মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-০৫+০৬

0
1247

#মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-০৫+০৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
______________________________
সূর্য অস্ত যাচ্ছে। কংলাক পাহাড়ের বুকে ঢলে পড়ছে রক্তিম সূর্য। কাছে থেকে মনে হচ্ছে যেন পাহাড়টি সূর্যকে গিলে নিচ্ছে। আপন করছে সূর্যের তেজকে। আভার মুখ হা। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে লুকায়িত সৌর্ন্দয্য দেখে সবাই অভিভূত। আভা উত্তেজনায় পাশে থাকা আহনাফের হাত চেপে ধরে। আহনাফের ধ্যান ভাঙে। সে চোখ সরিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকায়। আভার হাত আহনাফের কব্জি চেপে আছে। আহনাফ মৃদু হাসে। ঘাড় কাত করে আভার দিকে চায়। হাসে। বাচ্চা মেয়ে!
–’ আমাদের এখন নেমে যেতে হবে। ‘
বাঁধনের কথা শুনে সবার স্বাভাবিক হয়। আভা চোখ পিটপিট করে। সম্বিত ফিরে পেলে নিজের অবস্থান লক্ষ্য করে। আহনাফের হাত চেপে ধরা লক্ষ্য করলে চট করে হাত ছেড়ে দেয় আভা। লজ্জা, অস্বস্তিতে কানের পেছনে চুল গুঁজে মিনমিন সুরে বলে, ‘ সরি। ‘
আহনাফ গলা কেশে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। তারপর দুটো লাঠি হাতে নিয়ে একটা আভার হতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
–’ ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করিনি। লাঠি ধরো। আমাদের যেতে হবে। ‘
আভা এখনো লজ্জায় নীল। কি করে ফেলেছে ও? আহনাফের হাত ধরেছে? ইশ। আভা এখন মুখ দেখাবে কিভাবে? কি করে ফেললো ও? ছিঃ, ছিঃ!
আভা লাঠি হাতে নেয়। হাত কাপছে আভার। কম্পিত হাত থেকে লাঠি পড়ে যায়। আভা বোকার মত লাঠির দিকে চায়। আহনাফ মৃদু মৃদু হাসছে। মূলত আভাকে অপ্রস্তুত দেখতে আহনাফের ভালোই লাগছে। আভা ঝুঁকে লাঠি হাতে নেয়। হাতের কাপুনি থামছে না। লাঠি হাত থেকে আবার পড়ে যেতে নিলে আহনাফ ধরে ফেলে। আভা কানের পেছনে চুল গুঁজে ইতি ওতি চায়। আহনাফ আভার হাতে লাঠি ধরিয়ে দিয়ে বলে,
–’ অনুভূতির ক্ষেত্রে বড্ড নাজুক তুমি। শুধু কথাটাই ভালো বলতে পারো। ‘
আভা লাঠি হাতে নেয়। অতঃপর আহনাফকে পেছনে ফেলে হনহনিয়ে পাহাড় বেয়ে নামতে থাকে। পেছনে আহনাফ থুতনি চুলকে মৃদু হেসে এগিয়ে আসে।

পাহাড় বেয়ে নামছে সবাই। রাত সাতটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। আর মাত্র দু মিনিটের পথ হাঁটলেই পাহাড়ের রাস্তা শেষ হবে। তবে বিপত্তি ঘটল হঠাৎ। আভার পা মচকে গেছে। যার দরুন একবিন্দু হাঁটতে পারছে না সে। এখন জিরিয়ে নেবার সময় নেই। ইতিমধ্যে বেশ রাত হয়ে গেছে। পাহাড়ের সড়ক রাতের বেলা খুব একটা ভালো না। চুরি ডাকাতি হর-হামেশাই হয়। তাই আভা চোখ খিচে কোনরকম বাকিটা পথ পেরুল। নিচে নামতে সবাই গাড়িতে উঠছে। আভা পারছে না। পায়ের ব্যথায় রীতিমত চোখে জল এসে গেছে। বাঁধন আভাকে আস্তে হাঁটতে দেখে বলল,
–’ কোনো সমস্যা আভা? ‘
আভা ঠোঁট চেপে চোখ বুজে বলল,
–’ পা ব্যাথা করছে। বোধহয় মচকে গেছে। ‘
বাঁধন বলল,
–’ কই? দেখি। ‘
আভা পা এগিয়ে দিল। বাঁধন পা নেড়েচেড়ে দেখল। পা ফুলে গেছে। এতসময় মচকে যাওয়া পা নিয়ে পাহাড় চড়েছে। ব্যথা পেয়েছে ভীষন। কিন্তু অদ্ভুদ মেয়ে মুখ ফুটে অব্দি বলে নি। বাঁধন না জিজ্ঞেস করলে হয়তো হোটেল অব্দি এভাবেই যেত। বাঁধন বলল,
–’ পা একটা মোচড় দিলে ঠিক হয়ে যাবে। দিব? ‘
–’ না, না। ‘
আভা পা বটে নিল। আহনাফ দেখে দেখে সবাইকে গাড়িতে তুলছে। আভা ও বাঁধনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে এগিয়ে এল।
–’ কি হয়েছে? ‘
বাঁধন উঠে দাড়াল। বলল,
–’ আভার পা মচকে গেছে। হাঁটতে পারছে না বেচারি। ‘
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে আভার দিকে চাইল। মেয়েটা ব্যথায় কাতর। আহনাফ নির্লিপ্ত ভাবে বলল,
–’ পা মোচড় দে। ঠিক হয়ে যাবে। ‘
–’ বলেছিলাম। দিচ্ছে না। ভয় পাচ্ছে। ‘

আহনাফ আর দেরি করল না। চুপ করে আভার পায়ের কাছে বসে বলল,
–’ পা দাও। ‘
আভা আরো জোরালো ভাবে পা বটে নিল। দ্রুত বলল,
–’ না, না। লাগবে না। ব্যথা পাব। ‘
আহনাফ অবশ্য শুনল না। আভার পা জোরপূর্বক নিজের হাতে তুলে নিল। তারপর জোরে এক মোচড় দিল। আভা আহনাফের ঘাড় শক্ত করে খামচে ধরে চেচিয়ে উঠল। ব্যথায় চোখে পানি গড়িয়ে পড়ল। আহনাফ পা কিছুক্ষণ নেড়ে চেড়ে বলল,
–’ এবার ঠিক আছে? ‘
আভা চোখের জল হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুছে বলল,
–’ আপনি খুব খারাপ লোক। ব্যথা দিয়েছেন আমায়। ‘
–’ তার মানে পা ঠিক হয়ে গেছে। ‘
আহনাফ উঠে দাঁড়াল। আভা মুখ ফুলে আহনাফের দিকে চেয়ে আছে। আহনাফ গায়ের টিশার্ট টেনেটুনে ঠিক করে আভার দিকে চেয়ে বলল,
–’ গাড়িতে উঠো। ‘
আভা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
–’ হাঁটতে পারছি না আমি। ‘
–’ হাঁটার ট্রাই করো। এখন আর ব্যথা করবে না। ‘
আভা ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড় করে আহনাফকে কতগুলো গালি দিল। অতঃপর চোখ খিচে হাঁটার চেষ্টা করল। ও মা! আভা তো হাঁটতে পারছে। আভা হেসে উঠল। বলল,
–’ ব্যথা নেই তো। ‘
আহনাফ ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়ল। বলল,
–’ যাও। এবার গাড়িতে উঠো। ‘
আভা সুন্দর করে হেঁটে গাড়িতে উঠে পড়ল।
গাড়ি চলছে। দিহান বলল,
–’ আভা, তোমার নাকি পা মচকে গেছে? ‘
আভা চোখ বড়বড় করে আহনাফের দিকে চাইল। অথচ আহনাফ নির্লিপ্ত। মোবাইল চালাচ্ছে। আভা বলল,
–’ এখন ঠিক আছে। ‘
বাঁধন বলল,
–’ ঠিক হবেই ত। আহনাফের এক মোচড়ে আভা পারফেক্ট।’
আভা লজ্জা পেল। আড়চোখে আহনাফের দিকে চেয়ে বাঁধনকে প্রশ্ন করল,
–’ তিনি কি ডাক্তার? ‘
কামরুল হেসে ফেলল। কৌতুক করে বলল,
–’ হ্যাঁ। তোমার তিনিসহ আমরা সবাই মেডিকেল স্টুডেন্ট। সামনের বছর আল্লাহ কৃপা করলে ডাক্তার-ফাক্তার কিছু একটা হয়ে যাব। ‘
ইশ। ‘ তোমার তিনি ‘
কেমন যেন লাগল আভার। গা শিরশির করে উঠল। কান গরম হল। ইশ, তার বন্ধুরা কি অসভ্য।

হোটেলে পৌঁছে গেল সবাই। আভা হোটেলে পৌঁছে আভা একটা কাপ চায়ের অর্ডার দিল। চা আসতে দেরি হবে। তাই জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। গা ঘেমেছে ভীষন। গোসল করতে হবে।

আহনাফরাও গোসল করবে। সবাই জামা কাপড় বের করছে। আহনাফ গায়ের টিশার্ট খুলে হাতে নিল। বাঁধন লাগেজ থেকে কাপড় বের করছে। কামরুল টাওয়াল খুঁজছে। আহনাফ হাতে টাওয়াল ঝুলিয়ে বলল,
–’ আমি আগে যাচ্ছি। তারপর একে একে সবাই ঢুকে পড়িস। ‘
সবাই নিরবে সায় দিল। আহনাফ এগিয়ে গেল সামনে।

–’ আহনাফ, তোর ঘাড়ে কি হয়েছে? ‘
আহনাফ ঘাড় উচুঁ করে ঘাড়ের দিকে তাকাল। ঘাড়ের এক অংশ নখের আঁচড়। ফর্সা বাহুতে নখের লাল লাল আঁচড় বেশ চোখে লাগছে। বাঁধন কামরুলের কথায় তাকাল আহনাফের দিকে। কামরুল বলল,
–’ মনে হচ্ছে কোনো জংলী বিড়াল খামচে দিয়েছে। ‘
আহনাফ বুঝতে পারছে না, এই নখের আঁচড় কোথা হতে এল। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ ভাবল। অতঃপর মনে পড়ল। এটা তো আভার নখের আঁচড়। পা মোচড় দেওয়ার সময় আভা ব্যথায় খামচে দিয়েছিল। পরক্ষণেই আহনাফের বিরক্তি কেটে গেল। ভ্রুযুগল সোজা হল। মৃদু হেসে বলল,
–’ জংলী বিড়ালই হবে হয়তো। ‘
বাঁধন ভ্রু কুঁচকে তাকাল। বলল,
–’ সত্যি বিড়াল তো, আহনাফ? ‘
আহনাফ মুচকি হাসল। বাঁধনের মাথায় চাটা দিয়ে বলল,
–’ যাচ্ছি। ‘
আহনাফ চলে গেল। কেন যেন বাঁধনের মন খারাপ হল। আহনাফের ঘাড়ে আভার নখের আঁচড়। বাঁধন জানে সেটা। আভার কথা মনে পড়ে আহনাফের ওই মুচকি মুচকি হাসি! কি বুঝাচ্ছে? আহনাফ কি আভার প্রতি দুর্বল?

#চলবে

#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – ৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
_______________________________
রাতের অন্ধকারে সাজেক ডুবে। মেঘলা আকাশ, দমকা হাওয়া, পাহাড়ের নিস্তব্ধতায় সাজেক যেন মুখরিত। এখন সবাই যাবে হ্যালিপ্যাডে। উদ্দেশ্য গান করা, বার্বিকিউ বানানো। আভা হোটেলে ফিরে ঘুমাচ্ছিল। কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আভার গা ম্যাজম্যাজ করছে। পায়ের ব্যথাও বেড়েছে। তবে ঘুম আর হলো কই? আহনাফের বন্ধুরা আভাকে ফোন কলে অতিষ্ট করে জাগিয়ে তুললো। অগ্যতা ঘুমঘুম চোখ নিয়ে গায়ে শাল পেঁচিয়ে হোটেল ছেড়ে বের হল আভা।
হ্যালিপ্যাডে সবাই বসে আছে। আহনাফের হাতে গিটার। বাঁধনের হাতে ইলেকট্রিক বাঁশি। কামরুল নাকি বিশেষ ট্রিক খাটিয়ে মুখ দিয়ে গানের সুর তুলবে। দিহান ছবি তুলবে। চিত্রা অবশ্য চুপচাপ। চিত্রার এই অন্যরূপ সবার কাছে সন্দেহজনক ঠেকছে। মন খারাপ কি না, জানতে চেয়েছিল সবাই। উত্তরে চিত্রা শুধু এড়িয়েই গেছে।
‘ কি হয়েছে তোর? এমন অদ্ভুত বিহেভ করছিস কেন?’
আহনাফের শীতল কণ্ঠ। চিত্রা আর যাই পারুক, আহনাফের রাগ সহ্য করতে পারে না। নিজেকে আর নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হল না চিত্রার।
কাতর চোখে আহনাফের দিকে চেয়ে বলল,
‘ যা পাইনি, তা নিয়ে আফসোস হচ্ছে। যে পেয়েছে তাকে হিংসে হচ্ছে। সে খুব অদ্ভুত যন্ত্রণা। ক্রমাগত দগ্ধ হচ্ছি আমি। ‘
আহনাফের অবাক চোখ। চিত্রার কথা বুঝতে তার দু মিনিট সময় লাগল। চিত্রা আহনাফকে পছন্দ করে। আহনাফ জানে তা। কিন্তু আহনাফ বরাবরই বন্ধুত্বের বেলায় সৎ। বন্ধুত্বের মধ্যে ভালোবাসা তার কাছে বেমানান মনে হয়। তাই সে চিত্রার অনুভূতিসমূহ দেখেও না দেখার ভান করে যাচ্ছে। অথচ চিত্রা বারবার আহনাফের দিকেই এগিয়ে আসছে। কি করবে আহনাফ? চিত্রাকে সে অনেকবার বুঝিয়েছে। অথচ মেয়েটা বুঝতে নারাজ। পাগলামী দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে তার। বন্ধু বলে কিছু বলা যাচ্ছে না। অগ্যতা আহনাফ চুপচাপ সয়ে নিচ্ছে।
‘ এদিকে আয়। ‘
আহনাফ আলতো কণ্ঠে চিত্রাকে ডাকে। অভিমানী চিত্রা গাল ফুলিয়ে আহনাফের দিকে এগিয়ে আসে। আহনাফ চিত্রাকে নিজের পাশে বসায়। অতঃপর বলে,
‘ আমাদের বন্ধুত্বকে পবিত্র রাখার চেষ্টা কর চিত্রা। নিজের অনুভূতি সামলে রাখ। তুই খুব ভালো মেয়ে। তোর জন্যে আরো বেটার কেউ আসবে। শুধু একটু অপেক্ষা কর। ‘

চিত্রার ব্যথিত চোখে আহনাফের দিকে চায়। বলে,
‘ যদি বলি আমার তোকে চাই? দিবি আমায়? ‘
‘ দিয়েছি ত। এই যে তুই আমার প্রিয় বন্ধু। এটা কি যথেষ্ট নয়?’
চিত্রার মন খারাপ হয়। হু হু করে কান্না পায়। সবার সামনে কাদতে লজ্জা লাগছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে বলে,
‘ আমায় একটু ভালোবাসলে কি হয়, আহনাফ? আমি কি খুব খারাপ? ‘
আহনাফ মৃদু হাসে। চিত্রার গাল টেনে বলে,
‘ না। তুই খুব ভালো। তোর প্রেমিক খুন লাকি যে তোকে পাবে। আমাকে ছাড়। আমি মানুষটা ভালো নই। নিরামিষ, ভালোবাসতে জানিনা। কিন্তু তুই ভালোবাসতে জানিস। আগলে রাখতে জানিস। খামোকা কেন আমার কাছে বাঁধা পড়ে নিজের জীবন নষ্ট করবি? ‘

চিত্রা আর কথা বলে না। আহনাফ বলে,
‘ এবার অন্তত হাস একটু। আর কত মন খারাপ করে থাকবি? এত সুন্দর জায়গায় কেউ মন খারাপ করে? ‘
চিত্রা মুচকি হাসে। আহনাফ হাসে। চিত্রার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে,
‘ এইতো ভালো মেয়ে। এখন চল। গান করবি। ‘
আহনাফ চিত্রাকে নিয়ে গানের আসরে বসে।
দূর থেকে আভা আহনাফ আর চিত্রার কথা শুনছিল। আহনাফের শীতল কণ্ঠের বুলি শুনে আভা বিমোহিত। একটা মানুষ কি করে এতটা ঠান্ডা মাথায় কারো মন খারাপ দূর করে ফেলতে পারে? আহনাফ বলে আহনাফের কোনো গুন নেই। এই যে, কারো মন খারাপ নিমিষেই দূর করে ফেলার গুন? এটাই বা ক জনের আছে? সবাই শুধু মন খারাপের কারণ হয়। মন খারাপ দূর করার কারণ কজনই বা হতে পারে?
চিত্রা মেয়েটা আহনাফকে ভালোবাসে। বিষয়টা আভার মাথায় আসতে মন খারাপ হল। সেও তো আহনাফকে পছন্দ করে। তবে কি আহনাফ তাকেও মন খারাপ দূর করার ঔষধ দিয়ে ত্যাগ করবে? না, না। আহনাফ আভাকে ভুলে গেলে আভা মরেই যাবে। বেচে থাকতে পারবে না।

আভার ধ্যান ভাঙে আহনাফের গানের সুরে।
‘ আমার ভেতরে বাহির অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
ভালো আছি, ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
ভালো আছি, ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো ‘

আহনাফ যতক্ষণ গান গেয়েছে, আভা স্থির চোখে আহনাফের দিকে চেয়েছিল। আহনাফও তাকিয়ে ছিল। মনের অজান্তেই আভার চোখে জল এসেছে। আহনাফ চোখ দিয়ে ইশারা করলে আভা মুচকি হেসে চোখের জল মুছে নেয়। আহনাফ চেয়ে থাকে। আভার কান্না করার অর্থ তার বোধগম্য হয় না। আভা মেয়েটা কি ভীষন অদ্ভুত। এই ভালো ত এই খারাপ। এই হাসি তো এই কান্না। এই খুশি তো এই দুঃখ। মেয়েটা এমন কেন? আহনাফ কি করে সামলাবে এই অদ্ভুত মেয়েটিকে?
বার্বিকিউ রান্না করা হয়েছে। সবাই খাবার খেতে বসেছে। খুব মজা হয়েছে বার্বিকিউ। সবাই রীতিমত কব্জি ডুবিয়ে খাচ্ছে।
খাওয়া শেষ করে সবাই যার যার জায়গায় পৌঁছে ঘুমিয়ে গেছে। শুধু আভা জেগে আছে। ঘুম আসছে না আভার। কেন যেন মন খারাপের মাত্রাটা বেড়েই যাচ্ছে। থামছে না।
আভা শাল চেপে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। বারান্দা থেকে মনে হচ্ছে আভা যেন মেঘের সমুদ্রে পা ভিজিয়েছে। যেদিকে চোখ যায়, ভেসে বেড়ানো মেঘ চোখে পড়ে। হা করলে যেন মেঘ খেয়ে ফেলা যায়। চোখ খুললে মেঘেরা চোখের ভেতর ঢুকে পড়তে চায়। নিঃশ্বাস নিলে বুকের ভেতর মেঘেরা দৌঁড়ে বেড়ায়। সে কি অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি। আভা মুগ্ধ হয়ে আছে। সাজেকে আভা বারবার আসতে চায়। বারবার সাজেকের এই অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি প্রেমে পড়তে চায়। আমাদের একটি সাজেক আছে, চিৎকার করে পুরো পৃথিবীকে জানাতে চায়।

হঠাৎ বারান্দা থেকে নিচে তাকায় আভা। চোখ ভুল দেখে যেন। আহনাফ নিচে দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি আভার পানে আটকে। আভা অবাক হয়। চোখ মুছে পুনরায় চেয়ে দেখে। না, আহনাফই। আভা চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে,
‘ এখানে কেন? ‘
আহনাফ আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে নিচে নামতে। আভা কিছুক্ষণ ভাবে। অতঃপর মুচকি হেসে বলে,
‘ আসব না। ‘
আহনাফের মুখশ্রী গম্ভীর থেকে গম্ভীর হল। সে চুপচাপ সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। আভা বারান্দা থেকে চলে আসে। ঠোঁটে লিপগ্লোস এবং চোখে কাজলের রেখা টেনে নিচে নেমে আসে।

ঠাণ্ডায় তিরতির করে কাপছে আভা। আহনাফের কাছাকাছি দাড়িয়ে বলে,
‘ কেন ডেকেছেন? ‘
আহনাফ গম্ভীর চোখে আভাকে আপাদমস্তক জরিপ করে। অতঃপর প্রশ্ন করে,
‘ সেজেছ? ‘
আভা বোকা বনে। পরক্ষণেই লজ্জায় পড়ে যায়। মিনমিন করে বলে,
‘ আব…একটু। ‘
আহনাফ মৃদু হাসে। আর কথা পেঁচায় না। বরং অন্য প্রশ্ন করে, ‘ ঘুম আসছিল না। ভাবছি সাজেকের রাস্তায় হাঁটবো কিছুক্ষণ। তুমি সাথে যাবে? না গেলে চলে যেতে পারো। ‘
আভার যেন বিশ্ব জয় করে নেয়। আহনাফের সাথে রাতের আকাশের নিচে হাঁটবে। আভার মন খুশিতে রীতিমত নেচে বেড়ায়। মনেমনে বলে, আপনার সাথে পা মিলিয়ে আজীবন হাঁটার পণ করেছি। একটুতে মন ভরবে?
তবে মুখে আভা নিজের খুশি প্রকাশ করে না। বরং বলে,
‘ বেশিক্ষণ হাঁটতে পারব না। আধা ঘন্টা? ‘
‘ চলো তবে। ‘

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে