মনোহরা পর্ব-০১

0
1866

#গল্পঃমনোহরা
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃনির্মলা

কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরে দেখলাম বাড়ির দরজাটা খোলা ভিতরে ঢুকে দেখলাম।আমার বড় খালা,, খালু,,। আমি অবশ্য তাদের বড় আন্টি আর আঙ্কেল বলে ডাকি। দেখলাম তারা সোফার উপর বসে আছে আর চা খাচ্ছে।
[গল্প শুরু করার আগে চলুন আমাদের নায়িকার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। আমাদের নায়িকার নাম ইশা আক্তার ইশা, ইশা inter 1st years এ পড়ে।বয়স ১৬ বছর, দেখতে মাশাল্লাহ নূরের মতন। গায়ের রং তার দূধে আলতা। এখন এই টুকুই আস্তে আস্তে সব গল্পে জানতে পারবেন]

গল্পে ফেরা যাক👇
বড় আন্টি আমাকে দেখে বসা থেকে উঠে আমার কাছে এসে বলল
বড় আন্টিঃ এই তো ইশা মা চলে এসেছে

বড় আন্টি আমার গালে হাত দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ কি রে মা কেমন আছিস
আমি হাসি মুখে বড় আন্টিকে সালাম করে বললাম

ইশাঃ জী ভালো আপনি কেমন আছেন
বড় আন্টিঃ ভালো রে মা
আমি আন্টির থেকে চোখ সরিয়ে দেখলাম আঙ্কেল আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে।আমি আন্টিকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে আঙ্কেল কে সালাম করলাম আর বললাম
ইশাঃ কেমন আছেন আঙ্কেল
আঙ্কেল হেসে দিয়ে বলল
আঙ্কেলঃ ভালো আছি মা

এরই মধ্যে মাকে দেখলাম রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।মা আমাকে দেখে বলে উঠলো
ইশার মাঃ কিরে ইশা কখন এলি
ইশাঃ মা এই মাএ এলাম,
মা এসে আমার ওড়নাটা মাথায় দিয়ে বললেন
ইশার মাঃ শশুড় শাশুড়ী সামনে মাথায় কাপড় দিয়ে থাকতে হয় কত বার বলতে হবে তোকে। (ধমকের সুরে)
ইশাঃ………… (চুপ)
বড় আন্টি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন
বড় আন্টিঃ আরে তুই চুপ কর তো তুই সেই আগের জগতে পড়ে আছিস, ইশা মা এসবের কোন দরকার নেই তোমার শশুড় আর আমি এসব নিয়ে কিছু মনে করবো না। কি গো তাই তো
বড় আন্টি আঙ্কেল এর দিকে তাকিয়ে বললেন।আঙ্কেল একটা হাসি দিয়ে আমাকে বললেন
আঙ্কেলঃ হ্যাঁ রে মা তোমার শাশুড়ী ঠিক বলেছে।
বড় আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ যাও ভিতরে ফ্রেস হয়ে আসো
ইশাঃ হুম
আমি যাবার সময় মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মা আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তারপর নিজের রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালাম।আর ভাবতে লাগলাম বড় আন্টি আর আঙ্কেল হঠাৎ করে আমাদের বাড়ি কেনো এলেন।কারন সেদিনের পর থেকে তো তাড়া গত দুই বছরে এ বাড়িতে পা রাখেনি।অবশ্য ফোনে কথা হতো আজ হঠাৎ করে এলেন বেপার টা ঠিক আমার হজম হলো না।এসব ভাবছিলাম আর হাঁট ছিলাম।হঠাৎ করে কারো সাথে থাক্কা খেলাম।
ইশাঃ আউচ!!!!
জিসানঃ oh god,,,, চুন্নি কোথাকার দেখে চলতে পারিস না
আমি আমার হাত ঢলতে ঢলতে সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমার বড় ভাই জিসান।আমি ওর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম
ইশাঃ ভাইয়া দেখে চলতে পারো না
জিসান ভাই আমার থেকে দশ গুণবেশি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন
জিসানঃ তুই দেখতে পারিস না চুন্নি দিলি তো আমার গেইম খেলাটা নষ্ট করে

আমি আমার ভাইয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম
ইশাঃ মানে!!!
জিসানঃ কিছু না যা ভাগ চুন্নি
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম এ কি আমার ভাই নাকি। বোন এত ব্যাথা পেলো সেটা না দেখে গেইম নিয়ে পড়ে আছে।হঠাৎ করে ভাইয়া আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বলল
জিসানঃ কি রে এখানেই কি আজ দাড়িয়ে থাকবি ভেতরে যা (কিছুটা জোর বলল)
আমি ভাইয়ার দিকে তাকাতের হঠাৎ আমার মনে পড়লো বড় আন্টি কথা আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম
ইশাঃ ভাইয়া!!!
জিসানঃ কি
ইশাঃ বলছিলাম বড় আন্টি এসেছে কেনো
ভাইয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল

জিসানঃ কেনো তুই জানিস না
আমি না সূচক মাথা নাড়ালাম,
জিসানঃ অবশ্য জানবি কি করে আমিও তো আজ জানলাম।শান চৌধুরী আসছে তো

শান ভাইয়ার নাম শুনে আমার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। আমি কিছু বলার আগে ভাইয়া আবার বলে উঠলো
জিসানঃ তোকে হয় তো নিতে এসেছে maybe
আমি sure জানি না। কারন শান মানে আমাদের বাড়ির জামাই পরশু flight আসছে।অবশ্য শান এর সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে বলেছিলো আসবে কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আসবে সেটা বলে নি।এবার চুন্নি তুই বিদায় হোবি। আর আমি চাকরিটা পেলে ঘরে বউ নিয়ে আসবো (মজা করে হেসে বলল)

ভাইয়ার কথা শুনে আমি পুরো নিরব হয়ে গেলাম।
জিসানঃ কিরে ইশা কথা বলছিস না কেনো
আমি ভাইয়ার ডাক শুনে নিরবতা ভেঙে বলে উঠলাম।
ইশাঃ আমার মাথাটা ভিষন ধরেছে ভাইয়া মাকে বলিস আমি দুপুরে কিছু খাবো না

এই বলে আমি চলে গেলাম।এদিকে ভাইয়া আমার এমন ব্যবহার দেখে তো পুরো অবাক কারন বরাবরই আমি আর ভাইয়া ছোট খাটো বিষয় নিয়ে প্রচুর ঝগড়া করি।ভাইয়া আমার যাবার দিকে কত সময় তাকিয়ে থেকে নিজের ফোন নিয়ে busy হয়ে গেলো।
আমি কোন রকম রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম।ব্যাগটা বিছানার উপর ফেলে। বিছানার গাঁ ঘেসে বসে দুই হাঁটুর ভিতর মুখ গুঁজে অতীতের পাতায় ডুব দিলাম।

অতীতে………
আমি তখন সবে নাইনে উঠেছি।একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখলাম।বাসায় অনেক লোকজন এসেছে।আমি ভিতরে আসতেই সবাই আমার দিকে কেমন ভাবে দেখতে লাগলো। আমি ভালো ভাবে সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম এদের সবাইকেই আমি চিনি আমার কাজিনরা আর বড় আন্টি শশুড় বাড়ির লোক।আমি কিছুটা অবাক হলাম আর ভাবতে লাগলাম বাড়িতে কি কোন অনুষ্ঠান নাকি যে এত লোক এসেছে। হঠাৎ করে বড় আন্টির ননদ রাবেয়া আন্টি আমার কাছে এসে বলল
রাবেয়াঃ মাশাল্লাহ মেয়ে তো ভারি সুন্দর
বড় আন্টিঃ হুম আমার ইশা মা যেমন সুন্দরী তেমন লক্ষী।
এদের কথা শুনে অবাক হচ্ছি।এবার আমি বড় আন্টির দিকে তাকিয়ে বললাম
ইশাঃ বড় আন্টি মা কোথায়

সব মহিলারা আমার কথায় হেসে দিয়ে বলল এখন মা মা করবে আর বিয়ের পর জামাই জামাই করবে
বড় আন্টিঃ চুপ করোতো তোমরা যা মা তোর মা রান্না ঘরে আছে।

আমি স্কুল ব্যাগটা খুলে পাশের একটা টেবিলে রেখে দিয়ে দৌড়ে রান্না ঘরের উদ্দেশ্য গেলাম।রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম মা রান্না বান্না নিয়ে খুব ব্যস্ত।আমি মায়ের পাশে দাড়িয়ে নরম শুরে বললাম
ইশাঃ মা!!!!!!!
মা একবার আমার দিকে তাকিয়ে তারপর নিজের কাজে মন দিতে দিতে বলল
ইশা মাঃ আমি জানি তুই কি বলতে চাস।কিন্তু এখন আমি তোকে কিছু বলতে পারবো না যা হচ্ছে শান্তি মতন হতে দে কোন কথা বলবি না ইশা।
আমি শুধু হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলাম আর ভাবতে লাগলাম মা এসব কি বলছে। আমার তো সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।এরই মধ্যে অহনা আপু আমার কাছে আসলে আমি তাকে দেখে বললাম
ইশাঃ কেমন আছেন আপু
অহনাঃ ভালো আছি ভাবি
অহনা আপুর থেকে ভাবি ডাক শুনে আমি তো পুরো অবাক হয়ে বলে উঠলাম
ইশাঃকি বলছো আপু তুমি এসব
হঠাৎ দেখলাম কত গুলো মেয়ে এসে অহনা আপুর পাশে দাড়ালো। অহনা আপু তাদের দেখে আমাকে বলে উঠলো
অহনাঃ চলো ভাবি রেডি হতে হবে
ইশাঃমানে!!!
আমি অসহায় এর মতন মায়ের দিকে তাকালাম। দেখলাম মা তার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত
অহনা আপু আমার কানের কাছে এসে বলল
অহনাঃ এসব মানে টানে ভাইয়া আসলে বুঝতে পারবে।
আমি মনে মনে বলতে লাগলাম ভাইয়া মানে কে??
অতঃপর………….
মেয়ে গুলো আমাকে একটা বেনারসি শাড়ি পড়িয়ে দিলো।তার সাথে হালকা মেকাপ।গহনা,আমি এসব দেখে বুঝতে পারলাম আমার সাথে কি হতে যাচ্ছে।তবুও চুপ হয়ে থাকলাম কিছুই বললাম না।আর বলেই বা কি হবে কে শুনবে আমার কথা।আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে বসার ঘরে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। কাজি সাহেব এলো কিন্তু বর কে সেটা এখনও জানতে পারলাম না।আমার কাজিনরা পাশে বসে হাসি ঠাট্টা করতে লাগলো।আর আমি নিচুপ হয়ে বসে রইলাম।হঠাৎ করে অহনা আপু কোথা থেকে এসে বলে উঠলো।
অহনাঃ মা ভাইয়া এসেছে
বড় আন্টিঃশান চলে এসেছে
আমার কাজিনরা আমার পাশ থেকে উঠে দাড়িয়ে দরজার দিকে যেতে যেতে বলল
বর এসেছে বর!!!
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম পাগোল নাকি বললো শান ভাইয়া এসেছে। আর ওরা বর এসেছে বর এসেছে করছে।
অবশেষে শান ভাইয়া বাড়িতে ঢুকলো।আমি উনার দিকে তাকিয়ে পুরো অবাক সাদা শার্ট,ব্লু জিনসপ্যান্ট, সিল্কি চুল পুরো হিরোদের মতন লাগছে তাকে।আমি তাকাতেই দেখালাম উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।কারন সব সময় উনি একটা গম্ভীর মুখ নিয়ে থাকে শুধু আমার সাথে আর বাকিদের সাথে হেসে হেসে কথা বলে।হঠাৎ করে কাজি সাহেব বলে উঠলেন
কাজিঃ তাড়াতাড়ি ছেলেকে মেয়ের পাশে বসান আমাকে আরেক জায়গায় যেতে হবে
আমি এখনও ভাবছি বর কোথায়। এরই মধ্যে বড় আন্টি বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ শান গিয়ে ইশার পাশে বস
কথাটা শোনা মাএ আমি যেনো বড় সরো একটা শক খেলাম।তারমানে শান ভাইয়ার সাথে আমার ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো।কারন লোকটাকে আমি ভিষন ভয় পাই।আর তারই সাথে নাকি আমার বিয়ে।ভয়ে আমি আমার শাড়ি খামচে ধরলাম।হঠাৎ করে অনুভব করলাম শান ভাইয়া এসে আমার পাশে বসলেন। আর কাজি চট করে বিয়ে পড়াতে আরম্ভ করলেন। কিছুসময় পর কাজি আমাকে কবুল বলতে বললেন।আমার মুখ থেকে কোন কথাই বেড় হতে চাচ্ছিলো না আমি আমার শাড়িটা হাত দিয়ে আরো জোরে খামচে ধরলাম। তখনই অহনা আপু আমার কানের কাছে এসে বললেন
অহনাঃ ভাবি কবুল বলো
আমি মুখ তুলে অহনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম।অহনা আপু আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
অহনাঃ কি হলো ভাবি কোন সমস্যা
আমি না সূচক মাথা নাড়িয়ে বললাম না
প্রায় ১০ মিনিট পরে সবার জোরাজোরিতে কোনরকম ভাবে তিনবার কবুল বলে দিলাম।
কিন্তু আমি একটা বিষয় দেখে খুব অবাক হলাম আর সেটা হলো শান ভাইয়াকে যখন কাজি কবুল বলতে বললেন উনি চটপট বলে দিলেন।বিয়ে পড়ানোর পর আমরা দুজন দুজনকে আঙটি পড়ালাম। অবশেষে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।

বর্তমানে………………..
হঠাৎ করেই ইশার রুমের দরজায় নক পড়লো ইশা অতীত থেকে বেড়িয়ে গেলো। আসতে করে হাঁটু থেকো মাথা তুলে দরজার দিকে তাকালো।তারপর উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখ ওর বড় আন্টি মানে শাশুড়ী পেলেটে খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি বড় আন্টিকে হাতে খাবারের পেলেট দেখে বললাম
ইশাঃ বড় আন্টি তুমি শুধু শুধু খাবার আনতে গেলে কেনো আমি তো ভাইয়াকে বলেছি আমি খাবো না।

চলব।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে