শুরুটা অন্যরকম পর্ব-১৪

0
908

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৪
#অধির_রায়

অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে নিয়তি আর নির্বণ৷ একে অপরকে দিকে আড় চোখাচোখি করছি৷ কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না, কেন তাদের দু’জনকে এক সাথে ডাকা হয়েছে? নির্বণের মাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে৷

— তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নির্বণের মা বলে উঠেন, ” নিয়তি দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দাও৷”

— নিয়তি ভয়ে ভয়ে কোমল স্বরে, ” আচ্ছা মা৷” কিন্তু দরজা লাগানোর কোন দরকার আছে৷

— দরজা লাগানোর দরকার আছে৷ আমি চাই আমাদের কথা ঘরের বাহিরে না যাক।

নিয়তি নির্বণের মায়ের এমন এমন অগ্নিমূর্তি ধারণ করাতে নিয়তি খুব ভয় পেয়ে যায়৷ নিয়তি নির্বণের মায়ের দিকে একবার ছোট করে তাকিয়ে ধীর পায়ে দরজার কাছে আসে। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা লাগিয়ে দেয়৷

— গম্ভীর কণ্ঠে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তোমরা আমার কাছ থেকে কি কি লুকিয়েছ? আজ আমি তোমাদের কাছ থেকে সত্য ঘটনা জানতে চাই৷”

— নিয়তি একবার নির্বণের দিকে তাকিয়ে, ” মা আমরা আপনার কাছ থেকে কি লুকাবো? সত্যি বলছি আমরা কিছু লুকিয়ে রাখিনি৷”

— হুংকার দিয়ে “জাস্ট সাট আপ!” তোমরা কি ভেবেছো, আমি কিছু জানি না? আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারবে তোমরা৷”

নিয়তি নির্বণের মায়ের হুংকার শুনে শুকনো ঢুক গিলে। মুখটা একদম ছোট হয়ে যায়৷ নির্বণের হাসি পায় নিয়তির এমন অবস্থা দেখে। কিন্তু মায়ের সামনে হাসতে পারছে না৷

— মির্বণ তার মাকে শান্ত করার জন্য, ” মা এমন কি হয়েছে? যার জন্য তুমি নিয়তিকে বকাবকি করছো।” মা নিয়তি খুব ভালো মেয়ে৷ সে কখনো অন্যায় কাজ করে না৷

— নিয়তি কেমন তা জানা আছে৷ আর আমার ছেলে কেমন তাও আমার জানা আছে৷ তোমাদের স্বভাব এত নিচে নেমে যাবে আমি কখনও ভাবতেই পারি নি৷

— মা আমরা কি করেছি? আমার জানামতে আমরা কোন অন্যায় কাজ করিনি৷
নিয়তির দিকে তাকিয়ে, ” বল নিয়তি, আমরা কি কোন অন্যায় কাজ করেছি?

— ব্যাস আমার সামনে নাটক করতে হবে না৷ তোমরা তাহলে স্বীকার করলে না তোমরা অন্যায় করেছো? আমি ভেবেছিলাম তোমরা সব কিছু নিজের মুখে স্বীকার করবে৷ কিন্তু না। সেজন্য তোমাদের শাস্তি পেতে হবেই৷

— নিয়তি নির্বণের মায়ের হাত ধরে, ” প্লিজ মা আপনি শান্ত হন৷ আপনার কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে। আমরা কোন অন্যায় কাজ করিনি৷ আর আপনার ছেলেও খুব ভালো কারো সাথে কখনো অন্যায় হতে দেয় না৷

— হাত ঝাঁকি দিয়ে সরিয়ে, ” আমার কাছে তোমরা একে অপরের সাফাই শুনালে আমি গলে যাব৷ তোমাদের ধারণা ভুল৷”
তোমরা যা অন্যায় করেছ তার কোন ক্ষমা হয় না৷ সমাজে তোমাদের নিয়ে ছি ছি করবে৷ আমরা মানুষ, আমাদের সমাজ নিয়ে চলতে হয়৷

— মা আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন? প্লিজ মা! আমরা আপনার ধাঁধা বুঝতে পারছি না৷। একটু খোলে বলেন? (নিয়তি)

— তোমরা আগে বল তোমরা কি বিবাহিত?

বিবাহিত কথাটি শুনতেই নিয়তি নির্বণ দুই জনের মাথার উপর ছাঁদ ভেঙে পড়ে। তারা বুঝতে পারছে না কি বলবে? তারা তো কাউকে এসব কিছু বলেনি৷

— নির্বণ হাসিমুখে বলে উঠে, ” মা আমরা তো বিবাহিত। নিয়তিকে দেখে কি মনে হয়, নিয়তি বিবাহিত নয়?

— জাস্ট সাট আপ নির্বণ৷ আমার কাছে আবারও মিথ্যা কথা বলছো৷ আমি জানি নিয়তির মাথায় সিঁদুর নেই৷ সেটা রং। আমাকে কি তোমার বোকা মনে হয়৷
নিয়তি আমি কি মিথ্যা বলছি৷

— নিয়তি কাচুমাচু করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” মা আসলে আমরা দুই জনেই এমন পরিস্থিতির স্বীকার।”

— বাহ তোমরা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এমন কাজ করেছ। বিবাহ না করেই এক ঘরে রাত কাটাও৷ তোমাদের কোন তুলনা হয় না৷ সমাজে তোমার কতটা সম্মান হানী হবে সেটা তুমি জানো।

— মা আমার কাছে অন্য কোন উপায় ছিল না৷ আমি বাধ্য হয়ে স্যারের সাথে এমন কাজে জড়িত হয়েছি৷

— ছেড়ে দিলাম আমি আমার ছেলের কথা৷ তুমি তে মেয়ে তোমাকে কে মেনে নিবে৷ তুমি কিভাবে দাঁড়াবে সমাজে। যখন লোকজন বলবে তুমি একজন পতিতা৷

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” মা তুমি এই কথা কিভাবে বলতে পারলে নিয়তিকে। তুমি তো নিয়তি খুব ভালোবাসো। তাহলে তুমি কিভাবে তাকে পতিতা উপাধি দিলে৷

— আমি যুক্তি দিয়েই কথা বলছি৷ তুমি এখানে আমার মুখ বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু সমাজের মুখ কিভাবে বন্ধ করবে? তারা কি মেনে নিবে নিয়তিকে৷ তারা তো ভাববে নিয়তি পতিতা না হলে এমন কাজ করতে পারত না৷

নিয়তি নির্বণের মায়ের কথা শুনে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে কান্না করে যাচ্ছে। নিয়তি তো সত্যিই অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে৷ নিয়তিকে কি সমাজ মেনে নিবে না৷ কিভাবে সে সমাজে মাথা দেখাবে?

— মা বিশ্বাস কর, আমি নিয়তিকে একটু টার্চ করিনি৷ নিয়তি এখনো ততটাই পবিত্র যতটা পবিত্র মা দূর্গা।

— নিয়তি এখানে আসো৷ নির্বণ আমি চাই তোমরা যেহেতু ভুল করে ফেলেছো তার একটা উপায় বের করতে হবে৷ এসব কথা যেন বাহিরে না পৌঁছায়।

— নির্বণ তার মায়ের হাত ধরে , ” মা আমরা কথা দিচ্ছি কাউকে এসব কথা বলবো না৷”

— হাত সরিয়ে নিয়ে, ” তুমি মা ডাকার অধিকার হারিয়ে ফেলেছ। এত বড় অন্যায় করেছ তার কোন অনুশোচনা হচ্ছে না তোমার৷ তুমি তাকে বাধ্য করেছ চুক্তি নামায় সাইন করতে। ”

চুক্তি নামার কথা শুনে নির্বণ মাথা নিচু করে ফেলে৷ নির্বণ তো তার মায়ের মুখের হাসির জন্য এমন অন্যায় কাজ করেছে।

— মা আমি চাইনি বিবাহ বন্ধনে নিজেকে জড়াতে। আমি তোমার মুখের হাসি ফিরিয়ে আনার জন্য এমন অন্যায় কাজ করেছি৷

— আমার মুখের হাসি৷ আমার মুখের হাসি দিয়ে কি হবে? মারা যাওয়া ভালো ছিল তোমাদের অন্যায় দেখার আগে৷ তাহলে তো মানুষের চোখে ছোট হতে হত না৷

— নির্বণ তার মায়ের মুখে হাত দিয়ে, ” প্লিজ মা বাজে কথা বলবে না৷ তুমিই আমার পৃথিবী৷ তোমার হাসির জন্য এমন আরও হাজারটা অন্যায় কাজ করতে রাজি৷

নির্বণের ভালোবাসা দেখে নির্বণের মা মনে মনে খুশি হলেও বাস্তবে খুশি নয়৷ নির্বণের গালে ঠাস করে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন।

— লজ্জা করে না মেয়েদের নিয়ে খেলা করতে৷ তাদের কি তোমার কাছে খেলার পুতুল মনে হয়৷ তোমার দিকে তো আঙ্গুল তুলবে না৷ তুলবে মেয়েটার দিকে। কারণ নিয়তি একজন মেয়ে। তোমার মতো ছেলে নয়৷

নির্বণ গালে হাত দিয়ে মার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। আজ চোখ থেকে নির্বণ নিয়তির জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে।

— তোমরা যেহেতু অন্যায় করেছ৷ তোমাদের দু’জনকেই শাস্তি পেতে হবে।

নির্বণের মা বালিশের নিচ থেকে একটা সিঁদুর কোটা আর মঙ্গল সূত্র নিয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি গরিব কিনা ধনী আমার কোন জানার বিষয় নেই৷ আমার চোখে নিয়তি একজন নারী৷ আমি কিছুতেই তার সাথে অন্যায় হতে দিতে পারি না৷ ”
নির্বণ তোমাকে একটা শর্তেই ক্ষমা করতে পারি। যদি তুমি আজ আমার সামনে নিয়তির সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে ভরিয়ে দাও৷

— নিয়তি বলে উঠে, ” না মা এমন কাজ করবেন না৷ আপনি যেহেতু জেনে গেছেন সেহেতু আর এমন কাজ করার দরকার নেই৷ আমি মিডিল ক্লাসের মেয়ে৷ আমি স্যারের জন্য উপযুক্ত নয়৷”

— যখন নাটক করছিলে তখন মনে ছিল না৷ আমি তোমাদের কোন কথা শুনতে চাই না। আমার কথা শেষ কথা৷
“নির্বণ কি হলো সিঁদুর পড়িয়ে দাও? ” হংকং করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।

নির্বণ ধীর পায়ে সিঁদুর নিয়ে নিয়তির দিকে আসে৷ কাঁপা কাঁপা হাতে সিঁদুর নিয়ে নিয়তির সিঁথির কাছে হাত নিতেই নিয়তি হাত ধরে ফেলে৷ কিন্তু হাত ধরতে সামান্য দেরি হয়ে যায়৷ হাত ধরার সময়ই নির্বণ নিয়তির সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দেয়৷

পাতা উল্টে দেখো একটা গল্প লেখা।
একটু জানা কাহিনি কিছু অজানা।
একটা গোধুলি বেলা কনে দেখা আলোতে।
একটু উলো সানাই এ সাত পাকে বাঁধে যে। (২)
“””সাত পাকে বাঁধা “””
______________

— “মার কথা বিবেচনা করে আমি তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি৷ তোমাকে বিয়ে করেছি বলেই, তোমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিব এটা কল্পনাও করবে না৷” নরম স্বরে নির্বণ নিয়তিকে বলে উঠে।

— কিন্তু স্যার আমি তো…

— কোন কিন্তু নয়৷ আমি তোমার ভরণ পোষণের সব দায়িত্ব নিব৷ আমি আমার কর্তব্য থেকে কখন পিছপা হব না৷ নির্বণ চৌধুরী কখনও কর্তব্য থেকে পিছপা হয় না৷

— স্যার আমি সেটা বলতে চাইনি৷ আমি বলতে চাচ্ছি, মা আমাদের কথা কিভাবে জানতে পারলেন?

— নিয়তির হাত চেপে ধরে, ” আর কত নাটক করবে নিয়তি ? তুমি এত নাটক করতে পার আমার জানা ছিল না। তুমি ছাড়া এই রচনা রটানো কারো সম্ভব নয়৷ ”

— স্যার আমি কেন মাকে এসব বলতে যাব? আমার মাথা খারাপ হয়েছে কি? আমি মাকে এসব বলে মাকে ডিপ্রেশনে ফেলব।

— তুমি বলতে চাইছো তুমি কিছু বলনি৷ তাহলে মা কিভাবে জানতে পারল? মা তো মনোবিজ্ঞানী নয় যে আমাদের মনের কথা জেনে যাবে৷ আর হ্যাঁ মনোবিজ্ঞানীরাও মনের কথা জানে না৷ তুমি সব সময় মার কাছে থাকো৷ তুমি হুট করেই মাকে এসব কথা বলে দিয়েছো।

— “স্যার প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন৷ লাগছে আমার৷” নিয়তি টলমল চোখে বলে উঠে।

— তোমার জন্য আজ আমার দিনটাই খারাপ হয়ে গেল। যতসব আজাইরা পাবলিক।

নির্বণ নিয়তিকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়৷ নিয়তি নিজেকে সামলাতে না পেয়ে আলমারির সাথে ধাক্কা খায়৷ মাথায় প্রচুর আঘাত লাগায় নিয়তি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে