#মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-২১+২২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
____________________________________
এনাটমি ক্লাস শেষ করে মাত্র হল ছেড়ে বেরিয়েছে আহনাফ ও তার বন্ধুরা। ক্যান্টিনে প্রবেশ করে তাদের পূর্ব নির্ধারিত চেয়ার টেনে বসে সবাই। আহনাফ গায়ের এপ্রোন খুলে চেয়ারের হাতলে ঝুলিয়ে রাখে। বা হাতের কব্জিতে থাকা কালো রঙের ঘড়ি বেশ জ্বলজ্বল করছে। আহনাফের লোমশ হাত লক্ষ্য করে বেশ লোভ জাগল চিত্রার। আহনাফ এত সুন্দর হল কেন? আহনাফকে যতবার চিত্রা দেখে, চোখ জুড়িয়ে যায়। বুক কেপে উঠে। চোখের পলক বিদ্রোহ শুরু করে হার না মানার। আহনাফের ময় পুরুষালি ব্যক্তিত্ব চিত্রা এখন অব্দি দুটো দেখেনি। কথাবার্তায় গম্ভীরতা আহনাফের ব্যক্তিত্ব আরো আকর্ষণীয় করে তুলে। হাঁটলে বোধহয় ভয়ংকর এক সুপুরুষ লাল গালিচায় হেঁটে বেড়াচ্ছে। ভুলক্রমে একবার আহনাফের খালি গা দেখেছে চিত্রা। টিশার্ট ছাড়া কোমরে তোয়ালে পড়ে গোসল সেরে বেরিয়েছিল। চিত্রাসহ আহনাফের সকল বন্ধুরা সেসময় আহনাফের কক্ষে বসে চানাচুর খাচ্ছিল। আহনাফ তাদেরকে দেখে শান্ত কণ্ঠে জানিয়েছে, এখন সে রেডি হবে। সবাই যেন একটু পর তার ঘরে আসে। মূলত চিত্রাকে দেখে সে এই কথাটা বলেছে। মেয়ে মানুষের সামনে খালি গায়ে হেঁটে বেড়ানো আহনাফের পছন্দ নয়। আবার চিত্রার মনে আহনাফের জন্যে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। হয়ত আহনাফের খালি গা চিত্রাকে আকর্ষন করবে। তাই সে খুব চতুর ভঙ্গিতে সবাইকে ঘর ছেড়ে যেতে বলেছে। চিত্রা বুঝে সব। আহনাফ চিত্রাকে বন্ধুর বাইরে আর কিছু মনে করে না, চিত্রা জানে। আর জানে বলে তার বিশাল বিশাল দুঃখ। এই দুঃখে বেচে থাকতে ইচ্ছে হয় না চিত্রার। এই যে ঢাকা মেডিকেলের মত দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করে। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, পরিষ্কার। অথচ আহনাফের ন্যায় সুপুরুষের ভালোবাসা না পেয়ে এসব কিছু তুচ্ছ মন হয় চিত্রার। আহনাফ বলেছে, ভালোবাসা তার জন্য নয়। সে ভালোবাসতে জানে না। আগলে রাখতে জানে না। অথচ গত তিনমাস ধরে রাতের বেলায় আহনাফের ফোন ব্যস্ত থাকে। কল করতে করতে চিত্রা ক্লান্ত হয়। অথচ আহনাফের ব্যস্ততা কমে না। কার সাথে কথা বলে সে? নিশ্চয়ই প্রেমিকার সাথে। আর সে প্রেমিকা আভা হবে সেটা চিত্রা শতভাগ নিশ্চিত। আভা মেয়েটার মধ্যে কি আছে? মাত্র দুইদিনের আহনাফের মন চুরি কর নিল। কি আছে তার মধ্যে? গায়ে দু কিলো মাংস নেই, শরীরে আকর্ষন করার মত ফিগার নেই। অথচ আহনাফ মরিয়া এই মেয়েটার জন্যে। কি আছে সে…………
‘ চিত্রা, কিছু খাবি? ‘
বাঁধনের কথা শুনে চিত্রা ধ্যান ফিরে পায়। বাঁধনের দিকে চেয়ে মেকি হেসে বলে,
‘ তোরা যা খাবি তাই। ‘
‘ পাঁচজনের জন্যে সিঙ্গারা আর কোক অর্ডার দিয়ে দেই, আহনাফ?’
আহনাফ উত্তর দিল, ‘ দিয়ে দে। ‘
দিহান আহনাফের খাতা থেকে আজকের পড়ার নোট নিজের খাতায় তুলে নিচ্ছে। আহনাফ ক্লাসের সেরা শিক্ষার্থী। সবসময় যেকোনো টপিকে তার নোট হয় দুর্দান্ত। আহনাফের লেখা নোট মুখস্ত করলে ক্লাসের অর্ধেক পড়া চট করে বুঝে ফেলা যায়। দিহান খাতায় কলম দ্বারা খসখস আওয়াজ তুলে লেখালেখি করল। লেখায় মন দিয়ে হঠাৎ বলল,
‘ আহনাফ, এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে না?’
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ আভার রেজাল্ট কি? কোথাও চান্স পেয়েছে? ‘
আহনাফ বিব্রত হল। হঠাৎ করে আভা সম্পর্কিত প্রশ্ন শুনে সে বেশ খানিকটা অবাক হল। আহনাফের বন্ধুরা এখনো জানে না, আভা এবং আহনাফের এক হওয়ার কথা। আর না আহনাফ কখনো জানাবে। বাঁধন আভাকে নিয়ে কিছু ভাবে। আহনাফের আগে বাঁধব আভাকে মনেপ্রাণে চেয়েছিল। এখন বাঁধনের সম্মুখে আভাকে নিয়ে কথা বলতে দ্বিধাবোধ হয় তার। বন্ধুর ভালোবাসাকে ভালোবাসি বলতে অপরাধবোধ গ্রাস করে আহনাফকে। এই অপরাধবোধে জর্জরিত হয়ে আহনাফ চাইলেও সবাইকে বলতে পারে না, সে আভাকে ভালোবাসে। একপ্রকার এড়িয়ে চলে আভা সম্পর্কিত সকল প্রশ্ন।
আহনাফ নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করল। পারল বটে। খানিক গলা কেশে উত্তর দিল,
‘ জানিনা। ওর সাথে আমার যোগাযোগ নেই। ‘
‘ সত্যি? ‘
দিহান খাতা থেকে মাথা তুলে ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করল। আহনাফ স্বাভাবিক সুরে বলল,
‘ মিথ্যা বলব কেন? ‘
বাঁধন গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সে যা সন্দেহ করেছিল, সব মিথ্যা তাহলে। সে অযথাই আহনাফকে সন্দেহ করছে। আহনাফ নিশ্চয়ই বাঁধনের প্রেম নিয়ে টানা হেঁচড়া করবে না। সকল সম্পর্ক থেকে বন্ধুর সম্পর্ক আহনাফ সবসময় ঊর্ধ্বে রেখেছে। বন্ধুর দায়িত্ত্ব পালনে আহনাফের জুড়ি মেলা ভার। বাঁধন আভাকে পছন্দ করে। এটা জানার পরেও আহনাফ অবশ্যই আভার সাথে সম্পর্ক জড়াবে না। আহনাফের ন্যায় সেরা বন্ধু জীবনে অর্জন করে বাঁধনের গর্বে বুক ফুলে।
দিহান বলে, ‘ আমরা আরো ভেবেছিলাম, তোর আর আভার মধ্যে কিছুমিছু চলছে। তুই যে প্রেমে করতে পারিস না, এটা আমি ভুলেই গেছিলাম। সরি। হা হা হা। ‘
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে চাইল। বলল, ‘ আমরা বলতে? ‘
‘ আরে আমি আর বাঁধন। দুজন কাল ফোনে ডিসকাস করছিলাম। দ্য আহনাফ সাহেবের প্রেমে গবেষনা। বাঁধন আভাকে পছন্দ করে। সে ভেবেছিল, হয়তো তুইও আভাকে ভালোবাসিস। ভয় পেয়ে গিয়েছিল বেচারা। কি রে বাঁধন মাম্মা, ভয় কাটছে আপনার? ‘
বাঁধন মুচকি হাসে। অতঃপর বলে, ‘ শুধু পছন্দ করে বসে আছি। নাম্বার-টাম্বার কিচ্ছু নাই। যোগাযোগ করমু কেমনে? ভাই, তোরা কিসের বন্ধু আমার। একটা মেয়ের নাম্বার দিতে পারছিস না? হাও সেলফিশ! ”
আহনাফকে অজানা ভয় চেপে ধরে। বাঁধন আভাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর আভা এই মেডিকেলেই ভর্তি হচ্ছে। ও মাই গড! বাঁধনের সামনে আভা আসলে নিশ্চয়ই বাঁধন আভার পিছু নিবে। আহনাফ কি করবে তখন? বন্ধুকে বাঁধা দেবে? কিভাবে? ওরা তো জানে, আভা আহনাফ পরস্পর আলাদা। আহনাফ কোন অধিকারে বাঁধনের কাছ থেকে আভাকে দূরে রাখবে? কি, কি, কি করবে? কিছু বুঝতে পারছে না আহনাফ। নিজেকে বড্ড নির্বোধ মনে হচ্ছে। সবসময় মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি সামলে নেবার ন্যায় দক্ষ আহনাফ আজ ছন্নছাড়া, দিশেহারা।
‘ খাওয়া শেষ আমার। আমি আসছি। মা অপেক্ষা করছে। ‘
আহনাফ এপ্রোন হাতে তুলে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে। মাথা ভনভন করছে তার। আর একমুহুর্ত এখানে থাকলে সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারবে না। নিশ্চয়ই বড়সড় কিছু করে বসবে। যা এই মুহূর্তে আহনাফ একদম চাইছে না। কামরুল পেছন থেকে ডাকে। আহনাফের মন ভালো নেই। বুঝতে পারে। বন্ধুদ্বন্দ্বের চক্করে আহনাফ হতবম্ব। ভবিষ্যতে কি হবে ভেবে গা শিউরে উঠে কামরুলের। আভা আহনাফের সম্পর্ক ভবিষ্যতে কোন মোড় নেবে একমাত্র আল্লাহ জানেন। চিত্রা আহনাফের আধ খাওয়া সিঙ্গারা মুখে তুলে খেতে থাকে। আহনাফের ঠোঁটের ছোঁয়া না পাক। আহনাফের ঠোঁট স্পর্শ করা এঁটো খাবার খেয়েও শান্তি। কিন্তু চিত্রার মনে এক কঠিন প্রশ্ন। আহনাফ হঠাৎ করে এমন ঝড়ের বেগের ন্যায় পালাল কেন? মাত্রই ত আসর জমে উঠেছিল। এরমধ্যে আহনাফের চেহারা এমন চিন্তাগ্রস্ত হয়ে গেল কেন?
#চলবে
#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – ২২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
___________________________________
কলিং বেলের তীব্র শব্দে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসেন মিসেস শেখ। কোমড়ের বাঁকে গুঁজে রাখা শাড়ির আঁচল মাথায় তুলেন। হাতের উল্টোপিঠ দ্বারা কপালের ঘাম মুছে নিলেও সারা অঙ্গে ঘামে জুবজুব অবস্থা। পরনের সুতি শাড়ি ঘামে লেপ্টে আছে গায়ের সহিত। মিসেস শেখ লুকিং গ্লাসে ছেলেকে দেখতে পেয়ে কিছুটা অবাক হন। এই অসময়ে আহনাফ ঘরে আসার ছেলে নয়। ক্লাস দুপুর দুইটায় সমাপ্ত হলেও বন্ধুদের সাথে ঘুরেফিরে বিকেলের দিকে বাড়ি ফেরে সে। তবে আজ এত দ্রুত এসেছে কেন? মিসেস শেখ দরজা খুলেন। আহনাফ মায়ের দিকে ক্লান্ত চোখ নিক্ষেপ করে মুচকি হাসে। মিসেস শেখ ছেলেকে ঘরে প্রবেশ করান। রান্নাঘরে পানি আনতে যেতে যেতে বলেন,
‘ আজ এত দ্রুত এলি যে? ‘
আহনাফ এপ্রোন ছুঁড়ে ফেলে সোফার উপর। রাগটা বোধহয় এখনো কমে নি। সময়ের তালে ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে হয়ত। হাতের ঘড়ি খুলে বলে,
‘ ভালো লাগছিল না, তাই। ‘
মিসেস শেখ ঠান্ডা পানির গ্লাস এগিয়ে দেন ছেলের দিকে। আহনাফ এক ঢোকে সবটুকু পানি পান করে। গ্লাস সোফা সংলগ্ন টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ায়। মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
‘ রান্না হয়েছে, মা? ‘
‘ হ্যাঁ, শুধু চুলো থেকে নামাব। তুই গোসল সেরে আয়। আমি ভাত বাড়ছি। ‘
আহনাফ আর কথা বাড়ায় না। সোফা থেকে এপ্রোন হাতে তুলে নেয়। পানির গ্লাস নিয়ে রান্নাঘরের বেসিনে রেখে চলে আসে নিজের ঘরে। আহনাফ সর্বদা নিজের কাজ নিজে করতে ভালোবাসে। মা আর আহনাফ মিলে তাদের ছোট্ট পরিবার। মায়ের বয়স হচ্ছে। গায়ের শক্তি ক্রমশ নিচে নামছে। সারা ঘর সামলে মাঝেমধ্যে মা হাপিয়ে উঠেন। তাই মায়ের কাজ কমিয়ে আনতে আহনাফ নিজের কাজ নিজেই করে। ছুটির দিনে ঘর পরিষ্কার করতে মাকে সাহায্য করে। মা বারবার মানা করেন। পুরুষ মানুষ হয়ে ঘরের কাজ করছে, ভাবলে মিসেস শেখের কেমন যেন লজ্জা লাগে। আহনাফকে কাজ থেকে সরাতে চান। সরে না আহনাফ। বরং মায়ের হাত থেকে ন্যাকড়া নিজের হাতে নিয়ে বলে,
‘ ঘরের কাজ পুরুষরা করলে জাত যাবে কেন, মা? আমি আমার মাকে সাহায্য করছি। আমার মা ছেলের এই সাহায্যেটুকু পাওয়ার অধিকার কি রাখেন না? ‘
মিসেস শেখ কথা বলতে ভুলে যান। ছেলের এই অপরিসীম মমতায় চোখে জল জমে। মুখে না প্রকাশ করলেও অন্তর থেকে ছেলের জন্যে মায়ের দোয়া করেন। ছেলে যেন বড় হয়, সুখ যেন তার ঝুলিতে উপড়ে পড়ে, দুঃখ যেন না ছুয়।
আহনাফ নিজের কক্ষে আসে। গায়ের শুভ্র রঙের শার্ট খুলে বাথরুমে চলে যায়। শাওয়ার ছেড়ে অনেকসময় দাড়িয়ে থাকে চুপচাপ। মাথা ঠাণ্ডা রাখা এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন। বাঁধনকে কি বলবে আহনাফ, আভার পিছু ছেড়ে দেয়ার জন্যে? বাঁধনকে বললে কি ছেড়ে দেবে? প্রশ্ন করবে হাজারটা। কি উত্তর দেবে আহনাফ? বাঁধনের অনুভূতি জানার পরেও সে আভার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। ছিঃ, ছিঃ! স্বার্থপর ভাববে। কি করার ছিল আহনাফের। সে তো আভাকে দূরে দূরেই রেখেছে। অথচ আভা কাছে এসেছে। আহনাফ দু পা পিছিয়ে গেলে, আভা স্বতস্ফর্তভাবে তিন পা এগিয়ে এসেছে। আভার চোখের কাতরতা, ভালোবাসা আহনাফ চেয়েও উপেক্ষা করতে পারেনি। হেরে গেছে সে। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করেও টিকে থাকতে পারেনি। হার মেনেছে আভার প্রেমে। কি করত সে? আহনাফের দোষ কি এতে? বাঁধন আভাকে ভালোবাসে, জেনেও সে এগিয়েছে। এগুতে হয়েছে তাকে। এতে তার দোষ কি? মনের ফাঁদে পা দিয়েছে সে। এখন সে ফাঁদে নিজে আটকে ছটফট করতে হচ্ছে তাকে।
‘ আহনাফ, গোসল শেষ হয়েছে তোর? ‘
দরজায় করাঘাত এবং মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে আহনাফের ধ্যান ভেঙে যায়। আহনাফ মাকে ‘হু” বলে। মিসেস শেখ চলে গেলে আহনাফ দুহাতে নিজের মুখ ঘষে। উজ্জ্বল মুখ ঘষে লাল করে ফেলে। আর না! যা হয়েছে হয়েছে। যা হবে, তা দেখা যাবে।
আহনাফ নিজের পরনের কাপড় ধুয়ে কোমড়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে বাথরুম থেকে বের হয়।
কাপড়গুলো বারান্দায় মেলে নিজের কক্ষে এসে টিশার্ট প্যান্ট পড়ে কক্ষ ছেড়ে বের হয়। মা নিশ্চয়ই খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
আহনাফ খাবার টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসে। আহনাফের মা ছেলের প্লেটে ভাত ও সবজি তুলে দেন। আহনাফ খেতে খেতে মায়ের দিকে চায়। মা খাচ্ছে না। বসে আছেন। আহনাফের খাবার খাওয়া শেষ হলে তিনি খাবেন। আহনাফ বলল,
‘ খাচ্ছ না কেন? আমার সাথে খেয়ে নাও। ‘
‘ তোর শেষ হলে খাব। ‘
‘ সবসময় তোমার জেদ। হা করো। ‘
আহনাফ মায়ের মুখে খাবার তুলে দেয়। আহনাফের মা এই বুঝি কেঁদে দেবেন। নিজের জীবনে স্বামী সোহাগ পান নি তিনি। কিন্তু তার স্বামী আহনাফের ন্যায় এক ছেলে তাকে দিয়েছে। রাজার মত এক ছেলে। আহনাফের মা হা করেন। আহনাফ নিজে খেতে খেতে মাকেও খাইয়ে দিচ্ছে। আহনাফ মায়ের সাথে আনুসঙ্গিক কথা বলছে। বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানের জমিটা বাবার দখলে। আহনাফের মায়ের মতে, তিনি সেখান থেকে জমি নিজের জন্যে কিনতে চান। তিনি মরে গেলে যেন তাকে তার আত্মীয়ের সাথে দাফন করা হয়। আহনাফ মায়ের কথা শুনে চুপ করে থাকে। আহনাফের মা বলেন,
‘ আমি জানি, তুই এখনো তোর বাবার সাথে যোগাযোগ রেখেছিস। তাকে বল, আমাকে জমি দিতে। টাকা দিয়ে কিনতে চাই আমি কিছু জমি। ‘
আহনাফ মায়ের মুখে আরো একবার ভাত তুলে দেই। বলে,
‘ তুমি বললে বাবা দিয়ে দেবে। ‘
‘ না, আমি ওই মানুষটার সাথে কথা বলতে চাইছি না। ‘
‘ তাহলে কি আর করা যাবে। ‘
‘ আহনাফ, তুই কি কোনোভাবে চাইছিস, আমি তোর বাবার কাছে ফিরে যাই? ‘
‘ হ্যাঁ, চাইছি। ‘
আহনাফের নির্লিপ্ত উত্তর। আহনাফের মা অবাক হন না। গত এক বছর ধরে আহনাফের সকল কার্যকলাপ তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে, আহনাফ তার মা বাবার মিল চাইছে। কিন্তু মিসেস শেখ তা হতে দেবেন না। কম অপদস্ত হয়ে তিনি ও বাড়ি ছাড়েন নি। সহ্য সীমা অতিক্রম করেছিল বিধায় তিনি তার স্বামী সংসার ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
আহনাফ মা চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন। আহনাফের দিকে চেয়ে কড়া কণ্ঠে জানান,
‘ আমি যাব না ও বাড়ি। আমি মরে লাশ হব, তাও ওই মানুষটার মুখ আমি দেখব না। তুই আমাকে এই নিয়ে আর কখনো জোর করবি না। নাহলে আমি বিষ খাব। ‘
আহনাফের মা শাড়ির আঁচল মাথায় তুলে হনহন করে নিজের কক্ষে চলে যান। আহনাফ জানে, মা এখন কাদবে। কাদতে কাদতে বালিশের কোণ ভেজাবেন। মায়ের অনেক দুঃখ! এই দুঃখগুলো আহনাফ শুষে নিতে চায়। চেষ্টা করে। অথচ মায়ের মন অনেক কঠিন। হার মানতে চান না। আগে মা এমন ছিলেন না। বাবার ঘর ছেড়ে আসার পর মা ধীরে ধীরে কেমন যেন হয়ে গেছেন। আগের ন্যায় হাসেন না,রাতে ঘুম হয় না, মাথা ধরে, কঠোর হয়ে যান। মায়ের এই রোগের একমাত্র ঔষধ হলেন, বাবা। বাবা এলে মা সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে যাবেন। অথচ মা বাবাকে নিজের জীবনে দ্বিতীয়বার আনতে চান না। মা এত অবুঝ কেন?
#চলবে