#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_20
__________________
” এই যে শুনছেন ? আর কতক্ষণ হাটতে হবে ? আমি তো বুঝতে ই পারছি না এ-ই রাস্তার শেষ কোথায়! ”
ইলমি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কথা টা বলে উঠলো ,
কিন্তু রুদ্র তো নির্বিকার হেটে যাচ্ছে . যেন মনে হচ্ছে ইলমির কথা টা শুনতেই পায় নি , ইলমির কথায় পাত্তা না দেওয়ায় বেচারী তো ভীষন বিরক্ত ,
ইলমি খেয়াল করলো রুদ্র তাকে ছেড়ে অনেক টা পথ এগিয়ে গেছে তাই সে রুদ্রের পিছনে পিছনে দৌড় দিলো , দৌড়ে এসে রুদ্রের পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাটতে হাটতে বলল ,
” এই যে শুনছেন ? ”
“……… ”
” আমি কিন্তু আপনাকে ডাকছি ! এই যে শুনছেন ? নাম টা ও তো জানি না দুররর ..
ইলমির কথা যেন রুদ্রের কানে যাচ্ছে ই না এমন একটা ভাব নিয়ে হাটছে , এবার ইলমির ভীষণ রাগ হলো , সাহায্য করেছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি ? এত ভাব দেখানোর কি আছে ? আজব ,
এবার ইলমি বেশ রেগে গেলো ,
” ওই বেডা তোরে ডাকতাছি তুই শুনোস না ? কানে কালা তুই ? ভাব দেখাস তুই আমারে ? এহহ ভাব দেইখা তো মনে হইতাছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ! খচ্চর পোলা ”
বলেই সে দাড়িয়ে দুই হাতে মুখ চেপে ধরলো , এই যাহ্ , মুখ ফসকে মনের কথা গুলো রাগের বসে বেরিয়ে গেলো , এখন ?
ইলমি চোখ বন্ধ করে বিপদের দোয়া পড়তে পড়তে আস্তে আস্তে এক চোখ খুলল , পরিবেশ পরিস্থিতি বোঝার জন্য ,
রুদ্র ভ্রু কুচকে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে তার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ,
রুদ্র র ভাব ইলমির কাছে মোটেও সুবিধা জনক লাগছে না তাই সে ধীরে ধীরে মুখ থেকে হাত টা সরিয়ে, মেকি হাসি দিয়ে বলল ,
” হে হে হে , আপনি ওমন করে কি দেখছেন সাদা বিল… না থুক্কু ভাইয়া ? আমি না ইচ্ছে করে বলি নি , মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে , এতে আমার কি কোন দোষ আছে ! ”
হঠাৎ জঙ্গলের ভেতর থেকে অনেক গুলো শেয়ালের হাঁক শুনে ইলমি দৌড়ে গিয়ে রুদ্রের হাত খামচে ধরলো , বেচারী এমনি তেই ভয় পাচ্ছে তার উপর এই ভরা জঙ্গলে অন্ধকারে হাটছে , আর এই লোকটাকেও বিশ্বাস নেই , যা রাগ বাবা , ওরা আসবে আর উনি সুন্দর ভাবে আমাকে শেয়ালের ডিনারে রেখে ফুসস করে হাওয়া হয়ে যাবে ,
শেয়ালের ডাক কমতেই ইলমি খেয়াল করলো সে রুদ্রের হাত খামচে দাড়িয়ে আছে তাই চট জলদি হাত ছেড়ে দিয়ে দুরে সরে দাড়ালো ,
ইলমি খেয়াল করে রুদ্র খুব জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে , মানে কি ! রেগে গেলো মনে হয় , কেন যে মুখ টা বন্ধ করলাম না , এখন যদি এই ভরা জঙ্গলে মেরে কেটে রেখে যায় , কাক পক্ষি ও তো টের পাবে না ,
কথা টা মনে মনে ভেবে কাদো কাদো কন্ঠে বলে উঠলো ,
” বিশ্বাস করেন ভাইয়া , আমি ইচ্ছে করে বলি নি , ট্রাস্ট মি ! মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে ”
বলেই নাক টানতে লাগলো ,
রুদ্র এতক্ষণ পকেটে হাত দিয়ে ইলমির কথা ই শুনছিলো , এতক্ষণে সে মুখ খুলল ,
” তুমি মেয়ে শুধু ভীতু আর ভাঙা টেপ রেকর্ডার না সাথে চরম লেভেল এর বেয়াদব! সারা রাত জঙ্গলে কাটাতে না চাইলে হাটো , আর যদি বনের শেয়াল কুকুরের সাথে থাকতে চাও থাকতে পারো , এজ ইউর উইসস ”
বলেই আবার হাটতে লাগলো , হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় ৪ টা , কিছু ক্ষনের মাঝে ই আজান দিবে ফজরের , চার পাশ টা হালকা আলো,
ইলমি রুদ্রের পিছনে পিছনে যেতে বলল,
” এইই কি বললেন ? কি বললেন টা কি আপনি ? আমাকে কি আপনার জন্তু জানোয়ার মনে হয় যে আমি ওদের সাথে থাকবো ? ”
” তার থেকে কম কিছু মনে হচ্ছে না ”
” মানে কি হে ? আমাকে কোন এঙ্গেল এ জন্তু জানোয়ার মনে হয় ? ”
রুদ্র কিছু না বলে পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল টা বের করে ফ্লাস লাইটটা অন করে হাতের দিকে তাক করে বলল ,
” দেখো কেন বললাম তোমাকে জন্তু জানোয়ার? ”
ইলমি খেয়াল করলো , লোকটার হাত মাত্রা অতিরিক্ত ফর্সা , ফোল্ড করা শার্টের হাতার কিছু অংশ নিচে গুনে গুনে পাচ টা খামচির দাগ , দুইটাই আবার রক্ত ও বের হ’য়ে গেছে আর তিন টায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে ,
ইলমি চট জলদি নিজের হাতের আঙুলের দিকে খেয়াল করলো , নখ গুলো যে কবে এতো বড় হয়ে গেছে খেয়াল ই করল না , ইসসসস কত খানি ছিলে গেলো লোকটার !
ইলমি অপরাধী দৃষ্টিতে রুদ্রের দিকে তাকালো , মাথা নিচু করে বলল ,
” আসলে আমি ভয়ের চোটে খেয়াল ই করি নি , আমি আসলে ই সরি ”
রুদ্র ফ্লাস লাইট অফ করে বির বির করে বলল ,
” জঙ্গলি বিড়াল কোথাকার ”
______________
” বেশি কষ্ট হচ্ছে হাটতে ? ”
খুড়িয়ে খুড়িয়ে এক মনে জঙ্গলে র মধ্যে দিয়ে হাটছি৷, পাশে মহামান্য নেতা মহাশয় , হাঁটার মাঝে ই হঠাৎ উনার প্রশ্ন শুনে মোটে ও চমকে উঠলাম না , কারণ এই ২০ মিনিটে ও নি ৪০ বার এই কথা জিজ্ঞেস করেছে , বিরক্তি টা ভেতরে চেপে রেখে বললাম ,
” নাহ্ , ইট’স ওকে , আ’ম ফাইন ”
অমনি জুতার ভেতরে পাথরের টুকরো ঢুকতেই সেখানে চাপ লাগতেই ব্যথায় মুখ দিয়ে “আওও ” শব্দ টা বেরিয়ে আসলো , উনি থমকে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরলেন , ভ্রু কুচকে ব্যঙ্গ স্বরে বললেন ,
” এখন ব্যথা পেয়ে কাঁদো কেন ? এখনো বলো , ইট’স ওকে , আ’ম ফাইন ”
আমি নাক মুখ কুচকে বললাম
” ইট’স ওকে, আ’ম ফাইন ”
উনি দু কদম এগিয়ে এসে আমার সামনাসামনি দাড়ালো ,
” আরেকটা কথা বলবে মেয়ে তুমি , একদম মুখ টা সেলাই করে দিবো ”
বলতে বলতে হুট করে আমাকে পাঁজা কোলে তুলে নিলেন , আমি অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছি তার মুখের দিকে ,
” মুখে মশা যাবে ! আর এভাবে হা করে থাকবে না , পথ চলতে সমস্যা হয় ”
উনার কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে সামনের দিকে তাকিয়ে বললাম ,
” নামান আমাকে , আমি হেটেই যেতে পারব , এই সব ব্যথা আমার কিছু করার ক্ষমতা রাখে না , আরো বহুত গুন বেশি ব্যথা আমি পেয়েছি ”
” আমি তোমাকে নামাবো না , কি করতে পারো করো , আর বেশি ত্যাড়ামি করলে ঠাস করে ফেলে দিবো , মাইন্ড ইট ”
উনার ধমক শুনে আমি চুপ করে গেলাম , নাকে ভীষণ সুন্দর একটা স্মেল পাচ্ছি , এটা যে নেতা মশাই এর গা থেকে আসছে সেটা বোঝার আর বাকি রইলো না ,
আমি আনমনে উনার আর একটু বুক ঘেষে রইলাম , কেন জানি এভাবে থাকতেই বেশি ভালো লাগছে ,
” এই একদম আমার বুকে মাথা রাখবে না মিস পূর্ণা , আমি কিন্তু একেবারে পিউর ভার্জিন , আমার ভার্জিনিটি অপমান করবে না ”
উনার এমন কথায় চমকে উঠা থেকে বেশি অবাক হলাম , বলে কি উনি ? বুকে মাথা রাখলে ভার্জিনিটি কে অপমান করা হবে ? বাপের জন্মে তো এমন কথা শুনি নি .
” বুকে মাথা রাখলে রাখলে ভার্জিনিটির অপমান হবে ? আর এতো রাতে একা একটা মেয়েকে কোলে চাপিয়ে সারা জঙ্গল হাঁটছেন তখন কিছু হচ্ছে না ”
উনি আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” ইউ নোও না মিস পূর্ণা , আমি মানব দরদি , মানুষ কে সাহায্য করছি ”
বিরবির করে বলে উঠলাম ,
” এহহহ আইছে আমার মানবতার ফেরিওয়ালা ”
” ইয়েস মিস , আর আমার বুক একমাত্র আমার বউয়ের জন্য , আপনার মতো আজাইরা পাবলিকের জন্য না , ”
” কিই আমি আজাইরা পাবলিক ? ”
” তা নয়তো কি ? ”
বলেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো ,
এবার আমার বেশ ইগোতে লাগলো , উনার দিকে আরো চেপে বুকে মাথা রেখে বললাম ,
” নেন রাখলাম মাথা , দেখি কি করতে পারেন আপনি ! আপনি যেমন আমার অনুমতি ছাড়া কোলে নিলেন ঠিক তেমন ভাবে আমি ও আপনার ভার্জিনিটি তে আঘাত দিলাম , দেখি কি করতে পারেন আপনি ”
পূর্ণার এমন বাচ্চা মানুষের মতো জেদ দেখে ঠোঁটের হাসি আরো বিস্তর হলো তাহরিমের ,
সে তো ঠিক এটার জন্য ই তো এতো ক্ষন অপেক্ষা করছিলো ,,
চলবে …
#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_21
_________________
” আমাদের কি পূর্ণা কে এভাবে জঙ্গলে ফেলে আসা উচিত হয়েছে ? ”
ইলমির কথায় রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালো ,
আবাদত তারা এখন বাসের মধ্যে আছে , মিনিট ১৫ হয়েছে তারা বাসে উঠেছে কিন্তু ইলমি এই প্রশ্ন মনে হয় ৩০ বার অলরেডি করে ফেলেছে ,
রুদ্র ভ্রু কুচকে বলল ,
” পূর্ণা নিরাপদেই আছে আমার ভাইয়ের সাথে আছে , তোমাকে এত চিন্তা করতে হবে না , ইডিয়ট ! ”
ইলমির শরীর টা খুব একটা ভালো লাগছে না তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে বাসের জানালায় মাথা এলিয়ে দেয় ,
বাসের ঝাঁকি তে বারবার ওর মাথা গিয়ে জানালায় লাগছে , তাই রুদ্র ইলমির মাথা টা নিজের কাঁধের উপর রেখে শান্ত দৃষ্টিতে বাহিরে তাকালো ,
মেয়েটা বড্ড বাচ্চা স্বভাবের , ভেতরে কোন জটিলতা নেই , সাংবাদিক হয়েও এতো সহজ সরল কিভাবে হতে পারে সেটা রুদ্র ভেবে পায় না ,
_________________
” চাচা ওও ফরিদ চাচা , দেইখা যাইন , জঙ্গলার ভিত্তে তে একডা মাইয়া আর একটা পোলা আইতাছে , ওও চাচা ”
জঙ্গলের শেষ মাথায় একটা গ্রাম শুরু , এটা আমাদের শহর থেকে বেশ অনেক টা দুর , জঙ্গলে র মধ্যে দিয়ে আমায় কোলে নিয়ে হাটতে হাটতে জঙ্গলের শেষ কিনারে চলে এসেছেন মন্ত্রী সাহেব , সামনেই একটা লোকালয় দেখতে পেয়ে হাসি ফুটলো আমার মুখে , প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত কোলে নিয়ে হাঁটছেন , উনার কি ক্লান্ত লাগছে না? আমি যে এত টা ও শুকনো তা কিন্তু না ওজন তো মাশা আল্লাহ অনেক , কিন্ত উনাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে এত টা পথ কাউকে কোলে নিয়ে এসেছে , এসব ভাবতে ভাবতে ই হঠাৎ কারো চিৎকার শুনে আমি চমকে উঠি ,
একটা বছর ২২ কি ২৩ এর ছেলে আমাদের দিকে তাকিয়ে কাউকে ডাকছে , ফজরের আজান সেই কখন ই হয়ে গেছে , নামাজ শেষ করে সবাই বাড়ি ফিরছে ঠিক সেই সময়েই ছেলেটা এমন হাক ডাক শুরু করলো ,
উনি হাটতে হাটতে ছেলে টার সামনে গিয়ে দাড়ালো , আমাকে নামিয়ে দিয়ে আড় মোড়া ভেঙে পকেটে থেকে মাস্ক টা বের করে মুখে পড়ে নিলো , এক পলক আশে পাশে তাকিয়ে দেখে জায়গা টা একটা মসজিদের পাশেই ,
এতো ক্ষনে ছেলে টার ডাক শুনে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে , আমি মুখ কুচকে দাঁড়িয়ে রইলাম ,
” কি হে ছোকড়া , জঙ্গলার ভিত্তে তোমরা দুজন ছেড়া ছেড়ি কিতা করো ? ”
আমি খেয়াল করলাম , একজন মাঝ বয়সী লোক মুখে আধা পাকা দাড়ি , দাড়ি তে হাত বুলাতে বুলাতে কথাটা বলল ,
” আসলে চাচা , আমরা জঙ্গলের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম ”
” হয় হয় বুঝি বুঝি , দেইখা তো মনে অইতাছে শহুরে পোলা মাইয়া , কেন আ*কামের লাইগা জঙ্গলার ভিত্তে গেছো বুঝি না মনে করছো ! শহুরে পোলাপান রে আমাগো ভালা কইরাই চিনা আছে ”
লোকটার কথা শুনে আমার আর বোঝা বাকি রইলো না উনি কি মিন করে কথা বলছে , আমি কিছু বলার জন্য মুখ খুলব তার আগেই তাহরিম তালুকদার আমার হাত চেপে ধরলেন , ইশারায় ই বোঝালেন কোন কথা না বলতে কারণ এখন আমি কথা বললে জিনিস টা উল্টে যেতে পারে ,
” দেখুন চাচা আপনি কিন্তু না জেনে অপবাদ দিচ্ছেন , আমরা একটা কাজে এসেছিলাম আর পথ হারিয়ে ফেলি জঙ্গলে ”
” তা না হয় বুঝলাম , তাইলে লগে এই মাইয়া কেডা? ”
উনি এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” ও আমার স্ত্রী ”
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে তার দিকে তাকিয়ে আছি , বলে কি এই লোকে! আমি আবার কখন তাও বউ হলাম!
” কেমতে বিশ্বাস করুম , তোমরা যে জামাই বউ ? ”
” বিশ্বাস অবিশ্বাস আপনাদের ব্যপার সেখানে আমি কি বলতে পারি , যা হোক আমাদের সময় খুব ই স্বল্প , এখন যেতে দেন !”
বলেই উনি আমার হাত ধরে চলে আসতে নিলে ,
ভীরের মধ্যে থেকে একজন বয়স্ক লোক বলে উঠলো,
” খারাও পোলা , তোমাগো কথা আমরা বিশ্বাস করছি, হেতি তোমার বউ তাইলে বউ রে তো আবার বিয়া করুন ওই যা , তোমাগো আমরা হগ্গলে মিল্লা
ফের বিয়া দিমু ”
চারপাশে কাউকে খুঁজতে খুঁজতে হাফ ছাড়লো ,
” মতি ,, মতি রে কই গেলি ! যা তো ইমাম সাব আর কাজি রে ডাইক্কা লইয়া ”
লোকটার কথা শুনে আমি বেশ ঘাবড়ে গেলাম , উনার হাত খামচে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম ,
প্রায় মিনিট পাচেক পরে মতি নামের ছেলেটা একজন হুজুর আর মাঝ বয়সী এক কাজি নিয়ে আসলো ,
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাহরিমের দিকে তাকালাম , উনি নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে ,
মসজিদ থেকে কিছু চেয়ার নিয়ে আসা হলো৷, একটায় উনাকে বসতে দেওয়া হলো , আরেকটায় আমাকে সামনে কাজি আর হুজুর ,
আমি মাথা নিচে করে বসে আছি , বলার ই বা কি আছে! এক পলক তাহরিমের দিকে তাকালাম , লোকটার মুখে কোন প্রকার এক্সপ্রেসন দেখা যাচ্ছে না , ওরা যে কাজ টা করছে ওটাতে আদৌও কি তার মত আছে ? উনি কেন ই বা মেনে নেবেন ? একটা এতিম মেয়ে কে নিজের বউ হিসেবে মানার কোন প্রশ্ন ই আসে না ! নেহাত চাপে পড়ে বিপাকে পড়ে বিয়ে টা করছে ,
কাজি সাহেব রেজিস্ট্রার খাতায় নাম তুলছে ,
আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” মা তোমার নাম কি ? ”
” পূর্ণা , মিফতাহুল পূর্ণা ”
” তোমার বাবার নাম ? ”
কাজি সাহেব এর কথা শুনে আমি খানিকটা চিন্তা করে বললাম ,
” আমি এতিম , মা বাবা নেই , এতিম খানায় মানুষ ”
” ওহহ, আচ্ছা ঠিক আছে ”
এবার কাজি উনার নাম পরিচয় নিলেন ,
সব কিছু লেখা শেষে উনি খাতাটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল ,
” না ও বাবা এই খান টায় সইন করো “..
উনি এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে , সাইন করে দিলেন , এবার কাজি সাহেব রেজিস্ট্রার খাতা টা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন সাইন করে দেওয়ার জন্য ,
আমি খাতা আর কলম নিয়ে সাইন করতে গিয়েও থেমে গেলাম , এটা তো আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ সিদ্ধান্ত , আজকের দিন টা তো অন্য রকম হলেও পারতো , আমার এক পাশে মা আরেক পাশে বাবার থাকার কথা ছিলো , কিন্তু আজ ,? আজ তো কেউ নেই হাতে হাত রেখে ভরসা দেওয়ার মতো ,
এসব চিন্তা করার মাঝে দিয়েই হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ টের পেলাম , চোখ তুলে হাতের মালিক এর দিকে তাকালাম , উনি আমার হাতে হাত রেখে ভরসা দিচ্ছেন , আমার চোখ জলে টইটম্বুর তবুও গড়িয়ে পড়তে দিলাম না , এক হাত দিয়ে চোখ টা আলতো হাতে মুছে সাইন টা করে দিলাম ,
এবার মৌলভী সাহেব বিয়ে পড়নো শুরু করলো , প্রথমে উনাকে কবুল বলতে বলল , উনি ও সুন্দর ভাবে কবুল বলে দিল ,
তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল সব কথা শেষ করে বলল ,
” বল মা কবুল ”
আমি খানিকক্ষণ চুপ থেকে ই বললাম ,
” কবুল ”
বিয়ের কার্যক্রম শেষ , সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করলো , আমি ঠিক একই ভাবে পাথরের মতো বসে আছি , চারপাশে র কিছু ই যেন কানে আসছে না ,
ভেতর থেকে শুধু একটা কথা ই শোনা যাচ্ছে ,
” পূর্ণ তোর বিয়ে হয়ে গেছে , তুই এখন কারো অর্ধাঙ্গিনী , কারো বিয়ে করা বউ তুই , তোর ও এখন আপন মানুষ হয়েছে , তুই বিবাহিত পূর্ণ ,
নাউ ইউ আর মেরিড পূর্ণ ”
চলবে …