যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো পর্ব-০৯

0
331

যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৯.

সদ্য বিয়ে করা নববধূকে নিয়ে তূর্য যখন নিজের বাসায় প্রবেশ করে তখন কেবল ভোর ৬ টা বাজে। সম্পূর্ণ রাস্তা দু’জন নীরব ছিলো। এখনো নীরব। পৃথা চুপচাপ চলে তো এসেছে তূর্যের সাথে, কিন্তু এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। তাদের বিয়েটা তো আর আট দশটা সাধারণ বিয়ের মতো ছিলো না। কিন্তু তার ভাবাভাবির পাল্লা শেষ হলো নিজের হাতের টানে। তূর্য তার হাত ধরে সিঁড়ি ডিঙিয়ে দো তলায় উঠছে। পৃথা কোনো রা শব্দ করলো না। কেবল তূর্যের সাথে পা মিলিয়ে উপরে উঠলো।

পৃথা সদা গোলাপি রঙ প্রেমি। তার রুমটাও বেবি পিংক কালার থিমে সাজানো ও গুছানো। সেই মেয়ে যখন তার স্বামীর রুমে পহেলা কদম রেখে দেখে সম্পূর্ণ রুম সাদা কালোর মিশেলে সাজানো এবং বড্ড অগোছালো তখন তার মাথা ভনভন করে উঠে। রুমের বেডশিটটা বেশ কুচকানো, তার উপর বালিশ একটা মাথার কাছে তো একটা পায়ের কাছে অবহেলায় পড়ে আছে। রুমের একপাশে থাকা বুকশেলফ এবং টেবিল দুটো গাদা গাদা বই, ফাইলস দিয়ে উঁচু করে রাখা। কোনো ড্রেসিং টেবিল না থাকলেও রুমের একপাশে একটা লম্বা আয়তাকার আয়না রাখা আছে, তার পাশেই কালো রঙের ক্লসেট।

পৃথা আর কিছু দেখার সুযোগ পেলো না। তার আগেই তূর্য তাকে বিছানার একপাশে বসিয়ে দেয়। অবাক করার বিষয় হচ্ছে সে নিজেও হাঁটু গেড়ে পৃথার সামনে বসে। পৃথার নরম হাত দুটো এখনো তার দখলে। পৃথার নিঃশ্বাস রুদ্ধ হলো। দৃষ্টি হলো এলোমেলো। সেই এলোমেলো দৃষ্টি নিজের দিকে স্থির করতে তূর্য একহাতে তার গাল ধরে নিজের দিকে তার মুখ ফিরায়। অত:পর বলে,

“ দৃষ্টি এড়ানো বন্ধ করো। ইউ আর নট এনি কালপ্রিট। “

পৃথা তবুও তূর্যর দিকে তাকাতে পারছে না। মানুষটা তার বিশ্বাস ভেঙেছে। বোকা পৃথার সরলতার সুযোগ নিয়েছে। তূর্য প্রথম নিজের ভুল স্বীকার করে বলে,

“ আই নো আমি তোমার অজান্তে তোমাকে বিট্রে করেছি। তোমার কাছে আমি অপরাধী। সেজন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ক্ষমা করা কিংবা না করা তোমার ব্যক্তিগত বিষয়। চাইলে যেকোনো শাস্তিও জারি করতে পারো। ডিভোর্স দেওয়া ছাড়া তোমার যেকোনো শাস্তিই আমি মাথা পেতে নিবো। “

পৃথা চুপচাপ নিচের দিকে দৃষ্টি মেলে রেখেছে। তূর্য এবার নিজের এতক্ষণের নরম স্বরকে কিছুটা কঠোর করে বলে,

“ লুক এট মি পৃথা। “

পৃথা মৃদু কেঁপে উঠে। উচ্চ বাক্যে কথা শোনার অভ্যাস নেই তার। অন্তত তার সাথে তো কেউ গলার স্বর উঁচু করে কভু কথা বলেই নি। পৃথা তূর্যের দিকে তাকাতেই তূর্য নিজের গলার কাঠিন্যতা বজায় রেখে বলে,

“ আজ থেকে এই ঘর, এই রুম এবং আমি তিনটাই তোমার। আমার ইনটেনশন যেটাই থাকুক আমাদের বিয়েটা মিথ্যে না। আমার তরফ থেকে কখনো কোনো অভিযোগের সুযোগ পাবে না তুমি। তবুও যদি কোনো অভিযোগ কখনো থেকে থাকে তা আমাকে সরাসরি বলবে। আমি শুধরে নিবো। “

পৃথা নিষ্প্রভ স্বরে প্রশ্ন করে,

“ আপনি আমাকে ভালোবাসেন তূর্য। “

তূর্য থমকায়। কিন্তু মেয়েটাকে আঁধারেও রাখতে রাজি না সে। তাই জানায়,

“ আনফরচুনেটলি আমার হৃদয় তোমার হৃদয় থেকে আলাদা। শুরু থেকেই আমি কেবল তোমার প্রতি আগ্রহী ছিলাম। যেই আগ্রহ ভালোবাসায় রূপ পাওয়ার সুযোগ পেলো না। তুমি আমার আগ্রহ থেকে সরাসরি স্ত্রীতে পরিণত হয়েছো। “

পৃথা আর তূর্যকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে উঠে,

“ একা থাকতে চাই আমি। সম্পূর্ণ একা। “

তূর্য উঠে দাঁড়ায়। এক পল পৃথাকে দেখে সে এগিয়ে যায় নিজের ক্লসেটের দিকে। অত:পর ক্লসেট হতে নিজের শার্ট এবং প্যান্ট নিয়ে বলে উঠে,

“ আমার অফিস যেতে হবে। আজকে ছুটি ম্যানেজ করা ইম্পসিবল। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত নিজেকে সময় দাও। কি করতে চাও সেটা সিদ্ধান্ত নাও। আপাতত আমি নিচে ব্রেকফাস্ট রেডি করে রেখে যাচ্ছি। খেয়ে নিবে। আর দুপুরে আমি খাবার অর্ডার করে দিবো বাসার এড্রেসে। দাঁড়োয়ান আংকেল এনে দিয়ে যাবে। আর যাই করো, চুপচাপ খাবারটুকু খেয়ে নিও অন্তত। সন্ধ্যায় ফিরে আমি তোমাকে নিয়ে বের হবো। তোমার প্রয়োজনীয় এবং যাবতীয় যা কেনাকাটা করতে হবে তা শপিং করে নিবো। “

নিজের কথাটুকু শেষ করেই তূর্য বেরিয়ে যায়। পৃথা একই ভঙ্গিতে বসে রয়। এটা কি তার শাস্তি? আবেগের তাড়নায় নিজের আম্মা আব্বাকে না জানিয়ে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার শাস্তি? পৃথার বুদ্ধিদীপ্ততা কি কেবল পাঠ্যপুস্তক পর্যন্তই সীমাবদ্ধ? জীবনের আসল পরীক্ষায় এতো বড় করে জিরো পাওনা ছিলো তার?

__________

পার্থর ব্যাক্তিগত লিভিং এরিয়ার একটা সোফায় তরী বসে আছে। তার বরাবর বসে আছে পার্থ। যে আপাতত নিজের ভ্রু কুচকে তরীর দিকে তাকিয়ে আছে। তরী আপন মনে নাস্তা করতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ আগেই সে জমিলা খালাকে বলে নিজের জন্য ব্রেড এবং জ্যাম আনিয়েছে। তাই বসে বসে খাচ্ছে সে। তাকে দেখে বোঝা দায় যে মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে কিরকম একটা বাজে সিচুয়েশনের মাঝে তার বিয়ে হয়েছে। পার্থ মনে মনে ধরে নেয় হয়তো ডাক্তার সাহেবা পাগল হয়ে গিয়েছে। নাহয় এভাবে তার নিজের স্ব ঘোষিত শত্রুর বাসার দানাপানি মুখে তোলাটা বড্ড বেমানান লাগছে।

তরী পার্থর সেই দৃষ্টি লক্ষ্য করে। তার খাওয়া ইতিমধ্যে শেষ। সোফার সামনে থাকা টি টেবিল হতে স্বচ্ছ পানির গ্লাসটা নিয়ে আগে গলা ভিজিয়ে নেয়। গতরাত থেকে খিদেয় করা বুক ব্যাথাটা এখন কিছুটা কম মনে হচ্ছে। তবে নির্ঘুম রাত পারের ফলে মাথা বেশ ব্যাথা করছে তার। হাতের গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে বলে উঠে,

“ কি এক্সপেক্ট করছিলেন আপনি? এতো বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলবেন আপনি আমার লাইফের সাথে আর আমি সেই দুঃখে উপোষ থেকে অশ্রু বিসর্জন দিবো? “

পার্থ হাসে। যদিও তার এই হাসিটা মেকি। ভিতরে ভিতরে নিজের বোনের চিন্তা তাকে কুঁড়ে খাচ্ছে। তার সামনে বসে থাকা ডাক্তার সাহেবার মতো এতো সহজে এই সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা পৃথার নেই। মেয়েটা নাজুক। তার জগৎটা কেবল এই চৌধুরী নিবাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তার সকল চঞ্চলতা, দৎসীপনা কেবল নিজের দুই ভাইকে ঘিরেই ছিলো। তার বোন এই ঝড় কিভাবে সামলে উঠবে?

তরী পার্থর কপালে চিন্তার মৃদু ভাজ দেখতে পায়। অত:পর বলে উঠে,

“ আপনার বোন কোনো গুন্ডা, মাফিয়ার বাসায় যায় নি। আমি যদি একজন মাফিয়ার বাসায় এমন নির্বিঘ্নে বসে নাস্তাপানি করতে পারি, তাহলে সে-ও ওখানে ঠিকই মানিয়ে নিতে পারবে। “

পার্থ তরীর দিকে তাকায়। অত:পর শক্ত গলায় বলে,

“ যেই ছেলে আমার বোনকে বোকা বানিয়ে বিয়ে করতে পারে তাকে আমি কখনো বিশ্বাস করি না। আমার বোনের সাথে যে সেখানে খারাপ কিছু হবে না তার গ্যারান্টি কি? “

তরী নিজের এক পায়ের উপর পা তুলে সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলে,

“ আমার সাথেও যে এই বাসায় খারাপ কিছু হবে না তার গ্যারান্টি কি পার্থ মুন্তাসির চৌধুরী? “

পার্থ কঠিন দৃষ্টি বজায় রেখে তরীর দিকে স্থির তাকিয়ে আছে। তরী নিজেই আবার বলে,

“ পৃথা ওই বাসায় খারাপ থাকবে না তার গ্যারান্টি আমি নিজে দিচ্ছি। কারণ ছোটর মাঝে আমার পাপার রক্ত আছে। আর আমার পাপা ভালো করেই জানে হাও টু ট্রিট এ উইমেন। কিন্তু আপনি পার্থ মুন্তাসির চৌধুরী? গতকালের নিজের স্ব চোক্ষে দেখা ঘটনার পর আপনার গ্যারান্টি কে দিবে? কার মতো হয়েছেন আপনি? নিজের বাবার মতো? উনিও এমন? নাকি আপনার শরীরে অন্য কোনো অমানুষের রক্ত রয়েছে? “

তরীর বলা শেষ কথাটুকুতে পার্থর মাথা গরম হয়ে যায়। সে চকিতে উঠে দাঁড়িয়ে এক কদম দু কদম করে তরীর দিকে এগিয়ে আসে। তরী ভয় পায় না। নিজের মতো চুপচাপ বসে রয়। পার্থ তার সামনে এসে দাঁড়ায় স্থির হয়ে। অত:পর নিজের এক পা তুলে তরীর পাশে সোফায় ঠেক দিয়ে আরেকহাতে তরীর মুখ চেপে ধরে। ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,

“ মুখের ভাষার লাগাম দেন ডাক্তার সাহেবা। নাহয় আমি নিজেও নিজের গ্যারান্টি দিতে পারবো না। “

তরী দু’হাতে পার্থকে ধাক্কা দিয়ে পিছু সরিয়ে দেয়। অত:পর হেসে সম্পূর্ণ রুমে একবার নজর বুলিয়ে বলে,

“ পৃথিবীতে কোনো কিছু ফ্রি তে পাওয়া যায় না নেতা সাহেব। গতকাল রাত হতে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনায় কেবল আপনার লাভটুকুই ছিলো। নিজের আসল চেহারা নির্মোচন হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচালেন। অত:পর আমাকে বিয়ে করে ফ্রি-তে একখানা বউ আর জবানবন্দি দুটোই আত্মসাৎ করলেন। এই সম্পূর্ণ বিষয়ে আমার লাভটুকু কোথায়? “

“ লাভ চাই আপনার? “

“ আলবাত চাই। আপনার রুমের ডিজাইন আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। এই দরজার ভেতরে থাকা দুটি কামরার মধ্যে আমি ভেতরের কামরায় থাকবো। আর আপনি এই লিভিং এরিয়া তে থাকবেন। আমার ব্যক্তিগত কিংবা প্রফেশনাল লাইফে হস্তক্ষেপের চেষ্টাও করবেন না কখনো। আর আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টাও করলে মেরে শরীরের প্রতিটা হাড্ডির বিশ টুকরো করে দিবো। মনে থাকে যেন। “

পার্থ নিজের দু’হাত পিঠের পিছনে ভাজ করে প্রশ্ন করে,

“ আর আপনার এই শর্তগুলো আমি কেন মানবো? “

“ ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ঝামেলা এড়ানোর জন্য। আর আমার মুখ বন্ধ রাখার দাম হিসেবে। “

পার্থ নিজের চোয়াল শক্ত করে বলে,

“ আমি এভাবেও আপনার প্রতি অনাগ্রহী। আপনার বলা সবগুলো শর্ত আমি নিজ থেকেই পালন করতাম। “

কথাটুকু বলেই সে ধপধপ পা ফেলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। তরী সেদিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলে,

“ আর আমাকে নিজের স্ত্রী বানানোই হবে আপনার সবথেকে বড় শাস্তি। এমন শাস্তি যেই শাস্তির জন্য আপনি আজীবন পস্তাবেন। “

কথাটুকু বলেই তরী ভিতরের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। নিজের ফোন অন করে সে সবার আগে হসপিটালে কল করে আজকের ডে অফ নিয়ে নেয়। আজকের জন্য আর কোনো তামাশা হ্যান্ডেল করতে পারবে না সে। তার এখন একটা লম্বা ঘুমের প্রয়োজন। কালকে তার পরপর তিনটা গুরুত্বপূর্ণ সার্জারি আছে। সেটার জন্য হলেও ঘুমটা তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

__________

সবেমাত্র একটা নিউজ কাভার করে অফিসে ফিরেছে তূর্য। দিনের মধ্যাহ্ন ভাগ। ঘড়ির কাঁটা ১ টায় স্থির। অফিসে বসে লাঞ্চ শুরু করবে এমন সময়ই তার ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে পাপার নাম ভেসে উঠেছে। তূর্য কলটা রিসিভ করে না। কেটে দেয়। যেই না সে আবার খাবার মুখে তুলতে নিবে তখন আবার তার ফোন বেজে উঠে। কিন্তু এবার কলটা তার বাসার দাঁড়োয়ান আংকেল করেছে। তূর্য ফোনটা রিসিভ করেই বলে উঠে,

“ খাবার পৃথার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন আংকেল? “

“ বাবা, আমি গত আধাঘন্টা ধইরা ঘরের কলিংবেল বাজাইতাসি। কিন্তু মাইয়াডা তো দরজা খুলতাসে না। কি করমু এখন? “

তূর্যর কপালে ভাজ পড়ে। সে চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করে,

“ দরজা খুলছে না মানে? “

“ হ বাবা। কোনো সাড়াশব্দও নাই। “

তূর্যর মনের ভেতর অজানা ভয় হানা দিলো। মেয়েটা কোনো স্টুপিডিটি করে ফেলে নি তো? এতোকিছুর মাঝে এই ধরনের চিন্তা তূর্যের মাথায় আসে নি এক মুহুর্তের জন্য। একবারও যদি এরকম খেয়াল আসতো তাহলে কখনোই পৃথাকে বাসায় একা রেখে আসতো না।

তূর্য ফোনটা কেটে খাবার রেখে উঠে সবার আগে হাফ ডে অফ নিতে উদ্যত হয়। আজকের দিনে তার আর কোনো নিউজ কাভার করার শিডিউল না থাকায় সহজে বাকি দিনটার জন্য ছুটি পেয়ে যায় সে। সাথে সাথে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয় সে।

বাসায় ফিরে তূর্য দেখে দাঁড়োয়ান আংকেল এখনো দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। তূর্য অপেক্ষা না করে চাবি দিয়ে লক খুলে উপরে দৌঁড়ে যায়। নিজের রুমে প্রবেশ করতেই সে দেখে পৃথা বিছানার একপাশে গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। তূর্য অবাক হয়। এরকম কুম্ভকর্ণের ন্যায় ঘুমায় কেউ? তবুও সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এটা ভেবে যে অন্তত উল্টাপাল্টা কিছু তো করেনি। তূর্য নিজের গলা সামান্য ঝেড়ে ডাকে,

“ পৃথা? পৃথা? “

এখনো কোনো সাড়াশব্দ নেই। তূর্য বাধ্য হয়ে তাই তার পাশে বসে পৃথার হাত ধরে সামান্য ঝাকিয়ে তাকে ডাকে। এখনও পৃথা চোখ খুলে না। তূর্য এবার কিছুটা আতংকিত হয়। কাছে গিয়ে পৃথার গালে আলতো করে কয়েকটা চাপড় মেরে তার নাম ধরে ডাকে। পৃথা নিরুত্তর। তূর্য আতংকে বলে উঠে,

“ ড্যাম! এই মেয়ে কি করেছো তুমি? “

__________

আবু হায়দার বিচক্ষণ চোখে পরখ করছে শোভনকে। নিজের মেয়ের কাছে যেমন বিবরণ শুনেছে ঠিক তেমনই। ছেলেটা বেশ বিনয়ী। আদব কায়দাও ভালো জানে মনে হচ্ছে। কিন্তু ছেলের চাকরি এবং পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড তেমন একটা ভালো লাগছে না তার। ছেলের বাপ ও ভাই ব্যবসায় জড়িত। তার পাশাপাশি নাকি আবার বড় ভাই ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিতেও জড়িত। আবার ছেলে নিজেও পুলিশের চাকরি করে। পুলিশ আর রাজনীতি দুটি পেশাই হলো বর্তমান যুগে দূর্নীতিতে পরিপূর্ণ। পুরো জীবন নিজের মোরাল মেনে জীবন ধারণ করা আবু হায়দারের মেয়ের কিনা এইরকম এক ফ্যামিলির ছেলেই পছন্দ হতে হলো?

আবু হায়দারের স্ত্রী ফরিনা বেগম শোভনের মা’য়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে,

“ তা ভাবী, আপনারা বড় ছেলেকে রেখে ছোট ছেলের বিয়ে আগে দিতে চাচ্ছেন কেন? “

সাদিকা বেগম হেসে বিচক্ষণতার সাথে জবাব দেয়,

“ আমার বড় ছেলের জন্য এখনো ওর যোগ্য জীবনসঙ্গী পাই নি। আর এসব বিষয় তো উপরওয়ালার হুকুমে হয়। যার যেখানে জুটি ঠিক করে রাখা আছে তার সেখানেই বিয়ে হবে। “

ফরিনা বেগম হেসে শুধায়,

“ তা তো অবশ্যই। “

আফজাল সাহেব এতক্ষণে নীরবতা ভেঙে প্রশ্ন করে,

“ তা হায়দার সাহেব, দেখা সাক্ষাৎ আলাপ সবই তো হলো। এবার আমরা যেই উদ্দেশ্যে এসেছি তা নিয়ে কথা বলা যাক। আমার ছোট ছেলে শোভনের জন্য আমরা আপনার মেয়ে মধুমিতার সমন্ধ চাচ্ছি। আপনি কি এই বিয়েতে রাজি? “

আবু হায়দার আড়চোখে নিজের মেয়ের দিকে তাকায়। মধুমিতা হাসিহাসি মুখ করে নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। হায়দার সাহেব ভাবেন তার মেয়ে সবসময় তার বিশ্বাসের মান রেখেছে। আর তাছাড়া তার মেয়ে বেশ বিচক্ষণও। সে যে নিজের জন্য খারাপ কাউকে পছন্দ করবে না তা নিয়েও উনার সন্দেহ নেই। তাই তিনি বলে উঠেন,

“ আমার কোনো আপত্তি নেই। “

শোভন সাথে সাথে মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। এতক্ষণ তার রুদ্ধশ্বাস আটকে ছিলো। মনে হচ্ছিলো বুঝি কোনো বিসিএসের ভাইবা দিতে এসেছে। কিন্তু এখন নিজেকে অনেকটা হালকা লাগছে। শোভন আড়চোখে মধুমিতার দিকে তাকায়। বড়রা তখন মিষ্টিমুখ করতে ব্যস্ত। শোভন মধুমিতার দিকে তাকিয়েই নিজের হাসি চওড়া করে একটা ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দেয়।

মধুমিতা বিষম খায়। এই ডিউটিওয়ালা দিন দিন খুব দুঃসাহসিক হয়ে যাচ্ছে তো! উহু। মধুর সাহস কম নাকি? সে-ও পাল্টা শোভনের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে এক চোখ মারে। শোভন হেসে সবার আড়ালে নিজের ফোন বের করে মধুকে ম্যাসেজ লিখে,

“ শীঘ্রই দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে। এখন মধু দিয়ে মিষ্টিমুখ করাও তো। “

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে