মেঘবতী পর্ব-১০

0
1673

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

বেশ কিছুদিন পর,

ভার্সিটি থেকে এসে প্রায় ৫ মিনিট যাবত বেল বাজিয়ে চলেছে প্রিসা কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।তাই শেষে বাধ্য হয়ে ডুপ্লিকেট চাবি দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে প্রিসা।ভেতরে ডুকে প্রিসা আরো অবাক হয় কারণ বাড়িতে কেউ নেই।

প্রিসাঃমা…..ভাইয়া……।(চিৎকার করে)

প্রিসা পুরো বাড়ি খুঁজে কাউকে পেলোনা।ব্যাগ থেকেই ফোন বের করে একে একে সবাইকে ফোন দেয় কিন্তু কেউ ফোন তুলছে না।কিছু একটা ভেবে প্রিসা পরের তালায় চলে যায়,মিলাদের বাসাই।এবার যেন প্রিসা আরো বেশি অবাক হয় কারণ মিলাদের দরজার সামনে তালা ঝুলছে।

প্রিসাঃএটা কি হলো?কোথাও কেউ নেই কেন?সকালে যে মা আর ভাইয়া বললো তারা আজকে বাড়িতে থাকবে কিন্তু এখন তাহলে নেই কেন?আর কেউ আমার ফোনও তুলছে না কেন?

এসব বিরবির করে নিজের রুমে চলে আসে প্রিসা।তারপর ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে কিছু খাওয়ার জন্য।কিন্তু ড্রয়ংরুমে এসে তো প্রিসা ভুত দেখার মতো চমকে যায় কারণ সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে ফোন টিপছে অয়ন।

প্রিসাঃএনি আবার কোথা থেকে এলো?আমি তো পুরো বাসা ঘুরে দেখেছি।কই তখন তো ওনাকে দেখতে পেলাম না।আচ্ছা উনি কি জাদু জানে নাকি?(বিরবির করে)

অয়নঃএতো ছোট মাথায় এতো বেশি চাপ নিওনা মেঘবতী আর আমি কোন জাদু জানিনা।তুমিই মেইন ডোর ওপেন করে চলে গিয়েছিলে রুমে।(ফোন টিপতে টিপতে)

প্রিসাঃ(উনি কিভাবে জানলেন আমি এসব ভাবছিলাম?উনি কি মনোবিজ্ঞানী নাকি?নাকি আসলেই জাদু জানে?— মনে মনে)

অয়নঃআমি কোন মনোবিজ্ঞানী বা জাদুঘর নয়।তোমার মুখের এক্সপ্রেশন আর তোমার চোখ দেখেই আমি বলে দিতে পারি তুমি কি ভাবছো,বুঝতে পেরেছো মেঘবতী।

প্রিসাঃও আচ্ছা(মাথায় হাত দিয়ে)।আচ্ছা আমার বাসার আর মিলা আপুর বাসার সবাই কোথাই?

অয়নঃআমি জানি না।অন্য আমায় ফোন করে বলেছে বাসাই আসতে কারণ তোমার নাকি একা থাকতে ভয় লাগে।

প্রিসাঃতা তো লাগেই।আচ্ছা আপনি কখন এসেছেন?

অয়নঃঅনেক আগে।

প্রিসাঃতাহলে আপনি কোথায় ছিলেন?আপনাকে তো বাড়ির ভেতরে কোথাও দেখতে পাইনি।

অয়নঃআমি ছাদে ছিলাম এতক্ষণ।ছাদে খুঁজলে তুমি আমাকে পেয়ে যেতে।

প্রিসাঃআচ্ছা তাহলে…..

অয়নঃএখন আর কোন কথা নয় মেঘবতী।এখন খাবার খেয়ে নাও পরে তোমার প্রশ্ন শুনবো।

প্রিসা আর কোন কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।সব রান্না করা ছিল বিদায় প্রিসাকে আর কোন ঝামেলা করতে হয়নি।দুটো প্লেট খাবার নিয়ে প্রিসা ড্রয়ংরুমে চলে আসে।ড্রয়ংরুমে এসে দেখে সোফায় হেলাম দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে অয়ন।

প্রিসাঃউহু….উহু…..।

অয়নঃকি হয়েছে মেঘবতী?

প্রিসাঃএই নিন খাবার,খেয়ে নিন।

অয়নঃআমি খাবো না,তুমি খেয়ে নাও।(চোখ বন্ধ করে)

প্রিসাঃআপনাকে খেতেই হবে,দেখি ঠিক করে বসুন তো।

অয়ন উঠে না তবে চোখ খুলে প্রিসার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

প্রিসাঃকি হয়েছে?

অয়নঃভাবছি তুমি এখন থেকেই আমাকে এভাবে শাসন করছো,তাহলে বিয়ের পর কি করবে?

অয়নের কথায় প্রিসা লজ্জা পেয়ে যায়।এদিক-ওদিক থাকিয়ে তারপর আবার অয়নের দিকে তাকাই।

প্রিসাঃশুনুন আপনি খাবেন কিনা সেটা বলুন।প্লেট এখানে রাখছি খেলে খান না হলে ঘুমান।

অয়নঃআরে আমার মেঘবতী তো রাগ করেছে দেখছি।আচ্ছা ঠিক আছে দাও আমি খাচ্ছি।

প্রিসাঃঠিক আছে তবে আগে হাত ধুয়ে আসুন তারপর খাবেন।

অয়ন প্রিসার কথা বলার ধরণ দেখে মুচকি হেসে উঠে চলে যায় হাত ধোঁয়ার জন্য।এরপর দুজনে একসাথে খেতে বসে।খাওয়ার সময় কেউ কথা বলেনি কারণ দুজনেই টিভি দেখতে ব্যস্ত ছিল।খাওয়া শেষ হলে প্রিসা প্লেটগুলো পরিষ্কার করে আগের জায়গায় রেখে দেয়।বাইরে এসে দেখে অয়ন এখনও টিভি দেখছে।

অয়নঃমেঘবতী যাও কিছুক্ষণ রেস্ট নাও।বাইরে রোদটা কমলে বিকেলের দিকে আমরা ঘুরতে যাবো।

প্রিসাঃকিন্তু বাসায়….

অয়নঃসেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না তুমি এখন ঘুমাতে যাও।

প্রিসাও আর কথা না বাড়িয়ে রুমে যেয়ে শুয়ে পড়ে।বিকেলের দিকে অয়নের ডাকে তার ঘুম ভাঙে।অয়নের কথামত উঠে ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নেয় প্রিসা।তারপর দুজনে মিলে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বের হয়।

প্রিসাঃঅয়ন ভাইয়া গাড়ি নেবেন না?

অয়নঃনা।

প্রিসাঃকেন?

অয়নঃকারণ আজকে আমি আমার মেঘবতীর সাথে রিকশা চড়ে ঘুরবো।(মুচকি হেসে)

অয়নের কথায় প্রিসা আবার লজ্জায় পড়ে যায়।এরপর একটা রিকশায় উঠে তারা।প্রিসা যথাসম্ভব অয়নের কাছ থেকে দুরত্ব বজায় রাখতে চেষ্টা করছে,অয়নও বুঝতে পারছে সেটা।তাই সেও যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখেই বসেছে।কিছুক্ষণ পর একটা পার্কের সামনে এসে রিকশাটা থামে।রিকশা থেকে নেমে পার্কের ভিতরে গিয়ে একটা বেঞ্জ এ বসে তারা।আশেপাশে কিছু বাচ্চা খেলাধুলা করছে আবার কেউ এমনিতেই এসেছে নয়তো প্রিয় মানুষের সাথে দেখা করতে এসেছে।

অয়নঃএই নাও মেঘবতী বাদাম খাও।

প্রিসা বাদামের প্যাকেট টা অয়নের হাত থেকে নিয়ে তারপর অয়নকে প্রশ্ন করে—

প্রিসাঃআচ্ছা আপনি আমাকে মেঘবতী ডাকেন কেন?

অয়ন প্রিসার কথা শুনে মুচকি হেসে তার দিকে তাকাই।

অয়নঃবলবো একসময় তবে এখন না।

প্রিসাঃকেন?এখন কেন নয়?

অয়নঃকারণ এখন সেই মুহুর্তটা নয়।

প্রিসা আর কিছু না বলে চুপচাপ বাদাম খেতে থাকে।সে বুঝতে পারছে অয়ন তার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে তবুও সে কিছু বলছে না।

অয়নঃআই লাভ ইউ মেঘবতী।

অয়নের কথা শুনে প্রিসা বাদাম চিবোনো বন্ধ করে দেয়।তার হার্ট এখন এতো জোরে বিট করছে মনে হচ্ছে কেউ ড্রাম বাজাচ্ছে।প্রিসা অয়নের দিকে তাকাই।প্রিসার তাকানোর পর অয়ন মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকাই।প্রিসাও আর কথা না বাড়িয়ে বাদাম চিবোতে থাকে।

প্রিসা অয়নকে ভালোবাসে কিনা জানে না তবে তার অয়নকে ভালোলাগে।অয়ন তার আশেপাশে থাকলো সবকিছু তার ভালোলাগে,অয়নে কথা শুনলে তার হার্টবিট বেড়ে যায়,এছাড়াও আরো অনেক কিছু।কিন্তু প্রিসা জানেনা এটা আদৌও ভালোবাসা নাকি শুধু ভালোলাগা।

আরো কিছুক্ষণ বসে থেকে তারা দুজন বাড়িতে চলো আসে।বাড়িতে এসে প্রিসা যেন আকাশ থেকে পড়লো কারণ যাওয়ার সময় পুরো বাসা খালি ছিল কিন্তু এসে দেখে পুরো বাসাই মানুষ ভর্তি মানে সবাই ফেরত চলে এসেছে,এমনকি তার মামা-মামী আর সায়নও আছে।অয়নের সাথে প্রিসাকে দেখে সায়ন কিরকম করে যেন তাদের দিকে তাকাই,প্রিসা সেটা খেয়াল করেছে কিন্তু ওতোটা পাত্তা দেয়নি।প্রিসা সবার থেকে জিজ্ঞেস করছে তারা এতোক্ষণ কোথায় ছিল কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার কেউ থাকে কিছু বলছে না উল্টো তাকে এড়িয়ে চলছে।প্রিসা খেয়াল করে দেখে সবাইকে অনেক খুশি খুশি লাগছে,তারা কোন একটা বিষয়ে নিজেদের মধ্যেই কথা বলছে কিন্তু প্রিসাকে দেখলেই তারা চুপ হয়ে যাচ্ছে নয়তো কথা ঘুরিয়ে ফেলছে।প্রিসার কেন যেন এবার সন্দেহ হয়ে লাগে।

প্রিসাঃকি হলো সবাই এরকম করছে কেন?আচ্ছা ওরা কি আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছে?কিন্তু কি লুকাবে তারা আমার কাছ থেকে?(মনে মনে)

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে