সুখ একটি প্রজাপতি পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
1998

#সুখ_একটি_প্রজাপতি (৩৬)

টরন্টোর বুকে যেন এক চিলতে হাসির নাম টরন্টো জু। সবুজে ঘেরা চারপাশ। সোনালি আলোর মতো চকচক করছে সব। প্রবেশ পথে দারুণ এক ঘটনা ঘটে গেল। অলিভিয়া আর ড্যানিয়ালকে আশা করে নি ওরা। ঝিল অবাক হয়ে তাকিয়ে। এরই মধ্যে অলিভিয়া এসে ওকে জড়িয়ে ধরল।
“কেমন আছ অনা?”

“গুড। তোমাদের আশা করি নি একদম। ইটস টোটালি সারপ্রাইজিং!”

“অল ক্রেডিট টু ড্যানিয়েল। জানতে পেরেই এই প্ল্যান করেছে।”

“খুব ভালো হয়েছে অলিভিয়া। কিন্তু ড্যানিয়ালকে তো দেখতে পাচ্ছি না।”

“এই তো এসে যাবে। আমার জন্য চিপস কিনতে গিয়েছে।”

“চিপস! তোমার ও বুঝি ঝিলের মতো ছোট ছোট ক্ষিধে পায়।”

অভিনবর দিকে ঝিল রাগি চোখে তাকাল। অলিভিয়া হো হো করে হাসছে। ওদের দেখে মুনতাহারাও কাছে চলে এল। কুশলাদি করে বলল, “তোমাদের সাথে এখানে দেখা হবে ভাবি নি মাহেরা।”

“আমরা সবাই ফ্রেন্ড ফ্যামেলি।”

“এটা দারুণ। ঐ তো ড্যানিয়েল চলে এসেছে।”

ড্যানিয়েল চিপস গুলো এগিয়ে দিয়েই বলল, “হেই হোয়াট অ্যা সারপ্রাইজ! অভিনবর সেই বন্ধুরা যে তোমরা তা ভাবতেও পারি নি। খুব ভালো হলো। দারুণ হবে আজকের ট্যুর।”

“আমরাও ভাবি নি ড্যানিয়েল।”

মাহের হাত বাড়িয়ে কুশলাদি শেষ করল। তারপরই ওরা ভেতরে সবাই প্রবেশ করল। ঝিল অলিভিয়াকে পেয়ে অভিনবকে পাত্তাই দিচ্ছে না। দুজন গল্পে ডুবে গেছে। অভিনব ইশারা মুনতাহাকে ডেকে নিতে বলল। কিছু সময় পর মুনতাহাও ওদের সাথে যোগ দিল। মাহের ব্যস্ত ভিডিয়ো কলে। তার আর মিশকাতের দুষ্টুমি দেখে সকলেই এক বিস্তর হেসে নিল। আফরা আর মাহেরা পথ চলছে। যার কেন্দ্রে রয়েছে অভিনব।

মুনতাহার জীবন সম্পর্কে কিছুটা অবগত অলিভিয়া। সে হঠাৎ আপসোস করে বলল, “এটা খুবই খারাপ হয়েছে। তোমার উচিত অ্যাকশন নেওয়া।”

“অ্যাকশন নিলে কি হবে অলিভিয়া? যে আমায় চায় না তার মনে কেমন করে জায়গা নিব?”

“অনেক সময় জোর করতে হয় আপু। তুমি হয়ত জোর খাটাতে চাও নি।”

“তেমনি ঝিল। আরফান কখনো আমায় ভালোবাসেনি। সবটাই ছিল শারীরিক মোহ। নতুবা সংসারটা এত দীর্ঘ হতো না।”

ঝিলের খারাপ লাগল। অলিভিয়া পাশ থেকে মুনতাহার হাত ধরল। ভরসা দেওয়ার মতো করে বলল, “তোমায় এগিয়ে যেতে হবে মুনতাহা।”

মুনতাহার খুব বলতে ইচ্ছে করল আমি এগিয়ে যাব। তবে বিগত দিনের ঘটনা স্মরণ করে আর বলা হলো না। ওর খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। না পাওয়ার এক যন্ত্রণা।

টরন্টো চিরিয়াখানা প্রায় ৭০০ একর জমির উপর তৈরি করা। একদিনে পুরোটা ঘুরে দেখা অসম্ভব। তাই বিশেষ কিছু জায়গায় ঘুরবে বলেই ঠিক করেছে ওরা। ঝিলের হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে অভিনব। যেন কোনো বাচ্চা। ঝিল অবশ্য বেশ উপভোগ করছে। এত এত কেয়ার পেতে কার না ভালো লাগে?
এই চিরিয়াখানায় ইন্দো-মালায়া,আফ্রিকা,আমেরিকা ইউরেশিয়া,টুন্ড্র ট্রেক,অস্ট্রালয়েশিয়া এবং কানাডিয়ান ডোমেন সহ বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী প্রাণী রয়েছে। বাংলাদেশের চিরিয়াখানার মতো নোংরা নয় এর পরিবেশ। কোনো ধরনের বাজে গন্ধ নেই। বাতাস ও মুক্ত। এখানকার প্রাণীরা চলাচলের জন্য বেশ বড় আর খোলা জায়গা পেয়ে থাকে। চারপাশের সবুজ সোনালি গাছ কেমন শুভ্রতা ঢেলে দিয়েছে। সদ্য শীত থেকে উঠা গাছ গুলোকে যেন অন্যরকম লাগছে। একটু দূর পর পর ই রয়েছে ওয়েলকাম বোর্ড। গেট থেকে একটু ভেতরে যেতেই কিছু ফুলের গাছ চোখে পড়ল। ঝিল সেখানেই এল। ফুল গুলো হাত দিয়ে স্পর্শ করে বলল,”ফুল গুলো নিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।”

“গাছের ফুল,গাছেই সুন্দর ঝিল।”

ওরা আবার চলতে শুরু করল। এরই মাঝে মাহের ভিডিয়ো কলে সবার সাথে মিশকাতের কথা বলিয়ে দিয়েছে। ঝিল সেসব দেখে বেশ হেসে নিয়েছে। যার রেশ রয়েছে এখনো।অভিনব ওর হাসি লক্ষ্য করে বলল, “দেখলে প্রজাপতি,বাবু হওয়ার আনন্দে মাহের কতটা আদর করছে মিশকাতকে।”

ওর কথা বুঝতে পেরে মিটিমিটি হাসল ঝিল। অভিনব মুখে এ কথা বললেও আসলে সে জানে একটা নতুন সদস্য আনার সঠিক সময় নয় এখন। সামনে হয়ত আরও সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। আরেকটু যেতেই চোখে এল বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রাইডস। সেটা দেখে ঝিলের বায়না শুরু হয়ে গেল। তার বায়নায় সায় দিয়ে সবাইকে ডেকে নিল অভিনব। কাউন্টার থেকে টিকেট নিল সবার জন্য। মাহেরার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে আফরা। মলিন মুখে সে বলল,”ভয় নেই আফরা। আমি কষ্ট লুকাতে জানি।”

মুখে এ কথা বললেও সে মূলত কষ্ট লুকাতে পারল না। অভিনব স্পষ্ট দেখতে পায় মেয়েটির অবস্থা। কিন্তু তার যে কিছুই করার নেই। তাছাড়া পৃথিবীর সবাইকে খুশি করা যায় না। ঝিল মুনতাহার সাথে কথা বলছিল। খানিক বাদে কাছে আসতেই অভিনবর ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হলো। ঝিলের নাকে ইষৎ স্পর্শ করে বলল,”ম্যাডাম রাইডে উঠবেন না?”

“উঠব তো।”

“তবে দূরে কেন সরে গেলেন?”

“মাহেরা আপুর কষ্ট হচ্ছে।”

অভিনবর বুকটা কেমন করে উঠল। ঝিলের চোখ মুখ শুকনো। মেয়েটি নিজের সুখ ছেড়ে অন্যের সুখের কথা ভাবছে!
“তুমি পৃথিবীর সবাইকে খুশি করতে পারবে না ঝিল।”

“এটাই কষ্ট দিচ্ছে। আগে মাহেরা আপুকে যত না অসহ্য লাগত,আজ ততই মায়া লাগছে।”

ঝিলের শুকনো মুখটা দেখে আরেকটু নিকটে এল অভিনব। হাতের সাহায্যে কাছে টেনে নিতে নিতে শুধাল,”আর আমায়,আমায় ছাড়তে পারবে?”

“কখনো না। আমি মৃ ত্যু ছাড়া তোমার সাথে বিচ্ছিন্নতা না হোক। বেঁচে থেকেও ম রে যাব আমি। ভালোবাসি তো।”

“তাহলে মাহেরার মন ভালো করার কথা ভুলে যাও ঝিল। তোমার হাতে নেই এটা।”

কিছু সময় রাইড গুলো উপভোগ করে ওরা ফের চলতে শুরু করল। চোখের সামনে ভেসে এল গট ওয়ার্ল্ড। যেখানে রঙিন করে ইংরেজি অক্ষতে লেখা টরন্টো। গাড়ির টায়ার দিয়ে লেখা কিছু শব্দ দেখে হো হো করে হেসে ফেলল ঝিল। অভিনব ইশারা করতেই হাসি থামিয়ে দিল। ছাগল গুলো কচি ঘাস চিবুচ্ছে। ওদের জন্য তৈরি করা ঘর দেখে মাহের বলল, “কি আজব এই দুনিয়া। ছাগলের জন্য তৈরি করা ঘর মানুষের ঘরের থেকে বেটার।”

সেখান থেকে ওরা এল ডিসকভারি জোনে। গেটটা এত সুন্দর যে ছবি তুললে ভুল করল না আফরা। মাহেরার মনের অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। সে এখন হেসে খেলে কথা বলছে। অভিনব সবাইকে দাঁড় করিয়ে গ্রুপ ফটো তুলে নিল।
“অভিনব ভাই।”

“হ্যাঁ মাহের বলো।”

মাহের ফোন এগিয়ে দিয়ে ওয়াটার পার্ক দেখাল। অভিনব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখল গ্রীষ্মকালের জন্য এটা। তবে ঝিল সেখানে যাবে বলেই স্থির করেছে। ওর বায়না দেখে অলিভিয়া হেসে উঠল।
“অনা,তুমি তো দেখি ক্রমশ আমায় অবাক করে দিচ্ছ।”

“কেন অলিভিয়া?”

” অভিনবকে জোর করে যাচ্ছ। অথচ ড্যানিয়ালের কথার উপর কথাই বলা যায় না।”

এ কথা শুনে পাশ থেকে ড্যানিয়েল বলল,
“তোমায় কখনো কিছুতে বারন করি আমি?”

“বারন করো না?”

“সেসব তো তোমার ভালোর জন্যেই অলিভিয়া।”

“আর আমার জন্য যে তোমার সময় হয় না।”

“এবার তো সময় দিলাম সুইটহার্ট। এখনো রাগ করে আছ?”

কথার মাঝেই ড্যানিয়াল শক্ত করে আলিঙ্গন করল অলিভিয়াকে। এরই মাঝে চুমু খেয়ে বসল তারা। ঝিলের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। শিরশির অনুভূতিতে কাঁপতে থাকল সে। অভিনবকে খামচে ধরে বলল, “মাই গড! এটা কি ছিল।”

“তুমি প্রথম বার দেখলে?”

“হ্যাঁ। কখনো ভাবি নি এভাবে কাউকে লিপস টু লিপস।”

ঝিলের গাল লাল হয়ে এসেছে। অভিনব মুচকি হেসে নিচু স্বরে বলল, “অথচ রোজ কতভাবে আমার ভালোবাসায় সিক্ত হও প্রজাপতি। তখন তোমার লজ্জারা সব পালিয়ে যায়। তারা ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে। একেই বুঝি সুখ বলে?”

ঝিল উত্তর দিতে পারল না। কথাটা এত মনে লাগল ওর। খানিক বাদে ওর কানের কাছে চুল গুছিয়ে দিয়ে অভিনব বলল, “আমার সুখ তুমি ঝিল। শুধু তুমি।”

চলবে….

#সুখ_একটি_প্রজাপতি (৩৭)

“জানো অভিনব,তুমি যখন তরুণ ভাইয়ার সাথে আমাদের বাড়িতে এলে তখন আমার খুব কষ্ট হতে লাগল। আমার প্ল্যান ছিল বিয়েটা ক্যানসেল করার। কিন্তু ওনার সাথে তোমায় দেখে আমার যেন কি হলো। হুট করেই কারো প্রতি মায়া কাজ করতে পারে? কিন্তু তোমার প্রতি হুট করেই আমার একটা মায়া কাজ করতে শুরু করল। তারপর তোমার সেই আচারণ,যা পরপুরুষ হিসেবে একদমই অনুচিত সেটাও আমি মেনে নিলাম! মাঝে মাঝে খারাপ লাগত কিন্তু মন সে সবটা ভুলে যেত। আমি বউ হিসেবে খুব খারাপ তাই না?”

জুসের গ্লাসটা রেখে দিয়ে ঝিলের দিকে তাকাল অভিনব। মেয়েটার চোখ মুখ কেমন অন্ধকার হয়ে এসেছে।
“হঠাৎ করে এসব কেন বললে?”

“দেখো।”

ইশারা অনুযায়ী নজর সরায় অভিনব। একটা কপোত কপোতির মাঝে বেশ ঝগড়া হচ্ছে। খেয়াল করে বুঝতে পারল স্বামী থাকা সত্ত্বেও নারীটি অন্য পুরুষের সাথে ঘুরতে এসেছে। সেটা ধরে ফেলার দরুণ এই ঝগড়া। দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলল অভিনব। মেয়েটির মন খারাপ দূর করার প্রয়াসে বলল, “তোমার উপর যে ঝড় গিয়েছে,তুমি যে সবটা স্বাভাবিক মনে করে নিয়েছ সেটাই অনেক ঝিল। তাছাড়া যে বয়সে তোমার কাছাকাছি হয়েছি সেটা যে কাউকে প্রভাবিত করার মতোই ছিল। তুমি স্ত্রী হিসেবে দারুণ। আমি কখনো অভিযোগ করেছি তোমায়?”

ঝিল অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকাল। তার মায়াবী দুটি নয়নে মুক্তোর মতো জল ঝলমল করছে। সেটাই মুছে দিল ছেলেটা। থুতনি উঁচু করে সময় নিয়ে চুমু খেল ঠোঁট জুড়ে। উষ্ণতা পেয়ে চেপে ধরল ঝিল।
“আর কখনো এসব বলবে না। মনে থাকবে?”

“হুম।”

কানাডার শহরে যে এত গাছ থাকতে পারে তা ঝিলের ধারণাতেও ছিল না। এত দিন বরফের নিচে ডুবে থাকা গাছ গুলো এখন সতেজ সুন্দর। হাল্কা সূর্যের নরম আলো এসে লেগেছে গাছ গুলোর শরীরে। এত স্নিগ্ধ লাগছে দেখতে।ঝিলের হাল্কা শীত অনুভব হয়। সে দু হাত জড়ো করে ফেলল। অভিনব নিজের জ্যাকেট এগিয়ে দেয়।
“তোমার ঠান্ডা লাগবে তো।”

“আমি আবহওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে পারব। কিন্তু তুমি পারবে না।”

“তবু শরীর খারাপ করলে। আমার অতোও ঠান্ডা লাগছে না।”

“তুমি জমে যাচ্ছ ঝিল। এমন অবুঝের মতো করবে না। তাছাড়া তুমি অসুস্থ হলে আমার আগামীর রাত গুলো ঘুমে ঘুমে গত হবে। আমি ঘুমাতে চাই না প্রজাপতি।”

“অশ্লীল একটা।”

মুচকি হাসল অভিনব। ঝিল জ্যাকেট জড়িয়ে চলতে শুরু করেছে। একটা সুন্দর সুবাস এসে ধরা দিচ্ছে নাকে। এটা যে ছেলেটার শরীরের ঘ্রাণ তা বেশ ভালোই বুঝতে পারল ঝিল। মানুষটার লাগামহীন কথা গুলো স্মরণ করে ওর ঠোঁট দুটো কেবল প্রসারিত হয়ে রইল।

অলিভিয়া আর ড্যানিয়েল কথা বলে চলেছে। ওদের কথার মাঝে হঠাৎ হঠাৎ চুমু খাওয়ার দৃশ্য গুলো নজর এড়ায় নি কারোই। কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত এই কপোত কপোতির নিকট এসব স্বাভাবিক হলেও ঝিলের নিকট বিরল। ওদের দেখে তারও ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে চুমু খেতে। কিন্তু ওর সংস্কৃতি বাঁধা দিল। তাছাড়া কিছু জিনিস থাকে যা গোপনীয়।

“ঝিল,এদিকে এসো।”

খানিকটা ছুটে এল ঝিল। অভিনব হাতের সাহায্যে ট্রি হাউজ দেখাল। ঝিল বিস্ময়ে হতবাক। এত সুন্দর এটা! সে নিজের উত্তেজনা থামিয়ে বাকিদের ডাকতে যাচ্ছিল। অভিনব মুখ চেপে ধরল তৎক্ষণাৎ।
“আরে কি করছো কি?”

“কেন? ওরা যাবে না?”

“পরে যাবে। আমার সাথে আসো।”

“কিন্তু ওরা যে চলে যাচ্ছে।”

“যাক। আমরা আলাদা টাইম স্পেন্ড করব। বোকা প্রজাপতি আমার।”

লজ্জা পেল ঝিল। অভিনবর ভরাট পুরুষালি হাতটা খামচে ধরে চলতে শুরু করেছে। গাছের তৈরি এই ঘরটা মূলত চারপাশের সৌন্দর্য দেখার জন্যেই তৈরি করা। উপরে উঠার জন্য ভেতরে দিকে রয়েছে চক্রাকার সিঁড়ি। লোহার তৈরি এই সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় মেয়েটির হাত ধরে রাখল অভিনব। গাছের দেয়ালে রয়েছে বিভিন্ন পাখির ভাস্কর্য। উপরে উঠে দম ফেলল ঝিল। ওর পা কাঁপছিল। এখন বেশ ভালো লাগছে। এদিকে এখন মানুষ নেই। অভিনব সুযোগটা কাজে লাগাল। মেয়েটিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।
“কি হচ্ছে টা কি। এখানেও শুরু করলে?”

“হুম তো।”

“ছাড়ো।”

“ছাড়ার জন্যে ধরেছি নাকি?”

“আরে…”

ছেলেটির উষ্ণ ঠোঁটের অত্যাচারে ঝিল কথা বলতে পারল না। পুরুষালি হাতটা কোমরের দিকে আন্দোলন করছে। ওর স্পর্শ গুলো এত বেশি মাদকময় যে ঝিল নিজেও হারিয়ে ফেলল সমস্ত ধ্যানজ্ঞান।

ট্রি হাউজ থেকে নেমে সবাইকে খুঁজতে লাগল ওরা। ঝিলের উত্তেজিত অবস্থা দেখে অভিনব রাগ করল।
“তুমি দেখি রোমান্স বুঝোই না।”

“রাখো তো। ওরা কি ভাববে?”

“কি ভাববে?”

“আমরা কত সময় ধরে আলাদা আছি!”

“তো! একজন স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা ঘুরবে এটাই তো স্বাভাবিক। বর‍ং তুমি বুঝতে পারছ না।”

এর মধ্যেই আফরাকে দেখল ঝিল। ছুটে গিয়ে বলল, “বাকি সবাই কোথায় আপু?”

“আছে আশেপাশেই। তোমরা কোথায় ছিলে?”

“ট্রি হাউজে উঠেছিলাম।”

“অহ। আমরা এদিকটাই ঘুরছিলাম। আসো একটা সেল্ফি তুলি। তোমার সাথে একক ছবি নেই।”

ঝিল সুন্দর ভাবে দাঁড়াল। আফরা কয়েক ভাবে পোজ দিয়ে ছবি তুলছে।
“তামীম ভাইয়ার সাথে তোমার সম্পর্ক কতদূর?”

লজ্জায় লাল হয়ে এল আফরার মুখ। মেয়েটি অন্যদিক ফিরে বলল, “মাঝে সমস্যা হচ্ছিল। এখন ঠিক আছে।”

“ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে হলে তুমি আমি জা হবো।”

আফরা মাথা ঝাঁকাল। এই মুহূর্তে ঝিলকে ওর ভীষণ ভালো লাগছে। কথার মাঝেই মাহেরার আগমন। সে পানির বোতল এর ক্যাপ লাগাতে লাগাতে বলল, “কি বলছিস তোরা?”

“ঝিল বলল তামীম আর আমার বিয়ে হলে আমরা জা হবো।”

লজ্জায় হাসল আফরা। এদিকে মাহেরা বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে। সব ঠিক থাকলে তো ঝিলের জায়গাটা ওর হতো। তখন আফরা আর সে জা হতো। জীবন বড়ো অদ্ভুত আর নিষ্ঠুর।

বাচ্চারা কিডস জোনে বালি দিয়ে খেলছে। ওদের দেখে শৈশবের কথা স্মরণ হলো ঝিলের। ইচ্ছে হলো বাচ্চাদের সাথে বালির মধ্যে বসে খেলা করতে। তেমনটা করতেও যাচ্ছিল। কিন্তু অভিনব ওর প্রয়াস বুঝতে পেরে খপ করে ধরে ফেলল হাত।
“প্লিজ অভিনব।”

“এমন করলে বকা দিব প্রজাপতি। আমি যেমন ভালো বর তেমন খুব খারাপ বর ও।”

ঝিলের গোমড়া মুখ দেখেও না দেখার ভান করে রইল সে। এই বালির মধ্যে খেলা করার বয়স আছে ওর? কিছুদূর চলার পর একটা ছোট কাঠের ব্রীজ নজরে এল। সুন্দর এই ব্রীজের রেলিং এ মেয়েটিকে বসালো সে। দু হাতে কোমর পেঁচিয়ে বলল,”মন খারাপ করলে?”

“কী হতো একটু খেললে।”

“তুমি কি জানো,তুমি পুরো ছয় বছরের বাচ্চাদের মতো করছো।”

“আমি তো বাচ্চাই।”

মাথা নত করল ঝিল। অভিনব থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে নিল।
“পাগলি কোথাকার।”

আরেকটু চলতেই মুনতাহাদের কচ্ছপের উপরে বসে থাকতে দেখল ঝিল। আফরা বসেছে ডিমের খোলসের উপর। মূলত এগুলো আর্টিফিশিয়াল। বিনোদোন আর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তৈরি করা হয়েছে। মাহের তিন বোনের ছবি তোলায় ব্যস্ত। ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। অথচ নিষ্ঠুর মানুষ গুলো দেখেও দেখছে না। একের পর এক পোজ দিয়ে চলেছে। এর মধ্যে কিছু ভিন্ন ধরনের প্রাণী দেখল ওরা। চেনা প্রাণী জিরাপ ও রয়েছে। লম্বা তার দেহ। একটা বিষয় মিলিয়ে ফিক করে হেসে ফেলল ঝিল। অভিনব জিজ্ঞাসা করতেই জবাব দিল, “এই জিরাফটা হচ্ছো তুমি।”

“ওরে দুষ্টু।”

“সত্যি বলছি। তোমার কথাই মাথায় এসেছে।”

“তাই বলে জিরাফ?”

“ভাগ্যিস হাতি বলে নি।”

মাহেরের কথা শুনে ঝিল দম বন্ধ করা হাসিতে হাসতে শুরু করেছে। মাহেরের দিকে তাকিয়ে অভিনব বলে, “শেষমেশ তুমিও ছাড়লে না ভাই। ছয় ফিট মানুষ কি সত্যিই জিরাফ হয়?”

“বাংলাদেশের দৃষ্টিতে হয়। কানাডায় থাকলেও আমরা তো বাঙালি তাই না।”

সকলে আবার এক সাথে জড়ো হলো। ক্ষিধে পেয়েছে সবার ই। ঝিল ইতোমধ্যেই সঙ্গে করে আনা চিপস চকলেট শেষ করে ফেলেছে। মেয়েটার বেশির ভাগ সময় গেল খেতে খেতেই। অথচ পুষ্টিকর খাবারে একদমই মন নেই। অভিনব ঠিক করেছে এবার ফিরে কোনো ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে দিবে না। চলতে চলতে ওরা এল স্পেশাল ইভেন্টস সেন্টারের দিকে। রাস্তা গুলো রুপকথার কাহিনীর মতো সুন্দর। কোথাও কোনো ময়লার চিহ্ন নেই। চকচক করছে চারপাশ। এত সুন্দর পরিবেশ দেখে হিংসে হলো ঝিলের। মনে হতে লাগল বাংলাদেশের রাস্তা গুলোও যদি এমন সুন্দর হতো।

তুন্দ্রা ট্রেকের কাছে আসতেই ক্ষিধে বেড়ে গেল আরও কয়েকগুন। পাশে থাকা ক্যারিবু ক্যাফে থেকে ওরা পিজ্জা, বার্গার,আইস্কিম আর বাবল টি অর্ডার করল। বাবল টি এর স্বাদের সাথে পরিচিত নয় ঝিল। খাবার সার্ভ করতেই হুরমুরিয়ে নিল সে। এর স্বাদটা দারুণ লাগল ওর। রোগা পাতলা দেহের ঝিল পর পর দু জার শেষ করল মুহূর্তেই!

চলবে…..

#সুখ_একটি_প্রজাপতি (৩৮)

খাবার খাওয়া শেষে সবার বিশ্রাম নিচ্ছিল। এরই মাঝে ঝিল চেচিয়ে উঠল। সে ইশারায় দেখাল তুন্দ্রা এয়ার রাইড। যা ঝিলের নিকট বড়ো রোমাঞ্চিত। বাংলাদেশে থাকতে সে বহুবার ট্রাই করেছে কিন্তু বান্ধবীদের ভয়ের কারণে উঠা হয় নি। আজ কেন যেন ওর ইচ্ছে করছে খুব। ওর উচ্ছ্বাস দেখে ঠিক হলো এয়ার রাইডে উঠবে। কিন্তু সকলে বেশ পরিশ্রান্ত। সবে খাবার খেয়েছে কীনা। শরীর উঠতে চাইছে না। ঝিলের মন খারাপ হলো। সে টেবিলে মাথা গুঁজে দিয়ে বসে রইল। ঝিলের এই ইচ্ছেটাও অপূর্ণ রাখল না অভিনব। সে টিকেট কেঁটে আনল। ঝিলের খুশি হলো দেখার মতো। ড্যানিয়াল আমোদের সুরে বলল, “ইনজয় ইউর টাইম অনা। বেস্ট অফ লাক বোথ অফ ইউ।”

এদিকে মাহেরাও উঠে এসেছে। সেও উঠবে। আফরাকে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ও উঠতে হলো। অভিনব ঝিলের হাত ধরে রেখেছে। মাঝে মাঝে দু একটা কথা বলছে মাহেরা ও আফরার সাথে। ঝিলের ঠোঁটের কোণে শান্তি। তার মন মস্তিষ্ক জানে মানুষটা একান্তই তার।

অভিনব আর ঝিল একসাথে বসেছে। ঝিল এত সময় উত্তেজিত থাকলেও এখন কিছুটা ভয় হচ্ছে। অভিনব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। পুরুষ মানুষের স্পর্শ নারী দেহে একটু বেশিই প্রভাব ফেলে। নিজের মানুষটাকে রোজ হাজার ভাবে দেখা সত্ত্বেও ও ফের মন প্রাণ ভরে দেখছে ঝিল। এরই মাঝে রাইড চালু হয়ে গেল। ঝিল অন্যমনস্ক ছিল। হঠাৎ খেয়াল করায় সে বেশ ভয় পেয়ে গেছে। ওর ঘাবড়ে যাওয়া মুখটা দেখেই অভিনব বলল,
“রিলাক্স প্রজাপতি।”

“আমার খুব ভয় করছে অভিনব।”

“ভয় কে জয় করতে শিখো। তোমার সব ইচ্ছে পূরণ হবে।”

“তবু ভয় হচ্ছে।”

“লুক এট মাই আইস।”

ঝিল সরাসরি তাকাতে পারল না। তবে ইষৎ নত দৃষ্টিতে তাকাল। অভিনবর চোখের মনি এভাবে দেখা হয় নি কখনো। মেয়েটির শরীর মন অদ্ভুতভাবে কম্পিত হলো। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগল পুরো মুখটা। একটা মানুষকে সৃষ্টিকর্তা এত সুন্দর করে বানায়?

ঝিল নামতেই হাসতে শুরু করল অলিভিয়া। মেয়েটা এতে লজ্জা পেল। সর্বদা এমনি হয়। সে নিজ থেকেই এসব বায়না করে অথচ ঠিক সময় ভয় পেয়ে যায়। মুনতাহার চুল গুলো এলো হয়ে আছে। বিষণ্ণ দৃষ্টিতে কোথাও একটা চেয়ে আছে। মাহেরা হাল্কা হাতে বোনকে জড়িয়ে ধরল।
“কি ব্যপার? তুই না এয়ার রাইডে উঠবি।”

“উহু ফিরে এসেছি।”

“আচ্ছা চল।”

“তুই মন খারাপ করে আছিস?”

“না। মন খারাপ কেন করব। আমি সবার সাথে ইনজয় করছি।”

“তোর জন্যে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আপু। এমন কেন হলো বল তো।”

“তোর জন্যেও আমার কষ্ট হচ্ছে সোনা। কিন্তু ভাগ্য আমাদের বিপরীতে তাই না?”

“হুম। দুই বোনের প্রতি সৃষ্টিকর্তা এত নিষ্ঠুর কেন যে হলো?”

মুনতাহা চুপ হয়ে গেল। অভিনব এ পথেই আসছে। মুনতাহা ব্যথা লুকিয়ে হাসার প্রয়াস করল।

একটা জলাশয়ের কাছে এসে থামল ওরা। অলিভিয়া আর ড্যানিয়েল ছবি তুলছে। মাহের ভিডিয়ো কলে বরাবরের মতোই স্ত্রীকে সবটা দেখাচ্ছে। এদিকে মাহেরা আর আফরা ফোনে ব্যস্ত। মুনতাহাও তাদের সাথে টুকটাক কথা বলছে। অভিনবর একাই হাঁটছে এখন। ওর সাথে অবশ্য ঝিল ও আছে। মেয়েটি ওর সবটা জুড়ে। এভাবে হাতে হাত রেখে চলতে ভালোই লাগছে। বিগত সব জায়গার থেকেও স্নিগ্ধ এই জলাশয়ের পাশটা। রূপকথাকেও হার মানাবে এর সৌন্দর্য। জলাশয়ের ধারে কাচের দ্বারা দেয়াল করা হয়েছে। সেই দেয়ালে কিছু পাখির ভাস্কর্য দেওয়া। দেখে মনে হয় পাখি গুলো আটকে আছে। পাশেই ছোট ছোট খড়ের ছাতা বানানো। দেখতে ব্যাঙের ছাতার মতো লাগছে। একটা ডালে বসে আছে কিছু রঙিন বিদেশী পাখি। তারা নিজেদের সুখে মেতে আছে। সেখানে কিছু সময় পার করল ওরা। একটু দূরেই রয়েছে ছোট এক ঝরনা। সেটার সামনে গিয়ে মজার খেলা খেলল ঝিল। জোরে বলল, “অভিনব।”

ঝরনার বুকে সে শব্দ থেমে রইল। অভিনব হেসে ফেলল। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সে ও উচ্চ শব্দে ডাকল, “ঝিল।”

এবার ঝিলের আরও মজা লাগতে শুরু করেছে। সে একবার দেখে নিল মানুষটাকে। তারপর চোখ বন্ধ করল। তখুনি কিছু পানি ছিটিয়ে দিল ছেলেটা। পানির ছিটে পেয়ে এক চিলতে অনুভূতি জেগে উঠল ঝিলের বুক জুড়ে। সে সেভাবেই রইল। খানিক বাদে অনুভব হলো মানুষটা ওকে জড়িয়ে নেই। চোখ খুলে অভিনবকে না দেখতে পেয়ে বুকের ভেতর ছলাৎ করে উঠল। এদিক সেদিক চাইতে লাগল ক্রমাগত। অভিনব ঝরনার খুব নিকটে। সুন্দর চুল গুলোতে শিশিরের ন্যায় পানি জমেছে। অব্যক্ত সুরে ডাকল ঝিল।
“অভিনব।”

সে শব্দ ছেলেটার কান অবধি পৌছাল না। অভিনব কিছু একটা করছে। কিছু সময় পর পেছন ঘুরল সে। তার হাতে চকচক করছে একটা পাথর। ঝিলের ঠোঁটের কোণ রঙিন হলো। অভিনব উঠে এসে জড়িয়ে ধরল মেয়েটিকে। এত সুন্দর পাথর এর আগে দেখা হয় নি ওর। অভিনব হাঁটু গেড়ে বসে আছে। ঝিলের চোখ দুটো বিস্মিত হয়ে আছে। মুখে নেই শব্দ।
“ভালোবাসি প্রজাপতি।”

এত জোরে কথাটা বলল অভিনব,যে কিছু মানুষ এদিকে ছুটে এল প্রায়। পুরো টরন্টো জু যেন অভিনবর কথার জ্বালে ফেঁসে গেছে। তাদের কানে বেজে চলেছে সেই শব্দ। এত সুখের মধ্যেও জল চলে এল ঝিলের চোখে। মানুষটা এভাবে কেন ভালোবাসা প্রকাশ করে?

আরও কিছু সময় চারপাশ ঘোরার পর ঠিক হলো জু মোবাইলে করে ঘুরবে। সকলের পা ব্যথা হয়ে আছে। জু মোবাইল মূলত খোলা ট্রেনের মতো হয়ে থাকে। তবে এটি চলে পিচের রাস্তায় সাধারণ যানের মতোই। অভিনব আর মাহের এবার এক সাথে বসেছে। তাদের পেছনে বসেছে ঝিল আর মুনতাহা। টুকটাক কথা বলছে ওরা। ঝিলের কথার বেশিরভাগই অভিনব কে নিয়ে। হঠাৎ করেই প্রশ্নটা করল মুনতাহা।
“তোমার ভাইয়ারা ভীষণ ভালো। এমনটাই শুনেছিলাম। বোন অন্ত প্রাণ। তারাও বুঝল না তোমাকে?”

দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ল ঝিল। অনেকটা সময় নিয়ে বলল, “ভাইয়ারা সব জানে।”

“মানে?”

“ওরা মূলত আমাকে পালাতে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে তিনটে মানুষ। যাদের কথা আমি কখনো ভুলতে পারব না।”

“বাহ। এটা তো জানা ছিল না।”

“আসলে আপু অনেক কিছুই হয় যা আমরা দেখতে পাই না। রোহন ভাইয়া আর আহনাফ ভাইয়া আমাকে পালাতে সাহায্য করেছে। আর আয়ুশ ভাইয়া কানাডায় পৌছাতে। আসলে আমাদের অনেক বাঁধা রয়েছে। সবাই চাইলেও সবটা করতে পারছে না। নানান সমস্যায় ভরপুর।”

“ওনাদের সাথে যোগাযোগ রাখো নি?”

মলিন হয়ে এল ঝিলের মুখশ্রী। সে বলতে চাইল ভাইয়াদের সাথে আমার যোগাযোগ আছে তবে সেটাতেও রয়েছে দূরত্ব ও লুকোচুরি। তবু তাদের সাথে সপ্তাহ গেলে কথা হয়। অথচ বাবা স্নেহে লালন করা মানুষগুলোর সাথে কথা অবধি হয় না।

ঘাসের সাথে কিছু হলুদ ফুল দেখতে পেয়ে তুলে নিল অভিনব। ঝিল ছোট ছোট বিষয়ে সুখ অনুভব করে। এই ঘাসফুল গুলোই ওর ঠোঁটের কোণ প্রসারিত করবে। হলুদ ফুল গুলোকে সুন্দর করে গুছিয়ে নিল সে। ঝিল সবার সাথে গল্পে মেতে আছে। ইশারায় ডাকল সে।

“ডাকলে যে?”

“এদিকে আসো।”

“ওরা খুঁজবে না?”

“খুঁজুক।”

মেয়েটিকে এক প্রকার টেনে নিল অভিনব। ঝিল কিছুদূর গিয়ে প্রশ্ন করল।
“কি হয়েছে?”

পকেট থেকে ফুল গুলো বের করতেই ঝিল লাফিয়ে উঠল। ওর যুবতী হৃদয় এখন কিশোরীতে পরিনত হয়েছে। মেয়েটির এই খুশির ঝলক অভিনবকে বিমোহিত করে দিল। নিজ হাতে ফুল গুলো গুঁজে দিল কানে পাশটায়। এত সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে। অভিনবর ইচ্ছে করছে সময় কে থামিয়ে দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে।

একদল সাদা প্রাণী দেখে চমকে উঠল ঝিল। অভিনব ওর দৃষ্টি লক্ষ্য করে বলল, “রিলাক্স। এগুলো মূলত মেরু ভাল্লুক। বরফের মধ্যে ওদের বসবাস।”

“কি সুন্দর আর ভয়ানক।”

সেখান থেকে বেরিয়ে ওরা একটা গুহার কাছে এল। ঝিল কথা বলছিল বিধায় চুপ থাকতে বলল অভিনব কিন্তু মেয়েটা থামার বদলে প্রশ্ন করে বসল।
“কি হলো? চুপ কেন থাকব?”

“এখানে কোনো প্রাণী ঘুমিয়ে আছে।”

“তুমি কি করে বুঝলে? লেখা আছে নাকি?”

“আমি বুঝতে পারি।”

ছেলেটার কথায় প্রহেলিকা ঝরে। ঝিল বোকার মতো তাকিয়ে রইল। শব্দহীন হাসল সে।
“আমি প্রাণীদের ভীষণ ভালোবাসি। দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ করছি। প্রাণীর নিশ্বাসের শব্দ কিছু দূর থেকেই বুঝি।”

ঝিল মুগ্ধ হয়ে রইল। এত গুণ কেন ছেলেটার মধ্যে? ওরা পা টিপে টিপে গুহার ভেতরে এল। অভিনবর কথাই সত্যি। কিছু ভাল্লুক ঘুমিয়ে আছে। কাচের দেয়ালের এপাশ থেকে তাদের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালে, তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে। অভিনব কিছুটা কাছে গেলেও ঝিলকে যেতে দিল না। শান্ত ধীর স্থির হয়ে রইল ঝিল। প্রাণী গুলোর ঘুমন্ত মুখের কিছু ছবি তুললে অভিনব। নিখুঁত হয়েছে ছবি গুলো। অনেকদিন ধরে অনুরাগীদের সাথে কিছু শেয়ার করা হয় না। ছবিটা তাদের সাথে কিছু লাইন ব্যক্ত করার জন্যেই তোলা।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে