছানায় তুমি ঘুমাবে না। তোমাকে আমি একটুও ভালোবাসি না। তুমি আমার ভাই নও। তুমি প্রতিবেশী মেয়েদের ভাই। বুঝেছো? ‘

ধ্রুব শরীর দুলিয়ে হাসলো।

‘ প্রতিবেশী বোনদের ডেকে আন, তাদের দায়িত্ব দিবো দিনরাত যাতে তাদের ভাবীর সব আপডেট আমাকে দেয়। তোর মতো ফাঁকিবাজ কে আমার দরকার নেই। ‘

ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

‘ ঠিক আছে, দেখো আর কখনো তোমার কোনো কাজ করে দেই কি না! দেখবো তোমার প্রতিবেশী বোনরা কি কি করে। ‘

ধ্রুব মাথা নাড়ালো। ফারিন ভীষণ ক্লান্ত। বলল,

‘ আমি ঘুমাবো। ‘

ধ্রুব ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ তো ঘুমা, তোকে কি আমি ধরে রেখেছি? ‘

‘ তুমি হাত পা ছড়িয়ে পুরো খাট দখল করে শুয়ে আছো। আমি কোথায় ঘুমাবো? নিনীকা ভাবীকে ফোন করে বলবো বাপের বাড়ি থেকে বড়ো একটা খাট নিয়ে আসতে। তোমার জন্যে বেচারি শান্তি পাবে না, আমি বুঝতে পারছি। ‘

ধ্রুব হতভম্ব হয়ে এক কোণে চেপে গেলো। ফারিন ক্লান্ত শরীর ছেড়ে দিয়ে বলল,

‘ তুমি কি আজ এখানে ঘুমাবে? ‘

‘ যাই করি তোর সমস্যা কি? তোকে বলবো কেন? হু আর ইউ? ‘

‘ সে-ই তোমার কাজ শেষ হয়ে গেছে তো। এখন তো আমি কোনো কাজে আসবো না। ঠিক আছে দেখবো, দরকার হলে কাকে দিয়ে কাজ করাও। ‘

ধ্রুব উঠে বসলো।

‘ বাবার থেকে জানলাম তুই নাকি প্রেমে পড়েছিস! সত্যি? ‘

ফারিন তড়িৎ গতিতে উঠে বসলো।

‘ তোমাকে বাবা জানিয়ে দিলো! ইশ..’

ধ্রুব দাঁত বের করে হাসলো,

‘ কেন অসুবিধা হলো? মাকে বলে দেই? ‘

ফারিন তৎক্ষনাৎ রুপ বদল করে ফেলেছে। ধ্রুবর গলায় ঝুলে গাল টেনে দিলো।

‘ আমার লক্ষী ভাইয়া, তুমি কতো ভালো। আমি তোমাকে নিনীকা ভাবীর একটি সিক্রেট পিক দেখাবো। দেখবে? ‘

ধ্রুবর ভ্রু কুঁচকে গেলো,

‘ কিরকম সিক্রেট পিক? ‘

ফারিন মোবাইল গেঁটে কিছু একটা বের করলো। ধ্রুবর সামনে ধরে বলল,

‘ গতকাল রাতে ভাবীর সাথে কিছু নায়ক, প্রডিউসার, সিনেমা জগতের অনেকের মিটিং হয়েছে। কি বিষয়ে জানি না, তবে সেখানে কারো যাওয়া নিষেধ ছিল জানো। আমি যে বারান্দায় ছিলাম কেউ জানতো না। হি হি, লুকিয়ে ছবি তুলে রেখেছি। দেখো। ‘

ধ্রুব ছবিটা দেখলো। সিনেমা জগতের অনেক পরিচিত মুখ সেখানে। কি বিষয়ে মিটিং হতে পারে? হয়তো সিনেমা নিয়েই। কিন্তু একটা সিনেমার জন্যে কখনো নিশ্চয়ই দু-তিন জন করে এক ক্যাটাগরির মানুষ উপস্থিত হবে না! কি জন্য মিটিং হতে পারে ধ্রুব ভেবে পেলো না। ফারিনকে বলল,

‘ এটা তোমার করা উচিত হয়নি বনু, কারো ব্যক্তিগত কিছু না জানিয়ে এভাবে প্রকাশ করা ঠিক না। সে আমি হলেও না। মিটিং টা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং সিক্রেট রাখার মতো কিছু, তুমি আর কাউকে এ ব্যাপারে বলবে না কেমন? ‘

ফারিন অবাক হয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘ ঠিক আছে ব্রো। ‘

ধ্রুব কথা ঘুরালো,

‘ ক্যাপ্টেন নিরবকে তোর সত্যিই পছন্দ? ‘

ফারিন ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

‘ তোমাকে কেন বলবো? হু আর ইউ? ‘

নিজের কথা ফিরে পেয়ে ধ্রুব হতাশ হলো।

‘ ঠিক আছে চলে যাচ্ছি। পরে যদি ক্যাপ্টেন বেবি নিয়ে এসে আমাকে বলে মেজর এটা আমার একমাত্র বাচ্চা তবে কিন্তু তুই কিছু বলতে পারবি না। ‘

‘ কিহ! ‘

ধ্রুব হনহন করে বেড়িয়ে গেছে ততোক্ষণে। ফারিন রাগে রীতিমতো ফুঁসছে৷ ধ্রুবর মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে তার।

*
রাত বারোটার পর নেট দুনিয়া উত্তাল হলো! বউ কথা কও তখন গভীর নিদ্রায়। শেখ বাড়িতে ঘুমন্ত নিনীকার সাইলেন্ট ফোনে এসে চলেছে একের পর এক ফোনকল। নিশ্চিন্তে ঘুমানো নিনীকা জানতেও পারলো না আগামীকালের সকালে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে!

ধ্রুব ভোরে উঠে শরীরচর্চা করে। সমুদ্র ও তার সাথে উঠে পড়ে। মোবাইলে চোখ রেখে মাঝেসাঝে ধ্রুবকে দেখে। ধ্রুব তখন একনাগারে বুক ডাউন দিচ্ছিলো। তখনই সমুদ্র প্রায় চিৎকার করে উঠলো।

‘ ধ্রুব সি ইজ এ চিটার! ই’উর স্টার উডবি ভাইরাল! কাম ফাস্ট ব্রাদার। ‘

ধ্রুবর বুক ডাউন থেমে গেলো। বাগান পেরিয়ে চিন্তিত হয়ে সে পাতা টেবিলের কাছের একটি চেয়ারে বসলো।

‘ কি হয়েছে? ‘

সমুদ্র ঢুক গিলে অসহায় হয়ে বলল,

‘ একদম দুঃখ পাবে না কথা দাও গুরু! সিনেমা জগতের কেউই ভালো হয়না সেটা তো তুমি জানতে তাই না? এটা এখানেই শেষ করে দাও। বিয়ে আজ হতো তবে হয়নি এখনো। তুমি বেঁচে গেছো। ‘

ধ্রুবর অবিশ্বাস্য উদ্বিগ্ন গলায় বলে উঠলো,

‘ হোয়াট! ‘

(চলবে)

বিয়ে থা_২ পর্ব-১৪

0

#বিয়ে_থা_২
#পর্ব-১৪
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

আজকে ফারিনকে শেখ বাড়ি থেকে চলে যেতে হলো। আগামীকাল থেকে গায়ে হলুদ, সুতরাং ধারার দেওয়া শর্তানুযায়ী সে আর শেখ বাড়িতে থাকতে পারবে না। সকালে ধ্রুব গিয়ে তাকে নিয়ে এসেছে। বাড়িতে আসার পর থেকে ফারিন মুখ গোমড়া করে বসে আছে। চারিদিকে আত্নীয় স্বজনের ভীড়। সবাই কাজে ব্যস্ত। ধারা মাঝে মধ্যে এটা সেটা করতে বলছেন ফারিনকে। ফারিন ইতিমধ্যে কয়েকটা ধমকও খেয়ে ফেলেছে। ধারেকাছেও ফাহিম মাহবুব কে দেখা যাচ্ছে না। ফারিনের ঠোঁট ফুলে যাচ্ছে সে যেকোনো সময় কেঁদে ফেলতে পারে।

সময় টা বিকেল। সদর দরজা দিয়ে ফাহিম মাহবুব ঢুকলেন। সাথে ধারার পরিবার। মূলত এয়ারপোর্টে এদেরই রিসিভ করতে গেছিলেন ফাহিম মাহবুব। ধারার মা বাবা বেঁচে নেই৷ ভাইয়েরা পরিবার নিয়ে বিদেশে সেটেল্ড। একমাত্র বোনের একমাত্র ছেলের বিয়ে উপলক্ষে তাদের আসতেই হলো।

বাবাকে দেখে ফারিন আচমকা কেঁদে ফেললো। আহ্লাদীর মতো দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো বুকে। ফাহিম মাহবুব আকস্মিক ঘটনায় অবাক হলেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে হায় হায় করে উঠলেন।

‘ ধারা! আমার রাজকন্যা কাঁদছে কেন! এতো লোক বাড়িতে থাকতে আমার মেয়ে কান্না করছে কেন! আশ্চর্য, কয়েকঘন্টা বাড়িতে ছিলাম না, তোমরা আমার মেয়েকে কে কি বলেছো? ‘

ধারা বিরক্তি নিয়ে তাকালেন।

‘ তোমার মেয়েকে কেউ কিছু বলতে হয় নাকি? ‘

ধারা দাঁড়ালেন না। অনেকদিন পর নিজের ভাই ও তার পরিবারকে দেখে তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ফাহিম মাহবুব সোফায় বসে মেয়েকে নিচু কন্ঠে বললেন,

‘ কি নিয়ে কান্না করেছো মা? ‘

ফারিন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ফাহিম মাহবুব মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

‘ কার উপর অভিমান করেছো? ‘

ফারিন আকস্মিক প্রশ্ন করলো,

‘ আমি কি অনেক ছোট বাবা? ‘

ফাহিম মাহবুব একটু বেশিই অবাক হলেন।

‘ আমার কাছে তুমি সবসময়ই আমার আদরের ছোট রাজকন্যা। ‘

ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে ফেললো আবারও। ফাহিম মাহবুব বিস্মিত হলেন।

‘ কি হয়েছে? ‘

‘ তুমি বাবা হয়ে যদি আমাকে ছোট বলো ওই নিরব ফিরব ছোট বোন মনে করবে না কেন? ‘

কথা বলতে ভুলে যাওয়া ফাহিম মাহবুবকে রেখে ফারিন গটগট পায়ে উপরে চলে গেলো। উপরে এসে অনেকক্ষণ পর সে বুঝতে পারলো বাবাকে এসব বলা উচিত হয়নি। বাবা নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সে যখন নিচে নামলো তখন ধারেকাছেও ফাহিম মাহবুব নেই।

ফারিন বিকেলটা আফসোস করেই কাটালো। সন্ধ্যার পর ফাহিম মাহবুব বাসায় ফিরলেন। ফারিন তৎক্ষনাৎ ঝাপিয়ে পড়েছে। বার-বার স্যরি বলেছে। অথচ তাকে আশ্চর্য করে দিয়ে ফাহিম মাহবুব বললেন,

‘ তুমি তখন কি বলেছো আমি বুঝতেই পারিনি মা, রাগ করা তো পরের বিষয়। আগে বাবাকে সেটা বুঝিয়ে বলো। তারপর ভাববো রাগ করা যাবে কি না। ‘

বাবা মেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে সোফায় বসলেন। ফারিন কাচুমাচু করতে করতে বলল,

‘ একজনকে আমার পছন্দ হয়েছে বাবা, সে আমাকে ছোটবোনের নজরে দেখে। তুমি আমাকে তখন ছোট বলেছো সেজন্য না বুঝে রেগে গেছিলাম। ‘

ফাহিম মাহবুব কিছু সেকেন্ড পরই শরীর দুলিয়ে হেসেছেন। ফারিন ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ হেঁসো না, আমি সিরিয়াস হু। ‘

মেয়ের কাঁধে হাত জড়িয়ে ফাহিম বললেন,

‘ ছেলেটা কে? ‘

‘ ভাইয়ার ওই ক্যাপ্টেন, নিরব আয়মান। ‘

‘ তোমাকে কি বলেছে? ‘

‘ বাবা, ভাবীদের বাসায় থাকতে আমি কোচিং থেকে বের হয়ে ভাবীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখন ওই ক্যাপ্টেন হঠাৎ সামনে গাড়ি থামিয়ে বলে উঠে পড়তে বাসায় পৌঁছে দিবে। আমি না করেছি সেজন্য বলেছে আমি নাকি ছোটবোনের মতোই। ‘

‘ তুমি কি বলেছো? ‘

‘ আমি কিছু বলিনি! ‘

ফাহিম মাহবুব মেয়ের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করলেন,

‘ এ বিষয়ে তুমি কি সিরিয়াস? দেখো বয়সটা আবেগের, সবকিছুই ভালো লেগে যাবে। কিন্তু আমার মেয়ে তো বুদ্ধিমান সে জানে কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয়। ‘

‘ আমি বুঝতে পারছি না বাবা। ‘

‘ মাই চাইল্ড তুমি আগে নিজের অনুভূতি নিয়ে শিওর হও। নিরব ভালো ছেলে, যদিও তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়, বাট নো প্রব্লেম এসব তেমন ফ্যাক্ট হবে না। বাবা আছি না? সময় নিয়ে ভাবো। ‘

ফারিনের চোখমুখ উজ্জ্বল হলো। ফাহিম মাহবুব বললেন,

‘ আমার কাছে তুমি সবসময়ই ছোট থাকবে। আমার মেয়ে আমার একমাত্র আদরের রাজকন্যা তুমি। তবে তোমার বয়স কয়েকদিন পর আঠারো হবে। বাহিরের সবার কাছে তুমি বড় হয়ে যাবে। ‘

‘ সত্যি? ‘

ফারিনের চোখমুখ চিকচিক করছে। সে যে কথাটা শুনে খুশি হয়েছে তা বুঝা যাচ্ছে। ফাহিম মাহবুব হাসি চেপে বললেন,

‘ এটাই সত্যি মা। তুমি তোমার অনুভূতি সম্পর্কে ভাবো। নিরবের বয়স যে পর্যায়ে আছে তাতে ওর বিয়ের তেমন দেরি নেই। সময় হাতে কম। আমার মেয়ে যদি দুঃখ পায় সেটা আমার সহ্য হবে না। তুমি শীগগির আমাকে জানাবে। ‘

ফারিন গলা জড়িয়ে ধরলো,

‘ আমার প্রিয় বাবা..’

*
সন্ধ্যা থেকে রুমে পায়চারি করছে ধ্রুব। ফারিন চলে এসেছে মানে সে আর নিনীকার কোনোরকম আপডেট পাবে না। যোগাযোগ করার কোনো রাস্তা বাকি নেই। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তাকে। খাটের উপর ধ্রুবর বিদেশ থেকে আসা দুটো সমবয়সী মামাতো ভাই বসে আছে। তারা ধ্রুবর কান্ড দেখে হাসছে৷ দুজনই বিবাহিত। তাদের মধ্যে একজন বলল,

‘ এতো অস্থির হচ্ছিস কেন? ঠিক সময়ে বিয়ে করিস নি এখন অস্থির হয়ে লাভ আছে? অপেক্ষা কর ধ্রুব অপেক্ষা কর। ‘

ধ্রুব কোণা চোখে তাকালো,

‘ খুব মজা লাগছে তোদের? ‘

‘ অফকোর্স। আমার মামাতো কাজিন তোর জন্য কতো পাগল ছিল। না তুই বেটা রাজি হলি না। সে বেচারি বিয়ে করে বিদেশে সেটেল্ড। দু বাচ্চার মা হয়ে বসে আছে। এদিকে তুই এখনও ভার্জিনটি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস! ভাবতেই আমার দুঃখ হচ্ছে তোর জন্য৷ তা মামা কোনো ব্যবস্থা করবো নাকি? যেভাবে অস্থির হচ্ছিস মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে সামনে হাজির না করলে তুই মা*রা পড়বি। ‘

ধ্রুব অসহায় চোখে তাকালো,

‘ কোনো ব্যবস্থা করতে পারবি? ওকে একটু দেখবো শুধু! ‘

ধ্রুবর মামাতো ভাই সমুদ্র হাই তুললো,

‘ ফোন করস না কেন? ‘

‘ ফোন করতে পারলে কি এভাবে অস্থির হয়ে পায়চারি করি? আমার নাম্বার ব্লক লিস্টে রেখেছেন ম্যাডাম, অধিকার পাওয়ার পর নিজে সেটা খুলতে বলেছে। ‘

সমুদ্র নিজের মোবাইল এগিয়ে দিলো।

‘ নে এটা দিয়ে ফোন কর। ‘

ধ্রুবর চোখ চিকচিক করে উঠলো। পরমুহূর্তে থেমে গিয়ে বলল,

‘ নাহ্, সে যদি অন্যভাবে নেয়? ‘

সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ তাহলে ম্যা ম্যা করা বাদ দে। এক কাজ কর নাম্বার দে আমিই কথা বলি। তুই শুধু শুনে যাবি। দেবর হিসেবে তো আমি কথা বলতেই পারি তাই না? ‘

ধ্রুব নাকচ করলো। অনুভব করলো সে মারাত্মক হিংসুটে হয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের সাথে নিনীকা কথা বলবে এটা তার সহ্য হবে না৷

রাতে খাওয়ার পর সমুদ্র হাই তুলতে তুলতে বলল,

‘ দারুণ ফেঁসে গেছিস মনে হচ্ছে, লাভ কেস নাকি গুরু?’

ধ্রুব রাগ দেখাতে গিয়ে ও হেসে ফেললো।

‘ লাভ হবে হবে ভাব। ‘

‘ সিগনাল কিরকম? ‘

ধ্রুব পাশে শুয়ে বলল,

‘ তার পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিগন্যাল আসেনি। ঝুলে আছি। ‘

(চলবে)