Saturday, August 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 106



ফিরে পাওয়া পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0

#ফিরে_পাওয়া
– মারিয়া আফরিন নুপুর
(শেষ পর্ব)

সেই প্রথম ছিল তার ঠোঁটের আলতো পরশ পাওয়া।
সারা শরীরের রক্ত ছলকে উঠছিল মাতালের মত, তাকে পাওয়ার আবেশে। এর কিছু দিন পরেই শিহাব চলে যায় ঢাকায়। মাঝে মাঝে যোগাযোগ হতো। বেশ কিছুদিন পরে বাসা থেকে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। উপায় অন্ত না পেয়ে তাকে জানিয়ে ছিলাম, আমার বিয়ে ঠিক করেছে বাবা। আসলে বাবার মুখের উপর কথা বলার সাহস কখনও হয় নি আমার। তাই শিহাব কে বলেছিলাম, আমাকে যেন তার কাছে নিয়ে যায়। উত্তর এসেছিল তার পড়াশোনা এখনও কমপ্লিট হয় নাই। নিজেই চলতে পারে না, আমাকে নিয়ে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে। তাই আমি যেন বাবাকে বলে আর কিছু দিন সময় নেই। কিন্তু বাবা আর সময় দেয় নাই আমাকে। বিয়ে দিয়ে দেয় খ্যাতনামা এক ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে।
শুরু হয় জীবনের ভয়ংকর অধ্যায়। বাসর রাতেই বুঝেছিলাম আমার মনের না; শরীর নামক জিনিসের বড়ই কদর এই লোকের কাছে।
নিজের যে একটা আত্মসম্মান ছিল সেটা ভুলেই গেছিলাম।
বুকের উপরে, গলার নিচের, বুকের উপরিভাগের দগদগে লাল দাগ গুলোই সাক্ষী দিত অত্যাচারের।
এর মধ্যেই আমার কোল জুড়ে এলো ঝিনুক।
তখন রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার অযুহাতে রুম আলাদা করে নিল সে। নিজের যখন প্রয়োজন হতো, তখন হিড়হিড় করে রুমে টেনে নিয়ে যেত। প্রয়োজন শেষ তো, ছুঁড়ে ফেলে দিত। রাস্তার পতিতাদের মত লাগত নিজেকে। হঠাৎই একদিন স্ট্রোক করে বসে ঝিনুকের বাবা। তিনদিন যমে মানুষে টানাটানি করার পরে আর বাঁচানো গেল না তাকে…

মুয়াজ্জিন এর আজানের শব্দ কানে আসতেই চোখ খুলে ফেললাম। কখন যে সকাল হয়েছে টেরই পাই নাই।
উঠেই ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ঝিনুককে উঠিয়ে নাস্তা করালাম। বুয়াকে ঘর সামলাতে দিয়ে মা মেয়ে চললাম স্কুলে। বাসা থেকে বের হতেই দেখি শিহাব সামনে দাঁড়িয়ে। ক্রিম কালার আর ব্লু কালারের ব্লেন্ড পাঞ্জাবিতে কেমন যে তাকে দেখাচ্ছিল বুঝাতে পারব না।
শুধু এতটুকুই বলতে পারব যে, চোখ ফেরানো দায়।
তাকে দেখে এগিয়ে গেলাম। ঝিনুকের হাত ধরে দাঁড়ালাম শিহাবের সামনে। মেয়েটাকে দেখেই বলল ‘এটা তোমার মেয়ে দেখলেই বোঝা যায়। অবিকল তোমার মত হয়েছে।’
তখনই ঝিনুকের প্রশ্ন,
___ ‘মা মনি উনি কে?’
আমি উত্তর দেওয়ার আগেই ঝিনুককে শিহাব টেনে নিয়ে বলল,
___’আমি তোমার আম্মুর ফ্রেন্ড আর তোমার আংকেল।’
মেয়েটা আমার সবার সাথে মেশে না, কিন্তু কেন জানি না শিহাবকে জড়িয়ে ধরে বলল, ___’আংকেল আমি শুক্রবার বাসায় থাকি, তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবে।’
শিহাব ও সানন্দে রাজি হয়ে গেল।

পরের শুক্রবার সকাল থেকেই রান্না ঘরে ঢুকলাম।
বুয়া আর আমি মিলে রান্না শুরু করলাম। শিহাব পুডিং খুব পছন্দ করে তাই পুডিং, নুডুলস, পাকোড়া আর দুই এক পদের নাস্তা বানালাম। সে কখনোই বেশি ভারি খাবার খেত না। তাই পুরোদস্তুর বাঙালিয়ানা খাবার রান্না করলাম। ছোট মাছের চচ্চড়ি, বেগুন ভাজি, মুসুড়ের ডাল, সাদা ভাত, গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ ভুনা আর লাউ চিংড়ি।
রান্না শেষ করতে করতে প্রায় ১২ টা বেজে গেল।
শিহাব এলো নামাজের পরে। হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা ফুল আর দুটো গিফট বক্স। রাগ দেখিয়ে বললাম এত তাড়াতাড়ি আসার কি দরকার ছিল? আর একটু দেরি করে আসলেই তো রাতের খাবার খেতে পারতে। মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘অনেক খুঁজে পেয়েছি আর হারানোর ইচ্ছা নেই।’
ঝিনুককে ডেকে নিয়ে আসলাম। তিনজনে মিলে খেতে বসলাম। এত খাবার দেখে তো শিহাবের মাথায় হাত!
বলল, ‘করেছ কি এত এত খাবার!!!’
পরম তৃপ্তিতে তাকে খেতে দেখে শুধু চোখ না মনটাও জুড়িয়ে গেল আমার।
‘কি ব্যাপার শিমু, তুমি খাচ্ছ না কেন?’
শিহাবের প্রশ্নে যেন ধ্যান ভাঙল আমার।
বললাম পেট ভরে গেছে। খাওয়ার পরই ঝিনুকের ঘুমের অভ্যাস। ওর আংকেলকে বলে ও ঘুমাতে চলে গেল।
আমি শিহাবকে আমার রুমে নিয়ে আসলাম। ঘুরে দেখে বলল,
___ ‘শিমু তোমার রুমটা তো তোমার মতই গুছানো।’
বিছানা দেখিয়ে বললাম একটু রেষ্ট করে নেও।
___’এখন আর বসব না। পরশু পহেলা বৈশাখ তোমাকে আর ঝিনুককে নিয়ে ঘুরতে যাব মেলায়, রেডি থেকো।’
এই বলেই বের হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনও ছিল না আমার কাছে যে, আমি রাজি কি না!
র‍্যাপিং পেপার মোড়ানো বক্স গুলো খুলতেই, সোনালি আর কালোর মিশেলে সুন্দর একটা জামদানি শাড়ি পেলাম। ছোট্ট একটা চিরকুটেও ছিল সাথে লেখা
“প্রিয়জনকে, তার হারিয়ে যাওয়া কাছের মানুষ”।
চিরকুটটা পড়ে এক অন্য ভালো লাগায় মনটা ভরে গেল।
আবার কেন জানি না ভয়ও লাগছিল।
মনটা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিল, আমি কি ঠিক করছি???

বৈশাখী মেলার দিন দুপুরের পরেই শিহাব আমাদের বাসায় চলে এলো। তাকে একটু বসতে বলে মা মেয়ে রেডি হতে চলে গেলাম। শিহাবের সেই শাড়িটা পরে হালকা একটু সাজলাম। চুলগুলো হাত খোঁপা করে নিলাম আর কপালে ছোট একটা কালো টিপ দিলাম।
ঠোঁটে হালকা করে লিপবাম লাগিয়ে যখন ড্রয়িংরুমে আসলাম, দেখি শিহাব আর ঝিনুক দুই জনেই হা করে চেয়ে আছে আমার দিকে।
ঝিনুক দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলল, ___’মামনি তোমাকে কত্ত সুন্দর লাগছে তুমি নিজেও জানো না’।
শিহাবের দিকে তাকিয়ে দেখি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে।
বললাম,
___”যাবে না নাকি?? ”
ঘোর লাগা চাউনি নিয়ে বলল,
___ ‘নতুন করে সব শুরু করতে চাই আবার’।
যখন আবার প্রশ্ন করলাম, কিছু না বলে এড়িয়ে ঝিনুককে কোলে নিয়ে আগে আগে চলল।
সামনে যেয়ে আবার পিছনে এগিয়ে এসে সাদা পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা রক্তলাল গোলাপের কুঁড়ি হাতে দিয়ে বলল, ___”খোঁপায় দিও। ফুল ছাড়া খোঁপা খালি দেখাচ্ছে।”
সারা বিকেল মেলায় ঘুরলাম, সন্ধ্যায় ফুসকা-ঝাল মুড়ি খেয়ে বাসায় আসলাম। ঝিনুককে একগাদা খেলনা কিনে দিয়েছে শিহাব। মানা করার পরেও শোনে নাই।
শিহাবকে দেখে ভুলেই গিয়েছিলাম যে, এটা একটা মফস্বল শহর। দুইদিন পরে আম্মু আর ছোট বোন আসলো। দুজনেই আমতা আমতা করতে লাগল। জিজ্ঞেস করলাম,
___” কি হয়েছে? ”
তারপর আস্তে আস্তে শিহাবের কথা জানতে চাইল। আম্মুর কথা ছিল, আমি যেন আমার সংসার শুরু করি। কিন্তু ঝিনুকের কথা ভেবে আম্মুকে মানা করে দিয়েছিলাম।

বেশ কিছুদিন শিহাবের কোন খবর নেই। আমিও আর কোন খোঁজ নেই নি। মিছে মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?
স্কুল বন্ধ ছিল, ঝিনুক ওর নানুর বাসায় গিয়েছে।
বুয়াকে পাঠিয়েছি আনতে। বুয়া যেই দরজা চাপিয়ে বের হয়েছে সেই শুরু হল অঝোর বর্ষন। মন জানি কেমন করে উঠলো। সোজা চলে গেলাম ছাদে। বৃষ্টি বরাবরই ভীষন প্রিয় আমার। বাচ্চাদের মতো বৃষ্টি পেলে পাগল হয়ে যাই। বৃষ্টিতে ভিজেছি কতক্ষন খেয়াল নেই। হঠাৎই দেখি ছাদের দরজায় শিহাব। তাকে দেখেই মনটা কেন জানি না অজানা ভালো লাগায় ভরে গেল। হাত দিয়ে ইশারা করে শিহাব ডাকল আমাকে। কাছে যেতেই বলল,
___’বৃষ্টিতে ভিজতেছ জ্বর আসবে তো, এক্ষুনি নিচে নেমে গোসল করে নেও।’
চলে আসলাম নিচে।
গোসল করে বের হলাম, হালকা গোলাপি পাড় কালো শাড়ি আর গোলাপি ব্লাউজ পরে। এসে দেখি তখনও ভিজে শরীর নিয়ে বসে আছে। টাওয়াল এগিয়ে দিয়ে বললাম,
___” মাথা মুছে ফেলছ না কেন?”
শিহাব অভিমানের সুরে বলল
___’মুছিয়ে দিলেই হয়'”
হাতে তোয়ালে নিয়ে মাথা মুছে দিতে দিতে বললাম,
___” একটা বিয়ে করে নেও। ”
হালকা হাতে কোমর ধরে কাছে টেনে নিল সে,
___” ‘অনেক আগেই অন্য কারো হয়ে গেছি, চাইলেও এখন আর অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব না।”
এই বলেই বুকে মুখ গুজল আমার। তার উষ্ণ নিশ্বাসে বুকটা পুড়ে যাচ্ছিল।
মন সায় দিচ্ছিল বারবার কিন্তু আমিত্ত্ব সত্ত্বাটা বিদ্রোহ করে উঠল।
হাতের ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম তাকে। মানুষটা উঠেই মাথা নিচু করে চলে গেল সেই ঝুম বৃষ্টিতে। বারবার ইচ্ছা হচ্ছিল হাতটা ধরে ফিরিয়ে আনি, কিন্তু হাতটা যে বাঁধা ছিল।

প্রায় তিন চারদিন যাবত খোঁজ নেই শিহাবের।
না ঘুমাতে ঘুমাতে চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে। ঝিনুক একদিন সকালে গুঁটি গুঁটি পায়ে আমার রুমে এলো। কোলে মাথা দিলে বলল,
___ ‘মামনি কিছু কথা বলি?’
মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
___” হ্যাঁ মামনি বলো। ”
___’মামনি আমি কিন্তু জানি তুমি আংকেলকে পছন্দ করো, আংকেলও তোমাকে পছন্দ করে। নানুমনি বলেছে আমাকে। তাহলে কেন তুমি আংকেলকে আমাদের বাসায় আসতে মানা করেছ??'”
মেয়ের এই কথা শুনে আমি থরথর করে কেঁপে উঠলাম।
মেয়েটা আবার বলতে লাগল,
___ ‘মামনি তুমি আংকেলকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসো, এক্ষুনি যাবে না হলে আমি আর কথা বলব না তোমার সাথে। সবই ঠিক আছে কিন্তু আংকেলকে আমি বাবাই বলে ডাকব কি করে?’
এই বলে হেসে কুটি কুটি হতে লাগল ঝিনুক।
জড়িয়ে ধরে বললাম,
___”তবে রে পাজি মেয়ে।”

শিহাবের দেওয়া শাড়ি পরে, মাথার খোঁপায় ফুল গুজে আস্তে আস্তে গেলাম শিহাবের বাসায়। কলিংবেল টিপ দিতেই দরজা খুলল মাঝবয়সী এক লোক। শিহাবের কথা জিজ্ঞেস করতেই অন্য একটা রুমে নিয়ে গেল সে।
কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে শিহাব। লোকটা বলল গতকয়েক দিন যাবত জ্বর। কিছুই খায় না চুপ করে পড়ে থাকে। আস্তে করে ডাক দিতেই উঠে বসল শিহাব। শুকিয়ে গেছে অনেক খানি। আমাকে দেখেই চুপ করে মাথা নিচু করে বসল। মাথার চুলে আঙুল বুলিয়ে বললাম,
___” খাও না কেন? ”
অজানা এক অভিমানে আমার দিকে চেয়ে বলল,
___ ‘আমি ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করেছি, এই শহর ছেড়ে তোমাকে ছেড়ে আবার অনেক দূরে চলে যাবো।’
আমি বললাম,
___”ঝিনুক তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে। ”
চোখ তুলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ‘তোমার ফ্যামিলি, ঝিনুক এরা কি বলবে?’
শুধু বললাম,
___” ঝিনুক তোমাকে আংকেল থেকে বাবাই কি করে বলবে তা নিয়ে ভীষন টেনশনে আছে।”
এই বলেই তার বুকে মুখ লুকোলাম।
আর শিহাব দুই হাতের বাধঁনে জড়িয়ে বলল ‘,”হারিয়ে আবার ফিরে পেয়েছি তোমাকে, আর কখনোই হারাতে দেবো না।”

সমাপ্ত

ফিরে পাওয়া পর্ব-০১

0

#ফিরে_পাওয়া
– মারিয়া আফরিন নুপুর
(১ম পর্ব)

বইগুলো সারারাস্তায় ছড়িয়ে পড়ল ধাক্কা লেগে।
ভেবেছিলাম মাথা উঁচু করে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দেবো।
কিন্তু চোখ তুলে মুখের দিকে তাকাতেই বরফের মত জমে গেলাম।
আরেক জোড়া চোখ যে আমার মুখের দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে। এই সেই চোখ জোড়া, যার দিগন্ত ছড়ানো মায়ায় আমি হারিয়ে ছিলাম।
___’কি ব্যাপার শিমু, তুমি এখানে?’
এই বলেই শিহাব হাঁটু ভেঙে আমার সাথে বই উঠাতে লাগল।
আমি তখনও অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
___’তুমি কি রাস্তায়ই বসে থাকবে নাকি শিমু?’
মুচকি হেসে বলল সে।
সম্বিত ফিরে পেতেই বই তাড়াতাড়ি গোছাতে লাগলাম। বই উঠানো শেষে দাঁড়িয়ে পড়লাম দুজনেই। এই প্রথম আমি কথা বললাম,
___” তুমি এখানে? কবে আসলে?”
শিহাব উত্তরে বলল,
___ ‘এসেছি সপ্তাখানেক হল, সরকারি কলেজের সহকারী ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে জয়েন করেছি’
বলল উনি।
___”আমি এখানেই স্কুলে জয়েন করেছি প্রায় সাত বছর হল।”
___ “এখানে তো রিক্সাও পাবো না।”
___ ” সামনে আর একটু হাঁটলে পেতে পারো। ”
এই বলেই আমি হাঁটা শুরু করলাম।
আমার পাশাপাশি সেও হাঁটতেছে। হঠাৎ তার সেই বিখ্যাত হাসির আওয়াজ আসল কানে। থেমে বললাম,
___” হাসছো কেন?”
আমার দিকে ঘুরে শিহাব বলল,
___” ‘আচ্ছা শিমু বলতো, কত বছর পরে আমাদের দেখা?আগে যখন দেখা হত, তুমি তো অস্থির হয়ে যেতে ভয়ে। কে কখন দেখে ফেলবে!'”
চোখ কুঁচকে বললাম,
___”এই হলো তোমার হাসির কারণ? আচ্ছা তুমিই বল, কতদিন পরে দেখা আমাদের?”
___”‘আট বছর তিন মাস বারো দিন পরে দেখা।”
এই বলেই দুই পকেটে হাত দিয়ে উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল সে।
স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষন রইলাম। পরে কথা খুঁজে না পেয়ে বললাম,
___” আচ্ছা এখন আছো কোথায়? ”
___ “এই তো কলেজের পাশেই একটা বাসায় উঠেছি। একজন লোক রেখেছি রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সব কাজ ওই করে।”
তার উত্তর শুনে আরেকটা প্রশ্ন করার লোভ সামলাতে না পেরেই বললাম,
___”বউ কে এখানে আনো নি?”
উত্তর না দিয়েই শিহাব হাঁটতে শুরু করল।
একটু পরেই আমার বাসার সামনে চলে আসলাম,বললাম,
___”চলো আমার বাসায়। ”
অন্যদিন আসবে কথা দিয়েই, সোজা রাস্তায় হাঁটা শুরু করল সে।

আমার বাসাটা খুব বড় জায়গা নিয়ে না। একতলা বিল্ডিং, বেশ খানিকটা ঘিরে বাউন্ডারি ওয়াল দেয়া। সামনেই বেশ বড় একটা উঠানের মতো। মফস্বল শহর গুলোতে যেমন হয় আর কি। মেইন গেটের সামনেই বিশাল কামিনী ফুলের ঝাড়। বাসায় ঢোকার রাস্তার দুই পাশে গোলাপ আর গাঁদা ফুলের গাছ। আসলে বাসাটা আমি আমার মত করেই সাজিয়েছি। অতি চাকচিক্য কখনোই আমার ভালো লাগে না। তাই সব কিছু সাদাসিধে রাখতেই ভালোবাসি।
বাসায় ঢুকেই ডাক দিলাম ঝিনুককে। ঝিনুক আমার মেয়ে, এবার সাড়ে ছ’তে পড়েছে,ক্লাস টু এ পড়ে। বাসায় ও আর আমার এক দূরসম্পর্কের খালা থাকে। বলতে গেলে উনিই ঝিনুককে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। খালাকে জিজ্ঞেস করলাম,” ঝিনুক কই?” খালার উত্তর দিল রুমেই আছে।
দরজা হালকা ফাঁকা করে দেখলাম মামনিটা মন দিয়ে ড্রইং করছে। আস্তে করে চলে আসলাম নিজের রুমে।

রাতে খাওয়ার পরে মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের রুমে আসলাম। সমরেশ মজুমদার বরাবরের মতই আমার প্রিয় লেখক। তার ‘সাতকাহন’ বইটা নিয়ে বারান্দায় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলাম। পাতা উল্টাচ্ছি কিন্তু চোখের সামনে যেন আজ থেকে দশ বছর আগের ছবি সেলুলয়েড ফিতার মত একের পর এক সামনে আসছে।
তখন সবে ইন্টার পাশ করে বাংলা নিয়ে অনার্সে ভর্তি হয়েছি। নবীন বরন অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্টেজের মাঝামাঝি সারির চেয়ারে বসে আছি। প্রিয়া ফোনে ছবি তুলছিল। ইচ্ছা না থাকা স্বত্তেও দাঁত কেলিয়ে পোজ দিতে হচ্ছিল। হঠাৎই ভরাট গলার আওয়াজ আসলো। সবার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। সামনে চেয়ে দেখি পাক্কা পাঁচ ফুট এগারোর কম হবে না, মাথায় একরাশ চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, একহারা শরীর, ডিপ ব্লু পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা পরে অনুষ্ঠান উপস্থাপন করতে আসছে একটা ছেলে।
প্রথম দেখায় যারে বলে প্রেমে পড়ে গেছিলাম।
পাক্কা সাড়ে তিন ঘন্টার অনুষ্ঠানে কি হয়েছিল না হয়েছিল বলতে পারব না কিন্তু উপস্থাপক কি করেছে না করেছে সব মুখস্ত বলে দিতে পারব।
পরে জানতে পেরেছিলাম, নাম তার শিহাব।
ফুটবল খেলত কলেজের হয়ে। ইংলিশ ডিপার্টমেন্টর তুখোড় স্টুডেন্ট ছিল।
বিতর্ক থেকে শুরু করে কলেজের সব ফাংশনে তার উপস্থিতি ছিল বাধ্যতামূলক।
সে নাই মানে অনুষ্ঠান বন্ধ। এমন করেই যাচ্ছিল দিন।
মাঝে মাঝে কোন কারন ছাড়াই ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট এর সামনে অহেতুক ঘোরাঘুরি করতাম, শুধু তারে একপলক দেখার জন্য। এমন করেই চলে গেল প্রথম বর্ষটা।
আমার এই একতরফা প্রেম কাহিনী কি করে যেন প্রিয়া জেনে গেল। কতক্ষন রাগ করল কতক্ষন বকা দিল। পরে জিজ্ঞেস করল আমি শিহাব ভাইকে বলেছি কি না যে, আমি তাকে পছন্দ করি। মিনমিনিয়ে বললাম, এটা কি বলার কোন বিষয় নাকি?

প্রিয়া সাপের মত ফোঁস করে বলল, “তুই মনে মনেই মন কলা খেয়ে যা।”‘ এই বলেই আল্লাহর বান্দা আমাকে ফেলে সোজা হাঁটা শুরু করল।
আমি তখনও থ হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, এত রাগের কি বললাম আমি? পরের শুক্রবার প্রিয়া এসে আমাদের বাসায় হাজির। এসেই আম্মুকে তেল মাখতে শুরু করল যে আমাকে নিয়ে যাবে ওর সাথে ওদের বাসায়।
আম্মু প্রথমে রাজি না হলেও পরে, প্রিয়ার চাপাচাপিতে রাজি না হয়ে উপায় ছিল না। তখন আমার আর প্রিয়ার খুশি দেখে কে!
আমাকে বলল, ‘দোস্ত খুব সুন্দর করে রেডি হবি আজকে, যাতে তোরে দেখলে পরীও লজ্জা পায়।’
ওর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললাম, ___”পরীরা যদি আমাকে দেখে লজ্জা পায় সেটা খুব টেনশনের ব্যাপার।তাদের বয়ফ্রেন্ড জ্বিনরা, ওদের রেখে আমার সাথে ডেটিং মারবে। ”
এই কথা বলার পরে ও খিল খিল করে হেসে দেয়।
হালকা গোলাপি রঙ এর জামা আর সাদা ওড়না পাজামা পরে যখন চুল খুলে এসে দাঁড়ালাম প্রিয়া দেখেই বলল,
___’ওরে শিমুরে! তুনে তো মুঝে মার ডালা! একদম গোলাপের মত লাগছে তোকে।'”
চোখ কুঁচকে বললাম,
___তুই কি যাবি? নাকি আম্মুর মত ঘুরে যাওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবি?
তাড়াতাড়ি দুইজনে প্রিয়াদের বাসায় আসলাম।
আন্টির হাতের মজার মজার খাবার খেয়ে দুপুরে দুজন অনেক মজা করলাম। বিকালে হঠাৎই প্রিয়া বলল,
___’শিমু আমাদের ছাদে যাবি? খুব ভালো লাগবে তোর।”
আমি রাজি হয়ে বললাম,
___” চল এক্ষুনি চল। ”
ও আমাকে বসতে বলে কই যেন গেল… একটু পরেই লাফাতে লাফাতে এসে বলল, ___”‘চল চল, তুই এখনও বসে আছিস কেন? ছাদে যাব চল।”
দুই জনে ছাদে যাওয়ার জন্য উঠতেই ও বলল,
___”‘তুই ছাদে যা আমি আম্মুকে চা দিতে বলে আসি।”

আমি আস্তে আস্তে ছাদে এসে দাঁড়ালাম। দেখলাম কার্নিশ ঘোরানো কোমর অব্দি উঠানো দেওয়াল। পুরোটাই গোলাপের টব দিয়ে ঘেরা। অনেক গোলাপ আর গোলাপের কুঁড়িও আছে। একটা গোলাপের কুঁড়ি দেখে এতটাই ভালো লাগল যে, সোজা আলতো করে কুঁড়িটাকে ধরে গালের সাথে লাগালাম। মুখ যখনই ঘুরিয়েছি হঠাৎই দেখি ছাদের কোনায় কে জানি দাঁড়য়ে আছে। সোজা হয়ে তাকে দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না! এ তো দেখি শিহাব!
সাদা শার্টের স্লিভ ভাঁজ করে কনুই পর্যন্ত উঠানো, কালো প্যান্ট। এলোমেলো চুল, মুখে সেই খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে উদাস মনে।
তখনই মনে হলো, আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? উনি এখানে কেন? ঘুরেই বলতে গেলে ছোট খাটো এক ম্যারাথন দৌড় দিলাম। ওই দিন হয়ত উসাইন বোল্টও আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করলে হেরে যেত। কিন্তু সিঁড়ির ঘরে যেয়েই হার্ড ব্রেক কষতে হল। রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়া।
___”‘কি হয়েছে, ভূত দেখেছিস নাকি তুই?”‘ বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললাম,
___” ছাদের কোনায় কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। ”
প্রিয়া টানতে টানতে আমাকে নিয়ে গেল। এসে দাঁড় করালো শিহাবের সামনে। তখন বুঝলাম যে, আমি সত্যিই দেখেছি এটা শিহাবই।
প্রিয়া যখন টেনে আমাকে তার সামনে নিয়ে আসলো, সে তখন হাসতেছে আর আমি লজ্জায় মনে মনে বলছি, হে ছাদ তুমি দ্বিখণ্ডিত হও আমি নিচতালায় চলে যাই!
___”‘শিহাব ভাইয়া শিমু না অনেক কিছু তোমাকে বলতে চায়, কিন্তু বেচারীর বলার সুযোগই পায় না।”
এই বলেই খিল খিল করে হেসে উঠলো প্রিয়া।
পরে ‘চা আনি’ বলেই ঘুরে চলে গেল।
মনে মনে বকছিলাম প্রিয়াকে, চা আনতে কয় বার যেতে হয়? আস্তে আস্তে শিহাব আমার একদম সামনাসামনি এসে দাঁড়িয়েছিল। বুঝতে পারছিলাম মাতাল মাতাল এক জোড়া চোখ আমাকে গভীর ভাবে দেখছে।
চোখে না দেখলেও সেই চাহনির তীব্রতায় আমি পুড়ে যাচ্ছিলাম।
___”‘এই মেয়ে, যাকে এত ভালোবাসো অন্তত একবার বলতে তো পারো নাকি? অহেতুক ইংলিশ ডিপার্টমেন্টর সামনে ঘোরাঘুরি, ডিবেট ক্লাবে না থেকেও দৈনিক হাজিরা, এতই যখন ভালোবাসো বললেই পারো।”
আমি তখনও মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে আছি। সে ধীর পায়ে আরো এগিয়ে এলো, ফিস ফিস করে কানের কাছে বলল,
___”‘এত সুন্দর একটা মেয়ে যদি প্রতিদিন সামনে ঘোরাঘুরি করে, আমি তো ভালোই দেবতারাও চোখ ফেরাতে পারবে না। কেন জানি না আজকে গোলাপের চে’ও সুন্দর লাগছে তোমাকে। এখনও কি চুপ থাকবে, নাকি কিছু বলবে?'”
তখন আমার কাছে মনে হচ্ছিল খুব বড় একটা ভূমিকম্প হচ্ছে আর বিল্ডিং সহ নড়তেছে খুব জোরে জোরে।
মনে আছে শুধু এটুকুই বলতে পেরেছিলাম যে, “আমি পানি খাবো।” এই ছিল আমার ভালোবাসার প্রথম দিন।

এরপরে কলেজ ক্লাসের ফাঁকে, ছুটির পরে দেখা হত।
অত কথা তো হত না কিন্তু দুজন দুজনার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
ভালোবাসার প্রতিটা কথা, বেশিরভাগ চোখ দিয়েই আদান প্রদান হত। মফস্বল শহর, যদি আব্বু শুনতে পায়, এই ভয়েও খুব বেশি কথা বলতাম না।
এমন করেই যাচ্ছিল দিনকাল। দেখতে দেখতে শিহাবের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। মাস্টার্স কমপ্লিট ঢাকায় করবে। পয়লা ফাল্গুনের দিন প্রিয়া এসে হাজির।
আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে বাইরে। আম্মু বারবার বলছিল আব্বু শুনলে রাগ করবে। প্রিয়া কিভাবে জানি আম্মুকে রাজি করিয়ে ফেলে আবার।
সেদিন বাসন্তী কালারের শাড়ি পরেছিলাম বাসন্তী কালারের ব্লাউজের সাথে।
কপালে লাল টিপ, মাথায় হালকা হাতে একটা এলো খোপা। হাতে পরেছিলাম লাল কাঁচের চুড়ি। আমাকে দেখে প্রিয়া হাঁ করে চেয়ে বলেছিল, ‘শিমু করেছিস কি, বেচারা ঢাকা যাচ্ছে পড়তে তার মাথাটা খারাপ না করলেই কি নয়?’
চোখ মটকে বলেছিলাম, “যাবি, নাকি পুলিশ ডাকবো?”
দুই বান্ধবী রিক্সা নিয়ে কাঠেরপুলে আসছিলাম। পরে আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকি। একটু হাঁটার পরেই দেখি শিহাব ঢেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ব্লাক শার্ট আর হোয়াইট প্যান্ট পরে। পায়ে ব্ল্যাক স্নিকারস। শার্টের হাতা বরাবরের মতই একটু গোটানো।
হাতে রিষ্টওয়াচটা দেখলে মনে হয় শুধু তার জন্যই বানানো হয়েছে।
প্রিয়া আমাকে ঠেলে দিয়ে বলল, তুই যা আমি আছি।
গুঁটি গুঁটি পায়ে তার সামনে যেয়ে দাঁড়ালাম আমি।
আমাকে দেখেই সে এগিয়ে আসলো, আমার যেন হার্টবিট বন্ধ হয়ে আসছিল। কাছে আসতেই পারফিউমের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে উঠল আমার চার পাশ।
হাত ধরে বলল, ‘”চলো সামনে যেয়ে বসি।'”
হাঁটতে হাঁটতে কিছু দূর আসলাম। একটা বড় পুকুরের মতো। তার কিনারে বসতে যাব এমন সময় থামিয়ে দিল সে, পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে বিছিয়ে দিয়ে বলল, “এখানে বসো।”
দুজনেই বসে চুপ করে আছি অনেক্ষন।
সে হাসি দিয়ে বলল,
___” ‘আমি কি তোমার নিরবতা শুনতে এখানে এসেছি না কি?'”
আমি যখন মুখ তুলে তাকালাম, তখন আমার চোখ ভর্তি পানি।
___” ঢাকাতে অনেক অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে। তুমি ওখানে গিয়ে আমাকে ভুলে যাবে না তো?”
হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে সে। টের পাই কপালে তার উষ্ণ ঠোঁটের আলিঙ্গন। শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেই স্পর্শ যেন অনুভব করছিল। সে এক অন্য অনুভূতি।
___”নিজেকে হয়ত ভুলে যাবো, তোমাকে কখনও না। মাত্র তো দুই বছর এরপরেই চাকরি পেয়ে তোমাকে আমার করে নেবো।”
‘ এই বলেই বড় এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে।
পকেট থেকে একটা আধফোটা গোলাপ কুঁড়ি বের করে খোঁপায় গুজে দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল
“‘আমার জন্য অপেক্ষা করো…”

চলবে।

পাতা ঝরা বৃষ্টি পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0

#পাতা_ঝরা_বৃষ্টি
#অন্তিম_পর্ব
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

দিদার মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে তাদের বড় সোফা রুমে।রেহানা বানু ও দামিনী বেগম মুখে ভাতের সব আয়োজন করছে।

“খাবারের আয়োজন আরো বেশি করে করো ছোট মা মামি। মিষ্টির পরিমাণ টাও বেশি রেখো।কারণ আরো একটা সু-খবর শুনলে তোমাদের কারো কারো হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে।

হঠাৎ বলা এই কথায় চমকে যায় দামিনী ও রেহানা।এটা তো ইকরা।সাথে জামাই ও আছে।নিজের স্বামীকে দেখেও অবাক হয় রেহানা বানু।তখন এতো করে বলার পর ও যেই মানুষ টা তাদের সাথে আসেনি সেখানে মেয়ে জামাই সহ এখানে হাজির হয়েছে মানে বড় কোনো কারণ আছে।কিন্তু কি সেই কারণ। তাহলে কি সব কিছু ইকরা জেনে গেছে।ভাবতেই পিলে চমকে উঠলো রেহানা বানুর।

দামিনী বেগম রেহানার কানে কানে বললো-
” ভাবি আপনি তো বললেন ভাইজান আসবেন না।কিন্তু এখন তো মেয়ে জামাই নিয়ে হাজির।

“আমিও সেটাই ভাবছি। কি হয়েছে বলুন তো।

” সেটা আমি কি করে বলবো আপনি যেখানে আমিও তো সেখানেই।দেখি জিগ্যেস করে।আপনিই জিগ্যেস করুন না একবার।

“কি ব্যাপার ইরার বাবা তুমি তো বললে আসবে না। আর এখন মেয়ে জামাই নিয়ে হাজির হলে যে!

” এলাম তোমার খবর নিতে।কারণ এখানে বড়সড় পর্দা ফাঁস হবে বুঝলে ইরার মা।

“পর্দা মানে এখানে কি পর্দার দোকান বসেছে নাকি ভাইজান।কি ধরনের মজা করেন না আপনি।

” না ভাবি এটা একদমই মজা না।

“বাবা আমি কথা বলছি।মামি ডক্টর মিশ্মি তোমার কথা বলছিল জানো তো।জানতে চেয়েছে তুমি কেমন আছো।শুনলাম তুমি নাকি তার সাথে অনেক দিন হলো দেখা করো না?

” হ্যাঁ তা তো করিই না।

“ভাবি এটা আপনি কি বলছেন।আপনি আমি কোনো মিশ্মিকে চিনি না।

” আমি তো একদম ভুলে গেছিলাম ভাবি।ইশ মনের ভুলে খুব বড় ভুল করে ফেলেছি।এবার কি বলবো।

“কিছু একটা তো করতেই হবে নয়তো আমরা খুব বড় ফাঁসা ফেসে যাব।

” তুই কার কথা বলছিস বলতো ইকরা।আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

“নিজের বান্ধবীকে ভুলে গেলে কি করে চলবে মামি?তোমরা দুজনে মিলে আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছিলে।কেন করলে এমন? আমাকে তোমার পছন্দ নয় এটা সরাসরি কেন বলনি?আমি নিজে থেকে সরে যেতাম।এতোগুলো বছর তোমাদের কথা বিশ্বাস করে আমি অন্য কোনো ডক্টর দেখাইনি পর্যন্ত। ভুল করেছি আমি।অনেক বড় ভুল।

” মা তোমরা কি নিয়ে কথা বলছো বলবে?কি করেছো তোমরা ইকরার সাথে?

“দিদার তুই ঘরে যা।আমরা কথা বলছি।

” কেউ কোথাও যাবে না মামি।যা হবে সবার সামনে।

“ইকরা কি হয়েছে বল আমাকে।

” তার আগে বলো মামা কোথায়।অনকে দিন মামাকে দেখি না।

“আমি এখানেই আছি।সব শুনেছি আমি।তোর বাবা সব বলেছে আমায়।আমি ভাবতে পারছি না দামিনী তুমি এতো নিচে নামতে পারো।

” বাবা তুমিও জানো।আসলে এখানে কি হচ্ছে তোমরা বলবে আমায়?

তারপর ইকরা একে একে সবকিছু বিস্তারিত বললো দিদারকে।যা শুনে দিদার একেবারে ভেঙ্গে পরেছে।

“মা এসব কি সত্যি!

” আমি আসলে। দিদার বলছি বাবা আমরা এসব নিয়ে পরে কথা বলবো।তুই ঘরে যা।

“কেন এসব করলে মা।তুমি নিজের ছেলের সাথে এটা কেন করলে।তোমার জন্য আমি ইকরাকে ঠকিয়েছি মা।শুধু তোমার জন্য।

“আপা আমরা মনে হয় ধরা পরে গেছি।আর কোনো উপায় নেই।ইরার বাবা আমাকে মেরেই ফেলবে।

” ইকরা যা কিছু করেছি তার জন্য ক্ষমা করে দে মা।আমি অনেক বড় ভুল করেছি।কিন্তু তুই তো অসুখি নেই তাই না।এই যে এতো ভালো স্বামী পেয়েছিস।এতো ভালো সংসার। তাহলে কেন পুরনো কথা টানসিছ।ছাড় না মা এসব।আয় দুপুরের খাবার টা খেয়ে নিবি।এসেই যখন গেছিস তাহলে খেয়েই যা।জামাই তুমিও এসো।

এই বলে দামী বেগম ইকরাকে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু ইকরা তার যায়গা থেকে এক পা ও নড়ে না।

“কি হলো চল না।

“তুমি জানো মামি সেদিনের পর আমি ঠিক করে ঘুমোতে পারিনি?ঠিক করে খেতে পারিনি।তোমার কথা বাদই দিলাম।এই যে আমার মা।জন্ম দেয় নি ঠিকি কিন্তু সম্পর্ক টা তো মা মেয়েরই।আমি ওনাকে মা ছাড়া কখনো অন্য চোখে দেখিনি।অথচ উনি আমাকে জীবিত থাকা অবস্থায় মরন যন্ত্রণা দিয়ে দিয়েছে।এই সব কিছু ভুলে তুমি আমাকে খাবার খেতে বলছো মামি। কি করে ভুলবো আমি এসব?এতো সহজ ভুলে যাওয়া?
একটা কথা তো ঠিকই বলেছো আমি সত্যিই অনেক সুখে আছি।আর একটা ভালো খবর কি জানো মামি আমি মা হতে চলেছি।

” কিহ!

“হ্যাঁ। এই সত্যি টা মিথ্যে বানানোর জন্যই এতো কিছু করলে কিন্তু দেখো সেই মিথ্যে আর টিকলো না।তোমরা আমার উপকারই করেছো তুমি যদি এই কাজটা না করতে মামি তাহলে তোমার ছেলে যে মুখোশ টা পরে থাকতো সেই মুখোশের আড়ালে থাকা মানুষ টাকে আমি চিনতেই পারতাম না

” এসব তুমি কি বলছো ইকরা।সবটাই তো জেনেছো।এখানে আমি ইচ্ছাকৃত কিছুই করিনি।আমি পরিস্থিতির।

আর কিছু বলতে দিলো না ইকরা।তার আগেই থামিয়ে দিল দিদারকে।

” তুমি এসব বলে ভালোবাসার মানুষগুলোর প্রতি সম্মান টা উঠিয়ে দিও না দিদার ভাই।তোমার মুখে এসব মানায় না।যারা ভালোবাসে তারা সব পরিস্থিতিতেই তার ভালোবাসার মানুষের পাশে থাকে।থাকার চেষ্টা করে।তুমি চেষ্টা তো দূরের কথা আমার সাথে যোগাযোগই ছিন্ন করেছিলে।আমি কিছুই ভুলিনি।
বিশ্বাস করো তোমাদের মা ছেলের মধ্যে কোনো রকম মনোমালিন্য আমি চাই নি।এখানে আসার ও কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলো না।এখানে আসার একটাই কারণ তোমার মেয়ে।আল্লাহ না করুক আমার মতো পরিস্থিতির শিকার যেন তোমার মেয়ে না হয় সেই জন্যই এখানে আসা।আমি তো নিজেকে সামলে নিতে পেরেছি কিন্তু তোমার মেয়ে সেটা নাও করতে পারে।আর একটা কথা কি জানো তো প্রকৃতি কিন্তু প্রতিশোধ নেয়।ভালো থেকো। চলুন আরহান।বাবা তুমিও কি যাবে?

“যাব।রেহানা ভালো চাও তো বাড়ি চলে যাবে নয়তো ফল ভালো হবে না।

তারপর ইকরা আরহান আবারও ঢাকার উদ্দেশ্যে বাবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো।সেদিনের পর ইকরা আর দিদারের মুখোমুখি হয়নি।রেহানা বানুকেও আর মা বলে ডাকে নি।স্বামীর সাথেও সম্পর্ক ভালোনেই রেহানার।ইমন নিজের মায়ের এমন রুপ দেখে কষ্টে সেই যে বাড়ি ছেড়েছে আর ফেরেনি।ইরাও এখন মায়ের সাথে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।আর দিদার নিজের বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা বাড়িতে উঠেছে।ও চায় না তার জীবনের মতো তার সন্তানের জীবনেও এমন কষ্ট হোক।

★বর্তমান★

” ভাই শোন আজ কিন্তু কোনো রকম ঝামেলা করবি না কোথাও।

“ঠিক আছে করবো না।কিন্তু তোমাকে কেউ কিছু বললে করবো।

” আবার! আচ্ছা তুই এতো গুন্ডা হলি কবে থেকে বলতো।

“আমি মোটেও গুন্ডা নই আপা।কিন্তু তোমার জন্য গুন্ডা হতে ভালোই লাগে।

” ঠিক আছে চল এবার আমার ক্লাস আছে।

কলেজে এসেও যেন শান্তি পেল না মানহা।তার কারন জুয়েল।জুয়েল মানহার সিনিয়র। মানহাকে অসম্ভব ভালোবাসে।তবুও মানহা তাকে বার বার রিজেক্ট করে কারণ বাবা মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করবে না সে।যদিও এই কথা কখনো বলেনি জুয়েলকে।

“আর কতো অপেক্ষা করলে তুমি আমাকে ভালোবাসবে মানহা?

” আপনি প্রতিবার যে উত্তর টা পান এখনও তাই দিবো।কখনোই বাসবো না।প্লিজ এভাবে বিরক্ত করবেন না।এতে বাকিরা খারাপ কিছু ভাববে।

“কিন্তু আমাকে না ভালোবাসার একটা কারণ তো বলো।প্রমিজ যদি সেটা যুক্তির হয় তাহলে আর কখনো তোমার সামনে আসবো না।

” কোনো কারণ নেই জুয়েল ভাই।

“অবশ্যই আছে।এমনি এমনি তো এটা হতে পারে না তাই না।হতে পারে আমাকে তোমার পছন্দ নয়।এই পছন্দ না হওয়ারও তো একটা কারণ আছে। সেটাই বলো।

” দেখুন আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমনটা নয়।আমি বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবো।অন্য কোনো কারণ নেই।চলি।

মানহার আজ বিকালে টিউশন ছিলো।সামনে পরিক্ষা তাই পড়ায় ফাকি দেয়া চলবে না।বাড়িতে ফিরেই একটু অবাক হলো মানহা।সোফা রুমে বিশাল আয়োজন মানে মানুষের ভিড়।ইকরা মানহাকে দেখেই এগিয়ে এলো।

“এসে গেছিস!এতো দেরি হলো যে?

” টিউশন ছিলো মা।এতো মানুষ কেন বলো তো।

“সেটা পরে হবে।আগে চল ফ্রেশ হয়ে নিবি।সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

” আমার জন্য!কিন্ত কেন মা?

“সব পরে বলবো মা।অনেক দেরি হয়ে গেছে চল না।

মানহাকে ইকরা একটা নীল রঙের শাড়ি পরিয়েছে।হালকা সাজ সাথে সিম্পল কিছু জুয়েলারি। এতোক্ষনে মানহা বুঝে গেছে নিচে এতো মানুষ থাকার কারণ।

” বাহ: আমার মেয়েটাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।

“এবার আমায় বলবে কি হয়েছে।নিচে ওনারা কারা মা?

” আসলে তোর বাবা একটা বিয়ের সম্মন্ধ এনেছে তোর জন্য।অফিসের কলিগের ছেলে।অনেকদিন ধরেই আসতে চাইছিলো।ছেলে রাজি হচ্ছিলো না।আজ নাকি হুট করেই রাজি হয়েছে তাই তোকে দেখাতে নিয়ে এসেছে।যদিও তোর ছবি দেখেছে সবাই।
তোর কি কোনো আপত্তি আছে তাহলে আমি এখনই তোর বাবাকে বলছি।তাছাড়া দেখলেই তো বিয়ে হচ্ছে না।ছেলে কেও দেখেছি।মাহিনকে নিয়ে বাইরে গেছে আসলে তুইও দেখবি।ছেলে খুবই ভালো। তবুও যদি তোর কাউকে পছন্দ থাকে আমাকে বল। আমি তোর বাবাকে ম্যানেজ করবো।

মানহার এই মুহূর্তে শুধু জুয়েলের মুখটাই মনে পড়লো কিন্তু কিছুই বললো না।আসলে মানহা ইকরার অতীত সম্পর্কে শুনেছে।শুনেছে দিদারের কথা।সেদিনই মানহা ঠিক করেছিলো বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবে। অতীতে মা যেভাবে কষ্ট পেয়েছে তা সে পাবে না।বাবা মাকে কষ্ট দিবে না।

“মানহা!

” হ্যাঁ মা।

“কি হলো কাউকে পছন্দ করিস?

” না তো।তোমাদের যাকে পছন্দ হয় তাকেই বিয়ে করবো।কিন্তু সামনে আমার পরিক্ষা মা।

“সেটা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।ওনাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলাই আছে।চল এবার নিচে।

ছেলের বাড়ি থেকে অনেকেই এসেছে।ওরা একেবারে মেয়েকে আংটি পরিয়ে তবেই যাবে।আংটি পড়ানোর সময় মানহা একবারো ছেলের দিকে তাকায়নি।যাওয়ার আগে অন্তরা বেগম বললেন ছেলে মেয়েকে একটু কথা বলার সুযোগ দিতে।তাই এখন মানহারা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।মহিন আপাকে ছাদে রেখে চলে গেছে।কারণ ইকরা বলে দিয়েছে আপাকে যেন এখন বিরক্ত না করে।মানহা ছাদের এক কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।অন্যদিকে মুখ করে তার পাশে যে একজন সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে তাতে তার কোনো আগ্রহই নেই।

” আমাদের এখানে কথা বলার জন্য পাঠানো হয়েছে এভাবে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকার জন্য নয়।

কন্ঠটা শুনে বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো মানহার।মুহুর্তেই মনে হলো এটা জুয়েলের কন্ঠ।পরমুহূর্তে মনে হলো জুয়েল আসবে কোথা থেকে।এ তো অন্য একটা মানুষ যার সাথে একটু আগেই আংটিবদল হলো তার।

“তুমি যাকে ভাবছো আমি সেই।আগে বললেই হতো যে বাবা মায়ের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবে।তাহলে তো আমাকে এতো কষ্ট করে তোমার পিছু ঘুরতে হতো না।কারণ তোমার বাবা মা আমাকে অনেক আগেই পছন্দ করে রেখেছে।

এবার মানহার বিশ্বাস হলো এটা সত্যি সত্যিই জুয়েল।পিছে ঘুরে জুয়েলকে দেখে যেন চাঁদ হাতে পেলো।দ্রুত এগিয়ে গেলো জুয়েলের সামনে।এক মুহুর্ত দেড়ি না করে জরিয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিলো।

” কি হলো এভাবেই জরিয়ে ধরে থাকবে।সময় অনেক পাবে মিসেস জুয়েল।

বলেই মুচকি হাসলো জুয়েল।এবার মানহা একটু লজ্জা পেলো ছেড়ে দিলো জুয়েলকে।

“আগে কেন বলেননি। বাবা মা আপনার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে?

” আমিই তো জানতাম না।বাবা মা বলছিলো অনেক দিন ধরেই তোমাকে দেখতে আসার জন্য।কিন্তু অন্য মেয়ে ভেবে আমি রাজিই হইনি।আজ যখন তুমি আমাকে আবারও প্রত্যাখ্যান করলে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।তাই রাগের মাথায় বলেছি তারা যাকে বলবে তাকেই বিয়ে করবো।তখন মা তোমার ছবি দেখালো।পরে সবটাই মা-কে খুলে বললাম।আর এখন তুমি শেষ পর্যন্ত আমারই হলে।যদিও এখনো পুরোপুরি হওনি।বাই দ্যা ওয়ে আমাকে মিস করেছো যখন শুনলে তোমার আজ পাকা দেখা?আমাকে ধরে কাঁদলে কেন।ভালোবেসে ফেলেছো?

“নাহ।আমি কেন আপনাকে ভালোবাসবো।

” ঠিক আছে তাহলে আমি নিচে গিয়ে বলি বিয়ে হবে না।যে আমাকে ভালোবাসে না তাকে বিয়ে কেন করবো।

“আমি কি সেটা বলেছি।

” বলোনি?

“সরি।

” ঠিক আছে। চলো নিচে যাই।

আজ মানহার বিয়ে।সকাল থেকে বিয়ের সব কিছুই ইকরা নিজের হাতে করছে।মানহা ওর কাছে খুব আদরের।প্রত্যেকটা বাবা মায়ের কাছেই সন্তান খুব আদরের হয়।কিন্তু মানহা একটু বেশিই আদরের।এই সেই ছোট্ট মানহা যার হাত ধরে ইকরা একদিন এই বাড়িতে এসেছিলো।যার জন্য ইকরা এতো ভালোবাসা এতো সম্মান পেয়েছে।ইকরা এখনো মনে হয় এই তো সেদিনই যেন মানহা তাকে আধো আধো বুলিতে মা মা করে ডেকেছিলো।আর আজ সেই ছোট্ট মানহার বিয়ে।সময় কত দ্রুত চলে যায়।

“মন খারাপ মিসেস আরহান?

” তোমার ও তো মন খারাপ। কি ভেবেছো আমি বুঝি না।

“তা খারাপ।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোমার একটু বেশিই খারাপ।কারণ মানহা আমার চেয়ে বেশি তোমার কাছেই থেকেছে।

” আচ্ছা কেমন হতো যদি মানহাকে সারাজীবন আমাদের কাছেই রেখে দেয়া যেত।

“খুব খারাপ হতো।

” খারাপ হতো মানে!

“হ্যাঁ। তুমি আনার মেয়ে জামাইকে বউ থেকে বঞ্চিত করতে চাইছো তা খারাপ হতো না।

” তুমি না সত্যি। বুড়ো হয়ে গেলে তবুও রসিকতা গেলো না।আচ্ছা মাহি কোথায় ওকে তো দেখছি না।

“স্টেজে আছে।ওই তো সবটা সামলাচ্ছে।

” হয়েছে তোমার ছেলে যে কি পারে সেটা খুব ভালো করেই জানা আছে।

মানহার বিয়ে শেষে এখন বিদায়ের পালা।বিদায় সব সময় বেদনার হয়।মেয়েদের এই যাত্রা সবচেয়ে কষ্টদায়ক। মানহা বাবাকে জরিয়ে ধরে খুব কান্না করছে।ইকরা সামনে আসছে না।কারন ও এটা সহ্য করতে পারবে না।শেষে মানহার অনুরোধে সামনে এলো।মাহিন সবার আড়ালে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে আপার কান্না দেখছে।অন্য সময় হলে হয়তো যার জন্য তার আপা কান্না করছে তার হাত পা ভেঙ্গে দিত।কিন্তু এখন তা পারবে না।কারণ যাকে মারবে সে আপার স্বামী। আর জুয়েল মাহিনকে অনেক আদর করে।

“আমার প্রিন্সেসকে তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি বাবা ওকে কখনো কষ্ট দিও না।

” ভরসা রাখুন আব্বু আমি বেঁচে থাকতে মানহাকে কোনো দু:খ ছুতে পারবে না।আপনার মতো না হলেও আপনার মতো ভালো রাখার চেষ্টা করবো কথা দিলাম।

“আমার ছোট গুন্ডা টা কোথায় বাবা।একবার ও আমার সামনে আসেনি।ওকে না দেখলে আমি গিয়ে থাকতে পারবো না।

” এইতো তোর গুন্ডা পেছনে গিয়ে লুকিয়ে ছিলো।

“কিরে আমার সাথে কথা বলবি না।এদিকে আয়।

” তুমি যেওনা আপা।আমাকে মায়ের বকুনি থেকে কে বাঁচাবে বলোতো?আবার ব্যাথা পেলে আমাকে ব্যান্ডেজ করে দিবে কে আপা?তুমি আমাকে একা রেখে চলে যাচ্ছো কেন?

“মাহিন এটা নিয়ম বাবা।তুমিও একদিন এমন করে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে আসবে।তখন কি তুমি তোমার বউকে রেখে আসবে?

” মোটেই না।মা আমার বিয়ে হবে কবে?

এটা শুনে উপস্থিত সকলেই অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।মাহিন এবার খুব লজ্জা পেলো।আসলেই সে ভুলভাল বকে আপা ঠিকই বলে।

সমাপ্ত

পাতা ঝরা বৃষ্টি পর্ব-০৯

0

#পাতা_ঝরা_বৃষ্টি
#পর্ব_৯
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

“আপা।

” এই কে!মাহিন কোথায় ছিলি তুই।আর হাতে পায়ে এসব কি।ব্যাথা পেলি কি করে?

“আরে আস্তে কথা বলো আপা।মা দেখলে আমাকে মেরেই ফেলবে।

” হাত পায়ে এই হাল করে এখন বলছিস আস্তে বলবো?আমি এখনই ডাকছি মা-কে।

“আপু প্লিজ মা-কে ডেকো না।আমি ওই রিফাত আছে না ওর সাথে মারামারি করেছি।

” কিহ!এতো বড় একটা ছেলের সাথে তুই মারামারি করেছিস আর ও কিছুই বললো না তোকে?

“আরে ও কি আমার সাথে পারে।তোমার ভাইয়ের কতো শক্তি জানো না।

” হয়েছে বাহাদুরি। ঘরে চল ওষুধ দিতে হবে।এবার যদি মা এসব দেখে না আমি কিন্তু তোকে আর বাঁচাতে পারবো না।কেন এসব করতে যাস বল তো।এবার যদি ওরা এসে বাবার কাছে নালিশ করে শুধু মা একা না বাবাও তোলে পেটাবে।

“আমি কি ইচ্ছে করে মেরেছি নাকি।ও কেন তোমাকে বাজে কথা বলে।

” ও আমায় কখন বাজে কথা বললো?

“কেন ওইদিন তুমি আমাকে আমাকে নিয়ে যখন হেটে হেটে আসছিলে সেদিন তোমাকে ডার্লিং বলে ডাকছিলো না।ও কেন আমার আপাকে এসব বলে ডাকবে।আর আজকেও তো আমাকে শালা বলে ডাকছিলো তাই তো মেরেছি।

” তাই বলে সামান্য এই বিষয় নিয়ে মারামারি করবি।

“কেন মারবো না।আমার আপাকে যেই কিছু বলবে তাকে আমি এভাবেই মারবো।

” তাই!আপাকে ভালোবাসিস?

“হ্যাঁ। তুমি জানো না তোমাকে ভালোবাসি?

” হ্যাঁ জানি তো। তবুও শুনতে ভালো লাগে।আমিও আমার রাজকুমার ভাই কে অনেক ভালোবাসি।কিন্তু এভাবে আর না কেমন।আল্লাহ আল্লাহ কর যেন বাবার কানে এসব না যায়।ওষুধ লাগিয়ে দিলাম ঘরে যা আমি তোর খাবার নিয়ে আসছি।

“একটু দেখো না মা আছে কিনা।এভাবে দেখলে খুব মারবে।

” দেখছি।

“এতো বেলা হয়ে গেলো তবুও তোমার নাতির কোনো খবর নেই মা।ও কি এখনো ছোট আছে।দুদিন পর যে ওর ফাইনাল এক্সাম আছে সেই খবর আছে।এই বার যদি ও রেজাল্ট খারাপ করে আমি কিন্তু তোমাদের কথা আর শুনবো না মা।হোস্টেল পাঠিয়ে দিব এই আমি বলে রাখলাম।

” ইকরা এতো রেগে যাচ্ছিস কেন।দেখ ওর বয়সটাই তো ঘুরে বেরানোর তাই না।সবে ক্লাস সিক্স এ পরে।পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও তো জরুরি। এটা তো তোকে বুঝতে হবে মা।

“আপনি আর নিজের নাতিকে ভালো সাজাবেন না মা।মানহাও তো ছোট ছিলো ও কি এমন দুষ্টুমি করেছে।আমি যা বলেছি তাই শুনেছে।ও নিশ্চয়ই ওর বাবার মতো হয়েছে ধুরন্ধর।

” হ্যাঁ সেই। যখন ছেলে মেয়ের সাথে পেরে উঠবে না তখন সব দোষ এই আমি অধমের তাই না।তুমি তো খুব ভালো।তাহলে আমার সাথে ঝগড়া কে করতো শুনি?

এবার ছেলেমেয়ে থেকে ঝগড়া গড়ালো নিজেদের মধ্যে।মানহা মাহিন দুজনেই জানে এই ঝগড়া সহজে থামবে না।এটা শুরু হবে মায়ের চেচামেচিতে শেষ হবে মায়ের কান্না দিয়ে।আর বাবা বেচারা সারাদিন কেটে যাবে মায়ের রাগ ভাঙ্গাতে।দাদির দিন কেটে যাবে ওনাদের ঝগড়া দেখে হাসতে হাসতে।এটাই সুযোগ মাহিনকে ঘরে নিয়ে খাবার খাওয়ানোর।এখন কেউ আর ওদের খোঁজ নিতে আসবে না।

“ভাই এই সুযোগ তারাতাড়ি চল মা যেন দেখতে না পায়।

” ভয় পেয়োনা আপা এই ঝগড়া আর থামবে না।

এই বলে যেই না মানহা মাহিনকে নিয়ে ওর ঘরে যাবে অমনি বাইরে থেকে কারো গলার আওয়াজ পেয়ে স্ট্যাচু হয়ে যায় দুজনেই।মাহিন এবার আপার দিকে তাকিয়ে আছে।মানে সে এবার কি করবে।কারণ যার গলার আওয়াজ পাচ্ছে সে আর কেউ না।রিফাতের বাবা আজমল। এখন যদি বাবাকে সব বলে তাহলে মাহিনের কি হবে সেটা ভেবেই মাথা ধরে যাচ্ছে মানহার।অন্যদিকে মাহিনের চোখেমুখে কোনো ভয়ের ছাপ নেই।যেন সে জানতই এমন কিছু হবে।মাত্র ১১ বছরের ছেলে এতো সাহস কোথায় পায় এটা ভেবে পায় না মানহা।মানিহকে যখন কেউ বকে তখন তার খুব কষ্ট হয়।আদরের ভাই বলে কথা।

“একি আজমল সাহেব।আপনি হঠাৎ আমার বাড়িতে।কোনো সমস্যা?

” সমস্যা তো আছেই আরহান ভাই।এই যে আমার ছেলে দেখুন ওর কি অবস্থা।

“ওর এই অবস্থা কি করে হলো।বসুন না এসব কি করে।

” এটা আপনার ছেলে করেছে।তাই তো ওকে নিয়ে এখানে এলাম।

“মানে কি বলছেন মাহিন!

” হ্যাঁ আঙ্কেল মাহিন।

“তুমি কি বলছো রিফাত।ও কেন তোমাকে মারবে?

” আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না আঙ্কেল। তাহলে ওকেই ডাকুন ওর হাতে পায়েও জখম আছে।

“কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে।

” কি প্রশ্ন আন্টি?

“মাহিন তোমাকে যদি মেরেও থাকে তাহলে কেন মেরেছে।কি করেছ তুমি?

” কিছুই না।আমি তো শুধু রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম।কোথা থেকে ও এসেই আমাকে মারতে শুরু করলো।

” দেখেছ তো আপা ও সব কিছু এমন ভাবে বলছে যেন ও কিছু করেইনি।

“যে যাই বলুক ভাই তুই কিন্তু ওখানে যাবি না।

” কেন যাব না।আমি কি ওকে ভয় পাই।পারলে আরো দুইএক ঘা দিয়ে আসবো।

“তুই কিচ্ছু বলবি না ভাই।যা বলার আমি বলবো।চল আমার সাথে।

” এই তো মাহিন। দেখুন আঙ্কেল ওর হাতেও জখম। আমি বলেছিলাম।ও যখন আমাকে মারছিলো আমি নিজেকে বাঁচাতে ওকে আটকানোর সময় একটু আকটু লেগে গেছে।

“উনি মিথ্যে বলছে বাবা।ভাই এমনি এমনি ওনাকে মারে নি।

” কি বলছিস মানহা।কি হয়েছে খুলে বলতো মা।

“মা আসলে আমি কলেজ যেদিন গাড়িতে না যাই সেদিন আসা যাওয়ার সময় রিফাত ভাই আমাকে বিরক্ত করতো।যদিও আমি তেমন ভাবে গায়ে মাখিনি বিষয় টা। কিন্তু ওইদিন ভাইকে নিয়ে আসার সময়ও এমনটাই করেছিলো। ভাই সেদিন দেখেছিলো সব।
আর আজকেও নাকি ভাইকে উল্টো পালটা কথা বলছিল তাই ও এভাবে রিয়েক্ট করেছে।ভাইকে কিছু বলো না বাবা।

” মানহা মিথ্যে বলছে আঙ্কেল। আমি এসব কিছুই করিনি।

“যদি এটা মাহিন বলতো তাহলে বিশ্বাস করতাম।কিন্তু মানহা কখনোই মিথ্যে বলবে না। আমি ওকে সেই শিক্ষা দেইনি।আমার মাহিন ও কিন্তু মিথ্যে বলে না।

এবার রিফাত ওর বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি অগ্নি চোখে তাকে গিলে খাচ্ছে।এর মানে হচ্ছে তার জন্য এখানে এসে তাকে এইভাবে অপমানিত হওয়ার জন্য।আর এর ফল যে খুব খারাপ হবে সেটাও বুঝে গেলো।আজমল সাহেব রিফাতকে টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে গেলো।

” তোকে যে ওই বদমাশ টা বিরক্ত করে আগে কেন বলিস নি।এবার থেকে গাড়ি নিয়ে যাবি।

“বাবা তোমার এমন পালোয়ান ছেলে থাকতে তার বোনের কি হবে বলো তো।

” হ্যাঁ দিন শেষে একটা ডানপিটে বাদর হয়েছে।মানহা ওকে ঘরে নিয়ে যাও।আমি খাবার রেডি করছি
,
,
,
ইকরা মাহিনের খাবার দিয়ে চলে এসেছে।মাঝে মাঝে ছেলেটার প্রতি এতো রাগ হয়।কিন্তু বোনের প্রতি এতো ভালোবাসা দেখলে ভালো ও লাগে।একটু ডানপিটে তবে মনটা বোনের মতোই নরম।

“এতো অন্যমনস্ক হয়ে কি ভাবছেন মিসেস ইকরা?

” ভাবছি দেখতে দেখতে মাহিনের ১১ বছর পার হয়ে গেলো।ছেলেটা এতো ডানপিটে কেন হলো বলুন তো।মাসে কতবার ওর নামে বিচার আসে।এভাবে চললে তো মুশকিল।

“কিন্তু ও তো খারাপ কিছু করে না।ভাই হিসেবে যা করার তাই করেছে।

” হ্যাঁ মানছি কিন্তু এতো কম বয়সে এতো বাড়া ভালো না।এটা ওকে বুঝতে হবে।

“লাভ নেই।আমি ওর চোখে আগুন দেখেছি। এটা নিভবে না।এখন দেখার বিষয় এটাকে ও কি কাজে লাগায় ভালো নাকি মন্দ।আল্লাহ যে আমাদের আরো একটা সন্তান দিয়েছে এটাই বা কম কিসে বলো।ওরা বেঁচে থাকুক ভালো থাকুক এটাই তো আমরা চাই।

” এই তিক্ত কথা গুলো মনেও করতে চাই না।আমার এখনো ওসব ভাবলে ছোট মা মামির প্রতি ঘৃণাটা আরো বেড়েই যায়।

★ফ্ল্যাশব্যাক ★

দেখতে দেখতে বিয়ের প্রায় ৬ বছর। মানহাকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে।এখন পুরোপুরিই মা ভক্ত মানহা।অন্তরা বেগমের সাথে খুব ভাব তার।

সকাল থেকেই মাথাটা কেমন ঘুরছিল ইকরার।কিছুদিন যাবত খাবারেও অরুচি হওয়ায় সকালের খাবার টাও খেতে পারেনি।শুক্রবার থাকায় আরহানও বাড়িতেই ছিলো।আরহান খেয়াল করে ইকরার চলাফেরা যা মোটেও ভালো নয়।দেখে অসুস্থ বলেই মনে হলো।

“কি হয়েছে তোমার।মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন?

” বুঝতে পারছি না।বাইরে যে গরম হয়তো তার জন্যই এমন দেখাচ্ছে।ঠিক হয়ে যাবে।

“কিচ্ছু ঠিক হবে না।মা বলছিলো ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া ও করো না।কি হাল করেছো নিজের।রেডি হয়ে নাও তোমাকে ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাব।

” সামান্য বিষয় ডক্টর কেন লাগবে।তাছাড়া আমার ডক্টর এর কাছে যেতে ভালো লাগে না।

“না লাগলেও যেতে হবে।কোনো কথা শুনবো না।

” কিন্তু।

“কোনো কিন্তু নয় রেডি হয়ে এসো আমি গাড়ি বের করছি।

এই মুহুর্তে ডক্টর এর কেবিনে বসে আছে ইকরা আরহান।তাদের রিপোর্ট ডক্টর এর হাতে।যাতে স্পষ্ট লেখা ইকরা মা হতে চলেছে কিন্তু ইকরা যেন বিষয় টা বিশ্বাসই করতে পারছে না।তার জানা মতে মা হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাহলে এসবের মানে কি?

প্রথমে যখন ডক্টর ইকরাকে দেখে বলেছিলো সে প্রেগন্যান্ট তখন ও ইকরা বিষয় টা এতো গুরুত্ব দেয়নি।টেস্ট গুলো শুধু ডক্টর এর কথা অনুযায়ী করা।
আরহান তো অনেক খুশি।কিন্তু ইকরা এখনো তার মনোভাব প্রকাশ করেনি।

” ইকরা কি হয়েছে তোমার।তুমি কি খুশি নও?

“আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবেন?

” বাড়িতেই তো যাব।

“আমি আমার বাড়ির কথা বলেছি।নিয়ে যাবেন?

” কিন্তু এখন গেলে তো।

“আপনি না নিয়ে গেলে টাকা দিন আমিই বাসে করে চলে যাচ্ছি।

” আমি কি নিয়ে যাব না বলেছি।আচ্ছা ঠিক আছে চলো।

যাওয়ার সময় বাবার ফোন পেয়ে ইকরা ছোট মায়ের কথা জানতে চায়।তখন তিনি বলেন ছোট মা বাড়িতে নেই।ইকরার মামার বাড়ি গেছে।কারন হিসেবে জানতে পারে দিদারের মেয়ের মুখে ভাত।তারপর ইকরা কিছু একটা ভেবে বাবাকে আলমারিতে কিছু পেপার আছে সেগুলো নিয়ে আসতে বললো। তারপর তাকে নিয়ে সেখানে গেলো যেখানে ইকরার মেডিকেল টেস্ট করানো হয়েছিল।কারণ সবার আগে তাকে শিওর হতে হবে যে মেইন কালপ্রিট টা কে।

“ইকরা কি হয়েছে বলতো।এসব পুরনো রিপোর্ট দিয়ে কি হবে?

” সব জানতে পারবে বাবা।আচ্ছা তোমার একটা বন্ধু ছিলো না পুলিশ। উনি কি এখনো এখানে আছেন।

“সরিফের কথা বলছিস।রিটায়ার করেছে।তবে জরুরী হলে হেল্প চাইলে কিছু করলেও করতে পারে।কিন্তু হঠাৎ পুলিশ কেন?

” লাগবে বাবা।কারন আমি যেটা জানতে চাইছি সেটা এমনি এমনি বলবে না।তুমি এক কাজ করো কল দাও আমি কথা বলছি আংকেল এর সাথে।

“আপনিই তো সেই যিনি আমার রিপোর্ট দেখেছিলেন মিসেস মিশ্মি তাই না?

ডক্টর মিস্মি এখানকার অনেক পুরোনো ডক্টর। সাধারণত এইভাবে ওনার সাথে কেউ কথা বলে না।তাই কথাটা কে বললো সেটা দেখার জন্যই পেছনে ঘুরলো।প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে চিনতে অসুবিধা হলো না। কিন্তু এটা এখন কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না।

” আপনি কে বলুন তো!

“সে কি নিজের পেসেন্ট কে নিজেই চিনতে পারছেন না?এতো সহজে তো আমাকে আপনার ভুলে যাওয়ার কথা না।

” আপনারা কারা বলুন তো।এভাবে একজন ডক্টর এর কেবিনে এসে এই ধরনের ব্যবহার করছেন। আপনাদের ভেতরে কে আসতে দিলো।সিকিউরিটি, সিকিউরিটি?

“এই যে ম্যাডাম সিকিউরিটি পরে ডাকবেন হ্যাঁ। আমরা কিন্তু একা আসিনি।সাথে পুলিশ ও আছে।তাই বলছি ভালো হবে যদি ইকরা যেই সত্যিটা জানতে চাইছে সেটা বলে দেন। তা না হলে।

” পু..পুলিশ মানে।আপনারা আমার সাথে এমন করতে পারেন না।আমি একজন ডক্টর। আপনি কিসের কথা বলছেন আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না। আপনাকে চিনতেও পারছি না আমি।

“কিন্তু দামিনী বেগম আর রেহানা বানুকে চিনেন তো?আমি খুব ভালো করেই জানি আপনার সব মনে আছে।সত্যি টা বলুন নয়তো আপনার এতোদিনের রেপুটেশন নাম ডাক সব কিছু নষ্ট করে দিতে পুলিশ তো আছেই।জাল রিপোর্ট করার অপরাধে একজন ডক্টর এর কি শাস্তি হতে পারে জানেন তো?

ডক্টর মিশ্মি বুঝলো আর কোনো উপায় নেই।এবার সত্যি টা না বললে কিছুতেই ছাড়বে না ওরা তাকে।তাই বাধ্য হয়েই সবটা বলে দিলো।সব কিছু খুলে বললো।

” আসলে দামিনী আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড। সেদিন যখন ও তোমাকে নিয়ে আমার কছে এসেছিলো সাথে রেহানা ভাবিও ছিলেন।ওরা যখন বললো আমাকে এমন একটা রিপোর্ট বানাতে হবে আমি প্রথমে রাজি হইনি।কিন্তু পরে দামিনী খুব অনুরোধ করলো।ও হয়তো তোমাকে পছন্দ করে না।কিছুতেই চাইছিলো না তোমাকে ছেলের বউ করতে তাই ছেলের জীবন থেকে সরাতে ও চাইছিল তোমার এমন একটা দুর্বল যায়গা যেটা জানলে ওর ছেলে আর তোমাকে বিয়ে করতে চাইবে না।যেহেতু দিদারের বাচ্চা খুব পছন্দ ছিলো আর এটা জানার পর দামিনীর প্ল্যান ও সফল হয়।দিদার বলে যে দামিনী যাকে বলবে তাকেই বিয়ে করবে।আর তোমার মা চাইছিল তোমাকে মানসিক ভাবে শেষ করে দিতে।কেন চাইছিল তা আমি জানি না। আমিও টাকার লোভে এটা করতে রাজি হই।কারণ টাকার পরিমাণ টা বেশিই ছিলো।আমাকে ক্ষমা করে দাও।পুলিশে দিও না প্লিজ।আমার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে।সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না।

“আপনি আমার স্ত্রীর সাথে যেই অন্যায়টা করেছেন তাতে মানুষ হিসেবে ক্ষমা হলেও একজন দায়িত্ব রত ডক্টরের কোনো ক্ষমা নেই। এবার যা করার আইন করবে।

চলবে

পাতা ঝরা বৃষ্টি পর্ব-০৮

0

#পাতা_ঝরা_বৃষ্টি
#পর্ব_৮
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

“সত্যিই আমার থেকে মুক্তি চাইছেন?

” এভাবে জরিয়ে ধরলে কে মুক্তি চাইবে!এতো শক্ত করে কেউ জরিয়ে ধরে?মরে যাব তো।

“ছেড়ে দিলে তো নিচের ওই উজবুক কে বিয়ে করার জন্য ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে চলে যাবেন ।কত বড় সাহস আপনি ওই লোকটার জন্য সেজেছেন বিয়ে করবেন বলে!

” আপনি কি বোকা হ্যাঁ। আমি যে বিয়ে করবো আপনি ডিভোর্স পেপারে সই করেছেন?

“তাহলে ওই ছেলে কে। মা যে বললো!

” ও তো সোলেমান চাচার ছেলে।ওনার একটাই ছেলে। আমার এক বছরের ছোট। দেশের বাইরে ছিলো এইতো একটু আগেই এলো।চাচার যেহেতু ছেলে ছাড়া আর কেউ নেই আর উনিও বাদল ছোট থাকতেই ওকে নিয়ে এইবাড়িতে এসেছিলো সেই থেকে তো ওরা এখানেই থাকে।তাই তো বিদেশ থেকে সরাসরি এখানেই এসেছে।

“তার মানে মা আপনার বাবা আমাকে বোকা বানালো।আর আপনিও তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন?

” একটূ তো বানালাম।তবে ভালোই লেগেছে।

“ঠিক আছে ক্ষমা করে দিলাম।আমি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।ডিভোর্স পেপারে আপনার সাইন দেখে।

” আপনি তো পেপার টা পড়েননি।ওটা তো ডিভোর্স পেপার নয়।

“ডিভোর্স পেপার না।তাহলে কি?

” ওটাতো ইমনের একটা নমিনির কাগজ ওর নতুন অফিসের।যেখানে নমিনি হিসেবে আমার সাইন লেগেছে।

“এতো বড় ধোকা দিলেন সবাই মিলে।

” আপনিও তো বোকা হলেন।
কিন্তু আমার একটা আফসোস রয়ে গেলো।

“কি?

” এই যে কত ভেবেছিলাম এবার হয়তো একটা শ্যাম পুরুষ স্বামী সিহেবে পাবো সেটা তো হলো না।

“প্রয়োজনে আমি রোদে পুরে কালো হবো তবুও অন্য কারো কথা মাথায়ও আনবেন না।আপনি আমার বউ।আমার বউ পরিচয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে বুঝেছেন।

” হ্যাঁ বুঝেছি।

“আপনি জানেন না।ওই ছেলের সাথে আপনার কথা বলা দেখে আমার কতটা কষ্ট হচ্ছিলো।

★ফ্ল্যাশব্যাক ★

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু ঘুমিয়েছিলো আরহান।নিচে স্বল্প চেচামেচির আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায়।রুমে ইকরাকে না পেয়ে আরহান ফ্রেশ না হয়েই নিচের দিকে নামে।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতেই দেখতে পায় নিজের মা কে।ইকরা পাশে বসে।হালকা সাজ মুখে।পাশের সোফাতেই বাদল নামের ছেলেটি বসে কথা বলছিল অন্তরা বেগম আর ইকরার বাবার সাথে।

” কি হচ্ছে এখানে?

“আরহান এসে গেছিস।ভালোই হয়েছে।আয় তো এদিকে।দেখতো ওদের দুজনকে কেমন লাগছে?

” এসবের মানে কি মা?

“আমি তো বলেইছিলাম।বেয়াই আপনি কিছু বলেন নি ওকে?

” বলেছি কিন্তু।

“যাই হোক। আরহান শোন এই নে পেপার সাইন টা কর।ইকরা সাইন করে দিয়েছে।

” এটা কিসের পেপার?

“ডিভোর্স পেপার আবার কিসের।

” মা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?মানে সত্যি সত্যিই ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে হবে। আর ইকরা আপনি কোন সাহসে এটাতে সাইন করলেন।কাল সব টা ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও।

“আরহান এখানে ইকরার সাথে কোনো কথা হবে না।কথা সব আমার সাথে বল।ও কিছুই নলবে না।এটা আমি ঠিক করেছি।একটা মেয়ে সারাজীবন কেন নষ্ট করবে এটাও তো তোকে ভাবতে হবে তাই না।তাই বলছি ও যখন সাইন করেই দিয়েছে তখন তুইও করে দে।একটু পরেই কাজি আর ছেলের বাড়ির সবাই চলে আসবে। আমরা শুভ কাজটাও সেরে ফেলবো।

“ডিভোর্স পেপারে সাইন করবো তাই তো। কই দেখি।
এই বলেই পেপারটা ছিড়ে ফেললো আরহান।

” এটা কি করলি তুই।তুই কি ভেবেছিস এটা ছিড়েই সব সমাধান হয়ে যাবে।আমি জানতাম তুই এমন কাজ করবি তাই জন্য আরো একটা কপি আছে আমার কাছে।

“তুমি বললেই তো ডিভোর্স হবে না মা।উনি আমার বিয়ে করা বউ।আমি না চাইলে এই ডিভোর্স কখনোই হবে না।ইকরা চলুন এখান থেকে।

” কিন্তু কোথায় যাব।তাছাড়া মা।

“এই মা মা করা বন্ধ করুন তো।কি মা হ্যাঁ। মা বললেই ডিভোর্স হবে নাকি। আপনি কেন সাইন করলেন এর হিসাব আমি আপনার থেকে বুঝে নিব।চলুন এখান থেকে।

” আরহান এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে বা।ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস তুই।পালিয়ে কোথায় যাবি?

কে শোনে কার কথা।পেছনের কোনো কথাই যেন আরহানের কানে গেলো না।ইকরাকে প্রায় জোর করেই বসার ঘর থেকে নিয়ে এসেছে ইকরার ঘরে।

“এমন পাগলামির কোনো মানে নেই। তাছাড়া ডিভোর্স হলেই তো আপনি ভালো থাকবেন তাই না।আমাকে আর আপনার সহ্য করতে হবে না।নিচে সব বড়োরা আছেন ওনারা কি ভাবছে বলুন তো।

আরহান আর একমুহূর্তও দেরি করলো না।ইকরাকে নিজের বুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো।এতো শক্ত করে যেন পালিয়ে যেতে না পারে।

” আপনি সত্যি ডিভোর্স চাইছেন। সত্যিই আমার থেকে মুক্তি চাইছেন?

তারপর আপনারা সবটাই জানেন

“এটা কি হলো বেয়াইন ওরা আবার ঝগড়া করছে না তো।

” আরে না।আপনি ঠিক করে লুডুর গুটি টা চালুন না।ওরা একটু পর এমনিতেই নেমে আসবে।

“বাবা আন্টি প্লিজ দানে মনোযোগ দিন।আপনি কিন্তু আমার টিমের।এই ইরা তুই না বাবার টিমের কিছু বলছিস না কেন?

” বাবা ঠিক করে দান চালো।তোমার জন্য যদি ভাইয়ার কাছে হেরে যাই ও আমাকে পড়াতে পড়াতে মেরেই ফেলবে।

ইরার কথা শুনে সোফা রুমে আরো একচোট হাসির রোল পরলো যা দেখে ইরা মুখটা গম্ভীর করে ফেললো।
,
,

নিচে সত্যি সত্যিই বিয়ের আয়োজন চলছে।হ্যাঁ ইকরা আরহানের বিয়ে।আগের বার তেমন আয়োজন না হলেও এবার সব হচ্ছে।মানে আরহানদের বাড়িতে সব আয়োজনের কাজ প্রায় শেষ। এই দুইদিন অন্তরা বেগম এগুলোই করছিলেন বাড়িতে থেকে।অন্তরা বেগম মানহাকে নিয়ে আগেই চলে গেছেন।ওদিকের সব কিছুও দেখতে হবে।এই ফাকে আরহান ইকরা একটু নিজেদের মত করে সময় ও পাবে।বিয়ে পড়ানো শেষ। সবার থেকে বিদায় নিয়ে ইকরাকে নিয়ে চলেও এসেছে আরহান।

সন্ধ্যার শেষ ভাগ।গাড়িতে ঠিক মতো বসে থাকতে পারছে না ইকরা।তার কারণ পরনের শাড়ি।একেতো গড়ম তার মধ্যে এই বেনারসি। খুব বিরক্তিকর লাগছে গাড়িতে এসির হাওয়ায় আরো বেশি খারাপ লাগছে কিন্তু আরহান কে কিছুই বলতে পারছে না।আরহান বিষয় টা লক্ষ্য করে।গাড়ির এসি বন্ধ করে গ্লাস নামিয়ে দেয়।এক ঝলকা স্নিগ্ধ বাতাস এসে ইকরার চোখে মুখে বারি খায়।শরীর মন শীতল করার জন্য এই প্রাকৃতিক বাতাসই যথেষ্ট

“এবার ভালো লাগছে?

” হ্যাঁ। শান্তি লাগছে।

“এক কাজ করলে কেমন হয়?

” কি কাজ!

“আজ আমরা পুরো পৃথিবী ঘুরবো। না মানে যতটা পারা যায়।আপনিও তো এমনটাই চাইতেন তাই না?

” আমি তো আপনাকে এটা কখনো বলিনি তাহলে জানলেন কি করে?

“আমার একটা গোয়েন্দা আছে। সে সব সময় সব খবর আমাকে দেয় বুঝলেন।এবার বলুন আপনি রাজি কি না।

” অবশ্যই রাজি।

কিন্তু ম্যাডাম রাত কতো হলো খেয়াল আছে।খেতে হবে তো কিছু।সামনে গাড়ি পার্ক করার একটা যায়গা আছে।সেখান থেকে খেয়ে তারপর আবার যাত্রা শুরু করবো।

“কিন্তু এই অবস্থায় গিয়ে খাবো কি করে?

” চিন্তা নেই।আপনি গাড়িতেই থাকবেন আমি খাবার নিয়ে আসবো।

ইকরা গাড়ির বাইরে বোতল থেকে পানি নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিচ্ছে।আজ আকাশটা তারার মেলায় অন্য রকম সেজেছে।চাঁদটাও বেশ বড়।সেই চাঁদের আলোয় পাশের রমনীকে এতোটা মায়াবী লাগছে। আরহান দেখলো।বার বার দেখলো।এবার আফসোস হলো আগে কেন এতো সুন্দর সময় কাটায়নি ইকরার সাথে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবারও গাড়ি চলতে শুরু করলো।ইকরা অন্তরা বেগমের সাথে কথা বলে ফোনট আরহানের কাছে দিয়ে দেয়।ইকরা আবারও বাইরের প্রকৃতি দেখতে মনোযোগ দিলে কানে একটা গান বাজলো।

‘এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলো তো।’

“শেষ না হলেই বোধয় ভালো হতো।

” আমার না বিষয় টা কেমন ফিল্মি ফিল্মি লাগছে।

“কোন বিষয় টা?

” এই যে এক বউকে দুইবার বিয়ে করা।

“কেন আপনার কি আরেক জনকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো?

” করলে মন্দ হতো না।৪ টা বিয়ে করাই যায় কি বলেন।

“হ্যাঁ সেই।করেই দেখুন না।তারপর আমিও বোঝাবো কত ধানে কত চাল বুঝলেন।

চলবে

পাতা ঝরা বৃষ্টি পর্ব-০৭

0

#পাতা_ঝরা_বৃষ্টি
#পর্ব_৭
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

ভোরের দিকে আরহান গাড়ি থামিয়ে একটা মসজিদে ফযরের নামাজ আদায় করে আবার গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করে।চার পাশে আলো ফুটতে শুরু করেছে।ইকরাদের গ্রামে যেতে আরো তিন ঘন্টা সময় লাগবে।মাত্র এক দিনের ব্যবধানে আরহানের মনে হলো সে ইকরাকে খুব মিস করছে।যুগ যুগ তাদের দেখা হয় না।কথা হয় না।পবিত্র সম্পর্কের এটাই হয়তো তফাত।

হ্যাঁ কাল রাতে অন্তরা বেগমের কথায় কাজ হয়েছে।বিষয় টা নিয়ে অনেক গভীরে ভেবেছে আরহান।আসলেই তো।যা হয়েছে এসবে তো ইকরার কোনো দোষ নেই।শাড়ি নিয়ে বকাবকি ও তার ঠিক হয়নি।এটা তো সত্যি আইনত ইকরা এখন তার স্ত্রী। মহুয়াকে সে ভালোবাসে কিন্তু তাই বলে তো নিজের দায় এড়াতে পারে না সে।একটা মেয়ে স্বামীর ভালোবাসা ছাড়া আর কি চায়।যদি কিছু চাওয়ার থাকতো তাহলে বাবার ঘর ছেড়ে শশুর বাড়িতে এসে এতো কিছু সহ্য করে থাকতে হতো না।তারা ওই একটা মানুষের ওপর ভরসা করেই বাবার বাড়ি ছেড়ে সম্পুর্ণ অচেনা একটা পরিবারকে নিজের পরিবার করতে ব্যস্ত হয়ে পরে।তাহলে সেই দিক থেকে বলতে গেলে ইকরার তো আরহান ছাড়া আর কেউ নেই।সেই যদি ওকে না বোঝে তাহলে এই বাড়িতে ও কেন থাকবে।কার জন্য থাকবে?কেনই বা অন্য একজনের মেয়েকে নিজের মেয়ের মতো লালন পালন করবে।তার তো কোন দায় নেই।

“বিয়ে করবেন তাই না করাচ্ছি। একবার ফিরিয়ে আনি তারপর বিয়ের ভুত যদি মাথা থেকে না নামিয়েছি তবে আমার নামও আরহান নয়।

গ্রামের রাস্তায় হাটা হয় না অনেকদিন হলো।ইকরা মানহাকে নিয়ে হাটতে বের হয়েছে।সাথে আছে ইরা ও।দুই বোন গল্প করতে করতে গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেটে যাচ্ছে।গ্রাম মানেই একটা আলাদা ভালো লাগা প্রশান্তি। মানহা মায়ের কোলে থেকেই সবটা দেখছে। গ্রামে প্রায় যায়গাতেই গরমের সময় বসার জন্য ছোট ছোট টং বা মাচাল দেখা যায়।সেখানেই ইকরার বয়সী কিছু ছেলে বসে ছিল। ইকরাকে দেখে তারা বলতে শুরু করলো-

” দেখ এক বাচ্চার মা যাচ্ছে।

আরেকজন বললো-
“বর নাকি বুরো।এক বাচ্চার বাপ বুরো তো হবেই।

এসব শুনে ইকরা খুব রেগে গেল।
” এই তোরা এসব বলার কে রে?আমার বর আমার মেয়ে এতে তোদের কেন সমস্যা?

“এমা ইকরা রেগে যাচ্ছিস কেন।আমরা তো এমনিই বলছিলাম।

” বিদ্যুৎ ভাই তুমি আমার আপাইয়ের সাথে ঝগড়া কেন করছো।জানো না আপায়ের খুব রাগ।রেগে গেলে যা ইচ্ছা করতে পারে।

“এই আপায়ের চামচি চুপ কর।তোর আপায়ের রাগ না আমার জানা আছে।আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম।করলে কি আর এই বুড়ো স্বামীকে বিয়ে করতে হতো।

” তবেরে।দাঁড়া করাচ্ছি তোকে বিয়ে।

এই বলে ইকরা যখন সামনে এগোতে যাবে অমনি পেছন থেকে ইকরা বলে কেউ ডেকে ওঠে।
এখানে আরহানকে একদম আশা করেনি ইকরা।এতোক্ষনে রাগে লাল হওয়া মুখটাও কেমন চুপসে গেলো।

“আপনি এখানে!

” হ্যাঁ আমি।কেন আমাকে আশা করেননি বুঝি?
কেমন আছো ইরা পরি?

“আমি ভালো আছি দুলাভাই। আপনি কেমন আছেন?

” আমিও ভালো আছি।তো মিসেস ইকরা অনেক ঝগড়া হয়েছে এবার চলুন।অনেকটা জার্নি করে এসেছি।আমি খুবই ক্লান্ত।

“ইনি কে ইকরা?

বিদ্যুৎ প্রশ্ন করলেও ইকরা কোনো জবাব দিলো না।তাই ইরাই বললো-

” তুমি এতোক্ষণ যাকে বুড়ো বুড়ো বলছিলে বিদ্যুৎ ভাই। ইনিই সে।আমার দুলাভাই। আর কখনো যদি আমার দুলাভাইকে বুড়ো বলেছ।তাহলে আপাই তোমার দাত ভেঙ্গে ফেলবে বুঝেছ।আমার দুলাভাই কিন্তু অনেক সুন্দর। বুড়ো তো আপনি হিহি।

“ইরা চুপ করো।চলো এখান থেকে।

হাটতে হাটতে ইকরা রা অনেকটা দূরেই চলে এসেছিলো। তাই আরহানের গাড়িতে করেই তারা এখন বাড়ি ফিরছে। এর মধ্যে ইকরা আরহানের সাথে একটা কথাও বলে নি।এটা কেন জানি আরহানের ঠিক হজম হলো না।ইকরার সেই চঞ্চলতা খুব মিস করছে আরহান।

” আপনি যে আমার সাথে ঝগড়া করেন সেটা জানতাম।কিন্তু এভাবে বাইরের কারো সাথেও ঝগড়া করেন তা জানতাম না।মারতে পর্যন্ত যাচ্ছিলেন!বুড়োই তো বলেছে।তাতে কি এমন হলো?

তবুও ইকরা কোনো কথা বললো না।মানহা বাবার কোলে বসে থাকলেও ইকরার ওড়না হাত দিয়ে ধরে রেখেছে।ইরা পেছনের ছিটে বসে চকলেট খাচ্ছে যেটা আরহান দিয়েছে

আহান গাড়ি থামালো ইকরাদের বাড়ির সামনে।সবাই গাড়ি থেকে নামার পর আরহান পেছনের সিট থেকে দুটো বড় বড় বাজারের ব্যাগ বের করলো।আসার সময় মা বলেছিল নতুন জামাইদের এসব করতে হয়।নিয়ম যেটা গ্রামের মানুষ বেশি পালন করে।এক ব্যাগে বড় বড় তিনটি মাছ।অন্য ব্যাগে কাচা সবজি।ইরা এসব কিছুই খেয়াল করেনি।

“একি এতো সব কখন আনলেন আপনি!আর এসবের কি প্রয়োজন?

” এটা নাকি নিয়ম মা বললো তো।

“হ্যাঁ নিয়ম।কিন্তু এখন এসব নিয়ম পালন করে কিইবা লাভ।এমনিতে তো আমাদের রাস্তা আলাদা হয়েই যাবে।

ইকরা আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না সেখানে।দাঁড়িয়ে গেলে হয়তো দেখতো আরহানের মুচকি হাসি।যার অর্থ শুধু সেই জানে।

” উড়ছেন উড়ুন।কিন্তু সেটা সীমানার মধ্যেই।গন্ডি পেরোনোর চেষ্টাও করবেন না ইকরা।ফল ভালো হবে না।
,
,
,
“বাবা তুমি কি নার্ভাস হচ্ছো। পারবে তো?

” একটু তো নার্ভাস হচ্ছিই।জামায়ের সাথে অভিনয় এটা কি কম কথা বল।

“মায়ের মাথায় কি চলছে জানি না।তুমি নিজেকে তৈরী করে নাও। আমি গিয়ে দেখি উনি কি করছেন।

” হ্যাঁ হ্যাঁ। আমিও খাবারের দিক টা দেখছি।

আরহান ইকরার ঘরে বসে আছে অনেকটা সময় ধরে।এবাড়িতে আসার পর ইকরা আর আরহানের সামনে আসেনি।দাদির শাশুড়ীর সাথে কথা বলে প্রায় ৩০ মিনিট ঘরেই বসে আছে আরহান।ইমরানের থেকে শুনেছে কাল নাকি বাড়িতে কারা আসবে।যদিও খোলসা করে কিছুই বলেনি।তবে মায়ের কথা আর ইমরানের কথায় এটা বুঝতে পেরেছে ইকরার ২য় বিয়ের বিষয় টা সত্যিই।একটু আগে মা ফোন করে বলেছে সে ডিভোর্স পেপার এখানে পাঠিয়ে দিবে। দুজনেই যেন সই করে দেয়।এদিকে আব্দুল আজিজ এখনো মেয়ে জামায়ের সামনে আসেন নি।আরহানের বিষয় টা খটকা লাগলো।তাহলে উনি সামনে আসতে সংকোচ করছেন ইকরার ২য় বিয়ে দিবেন বলে?
যদি এটা সত্যি হয় ইকরা আপনার নিস্তার নেই।২য় বিয়ে কেন যদি ৪ টা বিয়েও হয় তবে সেটা হবে আমার সাথেই।এহহ বিয়ে কি মামা বাড়ির আবদার নাকি।আমার বউ বিয়ে করবে অন্য কাউকে হতেই পারে না।বিয়ে করাচ্ছি।

“জামাই আসবো?

” বাবা আসুন।আপনার বাড়ি এটা অনুমতির কি প্রয়োজন।

“তা যতই নিজের বাড়ি হোক।তুমি তো এই বাড়ির জামাই।না মানে এতোদিন তো তাই-ই ছিলে।

” এতোদিন মানে?

“সেকি তুমি কিছুই জানো না।বেয়ান কিছু বলেনি?

” হুম তার মানে মা যা বলেছে সেটা করবেই।ঠিক আছে আমিও দেখি মা কি করে তুমি আমার বউ এর বিয়ে অন্য কারো সাথে দাও।আর ডিভোর্স পেপার পাঠাবে তাই তো! সেটাও আমি দেখছি

“কি হলো জামাই।কথা বলছো না যে?

” তেমন কিছু না বাবা।ভাবছি জামাই হিসেবে আজকেই এই বাড়িতে আমার শেষ দিন তো।আমি ঠিক করেছি আজকের দিনটা খুব ভালোভাবে উপভোগ করবো।বলা তো যায় না সময়ের চাকা কোনদিকে ঘুরবে।

“ম..মানে!

” মানে বলতে চাইছি এর পর তো আর এখানে আমি আসতে পারবো না।তাই যখন এসেইছি ভালোভাবেই কাটাই দিনটা।কি বলেন?

“হ্যাঁ অবশ্যই। আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি তোমার খাবারের কতটা এগুলো দেখি গিয়ে।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছিল ইকরা।তার কারণ আরহান লুঙ্গি পরেছে।এর আগে কখনো লুঙ্গি পরা হয়নি তাই এভাবে বাইরে যেতে অস্বস্তি হচ্ছে বলে ঘরে চুপটি করে বসে রয়েছে।তারচেয়ে বড় কথা এটা ইকরার বাবার লুঙ্গি।ইকরাকে দেখে অনেকটা মিইয়ে যায় আরহান।একে তো প্রথমবার লুঙ্গি পরা তারপর ইকরা এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলো যে এবার বেশ ইতস্ততবোধ করে আরহান।

” আশ্চর্য এভাবে হাসছেন কেন আপনি!লুঙ্গি পরা ছেলে আগে দেখেন নি?

” দেখেছি তো।বাবাকে দেখিছি।ইমনকে দেখেছি। চাচাকে দেখেছি।কিন্তু আপনাকে দেখিনি।তাই তো তাকিয়ে আছি।আর।

“আর?

” আর মা বলেছে যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে সেও নাকি লুঙ্গি পরে।

“সে লুঙ্গি পরে এটাও বলেছে আপনাকে?আর কি কি বলেছে।নিচে কি পরে সেটাও বলেছে?

” আরে এসব কি ধরনের কথা।যাই হোক নিচে আসুন বাবা ডাকছে।

“এই অবস্থায় নিচে যাওয়া সম্ভব নয়।প্যান্ট কি শুকিয়েছে?

” না।আলমারিতে দেখুন আপনার প্যান্ট আছে। ওটা পরেই আসুন।

“আমার প্যান্ট! কিন্তু আমি তো কিছু নিয়ে আসিনি তাহলে?

” আমি এনেছিলাম।

“তাহলে এতোক্ষণ ইচ্ছে করেই বলেন নি?আর আমি অসহায়ের মতো এভাবে বসে আছি ঘরে?

” ইচ্ছে করেনি তাই বলিনি।আপনি পরলে পড়ুন নয়তো চাবি নিয়ে যাচ্ছি আলমারির।

“এই একদম না।বলছি আপনিই বের করে দিন।আপনার আলমারিতে আমি ঠিক কম্ফোর্ট ফিল করছি না।

” হুম।

রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আরহান ইকরার ঘরে বসে আছে।অফিসের কিছু কাজ করছিলো ফোনেই।ইকরা তখন একটা বালিশ আর বিছানার চাদর নিয়ে নিছে বিছানা করে।এটা দেখে আরহান তার ফোনের কাজ বন্ধ করে দেয়।মানহা খাটে ঘুমাচ্ছে।

“এসবের মানে কি?

” কোনসবের মানে!

“বুঝতে পারছেন না?এই যে মাটিতে কেন বিছানা করলেন ইকরা?

” আসলে মা বলছিলো আপনি যেহেতু এখনো ডিভোর্স পেপারে সই করেন নি।তাই এক ঘরে থাকতেই পারি কিন্তু আলাদা।আর তাছাড়া কাল যদি আমার হবু বর এসে জানতে পারে যে আমি আপনার সাথে ছিলাম তাহলে সে কষ্ট পাবে না বলুন?

“অহ এক বিছানায় ঘুমোতে সমস্যা অথচ এক ঘরে থাকতে সমস্যা নেই?বাহ! ঠিক আছে নিচে ঘুমোবেন তো ঘুমোন।

আরহান এই বলে ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে খাটে মানহার পাশে শুয়ে পরলো।ইকরাও আর কিছু বললো। উল্টো নিজেরই খারাপ লাগলো এটা ভেবে যে হয়তো আরহান কষ্ট পেয়েছে।এর মধ্যে ঘারে কারো গরম নিঃস্বাস অনুভব করলো।পাশ ফিরতে গেলেই কারো শক্ত বুকে আটকে গেলো।

“একি আপনি এখানে কেন এলেন!

“আস্তে কথা বলুন মানহা উঠে যাবে।তাছাড়া নিজের বউ এর পাশেই তো এতো ভয় পাওয়ার কি আছে?

” দেখুন এটা একদম ঠিক হচ্ছে না।কাল আমাদের ডিভোর্স হবে আর…।

“চুপ।কোনো ডিভোর্স হবে না।বললেই হলো ডিভোর্স হবে।আপনি আমার বউ।আমার বিয়ে করা বউ।আমার আপন বউ। নিজের স্বামী থাকা সত্তেও অন্য ছেলের নাম ও যেন মুখে না শুনি।

কথা বলতে বলতে আরহান ইকরাকে দুই হাতে নিজের বুকে জরিয়ে নিয়েছে ইকরার দম বন্ধ অবস্থা। এতোদিন যেটার আশায় ছিল পুরন তো হলো কিন্তু এতো অস্বস্তি কেন হচ্ছে বুঝতে পারছে না।আরহানেরও একই অবস্থা। এই প্রথম ইকরাকে নিজের এত কাছে এনেছে।এর জন্য যে নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করেছে তা কেবল আরহানই জানে।

“আপনি কি ভয় পাচ্ছেন ইকরা?

” না কিন্তু নার্ভাস হচ্ছি।

“কেন?

” সব কেন এর উত্তর হয়?

“খাটে গিয়ে শুয়ে পরুন আমিও যাচ্ছি।

” উহু এভাবেই ভালোলাগছে।থাকুন না।

‘থাকুন না’ কথাটায় যেন এজ রাশ আবেগ মিশে আছে।ইকরাও আর কিছু বললো না।এভাবে থাকতে কখন যে দু’জন ঘুমিয়ে গেলো।সকালে ইকরার ঘুম ভাঙলো কারোর স্নিগ্ধ হাতের স্পর্শ পেয়ে।যে হাতের স্পর্শ মোলায়েম। গুটি গুটি হাতে মানহা ইকরার মুঝে হাত বুলাচ্ছে।আর মাঝে মাঝে টুপ করে চুমু খাচ্ছে।ইকরা চোখ মেলে মানহার দিকে তাকায়।মায়ের তাকানো দেখে বিনিময়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয় মানহা।

“মাম্মাহ!

” মামনি তুমি কখন উঠলে।

মনহাকে যখন উঠে কোলে নিতে যাবে তখন বুঝলো তাকে কেউ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। কাল রাতের কথা মনে হলো।এভাবেই তো শুয়ে থেকে কথা বলছিল দুজন কখন যে ঘুমিয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না।ইকরার কেমন লজ্জা লাগলো।হুট করে আরো একটা কথা মাথায় এলো মানেহা আছে এখানে।এবার যেন আরো দিগুণ লজ্জা ভর করলো ইকরার মধ্যে।তাই তারাহুরো করেই আরহানে হাতের বাধন থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলো।

“কি হচ্ছে ইকরা এমন কেন করছেন?

” আরে ছাড়ুন। অনেক বেলা হয়েছে তো।

“তাতে কি হয়েছে।অফিস তো নেই আরেকটু ঘুমোই।

” তার আগে ছোখ তো খুলুন। সামনে মেয়ে বসে আছে আমাদের দিকে তাকিয়ে।

মেয়ের কথা শুনে চটজলদি উঠে বসে আরহান।মানহা তখনও বাবা মায়ের দিকে ডাগর ডাগর করে তাকিয়ে আছে।

“মামনি উঠে গেছ?

” হ্যাঁ উঠে গেছে।এবার তো ছাড়ুন প্লিজ।

“হুম।

ইকরা উঠে মানহাকে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ করাতে।আরহান ও উঠে গেল।কেন জানি নিজেকে অনেক হালকা লাগছে।অদ্ভুত এক ভালো লাগা।ইকরস্র ও কি তাই হচ্ছে?

চলবে

পাতা ঝরা বৃষ্টি পর্ব-০৬

0

#পাতা_ঝরা_বৃষ্টি
#পর্ব_৬
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

ইকরা যখন বাবার বাড়িতে পা রাখে তখন প্রায় দুপুর।মানহাকে নিয়ে দুই তলা বাড়িটির সামনে দাঁড়ায় ইকরা।কোথা থেকে সোলেমান চাচা চেচিয়ে ওঠে।

“কে কোথায় আছো দেহো কে আইছে।আমার ইকরা আম্মা আইছে।তুমি আইবা আগে কইবা না আম্মা?

” এভাবে জোরে কথা বলবেন না চাচা মানহা ভয় পাবে তো।কেমন আছেন আপনি?

“ভালো। তয় তোমারে দেইখা আরো ভালো।এতোদিন পর আমাগো কথা মনে পরলো তোমার আম্মা?

” সব সময় মনে পরে চাচা।কিন্তু চাইলেই এতো দূর থেকে আসতে পারি না যে।বাবা কোথায়?

“বড়ো সাহেব তো গেরামে একটা শালিসি ডাকা হইছে সেই হানেই গেছে।আইসা পরবো।চলো বাড়ির ভিতরে।

বাড়ির বিশাল বড়ো উঠনে বসে রেহানা বানু ইরার মাথায় তেল দিচ্ছিলেন আর বকাবকি করছিলেন।হঠাৎ গেটের সামনে আপাইকে দেখে মায়ের কাছ থেকে একপ্রকার ছুটে এলো ইকরার কাছে।হঠাৎ এমন হওয়ায় রেহানা বানু কিছুই বুঝলো না।ইরার দৌড় অনুসরণ করে সামনে ইকরাকে দেখতে পেলো মানহাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখটা কেমন ছোট হয়ে গেলো।

” আপাই তোমার আমাদের কথা মনে পরলো?
কেন এতোদিন আসোনি।নাকি মেয়ে পেয়ে তোমার পুতুল বোনকে আর ভালোবাসো না।

অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া একটা মেয়ে এমন বাচ্চামো কথা বললে যে কারোরই হাসি পাবে।ইকরার ও তাই হলো।ফিক করে হেসে দিয়ে নিজেই আবার নিজের জিভ কাটলো।

“তুমি হাসছো আপাই।সত্যিই তুমি আমাকে আর ভালোবাসো না।

” আমার পুতুলকে আমি ভালোবাসবো না তো কাকে বাসবো।মনে পরেছে তো অনেক মনে পরেছে।কিন্তু কি করবো চাইলেই তো আসতে পারি না।

সোলেমান চাচা ততক্ষণে ইকরার দাদিকে তার ঘর থেকে ধরে বের করে এনেছে বাইরে।নাতনিকে দেখে তিনি বেশ খুশিই হয়েছেন।বিয়ের পর এটাই প্রথম ইকরার এই বাড়িতে আসা।সকলকে নিয়ে বাড়ির বসার ঘরে প্রবেশ করে ইকরা।ইমন সেখানেই ছিলো টিভি দেখছিলো বসে।বোনকে দেখে তারাতাড়ি বোনের কাছে এগিয়ে যায়।

“এই তোমার আসার সময় হলো আপাই?

” তুইও এবার ইরার মতো অভিমান করিস না প্লিজ।

রেহানা বানু ইকরার আসাতে যে মোটেও খুশি হয়নি এটা তার চোখমুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝতে পারছে সবাই।তবে এতে কারোর বিশেষ কিছু যায় আসে না।ইরা মা-কে একটু আকটু ভয় পেলেও ইমন পুরোটাই বিপরীতে। সম্মান করে ঠিকই তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না কখনোই। ইরাকে উদ্দেশ্য করে রেহানা বানু বলেন-

“এই মাইয়া নিজের ঘরে যা।এইহানে কি মেলা বইছে যা কইতাছি।দুই দিন পর পরিক্ষা সেই খবর আছে?

ইরা মায়ের ধমক শুনে নিজের ঘরে চলে গেলো।

” ওকে না বকলেও পারতে ছোট মা।

“আমর মাইয়া আমি যা খুশি কমু তাতে তোর কি?

” মা!
চলো তো আপাই। উপরে চলো।আজ আমি বাজার থেকে তোমার সব পছন্দের খাবার নিয়ে আসবো।দাদি তুমিও চলো।এখানে থাকলে নানান কথা শুনতে হবে।

কতোদিন পর সেই চিরচেনা ঘরে প্রবেশ করেছে ইকরা।এই ঘরে কতো স্মৃতি, বাবার সাথে দেয়া আড্ডা সব কিছু মনে পরে যাচ্ছে।আহ: নিজের বাড়িতে এতো শান্তি এটা এখন অনুভব করছে ইকরা।এরই মধ্যে মানহা ছোট ছোট হাতে ইকরার শাড়ির আঁচল টেনে মুখে আঙুল চাপে।অর্থাৎ তার খিদে পেয়েছে।এই বিষয় টা ইকরার খুব ভালো লাগে। মেয়েটা ছোট তবে তার অসুবিধা গুলো খুব সহজেই ইকরাকে বুঝিয়ে দেয়।এই যেমন বাথরুম পেলে ইকরাকে টয়লেট দেখিয়ে দেয়।গরম লাগলে এসি।পানি তৃষ্ণা পেলে মাম পট।তাই ইকরার বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় না যে তার মেয়ের কি লাগবে না লাগবে।এই ক্ষেত্রে মা মেয়ের বন্ডিং দারুণ। এক কথায় অসাধারণ।

দিন গড়িয়ে রাত হলো।এমনিতে আরহান দিনে দু এক বার ফোন দিয়ে মানহার সাথে টুকটাক কথা বলে।ইকরার থেকে খোঁজ খবর নেয় তবে আজ একবারও ফোন করেনি আরহান।ইকরাও না।এমনিতেও লোকটার প্রতি অভিমান অনেক।ইকরা জানে লোকটা নির্দয়।ইকরার মান ভাঙাতে সে আসবে না।তবুও আশা করে।এবার দেখা যাক শাশুড়ী মায়ের কথা শুনে কি হয়।কথায় তো আছে
“যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই। পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন “!
হতেই পারে এক্ষেত্রেও তাই হলো।হয়তো সে আসবে।ইকরার জন্য না হোক নিজের মেয়ের জন্য তো আসতেই হবে।

আজ আরহান একটু দেরিতেই বাড়িতে ফিরেছে।ইদানীং কাজের খুব চাপ।ফ্যাক্টরিতে কিছু গড়মিল পাওয়া গেছে সেটা নিয়ে ম্যানেজারের সাথে হিসাব নিকাশ করতেই দেরি হয়ে গেলো।এই ফ্যাক্টরি টা অনেক কষ্ট করে প্রতিষ্ঠিত করেছে আরহান।বাবা মারা যাওয়ার পর অন্তরা বেগম স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িটা আকরে ধরে একা হাতে টিউশন করে আরহান কে বড়ো করেছে।আরহান ছোট থেকেই পরিশ্রমী। সেও স্কুল লাইফ থেকে টিউশন করেছে।উচ্চ মাধ্যমিকের পর একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছিলো আরহান।একবার সেখানকার এক উর্ধ কর্মকর্তা কাজে ভুল হওয়ায় অনেক গালাগাল করে।সেটা সে সহ্য করতে পারেনি।সেদিনই চাকরি ছেড়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিজেই কিছু করবে।ছেলের এক কথায় ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছিলেম অন্তরা বেগম।সেটা দিয়েই আরহান ছোট পরিসরে ছোট্ট একটা ফ্যাশন হাউস শুরু করে।যার নাম দিয়েছিল “স্বপ্নের ফ্যাশন হাউজ”।আজ সেটা অনেক বড়ো হয়েছে।এখন সেখানে শতাধিক বেকার মানুষ কাজ করে নিজেদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে।এছাড়াও বড়ো মামা দেশের বাইরে থাকায় তার সহযোগিতায় এখন বিদেশেও আরহানের ফ্যাশন হাউজ এর বেশ নাম হয়েছে।আজ তিল তিল করে গড়ে তোলা সেই ফ্যাক্টরির যখন এই অবস্থা এতে খারাপ লাগারই কথা।

বাড়িতে ফিরে খুব টায়ার্ড হয়ে যায় আরহান।কোনো কথা না বলে নিজের ঘরে যায়।সেখানে মানহা বা ইকরা কাউকেই দেখতে পায় না আরহান।প্রথমে ভেবেছিলো হয়তো মায়ের ঘরে আছে।কিন্তু যখন রাত ১০টা বেজে গেলো তখন একটু সন্দেহ হলো।এতো রাত করে তো মানহা ঘুমায় না।ইকরাও একবারও এলো না।বিষয় টা ভাবায় আরহানকে।তাই দেরি না করে বাইরে এসে খুঁজে কিন্তু কাউকেই পায় না।শেষে মায়ের রুমে গিয়ে দেখে মা বসে বসে কাথা সেলাই করছে।

” মা মানহা কোথায় দেখতে পাচ্ছি না যে?
ইকরাকে ও দেখছি না ওরা কি কোথাও গিয়েছে?

“ইকরা বাবার বাড়ি গেছে।

” বাবার বাড়ি!আর মানহা?

“সেও গেছে।তোমার কি মনে হয় ইকরাকে ছাড়া সে থাকতে পারবে?

” মানে সত্যি সত্যিই ওরা গেছে।আর তুমি আমাকে একবার জানালেও না মা?

“জানালে কি হতো।সে কি আমার কথা শুনে বসে থাকতো।তাছাড়া তুমি যা করেছো কাল।মেয়েটার সাথে তাতে আমারও মনে হলো এবার কিছু একটা করা উচিৎ। সেদিন না বুঝলেও আজ বুঝতে পারছি আবেগের বসে আমি কতো বড়ো ভুল করেছি।

” ভুল!কিসের ভুলের কথা বলছো মা?আর তুমি আমাকে তুমি তুমি করেই বা কেন বলছো।

“কারণ তোমাকে আমার কেমন অচেনা লাগছে।আমার ছেলে কখনই কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে পারে না।তাও সে যখন নিজের বিবাহিত স্ত্রী।যাই হোক ছাড়ো সেসব কথা।তুমি যখন কাল মেয়েটাকে ওসব বলছিলে আমি নিজেই সব কিছু বাইরে থেকে শুনেছি।বিশ্বাস করো তখন নিজের ওপর এতো রাগ হচ্ছিলো।তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

” কি!

“খুব তারাতাড়ি তোমাদের বিচ্ছেদ হবে।তারপর আমি নিজ দায়িত্বে একটা ভালো পাত্র দেখে ইকরার আবার বিয়ে দেব।

” তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে মা।কি সব বলছো।বিয়ে দিবে মানে!মানহার কি হবে।ও তো ইকরাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।

“সেই দায় তো ওর একার নয়।ও কেন তোমাদের বাবা মেয়ের সব দায়িত্ব নিতে যাবে যেখানে ওর কোনো মর্যাদাই নেই?

” আমি ওনার প্রতি সব দায়িত্ব পালন করেছি।অসম্মান তো করিনি।তাছাড়া কালকের বিষয় টা আলাদা ছিলো।

“একটা মেয়ে স্বামীর বাড়িতে শুধু ভালো ভালো খাবার,গহনা, ভালো পোশাকের জন্য আসে না।মেয়েদের গহনা হচ্ছে তার স্বামী। স্বামীর ভালোবাসা।অথচ মেয়েটা সেসব তো পায়ই নি উল্টো পদে পদে অপমানিত হয়েছে।তোমাকে এতো কথা কেনই বা বলছি।তোমার তো মন বলতে কিছুই নেই।আমি একজন উকিলের সাথে কথা বলেছি।কাল তুমি যাবে। ওনার সাথে কথা বলে ডিভোর্সের যাবতীয় কাজ শেষ করবে।

” এই ডিভোর্সের কথা উনি নিজে বলেছে?

“না। এটা আমার সিদ্ধান্ত। ও সেটা জানে।তাই আমার কথা মেনে নিয়েছে।

” মানে উনি রাজি!

“না হবার তো কিছুই নেই।

” তোমরা বললেই হবে নাকি।আমার মেয়ের ভবিষ্যতের প্রশ্ন এখানে।দেওয়াচ্ছি ডিভোর্স আমি।

এই বলে আরহান মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।অন্তরা বেগম সময় নষ্ট না করে ইকরাকে ফোন করে সবকিছু বুঝিয়ে বলে।এটা শুনে ইকরা একটু হাসে আবার একটু খারাপ ও লাগে।

“যদি সত্যিই তোমার ছেলে ডিভোর্স দিতে রাজি হয় তখন কি হবে মা?

” আমি থাকতে তুই কেন এতো ভয় পাচ্ছিস।আমার তো মনে হচ্ছে উল্টো টাই হবে।

“কি হবে?

“সেটা পরেই বুঝতে পারবি।তুই শুধু আমি যেটা বলছি সেটা করে যা।ফোনটা বন্ধ করে রাখ।আমি না বলা পর্যন্ত খুলবি না।বাকি কথা আমি তোর বাবার সাথে বলে নিবো।

চলবে

পাতা ঝরা বৃষ্টি পর্ব-০৫

0

#পাতা_ঝরা_বৃষ্টি
#পর্ব_৫
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

কেটে গেছে বেশ কিছুদিন। মানহার বয়স এখন ১বছর।আজ মানহার জন্মদিন। আরহান আজ কাজে যায়নি।ঠিক করেছে পুরো দিনটা মেয়ের সাথেই থাকবে।মানহা এখন অস্পষ্ট অনেক কথাই বলে।কিন্তু বাবা মা ছোট ছোট কথাগুলো বেশ স্পষ্ট।

মানহার জন্মদিন উপলক্ষে ছোট একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আরহান।বিশেষ করে ইকরার জন্য।ওদের বিয়ের ব্যাপারে আত্নীয় স্বজনের অনেকেই জানে না তাই এই আয়োজন।

রান্নার জন্য লোক আনা হয়েছে।রিতা বেগম ও এসেছেন তবে এখানে সে থাকার পারমিশন পায় নি।সেদিনের পর থেকে রিতা বেগমের সাথে কোনো রকমের যোগাযোগ করেনি আরহান।অন্তরা বেগমকে দিয়ে আজ এই বাড়িতে আনিয়েছে তাও কিছু সময়ের জন্য।

বাড়ির সবকিছু গোছগাছ করতে করতে প্রায় দুপুর। আরহান বাজারে গেছে কোনো একটা কাজের জন্য।ইকরা আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে দেখলো এটা পুরোনো তবে রঙ একেবারে নতুনের মতোই।খুব সম্ভবত এটা মহুয়ার শাড়ি।এটা ছাড়াও আরো কিছু শাড়ি আছে যেগুলো আরহান খুব যত্নে রেখে দিয়েছে।যদিও ইকরার শাড়ি আছে অনেক কাল আরহান ও নতুন দুটো শাড়ি এনে দিয়েছে। কিন্তু কেন জানি এই শাড়িটা বেশ পছন্দ হলো ইকরার।তাই ঠিক করলো সে এটাই পরবে।মেরুন রঙের শাড়িটা দেখলে যে কারোর নজর লেগে যাবে।আরহান আসার আগেই ইকরা ফ্রেশ হয়ে শাড়িটি পরে রেডি হয়ে নিলো।মানহা এখনো ঘুমে।ঘুম থেকে উঠলেই কেক কাটা হবে।

রেডি হয়ে ইকরা নিচে নেমে এলো।মানহাও ততক্ষণে ঘুম থেকে উঠে গেছে।আরহান বাজার থেকে এসেছে অনেকক্ষণ আগেই।ইকরাকে নিচে নামতে দেখে অন্তরা বেগম সহ বাকিরাও সেদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।সকলের একদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরহান ও পিছনের দিকে ঘুরে তাকালো।ইকরাকে সুন্দর লাগছে না এটা নয়।রাগ হচ্ছে ইকরা কেন মহুয়ার শাড়ি পরেছে এটা দেখে।আরহানের কি হলো কে জানে ইকরা নিচে নামার আগেই ওর এক হাত ধরে টেনে আবারও উপরে নিয়ে গেলো।

“আরহান বাবা শোন।

মায়ের ডাকেও আরহান থামলো না।রিতা বেগম জানে এটা মহুয়ার শাড়ি। মহুয়াকে আরহান কতটা ভালোবাসে সেটাও জানে।তাই এখন ইকরার সাথে কি হতে পারে সেটা ভেবেই তার কেমন খুশি খুশি লাগছে।

” আমার হাতে লাগছে।আচ্ছা কি হয়েছে বলুন না।আমি কি কিছু ভুল করেছি?

ইকরার কথা কানে না তুলে আরহান ইকরাকে নিজের ঘরে এনে তবেই থামলো।

“এটা কি পরেছেন আপনি?

” কেন শাড়ি।খারাপ লাগছে দেখতে!

“আপনি এই শাড়ি কেন পরেছেন।বলুন কেন পরেছেন?আপনাকে আমি নতুন শাড়ি এনে দেই নি?

” হ্যাঁ দিয়েছেন কিন্তু।

“কিন্তু কি হ্যাঁ। কিন্তু কি।শাড়ি এনে দেয়ার পরেও কেন এটা পরেছেন।আপনি জানেন না এটা মহুয়ার শাড়ি।মহুয়ার জিনিসে আপনি কেন হাত দিয়েছেন?আপনি কি কোনো ভাবে মহুয়ার যায়গা নিতে চাইছেন।স্ত্রীর অধিকার ফলাতে চাইছেন?

” আপনি এসব কি বলছেন।একটা শাড়িই তো পরেছি।বিশ্বাস করুন আপনার খারাপ লাগবে জানলে আমি পরতাম না।

“চুপ একদম চুপ।এক্ষুনি এটা পালটে অন্য শাড়ি বা আপনার যা ইচ্ছা আপনি পরুন।কিন্তু এটা নয়।

” আচ্ছা ঠিক আছে কেক টা কাটা হয়ে যাক তারপর না হয়।এমনিতেই তো দেরি হয়ে গেছে।

“হোক দেরি।তবুও আপনি এটা চেঞ্জ করবেন।একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন এই বাড়িতে আপনি..।

” শুধুই মানহার দেখাশোনা করার জন্য এসেছি।মায়ের ভুমিকা পালন করতে এসেছি।স্বপ্ন, চাওয়া পাওয়া সব কিছু বিসর্জন দিয়ে এসেছি শুধু মানহার দেখাশোনা করার জন্য।এটা জানি আমি।বার বার আমাকে মনে করিয়ে দিতে হবে না।

“আমি এভাবে বলতে চাই নি।

“থাক না। তাতে কি যায় আসে।আপনি নিচে যান আমি চেঞ্জ করে আসছি।

” ইকরা আমি।

“কিছুই বলতে হবে না।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।

আরহান আর কথা বাড়ালো না।ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

ঘরে মহুয়ার একটা বড়ো ছবি আছে। সেটার দিকে ইকরা এক পা দু পা করে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায়।মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে রয় কিছুটা সময়।

” তুমি খুব ভাগ্যবতী মহুয়া আপু।দেখো না তুমি নেই তবুও তুমি এখনো কতো ভালোবাসা পাচ্ছো আর আমি!হাহ আমি জন্ম থেকেই কপাল পোরা।আচ্ছা তুমি বলো না আমাকে কি ভালোবাসা যায় না।একটুও না? তোমার যায়গা তো আমি চাইনি।তবে কেন বার বার উনি আমায় ভুল বুঝেন?সত্যি বলছি যদি জানতাম তোমার শাড়ি পরাতে উনি এভাবে রিয়েক্ট করবেন আমি পরতাম না।

আড়াল থেকে সবটাই শুনলো অন্তরা বেগম।কিন্তু এখন এটা নিয়ে কিছুই বলা যাবে না।আগে আত্নীয় স্বজনেরা যাক তারপর আরহানের সাথে এটা নিয়ে কথা বলবে সে।একটা শাড়ির জন্য মেয়েটাকে এভাবে বলবে আরহান?বুঝিয়েই তো বলা যেত।সেটা না করে মেয়েটাকে আজকের দিনে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে হবে?
এবার এর একটা বিহিত না করলেই নয়।

১০ মিনিটে আগের শাড়ি পালটে বিয়েতে বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া শাড়ি থেকে একটা শাড়ি পরে নিচে নামে ইকরা।চোখমুখের ভাব স্বাভাবিক যেন কিছুই হয়নি।এটা দেখে চাচি শাশুড়ী জানতে চাইলেন শাড়ি কেন পাল্টেছে।

“আসলে কাকি ওই শাড়িটা অনেক অজন বুঝলে যেটা বহন করা আমার সাধ্যের মধ্যে নেই।তাই এটা পরে এলাম।দেখো না এটা অনেক হালকা কোনো অজন নেই।আমি এটাতেই বেটার ফিল করছি।

” আচ্ছা ঠিক আছে এসো কেক কাটা হবে।

আরহান সবটাই শুনলো কিন্তু কিছুই বললো না।মানহা ইকরাকে দেখে তার কাছে চলে এলো।কেক কাটা হলো।খাওয়া দাওয়া আড্ডা শেষে সবাই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেলো।ইকরা মানহাকে ঘুম পাড়িয়ে নিজেও ওর পাশেই শুয়ে পরলো। তখনকার আরহানের বলা প্রতিটি কথাই আবারও একবার স্বরণে এলো ইকরার।আহ কি কষ্ট দায়ক সেই কথাগুলো সহ্য করা।

“আল্লাহ আপনি তো জানেন আমি কারো জায়গায় নিজের যায়গা করে নিতে চাই না।আমি শুধু নিজের যায়গা টা চাই।আপনি তো জানেন আমি কি চাই।তাহলে কেন বার বার আমাকে কষ্ট দেয়া হয় আল্লাহ।আমি যে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি।আপনি আমাকে আরো ধৈর্য দিন।

আরহান এখনো ড্রয়িং রুমে বসে আছে।অন্তরা বেগম ছেলের কাধে হাত রাখেন।কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে আরহান বুঝতে পারে এটা তার মা।

” তুমি এখনো যেগে আছো মা?

“তুই ও তো যেগে আছিস।ঘরে যাসিনি কেন?

” ঘুম আসছে না তাই।

“ঘুম আসছে না নাকি অনুতপ্ত তুই?

” মানে!

“আমি তোর মা আরহান।মায়েরা সব বুঝে।এমন কাজ কেন করিস যার জন্য পরে অনুতপ্ত হতে হয়।অনুসুচনা হয়?যাই হোক ঘুমিয়ে পর এখন ভেবে কোনো লাভ নেই।আর হ্যাঁ ইকরা আমায় কিছুই বলেনি।এটা নিয়ে মেয়েটাকে আবার কথা শোনাস না।

মায়ের কথায় বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পরে আরহান।তার মা কখনো এভাবে কথা বলেনি তার সাথে।এমনকি মহুয়াকে যখন বিয়ে করে এনেছিলো তাকে না জানিয়ে তখন ও না।বাবা মারা যাওয়ার পরে অনেক কষ্টে একা হাতে মানুষ করেছে আরহানকে।তখনো এতো শক্ত ভাবে নিজের মা-কে আবিষ্কার করেনি আরহান।আজ কি হলো।নিজের মা কে কেন এতো অচেনা লাগছে!

আরহান রুমে এলো রাত তখন প্রায় ১২টা।ইকরা মানহাকে জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে।ইকরার গায়ে একটা পাতলা কম্বল। এসির হাওয়া সহ্য করতে পারে না।কিন্তু মানহা এই বয়সেই এসি ছাড়া ঘুমোতে পারে না।আরহান এসির পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে পাশের সোফায় বসলো।ইকিরার দিকে লক্ষ্য করলো মেয়েটার চোখে পানি শুকিয়ে আছে।হয়তো কান্না করেছে।হুট করেই বিছানার একদম কোনায় চলে এলো ইকরা।একটু মোর নিলেই পরে যাবে নিশ্চিত। হলোও তাই।যেই মোর নিলো পরতে যাবে আর আগেই আরহান ধরে নিলো।ইকরার ঘুমও ভেঙে গেলো।আরহানকে নিজের এতো কাছে দেখে একপ্রকার ছিটকে দূরে সরে গেলো।ভয় পেয়েছে।আরহান বিষয় টা বুঝতে পেরে গ্লাসের পানি সামনে দিল।এটাই যেন এই মুহুর্তে খুব প্রয়োজন ছিলো ইকরার।

“সরি আসলে পরে যাচ্ছিলেন তাই।

ইকরা কিছুই বললো না।পানি খেয়ে গ্লাসটা নিজেই টেবিলে রাখতে গেলে আরহান সেটা নিয়ে নিলো।তারপর ইকরা পুনরায় শুয়ে পরলো।

” কথা বলবেন না?

“ঘুমিয়ে পরুন অনেক রাত হয়েছে।

তারপর দুজনের মধ্যে আর কথা হলো না।আরহান বুঝলো অভিমানের পাল্লাটা অনেক ভাড়ি।ওই বা কি করতো।মহুয়াকে চাইলেই ভুলতে পারছে না।চাইলেও ইকরাকে আপন করে নিতে পারছে না।যতবার সবটা মানিয়ে নিতে চাইছে ততবারই মহুয়ার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত চোখের সামনে ভেসে আসছে।ভাবতে ভাবতে এক সময় আরহান ও খাটের এক কোনে ঘুমিয়ে গেলো।

সকালে উঠে ইকরাকে আর দেখতে পেলো না।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো অনেক বেলা হয়ে গেছে।ইকরা আসার পর আরহানের একটা বাজে স্বভাব হয়েছে সকালে রোজ ইকরা ডেকে দেয় বলে এখন নিজে থেকে উঠে না।কিন্তু আজ ইকরা ডাকেনি।ডাকেনি মেয়েও। এমনিতে মানহা সকালে ঘুম থেকে উঠলে বাবার সাথে অনেক দুষ্টুমি করে আজ তাও করে নি।মা মেয়ে মিলে হয়তো জোট পাকিয়েছে।

আরহান একেবারব অফিসের জন্য রেডি হয়ে বের হলো।নিচে নেমেও ইকরাকে পেলো না।তবে মানহাকে পেলো।মেয়েকে কোলে নিয়েই হালকা কিছু খেয়ে বেরিয়ে যায় আরহান।

” তোমার ছেলে কি চলে গেছে মা?

“হ্যাঁ। এবার তুইও তৈরি হয়ে নে।

” মানে আমি কেন তৈরি হবো!

“কারন তুই বাপের বাড়ি যাচ্ছিস।যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে পরে থেকে কি করবি?

” তুমি কি মজা করছো?

“না সত্যি সত্যিই বলছি।তুই কি আমার ছেলেকে ভালোবাসিস?সত্যি করে বল।

“বাসি তো।কিন্তু তাতে কি যায় আসে।

” তাহলে আমি যা বলছি সেটা কর।আরহান নিজেই তোকে ফিরিয়ে আনবে।

“তোমার ছেলে! কোনোদিন যাবে না মা।শুধু শুধু আমাকে আশা দেখিও না।তাছাড়া মানহাকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

” ছেড়ে থাকতে তো বলছি না।ওকে নিয়েই যাবি। তবেই না বউ মেয়ের টানে আমার ছেলে পাগল হবে।

“তুমি সত্যি বলছো।উনি যাবেন?

” ১০০% শিওর থাক।

“নিজের ছেলের সাথে এমন করতে তোমার খারাপ লাগছে না?তুমি তো জানো মানহাকে না দেখে উনি থাকতেই পারেন না।

” শোন মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েদের সঠিক টা বোঝানোর জন্য বাবা মায়ের এমন কিছু করতে হয়।এবার কথা না বলে যা।করিম তোকে নামিয়ে দিয়ে আসবে।

চলবে

পাতা ঝরা বৃষ্টি পর্ব-০৪

0

#পাতা_ঝরা_বৃষ্টি
#পর্ব_৪
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

দেখতে দেখতে মানহার বয়স এখন ৭ মাস।রোজ নতুন নতুন কথা শিখছে।সাধারণত বাচ্চারা প্রথম ডাকটা হয় দাদি নয়তো বাবা দিয় শুরু করে।কিন্তু মানহার প্রথম ডাক ছিলো মা।স্পষ্ট ডাক।যেটা শুনে সেদিন ইকরার চোখমুখ চিক চিক করছিল খুশিতে।এইতো তার মা হওয়া সার্থক হলো।

প্রতিদিনের মতই রাতের বেলা ইকরা মানহাকে সুজি খাইয়ে থাকে।আজও তাই করছিলো। সুজি রান্না করে খাটের পাশে ছোট টি টেবিলে রেখে মানহাকে কোলে নেয় ইকরা।এদিকে মানহার এতোটাই খিদে পেয়েছিলো যে কান্নার বেগ থামার নাম নেই।তাই সব কিছু ছেড়ে ইমরা আগে মানহাকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।আরহান তখন সবে নিজের ফ্যাক্টরি থেকে ফিরেছে।এমন সময় ঘটলো আরেক ঘটনা। টেবিলে রাখা গরম সুজি মানহার পায়ের ওপর গিয়ে পরলো।যদিও তেমন গরম নয় তবে বাচ্চাদের শরীরের জন্য এই গরমই যথেষ্ট। ইকরার থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলো ইকরার নানি মা।কিন্তু ইকিরা সেটা বুঝতেই পারেনি। ও তো মানহার এই অবস্থা দেখে অনেকটাই ঘাবড়ে গেছে।
ঘরে ঢুকে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে আরহানের চোখেমুখে রাগ স্পষ্ট। মানুষ কিভাবে এতোটা অসচেতন হতে পারে?

এদিকে আরহান ঘরে ঢোকার আগেই মানহার নানি মা (রিতা বেগম)বেরিয়ে যান।যার ফলে আরহান তাকে দেখতে পায়নি।

হুট করে মানহাকে কেউ একটানে ইকরার থেকে ছিনিয়ে নেয় আরহান।ইকরা পিছনে ফিরে দেখতে পায় আরহানের লাল চোখে ভয়ংকর চেহারা।

“আপনি এটা কি করলেন?

” বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে করিনি।

“কি বিশ্বাস করবো?সব তো নিজের চোখেই দেখলাম।যখন দায়িত্ব নিয়ে সেটা পালন করতে জানেন না তখন দায়িত্ব নিয়েছেন কেন।আপনি ভুলে গেছেন আমাদের বিয়েটা কেন হয়েছে?শুনুন আমার মেয়ের শরীরে যদি একটা ফোস্কা ও পরেছে না আপনাকে আমি দেখে নেব।

ছেলের চেচামেচি শুনে অন্তরা বেগম ছুটে এলেন আরহানের রুমে।কি হয়েছে সেটা মানহা আর পাশে পরে থাকা সুজি দেখেই বুঝতে পেরেছে।

আরহান নিজের মা-কে দেখে চুপ হয়ে যায়।যত যাই হোক মায়ের সামনে উচু গলায় কথা বলতে পারে না আরহান।মানহাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে একটা ফার্মেসীতে নিয়ে গেলে ডক্টর একটা মলম দেন।তেমন কিছু হয়নি সামান্য লালচে ভাব হয়েছে।সুজিটা এতোটাও গরম ছিলো না।তখন মাহনার কান্না দেখে সহ্য করতে পারেনি আরহান।মানহাও বাবা চিৎকারে ভয় পেয়ে বেশি কেদেছে। আরহান ভুলেই গিয়েছিল উচ্চস্বরে কথা মানহার সহ্য হয় না ভয় পেয়ে যায়।এটা তো সত্যি তখন ইকরার কোলেও কান্না করেনি মানহা।আরহানের কথা শোনার পরই কান্না করেছে।আরহানের এবার খারাপ লাগছে ইকরার সাথে ওই ব্যবহার করার জন্য।ইশ বেচারি হয়তো কষ্ট পেয়েছে?

বাড়িতে এসে আরহান ইকরারে ঘরে পেলো না।মানহা কোলেই ঘুমিয়ে গেছে বিধায় বিছানায় সুন্দর করে শুইয়ে দিলো।রাত তখন ৮টা বাজে।ইকরা এখনো রুমে আসছে না।
“তার মানে উনি আসবেন না?মায়ের কাছেই থাকবেন।তাহলে রাতে মানহাকে কি করে ম্যানেজ করবো!ও তো ইকরাকে ছাড়া কিছু বুনঝেই না।নিজের মেয়েও আজকাল কেমন পর হয়ে যাচ্ছে।

আরহান মায়ের ঘরের দিকে গেলো।বাইরে থেকে ইকরার কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

“এবার কান্না থামা না।তুই তো আরহানকে চিনিস ও কি এমন বল?জানিসই তো মেয়েকে বড্ড ভালোবাসে তাই রাগে এভাবে বলে ফেলেছে।

” তাই বলে আমাকে অবিশ্বাস করবেন উনি!এতোদিনে আমি কি ওনার একটু বিশ্বাস ও অর্জন করতে পারিনি মা?উনি তো জানেন আমি মানহাকে ভালোবাসি কি না।কি করে ভাবলেন যে আমি ওই গরম সুজি ওর গায়ে ফেলে দিবো?হ্যাঁ আমি ওর আসল মা নই কিন্তু মা তো।
এটাও সত্যি উনি আমার সাথে কখনো এমন ব্যবহার করেন নি।কিন্তু।

“কিন্তু কি?আচ্ছা তুই আমাকে বল তো টেবিল তো তোদের থেকে একটু দূরেই ছিলো তাহলে বাটিটা কি করে মানহার গায়ে পরলো?

” এটা আমিও ভেবেছি মা।আমার মনে হলো আমাকে কেউ পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে।আর এতো দ্রুত ঘটনা টা ঘটলো যে পিছনে ফিরে আমি কাউকে দেখতে পাই নি।তবে দরজার বাইরে আমি শাড়ির আঁচল দেখেছি।

“শাড়ির আঁচল!

” হ্যাঁ কিন্তু তুমি কি আমার কথা বিশ্বাস করবে মা?

“কি কথা বল?

” আমার মনে হয় ওটা আর কেউ না মহুয়া আপুর মা ছিলেন।

“কি বলছিস।আগে কেন বলিস নি!

” আমি ভেবেছিলাম আমি ভুল দেখেছি।তখন মাথাও ঠিক ছিলো না আমার।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যা দেখেছি সত্যিই দেখেছি।

“অনেক হয়েছে। আর না।এবার এর একটা বিহিত করতেই হবে।

” প্লিজ মা আপনি আপনার ছেলেকে কিছুই বলবেন না।

“বলবো না মানে?অবশ্যই বলবো।

” না বলবেল না।

“কেন আটকাচ্ছিস বল তো?

” কারণ আপনার ছেলে জানতে পারলে উনি এই বাড়িতে আর আসতে পারবেন না মা।আমি চাই না মানহা ওর নানির আদর ভালোবাসা থেকে দূরে থাকুক।

“কিন্তু।

” কোনো কিন্তু নয় মা প্লিজ।

“ঠিক আছে বলবো না।

শাশুড়ী ইকরার কথা শুনলেও একজন আছে যে শুনে নি।ইকরার বলা প্রতিটি কথাই আরহান শুনেছে।আর তখনই রিতা বেগমের ঘরের দিকে চলে যায়।সেই সময় রিতা বেগম ফোনে নিজের বোনের সাথে কথা বলছিলেন।ইকরার বলা প্রতিটি কথাই সত্যি এটা ওনার কথা শুনেই বুঝতে পেরেছে আরহান।

ইকরার সাথে অন্তরা বেগম তখনও নিজের ঘরেই কথা বলছিলেন।এমন সময় রিতা বেগমের গলার আওয়াজ শুনে বাইরে এলো দুজনেই।

” কি হয়েছে এভাবে চিৎকার করছেন কেন আপা?

“দেখুন না আপা।জামাই বলছে এই রাতের বেলা আমাকে এখান থেকে চলে যেতে।আপনিই বলুন আমার নাতনিকে রেখে গেলে আমার খারাপ লাগবে না?আমার মা মরা মেয়েটা।

” যদি এতোই আমার মেয়ের কথা ভাবতেন তবে আজ যেটা করেছেন সেটা করতেন না আম্মা।কথা বাড়াতে চাই না।আমি যখন বলেছি আপনি এখন এই বাড়ি থেকে যাবেন মানে এখনই।আর মা যদি বাধা দেয় আমি সেটাও শুনবো না।করিম ভাই গাড়ি বের করেছে আপনি আর দেরি করবেন না প্লিজ।

“বলছি আরহান থাক না বাবা।উনি তোর শাশুড়ী হন।

” মা প্লিজ উনি যেটা করেছেন সেটা অন্যায়।আমার ওইটুকু মেয়ের সাথে উনি এমন একটা কাজ করেছেন।তুমি ভাবো তো যদি ওটা বেশি গরম হতো তাহলে কি হতো?আমি শুধু শুধু তখন ইকরার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি।আর যাই হোক উনি এখানে থাকলে আমরা কেউই ভালো থাকতে পারবো না মা।বিশেষ করে ইকরা।আর আমি চাই না কোনো বদ সঙ্গে আমার মেয়েও বদ হোক।

“জামাই!

” বলতে বাধ্য হচ্ছি আম্মা।আর হ্যাঁ মানহা যতদিন বড়ো না হচ্ছে আপনি এবাড়িতে আসবেন না।এবার আপনি যেতে পারেন।করিম ভাই ওনাকে একেবারে বাড়িতে নামিয়ে দিয়েই আসবেন।

এতোকিছুর মধ্যে ইকরা একটা কথাও বলেনি।চুপচাপ আবারও শাশুড়ীর ঘরে চলে গেলো।

“যাক বাবা ভালো হয়েছে উনি গেছেন।এবার সবাই একটু ভালো থাকতে পারবো।

” মা!

“হ্যাঁ বল।

” উনি কি আমার ওপর রেগে আছেন?

“এই উনি টা কে?

” ইকরার কথা বলছি।

“আসলে কি বলতো আমরা রাগের মাথায় অনেক সময় অনেক কিছু বলে ফেললেও পরে কিন্তু ভুল বুঝতে পারি।কিন্তু পরে ভুল বুঝলে আগের দেয়া আঘাত সেরে যায়?তুই ভুল করেছিস আরহান।তোর যায়গায় হয়তো যে কেউ এটাই করতো।কিন্তু আমি তোর থেকে এটা আশা করিনি।আমি তো জানতাম আমার ছেলে বুঝদার, বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান মানুষ হুট করে রেগে গিয়ে কাউকে কষ্ট দেয়ার ছেলে তো তুই নস তাহলে?

” আমি সত্যি বুঝতে পারিনি মা।তখন কি যে হলো।তোমার ছেলে হয়তো ওই সরল মেয়েটার যোগ্য নয়।

“কে কার যোগ্য সেটা তো সময় বলবে।তবে তোকে একটা কথা বলতে পারি।

“কি?

” তোর উনি রেগে নেই।একটু কষ্ট পেয়েছে।সে কিন্তু কিছু খায় ও নি।

“খায় নি কেন?

” তুই কি কিছুই বুঝিস না।মহুয়াও তো এমন করতো।

“তুমি কি এখন ওনার রাগ ভাঙতে বলছ আমায়!

” বলিনি তো।তুই কি করবি তুই ভালো জানিস।আমার শুধু ভেবে খারাপ লাগছে মেয়েটা সারারাত না খেয়ে কষ্ট করবে।

“তুমিও না মা।ঠিক আছে খাবার বেরে দাও আমি দেখছি কি করা যায়।

” ঠিক আছে।(আল্লাহ যেভাবেই হোক এই দুটোকে মিলিয়ে দাও। আর কিছুই চাই না)

ইকরা অন্তরা বেগের ঘরে শুয়ে আছে।উল্টো দিকে ঘুরে শোয়ায় দেখতে পেলো না কে এসেছে।দেখার ইচ্ছেও নেই।ঘরের আলো এখন অসহ্য লাগছে।

“লাইট টা অফ করে দাও না মা।

এমনিতে অন্তরা বেগম আশেপাশে থাকলে কথা বলে।তবে এখন না বলায় ইকরার মনে সন্দেহ হয় তাই ঘুরে তাকায় শোয়া অবস্থাতেই।আরহানকে দেখে চটজলদি উঠে বসে।

” আপনি এখানে কেন মা কোথায়?

“কেন আমার কি এই ঘরে আসা বারন!

” সেটা আমি কখন বললাম।তাছাড়া আপনার বাড়ি আপনার ঘর আপনি আসতেই পারেন।সেখানে আমার বারনে তো কিছু যায় আসে না।

“ঠিক ধরেছেন। আর এই বাড়িতে আমার কথাই হবে শেষ কথা।

” কি বলতে চাইছেন সেটা বলুন।

“রাতে খান নি কেন?

” খিদে নেই।

“কেন নেই?আমার বাড়ির খাবার কি এতোটাই বাজে যে খাওয়া যায় না?

” আমি কি সেটা বলেছি?

“কোনো কথা শুনতে চাই না।এই নিন খাবার। আমার সামনেই খেয়ে শেষ করুন।

” বললেই হলো নাকি।আমার ইচ্ছের কি কোনো দাম নেই?

“অবশ্যই আছে তবে সেটা অন্য কোনো ইচ্ছে হলে ঠিক ছিলো।আপনার কোনো ধারণা আছে এই এক মুঠো খাবারে জন্য মানুষ দিন রাত কত পরিশ্রম করে।আর আপনি সেটা পেয়েও অবহেলা করছেন।এটা তো আমি মেনে নিবো না।

” কি হলো বসে আছেন কেন?দেখুন খাবারে হেরফের আমার একদম পছন্দ নয়।খেয়ে নিন বলছি।

অবশেষে বাধ্য হয়ে ইকরা খাবারটা খেয়েই নিলো।এমনিতেও খিদে পেয়েছিলো। আরহানের ওপররাগ করেই খায়নি।দরজার আড়াল থেকে সবটা দেখছিলেন অন্তরা বেগম।তিনি জানতেন আরহান এমন কিছু করবে।এসেছে রাগ ভাঙাতে ঠিক আছে তাই বলে এভাবে?এভাবে বকে কে বউ এর রাগ ভাঙায়?তাও ভালো বেশি বকেনি। তা না হলে দেখা যেত মেয়েটা সত্যি সত্যি খেত না।

চলবে

পাতা ঝরা বৃষ্টি পর্ব-০৩

0

#পাতা_ঝরা_বৃষ্টি
#পর্ব_৩
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

শশুর বাড়িতে এসে ইকরা প্রথমে ইতস্তত বোধ করছিলো।কারণ বাবার বাড়ি থেকে আসার পথে আরহান একবারের জন্যও কথা বলেনি ইকরার সাথে।কিন্তু ছোট খাটো বিষয় গুলোতে নজর রেখেছে।একবার ইকরার মনে হলো তবে কি বিয়েটা করে সে ভুল করেছে?আবার ভাবলো হয়তো সে সময় নিচ্ছে।

যে কোনো মেয়ের জীবনে শশুর বাড়িতে অন্যতম ভুমিকা পালন করে তার শাশুড়ী। শাশুড়ী যদি মনের মতো হয় তাহলে সেই মেয়ের জন্য সুখকর অন্য কিছুতে নেই।ইকরার ভাগ্য টা বলতে গেলে সেদিক থেকে ভালোই।বাকি রইলো স্বামী সেও একদিন ঠিক আপন করে নেবে এটা ইকরার বিশ্বাস।

অন্তরা বেগম এসেছে থেকে এই সেই করেই যাচ্ছেন।ইকরার কি ভালো লাগবে কি খাবে সবকিছু তিনি নিজের হাতে করছেন।এদিকে ইকরা আরহানের থেকে একটু বেটে বলে প্রতিবেশী কিছু মহিলারা সেটা নিয়ে কথাও শুনিয়ে দিয়েছে।যদিও অন্তরা বেগম জবাব ও দিয়েছেন যথাযথ।

“আপনি যাই বলেন ভাবি আমার মহুয়া কিন্তু লাখে একটা ছিলো।আর জামাই হিসেবে তো ১ নম্বর।

” কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো মহুয়া বেঁচে থাকতে আপনি আমাদের মেনেই নেন নি আম্মা।আর রইলো বাকি ইকরার কথা?তবে আমি বলবো আমি শোকেসে সাজিয়ে রাখার জন্য কোনো পুতুল নিয়ে আসিনি।যা দেখতে একেবারে নিখুঁত হবে।ওকে আমি বিয়ে করে এই বাড়িতে এনেছি। কাজেই ও দেখতে কেমন সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই।ওনারা না হয় বাইরের মানুষ কিন্তু আপনি তো নন।এটা আপনার মেয়ের শশুর বাড়ি আম্মা।হ্যাঁ সে হয়তো বেঁচে নেই কিন্তু তার রেখে যাওয়া একটা সম্বল তো আছে।এই বিয়েটা কেন হয়েছে সেটা আমরা সবাই জানি।কিন্তু তার মানে তো এই না যে সে শুধু আমার মেয়ের দেখভাল করবে অন্য সব কিছু ত্যাগ করে।
আর আপনাদের বলছি বউ দেখা শেষ। নিশ্চিত আপনারা আপনাদের প্রশংসা করে নিয়েছেন।এবার আপনারা আসতে পারেন।

“অন্তরা ভাবি আপনার সামনে আরহান এমন কথা বলছে আর আপনি চুপ করে আছেন?আমরা কি ওর খারাপ চাই?

” কি বলবো বলুন তো ভাবি।আমি বলতাম যদি ওর দোষ থাকতো। কিন্তু ওর তো কোন দোষ নেই।তাই কিছু বলতেও পারছি না।আর একটা কথা তো ঠিক।মানুষ দেখতে যেমনই হোক মন যদি পবিত্র থাকে তার সব কিছুই পবিত্র। তাছাড়া আমরা ওকে দেখেশুনেই বাড়ির বউ করেছি।সুতরাং ও কেমন নিশ্চয়ই সেটা জেনেই এনেছি।মহুয়াকে আমি কিন্তু পছন্দ করে আনি নি।তাই বলে কি আমি ওকে ভালোবাসতাম না?অবশ্যই বাসতাম।কিন্তু পরিস্থিতি আজ ভিন্ন।মহুয়া থাকলে এমন কিছু হতোই না।আমরা এখনো মহুয়াকে ভালোবাসি।তার মানে এই নয় যে ইকরা তার প্রাপ্যটা পাবে না।

“হয়েছে ভাবি।আমাদের ঘাট হয়েছে তোমাদের বাড়িতে এসে।এই চল সবাই এখান থেকে।বউ দেখতে এসেছি নাকি অপমানিত হতে।

” আরে ওনারা চলে যাচ্ছেন তো।মা আপনি আটকান ওনাদের।

“যেতে দিন ওদের।অদ্ভুত তো।এতোক্ষণ যারা আপনাকে এতোকিছু বললো তাদেরকেই যাওয়া থেকে আটকাতে চাইছেন?মা ওনাকে বলে দাও এতো নরম হয়ে চললে হবে না।আমার স্ত্রী থাকবে শক্ত। যার আত্ন সম্মানবোধ আছে।তোমাদের কি কি রিচুয়াল আছে শেষ করো আমি ঘরে গেলাম।

এই বলে আরহান আর একমুহূর্তের জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।বাড়িটা ইকরাদের বাড়ির মতোই। তবে বেশ বড়ো।আরহানের যাওয়ার দিকে চোখ বড়ো করে চেয়ে আছে ইকরা।যেই লোকটা আসার পথে একটা কথাও বললো না।এমনকি বাড়িতে এসেও না।সেই লোকটা তার হয়ে প্রতিবাদ করলো এটা অবিশ্বাসী লাগছে ইকরার কাছে।ইকরার আশ্চর্য যেন কাটছেই না।তখনই কাটলো যখন অন্তরা বেগম ইকরাকে টেনে সোফায় বসালো।

” এখনই এতো অবাক হলে হবে?তোকে বলেছিলাম না আমার ছেলে লাখে একটা। একটু সময় দে দখবি তোকে মাথায় করে রাখবে।শুধু আমার নাতনীটাকে একটু মায়ের ভালোবাসা দিস এতেই হবে।আবার ভাবিস না আমি স্বার্থপরের মতো কথা বলছি।তোকে তো আবার চোখে হারায় সে।বোস এখানে। ওসব রিচুয়াল টিচুয়ালের দরকার নেই।আমি হচ্ছি তোর স্মার্ট শাশুড়ী। এসব দিক দিয়ে তোর কোনো চাপ নেই।আর শোন আমাকে আপমি আজ্ঞে করতে হবে না।তুমি করে বলবি।এখন ফ্রেশ হয়ে নে।আমি তোদের খাবার দিচ্ছি।
আর আপা আপনিও এবার ঘরে চলে যান।অনেক রাত হলো।মানহা না হয় আমার সাথেই থাকুক।মেয়েটা আমার রুমে ঘুমিয়েছে।

“কেন মা ও আমার কাছে থাকবে না?

” থাকবে তো।তবে আজ না, কাল থেকে।আজ তোমাদের একটা বিশেষ রাত।আজ না হয় আমিই সামলে নেব।

ঘড়িরর কাটায় যখন ১১টা বাজে।ঠিক তখন ইকরাকে আরহাবের ঘরে দিয়ে গেলো ওর কিছু কাজিনরা।আরহান সে সময় তার অফিসের কিছু ফাইল দেখছিল।
ইকরা পরনের বেনারসি পালটে শাশুড়ীর দেয়া একটা মেজেন্ডা রঙের সুতি শাড়ি পরেছে।
ইকরাকে দেখে আরহান একবার তাকিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
ইকরাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে আরহান বললো-

“ঘুমিয়ে পরুন আমার ঘুমোতে অনেক রাত হবে।

ইকরা শান্ত মেয়ের মতো চুপচাপ শুয়ে পরলো।ভাবছে আরহান কি তার পাশে ঘুমোবে নাকি আলাদা।খাটের পাশে বেশ বড়সড় একটা জোড়া সোফা রাখা যে কেউ চাইলে আরাম করে ঘুমোতে পারবে।

” লাইট কি নিভিয়ে দিব?

“কি!

” আপনার কি আলোতে ঘুমোতে অসুবিধা হচ্ছে তাই বললাম।

“ওহ(আমি ভাবলাম কি না কি।কিন্তু এ তো আস্ত একটা বেরসিক লোক।)

” আমি কিছু জিগ্যেস করেছি।আপনি কি ভাবতে বসেছেন বলুন তো?

“ক..কিছু না।নিভিয়ে দিন। আমি ঘুমোচ্ছি।

” দেখুন ইকরা।বিয়েটা কেন হয়েছে আমরা দুজনেই।জানি।আমি অন্য ছেলেদের মতো বলবো না যে আপনাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না বা দায়িত্ব ছাড়া কিছুই পালন করতে পারবো না।কিন্তু হ্যাঁ আমার একটু সময় লাগবে।আর তখনকার জন্য সরি।

“সরি!

” নিচে যা হলো।আমি উপস্থিত থাকলে এসব কিছুই শুনতে হতো না।

“আমি কিছু মনে করিনি।কিছু মানুষের স্বভাব টাই এমন।আপনি যাকে আম্মা বলছিলেন উনি তো আপনার শাশুড়ী মা তাই না।

” হ্যাঁ। আসলে মহুয়া বেঁচে থাকতে উনি আমাদের বিয়েটা মেনে নেন নি। আর এখন মেয়ে মেই অথচ মেয়ের জামাই নাতির জন্য দরদের যেন কমতি নেই।আমি শুধু কিছু বলি না মহুয়ার মা বলে।সে যাই হোক আপনি ঘুমিয়ে পরুন আমি সোফায় ঘুমাবো।

কথার পিঠে বেশি কিছু বললো না ইকরা।সে নিজেও খুব ক্লান্ত। ঘুমের প্রয়োজন। তাই কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পরলো।কাল সকালটা হবে তার জীবনের নতুন সকাল।কারো বউ হওয়ার লড়াই,কারো মা হয়ে ওঠার লড়াই, কারো বউমা হয়ে ওঠার লড়াই।যেই লড়ায়ে হেরে যাওয়ার কোনো অপশন রাখতে চাইলো না ইকরা।সমাজকে দেখিয়ে দিবে জন্ম না দিয়েও মা হয়ে ওঠা যায়।যেই ভালোবাসা, যেই আদর স্নেহ ও নিজে পায়নি।সে সবকিছু মানহাকে দিবে ইকরা।এটা নিজের কাছে নিজের প্রতিজ্ঞা।বাবাকে কথা দিয়েছে কথা তো রাখতেই হবে।

সকালে ঘুম ভাঙলো মিষ্টি রোদের ঝলকানিতে। জানালা ভেদ করে একফালি রোদ ইকরার চোখে মুখে খেলা করে যাচ্ছে।এদিকে রাতে হালকা বৃষ্টি হওয়ায় বাইরের প্রকৃতিও সেজেছে নতুন রুপে।ইকরা ওঠে।সোফায় দিকে চোখ পরে।আরহান এখনো ঘুমে।এক কাত হয়ে ঘুমিয়ে আছে।ইকিরা সেদিক পানে কিছু সময় চেয়ে রয়।ছেলেদের ঘুমোলেও কি এতো সুন্দর লাগে?হয়তো জীবন সঙ্গী বলেই এতো সুন্দর লাগছে।

“আল্লাহ আমি তো একটা কালো স্বামী চাইতাম।তুমি আমার স্বামীকে এতো ফর্সা কেন বানালে বলতো।তবে যাই বলো দেখতে কিন্তু খারাপ নয়।

এর মধ্যেই বাইরে থেকে শাশুড়ী মায়ের ডাক শুনতে পেলো।ইকরা ঘড়ির দিকে সময় দেখে চটজলদি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।৯ টা বাজে।

” এতো বেলা হয়ে গেছে। আর আমি কিনা নতুন বউ হয়ে পরে পরে ঘুমাচ্ছিলাম।বাড়ির সবাই কি বলবে?

রান্না ঘরে ছোট যা মরিয়ম অন্তরা বেগমের সাথে সকালের নাস্তা বানাচ্ছিল।এখানে নিয়মিত থাকে না ওরা।কোনো কিছুর উপলক্ষে আসা হয়।এমনিতে এক ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে পুরান ঢাকার নিজ বাড়ি করে থাকেন।আরহানের বিয়ে উপলক্ষে এসেছিল।

“বুঝলেন বড় ভাবি এবার মানহাটার একটা হিল্লে হবে বলুন।মেয়েটার জন্য যা খারাপ লাগতো।

” হ্যাঁ। আমি না অনেক ভেবেই এই বিয়ের সিদ্ধান্ত টা নিয়েছিলাম।মানহার প্রতি ওর যে অগাধ ভালোবাসা সেটা দেখে আমার মনে হয়েছিল পারলে ওই পারবে আমার মানহাকে মায়ের ভালোবাসা দিতে।

“মা!

” আরে উঠে গেছো।টেবিলে চা আছে একটু খেয়ে নাও মা।

“আমার আসলে সকালে চা খাওয়ার অভ্যাস নেই।ভাতেই শান্তি পাই।আমার উঠতে অনেক বেলা হয়ে গেলো তাই না।বলুন কি কাজ করতে হবে আমি করে দিচ্ছি।

” কেন তোমাকে কি এবাড়িতে বাড়ির কাজের জন্য আনা হয়েছে?হ্যাঁ কাজ তো একটু আকটু করতেই হয় কিন্তু এবাড়িতে সবে এসেছো।যাক কিছুদিন তারপর।আপাতত আমি আর বড় ভাবিই সবটা সামলে নেবো বুঝলে।

“ইশ এই বাড়ির মানুষ গুলো এতো ভালো কেন।সবাই কত সহজে আপন করে নিয়েছে আমায়।
আচ্ছা বেশ আমি তবে ফ্রেশ হয়ে মানহার কাছে যাই কাল থেকে দেখতে পারছি না।

” ঠিক আছে যাও তবে।আমার রুমেই আছে ঘুম থেকে ওঠেনি এখনো। ভাত রান্না হলেই আমি তোমায় ডাকবো।

ইকরা যতক্ষণে মানহার কাছে গেলো তার আগেই আরহান সেখানে গিয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছিলো।

“মাত্রই তো দেখলাম ঘুমাতে এর মধ্যে উঠলো কখন আজব তো।

” আপনি এখানে কেন। নিচের সব কাজ শেষ?

“হ্যাঁ। আমি এসেছিলাম মানহাকে নিতে।

” এখন না নিলেও হবে।আমি ওকে নিয়ে একটু বাজারে যাবো।ওর খাবার আর প্যাম্পাস কিনতে হবে।আপনার কিছু লাগলে বলুন আমি নিয়ে আসবো।

“না কিছু লাগবে না।

” শিওর তো!

“একদম।

” ঠিক আছে।

আরহান একা আসতে গেলে অন্তরা বেগম ইকরাকেও জোর করে পাঠিয়ে দিলেন। এতে অবশ্য আরহান কিছুই বলেনি।নিজেই একবার ভেবেছিলো বলবে কিন্তু কেন জানি বলতে পারেনি।যেহেতু ইকরা সাথে যাচ্ছে তাই করিমকে আর সাথে নিলো না আরহান।নিজেই ড্রাইভ করলো।একটা শপিংমলে গিয়ে আনহা সহ ইকরার জন্যও কিছু রেগুলার থ্রিপিস নিলো। বিয়ে উপলক্ষে শুধু শাড়িই দেয়া হয়েছিলো।তারপর একটা রেস্টুরেন্টে সকালের খাবারটাও খেয়ে নিলো দুজনে।

চলবে