ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-০৮

0
349

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(৮)

সকালবেলা ইশান ঘুম থেকে উঠেই দেখে মুন বিছানাতে নেই। বুকের বাম পাশে ব্যাথার সৃষ্টি হয় মুন কি তাহলে সত্যই ওকে স্বামী হিসেবে চায় না?ইশান জানতেও পারলো না মুন তার জন্য সারা রাত অপেক্ষা করেছে কখন ইশান নিজে থেকে ওকে ডাকবে? ইশান সাথে করে ব্রাশ আনেনি গত কাল এখন কি হবে?ওর চিন্তা ভাবনা বাড়তে না দিয়েই মুন রুমে আসে। ইশানের দিকে এগিয়ে এসে মাথা নিচু করে বলে, আপনার ব্রাশ!!

ইশানের ভেতরটা কেঁপে ওঠে এতদিন পর? এত গুলি দিন পর মুন ওর সাথে কথা বলছে?তাও আবার তুমি থেকে আপনি তে পৌছেঁ?ইশান কিছুই বলেনা মুনের হাত থেকে ব্রাশ নিয়ে নেয় নতুন ব্রাশ!এবার ইশান নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয় সময় দিতে চায় সে যথেষ্ট মুনকে। মুন ইশানের কোন কথার আওয়াজ না পেয়ে ওর দিকে চোখ তুলে দেখে, ইশান ব্রাশের দিকে দেখিছে যেনো কিছু একটা ভাবছে?কি ভাবছে?এভাবে মুনকে দেখে কি সে বিরক্ত??

টুথ পেষ্ট?

মুন ডেসিনের সামনে থেকে টুথ পেস্ট এনে দেয়। ইশানের দিকে এগিয়ে দেয়।
ইশান তা না নিয়েই মুনকে প্রশ্ন করে, আমার সাথে কথা বলছিস না কেন তুই??

মুনের ভেতরটা যেনো ভেংগে আসতে চাইছে এইবার। ইশান কি করে বুঝবে মনের ভেতরে কত না বলা কথা রয়েছে মুনের?প্রথম প্রেম হিসেবে সে তো তার স্বামী কেই জানে অথচ ইশান তাকে দূরে সরে দিচ্ছে বার বার। কেন এমন করছে?ইশান কি তাকে বউ হিসেবে কখনোই মেনে নেবে না?মুন ইশানের চোখের দিকে চোখ তুলে দেখে, চোখে চোখ পরতেই মুন হাসফাস শুরু করে বলে, আসলে অনেক দিন পর দেখা! কি বলবো বুঝে উঠতে পারিনা!

ওহ। তুই ব্রাশ করেছিস?

মুনের মনে পরে যায় বিয়ের পরদিন সে ব্রাশ না করেই ইশানকে চু**মু দিয়েছিলো। হাত কচঁলিয়ে বলে, হ্যাঁ।

ভালো। খুব ভালো। তা…….
মুনকে একবার দেখে নিয়ে বলে, আম্মু তোকে নিয়ে যেতে বলেছে আমার সাথে যাবি?

মুন উত্তর দিতে পারেনা। মা বলেছে?শুধু মা বলেছে বলেই ইশান নিয়ে যাবে? নিজের ইচ্ছে থেকে নয়?ছোটো মুন ইশানের ভেতরটা পড়তে পারেনা। ততটা গভীর আবেগ সে ধরতেও জানেনা। তাই তো আবার ও অভিমান হয় ইশানের প্রতি।
তবুও বলে, যাবো ।

ইশান ফ্রেশ হয়ে আসে সকলের সাথে নানা রকম পিঠা পুলি দিয়ে নাস্তা করে মুনকে নিয়ে আসে নিজেদের বাসাতে। মুনকে দেখেই রিয়া এগিয়ে আসে। রাইফি মুনকে দেখেই ওর দিকে এসে ঝাপিয়ে পরে ওর কাছে যেতে। ওকে কোলে তুলে নেয় মুন। বাসার ভেতরে এসে সবার সাথে কথা বলে ইমরান আসছে আজকে। মুন খুশি হয় ইমরান আসার কথা শুনে। ইমরান তার খুবই ভালো একজন বন্ধু।
ইশান যতবার মুনের আশে পাশে আসে ওকেই দেখতে থাকে। এত সুন্দরী কেন হচ্ছে মুন?
নৌমি! ইশানের ক্লাসমেট ছিলো একসময়। ইশান তাকে বন্ধু ভাবলেও নৌমি ইশানের সুদর্শনতার প্রেমে আটঁকেছিলো ইশান ওকে রিফিউজ করলে ও ঠিক করে নেয় ইশান কে ফাসিয়ে হলেও বিয়ে করবে বাসায় চলে এসে বলবে যে ইশানের সাথে তার প্রেম ছিলো কিন্তু ইশান তা জানা মাত্রই বাসায় ফিরে মায়ের কাছে জানায় সে বিয়ে করবে। তারপর ওই ছোট মুনের সাথে বিয়ে!আর যা ইশানের পছন্দ হলো না। ইশানের সাথে কি মুনের বয়স মেলে?মুন সেই সময় বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করলেও পরে যখ ন বয়স বাড়বে বুঝতে শিখবে তখন কি ইশান কে নিজের পাশে চাইবে যা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই ইশানের তাই তো মুনকে সময় দিতে চেয়েছে।
বিকেলেই ইমরান চলে আসে ইশান, মুন, রাইফি তখন তিনজন মিলে বসার রুমে রাইফির সাথে খেলা করছিলো। ইমরান ব্যাগ নিয়ে সোফায় রেখে ইশান আর মুনের মাঝের ফাঁকা জায়গায় বসে পরে। মুন বিরক্ত হচ্ছে আজকে কি?হ্যাঁ হয়েছে! সে এতক্ষন ইশানকে ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছিলো কিন্তু এই হনুমান এসে কি করলো? সারা রুমে জায়গা রেখে মাঝে এসে বসেছে। ইশান নিজেও ভাইয়ের কাজে আ*হত হয়। এভাবে কেউ বসে?মুনের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে সে।

কেমন আছিস ভাই?

ভালো তুই?

ভালো। মুন তুই কবে এসেছিস?

সকালে।

ইমরান মুনকে ভালো করে দেখে নেয়, আজকাল এই মুখটা সে বেশিক্ষন না দেখে থাকতেও পারেনা। কিভাবে যে মুনের প্রতি আসক্ত হয়ে গেলো ইমরান!!
এক সময় যে ইমরান চাইতো মুন আর ইশানের সম্পর্ক ঠিক হয়ে যাক সেই ইমরান এখন ইশানের সাথে মুনের বিচ্ছেদ চায়। মনে প্রাণে চায় দুজনে আলাদা হোক।

কার সাথে এসেছিস?তুই তো নিজে থেকে আসার মানুষ না!
মুন আমতা আমতা করে বলে,ইশান…. ইশান ভাইয়ের সাথে।

ইশানের ভালো লাগে মুন তার নাম মুখে নিয়েছে বলে। কিন্তু ইমরানের?তার একদম ভালো লাগছেনা ইশান ভাই কি সম্পর্ক ঠিক করতে চাইছে নাকি?না না এ কিছুতেই হতে দিবে না ইমরান । প্রথমে হিমুকে চেয়েছে অথচ হিমু তাকে চাইলো না এখন যদি মুনকেও না পায়?সে বাচঁবে কি নিয়ে?
ইশান ইমরান এর পেছন দিকে মাথা দিয়ে মুনকে দেখলো এরপর রুমে চলে গেলো।
ইমরান ইশানে চলে যেতেই মুনকে বলে, তোর জন্য গিফট এনেছি আজকে।

মুন খুশি হয়ে বলে, কি দেখাও আমায়!
ইমরান ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে এতে রয়েছে সাদা পাথরের দুল। মুনের খুব পছন্দ এই সাদা পাথর। ইমরানকে ধন্যবাদ দিয়ে বক্স নিয়ে রুমে যায়। ইশান সোফাতে বসে টিভি দেখছে রুমে মুন যেতেই বলে, আমার থেকেও আমার ভাইয়ের সাথে বেশি মিশে যাচ্ছো অথচ আমার সাথে কথাই বলতে চাওনা
আজকাল দেখছি।
মুন অবাক হয় ইশান তাকে তুমি করে কথা বলছে?সে তো তুমি বলেনা, তুই করে বলে।

সেরকম নয়।

তাহলে কি রকম?

অন্যরকম। যেমনটা আপনি ভাবকছেন সেরকম নয়।

আমি আবার কি ভাববো?

অনেক কিছুই ভাবতে পারেন। ইমরান ভাইয়া আমার কাছে খুব ভালো একজন বন্ধু।

আর আমি?
ইশান জানতে চায় মুনের কাছে।

মুন স্বাভাবিক ভাবেই বলে, আপনি তো সব সময় আমার থেকে পালিয়ে বাঁচেন। এখন আপনিই ভাবুন আপনি আমার কাছে কেমন?

ইশানের মনে হয় মুন তার আবেগ এর সাথে কথাটা বলেছে ইশানের পালিয়ে যাওয়াতে কি মুন ব্যাথা পেয়েছে?কই?মুন তো এ নিয়ে কখনো কিছুই বলেনা। বুঝবে কি করে?

আমি তোমার থেকে পালিয়ে বাঁচি?

তা নয়তো কি?দুই বছর তো পালিয়ে বেড়ালেন!! কখনো আমায় ধরা দিয়েছিলেন??ইশান ভাইয়া!!

ইশান নির্বিকার শুনে যায় মুনের অভিযোগ আসলেই তাই সে তো মুনের থেকে দুরেই সরে দাঁড়িয়ে থেকেছে কখনো ওর সাথে সম্পর্ক নিয়ে কথাও বলেনি। মুনের সাথে সে সেই সময়ে কি কথাই বা বলতো মুন তো নিজেও তখন বুঝতে চাইতো না। এই যে মুন এখন অভিযোগ জানাচ্ছে সে যে আবেগে বলছে সেও জানে ইশান। যখন মুন সসম্পুর্ন বুঝতে শিখবে তখন?তখন ও কি এখনের মতো চাইবে ইশান কে?? দশটা বছরের গ্যাপ রয়েগেছে দুজনের মাঝে চার পাঁচ বছরের গ্যাপ তবুও মানান সই!! মুন আর কিছুই বলেনা বক্স রেখে বাইরে আসে। ইশান রিমোট দিয়ে টিভি অফ করে বেলকুনিতে যায়। কাল বিকেলেই তাকে আবার চলে যেতে হবে। তবে এবার সে একা যাবেনা। মুনকে সাথে নিয়ে যাবে। পাশাপাশি রাখলে সবটা বুঝতে শিখবে মুন। রাতে খাবার খাওয়া শেষ করেই ইশান বাবা আর দাদুর সাথে কথা বলে আগামীকাল তার সাথে মুনকেও সে নিয়ে যেতে চায় ওনারা সম্মতি দিয়েছেন এখন শুধু রুমে গিয়ে মুনকে জানাতে হবে।

মুনকে সাথে নিয়ে যাবে শুনেই ইমরান চিন্তিত হয়! মুনকে নিয়ে যাবে মানে?মুনকে তো ইশান স্ত্রী হিসেবে মানে না তাহলে কেন মুনকে সাথে নিয়ে যাবে। যপ্ত দ্রুত সম্ভব মুনকে মনের কথা জানিয়ে দিতে হবে তারপর ইশানের সাথে এই খেলনা বিয়ের সম্পর্ক ও শেষ করতে হবে তারপর……………মুন শুধু তার হবে।

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে