ভালোবাসি প্রিয় তোমাকে পর্ব-০৮

0
1001

গল্পঃ #ভালোবাসি প্রিয় তোমাকে
পর্বঃ ০৮ (বোনাস)
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

বিকেলে নিষান ভাইয়ার পুরো পরিবার আমাকে দেখতে এলো। এসেই আন্টি সবার সামনে আমাকে
জিজ্ঞেস করেন,

‘নিরা, তোমার নাকি ডায়রিয়া হয়েছে রাস্তার ধারের ফুচকা খেয়ে। এখন শরীরের কি অবস্থা? ‘

সবার সামনে এমন প্রশ্নে আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম।
আজকে হয়ত আমার জন্য লজ্জা দিবস। আমি ওনাকে বললাম,
‘এই তো এখন ভালোই।’

নিষান ভাইয়া এসেই মামির কাছ থেকে দা নিয়ে তাদের আনা ডাব কাটলেন আমার জন্য। তারপর লিজা আপুকে দিয়ে ডাবের পানি পাঠালেন। আমি তখন ভিতরের রুমে এসে বসেছি। লিজা আপু আমার হাতে ডাবের পানি দিতে দিতে বললেন,

‘আমার দেবরটা যে এতো কেয়ারিং, এতো রোমান্টিক। আগে জানতাম না। কি ভালোবাসা রে বাবা! ডায়রিয়া হয়েছে শুনেই ফলমূল নিয়ে দেখতে
চলে এসেছে। ‘

নিরা নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ইশ, লিজা আপু সবার মত তুমিও আমাকে পঁচাবে।’

‘সব আমার জন্য হয়েছে লিজা আপু। আমি ফোনে নিষান ভাইয়াকে বলেছিলাম নিরাপু ডায়রিয়ার রোগী। তাই উনি এসেছেন। আমাকে সবাই থ্যাংকু দেও।’ (মিরা)

‘তোকে ধরে লা’থি মা’রা উচিত। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সবাইকে বলেছিস আমার ডায়েরিয়া হয়েছে। ‘(নিরা)

‘নিরা ঝগড়া বাদ দে তো। এখন আর ঝগড়া করিস না। আমি গেলাম আমার শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে। তুইও একটু পরে আয়।’ (লিজা)

‘আচ্ছা। ‘

লিজা আপু যেতেই রিমি আমাকে বলল,
‘এই যে তোর জামাইয়ের সাথে তো আমি এখনো কথা বলি নি। পরিচয় করিয়ে দিবি না?’

‘ নতুন করে কি পরিচয় করিয়ে দিব? তুই তো নিষান ভাইয়াকে চিনিসই, আর ওনিও তোকে চিনে। তোর কথা বলতে ইচ্ছে করলে গিয়ে কথা বল।’

‘চিনলেও, আমার শরম করে। এখন তো আমি তার শ্যালীকা আর আগের হিসাব তো আলাদা। তুই আমার সাথে আয়।’

আমি রিমিকে নিয়ে নিষান ভাইয়ার কাছে গেলাম।
নিষান ভাইয়া সোফার রুমে বসে ছিলেন।
রিমিকে দেখিয়ে ওনার উদ্দেশ্যে বললাম,

‘এই যে এটা আপনার শালী। দেখুন। আপনার সাথে নাকি ওর পরিচয় হয় নি? তাই নিয়ে এলাম।’

নিষান হেসে দিয়ে বলল,
‘পরিচয় না হলেও আমি ওকে চিনি। ওর নাম রিমি। ওর মত ভদ্র মেয়ে দুনিয়ায় আর দুইটা নাই তুমি বলেছিলে নিরা। তা বসুন শালী সাহেবা..

আমরা তিনজন মিলে অনেকক্ষন আড্ডা দিলাম।
.
.
.
দেখতে দেখতে কেটে গেছে পাঁচদিন। আজকে নিরার গাঁয়ের হলুদ। নিরা ভাবছে গত দশদিন আগে সে
তার মামাতো বোনের বিয়েতে এসেছিল। অথচ দশদিনের ব্যবধানে রাত পোহালে তার বিয়ে। নিরা কখনোই ভাবে নি এভাবে হুট করে বিয়ে হয়ে যাবে।
এক্সাম আর বিয়ে দুইটাই অন্যের হলে মজা লাগে কিন্তু আপাতত দুইটাই তার ঘাড়ে চেপে আছে।
.
হলুদের বউ সেজে স্টেজে বসে আছে নিরা। ভালো লাগা, খারাপ লাগা দুইটাই লাগছে তার। এতদিন
অন্যদের বিয়ের সময় কেউ কাঁদলে নিরার হাসি
পেতো, আজ নিরার নিজেরই বুকের ভিতর ভীষণ
খারাপ লাগছে তার বাবা-মায়ের জন্য, মিরার জন্য।
হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। মাইশা, রিমি,তিন্নি ,মিরা
ওরা সাজগোজ করে ঘুরা ফেরা করছে। মাইশা
ওর মায়ের চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে। সম্পর্কে মাইশাও মামাতো বোন।
মাইশা আর রিমি নিরাকে হলুদ ছোঁয়াতে গেল।
মাইশা নিরাকে কনুই দিয়ে গুঁতা দিয়ে বলে উঠল,

‘শেষমেষ আমাদের সবার ক্রাশ বয়টাকে তুই বিয়ে করে ফেললি? আমাদের তো পাত্তাই দিলো না তুই
পাত্তা পেলি কীভাবে? ‘

‘এটাই নিরার জাদু। নিরা কাউকে পাত্তা দেয় না, নিরাকেই সবাই পাত্তা দেয়। ‘
বলে নিরা হেসে দেয়।
.
রাত বারোটায় নিষান আর ওর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে নিরার
হলুদে উপস্থিত হলো। যদিও নিরার হলুদের অনুষ্ঠান
আরও একঘন্টা আগে শেষ হয়েছে। স্টেজে বসেই নিরা মেহেদী দিচ্ছিল। হঠাৎ কেউ একজন বলল, নিষান এসেছে। নিরা প্রথমে বিশ্বাস করে নি এতো রাতে নিষান আসবে কোথা থেকে? পরে নিষানকে
দেখে বিশ্বাস করল। নিষান এসেই নিরার গালে হলুদ লাগিয়ে দিল।

‘তোমাকে হলুদ লাগাতে সেই দূর থেকে চলে এসেছি। নিজের বউয়ের হলুদের অনুষ্ঠান বলে কথা।’

‘আহারে,, তা আপনাদের বাড়িতে হলুদের অনুষ্ঠান করেন নি?’

‘সব মেয়ে তো তোমাদের বাড়িতেই, আমাদের বাড়িতে কেউ নেই, সব ছেলে। ছেলেদের দিয়ে কি হলুদের প্রোগ্রাম জমে?’

‘আসুন, আপনাকেও লাগিয়ে দেই।’ বলে পুরো মুখে
হলুদ মাখিয়ে দিয়ে হাহা করে হেসে দিলাম। হাসি দিয়ে সারতেও পারলাম না নিষানও আমার
পুরো মুখে মাখিয়ে দিয়ে হাহা করে হেসে দিল।

এরপর নিষান ওর বন্ধুদের নিয়ে কিছুক্ষন নাচল। নিরা নিষানের নাচ দেখে হা করে তাকিয়ে রইল। ও মেয়ে হয়েও এত সুন্দর নাচতে পারে না। রাত দেড়টার দিকে নিষান ওর বন্ধুদের নিয়ে চলে গেল।
মেহেদী উঠিয়ে আমার ঘুমাতে ঘুমাতে রাত তিনটা বেজে গেল। ঘুমে চোখ লেগে আসছিল হঠাৎ বসার ঘর থেকে আম্মু-খালামনির চিল্লাচিল্লি শুনতে পেলাম। শোয়া থেকে উঠে বসার ঘরে গিয়ে যা শুনলাম তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
নিষান ভাইয়াদের গাড়ি নাকি যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট করেছে….

#চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে