Thursday, July 31, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1005



এক কুয়াশার সকাল পর্ব-০২

0

#এক কুয়াশার সকাল
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#২য়_পর্ব

সে পেছন পেছন আমাকে ডাকতে থাকে,
এই নিধি এই নিধি তুমি জানো,তোমাকে কাজল পড়লে মারাত্মক লাগে।

আর তুমি যদি এখন না দাঁড়াও।
তাহলে আমি কিন্তু তোমার সাথে তোমার বাসায় চলে আসবো।

আমি এ কথা শুনে আরো জোরে দৌড়।

সেদিনের মত বাসায় চলে আসি আমি।
আমি এই শীতে ঘেমে একাকার হয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বাসায় ঢুকি বলে আম্মু তাড়াতাড়ি এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?
এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন?

আম্মুকে রাগী কন্ঠে বললাম,
তোমাকে বলেছিলাম আমি আজ যাবোনা আমি।
তুমি শুনলেনা।

_তো কি হয়েছে এখন?

আমি আম্মুকে সব খুলে বললাম।

আম্মু বল্লো সমস্যা নেই।এত ভয় পেতে হবেনা।এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।
আমি দেখি কি করা যায়।

আমি ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলাম।

আমি সারাক্ষণ শুধু এই কথাই ভাবছি,
কে করতেছে এমন আমাদের সাথে।
আর কেনই বা করতেছে।
ছেলে টা কে,
আর কিভাবে জানলো এই সময়ে আমি প্রাইভেট পড়তে যাই।
আর সেই বা কেন দাঁড়িয়ে ছিলো আমার জন্য।

এর আগেও কয়েক টা ঘটনা ঘটেছে আমার সাথে।যেই ঘটনা গুলো অনেক দিন পর্যন্ত আমাকে ভালো থাকতে দেয়নি।
আমি ভয়ে ঘুমাতে পারতাম না।
চিন্তায় ভুগতাম সব সময়।
মাঝে কিছু দিন ভালোই ছিলাম,
কিন্তু আবার নতুন অশান্তি শুরু।
একটা সময় মনে হলো,আমার গায়ের রঙ কালো হলেই বোধয় ভালো ছিলো।
অন্তত শান্তিতে বাঁচতে পারতাম।

ক্লাস ফাইভে থাকা কালীন সময় আমি প্রথম বারের মত কোন ছেলের কাছে প্রেমের প্রপোজাল পাই।আর তখন থেকেই শুরু প্রেমের প্রপোজাল পাওয়া।
যদিও তখন এই প্রেম ভালবাসা সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিলোনা।
ছেলেটা প্রচন্ড রকম বিরক্ত করতো,যার কারণে আমি স্কুলই বন্ধ করে দিয়েছিলাম প্রায়।

ক্লাস ফাইভে পড়া মেয়ে আমি।
বুঝলামই না কোন দিন,কিভাবে এই টুকু মেয়েকে কোন ছেলে ভালবাসতে পারে বা প্রপোজ করতে পারে।

এরপর আরো কয়েক জন উপরের ক্লাসে উঠার সাথে সাথে ঘুরঘুর করা শুরু করে।
কিন্তু তার মধ্যে কয়েক জন মাত্রা ছাড়া বিরক্ত করতো।
যার ফলে মানুষ ডেকে আম্মুকে তাদের বাসায় নালিশও পাঠাতে হয়েছে।

আমি ভাবতে লাগলাম,ওই ছেলে গুলোর মধ্য থেকেই কি কেউ এমন কাজ গুলো করছে?

কিন্তু কে হবে তাহলে?

নাকি এই ছেলে এমন করছে,
যে আজ দাঁড়িয়ে ছিলো।
কিন্তু এই ছেলেকে তো আমি চিনিনা।
আগে কখনো দেখেছি বলেও মনে পড়েনা।
চোখ দেখে যত টুকু বুঝলাম।

সারাদিন এসব ভাবনায়ই দিন কাটলো।

আম্মু ইতিমধ্যে আমাদের আশেপাশের কয়েকজনকে বলেছে আমাদের বাসায় খেয়াল রাখতে।
আর আমাদের বাসার ফোন নাম্বার টাও দিয়ে রেখেছে।
তাদের ফোন নাম্বারও নিয়ে রেখেছে।
যাতে কোন সমস্যা হলে তাদের ফোন দিতে পারে।
আর তারাও আমাদের নাম্বার দেখে চিনতে পারে,আর আমাদের সাহায্য করতে পারে।

আব্বুকেও আম্মু ফোন করে জানায় সব।যেহেতু আব্বু প্রবাসী।তাই
আব্বুও তার আশেপাশের বন্ধু বান্ধবদের ফোন করে জানায় যেন আমাদের একটু খেয়াল রাখেন তারা।
সবাই আশ্বাস দিলেন তারা খেয়াল রাখবেন আমাদের।

রাতে আজ আম্মুকে বললাম,তুমিও আমাদের সাথে ঘুমাও।

ভয় লাগছে আমার।

আম্মুও আজ আমার আর ছোটর সাথে ঘুমালো।

ঘুমিয়ে পড়েছি আমরা সবাই।
আর যেহেতু গ্রাম,গ্রামে সবাই খুব তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়ে।

হঠাৎ রাত সাড়ে ১২ টা বা ১ টার দিকে কেউ আমাদের টিনের চালে ঢিল মারতে শুরু করে।

আর ভয়ে আমি চিৎকার দিয়ে উঠি।
আমি ছোট বেলা থেকেই অনেক ভীতু।
আমার ছোট বোনের চেয়েও সাহস কম আমার।
এমন কি এখনো আমি একটা মুরগীর বাচ্চা কিংবা জ্যান্ত মাছ নিজের হাতে ধরতে পারিনা।

আমি জানিনা আল্লাহ কেন আমাকে এত কম সাহস দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।

আমি ঘুম থেকে উঠেই কাঁদতে শুরু করি।
আম্মু বলে চুপ কর,আমি সবাইকে ফোন দিচ্ছি।
আম্মু ফোন দিতে দিতে কয়েক জন চলে আসে আমাদের বাসায় যদিও।
কিন্তু যে ঢিল ছুড়েছে কি আর বসে আছে নাকি।
সে ঠিকই চলে গেছে।

যারা এসেছিলেন তারা কয়েক টা বড় বড় ইটের খন্ড দেখতে পেলেন।
কোন অসভ্য এগুলোই ছুড়েছে এত ক্ষণ।

সবাই বললেন,এবার দরজা আটকে শুয়ে পড়ো তোমরা।
যে এই কাজ করেছে সে চলে গেছে।
চিন্তা করোনা।
কাল একটা ব্যবস্থা করা যাবে।

সেদিনের মত রাত টা কাটলো কোন রকম।

আব্বুকে সকাল হতেই ফোন দিয়ে জানানো হলো।
আমি কাঁদতে কাঁদতে আব্বুকে বললাম,
আব্বু আপনি চলে আসেন।
আপনার আর বিদেশে থাকা লাগবেনা।
আমার খুব ভয় লাগে।
আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসেন।

আব্বু আমাকে শান্ত করলেন।
বললেন,সে সব কিছু ওকে করে খুব দ্রুত চলে আসবেন।

আব্বু আবার আমাদের প্রতিবেশীদের ফোন দিয়ে বললেন,
তারা যেন কেউ আমাদের বাসায় রাতে পাহারা দেন।

দুই এক দিন পাহারা দিলেই ধরা পরে যাবে যে এমন করছে।

এতে তারাও মত পোষণ করেন।
দুজনকে ঠিক করা হলো আমাদের বাসায় পাহারা দেয়ার জন্য রাতে।
তারা দুজন বললেন,রাত ১২ টার সময় আমাদের বাসার রাস্তায় থাকবেন তারা।
তাহলেই বুঝতে পারবে কারা এই কাজ করে।
কারণ রাস্তা দিয়েই তো বাসায় প্রবেশ করবে সেই অসভ্য।

যেই কথা সেই কাজ।
তারা ঠিক রাত ১২ টায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলো।
আমরাও সেদিন জেগে আছি।

রাত প্রায় দুটো।
আজ কোন সাড়া নেই কারো।

তাই পাহারারত দুজন বাইরে থেকে আম্মুকে ডেকে বললেন,
আমরা তাহলে চলে যাই কাকী।
কেউ তো আসলোনা।
আপনারা ঘুমিয়ে পড়েন।আর যেই আসুক রাতে,দরজা খুলতে বললে খুলবেন না।

আম্মু আচ্ছা বলে তাদের বিদায় জানালো।

রাত প্রায় তিন টা।
আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি।

হঠাৎ আমার পাশেই টিনের মধ্যে বারির আওয়াজ।
কে যেন লাঠি দিয়ে নয়তো হাত দিয়ে আমাদের ঘরের টিনের মধ্যে বারি দিচ্ছে।
আমি আবার চিৎকার দিয়ে উঠি।

এবার কাঁদতে কাঁদতে বলি,
দেখেন,যেই হোন আপনি।
দয়া করে এমন কইরেন না আর।
আপনি কি চান আমাদের বলেন।
এমন করে বিরক্ত করবেন না দোহায় লাগে।
আমি খুব ভয় পাই।

আম্মুও বলে,কে তুমি।
কি চাও।

এবার সে উত্তর দেয়,

_আপনার মেয়ে কে চাই।
দিবেন?

ভয়েজ টা এমন ভাবে চিকন করে বলেছে।
বোঝার সাধ্য নেই কে সে।

আম্মু বলে,

_মেয়েকে চাও মানে?

সে বলে,
আপনার বড় মেয়েকে বিয়ে করতে চাই বিয়ে দিবেন?
আর আপনার মেয়েকে বলেন,রাজি হতে।
তাহলে আর আমি এমন করবোনা।

আমি বললাম,আপনি কে আমি না জেনে কিভাবে রাজি হবো?
বলুন তাহলে কে আপনি?

সে একটা অসভ্যের মত হাসি দিয়ে বলে,
বললে তো সবাইকে জানিয়ে দিবা তুমি জান।

আম্মু বলে,না বাবা কাউকে কিছু বলবোনা।
তা ছাড়া ওকে তো এখন বিয়ে দিবোনা।
সামনে ওর পরীক্ষা।
আগে কলেজে উঠুক।কলেজ শেষ করুক।তারপর ওকে বিয়ে দিবো।

তুমি কাল আমার সাথে দেখা কইরো।আমি কথা দিলাম,কারো কাছে তোমার নাম বলবোনা।
আর বাবা রাত বিরাতে এমন কইরোনা।
বুঝোই তো মেয়েরা মেয়েরা থাকি আমরা।

ছেলেটা বলে,সত্যি ওরে বিয়ে দিবেন না এখন?

আম্মু বল্লো সত্যি বাবা।

তারপর ছেলেটা বলে,ঠিক আছে।
তাহলে আগে কলেজে উঠুক।
আমি আর বিরক্ত করবোনা।
যাই তাহলে আমি।
আর আপনার মেয়েরে বইলেন,ও যেন ঘোমটা দিয়ে বের হয়।
ওরে কোন পোলা যেন না দেখে।

আম্মু বলে আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর বেয়াদব টা চলে যায়।

কিন্তু কথা গুলো এমন ভাবে কন্ঠ চেকন করে বলে,কারোই বুঝার ক্ষমতা নেই যে কে এই ছেলে।

সে চলে যাবার পর আম্মুকে বললাম,তুমি এত বাবা বাবা করলা কেন এই বেয়াদব টাকে?

আম্মু বলে,আমি যদি ভালো ভাবে কথা না বলতাম তাহলে কি ও যেতো?
এখন তো বল্লো আর বিরক্ত করবেনা।

এখন ঘুমা।
সকালে কথা বলবোনে।

সকাল হলো,

আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
এই কয়দিনের মধ্যে কেউ তোকে বিরক্ত করেছে?
বা কিছু বলেছে?

আমি বললাম,নাতো।
তেমন কেউ তো কিছু…
তারপর মনে পড়ে আমার কুয়াশার সকাল টার কথা।

আম্মুকে বললাম,ওই যে বললাম কুয়াশার সকালে ছেলেটা দাঁড়িয়েছিলো মুখ ঢেকে।

আম্মু বল্লো,ছেলেটার কন্ঠ কি এই ছেলের মত?

আমি বললাম,আমি তো কন্ঠই বুঝিনি এই ছেলের।
আম্মু উত্তর দেয় আমিও তো বুঝলাম না।

তারপর আম্মু বলে এই কয়েক মাসে আর কেউ কিছু বলেছে মনে করে দেখ।

আমি মনে করতে হঠাৎ মনে হলো,
তিন চার মাস আগে আবির ভাইয়া আমাকে প্রোপোজ করেছিলো।

সে আমাদের প্রতিবেশী।
কিন্তু সে তো এমন করার মত ছেলে না।
সে খুব ভালো।
আর খুব ভালো সম্পর্ক আমাদের সাথে তার পরিবারের।

আম্মুকে বললাম,আম্মু আবির ভাইয়া প্রোপজ করেছিলো আমায়।
বলেছিলো প্রেম করবি আমার সাথে?
আমি না করেছিলাম।
আর বলেছিলাম,ধুর ভাইয়া।
আপনি আর আমি ভাই বোন তো।
আপনি এসব কি বলেন?

আম্মু বলে,নাহ ও এমন করবেনা কোন দিন।
আচ্ছা আবার একটু ভাবিস,কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস নাকি।

আর এই ছেলের কথায় তো বুঝা গেলো,এই ছেলে হয়তো তোকে কিছু বলেছে আর তুই রাজি হোস নি।
বল্লোনা,আপনার মেয়েকে রাজি হতে বলেন?

আচ্ছা ভাববোনে।
বাদ দাও এখন।
ভালো লাগছেনা কিছু আমার এখন।

আম্মু উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাতে চলে যায়।

বুঝতেছিনা,আজ কি যাবো পড়তে।
যাবো নাকি স্কুলে।
কি করবো।

ভাবলাম,থাক যাই পড়তে।
প্রথম টা বাদ দেই।
২য় টা পড়তে যাই।
তত ক্ষণে অনেক টা বেলা হয়ে যাবে।

আমি রেডি হয়ে পড়তে যাচ্ছি,
হঠাৎ মাঝ পথে গিয়ে দেখি,

আবারো মাফলার পড়ে মুখ ঢেকে ওই ছেলে দাঁড়িয়ে আছি।

আমি তাকে দেখে দূর থেকে বললাম,
আপনি আজকেও দাঁড়িয়ে আছেন?
এই শীতের মধ্যে কেন দাঁড়িয়ে থাকেন?
নাম কি আপনার?

সে দূর থেকে জোরে উত্তর দিলো,
হুম দাঁড়িয়ে আছি তোমার জন্য।
তোমাকে দেখতে।
আর আমার নাম,কল্লোল।
তুমি আমাকে চিনবেনা।
আমি তোমাকে প্রতিদিনই দেখি।তবে দূর থেকে।তুমিই আমাকে দেখোনা।তোমাকে না দেখলে আমার ভালো লাগেনা।

আমি জোরে বললাম,আপনি যদি আজ না চলে যান।
আর যদি কাল থেকে আমার সামনে আসা বন্ধ না করেন।
তাহলে কিন্তু আমি আর পড়তে আসবোনা।

সে বলে,
না না না।
তুমি কিন্তু আসা বন্ধ করোনা।
আমিই আসবোনা তোমার সামনে।
দূর থেকে দেখবো ওকে?
তুমি কিন্তু পড়া বন্ধ করোনা।

আমি বললাম আচ্ছা।
তারপর কল্লোল সত্যি সত্যি চলে যায়।

আমি দেখতে পাই এলাকার এক আংকেল আসতেছে।
আমি তার সাথে সাথে স্যারের কাছে পড়তে চলে যাই।

স্যারের কাছে পৌছানোর পর দেখি,কয়েক জন মিলে জড় হয়ে কি যেন দেখছে।

আমি সামনে গিয়ে দেখি তিথী মোবাইল নিয়ে এসেছে।আর সবাইকে ওর পরিবারের ছবি দেখাচ্ছে।

আমি তাকাতেই দেখি ওদের পরিবারের সবার এক সাথে জয়েন একটা ফটো।
আর সেখানে তিথীর সাথে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,এই ছেলেটা তোর কি হয়?
ও উত্তর দেয়,কেন?এটা আমার বড় ভাই দুর্জয়।তুই চিনিস নাকি আমার ভাইয়াকে?
আমি বললাম,সত্যি তোর ভাইয়া এই ছেলে?
ও বলে হুম।কেন কি হয়েছে?

আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তিথীকে বললাম,
তোর ভাইয়ার গায়ে দেয়া টিশার্ট টা আমার ব্যাগের ভেতর সেদিন কিভাবে আসলো?আর এদিকে আমার সারা শরীর কাঁপছে।আমার মনে হচ্ছে আমি বোধয় এখনই সেন্সলেস হয়ে যাবো।

চলবে..

এক কুয়াশার সকাল পর্ব-০১

0

#এক কুয়াশার সকাল
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#সূচনা_পর্ব

ব্যাগ থেকে বই বের করতে গিয়ে ব্যাগের চেইন খুলতেই দেখি আমার ব্যাগে রক্তে ভেজা একটা টিশার্ট।আমি ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।সবাই আমার চিৎকারে চুপ হয়ে গেলো।স্যার চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,এই মেয়ে কি হয়েছে তোমার?আমি ভীতু কন্ঠে স্যারকে বললাম,স্যার আমার ব্যাগে কার যেন রক্তে ভেজা টিশার্ট।
স্যার আমার কাছে এসে বললেন,কই দেখিতো।
তোমার ব্যাগে আবার কার টিশার্ট থাকবে।
স্যার সামনে এসে দেখেন আমি সত্যি বলছি,আর টিশার্টে লেগে আছে একদম তাজা রক্ত।
_তোমার ব্যাগে টিশার্ট,আর তুমি বলছো কার যেন টিশার্ট।
আর তোমার ব্যাগে কেউ রাখলো,আর তুমি তা টেরও পেলে না?
এটা কি হয় নাকি?
এই টিশার্ট এখানে এলো কি করে তাহলে?

আমি এত ক্ষণে ভয়ে কান্না করে দিয়েছি।
_সত্যি বলছি স্যার,আমি জানিনা কার টিশার্ট।আর কিভাবে আমার ব্যাগে এলো।

_আচ্ছা ঠিক আছে।
এটা এখন ওই ঝুড়িতে রাখো।আর গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।

_আমি পারবোনা স্যার এটা ধরতে।

স্যার অন্য একজনকে দিয়ে আমার ব্যাগ থেকে টিশার্ট টা বের করে ঝুড়িতে রাখলেন।

আমি যে ফ্রেশ হতে যাবো আমার হাত পা কাঁপছে।তাই স্যার আমারই এক বান্ধবীকে আমার সাথে পাঠালেন।

_বিশ্বাস কর মুন্নি,আমি জানিনা এই রক্ত মাখা টিশার্ট কিভাবে আমার ব্যাগে এলো।
_আমি বুঝেছিরে,কিন্তু রাখলো টা কে।এটাই আমি ভাবছি।

সেদিনের মত ক্লাস শেষ হলে বাসায় চলে আসি।
বাসায় এসে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ি।
আম্মু খেতে ডাকলেও খেতে যাইনা।
অদ্ভুত একটা শংকা ভয় কাজ করছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বলে আম্মু আর ডাকেনি।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আম্মুর কাছে গেলাম।

_তোর কি শরীর খারাপ?কি হয়েছে?
_কিছু হয়নি আম্মু।ভালো লাগছেনা।
_না খেয়ে শুয়ে পড়েছিস।বস আমি খাবার নিয়ে আসছি।

আম্মু খাবার আনতে চলে গেলো।
খাবার নিয়ে এসে নিজে হাতে খাইয়ে দিলো।

আম্মুর সাথে কিছু ক্ষণ গল্প করে চলে গেলাম আমার রুমে।

গিয়ে ভাবলাম পড়া টা কমপ্লিট করে ফেলি।
কিন্তু ব্যাগ টা ধরতে ভয় লাগছে।

ভয়ে ভয়ে আবার ব্যাগের চেইন খুললাম।
বই বের করলাম,পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকাল বেলা ঘুম ভাঙলো আম্মুর চিৎকারে।

দৌড়ে আম্মুর কাছে যেতেই দেখি,

দুইটা গলা কাটা মুরগী পড়ে আছে।
কিন্তু এই সকালে এখানে কে এই দুটোকে ফেলে রেখে গেলো।

_কি হয়েছে আম্মু?
_আমি হঠাৎ ঘর থেকে বেড়ুতেই পায়ের সামনে দেখি এই দুটো লাফাচ্ছে।কে যেন মাত্রই জবাই করে ফেলে রেখে গেছে।
কিছুই বুঝতেছিনা।
কে এমন করলো।

এখন আমার ভয়টা আরো বেড়ে গেলো।
গতকাল আমার সাথে টিশার্টের ঘটনা।
আবার আজ এই মুরগীর ঘটনা।

কিছু একটা রহস্য তো আছেই।
কিছুই ভালো লাগছেনা আমার।

_এত চিন্তা করার কিছু নেই।বাদ দে যা হবার হয়েছে।কেউ বোধয় বজ্জাতপানা করে এমন করেছে।

কিছু ক্ষণ পর আম্মু নাস্তা বানালো।
ছোট বোন এসে আমাকে ডেকে নিয়ে গেলো নাস্তা খেতে।

নাস্তা করে আমি আমার প্রাইভেট টিচারের বাসায় রওনা দিলাম।
দুইটা স্যারের কাছে দুই সাবজেক্ট পড়ে তারপর আবার স্কুল।

প্রতিদিনের মত সেদিনও প্রাইভেট পড়ে,ক্লাস করে বাসায় চলে আসি।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে আম্মু আর ছোট বোনের সাথে গল্প করি।

গল্প করতে করতে রাত হয়ে যায়।
একটু বই বের করে পড়ে তারপর ঘুমিয়ে পরি আমি।

রাত তখন প্রায় ৩ টা।

হঠাৎ এক বিকট শব্দ।

আমি ভয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠি,সাথে আমার বোনও।
আম্মুকে ডাকতেই আম্মু বল্লো,চুপ করে শুয়ে থাকো কোন শব্দ করোনা।

আম্মু জোড়ে জোড়ে বলতে লাগলো,
কে রে কে।
কিন্তু কারো কোন সাড়া শব্দ নেই।

সারারাত নির্ঘুম কাটলো আমাদের।
আম্মু আমাদের দুজনকে ঘুমাতে বল্লেও আমরা জেগেই থাকি।
ছোট আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।
শীতের রাত।কিন্তু আমি ভয়ে ঘেমে একাকার।

সকাল হতেই প্রথমে আম্মু বের হলো,বের হয়ে দেখে আমাদের দরজার সামনে দুইটা মাটির কলস ভাঙা।
আর সেইখান থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছে।

কে বা কারা যেন রাতে এই কলস ফাটিয়ে রেখে গেছে।

আমি আর আমার ছোট বোন আস্তে আস্তে এসে দাঁড়িয়ে দেখি এই অবস্থা।

হঠাৎ আমার বোনের চোখ যায় একটা ছোট্ট কাগজের টুকরোর দিকে।

ও গিয়ে হাত দিয়ে কাগজ টা মাটি থেকে তুলে।
তুলে নিয়ে খুলে কি যেন পড়ে,
পড়েই আমার হাতে কাগজ টা তুলে দেয়।
আমি কাগজ টা হাতে নিতেই দেখি,
ওখানে লিখা-

”প্রতিদিন একটা একটা সারপ্রাইজ পেতে প্রস্তুত থাকো প্রিয়তমা”

আমি কিছুই বুঝলাম না,কে এই ব্যক্তি।
আর কেনই বা এসব করছে।

আম্মু বল্লো,কোন অসভ্য ফাজিল ছেলের কাজ এটা।
তোরা চিন্তা করিস না।
তোদের আব্বুকে আজ ফোন দিয়ে জানাবোনে।
সে তার বন্ধু বান্ধবদের ফোন দিয়ে বললে,তারা খেয়াল রাখবেনে বা খোঁজ করবেনে।
কে করছে এই সব।

আম্মু নাস্তা বানাতে চাইলো।
আমি বললাম,আজ দেরি করে বানাও সমস্যা নেই।
আজ আমি পড়তেও যাবোনা,স্কুলেও যাবোনা।
আম্মু বল্লো,সামনে পরীক্ষা,এসব বাজে চিন্তা মাথায় না রেখে পড়াশোনায় মন দে।
নাস্তা বানাচ্ছি,খেয়ে পড়তে যাবি।
আমার প্রাইভেট একটা সকাল সাত টা থেকে আট টা।
আরেকটা আট টা থেকে নয়টা।
তারপর আমি ওখান থেকেই স্কুলে চলে যাই।
সেই জন্য আম্মু অনেক সকালে উঠে নাস্তা বানায়।
আর আমারো তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠতে হয়।

সেদিন আবার অনেক কুয়াশা পড়ে।
আর অনেক বেশি শীত।
তার উপর এই ঘটনা।
তাই যেতে ইচ্ছে করছিলোনা পড়তে।
কিন্তু আম্মুর কথায় রেডি হয়ে চলে গেলাম।

রাস্তায় বের হতেই দেখি চারিপাশ কুয়াশার চাদরে ঢাকা।
না আছে একটা রিক্সা আর না আছে কিছু।

কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা কুয়াশার কারণে আজ।
আর তার উপর কনকনে শীত।

সারা রাস্তা হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি।আজ শুধু প্রাইভেট পড়েই চলে আসবো বাসায়।
স্কুলে যাবোনা।তাই স্কুল ড্রেস পরিনি আজ।হালকা গোলাপী রঙের একটা থ্রি পিস পরেছি।
চোখে একটু কাজল দিয়েছি।কাজল আমার অনেক বেশিই পছন্দ সেই জন্য।আমার ডান হাতে একটা চুড়ি আর বাম হাতে ঘড়ি।
আর কাঁধের এক পাশে ব্যাগ।

তাড়াহুড়ো করে ঘড়িতে সময় দেখছি আর হাঁটছি আমি।সময় দেখে মাথা টা উঁচু করতেই দেখি আমার থেকে একটু দূরে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে।
দেখেই বুকের ভেতর টা ধুকধুক করে উঠেছে।
এত সকালে,এই কুয়াশার মধ্যে কে দাঁড়িয়ে আছে।

হঠাৎ দেখি মানুষ টা আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।
তার গায়ে কালো একটা জ্যাকেট আর
জিন্স প্যান্ট।আর মুখ টা মাফলার দিয়ে ঢাকা।
সে আমার সামনে আসতেই তার চোখ দুটো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
ঘন কালো ভ্রু তার।চোখ দুটো ভাসা ভাসা।
উনি সামনে আসতেই আমি পেছনের দিকে আগাতে থাকি।
আমি পিছপা হচ্ছি দেখে সে আমাকে বলে,

পিছপা কেন হচ্ছো?
আমি তো তোমার জন্যই দাঁড়িয়ে আছি।এই ঘন কুয়াশার মধ্যে তুমি একা একা যেতে ভয় পাবে তাই।

এ কথা শুনে আমি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে উলটো পথে দেই দৌড়।
মানে আমার বাসার পথে।

আর সে পেছন পেছন আমাকে ডাকতে থাকে,
এই নিধি এই নিধি তুমি জানো,তোমাকে কাজল পড়লে মারাত্মক লাগে।

আর তুমি যদি এখন না দাঁড়াও।
তাহলে আমি কিন্তু তোমার সাথে তোমার বাসায় চলে আসবো।

চলবে?

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২৭(অন্তিম পর্ব)

স্নিগ্ধতার জ্ঞান ফিরেছে,চোখের সামনে স্তব্ধকে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।ভোর রাতের দিকে স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছে তখন স্নিগ্ধতার জ্ঞান ছিল না। অরিত্রি শিকদার ছাড়া আর কাউকে কিছু জানানো হয়নি। ওই ঘটনাটা মনে পড়তেই স্নিগ্ধতার ভেতরে আবারও ভয় জাগ্ৰত হয়েছে চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো।স্তব্ধকে শক্ত করে ধরলো,স্তব্ধ ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,

– নড়ছো কেন স্নিগ্ধ?

স্নিগ্ধতা কোনো উত্তর দিল না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। স্তব্ধের সব ঘুম নিমিষেই উধাও হয়ে গেল দ্রত একহাত দিয়ে পেছনে টেবিলে রাখা টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে স্নিগ্ধতার থুতনি ধরে মুখ উঁচু করে বলল,

– কাঁদছো কেন?

এবারও কোনো উত্তর পাওয়া গেল না,স্তব্ধ বিষয়টা বুঝতে পেরে স্নিগ্ধতার কপালে চুমু দিয়ে চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলল,
– কেন বুঝতে চাও না তোমার চোখের পানি দেখতে আমার ভালো লাগে না অনেক কষ্ট হয়, এখন তো তুমি আমার কাছেই আছো তারপরেও কেন কাঁদছো?

– মানুষ কতটা নোংরা মস্তিষ্কের হলে এমন একটা জঘন্য কাজ করতে যায়, যদি খারাপ কিছু হয়ে যেত তাহলে মৃত্যু ছাড়া আমার কোনো উপায় থাকতো না।

স্তব্ধ ধমক দিয়ে বলল,
– কেন আজেবাজে কথা বলছো কিছু হয়নি তো, আমি থাকতে তোমার কিছু হতে দিব না অনেক শিক্ষা হয়েছে এরপর থেকে তোমাকে কোথাও একা ছাড়বো না।

স্তব্ধ আবারও বলল,
– তোমাকে না পেয়ে আমার তো মাথাই কাজ করছিল না ড্যড কি সুন্দর মাথা ঠান্ডা করে কাজ করল,ড্যড এর বুদ্ধির কারণেই তোমাকে ফিরে পেলাম।

– নাতাশা আদ্রিক ওদের কি হয়েছে?

– জেলখানায় বসে বসে মশা মারছে।

স্নিগ্ধতা চুপ করে আছে,স্তব্ধ আহ্লাদি সুরে বলল,
– ভয় করছে স্নিগ্ধ?

– হু।

– কিসের এত ভয়?

– তখন মনে হয়েছিল আমি যেন তোমাকে হারিয়ে ফেলব খুব কষ্ট হচ্ছিল।

– সব ভয় দূর করে দিচ্ছি।

বলেই স্নিগ্ধতার মুখে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে লাগলো স্তব্ধ।স্নিগ্ধতা পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
______________

সকাল হতেই অরিত্রি শিকদার নিজে ঘরে এসে খাইয়ে দিয়ে গেছে স্নিগ্ধতাকে। গতকালের ঘটনা মনে গেঁথে আছে কিছুতেই ভুলতে পারছে না,নিচেও যেতে ইচ্ছে করছে না লজ্জায়।স্তব্ধ নিচে গেছে নাস্তা করতে অরিত্রি শিকদার জোর করে নিচে পাঠিয়েছে।

নাস্তা করে স্তব্ধ ঘরে আসলো স্নিগ্ধতাকে চুপচাপ বিছানায় হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে বিরক্ত হলো। স্তব্ধ যে ঘরে এসেছে সে খেয়াল নেই স্নিগ্ধতার কি যেন ভেবে যাচ্ছে,স্তব্ধ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে স্নিগ্ধতাকে দেখলো তারপর হুট করে গিয়ে স্নিগ্ধতার কোলে মাথা রেখে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল।স্নিগ্ধতা কিছুটা ঘাবড়ে গেল,স্তব্ধ স্নিগ্ধতার শাড়ির আঁচল আঙ্গুলে প্যাচাতে প্যাচাতে বলল,

– বলেছি না গতকালের কথা ভুলে যেতে বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করো যত অতীত নিয়ে চিন্তা করবে ততোই ভেতরে পীড়া দিবে।

– চেষ্টা করছি ভুলে যাওয়ার।

– হুম দ্রুত চেষ্টা করো নইলে তোমাকে কামড়ে দিব।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্নিগ্ধতা হেসে দিল যতোই মন খারাপ থাকুক কিংবা রাগ হোক না কেন স্তব্ধের কিছু কিছু কথায় না হেসে থাকা যায় না। স্তব্ধ বরাবরের মতই মুগ্ধ হয়ে স্নিগ্ধতার হাসি দেখছে,স্নিগ্ধতার গালে হাত রেখে বলল,

– এভাবেই সবসময় হাসিখুশি থাকবে, তোমার হাসিটাই যে আমার ভালো থাকার কারণ।

– তুমি থাকতে হাসি অটোমেটিক চলে আসবে।

শিরিন গতকাল রাত থেকে স্নিগ্ধতাকে একবারও দেখেনি নাস্তা করার সময়ও টেবিলে দেখেনি বুঝতে পারছে না কি হয়েছে তাই কিছু না ভেবেই দরজা খোলা দেখে স্নিগ্ধতার ঘরে চলে আসলো। ঘরে এসেই একরাশ লজ্জা ভর করলো শিরিনের মুখে,স্তব্ধ স্নিগ্ধতার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর দু’জনে কথা বলছে হাসছে। শিরিন ইচ্ছে করে জোরে কাশি দিল,কাশির শব্দে স্তব্ধ-স্নিগ্ধতা দু’জনেই দরজার দিকে ফিরে তাকালো।স্তব্ধ উঠে বসতেই স্নিগ্ধতা বিছানা থেকে নেমে বলল,

– শিরিন তুই! ভেতরে আয়।

– তোদের রোমান্সে বিরক্ত করে ফেললাম স্যরি।

স্তব্ধ ব্রু কুঁচকে বলল,
– একে তো দরজা নক না করেই ঢুকে পরলে আবার ঢং করে স্যরি বলা হচ্ছে? কাশিটা না দিয়ে আস্তে করে চলে গেলেই পারতে।

– আপনারও উচিত ছিল দরজা লক করে বউয়ের সঙ্গে রোমান্স করার।

– আমার দরজা আমি সারাদিন খোলা রাখব তুমি কেন নক না করে আসবে?

– এখন সব দোষ আমার?

– অবশ্যই।

– স্নিগ্ধা দেখ দুলাভাই আমার সঙ্গে ঝগড়া করছে।

– তুমি কি চুপ করে ছিলে নাকি?

শিরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্নিগ্ধতা চেঁচিয়ে বলল,
– এবার তোমরা থামো।

– আচ্ছা থামলাম দুলাভাই আপনি বাইরে যান আমার বান্ধবীর সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে।(শিরিন)

– কথা পরে বলো এখন ঘর থেকে বের হতে পারছি না।

– ঠিক আছে থাকুন আপনি আপনার ঘরে স্নিগ্ধা তুই চল আমার ঘরে।

বলেই শিরিন স্নিগ্ধতার হাত ধরল,স্তব্ধ রাগ দেখিয়ে বলল,
– আমার বউ তোমার ঘরে যাবে কেন? তিহান কোথায়? তিহানের কাছে যাও।

– তিহান বাড়িতেই আছে আর আপনি এত বউ বউ করবেন না, স্নিগ্ধা চল তো।

স্তব্ধের আর কোনো কথা না শুনেই শিরিন স্নিগ্ধতাকে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। তারা যাওয়ার কয়েক মিনিট পরেই তিহানের আগমন ঘটে স্তব্ধের ঘরে।তিহান এসেই শুয়ে পড়ল,স্তব্ধ জিজ্ঞেস করল,

– কি ব্যাপার টায়ার্ড মনে হচ্ছে রাতে ঘুম হয়নি?

– শিরিনকে সারপ্রাইজ দিতে দিতেই রাত পেরিয়ে গেল সকালে একটু ঘুমিয়ে ছিলাম ঘর থেকে বের করে দিল।

– বউকে সামলে রাখতে শিখ তোর বউ বাড়িতে আসতে না আসতেই আমার বউকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে চলে গেল।

– আহারে কষ্ট পাস না ভাইয়া আমার পাশে শুয়ে পর দু’জনে ঘুমাই।

– তুই ঘুমা ইডিয়ট।
____________

আশরাফ খাঁন আদ্রিকের খবরটা শুনেই ভালো উকিলের সঙ্গে কথা বলে থানায় ছুটে গেলেন।আদ্রিকের নামে তেমন বড় কোনো মামলা না হওয়ায় বিকেলের দিকেই থানা থেকে বাড়িতে যেতে পেরেছে। বাড়িতে আসার পর আদ্রিকের বাবা আদ্রিককে অনেক বকাঝকা করেন কিন্তু বকাঝকা করে কি লাভ ছেলে তো আগেই হাতের বাহিরে চলে গেছে।

নাতাশা এবং রুশির নামে শক্তপোক্ত মামলা দেওয়ায় কেইসটা কোর্টে উঠবে অনেক বছর জেলও হতে পারে।রুশির এমন খারাপ চিন্তা ভাবনার কারণে অনেক আগেই তার স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটেছিল নাতাশা-নিতুকে তাদের বাবা নিজের কাছে নিয়ে বড় করতে চেয়েছিলেন কিন্তু রুশির কারণেই পারেননি। নিতু এখন স্তব্ধদের বাড়িতেই আছে রাতুল শিকদার যেতে দেননি।

আদ্রিক ভাবছে কিভাবে স্তব্ধ-স্নিগ্ধতার ক্ষতি করবে। সন্ধ্যের পরে রিয়াদের নাম্বার থেকে আদ্রিকের মোবাইলে কল আসে কিছুক্ষণ দু’জনের মধ্যে কথা হতেই আদ্রিক বাড়ি থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে বের হতে নেয় তখনি পেছন থেকে ডাক পরে,

– থানা থেকে আসতে না আসতেই আবারো বাইরে যাচ্ছো, এবার কিছু ঘটিয়ে আসলে আমি কিন্তু যাব না বলে দিলাম।

– চিন্তা করো না বাবা এমন কিছুই হবে না।

আদ্রিক বেরিয়ে গেল আশরাফ খাঁন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
.
.
.
একটা গোডাউনে স্তব্ধ,নিলয়,রাজ এবং তাদের আরো কয়েকজন বন্ধু আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে স্তব্ধ বাদে বাকি সবার মুখ ডাকা আর গোডাউনের মাঝখানে রিয়াদকে একটা চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে শরীরে মা’রের চিহ্ন। ঠোঁট, কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছে গালে কয়েক অংশে দাগ।আদ্রিক রিয়াদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী গোডাউনে পৌঁছে গেছে, চারিদিকে আবছা আলো ভেতরে প্রবেশ করতেই গোডাউনের দরজা আটকে গেল।আদ্রিক জোরে জোরে ডাকতে লাগল,

– রিয়াদ কোথায় তুই?

কারো কোনো শব্দ না পেয়ে আদ্রিকের ভেতরে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে গোডাউনের মাঝখানে চলে এসেছে, মাঝখানে আসতেই সব আলো জ্বলে উঠলো। রিয়াদের দিকে দৃষ্টি যেতেই আদ্রিক অবাকের সাথে সাথে ভয় পেয়ে গেল, রিয়াদের গালে হালকা চাপড় দিয়ে জিজ্ঞেস করল,

– রিয়াদ তোর এই অবস্থা কে করল? তুই দেশে কেন ব্যাক করলি?

পেছন থেকে রাজ বলল,
– আমরা করেছি।

আদ্রিক পেছনে ঘুরতেই রাজকে দেখতে পেল তবে মুখ বাঁধা তাই চেহারা বুঝতে পারলো না ধীরে ধীরে সবাই বেরিয়ে আসলো। কাউকে আদ্রিক চিনতে পারছে না এবার স্তব্ধ এসে সামনে দাড়াতেই আদ্রিক চমকে গেল কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

– স্তব্ধ!

স্তব্ধ বাঁকা হেসে হাতের রড নিজের কাঁধে রেখে বলল,
– চিনতে পেরেছ?

– তুমি এখানে?

– তোমার কাছেই এসেছি।

– রিয়াদকে কেন মে’রেছ?

– জেনেও কেন জিজ্ঞেস করছো?

– আমি কিছু জানি না।

– আমি জানিয়ে দিচ্ছি, এই রিয়াদের সঙ্গে প্লান করে তুমি স্নিগ্ধতার সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে প্লান যখন কাজে দিল না একে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিলে তারপরেও আমার স্নিগ্ধর ক্ষতি করার বারবার চেষ্টা করলে, আমিও প্লান করে রিয়াদকে তোমার নাম করে দেশে এনেছি আবার রিয়াদকে দিয়ে তোমায় এখানে এনেছি। তুমি কি ভেবেছ তোমাদের এত সহজে ছেড়ে দিব? আমার প্রপার্টির উপর হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছ শাস্তি তো পেতেই হবে এবার এমন অবস্থা করবো চাইলেও আর আমার স্নিগ্ধতার দিকে নজরও দিতে পারবে না।

– স্তব্ধ ভালো হবে না বলে দিলাম।

– ভালো তো হবেই না তবে তোমার সঙ্গে।

সবার হাতেই রড, স্তব্ধের ইশারা পেতেই সবাই হামলে পড়ল আদ্রিকের উপর হাত পায়ে অনবরত মা’রতে লাগল। পুরো গোডাউন আদ্রিকের বেদনাদায়ক চিৎকারে কেঁপে উঠছে, অনেকক্ষণ পেটানোর পর রাজ হাঁপিয়ে গিয়ে বলল,

– এবার অফ যা যেই মা’র দিয়েছি মনে হয় না এই জীবনে নিজ পায়ে দাড়াতে পারবে আর না নিজ হাতে খেতে পারবে।

সবাই থেমে গেল নিলয় বলল,
– শরীর অনেক চাঙ্গা লাগছে অনেকদিন পর কাউকে ইচ্ছে মতো পেটাতে পারলাম।

স্তব্ধ মুখটা অসহায় করে বলল,
– আমার তো মন ভরছে না ইচ্ছে করছে একেবারে মে’রে দেই কতবড় সাহস আমার বউকে কাঁদায়, আমার বউকে কাঁদাবোও আমি হাসাবোও আমি ওর সাহস হয় কিভাবে?

রাজ আর নিলয় দু’জন স্তব্ধের দু’কাঁধে হাত রেখে স্বান্তনা দিয়ে বলল,
– আহা দোস্ত মন খারাপ করিস না একেবারে মে’রে দিলে তো ম’রেই গেল কিন্তু এখন বাঁচিয়ে রাখলে সারাজীবন অন্যের বোঝা হয়ে ধুঁকে ধুঁকে ম’রবে দেখতেও শান্তি লাগবে।

– তাও ঠিক এখন চল এদের একটা ব্যবস্থা করি।

– এদের ব্যবস্থা আমরা করছি তুই বাড়িতে যা ভাবীর কাছে।

স্তব্ধ মুখটা কাঁচুমাচু করে বলল,
– তোদের জন্য ভালোবাসা বেড়ে গেল আমার, তোরা থাক আমি তাহলে বউয়ের কাছে যাই কি বলবো তোদের ভাবী আমাকে না দেখে থাকতেই পারে না।

স্তব্ধ সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল বাকিরা হাসতে হাসতে আদ্রিক আর রিয়াদের কাছে গেল।
.
.
ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে ঘরে আসলো স্তব্ধ, ঘরে স্নিগ্ধতাকে না দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। গোসল করে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ঘরে এসে স্নিগ্ধতাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো।স্নিগ্ধতা রাগ মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

– কোথায় গিয়েছিলে?

– কেন মিস করছিলে!

– এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়।

– ঘুরতে গিয়েছিলাম।

– এমনিতে তো ভালোবাসা উতলে পড়ছিল অফিসেও যাওনি বউয়ের চিন্তায় আর এখন ঘুরতে গিয়েছিলে সব নাটক।

– এভাবে বলো না বেইবি কষ্ট লাগে।

স্নিগ্ধতা ভেংচি কাটলো।স্তব্ধ টাওয়াল বেলকোনিতে মেলে দিয়ে এসে আলতো করে স্নিগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরলো।
______________

রাত পেরিয়ে নতুন একদিনের সূচনা হয়েছে, সকালে ছেলের খারাপ খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে গেলেন আশরাফ খাঁন। আদ্রিককে কারা যেন হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে জানা গেছে চোর সন্দেহে রাস্তায় পাবলিকের হাতে গনধোলাই খেয়েছে তারা, রিয়াদের অবস্থা সূচনীয় আর আদ্রিকের জ্ঞান ফিরেনি হাত পায়ের কিছু হাড় ভেঙে গেছে যা আদৌও জোড়া লাগবে নাকি বলা যাচ্ছে না।

স্তব্ধ রাতুল শিকদারের সামনে মুখ মলিন করে বসে আছে। রাতুল শিকদার নিরবতা ভেঙ্গে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

– আদ্রিকের এমন অবস্থা কে করেছে?

– পাবলিক গনধোলাই দিয়েছে চোর সন্দেহে।

– সেটা তো সবাই জানে আমি আসল সত্যিটা জানতে চাইছি।

– সবাই যেটা জানে আমিও সেটাই জানি এর পেছনে যদি কোনো সত্য থাকে তাহলে বলতে পারো।

– এসব নাটক আমার সঙ্গে করিস না আমি তোর ড্যড তোর রক্তে শিরায় শিরায় কি চলছে বুঝতে পারি আদ্রিকের এমন অবস্থা কে করেছে তাও জানি।

– জানো ভালো কথা ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলতে হবে কেন? ভেতরের কথা ভেতরে রাখো।

রাতুল শিকদার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।স্তব্ধ মাথার চুল স্লাইড করতে করতে বলল,
– তোমাকে অনেক ক্লান্ত লাগছে ড্যড তুমি এখানে বসো আমি বরং সালেহা আন্টিকে বলে তোমার জন্য কোল্ড ড্রিংকস পাঠিয়ে দিচ্ছি।

বলেই স্তব্ধ শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেল, রাতুল শিকদার কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললেন,
– এটা কি আমার ছেলে!

নিতু শিকদার বাড়ি থেকেই স্কুলে যাওয়া আসা করে।রাজের যাতায়াতটা স্তব্ধের বাড়িতে বেড়েছে, রাজ আর নিতুর মধ্যকার ভাব অনেক বেড়েছে প্রতিদিন নিতুকে স্কুলে দিয়ে আসা নিয়ে আসা যেন তার দায়িত্বের মধ্যে পড়েছে।আজও রাজ হল ঘরে সোফায় বসে আছে অরিত্রি শিকদার একের পর এক খাবার এনে রাজের সামনে রেখে বলছে,

– তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করো আমি আরও আনছি।

রাজ কিছু বলতেও পারছে না অবশ্য বললেও কাজ হবে না অরিত্রি শিকদারের অধীক আপ্যায়নের জন্যই এ বাড়িতে তেমন আসতো না কিন্তু এখন বাধ্য হয়েই আসতে হচ্ছে।স্তব্ধ রাজের পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে বলল,

– নিতুর কিছুদিন পর পরীক্ষা সেই জন্যই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে তুই আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর পরীক্ষা শেষ হলেই তোদের বিষয়ে ড্যড এর সঙ্গে কথা বলবো।

রাজ ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
– কি বলিস এসব?

– আহা ভয় পায় না বন্ধু হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে না আমার এমনিতেই তুই অবিবাহিত তার উপর আমার খালাতো বোনকে পছন্দ করিস চিন্তা করিস না আমি আছি তো।

– স্তব্ধ চুমুটা কি তোর কপালে দিব নাকি গালে?

– হুস বেয়াদব এগুলো আমার বউয়ের সম্পত্তি, তুই বরং বিয়ের পর নিতুকে চুমু দেইস।

– আচ্ছা।

অরিত্রি শিকদার হাতে করে আরেকটা ট্রে নিয়ে এসে বললেন,
– রাজ এখনও খাওয়া শেষ হয়নি কেন? স্তব্ধ তুইও খাবি?

– না তুমি রাজকে জামাই আদর করো।

– এগুলো আবার কি কথা?

স্তব্ধ মৃদু হেসে ঘরে চলে গেল।

শিরিন জামা-কাপড় আলমারিতে গুছিয়ে রাখছে পেছন থেকে তিহান এসে জড়িয়ে ধরে বলল,
– শিরিন কি করো?

– চোখ কি অকালেই গেছে নাকি দেখতে পাচ্ছো না কি করছি?

– সবসময় এমন খিটখিট করো কেন? একটু রোমান্টিক ভাবে কথা বললে কি হয়?

– পারবো না রোমান্টিক কথা বলতে সরো কাজ করছি।

– উহু সরবো না কাজ পরে হবে।

– ভালো কথায় কাজ না হলে ঝাটা পেটা করবো কিন্তু।

তিহান দ্রুত শিরিনকে ছেড়ে দূরে সরে গিয়ে বুকে থু থু দিয়ে বলল,
– বিয়ে হতে না হতেই এই রূপ দেখাচ্ছে বাকি জীবন কি হবে আমার?
_____

স্নিগ্ধতা সবেমাত্র গোসল করে এসে বেলকোনির দড়িতে ভেজা কাপড় মে’লে দিচ্ছে।বেলকোনিটা বেশ বড় আর অনেক রোদও আসে দুপুর আর বিকেলের দিকে।স্তব্ধ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধতার ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল,স্নিগ্ধতা কিছুটা কেঁপে উঠলো।স্তব্ধ ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,

– তোমার ভেজা চুলের এত সুন্দর ঘ্রান কেন?

– চুলে শ্যাম্পু করেছি এটা শ্যাম্পুর ঘ্রান।

– সে যাই হোক না কেন স্নিগ্ধতার এই স্নিগ্ধ মায়ায় স্তব্ধ পাগল হয়ে গেছে।

স্নিগ্ধতা হেসে পূর্বের ন্যায় কাপড় মেলছে,স্তব্ধ স্নিগ্ধতার হাত ধরে নিজের গালে ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
– আমার অনুভূতি যদি তুমি বুঝতে তাহলে এভাবে হাসতে না নিজেও পাগল হয়ে যেতে।

– আমি পাগল হতে চাই না দু’জনে পাগল হলে তোমাকে সামলাবে কে?

– হুম।

– পাগল না হলেও স্তব্ধের প্রেমে মাতাল হয়েছি আমি, সারাজীবন #স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা হয়ে থাকতে চাই।

– হুহ তুমি শুধু স্তব্ধের স্নিগ্ধতা।

স্তব্ধ পরম যত্নে স্নিগ্ধতার কপালে লেপ্টে থাকা ভেজা ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিল আর স্নিগ্ধতা স্তব্ধের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

(~সমাপ্ত~)

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-২৬

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২৬

স্তব্ধ আশেপাশে কোথাও স্নিগ্ধতাকে খুঁজে পাচ্ছে না। মোটামুটি সবাইকে জিজ্ঞেস করা শেষ কিন্তু কেউ নাকি স্নিগ্ধতাকে কিছুক্ষণ ধরে দেখছে না। স্তব্ধের প্রাণপাখি যায় যায় অবস্থা, রাতুল শিকদারের সঙ্গে কথা বলে আসার পর থেকে স্নিগ্ধতাকে দেখছে না, কমিউনিটি সেন্টারের সব জায়গায় খুঁজা শেষ। অনেকবার কল দেওয়া হয়েছে কিন্তু স্নিগ্ধতার মোবাইল বন্ধ চিন্তায় দম বন্ধ হয়ে আসছে স্তব্ধের কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছে না, এখন সবাইকে বিষয়টা জানালে সবাই চিন্তা করবে তিহান আর শিরিনকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারা অনেক খুশি স্তব্ধ চায় না তাদের এই আনন্দ মিয়ে যাক।

বিয়ে বাড়িতে এসেও নিতু তার সমবয়সী কাউকে পায়নি এতক্ষণ নাতাশার সঙ্গে থাকলেও এখন নাতাশাকে দেখতে পাচ্ছে না তাই একপাশে একা একা দাড়িয়ে আছে।রাজ নিতুকে চুপচাপ একা একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে বলল,

– তুমি স্তব্ধের খালাতো বোন না?

– জ্বি।

– এভাবে চুপচাপ এখানে দাড়িয়ে আছো কেন?

– এতক্ষণ আমার সাথে আপু ছিল।

– তো কোথায় গেল তোমার আপু?

– ওয়াশরুমের কথা বলে যে সেই কখন গেল এখনও আসলোই না মাও ওদিকে বড়দের সঙ্গে কথা বলছে স্নিগ্ধতা ভাবীকেও খুঁজলাম কিন্তু কোথাও দেখলাম না।

– এই জন্যই একা দাড়িয়ে আছো?

– হুম।

– আমাদের মধ্যে অনেক মিল আমিও একা তুমিও একা।

– আপনি একা কেন ভাইয়া?

– আমার বউ নেই তাই আমি একা।

– তাহলে বিয়ে করে নিন।

– বিয়ে দিলে তো করবো আচ্ছা তুমি কি বিবাহিত?

নিতু বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– উহু আমাকে দেখে কি আপনার বিবাহিত মনে হয়?

– না তবে অনেকে আছে যারা বিবাহিত হবার পরেও বিবাহিত বুঝা যায় না।

– আমি বিবাহিত নই আমি এখনও অনেক ছোট, ছোটদের কি বিয়ে হয়?

রাজ কপাল চুলকিয়ে কয়েক সেকেন্ড ভেবে বলল,
– ছোটদের বিয়ে হয় না?

– না।

– ওহ তাহলে আমিও হয়তো ছোট।

নিতু জোরে জোরে হেসে দিল।রাজ কপাল কুঁচকে সেই হাসির দিকে তাকিয়ে আছে প্রাণবন্ত এক হাসি তখনি তাদের সামনে স্তব্ধের আগমন ঘটে।স্তব্ধ নিতুর উদ্দেশ্যে বলল,

– নিতু তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই বাড়ির দিকে রওনা দিবে।

নিতু মাথা নাড়িয়ে চলে গেল রাজ মুখ গোমড়া করে বলল,
– ওকে যেতে বললি কেন?

– ওকে দিয়ে তুই কি করবি?

– কিছু না তোর মুখ চুপসে আছে কেন?

– স্নিগ্ধকে খুঁজে পাচ্ছি না আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।

– খুঁজে পাচ্ছিস না মানে? আশেপাশে কোথাও আছে হয়তো ভালো করে দেখ।

– সব জায়গায় দেখেছি কোথাও নেই কেউ বলতে পারছে না কোথায় গেছে নাম্বারে কল দিয়েছি মোবাইল বন্ধ বলছে।

রাজ ব্রু কুঁচকে বলল,
– বিয়ের সময়ও তো ভাবীকে দেখলাম এর মধ্যে কোথায় চলে গেল?

– বিয়ের পরেও আমি স্নিগ্ধকে দেখেছি কথাও বলেছি ও বলল ড্যড আমাকে ডাকছে আমিও গেলাম কিন্তু এসে আর ওকে দেখছি না।

– এখন কি করবি?

– বুঝতে পারছি না এত তাড়াতাড়ি কোথায় চলে গেল? কাউকে বলতেও পারছি না সবাই চিন্তা করবে।

– আঙ্কেলকে বলেছিস?

– না।

– আঙ্কেলের কাছে চল সবটা জানা আঙ্কেল দেখি কি বলে।

স্তব্ধ এবং রাজ রাতুল শিকদারের কাছে গেল। রাতুল শিকদার শিরিনের বাবার সঙ্গে কথা বলছিলেন স্তব্ধ ডাক দিতেই ওখান থেকে সরে এসে বললেন,
– বল।

– ড্যড স্নিগ্ধকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।

– কি বলিস!

স্তব্ধ সবকিছু বলল রাতুল শিকদারকে, রাতুল শিকদারের মুখেও চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে।ব্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে বললেন,
– রুশি কোথায়?

রাজ বলল,
– বাকি রিলেটিভদের সঙ্গে দেখে আসলাম।

– নাতাশা?

– জানি না আঙ্কেল নিতুও নাতাশাকে খুঁজছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।

স্তব্ধ অধৈর্য হয়ে বলল,
– এদিকে আমি আমার বউকে খুঁজে পাচ্ছি না আর তুমি নিজের শালীর খবর নিচ্ছো।

– কারণ আছে তাই নিচ্ছি, রাজ তুমি সবাইকে নিয়ে বাড়িতে যাও কেউ যাতে এ খবর জানতে না পারে, আমার আর স্তব্ধের কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে আমরা অন্য গাড়ি দিয়ে আসছি।

– ড্যড স্নিগ্ধ..

– স্নিগ্ধতা মা’কে আমরা খুঁজে বের করবো।

রাজ বলল,
– আচ্ছা আঙ্কেল ওইদিকটা আমি সামলে নিচ্ছি কোনো দরকার হলে আমাকে জানাবেন।

রাজ চলে গেল। ধীরে ধীরে কমিউনিটি সেন্টার খালি হয়ে যাচ্ছে তিহানদের গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে, স্তব্ধের কপাল থেকে ঘাম চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে রাতুল শিকদার ছেলের কাঁধে হাত রেখে বললেন,

– চিন্তা করিস না বউমাকে আমরা পেয়ে যাব।

– কিন্তু ড্যড স্নিগ্ধ কোথায় গেছে কেন গেছে তাই তো জানি না।

– বউমা নিজ থেকে কোথাও যায়নি তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

স্তব্ধ চমকায়িত কন্ঠে বলল,
– নিয়ে গেছে!

– হুম আমার সঙ্গে চল।

রাতুল শিকদার সামনের দিকে হাঁটছেন আর স্তব্ধ পেছনে তাকে অনুসরণ করছে। রাতুল শিকদার কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজারের কাছে গেলেন,ম্যানেজার উনাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

– স্যার কি হেল্প করতে পারি বলুন?

– আমার পুত্রবধূ বিয়ে উপলক্ষে আমাদের সঙ্গেই এখানে এসেছিল কিন্তু কিছুক্ষণ ধরে তাকে খুঁজে পাচ্ছি না সবজায়গাতেই খুঁজা শেষ।

– কি বলছেন স্যার আমাদের এখানে স্ট্রং একটা সিকিউরিটি আছে বাচ্চা হারিয়ে যাওয়াও অসম্ভব সেখানে বড় মানুষ কিভাবে হারিয়ে যাবে?

– হুম এই জন্যই আপনার কাছে আসা আপনাদের এখানে তো সিসি ক্যামেরা আছে আমরা সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে চাই।

– জ্বি স্যার আসুন।

ম্যানেজার তাদেরকে সিসি ক্যামেরা কন্ট্রোলার রুমে নিয়ে গেলেন।ঢাকার নামিদামি কমিউনিটি সেন্টার হওয়ায় সব ধরনের ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা এখানে আছে। টাইমিং অনুযায়ী সিসি টিভি ফুটেজ অন করা হলো, ফুটেজে একটা লোক দৃষ্টি রেখে বলল,

– যাকে পাওয়া যাচ্ছে না ভালো করে দেখুন তিনি এখানে আছেন কিনা?

রাতুল শিকদার আর স্তব্ধ দু’জনেই ফুটেজ দেখছে। অনেক মানুষ দেখা যাচ্ছে স্তব্ধ চঞ্চল কন্ঠে বলল,
– ওই খয়েরী রঙের শাড়ি পরাটাই স্নিগ্ধ।

ফুটেজে দেখা যাচ্ছে স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতা কথা বলছে,স্তব্ধ পুনরায় বলল,
– কয়েক মিনিট সামনে টানুন ভিডিওটা।

লোকটি স্তব্ধের কথামতো ভিডিও টেনে নিলো, এবার দেখা যাচ্ছে স্নিগ্ধতা দু’টো মেয়ের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে তখনি নাতাশা স্নিগ্ধতার কাছে আসে, স্নিগ্ধতার সঙ্গে কয়েক সেকেন্ড কথা বলল তারপর দু’জনে মিলে স্থান ত্যাগ করল দু’জনের মুখেই হাসি।

এরপর থেকে ফুটেজে নাতাশা এবং স্নিগ্ধতা কাউকেই কোথাও দেখা যাচ্ছে না।স্তব্ধ ভারী কন্ঠে বলল,
– ড্যড তার মানে নাতাশা!

– হুম নাতাশা স্নিগ্ধতাকে নিয়ে কোথাও গেছে এদের উপর আমার আগেই সন্দেহ হয়েছে এমন একটা কাজ করবে ভাবতেও পারিনি।

সেন্টারের সব গার্ডদের প্রশ্ন করে জানা গেছে স্নিগ্ধতা আর নাতাশা দু’জনকে একসঙ্গেই গেইট দিয়ে বের হতে দেখেছে তারা। স্তব্ধের চোখমুখ রাগে লাল হয়ে গেছে ক্রুর গলায় বলল,

– নাতাশা অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে একবার হাতের কাছে পেয়ে নেই নিজ হাতে খু’ন করবো।

– মাথা ঠান্ডা কর কে জানে কোথায় নিয়ে গেছে স্নিগ্ধতা মা’কে আগে খুঁজে বের করতে হবে কোনো ক্ষতি না হলেই হয়।

– ড্যড আমার মাথা কাজ করছে না আমার স্নিগ্ধকে চাই ড্যড।

– পুলিশকে ইনফর্ম করতে হবে।

রাতুল শিকদার তার পরিচিতি পুলিশ অফিসারকে কল দিয়ে পুরো ঘটনা জানালেন তারপর মোবাইল পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে স্তব্ধকে বললেন,

– চল আমার সঙ্গে।

রাতুল শিকদার এবং স্তব্ধ দু’জনেই কমিউনিটি সেন্টার থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলেন।
______________
বাড়িতে আসার পর তিহান আর শিরিনকে হল ঘরের সোফায় বসানো হয়েছে নতুন বউ দেখার জন্য পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনরা হুমড়ে পড়েছে।শিরিনের অস্বস্তি বোধ হচ্ছে এত মানুষের কারণে, রাহেলা বেগম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অরিত্রি শিকদারের উদ্দেশ্যে বললেন,

– বউমা ছোট নাতবউকে ঘরে নিয়ে যাও ওর এখন বিশ্রামের প্রয়োজন।

অরিত্রি শিকদার শিরিনকে নিয়ে যাবেন মাঝখানে তিহান বাঁধ সেধে বলল,
– তোমার কষ্ট করতে হবে না বড় আম্মু আমি নিয়ে যাচ্ছি।

– আচ্ছা যা।

শিরিন গরম চোখে তিহানের দিকে একবার তাকালো তিহান মেকি হাসলো। রাহেলা বেগম আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
– রাতুল,স্তব্ধ দাদুভাই নাতবউ ওরা কোথায়?

রাজ কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ছিল কথাটা শোনা মাত্রই এগিয়ে এসে বলল,
– আঙ্কেল অফিসে গেছেন একটা কাজে,স্তব্ধ আর ভাবী অন্য গাড়িতে আসছে।

– ওহ।

রাহেলা বেগম অরিত্রি শিকদার তেমন কিছু বললেন না,রাজ চিন্তা মুক্ত হলো।

পুলিশ নাতাশা এবং স্নিগ্ধতার মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাকিং করতে সফল হয়েছে। একটা পুরনো বাড়িতে লোকেশন দেখাচ্ছে যা শহর থেকে কিছুটা দূরে, ওখানকার পুলিশকে ইনফর্ম করে দেওয়া হয়েছে তারাই বিষয়টা দেখবে।

একটা ঘরে বিশাল খাটে স্নিগ্ধতা শুয়ে আছে চোখ বন্ধ মাথার কাছে একজন মাঝবয়সী মহিলা বসে আছে।মহিলাটির অদ্ভুত সাজ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে বিরক্ত সে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেতরে একজন পুরুষ প্রবেশ করলো পুরুষটি হচ্ছে আদ্রিক ঠোঁটের কোণে নোংরা হাসি।মহিলাটি বিরক্ত মুখে বললেন,

– আধ ঘন্টা ধরে বসে আছি এবার তো একে নিয়ে যেতে দিন।

– এত তাড়া কিসের?

– ধরা পড়লে বিপদ হয়ে যাবে।

– আদ্রিক খাঁন থাকতে ভয়ের কোনো কারণ নেই আজকের রাতটার জন্য স্নিগ্ধতা আমার কাছে থাকবে সকাল হলে পাচার করে দিও এমন জায়গায় পাঠাবে যাতে ফিরে আসতে না পারে স্তব্ধও কোনো খোঁজ না পায়।

– টাকার এমাউন্ট কিন্তু বেশি লাগবে।

– টাকা নিয়ে ভেবো না এখন এখান থেকে যাও আজ আমার স্বপ্ন পূরন হবে এতদিনের পরিশ্রম সফলতা পাবে।

মহিলাটি বাঁকা হেসে চলে গেলেন।আদ্রিক স্নিগ্ধতার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, হাতটা স্নিগ্ধতার দিকে এগিয়ে নিচ্ছিল তখনি ভেতরে রুশি আর নাতাশা প্রবেশ করে।আদ্রিক রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো তাদের দিকে রুশি হালকা কেশে বলল,

– এই মেয়ের সঙ্গে যা ইচ্ছে করো কিন্তু এসবে আমাদের মা-মেয়ের নাম যাতে কোনভাবেই না জড়ায়।

– এই সামান্য কথাটা বলতে এসে আমার মুড নষ্ট করলেন?

– তোমার কাছে সামান্য হলেও আমাদের কাছে অসামান্য।

– চিন্তা করবেন না কেউ জানতে পারবে না।

রুশি আর নাতাশা স্বস্তি পেল। দু’জনে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো কিন্তু নাতাশা থেমে গিয়ে স্নিগ্ধতার দিকে তাকালো আদ্রিক ব্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,

– আবার কি?

– এমন নিস্তেজ স্নিগ্ধতাকে দেখতে একদম ভালো লাগছে না,ওর ভয়ার্ত মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে জোরে জোরে চিৎকার করবে অনুনয় বিনয় করবে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কান্না করবে এসব দেখতেই তো মজা।

আদ্রিক বাঁকা হেসে বলল,
– এটা কেন আমার মাথায় আসলো না? মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য থ্যাঙ্কস নাতাশা।

– হুম এবার ওর জ্ঞান ফিরাও।

– ওর অনেক তেজ জ্ঞান ফেরালে সামলানো যাবে না রিস্ক হয়ে যাবে।

– তাহলে কি ইচ্ছে পূরণ হবে না?

– অবশ্যই হবে একটু অপেক্ষা করো।

আদ্রিক কাউকে ফোন দিল দুয়েকমিনিট পর একটা মহিলা প্রবেশ করল, দেখে বুঝা যাচ্ছে ডাক্তার।আদ্রিক বলল,

– জ্ঞান ফিরতেই আপনার স্পেশাল ইনজেকশন পুশ করে দিবেন।

– ওকেহ স্যার।

মহিলাটি ইনজেকশন নিয়ে রেডি হয়ে স্নিগ্ধতার মাথার পেছনের দিকে দাড়ালো।আদ্রিক জগ থেকে পানি ছুঁড়ে দিল স্নিগ্ধতার দিকে। মুখে আচমকা পানি লাগতেই জ্ঞান ফিরে আসলো স্নিগ্ধতার চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আশেপাশে ভালোভাবে দেখলো আদ্রিককে দেখে অবাক হয়ে গেছে প্রাণপাখি যেন উড়ে যায় যায় অবস্থা।

স্নিগ্ধতা উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বলল,
– আদ্রিক আপনি এখানে কেন? এটা কোন জায়গা?

– তুমি আমার কাছে স্নিগ্ধা ডার্লিং, আমি তোমাকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছিনিয়ে এনেছি।

বলেই আদ্রিক এক অদ্ভুত হাসি দিল।স্নিগ্ধতা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,
– স্তব্ধ কোথায়?

– সত্যিই তো স্তব্ধ কোথায়?

নাতাশা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– কোথায় আবার হয়তো বউকে খুঁজছে।

স্নিগ্ধতা এবার নাতাশার দিকে তাকালো তখনকার কথাটা মনে করার চেষ্টা করল‌।স্নিগ্ধতা তার পুরনো বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলছিল তখনি নাতাশা স্নিগ্ধতার কাছে গিয়ে বলল,
– স্নিগ্ধতা আমার সঙ্গে একবার গেইটের কাছে যাবে?

– কেন?

– আমার একটা ফ্রেন্ডকে ইনভাইট করেছিলাম সে এসে গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে তুমি একটু আমার সঙ্গে যাবে।

– আমি কেন?

– তুমি ছাড়া আর কাউকে তো আমি চিনি না এমন করছো কেন একবার চলো না অল্প সময়ের ব্যাপার।

– আচ্ছা আমি স্তব্ধকে বলে আসছি।

– স্তব্ধকে বলতে হবে কেন? তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না?

– আরে না এটা কখন বললাম।

– তাহলে চলো।

অগ্যতা স্বত্বেও স্নিগ্ধতা নাতাশার সঙ্গে গিয়েছিল কিন্তু গেইটের কাছে গিয়ে কাউকেই দেখতে পায়নি নাতাশা অনেক কিছু বলে স্নিগ্ধতাকে জোর করে গেইটের বাহিরে যায় আর তারপরেই কেউ পেছন থেকে স্নিগ্ধতার মুখে রুমাল চেপে ধরে অজ্ঞান করে দেয়।

স্নিগ্ধতা চমকায়িত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– নাতাশা তুমি আমার সঙ্গে এমনটা করলে!

– আমি ছাড়া আর কে করবে?

– কেন এমন করেছ আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি।

– তুমিই আমার বড় ক্ষতিটা করেছ আমার স্তব্ধকে কেড়ে নিয়েছ তোমার জন্য আঙ্কেল আমাদের অপমান করেছে এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না স্তব্ধকে পাওয়ার জন্য এসব করতে হয়েছে আমাকে।

স্নিগ্ধতার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আদ্রিক আহ্লাদি সুরে বলল,
– আহা কাঁদে না স্নিগ্ধা স্তব্ধকে তুমি আর এজীবনে পাবে না আজ আমি আমার ইচ্ছে পূরণ করবো কাল সকালেই তোমাকে পাচার করে দিব।

– আমি তোমাদের ইচ্ছে পূরণ হতে দিব না।

বলেই স্নিগ্ধতা উঠতে নিলো নাতাশা স্নিগ্ধতাকে চেপে ধরল কিন্তু পেরে উঠছে না।স্নিগ্ধতা নাতাশাকে ফেলে দিল,আদ্রিকের ইশারায় পেছনে থাকা মহিলাটি স্নিগ্ধতার হাতের পেছনের দিকে ইনজেকশন পুশ করে দিল।স্নিগ্ধতা ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠলো, শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে স্নিগ্ধতা বিছানায় পড়ে গেল।আদ্রিক বলল,

– এত সহজে আমার সামনে দিয়ে চলে যাবে তুমি! তা তো হতে দেওয়া যায় না আজ নিজ চোখে তুমি তোমার ক্ষতি হতে দেখবে অথচ বাঁধা দিতে পারবে না।

অনেক চেষ্টা করেও স্নিগ্ধতা উঠতে পারছে না ইনজেকশনের মাধ্যমে তার শরীর অবশ করে দেওয়া হয়েছে। আর্তনাদ করার চেষ্টা করেও পারছে না, নাতাশা আর রুশি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল এখন ঘরে শুধু আদ্রিক আর স্নিগ্ধতা। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করল স্নিগ্ধতা চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে যা দেখে আদ্রিক মজা পাচ্ছে।

স্নিগ্ধতার কাছে এগোনোর জন্য উদ্যত হতেই আদ্রিকের মোবাইল বেজে উঠল।আদ্রিক বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে একজন বলল,

– বস পুলিশ পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেছে নিচের সব গার্ডদের ধরে নিয়েছে।

– পুলিশ জানলো কিভাবে?

– জানি না স্যার।

আদ্রিক চিন্তায় পড়ে গেল এত কষ্টের প্লান এত সহজে নষ্ট হয়ে যাবে ইতোমধ্যে পুনরায় জ্ঞান হারালো স্নিগ্ধতা।আদ্রিক ভাবছে কিভাবে এখান থেকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে স্নিগ্ধতাকে নিয়ে পালানো যায়,ভাবতে ভাবতে ঘরের ভেতরে আরেকটা দরজার দিকে চোখ যায় দরজাটা খুলে এবার স্নিগ্ধতাকে কোলে নিতে যাবে ঠিক সেই সময় পেছন থেকে কেউ আদ্রিকের হাত শক্ত করে ধরে নেয়। আদ্রিক পেছনে ঘুরে স্তব্ধকে দেখে আঁতকে উঠল, ভয়ে একটা শুকনো ঢুক গিললো।স্তব্ধ স্নিগ্ধতার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর আদ্রিককে কিল ঘুষি মা’রতে লাগলো। কয়েকজন পুলিশ এসে স্তব্ধের হাত থেকে আদ্রিককে নিয়ে গেল।

নাতাশা আর রুশিকেও পুলিশ আটক করেছে, বাড়িতে আরও কয়েকজন মেয়েকে পাওয়া গেছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায়।স্তব্ধ স্নিগ্ধতার দুই গালে আলতো করে চাপড় দিয়ে ডাকতে লাগল,

– স্নিগ্ধ ওই স্নিগ্ধ উঠো না এই দেখো আমি এসেছি।

এবার আর স্নিগ্ধতার জ্ঞান ফিরলো না। রাতুল শিকদার বললেন,
– হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে ওকে স্তব্ধ নিয়ে আয় বউমাকে।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
_______________

নাতাশা এবং রুশির নামে শক্ত পোক্ত একটা কেস দিয়েছেন রাতুল শিকদার কিন্তু আদ্রিকের নামে দিতে পারেননি স্তব্ধের জন্য তিনি বুঝতে পারছেন না স্তব্ধ কি করতে চাইছে। নাতাশা চিৎকার করে বলল,

– স্তব্ধ আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে পাওয়ার জন্য এসব করেছি আমার সঙ্গে এমন করো না স্তব্ধ।

মূহুর্তের মধ্যেই মাথাটা আরও গরম হয়ে গেল স্তব্ধের নাতাশার দিকে এগিয়ে গিয়ে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় দিল নাতাশাকে। নাতাশা নিচে ছিটকে পড়ে গেল ঠোঁটের কোণ থেকে রক্ত বের হয়ে গেছে, রুশি মেয়ের করুন অবস্থা দেখে চেঁচিয়ে উঠলেন কিন্তু মেয়ের কাছে আসতে পারলেন না কারণ তাকে দু’জন মহিলা কনস্টেবল ধরে রেখেছে। নাতাশা ছলছল দৃষ্টিতে স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে আছে রাতুল শিকদার স্তব্ধকে টেনে বাহিরে নিয়ে গেলেন।

সমস্ত ঘটনা অরিত্রি শিকদারকে জানিয়ে দিয়েছেন রাতুল শিকদার, অরিত্রি শিকদার বোন আর বোনের মেয়ের এমন কর্মকাণ্ড শুনে অবাক হয়ে গেছেন এখনও উনার কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না।

চলবে……

[গল্প শেষের পথে, ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-২৫

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২৫

ঘুমের মধ্যেই উপলব্ধি করতে পারছে স্নিগ্ধতা শূন্যে ভাসছে, কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল স্নিগ্ধতা ঘুম তেমন প্রখর হয়নি বলতে গেলে কাঁচা ঘুম এই ঘুমের মধ্যেই কেউ তাকে শূন্যে ভাসিয়ে নিয়ে চলছে।স্নিগ্ধতার ভয় করছে চিৎকার দেওয়ার জন্য মুখ খুলেছে তখনি কেউ বলল,

– স্নিগ্ধ আমি।

অন্ধকারে কারো মুখ তেমন দেখা যাচ্ছে না।স্নিগ্ধতা ভিতু কন্ঠে বলল,
– আমি কে?

– ভূত।

স্নিগ্ধতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এবার বুঝতে পারলো এটা স্তব্ধ।স্নিগ্ধতা জিজ্ঞেস করল,
– এই মাঝরাতে আপনি এভাবে আমায় নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

– তোমাকে ফেলে দিতে নিয়ে যাচ্ছি।

স্নিগ্ধতা হাসলো সেই হাসি অন্ধকারে দেখতে না পেলেও উপলব্ধি করতে পারলো স্তব্ধ, হাসিতে শরীর দুলছে।স্নিগ্ধতা স্তব্ধের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

– এবার তো নামান।

– জায়গা মতো গিয়ে নামিয়ে দিব।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে নিয়ে ছাদে গেল তারপর কোল থেকে নামিয়ে দিল।স্নিগ্ধতার মুখে আবারও রাগ ফুটে উঠেছে চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে স্তব্ধ।স্তব্ধ মিনমিনে গলায় বলল,

– কি ব্যাপার বউ হাসাহাসি বন্ধ করে রাগ দেখাচ্ছো কেন?

– আমি কিন্তু কিছুই ভুলিনি।

– স্যরি।

– সবকিছু নষ্ট করে দিয়ে এখন স্যরি বলা হচ্ছে?

স্তব্ধ মুচকি হেসে স্নিগ্ধতাকে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দিল। ট্রাউজারের পকেট থেকে কয়েকটা কাঠগোলাপ বের করে একটা স্নিগ্ধতার কানে গুজে দিল বাকিগুলো স্নিগ্ধতার হাতে দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে গুনগুন করে গাইতে লাগলো,

তোমার জন্য নীলচে তারার
একটু খানি আলো
ভোরের রং রাতে মিশে কালো
কাঠগোলাপের সাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবি
আবছা নীল তোমার লাগে ভালো।

রাগ অভিমান সব যেন মুহূর্তেই গায়েব হয়ে গেল মুগ্ধ হয়ে স্নিগ্ধতা বলল,
– আপনি এত সুন্দর করে গানও গাইতে পারেন!

– শিখেছি।

– কেন?

– বউয়ের রাগ ভাঙানোর জন্য আজ কাজে লেগে গেল।

– আপনার এতসব পাগলামির পর আর রাগ করে থাকাও যায় না।

– কিন্তু এবার আমি রাগ করেছি।

স্নিগ্ধতা স্তব্ধের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– কেন?

– তুমি ডাকটাই ভালো লাগে এখন আবার আপনি করে কেন বলছো?

স্নিগ্ধতা চুপ।স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– আমার প্রেমিকা,ভালোবাসা,বউ, প্রিয়তমা সব তো তুমি। বন্ধুদের সঙ্গে অনেকদিন টাইম স্পেন্ড করা হয় না রাজ অনেক রিকোয়েস্ট করছিল তাই ওদের সাথেই অফিস শেষে বের হয়েছিলাম অনেক জোরাজুরিতে ডিনারও ওদের সঙ্গে করেছি আমি জানতাম না তুমি আমার জন্য এভাবে অপেক্ষা করবে একবার ফোন করে বলতে পারতে চলে আসতাম।

নিজের বোকামির কথা ভেবে লজ্জা লাগছে স্নিগ্ধতার অযথা স্তব্ধকে ভুল বুঝলো।স্তব্ধ আবারো বলল,
– আজকের জন্য মাফ করে দাও।

স্নিগ্ধতা হেসে বলল,
– মাফ করেছি এবার ঘরে চলো।

স্তব্ধ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল দু’জনে ঘরে চলে গেল। ঘরে এসেই স্তব্ধ বলল,
– এবার খেয়ে নিবে চলো।

– রাত প্রায় শেষের দিকে এখন আর খাবো না।

– না খেলে শরীর খারাপ হবে অল্প কিছু হলেও খেয়ে নাও।

– উহু বেশি রাত করে খাবার খাওয়ার অভ্যাস নেই এখন খেলে আরও খারাপ লাগবে।

স্তব্ধ মুখ গোমড়া করে বলল,
– তোমার যা ইচ্ছে।
_____________

ভোরের আলো অনেক আগেই ফুটে গেছে ব্যস্ততম শহরে যে যার যার গন্তব্যে যাচ্ছে। মাঝরাতে ঘুমানোর কারণে স্নিগ্ধতার ঘুম ভাঙেনি,স্তব্ধও স্নিগ্ধতাকে ডাকেনি সালেহাকে বলে গেছে যাতে ঘর পরিষ্কার করে নাস্তা ঘরে দিয়ে যায়।

ঘুম ভাঙতেই স্নিগ্ধতা টি-টেবিলে খাবারের ট্রে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো।ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেল, ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোফায় বসতেই স্তব্ধের ফোন আসলো।স্নিগ্ধতা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে স্তব্ধ জিজ্ঞেস করল,

– ঘুম ভেঙেছে মহারানী?

– হুম।

– নাস্তা করেছ?

– করবো, তুমি আমায় ডাকলে না কেন?

– রাতে অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছ তাই ডাকলাম না।

– তুমিও তো।

– দেরি করে ঘুমালেও আমার সমস্যা হয় না।

– কখন আসবে?

– সন্ধ্যার পরে আজ না বিয়ের শপিং এ যাওয়ার কথা।

– হুম।

– আচ্ছা রাখি তাহলে তুমি খেয়ে নাও।

– আচ্ছা।

– শুনো।

– হুম।

– লাভ ইউ।

বলেই কল কেটে দিল স্তব্ধ, স্নিগ্ধতা মুচকি হেসে খেতে লাগলো।

বিয়ের জন্য কলেজ থেকে তিহান আর শিরিন ছুটি নিয়েছে।আজ তারা বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবে।সব কলিগরা তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে,প্রিন্সিপাল স্যার তো সরাসরি বলেই দিলেন,

– আপনাদের দু’জনের ঝগড়া দেখে আমি আগেই বুঝেছিলাম আপনাদের মধ্যে কিছু একটা হতে যাচ্ছে আজ প্রমাণ হয়ে গেল।

শিরিন আর তিহান বেশ লজ্জা পেয়েছে।
_______________

সন্ধ্যার পরে রাহেলা বেগম, রাতুল শিকদার আর সালেহা বাদে সবাই শপিং করতে বের হয়েছে। শিরিনও এসেছে বড়রা আলাদা ভাবে কেনাকাটা করছে।তিহান, শিরিন আর স্নিগ্ধতা শাড়ির দোকানে বসে শাড়ি দেখছে অন্যদিকে অরিত্রি শিকদার শিরিনের মা কেনাকাটা করছে। শাড়ি দেখতে দেখতে তিহান বলল,

– ভাবী ভাইয়া কোথায় গেল?

– জানি না আপনার ভাই এক জায়গায় বসে থাকার লোক নয়।

তিহান মৃদু হেসে বলল,
– হু শুধু ছটফট করে।

ওদের কথার মাঝখানে স্তব্ধ এসে একটা মোড়া টেনে বসলো।স্নিগ্ধতা জিজ্ঞেস করল,
– কোথায় গিয়েছিলে?

– পুরো শপিং মলে একটা টুকি দিতে গিয়েছিলাম।

তিহান হেসে বলল,
– এত তাড়াতাড়ি টুকি দেওয়া শেষ?

– উহু মাঝপথে বউকে মিস করছিলাম তাই চলে এসেছি।

স্নিগ্ধতা চোখ গরম করে তাকাতেই স্তব্ধ মুখটা অসহায় করে ফেলল, স্তব্ধের কথায় দোকানদারও হেসে দিল।স্তব্ধ দোকানদারকে একটা শাড়ি দেখিয়ে বলল,
– ওই খয়েরী রঙের শাড়িটা দেখান তো।

দোকানদার শাড়িটা স্তব্ধের হাতে দিল,স্তব্ধ শাড়িটা উল্টে পাল্টে দেখছে তিহান বলল,
– ওয়াও ভাইয়া শাড়িটা অনেক সুন্দর।

– নজর দিবি না।

– কেন?

– এটা আমার বউয়ের জন্য।

– বিয়ে আমাদের আর তুই কিনা নিজের বউয়ের জন্য শাড়ি পছন্দ করছিস?

– তুইও পছন্দ কর নিষেধ করেছে কে?

তিহান মুখ বাঁকালো।স্তব্ধ দোকানদারকে শাড়ি প্যাকেট করে দিতে বলে স্নিগ্ধতার উদ্দেশ্যে বলল,
– এই শাড়িটা পরলে তোমাকে কি সুন্দর যে লাগবে উফ ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে।

স্নিগ্ধতা ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
– আমাকে সুন্দর লাগলে তোমার লজ্জা লাগবে কেন?

– নিজেকে কন্ট্রোল করবো কিভাবে এই ভেবে।

– সবসময় আজেবাজে চিন্তা ভাবনা।

তিহান শিরিনের জন্য নিজে পছন্দ করে কয়েকটা শাড়ি কিনলো। বিয়ের ল্যাহেঙ্গা কেনার দায়িত্ব অরিত্রি শিকদারের উপর শিরিনকে নিজে পছন্দ করে কিনতে বলা হয়েছিল কিন্তু তার কথা,’আমি এসব তেমন বুঝি না।’

সবাই এবার গহনার দোকানে প্রবেশ করেছে,স্তব্ধ স্নিগ্ধতার পাশ থেকে সরছেই না এমন ভাবে লেগে আছে যেন সরে গেলেই বউ হারিয়ে যাবে। তিহান শিরিনের জন্য গহনা দেখছে সাথে শিরিনের মাও আছে আরেকদিকে স্তব্ধ স্নিগ্ধতার জন্য গহনা দেখছে কিন্তু স্নিগ্ধতার পছন্দ হচ্ছে না।অরিত্রি শিকদার একটা নেকলেস স্নিগ্ধতার গলার কাছে ধরে বললেন,

– এটা তোমার গলায় অনেক সুন্দর লাগবে।

স্তব্ধ মৃদু হেসে বলল,
– হুম মম স্নিগ্ধকে বেশ মানাবে।

অরিত্রি শিকদার নেকলেস প্যাক করে দিতে বললেন। পেছন থেকে একটা মেয়ে চেঁচিয়ে ডাক দিল,

– হেই স্তব্ধ।

ডাকটা সবাই শুনতে পেয়েছে তাই তাদের দৃষ্টি মেয়েটির দিকে।অরিত্রি শিকদার ব্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন,
– এই মেয়েটা আবার কে?

স্নিগ্ধতাও স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে আছে উওরের আশায়।স্তব্ধ বিরক্ত চাহনি দিয়ে বলল,
– জেসি।

অরিত্রি শিকদার মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
– তোর ড্যড এই মেয়ের কথাই বলেছিল?

– হুম।

স্নিগ্ধতা মা-ছেলের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না ততক্ষনে জেসি চলে এসে স্তব্ধের সামনে দাড়ালো।জেসি ভাব নিয়ে বলল,
– অনেকদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হলো এখানে কেন এসেছ?

– তোমাকে বলবো কেন?

– তাও ঠিক, কেমন আছো?

– কি চাই?

– কিছু না আসলে আমি শপিং করতে এসেছিলাম আর তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।

স্তব্ধ কিছু বলল না।জেসি মেকি হেসে বলল,
– আমার বিয়ে হয়ে গেছে।

– ভালো।

– আমার হাজব্যান্ড তোমার থেকেও সুন্দর।

– আরও ভালো।

আশানুরূপ উওর না পেয়ে জেসি বিদায় জানিয়ে চলে যেতে লাগলো।অরিত্রি শিকদার তিহানের কাছে চলে গেলেন জেসি কিছু একটা ভেবে আবারও ফিরে এসে জিজ্ঞেস করল,

– তোমার ওয়াইফ কোথায়?

স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে দেখিয়ে বলল,
– এটা আমার একমাত্র বউ তোমার থেকেও সুন্দর।

জেসি আবারও মেকি হেসে বলল,
– আহারে স্তব্ধ তোমার জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে সামান্য টাচ করায় তুমি সবার সামনে আমাকে থাপ্পড় মা’রলে অথচ আজ তুমি একজন বিবাহিত ছেলে তোমার বউ তোমার সব ইজ্জত লুটে নিলো।

– ফাজিল মেয়ে।

বলেই স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে টেনে দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। জেসি হাসতে হাসতে একটা লোকের হাত ধরে চলে যাচ্ছে।স্তব্ধ লোকটাকে দেখতে পেয়েই বাঁকা হেসে চেঁচিয়ে বলল,

– আয়হায় জেসি তোমার হাজব্যান্ড তো বুইড়া।

আকষ্মিক এমন কথায় জেসি হতবাক হয়ে গেল জেসির হাজব্যান্ড কিছুটা লজ্জা পেয়েছে।জেসি রাগে কটমট করতে করতে শপিং মল থেকে বেরিয়ে গেল আশেপাশের মানুষগুলো হাসছে।স্নিগ্ধতা কিছুক্ষণ স্তব্ধের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে তারপর জোরে জোরে হেসে দিল।স্তব্ধ জিজ্ঞেস করল,

– হঠাৎ করে হাসছো কেন?

– তোমার কথায় হাসি পাচ্ছে এভাবে পাবলিক প্লেসে কেউ কাউকে অপমান করে?

– অপমান কখন করলাম আমি তো সত্যি কথাই বললাম।

– তুমি অনেক ইনোসেন্ট ভাবা যায় টাচ করেছিল বলে মেয়েটাকে থাপ্পড় মে’রেছ আমার না গর্ববোধ হচ্ছে।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতার কথায় পাত্তা দিল না। শপিং শেষে সবাই বাড়িতে চলে এসেছে তিহান অবশ্য শিরিন আর তার মা’কে পৌঁছে দিয়ে এসেছে।
_______________

সময় বহমান এক সপ্তাহ পার হয়ে বিয়ের দিন চলে এলো চারিদিক সুসজ্জিত করে সাজানো হয়েছে। বাড়িতে বিয়ে বিয়ে আমেজ আত্মীয় স্বজন সবাই এসে বাড়ি ভরিয়ে দিয়েছে। গতকাল গায়ে হলুদ শেষ হয়েছে আজ বিয়ে, বিয়ের আয়োজন কমিউনিটি সেন্টারে করা হয়েছে।তিহান বরবেশে সেজে আয়নায় বারবার নিজেকে দেখছে বিছানায় স্তব্ধ আর রাজ বিরক্ত হয়ে তাকে দেখছে।স্তব্ধ এবার বলল,

– বারবার নিজেকে আয়নায় দেখার মানে কি? তুই কি মেয়ে?

– মেয়ে হতে যাব কেন? আজ আমার বিয়ে সুন্দর করে যেতে হবে।

– যা না আমাকে কেন বসিয়ে রেখেছিস? ওইদিকে আমার বউ কিভাবে সেজেছে কে জানে?

– আজ অন্তত বউ বউ করিস না ভাইয়া আজ তোর ছোট ভাইয়ের বিয়ে সেদিকে খেয়াল দে।

রাজ নিরলস ভাবে বলল,
– হ্যা সব আনন্দ তোদের কেউ বিয়ে করেছে আবার কেউ বিয়ে করতে যাচ্ছে আমার কপালটাই খারাপ অন্যের বিয়ে দেখতে হচ্ছে।

তিহান বলল,
– আহা রাজ ভাই কষ্ট পেও না বিয়ে বাড়িতে আজ অনেক মেয়ে আসবে ওখান থেকে কাউকে পটিয়ে নিও।

– কথা মন্দ নয়।

রাতুল শিকদারের তাড়ায় সবাই গাড়িতে গিয়ে বসলো।অরিত্রি শিকদার রাহেলা বেগম সালেহা আরও কিছু মহিলা বাড়িতেই থাকবে।অরিত্রি শিকদার মূলত রাহেলা বেগমের জন্যই যাননি রাহেলা বেগম এখন আর তেমন চলতে পারেন না হাঁটুর ব্যথা বেড়েছে।

গাড়িতে উঠতে গিয়ে স্নিগ্ধতার দেখা পেল স্তব্ধ, স্তব্ধের দেওয়া খয়েরী শাড়িটাই স্নিগ্ধতা পরেছে তবে শাশুড়ির দেওয়া নেকলেস পরতে পারেনি কারণ মাথায় হিজাব পরেছে, হাতে সোনার চুড়ি। স্তব্ধ স্নিগ্ধতার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না,রাজ কনুই দিয়ে স্তব্ধকে গুতা দিয়ে বলল,

– দেখা শেষ হলে গাড়িতে উঠ।

স্তব্ধ হালকা কেশে গাড়িতে উঠলো একেবারে স্নিগ্ধতার পাশ ঘেঁষে বসলো। ফিসফিস করে স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে বলল,

– তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে স্নিগ্ধ দৃষ্টি সরাতেই পারছি না।

স্নিগ্ধতা লাজুক হেসে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। রুশি,নাতাশা,নিতুও তাদের সঙ্গে যাচ্ছে পেছনের গাড়িতেই তারা উঠেছে।

শিরিন সবেমাত্র পার্লার থেকে বধূ বেশে সেজে সেন্টারে আসলো, শিরিনের জন্য নির্ধারিত একটা ঘরে শিরিন এসে বসলো আর তারপাশে সব বান্ধবী এবং কাজিনরা বসে আছে।

তিহানদের গাড়ি এসে কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছালো সবাই বর এসেছে বলে চেঁচাতে চেঁচাতে গাড়ির সামনে দাড়ালো। স্নিগ্ধতা গাড়ি থেকে নেমেই শিরিনের কাছে চলে গেল। গেইট থেকে সব নিয়ম বাঁধা পার করে তারপর সবাই ভেতরে প্রবেশ করলো। তিহানকে তার নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে বসানো হয়েছে,স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে না দেখে মুখ মলিন করে রেখেছে।
______________

বিয়ের পর্ব শেষ তিহান আর শিরিনের বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে,তাদের দু’জনকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে।তিহান আড়চোখে বারবার তাকাচ্ছে, তিহানের চাহনি দেখে শিরিন বলল,
– বাড়িতে নিয়ে সারাক্ষণ তাকিয়ে থেকো এখন আপাতত ঠিক হয়ে বসো।

তিহান রুমাল দিয়ে কপাল মুছে বলল,
– তুমি বলে ডাকা শুরু করে দিয়েছ!

– এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী তুমি বলেই তো ডাকবো।

– হুম।

কিছু মেয়ে স্তব্ধের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে দৃষ্টি দিয়েই যেন গিলে খাচ্ছে।স্নিগ্ধতা অনেকক্ষণ যাবত খেয়াল করছে আর ভেতরে ভেতরে জেলাস ফিল করছে।স্নিগ্ধতা গিয়ে স্তব্ধের পাশ ঘেঁষে দাড়িয়ে বলল,

– বাবা তোমাকে ডাকছে।

– কেন?

– জানি না শুধু বলল তোমাকে ডেকে দিতে।

– যাচ্ছি।

স্তব্ধ রাতুল শিকদারের কাছে চলে গেল।স্তব্ধ যেতেই মেয়েগুলোর মুখ মলিন হয়ে গেছে,স্নিগ্ধতা মেয়েগুলোর দিকে এগিয়ে গিয়ে মৃদু হেসে বলল,

– ওদিকে তাকিয়ে লাভ নেই ওটা আমার হাজব্যান্ড।

স্নিগ্ধতা কথাটা বলেই হাসতে হাসতে চলে গেল মেয়েগুলোর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারা যে অনেক অবাক হয়েছে।

চলবে………..

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-২৪

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২৪

বাড়িতে স্নিগ্ধতার পুরো পরিবারকে দেখে চমকে গেছে শিরিন।শিরিনের বাবা-মাকে ফোন করে সবটা জানিয়ে দিয়েছিল স্নিগ্ধতা তাই তারা আগে থেকেই যেন প্রস্তুত ছিলেন। শিরিনকে শাড়ি পরিয়ে সোফায় বসানো হয়েছে, শিরিনের ঠিক বরাবর তিহান বসে আছে চোখেমুখে লাজুকতা ফুটে উঠেছে। শিরিন ইশারা দিয়ে স্নিগ্ধতাকে বারবার প্রশ্ন করছে কিন্তু স্নিগ্ধতা মুচকি মুচকি হাসছে।

এবার রাতুল শিকদার মুখ খুললেন,
– তিহান আমার ভাইয়ের ছেলে হলেও ওকে আমরা নিজেদের ছেলে হিসেবে বড় করেছি অনেকদিন ধরে বিয়ের কথা ভাবছিলাম তিহানের শিরিনকে পছন্দ হয়েছে তাই আর অপেক্ষা না করে আপনাদের কাছে চলে আসলাম বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।

শিরিন অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল মনে মনে বলল,’ছেলেটা এত ফাস্ট!প্রেম না করেই বিয়ে করতে চলে এসেছে?’

তিহানের ঠোঁটের কোণে হাসি প্রশস্ত হচ্ছে।শিরিনের এখন লজ্জা লাগছে।দুই পরিবার কিছুক্ষণ কথা বললেন, শিরিনের বাবা-মা বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন রাজি না হবার কথা নয় তিহান এক কথায় পাত্র হিসেবে অনেক ভালো তার উপর স্নিগ্ধতারও শশুর বাড়ি।

তিহান আর শিরিন একে অপরকে আংটি পরিয়ে দিলো। বিয়ের তারিখও ঠিক করা হয়ে গেছে আগামী সপ্তাহেই বিয়ে আসলে তিহান আর দেরি করতে চাইছে না। শিরিন ঘরে চলে গেল সঙ্গে স্নিগ্ধতাকেও নিলো ঘোমটা মাথা থেকে ফেলেই বলতে লাগলো,

– এই তোর সারপ্রাইজ?

– হুম কেমন লেগেছে?

শিরিন মুখ বাঁকিয়ে নিলো,স্নিগ্ধতা বিছানায় বসে বলল,
– এই প্রথম একটা কাজের কাজ করেছিস এখন দুই বান্ধবী এক বাড়িতে থাকবো।

– হুম তার আগে তোর দেবরের সঙ্গে হিসাব নিকাশ বাকি আছে।

– সব হিসাব নিকাশ মিটিয়ে নে।

– হুম, একটা প্রশ্নের উত্তর দে তুই।

– কি প্রশ্ন?

– তুই স্তব্ধকে মনের কথা বলেছিস?

– উহু।

– কেন?

– সম্পর্কটা তো ভালোই চলছে মনের কথা বলার কি দরকার।

– অবশ্যই বলতে হবে আজই বলবি।

– উহু আমার শরম করে।

– রাখ তোর শরম আমি যা বলছি তাই করবি।

– বলতে হবে কেন? উনি আমার মনের কথা ঠিকই বুঝতে পারেন।

– বুঝতে পারলে হবে না তোকে বলতে হবেই।

– এমন করছিস কেন? উনাকে দেখলেই আমার লজ্জা লাগে তার উপর মনের কথা বলবো অসম্ভব তুই বরং তোর আর তিহান ভাইয়ার কথা ভাব।

– আমাদের কথা আর কি ভাববো? আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর তোদের বিয়ে হয়েছে এক ঝামেলার মধ্য দিয়ে বিয়ের পরেও ঝামেলা এখনও কিছু বলতে পারলি না।

স্নিগ্ধতা মুখ গোমড়া করে ফেলল, শিরিন বলল,
– আর দেরি করিস না মনের কথা বলে দিতে শিখ।

– কিভাবে?

শিরিন মুচকি হেসে ফিসফিস করে স্নিগ্ধতাকে বুঝিয়ে বলল।স্নিগ্ধতা হেসে বলল,
– আচ্ছা।

শিকদার পরিবারের সবাই নিজেদের বাড়ি ফিরে গেল। রাতুল শিকদার সোজা অফিসে গেছেন স্তব্ধের উপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারেন না।

রাতুল শিকদার এসেই স্তব্ধের কেবিনে ঢুকলেন।স্তব্ধ গালে হাত দিয়ে ফাইল দেখছে, রাতুল শিকদার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের কেবিনে চলে গেলেন।
______________

নিজেদের বেড রুম অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে স্নিগ্ধতা।হরেক রঙের বেলুন মেঝেতে ছড়িয়ে দিয়েছে।দেওয়ালে আর বিছানায় গোলাপ, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা,গাঁদা ফুল লাগানো হয়েছে।তিহান স্নিগ্ধতাকে সাজাতে সাহায্য করেছে ফুলগুলোও তিহান নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছে।মূলত শিরিন তিহানকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছে।

বেলকোনিতে দু’জনে বসার মতো ছোট একটা টেবিল আর দু’টো চেয়ার রাখা হয়েছে মাঝখানে সুন্দর একটা কারুকাজের স্টেন যার ভেতর বড় বড় দু’টো মোমবাতি।ক্যান্ডেলাইট ডিনারের জন্য সাজানো হয়েছে এই বুদ্ধিটা তিহানের,স্নিগ্ধতা অস্থিরতা নিয়ে বলল,

– ভাইয়া এগুলো একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না?

– একদম না ভাবী, আমি তো ভেবে রেখেছি বিয়ের প্রথম রাতে শিরিনকে নিয়ে এভাবে আমিও ক্যন্ডেলাইট ডিনার করবো।

– আপনারটা মানা যায় কিন্তু আমি!

– এটা কোনো ব্যাপার না ভাবী, ভাইয়া সারপ্রাইজড হয়ে যাবে সাথে খুশিও হবে।

স্নিগ্ধতার অস্থিরতা এখনও যায়নি ভেতরে লজ্জা কাজ করছে।তিহান সবকিছু সাজানো শেষে বলল,
– সব কমপ্লিট আমি এবার আসি ভাবী তুমি অপেক্ষা করো ভাইয়া আসা পর্যন্ত নাকি ভাইয়াকে কল করবো?

– কল করার দরকার নেই আমি অপেক্ষা করবো।

– ঠিক আছে গুড নাইট হেভ এ নাইছ নাইট।

স্নিগ্ধতা মুচকি হাসলো।তিহান চলে যাচ্ছিল কি যেন মনে করে আবার এসে হাতে থাকা গোলাপের গুচ্ছ এগিয়ে দিয়ে বলল,

– এটা দিয়ে ভাইয়াকে প্রপোজ করিও।

স্নিগ্ধতা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই তিহান ভয় পেয়ে ফুলগুলো রেখে দৌড়ে চলে গেল।

তিহান ঘরে এসে দরজা আটকে মোবাইল নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।শিরিনের নাম্বারে ফোন দিতেই সাথে সাথে রিসিভ হয়ে গেল।শিরিন আগে বলা শুরু করল,

– কাজ হয়েছে? সব ঠিকঠাক ভাবে ব্যবস্থা করেছেন?

– আমি যে কাজে হাত দেই সেই কাজ ঠিকঠাকই হয়।

– নিজের সুনাম করা বন্ধ করুন আরেকটা কথা ওদের আবার এসব নিয়ে লজ্জা দিয়েন না।

– লজ্জা শুধু ভাবী পায় আমার ভাইয়ার লজ্জা বলতে কিছুই নেই তোমার আমার কাহিনী শুনে আমাকে কম জ্বালাতন করেনি।

– আমি স্নিগ্ধার কথাই বলেছি।

– এবার আপনি আমাদের কথা বলুন।

– আমাদের কথা আর কি বলবো প্রপোজ না করেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছেন এখন আবার হবু বউকে আপনি বলে সম্বোধন করছেন আপনার মতো বোকা হাদারাম আমি দু’টো দেখিনি।

– আপনি আমায় বোকা হাদারাম বললেন!

– হ্যা বললাম বলার মতো কাজগুলোই করছেন।

– বিয়ের পর প্রপোজ করবো প্রমিস, আপনিও আমায় আপনি বলেই সম্বোধন করছেন।

– নিজের ভাইয়ের থেকে কিছু হলেও শেখা উচিত।

– ভাইয়া আবার কি করলো?

– দুলাভাই স্নিগ্ধাকে তুমি বলে আর স্নিগ্ধা দুলাভাইকে আপনি বলে।

– আপনিও কি আমায় আপনি আপনি করে ডাকবেন?

– বিয়ের পর দেখা যাবে।

– আমিও বিয়ের পর দেখবো।

– আপনার সঙ্গে কথা বলা মানে পাগল হয়ে যাওয়া রাখুন।

শিরিন নিজেই কল কেটে দিলো।তিহান মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলল,
– যাহ নিজেই কেটে দিলো!
.
.
.
দুই ঘণ্টা স্তব্ধের জন্য অপেক্ষা করছে স্নিগ্ধতা কিন্তু স্তব্ধের ফেরার কোনো নাম নেই একবার মনে হয়েছিল কল দিবে পরক্ষনে ভাবনা বদলে ফেলল প্রিয় মানুষের জন্য অপেক্ষা করতে মন্দ লাগছে না।

রাতুল শিকদার অনেক আগেই অফিস থেকে ফিরে এসেছেন তারা একসঙ্গেই ডিনার করেছে স্নিগ্ধতা খেতে যায়নি।স্তব্ধ অফিস শেষে আজ বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গেছে,রাজ অনেক অনুরোধ করেছিল আজ যেন বন্ধুদের একটু সময় দেয়। বন্ধুদের এমন অনুরোধে স্তব্ধ না করতে পারেনি এমনিতেও অনেকদিন হলো বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো হয় না।

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে স্নিগ্ধতাকে জানানোর কথা ভুলেই গেছে স্তব্ধ। বন্ধুত্ব সম্পর্কটাই এমন বন্ধুদের সঙ্গে থাকলে মানুষ মূল্যবান কাজগুলোও ভুলে যায় সময় কোনদিক দিয়ে বয়ে যায় খোঁজ থাকে না। সবার জোরাজুরিতে বন্ধুদের সঙ্গেই ডিনার করেছে স্তব্ধ ঘড়িতে চোখ পরতেই চমকে গেল সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে।স্তব্ধ উঠে গিয়ে বলল,

– অনেক রাত হয়ে গেছে বাড়িতে যেতে হবে।

রাজ জিজ্ঞেস করল,
– মাত্র সাড়ে এগারোটা বাজে এখন বাড়িতে যাবি? আগে তো কত রাত পর্যন্ত আমরা পার্টি করতাম ঘুরতাম আড্ডা দিতাম।

– আগে আমার বউ ছিল না এখন বউ আছে বিবাহিত ছেলেদের বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে হয় না তোর মতো অবিবাহিত ছেলে বউয়ের কদর বুঝবে কি করে।

নিলয় মাঝখান থেকে বলে উঠলো,
– ভাই বউ আমারও আছে কিন্তু তোর মতো বউ পাগল হয়ে যাইনি।

– চুপ মিথ্যুক তুই বউয়ের কাছ থেকেই সোজা এখানে এসেছিস আর আমি সেই সকালে আমার বউকে দেখে এসেছি তারপর অফিস আর অফিস থেকে এখানে, তোরা থাক আমি গেলাম টাটা।

স্তব্ধ আর কারো কথা না শুনেই বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেল।রাজ দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বলল,

– স্তব্ধের মতো ছেলেও বউ পাগল হয়ে গেল আর আমি অবিবাহিত রয়ে গেলাম এ সহ্য করার মতো নয় আজকেই বাবা-মায়ের সঙ্গে আমি কথা বলবো আমার বিয়ে নিয়ে।

নিলয় হেসে বলল,
– ভালোই হবে আরেকটা বিয়ে খাবো‌।

– বিয়ে কি খাওয়ার জিনিস নাকি?

– আমি বলতে চাইছি বিয়ের দাওয়াত খাবো।
__________

বাড়িটা পুরো শান্ত চারিদিকে নিরবতা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বারোটা বেজে গেছে, সদর দরজা আনলক ছিল।স্তব্ধ দরজা ভালোভাবে লক করে লাইট জ্বালিয়ে আশেপাশে দেখে নিলো তারপর নিজের ঘরের দিকে গেল।

ঘর পুরো অন্ধকার স্তব্ধ মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালালো যাতে স্নিগ্ধতার ঘুমের কোনো সমস্যা না হয়।মেঝেতে বেলুন দেখে স্তব্ধের ব্রু কুঁচকে গেল কিন্তু শরীর অনেক ক্লান্ত বাহির থেকে এসেই পোশাক বদলে গোসল করার অভ্যাস স্তব্ধের আজও তার ব্যতিক্রম হলো না ভাবনা বাদ দিয়ে দিলো।

স্তব্ধ শব্দ না করে নিজের পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ঘরে লাইট জ্বালানো দেখতে পেল, পুরো ঘর সাজানো দেখে বেশ অবাক হলো বিছানায় তাকিয়ে স্নিগ্ধতাকে দেখতে না পেয়ে মনে মনে বলল,’স্নিগ্ধ ঘুমায়নি?’

টাওয়াল সোফায় রেখে বেলকোনির দিকে এগিয়ে গেল স্তব্ধ।বেলকোনিতে রাখা টেবিলের উপর ক্যান্ডেল জ্বলছে,নুপূরের শব্দ শুনতেই পাশে তাকিয়ে স্নিগ্ধতাকে দেখতে পেল।

স্নিগ্ধতাকে অনেক সুন্দর লাগছে শরীরে জর্জেট শাড়ি পায়ে নুপূর চুলগুলো রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বাঁধা মুখে কোনো প্রসাধনীর ব্যবহার নেই এতে যেন সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।স্তব্ধ অনুভব করছে তার সামনে সবথেকে সুন্দর এক নারী দাড়িয়ে আছে যাকে দেখে সে কথা বলতে ভুলে গেছে চোখ ফেরাতে পারছে না। স্তব্ধের এমন চাহনি দেখে স্নিগ্ধতার ভেতরে ঢুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে অভিমানী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

– এত দেরি হলো কেন আসতে? আমি অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম।

– কেন অপেক্ষা করছিলে?

কি উওর দিবে ভেবে পাচ্ছে না স্নিগ্ধতা। মনে মনে অনেক সাহস জুগিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দৌড়ে গিয়ে স্তব্ধকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।স্তব্ধ আরও চমকে গেল স্নিগ্ধতাকে তার আচেনা লাগছে তবে ছোঁয়া গুলো ভালোই লাগছে। স্নিগ্ধতা বলতে লাগলো,

– মানুষ কখন কারো জন্য অপেক্ষা করে?

– যাকে ভালোবাসে।

– আমিও তোমাকে ভালোবাসি স্তব্ধ।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরলো এই প্রথম স্নিগ্ধতা স্তব্ধকে তুমি বলে সম্বোধন করছে।স্নিগ্ধতা আবারও বলল,

– প্রথম থেকেই তোমার প্রতি আমার একটা ভালোলাগা কাজ করছিল এই ভালোলাগাই একসময় ভালোবাসায় পরিণত হয় আমার প্রতি তোমার ছোট ছোট কেয়ার গুলো ভিষন ভালো লাগতো, তোমাকে ভালোবাসি বলতে চেয়েও বলতে পারিনি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমার মনের কথাগুলো বুঝতে পারবে জানি না কতটুকু বুঝতে পেরেছ কিন্তু মনের ভেতর না বলা কথাগুলো আর আটকে রাখা যাচ্ছিল না ইচ্ছে করছিল সব অনুভূতি গুলো প্রকাশ করে দিতে।

– আমার বউটা যে আমাকে ভালোবাসে আমি জানতাম আমিও চেয়েছিলাম যাতে তুমি নিজ মুখে আমায় ভালোবাসি বলো।

স্নিগ্ধতা মৃদু হাসলো, লজ্জা কিছুটা হলেও কমেছে ভেতরে আনন্দ কাজ করছে।স্তব্ধ স্নিগ্ধতার থুতনি ধরে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

– আপনির থেকে তোমার মুখে তুমি ডাকটা অনেক সুন্দর লাগে রোমান্টিক রোমান্টিক ফিল আসে বাই দ্য ওয়ে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আমি কখনও পরী দেখিনি কিন্তু তোমায় দেখছি।

স্নিগ্ধতা লাজুক হেসে বলল,
– শুকনো কথায় চিড়ে ভিজবে না।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল
– এখন কি করতে হবে মহারানী?

– সুন্দর করে আমায় প্রপোজ করতে হবে।

– পারবো না বউকে আবার প্রপোজ করতে হয় নাকি?

– কাকে করতে হয়?

– প্রেমিকাকে করতে হয়।

– আপনার প্রেমিকা আছে!

– আছে তো।

স্নিগ্ধতার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল কোমড়ে দুই হাত রেখে বলল,
– আমি ছাড়া আপনার জীবনে আর কেউ থাকবে না।

– তাহলে ওই প্রেমিকার কি হবে?

– ঝাটা পেটা করবো সুড়সুড় করে চলে যাবে।

– ওকে মা’রলে আমি কষ্ট পাবো।

স্নিগ্ধতা ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।স্তব্ধ মৃদু হেসে বলল,
– এখানে টেবিল কেন নিয়ে আসলে?ক্যান্ডেল জ্বলছে খাবার রাখা ক্যান্ডেলাইট ডিনারের প্ল্যান নাকি?

– তিহান ভাইয়া এগুলো করেছে।

স্তব্ধ অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
– ওহ আসলে আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।

মনটা বিষিয়ে গেল স্নিগ্ধতার আনন্দ গুলো রাগ আর অভিমানে রূপান্তরিত হলো। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
– আপনার জন্য এতকিছু করাটাই ভুল হয়েছে, আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল আপনি আমাকে ভালোবাসেন না সবকিছু সহানুভূতি ওই প্রেমিকার সঙ্গে ডিনার করেছেন তাই না? ওই প্রেমিকা নিয়েই থাকুন আমার কাছে আর আসবেন না।

স্তব্ধ অস্থির হয়ে বলল,
– পুরোটা না জেনে এতকিছু ভেবে নিয়েছ!

স্নিগ্ধতা কিছু বলল না স্তব্ধের পাশ কাটিয়ে হাঁটা ধরলো।স্তব্ধ স্নিগ্ধতার হাত ধরে বলল,
– আরে কোথায় যাচ্ছো?

– আপনার সঙ্গে আমি থাকবো না দিদানের ঘরে গেলাম আপনি একাই থাকুন।

বলেই স্তব্ধের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে গেল স্নিগ্ধতা।স্তব্ধ অসহায় কন্ঠে বলল,
– উফ স্তব্ধ কেন দুষ্টুমি করতে গেলি এত সুন্দর মোমেন্ট নষ্ট হয়ে গেল।

রাহেলা বেগম ঘুমিয়ে আছেন,স্নিগ্ধতা রাহেলা বেগমের ঘরে এসে দরজা চাপিয়ে দিয়ে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো। মনে মনে স্তব্ধকে ধুয়ে দিচ্ছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নাও করছে।

চলবে……..

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-২৩

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২৩

বিছানায় শুয়ে পা দুলাচ্ছে স্তব্ধ, দু’দিন পর পর অফিস মিস দেওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।এই অভ্যাসের কারণে রাতুল শিকদারের কাছে প্রতিনিয়ত বকাঝকাও খায় কিন্তু অভ্যাস আর বদলায় না।স্নিগ্ধতাকে নাস্তা করার সময় দেখেছিল তারপর আর দেখতে পাচ্ছে না।স্নিগ্ধতা ইচ্ছে করেই ঘরে আসছে না, ঘরে আসলেই আবার কোন লজ্জায় পড়তে হবে কে জানে।

স্তব্ধ এবার গলা খাঁকারি দিয়ে ডাক দিলো,
– স্নিগ্ধ….. এদিকে আসো।

স্নিগ্ধতা শাশুড়ি এবং দিদানের সঙ্গে বসে টিভি দেখছিল স্তব্ধের ডাক শুনতেই কলিজা শুকিয়ে গেল।অরিত্রি শিকদার বললেন,
– স্তব্ধ ডাকছে দেখে আসো কি দরকার।

– যাচ্ছি মা।

স্নিগ্ধতা স্তব্ধকে মনে মনে গালি দিতে দিতে ঘরের দিকে ছুটলো। এখন বাড়িতে স্নিগ্ধতার ভালোই সময় কাটে শাশুড়ি বউমার অনেক মিল হয়েছে।

স্নিগ্ধতা ঘরে প্রবেশ করে স্তব্ধকে শুয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হলো বিরক্ত প্রকাশ না করে বলল,

– ডাকলেন কেন?

– ঘরে জামাই রেখে পাষান হৃদয় নিয়ে বাইরে ঘুরঘুর করলে ডাকতে তো হবেই।

– আমার হৃদয় পাষান?

– হুম এই যে আজ আমি অফিসে গেলাম না তোমার তো উচিত ছিল আমার সামনে বসে থাকার আর তুমি কিনা মম আর দিদানের সঙ্গে টিভি দেখো।

– অযথা বসে থাকতে ভালো লাগে না।

– উফ আমি কি তোমায় অযথা বসিয়ে রাখতাম নাকি?

– কি করাতেন?

– রোমাঞ্চ করতাম।

– কেন ডেকেছেন তা বলুন।

– রেডি হয়ে নাও আমরা বের হব।

– কোথায়?

– প্রশ্ন করো না গেলেই দেখতে পাবে।

– মা’কে বলে আসি।

– কাউকে বলতে হবে না তুমি দ্রুত রেডি হয়ে আসো।

স্নিগ্ধতা মাথা নাড়িয়ে আলমারির কাছে যেতেই স্তব্ধ আবারো পেছন থেকে ডেকে বলল,
– ভেতরে দেখো একটা প্যাকেটে বোরকা হিজাব আছে পরে নাও।

স্নিগ্ধতা বোরকা হিজাব বের করে পরতে লাগলো স্তব্ধ নিজের পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণ পর স্তব্ধ বের হলো কালো জিন্স সাদা শার্ট পরে।আয়নার সামনে গিয়ে চুল গুলো ঠিক করে নিয়ে শার্টের উপরে একটা কালচে কোট পরলো।স্নিগ্ধতা রেডি হয়ে বিছানায় বসে স্তব্ধকে দেখছে, স্তব্ধ ওয়ালেট আর মোবাইল হাতে নিয়ে স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলল,

– চলো।

স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতা দু’জনেই বেরিয়ে গেল। গাড়ি ড্রাইভার চালাচ্ছে কিছুক্ষণ পর একটা ভার্সিটির সামনে গাড়িটা থামলো,স্তব্ধ নেমে গেল সাথে স্নিগ্ধতাও নামলো।স্নিগ্ধতার মনে প্রশ্ন ঘুরছে প্রশ্নগুলো দমিয়ে রেখে স্তব্ধের সঙ্গে সামনের দিকে চলতে লাগলো। স্তব্ধের হাতে একটা ফাইল ছিল যা এতক্ষণ স্নিগ্ধতা খেয়াল করেনি সবকিছু শেষে স্নিগ্ধতার সাইন নিতে যাবে তখনি স্নিগ্ধতা প্রশ্ন করল,

– এগুলো?

– তোমার মাস্টার্সে ভর্তির কাগজপত্র।

স্নিগ্ধতা বেশ অবাক হলো স্তব্ধ মৃদু হেসে বলল,
– আগে সাইন করো।

স্নিগ্ধতা সাইন করতেই দু’জনে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে গেল।স্তব্ধ বলল,
– তোমার তো ইচ্ছে ছিল মাস্টার্স কমপ্লিট করার আমি চাই তোমার ইচ্ছে পূরণ হোক এছাড়া বাড়িতেও বোরিং সময় পার করতে হয় এর থেকে ভার্সিটি আসলে পড়াশোনায় থাকলে ভালো লাগবে।

– কিন্তু..

– কোনো কিন্তু নয়, ফুচকা খাবে?

স্নিগ্ধতা আশেপাশে তাকাতেই একটা ফুচকা ওয়ালাকে দেখে মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকালো।স্তব্ধ জানে স্নিগ্ধতার ফুচকা পছন্দ তাই আজ নিজেও স্নিগ্ধতার খুশির জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে ফুচকা খেয়েছে।
____________

‘আপনার সাহস হয় কিভাবে আমাকে রোজ রোজ গাঁ জ্বালানো মেসেজ দেওয়ার?’

কলেজ শেষে রাস্তায় দাড়িয়ে তিহানের দিকে আঙ্গুল
তাক করে ধমকিয়ে কথা বলছে শিরিন।শিরিনের রাগমিশ্রিত মুখ দেখে তিহান একটা ঢুক গিললো। শিরিন আবারো ধমকিয়ে বলল,

– কথা বলছেন না কেন? সামনাসামনি ঝগড়ায় পারেন না বলে মেসেজ করে ঝগড়া করেন?

– ঝগড়া কোথায় করলাম?

– তাহলে কি আমায় লাইন মা’রার চেষ্টা করছেন?

– উহু আমি দুষ্টুমি করেছি, আপনাকে রাগানোর জন্য মেসেজ গুলো দিয়েছি।

– এখন রেগে একটা ঘুষি মা’রি?

– না না এ করবেন না এখনও আমার বিয়ে করা বাকি আপনাকে আর কখনও মেসেজ দিব না ঝগড়াও করবো না এমনকি দেখা হলে কথাও বলবো না প্রমিস।

শিরিনের রাগটা আরও বেড়ে গেল তিহানের কলার চেপে ধরে বলল,
– কেন মেসেজ দিবেন না কথা বলবেন না হাত ভেঙ্গে গলায় ঝুলিয়ে দিব।

তিহান ভিতু কন্ঠে বলল,
– এমন করছেন কেন? সবাই দেখছে।

– আপনি জানেন না কেন এমন করছি?

– আমি তো সমস্যার সমাধান করে দিলাম।

– এটা সমস্যার সমাধান নয়।

– ওহ আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা? আমি প্রমিস করলে প্রমিস রাখি।

শিরিন কলার ছেড়ে দিয়ে তিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,
– অথচ একবারও বললেন না আমার জন্য আপনার ভেতরে অনুভূতি বিচরণ করছে আমাকে আপনি পছন্দ করেন কি সুন্দর করে বলে দিলেন আর কথা বলবেন না মেসেজ করবেন না।

তিহান অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিরিনের চোখেও নিজের জন্য ভালোলাগা খুঁজে পেয়েছে। শিরিন আর এক মুহূর্তও না দাড়িয়ে তিহানের সামনে থেকে চলে গেল।

তিহান শিরিনকে পছন্দ করে কিন্তু সাহসের অভাবে বলতে পারছে না যদি রাগারাগী করে কিংবা স্নিগ্ধতাকে বলে দেয় আর তখন যদি স্নিগ্ধতা খারাপ ভাবে। আজ শিরিনের চোখের ভাষা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে তিহান।
.
.
.
তিহান চুপচাপ বসে আছে কতকিছু ভাবছে।অরিত্রি শিকদার তিহানের ঘরে এসে তিহানকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞেস করলেন,

– কি হয়েছে তোর? এমন মনমরা কেন?

– আমি বিয়ে করবো বড় আম্মু।

অরিত্রি শিকদার চমকে গেলেন।অরিত্রি শিকদারের মুখের অবয়ব দেখে জিহ্বায় কামড় দিলো তিহান, অরিত্রি শিকদার বললেন,

– ভালো সিদ্ধান্ত তো মেয়ে দেখা তাহলে শুরু করি?

তিহান এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– মেয়ে দেখতে হবে না কষ্ট করে মেয়ে সামনেই আছে।

অরিত্রি শিকদার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– কই মেয়ে?

– আরে বড় আম্মু এই সামনের কথা বলিনি আমি বলতে চাইছি মেয়েকে তোমরা চেনো।

– কে?

– ভাবীর বান্ধবী শিরিন।

– কিহহ!

– প্লিজ বড় আম্মু আমার ক্ষেত্রে দজ্জাল হয়ো না শিরিনের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও।

– তুই আমাকে দজ্জাল ভাবিস!আজ তোর বড় আব্বু আসুক কালই শিরিনদের বাড়ি যাব আমি।

– লাভ ইউ বড় আম্মু।
____________

বাড়িতে এসে স্তব্ধ-স্নিগ্ধতা তিহান আর শিরিনের ব্যাপারটা জানতে পেরেছে।এই নিয়ে স্তব্ধ তিহানের সঙ্গে অনেক মজা করেছে। রাতে রাতুল শিকদারকেও অরিত্রি শিকদার জানিয়েছে, রাতুল শিকদার রাজি হয়ে গেছেন আগামীকাল শিরিনদের বাড়িতে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে আছে, স্নিগ্ধতাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে অনেক খুশি।স্তব্ধ জিজ্ঞেস করল,

– আজকে এত খুশি কেন মহারানী?

– খুশি হব না আমরা দুই বান্ধবী এক বাড়িতে থাকবো একসঙ্গে সংসার করবো,জানেন ছোট বেলায় সবসময় বলতাম বিয়ে করলে দু’জনে এক বাড়ির দুই ভাইকেই বিয়ে করবো ছোটবেলার কথাটা যে সত্য হয়ে যাবে কে জানতো।

স্তব্ধ অসহায় কন্ঠে বলল,
– আমাদের দুই ভাইয়ের জীবনটা তেজপাতা হয়ে যাবে, জেনে বুঝে কেন যে খাল কেটে কুমির আনতে চাইছে তিহান?

– আপনি আমার বান্ধবীকে কুমির বললেন?

– উহু কুমির নয় ডায়নী তোমাকে আজেবাজে বুদ্ধি দেয়।

– ভালো হচ্ছে না কিন্তু।

– বান্ধবীর নামে কথা বললেই গায়ে লাগে আর জামাইয়ের নামে যখন বান্ধবী কথা বলে তখন গায়ে লাগে না?

– শিরিন মুটেও আপনার নামে কিছু বলে না।

– আমার জানা আছে হুহ।

– আপনার আর কি কি জানা আছে?

– তোমাকে বলবো কেন?

– কাকে বলবেন?

– কাউকে বলবো না আমার মনের ভেতর চাপিয়ে রাখব।

– রাখেন চাপিয়ে আমার জানার ইচ্ছে নেই।

বলেই রাগ দেখিয়ে অন্যপাশে ফিরে শুয়ে পড়লো স্নিগ্ধতা।স্তব্ধ পেছন থেকে শক্ত করে ধরে বলল,
– বউ তুমি রাগ করলেও সুন্দর লাগে হাসলেও সুন্দর লাগে তোমাকে ধরতেও ভালো লাগে আহা আমার পরী বউ।

– ছাড়ুন আমায়।

– তোমায় ছাড়লে ঘুমাবো কি করে?

– ঘুমাতে হবে না ছাড়ুন।

স্তব্ধ দুষ্টু হেসে বলল,
– তার মানে তুমি কি রোমাঞ্চ করতে চাইছো বউ?

স্নিগ্ধতা বুঝতে পারলো সে কি বলে ফেলেছে দ্রুত কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,
– এই না না আমি মজা করলাম আপনি এভাবেই ঘুমান হি হি।

স্তব্ধ মুখ গোমড়া করে বলল,
– ওকেহ গুড নাইট।

স্নিগ্ধতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দোয়া দরুদ পড়ে ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করলো।

তিহান শিরিনের ছবি দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। এতদিন অনুভূতিকে পাত্তা দেয়নি কিন্তু আজ শিরিনের চোখে ধরা খেয়ে গেল।
______________

সকালে সবাই খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করছে। আজ রাতুল শিকদার অফিসে যাবেন না স্তব্ধ অফিসে যাবে,স্নিগ্ধতা শিরিনকেও কলেজ থেকে ছুটি নিতে বলেছে, শিরিন প্রশ্ন করেছিল কিন্তু স্নিগ্ধতা আসল কারণটা বলেনি।

সকাল সকাল কলিং বেল বাজা শুরু হয়ে গেছে।সালেহা গিয়ে দরজা খুলে দিল,রুশি এবং নাতাশা ভেতরে প্রবেশ করতেই সবাই চমকে গেল,স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে নিয়ে নিজেদের ঘরের দিকে চলে গেল। রাতুল শিকদার কৌতুহল নিয়ে বললেন,

– তোমরা!

– আশা করেননি দুলাভাই?

– হঠাৎ করে এলে তাই একটু অবাক হলাম।

– নিজেদের মানুষ অযথা অভিমান করে সম্পর্ক বললেই তো শেষ হয়ে যায় না সম্পর্কগুলো ঠিক করতে এসেছি সাথে ভালো একটা খবরও নিয়ে এসেছি।

অরিত্রি শিকদার জিজ্ঞেস করলেন,
– কি খবর?

– নাতাশার বিয়ে ঠিক করেছি।

অরিত্রি শিকদার খুশি হলেন।যতই হোক বোন তো ছোট থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছেন সুখ দুঃখের সঙ্গি ছিল এই বোন।অরিত্রি শিকদার ওদেরকে সোফায় বসতে দিয়ে বললেন,

– এ তো খুশির খবর কবে বিয়ে ছেলে কি করে?

– এখনও বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়নি তবে তোমরা ছেলেকে চেনো।

– আমরা চিনি?

– হুম ছেলে হচ্ছে আদ্রিক খাঁন।

সবার মুখ চুপসে গেল।রুশি আবারো বলল,
– আদ্রিক ছেলে হিসেবে মন্দ নয় আমার মেয়ের জন্য সঠিক।

রাতুল শিকদার হেসে বললেন,
– হ্যা খারাপ না।

স্নিগ্ধতা বিছানায় পা দুলাতে দুলাতে স্তব্ধকে বলল,
– ঘরে নিয়ে আসলেন কেন? সবাই কি ভাববে?

স্তব্ধ অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল,
– কেউ কিছু ভাববে না ওখানে থেকে তুমি কি করবে?

– এখানে থেকে আমি কি করবো?

– তাই তো দাড়াও তোমায় একটা কাজ দেই।

বলেই স্তব্ধ একটু ভেবে টাইটা স্নিগ্ধতার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
– আমার টাই বেঁধে দাও।

– আমি কেন? আপনি নিজেই তো বাঁধতে পারেন।

– বাঁধতে পারি তো কি হয়েছে? বউ হিসেবে তোমার একটা দায়িত্ব আছে না নাও টাই বেঁধে দাও।

– বাঁধতে পারি না।

– আসো শিখিয়ে দেই।

অগ্যতা স্বত্বেও স্নিগ্ধতা স্তব্ধের সোজাসুজি দাড়ালো, স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে টাই বাঁধা শিখিয়ে দিয়ে বলল,
– দেখলে কত ইজি।

– হুম।

স্তব্ধ শার্টের উপর একটা কোট পরে স্নিগ্ধতার কপালে চুমু খেয়ে বের হতে যাবে তখনি তিহান দরজার কাছে এসে বলল,

– ভেতরে আসতে পারি কাপল?

– হুম আয়।

তিহান ভেতরে এসে বিছানার এক কোণে বসলো,স্তব্ধ জিজ্ঞেস করল,
– আন্টি এখনও আছে নাকি গেছে?

– আছে, জানিস নাতাশার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

– ওহ।

– কার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছে সেটা তো শোন।

– বল।

– আদ্রিক খাঁনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছে।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতা দু’জনেই বিষ্মত হলো।স্তব্ধ ঠোঁটে হাসি রেখা টেনে বলল,
– এটা আরও ভালো খবর ওদের দু’জনকে অনেক মানাবে একেবারে পারফেক্ট কাপল।

বলেই স্তব্ধ বেরিয়ে গেল, স্তব্ধের কথায় তিহান হাসছে।

চলবে……….

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-২২

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২২

আদ্রিক নাতাশাকে না চিনলেও নাতাশা ঠিক আদ্রিককে চিনতে পেরেছে এও মনে পড়েছে এই ছেলেকেই স্তব্ধ মে’রেছিল এই অপরাধে স্তব্ধ নিজের বাবার হাতে থাপ্পড় খেয়েছিল। আদ্রিক নাতাশাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখছে। নাতাশা স্মার্ট সুন্দরী মেয়ে তবে সৌন্দর্যের মূল উৎস মেকআপ।

রুশি গদগদ হয়ে বলল,
– এ হচ্ছে আমার বড় মেয়ে নাতাশা অনার্স শেষ করেছে কিছুদিন আগে।

মিসেস খাঁন মুখে একটা রসগোল্লা পুরে দিয়ে বললেন,
– মেয়ে দেখতে মাশাল্লাহ।

রুশি মেকি হাসলেন মনে মনে বলতে লাগলেন,’ওই শিকদার পরিবারকে দেখিয়ে দিব স্তব্ধের থেকেও ভালো ছেলের সঙ্গে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি।’

মিসেস খাঁন আরও কিছু প্রশ্ন করলেন নাতাশাকে। নাতাশা সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিল, মিসেস খাঁনের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে নাতাশাকে তার পছন্দ হয়েছে মি. খাঁন মিসেসের মতামতের উপর নির্ভরশীল। মিসেস খাঁন রুশিকে বললেন,

– মেয়ে পছন্দ হয়েছে তবে এখনি পাকা কথা দিয়ে যেতে পারছি না কালকের মধ্যে জানিয়ে দিব।

রুশি ছটফট করতে করতে বললেন,
– জ্বি আচ্ছা।

সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল আদ্রিককে আলাদাভাবে নাতাশার সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছিল কিন্তু আদ্রিক কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। সবাই যেতেই নাতাশা মাথা থেকে ঘোমটা নামিয়ে মায়ের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,

– মা তুমি সব জেনেও আদ্রিকের সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে চাইছো?

– বিয়ে কোথায় দিতে চাইছি? সবে তো দেখে গেল।

– এরপর বিয়েও পাকাপাকি হয়ে যাবে তুমি জানো না স্তব্ধ একে মে’রেছিল।

– জানি বলেই তো চাই তোর আর আদ্রিকের বিয়ে হোক তারপর শোধ নিব রাতুল শিকদার এবং স্তব্ধের উপর ।

– কি বলো এসব? স্তব্ধকে না তুমি ছেলের চোখে দেখো?

– আমি চেয়েছিলাম তোর আর স্তব্ধের বিয়ে দিতে তাই ওসব বলেছি তবে এর একটা শোধ তুলতেই হবে আমাদের এত বড় অপমান।

– আর যাই করো না কেন স্তব্ধের কোনো ক্ষতি করবে না আর আমি আদ্রিককেও বিয়ে করতে পারবো না তুমি জানো তো আমি স্তব্ধকে ভালোবাসি।

রুশি ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন। নাতাশা চলে যেতেই মনে মনে বললেন,’কার ক্ষতি হবে আর হবে না সময় বলে দিবে।

শিরিন আজ শিকদার বাড়িতে এসেছে মূলত স্নিগ্ধতার জোরাজুরিতে।শিরিন আসবে জেনে তিহান নিজে গিয়ে শিরিনকে নিয়ে এসেছে।আজ নিজ হাতে অনেক পদ রান্না করেছে স্নিগ্ধতা,শিরিন স্নিগ্ধতাকে টেনে ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল,

– কতদিন পর দেখা হলো কোথায় গল্প করবি তা না করে রান্নাঘরে বসে আছিস।

– তোর জন্যই তো রান্না করছি।

– করতে হবে না আমার কাছে বসে থাক।

– আচ্ছা বসলাম।

– তোর হাজব্যান্ড কোথায়?

– সকাল সকাল কোথায় যেন বের হলো।

– ওহ।

– আমার হাজব্যান্ড তোর দুলাভাই হয় বুঝলি।

– হুম বুঝেছি।

– তিহান ভাইয়ার সঙ্গে তোর কি চলছে রে সত্যি করে বলবি।

শিরিন চোখগুলো বড় বড় করে,
– ওই তালগাছের সঙ্গে আমার কি চলবে!

– তাহলে এত ঝগড়া করিস কেন?

– ওই ব্যাটা আমার নামে তোর কাছে আজেবাজে কথা বানিয়ে বলেছে তাই না ?

– তুই যা ভাবছিস তা নয়।

– আমি তো তাই ভাবছি, শোন তোর দেবর হচ্ছে অসভ্য শুরুর দিন থেকে আমাকে জ্বালাচ্ছে ইচ্ছে করে দু’বার ধাক্কা দিয়েছে আবার পিচ্চিও বলেছে তুই বল আমাকে কোন দিক দিয়ে পিচ্চি মনে হয়।

– থাক রাগ করিস না।

– ওই ব্যাটারে দেখলেই রাগ উঠে।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ শিরিন এবার চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু স্নিগ্ধতা দেয়নি। রাতুল শিকদার বাড়িতে ছিলেন না স্তব্ধ অফিসে যায়নি আবার বাড়িতেও নেই। সবার সাথে শিরিনের পরিচয় হয়ে গেছে তিহানও আজ বাড়িতেই ছিল, শিরিন তিহানকে দেখেও না দেখার ভান করে ছিল।

স্নিগ্ধতা চা বানাতে গেছে শিরিন নিষেধ করার পরেও শুনেনি। শিরিন উপরতলা ঘুরে দেখছে, একটা ঘরের সামনে যেতেই পুরুষ কন্ঠ থেকে গুনগুন গান শুনতে পেয়ে ঘরে উঁকি দিতেই লজ্জা পেয়ে গেল দ্রুত ওখান থেকে সরে গেল।তিহান সবেমাত্র কোমড়ে টাওয়াল জড়িয়ে গোসল করে বের হয়েছিল আর তখনি শিরিন তাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলে তিহানও শিরিনকে লক্ষ্য করেছে।

তিহানের লজ্জা লাগছে দ্রুত জামা-কাপড় পড়ে নিয়েছে।স্তব্ধ শিষ বাজাতে বাজাতে ঘরে প্রবেশ করতেই শিরিনকে বিছানার একপাশে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো।ব্রু জোড়া কুঁচকে বলল,

– বউয়ের বদলে বউয়ের বান্ধবী এখানে কেন!

শিরিন বাঁকা হেসে জবাব দিল,
– কেন আপনি খুশি হননি দুলাভাই?

– উহু তোমাকে দেখলেই আমার বুকটা ছেৎ করে উঠে।

– কেন দুলাভাই?

– তুমি আমার বউকে কু বুদ্ধি দেও তোমার জন্য আমার বউ আমাকে অত্যাচার করে।

শিরিনের হাসি পাচ্ছে নিজের হাসি দমিয়ে রেখে বলল,
– এবার বুঝতে পারলেন তো স্নিগ্ধা আমায় বেশি ভালোবাসে।

– উহু আমাকে বেশি ভালোবাসে।

– না আমাকে।

– হুস লেসবিয়ান।

শিরিন রেগে গিয়ে বলল,
– লেসবিয়ান কেন বললেন?

– মেয়ে হয়েও আমার বউয়ের দিকে নজর দেও তাই।

শিরিন ভরকে গেল স্নিগ্ধতা এসে দু’জনের ঝগড়া দেখে বলল,
– কি হয়েছে?

শিরিন মুখ ভার করে বলল,
– তোর জামাই আমাকে লেসবিয়ান বলেছে।

স্তব্ধ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
– ঠিকই তো বলেছি।

– দেখলি স্নিগ্ধা আবার।

– ওকে লেসবিয়ান কেন বললেন?(স্নিগ্ধতা)

– তোমার দিকে নজর দেয়।

স্নিগ্ধতা হা করে তাকিয়ে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না হাসিও আসছে। শিরিন বলল,
– এবার থেকে আপনার বউয়ের দিকে বেশি বেশি নজর দিব।

বলেই শিরিন আর স্নিগ্ধতা ঘর থেকে বের হতে নিচ্ছিল তখনি স্তব্ধ বলল,
– এই শালী শুনো আর কোনো কু বুদ্ধি আমার বউয়ের কানে দিও না আমার সংসারে কিছু হলে তোমার নামে মামলা করবো।

কথা শেষ করে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল স্তব্ধ।স্নিগ্ধতা আর শিরিন দু’জনে ফিক করে হেসে দিল। শিরিন চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো সবাই থাকতে বলেছিল আজকের রাতটা কিন্তু শিরিন বুঝিয়ে না করে দিয়েছে।
____________

রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল শিরিন এমন সময় একটা কল আসলো রিসিভ করতেই ওপরপাশ থেকে তিহান ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

– আমাকে তো খুব ম্যানারস শেখান এখন আপনার ম্যানারস কোথায় গেছে মিস ঝগড়ুটে?

– আমি আবার কি করলাম?

– জানেন না নাকি না জানার নাটক করছেন।

– আচ্ছা আপনি যে পাগল হয়ে গেছেন বাড়িতে কেউ জানে?

– মিস ঝগড়ুটে আপনি কিন্তু আবার ঝগড়া করতে চাইছেন।

– ফোন কে দিয়েছে?

তিহান এবার থতমত খেয়ে গেল গলার স্বর নিচু করে বলল,
– আমি দিয়েছি।

– কেন দিয়েছেন?

– আপনি তখন এক অবলা পুরুষের ঘরে গিয়ে তাকে বিভৎস রূপে কেন দেখেছেন?

তখনকার কথা মনে পড়তেই শিরিনের অস্বস্তি লাগছে। তিহান কোনো উত্তর না পেয়ে আবারো বলল,
– কি হলো এখন চুপ কেন?

– আপনি ওই অবেলায় কেন গোসল করেছেন? গোসল করেছেন ভালো কথা ঘরের দরজা আটকে পোশাক পরতে পারলেন না?

– এখন উল্টো আমার দোষ দেওয়া হচ্ছে?

– অবশ্যই সব দোষ আপনার আপনি দরজা লাগালে এমন সমস্যা হতো না।

– এখন আমায় বিয়ে করবে কে? সব তো আপনি দেখে নিলেন।

শিরিন মুখ কাচুমাচু করে বলল,
– ওভার এক্টিং বন্ধ করুন তেমন কিছুই আমি দেখিনি।

– যা দেখেছেন সেটাই আমার জন্য লজ্জাজনক এখন কে বিয়ে করবে জবাব দিন।

– বিয়ে পাগল ছেলে।

বলেই কল কেটে দিল শিরিন হাসতে হাসতে শুয়ে পড়লো।
.
.
.
খাঁন পরিবার থেকে রুশিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ছেলের বউ হিসেবে নাতাশাকে তাদের পছন্দ হয়েছে। ওরা চায় আদ্রিক আর নাতাশা আলাদা ভাবে কথা বলুক রুশি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেছে।

নাতাশা আর নিতু দু’জনে ঘরে দুপাশে বসে আছে নিজেদের মতো।রুশি মেয়ের কাছে বসে বললেন,

– আজ সন্ধ্যায় আদ্রিকের সঙ্গে তুই দেখা করতে যাবি।

– অসম্ভব।

– অতীতের কথা ভুলে যা নতুনভাবে জীবন শুরু করতে হবে নিজেকে ভালো রাখতে হবে।

– তুমি যদি অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করতে মানা যেত কিন্তু আদ্রিক!

– আদ্রিক খারাপ কিসের?

– স্তব্ধ আদ্রিককে মে’রেছে এমনি এমনি তো আর স্তব্ধ এমনটা করবে না।

– আমি যা বলছি তাই করবি আজ তুই দেখা করবি।

সন্ধ্যায় একটি রেস্টুরেন্টে আদ্রিক নাতাশা দেখা করতে এসেছে দু’জন দু’জনের মুখোমুখি বসে আছে। আদ্রিক ব্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে নাতাশাকে দেখছে, নাতাশার ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে। এবার আদ্রিক মুখ খুলল,

– এখানে কি বসে থাকতে এসেছ? কথা বলছো না কেন?

নাতাশা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
– আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না কারণ আমি একজনকে ভালোবাসি।

আদ্রিকের কোনো ভাবান্তর নেই মুখে ঝুলে আছে বিভৎস হাসি এতে নাতাশা চরম অবাক হয়েছে।আদ্রিক বলল,

– স্তব্ধকে ভালোবাসো, আই এম রাইট?

– আপনি জানলেন কিভাবে?

– আমি অনেক কিছুই জানি তবে স্তব্ধ বিবাহিত তোমাকে পাত্তাও দেয় না তোমাদের তো ওই বাড়িতে যেতেও নিষেধ করেছে তাই না।

– তবুও আমি স্তব্ধকে চাই আপনি বাড়িতে গিয়ে বলে দিবেন আমায় বিয়ে করবেন না।

– কোনকিছু করার আগে ভেবে করতে হয়।

– যেমন?

– স্তব্ধকে পাওয়ার জন্য তোমাকে আমি হেল্প করতে পারি।

– কিভাবে?

– সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না বিয়ে আমাদের ঠিক হবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হবে না তুমি স্তব্ধকে পেয়ে যাবে তবে আমাকেও হেল্প করতে হবে।

– কি হেল্প করতে হবে বলুন আমি সব করতে রাজি।

– স্নিগ্ধতাকে আমার চাই।

– কি!

– চমকে যাওয়ার দরকার নেই যা বলছি তা করতে পারলে বলো।

– স্নিগ্ধতাকে আপনি চেনেন?

– না চিনলে চাইলাম কেন?

– কিভাবে স্নিগ্ধতাকে আপনার কাছে এনে দিব?

– ওসব তোমাকে ভাবতে হবে না ভাবনা বুদ্ধি আমার কাজ তোমার বলো রাজি?

– হুম রাজি।

নাতাশা বাড়িতে এসে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেল তবে মা’কে বলে দিয়েছি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে পারবে না একটু সময় লাগবে রুশি কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলেন।
_____________

নুহাশ দেশে ফিরেছে কয়েকদিন আগে আজ আরিয়া, নুহাশ নৌসিন শিকদার বাড়িতে আসছে যার জন্য অরিত্রি শিকদার আজ নিজে রান্নাঘরে ঢুকেছে রান্না করতে স্নিগ্ধতা হাতে হাতে সাহায্য করছে।

বেলা এগারোটার দিকে আরিয়াদের গাড়ি বাড়ির নিচে থামে।তারা ভেতরে প্রবেশ করলো, অরিত্রি শিকদার হেসে নুহাশের সঙ্গে কথা বলছেন। স্নিগ্ধতার সঙ্গেও পরিচয় হয়ে গেছে এতক্ষণে,নৌসিন স্তব্ধের ঘরে বসে দুষ্টুমি করছে আর স্নিগ্ধতা সেই দুষ্টুমি দেখছে।স্তব্ধ নুহাশকে দেখেই উৎফুল্ল হয়ে বলল,

– আরে দুলাভাই এতদিন পর?

– দেশের বাইরে ছিলাম দেশে ব্যাক করতেই তোমাদের দেখতে চলে এলাম।

– ভালো করেছ অনেক মিস করছিলাম তোমায়।

– নাটক বাদ দাও এখন তুমি বউ পেয়েছ বউকে মিস করতে করতেই তো তোমার সময় শেষ।

স্তব্ধ তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে আরিয়ার দিকে তাকালো,আরিয়া শুকনো হাসলো।স্তব্ধ নিজের চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে বলল,
– বউকে সবাই মিস করে তুমি কি কম করেছ?

নুহাশ ভরকে গিয়ে বলল,
– তোমার মতো করি না।

– সব দেখা আছে, সারারাত ধরে আপুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে কে?

– শালা মাফ চাই তোমার কাছে আর আমার মান সম্মান ডুবিও না।

– ঠিক আছে পরে কথা হবে।

স্তব্ধ ঘরে গিয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলল,

– এমন একটা পরী লাগবে তোমার?

স্নিগ্ধতা অবুঝের মতো স্তব্ধের দিকে তাকালো স্তব্ধ দৃষ্টি বুঝতে পেরে বলল,
– না মানে তুমি চাইলে আজ থেকেই এমন একটা পরী আনার কার্যক্রম শুরু করে দিতে পারি।

– সারাক্ষণ ঠোঁটের মধ্যে পঁচা গন্ধ কথা নিয়ে ঘুরেন মুখে কিছু আটকায় না?

– পঁচা কথা নয় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা।

– চুপ থাকেন।

– তুমি যেই লজ্জাবতী রমনী এখন যদি আমি চুপ থাকি তাহলে আর তুমি পরী পাবে না।

– আপনার সঙ্গে কথা বলা মানে লজ্জা পাওয়া।

স্নিগ্ধতা নৌসিনকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।স্নিগ্ধতার কান্ড দেখে স্তব্ধ হাসতে লাগলো।

চলবে……..

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-২১

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২১

‘এই কানা লোক আপনাকে বারবার কেন আমার সঙ্গেই ধাক্কা খেতে হবে?’

তিহান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– আমার কি দোষ আপনিই তো আমার সামনে চলে আসেন।

– আমি সামনে আসি নাকি আপনি আসেন?দাড়ান দাড়ান আপনি আমাকে ফলো করেন না তো!

– ফলো করবো কেন? আমরা এক কলেজের শিক্ষক দেখা হবে এটাই স্বাভাবিক।

– ধাক্কা কেন লাগবে?

– আপনি বটগাছ তাই ধাক্কা লাগে।

– আমি বটগাছ নই বরং আপনি তাল গাছ।

– মোটেও না আমি লম্বায় ঠিক আছি।

– সরুন সামনে থেকে আপনার সঙ্গে ঝগড়া করার সময় নেই মুড নষ্ট করে দিল।

– ঝগড়া করা শেষে বলে সময় নেই এ কি মেয়ে মানুষ রে বাবা?

শিরিন মুখ বাঁকিয়ে চলে গেল। কলেজ শেষে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে হল ঘরে বসলো তিহান হাঁক ছেড়ে বলল,
– ভাবী এক কাপ কফি পাওয়া যাবে?

তিহানের কন্ঠ পেয়ে স্নিগ্ধতা হল ঘরে উঁকি দিয়ে বলল,
– হুম ভাইয়া আনছি।

কয়েক মিনিট সময় নিয়ে কফি বানিয়ে এনে তিহানের হাতে দিল স্নিগ্ধতা।তিহান কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
– ভাবী তোমার বান্ধবী এত ঝগড়ুটে কেন? জম্মের সময় মুখে কি মধু দেওয়া হয়নি?

– আমার বান্ধবী!

– ওই যে শিরিন।

– শিরিনকে কোথায় পেলেন আর ওকে চেনেন কিভাবে?

– আমরা এক কলেজের শিক্ষক ওই যে একটা ঝগড়ুটে মেয়ের কথা বললাম না এখন দেখি এটাই তোমার বান্ধবী।

– ওহ।

– কখনও তো বললে না তোমার ঝগড়ুটে বান্ধবী আছে।

– আপনি জিজ্ঞেস করলে তো বলবো ভাইয়া।

– তাও ঠিক।

– আজকেও কি ঝগড়া হয়েছে?

– হুম।

– কি নিয়ে?

– ধাক্কা লেগেছে বলে ঝগড়া করেছে বিশ্বাস করো ভাবী আমার কোনো দোষ ছিল না।

– শিরিন এমনি ওর রাগ একটু বেশি।

– তাই বলে সবসময় আমার সঙ্গে কেন ঝগড়া করবে? তুমি কি ভালো আর তোমার বান্ধবী ঝগড়ুটে।

স্নিগ্ধতা হাসতে হাসতে বলল,
– ভাইয়া ওর সামনে গিয়ে এই কথাটা শুধু বলবেন।

– আমার আর ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই।

তিহান কফির কাপ খালি করে দাড়িয়ে গিয়ে বলল,
– ঘুম পাচ্ছে ভাবী ঘরে গেলাম।

– এই অবেলায় ঘুম!

– তোমার বান্ধবীর ঝগড়া দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত এই ক্লান্তি দূর করতে ঘুমের প্রয়োজন।

– আচ্ছা যান।

তিহান হাই তুলতে তুলতে চলে গেল স্নিগ্ধতার হাসি পাচ্ছে।শিরিনের নাম্বারে ফোন করল স্নিগ্ধতা কয়েকবার রিং হয়ে কল রিসিভ হলো।স্নিগ্ধতা গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
– এতক্ষণ লাগে কল রিসিভ করতে?

– মোবাইল সাইলেন্ট ছিল আর আমি ফ্রেশ হতে গিয়েছিলাম।

– ওহ অনেকদিন ধরে তোকে দেখি না একবার দেখা করবি?

– আমিও এটাই ভাবছিলাম কিন্তু বলা হয়ে উঠছিল না।

– কবে দেখা করবি বল?

– তোর যেদিন ইচ্ছে চলে আয় আমার ফ্ল্যাটে দু’জনে মিলে আড্ডা দিব।

– উহু আমি যাব না তুই কাল এখানে চলে আয় এমনিতেও তোর তো কারো সঙ্গে তেমন ভাবে পরিচয় হয়নি।

– তোর ওই শশুর বাড়ীতে আমি যাচ্ছি না।

– এমন করে কেন বলছিস? তোকে তো সবকিছু বলেছি।

– তুই সবকিছু এত সহজে মেনে নিলি কিভাবে?

– আমি কিছুই মেনে নেয়নি একটা কথা কি জানিস? একটা সম্পর্ক ভাঙ্গা সহজ কিন্তু গড়া অনেক কঠিন হোক না কিছু খারাপ এতে যদি ভালো হয় তাহলে সমস্যা কি? সবকিছু বিবেচনার পর দেখলাম আমার সঙ্গে শুধু অন্যায় করেছে আমার সৎ মা, সব দুঃখ দূর হয়ে সুখ আমার দুয়ারে নিজ থেকে এসেছে আমি কিভাবে এই সুখ আর সবার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে চলে যাই বল তো, তবে স্তব্ধকেও কম জব্দ করিনি, সব জায়গায় আত্ন সম্মান মানায় না আমি নিজ থেকে যেমন এ বাড়ি থেকে বের হইনি তেমনি নিজ থেকে আসিনি।

– সেল্ফ রেসপেক্ট বলে একটা কথা আছে জানিস নিশ্চই?

– হুম জানি।সেল্ফ রেসপেক্ট যদি সবকিছু হতো তাহলে পৃথিবীর বেশিরভাগ সম্পর্ক নিমিষেই ভেঙে যেত ভালোবাসা বলে কিছু থাকত না শুধু বিচ্ছেদ নামক শব্দটা শোনা যেত, এমন কোনো সম্পর্ক নেই যেখানে সমস্যা হয় না কিছুটা হলেও মানিয়ে নিতে হয় আমি শুরু থেকেই স্তব্ধের ভালোটা দেখেছি তাকে নতুন করে চিনেছি এত এত ভালোর মাঝে সামান্য পরিমাণ ভুলের জন্য তাকে ছেড়ে যাব, এ সম্ভব নয় এতে যদি কারো মনে হয় আমার আত্নসম্মান নেই তাহলে তাই, ঘটনা যার সঙ্গে ঘটে সেই বুঝতে পারে বাকিরা শুধু নামমাত্র শান্তনা দেয়।

– তাও ঠিক তবে তুই যদি ভালো থাকিস আমি খুশি কিন্তু তোর হাজব্যান্ডকে বেশি বেশি চাপে রাখবি।

স্নিগ্ধতা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
– তা আর বলতে।

– আচ্ছা এখন তাহলে রাখি।

– হুম কাল কিন্তু তোকে আমাদের বাড়িতে দেখতে চাই।

– ভেবে দেখব।

– ভাবার কিছু নেই তুই আসছিস এটাই ফাইনাল।

– ঠিক আছে।

শিরিন কল কেটে দিল,স্নিগ্ধতা ফোন রেখে ঘর গোছাতে লাগলো, অনেকদিন ধরে ঘরটা গুছানো হয় না নিজের এবং স্তব্ধের কিছু জামা-কাপড় নিয়ে গেল ধুয়ার জন্য।

জামা-কাপড় ধুয়ে ছাদে মেলে দিয়ে এসে গোসল করে নামাজ পড়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল স্নিগ্ধতা। ঘুমে চোখটা লেগে এসেছে তখনি অরিত্রি শিকদার ঘরে এলেন বেড সাইডের পাশে রাখা সোফায় বসে মমতাময়ী কন্ঠে ডেকে বললেন,

– স্নিগ্ধতা ঘুমিয়ে গেছ নাকি?

শাশুড়ির কন্ঠস্বর শুনে স্নিগ্ধতা তাকালো শোয়া থেকে উঠে বসে মৃদু হেসে বলল,
– না মা এমনি শুয়ে ছিলাম।

– এতগুলো কাপড় নিজে ধুতে গেলে কেন? সালেহাকে বলতে পারতে কিংবা ওয়াশিং মেশিনে ধুতে।

বাবার বাড়িতে থাকতে সবার কাপড় নিজ হাতে একাই ধুতো স্নিগ্ধতা মলিন হেসে বলল,
– সালেহা আন্টি তো অনেক কাজ করে তাই আর বিরক্ত করিনি এছাড়া আমার অভ্যাস আছে।

– আচ্ছা এদিকে আসো আমার পাশে বসো মাথায় তেল দিয়ে দেই চুলগুলোর অবস্থা কেমন হয়েছে আয়নায় দেখেছ?

– আপনাকে কষ্ট করতে হবে না মা।

– পাকামো বাদ দিয়ে যা বলছি তাই করো।

স্নিগ্ধতা চুপ হয়ে গেল অরিত্রি শিকদারের পাশে বসলো পিঠ ঘুরিয়ে।অরিত্রি শিকদার পরম যত্নে স্নিগ্ধতার মাথায় তেল দিতে দিতে বললেন,

– নিজের খেয়াল রাখতে শিখো যত্ন নিতে শিখো মন যা চায় তাই করো দেখবে শরীর আত্মা ভালো থাকবে।

– জ্বি মা।

– অনেকদিন বাহিরে কোথাও যাওয়া হয় না চলো আজ তিন শাশুড়ি বউমা মিলে ঘুরতে যাই।

স্নিগ্ধতা কৌতুহল নিয়ে বলল,
– মা তিন শাশুড়ি বউমা কিভাবে?

অরিত্রি শিকদার রসিকতার ছলে বললেন,
– আমার শাশুড়ি তোমার শাশুড়ি আর তুমি।

স্নিগ্ধতা হেসে দিল।প্রশ্ন করল,
– দিদান যেতে রাজি হবে?

– অবশ্যই আমাদের যাওয়ার কথা শুনলে ঠিক রাজি হবে।
_____________

‘অফিসে এসে কেউ গেম খেলে?’

স্তব্ধ নিজের কেবিনে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে মোবাইলে গেম খেলছিল রাতুল শিকদার এসে ছেলের এমন কাজ দেখে বিরক্ত কন্ঠে প্রশ্নটি করলেন।স্তব্ধ আড়চোখে একবার রাতুল শিকদারের দিকে তাকালো তারপর আবারো গেম খেলায় ব্যস্ত হয়ে গেল। রাতুল শিকদার রাগ দেখিয়ে বললেন,

– নিজের বাপকে পাত্তা দিচ্ছিস না! তোকে যে কতগুলো ফাইল দিয়ে গিয়েছিলাম ওগুলো কমপ্লিট না করে আরামে বসে গেম খেলছিস।

– ফাইল কমপ্লিট হয়ে গেছে এবার এগুলোর কি করবে তোমার ব্যাপার।

রাতুল শিকদার ব্রু কুঁচকে ফাইলগুলো দেখতে লাগলেন। সবগুলো ফাইল কমপ্লিট রাতুল শিকদার অবাক হবার ভঙ্গিতে বললেন,

– তুই এত আপগ্ৰেড হলি কিভাবে?

– জম্ম থেকেই ছিলাম তবে তোমার চোখে কখনও পড়েনি।

– আকামের জন্য আপগ্ৰেড ছিলি এখন কাজের ক্ষেত্রে হচ্ছে।

– কাজ শেষ এবার বাড়িতে যাই।

– বাড়ি বাড়ি করিস কেন? আগে তো খুঁজেও বাড়িতে সহজে পেতাম না এখন বাড়িতে কি? বস আমি আমার পি.এ কে বলে তোকে আরও কাজ দিয়ে যাচ্ছি।

– আগে তো বউ ছিল না তাই বাড়িতে থাকার দরকার ছিল না।

– বিয়ে করলে মানুষ এত বদলে যায় বাহ! আমিই বদলাতে পারলাম না।

– তুমি না বদলালে আপু আর আমি পয়দা হলাম কিভাবে!

রাতুল শিকদার কাশতে লাগলেন স্তব্ধ টেবিলের একপাশে রাখা পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,
– পানি খাও ড্যড।

রাতুল শিকদার এক চুমুকে পানির গ্লাস খালি করে বসা থেকে উঠে বাহিরে যেতে যেতে বললেন,
– দিনে দিনে ছেলেটা নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে বাপের সঙ্গে অসভ্যতামি।

স্তব্ধ আবারও নিজের মতো গেম খেলছে।
___________

দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে অরিত্রি শিকদার স্নিগ্ধতা এবং রাহেলা বেগমকে নিয়ে বের হলেন। গাড়ি এসে থামলো এক অনাথ আশ্রমের সামনে আসার সময় অনেক উপহার আর চকলেট কিনে এনেছেন। ভেতরে ঢুকতেই বাচ্চারা দৌড়ে এলো অরিত্রি শিকদার স্নিগ্ধতার উদ্দেশ্যে বললেন,

– এটা আমি আর স্তব্ধ মিলে নিজ হাতে তৈরি করেছি, প্লানটা স্তব্ধের ছিল রাস্তায় জ্যাম হলে অসহায় ছোট ছোট বাচ্চাদের অসহায়ত্ব দেখা যায় ওদের জন্য মায়া হয় তারপর স্তব্ধ আমার কাছে একদিন বলল আমিও রাজি হয়ে গেলাম পরে মা-ছেলে মিলে অদম্য পরিশ্রমের মাধ্যমে বাচ্চাগুলোর অসহায়ত্ব দূর করার চেষ্টা করলাম।

স্নিগ্ধতা শুধু শুনছে যত দিন যাচ্ছে স্তব্ধের প্রতি ভালোবাসা বাড়ছে।অরিত্রি শিকদার পুনরায় বললেন,

– স্তব্ধের ড্যড এই খবর জানে না ছেলের ভালো কাজের খবরই রাখে না অথচ কোথায় কোন বাঁদরামি করে বেড়ায় তার খবর সবার আগে তার কানে পৌঁছে যায়।

রাহেলা বেগম বললেন,
– এতে রাতুলের কি দোষ? দাদুভাই ভালো কাজগুলো আড়ালে করে আর বাঁদরামি গুলো ঢোল পিটিয়ে করে।

অরিত্রি শিকদার সবার সঙ্গে স্নিগ্ধতার পরিচয় করিয়ে দিল।স্নিগ্ধতা নিজ হাতে বাচ্চাদের চকলেট আর উপহারগুলো দিল। অনাথ আশ্রমটায় ৪৫-৫০ জন বাচ্চা আছে আর তাদের দেখভাল এর জন্য নয়জন পুরুষ এবং মহিলা রাখা হয়েছে।

স্তব্ধ কিছুদিন ধরে সন্ধ্যার পর পর বাড়িতে ফিরে কারণটা অবশ্য স্নিগ্ধতা।স্নিগ্ধতা সুযোগ পেলেই স্তব্ধকে খোঁচা দিয়ে কথা বলে,আজও স্তব্ধ সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফিরল ফ্রেশ হয়ে পুরো বাড়ি চক্কর দিয়ে মা,দিদান আর বউকে না পেয়ে অবাক হয়ে গেল।তিহান মোবাইল টিপছে আর মুচকি মুচকি হাসছে, স্তব্ধ তিহানের বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করল,

– কার সঙ্গে প্রেম করিস?

তিহান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়ে বলল,
– ককই কারো সাথে না তো।

– তাহলে হাসছিস কেন?

তিহান এবার হেবলার মতো হাসি দিয়ে বলল,
– একটা মিমস দেখে হাসছিলাম।

– ওহ, বাড়ির সবাই কোথায়? কাউকে দেখছি না কেন?

– বড় আম্মু ভাবী আর দিদানকে নিয়ে ঘুরতে গেছে।

– কখন!

– অনেকক্ষণ হয়েছে।

– কখন আসবে?

– জানি না।

স্তব্ধ ফাঁকা জায়গায় গিয়ে স্নিগ্ধতাকে ফোন দিতে লাগলো রিং হলেও রিসিভ হচ্ছে না উপায় না পেয়ে এবার হোয়াটসঅ্যাপ এ মেসেজ দিতে লাগলো কিন্তু সিন হচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে মোবাইল রেখে দিয়ে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো।

রাতে তিহান আর রাতুল শিকদারকে সালেহা খাবার দিয়ে গেছে। রাতুল শিকদার অরিত্রি শিকদারের এমন কাজে খুশী হয়েছেন স্তব্ধকে ডাকা হয়েছিল কিন্তু খাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তিহান ঢেকুর তুলতে তুলতে বলল,

– ভাইয়া খেতে এলো না কেন বড় আব্বু?

– তোর ভাবী বাড়িতে নেই বলে।

– ওহ।

তিহান ঘরের দিকে যেতে যেতে মনে মনে বলল, ‘বিয়ের পর মানুষ এত বদলে যায়!’

রাত নয়টায় তিনজন বাড়ি ফিরল আসার আগে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল তারা অরিত্রি শিকদার রাহেলা বেগম খেলেও স্নিগ্ধতা ঠিক মতো খায়নি। বাড়িতে এসে স্নিগ্ধতা আগে দিদানকে তার ঘরে নিয়ে ফ্রেশ হতে সাহায্য করলো তারপর নিজের ঘরে গেল।

ঘরে এসে খাটের উপর স্তব্ধকে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখে স্নিগ্ধতা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। স্তব্ধের চোখ বন্ধ একটা হাত কপালের উপর ভাঁজ করা, স্নিগ্ধতা ইচ্ছাকৃতভাবে শব্দ করে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল কয়েক মিনিট পর পোশাক পাল্টে বের হতেই আবারো স্তব্ধকে দেখতে পেল, স্তব্ধ এবার বিছানায় বসে আছে দৃষ্টি স্নিগ্ধতার দিকে। স্নিগ্ধতা সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজের কাপড়গুলো বেলকোনির দড়িতে মেলে দিতে লাগলো আচমকা স্তব্ধ স্নিগ্ধতার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাদুকাদু মুখে বলল,

– বউ তোমায় অনেক মিস করছিলাম।

– ড্রামা বাদ দেন।

– আমার ফিলিং তোমার ড্রামা মনে হয়?

– হুম।

– অনেকগুলো কল দিয়েছিলাম একবার তো ধরতে পারতে।

– ইচ্ছে হয়নি।

– ইগনোর করছো কেন? কোনো ভুল করেছি নাকি?

– ভুল করলে আপনাকে ছেড়ে দিতাম নাকি?

– তাহলে?

– ভালো লাগছে না।

– কাকে? আমাকে!

– হুম।

স্তব্ধের খারাপ লাগলো কিন্তু স্নিগ্ধতাকে বুঝতে দিল না জোরপূর্বক হেসে বলল,
– শুয়ে পড় ঘুমালে শরীর ভালো লাগবে।

বলেই স্তব্ধ আবারো ঘরে এসে বিছানার একপাশে বসলো। স্নিগ্ধতা ঘর থেকে বের হলো কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে ঘরে আসলো, স্তব্ধের সোজাসুজি বসে এক লোকমা খাবার স্তব্ধের মুখের সামনে ধরতেই স্তব্ধ ব্রু কুঁচকালো।স্নিগ্ধতা বাম হাত দিয়ে স্তব্ধের গাল দু’টো চেপে ধরে মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলল,

– কতবার বলবো রাতে না খেয়ে ঘুমানো ভালো না, মা খুশী হয়ে কোথাও নিয়ে যেতে চাইলেন তাই গিয়েছি এতে মন খারাপ করার কি আছে?

– তুমি কি বুঝবা তোমার তো বউ নাই।

স্নিগ্ধতা ফিক করে হেসে দিল।এই হাসি দেখে আবারো সব অভিমান ভুলে গেল স্তব্ধ, দু’জনে খেয়ে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিল।

শিরিনের রাগে ঘুম আসছে না একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে গাঁ জ্বালানো মেসেজ আসছে দু’দিন ধরে প্রথমে রং নাম্বার ভেবে পাত্তা না দিলেও এখন ব্যাপারটা নিয়ে সিরিয়াস হয়ে গেছে তার পরিচিত কেউ তাকে মেসেজ করছে এটা বুঝতে পেরেছে শিরিন কিন্তু নাম্বারে ফোন করলেই রিসিভ হয় না।

মেসেজ গুলো দেখে শিরিনের রাগ হচ্ছে ইচ্ছে করছে লোকটার মাথা গিয়ে ফাটিয়ে দিয়ে আসতে।
___________

খাঁন বাড়ির লোকেরা মেয়ে দেখতে যাবে আদ্রিকের জন্য তারা চায় আদ্রিককে দ্রুত বিয়ে দিতে ভালো মেয়ের সন্ধান পেতেই আর দেরি করলেন না আশরাফ খাঁন। এতে আদ্রিকের কোনো ইন্টারেস্ট নেই তার কাজই তো একেক দিন একেক মেয়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো।

মেয়ের বাড়িতে অনেক আয়োজন করা হয়েছে সোফায় বসে আছে আদ্রিক আর তার বাবা-মা। কিছুক্ষণ পর মেয়েকে আনা হলো, মেয়ে আর কেউ নয় নাতাশা।

চলবে…..

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-২০

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২০

কারো উষ্ণ পরশে ঘুম ভেঙ্গে গেল স্নিগ্ধতার, ঘুমঘুম চোখে পাশ ফিরে তাকাতেই ঘুমন্ত স্তব্ধকে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো।স্তব্ধ সোফায় শুয়ে ছিল কিন্তু স্নিগ্ধতা ঘুমিয়ে যেতেই আবার স্নিগ্ধতার পাশে এসে শুয়েছে।স্নিগ্ধতা তাকিয়ে স্তব্ধের মাথায় হাত রাখতেই স্তব্ধ বলল,

– এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে জামাইকে দেখতে হবে কেন? তুমি চাইলে সামনাসামনি তাকিয়ে আমায় দেখতে পারো।

– আপনি ঘুমাননি?

– উহু।

– কেন?

– ঘুম আসছে না।

– ওহ।

– ছাদে যাবে?

– এত রাতে!

– কেন ভয় লাগে?

– একটু একটু।

– আমি আছি তো কোনো ভয় নেই।

– যাব না ঘুমান।

বলেই স্নিগ্ধতা অন্যদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে নিলো। স্তব্ধ তো ছাড়ার পাত্র নয় শোয়া থেকে উঠে স্নিগ্ধতাকে কোলে তুলে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।স্নিগ্ধতা হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে স্তব্ধ বিরক্ত কন্ঠে বলল,

– তোমার মতো চালের বস্তা কোলে উঠে লাফালাফি করলে আমি তো এবার পড়ে যাব, হাত-পাও ভেঙ্গে যাবে তখন কিন্তু তোমাকেই সবাই বলবে স্নিগ্ধতা তোর হাজব্যান্ড দেখতে বাজে।

স্নিগ্ধতা শব্দ করে হেসে দিল,স্তব্ধ মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখতে লাগল আর মনে মনে বলল,’মানুষের হাসি এতটাও সুন্দর হয়?’

স্নিগ্ধতা ব্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

– তোমাকে দেখছি।

– কি দেখলেন?

– একটা মেয়ে এতটা সুন্দর হয় কিভাবে?

– শুধু আপনার কাছেই।

– আর কারো কাছে সুন্দর হওয়ার দরকার নেই তোমার সৌন্দর্য শুধু আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে আমিই শুধু তোমাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখব।

– কেন?

– কারণ তুমি শুধুই স্তব্ধের স্নিগ্ধতা।

স্নিগ্ধতা আবারও হাসলো,স্তব্ধ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে বলল,
– এভাবে হেসো না পাগল হয়ে যাব।

– ঠিক আছে এখন নিচে নামান।

– যদি চলে যাও?

– আমি আপনার মতো না যে ছেড়ে চলে যাব।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে নিচে নামিয়ে বলল
– আমি তোমায় ছাড়িনি শুধু তখনকার পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সাইন করেছিলাম তবে তোমায় ছাড়া আমি ভালো ছিলাম না মমকে উপেক্ষা করেই তোমায় ফিরিয়ে আনতে ছুটে গিয়েছিলাম।

এই মুহূর্তটাকে বিষিয়ে দিতে চায় না স্নিগ্ধতা তাই কথা ঘুরিয়ে বলল,
– ছাদে যাবেন বলেছিলেন তাহলে বেলকোনিতে এলেন কেন?

– ছাদে যাওয়া ক্যান্সেল।

– কেন?

– জ্বীনে যদি আমার এই পরীটাকে নিয়ে যায় তখন আমার কি হবে! তাই প্রেম করার জন্য এটাই পারফেক্ট জায়গা।

স্তব্ধের কথায় স্নিগ্ধতার আজ শুধু হাসি পাচ্ছে আর স্তব্ধেরও স্নিগ্ধতার হাসিতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।বেশ কিছুক্ষণ দু’জনে একসঙ্গে দাড়িয়ে আকাশ দেখল,স্নিগ্ধতা এবার স্তব্ধের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

স্তব্ধ দুষ্টুমি করে বলল,
– একটা কেন তুমি চাইলে অনেকগুলো কথা জিজ্ঞেস করতে পারো।

– সঠিক উওর দিবেন তো?

– জানা থাকলে অবশ্যই দিব।

– আদ্রিককে কেন মে’রেছেন?

স্তব্ধ ভরকে গেল,স্নিগ্ধতা উওরের অপেক্ষায় স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে আছে। স্তব্ধের নিরবতা দেখে স্নিগ্ধতা বলল,
– বলছেন না কেন?

– মা’রার কাজ করেছে তাই মে’রেছি।

– এটা আমার প্রশ্নের উওর নয় কি করেছে তাই জানতে চাইছি।

স্তব্ধ বেলকোনির রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বলল,
– আমার কাছে তোমাকে চেয়েছে তাও আবার এক রাতের জন্য।

মনটা বিষাদে ভরে গেছে মনে মনে ভাবছে স্নিগ্ধতা, ‘একটা মানুষের চিন্তা ধারা এত নোংরা কিভাবে হতে পারে? কিভাবে একটা মানুষ এত খারাপ হয়।’

স্তব্ধ স্নিগ্ধতার চুল নাড়াচাড়া করতে করতে বলল,
– মন খারাপ হয়ে গেছে?

– আপনার একবারও জানতে ইচ্ছে হয়নি কেন আদ্রিক আমার পেছনে পড়ে আছে কেন আপনাকে এসব বলেছে? কি সম্পর্ক আমাদের?

– না।

– কেন? সন্দেহ তো হবার কথা নিজের ওয়াইফের সম্পর্কে কেউ নোংরা কথা বলেছে যে কারো মনেই তো প্রশ্ন জাগার কথা।

– সন্দেহ করার মতো কিছু পাইনি,আদ্রিকের সঙ্গে তোমার কোনো সম্পর্ক থাকলে তুমি নিশ্চই এত সহজে আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে না আর আদ্রিকও ব্যক্তিত্বহীনের মতো আমার কাছে এত নোংরা প্রস্তাব দিত না।

স্নিগ্ধতা আলগোছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল,স্তব্ধ যে এত সহজে ব্যাপারটা বুঝবে স্নিগ্ধতা ভাবতেই পারেনি।স্নিগ্ধতা স্তব্ধের হাত জড়িয়ে ধরে বলল,

– আপনার সবটা জানা উচিত মানুষের মন সবসময় একরকম থাকে না কখনও মনের কোনো এক জায়গায় প্রশ্ন জম্মাতে পারে।

– তোমার সমস্যা না থাকলে বলতে পারো কিন্তু আমি জোর করছি না।

স্নিগ্ধতা বলতে লাগলো,
– আদ্রিক আর আমি এক ভার্সিটিতে পড়তাম, আদ্রিক আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র ছিল ভার্সিটির সবাই তাকে এক নামে চিনতো বন্ধুদের নিয়ে মারামারি,রেগিং, মেয়েদের বিরক্ত করা ছিল প্রধান কাজ কেউ প্রতিবাদ করতো না শুধুমাত্র ধনীর পাওয়ারফুল ছেলে বলে, কিভাবে যেন আমি তার নজরে পড়ে যাই তারপর থেকেই আমার পেছনে ঘুরঘুর করা শুরু করে দেয় আমি দেখেও না দেখার ভান করেই থাকতাম কিন্তু একদিন আমার সামনে এসে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় আমি সরাসরি না করে দেই তবুও তিনি আমায় বিরক্ত করতেন তারপর একদিন তো সব সীমা অতিক্রম করে ফেললেন সবার সামনে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে খারাপ আচরণ করলেন।

শেষ কথাটা বলতে গিয়ে স্নিগ্ধতার মুখে আঁধার নেমে এলো।স্নিগ্ধতা আবারও বলতে লাগলো,

– প্রথম কোনো ছেলে আমায় বাজে ভাবে স্পর্শ করেছিল রাগে আর ঘৃণায় থাপ্পড় মে’রে দিয়েছিলাম এই থাপ্পড় আদ্রিকের সহ্য হয়নি তাই শোধ নেওয়ার জন্য আমার পেছনে পড়ে আছে শেষে বাধ্য হয়ে পুলিশেও কমপ্লেইন করেছিলাম কিন্তু কোনো লাভ হয়নি,একটা মানুষ এত খারাপ হয় কিভাবে?এরা অন্যায় করবে কেউ যদি প্রতিবাদ করে তাহলে তার পিছনেই পড়ে থাকে আমার কি দোষ ছিল আমি তো যেচে আদ্রিকের কাছে যাইনি উনি আগ বাড়িয়ে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন আমি শুধু প্রতিবাদ করেছি আর এটাই আমার দোষ?

স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– তোমার কোনো দোষ নেই আসলে আমাদের সমাজে এমন কিছু খারাপ পুরুষ আছে যারা মেয়েদের ভোগপণ্য এবং দুর্বল মনে করে তবে একটা কথা অতীতের কথা মনে করে কষ্ট পাওয়ার দরকার নেই বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবাই বুদ্ধিমানের কাজ।

– আপনি এত ভালো কেন?

– আমি ভালো!

– হুম।

– অথচ তুমি আমাকে একবার খারাপ বলেছিলে।

– ওইটা তো রাগ করে বলেছিলাম।

স্তব্ধ মুচকি হাসলো স্নিগ্ধতা মন খারাপ করে বলল,
– আমার কারণে আদ্রিকের সঙ্গে আপনার শত্রুতা হয়ে গেল আপনার আন্টির সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হলো তাই না? আমি আপনার জীবনে না আসলে হয়তো এতকিছু হতো না।

– তোমাকে কে বলেছে এসব?

– কেউ বলেনি আমার মনে হয়েছে এছাড়া কথাগুলো তো সত্য।

– তুমি আমার জীবনে এসেছ বলে আমি বদলে গেছি বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরেছি ড্যড এর সঙ্গে আমার দূরত্বটা কমেছে নিজের জীবনকে গুছিয়ে নিতে পেরেছি বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি আর ড্রিংক করা ছাড়াও যে ভালো থাকা যায় খুশী থাকা যায় বুঝতে পেরেছি কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয় যারা চলে গেছে যাক তোমাকে তো পেয়েছি আর কাউকে চাই না আমি।

স্নিগ্ধতা প্রাপ্তির হাসি হেসে একটা মাদুর বিছিয়ে বেলকোনিতে বসে পড়লো স্তব্ধও স্নিগ্ধতার গাঁ ঘেঁষে বসলো।স্নিগ্ধতা স্তব্ধের কাধে মাথা রেখে বলল,

– বাবার কথাটা আমি এখন উপলব্ধি করছি কষ্টের পরেই সুখ আসে আমার জীবনে কষ্ট ছিল বলেই আমি আপনাকে পেয়েছি।

– তারপরেও তো খুশি হয়ে একটা চুমু দেও না।

– চুমু ছাড়া কি আপনি কিছু বুঝেন না?

– না।

বলেই স্নিগ্ধতার গালে একটা চুমু খেল স্তব্ধ,স্নিগ্ধতা লজ্জায় দৃষ্টি নত করে ফেলল।
_______________

এ ক’দিন রাহেলা বেগমের সঙ্গে তেমন কথা না হওয়ায় সকালে নাস্তা করেই রাহেলা বেগমের ঘরে গেল স্নিগ্ধতা। স্নিগ্ধতাকে দেখতেই রাহেলা বেগম খুশি হয়ে গেলেন, স্নিগ্ধতা রাহেলা বেগমের পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,

– কেমন আছো দিদান?

– এখন এসে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে কেমন আছি?

স্নিগ্ধতা মুখটা অপরাধীর ন্যায় করে রেখেছে। রাহেলা বেগম আদুরে গলায় বললেন,
– শরীরের ব্যথাগুলো ঠিক হয়েছে নাত বউ?

– পুরোপুরি ঠিক হয়নি।

– দাদুভাইয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি ঠিক হয়েছে?

– হুম।

– দাদুভাই তোকে ভালোবাসে কিন্তু এই ভালোবাসাটা বুঝতে একটু সময় লেগেছে আসলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কিছু না ভেবেই সাইন করে দিয়েছিল ভাবতে পারেনি এতকিছু হয়ে যাবে।

– উনি আমায় ভালোবাসে!

– এখনও বুঝতে পারিসনি বোকা মেয়ে, বউমা সবার অগোচরে দাদুভাইকে ডেকে নিয়ে তোকে ডিভোর্স দিতে বলেছিল কিন্তু দাদুভাই সাথে সাথে প্রতিবাদ করেছিল কাগজ ছিঁড়েও ফেলেছিল ভালো না বাসলে কি এমন করতো, তোর শাশুড়ি যখন দেখলো দাদুভাই তার কথা শুনছে না তখনি বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দিল আসলে কথাটা বলেছিল দাদুভাইকে ভয় দেখানোর জন্য এমনিতে কখনও এমন কাজ করতো না তোর শশুর আগেই সব বলেছে আমায় তাই আমিও কিছু বলিনি নইলে তোর সঙ্গে কোনো অন্যায় হতে দিতাম না, এই ঘটনায় ভালোই হয়েছে তোর শাশুড়ি নিজের ভুল বুঝতে পেরে তোকে মেনে নিয়েছে।

– হুম।

– দাদুভাই কোথায়?

– বাবার সঙ্গে অফিসে গেছে।

– তিহান দাদুভাই?

– ভাইয়া কলেজে গেছেন।

– ওহ।

সালেহা হাত মুছতে মুছতে রাহেলা বেগমের ঘরে এসে স্নিগ্ধতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– আপনারে ভাবী ডাক পারে এহনি যাইতে বলছে।

সালেহা কথাটা বলে চলে গেল রাহেলা বেগম হেসে বললেন,
– গিয়ে দেখ কেন ডাকছে।

স্নিগ্ধতা মাথা নাড়িয়ে চলে গেল অরিত্রি শিকদারের ঘরের সামনে দাড়িয়ে বলল,
– মা আসবো?

অরিত্রি শিকদার ভেতর থেকে বললেন,
– হ্যা আসো।

স্নিগ্ধতা ভেতরে প্রবেশ করলো, বিছানায় শাড়ি আর গহনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।অরিত্রি শিকদার হেসে বললেন,

– এখানে বসো।

স্নিগ্ধতা বসতেই অরিত্রি শিকদার বলতে লাগলেন,
– এই শাড়ি গহনা গুলো স্তব্ধের বউয়ের জন্য রেখেছিলাম তিহানের বউয়ের জন্যও আলাদা রাখা আছে যেদিন ওর বউ আসবে সেদিন সব বুঝিয়ে দিব, স্তব্ধের বউ হিসেবে এগুলো সব তোমার নিজের জিনিস নিজের কাছে নিয়ে রাখো।

– আপনার কাছেই থাক মা যখন দরকার হবে নিয়ে নিব।

– তা বললে হয় না নিজের জিনিস নিজের কাছে রাখতে শিখো, তুমি একা নিতে পারবে না চলো দু’জনে মিলে তোমাদের ঘরে নিয়ে যাই।

– কিন্তু মা…

– আমার অবাধ্যতা পছন্দ নয় চলো।

স্নিগ্ধতা আর কিছু বলল না দু’জনে মিলে বিছানায় রাখা সব শাড়ি আর গহনা স্তব্ধের ঘরে নিয়ে গেল।অরিত্রি শিকদার যত্ন সহকারে আলমারিতে সব সাজিয়ে রাখলেন।
_____________

সানজিদ ওয়াজেদ মা’রা গেছেন এক মাস হয়ে গেছে। সবাই শোক কাটিয়ে উঠেছে তবে স্নিগ্ধতা এখনও ঘুমের ঘোরে বাবা বলে চেঁচিয়ে উঠে স্তব্ধই তখন সামলায় তাকে। সানজিদ ওয়াজেদ মা’রা যাওয়ার পর জানা গেছে তিনি তার বেশির ভাগ অর্থ এবং সম্পত্তি স্নিগ্ধতার নামে দিয়ে গেছেন কিন্তু স্নিগ্ধতা কিছুই নেয়নি সব শুভকে দিয়ে দিয়েছে শুভ নিতে চায়নি শেষে বোনের জোরাজুরিতে নিতে বাধ্য হয়েছে। অর্থ বিত্ত সম্পত্তির প্রতি কোনদিন মোহ ছিল না স্নিগ্ধতার শুধু একটু ভালোবাসার দরকার ছিল তবে তার বাবা যে তাকে ভালোবাসতো তা স্নিগ্ধতা সবসময় বুঝতে পারতো।

তবে এখন সব চাওয়া গুলো পূর্ণতা পেয়েছে ভালো একটা পরিবার পেয়েছে পরিবারের মানুষগুলোর ভালোবাসা পাচ্ছে।স্নিগ্ধতা আর বাবার বাড়ি যায়নি কেনই বা যাবে কার জন্য যাবে কিন্তু শুভর সঙ্গে প্রতিদিন কথা হয়।

অরিত্রি শিকদারের সঙ্গে রুশির ঝামেলা হয়েছে দু’বোনের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে কিন্তু অরিত্রি শিকদারের এতে আক্ষেপ নেই তিনি বোনকে বলে দিয়েছেন,’তোর থেকেও স্তব্ধ আর স্তব্ধের চাওয়া গুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

চলবে…….