ভালোবাসার_অন্যরূপ🍁
#লেখিকা:- Nishi Chowdhury
#প্রথম_অংশ
বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আরিশা। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে তারপর প্রথম সন্তান বলে অতি আদরের এই আরিশা। ছোট একটা ভাই আছে তার নাম আরিয়ান। নবম শ্রেণীর ছাত্র সে। চারজনের সুখী পরিবার।
মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারবে না বলে শহরের বাইরে যেতে দেয়নি আরিশার বাবা-মা। তাই ঢাকা শহরের একটি নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এল এল বি তে ভর্তি করে দিয়েছে তাকে। স্টুডেন্ট হিসেবে ও সে খুব ভালো ছাত্রী। কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছে।
ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর এর সাথে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আরিশা বিষয়টা তার মা-বাবার কাছ থেকে গোপন করে রেখেছিল। চেয়েছিল নিজের পড়াশোনা কমপ্লিট করে তারপর মা বাবাকে নিজের মনের কথা বলবে।
কিন্তু তার ভাগ্য অন্য কথা ভেবে রেখেছিল।
আরিশার মা একজন হাই ব্লাড প্রেসারের রোগী। একদিন বাড়িতে শুধু আরিশা ও তার মা আর একটা ছোট কাজের মেয়ে ছিল। বাবা ভাই কেউ ছিলনা বাসায়। গরমে রান্না করতে করতে হঠাৎ প্রেসার হাই হয়ে যাওয়ায় মাথা ঘোরাতে শুরু করে তার। রান্নাঘর থেকে ডাইনিং টেবিলের কাছে আসতে গিয়ে ধুপ করে মাথা ঘুরে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
আরিশা হঠাৎ ডাইনিং রুমে এমন শব্দ শুনে ছুটে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে তার মা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। সে এসে মাকে টেনে তুলে টেবিলে বসিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে রিং দেয় কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ না করায়, তাড়াতাড়ি কাজের মেয়ের সহায়তায় মাকে নিয়ে কোনরকমে গাড়ির কাছে এসে পৌঁছায় তারপর মাকে নিয়ে হাসপাতালে উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আরিশা।
হাসপাতালে পৌঁছে উন্মাদের মতো আচারণ করতে শুরু করে আরিশা। এবং দূর থেকে এই এই বিষয়টা দৃষ্টিগোচর হয় ডঃ আহনাফ এর। তিনি দৌড়ে এসে তাড়াতাড়ি আরিশার মাকে হসপিটালে এডমিট করে নেন। প্রায় দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আরিশার মায়ের জ্ঞান ফিরে আসে।
পুরোটা সময়ই মায়ের হাত জড়িয়ে বসে ছিল আরিশা। ডক্টর আহনাফের মনে অন্যরকম একটা ভালো লাগা সৃষ্টি হয়েছিল আরিশার জন্য। অন্য সেকশনে ডিউটি থাকায়। থাকতে পারলো না এখানে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর এসে সে ঠিকই দেখে গেছে।
জ্ঞান ফেরার পর নার্স আহনাফকে জানালে তিনি চলে আসেন আরিশার মায়ের কেবিনে। এসে চেকআপ করে দেখেন তিনি বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ আছেন। কিন্তু তার প্রপার রেস্ট এর প্রয়োজন। আরিশার মায়ের প্রথম নজরে আহনাফকে অনেকটা ভালো লাগে। এবং তার অমায়িক সুন্দর আচরণ ,ভদ্র ব্যবহার দেখে খুব খুশি হন।
একসময় কথা বলার ছলে তিনি জানতে পারেন ডক্টর এখনো অবিবাহিত। আরিশার মা ও মেয়ের জন্য এমন একটি জামাই খুঁজছেন। মনে মনে কিছু একটা ঠিক করে রেখে দিলেন এবং আহনাফের থেকে তার পার্সোনাল ফোন নাম্বার দুজনের মধ্যে আদান-প্রদান করে নিলেন।
সবকিছু জানার পরে আরিশার বাবা ও ভাই হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে আসেন। পরে আরিশার আম্মু আরও সুস্থবোধ করলে বিকালের দিকে বাড়িতে নিয়ে যান তাকে।
ডক্টর আহনাফের ও আরিশা কে প্রথম দেখায় অনেকটা ভাল লেগে যায়। আর ভালো লাগবে না ই বা কেন আজকালকার আধুনিক মর্ডান মেয়েদের তুলনায় অনেক ভদ্র মেয়ে এই আরিশা। পোশাক-আশাক ও পরিপাটি। অশ্লীল জীবনযাপন তার নয়। কিন্তু মনের উপর কারো জোর চলে না। তাই সে এদিক থেকে বেপরোয়া হয়ে গেছে। তার ভার্সিটির প্রফেসর অভিকে সে বেপরোয়া ভাবে ভালবাসে।
হসপিটাল আওয়ার শেষে আহনাফ বাড়ি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তার মায়ের সাথে তার মনের কথাগুলো শেয়ার করে। আহনাফ ছোটবেলা থেকেই এমন। মনের ছোট ছোট কথাগুলো সে তার মায়ের সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করে। কারণ মা ই তার প্রথম বেস্ট ফ্রেন্ড। তার মা সবকিছু জানার পরে। আহনাফের কাছ থেকে ভদ্রমহিলার নাম্বার নিয়ে বলেন,
— আমি কাল কথা বলবো তার সাথে। আশা করছি পরের শুক্রবার মেয়েটাকে দেখতে যাব।
_____________&____________
এদিকে আরিশা ভার্সিটিতে তার ব্রেক টাইমে অফিস রুমের দিকে গিয়ে দেখে সেখানে অভি নেই। সে কন্টিনিয়াসলি ফোন দিয়েছে তার নাম্বারে। প্রথম কিছুক্ষণ রিং হয়ে কেটে যাচ্ছিল পরে সুইচড অফ দেখাচ্ছিলো। পরে অফিসের দাপ্তরিক এর কাছ থেকে জানতে পারে অভি আজকে ইউনিভার্সিটিতেই আসেনি।
বাড়িতে ফিরে এসে দরজায় কলিং বেল বাজাতেই তার মা এসে খুলে দিল। মুখে হাসির রেশ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোন ব্যাপার নিয়ে সে খুব খুশি হয়েছে। ভিতরে ঢুকে ডাইনিং টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে পান করে বলল,
— কি ব্যাপার আম্মু? তোমাকে খুব খুশি খুশি লাগছে। তোমার সিরিয়ালের সেই শয়তান টা কি ধরা পড়েছে।
আরে না। ওসব বাদ দে। আগে বল আগামী দুইদিন কি তোর কোন জরুরী ক্লাস আছে ভার্সিটিতে?
— না আম্মু। তেমন নাই কিন্তু গেলে ভালো হতো। বাট এমন প্রশ্ন কেন করলে?
— তাহলে সামনের দুই দিন তোকে আর ইউনিভার্সিটি তে যেতে হবে না। আমার সাথে একটু বাইরে যেতে হবে আমি একটু শপিং-এ যাবো।
— আব্বুর সাথে চলে যাও। জানো তো আমার শপিং-এ যেতে ভালো লাগেনা ভিড়ভাট্টার মধ্যে ঠেলাঠেলি গুঁতোগুঁতি করতে মোটেও পছন্দ না আমার।
— তোর আব্বুর অফিস আছে। সে যেতে পারবে না। আমার সাথেই তোকে যেতে হবে তাই সামনের দুই দিন তুই ভার্সিটিতে যাবি না ব্যাস এটাই আমার শেষ কথা।
আরিশা ভালো করেই জানে তার মা একবার যেটা জেদ করে তা সে করেই ছাড়ে। এমনিতেই দুদিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাই মায়ের সাথে বেশি তর্কে জড়ানো না। চুপি চুপি নিজের রুমে চলে গেল।
________&&&________
পরেরদিন যথারীতি আরিশা তার মায়ের সঙ্গে শপিং মলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। শপিং মলে গিয়ে একটার পর একটা শাড়ি আরিশার গায়ের উপর ধরে আয়নায় দেখতে লাগে যে কোনটা তার মেয়ের গায়ে সবথেকে সুন্দর মানাচ্ছে। আরিশা ভুরু কুঁচকে বললো,
—শাড়ি আমার গায়ে ধরছ কেন? কেনাকাটা তো তুমি করতে এসেছ। তুমি দেখো তোমার কি লাগবে।
— তুই চুপ কর তো শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক। আর আমাকে আমার কাজ করতে দে।
আরিশা হতাশার নিঃশ্বাস ছেড়ে সাইড গ্লাসে তাকিয়ে চমকে উঠল। কারণ অপর পাশের দোকানে ক্যাশ কাউন্টারে অভি একটা মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। ক্রেডিট কার্ড পাঞ্চ করে বিল পে করে শপিং এর ব্যাগ গুলো নিয়ে মেয়েটার হাত জড়িয়ে ধরে কাউন্টার থেকে বেরিয়ে গেল।
আরিশা পেছনে ঘুরে ভালোভাবে দেখলো। না সে ভুল দেখেনি ওটা অভি। আবার দুজনের অঙ্গভঙ্গি হাসাহাসি ধরন দেখে ভাই বোন বলেও মনে হচ্ছে না। যদিও অভির একটা ছোট বোন আছে। কিন্তু সে তো রাজশাহী থাকে। আজ যত দূর দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে ওটা তানিশা হতেই পারে না। তাহলে কে?
আরিশার মা শাড়ি দেখতে দেখতে হঠাৎ মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলেন মেয়ে কেমন অন্যমনস্ক হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি দৃষ্টি অনুসরণ করে তেমন কিছু উল্লেখযোগ্য বুঝতে পারলেন না। তাই আরিশা কে ধাক্কা দিয়ে বললেন,
— কি হলো এত মনোযোগ সহকারে কি দেখছিস তুই?
মায়ের কথায় আরিশার ধ্যান ভাঙ্গলো। সাথে সাথে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল। তারা অলরেডি চলন্ত সিঁড়িতে নিচে যাওয়ার জন্য উঠে পড়েছে। আরিশা দ্রুত তার মাকে বলল,
— কেমন যেন তমা কে দেখলাম। তুমি দাঁড়াও আমি একটু দেখে আসছি। ওর সাথে অনেকদিন আলাপ হয় না আমার।
বলে হন্তদন্ত হয়ে শোরুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে চলন্ত সিঁড়িতে দাঁড়ালো তারে অভি আর তার সাথে থাকা মেয়েটি সিঁড়ি থেকে নেমে বাইরের মেইন গেট পেরিয়ে গেল মার্কেটের। আরিশা দ্রুত চলন্ত সিঁড়ির পার করে গাড়ি পার্কিং জোন এ গিয়ে দেখল সত্যিই ওটা অভি ছিল। কারণ অভির গাড়ির নাম্বার অর মুখস্ত।
সে সঙ্গে সঙ্গে তার সাইড ব্যাগ থেকে ফোন বের করে অভিকে ফোন করলো। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছেনা। আরিশা আবার ফোন দিল। দিতে থাকলো। অবশেষে রিসিভ হলো ফোনটা। কিন্তু ওপাশ থেকে দুটো কথা বলার পরপরই লাইনটা কেটে গেল। আর যার ফলে আরিশার মাথাটা ঘুরে উঠলো, কারণ ফোনটা রিসিভ করে অভি যে দুটো কথা বলেছিল তা হল,
— আরু আমি এখন টিচার্স মিটিংয়ে ব্যাস্ত আছি, পরে কথা হবে।
আরিশার মাথায় এখন শুধু একটা কথাই ঘুরতে থাকলো। অভি আমাকে মিথ্যে কথাট কেন বলল? তাহলেও কি কিছু লুকাতে চাচ্ছে আমার কাছ থেকে মারাত্মক কিছু………….!!
চলবে……?