মরীচিকাময় ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
498

#মরীচিকাময়_ভালোবাসা
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

প্লাবণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে নিষ্পলক চোখে চেয়ে আছে। কিছুতেই যেন ঘুম আসছে না তার। এরমধ্যে হঠাৎ করে তার ফোনটা বেজে উঠল। বিরক্তিতে কপাল কুচকে আসল প্লাবণের। ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে শামিম বলে ওঠে,
“তোর সাথে কিছু কথা ছিল ব্রো।”

“কি বলবি তুই? কোন মুখে বলবি? বলার মতো মুখ রেখেছিস।”

“তুই আমাকে ভুল বুঝছিস..”

“কোন ভুল বুঝছি না আমি। তোর সাথে আমার এতদিন কার বন্ধুত্ব অথচ তোর কাছে আমার চেয়ে মৌরী বড় হয়ে গেল? তুই ওকে সাহায্য করলি। আমার সমস্ত কথা আম্মুকে বলে দিলি।”

“আমি তো ভুল কিছু করিনি প্লাবণ। যা ঠিক তাই করেছি।”

“তাহলে এখন আমায় ফোন করেছিস কেন? আমি তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই।”

“দেখ, প্লাবণ। তুই কিন্তু শুধু শুধু আমায় ভুল ভাবছিস। আমি তোর বন্ধু ছিলাম, আছি আর থাকব। আর তুই যে মুখে বলিস মৌরীকে সহ্য করতে পারিস না তাহলে ওর কেয়ার করিস কেন?”

“কি বললি? কেয়ার করি মানে?”

“থাক, আর ঢং করতে হবে না। আজ তো তুই আমাকে পাঠিয়েছিলি মৌরীকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসার জন্য।”

“যা করেছি সেটা আমি মানবতা বোধ থেকে করেছি। বৃষ্টির সময় ও একা ওখানে ছিল, একা একটা মেয়ে কোন বিপদ হবে ভেবেই তোকে নিয়ে আসতে বলেছিলাম। আমি যদি সত্যিই ওর কেয়ার করতাম তাহলে নিজে নিতে যেতাম। তবে এখন মনে হচ্ছে তোকে পাঠানো ঠিক হয়নি। আজ শুধুমাত্র এই কারণে আমার আম্মুর কাছে আমি ছোট হয়ে গেছি।”

শামিম হালকা শ্বাস নিয়ে বলল,
“যাই হোক না কেন, আমার মনে হয় তোর এবার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা উচিত। মৌরী মেয়েটা কিন্তু খারাপ না।”

“তোর যদি এতই পছন্দ হয় ওকে তাহলে তুই ওকে বিয়ে করে নিস। আর মাত্র ৬ মাস পরই তো আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।”

“আচ্ছা আমি যদি মৌরীর কাছাকাছি যাই তোর জেলাস ফিল হবে না?”

“একেবারেই না।”

“ভেবে বলছিস তো?”

“হ্যাঁ, শতভাগ।”

“ঠিক আছে। মনে থাকে যেন। পরে কিন্তু ডিনাই করতে পারবি না।”

প্লাবণ ফোনটা রে’খে দিলো। তার মনটা হঠাৎ করে উশখুশ করছে। মৌরীর কথা খুব মনে পড়ছে৷ প্লাবণ জানে না কি হচ্ছে ওর সাথে। না, ও নিশ্চিত মৌরীর প্রতি ওর কোন অনুভুতি নেই।

★★★
নতুন দিন, সবকিছু নতুন করে শুরু করার পালা। মৌরী আজ অনেক দিন পর নিজের কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট সে। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। এই ক’দিন বিয়ের জন্য কলেজ মিস গেছে। তাই এখন আর মিস দিতে চাইছে না।

মৌরী ডাইনিং টেবিলে বসে ছিল আর আতিফা বেগম তাকে খাবার দিচ্ছিলেন। মাঝে মাঝে টুক টাক কথাও হচ্ছিল তাদের দুজনার মধ্যে। এর মাঝে হঠাৎ করে প্লাবণ চলে আসে তাদের মাঝে। যার ফলে দুজনেই কথা বলা বন্ধ করে দেয়। মৌরী মাথা নিচু করে খেতে থাকে। প্লাবণের দিকে একবারের জন্যেও তাকায় না।

মৌরী তার দিকে তাকাচ্ছেনা দেখে প্লাবণ মনে মনে খুব রেগে যায়। বিড়বিড় করে বলে,
“ভাব খুব বেড়ে গেছে তাই না? তোর ভাব নেওয়া আমি বের করছি।”

মৌরী দ্রুত খাওয়া শেষ করে টেবিল থেকে উঠে পড়লো। অতঃপর আতিফা বেগমকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
“বড়মা আমি তাহলে কলেজে যাচ্ছি।”

“আচ্ছা। সাবধানে যাস।”

মৌরী যেতে যাবে তখনই হঠাৎ প্লাবণ বলে উঠল,
“তুই একটু দাড়া, আমার খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।”

” আমি একা চলে যেতে পারব।”

বলেই মৌরী চলে যেতে চায়। প্লাবণ উঠে দাঁড়িয়ে মৌরীর হাতটা শক্ত করে ধরে। দাঁত ক’টমট করে বলে,
“কি বলেছি কানে যায়নি তোর? আমি তোকে নিয়ে যাব।”

“ছাড়ুন আমার হাত লা’গছে আমার।”

আতিফা বেগম রাগী গলায় বলেন,
“এসব কি হচ্ছে প্লাবণ? ছেড়ে দে মৌরীকে। ও যখন বলছে একা যাবে তখন একাই যেতে দে। তোর কোন অধিকার নেই ওকে জোর করার।”

“আমার অধিকার নেই মানে? আমি স্বামী হই ওর।”

“তুই তো নিজেই এই বিয়েটাকে মানিস না। তাছাড়া এটা মাত্র ৬ মাসের বিয়ে।”

“৬ মাসের হোক বা ৬ দিনের। এই ক’দিন ওকে আমার কথা মতো চলতে হবে।”

মৌরী একটা ঝা’ড়া দিয়ে নিজের হাত আলাদা করে নিয়ে বলে,
“আমি তোমার হাতের কোন পুতুল নই যে তোমার কথা মতো চলব। আমি একজন স্বাধীন মানুষ।”

“ঠিক আছে, সাহস থাকলে বাড়ি থেকে এক পা বের হয়ে দেখা।”

মৌরী প্লাবণকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে লাগল। মৌরী বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। প্লাবণও মৌরীর পেছন পেছন রাস্তায় বেরিয়ে এলো। মৌরীকে টেনে হি’চড়ে নিজের বাইকে বসানোর চেষ্টা করল। মৌরী রেগে গিয়ে প্লাবণকে ধা’ক্কা দিয়ে বলল,
“দূরে থাকো আমার থেকে। আমি তোমার সাথে যেতে চাই না, কেন বুঝতে চাইছ না তুমি?”

” কাল অব্দি আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছটফট করছিলি। তাহলে আজ কি হলো?”

“আমার আর চাই না তোমার ভালোবাসা। বুঝলে তুমি?”

“ও বুঝেছি নতুন না’গর জুটিয়েছিস তাই না? তোর নতুন না’গর তোকে কি সুখ দেয় বল আমায় যেটা আমি তোকে দিতে পারি না।”

“ভদ্র ভাবে কথা বলো।”

“তোর মতো মেয়ের সাথে এর থেকে ভদ্রভাবে তো কথা বলা যায়না।”

“প্লাবণ!”

“চুপ। একদম চুপ। আমার উপর বড় গলায় কথা বলবি না।”

“আমি তোমার সাথে কথাই বলতে চাই না।”

মৌরী সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্লাবণ তার হাত ধরে হেচকা টান দেয়। মৌরীর মাথা এসে প্লাবণের বুকের কাছে স্পর্শ করে। মৌরী প্লাবণের হৃদস্পন্দন শুনতে পারছিল। ইচ্ছা করছিল এভাবে কিছুক্ষণ থাকবে। কিন্তু তারপরেই প্লাবণের বলা জ’ঘন্য কথাগুলো মনে পড়ে গেল৷ সে দূরে সরে এলো। প্লাবণ বললো,
“কি আমাকে আর ভালো লাগছে না? অন্য কারো বুকে ঠাঁই নিতে ইচ্ছা করছে।”

“তুমি এই জঘন্য কথা বলা বন্ধ করো প্লিজ। আমার ধৈর্যের বাধ কিন্তু ভেঙে যাচ্ছে। আমি কিন্তু কিছু করে ফেলবো”

“কি করবি তুই? এই যে আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে। মা’রবি আমায় আয় মা’র।”

মৌরী প্লাবণকে এড়িয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমন সময় একটি গাড়ি এসে তার সামনে থামে। গাড়ির কাঁচ নামিয়ে শামিম বলে,
“ভাবি আপনি! কোথাও যাবেন নাকি?”

মৌরীর কাছে মনে হলো এখন শামিমই তাকে প্লাবণের এইসব বাজে বিহেভিয়ার থেকে বাচাতে পারে৷ তাই সে বলল,
“হ্যাঁ, আমি আসলে কলেজে যাব।”

“আমার গাড়িতে উঠুন আমি আপনাকে কলেজ পর্যন্ত ড্রপ করে দেব।”

মৌরী যেন হাতের কাছে চাঁদ পেয়ে গেল। রাজি হয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় প্লাবণ বলে উঠল,
“এখন আমি বুঝতে পেরেছি আমার বন্ধু কেন আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। নারীর থেকে বড় ছলনাময়ী আর কিছু হয়না। একটা মেয়ে সব করতে পারে। আমার বন্ধুর সাথে রা’ত কা’টিয়ে নিশ্চয়ই ওকে বস করে নিয়েছিস তুই তাইনা মৌরী?”

মৌরীর ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেল৷ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে প্লাবণকে ঠা’স করে থা’প্পর মা’রল সে। প্লাবণ রক্তিম চোখে তাকিয়ে রইল শুধু।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে