যে প্রেম এসেছিল পর্ব-০১

0
427

#যে_প্রেম_এসেছিল
#Raiha_Zubair_Ripte
#সূচনা_পর্ব

“সমস্যা কি আপনার? প্রতিদিন এভাবে ফলো করেন কেনো মেয়েকে? লোকে কি ভাববে? আপনার জন্য তো দেখছি এখন ঘর থেকে বের হওয়া ও দুষ্কর হয়ে উঠেছে। আগে আপনি নিমির বাসায় জ্বালাতেন আর এখন রাস্তাঘাটে!”

ইন্দুপ্রভার কথায় লোকটার মধ্যে কোনো ভাবান্তর হলো না বরং লোকটা ইন্দুপ্রভার হাতে থাকা বাজারের ব্যাগ টা নিজের হাতে নিয়ে ইন্দুপ্রভার হাত ধরে হাঁটতে থাকলো। ইন্দুপ্রভার রাগ সপ্তম আকাশে। এই লোক কি কিছুই বুঝে না? লোকজন কিভাবে আড় চোখে তাকিয়ে আছে সেদিকে কি লক্ষ আছে তার!

ইন্দুপ্রভা লোকটার থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু ফলাফল শূন্য। বাড়ির মোড়ে আসতেই লোকটা ইন্দুপ্রভার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে- “ নাও এখন বাসায় যাও। আর হ্যাঁ বাসা থেকে একা-একা বের হবা না সাথে ছোট ভাই বা আন্টি কে নিয়ে আসবা। আর তা না হলে আমাকে ফোন দিবা। আমার ফোন নাম্বার আছে না তোমার কাছে? আরে ধূর আমিও না থাকবে কি করে কাল তো নতুন সিম কিনেছি। বাকি ১০ টা সিম তো তোমার ব্লক লিস্টে। এই তুমিও সিম চেঞ্জ করছো তাই না? হুমম তাই তো বলি নাম্বার বন্ধ কেনো?”

ইন্দুপ্রভার মাথা ধরে গেল লোকটার বকবক শুনতে শুনতে। কোন কুলক্ষণে যে এই লোকের সাথে তার দেখা হয়েছিল। সেই তিন মাস ধরে লোকটা ইন্দুপ্রভা কে পাগল বানিয়ে ছাড়ছে। ইন্দুপ্রভা কোনো কথা না বাড়িয়ে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাসার দিকে যেতে যেতে বলে- “আগে বাসায় যান ডক্টর দেখান । দিনকে দিন আপনার পাগলামি বেড়ে চলছে। আপনার আম্মা জানলে কি হবে ভেবে দেখেছেন।”

পেছন থেকে তুহিন কিছুটা জোরে বলে উঠে- “আম্মা জানলে জানবে সমস্যা কোথায়? আর হ্যাঁ আমার মনের ডক্টর তো আপনি। একটু চিকিৎসা করে দেখুন তো এই হৃদপিণ্ডটায় কি আছে যে সারাক্ষণ ইন্দুপ্রভা ইন্দুপ্রভা করে।”

ইন্দুপ্রভা দাঁড়িয়ে যায়-“ আপনার হৃদপিণ্ডটায় আস্ত গোবর ভরা আছে তাই ইন্দুপ্রভা ইন্দুপ্রভা করে। আর আসবেন না আমার সামনে।

“ বারবার আপনার সামনে আসবো। আপনার বাসার সামনে এসে দাঁড়ায় থাকবো আপনি পারলে আটকান।”

তুহিনের এমন গা ছাড়া কথা দেখে ইন্দুপ্রভার রাগ হলো-“আপনার আম্মাকে কিন্তু আমি বলে দিব তার ছেলে শহর থেকে ডাক্তারি পড়ে গ্রামের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে।”

তুহিন ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করে-“ আমি আর কাকে উত্ত্যক্ত করছি? ”

“ এই যে আমি আপনায় বারন করার পরও আমার পেছন পেছন রোজ আসেন। বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। আপনার জন্য যে গ্রামের সবাই আমাদের দিকে আঙুল তুলবে এটা কি ভেবে দেখেছন একবারও? ”

“ তাহলে আমার আম্মা কে তোমাদের বাসায় পাঠাই।”

“ আপনার আম্মা কে আমাদের বাসায় পাঠাবেন কেনো?”

“ কেনো আবার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার জন্য। ”

“ আমি অবাক হচ্ছি আপনার মতো পাগল কে ডাক্তার হবার জন্য সার্টিফিকেট কে দিলো? আপনি হসপিটালের রোগী রেখে একটা মেয়ের পেছন দিনরাত পড়ে থাকেন। চাকরি চলে যাবে না?”

“ তোমায় কে বললো আমি রোগী না দেখে শুধু তোমার পেছন পড়ে থাকি? রোগী দেখা শেষ করেই তোমায় দেখতে আসি। আবার যখন সময় হয় তখন চলে যাই।”

“ এতে কি লাভের লাভ কিছু হচ্ছে? ”

“ লাভ লোকসানের কথা এতো ভাবলে হয় না কখনো কখনো ক্ষতি করেও লাভ পাওয়া যায়। লাভ মিন’স লাভ।”

“ ক্ষতিই হবে শুধু লাভ কখনোই হবে না। ইন্দুপ্রভার থেকে পজিটিভ সারা কখনোই পাবেন না। তাই বলছি অযথা আমার পেছন ঘুরা বাদ দিন।”

“ আমি কার পেছন ঘুরবো কি ঘুরবো না সেটা কি তোমার থেকে শুনে করতে হবে। পুচকি একটা মেয়ে তার আবার এতো কঠিন মন! পুচকিদের থাকে নরম সফ্ট একটা মন। যাও বাসায় যাও।

ইন্দুপ্রভা তপ্ত শ্বাস ফেলে বাসায় চলে আসে। তুহিন যতক্ষণ ইন্দুপ্রভা কে দেখা যায় ততক্ষণই তাকিয়ে থাকে। ইন্দুপ্রভা চোখের আড়াল হতেই তুহিন চলে আসে।

ইন্দুপ্রভা বাসায় আসতেই তার মা মনোয়ারা বেগম মেয়ের হাত থেকে বাজারের ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বলে- “ এতো দেরি হলো কেনো ইন্দু পাড়ার মোড়ের ছেলে গুলো কি আজও উত্ত্যক্ত করেছিল?

ইন্দুপ্রভা বারান্দায় থাকা বেঞ্চে বসে ওড়না দিয়ে শরীরের ঘাম মুছতে মুছে বলে-“ না মা এখন আর ছেলে গুলো উত্ত্যক্ত করে না। ভালো হয়ে গেছে।”

মনোয়ারা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে –
“ খুব কষ্ট হয় তোর তাই না ইন্দু এই সংসার চালাতে। আজ তোর বাবা বেঁচে থাকলে এতো কষ্ট আমাদের করতে হতো না।”

ইন্দুপ্রভা মাথা থেকে মায়ের হাত সরিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে বলে-“ না মা কোনো কষ্ট হয় না।”

“ মুখে যতোই বলিস কষ্ট হয় না আমি তো জানি আমি তো মা। তোর মনের কষ্ট টা তো বুঝি। সারাদিন স্কুলে ক্লাস করিয়ে আবার টিউশনি করানো। নিজের জন্য তো সময়ই নেই তোর।”

“ সময় নেই কে বলছে এই যে এখন সারাটা রাত তোমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো এটাই তো সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমিষেই শান্তিতে পরিনত করে দিবে।”

“ আচ্ছা উঠ যা ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার বাড়ছি খেতে হবে তো।”

ইন্দুপ্রভা মাথা নাড়িয়ে গোসল খানায় যায় গোসল করতে হবে সারাদিনের ধুলোময়লা সব উড়ে এসে শরীরে ভিড়েছে।

————————

“ এই স্মৃতি দাঁড়াও তো। তোমার কাছে ইন্দুর নাম্বার আছে দাও তো আমায়।”

হসপিটালে যাওয়ার পথে হঠাৎ রাস্তায় ইন্দুর ফ্রেন্ড স্মৃতি কে দেখে কথাটা বলে উঠে তুহিন।

স্মৃতি তুহিন কে দেখে স্মিত হেসে বলে-“ আসলে ভাইয়া ইন্দুর নাম্বার তো আমার কাছে নেই।”

তুহিন দু হাত বুকে গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে-“ দেখো স্মৃতি মিথ্যা বলো না। জানো না মিথ্যা বলা মহা পাপ। তোমার মতো এতো সুইট মেয়ে মিথ্যা বলবে আমি কল্পনাতেও ভাবতে পারি নি ছ্যা।”

“ ভাইয়া ইন্দু আপনাকে তার নম্বর দিতে না করছে। যদি জানে আমি আপনায় নম্বর দিয়েছি তাহলে আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করে দিবে ইন্দু।”

“ আরে ছোট প্যাকেট জানবে না তুমি দিয়ে যাও। ইন্দু বুঝতে পারবে না যে নাম্বার তুমি দিছো।

“ সত্যি তো ভাইয়া?”

“ হুম সত্যি। ”

“ ০১৭৬******৯। এটা ইন্দুর নাম্বার। ভাইয়া ইন্দু যেনো ঘুনাক্ষরেও টের না পায় আমি দিছি।”

“ নিশ্চিন্তে বাড়ি যাও চিল করো ইন্দু জানবে না। ”

“ আচ্ছা ভাইয়া আমি আসি।

তুহিন নাম্বার টা ইন্দুপ্রভা লিখে ব্লাক ইমোজি দিয়ে সেভ করে। এবার জ্বালাতে পারবে ফোন দিয়ে। আর যদি এই নাম্বার ব্লক করছে তাহলে সোজা বাসায় গিয়ে ইচ্ছে মতো বকে আসবে হার্টলেস মেয়েটাকে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে