#মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-০৭+০৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
___________________________
পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে আভা এবং আহনাফ। অনুভূতিরা আভার গলায় আটকে। গা মৃদুমন্দ কাপছে। হাত ঘামছে। কেমন যেন একটা অসহ্য সুখকর অনুভূতি। এমন অনুভূতি আভা এই প্রথম অনুভব করছে। আগে কখনো এমন হয়নি। আগে কখনো আভা এমন ভয়ঙ্কর ভাবে কারোর প্রেমে পড়েনি। কাউকে এতটা চেয়ে বসেনি। কারো চেহারায় এতটা মায়া খুঁজে বেড়ায় নি। এই প্রথম!
‘ কেমন লাগছে? ‘
আহনাফের শীতল কণ্ঠের প্রশ্ন। আভা যতবার আহনাফের কণ্ঠ শুনে আভার গা শিরশির করে উঠে। একটা মানুষ এত সুন্দর করে কি করে কথা বলে? তার কন্ঠে কেন এত মায়া , এত আদর? সে কি জাদুকর? তার কণ্ঠে কেন এত জাদু? এই যে তার কন্ঠ শুনে আভা জাদুর ন্যায় বশীভূত হয়ে গেল? তা তো পাশে হেঁটে চলে লোকটা জানতেই পারল না।
‘ বললে না যেন, কেমন লাগছে? ‘
আহনাফের দ্বিতীয় প্রশ্ন। আভা ঢোক গলাধঃকরণ করে। গায়ে শাল ভালো করে পেঁচিয়ে অতঃপর উত্তর দেয়,
‘ ভালো। তবে একটু ঠাণ্ডা লাগছে। ‘
আহনাফ শুনে। অতঃপর নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে আভার দিলে এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ এটা পড়ে নাও। ‘
আভা হকচকিয়ে যায়। বলে,
‘ না। লাগবে না। আমি ঠিক আছি। ‘
আহনাফের ভ্রু বেকে যায়। ত্যাড়া কণ্ঠে বলে,
‘ বাঁধনের জ্যাকেট নয় বলেই কি পড়ছ না? ‘
আভা ভ্রু কুঁচকে আহনাফের দিকে চায়। বিস্মিত কণ্ঠে সুধায়,
‘ কি বলতে চাইছেন? ‘
আহনাফ উত্তর দেয় না। বরং একটু বেহায়া হয়। একটু খারাপ হয়। জোর করে আভাকে জ্যাকেট পড়িয়ে দেয়। সুন্দর করে দায়িত্বশীল ব্যক্তির ন্যায় জ্যাকেটের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে,
‘ আমায় কখনো না বলো না। আমি শুনব না। ‘
আভা চেয়ে থাকে আহনাফের মুখের দিকে। আভার মনে হচ্ছে, আহনাফ রেগে আছে। কিন্তু কেন? আভা তো তেমন কিছুই করেনি। আভার গায়ে সুন্দর করে জ্যাকেট ফিট করে আহনাফ সরে আসে। আভাকে পেরিয়েই আগে পা চালায়। আভা পেছনে পড়ে যায়। দৌঁড়ে আসে আভা। আহনাফ তবুও এগিয়ে। আভা ঠোঁট উল্টে ফেলে। পেছনে থম করে দাড়িয়ে চিৎকার করে,
‘ হঠাৎ রেগে গেলেন কেন? ‘
আহনাফ দাড়িয়ে যায়। পেছনে ফিরে ভ্রু কুচকে সুধায়,
‘ চিৎকার করছ কেন? কেউ শুনবে। ‘
‘ শুনুক। আপনি রেগে আছেন কেন বলুন। আমি কিছু করেছি? ‘
আভার নাছোড়বান্দা প্রশ্ন। আভার বাচ্চামো দেখে আহনাফ মুচকি হেসে দেয়। সম্পূর্ন ঠোঁটে ছড়িয়ে পড়ে সেই হাসি। আভার বোধ হল, সে জ্ঞান হারাচ্ছে। মানুষটা এত সুন্দর করে হাসে কেন? আভা মুখ ফিরিয়ে নেয়। বুকে হাত চেপে ধরে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়ে। আহনাফ দূরে দাঁড়িয়ে বুকে হাত আড়াআড়ি ভাজ করে আভার দিকে চেয়ে আছে। আভা নিজেকে সামলে নেয়। আহনাফ বলে,
‘ আমি রেগেছি, তোমায় কে বলল? ‘
আভা বলে,
‘ এই যে আপনি আমার থেকে কয়েক ফুট দূরে হাঁটছেন। এটা কি রাগ নয়? ‘
আহনাফ হাত ছাড়ে। আভার দিকে এগিয়ে আসে। আভার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ এখন হাঁটলে চলবে? ‘
আভা ফিক করে হেসে দেয়। অতঃপর বলে,
‘ চলবে না। দৌড়াবে। ‘
আহনাফ মুচকি হাসে। বাচ্চা একটা!
আভা আহনাফের পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটছে। আহনাফের বড় বড় পায়ের ছাপ অনুসরন করা আভার পক্ষে খানিক মুশকিল বটে। আহনাফের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটার জন্য আভার খানিক দৌঁড়াতে হচ্ছে। অদ্ভুত লোক। দানবের মত হাত পা। আহনাফ হাঁটছে। আভার মাথা উঁচু করে আহনাফের দিকে হঠাৎ হঠাৎ চোরাচোখে চাইছে। আভা আহনাফের বুক বরাবর। মানুষটা এত লম্বা। আভার ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে তার দিকে চেয়ে থাকতে। তবুও ঘাড়ের ব্যথা উপেক্ষা করে আভা চেয়ে আছে। আজীবন চেয়ে থাকবে। তবুও তৃষ্ণা নিভে যাবে না। বরং বৃদ্ধি পাবে। আধা ঘন্টা সেই কবেই পেরিয়ে গেছে। দু ঘন্টা ধরে সাজেকের পথ ধরে হাঁটছে তারা। তবুও যেন আশ মেটে না কারো।
‘ আমাদের এখন ফিরতে হবে। রাত তিনটা বাজে। ‘
আভার নিমিষেই মন খারাপ হয়ে যায়। তবে বাইরে প্রকাশ করে না। বরং মুচকি হেসে বলে,
‘ ঠিক আছে। ‘
পিছু হাটতে থাকে আভা এবং আহনাফ। রাতের সাজেক অদ্ভুত সুন্দর। রাস্তার দুদিকে পাহাড় আর পাহাড়। মাঝখানে আকাবাকা পথ। পথের পথিক একজোড়া ভালোবাসার শালিক। ইশ, কি সুন্দর মুহূর্তখানা। বাঁধিয়ে রাখার মত। দিহান থাকলে নিশ্চয়ই ছবি তুলে দিত তাদের। আভা সেই ছবি নিজের কাছে গেঁথে রাখত। যখন মন খারাপেরা আভাকে আটকে ফেলতে, আভার গা তাদের খারাপ স্পর্শ দিয়ে ঝাঁজরা করত, আভা তখন তাদের এই একসঙ্গে পথ চলার ছবি দেখত। মন খারাপেরা হেরে যেত। আভা হাসত।
আভা লুকিয়ে নিজের ফোন বের করল। আহনাফ সামনে তাকিয়ে হাঁটছে। আভা চট করে আহনাফের অগোচরে একটা সেলফি তুলে নিল। আহনাফ জানল না। আভা ছবি তুলেই ফোন লুকিয়ে নিল। আহনাফ দেখেনি। ভালো হয়েছে।
‘ ছবি তোলা শেষ? ‘
আহনাফের কৌতুক প্রশ্ন। আভা থতমত হয়ে যায়। আহনাফ জেনে গেছে? ছিঃ, ছিঃ। কি ভাবছে? তার অনুমতি ছাড়া আভা ছবি তুলেছে? কি লজ্জার কথা। আভা মাথা নত করে ফেলল। আহনাফ ঠোঁটে মৃদু হাসি। আভা সম্পূর্ণ রাস্তা লজ্জায় আর কথাই বলতে পারল না। লজ্জায় যেন মেয়েটা জমে গেছে। সারা অঙ্গ কাপছে। আভার এই নাস্তানাবুদ অবস্হা দেখে আহনাফের ঠোঁটে কৌতুক হাসি।
পথ শেষ হয়েছে। আভাকে হোটেলের সামনে পৌঁছে দিয়েছে আহনাফ।
বিদায় বেলায় দুজনেই নীরব। দুজনেই হাজারো কথা বলতে চাইছ। অথচ বলা হয়ে উঠছে না। কোথাও যেন একটা বাধা কাজ করছে। সংকোচ ঘিরে ধরছে। আহনাফ বলল,
‘ যাবে না? ‘
আভার চোখ ছলছল করল। আভা নিজেকে সামলে বলল,
‘ শুভ রাত্রি। ‘
আহনাফ মুচকি হাসল।
‘ গুড নাইট। ‘
আভা এখনো দাড়িয়ে আছে। আহনাফ বুঝতে পারল, আভা যেতে চাইছে না। সে বলল,
‘ আরো ঘুরতে ইচ্ছে করছে? ‘
আভা দ্রুত উত্তর দেয়,
‘ না, না। অনেক রাত হয়েছে। আর না। ‘
‘ তাহলে ভেতরে যাও। ‘
‘ শুভ রাত্রি। ‘
আহনাফের বড্ড হাসি পাচ্ছে। সে হাসি চেপে বলল,
‘ গুড নাইট। এবার যাও। ‘
আভা লজ্জা পেল। দিনদিন আভা বড্ড অদ্ভুত আচরন করছে। আহনাফের সামনে গেলে আভার সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যায়। আভা আহনাফের সামনে একদম বাচ্চা হয়ে যায়। কেন হয় এমন? আভা পেছন ফেরে। হোটেলের দরজার সামনে এসে আবার পিছন ফিরে তাকায়। আহনাফের চোখ আভার পানেই আটকে। আভা মুচকি হাসে। অতঃপর ভেতরে চলে যায়।
আভা চলে গেলে আহনাফ শব্দ করে হেসে ফেলে। হা হা হা করে হাসে। হাসি যেন থামতেই চাইছে না তার। এই প্রথম আহনাফ তার চিরচায়িত অভ্যাস থেকে দূরে সরে অদ্ভুত আচরন করল। এমন শব্দ হাসি আহনাফ এই প্রথম হাসল। তার হাসির কারণ কে? আভা?
আভা হোটেলের দরজা খানিক ফাঁক করে আড়ালে আহনাফের হাসি দেখছে। আহনাফের শব্দ হাসি দেখে আভার লজ্জায় আক্কেলগুড়ুম হয়। চোখ-প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আভা বুকে হাত চেপে ঠায় চেয়ে থাকে হাস্যরত প্রেমিকের পানে। সে সদা এমন করে হাসে না কেন? আভাকে বারবার মুগ্ধ করতে কি তার ভালো লাগে না? পাষাণ লোক!
#চলবে
#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – পর্ব ৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
__________________________
ক্রিং, ক্রিং, ক্রিং। আভার সেলফোন সশব্দে বেজে চলেছে। আভা হাত পা ছড়িয়ে সুখের ঘুম ঘুমাতে ব্যস্ত। আর সুখ হবেই না কেন? গতরাত আহনাফকে যে এত কাছে থেকে অনুভব করেছে। আহনাফ আভার পাশে ছিল। ওরা দুজন একসাথে হেঁটেছে। ঝগড়া করেছে। হাসির ঝর্না বইয়ে দিয়েছে। দুজন দুজনকে ভীষন রকম উপলব্ধি করেছে। কাছে আসাটা আরো প্রগাঢ় হয়েছে। আভা আর ভাবতে পারছে না। স্বপ্নের দুয়ারে করাঘাত শুনতে পারছে। অথচ স্বপ্নটাও ভালো করে দেখতে পারছে না। সেলফোন থেমে থেমে বারংবার বেজে যাচ্ছে। অগ্যতা আভার ঘুম ভেঙে যায়। আভা কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে। ঘুম খানিক ছুটে যেতেই সেলফোন হাতে নেয়। কামরুলের কল। আভাঘড়ি দেখে। ভোর সাড়ে চারটা বাজে। এত সকালে কল? মাত্র এক ঘন্টা ঘুমিয়েছে আভা। আরো ঘুম পাচ্ছে।
আভা আড়মোড়া ভেঙে কল রিসিভ করে।
‘ হু, বলো। এত সকালে? ‘
কামরুলের উচ্ছসিত কণ্ঠ। সে বলল,
‘ আর ঘুমিয়ে কাজ নেই। সূর্যোদয় দেখব আমরা। আমরা হোটেলের বাইরে অপেক্ষা করছি। দ্রুত বেরিয়ে আসো। ‘
‘ সূর্যোদয়? ‘
আভার ঘুম এক লাফে আকাশে উড়ে বেড়ায়। আভা উঠে বসে। দ্রুত সুধায়, ‘ আমি আসছি। পাঁচ মিনিট। ‘
‘ আসো। ‘
আভা কল কেটে দেয়। দ্রুত বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। গায়ে সুয়েটার জড়িয়ে বেরিয়ে আসে হোটেল ছেড়ে।
এই তো নিচে আহনাফরা অপেক্ষা করছে। আহনাফ গাড়িতে হেলান দিয়ে ঝুঁকে মোবাইল দেখছে। চারপাশে কি হচ্ছে তাতে তার মন একদম নেই। এই যে আভা এগিয়ে আসছে। আহমাফকে দেখে আভার ঠোঁটে মুচকি মুচকি হাসি। সে তো দেখছেই না। পাষাণ লোক। দয়া মায়া নেই। হৃদয় কি আদৌ আছে? না, নেই তো। আভার গাল ফুলায়। হেঁটে আসে সবার কাছে।
‘ এই তো আভা এসে গেছে। ‘
দিহানিয়ে কথায় সবাই আভার দিকে চায়। কামরুল আভাকে সূক্ষ্ম চোখে পরখ করে। আভার দু চোখ ফুলে ঢোল। ঘুমে চোখ কাতর। দেহ অবসন্ন। কামরুল ঠোঁট টিপে হেসে উঠে। আভা বোকার মত তার দিকে চায়। নিজেকে আগাগোড়া দেখে ঠোঁট উল্টে বলে,
‘ আমাকে দেখতে কি জোকার লাগছে? হাসছ কেন তোমরা? ‘
কামরুল এখনো হেসেই যাচ্ছে। বাঁধন এবার কামরুলের পিঠে চাপড় দেয়। বলে, ‘ এই শালা। হাসছ ক্যান? ‘
কামরুল হাসি থামায়। সবার তীক্ষ্ম চোখ কামরুলের দিকে আটকে। কামরুল টিপ্পনী কেটে বলে,
‘ আভা, রাতে ঘুম হয় নি? ‘
আভা হকচকিয়ে যায়। বাঁকা চোখে আহনাফের দিকে তাকায়। আহনাফ অত্যন্ত স্বাভাবিক। তার চোখ আভাকে দেখছে। গভীর ভাবে। যেন আভাকে এই খেয়ে ফেলবে। ছিঃ। কি ভাবছে আভা? আভা কি খাওয়ার জিনিস? আভা গায়ের সুয়েটার টেনে ধরে। তারপর মিনমিনিয়ে বলে,
‘ ঘুমিয়েছি তো। ‘
কামরুল বলে,
‘ তাই তো বলি। গতরাত আহনাফ তিনটার সময় কোথা হতে বিছানায় আসল? বেচারাও সারারাত ঘুমায় নি। তোমাদের দুজনের কি মিল। তাই না আভা? ‘
লজ্জায় আভা মাথা তুলে চাইবার জো পায় না। তার বন্ধুরা কি অসভ্য। অকারণে শুধু শুধু আভাকে লজ্জা দেয়। সে অসভ্য। তার বন্ধুরাও অসভ্য। অসভ্য অসভ্য বন্ধু বন্ধু।
আভা চোরাচোখে আহনাফের দিকে চায়। আহনাফ তীক্ষ্ম চোখে এখনও আভাকেই দেখে যাচ্ছে। এত কি দেখছে? আভার মধ্যে আদৌ কিছু দেখার মত আছে? নেই তো। এই যে আভা দেখতে পারছে না কিছু। তবুও সে দেখছে। কি দেখছে?
‘ অনেক বকবক করেছিস। এখন চল। ‘
আহনাফ কথাটা বলে আর একটুও অপেক্ষা করেনি। সবাইকে পেছনে ফেলে বড়বড় পা ফেলে গাড়িতে উঠে পড়েছে। আভাকে লজ্জা দেওয়ার আসর ভেঙে যায়। কামরুলের মুখ ভোঁতা হয়ে। কি সুন্দর সবাই মিলে আহনাফকে খুঁচাচ্ছিল। আর আহনাফ কি করল? সব ভেস্তে দিল। চতুর ছেলে। সবসময় এগিয়ে থাকবে। জয় হাতিয়ে নেবে। অগ্যতা কামরুলসহ সবাই গাড়িতে উঠে বসে।
পুনরায় সবাই কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে। শুনা যায়, কংলাক পাহাড়ে সূর্যোদয় যেমন সুন্দর তেমনি সূর্যাস্তও সুন্দর দেখা যায়। সাজেকে এসে কেউ এখানকার সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত কোনোটাই এড়িয়ে যায় না। কে যাবে এড়িয়ে? আমাদের চোখ সবসময় সুন্দর জিনিস দেখতে তৃষ্ণার্ত। সুন্দর জিনিসের প্রেমে পড়তে আমার হৃদয় ব্যাকুল। আর মানবমন বরাবরই সুন্দরের গোলাম।
পূর্ব দিকের আকাশ ক্রমাগত রক্তিম হচ্ছে। প্রথমে কমলা, তারপর হলুদ, তারপর লাল অতঃপর উদয় হয় আস্ত এক সূর্যের। সবাই মুগ্ধ হয়ে সূর্যের লুকোচুরি দেখছে। দিহান পরপর ছবি তুলল।
সূর্যোদয় দেখা শেষ হলে সবাই নিচে নেমে আসে। ঘড়িতে সকাল আটটা বেজে দশ মিনিট। সবাই ডাবের পানি কিনেছে। আহনাফ একপাশে দাড়িয়ে আছে। আভা স্ট্রো মুখে দিয়ে ডাবের পানি খায়। অতঃপর এগিয়ে আসে আহনাফের দিকে।
নজর সরিয়ে আহনাফ আভার দিকে তাকায়। আভা ডাবটা আহনাফের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ এটা একটু ধরুন তো। কাজ আছে। ‘
আহনাফ আভার ডাব নিজের হাতে রাখে। আভা মাথা নিচু করে পেছনে ঘুরে ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করতে থাকে। তার ফাঁকে আহনাফ আভার ডাবের পানির স্ট্রোতে ঠোঁট বসায়। আহনাফের বোধ হচ্ছে, সে আভার ঠোঁট ছুঁয়েছে। আভার লিপস্টিকের দাগ স্ট্রোতে লেগে আছে। আহনাফের ঠোঁটেও আভার লিপস্টিকের দাগ খানিক লেগেছে। আহনাফ আঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছে ফেলে। সাবধানতা অবলম্বন না করলে, বন্ধুরা লজ্জা দিবে। অবশ্য আহনাফের এমন লজ্জায় কিছু হয় না। নির্লজ্জ কি না। তবে আভা নিশ্চয়ই লজ্জায় মারা যাবে। মেয়েটা লজ্জা একদম সহ্য করতে পারে না। কেমন যেন গুটিয়ে যায়। আহনাফ মুচকি হাসে। আরো এক চুমুক ডাবের পানি খেয়ে সঙ্গেসঙ্গে ভদ্র সেজে দাড়ায়।
‘ এই নিন আপনার জ্যাকেট। ‘
আভার সুন্দর হেসে আহনাফের দিকে গতরাতের দেওয়া জ্যাকেট এগিয়ে দেয়। আহনাফের ভ্রু কুচকে যায়। জ্যাকেট ফেরত দেওয়া আহনাফের পছন্দ হল না বটে। আহনাফ ডাব আভার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘ লাগবে না। রেখে দাও। ‘
আহনাফ আর একমুহুর্ত দেরি করে না। গটগট পা ফেলে ডাবের বিল মেটাতে চলে যায়। আভা জ্যাকেট হাতে নিয়ে বোকার ন্যায় দাড়িয়ে থাকে। নিজের জ্যাকেট নিল না কেন? দেখে মনে হচ্ছে জ্যাকেটটা বেশ দামী। অ্যাডিডাসের জ্যাকেট। দাম তো হবে বটে। এত দামী জ্যাকেট আভাকে দিয়ে দিল? কেন? এখন আভা এই জ্যাকেট নিয়ে কি করবে? ছেলেদের জ্যাকেট তো আর সে পড়তে পারবে না। লোকে হাসবে। অদ্ভুত মানুষ।
আভা জ্যাকেটটা ব্যাগে রাখতে গিয়েও থেমে যায়। জ্যাকেট উচু করে তার ঘ্রাণ শুকে। আহনাফের গায়ের গন্ধ লেগেছে আছে জ্যাকেটে। কি আদুরে গন্ধ। আভার চোখ বুজে আসছে আদরে, মায়ায়। গা শিরশির করছে। আভা হাত দিয়ে জ্যাকেটটা ছুঁয়ে দেয়। মনে হচ্ছে আভা তার দুহাত দিয়ে আহনাফকে ছুঁয়ে দেখছে। জ্যাকেটটা গায়ে দিলে মনে হয় আহনাফ আভাকে জড়িয়ে রেখেছে। কেমন যেন একটা অন্যরকম অনুভূতি। আভা জানে না, এই অনুভুতির নাম কি? তবে সদ্য অনুভব হওয়া এই অন্যরকম অনুভুতি আভার আজকাল বেশ লাগে। আভা জ্যাকেট ব্যাগে রেখে দিল। এখন মনে হচ্ছে, আহনাফ তার জ্যাকেট আভাকে দিয়ে ভুল করে নি। বরং আভার খুশির মাত্রা দ্বিগুণ করেছে।
‘ আভা, গাড়ি ছেড়ে দিবে। দ্রুত চল। ‘
দিহানের কথা শুনে আভার ধ্যান ভেঙে যায়। আভা দৌঁড়ে যায় গাড়ির পানে।
#চলবে