ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-০৭

0
347

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(৭)

মুন স্কুল থেকে ফেরার পর থেকেই কেমন চুপচাপ হয়ে আছে সেরকম বেশি কথাও বলছেনা আবার রুম থেকে বের ও হচ্ছেনা। সেই যে বিকেলে ৪টার
দিকে এসে রুমে ঢুকেছে এখনো বের হয়নি । ইশান জানে কেন আসছেনা? নিশ্চয়ই বন্ধুদের সাথে ইশান কে নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে নিজের এই বয়সে এসে বিয়ে করা আবার তার থেকেও অনেকটাই বড় একটা ছেলেকে!! ছোটো মুন কি ওকে নিয়ে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে?এতে তো সব দিক থেকেই মুনের ক্ষতি! ইশান বুঝে নিলো মুনের থেকে তাকে আরও দূরত্ব বাড়িয়ে দিতে হবে। ইশান ও মুনকে আর ডাকলো না। এমনিতেই সেদিনের পর থেকে মুন খুব একটা ইশানের সাথে মিশছেনা। রিয়ার ডাকে নিচে আসলো ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করাও হয়নি তার বিকেলের দিকেই খাবার খেয়ে নিচ্ছে তাই। ইশান বই নিয়ে সোফা থেকে উঠে রুমের দিকে চলে গেলো। ব্যাগটা গুছিয়ে নিলো এমনিতেই কাল তাকে চলে যেতে হবে ক্লাস মিস্ দেওয়া চলবেনা এই সময়ে। সে রাতেও মুন ইশানের সাথে আর কোন প্রকার কথা বললো না। চুপ করে অন্যদিক ফিরে ঘুমিয়ে গেলো আজ আর ক্লাসের দেওয়া পড়া গুলোও ছুঁয়ে দেখলো না। ইশানের খারাপ লাগলো একটু এই কয় দিনে মুনের সাথে ঘুমাতে এসে কম বেশি কথা হতো আজ একদম চুপ করে রয়েছে তবে ইশান ওকে কিছুই বললো না কি দরকার শুধু শুধু মায়া বাড়ানো মেয়েটার প্রতি??আজকে বন্ধুদের কথাতেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে!!

পরের দিনই ইশান চলে গেলো ঢাকাতে আর মুন রইলো এখানেই। মুনের খারাপ লাগলো ইশান চলে গেলো অথচ নিজে থেকে একটা কথাও বললো না। কেন?ইশান কি তাহলে সত্য ওকে বউ হিসেবে একদমই পছন্দ করে না?হয়তো তাই! মুনের আর এখানে থাকার ইচ্ছে নেই চলে যেতে চায় সে। দাদুর রুমে গিয়ে বললো, সে চলে যেতে চায়। দাদুও মানা করলেন না। ইশান ও চলে গেছে আবার যখন ইশান আসবে তখন না হয় আবার নিয়ে আসবে। মুনের মোন খারাপ বলে ইমরান ওকে নিয়ে বের হলো বাইরে উদ্দেশ্য মেয়েটার পছন্দের সকল সাজুগুজুর তৈজসপত্র কিনে দিবে সেদিন তো ইশান ভাইয়া সব ফেলে দিয়েছে। মুনকে নিয়ে ইমরান বের হয়েছে কসমেটিকস এর দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে মুনকে নিয়ে দোকানে এসেছে সেই মুহুর্তে হিমু আর ওর দুই বান্ধবী ও এদিকেই এসেছে ইমরানের সাথে কোন মেয়েকে দেখেই হিমুর পাশে থাকা মেয়ে দুটোর মাঝে একজন বলে,

বলেছিলাম না?বড় লোকের ঘরের ছেলেরা কখনো একটা মেয়ের পেছনে পরে থাকে না?

আসলেই দেখলি হিমু তোর সাথে কাল সকালেই না কত তামাশা করতে চলে গেছিলো? আর আজকেই অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে এসেছে সপিং করতে! চেহারা দেখেছিস মেয়েটা? তোর থেকেও হাজার গুন সুন্দরী!

হিমু ওদের দিকে দেখে নিয়ে বলে, এই জন্যই আমি ইমরান কে হ্যাঁ বলতে ভয় পাচ্ছিলাম! আমার মতো মেয়েকে কেন ইমরান ভালোবাসবে?তাদের মতো আমাদের অর্থ নেই সম্পদ নেই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট নেই ওদের সাথে আমাদের কিছুই মিলবেনা।

হ্যাঁ রে হিমু ভালো করেছিস তুই ইগনোর করিস ওকে। আজকে তো নিজের চোখেই দেখলাম সব!আমরা আরও ভাবছিলাম তোকে সাহস জুগিয়ে দেব।ছেলেটা ভালো বলে!

আজ তো মুখোশ এর বাইরেটা দেখলি! চল ওদিকে যাই।

হিমুরা চলে গেলো অন্যদিকে আর ইমরান মুনকে খুশি করতে গিয়ে ওর পছন্দের অনেক কিছুই কিনে দিলো এরপর নিজেই মুনকে ওর বাবার বাসায় রেখে এলো। এর মাঝে আর ইশান বাসায় ফিরে নি। মুন ও আসেনি। প্রায় ছয় মাস পর রিয়ার বাচ্চা হলে রিয়ার মায়ের বাসাতে গিয়েই দেখে এসেছে। রিয়া ওখানেই থাকবে কিছু দিন। এদিকে মুনের অর্ধবার্ষিক এক্সাম চলছে। ইশান এসেছে বাসায় তবে এক্সামের কারনে ওকে শাহেদা আনেন নাই তবে ছেলেকে বলেছে ওই বাসাতে গিয়ে মেয়েটাকে একটু দেখে আয় বার বার বলার পরে ইশান চলে আসে দেখা করতে কিন্তু ওই যে ভাগ্য খারাপ সেই সময় মুন বাসায় ছিলো না প্রায়ভেট ছিলো বলে আর দেখা হয়নি। ইশানের একটু খারাপ লাগে মেয়েটার সাথে কথাও হয় না দেখাও হয় না আজকে দেখা করতে এসেও দেখা হলো না কেমন আছে মুন??আচ্ছা সে তো মুনকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়নি তাহলে মুন কেমন আছে তা ওর কেন জানতে ইচ্ছে করবে?স্ত্রী বলেই কি?হবে হয়তো!! ইশানকে মিথিলা আর শামছুননাহার থাকতে বললেও সে থাকেনা। বলে আবার আসবে। ইশানের শেষ ইয়ার চলছে এই সময় চাপ বেশি তাই চলে যেতে হয় দ্রুত। দুটো ইঁদ চলে গেলেও
ইশানের আসা হয় না। মুন অবশ্য এই ইদঁ গুলি শশুড় এর বাসাতেই করেছে যেহেতু সকলেই ছিলো এতে ওর মোন কেমন করে না। তবে ইচ্ছে করে ইশানের সাথে একটু কথা বলতে। ইশানের কি মুনের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না?মুন কে যখন শাহেদা বা রিয়া, ইমরান বলে যে ইশানের সাথে কথা বলবে কি না?মুনের ইচ্ছে করলেও না করে দেয় কেননা,ইশান তার কথা মনে করে একবার ও কিছুই জিজ্ঞেস করেনা সেখানে মুন কেন বেহায়ার মতো ওর সাথে কথা বলতে যাবে?রিয়ার ছেলেটা এখন বসা শিখেছে ইশান এখন পুরোপুরি ডাক্তার হয়েগেছে একটা ক্লিনিকে রোজ রাত ৮ টা থেকে ২টা পর্যন্ত বসে সে আবার অন্য একটা তে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ২ টা পর্যন্ত সব মিলিয়ে সে খুবই ব্যাস্ত ঢাকা থেকে রোজ গ্রামে আসতে পারেনা সে মাঝে মাঝে এলেও হুট করে রাতে এসে সকালেই চলে যেতে হয়। এর মাঝে ইশানের সাথে মুনের শুধু একবার দেখা হয়েছে তাও মুনের বাসাতে এসে দেখা করে গেছে ইশান। মুন এখন বড় হয়ে যাচ্ছে আগের থেকেও বেশি সুন্দরী হয়ে যাচ্ছে সে এখন ইশানের সামনে আসতেও নাকি লজ্জা পায় তাই তো সেভাবে কথাও বলা হয় না মুনের সাথে।
ইশান প্রায় দেড় বছর পর তিন দিনের ছুটি পেয়ে গ্রামে এসেছে। বাসায় রিয়া আছে ওর ছেলে রাইফি এখন একটু একটু কথা বলতে শুরু করেছে। মা, বাবা,দাদা,নানা,বু,কাকাই এগুলোই শিখছে এখনো। ইশান বাসায় এসেছে শুনে, মুনের বাবা মা ওকে দাওয়াত করে আসে যতই হোক মেয়ে জামাই কিনা?এত দিন পর ফিরেছে! ওরাও এখন জানে মুনের আর ইশানের সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। তবে চাপ দিচ্ছেনা মেয়ে তাদের ছোটো ইশান অবুঝ নয় ও সময় মতো সব মিলিয়ে নেবে। তাই তো সে নিয়ে মোন খারাপ করে না। ইশান যাবে কি যাবে না করতে করতেও যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় মুনের সাথেও একবার দেখা করা দরকার কতদিন হয় দেখা হয় না? কথা তো আর ও অনেক আগে থেকেই হয়না। সেই যে ইশান কে স্কুলে সাথে নিয়ে জোড় করলো তার পর থেকেই কেমন ইশানের কাছে থেকে লুকিয়ে চলে সে। মুন কি তাহলে ওকে স্বামী হিসেবে আর চাইছে না?হতেও পারে। ইশান একাই চলে আসে পরের দিন বিকেলে। হাত ভর্তি প্যাকেট গুলো নিয়ে এসে সোফায় বসে। ওকে দেখেই মুনের দাদি এগিয়ে আসে পাশে বসে কথা বলে। মুনের দাদুও বাসায় ছিলেন না তিনি এসেও ইশানের সাথে গল্প করে। মিথিলা মেয়ের জামাইয়ের আনা মিষ্টি সাথে আরও কিছু নাস্তা সাজিয়ে ইশানের সামনে দেয়। মুন ইশানকে রুমের দরজা থেকে দেখেই রুমে গিয়ে বিছানায় বসে আছে। ইশান কে সে দেখেছে, এত দিনে ইশান একটুও বদলায়নি মুনের কাছে মনে হয় গম্ভীর মানুষ টা আরও সুন্দর হয়েছে।কেমন একটা ভাব নিয়ে সবার সাথে কথা বলে। বছর দুই আগে স্কুলের বন্ধুরা ওকে বলেছিলো, ইশান ভাইয়া কি তোকে ভালোবাসে??
মুন আমতা আমতা করে উত্তর দিয়েছিলো, না বাসেনা।
ওরা শুনেই বলেছিল, তার মানে আমাদের ধারণাই সত্য! ইশান ভাইয়া শহরে থাকে মেডিকেলে পড়ছে ফিউচারে বড় ডাক্টার হবে কেন তোকে সে ভালোবাসবে?
যদিও তুই অনেক বেশি সুন্দরী আমাদের মাঝে তবুও তুই তো স্মার্ট নস!তোকে আমার মনে হয় ইশান ভাইয়া পছন্দ করে না।

মুন তখন কিছুই বলেনি সে নিজেও জানে ইশান তাকে পছন্দ করেনা। সেদিন থেকেই মাথায় চেপেছে ইশান শহরের কাউকে ভালোবাসে তাহলে কেন মুন তার পেছনে পরে রইবে? তাই তো মুন দূরত্ব বাড়িয়েছে এতে অবশ্য ইশান ও কিছুই বলেনি সে নিজেও তো দূরত্ব চেয়েছে। মুন আর নিচেই গেলো না, ওর মা আর দাদী ডেকে নিলেন সময় নিয়ে বের হলো মুন। থ্রি পিস এর ওড়না দিয়ে মাথায় বউ দিয়ে নিচে এসে দাদুর পাশেই বসেছে। ইশান ওকে এক পলক দেখে নেয়, মুন আরও বড় হয়েছে যথেষ্ট যুবতী মেয়েদের মতো। সাথে বেড়েছে ওর ভেতরের লজ্জা কেমন নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে অথচ এর আগে মুন এমন ছিলো না। চঞ্চল ছিলো, এটা ওটা বলে মাথা খারাপ করিয়ে দিতে ওস্তাদ ছিলো।
এস এস সি দিয়ে শেষ করেছে দশ দিন হবে। ইশান ওকে সবার সামনে কি প্রশ্ন করবে? তাই চুপ করেই রইলো। মুন কিছু সময় বসে থেকে ওর মায়ের কাছে কিচেনে এলো। ডিনারের সব রান্না মায়ের হাতে হাতে টেবিলে সাজিয়ে রাখলো। ইশানের সাথে বসে মুনের বাবা দাদু আর দাদী ও মুন বসলো মিথিলা এক হাতেই সবাইকে এগিয়ে দিলেন। মুনের খাওয়া শেষ হতেই রুমে চলে গেলো আর ইশান তার শশুড়ের সাথে গল্প করতে বসলো। ইশান যখন মুনের রুমে এলো দেখলো মুন বিছানার এক পাশে জায়গা করে দিয়ে অপর পাশে ঘুমিয়ে গেছে। ইশান একটু অবাক হলো মুনের বিছানাতে একটা পুতুল ও নেই সব সরিয়ে রেখেছে। ভেবেছিলো রুমে এসে মুনের সাথে আজকে দুই একটা কথা বলবে কিন্তু মুন তো আগেই ঘুমিয়েছে ইশান জানে ওর সাথে কথা বলতে চায়না বলেই এরকম করে আগেই ঘুমিয়েছে। ইশান একটা ধীর্ঘ শ্বাস ফেলে অন্য পাশে ঘুমিয়ে পরে।

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে