Wednesday, July 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1023



ভুলোনা আমায় পর্ব-১৫

0

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-১৫
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

বাবা’র বাড়ি থেকে এস এস সি পরীক্ষার পার্ট শেষ করে সবে মাত্র আজকে ঢাকায় ফিরলো টুসি। তখনি দুইটা খুশির খবর জানতে পারলো এক তার ছোট জা প্রেগনেন্ট।দ্বিতীয়টা হলো মেহুলের বিয়ে ঠিক হয়েছে! ছেলে মন্ত্রণালয়ে চাকরি করে, সরকারি কোয়ার্টারে থাকে পরিবার নিয়ে। খুব ভালো সমন্ধ দেখে রোকেয়া বেগম রাজি হয়ে গিয়েছেন। সোহান কে সব কিছু বলে রাজি করিয়েছেন। তারপর ও সোহান আরমান কে বলেছেন ছেলের সম্পর্কে ভালো করে খুঁজ খবর নেওয়ার জন্য। আরমান খুঁজ নিয়ে ভালো রিপোর্ট ই পেয়েছে।তাই গতকাল পাকা কথা বার্তা হয়েছে। আগামী শুক্রবার বিয়ের তারিখ ধার্য করা হয়েছে। কেননা বিবাহের জন্য জুমার দিন হচ্ছে উত্তম দিন। ইসলামের দৃষ্টিতে যে কোন দিন, যে কোন সময় বিবাহের জন্য বৈধ। তবে শাওয়ার মাস আর জুমার দিনে বিবাহ করা সুন্নত।[১]

বুখারী সাথে করে টুসি’কে নিয়ে এসেছে।আর তাই রোকেয়া বেগম এতো সময় পাত্রের সম্পর্কে সব কিছু জানালেন বুখারী কে। বুখারী খুশি হয়ে বললো,
— আলহামদুলিল্লাহ।দো’আ করি আমাদের বোন সুখী হোক।

রোকেয়া বেগম বললেন,
— হ বাপ একটা মেয়ে আমার ওর শান্তি দেখে গেলে মরলে হাড় গুলো পচবো! সোহানের জন্য দুঃখ হয়, ছেলেটা ভাই বোন কারো বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারলো না। কতো আশা ছিল বোনের বিয়ে নিজ হাতে দিব।তা আর হলো কই।তয় তোমরা কিন্তু অবশ্যই থাকবে তোমাদের বোনের বিয়েতে। আমি ভাইজান রে আজকেই কল করে বলবো। তবুও তোমারে বলি দরকার হলে ঘরে তালা দিয়ে সবাইকে নিয়ে চলে আসবে।

বুখারী বললো বাড়িতে গিয়ে সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবে। তারপর রোকেয়া বেগম এবং মেহুল বলে কয়ে আজকের দিনটা রেখে দিল বুখারী কে।

এর পরের দিন সকালে নাস্তা করে বাড়ির জন্য র‌ওনা হয় বুখারী।
.
ভাবী ননদিনী অনেক দিন পর একসাথে হয়েছে তাদের মনে কতো সুখ দুঃখের কথা জমেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। দু’জনে দোলনায় দোল খেতে খেতে মনের কথা গুলো শেয়ার করছে একজন আরেকজনের কাছে।কার পরীক্ষা কেমন হলো? কেন্দ্রের মধ্যে কেমন গার্ড দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষে টুসি দুঃখ প্রকাশ করে বলে,
— তোমার ভাইকে ছাড়া, তোমার সাথে সারাদিন কথাবার্তা বলে দিন কাটিয়েছি। এখন তুমি চলে গেলে কি হবে আমার? আমি একা একা কিভাবে সময় কাটাবো?

মেহুল তার আদরের ভাবী কে জরিয়ে ধরে বললো,
— আমিও তোমাকে ছাড়া ঐ নতুন পরিবেশে লোকজনের সাথে কিভাবে কাটাবো ভাবী? মাকে বলো না আমাকে এখন বিয়ে না দিতে!

টুসি মেহুল কে ছাড়িয়ে তার হাত দুটো ধরে বললো,
— এমন কথা মুখেও আনে না বোন। আমাদের মেয়েদের জন্ম‌ই হয়েছে পরের ঘরে বাস করার জন্য। তোমরাও কিন্তু আমার কাছে অপরিচিত ছিলে কারণ ফুফি বছরে একাতবার আমাদের বাড়িতে গেলেও তোমরা কখনো যাওনি। ইভেন তোমার ভাইকে তো আমি আগে কখনোই দেখিনি। তবে সব কিছুর মাঝে একটা ভালো আছে, “লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক” সেটা হলো স্বামীর ভালবাসা। তুমি যখন তোমার স্বামীর ভালবাসা গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারবে তখন বাদবাকি সব কিছু তোমার কাছে তুচ্ছ মনে হবে।
— আচ্ছা তোমার স্বামী বুঝি তোমাকে অনেক ভালোবাসে?

টুসি লজ্জা পেয়ে বললো,
— দুষ্টু মেয়ে কোথাকার..

এর মাঝে রোকেয়া বেগম এসে বললেন,
— কত্ত কাজ কাম বাকি আর তোরা বসে বসে গল্প করিস।
টুসি সাথে সাথে উঠে এসে বললো,
— আমি এক্ষুনি যাচ্ছি আম্মা।

সাথে মেহুল যেতে চাইলে রোকেয়া বেগম বললেন,
— তোকে এই কয়েকদিন কোন কাজ করতে হবে না।যা গিয়ে মুখের যত্ন (রুপচর্চা) নে।
.
রোকেয়া বেগম নিজ হাতে টুসি’কে ধরে ধরে কাজ শিখাতে লাগলেন।টুসি ও শিখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।যদিও অনেক ভুল হয়ে যায় এতে করে রোকেয়া বেগম রোজিনা বেগম কে নিয়ে কথা শুনাতে ছাড়েন না। রোজিনা বেগম কেন কাজ শিখালেন না এগুলো নিয়ে বলতে থাকেন।
মাঝে মাঝে টুসি’র ইচ্ছে করে জবাব দিতে কিন্তু সোহানের কথা ভেবে নিজেকে সংযত করে রাখে।
.
.
বিয়ের আগের দিন টুসি’র মা আর দাদু ছাড়া বাকি সবাই এলো। এছাড়াও রোকেয়া বেগমের অনেক আত্মীয় স্বজন এবং মিরার বাপের বাড়ির লোকজন সহ।টুসি সবার আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত। সোহান কল করলেও কথা বলতে পারছে না। সোহান বুঝতে পারছে না টুসি কি এমন কাজ করছে, পিচ্চি কাজ পারেই কতটুকু?তাই খানিক রাগ করে মায়ের সাথে কথা বলে রেখে দিয়েছে।

সোহান তো আর জানে না তার পিচ্চি ব‌উ এখন কাজ কর্ম অনেকটাই রপ্ত করে নিয়েছে।
টুসি’র কাজের চাপ দেখতে পেয়ে তার দুই ভাবী সাহায্য করতে যায়। কিন্তু টুসি দেয় না, জোর করে নিয়ে রুমে বসিয়ে রাখে।

অতঃপর,
এর পরের দিন বিয়ে সম্পুর্ন হলে আত্মীয় স্বজন চলে যেতে শুরু করে। আবার দূরের যারা আছে তারা থেকে যায়। তারপরের দিন সোহানের কথায় আরমান টুসি’র দুই ভাবীর জন্য খুব সুন্দর কাতান শাড়ি নিয়ে এসে তাদের উপহার দেয়।তারা নতুন ব‌উ এই প্রথম সোহানদের বাড়ি এসেছে বলে কথা।
এতে টুসি খুব খুশি হয়, সোহানের প্রতি।

এদিকে মিরা ফিসফিস করে আরমান কে খুঁচিয়ে বলে, তোমার তো সাধ্য নেই আমার পরিবার কে কিছু উপহার দেওয়ার।এই শাড়ি গুলো কমের মধ্যে এনে তো বাকি টাকা দিয়ে আনতে পারতে?
আরমান তখন বললো,
— এসব বলে না মিরা, আল্লাহ গুনাহ দিবেন। এটা একধরনের চোরি করা হতো।

মিরা ভেংচি কেটে চলে যায় তার রুমে।
.
.
এক সপ্তাহ পর,
টুসি’র ভিশন জ্বর আসে। তাকে সেবা করার জন্য শুধু কাজের মহিলা আমেনা বুয়া আসে। মাঝে মাঝে একটু মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে যায়।এ ছাড়া আর কেউ আসে না। এতে করে খুব কষ্ট পায় টুসি। কিছুই খেতে পারে না একটু খেলে‌ই ভুমি হয়ে যায়।”ফাহিম চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি গল্প চোরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছে” সোহান ও আজকে কল করেনি এ জন্য টুসি’র মনটা আরো বিষিয়ে আছে।
ভালো লাগছে না বলে,ড্রয়িং রুমে উঠে এসে বসে। তখন দেখে রোকেয়া বেগম সোহানের সাথে কথা বলছে। এতে টুসি খুব কষ্ট পেলো তাকে কেন কল করলো না সোহান?তার অসুস্থতার মাঝে সোহানের সাথে কথা বললে মনটা প্রশান্তি পেত। বিষন্ন মন নিয়ে সারাদিন শুয়ে বসে পার করলো টুসি।এর মাঝে মাঝে খুব কষ্টে নামায আদায় করে নিয়েছে। কেননা মুমিন মুসলমানের জন্য ঈমানের পর প্রথম ও প্রধান ইবাদত হচ্ছে নামাজ। নামাজের রোকনগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে না পারলেও নামাজের ফরজিয়ত তথা আবশ্যকতা থেকে বিরত থাকার সুযোগ নেই। হাদিসে এসেছে-হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমার অশ্ব রোগ ছিল। এ অবস্থায় আমি কিভাবে নামাজ আদায় করবো তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর, যদি না পার; তবে বসে (নামাজ আদায়) কর, তাও যদি না পার, তাহলে এক পার্শ্বের উপর (নামাজ) আদায় কর।[২]
.
.
এরপরের দিন সোহান কল করলে টুসি বলে,
— আম্মা কে গতকাল কল করলে অথচ আমাকে আপনি কল করলেন না কেন?

গতকাল কাজের খুব চাপ ছিল বলে মায়ের সাথে পাঁচ মিনিট কথা বলে রেখে দেয় সোহান। সেটা টুসি’কে বলার আগেই টুসি কথার শুরুতেই মাকে নিয়ে হিংসাত্মক কথা বলায় খুব রেগে যায় সোহান!রেগে কল কেটে অফলাইনে চলে যায়।

টুসি বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরে,সে এ কোন সোহানের সাথে পরিচিত হলো?এই মুহূর্তে বড্ড অচেনা লাগছে মানুষটাকে। একদিকে জ্বর এখনো অবধি পুরোপুরি কমেনি তার উপর সোহানের এমন ব্যাবহার মাথা ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো।
ডাইনিং এ পানি খেতে আসলে হাতের কাঁপুনিতে পানির কন্টিনার হাত থেকে পরে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। রোকেয়া বেগম আর মিরা দৌড়ে এসে এহেন অবস্থা দেখে রাগে তেতে উঠে রোকেয়া বেগম বলে,
— বাপের বাড়ি থেকে কি জিনিষ পত্র নিয়ে এসেছিস এভাবে যে ভেঙে চুরমার করলি?বাপ তো একটা সুতো পর্যন্ত দেয়নি!

টুসি তার প্রিয় আব্বুর নামে এভাবে বলায় সহ্য করতে পারলো না। চেয়ার চেপে ধরে বললো,
— আম্মা আপনি কি বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছেন? আপনি ও তো আনেন নাই। ভুলবশত ভেঙে গেছে তাই বলে আব্বু কে টেনে আনছেন কেন এখানে?

ব্যাস এটুকুই যথেষ্ট ছিল রোকেয়া বেগম এর জন্য। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমে গিয়ে ধিরাম করে দরজা বন্ধ করে ছেলের কাছে ফোন লাগালো!একটার জায়গায় দুইটা বাড়িয়ে বললো!
ছেলে তার মায়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তৎক্ষণাৎ কল দিল টুসি’কে।কল দিয়েই বলতে শুরু করলো,
— আমার মাকে কটুক্তি করে কথা বলার সাহস তোমাকে কে দিয়েছে? বলেছিলাম আমার মায়ের মুখে মুখে তর্ক করবে না তাও করেছো। তোমার জন্য আমার আম্মা কষ্ট পেয়েছে। এক্ষুনি গিয়ে আম্মার কাছে মাফ চাইবে তুমি!আর যদি মাফ চাইতে না পারো তবে তোমার থাকার দরকার নেই!

টুসি কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দেয় সোহান।টুসি কাঁদতে কাঁদতে ফ্লুরে বসে পরে। এমনিতেই অসুস্থ তার উপর এতো প্রেশার সহ্য করতে পারে না।
দিন দিন আরো অসুস্থ হয়ে পরে, সেটা সোহান জানতেও পারলো না। সেদিনের পর থেকে সোহান না কল করেছে আর না ধরেছে।টুসি’র খারাপ অবস্থা দেখে রোকেয়া বেগম স্বপন তালুকদার কে খবর দেয়, তিনি ভালো ডাক্তার দেখিয়ে অ্যাম্বুলেন্স করে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যান কারণ টুসি’র টায়ফয়েড হয়ে গিয়েছে।এই সময় অনেক সেবার প্রয়োজন।
কয়েকদিন যেতে সবাই বিষয়টি খেয়াল করলো এতো কিছুর মধ্যে সোহান একবার ও কল করলো না!টুসির দাদি এবং রোজিনা বেগম টুসি’কে জিজ্ঞাসা করে কারণ কি এর?টুসি নিরবে নিভৃতে কাঁদে..
_______
রেফারেন্স:-
[১] ফাতাওয়ে শামী ৩/৮।
[২](বুখারি)।
________

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

ভুলোনা আমায় পর্ব-১৪

0

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-১৪
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মালয়েশিয়ায় ব্যবসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা বেশ এগিয়ে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী এখানে বেশ শক্ত অবস্থানে আছেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি বস্ত্রশিল্পের চাহিদা অনেক বেশি।

ইউনিক্লো, এইচ অ্যান্ড এম, জারা, লিভাইস, সুপার ড্রাই ইত্যাদি ব্র্যান্ড এর পোশাক আসে বাংলাদেশ থেকেই। এছাড়াও বাংলাদেশি গার্মেন্টস এর স্টক লট এর বিশাল চাহিদা এই মালয়েশিয়ায়।

সেরকম ই ব্র্যান্ডের পোশাক ব্যবসায় সোহানের। তবে সেটা যৌথ মালিকানায় গঠিত। সোহান সহ আরো তিন জন মালয়েশিয়ায় এসেছে, এখানকার কোম্পানি দেখা শোনার দায়িত্ব পালন করবে তারা।
.
সোহান রাতের খাবার খেয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। রাতের অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে লোকজনের ঘরের জানালা দিয়ে একটু একটু করে লাইটের আলো গুলো বাহিরে আলোকিত করে আছে। এমন লক্ষাধিক ঘরের জানালা দিয়ে বাহিরে বের হ‌ওয়া আলো গুলো বেশ চমৎকার লাগছে তার কাছে।এই মুহূর্তে পাশে যদি টুসি থাকতো তাহলে মন্দ হতো না। মূহূর্তটা আরো মোহনীয় হয়ে উঠতো।
সোহান আর কালবিলম্ব না করে ফোন অন করে।অন করতেই টুসি’র মেসেজের নোটিফিকেশন দেখতে পায়।তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি খেলে যায়। তারপর দেখে টুসি’র হোয়াটসঅ্যাপ এ অনলাইন সো করছে তাই কল করে, সাথে সাথে ওপাশ থেকে রিসিভ করা হয়। খুব বিচলিত কন্ঠে বলে,
— আপনি এখন কল করবেন আমি ভাবতেই পারিনি জানেন!

সোহান হাসি দিয়ে বললো,
— আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাহ কাতু।
— ওহ্ সরি, ওয়ালাইকুমুস সালাম।
আসসালামু আলাইকুম।
— ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাহ কাতু
— আসলে আপনার কল দেখে খুব এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম তাই সালাম দিতে ভুলে গিয়েছি।
— আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই, আমি বুঝতে পেরেছি। কেমন আছো তুমি?আর কি করছিলে তুমি?
— আপনি যেমন রেখে গেছেন তেমনি আছি।আর পড়ার টেবিলে বসে খাতায় আঁকিবুঁকি করছিলাম। আপনি কেমন আছেন বলেন?
— আমি যেমন রেখে গেছি মানে কি? এভাবে বলতে হয় না।বলবে আল্লাহ তা’আলার রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।
— আপনি তো আমাকে ভুলেই গিয়েছেন, তাই এভাবে বলেছি।
— কাজের খুব চাপ ছিল তাই কল করতে পারিনি,তাই বলে কি ভুলে গিয়েছি? আমার পিচ্চি ব‌উটা কে কখনো কি ভুলিতে পারি আমি? কখনো ভুলবো না ইনশা আল্লাহ।
আচ্ছা বাসায় সবাই ঘুমিয়ে আছে তাই না?
— হুম সবাই ঘুমিয়ে আছে। রাতের খাবার খেয়েছেন আপনি?
— আলহামদুলিল্লাহ খেয়েছি তুমি?
— আমিও খেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
— আম্মা,মেহের, আরমান ওর স্ত্রী সবাই কেমন আছেন?
— আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছেন।
— তো এখনো অবধি ঘুমাও নি কেন?
— ঘুম আসে না সে জন্য।
— আমি নেই বলে সব কিছুর অনিয়ম শুরু করে দিয়েছো? দেশে তো এখন বারোটা বেজে সামথিং ম্যাবি। প্রতিদিন এতো লেইট করে ঘুমাও নিশ্চ‌ই?তাই তো দেখছি ডার্ক সার্কেল পরে গেছে চোখের নিচে।

টুসি ঠোঁট কামড়ে ধরে, তার পর বলে,
— আপনাকে ছাড়া সব কিছু অসহ্য লাগে আমার। আমাকে আসক্ত করে দিয়ে আপনি কেন চলে গেলেন?চলে আসুন ন?
— সময় হলে ঠিক চলে আসবো ইনশা আল্লাহ। সেদিন তোমাকে চমকে দিব।
আচ্ছা পড়াশোনা কেমন করছো? ভালো রেজাল্ট করতে হবে কিন্তু! তোমাদের টেষ্ট এক্সামের বেশি দিন নেই হয়তো।

টুসি ঠোঁট উল্টে বলে আর একমাস আছে।বড় ভাইয়া এসে নিয়ে যাবে বলেছে।
— আচ্ছা খুব ভালো, এটা তো তোমার স্কুলে দিতে হবে।
— হুম।
— আচ্ছা ঘুমাও এখন রাত বেড়ে যাচ্ছে।ফজর নামায পড়ে মেসেজ দিও আমাকে কেমন?
— ইনশা আল্লাহ।

তারপর বেশ কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে থাকে সোহান।টুসি লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে। সোহান হাসি মুখে বিদায় নেয়।
.
.
সকাল বেলা মেহুল আর টুসি স্কুলে যাবে বলে তৈরি হয়ে এসে খেতে বসে। তখন আরমান এর ব‌উ মিরা বলে,
— ভাবী ভোর বেলায় উঠে আমাদের তো একটু সাহায্য করে তারপর স্কুলে যাইতে পারেন?

মেহুল তখন বলে,
— ছোট ভাবী আমাদের সামনে পরীক্ষা জানোই তো? দু’জনেই নামায পড়ে পড়াশোনা করেছি। কিছুদিন একটু ম্যানেজ করে নাও প্লিজ?

মিরা দারাজ গলায় বললো,
— আমি ও তো পরীক্ষা দিয়েছি তাই বলে কি মায়ের সাথে কাজকর্ম করিনি? তাছাড়া ভাবী এ বাড়ির বড় বউ, তার দায়িত্ব আমার থেকে বেশি অথচ তিনি কিছুই করেন না।

মিরা এ বাসায় আসার কিছুদিন পর থেকেই তার এমন চেটাং চেটাং কথা শুরু হয়। বয়সে টুসি’র থেকে বড় বলে কখনোই সম্মান করে কথা বলে না। অথচ সম্পর্কে সে টুসি’র ছোট, সবটা হয়েছে রোকেয়া বেগম এর প্রশ্রয়ে। মিরা এমন ধারা কথা বললে তিনি যেন খুশি হন। কারণ লোকলজ্জার ভয়ে নিজে কিছু বলতে পারেন না তো তাই।
টুসি’র বাড়ি থেকে এখনো অবধি কোন টাকা পয়সা বা ফার্নিচার দিচ্ছে না বলে চাপা ক্ষোভ টুসি’র উপর। ছোট ব‌উয়ের বাড়ি থেকে কিছু দিতে না পারলেও ছোট ব‌উ ভালো কেননা ছোট ব‌উ তার কাজের পার্ফোমেন্স দিয়ে মন জয় করে নিয়েছে। কিন্তু টুসি বয়সে ছোট তার উপর নিজের বাড়িতে কোনো কাজ করেনি। রোজিনা বেগম শত বলেও একটা কাজ করাতে পারেনি।তাই কখন কি করতে হবে কিছুই জানে না টুসি।এর জন্য দিনকে দিন টুসি’র প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি হচ্ছে রোকেয়া বেগম এর।

যাই হোক একজন টুসি’র পাশে ছায়া হয়ে থাকে। সে হল মেহুল, মায়ের মুখে মুখে তর্ক না করলেও ছোট ভাবীকে ছেড়ে কথা বলে না মেহুল।
.
টুসি আর মেহুল স্কুল গেইট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে খেয়াল করলো সাবা’কে মাহফুজ আনাম স্যার ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন!
এতেই তারা দুজন বুঝে গেল আসলে এই দু’জনের দুজনার সাথে বিয়ে হয়েছে।

আসলে টুসি আর সোহানের ডিবোর্সের ঘটনার পর সাবা খুব ভেঙ্গে পরে।এর কিছুদিন পর মাহফুজ আনাম এর বাসা থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় সাবা’র মায়ের কাছে।সাবা নাকুচ করে বসে, কিন্তু তার মা হতে দেয়নি। এতো ভালো ছেলে সচরাচর পাওয়া মুশকিল তাই অনেক ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে সাবা কে রাজি করায় বিয়েতে।
বিয়ের পর একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে মাহফুজ আনাম কে দেখতে পায় সাবা।যে কিনা দুইটা পরিবারের সমান ভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছে আলহামদুলিল্লাহ। এমন একজনের সংস্পর্শে থেকে তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারে না সে। ধীরে ধীরে সব কিছু ভুলে সুন্দর সংসার করতে শুরু করে। বর্তমানে স্কুলে আসার পথে সাবা পায়ে হুচট খেয়ে মচকে যায়।তাই ব্যাথায় হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে বলে মাহফুজ আনাম ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

আলহামদুলিল্লাহ সাবা ও তার যোগ্য জীবন সঙ্গিনী পেয়েছে।সে জন্যই বলে একটা ভালো দিন পাওয়ার জন্য তোমাকে অনেকগুলো খারাপ দিনের সাথে লড়াই করতে হবে!

[ অবশ্যই তুমি পাবে, যা তোমার থেকে চলে গেছে তার চেয়েও উত্তম কিছু। ] [১]
.
.
হুজুর স্যার ক্লাসে বললেন, তোমাদের পরীক্ষা তো অতি নিকটে পৌঁছে গেছে।আশা করি ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয় নিয়ে তোমাদের সমস্যা থাকার কথা নয়। তবুও তোমাদের কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারো, ইনশা আল্লাহ আমি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করবো।

একজন ছাত্র দাঁড়িয়ে বললো,
— শুনেছি নামায নামাযীকে বদ দু’আ দেয়,এটা কতটুকু সত্যি? এবং নামায কখন নামাযীকে বদ দু’আ দেয় এবং ধ্বংস কামনা করে?

হুজুর স্যার খুশি হয়ে বললেন,
— মা শা আল্লাহ অতি উত্তম প্রশ্ন। মনোযোগ দিয়ে শুনো,
যে ব্যক্তি মন্দভাবে নামায আদায় করে, সময়ের দিকে লক্ষ্য রাখে না, ওযুও ভালরূপে করে না, রুকু সিজদাও ঠিকমত করে না, তার নামায বিশ্রী ও কালো হয়ে বদ দু’আ দিতে দিতে চলে যায় এবং বলে, আল্লাহ তা’আলা তোমাকেও এরূপ ধ্বংস করুক, যেমন তুমি আমাকে ধ্বংস করেছ। অতঃপর নামাযকে পুরানো কাপড়ের মত পেঁচিয়ে নামাযীর মুখে মেরে দেয়া হয়।[২]

উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা গেল, নামায যথাযথভাবে মাসআলাসহ আদায় করা অপরিহার্য। নামাযের মাসআলা বলতে অযু, রুকু, সিজদা, নামাযের আরাকান, আহকাম যথাযথভাবে অর্থাৎ উত্তমরূপে সম্পাদন করতে হবে। আওয়াল ওয়াক্তে নামায আদায় করতে হবে। নামাযের মধ্যে মনোযোগ আনতে হবে। এককথায় বলা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশিত উত্তম সালাত নিশ্চিত করতে হবে। মাসআলা ছাড়া নামায পড়লে সে নামায মহান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।

এমন আরও কিছু প্রশ্ন করলো ছাত্র ছাত্রী’রা।টুসি মনোযোগ দিয়ে শুনছে।আর ভাবছে তাকে ও তার স্বামীর মতো নামাযে মনোযোগী হতে হবে। সোহান সব সময় বলে সব কিছুর উর্ধ্বে যেন নামায থাকে। কোন কিছুর বিনিময়ে নামায আদায় থেকে বিরত যেন না থাকে টুসি।টুসি তার স্বামীর কথা মেনে চলার চেষ্টা করে।
.
.
এস এস সি পরীক্ষার পর টুসি কে আর কোন কিছুতে ছাড় দিবেন না বলে ঠিক করেন রোকেয়া বেগম।যদিও বাসায় একজন হেল্পিং হ্যান্ড আছে তবুও বাসার সমস্ত কাজ টুসি করবে বলে জানিয়েছেন। কেননা তার আদরের ছোট ব‌উমা অন্তঃসত্ত্বা!এই অবস্থায় তার কাজ করা বারন…..
___________
রেফারেন্স:-
[১]সূরা, আনফাল – ৭০
[২](হাদীসঃ তাবারানী ২ঃ ২২৭)
____________

#চলবে ইনশা আল্লাহ।

ভুলোনা আমায় পর্ব-১৩

0

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-১৩
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

সকালের মিষ্টি রোদ ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে। অন্ধকারের রেশটুকু নেই আর। পূর্ব দিকের জানালা দিয়ে একটুকরো রোদের সোনালী আলো বার বার টুসি’র মুখশ্রী জোরে খেলে যাচ্ছে।টুসি হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু বাধা মানছে না।তাই বিরক্ত হয়ে চোখ খুললো। দেয়াল ঘড়িতে সাতটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট, শ্বাশুড়ি মাকে নাস্তা তৈরি করায় সাহায্য করবে বলে উঠতে নিলে সোহান কে লক্ষ্য করে সে।সোহান ঘুমিয়ে আছে তার যেন ঘুম ভেঙ্গে না যায় তাই। খুব সন্তর্পণে উঠে গেল টুসি।টুসি উঠতেই সূর্যের আলো সোহানের উপর পরলো।তাই পর্দা টেনে দেয় টুসি।
তারপর বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে কিচেনে যায়।
রোকেয়া বেগম টুসি কে দেখে কটুক্তি করে বললেন, “ঘুম তাহলে ভাঙ্গলো মহারানীর”?

টুসি পাল্টা জবাব না দিয়ে বললো,
— আম্মা আমাকে বলুন কি করতে হবে?
(সোহান টুসি’কে বলেছে তার আম্মা কে টুসিও যেন আম্মা বলে ডাকে)

রোকেয়া বেগম মনে মনে খানিক খুশি হলেন, কেননা তিনি পাল্টা জবাব পছন্দ করেন না। তিনি সারাদিন বকাঝকা নানান ধরনের কথা বলবেন কিন্তু এর পাল্টা জবাব দিলেই মুশকিল।তার ছেলে মেয়েরাও এ ব্যাপারে অবগত আছেন।যাই হোক টুসি’কে বললেন রুটি বেলার জন্য।টুসি পারুক আর না পারুক বসেছে রুটি বেলার জন্য। খুব কষ্ট করে বেলে চলেছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। একেকটা রুটি মানচিত্রের আঁকার ধারণ করছে। রোকেয়া বেগম ডিম,আলু একসাথে মাখো মাখো করে ভাজি করছেন আর টুসি’র দিকে আড়চোখে দেখছেন। মনে মনে ঠিক করলেন এই রুটিই আজকে সবাইকে খাওয়াবেন। তাহলে যদি টুসি’র কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

রুটি বেলা অর্ধেক শেষ হয়ে এলে মেহুল আসে। এসে বলে,ভাবী আমাকে দাও আমি তৈরি করে দিচ্ছি?
টুসি কিছু বলার আগেই রোকেয়া বেগম বললেন,
— ও করছে করুক। তুই অন্য কাজ কর।
— কি করবো বলো?
— ডাইনিং টেবিলে নাস্তার প্লেট গুলো সাজিয়ে রাখ।আর খাবার পানি আছে কিনা দেখ, না থাকলে পানি নিয়ে রাখ।
.
খাবার তৈরি হয়ে এলে রোকেয়া বেগম বললেন,
— টুসি যা গিয়ে সোহান কে আসতে বলে আয়।আর মেহুল তুই গিয়ে আরমান কে ডেকে আন।

দু’জনেই আচ্ছা বলে চলে গেল।

টুসি সোহানের পাশে বসে আলতো হাতে বাহুতে ছুঁয়ে বললো,
— এই যে শুনছেন? আম্মা খাবার খাওয়ার জন্য যেতে বলছে। উঠুন তারাতাড়ি আম্মা আবার রাগ করবেন।

সোহান ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
— তুমি উঠে চলে গেলে কেন? আজকের দিনটা তো আমার সাথে সারাক্ষন থাকতে পারো?
— আম্মা যে রাগ করবেন তাই গিয়েছি।
— আজকে আমি চলে যাব তাই আম্মা কখনোই রাগ করতেন না।

টুসি’কে পাশে শুয়ে দিয়ে মুখ গুঁজে রাখে সোহান। এদিকে গভীর ভাবনায় মগ্ন হয় টুসি! কিচেনে যেতেই রোকেয়া বেগম বললেন, “ঘুম তাহলে ভাঙ্গলো মহারানীর”!
তাহলে এমন ধারা কথা কেন বললেন তার শ্বাশুড়ি আম্মা?টুসি’র ছোট্ট মাথায় ঢুকছে না মা ছেলের কথা।

টুসি’কে নিঃশব্দ থাকতে দেখে সোহান বললো,
— চুপ করে আছো যে?কি এমন ভাবনায় মগ্ন তুমি?
— তেমন কিছু না, উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে চলুন। আম্মা নিশ্চ‌ই অপেক্ষা করছে।

সোহান আর বিলম্ব না করে ফ্রেশ হতে চলে গেল।টুসি উঠে বিছানা গুছিয়ে রেখে বড় করে ঘুমটা টেনে ডাইনিং রুমে গেলো।তার দেবর বাসায় এসেছে খুব সন্তর্পণে চলাফেরা করতে হবে।

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! দেবরদের ব্যাপারে কি নির্দেশ? তিনি উত্তর দিলেন, দেবর তো মৃত্যুতুল্য।[১]

আরমান টুসি’কে দেখতে পেয়ে বললো,
— আসসালামু আলাইকুম।ভাবী কেমন আছেন?

টুসি নিচু কন্ঠে বললো,
— ওয়ালাইকুমুস সালাম।জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ভাইয়া আপনি কেমন আছেন?
— আল্লাহ রাখছে ভালোই। ভাইয়া কোথায় আসে না খেতে?
— জ্বি এক্ষুনি আসবে।

তারপর সোহান আসলে সবাই এক সাথে খেতে বসে। খাবার খাওয়া শেষে সবাই মিলে আরমানের বিয়ে নিয়ে আলোচনা করে। সোহান তার ভাইকে বলে দেয় স্ত্রীর সাথে যেন সদা ভালো ব্যাবহার করে। মায়ের এবং কি পরিবারের খেয়াল রাখতে। আরমান বলে, ইনশা আল্লাহ সর্বদা চেষ্টা করবো।আর রোকেয়া বেগম কে ও বললো,
— ব‌উদের সাথে রাগারাগী না করে স্নেহের মায়ায় বুঝিয়ে যেকোনো বিষয়ে কথাবার্তা বা কাজ করানো।যাই করার করতে, রাগারাগী করলে হিতে বিপরীত হয় ভালো কিছু হয় না।

তারপর শেষ মুহূর্ত গুলো টুসি’র সাথে কাটাতে রুমে চলে আসে।টুসি মলিন মুখে বসে আছে, সোহান পাশে বসে বাহুবন্ধনে জড়িয়ে ধরে বললো,
— তোমার এমন মলিন মুখশ্রী দেখে গেলে আমার ভালো লাগবে বলো?
— আমাকে আপনার সাথে নিয়ে চলুন প্লিজ?
— তা তো এখন সম্ভব নয়। তবে দেশে ফিরে তোমাকে নিয়ে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেশে ঘুরতে যাবো ইনশা আল্লাহ।

টুসি নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে।তার এখন থেকেই বড্ড একা একা মনে হচ্ছে। এতো গুলো কিভাবে কাটাবে জানে না সে।
সোহান টুসি’র থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে, দেখতে পায় টলমলে আঁখিপল্লব দুটো। দুই হাত দিয়ে গাল দুটো আঁকড়ে ধরে নিজের অধরপল্লব ছুঁয়ে দেয় টুসি’র আঁখিপল্লবে।
পুনরায় টুসি’কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
— খুব শীঘ্রই ফিরে আসবো আমি ইনশা আল্লাহ। ততদিনে তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করো কেমন? নিজেকে পূর্ণ পর্দায় ঢেকে রেখো তোমার স্বামীর জন্য। মনে রাখবে তুমি শুধুমাত্র তোমার স্বামীর জন্য। কোন লোভাতুর দৃষ্টি পরতে দিও না নিজের উপর।
আম্মার সাথে কখনো খারাপ আচরণ করো না, তাহলে আমি সহ্য করতে পারবো না। কখনো আম্মার অবাধ্য হ‌ইয়ো না। আম্মা তার মুখে মুখে তর্ক পছন্দ করেন না।কিছু বললে শুধু শুনে থাকবে প্রতিউত্তর করবে না।আম্মা কোন অন্যায় করলে আমাকে বলবে আমি আম্মাকে বুঝিয়ে বলবো। তুমি কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে।

মন খারাপ হলে বাবার বাড়ি ঘুরে আসবে গিয়ে। তাছাড়া ফোনে কল করে কথা বলবে।রাতে একা ঘুমাতে ভয় পেলে মেহুল কে নিয়ে ঘুমাবে। রাস্তা ঘাটে গাড়ি দেখে শুনে রাস্তা পার হবে। আগের মত বৃষ্টিতে ভিজবে না।
ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবে, খাবার ঠিক মত খেলে জ্ঞান বাড়বে বুদ্ধি বাড়বে, সুস্থ থাকবে।যখনি আমার কথা মনে পরবে তখন আমাকে মেসেজ দিবে। আমি ফ্রি থাকলে কল করবো।
.
.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে, সোহানের র‌ওনা হ‌ওয়ার সময় হয়ে এসেছে। সন্ধ্যা সাতটায় ফ্লাইট। টুসি মলিন মুখে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এগিয়ে দিচ্ছে। রোকেয়া বেগম এসে তারা দিয়ে বললেন,বাপ আগে আগে পৌঁছে যাওয়া ভালো। বৃষ্টিবাদলের দিন তার উপর ঢাকা শহরে কতো যাটযট লেগে থাকে।

সোহান বললো,
— এই আম্মা হয়ে গেছে,বের হবো এক্ষুনি।

তারপর মায়ের হাতে টুসি’কে তুলে দিয়ে বললো,
— তোমরা একে অপরকে দেখে রাখবে। মনে রেখ তোমাদের একজন কে ছাড়া আমি অপূর্ণ।

দু’জনেই সোহানের কথায় সায় দেয়। রোকেয়া বেগম রুম থেকে বেরিয়ে গেলে শেষ বারের মতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে টুসি’কে। তারপর টুসি’র মুখশ্রী’র বরাবর নিজের মুখশ্রী রেখে বললো,
— আদর করে দিবে না আমাকে?

টুসি দুই হাত দিয়ে সোহানের গাল দুটো আঁকড়ে ধরে সারা মুখে নিজের অধরপল্লব ছুঁয়ে দেয়। এরপর সোহান পাগলের মত চুমু এঁকে দেয় টুসি’র মুখশ্রী’তে। এতে টুসি শব্দ করে কেঁদে দিয়ে জড়িয়ে ধরে সোহান কে।
সোহানের চোখ দুটো লাল রঙা ধারন করেছে। ভিশন কষ্ট হচ্ছে তার, কিন্তু যেতে হবে তাকে তাই চলে গেল। রোকেয়া বেগম,মেহুল বাড়ির গেইট অবধি পৌঁছে দিতে এলেন। তাদের চোখেও পানি স্পষ্ট। আরমান সাথে গেল পৌঁছে দিতে।
.
.
সোহান চলে গেলে টুসি ফ্লুরে বসে বিছানায় মাথা রেখে কাঁদে। খুব করে বিয়ের প্রথমের দিন গুলো মনে পরছে। মানুষটা তার এতো কাছে থেকেও কতোই না অবহেলা করেছে সে।আজ যখন ভালোবাসা বুঝতে শিখেছি তখন মানুষটা চলে গেল দূর দেশে। ফিরবে কবে তার কোন ঠিক ঠিকানা আজো জানে না টুসি।

কয়েকদিন যাবত অতি কষ্টে শূন্যতায় ডুবে আছে টুসি। পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছে না।বার বার সোহানের বচন ভঙ্গি গুলো মনে পরছে।
এদিকে সোহান পৌঁছে কল করে জানিয়েছে ঠিকই কিন্তু কাজে নতুন জয়েন করার জন্য আর কল করার সুযোগ পায়নি। নতুন অবস্থায় কোম্পানিতে জয়েন করে সমস্ত কাজ বুঝে নিচ্ছে যার ফলে ভিশন ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে।
টুসি মেসেজ দিলে খাবার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দুই একটা মেসেজের রিপ্লাই দেয় এটুকুই। তবে খুব শীঘ্রই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে বলেছে ইনশা আল্লাহ।

বাসায় চলছে ছোট ছেলের বিয়ের তোরজোর। রোকেয়া বেগম ঘরদোর মানুষ নিয়ে সাজাতে ব্যস্ত। আত্মীয়-স্বজন আসবে বলে কথা। সোহান বলেছিল বেশি তোরজোর না করতে যেন মেয়ের বাবার খরচ কম হয়। কিন্তু রোকেয়া বেগম তার বড় ছেলের বিয়ে ছোট করে দিলেও ছোট ছেলের বিয়ে দুমদাম করে দিবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

টুসি সারাক্ষণ নিজের রুমে থাকে বলে, মনে মনে টুসি’র প্রতি খুব বিরক্ত রোকেয়া বেগম।যদিও কাজ কর্ম সব মানুষজন দিয়ে করাচ্ছে তাও।
.
.
বিয়ের কিছুদিন হতেই ছোট ব‌উয়ের কাজ কর্মে বেশ সন্তুষ্ট রোকেয়া বেগম। কথায় কথায় ছোট ব‌উয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি। এদিকে একটা বিশেষ কারণে টুসি’র প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি হচ্ছে তার….
_________
রেফারেন্স:-
[১] (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১১২ হাদীস নং ৫২৩২; মুসলিম ৩৯/৮, হাঃ ২১৭২)
__________

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

ভুলোনা আমায় পর্ব-১২

0

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-১২
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

তোমার জন্য একটা গিফট আছে দেখবে?

টুসি খুশি হয়ে বললো,
— ওয়াও কি গিফট দেখি?

সোহান বাম হাতে টুসি’কে আঁকড়ে ধরে ডান হাত দিয়ে পাশে থাকা টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা সাদা রঙের বক্স বের করলো। তারপর টুসি’র হাতে দিয়ে বললো,
— নাও খুলে দেখে বলো পছন্দ হয়েছে কিনা?

ধীরে ধীরে বক্সটি খুললো টুসি। খুলে বেশ চমকে গেল! কেননা এটা একটা স্মার্ট ফোন।টুসি সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করল,কার এটা?
— তোমার! পছন্দ হয়েছে কিনা বলো?

টুসি থতমত খেয়ে বললো,
— আমার জন্য?

সোহান তার বেবি হেয়ার গুলো কানের পিছনে নিতে নিতে বললো,
— খুশি হ‌ওনি?

টুসি ফোনটা দেখতে দেখতে বললো,
— তা নয়। তবে আমার ফোনের প্রয়োজন ছিল না। আপনার ফোন থেকেই তো আমি আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলতে পারি।তা ছাড়া অন্যান্য কাজ ও করতে পারি। তাহলে কি দরকার ছিল এতো গুলো টাকা শুধু শুধু নষ্ট করার?
— বাহ্ আমার পিচ্চি ব‌উটা তো বড় হয়ে যাচ্ছে। ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছে “মা শা আল্লাহ”।
— সে যাই বলেন আপনি এটা ফিরত দিয়ে দিবেন।

সোহান টুসি’র দুই গাল, নিজের দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
— ফিরত দিয়ে দিলে, আমি আমার ব‌উটার সাথে কি করে কথা বলবো শুনি?

টুসি তার অরুনলোচন আঁখি মেলে, নিজের শাহাদাত আঙ্গুল তুলে ইশারা করে বললো,
— এই যে এভাবে ফেইস টু ফেইস কথা বলবেন।

সোহান ঠোঁট কামড়ে বললো,
— আমাকে যে বিদেশে যেতে হবে কয়েক বছরের জন্য! তাহলে ফেইস টু ফেইস কিভাবে কথা বলবো?

অনিমেষ চাহনিতে তাকিয়ে র‌ইলো টুসি,এই মুহূর্তে তার রিয়েকশান ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। কিভাবে কি বলবে? ঠিক কি বললে সোহান কে আটকে রাখা যাবে মাথায় আসছে না। সবকিছু কেমন একটা গুলিয়ে যাচ্ছে তার।
তখন দরজায় কড়াঘাত পরে, রোকেয়া বেগম সোহান কে ডাকছে।তাই টুসি’কে বসিয়ে রেখে সোহান দরজা খুলে তার আম্মার কাছে গেল।
টুসি ফোনটা টেবিলের উপর রেখে বিছানায় দপ করে শুয়ে পড়ল। কোলবালিশ দিয়ে মুখশ্রী ঢেকে রাখলো তাই তার অনুভূতি বোঝা দায় এই মুহূর্তে।
.
.
ছোট ভাইয়ের বিয়েতে থাকবি না তুই?এই সপ্তাহে না হয় বিয়ের তারিখ ঠিক করি। তবুও তুই বিয়েতে উপস্থিত থাক, শেষ হলে তবেই বিদেশে চলে যাস।

সোহান মলিন মুখশ্রী করে বললো,
— তা হয় না আম্মা তোমাকে তো আমি আরো সপ্তাহ খানেক আগে বলেছিলাম যে আমাকে বিদেশে যাওয়া লাগবে হয়তো।আর এখন তো আগামীকাল ফ্লাইট! পিছুপা হ‌ওয়ার কোন চান্স নাই। বিয়েতে কাজ কর্ম দেখা শোনার জন্য আমি লোকজন ঠিক করে দিয়ে যাবো। তুমি এই নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না।আর মেয়ে কি ভাইয়ের পছন্দ হয়েছে?

রোকেয়া বেগম হাসি হাসি মুখে বললেন,
— আরমান বলেছে তোমাদের পছন্দ্ই আমার পছন্দ।এ নিয়ে চিন্তা নাই, আমার ছেলে মেয়েদের আমার উপর ভরসা আছে।
— “আলহামদুলিল্লাহ”।
রাতের মেডিসিন নিয়েছো আম্মা?
— হ ঔষধ খাইতে খাইতে আর ভাল্লাগে না রে বাপ।এর থেকে মরন ভালো মনে হয়। মরনের আগ পর্যন্ত খাইতে হ‌ইবো এই ঔষধ।আর খাইতে ইচ্ছা করে না।

সোহান তার আম্মার গাল দুটো আঁকড়ে ধরে বললো,
— এমন কথা মুখেও আনবে না আম্মা। আব্বা মারা যাওয়ার পর তুমি একমাত্র সম্বল আমাদের। তোমার মুখের পানে তাকিয়ে আমরা আব্বার কষ্ট গুলো ভুলে থাকি। এমন কথা আর বলতে যেন না শুনি তোমায়। আমি সময় পেলেই তোমার সাথে যোগাযোগ করবো তখন যেন না শুনি যে তুমি খাবারের অনিয়ম করেছো।এই বলে দিলাম।

মেহুল টলমল চোখে তাকিয়ে আছে, সোহান কাছে ডাকতেই হাউমাউ করে কেঁদে দিল। বললো,
— ভাইয়া তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো আমরা? তুমি যেও না কোথাও।

সোহান মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
— বোকা মেয়ে আমি কি চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছি নাকি? আল্লাহ চায়েতো কাজটি শেষ করে আবার তোদের মাঝে ফিরে আসবো। ঠিক মতো পড়াশোনা করবি তুই এবং টুসি দু’জনেই। আমি যেন দু’জনের‌ই ভালো রেজাল্ট শুনতে পাই। আর মায়ের কথা মতো চলবি, মায়ের খেয়াল রাকবি কেমন?

মেহুল কেঁদে কেঁদে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। সোহান গাল টেনে দিয়ে বলে, আমার কিউট বোন’টা মা শা আল্লাহ।

দরজায় কলিং বেল বেজে ওঠে। সোহান বললো,
— আরমান মনে হয় চলে এসেছে। আমি দরজা খুলছি বস তুই।

অতঃপর দরজা খুলে দেখে সত্যিই আরমান এসেছে।বড় ভাইকে সালাম দেয় আরমান। দুই ভাই কুশল বিনিময় করে রুমে ডুকে। তারপর রোকেয়া বেগম কে সালাম দেয় আরমান। চকলেট আইসক্রিম এর প্যাকেট’টা মেহুল কে দিয়ে দুষ্টুমি করে বলে,
— এই পিচ্চি নে ধর তোর তকলেট! এবার ফেচফেচানি কান্না থামা।

মেহুল রেগে গিয়ে বললো,
— তোর চুল টেনে ছিঁড়ে দিব কিন্তু! আমি চকলেট এর জন্য কাঁদছি নাকি?নিজে তো বিয়ে করবি বলে দেইদেই করে নাচছিস। ভাইয়া যে চলে যাবে জানিস তুই?

আরমান খুব অবাক হয়ে বললো, ভাইয়া কোথায় চলে যাবে?
মেহুল সবটা বললো। সবটা শুনে আরমান খুব মনঃক্ষুন্ন হয়।তার এমন একটা বিশেষ দিনে বড় ভাই থাকবে না। এটা মানা আসলেই কষ্টের।তাই মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে গেল। সোহান কতো ডাকলো তাও শুনলো না।
.
.
নিজের রুমে এসে ভিতর থেকে দরজা লক করে দিল সোহান। তারপর সামনে লক্ষ্য করে দেখে টুসি এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে। তাই সোহান পাশে বসে টুসি’র চুল গুলো ঠিক করে দিতে দিতে বললো,
— এই টুসি ম্যাডাম ঠিক ভাবে শুয়ে তারপর ঘুমাও। এভাবে উল্টা পাল্টা শুলে ঘুম আসে?

টুসি’র কোন সাড়া শব্দ নেই, সোহান তার পিঠে হাত রাখতে অনুভব করলো টুসি কেমন কাঁপছে। এমন কেন করছে দেখার জন্য নিজের দিকে ঘুরাতে গেলে টুসি শক্ত হয়ে কোলবালিশ আঁকড়ে ধরে থাকে। কিন্তু সোহান ও কম যায় না, জোর করে নিজের কোলে টুসি’র মাথাটা নিয়ে আসে। তারপর লক্ষ্য করে দেখে টুসি ম্যাডাম কেঁদে কেটে একাকার করে ফেলেছে। বেশি সময় কাঁদার ফলে চোখ মুখ লাল রঙা ধারন করেছে। ফর্সা গোলগাল মুখশ্রী অধিকারীর মানুষ গুলো হয়ত এমনি,কান্নার চিহ্ন গুলো মুখশ্রী তে ফুটে উঠে।
সোহান তার দুই গাল আঁকড়ে ধরে বললো,
— এভাবে কাঁদে কেউ?চোখ মুখের কি অবস্থা করেছো দেখেছো তুমি?

টুসি হেঁচকি দিতে দিতে বললো,
— আমি আপনাকে ছাড়া এখানে একদম থাকতে পারবো না। আপনি আমাকে নিয়ে চলুন আপনার সাথে।আর তা না হয় আপনি কোথায় যাবেন না।

টুসি’র কার্যকলাপ দেখে সোহানের নিজের‌ই বুক ফেটে কান্না আসছে। সত্যি এতো গুলো দিন তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে ছেড়ে কিভাবে থাকবে সে? সে যে বড্ড বেশি ভালোবাসে তার স্ত্রী কে।
রুমের লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে বিছানায় আসে সোহান।টুসি’কে ঠিক করে শুয়ে দিয়ে তার উপর হালকা ভর দিয়ে থাকে সে।টুসি’র চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে
দিতে বললো,প্লিজ আমাকে এভাবে দূর্বল করে দিও না। আল্লাহ তা’আলা যা কিছু করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন। হয়তো এখানে আমাদের কল্যাণ নিহিত আছে, তাই যাচ্ছি।

টুসি ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করে। সোহানের দুই গাল দুটো আঁকড়ে ধরে বলে,
— ভুলোনা আমায়!

সোহান তার গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে আদুরে গলায় বলে,ভুলোনা আমায়!
টুসি এবার শব্দ করে কেঁদে দেয়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে।যেন ছাড়লেই সোহান বিদেশে চলে যাবে।
.
রাতটা তাদের স্মরনীয় হয়ে থাকবে। কেননা এই রাত তাদের “ভালোবাসাময় রাত”!একে অপরের খুব গভীর ভাবে উপলব্ধি করার রাত। যেখানে বিন্দুমাত্র ফাঁকা নেই,একে অপরের পরিপূরক হিসেবে পূর্ণতা পেয়েছে তাদের পবিত্র বন্ধন।

ঘড়িতে দুইটা বাজতে এলার্ম বেজে উঠল। সোহান ঘুম ঘুম চোখে এলার্ম বন্ধ করে দেয়। তারপর টুসি’র দিকে লক্ষ্য করে দেখে মেয়েটা গুটিসুটি মেরে সোহানের সাথে মিশে আছে। সোহান তার কপালের বেবি হেয়ার গুলো সরিয়ে দিয়ে নিজের অধরপল্লব দুটি ছুঁয়ে দেয়।এতে কোন ভাবান্তর নেই টুসি’র সে তার মতো করে শান্তি’তে ঘুমিয়ে আছে।এই শান্তিপূর্ণ ঘুম হয়তো চাইলেও পাবে না বছরের পর বছর।
সোহানের ইচ্ছে হলো আজকে দুজন মিলে একসাথে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার। ঘুমন্ত টুসি’র ঘুম না ভাঙ্গার ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। আবার কবে না কবে এই সুযোগ আসে কে জানে? আজকে দুজনে মিলে আল্লাহ তা’আলার দরবারে হাত তুলবে। চুপিচুপি নিজেদের ইচ্ছা গুলো সৃষ্টিকর্তার কাছে ব্যক্ত করবে।
কত‌ই না সুন্দর আল্লাহ তা’আলার মহিমা “সুবহান আল্লাহ”।

অতঃপর সোহান টুসি’র সাড়া মুখশ্রী জোরে আঁকিবুঁকি করে বলছে,
— টুসি ম্যাডাম উঠুন আমরা একসাথে নামায আদায় করবো।

কে শুনে কার কথা?টুসি সোহানের হাত জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকে। তাই সোহান তার অন্য হাত দিয়ে আবার দুষ্টুমি শুরু করে। একসময় বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে ভ্রু কুঁচকে তাকায় টুসি। সোহান তখন আদুরে গলায় বলে,
— চলো না একসাথে তাহাজ্জুদ নামায পড়ি?

এতো আদুরে আবদার ফেলতে পারে না টুসি।তাই বলে,
— চোখ বন্ধ করুন আপনি, আমি শাওয়ারে যাবো।

সোহান দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
— আমি তো সব দেখে নিয়েছি, এখন চোখ বন্ধ করে কি হবে?

এতে করে টুসি চোখ রাঙিয়ে তাকায় সোহানের পানে। সোহান মাথা চুলকে পাশ ফিরে শুয়ে পরে। তারপর টুসি ব্ল্যাঙ্কেট জরিয়ে বাথরুমে ঢুকে।
.
.
অতঃপর দু’জনে নামাযের জন্য সুন্দর করে সাজগোজ করে তৈরি হয়ে নেয়।রাত তখন দুইটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট।
টুসি’র চুল গলিয়ে পানি পরছে,তা দেখে তাওয়ালে দিয়ে খুব যত্ন সহকারে পানি গুলো মুছে দেয় সোহান। তারপর দুজনে নামাযে দাঁড়ায়।
নামায শেষে সোহানের কাঁদে মাথা রেখে তসবিহ পড়ে। পাশে থাকা জানালার থাইগ্লাস টা খুলে দেওয়া হয়েছে।ঐ দূর আকাশে চাঁদ মামা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।
.
.
আজকে সোহান ঘরেই ফজর নামাজ পড়ে নিল।যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে সময়টা অতিবাহিত করার জন্য।সযত্নে আগলে রেখে দিল নিজের বাহুবন্ধনে,আবদ্ধ করে নিল টুসি’কে…..

#চলবে…. ইনশা আল্লাহ।

ভুলোনা আমায় পর্ব-১১

0

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-১১
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

সোহান মুচকি হেসে “আলহামদুলিল্লাহ” বললো।আর মনে মনে বললো, আমি এটাই দেখতে চেয়েছে ইয়া আল্লাহ তুমি আমার নেক ইচ্ছে পূরণ করেছো। আমার অবুঝ স্ত্রী কে আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছো। তোমার দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া ইয়া আল্লাহ।

তারপর পাশে বসে থাকা সাবা কে বললো,
— এর পর নিশ্চয়ই তোমার কিছু বলার থাকতে পারে না।সাবা আমি জানি তুমি যথেষ্ট ভালো একটা মেয়ে। তুমি হয়তো জানো না আল্লাহ তা’আলা আমাদের জীবনসঙ্গী পূর্বেই নির্ধারণ করে রেখেছেন।

কার সাথে কার বিবাহ এটা নির্ধারণ করা।
তাকদীর অর্থাৎ ভাগ্য দুই প্রকার৷
১) তাকদীরে মুবরাম
এবং২) তাকদীরে মুয়াল্লাক
অর্থাৎ
ক) অকাট্য বা অপরিবর্তনীয় ভাগ্য
খ) ঝুলন্ত বা পরিবর্তনীয় ভাগ্য

জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিনটি বিষয় পূর্বে থেকেই আল্লাহ নির্ধারন করে রেখেছেন। কোনদিন আমাদের জন্ম হবে, কোনদিন আমাদের মৃত্যু হবে, কার সঙ্গে আমাদের বিয়ে হবে, এই সংক্রান্ত সকল কিছুই আল্লাহ তা’য়ালা পূর্বে থেকেই ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এটিকে অকাট্য বা অপরিবর্তনীয় ভাগ্য বলা হয় যা কি না পরিবর্তন সম্ভব নয়!

রাসূল সাঃ বলেছেন, দোয়া ব্যতীত অন্য কোনো কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না।

[জামে আত তিরমিজি হাদীস নং- ২১৩৯]

এখানে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা বুঝতে হবে! হাদীসের ব্যাখ্যা হচ্ছে অকাট্য বা অপরিবর্তনীয় ভাগ্যসমূহ দোয়ার দ্বারা পরিবর্তন হয় না, পরিবর্তন হয় ঝুলন্ত বা পরিবর্তনীয় ভাগ্যসমূহ।
যেমনঃ- আমাদের ভাগ্যে যদি অপমৃত্যু (অর্থাৎ আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে কিংবা এক্সিডেন্টের মাধ্যমে) মৃত্যু লিখা হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা চাইলে আমাদের দোয়ার বরকতে সেই অপমৃত্যু থেকে হেফাজত করতে পারেন, নেক হায়াত দান করবেন, আমল করার মতো জিন্দেগী দান করবেন। এর দ্বারা এটি বুঝায় না যে, দোয়ার দ্বারা নির্ধারিত হায়াত থেকে আল্লাহ তা’য়ালা হায়াত বৃদ্ধি করে দিবেন। এটি হচ্ছে দোয়ার দ্বারা (ঝুলন্ত) ভাগ্য পরিবর্তনের ব্যাখ্যা।

আবার বিয়ের ক্ষেত্রেও একই ব্যাখ্যা, আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের জন্য পূর্বে থেকে যাদেরকে নির্ধারন করে রেখেছেন তারাই আমাদের জীবনসঙ্গীনী হবে, তারাই আমাদের জন্য উত্তম এবং মঙ্গলজনক হবে বিধায় আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে আমাদের জন্য নির্ধারন করেছেন।

তাই প্লিজ অতীত ভুলে নতুন করে শুরু করো। ভালো থেকো “আল্লাহ হাফেজ”।

আর মিজান ভাই আপনাকে “জাযাকিল্লাহু খাইরন” । অনেক বড় উপকার করলেন ভাই।

মিজান সাহেব হেসে বললেন,
— আজকে একটা ভালো কাজ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে ভাই‌। আপনি কি আমার কম উপকার করেছেন।তার কিছু অংশ হয়তো শোধ করতে পেরেছি।আর হ্যা যেকোনো প্রয়োজনে বলবেন ভাই।
— জ্বি অবশ্যই। আজকে তাহলে যাই “আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতু”।
— ওয়ালাইকুমুস সালাম।
.
.
এই ভদ্রলোক মানে মিজান সাহেবের সাথে কথা বলে তাকে ভূয়া পেপার্স তৈরি করতে বলে সোহান। ভদ্রলোক পূর্বে সোহানের থেকে অর্থ দিয়ে সাহায্য পেয়েছেন তাছাড়া সোহান কে খুব ভালো জানেন,তাই নির্দ্বিধায় কাজটি করেন। কোথায় শুনেছিলাম ভালো কিছুর জন্য এটুকু মিথ্যা বলাই যায়। তাছাড়া বিনা কারণে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়াছাড়ি হলে আল্লাহ তা’আলার আরশ কেঁপে উঠে। সেখানে একটু মিথ্যা বা ছলনা ব্যাপার না। বাকিটা আল্লাহ পাক ভালো জানেন “আল্লাহু আকবার”।
.
.
কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসে পাশে চোখ বুলিয়ে দেখে সোহান। অদূরে একজনকে বসে থাকতে দেখে দ্রুত পা চালিয়ে তার পাশে গিয়ে বসে। তারপর বলে,
— আমি তো ভেবেছিলাম টুসি ম্যাডাম হয়তো এতক্ষণে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে! কিন্তু সে যে রাস্তার পাশে এভাবে বসে আছে,ব্যাপার কি? নিজের গ্রামে ফিরে যাবে না নাকি?

সোহানের এমন পিঞ্চ মার্কা কথা শুনে রেগে কিল ঘুষি মারতে শুরু করে টুসি। সোহান আউচ বলার বদলে তৃপ্তির হাসি হাসছে।তার পিচ্চি ব‌উটাকে আরো রাগিয়ে দিতে বললো,
— পেপার্স টা এভাবে ছিরে দিলে, কাজটা ঠিক করনি একদম। ভেবেছিলাম আরেকটা বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করবো। নতুন ব‌উয়ের আদর পাবো!সব কিছুতে তুমি পানি ডেলে দিলে। কাজটা কিন্তু একদম ঠিক করোনি তুমি।

টুসি এবার সোহেলের গলা টিপে ধরে বললো,
— একদম অন্য নারীর কথা ভাবা তো দূর মুখে নিবেন তো আপনাকে মেরে আমিও মরবো! আপনার ভাগ আমি কাউকে দিব না বলে দিচ্ছি।

এই আবার কাঁদতে শুরু করে দিল। সোহান তার বাম হাত দিয়ে টুসির বাহু জড়িয়ে ডান হাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
— আমার বউ তো আমাকে বুঝতেই চায় না। আমি যে তাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলে সেই প্রথম থেকেই! সে তো থাকে শুধু তার বাচ্চাগিরী নিয়ে। আমাকে তো বিন্দুমাত্র পাত্তা দেয় না, তাই তো পাত্তা’হীনতায় ভুগতে ভুগতে দ্বিতীয় বিয়ের কথা যাষ্ট মুখে এনেছি।
কথায় আছে না পুরুষ মানুষ কে আঁচলে বেঁধে রাখতে হয়, এখন তুমি যদি তোমার আঁচলে আমায় বেঁধে না রাখো তাহলে তো আমি উড়াল দিব‌ই।

— আপনার মাথা!

টুসি উঠে হাঁটা শুরু করলো। পিছন পিছন সোহান ও উঠে টুসির মৌজা জড়ানো হাতটা শক্ত করে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
— রাগ করেছো?রাগ করে না। তোমাকে মৃত্যুর আগে ছাড়ছি না ইনশা আল্লাহ। এবার বাসায় চলো।

টুসি খুব খুশি হয় সোহানের কথায়। তাই সেও সুহানের হাত শক্ত করে ধরে তার বাহুতে মাথা কাত করে হাঁটে।
.
.
রাত ১০ টা..
রোকেয়া বেগম পান চিবোতে চিবোতে বললেন,
— বুঝলি বাপ গতকাল যে মেয়েটা দেখতে গেলাম দেখতে শুনতে ভালই তবে মেয়েরা পাঁচ পাঁচটা বোন। মেয়ের বাপ অবসরে আছেন, একটা ভাই প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। অবস্থা ততো ভালো লাগলো না আমার কাছে।

সোহান তার আম্মার কথায় আহত স্বরে বললো,
— আম্মা দয়া করে তুমি টাকা পয়সার চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে একটা ধার্মিক মেয়ে খুঁজে আনো তাহলে দেখবে তোমার ঘরে আল্লাহ তা’আলার রহমত আসবে।আর এই মেয়েটা যদি ভালো লাগে তাহলে ওরেই ব‌উ করে নিয়ে আসো আম্মা।কারণ ঐ ঘরে আল্লাহ তা’আলার রহমতে পাঁচ পাঁচটা জান্নাতের ফুল। তুমি একটা ফুল নিয়ে আসো।
জানো আল্লাহ তা’আলা যখন খুশি হন তখন কন্যা সন্তান দান করেন “সুবহান আল্লাহ” ।

সোহান চলে গেলে রোকেয়া বেগম গভীর ভাবনায় মগ্ন হলেন। মেয়েটাকে তো ভালোই লেগেছে কিন্তু আর্থিক অবস্থা দিয়ে তো তেমন নেই। তাহলে এখন কি করবেন তিনি?
.
সোহান রুমে এসে টুসি কে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় এসে দেখে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার নিয়ন আলোয় ব্যস্ত যানবাহনের আশা যাওয়া দেখছে। সোহান পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বাহুতে থুতনি রাখে। হঠাৎ কারো স্পর্শে শিউরে উঠে টুসি।গার গুড়িয়ে দেখে সোহান কে।
সোহান মুচকি হেসে বলে,
— ভয় পেয়েছো?

উত্তরে নিঃশব্দে মাথা নাড়ায় টুসি। সোহান তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গ্রিলের সাথে মিশিয়ে খুব কাছাকাছি দাঁড়ায়।টুসি’র নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে, লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। সোহান তার অধরের কাছাকাছি নিজের অধর নিতে থাকে!যার ফলে বিন্দু পরিমাণ ফাঁকা জায়গা অবশিষ্ট থাকে।টুসি তার আঁখিপল্লব দুটো খিচে বন্ধ করে রাখে।
মিনিট খানেক চলে গেলেও যখন কিছুর অস্তিত্ব টের পায় না তখন চোখ খুলে তাকায়।আর এই সুযোগে সোহান তার অধৈর্য অধর দুটি বিপরীত অধরে ডুবিয়ে দেয়।টুসি তার হাত দুটো সোহানের পিছন দিকে নিয়ে খামচে ধরে সার্ট।
.
— একটা কথা ছিল বলবো?

টুসি সোহানের প্রশস্ত বুকে মুখ গুঁজেই বললো,
— কি বলেন?
— মাথা উঁচু করো তাহলে বলবো।
— না আপনি এমনি বলেন।

সোহান বুঝতে পারলো টুসি খুবই লজ্জা পাচ্ছে সোহানের সাথে চোখাচোখি হতে। আসলে এই প্রথম বার স্বামীর গভীর ছোঁয়া পেয়েছে তো তাই। সোহান বললো,
— আচ্ছা ঘুমাতে হবে তো রাত বেড়ে যাচ্ছে। বেশি রাত করে ঘুমানো ঠিক নয়।

টুসি কোনরকম ভ্রক্ষেপ করলো না। আগের মতই র‌ইলো। সোহান দুষ্টুমি করে টুসি’কে নিজের বাহুবন্ধনে আরো শক্ত করে আবদ্ধ করে নিল। তারপর নিজের অধরপল্লব দুটি ছুঁয়ে দিল গভীর ভাবে টুসির গলার দিকটায়।টুসি বেচারি লজ্জায় লাল রঙা ধারন করে আরো মিইয়ে গেল।
.
.
মেহুল আর টুসি স্কুলে পৌঁছাতেই ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীদের থেকে শুনলো তাদের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্যার এবং সাধারণ গণিত ক্লাস নিতেন সেই ম্যামের বিয়ে হয়েছে!
ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে এই নিয়ে খুব আলোচনা চলছে। আসলে হ‌ওয়ার ই কথা স্কুলে ইয়ং টিচার এবং মিস থাকলে তাদের ব্যাপারে জানার আগ্রহ হয় ছাত্র ছাত্রীদের।তারা কবে বিয়ে করবে কখন করবে না করবে এসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয় এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এখন কেউ বলছে দুজনের আলাদা বিয়ে হয়েছে আবার কেউ বলছে দুজন দুজনকে বিয়ে করেছেন। সঠিক খবর শিক্ষক মহল ছাড়া কেউ জানে না।
.
সোহান বাড়ি ফিরলে টুসি তাকে জানায় যে তার সাবা মিস বিয়ে করেছে।এই খবর শুনে সোহান খুব খুশি হয়। তবে টুসি’র মাথায় গতকালের বিষয়টি নাড়া দেয়,সাবা তাদের সাথে কোর্টে গিয়েছিল কেন?
সোহান কে জিজ্ঞাসা করলে সোহান বলে,
— তুমি পিচ্চি একটা মেয়ে তোমার মাথায় এগুলো ঢুকবে না।
— আমি পিচ্চি তাই না? দেখেন তাহলে…

সোহান রকিং চেয়ার হেলান দিয়ে বসে আছে আর তার কোলে সম্পূর্ণ ভার ছেড়ে বসেছে টুসি।
সেই অবস্থাতেই নিজের দন্ত দিয়ে সোহানের থুতনিতে কামড় বসিয়ে দেয় টুসি…

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

ভুলোনা আমায় পর্ব-১০

0

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-১০
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

যবে থেকে শুনেছে সোহান ঢাকায় ফিরে যাবে, তখন ই টুসি নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়েছে। সোহান তাকে একবার ও সাথে যাওয়ার কথা বলে নাই।মেহুলের থেকে যাওয়ার কথা শুনেছে সে।তাই শুনেই তৈরি হয়ে নাস্তার টেবিলে এসেছে।আনাস আর বুখারী তাকে দেখে বললো, বোন তুই কি কোথাও বের হবি?

টুসি তখন বললো,
— আমরা চলে যাবো!তোমরা কি জানো না?

সবাই অবাক হয়ে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। নিরবতা ভেঙ্গে বুখারী বললো,
— বোন তুই আরো কিছুদিন এখানে থাকবি। সোহান আমি বলেছি, সোহান ও মত দিয়েছে। কিছুদিন পর সময় করে আমি তোকে দিয়ে আসবো গিয়ে ঠিক আছে?

টুসি চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
— না ভাইয়া আমাকে আজকেই যেতে হবে। কতোদিন হলো পড়াশোনা করা হচ্ছে না। দেখতে দেখতে পরীক্ষার সময় চলে আসবে। তাছাড়া স্কুলে ভর্তি হয়েছি এমন বন্ধ দিলে তারা আমাকে বের করে দিবে। আমাদের স্কুলের নিয়োম শৃঙ্খলা অনেক কঠোর।এই যে কতোদিন স্কুলে যাচ্ছি না তার জন্য কি পানিশমেন্ট পেতে আল্লাহ তা’আলা জানেন।

টুসি’র কথায় সবাই চুপ করে রইলো। কি আর বলবে টুসি তো অযৌক্তিক কিছু বলেনি। সত্যিই তো সামনে বোর্ড পরীক্ষা বলে কথা, হেলাফেলা করে পড়াশোনা করলে তো চলবে না। ভালো রেজাল্ট করতে হলে পড়াশোনা করতে হবে। সোহান কখনো ভাবেনি টুসি নিজ ইচ্ছায় তার সাথে যেতে চাইবে, কেননা টুসি তার গ্রামকে খুব ভালোবাসে যার কারণে শ্বশুরবাড়ি পর্যন্ত যেতে চায়নি। শেষে গিয়েও দিন ভর কেঁদেছে।

এদিকে রোজিনা বেগম মেয়ের মতামত শুনে খুশি হলেন। সোহান যখন বলেছিল টুসি কিছুদিন থাকুক তখন রোজিনা বেগম জোর গলায় বলতে পারেনি যে না ওরে সাথে করে নিয়েই যাও।তাই এখন যখন টুসি নিজেই যেতে চাইছে তখন কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হলেন।

অতঃপর সবার থেকে বিদায় নেয় টুসি।তার নতুন ভাবীরা থাকার জন্য খুব অনুরোধ করে তখন টুসি বলে এস এস সি পরীক্ষার সময় আসবে। কেননা এখান থেকেই তো সে পরীক্ষা দিবে।
এবার হাসিমুখে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্য র‌ওনা হয় টুসি।অন্যবারের মতো কেঁদে কেটে বাসায় না। তবে রোজিনা বেগম আড়ালে চোখের পানি মুছেন।যত‌ই হোক নারী ছেঁড়া ধন তার সে তো কাঁদবেই।
.
.
ঢাকায় ফিরে স্বাভাবিক ভাবেই স্কুলে যাওয়া শুরু করে টুসি আর মেহুল।
সোহান প্রয়োজন ব্যাতিত অন্য কোন কথা বলে না টুসি’র সাথে।এতে টুসি মনঃক্ষুন্ন হয়।যত‌ই ফ্রি হতে চায় ততোই যেন দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

আজ শুক্রবার ছুটির দিন। রোকেয়া বেগম মেহুল কে নিয়ে পাত্রী দেখতে গিয়েছেন তার ছোট ছেলের জন্য।তাই আপাতত টুসি আর সোহান বাসায় একা।তারা যাওয়ার ঘন্টা খানেক পর ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়।এই অয়েদারে টুসির ইচ্ছে হলো শাড়ি পড়তে তাই সব গুলো শাড়ির থেকে তার পছন্দ মতো বেছে নিল একটা। এখন শাড়ি তো নিয়েছে ঠিকই কিন্তু বাঁধ সাধলো পরা নিয়ে। সে তো শাড়ি পরতে পারে না। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিল সোহান কে বলবে পরিয়ে দিতে।

সোহান হাদীসের ব‌ই পড়ছে।প্রতি শুক্রবার একটা নির্দিষ্ট সময়ে সে বিভিন্ন ইসলামিক বই নিয়ে পড়াশোনা করে।যেন দুনিয়া এবং আখিরাতের কাজে লাগে।
টুসি দ্বিধা কাটিয়ে উঠে শাড়ি নিয়ে হাজির হয়। তারপর আমতা আমতা করে বলে,
— এই যে শুনছেন?

সোহান ব‌ইয়ের দিকে চোখ রেখেই বললো,
— কি বলবে বলো?
— আমাকে এটা পরিয়ে দিবেন প্লিজ?
— কোনটা?

টুসি শাড়ি টা দেখিয়ে বললো,
— এই যে এটা।

সোহান শাড়ি হাতে টুসি’কে দেখতে পেয়ে চক্ষু বিস্ফোরিত করে,যেন আকাশ থেকে পড়ল। তবে নিজের বিন্ময় ভাবটা নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রেখে টুসি কে বললো,
— হঠাৎ শাড়ি পরবে কেন?

টুসি তার শখের কথা বলতে যাবে তার আগেই সোহান বলে বসে,
— আজকে শাড়ি পরে কাকে দেখাতে যাবে!

টুসি এর প্রতিউত্তর না করে রুমে ফিরে এসে শাড়িটা আগের মতই গুছিয়ে রেখে দিল।তার বুকচিরে কান্না আসছে, ভিশন কষ্ট হচ্ছে। একবার ভুল করেছে বলে কি সব সময় ভুল করবে? সোহান কিভাবে পারলো এতো কঠোরভাবে কথাটা বলতে?স তো তার স্বামীর জন্য‌ই সাজবে বলে ঠিক করেছিল।
খুব কষ্ট হচ্ছে তার খুব, এই মুহূর্তে যদি রোজিনা বেগম কাছে থাকতো তাহলে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতো।যাই হোক নিজের কান্না দমন করতে বৃষ্টির মাঝে ছাদে চলে আসে টুসি।ঝুম বৃষ্টি পরছে, আজকে হয়তো আল্লাহ তা’আলা ভিশন খুশি কেননা আল্লাহ তা’য়ালা যখন খুশি হন তখন জমিনে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। কিন্তু টুসি’র মনের আকাশে মেঘ জমেছে। ছাদের রেলিং গেসে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের মত করে কাঁদছে। চোখের পানি গুলো বৃষ্টির মাঝে মিশে যাচ্ছে তার।

বেশ কিছুক্ষণ পর সোহান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে টুসি’কে ডেকে বললো,
— এভাবে ভিজতেছো কেন? আল্লাহ না করুক জ্বর ঠান্ডা বেঁধে গেলে কি করবে? তাড়াতাড়ি বাসায় এসে কাপড় চেঞ্জ করে নাও।

টুসি’র থেকে কোন জবাব না পেয়ে সোহান আবার বললো,
— কি বলছি শুনতে পারছো না? আমি এবার কিন্তু রেগে যাবো টুসি!

তাও টুসি শুনলো না তাই বাধ্য হয়ে সোহান ভিজে টুসির কাছে আসলো। এসে আবারো বললো, জ্বর আসবে তো এভাবে ভিজছো কেন?

টুসি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, কিছু হবে না বৃষ্টিতে ভিজার অভ্যাস আছে। আপনি বাসায় যান।
— না তুমি সহ আসবে এক্ষুনি।চলো?
— যাবো না আমি।

সোহান এবার রেগে গিয়ে টুসির দুই বাহু শক্ত করে ঝাঁকিয়ে বললো,
— সমস্যা কি তোমার? কথা শুনছো না কেন?

টুসি তখন দ্বিগুণ রাগে বললো,
— আপনার কি সমস্যা বলুন তো? কেন আমাকে এভাবে ইগনোর করছেন?মানছি একটা ভুল করেছি কিন্তু তার জন্য তো মাফ চাইছি আমি।তাও কেন কষ্ট দিচ্ছেন আমাকে? আমি মানতে পারছি না আপনার অবহেলা। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। কেন বুঝতে পারছেন না আপনি? আপনার কেয়ার গুলো আমার চাই ঠিক আগের মতই। আপনাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ কেন বুঝেন না?

বলতে বলতে কেঁদে দিল টুসি। সোহান পাথর মানব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।যা দেখে আরো রেগে যায় টুসি। তখন সোহানের টি-সার্ট এর কলার ধরে বললো,
— আমি একটা দো’আ শিখেছি শুনবেন?

সোহান খানিকটা অবাক হয়, কারণ পরিস্থিতি এমন যে টুসি কোন দো’আ এর কথা বলবে তা কেমন যেন? তবুও বললো কি দো’আ বলো?

“একটি সুন্দর দো’আ”

[আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুব্বাকা ওয়া হুব্বা মান ইউহিব্বুক।]

হে আল্লাহ!
আমি তোমার ভালোবাসা চাই। এবং তোমাকে যে ভালোবাসে তার ভালোবাসা চাই।

[তিরমিযী – ৩৪৯০]

— সুন্দর না?
— আলহামদুলিল্লাহ খুব সুন্দর।
— ভালোবাসা দিবেন আমায়?

অনিমেষ চাহনিতে চেয়ে র‌ইলো সোহান।সে বিশ্বাস করতে পারছে না টুসি এই কথা বলছে? কি হয়েছে তার? বৃষ্টিতে ভিজে মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?
সোহান আর কথা না বাড়িয়ে টেনে নিচে নিয়ে গেল টুসি’কে। তারপর বাথরুমে পাঠিয়ে নিজে রুমে কাপড় চেঞ্জ করে নিল।
.
.
কিচেনে খাবার গরম করছে সোহান তখন পিছন থেকে টুসি বললো আমাকে দিন আমি করছি। সোহান পিছনে ফিরে তাকাতে লক্ষ্য করলো তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে আজকে বেশিই সুন্দর লাগছে।বেগুনি রঙের কামিজের সাথে সাদা ওড়না এবং সেলোয়ার পরেছে টুসি। সাথে ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া।তার উপর কামিজের কলসি হাতা ডিজাইনে ফর্সা হাত দুটো দৃশ্যমান তার। ওরনা টা চিকন করে গলায় দিয়ে রেখেছে। এতেই
বেশি আবেদনময়ী লাগছে তাকে। নিরবতা ভেঙ্গে টুসি বললো,
— দিন আমি করছি?

এতে সোহানের টনক নড়লো তাই শুকনো কাশি দিয়ে বললো,
— না থাক তুমি গিয়ে বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।

টুসি দ্বিরুক্তি না করে চেয়ার টেনে বসলো। তারপর সোহানের গরম করা হয়ে এলে খাবার নিয়ে আসে।
.
.
এরপরের দিন,
সোহান টুসি’কে নিয়ে বাহিরে বের হবে বলে তৈরি হতে বললো।
কিছুদিন পর হয়তো সোহানের ব্যবসায়ের কাজে বিদেশে যাওয়া লাগবে।সোহানের কথা অনুযায়ী সাবা’র সাথে দেখা করার আরো দুদিন বাকি কিন্তু সেই সময় তো নেই তাই সোহান আজকেই বলেছে দেখা করার কথা।
সাবা কে কোর্টে আসতে বলে টুসি কে নিয়ে কোর্টের উদ্দেশ্য র‌ওনা হয় সোহান!টুসি অনেক জিজ্ঞাসা করেও উত্তর পায়নি। তবে তার মনটা ভিশন খারাপ গতকাল রাতে খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছে,বার বার মনে হচ্ছে স্বপ্নটা সত্যি হয়ে যাবে না তো…এই ভয়ে টটস্থ হয়ে আছে।

পথিমধ্যে টুসি আবার বলে,
— আমি আজকে খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি!আচ্ছা সবাই বলে ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয় এটা কি ঠিক?

প্রতিউত্তরে সোহান বললো,
— স্বপ্ন নিয়ে দুশ্চিন্তা না করাই উত্তম।

স্বপ্নের কোনো বাস্তবতা আছে কি না এ ব্যাপারে ধর্মীয় গবেষক এবং দার্শনিকদের মাঝে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। দার্শনিকদের মতে, মানুষের চিন্তা-ভাবনার একটি প্রতিচ্ছবি তার ঘুমের মাঝে ফুটে ওঠে, যা শুধু ধারণা ও চিন্তাপ্রসূত। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। তবে ইসলামী জ্ঞানসম্পন্ন বিদগ্ধ আলেমরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন। তাদের বক্তব্য হলো, সব স্বপ্নই মানুষের ধারণাপ্রসূত নয়। বরং অনেক স্বপ্ন রয়েছে, যা অর্থবোধক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন স্বপ্ন তিন প্রকার। ১. রুইয়ায়ে সালেহাহ তথা ভালো স্বপ্ন। আল্লাহ মহানের পক্ষ থেকে কোনো সুসংবাদ হিসেবে যা বিবেচ্য। ২. রুইয়ায়ে শায়তানি তথা শয়তান কর্তৃক প্ররোচনামূলক প্রদর্শিত স্বপ্ন। ৩. রুইয়ায়ে নাফসানি তথা মানুষের চিন্তা-চেতনার কল্পচিত্র। এরপর রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি কেউ অপছন্দনীয় তথা ভয় বা খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন তাড়াতাড়ি অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যায় এবং দর্শিত স্বপ্নের ব্যাপারে অনভিজ্ঞ কাউকে কিছু না বলে। [আবু দাউদ] হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে এও বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.) ফজরের নামাজের পর সাহাবিদের জিজ্ঞেস করতেন তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো স্বপ্ন দেখেছ কি? অতঃপর রাসুল (সা.) নিজে এগুলোর ব্যাখ্যা করতেন। চিরসত্যের ধারক মহানবি (সা.) এর বাণীর আলোকে আমরা এ বিশ্বাস স্থাপন করি যে, কিছু ভালো স্বপ্ন আল্লাহ মহান তার প্রিয় ও নেক বান্দাদের দেখান। কিছু স্বপ্ন শয়তানের প্ররোচনায় হয়ে থাকে। কিছু স্বপ্ন মানুষের চিন্তা ও ধারণার ফল। একটি কথা উল্লেখ্য যে, সব নবি-রাসুলের স্বপ্ন অহি। এ জন্যই স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর পুত্র কোরবানিতে প্রস্তুতি জরুরিও ছিল আবার সঠিকও ছিল। অন্য কোনো ব্যক্তি এ জাতীয় কোনো স্বপ্ন দেখলে তার জন্য এভাবে কোরবানি করতে উদ্যত হওয়া সম্পূর্ণ হারাম। তবে স্বপ্নের ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূণ কথা হলো স্বপ্ন কাউকে না বলা। স্বপ্ন ব্যাখ্যা খুবই কঠিন এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক একটি বিষয়।

তুমি শুধু এটুকু মনে রেখো ভালো স্বপ্ন মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে আসে।আর খারাপ স্বপ্ন শয়তান কর্তৃক প্ররোচনামূলক প্রদর্শিত স্বপ্ন।
.
.
অতঃপর সেই কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছায় তারা।টুসি এরকম জায়গায় কখনো যায়নি তাই আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে। একটা রুমে যেতেই সাবা কে দেখলো টুসি,ভিশন অবাক হয়।মাথার মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নরা কিলবিল করতে শুরু করে।

সাবা আজকে বেশ খুশি, সোহান কে দেখে এগিয়ে এসে বললো,
— তোমাদের জন্য‌ই সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম।এসো বসো।

সোহানের সাবার সাথে প্রথমবার চোখাচোখি হতে দৃষ্টি নত করে নিল।সাবা শাড়ি পরে সাথে সুন্দর করে হিজাব পরেছে।তার অধরে তৃপ্তির হাসি ফুটে আছে।
সোহান ওকিল সাহেব কে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
— পেপার্স গুলো রেডি হয়েছে?
— বসুন মি.সোহান রাজবি।
আপনি যেরকম বলেছেন সেরকম ভাবেই আমি পেপার্স রেডি করেছি।এই দেখুন?

সোহান মাঝে বসে আর দুই পাশে টুসি এবং সাবা বসে। পেপার্স হাতে নিয়ে টুসি’র দিকে এগিয়ে দিয়ে সোহান বললো,
— নাও স‌ই করো।
— কিসের পেপার্স এগুলো?
— আমাদের ডিবোর্স পেপার! আজকে থেকে তোমাকে মুক্তি দিলাম!

টুসি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সোহানের দিকে। নেকাবের আড়ালে ঠোঁট কামড়ে ধরে। হয়তো ধারালো ছু’রির মতো দন্তের আঘাতে ঠোঁট কেটে যাচ্ছে কিন্তু টুসি’র সেই দিকে কোন ভাবাবেশ নেই।
এর মধ্যে সাবা বলে উঠলো,
— তাসনুভা তুমি তো আমাকে বলেছিলে তুমি এখান থেকে মুক্তি পেতে চাও। তাহলে স‌ইটা করে দাও, তবেই তুমি আগের জীবন ফিরে পাবে।

সাথে সোহান চোখে ইশারা করে স‌ই করার জন্য।টুসি বেশ কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে পেপার্স গুলো হাতে নিয়ে লম্বা করে ধরে টান দিয়ে ছিরে দুই ভাগ করে দিল! আবার মাঝখানে এক‌ই অবস্থা করলো। তারপর রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে চলে গেল…..

#চলবে…. ইনশা আল্লাহ।

ভুলোনা আমায় পর্ব-০৯

0

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-০৯
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

রোজিনা বেগম নাস্তা নিয়ে এসে দেখে সোহান এখনো আসেনি। টেবিলে নাস্তার ট্রে রেখে দিয়ে টুসি’র দিকে পলক ফেলতেই টুসি’র মলিন মুখশ্রী নজরে পরে রোজিনা বেগম এর।তাই কাছে এসে বললেন,
— কিরে এভাবে বসে আছিস কেন?ভাবী’দের পছন্দ হয়েছে?

টুসি’র থেকে কোন উত্তর না পেয়ে, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রোজিনা বেগম আবার বললেন,
— ওহ হ্যাঁ জামাই তখন ঐভাবে একা একা চলে আসলো কেন?কিছু কি হয়েছে?

এবার ও চুপ করে বসে আছে টুসি।তা দেখে যা বোঝার বুঝে গেল রোজিনা তাই রুক্ষ গলায় বললেন,
— আবার নিশ্চ‌ই কোন ঘটনা ঘটিয়েছিস? তুই কি আমাদের মরন চাস?

চমকে মায়ের পানে তাকায় টুসি! রোজিনা বেগম আরো কঠোরতা অবলম্বন করে বললেন,
— সোহানের মতো ভদ্র ছেলে বলে তোকে এখনো সহ্য করে যাচ্ছে অন্য কোন ছেলে হলে দূর দূর করে তারিয়ে দিত। আসলে কি বল তো এমন একজনের স্ত্রী হ‌ওয়ার যোগ্যতা তোর নেই। এখন কি মনে হচ্ছে জানিস?আমরা ছেলেটার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি!

টুসি’র চোখ দুটো ছলছল করছে, ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে রেখেছে। রোজিনা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে, হনহন করে বেড়িয়ে চলে যান।টুসি’র চোখের অবাধ্য নোনা পানির ফোঁটা চোখের কোটর থেকে গড়িয়ে পরে।
এশার নামাযের সময় হয়ে আসছে তবুও সোহান বাড়ি ফিরে এলো না।

এদিকে সোহান দীঘির পাড়ে পাকা সিঁড়িতে বসে আছে। মনের আকাশে মেঘ জমেছে তার!টুসি’র সব কিছু সহ্য করে নিলেও বে-পর্দা চলাফেরা মেনে নিতে পারছে না সে। দুপুরের সেই দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠলেই রেগে চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে নেয়। একটা পরপুরুষ হয়ে কেন তার স্ত্রীর হাত ধরবে? কেন? ইচ্ছে করছিল থাপ্পর দিয়ে টুসি’র গাল দুটো লাল করে দিতে, কিন্তু সোহান তার রাগ কে শংবরন করে নেয় কেননা,
স্ত্রী কে কখনো মারধর না করা সুন্নাত। রাসূল (সাঃ) কখনো কারো উপর প্রতিশোধ নিতেন না, এবং স্ত্রীদের ও মার ধর করতেন না।[১]

যাই হোক এবার যেভাবেই হোক টুসি’কে বুঝতে হবে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা এতো ঠুনকো কাচের মতো নয়। এটা একটা পবিত্র বন্ধন,যেটা আল্লাহ পাক নিজ হাতে নির্ধারণ করেছেন।
.
এশার নামাযের আযান হচ্ছে, সোহান আযানের সাথে সাথে জবাব দিচ্ছে। তারপর আযান শেষ হলে আযানের দো’আ পড়ে, দূর আকাশের ঐ চাঁদের দিকে তাকিয়ে দুই হাত তুলে বলতে শুরু করে কেননা এই সময়টা দো’আ কবুলের মুহূর্ত,

— ইয়া আল্লাহ আমাকে তুমি আরো ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করো,বোঝবান হ‌ওয়ার পর থেকে তোমার হাবিবের আদর্শে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
সাবা আমাকে অনেক পছন্দ করতো আমি বুঝতে পারছি তাই একজন নারীকে সম্মান করে,আম্মা’র কাছে সাবা’র ব্যাপারে প্রস্তাব রাখি। কিন্তু আম্মা রাজী ছিলেন না,আর তাই মায়ের অবাধ্য হয়ে সাবা’কে বিয়ে করিনি।
জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, ধ্বংসহোক সেই ব্যক্তি! যে তার মা-বাবা উভয়কে অথবা উভয়ের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাত লাভ করতে পারল না। হোক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘আমিন’। অর্থাৎ আল্লাহ কবুল করুন।’ (মিশকাত) কত মারাত্মক কথা। এ হাদিস থেকে অনুমান করা যায় যে, মা-বাবার সঙ্গে অবাধ্য আচরণ করলে কেন কবিরা গোনাহ হবে।
মা-বাবার অবাধ্য হওয়া আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী। কেননা আল্লাহ তাআলা মা-বাবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ পালন করা প্রত্যেক সন্তানের জন্য ফরজ। এ জন্য যারা মা-বাবার অবাধ্য হবে; এটি তাদের জন্য কবিরা গোনাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
আর আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। (আরও) নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে।[২]

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত মা-বাবার অবাধ্য না হওয়া আল্লাহর নির্দেশ। আর এর ব্যতিক্রম করার অর্থই হলো- আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা। আর তা কবিরা গোনাহ।

এমনকি বাবা-মা অমুসলিম হলেও…

তবে কোন অবৈধ নির্দেশের ক্ষেত্রে পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া জায়েজ।আর বিবাহ মূলত বিবাহ কারীর পছন্দে হ‌ওয়া উচিৎ।বরং এটা তার হক।তবে প্রত্যেক বাবা মায়ের সন্তানের কাছে একটা আশা থাকে তাই সে দিকটাও লক্ষ্যণীয়।তাই আম্মার ইচ্ছা কে সম্মান করে তার পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করেছি।

এবংকি কোনদিন কোন হারাম সম্পর্কে নিজেকে জড়াইনি। একটা হালাল সম্পর্ক চেয়েছি সর্বদা। আর তাই আম্মার অবাধ্য হয়ে সাবা’কে বিয়ে করিনি।আম্মার পছন্দ মতোই বিয়ে করেছি।
তাই আমরা স্ত্রী কে সঠিক জ্ঞান দান করো আল্লাহ। আমি দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবতেই পারি না। আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক নয়, সচরাচর এমন সম্পর্ক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভেঙ্গে যায়। কিন্তু আমি চাই না সেরকম কিছু হোক। আমি তোমার সাহায্য চাই আল্লাহ, তুমি একমাত্র আমাকে সাহায্য করতে পারো ইয়া আল্লাহ।
.
মোনাজাত শেষে মসজিদে গিয়ে নামায পড়ে বাসায় ফিরে। খুব খিদে অনুভব করছে সে, সেই সকালে নাস্তা করেছিল তার পর আর খাওয়া হয়নি।ভাবছে রোজিনা বেগম কে খাবারের কথা বলবে কিনা?পরে আবার মনে হলো বাড়িতে অনেক মেহমান রয়েছে। উনি নিশ্চ‌ই কাজে ব্যস্ত আছেন,, এরকম বিভিন্ন কথা চিন্তা করে আর গেল না বড় ঘরে। চোখের উপর লম্বা করে ডান হাত রেখে খাটে শুয়ে রইলো।
কিছুক্ষণ পর কারো পায়ের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখলো টুসি এসেছে।তাই পুনরায় আগের ভঙ্গিতে শুয়ে রইলো।

টুসি কাছে এসে বসলো সোহানের। তারপর ধীরে ধীরে সোহানের বাম হাতটা নিজের দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
— আমাকে মাফ করে দিন? আমি আর কখনো আপনার অবাধ্য হবো না। আপনি যেমনটি বলবেন, তেমনটি হবে। এবারের মতো মাফ চাই..

তখন রোজিনা ঘরের দরজায় কড়াঘাত করে।টুসি হাত ছেড়ে দিলে সোহান উঠে বসে।
রোজিনা বেগম বলে,
— সোহান বাবা খেতে আসো, তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।
— জ্বি মামি আসছি।
— আচ্ছা আসো তাড়াতাড়ি।

সোহান খাট থেকে নেমে দরজার দিকে যেতে যেতে বললো,
— খাবার খেতে আসো।

তারপর একা একা ঐ ঘরে চলে গেল।টুসি চুপচাপ কতোক্ষণ বসে থেকে তারপর ডাইনিং রুমে যায়।টুসি’র দাদি দেখে বলে, সোহানের পাশে বসতে বলে।টুসি বাধ্য মেয়ের মত বসে পরে। খেতে খেতে সোহানের দিকে আড়চোখে তাকায়। সোহান ধীরে ধীরে খুব সুন্দর করে খাচ্ছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক খিদে পেয়েছে বেচারার।
টুসি এভাবে তাকাতে তাকাতে আনমনে মরিচ খেয়ে নেয়।এতে করে জ্বালে অবস্থা নাজেহাল তার।রোজিনা বেগম পানি এগিয়ে দেয়।স্বপন তালুকদার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
— দেখে শুনে মরিচ বেছে খাবি তো। এখন একটু কমেছে?

টুসি মাথা নাড়িয়ে বোঝায় কমেছে। এদিকে সোহান ফিরেও তাকায় না টুসি’র দিকে।এতে করে টুসি খুব কষ্ট পায়।অন্য সময় হলে খুব যত্ন সহকারে পানি খাইয়ে দিত সোহান, অথচ আজকে ফিরেও তাকালো না।
খাবার শেষে চুপচাপ উঠে চলে গেল। সোহান চলে যেতে রোজিনা বেগম স্বপন তালুকদার কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— তোমার আধুরি মেয়েকে ভালো হয়ে যেতে বলো! না হয় ও যে বড় হয়েছে সে কথা আমি ভুলে যাবো।
— কেন কি করেছে আমার মেয়ে?যার জন্য তুমি এমন কথা বলছো?

টুসি’র আর বসে থাকলো না,সব কিছু তার কাছে অসহনীয় লাগছে তাই খাবার ছেড়ে উঠে চলে গেল।এতে রোজিনা বেগম আরো ক্ষেপে গিয়ে বললেন,
— দেখলে? তোমার মেয়ের তেজ দেখলে তুমি? সবাই মিলে মেয়েটা কে আদরে আদরে বাঁদর করে তুলেছো!যার কারণে এমন ধারা তৈরি হয়েছে।

ছেলেদের খাবার খাওয়া শেষে নতুন ব‌উ এবং তাদের সাথে আসা মেহমানদের খেতে দেওয়া হলো। এদিকে টুসি’র কাজিন রা মিলে দুই রুমের বাসর ঘর সাজাতে ব্যস্ত।টুসি কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে যাওয়া ধরলে সবাই মিলে ডাকাডাকি করে কিন্তু এসব আনন্দ কিছুই ভালো লাগছে না তার তাই দু’চালা নতুন ঘর’টাতে চলে আসে।
ঘরটা পুরো অন্ধকার ছেয়ে আছে।টুসি লাইটের সুইচ অন করলে সোহানের উন্মুক্ত শরীর চোখে পড়ে। সোহান উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে আছে।টুসি দরজা বন্ধ করে মশারি টাঙিয়ে লাইট অফ করে দিল। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল খাটে,গত দু’দিনের মতোই জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো। কিন্তু সোহান হাত ছাড়িয়ে নিল।টুসি তা আমলে নিলো না পুনরায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সোহানের পিঠে তার ঘ্রাণেন্দ্রিয় দিয়ে আঁকিবুঁকি করা শুরু করে আর বলে,
— আপনি কি রেগে গিয়ে আমাকে ছেড়ে যাবেন?

এমন ধারা কথায় চোখ খুলে তাকায় সোহান। তবে কিচ্ছুটি বলে না।টুসি আবার বললো,
— আপনি আমার সাথে কথা না বললে আমার একদম ভালো লাগে না, খুব কষ্ট হয়। কেন এমন হয় বলেন তো? আমি না আপনাতে কেমন যেন অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি।

সোহানের প্রশান্তিতে ভরে গেল মনটা,সে তো এমন কিছুর অপেক্ষায় ছিল এতো গুলো দিন। সে তো তাই চাইতো যা আজকে নিজ মুখে শিকার করলো টুসি।
.
.
সাবা কে কোর্টে আসতে বলে টুসি কে নিয়ে কোর্টের উদ্দেশ্য র‌ওনা হয় সোহান!টুসি অনেক জিজ্ঞাসা করেও উত্তর পায়নি। তবে তার মনটা ভিশন খারাপ গতকাল রাতে খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছে,বার বার মনে হচ্ছে স্বপ্নটা সত্যি হয়ে যাবে না তো…
__________
রেফারেন্স:-
[১](বুখারীঃ ৬১২৬)
[২](সুরা লোকমান : আয়াত ১৪)
___________

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।,

ভুলোনা আমায় পর্ব-০৮

0

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-০৮
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

সোহান আশেপাশে টুসি’কে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এতো ভিড়ে পাওয়া মুশকিল মনে হচ্ছে।তার‌উপর মেয়েদের ঘরে প্রবেশ করবে না সে। তাছাড়া পরিচিত কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।তাই কোলাহল মুক্ত পরিবেশে চলে আসে। তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে হাতে নেয় মায়ের সাথে কথা বলবে বলে.. ঠিক সেই মুহূর্তে একটা ছেলে একটা মেয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়! সোহানের পাশ কাটিয়ে সামনে যেতেই, কালো রঙের মাঝে সোনালী গাউন নজরে পরে সোহানের। মাথা নিচু করে ছিল বলে নিচের অংশ দেখতে পায় সে।যখন গাউনের অংশটি নজরে তখন পরিচিত মনে হয়। কেননা টুসি এবং মেহুলের জন্য মেচিং গাউন সোহান নিজে পছন্দ করে কিনেছে।

তাও মেয়েটির ফেইস দেখেনি বলে সোহান ব্যাপারটা ততোটা আমলে নিলো না।
পুকুর পাড়ের এই শুনশান নীরবতা, সাথে প্রকৃতির হাওয়া বইছে।বেশ ভালো লাগছে তার, কিন্তু তা-ও কোথায় যেন একটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। একটু আগালেই পাকা সিঁড়ি, সোহান ভেবেছিল ওখানে গিয়ে বসবে। পরক্ষনেই মনে হলো সাথে টুসি থাকলে খারাপ হয় না।তাই আবারো তাকে খুঁজতে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। কয়েক পা এগিয়ে যেতেই পিছন থেকে অট্টহাসির শব্দ শুনতে পায় সোহান, না চাইতেও পিছনে ফিরে তাকায় সে। তখন দেখতে পায় তিনটা ছেলে সাথে চারটা মেয়ে।আর এর মধ্যে আছে টুসি ম্যাডাম। খুব হাসাহাসি করছে আর স্প্রিড ক্যানে চুমুক দিচ্ছে।
সোহান শক্ত হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।টুসি তার মতোই কথা বলতে বলতে যখন কাছে আসে তখন সোহান কে দেখে দাঁড়িয়ে বলে,
— আপনি এখানে?

সোহান চোখে মুখে কাঠিন্য ভাব ফুটিয়ে তোলা অবস্থাতেই বললো,
— আমি থাকাতে খুব বেশি অসুবিধা হয়ে গেল বুঝি?

টুসি অবুঝের মতো করে বললো,
— মানে?
— পরপুরুষের সাথে হাসি তামাশা করতে এতোটাই কমফোর্টেবল তুমি! আজকে নিজ চোখে না দেখলে সত্যি বিশ্বাস করতাম না। আমি ভাবতাম তুমি বুঝি গ্রামের সহজ-সরল একটা মেয়ে।বয়সেও অনেক ছোট,তাই ছেলেদের ব্যাপারে অনাগ্রহী। আর তাই স্বামী নামক বিপরীত মানুষটাকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি সম্পূর্ণ ভুল ছিলাম এতো দিন। হয়তো এই মুহূর্তের মতো আনন্দ ফুর্তি করতে চেয়েছিলে! কিন্তু বিয়ের কারণে বাঁধা পরে গেছে।তাই..

বেয়াইন এই ছেলেটা তোমাকে কখন থেকে বাজে কথা বলে যাচ্ছে,অথচ তুমি কিছুই বলছো না কেন?

পাশে থাকা একটা ছেলে বললো এই কথা। তখন সোহান চোখ তুলে তাকায়। ছেলেটার বেশভূষায় বুঝতে বাকি নেই কি ধরনের ছেলে।মাথার চুল গুলো কেমন বড় বড় কানের কিছুটা উপরে, মনে হয় যেন মুরগি আঁচর কেটেছে।যাকে বলে হানি’সিঙ্গার কার্ট। এরকম উগ্র ধরনের ছেলেদের সাথে টুসি’র এতো ভাব মেনে নিতে পারছে না সোহান।তার স্ত্রীর এরকম চলাফেরার জন্য যে,পরকালে আল্লাহ তা’আলার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজের লোকজন জেনেও অজ্ঞাত যুবকের সাথে অবাধ মেলামেশা করে। অথচ ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুরুষের জন্য ও পর্দা ফরজ করা হয়েছে।

নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই পর্দা পালন করা ফরজ। ইসলামে উভয়কেই পর্দা পালনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। পর্দা পালন করা মুসলিম নারীর অনন্য রুচিবোধ ও সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। পর্দা পুরুষের উন্নত চরিত্র গঠনের মাধ্যম; পাশাপাশি নারীর মান-সম্মান, ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচও বটে।আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষদের প্রতি পর্দা পালনের বিষয়টি কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘(হে নবি! আপনি) মুমিন (পুরুষদের) বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, এটা তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। তারা যা কিছু করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত।এবং (হে নবি! আপনি) ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে;এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত দাসি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।[১]
আবার নারী এবং পুরুষের পর্দার স্বরূপ কেমন হবে হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিসেই প্রমাণ পাওয়া যায়।বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহুর আগমনে প্রিয়নবির নসিহতটি সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি।হজরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি ও মায়মুনা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে ছিলাম। এমতাবস্থায় (দৃষ্টিহীন সাহাবি) আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে আগমক করলেন।তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা পর্দার অন্তরালে চলে যাও।আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! ইনি (আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম) কি দৃষ্টিহীন নন? ইনি তো আমাদেরকে দেখছেন না।জবাবে আল্লাহর রাসুল বললেন, তোমরা কি তাকে দেখছো না?[২]
উল্লেখিত হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, কোনো নারী পর্দার ভেতরে থেকে কোনো পুরুষকে দেখাও বৈধ নয়। পুরুষের জন্য যেমন নারীদের সঙ্গে অবাধ দেখা-সাক্ষাৎ বৈধ নয়; ঠিক তেমনি নারীদের জন্য পুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বৈধ নয়।সুতরাং নারী ও পুরুষের জন্য পর্দা পালন করা সমভাবে প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পর্দার পালনে কুরআন ও হাদিসের ওপর আমল করে পরকালীন জীবনের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সোহান আর মূহূর্ত বিলম্ব না করে, বিয়ে বাড়ি ছেড়ে তার শ্বশুর বাড়ির দিকে রওনা দিল।টুসি শুধু যাওয়ার পথে তাকিয়েই রইলো। সোহান কে আটকানোর বৃথা চেষ্টা করলো না,জানে করেও লাভ নেই। এখন সে যাবেই, খুব রেগে আছে যে। তবে টুসি খুব অনুতপ্ত হলো, বুঝতে পারলো তার খুব বড় ভুল হয়েছে।
হাতে থাকা ক্যান টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে তার হবু ভাবী’দের কাছে চলে যায়। এখানে থাকা ছেলে মেয়ে গুলো ডাকাডাকি করলেও পিছনে ফিরে তাকায় না টুসি।
.
.
স্বপন তালুকদার তার একমাত্র জামাই’কে নিয়ে সবার আগে র‌ওনা হন। বাজার সদাই করে তবে নতুন আত্মীয়ের বাড়িতে যাবেন বলে।আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে টুসি এতো সাজগোজ করে বেরিয়েছে। না হয় সোহান পূর্ণ পর্দায় ঢেকে তবেই তার স্ত্রীকে নিয়ে যেত।
তারপর এখানে আসার পর কিছু ছেলে যারা মেয়ের আত্মীয় কিংবা ভাই।বেয়াইন বলে হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠে। যেমনটা আমাদের তথাকথিত সমাজে হর’হামেসা চলে।
টুসি যেতে না চাইলে একটা ছেলে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।যখন সোহান দেখেছিল,ঐটা আর কেউ নয় বরং টুসি ছিল।যদি মজা মাস্তি করেছে,বেয়াই-বেয়াইন সম্পর্ক বলে। কিন্তু ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এগুলো।
.
সোহান তার শ্বশুর বাড়িতে পা রাখচেই রোজিনা বেগমের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।এই অসময়ে জামাই কে ফিরতে দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় রোজিনা। বিভিন্ন প্রশ্ন মাথায় এসে ঘুরপাক খাচ্ছে,তাই নিজেকে দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে বিয়ের কাজ কি শেষ বাবা? তুমি যে একা আসলে? খাবার দাবার ঠিক ঠাক মতো খেয়েছো তো? আচ্ছা তোমার আবার শরীর খারাপ হলো না তো?

সোহান সব গুলো প্রশ্ন এরিয়ে গিয়ে বললো,
— মামি আপনি এতো ব্যাতি ব্যস্ত হবেন না, তেমন কিছু হয়নি আমি ঠিক আছি।
— তারমানে কিছু একটা হয়েছে!বলো বাবা কি হয়েছে তুমি না বললে আমার আরো দুশ্চিন্তা বাড়বে।
— তেমন কিছু না, মাথা টা একটু ব্যথা করছে। ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে। আমি একটু ঘুমানোর ট্রাই করি কেমন..

তারপর সোহান চলে গেল,দু’চালা নতুন ঘর’টাতে। ওখানেই সোহান এবং টুসি থাকে।টুপি’র সাথে রাগারাগী করে, এই ঠাডা পরা রোদ্দুরে এ বাড়িতে আসায় প্রচুর পরিমাণে মাথা ব্যথা করছে সোহানের।যার ফলে তাকিয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে।তাই আর দেরি না করে ঘরে এসে ফুল স্পীডে ফ্যান চালু করে শুয়ে রইলো।

এদিকে খাবার টেবিলে বসে আছে টুসি, তার গলা দিয়ে খাবার নামছে না। সোহান যে না খেয়ে বেড়িয়ে গেছে সে জন্য তার ও খেতে ইচ্ছে করছে না। এখন মনে হচ্ছে সোহানের সাথে চলে যাওয়া উচিৎ ছিল।এর মধ্যে মেহুল কয়েকবার সোহানের কথা জিজ্ঞাসা করে,টুসির থেকে কোন উত্তর পায়নি। এখন খাবার টেবিলে টূসি’কে আনমোনা দেখে সন্দেহ হলো কিছু একটা হয়েছে।হ‌ওয়ারি কথা কারণ টুসি যেভাবে সাজুগুজু করে বেরিয়েছে।আজ পর্যন্ত মেহুল কে এভাবে কোথাও বের হতে দেয়নি সোহান।আর এ তো তার স্ত্রী।যেখানে সোহান ব্যাতিত তার স্ত্রীর সৌন্দর্য দেখার অধিকার আর কারো নেই।
খাবার শেষে বিয়ে পড়ানো শুরু করে ইমাম সাহেব। প্রথমে আনাস এর তারপর বুখারী’র। দুই ভাই দুই বোন কে বিয়ে করছে।যদিও মেয়ে একে অপরের চাচাতো জেঠাতো বোন!, তবুও বোন ই তো।
বিয়ের কাজ শেষ করে,ব‌উ নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।টুসি বাড়ি ফিরেই সোহানের খুঁজ নিল, তার মা জানালো সোহান মসজিদে গিয়েছে।
টুসিও ফ্রেশ হয়ে মাগরিব নামায আদায় করে নেয়। তারপর তার রুমে বসে অপেক্ষা করতে থাকে…..
___________
রেফারেন্স:-
[১]সুরা নূর : আয়াত ৩০-৩১
[২](আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, মিশকাত)
_____________

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

ভুলোনা আমায় পর্ব-০৭

0

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-০৭
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

টুসি ঘরে ঢুকে বললো,
— তামান্না’র পর মেহেদী দেওয়ার সিরিয়াল আমার ছিল। আপনি ডাকলেন কেন বলেন তো?

সোহান টুসি’র হাত ধরে খাটের উপর বসিয়ে বললো,
— আমার একটা ইচ্ছে পূরণ করবে তুমি?

টুসি কপাল কুঁচকে বললো কি ইচ্ছে শুনি? তারপর ভেবে বলবো পূরন করতে পারি কিনা।

সোহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
— ভয় পাচ্ছ?অযথাই ভয় পাচ্ছ,ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আমি এমন কোন কঠিন কিছু চাইবো না। শুধু চাই তোমার হাতে মেহেদি পরিয়ে দিতে! দিবে কি সেই অধিকার?
— আচ্ছা ঠিক আছে আমি মেহেদী নিয়ে আসি। আপনি বসুন।
— তার প্রয়োজন নেই, আমি আগেই এনে রেখেছি।
— কোথায় পেলেন? মেহেদী তো সব ওখানে মেয়েদের কাছে। আপনি তো সেখানে যান না, তাহলে?
— দাদির থেকে নিয়েছি।
— ওহ্ আচ্ছা, এই ব্যাপার।সে জন্যই বলি বুড়ি কেন মেহেদী চাইছে! জিজ্ঞাসা করাতে বলে, আমার দরকার আছে।
— আচ্ছা তাই?
— হুম তাই তো।
— চলো দেওয়া শুরু করি?

টুসি তার ডান হাত বাড়িয়ে দিল। তারপর সোহান মনে মনে ছক তৈরি করে, দেওয়া শুরু করলো।টুসি মনোযোগ দিয়ে দেখছে আর ভাবছে এ লোক এতো সুন্দর করে মোহিনী দিতে পারে?অথচ সে মেয়ে হয়েও কখনো মেহেদী দিতে পারে না।

প্রথমে বড় করে বৃত্ত তৈরি করে এর মাঝে ফুল লতাপাতা দিয়ে আর্ট করলো। তারপর বৃত্তের চারিদিকে ছোট বড় ছোট বড় দাড়ির মতো করে এর‌উপর ঢেউ ঢেউ করে আর্ট করলো। তারপর পাঁচ আঙুলের শেষাংশে ছোট করে লতাপাতার আর্ট করে, অতঃপর শেষ করে।

মেহেদী ডিজাইন টা সত্যিই মনোমুগ্ধকর ছিল।(লেখিকা ও টুসি’র মতো অকর্মা)

টুসি বলেই ফেললো এতো সুন্দর করে মেহেদী দেওয়া কোথায় শিখেছেন আপনি?
সোহান হেসে বললো,
— সুন্দর হয়েছে বুঝি? এমনিতেই মনের আঁকিবুঁকি গুলো তোমার হাতে প্রকাশ করলাম। তুমি যেহেতু সুন্দর বলেছো তাহলে আমি সার্থক “আলহামদুলিল্লাহ”।
— সত্যি সুন্দর হয়েছে। আমি যাই সবাইকে দেখিয়ে আসি। সবাই চমকে যাবে হা হা হা…
— সবাই দেখলে কিন্তু তুমি ই লজ্জা পাবে, তার চেয়ে এখানেই থাকো। শুকিয়ে গেলে তুলে নিও।
— আরে এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আপনি বেশি বুঝেন,যাই আমি।

আর কি সে চলে গেল দৌড়ে। সোহান হাসতে হাসতে বললো,
— আমার পিচ্চি ব‌উটা,কবে যে বড় হবে আল্লাহ তা’আলা জানেন।
.
.
টুসি না থাকায় তামান্না যে কিনা টুসি’র খালাতো বোন।সে মেহেদী দেওয়া শুরু করে। এখন তার দেওয়া শেষ হলে তিশা দিচ্ছে।যে কিনা কাকাতো বোন টুসি’র। এরমধ্যে টুসি দৌড়ে এসে বললো, –এই দেখ আমার মেহেদী দেওয়া শেষ।

সবাই আশ্চার্য হয়ে তাকায়, কেননা টুসি নিজে মেহেদী দিতে পারে না এটা সবাই জানে। তবে এতো সুন্দর করে মেহেদী কে দিয়ে দিল?মেহুল বললো,
— ভাবী তুমি তো খুব সুন্দর করে মেহেদী দিতে পারো! তুমি আমাকে দিয়ে দিও কেমন?

তামান্না অবাক চাহনিতে বললো,
— এই টুসি তুই না এতো দিন বলছিস তুই মেহেদী দিতে পারিস না। তাহলে আজকে কিভাবে দিলি? আমাদের মিথ্যা বলে বোকা বানিয়েছিস তাই না?

টুসি রেগে গিয়ে বললো,
— তোর মাথা!
আমাকে উনি মেহেদী দিয়ে দিয়েছেন।

আটজন মেয়ে বড় বড় চোখে তাকায় টুসি’র দিকে। তিশা তো বলেই বসলো,
— হাউ সুইট! দুলাভাই কি রোমান্টিক আহা.. আমার কবে যে এমন একটা বর হবে?আর আমাকে এভাবে মেহেদী দিয়ে দিবে।

তারপর একে একে সবাই বলতে শুরু করলো। তাদের কবে যে এমন একটা বর হবে। শেষে তামান্না বললো,
— টুসি তুই বরং তোর কিউট বর কে আমাদের দিয়ে দে! এমন একখান বর পেলে জীবন ধন্য হয়ে যাবে,যে কিনা তার স্ত্রী ছাড়া পরনারীর দিকে চোখ তুলে তাকায় না।তোর তো তাকে পছন্দ না।তাই তুই বরং আমাদের দিয়ে দে!দিবি কিনা বল?

সবার মাঝে মেহুল নিরব দর্শক হয়ে বসে আছে।আর এদের কথায় টুসি’র গা জ্বালা দিয়ে উঠলো।তাই রেগে গিয়ে বললো,
— সবকটা লুচুর দল!অন্যের বরের দিকে নজর দিস কেন তোরা? লজ্জা করে না তোদের? আমি সবার আব্বু আম্মু কে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করছি দাঁড়া।

তারপর হনহন করে ঘরে চলে গেল। এদিকে সবাই তাজ্জব বনে গেল। কেননা সবাই জানে টুসি সোহানকে একদম পছন্দ করে না। তবে টুসি’র মনে অধিকার বোধ জাগ্রত করার উদ্দেশ্যেই সবাই এরকম বলেছে।তাই কিছুক্ষণ পর সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। মেহুল সবাই কে থামিয়ে দিয়ে বললো,
— এভাবে হাসতে নেই।বড় ভাইয়া সব সময় আমাকে বলে,সব সময় হাসবি তবে মুচকি হাসবি। এবং এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন,
ইসলামের দৃষ্টিতে মুচকি হাসির গুরুত্ব অপরসীম, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে হাসি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।হাসি মানব চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য, মানুষের অন্তরের অভ্যন্তরীণ উৎফুল্লতা প্রকাশ করার একটি মাধ্যম, হাসি সৌন্দর্যের প্রতীকও বটে। কখনো কখনো হাসি ভুলিয়ে দেয় আমাদের মনের সব যাতনা, যারা হাসতে জানে তাদের সবাই ভালোবাসে। হাসির দ্বারা পরস্পরের মধ্যে খুব সহজে আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের বীজ বপন হয়, একটুখানি হাসির পরশে শত্রুও বন্ধুত্বে রূপ নেয়।
নিজের মুখের হাসি অন্যের জন্যও আনন্দ বয়ে আনে, হাসি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের দুঃখের বোঝা হালকা করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কারণ হাসি মানুষের হৃদয়ের চাপা ব্যথা দূরীভূত করে, জীবন চলার পথে, কাজে কর্মে বহু মানুষের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, তখন মুখ মলিন না রেখে হাসিমুখে তাদের সাথে কথা বলাই উত্তম।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেন, হাসি আমাদের মনের উদ্বেগ দূর করে, রাগ আর দুঃখ দূর করে, তাই হাসির গুরুত্ব অনেক।
প্রকারভেদে হাসির বহুমাত্রিক উপকারিতা রয়েছে। যেমন- হাসি মানসিক চাপ দূর করে, ব্যথা জ্বালা কমায়, রোগ প্রতিরোধ করে, চিন্তাভাবনা সতেজ ও শাণিত করে। সম্পর্কের বিকাশ ও উন্নতি করে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে ইতিবাচক ভাবনা শেখায়।
রাসূল সা:-এর অনুপম আদর্শের মধ্যে অন্যতম একটি মহৎ আদর্শ হলো তিনি হাজার দুঃখের মধ্যেও মুচকি হাসতেন। অট্টহাসি কখনো দিতেন না, অট্টহাসি অভদ্রতা ও অহঙ্কারের পরিচায়ক। আর মুচকি হাসি রাসূল সা:এর সুন্নাত। মুচকি হাসি মুমিন বান্দার সৌন্দর্য প্রদর্শন করে।
সাধারণত হাসি তিন প্রকার-
এক. তাবাসসুম- মৃদু বা মুচকি হাসি, এ হাসিতে দাঁতও দেখা যায় না, শব্দও হয় না। নবী সা: সর্বদা মুচকি হাসি হাসতেন, এ হাসিই উম্মতের জন্য সুন্নাত।
দুই. দিহক- এ হাসিতে দাঁত দেখা যায় কিন্তু শব্দ হয় না, এভাবে হাসা জায়েজ আছে তবে না হাসাই উত্তম।
তিন.কহকহা- এ হাসি হলো অট্টহাসি, এটি নির্লজ্জ লোকদের হাসি এবং এতে চেহারার আকৃতি পরিবর্তন ঘটে। তাই ইসলামে অট্টহাসি নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এতে অন্তর মরে যায়। এ ছাড়াও নামাজে উচ্চস্বরে হাসলে অজু ও নামাজ উভয় নষ্ট হয়ে যায়।
প্রিয় নবী সা: সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন, তাকে কখনোই কেই অকারণে মুখ মলিন করে থাকতে দেখেননি।
হাসি সম্পর্কে রাসূল সা:-এর কয়েকটি হাদিস নিচে উল্লেখ করা হলো।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারিস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এমন কাউকেই দেখিনি যিনি রাসূল সা:-এর থেকে অধিক হাসি মুখে থাকতেন।[১]
হজরত আবু জর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, তোমার ভাইয়ের প্রতি তোমার হাসিও তোমার জন্য সদকা।[২]
রাসূল সা: বলেন, প্রতিটি ভালো কাজ সদকা, আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো অন্য ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।[৩]
উপরের হাদিস পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, হাসির দ্বারা আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। মুচকি হাসির মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠা হিংসার দেয়ালের পতন ঘটে এবং আমরা একে অন্যের কাছাকাছি আসতে পারি।
আমাদের প্রিয় নবী সা: সবসময় মুচকি হাসতেন, মুচকি হাসি ছিল তার চিরাচরিত ভূষণ। প্রতিটি হাদিসগ্রন্থে তাঁর হাসির ব্যাপারে আলোচনা এসেছে। বস্তুত হাসির মতো সাধারণ একটি আমলে আল্লাহ তায়ালা এত বড় পুরস্কার দেবেন, ভাবতেই অবাক লাগে। হাসি মুখে কথা বলার দ্বারা মুমিন বান্দা খুশি হয়, সাথে আল্লাহও খুশি হন, এর বিনিময়ে আল্লাহ বান্দাকে কিয়ামতের দিন আনন্দিত ও খুশি করবেন।তাই আসুন আমরা মুচকি হাসির অভ্যাস গড়ে তুলি, রাসূল সা:-এর সুন্নাতকে সমাজে সমুন্নত রাখি।
.
.
বিয়ে বাড়িতে টুসি কালোর সাথে সোনালী রঙের গাউন সাথে মেচিং হিজাব পরে এসেছে, সাজগুজেও জুরি নেই তার।মেহুল অনেক বার নিষেধ করেও ব্যর্থ হয়েছে,যে ভাবী,ভাইয়া এভাবে সাজগোজ করে বাহিরে বের হ‌ওয়া পছন্দ করে না। কিন্তু টুসি মেহুলের কথা অগ্রাহ্য করে ওর অন্যান্য বোনদের মতো সেজেগুজে সেও যায়। এখন দেখার বিষয় সোহানের পতিক্রিয়া!….
_________
[১](তিরমিজি)
[২](তিরমিজি)
[৩](তিরমিজি : ১৯৭০)
___________

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

ভুলোনা আমায় পর্ব-০৬

0

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-০৬
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

বাসের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে টুসি, রাস্তার পাশের গাছপালা গুলো যেন তাদের সাথে ছুটে চলেছে। সে এখনো অবধি জানে না তার গন্তব্য স্থান! সোহান কে কয়েক বার জিজ্ঞাসা করেও যখন উত্তর পায়নি তখন মলিন মুখশ্রী করে রাখে। তবে বাহিরে থেকে আসা প্রাকৃতিক ঠান্ডা হাওয়া মন ছুঁয়ে দিচ্ছে,বেশ ভালো লাগছে। পাশে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোহান ঘুমিয়ে আছে,টুসি’র কাঁদে বার বার মাথা হেলে পরছে আবার সরিয়ে নিচ্ছে। এরকম হ‌ওয়ায় টুসি বিরক্ত হয়ে সোহানের গালে হাত রেখে হালকা চেপে ধরে!যেন সোহান টুসি’র কাদেই মাথা রেখে শান্তি মতো ঘুমাতে পারে।এই কয়েক দিনে মানুষটার প্রতি তার একটা আলাদা মায়া জন্মিয়েছে,যত‌ই হোক স্বামী স্ত্রীর পবিত্র বন্ধনের শক্তি থাকবে না,তা কি করে হয়?

পাশাপাশি একটা বৃদ্ধ মহিলার পাশে বসেছে মেহুল।সেও বাহিরে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে।তার ভাইয়া বলেছিল,মাঝে মাঝে বিপদে আকাশের দিকে মাথা তোলা। আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের কষ্টগুলো আল্লাহকে বলা সুন্নাত [১]যদিও মেহুলের কোন দুঃখ নেই আলহামদুলিল্লাহ। তবে আল্লাহ তা’আলার কাছে তার অনেক কিছু চাওয়ার আছে।
.
.
বিরতি সময়ে বাস থামালে, সোহান খাবার পানি কিনে আনে দোকান থেকে।টুসি খেতে না চাইলে জোর করে খাইয়ে দেয় সোহান। তারপর টুসি এবং মেহুল উভয়কেই জিজ্ঞাসা করে তারা প্রাকৃতির কাজ সারবে কিনা?তারা দু’জনেই না করে। তারপর সময় মতো বিরতি শেষ হলে বাস চালু করা হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর সোহান কাউকে কল করে তাদের অবস্থান জানায়।

দীর্ঘ জার্নির পর স্টেশনে নামে তারা, রাস্তায় একপাশে টুসি আর মেহুল দাঁড়িয়ে আছে আর সোহান বাসের কন্ডাক্টর এর সাহায্যে টলি ব্যাগ নামায়। এদিকে টুসি রাস্তার ল্যাম্প পোস্টের আলোয় চারিদিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।এ যে তার চীরচেনা স্থান। এখান থেকে কয়েক পা এগিয়ে গেলেই যে তার মায়াময় গ্রাম।টুসি স্বপ্নেও ধারণা করেনি সে তার বাড়িতে আজ আসতে পারে..
সোহান পকেট হাতড়ে ফোন বের করে সময় দেখলো। তারপর টুসির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
— টুসি ম্যাডাম এই মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কি?

টুসি দিকপাশ না ভেবে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে সোহান কে। দৌড়ের গতিতে খানিকটা পিছিয়ে যায় সোহান। তারপর বোনের দিকে নজর দিতে দেখলো পিছন ঘুরে,ক্লান্ত হয়ে টলি ব্যাগের উপরে বসে আছে। তারপর টুসির দিকে দৃষ্টি দেয়।টুসি কেঁদে উঠে বলে,
— অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমি কখনো ভাবিনি আজকে বাড়িতে আসবো।

সোহান টুসি’র মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— সব‌ই আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছে, তিনি উত্তম পরিকল্পনাকারী। তিনি চেয়েছেন বলেই এখানে সুস্থ মতো পৌঁছাতে পেরেছি। ধন্যবাদ দিতে হলে তাকে দাও।
— কিভাবে দিব?
— আলহামদুলিল্লাহ বললেই তিনি খুশী হন। কেননা আলহামদুলিল্লাহ বলে তার প্রশংসা করা হয়। তাছাড়া খুব খুশি হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়া সুন্নাত।[২]এতে তোমার একটা সুন্নাত পালন করা হয়ে যাবে।
— আচ্ছা সিজদায় লুটিয়ে পড়া মানে কি?
— মানে শুকরিয়া আদায় করতে নফল নামায পড়বে, সাধারণত আমরা নফল নামায যেভাবে পড়ি সেভাবে।
— আচ্ছা পড়বো।
— উঁহু বলো, “ইনশা আল্লাহ”।আগাম কোন পরিকল্পনা করে “ইনশা আল্লাহ” বলতে হয়, কেননা আল্লাহ পাক চায়েতো কাজটি হবে, না হয় কখনোই সম্ভব না।
— ইনশা আল্লাহ পড়বো।

অতঃপর,টুসি’র দুই ভাই আসে তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সোহান কুশল বিনিময় করে দুই ভাইয়ের সাথে। দুই ভাই ও অতি সম্মানের সহিত কুশল বিনিময় করে। তারপর বোনের কাছে গেলে,টুসি রাগ করে গাল ফুলিয়ে রাখে। দুই ভাই আহত স্বরে বললো,
— কিরে বোন ভাইদের সাথে কথা বলবি না?
— বোনকে তো বিদায় করে শান্তি মতো ঘুমাতে পারছো। একটিবার ও দেখতে গেলে না, তোমাদের বোন কিরকম আছে।বেচেই আছে নাকি মরে গেছে!

বোনের এরকম কথা শুনে বিচলিত হয়ে যায় দুই ভাই। মুখে হাত দিয়ে বলে,
— এরকম অলুক্ষনে কথা বলতে হয় না।জানিস তো আমাদের কত্তো কাজ থাকে। আমার কাছে না থাকলেই কর্মচারীদের ফাঁকিবাজি শুরু হয়ে যায়। তাছাড়া সোহানের উপর আমাদের ভরসা আছে,আমরা জানি ও সবসময় আগলে রাখবে তোকে। তবে এবার যাবো তোর ভাবীদের নিয়ে তবেই যাবো।

টুসি সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
— ভাবীরা কোথা থেকে আসল?

দুই ভাই থতমত খেয়ে গেল, পিছনে সোহানের দিকে তাকালে সোহান মুচকি হাসে। তারপর বুঝতে পারে টুসি’কে জানানো হয়নি।তাই বলে সে বাড়ি গিয়ে জানতে পারবি এবার চল। অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এসেছিস নিশ্চিই ক্লান্ত লাগছে,চল চল…
.
.
বাসায় ফিরে সবার সাথে কুশল বিনিময়ের পর টুসি যখন জানতে পারলো তার ভাইদের বিয়ে তখন সে গাল ফুলিয়ে বসে রইল। এবং জানিয়ে দিল,যে মেয়েদের পছন্দ করা হয়েছে টুসি’র তাদের পছন্দ না হলে বিয়ে ক্যান্সেল।এতে করে ভাইয়েরা পরেছে মহা বিপদে, সত্যি সত্যি যদি বোনের মেয়ে পছন্দ না হয় তাহলে কি হবে তাদের?তারা বোনের দুই পাশে দু’জন বসে ইনিয়ে বিনিয়ে বললো,
— বোন তুই আমাদের একমাত্র আদরের মিষ্টি ছোট বোন….
— সে জন্যই তো আমার পছন্দ হলে, তবেই বিয়ে করবে না হয় নয়।
— বোন আমার এরকম কথা বলে না,জানিস তো বিয়ে ভেঙে গেলে মেয়েদের অনেক হীন চোখে দেখে সমাজের লোকজন।
— তাতে আমার কি?হুহ বিয়ে ঠিক করার আগে আমাকে ভুলে গিয়েছিলে কেন? বিয়ে হয়েছে বলে কি পর হয়ে গিয়েছি তোমাদের কাছে?
— আচ্ছা আমরা কানে ধরছি এমন ভুল আর কখনো হবে না।সরি সরি সরি…প্লিজ একসেপ্ট করে নে?

টুসি হাসে তার ভাইদের কর্মকাণ্ড দেখে, তারপর সরি একসেপ্ট করে নেয়।

বোন আর ভাইদের কর্মকাণ্ড দেখে, সামনে থাকা সোফায় বসে মেহুল সোহানের কাঁদে মাথা রাখে।আর সোহান বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
.
.
রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সোহানের রোজকারের অভ্যাস মতো ঘুম ভেঙ্গে যায়। নিজের সাথে ভারি কিছু অনুভব করতে পিট পিট করে চোখ খুলে তাকালো সে। তাকাতেই চোখ গুলো অটোমেটিক বড় বড় হয়ে গেল।কারণ টুসি সোহান কে ঝাপটে ধরে শুয়ে আছে। মাঝে থাকা কোলবালিশের কোন চিহ্ন টুকু নেই। তাদের দুই মুখশ্রীর মধ্যে কিঞ্চিৎ ফাঁক বিদ্যমান। সোহান পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে। তারপর দুঃসাহসী কাজ শুরু করে দিল! বিরতিহীন ভাবে টুসি’র পুরো মুখশ্রী জুরে অজস্র আদরে ভরিয়ে দিতে নিজের অধরপল্লব দুটি ছুঁয়ে দিচ্ছে!যার ফলে টুসি’র ঘুম ভেঙ্গে যায়।

আজকে একটুও বিচলিত হলো না টুসি, বরং আগের ন্যায় চোখ বন্ধ করে বললো,
— নামায পড়বেন না? এখনো যে শুয়ে আছেন?

রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সোহান তাহাজ্জুদের নামায আদায় করে। এতো দিনে টুসি’র সেটা জানা হয়ে গেছে।প্রায় সময় ই ঘুম ভেঙ্গে গেলে পাশে সোহান কে দেখেতে না পেলে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতো সোহান নামায পড়ছে।তাই এ প্রশ্ন করলো।এর উত্তরে সোহান বললো,
— মানুষজন এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলে উঠি কি করে আমি? মনে হচ্ছে যেন আমি একটা কোলবালিশ..

সোহানের এমন কথায় তাকে ছেড়ে দিতে উদ্যত হয় টুসি। কিন্তু সোহান এবার আরো শক্ত করে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে বলে,
— আমি কাউকে ছাড়তে বলিনি শুধু এমনি বললাম। আসলে জার্নি করে এসে খুব ক্লান্ত লাগছে,তার‌উপর শুয়েছি দুইটা নাগাদ।তাই আজকে পড়বো না।ফযরের আযান হলে তখন উঠে মসজিদে যাবো ইনশা আল্লাহ। তুমি ঘুমাও..

টুসি স্বাভাবিক ভাবেই ঘুমিয়ে পরলো।এতে সোহান খুব খুশি হলো। মনে মনে আল্লাহ্ পাকের শুকরিয়া আদায় করে নিজেও চোখ বন্ধ করলো।
.
.
আজকে টুসি’র ভাইদের গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান।যদিও ইসলামে গায়ের হলুদের নিয়ম নেই, তবুও গ্রামের মানুষজন এটা করেই। তাদের কে যদি বলা হয়, এই কাজ গুলো হাদীসের নেই বা করা উচিৎ নয়। তখন তারা বলে এগুলো যোগ যোগ ধরে করে আসছে সবাই এখন তোদের নতুন নতুন হাদীস বের হয়েছে! আল্লাহ মাফ করুন আমাদের।বোঝবান মানুষদের তো আর বোঝানো সম্ভব নয় তাই এমন অনেক কিছুই মেনে নিতে হয় আমাদের। তবে টুসি’র দুই ভাই আনাস আর বুখারী’র যখন মেহেদী দেওয়ার কথা উঠে তখন সোহান বললো,
— পুরুষের জন্য সৌন্দর্য বৃদ্ধি কল্পে হাতে বা পায়ে মেহেদি বা মেন্দি লাগানো জায়েজ নেই বরং মাকরূহ। তবে যাদি কোন ঔষধ হিসাবে যেমন হাতে বা পায়ের কোন ঘায়ের জন্য ব্যবহার করে তাহলে এটা ঔষধ হিসাবে ব্যবহারের কারণে মকরূহ হবে না। অনুরূপভাবে পুরুষের সাদা চুল বা দাড়িতে মেহেদী লাগানো জায়েজ আছে। আর মহিলারা সর্ব অবস্থায় যে কোন কারণে যে কোন জাগায় মেন্দি ব্যবহার করতে পারবে। আর বিয়ের সময় মেহেদী লাগানো শুধু মেয়েদের জন্যই জায়েজ হবে, পুরুষের জন্য নয়।[৩]

নতুন জামাইয়ের মুখের উপর কেউ কথা বলার বেয়াদবি করার সাহস করে উঠতে পারেনি কেউ।তাই গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান প্রায় বাতিল হয়ে যায়।আনাস আর বুখারী ও সোহানের মত এক মত। তবে বিয়ের আনন্দে বাড়ির মেয়েরা মেহেদী দিবে বলে জানায় টুসি।মেহুল ভালো মেহেদী দিতে পারে বলে সবাই মেহুল কে ঘিরে বসেছে,মেহুল এক এক করে দিয়ে দিচ্ছে। এদিকে সোহান এক পিচ্চি কে দিয়ে টুসি কে ঘরে ডেকে নেয়….
____________
রেফারেন্স:-
[১]মুসলিম- ২৫৩১।
[২]মুখতাসার যাদুল মা’ আদ- ১/২৭
[৩]ফাতাওয়ে আলমগীরী
_____________

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।