হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-০৬

0
582

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৬|
#শার্লিন_হাসান

-আরে বা’ল…..

সেরিন তাকিয়ে দেখে শুভ্র তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো ক্লাস নিস্তব্ধ। সেরিন চোখ মুখ কচলে পুনরায় তাকায়। না সত্যি এটা জ্বীন না আরজিনই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে আসলো কখন? কীভাবে? নিশাত সেরিনের দিকে চোখ পাকাচ্ছে। তাঁদের আবার কথা বলতে গেলে হুঁশ থাকে না। আশে-পাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে।

তখন শুভ্র বলে,
-দু’জনে দাঁড়াও।

সেরিন নিশাত দু’জনে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তখন শুভ্র কন্ঠস্বর উঁচু করে বলে,
‘ক্লাসে আসো প্রেমালাপ করার জন্য? আমি এখানে এসেছি আমায় চোখে পড়ে না? বেয়া’দব দু’টো। পড়ালেখা তো নেই তার উপর ক্লাসে ডিস্টার্ব করে। স্যার যারা এদের দু’জনের মতো ক্লাসে এসে কথা বলবে, ক্লাসের পরিবেশ নষ্ট করবে এঁদেরকে সামনে নিয়ে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবেন।

শুভ্র থেমে বলে,
সীট ডাউন!’

রাগে সেরিনের মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। এমনিতে ওইদিকে কী হলো না হলে সেই চিন্তায় শেষ তারউপর এমন অপমান। নিশাত বসতে,বসতে দশবিশটা গা’লি শুভ্রকে দান করেছে। সেই সাথে কঠোর অভিশাপ! সেরিন মনে, মনে একশটা গা’লি দিয়েছে সেই সাথে অভিশাপ।
‘ দোআ দিলাম তোর বাবু হলে যাতে তোর বউ বাবুকে কোলে নিতে না দেয়। তোর বউ আস্ত ঝগড়ুটে হবে। এতো পরিমান বাচাল হবে যে তোর কান জ্বালা ফালা করে ফেলবে। শুধু তাইনা কথায়,কথায় উঠতে বসতে খোঁটা দিবে। শুধু খোটাই না। এতো রাগ করবে যে রাগ ভাঙাতে,ভাঙতে তোর জীবন লুজ হয়ে যাবে। এতো তেজ থাকবে না ভাই।’

শুভ্র তখন তাঁদের কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে বলে। আগামী কাল থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় বের করে রিহার্সাল করানো হবে। এবং যারা গান গাইতে পারে তারা জেনো গানের তালিকায় নাম দেয়।

শুভ্রর সাথে দু’জন টিচার এসেছে। তাঁদের নিয়ে শুভ্র কমার্সের রুমে যায়।
সেরিন নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন নিশাত সেরিনকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য বলে,
‘এতো তেজ দেখিয়ে লাভ নেই সেই বউয়ের কাছে গেলে বনের সিংহ ও বিড়াল হয়ে যায়।’

‘এই শা’লা জীবনেও বিড়াল হবে না। সিংহ সিংহের মতোই থাকবে।’

সেরিনদের ক্লাস শেষ হতে তাঁদের কলেজের সাংস্কৃতির টিচার একজন স্যার আর একজন ম্যাম আসে নাম নেওয়ার জন্য। নিশাত সেরিনকে ঠেলছে নাম দেওয়ার জন্য। সেরিনের মুড নেই এসবে। কিন্তু সেরিন খুব ভালো গায়। ফেসবুকে তার ভালো একটা ফ্যানবেজ রয়েছে। নিশাতের জোড়াজুড়িতে সেরিন নাম লেখায়।

*******

আর্থ শসীর দিকে তাকিয়ে আছে। যেটা অনেকেরই চোখে পড়েছে। আপাতত মেয়েরা পারছে না শসীকে সরিয়ে নিজেরা শসীর জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে। আর্থ চৌধুরীর ব্যবহার প্লাস এট্টিটিউড সম্পর্কে অনেকের ধারণা আছে। বেশীরভাগ তার সুন্দর হাসির প্রেমে পড়েছে। শসীও তার ব্যতিক্রম নয়। শসীর এতো বেশী আফসোস হচ্ছে যে ক্রাশকে সামনে পেয়েও কথা বলতে পারছে না। ওইদিকে অনেক মেয়েরা ছবি তুলছে অথচ তারা ছবি তুলতে পারছে না। সিনহার হাত খামচে ধরে শসী। আস্তে করে বলে,

‘চল পিকচার তুলবো। আই হোপ না করবে না।’

‘আচ্ছা চল।’

সিনহা,শসী আর্থর দিকে এগিয়ে যায়। আর্থ শসীকে এগিয়ে আসতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হয়ত চিনে এতো মানুষ দেখে কিছুটা আনইজি ফিল করছে। যাই হোক আর্থর জন্য ভালোই হয়েছে। সে কখনো পাবলিক করবে না প্রেমের কথা। শসী সিনহা আর্থর সামনে যায়। শসী সাহস করে বলেই ফেলে,

‘ভাইয়া যদি কিছু মনে না করেন একটা পিকচার তুলবো।’

‘ভাইয়া?’

আর্থর কথায় বাকীরা তাকায়। শসী মনে,মনে বলে,
‘ভাইয়া না সাইয়্যা বানাবো আপনায়।প্লিজ আসুন,আসুন বলুন ‘ শসী ডু ইউ লাভ মি? উইল ইউ ম্যারি মি। সেটা তো আর বলবেন না। আবার মনে, মনে আশাও রাখেন ভাইয়া না সাইয়্যা হওয়ার। জানি শসী সুন্দরী ভালো না লাগার কিছু নেই।’

‘হ্যাঁ পিকচার নিতে পারেন।’

আর্থর কথায় শসী সেলফি নেয়। ক্রাশের সাথে পিকচার শসী আজকে ভীষণ খুশি। সেরিনকে বাড়ী গিয়ে খবরটা দিতে হতে। আর্থ শসীর মুখের দিকে আরেকবার তাকায়। মেয়েটার হাসিটাও সুন্দর। কিন্তু শসী তো আজকে অনেক বেশী বকা খাবে আর্থর থেকে। আর্থ মনে,মনে ঠিক করে নেয় গাড়ীতে বসেই মেসেজ দিবে।

বৃদ্ধাশ্রম উদ্বোধনের কাজ শেষ করে তারা ব্যাক করে বাড়ীর উদ্দেশ্যে। আর্থ গাড়ীতে বসেই মেসেজ দেয় শসীকে।

‘তুমি আমাকে চিনতে পারোনি? এমন রিয়েকশন দেওয়ার কী আছে? আমি কে? তোমার ফিউচার বর! এই আশেপাশে ছেলে দেখে ঢং করেছো? আমাকে আর ভালো লাগে না? ওই ছেলেদের ভালো লেগে গেছে?’

মেসেজ গেলেও সীন হয়নি। আর্থ থামেনি তার রাগ লাগছে। পুনরায় লিখে,
‘ছেলেদের দিকে তাকিয়েছো নাকী আমার দিকে? এরপর এমন দেখলে না ডিরেক্ট বিয়ে করে চশমায় আমার ছবি লাগিয়ে চোখে জুলিয়ে দেবো। যাতে ডানে,বামে,উপরে,নিচে যেদিকে তাকাও আমাকেই দেখতে পাও। ইউ ক্যান ইমাজিন? আমাদের হুট করে দেখা হলো তাও তুমি খুশি হওনি?’

বাড়ীতে এসে আর্থ মুখ একটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে। শুভ্র তার কাছে এসবে বসে। আর্থর মুখ দেখে বলে,
‘গার্লফ্রেন্ড ব্রেকআপ করে নিয়েছে নাকী?’

‘না। মেসেজ সীন করছে না।’

‘যদি ফেইক হয় মেয়েটা?’

‘ফেইক হবে কেন? ওর সাথে আজকে দেখাও হয়েছে।’

‘সেটা না! যদি যার সাথে প্রেম করছিস সে জানে না অথচ তার হয়ে আরেকজন কথা বলছে তোর সাথে।’

‘বললেও লাভ হবে না। আমি সেই একজনকে ভালোবাসি। প্রয়োজন সেই একজনকে গিয়ে প্রপোজ দেবো।’

‘নেতা সাহেব প্রেমে পড়ে বাচ্চা ছেলে হয়ে গেলো। তার মেয়ে ফ্যানরা শোনলে ওই সেরিনের খবর আছে।’

‘ভাবীর খবর হবে কেন?’

‘ভাবী কী হ্যাঁ? ও আমার বিয়ে করা বউ নাকী যে তুই ভাবী উপাধি দিচ্ছিস?

‘সে একই! চিঠি তো সেই দিলো আর তুমি আমায় আর আমার বাবুর আম্মুকে দোষ দাও।’

‘নাহ্! ও চিঠি দেয়নি। চিঠি কে দিয়েছে সেটাও জানি না। তবে যে দিয়েছে চালাকি করেই দিয়েছে। কারণ প্রথম চিঠিটা আমার নামে আসলেও পরের চিঠিটা তোর আর আমার নাম মিলিয়ে। এই দাউদকান্দি উপজেলায় এমন কেউ নেই যে আমাদের নাম জানে না। সবাই জানে চৌধুরীদের দুই ছেলে। আরজিন চৌধুরী শুভ্র আর আরফিন চৌধুরী আর্থ। মেয়েটা প্রচুর চালাক।’

‘চালাকি করে দেয়নি। মেয়েটা সত্যি হয়ত জানে না আমাদের নাম।’

‘সে যাই হোক চিঠুর মালিককে পেলে কষিয়ে কয়টা দিয়ে ভুল জায়গায় বাবুর আম্মু হওয়ার আবদার করার মানে বুঝিয়ে দেবো।’

****

আর্থর মেসেজ দেখে সেরিনের মাথায় হাত চলে যায়। সময়টা সন্ধ্যা গড়িয়ে। শসী আসে সেরিনের রুমে। তার হাতে ফোন আর সেই ফোনের স্ক্রিনে আর্থর আর তার ছবিটা জ্বলজ্বল করছে।

সেরিন শসীকে দেখে বলে,

‘বনু বসো একটা কথা বলার ছিলো।’

‘বল?

বসতে,বসতে বলে শসী। তখন সেরিন বলে,
‘আসলে তুমি তো আর্থ স্যারের উপর ক্রাশিত আইমিন প্রেম ভালোবাসা। তো ধরো আর্থ স্যার ও তোমায় লাভ করে।”‘

‘ইম্পসিবল। ও কখনো আমার মতো বাচ্চাকে লাভ করবে না।
‘গাধী আমি তোর থেকে একবছরের জুনিয়র। আমার কাছে কাবু হলে তোর কাছে হবে না?’

‘তার মানে আর্থর সাথে তুই প্রেম করছিস?’

‘না, আর্থ শসীকে ভালোবাসে আর আমি সেরিন যে শসী হয়ে আর্থকে ইমপ্রেস করেছি। এখন প্লিজ আইডি চেন্জ কর। তোর আইডি তুই নে আর আমায় উদ্ধার কর। এমনিতে একজনের কাছে ধরা খেয়ে গেছি।’

‘একদিনে দুই দু’টো খুশির খবর। সত্যি আর্থ আমায় ভালোবাসে?’

‘হ্যাঁ। শোন এবার তোর আইডি থেকে আমার গাওয়া গান ডিলিট করে দিস। আমার আইডিতে আমি পোস্ট দিবো। মানে আগের মতো সব ঠিকঠাক করে নিবো।’

শসী সেরিন যে যার আইডি লগ ইন করে নেয়। তখন সেরিন বলে,
‘রিসেন্ট মেসেজের রিপ্লাই তুই দিস।’

‘হ্যাঁ দিবো।’

শসী প্রস্থান করতে সেরিন হাফ ছেড়ে বাঁচে। তার গাড় থেকে বোঝা নেমে গেছে। এখন আরকী! বাকী সব ছেড়ে নিজের ব্যস্ত লাইফে ফোকাস করতে হবে।

রাতে নিজের কাজ শেষ করে শুভ্র শসীর আইডি স্টক করে। কোন গানের ভিডিও নে আইডিতে। হয়ত সেরিন হিংসুটে মেয়েটাকে ব্লাকমেইল করে ডিলিট করিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সেরিন হিংসুটে হবে কেন? সেরিন কী তাকে পছন্দ করে নাকী? যা খুশি হোক শসী তার ছেট ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড শুভ্র সেদিকে তাকানোর মতো কিছু নেই। নিজের লাইফ,কর্ম নিয়ে ব্যস্ত সে।

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।❤️‍🩹)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে