যে প্রেম এসেছিল পর্ব-১০

0
270

#যে_প্রেম_এসেছিল
#পর্ব১০
#Raiha_Zubair_Ripte

-“ মা আমি বিয়ে করতে চাই ইন্দু কে। আর সেটা আজই।

তনয়া বেগম সোফায় বসে ছিলেন, তার সামনা-সামনি বসে আছে তুহিন। তুহিনের এমন কথা শোনায় মুহুর্তে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো তনয়া বেগমের।

-“ ভুলেও ঐ মেয়েকে বিয়ে করার কথা মাথায় আনবে না তুহিন। ঐ মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে ইম্পসিবল। ঐ মেয়ে কখনও মা হতে পারবে না জানো তো।

তুহিন সোফায় বসে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিমির মায়ের দিকে তাকায়। ভদ্রমহিলা কিছুক্ষণ আগে ফোন দিয়ে জানিয়েছিল ইন্দু আর তার মায়ের কথা কাটাকাটি হয়েছে।

ইন্দু এসেছিল নিমি কে পড়াতে। তনয়া বেগম আগেই বসেছিল নিমি দের বাসায়। ইন্দুকে দেখে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে-

-“ কেমন আছো ইন্দু?

ইন্দু হাসিমুখে জবাব দেয়-

-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,আপনি?

-“ আমিও ভালো আছি। তোমার সাথে কিছু কথা আছে।

ইন্দু ভ্রুকুটি করে।

-“ জ্বি বলুন আন্টি।

-“ অনেক তো হলো আমার ছেলেটা তো তোমায় ভালোবাসে, তুমি কি পারো না তার ভালোবাসা স্বীকার করতে?
সহসা ইন্দুর চোখ মুখে কালো আঁধার ঘনিয়ে আসলো। তনয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে-

-“ আন্টি আমি আপনায় একটা কথা বলতে চাই।
তনয়া বেগম কিছুটা উৎফুল্ল হলো। আগ্রহ নিয়ে বললো-

-” হ্যাঁ বলো কি বলতে চাও।

-“ আন্টি আপনার ছেলেকে বুঝান,আমাকে বিয়ে করলে সে কখনও বাবা হতে পারবে না।
কথাটা শোনা মাত্রই তনয়া বেগম যেনো আকাশ থেকে টুপ করে পড়ে। ইন্দুর দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ বুঝলে কি করে তুহিন কখনও বাবা হতে পারবে না?
ইন্দু জিহবা দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নেয়। পরপর দুটো ঢোক গিলে বলে-

-“ আন্টি মা হতে গেলে যেই এবিলিটি গুলো দরকার হয় সেই এবিলিটি আমার মধ্যে নেই। আমার আজ অব্দি পিরিয়ড হয় নি।

কথাটা যেনো ঝংকারের ন্যায় তনয়া বেগমের কানে ঢুকলো। পরমুহূর্তে মনে পড়লো সেদিন রাতে বলা তুহিনের কথা। তুহিন তার মানে ইন্দুর কথা বলেছিলো।

-“ তুমি কি তাহলে হি/জড়া?

কথাটা একদম বুকে গিয়ে বিঁধে ইন্দুর। নিমির মা তনয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ ভাবি কি বলছেন এটা। পিরিয়ড না হলেই যে সে হি/জড়া এটা কে বললো। ইন্দু এটার কি চিকিৎসা করাও নি,বুঝতে পারছো কত বড় সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছ তুমি।

ইন্দু স্মিত হেসে বললো-

-“ জ্বি চিকিৎসা করানো হয়েছে কিন্তু এটা ঠিক হবে না। আমি আমার বাস্তবতা কে মেনে নিয়েছি। তুহিন কে বুঝাবেন আন্টি সেও বুঝবে।
তনয়া বেগম হন্তদন্ত হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। নিমির মা ইন্দুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে –

-“ তুহিন কিন্তু তোমায় অনেক ভালোবাসে ইন্দু। ছেলেটা আমায় বলেছে সব তোমার ব্যাপারে। সে এই বিষয় টার জন্য মোটেও ছেড়ে দিবে না তোমায়।

ইন্দু কিছু না বলে চলে গেলো নিমি কে পড়াতে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই এলাকা তাকে ছাড়তে হবে। নিমির মা ইন্দুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

পরশু তুহিন জানিয়েছিল ইন্দুর ব্যাপার টা। ছেলেটার আকুতিভরা কন্ঠ বারবার জানান দিচ্ছিল সে কতটা ভালোবাসে ইন্দু কে। নিমির মা ফোন বের করে তুহিন কে ফোন দিয়ে সব বলে দেয়। তার মতে সামনে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে।

-“ দেখো মা আমার ইন্দুকেই লাগবে বাচ্চা আমার চাই না। আমি বাচ্চা এডপ্ট করবো।

তনয়া বেগম ছেলের সামনে এসে হুংকার দিয়ে বলে-

-“ মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তর। ঐ মেয়েকে তোর বিয়ে করতে হবে৷ মেয়েটা স্বাভাবিক হলে আমি নিজে হাতে পায়ে ধরে হলেও রাজি করাতাম কিন্তু এখন আমার হাতে পায়ে ধরলেও আমি তনয়া রাজি হবো না।

-“ বেশ রাজি হয়ো না,বাট আমার ইন্দুকেই চাই।

-“ তুই যদি ইন্দুকে বিয়ে করিস তাহলে আমার বাড়িতে তোর জায়গা নেই। আমরা একটা সমাজে বাস করি,আমাদের স্ট্যাটাস আছে একটা।

সহসা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তুহিন।

-“ বেশ তবে তাই হোক। চলে যাবো তোমার বাড়ি থেকে। আমি না খেয়ে থাকলে তোমার সমাজ,স্ট্যাটাস আমায় প্লেটে ভাত বেড়ে দিয়ে যাবে না। সমাজের জন্য আমি আমার ইন্দুকে ছাড়তে পারবো না।

-“ তুই আবেগে ভেসে বেড়াচ্ছিস। কয়েকদিন গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ভুলে যা ইন্দু কে।

-“ ইহকালে পসিবল না মা। আই কান্ট লিভ উইদাউট সি।

-“ মায়ের থেকেও ঐ মেয়ে তোর কাছে বড় হয়ে দাঁড়ালো! বেশ যা কিন্তু মনে রাখিস জীবনে আমায় তোর এই মুখ দেখাবি না।

তুহিন অসহায় হয়ে পড়লো নির্নিমেষ মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো-

-“ তুমি সত্যি ইন্দুকে মানবে না? সোসাইটি সমাজই বড় হয়ে দাঁড়ালো? ছেলের ইচ্ছের প্রাধান্য দিলে না!

-“ ছেলে চাওয়ার মত কিছু চাইলে অবশ্যই দিতাম। কিন্তু না সে অবুঝের মতো আগুন নিয়ে খেলতে চাইছে। ইন্দুকে বিয়ে করতে চাইলে আমার বাসায় জায়গা নেই।

-“ আচ্ছা বেশ তুমি যখন আমার ভালোবাসা মানতে পারবে না, আমিও থাকবো না তোমার এই সোসাইটি সমাজে। ভালো থেকে।
কথাটা বলে তুহিন বেরিয়ে আসতে নিলে পেছন থেকে নিমির মা আটকানোর চেষ্টা করে তুহিন কে, কিন্তু তুহিন শুনে নি, ইশারায় বলে গেছে তার মায়ের খেয়াল রাখতে সে শীগ্রই ফিরবে।

নিমির মা তনয়া বেগমের কাছে এসে বলে-

-“ ভাবি ইন্দু তো মেয়েটা ভালো,ওর এই পরিস্থিতির জন্য তো ও দায়ী না,আপনি নিজে থেকেও তো ইন্দু কে পছন্দ করতেন৷ সামান্য একটা সত্যি শুনে এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলেন?

তনয়া বেগম নিমির মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে-

-“ তোমার ছেলে এমন মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে তুমিও বাঁধা দিতে। যার পুড়ে সেই বুঝে জ্বালা।

কথাটা বলে তনয়া বেগম চলে যায়। নিমির মা তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজের বাড়ি চলে যায়।

রাত বাজে নয়টা বেজে চব্বিশ মিনিট। এই হালকা শীতের মাঝেও আচমকা ঝড়ের আভাস টা ঠিক হজম হলো না ইন্দুর। কি প্রবল বাতাস বইছে। হঠাৎ হাতে থাকা মুঠো ফোন টা বেজে উঠায় সামনে এনে দেখে তুহিনের নম্বর জ্বল জ্বল করছে। ধরলো না পরপর দুবার কেটে যাওয়ায় আবার বেজে উঠল ফোন। ইন্দু রিসিভ করলো ফোন। হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে তুহিন বলে উঠল-

-“ আমি সব ছেড়ে ছুঁড়ে চলে এসেছি। আমি বিয়ে করতে চাই তোমায়।

কথাটা কর্ণকুহর হতে বিস্মিত হয় ইন্দু।
-“ আপনি সব ছেড়ে ছুঁড়ে চলে এসেছেন মানে?
-“ আমি বাসা ছেড়ে চলে এসেছি।
-“ আপনি বাসা কেনো ছেড়েছেন, আমি কি ছেড়ে আসতে বলছি?
-“ তেমাকে পাবার জন্য ছেড়েছি।
-“ মানে?
-“ মানে মা আমার ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে চাচ্ছিলল না তাই চলে এসেছি।
-“ আপনার কি মনে হয় আপনি সব ছেড়েছুড়ে চলে আসলে পূর্ণতা পাবেন? ভুল ভাবনা নিয়ে বাসা ছেড়েছেন। বাসায় যান। আচ্ছা আপনি এখন কোথায়?
-“ তোমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।
ইন্দু শোনা মাত্রই দৌড়ে জানালার কাছে গিয়ে দেখে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে তুহিন কে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। বাহিরে যে বাতাস বইছে। ইন্দু তুহিনের পানে এক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলে-

-“ বাসায় যান। দেখছেন আকাশের অবস্থা ভালো না৷ ঝড় আসবে।
-“ না বাসায় ফেরা অসম্ভব।
-“ তাহলে কি সারা রাত দাঁড়িয়ে কাটাবেন?
-“ হ্যাঁ তুমি বললে দাঁড়িয়ে থাকবো।
-“ দেখেন বাড়াবাড়ি করবেন না বাসায় যান রাখি।
কথাটা বলে ইন্দু ফোন কেটে দিলো। মনেয়ারা বেগম ইন্দু কে ডিনার করার জন্য ডাক দিলো। ইন্দু তুহিনের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে খাবার খেতে দিলো। খাবার খেয়ে দেয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।

বাহিরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে কেউ একজন এক দৃষ্টি তে কারো জানালার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা দেখলো না। হঠাৎ মাঝ রাতে রুমে দরজা টোকা দেওয়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ইন্দুর। ইন্দু আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দেখে তার মা।

এতো রাতে মাকে দেখে অবাক হয় ইন্দু। ইন্দু কিছু বলার আগেই মনোয়ারা বেগম ইন্দুর হাত টেনে নিয়ে জানালার পাশে দাড় করিয়ে বলে-

-“ ছেলেটাকে আর কত কষ্ট দিবে তুমি? সেই কখন থেকে বৃষ্টি তে দাঁড়িয়ে ভিজছে। সে যদি তোমার সব মেনে নিয়ে সংসার করতে চায় তাহলে তোমার আপত্তি কোথায়?
ইন্দু ভাবতে পারে নি তুহিন এই বৃষ্টি তে দাঁড়িয়ে ভিজবে। সে ভেবেছিল বৃষ্টি নামলে তুহিন চলে যাবে। কিন্তু ছেলেটা এভাবে কতক্ষণ ধরে ভিজছে জ্বর আসবে তো। ইন্দু রুম থেকে ছাতা নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।

তুহিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-

-“ আপনি কি পাগল তুহিন৷ বৃষ্টি তে কেনো ভিজছেন?
তুহিনের সারা শরীর কাঁপছে, মুখে লেগে আছে মৃদু হাসি। ইন্দুর দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ আমি তো কবে থেকেই তোমার প্রেমে পাগল হয়েছি। পাগল টাকে ভরসা করে পাগলটার হাত ধরুন। ট্রাস্ট মি সব সুখ আপনার পায়ের কাছে এনে দিবো।
-” আমি পাগল হয়ে যাবো আপনাকে এই একটা কথা বলতে বলতে। আপনি আমাকে গ্রহন করলে জীবনেও সুখী হতে পারবেন না তুহিন।
-“ আমার সুখ কিসে হবে আমার থেকে বুঝি তুমি বেশি জানো? আচ্ছা ইন্দু তোমার হৃদয় এতো পাষাণ কেনো? একটা ছেলে তোমার ভালোবাসা পাবার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে আর তুমি বারংবার তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো। আচ্ছা এই আমি যদি তোমার ভালেবাসা না পেয়ে পৃথিবী ত্যাগ করি মায়া হবে না আমার জন্য?
সহসা ইন্দুর বুক কেঁপে উঠলো। তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আজেবাজে কথা কেনো বলছেন। পৃথিবী ছেড়ে কেনো যাবেন।
-“ এই যে তোমার ভালোবাসা না পাওয়ার এক মরণব্যাধি অসুখ নিয়ে। কষ্ট পাবে তখন?
-“ কিসব কথা বলছেন তখন থেকে চুপ করবেন? দেখছেন আপনি শীতে কিভাবে কাঁপছেন। বাসায় চলুন জামাকাপড় বদলে নিবেন।
-“ না যাবো না বাসায়।
-“ আমার বাসায় চলুন।
-“ না কোনো বাসায় যাবো না। এভাবেই এই বৃষ্টি তে দাঁড়িয়ে থাকবো। জ্বর বেঁধে মরণ হোক ঢের ভালো এমন জীবনের থেকে।
-“ আপনি ম’রলে কেউ একজন কষ্ট পাবে।
আনমনে কথাটা বলে ফেলে ইন্দু। তুহিন শুনে ফের বলে-
-“ কে কষ্ট পাবে আমার মৃ’ত্যুতে?
ইন্দু তুহিনের হাত ধরে। হাত গরম লোকটার জ্বর এসেছে। ইন্দু হাত টেনে বাসার ভেতর নিয়ে যেতে যেতে বলে-
-“ আছে একজন যার হৃদয় পুড়ে আপনার জন্য। জ্বর এসেছে শরীরে তাই আজেবাজে কথা বলছেন,মেডিসিন খেতে হবে।
তুহিন দাঁড়িয়ে যায়। ভাবান্তর হয়ে বলে-
-“ আচ্ছা সেই একজন কি ইন্দুপ্রভা?
-“ হয়তো। চলুন এবার।
কথাটা বলে টেনে নিয়ে যায় ইন্দু তুহিন কে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে