মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-১৭+১৮

0
1509

#মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-১৭+১৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
______________________________
–’ ওহে মেয়ে, আমার শুধু তোমাতেই চলবে। একবার তোমাতে আটকে গেছি। এখন সমবয়সী কেন, পৃথিবীর সবচে সুন্দর মেয়ে এনে দিলেও কাজ হবে না। আ’ম অল ইউরস। ‘
আহনাফের তীব্র স্বীকারোক্তি আকাশ বাতাস আলোড়িত করে তুলল। বাতাসের স্রোতে গা ভাসিয়ে চলে গেল আভার কাছে। আভা হাঁটতে পারল না। এড়িয়ে যেতে পারল না প্রিয় মানুষের প্রবল ভালোবাসা, আদুরে বার্তা। আভা পা টানতে চাইল। চাচ্ছে না আহনাফের কথায় কান দিতে। অথচ পারল না। আটকে রইল। জমে গেল পা দুখানা। আহনাফ আভার পাশে এসে দাঁড়াল। আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁলো। হাতে হাত রাখল। আহনাফের স্পর্শে আভার হাত বেয়ে ঘাম ছুটে গেল
ভিজল কপোল, নরম গালের একাংশ। আহনাফ মিষ্টি কণ্ঠে শুধাল,
–’ রাগ কমেছে? ‘
ইশ, এমন আদর করে বললে কি আদৌ রাগ করে থাকা যায়? উহু, যায় না! একদম যায় না। আভা আহনাফের দিকে রাগ নিয়ে চাইল। দু একটা কথা শুনাতে চাইল। পারল না। আহনাফ বড্ড অসহায় চোখে চেয়ে আছে আভার ডিকে। আভা কিছুক্ষণ থম করে রইল। অতঃপর ফিক করে হেসে আহনাফের গাল টেনে দিয়ে বলল,
–’ খুব কিউট লাগছে। ‘
আহনাফ হাত দিয়ে গাল ঘষে বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
–’ গাল টানবে না। বাচ্চা না আমি। ‘
আভা আহনাফের বাহু দুহাতে জড়িয়ে ধরলো। পা উচু করে লাফিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
—’ জানি। চব্বিশ বছরের দামড়া ছেলে। যাই হোক। আমারই তো। ‘
দুজনেই হেসে উঠে। হাসতে হাসতে আভার চোখের কোণে জল জমে। মেয়েটা অতি সুখে পাগল হয়ে আছে। আভা চোখের পানি মুছে নিল। বলল,
–’ আমার খুব হাসতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ। হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। আপনি আমার জীবনে আরো আগে এলেন না কেন? সুখ আরো আগে আমার হাতে ধরা দিল না কেন? এতটাবছর অপেক্ষা করালেন। ‘
আহনাফ নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে আভাকে পরিয়ে দিল। সুন্দর করে দায়িত্বশীল প্রেমিকের ন্যায় জ্যাকেট ফিট করে সরে দাঁড়াল। আভা বলল,
–’ জ্যাকেট কেন? ঠাণ্ডা লাগছে না তো। ‘
আহনাফ মৃদু হাসল। আভার কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিসাল,
–’ ভিজে গায়ে সব দেখা যাচ্ছে। যা বিয়ের আগে দেখতে চাচ্ছি না, তা এখন চোখে পড়ছে। বাকিটা তুমি জানো। জ্যাকেট খুলবে এখন? ‘
আভা যেন লজ্জায় মরি-মরি। গায়ের জ্যাকেট শক্ত করে টেনে ধরে বিড়বিড় করে,
–’ অসভ্য। ‘
আহনাফ হাসে। কথা বলতে বলতে দুজন আভার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বাড়িতে চলে এসেছে দেখে আভার মন খারাপ হল। সে ঠোঁট ফুলে আহনাফের দিকে চেয়ে থাকল। আহনাফ আভার গালে হাত রাখল। বলল,
–’ আমরা আবার দেখা করব। ঠিক আছে? মন খারাপ করো না। ‘
–’ মন খারাপ করতে চাইছি না। হয়ে যাচ্ছে। কি করব? ‘
–’ কিছু করবে না। এখন বাসায় যাবে। হট গোসল করবে। চা খেয়ে পড়তে বসবে। সামনে অ্যাডমিশন। ভালো করে না পড়লে আমার কাছে আসতে পারবে না। আমার সাথে পড়তে হলে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। বাসায় যাও। আমি একটু পর ফোন করব। ‘
—’ আপনার ফোন তো নষ্ট। ‘
–’ আরো একটা বাটন ফোন আছে। সেটা দিয়ে কল করব। ‘
–’ আচ্ছা। শুভ বিদায়। ‘
–’ জ্যাকেট নিয়ে যাবে? ‘
–’ ওহ, আমি তো জ্যাকেটের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। কি করব এটা? নিয়ে যাই? ‘
–’ তোমার মা দেখলে প্রবলেম হবে? ‘
–’ তাও ঠিক। আচ্ছা আপনি জ্যাকেট নিয়ে নিচে দাড়াবেন। আমি আমার ঘরে জানালা দিয়ে দড়িতে পলিথিন আটকে নিচে নামব। আপনি জ্যাকেট পলিথিনে দিয়ে দিবেন। ‘
–’ এত কষ্ট কেন? সামান্য জ্যাকেটই ত। তোমার কাছে আরো একটা আছে না? ‘
–’ এটাও লাগবে। ‘
আহনাফ হাসে। আভার মাথার চুল এলোমেলো করে বলে,
–’ বিয়ের পর আমার সব জ্যাকেট তোমায় দিয়ে দেব। আমার সামনে সবসময় জ্যাকেট পড়ে ঘুরবে। দেখব তখন। কত জ্যাকেট পড়তে পারো। ‘
–’ ছিঃ। শুধু জ্যাকেট পড়ে থাকব কেন? ‘
–’ ছিঃ কি? তোমাকে কি শুধু জ্যাকেট পড়ে থাকতে বলছি। জামার উপর জ্যাকেট পড়বে। বাচ্চা মেয়ে। সারাক্ষণ মাথায় অদ্ভুত চিন্তা। ‘
–’ আমি বাচ্চা না। ‘
আভা মুখ ফুলায়। আহনাফ হাসে। বলে,
–’ আচ্ছা। তুমি বড় বাচ্চা। এখন যাও। নয়টা বেজে গেছে। তোমার মা চিন্তা করবেন। ‘
–’ আচ্ছা, যাই। শুভ বিদায়। ‘
–’ গুড বাই। ‘
আভা জ্যাকেট খুলে আহনাফের হাতে দেয়। অতঃপর পেছনে ফিরে এগিয়ে যায় গেইটের দিকে। গেইটে প্রবেশ করার আগে আরো একবার পেছন ফেরে আহনাফকে দেখে। আহনাফের দৃষ্টি আটকে আভার দিকে। আভা চোখের ইশারায় আরো রোজার বিদায় জানায়। আহনাফ হাসে। মেয়েটা এমন অদ্ভুত কেন? এই যে সে আহনাফ ছাড়া আর কিছু বুঝে না। আহনাফ দিন বললে আভা সেটাকে দিন মানে, আহনাফ রাত বললে আভা রাত মানে। আভা এতটা নির্ভরশীল কেন আহনাফের উপর। এই যুগে এসে একটা মেয়ে অচেনা পুরুষের উপর এত নির্ভরশীল হয়? আদৌ সম্ভব? আহনাফের ভয় হল। আভার এই বিশ্বাসের মর্যাদা সে রাখতে পারবে তো? আহনাফের কিছু হয়ে গেলে আভার কি হবে? মেয়েটা যে পাগল, নিশ্চয়ই উল্টোপাল্টা কিছু করে বসবে। আহনাফ কি করবে এই অবুঝ মেয়েকে নিয়ে? মেয়েটা কি একটু বুঝবে না?

–’ ডাক্তার সাহেব! ‘
উপর থেকে আভার ফিসফিস চেঁচানো শুনে আহনাফের ধ্যান ভাঙে। আহনাফ মাথা তুলে উপরের দিকে চায়। আভা আঙ্গুলের ইশারায় নিচে কিছু একটা দেখাচ্ছে। আহনাফ আভার ইশারা অনুসারে নিচে তাকায়। লম্বা দড়িতে একটা পলিথিন ঝুলানো। আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। হাতে থাকা ভেজা জ্যাকেট পলিথিনে ঢুকিয়ে দেয়। উপরে চেয়ে হাত নাড়ায়। আভা মুচকি হাসে। দড়ি উপরে উঠায়। জ্যাকেট হাতে নিয়ে গায়ে জড়ায়। আহনাফের দিকে চেয়ে হাতের ইশারায় বিদায় জানায়। আহনাফ মৃদু হেসে বাইকে করে চলে যায়। আভা জ্যাকেট গায়ে শক্ত করে চেপে ধরে। জ্যাকেট থেকে আহনাফের গায়ের গন্ধ ভেসে আসছে। আহনাফ সদা যে পারফিউম ব্যবহার করে জ্যাকেটে সেই পারফিউমের সুঘ্রাণ। আহনাফের পাশে হাঁটলে আভার নাকে তীব্রভাবে লাগে এই পারফিউমের গন্ধ। বিয়ের পর আভা সারাক্ষণ আহনাফের এই পারফিউম ব্যবহার করে বসে থাকবে। তাহলে আভার বোধ হবে আহনাফ আভার পাশেই আছে, ছুঁয়ে দিচ্ছে, ভালোবাসছে। আভার আর একা একা লাগবে না। আহনাফকে আভা জিজ্ঞেস করবে, সে কোন পারফিউম ব্যবহার করে। এত সুঘ্রাণ কোন পারফিউমে আছে। আভা তাহলে এখন থেকে সেই পারফিউম ব্যবহার করবে।
আভা গায়ের জ্যাকেট নাকের সামনে উচু করে ঘ্রাণ শুঁকল। উফ, নাকের কাছে যেন সুরসুরি লাগছে। আভা জ্যাকেট চেপে ধরে বারান্দা থেকে কক্ষে প্রবেশ করল। জ্যাকেট হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে আলমারিতে লুকিয়ে রাখল। সাজেকে দেওয়া আহনাফের সেই জ্যাকেটটাও সেখানে রাখা। এখন থেকে আভা আলমারিতে এই লুকানো জায়গার নাম দিল, প্রেম সিন্দুক। এখন থেকে এই জায়গায় আভা প্রেম জমাবে। বিন্দু বিন্দু করে প্রেম জমিয়ে রাখবে। বিন্দু বিন্দু থেকে সাগর তৈরি হয়। তাহলে একদিন এই প্রেমগুলো জমে প্রেমের সাগর তৈরি হবে। আভা এই প্রেমের সাগরে সাঁতরে বেড়াবে। ইশ, এত আনন্দ কোথায় রাখবে আভা? বুকের ভেতর পুষবে কি?

#চলবে

#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – ১৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
______________________________
রাত থেকে আহনাফের প্রচন্ড সর্দি-জ্বর। চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। নাকের পাটা লাল টকটকে। ফর্সা গরণে লালের আভাস বেশ চোখে পড়ছে। আহনাফের মা ছেলের অসুস্থতায় বেশ ব্যস্ত আছেন। এই গরম পানি করে দেন, এই ভাপ দেওয়ান, ঔষুধ পত্র ঠিকমত খাচ্ছে কি না খেয়াল রাখছেন। একা হাতে সবকিছু সামলে হাপিয়ে উঠেছেন তিনি। আহনাফের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন। আহনাফের চোখ বুজে। তিরতির করে কাপছে রক্তিম রঙের ঠোঁট। কপালে হাত রাখা যাচ্ছে না। বোধ করি পুড়ে যাবে হাত। জ্বরের মাত্রা সময়ের তালে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আহনাফের মা চোখের জল মুছেন। টাওয়াল আবারও পানিতে ভিজিয়ে আহনাফের কপালে রাখেন। একে একে মা’সুলভ অভিযোগ করেন,
–’ বৃষ্টির পানি সহ্য হয় না তো ভিজেছিস কেন? সবসময় তোর বাড়াবাড়ি। জানিস এক ফোঁটা পানি মাথায় পড়লে তোর সর্দি হয়, জ্বরে গা পুড়ে যায়। তবুও বেখায়ালি সবসময়। তোর বাবা এসব দায়িত্ত্ব থেকে ছুটি নিয়ে ভালো আছেন। আমার হয়েছে যত জ্বালা। দেখি, থার্মোমিটার মুখে রাখতে দে। ‘
আহনাফ মৃদু হা করে। আহনাফের মা মিসেস শেখ আহনাফের মুখে থার্মোমিটার রেখে পারদ পর্যবেক্ষণ করেন। ১০২° জ্বর। জ্বর কমছে না কেন? ছেলেটার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। শুকিয়ে এটুকু হয়ে আছে। ইশ!
আহনাফের মা চোখের জল মুছতে ব্যস্ত। আবারো ঔষুধ বের করে আহনাফকে ধরে খাওয়ালেন। আহনাফ মায়ের ব্যস্ততা দেখে বিড়বিড় করল,
–’ আ-আমি ঠ-ঠিক হয়ে যাব। খা-খামোকা ব-ব্যস্ত হচ্ছ। ‘
–’ হ্যাঁ। আমি যা করি সব তো তোর কাছে খামোমাই মনে হয়। চুপ করে বসে থাক। আর একটাও কথা বলবি না। বাজে ছেলে। ‘
আহনাফের আর উত্তর দেয়ার শক্তি নেই। সে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করে। ঘুম আসছে না। সারা গায়ে অসহ্য এক ব্যথা কিলবিল করছে। আহনাফের মা বলেন,
–’ বাবা, মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। একটু ঘুমা? ‘
আহনাফ মাথা নাড়ায়। আহনাফের মা মাথায় বিলি কেটে দেন। আহনাফের ঘন চুলে মায়ের হাত যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। আহনাফের মা মনের সুখে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন। মায়ের হাতের জাদু আছে। এই যে আহনাফের দু চোখে ঘুম নেমে এল। কেন এলে? মায়ের হাতের জাদুর জন্যে নিশ্চয়ই।
যার মা জীবিত আছেন, সে এই পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার কাছে জাগতিক সকল সুখ আছে, শান্তি আছে। মা হলেন জগতের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
আভা পড়ছে। বৃষ্টিতে ভিজে তার অবস্থাও খুব একটা ভালো নেই। একটু পরপর হাচি দিচ্ছে। আভার মা মেয়ের টেবিলে গরম দুধ রাখলেন। বললেন,
–’ বৃষ্টি দেখেছিস তো ভিজেছিস কেন? তারাদের বাসায় ছাতা ছিল না? বাসা থেকে ছাতা নিয়ে বেরুলেই তো পারিস। সবসময় তোর বাড়াবাড়ি। নে, গরম গরম দুধ খা। শরীর ভালো লাগবে। খেয়ে পড়।’
আভা ঠোঁট উল্টে মায়ের দিকে চাইল। আভার মা গরম চোখে মেয়ের দিকে চেয়ে আছেন। আভা ঢোক গলাধঃকরণ করল। চুপচাপ দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে খেতে লাগল। আভার মা বিড়বিড় করতে করতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। আভা খালি গ্লাস টেবিলে রাখল। আড়চোখে সেলফোনের দিকে চাইল। না, এখনো আহনাফের কোনো কল আসে নি। সে কি বাসায় পৌঁছেছে? কোনো কাজে আটকে গেছে। বলেছে তো বাসায় গিয়ে কল করবে। অথচ এখনো……
আভা ফোন হাতে নিল। আহনাফ কল করে নি তো কি হয়েছে। আভা করবে? দুজনের একজনকে সবসময় এগিয়ে থাকতে হবে। আভা কল করল আহনাফের নাম্বারে। দুবার রিং বাজতেই কল রিসিভ হল। আভা বলল,
–’ হ্যালো। ‘
–’ হ্যালো, কে? ‘
মেয়েলি কণ্ঠ শুনে আভা চমকে গেল। আহনাফের মোবাইল কার কাছে?
–’ আমি আহনাফের মা। আহনাফ ঘুমাচ্ছে। পরে কল করো। ‘
– ‘ জ্বি আচ্ছা। ‘
আভার বুক ধুকপুক করতে শুরু করল। আহনাফের মুখে তার মায়ের কথা শুনলে এই প্রথম উনার কণ্ঠ শুনল। কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে বেশ আভিজাত্যপূর্ন মহিলা। কন্ঠে যেন মধু ছেটানো। এত সুন্দর করে কথা বলেন। ইশ!
–’ তোমার নাম কি? ‘
–’ জ্বি? ‘
–’ তোমার নাম কি? ‘
আভা চিন্তায় পড়ে গেল। এখন কি উত্তর দেবে? নিজের নাম বলে ফেলবে? না, আভার নাম আহনাফের মা আহনাফের মুখেই শুনবে। আভা বলবে না। আভা বলল,
–’ চিত্রা, আহনাফের বন্ধু। ‘
–’ আচ্ছা, চিত্রা? কেমন আছো? ‘
–’ ভালো। আপনি? ‘
–’ ভালো। আহনাফের জ্বর উঠেছে। মাত্রই ঘুমিয়েছে। পরে কথা বলব তোমার সাথে। রাখি, মা? ‘
–’ আহনাফের জ্বর? ‘
আভার বুক ধড়াস করে উঠে। আহনাফের মা বলেন,
–’ হ্যাঁ। আজ রাতে কোথা থেকে বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় এসেছে। এখন জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। তোমাদের সাথে ছিল নাকি? ‘
–’ আব…হ্যাঁ। ‘
–’ একটু বলবে ওকে, বৃষ্টিতে যেন না ভিজে। দেখো না। একটু ভিজেই মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। একটু বলবে। কেমন? ‘
–’ ঠিক আছে। বলব আমি। চিন্তা করবেন না। ‘
–’ রাখি এখন। ভালো থেকো। ‘
–’ আপনিও ভালো থাকবেন। ‘
আভা ফোন কেটে থম করে বসে রইল। খুব তো বলেছে, তার বৃষ্টিতে ভিজলে কিছু হয় না। কিন্তু নিজেই বৃষ্টি সহ্য করতে পারে না। আভাকে বলে, আভা নাকি অসুস্থ হবে। আভার বুকের ভেতর খচখচ করতে লাগল। সে অসুস্থ। ভাবলে বুকের মোচড় দিয়ে উঠে। কি করা যায়? ওর বাসায় গিয়ে একবার দেখে আসবে কি? না, না। আহনাফের মা সন্দেহ করবেন। কি করব? আহনাফের বন্ধুদের বলবে কি? না,না। আহনাফের বন্ধুরা এখনো ওদের সম্পর্কের কথা জানে না। আহনাফ যতদিন ওদেরকে আভা সম্পর্কে না জানায়, আভা কিছু বলতে পারবে না। খারাপ দেখাবে সেটা। আভা চিন্তা করে অস্থির হয়ে পড়ল। অথচ উপায় খুঁজে পেল না।
আভা চুপ করে কতক্ষণ ভাবল। মাথায় এল, কামরুলের কথা। আভা কামরুলকে কল দিল।
–’ হ্যালো, আভা। কেমন আছো? ‘
–’ ভালো, কামরুল ভাই। তুমি? ‘
–’ ভালো। ‘
–’ তোমার নাম্বার আমি কিন্তু আহনাফকে দেইনি। ‘
–’ সেটা জানি। ভাইয়া, একটা ফেবার দরকার ছিল। ‘
–’ হ্যাঁ, বলো। ‘
–’ আহনাফের বাসায় একটু যাবে? ‘
–’ কেন? কি হয়েছে? ‘
–’ ও অসুস্থ। ‘
–’ কি? অসুস্থ? ‘
–’ জ্বর হয়েছে। ‘
–’ কিভাবে? কখন? আমি তো জানিনা। ‘
–’ আজ রাতে। বৃষ্টিতে ভেজার কারণে। ‘
–’ বৃষ্টি? আহনাফের বৃষ্টি সহ্য হয় না তো। সঙ্গেসঙ্গে জ্বর উঠে। কিভাবে ভিজল? তোমার সাথে? ‘
–’ আব..না, না। আমার সাথে না। ওর সাথে তো আমার যোগাযোগ নেই। ‘
কামরুল মৃদু হাসল। কৌতুক করে বলল,
–’ আচ্ছা? বিশ্বাস করলাম। ‘
–’ আপনি কি যাবেন ওর বাসায়? ‘
–’ হ্যাঁ, আমি রওনা দিয়েছি। সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। ওরা সবাই যাবে। ‘
–’ ভাইয়া, একটা সাহায্যের দরকার ছিল।’
–’ হ্যাঁ, বলো। ‘
–’ আমি কিছু রান্না করে দিতাম ওর জন্যে। জ্বরে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়েছে বোধহয়। টক কিছু রেধে দিতাম। ‘
–’ আচ্ছা। আমি তোমার বাসার নিচে আসব। তুমি টিফিন নিয়ে নিচে নেমে যেও। ঠিক আছে? ‘
–’ আচ্ছা, ভাইয়া। ‘
–’ এখন রাখি? ‘
–’ ভাইয়া, আরো একটা সাহায্য? ‘
–’ হ্যাঁ, বলো। ‘
–’ ভাইয়া, আহনাফের বন্ধুরা যেন জানে না আমাদের ব্যাপারে। ম্যানেজ করবেন একটু। ‘
–’ আচ্ছা, জানবে না ভরসা রাখো। ‘
–’ রাখি এখন। ‘
–’ গুড বাই। ‘

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে