Sunday, June 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1054



নব্যদিনের সূচনা পর্ব-০৫

0

#নব্যদিনের সূচনা
হুমাইরা
(৫)

রৌদ্রময় দুপুর। চারদিকে সূর্যের প্রখান্ড উত্তাপ।গা ঝলসানো রোদ যেন ভস্ম করে দেবে।এক ফোটা বাতাসের ছিটে ফোটাও যেনো নেই।

সূর্যের তাপ মাথার উপর তীর্যক ভাবে পড়ছিলো।প্রচন্ড পিপাসায় গলা যেন শুকিয়ে আসছিলো।পার্স এ হাত দিয়ে দেখলাম, কাছে চার হাজার পাঁচশ টাকার মত।পাঁচশ টাকার মত শেষ হয়ে গিয়েছে খাতা কলম খাবার সামগ্রি কিনতে গিয়ে। খুব ভেবে চিন্তে টাকা খরচ করতে হবে এটায় যেন শেষ সম্বল।বই ও কিনতে হবে আর আমার পড়া জন্য তো জামা কাপড় ও নেই।সেই একসেট জামা পড়ে এসেছিলাম কাল। কিন্তু এত কম টাকায় কিভাবে কি করব ?সেই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো মাথায়।

ক্যাম্পাসে এসে ভাবতে লাগলাম এখন কি করব আজকে একটা ক্লাস করে বেরিয়ে গেলাম, বাকি ক্লাস করার ইচ্ছে টা নেই। চারদিকে জোড়ায় জোড়ায় ছাত্র ছাত্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।হটাৎ কানে এক সুর ভেসে উঠল। কেউ মনে হয় গান গায়ছে। যেই হোক তার গলা টা ভীষণ সুন্দর। যেতে গিয়েও থেকে গেলাম।আমার যে ভীষণ কাজ।হাতে টাকা নেই কি থেকে করবো বুঝতেই পারছিলাম না।

হাজার এক খরচ করে কোনো মত মত দুটো
জামা কিনলাম।হাতে আছে আর মাত্র কিছু টাকা। এখনো বই কেনা বাকি।রুমমেট আমার থেকে দুই ইয়ারের সিনিয়র এক আপু ছিলো।খুব মিষ্টি ভাষি।আপু আমাকে তার বই দিয়েও হল্প করার কথা বলছিলেন কিন্তু ডিপার্টমেন্ট আলাদা থাকায় দিতে পারেন নি।কিন্তু লাইব্রেরির কথা বললেন যেখে কম দামে পুরাতন বই পাওয়া যায়।যা শুনে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল।যাক তাহলে বই কিনতে সমস্যা হবে না তেমন।

সময় যেতে লাগল।রুমমেট আপুটার নাম ছিলো কিয়া। কিয়া আপু আমাকে ২ টো টিউশনি খুজে দিয়েছিলেন।সব মিলিয়ে ভালোই চলছিলো দিন।
একদল বন্ধু বান্ধব জুটেছিলো আমার।তাদের সাথে থেকে মনের সব দুঃখ যেনো ভুলে যেতাম।সিহা,ফিহা, রাদন,জুদান আর রিকি। সিহা ফিহা জমজ বোন।তাদের সাথে থেকে জেনে নিজেকে সেই চঞ্চল মেয়েটা মত হতো,যে হারিয়ে গিয়েছিলো।তাদের সাথে দিন গুলো ভালোই চলছিলো।পড়শোনা বন্ধু বান্ধব সব পেয়ে আতীত থেকে আস্তে আস্তে করে বের হয়ে এসেছিলাম।

হটাৎ একদিন এক স্যার অফিসরুমে ডাকলেন।তিনি সিনিয়র লেকচারার। মনে ভয় জেকে বসল।আমি তো কিছু করিনি তাহলে?কিন্তু তিনি যা বললেন তা শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন

–তোমার নাম সিদরাতুল মেঘনা। তোমার বাবার নাম সায়ন আহমেদ আর মার নাম মুয়িয়া তানজুম।তোমার দাদার নাম নিশ্চয়ই আয়মান আহমেদ। তোমার বাবা ট্রেন এক্সিডেন্টে স্পট ডেড। তোমার মা দ্বিতীয় বার রিয়াদ হাসান কে বিয়ে করেছে।

স্যারের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।তিনি আমার ডিটেইলস কিভাবে জানেন? যতদুর জানি মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে আর এত তথ্য তো কেউ জনার কথা নয়। আর আমি কখনো তা জানায়ও নি কাউকে।তাহলে স্যার কিভাবে জানলেন? আমার এখানে থাকার কথা তিনি আবার জানিয়ে দিবেন না ?

তাহলে কি আবার আমার বিপদ? স্যার আমাকে শান্ত হয়ে বসতে বললেন।মনে ভয় আবার জেকে বসলো। অতীত কি আমার পিছু ছাড়বে না তাহলে?

স্যার আবার যা বললেন তা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলেন।

তিনি বললেন আমার বাবা, তিনি আর রিয়াদ আংকেল একসাথে স্কুল কলেজ শেষ করেছেন।তারা তিন জন বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন।কিন্তু রিয়াদের নজর আমার বাবার সকল জিনিসের উপর ছিলো। আমার বাবার যা পছন্দ হতো রিয়াদের ও সেই জিনিস ই পছন্দ হতো।রিয়াদ এর পরিবার গরিব ছিলো। এমনকি রিয়াদের লেখাপড়ার খরচ টাও স্যার আর আমার বাবা মিলে চালাতেন।রিয়াদ যা চাইত আমার বাবা তাই দিয়ে তা দিয়ে দিতেন ততক্ষণাৎ।

একদিন গ্রামে টুরে গেলে আমার বাবার চোখে পড়ে আমার মাকে।প্রথম দেখায় আমার মাকে তিনি ভালোবেসে ফেলেন।সেই কথা তিনি রিয়াদকে আগে বলেন। রিয়াদের ও ভালো লেগে যায় আমার মাকে।তিনি তখন কিছু বলেন না। পারিবারিক সম্মতি না থাকায় আমার বাবা আমার মাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন।পরে অবশ্য পরিবার মেনে নিয়েছিলো আমি হওয়ার পর।কিন্তু আমাকে কখনোই রাজশাহী।

কথাগুলো বলে থামলেন।তিনি আরো বললেন পালিয়ে বিয়ে করার পর আমার বাবা খুব কষ্টে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন। স্যার তখন উচ্চ ডিগ্রির জন্য আমেরিকায় গিয়েছিলেন।তাই কোনো সাহায্য তিনি আমার বাবাকে করতে পারেন নি।যতদিনে তিনি দেশে ফিরে আসেন জানতে পারে আমার বাবা মারা গিয়েছেন আর মা রিয়াদ হোসেনকে বিয়ে করেছেন।স্যারের কিছু করার ছিলো না ততদিনে।

স্যার কথা গুলো শুনে চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে আসে।আসলেই আমার বাবা মানুষটা সরল ছিলেন।মানুষ টা নিজের বন্ধুর জন্য সব করতে রাজী ছিলো।তাই কাছের বন্ধু ই তাকে ধোঁকা দিয়ে দিয়েছে।কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম স্যার আমাকে চিনলেন ই বা কিভাবে?

স্যার বললেন আমার চেহারার সাথে নাকি আমার বাবার চেহারার মিল রয়েছে।আমাকে দেখলেই নাকি আমার বাবার কথা মনে পড়ে যেতো।তিনি এই কথা প্রথমে গুরুত্ব দেন নি।পরে একদিন আমার নাম শুনে তিনি আমার ভার্সিটি ভর্তি কাগজ চেক করেন।ফলে তিনি সিউর হয়ে যান আমিই তার বন্ধুর মেয়ে।

স্যার আমার মাথার উপর তার স্নেহ ভরা হাত রাখেন।আর জীবনে এগিয়ে যেতে বলেন।স্যারকে আমার দাদাবাড়ী সম্পর্কে জিগ্যেস করতেই তিনি বলেন বাংলাদেশ আসার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন পড়ে জানতে পারেন আমার দাদা বাড়িটা বিক্রি করে রাজশাহীরই কোথাও নতুন বাড়ি করেছেন। তাই তিনি আর খোজ পান নি।যা শুনে আমার মনে আশার আলো নিভে গেলো।কিন্তু পরমুহূর্তেই স্যার বললেন আমার বড় চাচার ছেলে আফনান এই ভার্সিটিতেই পড়েন।কথা টা শুনে আমার খুশিতে আমার মন ভরে উঠে।তাহলে কি আমি আমার দাদাবাড়ী সাথে যোগাযোগ করতে পারব?

সময় বহমান।কারো জন্য থেমে থাকে না। দেখতে দেখতে আমার ভার্সিটি লাইফের একটা বছর কেটে গেলো।সোহান নামক অধ্যায় যেনো কবেই ভুলে গিয়েছিলাম। বন্ধু বান্ধব এর সঙ্গ যেন এর জন্য অনেক অংশে দায়ী। তারা না থাকলে কখনোই নিজের মত বাচতে পারতাম না আমি।প্রথম প্রথম হতাশা কাজ করত মনে।কিন্তু তাদের সঙ্গ আর কিয়া আপুর সহযোগীতায় যেনো আবার বাচার আশা খুজে পেলাম। আফনান , আমার বড় চাচার ছেলে তাকে আমি খুজে পাই নি হাজারো ছাত্র-ছাত্রী মাঝে। স্যার যতদিন বেঁচে ছিলেন আমাকে মেয়ের মত ই দেখেছেন।যথা সম্ভব সাহায্য করেছেন।তার সাথে পরিচয় হওয়ার ২ মাসের মধ্যেই স্যার হার্ট অ্যাটাক এ মারা যান। নিজেকে যেন অসহায় লাগছিলো।মনে হয়েছিলো আরেক পিতৃছায়া থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম সেদিন।তাই আফনান কে খুজে পেতে কোনো সাহায্য তিনি করতে পারেন নি।

এভাবে জীবন চলছিলো আমার।তবে সখ্য গড়ে উঠেছিলো মুগ্ধ ভাইয়ার সাথে। তার সাথে আমার যেন টমেন জেরির মত ঝগড়া। তিনি আমাকে আর আমি তাকে দুচক্ষে সহ্য করতে পারতাম না।তিনি আমার পিছনে লেগেই থাকতেন। উহ ভাবছেন মুগ্ধ টা আবার কে? মনে আছে ঐ যে যেদিন পালিয়ে রাজশাহী এসেছিলাম যে ছেলেটা আমাকে সাহায্য করেছিলো। এমনকি চিমটিও কেটে ছিলো সেই মুগ্ধ। আমার থেকে তিন ইয়ারের সিনিয়র মুগ্ধ। মুগ্ধ আর তার দল আমাদের পিছনে পড়েই থাকত। সব মিলেয়ে দিন ভালোই কাটছিলো।

ঈদের ছুটি দিয়ে দিয়ে দিয়েছিলো।হল গুলো যেন ফাকা হয়ে আসছিলো।একদিন ফোনে একটা আননোর নম্বর দিয়ে কল আসল।কোনো কিছু না ভেবে কল টা রিসিভ করলাম। কল রিসিভ করতেই পরিচিত এক পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসল।সে বলল,

–আমি রাজশাহী আসছি মেঘনা।

মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে আসলো

–সোহান

তবে কি বিপদ শেষ হলো মেঘনার জীবনে? নাকি ক্ষণিক সময়ে আগমন ছিলো সুখের?

চলবে?

নব্যদিনের সূচনা পর্ব-০৪

0

#নব্যদিনের সূচনা
হুমাইরা হুর
(৪)

রীতি আপু যেতে না যেতেই বুড়ো লোকটা আমার কাছে এগিয়ে আসতে লাগল। আমার গায়ে থেকে ওড়না টান দিয়ে ফেলে দিলো মাটিতে।তাহলে কি মৃত্যু ঘটবে আমার আত্মার?

বুড়ো লোকটা ধীরে ধীরে কাছে আসতে লাগল।তখনই রীতি আপু এসে পিছন থেকে বুড়ো লোকটার মাথায় লাঠিতে দিয়ে আঘাত করতে শুরু করল।ক্রমাগত কয়েক আঘাতে বুড়ো লোকটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। রীতি আপু যে আমাকে এভাবে সাহায্য করবে আমি ভাবতে পারিনি।কিছুক্ষণের জন্য আমি যেন নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।রীতি আপু তাড়াহুড়ো করে একসেট বোরকা আমার হাতে দিয়ে আমাকে পড়তে বলে।সেখান থেকে তড়িহড়ি করে সেখান থেকে চলে গেল।আমি সেখানে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।সামনে লোকটা পড়ে ছিলো।যে কোনো মুহূর্তে লোক টার জ্ঞান ফিরতে পারে।যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।আমি তাড়াতাড়ি বোরকা পড়ে নিলাম।ততক্ষণে রীতি আপু ফিরে এসেছে। রীতি আপু আমি হাতে একটা বাটন ফোন আর ৫ হাজার টাকা গুজে দিলয়ে পালাতে বলেন। ।রীতি আপুর এই রুপ দেখে যেনো আমি হতভম্ব। যে রীতি একটু আগে আমাকে অন্য লোকের কাছে বেচে দিল সেই রীতি আপু এখন কিনা আমাকে সাহায্য করছে ভাবতেই অবাক লাগছে।এ যেন আমার আগের রীতি আপু।আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া করলাম।

রীতি আপু আমাকে বললেন আমাকে তিমি নিজের বোনের মত ভেবেছিলেন। কখনো আমার ক্ষতি হোক সেটা তিনি চাইনি। কিন্তু আমি রীতি আপুর বাসায় চলে এসেছিলাম তাকে না জানিয়েই,এটাই ভুল ছিলো আমার। আমার উপর সোহানের কুদৃষ্টি পড়ে।তার কোনো মতেই আমাকে চাই।এজন্যই এতদিন সে আমার সাথে প্রেমের নাটক করেছিলো।রীতি আপু বাধ্য ছিলেন তাই সোহানের প্রতিবাদ করতে পারেন নি এতদিন। তিনি সোহানকে যতটা সম্ভব আমার থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছেন।সোহানের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি এখন আমাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করছেন।

তিনি চান না তিনি একসময় যে পরিস্থিতি পড়েছিলেন এখন সেই পরিস্থিতিতে আমিও পড়ি। তার মত অসহায় যেন আমি না হয়ে পড়ি। একদিন তিনি আমার জায়গা ছিলেন কিন্তু তিনি কিছু করতে পারেননি তাই তিনি আজ আমাকে সাহায্য করছেন।

রীতি আপুর কথা শুনে চোখ গুলো ধাপসা হয়ে আসল। রীতি আপু আমাকে তাড়াতাড়ি পালিয়ে যেতে বললেন।না হলে বুড়োর জ্ঞান ফিরে আসবে এবং সোহান চলে আসবে।

আমি রীতি আপুর দেওয়া টাকা আর বাটন ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম নতুন গন্তব্যে।পিছন ফিরে একবার রীতি আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখে পানি টলমল করছিলো।সেও যে ভাগ্যের কাছে পরাজিত। না পাড়ছে গিলতে না পারছে বের হতে।

তবে কি এখন সুখ আসবে? নাকি অপেক্ষা করছে আরেক নতুন বিপদ?

যতদূর এ শহর ছাড়তে হবে যে করেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে নাহলে সোহান আমাকে খুঁজে বের করবে। চলে আসার আগে রীতি আপু জানালেন আমার নাকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়।ছোটবেলা থেকে ভেবেছিলাম আমি বড় হয়ে সেখানে পড়বো। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর এ পড়লে সোহান আমাকে দ্রুতই খুঁজে বের করবে। যত দ্রুত ঢাকা থেকে দূরে চলে যেতে হবে। সব চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি রাজশাহী যাওয়ার।

গভীর রাত।চারিপাশে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। বাতাসে শো শো শব্দ হচ্ছে।উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন গন্তব্য,নতুন ঠিকানা।ট্রেনে বসে জিবনের হিসেবে মিলচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম নতুন জীবন কেমন হবে। ছেড়ে আসা হীবনে যেনো আর ফিরতে চাইছিলাম। কিন্তু প্রশ্ন একটাই ভাগ্য কি আমার প্রতি সহায় হবে আদৌ? একা একটা মেয়ে জীবনে কি চালনা করব? যার বাবা নেই,মা থেকেও নেই তার মত অসহায় কি কেউ আছে? আর দাদাবাড়ী কথা মনেও নেই,সেই ছোট বেলায় তাদের দেখেছিলাম।তারা সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার পরে তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি আমার। শুধু এটা জানি আমার দাদাবাড়ী নাকি রাজশাহী। আমিও তো রাজশাহী যাচ্ছি তাদের সাথে কি আদৌ দেখা হবে? ভাবতেই মনে খুশি ঝলক দিয়ে উঠল।কিন্তু তাদেরকে তো আমি চিনি ই না।কিভাবে খুজে পাবো তাদের?আর রাজশাহী বা আমি কোথায় থাকব যেয়ে?

ভাবতে ভাবতে ই চোখ লেগে গিয়েছিলো আমার।হটাৎ এক অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ এ ঘুম ভেঙে গেলো আমার। ভয় পেয়ে উঠলাম।সোহান নয় তো। সে কি আমায় খুজে পেয়ে গেছে?

ভয়ে ভয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলাম একটা টুপি পড়া ছেলে।চারিপাশে তাকিয়ে দেখলাম সকাল হয়ে গিয়েছে।এখন ট্রেন থেকে নামার সময়। প্রায় যাত্রী নেমে গিয়েছে। আমি আর ঐ ছেলে টা বাদে গুণা কয়েকজনই ট্রেনে অবস্থান করছে।ছেলেটা আমাকে এই জন্য ডাকছে। কারণ যারা ট্রেনে অবস্থান করছে তাদের মতিগতি সুবিধার লাগছে না।ছেলেটাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেলাম । এখন যাবো কোথায়? কি আমার গন্তব্য?

হটাৎ দেখলাম ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে।মনে মধ্যে ভয় জেকে বসেছে।এই ছেলেও কি সোহানের মত তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে?ছেলেটা কাছে এসে রীতি আপুর দেওয়া সেই বাটন ফোনটা দিয়ে চলে কোনো কথা না বলে চলে গেলো।

ছেলে অপরিচিত হয়েও আমায় সাহায্য করল।এই ফোনটা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আমার আছে ফোন আর সেই ৫ হাজার টাকা ছাড়া কিছু ছিলো না। এ নতুন শহরে কি ভাবে টিকে থাকব আমি? দুর থেকে ছেলেটার চলে যাওয়া দেখছিলাম। মাথায় টুপি কাধে গিটার। অদূরেই যেন মিলিয়ে গেলো।

এখন আমার গন্তব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলায়।নিজেকে যে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। না হলে সমাজের চোখে আঙুল তুলে দেখাতে পারে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক মানুষের স্বপ্নের জায়গা।এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় বিশ্ববিদ্যালয়। ভাবতেই অবাক লাগছে আমার এখানে চান্স হয়েছে।চারিপাশে জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।হটাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম।চারপাশ তাকিয়ে দেখলাম।যে যার যার কাজে ব্যাস্ত। কারো দিকে যেনো কারো লক্ষ নেই।হটাৎ দেখি কেউ একজন আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।।তাকিয়ে দেখি সকালের সেই ছেলেটা।যে কিনা আমাকে ট্রেনে সাহায্য করেছিলো।কিন্তু এই ছেলেটা এখানে কি করছে?

ছেলেটা আমার অন্যমনস্ক ভাব দেখে আমার হাতে চিমটি কাটল। আশ্চর্য অচেনা অপরিচিত ছেলে কিনা আমার হাতে চিমটি কাটে ভেবে মাথার উপর রাগ চড়ে বসলো। আমি তাড় হাতে না ধরেই উঠে দাড়ালাম।মুখ ঘুরিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম। অফিসরুম খুজতে লাগলাম। পেয়েও গলাম।অনলাইনে সকল তথ্য থাকায় আমার ঝামেলা পোহাতে হয় নি।মেধা যাচাই ৯ তম হওয়ায় আমার ভর্তি হয়ে গেলো।

আমাকে হলে থাকতে দেওয়া হলো। এদিক টায় টাকার সমস্যা না থাকলে? বই খাতা,খাওয়া খরচ এগুলোর টাকা কোথায় পাবো আমি।এটা ভাবতে ভাবতেই চোখের কোণে জল চলে আসলো। এত অভাব কোনো বুঝিনি।আজ বুঝতে পারছি সমাজে একা চলা কতটা কঠিন।

হলে আমাকে যে রুম দেওয়া হলো তা ছোট হলেও পরিপাটি করে সাজানো।নিশ্চয়ই রুমেমেট অনেক গুছানো।এখানে আমি বাদেও একজন আছে।জানি না তার আচরণ কেমন হবে?

চলবে?

নব্যদিনের সূচনা পর্ব-০২+০৩

0

#নব্যদিনের সূচনা
হুমাইরা হুর
(২)+(৩)

মাঝ রাতে গভীর পানি পিপাসায় আমার ঘুম ভেঙে গেলে।হাতের কাছে পানি না পেয়ে পানি আনার জন্য উঠে দরজার খুলতে গেলেই আশ্চর্য হলাম দরজা বন্ধ। কিন্তু রীতি আপু দরজা বাইরে দিয়ে কেনো লাগিয়ে দেবে?

সেই রাত ভয়ে ভয়ে কাটল আমার। বুঝতে পারছিলাম না রীতি আপু কেন দরজাটা বাইরে থেকে আটকে রাখেছিলো। এখনও আমার চারপাশে হানা দিচ্ছে?

রাতে ঘুম হলো না আমার।এসময় চোখটা লেগে এসেছিল আমার। রীতি আপু ঠাক্কায় ঘুম ভাঙলো। আমি দরজা আটকানোর কারন জিগ্যেস করতেই তিনি আমতা আমতা করে বলতে লাগল ভুলে লাগিয়ে দিয়েছিলো।কেন জানি কথাটা আমার বিশ্বাস হলো না।যাই হোক তখন কার মত চিন্তা বাদ দিলাম। রীতি আপু আমাকে খাওয়ার জন্য ডাকলেন। খাবার টেবিলে বসতেই সেই কালকের ছেলেটার সাথে দেখা হলো।আশ্চর্য কালকে যতটা সুন্দর ভেবেছিলাম তার থেকে বেশি সুন্দর। মাথা ঝাকড়া ঝাকড়া চুল,নীলাভ চোখের অধিকারী তিনি বেশি লম্বা না ৫ ফিট ৯ এর মত লম্বা। খাওয়ার সময় ছেলেটার সাথে আমার দু তিনবার চোখাচোখি হয়েছিলো।প্রথম দেখায় ছেলেটা কে আমার ভালো লেগেছিলো।

কিন্তু এই ভালো লাগে ই যে কাল হয়ে দাড়াবে কে জানত?

কেটে গেলো সাপ্তাহ খানেক।দেখতাম ছেলে রাতে আসত।আমার সাথে বেশ কয়েকবার চোখাচোখি ও হয়েছিলো। নিরবে পাশ কেটে এড়িয়ে যেতাম।ভালো লাগতে শুরু করেছিলো ছেলেটাকে আমার।রীতি আপুর সাথে কথায় কথায় জানতে পারলাম ছেলেটার নাম সোহান। সে পুলিশ।ছেলেটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বোধ বেড়ে গেলো।ছোটবেলা থেকেই যেনো আমার পুলিশ দের প্রতি দুর্বলতা ছিলো। তাদেরকে আমি শ্রদ্ধা চোখে দেখতাম।কারণ আমার বাবা ছিলেন পুলিশ। আমার মনে হতো আমার বাবার প্রতিচ্ছবি যেন তারা।ছেলে টা পুলিশ জানার পর থেকে আমি আরো দুর্বল হয়ে পড়ি তার প্রতি। দিনে দিন যেন আমার ভালোলাগা তার প্রতি বাড়ছিলো।তার কথাবার্তা আমায় মুগ্ধ করে দিতো।আস্তে আস্তে তাকে আমি ভালবাসতে শুরু করি। কিভাবে মনের কথা বলব তা বুঝতে পারছিলাম না।ভেবেছিলাম তার মত সুদর্শন ছেলে আমার মত আমার মত এতীম কেন ভালবাসতে?কই আমি তো তেমন সুন্দর না। না আছে আমার লম্বা চুল,না গায়ে ফর্সা রঙ।
তার পাশে আমাকে মানাবে না।এটা নিজের কাছে অসহায় লাগত নিজেকে।যেই মেয়ে কিনা ঘর ছাড়া তার ও কি সুখ কপালে আছে?তাই নিজেকে গুটিয়ে রাখা শুরু করলাম।যতটা পারতাম এড়িয়ে চলাম।কখনো দেখা হলে দেখতাম তার নীলাভ চোখ আমার দিকে শান্ত ভাবে তাকিয়ে রয়েছে,যেন কিছু বলতে চায়। আমি নিরবে সেখান থেকে চলে যেতাম।কত দিন আর অন্যের ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকব? নিজের তো কিছু করতে হবে তাই না।তাই রীতি আপুকে টিউশনি যোগার করে দেওয়ার বললাম।আর লেখাপড়া শুরু করার কথা বললাম।সে আমার সাথে সহমত পোষণ করল।

কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে সোহান একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে সে আমাকে জরিয়ে ধরে।হতভম্ব হয়ে যায় সেই দিন। হাত-পা যেন আমার স্তব্ধ হয়ে আসছিল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমি যেন অজ্ঞান হয়ে যাব। আমাকে জড়িয়ে ধরেছে অঝোরে কাঁদতে থাকে।ছেলেরাও বুঝি কাঁদে?তাকে অসহায় লাগছিলো। আমি কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে আমাকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। এক মুহূর্তে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তার ভালোবাসার কথা শুনে। ভেবেছিলাম হয়তো মনে ভুল।কিন্তু না আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়েে সে আমাকেই ভালোবাসে বলেন। সেও আমাকে ভালোবাসে কথাটা শুনে আমি যতটা খুশি হলাম তার থেকে বেশি অবাকই হলাম কারণ তার মত ছেলে আমার মত মেয়েকে ভালোবাসতে পারে এটা আদৌ সম্ভব।আমার প্রতি না জানা হাজারো অভিযোগ সে আমাকে জানায়।তার প্রতি দুর্বল থাকায় আমিও মানা করতে পারি না। আমাকে গড়ে উঠলো আমাদের মাঝে প্রণয় সম্পর্ক। নিজের থেকেও বেশি তাকে আমি বিশ্বাস করতাম। আমাদের সম্পর্কের কথা রীতি আপুও পর্যন্ত জানতো।। এর মাঝে আমি ভার্সিটি এডমিশন এর প্রস্তুতি নিতে থাকি। তিনি আমাকে সাহায্য করতেন। রীতি আপু আমাকে তিনটি টিউশনি খুজে দিয়েছিল। তিনি আমাকে বাইকে করে আমাকে সেখান দিয়ে আসতেন।হাজারো অভিযোগের ঝুড়ি নিয়ে তার কাছে বসতাম।নিজেকে খোলা পাতার ন্যায় তার কাছে উপস্থাপন করেছিলাম।

কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি ভালোবাসাও আমার ভাগ্যে ততদিন জুটলো না। ভেবেছিলাম তিনি হয়তো আমাকে ভালোবাসেন আমাকে কখনো ধোকা দিবেন না। কিন্তু না তিনি আমার বাবা মায়ের মতো আমাকে ধোকা দিলেন ।

নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্য এক মেয়ের সাথে ঘ`নি`ষ্ঠ অবস্থায় দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মাথায় আমার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল আর মেয়েটা যে রীতি আপু হতে পারে তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি র।রীতি আপু আমার সাথে এমনটা করবেন তা আমার পক্ষে ভাবা অসম্ভব ই ছিলো।তিনি তো আমার বোনের মত ছিলেন। কিন্তু দুইজন তো ভাই-বোন তাহলে তাদের মধ্যেই নোংরা সম্পর্ক কিভাবে সম্ভব? আমার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল।

তাদের একেবারে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে আমি এসে পৌঁছে ছিলাম। বাসার চাবি থাকায় ঢুকতে সমস্যা হয় নি আমার।টিউশন যাওয়ার পর শরীর টা ভালো লাগছিলো না তাই একটা টিউশন না করে চলে এসেছিলাম তাড়াতাড়ি বাসায়।নিজের রুমে যাওয়ার সময় অস্পষ্ট কিছু শব্দ শুনতে পাই।কি হয়েছে তা দেখার জন্য সামনে যেতেই যে এমন অবস্থা দেখব তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি তখন । তারা অসম্ভব নোংরা ভাষায় কথা বলছিলো।তাদের কথাবার্তা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই।

কথা গুলো এমন ছিলো যে সোহান আমাকে কখনেই ভালোবাসে নি। আমাকে ভোগ করার জন্য এমন করেছে।আর সোহান আর রীতি আপু ভাইবোন ও না।তারা হলো এসব নোংরা কাজে একে অপরের পাটনার।রীতি আপু মেয়েদের ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসে।আর সোহান তাদের সাথে প্রেমের নাটক করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তার ভিডিও বানিয়ে রাখে। পরে মেয়েদের কে ব্লাকমেইল করে তারা দিয়ে নোংরা কাজ করায়।আর আমি নাকি তাদের পরবর্তী শিকার।তাদের কথা না শুনলে মেয়েদের বয়স্ক লোকের কাছে বেঁচে দেন।

কথা গুলো শুনে আমার ভয়ে গা কাপতে লাগল।এ কোন নরকে এসে পৌছেছি। এক নরক থেকে বের হয়ে সেধে সেধে আর নরকে এসেছি?রীতি আপুকে ভালো ভাবতাম আর তিনিই আমাকে এ জঘন্য কাজের সাথে যুক্ত করতে চান। ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো আমার। হটাৎ করে রীতি আপু আমাকে দরজার পাশে দেখে ফেললেন।তৎক্ষনাৎ সে সোহানকে ঠাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দিয়ে আমার কাছে আসতে লাগলেন। রীতি আপুকে আমার দিকে আসতে দেখে আমি পালাতে চেষ্টা করলাম।কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। রীতি আপু আমার চুলের মুঠি ধরে চেপে ধরল।আমি ছাড়াতে চেষ্টা করলে সোহান এসে আমাকে জোরে কয়েকটা থাপ্পড় দিল।আমি যেনো নেতিয়ে পড়ালাম।রীতি আপু আর সোহানের এই রুপ যেনো কোনো মতেই আমি মানতে পারছিলাম না। আমি রীতি আপুর কাছে ভয়ে আকুতি মিমতি করতে থাকি আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।কিন্তু তারা আমাকে ছাড়তে নারাজ।আমাকে দিয়ে নাকি অনেক টাকা কামাই করতে পারবে।রীতি আপু আমার চুলে মুঠি ধরে আমি যে রুমে থাকতাম সেই রুমে নিয়ে গেলেন। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দরজা আটকে দিলেন।কি করবো আমি বুঝতে পারছিলাম না। এ কোথায় এসে পড়লাম? যেই সম্মান হারানোর ভয়ে নিজের বাড়ি থেকে চলে আসলাম সেই সম্মান এখন বেচতে হবে আমার?

এসব ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে গেলো।দরজার খোলার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে দেখি সোহান এসেছে।হাতে একটা ক্যামেরা। বুঝতে পারলাম না সোহান কি করবে এটা দিয়ে।মনে ভয় দানা বাঁধতে থাকল। সোহান রুমের এক কোণায় ক্যামেরা সেট করল। করে নিজের শার্ট খুলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।কি হতে চলেছে তা আন্দাজ করে আমার বুকের ভিতরে হু হু করে উঠল।তবে কি…

চলবে?

#নব্যদিনের_সূচনা🌾

🍂হুমাইরা হুর🍂

(৩)

সোহান রুমের এক কোণায় ক্যামেরা সেট করল। নিজের শার্ট খুলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।কি হতে চলেছে তা আন্দাজ করে আমার বুকের ভিতরে হু হু করে উঠল।তবে কি আজ রক্ষে নেই?

সোহান আমার একবারে কাছে চলে আসল।সোহানের নিশ্বাস গুলো আমার মুখের উপর পড়ছিলো।সোহান শক্ত করে আমার দুই হাত দুটো চেপে ধরেছিল। তার থেকে নিজেকে বাঁচতে চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পারছিলাম না। ঘৃণা হচ্ছিল নিজের প্রতিই যে এমন মানুষকে আমি ভালোবেসেছিলাম। নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করেছিলাম।এমন নিষ্পাপ মুখশের পিছনে যে একজন ভক্ষক আমি বুঝতে পারিনি। কি নিখুত অভিনয় ছিলো তার। কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পুলিশদের তো` আজ পর্যন্ত আমি সম্মানের চোখে দেখতাম। তারাই তো সমাজ রক্ষা করে।আজ তারাই আবার মেয়েদের সর্বনাশ করতে দুদন্ড ভাবে না। রক্ষকই তো ভক্ষক হয়ে দাড়িয়েছে সমাজের জন্য।

কোনো মতেই সোহানের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারছিলাম না।বিশাল দেহী এই শক্তপোক্ত অমানুষের কাছে আমার শক্তি যেন কিছুই না। সোহান আমার দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হয়ে যাচ্ছিলো।তাহলে কি আমিও আজকের পর থেকে নোংরা মেয়ে হিসেবে বিবেচিত হব? সমাজের কাছে নিজেকে বিক্রি করেতে হবে?ধ`র্ষি`তার ট্যাগ লাগাতে হবে নিজের নামের উপর।

সোহান আমার ঘাড়ে মুখ ডুবালো।বাজে ভাবে স্পর্শ করা শুরু করেছিলো।আমি যেন নরক যন্ত্রণা ভোগ করছিলাম।আল্লাহ কে বার বার ডাকছিলাম।

সেই মুহুর্তে রীতি আপু আসল।রীতি আপু এসে সোহানকে থামিয়ে দিলো।এসে যা বলল তাতে আমার কিছুটা সময় এর জন্য স্বস্তি পেলেও পরবর্তীতে তা ভেঙ্গে যায়।

রীতি আপু সোহান কে বলে যে আমারে সাথেকিছু না করতে এই মুহুর্তে। কারণ বিকেলে তাদের একজন বড়লোক কাস্টমার আসবে।যে কিনা তাদের অনেক টাকা দেয়।রীতি আপু আমার ছবি দেখিয়েছিলো তাকে।এক দেখায় লোকটার মনে ধরে যায়।তার আমাকে নাকি চাই। তাই তারা আমাকে বিক্রি করে দিবে।কিন্তু লোকটার এর শর্ত যে আমাকে তার আগে কেউ ছুতে পারবে না।আর আমাকে পেলে অনেক মোটা অংকের টাকা দিবে। অনেক টাকার কথা শুনে রীতি আপু লোভ সামলাতে না মেরে তাকে হ্যা করে দেয়।তার চোখ মুখ লোভে চিক চিক করছিলো।

রীতি আপুর কথা শুনে সোহান রাগ উঠে যায়।সে চেয়েছিলো সে আমাগে প্রথমে ভোগ করবে।কিন্তু রীতি আপু বাধা দেওয়ায় পাশে থাকা টেবিল টা লাত্থি মেরে চলে যায়।যাওয়ার আগে আমার উপর অগ্নিময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে যায়।নীলাভ চোখের এক সুদর্শন ছেলের ভেতরে যে জঘন্য এক শয়তান আছে তা সামনে থেকে দেখলে বোঝাই যায় না। রীতি আপু আমার জন্য খাবার রেখে চলে যান।আর আমাকে হুমকি দিয়ে যান।

বিছানার উপর ধপ করে বসে পড়লাম।চারিপাশ যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। আমি এই শয়তানদের চিনতে কেন পারি নি আগে থেকে?

ভালো ভাবে ভেবে দেখলাম সবই আমার চোখের সামনে ছিলো।অন্ধ বিশ্বাসের কারণে আমি কিছুই বুঝতে পারি নি।

রীতি আপুর বাসায় দুই রুম থাকায় এক রুমে আমি থাকতাম আরেক রুমে আপু থাকত। ঘরে কোনো সোফা ছিলো না। এদিকো সোহান তো এ বাসাই থাকত।কিন্তু রাতে কই থাকত?আর আমার রুমের দরজা প্রাই বাইরে দিয়ে লাগানো থাকত। এসব কথা কোনো দিন মাথাই আসে নি তারা এক সাথে এক বিছানায় রাত পার করত।আর আমি কি পরিমাণ বোকা যে চোখের সামনে দিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে পাত্তা ই দেই নি।আমার সামনেই ঘটছিলো সব আর আমি কিনা কিছু বুঝতেই পাটি নি।

আবার রীতি আপু যখন কলেজে পড়ত, তখন একবার শুনেছিলাম রীতি আপুর ভিডিও ভাইরাল হয়েছিলো।আমি তখন বুঝিনি ব্যাপার টা কি?সেই কথা শোনার পর রীতি আপুর যে কি কান্না। তিনি কিভাবে কিভাবে প্রমান করে দেন সেটা সে ছিলো না,এডিট করে তার মুখ বসানো হয়েছে।কিছুদিন গুঞ্জনের পর সব শান্ত হয়ে গিয়েছিলো।অনেকে আমাকে বলেছিলো রীতি আপু ভালো না। সেইসব কথা তখন পাত্তা দেই নি। কারণ পুরো কলেজে রীতি আপু ছাড়া আমার কাছের মানুষ কেউ ছিলো না।তাই অসম্ভব বিশ্বাস করতাম।আসলে মেয়েরা নাকি সহজেই বিশ্বাস করে ফেলে।আজ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি কোনো কিছু মিথ্যা ছিলো না।

রীতি আপুকে বিশ্বাস করা আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিল তারপরে বড় ভুল ছিলো সোহানকে ভালোবাসা। ভাবতে পারিনি সবচেয়ে কাছের দুজন মানুষ আমাকে এভাবে ধোঁকা দিবে।

জীবনের সামনে যে এখনো অনেক বিপদ। এখন আমার কি করতে হবে? অন্ধকার লাগছিল চারিপাশ।এই বিপদের সময় সাহায্যের জন্য কেউ ছিলনা না।

না বসে থাকলে কোনো তো হবে না।নিজের জীবন সম্মান বাঁচানোর জন্য লড়াই করতে হবে। বিছানা ছেড়ে উঠলাম চারপাশ দেখতে লাগলাম কোনো ফোন বা টেলিফোন জাতীয় কিছু পাওয়া যায় নাকি।হন্নতন্ন হয়ে খুজলাম কোথাও কিছু পাই কি না।কিন্তু না কিছুই ছিলো না সেখানে।রীতি আপু আমাকে যে রুম দিয়েছিলেন সেখানে কোনো বারান্দা ছিলো না।ছোট একটা জানালা ছিলো। যেহেতু রীতি আপুর বাসা ৫ তালায় তাই কোনো ভাবে কাউকে ডাক দিলে শোনা যেত না।তখনই মাথায় আসলো কাগজে লিখে সাহায্য চাওয়ার কথা।তখনি আবার খুজতে লাগলাম কোনো কাগজ বা কলম আছে নাকি।অনেক খুজে একটা প্যাড পেলাম কিন্তু কোনো কলম বা পেনসিল পেলাম না। কি দিয়ে লিখব তাহলে?হটাৎ চোখে পড়ল একটা কাজল।কোনো মতে লিখলাম-

`আমি খুবই বিপদে পড়ছি।দয়া করে আমায় সাহায্য করুন।আমি রিজিপারি ভবন এর ৫ তলায় অবস্থান করছি।এরা আমাকে বেচে দিতে চায়।দয়া করে সাহায্য করুন।`

এতটুকু লিখে সামনে থাকা বল প্লাস্টিক ফুল এর সাথে আটকিয়ে নিচে ফেলে দিলাম। পালানোর কোনো সুযোগ ই পাচ্ছিলাম না। দরজা বন্ধ।

কি করবো ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে গেলো।হটাৎ কারো বেল্টের আঘাতে ঘুম ভাঙ্গল। দেখলাম সামনে রীতি আপু আর সোহান দাড়িয়ে।রীতি বপুর হাতে সেই প্লাস্টিকের ফুল টা। তবে কি আমি বাচতে পারব না? ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো।ফুলটা রীতি আপুর হাতে পড়ে গেলো।

রীতি আপু এসে আমাকে কয়েকটা থাপ্পড় দিলো।আর বিচ্ছিরি ভাষায় গালাগালি করতে লাগল।বাড়িয়ালা নাকি চিঠি এটা পেয়ে বাসায় এসেছিলো।বাড়িয়ালা রীতি আপুকে দীর্ঘ দিন ধরে চেনার কারণে কতাটা ভুয়া মনে করে। তাও রীতি আপুকে সর্তক করে দিয়ে যায়।আমার জন্য তারা ফেসে যেতে গিয়েছিলো তাই তারা আমার রুমে আসে।আর মারতে শুরু করে।রীতি আপুকে থামিয়ে সোহান একের পর এক বেল্টের বাড়ি দিয়ে যাচ্ছিলো।ব্যাথায় কাতরাতে থাকলাম।এত যত্রণা আমি কোনোদিনও সহ্য করে নি।এক পর্যায়ে যেন আমি নেতিয়া পড়লাম।রীতি আপু দৌড়ে এসে সোহানের হাত থেকে আমাকে বাচিয়ে নীলেন।আর সোহানকে গালাগালি করতে লাগলেন।কারন আমি মরে গেলে তারা টাকা কিভাবে পাবে?

সোহান বেরিয়ে গেলো।রীতি আপু আমার ক্ষত জায়গায় মলম লাগাতে শুরু করলেন।আর শান্ত হয়ে আমাকে মেনে নিতে বললেন।। আর বলতে শুরু জরলেন তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা।

রীতি আপুর বাবা মা গরীব ছিলেন।তাদের আর্থিক সমসয়া তাকার কারনে তিনি তার ফুফু বাড়ি থেকে পড়া শোনা করতেন।তখন তার বয়স সবে ১২ বছর। অবুঝ ছিলেন তিনি। তার ফুফুতো ভাই ছিলো সোহান।একদিন রাতে যখন রীতি আপু পড়ছিলো তখন তার ফুফা তার কাছে আসেন। বিভিন্ন চকলেট,খেলনা দিয়ে কাছে বসান।অবুঝ রীতি আপু তখন তার কাছে গিয়ে বসত।খালু তাকে বলত আদর করবে। তাই বলে ঐদিন রাতে সেই ১২ বছরের রীতি আপুকে ধ`র্ষ`ণ করেন। অবুজ রীতি আপুর কান্না যেনো থামছিলোই না।খালু তাকে ভয় ডর দেখিয়ে দিনের পর দিন নি`র্যাতন করতে থাকে।রীতি আপুর বসয় যখন ১৫ বছর তখন তিনি গর্ভ`বতী হয়ে যান।সকল ঘটনা তিনি তার ফুফু কে জানান। ফুফু শুনে রীতি আপুকে মারা শুরু করে।মারতে মারতে আধমরা করে ফেলেন রীতি আপুকে।। আর ঐ অধমরা রীতি আপুকে ডাক্তারে কাছে নিয়ে যায় আর বাচ্চা টা নষ্ট করিয়ে ফেলেন সমাজের ভয়ে।এসব কিছুই দেখছিলো সোহান।সমাজের ভয়ে রীতি আপুর ফুফু ও চুপ থাকেন। রীতি আপুর বাবাকে কি করে বলবেন তাই তিনি রীতি আপুকে নিজের কাছে রাখেন।ফুফার অত্যাচার কমলেও রীতি আপুর ফুফু রীতি আপুকে অমানুষিক অত্যাচার করতেন।মাঝে মাঝে ফুফু না থাকলেও ফুফা আবার ও তার নোংরা কাজ করতেন।একদিন সোহানের কাছে হাতে নাতে ধরা পড়েন।ছেলের কাছে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারতেন না তিনি। ততদিনে সোহান রীতিকে ভালবাসতে শুরু করেছিলো।রীতিকে সোহান বাচানোর পর থেকে রীতিও সোহান কে ভালোবাসতে শুরু করে। সোহান রীতিকে পালিয়ে ঢাকা নিয়ে আসে।

সব কিছু ভালোই চলছিলো রীতি সোহানকে ভালোবাসায় নিজেকে বিলিয়ে দেয় সোহানের কাছে।সোহান ও যেন রীতিকে ভালোবাসত।তারা বিয়েও করে।কিন্তু রক্ত বলে কথা আছে না? বাপের মত ছেলে। সোহান এর মেয়ের নেশা ছিলো। সে রীতি ভালোবাসলেও মেয়েদের নিয়ে ব্যাবসা করত।সোহানের জন্য রীতি আজ মুক্ত।আর রীতি সেহানে ভালোবাসে বলে এই অন্যায়ের সাথে যুক্ত।

শুনে আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল।রীতি আপুও যে এতটা অসহায় ছিলো তা ভাবতেও পারি নি।রীতি আপু চলে গেলে রেখে গেলেন আমাকে এক গোলক ধাধায়। কিছুক্ষণ পর সোহান আসল।কিছু জামা কাপড় আমার সামনে রাখল।আর পরে বললেন।আমি না পড়ায় সোহান আমাকে জোড় করে পড়িয়ে দিতে গেলে রীতি আপু বাধা দেয়। সোহান কে যেতে বলে চুপচাপ আমাকে জামাগুলো পড়তে বলেন।

আমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে রীতি আপু আর সোহান এক বয়স্ক লোক এর সামনে বসালেন।বয়স্ক লোকটা আমাকে দেখে আমার গায়ে হাত দেওয়ার চেস্টা করলেন। আমি সরে যেতেই আমার দিক হেসে তাকিয়ে বললেন

`পাখি যত উরার উর।একটু পর আমার খাঁচায় বন্দি হবি। `

আমি তখনো পালানোর কথা ভাবছিলাম। রীতি আপু আমাকে সুন্দর একটা রুমে বসিয়ে রেখে গেলেন।আর বলে গেলেন চুপচাপ যা হচ্ছে মেনে নিতে।রীতি আপু যেতে না যেতেই বয়স্ক লোকটা আমার কাছে এগিয়ে আসতে লাগল। আমার গায়ে থেকে ওড়না টান দিয়ে ফেলে দিলো মাটিতে।তাহলে কি….

চলবে?

নব্যদিনের সূচনা পর্ব-০১

0

#নব্যদিনের সূচনা
হুমাইরা হুর
(১)

যেদিন নিজের সৎ বাবার অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ পেয়েছিলাম সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম যে এ বাসা আমার জন্য নয়।এ পরিবার আমার নয়।বয়স টা তখন সবে ১৬ ছিলো।বুঝে গিয়েছিলাম বাঁচতে হলে দূরে যেতে হবে। কিন্তু উপায় ছিলো না আমার।যাওয়ার কোনো জায়গায়ই ছিলো না, না ছিলো কোনো আত্মীয় স্বজন।এতীমদের কি আল্লাহ ছাড়া আদৌ কেউ আছে? হাহ মা থেকেও এতীম। ভাগ্যের পরিহাসে অনিচ্ছার সত্ত্বেও থেকে যেতে হলো সেই বাড়িতে।ভাগ্যকে মেনে নিয়ে যথাসম্ভব আড়াল রাখতাম ঐ লোক থেকে। কিন্তু তার কুনজর আমার উপর থেকে সরত না।

আমার বাবা মারা যান যখন আমার বয়স ১৪ ছিলেন।বাবা মারা যাওয়ার পনেরো দিন পরেই আমার মা নতুন বিয়ের পিড়িতে বসলেন।যেখানে সদ্য হারানো বাবার শোকে কাতর ছিলাম সেখানে আমার মা ছিলেন বিয়ের আমেজে মত্ত্ব। দীদুনের কাছে শুনেছিলাম আমার মা ছিলো গরীব ঘরের সন্তান।টিনের বাড়ি ছিলেন তাদের।কিন্তু আমার মা ছিলেন অত্যান্ত সুন্দরী। আমার বাবা এক দেখায় আমার মাকে বিয়ে করেন।মায়ের পরিবারে সকল দায়িত্ব নেন। ভালোই তো ছিলো সব।হটাৎ এক ঝড় হওয়ায় উল্টে গেলো আমার পৃথিবী।স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। হটাৎ বাড়ির সামনে লোক জড় দেখে ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম তাতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিলো।এক মুহুর্তে দুনিয়া যেন অন্ধকার ঢেকে গিয়েছিলো আমার। আমার বাবা শুয়ে আছে।সারা শরীরে আঘাত,মুখটা ক্ষ`ত বি`ক্ষত হয়ে ছিলো। ভয়ে শোকে অঙ্গান হয়ে পড়লাম। যখন আমার জ্ঞান ফিরল ততক্ষণে আমার বাবার কবর দেওয়া হয়ে গিয়েছিলো।নিজের বাবাকে শেষ দেখাটুকুও সেদিন দেখতে পারি নি। ১৫ দিন যেতে না যেতেই আমার মা বিয়ে করে নিলেন।তাও আমার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ড কে। তার নাকি দুই ছেলে মেয়ে আছে।পরে জানতে পেরেছিলাম তার সাথে নাকি আমার মায়ের গভীর প্রণয়ের সম্পর্ক ছিলো ।

মায়ের বিয়ের পর আমার বাবার পরিবার আমাদের সাথে সকল সম্পর্ক বিছিন্ন করে দিয়েছিলো।যদিও তারা আমাকে সাথে রাখতে চেয়েছিলো।কিন্তু মা দেয় নি।মাকেও আমি ভীষণ ভালোবাসতাম। এত ভালোবাসতাম যেন আমার মার করা অন্যায় গুলো সঠিক ভাবতাম,কখনো প্রতিবাদ করতাম না।তিনি যা করেছেন সবই ঠিক করেছেন। বাবার আদর পাব এটা ভেবেই খুশি হয়েছিলাম।কিন্তু এটাই যে কাল হয়ে দাড়ায় আমার জীবনে।পরিবারের সেই চঞ্চল মেয়ে টা আসতে আসতে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।

একদিন যখন মা বাইরে গিয়েছিলো আমি রুমে বই পড়ছিলাম।হটাৎ করে দেখি তিনি আমার রুমে।তাকে আমি কখনোই বাবা ডাকি নি। তিনি এসে আমার সাথে কথা বলা শুরু করলেন।কিন্তু এর পিছনে যে তার নিচু মানসিকতা ছিলো তা আমার জানা ছিলো না।তিনি হটাৎ করে আমার গায়ে হাত দিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন।বিষয়টা পাত্তা না দিলেও পরে বুঝতে পারলাম তার উদ্দেশ্য। অতটাও ছোট নই। বোঝায় বয়স হয়েছে তখন আমার। ।ভয়ে কুকড়ে যেতে থাকি।।অসহায় যেন কেউ নেই আমার মত।মনে মনে নিজেকে আল্লাহ প্রতি বিশ্বাস রাখতে বলছিলাম। যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন।হ্যা আল্লাহ ই আমাকে ঐদিন সাহায্য করেছিলেন শয়তানের হাত থেকে বাঁচতে। তিনি যখন আমায় ছোয়ার চেষ্টা করেন তখন বাড়ির কাজের লোক রেহেনা আপা আমার রুমে খাবার দিতে আসছিলেন।তাকে থেকে লোক টা চলে যায়। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাচি।মনের মধ্যে ভয় দানা বাঁধতে থাকে৷ নিজেকে আড়াল করতাম সব সময়।

এ ঘাটনার পর তিনি প্রায় আমার সাথে নোং|রামি করার চেষ্টা করতেন।আমার মাকে জানালে তিনি এ বিশ্বাস করেন না। আমাকে মার ধর করেন। আমাকে ৩ দিন খেতে দেন না। লেখা পড়া বন্ধ করে দিলেন।মাঝে মাঝে রেহেনা আপা লুকিয়ে আসতেন। জোর করে কিছু খায়িয়ে দিতেন।তার কলে মাথা রেখে চোখের জল বিসর্জন দিতাম।কিছু দিনের মাথায় মা আসেন। নিজের সাথে জরিয়ে ধরেন।আদর করে খাওয়ান। আমার কাছে ক্ষমা চান মারধর করার কারনে। আমাকে বোঝান এগুলো আমার মনে ভুল।বাবা হিসেবে তিনি আদর করছিলেন।আরো অনেক কিছু।সেদিন নিরব চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।তার পর ২ বছর ভালেই ছিলাম। তিনি কোনো খারাপ ব্যাবহার করেন নি আমার সথে।ভেবেছিলাম হয়েতো সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।হয়তো বাবার আদর পাব।

এত কিছু পর ও ঠিক ছিলো সব।কিন্তু ধৈর্য্যের বাধ সেদিন ভাঙ্গল গেলো যেদিন উনি রাতে আমার রুমে আসলেন। সেদিন সকালে বৃষ্টি ভেজায় জ্বর এসেছিলো রাতে। শরীর টা তখন দুর্বল ছিলো।ঘুমের মধ্যে হটাৎ অনুভব করলাম কেউ আমার মুখে হাত দিয়ে বা`জে ভাবে স্পর্শ করছে। ধড়পড়িয়ে উড়লাম।সামনে কালো অবয়ব দেখে দূর্বল হাতে ধাক্কা দেও চেষ্টা করলাম।খুব বেশি সরে না গেলোও হালকা সেরে গেলেন।আবার আমার দিকে তেড়ে এসে আমার গলা চেপে ধরলেন।। বুঝে গিয়ে ছিলাম কালো ছায়া টা কে। নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো আমার।ধ`স্তা`ধ`স্তি একসময় আমি যেনো নেতিয়ে পড়ছিলাম। তবে কি?আজ রেহাই পাব না? মানুষ রুপী জানোয়ার এর কাছ থেকে নিজেকে বাচাতে পারব না আর? আমাকে নেতিয়ে পড়তে দেখে লোকটা ভয় পেয়ে আমার গলা ছেড়ে দিলো। কোনো মতে লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেলাম বাড়ি থেকে।সেই রাতেই এক কাপড়ে ঐ বাসা ছেড়েছিলাম আমি।হাতে না ছিলো ফোন না ছিলো কোনো টাকা।

কিন্তু এখানেও শেষ না। ঝড় আসা তো কেবল শুরু হয়েছিলো জীবনে।

কোথায় যাবো তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না।।এ শহরে যে কেউ ছিলো না আমার। হটাৎ মনে পড়ল রীতি আপু কথা।রীতি ছিলো আপু কলেজের এক বড় আপু।যদিও অনেক দিন তার সাথে কথা হয় না। কষ্টের সময় তার কথাই মনে পড়েছিলো আমার। কলেজে একমাত্র তাকেই পেয়েছিলাম আমি। তার সাথে আমার সম্পর্ক যেনো বোনের মতই ছিলো। কিন্তু আপুর এইচএসসি শেষ হওয়ার পর আমাদের মাঝে আর যোগাযোগ ছিলো না। তার বাসা যেহেতু চেনা ছিলো আমার তাই যেখানের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।

রাত তখন ১ টা কি ২ টো বাজে। রীতি আপু আমাকে দেখে চমকে উঠলেন।রীতি আপু দেখে যেনো আমার চোখে পানি বেরিয়ে আসল।আপুকে জরিয়ে ধরে অঝোরে কান্না করেছিলাম সেদিন। মনে হয়েছিলো তার থেকে আপন কেউ নেই আমার।আমাকে কি হয়েছে জিগেশ করতেই সব ঘটনা খুলে বললাম। সব ঘটনা শুনে স্তব্ধ হয়ে পড়ছিলেন তিনি।হয়তে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিলো তার।তিনি কোনো মতে আমাকে শান্ত করে তারে পাশের রুমে নিয়ে গেলেন। রীতি আপুর বাসাটা বেশ সুন্দর। ছিমছাম করে গুছানো।তার বাসায় দুটো রুম।একটা বাথরুম আর রান্নাঘর। একা একটা বাসায় থাকে ভাবতেই অবাক লাগে।রুমে আসার সময় লক্ষ করলাম একটা ছেলে ফোনে গেম খেলছে।ছেলেটার চেহারা দেখতে না পালেও ভালোই সুদর্শন মনে হলো।কথায় কথায় জিগ্যেস করতেও তিনি অকপটে বলে দেন এটা তার ভাই।আমার জানা মতে আপু কোনো ভাই ছিলো না।হটাৎ করে উদয় হলো কিভাবে?ধুর থাকতেই পারে। সেদিকে মাথা ঘামালাম না। সকল ভাবনা চিন্তা বন্ধ করে দিলাম।রীতি আপু আমাকে জোর করে খাইয়ে শুয়ে দিয়ে চলে গেলেন।

মাঝ রাতে গভীর পানি পিপাসায় আমার ঘুম ভেঙে গেলে।হাতের কাছে পানি না পেয়ে পানি আনার জন্য উঠে দরজার খুলতে গেলেই আশর্য হলাম দরজা বন্ধ। কিন্তু রীতি আপু দরজা বাইরে দিয়ে কেনো লাগিয়ে দেবে?

আবার ও কি সামনে বিপদ? অপেক্ষা করছে অনেক কিছু,,,,,

চলবে!

প্রণয় স্রোতে পর্ব-০৮(অন্তিম পর্ব)

0

#প্রণয় স্রোতে
#পর্বঃ৮(অন্তিম পর্ব)
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

“স. সরো!”

জড়তা নিয়ে বলে উঠল বহ্নি।বহ্নি ভেবেছিল হয়তো আরাব সরবে না।কি’ন্তু বীনা বাক্যে সে সরে গেল।সামনের দিকে তাকিয়ে আছে আরাব।বহ্নি এর বেশ অ’স্ব’স্তি হচ্ছে।এই ছেলের কা’জ’ক’র্ম কোনো কিছুই তার বোধগম্য হয় না।এই শান্ত তো এই অশান্ত।

“আমরা এখানে কেন এসেছি?”

ডিনার করতে।আরাবের শা’ন্ত ক’ন্ঠ।বহ্নি কোনো প্রতিউত্তর করলো না।চুপচাপ নেমে দাঁ’ড়া’লো। আরাব ও ব্য’তি’ক্র’ম নয়।

নি’র্জ’ন পরিবেশে এমন একটা ধাবা বেশ আ’ক’র্ষ’নী’য়।আরাব আর বহ্নি গিয়ে বসল একটি কোনায় তারপর দুজনেই নিজেদের ডিনার শেষ করে নিলো।ডিনার শেষে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে বিল মিট করছে আরাব আর বহ্নি বাইরে এসে দাড়িয়ে আছে। আরাব বহ্নি এর কাছে এসে দাড়ালো।নি’স্ত’ব্ধ’তা থাকলে ও বাতাসের কমতি নেই জায়গাটাতে।মৃ’দু’ম’ন্দ বাতাস বেশ ভালোই বইছে।

“লং ড্রাইভে যাবে?”

আরাব হঠাৎই জি’জ্ঞে’স করে উঠল। কয়েক মিনিটের জন্য ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল বহ্নি। এতো রাতে লং ড্রাইভ? প্র’শ্ন’টা গুটি কয়েকবার নিজের মাথায় ঘুরলো।

“আমি খুব টা’য়া’র্ড।বাড়িতে যেতে পারলে বেশি ভালো লাগতো!কি’ন্তু যখন তোমার যেতে ই’চ্ছে হয়েছে তখন কি আর আমার ই’চ্ছে’র দাম থাকবে?”

বহ্নি এর কন্ঠে অভিমান এর রেশ স্প’ষ্ট।সেই সাথে প্রকাশ পাচ্ছে ক্ষো’ভ। কিন্তু এই ক্ষোভ কিসের?কার ওপর এই ক্ষো’ভ? আরাবের ওপর! কেন? কারণ সে বহ্নি এর সাথে থাকতে চেয়েছে!

এক এক করে কথাগুলো মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকলো আরাবের।আরাব আর কিছু বলল না।চুপচাপ বহ্নি কে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল।
_____________
নি’স্ত’ব্ধ রজনীতে সকলে ঘুমে বিভোর। আরাব ও এপাশ ওপাশ করতে করতে একটু আগে পাড়ি জমিয়েছে ঘুমের দেশে।শুধু নিদ্রাহীন বহ্নি। তার মাথায় যে বিশাল প’রি’ক’ল্প’না। আজকে আর বহ্নিকে জড়িয়ে রাখেনি আরাব।তাই বিনা বাধায় খাট থেকে নেমে গেল বহ্নি।টেবিল ল্যা’ম্প জ্বা’লি’য়ে শুভ্র কাগজে ফেলতে লাগলো কালির আচড়।

গতকালের মতো আজ ও আরাব দেরিতে জাগলো।অ’র্থ্যা’ৎ বহ্নি এর পরে।কাল রাতে অনেক কিছু ভেবেছে সে।সাথে সি’দ্ধা’ন্ত ও নিয়েছে।বহ্নি কে আর কোনো কিছুতে জোর করবে না ধীরে ধীরে উ’প’ল’ব্ধি করাবে সবটা।সাথে সে নিজে ও করবে।

একটা ছেলে মানসিক ভাবে যতটা স্ট্রং হয় একটা মেয়ে ততটা হয় না।সবটা স্বা’ভা’বি’ক ভাবে আরাব মানতে পারলে ও বহ্নি পারেনি।আর তার জন্য মেয়েটাকে সত্যি একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন।
______________
ফ্রে’শ হয়ে বের হওয়ার পর ও বহ্নি এর দেখা মিলল না।আরাব ভাবলো হয়তো নিচে আছে সেজন্য সে ও নিচে নেমে গেল।কি’ন্তু নিচে মনিমা একটা কাগজ হাতে নিয়ে বসে আছে। পেছন থেকে মনিমার অ’ভি’ব্যা’ক্তি ঠিক বুঝলো না আরাব। কিন্তু সামনে গিয়ে দেখলো মনিমার মুখ বেশ থমথমে। আরাব এর দিকে এক নজর তাকালেন তিনি। তারপর কাগজ টা আরাবের হাতে দিয়ে চলে গেলেন নিজের ঘরে। আরাব এমন ব্যবহারে বেশ অবাক হলো তারপর কাগজ টি নিয়ে পড়তে গিয়েই থমকে গেল সে।কারণ কাগজটিতে লেখা আছে,

“মনিমা,

চিঠিটা পেয়ে আপনি কি ভাববেন জানি না। তবে কথাগুলো চিঠির মাধ্যমেই আপনাকে জানাতে হ’চ্ছে। যেদিন প্রথম আপনি আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন সেদিন আমি ভেবেছিলাম এবার হয়তো একটা মায়ের অভাব আমার ঘুচবে! কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস দেখুন,একটা মা পেতে গিয়ে আমাকে নিজের অনুভুতি গুলো গলা টিপে মেরে ফেলতে হলো।একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে তার ভাইকে নিয়ে সংসার করা আপনাদের দৃ’ষ্টি’তে স্বাভাবিক।কিন্তু আমার পক্ষে সেটা মানা স’ম্ভ’ব নয় মনিমা।আপনার ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই শুধু এটুকু বলবো,এনগেজমেন্ট এর দিন একজন ক’ন্যা’দা’য়’গ্র’স্থ পিতার কাছে তার দুই মেয়ের বিয়ের কথা জানানোর আগে একটা বার আমার কাছে জিজ্ঞেস করতে পারতেন দীঃর্ঘ একমাস যাবত যে বাড়ির বড় ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে সেই বাড়ির ছোট ছেলেকে নিজের স্বা’মী হিসাবে মানতে পারবো কি না!

ইতি বহ্নি। ”

চিঠিটা পড়েই এক মু’হূ’র্ত দেরি করলো না আরাব ছুটে গেল নিজের ঘরে। আরাবের বি’শ্বা’স বহ্নি তার জন্য ও একটা চিঠি রেখে গেছে।
____________________
সকাল বেলা বাড়ির দরজা খুলেই যে একটা খাম পাবে তোহান আজাদ সেটা তিনি ভাবেননি।খামের ওপর বেশ বড় করে লেখা বহ্নি। তোহান আজাদ অবাক হলেন।কি আছে খামের মধ্যে! সেটা দেখার জন্য খামটি খুলে বের করলেন একটা চিঠি।যেখানে লেখা আছে,

নামটা দেখেই বুঝে গেছ হয়তো এটা আমি।হ্যাঁ বাবা। আমি বহ্নি। তোমার সেই মেয়ে যার অনুভূতির দাম দিতে তুমি ব্যার্থ।সেই ছোট থেকেই আমি একা ছিলাম। স’ঙ্গী বলতে শুধু তানভি।তুমি কখনোই আমাকে বোঝার চে’ষ্টা করোনি।এন”গে’জ’মে’ন্ট এর আগে যদি একটা বার আমাকে জি’জ্ঞে’স করতে আমি আরাব কে চায় কি না! কিন্তু তুমি সেটা করোনি।আর আজ সে কারণেই আমাকে এত বড় একটা সি’দ্ধা’ন্ত নিতে হলো।আমি তোমাদের সবাই কে ছেড়ে চলে যা’চ্ছি বাবা।হয়তো আর দেখা হবে না।শুধু একটা কথাই বলবো,তোমাদের ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই।

বহ্নি। ”

চিঠিটা পড়েই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো তোহান আজাদ এর। মেয়েদের সুখী করতে গিয়ে যে এত বড় একটা অন্যায় তিনি করে ফেলেছেন সেটা বহ্নি চোখে আঙুল দিয়ে না দেখিয়ে দিলে তিনি বুঝতেই পারতেন না।কি’ন্তু আফসোস এখন আর তিনি তার ভুল শুধরাতে পারবেনা।সারাটা জীবণ আ’ত্ম’গ্লা’নি তে ভুগতে হবে তাকে।
_____________________
সকাল সকাল ও’য়া’র্ড’ব’য় এর হাত দিয়ে চিঠি এলো ইয়ারাব আর তানভি এর জন্য ব’রা’দ্দ কেবিনে। বাকিদের মতো এরা ও বেশ অবাক হলো এমন কাজে তবে চিঠির ওপর বহ্নি এর নাম লেখা। তানভি চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো সেখানে লেখা ছিল,

“তানভি চিঠিটা পড়ে একটু ও কাঁদবি না বলে দিলাম।আমি চলে যাচ্ছি। তবে যাওয়ার আগে ভেবেছিলাম তোকে একটা সরি বলবো।কারণ আরাবকে বিয়ে করার একমাত্র কারণ ছিল ইয়ারাব। ইয়ারাব এর ক্ষ’তি। কিন্তু যে মানুষটা আমার ছোট বোনের অনেকটা জুড়ে রয়েছে তার ক্ষতি করার ক্ষমতা এখনো হয়নি আমার।তানভি, তিন দিনে তোর ইয়ারাব এর প্রতি যে ভালোবাসা আমি দেখেছি আমি স’ত্যি খুশি।তুই সারাটা জীবন সুখে থাক সেটাই চায় আমি।হোকনা সেটা আমার প্রথম অনুভূতির সাথে। ”

প্রথম অনুভূতি। কথাটা বারবার মাথায় বাড়ি খাচ্ছে তানভি এর।এই সহজ বিষয়টা কি এতদিন চোখে পড়েনি তানভি এর।নাকি ই’চ্ছে করে দেখতে চায়নি সে।সত্যি তো বহ্নি এর তো ইয়ারাব এর সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু তানভি কি সুন্দর, একটা ভুল বোঝাবুঝি কে সামনে দাঁড় করিয়ে সেই মানুষটার সাথেই ঘর বেঁধেছে তাও আরাব বহ্নিরই সামনে।বহ্নি তাকে বলেছিল সে চাইলে এ বিয়ে করতে পারে এতে বহ্নি এর কোনো আপত্তি নেই। কি’ন্তু সে কথার পেছনে লুকিয়ে থাকা অভিমান টা একটাবার বুঝতে পারলো না তানভি।নিজেকে অনেক বেশি ছোট লাগছে তানভি এর।যে বোন মায়ের থেকে কোনো অংশে কম ছিল না সেই বোনের স্ব’প্ন কে মাটি চাপা কি করে দিতে পারল তানভি।বুকের ভেতর টা জ্ব’লে যা’চ্ছে তানভি এর।তার বোন যে কতটা ক’ষ্ট বুকে নিয়ে চলে গেছে সেটা হয়তো আচ করতে পারছে তানভি।জ্ব’লে ট’ই’ট’ম্বু’র চোখ দুটি মুছে নিয়ে আবার ও পড়তে লাগলো তানভি,

ইয়ারাব,

স’ম্প’র্কে এখন তুমি আমার বড় ভাসুর।আবার ছোট বোনের স্বামী ও।কি’ন্তু কি অ’দ্ভু’ত তাই না।কয়েকদিন আগে ও আমাদের সম্পর্কটা অন্য কিছু হওয়ার কথা ছিল। আমি বলছি না তুমি নিজের ভালোবাসাকে চুজ করে ভুল করেছো।শুধু এটুকু বলবো,

যে মানুষটাকে দিনের পর দিন স্ব’প্ন দেখালো একটা বার জেনে নেওয়া উচিত ছিল সে মানুষটা তোমার কাঙ্ক্ষিত মানুষ কিনা!”

পরের লেখাটা জোরেই পড়ল তানভি।ইয়ারাব চুপচাপ শুনলো।কোনো প্রতিউত্তর করলো না।কিন্তু চোখের কা’র্ণি’স বেয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েকফোটা জল।এতটা নিচ কাজ করেছে সে। ভাবতেই নিজের প্রতি কেমন জানি বিতৃষ্ণা চলে এলো যেন
_____________
কেটে গেছে দু দুটো বছর।ইয়ারাব এবোর্ড থেকে অপরেশন করিয়ে এসে এখন সে সু’স্থ।বিজনেসে আবার ও জয়েন করেছে সে।সকলে সকলের মতো ভালো আছে।তবে সেই ভালে থাকার মধ্যে ও কোথাও একটা ক’ষ্ট বিরাজ করে।মনিমা এখন বাড়ির স’ম’স্ত সি’দ্ধা’ন্ত সকলেকে সাথে নিয়ে নেই।তোহান আজাদ মাঝে মাঝে তানভি এর সাথে যোগাযোগ করেন কিন্তু যতবারই যোগাযোগ করেন বাবা মেয়ে দুজনেই বহ্নি এর জন্য চোখের জল ফেলে।

ইয়ারাব এর মধ্যে আজ ও অপরাধ বোধ কাজ করে। বারবার একটা কথাই মনে হয় বহ্নি এর সাথে এতবড় অন্যায় করার পর ও একটা বার ক্ষ’মা চাইতে পারেনি সে।আর তানভি এর প্রতিদিনের সাধারণ কাজের মধ্যে একটি হলো নিজের মায়ের সমান বোনের জন্য চোখের জল ফেলা।

______________________

কানাডা এর একটি ছোট্ট শহর টরন্টো।সেখানের একটি ছোট্টবাড়ি ড্রিম হাউজ।সেখানে,

প্রা’ণ’চ্ছ’ল বহ্নি চারিদিকে ছুটে বে’রা’চ্ছে প্র’তি’প’ক্ষে’র হাত থেকে ধরা না পড়ার জন্য।বারবার তার হাত থেকে পা’লা’চ্ছে।সেই সাথে পুরো বাড়ি তার হাসির শব্দে রিনরিন করে উঠছে।দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎই দুটো হাত পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো বহ্নি এর কোমর।প্রত্যেক বারের ন্যায় এবার ও শীড়দাড়া বেয়ে নেমে গেল শীতল স্রোত।বরফের ন্যায় জমে গিয়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো ‘বলি’ষ্ঠ এক বুকে।দুজনেরই বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ শব্দ।

বেশ কিছুক্ষণ পর পেছন থেকে সেই শিরশিরানি শব্দ কানে এলো বহ্নির।

“এতো ছোটাছুটি করছো কেন?আমি কি তোমায় খেয়ে ফেলব নাকি?”

ই’ঙ্গি’ত’পূ’র্ণ কথায় বহ্নি এর মুখে দেখা দিল রক্তিম আভা। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছুট লাগালো কিছুদূর তারপর বলে উঠল,

“রোজ, রোজ তোমার এক কথা ভালো লাগে না আমার!বলছি তো আমার এখন খেতে ই’চ্ছা করছে না।তাও তুমি জোর করছো!”

“এখনো তো কিছুই করিনি।যদি আজ রি’পো’র্ট পজিটিভ আসে।আর আমি স’ত্যি বাবা হয় তাহলে এরপর থেকে তুমি দেখতে পাবে এই আরাব কি জিনিস!”

আবার ও রিনরিনে শব্দে হেসে ফেলে বহ্নি। কি’ন্তু হাসি থামার আগেই বেজে ওঠে আরাবের ফোন।ফোনটা পকেট থেকে বের করে একবার নম্বর টার দিকে চোখ বুলায় আরাব। তারপর সেটা নিয়ে চলে যায় বেশ খানিকটা দূ’র’ত্বে। যেখান থেকে বহ্নি এর অ’স্বি’ত্ব বোঝা যাবে না।আরাব দূরে যেতেই হাসি থামিয়ে দেয় বহ্নি। সিঁড়ি বেয়ে সোজা চলে আসে নিজের ঘরে।উহু তার আর আরাবের ঘরে। সে জানে এখন বাংলাদেশ থেকেই ফোন এসেছে।বেলকনিতে রাখা দোলনাটাতে বসে পড়ে বহ্নি। আর হিসাব মেলাতে থাকে গত দু বছর এর ঘটনার।

নিজের পক্ষে যতটা স’ম্ভ’ব সকলের দোষ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে চলে আসে বহ্নি।সকলের জন্য তাদের দোষের চিঠি ব’রা’দ্দ থাকলে ও আরবের জন্য ছিল অন্য কিছু। সেদিন,

🍁🍁🍁🍁

একছুটে নিজের ঘরে চলে আসে আরাব।সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খোঁ’জে কিন্তু কোনো চিঠি পায়না।সারাদিন বহ্নি এর চিন্তায় কেটে যায় আরাবের। তবে গভীর রাতে ফোন আসে তার ফোনে।ন’ম্ব’র দেখেই আরাব বুুঝতে পারে এটা বাইরের ন’ম্ব’র। সেজন্য সাথে সাথে রিসিভ করে সে।তবে বহ্নি এর কথাগুলোর পিঠে আর কিছু বলে উঠতে পারে না সেদিন। শুধু এটুকু বলেছিল,

“ভাই যেদিন এর্বোড থেকে ফিরতে তার পরের সপ্তাহে আমি কানাডাতে যাবো!”

🍁🍁🍁

“আঙ্কেল (বহ্নির বাবা) এখন সুস্থ আছে। ডোন্ট ওয়ারি!”

বহ্নি এর ভাবনার মাঝে বহ্নি এর পাশে বসে বলে ওঠে আরাব।

“তোমাকে ফেরার কথা বলেনি?”

“সে আর বলতে! তারা তো আর জানে না আমি আমার পুরানে বউ নিয়ে এখানে নতুন করে সংসার পেতেছি তাই যতবার ফোন করে সকলেই বলে দেশে ফিরে তোমাকে খুঁ’জে বের করতে।কিন্তু যে পাখি আমার কাছেই আছে তাকে কেন খুজতে আবার ও বাংলাদেশ যাবো বলোতে!”

কথাগুলো বলেই বহ্নি এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে আরাব।পেটে আলতো করে মুখ গুজে জি’জ্ঞে’স করে ওঠে,

“তোমার টেনশন হচ্ছে না?”

“একটু!”

“ডোন্ট ওয়ারি।আজকেই রি’পো’র্ট পেয়ে যাবো!”

“হুম!”

আরাবের সিল্কি চুলের মাঝে হাত বোলাতে বোলাতে জবাব দেয় বহ্নি।

বহ্নি যে কানাডাতে আরাবের সাথে আছে সেটা কেউ জানে না।সেই শ’র্তে’ই আরাবকে নিজের ঠিকানা দিয়েছিল বহ্নি। সেই সাথে বলেছিল তার খবর যদি পরিবারের কেউ জানে তাহলে এবার হারালে আর কখনো ফিরে আসবে না সে।আরাব ও মেনে নিয়েছিল বহ্নি এর কথা।ইয়ারাব সু’স্থ হওয়ার মাঝে কানাডাটে বিজনেস এর একটা নতুন অংশ খোলে এবং এখান থেকেই সেটা দেখাশোনা করে।

বহ্নি চাইলেই পারতো আরাব এর থেকে দূরে সরে আসতে। কিন্তু কেন? সে কেন এ’কা’কি’ত্ব বেছে নেবে জীবনে।যে মানুষগুলো তাকে কষ্ট দিয়েছে সে মানুষ গুলোর ক্ষ’তি বহ্নি করতে পারবে না। কি’ন্তু নিজে কেন কষ্টে থাকবে! একটা মেয়ের একাকি জীবন অনেক কষ্টের। আর সেই ক’ষ্টে’র জীবন বেছে নেয়নি বহ্নি। প্রত্যকে নিজেদের ভালো থাকা টাই দেখেছে।তাই বহ্নি ও নিজের মতো করে ভালো থাকার চে’ষ্টা করল।বহ্নি জানে শুধু একটুখানি ক্ষ’মা চাওয়ার জন্য ওই মানুষ গুলো প্রতিনিয়ত ছটফট করে। কি’ন্তু ব’হ্নি সে সুযোগ দেবে না।সারাটা জীবন আ’ত্ম’গ্লা’নি’তে ভোগাটাই তাদের শা’স্তি।

আরাব বহ্নি এর কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেছে। ঘু’ম’ন্ত আরাবের মাথায় আলতো করে ঠোঁ’ট স্পঃর্শ করল বহ্নি। তারপর ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

“আমি তোমার #প্রয়ণ_স্রোতে নিজেকে ভাসিয়েছি আরাব।সাথে সুখী ও আছি।শুরুর দিকটা ক’ষ্ট’ক’র ছিল তবে এখন এই পৃথিবীতে সুখী মানুষ গুলোর মধ্যে আমি ও একজন।”

একথাগুলো কানে যাওয়ার পরেই ঘুমের ভান করে থাকা আরাবের ঠোঁ’টের কোনায় ফুটে উঠল চমৎকার হাসি।

সমাপ্ত।

প্রণয় স্রোতে পর্ব-০৭

0

#প্রণয় স্রোতে
#পর্বঃ৭
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

আরাবের দিকে তাকাতেই চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেল বহ্নি এর।কেমন এক অ’দ্ভু’ত দৃ’ষ্টি’তে দেখছে আরাব তাকে।এই দৃ’ষ্টি’র কি নাম দেবে বহ্নি ভেবে পেল না।এমন দৃ’ষ্টি’র অর্থ ও খুঁ’জে পেল না। এ যেন এক স’র্ব’না’শা দৃ’ষ্টি যা একজন স্ত্রী কে জ্বা’লি’য়ে দিতে স’ক্ষ’ম।কয়েক মুহূ’র্ত স্ত’ব্ধ থাকার পর বহ্নি আরাব ও কিছুটা সা’হ’স জোগালো তারপর বলে উঠল,

“আ’ম সরি আরব! কি’ন্তু এই বিয়ে টা আমি সংসার করার জন্য করিনি।আমার একমাত্র উ’দ্দে’শ্য ছিল ইয়ারাব এর ক্ষ’তি। কি’ন্তু সেটা ও এখন আমার প’ক্ষে স’ম্ভ’ব নয়।তাই আমি আর এই সংসার নামক মি’থ্যা বেড়াজালে জড়িয়ে থাকতে চায় না।এতে তুমি আমি কেউই সুখী হবো না।তাই আমার মনে হয় আমাদের ডি’ভো’র্স নেওয়ায় শ্রেয়।”

“বলা শেষ?”

আরাবের নি’র্লি’প্ত কন্ঠ। যেটা দেখে বহ্নি বেশ অবাক হলো।বেশ অবাক হয়েই বলে উঠল,

“আমার কথাগুলো তুমি বুঝতে পারছো?”

“অবশ্য’ই। বাংলা ভাষায় খুব স্প’ষ্ট ভাবে তুমি আমাকে বলেছো না বোঝার কি আছে! তবে তুমি একটা জিনিস ভালোভাবে বুঝে নাও, আমি তোমাকে ডি’ভো’র্স দেব না।আর না তোমাকে দিতে দেব!”

আরাবের এমন স্প’ষ্ট কথা শুনে হ’ত’ভ’ম্ব বহ্নি। কি বলে ছেলেটা।বেশ উ’দ’গ্রী’ব হয়ে বহ্নি বলে ওঠে,

“যে স’ম্প’র্কে ভালোবাসা নেই সে স’ম্প’র্ক টিকিয়ে রেখে কি লাভ?”

“আর ইউ সিওর?”

“হোয়াট?”

“আই মিন টু সে দেট,আর ইউ সিওর আমাদের স’ম্প’র্কে কোনো ভালোবাসা নেই?”

“কি.কি বলতে চাইছো তুমি?”

তুতলিয়ে বলে ওঠে বহ্নি।

আরাব এগিয়ে গেল বহ্নি এর দিকে। এ’ত’ক্ষ’ণ সামনাসামনি দাঁ’ড়ি’য়ে কথা বলাই আরাব এগোনোর সাথে সাথে বহ্নি কে ও পেছাতে হলো।এক পর্যায়ে দেওয়ালে আটকে গেল সে।আরাব বেশি দূ’র’ত্ব রাখলো না দুজনের মধ্যে তবে শরীরে শরীরে টাচ ও লাগলো না এমনভাবে দূ’র’ত্ব বজায় রাখলো।পকেটে দুই হাত গুজে নি’র্বা’ক ক’ন্ঠে বলে উঠল,

“আমাদের বিয়ের আজ তিনদিন। আর এ তিনদিনে তুমি আমাকে যতটা শা’ন্ত দেখেছো আমি তার থেকে ও বেশি অ’শা’ন্ত।আমাকে নিয়ে হয়তো তুমি এই তিন দিন বা তার ও অ’ল্প সময় নিয়ে ভেবেছো কি’ন্তু আমি তোমাকে ১০ দিনের বেশি সময় নিয়ে ভেবেছি। আর এই দশ দিনে তোমাকে নিয়ে ভেবে আমি একটাই সি’দ্ধা’ন্ত নিয়েছি আমি সারাজীবন তোমার সাথে থাকবো!”

কোনো মানুষের স্বা’ভা’বি’ক ক’ন্ঠে বলা কথাকি কখনো কারো শরীরে হিম ধরিয়ে দিতে পারে? হয়তো কিছু মু’হূ’র্ত আগে ও বহ্নি জবাবে বলত না! কি’ন্তু এই মূ’হু’র্তে সে বলবে স’ম্ভ’ব। সে নিজে আরাবের কথা শুনে বরফের ন্যা’য় জমে গেছে। এই ছেলেকে যেমনটা ভেবেছিল ঠিক তার বিপরীত সে।স্ব’চ্ছ পানির ন্যা’য় শান্ত ছেলেটি যে অনলের ন্যা’য় শা’ন্ত হু’ম’কি দিতে পারে সেটা যেন বি’শ্বা’স’ই হ’চ্ছে না বহ্নি এর।

হঠাৎই বলা নেই কওয়া নেই বহ্নি কে কোলে তুলে নিলো আরাব।বিছানাতে শুয়িয়ে নিজে ও শুয়ে পড়ল।বিষয়টা এখানে থেমে গেলে বহ্নি হয়তো সামলে নিতো নিজেকে।তবে আরাব যে তার থেকে ও ভ’য়’ঙ্ক’র কাজ করছে।বহ্নি কে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। আর বহ্নি কিছু বলে ওঠার আগেই কড়া কন্ঠে বলে উঠেছে,

“কারো ওপর জোর করে স্ত্রীর অধিকার আদায় করে নিজেকে পুরুষ প্র’মা’ণ করার মতো ঘৃ’ণ চি’ন্তা ভাবনা আমার নেই। তবে আমার বিয়ে করা বউকে কখন টাচ করবো সেটা ও কারো কাছ থেকে পারমিশন নেব না আমি!”

আরাবের কড়া ক’ন্ঠে’র বি’রু’দ্ধে প্রতিবাদ করে উঠতে চাইলো বহ্নি এর ম’স্তি’ষ্ক। কিঃন্তু মনের মধ্যে কিছু একটা বাধা দিলো যেন।সত্যি তো আরাবকে বিয়ে করার আগে একবার ভাবা উচিত ছিল বহ্নি এর।

এই ভাবনা আসার কারণ জানা নেই বহ্নি এর।আরাবের সেই ঘায়েল করা দৃষ্টি। নাকি মনের মধ্যে কোথাও লুকিয়ে থাকা স্ত্রী স্ব’ত্তা বলে উঠল কথাটি যা এই তিন দিন প্রতিশোধের অনলে চাপা পড়েছিল।সঠিক উত্তর টা দিতে পারল না বহ্নি এর মন।না পারল ম’স্তি’ষ্ক। অনেক দ্বি’ধা দ্ব’ন্দ্ব নিয়েই পাড়ি জমালো ঘুমের দেশে।

সকালের সোনালি রোদ চোখে পড়তেই পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো বহ্নি। পাশে আরাব ঘুমিয়ে আছে। তবে রাতের মতো জড়িয়ে রেখে নেই।
ঘুমন্ত আরাবের দিকে তাকিয়ে তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে বহ্নি।হয়তো এই প্রথম আরাবকে এতটা কাছ থেকে নিজে দেখছে সে।ছেলেটার গায়ের রং নিয়ে কথা উঠলে অবশ্যই তাকে ফরসাদের কাতারে ফেলতে হবে।মুখে রাখা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি ছেলেটির মুখটিকে বেশ মায়াবি করে রেখেছে। উচ্চতায় বহ্নির থেকে কয়েক ই’ঞ্চি ল’ম্বা আরাব।বলতে গেলে বহ্নি আরাবের কাধ অবদি।যেটা নাকি পা’র্ফে’ক্ট কাপলদের সাইন।হঠাৎই মনের কোনে ভাবনা এসে হানা দিলো বহ্নির।সে কি চাইলে পারে না আরাবের সাথে সত্যি সত্যি একটা পা’র্ফে’ক্ট কাপল হতে।কি জানি? আর তা’ড়া’হু’ড়ো করে কোনো সি’দ্ধা’ন্ত নেবে না বহ্নি।

জীবনে একবার হিংসার অনলে পুড়ে অনেক বড় আর ভুল সি’দ্ধা’ন্ত একবার নিয়ে ফেলেছে সে।বিয়ের আগে একটাবার ও ভাবেনি যে মানুষটার সাথে স্বা’মী স্ত্রী’র পবিত্র ব’ন্ধ’নে আ’ব’দ্ধ হতে যা’চ্ছে তার যো’গ্য স্ত্রী হয়ে উঠত পারবে কিনা! তাকে মেনে নিতে পারবে কি না!

আরাব তো ওর জায়গায় ঠিক। সে তো ডি’ভো’র্স দেওয়ার জন্য বিয়ে করেনি।সে তো সংসার করার জন্যই বিয়েটা করেছে।তাহলে!

নানা রকম চি’ন্তা হচ্ছে বহ্নির।কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল ভেবেই পাচ্ছে না।সবটা বারবার এলোমেলো হয়ে যা’চ্ছে।অনেক এলোমেলো ভাবনা নিয়েই ওয়াশরুমে চলে গেল বহ্নি। বহ্নি চলে যেতেই চোখ মেলে তাকালো আরাব।এত’ক্ষঃণ যে তার বউ তাকে খুঁ’টি’য়ে খুঁ’টি’য়ে দেখছিল সেটা ভালো করেই টের পেল সে সেই সাথে মুখে ফুটিয়ে তুলল এক র’হ’স্য’ময় হাসি।

সকালের সব কাজ মোটামুটি গোছগাছ করে সকলেই হসপিটালে চলে এসেছে।ইয়ারাব এর সুস্থ হতে এখনো দিন পনেরো লাগবে! তবে পনেরো দিন পরে ও সে পরিপূর্ণ সু’স্থ হবে না।ইয়ারাব এর মাথায় একটা জায়গায় রক্ত জমাট বেঁ’ধে আছে যার জন্য বাইরে যেতে হবে ওকে।ইয়ারাব মোটামুটি সুস্থ হলে পনেরো দিন পরেই ওকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার সি’দ্ধা’ন্ত নিয়েছে সবাই।

হসপিটালে তানভি রাতে ছিল। আরাবেরা সকলে পৌছালো তানভি বাড়িতে এসে ফ্রে’শ হয়ে নেই। তারপর আবার ও ছোটে হসপিটালের উ’দ্দে’শ্যে।

সারাদিন বাড়ি হসপিটাল করেই কাটছে পরিবারের মানুষগুলোর।প্রত্যেকের এখন একটাই চাওয়া ইয়ারাব যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।

আরাবের সাথে সারাদিন কথা বলেনি বহ্নি। প্রয়োজন ছাড়া।কেমন একটা এড়িয়ে চলেছে সে।আরাব সেটা ঠিকই খেয়াল করেছে। তবে সারাদিনের ব্য’স্ত’তা’য় কিছু বলেনি।

মনিমা সহ সকলেই বিকাল থেকে হসপিটালে।তবে বহ্নি খেয়াল করছে তানভিকে।কি সুন্দর নিরোলস সেবা করে যাচ্ছে ইয়ারাব এর।মাত্র এই কয়দিনে কি কারো ওপর এতো টান অনুভব করা যায়।কই তার তো আরাবের প্রতি সে রকম টান নেই। নাকি আছে যা সে বুঝতে পারছে না।

হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে বহ্নি। বাকিরা ইয়ারাব এর কেবিন এর ভেতরে।হঠাৎই কাঁধে কারো হাতের স্প’র্শ পেল বহ্নি। পেছনে ফিরতেই দেখা পেল তানভি এর।দুদিনেই কেমন শুকিয়ে গেছে মুখটা।তারপর ও সে খুশি।

“কি ভাবছো আপুনি?”

জিজ্ঞেস করে উঠল তানভি।

“কিছু না। এমনি দাঁ’ড়িঃয়ে আছি!”

জবাবে বলল বহ্নি।

“তুমি এখনো ভাইয়াকে মেনে নিতে পারোনি তাই না!”

“তোকে এসব কে বলেছে?”

“কেউ না।তবে আমি জানি! জানো আপুনি বিয়ের আগের দিন অবধি ইয়ারাব এর ওপর আমার কোনো ফিলিংস কাজ করতো না।কিন্তু যখন থেকে আমি এটা উ’প’ল’ব্ধি করতে পেরেছি যে ওই মানুষটা আমার স্বা’মী।আমি তখন থেকেই যেন কেমন একটা মায়ায় জড়িয়ে গেছি।আমি নিজে ও জানি না এটা কিভাবে হয়েছে। শুধু এটুকু জানি এই মনুষটার সাথে আমি ভালো থাকবো।আ’চ্ছা আপুনি তোমার কখনো মনে হয়নি তুই ভাইয়ার সাথে ভালো থাকবে?কখনো মনে হয়নি এই মানুষটার ওপর চোখ বুজে ভরসা করা যায়?”

হঠাৎই বুকের মধ্যে ধক করে উঠল বহ্নি এর।সত্যি তো সে তো আরাবকে ভরসা করে।এটা জানে না সে মায়ায় পড়েছে কিনা! কি’ন্তু সে ভরসা করে।খুব ভরসা করে আরাবকে।তবে কেন করে সেটা জানে না বহ্নি।তখনই পেছন থেকে গলা খাকারির শব্দ পেল বহ্নি আর তানভি।পেছনে ফিরতেই দৃ’শ্য’মান হলো আারব।আরাব তানভি এর উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

“বেশ রাত হয়েছে ভাবি। মনিমা আগেই চলে গেছে।এবার আমাদের ও যেতে হবে।বোনের সাথে গ’ল্প’টা না হয় কালকে করো।আর ভাইয়া ও তোমাকে খুঁজছে!”

তানভি আর কথা বাড়ালো না। ওর পক্ষে একদিনে সবটা ঠিক করা সম্ভব না।তবে তানভি চে’ষ্টা করবে যাতে বহ্নি ও আরাবকে মেনে নিতে পারে।একটা স্বাভাবিক স’ম্প’র্কে আসতে পারে।

চেনা পরিচিত রা’স্তা’টার বিপরীতে গাড়ি যখনই টা’র্ণ নিলো আরাব।তখনই চমকে উঠল বহ্নি। এ পথ দিয়ে তো বাড়িতে যাওয়া যাবে না তাহলে আরাব এ পথে কেন গাড়ি ঘোরালো।বহ্নি আরাবের দিকে চেয়ে কিছু বলার আগেই ব্রে’ক করল আরাব।চারিদিকটা বেশ অ’ন্ধ’কা’র।লোকজন ও কম রা’স্তা’টা’তে।দূরে একটা ধাবা দেখা যা’চ্ছে।সেই আলোতে আশপাশ দেখে বোঝার চে’ষ্টা করছে বহ্নি। হঠাৎই আরাব ঝুঁ’কে এলো বহ্নি এর দিকে। সীট বেলটা খুলে দিল। তবে সিট বেল খুলে আর সরে আসেনি।বহ্নি এর দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইল সে।বহ্নি ও তাকালো সেই দৃষ্টির দিকে। বহ্নি এখন একটা কথাই ভাবছে আরাব কেন এটতা স’ম্মো’হ’নী দৃ’ষ্টি’তে তাকায় বহ্নি এর দিকে।সে এই দৃ’ষ্টি দিয়েই ঘায়েল করে দেবে বহ্নিকে।নাকি শা’ন্ত করে দেবে বহ্নি এর উ’ত্ত’প্ত হৃদয়?

চলবে,

প্রণয় স্রোতে পর্ব-০৬

0

#প্রণয় স্রোতে
#পর্বঃ৬
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

চোখ মেলে নিজেকেও হসপিটালের বিছানাতে আবিষ্কার করে বহ্নি। ধীরে ধীরে ম’স্তি’ষ্ক সজাগ হতে থাকে যেন।এখানে কি করছে সে? প্র’শ্ন’টা মাথাতে আসতেই তড়াক করে মনে পড়ে গেল ইয়ারাব এর খবরটি।বাকিরা কোথায় এটা ভেবেই তড়িঘড়ি করে বেড থেকে নেমে পড়ল বহ্নি।যত দ্রু’ত স’ম্ভ’ব পা চালিয়ে বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে। তবে কেবিন থেকে বের হয়ে ইয়ারাব এর জন্য ব’রা’দ্দ কেবিনে পা ফেলার আগেই কারো হেঁ’চ’কা টানে ভেতরে ঢুকতে বাধা পড়ল বহ্নি এর।পেছনে ফিরে আরাবকে দেখে বেশ অবাক হয় সে।আরাব য’থে’ষ্ট স্বা’ভা’বি’ক। কে বলবে আজ এই ছেলেটার প্রি’য় মানুষ টি নেই। বহ্নি এক নয়নে আরাবকে অবলোকন করতে ব্য’স্ত তখন আরাব বহ্নি কে টেনে নিয়ে আসে বহ্নি এর জন্য ব’রা’দ্দ কেবিনটিতে।

বহ্নি বুঝতে পারেনা কিছুই। বহ্নি এর প্র’শ্ন’বোধক চাহনি দেখে আরাব বলে ওঠে,

“ওই কেবিনে ভাই আর ভাবি আছে। ওখানে এখন তোমাকে যেতে হবে না।তুমি এখানে রে’স্ট করো!”

আরাবের কথাটা ম’স্তি’ষ্কে প্রবেশ করতে সময় লাগলো একটু।যখনই কথাটা ম’স্তি’ষ্ক ধারণ করতে পারলো তড়াৎ করে উঠল ম’স্তি’ষ্কে’র নিউরন গুলো।তানভি আর ইয়ারাব ওই কেবিনে।কিন্তু সেটা কি করে স’ম্ভ’ব?”

বহ্নি এর ভাবনার মাঝেই আরাব কিছু ওষুধপত্র গোছাতে গোছাতে বলে উঠল,

“তোমাদের দুই বোনের কি অ’জ্ঞা’ন হয়ে যাওয়া রোগ আছে নাকি? ভাবি দু দু বার জ্ঞা’ন হারালো! শেষ বার তো মাথাটাই ফাটিয়ে ফেলল।আর তুমি ভাবি কে না দেখে নিজে ও অ’জ্ঞা’ন হয়ে গেলে! আরে ও’য়া’র্ড’ব’য় এর কথার সত্য’তা টা অ’ন্ত’ত যাচাই করবে তো!”

আরাবের কথাগুলো মাথার ওপর দিয়ে যা’চ্ছে বহ্নি এর। তবে এটুকু বুঝলো ইয়ারাব এর কিছু হয়নি।

আবার কাজ করতে করতে নিজের মতো বলে উঠল,

“ভাই এর পাশের কেবিনের পে’সে’ন্ট আর নেই।তিনি মারা গেছেন।ওয়ার্ডবয় তাদের বাড়ির লোককে খবর না দিয়ে ভুল করে তোমাদের খবরটা জানিয়েছে। আর সেটা শুনে তোমরা দুই বোন জ্ঞা’ন হারিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খা’চ্ছি’লে।ভা’গ্যি’স আমি তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলাম। ভাবির মাথায় ব্যা’ন্ডে’জ করিয়ে, তোমাকে কেবিনে রে’স্ট করতে রেখে যখনই ভাই এর কেবিনের দিকে যাচ্ছিলাম তখন রেসপন্স করতে শুরু করে ভাই!আল্লাহর রহমতে এখন আউট অফ ডে’ন্জার!”

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো আরাব। সাথে একটা স্নতির নিশ্বাস ও নিলো সে।আর বহ্নি এক মনে কথাগুলো শুনছে!

তবে ইয়ারাব সু’স্থ হয়ে যাবে এটা শুনে প্র’শা’ন্তি পেল বহ্নি। যে মানুষটার ওপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল সেই মানুষটা যখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ফিরে আসে, তার ওপর কি আর কোনো প্রতিশোধ নেওয়া যায়!

রিভেঞ্জ অফ নেচার বলে ও একটা কথা আছে। ইয়ারাব এর শাস্তি টা না হয় প্রকৃতিই ওকে দেবে!

হঠাৎই বহ্নি এর মাথায় উদয় হয় এক নতুন প্র’শ্ন।তার আর আরাব এর স’ম্প’র্কে’র সমীকরণ কি হবে তাহলে? বহ্নি তো আরাবকে ভালোবেসে এই বিয়ে করেনি! না আরাব তার কোনো আচরণে এটা বুঝিয়েছে সে বহ্নি কে ভালোবাসে। বহ্নি এতদিন ইয়ারাব প্রতি ক্রো’ধে’র আগুনে জ্বলেছে আর আরাব সেই আ’গু’ন নেভানোর চে’ষ্টা’য় ম’শ’গু’ল ছিল।

কিন্তু এরপর? এরপর তাদের স’ম্প’র্ক টা কোথায় গিয়ে দাড়াবে! স্বা’ভা’বি’ক একটা স’ম্প’র্ক গড়বে নাকি! শেষ পরিণতি বি’চ্ছে’দ হবে ওদের সম্পর্কের।

নাহ!আর ভাবতে পারছে না বহ্নি।মস্তিস্কের নিউরনগুলো ছিড়ে আসবে এবার হয়তো! সকাল থেকে কম ধকল যায়নি শরীরের ওপর।এতটা মানসিক প্রে’শা’র আগে কখনো পায়নি বহ্নি। সেই সাথে অনাহার তো আছেই। মন সায় না দিলে ও শরীর তো মানতে নারাজ।প্রকৃতি সন্ধ্যা ছুঁ’ই’ছুঁ’ই। একটু ফ্রে’শ হওয়া এবার আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

তানভি আর বহ্নি কে নিয়ে বাড়ি ফিরল আরাব।ওরা দুজনেই আসতে নারাজ।কিন্তু মনিমা নিজে ওখানে থেকে এদেরকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়েছে।কারণ এখন ইয়ারাব আগের থেকে কিছুটা সু’স্থ।
___________________
এক মনে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে বহ্নি। কত বিচিত্র আকাশের খেলা।কখনো নিকাশ কালো আঁ’ধা’রে ঢেকে থাকে।আবার কখনো পূ’র্ণি’মা’য় চারিদিক আলোকিত করে রাখে।মানুষের মন ও তেমনি।যখন মন খারাপেরা হানা দেয় তখন মনটা ও নিকাশ কালো আঁ’ধা’রে ঢেকে থাকে আর যখন স’ম’স্ত তি’ক্ত’তা দূর হয়ে যায় তখন পূ’র্ণি’মা’র মতো জ্ব’ল’জ্ব’লে।

আচ্ছা বহ্নি এর আকাশ তো এখন নিকাশ কালো আঁ’ধা’রে ঢেকে আছে এখানে কি কখনো পূ’র্ণি’মা হবে!

নিজেই নিজেকে প্র’শ্ন করে উঠল বহ্নি। তানভি হসপিটালে।রাতে ইয়ারাব এর কাছে একজনের বেশি এলাও না। আর তানভি কিছুতেই ইয়ারাব কে ছেড়ে আসবে না।তাই বাকিরা সবাই বাড়িতে চলে এসেছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নানা রকম ভাবনায় মশগুল বহ্নি। তখনি ওয়াশরুম এর দরজা খোলার শব্দে ধ্যা’ণ ভা’ঙে তার।আরাব কেবলই শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে।বহ্নি আরাবকে বের হয়ে আসতে দেখে নিজে ও বেলকনি থেকে রুমে চলে এসেছে। আজ একটা কঠিন সিদ্ধা’ন্ত নিয়েছে সে।যদি ও বহ্নি এর ধারণা আরাব এর এটাতে পূ’র্ণ সম’র্থ’ন থাকবে।তাও কেমন যেন জড়তা কাজ করছে মনের মধ্যে।

আজ সকাল থেকে অনেক ধকল গেছে আরাব এর ওপর দিয়ে।এত বড় কিছু ঘটবে সেটা কারোরই ধারণা ছিল না আর না ছিল এই পরিস্থিতি তে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া।তবু ও আরাবকে সবটা মানিয়ে নিতে হয়েছে।এই মুহূর্তে সবটা ঠিকঠাক আছে এটাই যেন আরাবের শান্তি।

“আমার কিছু কথা ছিল!”

অনেক জড়তা নিয়ে শেষমেশ বলে উঠল বহ্নি।

“হুম বলো!”

নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে উঠল আরাব।

“আমি কিছু বলতে চাচ্ছি!”

মানে.. ”

আমতা আমতা করে ও বলে উঠতে পারছে না বহ্নি। কথাটা কিভাবে শুরু করবে।বহ্নি এর আমতা আমতা দেখে ভ্রু কুচকে গেল আরাবের।

আরাব আর বহ্নি যে দূ’র’ত্বে দাঁড়িয়ে ছিল সেটা ঘুচিয়ে দিল আরাব।ধীর পায়ে এগিয়ে গেল বহ্নি এর কাছে। মেয়েটা এখনো হাসফাস করছে।

“রি’লা’ক্স বহ্নি! এতো হেজিটেড করার কিছু নেই। তোমার যেটা বলার নি’শ্চি’ন্তে আমাকে বলতে পারো!”

আরাবের ভ’র’সা’পূ’র্ণ কথাতে একটু সাহস পেল যেন বহ্নি। একটু শ্বা’স নিয়ে বলে উঠল ,

“আই থিংক আমাদের ডিভোর্স নেওয়া উচিত! ”

এটুকু বলেই থেকে গেল বহ্নি। আরাবের রিয়াক্ট দেখার জন্য ওপরে তাকালো।আর তাকাতেই

চলবে,

প্রণয় স্রোতে পর্ব-০৫

0

#প্রণয় স্রোতে
#পর্বঃ৫
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

ইয়ারাব এর এক্সিডেন্ট টা বেশ গুরতর।মাথায় বেশ ভারি আঘাত পেয়েছে।যার জন্য সাথে সাথে অপারেশন থিয়েটার এ নিতে হয়েছিল ওকে।তবে সেখানে আর এক কান্ড করে বসে আরাব।সে কিছুতেই ইয়ারাব কে ভেতরে একা ছাড়বে না।নিজে ও যাবে।

ডক্টররা শুরুতে রাজি না থাকলে ও শেষে বাধ্য হয় ওকে ভেতর নিতে যদিও সেটার জন্য অথরিটির পারমিশন নেওয়া লেগেছে। তবে এটাতে কোনো অসুবিধা হয়নি আরাব এর।কারণ অথরিটির লোক আরাবকে চেনে।

এই মূহুর্তে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে ইয়ারাব কে।ভালো মন্দ কিছু বলতে পারবে না তারা।তবে এই মূহুর্তে ইয়ারাব এর যা কান্ডিশন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে সে কোমায় চলে যাবে।ডক্টর যতটুকু পেরেছে শান্তনা দিয়েছে ইয়ারাব এর পরিবার কে।তানভি সমস্ত টা শোনার পর পাগলের মতো বিলাপ করছে।বহ্নি কে জড়িয়ে ধরেই হাউমাউ করে কেঁদেছে সে।তানভি এর কান্না দেখে বহ্নি ও পারেনি নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে।কি করে পারবে, আজকের দিনটার জন্য তো প্রত্যক্ষভাবে সেই দায়ী।প্রতিশোধের নেশা তাকে অন্ধ করে দিয়েছিলো।সেই তো তানভিকে বুঝিয়ে ছিল ইয়ারাব কে বিয়ে করার জন্য।(লেখিকার কোনো দোষ না! সব দোষ বহ্নি এর) তানভি তো নিজের বাবা আর বোন এর কথা শুনেই এই বিয়েটা করেছিল।কিন্তু আজ কেন তাহলে এত বড় শাস্তি পাচ্ছে সে।কাঁদতে কাঁদতে এক সময় জ্ঞান হারায় তানভি।হঠাৎ এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় প্রেশার ফল করেছে তানভি এর।তাই ওকে অন্য কেবিনে দেওয়া লাগে।আপাতত স্যালাইন চলছে।মনিমাকে তানভি এর কাছে বসিয়ে বের হয়ে আসে বহ্নি।

নিজে থেকে কাঁদতে যেন ভুলে গেছে সে।যখন তানভি ওকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছিল তখন কয়েক ফোটা অশ্রু ঝরেছিল তানভি এর চোখ দিয়ে তবে সেটা ইচ্ছাকৃত নয়।

হসপিটাল থেকে ধীর পায়ে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো বহ্নি।চারিদিকে অনেক বেশি লোক।একটু ফাঁকা জায়গা দরকার নিশ্বাস নিতে।

কোনো কিছু না ভেবে ছাদে উঠে গেল বহ্নি।ভাগ্য প্রশন্ন ছিল বলে হয়তো সেখানে আর কেউ ছিল না।ছাঁদের কিনারা এর কাছে দাঁড়িয়ে রইল বহ্নি।এতটুকু সময়ের মধ্যে যেন ঝড় বয়ে গেছে পুরো পরিবার এর ওপর দিয়ে।

বহ্নি হঠাৎ খেয়াল করল তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে।তবে পেছনে ফিরতেই যে আরাবকে দেখবে সেটা ভাবেনি সে।বহ্নি এর কি হলো কে জানে,এক ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল আরাবকে।এই প্রথমবার আরাবের এত কাছে গেল বহ্নি। সেটা ও নিজে থেকে।খুব শক্ত করে জড়িয়ে রইল বহ্নি।

বহ্নি এর এমন কাজে প্রচন্ড অবাক হলো আরাব!বহ্নি কে ছাঁদে আসতে দেখেছে সে।এতক্ষণে ডক্টর আর ওষুধপত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিল।সব ফর্মালিটি শেষ করে ইয়ারাব এর কেবিন এর দিকে যেতে গিয়ে চোখ পরে বহ্নি এর ওপর।আর তারপরই এখানে আসা।

বহ্নি এর কেঁপে ওঠা আর ফোপানি এর শব্দে আরাব বুঝতে পারে মেয়টি কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতেই বহ্নি বলে ওঠে,

“আমি এমনটা চায়নি আরাব! বিশ্বাস করো এমনটা চায়নি! আমার জন্য আজ আমার বোনটা কষ্ট পাচ্ছে। আমি কি করব বলো আরাব? আমি কি করব!”

কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে বহ্নি এর। হঠাৎই মুখ তুলে ধরে আরাব বহ্নি এর।নিজেকে শক্ত রেখে, বহ্নিকে বলে ওঠে,

“ভাই এর কিচ্ছু হবে না। দেখো ও ঠিক হয়ে যাবে!”

আরাবের কথায় যেন একটু কাজ দিল।আস্তে আস্তে কমে আসল কান্নার বেগ। তবে হেচকি এখনো বন্ধ হয়নি।আরাব বহ্নি কে জড়িয়ে ধরেই দাঁড়িয়ে আছে।তবে বেশ কিছুক্ষণ পর অস্বস্তি টা ঘিরে ধরল বহ্নি কে।

তানভি এর কান্না দেখে নিজে ও মারাত্মক ভেঙে পড়েছিল বহ্নি। সেজন্যই তো ছাঁদে চলে এসেছিল।কিন্তু সেখানে আরাবকে দেখতে পেয়ে আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি বহ্নি। সমুদ্রের ঢেউ এর মতো আছড়ে পড়েছিল আরাব এর বুকে।কিন্তু এখন।এখন তো বেশ লজ্জা লাগছে তার।

আরাবকে আস্তে করে ছেড়ে দিলো বহ্নি। আরাব ও দিল।বিপদের সময় যে কেউ ই যে কাউকে আকড়ে ধরতে পারে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। নিজেকে এই ফালতু এক্সকিউজ টা দিয়ে বুঝালো নিজেকে বহ্নি। বহ্নি এর অবস্থা আরাব হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো। তাই নরমালি বহ্নি কে বলল নিচে যেতে বহ্নি ও বিনা বাক্যে নিচে চলে এলো।

আজকে বহ্নি, আরাব,তানভি আর ইয়ারাব এর আজাদ ভিলাতে যাওয়ার কথা ছিল। নিয়মমতো বৌভাত এর পরের দিন যাবে ওরা।নিজেদের মধ্যে ও একই পরিকল্পনা ছিল।তবে সকালে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় যাওয়া ভেস্তে গেল সবার।তবে, তোহান আজাদ নিজের ছোট জামাই এর এমন একটা খবর শুনে হসপিটালে ছুটে এসেছেন। এখানে এসে ইয়ারাব এর কান্ডিশন আর তানভি এর অবস্থা দেখে নিজে ও ভেঙে পড়েন।যতই হোক বিয়ের পরের দিন এমন একটা দুর্ঘটনা কোনো পরিবারেই কাম্য নয়।

নিজেকে বড্ড বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে তোহান আজাদ এর। মেয়েদেরকে সুখে দেখবে বলেই তো এই বিয়েতে রাজি হন তিনি। এক মেয়ের সাথে অন্যায় হচ্ছে সেটা অবদি চোখে পড়েনি তার।তিনি ভেবেছিলেন ইয়ারাব এর সাথে তানভি এর বিয়ে হলে তানভি সুখেই থাকবে।আর আরাব এর মতো একটা ছেলে বহ্নি এর জীবণে আসলে এক মাসের মিছে প্রেম ভুলে যাবে মেয়েটি।কিন্তু ওপরওয়ালা যে এমন কিছু ভেবে রেখেছিল কে জানতো সেটা!

সকাল পেরিয়ে দুপুর হলো।এখনো সকলেই হসপিটালে আছে।সবার একটাই আশা এই বুঝি ইয়ারাব এর জ্ঞান ফিরল।এই বুঝি ইয়ারাব রেসপন্স করল।কিন্তু সকলে শুধু অপেক্ষায় করে চলেছে। সেই অপেক্ষার অবশন ঘটছে না।

আরাব সকলেকে বাড়িতে চলে যেতে বলেছে। কিন্তু কেউ শোনেনি। ঘড়ির কাটা দুপুর ২ টা এর ওপারে। সকাল থেকে এখনো কেউ কোনো কিছুই মুখে তোলেনি।তানভি এখনো কেবিনে। জ্ঞান ফেরেনি তার।হঠাৎ কোনো রকম মারাত্মক শক নিতে পারেনা তানভি।যদি একবার শক পেয়ে জ্ঞান হারায় তাহলে জ্ঞান কখন ফিরবে কেউ বলতে পারে না।ছোট বেলা থেকেই তানভি এমন।

বহ্নি তানভিকে ছেড়ে যেতে নারাজ।তবে মনিমাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছে আরাব।

সময় গড়ায় নিজের মর্জিমতো! কেউ যেমন তাকে বাঁধতে পারে না,তেমনি কেউ চাইলে ও সময়টাকে তারাতাড়ি পার করতে পারে না।তানভি এর জ্ঞান ফেরে বিকালের দিকে। বহ্নি সেখানেই ছিল। বহ্নিকে দেখে আরো একচোট কেঁদে দেয় তানভি।তবে সেখানেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে এক ওয়ার্ডবয়।হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ওঠে,

“আপনারা তারাতাড়ি চলুন।আপনাদের পেসেন্ট আর নেই।”

কথাটা বিস্ফোরণ এর ন্যায় লাগে ওখানে উপস্থিত প্রতিটা মানুষের কাছে।বহ্নি যেন নিজের জায়গায় জমে গেছে।কি শুনলো ও।যে মানুষ টার ওপর এতো করোধ ছিল সে মানুষ টা আর নেই।এভাবে চলে গেল!

বহ্নি যখন এসব ভাবনায় ব্যাস্ত! তখনই কেঁপে ওঠে কোনো কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে। কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে দেখে তানভি মাটিতে পড়ে আছে।হঠাৎই মাথা ঘুরে পরে যাওয়ায় ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারেনি সে।সজোরে বাড়ি খেয়েছে বেড এর মাথার গ্রিলের সাথে।লবনাক্ত রক্তে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর।কিন্তু আশ্বর্য বহ্নি শরীরে কোনো শক্তি পাচ্ছে না। চোখের সামনে শুভ্র ফ্লোরটা রক্তে ভেষে যাচ্ছে কিন্তু সে কিছু করতে পারছে না।না পারছে তার বোনেকে তুলে ধরতে,না পারছে ছুটে ইয়ারাব এর কাছে যেতে! ওয়ার্ডবয় এর কথার সত্যতা যাচাই করতে।

এ কেমন পরিস্থিতি যে বহ্নি নিজের মস্তিষ্কে জোর দিতে অচল।সবটা যখন ধীরে ধীরে অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে তখনই বহ্নি একটু একটু করে বুঝতে পারছে সে ও চেতনা হারাচ্ছে। তার বোনের পাশেই হয়তো ছিটকে পড়বে ওর অশাড় শরীরটি।

চলবে,

ইয়ারাব কি সত্যি মারা গেল!!!

প্রণয় স্রোতে পর্ব-০৪

0

#প্রণয় স্রোতে
#পর্বঃ৪
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

দক্ষিণা বাতাসে চারিদিক ভরপুর। ঝড় উঠেছে, হয়তো বৃ’ষ্টি ও হবে।বৃ’ষ্টি হওয়ার পর হয়তো ঝড় শান্ত হয়ে যাবে।কিন্তু যে ঝড় বহ্নি এর মনের মধ্যে চলছে সেটা কি ব’র্ষ’ণ হয়ে থেমে যেতে পারবে।

এক প্রকার নিজের সাথে যু’দ্ধ করে রিসিপশন টা পার করেছে বহ্নি।এত পরিচিত, অপরিচিত লোকের ভীড়ে ও বিষাদের তাড়নায় দ’গ্ধ হচ্ছিল হৃদয়।সেই দ’গ্ধ হৃদয় নিয়েই সৌজন্য হাসি হেসেছে বারবার। হঠাৎই বহ্নি এর খেয়াল হলো আজ প্রায় দুদিন এ বাড়িতে সে।একই সাথে তার আদরের বোনটি ও।অথচ বিনা কারণ ছাড়া একবার ও তানভি এর সাথে কথা বলেনি সে।সামনে অবদি যায়নি।মা চলে যাওয়ার পর ওরা দুই বোনই তো একে অপরের স’ঙ্গী ছিল। ওদের বাবার এই বিয়েতে রাজি হওয়ার প্রধাণ কারণ ছিল ওরা দুই বোন একই সাথে থাকতে পারবে।বাবা হিসেবে কি খুব ভুল কিছু চেয়েছেন তিনি!প্র’শ্ন জাগল বহ্নি এর মনে!

ছোট থেকেই তানভি বহ্নি কে ছাড়া অচল। এজন্যই সে এ বিয়েতে রাজি হয়েছে। সদ্য আঠারোতে পা দেওয়া তার বোনটি নতুন পরিবারের সাদ উপভোগ করতে,নতুুন মানুষকে নিয়ে ঘর বাধতে আর নিজের বোনের ছায়া তলে থাকতে যে অন্য কোনো কিছু চিন্তা না করেই এ বিয়েটা করেছে। সেটা তো বহ্নি বোঝে।তাহলে কি করে সে পারল! কি করে পারল ব’হ্নি তার বোনকে অবহেলা করতে!!

প্রশ্নটা মনে উদয় হতেই বোনের ছায়াকোনে লুকায়িত মাতৃসত্তা জেনে জেগে উঠল বহ্নি এর।নিজের কাছেই কেমন অপরাধী মনে হতে লাগল। সত্যি তো! সবটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল।ইয়ারাব না জেনে তার সাথে অন্যায় টা করে ফেলেছে। কি’ন্তু সে যে সি’দ্ধা’ন্ত নিয়েছে সেটা তো জেনে শুনেই।আংটি বদলই এখনকার দিনে সব নয়।সে চাইলেই বিয়ে টা ভেঙে দিতে পারত।কিন্তু না জেদের বসে এত বড় একটা সি’দ্ধা’ন্ত নিয়ে নিলো বহ্নি।

আজ রিসিপশনে তানভি অনেক বেশি ঘাবড়ে গেছিল। বিয়ের দিন ওদের বাড়ির আ’ত্মী’য় বেশি ছিল সকলে প্রায় পরিচিত। কিন্তু আজকে হাতে গোনা কয়েকজন বাদে বাকি সবাই ই অপরিচিত। এত অচেনা মানুষের ভীড়ে তানভি বারবার না’র্ভা’স হয়ে বহ্নি এর দিকে চায়ছিল কিন্তু বহ্নি যেন দেখে ও দেখতে পা’চ্ছি’ল না।এতটা নি’ষ্ঠু’র কি করে হলো বহ্নি!

“আমি এত কঠিন কি করে হতে পারলাম!”

নিজেই নিজেকে বলে উঠল বহ্নি। দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনাজলের ধারা।এই মূ’হু’র্তে ঠিক কি করণীয় তার! ভেবে পেল না।আঁখি জোড়া থেকে অনবরত ব’র্ষ’ণ ঝড়ছে যেমনটা প্রকৃতিতে এখন ব’র্ষ’ণ বিদ্যমান।দূর আকাশে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে চোখে আধার ঘনিয়ে এলে বুঝতেই পারলো না বহ্নি।

অনবরত কারো ডাকাডাকিতে যেন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটল বহ্নি এর।সেই সাথে চোখে মুখে তো পানির অ’স্তি’ত্ব স্প’ষ্ট।ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো বহ্নি। চোখ খুলতেই দেখা মিলল আরাবের চি’ন্তি’ত, মলিন মুখখানা।আরাব আস্তে করে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো বহ্নি কে।ধা’ত’স্থ হওয়ার একটু সময় দিল।তারপর উ’দ্বী’গ্ন কন্ঠে জি’জ্ঞে’স করে উঠল,

“তুমি ঠিক আছো?জ্ঞা’ন হারালে কি করে?”

“আমি খুব খারাপ তাই না?আমাকে বিয়ে করে তুমি ভুল করেছো তাই না?”

ভালো মন্দ কোনো কথা না বলে বহ্নি এমন কিছু বলে উঠবে সেটা ভাবেনি আরাব! হঠাৎ এমন কথার কারণ ঠিক বুঝতে পারল না আরাব! তবে এটা বুঝলো এই মুহূর্তে তার অর্ধাঙ্গিনীর মনের মধ্যে বয়ে চলা ঝড়।একটু এগিয়ে গিয়ে বসল আরাব।বহ্নি এর বেশ অনেকটা কাছাকাছি।মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে উঠল,

“তুমি খারাপ নও! হুট করে ঘটে যাওয়া ঘটনা টা ঠিক মতো বুঝতে পারো নি!মেনে নিতে পারো নি! আর কিছু না! দেখো সবটা ঠিক হয়ে যাবে!”

আরাবের কথা শু’নে আরাবের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল বহ্নি। ম’স্তি’ষ্ক যেন ফাঁ’কা ফাঁ’কা লাগছে।আরাব হয়তো বুঝে নিলো বহ্নি এর অ’ব’স্থা টা।তাই উঠে গিয়ে একটা ঘুমের ওষুধ আর পানি এনে দিল বহ্নি এর কাছে।বহ্নি ও বীনা বাক্যে খেয়ে নিলো সেটা।এই মু’হূ’র্তে ঘুমটা তার সত্যিই প্রয়োজন।

ওষুধ তার কাজ শু’রু করে দিয়েছে।মিনিট দশেক পরেই বহ্নি ঘুমিয়ে গেছে।ঘড়ির কাটা ১২ টার ওপারে। আরাব একবার সেদিকে চাইলো তারপর উঠে গেল বেলকনিতে।চারিদিক ঘুটঘুটে অ’ন্ধ’কা’র। একটু আগে বৃ’ষ্টি হওয়ার জন্য পরিবেশ টা ও বেশ শীতল। জানালা দিয়ে একবার চাইলো ঘু’ম’ন্ত বহ্নি এর মুখের দিকে।তারপর ডুব দিল নিজের ভাবনায়।যে ভাবনা আজ থেকে নয়, শুরু হয়েছে তাদের এ’ন’গে’জ’মে’ন্ট এর দিন থেকে।

বহ্নি কে এর আগে কখনোই বিশেষ নজরে দেখেনি আরাব।তবে এনগেজমেন্ট এর দিন বহ্নি এর মুখের দিকে তাকিয়ে এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল।ধা’ক্কা টা কাটানো সহজ হবে না বহ্নি এর জন্য।তবে বহ্নি যে প্র’তি’শো’ধ নিতে বিয়ে করবে এটা ও আশা ছিল না।তবে পরে যখন বুঝতে পারল তখন চেয়ে ও পারেনি বহ্নি কে আটকাতে।মনের মধ্যে কোথাও একটা বি’শ্বা’স ছিল। যতটা কঠোর নিজেকে ভাবছে বহ্নি, আদে ও ওতটা কঠোর সে নয়।

হুট করে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মানতে না পেরে এমন একটা সি’দ্ধা’ন্ত নিয়েছে সে।ডিপ্রেশন এর বসে কি করতে গিয়ে কি করতে যা’চ্ছে সেটা মাথাতেই নেই ওর।বিয়ের দিন বহ্নি কে দেখে জীবণে প্রথমবারের মতো হার্টবিট মিস করে আরাব।অনুভূতিহীন কোমল মুখটিতে ফুটে ওঠা দৃড় চাহনি যেন ঘায়েল করে আরাবকে। নিজের ওপর নিজেরই হাসি পায় আরাবের।শেষমেষ একটা মেয়ের দৃড় চাহনির প্রেমে পড়ল সে।বহ্নি এর চাহনি তাকে #প্রণয়_স্রোতে ভাসালো। কি অ’দ্ভু’ত তাই না!
এই মেয়েটাকে নিয়ে সে ভাসতে চায়! #প্রণয়_স্রোতে ভেসে যেতে চায় ব’হু’দূর।কি’ন্তু মেয়েটাকি তাকে বুঝতে পারবে! নাকি মিথ্যা মরিচিকার পেছনে ছুটে বেরাবে! উত্তর জানা নেই আরাবের।

________________
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস হলে ও আজ ঘড়ির কাটা ১০ টার ওপারে যাওয়ার পর ঘুম ভাঙে বহ্নি এর।নিজেকে কেমন হালকা লাগছে! কেন লাগছে জানা নেই বহ্নি এর। তবে তার হালকা লাগছে। পাশে আরাব নেই।তবে বহ্নি বেশি ভাবলো না।ফ্রে’শ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।

সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে চারিদিকে চোখ বুলালো বহ্নি। ড্রয়িংরুমে বসে আছে সকলে।সকলে বলতে তানভি আর উজ্জয়ীনি চৌধুরি। আরাব, ইয়ারাব নেই। বাড়ির বউ বিয়ের দ্বিতীয় দিন এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছে বিষয় টা য’থে’ষ্ট দৃ’ষ্টি কটু এজন্য নিজের কাছেই খারাপ লাগছে বহ্নির।তবে বহ্নি এর দিকে তাকাতেই তানভি ছুটে এলো।জি’জ্ঞে’স করে উঠল,

“আপুনি!তুই নাকি কালকে খুব অ’সু’স্থ হয়ে গেছিলিস! আমাকে ডাকলি না কেন? জানিস আজ সকালে যখন ভাইয়ার কাছে শুনলাম তখন আমি আর মনিমা গেছিলাম তোর কাছে কি’ন্তু তুই ঘুমিয়ে ছিলিস বলে ডাকিনি!”

তানভি কথা শেষ করার আগে মনিমা বহ্নি এর কাছে এসে দাঁড়ালো। নরম গলায় জি’জ্ঞে’স করে উঠল,

“এখন শরীর কেমন তোমার?”

“জ্বি।এখন ভালো আছি!”

সৌজন্য হেসে বলে উঠল বহ্নি। মনে মনে এক অ’দ্ভু’ত তৃ’প্তি অনুভব হলো বহ্নি এর।এই মানুষগুলো তাকে য’থে’ষ্ট ভালোবাসে।তাহলে কি এই মানুষগুলোর জন্যে ও ইয়ারাব কে ক্ষ’মা করে দিতে পারবে না সে!

নিজে যখন প্রশ্নের বেড়াজালে জ’র্জ’রি’ত তখন দারোয়ান ছুটতে ছুটতে বাড়ির মধ্যে ঢুকলো।তার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। কেমন আতঙ্কগ্রস্ত দেখাচ্ছে দারোয়ানকে।উজ্জয়ীনি চৌধুরি দারোয়ান এর এমন অ’ব’স্থা দেখে তার কাছে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে।তবে দারোয়ান এর কথা শুনে সকলের পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার উপক্রম

দারোয়ান কাঁপা স্বরে বলে উঠল,

“ইয়ারাব স্যার এ’ক্সি’ডে’ন করেছে!”
_________________
হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে চৌধুরী পরিবারের প্রতিটি লোক।তানভি স্ত’ব্ধ। এতটাই স্ত’ব্ধ যে কাঁদতে ভুলে গেছে সে।ইয়ারাব এর এ’ক্সি’ডে’ন এর খবর শুনে আরাব সাথে সাথেই হসপিটালে চলে এসেছিল।

বহ্নি, তানভি আর মনিমা দারোয়ান এর কাছ থেকে খবর শুনে তারপর এসেছে।আজ সকালে একটা কাজে বের হয়েছিল ইয়ারাব।কি’ন্তু মাঝ রা’স্তা’তে এ’ক্সি’ডে’ন হয় ওর।

সকলের মুখ থমথমে।তানভি এর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে কিন্তু কোনো শব্দ বের হ’চ্ছে না।আরাবকে এসে থেকে দেখতে পায়নি কেউ। বহ্নি কয়েকবার খোঁ’জা’র চে’ষ্টা করেছিল কি’ন্তু পারেনি।তানভি এই মু’হূ’র্তে বহ্নিকেই আকড়ে ধরে আছে।আর বহ্নি ও বারবার শা’ন্ত’না দিয়ে যাচ্ছে তার ছোট্ট বোনটিকে।বেশ কিছুক্ষণ পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসে ড’ক্ট’র। তবে ড’ক্ট’র একা আসেনি।সাথে আরাব ও বের হয় অপরেশন থিয়েটার থেকে।বহ্নি আরাবকে দেখে অবাক হয় তবে সেদিকে এখন ধ্যা’ণ দেওয়ার সময় নেই। সকলে এখন আগে জানতে চায় ইয়ারাব এর অবস্থা।

চলবে,

প্রণয় স্রোতে পর্ব-০৩

0

#প্রণয় স্রোতে
#পর্বঃ৩
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

বিশ্রাম এর জন্য নিজের ঘরে এসে বসেছে তানভি।একটু পরেই পা’র্লা’র এর লোকেরা আসবে।তখনই ঘরে ঢুকলো ইয়ারাব।চোখ মুখ এখনো বাকিয়ে রেখেছে সে।তানভি খেয়াল করল বিষয়টি।

“আপনার কি কিছু হয়েছে?”

জি’জ্ঞে’স করে উঠল তানভি। ইয়ারাব উত্তর দিল না। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো তানভি এর দিকে। হঠাৎ ইয়ারাবকে এগিয়ে আসতে দেখে ভড়কে গেল তানভি।এমন কাজের কারণ খুঁ’জে পেল না সে।তবে ইয়ারাব এর চাহনি যেন সুবিধার ঠেকছে না তার কাছে। ইয়ারাব তানভি এর অনেক কাছে এগিয়ে আসতেই আটকে দিল তানভি। ভয়ে ভয়ে বলে উঠল,

”আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন!”

তানভি এর কথা শুনে ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে ইয়ারাব। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যায় বেলকনিতে। বেলকনিতে কালকে যেখানে দাড়িয়ে ছিল ইয়ারাব এখনও সেখানেই দাঁ’ড়ি’য়ে আছে সে।কালকে ঠিক তার পাশেই দাঁ’ড়ি’য়ে ছিল তানভি।এখানে দাঁ’ড়ি’য়ে’ই তানভি আদায় করে নিয়েছিল এক কঠিন শর্ত।

গতকাল রাতে,

“আপনাকে কিছু বলার ছিল আমার!”

মিনমিনে ক’ন্ঠে বলে উঠল তানভি।

“হুম বলো!”(ইয়ারাব)

“আপনার কি মনে হয় না যেটা হয়েছে ভুল বোঝাবুঝি হলে ও সেটা আপুনি এর সাথে অন্যায় হয়েছে।”

তানভি এর কথায় চুপ করে রইল ইয়ারাব।কোনো জবাব দিল না। ইয়ারাবকে চুপ থাকতে দেখে তানভি বেশ সাহস নিয়ে বলে উঠল,

“আপুনি এই বিয়েটাতে খুশি নয়!প’রি’স্থি’তি’তে পরে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে ঠিকই তবে সবটা সহজে মেনে নিতে সময় লাগবে আপুনির!”

“আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি তানভি।কিন্তু আমি কি করব ভেবে পাচ্ছি না!”

“আমি চিনি আপুনিকে।আপুনি একটু চাপা স্ব’ভা’বের। তবে তার থেকে বেশি অভিমানি। তবে একবার যদি ছোট ভাইয়াকে ভালোবাসতে শুরু করে তাহলে সবটা ঠিক হয়ে যাবে!”

“আমি ও সেটাই চায় তানভি। একজনকে ভালোবেসে অন্যজনকে বিয়ে করা স’ম্ভ’ব ছিল না আমার প’ক্ষে।সেজন্য তোমার বোনকে ক’ষ্ট দিয়ে বসলাম।বড়রা একটা সলুশান বের করল ঠিকই তবে সেটা ও পা’র’ফে’ক্ট না।কিন্তু এখন আমার কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছি না আমি।”

“আমার মনে হয় আপুনি ছোট ভাইয়ার সাথে থাকতে থাকতে সবটা ঠিক হয়ে যাবে। তবে!”

“তবে?”

ভ্রু কুচকে জি’জ্ঞে’স করে উঠল ইয়ারাব।

“তবে যতদিন না ওদের সবটা ঠিক হবে ততদিনে আমরা ও দূ’র’ত্ব বজায় রাখবো!”

তানভি এর কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকায় ইয়ারাব মূ’হু’র্তে’ই উ’ত্তে’জি’ত হয়ে বলে ওঠে,

“এই মেয়ে তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও থাকার প্লান করছো নাকি?”

“না।আমি সেটা বলিনি।তবে আমি চা’চ্ছি যে,”

ইতস্তত করে উঠল তানভি।কথাটা ঠিক বলে উঠতে পারছে না। ইয়ারাব নিশ্বব্দে হাসল তারপর তানভি এর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল,

“শা”(স্তি টা কঠিন। তবে মেনে নিলাম।আগে ভাই এর সংসার ঠিক করব তারপর নিজের!”

ইয়ারাব এর কথায় স্ব’স্তি’র হাসি ফুটে উঠল তানভি এর মুখে।
_____________________
ঘরে ঢুকতেই একের পর এক বালিশের ব’র্ষ’ণ শুরু হলো আরাব এর ওপর।হ্যাঁ! বহ্নি ই এক এর পর এক বালিশ ছুড়ে দিচ্ছে আরাব এর গায়ে।আরাব প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলে ও বিষয়টি বুঝতে সময় নিলো না।বালিশ সব ছোড়া শেষ হলে বেডসাইড থেকে ফুলদানি টা ছুড়ে দিল আরাবের পায়ের কাছে।একটুর জন্য পায়ে লাগেনি আরাবের।রাগে হিসহিস করছে বহ্নি।বহ্নি কে এত রেগে যেতে দেখে আরাব ভেবে পেল না কি করবে! বহ্নি আবার ও একটা সোপিছ তুলে ছুড়ে দেওয়ার আগেই আরাব ছুটে এলো বহ্নি এর কাছে। বেশ ধমক দিয়ে বলে উঠল,

“কি করছ তুমি?পাগল হয়ে গেছ?এভাবে জিনিস কেন ছুড়ছ?”

“তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে কোলে নেওয়ার। আমার অনুমতি না নিয়ে আমাকে বেলকনি থেকে নিয়ে আসার।”

রাগে ফোসফাস করতে করতে বলে উঠল বহ্নি। বিষয়টা এবার বোধগম্য হলো আরাবের।বহ্নি এর আর একটু কাছে এগিয়ে এসে বলে উঠল,

“সারারাত বেলকনিতে তোমাকে রাখব তুমি ভাবলে কি করে?”

“মানে?”(বহ্নি)

“মানে তখন তোমার মাথা গরম ছিল তাই কিছু বলিনি।কিন্তু তাই বলে তোমায় একা একা বেলকনিতে ফেলে রাখতাম আমি? যদি তুমি বধু নির্যাতনের মামলা করো আমার নামে?”

আরাবের এমন রসিকতায় গা যেন জ্ব’লে উঠল বহ্নির।আরাবের দিকে তেড়ে গিয়ে ওর কলার চেপে ধারার আগেই অ’স্ফু’ট’স্ব’রে আর্তনাথ করে বসে পড়ল মাটিতে।আরাবের পায়ে জুতা থাকায় রুমের মধ্যে পড়ে থাকা ভাঙা ফুলদানির অংশ পায়ে লাগিনি তার।কি’ন্তু বহ্নি খালি পায়ে থাকায় তা বিধে গেছে তার পায়ে।বহ্নি এভাবে বসে যাওয়ায় আরাব ও ব্যাতিব্যস্ত হয়ে বসে পড়ল বহ্নি এর পায়ের কাছে।লালচে রক্তে তখন ফ্লো’র মাখামাখি। কোনো কথা না বলে বহ্নি কে দ্বিতীয় বারের মতো কোলে তুলে নিলো আরাব।বহ্নি বাঁ’ধা দেওয়ার চেষ্টা করল তবে আরাব এর চোখ রাঙানি দেখে আর কিছু বলার সাহস হলো না।এই ছেলেটা কেমন যেন! নিজের অধিকার ঠিক আদায় করে নেয়। সারাদিন এর সাথে ঝগড়া করা হলে ও দিন শেষে নিজের কাজ ঠিক হাসিল করে নিবে সেটাই বহ্নি এর বিশ্বাস।

বহ্নি কে খাটে বসিয়ে পায়ে এ’ন্টি’সে’প্টি’ক লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল আরাব।তারপর ফ্লো’র থেকে বালিশ গুলো তুলে এনে হাতে ধরিয়ে দেয় বহ্নি এর।নিজে ও বসে পড়ে বহ্নি এর পাশে। ভাবেলাশহীন হয়ে বলে ওঠে,

“নাও এবার মারো!তবে পায়ে ব্যা’থা নিয়ে ছোটাছুটি করো না!”

আরাবের কথায় হ’ত’ভ’ম্ব হয়ে গেছে বহ্নি। এই ছেলেটা কি তার সাথে মজা করছে।বহ্নি নি’শ্চু”প হয়ে বসে থাকায় এবার বহ্নি এর দিকে ভালো করে তাকায় আরাব।তারপর খুব শা’ন্ত ক’ন্ঠে’ই বলে ওঠে,

“তিতু খাওয়িয়ে কখনো কারো ওপর থেকে প্র”তি’শো’ধ নেওয়া যায় না।আমায় বলতে পারতে আমি তেমাকে হে’ল্প করতাম!”

আরাব যে বহ্নি এর কারসাজি ধরে ফেলেছে সেটা বুঝতে বেগ পেতে হলো না বহ্নি এর।সাথে সাথে চোখ টা নামিয়ে নিলে বহ্নি। যতই হোক ধরা পড়ার পরে চোখে চোখ রেখে কথা বলা যায় না নিশ্চয়।

“মেরে ফেলি ইয়ারাব কে? কি বলো?”

আরাবের এমন শা’ন্ত ক’ন্ঠে এমন কথা শুনে বি’স্ফো’রিত চোখে তাকিয়ে থাকে বহ্নি। তবে আরাব নি’র্বি’কা’র! যেন খুব স্বা’ভা’বিক কোনো কথা বলছে সে।

“তু.তুমি এসব কি বলছো? তোমার ভাই হয় ইয়ারাব!”

কাঁ’পা কাঁ’পা ক’ন্ঠে বলে উঠল বহ্নি।

“দেখ বহ্নি, আমার ভাই তোমাকে রি’জে’ক্ট করে তোমার বোনকে বিয়ে করেছে! এখানে আমার ভাই আর তোমার বোন দুজনেই দোষি।একজন তোমাকে ঠকালো,অন্য জন তাকেই বিয়ে করল! এখন যদি ইয়ারাব কে মেরে ফেলি তাহলে আমার ভাই শা’স্তি পাবে সেই সাথে তোমার বোন ও বিধবা হয়ে শা’স্তি পাবে।আর তোমার প্রতিশোধ ও পূরণ হবে।আমি কি’ন্তু সবটা ভেবেই বলছি! তুমি ভেবে দেখ একবার!”

আরাবের কথা শুনে মাথা ভো ভো করে ঘুরছে বহ্নি এর।ইয়ারাব আর তানভি তার সাথে অন্যায় করেছে তবে তাই বলে তাদেরকে এত বড় শা’স্তি কখনোই দিতে পারবে না বহ্নি! এখন ও এতটা ও পাষান হয়ে যায় নি সে!

“তুমি এসব কি উ’ল্টো পা’ল্টা বকছো?”(বহ্নি)

“এই আইডিয়া টা ভালো লাগলো না! উমমমম. তাহলে তানভি ভাবি এর সাথে ভাই এর ডি’ভো’র্স করিয়ে দেয়।আমরা ও ডি’ভো’র্স নিয়ে নেয় তারপর তোমার সাথে ভাই এর বিয়ে দিয়ে দেয়!এটা ঠিক আছে? ”

“নাআআআআ!”

বেশ জোরে বলে উঠল বহ্নি।

“তোমার ভাই কে আমি কখনো বিয়ে করবো না।আই জাস্ট হেট হিম।একটা মাসে তোমার ভাই এর প্রতি আমার ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল কি’ন্তু তোমার ভাই আমার সাথে যে কাজ করেছে তারপর আমার মনে তার জন্য শু’ধু’ই ঘৃ’ণা আছে। ডিড ইউ আ’ন্ড্রা’স’ট্যা’ন্ট দেট!”

আঙুল উঁচিয়ে কথাটা বলে উঠল বহ্নি।

এতক্ষণ নিজের মুখের আদল স্বাভাবিক রাখলে ও এবার র’হ’স্য’ময় হাসি হেসে উঠল আরাব।

“তুমি যে ভাই বা ভাবির কোনো ক্ষতি করতে পারবে না সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না বহ্নি। তাহলে শুধু শুধু কেন রাগ পুশে রাখছো।ক্ষ’মা করে দাওনা ওদের।প্লি’জ!”

এতক্ষণে আরাবের কথার আসল মানে বুঝতে স’ক্ষ’ম হলো সে।সত্যি তো সে চাইলে ও ইয়ারাব আর তানভি এর কোনো বড় ধরণের ক্ষ’তি করতে পারবে না। তবে কি এমন ছোট খাটে কিছু শা’স্তি’র জন্য সে আরাবকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে!

নিজেই নিজেকে প্র’শ্ন করে উঠল বহ্নি।

চলবে,