মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-১৩+১৪

0
1596

#মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-১৩+১৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
__________________________
আভার আকাশে মন খারাপের মেঘ ন্যায় উড়ে বেড়ায়। আহনাফের আকাশে বিভ্রান্তের দেয়াল। সুতোর দু প্রান্তে দুজন ভালোবাসার কাঙালের ভাবনার দাপট। সে কি তীব্র যন্ত্রণা! আকাশে মন পুড়ে যাওয়ার বিদঘুটে গন্ধ।
আহনাফ গিটারে সুর তোলার চেষ্টা করল। পারল না। আবার চেষ্টা করল। চোখ বুজে নিল। চোখের আয়নায় কে ভাসে? এক এলোকেশী কন্যা। যার গায়ে বধূর শাড়ি। মখমলে পা আলতায় ডুবে। আঁচলে মুখ আড়ালে। চোখ দুখানা দেখা যায়। চোখে যে কি মায়া। ও চোখে ডুবে যাওয়া যায় অবলীলায়। সাঁতরে পাড় হওয়া যায় না। প্রেমের ঢেউয়ে গা ভেসে যায়। কে সে? কে এই কন্যা? আহনাফ চোখ বুজে বিড়বিড় করে, ‘ আভা! আমার আকাশের তারা। আমার আকাশরানী। ‘
আহনাফের ঠোঁট হাসে, চোখ হাসে। ঠোঁটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে ভালোবাসার হাস। কপালের কুঁচকে রাখা ভ্রুযুগল সোজা হয়। আহনাফ সুর তুলে। গলা ছেড়ে গায়,
‘ যে পাখি ঘর বোঝেনা
যে পাখি ঘর বোঝেনা
উড়ে বেড়ায় বন বাদাড়ে
ভোলা মন মিছে কেন
মনের খাঁচায় রাখিস তারে

যে পাখি ঘর বোঝেনা
যে পাখি ঘর বোঝেনা
উড়ে বেড়ায় বন বাদাড়ে
ভোলা মন মিছে কেন
মনের খাঁচায় রাখিস তারে

ও পাখি বাঁধন হারা ছন্নছাড়া
মানেনা প্রেমের শিকল
ও পাখি দশ দুয়ারে
শত মন করে দখল

যে পাখি ঘর বোঝেনা
যে পাখি ঘর বোঝেনা…. ‘

গানের প্রতি শব্দ যেন আভাকে উদ্দেশ্য করে লেখা। গানের শিল্পী যেন আভাকে সামনে রেখে খুব নিপুণ চোখে আভাকে আগাগোড়া পরখ করে গান গেয়েছেন। আহনাফের হুশ ফেরে ফোন কলের শব্দে। আহনাফ গিটার পাশে রাখল। ফোন রিসিভ করে কানে ধরল,
–’ বাঁধন, বল। ‘
–’ কি খবর? আসার পর একবারও দেখা করলি না। আজ আমাদের মন্টু মামার চায়ের দোকানে দেখা করার কথা ছিল। আমরা সবাই পৌঁছে গেছি। তুই কোথায়? ‘
–’ আমার ভালো লাগছে না। তোরা গল্প কর। ‘
–’ ফালতু কথা বলে মজা নষ্ট ক্যান করো, মামা। দ্রুত আসো। কোনো অজুহাত না। ‘
–’ কামরুল এসেছে? ‘
–’ হ্যাঁ। আসবে না কেন? ‘
–’ আমি আসছি। দশ মিনিট লাগবে। ‘
–’ দ্রুত আয়। ‘
আহনাফ ফোন কেটে দিল। গিটার কাঁধে তুলে কক্ষে এল। গিটার ব্যাগে রেখে বাসার টিশার্ট প্যান্ট পড়েই বেড়িয়ে গেল মন্টু মামার চায়ের দোকানের উদ্দেশ্যে।

–’ আহনাফ আসবে? ‘
–’ হ্যাঁ। ‘
দিহান আশ্বস্ত হল। বাঁধন বেঞ্চে বসল। কামরুলের দিকে চেয়ে কিঞ্চিৎ সন্দিহান কণ্ঠে সুধাল,
–’ তোর কথা জিজ্ঞেস করেছে। তুই এসেছিস কি না। এসেছিস বলতেই আসছি ফোন কেটে দিল। ব্যাপক সন্দেহ মামা। তোমার কাছে কি কোনো স্পেশাল কিছু আছে? আহনাফ ছুটে আসছে তোর জন্যে। ‘
–’ আরে ও তো আভার….’
কামরুলের শব্দ ভান্ডার থমকে গেল। দ্রুত কেশে উঠল সে। যেন গলার শব্দগুচ্ছ পরিষ্কার করল। বাঁধন সন্দিহান চোখে কামরুলকে পরখ করল। অতঃপর বলল,
–’ আভা কি? আহনাফের সাথে আভার কথা হয় নাকি? ‘
কামরুল হাসার চেষ্টা করল। বলল,
–’ আরে না। আহনাফের সাথে তো আভার কোনো যোগাযোগই নেই। কথা-টথা হবে কিভাবে? ‘
–’ আভার নাম্বার কি কারো কাছেই নেই? মেয়েটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। ওকে আমার পছন্দ হয়েছে ভীষন। আচরণে কি চঞ্চলতা। কিশোরীদের ন্যায় যেন উড়ে উড়ে হাঁটে। এমন মেয়েই আমার জন্যে পারফেক্ট। ওর নাম্বার আছে তোর কাছে? ‘
কামরুল অন্যপাশে তাকাল। বুকে হাত চেপে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করল, ‘ আহনাফ ছুইটা আসতেছে ওর নাম্বার নিতে। বাঁধন চাইপা ধরসে নাম্বারের জন্যে। আর আভা হুকুম দিয়েছে, কাউকে নাম্বার দেয়া যাবে না। হায়রে খোদা। কই যাব? ‘

–’ কি রে? নাম্বার আছে? কথা কস না ক্যান? ‘
কামরুল স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল। ফিক করে হেসে বলল,
–’ আমার কাছে নাম্বার থাকবে কিভাবে? আমি কি বাংলাদেশের সব মেয়ের নাম্বার নিয়ে ঘুরি? অদ্ভুত কথাবার্তা! ‘
বাঁধন ভ্রু কুঁচকে তাকাল। কামরুলের বিভ্রান্ত চেহারা আগাগোড়া জরিপ করে সুধাল,
–’ সত্যিই তোর কাছে নাম্বার নেই? ‘
–’ আরে, মন্টু মামার চায়ের কসম। সত্যি আমার কাছে নাম্বার নেই। ‘
–’ কসম কাটলে নিজের মাথা ধরে কাটবি। মন্টু মামার চায়ের কসম আবার কি? মজা লস? ‘
–’ ধুর। কথা পেঁচাইস না। আহনাফের জন্যে চা দিতে বল। এক্ষুনি এসে পড়বে ও। ‘
বাঁধন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কামরুল মন্টু মামার দিকে চেয়ে বলল,
–’ মামা, চা টা একটু দেখেশুনে বানাবে। তোমার চা খেয়ে আবার না আমি ম’রে-টরে যাই। ‘
মন্টু নামের চায়ের দোকানদার সুন্দর হাসল। চাঁদের আলোয় নিষ্পাপ হাসি ঝলমল করে উঠল। মন্টু চায়ে দু চামচ চিনি মিশিয়ে বলল,
–’ আমার চা চোখ বন্ধ করে খাইতে পারো, কামরুল মিয়া। একদম খাঁটি চা বানাই। দুই নাম্বারী আমার খাতায় নেই। ‘

কামরুল মুচকি হেসে বিড়বিড় করল,’ দুই নাম্বারী আমার খাতায় আছে মামা। তাই বলেছি। ‘
কথা বলার ফাঁকে দেখা গেল আহনাফ এসে বেঞ্চে বসেছে। দিহান আহনাফকে আগাগোড়া লক্ষ্য করে বলল,
–’ মামা কি বিয়ে থেকে আসছ? ‘
আহনাফ বলল,
–’ মানে? বিয়েতে যাব কেন? ‘
–’ না, মানে। আজ একটু বেশীই হ্যান্ডসাম লাগছে আরকি। তাই জিজ্ঞেস করলাম। রাতের বেলায় চাঁদের নিচেও জ্বলজ্বল করছ। ব্যাপার কি? ‘
আহনাফ কথা এড়িয়ে গেল। মন্টু মামাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–’ মামা, এক কাপ চা দিও। দু চামচ চিনি। ‘
মন্টু মামা উত্তর দিলেন,
–’ বলতে হবে না, ভাই। তুমি কেমন চা খাও, আমার একদম মুখস্ত হয়ে গেছে। তোমার চা আমি আগেই বানাই রাখসি। ধরো। ‘
মন্টু এক কাপ চা এগিয়ে দেয় আহনাফের দিকে। মন্টু মামা আহনাফ বলতে একপ্রকার উন্মাদ। আহনাফ তার দোকানে এলে সে শশব্যস্ত হয়ে যায় তাকে অ্যাপায়ন করার জন্যে। আহনাফ বিপদে আপদে মন্টুর পাশে থাকে বলেই মন্টু সারাক্ষণ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে। আহনাফকে পছন্দ করায় তার বন্ধুদেরও বেশ খাতির যত্ন করে সে। মানুষটা বড্ড সহজ সরল। গরীবদের মন ধনীদের ন্যায় অত পেঁচানো না। ধনীদের সবাই টাকার গরমে সারাক্ষণ কুর্নিশ করে। গরীবরা ভালো ব্যবহার পেয়ে অভ্যস্ত নয়। কিন্তু যখন কেউ তাদের মন খুলে ভালোবাসে, তাদের হৃদয় মোমের ন্যায় গলে যায়। তারা সেই মানুষটার জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতে কুণ্ঠিত হয় না। গরীবরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে জানে। ধনীদের গায়ের রক্ত খারাপ। তারা বরাবরই অকৃজ্ঞতার পরিচয় দেয়।

আহনাফ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তাতে চুমুক বসাল। বাঁধন প্রশ্ন করল,
–’ আহনাফ, তোর সাথে আভার যোগাযোগ আছে? ‘
বাঁধনের মুখে ফের আভাকে নিয়ে কৌতুহল আহনাফকে বিরক্ত করল। বাঁধনকে বন্ধু হিসেবে তার ভালো লাগে। এক কথায় সেরা বলা যায়। কিন্তু বাঁধন যখন আভাকে নিয়ে কোনো কথা বলে, আহনাফের সহ্য হয় না। আভার নাম শুধু আহনাফের ঠোঁটে থাকবে। শুধু বাঁধন নয়, অন্য কোনো পুরুষের ঠোঁটে আভার নাম কেন থাকবে? আহনাফ নিজের অযথা রাগ সামলে, ভ্রু কুঁচকে ফের চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
–’ না, নেই। ‘
–’ ওর নাম্বার আছে তোর কাছে? ‘
–’ আশ্চর্য। যোগাযোগ নেই ত নাম্বার থাকবে কিভাবে? ‘
–’ তোদের কারো কাছেই কি নাম্বার নেই? ওর সাথে কথা বলতাম একটু। মনে পড়ছে খুব। ‘
দিহান বলল,
–’ এই বাঁধন পাগল হয়ে গেছে। সারাক্ষণ এ ওর থেকে আভার নাম্বার চেয়ে বেড়াচ্ছে। ‘
–’ পাবনা পাঠিয়ে দে। তাহলেই ল্যাটা চুকে যায়। ‘
কামরুলের কথায় দিহান উচ্চস্বরে হেসে উঠল। বাঁধনের মুখ শুকিয়ে এটুকু হয়ে গেল। বাঁধন চুপসে যাওয়া মুখ নিয়ে থ বসে রইল। কেউ তার অনুভূতি সচেতন চোখে দেখছে না। বাঁধনের বেশ রাগ হল। সে যে বারবার চিৎকার করে বলছে, আভাকে তার ভালো লাগে। অথচ কেউ কানেই তুলছে না কথা। এমন কেন সবাই?
গল্পের আসর সমাপ্ত হল রাত বারোটায়। সবাই যার যার বাড়ি চলে গেছে। শুধু আহনাফ আর কামরুল বাকি রয়েছে। তারা এখনো মন্টু মামার চায়ের দোকানে বসে পঞ্চমবারের মত চা খাচ্ছে। শেষ চায়ের কাপটা রেখে আহনাফ বিল মেটাল। মানিব্যাগ পকেটে পুড়ে কামরুলের পাশে এসে দাঁড়াল। আহনাফ কামরুলের কাঁধে হাত রেখে বলল,
–’ আমি জানি, আভার ঠিকানা তোর কাছে আছে। কিন্তু তুই দিবি না। আভা নিশ্চয়ই মানা করেছে। অবশ্য আমি ঠিকানা চাইবও না। নিজে খোঁজে নেওয়ার মত বুদ্ধি আমার আছে। আসছি। ‘
আহনাফ চলে যাচ্ছে। কামরুল স্থির পায়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। আহনাফ জেনে গেছে তাহলে? কামরুলের খুব অপরাধবোধ হচ্ছে। আহনাফ নিশ্চয়ই ভেতরে খুব ছটফট করছে। আভাও তার ব্যতিক্রম নয়। দুপাশে দুজন তড়পাচ্ছে। অথচ কেউই জেদ ছাড়তে চাইছে না। এ কেমন অবিচার? তবে কামরুল জানে, আহনাফের মনে যদি আভার জন্যে বিন্দু অনুভূতি থাকে তবে আহনাফ আকাশ পাতাল এক করে আভাকে ঠিক খুঁজে নেবে। আহনাফের সেই প্রখর বুদ্ধি আছে। কামরুল ছোট থেকে চেনে আহনাফকে। আহনাফের যা চাই, তা যেকোনো মূল্যে সে অর্জন করেই ছাড়ে। বড্ড জেদী ছেলে আহনাফ। জেদের আগুন যেন আহনাফের রক্তে রক্তে বয়ে বেড়ায়।

#চলবে

#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – ১৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
___________________________
জয়ধ্বনি ট্রাভেল এজেন্সি অফিসের সামনে এসে থামল আহনাফ। এই ট্রাভেল এজেন্সির দ্বারা আহনাফরা সাজেক গিয়েছিল। আহনাফ বাইক থেকে নেমে দাড়াল। টিশার্ট টেনে ঠিক করে রোদচশমা খুলে কলারে ঝুলাল। মুখখানা গম্ভীর করে ভেতরে প্রবেশ করল।

–’ আরে, আহনাফ ভাই যে? আসুন আসুন। ‘
আহনাফকে দেখে অফিসের ম্যানাজার পুলকিত হলেন। চেয়ার ছেড়ে উঠে আহনাফকে জড়িয়ে ধরলেন। আহনাফকে বসার জন্যে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললেন,
–’ ভাই, আবার কি মনে করে আমাদের এজেন্সিতে? কোনো ট্রিপ চাই নাকি? ‘

আহনাফ উত্তর দিল,
–’ ট্রিপ নয়। ট্রিপের পার্মানেন্ট সঙ্গী চাই। ‘

ম্যানেজার চিন্তায় পড়ে গেলেন। মাথা চুলকে মৃদু স্বরে বললেন,
–’ বুঝিনি ভাই। ট্রিপের সঙ্গী বলতে? ‘

আহনাফ বেপরোয়া হয়ে উত্তর করল,
–’ আভার নাম্বার এবং ঠিকানা চাই। দেওয়া যাবে? ‘
–’ কোন আভা? আভা ইসলাম রাত্রি? ওই চঞ্চল মেয়েটা? ‘
-‘ হ্যাঁ। ‘

ম্যানেজার যারপরনাই বিস্ময় নিয়ে তাকালেন আহনাফের দিকে। আহনাফের আচরণ ভঙ্গি অত্যন্ত স্বাভাবিক। ম্যানেজার গোলাকার চোখে আগাগোড়া পরখ করলেন আহনাফকে। আহনাফ পায়ের উপর পা তুলে বাবু হয় বসে চেয়ারের হাতলে হাত রেখে পা দুলাচ্ছে। আহনাফের কখনো মেয়ে চক্কর ছিল না। আচমকা একটা মেয়ের ঠিকানা চাইছে। কি সাংঘাতিক! আহনাফের বড় কোনো অসুখ টসুখ হল কি? ম্যানেজার লাল দিয়ে গলা ভিজিয়ে সুধালেন,
–’ ভাই ঠিক আছেন? অসুস্থ? ‘
–’ না, সুস্থ আছি। আপনি ঠিকানা দিলে আরো বেশি ভালো এবং সুস্থ থাকব। ‘

ম্যানেজার মাথা চুলকে বোকা বোকা হাসলেন। বললেন,
–’ আসলে বিশ্বাস হচ্ছে না। মেয়ে আর আপনি? বড্ড আশ্চর্যজনক লাগছে। ‘
–’ আর কত একা একা ট্রাভেল করব? একটা স্থায়ী সঙ্গী হলে ভালো হয় না? ‘
-‘ হ্যাঁ, হ্যাঁ। তা হয় বৈকি। ‘
–’ তাহলে ঠিকানাটা? ‘
দেখা গেল ওহী সাহেব কিছুটা শঙ্কিত হচ্ছেন। এদিক ওদিক চেয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বলছেন না। আহনাফ লক্ষ্য করে বলল,
– ‘ কিছু বলার হলে বলে ফেলুন। ‘

ওহী সাহেব বোধহয় খানিক আশ্বস্ত হলেন। লালা কর্তৃক
গলদেশ ভিজিয়ে বললেন,
–’ ভাই, এভাবে কারো ঠিকানা দেয়া আমাদের নিয়মের বহির্ভূত। ‘

আহনাফের কুচকে যাওয়া ভ্রু লক্ষিত হল। আহনাফ শান্ত কণ্ঠে সুধাল,
–’ যার ঠিকানা চাইছি, সেও চায় আমি তাকে খুঁজে বের করি। শি ইজ ইন লাভ উইথ মি। ‘

ওহী সাহেবকে অবাক হতে দেখা গেল না। বরং তিনি জানতেন, আহনাফ এবং আভার মধ্যে কিছু একটা খুসুরফুসুর চলছে। হয়তো ট্রাভেলে থাকা সবাই তা জেনে গেছে। আভার আহনাফের কাছে ঘেঁষা, আহনাফের মুগ্ধ নয়ন কারো চোখ এড়ায় না। দুজন প্রেমিক প্রেমিকা এক হতে চাইছে। হোক! কি দোষ তাতে? সে নাহয় পৃথিবীতে আরো এক ভালোবাসার গল্প তৈরি করবে। ওহী সাহেব মৃদু হেসে বললেন,
–’ আমি ডায়েরি বের করে দেখছি। ‘

ডায়রি খোলা হল। পাতা উল্টাতে দেখা গেল। ভ্রু কুঁচকে যাওয়া পরিলক্ষিত হল। ওহী সাহেব বললেন,
–’ পেয়েছি ভাই। ঠিকানা, মোহাম্মদপুর, রোড নং ১২০১, বাসা নং ৩৪। নাম্বার , ০১৭******** ‘

আহনাফ বিস্ময় নিয়ে চাইল। এই ঠিকানায় সে অনেকদিন বাইক নিয়ে পাড়ি দিয়েছে। আভাদের বাসার নিচে বন্ধুদের সাথে চা খেয়েছে। মাঝরাতে বন্ধুদের সাথে বাইক নিয়ে এই রাস্তা থেকে সেই রাস্তা ঘুরে বেরিয়েছে। ওরা দুজন এত কাছে অথচ দূরত্ব যেন তাদের আস্টেপিস্টে জড়িয়ে রেখেছিল। আহনাফ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ওহী সাহেবের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
–’ ধন্যবাদ ফেভারটুকুর জন্যে। ‘

ওহী সাহেব হাত মেলালেন আহনাফের সাথে। বললেন,
–’ আমি আমার কাজ করেছি। মেয়েটাকে ভালো রাখার দায়িত্ব তোমার। আশা করি, তুমি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। ‘
–’ অবশ্যই। আসছি। ‘

আহনাফ রোদ চশমার আড়ালে নিজ ঘোলাটে চোখ লুকাল। অতঃপর বেরিয়ে গেল এজেন্সির অফিস থেকে।
________________________________
মাগরিবের আজানে সন্ধ্যার পরিবেশ কলোরিত। দলে দলে পুরুষরা ছুটে চলেছে মসজিদের দিকে। আহনাফ মাগরিবের নামাজ আদায় করল মোহাম্মদপুর মসজিদে।
আভা নামাজ আদায় করে চা হাতে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। যতদূর দৃষ্টিসীমা পৌঁছে, চেয়ে দেখে অলিগলি। নেই, কেউ নেই। আভার আকাঙ্খিত পুরুষের দেখা মেলে নি। আভার চোখে জল টুইটুম্বর করে উঠে। আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল। অথচ সে একবার কল করেনি। তার মিঠা কণ্ঠ শুনিয়ে বলে নি, ‘ এই মেয়ে, এত রাগ করো না তো। এই যে আমি কথা বললাম। চিৎকার করে বললাম, তোমার ছাড়া আমার চলছে না। তুমি কি শুনতে পাও নি? ‘
না, সে বলেনি। একবার গলির মুখে তার লম্বাটে, পেটানো দেহের দেখা মেলে নি। দূর থেকে হাত বাড়িয়ে বলে নি, ‘ মন তোমাকে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলাম। একবার আমার বুকে মাথা ঠেকাবে কি? ‘
সে বলেনি। পাষাণ লোক! আভা তার কথা আর কখনো মনে করবে না। সে আভাকে ভুলে গেছে। আভাও তাকে ভুলে যাবে। কিন্তু ভুলে যাবে কি করে? মন ছোঁয়া পুরুষকে কি এত সহজে ভুলে যাওয়া যায়? যে পুরুষে আভার সর্বনাশ, তার স্মৃতি নাশ করা কি আদৌ সম্ভব? না তো। এমন কোনো মন্ত্র আছে কি, যা পাঠ করে আভা আহনাফ নামক খারাপ নির্দয় লোককে ভুলে যাবে?
আছে এমন কোনো মন্ত্র, জাদুপত্র?

আভা চায়ের কাপে শেষ চুমুক দেয়। ঘোলা অশ্রু ভেজা চোখ পরিষ্কার করে পুনরায় চোখ রাখে দূরে-বহুদূরে! আশাহত হল। কেউ নেই।

কে যেন হাত বাড়াল। হাত বাড়িয়ে আভাকে ডাকল। আভা চমকে উঠল। গায়ে কাঁটা দিয়ে গেল। আভা ঠিক দেখছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ, আভা ঠিক দেখছে। শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরিধান করে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে সে। আভার নয়ন গড়িয়ে টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। আহনাফ বাসার নিচে থেকে চেয়ে থাকল অনিমেষ। সপ্তাহ কেটে গেছে। তবুও মনে হচ্ছে কত বছর কেটেছে। টিশার্ট ও প্লাজু পরিধানকৃত আহনাফের কিশোরী আভাকে দেখতে বাচ্চা লাগছে। আহনাফের চোখের পাতা এক হয় না। এ তৃষ্ণা নিভে যেতে চায় না। বরং আগুনের ফুলকির মত তেজ দেখিয়ে বেড়ে উঠে। বহুদিন পর একযুগল প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের চোখের তৃষ্ণা নেভাচ্ছে। জানালার এপারে আভা, ওপাড়ে আহনাফ। আভার চোখে জল আর আহনাফের চোখে মুগ্ধতা। এ মুগ্ধতা শেষ হবার নয়। কেমন যেন বেহেয়া ন্যায় বৃদ্ধি পেয়ে আকাশ ছুঁতে চায়। আকাশ ছুঁয়ে ফেলার কি তীব্র বাসনা! মন জ্বলে পুড়ে ছারখার!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে