মনের গহীনে শুধুই তুমি পর্ব-২৭+২৮

0
1160

#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_27+28
#Mst_Meghla_Akter_Mim

টিপ টিপ বৃষ্টির শব্দ এখনও অল্প অল্প কানে আসছে। পুরো রাত বৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশ এক মনমুগ্ধকর রূপ ধারণ করেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসছে। বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভালো হয় সে সত্ত্বে মেঘ রোদেরও ঘুম ভাঙেনি এখনও। ফজরের আজান হয়ে গেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে এখনও ঘুমিয়ে মেঘ – রোদ । ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেলো মেঘের। তখনই সে নিজেকে আবিষ্কার করলো রোদের বুকের মাঝে! রোদ দু হাতে জড়িয়ে রেখেছে মেঘ কে। কিন্তু কিভাবে মেঘ রোদের বুকের মাঝে আসলো তা বুঝতে পারছে না কারণ তাদের মাঝে তো কোল বালিশ দেয়া থাকে। মেঘ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না রোদ খুব শক্ত করে ধরে আছে। মেঘের ও বেশ ভালো লাগছে কিন্তু এখন উঠা দরকার নাহলে নামাজের সময় পেরিয়ে যাবে। মেঘ জোরে করে রোদের হাতে চিমটি কাটলো রোদ একটু নরে উঠলো কিন্তু মেঘ কে ছাড়ল না। মেঘ সরু চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,

-“বান্দর আপনি তাহলে ইচ্ছা করে আমায় জড়িয়ে ধরে আছেন। তবে আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে স্পর্শ করেছেন এই জন্য তো আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে।”

ভেবেই একটু হাসি দিয়ে মেঘের মুখ রোদের মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলো আর রোদ চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসি দিলো। মেঘের নিশ্বাস অনুভব করতে পারছে রোদ, রোদ ভাবলো হয়তো মেঘ ভালোবাসার পরশ একে দিবে! কিন্তু রোদের সে স্বপ্ন তে জল ঢেলে দিয়ে মেঘ রোদের গালে কামড় বসিয়ে দিলো!
সাথে সাথে রোদ চোখ খুলে মেঘের দিকে তাকালো কি বলবে যেনো খুঁজে পাচ্ছে না। অন্য দিকে মেঘের সৌন্দর্যে আর মেঘের হাসিতে যেনো রোদ হারিয়ে যাচ্ছে। রোদের তাকিয়ে থাকা দেখে মেঘ শয়তানী হাসি দিয়েই সাথে সাথে আবার রাগী রাগী চেহারা ফুটিয়ে তুলে বললো,

–“ছাড়ুন আমায়।”

রোদ কে ছাড়ার সুযোগ না দিয়েই মেঘ জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। ওরনা পাশ থেকে নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো আর এখনো রোদ শুয়ে শুয়ে মেঘ কে দেখছে। মেঘ রাগী দৃষ্টি ফেলে ভ্রু কুঁচকে বললো,

–“আমি আপ্নার বুকে কিভাবে আসলাম?”

রোদ উঠে বসলো। মুচকি হাসি দিয়ে কিছু না বুঝার ভান করে বললো,

–” আমি কিভাবে বলবো? হয়তো তুমি ভয় পেয়ে আমার বুকের উপরে মাথা রেখেছিলে।”

বলে মুখ চেপে হাসি দিলো। কারন মেঘ মোটেও আসেনি রাতে রোদই কোল বালিশ সরিয়ে মেঘ কে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়েছে। মেঘ কে জড়িয়ে ধরতে তার খুব ইচ্ছা করছিলো কিন্তু মেঘ কে বললে কখনোই ধরতে দিতো না। মেঘ বিছানা ছেড়ে উঠে বললো,

–” আমি মোটেও ভয় পায় নি। আপনার মতলব আমি খারাপ দেখছি কিন্তু।”

–“কি যে বলো না। তুমি তো আমার বউ তোমার সাথে আবার কিসের মতলব!”

মেঘ সরু চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,” আপনার পায়েল যদি জানে আপনি আমাকে এইভাবে রাতে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন তাহলে কি হবে ভাবতে পারছেন! ছি বলবে আপনার চরিত্রের ঠিক নেই!”

বলেই ওয়াশ রুমে চলে গেলো। বেশি সময় নেই নামাজের তাই আর দেরি করলো না। এইদিকে রোদ মেঘের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো। মনে মনে বললো,

–‘বাহ কি শয়তান! আমি ভাবছিলাম শুধু আমি জেনেও না জানার ভান করতে পারি কিন্তু এ তো দেখছি আমার থেকেও বড় খেলোয়াড়! নিজে জানে সেই পায়েল আবার পায়েল কে নিয়েই আমায় ঠ্রেট দেয়।”

কিছুক্ষণ বাদে মেঘ অজু করে বেরিয়ে আসলো। এখনও রোদ মেঘের কথা ভাবতেই ব্যাস্ত। মেঘ রোদের চোখের সামনে হাত নাড়াল আর রোদ যেনো ঘোর থেকে বেরিয়ে আসলো। রোদ কিছু বলার আগেই মেঘ বললো,

–” এখন সাত পাঁচ না ভেবে যান অজু করে আসুন নামাজ পড়বেন।”

রোদ বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বললো, “আজান দিয়েছে? আমি মসজিদে যায় তাহলে।”

–“হুম আজান দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। মসজিদে যেতে সময় পার হয়ে যাবে আপনি অজু করে আসুন একসাথে নামাজ পড়ব।”

–“ছেলেদের বাসায় নামাজ পড়া ঠিক না মেঘ।”

মেঘ জায়নামায রেখে কোমরে হাত দিয়ে বললো,” আমি জানি এত বলতে হবে না সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে বুঝলেন। আর না নামাজ পড়ার চেয়ে বাসায় নামাজ পড়া টায় ঠিক আর আমি আপনার বউ তাই আমার সাথে নামাজ পড়তে কি সমস্যা? শুধু পায়েলের সাথে পড়বেন তা ভেবে রেখেছেন? কিন্তু আপনি আজ আমায় জড়িয়ে ধরেছিলেন তাই আমার সাথেও নামাজ পড়তেই হবে আপ্নার। এইটাই আমার লাস্ট কথা!”

এক শ্বাসে কথাগুলো বলে মেঘ থামল। রোদ তাকিয়ে তাকিয়ে মেঘের কথা শুনল। মেঘের কথা শেষ হওয়ার পর মুচকি হাসি দিলো। মেঘ ভ্রু কুঁচকে বললো,

–” কি পড়বেন না?”

রোদ ওয়াশ রুমের দিকে গিয়ে মেঘের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,

–” বিবি সাহেবা কিছু বললে আমি না শুনে থাকতে পারি।”

বলে অজু করে নিলো। এ দিকে মেঘ মুচকি হাসছে। রোদের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিল ভাবতেই তার লজ্জা করছে। মেঘের আরো বেশি হাসি পাচ্ছে এইটা ভেবে যে সে পায়েল কে নিয়ে রোদের সাথে কত কি বললো কিন্তু সেই যে পায়েল!

দুজন নামাজ পড়ে নিলো। তার পরেই মেঘ যখন ঘর থেকে যেতে নিলো রোদ ওর হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো। মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রোদ বললো,

–” কি দোয়া করলে না বলেই কোথায় যাও?”

মেঘ নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,” কি দোয়া করলাম সেটা বলতে হবে কেনো?”

–“আমি তোমার স্বামী তাই বলতে হবে।”

–“হ্যাঁ স্বামী! যখন আপনার ইচ্ছা হবে স্বামীর অধিকার দেখাবেন আর অন্য সময়ে পায়েল পায়েল করবেন।”

বলে মেঘ মুখ ফুলিয়ে ফেললো। রোদ শয়তানী করে বললো,

–” কোথায় স্বামীর অধিকার দেখালাম? মিথ্যা দোষ যখন দিলে তাহলে অধিকার টা দেখায় তাইনা?”

বলেই রোদ মেঘের দিকে এগিয়ে আসতে নিলো। মেঘ পিছু হাঁটছে আর বলছে,” একদম এগিয়ে আসবেন না বলে দিলাম।”

কিন্তু রোদ কোনো কথা শুনছে না এগিয়ে ই যাচ্ছে। মেঘ ভয় পেয়ে কাঁপছে। শেষ পর্যন্ত আলমারি তে গিয়ে পিঠ ঠেকে গেলো মেঘের, রোদ একদম মেঘের কাছাকাছি গিয়ে শয়তানী হাসি দিলো। মেঘ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

–” সরুন প্লিজ।”

–“কেনো একটু স্বামীর অধিকার কাকে বলে দেখিয়ে দিবো না?”

–“না একদম না।”

মেঘ রোদ কে ধাক্কা দিলো কিন্তু রোদ সরছে না। কিছুক্ষণ মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকলো মেঘ ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। রোদ আলতো হাতে মেঘের হাত স্পর্শ করলো। মেঘ চোখ বন্ধ করেই বললো,

–” প্লিজ রোদ কিছু করবেন না প্লিজ।”

রোদ মেঘের ভয় দেখে মৃদু হাসল। বন্ধ চোখে মেঘ কে যেনো চোখ ভরে দেখছে রোদ। হাত আস্তে আস্তে বুকের বা পাশে নিয়ে আসলো। মেঘ অবাক হয়ে চোখ খুলে ফেললো। রোদ শান্ত কন্ঠে বললো,

–“এই বুকের স্পন্দন যেদিন তোমায় ভালোবাসবে আর যদি তুমিও ভালোবাস সেদিন ই স্বামীর অধিকার বুঝিয়ে দিবো তোমায় তার আগে না।”

মেঘ অবাক হয়ে বললো, “মানে? আপনি এতক্ষণ মজা করছিলেন?”

রোদ শান্ত গলায় বললো,” হয়তো আবার হয়তো না!”

মেঘ রোদের কথার মানে বুঝলো না। ঘর থেকে যেতে নিলো আর রোদ মেঘের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। দরজার সামনে যেতেই হঠাৎ মেঘের মাথা ঘুরে গেলো। দরজায় হাত রাখলো আর কোনোমতে বললো,

–” রোদ্দুর…”

বলার সাথে সাথে রোদ ছুটে গেলো আর মেঘ জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। রোদ মেঘ কে ডাকছে কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নেই। রোদের ডাকে বাড়ির সবাই চলে আসলো। আদিল চৌধুরী, রোজা চৌধুরী, আয়রা ঈশান চিন্তায় পড়ে গেলো। রোদ মেঘ কে কোলে করে বেডে শুয়ে দিলো। আর এদিকে ডক্টর কে কল করে আসতে বললো। রোদ মেঘের sence আসছে না এই জন্য যেনো পাগলের মত হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর মেঘের জ্ঞান ফিরে আসলো আর রোদ কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,

–“তুমি ঠিক আছো তো এখন?”

মেঘ মুচকি হেসে বললো, “হুম কিছু হয়নি তো।”

পাশে থেকে রোজা চৌধুরী হেসে বললো, “আরে রোদ চিন্তা করিস না এই সময়ে এইরকম মাথা ঘুরে যায় একটু।”

রোদ এই কথায় রেগে গিয়ে বললো, “আম্মু কি সব আজেবাজে কথা বলছো তুমি? মাথা ঘুরে যাওয়া স্বাভাবিক বলছো তোমার মাথা ঠিক আছে তো?”

রোজা চৌধুরী বললো, “তুই এতকিছু বুঝবি না।”

আয়রা আর ঈশান বললো,” তাই তো তুমি ভাবীর এমন অবস্থা দেখেও বলছো স্বাভাবিক!”

রোজা চৌধুরী মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” মা এই সময়ে এইসব হয়। প্রথম মা হতে চলেছ তাই বুঝতে পারছ না।”

মেঘ কথাটা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লো। রাগী চোখে রোদের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। রোদ নিষ্পাপ মুখে মাথা নাড়িয়ে না বোধক সম্বোধন করলো। মেঘ একটু হেসে বললো,

–“মা তা না এমনি।”

রোদ রেগে গিয়ে বললো,” আম্মু সবসময় এইসব ছাড়া কিছু ভাবতে পারো না? দেখছ মেয়েটা অসুস্থ আর তুমি এসব বলছো? আমি সারাদিন বাড়িতে থাকি না তুমি ওর দেখা শোনা করবে না ঠিকভাবে হ্যাঁ?”

রোদের কথায় আদিল চৌধুরী মনে মনে ভীষণ খুশি। মনে মনে বললো,” যাক শেষ পর্যন্ত তুই মেঘ কে তাহলে ভালোবেসে ফেললি।”

মেঘ উঠে বসতে নিতেই রোদ এক ধমক দিয়ে বললো,”তুমি নিজেকে কি ভাবো হ্যাঁ? চুপ করে শুয়ে থাকো।”

মেঘ আস্তে করে বললো,” তেমন কিছু তো হয় নি। এমনি মাথা ঘুরে গেছে।”

মেঘের কথা শেষ হতে ই ডক্টর চলে আসলো। ঈশান বললো, “ভাইয়া ডক্টর এসেছে।”

রোদ একটু শান্ত হয়ে ডক্টর কে বসতে দিয়ে সবকিছু বললো। ডক্টর চেক আপ করে মেঘ কে বললো,

–” খুব চিন্তা করো মনে হয়। আর ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করছো না।”

মেঘ উত্তর দেয়ার আগেই রোদ উতলা হয়ে বললো, “ডক্টর ওর সিরিয়াস কিছু হয়নি তো?’

রোজা চৌধুরী বললো, “ডক্টর আমার বউ মা মা হতে চলেছে তাইনা?”

আদিল চৌধুরী ডক্টরের কাছে এসে বললো,” চুপ তোমরা এখন। এত কথা বলে কেউ।
ডক্টর মেঘের কি হয়েছে?”

–“মিস্টার চৌধুরী চিন্তা করার কিছুই নেই। অতিরিক্ত চিন্তার জন্য শরীর অনেক দুর্বল হয়ে গেছে এই জন্য মাথা ঘুরে গেছে। মনে হয় ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করে না।”

রোদ বললো, “ডক্টর আজ থেকে ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া না করলে আমি কি করব তখন বুঝবে। আর ডক্টর মেডিসিন কিছু লাগবে না?”

ডক্টর কয়েকটা মেডিসিন প্রেসক্রাইভ করে দিয়ে বললো,”এই ওষুধ গুলো পনেরো দিন নিয়ম করে খাওয়াবে। আর মামনি টেনশন কম করবে কেমন?”

মেঘ হেসে বললো, “জী আঙ্কেল।”

মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে ডক্টর উঠলো আর আদিল চৌধুরী ডক্টর কে এগিয়ে দিতে গেলো। রোদ প্রেসক্রিভশন ঈশান কে দিয়ে বললো,

–“ভাই তাড়াতাড়ি মেডিসিন গুলো নিয়ে আয়।”

ঈশান বললো,” ঠিক আছে ভাইয়া তুমি মেঘের খেয়াল রাখো।
আর মেঘ একটু নিজের খেয়াল রাখ প্লিজ।”

মেঘ মাথা নাড়াল। ঈশান তাড়াহুড়ো করে ফার্মেসির উদ্দেশ্যে রওনা হল।
.
রোদ মেঘের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,” সারাদিন কিসের চিন্তা এত তোমার?”

মেঘ ইনোসেন্ট মুখ করে বললো,” কোনো চিন্তা নেই তো আমার।”

রোদ ধমক দিতে যেতেই আয়রা থামিয়ে বললো,” ভাইয়া এত ধমক দিস না। ভাবি অসুস্থ এখন, সবসময় রাগ নিয়ে থাকিস কেনো?”

আয়রা মেঘের পাশে বসলো। এ দিকে রোজা চৌধুরী সাত পাঁচ ভাবছে মেঘ তা খেয়াল করে বললো,” মা!”

রোজা চৌধুরী চমকে উঠার মত হয়ে উঠলো। মেঘের দিকে এসে বললো,

–” তার মানে তুমি মা হচ্ছো না? আমার দাদুমনি হওয়া হল না!”

মেঘ হেসে মাথা নাড়াল। রোদ রেগে বললো,

–” মা আবার!”

–“আরে তুই কি বুঝবি আমার কথা, এই সময় হোক তোর।”

বলেই মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” রেস্ট নাও মা আমি স্যুপ বানিয়ে আনি।”

–“মা আমি স্যুপ খাব না। ভালো লাগেনা।”

–” না ভালো লাগলেও খেতে হবে।”

রোজা চৌধুরী চলে গেলো। ঘরে এখন আয়রা রোদ আর মেঘ। ইশা চৌধুরী ঘরের বাহিরে থেকে রোদের মেঘের প্রতি চিন্তা কেমন তা পর্যবেক্ষণ করে কিছুক্ষণ আগে চলে গেছে। রোদ মেঘের কাছে বসে আয়রার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,

–” তোকে কি এখন আলাদা করে বলতে হবে যে বাহিরে যা! মেঘ কে একটু রেস্ট নিতে দে।”

মেঘ বললো, “একা একা আমার ভালো লাগেনা আয়রা থাকো না।”

রোদ আয়রা কে কিছু বলতে না দিয়ে বললো, “এখন আমি আছি না? আমি না থাকলে আয়রা থাকবে।”

আয়রা উঠে গিয়ে রোদের মাথা মেরে বললো, “তুই তোর বউ এর সাথে একা থাকবি এইটা বলতে এত কথা ঘুরিয়ে বলিস কেনো? লজ্জা করে? ”

–” ওই তোর লজ্জা করে না বড় ভাই কে মারতে? ”

আয়রা রোদের সামনে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বললো,”তোর নিজের বউ এর সাথে সময় কাটানোর কথা বলতে লজ্জা লাগতে পারে কিন্তু আমি তোর মত না বুঝলি।”

বলে রোদের কান টেনে দৌড় দিলো। রোদ রেগে ওকে তারা করতে গেলো কিন্তু ঘরের দরজার বাহিরে গেলো না।

.

মেঘ হাসছে রোদ আর আয়রার ঝগড়া দেখে আর সাথে সাথে একটুও পরেই মেঘের চোখে খানিকটা জল এসে গেলো। যদি মেঘ হারিয়ে না যেতো তাহলে আজ হয়তো সে আর প্রিন্স এমন ই ঝগড়া করত। রোদ দরজা থেকে মেঘের হঠাৎ চুপ হওয়া দেখে ধীর পায়ে মেঘের পাশে এসে বসল । মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

–” কি হয়েছে?”

মেঘ নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে বসলো। ম্লান মুখে বললো, “কিছুনা এমনি।”

রোদ তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে কিন্তু আর কোনো উত্তর দিলো না। রোদ হয়তো মেঘের মনের কথা বুঝেছে। নীরবতা ভেঙ্গে মেঘ বললো,

–“খুব বেশি বিরক্ত করে ফেললাম আপনাদের তাইনা? মাথা ঘুরে যাবে বুঝতে পারি নি। সরি!”

রোদ মেঘ কে পর্যবেক্ষণ করে বললো, “বড্ড পাকা হয়ে গেছো তুমি তাইনা?”

মেঘ রোদের দিকে তাকালো কিছু না বুঝে। বললো,”মানে? কি করলাম আমি?”

–“কি করো নি তুমি তাই বল? এই যে এখনই বললে কি সব আজেবাজে কথা। আমরা সবাই এক পরিবার মেঘ আর তোমার কিছু হলে আমরা বিরক্ত হব কেনো?”

–“না মানে আপনাকে অনেক অস্থির লাগছিল তাই…”

মেঘ বলতে গিয়ে থেমে গেলো। রোদ ভ্রু কুঁচকে বললো,

–” অস্থির লেগেছে বলে সেটা বিরক্তি প্রকাশ করেছে বুঝি? আজ প্রথম শুনলাম এই কথাটা। তোমাকে নিয়ে আমার চিন্তা হয় মেঘ খুব।”

মেঘ হা করে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে। রোদও মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে যেনো চোখে চোখে ভালোবাসার আদান প্রদান করছে। দুজন চাইছে দুজনের চোখের ভাষা বুঝতে। মেঘ ঘোরের মাঝেই বললো,

–” কেনো চিন্তা হয়? তাহলে কি ভালবাসেন?”

রোদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোন বেজে উঠলো। মেঘের আর শোনা হলো না রোদের উত্তর টা। রোদ ফোনে কথা বলে মেঘের সামনে আসতেই মেঘ খেয়াল করলো রোদ কে একটু চিন্তিত লাগছে। মেঘ জিজ্ঞেস করলো,

–“কে কল করেছিলো? আপনাকে চিন্তিত লাগছে রোদ।”

রোদ একটা শ্বাস নিয়ে বললো,” রুদ্র কল করেছিলো একটা important কাজ পড়ে গিয়েছে। কিন্তু তোমার এই অবস্থায় তোমায় রেখে যেতে ইচ্ছা করছে না।”

মেঘ মুচকি হেসে বললো,” আপনি কি কাজ করেন এখনও কিন্তু বললেন না আমায়। আর এই যে মিস্টার রোদ্দুর আমার কিছুই হয়নি। একটু মাথা ঘুরলে কিছুই হয় না। এত চিন্তিত হয়েছেন আপ্নার পায়েল জানলে একদিনও আপ্নার কাছে থাকবে না হুম! বলে দিলাম।”

রোদ হেসে ফেললো। বললো,” কি কাজ করি নিশ্চয় বলব কিন্তু এখন না। এখন আমার যেতে হবে। নিজের খেয়াল রেখো কেমন? আমি ফোন করে শুনব কিন্তু।”

মেঘ মাথা নারিয়ে বললো,” জো হুকুম!”

বলে মুচকি হাসি দিলো। রোদ ও একটু হাসি দিয়ে বললো,”সন্ধ্যা সাত টায় আসব আজকে।”
___________
ঈশান সামনের কোনো ফার্মেসি খোলা পেলো না তাই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটা ফার্মেসি তে গেলো। পুরো রাত বৃষ্টি হয়েছে তাই হয় তো কেউ ফার্মেসি খুলে নি। বেশ কিছুদূর আসার পর ঈশান গাড়ি পার্ক করে ওষুধ নেয়ার জন্য নামলো। ফার্মেসি তে কোনো customer নেই তাই খুব বেশি দেরি ও করতে হবে না ঈশানের সেটা ভেবে ঈশানের ভালো লাগলো। ঈশান গিয়ে প্রেসক্রিপশন দিলো আর লোক টা ওষুধ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ঈশান চুপ চাপ দাঁড়িয়ে নিউজফিড স্কোল করছে। এমন সময়ে হঠাৎ একটা মেয়ে তাড়াহুড়ো করে এসে বললো,

–“আঙ্কেল প্লিজ আগে আমার মেডিসিন গুলো দিন।”

লোক টা নির্লিপ্ত ভাবে বললো, “তা হবে না একটু দেরি করুন একটা ওষুধ খুঁজে পাচ্ছি না সেটা উনাকে দেয়ার পর আপনাকে দিবো। উনি আগে এসেছেন তো।”

মেয়েটি উনার কথা শুনার পরও বললো,” আমার খুব দরকার এই মুহূর্তে ওষুধ গুলো। আমাকে আগে দিন প্লিজ।”

মেয়েটি আরো মিনতি করতে থাকলো। এতক্ষণ ঈশান ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিল কিন্তু মেয়েটির আকুতি শুনেও লোক টা আগে ওষুধ দিচ্ছে না সেজন্য ফোন পকেটে রেখে লোক টার দিকে তাকিয়ে বললো,

–” উনি এতো করে বলছেন উনাকে দিয়ে দিলেই তো হয়।”

–” কিন্তু আপনি তো আগে…”

ঈশান হাত সামনে দিকে উনাকে থামিয়ে বললো,” আমার একটু দেরি হলেও প্রবলেম নেই কিন্তু উনার কথা শুনে মনে হচ্ছে একটু দেরি হলেও প্রবলেম হয়ে যাবে। তাই আপনি উনার মেডিসিন গুলো আগে দিয়ে দিন।”

–“ঠিক আছে।”

লোক টি মেয়েটির প্রেসক্রিপশন নিয়ে মিলিয়ে মিলিয়ে ওষুধ বের করতে থাকলো। ঈশান আবারো ফোনের দিকে মনোযোগ দিলো। এই ছেলেটা এমন ই কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না। মেয়ে বন্ধু বলতে শুধু মেঘ ই তার কাছে। অবশ্য মনে মনে মেঘ কে ঈশান পছন্দ ও করত কিন্তু ভাগ্যের লীলা খেলায় মেঘ এখন ওর ভাবি! মেয়েটির মুখে কৃতজ্ঞতা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বললো,

–“ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক বড় উপকার হলো আমার। আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।”

মেয়েটি একা একা বলে যাচ্ছে কিন্তু ঈশানের সেদিকে কোনো নজর নেই। মনে হচ্ছে সে কোনো কথায় শুনতে পারছে না। মেয়েটি কিছুটা বিরক্ত হলো কিন্তু তা প্রকাশ করলো না। ঈশানের চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বললো,

–” এই যে মিস্টার আপ্নার সাথে কথা বলছি।”

ঈশান এইবার স্বাভাবিক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো। এক অদ্ভূত ভালো লাগা হৃদয়ে বয়ে গেলো। মেয়েটি পাতলা গড়নের,উজ্জ্বল শ্যাম বর্ন গায়ের রং, চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। তবুও এই মায়াবী চেহারা ঈশান কে মুগ্ধ করে দিলো। ঈশান ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি এইবার বিড়বিড় করে বললো,

–“এই মানুষটি পাগল নাকি! কথা বললেও শুনে না আবার একভাবে তাকিয়ে আছে।”

এর মাঝে ফার্মেসির লোক টা বলে উঠলো, “আপনার মেডিসিন গুলো নিন।”

উনার কথায় ঈশানের ধ্যান ভাঙল। মেয়েটি মেডিসিন নিয়ে বিল পে করতে নিলো। ঈশান মাথা চুলকে বললো,

–“কিছু বলছিলেন মনে হয়। আরেকবার বলা যাবে?”

মেয়েটি একবার ঈশানের দিকে তাকিয়ে বললো,” ধন্যবাদ বলেছি আপনাকে।”

বলেই ওষুধ গুলো নিয়ে যেতে নিলো। ঈশান পাশে গিয়ে বললো, “আমি এগিয়ে দিবো?”

মেয়েটি ঈশানের দিকে না তাকিয়ে বললো,” না আমি যেতে পারবো।”

কথাটা বলে আর থামল না মেয়েটি। দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেলো। ঈশান মেয়েটির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

–” এইবার হয়তো কাউকে পেয়ে যাব। কিন্তু নাম ই তো শোনা হলো না!”
____________
দশ টা পার হয়েছে সবে। মেঘ ঘরে বসে আছে সাথে আয়রা। ঘরে বসে বসে মেঘের বিরক্ত লাগছে কিন্তু কিছু করার নেই এই সময়ের মধ্যেই রোদ প্রায় দশ পনেরো বার কল করে জানতে চেয়েছে মেঘ কি করছে। মেঘ বিরক্ত মুখ করে আয়রা কে বললো,

–“তোমার ভাইয়া এমন কেনো? এতো প্যানিক করার কি আছে বলতো? আমার তো কিছুই হয় নি।”

আয়রা একটু কেশে বললো, “এইটাই মনে হয় ভালোবাসা ভাবি। তাহলে কি ভাইয়া ও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছে!ভালোবাসা কত সুন্দর!”

কথাটা বলতে নিয়ে আয়রা আনমনে কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো। মেঘ আয়রার চেহারা কয়েকবার দেখে আয়রার গাল টেনে বললো,

–“পাকনা বুড়ি হয়েছ! ভালোবাসা কত সুন্দর তাইনা? দিহানের থেকে এইসব শিখেছ তাইনা!”

আয়রা দাঁত কেলিয়ে বললো, “ভালোবাসার কথা শিখিয়ে দিতে হয় না ভাবি! এইসব কথা তো আপনাআপনি চলে আসে।”

মেঘ মুখ দিয়ে শ্বাস ছেড়ে বললো, “বাহ্ বাহ্ প্রেমময়ী বোন আমার।”

মেঘ আয়রার কথার মাঝে হুট করে দৌড়ে ঈশান চলে আসলো। ঈশান কে দরজার সামনে দেখেই আয়রা উঠে গিয়ে বললো,

–“গেলি সাত টার সময়ে আর আসলি দশ টার সময়ে! কি করলি এতক্ষণ? কারো সাথে গল্প শুরু করেছিলি নাকি?”

ঈশান আয়রার কথার উত্তর না দিয়ে ঘরে গিয়ে মেডিসিন রাখলো। মেঘ ঈশান কে দেখে মুচকি হাসি দিলো। ঈশান মেডিসিন আর এক গ্লাস পানি মেঘ কে দিয়ে বললো,

–“নে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে এগুলো।”

এগিয়ে আয়রা রেগে ঈশানের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,”তোকে কিছু বলেছি শুনতে পারিস নি?”

–“তুই ছোট হয়ে পাকা পাকা কথা বললে তার উত্তর দিবো কিভাবে?”

–“কি আমি পাকা কথা বলছি!”

মেঘ ওদের থামিয়ে বললো, “এখন ঝগড়া করো না। ঈশান তোর দেরি কেনো হল? রাস্তায় কোনো প্রবলেম হয়েছিল কি?”

ঈশান মেঘের সামনে বসে বললো, “না রে। সব ফার্মেসি বন্ধ তাই একটু দূরে যেতে হয়েছিল। আর তোকে একটা কথা বলার ছিল।”

–“হুম বল।”

আয়রা ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। ঈশান আয়রার দিকে তাকিয়ে বললো, “তুই ছোট মানুষ তুই যা এখন।”

আয়রা মুখ ফুলিয়ে বললো, “ভাবিও তো ছোট ই।”

–“তোর ভাবি ছোট কিন্তু আমার বন্ধু তা জানিস তো। এখন যা না বোন আমার।”

আয়রা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো। মেঘ শান্ত কন্ঠে বললো, “কি এমন কথা বলবি যে আয়রা কে চলে যেতে বললি?”

ঈশান মুখে হাসি টেনে বললো, “একটা মেয়েকে আমার ভালো লেগেছে।”

কথাটা শুনেই মেঘ ভীষণ খুশি হয়ে গেলো। উৎফুল্ল মুখে বললো,” নাম কি মেয়েটার? বাসা কোথায়? কোথায় পরিচয়? আমার সাথে কবে দেখা করাবি?”

মেঘ গড় গড় করে এতগুলো প্রশ্ন করে ফেললো। ঈশান মুখ শুকনো করে বললো, “কিছুই জানি না।”

–“মানে?”

–“মানে হল আজকেই মেয়েটি কে দেখেছি মেডিসিন নেয়ার সময়ে আর কিছুই না।”

বলে ঈশান মন খারাপ করে ফেললো। মেঘ মুচকি হেসে ঈশানের হাত ধরে বললো,

–“এত মন খারাপ করিস না। সে যদি তোর ভাগ্যে থাকে নিশ্চয় আবারো দেখা হবে মিলিয়ে নিস।”

ঈশান মেঘের কথায় ভরসা পেলো কিছুটা। শুধু মুখে হাসি ফুটে তুললো।মেঘ এমন ই সবসময় ঈশান কে মনের জোর বাড়াতে সাহায্য করেছে।
_________
মেঘ গোসল করে বেরোতে ই দেখতে পেলো তার ঘরে ওর দুই মা বসে আছে। মানে মিমি হাসান আর মৌ ইসলাম। মেঘ অবাক হয়ে গেলো উনাদের দেখে। মেঘ কে বেরোতে দেখেই দুজন এগিয়ে গিয়ে চিন্তিত মুখে বললো,

–“তোর শরীর খারাপ একবার তো কল করবি। এখন কেমন আছিস মা?”

মেঘ দুজনের মুখের দিকে তাকালো। আজ মিমি হাসান কে হালকা লাগছে। মেঘ দুজন কে বসিয়ে বললো,

–“তোমরা কখন আসলে তা বল? আর তোমাদের কে বললো আমার শরীর খারাপ?”

মিমি হাসান বললো, “তুই না বললে কি হবে রোদ কল করেছিলো।”

মেঘ মৌ ইসলামের দিকে তাকালো। উনি কোনো উত্তর না দিয়ে নিজে উঠে মেঘ কে বসিয়ে দিয়ে বললো,

–“এত প্রশ্ন করিস কেনো সবসময়? এমনিতে শরীর খারাপ বস, রেস্ট নে। আর এখনো মাথা ঘুরছে কি মা?”

মেঘ মৌ ইসলামের দিকে তাকিয়ে সব কথা শুনছে। মৌ ইসলাম মেঘের মা তা জানার পর আজ প্রথম মৌ ইসলাম মেঘের সামনে। মেঘের ইচ্ছা করছে জড়িয়ে ধরে বলতে যে মা আমি তোমারই মেয়ে মা। কিন্তু এখন যে তা বলার সময় হয় নি। মেঘের চোখে পানি ছল ছল করছে। মিমি হাসান মেঘ আর মৌ ইসলাম কে দেখছে। উনার চোখেও জল কিন্তু এইটা কষ্টের নয় মৌ ইসলাম এতদিন কত কষ্টে ছিল তা অনুভব করতে পারছে মিমি হাসান।

মিমি হাসান নিজেকে শক্ত করে মেঘের কাঁধে হাত রেখে বললো, “মেঘ!”

মেঘ স্বাভাবিক হয়ে চোখের জল মুছে নিলো। মৌ ইসলাম বললো, “কান্না করছিস কেনো? কষ্ট হচ্ছে তোর খুব তাইনা?”

মেঘ বললো, “না মামনি এইটা আনন্দের কান্না।”

“কিসের আনন্দ? “-মৌ ইসলাম জিজ্ঞেস করলো।

মেঘ মুচকি হেসে মৌ ইসলামের হাতে হাত রেখে বললো,”এইযে আমার দুই মা কে একসাথে দেখে। এখন নিজেকে পুরোপুরি সুস্থ লাগছে।”

মৌ ইসলাম মুচকি হাসি দিলো। উনার গালের টোল পড়া দেখতে মেঘের খুব ভালো লাগে। মেঘ টোল পড়া জায়গায় হাত দিয়ে বললো,

–“উফ আমার কেনো টোল পরে না মামনি?”

মিমি হাসান আর মৌ ইসলাম হেসে উঠলো মেঘের ছোটদের মত কথা শুনে। মিমি হাসান মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

–“সবার টোল পড়লে টোল এর স্পেশালিটী আর থাকতো কই?”

–“তাও তো! আচ্ছা মাম্মা পাপ্পা আসছে?”
–“হুম আসছে।”
মেঘ মৌ ইসলামের দিকে তাকিয়ে বললো, “মামনি ভাই আর আঙ্কেল এসেছে?”

–“হুম এসেছে। নিচে বসে আছে।”

মেঘ আর বসে থাকল না। উঠে বললো, “চলো নিচে যাবো সবার সাথে দেখা করব।”

সবার সাথে দেখা করে গল্প করলো মেঘ। মেঘের আজ প্রচণ্ড ভালো লাগছে কারণ নিজের পুরো পরিবার তার সাথে। মিমি হাসান আর প্রতীক হাসান বিকেলে বাসায় চলে গেলো। মেঘ জোর করায় প্রিন্স আর মৌ ইসলাম থেকে গেলো। নীল ইসলামের কিছু কাজ ছিল তাই আর থাকা হলো না।
_________
সূর্য অস্ত হবে হবে এখন। আকাশে গোধূলির মেলা বইছে। মেঘ আলমারি থেকে সেই গোলাপি আর সাদা মিশ্রণের শাড়ি বের করলো। অবাক করা বিষয় আজকেও চাবি টা খুঁজতে হয় নি মেঘের। শাড়ি টা বের করে আলতো করে স্পর্শ করে একটু হাসল। আস্তে আস্তে বললো, এ

–‘ই শাড়ি দেখে একদিন কেঁদেছিলাম কিন্তু আজ দ্বিগুণ আনন্দ হচ্ছে।”

মৌ ইসলামের থেকে শাড়ি টা পড়িয়ে নিলো মেঘ। মৌ ইসলাম সুন্দর করে সাজিয়ে ও দিলো। সাথে একটা নজর টিপ লাগিয়ে দিলো নিজের চোখের কাজল দিয়ে। সবকিছু শেষে মৌ ইসলাম বললো,

–“শাড়ি কেনো পড়লি? রোদের সাথে কোথাও যাবি বুঝি?”

মেঘ মুচকি হেসে মৌ ইসলাম কে জড়িয়ে ধরে বললো,” না মামনি এমনি একটু ইচ্ছা হল শাড়ি পড়তে।”

বলে ফোন বের করে বললো,” মামনি একটা সেলফি হয়ে যাক?”

মৌ ইসলাম আর মেঘ কয়েকটা ছবি উঠাল। এই প্রথম মা মেয়ে ছবি উঠাল। মেঘের ভীষণ ভালো লাগছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাতটা বাজতে আর মাত্র পনেরো মিনিট। রোজা চৌধুরীর ডাকে মৌ ইসলাম নিচে গেলো। মেঘ আপন মনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখলো। আজ মেঘের নিজেরই নিজেকে ভাল লাগছে, ইচ্ছা করছে নিজেকে দেখতে কিন্তু বেশি দেরি করে ফেললে রোদ চলে আসবে। তাই আর দেরি না করে ঘরে টেবিলে একটা চিরকুট রেখে ছাদে চলে গেলো।

.
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে