মন গোপনের কথা পর্ব-৬+৭

0
889

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৬
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

ছিকুর শার্ট প্যান্ট পাল্টে দিল পরী। খাবার টেবিলের কাছে এনে চেয়ারে দাঁড় করিয়ে দিল ছিকুকে। মাহিদ তার দিকে চোখ গরম করে তাকালো। ছিকু ও মাহিদের মতো চোখ গরম করে তাকালো। পরী বলল

‘ মামার কাছে যাবেন?

‘ না। মিহি অচুভ্য।

মাহিদ চোখ গরম করে বলল

‘ শালা ছিকু তোরে আমি একা পাই একবার? তোর খবর আছে বাপ।

‘ কেন? খবর আচে কেন?

পরী বলল

‘ চুপ। খাবার টেবিলে আর কোনো কথা না।

‘ মিহি ভিজি দিচে কেন?

পরী কপাল চাপড়ে বলল

‘ তো আমি এখন কি করব? ভুলে ভিজিয়ে দিছে। কতবার বলব?

‘ মিহিকে মারোনি কেন?

পরী আবার কপাল চাপড়ালো। বলল

‘ আরেকবার কেন কেন করলে ঠাস করে দেব একটা।

যেন কালবৈশাখীর আগাম মুহূর্তের আভাস ছিকুর চেহারায়। ইশা বলল

‘ পরী কি করছ? ওকে বকছ কেন?

ইশা এসে কোলে নেওয়ার আগেই ভ্যাঁ করে গাল ছেড়ে দিল ছিকু। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কাঁদছে। যেন তার পিঠে কেউ চাবুক মারছে। মাহিদ ততক্ষণে হাত ধুয়ে এসে উপস্থিত। ছিকুকে কাঁদতে দেখে এগিয়ে গেল। পাঁজাখোলা করে কোলে তুলে ভেজা গালে আদর দিয়ে বলল

‘ কান্দিস না বাপ। তুই কাঁদলে আমার পরাণ জ্বলিয়া যায় রে।

ছিকু কেঁদেকেটে ঠোঁট উল্টে বলল

‘ পরী বুকা দিচে কেন? মারবে বুলছে কেন? ছিকুকে মারবে বুলছে কেন?

মাহিদ তাকে বলল

‘ শোন বাপ। বাইরে ইয়া ইয়া বড় ভূত রাক্ষস আইয়া পড়ছে তোর কান্না শুনে। এখন তোরে নিয়া গেলে আমি নাই বাপ। আমার হেব্বি ডর লাগতেছে এহন। আমি নাই।

ছিকু তৎক্ষনাৎ কান্না থামিয়ে দিল। ছোট্ট গুলুমুলু হাতটা দিয়ে গাল ঢলে জল মুছার চেষ্টা করলো। মাহিদকে অবাক করে দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো

‘ ভূত এখানে আসেনা কেন? ছিকুর সাথে কথা বুলেনা কেন?

মাহিদ হা করে তাকিয়ে থাকলো। সে ভেবে পেল না এই পরীর বাচ্চা ঠিক কোন ব্র্যান্ডের? শালারে কোনোকিছু দিয়ে জব্দ করানো যায় না। যদিও কান্না থামছে এইটা ভালো কথা। কিন্তু ভূতের কথা মাথা থেকে নামতেই ছিকু আবার কান্না শুরু করলো। কাঁদতে কাঁদতে ইতোমধ্যে মাহিদের চুল টেনে দিয়েছে। কামড় বসানোর চেষ্টা করেছে। মাহিদ তাকে ধপাস করে সোফায় ছুঁড়ে মেরে বলল

‘ শালা তোরে আদর করলে তুই মাথার উপর উঠে মুতোস। যাহ শালা ভাগ। তোরে আর আদর সোহাগ দিতাম না বাপ। দূর হ।

ছিকু ক্ষেপে তাকিয়ে থাকলো মাহিদের দিকে। তারপর ধীরেধীরে নেমে নিম্ন বলিউমে চলা টিভির রিমোট হাতে নিল। ঠুস ঠুস টিপে হাউ বলিউম করে দিল টিভির সাউন্ড। সবাই কান চেপে ধরলো। মাহিদ বলল

‘ শালা ছিকু সাউন্ড কমা বাপ।

ছিকু রিমোট তার শার্টের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলল। হাত নেড়ে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল

‘ লিমুট নাই। নাই কেন?

‘ আছে। তোর শার্টের ভেতর। তাড়াতাড়ি বের কর বাপ।

ছিকু সবার আড়ালে গিয়ে শার্ট থেকে বের করলো রিমোট। প্যান্টের ভেতর ঢুকিয়ে রেখে প্যান্টের সামনের উপরিভাগে হাত চেপে ধরে এসে সোফায় বসে থাকলো। মাহিদ কপাল কুঁচকে বলল

‘ শালা রিমোট কোথায় বাপ?

‘ নাই। লিমুট বিড়াতে গিছে। লিমুট নাই। লিমুট ভূতে নিয়ে গিছে।

যেন মাহিদ ছোট বাচ্চা আর সে মাহিদকে কল্পকাহিনি শোনাচ্ছে।
মাহিদ এসে তার পাশে বসলো। ছিকু শক্ত করে প্যান্টের সামনের অংশ চেপে ধরলো। বলল

‘ মিহি ইমুন করে তাকায় কেন? মিহি বিদ্দব কেন? ইখানে দেখে কেন?

মাহিদ খপ করে তার প্যান্ট টেনে ধরলো। রিমোট হাতে লাগলো তার। একটানে ছিকুকে বস্ত্রহীন করে বলল

‘ ছিঃ ছিঃ ছিঃ। রিমোট লুকানোর আর জায়গা পেলিনা বাপ। ছিঃ।

ছিকু এবার লজ্জা পেয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। প্যান্ট টেনে উপরে তুললো। সোফায় মাথা ঠুকতে ঠুকতে কাঁদলো। রাইনা দৌড়ে এসে তাকে কোলে তুলে নিল। বলল

‘ কি একটা অবস্থা। সবাই কি শুরু করেছিস ওকে নিয়ে? মাহি দেখতো কপালে লাগলো কিভাবে! তোর ভালো লাগে ওর সাথে এসব করতে? তুই কি বড় হচ্ছিস দিনদিন নাকি ছোট্ট হচ্ছিস?

মাহিদ হো হো করে হেসে সোফায় লুটিয়ে পড়লো। নাজিয়া বানু বলল

‘ এই বজ্জাত ছেলে আমার মেয়ে আর জামাইটাকে শান্তি দেয় না বুঝতে পারছি আমি। কেমনে এত তিড়িংতিড়িং করে আল্লায় জানে।

ইশা এসে তার কান ধরে বলল

‘ আন্টি তুমি কাল ঠিক বলেছ। এই ছেলের তিড়িংতিড়িং কমবে বিয়ে করিয়ে দিলে। বউয়ের কথায় তখন উঠবস করবে।

‘ ওরকম বউ আমার লাগতো না বাপ। এক মাইর দিয়ে বাড়ি থেকে বাইর কইরা দিমু শালীরে।

ইশা গালে হাত দিল। অবাক গলায় বলল,

‘ এ নাকি রিপদার ছেলে!

____

আছরের আযানের আধঘন্টা আগেই বেরোনোর জন্য রেডি হয়ে নিল নাজিয়া বানু। অনেকদিন থেকেছেন। যত্ন-আত্তিরে কম রাখেনি কেউ। ইশা একটি সোনালি রঙের কারুকাজ করা একটা শাড়ি, জায়নামাজ দিল নাজিয়া বানুকে। বলল

‘ শাড়িটা রেহান দিয়েছে আন্টি। ও আমার মেয়ের জামাই সাথে ছেলেও। তোমার নাতনী জামাই ও। আর জায়নামাজটা ডক্টর দিয়েছে। সবার জন্য দোয়া করিও আন্টি। আবার আসবা কিন্তু।

নাজিয়া বানু তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বলল

‘ আসব। তুই ও যাস সবাইকে নিয়ে।

‘ যাব।

পরী সালাম করে বলল

‘ নানু আমি এবার একা একা চলে যাব। নইলে রাহির পাপাকে সাথে নিয়ে যাব।

‘ যাস। কত ছোট ছিল এই মেয়ে, আর এখন বাচ্চার মা। তোর বাচ্চাকে দেখে রাখিস। ঘুমিয়েছে?

‘ হ্যা। ঘুম।

ইশা বলল

‘ পিহু কোথায়? পিহুকে ডাকো পরী।

পিহুকে ডাকতে হলো না। পিহু নিজেই এল। নাজিয়া বানুকে সালাম করে বলল

‘ আবার আসবে নানু। তুমি ছিলে কত ভালো লাগলো আমাদের।

তিনি পিহুর মুখে হাত বুলিয়ে বললেন

‘ তোর বিয়ের সময় আসব টুনটুনি।

পিহু হাসলো।

‘ একদম মায়ের মতো হয়েছিস। এটা তো পুরো তোর মতো রে ইশু।

ইশা হাসলো। পরী গালফুলিয়ে বলল

‘ আর আমি?

সবাই হেসে ফেলল। নাজিয়া বানু তার মুখে হাত বুলিয়ে বলল

‘ তুই তোর ডাক্তার বাপের মতো। একটা মায়ের মতো আরেকটা বাপের মতো।

পরীর ঠোঁটে এক চিলতে সুন্দর হাসি ফুটলো। সে সত্যিই তার আব্বার মতো দেখতে।

মাহিদের সাথে খান বাড়িতে চলে গেল নাজিয়া বানু । আর সেখান থেকে আপন নীড়ে।

________________

মাহিদ পড়ছে। নীরা দুধের গ্লাস রাখলো তার সামনে। মাহিদ চোখ তুলে তাকালো। বই থেকে চোখ সরিয়ে মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকালো। নীরা তার মাথার চুল হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল

‘ কাল চুল কেটে ফেলবি। দেখ মুঠোয় চলে আসছে।

‘ না নজরুল হবো মেরিমা।

নীরা খাটে গিয়ে বসলো। বলল

‘ দুধ খেয়ে নে। নজরুল হওয়া বের করব আমি।

মাহিদ দুধের গ্লাস নিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসলো। বলল

‘ নাও তুমি খাও।

নীরা গ্লাস ফিরিয়ে দিল। বলল

‘ আমি খেয়েছি মাহি। জ্বালাস না তো। খাহ চুপচাপ। তুই জানিস তুই না খেয়ে থাকতে পারবিনা। চুপচাপ খা।

মাহিদ এক ঢোকে সবটা খেয়ে ঢলে পড়লো নীরার কোলে। নীরা তার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল

‘ একটা কথা বলি মাহি?

‘ কি?

‘ তোর কেমন মেয়ে পছন্দ?

মাহিদ চোখ তুলে তাকালো।

‘ ওভাবে তাকাচ্ছিস কেন?

‘ হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?

‘ বল না। মিথ্যে বলবি না। বল বল। না বলিস না প্লিজ।

কারো উড়োচুলের খেলা, কোমল পেলব ঠোঁটের হাসি আর মন ভিজানো চাহনি ভাসলো চোখের কোণে। চোখে ভাসলে আর মনে আসলেই কি পছন্দ বলা যায়? ভালো লাগা বলা যায়? কে জানে?

‘ বল না কেমন মেয়ে পছন্দ? এই মাহি।

‘ আমার কোনো মেয়েই পছন্দ না বাপের বউ।

মাহিদ উঠে বসলো নীরার কোল থেকে। পড়ার টেবিলে গিয়ে বসে হাই তুলে বলল

‘ মেরিমা আমার মেয়ে বলতেই অপছন্দ। সব শালী ধান্ধাবাজ। এদের পছন্দ করতে নাই বাপ।

‘ কিসব উল্টাপাল্টা কথা মাহি।

মাহিদ টেবিলে মাথা রেখে বলল, আমি ঘুম।

নীরা চলে যেতে যাচ্ছিল হতাশ হয়ে। পরক্ষণে এসে বলল

‘ আব্বা ধর পিহুর মতো?

মাহিদের চোখের দীপ্ততা এড়িয়ে গিয়ে নীরা বলল

‘ ওমা আমি ভুল কি বললাম? মানে পিহুর মতো। পিহুর কথা তো বলছিনা। তোরা তো ভাইবোনের মতো। পিহুর মতো মেয়ের কথা বলছি। মানে স্বভাব। বুঝলি?

‘ মেয়ে তো একদম পছন্দ নয়। তারউপর ওই মেয়ের মতো তো নয়ই । ওর মতো মেয়ে দেখলেই আমার হাত চুলকায়। ঠাস ঠাস বসাইতে ইচ্ছে করে। যত্তসব।

যেন বিরক্ত ঝড়ে পড়লো মাহিদের কন্ঠে।

‘ আচ্ছা পিহুর বিপরীত? মানে পিহুর চাইতে পুরো উল্টো। পছন্দ?

মাহিদ চুপ করে থাকলো।

‘ পিহু তো খুব ভালো মিষ্টি একটা মেয়ে। ওর বিপরীতে পড়বে ঝাল ঝাল। তোর সেরকম পছন্দ?

মাহিদ উত্তর দিল না। বইয়ে মুখ গুঁজলো। নীরা বলল

‘ আমি বুঝতে পারছি তোর চুপচাপ মেয়ে পছন্দ নয়। ঠিক আছে আমি বুঝে নিলাম। গুডনাইট মাই বাচ্চা। আর কিছুক্ষণ পর ঘুমায় পড়িস। সকাল সকাল উঠে পড়বি। টা টা।

নীরা চলে গেল।
রিপ তখন ল্যাপটপে এডভোকেট মহিউদ্দিনের দেওয়া ফাইলগুলো চেক করছিল। নীরা গিয়ে তার পাশে বসলো। বলল

‘ পিহুর মতো মেয়ে নাকি একদমই পছন্দ না৷

রিপ কাজ করতে করতে জবাব দিল,

‘ তাই নাকি?

‘ হ্যা।

‘ তার অপোজিট কিছু নিশ্চয়ই পছন্দ।

‘ হুমম। আমি আর কতক্ষণ না ঘুমিয়ে বসে থাকবো। ধুরর।

‘ ঘুমিয়ে পড়ো। বসে থাকতে কে বলেছে?

নীরা বেলুনের ফুলতে ফুলতে বলল

‘ নাহ৷

‘ কি নাহ।

ল্যাপটপ কেড়ে নিল নীরা। ল্যাপটপের জায়গায় নিজে এসে বসলো। রিপের বুকে মাথা রেখে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বসলো। রেগে বলল

‘ আমি এভাবে ঘুমায় ? জেনে ও ঢং করেন। আমার ঘুম পাচ্ছে ভীষণ।

রিপ আর বাঁধা দিল না। এই মহিলাকে বারণ করে কোনো ফায়দা নেই। তার চাইতে ঘুম চলে আসলেই ভালো।
বকবক করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো নীরা। রিপ তাকে শুইয়ে দিয়ে কাঁথা টেনে দিল গায়ে। মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল

‘ তুমি আর বড় হলে না নীরা৷

আসলে প্রিয় মানুষটার কাছে দুনিয়ার সব আবদার গিয়ে ঠেকে যায়। প্রিয় মানুষটার একটু যত্ন আর কোমলতা সবচাইতে বরফ শক্ত মনের মানুষকে ও শীতল করে ফেলে। ভালোবাসার এমনই শক্তি। রিপ বিশ্বাস করতো আজ ও করে ভালোবাসার চাইতে সুন্দর, পবিত্র কিছু আর হতেই পারে না। নীরা তার জীবনের অনেক বড় একটা পাওয়া। মাঝেমাঝে অবাক ও হয় ভীষণ, এই ঘুমন্ত রমণী তাকে এত ভালোবাসে আগলে রাখে কি করে? নীরা ছাড়া আসলেই ছিটগ্রস্ত হতো রিপ রেজওয়ান খান। নীরা তার শক্তি তার অনুপ্রেরণা। তার ঠোঁটের কোণার হাসির কারণ।

নীরা কিছুক্ষণের মধ্যেই লাফ দিয়ে উঠলো। ঘুমঘুম চোখে বলল

‘ আপনাকে আমি ল্যাপটপের জামাই বানিয়ে দেব। অসভ্য ব্যারিস্টার। আপনার নামে মামলা উঠা উচিত আদালতে।

রিপ হেসে উঠলো। নীরা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো। মানুষটার সবকিছু এত সুন্দর হতে হবে কেন?

___________

মেডিক্যাল থেকে বেরোতেই ঝুম বৃষ্টি পেল পিহুকে। রিকশা ডাকতে ডাকতে ততক্ষণে আধভেঁজা। ফোন বাজছে ব্যাগের ভেতর। পিহু একটি বন্ধ দোকানের বারান্দা বেছে নিল দাঁড়ানোর জন্য। দেখলো নিশিতার ফোন। পিহু মেসেজ পাঠালো। রিকশা পাইনি এখনো। পেয়ে যাব। চিন্তা করিস না।
তারমধ্যেই ইশার ফোন। পিহু ফোন তুললো। ইশা বলল

‘ কোথায় তুমি?

‘ পৌঁছে যাব আম্মা। চিন্তা করো না।

ইশা চিন্তিত গলায় বলল

‘ রিকশা পেয়েছ?

‘ হ্যা হ্যা পেয়ে যাব।

পিহু ফোন রেখে দিল। তার পাশাপাশি ছোট বারান্দায় এসে দাঁড়ালো এক যুবক। ভিজে যাওয়া চুল আর গায়ে লেগে যাওয়া শার্ট ঝাড়তে লাগলো অনবরত। ভুল করেই চোখ গেল পিহুর দিকে। পিহু মুখ ঘুরিয়ে রাস্তায় দৃষ্টি ফেললো। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবার রূপ নিল ভয়ংকর ঝড়ে। কিছু দূরে ভয়ংকর বজ্রপাতের শব্দে যেন রাস্তাঘাট ও কেঁপে উঠলো। কেঁপে উঠলো পিহু। চোখ বন্ধ করে দোয়া দরূদ পড়তে লাগলো বিড়বিড় করে। তারপর চোখ মেলে পাশে দাঁড়ানো যুবকের দিকে তাকালো৷ তখনই ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রিকশা নিয়ে চলে আসলো নিনিত। রিকশা থেকে লাফ মেরে নেমে দোকানের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। বলল

‘ আরিশা উঠে বসো।
ভ্যাগিস বলেছিস নইলে তো আজ এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। ঝড় এখন থামবে বলে মনে হচ্ছে না৷

মাহিদ বলল,

‘ রিকশা আরেকটা কোথায়?

‘ আসছে। এটাতে করে আরিশা চলে যাক। আমি আর তুই পরেরটাতে যাব।

পিহু রিকশাতে উঠতেই যাচ্ছিল। দুই বন্ধুর কথোপকথন শুনে থমকে দাঁড়ালো।

‘ আরিশা উঠো।

‘ নাহ।

দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের ভাড়া করা রিকশায় চড়ে সে যাবে না।

‘ আরিশা!

‘ আমি এই রিকশায় যাব না বলেছি স্যার।

নিনিত বোকা চেহারায় তাকালো মাহিদের দিকে। চুপিসারে বলল

‘ তোমার আবারও ঝগড়া?

মাহিদ কথা বাড়ালো না। এগিয়ে গিয়ে শক্ত করে পিহুর হাত ধরে টেনে রিকশায় তুললো। নিজেও বসে বলল

‘ মামা চলেন।

নিনিত হাঁফছেড়ে বাঁচলো।

পিহু হতভম্ব। হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে সে। যদি ও ইচ্ছে করলো না। এই হাতে হাত রেখে বহুবছর বাঁচার ইচ্ছে তার। তারপর ও কাটিয়ে উঠা দরকার এই মায়া। ছাড়ানো দরকার এই বাঁধন। দূর সম্পর্কের আত্মীয় এমন অধিকারবোধ দেখায় বুঝি? পিহু বুঝে উঠতে পারলো না। হাতটা ছাড়াতে ও পারলো না। হাজারো ধস্তাধস্তি কোনো কাজে আসলো না। হাতটা চাপা পড়ে রইলো অচেনা পুরুষের হাতের ভাঁজে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়কে অচেনা পুরুষ বলাই যায়।

চলবে,

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৭
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

ত্যাড়ছাভাবে বৃষ্টির ফোঁটা পড়া শুরু করেছে। রিকশার হুড তুলে ফেলল মাহিদ। পিহু গুঁজে ছিল এতক্ষণ। হুড তুলে দেওয়ায় জপজপে ভিজে গেল মুখটা। একটু বড় করে শ্বাস নিল সে।

‘ মামা একটু থামেন।

রিকশা থামলো। মাহিদ লাফ দিয়ে রিকশা থেকে নেমে পেছনে থেকে ধাক্কা দিয়ে রিকশার হুড আবার নামিয়ে দিল। পিহু কেঁপে উঠলো। সমস্যা কি?

‘ মামা সোজা চৌধুরী বাড়ি যাবেন।

‘ আইচ্ছা।

পিহুর ভুরু কুঞ্চন হলো। রিকশা চলতে শুরু করলো। পিহু গলা বের করে উঁকি দিয়ে দেখলো মাহিদ হাতের ফাইল মোচড়ে নিয়ে ছুটতে লাগলো ভিজে ভিজে। পিহু ভেবে পেল না তার পাশে বসে এতদূর এসেছে কি করে? যত্তসব ঢং। খান বাড়ি মোড় এই তো সামনে।
মাহিদ ছুটতে ছুটতে একবার পিছু ফিরে রিকশার দিকে তাকালো। পিহুর সাথে চোখাচোখি হয়ে যাওয়ায় পিহু সতর্ক হয়ে গেল। রিকশার হুডের নিচে ঢুকে এল।
মাহিদ ছুটতে ছুটতে মাথার পেছনে হাত নিয়ে গিয়ে মাথা চুলকালো। আশ্রয় নিল একটি ফার্মেসীর দোকানে। অপেক্ষা করলো নিনিতের রিকশাটির অপেক্ষায়।

চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছুতেই পিহু ব্যাগ হাতড়ালো টাকা দেওয়ার জন্য। রিকশাচালক বললেন

‘ লাগবো না টাকা। ব্যারিস্টারের পোলা দিয়া দিছে।

পিহু ঠোঁট গোল করে বল

‘ ওহ। পয়সাওয়ালার ছেলে। যাক আমার পয়সা বেঁচে গেল।

পিহুকে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরতে দেখে রাইনা বলল

‘ ছাতা নিয়ে বেরোবি তো। তাড়াতাড়ি জামা পাল্টা।

পিহু যাওয়ার আগে ছিকু দৌড়ে দৌড়ে আসলো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল

‘ চকলেট। ছিকুর চকলেট।

পিহু পকেট থেকে চকলেট বের করে দিয়ে বলল

‘ আব্বার জন্য চকলেট আনতে ভুলিনা আমি।

চকলেট পেয়ে কদুর বিচির মতো দাঁতগুলো দেখিয়ে একগাল হাসলো ছিকু। গালের দুপাশে দুহাত দিয়ে দুলতে দুলতে বলল

‘ আলাভিউ পিহুচুন্নি।

পিহু নিচে ঝুঁকে টাপুস করে তার গালে চুমু খেল। বলল

‘ আলাভিউ ঠু কলিজা।

______________

ছিকুর পেট ব্যাথা উঠেছে। ইদানীং ব্যাথাটা তার বেড়েই চলেছে। পেটে চেপে ধরে ধরে কান্না করছে। আদি শুরুর দিকে তার ফাস্টফুড, চকলেট, চিপস খাওয়া বন্ধ করে দিতে বলল। কিন্তু ব্যাথা কমার নয়। রাতে বেশি কান্না করে। বাড়ির সবাই চিন্তিত। সারাদিন ব্যাথা লাগলে ও খেলতে খেলতে কেটে যায় ছিকুর দিন। কিন্তু রাতে ঘুমাতে দেয় না পরীকে। রেহান কোলে নিয়ে বসে থাকে। অফিস করে এসে রাতে ঘুমাতে না পারলে সারাদিনের ক্লান্তি ও মুছে না।
আদি এইবার বেশ মনোযোগ দিল। ছিকুর পেটের ব্যাথার কারণ খুঁজে বের করার চেকআপ করালো। দেখলো ছিকুর প্রসাব করতে কষ্ট হয়। কম হয়। ছিকু বাচ্চা মানুষ। কাকে কি বলবে? সে কি নিজেও আদৌ জানে? আদির কোলে কেবিনে বসেছিল সে। আদি জিজ্ঞেস করল

‘ তোমার সুসু করতে ব্যাথা লাগে?

ছিকু ভীষণ লজ্জা পেল। আদির বুকে মুখ লুকিয়ে বলল

‘ ডততর বিদ্দব।

নার্স দুজন হেসে উঠলো। হাসলো ইশা আর পিহু ও। ইশা বলল

‘ সোনা ডাক্তারকে বলো। নইলে আবার ব্যাথা করবে। খুব কান্না আসবে।

ছিকুর মন খারাপ হয়ে গেল। ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে থাকলো সে। কপালের পাশে কালো টিপ পড়িয়ে দিয়েছে রাইনা। কোথাও গেলে নজর লেগে যায় ছেলেটার। গোলগোল চোখে ছিকুকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পিহুর ইচ্ছে করলো টুপ করে খেয়ে ফেলতে। এত আদুরে কেন তার কলিজা?
ইশা বলল

‘ বলো।

ছিকু গাল ফুলিয়ে বলল

‘ সুসু ব্যাথা কেন? ছিকু দুক্কু পায় কেন?

আদি তার গালে চুমু এঁকে ইশার কোলে দিয়ে ফেলল। বলল

‘ মিষ্টি এখন সারকামসিশন ছাড়া উপায় নেই। প্রসাব ঠিকঠাক হচ্ছে না তাই পেট ব্যাথা হচ্ছে। ও ছোট তাই বলতে পারছেনা।

‘ সাককামশিসান কেন? কেন বাপ কেন?

নার্স দুটো হাসিতে ফেটে পড়লো। পিহু হাসি চেপে বলল

‘ উফফ এত বকবক করে ছেলেটা?

ইশা বলল

‘ এত তাড়াতাড়ি! ওর কষ্ট হবে।

‘ এখন সবকিছুর ইমপ্রুভ হয়েছে মিষ্টি। আমি ত আছি। আমার পরিচিত একজন আছে। ওনার ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হবে। অনেক ফাস্ট সার্ভিস। ডোন্ট ওয়ারি।

ছিকু ইশার মুখের দিকে তাকালো। ইশা তার কপালে চুমু খেয়ে বলল

‘ এখন বাড়ি যাব সোনা।

‘ পরীর কাছে যাব।

‘ হ্যা পরীর কাছেই যাচ্ছি।

আদি পিহুকে বলল

‘ ওদেরকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে এসো। তোমার ত ক্লাস আছে।

” ইয়েস পাপা। আ’ল ম্যানেজ।

ইশা ছিকুকে নিয়ে চলে গেল বাড়িতে।

সাতদিনের মাথায় ছিকুর সারকামসিশন হলো। ডাক্তার বলেছে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ক্ষত শুকিয়ে যাবে পুরোপুরি। শুধু ঔষধগুলো ঠিকঠাক খাওয়াতে হবে।
ছিকু খেলতে পারলো না, দৌড়াতে পারলো না, নাচতে পারলো না,গাইতে পারলো না, তাই শুধু কিছুক্ষণ পর পর কেঁদে কেঁদে আদিকে বকলো। বলল

‘ ডততরকে মারি ফিলবো। ডততর ছিকুকে দুক্কু দিচে কেন? ডততর পুঁচা কেন?

সবাই মিটিমিটি হাসলো তার কথায়। খান বাড়ি থেকে সবাই তার জন্য চিড়া মুড়ি আর মিষ্টি নিয়ে দেখতে এল। রিক আর রিপ লুঙ্গি আনলো। খেলার জিনিস আনলো। মাহিদ এল না। তার তখন পরীক্ষা সবে শুরু। রাতদিন পড়তে হচ্ছে। ঘাড় ঘুরানোর সময় নেই। ইচ্ছে করলো একবার চৌধুরী বাড়ি যেতে। ছিকু শালার লুঙ্গি টেনে খুলে তাকে রাগিয়ে দিতে। কিন্তু আর তা হলো না। ছিকু মাহিদের উপর রাগ করলো। রিপের ফোন থেকে মাহিদকে ফোন দিয়ে বলল

‘ মিহি সাথে ছিকুর কথা বুলেনা কেন? মিহি ছিকুকে দেখতে আসেনি কেন? মিহি পুঁচা কেন?

মাহিদ বলল

‘ শালা আমি তোর মতো বইসা নাই বাপ। তুই মুটু বইসা বইসা হাগোস বইসা বইসা মুতোস। বইসা বইসা গিলোস। শালা মটু।

” মিহি মুটু বুলে কেন? ছিকুর কান্না পায় কেন?

নীরা ফোন কেড়ে নিয়ে বলল

‘ মাহি এসব কথা বলতে আছে? তোর ভাগিনা হয় না? তোর বাচ্চার মতো।

‘ শালার লগে আমার অনেক হিসাবনিকাশ বাকি আছে মেরিমা। আমার পরীক্ষা বাপেরে শেষ হতে দাও আগে। শালারে আমি দেইখা লমু।

সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ছিকু হাঁটতে লাগলো। দৌঁড়াতে লাগলো লুঙ্গি ধরে ধরে। সবাইকে লুঙ্গি ডান্স ও দেখিয়ে দিল। বাড়িতে হুজুর আসলো দাওয়াত খেতে। ছিকু হুজুরকে লুঙ্গি দেখিয়ে দেখিয়ে বলল

‘ হুজুল নুঙ্গী পড়েনা কেন? ছিকু নুঙ্গী পড়ে কেন?

সবাই ঠোঁট টিপে টিপে হাসলো। মাহিদ এল পরীক্ষার এক ফাঁকে। হাতে একটি শপিং ব্যাগ। ছিকুর জন্য খাবার আর খেলনা। ছিকুকে আর পায় কে? এক লাফে মাহিদের কোলে উঠে বলল

‘ মিহি বিদ্দব ডততর ছিকুর সুসু ঠিক করি দিচে।

মাহিদ বোকাসোকা চোখে চেয়ে থাকলো। বলল

‘ তুই তো শালা মহা বেয়াদব। আমার কান বাপ শেষ। ফিনিশ।

‘ পিনিচ কেন?
বলেই ছিকু চকলেট খাবে বলে কোল থেকে নেমে পড়লো। লুঙ্গি ধরে রেখে বলল

‘ মিহি নুঙ্গী পড়ি যায় কেন?

মাহিদ শপিং ব্যাগ থেকে একটি মেয়েদের স্কার্ট বের করলো। সেটি ছিকুকে পড়িয়ে দিয়ে বলল

‘ শালা তোরে তো এটাতে বেশ লাগতেছে বাপ। আর খুলি পড়ি যাইবো না বাপ।

ছিকু তো মহাখুশি। স্কার্টরা ধরে নাচতে নাচতে বলল

‘ ডুম্পাচালে ডুম্পাচালে ডুম।

মাহিদ হেসে গড়াগড়ি খেল সোফায়। বাকি সবাই মামা ভাগিনার কান্ড দেখে হেসে কুটিকুটি।

খান বাড়ি থেকে ছিকুর সুন্নতির অনুষ্ঠানের জন্য গরু দেওয়া হলো একটি। লোকজন খাওয়াবে, আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত করবে এমন পরিকল্পনা চলছে।
পরী এখনি আয়োজন করতে চাইলো না। ভাই ছাড়া সে অন্ধের মতো। মাহিদকে সাথে নিয়ে অনেক কাজ সে একা একা করে ফেলতে পারে। মাহিদের এখন অন্য কাজ করার সময় নেই। তা ও ছিকুকে দেখতে এসেছিল সবার কথা থেকে বাঁচতে। ছিকুর একটামাত্র মামা সে। মারুক, বকুক ছিকুরও ভারী পছন্দ মিহিকে। মিহির সাথে থাকলে তার ভারী মজা লাগে।
মাস দুমাস পরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
ততদিনে মাহিদের পরীক্ষা শেষ। বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি করতে চলে গেল সে পরীক্ষা হওয়ার সাথে সাথে। তাকে আর পায় কে?
পরী জানতে পেরে মাহিদের উপর ভীষণ রকম চটে গেল। ফোন দিয়ে বলল

‘ তুই আসলে আয়। নইলে একদম আসবি না। আজ থেকে তোর সাথে আর কোনো কথা নাই।

মাহিদ রাতে রাতেই কক্সবাজার থেকে চলে এল। পরীর অভিমান ভাঙলো। পিহু আর মাহিদকে নিয়ে সে ছুটলো শপিং করতে। ছিকুর জন্য দামী পাঞ্জাবি কিনলো। জুতো কিনলো। মাহিদের জন্য রেহানের জন্য ও কিনলো। তার আর পিহুর জন্য ও কেনাকাটা করলো। জুয়েলারির দোকানে একটি সাদা স্টোনের পেনডান্ট পিহুর ভারী পছন্দ হলো। পরী বলল
‘ তুমি এটা নিবে?

পিহু সেটি তাড়াতাড়ি রেখে দিল। বলল

‘ না। এর চাইতে আর ও সুন্দর সুন্দর আছে। সেখান থেকে একটা কিনবো। এখন নাহ।

‘ এখন নাও।

‘ নাহ দিদিয়া৷ অনেক কিছু কিনে ফেলেছি। আর নয়। বললাম তো পরে এসে নেব৷

মাহিদ জুতোর দোকান থেকে ফিরে ডাক দিল৷ পিহু আর পরী দোকান থেকে বের হলো। পরী বলল

‘ সব নিয়েছিস?

‘ হ্যা।

‘ তুই আর পিহুকে ইদানীং কম কথা বলতে দেখছি কেন? তোদের কি ঝগড়া হয়েছে?

মাহিদ যেতে যেতে বলল

‘ নাহ। ঝগড়া হবে কি নিয়ে?

পিহু মুখ মোচড় দিয়ে বিড়বিড় করলো

‘ ঢং।

_________

ছিকুর অনুষ্ঠানে অনেক আত্মীয় স্বজনরা এল। অনেক মানুষের রাতের খাবারের আয়োজন করা হলো। ছিকুর দু হাত ভর্তি মেহেদী দেওয়া হলো। মেহেদী দেওয়া হাত ছিকু সবাইকে দেখালো৷ বলল

‘ ছিকু লাল দিচে। ছিকুর হাত বিটি ফুল কেন? বিশিবিশি চুন্দর কেন?

ছিকুর সাথে সাথে পিহুও দু হাত ভরে মেহেদী দিল। ছিকুর পেছন পেছন থাকা ওর কাঁধে গুরুদায়িত্ব পড়েছে। পাজিটা এক জায়গায় থাকে? নিজে ছুটতে লাগলো, সাথে পিহুকে ও হয়রান বানালো। এক জায়গায় ঠিকঠাক বসেনা এই পাজিটা। আর ও দৌড়াতে দৌড়াতে পিহুর দিকে তাকিয়ে বলল

‘ পিহু দুড়ায় না কেন? দুড়াতে পারে না কেন?

পিহু নাকফুলিয়ে বলল

‘ পাজি ছেলে। বজ্জাত ছেলে।

ছিকু এবার রেগে তাকালো। কোমরে হাত দিয়ে বলল

‘ পাচি বলো কেন? বুজ্জাত বলো কেন? পিহুচুন্নি!

পিহু বলল

‘ তাই। দাঁড়াও। হাড্ডি ভেঙে ফেলব আজ।

ছিকু এক দৌড় দিল। পিহু ও দিল। হঠাৎ পিহুর সাথে ধাক্কা লেগে ধপাস করে একটা বাক্স পড়ে গেল । পিহু থেমে গেল। দেখলো কেকের প্যাকেটের বাক্স। মাহিদ চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল

‘ কোথাও শান্তি নাই শালার। এত নাচানাচি কিসের বুঝলাম না বাপ।

পিহু মুখ মোচড়ে বলল

‘ একশবার নাচব। কে কি করে দেখি।

মাহিদ কেকের প্যাকেট তুলে পাশে রাখলো। পিহুকে কিছু বলতে গিয়ে ও বললো না। ছিকু দৌড়ে আসলো। পিহুর পেছনে দাঁড়ালো। পিহুকে ধাক্কা দিল জোরে। পিহু হুমড়ি খেয়ে পড়লো মাহিদের উপর। চিল্লিয়ে বলে উঠলো

‘ ইননা আমার মেহেদী।

বলেই নাকিসুরে কাঁদতে লাগলো পিহু। মাহিদের নড়চড় নেই। বিরক্তি মুখে চেয়ে থাকলো পিহুর দিকে। কি করা যায় এখন। রাগ তরতর করে বাড়লো তার। ছাইরঙা শার্টের কলার, গলায় বিশ্রীভাবে লেগে গিয়েছে মেহেদী।
পিহু চোখ খুললো৷ মাহিদকে দেখে ছিটকে সরে এল। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল

‘ ও আল্লাহ মেহেদী৷

হাত দিয়ে মেহেদী মুছে নিতে গেল পিহু। হাতের বাকি মেহেদীগুলো আর ও বাজেভাবে লেগে গেল মাহিদের গলায়,কানে, শার্টে। হা করে ভয়ার্ত চোখে চেয়ে থাকলো পিহু। মাহিদ কি করবে ভেবে পেল না। কি বলবে বুঝে পেল না৷ পিহু দু পা পিছিয়ে গিয়ে বলল

‘ সরি।

‘ সরি তোর বাপেরে গিয়া বল শালী৷

ছিকু দূরে দাঁড়িয়ে হাত তালি দিয়ে বলল

‘ মিহি রাগি গিছে কেন? পিহুকে বুকা দেয় কেন? মিহি গলায় লাল দিচে কেন? পিহু ভয় পায়ছে কেন?

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে