#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৮|
#শার্লিন_হাসান
সেরিন, নিশাতের যাওয়ার পাণে শুভ্র পলক ফেলে। অতঃপর নিজেও সিএনজি ধরে কলেজ গেটের সামনে নেমে যায়। সেরিনকে ছোটখাটো একটা বাঁশ না দেওয়া অব্দি শুভ্রর শান্তি নেই। এই মেয়ে কারণে অকারণে তাকে তুলোধোনা করে। যেখানে সেখানে চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে। সে একজন প্রিন্সিপাল মানুষ কত সন্মান দেয় আর মেয়েটা তাকে ধোয়। কারণে অকারণে ধোয়।সে যে সেরিনের টিচার সেটা সেরিন ভুলে গেছে। কিছু একটা মনে হতে শুভ্র কলেজের পাশে ফাস্টফুডের দোকান গুলোতে যায়।
সেখানে গিয়ে সে তার কলেজের স্টুডেন্ট পায়। তাও ছেলে আর মেয়ে একসাথে বসে আছে। শুভ্রকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে আকাশ। শুভ্র চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। হুংকার ছেড়ে বলে,
‘এটা কলেজ! কলেজ ক্যাম্পাস। একজন এমপির বাড়ী। এটা কোন ডেটে আসার জায়গা না। আমার দেওয়া ওয়ার্নিং ভুলে গেছো তোমরা।’
শুভ্রর কথায় আকাশ এবং প্রিতী দু’জনে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। শুভ্র দু’জনকে তার রুমে আসতে বলে। ফাস্টফুডের দোকান ছেড়ে শুভ্র সোজা ফাস্ট ইয়ারের ক্লাসে যায়। লাস্ট পিরিয়ড এটা। তখন ক্লাসে থাকা টিচারকে বলে,
‘আজকে যারা অনুপস্থিত তাদের বাড়ীতে কল দিয়ে জানিয়ে দিবেন কলেজ আসেনি। আর না আসার কারণটাও জেনে নিবেন। সেরিন পাটওয়ারী মিশাত রোল ২৩৫ মেয়েটার বাড়ীতে এই মূহুর্তে কল দিয়ে জানগন কেনো কলেজ আসেনি।’
কথাটা বলে শুভ্র প্রস্থান করে। সবাই তাকিয়ে আছে শুভ্রর যাওয়ার পাণে। ঝড়ের গতিতে আসলো আবার ধমকা ধমকি করে বিদ্যুতের গতিতে চলেও গেলো। আকাশ,প্রিতী দুজন শুভ্রর রুমে যায়। শুভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমার দেওয়া রুলসের কথা মনে নেই? আমার কলেজ ক্যাম্পাসে কোন কাপল ডেটে আসতে পারবে না। বেয়া’দব কোথাকার! একদিন আমি কলেজে নেই সাহস জেনো ঝড়ের গতিতে বেড়ে গেছে। তোদের দু’জনকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে দিলাম নেক্সট টাইম আমার চোখে পড়লে দু’জনকে বিয়ে দিয়ে দেবো নাহয় টিসি দিয়ে বের করে দেবো।
থেমে,
গেট লস্ট!’
ছেলে মেয়ে দু’টো যেতে শুভ্র কপাল স্লাইড করতে থাকে। ফোন হাতে মাহিকে কল দেয় শুভ্র। কয়েকবার রিং হতে কল রিসিভ হয়। ওপর পাশ থেকে মাহি বলে,
‘কিছু হয়েছে শুভ্র?’
‘তোর বোন আজকে কলেজ আসেনি।’
‘ও তো কলেজ ড্রেস পড়েই বের হয়েছে।’
‘কলেজ আসেনি বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেটে গিয়েছে কুমিল্লা।’
‘হুয়াট?’
‘হ্যাঁ, আজকে আমিও কুমিল্লা গিয়েছি….
‘তোর সাথে ও গিয়েছে?’
‘তোর বোনকে আমার সাথে নিলে তো? পিচ্চি একটা মেয়ে আমার হাঁটুর নিচে পড়ে থাকে। আর ও আমার গার্লফ্রেন্ড না যে ডেটে যাবো। আমি কাজে গিয়েছি সেখানেই একটা লোকাল বাসে তোর বোনের সাথে দেখা হয়।’
‘তো তুই কী করে জানলি ও ডেটে গেছে?’
‘সাথে তোর গার্লফ্রেন্ড নিশাত ও ছিলো।’
তখন মাহি শুধায়,
‘কই নিশাত তো আমায় কিছু বলেনি। আমার বোন এমন না বুঝলি? ওর বয়ফ্রেন্ড নেই যে ডেটে যাবে। হয়ত কোন কারণে গিয়েছে।’
‘কলেজ ইউনিফর্ম পড়ে যাবে কেনো?’
‘তো তুই একটা শাড়ী কিনে দিতি শাড়ী পড়ে যেতো।’
‘ইয়ার্কি ছাড় ভাই। তোর এটা বোন? কথা,কথায় উঠতে বসতে আমায় গা’লি দেয়। যার তার সামনে আমার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে। আমার নামটা শোনে না জেনো কী শোনে আল্লাহ ভালো জানে। তোর বেনের দু চোখের বিষ আমি।’
‘আল্লাহ আমার বোনের নামে এতো বদনাম। তুই যে বকা-ঝকা বেশী দেস আবার ধমকা ধমকি করস ওর পছন্দ না সেজন্য ও তোর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে। ‘
‘তোহ তোর বোনের জন্য কী আমি আমার রুলস ব্রেক করবো?’
‘না,না এটা তোর দায়িত্ব। ও আস্তে ঠিক করে নিবে সব। আমি বুঝিয়ে দেবো। একটু দেখে রাখিস আমার বোনকে।’
‘সবাই আমার চোখে সমান। তোর বোনের জন্য আমি এক্সট্রা চোখ লাগাতে পারবো না।’
‘আমার বোন ও সেই হিসাবে দেখে রাখবি।’
‘তোর বোন আমায় সহ্য করতে পারেনা।’
‘পারবে,পারবে।’
কিছুক্ষণ কথা বলে শুভ্র কল কেটে দেয়। অফিসে গিয়ে স্যারদের সাথে কিছুক্ষণ রাগারাগি করে শুভ্র। তার অবর্তমানে স্টুডেন্টরা ডেটে যায়। কেউ খোঁজ রাখে না। এই জন্যই কলেজ শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। তাঁদের কলেজ ধ্বংসের পেছনে এই হেলাফেলা, কোন বিষয়ে কেউ খেয়াল না রাখা। সাথে আরো কিছু লেকচার দেয় শুভ্র। স্যাররা চুপচাপ শোনে গেছে শুধু। ছাত্রছাত্রীদের থেকে বেশী বিরক্ত তারা। শুভ্রর মনে দয়ামায়া কিছুই নেই। ধমক একটা দিবে পুরো ক্যাম্পাস কাঁপানোর মতো। পিটির রোদে বসিয়ে তার দেওয়া ভাষণ সবচেরে বেশী বিরক্তিকর। তার চেয়ে বেশী বিরক্তকর ছুটি নেওয়ার জন্য তার কাছে আবেদন পত্র দেওয়া। ইত্যাদি,ইত্যাদি রুলস আর রুলস। শুভ্রর মাথায় কী চলে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
******
সেরিন বাড়ীতে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে৷ তার পেছন দিয়ে তার আম্মু সাইয়ারা আসে হাতে তার ঝাড়ু। ঝাড়ু দেখে সেরিন কিছুটা ভয় পায়। এখনো মাঝেমধ্যে ঝাড়ুর বারি কপালে জুটে তার। তার আম্মুকে দেখে সে বলে,
‘আম্মু ঝাড়ু কেনো?’
‘কলেজ গিয়েছিলি আজকে?’
‘হ্যাঁ!কেনো?’
‘তো স্যার কল দিয়ে কেনো বললো আজকে তুই অনুপস্থিত।’
‘আরে আম্মু হাজিরা এতো তাড়াহুড়োয় ডাকে যে প্রেজেন্ট স্যার,ইয়েস স্যার বলতে,বলতে আরেকজনের রোলে গিয়ে ঠেকে। তখন দু’জন একসাথে হয়ে যায়। আর আমি তো লেট লতিফা তুমি জানোই।’
সাইয়ারা আর কিছু বলেনি ঝাড়ু নিয়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। সেরওন জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। জন্মের মতো লেট লতিফা হয়েও সুবিধা আছে। এই যে মিথ্যে কথাটাও বিশ্বাস করানো যায়৷
তখন শশীর আম্মু তুষি আসে সেরিনের কাছে। সেরিন তার কাকীমাকে দেখে বলে,
‘তুমি আবার কী নিউজ নিয়ে এসেছো?’
‘তেমন কিছু না। চলো ফ্যামিলি ট্যুর দেই।’
‘টাকা নাই কাকীমা। তুমি নিলে আমি যেতে পারি।’
‘ফ্যামিলি ট্যুর মানে সবাই মিলে।’
‘তো চলো সমস্যা কোথায়?’
‘চলো তাহলে প্লেস বের করো। আমি আজকে সন্ধ্যায় তোমার চাচ্চু আর বাবাকে বলবো।’
‘শশী আসুক।’
তুষি প্রস্থান করতে সেরিন চুপচাপ শুয়ে পড়ে। এবার থেকে ভালো মেয়ে হয়ে যেতে হবে। না শুভ্রকে বকা যাবে আর না কারোর প্রেম নিয়ে মাথা ঘামাবে। শুধু পড়াশোনা আর পড়াশোনা এবং পড়াশোনা।
*******
আর্থ বাড়ী আসে। শুভ্র লিভিং রুমে বসে আছে। আর্থকে দেখে জোরই বলে,
‘বাবুর আম্মুর সাথে ডেটে গেলে নাকী হসপিটালে? তোহ মেয়ে বাবুর জেঠু হবো নাকী ছেলেবাবুর?’
আর্থ দৌড়ে এসে শুভ্রর মুখে চাপা দেয়। না করে বাবুর আম্মু নাম যাতে না উঠায়। কিন্তু শুভ্র আজকে আর্থকে বাঁশ দিবেই দিবে।
কিছুটা জোরে বলে,
‘ছোট আম্মু শুনেছো? মেঝো আম্মুকে খবর দাও তার ছেলের বউকে আমি পেয়েছি আজকে। এতোদিন লুকিয়ে রেখেছে। আজকে তো বাবুর আম্মুর সাথে হসপিটাল এমনকি কুমিল্লা শহর পুরোটা ঘুরে এসেছে।’
‘ওটা তোমার বাবুর আম্মু ছিলো। আমি তো ওকে চিনিও না। শুধু দূর থেকে দেখেছি আর তোমাকে স্মরণ করেছি। আর আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই যে আমি ডেটে যাবো।’
‘শশী কে?’
‘ছ..ছোট বোন।’
‘তার মানে শশীর বড় বোনের সাথে প্রেম! জানতাম এমনটাই হবে। দু’টোর অবস্থাই, চোরা চোরা বাট পুলিশ,পুলিশ ভাব নিয়ে ঘুরাফেরা । ওই সেরিনকে বিয়ে করিস না ভাই। ভালোর জন্য বলছি ও নাহলে তোর লাইফ টাকে বরবাদ করে দিবে। নেতা গিরি এক অপমানে ছুটিয়ে দিবে।’
‘কেনো তোমার প্রিন্সিপাল গিরি ও কী এক অপমানে ছুটিয়ে দিয়েছে?’
‘আমার কাছে ওর পাত্তা আছে নাকী? আর আমাকে সবাই রেসপেক্ট করে।’
‘একমাত্র ওই একরোখা মেয়েটা ছাড়া।’
শুভ্র ‘হ্যাঁ’ বোধকে মাথা নাড়ায়। আর্থ উচ্চস্বরে হেঁসে দেয়। শুভ্রর হাতে চাপড় মেরে বলে,
‘ক্যারি অন।’
আর্থ চলে যেতে শুভ্র ও নিজের রুমে চলে যায়।
সন্ধ্যায় শুভ্র কাবাড থেকে একটা বড় ফটো এলবাম বের করে তার আম্মুর। নজরকারা হাসিতে চোখ ভোলায় শুভ্র। কোন একসময় তার আম্মু ছিলো চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সুন্দরী রমণী। ভাগ্য সহায় হয়নি তাই তো অল্পতেই মৃ’ত্যুবরণ করলো। শুভ্র জানে তার মায়ের মৃ’ত্যুর পেছনে এই চার দেওয়ালে থাকা কারোর না কারোর হাত আছে। তার মায়ের খু’নিদের খোঁজ পেলে কাউকেই ছাড়বে না শুভ্র।
ছবিটা বুকে জড়িয়ে বেলকনিতে যায় শুভ্র। সেখান থেকে স্পষ্ট তার মায়ের ক’বর দেখা যাচ্ছে। আজকের সন্ধ্যাটা একটু অন্যরকম। আকাশে সুন্দর চাঁদের আলো
জ্বলমল করছে। শুভ্রর তৃষ্ণা পায় খুব বেশী! কাউকে মা’রার তৃষ্ণা।
#চলবে