মরীচিকাময় ভালোবাসা পর্ব-১৮

0
672

#মরীচিকাময়_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মৌরী রাতে খাবার সময় তার বাবা আজাদ চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।”

“হ্যাঁ বল কি বলবি।”

“কথাটা শুনে তুমি খুশিই হবে। আমি নিজের জীবনকে আরেকটা সুযোগ দিতে রাজি। আমি আবার বিয়ে করতে চাই।”

“আমি ঠিক শুনছি তো?”

মৌরী লাজুক হাসে। আজাদ চৌধুরী খুব খুশি হন। এই দিনটারই তো অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। মৌরীকে তিনি জিজ্ঞেস করেন,
“তোর কি কোন পছন্দ আছে?”

“হ্যাঁ, খান গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টিজ এর মালিক প্রত্যুষ খানকে আমি বিয়ে করতে চাই।”

“উনি তো অনেক বিখ্যাত বিজনেসম্যান। নতুন এসেই কামাল করে দেখিয়েছেন। ওনার সাথে তোর পরিচয় কিভাবে হল?”

“একটা পার্টিতে দেখা হয়। তারপর টুকটাক আলাপ। তখন থেকেই আমরা একে অপরকে পছন্দ করি।”

“আচ্ছা আমি একটু খোঁজ নিয়ে দেখি আগে। শুধু ভালো বিজনেসম্যান হলেই তো হবে না। আমার মেয়ের জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।”

“আমি সব খোঁজ নিয়ে নিয়েছি আব্বু। এখন শুধু তুমি আর বড়মা ওর সাথে কথা বলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করো।”

“সেকি! ওর ফ্যামিলির সাথে কথা বলব না?”

“ওনার নিজের বলতে কেউ নেই। বাবা কিছু বছর আগেই মারা গেছেন। সৎ মা আর ভাইদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই।”

“ওহ আচ্ছা। আমি দেখছি তাহলে। এবার যদি অন্তত তুই খু্শি হস। আগের মতো কিছু না হলেই ভালো।”

★★★
কে’টে গেছে একটা মাস। আজাদ চৌধুরী আর আতিফা বেগম মিলে প্রত্যুষের সাথে দেখা করেছেন এরমধ্যে। প্রত্যুষকে তাদের বেশ পছন্দ হয়েছে। ছোট পরিসরে তাদের এনগেজমেন্টও হয়ে গেছে। আজ তাদের বিয়ে হওয়ার কথা। বিয়েটা বেশ সাদামাটাভাবেই হচ্ছে। খুব কাছের কিছু নিকটাত্মীয় ছাড়া আর কেউ উপস্থিত নেই। এই বিয়ে উপলক্ষে আজাদ চৌধুরীর সাথে তার বড় ভাইয়েরও পূর্নমিলন হয়েছে। প্লাবণ প্রথমদিকে মৌরীর বিয়ের কথা শুনে খুব কষ্ট পায়। কিন্তু পরবর্তীতে ভেবে দেখে মৌরী কেন আজীবন একা থাকবে? তাদের মধ্যে তো অনেক আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তাই এখন মৌরী মুভ অন করতেই পারে। এতে তো দোষের কিছু নেই। প্লাবণ মৌরীর বিয়ে উপলক্ষে সব আয়োজনে উৎসাহের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আতিফা বেগমের নিজের ছেলের জন্য ভীষণ খারাপ লাগছিল। তাই তিনি প্লাবণকে ডেকে বলেন,
“তোর কি খা’রাপ লাগছে না প্লাবণ?”

“খারাপ লাগবে কেন আম্মু? মৌরী জীবনে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা তো খুব ভালো সিদ্ধান্ত।”

“আমি তোর মা হই। তাই তোর কষ্টটা বুঝতে পারি। দেখ মৌরী আর তোর এক হওয়া আর সম্ভব না। মৌরী বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে একদম ঠিক করেছে এবার তুইও ব্যাপারটা নিয়ে ভাব। আর কতদিন এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবি বল?”

“আমি তো কষ্টে নেই আম্মু। আমি অনেক ভালো আছি। তুমি আমাকে নিয়ে ভেবো না।”

আতিফা বেগম আর কিছু বললেন না। নিজের ছেলের এই হালের জন্য প্রথমদিকে তার শান্তি লাগতো। মনে হতো প্লাবণ তার কৃতকর্মের শিক্ষা পাচ্ছে। তবে এখন তার মনে হয়, ছেলেটা বোধহয় তার অন্যায়ের থেকে অনেক বেশিই শাস্তি পেয়েছে।

★★★
প্রত্যুষ ও মৌরীকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে। কাজি তাদের বিয়ে পড়ানো শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পর বিয়ে পড়ানো সমাপ্ত হয়। প্রত্যুষ ও মৌরীর বিয়ে হয়ে যায়।

বিয়ের পর সবাই কুশল বিনিময় করে। আতিফা বেগম প্রত্যুষের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“মৌরীর ব্যাপারে সবই তো তুমি জানো। মেয়েটার অতীত বেশি একটা সুখকর নয়। তুমি ওকে সুখে রাখার চেষ্টা করিও।”

“আপনি চিন্তা করবেন না। আমি নিজের সর্বস্ব দিয়ে মৌরীকে ভালো রাখার চেষ্টা করব।”

আতিফা বেগম হাসেন। বিদায়ের আগে প্লাবণ প্রত্যুষের সাথে আলাদাভাবে কথা বলে। সে বলে,
” আপনি হয়তো আমার আর মৌরীর ব্যাপারে সব জানেন।”

“হ্যাঁ, মৌরী সব বলেছে আমায়।”

“আমি আপনার কাছে কিছু বিষয় ক্লিয়ার করতে চাই। প্রথমত, আমাদের ডিভোর্সের কারণ আমি ছিলাম। মৌরীর কোন দোষ ছিল না। আমি ওকে কষ্ট দিয়েছিলাম। আর দ্বিতীয়ত আমাদের বিয়েটা কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ ছিল।”

প্লাবণের প্রথম কথায় তেমন রিয়্যাক্ট না করলেও কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের কথা শুনে সে বেশ চমকে যায়। কারণ তাদের বিয়েটাও তো কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ! এরমধ্যে প্লাবণ আবার বলে,
“আশা করি আপনি মৌরীকে ভালো রাখবেন। আমার মতো ওকে কষ্ট দেবেন না। জানেন মেয়েটা না অনেক ভালো। ও অনেক ভালো কিছু ডিজার্ভ করে। তাই হয়তো আপনার মতো ভালো কাউকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছে। তবে মনে রাখবেন মৌরী যেন কোন কষ্ট না পায়। আপনার জন্য যদি মৌরীর মনে সামান্যতম কষ্ট লাগে তাহলে আমি কিন্তু আপনাকে ছাড়ব না।”

“আপনি চিন্তা করবেন না। আপনি যেই ভুল করেছেন আমি সেই ভুল করব না।”

তাদের মধ্যে আর কোন কথা হয়না। এরমধ্যে মৌরী আর প্রত্যুষের বিদায়ের সময় হয়ে যায়। সবাই বিদায় জানিয়ে তারা দুজন গাড়িতে উঠে পড়ে। গাড়িতে উঠেই প্রত্যুষ মৌরীর দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“ভালো করে পড়ে সাইন করুন। এটা আমাদের কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের পেপারস।”

মৌরী পড়ে সই করে দেয়। অতঃপর প্রত্যুষ বলে,
“শুনলাম এর আগে প্লাবণের সাথেও আপনার কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ হয়েছিল।”

“হ্যাঁ, আমি আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম এর আগেও আমার বিয়ে হয়েছিল।”

“হুম জানি। আমি তো বলেছি আপনার অতীত নিয়ে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। আমাদের বিয়েটা তো শুধুই একটা কন্ট্রাক্ট।”

মৌরী আর কিছু বলে না।

★★★
মৌ হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শামিমের দিকে। শামিম কিনা তার দিকে ডিভোর্স পেপারস বাড়িয়ে দিয়েছে! মৌ কিছু বলতে যাবে তার আগেই শামিম বলে,
“তুমি এত নিচ আমি ভাবতে পারিনি। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবেসে ছিলাম। তাই তুমি কোনদিন মা হতে পারবে না জেনেও তোমার সাথে এতদিন যাবৎ সংসার করে চলছি। আর তুমি কি করলা? নিজের এক্স বয়ফ্রেন্ড এখন আমার থেকে বড়লোক দেখে তার জীবনে ফিরতে চাইছ?”

“এসব কি বলছ তুমি?”

“এই রেকর্ডিংটা শুনে দেখ বুঝতে পারবা।”

মৌ শুনতে পায় সে বলছে,
“তুমি প্লিজ এই বিয়েটা করো না। আমি তোমাকে এখনো খুব ভালোবাসি। তুমি একবার বললে আমার স্বামীকে ছেড়ে আমি তোমার কাছে ফিরে যাব। প্লিজ আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।”

মৌয়ের মনে পড়ে দুদিন আগেই সে প্রত্যুষের সাথে এসব কথাবার্তা বলছিল। প্রত্যুষ কি তাহলে এসব রেকর্ড করে পাঠালো শামিমকে?

এদিকে শামিম রাগে ফুসছে। মৌকে বলল,
“এই কল রেকর্ডিং তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ডই আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি জানি না তিনি কে। কিন্তু যেই হোন না কেন তার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।”

“শামিম আমার কথাটা শোনো..”

“আমি আর তোমার কোন কথা শুনতে ইন্টারেস্টেড নই। তাড়াতাড়ি এই পেপারে সই করো আর বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। তোমার কাবিনের টাকা তুমি যথাসময়ে পেয়ে যাবে। আমাকে মুক্তি দাও।”

মৌ অশ্রুসিক্ত নয়নে ডিভোর্স পেপারে সই করে শামিমের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। তবে বাড়ির বাইরে এসে সে বলতে থাকে ,
“এটা তুমি ভালো করলে না প্রত্যুষ। আমাকে এভাবে কষ্ট দিয়ে তুমি ভালো থাকতে পারবে না। তোমার আর তোমার বউয়ের জীবন আমি নরক করে দেবো। এটাই আমার প্রতিজ্ঞা।”

★★★
বাসর ঘরে বসে আছে প্রত্যুষ আর মৌরী। প্রত্যুষ মৌরীকে বলল,
“আপনি বিছানায় থাকুন আমি নাহয় সোফায় থাকব। ৬ মাস এভাবেই কা’টাই আমরা। আপনি কোন চিন্তা করবেন না। কোন অসুবিধা হলে আমায় বলবেন।”

বলেই প্রত্যুষ সোফায় চলে যায়। মৌরী প্লাবণের সাথে প্রত্যুষের তুলনা করতে থাকে। প্রত্যুষ তার সাথে কতটা ভালো ব্যবহার করছে। তার জন্য বিছানাটাও ছেড়ে দিল। অথচ প্লাবণ তার সাথে কতোটা অমানুষের মতো ব্যবহার করেছিল। মৌরীর এবার খুব করে আফসোস হতে থাকে। সে যদি প্লাবণকে ভালোবেসে নিজের জীবনের এত বড় ভুলটা না কর‍ত তাহলে হয়তো আজ তার জীবনটাও সুন্দর হতো!

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে